Posts: 6,161
Threads: 42
Likes Received: 12,438 in 4,169 posts
Likes Given: 5,340
Joined: Jul 2019
Reputation:
3,799
(18-01-2021, 01:36 PM)pinuram Wrote: তা সত্যি, একটা ছবিতে কখন সব কিছু ব্যাক্ত করা সম্ভব নয়! আচ্ছা ওই সূর্যাস্তের সাথে বাইকের ছবিটা যে দিয়েছ, গল্পটা কি পড়া হয়ে গেছে নাকি !!!!!!
না দাদা...... ওটা নিজের থেকেই দেওয়া. বাইকটা এই গল্পে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে... তাই সব ছবিতেই ওই বাইক আমি রাখি. ❤
এই পথ যদি না শেষ হয় তবে কেমন হতো তুমি বলতো?
তুমিই বলো....
Posts: 1,887
Threads: 6
Likes Received: 6,479 in 1,870 posts
Likes Given: 2,644
Joined: Jun 2019
Reputation:
742
পর্ব তিন (#3-#13)
লাজুক হেসে আমার গালে হাত দিয়ে আমার গভীর প্রেমময় নজর সরিয়ে দিলে বলল, “তুমি একদম ওইভাবে আমার দিকে তাকাবে না।”
আমি ওকে জিজ্ঞেস করলাম, “আইস্ক্রিম খাবে?”
মাথা দুলিয়ে সায় দিল তিতলি, “হ্যাঁ।”
দুটো আইস্ক্রিম কিনে খেতে খেতে তিতলি বলতে শুরু করল, “তুমি জানো, মা না আমাদের ব্যাপারটা বুঝে গেছে।” আমি ইশারায় জিজ্ঞেস করলাম, কি ভাবে? উত্তরে বলল, “তুমি তো শয়তানি করে সেদিন আমাকে ট্যাক্সিতে চড়িয়ে দিয়ে কোথায় কোন মেয়ে দেখতে চলে গেলে। আমি না সারাটা রাস্তা...” শেষের দিকে কন্ঠস্বর ধসে গেল তিতলির।
আমি ওর হাত ধরে টেনে প্রবোধ দিয়ে বললাম, “বললাম তো সরি।” ঘড়ি দেখলাম, সারে সাতটা বেজে গেছে। আমি ওকে জিজ্ঞেস করলাম, “তোমার দেরি হচ্ছে না?”
মুচকি হেসে উত্তর দিল, “না বাবা নেই, আগামীকাল ফিরবে। আমি বাড়িতে বলেছি যে একটু ফিরতে দেরি হবে। মা তাতে কিছু বলেনি।”
বললাম, “আচ্ছা বেশ। তোমার ভাইয়ের পড়াশুনা কেমন চলছে?”
বাঁকা একটা হাসি দিল তিতলি, “ছেলে তো তাই সব ভালো। ক্লাস ইলেভেনেই বাবার কাছে বায়না করে বাইক পেয়ে গেছে। পড়াশুনা আর করবে কি। কোচিঙের নাম করে আড্ডা মেরে বেড়ায় আর কি।”
আমি ওকে জিজ্ঞেস করলাম, “তুমি এত খবর কি করে পেলে?”
উত্তর দিল, “আমি কতবার দেখেছি ওকে, পাড়ার মোড়ে, বাইকে বসে আড্ডা মারতে।”
আমি একটু অবাক হলাম ওর কথা শুনে। ওর বাবা কড়া ধাতের মানুষ কিন্তু নিজের ছেলেকে শাসনে রাখেন না? মনে হয় তিতলি আমার চোখের প্রশ্ন পড়ে ফেলেছিল তাই বক্র হাসি দিয়ে বলল, “ওই আদরে বাঁদর হওয়া আর কি।”
আইস্ক্রিম শেষ করে আবার বাইকে চড়ে বাড়ির পথ ধরলাম। কাজিপাড়ার মোড়ে ওকে নামিয়ে দিয়ে একটা কাগজে আমার ফোন নাম্বার লিখে দিলাম।
তিতলিও আমাকে ওর ফোন নাম্বার দিয়ে বলল, “তুমি না প্লিজ ফোন করবে না। আসলে কি জানো আমার বাড়িতে আমাকে বিশেষ কেউই ফোন করে না। আর তার ওপরে যদি কোন ছেলে ফোন করেছে জানতে পারে তাহলে মুশকিলে পরে যাবো।”
আমি বুঝতে পারলাম ওর বন্দিনী জীবনের ছবি। আমি ওকে জিজ্ঞেস করলাম, “বাড়িতে এত কড়াকড়ি থাকা সত্ত্বেও তাহলে তুমি এই কম্পিউটার শিখতে একা কি করে বের হও?”
তিতলি উত্তর দিল, “ওটা তো তাও করা যায়, কিন্তু তাই বলে বাড়িতে কোন ছেলের ফোন। বাপরে মাথা খারাপ নাকি?”
বুঝতে বাকি রইল না যে, ওর বাড়িতে এই সব বিষয় নিয়ে ভীষণ কড়াকড়ি। অনেকদিন পরেই দেখা, তাই কেউই কাউকে ছাড়তে ইচ্ছে করছিল না। কিন্তু সময় পেরিয়ে যাচ্ছে দেখে শেষ পর্যন্ত এক প্রকার জোর করেই ওকে বাড়ি যেতে বলে দিলাম। সেই আগের মতন, গলির বাঁকে আধো আলো আঁধারে ক্ষনিকের জন্য দাঁড়িয়ে মৃদু হেসে মাথা নুইয়ে আমাকে বিদায় জানিয়ে হারিয়ে গেল।
রাত অনেক বারান্দায় দাঁড়িয়ে একটা সিগারেট ধরিয়ে সুখ টান দিচ্ছিলাম। মনের মধ্যে একটা খচখচ ছিল, কল করবে বলে এখন কল করল না। প্রায় তখন মধ্যরাত, হটাত করেই ক্রিং ক্রিং করে ফোন বেজে উঠল। দুইবার ফোন বেজে ওঠার পরে কেটে গেল। আবার কিছুক্ষন বেশ নিস্তব্দ, নিঝুম। আমি হাঁ করে তাকিয়ে ফোনের দিকে। ফোনটা আবার বেজে উঠল, ক্রিং ক্রিং, আগের মতন ঠিক দুবার। তারপরে আবার কেটে গেল। আমি মনে মনে হেসে ফেললাম। যার ফোনের অপেক্ষা করেছিলাম তার ফোন এসে গেছে। মানসচক্ষে দেখতে পেলাম, নিঝুম রাতে পা টিপে টিপে বসার ঘরে ঢুকে চুপি চুপি একটা চেয়ারে বসে বোতাম টিপছে তিতলি। কানের কাছে রিসিভার ধরে রেখেছে সন্তর্পণে, চোখে মুখে চাপা উত্তেজনা পাছে কেউ দেখে ফেলে। দুবার রিং হতেই কেটে দিল। সিগারেট শেষ করে বিছানায় শুয়ে পড়লাম, কিন্তু ঘুম আর এলো না। পিঠের ওপরে দুমদাম কিল চড়ের কথা মনে পড়তেই ভীষণ হাসি পেয়ে গেল।
শুরু হল এক নতুন জীবন যাত্রা। যার বেশির ভাগ সময়ে তিতলির আবর্তে চলে যায়। তিতলি যখন সাথে থাকে তখন আর যখন থাকে না তখন। কলেজ আগে ছুটি হয়ে গেলে ট্যাক্সি করে আমার অফিসে চলে আসে। সেখান থেকে বাইকে করে বাড়ি ফেরা হয়। প্রতি ক্লাসের পরে বাইকে করে বাড়ি ফেরা নিয়মিত বাঁধা ধরা ব্যাপার। কোনদিন কাঁকুড়গাছির মোড়ে দাঁড়িয়ে গল্প করি, কোন শনিবার ক্লাসের পরে আমাদের ইন্সটিটিউটের পেছনের দিকে একটা শিশুউদ্যান ছিল, সেখানে বসে বসে আলু কাবলি খেতে খেতে গল্প করতাম। শুক্রবার রাতে মামাবাড়ি যাওয়ার বদলে সেটা শনিবার রাত হয়ে গেল। সম্পূর্ণ মিথ্যে বলিনি, শুধু সত্যিটা লুকিয়েছিলাম, মামিমাকে বলতাম যে শনিবার ক্লাস থাকে তাই দেরি হয়ে যায়।
দেখতে দেখতে একমাস কেটে গেল। তিতলি এখন আর অনির্বাণকে দেখলে বিরক্ত হয় না। যতক্ষণ আমাদের সিগারেট শেষ না হয় ততক্ষন আমাদের সাথে দাঁড়িয়ে থাকে। ইন্সটিটিউটের মধ্যে তিতলি এখন ওই সামনের চেয়ারে বসে আর আমি আর অনির্বাণ সেই পেছনের চেয়ারে বসে আড্ডা মারতে মারতে ক্লাস করি। ক্লাসের পরে মাঝে মাঝে প্রেয়সীর মুখ ঝামটা শুনতে হয়। তোমরা সিগারেট খাওয়া একটু কমাতে পারো না? অনির্বাণ বেশিক্ষন ওর সামনে দাঁড়াতে পারে না, তিতলিকে দেখলেই আমাকে বলে, এই আমি কাটছি, ধ্যাতানি মারার জন্য এসে গেছে। আমি ওর কথা শুনে হেসে ফেলি।
ঠান্ডা যদিও নেই, তবে সকালের দিকে একটু ঠান্ডার আমেজ বেশ ভালো লাগে। পরেরদিন আমার জন্মদিন। তিতলির সাথে ক্লাসে দেখা। ক্লাসের পরে যথারীতি, প্রেয়সীকে বাইকের পেছনে বসিয়ে বাড়ির পথে যাত্রা করেছিলাম। দিনের বেলা ঠান্ডা লাগে না তবে রাতের বেলা বাইকে চাপলে একটু ঠান্ডা হাওয়া লাগে তাই তিতলির কলেজের ব্যাগে একটা কারডিগান রাখা থাকে। সেটা শুধু মাত্র বাইকে চাপলেই ব্যাবহার করা হয়। কথা ছিল আমার জন্মদিনের দিন আমি অফিস থেকে হাফ ডে ছুটি নিয়ে সোজা ওর কলেজ চলে যাবো। সেখান থেকে যেখানে প্রেয়সীর ইচ্ছে সেখানেই যেতে হবে। মাঝ রাতে সেই পরপর দুই বার দুটো ক্রিং ক্রিং ফোনের আওয়াজে বুঝে গেলাম আমার জন্মদিনের শুভেচ্ছা পেয়ে গেছি। ভীষণ আনন্দ হল সেদিন। দিম্মা আর তোতাপাখি ছাড়া আর কেউ আমার জন্মদিন মনে রাখে না।
অফিস থেকে তাড়াতাড়ি বেড়িয়ে পড়লাম। বোউবাজারে গিয়ে একটা সোনার কানের দুল কিনলাম। বেশি বড় পছন্দ নয়, তবে দেখতে সুন্দর হওয়া চাই। বেশ কয়েকটা দোকান ঘুরে ঘুরে একটা সোনার দুল পছন্দ হল। বাধ সাধল, হৃদয়, প্রেয়সীর পছন্দ হবে তো? না হলে আবার ফেরত দিতে আসতে হবে। কলেজের গেট ছাড়িয়ে একটু আগে গিয়েই দাঁড়ালাম। কলেজের গেটের কাছেই দাঁড়িয়েছিল তিতলি, ওর সাথে পারমিতা। পোশাকে ভীষণ ভাবেই সুরুচিপূর্ণতা ধরা দিয়েছে। হাঁটু পর্যন্ত লম্বা একটা গাড় নীল রঙের স্কারট, দুই পাশে একটু কাটা। পরনে একটা সাদা শার্ট, হাতা গুটানো। মেঘের মতন ঢালাও কেশ, একটা সুন্দর খোঁপায় বাঁধা। বাম হাতের সরু কব্জিতে বাঁধা সোনার ঘড়ি। হাতে একটা বাদামি রঙের একটা ফোল্ডারের মতন ব্যাগ। দেখে মনে হল কোন বড় অফিসের বড় ম্যানেজার। আমি ওদের দেখে ভদ্রতার খাতিরে মৃদু হাসি দিলাম। পারমিতা তিতলির কানে কানে কিছু একটা বলতেই, দুই কন্যে আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দিল। তারপরে পারমিতা আমাকে দেখে একটু হাত নাড়াল। পারমিতাকে বিদায় জানিয়ে ছোট ত্রস্ত পায়ে আমার দিকে এগিয়ে এসে বাইকের পেছনে উঠে বসল তিতলি। তিতলির সুচারু সাজের বহর দেখে মনে হল জন্মদিন আমার নয়, ওর। মনে মনে হেসে ফেললাম আমি, সাজের মধ্যেও একটা মার্জিত ভাব, অসামান্য রুচিপূর্ণ সুন্দরী।
কাঁধে হাত রেখে আমাকে বলল, “আউট্রাম ঘাটে চল।”
এই ললনার আদেশ অমান্য করা আমার সাধ্যের বাইরে। সায় দিয়ে মাথা দুলিয়ে বললাম, “যথাআজ্ঞা মহারানী।” আমি ঘাড় বেঁকিয়ে তিতলির গায়ের মদির ঘ্রাণে নিজেকে মাতাল করে বললাম, “তোমায় আজকে যা দেখাচ্ছে না।” কাঁধে একটা আলতো চাঁটি, “ধ্যাত” সলজ্জ ভঙ্গিমায় কাজল কালো নয়নে আমাকে ঘায়েল করল। ফিসফিস করে বললাম, “তোমার রূপে ঘায়েল হয়ে আজকে কতজন যে মারা পরবে কে জানে।”
খিলখিল করে হেসে ফেলল সুন্দরী, “এই যে মিস্টার, তুমি মরলে ক্ষতি নেই। আজকে আমার বয়ফ্রেন্ড আমাকে নিয়ে বেড়াতে নিয়ে যাচ্ছে বুঝলে, তাই এই সাজ। চল চল, দেরি হচ্ছে। আমার বয়ফ্রেন্ডটা আবার একটু পাগলা আছে, দেরি হয়ে গেলে মুখ ব্যাজার করে বসে থাকবে।” বলেই আমাকে কাতুকুতু দিতে শুরু করে দিল।
তীব্র আকর্ষণীয় দেহপল্লব থেকে মদির ঘ্রাণ নির্গত হয়ে আমার মাথা ঝিমঝিম করে দিল। সুড়সুড়ি দেওয়ার ফলে বাইক ঠিক ভাবে চালাতে পারছিলাম না। আমি ওকে বললাম, “দেখো, এরপরে আমি কিন্তু বাইক চালাতে পারব না।”
বাবুঘাট পর্যন্ত পিঠের ওপরে নিজেকে উজাড় করে বসে রইল। বাবুঘাটে বাইক রেখে রেল লাইন ধরে হাঁটতে শুরু করে দিলাম। সূর্য পশ্চিম গগনে ঢলে পড়েছে। দুর আকাশে সাদা মেঘের রাজ্যে কমলা আর গেরুয়া রঙের খেলা শুরু হয়ে গেছে। আশে পাশের গাছের ডালে অসংখ্য গৃহপানে ফেরা পাখীদের কিচিরমিচির কলতান। গঙ্গা বক্ষে ধোঁয়াশা আভাস। মিহি কুয়াশা গঙ্গার হাওয়ায় উড়ে আসে রেল লাইনের ওপরে। লাইনের পাশে গঙ্গার পাশ ধরে ইট পাতা রাস্তা। একটা প্রাচিন বট গাছের নিচে একজন উনুন জ্বালিয়ে ভুট্টা পুড়িয়ে বিক্রি করছে। গঙ্গার জলো হাওয়া, কুয়াশা আর সেই উনুনের ধোঁয়া উড়ে এসে আমাদের ঢেকে দিল। বাচ্চা মেয়ের মতন আমার হাত ধরে একটা রেল লাইনের ওপর দিয়ে হাঁটছিল তিতলি। সেই ধোঁয়ায় আবর্তে গেল সুন্দরী ললনা। মনে হল যেন কোন মেঘের রাজ্যে চলে এসেছি। চারপাশে সবুজ গাছাপালা, একপাশ দিয়ে ধোঁয়া, সামনে লম্বা রেল লাইন। দূরে ওই গঙ্গা বক্ষে প্রচুর ছোট ছোট নৌকার মধ্যে টিম টিম করে আলো জ্বলতে শুরু করে দিয়েছে। পাশে সুন্দরী, আমার হাতে হাত রেখে হেঁটে চলেছে এক অনির্দিষ্টের পানে।
আমি ওর মুখের দিকে চেয়েছিলাম। মৃদু হেসে আমাকে বলল, “এই, ওইভাবে কেন দেখছ?”
আমি হেসে ফেললাম। জানি না কি দেখছি, বললাম, “তোমার ঠোঁটের ওপরের ওই তিলটা না দারুন সুন্দর।”
লজ্জা পেয়ে গেল সুন্দরী। রেল লাইন থেকে নেমে, আমার কোল ঘেঁষে আমার বাম বাজু দুইহাতে আস্টেপিস্টে জড়িয়ে ধরে বলল, “আদি, এই রেল লাইনটা কোথায় যায়?”
আমি ওকে উত্যক্ত করার জন্য বললাম, “রেল লাইন আবার কোথায় যাবে। রেল লাইন এখানেই রয়েছে অনেকদিন ধরে পালাতে পারেনি।”
আমার উত্তর শুনে ক্ষেপে গেল ললনা, আদরের একটা চিমটি খেলাম বাজুতে, “ধ্যাত তোমাকে কোন প্রশ্ন করা বৃথা।”
রেল লাইন ছেড়ে ইটপাতা রাস্তা ধরে গঙ্গার পাড় ধরে হাঁটতে হাঁটতে পৌঁছে গেলাম একদম শেষ প্রান্তে। দুইতলা একটা আইস্ক্রিমের দোকান, স্কুপ। বেশ সুন্দর। নিচে কাউন্টারে দুটো আইস্ক্রিমের অর্ডার দিয়ে উপরের বিশাল জানালার পাশে দুটো চেয়ার নিয়ে বসে পড়লাম। আমার পাশে বসে আমার বাম কাঁধে মাথা রেখে চুপ করে আমার বাম হাত নিজের হাতের মধ্যে নিয়ে বসে রইল তিতলি। আমার মনের মধ্যে শুধু একটা প্রশ্ন, এই সুন্দরীকে কোথায় রাখব। আমি হয়ত ওর সব কিছু জানি, কিন্তু তিতলিকে আমার ব্যাপারে কিছুই জানানো হয়নি। ও শুধুমাত্র এইটুকু জানে যে আমার বাড়ি বাঙ্গুরে, ব্যাস। কোনদিন জিজ্ঞেস করেনি আমার ব্যাপারে। যদি জানতে পারে আমার কেউ নেই, বাবা অনেকদিন আগেই ছেড়ে চলে গেছে। একটা ছোট ফ্লাটে একা থাকি তখন কি করবে? আমি ওর ভাসা ভাসা কাজল কালো চোখের দিকে তাকিয়ে দেখলাম। দুই চোখে কোন প্রশ্ন নেই, কোন উদ্বেগ নেই, কোন আশঙ্কা নেই, কোন ভয় নেই, কেমন যেন একটা প্রশান্তির স্নিগ্ধ ছায়া। যেন এটাই ওর জীবন। ওর কাঁধে হাত রেখে বুকের কাছে জড়িয়ে ধরতেই আরো বেশি বুকের ওপরে নিবিড় হয়ে সরে এলো তিতলি। আমি ওর বাম কাঁধের গোলায় হাত রেখে কাছে টেনে নিলাম।
মিহি কন্ঠে ওকে বললাম, “এই, তিতলি...”
ঘুমের আবেশ মাখা কন্ঠে উত্তর এলো, “কিইইই...”
বুক ভরে শ্বাস নিলাম আমি, আমার অনেক কথা বলার আছে, “আমার কিছু বলার আছে।”
আমার ডান হাত নিজের হাতের মুঠোর মধ্যে চেপে ধরে আমার বুকের ওপরে নরম গাল ঘষে বলল প্রেয়সী, “প্লিজ, কিছু বল না। ভীষণ ভালো লাগছে এই ভাবে চুপচাপ বসে থাকতে।”
সত্যি, আমার ভীষণ ভালো লাগছিল। দুই নীরব হৃদয়ের কথোপকথন শুনতে বেশ ভালো লাগছিল আমার। সম্বিত ফিরল যখন ওয়েটার আমাদের জন্য আইস্ক্রিম নিয়ে এলো।
তিতলি আমার বুকের ওপর থেকে মাথা উঠিয়ে আমাকে মিহি কন্ঠে বলল, “কি হল কিছু বলবে না? চুপ করে থাকবে।”
আমি পড়লাম মহা সমস্যায়, “যাহ্ বাবা, আমি টেপ রেকরডার নাকি। একবার বল চুপ থাকতে একবার বল কথা বলতে।”
মুচকি হাসি দিল ওই মিষ্টি গোলাপি অধর জোড়া, “হ্যাঁ, তুমি আমার টেপ রেকর্ডার, আমার রেডিও, আমার ডিকশানারি, আমার অনে...ক কিছুউউউ...” শেষের টানটা এতটাই যে আশেপাশের ছেলে মেয়েরা আমাদের দিকে তাকিয়ে দেখছিল।
ওদের দেখে ভীষণ লজ্জা পেয়ে গেল তিতলি। আমি পকেট থেকে কানের দুলের কৌটো বার করে ওর হাতে দিয়ে বললাম, “এটা তোমার জন্য।”
বাক্সটা খুলে সোনার দুল দেখে অবাক চোখে তাকিয়ে রইল আমার দিকে। মৃদু মিষ্টি বকুনি খেলাম একটু, “এত খরচ করতে হত নাকি, পাগল ছেলে। একবারে সোনার দুল।”
আমি মাথা নাড়িয়ে হেসে বললাম, “না গো এটা সোনার নয়। ওই রাস্তার পাশে একটা দোকান থেকে আনা।”
বাক্স হাতে নিয়ে দোকানের নাম দেখিয়ে আমাকে বললে ললনা, “হ্যাঁ জানা আছে। এতদামি উপহার আমি তোমার কাছ থেকে কোনদিন চাইনি, আদি।” তারপরে সোনার দুল দুটো নিজের কানের লতিতে পড়তে পড়তে মিষ্টি হেসে বলল, “আমার পছন্দ অপছন্দ মনে হয় খুব বেশি করেই বুঝে গেছ।”
আমি ওর কথা শুনে হেসে ফেললাম। একটু মাথা নুইয়ে ওকে বললাম, “পছন্দ অপছন্দ মাথায় না রাখলে ভবিষ্যতে যে আমার পিঠে কাঁঠাল ভাঙবে।”
কথাটা শুনে হেসে ফেলল তিতলি। আইস্ক্রিম খাওয়া শেষ করে আমি ওকে বললাম, “এই এবারে বাড়ি ফিরতে হবে।”
বাড়ি ফেরার কথা শুনে ওর ফর্সা চাঁদপানা মুখমন্ডলে আষাঢ়ের বাদলের ছায়া নেমে এলো, “এত তাড়াতাড়ি?”
আমি ওকে বললাম, “দেখো, সন্ধ্যে হয়ে গেছে।”
এতক্ষন ওর খেয়াল ছিল না, খেয়াল আমারও ছিল না। সামনের গঙ্গাবক্ষ কখন যে আঁধারে ঢেকে গেছে বুঝতে পারিনি। পাশের বিশাল দ্বিতীয় হুগলী সেতুর আলো জ্বলে উঠেছে। দূরে স্টিমারে আলো জ্বলে উঠেছে। গঙ্গার অন্যপাশে হাওড়ার কুলবর্তি বাড়ি কারখানায় আলো জ্বলে উঠেছে। গঙ্গার কালো জলের ওপরে সেই দুর আলোর ঝলমলে প্রতফলনে আবার যেন হারিয়ে যেতে ইচ্ছে করে আমাদের। তাও সময় বাঁধা দেয়। একপ্রকার জোর করে টেনে তুলতে হল প্রেয়সীকে।
আইস্ক্রিমের দোকান থেকে বেড়িয়ে ওর ব্যাগের মধ্যে থেকে একটা ছোট বাক্স বের করল তিতলি। বাক্সটা আমার হাতে দিয়ে বলল, “এতে একটা কেক আছে। আমি না গতকাল বানিয়েছি। তুমি বাড়ি গিয়ে খেয়ো।”
আমি কেকের বাক্স হাতে নিয়ে ওকে ইয়ার্কি মেরে বললাম, “তোমার হাতের কেক। বাড়ি গিয়ে খেয়ে যদি মরে যাই...”
সঙ্গে সঙ্গে ওর আঁখি জোড়া ঝাপসা হয়ে এলো। আমার ঠোঁটের ওপরে কোমল চাঁপার কলির মতন তর্জনী চেপে ধরে বললে ললনা, “একদম ওই সব অলুক্ষুনে কথা মুখে আনবে না তো।”
আমি ওর তর্জনীর ডগায় ছোট একটা চুমু খেতেই তিতলির সর্বাঙ্গ ভীষণ ভাবেই কেঁপে উঠল। আমার কিছুতেই ইচ্ছে করছিল না ওর ওই পদ্ম কুড়ির মতন কোমল হাতখানি ছাড়তে। আঙ্গুলের দুটো কড় পর্যন্ত নিজের লালাশিক্ত মুখের মধ্যে পুড়ে একটু চুষে ধরতেই আমার সর্বাঙ্গ বেয়ে একটা তীব্র আলোড়ন সৃষ্টি হল, সেই সাথে বুঝতে পারলাম যে তিতলির তীব্র আকর্ষণীয় লাস্যময়ী দেহকান্ড কঠিন হয়ে গেছে প্রেমের উত্তেজনায়।
মিহি কন্ঠে কেকারবে ককিয়ে ওঠে ললনা, “ছাড়বে তুমি...”
বহুকষ্টে আমি ওর তর্জনী ছেড়ে দিলাম। দুষ্টু মেয়েটা আমার চোখে চোখ রেখে নিজের ভিজে তর্জনী নিজের গোলাপি অধর মাঝে চেপে ধরে চুষে নিল আমার লালা। আমি ওকে বললাম, “এবারে?”
মিষ্টি হাসি দিয়ে বলল আমাকে, “এটা আমার আঙ্গুল, যা খুসি তাই করতে পারি।” তারপরে ব্যাগ থেকে আরো একটা বড় প্যাকেট বের করে আমার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল, “আমি জানি তুমি গল্পের বই পড়তে ভালোবাসো। এটা সমরেশ মজুমদারের সাতকাহন। আমি হয়ত হাত খরচের জন্য অনেক টাকা পাই বাড়ি থেকে। কিন্তু তাও আমি তোমার মতন ওত বড়লোক নই, আদি। আমি চাকরি করি না। গত বছর বাবার অফিস থেকে স্কলারশিপ পেয়েছিলাম, সেটাই জমিয়ে রেখেছিলাম একজনের জন্য, যে আমাকে প্রজাপতির মতন উড়তে শেখাবে।”
আমার বুকটা ভরে গেল। ভাবিনি এতটা ভালোবাসা আমার কপালে লেখা। আমি ওই বইটা হাতে নিয়ে ওকে জড়িয়ে ধরে বললাম, “তুমি সত্যি পাগল।”
আমার নিবিড় বাহুপাশে আবদ্ধ হয়ে গলতে শুরু করে দিল তিতলির নধর আকর্ষণীয় দেহপল্লব। কতক্ষন ওইভাবে দুইজনে পরস্পরকে জড়িয়ে ধরে আঁধারে দাঁড়িয়ে ছিলাম জানি না। ভীষণ ভালো লাগছিল, মনে হচ্ছিল আমার বুকের মধ্যে একটা ছোট পায়রাকে চেপে ধরে রেখেছি। সারাটা রাস্তা আমাকে আঁকরে ধরে চুপ করে বসেছিল তিতলি। ছাড়তে চাইলেও ছাড়তে ইচ্ছে করছিল না একদম। কাজিপাড়ার মোড়ে দাঁড়িয়ে ওর চোখ দেখে মনে হচ্ছিল প্রজাপতির ডানায় কেউ যেন আবার শিকল লাগিয়ে দেবে। ভীষণ কষ্ট হয়েছিল সেদিন ওকে ছেড়ে আসতে।
বাড়ি ফিরতে একটু রাত হয়ে গেল। রাতে খাওয়া দাওয়া সেরে বইটা খুলে বসলাম। প্রথম পাতার নিচে ছোট করে লেখা। “শুধু তার জন্য, যে আমাকে উড়তে শিখিয়েছে।” নতুন বইয়ে চুমু খেয়ে পড়তে শুরু করতে যাবো তখন ফোন বেজে উঠল। আমি নেচে উঠলাম, নিশ্চয় তিতলির ফোন।
ফোন উঠিয়ে খুশির উত্তেজনা নিয়ে উত্তর দিলাম, “কি হল কি করছ...”
কথাটা শেষ করার আগেই অন্যপাশ থেকে ভেসে এলো এক অচেনা নারীর কন্ঠস্বর, “হ্যাপি বার্থডে মিস্টার বুধাদিত্য ঘোষ।”
The following 18 users Like pinuram's post:18 users Like pinuram's post
• a-man, astroner, Avenger boy, Baban, Biddut Roy, bismal, bluestarsiddha, Bondhon Dhali, Buro_Modon, bustylover89, ddey333, khorshedhosen, kunalabc, Mr Fantastic, o...12, ppbhattadt, Roy234, sorbobhuk
Posts: 9
Threads: 0
Likes Received: 10 in 6 posts
Likes Given: 11
Joined: Oct 2019
Reputation:
0
Dada apnar hater lekhate jadu ache.
Posts: 13
Threads: 0
Likes Received: 26 in 13 posts
Likes Given: 9
Joined: Nov 2019
Reputation:
2
খুব সুন্দর। আদি কে জন্মদিনের শুভেচ্ছা। কিন্তু অন্যদিকে আর এক মহিলা কণ্ঠ! কাহানি মে টুইস্ট।
Posts: 116
Threads: 0
Likes Received: 133 in 76 posts
Likes Given: 91
Joined: May 2019
Reputation:
6
Kahani mein twist? Update er jonno onek onek dhonobadh Pinuram.
Ralph..
Posts: 774
Threads: 6
Likes Received: 1,664 in 829 posts
Likes Given: 2,218
Joined: Jan 2019
Reputation:
196
সুন্দর আপডেট।
সাতকাহন বইটা পড়েছি আমি অনেক দিন আগেই।
এই রাতে কি আবার সংযুক্তা ফোন দিলো আদিকে নাকি?
ব্যাপার টা কেমন ঘোলাটে লাগছে।
Posts: 18,225
Threads: 471
Likes Received: 66,019 in 27,781 posts
Likes Given: 23,869
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,275
কি অসহ্য সুন্দর পাগল করে দেওয়া বর্ণনা , প্রথম প্রেমের সেই উপলব্ধি আর আবেশ এর মাতোয়ারা গন্ধ ভেসে আসছে প্রত্যেকটা লাইন , প্রত্যেকটা শব্দের থেকে ....এক অনাবিল সংগীতের মূর্ছনা তে ডুবিয়ে দিয়ে গেলো মন আর প্রাণ ....!!
প্রজাপতিটা উড়ছে এখন সব ভয় কাটিয়ে , পেয়ে গেছে ও হাতে হাত ধরে ওড়ার সেই সাথী !!!
Posts: 1,247
Threads: 0
Likes Received: 977 in 707 posts
Likes Given: 1,681
Joined: Jul 2020
Reputation:
66
Posts: 187
Threads: 1
Likes Received: 342 in 169 posts
Likes Given: 1,987
Joined: Feb 2020
Reputation:
23
Nice update,+reps+++ likes
Posts: 6,161
Threads: 42
Likes Received: 12,438 in 4,169 posts
Likes Given: 5,340
Joined: Jul 2019
Reputation:
3,799
অসাধারণ. আজকের আপডেট পড়ে ওই গানটা মনে পড়ে গেলো - Md. আজিজ স্যার ও অনুরাধা ম্যামের...
এতো ভালোবাসা দিয়েছো তবু যে আরো পেতে মন হাত বাড়ায়
যত দিন যায় ততবারই আশা চাওয়া যে আমার সীমা ছাড়ায়...
বন্দিনী আমি... তোমার প্রেমেতে বন্দিনী ❤
Posts: 30
Threads: 0
Likes Received: 43 in 24 posts
Likes Given: 392
Joined: Aug 2020
Reputation:
3
Khub sundor update Dada,Notun kichur apekha te
Posts: 30
Threads: 0
Likes Received: 43 in 24 posts
Likes Given: 392
Joined: Aug 2020
Reputation:
3
(16-01-2021, 08:21 PM)Mr Fantastic Wrote: হেঁ হেঁ, এইডা একদম সত্য কইসেন !!
Dada,apnio khub sundor lakhen
Posts: 30
Threads: 0
Likes Received: 43 in 24 posts
Likes Given: 392
Joined: Aug 2020
Reputation:
3
(16-01-2021, 08:27 PM)pinuram Wrote: আমিও মাঝে মাঝে বসে থাকি, কখন আপনাদের দেখা পাওয়া যাবে! যখন দেখা পাওয়া যায় না তখন মনে হয়, কি আশায় বাধি খেলাঘর, বেদনার বালুচরে !!!!!!
Dada,Ami sob somoy apnar golpo pori kintu comments kora Hoi na,upostithi sudhu like ar rating ar vitor simabodho thake
Posts: 58
Threads: 0
Likes Received: 80 in 42 posts
Likes Given: 3
Joined: Dec 2018
Reputation:
7
অনেক দিন আশা হয়ে উঠেনি ব্যাস্ততার কারনে তাই এসে সব গ্রাসে গিলুম
সবে প্রেমের কুড়ি থেকে ফুলের আকার ধারণ করছে আর দুম করে সংযুক্তা না আনলেই নয়
শুধু ধন বড় হলে চলবে না মন বড় হতে হয় ।
Posts: 91
Threads: 1
Likes Received: 66 in 32 posts
Likes Given: 1
Joined: Jun 2019
Reputation:
7
দারুন লেখা, লেখা অনেকটা দূর যাবে মনে হচ্ছে
Posts: 6,542
Threads: 21
Likes Received: 7,066 in 3,717 posts
Likes Given: 12,105
Joined: Feb 2020
Reputation:
240
আহা , এটা কোনো লেখা নয়, এ হল লেখক পিনুরামের জাদুস্পর্শে সৃষ্ট মণিমুক্তো খচিত প্রানবন্ত বর্ণনা সব । চোখের সামনে ছবির মতো ভাসছে দুই কপোত-কপোতীর মধুর প্রেমালাপ। নিজের প্রেমকে যেন আয়নায় দেখছি, তিতলি একদম পুচ্চির মতো । যতদিন যাচ্ছে গল্পটারও প্রেমে পড়ে যাচ্ছি। :)
Posts: 6,542
Threads: 21
Likes Received: 7,066 in 3,717 posts
Likes Given: 12,105
Joined: Feb 2020
Reputation:
240
(18-01-2021, 06:43 PM)Bondhon Dhali Wrote: Dada,apnio khub sundor lakhen
এই অধমের লেখা সুন্দর জেনে খুশি হলাম, আমার থ্রেডে আপনার মন্তব্য পাবো আশা করি :shy:
Posts: 64
Threads: 0
Likes Received: 120 in 57 posts
Likes Given: 28
Joined: May 2019
Reputation:
5
Durgapur er meyeta phone koreche mone hocce?
Posts: 113
Threads: 0
Likes Received: 57 in 48 posts
Likes Given: 26
Joined: Dec 2018
Reputation:
8
Osadaron golpo.kono krittimota nei. Apnar lekha golpo ei jonnei valo lage
Posts: 133
Threads: 2
Likes Received: 198 in 98 posts
Likes Given: 617
Joined: Jun 2019
Reputation:
20
দাদা তিতলির এতো ভালোবাসা রাখবো কোথায় ?
অন্যপ্রান্তে নিশ্চই তোতাপাখি আছে।
নাহ এই ঠান্ডায় গল্প পড়ে মনে হচ্ছে "ফুল ফুটুক না ফুটুক আজ বসন্ত" নাকি "আজি বসন্ত জাগ্রত দ্বারে" ।
|