Thread Rating:
  • 100 Vote(s) - 3.34 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Romance সুপ্তির সন্ধানে
(09-01-2021, 07:56 PM)dada_of_india Wrote: এখনও কিন্তু করে যাচ্ছি গো ! 

(09-01-2021, 07:58 PM)dada_of_india Wrote: পিনুদা নিজেই অর্ধনারিশ্বর ! তাই তো পুরুষের সাথে সাথে নারিদের চরিত্রও বেশ ভালো ভাবেই ফুটিয়ে তোলে !  

গল্প পড়, কমেন্ট কেন পড়ছ ??? Tongue Tongue Tongue
[Image: 20210115-150253.jpg]
[+] 1 user Likes pinuram's post
Like Reply
Do not mention / post any under age /rape content. If found Please use REPORT button.
(09-01-2021, 08:24 PM)ddey333 Wrote: কি করবো ,কেউ একবার বলে দিক ....
এতো ব্যাথা ,জানিনা ...

(09-01-2021, 08:47 PM)ddey333 Wrote: তিতলির সন্ধানে ...
কারো জীবন শেষ হয়ে যায়,  ....
কেউ বা চুপ করে মাথা নিচু করে বলে ... ভালোবেসে এতো কি ভুল করেছিলাম ...

গল্পটা যতটা আমার ততটা তোমার, তাই তোমাকে বেশি কিছু আমার বলার নেই! আপ্রান চেষ্টা করব... (জানি না কে কোথায় কতটা সফল আর কতটা বিফল) !!!!!!
Reps Added +1
[Image: 20210115-150253.jpg]
[+] 2 users Like pinuram's post
Like Reply
(09-01-2021, 09:50 PM)Jupiter10 Wrote: হ্যাঁ এডিট করে লিখতে পারেন। তবে আমার মনে হয় সম্পাদনার কাজ লেখক কে না করায় উচিৎ। কারন লেখক তার কলম দিয়ে কল্পনার উঁচু শিখরে উঠলেও এক জন সম্পাদক তার পায়ে দড়ি বেঁধে তাকে নামিয়ে দেয়। Forbidden Love আর Dawn at midnight গল্প দুটো যেহেতু ইংলিশ এ সেহেতু ওর কাটছাঁট একটু কম হবে কারন খ্যাতনামা লেখক রাও fuck jerk dick এই সবের উল্লেখ করে থাকেন নিজের গল্পে। আর আমার মনে গল্পের প্রয়জনে যদি সেগুল বলা হয়ে থাকে তাহলে কাটছাঁটের প্রস্ন আসছে না। আপনি আপনার বাংলা এবং ইংলিশ as it is. নিয়ে পাবলিশার্স এর কাছে নিয়ে যেতে পারেন। ওনারাই নিজেদের সম্পাদক দিয়ে নিজের মতো করে সাজিয়ে নেবেন। তবে আপনার গল্প লেখার দক্ষতা কোন প্রশ্ন রাখে না। যে কোন পাবলিশার সোজা সুজি আপনাকে গল্প গুলকে ফিরিয়ে দেবেন না। JK Rowling কেও একসময় নিজের লেখা নিয়ে পাবলিশারের দরজায় ঘুরতে হয়েছিল। কিন্তু এখন দেখুন। সেরা সাহিত্যিকের মধ্যে নাম করা একজন। সেহুতু হৃদয় থেকে আপনার এই ক্ষুদ্র অনুগামী ও চায় পিনুরাম ও বাংলা সাহিত্তের ইতিহাসে স্মরণীয়  থাকুক।



আদি আর তিতলিকে আপনার অফ লাইন পাঠিকার কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে উনিই মন্তব্য করবেন যা করার। Namaskar Heart

ভাবতেও ভালো লাগে, যে কেউ আমার থ্রেডে শুধু মাত্র কমেন্ট পড়তেই আসে, গল্প পড়তে নয়! আসলে এতদিন যত বন্ধুদের দেখেছি তারা সবাই আমার গল্প পড়তে আসে আর আমার সাথে গল্প করতে আসে! আপনি মনে হয় প্রথম কেউ যে কমেন্ট পড়তে আসে, গল্প নয় thanks  ! তবে হ্যাঁ, আপনার কথা মাথায় রাখব দেখা যাক সুদুর ভবিষ্যতে কি করা যায় !!!!!!
[Image: 20210115-150253.jpg]
[+] 3 users Like pinuram's post
Like Reply
(09-01-2021, 10:26 PM)pinuram Wrote: গল্পটা যতটা আমার ততটা তোমার, তাই তোমাকে বেশি কিছু আমার বলার নেই! আপ্রান চেষ্টা করব... (জানি না কে কোথায় কতটা সফল আর কতটা বিফল) !!!!!!
Reps Added +1

গল্প অনেকেই  লেখে , কেউ পড়ে কেউ হয়তো না ..
কিন্তু কিছু গল্প কাউকে লিখতেই হয় শুধু এটাই জেনে যে আর কেউ না হোক একজন তো পড়বেই পড়বে

আর শুধু পড়বে না , জীবনের শেষ শক্তিগুলো দিয়ে আঁকড়ে ধরে ....শেষ হতে হতে সে হারিয়ে যাবে ...
না , সস্তা ধন্যবাদ দিয়ে তোমায় ছোট করবো না পিনুদা , পারলে আমায় তোমার ওই বস্তায় বন্ধ করে পেটাও .....
[+] 2 users Like ddey333's post
Like Reply
(09-01-2021, 12:42 PM)pinuram Wrote: আদির সাথে তিতলির দেখা আর নাও তো হতে পারে! তাই না, ঠিক যেমন রিশুর সাথে চন্দ্রিকার হয়েছিল! রিশু আর চন্দ্রিকা মিলতে পারেনি ! তবে হ্যাঁ, গল্পটা পুরোটা পড়তে হবে !!!!! 
সকলি আপনার ইচ্ছে!!!দেখি কি হয়। পরের পর্ব পড়ার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি।  Namaskar
[+] 2 users Like Tiyasha Sen's post
Like Reply
(09-01-2021, 10:49 PM)ddey333 Wrote: গল্প অনেকেই  লেখে , কেউ পড়ে কেউ হয়তো না ..
কিন্তু কিছু গল্প কাউকে লিখতেই হয় শুধু এটাই জেনে যে আর কেউ না হোক একজন তো পড়বেই পড়বে

আর শুধু পড়বে না , জীবনের শেষ শক্তিগুলো দিয়ে আঁকড়ে ধরে ....শেষ হতে হতে সে হারিয়ে যাবে ...
না , সস্তা ধন্যবাদ দিয়ে তোমায় ছোট করবো না পিনুদা , পারলে আমায় তোমার ওই বস্তায় বন্ধ করে পেটাও .....

Namaskar  না না তোমায় পেটাব কেন? তোমার জন্য এই গল্প লিখতে বসেছি না হলে কি আর এই তিতলি এখানে বিরাজিত হত !!!!!!
[Image: 20210115-150253.jpg]
[+] 1 user Likes pinuram's post
Like Reply
(10-01-2021, 01:29 AM)Tiyasha Sen Wrote: সকলি আপনার ইচ্ছে!!!দেখি কি হয়। পরের পর্ব পড়ার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি।  Namaskar

পরের পর্ব তাড়াতাড়ি আসবে !!!!!! Heart
[Image: 20210115-150253.jpg]
[+] 1 user Likes pinuram's post
Like Reply
পর্ব দুই (#1-#7)

 
মিনিবাস ধরে বেড়িয়ে পড়লাম। রাত বেশ হয়েছিল তাই বাসে বিশেষ ভিড় ছিল না, বসার জায়গা পেয়ে গেছিলাম। সিটে বসার পরে মনে হল যেন আমি কত বড় এক ভীতু কাপুরুষ ছেলে। প্রথমত মুখ ফুটে নিজের মনের কথা বলতেই পারলাম না, দ্বিতীয়ত যেটা প্রথমের চেয়েও বেশি গুরুতর, সেটা হচ্ছে মার খাওয়ার ভয়ে পিছিয়ে আসা। ভীতি আমলুক নয়, কি করব পঙ্গু হয়ে কারুর গলগ্রহ হয়ে বেঁচে থাকাটাই মুশকিল। হাওড়া পৌঁছে একটা পিসিও থেকে প্রবালদাকে ফোন করে দিলাম। লাস্ট বর্ধমান লোকালে বর্ধমান পৌঁছে তারপরে অন্ডাল লোকালে দুর্গাপুর পৌঁছে যাবো। দুর্গাপুর পৌঁছাতে পৌঁছাতে রাত বারোটা হয়েই যাবে। সারাটা রাস্তা শুধু চোখের সামনে তিতলির তিরতির করে কম্পিত নরম গোলাপি ঠোঁট জোড়া ভেসে উঠছিল, কানের মধ্যে প্রতিধ্বনিত হচ্ছিল, “আদি আমি তোমায়...” একটু দাঁড়িয়ে গেলে হয়ত ওর কথাটা শুনতে পেতাম। কিন্তু ট্যাক্সি ছেড়ে দিয়েছিল।
 
দিনের শেষের লোকাল ট্রেন, যাত্রী বলতে কেউ নেই ট্রেনে, শুধু কয়েকজন হকার, কয়েকজন দোকানি হয়ত ব্যাবসাদার। দিন আনি দিন খাই এরা মানুষ, ওদের দেখে নিজেকেও অনেকটা তাই বলেই মনে হল। পরনে খুব সাধারন পোশাক আশাক, এমন কিছু বড় অফিসে চাকরি করি না, এমন কিছু বিশাল কোন মাইনেও পাইনা। হুহু করে রাতের অন্ধকার চিড়ে ধেয়ে চলেছে লাস্ট বর্ধমান লোকাল। বর্ধমান পৌঁছে, লাস্ট অন্ডাল লোকাল ধরলাম। বর্ধমান লোকালে যাও কয়েকজন মানুষ ছিল, অন্ডাল লোকালে তাও নেই। একটা বেঞ্চিতে একজন কেউ শুয়ে রয়েছে তাছাড়া কামরা সম্পূর্ণ শুন্য। ছেঁড়া চাদরের মধ্যে থেকে মুখ বের করে সেই অপরিচিত বৃদ্ধ মানুষ মাথা বের করে আমার দিকে তাকাল। মাথার চুল অনেকটাই সাদা হয়ে গেছে। গাল ভর্তি দাড়ি। চাদরটা শতছিন্ন, অনেক জায়গায় ভিন্ন ভিন্ন রঙের কাপড়ের তালি তাপ্পি দেওয়া। ওই মানুষের কাঁথার মতন আমার মনের অবস্থা, শতছিন্ন বহু প্রশ্নে বিদ্ধ। আমি কি সত্যি তিতলিকে ভালোবাসি? যদি ভালোবাসি তাহলে এতদিন, প্রায় এক মাসের মতন হয়ে গেল, কেন কেউ মুখ ফুটে কেউ কাউকে বলতে পারলাম না? আমি কেন কাপুরুষ? বিদায় বেলায় ট্যাক্সিতে উঠে তিতলি আমাকে ঠিক কি বলতে চেয়েছিল? আমি গেটের কাছে দাঁড়িয়েছিলাম, এক হাতে রড ধরে অন্য হাতে সিগারেট নিয়ে। দুইপাশে অন্ধকার ঘেরা ধানের খেত, দূরে দিগন্তে কোথাও কোন গ্রামের কোন বাড়িতে ছোট ছোট আলো জ্বলছে। আকাশে মেঘ, তাও তার ফাঁক দিয়ে মাঝে মাঝে এক ফালি চাঁদ উঁকি মারছে। চাঁদের ওই বাঁকা হাসি যেন আমাকে ভীষণ ভাবেই তিরস্কার করছে। দুর্গাপুর পৌঁছাতে রাত প্রায় বারোটা বেজে গেল। প্রবালদা আমার জন্য বাইক নিয়ে স্টেসানের বাইরে অপেক্ষা করছিল।
 
বাইকে উঠে আমি প্রবালদাকে জিজ্ঞেস করলাম, “কি রে কি ব্যাপার বলতো?”

প্রবালদা হেসে উত্তর দিল, “চল চল বাড়ি চল তারপরে বলছি।”
 
হাসিটা ভালো লাগলো না সত্যি বলছি, এমনকি প্রবালদার গলাটাও কৌতুকপূর্ণ ছিল। কি হতে চলেছে বলা মুশকিল। রেল স্টেশান থেকে ডিভিসি কলোনি বেশ দুর। ওর কোয়াটারে পৌঁছাতে পৌঁছাতে বেশ রাত হয়ে গেল। তোতাপাখি আমাদের জন্য অপেক্ষা করছিল। বাইকের আওয়াজ পেয়ে দরজা খুলে দাঁড়িয়ে আমাকে দেখে এক গাল হাসি দিল তোতাপাখি।
 
প্রবালদা আমার হাত থেকে ব্যাগ নিয়ে বলল, “যা তাড়াতাড়ি হাত মুখ ধুয়ে নে, তারপরে খেয়ে দেয়ে নে। অনেক রাত হয়েছে।”

তোতাপাখির হাসি দেখে আমার ভীষণ সন্দেহ হল। শেষ পর্যন্ত থাকতে না পেরে আমি তোতাপাখিকে জিজ্ঞেস করলাম, “তোমরা বর বউ মিলে কি প্লান করছ বলতো?”

তোতাপাখি আমার হাত ধরে মুচকি হেসে বলল, “তুমি না সত্যি। আজকে তোমার জন্য সর্ষে ইলিশ বানিয়েছি। যাও যাও আগে হাত মুখ ধুয়ে নাও তারপরে খেতে খেতে গল্প করা যাবে।”
 
কোয়াটারটা বেশি বড় না হলেও, তোতাপাখির হাতের ছোঁয়ায় বেশ সুন্দর উঠেছে। হাত মুখ ধুয়ে খেতে বসে গল্প করতে করতে সব প্রশ্নের সমাধান হল। যা বোঝা গেল তাতে হোঁৎকা আর তার সুন্দরী স্ত্রী, তোতাপাখি মিলে চক্রান্ত করে আমার ছোট ফ্লাটে আরো একজনের প্রবেশ ঘটাতে চাইছে। ভীষণ দুরাভিসন্ধি। প্রবালদার অফিসের ম্যানেজার, বুদ্ধদেব সাহা, বেশ বড় পোস্টে চাকরি করেন। তার কন্যে সংযুক্তা সাহা, সেই বছরেই দুর্গাপুর ওমেন’স কলেজ থেকে পল সায়েন্স নিয়ে পাশ করেছে। বুদ্ধদেব বাবুর বড় ছেলে, সেও ডিভিসিতে চাকরি করে। দক্ষিণ পল্লীতে বিশাল দোতলা বাড়ি। বেশ বড়লোক মানুষ, দুর্গাপুরে বুদ্ধদেব বাবুর বেশ নামডাক আছে। বেশ কয়েকমাস ধরেই নাকি তিনি তাঁর কন্যের জন্য ছেলে খুঁজছিলেন। আমার পরিচয় ইত্যাদি পেয়ে বিশেষ করে আমার পড়াশুনা কলেজ কলেজের ব্যাপারে জানার পরে তাঁরা নাকি একবার আমাকে দেখতে চায়। মামা মামী নাকি গত গ্রীষ্মের সময়ে এসে সংযুক্তাকে দেখে গেছেন। মামীর ওপরে বেশ রাগ হল আমার, একবার বললেন না আমাকে। প্রবালদা অবশ্য তাঁদের কে আমার ব্যাপারে জানিয়ে দিয়েছে, আমার বাড়ির কথা ইত্যাদি। তাতে নাকি তাঁদের কোন আপত্তি নেই। খাওয়ার পরে একটা সাদা খামের ভেতর থেকে একটা ফটো বার করে দেখাল তোতাপাখি। ছবিতে সবাইকে ডানা কাটা পরীর মতন দেখায়। ছবিটা হাতে নিয়ে বেশ কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকলাম। মেয়েটা দেখতে মন্দ নয়।
 
আমি শোয়ার আগে একটা সিগারেট ধরানোর জন্য বাইরের বারান্দায় এলাম। আকাশের ছড়ান ছিটানো মেঘের মধ্যে দিয়ে মাঝে মাঝে ওই এক ফালি চাঁদ আমাকে দেখে তিরস্কারের হাসি হেসে চলেছে। বাঁ হাতের দুই আঙ্গুলের মাঝে সিগারেট ধরা, ডান হাত মুঠো করে উল্টো পিঠ দেখলাম আমি, যেখানে এই কয়েক ঘন্টা আগে এক সুন্দরী প্রজাপতির এক ফোঁটা চোখের জল পড়েছিল। বুকের পাঁজর গুলো এক এক করে জ্বলছে। সিগারেট শেষ করে ঘরে ঢুকে গেলাম। পাশের ছোট শোয়ার ঘরে আমার বিছানা পাতা। ঘুম আসছে না। জানালা খোলা, বেশ হাওয়া দিচ্ছে, আকাশের মেঘের মধ্যে চাঁদ লুকোচুরি খেলা করছে। আমি চাদর গায়ে বিছানায় শুধু এপাশ ওপাশ করে যাচ্ছি। মাঝে মাঝে ভীষণ অস্বস্তি হচ্ছে বুকের মধ্যে। চোখ বন্ধ করলেই কানের মধ্যে ভেসে আসে তিতলির করুন কন্ঠ, “আদি আমি তোমায়...”। বাঁচার লড়াই, কিন্তু কার সাথে সেই বাঁচার লড়াই সেটাই যে জানি না আমি। ভোর রাতের দিকে চোখ বুজে এলো, শুতে যাওয়ার আগে ঠিক করলাম, হোঁৎকাকে বলে এই দুর্গাপুরে ডিভিসিতে চাকরি নিয়ে নেব। যদি সংযুক্তা চায় তাহলে ওকেই বিয়ে করব।
 
ঘুম ভাঙল তোতাপাখির মিষ্টি ডাকে, “এই গেছো, ওঠো।” চোখ মেলে দেখলাম তোতাপাখি বিছানার পাশে দাঁড়িয়ে হাতে এক কাপ চা নিয়ে। মিষ্টি হেসে আমাকে জিজ্ঞেস করল, “রাতে ঘুম হয়েছে?”

আমি ওকে ইয়ার্কি মেরে বললাম, “তুমি আর হোঁৎকা রাতে যা শুরু করছিলে তাতে কি আর ঘুম হয় নাকি?”
 
ভীষণ লজ্জা পেয়ে গেল মিষ্টি তোতাপাখি। কান গাল লাল হয়ে গেল ওর। পদ্ম কুড়ির মতন চোখের পাতা ভারী হয়ে নেমে এলো তোতাপাখির বুকের ওপরে। মিষ্টি একটা “ধ্যাত” বলে বিছানার ওপরে চায়ের কাপ রেখে লজ্জিত ত্রস্ত পায়ে পালিয়ে গেল আমার সামনে থেকে। তোতাপাখির লজ্জা দেখে মনে মনে হেসে ফেললাম আমি।
 
সকালের জল খাবারের সময়ে প্রবালদা জানিয়ে দিল যে দুপুরে বুদ্ধদেব বাবুর বাড়িতে আমাদের খাওয়ার নেমতন্ন সেই সাথে সংযুক্তাকে দেখাও হয়ে যাবে। একটা গাড়ি বলা ছিল। স্নান সেরে তৈরি হয়ে নিলাম আমরা তিনজনে। জীবনে প্রথম বার বিয়ের জন্য মেয়ে দেখতে যাচ্ছি। অবশ্য হোঁৎকার বিয়ের আগে একবার আমি আর হোঁৎকা তোতাপাখির জাগুলিয়ার বাড়িতে গেছিলাম। সেটা অবশ্য হোঁৎকার বিয়ে ছিল। এটা আমার জন্য দেখতে যাওয়া। বুকের ভেতরটা একটু ধুরুক ধুরুক করছে। চাকরির ইন্টারভিউতে এত ভয় পাইনি যতটা রাস্তায় গাড়িতে যেতে যেতে ভয় করছিল। তোতাপাখি বারে বারে আমাকে সহজ হতে বলছিল। সে কথা কি আর কানে যায় নাকি আমার।
 
ডিভিসি কোয়াটার থেকে দক্ষিণ পল্লীতে বুদ্ধদেব বাবুর বাড়ি পৌঁছাতে প্রায় আধা ঘন্টা লেগে গেল। আমাদের গাড়ির আওয়াজ পেয়েই আমাদের অভ্যর্থনা জানানোর জন্য বেশ কয়েকজন বেড়িয়ে এল বাড়ি থেকে। দোতলা বাড়িটা বেশ বড়, সামনে একটা বড় ফুলের বাগান। বাড়ির একপাশে একটা গ্যারেজ তার মধ্যে একটা স্টিল রঙের ওপেল এস্ট্রা দাঁড়িয়ে। গাড়ি বাড়ি দেখে বেশ বড়লোক বলেই মনে হল। বসার ঘরে ঢুকে বসলাম, বেশ বড়সর বসার ঘর। প্রবালদা আমাকে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিল। বুদ্ধদেব বাবু, তার পাশে তার শ্যালক, সমরেশ, বুদ্ধদেব বাবুর ভাই, বেশ কয়েকজন মহিলা, বসার ঘরে রিতিমত লোকজনে ভর্তি। আমি চুপচাপ বসে এদিকে ওদিকে ঘাড় ঘুরিয়ে জরিপ করে নিচ্ছি। আমার বউদি, তোতাপাখি মুখে ফুলঝুরি ছোটে সুতরাং বাড়ির মহিলাদের সাথে মিশে যেতে বেশি সময় নিল না। আমার দিকে ছোঁড়া প্রশ্ন গুলোর বেশির ভাগ উত্তর প্রবালদা দিয়ে দিচ্ছিল। বেশ কিছুক্ষন পরে আমাকে অথই জলের মধ্যে ফেলে দিয়ে তোতাপাখি বাড়ির মধ্যে মহিলাদের সাথে কোথায় যেন চলে গেল।
 
বুদ্ধদেব বাবু আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, “তোমার কোম্পানি কেমন চলছে?”

আমি উত্তর দিলাম, “ছোট প্রাইভেট কোম্পানি মোটামুটি চলছে। আমি সময় মতন মাইনে পাই তাই এর বেশি খবর রাখি না।”

মৃদু হাসলেন বুদ্ধদেব বাবু, “প্রবাল বলছিল তুমি যদি একবার ডিভিসিতে এপ্লাই কর।”

মাথা দোলালাম আমি, “হ্যাঁ দেখি। এখন তো একটা কম্পিউটার কোর্স করছি। এটা শেষ হওয়ার পরেই চাকরি চেঞ্জ করার কথা ভাবা যাবে।”

বুদ্ধদেব বাবু একটু ভেবে বললেন, “না না ঠিক আছে। তা এই কম্পিউটার কোর্স কতদিন আর বাকি আছে?”

আমি উত্তর দিলাম, “আরো একটা সেমেস্টার বাকি আছে। মানে শেষ হতে আরো মাস সাত আট বলতে পারেন।”

মৃদু হেসে বললেন, “তাই হোক। তুমি তাহলে তোমার কম্পিউটার কোর্স শেষ করে একবার ডিভিসিতে পরীক্ষা দিও। প্রবালতো আছেই আমিও না হয় দেখব।”
 
মাথা দোলালাম আমি, বাঙালি মেয়ের বাবা, জামাই সরকারি চাকুরেরত খুঁজবে এটাই ধর্ম।
 
বুদ্ধদেব বাবুর পাশে বসা একজন ভদ্রলোক আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, “বাঙ্গুরে তোমার নিজের ফ্লাট? একাই থাকো?”

মাথা দোলালাম আমি, “হ্যাঁ আমার নিজের ফ্লাট, একাই থাকি।”

সেই ভদ্রলোক বললেন, “একা থাকো, তাহলে তো এখানে চাকরি হলে অসুবিধে কিছু নেই।”
 
ওদের কথাবার্তা শুনে মনে হল আমাকে একা পেয়ে এদের আরও বেশি করেই পছন্দ হয়ে গেছে। সাথে এটাও বুঝতে অসুবিধে হল না যেহেতু আমার কেউ নেই তাই মেয়ের বাড়ির কাছেই টেনে আনলে এদের সুবিধে হবে। নিজের আত্মসন্মানে একটা ঘা লাগলো। আমি প্রবালদার দিকে আড় চোখে একবার তাকালাম। প্রবালদা বুঝে গেল আমার অস্বস্তি, তাও চোখের ইশারায় আমাকে একটু চুপ করে থাকতে বলল। প্রবালদার বস তাই সন্মানের সাথেই প্রশ্নের উত্তর দিতে হচ্ছিল।
 
বেশ কিছুপরে সংযুক্তাকে সঙ্গে নিয়ে আমার বউদি বসার ঘরে প্রবেশ করল। ছবিতে দেখা মেয়েটার সাথে মেলাতে চেষ্টা করলাম, একটু অসুবিধে হল। একটা কচি কলাপাতা রঙের শাড়ির পরতে পরতে ঢাকা উদ্ভিন্ন যৌবনা এক তন্বী ললনা। সজিয়ে গুছিয়ে একদম পটে আঁকা ছবির মতন বসার ঘরে আনা হয়েছে। বেশ মিষ্টি দেখতে তবে দেখে মনে হল অনেক কচি, অনেক কম বয়স। গায়ের রঙ ফর্সা। আমার অবচেতন মন তিতলিকে সংযুক্তার পাশে দাঁড় করিয়ে একবার মানসপটে দুইজনের তুলনা করতে শুরু করে দিল। তিতলি অনন্যা, না সাজলেও অতীব সুন্দরী, যদিও সংযুক্তাকে সেই হিসাবে দেখিনি তাও মনে হল তিতলির লাবন্যের কাছে পাশে ম্লান হয়ে যাবে। সেই টিয়াপাখির মতন নাক নেই, পদ্মপাতার মতন চোখের পাতা নয়। সব থেকে যেটা বাধ সাধল, তিতলির মতন সংযুক্তার ঠোঁটের ওপরে ডান পাশে কোন তিল নেই। মনে মনে হেসে ফেললাম আমি, এই তো গতকাল রাতে শুয়ে শুয়ে ভাবছিলাম যে যা হয় হোক সংযুক্তাকে বিয়ে করে এই দুর্গাপুরে না হয় চলে আসব। কিন্তু সংযুক্তাকে সামনে নিয়ে আসার পরে বুকের ভেতরে দ্বন্দযুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে। হাত মুঠো করে নিলাম আমি, চোখের দৃষ্টি সেই জায়গায় নিবদ্ধ, যেখানে গতকাল রাতে তিতলির এক ফোঁটা অশ্রুকণা আমাকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করে দিয়েছিল। কর্ণ কুহরে প্রতিধ্বনিত হল ওর শেষ আকুতি, “আদি আমি তোমায়...” আমি আর কিছুই ভাবতে পারছি না। দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে আসছে ধিরে ধিরে।
 
প্রবালদা আমার কাঁধে আলতো ধাক্কা মেরে ফিরিয়ে আনল ওদের মধ্যে। চোখের ইশারায় আমাকে জিজ্ঞেস করল, কি রে কি হয়েছে? মাথা নাড়লাম আমি, মৃদু হেসে বললাম, না রে কিছু না। তোতাপাখি আগে থেকেই সব জেনে বসে আছে, সেই আমার সাথে সংযুক্তার পরিচয় করিয়ে দিল। পাতলা ঠোঁটে মৃদু হাসি মাখিয়ে লাজুক চোখে মাঝে মাঝে আমার দিকে তাকায় সংযুক্তা। সেই হাসির প্রতি আমি নিঃস্পৃহ, আমার হাসি ওই মেঘের আড়ালে হারিয়ে গেছে। আমার দৃষ্টি সামনের সোফায় বসা সংযুক্তাকে ছাড়িয়ে কাজিপাড়ার সেই গলির মুখে চলে গেছে। রাস্তার নিয়নের আধো আলো অন্ধকারে দাঁড়িয়ে তিতলি, মৃদু মাথা দুলিয়ে একটু হেসে গলির বাঁকে হারিয়ে গেল।
 
এমন সময়ে তোতাপাখি আমার পাশে এসে আমার কানে কানে জিজ্ঞেস করল, “তোমার কি হয়েছে?”

অনেকক্ষণ পরে কানের পাশে তোতাপাখির গলার আওয়াজ পেয়ে আমি সম্বিত ফিরে পেলাম। আমি মৃদু হেসে মাথা নাড়িয়ে বললাম, “কিছু না।”

তোতাপাখি আমাকে বলল, “কিছু কথা বল? এমন চুপচাপ কেন বসে আছো?”

আমি মৃদু হেসে ওকে উত্তর দিলাম, “সব তো তুমি জেনে বসে আছো। আমার কি আর জিজ্ঞাস থাকবে।”

তোতাপাখি ভুরু কুঁচকে আমাকে বলল, “তাও, কিছু তো জিজ্ঞেস করবে, নাকি।” আমার হাতের ওপরে হাত রেখে বলল, “লজ্জা পাচ্ছো নাকি?”

আমি মুচকি হেসে জানালাম, “তা একটু। আসলে কি জিজ্ঞেস করব সেটাই ভেবে পাচ্ছি না।”

তোতাপাখি মৃদু হেসে আমার কানে কানে ফিসফিস করে বলল, “এই মেয়ে কিন্তু আমার মতন ভীষণ কথা বলে।”

আমি হেসে দিলাম ওর কথা শুনে, “তাহলেই হয়েছে। বাড়িতে ঝগড়া লাগলো বলে।”

তোতাপাখি সবার চোখের আড়ালেই আমার বাজুতে একটা চিমটি কেটে ফিসফিস করে বলল, “তুমি না যাতা।” একটু থেমে সংযুক্তার দিকে তাকিয়ে আমাকে বলল, “একা ছাড়তে হবে নাকি তোমাদের?”

আমার ইচ্ছে ছিল না কারুর সাথে কোন কথা বলার। তাও ভদ্রতার খাতিরে বললাম, “তাই সই। দেখি কত কথা বলে।”

মুচকি হসি দিল তোতাপাখি। গভীর ভাবে আমার চোখের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল, “পছন্দ হয়েছে নাকি?”

উত্তর দিতে পারলাম না। আমার চোখের ভাষা খোলা বইয়ের মতন পড়ে ফেলতেই নিরুত্তর হয়ে গেল তোতাপাখি। ফিসফিস করে বলল আমাকে, “দয়া করে, ভদ্রতার খাতিরেই না হয় কিছু জিজ্ঞেস কর। বাকিটা আমি আর তোমার দাদা সামলে নেব।”
 
তোতাপাখির কথা শুনে কি বলব কিছু ভেবে পেলাম না। তাও ভদ্রতার খাতিরেই সংযুক্তাকে ওর কলেজের ব্যাপারে কিছু জিজ্ঞেস করলাম। একদম মুখ বন্ধ করে বসে থাকাটা ভীষণ দৃষ্টি কটু লাগছিল সেটা আমিও বুঝতে পারছিলাম। দুপুরের খাওয়ার আয়োজন করাই ছিল, কিন্তু তোতাপাখি আমাকে বাঁচিয়ে দিল। শরীর খারাপের অজুহাত দেখিয়ে মিষ্টি মুখ করেই আমরা বুদ্ধদেব বাবুর বাড়ি থেকে বেড়িয়ে পড়লাম। বিদায় নেওয়ার আগে বুদ্ধদেব বাবু বারবার আমাকে দুর্গাপুরের চাকরির ব্যাপারে জোর করলেন। আমিও ভদ্রতার খাতিরে শান্ত গরুর মতন মাথা নাড়িয়ে জানিয়ে দিলাম, কম্পিউটার কোর্স শেষ হলেই এখানে ডিভিসিতে এপ্লাই করে দেব।
 
গাড়িতে চাপতেই প্রবালদা আমাকে চেপে ধরল, “দেখ বুধো, বুদ্ধদেব স্যার আমার বস। আমার একটু মান সন্মান রাখিস।”

প্রবালদাকে থামিয়ে দিয়ে আমাকে প্রশ্ন করল তোতাপাখি, “মেয়ের নাম কি? কি ঘটনা?”

প্রবালদা হা করে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে। আমি তোতাপাখিকে উত্তর দিলাম, “জানি না গো আমার কি হবে।”

তোতাপাখি আমাকে জিজ্ঞেস করল, “অফিসের কেউ নাকি ওই ইন্সটিটিউটের?”

আমি উত্তর দিলাম, “আমার ব্যাচের একজন। নাম অনুস্কা ব্যানারজি, ডাক নাম তিতলি।”
 
ধিরে ধিরে এক এক করে সব কিছুই তোতাপাখি আর হোঁৎকাকে খুলে বললাম। তিতলির স্বভাব, তিতলির পরিচয় ওর বাবার কথা, ওর কাকার কথা, ওরা বড়লোক সেই কথা আর সব শেষে গতকাল রাতে ট্যাক্সির কথা। আমার হাতের ওপরে এক ফোঁটা অশ্রুকণা এখন যেন লেগে রয়েছে। সব শুনে হোঁৎকা একটু চিন্তায় পরে গেল। একদিকে ওর অফিসের বস বুদ্ধদেব বাবু, অন্যপাশে আমি নিজেই জানি না কি করব। আমার আর দুর্গাপুরে থাকতে ভালো লাগছিল না। আমি ওদের জানিয়ে দিলাম যে বিকেলের ব্লাক ডায়মন্ডে বাড়ি ফিরে যাবো। বাড়ি ফিরে যাবো শুনে তোতাপাখির ভীষণ মন খারাপ হয়ে গেল। এমনিতেই আমার সব কথা শোনার পরে কিছুই ভেবে পাচ্ছিল না তোতাপাখি। কোয়াটারে ফিরে দুপুরের খাওয়া সেরে একটু বিশ্রাম নিয়ে বেড়িয়ে পড়লাম। বাড়ি ফিরতে হবে। আমার ঘুম ট্যাক্সি করে জল ভরা চোখে চলে গেছে। নিজেই জানিনা কি করব।
 
বিদায়ের শেষ বেলায় তোতাপাখি আমাকে জিজ্ঞেস করল, “কি করবে তাহলে?”

আমি শুন্য দৃষ্টি নিয়ে তোতাপাখির দিকে দেখে নিঃস্পৃহ ভাবেই উত্তর দিলাম, “জানি না গো। মধ্যবিত্ত মানুষ। ভয় ডর আমার রন্ধ্রে রন্ধ্রে। আমার সামান্য চাকরি, আমার পেছনে দাঁড়ানোর মতন কেউই নেই। না আছে আমার লোকবল না আছে আমার অর্থ বল। এই সেমেস্টার শেষ হতে আর তিন সপ্তাহের মতন বাকি। এই কয়দিন ওকে এড়িয়ে চলব। তারপরে আর কি, দেখা হবে না কথা হবে না। আশা করি একদিন ভুলেও যাবে, আমিও ভুলে যাবো। তখন না হয় নতুন করে আবার শুরু করা যাবে। তিন সপ্তাহের ব্যাপার।” শেষের দিকে একটা ম্লান হাসি হাসলাম।
 
বেশিক্ষন আর দাঁড়াইনি। হোঁৎকা আমাকে বাইকে করে স্টেসানে পৌঁছে দিল। ট্রেনে উঠে বারে বারে তোতাপাখি আর হোঁৎকার মুখ মনে পড়ছিল। কারুর গলগ্রহ হয়ে থাকতে পারব না তবে অন্য কাউকে এই পোড়া বুকে স্থান দিতেও পারব না। ভালোবাসা কি সেটা বোঝার আগেই আমি জ্বলে পুড়ে ছারখার।
[Image: 20210115-150253.jpg]
Like Reply
ছুটি আর কাটানো হলো না।
সেই ভালোবাসার টানেই ছুটে চলে যাচ্ছে আবার।
বাহ।
কিন্তু তিতলিকে কি এড়িয়ে চলতে পারবে এই তিন সাপ্তাহ।
দেখা যাক কি হয় সামনে।
পরের আপডেটের অপেক্ষায় রইলাম।
বিদ্যুৎ রায় চটি গল্প কালেকশন লিমিটেড 
http://biddutroy.family.blog
[+] 2 users Like Biddut Roy's post
Like Reply
(10-01-2021, 02:06 AM)pinuram Wrote:  আমার দৃষ্টি সামনের সোফায় বসা সংযুক্তাকে ছাড়িয়ে কাজিপাড়ার সেই গলির মুখে চলে গেছে। রাস্তার নিয়নের আধো আলো অন্ধকারে দাঁড়িয়ে তিতলি, মৃদু মাথা দুলিয়ে একটু হেসে গলির বাঁকে হারিয়ে গেল। 
এই মুহুর্তটা কল্পনা করেই কেমন যেন লাগছে ❤
ভালোবাসা কি সেটা কি এখনো বোঝেনি আদি?
ভালোবাসা তো দেখছি ক্রিস্টোফার নোলানের ছবির মতো জটিল. তবে সেও কিন্তু বলেছে - dont try to understand it, just feel it❤
[+] 3 users Like Baban's post
Like Reply
দুর্দান্ত আপডেট দাদা,,,, ভালোবাসা অবিরাম....
[+] 2 users Like Avenger boy's post
Like Reply
Moddho bitter sei chira chorito astitto sankat. Adir jaigai nijeke feel korchi. Na hoito prem bhalobashi noi. Ei manosik dotanai. Dekha jak adir nouka kon dike jai.
[+] 2 users Like himadri_hdas's post
Like Reply
আদি উচ্চশিক্ষিত অথচ এটা জানে না , "Cowards die many times before their deaths"....

এটুকু পড়ে বুজলাম যে আদি নিজে কি চাই সেটাই জানে না, 
একদিকে বলছে কারোর গলগ্রহ হয়ে থাকতে চাই না , আবার অন্য দিকে বুদ্ধদেব বাবুর চরকির প্রস্তাব বিবেচনা করবে এটা কিরকম হলো ?
যদি গলগ্রহ হয়ে বাঁচতে না চাই তাহলে অন্যের দানের চাকরি কেনো গ্রহণ করবে ?

ভালোবাসা আর ভীতি এর দ্বন্দ্বে কে জেতে জানার জন্য পরের পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।।।
[+] 3 users Like Buro_Modon's post
Like Reply
(10-01-2021, 02:06 AM)pinuram Wrote: পর্ব দুই (#1-#7)

 
মিনিবাস ধরে বেড়িয়ে পড়লাম। রাত বেশ হয়েছিল তাই বাসে বিশেষ ভিড় ছিল না, বসার জায়গা পেয়ে গেছিলাম। সিটে বসার পরে মনেহলল যেন আমি কত বড় এক ভীতু কাপুরুষ ছেলে। প্রথমত মুখ ফুটে নিজের মনের কথা বলতেই পারলাম না, দ্বিতীbhule য়ত যেটা প্রথমের চেয়েও বেশি গুরুতর, সেটা হচ্ছে মার খাওয়ার ভয়ে পিছিয়ে আসা। ভীতি আমলুক নয়, কি করব পঙ্গু হয়ে কারুর গলগ্রহ হয়ে বেঁচে থাকাটাই মুশকিল। হাওড়া পৌঁছে একটা পিসিও থেকে প্রবালদাকে ফোন করে দিলাম। লাস্ট বর্ধমান লোকালে বর্ধমান পৌঁছে তারপরে অন্ডাল লোকালে দুর্গাপুর পৌঁছে যাবো। দুর্গাপুর পৌঁছাতে পৌঁছাতে রাত বারোটা হয়েই যাবে। সারাটা রাস্তা শুধু চোখের সামনে তিতলির তিরতির করে কম্পিত নরম গোলাপি ঠোঁট জোড়া ভেসে উঠছিল, কানের মধ্যে প্রতিধ্বনিত হচ্ছিল, “আদি আমি তোমায়...” একটু দাঁড়িয়ে গেলে হয়ত ওর কথাটা শুনতে পেতাম। কিন্তু ট্যাক্সি ছেড়ে দিয়েছিল।
 
দিনের শেষের লোকাল ট্রেন, যাত্রী বলতে কেউ নেই ট্রেনে, শুধু কয়েকজন হকার, কয়েকজন দোকানি হয়ত ব্যাবসাদার। দিন আনি দিন খাই এরা মানুষ, ওদের দেখে নিজেকেও অনেকটা তাই বলেই মনে হল। পরনে খুব সাধারন পোশাক আশাক, এমন কিছু বড় অফিসে চাকরি করি না, এমন কিছু বিশাল কোন মাইনেও পাইনা। হুহু করে রাতের অন্ধকার চিড়ে ধেয়ে চলেছে লাস্ট বর্ধমান লোকাল। বর্ধমান পৌঁছে, লাস্ট অন্ডাল লোকাল ধরলাম। বর্ধমান লোকালে যাও কয়েকজন মানুষ ছিল, অন্ডাল লোকালে তাও নেই। একটা বেঞ্চিতে একজন কেউ শুয়ে রয়েছে তাছাড়া কামরা সম্পূর্ণ শুন্য। ছেঁড়া চাদরের মধ্যে থেকে মুখ বের করে সেই অপরিচিত বৃদ্ধ মানুষ মাথা বের করে আমার দিকে তাকাল। মাথার চুল অনেকটাই সাদা হয়ে গেছে। গাল ভর্তি দাড়ি। চাদরটা শতছিন্ন, অনেক জায়গায় ভিন্ন ভিন্ন রঙের কাপড়ের তালি তাপ্পি দেওয়া। ওই মানুষের কাঁথার মতন আমার মনের অবস্থা, শতছিন্ন বহু প্রশ্নে বিদ্ধ। আমি কি সত্যি তিতলিকে ভালোবাসি? যদি ভালোবাসি তাহলে এতদিন, প্রায় এক মাসের মতন হয়ে গেল, কেন কেউ মুখ ফুটে কেউ কাউকে বলতে পারলাম না? আমি কেন কাপুরুষ? বিদায় বেলায় ট্যাক্সিতে উঠে তিতলি আমাকে ঠিক কি বলতে চেয়েছিল? আমি গেটের কাছে দাঁড়িয়েছিলাম, এক হাতে রড ধরে অন্য হাতে সিগারেট নিয়ে। দুইপাশে অন্ধকার ঘেরা ধানের খেত, দূরে দিগন্তে কোথাও কোন গ্রামের কোন বাড়িতে ছোট ছোট আলো জ্বলছে। আকাশে মেঘ, তাও তার ফাঁক দিয়ে মাঝে মাঝে এক ফালি চাঁদ উঁকি মারছে। চাঁদের ওই বাঁকা হাসি যেন আমাকে ভীষণ ভাবেই তিরস্কার করছে। দুর্গাপুর পৌঁছাতে রাত প্রায় বারোটা বেজে গেল। প্রবালদা আমার জন্য বাইক নিয়ে স্টেসানের বাইরে অপেক্ষা করছিল।
 
বাইকে উঠে আমি প্রবালদাকে জিজ্ঞেস করলাম, “কি রে কি ব্যাপার বলতো?”

প্রবালদা হেসে উত্তর দিল, “চল চল বাড়ি চল তারপরে বলছি।”
 
হাসিটা ভালো লাগলো না সত্যি বলছি, এমনকি প্রবালদার গলাটাও কৌতুকপূর্ণ ছিল। কি হতে চলেছে বলা মুশকিল। রেল স্টেশান থেকে ডিভিসি কলোনি বেশ দুর। ওর কোয়াটারে পৌঁছাতে পৌঁছাতে বেশ রাত হয়ে গেল। তোতাপাখি আমাদের জন্য অপেক্ষা করছিল। বাইকের আওয়াজ পেয়ে দরজা খুলে দাঁড়িয়ে আমাকে দেখে এক গাল হাসি দিল তোতাপাখি।
 
প্রবালদা আমার হাত থেকে ব্যাগ নিয়ে বলল, “যা তাড়াতাড়ি হাত মুখ ধুয়ে নে, তারপরে খেয়ে দেয়ে নে। অনেক রাত হয়েছে।”

তোতাপাখির হাসি দেখে আমার ভীষণ সন্দেহ হল। শেষ পর্যন্ত থাকতে না পেরে আমি তোতাপাখিকে জিজ্ঞেস করলাম, “তোমরা বর বউ মিলে কি প্লান করছ বলতো?”

তোতাপাখি আমার হাত ধরে মুচকি হেসে বলল, “তুমি না সত্যি। আজকে তোমার জন্য সর্ষে ইলিশ বানিয়েছি। যাও যাও আগে হাত মুখ ধুয়ে নাও তারপরে খেতে খেতে গল্প করা যাবে।”
 
কোয়াটারটা বেশি বড় না হলেও, তোতাপাখির হাতের ছোঁয়ায় বেশ সুন্দর উঠেছে। হাত মুখ ধুয়ে খেতে বসে গল্প করতে করতে সব প্রশ্নের সমাধান হল। যা বোঝা গেল তাতে হোঁৎকা আর তার সুন্দরী স্ত্রী, তোতাপাখি মিলে চক্রান্ত করে আমার ছোট ফ্লাটে আরো একজনের প্রবেশ ঘটাতে চাইছে। ভীষণ দুরাভিসন্ধি। প্রবালদার অফিসের ম্যানেজার, বুদ্ধদেব সাহা, বেশ বড় পোস্টে চাকরি করেন। তার কন্যে সংযুক্তা সাহা, সেই বছরেই দুর্গাপুর ওমেন’স কলেজ থেকে পল সায়েন্স নিয়ে পাশ করেছে। বুদ্ধদেব বাবুর বড় ছেলে, সেও ডিভিসিতে চাকরি করে। দক্ষিণ পল্লীতে বিশাল দোতলা বাড়ি। বেশ বড়লোক মানুষ, দুর্গাপুরে বুদ্ধদেব বাবুর বেশ নামডাক আছে। বেশ কয়েকমাস ধরেই নাকি তিনি তাঁর কন্যের জন্য ছেলে খুঁজছিলেন। আমার পরিচয় ইত্যাদি পেয়ে বিশেষ করে আমার পড়াশুনা কলেজ কলেজের ব্যাপারে জানার পরে তাঁরা নাকি একবার আমাকে দেখতে চায়। মামা মামী নাকি গত গ্রীষ্মের সময়ে এসে সংযুক্তাকে দেখে গেছেন। মামীর ওপরে বেশ রাগ হল আমার, একবার বললেন না আমাকে। প্রবালদা অবশ্য তাঁদের কে আমার ব্যাপারে জানিয়ে দিয়েছে, আমার বাড়ির কথা ইত্যাদি। তাতে নাকি তাঁদের কোন আপত্তি নেই। খাওয়ার পরে একটা সাদা খামের ভেতর থেকে একটা ফটো বার করে দেখাল তোতাপাখি। ছবিতে সবাইকে ডানা কাটা পরীর মতন দেখায়। ছবিটা হাতে নিয়ে বেশ কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকলাম। মেয়েটা দেখতে মন্দ নয়।
 
আমি শোয়ার আগে একটা সিগারেট ধরানোর জন্য বাইরের বারান্দায় এলাম। আকাশের ছড়ান ছিটানো মেঘের মধ্যে দিয়ে মাঝে মাঝে ওই এক ফালি চাঁদ আমাকে দেখে তিরস্কারের হাসি হেসে চলেছে। বাঁ হাতের দুই আঙ্গুলের মাঝে সিগারেট ধরা, ডান হাত মুঠো করে উল্টো পিঠ দেখলাম আমি, যেখানে এই কয়েক ঘন্টা আগে এক সুন্দরী প্রজাপতির এক ফোঁটা চোখের জল পড়েছিল। বুকের পাঁজর গুলো এক এক করে জ্বলছে। সিগারেট শেষ করে ঘরে ঢুকে গেলাম। পাশের ছোট শোয়ার ঘরে আমার বিছানা পাতা। ঘুম আসছে না। জানালা খোলা, বেশ হাওয়া দিচ্ছে, আকাশের মেঘের মধ্যে চাঁদ লুকোচুরি খেলা করছে। আমি চাদর গায়ে বিছানায় শুধু এপাশ ওপাশ করে যাচ্ছি। মাঝে মাঝে ভীষণ অস্বস্তি হচ্ছে বুকের মধ্যে। চোখ বন্ধ করলেই কানের মধ্যে ভেসে আসে তিতলির করুন কন্ঠ, “আদি আমি তোমায়...”। বাঁচার লড়াই, কিন্তু কার সাথে সেই বাঁচার লড়াই সেটাই যে জানি না আমি। ভোর রাতের দিকে চোখ বুজে এলো, শুতে যাওয়ার আগে ঠিক করলাম, হোঁৎকাকে বলে এই দুর্গাপুরে ডিভিসিতে চাকরি নিয়ে নেব। যদি সংযুক্তা চায় তাহলে ওকেই বিয়ে করব।
 
ঘুম ভাঙল তোতাপাখির মিষ্টি ডাকে, “এই গেছো, ওঠো।” চোখ মেলে দেখলাম তোতাপাখি বিছানার পাশে দাঁড়িয়ে হাতে এক কাপ চা নিয়ে। মিষ্টি হেসে আমাকে জিজ্ঞেস করল, “রাতে ঘুম হয়েছে?”

আমি ওকে ইয়ার্কি মেরে বললাম, “তুমি আর হোঁৎকা রাতে যা শুরু করছিলে তাতে কি আর ঘুম হয় নাকি?”
 
ভীষণ লজ্জা পেয়ে গেল মিষ্টি তোতাপাখি। কান গাল লাল হয়ে গেল ওর। পদ্ম কুড়ির মতন চোখের পাতা ভারী হয়ে নেমে এলো তোতাপাখির বুকের ওপরে। মিষ্টি একটা “ধ্যাত” বলে বিছানার ওপরে চায়ের কাপ রেখে লজ্জিত ত্রস্ত পায়ে পালিয়ে গেল আমার সামনে থেকে। তোতাপাখির লজ্জা দেখে মনে মনে হেসে ফেললাম আমি।
 
সকালের জল খাবারের সময়ে প্রবালদা জানিয়ে দিল যে দুপুরে বুদ্ধদেব বাবুর বাড়িতে আমাদের খাওয়ার নেমতন্ন সেই সাথে সংযুক্তাকে দেখাও হয়ে যাবে। একটা গাড়ি বলা ছিল। স্নান সেরে তৈরি হয়ে নিলাম আমরা তিনজনে। জীবনে প্রথম বার বিয়ের জন্য মেয়ে দেখতে যাচ্ছি। অবশ্য হোঁৎকার বিয়ের আগে একবার আমি আর হোঁৎকা তোতাপাখির জাগুলিয়ার বাড়িতে গেছিলাম। সেটা অবশ্য হোঁৎকার বিয়ে ছিল। এটা আমার জন্য দেখতে যাওয়া। বুকের ভেতরটা একটু ধুরুক ধুরুক করছে। চাকরির ইন্টারভিউতে এত ভয় পাইনি যতটা রাস্তায় গাড়িতে যেতে যেতে ভয় করছিল। তোতাপাখি বারে বারে আমাকে সহজ হতে বলছিল। সে কথা কি আর কানে যায় নাকি আমার।
 
ডিভিসি কোয়াটার থেকে দক্ষিণ পল্লীতে বুদ্ধদেব বাবুর বাড়ি পৌঁছাতে প্রায় আধা ঘন্টা লেগে গেল। আমাদের গাড়ির আওয়াজ পেয়েই আমাদের অভ্যর্থনা জানানোর জন্য বেশ কয়েকজন বেড়িয়ে এল বাড়ি থেকে। দোতলা বাড়িটা বেশ বড়, সামনে একটা বড় ফুলের বাগান। বাড়ির একপাশে একটা গ্যারেজ তার মধ্যে একটা স্টিল রঙের ওপেল এস্ট্রা দাঁড়িয়ে। গাড়ি বাড়ি দেখে বেশ বড়লোক বলেই মনে হল। বসার ঘরে ঢুকে বসলাম, বেশ বড়সর বসার ঘর। প্রবালদা আমাকে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিল। বুদ্ধদেব বাবু, তার পাশে তার শ্যালক, সমরেশ, বুদ্ধদেব বাবুর ভাই, বেশ কয়েকজন মহিলা, বসার ঘরে রিতিমত লোকজনে ভর্তি। আমি চুপচাপ বসে এদিকে ওদিকে ঘাড় ঘুরিয়ে জরিপ করে নিচ্ছি। আমার বউদি, তোতাপাখি মুখে ফুলঝুরি ছোটে সুতরাং বাড়ির মহিলাদের সাথে মিশে যেতে বেশি সময় নিল না। আমার দিকে ছোঁড়া প্রশ্ন গুলোর বেশির ভাগ উত্তর প্রবালদা দিয়ে দিচ্ছিল। বেশ কিছুক্ষন পরে আমাকে অথই জলের মধ্যে ফেলে দিয়ে তোতাপাখি বাড়ির মধ্যে মহিলাদের সাথে কোথায় যেন চলে গেল।
 
বুদ্ধদেব বাবু আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, “তোমার কোম্পানি কেমন চলছে?”

আমি উত্তর দিলাম, “ছোট প্রাইভেট কোম্পানি মোটামুটি চলছে। আমি সময় মতন মাইনে পাই তাই এর বেশি খবর রাখি না।”

মৃদু হাসলেন বুদ্ধদেব বাবু, “প্রবাল বলছিল তুমি যদি একবার ডিভিসিতে এপ্লাই কর।”

মাথা দোলালাম আমি, “হ্যাঁ দেখি। এখন তো একটা কম্পিউটার কোর্স করছি। এটা শেষ হওয়ার পরেই চাকরি চেঞ্জ করার কথা ভাবা যাবে।”

বুদ্ধদেব বাবু একটু ভেবে বললেন, “না না ঠিক আছে। তা এই কম্পিউটার কোর্স কতদিন আর বাকি আছে?”

আমি উত্তর দিলাম, “আরো একটা সেমেস্টার বাকি আছে। মানে শেষ হতে আরো মাস সাত আট বলতে পারেন।”

মৃদু হেসে বললেন, “তাই হোক। তুমি তাহলে তোমার কম্পিউটার কোর্স শেষ করে একবার ডিভিসিতে পরীক্ষা দিও। প্রবালতো আছেই আমিও না হয় দেখব।”
 
মাথা দোলালাম আমি, বাঙালি মেয়ের বাবা, জামাই সরকারি চাকুরেরত খুঁজবে এটাই ধর্ম।
 
বুদ্ধদেব বাবুর পাশে বসা একজন ভদ্রলোক আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, “বাঙ্গুরে তোমার নিজের ফ্লাট? একাই থাকো?”

মাথা দোলালাম আমি, “হ্যাঁ আমার নিজের ফ্লাট, একাই থাকি।”

সেই ভদ্রলোক বললেন, “একা থাকো, তাহলে তো এখানে চাকরি হলে অসুবিধে কিছু নেই।”
 
ওদের কথাবার্তা শুনে মনে হল আমাকে একা পেয়ে এদের আরও বেশি করেই পছন্দ হয়ে গেছে। সাথে এটাও বুঝতে অসুবিধে হল না যেহেতু আমার কেউ নেই তাই মেয়ের বাড়ির কাছেই টেনে আনলে এদের সুবিধে হবে। নিজের আত্মসন্মানে একটা ঘা লাগলো। আমি প্রবালদার দিকে আড় চোখে একবার তাকালাম। প্রবালদা বুঝে গেল আমার অস্বস্তি, তাও চোখের ইশারায় আমাকে একটু চুপ করে থাকতে বলল। প্রবালদার বস তাই সন্মানের সাথেই প্রশ্নের উত্তর দিতে হচ্ছিল।
 
বেশ কিছুপরে সংযুক্তাকে সঙ্গে নিয়ে আমার বউদি বসার ঘরে প্রবেশ করল। ছবিতে দেখা মেয়েটার সাথে মেলাতে চেষ্টা করলাম, একটু অসুবিধে হল। একটা কচি কলাপাতা রঙের শাড়ির পরতে পরতে ঢাকা উদ্ভিন্ন যৌবনা এক তন্বী ললনা। সজিয়ে গুছিয়ে একদম পটে আঁকা ছবির মতন বসার ঘরে আনা হয়েছে। বেশ মিষ্টি দেখতে তবে দেখে মনে হল অনেক কচি, অনেক কম বয়স। গায়ের রঙ ফর্সা। আমার অবচেতন মন তিতলিকে সংযুক্তার পাশে দাঁড় করিয়ে একবার মানসপটে দুইজনের তুলনা করতে শুরু করে দিল। তিতলি অনন্যা, না সাজলেও অতীব সুন্দরী, যদিও সংযুক্তাকে সেই হিসাবে দেখিনি তাও মনে হল তিতলির লাবন্যের কাছে পাশে ম্লান হয়ে যাবে। সেই টিয়াপাখির মতন নাক নেই, পদ্মপাতার মতন চোখের পাতা নয়। সব থেকে যেটা বাধ সাধল, তিতলির মতন সংযুক্তার ঠোঁটের ওপরে ডান পাশে কোন তিল নেই। মনে মনে হেসে ফেললাম আমি, এই তো গতকাল রাতে শুয়ে শুয়ে ভাবছিলাম যে যা হয় হোক সংযুক্তাকে বিয়ে করে এই দুর্গাপুরে না হয় চলে আসব। কিন্তু সংযুক্তাকে সামনে নিয়ে আসার পরে বুকের ভেতরে দ্বন্দযুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে। হাত মুঠো করে নিলাম আমি, চোখের দৃষ্টি সেই জায়গায় নিবদ্ধ, যেখানে গতকাল রাতে তিতলির এক ফোঁটা অশ্রুকণা আমাকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করে দিয়েছিল। কর্ণ কুহরে প্রতিধ্বনিত হল ওর শেষ আকুতি, “আদি আমি তোমায়...” আমি আর কিছুই ভাবতে পারছি না। দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে আসছে ধিরে ধিরে।
 
প্রবালদা আমার কাঁধে আলতো ধাক্কা মেরে ফিরিয়ে আনল ওদের মধ্যে। চোখের ইশারায় আমাকে জিজ্ঞেস করল, কি রে কি হয়েছে? মাথা নাড়লাম আমি, মৃদু হেসে বললাম, না রে কিছু না। তোতাপাখি আগে থেকেই সব জেনে বসে আছে, সেই আমার সাথে সংযুক্তার পরিচয় করিয়ে দিল। পাতলা ঠোঁটে মৃদু হাসি মাখিয়ে লাজুক চোখে মাঝে মাঝে আমার দিকে তাকায় সংযুক্তা। সেই হাসির প্রতি আমি নিঃস্পৃহ, আমার হাসি ওই মেঘের আড়ালে হারিয়ে গেছে। আমার দৃষ্টি সামনের সোফায় বসা সংযুক্তাকে ছাড়িয়ে কাজিপাড়ার সেই গলির মুখে চলে গেছে। রাস্তার নিয়নের আধো আলো অন্ধকারে দাঁড়িয়ে তিতলি, মৃদু মাথা দুলিয়ে একটু হেসে গলির বাঁকে হারিয়ে গেল।
 
এমন সময়ে তোতাপাখি আমার পাশে এসে আমার কানে কানে জিজ্ঞেস করল, “তোমার কি হয়েছে?”

অনেকক্ষণ পরে কানের পাশে তোতাপাখির গলার আওয়াজ পেয়ে আমি সম্বিত ফিরে পেলাম। আমি মৃদু হেসে মাথা নাড়িয়ে বললাম, “কিছু না।”

তোতাপাখি আমাকে বলল, “কিছু কথা বল? এমন চুপচাপ কেন বসে আছো?”

আমি মৃদু হেসে ওকে উত্তর দিলাম, “সব তো তুমি জেনে বসে আছো। আমার কি আর জিজ্ঞাস থাকবে।”

তোতাপাখি ভুরু কুঁচকে আমাকে বলল, “তাও, কিছু তো জিজ্ঞেস করবে, নাকি।” আমার হাতের ওপরে হাত রেখে বলল, “লজ্জা পাচ্ছো নাকি?”

আমি মুচকি হেসে জানালাম, “তা একটু। আসলে কি জিজ্ঞেস করব সেটাই ভেবে পাচ্ছি না।”

তোতাপাখি মৃদু হেসে আমার কানে কানে ফিসফিস করে বলল, “এই মেয়ে কিন্তু আমার মতন ভীষণ কথা বলে।”

আমি হেসে দিলাম ওর কথা শুনে, “তাহলেই হয়েছে। বাড়িতে ঝগড়া লাগলো বলে।”

তোতাপাখি সবার চোখের আড়ালেই আমার বাজুতে একটা চিমটি কেটে ফিসফিস করে বলল, “তুমি না যাতা।” একটু থেমে সংযুক্তার দিকে তাকিয়ে আমাকে বলল, “একা ছাড়তে হবে নাকি তোমাদের?”

আমার ইচ্ছে ছিল না কারুর সাথে কোন কথা বলার। তাও ভদ্রতার খাতিরে বললাম, “তাই সই। দেখি কত কথা বলে।”

মুচকি হসি দিল তোতাপাখি। গভীর ভাবে আমার চোখের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল, “পছন্দ হয়েছে নাকি?”

উত্তর দিতে পারলাম না। আমার চোখের ভাষা খোলা বইয়ের মতন পড়ে ফেলতেই নিরুত্তর হয়ে গেল তোতাপাখি। ফিসফিস করে বলল আমাকে, “দয়া করে, ভদ্রতার খাতিরেই না হয় কিছু জিজ্ঞেস কর। বাকিটা আমি আর তোমার দাদা সামলে নেব।”
 
তোতাপাখির কথা শুনে কি বলব কিছু ভেবে পেলাম না। তাও ভদ্রতার খাতিরেই সংযুক্তাকে ওর কলেজের ব্যাপারে কিছু জিজ্ঞেস করলাম। একদম মুখ বন্ধ করে বসে থাকাটা ভীষণ দৃষ্টি কটু লাগছিল সেটা আমিও বুঝতে পারছিলাম। দুপুরের খাওয়ার আয়োজন করাই ছিল, কিন্তু তোতাপাখি আমাকে বাঁচিয়ে দিল। শরীর খারাপের অজুহাত দেখিয়ে মিষ্টি মুখ করেই আমরা বুদ্ধদেব বাবুর বাড়ি থেকে বেড়িয়ে পড়লাম। বিদায় নেওয়ার আগে বুদ্ধদেব বাবু বারবার আমাকে দুর্গাপুরের চাকরির ব্যাপারে জোর করলেন। আমিও ভদ্রতার খাতিরে শান্ত গরুর মতন মাথা নাড়িয়ে জানিয়ে দিলাম, কম্পিউটার কোর্স শেষ হলেই এখানে ডিভিসিতে এপ্লাই করে দেব।
 
গাড়িতে চাপতেই প্রবালদা আমাকে চেপে ধরল, “দেখ বুধো, বুদ্ধদেব স্যার আমার বস। আমার একটু মান সন্মান রাখিস।”

প্রবালদাকে থামিয়ে দিয়ে আমাকে প্রশ্ন করল তোতাপাখি, “মেয়ের নাম কি? কি ঘটনা?”

প্রবালদা হা করে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে। আমি তোতাপাখিকে উত্তর দিলাম, “জানি না গো আমার কি হবে।”

তোতাপাখি আমাকে জিজ্ঞেস করল, “অফিসের কেউ নাকি ওই ইন্সটিটিউটের?”

আমি উত্তর দিলাম, “আমার ব্যাচের একজন। নাম অনুস্কা ব্যানারজি, ডাক নাম তিতলি।”
 
ধিরে ধিরে এক এক করে সব কিছুই তোতাপাখি আর হোঁৎকাকে খুলে বললাম। তিতলির স্বভাব, তিতলির পরিচয় ওর বাবার কথা, ওর কাকার কথা, ওরা বড়লোক সেই কথা আর সব শেষে গতকাল রাতে ট্যাক্সির কথা। আমার হাতের ওপরে এক ফোঁটা অশ্রুকণা এখন যেন লেগে রয়েছে। সব শুনে হোঁৎকা একটু চিন্তায় পরে গেল। একদিকে ওর অফিসের বস বুদ্ধদেব বাবু, অন্যপাশে আমি নিজেই জানি না কি করব। আমার আর দুর্গাপুরে থাকতে ভালো লাগছিল না। আমি ওদের জানিয়ে দিলাম যে বিকেলের ব্লাক ডায়মন্ডে বাড়ি ফিরে যাবো। বাড়ি ফিরে যাবো শুনে তোতাপাখির ভীষণ মন খারাপ হয়ে গেল। এমনিতেই আমার সব কথা শোনার পরে কিছুই ভেবে পাচ্ছিল না তোতাপাখি। কোয়াটারে ফিরে দুপুরের খাওয়া সেরে একটু বিশ্রাম নিয়ে বেড়িয়ে পড়লাম। বাড়ি ফিরতে হবে। আমার ঘুম ট্যাক্সি করে জল ভরা চোখে চলে গেছে। নিজেই জানিনা কি করব।
 
বিদায়ের শেষ বেলায় তোতাপাখি আমাকে জিজ্ঞেস করল, “কি করবে তাহলে?”

আমি শুন্য দৃষ্টি নিয়ে তোতাপাখির দিকে দেখে নিঃস্পৃহ ভাবেই উত্তর দিলাম, “জানি না গো। মধ্যবিত্ত মানুষ। ভয় ডর আমার রন্ধ্রে রন্ধ্রে। আমার সামান্য চাকরি, আমার পেছনে দাঁড়ানোর মতন কেউই নেই। না আছে আমার লোকবল না আছে আমার অর্থ বল। এই সেমেস্টার শেষ হতে আর তিন সপ্তাহের মতন বাকি। এই কয়দিন ওকে এড়িয়ে চলব। তারপরে আর কি, দেখা হবে না কথা হবে না। আশা করি একদিন ভুলেও যাবে, আমিও ভুলে যাবো। তখন না হয় নতুন করে আবার শুরু করা যাবে। তিন সপ্তাহের ব্যাপার।” শেষের দিকে একটা ম্লান হাসি হাসলাম।
 
বেশিক্ষন আর দাঁড়াইনি। হোঁৎকা আমাকে বাইকে করে স্টেসানে পৌঁছে দিল। ট্রেনে উঠে বারে বারে তোতাপাখি আর হোঁৎকার মুখ মনে পড়ছিল। কারুর গলগ্রহ হয়ে থাকতে পারব না তবে অন্য কাউকে এই পোড়া বুকে স্থান দিতেও পারব না। ভালোবাসা কি সেটা বোঝার আগেই আমি জ্বলে পুড়ে ছারখার।

Bhule jaoa eto sahaj hole to kathai chiloi na!!!
[+] 4 users Like Debartha's post
Like Reply
তীর একবার ধনুক থেকে বেরিয়ে গেলে কিছু করার থাকবে না, তার আগেই বুধোকে বুঝতে হবে আসলে সে কি চায় - দূর্গাপুরে অন্যের দয়ায় চাকরিতে ঢুকে ঘরজামাই হয়ে একপ্রকার পুতুল হয়ে থাকা নাকি কঠিন পথ বেছে নিয়ে নিজের চেষ্টায় পায়ে দাঁড়িয়ে আপন ভালোবাসাকে বরণ করে নেওয়া। নিজের মনের দ্বিধাবোধ আর দ্বন্দ্বকে কাটিয়ে উঠে তিতলির সামনে দাঁড়াতে হবে আর সমাধান খুঁজে বের করতে হবে, নিজেদের ওপর আস্থা রাখতে হবে  Heart Namaskar
[+] 3 users Like Mr Fantastic's post
Like Reply
(10-01-2021, 10:37 AM)Mr Fantastic Wrote: তীর একবার ধনুক থেকে বেরিয়ে গেলে কিছু করার থাকবে না, তার আগেই বুধোকে বুঝতে হবে আসলে সে কি চায় - দূর্গাপুরে অন্যের দয়ায় চাকরিতে ঢুকে ঘরজামাই হয়ে একপ্রকার পুতুল হয়ে থাকা নাকি কঠিন পথ বেছে নিয়ে নিজের চেষ্টায় পায়ে দাঁড়িয়ে আপন ভালোবাসাকে বরণ করে নেওয়া। নিজের মনের দ্বিধাবোধ আর দ্বন্দ্বকে কাটিয়ে উঠে তিতলির সামনে দাঁড়াতে হবে আর সমাধান খুঁজে বের করতে হবে, নিজেদের ওপর আস্থা রাখতে হবে  Heart Namaskar

Akdom jothartho bolechen .. ami o ai katha guloi bolte jacchilam .. tai apnar comment e reply ta korlam .. kaoke valo basle sei valobasha r upor vorsa rakte hoi .. mone mone valo baslam .. ar jei onno sujog pelam valobasha vule gelam .. eta abar kemon valobasha .. ki jani .. keu kaoke valo basle tar jonno anek dur projonto jete pare .. ekhane adi sudhu titli r family background sunei voy peye palia gelo .. titli to akta meye .. or o to bie debe or family .. ta age dekhuk je hoito etao to hote pare adi ke or family pochondo kore nilo .. kichu na dekhe omni palia jaoke to kapurush e bole ... Tobe golpo to sobe suru .. ki jani ki hobe ... Ami o kichu na dekhei ato kichu likhe dilam .. pinuda rag korben na ...
[+] 2 users Like dreampriya's post
Like Reply
(10-01-2021, 12:32 PM)dreampriya Wrote: Akdom jothartho bolechen .. ami o ai katha guloi bolte jacchilam .. tai apnar comment e reply ta korlam .. kaoke valo basle sei valobasha r upor vorsa rakte hoi .. mone mone valo baslam .. ar jei onno sujog pelam valobasha vule gelam .. eta abar kemon valobasha .. ki jani .. keu kaoke valo basle tar jonno anek dur projonto jete pare .. ekhane adi sudhu titli r family background sunei voy peye palia gelo .. titli to akta meye .. or o to bie debe or family .. ta age dekhuk je hoito etao to hote pare adi ke or family pochondo kore nilo .. kichu na dekhe omni palia jaoke to kapurush e bole ... Tobe golpo to sobe suru .. ki jani ki hobe ... Ami o kichu na dekhei ato kichu likhe dilam .. pinuda rag korben na ...

আরেকটা ব্যাপার দেখার আছে। তিতলির সঙ্গে ওর মায়ের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আছে কিনা, তাহলে যদি মায়ের কাছে আদির ব্যাপারে কিছু বলতে পারে। কারণ, পুরুষশাসিত সমাজ হলেও বঙ্গ পরিবারে গৃহকর্ত্রীদের বড়ো স্থান থাকে, মা-জেঠিমা-দিম্মারা হোম মিনিস্টার। ওদের কথার একটা গুরুত্ব আছে  Tongue Blush Smile
[+] 2 users Like Mr Fantastic's post
Like Reply
(10-01-2021, 01:29 PM)Mr Fantastic Wrote: আরেকটা ব্যাপার দেখার আছে। তিতলির সঙ্গে ওর মায়ের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আছে কিনা, তাহলে যদি মায়ের কাছে আদির ব্যাপারে কিছু বলতে পারে। কারণ, পুরুষশাসিত সমাজ হলেও বঙ্গ পরিবারে গৃহকর্ত্রীদের বড়ো স্থান থাকে, মা-জেঠিমা-দিম্মারা হোম মিনিস্টার। ওদের কথার একটা গুরুত্ব আছে  Tongue Blush Smile

Hmm ai baper to achei ..
[+] 1 user Likes dreampriya's post
Like Reply
এইরকম সমস্যা অনেকের জীবনেই হয়।
এখন দেখি তোমার হাতে পড়ে এই গেছো বাঁদর কি করে।
[+] 1 user Likes TumiJeAmar's post
Like Reply
(10-01-2021, 02:42 AM)Biddut Roy Wrote: ছুটি আর কাটানো হলো না।
সেই ভালোবাসার টানেই ছুটে চলে যাচ্ছে আবার।
বাহ।
কিন্তু তিতলিকে কি এড়িয়ে চলতে পারবে এই তিন সাপ্তাহ।
দেখা যাক কি হয় সামনে।
পরের আপডেটের অপেক্ষায় রইলাম।

ভালোবাসার টানে ছুটে যাচ্ছে না কি তার চোখ এড়াতে যাচ্ছে এখন সঠিক ভাবে বোঝা যাচ্ছে না! সাথে থাকুন, অচিরে আদির সাথে সাথে আমরাও হয়ত জানতে পারব !!!!!
[Image: 20210115-150253.jpg]
Like Reply




Users browsing this thread: 75 Guest(s)