Thread Rating:
  • 100 Vote(s) - 3.34 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Romance সুপ্তির সন্ধানে
(08-01-2021, 11:36 AM)Buro_Modon Wrote: হুর শেষে পড়ার মস্তান কাকা দাদা এনে কিরকম যেনো দেবের বাংলা সিনেমার প্লট এনে দিলে।

এত তাড়াতাড়ি "হুড়" বলে দিলে হবে? আমি কিন্তু কেঁদে ফেলব, মানি আদি! ইসসস, এখন ঠিক করে প্রেম শুরু হল না তার আগেই হুর বলে দিলেন !!!!!
Reps Added +1
[Image: 20210115-150253.jpg]
[+] 2 users Like pinuram's post
Like Reply
Do not mention / post any under age /rape content. If found Please use REPORT button.
(08-01-2021, 01:43 PM)Tiyasha Sen Wrote: বাইকটা ছুটে যাচ্ছে আর আমি রুদ্ধশ্বাসে পড়ে চলেছি। তিতলীকে নামিয়ে দিল আর আমিও নিঃশ্বাস ছাড়লাম। উফঃ ভয় পেয়ে গেছিলাম। দারুন চলছে ???

Heart Heart Heart Heart  এমা ভয় পেতে নেই এইটুকু তে, ছি ছি !
[Image: 20210115-150253.jpg]
[+] 2 users Like pinuram's post
Like Reply
(08-01-2021, 03:18 PM)wanderghy Wrote: Ekebare kelo kore dile. sundar prem cholchilo..ekhono propose hoy ni bas ene dile murtiman villain. Na pinuda emon cholbe na. Keno dukho dao..age olpo romance hok..thik na. opekhay roilam titlir prem er 4 th part er..

এখানে কে ভিলেন কে হিরো, এই একটু পরেই বোঝা যাবে! একটু পরেই আসছে আপডেট !!!!!
[Image: 20210115-150253.jpg]
[+] 2 users Like pinuram's post
Like Reply
পর্ব এক (#6-#6)

 
অনির্বাণ রাস্তা পেরিয়ে চলে যেতেই তিতলি আমার গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আমাকে জিজ্ঞেস করল, “তুমি ঠিক আছো?”

আমি মাথা দুলিয়ে উত্তর দিলাম, “হ্যাঁ ঠিক আছি।”

তিতলি আমার চোখের ভেতর দিয়ে গভীর ভাবে তাকিয়ে আমার হৃদপিন্ডের গভীরে প্রবেশ করে জিজ্ঞেস করল, “তোমার মুখ শুকনো কেন গো?”

মাথার মধ্যে তখন অনির্বাণের কথা গুলো আওড়াচ্ছিলাম। এই যাঃ ধরা পরে গেলাম নাকি? না না, হেসে ফেললাম তিতলির দিকে দেখে, “আরে আর বল না। সেই সকালে বেরিয়েছি। প্রথমে জোকা গেলাম, সেখান থেকে ভিজে ভিজে অফিস। অফিসে বসে আবার রিপোর্ট বানাতে হল। তারপরে আবার ভিজে ভিজে ইন্সটিটিউট এলাম তাই ক্লান্ত হয়ে পড়েছি।”

কথাটা যেন ওর বিশ্বাস হল না। গভীর ভাবে আমার চোখ জোড়া নিরীক্ষণ করে আবার প্রশ্ন করল তিতলি, “তুমি সত্যি বলছ?”

আমি ওকে অভয় দিয়ে বললাম, “হ্যাঁ রে বাবা, সত্যি বলছি।”
 
বৃষ্টি এক নাগাড়ে পরেই চলেছে। বাস গুলো বেশ ভিড়। কাঁকুড়গাছির মোড়ে একটা বাস খারাপ হয়ে যাওয়াতে মানিকতলা রোডে জ্যাম লেগে গেছে। তিতলি একদম আমার গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে, ওর বাজুর সাথে আমার বাজু স্পর্শ করে রয়েছে। ইন্সটিটিউট থেকে আমাদের ব্যাচের কয়েকজন বেড়িয়ে এলো, আমাদের ওইভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে ভদ্রতার খাতিরে একটু হেসে চলে গেল। হয়ত মনে মনে কত কিছুই ভেবে নিয়েছে ওরা। ভাবে ভাবুক আমার তাতে কি। সেই বৃষ্টিতে দোকানের শেডের নিচে দাঁড়িয়ে পাশে তিতলিকে দেখে হটাত আমার মনে হল একটু ওর কাঁধে হাত রাখি, আরো একটু কাছে টেনে আনি। আমি ওর দিকে তাকালাম, সেই সাথে তিতলিও আমার দিকে মুখ তুলে তাকিয়ে রইল। চোখ জোড়া ভীষণ ভাবেই ভাসা ভাসা। কিছু একটা বলতে চাইছে ওর কেঁপে ওঠা ঠোঁট জোড়া, বিশেষ করে ডান দিকের ঠোঁটের ওপরের তিলটা। ফর্সা নরম মসৃণ লালচে গালের ওপরে আমার চোখ আটকে গেল। বৃষ্টির ছাঁটে কয়েক ফোঁটা জল ওর ছাতা বেয়ে কখন ওর গালের ওপরে পরে ছিল ওর হয়ত খেয়াল নেই। কয়েক ফোঁটা জল মিলে একটা অতি ক্ষীণ ধারা ওর গাল বেয়ে নিচের দিকে নেমে গেছে। সেই ক্ষীণ ধারার ওপরে আমার চোখ আটকে গেল।

সময় আমাদের মাঝে থমকে। আমার মুখের ওপরে ওর দৃষ্টি আটকে গেছে। ধিরে ধিরে আমাদের বাজুর স্পর্শ গভীর থেকে গভীরতর হয়ে উঠছে। আমার বুকের কাছে জড়সড় হয়ে আসছে তিতলি। জোলো হাওয়া ভীষণ ভাবেই একটা তীব্র আকর্ষণের মাধ্যম হিসাবে কাজ করছে আমাদের দুই তৃষ্ণার্ত হৃদয়ের মাঝে। কিসের তৃষ্ণা জানি না, তিতলিকে যে ভীষণ ভাবেই ভালোবেসে ফেলেছি আমি। প্রশ্নটা, ওকি আমাকে ভালোবাসে নাকি শুধু মাত্র বন্ধুর চোখে দেখে?
 
আমি ওর চোখে চোখ রেখে বললাম, “তিতলি...”

ঘুমের আবেশ কাটিয়ে ওর যেন ঘুম ভেঙ্গে গেল। মৃদু মদির কন্ঠে উত্তর এলো, “কি...”

জড়িয়ে আসছে আমার কন্ঠ, “বাড়ি যাবে না?”

নেতি বাচক সুরে মাথা নাড়িয়ে বলে, “নাহ...” ওর গলাটা অনেক অনেক দূরে থেকে শোনা গেল বলে মনে হল। গলা বসে গেছে তিতলির।

আমি ওকে বললাম, “তিতলি, বৃষ্টি পড়ছে, বাড়ি যাও।”

তিরতির করে কেঁপে উঠল ওর ঠোঁট, “ছাতা মাথায় কি করে বাইক চালাবে?”

কথাটা শুনে আমার গলার কাছে কিছু একটা দলা পাকিয়ে গেল। মেয়েটা আমাকে কিছুতেই ছাড়বে না। আমি ওকে বুঝিয়ে বললাম, “আজকে প্লিজ ট্যাক্সি করে চলে যাও।”

জোরে জোরে মাথা নাড়াল তিতলি, “নাহ, বৃষ্টি থামুক তারপরে তুমি আমাকে দিয়ে আসবে।”

আকাশের দিকে দেখিয়ে ওকে বললাম, “দেখো, সেই দুপুর থেকে কিন্তু বৃষ্টি পড়ছে। আকাশের অবস্থা কিন্তু এখন ভালো নয়। মনে হয় রাতে এই বৃষ্টি থামবে না।”

ধস নামছে দুই হৃদপিণ্ডের মাঝে। কাঁপা কন্ঠে আমাকে জিজ্ঞেস করল, “একা একা?”

আমি ওকে হাসি মুখে প্রবোধ দিয়ে বললাম, “একা কেন রে বোকা মেয়ে। আমি তোমার ট্যাক্সির পেছনেই বাইক নিয়ে থাকব।”
 
আমার কথা শুনে তখন মনে বল পেল তিতলি। এতক্ষন পরে তিতলির মিষ্টি গোলাপি ঠোঁটে হাসি ফুটে উঠল। মাথা দুলিয়ে জানিয়ে দিল ও যেতে রাজি। হাত ধরে রাস্তা পার করলাম। পারলে তিতলি আমার বুকের মধ্যে সেঁধিয়ে যায়, এমন অবস্থা। এবারে আর বাসস্টান্ডে দাঁড়াতে হল না। আমি বাইকের বাক্স খুলে আমার রেনকোট গায়ে চাপিয়ে নিলাম। সারাক্ষন আমার মাথার ওপরে ছাতা ধরে দাঁড়িয়েছিল তিতলি। ট্যাক্সি পেতে একটু বেগ পেতে হল। বৃষ্টির জন্য বেশির ভাগ ট্যাক্সি ভর্তি আর যারাই আসে তারা কেউই ওইদিকে যেতে চাইছে না। এদিকে প্রায় পৌনে ন’টা বাজে। তিতলির চেহারায় অস্থিরতা ফুটে ওঠে।
 
কাঁপা কন্ঠে আমাকে জিজ্ঞেস করে তিতলি, “আদি কি হবে?”

আমি ওকে আসস্থ করে বললাম, “ট্যাক্সি এসে যাবে এত চিন্তা করো না।”
 
বেশ কিছুক্ষন পরে একটা ট্যাক্সি পাওয়া গেল। তিতলিকে ট্যাক্সিতে উঠিয়ে দিতেই ট্যাক্সির দরজা ধরে বসে আমার দিকে তাকিয়ে থাকল। আমি ওকে আসস্থ করে বললাম, এই পেছনেই বাইকে আছি। বাইক নিয়ে ওর ট্যাক্সির পিছু নিলাম। বারে বারে জানালা দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে দেখে। আমাকে একদম ট্যাক্সির পেছনে নয়ত একদম পাশে পাশেই চালিয়ে যেতে হচ্ছিল। বৃষ্টির জন্য রাস্তায় গাড়ির চলাচল ধিমে গতিতে হয়ে গেছে। একটানা বৃষ্টিতে উল্টোডাঙ্গার ব্রিজের নিচে জল জমেছে, সেখানেও জ্যাম। বাইক নিয়ে ওর ট্যাক্সির পাশে যেতেই মুখে হাসি ফুটে উঠল ললনার। ট্যাক্সির পেছনের সিটে বসে, বাঁ দিকের দরজার সামনে সরে এসে কাঁচের জানালা দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসি দিল। আমি হেলমেটের কাঁচ উঠিয়ে ওকে মাথা নাড়িয়ে ইশারায় জিজ্ঞেস করলাম, কি হল? মিষ্টি একটা লাজুক হাসি দিয়ে চোখ নামিয়ে দিল তিতলি। কখন ওর ট্যাক্সির পেছনে, কখন ওর ট্যাক্সির পাশে, এইভাবেই বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে ওর বাড়ির ওইখানে পৌঁছালাম। ট্যাক্সি থেকে নেমে ওর চোখ মুখের অভিব্যাক্তি দেখে মনে হল এতক্ষন যেন একটা খাঁচায় বন্ধী ছিল। মুক্তির স্বাদ পেতেই ডানা মেলে দিয়েছে সুন্দরী প্রজাপতি, তিতলি।
 
ট্যাক্সি থেকে নেমে প্রতিবারের মতন ছাতা মাথায় দাঁড়িয়ে রইল কিছুক্ষন। তারপরে দুষ্টুমি ভরা একটা হাসি হেসে আমাকে জিজ্ঞেস করল, “প্লিজ কাল আমাকে ওই ভিসুয়াল বেসিকটা বুঝাতে আসবে?”

আমি হেসে ফেললাম ওর কথা শুনে। ওই দুষ্টু মিষ্টি অনুরোধ উপেক্ষা করতে পারলাম না। বললাম, “আচ্ছা আসব। তবে আর ফুচকা নয় কিন্তু।”

ছোট বাচ্চার মতন নেচে উঠল তিতলি। মাথা নাড়িয়ে হেসে বলল, “না আর ফুচকা নয়।”
 
আমি ওকে বাড়ি যেতে বলে বাড়ির পথ ধরলাম। বৃষ্টি একটু ধরে এসেছে। সেই সাথে প্রানের মধ্যে এক নতুন জোয়ারের ধারা দেখা দিয়েছে। যে ভাবে পাশে দাঁড়িয়ে আমার সাথে যাওয়ার জেদ করছিল আর মাথা নাড়িয়ে “নাহ” বলেছিল, সেই কথা ভেবে আপন মনেই হেসে ফেলছিলাম। ট্যাক্সির ভেতরে ওর আশঙ্কা ভীতিপূর্ণ অভিব্যাক্তি মনে পড়তেই বিষণ্ণ ভাব জেগে উঠছিল। সারা রাত ঘুমাতে পারলাম না। এক অদ্ভুত অনুভূতি মন প্রান জুড়ে ছেয়ে রইল।
 
পরের দিন বৃষ্টি থেমে গেছিল। চারপাশে গাছে গাছে নতুন সবুজের ভিড়। মেঘলা আকাশের ফাঁকে মাঝে মাঝে সূর্য দেখা দেয়। সারাদিন অফিসে বসে শুধু ওর অপেক্ষায় ছিলাম। কাজেও সেই ভাবে মন বসছিল না। শুধু ভাবছিলাম, কখন বেথুনের সামনে যাবো। মনে মনে ভাবছিলাম, তিতলি কি ভাবছে? পুরুষ শাসিত সমাজ, নিশ্চয় আমার অপেক্ষায় বসে আছে তিতলি।
 
সকালের দিকে তাও মানসিকতা ঠিক ছিল। মাঝে মাঝে ভয় করছিল ওর কাকার কথা ভেবে। যত দিন গড়ায় তত একটা অজানা ভয় ভর করতে শুরু করে আমার বুকের ভেতরে। অনির্বাণের কথা গুলো ভীষণ ভাবেই মনে পরে যায়। ওর কাকা যদি জানতে পারে তাহলে কি পরিনতি হবে জানি না। যদি হাত পা ভেঙ্গে রেখে দেয় তাহলে আমায় কে দেখবে? আমার তো সেই অর্থে কেউই নেই। আমি যদি বিছানায় পরে থাকি তাহলে হোঁৎকা কি চিরকাল আমাকে দেখবে? তোতাপাখিকে নিয়ে ওর একটা সংসার আছে। মামা মামির বয়স হয়েছে, তাদের গলগ্রহ হয়ে না থাকার জন্য তো এই ফ্লাটে এসে একা একা থাকছি। বিকেলে অফিস থেকে বেড়িয়ে একবার ভাবলাম, না সোজা বাড়ি চলে যাই। শুক্রবার রাতে তো আমাকে দুর্গাপুর যেতে হবে। তারপরে রূপসী ললনার টোপা টোপা লালচে গালের কথা মনে পরে গেল। আকুল চোখে আমার দিকে তাকিয়ে বলেছিল, একা একা ট্যাক্সিতে উঠবে না। থাকতে পারলাম না। ভাবলাম শেষ বারের মতন একবার দেখা করে আসি। এই ব্যাচ শেষ হতে বেশি দিন নেই। আগস্ট শেষ হতে চলছে, সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি আমাদের কম্পিউটারের ব্যাচ শেষ হয়ে যাবে। তারপরের সেমেস্টারে আর তিতলির ব্যাচের সাথে এডমিশান নেব না। চোখের সামনে না থাকলে হয়ত কিছুদিনের মধ্যে ভুলে যেতে পারে।
 
সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে বাইক চালাতে চালাতে কখন যে বিধান সরণি ধরেছি খেয়াল নেই। কখন যে বেথুনের সামনে পৌঁছে গেছি সেটাও বুঝতেও পারিনি। একটা অদৃশ্য শক্তি আমাকে টেনে এনেছিল ওর কলেজের সামনে। সেদিন একদম গেটের সামনেই দাঁড়িয়ে ছিল তিতলি। ওর আশেপাশে আরো বেশ কয়েকটা মেয়ের জটলা ছিল। আমাকে দেখতে পেয়েই সবার অলক্ষ্যে আমাকে ইশারায় একটু এগিয়ে যেতে বলে দিল। আমি বুঝতে পারলাম যে আমাকে যদি ওর বান্ধবিরা দেখে ফেলে তাতে ওর অসুবিধে হতে পারে। আমি বসন্ত কেবিন ছাড়িয়ে গিয়ে বাইক দাঁড় করিয়ে দিলাম। আমি সিগারেট ধরিয়ে একটু অপেক্ষা করলাম তিতলির জন্য। বেশ কিছুক্ষন পরে দুর থেকে দেখতে পেলাম তিতলি বেশ তাড়াতাড়ি আমার দিকে হেঁটে আসছে। ওর চোখ মুখের লালিমা দেখে মনে হল কোন মতে বিডন স্ট্রিট পার করেই যেন ঝাঁপিয়ে পরবে আমার ওপরে। ওকে দেখে সিগারেটে বেশ কয়েকটা জোরে জোরে টান মেরে শেষ করে দিলাম।
 
আমার কাছে এসে মৃদু বকুনি দিল, “সিগারেট না খেলেই নয় নাকি?”

মৃদু হাসলাম আমি, “এটাই আছে একমাত্র সঙ্গী।”

ক্ষনিকের জন্য ফর্সা চেহারা মেঘে ঢেকে গেল। তারপরে বাইকের সিট দেখিয়ে বলল, “চল।” কন্ঠে একটা আদেশের ভাব।

আমি মনে মনে হেসে ফেললাম। জিজ্ঞেস করলাম, “ভিসুয়াল বেসিক?”

সঙ্গে সঙ্গে উত্তর এলো অভিমানী ললনার, “জলে ডুবে মরেছে।”

আমার ওপরে অভিমানের কারণ বুঝতে পারলাম না। আমি ওকে জিজ্ঞেস করলাম, “কি হয়েছে?”
 
বুকের ওপরে পেলব ফর্সা হাত দুটো ভাঁজ করে রাখা, কাঁধে শান্তিনিকেতনি ঝোলা ব্যাগ, পরনে একটা কাঁচা হলুদ রঙের সালোয়ার কামিজ। কালো চাবুকের মতন বাঁকা ভুরুর মাঝে একটা ছোট মেরুন রঙের টিপ, আর ঠোঁট জোড়ায় সব দিনের মতন গোলাপি রঙ। রূপসী ললনা কোনদিন মেকি সাজে সেজে আসতে দেখিনি।
 
আমার কাছে সরে এসে মৃদু ঝাঁঝিয়ে উঠল, “মিতাটা খুব শয়তান।”

আমি অবাক হয়েই ওকে জিজ্ঞেস করলাম, “কি হল মিতার সাথে?”

মৃদু ঝাঁঝিয়ে উঠল ললনা, “তুমি আমাকে এখান থেকে নিয়ে যাবে না এখানে দাঁড়িয়েই জেরা করবে?”
 
বুঝতে পারলাম, কিছু একটা নিয়ে বান্ধবীদের সঙ্গে মন কষাকষি হয়েছে। অগত্যা রথ তৈরি করে সারথি চেপে বসলো। যথারীতি রাজকন্যে রথে চেপে বসে সারথির কাঁধ ধরে রথ চালাতে আদেশ করল। হেলমেট আর পড়লাম না। ধিরে ধিরেই বিধান সরনি ধরে এগোতে লাগলাম। চুপচাপ আমার কাঁধে হাত রেখে পেছনে বসে তিতলি।
 
মিনার পার করার পরে মুখ খুলল রূপসী ললনা, “আমি আজ একটা রেনকোট কিনেছি, সেই নিয়ে কত প্রশ্ন। কেন আমি রেনকোট কিনেছি। রেনকোট পরে কেউ কি ট্যাক্সিতে চাপে নাকি।” আমি ওর কথা শুনে অবাক। মেয়ে বাইকে চাপবে বলে রেনকোট কিনেছে? তিতলির বুকের জমানো কথা কি আর থামতে চায়, “আমিও বললাম, যা তুই নিজের চরকায় তেল দে। মিতা জিজ্ঞেস করল তোমার কথা। আমি ওকে বললাম যে আমার কম্পিউটার ব্যাচের, আমাকে ওই ভিসুয়াল বেসিক বুঝাতে এসেছিল। কিছুতেই বিশ্বাস করে না। আচ্ছা বল, আমি কি মিথ্যে বলেছি নাকি?” আমি মাথা নাড়লাম, একদম নয়। আমি তো ভিসুয়াল বেসিক বুঝাতেই এসেছিলাম। বাধ সেধেছিল ওই আকাশ আর ফুচকা। ললনা পেছনে বসে বলেই চলেছে, “কত যেন চিন্তা আমার জন্য। আমার কাকা জানতে পারলে আমার কি হবে। আরে বাবা তোর তাতে কি? তুই তো কোন বুড়োর সাথে ঘুরে বেড়াস আমি কি দেখতে গেছি নাকি? এমনিতে তো কফিহাউস কিম্বা এই বসন্ত কেবিনে বসে কতদিন আমার টাকায় সিঙ্গারা কচুরি খেয়েছিস। তখন?” কি যে বলছে কিছুই বুঝতে পারছিলাম না, তাও অগত্যা মাথা নাড়াতে হচ্ছিল আমাকে। শুধু মনে হচ্ছিল বাইক থামিয়ে ওর লালচে গালে একটা চুমু খাই। পাগলি মেয়েটা আমার বাইকে বসবে বলে রেনকোট কিনেছে। কিছু পরে ঝাঁঝিয়ে উঠল রমণী, “কিছু বলবে নাকি চুপ করে থাকবে?”

আমি পড়লাম আকাশ থেকে। তাও ওর মন রক্ষা করার জন্য বললাম, “না না, এটা শিখার খুব বড় ভুল হয়েছে।”

কাঁধে চিমটি কেটে কানের কাছে চেঁচিয়ে উঠল তিতলি, “শিখা কোথা থেকে এলো এখানে?” আমি চিন্তায় পরে গেলাম। শিখা নয় তাহলে কার নামে আমাকে এতক্ষন ধরে নালিশ করছিল তিতলি। দুম করে পিঠের ওপরে কিল মেরে কাঁদো কাঁদো কন্ঠে বলল, “তুমি আমার কোন কথা শোন না। যাও আমি আর তোমাকে কিছুই বলব না।”

অগত্যা পাঁচমাথা পার করে বাইক দাঁড় করাতে হল আমাকে। ঘাড় ঘুরিয়ে দেখলাম চোখের কোল ছলকে আসার যোগার রূপসী কন্যের। আমি ওকে সান্ত্বনা দিয়ে বললাম, “এই দেখো। বাইক চালালে কথা শোনা যায় নাকি? তুমি বল। প্লিজ কাঁদে না।” আমি ওর চোখের দিকে গভীর ভাবে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, “তুমি রেনকোট কিনেছ?”

মাথা দোলায় তিতলি, “হ্যাঁ।” টিয়াপাখির মতন নাকের ডগায় লালচে রঙ ধরে যায়। লাজুক হেসে আমাকে বলল ললনা, “ছাতা নিয়ে বাইকে চড়া যায় নাকি?”

আমি মাথা নাড়িয়ে হেসে ফেললাম। জিজ্ঞেস করলাম, “ছাতাও এনেছ?”

মুচকি হেসে মাথা দোলাল, “হ্যাঁ, ওটা তো নিতেই হবে।”

আমি ওকে বললাম, “ঝামেলা তাহলে বাড়ল কি বল।”

নিচের ঠোঁট দাঁতে চেপে বলল, “মনে হয়।” আকাশের দিকে দেখে বলল, “কোলকাতায় কেন যে মরতে এত বৃষ্টি হয় জানি না বাপু।”

আমিও হেসে ফেললাম, “তাহলে তো কোলকাতা ছেড়ে চলে যেতে হয়।”

চোখ জোড়া চকচক করে উঠল তিতলির। কন্ঠে ভরা উৎফুল্ল, “কোথায় নিয়ে যাবে?”
 
হটাত ওইভাবে চোখ জোড়া চকচক করতে দেখে আমার ভয় পেয়ে গেল। করছি কি আমি? আগুনে ঘৃতাহুতি কেন দিচ্ছি? আমি তো এসেছিলাম একটু দেখা করতে। অনির্বাণের সাবধান বানী মনে পরে যেতেই গলাটা শুকিয়ে গেল। সেই সাথে এই একটু আগেই কথা বলতে বলতে ওর কাকার ব্যাপারে তিতলির মুখ ফস্কে বেড়িয়ে গেছিল। ভয় ঢুকে গেল আমার মনের মধ্যে। সত্যি ভিতু ছেলে আমি। আবার বাইক স্টার্ট করে দিলাম। আমাকে পেছন থেকে দুই হাতে জড়িয়ে ধরল তিতলি।
 
পিঠের ওপরে নরম গাল ঘষে আমাকে জিজ্ঞেস করল, “তুমি পুজোতে কি করছ?”

বুক ভরে শ্বাস নিলাম আমি। একটু ভেবে উত্তর দিলাম, “দিম্মা মানে আমার দিদাকে নিয়ে হরিদ্বার ঋশিকেশ ঘুরতে যাবো।”

শুকনো কন্ঠে উত্তর এলো, “তুমি পুজোতে কোলকাতায় থাকবে না?”

মাথা নাড়লাম আমি, “না গো। দিম্মা অনেকদিন ধরেই হরিদ্বার ঋশিকেশ যাওয়ার কথা বলছেন, এইবারে নিয়ে যেতেই হবে।” চুপ করে আমার পিঠের ওপরে ওর মৃদু শ্বাসের লয় অনুভব করতে পারছি। পরের দিন রাতে আমি থাকব না সেটা জানানো দরকার। বুকে বল নিয়ে আমি ওকে বললাম, “কাল রাতে ক্লাসের পরে আমি দুর্গাপুর যাবো।”

তিতলি আমাকে জিজ্ঞেস করল, “রাতে দুর্গাপুর যাবে?”

আমি বললাম, “হ্যাঁ, ওইখানে আমার মামাতো দাদা থাকে।”

আমাকে জিজ্ঞেস করল, “রাতে কেন? সকালের ট্রেনে চলে যেও।”

আমি ওকে বললাম, “দাদা রাতেই যেতে বলেছে।”

তিতলি ছোট করে একটা উত্তর দিল, “আচ্ছা।” ওর গলা শুনে বুঝতে পারলাম যে ও আমার কথা একদম বিশ্বাস করেনি।
 
যদিও কথাটা ঠিক নয়। পরেরদিন সকালে গেলেও কোন অসুবিধে হত না। ভয়টা আমার বুকের মধ্যে কাঁটার মতন বিঁধে গেছে। কিছুতেই ছাড়াতে পারছি না। যদি কোনদিন ধরা পরি তাহলে যদি মেরে ফেলে তাহলে তো ঠিক আছে। কিন্তু যদি না মেরে হাত পা ভেঙ্গে রেখে দেয় তাহলেই মুশকিল। কার গলগ্রহ হয়ে বাকি জীবন কাটাবো?
 
বাকি রাস্তা আমার পিঠের ওপর থেকে সরে গিয়ে শুধু মাত্র কাঁধে হাত রেখে নিজের ভার সামলে বসে রইল। কারুর মুখে কোন কথা নেই। যথারীতি ওকে ওর গলির মুখে নামিয়ে দিলাম। অন্যদিনের মতন আর সেদিন দাঁড়াল না তিতলি। বাইক থেকে নামার পরেই, আমাকে বিদায় না জানিয়েই মাথা নিচু করে হেঁটে চলে গেল। আমি চুপচাপ দাঁড়িয়ে ওর চলে যাওয়ার দিকে নিস্পলক চোখে তাকিয়ে রইলাম। গলির বাঁকে আধো আলো আঁধারে দাঁড়িয়ে আমার দিকে একটু তাকিয়ে দেখল। মাথা নারল না। চুপচাপ হারিয়ে গেল গলির বাঁকে।
 
সারাটা রাত আমি শুধু ছটফট করেই বিছানায় কাটিয়ে গেলাম। কেন দেখা করতে গেলাম আমি ওর সাথে। এর আগেও বৃষ্টি হয়েছে, এর আগেও ওই বাসস্টান্ডের নিচে নিশ্চয় অনেকবার দাঁড়িয়ে থেকেছে তিতলি। সেদিন কেন বৃষ্টি এলো? না আসলেই পারত। সেদিন না হয় দাঁড়িয়েছিলাম, কিন্তু তারপরে তো বেশ কয়েকবার শুধু মাত্র দেখাই হয়েছিল। কেন মরতে সেদিন ওকে বাইকে চাপাতে গেলাম? আসল কথাটা নিজেকে একদম বলতে সাহস পাচ্ছিলাম না আমি। কেন মরতে এক নিষ্পাপ সুন্দরী ললনাকে ভালোবেসে ফেলেছিলাম।
 
পরেরদিন ক্লাসের পরে, যদিও তিতলি আমার দিকে আর ঘুরে তাকায়নি তবে আমি বারবার ওর করুন চোখের ভাষা পড়তে পেরেছিলাম। অফিসে ব্যাগ নিয়েই গেছিলাম, সেই ব্যাগ আমার সাথেই ছিল। ইন্সটিটিউট থেকে বেড়িয়ে বেশ কিছুক্ষন বাস স্টান্ডে দাঁড়িয়ে রইলাম। দেখলাম আমার অদুরে তিতলি চুপচাপ দাঁড়িয়ে। আমি থাকতে পারলাম না ওর ওই করুন চেহারা দেখে। আমি দুই পা এগিয়ে গেলাম ওর দিকে। ভাসা ভাসা ঝাপসা হয়ে আসা কাজল কালো নয়ন মেলে আমার দিকে তাকিয়ে রইল তিতলি।
 
আমি আমার ব্যাগ হাতে ওর পাশে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করলাম, “কি হয়েছে?”

অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে ছোট রুমাল দিয়ে চোখের কোল মুছে উত্তর দিল, “কিছু না।”

আমি জিজ্ঞেস করলাম, “বাড়ি যাবে না।”

মাথা নাড়ল, “নাহ।”

আমি হেসে ফেললাম ওর কথা শুনে, “রাত হয়েছে। বাড়ি না গেলে রাতে কোথায় থাকবে?”

চাপা ঝাঁঝিয়ে উঠল ললনা, “জাহান্নুমে যাবো আমি। তোমার তাতে কি?”
 
আমি মাথা নিচু করে ওর সামনে কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে রইলাম। ভীষণ ভাবেই ওর কাঁধে হাত রেখে ওকে বুকের মধ্যে টেনে ধরতে ইচ্ছে করছিল আমার। কিন্তু পারিনি সেদিন। ভিতু ছেলে। এই নাকি ভালোবাসা, ছিঃ।
 
কি ভেবে হটাত করেই আমি তিতলিকে জিজ্ঞেস করলাম, “তোমার কাকুর নাম কি অমিত ব্যানারজি?”
 
আমার মুখে নিজের কাকার নাম শুনেই তিতলির চেহারা রক্ত শুন্য হয়ে গেল। আমার দিকে বিস্ফোরিত নয়নে তাকিয়ে রইল। ঠোঁট জোড়া অল্প খোলা। ধিরে ধিরে ওর চোখ জোড়া ভরে গেল জলে। ওর ওই ভাবে তাকিয়ে থাকা দেখে আমার সব কিছু পরিস্কার হয়ে গেল।
 
ওর চোখে জল দেখে ওকে বুঝাতে চেষ্টা করলাম, “তিতলি বাড়ি যাও।” একটা খালি ট্যাক্সি যাচ্ছিল সেটা কে দাঁড় করিয়ে ওর মধ্যে এক প্রকার জোর করেই ওকে চড়িয়ে দিলাম। ট্যাক্সির জানালা ধরে আমার দিকে করুন চোখে তাকিয়ে রইল। আমি ওকে বললাম, “তিতলি, বাড়ি গিয়ে মাথা ঠান্ডা করে একবার ভেবো। তুমি আর আমি দুই মেরুর দুই প্রান্ত। তুমি আমার সম্বন্ধে কিছুই জানো না।” কথা গুলো বলার সময়ে আমার হৃদপিণ্ড পাঁজরের বাঁধন ছিঁড়ে গলার কাছে এসে ধাক্কা মারছিল। তিতলির চোখ জোড়া ভেসে গেছিল। টপটপ করে জলের ফোঁটা ওর ফর্সা হাত ভিজিয়ে দিচ্ছিল। আমার দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে আসে, “এই পর্যন্ত হয়ত আমাদের দেখা তিতলি। আমি ভিতু, আমি কাপুরুষ।” তারপরে আমি ট্যাক্সির ড্রাইভারকে বললাম তিতলিকে কাজিপাড়া নামিয়ে দিতে।
 
ট্যাক্সি ছাড়ার মুহূর্তে আমার হাত চেপে ধরল তিতলি। ঠোঁট জোড়া তিরতির করে কাঁপছে, দুই নয়নে বন্যা, “আদি আমি তোমায়...”
 
বাকিটা আর শুনতে পারলাম না, তার আগেই ওর ট্যাক্সি ছেড়ে দিল। ওর চোখের একফোঁটা অশ্রু আমার হাতের ওপরে পড়ল। আমি সেই ট্যাক্সির দিকে নিস্পলক চোখে তাকিয়ে রইলাম। আমি বড় পাপী মানুষ। হাতের উল্টো পিঠের ওপরে ওর এক ফোঁটা অশ্রু মনে হল যেন একটা দামী হীরের কণা। ঠোঁট চেপে ধরলাম ওর অশ্রু ফোঁটার ওপরে। কানের মধ্যে শুধু সেই কান্নার রোল প্রতিধ্বনিত হয়, “আদি আমি তোমায়...” বাকি কথা আর শুনতে পেলাম না।





============== পর্ব এক সমাপ্ত [i][b]============== [/b][/i]
[Image: 20210115-150253.jpg]
Like Reply
Ja baba prem suru hote na hotei bichched ... Eta ki holo .. sotti eta kub bedonadayok .. adi r sathe r ki titli r dekha hobe !! Adi r na bola katha ki titli konodin o jante parbe !!
[+] 2 users Like dreampriya's post
Like Reply
(08-01-2021, 03:34 PM)holo to kelo kirti..shanti pelen dujon ke soriye diye..ebar tomar namme e supari debo pishi ke..pinuda.. pinuram Wrote:


পর্ব এক (
#6-#6)

 
অনির্বাণ রাস্তা পেরিয়ে চলে যেতেই তিতলি আমার গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আমাকে জিজ্ঞেস করল, “তুমি ঠিক আছো?”

আমি মাথা দুলিয়ে উত্তর দিলাম, “হ্যাঁ ঠিক আছি।”

তিতলি আমার চোখের ভেতর দিয়ে গভীর ভাবে তাকিয়ে আমার হৃদপিন্ডের গভীরে প্রবেশ করে জিজ্ঞেস করল, “তোমার মুখ শুকনো কেন গো?”

মাথার মধ্যে তখন অনির্বাণের কথা গুলো আওড়াচ্ছিলাম। এই যাঃ ধরা পরে গেলাম নাকি? না না, হেসে ফেললাম তিতলির দিকে দেখে, “আরে আর বল না। সেই সকালে বেরিয়েছি। প্রথমে জোকা গেলাম, সেখান থেকে ভিজে ভিজে অফিস। অফিসে বসে আবার রিপোর্ট বানাতে হল। তারপরে আবার ভিজে ভিজে ইন্সটিটিউট এলাম তাই ক্লান্ত হয়ে পড়েছি।”

কথাটা যেন ওর বিশ্বাস হল না। গভীর ভাবে আমার চোখ জোড়া নিরীক্ষণ করে আবার প্রশ্ন করল তিতলি, “তুমি সত্যি বলছ?”

আমি ওকে অভয় দিয়ে বললাম, “হ্যাঁ রে বাবা, সত্যি বলছি।”
 
বৃষ্টি এক নাগাড়ে পরেই চলেছে। বাস গুলো বেশ ভিড়। কাঁকুড়গাছির মোড়ে একটা বাস খারাপ হয়ে যাওয়াতে মানিকতলা রোডে জ্যাম লেগে গেছে। তিতলি একদম আমার গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে, ওর বাজুর সাথে আমার বাজু স্পর্শ করে রয়েছে। ইন্সটিটিউট থেকে আমাদের ব্যাচের কয়েকজন বেড়িয়ে এলো, আমাদের ওইভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে ভদ্রতার খাতিরে একটু হেসে চলে গেল। হয়ত মনে মনে কত কিছুই ভেবে নিয়েছে ওরা। ভাবে ভাবুক আমার তাতে কি। সেই বৃষ্টিতে দোকানের শেডের নিচে দাঁড়িয়ে পাশে তিতলিকে দেখে হটাত আমার মনে হল একটু ওর কাঁধে হাত রাখি, আরো একটু কাছে টেনে আনি। আমি ওর দিকে তাকালাম, সেই সাথে তিতলিও আমার দিকে মুখ তুলে তাকিয়ে রইল। চোখ জোড়া ভীষণ ভাবেই ভাসা ভাসা। কিছু একটা বলতে চাইছে ওর কেঁপে ওঠা ঠোঁট জোড়া, বিশেষ করে ডান দিকের ঠোঁটের ওপরের তিলটা। ফর্সা নরম মসৃণ লালচে গালের ওপরে আমার চোখ আটকে গেল। বৃষ্টির ছাঁটে কয়েক ফোঁটা জল ওর ছাতা বেয়ে কখন ওর গালের ওপরে পরে ছিল ওর হয়ত খেয়াল নেই। কয়েক ফোঁটা জল মিলে একটা অতি ক্ষীণ ধারা ওর গাল বেয়ে নিচের দিকে নেমে গেছে। সেই ক্ষীণ ধারার ওপরে আমার চোখ আটকে গেল।

সময় আমাদের মাঝে থমকে। আমার মুখের ওপরে ওর দৃষ্টি আটকে গেছে। ধিরে ধিরে আমাদের বাজুর স্পর্শ গভীর থেকে গভীরতর হয়ে উঠছে। আমার বুকের কাছে জড়সড় হয়ে আসছে তিতলি। জোলো হাওয়া ভীষণ ভাবেই একটা তীব্র আকর্ষণের মাধ্যম হিসাবে কাজ করছে আমাদের দুই তৃষ্ণার্ত হৃদয়ের মাঝে। কিসের তৃষ্ণা জানি না, তিতলিকে যে ভীষণ ভাবেই ভালোবেসে ফেলেছি আমি। প্রশ্নটা, ওকি আমাকে ভালোবাসে নাকি শুধু মাত্র বন্ধুর চোখে দেখে?
 
আমি ওর চোখে চোখ রেখে বললাম, “তিতলি...”

ঘুমের আবেশ কাটিয়ে ওর যেন ঘুম ভেঙ্গে গেল। মৃদু মদির কন্ঠে উত্তর এলো, “কি...”

জড়িয়ে আসছে আমার কন্ঠ, “বাড়ি যাবে না?”

নেতি বাচক সুরে মাথা নাড়িয়ে বলে, “নাহ...” ওর গলাটা অনেক অনেক দূরে থেকে শোনা গেল বলে মনে হল। গলা বসে গেছে তিতলির।

আমি ওকে বললাম, “তিতলি, বৃষ্টি পড়ছে, বাড়ি যাও।”

তিরতির করে কেঁপে উঠল ওর ঠোঁট, “ছাতা মাথায় কি করে বাইক চালাবে?”

কথাটা শুনে আমার গলার কাছে কিছু একটা দলা পাকিয়ে গেল। মেয়েটা আমাকে কিছুতেই ছাড়বে না। আমি ওকে বুঝিয়ে বললাম, “আজকে প্লিজ ট্যাক্সি করে চলে যাও।”

জোরে জোরে মাথা নাড়াল তিতলি, “নাহ, বৃষ্টি থামুক তারপরে তুমি আমাকে দিয়ে আসবে।”

আকাশের দিকে দেখিয়ে ওকে বললাম, “দেখো, সেই দুপুর থেকে কিন্তু বৃষ্টি পড়ছে। আকাশের অবস্থা কিন্তু এখন ভালো নয়। মনে হয় রাতে এই বৃষ্টি থামবে না।”

ধস নামছে দুই হৃদপিণ্ডের মাঝে। কাঁপা কন্ঠে আমাকে জিজ্ঞেস করল, “একা একা?”

আমি ওকে হাসি মুখে প্রবোধ দিয়ে বললাম, “একা কেন রে বোকা মেয়ে। আমি তোমার ট্যাক্সির পেছনেই বাইক নিয়ে থাকব।”
 
আমার কথা শুনে তখন মনে বল পেল তিতলি। এতক্ষন পরে তিতলির মিষ্টি গোলাপি ঠোঁটে হাসি ফুটে উঠল। মাথা দুলিয়ে জানিয়ে দিল ও যেতে রাজি। হাত ধরে রাস্তা পার করলাম। পারলে তিতলি আমার বুকের মধ্যে সেঁধিয়ে যায়, এমন অবস্থা। এবারে আর বাসস্টান্ডে দাঁড়াতে হল না। আমি বাইকের বাক্স খুলে আমার রেনকোট গায়ে চাপিয়ে নিলাম। সারাক্ষন আমার মাথার ওপরে ছাতা ধরে দাঁড়িয়েছিল তিতলি। ট্যাক্সি পেতে একটু বেগ পেতে হল। বৃষ্টির জন্য বেশির ভাগ ট্যাক্সি ভর্তি আর যারাই আসে তারা কেউই ওইদিকে যেতে চাইছে না। এদিকে প্রায় পৌনে ন’টা বাজে। তিতলির চেহারায় অস্থিরতা ফুটে ওঠে।
 
কাঁপা কন্ঠে আমাকে জিজ্ঞেস করে তিতলি, “আদি কি হবে?”

আমি ওকে আসস্থ করে বললাম, “ট্যাক্সি এসে যাবে এত চিন্তা করো না।”
 
বেশ কিছুক্ষন পরে একটা ট্যাক্সি পাওয়া গেল। তিতলিকে ট্যাক্সিতে উঠিয়ে দিতেই ট্যাক্সির দরজা ধরে বসে আমার দিকে তাকিয়ে থাকল। আমি ওকে আসস্থ করে বললাম, এই পেছনেই বাইকে আছি। বাইক নিয়ে ওর ট্যাক্সির পিছু নিলাম। বারে বারে জানালা দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে দেখে। আমাকে একদম ট্যাক্সির পেছনে নয়ত একদম পাশে পাশেই চালিয়ে যেতে হচ্ছিল। বৃষ্টির জন্য রাস্তায় গাড়ির চলাচল ধিমে গতিতে হয়ে গেছে। একটানা বৃষ্টিতে উল্টোডাঙ্গার ব্রিজের নিচে জল জমেছে, সেখানেও জ্যাম। বাইক নিয়ে ওর ট্যাক্সির পাশে যেতেই মুখে হাসি ফুটে উঠল ললনার। ট্যাক্সির পেছনের সিটে বসে, বাঁ দিকের দরজার সামনে সরে এসে কাঁচের জানালা দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসি দিল। আমি হেলমেটের কাঁচ উঠিয়ে ওকে মাথা নাড়িয়ে ইশারায় জিজ্ঞেস করলাম, কি হল? মিষ্টি একটা লাজুক হাসি দিয়ে চোখ নামিয়ে দিল তিতলি। কখন ওর ট্যাক্সির পেছনে, কখন ওর ট্যাক্সির পাশে, এইভাবেই বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে ওর বাড়ির ওইখানে পৌঁছালাম। ট্যাক্সি থেকে নেমে ওর চোখ মুখের অভিব্যাক্তি দেখে মনে হল এতক্ষন যেন একটা খাঁচায় বন্ধী ছিল। মুক্তির স্বাদ পেতেই ডানা মেলে দিয়েছে সুন্দরী প্রজাপতি, তিতলি।
 
ট্যাক্সি থেকে নেমে প্রতিবারের মতন ছাতা মাথায় দাঁড়িয়ে রইল কিছুক্ষন। তারপরে দুষ্টুমি ভরা একটা হাসি হেসে আমাকে জিজ্ঞেস করল, “প্লিজ কাল আমাকে ওই ভিসুয়াল বেসিকটা বুঝাতে আসবে?”

আমি হেসে ফেললাম ওর কথা শুনে। ওই দুষ্টু মিষ্টি অনুরোধ উপেক্ষা করতে পারলাম না। বললাম, “আচ্ছা আসব। তবে আর ফুচকা নয় কিন্তু।”

ছোট বাচ্চার মতন নেচে উঠল তিতলি। মাথা নাড়িয়ে হেসে বলল, “না আর ফুচকা নয়।”
 
আমি ওকে বাড়ি যেতে বলে বাড়ির পথ ধরলাম। বৃষ্টি একটু ধরে এসেছে। সেই সাথে প্রানের মধ্যে এক নতুন জোয়ারের ধারা দেখা দিয়েছে। যে ভাবে পাশে দাঁড়িয়ে আমার সাথে যাওয়ার জেদ করছিল আর মাথা নাড়িয়ে “নাহ” বলেছিল, সেই কথা ভেবে আপন মনেই হেসে ফেলছিলাম। ট্যাক্সির ভেতরে ওর আশঙ্কা ভীতিপূর্ণ অভিব্যাক্তি মনে পড়তেই বিষণ্ণ ভাব জেগে উঠছিল। সারা রাত ঘুমাতে পারলাম না। এক অদ্ভুত অনুভূতি মন প্রান জুড়ে ছেয়ে রইল।
 
পরের দিন বৃষ্টি থেমে গেছিল। চারপাশে গাছে গাছে নতুন সবুজের ভিড়। মেঘলা আকাশের ফাঁকে মাঝে মাঝে সূর্য দেখা দেয়। সারাদিন অফিসে বসে শুধু ওর অপেক্ষায় ছিলাম। কাজেও সেই ভাবে মন বসছিল না। শুধু ভাবছিলাম, কখন বেথুনের সামনে যাবো। মনে মনে ভাবছিলাম, তিতলি কি ভাবছে? পুরুষ শাসিত সমাজ, নিশ্চয় আমার অপেক্ষায় বসে আছে তিতলি।
 
সকালের দিকে তাও মানসিকতা ঠিক ছিল। মাঝে মাঝে ভয় করছিল ওর কাকার কথা ভেবে। যত দিন গড়ায় তত একটা অজানা ভয় ভর করতে শুরু করে আমার বুকের ভেতরে। অনির্বাণের কথা গুলো ভীষণ ভাবেই মনে পরে যায়। ওর কাকা যদি জানতে পারে তাহলে কি পরিনতি হবে জানি না। যদি হাত পা ভেঙ্গে রেখে দেয় তাহলে আমায় কে দেখবে? আমার তো সেই অর্থে কেউই নেই। আমি যদি বিছানায় পরে থাকি তাহলে হোঁৎকা কি চিরকাল আমাকে দেখবে? তোতাপাখিকে নিয়ে ওর একটা সংসার আছে। মামা মামির বয়স হয়েছে, তাদের গলগ্রহ হয়ে না থাকার জন্য তো এই ফ্লাটে এসে একা একা থাকছি। বিকেলে অফিস থেকে বেড়িয়ে একবার ভাবলাম, না সোজা বাড়ি চলে যাই। শুক্রবার রাতে তো আমাকে দুর্গাপুর যেতে হবে। তারপরে রূপসী ললনার টোপা টোপা লালচে গালের কথা মনে পরে গেল। আকুল চোখে আমার দিকে তাকিয়ে বলেছিল, একা একা ট্যাক্সিতে উঠবে না। থাকতে পারলাম না। ভাবলাম শেষ বারের মতন একবার দেখা করে আসি। এই ব্যাচ শেষ হতে বেশি দিন নেই। আগস্ট শেষ হতে চলছে, সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি আমাদের কম্পিউটারের ব্যাচ শেষ হয়ে যাবে। তারপরের সেমেস্টারে আর তিতলির ব্যাচের সাথে এডমিশান নেব না। চোখের সামনে না থাকলে হয়ত কিছুদিনের মধ্যে ভুলে যেতে পারে।
 
সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে বাইক চালাতে চালাতে কখন যে বিধান সরণি ধরেছি খেয়াল নেই। কখন যে বেথুনের সামনে পৌঁছে গেছি সেটাও বুঝতেও পারিনি। একটা অদৃশ্য শক্তি আমাকে টেনে এনেছিল ওর কলেজের সামনে। সেদিন একদম গেটের সামনেই দাঁড়িয়ে ছিল তিতলি। ওর আশেপাশে আরো বেশ কয়েকটা মেয়ের জটলা ছিল। আমাকে দেখতে পেয়েই সবার অলক্ষ্যে আমাকে ইশারায় একটু এগিয়ে যেতে বলে দিল। আমি বুঝতে পারলাম যে আমাকে যদি ওর বান্ধবিরা দেখে ফেলে তাতে ওর অসুবিধে হতে পারে। আমি বসন্ত কেবিন ছাড়িয়ে গিয়ে বাইক দাঁড় করিয়ে দিলাম। আমি সিগারেট ধরিয়ে একটু অপেক্ষা করলাম তিতলির জন্য। বেশ কিছুক্ষন পরে দুর থেকে দেখতে পেলাম তিতলি বেশ তাড়াতাড়ি আমার দিকে হেঁটে আসছে। ওর চোখ মুখের লালিমা দেখে মনে হল কোন মতে বিডন স্ট্রিট পার করেই যেন ঝাঁপিয়ে পরবে আমার ওপরে। ওকে দেখে সিগারেটে বেশ কয়েকটা জোরে জোরে টান মেরে শেষ করে দিলাম।
 
আমার কাছে এসে মৃদু বকুনি দিল, “সিগারেট না খেলেই নয় নাকি?”

মৃদু হাসলাম আমি, “এটাই আছে একমাত্র সঙ্গী।”

ক্ষনিকের জন্য ফর্সা চেহারা মেঘে ঢেকে গেল। তারপরে বাইকের সিট দেখিয়ে বলল, “চল।” কন্ঠে একটা আদেশের ভাব।

আমি মনে মনে হেসে ফেললাম। জিজ্ঞেস করলাম, “ভিসুয়াল বেসিক?”

সঙ্গে সঙ্গে উত্তর এলো অভিমানী ললনার, “জলে ডুবে মরেছে।”

আমার ওপরে অভিমানের কারণ বুঝতে পারলাম না। আমি ওকে জিজ্ঞেস করলাম, “কি হয়েছে?”
 
বুকের ওপরে পেলব ফর্সা হাত দুটো ভাঁজ করে রাখা, কাঁধে শান্তিনিকেতনি ঝোলা ব্যাগ, পরনে একটা কাঁচা হলুদ রঙের সালোয়ার কামিজ। কালো চাবুকের মতন বাঁকা ভুরুর মাঝে একটা ছোট মেরুন রঙের টিপ, আর ঠোঁট জোড়ায় সব দিনের মতন গোলাপি রঙ। রূপসী ললনা কোনদিন মেকি সাজে সেজে আসতে দেখিনি।
 
আমার কাছে সরে এসে মৃদু ঝাঁঝিয়ে উঠল, “মিতাটা খুব শয়তান।”

আমি অবাক হয়েই ওকে জিজ্ঞেস করলাম, “কি হল মিতার সাথে?”

মৃদু ঝাঁঝিয়ে উঠল ললনা, “তুমি আমাকে এখান থেকে নিয়ে যাবে না এখানে দাঁড়িয়েই জেরা করবে?”
 
বুঝতে পারলাম, কিছু একটা নিয়ে বান্ধবীদের সঙ্গে মন কষাকষি হয়েছে। অগত্যা রথ তৈরি করে সারথি চেপে বসলো। যথারীতি রাজকন্যে রথে চেপে বসে সারথির কাঁধ ধরে রথ চালাতে আদেশ করল। হেলমেট আর পড়লাম না। ধিরে ধিরেই বিধান সরনি ধরে এগোতে লাগলাম। চুপচাপ আমার কাঁধে হাত রেখে পেছনে বসে তিতলি।
 
মিনার পার করার পরে মুখ খুলল রূপসী ললনা, “আমি আজ একটা রেনকোট কিনেছি, সেই নিয়ে কত প্রশ্ন। কেন আমি রেনকোট কিনেছি। রেনকোট পরে কেউ কি ট্যাক্সিতে চাপে নাকি।” আমি ওর কথা শুনে অবাক। মেয়ে বাইকে চাপবে বলে রেনকোট কিনেছে? তিতলির বুকের জমানো কথা কি আর থামতে চায়, “আমিও বললাম, যা তুই নিজের চরকায় তেল দে। মিতা জিজ্ঞেস করল তোমার কথা। আমি ওকে বললাম যে আমার কম্পিউটার ব্যাচের, আমাকে ওই ভিসুয়াল বেসিক বুঝাতে এসেছিল। কিছুতেই বিশ্বাস করে না। আচ্ছা বল, আমি কি মিথ্যে বলেছি নাকি?” আমি মাথা নাড়লাম, একদম নয়। আমি তো ভিসুয়াল বেসিক বুঝাতেই এসেছিলাম। বাধ সেধেছিল ওই আকাশ আর ফুচকা। ললনা পেছনে বসে বলেই চলেছে, “কত যেন চিন্তা আমার জন্য। আমার কাকা জানতে পারলে আমার কি হবে। আরে বাবা তোর তাতে কি? তুই তো কোন বুড়োর সাথে ঘুরে বেড়াস আমি কি দেখতে গেছি নাকি? এমনিতে তো কফিহাউস কিম্বা এই বসন্ত কেবিনে বসে কতদিন আমার টাকায় সিঙ্গারা কচুরি খেয়েছিস। তখন?” কি যে বলছে কিছুই বুঝতে পারছিলাম না, তাও অগত্যা মাথা নাড়াতে হচ্ছিল আমাকে। শুধু মনে হচ্ছিল বাইক থামিয়ে ওর লালচে গালে একটা চুমু খাই। পাগলি মেয়েটা আমার বাইকে বসবে বলে রেনকোট কিনেছে। কিছু পরে ঝাঁঝিয়ে উঠল রমণী, “কিছু বলবে নাকি চুপ করে থাকবে?”

আমি পড়লাম আকাশ থেকে। তাও ওর মন রক্ষা করার জন্য বললাম, “না না, এটা শিখার খুব বড় ভুল হয়েছে।”

কাঁধে চিমটি কেটে কানের কাছে চেঁচিয়ে উঠল তিতলি, “শিখা কোথা থেকে এলো এখানে?” আমি চিন্তায় পরে গেলাম। শিখা নয় তাহলে কার নামে আমাকে এতক্ষন ধরে নালিশ করছিল তিতলি। দুম করে পিঠের ওপরে কিল মেরে কাঁদো কাঁদো কন্ঠে বলল, “তুমি আমার কোন কথা শোন না। যাও আমি আর তোমাকে কিছুই বলব না।”

অগত্যা পাঁচমাথা পার করে বাইক দাঁড় করাতে হল আমাকে। ঘাড় ঘুরিয়ে দেখলাম চোখের কোল ছলকে আসার যোগার রূপসী কন্যের। আমি ওকে সান্ত্বনা দিয়ে বললাম, “এই দেখো। বাইক চালালে কথা শোনা যায় নাকি? তুমি বল। প্লিজ কাঁদে না।” আমি ওর চোখের দিকে গভীর ভাবে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, “তুমি রেনকোট কিনেছ?”

মাথা দোলায় তিতলি, “হ্যাঁ।” টিয়াপাখির মতন নাকের ডগায় লালচে রঙ ধরে যায়। লাজুক হেসে আমাকে বলল ললনা, “ছাতা নিয়ে বাইকে চড়া যায় নাকি?”

আমি মাথা নাড়িয়ে হেসে ফেললাম। জিজ্ঞেস করলাম, “ছাতাও এনেছ?”

মুচকি হেসে মাথা দোলাল, “হ্যাঁ, ওটা তো নিতেই হবে।”

আমি ওকে বললাম, “ঝামেলা তাহলে বাড়ল কি বল।”

নিচের ঠোঁট দাঁতে চেপে বলল, “মনে হয়।” আকাশের দিকে দেখে বলল, “কোলকাতায় কেন যে মরতে এত বৃষ্টি হয় জানি না বাপু।”

আমিও হেসে ফেললাম, “তাহলে তো কোলকাতা ছেড়ে চলে যেতে হয়।”

চোখ জোড়া চকচক করে উঠল তিতলির। কন্ঠে ভরা উৎফুল্ল, “কোথায় নিয়ে যাবে?”
 
হটাত ওইভাবে চোখ জোড়া চকচক করতে দেখে আমার ভয় পেয়ে গেল। করছি কি আমি? আগুনে ঘৃতাহুতি কেন দিচ্ছি? আমি তো এসেছিলাম একটু দেখা করতে। অনির্বাণের সাবধান বানী মনে পরে যেতেই গলাটা শুকিয়ে গেল। সেই সাথে এই একটু আগেই কথা বলতে বলতে ওর কাকার ব্যাপারে তিতলির মুখ ফস্কে বেড়িয়ে গেছিল। ভয় ঢুকে গেল আমার মনের মধ্যে। সত্যি ভিতু ছেলে আমি। আবার বাইক স্টার্ট করে দিলাম। আমাকে পেছন থেকে দুই হাতে জড়িয়ে ধরল তিতলি।
 
পিঠের ওপরে নরম গাল ঘষে আমাকে জিজ্ঞেস করল, “তুমি পুজোতে কি করছ?”

বুক ভরে শ্বাস নিলাম আমি। একটু ভেবে উত্তর দিলাম, “দিম্মা মানে আমার দিদাকে নিয়ে হরিদ্বার ঋশিকেশ ঘুরতে যাবো।”

শুকনো কন্ঠে উত্তর এলো, “তুমি পুজোতে কোলকাতায় থাকবে না?”

মাথা নাড়লাম আমি, “না গো। দিম্মা অনেকদিন ধরেই হরিদ্বার ঋশিকেশ যাওয়ার কথা বলছেন, এইবারে নিয়ে যেতেই হবে।” চুপ করে আমার পিঠের ওপরে ওর মৃদু শ্বাসের লয় অনুভব করতে পারছি। পরের দিন রাতে আমি থাকব না সেটা জানানো দরকার। বুকে বল নিয়ে আমি ওকে বললাম, “কাল রাতে ক্লাসের পরে আমি দুর্গাপুর যাবো।”

তিতলি আমাকে জিজ্ঞেস করল, “রাতে দুর্গাপুর যাবে?”

আমি বললাম, “হ্যাঁ, ওইখানে আমার মামাতো দাদা থাকে।”

আমাকে জিজ্ঞেস করল, “রাতে কেন? সকালের ট্রেনে চলে যেও।”

আমি ওকে বললাম, “দাদা রাতেই যেতে বলেছে।”

তিতলি ছোট করে একটা উত্তর দিল, “আচ্ছা।” ওর গলা শুনে বুঝতে পারলাম যে ও আমার কথা একদম বিশ্বাস করেনি।
 
যদিও কথাটা ঠিক নয়। পরেরদিন সকালে গেলেও কোন অসুবিধে হত না। ভয়টা আমার বুকের মধ্যে কাঁটার মতন বিঁধে গেছে। কিছুতেই ছাড়াতে পারছি না। যদি কোনদিন ধরা পরি তাহলে যদি মেরে ফেলে তাহলে তো ঠিক আছে। কিন্তু যদি না মেরে হাত পা ভেঙ্গে রেখে দেয় তাহলেই মুশকিল। কার গলগ্রহ হয়ে বাকি জীবন কাটাবো?
 
বাকি রাস্তা আমার পিঠের ওপর থেকে সরে গিয়ে শুধু মাত্র কাঁধে হাত রেখে নিজের ভার সামলে বসে রইল। কারুর মুখে কোন কথা নেই। যথারীতি ওকে ওর গলির মুখে নামিয়ে দিলাম। অন্যদিনের মতন আর সেদিন দাঁড়াল না তিতলি। বাইক থেকে নামার পরেই, আমাকে বিদায় না জানিয়েই মাথা নিচু করে হেঁটে চলে গেল। আমি চুপচাপ দাঁড়িয়ে ওর চলে যাওয়ার দিকে নিস্পলক চোখে তাকিয়ে রইলাম। গলির বাঁকে আধো আলো আঁধারে দাঁড়িয়ে আমার দিকে একটু তাকিয়ে দেখল। মাথা নারল না। চুপচাপ হারিয়ে গেল গলির বাঁকে।
 
সারাটা রাত আমি শুধু ছটফট করেই বিছানায় কাটিয়ে গেলাম। কেন দেখা করতে গেলাম আমি ওর সাথে। এর আগেও বৃষ্টি হয়েছে, এর আগেও ওই বাসস্টান্ডের নিচে নিশ্চয় অনেকবার দাঁড়িয়ে থেকেছে তিতলি। সেদিন কেন বৃষ্টি এলো? না আসলেই পারত। সেদিন না হয় দাঁড়িয়েছিলাম, কিন্তু তারপরে তো বেশ কয়েকবার শুধু মাত্র দেখাই হয়েছিল। কেন মরতে সেদিন ওকে বাইকে চাপাতে গেলাম? আসল কথাটা নিজেকে একদম বলতে সাহস পাচ্ছিলাম না আমি। কেন মরতে এক নিষ্পাপ সুন্দরী ললনাকে ভালোবেসে ফেলেছিলাম।
 
পরেরদিন ক্লাসের পরে, যদিও তিতলি আমার দিকে আর ঘুরে তাকায়নি তবে আমি বারবার ওর করুন চোখের ভাষা পড়তে পেরেছিলাম। অফিসে ব্যাগ নিয়েই গেছিলাম, সেই ব্যাগ আমার সাথেই ছিল। ইন্সটিটিউট থেকে বেড়িয়ে বেশ কিছুক্ষন বাস স্টান্ডে দাঁড়িয়ে রইলাম। দেখলাম আমার অদুরে তিতলি চুপচাপ দাঁড়িয়ে। আমি থাকতে পারলাম না ওর ওই করুন চেহারা দেখে। আমি দুই পা এগিয়ে গেলাম ওর দিকে। ভাসা ভাসা ঝাপসা হয়ে আসা কাজল কালো নয়ন মেলে আমার দিকে তাকিয়ে রইল তিতলি।
 
আমি আমার ব্যাগ হাতে ওর পাশে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করলাম, “কি হয়েছে?”

অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে ছোট রুমাল দিয়ে চোখের কোল মুছে উত্তর দিল, “কিছু না।”

আমি জিজ্ঞেস করলাম, “বাড়ি যাবে না।”

মাথা নাড়ল, “নাহ।”

আমি হেসে ফেললাম ওর কথা শুনে, “রাত হয়েছে। বাড়ি না গেলে রাতে কোথায় থাকবে?”

চাপা ঝাঁঝিয়ে উঠল ললনা, “জাহান্নুমে যাবো আমি। তোমার তাতে কি?”
 
আমি মাথা নিচু করে ওর সামনে কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে রইলাম। ভীষণ ভাবেই ওর কাঁধে হাত রেখে ওকে বুকের মধ্যে টেনে ধরতে ইচ্ছে করছিল আমার। কিন্তু পারিনি সেদিন। ভিতু ছেলে। এই নাকি ভালোবাসা, ছিঃ।
 
কি ভেবে হটাত করেই আমি তিতলিকে জিজ্ঞেস করলাম, “তোমার কাকুর নাম কি অমিত ব্যানারজি?”
 
আমার মুখে নিজের কাকার নাম শুনেই তিতলির চেহারা রক্ত শুন্য হয়ে গেল। আমার দিকে বিস্ফোরিত নয়নে তাকিয়ে রইল। ঠোঁট জোড়া অল্প খোলা। ধিরে ধিরে ওর চোখ জোড়া ভরে গেল জলে। ওর ওই ভাবে তাকিয়ে থাকা দেখে আমার সব কিছু পরিস্কার হয়ে গেল।
 
ওর চোখে জল দেখে ওকে বুঝাতে চেষ্টা করলাম, “তিতলি বাড়ি যাও।” একটা খালি ট্যাক্সি যাচ্ছিল সেটা কে দাঁড় করিয়ে ওর মধ্যে এক প্রকার জোর করেই ওকে চড়িয়ে দিলাম। ট্যাক্সির জানালা ধরে আমার দিকে করুন চোখে তাকিয়ে রইল। আমি ওকে বললাম, “তিতলি, বাড়ি গিয়ে মাথা ঠান্ডা করে একবার ভেবো। তুমি আর আমি দুই মেরুর দুই প্রান্ত। তুমি আমার সম্বন্ধে কিছুই জানো না।” কথা গুলো বলার সময়ে আমার হৃদপিণ্ড পাঁজরের বাঁধন ছিঁড়ে গলার কাছে এসে ধাক্কা মারছিল। তিতলির চোখ জোড়া ভেসে গেছিল। টপটপ করে জলের ফোঁটা ওর ফর্সা হাত ভিজিয়ে দিচ্ছিল। আমার দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে আসে, “এই পর্যন্ত হয়ত আমাদের দেখা তিতলি। আমি ভিতু, আমি কাপুরুষ।” তারপরে আমি ট্যাক্সির ড্রাইভারকে বললাম তিতলিকে কাজিপাড়া নামিয়ে দিতে।
 
ট্যাক্সি ছাড়ার মুহূর্তে আমার হাত চেপে ধরল তিতলি। ঠোঁট জোড়া তিরতির করে কাঁপছে, দুই নয়নে বন্যা, “আদি আমি তোমায়...”
 
বাকিটা আর শুনতে পারলাম না, তার আগেই ওর ট্যাক্সি ছেড়ে দিল। ওর চোখের একফোঁটা অশ্রু আমার হাতের ওপরে পড়ল। আমি সেই ট্যাক্সির দিকে নিস্পলক চোখে তাকিয়ে রইলাম। আমি বড় পাপী মানুষ। হাতের উল্টো পিঠের ওপরে ওর এক ফোঁটা অশ্রু মনে হল যেন একটা দামী হীরের কণা। ঠোঁট চেপে ধরলাম ওর অশ্রু ফোঁটার ওপরে। কানের মধ্যে শুধু সেই কান্নার রোল প্রতিধ্বনিত হয়, “আদি আমি তোমায়...” বাকি কথা আর শুনতে পেলাম না।





============== পর্ব এক সমাপ্ত [i][b]==============






[/b][/i]
Ralph..
[+] 2 users Like wanderghy's post
Like Reply
Don't care bhab hoito cinema tei manai. Bastob jibon e sombhob na. Tai Pinudar lekha bastober eto kacha kachi lage.
[+] 4 users Like himadri_hdas's post
Like Reply
তোমার গল্পে এইরকম ভীতু নায়ক হয় ভাবতে পারছি না
তবে এটাও ঠিক যে সবাই তো আর "দেব" এর মত হিরো হয় না। সাধারণ ছেলেরা একটু ভীতুই হয়।
[+] 4 users Like TumiJeAmar's post
Like Reply
এটা কি হলো পিনুদা????
প্রেম শুরু হওয়ার আগেই বিদায় ঘণ্টা বাজিয়ে দিলে....
[+] 3 users Like Avenger boy's post
Like Reply
এই ব্যাপারটাই আমার আপনার সেরা লাগে. বাস্তবের প্রকৃত রূপ আপনি যেভাবে ফুটিয়ে তোলেন সেটা কজন পারে জানিনা. আপনি চাইলেই বাংলার দেব এর চ্যালেঞ্জ পার্ট 3 বানিয়ে ফেলতে পারতেন তা না করে আপনি সত্যিকারের একটি ছেলের কাহিনী তুলেছে ধরছেন আমাদের সামনে. যে বাঁচতে চায়... নিজের জন্য, পরিবারের জন্য. সে মরতে ভয় পায়..... আমি তাকে কাপুরুষ বলবোনা.... সে হয়তো সেইভাবে সাহসী নয় কিন্তু কাপুরুষও নয়. আমি তাই চ্যালেঞ্জের দেবের থেকে সাঁঝবাতির দেব কে দেখা বেশি পছন্দ করি ❤

খুব সুন্দর পর্ব. Like reps added ❤
[+] 4 users Like Baban's post
Like Reply
(08-01-2021, 04:18 PM)dreampriya Wrote: Ja baba prem suru hote na hotei bichched ... Eta ki holo ..  sotti eta kub bedonadayok .. adi r sathe r ki titli r dekha hobe !! Adi r na bola katha ki titli konodin o jante parbe !!

পৃথিবী গোল, দেখা হয়ত একদিন হতেও পারে, তবে কি অবস্থায় হবে কেউ জানে না! এই যেমন রিশু আর চন্দ্রিকা ("শেষের পাতায় শুরু"), প্রেম  করেছিল, বিয়ে করতে পারেনি কিছু কারনে !!!!!!
[Image: 20210115-150253.jpg]
[+] 2 users Like pinuram's post
Like Reply
(08-01-2021, 05:29 PM)himadri_hdas Wrote: Don't care bhab hoito cinema tei manai. Bastob jibon e sombhob na. Tai Pinudar lekha bastober eto kacha kachi lage.

(08-01-2021, 05:32 PM)TumiJeAmar Wrote: তোমার গল্পে এইরকম ভীতু নায়ক হয় ভাবতে পারছি না
তবে এটাও ঠিক যে সবাই তো আর "দেব" এর মত হিরো হয় না। সাধারণ ছেলেরা একটু ভীতুই হয়।

(08-01-2021, 06:41 PM)Avenger boy Wrote: এটা কি হলো পিনুদা????
প্রেম শুরু হওয়ার আগেই বিদায় ঘণ্টা বাজিয়ে দিলে....

আসলে আমি বাংলা সিনেমা দেখিনি বহু বছর হয়ে গেছে, তাই এই "দেব" কে চিনি না!
বাস্তব বড় কঠিন, মাটিতে পা রেখে চলতেই হয় আমাদের সবাইকে! হয়ত আদি ভীতু কাপুরুষ, হয়ত নয়! কে জানে আদির কপালে কি আছে !!!!!!
[Image: 20210115-150253.jpg]
[+] 2 users Like pinuram's post
Like Reply
(08-01-2021, 07:16 PM)Baban Wrote: এই ব্যাপারটাই আমার আপনার সেরা লাগে. বাস্তবের প্রকৃত রূপ আপনি যেভাবে ফুটিয়ে তোলেন সেটা কজন পারে জানিনা. আপনি চাইলেই বাংলার দেব এর চ্যালেঞ্জ পার্ট 3 বানিয়ে ফেলতে পারতেন তা না করে আপনি সত্যিকারের একটি ছেলের কাহিনী তুলেছে ধরছেন আমাদের সামনে. যে বাঁচতে চায়... নিজের জন্য, পরিবারের জন্য. সে মরতে ভয় পায়..... আমি তাকে কাপুরুষ বলবোনা.... সে হয়তো সেইভাবে সাহসী নয় কিন্তু কাপুরুষও নয়. আমি তাই চ্যালেঞ্জের দেবের থেকে সাঁঝবাতির দেব কে দেখা বেশি পছন্দ করি ❤

খুব সুন্দর পর্ব. Like reps added ❤

সবাই কি আর সিনেমার হিরো হয় গো? পা ঘুরালেই ঘূর্ণিবার্তা শুরু হয়ে যাবে, পা ফেললেই দুম দাম করে মানুষ উড়বে, গাড়ি উড়বে! আসলে কি সেটা কখন হয় নাকি? রক্ত মাংসের মানুষ পিনুরাম, তাই রক্ত মাংসের মানুষের গল্প লেখে! অতিমানবের গল্প সত্তর এম এম এর পর্দায় ভালো লাগে !!!!!!
[Image: 20210115-150253.jpg]
[+] 3 users Like pinuram's post
Like Reply
এতই যদি পোঁদে ভয় তাহলে তো প্রেম করা উচিত নয় ! পুরুষ সেই যে সমস্ত ভয়কে বিপদকে উপেখ্যা করে তার প্রেয়সীকে উদ্ধার করে টাকে এক নতুন জীবন দান করে ! 
[+] 3 users Like ddey333's post
Like Reply
(08-01-2021, 08:14 PM)dada_of_india Wrote: এতই যদি পোঁদে ভয় তাহলে তো প্রেম করা উচিত নয় ! পুরুষ সেই যে সমস্ত ভয়কে বিপদকে উপেখ্যা করে তার প্রেয়সীকে উদ্ধার করে টাকে এক নতুন জীবন দান করে ! 

Big Grin Big Grin  কে কাকে বলে Lotpot Lotpot Lotpot !!!!!!
[Image: 20210115-150253.jpg]
[+] 2 users Like pinuram's post
Like Reply
শুরু হয়ে গেলো , সেই লড়াই , সেই নাম না জানা যুদ্ধ এই পৃথিবীর সাথে , তার চেয়েও বেশি নিজের সাথে ...
আদি তুমি হেরো না , শেষ লড়াইয়ের জন্য বুক বেঁধে নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ো অজানা ওই ভবিষ্যতের উদ্যেশ্যে, তিতলি একটাই আছে আর ছিল , সবাই বার বার হেরে গিয়ে পিছিয়ে যাবে না ওর জন্য ....

ভালোবাসা কারো জন্য দীর্ঘ প্রক্রিয়া , আর কারো জন্য সপ্ন ..
কষ্ট কিন্তু দুটোতেই সমান ..
[+] 2 users Like ddey333's post
Like Reply
(08-01-2021, 08:32 PM)ddey333 Wrote: শুরু হয়ে গেলো , সেই লড়াই , সেই নাম না জানা যুদ্ধ এই পৃথিবীর সাথে , তার চেয়েও বেশি নিজের সাথে ...
আদি তুমি হেরো না , শেষ লড়াইয়ের জন্য বুক বেঁধে নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ো অজানা ওই ভবিষ্যতের উদ্যেশ্যে, তিতলি একটাই আছে আর ছিল , সবাই বার বার হেরে গিয়ে পিছিয়ে যাবে না ওর জন্য ....

ভালোবাসা কারো জন্য দীর্ঘ প্রক্রিয়া , আর কারো জন্য সপ্ন ..
কষ্ট কিন্তু দুটোতেই সমান ..

যুদ্ধ করলে পরীকে পাওয়া যায় আর না হলে তিতলিকে হারাতে হয়! এর বেশি আমার কিছু বলার নেই !!!!!
[Image: 20210115-150253.jpg]
[+] 3 users Like pinuram's post
Like Reply
খুব হৃদয় বিদারক পর্ব। মনটা ভারী হয়ে গেল, বুকের ভেতরটা খালি খালি লাগছে। বুধাদিত্যের ভয়টা অমূলক নয়, কিন্তু পিনুরামের গল্পের নায়কদের মনোবল তো এতো কম হয় না ! দাঁতে দাঁত চেপে সংগ্রামের প্রতীক, বহু যুদ্ধের নায়ক আমাদের পিনুরাম। তাই পূর্ণ বিশ্বাস আছে, সুদিন ফিরবেই, শুধু বুধোকে আত্মবিশ্বাস রাখতে হবে। আরে ভালোবাসায় ধনী-গরিব একটা কথা হলো ? ভালোবাসার জোরে এক রিকশাচালক আইপিএস হয়ে যেতে পারে ( এটা সিনেমা বা কামদেবের গল্প নয়, সত্যি ঘটনা ), সেখানে বুধো শুরুতেই ভেঙে পড়বে কেন ? 
[+] 3 users Like Mr Fantastic's post
Like Reply
(08-01-2021, 08:55 PM)Mr Fantastic Wrote: খুব হৃদয় বিদারক পর্ব। মনটা ভারী হয়ে গেল, বুকের ভেতরটা খালি খালি লাগছে। বুধাদিত্যের ভয়টা অমূলক নয়, কিন্তু পিনুরামের গল্পের নায়কদের মনোবল তো এতো কম হয় না ! দাঁতে দাঁত চেপে সংগ্রামের প্রতীক, বহু যুদ্ধের নায়ক আমাদের পিনুরাম। তাই পূর্ণ বিশ্বাস আছে, সুদিন ফিরবেই, শুধু বুধোকে আত্মবিশ্বাস রাখতে হবে। আরে ভালোবাসায় ধনী-গরিব একটা কথা হলো ? ভালোবাসার জোরে এক রিকশাচালক আইপিএস হয়ে যেতে পারে ( এটা সিনেমা বা কামদেবের গল্প নয়, সত্যি ঘটনা ), সেখানে বুধো শুরুতেই ভেঙে পড়বে কেন ? 

এই ব্যাপারে আমি বলবো একজন ডিরেক্টর যদি তার সব ফিল্মে তার নায়কদের একই রকম দেখাতো তাহলে কি ভালো লাগতো? নতুনত্ব থাকতো না কিছুই. কখনো আব্বাস মাস্তানের ফিল্মে শাহরুখ প্রতিশোধ নিতে নিজের পথের সব বাঁধা একাই সরিয়ে দিচ্ছে (Bazigaar) আবার সেই ডিরেক্টর দের পরের ফিল্মে সেই শাহরুখ একটা কুকুরকে ভয় পেয়ে পালাচ্ছে (Badshah)

এখানেই তো লেখকের আসল খেলা. সে কিভাবে তার চরিত্রদের নিয়ে খেলবে. তাদের  নতুন  নতুন  ভাবে আমাদের সামনে  নিয়ে  আসবে. আশা করি  সব ঠিক হয়ে যাবে. ❤ শেষের মুহুর্ত টা যা লিখেছে দাদা উফফফফ....
[+] 2 users Like Baban's post
Like Reply
খুব সুন্দর হচ্ছে। কিনতু আদি কি আসলেই ভিতু। সে কি তিতলির কাকা কে ভয় পেয়ে নিজের ভালোবাসাকে বিদায় জানিয়ে দিলো ১ম পর্বে। ২য় পর্বে কি হয় তা জানার অপেক্ষায় রইলাম। আর তিতলি কি আদি আমি তোমায় ভালোবাসি বলতে চেয়েছিলো।
Like Reply




Users browsing this thread: 73 Guest(s)