Thread Rating:
  • 65 Vote(s) - 3.34 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Romance শেষের পাতায় শুরু (Completed)
(04-12-2020, 09:27 PM)sorbobhuk Wrote: খুব সুন্দর হয়েছে ভাই।  একদম ঝাক্কাস।  দুজনেই একে অপরকে বলে দিয়েছে ভালোবাসে। সামনে দেখি

thanks thanks  ধন্যবাদ !!!!!!
[Image: 20210115-150253.jpg]
[+] 3 users Like pinuram's post
Like Reply
Do not mention / post any under age /rape content. If found Please use REPORT button.
দাদা পাবো কি আজ তার দেখা !! ?? বড্ড যে চায়ের তেষ্টা পেয়েছে।

""পৃথিবীটা রঙ্গমঞ্চ আমরা সবাই অভিনেতা"" !! Sad

[+] 2 users Like Kolir kesto's post
Like Reply
দাদা আজ আসছে নাকি নতুন পর্ব ?
দুজনের "চায়ে পে চর্চা"  এর  অপেক্ষায় রইলাম ।
[+] 2 users Like Buro_Modon's post
Like Reply
(04-12-2020, 10:09 PM)Kolir kesto Wrote: দাদা পাবো কি আজ তার দেখা !! ?? বড্ড যে চায়ের তেষ্টা পেয়েছে।

ইসসস দেখো কি শখ, দাদাকে জিজ্ঞেস করলেই কি আমার দেখা পাওয়া যাবে নাকি ভেবেছ? অত সহজে এই ভবি কে ভোলানো যাবে না, যাও শয়তান ছেলে! হৃদয় থেকে ডাক দিতে হবে, তবে পাবে আমার সন্ধান! এই তোমাদের লেখক দাদা কিচ্ছুটি করতে পারবে না! প্লিজ একটু সবুর করো সোনা, আমি আসবো বলেছি তো, তোমাকে দেখা না দিয়ে কি আর থাকতে পারি নাকি, বলো!!!!!
(আজকে সত্যি তোমাদের জ্বালায় পিনুরাম মানে আমি কারুর রিপ্লাই দিতে পারছি না, সব ওই ঝিনুকের কারসাজি)
[Image: 20210115-150253.jpg]
[+] 5 users Like pinuram's post
Like Reply
বাহ্ এটা নতুন টেকনিক ! পিনুদা ঝিনুকের ঘাড়ে চাপিয়ে রিপ্লাই গুলো দিয়ে দিচ্ছে !!  Big Grin
[+] 2 users Like Mr Fantastic's post
Like Reply
(04-12-2020, 10:13 PM)Buro_Modon Wrote: দাদা আজ আসছে নাকি নতুন পর্ব ?
দুজনের "চায়ে পে চর্চা"  এর  অপেক্ষায় রইলাম ।

পিনু -- না দাদা, আজকে আর চায়ে পে চর্চা আনতে পারছি না!
ঝিনুক -- ইসসস, পিনু তুমি এইভাবে আমার আগেই কেন কথাটা কেড়ে নিলে? ভালো করলে না কিন্তু!
পিনু -- না মানে তুমি অনেকক্ষণ থেকে বকবক করে যাচ্ছও!
ঝিনুক -- গল্প আমার, আমার অধিকার আছে আমার এডমায়ারারদের সাথে গল্প করার, তার মাঝে তুমি কেন এলে? সরি বুড়ো মদন দাদা, আজকে আর আসতে পারছি না, দুঃখিত! কাল চেষ্টা করব, তবে কি জানেন এখুনি কথা দিতে পারছি না, চুপিচুপি বলছি, মাথাটা ভীষণ ধরেছে... এই আমি যাচ্ছি রিশু ডাকছে !!!!!!! 
[Image: 20210115-150253.jpg]
[+] 5 users Like pinuram's post
Like Reply
পর্ব সাত – (#7-36)

 
বিছানা ছেড়ে দুইজনে উঠে পড়ল। রান্না ঘরে গিয়ে গ্যাস জ্বালিয়ে একটা ডেকচিতে দুই কাপ জল চাপিয়ে ঝিনুক জিজ্ঞেস করে, “এর পর?”

রিশু ওকে চা বানানোর পদ্ধতি বুঝিয়ে দেয়, “জল একটু গরম হলে একটু আদা থেঁতো করে দেবে আর তুলসি পাতার গুঁড়ো দেবে...”

ঝিনুক চোখ বড় বড় করে, “তুলসি পাতার গুড়ো, হোয়াট দ্যা ... কোথায় পেলে?”

মৃদু হেসে রিশু উত্তর দেয়, “মা যখন আসে তখন বাড়ি থেকে তুলসি পাতা শুকিয়ে গুঁড়ো করে নিয়ে আসে।”

ঝিনুক ভুরু নাচিয়ে হেসে বলে, “চা নাকি না অন্য কিছু।”

রিশু হেসে উত্তর দেয়, “আরে খেয়ে দেখো। জল গরম হবে কিন্তু ফোটার আগেই একটু চায়ের পাতা দিয়ে বন্ধ করে দেবে, তারপর প্রায় পাঁচ মিনিট একটু ভিজতে দেবে, ব্রিউ হতে দেবে পাতা। পাতা খুলে নিচে পরে যাবে তখন চায়ের জল তৈরি হয়ে যাবে।”

বাধ্য মেয়ের মতন মাথা দুলিয়ে রিশুর পদ্ধতি অনুযায়ী চা বানাতে শুরু করে দেয় ঝিনুক। পাঁচ মিনিট পরে চা ছেঁকে ওকে জিজ্ঞেস করে, “ক চামচ চিনি দেবো?”

মুচকি হাসে রিশু, “না না চিনি নয়, এবারে চায়ে এক চামচ করে মধু দাও তার পরে লেবুর স্লাইস করে কেটে দাও।”

লেবু পাতলা করে কাটতে কাটতে চোখ বড় বড় করে ওকে জিজ্ঞেস করে, “এটা কি চা গো?”

রিশু হেসে বলে, “দারুন লাগবে খেয়ে দেখো।”
 
ঝিনুক এমন চা কোনদিন খায়নি। সেদিন একের পর এক যা ঘটে চলেছে সব কিছুই ওর কাছে প্রথমবার আর বারেবারে অবাক করে দেওয়ার মতন। বিকেল বেলায় যেমন হটাত করেই ওর মুখ থেকে ভেতরের উদ্বেগ ঠিকরে বেড়িয়ে এসছিল, সাবধানে এসো। তারপরে শালিনীর সাথে দেখা, রিশুকে বড় দাদার মতন সন্মান করে, দেখতে সুন্দরী নিওন্যাটোলজিস্ট কিন্তু কোন অহঙ্কার নেই কত সহজে ওর সাথে মিশে গেল, ওকে বুঝতেই দিল না যে ওদের আগে দেখা হয়নি। ডিনারের খাবারের বহরের নাম কোনদিন আগে শোনেনি। অন্ধকার ট্যাক্সিতে দয়িতের উষ্ণ পরশে ওর হৃদয় গলে গিয়েছিল। রিশুর প্রথম চুম্বনে ওর সারা শরীর অসাড় হয়ে গিয়েছিল, যদিও সেই চুম্বন ওর অধরে নয় ললাটে প্রস্থাপিত কিন্তু সেই ললাটের চুম্বনের প্রশান্তির প্রলেপ অধরের চুম্বনের মাধুর্যের ভাষার কাছে হার মেনে যায়। এটা ওর জীবনের প্রথম চুম্বন নয় তবে কেউ ওর কপালে এইভাবে এর আগে চুমু খায়নি।
 
চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে বেশ ভালো লাগে ঝিনুকের, হাসি মুখে রিশুকে বলে, “এর টেস্ট বেশ অন্যরকম।”

রিশু প্রশ্ন করে, “ভালো লেগেছে?” মাথা দোলায় ঝিনুক, হ্যাঁ। রিশু ওকে বলে, “আমাদের বাড়িতে এই চা খাওয়া হয়। বোন বলে পথ্য খাচ্ছি। আসলে আমার একটু সর্দির ধাত আছে তাই সেই ছোটবেলা থেকে মা আমাকে এই চা খাওয়ায় আর নিজেও খায়, আর সেই থেকেই বাড়ির সবাইকে এই চা খেতে হয়।” বলেই হেসে ফেলে।

ঝিনুক মুচকি হেসে রিশুর পাশ ঘেঁষে বলে, “আসলে কি জানো আই ওয়াজ ফিলিং ভেরি ডিজি...” কথাটা শেষ করার আগেই লাজুক হেসে মাথা নিচু অস্ফুট স্বরে বলে, “আমার অতটা ড্রিঙ্ক করা উচিত হয়নি।”

ওর সামনে ড্রিঙ্ক করে কুন্ঠিত বোধ করছে দেখে বেশ ভালো লাগে রিশুর, মানুষের উচিত সময় থাকতে নিজের ভুল বোঝার। অনেক সময়ে মানুষ নিজের ভুল ত্রুটি দেখতে পারে না আর সেই ভুল পথেই চলে যায়। ঝিনুকের অপ্রস্তুতভাব কাটানোর জন্য কাঁধ দিয়ে আলতো ধাক্কা মেরে বলে, “ইট ইজ অল রাইট। এক আধ দিন ড্রিঙ্ক করলে ক্ষতি নেই। মা আমাকে একটা গল্প বলত, এক রাজার একটা পোষা বাঁদর ছিল, সেই রাজা তার পোষা বাঁদরকে ভীষণ ভালবাসত। পোষা বাঁদরটা খুব জ্বালাতন করত সেই রাজাকে সব সময়ে এইটা ধরে টান মারে অইটা ধরে টান মারে, কিন্তু সেই রাজা কোনদিন সেই বাঁদরটাকে কিছু বলত না। একদিন সেই বাঁদর সেই রাজার ঘাড়ে চেপে বসলো, রাজা তখন সেই বাঁদর কে আদর করে মাটিতে নামিয়ে দিল কিন্তু কিছুই বলল না। এই ভাবে সেই বাঁদরের আরো সাহস বেড়ে গেল। একদিন সেই বাঁদর রাজার ঘাড়ের বদলে মাথায় চেপে বসতে গেল, ঠিক তখনি সেই রাজা সেই বাঁদরটাকে তুলে আছাড় মেরে মাটিতে ফেলে দিল। রাজার আদরের বাঁদরের সাথে এই ব্যাবহারে সভাসদেরা অবাক হয়ে কারণ জিজ্ঞেস করলে রাজা উত্তরে বলেন, অভ্যেস অথবা মানুষ কাউকেই কোনদিন মাথায় চড়তে দিতে নেই, মাথায় বসালেই সে তোমার মাথায় চড়ে নাচতে শুরু করে দেবে, তোমার জীবন শেষ করে দেবে।”

এই গল্পের নিগূড় অর্থ অনুধাবন করতে পেরে ঝিনুক চুপ করে যায়, ছোট একটা গল্পের মাধ্যমে অনেক কিছুই ওকে জানিয়ে দিল রিশু। রিশুকে দেখতে একদম রিশুর মায়ের মতন, এক ছাঁচে তৈরি, প্রকৃত অর্থে মায়ের ছেলে। কুন্ঠা বোধে ওর বুক ভেঙ্গে যায়। রিশুর কাছ ঘেঁষে নরম কন্ঠে বলে, “আর কোনদিন এমন করব না।”

পাপ বোধে জর্জরিত ঝিনুকের গলা শুনে আহত হয়েই ওকে সান্ত্বনা দিয়ে বলে, “আরে না না, বললাম তো কালে ভদ্রে ড্রিঙ্ক কর ক্ষতি নেই।” চায়ের কাপ ছোট চুমুক দিয়ে বাঁ হাত দিয়ে ঝিনুকের কাঁধ জড়িয়ে ধরে কাছে টেনে বলে, “এই তোমার নাকি মাথা ঝিমঝিম করছিল?”

চায়ের কাপ চুমুক দিয়ে ওর কোল ঘেঁষে মিহি কন্ঠে বলে, “এখন আর নেই” বলেই মুচকি হাসি দেয় ঝিনুক।

অনেকদিন থেকেই মনের মধ্যে একটা প্রশ্ন উঁকি মারছিল ঝিনুকের, কি কারনে গত রবিবার ওর রক্ত আর ইউরিন পরীক্ষা করেছিল রিশু। প্রশ্ন করে রিশুকে, “আচ্ছা একটা প্রশ্ন করব?” রিশু মাথা দোলায়। ঝিনুক ওকে প্রশ্ন করে, “আমার কি হয়েছে যে ব্লাড টেস্ট করতে দিয়েছিলে?”

ঝিনুককে আসস্থ করার জন্য মাথা নাড়ায় রিশু, “তোমার কিছুই হয়নি, তুমি ফিট এন্ড ফাইন আছো।”

ঝিনুক মুখ গোমড়া করে বলে, “না প্লিজ বল না।”

বুক ভরে শ্বাস নিয়ে রিশু ওর প্রশ্নের উত্তরে বলে, “তুমি জল খাও না একদম...”

তেড়ে ওঠে ঝিনুক, “কই খাই ত।”

হেসে ফেলে রিশু, “সে তো আমার বলার পরে।”

লাজুক হাসি দেয় ঝিনুক, “হুম”

রিশু ওকে বলে, “সঞ্জনা ম্যাডাম যে ওষুধ গুলো দিয়েছে সেই গুলো ঠিক মতন খেয়ে যাও আর জল খেও তাহলে কিছু হবে না।”

তাও ঝিনুকের ভীষণ ভাবেই জানতে ইচ্ছে করে আসলে ওর শরীরে কি হয়েছে, হটাত করেই কেন ওর রক্ত পরীক্ষা করার ইউরিন পরীক্ষা করার দরকার পড়ল রিশুর, “তুমি না বললে কাল থেকে ফল খাবো না কিন্তু।”

রিশু হেসে ফেলে, “আচ্ছা বাবা, আসলে হয়ত কিছুই নয় সব কিছুই আমার মনের ভুল কিন্তু তাও একটা দুশ্চিন্তায় ছিলাম। তোমার ইউরিনে এমোনিয়ার মানে এসিডিক গন্ধ ছিল তাই ইউরিন টেস্ট করিয়েছিলাম, পরীক্ষা করে দেখতে চেয়েছিলাম ইউরিন ইনফেক্সান আছে নাকি। মেয়েদের ভ্যাজাইনা আর এনাস খুব কাছাকাছি, পটি করার পরে ধোয়ার সময়ে সেই জল ভ্যাজাইনাতে ঢুকে পরে আর তাতে ইনফেক্সানের চান্স অনেক বেড়ে যায়। যদিও তোমার ইনফেক্সান নেই তবে তুমি যেহেতু জল খাও না তাই এলএফটি করার দরকার ছিল, লিভারের কি অবস্থা সেটা জানার দরকার ছিল, তাই ব্লাড টেস্ট করতে হল। সিস্টের একটা সম্ভাবনা আছে তবে সেটা আশা করি সঞ্জনা ম্যাডামের ওষুধে ঠিক হয়ে যাবে।”

যখন ওর রক্ত নেওয়া হয় তখন বাড়ি মাথায় করে তুলেছিল, তখন রিশুকে সঠিক ভাবে চিনত না পর্যন্ত কিন্তু ওর জন্য দুশ্চিন্তা হয়েছে জানতে পেরে ওকে জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে করে ঝিনুকের। মিহি কন্ঠে ওকে বলে, “এত ভাবতে আমার জন্য?”

হেসে ফেলে রিশু, বুকের বাঁ দিকে কিল মেরে বলে, “বললাম তো, এয়ারপোরটে সিকিউরিটি চেকের পরে যখন তোমার চোখ আমাকে খুঁজে বেড়াচ্ছিল তখন থেকেই তোমার জন্য ভাবতে শুরু করেছি।” চায়ের কাপ বেসিনে রেখে জিজ্ঞেস করে ললনাকে, “রাতে কি রান্নাঘরে কাটানোর ইচ্ছে আছে নাকি?”

চায়ের কাপ শেষ করে, রিশুর বুকের ওপরে কিল মেরে বলে, “হ্যাঁ এইখানে সারারাত তোমাকে দাঁড় করিয়ে রাখব।”

রিশু প্রশ্ন করে, “কেন বাবা কি করলাম আবার?”

ঝিনুক হটাত এক দৌড়ে রান্নাঘর থেকে বেড়িয়ে ওর মুখের সামনে দরজা বন্ধ করে দিয়ে খিলখিল করে হেসে বলে, “সিকিউরিটি চেকের পরে আমাকে ওইভাবে ছেড়ে যাওয়ার শাস্তি।”
 
নিস্তব্ধ নিঝুম রাতের নীরবতা ভঙ্গ করে সুন্দরী ললনার ফর্সা পায়ের নুপুরের নিক্কন সারা ঘরে প্রতিধ্বনিত হয়, সেই নুপুরের আওয়াজ সোজা রিশুর হৃদয়ে শক্তিশেলের মতন বিঁধে যায়। রান্নাঘরের দরজা খুলে দেখে ওর রূপসী ললনা শোয়ার ঘরের দরজায় দাঁড়িয়ে ওর প্রতীক্ষায় প্রহর গুনছে। মিটিমিটি হাসি নিয়ে তাকিয়ে যেন কিছু বলতে চাইছে, আসবে নাকি ওই রান্নাঘরেই দাঁড়িয়ে থাকবে। রিশু মুচকি এক হাসি ধির পায়ে রূপসী ললনার দিকে পা বাড়ায়, গুটিগুটি পায়ে যেন এক সিংহ তার সিংহীর দিকে মিলনেচ্ছুক হৃদয় নিয়ে এগিয়ে চলেছে। মনে মনে প্রমাদ গোনে ঝিনুক, রক্তে লেগেছে শুরার নেশা সেই সাথে চোখের তারায় প্রেমে বিভোর হওয়ার উন্মাদনা। রিশু যতই ওর দিকে এক পা এক পা করে এগিয়ে আসে, ততই ঝিনুক এক পা এক পা করে পিছিয়ে যায়। নুপুরের নিক্কন, প্রেয়সীর নধর দেহপল্লবের উন্মত্ত ঘ্রাণ আর মদালসা ছন্দের মত্ত চলনে রিশুর বুকের ভেতর রক্ত এলোপাথাড়ি ছোটাছুটি শুরু করে দেয়।
 
ঝিনুক দুষ্টুমি করে বিছানায় উঠে গলা পর্যন্ত লেপ টেনে খিলখিল করে হেসে বলে, “আর একদম কাছে আসবে না।”

বিছানার ওপরে দুই হাতে ভর দিয়ে ঝিনুকের দিকে ঝুঁকে পরে রিশু। ডান হাতের মুঠোতে লেপের এক কোনা ধরে একটু টান মেরে বলে, “আমাকে শুতে দেবে না?”

গোলাপি জিব বের করে নাক কুঁচকে রিশুকে ভেঙ্গিয়ে বলে, “তুমি তো নিশাচর প্রাণী, তোমার ঘুমের কিসের দরকার।”

হেসে ফেলে রিশু, “কে বলেছে আমি নিশাচর প্রাণী?”

নিচের ঠোঁট দাঁতে কেটে চোখের তারায় দুষ্টু মিষ্টি হাসি মাখিয়ে বলে, “কেন রোজ রাতে খাওয়ার পরে কত রাত পর্যন্ত ল্যাপটপে বসে কি সব কর যে? তুমি কি ভাবো আমি কিছু জানি না?”

সত্যি কোনদিন খেয়াল করেনি রিশু, রাতে খাওয়ার পরে ওর পড়াশুনা, ক্যালিফোর্নিয়ায় ওর একজন ডাক্তার বন্ধুর সাথে আজকাল রাতে ভিডিও কল করে নতুন পেপারের আলোচনা করতে হয়, সেই করতে করতেই অনেক রাত হয়ে যায়। ভুরু কুঁচকে ঝিনুককে জিজ্ঞেস করে, “তুমি তার মানে রাতে না ঘুমিয়ে আমার ওপরে চর গিরি কর।” বলেই হেসে ফেলে।

মাথা নাড়ায় ঝিনুক, “নো নো নট দ্যাট, তবে রাতে ঘুম না এলে কি করবো? তাই মাঝে মাঝে উঠে তোমার ঘরে উঁকি মেরে দেখি তুমি কি করছ।”

হেসে ফেলে রিশু, “আচ্ছা এটা দেখতে চাও যে আমি রাতে কার সাথে ভিডিও কল করছি।” ওর চোখ চলে যায় ঝিনুকের গোলাপি ফোলা নরম গালের ওপরে, খুব কাছ থেকে না দেখলে আঁচড়ের দাগ আর বোঝা যায় না। ডান হাতের তর্জনী আর মধ্যমা দিয়ে ঝিনুকের নরম গাল ছুঁয়ে জিজ্ঞেস করে, “কেন করতে গিয়েছিলে?”

সেই দিনের কথা চোখের সামনে ভেসে উঠতেই চোখ ফেটে জল চলে আসে ঝিনুকের। দয়িতের ভালোবাসার উষ্ণ পরশে ঝিনুকের মোমের হৃদয় গলে যায়, ধরা গলায় বলে, “তুমি জানো দ্যাট সন অফ বিচ জঘন্য ভাবে আমার গালের ওপরে জিব দিয়ে চেটেছিল।”

কথাটা কানে যাওয়া মাত্রই চরম ক্রোধে রিশুর মাথার রক্ত গরম হয়ে যায়। লেপ ছেড়ে বিছানায় উঠে ঝিনুকের মাথা বুকের ওপরে চেপে ধরে বলে, “আর সেই সব মনে করতে হবে না...”

রিশুর প্রসস্থ ছাতির উষ্ণ পরশে ভেঙ্গে পরে ঝিনুক, দুই হাত দিয়ে রিশুকে জড়িয়ে ধরে বুকের ওপরে ভেঙ্গে পরে “আমাকে কেউ ভালবাসেনা জানো, নো ওয়ান লাভস মি।”

ঝিনুক কে বুকের ওপরে জড়িয়ে ধরে বিছানায় আধাশোয়া হয়ে রিশু ওর চোখের জল মুছিয়ে দিয়ে বলে, “আমি তোমায় ভালোবাসি ঝিনুক।”

রিশুর বুকের ওপরে লুটিয়ে পরে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে চোখের সামনে ফুটে ওঠা সেই বিভীষিকাময় সন্ধ্যের বিবরন দেয়, “তুমি জানো, আমাকে কি ভাবে ডিচ করেছে ওই শয়তানটা? পার্টি করার নাম করে সেদিন আমাকে ওর এক বন্ধুর ফ্লাটে ডেকে নিয়ে গেল। এর আগেও অনেকবার পরেশের ফ্লাটে গিয়ে পার্টি করেছি। তুমি জানো ও আমাকে খুব করে মদ খাওয়াত জানো, আই গট এডিক্টেড।” কথা গুলো শুনে ক্রোধান্বিত হয়ে ওঠে রিশু। ঝিনুক থামে না, “জানি না কেন ওই শয়তানটার জন্য অত পাগল হয়েছিলাম। মা বাবার কথা অমান্য করে সেদিন ওর সাথে দেখা করতে চলে গিয়েছিলাম। আমাকে মদ খাওয়াল তারপরে আমাকে জোর করে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে আমাকে রেপ করতে...”

;.,ের কথা কানে যেতেই রিশুর মনে হল কেউ যেন ওর কানের ওপরে গরম লাভা ঢেলে দিয়েছে। এই পার্থ কে উচিত শিক্ষা দিতেই হবে, ওর ঝিনুকের চোখের জলের দাম ওকে দিতেই হবে। অনায়াসে এই ইতর মানুষটাকে ছেড়ে দেবে না রিশু। ঝিনুকের মুখের ওপরে আঙ্গুল চেপে শান্ত করে বলে, “আই প্রমিজ দ্যাট আই উইল এভেঞ্জ দিস।”

ঝিনুক ওর বুকের ওপরে মাথা গুঁজে এক নাগারে কেঁদে চলে, “নো ওয়ান লাভস মি...”

ঝিনুকের চিবুকে আঙ্গুল দিয়ে নিজের দিকে তুলে ধরে বলে, “এই পাগলি আমি তোমার সাথে আছি তো।”

ডান হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে চোখের জল মুছে বলে, “নট ইউ। দশ বছর আগে বাবার ট্রান্সফার হল কোলকাতায়। রানীগঞ্জের সব বন্ধু বান্ধবী ছেড়ে আসতে আমার ভীষণ খারাপ লেগেছিল, কিন্তু কিছুই করার ছিল না। আমার খুব নাচের শখ ছিল জানো। আমার মামতো দিদি রুহি খুব সুন্দর নাচতে জানে, শান্তিনিকেতন থেকে নাচে বি মিউজ করেছে। রুহিদিকে দেখে আমারও শখ হয়েছিল যে আমিও নাচ শিখবো। কিন্তু যেহেতু আমার বাবা ইঞ্জিনিয়ার, আমার পিসতুতো দাদা আর দিদি দুইজনেই ইঞ্জিনিয়ার তাই আমাকেও বলা হল যেন আমি সায়েন্স নিয়ে পড়াশুনা করি। আমি মাকে কত করে বললাম যে আমি শান্তি নিকেতনে নাচ নিয়ে পড়াশুনা করতে চাই। কেউ শুনলো না, মা আমাকে শাসিয়ে বললে যে নাচে ভবিষ্যৎ নেই, জীবন নেই, এই সিনেমা টিভিতে হয়ত নেচে বেড়াতে হবে। যখন আমাকে নাচ শিখতে দেওয়া হল না তখন আমি বেপরোয়া হয়ে গেলাম। উচ্চ মাধ্যমিকে ভালো রেজাল্ট আর করলাম না।” রিশুর বুকের ওপরে আবার আছড়ে পরে কেঁদে ফেলে, “আমি খুব বাজে মেয়ে রিশু... আমি খুব খারাপ মেয়ে...”

শরীরের শেষ শক্তি টুকু নিঙরে দুই হাতের মধ্যে জড় করে ঝিনুককে বুকের ওপরে জড়িয়ে ধরে রিশু, “কে বলেছে তুমি বাজে মেয়ে?” ওর চোখের জল মুছিয়ে মাথায় ঠোঁট চেপে ধরে স্বান্তনা দিয়ে বলে, “কোন বড় কার্যসিদ্ধি করে অহংকারী হওয়ার চেয়ে নিজের ভুল শুধরে বিনম্র নিরহঙ্কার হওয়া অনেক ভালো।”

কথাটা শুনে কান্না ভুলে রিশুর দিকে মুখ তুলে তাকায় ঝিনুক, “হু আর ইউ?”

ঝিনুকের নাকের ওপরে নাক ঘষে আদর করে বলে, “তোমার ঘুড়ির লাটাই।”
 
রিশুর বুকের কাছে সরে এসে ওর বাম বাজুর ওপরে মাথা রেখে চুপ করে চোখ বুজে নেয় ঝিনুক। রিশুর শরীরের তাপে ঝিনুকের বুকের মাঝে প্রশান্তির ছায়া নেমে আসে, চোখের পাতা ভারি হয়ে যায়। শরীরের ছোঁয়া এর আগেও পেয়েছিল ঝিনুক কিন্তু সেই পরশে এই ভালোবাসা ছিল না। রূপসী প্রেয়সীর নধর দেহটাকে ডান হাতে জড়িয়ে বুকের কাছে টেনে আনে রিশু। পানপাতার আকারের মুখবয়াবের দিকে নিস্পলক তাকিয়ে থাকে রিশু, কেমন চোখ বুজে ওর বুকের কাছে কুঁকড়ে চোখ বুজে শুয়ে। প্রেয়সীর বুকের বেদনা অনুভব করতে চেষ্টা করে, কোন মানুষ জন্মেই উশ্রিঙ্খল হয় না, পরিস্থিতি মানুষকে কখন কোন পথে নিয়ে যাবে কেউ জানে না। এরপর থেকে যথা সম্ভব চেষ্টা করবে প্রেয়সীর চলার পথ কন্টকমুক্ত করতে। রিশুর বুকের ওপরে হাত রেখে এক সময়ে নিদ্রাদেবীর কোলে ঢলে পরে ঝিনুক। এক বিছানায় একটা লেপের তলায় একে অপরকে নিজ নিজ বাহুপাশে ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে ধরে ওরা কখন ঘুমিয়ে পড়েছিল সেটা আর ওদের খেয়াল নেই। 



=================== পর্ব সাত সমাপ্ত ===================
[Image: 20210115-150253.jpg]
Like Reply
খুব আবেগঘন মুহুর্ত। রিশু-ঝিনুকের একান্তে এই আলোচনা, এই স্বীকারোক্তির খুব দরকার ছিল। নাহ, পার্থকে একটা উচিত শিক্ষা দিতেই হবে, নইলে আমার শান্তি হবে না। সামনে পেলে শালার টুটি টিপে ধরবো ! পরিশেষে দুই প্রেমিক-প্রেমিকা পরস্পরের বাহুপাশে আবদ্ধ হয়ে পরম নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে পড়ল। কাল নতুন সূর্য ওঠার পর থেকে শুরু হবে ওদের সত্যিকারের দাম্পত্য জীবন  Heart Heart
[+] 3 users Like Mr Fantastic's post
Like Reply
(04-12-2020, 11:58 PM)pinuram Wrote: কথাটা শুনে কান্না ভুলে রিশুর দিকে মুখ তুলে তাকায় ঝিনুক, “হু আর ইউ?”

ঝিনুকের নাকের ওপরে নাক ঘষে আদর করে বলে, “তোমার ঘুড়ির লাটাই।”


প্রিয়তমাকে...

বধূ...
কত বন্ধুর পথ পার হয়ে আজ দাড়িয়েছি
তোমার হাতটি হাতে নিয়ে,
তোমায় নিয়ে এই অনিশ্চিত গহীন সাগরে 
ঝাঁপিয়ে পড়বো বলে ।

সেই অসম্ভব অনিশ্চিত সময় গুলোতে
আমরা যে অপরিনত সপ্ন গুলো দেখতাম
তাদের পূর্না করতেই 
আমরা আজ পাশাপাশি ।

প্রথম সূর্যালোকের মত 
নরম আর অদূরে হবেনা জানি
আমাদের আগামী সময়...

জানি শীতের সকালের
গরম কফির মত মিষ্টি হবেনা
সব মুহূর্ত গুলো...

তবুও এটুকু বলি
দুপুরে তপ্ত প্রখর রোদে
যখন প্রাণ ওষ্ঠাগত
তখন অন্তত আমার দুটো হাত
থাকবে তোমার ওপরে,
বট বৃক্ষের মত
ছায়া দিয়ে যাবে অনন্ত কাল ।

হয়ত ফ্রিজের মত
গ্লাসের চারপাশে
বিন্দু বিন্দু জল জমতে পারবোনা,
তবুও; অতৃপ্ত পিয়াসীর পিয়াস মেটাতে পারব
এটুকু কথা দিতেই পারি তোমায়.....

......ভবঘুরে
[+] 4 users Like Voboghure's post
Like Reply
(05-12-2020, 12:49 AM)Mr Fantastic Wrote: খুব আবেগঘন মুহুর্ত। রিশু-ঝিনুকের একান্তে এই আলোচনা, এই স্বীকারোক্তির খুব দরকার ছিল। নাহ, পার্থকে একটা উচিত শিক্ষা দিতেই হবে, নইলে আমার শান্তি হবে না। সামনে পেলে শালার টুটি টিপে ধরবো ! পরিশেষে দুই প্রেমিক-প্রেমিকা পরস্পরের বাহুপাশে আবদ্ধ হয়ে পরম নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে পড়ল। কাল নতুন সূর্য ওঠার পর থেকে শুরু হবে ওদের সত্যিকারের দাম্পত্য জীবন  Heart Heart
তোমায় হৃদ মাঝারে রাখিবো ছেড়ে দেবো না

ওরে ছেড়ে দিলে সোনার গৌর আর পাবো না
ক্ষ্যাপা ছেড়ে দিলে সোনার গৌর
আর পাবো না না নাআর পাবো না 
[+] 2 users Like Buro_Modon's post
Like Reply
(04-12-2020, 11:58 PM)pinuram Wrote: ডান হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে চোখের জল মুছে বলে, “নট ইউ। দশ বছর আগে বাবার ট্রান্সফার হল কোলকাতায়। রানীগঞ্জের সব বন্ধু বান্ধবী ছেড়ে আসতে আমার ভীষণ খারাপ লেগেছিল, কিন্তু কিছুই করার ছিল না। আমার খুব নাচের শখ ছিল জানো। আমার মামতো দিদি রুহি খুব সুন্দর নাচতে জানে, শান্তিনিকেতন থেকে নাচে বি মিউজ করেছে। রুহিদিকে দেখে আমারও শখ হয়েছিল যে আমিও নাচ শিখবো। কিন্তু যেহেতু আমার বাবা ইঞ্জিনিয়ার, আমার পিসতুতো দাদা আর দিদি দুইজনেই ইঞ্জিনিয়ার তাই আমাকেও বলা হল যেন আমি সায়েন্স নিয়ে পড়াশুনা করি। আমি মাকে কত করে বললাম যে আমি শান্তি নিকেতনে নাচ নিয়ে পড়াশুনা করতে চাই। কেউ শুনলো না, মা আমাকে শাসিয়ে বললে যে নাচে ভবিষ্যৎ নেই, জীবন নেই, এই সিনেমা টিভিতে হয়ত নেচে বেড়াতে হবে। যখন আমাকে নাচ শিখতে দেওয়া হল না তখন আমি বেপরোয়া হয়ে গেলাম। উচ্চ মাধ্যমিকে ভালো রেজাল্ট আর করলাম না।” রিশুর বুকের ওপরে আবার আছড়ে পরে কেঁদে ফেলে, “আমি খুব বাজে মেয়ে রিশু... আমি খুব খারাপ মেয়ে...”

Best part of this update... 

আমরা (মানে মাঝবয়সী মধ্যবিত্ত মানসিকতার কিছু মানুষের কথা বলছি) খুব সহজেই এখনকার জেনেরেশনএর ছেলেমেয়েদের উৎশৃঙ্খলতাগুলোকে একটা বিশেষণে দাগিয়ে দিই... কিন্তু তাদের পেছনে এই আমাদেরই মত বাবা মায়েদের অবুঝ আবদারের ফল স্বরূপ যে এই ভাবে কৈশরের সন্ধিক্ষণে দাড়িয়ে থাকা ছেলেমেয়েগুলোর ইচ্ছা অনিচ্ছা ভেঙে দুমড়ে যায়, সেটা খেয়াল করিনা... তাদের স্বপ্নের কোন দাম থাকে না আমাদের নিজেদের ইচ্ছার কাছে...

কিছু দিন আগেই আমি একটা মন্তব্য করেছিলাম, তুমি বড্ড ভালো বাবা... আজ আরো একবার তার প্রমাণ পেলাম পিনু... অতুলনীয়...

রেপু + লাইক রইল একরাশ ভালোবাসার সাথে...
Heart Heart Heart Heart

তুলসি পাতা দিয়ে বাড়িতে বউকে বলবো এই ভাবেই চা বানিয়ে খাওয়াতে... যদি ভালো হয় তো ভালো, আর না হলে, শালা তিন পেগ স্কচ চাই এর বদলে...
[+] 4 users Like bourses's post
Like Reply
(04-12-2020, 11:58 PM)pinuram Wrote: পর্ব সাত – (#7-36)

 
বিছানা ছেড়ে দুইজনে উঠে পড়ল। রান্না ঘরে গিয়ে গ্যাস জ্বালিয়ে একটা ডেকচিতে দুই কাপ জল চাপিয়ে ঝিনুক জিজ্ঞেস করে, “এর পর?”

রিশু ওকে চা বানানোর পদ্ধতি বুঝিয়ে দেয়, “জল একটু গরম হলে একটু আদা থেঁতো করে দেবে আর তুলসি পাতার গুঁড়ো দেবে...”

ঝিনুক চোখ বড় বড় করে, “তুলসি পাতার গুড়ো, হোয়াট দ্যা ... কোথায় পেলে?”

মৃদু হেসে রিশু উত্তর দেয়, “মা যখন আসে তখন বাড়ি থেকে তুলসি পাতা শুকিয়ে গুঁড়ো করে নিয়ে আসে।”

ঝিনুক ভুরু নাচিয়ে হেসে বলে, “চা নাকি না অন্য কিছু।”

রিশু হেসে উত্তর দেয়, “আরে খেয়ে দেখো। জল গরম হবে কিন্তু ফোটার আগেই একটু চায়ের পাতা দিয়ে বন্ধ করে দেবে, তারপর প্রায় পাঁচ মিনিট একটু ভিজতে দেবে, ব্রিউ হতে দেবে পাতা। পাতা খুলে নিচে পরে যাবে তখন চায়ের জল তৈরি হয়ে যাবে।”

বাধ্য মেয়ের মতন মাথা দুলিয়ে রিশুর পদ্ধতি অনুযায়ী চা বানাতে শুরু করে দেয় ঝিনুক। পাঁচ মিনিট পরে চা ছেঁকে ওকে জিজ্ঞেস করে, “ক চামচ চিনি দেবো?”

মুচকি হাসে রিশু, “না না চিনি নয়, এবারে চায়ে এক চামচ করে মধু দাও তার পরে লেবুর স্লাইস করে কেটে দাও।”

লেবু পাতলা করে কাটতে কাটতে চোখ বড় বড় করে ওকে জিজ্ঞেস করে, “এটা কি চা গো?”

রিশু হেসে বলে, “দারুন লাগবে খেয়ে দেখো।”
 
ঝিনুক এমন চা কোনদিন খায়নি। সেদিন একের পর এক যা ঘটে চলেছে সব কিছুই ওর কাছে প্রথমবার আর বারেবারে অবাক করে দেওয়ার মতন। বিকেল বেলায় যেমন হটাত করেই ওর মুখ থেকে ভেতরের উদ্বেগ ঠিকরে বেড়িয়ে এসছিল, সাবধানে এসো। তারপরে শালিনীর সাথে দেখা, রিশুকে বড় দাদার মতন সন্মান করে, দেখতে সুন্দরী নিওন্যাটোলজিস্ট কিন্তু কোন অহঙ্কার নেই কত সহজে ওর সাথে মিশে গেল, ওকে বুঝতেই দিল না যে ওদের আগে দেখা হয়নি। ডিনারের খাবারের বহরের নাম কোনদিন আগে শোনেনি। অন্ধকার ট্যাক্সিতে দয়িতের উষ্ণ পরশে ওর হৃদয় গলে গিয়েছিল। রিশুর প্রথম চুম্বনে ওর সারা শরীর অসাড় হয়ে গিয়েছিল, যদিও সেই চুম্বন ওর অধরে নয় ললাটে প্রস্থাপিত কিন্তু সেই ললাটের চুম্বনের প্রশান্তির প্রলেপ অধরের চুম্বনের মাধুর্যের ভাষার কাছে হার মেনে যায়। এটা ওর জীবনের প্রথম চুম্বন নয় তবে কেউ ওর কপালে এইভাবে এর আগে চুমু খায়নি।
 
চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে বেশ ভালো লাগে ঝিনুকের, হাসি মুখে রিশুকে বলে, “এর টেস্ট বেশ অন্যরকম।”

রিশু প্রশ্ন করে, “ভালো লেগেছে?” মাথা দোলায় ঝিনুক, হ্যাঁ। রিশু ওকে বলে, “আমাদের বাড়িতে এই চা খাওয়া হয়। বোন বলে পথ্য খাচ্ছি। আসলে আমার একটু সর্দির ধাত আছে তাই সেই ছোটবেলা থেকে মা আমাকে এই চা খাওয়ায় আর নিজেও খায়, আর সেই থেকেই বাড়ির সবাইকে এই চা খেতে হয়।” বলেই হেসে ফেলে।

ঝিনুক মুচকি হেসে রিশুর পাশ ঘেঁষে বলে, “আসলে কি জানো আই ওয়াজ ফিলিং ভেরি ডিজি...” কথাটা শেষ করার আগেই লাজুক হেসে মাথা নিচু অস্ফুট স্বরে বলে, “আমার অতটা ড্রিঙ্ক করা উচিত হয়নি।”

ওর সামনে ড্রিঙ্ক করে কুন্ঠিত বোধ করছে দেখে বেশ ভালো লাগে রিশুর, মানুষের উচিত সময় থাকতে নিজের ভুল বোঝার। অনেক সময়ে মানুষ নিজের ভুল ত্রুটি দেখতে পারে না আর সেই ভুল পথেই চলে যায়। ঝিনুকের অপ্রস্তুতভাব কাটানোর জন্য কাঁধ দিয়ে আলতো ধাক্কা মেরে বলে, “ইট ইজ অল রাইট। এক আধ দিন ড্রিঙ্ক করলে ক্ষতি নেই। মা আমাকে একটা গল্প বলত, এক রাজার একটা পোষা বাঁদর ছিল, সেই রাজা তার পোষা বাঁদরকে ভীষণ ভালবাসত। পোষা বাঁদরটা খুব জ্বালাতন করত সেই রাজাকে সব সময়ে এইটা ধরে টান মারে অইটা ধরে টান মারে, কিন্তু সেই রাজা কোনদিন সেই বাঁদরটাকে কিছু বলত না। একদিন সেই বাঁদর সেই রাজার ঘাড়ে চেপে বসলো, রাজা তখন সেই বাঁদর কে আদর করে মাটিতে নামিয়ে দিল কিন্তু কিছুই বলল না। এই ভাবে সেই বাঁদরের আরো সাহস বেড়ে গেল। একদিন সেই বাঁদর রাজার ঘাড়ের বদলে মাথায় চেপে বসতে গেল, ঠিক তখনি সেই রাজা সেই বাঁদরটাকে তুলে আছাড় মেরে মাটিতে ফেলে দিল। রাজার আদরের বাঁদরের সাথে এই ব্যাবহারে সভাসদেরা অবাক হয়ে কারণ জিজ্ঞেস করলে রাজা উত্তরে বলেন, অভ্যেস অথবা মানুষ কাউকেই কোনদিন মাথায় চড়তে দিতে নেই, মাথায় বসালেই সে তোমার মাথায় চড়ে নাচতে শুরু করে দেবে, তোমার জীবন শেষ করে দেবে।”

এই গল্পের নিগূড় অর্থ অনুধাবন করতে পেরে ঝিনুক চুপ করে যায়, ছোট একটা গল্পের মাধ্যমে অনেক কিছুই ওকে জানিয়ে দিল রিশু। রিশুকে দেখতে একদম রিশুর মায়ের মতন, এক ছাঁচে তৈরি, প্রকৃত অর্থে মায়ের ছেলে। কুন্ঠা বোধে ওর বুক ভেঙ্গে যায়। রিশুর কাছ ঘেঁষে নরম কন্ঠে বলে, “আর কোনদিন এমন করব না।”

পাপ বোধে জর্জরিত ঝিনুকের গলা শুনে আহত হয়েই ওকে সান্ত্বনা দিয়ে বলে, “আরে না না, বললাম তো কালে ভদ্রে ড্রিঙ্ক কর ক্ষতি নেই।” চায়ের কাপ ছোট চুমুক দিয়ে বাঁ হাত দিয়ে ঝিনুকের কাঁধ জড়িয়ে ধরে কাছে টেনে বলে, “এই তোমার নাকি মাথা ঝিমঝিম করছিল?”

চায়ের কাপ চুমুক দিয়ে ওর কোল ঘেঁষে মিহি কন্ঠে বলে, “এখন আর নেই” বলেই মুচকি হাসি দেয় ঝিনুক।

অনেকদিন থেকেই মনের মধ্যে একটা প্রশ্ন উঁকি মারছিল ঝিনুকের, কি কারনে গত রবিবার ওর রক্ত আর ইউরিন পরীক্ষা করেছিল রিশু। প্রশ্ন করে রিশুকে, “আচ্ছা একটা প্রশ্ন করব?” রিশু মাথা দোলায়। ঝিনুক ওকে প্রশ্ন করে, “আমার কি হয়েছে যে ব্লাড টেস্ট করতে দিয়েছিলে?”

ঝিনুককে আসস্থ করার জন্য মাথা নাড়ায় রিশু, “তোমার কিছুই হয়নি, তুমি ফিট এন্ড ফাইন আছো।”

ঝিনুক মুখ গোমড়া করে বলে, “না প্লিজ বল না।”

বুক ভরে শ্বাস নিয়ে রিশু ওর প্রশ্নের উত্তরে বলে, “তুমি জল খাও না একদম...”

তেড়ে ওঠে ঝিনুক, “কই খাই ত।”

হেসে ফেলে রিশু, “সে তো আমার বলার পরে।”

লাজুক হাসি দেয় ঝিনুক, “হুম”

রিশু ওকে বলে, “সঞ্জনা ম্যাডাম যে ওষুধ গুলো দিয়েছে সেই গুলো ঠিক মতন খেয়ে যাও আর জল খেও তাহলে কিছু হবে না।”

তাও ঝিনুকের ভীষণ ভাবেই জানতে ইচ্ছে করে আসলে ওর শরীরে কি হয়েছে, হটাত করেই কেন ওর রক্ত পরীক্ষা করার ইউরিন পরীক্ষা করার দরকার পড়ল রিশুর, “তুমি না বললে কাল থেকে ফল খাবো না কিন্তু।”

রিশু হেসে ফেলে, “আচ্ছা বাবা, আসলে হয়ত কিছুই নয় সব কিছুই আমার মনের ভুল কিন্তু তাও একটা দুশ্চিন্তায় ছিলাম। তোমার ইউরিনে এমোনিয়ার মানে এসিডিক গন্ধ ছিল তাই ইউরিন টেস্ট করিয়েছিলাম, পরীক্ষা করে দেখতে চেয়েছিলাম ইউরিন ইনফেক্সান আছে নাকি। মেয়েদের ভ্যাজাইনা আর এনাস খুব কাছাকাছি, পটি করার পরে ধোয়ার সময়ে সেই জল ভ্যাজাইনাতে ঢুকে পরে আর তাতে ইনফেক্সানের চান্স অনেক বেড়ে যায়। যদিও তোমার ইনফেক্সান নেই তবে তুমি যেহেতু জল খাও না তাই এলএফটি করার দরকার ছিল, লিভারের কি অবস্থা সেটা জানার দরকার ছিল, তাই ব্লাড টেস্ট করতে হল। সিস্টের একটা সম্ভাবনা আছে তবে সেটা আশা করি সঞ্জনা ম্যাডামের ওষুধে ঠিক হয়ে যাবে।”

যখন ওর রক্ত নেওয়া হয় তখন বাড়ি মাথায় করে তুলেছিল, তখন রিশুকে সঠিক ভাবে চিনত না পর্যন্ত কিন্তু ওর জন্য দুশ্চিন্তা হয়েছে জানতে পেরে ওকে জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে করে ঝিনুকের। মিহি কন্ঠে ওকে বলে, “এত ভাবতে আমার জন্য?”

হেসে ফেলে রিশু, বুকের বাঁ দিকে কিল মেরে বলে, “বললাম তো, এয়ারপোরটে সিকিউরিটি চেকের পরে যখন তোমার চোখ আমাকে খুঁজে বেড়াচ্ছিল তখন থেকেই তোমার জন্য ভাবতে শুরু করেছি।” চায়ের কাপ বেসিনে রেখে জিজ্ঞেস করে ললনাকে, “রাতে কি রান্নাঘরে কাটানোর ইচ্ছে আছে নাকি?”

চায়ের কাপ শেষ করে, রিশুর বুকের ওপরে কিল মেরে বলে, “হ্যাঁ এইখানে সারারাত তোমাকে দাঁড় করিয়ে রাখব।”

রিশু প্রশ্ন করে, “কেন বাবা কি করলাম আবার?”

ঝিনুক হটাত এক দৌড়ে রান্নাঘর থেকে বেড়িয়ে ওর মুখের সামনে দরজা বন্ধ করে দিয়ে খিলখিল করে হেসে বলে, “সিকিউরিটি চেকের পরে আমাকে ওইভাবে ছেড়ে যাওয়ার শাস্তি।”
 
নিস্তব্ধ নিঝুম রাতের নীরবতা ভঙ্গ করে সুন্দরী ললনার ফর্সা পায়ের নুপুরের নিক্কন সারা ঘরে প্রতিধ্বনিত হয়, সেই নুপুরের আওয়াজ সোজা রিশুর হৃদয়ে শক্তিশেলের মতন বিঁধে যায়। রান্নাঘরের দরজা খুলে দেখে ওর রূপসী ললনা শোয়ার ঘরের দরজায় দাঁড়িয়ে ওর প্রতীক্ষায় প্রহর গুনছে। মিটিমিটি হাসি নিয়ে তাকিয়ে যেন কিছু বলতে চাইছে, আসবে নাকি ওই রান্নাঘরেই দাঁড়িয়ে থাকবে। রিশু মুচকি এক হাসি ধির পায়ে রূপসী ললনার দিকে পা বাড়ায়, গুটিগুটি পায়ে যেন এক সিংহ তার সিংহীর দিকে মিলনেচ্ছুক হৃদয় নিয়ে এগিয়ে চলেছে। মনে মনে প্রমাদ গোনে ঝিনুক, রক্তে লেগেছে শুরার নেশা সেই সাথে চোখের তারায় প্রেমে বিভোর হওয়ার উন্মাদনা। রিশু যতই ওর দিকে এক পা এক পা করে এগিয়ে আসে, ততই ঝিনুক এক পা এক পা করে পিছিয়ে যায়। নুপুরের নিক্কন, প্রেয়সীর নধর দেহপল্লবের উন্মত্ত ঘ্রাণ আর মদালসা ছন্দের মত্ত চলনে রিশুর বুকের ভেতর রক্ত এলোপাথাড়ি ছোটাছুটি শুরু করে দেয়।
 
ঝিনুক দুষ্টুমি করে বিছানায় উঠে গলা পর্যন্ত লেপ টেনে খিলখিল করে হেসে বলে, “আর একদম কাছে আসবে না।”

বিছানার ওপরে দুই হাতে ভর দিয়ে ঝিনুকের দিকে ঝুঁকে পরে রিশু। ডান হাতের মুঠোতে লেপের এক কোনা ধরে একটু টান মেরে বলে, “আমাকে শুতে দেবে না?”

গোলাপি জিব বের করে নাক কুঁচকে রিশুকে ভেঙ্গিয়ে বলে, “তুমি তো নিশাচর প্রাণী, তোমার ঘুমের কিসের দরকার।”

হেসে ফেলে রিশু, “কে বলেছে আমি নিশাচর প্রাণী?”

নিচের ঠোঁট দাঁতে কেটে চোখের তারায় দুষ্টু মিষ্টি হাসি মাখিয়ে বলে, “কেন রোজ রাতে খাওয়ার পরে কত রাত পর্যন্ত ল্যাপটপে বসে কি সব কর যে? তুমি কি ভাবো আমি কিছু জানি না?”

সত্যি কোনদিন খেয়াল করেনি রিশু, রাতে খাওয়ার পরে ওর পড়াশুনা, ক্যালিফোর্নিয়ায় ওর একজন ডাক্তার বন্ধুর সাথে আজকাল রাতে ভিডিও কল করে নতুন পেপারের আলোচনা করতে হয়, সেই করতে করতেই অনেক রাত হয়ে যায়। ভুরু কুঁচকে ঝিনুককে জিজ্ঞেস করে, “তুমি তার মানে রাতে না ঘুমিয়ে আমার ওপরে চর গিরি কর।” বলেই হেসে ফেলে।

মাথা নাড়ায় ঝিনুক, “নো নো নট দ্যাট, তবে রাতে ঘুম না এলে কি করবো? তাই মাঝে মাঝে উঠে তোমার ঘরে উঁকি মেরে দেখি তুমি কি করছ।”

হেসে ফেলে রিশু, “আচ্ছা এটা দেখতে চাও যে আমি রাতে কার সাথে ভিডিও কল করছি।” ওর চোখ চলে যায় ঝিনুকের গোলাপি ফোলা নরম গালের ওপরে, খুব কাছ থেকে না দেখলে আঁচড়ের দাগ আর বোঝা যায় না। ডান হাতের তর্জনী আর মধ্যমা দিয়ে ঝিনুকের নরম গাল ছুঁয়ে জিজ্ঞেস করে, “কেন করতে গিয়েছিলে?”

সেই দিনের কথা চোখের সামনে ভেসে উঠতেই চোখ ফেটে জল চলে আসে ঝিনুকের। দয়িতের ভালোবাসার উষ্ণ পরশে ঝিনুকের মোমের হৃদয় গলে যায়, ধরা গলায় বলে, “তুমি জানো দ্যাট সন অফ বিচ জঘন্য ভাবে আমার গালের ওপরে জিব দিয়ে চেটেছিল।”

কথাটা কানে যাওয়া মাত্রই চরম ক্রোধে রিশুর মাথার রক্ত গরম হয়ে যায়। লেপ ছেড়ে বিছানায় উঠে ঝিনুকের মাথা বুকের ওপরে চেপে ধরে বলে, “আর সেই সব মনে করতে হবে না...”

রিশুর প্রসস্থ ছাতির উষ্ণ পরশে ভেঙ্গে পরে ঝিনুক, দুই হাত দিয়ে রিশুকে জড়িয়ে ধরে বুকের ওপরে ভেঙ্গে পরে “আমাকে কেউ ভালবাসেনা জানো, নো ওয়ান লাভস মি।”

ঝিনুক কে বুকের ওপরে জড়িয়ে ধরে বিছানায় আধাশোয়া হয়ে রিশু ওর চোখের জল মুছিয়ে দিয়ে বলে, “আমি তোমায় ভালোবাসি ঝিনুক।”

রিশুর বুকের ওপরে লুটিয়ে পরে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে চোখের সামনে ফুটে ওঠা সেই বিভীষিকাময় সন্ধ্যের বিবরন দেয়, “তুমি জানো, আমাকে কি ভাবে ডিচ করেছে ওই শয়তানটা? পার্টি করার নাম করে সেদিন আমাকে ওর এক বন্ধুর ফ্লাটে ডেকে নিয়ে গেল। এর আগেও অনেকবার পরেশের ফ্লাটে গিয়ে পার্টি করেছি। তুমি জানো ও আমাকে খুব করে মদ খাওয়াত জানো, আই গট এডিক্টেড।” কথা গুলো শুনে ক্রোধান্বিত হয়ে ওঠে রিশু। ঝিনুক থামে না, “জানি না কেন ওই শয়তানটার জন্য অত পাগল হয়েছিলাম। মা বাবার কথা অমান্য করে সেদিন ওর সাথে দেখা করতে চলে গিয়েছিলাম। আমাকে মদ খাওয়াল তারপরে আমাকে জোর করে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে আমাকে রেপ করতে...”

;.,ের কথা কানে যেতেই রিশুর মনে হল কেউ যেন ওর কানের ওপরে গরম লাভা ঢেলে দিয়েছে। এই পার্থ কে উচিত শিক্ষা দিতেই হবে, ওর ঝিনুকের চোখের জলের দাম ওকে দিতেই হবে। অনায়াসে এই ইতর মানুষটাকে ছেড়ে দেবে না রিশু। ঝিনুকের মুখের ওপরে আঙ্গুল চেপে শান্ত করে বলে, “আই প্রমিজ দ্যাট আই উইল এভেঞ্জ দিস।”

ঝিনুক ওর বুকের ওপরে মাথা গুঁজে এক নাগারে কেঁদে চলে, “নো ওয়ান লাভস মি...”

ঝিনুকের চিবুকে আঙ্গুল দিয়ে নিজের দিকে তুলে ধরে বলে, “এই পাগলি আমি তোমার সাথে আছি তো।”

ডান হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে চোখের জল মুছে বলে, “নট ইউ। দশ বছর আগে বাবার ট্রান্সফার হল কোলকাতায়। রানীগঞ্জের সব বন্ধু বান্ধবী ছেড়ে আসতে আমার ভীষণ খারাপ লেগেছিল, কিন্তু কিছুই করার ছিল না। আমার খুব নাচের শখ ছিল জানো। আমার মামতো দিদি রুহি খুব সুন্দর নাচতে জানে, শান্তিনিকেতন থেকে নাচে বি মিউজ করেছে। রুহিদিকে দেখে আমারও শখ হয়েছিল যে আমিও নাচ শিখবো। কিন্তু যেহেতু আমার বাবা ইঞ্জিনিয়ার, আমার পিসতুতো দাদা আর দিদি দুইজনেই ইঞ্জিনিয়ার তাই আমাকেও বলা হল যেন আমি সায়েন্স নিয়ে পড়াশুনা করি। আমি মাকে কত করে বললাম যে আমি শান্তি নিকেতনে নাচ নিয়ে পড়াশুনা করতে চাই। কেউ শুনলো না, মা আমাকে শাসিয়ে বললে যে নাচে ভবিষ্যৎ নেই, জীবন নেই, এই সিনেমা টিভিতে হয়ত নেচে বেড়াতে হবে। যখন আমাকে নাচ শিখতে দেওয়া হল না তখন আমি বেপরোয়া হয়ে গেলাম। উচ্চ মাধ্যমিকে ভালো রেজাল্ট আর করলাম না।” রিশুর বুকের ওপরে আবার আছড়ে পরে কেঁদে ফেলে, “আমি খুব বাজে মেয়ে রিশু... আমি খুব খারাপ মেয়ে...”

শরীরের শেষ শক্তি টুকু নিঙরে দুই হাতের মধ্যে জড় করে ঝিনুককে বুকের ওপরে জড়িয়ে ধরে রিশু, “কে বলেছে তুমি বাজে মেয়ে?” ওর চোখের জল মুছিয়ে মাথায় ঠোঁট চেপে ধরে স্বান্তনা দিয়ে বলে, “কোন বড় কার্যসিদ্ধি করে অহংকারী হওয়ার চেয়ে নিজের ভুল শুধরে বিনম্র নিরহঙ্কার হওয়া অনেক ভালো।”

কথাটা শুনে কান্না ভুলে রিশুর দিকে মুখ তুলে তাকায় ঝিনুক, “হু আর ইউ?”

ঝিনুকের নাকের ওপরে নাক ঘষে আদর করে বলে, “তোমার ঘুড়ির লাটাই।”
 
রিশুর বুকের কাছে সরে এসে ওর বাম বাজুর ওপরে মাথা রেখে চুপ করে চোখ বুজে নেয় ঝিনুক। রিশুর শরীরের তাপে ঝিনুকের বুকের মাঝে প্রশান্তির ছায়া নেমে আসে, চোখের পাতা ভারি হয়ে যায়। শরীরের ছোঁয়া এর আগেও পেয়েছিল ঝিনুক কিন্তু সেই পরশে এই ভালোবাসা ছিল না। রূপসী প্রেয়সীর নধর দেহটাকে ডান হাতে জড়িয়ে বুকের কাছে টেনে আনে রিশু। পানপাতার আকারের মুখবয়াবের দিকে নিস্পলক তাকিয়ে থাকে রিশু, কেমন চোখ বুজে ওর বুকের কাছে কুঁকড়ে চোখ বুজে শুয়ে। প্রেয়সীর বুকের বেদনা অনুভব করতে চেষ্টা করে, কোন মানুষ জন্মেই উশ্রিঙ্খল হয় না, পরিস্থিতি মানুষকে কখন কোন পথে নিয়ে যাবে কেউ জানে না। এরপর থেকে যথা সম্ভব চেষ্টা করবে প্রেয়সীর চলার পথ কন্টকমুক্ত করতে। রিশুর বুকের ওপরে হাত রেখে এক সময়ে নিদ্রাদেবীর কোলে ঢলে পরে ঝিনুক। এক বিছানায় একটা লেপের তলায় একে অপরকে নিজ নিজ বাহুপাশে ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে ধরে ওরা কখন ঘুমিয়ে পড়েছিল সেটা আর ওদের খেয়াল নেই। 



=================== পর্ব সাত সমাপ্ত ===================
তাহলে প্রথম রাতে রিশুও  ঘুমিয়ে পড়লো ? এবার যেন আমাকে বোলোনা  !
[+] 2 users Like ddey333's post
Like Reply
পীড়িত হল কাঁঠালের আঠা
লাগলে পড়ে ছাড়বে না..


.
রিসু আর ঝিনুকের আঠা লেগে গিয়েছে

আর নাই নাই ভয়
হবে হবে জয়
[+] 2 users Like TumiJeAmar's post
Like Reply
(05-12-2020, 12:49 AM)Mr Fantastic Wrote: খুব আবেগঘন মুহুর্ত। রিশু-ঝিনুকের একান্তে এই আলোচনা, এই স্বীকারোক্তির খুব দরকার ছিল। নাহ, পার্থকে একটা উচিত শিক্ষা দিতেই হবে, নইলে আমার শান্তি হবে না। সামনে পেলে শালার টুটি টিপে ধরবো ! পরিশেষে দুই প্রেমিক-প্রেমিকা পরস্পরের বাহুপাশে আবদ্ধ হয়ে পরম নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে পড়ল। কাল নতুন সূর্য ওঠার পর থেকে শুরু হবে ওদের সত্যিকারের দাম্পত্য জীবন  Heart Heart

স্বীকারোক্তির ভীষণ দরকার না হলে সারা জীবন মনে মধ্যে একটা পাপবোধ জমে থাকবে! জীবন সঙ্গীর কাছে সব কিছু পরিষ্কার হয়ে যাওয়া ভালো! এরপরে শুরু হবে আসল জীবন!!!!!!
Reps Added +1
[Image: 20210115-150253.jpg]
[+] 6 users Like pinuram's post
Like Reply
(05-12-2020, 01:04 AM)Voboghure Wrote: প্রিয়তমাকে...

বধূ...
কত বন্ধুর পথ পার হয়ে আজ দাড়িয়েছি
তোমার হাতটি হাতে নিয়ে,
তোমায় নিয়ে এই অনিশ্চিত গহীন সাগরে 
ঝাঁপিয়ে পড়বো বলে ।

সেই অসম্ভব অনিশ্চিত সময় গুলোতে
আমরা যে অপরিনত সপ্ন গুলো দেখতাম
তাদের পূর্না করতেই 
আমরা আজ পাশাপাশি ।

প্রথম সূর্যালোকের মত 
নরম আর অদূরে হবেনা জানি
আমাদের আগামী সময়...

জানি শীতের সকালের
গরম কফির মত মিষ্টি হবেনা
সব মুহূর্ত গুলো...

তবুও এটুকু বলি
দুপুরে তপ্ত প্রখর রোদে
যখন প্রাণ ওষ্ঠাগত
তখন অন্তত আমার দুটো হাত
থাকবে তোমার ওপরে,
বট বৃক্ষের মত
ছায়া দিয়ে যাবে অনন্ত কাল ।

হয়ত ফ্রিজের মত
গ্লাসের চারপাশে
বিন্দু বিন্দু জল জমতে পারবোনা,
তবুও; অতৃপ্ত পিয়াসীর পিয়াস মেটাতে পারব
এটুকু কথা দিতেই পারি তোমায়.....

......ভবঘুরে

আহা, দারুন দারুন, মন প্রান ভরে গেল !!!!!!
Reps Added +1
[Image: 20210115-150253.jpg]
[+] 4 users Like pinuram's post
Like Reply
(05-12-2020, 08:50 AM)Buro_Modon Wrote: তোমায় হৃদ মাঝারে রাখিবো ছেড়ে দেবো না

ওরে ছেড়ে দিলে সোনার গৌর আর পাবো না
ক্ষ্যাপা ছেড়ে দিলে সোনার গৌর
আর পাবো না না নাআর পাবো না 

রিশুকে একেবারে সোনার গৌর বানিয়ে দিলেন, ধন্যবাদ !!!!!!
Reps Added +1
[Image: 20210115-150253.jpg]
[+] 4 users Like pinuram's post
Like Reply
(05-12-2020, 11:02 AM)bourses Wrote: Best part of this update... 

আমরা (মানে মাঝবয়সী মধ্যবিত্ত মানসিকতার কিছু মানুষের কথা বলছি) খুব সহজেই এখনকার জেনেরেশনএর ছেলেমেয়েদের উৎশৃঙ্খলতাগুলোকে একটা বিশেষণে দাগিয়ে দিই... কিন্তু তাদের পেছনে এই আমাদেরই মত বাবা মায়েদের অবুঝ আবদারের ফল স্বরূপ যে এই ভাবে কৈশরের সন্ধিক্ষণে দাড়িয়ে থাকা ছেলেমেয়েগুলোর ইচ্ছা অনিচ্ছা ভেঙে দুমড়ে যায়, সেটা খেয়াল করিনা... তাদের স্বপ্নের কোন দাম থাকে না আমাদের নিজেদের ইচ্ছার কাছে...

কিছু দিন আগেই আমি একটা মন্তব্য করেছিলাম, তুমি বড্ড ভালো বাবা... আজ আরো একবার তার প্রমাণ পেলাম পিনু... অতুলনীয়...

রেপু + লাইক রইল একরাশ ভালোবাসার সাথে...
Heart Heart Heart Heart

তুলসি পাতা দিয়ে বাড়িতে বউকে বলবো এই ভাবেই চা বানিয়ে খাওয়াতে... যদি ভালো হয় তো ভালো, আর না হলে, শালা তিন পেগ স্কচ চাই এর বদলে...

এই বয়ঃসন্ধিক্ষণ একটা সাঙ্ঘাতিক সময়, ছেলে মেয়েদের সঠিক ভাবে বুঝিয়ে উঠতে না পারলে বিপথে চলে যায় তখন ফিরিয়ে আনা খুব মুশকিল, ঠিক যেমন ঝিনুকের হয়েছে! তবে এখানে ওর জীবনে পরবর্তী কালে রিশুর আগমন হয়েছে অনেক ক্ষেত্রে সেটা হয় না, তখন আর সেই মানুষ ফিরে আসে না! দ্বিতীয়ত, এখানে পিনুকে কেন টানলে বুঝতে পারলাম না! আর হ্যাঁ, রিশু যে পদ্ধতিতে চা বানিয়েছে সেই পদ্ধতিতে একদিন চা বানিয়ে খেও দেখবে দারুন লাগবে না হলে প্রিমিয়াম স্কচ দেনা রইল নিশ্চয় খাওয়াবো !!!!!!
Reps Added +1
[Image: 20210115-150253.jpg]
[+] 4 users Like pinuram's post
Like Reply
(05-12-2020, 11:59 AM)dada_of_india Wrote: তাহলে প্রথম রাতে রিশুও  ঘুমিয়ে পড়লো ? এবার যেন আমাকে বোলোনা  !

হাসতে হাসতে পেট ফেটে গেলো জানো, কে কাকে বলছে, সূচ বলে চালুনি তোর পোঁদে ফুটো, হাহাহাহা! সুনন্দ এক বছর বাঁড়াতে ন্যাকড়া বেঁধে ঘুরে বেড়াতে পারে তার বেলায় চোখে ঠুলি দিয়েছিলে আর রিশু প্রথম রাতে প্রেমের আবেশে ঘুমিয়ে পড়ল তাতে তোমার গায়ে ফোস্কা পরে গেল! এটা কি ন্যায্য কথা? সুনন্দকে বলো আগে নিজের বাঁড়াতে ঠিক করে শান দিতে তারপরে রিশুর ব্যাপারে কথা বলতে !!!!!!!
[Image: 20210115-150253.jpg]
[+] 4 users Like pinuram's post
Like Reply
(05-12-2020, 12:33 PM)TumiJeAmar Wrote: পীড়িত হল কাঁঠালের আঠা
লাগলে পড়ে ছাড়বে না..



.
রিসু আর ঝিনুকের আঠা লেগে গিয়েছে

আর নাই নাই ভয়
হবে হবে জয়

এই গানে এটাও বলা আছে যে, গোলেমালে গোলেমালে পীরিত কইরো না, সেটাও কি রিশুকে বলে দেবো? তবে হ্যাঁ, এই বারে গাড়ি চলবে !!!!!
Reps Added +1
[Image: 20210115-150253.jpg]
[+] 3 users Like pinuram's post
Like Reply
Btw, চায়ের রেসিপিটা জেনে নিলাম, আমরাও বানিয়ে দেখবো কেমন লাগে খেতে  Tongue
[+] 1 user Likes Mr Fantastic's post
Like Reply




Users browsing this thread: 4 Guest(s)