29-11-2020, 02:03 PM
(This post was last modified: 16-05-2021, 07:08 PM by cuck son. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
গল্পটার সামনে কনো ট্যাগ দিলাম না কারন আমি এখনো জানি না কি কি থাকবে এতে । পরে দেখা যাবে অনেকেই রাগ করেছেন । আর আমার অন্য গল্পগুলোর মতই এটা সম্পূর্ণ কাল্পনিক , বাস্তবতার বিন্দুমাত্র ছোঁয়া এতে নেই । আর হ্যাঁ গল্পে সেক্স এর বর্ণনা তেমন একটা থকবে বলে মনে হচ্ছে না আর এলেও বেশ দেরিতেই আসবে ।
সফিপুর নামবেন কে কে , এই সফিপুর । বাস এর হেল্পার এর ডাকে ঘুম ভাংলো । কিন্তু ব্যাটা সফিপুর সফিপুর করছে কেন ? এই জমজমাট বাজার কি সফিপুর নাকি ? রাস্তার দুপাশে সাড়ি সাড়ি দোকান , ধুমসে বাঝছে হিন্দি গান । কি দোকান নেই এখানে ? বেশ কিছু লোক নামলো দেখে আমি দ্বিধায় পড়ে গেলাম । ওরা কি সবাই ভুল জায়গায় নামছে ?
ওস্তাদ আর কেউ নাই নামার আগে বারেন ।
হেল্পার এর কথায় বাস আগে বাড়ল । আমি হুরমুর করে উঠে দাঁড়ালাম হেল্পার কে উদ্দেশ্য করে চেচিয়ে উঠলাম যে আমিও সফিপুর নামবো। বিরক্তি নিয়ে হেল্পার একটা থাবা মেরে বাস থামার ইঙ্গিত করলো । ওমনি ভীষণ প্রতিবাদি ক্যাঁচ ক্যাঁচ শব্দ তুলে ব্রেক কষল বাস। একটা ব্যেপার খেয়াল করলাম আমার গলার স্বর বাসের ড্রাইভার পর্যন্ত না পৌঁছানোর কোন কারন নেই এটুকু একটা বাস তার উপর আমি বেশ জোরেই চেচিয়েছিলাম । কিন্তু ড্রাইভার বাস থামায় নি যতক্ষণ না পর্যন্ত হেল্পার ইঙ্গিত না করেছে । বেশ ভালো লাগলো আমার এই ব্যাপারটা । দেশে আসার পর সবজায়গায় অনিয়ম এর ছড়াছড়ি দেখছি । কিন্তু এই ছোট্ট পুরনো ডেট ওভার বাস এর হেল্পার আর ড্রাইভার এর মাঝে বোঝাপড়া খুব ভালো লাগলো ।
“কই থেইকা যে আহে এগুলা “
হেল্পার এর আক্রোশ মিশ্রিত চাপা শব্দ গুলি সাঙ্গ করে শেষ হলো আমার এই সাড়ে চার ঘণ্টার বাস ভ্রমন । বাস বেশ কিছু দূরে চলে এসেছে। হেল্পার ছেলেটা ইচ্ছে করেই একটু দেরিতে থাবা মেরেছে বাসের দরজায় । হাতের লাগেজ আর কাধের ব্যাগ নিয়ে কিছুদুর হেঁটে এলাম । এতো মানুষ কথা থেকে এলো এই সফিপুর বাজারে কে জানে । খুব বেসিদিন তো হয়নি মাত্র ৩০ বছর । এই ৩০ বছরে মানুষ দ্বিগুণ হতে পারে চারগুন হতে পারে কিন্তু এখানে যা দেখছি দশগুণ বল্লেও কম হবে । ঝাঁ চকচকে পিচ ধালাই রাস্তা । তার উপরে হয়তো কিছুক্ষন আগে বৃষ্টি হয়েছিলো , একেবারে পিচ কালো রস্তা সাঁ সাঁ করে ছুটে চলছে গাড়ি সেই রাস্তার উপর দিয়ে । অথচ যেদিন এই সফিপুর ছেরেছিলাম , এই বাজারে গোটা ছয় দোকান ছিলো । কালু মোল্লা দৌরে এসে কিছু পিয়াজু দিয়ে গিয়েছিলো আমাকে ।
বৃষ্টি পড়ে মাটি পিচ্ছিল হয়ে আছে মনে হওয়ায় ভয়ে আর মাটিতে পা দিলাম না । ব্যাপারটা একটু ভাবিয়ে তুলল আমায় , শুনেছি মানুষ নাকি প্রবাস থেকে ফিরে খালি পায়ে মাটিতে হাটতে খুব পছন্দ করে । আমাদের সফিক ভাই কে পার্য উদাস ভঙ্গিতে বলতে শুনতাম “ কেউ যদি আমাকে দেশ থেকে এক পোটলা মাটি এনে দিত “ এই বাক্য টি বলে সফিক ভাই বড় নিশ্বাস ছেড়ে উদাস হয়ে জেতেন । আমারা তখন মজা করে জিজ্ঞাস করতাম কি করবেন মাটি দিয়ে । অবশ্য এই প্রশ্নের উত্তর সফিক ভাই কোনদিন দেয়নি উত্তর দিত ভাবি বেঙ্গ করে বলতো “ হয়তো রোজ সকালে দুধের সাথে এক চামচ করে খেত” আমারা তখন খুব হাসতাম । এই এক দম্পতি সম্পূর্ণ উল্টো দুই চরিত্র অথচ ২৬ বছর এক সাথে মানুষ পারে কি করে । আমি আর লিজা তো তিন বছর ও একসাথে থাকতে পারলাম । এর পর এলো সুজান । সুজান আর আমার জুটি আরও এক কাঠি সরেস মাত্র নয় মাস । লিজা বাঙালী ছিলো বলে মনে হয় একটু বেশি সময় নিয়েছিলো ।
নাহ দেশে আসার আবেগ মনেহয় আমার উপর ও একটু ভর করেছে । বাস থেকে সম্পূর্ণ অপরিচিত নিজ গ্রামে নেমে কই বাড়ি পৌছার জন্য বাহন ঠিক করবো তা না করে সফিক ভাই আর নিজের এর দাম্পত্য জীবন এর তুলনা করছি ।
“স্যার কই জাইবেন ?”
তিন চাকার এক কিম্ভূত রিক্সা নিয়ে এক ১৪-১৫ এর বালক আমার দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলো । নিজ গ্রামের ঠিকানা বলতে গিয়েও থেমে গেলাম ।
“ না কোথাও যাবো না “
উত্তর দিলাম আমি , বুঝলাম ছেলেটি বিরক্ত হলো তারপর প্যাডেল মারার বদলে রিক্সার হেন্ডেল ঘুরাতেই বনবন করে ছুট দিলো রিক্সা । বাহ দেশের রিক্সা তো বেশ উন্নত হয়েছে । তবে একটা ব্যাপার ভেবে হাসি পেলো বুড়ো রিক্সা অয়ালাদের এখন আর মানুষ বেশি টাকা দেবে না । আগে দেখাতাম রিক্সা চালক বুড়ো হলে মানুষ দয়া দেখিয়ে বেশি ভারা দিত । এখন তো রিক্সা চালানোর কষ্ট নেই তাই ভারা ও বেশি নেই । যন্ত্র মানুষ এর দয়া মায়া কেড়ে নিচ্ছে । এই যা আবার ফিলোসফি বেরিয়ে এলো । কিন্তু এই যান্ত্রিক রিক্সা ওয়ালা কে না করলাম কেন কে জানে । এখন মনে মনে নিজেকে গালি দিচ্ছি । অনেক দোকান পাঠ মানুষ হলেও এখনো যাতায়াত বেবস্থার তেমন উন্নতি মনে হয় না সাধন হয়েছে। কারন আর কোন পায়ে চালিত রিক্সা বা যান্ত্রিক রিক্সা দেখতে পাচ্ছি না ।
হঠাত মাথায় একটা চিন্তা এলো , একটা চায়ের দোকানে বসি না কেন ? চায়ের দোকানে বসলে এখানকার মানুষ দের সম্পর্কে ভালো একটা ধারণা পাওয়া যাবে । পাশা পাশী ৪ টা দোকান । একটা দোকানে বেশ কিছু কম বয়সী ছেলে পেলে বসে আড্ডা মাড়ছে । আমি সেই দোকানে বসার সিধান্ত নিলাম । কারন এই জায়গার সাথে আমার সব সৃতি বাল্য আর কৈশোর কালের । তাই বুড়ো মানুষ দের কথা শুনে আমি কম্পেয়ার করতে পারবো না গ্রাম এখন কথায় আছে আর আমাদের সময় কোথায় ছিলো ।
দোকানে বসে আছে বেশ নাদুস নুদুস একটি ১২- ১৩ বছর বয়সী ছেলে । মাথার চুল কদম ছাঁট । সেন্ড গেঞ্জি থলথলে বেশ বড়সড় ভুরি বেয়ে বেশ খানিকটা উপরে উঠে আছে । একমনে নাক পরিষ্কার করতে করতে দোকানে বসানো ২১ ইঞ্চি রিঙ্গিন টিভির দিকে তাকিয়ে । সেখানে একটি গান চলছে । একটি ১৫- ১৬ বছরের ছেলে আর ২০ এর উপরে মেয়ে হচ্ছে গানের মডেল । গানের কথা শুনে বোঝা যাচ্ছে যে ভাগ্নে মামা বাড়ি বেড়াতে এসেছে কিন্তু নতুন মামি তাকে আদর করছে না ঠিক মতো । তাই ভাগ্নে মামি কে পুরাতন মামির গুন গান সুনাচ্ছে আর সাথে মামার কাছে নালিশ করার ভয় দেখাচ্ছে । ভাগ্নের এই অভিযোগ শুনে সুন্দরি কম বয়সী মামি আদর করে লাল গাই এর সাদা দুধ খাওয়ানর প্রস্তাব রাখছে ।
বেশ নোংরা একটি ইঙ্গিত রয়েছে গানটিতে । এমনিতে ভাগ্নে কে লাল গাই এর সাদা দুধ খাওয়ানোর প্রস্তাব দেয়া খুব খারাপ কিছু না । কিন্তু নাচের ধরন আর পোশাক আসাক কিন্তু অন্য ইঙ্গিত দিচ্ছে । গানের মেয়েটি একটি লাল সাড়ি পড়ে আছে আর দুধ শব্দ টি উচ্চারন করার সময় সুন্দরি কম বয়সী মামি নিজের বুকের দিকে যে ইঙ্গিত করলো সেটা আমার মতো মানুষ এর পক্ষে বোঝা খুব বেশি কষ্ট সাধ্য ব্যাপার নয় ।
“ কি দিমু আপনেরে “
নাদুস নুদুস ছেলেটি নিজের গামছা ডিজাইন এর লুঙ্গির উপর সদ্য নাক পরিষ্কারে ব্যাবহার করা আঙ্গুলটি মুছতে মুছতে জিজ্ঞাস করলো আমাকে । কি উত্তর দেবো এই প্রশ্নের ? খুব চিন্তায় পড়ে গেলাম । লুঙ্গিতে আঙুল মোছার দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ আমার । নাহ এই হাতে আমি কিছু খেতে পারবো না । কিন্তু খালি খালি বসে তো আর লাল টুকটুকে মামি আর দুষ্ট ভাগ্নের গান শুনা যায় না । কিছু না কিছু তো নিতে হবে । এই যৌন সুড়সুড়ি যুক্ত গান লাগানোর এইটাই নিশ্চয়ই কারন । মানুষ আসবে গান দেখবে আর সাথে কিছু না কিছু কিনে খাবে । তবে আমি বেঁচে গেলাম । একজন ৩৫-৪০ এর লোক এসে ছেলেটিকে উদ্দেশ্য করে বলল
“ যা কালাম বাড়িত যা , তোর মামি পিয়াজি চপ ভাজতে বসছে অইগিলা নিয়া আয় “
আমার দৃষ্টি আবার আবার টিভির মনিটরে চলে গেলো , সেখানে ভাগ্নে যে মামির জন্য শবরী কলা এনেছে সেই কথা বলছে । তবে আমাদের দোকানের মামা ভাগ্নের সেই ব্যাপারে কোন ভ্রূক্ষেপ দেখলাম না । ভাগ্নে মামার জন্য স্থান ছেড়ে দিলো আর মামা সেখানে এসে বসলো ।
“ যাও বাজান যাও , বেশি দেরি কইরো না কিন্তু “
মামা তাগিদ দিলো ভাগ্নে কে , কিন্তু ভাগ্নে মনে হয় কিছু চায় , সে নরছে না , একজায়গায় দাড়িয়ে মোড়ামুড়ি করছে ।
“ কি হইলো যা “
“ একটা চিপ নেই মামা “
“ আমার দোকানটা তুই শেষ কইরা ফালাবি খাইতে খাইতে, রাক্ষস এর বাচ্চা কোনহানকার “
মামার বলা কথা গুলি নির্দয় মনে হলেও মামা যে মন থেকে বলেনি তা পরক্ষনেই বোঝা
“ যা নিয়া যা রাক্ষক কোনহানকার “
অন্মি ভাগ্নে হলুদ রং এর একটি চিপস এর প্যাকেট নিয়ে ভোঁ দৌর ।
আর মামা আয়েস করে বসে রিমোট হাতে নিয়ে টীভির গান পরিবর্তন করে দিলো । এই গানে একটা মধ্যবয়স্ক লোক একটি কিশোরী মেয়ে । লোকটি কিশোরীর বাড়ির ঠিকানা জিজ্ঞাস করছে । আর মেয়েটি দুই বিয়ে করা লোকটির কাছে নিজের রূপ যৌবন ধরা না দেয়ার প্রতিজ্ঞা করছে । বুঝলাম মামা ভাগ্নের টেস্ট এর উপর নির্ভর করে দোকানের খদ্দের রা কখন কি গান শুনতে এবং দেখতে পাবে ।
“ মিয়া সাব কি এই এলাকায় নতুন নাকি “
দোকানদার “মামা “ এর গলার স্বর টিভির পর্দা থেকে আমার মনোযোগ বিচ্ছিন্ন করলো । একটু লজ্জা লজ্জা করতে লাগলো আমার , এমন হা করে টিভির পর্দায় তাকিয়ে ছিলাম বলে ।
“ জী নতুন ই বলতে পারেন “
“ মিয়া সাব জাইবেন কই ?”
নাহ পুরোপুরি পরিবর্তন হয় নি এখনো এই গ্রামের মানুষ , গ্রাম্য মানুষ এর আজন্ম কৌতূহল এখনো বেঁচে আছে দেখছি এদের মাঝে। শহরের মানুষ কিন্তু আপনাকে এমন যেচে পড়ে প্রশ্ন করবে না যদি না তার কোন বদ মতলব থেকে থাকে ।
“ মিয়া বাড়ি যাবো “
“ ওই বাড়ি কার কাছে জাইবেন , মিয়া রা তো অইখানে কেউ থাকে না ? বাড়ি কি বিক্রি কইরা দিবো নাকি ? “
“ না না সেরকম কিছু না “
পুরো কথা বললাম না লোকটার কাছে , কি দরকার পুরো কথা বলা ।
“আহা আগের মিয়া বাড়ি কি আর এহন আছে নি ? মিয়াঁরা থাকলে কি গেরামের এই অবস্তা হইতো ? মিয়াঁ রা জহন আসিলো , তহন কি এমুন আসিলো গেরাম এর অবস্থা , এহন আজাত কু জাত লোক ক্ষমতা পাইসে যা ইচ্ছা তা করে মাইনসের লগে ।“
লোকটা কে দেখে যা মনে হচ্ছে বয়স কোনভাবেই ৪০ এর বেশি হবে না । যদিও দেখতে আমার চেয়ে একটু বেশি বয়স্ক মনে হচ্ছে সেটা গ্রাম্য পরিবেশে অযত্নে থাকার কারন এ হতে পারে । আমার বয়স তো এখন ৪৭ । আর বয়স যদি আমার সমান বা আমার চেয়ে দু চার বছরের বড় ছোট হয় তাহলে তো মিয়াঁ বাড়ির ক্ষমতায় থাকা দিন গুলি সম্পর্কে তেমন কোন ধারণা থাকার কথা নয় এই লোকের । হায় রে মানুষ, চলে যাওয়া দিন গুলি সব সময় ভালো লাগে । অথচ মিয়াঁ বাড়ি নিয়ে বেশ জঘন্য কিছু কথা প্রচলিত আছে ।
“ মিয়াঁ বাড়িতে কি কাম আপনের “
“ এমনি ঘুরতে এসেছি “ লোকটির সাথে কথা বার্তায় তেমন আগ্রহ পাচ্ছি না , আমি এই দোকানে বসেছিলাম , কিছু কিশোর কে দেখে ওরা কি নিয়ে কথা বলে সেটা সোনার জন্য , কিন্তু ওই কিশোর গ্রুপ সবাই মোবাইল নিয়ে ব্যেস্ত নিজেদের মধ্যে তেমন কথা হচ্ছে না । সুধু একটু পর পর একজন দুজন অদ্ভুত সব কথা বলে উঠছে , ওই সালা ড্রাগন ডে অ্যাটাক করুম , মামা আমার টা তিন স্টার কইরা দিসে । যার আগা মাথা আমি কিছুই বুঝতে পারছি না ।
“ এহন কি আর দেহার মতন কিসু আছে , সব চোর ছেচ্চর এ নিয়া গেসে , যার কাসে জিম্মা দিয়া গেসে হে নিজেই বড় চোর , অন্য মাইনসে আর কি নিবো , সব ফাঁকা কইরা ফালাইসে “
চা দকানি এখনো আমার উপর থেকে আগ্রহ হারায় নি , মনে হয়না হারাবে মিয়াঁ বাড়ি এসেছে এটাই তার কাছে অনেক বড় কিছু । তাই আমি রাস্তার দিকে দেখতে লাগলাম কোন রিক্সা পাওয়া যায় কিনা । এবং ভাগ্য ভালো পেয়ে ও গেলাম । ওই যান্ত্রিক রিক্সা একটা । এবারকার চালক চেংড়া নয় যুবক । আমি হাত নেড়ে ডাকতেই দোকান এর কাছে চলে এলো ।
“ কই জাইবেন “
“ মিয়াঁ বাড়ি যাবে ? “ আমি জিজ্ঞাস করলাম
আর অম্নি রিক্সা অয়ালার ভয়ঙ্কর উত্তর “ নাহ ওইদিকে জামু না ব্যাটারি নাই “ ভয়ঙ্কর বলছি এই কারনে যে আসে পাশে আর কোন রিক্সা দেখা যাচ্ছে না ।
“ ওই ব্যাটা লুতফইরা যাবি না যা ব্যাটা মিয়াঁ বাড়ি যাইব , মেহমান “ আমার হয়ে দোকানি মামা রিক্সা চালক এর কাছে দেন দরবার করতে লাগলো।
“ মিয়াঁ বাড়ি যাইব তো কি হইসে , আমার ব্যাটারি তে চার্জ নাই , আমার গাড়ি তো আর মিয়াঁ আর ফকিরনী চিনে না , চার্জ থাকলে চলব না থাকলে নাই “
“ সাব রাগ কইরেন না , ওই একটু তেড়া আছে , তবে লোক ভালো “ দকানি আমাকে সান্তনা দেয়ার জন্য বলল তারপর রিক্সা চালক কে ধমকে উঠলো ।
“ গেরাম এর ইজ্জত আর রাখলি না তরা , যা নিয়া যা , ভারা বেশি দিবনে “
এবার আর রিক্সা চালক কিছু বলল না , চুপ করে রইলো , দোকানী হাসি মুখে দিগবিজয়ী একটা ভাব নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বলল ।
“ উঠেন সাব , ওই ঠিক মতো নিয়া যা “ দোকানী আমাকে শেষ বিদায় বলে দিলো ।
এতো কিছু হয়েগেল অথচ এই দোকানে যাদের দেখে এসে বসেছিলাম , তাদের একজন ও মোবাইল এর পর্দা থেকে চোখ তুলে তাকালো না। এরা একে অপরের কাছ থেকে ,ড্রাগন নিচ্ছে , বেলুন নিচ্ছে , কিন্তু মোবাইল থেকে হাত সরাচ্ছে না । এদের মাঝে কোন কৌতূহল নেই , নেই কোন জিজ্ঞাসা । নাহ আমাদের সময়কার কিশোরদের সাথে এদের কোন মিল নেই । এরা চায়ের দোকানে বসে দল বেধে কিন্তু আড্ডা দেয় না । দোকানে আদিরসাত্মক গান চলে কিন্তু এদের কোন বিকার নেই । এদের দুনিয়া জুরে সুধু ওই ৫ ইঞ্চি মনিটর । অথচ আমাদের সময় আমারা সারাটা গ্রাম চষে বেরাতাম । এমন কোন দিন ছিল না যে শরীর এর কোন অংশ কাটা ছেঁড়া বা পরনের কাপড় অখণ্ড রেখে বাড়ি গেছি ।
বাজারের পাশের মহাসরক যতটা মসৃণ ছিল , গ্রামের ভেতরের রাস্তা ঠিক ততটাই বন্ধুর । মনে হচ্ছে এখনি উলটে যাবে ই যান্ত্রিক রিক্সা । একবার ডানে হেলে পড়ছে তো একবার বায়ে ।
“ একটু ধীরে চালাও ভাই “ কাতর মিনতি করলাম আমি রিক্সা চালক কে । কিন্তু আমার কথা শুনে যেন স্পিড আরও বাড়িয়ে দিলো ঝাকি খেতে খেতে চলছে যান্ত্রিক রিক্সা । আমি দ্বিতীয় বার অনুরধ করতে ভয় পেলাম । যদি আরও স্পিড বাড়িয়ে দেয় । ঠিক মতো যে আসে পাশে দেখতে দেখতে যাবো সে উপায় নেই । ব্যাগ আর নিজেকে বাচাতে ব্যেস্ত আমি । তবে এর মাঝে যা দেখতে পেলাম সেটা হচ্ছে বাড়ি ঘর প্রচুর বেড়ে গেছে । যে পরিমান মানুষ দেখলাম বাড়ি ঘর তো হবেই । দোকান পাঠ সুধু বাজারে নয় গ্রাম এরভেতরে ও আছে প্রচুর । প্রতিটা মোড়ে মোড়ে দোকান । চায়ের দোকান গুলি জমে উঠেছে জমজমাট আড্ডা । বেশিরভাগ কিশোর যুবক । সবার হাতে মোবাইল ।
আমি আসলে কোন জায়গাই চিনতে পারছি না । এতক্ষনে লাভ্লু দের বাড়ি পেরিয়ে আসার কথা । ওদের বাড়ি রাস্তার ধারেই ছিলো । কিন্তু এখন চেনার উপায় নেই একদম । যে স্পিড এ চলচে রিক্সা বাজার থেকে মিনিট ত্রিশ এর বেশি লাগার কথা না মিয়াঁ বাড়ি পৌছুতে । কিন্তু আমার কাছে মনে হচ্ছে অনন্ত কাল ধরে চলছে এই যান্ত্রিক রিক্সা ।
হঠাত ব্রেক করলো সেই রিক্সা । “আইসা পরসি মিয়াঁ বাড়ি নামেন “
সফিপুর নামবেন কে কে , এই সফিপুর । বাস এর হেল্পার এর ডাকে ঘুম ভাংলো । কিন্তু ব্যাটা সফিপুর সফিপুর করছে কেন ? এই জমজমাট বাজার কি সফিপুর নাকি ? রাস্তার দুপাশে সাড়ি সাড়ি দোকান , ধুমসে বাঝছে হিন্দি গান । কি দোকান নেই এখানে ? বেশ কিছু লোক নামলো দেখে আমি দ্বিধায় পড়ে গেলাম । ওরা কি সবাই ভুল জায়গায় নামছে ?
ওস্তাদ আর কেউ নাই নামার আগে বারেন ।
হেল্পার এর কথায় বাস আগে বাড়ল । আমি হুরমুর করে উঠে দাঁড়ালাম হেল্পার কে উদ্দেশ্য করে চেচিয়ে উঠলাম যে আমিও সফিপুর নামবো। বিরক্তি নিয়ে হেল্পার একটা থাবা মেরে বাস থামার ইঙ্গিত করলো । ওমনি ভীষণ প্রতিবাদি ক্যাঁচ ক্যাঁচ শব্দ তুলে ব্রেক কষল বাস। একটা ব্যেপার খেয়াল করলাম আমার গলার স্বর বাসের ড্রাইভার পর্যন্ত না পৌঁছানোর কোন কারন নেই এটুকু একটা বাস তার উপর আমি বেশ জোরেই চেচিয়েছিলাম । কিন্তু ড্রাইভার বাস থামায় নি যতক্ষণ না পর্যন্ত হেল্পার ইঙ্গিত না করেছে । বেশ ভালো লাগলো আমার এই ব্যাপারটা । দেশে আসার পর সবজায়গায় অনিয়ম এর ছড়াছড়ি দেখছি । কিন্তু এই ছোট্ট পুরনো ডেট ওভার বাস এর হেল্পার আর ড্রাইভার এর মাঝে বোঝাপড়া খুব ভালো লাগলো ।
“কই থেইকা যে আহে এগুলা “
হেল্পার এর আক্রোশ মিশ্রিত চাপা শব্দ গুলি সাঙ্গ করে শেষ হলো আমার এই সাড়ে চার ঘণ্টার বাস ভ্রমন । বাস বেশ কিছু দূরে চলে এসেছে। হেল্পার ছেলেটা ইচ্ছে করেই একটু দেরিতে থাবা মেরেছে বাসের দরজায় । হাতের লাগেজ আর কাধের ব্যাগ নিয়ে কিছুদুর হেঁটে এলাম । এতো মানুষ কথা থেকে এলো এই সফিপুর বাজারে কে জানে । খুব বেসিদিন তো হয়নি মাত্র ৩০ বছর । এই ৩০ বছরে মানুষ দ্বিগুণ হতে পারে চারগুন হতে পারে কিন্তু এখানে যা দেখছি দশগুণ বল্লেও কম হবে । ঝাঁ চকচকে পিচ ধালাই রাস্তা । তার উপরে হয়তো কিছুক্ষন আগে বৃষ্টি হয়েছিলো , একেবারে পিচ কালো রস্তা সাঁ সাঁ করে ছুটে চলছে গাড়ি সেই রাস্তার উপর দিয়ে । অথচ যেদিন এই সফিপুর ছেরেছিলাম , এই বাজারে গোটা ছয় দোকান ছিলো । কালু মোল্লা দৌরে এসে কিছু পিয়াজু দিয়ে গিয়েছিলো আমাকে ।
বৃষ্টি পড়ে মাটি পিচ্ছিল হয়ে আছে মনে হওয়ায় ভয়ে আর মাটিতে পা দিলাম না । ব্যাপারটা একটু ভাবিয়ে তুলল আমায় , শুনেছি মানুষ নাকি প্রবাস থেকে ফিরে খালি পায়ে মাটিতে হাটতে খুব পছন্দ করে । আমাদের সফিক ভাই কে পার্য উদাস ভঙ্গিতে বলতে শুনতাম “ কেউ যদি আমাকে দেশ থেকে এক পোটলা মাটি এনে দিত “ এই বাক্য টি বলে সফিক ভাই বড় নিশ্বাস ছেড়ে উদাস হয়ে জেতেন । আমারা তখন মজা করে জিজ্ঞাস করতাম কি করবেন মাটি দিয়ে । অবশ্য এই প্রশ্নের উত্তর সফিক ভাই কোনদিন দেয়নি উত্তর দিত ভাবি বেঙ্গ করে বলতো “ হয়তো রোজ সকালে দুধের সাথে এক চামচ করে খেত” আমারা তখন খুব হাসতাম । এই এক দম্পতি সম্পূর্ণ উল্টো দুই চরিত্র অথচ ২৬ বছর এক সাথে মানুষ পারে কি করে । আমি আর লিজা তো তিন বছর ও একসাথে থাকতে পারলাম । এর পর এলো সুজান । সুজান আর আমার জুটি আরও এক কাঠি সরেস মাত্র নয় মাস । লিজা বাঙালী ছিলো বলে মনে হয় একটু বেশি সময় নিয়েছিলো ।
নাহ দেশে আসার আবেগ মনেহয় আমার উপর ও একটু ভর করেছে । বাস থেকে সম্পূর্ণ অপরিচিত নিজ গ্রামে নেমে কই বাড়ি পৌছার জন্য বাহন ঠিক করবো তা না করে সফিক ভাই আর নিজের এর দাম্পত্য জীবন এর তুলনা করছি ।
“স্যার কই জাইবেন ?”
তিন চাকার এক কিম্ভূত রিক্সা নিয়ে এক ১৪-১৫ এর বালক আমার দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলো । নিজ গ্রামের ঠিকানা বলতে গিয়েও থেমে গেলাম ।
“ না কোথাও যাবো না “
উত্তর দিলাম আমি , বুঝলাম ছেলেটি বিরক্ত হলো তারপর প্যাডেল মারার বদলে রিক্সার হেন্ডেল ঘুরাতেই বনবন করে ছুট দিলো রিক্সা । বাহ দেশের রিক্সা তো বেশ উন্নত হয়েছে । তবে একটা ব্যাপার ভেবে হাসি পেলো বুড়ো রিক্সা অয়ালাদের এখন আর মানুষ বেশি টাকা দেবে না । আগে দেখাতাম রিক্সা চালক বুড়ো হলে মানুষ দয়া দেখিয়ে বেশি ভারা দিত । এখন তো রিক্সা চালানোর কষ্ট নেই তাই ভারা ও বেশি নেই । যন্ত্র মানুষ এর দয়া মায়া কেড়ে নিচ্ছে । এই যা আবার ফিলোসফি বেরিয়ে এলো । কিন্তু এই যান্ত্রিক রিক্সা ওয়ালা কে না করলাম কেন কে জানে । এখন মনে মনে নিজেকে গালি দিচ্ছি । অনেক দোকান পাঠ মানুষ হলেও এখনো যাতায়াত বেবস্থার তেমন উন্নতি মনে হয় না সাধন হয়েছে। কারন আর কোন পায়ে চালিত রিক্সা বা যান্ত্রিক রিক্সা দেখতে পাচ্ছি না ।
হঠাত মাথায় একটা চিন্তা এলো , একটা চায়ের দোকানে বসি না কেন ? চায়ের দোকানে বসলে এখানকার মানুষ দের সম্পর্কে ভালো একটা ধারণা পাওয়া যাবে । পাশা পাশী ৪ টা দোকান । একটা দোকানে বেশ কিছু কম বয়সী ছেলে পেলে বসে আড্ডা মাড়ছে । আমি সেই দোকানে বসার সিধান্ত নিলাম । কারন এই জায়গার সাথে আমার সব সৃতি বাল্য আর কৈশোর কালের । তাই বুড়ো মানুষ দের কথা শুনে আমি কম্পেয়ার করতে পারবো না গ্রাম এখন কথায় আছে আর আমাদের সময় কোথায় ছিলো ।
দোকানে বসে আছে বেশ নাদুস নুদুস একটি ১২- ১৩ বছর বয়সী ছেলে । মাথার চুল কদম ছাঁট । সেন্ড গেঞ্জি থলথলে বেশ বড়সড় ভুরি বেয়ে বেশ খানিকটা উপরে উঠে আছে । একমনে নাক পরিষ্কার করতে করতে দোকানে বসানো ২১ ইঞ্চি রিঙ্গিন টিভির দিকে তাকিয়ে । সেখানে একটি গান চলছে । একটি ১৫- ১৬ বছরের ছেলে আর ২০ এর উপরে মেয়ে হচ্ছে গানের মডেল । গানের কথা শুনে বোঝা যাচ্ছে যে ভাগ্নে মামা বাড়ি বেড়াতে এসেছে কিন্তু নতুন মামি তাকে আদর করছে না ঠিক মতো । তাই ভাগ্নে মামি কে পুরাতন মামির গুন গান সুনাচ্ছে আর সাথে মামার কাছে নালিশ করার ভয় দেখাচ্ছে । ভাগ্নের এই অভিযোগ শুনে সুন্দরি কম বয়সী মামি আদর করে লাল গাই এর সাদা দুধ খাওয়ানর প্রস্তাব রাখছে ।
বেশ নোংরা একটি ইঙ্গিত রয়েছে গানটিতে । এমনিতে ভাগ্নে কে লাল গাই এর সাদা দুধ খাওয়ানোর প্রস্তাব দেয়া খুব খারাপ কিছু না । কিন্তু নাচের ধরন আর পোশাক আসাক কিন্তু অন্য ইঙ্গিত দিচ্ছে । গানের মেয়েটি একটি লাল সাড়ি পড়ে আছে আর দুধ শব্দ টি উচ্চারন করার সময় সুন্দরি কম বয়সী মামি নিজের বুকের দিকে যে ইঙ্গিত করলো সেটা আমার মতো মানুষ এর পক্ষে বোঝা খুব বেশি কষ্ট সাধ্য ব্যাপার নয় ।
“ কি দিমু আপনেরে “
নাদুস নুদুস ছেলেটি নিজের গামছা ডিজাইন এর লুঙ্গির উপর সদ্য নাক পরিষ্কারে ব্যাবহার করা আঙ্গুলটি মুছতে মুছতে জিজ্ঞাস করলো আমাকে । কি উত্তর দেবো এই প্রশ্নের ? খুব চিন্তায় পড়ে গেলাম । লুঙ্গিতে আঙুল মোছার দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ আমার । নাহ এই হাতে আমি কিছু খেতে পারবো না । কিন্তু খালি খালি বসে তো আর লাল টুকটুকে মামি আর দুষ্ট ভাগ্নের গান শুনা যায় না । কিছু না কিছু তো নিতে হবে । এই যৌন সুড়সুড়ি যুক্ত গান লাগানোর এইটাই নিশ্চয়ই কারন । মানুষ আসবে গান দেখবে আর সাথে কিছু না কিছু কিনে খাবে । তবে আমি বেঁচে গেলাম । একজন ৩৫-৪০ এর লোক এসে ছেলেটিকে উদ্দেশ্য করে বলল
“ যা কালাম বাড়িত যা , তোর মামি পিয়াজি চপ ভাজতে বসছে অইগিলা নিয়া আয় “
আমার দৃষ্টি আবার আবার টিভির মনিটরে চলে গেলো , সেখানে ভাগ্নে যে মামির জন্য শবরী কলা এনেছে সেই কথা বলছে । তবে আমাদের দোকানের মামা ভাগ্নের সেই ব্যাপারে কোন ভ্রূক্ষেপ দেখলাম না । ভাগ্নে মামার জন্য স্থান ছেড়ে দিলো আর মামা সেখানে এসে বসলো ।
“ যাও বাজান যাও , বেশি দেরি কইরো না কিন্তু “
মামা তাগিদ দিলো ভাগ্নে কে , কিন্তু ভাগ্নে মনে হয় কিছু চায় , সে নরছে না , একজায়গায় দাড়িয়ে মোড়ামুড়ি করছে ।
“ কি হইলো যা “
“ একটা চিপ নেই মামা “
“ আমার দোকানটা তুই শেষ কইরা ফালাবি খাইতে খাইতে, রাক্ষস এর বাচ্চা কোনহানকার “
মামার বলা কথা গুলি নির্দয় মনে হলেও মামা যে মন থেকে বলেনি তা পরক্ষনেই বোঝা
“ যা নিয়া যা রাক্ষক কোনহানকার “
অন্মি ভাগ্নে হলুদ রং এর একটি চিপস এর প্যাকেট নিয়ে ভোঁ দৌর ।
আর মামা আয়েস করে বসে রিমোট হাতে নিয়ে টীভির গান পরিবর্তন করে দিলো । এই গানে একটা মধ্যবয়স্ক লোক একটি কিশোরী মেয়ে । লোকটি কিশোরীর বাড়ির ঠিকানা জিজ্ঞাস করছে । আর মেয়েটি দুই বিয়ে করা লোকটির কাছে নিজের রূপ যৌবন ধরা না দেয়ার প্রতিজ্ঞা করছে । বুঝলাম মামা ভাগ্নের টেস্ট এর উপর নির্ভর করে দোকানের খদ্দের রা কখন কি গান শুনতে এবং দেখতে পাবে ।
“ মিয়া সাব কি এই এলাকায় নতুন নাকি “
দোকানদার “মামা “ এর গলার স্বর টিভির পর্দা থেকে আমার মনোযোগ বিচ্ছিন্ন করলো । একটু লজ্জা লজ্জা করতে লাগলো আমার , এমন হা করে টিভির পর্দায় তাকিয়ে ছিলাম বলে ।
“ জী নতুন ই বলতে পারেন “
“ মিয়া সাব জাইবেন কই ?”
নাহ পুরোপুরি পরিবর্তন হয় নি এখনো এই গ্রামের মানুষ , গ্রাম্য মানুষ এর আজন্ম কৌতূহল এখনো বেঁচে আছে দেখছি এদের মাঝে। শহরের মানুষ কিন্তু আপনাকে এমন যেচে পড়ে প্রশ্ন করবে না যদি না তার কোন বদ মতলব থেকে থাকে ।
“ মিয়া বাড়ি যাবো “
“ ওই বাড়ি কার কাছে জাইবেন , মিয়া রা তো অইখানে কেউ থাকে না ? বাড়ি কি বিক্রি কইরা দিবো নাকি ? “
“ না না সেরকম কিছু না “
পুরো কথা বললাম না লোকটার কাছে , কি দরকার পুরো কথা বলা ।
“আহা আগের মিয়া বাড়ি কি আর এহন আছে নি ? মিয়াঁরা থাকলে কি গেরামের এই অবস্তা হইতো ? মিয়াঁ রা জহন আসিলো , তহন কি এমুন আসিলো গেরাম এর অবস্থা , এহন আজাত কু জাত লোক ক্ষমতা পাইসে যা ইচ্ছা তা করে মাইনসের লগে ।“
লোকটা কে দেখে যা মনে হচ্ছে বয়স কোনভাবেই ৪০ এর বেশি হবে না । যদিও দেখতে আমার চেয়ে একটু বেশি বয়স্ক মনে হচ্ছে সেটা গ্রাম্য পরিবেশে অযত্নে থাকার কারন এ হতে পারে । আমার বয়স তো এখন ৪৭ । আর বয়স যদি আমার সমান বা আমার চেয়ে দু চার বছরের বড় ছোট হয় তাহলে তো মিয়াঁ বাড়ির ক্ষমতায় থাকা দিন গুলি সম্পর্কে তেমন কোন ধারণা থাকার কথা নয় এই লোকের । হায় রে মানুষ, চলে যাওয়া দিন গুলি সব সময় ভালো লাগে । অথচ মিয়াঁ বাড়ি নিয়ে বেশ জঘন্য কিছু কথা প্রচলিত আছে ।
“ মিয়াঁ বাড়িতে কি কাম আপনের “
“ এমনি ঘুরতে এসেছি “ লোকটির সাথে কথা বার্তায় তেমন আগ্রহ পাচ্ছি না , আমি এই দোকানে বসেছিলাম , কিছু কিশোর কে দেখে ওরা কি নিয়ে কথা বলে সেটা সোনার জন্য , কিন্তু ওই কিশোর গ্রুপ সবাই মোবাইল নিয়ে ব্যেস্ত নিজেদের মধ্যে তেমন কথা হচ্ছে না । সুধু একটু পর পর একজন দুজন অদ্ভুত সব কথা বলে উঠছে , ওই সালা ড্রাগন ডে অ্যাটাক করুম , মামা আমার টা তিন স্টার কইরা দিসে । যার আগা মাথা আমি কিছুই বুঝতে পারছি না ।
“ এহন কি আর দেহার মতন কিসু আছে , সব চোর ছেচ্চর এ নিয়া গেসে , যার কাসে জিম্মা দিয়া গেসে হে নিজেই বড় চোর , অন্য মাইনসে আর কি নিবো , সব ফাঁকা কইরা ফালাইসে “
চা দকানি এখনো আমার উপর থেকে আগ্রহ হারায় নি , মনে হয়না হারাবে মিয়াঁ বাড়ি এসেছে এটাই তার কাছে অনেক বড় কিছু । তাই আমি রাস্তার দিকে দেখতে লাগলাম কোন রিক্সা পাওয়া যায় কিনা । এবং ভাগ্য ভালো পেয়ে ও গেলাম । ওই যান্ত্রিক রিক্সা একটা । এবারকার চালক চেংড়া নয় যুবক । আমি হাত নেড়ে ডাকতেই দোকান এর কাছে চলে এলো ।
“ কই জাইবেন “
“ মিয়াঁ বাড়ি যাবে ? “ আমি জিজ্ঞাস করলাম
আর অম্নি রিক্সা অয়ালার ভয়ঙ্কর উত্তর “ নাহ ওইদিকে জামু না ব্যাটারি নাই “ ভয়ঙ্কর বলছি এই কারনে যে আসে পাশে আর কোন রিক্সা দেখা যাচ্ছে না ।
“ ওই ব্যাটা লুতফইরা যাবি না যা ব্যাটা মিয়াঁ বাড়ি যাইব , মেহমান “ আমার হয়ে দোকানি মামা রিক্সা চালক এর কাছে দেন দরবার করতে লাগলো।
“ মিয়াঁ বাড়ি যাইব তো কি হইসে , আমার ব্যাটারি তে চার্জ নাই , আমার গাড়ি তো আর মিয়াঁ আর ফকিরনী চিনে না , চার্জ থাকলে চলব না থাকলে নাই “
“ সাব রাগ কইরেন না , ওই একটু তেড়া আছে , তবে লোক ভালো “ দকানি আমাকে সান্তনা দেয়ার জন্য বলল তারপর রিক্সা চালক কে ধমকে উঠলো ।
“ গেরাম এর ইজ্জত আর রাখলি না তরা , যা নিয়া যা , ভারা বেশি দিবনে “
এবার আর রিক্সা চালক কিছু বলল না , চুপ করে রইলো , দোকানী হাসি মুখে দিগবিজয়ী একটা ভাব নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বলল ।
“ উঠেন সাব , ওই ঠিক মতো নিয়া যা “ দোকানী আমাকে শেষ বিদায় বলে দিলো ।
এতো কিছু হয়েগেল অথচ এই দোকানে যাদের দেখে এসে বসেছিলাম , তাদের একজন ও মোবাইল এর পর্দা থেকে চোখ তুলে তাকালো না। এরা একে অপরের কাছ থেকে ,ড্রাগন নিচ্ছে , বেলুন নিচ্ছে , কিন্তু মোবাইল থেকে হাত সরাচ্ছে না । এদের মাঝে কোন কৌতূহল নেই , নেই কোন জিজ্ঞাসা । নাহ আমাদের সময়কার কিশোরদের সাথে এদের কোন মিল নেই । এরা চায়ের দোকানে বসে দল বেধে কিন্তু আড্ডা দেয় না । দোকানে আদিরসাত্মক গান চলে কিন্তু এদের কোন বিকার নেই । এদের দুনিয়া জুরে সুধু ওই ৫ ইঞ্চি মনিটর । অথচ আমাদের সময় আমারা সারাটা গ্রাম চষে বেরাতাম । এমন কোন দিন ছিল না যে শরীর এর কোন অংশ কাটা ছেঁড়া বা পরনের কাপড় অখণ্ড রেখে বাড়ি গেছি ।
বাজারের পাশের মহাসরক যতটা মসৃণ ছিল , গ্রামের ভেতরের রাস্তা ঠিক ততটাই বন্ধুর । মনে হচ্ছে এখনি উলটে যাবে ই যান্ত্রিক রিক্সা । একবার ডানে হেলে পড়ছে তো একবার বায়ে ।
“ একটু ধীরে চালাও ভাই “ কাতর মিনতি করলাম আমি রিক্সা চালক কে । কিন্তু আমার কথা শুনে যেন স্পিড আরও বাড়িয়ে দিলো ঝাকি খেতে খেতে চলছে যান্ত্রিক রিক্সা । আমি দ্বিতীয় বার অনুরধ করতে ভয় পেলাম । যদি আরও স্পিড বাড়িয়ে দেয় । ঠিক মতো যে আসে পাশে দেখতে দেখতে যাবো সে উপায় নেই । ব্যাগ আর নিজেকে বাচাতে ব্যেস্ত আমি । তবে এর মাঝে যা দেখতে পেলাম সেটা হচ্ছে বাড়ি ঘর প্রচুর বেড়ে গেছে । যে পরিমান মানুষ দেখলাম বাড়ি ঘর তো হবেই । দোকান পাঠ সুধু বাজারে নয় গ্রাম এরভেতরে ও আছে প্রচুর । প্রতিটা মোড়ে মোড়ে দোকান । চায়ের দোকান গুলি জমে উঠেছে জমজমাট আড্ডা । বেশিরভাগ কিশোর যুবক । সবার হাতে মোবাইল ।
আমি আসলে কোন জায়গাই চিনতে পারছি না । এতক্ষনে লাভ্লু দের বাড়ি পেরিয়ে আসার কথা । ওদের বাড়ি রাস্তার ধারেই ছিলো । কিন্তু এখন চেনার উপায় নেই একদম । যে স্পিড এ চলচে রিক্সা বাজার থেকে মিনিট ত্রিশ এর বেশি লাগার কথা না মিয়াঁ বাড়ি পৌছুতে । কিন্তু আমার কাছে মনে হচ্ছে অনন্ত কাল ধরে চলছে এই যান্ত্রিক রিক্সা ।
হঠাত ব্রেক করলো সেই রিক্সা । “আইসা পরসি মিয়াঁ বাড়ি নামেন “