25-12-2020, 06:47 PM
কাটলেটে শেষ কামড়টা দিতেই পিঠে হটাৎ একটা জোরে চাপড় পড়লো. ভুরু কুঁচকে তাকিয়ে অবাক. সঞ্জয়!! এতো বছর পর!!
সঞ্জয় দুস্টু রাগী চোখেই তাকিয়ে বললো - কিরে শালা? কোথায় ছিলি এতো বছর? ব্যাটা সেই কলেজ শেষ হতে না হতেই গায়েব? শালা... তুমি বহুত চালু মাল হ্যা.... কলেজ শেষ তো বন্ধুত্বও শেষ?
আমি হেসে উঠে দাঁড়িয়ে জড়িয়ে ধরলাম ওকে. তারপর বললাম - আচ্ছা তাই বুঝি? শালা তুমি যে প্রতিবার আমার পরীক্ষার খাতায় চক্ষুদান করতে.. তখন কি তোমায় আটকেছি? আর আমায় চালু বলছিস? তারপর হেসে বললাম - আরে কি করবো বল? তোর আর বাকিদের নম্বর গুলো আমার ফোনে ছিল... আর সেটাই গেলো চুরি... মানে তারপর নানারকম ঝামেলা এই করো ওই করো..কিছু ফ্যামিলি প্রব্লেম ছিল... উফফফফ....তারপর তো আমরা অনেকদিন অন্য জায়গায় শিফট করেছিলাম. রাতুলের সাথে পরে দেখা হতে ও বলেছিলো তোরাও অন্য জায়গায় ফ্লাট নিয়ে চলে গেছিস. এদিকে আমিও নিজের জীবন নিয়ে ব্যাস্ত হয়ে পড়লাম. ছাড় ওসব কথা. তা গুরু তুমি তো ফুলে গেছো ভাই? এতো ভুঁড়ি কিকরে এলো রে? খুব সাঁটাচ্ছিস না?
সঞ্জয় পেটে হাত বুলিয়ে বললো - এটা কৃতিও বলে রে. কিন্তু কিকরবো বল... শালা কিছুতেই খাওয়া কমাতেই পারছিনা.
আমি চোখ মেরে বললাম - এইযে.... কৃতিটা কে হ্যা? আমাদের কলেজে কৃতি বলে তো কেউ ছিলোনা....
সঞ্জয় বললো - ওরে... সেই কচি বয়স কি আর আছেরে... যে এদিক ওদিক খুঁজে বেড়াবো... কলেজে অন্য জিনিস....তখন আলাদা ব্যাপার ছিল গুরু..... আজ তো আমার হাল দেখছিস.....কৃতি আমার ওয়াইফ. দাঁড়া... পরিচয় করিয়ে দি.....
এই কৃতি এদিকে এসো.
আমি দেখলাম নীল সালোয়ার পরিহিতা এক বেশ সুন্দরী নারী হাসি মুখে আমাদের দিকে তাকালো. তারপর হাসি মুখে আমাদের দিকে এগিয়ে এলো.
আমি নমস্কার করলাম. উনিও প্রত্তুতরে নমস্কার করলেন. তারপর উনি বললেন - দাদা..... আপনার কথা ওর থেকে অনেকবার শুনেছি. এখানে এসে আপনাকে দূর থেকে দেখে একবার আমায় বললো চেনা চেনা লাগছে. তারপর চিনতেই ছুটে গেলো আপনার কাছে.
আমি মুচকি হাসলাম.
তারপর কৃতি আমাকে একবার দেখে নিয়ে স্বামীর দিকে তাকিয়ে বললো - দেখো.... দেখো নিজের বন্ধুকে.... কি হ্যান্ডসম... কি সুন্দর ভাবে আজও নিজেকে মেইনটেইন করেছেন... আর তুমি.... ইশ.... নিজের পেটের দিকে দেখো একবার.
সঞ্জয় আমার দিকে তাকিয়ে বললো - ওই... দেখলি? শুরু হয়ে গেলো.
আমরা তিনজনেই হেসে উঠলাম. তারপর ভদ্রতার খাতির আমিই বললাম - আয়না.... আমার এখানে বোস. তোরা কি অর্ডার দিয়ে দিয়েছিস?
সঞ্জয় বললো - আরে নারে..... আমরা তিনজন ঢুকে সবে বসেছি... এমন সময় তোর দিকে নজর গেলো আমার. আমার মনেই হচ্ছিলো ওটা তুই. তারপর তুই যখন ওয়েটার কে ডাকতে পাশে তাকালি... পুরো তোর মুখটা দেখতে পেলাম. তাই তো গিয়ে সোজা চাপড়.
আমি বললাম - ইশ.....ব্যাটা যা জোরে মারলি... উফফফ.....তোর শয়তানি গেলোনা... জানেন বৌদি? ব্যাটা.... কলেজে এইভাবেই রোজ আমায় চাপড় দিতো.
তারপরই একটা কথা মাথায় এলো. জিজ্ঞেস করলাম - এক মিনিট... তুই কি বললি? তিনজন? আরেকজন কে?
সঞ্জয় মাথায় হাত রেখে জিভ বার করে বললো - এমা! দেখেছিস... মেয়েটাকে একা বসিয়ে চলে এসেছি. আমার স্ত্রীয়ের বান্ধবী. দাঁড়া পরিচয় করিয়ে দি..... এই অঞ্জলি.
নামটা শুনেই পলকের মধ্যে হাজার মুহুর্ত মনে পড়ে গেলো আমার. কেমন একটা করে উঠলো বুকের ভেতরটা. এই নামটা..... এই নামটা কোনোদিন কি আমার পিছু ছাড়বেনা? ওই নামটাকে কি ভুলতে পারবোনা আর কোনোদিন?
যাক গে..... মাথা থেকে সব ঝেড়ে ভদ্রতার খাতিরে হাসি মুখে সঞ্জয় যে দিকে তাকিয়ে আছে সেই দিকে তাকালাম.
নিজের নাম শুনে কিছুদূরে বসে থাকা মেয়েটি আমাদের দিকে ঘুরে তাকালো. আর তখনি মনে হলো পায়ের তলা থেকে মাটি সরে যাচ্ছে. তৎক্ষণাৎ আমার মুখ ঘুরিয়ে নিলাম.
এ কাকে দেখলাম আমি!! না না..... এতো বছর পর. আবার?
পায়ের শব্দ প্রতি মুহূর্তে এগিয়ে আসছে. আর ততই দ্রুত হচ্ছে আমার বুকের ধুকপুকানি. শেষে আমার পাশে এসে সে দাঁড়ালো.
সঞ্জয় হেসে তাকে বললো - হ্যা... আলাপ করিয়ে দি..... আমার কলেজ ফ্রেন্ড অনির্বান.
হাসি মুখেই সে নিজের মুখ সঞ্জয়ের থেকে ঘুরিয়ে আমার দিকে তাকালো. আর তারপরেই তার মুখের হাসিও মিলিয়ে গেলো. হাত দুটো নমস্কার করবে বলে জড়ো করতেই যাচ্ছিলো. দুই হাত সেই দূরত্বেই থেকে গেলো. আমার বুঝতে বাকি রইলোনা যে সামনের মানুষটার অবস্থাও আমার মতোই. তার ভেতরেও একটা ঝড় শুরু হয়েছে. অনেক মুহূর্ত তার সামনেও হয়তো ভেসে উঠেছে.
পরিস্থিতি সামলাতে আমি দুই হাত জড়ো করে বললাম - নমস্কার.
সেও অবাক হয়ে তারপর পরিস্থিতির গাম্ভীর্য বুঝে নকল হাসি হেসে আমায় নমস্কার জানালো.
এটা করতে যে তাকে বেশ কষ্ট করতে হয়েছে বুঝলাম. আমারো তো একি অবস্থা.
আমরা সবাই একসাথেই খেতে বসলাম. আমি আর সঞ্জয় একদিকে আর অন্যপাশে দুই বান্ধবী. সঞ্জয় নিজেদের অর্ডার দিলো. আমি তো বেশ কিছুক্ষন আগেই এসেছিলাম তাই আমার খাওয়া শেষই হয়েছে গেছিলো. তবু বন্ধু জোর করে আবার আমার জন্য অর্ডার দিলো. আমি বারণ করলাম কিন্তু কে শোনে. খাবার আসলে সবাই খেতে লাগলাম. খেতে খেতে বার বার সামনের মানুষটার দিকে নজর চলে যাচ্ছিলো. আজও বেশি ঝাল খেতে পারেনা. তবু সেটাই বেশি করে খায় . বার বার নাক টানে. আজও তার পরিবর্তন লক্ষ্য করলাম না. শেষের চিকেনটা পুরো খেলনা. খাওয়া অনেক কমিয়ে দিয়েছে. একটু রোগাও হয়ে গেছে. না তবে সেই পাগল করা রূপটা একটুও কমেনি. সবুজ শাড়ীটাতে অসাধারণ লাগছে.
আমার বন্ধুটি আবার খাবার সময় স্পিক্ টি নট. সব ভুলে মাংসের পা চিবোচ্ছে. কি মোটকুই না হয়েছে. কলেজের সময় থেকে কত পাল্টে গেছে ব্যাটা.
আরে ওকে কি বলছি? আমি কি পাল্টাইনি? হ্যা পাল্টেছি.... অনেক পাল্টেছি..... ওর থেকেও বেশি পাল্টেছি একসময়. বাইরে থেকে নয়.... ভেতর থেকে. আর সেটাই তো ছিল আমার.... না.... আমার কেন? আমাদের মাঝে দূরত্বের কারণ.
তাই হয়তো একবারও সোজা তাকিয়ে দেখতে পারিনি সামনে বসে থাকা সুন্দরী নারীটির দিকে. সবসময় খাবার অছিলায় চোখ নামিয়ে ছিলাম. আচ্ছা ও কি আমাকে দেখছে? নাকি একবারের জন্যও তাকায়নি? সত্যি কি তাকায়নি?
এদিকে আমার প্রায় দ্বিগুন গেরাচ্ছে সঞ্জয়টা. কৃতি নিজের স্বামীর খাওয়া দেখে আমায় ইশারায় ওকে দেখিয়ে বললো - দেখেছেন আপনার বন্ধুর কান্ড? কত বলি কন্ট্রোল করো, শুনবেই না কিছু.
সঞ্জয় মাংস চিবোতে চিবোতেই বললো - ওসব ডায়েটিং ফায়েটিং আমার দ্বারা হবেনা গুরু.... আমি এই বেশ আছি. খেতে দাও তো... খেতে দাও. দেখছিস ভাই.....? সবসময় আমার খাওয়া নিয়ে খোঁটা দেবেন ইনি. আরে বেচারা মানুষটার একটু খেতে ভালো লাগে আর সেটা নিয়ে এরকম অত্যাচার... উফফফ.
আমরা হেসে উঠলাম. তারপর হটাৎ একটা প্রশ্নবান ছুটে এলো আমার দিকে সামনের দিক থেকে.
দাদা.... আপনি কি বিয়ে করেছেন? নাকি এখনো অবিবাহিত?
সঞ্জয় বললো - হ্যা রে? সেটাতো জিজ্ঞেসই করা হয়নি.... এখনো unmarried নাকি..... অবশ্য যা হ্যান্ডসম হয়েছিস.... সত্যি যা লাগছেনা তোকে..উফফ দেখেই বোঝা যাচ্ছে... হেব্বি মাল্লু কামাচ্ছিস না ? ওটাই তো আসল জিনিস... কি বল?
আমি মুচকি হাসলাম. দেখলাম সামনে বৌদির পাশে বসে থাকা মানুষটা একবার আমার দিকে তাকিয়ে আবার খেতে লাগলো.
কৃতি বৌদির প্রশ্ন শুনে কি বলবো বুঝতে পারলাম না.... একজন সামনে উপস্থিত না থাকলে হয়তো মিথ্যেটাই বলতাম. কিন্ত......শেষমেষ সত্যিটাই বলে ফেললাম. আর কত এড়িয়ে যাবো এই সত্যিটা?
আমি - হ্যা... করেছি..... I mean করেছিলাম. কিন্তু আমাদের মধ্যে....
এইটুকু শুনেই আমার বন্ধু আর তার স্ত্রীর হাসিমুখটা শান্ত হয়ে গেলো. নিজেদের খাওয়া থেকে সবাই একটু বিরতি দিলেন শুধু একজন বাদে. সে একবারের জন্যও না তাকিয়ে নিজের ফোনে কি দেখছে আর খাচ্ছে.
সঞ্জয় - ওহ... সরি রে... আসলে আমরা.....তো.....
আমি হেসে বললাম - আরে দূর ব্যাটা.... এটাতো নরমাল ব্যাপার. আমাদের দুজনেরই প্রব্লেম হচ্ছিলো এই সম্পর্কটা এগিয়ে নিয়ে যেতে.... তার থেকে ভালো ছিল আলাদা হয়ে যাওয়া... আমরা সেটাই করেছি.
কৃতি আর আমার বন্ধু নিজেদের চোখ চাওয়া চাই করে আবার খেতে লাগলেন. অর্থাৎ এই ব্যাপারে আর কোনো কথা নয়. আজ আমরা আর সেই কলেজের বিচ্ছু স্টুডেন্ট নই, পুরোপুরি প্রাপ্তবয়স্ক... তাই বুঝি কখন কোথায় ইতি টানতে হয় কথায়.
উফফফফফ পেট ভর্তি পুরো. ব্যাটা সঞ্জুটার জন্য এই অবস্থা. এবার কিছুক্ষন হাঁটা চলা না করলে শান্তি পাবনা.
বিল মিটিয়ে আমরা বেরিয়ে পড়লাম. এবারে হোটেলে ফেরার পালা. কথা বলে জানলাম আমি যে হোটেলে উঠেছি ওরাও আজকেই সকালে সেই হোটেলেই এসে উঠেছে. এটাকে কি বলে ঠিক জানিনা. আকাশের দিকে তাকালাম. ভগবান? কি বলতে চাইছেন বলুনতো? কি ঘুরছে মাথায়?
কাজের থেকে বিরতি নিয়ে কয়েক দিনের জন্য বেড়াতে এসে যে হটাৎ দ্বিতীয় দিনেই আমার সাথে এরকম কিছু হবে কে জানতো? যে অতীতকে একান্তে ভাববো বলে এসেছি, সেই অতীত নিজেই আমার সামনে এসে উপস্থিত হবে কে জানতো?
দুই বান্ধবী হেটে এগিয়ে গেছে তখন সঞ্জয় আমায় হালকা ধাক্কা মেরে সামনে দেখিয়ে বললো - কিরে? কেমন দেখলি? আমি বুঝেও না বোঝার ভান করে বললাম - খুব মিষ্টি একটা বৌ পেয়েছিস গুরু. ভেরি লাকি. সঞ্জয় কপালে হাত মেরে বললো - ধুর.. আরে ব্যাটা... আমার বৌয়ের কথা কে বললো? ওর পাশে যিনি হাঁটছেন...... কেমন লাগলো তাকে?
আমি একবার সামনে তাকিয়ে হেসে আবার সঞ্জয়ের দিকে তাকিয়ে বললাম - ভালোই তো....
সঞ্জয় বড়ো বড়ো চোখ করে বললো - ভালো বলছিস কিরে? দারুন বল..... আরে প্রথমবার যখন আমি পরিচিত হয়েছিলাম.. তখন তো আমারই মাথা ঘুরে গেছিলো রে. না.... তাবলে ভাবিসনা ওকে খারাপ চোখে দেখি, মোটেও তা না কিন্তু সত্যি.... মেয়েটার মধ্যে একটা যোগ্য বৌ বৌ ব্যাপার আছে মানতেই হবে.... আমি তো দেখছি ওকে অনেকদিন.... সত্যি খুব ভালো মেয়ে. শান্ত, বেশি কথা বলেনা, আমার বৌয়ের মতো এতো রাগ করেনা. নম্র স্বভাবের.
আমার কেমন কেমন যেন লাগলো. সঞ্জয় কি বোঝাতে চাইছে আমায়? আমি তীক্ষ্ণ নয়নে ব্যাটার দিকে তাকিয়ে বললাম - হুমম বুঝলাম.... তা বাবা ঝেড়ে কাশতো... কি বলতে চাইছিস.
আমার হাতে কনুই মেরে ও বললো - কি? পছন্দ?
আরে ধুর ব্যাটা.... একবার ওই রাস্তায় গিয়ে দেখেছি... আর নয় গুরু. এই বলে তাকালাম সামনের দিকে. দুই বান্ধবী হাসাহাসি করতে করতে এগিয়ে যাচ্ছে. দুজনেই একবার পেছনে ফিরে আমাদের দেখলো. তারপর আবার সামনে চলতে লাগলো. যদিও কৃতি বৌদির পাশের মানুষটি আমাদের নয়, আমার দিকে তাকিয়ে ছিল আর কিছুক্ষন ঐভাবেই তাকিয়ে তারপর মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছিল.
সঞ্জয় বললো - জানিস ওর ব্যাপারটাও তোর মতোই. তিন বছর আগে ওরও সেপারেশন হয়েছে. আমাদের সঙ্গে তো হটাৎ দেখা এই কয়েকমাস আগে একটা শপিং মলে. কৃতিই পরিচয় করিয়ে দেয় তখন.... আর তখনই সব জানতে পারি. ওর সঙ্গে কৃতির যোগাযোগ সেরকম ছিলোনা কলেজের পর আর দেখা সেরকম হয়নি দুজনে. এবারে এতদিন পর দেখা. সব তখনই বলে ও. এতদিন পর বান্ধবীকে পেয়ে কৃতিও আর ছাড়লনা... বললো আমরা বেড়াতে যাচ্ছি তোকেও আসতেই হবে. সেতো আসতেই চায়না... জোর করে আমরা রাজি করালাম. কৃতি আমায় বলেছিলো সেই আগের বান্ধবী আর এখনকার অঞ্জলির মিল সেরকম নেই. হয়তো..... ওই ডিভোর্সের কারণেই..... আচ্ছা... এরকম একটা মিষ্টি মেয়েকে কোন বোকাচোদার ভালো লাগেনি বলতো? এরকম একজনকে পেয়েও তার মর্ম বুঝলোনা? শালা গান্ডু একটা.... কি বলিস?
আমি কথাটা শুনে মাথা নিচু করে হেসেই বললাম - হ্যা...... গান্ডুই..... তাইতো.
আমার কবিত্ব আসেনা. নইলে সামনের ওই মানুষটার ওই একবার ঘুরে তাকানো দেখে আমার যে কি অনুভূতি হয়েছিল তা কাগজে লিখে ফেলতাম. যাইহোক হোটেলে পৌঁছে গেলাম একটু পরেই. বিদায় নেবার আগে সঞ্জয় বললো কাল ওদের ঘুরতে যাবার প্ল্যান আছে. সামনেই দারুন একটা জায়গা আছে. আমাকেও ওদের সাথে যেতেই হবে. কোনো ছাড়াছাড়ি নেই. শেষমেষ রাজি হতেই হলো. তারপর একে অপরকে goodnight জানিয়ে আমি ওখান থেকে বেরিয়ে নিজের রুমের দিকে যেতে লাগলাম . কি মনে হতে কিছুদূর এগিয়ে একবার পেছন ফিরে তাকালাম. দেখলাম আমার বন্ধু ও তার স্ত্রী ঘরে ঢুকে গেছেন কিন্তু তাদের সঙ্গের মানুষটি নিজের রুমের দরজা খুলেও না ঢুকে আমার দিকেই তাকিয়ে রয়েছে. চোখাচুখি হতেই মুখ নামিয়ে দ্রুত নিজের রুমে চলে গেলো. আমি নিজের রুমে চলে এলাম.
না...... আর তাকাইনি ঘুরে.
নিজের ঘরে এসে ফ্রেশ হয়ে শুয়ে বাবা মায়ের সাথে কিছুক্ষন কথা বলে শুয়ে পড়লাম. না... ঘুম আসছেনা. কিকরে আসবে? আসার কথাও নয়. বার বার চোখের সামনে ভাসছে সেই সব স্মৃতি গুলো. ফোনের গ্যালারিতে গিয়ে নিজের এক্স ওয়াইফের ছবি দেখতে লাগলাম. তার সাথে বেশ কয়েকটা ছবি তোলা ছিল আমার. ডিলিট করতে গিয়েও কেন জানি পারিনি. সেই ছবি গুলোই পাল্টে পাল্টে দেখতে দেখতে পাশে তাকিয়ে দেখি দুজন মানুষ দাঁড়িয়ে ঝগড়া করছে. তার মধ্যে একজন পুরুষ একজন নারী. দুজনকেই চিনি আমি. একজন কে তো রোজ দেখি..... নিজের আয়নায়. আরেকজন তারই অর্ধাঙ্গিনী.
মেয়েটির চোখে জল. তাও এগিয়ে গিয়ে স্বামীর কাঁধে হাত রাখলো. কিন্তু শয়তান লোকটা এক ঝটকায় ওর হাত সরিয়ে স্ত্রীয়ের দুই কাঁধ ধরে ক্রুদ্ধ নয়নে বললো - গিভ মি মাই স্পেস. জাস্ট..... লিভ মি অ্যালোন. তুমি থাকোনা তোমার মতন.... আরে আমি কি তোমায় ভুলে অন্য মেয়েকে নিয়ে ফুর্তি করছি নাকি? আমি তো নিজের কাজ নিয়ে আছি নাকি? আরে আজ আমি একটা সুযোগ পেয়েছি নিজেকে এগিয়ে নিয়ে যাবার..... কেন আমার পথে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছ... কেন?
মেয়েটি ভেজা চোখেই বললো - আমি তোমার এগোনোর পথে বাঁধা? এটা তুমি কি বললে?
লোকটি স্ত্রীকে ছেড়ে এগিয়ে গিয়ে দেয়ালে হাত রেখে বললো - আর নয় তো কি? বার বার কেন আমায় বিরক্ত করো. দেখো অঞ্জু বোঝো একটু.... আমি তোমায় খুব ভালোবাসি কিন্তু এখন আমি প্রস্তুত নই এতো বড়ো দায়িত্ব নেবার. এটা আমার এগিয়ে যাবার সময়..... এসব ফালতু পিছুটান মাথায় নিয়ে চললে কাজ টাজ মাথায় উঠবে.
মেয়েটি - আমি তো তোমার কাছে আর কিছু চাইনি.... একটা বাচ্চা ছাড়া. তোমাকে তো সারাদিন কাছেই পাইনা.... সারা বাড়িতে একা কাটাই. অন্তত আমাদের বাচ্চা থাকলে তাকে নিয়ে সময় কাটাতাম. আর এটাও তোমার কাছে ফালতু ব্যাপার অনি?
আমি দর্শকের মতো শুধুই দেখছি সব. দেখলাম মেয়েটি বিছানায় বসে স্বামীর দিকেই তাকিয়ে রইলো. টপ করে একফোঁটা জল বেরিয়ে নিচে পড়লো. ওই শয়তান লোকটা বললো - আরে এসব সেন্টিমেন্টাল কথা বলে আমায় নরম করার চেষ্টা করোনা.... বোঝতোনা খাটনি কি.... ঘরে রানীর মতো থাকো... যা চাও তাই পাও... আমি যে কি করে অর্জন করি জানো? বোঝো? বুঝলে আর এসব বলতে না. আমাকে আমার মতো থাকতে দাওনা প্লিস...আগে নিজেকে আরেকটু গুছিয়ে নি... তারপর সব হবে... ততদিন সময় চাইছি... এই হাত জোর করছি তোমার কাছে.... প্লিস . উফফফ.
বেরিয়ে যাচ্ছিলো লোকটা. পেছন থেকে মেয়েটি বললো - তাহলে বিয়ে করলে কেন আমায়? যদি আমায় একটুও সময় দিতে না পারো তাহলে....
-আমি চাইনি. বললো লোকটি. আমি এই সময় চাইনি বিয়েটা করতে. বাবা মাকে বলেও ছিলাম কিছু বছর পর করবো.... কিন্তু তারাও এমন সব ইমোশনাল...সেন্টিমেন্টাল কথাবার্তা বলতে লাগলো.... রাজি হতেই হলো. সবাই যেন ইমোশনাল ফুল হয়ে যাচ্ছে.
আমি তাকালাম লোকটার দিকে. দেখতে আমার মতোই. আমার মতো কেন? সেতো আমিই. আমারই তো অতীত এই শয়তান. সে আবার বললো - বাবা মায়ের কথা রাখতে রাজি হয়েছিলাম. আমি চাইনি এরকম একটা সময় বিয়ে করতে. ভালো আমিও বাসি তোমায়. সেটা তুমিও জানো. কিন্তু এই মুহূর্তে আমার কাছে আমার এম্বিশন আগে. আমি অনেক ঝামেলার মধ্যে বড়ো হয়েছি অঞ্জু. আমাদের একটা ভয়ানক সময় গেছে. প্রায় সব কিছু হারিয়ে গেছিলো আমাদের. নিজের লোকেরাই আমাদের পেছনে ছুরি মেরেছিলো. ওই সময় বাস্তব জীবনের ভয়ঙ্কর রূপটা দেখেছি আমি. আমি কখনোই চাইনি আমার নিজের ভবিষ্যত সেরকম হোক. তাই আমার কাছে আগে আমার ব্যবসা. আমি একটু একটু করে নিজের বিজনেসটা দাঁড় করাচ্ছি.... এখন এসব বাচ্চা টাচ্চা চেওনা. দেখো... সব হবে.... কিন্তু এখন না. আমি যা করছি আমাদের ভালোর জন্যই. আগে সবকিছু গুছিয়েনি তারপরে ভাবা যাবে. আর তাছাড়া সবে তো ৮ মাস হলো আমাদের..... এতো তাড়াতাড়ি কি হবে? আজকাল এতো তাড়াতাড়ি কেউ নেয়না..
মেয়েটি এগিয়ে গিয়ে স্বামীর পিঠে হাত রেখে বললো - কিন্তু আমি যে একটু একটু করে তোমায় হারিয়ে ফেলছি..আগে যাও বা তোমাকে কাছে পেতাম কিন্তু এখন..... রোজ তুমি সকালে বেরিয়ে যাও... ফেরো সেই রাতে. আমাকে কতক্ষন সময় দাও বলো? আমি তোমায় কখনই আটকাইনি. আমি জানি তোমার কাছে তোমার কাজের মূল্য কি.... কিন্তু আমারো তো তোমাকে কাছে পেতে ইচ্ছে করে. আমরা যতটুকু একে অপরকে পাশে পেয়েছি.... তা ভেবে বলতো? আমাদের বিবাহিত জীবন কি এইভাবেই চলবে? তাহলে এই সংসারের মানেটা কি?
মানুষটা এবারে ঘুরে দাঁড়িয়ে বললো - এসব বলে কি বলতে চাইছো? আমি তোমায় খুশি রাখিনা? এই যে গলায় হারটা... এটা কে দিয়েছে? এই যে কানের দুল কার দেওয়া? এগুলো এমনি এমনি আসেনি... আমার এই সারাদিনের খাটনির ফলাফল বুঝলে.....এইযে এতো বড়ো বড়ো জ্ঞান দিচ্ছ.... আজ এগুলো যদি কিনে না দিতে পারতাম তখন নিজেই তো বলতে কার সাথে বিয়ে করলাম.... বৌকে কিছু দেবার দম নেই, সামর্থ নেই ... অযোগ্য লোক একটা.... কি বলতেনা? দেখো... টাকা আছে তো খুশিও আছে... নইলে না এসব জ্ঞান পেছন দিয়ে বেরিয়ে যায় বুঝলে? যত্তসব...
এইবলে লোকটা বেরিয়ে গেলো. মেয়েটি স্বামীর চলে যাওয়া দেখে বিছানায় বসে কাঁদতে কাঁদতে কোথায় যেন মিলিয়ে গেলো.
আমার মনে হচ্ছিলো নিজের অতীতের ওই রূপটাকে গিয়ে কষিয়ে দুটো থাপ্পড় মারতে. কি হয়ে গেছিলো আমার তখন? শুধু টাকা- টাকা - টাকা. এই ঝগড়া প্রায় রোজ হতো দুজনে. আর সহ্য করতে পারেনি মেয়েটি. চলে যায় একদিন ঘর ফাঁকা করে. আমিও জোর করে আটকাইনি তাকে. ফাঁকা বিছানায় ঘুমোতে প্রথম প্রথম ভালোই লাগতো. আর কেউ নেই বিরক্ত করার. পুরো সময় আমার . আর নেই কোনো বাড়তি দায়িত্ব. সারাদিন অর্থের পেছনে দৌড় করা ছাড়া কোনো কাজ নেই. ঘরে অর্থ আসছে. সাফল্যের মুখ দেখছি. কিন্তু যতদিন যেতে লাগলো ততো মনে হতে লাগলো সত্যি তো কেউ আর বিরক্ত করছেনা, কেউ তো ঝগড়া করছেনা, কেউ তো অপেক্ষা করে থাকেনা. ফাঁকা বাড়িটা সকালে যেমন ছেড়ে যায়, ফেরত এসে তেমনি পাই. মাঝে মাঝে একাকিত্ব অনুভব করে. কেমন যেন ভয় লাগতো. পাশে বার বার তাকিয়ে দেখতাম ফাঁকা জায়গাটা.
নতুন ফ্লাট নিলাম. ভেবেছিলাম একেবারে নতুন ফ্ল্যাটেই বাবা মাকে নিয়ে আসব. এবারে যদি একাকিত্ব দূর হয়. কিন্তু নিজের ঘরে ঢুকলেই আবার সেই একাকিত্ব. বাবা মা অনেকবার বলেছিলো আমাদের আলাদা না হতে কিন্তু তখন আমি আর আমি ছিলাম না. তখন আমি ছিলাম অর্থের উপাসক. শুধুই সাফল্য ছিল আমার স্বপ্ন. নিজের অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে সাফল্যের ভবিষ্যত গড়ে তুলতে এতোই মশগুল ছিলাম যে কোনো কিছু তোয়াক্কা করিনি. নিজের বাবা মাকেও না. শুধুই অর্থ উপার্জন করে বাবা মায়ের হাতে টাকা তুলে দেয়াকেই ভেবেছি কর্তব্য পালন.
আজ আমি সফল. হ্যা... বেশ ভালোই আছি. গাড়ি, ফ্লাট সব হয়েছে. কিন্তু আজ যখন পেছন ফিরে তাকাই তখন নিজেকে দেখতে পাইনা. দেখি একটা কাপুরুষকে. যে জীবনের মানেটাই বোঝেনি. যে জীবনের মূল অর্থটাই বোঝেনা, যে সাফল্য আর সুখের মধ্যে ভারসাম্যটা অনেক আগেই হারিয়ে ফেলেছিলো.
আজ সে একা..... আমি একা. বাবা মায়ের সন্তান কিন্তু স্পেশাল কারোর একজন আর নই. আমি চাইলেই আবার সংসার করতে পারতাম. না..... পারিনি. পারিনি আর. ইচ্ছে হয়নি.... না.... বোধহয় এটা বলা ঠিক যে সেই মুখটা ভুলতে পারিনি . বার -বার বাবা মা বলেছে কিন্তু পারিনি.
থাকতে না পেরে খোঁজও নিতে চেয়েছি অতীতের চেনা মানুষটার. ফোন করেও ছিলাম কিন্তু ওপাশ থেকে উত্তর পাইনি. সে হয়তো নিজের জীবনে এগিয়ে গেছে ভেবে আর এগোতে পারিনি. তাছাড়াও কি মুখে দাঁড়াতাম তার সামনে? কি বলতাম তাকে?
না... আর খোঁজ নেওয়া হয়নি. ভুলতেও চেয়েছি, পারিনি. কিন্তু এটা বুঝেছিলাম ভালোবাসা আমার জীবনেও এসেছিলো. কিন্তু তাকে দুহাত বাড়িয়ে গ্রহণ করার পরিবর্তে নিজের ভুলে তাকে বর্জন করেছি. শুধুই কষ্ট দিয়েছি. আর শেষে হারিয়ে ফেলেছি আমার ভালোবাসা. ওই শুন্য স্থান আর কেউ পূরণ করতে পারবেনা.
চোখে হালকা জল এসে গেলো . তারপর ছবিতে সুন্দরী মেয়েটার হাসি মুখটা দেখে আমার মুখ দিয়ে বেরিয়ে এলো- সরি. এক্সট্রিমলি সরি.
সকালে উঠে ফ্রেস হয়ে রেডি হয়ে নিলাম. চা খাচ্ছি এমন সময় ফোন বাজলো. ফোন হাতে নিয়ে দেখি অচেনা নম্বর. আমিই রিসিভ করলে ওপাশ থেকে শুনলাম - উঠে পড়েছিস... চল জলদি রেডি হয়ে নে...খেয়েই বেরিয়ে পড়বো. একসাথে বাইরে খেতে যাবো.
ভুলেই গেছিলাম কালকেই সঞ্জয়কে নিজের নম্বর দিয়েছিলাম. বাড়ি ফিরে ওরটা সেভ করতে ভুলেই গেছিলাম. কি মনে হতে আমি তখনি বললাম - হ্যা আসছি.... তা আমরা সবাই যাচ্ছি তো?
- হ্যা... সবাই... যদিও অঞ্জলি বলছিলো ও বেরোবে না ....হোটেলেই থাকবে.... কিন্তু আমরা ঠিক রাজি করিয়ে নিয়েছি. আরে বেড়াতে এসে ঘরে বসে থাকা? কাভি নাহি!!
নে চল... চল ব্যাটা তাড়াতাড়ি আয় নিচে.
একটু পরে রেডি হয়ে নিলাম. আমার মধ্যে কি যেন একটা পরিবর্তন এসেছে হটাৎ বুঝলাম. কেমন একটা অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছে ভেতরে. আয়নায় তাড়াতাড়ি একবার নিজেকে দেখে নিলাম. আশ্চর্য!আজ অনেকদিন পর নিজের মুখটা আয়নায় অন্যরকম লাগলো. কিছু একটা পরিবর্তন হয়েছে আমার মধ্যে কি?
সঞ্জয়কে আরেকবার ফোন করে ওরা রেডি হয়েছে কিনা জেনের নিয়েই বেরিয়ে গেলাম নিচে. বাইরে গিয়ে দেখি বন্ধু আর দুই মহিলা দাঁড়িয়ে. আমাকে আসতে দেখে দুজনের মুখে হাসি ফুটলেও একজন নিজের মুখ ঘুরিয়ে রাস্তার দিকে তাকিয়ে রইলো. আমিও আর না তাকিয়ে সঞ্জয়ের সাথে কথা বলতে লাগলাম.
আহা.... এবারে চলো যাই. বৌদির কথায় যথা আজ্ঞা দেবী বলে বন্ধুটি আমার গায়ে ঠেলা দিয়ে বললো - ভাই চল..... অর্ডার পালন করতেই হবে... নইলে বিপদ. আমরা হেসে বেরিয়ে পড়লাম.
বুঝলাম বন্ধুটি আমার বেশ খুশি আছে নিজের জীবনে. যতই বন্ধুকে দেখছি ততই নিজের ওপর লজ্জিত হচ্ছি. ওর জায়গায় আমি কি ছিলাম? দুজনকে একে অপরের সাথে কি ভালো লাগছে. এটাই তো জীবনের আসল খুশি. একটু রাগ, একটু অভিমান, একটু ইয়ার্কি,দুস্টুমি আর অনেক অনেক ভালোবাসা.
হাঁটতে হাঁটতে মাঝে মাঝে আমার নজর চলে যাচ্ছে বেগুনি সালোয়ার কামিজ পরিহিতার দিকে. কি অসাধারণ লাগছে. কিন্তু সোজা চোখে তাকিয়ে দেখার অধিকার আজ আর নেই. সত্যি কি নেই? একটুও?
আমার বন্ধুটি হটাৎ আমার ঘনিষ্ট হয়ে গলা নামিয়ে বললো - আচ্ছা তখন তুই আমায় সবাই আসছে কিনা জিজ্ঞেস করলি কেন?
আমি কি বলবো বুঝতে না পারলেও তৎক্ষণাৎ নিজেকে সামলে বললাম - না মানে এমনি..... এই আর কি.
দুস্টু চাহুনি দিয়ে সে বললো - এমনি? আচ্ছা? এমনি? আমায় কি কচি খোকা ভাবো? কিছুই বুঝিনা হুম?
মানে? বুঝেও না বোঝার ভান করে জিজ্ঞেস করলাম.
ও দুস্টু চাহুনি দিয়ে বললো - মানে? বলি চোখ তো সরাতেই পারছোনা গুরু? তাইতো বলি আমাকে জিজ্ঞেস করলো কেন সবাই... মানে সবাই যাচ্ছি কিনা. কাল তো বললামই আমরা সবাই যাচ্ছি তাও আজ আলাদা করে সবাই যাচ্চি কিনা জিজ্ঞেস কেন করলো? কি ব্যাপার গুরু?
আমি অপ্রস্তুত হয়েও নিজেকে সামলে নিয়ে বললাম - আরে ধুর ব্যাটা... আমি... আমি তো...
ও বললো - এত আমি আমি করোনা.... পেটে খিদে মুখে লাজ... ন্যাকা....দেখ তুই যদি বলিস আমি মানে আমি আর কৃতি কিন্তু ওর সাথে কথা বলতে পারি.....তারপর না হয়....
আমি - আরে তুই কোথা থেকে কোথায় চলে যাসনা.... এমন কিছু না চল ব্যাটা . (আমি এড়ানোর জন্য বললাম.)
এবারে সঞ্জয় সিরিয়াস হয়ে বললো - আরে আর কতদিন একা থাকবি? যা হবার তো হয়েই গেছে.... এবারে এগিয়ে যাওয়াই তো উচিত নাকি? দেখ তুই আর ও দুজনেই এখন একা. তোদের দুজনেরই একটা পাস্ট আছে কিন্তু সেসব ভুলে নতুন করে এগিয়ে যাওয়া উচিত. তোর যদি ওকে ভালো লেগে থাকে তাহলে আমাকে বল..... আমরা ওর সাথে কথা বলি.... বা বেস্ট হয় তোরা নিজেদের সাথে কিছুক্ষন সময় কাটা, কথা বল.
আমি হেসে বললাম - আরে আমরা বেড়াতে এসেছি.... এখানে এসে এসব করবো?
সঞ্জয় - তুই ব্যাপারটা এড়িয়ে যাচ্ছিস কেন বলতো? ও ডিভোর্সড বলে?
আমি - সে তো আমিও.
সঞ্জয় - তাহলে? লজ্জা করছে? তুই শালা চিরকাল গুড বয় হয়েই থেকে গেলি. ভদ্র ছেলেটা. আরে একটু সাহস নিয়ে এগিয়ে যা না.
আমি হেসে বললাম - হুম..... ঠিকই বললি.... গুড বয় হয়েছি ঠিকই, কিন্তু গুড হাসব্যান্ড হতে পারিনি.
সঞ্জয় - এই সরি রে আমি কিন্তু ওই ভাবে কিছু.......
আমি হেসে ওর কাঁধে হাত রেখে বললাম - আরে ধুর... সরি কিসের..... ছাড় ওসব... চল.
সঞ্জয় - আমি কিন্তু শুধু তোর কথা ভেবে ওগুলো বলিনি. তুই যেমন ওর দিকে দেকছিলিস... তেমনি অঞ্জলিও কিন্তু তোর দিকে দেখছিলো মাঝে মাঝেই কাল. কৃতি বললো আমায়. কাল তুই যখন খাচ্ছিলি তখন কৃতি দেখেছে ওকে তোর দিকে মাঝে মাঝে তাকাতে. I think..... ওরও তোকে পছন্দ হয়েছে. কাল তোর সাথে পরিচয় করানোর সময়ই তো দেখলাম... দুজন দুজনকে দেখেই যাচ্ছিলি.
আমি নিজের মনের হাসলাম ওর কথা শুনে. ও কি ভাবছে আর..... সত্যিটা কি.
একসময় সেই স্থানে পৌঁছে গেলাম. খুব বেশি দূর না আমাদের হোটেল থেকে. কিন্তু এই রাস্তা টুকু কখন যে পার করে ফেলেছি ভেবে পেলাম না.
সঞ্জয় দুস্টু রাগী চোখেই তাকিয়ে বললো - কিরে শালা? কোথায় ছিলি এতো বছর? ব্যাটা সেই কলেজ শেষ হতে না হতেই গায়েব? শালা... তুমি বহুত চালু মাল হ্যা.... কলেজ শেষ তো বন্ধুত্বও শেষ?
আমি হেসে উঠে দাঁড়িয়ে জড়িয়ে ধরলাম ওকে. তারপর বললাম - আচ্ছা তাই বুঝি? শালা তুমি যে প্রতিবার আমার পরীক্ষার খাতায় চক্ষুদান করতে.. তখন কি তোমায় আটকেছি? আর আমায় চালু বলছিস? তারপর হেসে বললাম - আরে কি করবো বল? তোর আর বাকিদের নম্বর গুলো আমার ফোনে ছিল... আর সেটাই গেলো চুরি... মানে তারপর নানারকম ঝামেলা এই করো ওই করো..কিছু ফ্যামিলি প্রব্লেম ছিল... উফফফফ....তারপর তো আমরা অনেকদিন অন্য জায়গায় শিফট করেছিলাম. রাতুলের সাথে পরে দেখা হতে ও বলেছিলো তোরাও অন্য জায়গায় ফ্লাট নিয়ে চলে গেছিস. এদিকে আমিও নিজের জীবন নিয়ে ব্যাস্ত হয়ে পড়লাম. ছাড় ওসব কথা. তা গুরু তুমি তো ফুলে গেছো ভাই? এতো ভুঁড়ি কিকরে এলো রে? খুব সাঁটাচ্ছিস না?
সঞ্জয় পেটে হাত বুলিয়ে বললো - এটা কৃতিও বলে রে. কিন্তু কিকরবো বল... শালা কিছুতেই খাওয়া কমাতেই পারছিনা.
আমি চোখ মেরে বললাম - এইযে.... কৃতিটা কে হ্যা? আমাদের কলেজে কৃতি বলে তো কেউ ছিলোনা....
সঞ্জয় বললো - ওরে... সেই কচি বয়স কি আর আছেরে... যে এদিক ওদিক খুঁজে বেড়াবো... কলেজে অন্য জিনিস....তখন আলাদা ব্যাপার ছিল গুরু..... আজ তো আমার হাল দেখছিস.....কৃতি আমার ওয়াইফ. দাঁড়া... পরিচয় করিয়ে দি.....
এই কৃতি এদিকে এসো.
আমি দেখলাম নীল সালোয়ার পরিহিতা এক বেশ সুন্দরী নারী হাসি মুখে আমাদের দিকে তাকালো. তারপর হাসি মুখে আমাদের দিকে এগিয়ে এলো.
আমি নমস্কার করলাম. উনিও প্রত্তুতরে নমস্কার করলেন. তারপর উনি বললেন - দাদা..... আপনার কথা ওর থেকে অনেকবার শুনেছি. এখানে এসে আপনাকে দূর থেকে দেখে একবার আমায় বললো চেনা চেনা লাগছে. তারপর চিনতেই ছুটে গেলো আপনার কাছে.
আমি মুচকি হাসলাম.
তারপর কৃতি আমাকে একবার দেখে নিয়ে স্বামীর দিকে তাকিয়ে বললো - দেখো.... দেখো নিজের বন্ধুকে.... কি হ্যান্ডসম... কি সুন্দর ভাবে আজও নিজেকে মেইনটেইন করেছেন... আর তুমি.... ইশ.... নিজের পেটের দিকে দেখো একবার.
সঞ্জয় আমার দিকে তাকিয়ে বললো - ওই... দেখলি? শুরু হয়ে গেলো.
আমরা তিনজনেই হেসে উঠলাম. তারপর ভদ্রতার খাতির আমিই বললাম - আয়না.... আমার এখানে বোস. তোরা কি অর্ডার দিয়ে দিয়েছিস?
সঞ্জয় বললো - আরে নারে..... আমরা তিনজন ঢুকে সবে বসেছি... এমন সময় তোর দিকে নজর গেলো আমার. আমার মনেই হচ্ছিলো ওটা তুই. তারপর তুই যখন ওয়েটার কে ডাকতে পাশে তাকালি... পুরো তোর মুখটা দেখতে পেলাম. তাই তো গিয়ে সোজা চাপড়.
আমি বললাম - ইশ.....ব্যাটা যা জোরে মারলি... উফফফ.....তোর শয়তানি গেলোনা... জানেন বৌদি? ব্যাটা.... কলেজে এইভাবেই রোজ আমায় চাপড় দিতো.
তারপরই একটা কথা মাথায় এলো. জিজ্ঞেস করলাম - এক মিনিট... তুই কি বললি? তিনজন? আরেকজন কে?
সঞ্জয় মাথায় হাত রেখে জিভ বার করে বললো - এমা! দেখেছিস... মেয়েটাকে একা বসিয়ে চলে এসেছি. আমার স্ত্রীয়ের বান্ধবী. দাঁড়া পরিচয় করিয়ে দি..... এই অঞ্জলি.
নামটা শুনেই পলকের মধ্যে হাজার মুহুর্ত মনে পড়ে গেলো আমার. কেমন একটা করে উঠলো বুকের ভেতরটা. এই নামটা..... এই নামটা কোনোদিন কি আমার পিছু ছাড়বেনা? ওই নামটাকে কি ভুলতে পারবোনা আর কোনোদিন?
যাক গে..... মাথা থেকে সব ঝেড়ে ভদ্রতার খাতিরে হাসি মুখে সঞ্জয় যে দিকে তাকিয়ে আছে সেই দিকে তাকালাম.
নিজের নাম শুনে কিছুদূরে বসে থাকা মেয়েটি আমাদের দিকে ঘুরে তাকালো. আর তখনি মনে হলো পায়ের তলা থেকে মাটি সরে যাচ্ছে. তৎক্ষণাৎ আমার মুখ ঘুরিয়ে নিলাম.
এ কাকে দেখলাম আমি!! না না..... এতো বছর পর. আবার?
পায়ের শব্দ প্রতি মুহূর্তে এগিয়ে আসছে. আর ততই দ্রুত হচ্ছে আমার বুকের ধুকপুকানি. শেষে আমার পাশে এসে সে দাঁড়ালো.
সঞ্জয় হেসে তাকে বললো - হ্যা... আলাপ করিয়ে দি..... আমার কলেজ ফ্রেন্ড অনির্বান.
হাসি মুখেই সে নিজের মুখ সঞ্জয়ের থেকে ঘুরিয়ে আমার দিকে তাকালো. আর তারপরেই তার মুখের হাসিও মিলিয়ে গেলো. হাত দুটো নমস্কার করবে বলে জড়ো করতেই যাচ্ছিলো. দুই হাত সেই দূরত্বেই থেকে গেলো. আমার বুঝতে বাকি রইলোনা যে সামনের মানুষটার অবস্থাও আমার মতোই. তার ভেতরেও একটা ঝড় শুরু হয়েছে. অনেক মুহূর্ত তার সামনেও হয়তো ভেসে উঠেছে.
পরিস্থিতি সামলাতে আমি দুই হাত জড়ো করে বললাম - নমস্কার.
সেও অবাক হয়ে তারপর পরিস্থিতির গাম্ভীর্য বুঝে নকল হাসি হেসে আমায় নমস্কার জানালো.
এটা করতে যে তাকে বেশ কষ্ট করতে হয়েছে বুঝলাম. আমারো তো একি অবস্থা.
আমরা সবাই একসাথেই খেতে বসলাম. আমি আর সঞ্জয় একদিকে আর অন্যপাশে দুই বান্ধবী. সঞ্জয় নিজেদের অর্ডার দিলো. আমি তো বেশ কিছুক্ষন আগেই এসেছিলাম তাই আমার খাওয়া শেষই হয়েছে গেছিলো. তবু বন্ধু জোর করে আবার আমার জন্য অর্ডার দিলো. আমি বারণ করলাম কিন্তু কে শোনে. খাবার আসলে সবাই খেতে লাগলাম. খেতে খেতে বার বার সামনের মানুষটার দিকে নজর চলে যাচ্ছিলো. আজও বেশি ঝাল খেতে পারেনা. তবু সেটাই বেশি করে খায় . বার বার নাক টানে. আজও তার পরিবর্তন লক্ষ্য করলাম না. শেষের চিকেনটা পুরো খেলনা. খাওয়া অনেক কমিয়ে দিয়েছে. একটু রোগাও হয়ে গেছে. না তবে সেই পাগল করা রূপটা একটুও কমেনি. সবুজ শাড়ীটাতে অসাধারণ লাগছে.
আমার বন্ধুটি আবার খাবার সময় স্পিক্ টি নট. সব ভুলে মাংসের পা চিবোচ্ছে. কি মোটকুই না হয়েছে. কলেজের সময় থেকে কত পাল্টে গেছে ব্যাটা.
আরে ওকে কি বলছি? আমি কি পাল্টাইনি? হ্যা পাল্টেছি.... অনেক পাল্টেছি..... ওর থেকেও বেশি পাল্টেছি একসময়. বাইরে থেকে নয়.... ভেতর থেকে. আর সেটাই তো ছিল আমার.... না.... আমার কেন? আমাদের মাঝে দূরত্বের কারণ.
তাই হয়তো একবারও সোজা তাকিয়ে দেখতে পারিনি সামনে বসে থাকা সুন্দরী নারীটির দিকে. সবসময় খাবার অছিলায় চোখ নামিয়ে ছিলাম. আচ্ছা ও কি আমাকে দেখছে? নাকি একবারের জন্যও তাকায়নি? সত্যি কি তাকায়নি?
এদিকে আমার প্রায় দ্বিগুন গেরাচ্ছে সঞ্জয়টা. কৃতি নিজের স্বামীর খাওয়া দেখে আমায় ইশারায় ওকে দেখিয়ে বললো - দেখেছেন আপনার বন্ধুর কান্ড? কত বলি কন্ট্রোল করো, শুনবেই না কিছু.
সঞ্জয় মাংস চিবোতে চিবোতেই বললো - ওসব ডায়েটিং ফায়েটিং আমার দ্বারা হবেনা গুরু.... আমি এই বেশ আছি. খেতে দাও তো... খেতে দাও. দেখছিস ভাই.....? সবসময় আমার খাওয়া নিয়ে খোঁটা দেবেন ইনি. আরে বেচারা মানুষটার একটু খেতে ভালো লাগে আর সেটা নিয়ে এরকম অত্যাচার... উফফফ.
আমরা হেসে উঠলাম. তারপর হটাৎ একটা প্রশ্নবান ছুটে এলো আমার দিকে সামনের দিক থেকে.
দাদা.... আপনি কি বিয়ে করেছেন? নাকি এখনো অবিবাহিত?
সঞ্জয় বললো - হ্যা রে? সেটাতো জিজ্ঞেসই করা হয়নি.... এখনো unmarried নাকি..... অবশ্য যা হ্যান্ডসম হয়েছিস.... সত্যি যা লাগছেনা তোকে..উফফ দেখেই বোঝা যাচ্ছে... হেব্বি মাল্লু কামাচ্ছিস না ? ওটাই তো আসল জিনিস... কি বল?
আমি মুচকি হাসলাম. দেখলাম সামনে বৌদির পাশে বসে থাকা মানুষটা একবার আমার দিকে তাকিয়ে আবার খেতে লাগলো.
কৃতি বৌদির প্রশ্ন শুনে কি বলবো বুঝতে পারলাম না.... একজন সামনে উপস্থিত না থাকলে হয়তো মিথ্যেটাই বলতাম. কিন্ত......শেষমেষ সত্যিটাই বলে ফেললাম. আর কত এড়িয়ে যাবো এই সত্যিটা?
আমি - হ্যা... করেছি..... I mean করেছিলাম. কিন্তু আমাদের মধ্যে....
এইটুকু শুনেই আমার বন্ধু আর তার স্ত্রীর হাসিমুখটা শান্ত হয়ে গেলো. নিজেদের খাওয়া থেকে সবাই একটু বিরতি দিলেন শুধু একজন বাদে. সে একবারের জন্যও না তাকিয়ে নিজের ফোনে কি দেখছে আর খাচ্ছে.
সঞ্জয় - ওহ... সরি রে... আসলে আমরা.....তো.....
আমি হেসে বললাম - আরে দূর ব্যাটা.... এটাতো নরমাল ব্যাপার. আমাদের দুজনেরই প্রব্লেম হচ্ছিলো এই সম্পর্কটা এগিয়ে নিয়ে যেতে.... তার থেকে ভালো ছিল আলাদা হয়ে যাওয়া... আমরা সেটাই করেছি.
কৃতি আর আমার বন্ধু নিজেদের চোখ চাওয়া চাই করে আবার খেতে লাগলেন. অর্থাৎ এই ব্যাপারে আর কোনো কথা নয়. আজ আমরা আর সেই কলেজের বিচ্ছু স্টুডেন্ট নই, পুরোপুরি প্রাপ্তবয়স্ক... তাই বুঝি কখন কোথায় ইতি টানতে হয় কথায়.
উফফফফফ পেট ভর্তি পুরো. ব্যাটা সঞ্জুটার জন্য এই অবস্থা. এবার কিছুক্ষন হাঁটা চলা না করলে শান্তি পাবনা.
বিল মিটিয়ে আমরা বেরিয়ে পড়লাম. এবারে হোটেলে ফেরার পালা. কথা বলে জানলাম আমি যে হোটেলে উঠেছি ওরাও আজকেই সকালে সেই হোটেলেই এসে উঠেছে. এটাকে কি বলে ঠিক জানিনা. আকাশের দিকে তাকালাম. ভগবান? কি বলতে চাইছেন বলুনতো? কি ঘুরছে মাথায়?
কাজের থেকে বিরতি নিয়ে কয়েক দিনের জন্য বেড়াতে এসে যে হটাৎ দ্বিতীয় দিনেই আমার সাথে এরকম কিছু হবে কে জানতো? যে অতীতকে একান্তে ভাববো বলে এসেছি, সেই অতীত নিজেই আমার সামনে এসে উপস্থিত হবে কে জানতো?
দুই বান্ধবী হেটে এগিয়ে গেছে তখন সঞ্জয় আমায় হালকা ধাক্কা মেরে সামনে দেখিয়ে বললো - কিরে? কেমন দেখলি? আমি বুঝেও না বোঝার ভান করে বললাম - খুব মিষ্টি একটা বৌ পেয়েছিস গুরু. ভেরি লাকি. সঞ্জয় কপালে হাত মেরে বললো - ধুর.. আরে ব্যাটা... আমার বৌয়ের কথা কে বললো? ওর পাশে যিনি হাঁটছেন...... কেমন লাগলো তাকে?
আমি একবার সামনে তাকিয়ে হেসে আবার সঞ্জয়ের দিকে তাকিয়ে বললাম - ভালোই তো....
সঞ্জয় বড়ো বড়ো চোখ করে বললো - ভালো বলছিস কিরে? দারুন বল..... আরে প্রথমবার যখন আমি পরিচিত হয়েছিলাম.. তখন তো আমারই মাথা ঘুরে গেছিলো রে. না.... তাবলে ভাবিসনা ওকে খারাপ চোখে দেখি, মোটেও তা না কিন্তু সত্যি.... মেয়েটার মধ্যে একটা যোগ্য বৌ বৌ ব্যাপার আছে মানতেই হবে.... আমি তো দেখছি ওকে অনেকদিন.... সত্যি খুব ভালো মেয়ে. শান্ত, বেশি কথা বলেনা, আমার বৌয়ের মতো এতো রাগ করেনা. নম্র স্বভাবের.
আমার কেমন কেমন যেন লাগলো. সঞ্জয় কি বোঝাতে চাইছে আমায়? আমি তীক্ষ্ণ নয়নে ব্যাটার দিকে তাকিয়ে বললাম - হুমম বুঝলাম.... তা বাবা ঝেড়ে কাশতো... কি বলতে চাইছিস.
আমার হাতে কনুই মেরে ও বললো - কি? পছন্দ?
আরে ধুর ব্যাটা.... একবার ওই রাস্তায় গিয়ে দেখেছি... আর নয় গুরু. এই বলে তাকালাম সামনের দিকে. দুই বান্ধবী হাসাহাসি করতে করতে এগিয়ে যাচ্ছে. দুজনেই একবার পেছনে ফিরে আমাদের দেখলো. তারপর আবার সামনে চলতে লাগলো. যদিও কৃতি বৌদির পাশের মানুষটি আমাদের নয়, আমার দিকে তাকিয়ে ছিল আর কিছুক্ষন ঐভাবেই তাকিয়ে তারপর মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছিল.
সঞ্জয় বললো - জানিস ওর ব্যাপারটাও তোর মতোই. তিন বছর আগে ওরও সেপারেশন হয়েছে. আমাদের সঙ্গে তো হটাৎ দেখা এই কয়েকমাস আগে একটা শপিং মলে. কৃতিই পরিচয় করিয়ে দেয় তখন.... আর তখনই সব জানতে পারি. ওর সঙ্গে কৃতির যোগাযোগ সেরকম ছিলোনা কলেজের পর আর দেখা সেরকম হয়নি দুজনে. এবারে এতদিন পর দেখা. সব তখনই বলে ও. এতদিন পর বান্ধবীকে পেয়ে কৃতিও আর ছাড়লনা... বললো আমরা বেড়াতে যাচ্ছি তোকেও আসতেই হবে. সেতো আসতেই চায়না... জোর করে আমরা রাজি করালাম. কৃতি আমায় বলেছিলো সেই আগের বান্ধবী আর এখনকার অঞ্জলির মিল সেরকম নেই. হয়তো..... ওই ডিভোর্সের কারণেই..... আচ্ছা... এরকম একটা মিষ্টি মেয়েকে কোন বোকাচোদার ভালো লাগেনি বলতো? এরকম একজনকে পেয়েও তার মর্ম বুঝলোনা? শালা গান্ডু একটা.... কি বলিস?
আমি কথাটা শুনে মাথা নিচু করে হেসেই বললাম - হ্যা...... গান্ডুই..... তাইতো.
আমার কবিত্ব আসেনা. নইলে সামনের ওই মানুষটার ওই একবার ঘুরে তাকানো দেখে আমার যে কি অনুভূতি হয়েছিল তা কাগজে লিখে ফেলতাম. যাইহোক হোটেলে পৌঁছে গেলাম একটু পরেই. বিদায় নেবার আগে সঞ্জয় বললো কাল ওদের ঘুরতে যাবার প্ল্যান আছে. সামনেই দারুন একটা জায়গা আছে. আমাকেও ওদের সাথে যেতেই হবে. কোনো ছাড়াছাড়ি নেই. শেষমেষ রাজি হতেই হলো. তারপর একে অপরকে goodnight জানিয়ে আমি ওখান থেকে বেরিয়ে নিজের রুমের দিকে যেতে লাগলাম . কি মনে হতে কিছুদূর এগিয়ে একবার পেছন ফিরে তাকালাম. দেখলাম আমার বন্ধু ও তার স্ত্রী ঘরে ঢুকে গেছেন কিন্তু তাদের সঙ্গের মানুষটি নিজের রুমের দরজা খুলেও না ঢুকে আমার দিকেই তাকিয়ে রয়েছে. চোখাচুখি হতেই মুখ নামিয়ে দ্রুত নিজের রুমে চলে গেলো. আমি নিজের রুমে চলে এলাম.
না...... আর তাকাইনি ঘুরে.
নিজের ঘরে এসে ফ্রেশ হয়ে শুয়ে বাবা মায়ের সাথে কিছুক্ষন কথা বলে শুয়ে পড়লাম. না... ঘুম আসছেনা. কিকরে আসবে? আসার কথাও নয়. বার বার চোখের সামনে ভাসছে সেই সব স্মৃতি গুলো. ফোনের গ্যালারিতে গিয়ে নিজের এক্স ওয়াইফের ছবি দেখতে লাগলাম. তার সাথে বেশ কয়েকটা ছবি তোলা ছিল আমার. ডিলিট করতে গিয়েও কেন জানি পারিনি. সেই ছবি গুলোই পাল্টে পাল্টে দেখতে দেখতে পাশে তাকিয়ে দেখি দুজন মানুষ দাঁড়িয়ে ঝগড়া করছে. তার মধ্যে একজন পুরুষ একজন নারী. দুজনকেই চিনি আমি. একজন কে তো রোজ দেখি..... নিজের আয়নায়. আরেকজন তারই অর্ধাঙ্গিনী.
মেয়েটির চোখে জল. তাও এগিয়ে গিয়ে স্বামীর কাঁধে হাত রাখলো. কিন্তু শয়তান লোকটা এক ঝটকায় ওর হাত সরিয়ে স্ত্রীয়ের দুই কাঁধ ধরে ক্রুদ্ধ নয়নে বললো - গিভ মি মাই স্পেস. জাস্ট..... লিভ মি অ্যালোন. তুমি থাকোনা তোমার মতন.... আরে আমি কি তোমায় ভুলে অন্য মেয়েকে নিয়ে ফুর্তি করছি নাকি? আমি তো নিজের কাজ নিয়ে আছি নাকি? আরে আজ আমি একটা সুযোগ পেয়েছি নিজেকে এগিয়ে নিয়ে যাবার..... কেন আমার পথে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছ... কেন?
মেয়েটি ভেজা চোখেই বললো - আমি তোমার এগোনোর পথে বাঁধা? এটা তুমি কি বললে?
লোকটি স্ত্রীকে ছেড়ে এগিয়ে গিয়ে দেয়ালে হাত রেখে বললো - আর নয় তো কি? বার বার কেন আমায় বিরক্ত করো. দেখো অঞ্জু বোঝো একটু.... আমি তোমায় খুব ভালোবাসি কিন্তু এখন আমি প্রস্তুত নই এতো বড়ো দায়িত্ব নেবার. এটা আমার এগিয়ে যাবার সময়..... এসব ফালতু পিছুটান মাথায় নিয়ে চললে কাজ টাজ মাথায় উঠবে.
মেয়েটি - আমি তো তোমার কাছে আর কিছু চাইনি.... একটা বাচ্চা ছাড়া. তোমাকে তো সারাদিন কাছেই পাইনা.... সারা বাড়িতে একা কাটাই. অন্তত আমাদের বাচ্চা থাকলে তাকে নিয়ে সময় কাটাতাম. আর এটাও তোমার কাছে ফালতু ব্যাপার অনি?
আমি দর্শকের মতো শুধুই দেখছি সব. দেখলাম মেয়েটি বিছানায় বসে স্বামীর দিকেই তাকিয়ে রইলো. টপ করে একফোঁটা জল বেরিয়ে নিচে পড়লো. ওই শয়তান লোকটা বললো - আরে এসব সেন্টিমেন্টাল কথা বলে আমায় নরম করার চেষ্টা করোনা.... বোঝতোনা খাটনি কি.... ঘরে রানীর মতো থাকো... যা চাও তাই পাও... আমি যে কি করে অর্জন করি জানো? বোঝো? বুঝলে আর এসব বলতে না. আমাকে আমার মতো থাকতে দাওনা প্লিস...আগে নিজেকে আরেকটু গুছিয়ে নি... তারপর সব হবে... ততদিন সময় চাইছি... এই হাত জোর করছি তোমার কাছে.... প্লিস . উফফফ.
বেরিয়ে যাচ্ছিলো লোকটা. পেছন থেকে মেয়েটি বললো - তাহলে বিয়ে করলে কেন আমায়? যদি আমায় একটুও সময় দিতে না পারো তাহলে....
-আমি চাইনি. বললো লোকটি. আমি এই সময় চাইনি বিয়েটা করতে. বাবা মাকে বলেও ছিলাম কিছু বছর পর করবো.... কিন্তু তারাও এমন সব ইমোশনাল...সেন্টিমেন্টাল কথাবার্তা বলতে লাগলো.... রাজি হতেই হলো. সবাই যেন ইমোশনাল ফুল হয়ে যাচ্ছে.
আমি তাকালাম লোকটার দিকে. দেখতে আমার মতোই. আমার মতো কেন? সেতো আমিই. আমারই তো অতীত এই শয়তান. সে আবার বললো - বাবা মায়ের কথা রাখতে রাজি হয়েছিলাম. আমি চাইনি এরকম একটা সময় বিয়ে করতে. ভালো আমিও বাসি তোমায়. সেটা তুমিও জানো. কিন্তু এই মুহূর্তে আমার কাছে আমার এম্বিশন আগে. আমি অনেক ঝামেলার মধ্যে বড়ো হয়েছি অঞ্জু. আমাদের একটা ভয়ানক সময় গেছে. প্রায় সব কিছু হারিয়ে গেছিলো আমাদের. নিজের লোকেরাই আমাদের পেছনে ছুরি মেরেছিলো. ওই সময় বাস্তব জীবনের ভয়ঙ্কর রূপটা দেখেছি আমি. আমি কখনোই চাইনি আমার নিজের ভবিষ্যত সেরকম হোক. তাই আমার কাছে আগে আমার ব্যবসা. আমি একটু একটু করে নিজের বিজনেসটা দাঁড় করাচ্ছি.... এখন এসব বাচ্চা টাচ্চা চেওনা. দেখো... সব হবে.... কিন্তু এখন না. আমি যা করছি আমাদের ভালোর জন্যই. আগে সবকিছু গুছিয়েনি তারপরে ভাবা যাবে. আর তাছাড়া সবে তো ৮ মাস হলো আমাদের..... এতো তাড়াতাড়ি কি হবে? আজকাল এতো তাড়াতাড়ি কেউ নেয়না..
মেয়েটি এগিয়ে গিয়ে স্বামীর পিঠে হাত রেখে বললো - কিন্তু আমি যে একটু একটু করে তোমায় হারিয়ে ফেলছি..আগে যাও বা তোমাকে কাছে পেতাম কিন্তু এখন..... রোজ তুমি সকালে বেরিয়ে যাও... ফেরো সেই রাতে. আমাকে কতক্ষন সময় দাও বলো? আমি তোমায় কখনই আটকাইনি. আমি জানি তোমার কাছে তোমার কাজের মূল্য কি.... কিন্তু আমারো তো তোমাকে কাছে পেতে ইচ্ছে করে. আমরা যতটুকু একে অপরকে পাশে পেয়েছি.... তা ভেবে বলতো? আমাদের বিবাহিত জীবন কি এইভাবেই চলবে? তাহলে এই সংসারের মানেটা কি?
মানুষটা এবারে ঘুরে দাঁড়িয়ে বললো - এসব বলে কি বলতে চাইছো? আমি তোমায় খুশি রাখিনা? এই যে গলায় হারটা... এটা কে দিয়েছে? এই যে কানের দুল কার দেওয়া? এগুলো এমনি এমনি আসেনি... আমার এই সারাদিনের খাটনির ফলাফল বুঝলে.....এইযে এতো বড়ো বড়ো জ্ঞান দিচ্ছ.... আজ এগুলো যদি কিনে না দিতে পারতাম তখন নিজেই তো বলতে কার সাথে বিয়ে করলাম.... বৌকে কিছু দেবার দম নেই, সামর্থ নেই ... অযোগ্য লোক একটা.... কি বলতেনা? দেখো... টাকা আছে তো খুশিও আছে... নইলে না এসব জ্ঞান পেছন দিয়ে বেরিয়ে যায় বুঝলে? যত্তসব...
এইবলে লোকটা বেরিয়ে গেলো. মেয়েটি স্বামীর চলে যাওয়া দেখে বিছানায় বসে কাঁদতে কাঁদতে কোথায় যেন মিলিয়ে গেলো.
আমার মনে হচ্ছিলো নিজের অতীতের ওই রূপটাকে গিয়ে কষিয়ে দুটো থাপ্পড় মারতে. কি হয়ে গেছিলো আমার তখন? শুধু টাকা- টাকা - টাকা. এই ঝগড়া প্রায় রোজ হতো দুজনে. আর সহ্য করতে পারেনি মেয়েটি. চলে যায় একদিন ঘর ফাঁকা করে. আমিও জোর করে আটকাইনি তাকে. ফাঁকা বিছানায় ঘুমোতে প্রথম প্রথম ভালোই লাগতো. আর কেউ নেই বিরক্ত করার. পুরো সময় আমার . আর নেই কোনো বাড়তি দায়িত্ব. সারাদিন অর্থের পেছনে দৌড় করা ছাড়া কোনো কাজ নেই. ঘরে অর্থ আসছে. সাফল্যের মুখ দেখছি. কিন্তু যতদিন যেতে লাগলো ততো মনে হতে লাগলো সত্যি তো কেউ আর বিরক্ত করছেনা, কেউ তো ঝগড়া করছেনা, কেউ তো অপেক্ষা করে থাকেনা. ফাঁকা বাড়িটা সকালে যেমন ছেড়ে যায়, ফেরত এসে তেমনি পাই. মাঝে মাঝে একাকিত্ব অনুভব করে. কেমন যেন ভয় লাগতো. পাশে বার বার তাকিয়ে দেখতাম ফাঁকা জায়গাটা.
নতুন ফ্লাট নিলাম. ভেবেছিলাম একেবারে নতুন ফ্ল্যাটেই বাবা মাকে নিয়ে আসব. এবারে যদি একাকিত্ব দূর হয়. কিন্তু নিজের ঘরে ঢুকলেই আবার সেই একাকিত্ব. বাবা মা অনেকবার বলেছিলো আমাদের আলাদা না হতে কিন্তু তখন আমি আর আমি ছিলাম না. তখন আমি ছিলাম অর্থের উপাসক. শুধুই সাফল্য ছিল আমার স্বপ্ন. নিজের অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে সাফল্যের ভবিষ্যত গড়ে তুলতে এতোই মশগুল ছিলাম যে কোনো কিছু তোয়াক্কা করিনি. নিজের বাবা মাকেও না. শুধুই অর্থ উপার্জন করে বাবা মায়ের হাতে টাকা তুলে দেয়াকেই ভেবেছি কর্তব্য পালন.
আজ আমি সফল. হ্যা... বেশ ভালোই আছি. গাড়ি, ফ্লাট সব হয়েছে. কিন্তু আজ যখন পেছন ফিরে তাকাই তখন নিজেকে দেখতে পাইনা. দেখি একটা কাপুরুষকে. যে জীবনের মানেটাই বোঝেনি. যে জীবনের মূল অর্থটাই বোঝেনা, যে সাফল্য আর সুখের মধ্যে ভারসাম্যটা অনেক আগেই হারিয়ে ফেলেছিলো.
আজ সে একা..... আমি একা. বাবা মায়ের সন্তান কিন্তু স্পেশাল কারোর একজন আর নই. আমি চাইলেই আবার সংসার করতে পারতাম. না..... পারিনি. পারিনি আর. ইচ্ছে হয়নি.... না.... বোধহয় এটা বলা ঠিক যে সেই মুখটা ভুলতে পারিনি . বার -বার বাবা মা বলেছে কিন্তু পারিনি.
থাকতে না পেরে খোঁজও নিতে চেয়েছি অতীতের চেনা মানুষটার. ফোন করেও ছিলাম কিন্তু ওপাশ থেকে উত্তর পাইনি. সে হয়তো নিজের জীবনে এগিয়ে গেছে ভেবে আর এগোতে পারিনি. তাছাড়াও কি মুখে দাঁড়াতাম তার সামনে? কি বলতাম তাকে?
না... আর খোঁজ নেওয়া হয়নি. ভুলতেও চেয়েছি, পারিনি. কিন্তু এটা বুঝেছিলাম ভালোবাসা আমার জীবনেও এসেছিলো. কিন্তু তাকে দুহাত বাড়িয়ে গ্রহণ করার পরিবর্তে নিজের ভুলে তাকে বর্জন করেছি. শুধুই কষ্ট দিয়েছি. আর শেষে হারিয়ে ফেলেছি আমার ভালোবাসা. ওই শুন্য স্থান আর কেউ পূরণ করতে পারবেনা.
চোখে হালকা জল এসে গেলো . তারপর ছবিতে সুন্দরী মেয়েটার হাসি মুখটা দেখে আমার মুখ দিয়ে বেরিয়ে এলো- সরি. এক্সট্রিমলি সরি.
সকালে উঠে ফ্রেস হয়ে রেডি হয়ে নিলাম. চা খাচ্ছি এমন সময় ফোন বাজলো. ফোন হাতে নিয়ে দেখি অচেনা নম্বর. আমিই রিসিভ করলে ওপাশ থেকে শুনলাম - উঠে পড়েছিস... চল জলদি রেডি হয়ে নে...খেয়েই বেরিয়ে পড়বো. একসাথে বাইরে খেতে যাবো.
ভুলেই গেছিলাম কালকেই সঞ্জয়কে নিজের নম্বর দিয়েছিলাম. বাড়ি ফিরে ওরটা সেভ করতে ভুলেই গেছিলাম. কি মনে হতে আমি তখনি বললাম - হ্যা আসছি.... তা আমরা সবাই যাচ্ছি তো?
- হ্যা... সবাই... যদিও অঞ্জলি বলছিলো ও বেরোবে না ....হোটেলেই থাকবে.... কিন্তু আমরা ঠিক রাজি করিয়ে নিয়েছি. আরে বেড়াতে এসে ঘরে বসে থাকা? কাভি নাহি!!
নে চল... চল ব্যাটা তাড়াতাড়ি আয় নিচে.
একটু পরে রেডি হয়ে নিলাম. আমার মধ্যে কি যেন একটা পরিবর্তন এসেছে হটাৎ বুঝলাম. কেমন একটা অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছে ভেতরে. আয়নায় তাড়াতাড়ি একবার নিজেকে দেখে নিলাম. আশ্চর্য!আজ অনেকদিন পর নিজের মুখটা আয়নায় অন্যরকম লাগলো. কিছু একটা পরিবর্তন হয়েছে আমার মধ্যে কি?
সঞ্জয়কে আরেকবার ফোন করে ওরা রেডি হয়েছে কিনা জেনের নিয়েই বেরিয়ে গেলাম নিচে. বাইরে গিয়ে দেখি বন্ধু আর দুই মহিলা দাঁড়িয়ে. আমাকে আসতে দেখে দুজনের মুখে হাসি ফুটলেও একজন নিজের মুখ ঘুরিয়ে রাস্তার দিকে তাকিয়ে রইলো. আমিও আর না তাকিয়ে সঞ্জয়ের সাথে কথা বলতে লাগলাম.
আহা.... এবারে চলো যাই. বৌদির কথায় যথা আজ্ঞা দেবী বলে বন্ধুটি আমার গায়ে ঠেলা দিয়ে বললো - ভাই চল..... অর্ডার পালন করতেই হবে... নইলে বিপদ. আমরা হেসে বেরিয়ে পড়লাম.
বুঝলাম বন্ধুটি আমার বেশ খুশি আছে নিজের জীবনে. যতই বন্ধুকে দেখছি ততই নিজের ওপর লজ্জিত হচ্ছি. ওর জায়গায় আমি কি ছিলাম? দুজনকে একে অপরের সাথে কি ভালো লাগছে. এটাই তো জীবনের আসল খুশি. একটু রাগ, একটু অভিমান, একটু ইয়ার্কি,দুস্টুমি আর অনেক অনেক ভালোবাসা.
হাঁটতে হাঁটতে মাঝে মাঝে আমার নজর চলে যাচ্ছে বেগুনি সালোয়ার কামিজ পরিহিতার দিকে. কি অসাধারণ লাগছে. কিন্তু সোজা চোখে তাকিয়ে দেখার অধিকার আজ আর নেই. সত্যি কি নেই? একটুও?
আমার বন্ধুটি হটাৎ আমার ঘনিষ্ট হয়ে গলা নামিয়ে বললো - আচ্ছা তখন তুই আমায় সবাই আসছে কিনা জিজ্ঞেস করলি কেন?
আমি কি বলবো বুঝতে না পারলেও তৎক্ষণাৎ নিজেকে সামলে বললাম - না মানে এমনি..... এই আর কি.
দুস্টু চাহুনি দিয়ে সে বললো - এমনি? আচ্ছা? এমনি? আমায় কি কচি খোকা ভাবো? কিছুই বুঝিনা হুম?
মানে? বুঝেও না বোঝার ভান করে জিজ্ঞেস করলাম.
ও দুস্টু চাহুনি দিয়ে বললো - মানে? বলি চোখ তো সরাতেই পারছোনা গুরু? তাইতো বলি আমাকে জিজ্ঞেস করলো কেন সবাই... মানে সবাই যাচ্ছি কিনা. কাল তো বললামই আমরা সবাই যাচ্ছি তাও আজ আলাদা করে সবাই যাচ্চি কিনা জিজ্ঞেস কেন করলো? কি ব্যাপার গুরু?
আমি অপ্রস্তুত হয়েও নিজেকে সামলে নিয়ে বললাম - আরে ধুর ব্যাটা... আমি... আমি তো...
ও বললো - এত আমি আমি করোনা.... পেটে খিদে মুখে লাজ... ন্যাকা....দেখ তুই যদি বলিস আমি মানে আমি আর কৃতি কিন্তু ওর সাথে কথা বলতে পারি.....তারপর না হয়....
আমি - আরে তুই কোথা থেকে কোথায় চলে যাসনা.... এমন কিছু না চল ব্যাটা . (আমি এড়ানোর জন্য বললাম.)
এবারে সঞ্জয় সিরিয়াস হয়ে বললো - আরে আর কতদিন একা থাকবি? যা হবার তো হয়েই গেছে.... এবারে এগিয়ে যাওয়াই তো উচিত নাকি? দেখ তুই আর ও দুজনেই এখন একা. তোদের দুজনেরই একটা পাস্ট আছে কিন্তু সেসব ভুলে নতুন করে এগিয়ে যাওয়া উচিত. তোর যদি ওকে ভালো লেগে থাকে তাহলে আমাকে বল..... আমরা ওর সাথে কথা বলি.... বা বেস্ট হয় তোরা নিজেদের সাথে কিছুক্ষন সময় কাটা, কথা বল.
আমি হেসে বললাম - আরে আমরা বেড়াতে এসেছি.... এখানে এসে এসব করবো?
সঞ্জয় - তুই ব্যাপারটা এড়িয়ে যাচ্ছিস কেন বলতো? ও ডিভোর্সড বলে?
আমি - সে তো আমিও.
সঞ্জয় - তাহলে? লজ্জা করছে? তুই শালা চিরকাল গুড বয় হয়েই থেকে গেলি. ভদ্র ছেলেটা. আরে একটু সাহস নিয়ে এগিয়ে যা না.
আমি হেসে বললাম - হুম..... ঠিকই বললি.... গুড বয় হয়েছি ঠিকই, কিন্তু গুড হাসব্যান্ড হতে পারিনি.
সঞ্জয় - এই সরি রে আমি কিন্তু ওই ভাবে কিছু.......
আমি হেসে ওর কাঁধে হাত রেখে বললাম - আরে ধুর... সরি কিসের..... ছাড় ওসব... চল.
সঞ্জয় - আমি কিন্তু শুধু তোর কথা ভেবে ওগুলো বলিনি. তুই যেমন ওর দিকে দেকছিলিস... তেমনি অঞ্জলিও কিন্তু তোর দিকে দেখছিলো মাঝে মাঝেই কাল. কৃতি বললো আমায়. কাল তুই যখন খাচ্ছিলি তখন কৃতি দেখেছে ওকে তোর দিকে মাঝে মাঝে তাকাতে. I think..... ওরও তোকে পছন্দ হয়েছে. কাল তোর সাথে পরিচয় করানোর সময়ই তো দেখলাম... দুজন দুজনকে দেখেই যাচ্ছিলি.
আমি নিজের মনের হাসলাম ওর কথা শুনে. ও কি ভাবছে আর..... সত্যিটা কি.
একসময় সেই স্থানে পৌঁছে গেলাম. খুব বেশি দূর না আমাদের হোটেল থেকে. কিন্তু এই রাস্তা টুকু কখন যে পার করে ফেলেছি ভেবে পেলাম না.