Thread Rating:
  • 100 Vote(s) - 3.34 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Romance সুপ্তির সন্ধানে
(13-01-2021, 08:27 PM)Mr Fantastic Wrote: " চির নিদ্রায় শায়িত আমার বিশ্ব সুন্দরী দিম্মা " - হরিদ্বারের অপরুপ অপার্থিব নিসর্গ শোভা এক লহমায় ফিকে হয়ে গেল এই শোচনীয় বেদনাদায়ক লাইনটা পড়ে  Sad  মনে পড়ে গেল নিজের দিম্মার কথা, কমবয়েসে নাকি ঠিক যেন যৌবনের সুপ্রিয়া দেবী ছিলেন  Namaskar  ভীষণ ভালোবাসতো আমাকে, দুষ্টুমিতে প্রশ্রয় দিত, মায়ের হাতে মার খাওয়া থেকে বাঁচাত, সাঁতার শিখিয়েছিল। আর কিছু ভালো লাগছে না। মনে হচ্ছে যতদিন যাচ্ছে আদি আর তিতলি ক্রমশ দূরে সরে যাচ্ছে একে অপরের থেকে, কিন্তু সেটা তো কাম্য নয় পিনুদা। 

দিম্মারা সব সময়ে নাতিদের বড় ভালোবাসেন! তোমার দিম্মার কথা মনে পরে গেল, এই মনে করিয়ে দেওয়াটাই হয়ত আমার কাজ! কতজনের কত কিছু মনে পরে যায়, কেউ বাল্যস্মৃতি খুঁজে পায়, কেউ বাল্যকালের প্রেম খুঁজে পায়! কে কি খুঁজে নেবে সেটা তার ব্যাপার এর আমি এক ফেরিওয়ালা! ওই যে বলেছিলাম এক সময়ে, ফেরি করতে বেড়িয়ে যাবো তোমাদের কাছে! রকমারির ঝুড়ি সাজিয়ে!!!!
[Image: 20210115-150253.jpg]
[+] 2 users Like pinuram's post
Like Reply
Do not mention / post any under age /rape content. If found Please use REPORT button.
(13-01-2021, 09:47 PM)Avenger boy Wrote: ভালো ছিল,,, কিন্তু মনটা একটু খারাপ হয়ে গেছে দিদিমার হঠাৎ মৃত্যুতে

তা বটে নিশ্চয়, দিম্মার জন্য আদির মন ভারাক্রান্ত সেই সাথে আমার মন ও বেশ ভারাক্রান্ত! দিম্মার সাথে বুধাদিত্যের "আদি" নামটা যেন হারিয়ে গেল !!!!!
[Image: 20210115-150253.jpg]
[+] 2 users Like pinuram's post
Like Reply
(13-01-2021, 11:02 PM)Rajdip123 Wrote: বাহহহহহ......... কি লিখেছ ইয়ার তুমি। কিনে নিলে আমাকে। এক একটা কথা বুকে এসে আঘাত করলো। এইটা আমারও কথা, কিন্তু এত সুন্দর করে তোমার মতন বুঝিয়ে লিখতে পারবো না Heart Heart Heart Heart Heart

লিখতে তুমিও পারো, তোমার গল্পের এক একটা পঙক্তি বুকের পাঁজরে এসে আঘাত হেনেছে! এরপরে নয় অঙ্গে আঘাত হানবে সেটা জানি Tongue  !!!!!!
[Image: 20210115-150253.jpg]
[+] 3 users Like pinuram's post
Like Reply
দাদা পরের আপডেট কখন দিবেন বলুন একটু। তাহলে বার বার ঢুকে দেখা লাগবে না banana
[+] 2 users Like babalula's post
Like Reply
(13-01-2021, 11:18 PM)babalula Wrote: দাদা পরের আপডেট কখন দিবেন বলুন একটু। তাহলে বার বার ঢুকে দেখা লাগবে না banana

সেটা তো ঠিক নেই, আসলে ভাই আমি পাগল ফেরিওয়ালা, নেশার ঘোরে লিখি! যখন সময় হয় তখন লিখি, যখন সময় হয় না তখন লিখি না! এমন ভাবে কি এর বলা যায় কবে দেব আপডেট! আমি যন্ত্র নই যে বোতাম টিপবেন লেখা বেড়িয়ে আসবে! তাই সত্যি কথা হচ্ছে কবে পরের আপডেট আসবে সেটা আমিও জানি না!!!!!
[Image: 20210115-150253.jpg]
[+] 3 users Like pinuram's post
Like Reply
গারে জখোন দোম নেই বারা প্রেম করতে কেন জাও, কাকা নেতা তো কোন বাল, তিতলি অন্ন কারো হয়েগেলে বুঝবে। প্রবাহমান ঘটোনায় গল্প স্তিতিসিল। এই পরিস্থিতিতে দেবায়নের মাত এক্তা বন্ধুর হেল্প দরকার।
[+] 3 users Like bluestarsiddha's post
Like Reply
কচি বয়েসের প্রেম দেখে ঝাত জলেজায়
[+] 2 users Like bluestarsiddha's post
Like Reply
(13-01-2021, 11:54 PM)bluestarsiddha Wrote: গারে জখোন দোম নেই বারা প্রেম করতে কেন জাও, কাকা নেতা তো কোন বাল,  তিতলি অন্ন কারো হয়েগেলে বুঝবে। প্রবাহমান ঘটোনায় গল্প স্তিতিসিল। এই পরিস্থিতিতে দেবায়নের মাত এক্তা বন্ধুর হেল্প দরকার।

(13-01-2021, 11:55 PM)bluestarsiddha Wrote: কচি বয়েসের প্রেম দেখে ঝাত জলেজায়

তোমার এই উক্তিও একজনকে পৌঁছে দিলাম! দেখি তিনি কি বলেন এখানে! হয়ত তিনি চুপ করেই থাকবেন, তাই সই! কারণ এখানে আদির বিশেষ কিছুই মুখ নেই বলার মতন !!!!!
[Image: 20210115-150253.jpg]
[+] 3 users Like pinuram's post
Like Reply
পর্ব দুই (#4-#10)

 
আকাশে পোজা তুলোর মতন মেঘের আনাগোনা শুরু হয়ে গেছে। দশমী শেষ, পুজো পুজো ভাবের রেশ একটু আকাশে বাতাসে তখন মাখামাখি। দুর্গাপুজো শেষ হলেই পুজো শেষ হয়ে যায় না। মানুষের মনে তখন রঙের ভিড়। অনেকের পরনে নতুন জামা কাপড়। একদিন অনির্বাণের সাথে ইন্সটিটিইউট গেলাম চতুর্থ সেমেস্টারের জন্য এডমিশান নিতে। দিম্মার কথা বলাতে একটু দুঃখ প্রকাশ করল। সাধারণত পুরো কোর্স অনেক কম লোকেই করে। বেশির ভাগ মানুষ প্রথম দুটো সেমেস্টার করে। আমাদের চতুর্থ সেমেস্টার, ছাত্র সংখ্যা আগের চেয়ে কম। এবারে ব্যাচ পেলাম, মঙ্গল বৃহস্পতি রাতের বেলায় আর শনিবার দুপুরের ব্যাচ। শনিবার অনেকের ছুটি থাকে তাই ওইদিন দুপুরের ব্যাচ। বেশ ভালোই হল। অন্তত শনিবার বাড়িতে বসে কাটাতে হবে না, একটা কাজে অন্তত ব্যাস্ত থাকা যাবে। কালীপুজোর পরে নতুন ক্লাস শুরু হবে। এডমিশান নেওয়ার পরে ইন্সটিটিউট থেকে বেড়িয়ে বাসস্টান্ডে দাঁড়িয়ে আমি আর অনির্বাণ সিগারেট ধরিয়ে গল্প করছিলাম।
 
অনির্বাণকে বেশ খোশ মেজাজে দেখে ওকে জিজ্ঞেস করলাম, “কি ব্যাপার বলতো তোর?”

অনির্বাণ যেন আমার প্রশ্নের জন্য অপেক্ষা করছিল, “এই পুজোতে একটা মাল পটিয়েছি মাইরি।”

আমি মুচকি হেসে বললাম, “বাঃ কাজের কাজ করেছিস। কি নাম, কোথায় থাকে?”

অনির্বাণ ওর গল্প শুরু করল, “আরে এই আমাদের পুজো মন্ডপে দেখা। মানে আমাদের পাড়ায় ওর মামাবাড়ি। পুজোতে মামাবাড়িতে বেড়াতে এসেছিল। কাবেরি বারুই। ওদের বাড়ি কসবায়। বেশ চুটিয়ে পুজোর কয়দিন একটু ঝারি মারলাম।”

জিজ্ঞেস করলাম, “কেমন দেখতে?” উফফ, অনির্বাণের কি হাসি। আমি তখন ওকে বললাম, “এবারে তুই ঘেঁটে ঘ হয়ে গেছিস?”

মাথা দোলাল অনির্বাণ, “তা একটু। গোলগাল দেখতে, বেশ সুন্দরী।”

জিজ্ঞেস করলাম, “তা কত দুর এগোলি?”

একটা লাজুক হাসি দিল অনির্বাণ, “ফোন নাম্বার নেওয়া হয়েছে এই আর কি। তবে ফোনে কি আর কথা বলা যায় নাকি। আসলে এক নম্বর গেট থেকে কসবা। শালা অনেকদুর পরে যাচ্ছে।”

আমি হেসে ফেললাম, “ফোন করে বাড়ির বাইরে কোথাও দেখা করলেই হয়।”

অনির্বাণ মাথা চুলকে বলল, “বাপের হোটেলে খাই। নিজে থেকে একটা কিছু না করা পর্যন্ত কিছু হচ্ছে না।”

সেটা ঠিক কথা বটে। অনির্বাণ এখন নিজে থেকে কিছুই করে না। তাও ওকে বললাম, “তাতে প্রেম করা ছেড়ে দিবি নাকি?”

মৃদু হাসল অনির্বাণ, “না ঠিক তা নয়।” একটু থেমে আমাকে জিজ্ঞেস করল অনির্বাণ, “তোর খবর?”

বুক ভরে শ্বাস নিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললাম, “ব্যাচ শেষ, দেখা সাক্ষাৎ শেষ। এবারে যে যার রাস্তায়, আর কি।”

অনির্বাণ আমার চোখের দিকে গভীর ভাবে তাকিয়ে বলল, “তুই সত্যি কি ওকে ভুলতে পারবি?”

জানি না, কি ভুলতে পারব আর কি পারব না। তবে ওই ট্যাক্সিতে বসে শেষ দেখা আর আমার হাতের ওপরে ওর অশ্রুকণা হয়ত কোনদিন ভুলতে পারব না। ম্লান হেসে ওকে বললাম, “সময়ের সাথে সাথে হয়ত ঝাপসা হয়ে আসবে।”

মাথা নাড়ল অনির্বাণ, “তাই?”

আমি ওর পিঠের ওপরে একটা থাবড় মেরে বললাম, “শালা তোর দোষ সব।”

অবাক হয়ে আমাকে জিজ্ঞেস করল, “আমি এর মধ্যে কি করলাম রে বোকাচোদা?”

আমি ওকে বললাম, “না তুই কিছুই করিস নি। শালা আমি একটা কাপুরুষ আর কিছু না।”

হেসে ফেলল অনির্বাণ, “দ্যাখ ভাই। তুই বন্ধু তাই সাবধান করে দিয়েছিলাম। এই আর কি। কারণ অমিত ব্যানারজির ব্যাপারে আমি জানি।”
 
আরো কিছুক্ষন গল্প করে সেদিন বাড়ির পথ ধরলাম। সেদিন আর মামাবাড়ি গেলাম না, নিজের বাড়িতে ফিরে এলাম। দিম্মা যদিও আমার বাড়িতে এসে বেশি দিন থাকতেন না তাও বাড়িটা ভীষণ খালি খালি লাগছিল। আসলে কেউ চলে যাওয়ার পরে মন ভীষণ খালি খালি লাগে। ভাগ্যিস যেদিন তিতলিকে ট্যাক্সিতে উঠিয়ে দিয়ে চলে এসেছিলাম সেদিন বাড়িতে ফিরিনি, না হলে এই বাড়িটা ভীষণ ভাবেই খাঁখাঁ লাগত আমার। এমনিতেই আমার বাড়ি ফাঁকা। বেশি আসবাব পত্র বলতে কিছুই নেই। আর দিম্মা চলে যাওয়াতে আরো বেশি খাঁখাঁ লাগছিল।
 
দিম্মার কথা মনে পড়তেই দিম্মার শেষ অনুরোধের কথা মনে পরে গেল। বাবাকে একটা ফোন করতে বলেছিলেন দিম্মা। আসার আগে মামিমাও আমাকে বলেছিলেন, দ্যাখ সবার বয়স হয়েছে, কার কপালে কখন ডাক আসে, কে কখন চলে যাবে বলা যায় না। পারলে একবার ফোন করিস। আমাকে ফোন নাম্বার দিয়েছিলেন মামিমা। রাতে খাওয়া পরে ফোন হাতে নিয়ে বেশ কিছুক্ষন বসে থাকলাম। মনের মধ্যে দ্বন্দযুদ্ধ, এতদিন পরে ফোন করে কি কথা বলব।
 
রাত তখন দশটা বাজে। ফোনের বোতাম টিপে কাগজে লেখা নাম্বার ডায়াল করলাম। বেশ কিছুক্ষন রিং বেজে যাওয়ার পরে ফোন রাখতে যাবো তখন অন্যপাশে একজন মহিলা ফোন উঠিয়ে উত্তর দিলেন, “হ্যালো।” পরিস্কার ইংরেজিতে জিজ্ঞেস করলেন সেই কন্ঠস্বর, “কে বলছেন?”

আমি ঠিক বুঝে পেলাম না। আসলে বাবার ছবি আমার চোখের সামনে কোনদিন ছিল না তাই সামনের মানুষ আমার কাছে সম্পূর্ণ অপরিচিত এক ব্যাক্তি। আমিও তার উত্তরে ইংরেজিতেই বললাম, “মিস্টার সুবির ঘোষের সাথে কথা বলতে চাই।”

আবার প্রশ্ন এলো সেই মহিলার, “আপনি কে বলছেন?”

হটাত আমার যে কি হল জানি না, আমিও উলটে অন্যপাশের মহিলাকে জিজ্ঞেস করে বসলাম, “আপনি কে বলছেন?”

সেই মহিলা আমার প্রশ্ন শুনে ঘাবড়ে না গিয়ে একটু রেগেই গেলেন, “ইজ দিস এ জোক। এত রাতে কি ইয়ার্কি মারার জন্য ফোন করেছেন?”

বুঝলাম, অন্যপাশের মহিলা এত সহজে নত হওয়ার নয় অথবা পিছিয়ে যাওয়ার মহিলা নয়। তিনি নিশ্চয় অনেক দৃঢ় ব্যাক্তি। বুক ভরে শ্বাস নিয়ে আমি নিজের পরিচয় দিয়ে বললাম, “আমি বুধাদিত্য ঘোষ বলছি। একবার কি মিস্টার সুবির ঘোষের সাথে কথা বলতে পারি?”
 
আমি চুপ করে গেলাম কথাটা বলে। কোন শব্দ নেই আমার মুখে, অন্যপাশে থেকেও কোন সাড়াশব্দ নেই। আমি একবার ভাবলাম, হয়ত ভুল নাম্বারে ফোন করে ফেলেছি। বুকের মধ্যে হাপর টানছে। কাকে কি বলেছি জানি না। কারণ অন্যপাশের মহিলার কণ্ঠস্বর শুনে বেশ সম্ভ্রান্ত মহিলা বলেই মনে হল। তার দৃঢ় কন্ঠস্বরে তার ইংরেজি বলার ধরনেই বোঝা যায় তার চরিত্র।
 
বেশ কিছু পরে শুনতে পেলাম বাবার গলা। মিস্টার সুবির ঘোষের কন্ঠস্বর কেমন শোনায় সেটা ভুলেই গেছিলাম। সতেরো বছর পরে শুনলাম কম্পিত এক বয়স্ক পুরুষের কন্ঠস্বর। “কেমন আছো?” অন্যপাশের পুরুষের গলা কাঁপছে বেশ।

আমি কিছুক্ষন চুপ করে থাকলাম, কি উত্তর দেব? কেমন আছি? আমি কেমন আছি এই মানুষটা জেনে কি করবে? তাও ভদ্রতার খাতিরে অচেনা মানুষের প্রশ্নের উত্তর দিলাম, “ভালো আছি।”

জিজ্ঞেস করলেন বাবা, “বাড়ির সবাই ভালো?”

মাথা দোলালাম, “হ্যাঁ বাড়ির সবাই মোটামুটি আছেন আর কি। এই নবমীর দিন দিম্মা চলে গেলেন।”

বাবা দুঃখ প্রকাশ করে বললেন, “হ্যাঁ, অনেক বয়স হয়েছিল শাশুড়িমায়ের।” কন্ঠস্বরে একটু দুঃখ, একটু কুন্ঠা।

আমি উত্তর দিলাম, “হ্যাঁ এই তিরাশির মতন হয়েছিলেন।”

বেশ কিছুক্ষন আমরা দুইপাশে চুপ। আমার কথা বলার কিছুই নেই। বাবার আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, “তুমি বাঙ্গুরে একা থাকো?”

উত্তর দিলাম, “হ্যাঁ একটা ছোট ফ্লাট।”

বাবার কন্ঠে একটু আক্ষেপ, “ওহ, আচ্ছা। তোমার অফিস কোথায়?”

আমি উত্তর দিলাম, “পার্ক স্ট্রিটে একটা ছোট কন্সট্রাক্সান কোম্পানিতে চাকরি করি।”

বাবা জিজ্ঞেস করলেন, “তোমার মামাতো দাদা...”

কথাটা আমি মাঝখানেই থামিয়ে দিয়ে হিমশীতল কন্ঠে উত্তর দিলাম, “হ্যাঁ, আমার দাদা ডিভিসিতে চাকরি করে। দুর্গাপুরে। বউদি ওইখানেই একটা বাচ্চাদের কলেজের টিচার।”
 
আমার হিমশীতল কন্ঠ শুনে একটু থেমে গেলেন অন্যপাশের কন্ঠস্বর। কথাবার্তা গুলো যেন রাবার ব্যান্ডের মতন টেনে টেনে লম্বা করে করা হচ্ছিল। যে মানুষটা আমার মায়ের মৃত্যু শয্যায় মাকে দেখতে আসেনি তার সাথে কোন রকমের সম্পর্ক রাখার মতন মানসিকতায় ছিলাম না। আমার বেশিক্ষন কথা বলতে একদম ইচ্ছে করছিল না অন্যপাশের সেই মানুষটার সাথে।
 
তাই শেষ পর্যন্ত সব বাধা কাটিয়ে হিমশীতল কন্ঠে অন্যপাশের সেই মানুষটাকে প্রশ্ন করলাম, “কি কারনে আমাকে এতদিন পরে মনে পড়ল? আসল কথাটা জানতে পারি কি?”

অন্যপাশে ধস নেমে গেছে বুঝতে পারলাম। ফোনের রিসিভার ধরে বাবা কেঁদে ফেললেন, “কিছু না, এমনি। তোমাকে অনেকদিন দেখিনি। কতদিন আর বাঁচব জানি না, তাই তোমাকে একবার খুব দেখতে ইচ্ছে করছিল।”

আমার চোখ জোড়া জ্বালা করে উঠল, সেই সাথে রাগে দুঃখে চিড়বিড় করে উঠল আমার সর্বাঙ্গ। বাবার কান্না উপেক্ষা করেই চিবিয়ে চিবিয়ে উত্তর দিলাম, “এই তো আমার গলা শুনেছ। জেনে গেছ আমি বেঁচে আছি। ব্যাস আর কিছু চাই কি?” অন্যপাশে কোন কথা নেই, শুধু মাত্র চাপা গোঙানির শব্দ ভেসে এলো। আমি শেষে বললাম, “আচ্ছা ফোন রাখছি তাহলে।”

বাবা ধরা কন্ঠে বললেন, “একবার ধানবাদ আসতে পারবে?”

আমি জিজ্ঞেস করলাম, “কেন?”

আমতা আমতা করে বললেন বাবা, “একবার দেখা করার ইচ্ছে ছিল। তা তোমার যদি সময় না হয় তাহলে তোমার ঠিকানা দাও। আমরা না হয় একদিন দেখা করে আসব তোমার সাথে।”

আমি ঠান্ডা গলায় বললাম, “দেখা করার খুব দরকার আছে কি?”
 
অন্যপাশে বাবা কি উত্তর দেবেন সেটা হয়ত ভেবে পেলেন না তাই বেশ কিছুক্ষন চুপ করেই ছিলেন। মামিমার কথা মনে পরে গেল, বয়স হয়েছে, হয়ত প্রায়শ্চিত্ত করার জন্যেই ফোন করেছেন। মামিমার কথা মনে পড়তেই মনে মনে হেসে ফেললাম “তো একটা ফোন করলেই কি আমার ছেলে পর হয়ে যাবে নাকি? আমি কি এমনি এমনি ছেড়ে দেব?”
 
আমি বাবাকে বললাম, “আচ্ছা,তোমার ঠিকানা দাও, দেখি কোনদিন সময় পেলে যাবো।”

আমাকে ধানবাদের বাড়ির ঠিকানা দিয়ে বাবা বললেন, “এসো একদিন। আমার ভালো লাগবে।”

আমিও ভদ্রতার খাতিরে একটু হেসে বললাম, “আচ্ছা।”
 
ফোন ছাড়ার পরে আমার সব রাগ গিয়ে পড়ল মামার ওপরে। কিন্তু মামার ওপরে তো আর রাগারাগি করতে পারি না। মা মারা যাওয়ার পরে আমার সব আদর আবদার দিম্মা আর মামিমা। তাই ফোন করে মামিমাকেই রাগারাগি করলাম। কি দরকার ছিল সুবির বাবুর সাথে কথা বলার? বলে দিতে পারো নি, তুমি জানো না আমি কোথায় থাকি। ওত প্রেম উথলে পড়ছিল তা তুমি নিজে কেন গেলে না ধানবাদে। মামিমাকে চুপ করে থাকতে দেখে আমার নিজেরই ভীষণ খারাপ লাগলো। কার রাগ কার দুঃখ কার ওপরে করছি।
 
মামিমার কাছে ক্ষমা চাইতেই মামিমা সস্নেহে বললেন, “যাক বাবা, তুই ফোন করেছিস সেটা জেনে ভালো লাগলো। মাও চেয়েছিলেন তুই একবার অন্তত তোর বাবার সাথে কথা বল।”
 
রিসিভার রেখে দিলাম। চোখ ফেটে জল বেড়িয়ে আসার যোগার। না, মামা মামীর ওপরে রাগের জন্য নয়। সব রাগ ওই কোন দূরে, এক অট্টালিকায় নরম বিছানায় শায়িত এক পুরুষের প্রতি, যার ঔরসে আমার জন্ম শুধু মাত্র আমার পদবী ছাড়া আর কিছুই অবদান নেই। রান্নাঘর তন্নতন্ন করে খুঁজে একটা অর্ধেক মদের বোতল পেলাম। বোতল খুলে ঢকঢক করে গিলে নিলাম মদ। জ্বলছে সারা শরীর। মাথায় আগুন জ্বলছে। বসার ঘরে সোফার ওপরে শুয়ে পড়লাম। বসার ঘরের দেয়ালে মায়ের একটা বেশ বড় ছবি টাঙ্গানো। হাসি হাসি মুখে রোজদিন মা আমাকে আশীর্বাদ করেন।
 
মায়ের তখন একুশ হবে, বাবার সাতাস মনে হয়। বয়সের বেশ ব্যাবধান ছিল আমার বাবা মায়ের মধ্যে। তিন বছর পরেই আমার জন্ম হয়, এই মধ্যমগ্রামের বাড়িতে। আমার দাদু তখন বেঁচে ছিলেন। চোখের সামনে পুরানো দিন গুলো এক এক করে ছবির মতন ভেসে উঠতে লাগলো। মনে আছে, তারপরে আমরা ধানবাদে চলে যাই। বিসিসিএল এর কোয়াটারে। ছোট দুই কামরার কোয়াটার, সামনে একটা বাগান ছিল। সেখানে একটা দোলনা ছিল। একটু একটু করে বড় হলাম সেখানে। মনে পরে, মাঝে মাঝেই বাবা মায়ের মধ্যে ঝগড়া হত কিছু কারনে। ছোট ছিলাম তাই বুঝতাম না। অনেক রাত মাকে দেখেছি চুপ করে খাবার বেড়ে বাবার জন্য অপেক্ষা করে থাকতে। দরজার ফাঁকা দিয়ে দেখতাম, বাবা মদে চুড় হয়ে বাড়ি ফিরতেন। একদিন কি হল, খুব ঝগড়া হল। বিকেলের ট্রেনে মা আমার হাত ধরে মামা বাড়ি চলে এলেন। আর ফিরে যাননি ধানবাদে। আমি ভর্তি হলাম নরেন্দ্রপুর রাম কৃষ্ণ মিশনে। ভর্তি করার সময়ে সেই এক বার মাত্র বাবা এসেছিলেন। তারপরে আর কোনদিন বাবার মুখ দেখিনি।
 
চোখ চলে যায় মায়ের ছবির দিকে। কাঁচের ফ্রেমের ভেতর থেকে মা আমার দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হাসছেন। চোখ দুটি ভারী মিষ্টি, অসীম মমতা মাখা। রোজ সকালে স্নান সেরে মায়ের ছবির নিচে ধুপ কাঠি জ্বালিয়ে দেই। মা আমাকে রোজ দিন আশীর্বাদ করেনবাবা একটু সাবধানে বাইক চালাসকারুর সাথে এক্সিডেন্ট হলে মাথা গরম করিস নামারপিট করিস না। আদি রে, আমি তোর পথ চেয়ে বসে থাকবো।


ক্লাস সিক্সে পড়ি তখন। শীতের ছুটির আর কয়েকদিন বাকি। একদিন কলেজ যাওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছে সবাই। হস্টেল ওয়ার্ডেন এসে আমাকে সেক্রেটারি মহারাজের ঘরে ডেকে নিয়ে গেল। সেখানে গিয়ে দেখি মামা বসে আছেন। মামাকে দেখে আমি খুব খুশি। ছুটির আগেই আমি ছুটি পেয়ে যাবো। আমি মামাকে দেখে আনন্দে আঠখানা। জিজ্ঞেস করলাম, কি এনেছো মামা। মামার চেহারা থমথমে। তখন বুঝতে পারিনি কি হচ্ছে। সেক্রেটারি মহারাজ আমাকে বললেন, বুধাদিত্য, তুমি বাড়ি যাও। তোমার মামা তোমাকে নিতে এসেছেন। আমাকে বাড়ি নিয়ে যেতে এসেছেন শুনে আমি খুব খুশি। নরেন্দ্রপুর থেকে মধ্যমগ্রাম পর্যন্ত মামা আমাকে বুকের কাছে জড়িয়ে ধরে বসেছিলেন। ক্ষনিকের জন্যেও আমাকে বুঝতে দেননি যে তার ছোট বোন মৃত্যু শয্যায় আর তার একমাত্র ভাগ্নের সেই শেষ হাসি।

বাড়িতে পা দিতেই পা আটকে যায় মাটিতে। মামাবাড়ি বিশাল উঠানে আমার স্নেহময়ি মা শুয়ে আছেন অন্তিম শয্যায়। আমি মামার হাত ছাড়িয়ে দৌড়ে গিয়ে মায়ের গলা জড়িয়ে ধরে চিৎকার করে উঠেছিলাম, মা একি হলো, তুমি যে বলেছিলে শীতের ছুটিতে আমাকে নিয়ে বেড়াতে যাবে? মা ওঠ মা, দেখ আমি এসে গেছি। চল না মা, ঘুরতে যাব। মায়ের কানে আমার সেই আওয়াজ পৌঁছায়নি। শেষ পর্যন্ত সবাই মিলে মাকে নিয়ে চলে গেল। মায়ের মুখাগ্নি করার সময়ে প্রতিজ্ঞা করেছিলাম, যদি কোনদিন বাবার সাথে দেখা হয় তাহলে একবার অন্তত জিজ্ঞেস করব। কেন এমন করলে? মায়ের চিতা জ্বলে উঠেছিল সেই এক শীতের রাতে। সেই সাথে জ্বলে পুড়ে ছাড়খার হয়ে গিয়েছিল আমার স্বপ্ন আমার মনের আনন্দ। দিম্মা আর মামিমা আমাকে বুকের মধ্যে আঁকরে না ধরলে আমিও এক অনাথ হয়েই বেঁচে থাকতাম। দিম্মা আমাকে ছাড়তে চায়নি। তবে আমার ভবিষ্যৎ আমার পড়াশুনার কথা ভেবেই মামা আমাকে নরেন্দ্রপুরে দিয়ে এসেছিলেন।
 
দিম্মার শেষ অনুরোধ রেখেই বাবাকে ফোন করেছিলাম, কিন্তু দেখা করতে যাওয়ার কথা ঠিক মানতে পারছিলাম না কিছুতেই।





============= পর্ব দুই সমাপ্ত =============
[Image: 20210115-150253.jpg]
Like Reply
খারাপ লাগলো পড়ে বিশ্ব সুন্দরী আর নেই। দেখি আদির জীবনে কি ঘটে সামনে
[+] 2 users Like sorbobhuk's post
Like Reply
ভাই নতুন আপডেট টা রাতে পড়বো
[+] 2 users Like sorbobhuk's post
Like Reply
(14-01-2021, 01:26 PM)sorbobhuk Wrote: খারাপ লাগলো পড়ে বিশ্ব সুন্দরী আর নেই। দেখি আদির জীবনে কি ঘটে সামনে

(14-01-2021, 01:27 PM)sorbobhuk Wrote: ভাই নতুন আপডেট টা রাতে পড়বো

thanks  নতুন আপডেট এর মতামতের জন্য অপেক্ষা করব !!!!!
Reps Added +1
[Image: 20210115-150253.jpg]
[+] 2 users Like pinuram's post
Like Reply
(13-01-2021, 11:02 PM)Rajdip123 Wrote: বাহহহহহ......... কি লিখেছ ইয়ার তুমি। কিনে নিলে আমাকে। এক একটা কথা বুকে এসে আঘাত করলো। এইটা আমারও কথা, কিন্তু এত সুন্দর করে তোমার মতন বুঝিয়ে লিখতে পারবো না Heart Heart Heart Heart Heart

ধন্যবাদ Rajdip123❤
[+] 3 users Like Baban's post
Like Reply
(13-01-2021, 11:54 PM)bluestarsiddha Wrote: গারে জখোন দোম নেই বারা প্রেম করতে কেন জাও, কাকা নেতা তো কোন বাল,  তিতলি অন্ন কারো হয়েগেলে বুঝবে। প্রবাহমান ঘটোনায় গল্প স্তিতিসিল। এই পরিস্থিতিতে দেবায়নের মাত এক্তা বন্ধুর হেল্প দরকার।

আপনি আপনার মত দিয়েছেন.... নিশ্চই দেবেন. আমি আপনাকে শুধু একটুকুই জিজ্ঞেস করতে চাই..... অন্ধকারে কিছু গুন্ডা একটি ছেলেকে চেপে ধরে আছে... একজন গুন্ডা ছুরি হাতে এগিয়ে আসছে ছেলেটির দিকে. ওই মুহূর্তে ছেলেটি কি গাইবে? ( বাবা! ওই সময়েও গান? এসব শালা  আমার  মাথাতেই আসতে পারে  Big Grin  ) তাও বলুন কি গান?

Aa dekhey zara... Kisme kitna hai dum? নাকি
বাঁচাও!! কে আছো? মরেছি যে প্রেম করে
[+] 3 users Like Baban's post
Like Reply
প্রতিটা আপডেট অসাধারণ. Obviously কে লিখছে দেখতে হবে তো ❤ পিতা পুত্রের কথোপকথন বেশ আকর্ষক. যেদিন মুখোমুখি হবে সেদিন যে কি হবে সেটাই দেখার.
[Image: 20210112-204412.jpg]
[+] 2 users Like Baban's post
Like Reply
মনে অভিমান কষ্ট থাকলেও বাবার সাথে দেখা করা দরকার আদির।
হয়তো কিছু বলতে চান তার বাবা। যেটা ফোনে বলা সম্ভব না।
পরের পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।
বিদ্যুৎ রায় চটি গল্প কালেকশন লিমিটেড 
http://biddutroy.family.blog
[+] 2 users Like Biddut Roy's post
Like Reply
চমৎকার...... এক একেক টা শব্দমালা হৃদয়ে স্পর্শ করে যায়।
[+] 2 users Like five idot's post
Like Reply
এইরকম ডিফেক্টিভ বাবা আমি কোনদিন দেখিনি।
সত্যি আদি অনেক দুর্ভাগা ছেলে।
[+] 2 users Like TumiJeAmar's post
Like Reply
(13-01-2021, 04:08 AM)Troya A1 Wrote: পিনুদার নতুন গল্প

"চন্দ্রকান্তা"

COMING SOON

এই খবরটা কি স্টার আনন্দে দেখেছিলেন? আপনার পোস্টটা দেখে মনটা খুব খারাপ হয়ে গেলো, জানেন? বুকের ভেতরে একটা ছুঁচের মতো ব্যথা চিনচিন করে উঠল... 
banghead
[+] 2 users Like bourses's post
Like Reply
[quote dateline='1610609411']
 
দিম্মার কথা মনে পড়তেই দিম্মার শেষ অনুরোধের কথা মনে পরে গেল। বাবাকে একটা ফোন করতে বলেছিলেন দিম্মা। আসার আগে মামিমাও আমাকে বলেছিলেন, দ্যাখ সবার বয়স হয়েছে, কার কপালে কখন ডাক আসে, কে কখন চলে যাবে বলা যায় না। পারলে একবার ফোন করিস। আমাকে ফোন নাম্বার দিয়েছিলেন মামিমা। রাতে খাওয়া পরে ফোন হাতে নিয়ে বেশ কিছুক্ষন বসে থাকলাম। মনের মধ্যে দ্বন্দযুদ্ধ, এতদিন পরে ফোন করে কি কথা বলব।
 
রাত তখন দশটা বাজে। ফোনের বোতাম টিপে কাগজে লেখা নাম্বার ডায়াল করলাম। বেশ কিছুক্ষন রিং বেজে যাওয়ার পরে ফোন রাখতে যাবো তখন অন্যপাশে একজন মহিলা ফোন উঠিয়ে উত্তর দিলেন, “হ্যালো।” পরিস্কার ইংরেজিতে জিজ্ঞেস করলেন সেই কন্ঠস্বর, “কে বলছেন?”

আমি ঠিক বুঝে পেলাম না। আসলে বাবার ছবি আমার চোখের সামনে কোনদিন ছিল না তাই সামনের মানুষ আমার কাছে সম্পূর্ণ অপরিচিত এক ব্যাক্তি। আমিও তার উত্তরে ইংরেজিতেই বললাম, “মিস্টার সুবির ঘোষের সাথে কথা বলতে চাই।”

আবার প্রশ্ন এলো সেই মহিলার, “আপনি কে বলছেন?”

হটাত আমার যে কি হল জানি না, আমিও উলটে অন্যপাশের মহিলাকে জিজ্ঞেস করে বসলাম, “আপনি কে বলছেন?”

সেই মহিলা আমার প্রশ্ন শুনে ঘাবড়ে না গিয়ে একটু রেগেই গেলেন, “ইজ দিস এ জোক। এত রাতে কি ইয়ার্কি মারার জন্য ফোন করেছেন?”

বুঝলাম, অন্যপাশের মহিলা এত সহজে নত হওয়ার নয় অথবা পিছিয়ে যাওয়ার মহিলা নয়। তিনি নিশ্চয় অনেক দৃঢ় ব্যাক্তি। বুক ভরে শ্বাস নিয়ে আমি নিজের পরিচয় দিয়ে বললাম, “আমি বুধাদিত্য ঘোষ বলছি। একবার কি মিস্টার সুবির ঘোষের সাথে কথা বলতে পারি?”
 
আমি চুপ করে গেলাম কথাটা বলে। কোন শব্দ নেই আমার মুখে, অন্যপাশে থেকেও কোন সাড়াশব্দ নেই। আমি একবার ভাবলাম, হয়ত ভুল নাম্বারে ফোন করে ফেলেছি। বুকের মধ্যে হাপর টানছে। কাকে কি বলেছি জানি না। কারণ অন্যপাশের মহিলার কণ্ঠস্বর শুনে বেশ সম্ভ্রান্ত মহিলা বলেই মনে হল। তার দৃঢ় কন্ঠস্বরে তার ইংরেজি বলার ধরনেই বোঝা যায় তার চরিত্র।
 
বেশ কিছু পরে শুনতে পেলাম বাবার গলা। মিস্টার সুবির ঘোষের কন্ঠস্বর কেমন শোনায় সেটা ভুলেই গেছিলাম। সতেরো বছর পরে শুনলাম কম্পিত এক বয়স্ক পুরুষের কন্ঠস্বর। “কেমন আছো?” অন্যপাশের পুরুষের গলা কাঁপছে বেশ।

আমি কিছুক্ষন চুপ করে থাকলাম, কি উত্তর দেব? কেমন আছি? আমি কেমন আছি এই মানুষটা জেনে কি করবে? তাও ভদ্রতার খাতিরে অচেনা মানুষের প্রশ্নের উত্তর দিলাম, “ভালো আছি।”

জিজ্ঞেস করলেন বাবা, “বাড়ির সবাই ভালো?”

মাথা দোলালাম, “হ্যাঁ বাড়ির সবাই মোটামুটি আছেন আর কি। এই নবমীর দিন দিম্মা চলে গেলেন।”

বাবা দুঃখ প্রকাশ করে বললেন, “হ্যাঁ, অনেক বয়স হয়েছিল শাশুড়িমায়ের।” কন্ঠস্বরে একটু দুঃখ, একটু কুন্ঠা।

আমি উত্তর দিলাম, “হ্যাঁ এই তিরাশির মতন হয়েছিলেন।”

বেশ কিছুক্ষন আমরা দুইপাশে চুপ। আমার কথা বলার কিছুই নেই। বাবার আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, “তুমি বাঙ্গুরে একা থাকো?”

উত্তর দিলাম, “হ্যাঁ একটা ছোট ফ্লাট।”

বাবার কন্ঠে একটু আক্ষেপ, “ওহ, আচ্ছা। তোমার অফিস কোথায়?”

আমি উত্তর দিলাম, “পার্ক স্ট্রিটে একটা ছোট কন্সট্রাক্সান কোম্পানিতে চাকরি করি।”

বাবা জিজ্ঞেস করলেন, “তোমার মামাতো দাদা...”

কথাটা আমি মাঝখানেই থামিয়ে দিয়ে হিমশীতল কন্ঠে উত্তর দিলাম, “হ্যাঁ, আমার দাদা ডিভিসিতে চাকরি করে। দুর্গাপুরে। বউদি ওইখানেই একটা বাচ্চাদের কলেজের টিচার।”
 
আমার হিমশীতল কন্ঠ শুনে একটু থেমে গেলেন অন্যপাশের কন্ঠস্বর। কথাবার্তা গুলো যেন রাবার ব্যান্ডের মতন টেনে টেনে লম্বা করে করা হচ্ছিল। যে মানুষটা আমার মায়ের মৃত্যু শয্যায় মাকে দেখতে আসেনি তার সাথে কোন রকমের সম্পর্ক রাখার মতন মানসিকতায় ছিলাম না। আমার বেশিক্ষন কথা বলতে একদম ইচ্ছে করছিল না অন্যপাশের সেই মানুষটার সাথে।
 
তাই শেষ পর্যন্ত সব বাধা কাটিয়ে হিমশীতল কন্ঠে অন্যপাশের সেই মানুষটাকে প্রশ্ন করলাম, “কি কারনে আমাকে এতদিন পরে মনে পড়ল? আসল কথাটা জানতে পারি কি?”

অন্যপাশে ধস নেমে গেছে বুঝতে পারলাম। ফোনের রিসিভার ধরে বাবা কেঁদে ফেললেন, “কিছু না, এমনি। তোমাকে অনেকদিন দেখিনি। কতদিন আর বাঁচব জানি না, তাই তোমাকে একবার খুব দেখতে ইচ্ছে করছিল।”

আমার চোখ জোড়া জ্বালা করে উঠল, সেই সাথে রাগে দুঃখে চিড়বিড় করে উঠল আমার সর্বাঙ্গ। বাবার কান্না উপেক্ষা করেই চিবিয়ে চিবিয়ে উত্তর দিলাম, “এই তো আমার গলা শুনেছ। জেনে গেছ আমি বেঁচে আছি। ব্যাস আর কিছু চাই কি?” অন্যপাশে কোন কথা নেই, শুধু মাত্র চাপা গোঙানির শব্দ ভেসে এলো। আমি শেষে বললাম, “আচ্ছা ফোন রাখছি তাহলে।”

বাবা ধরা কন্ঠে বললেন, “একবার ধানবাদ আসতে পারবে?”

আমি জিজ্ঞেস করলাম, “কেন?”

আমতা আমতা করে বললেন বাবা, “একবার দেখা করার ইচ্ছে ছিল। তা তোমার যদি সময় না হয় তাহলে তোমার ঠিকানা দাও। আমরা না হয় একদিন দেখা করে আসব তোমার সাথে।”

আমি ঠান্ডা গলায় বললাম, “দেখা করার খুব দরকার আছে কি?”
 
অন্যপাশে বাবা কি উত্তর দেবেন সেটা হয়ত ভেবে পেলেন না তাই বেশ কিছুক্ষন চুপ করেই ছিলেন। মামিমার কথা মনে পরে গেল, বয়স হয়েছে, হয়ত প্রায়শ্চিত্ত করার জন্যেই ফোন করেছেন। মামিমার কথা মনে পড়তেই মনে মনে হেসে ফেললাম “তো একটা ফোন করলেই কি আমার ছেলে পর হয়ে যাবে নাকি? আমি কি এমনি এমনি ছেড়ে দেব?”
 
আমি বাবাকে বললাম, “আচ্ছা,তোমার ঠিকানা দাও, দেখি কোনদিন সময় পেলে যাবো।”

আমাকে ধানবাদের বাড়ির ঠিকানা দিয়ে বাবা বললেন, “এসো একদিন। আমার ভালো লাগবে।”

আমিও ভদ্রতার খাতিরে একটু হেসে বললাম, “আচ্ছা।”
 
ফোন ছাড়ার পরে আমার সব রাগ গিয়ে পড়ল মামার ওপরে। কিন্তু মামার ওপরে তো আর রাগারাগি করতে পারি না। মা মারা যাওয়ার পরে আমার সব আদর আবদার দিম্মা আর মামিমা। তাই ফোন করে মামিমাকেই রাগারাগি করলাম। কি দরকার ছিল সুবির বাবুর সাথে কথা বলার? বলে দিতে পারো নি, তুমি জানো না আমি কোথায় থাকি। ওত প্রেম উথলে পড়ছিল তা তুমি নিজে কেন গেলে না ধানবাদে। মামিমাকে চুপ করে থাকতে দেখে আমার নিজেরই ভীষণ খারাপ লাগলো। কার রাগ কার দুঃখ কার ওপরে করছি।
 
মামিমার কাছে ক্ষমা চাইতেই মামিমা সস্নেহে বললেন, “যাক বাবা, তুই ফোন করেছিস সেটা জেনে ভালো লাগলো। মাও চেয়েছিলেন তুই একবার অন্তত তোর বাবার সাথে কথা বল।”
 
রিসিভার রেখে দিলাম। চোখ ফেটে জল বেড়িয়ে আসার যোগার। না, মামা মামীর ওপরে রাগের জন্য নয়। সব রাগ ওই কোন দূরে, এক অট্টালিকায় নরম বিছানায় শায়িত এক পুরুষের প্রতি, যার ঔরসে আমার জন্ম শুধু মাত্র আমার পদবী ছাড়া আর কিছুই অবদান নেই। রান্নাঘর তন্নতন্ন করে খুঁজে একটা অর্ধেক মদের বোতল পেলাম। বোতল খুলে ঢকঢক করে গিলে নিলাম মদ। জ্বলছে সারা শরীর। মাথায় আগুন জ্বলছে। বসার ঘরে সোফার ওপরে শুয়ে পড়লাম। বসার ঘরের দেয়ালে মায়ের একটা বেশ বড় ছবি টাঙ্গানো। হাসি হাসি মুখে রোজদিন মা আমাকে আশীর্বাদ করেন।
 
মায়ের তখন একুশ হবে, বাবার সাতাস মনে হয়। বয়সের বেশ ব্যাবধান ছিল আমার বাবা মায়ের মধ্যে। তিন বছর পরেই আমার জন্ম হয়, এই মধ্যমগ্রামের বাড়িতে। আমার দাদু তখন বেঁচে ছিলেন। চোখের সামনে পুরানো দিন গুলো এক এক করে ছবির মতন ভেসে উঠতে লাগলো। মনে আছে, তারপরে আমরা ধানবাদে চলে যাই। বিসিসিএল এর কোয়াটারে। ছোট দুই কামরার কোয়াটার, সামনে একটা বাগান ছিল। সেখানে একটা দোলনা ছিল। একটু একটু করে বড় হলাম সেখানে। মনে পরে, মাঝে মাঝেই বাবা মায়ের মধ্যে ঝগড়া হত কিছু কারনে। ছোট ছিলাম তাই বুঝতাম না। অনেক রাত মাকে দেখেছি চুপ করে খাবার বেড়ে বাবার জন্য অপেক্ষা করে থাকতে। দরজার ফাঁকা দিয়ে দেখতাম, বাবা মদে চুড় হয়ে বাড়ি ফিরতেন। একদিন কি হল, খুব ঝগড়া হল। বিকেলের ট্রেনে মা আমার হাত ধরে মামা বাড়ি চলে এলেন। আর ফিরে যাননি ধানবাদে। আমি ভর্তি হলাম নরেন্দ্রপুর রাম কৃষ্ণ মিশনে। ভর্তি করার সময়ে সেই এক বার মাত্র বাবা এসেছিলেন। তারপরে আর কোনদিন বাবার মুখ দেখিনি।
 
চোখ চলে যায় মায়ের ছবির দিকে। কাঁচের ফ্রেমের ভেতর থেকে মা আমার দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হাসছেন। চোখ দুটি ভারী মিষ্টি, অসীম মমতা মাখা। রোজ সকালে স্নান সেরে মায়ের ছবির নিচে ধুপ কাঠি জ্বালিয়ে দেই। মা আমাকে রোজ দিন আশীর্বাদ করেনবাবা একটু সাবধানে বাইক চালাসকারুর সাথে এক্সিডেন্ট হলে মাথা গরম করিস নামারপিট করিস না। আদি রে, আমি তোর পথ চেয়ে বসে থাকবো।


ক্লাস সিক্সে পড়ি তখন। শীতের ছুটির আর কয়েকদিন বাকি। একদিন কলেজ যাওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছে সবাই। হস্টেল ওয়ার্ডেন এসে আমাকে সেক্রেটারি মহারাজের ঘরে ডেকে নিয়ে গেল। সেখানে গিয়ে দেখি মামা বসে আছেন। মামাকে দেখে আমি খুব খুশি। ছুটির আগেই আমি ছুটি পেয়ে যাবো। আমি মামাকে দেখে আনন্দে আঠখানা। জিজ্ঞেস করলাম, কি এনেছো মামা। মামার চেহারা থমথমে। তখন বুঝতে পারিনি কি হচ্ছে। সেক্রেটারি মহারাজ আমাকে বললেন, বুধাদিত্য, তুমি বাড়ি যাও। তোমার মামা তোমাকে নিতে এসেছেন। আমাকে বাড়ি নিয়ে যেতে এসেছেন শুনে আমি খুব খুশি। নরেন্দ্রপুর থেকে মধ্যমগ্রাম পর্যন্ত মামা আমাকে বুকের কাছে জড়িয়ে ধরে বসেছিলেন। ক্ষনিকের জন্যেও আমাকে বুঝতে দেননি যে তার ছোট বোন মৃত্যু শয্যায় আর তার একমাত্র ভাগ্নের সেই শেষ হাসি।

বাড়িতে পা দিতেই পা আটকে যায় মাটিতে। মামাবাড়ি বিশাল উঠানে আমার স্নেহময়ি মা শুয়ে আছেন অন্তিম শয্যায়। আমি মামার হাত ছাড়িয়ে দৌড়ে গিয়ে মায়ের গলা জড়িয়ে ধরে চিৎকার করে উঠেছিলাম, মা একি হলো, তুমি যে বলেছিলে শীতের ছুটিতে আমাকে নিয়ে বেড়াতে যাবে? মা ওঠ মা, দেখ আমি এসে গেছি। চল না মা, ঘুরতে যাব। মায়ের কানে আমার সেই আওয়াজ পৌঁছায়নি। শেষ পর্যন্ত সবাই মিলে মাকে নিয়ে চলে গেল। মায়ের মুখাগ্নি করার সময়ে প্রতিজ্ঞা করেছিলাম, যদি কোনদিন বাবার সাথে দেখা হয় তাহলে একবার অন্তত জিজ্ঞেস করব। কেন এমন করলে? মায়ের চিতা জ্বলে উঠেছিল সেই এক শীতের রাতে। সেই সাথে জ্বলে পুড়ে ছাড়খার হয়ে গিয়েছিল আমার স্বপ্ন আমার মনের আনন্দ। দিম্মা আর মামিমা আমাকে বুকের মধ্যে আঁকরে না ধরলে আমিও এক অনাথ হয়েই বেঁচে থাকতাম। দিম্মা আমাকে ছাড়তে চায়নি। তবে আমার ভবিষ্যৎ আমার পড়াশুনার কথা ভেবেই মামা আমাকে নরেন্দ্রপুরে দিয়ে এসেছিলেন।
 
দিম্মার শেষ অনুরোধ রেখেই বাবাকে ফোন করেছিলাম, কিন্তু দেখা করতে যাওয়ার কথা ঠিক মানতে পারছিলাম না কিছুতেই।





============= পর্ব দুই সমাপ্ত =============

[/quote]
এই অংশটা আগেও পরেছি কোন একটা গল্পে ! সেই গল্পের নায়ক দিল্লি গেছিলো ! যতদূর মনে পড়ে সেখানেও নায়কের বাবার নাম সুবির ঘোষ ছিল ! তিনিও তার স্ত্রী কে ছেরে ধানবাদে সেটেল হয়েছিলেন ! সেখানেও মামা মামি ছিল আর ছিল মামাতো বোন ! ঠিক মনে পড়ছে না কার লেখা ! তোমার ছিল নাকি কামদেভ দাদার গল্প ! আসলে বুড়ো হয়ে গেছি তো তাই সব ভুলে যাচ্ছি ! 
[+] 4 users Like ddey333's post
Like Reply




Users browsing this thread: 86 Guest(s)