Posts: 72
Threads: 2
Likes Received: 27 in 19 posts
Likes Given: 0
Joined: Mar 2019
Reputation:
14
বুকুন
১.
কাল বাড়ি পৌঁছতে বেশ রাত হয়েছে, তারপর মায়ের সঙ্গে একটু গল্পগুজব করে ঘুমিয়েছি। তাই আজ সকালে মা যখন চা নিয়ে ডাকাডাকি করছে, তখন আমি গভীর ঘুমে।
এক তো কলকাতা থেকে এতটা জার্নির ক্লান্তি, তারপর অত রাতে ঘুমনো। তাই উঠতেই ইচ্ছে করছিল না। কিন্তু তারপরেই খেয়াল হল অঞ্জলি দিতে হবে। আজ সপ্তমী।
অনেকদিন পরে পুজোর সময়ে গ্রামে এসেছি। রোজই অঞ্জলিটা দেব ভেবে রেখেছি।
ঝট করে উঠে পড়ে দরজা খুলে এসে দেখি মা চায়ের কাপটা নিয়ে গিয়ে খাবার ঘরে টেবিলের ওপরে রাখছে।
আমাদের এই গ্রামের বাড়িতে ঘরের সঙ্গে লাগানো বাথরুম নেই। তাই মাকে বললাম, ‘চা টা ঢাকা দিয়ে রাখ। আমি বাথরুম থেকে আসছি।‘
ফিরে এসে চা খেয়ে বাথরুমে গিয়ে স্নান করে বেরলাম একেবারে।
পিয়ালী - আমার বউ - সুটকেসের কোন জায়গায় যে পাজামা পাঞ্জাবিগুলো দিয়েছে! দুটে পাজামা আর গোটা তিনেক পাঞ্জাবি দিতে বলেছিলাম ওকে।
একটু নীচের দিকে ছিল। খুঁজে পেয়ে একটা আকাশী নীল রঙের পাঞ্জাবি পড়লাম।
তারপর সাইকেলটা বার করতে করতে মাকে বললাম, ‘বেরলাম। অঞ্জলি দিয়ে একটু ঘুরে টুরে আসব।‘
ছোটবেলার চেনা জায়গাতে আজকাল আর পুজোটা হয় না। ওখানে বাড়িঘর হয়ে গেছে। তাই একটু দূরের মাঠে সরে গেছে আমাদের গ্রামের বারোয়ারি পুজো।
ছোটবেলায় দলবেঁধে সকালবেলা চলে আসতাম প্যান্ডেলে। দুপুরে একটু স্নান খাওয়া করেই আবার সেই রাত অবধি।
ঠাকুর দেখতে বেরনোর অত ব্যাপার ছিল না আমাদের তখন। কয়েক বছর পরপর হয়তো কাছের টাউনের দিকে নিয়ে যেত কাকারা কেউ। না নিয়ে গেলেও আমাদের মাথা ব্যাথা ছিল না। পুজোর সময়ে সারাদিন খেলতে পারাটাই আনন্দের।
এইসব ভাবতে ভাবতেই সাইকেল নিয়ে পুজোর মাঠে হাজির।
একদিকে সাইকেলটা রেখে প্যান্ডেলের ভেতরে ঢুকে দেখি অনেকলোক অঞ্জলি দিতে দাঁড়িয়ে গেছে। এরপরের বার হয়তো আমার জায়গা হবে।
যে ভদ্রমহিলা স্টেজের ওপরে দাঁড়িয়ে সবার হাতে ফুল দিচ্ছিলেন, তার মুখটা বেশ চেনা চেনা লাগছিল। গ্রামেরই কেউ হবে, সেটা তো নিশ্চিত। কিন্তু ঠিক কে, সেটা মনে করে উঠতে পারলাম না।
এমনিতেই কলেজের সময়ে থেকে আর গ্রামে থাকি না, আর এখন তো বছরে এক আধবারই আসা হয়!
তাই ঠিক চিনতে পারছিলাম না কে ওই ভদ্রমহিলা।
প্রথম ব্যাচের অঞ্জলি শেষ হল। সবাই শান্তি জল নিয়ে আস্তে আস্তে জায়গা ছাড়তে শুরু করল। আমি এগিয়ে গেলাম একটু।
ওই ভদ্রমহিলা আবারও ফুলের ঝুড়ি নিয়ে সবাইকে ফুল দিতে শুরু করলেন। আগে তো দূর থেকে দেখছিলাম, এখন কাছ থেকে দেখছি। আরও বেশী চেনা মনে হচ্ছে, কিন্তু মনে করতে পারছি না কে!
ভদ্রমহিলা একটা সুন্দর তাঁতের শাড়ি পড়েছেন – লালপাড় দেওয়া। মাথায় সিঁদুর। কাজের সুবিধা হবে বলে শাড়ির আঁচলটা পেঁচিয়ে কোমরে গুঁজে দিয়েছেন। সামান্য মেদ আছে কোমরের কাছে। ঘামে ভিজে গেছে উনার বগলটা।
হাত বাড়িয়ে রয়েছি আমি, ফুল নেওয়ার জন্য।
আমার দিকে ফুলভর্তি হাতটা এগিয়ে দিয়ে কয়েক সেকেন্ড হাঁ করে তাকিয়ে রইলেন ভদ্রমহিলা। তারপর বলে উঠলেন, ‘আরে রবিদা না? কবে এসেছিস?’
গলার স্বরটাও খুব চেনা, আমাকে দাদাও বলে আবার তুই-ও বলে! কিন্তু মনে করতে পারছি না কেন এ কে? আমি মাথা নেড়ে ভদ্রতা করে একটু হেসে বললাম , ‘কাল রাতে।‘
আশপাশের সবাইকে ফুল দিতে দিতেই উনি বললেন, ‘আমাকে চিনতে পারছিস তো, নাকি?
আমি একটু বোকা বোকা হেসে মাথা নাড়িয়ে বুঝিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলাম যে উনাকে চিনেছি। বুঝতে দিলাম না যে চিনতে পারি নি উনাকে তখনও।
‘কত্তদিন পরে দেখলাম তোকে রে!’
এই একটা শব্দ – ‘কত্তদিন’টা শুনেই মনে পড়ে গেল। এইভাবে কত্তদিন একজনই বলত।
ঝট করে মনে পড়ে গেল, বু-কু-ন...
আমার ছোটবেলা, বড় হয়ে ওঠার সঙ্গী.. আরও কত কিছু প্রথম পাওয়া ওর কাছ থেকেই
‘বু-কু-ন তো?’ আমার গলায় তখনও একটু অনিশ্চয়তা।
‘যাক চিনেছিস তাহলে! অঞ্জলি দিয়ে চলে যাস না কিন্তু।‘
পুরোহিত মশাই মন্ত্র পড়তে শুরু করেছেন।
আমি মা দুর্গার দিকে তাকিয়ে মন্ত্র পড়ছি বিরবির করে আর মাঝে মাঝে আড়চোখে দেখছি বুকুনের দিকে। একবার চোখাচোখিও হয়ে গেল।
ও ঠোঁট টিপে একটু হেসে মুখটা ঘুরিয়ে নিল অন্য দিকে।
অঞ্জলির শেষে প্যান্ডেলের বাইরে গিয়ে একটা সিগারেট ধরালাম।
কত স্মৃতি ভিড় করে এল মনের মধ্যে।
এরকমই একটা পুজোর দিন ছিল সেটা – সরস্বতী পুজো।
--
২
বুকুন আমার থেকে বছর খানেকের ছোট। কাছাকাছিই বাড়ি, ওর মা কে কাকিমা বলে ডাকি ছোট থেকেই।
কাকা বাইরে চাকরী নিয়ে চলে গেল, আর আমি পেলাম কাকার সাইকেলটা। সময় পেলেই সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে পড়ে আর টোটো করে ঘুরে বেড়াই বন্ধুরা মিলে।
কয়েক বছর আগেই একটু লায়েক হয়েছি। মেয়েদের দিকে নজর টজরও দিতে শুরু করেছি। তবে গ্রাম এলাকা – মেয়েরাও সব এলাকারই কাকা, জেঠাদের – বেশী তাকানোর সাহস হত না।
কিছুদিনের মধ্যেই বুকুন বায়না ধরল, ‘এই রবিদা, আমাকেও সাইকেল চালানো শিখিয়ে দে না রে।‘
আমি প্রথম কয়েকদিন একটু দাদাগিরি দেখালাম, ‘না না পড়ে যাবি। কাকিমা বকবে আমাকে।‘
তবুও সে ছাড়ে না, মাঝে মাঝেই বায়না ধরে সাইকেল চালানো শিখবে বলে। বেশ কয়েক মাস কাটিয়ে দিলাম এই করে। কিন্তু ওর বায়না থামে না আর।
আমাদের বাড়ি যাওয়ার রাস্তার প্রথম কিছুটা পাকা রাস্তা ছিল, কিন্তু তারপর মাঠ পেরিয়ে যেতে হত।
পাকা রাস্তা ছেড়ে মাঠে নামার পরে আমি একদিন বাধ্য হয়ে বললাম, ‘আচ্ছা, বোস সাইকেলে।‘
আমার বন্ধুরা একটু আগেই নিজের নিজের বাড়ির দিকে চলে গেছে।
আমি সাইকেলটা ধরে রেখে বুকুনকে চড়া শেখানোর মধ্যেই খেয়াল করলাম এই প্রথম একটা মেয়ের অত কাছাকাছি আছি আমি। সাইকেলের সিটটা শক্ত করে ধরে আছি যাতে ও না পড়ে যায়।
বেশ মজা পেলাম আমার সদ্যপ্রাপ্ত শিক্ষকতার কাজটা।
বুকুন বলল, ‘তুই আমাকে চালিয়ে নিয়ে চল। আজ আর শিখব না। পা ব্যথা করছে।‘
কাকার সাইকেলে আবার পেছনে কেরিয়ার ছিল না, সামনে বাস্কেট লাগানো ছিল। তাই বুকুনকে সাইকেলের রডেই উঠতে হল। এসবে ও অভ্যস্থ বাবা কাকাদের সাইকেলে চেপে চেপে।
আমি সাইকেলে উঠে বসার পরে বুকুনও উঠল। আমার বুকটা একটু ধুকপুক করছে। ও কিন্তু বেশ স্মার্টলি একদিকে সাইড করে রডের ওপরে চেপে বসে পড়ল। হ্যান্ডেলটা ধরে বলল, ‘কী রে রবিদা, চল!’
আমি প্যাডেল করতে লাগলাম। শীতের বিকেল। গ্রামের দিকে তখন বেশ ঠান্ডা। কিন্তু আমার কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমছে। সোয়েটার পড়েও গরম লাগছে বেশ। ওর হাত আমার হাত ছুঁয়ে রয়েছে। ওর চুলের গন্ধ পাচ্ছি।
ও কীসব যেন বকবক করছিল, আমার কানে সেসব ঢুকছিল না তখন। হার্টের শব্দটা যেন সেদিন এমনি এমনি-ই শুনতে পাচ্ছি।
এইসব হাবিজাবি ভাবতে ভাবতে খেয়াল করি নি মাঠের রাস্তায় একটা বড়সড় মাটির ঢেলা পড়েছিল। সেটাকে শেষ মুহুর্তে কাটাতে গিয়ে ব্যালান্সটা গেল আর হুড়মুড় করে পড়লাম দুজনে – সঙ্গে সাইকেলটা।
বুকুনের ‘আআআআ পড়ে গেলাআআম’ শুনেই আমার সম্বিৎ ফিরল। কিন্তু ততক্ষণে সাইকেল আর আমার নিয়ন্ত্রনে নেই।
আমি আর বুকুন আছাড় খেলাম.. প্রায় জড়াজড়ি করে, আমাদের ওপরে পড়ল সাইকেল।
কিন্তু সেই বয়সেও শিভালরি-টা তো দেখাতে হবে। তাই ঝট করে উঠে দাঁড়ালাম। তারপরে সাইকেলটা এক ঝটকায় তুলে নিয়ে স্ট্যান্ড করালাম। বুকুন তখনও পড়ে আছে। ওকে হাত ধরে তুললাম। তারপর দেখি ওর সাদা সালোয়ার কামিজটায় ধুলো লেগে গেছে বেশ।
‘কী রে লাগল?’
‘তুই কি কানা? আমি বলছি সামনে বড় মাটির ঢেলা দেখ দেখ – তোর কানে ঢোকে নি?’
কথাটা বলতে বলতে নিজের সালোয়ার কামিজটা ঝাড়ছিল ও।
আমি বললাম, ‘আমিও দেখেছি। তুই ছিলি বলে কাটাতে গিয়ে ব্যালান্স হারালাম। এ বাবা তোর ড্রেসটা গেল। ইশ কতটা ধুলো লেগেছে রে।‘
বলে আমিও ওর সঙ্গে ধুলো ঝাড়ায় হাত লাগাতেই বুকুন বলল, ‘থাক তোকে আর আমার জামা থেকে ধুলো ঝাড়তে হবে না।‘
আমি ওকে আরও একটু ছুঁয়ে নেওয়ার আশায় বুকুনের কথায় কান না দিয়ে ওর পিঠ, কোমর আর কোমরের পেছন দিকটা একটু ঝেড়ে দিলাম। নিজের অজান্তেই বোধহয় একটু চাপটাপও দিয়ে দিয়েছিলাম।
এবার বুকুন ধমক দিল, ‘এই রবি দা! কী হচ্ছে ! ধুলো ঝাড়ার নাম করে এদিক ওদিক হাত দিচ্ছিস না? জেঠিকে বলে দেব কিন্তু!’
বলে একটা ফিচেল হাসি দিল।
আমি বললাম, ‘তোকে তো হেল্প করছিলাম। পেছন দিকে কত ধুলো লেগেছে!’
ও নিজেই নিজের পেছন দিকটা ঝাড়তে ঝাড়তে বলল, ‘তোকে আর হেল্প করতে হবে না। বাড়ি চল। পায়ে এমনিতেই ব্যথা ছিল, এখন আরও ব্যথা করছে।উ:’
‘হাঁটতে পারবি?’
‘হুম। আস্তে আস্তে চল।‘
দুপা যেতে না যেতেই আবারও কঁকিয়ে উঠল বুকুন।
‘উফ। কোমরে লেগেছে রে খুব। এদিকে কাৎ হয়ে পড়লাম তো। তুই একটা গাধা জানিস। আবার আমাকে সাইকেল চালাতে শেখাবেন উনি,’ ধমক দিল বুকুন।
কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে পড়েছে। শীতের বিকেলে আলো বেশ কমে এসেছে, কিন্তু ওর মুখে চোখে ব্যথার ছাপ স্পষ্ট।
‘তুই সাইকেলে ওঠ বুকুন। আর ফেলব না। হেঁটে বাড়ি যেতে পারবি না।‘
‘তোর সাইকেলে আমি আর উঠছি না। তুই বরঞ্চ একটু দাঁড়া, এখানটাতে একটু বসি। একটু পরে ঠিক হয়ে যাবে।‘
রাস্তার ধারে কিছুক্ষণ বসে রইল ও। আমিও পাশেই বসলাম। আমাকে সমানে ধমক দিয়ে চলল আর নিজেই কোমরটা মাসাজ করতে থাকল বুকুন। একবার ভাবলাম যে বলি আমি কোমরটা একটু টিপে দেব কী না, কিন্তু ধুলো ঝাড়তে গিয়ে যা ঝাড় খেয়েছি, তারপরে আর কোমরে মাসাজ করে দেওয়ার কথা বলি!!!
‘চল রবি দা। সন্ধ্যে হয়ে আসছে। মা কী ভাবছে কে জানে! সাইকেলেই নিয়ে চল,’ বলল বুকুন।
আবারও ওকে সাইকেলের রডে উঠিয়ে প্যাডেল ঘোরালাম। এবার বেশীই সতর্ক হয়ে।
কদিন পরেই সরস্বতী পুজো। সেসময়ে তো আর ভ্যালেন্টাইনস ডে ছিল না। আমাদের কাছে সরস্বতী পুজোটাই ভ্যালেন্টাইন্স ডে। সেদিন একটু স্বাধীনতা দিত বাবা মায়েরা।
বাড়ির পুজোতে কোনও মতে অঞ্জলি দিয়েই সাইকেল নিয়ে ছুটেছিলাম। বুকুন বলে দিয়েছিল আজ ওর বন্ধুদের বাড়ি বাড়ি ঘুরবে, ওকে যেন ওকে সঙ্গে করে নিয়ে যাই। আবার ফেরার পথেও যেন আসি। অন্য বন্ধুদের সঙ্গে যেন কোথাও না চলে যাই।
বুকুনকে ওর বাড়ি থেকে ডাকতে গেলাম। সে দেখি বাসন্তী শাড়ি আর ব্লাউজ পরে সেজেগুজে রেডি।
কাকিমা বলল, ‘রবি একটু প্রসাদ খেয়ে যা।‘
বসলাম। প্রসাদ কোনও মতে খেয়ে নিয়েই দুজনে বেরিয়ে পড়লাম।
কাকিমা বলে দিলেন, ‘বিকেল বিকেল ফিরবি। দূরে কোথাও যাস না যেন।‘
আমরা মাথা নেড়ে ‘হ্যাঁ’ বলে রওনা হলাম।
‘শাড়ি পড়ে সাইকেলে বসতে পারবি?’ জিগ্যেস করলাম।
‘হেঁটেই চল না আজ। অ্যাই রবিদা, কেমন লাগছে রে আমাকে শাড়ি পড়ে?’
ওর দিকে একটু তাকিয়ে নিয়ে বললাম, ‘দা-রু-ণ।‘
একটু যেন লজ্জা পেল।
আজকের আসল মজাটা তো লুকিয়ে সিগারেট খাওয়া হবে আজ – বন্ধুরা মিলে ঠিক করেছি। মেয়েরাও সব বাসন্তী রঙের শাড়ি পড়ে পরী সেজে রাস্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছে।
আমাদের কলেজের পুজোর পরে প্রসাদ আর দুপুরে লুচি ছোলার ডাল আর আলুর দমের প্যাকেট নিয়ে আমরা কজন বন্ধু বিলের মাঠের দিকে গিয়েছিলাম। লুকিয়ে সিগারেট খাওয়ার জন্য ওর থেকে যে ভাল জায়গা আর হয় না, সেটা আমাদের আগের কোনও ব্যাচের ছেলেরা অনেক বছর আগে ঠিক করেছিল। তারপর থেকে সেই ট্র্যাডিশন সমানে চলছে।
ছেলেদের সিগারেট খাওয়ায় হাতেখড়ির পার্মানেন্ট জায়গা বিলের মাঠ।
একদিকে বিল আর অন্যদিকে বড় মাঠের ধারে ঝোপঝাড়। ঝোপের আড়ালে বসে পড়লে কারও দেখার কোনও চান্স নেই। আর এদিকটায় কেউ সকাল-দুপুর কোনও সময়েই বিশেষ আসে না। সন্ধের পরে শুনেছি নেশা করতে আসে কেউ কেউ।
বিলের মাঠে যাওয়ার জন্য দুটো সিগারেট নেওয়া হয়েছে, সঙ্গে একটা দেশলাইয়ের বাক্স। সবই ঝাড়া।
আমাদের কাউকেই গ্রামের দোকানে সিগারেট কিনতে দেখলেই বাড়িতে পৌঁছনর আগেই খবর চলে যাবে। তারপর যে কী হবে, সেটা আর নাই-বা বললাম। তাই অতি কষ্টে যোগাড় করা হয়েছে সিগারেট দুটো।
বিলের মাঠে গিয়ে তো দেখি আরও আমাদের বয়সী আরও কয়েকজন সেখানে হাজির। তারমধ্যে আবার আছে আমাদের লাল্টু মার্কা ফার্স্ট বয় শ্যামলও।
ও যে স্যারেদের চর, সেটা আমরা সবাই জানি। তাই একটু ঘাবড়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু ও নিজেই আশ্বস্ত করল, যে ‘প্রমিস কাউকে বলব না। বললে তো আমিও কেস খাব রে শালা।‘
সেই প্রথম সিগারেট খাওয়া। সকলেই কেশে অস্থির। কারও কাছে জলও নেই। কোনওমতে সিগারেটগুলো শেষ করে পুজোর কাছে ফিরে এলাম সবাই। কলেজের টিউবওয়েলে ভাল করে মুখ টুখ ধুয়ে আবারও একটু প্রসাদ খেয়ে মুখের গন্ধ চাপা দেওয়ার চেষ্টা করলাম।
কেউ বলল, ‘চল পান খাই।‘
সকলে মিলে পান কিনে মুখের গন্ধ চাপা দেওয়ার চেষ্টা করতে করতেই খেয়াল হল, আরে বুকুন তো বলেছিল ওকে ডাকতে।
আমি বন্ধুদের বললাম, ‘আমি চলি রে। গার্লস কলেজের বুকুনকে নিয়ে বাড়ি ফিরতে হবে।‘
ওরা একটু আওয়াজ দিল আবারও, ‘বাড়ি যাবি তো নাকি অন্য কোথাও?’
‘ধুর শালা।‘
সাইকেল চালিয়ে তাড়াতাড়ি চলে এলাম বুকুনের কলেজে।
এদিক ওদিক তাকাতেই কোথা থেকে আরও দুই বন্ধুর সঙ্গে বুকুন এসে হাজির।
‘কীরে রবিদা, এত দেরী করলি? প্রসাদ খাবি তো?’
ওর বন্ধুদের কে একজন যেন বলল, ‘ভাল করে প্রসাদ খাওয়া রবিকে।‘
এই আওয়াজ দেওয়াতে বুকুনও একটু লজ্জা পেল।
বলল, ‘প্রসাদটা খেতে খেতেই চল।‘
ওর দুই বন্ধুও কলেজের বাইরে বেরিয়ে এল। গেটের একটু বাইরে দেখি আমার আরও দুই বন্ধু।
‘কি রে তোরা এখানে? ভেতরে গিয়ে প্রসাদ নিয়ে আয়।‘
ওরা দুজন আমাকে দেখে একটু ঘাবড়ে গেছে মনে হল।
বুকুন আর ওর অন্য দুই বন্ধু নিজেদের মধ্যে কী যেন ফিস ফিস করে বলল।
বুকুন আমার দিকে এগিয়ে এসে বলল, ‘অ্যাই রবিদা, এখনই বাড়ি যাবি? নাকি একটু বিলের মাঠে যাবি রে? আমার বন্ধুদুটোর সঙ্গে তোদের কলেজের ওই দুটো ছেলে বিলের মাঠে যাচ্ছে। যাবি তুই?’
এবার আমার ঘাবড়ে যাওয়ার পালা। বিলের মাঠে তো আমরা সিগারেট খেতে গিয়েছিলাম। এরা কী করতে যাবে!
ওকে বললাম, ‘কেন রে বিলের মাঠে কী?’
বুকুন আবারও গলা নামিয়ে বলল, ‘ধুত গাধা, বুঝিস না? ওরা প্রেম করে রে হাঁদা। অন্যদিন পারে না তো, আজ একটু তাই যাবে।‘
‘কী করতে যাবে ওখানে?’
‘তোকে বুঝতে হবে না। তুই যাবি তো চল। নাহলে বাড়ি চল। আমার বন্ধুদুটো আসলে একটু ভয় পাচ্ছে ছেলেদুটোর সঙ্গে যেতে। এদিকে প্রেম করবে, এদিকে আবার ন্যাকামি।‘
‘চল তাহলে।‘
ভেতরে ভেতরে উত্তেজনা আমার। বিলের মাঠে লোকচক্ষুর আড়ালে কী করে ওরা দুই জোড়া সেটা জানার আগ্রহও আছে, আবার ভয়ও আছে।
প্রথমে তিনজনে কাছাকাছিই হাঁটছিলাম। তারপরে একটু আগুপিছু হয়ে গিয়ে তিন জোড়া আলাদা হয়ে গেল। জোড়ায় জোড়ায় সবাই নিজেদের মধ্যে ফিসফিস করে কথা বলছে। অন্য মেয়েদুটোর মাথা নীচু। প্রেম করতে যাচ্ছে, আবার লজ্জাও পাচ্ছে।
সেদিক থেকে আমি আর বুকুন ঠিক আছি। আমরা তো আর প্রেম করি না!
ওকে বললাম, ‘শোন, বিলের মাঠে গিয়ে ওরা কী করবে রে?’
‘তোকে বলছি না গাধা প্রেম করতে যাচ্ছে। আমি আর তুই গল্প করব, হয়েছে?’
বেশী কথা বললাম না আর। আমি একটু আঁচ করতে পারছি কী ধরণের প্রেমের জন্য বিলের মাঠের আড়াল দরকার হতে পারে এদের।
বিলের মাঠে পৌঁছিয়ে বাকি চারজন দুদিকে চলে গেল একটু ঝোপের আড়ালে।
আমি আর বুকুন একটা ফাঁকা জায়গায় ঘাষের ওপরে বসে পড়লাম। ও যেন একটু বেশী কাছাকাছিই বসল আমার।
এটা সেটা গল্প হচ্ছিল, মাঝে মাঝে ওই দুই জোড়ার হাসির খিক খিক শব্দ পাচ্ছিলাম।
হঠাৎ বুকুন বলল ‘এই রবিদা। একটা মজা করবি? চল ঝোপের এপাশ থেকে ওদের একটু ঘাবড়ে দিই গিয়ে।‘
মজা পেলাম।
বুকুন উঠে দাড়িয়ে নিজের শাড়ি পড়া পেছন দিকটা একটু ঝেড়ে নিল। ঘাস- ধুলো লেগে গেছে একটু।
আমরা যেন কোনও অভিযানে যাচ্ছি, এইভাবে ও আমার হাতের বাজুটা ধরে দুই জোড়ার একটা জোড় যে ঝোপের পেছনে ছিল বলে মনে হল, সেদিকে নিয়ে গেল।
ঠিকই ধরেছে। এটার ওদিকেই আছে। মিনিট কয়েক কান পাতলেই ফিস ফিস শব্দ আসছে, আর কিছু অচেনা শব্দ।
বুকুন আমার গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে।
আমার দিকে তাকিয়ে মুখ টিপে হাসল একবার, তারপর ঠোঁটে আঙুল দিয়ে চুপ করে থাকতে বলল।
গলাটা একটু মোটা করে নিয়ে বলল, ‘এইইইই কেরে ওখানে!!!’
বলতেই ওদিক থেকে আসা সব শব্দ বন্ধ।
সেকেন্ড দশেক পরে ঝোপের ধার থেকে বুকুনের একটা বন্ধু উঠে দাঁড়িয়ে বলল, ‘এই শয়তান আড়ি পাতা হচ্ছে? তোর গলা চিনি না না?’
বুকুনের বন্ধুটার শাড়িটা দেখলাম বেশ অবিন্যস্ত। চুলটাও একটু যেন অগোছালো।
বুকুন বলল, ‘আর কতক্ষণ রে। বাড়ি চল এবার। আমি আর রবিদা তো বোর হচ্ছি।‘
পাশ থেকে উঠে দাঁড়াল আমাদের বিমল।
‘তোরা থাক না নিজের মতো। আমাদের পেছনে কাঠি করছিস কেন রে!’
ডিসটার্ব করায় বেশ রেগে গেছে মনে হল।
আমি বুকুনের হাত ধরে টানলাম।
ও হিহি করে হেসে বলল, ‘আচ্ছা বাবা আচ্ছা। দেখি আরেক জোড়া কী করছে।‘
ওই ঝোপ থেকে সরে এসে অন্য জোড়টা আর খুঁজতে দিলাম না বুকুনকে।
‘তুই কেন ওদের পেছনে লাগছিস রে। ছাড় না। আচ্ছা ওরা কী করছিল বল তো। তোর বন্ধুর শাড়িটা দেখলাম অগোছালো!’
আমার হাত ধরে মাটিতে বসালো বুকুন।
‘রবি দা তুই কি সত্যিই বুঝিস নি ওরা কি করছে না কি জেনেও বোকার মতো জিগ্যেস করছিস রে?’
‘আন্দাজ করছি, তবে ঠিক কী করছে জানি না।‘
বুকুন বলল, ‘দেখ -- ওরা এটা করছে....’
এত বছর পরে হঠাৎ সরস্বতী পুজোর সেই দুপুরটা মনে পড়ে গেল।
--
•
Posts: 72
Threads: 2
Likes Received: 27 in 19 posts
Likes Given: 0
Joined: Mar 2019
Reputation:
14
৩
‘কী রে রবিদা তোকে না বললাম প্যান্ডেলে দাঁড়া আসছি আমি। তুই এতটা চলে এসেছিস। আমি ভাবছি গেল কোথায় লোকটা!’
ওর কথায় সম্বিৎ ফিরল আমার।
সিগারেটটা ধরিয়ে সাইকেল নিয়ে হাঁটতে হাঁটতে একটু এগিয়ে এসেছি।
‘এই একটু হাঁটছিলাম আর কি, চলে তো যাই নি,’ নিজের খামখেয়ালীপনায় লজ্জা পেয়ে বললাম আমি।
‘বউদি, বাচ্চা এল না অঞ্জলি দিতে?’
‘ওরা তো আসেই নি আমার সঙ্গে। একা এসেছি।‘
‘ওহ। সে কি রে! পুজোর সময়ে ওদের কোথায় রেখে এলি!’
‘ওদের এই গ্রামের পুজো ভাল লাগবে না। শহরের ভীড়- পুজো দেখা, বাইরে খেতে যাওয়া – এসবই পছন্দ ওদের। তাই একাই এলাম। তা তোর খবর কি? তুই কোথায় থাকিস এখন? কতদিন পরে দেখা হল!’
‘হ্যাঁ রে। প্রায় কুড়ি বছর, না রে?’ ও জিগ্যেস করল।
‘হুম, বছর কুড়ি তো হবেই.. এম এস সি শেষ করে এম বি এ করে চাকরীতেই তো ঢুকেছি পনেরো বছর হয়ে গেল।‘
‘আবার তোর বিয়ে যখন হল, তখন তো আমি শ্বশুরবাড়ি চলে গেছি। মার কাছে শুনেছিলাম তোর বিয়ের খবর।‘
মাথাটা কয়েক সেকেন্ডের জন্য নামিয়ে নিল বুকুন। তারপর একটা বড় শ্বাস ছাড়ল যেন মনে হল। সোজাসুজি তাকাল আমার দিকে।
‘তুই তো সাউথ কলকাতায় থাকিস না রে? আমার এক দেওর ওদিকে ফ্ল্যাট কিনেছে।‘
‘তুই থাকিস কোথায় এখন? জামশেদপুর না কোথায় বিয়ে হয়েছিল না তোর?’ আমি জানতে চাইলাম।
‘হুম বিয়ের সময়ে ও জামশেদপুরে থাকত। বর তো টাটায় কাজ করে। তবে বছর তিনেক হল আমরা কলকাতাতেই। সল্টলেকে অফিস থেকে ফ্ল্যাট দিয়েছে রে।‘
‘ও তাই? সল্ট লেকে থাকিস? আমার তো অফিস সেক্টর ফাইভেই। দেখ কী কান্ড, রোজ যাতায়াত করি, কখনও দেখা হল না এত বছরেও!’
‘দেখা না হয়ে ভালই হয়েছে মনে হয়। যাক শোন কদিন থাকবি রে তুই?’
‘লক্ষ্মীপুজো অবধি তো আছি।’
‘আমাদের বাড়িতে আয়। বরের সঙ্গে আলাপ করবি। এক কাজ কর। এখনই চল। আজ বাড়িতে লুচি বেগুনভাজা হবে।‘
‘তোর বর অঞ্জলি দিতে এল না?’
‘না কাল আসবে ওরা সবাই। চল বাড়ি চল।‘
‘মা তো বোধহয় বাড়িতে কী সব ব্যবস্থা করছে। চল তুই বরং আমাদের বাড়িতে একটু চা খেয়ে যাবি।‘
হাঁটতে হাঁটতে আমরা বেশ অনেকটা চলে এসেছি। সেই যেখানে কাঁচা রাস্তায় বুকুনকে সাইকেলে নিয়ে যেতে গিয়ে পড়েছিলাম, সেই জায়গাটার কাছাকাছি প্রায়।
‘তোর মনে আছে রবিদা, আমাকে সাইকেল চালানো শেখাতিস এই রাস্তায়! আর একবার সাইকেল থেকে ফেলে দিয়েছিলি?’
‘হ্যাঁ। মনে পড়ছিল অঞ্জলি দিয়ে প্যান্ডেলের বাইরে এসে সিগারেট খাচ্ছিলাম যখন তখন ভাবছিলাম ওইসব,’হাসতে হাসতে বললাম বুকুনকে।
‘কত্ত পাল্টে গেছে না রে রবিদা জায়গাগুলো!’
‘হুম’
‘সেই বিলের মাঠ তো পুরো হাওয়া হয়ে গেছে জানিস, কত্ত বাড়ি হয়েছে ওখানে!’
কত্ত বলতে গেলে সেই ছোট থেকেই একটা বাড়তি ত লাগায় বুকুন।
‘হুম জানি। বছরে এক দুবার তো আসিই আমি। একবার তো বাড়ি করব বলে ওখানে জমি কিনব ভেবেছিলাম।‘
হি হি করে হাসতে হাসতে বুকুন বলল, ‘সে-ই বিলের মাঠে তুই জমি কিনবি ভেবেছিলি! হিহি... মনে আছে সরস্বতী পুজোর দিনটা?’
সাইকেলের হ্যান্ডেলে রাখা আমার হাতটায় আলতো করে ছুঁয়ে দিল বুকুন হাসতে হাসতেই।
‘ফাজলামি হচ্ছে?’ কপট রাগ দেখালাম ছোটবেলার সেই স্মরণীয় দিনটা মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য।
‘বাকি চারজন তো ঝোপের আড়াল থেকে বেরিয়ে এসে আমাদের দেখে অবাক। উফফফফফফফ,’ হাসতে হাসতে বলল বুকুন।
ছোটবেলার সেই দিনটার কথা মনে পড়ে যেতে এবার এত বছর বয়েসে এসে আমারই লজ্জা করতে লাগল। বুকুনের সেসব ব্যাপার কোনও দিনই ছিল না, এখনও নেই। ফাজলামি তে সে চিরকালই ওস্তাদ।
‘তুই যে কতটা আনাড়ি ছিলি, সেদিন বুঝেছিলাম। চুমুটাও ভাল করে খেতে পারিস নি। ইশশ।‘
‘আর তুই যেন ওসব কত করেছিলি তখন!’
আমরা যেন ফিরে গেছি সেই ছোটবেলায়।
আমাদের খেয়ালই নেই যে প্রায় পচিশ বছর পেরিয়ে গেছে সেইসবের পরে। আমি কলকাতায় কলেজ-দিল্লিতে ইউনিভার্সিটি, এম বি এ পড়া শেষ করে চাকরী পাওয়ার বেশ কয়েক বছর পরে বিয়ে করে সংসারী হয়ে গেছি প্রায় ৯ বছর হলো।
চাকরী পাওয়ার একটু তাড়াতাড়িই ছিল আমার। মনে মনে ভেবে রেখেছিলাম চাকরী পেয়েই মাকে বলব বুকুনের কথা।
কিন্তু এম এস সি পাশ করে এম বি এ-তে ভর্তি হওয়ার কিছুদিন পরেই খবর পেয়েছিলাম যে বিয়ে ঠিক হয়েছে বুকুনের।
পুরণো কথা ভাবতে ভাবতে কখন যে বাড়ির কাছে চলে এসেছি, খেয়াল করি নি।
বাড়ির রাস্তাটা দেখেই ওকে বললাম, ‘চল বাড়িতে চা খেয়ে যাবি। মা খুব খুশি হবে।‘
‘তুই চল না আমাদের বাড়িতে। বরের সঙ্গে আড্ডা দিতে দিতেই আমার লুচি ভাজা হয়ে যাবে।‘
‘চল তাহলে, তোর বরের সঙ্গে আলাপটা করে আসি’ বললাম আমি।
৪
ওদের বাড়িতে ঢুকতেই কাকিমার সঙ্গে দেখা। কাকিমা তো আমাকে প্রথমে চিনতেই পারেন নি। বহুদিন পরে দেখছেন, তার ওপরে আজকাল চোখেও নিশ্চই ভাল দেখতে পান না।
প্রণাম করে বললাম, ‘কাকি, আমি রবি। দত্ত বাড়ির রবি।‘
‘র—বি... বাবা কত বছর পরে দেখছি রে তোকে! কেমন আছিস বাবা?’
‘ভাল আছি। তুমি কেমন আছ গো?’
‘আর এই বয়সে থাকা না থাকা। তা কবে এলি রে তোরা?’
‘তোরা না, আমি একাই এসেছি। তোমার বৌমা নাতি কলকাতায় পুজোর আনন্দ ছেড়ে গ্রামে আসতে রাজী নয়।‘
কথার মাঝেই বাড়ির ভেতর থেকে বুকুন ওর বরকে ডেকে এনেছে।
আলাপ হল তার সঙ্গে। লুচি বেগুনভাজা চা দিয়ে আড্ডা ভালই জমেছিল।
বুকুনের বর এমনিতে বেশ আড্ডাবাজ লোক।
ঘন্টাখানেক আড্ডা মেরে বাড়ি ফিরলাম। কদিন থাকব, আবারও যাব বলে আসতে হল। ওদেরকেও বললাম বাড়িতে আসতে।
খেয়ে দেয়ে ঘুমিয়ে উঠে পুরণো বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা মেরে বাড়ি ফিরে ফোন করেছিলাম বউকে। তারা তখন হোল নাইট ঠাকুর দেখতে বেরচ্ছে।
তাড়াহুড়ো ছিল পিয়ালীর। সাজছে। তার মধ্যেই বললাম , ‘জানো তো আজ প্যান্ডেলে বুকুনের সঙ্গে দেখা হয়ে গেল! বলেছিলাম তোমাকে ওর কথা মনে আছে?’
পিয়ালীর গলার স্বরটা দেখলাম একটু পাল্টে গেল।
জিগ্যেস করল, ‘ও তোমার সেইইইই বুকুন? প্রথম প্রেম? বাহ। সে-ও গেছে বুঝি। বাহ। ভালই তো।‘
একটানা কথাগুলো বলে গেল। বুঝলাম অভিমান হয়েছে। বুকুনের সঙ্গে যে ছোটবেলায় সম্পর্ক ছিল, সে কথা পিয়ালীকে বলেছিলাম। মেয়েরা যে এসব ব্যাপার মনে রেখে দেয় এত বছর সে কি আর জানতাম! খচে গেল বউ!
‘ঠিক আছে এখন রাখছি। বেরতে দেরী হয়ে যাবে,’ বলেই কট করে কেটে দিল লাইনটা।
আমি ভাবলাম, ধুর, কী দরকার ছিল আমার বুকুনের কথা জানানোর ওকে!
বুকুনের সঙ্গে দেখা হওয়ার পর থেকে মুডটা বেশ ফুরফুরে লাগছিল, গেল নষ্ট হয়ে!
তাড়াতাড়ি খাওয়া দাওয়া সেরে ঘরে ঢুকে পড়লাম। সিগারেট ধরিয়ে মোবাইলটা হাতে নিলাম, মেইল, ফেসবুক, হোয়াটস অ্যাপ গুলো চেক করব বলে।
হোয়াটস্ অ্যাপে বেশ কিছু মেসেজ এসেছে – বেশীরভাগই বন্ধু আর অফিস কলিগদের বিভিন্ন গ্রুপের – পুজোর শুভেচ্ছা আর জোকস।
একটা অচেনা নম্বর থেকে মেসেজ এসেছে রোমান হরফে লেখা: ‘কী ঘুমিয়ে পড়েছিস?’
কার মেসেজ, সেটা বোঝার জন্য ডিসপ্লে প্রোফাইলটাতে আঙ্গুল ছোঁয়াতেই স্ক্রীণে ভেসে উঠল সকালে পুজোর প্যান্ডেলে দেখা হওয়া মাঝবয়সী বুকুনের ছবি।
সকালে আমার নম্বর নিয়ে নিয়েছিল ও, আমারই ওর নম্বরটা নেওয়া হয় নি।
বুকুনের ডি পি-টাতে আঙুল বোলাতে বোলাতে অনেক পুরণো কথা মনে পড়ে যাচ্ছিল।
সেই সরস্বতী পুজোর দুপুরে বিলের মাঠে যে কতক্ষণ বুকুন নিজের মুখের ওপরে আমার মাথাটা চেপে ধরে রেখেছিল, তা অবশ্য এতদিন পরে আর মনে নেই। কিন্তু সেদিন যে স্বাদ পেয়েছিলাম আমি ,সেটা এখনও কিছুটা মনে আছে – সেই প্রথম তো! ঘটনায় কিছুটা অবাক হয়ে গিয়েছিলাম প্রথম কিছুক্ষণ। তবে তারপরে আমিও বুকুনকে সাহায্য করার জন্য হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলাম, সেটা বেশ মনে আছে। আমাদের দুই জোড়া হাত তখন আর আমাদের কন্ট্রোলে ছিল না। এখন যেমন মোবাইলের হ্যান্ডস্ ফ্রি ব্যবহার করি, সেদিনও আমরা হ্যান্ডস ফ্রি হয়ে গিয়েছিলাম অনেকটা। অচেনা জায়গায় কি যে খুঁজছিলাম আমরা দুজন, সেটা তখনও ঠিকঠাক জানতাম না আমরা।
আমাদের সম্বিৎ ফিরেছিল ‘এ কি রে...’ শব্দগুলো কানে যেতে।
ঝোপের আড়াল থেকে আমাদের একজোড়া বন্ধু-বান্ধবী উঠে এসে আমাদের খোলা জায়গায় ওইভাবে থাকতে দেখে রীতিমতো শকড হয়েছিল।
আমরা ঝটপট উঠে দাঁড়িয়েছিলাম লজ্জা পেয়ে।
তাড়াতাড়ি উঠে দাঁড়িয়ে বুকুন নিজের বাসন্তী রঙা শাড়িটা থেকে ধুলো আর শুকনো ঘাসটাসগুলো ঝেড়ে নিয়েছিল কোনও কথা না বলে। ওর ফর্সা মুখটা যেন পড়ন্ত বিকেলের সূর্যের মতো লাল হয়ে গিয়েছিল।
উঠে দাঁড়িয়েছিলাম আমিও।
ঝোপের ওপাড়ে প্রায় ঘন্টাখানেক কাটিয়ে আসা বুকুনের বান্ধবীটি ফিক ফিক করে হেসে যাচ্ছিল তখনও। ওর সঙ্গে থাকা আমার বন্ধুটি বয়সে অনেকটাই বড় – বেশ কয়েকবার ফেল করে আমাদের সঙ্গে পড়ত। সে মিচকি হেসে বলল, ‘তা ঝোপের ওপাশে গিয়ে করলেই পারতি!’
বুকুনের মুখ তখনও লাল। আস্তে আস্তে বলেছিল, ‘রবিদা দেরী হয়ে যাচ্ছে। বাড়ি চল।‘ কথাগুলো বলেই ও এগিয়ে গিয়েছিল একটু।
বাকি দুজন ওখানেই থেকে গিয়েছিল – আরেক জোড়ার অপেক্ষায়।
সারা রাস্তা আর কোনও কথা বলে নি বুকুন। মাথাটা নামিয়ে নিয়ে রাস্তা দিয়ে তড়তড় করে হেঁটে ছিল আমার সাইকেলের পাশে পাশে।
সেদিন আর সাইকেলে ওঠার কথা বলি নি ওকে।
সামনে পরীক্ষা, কিন্তু সেদিন বিলের মাঠের কথা ভাবলেই মনটা হু হু করে ওঠে।
বুকুনের সঙ্গে দেখা যে একেবারে হয় না, তা না। কখনও আমার মা ওদের বাড়িতে কিছু খাবার বানিয়ে পাঠায়, আবার কখনও ওর মা পাঠায় ওকে - হাতে খাবারের কৌটো।
পুরণো দিনের সেইসব কথা ভাবতে ভাবতেই কখন যে হোয়াটস অ্যাপে লিখে দিয়েছি, ‘না রে ঘুমোই নি। জাস্ট খাওয়া হল।‘
মেসেজটা পাঠাতেই দুটো নীল রঙের টিক চিহ্ন দেখা গেল ওটার নীচে, ডান দিকে।
ওর ফোন নম্বরের নীচে দেখলাম অনলাইন বুকুন।
ওর নম্বরটা সেভ করে রাখাটা কি ঠিক হবে? পিয়ালী যদিও আমার মোবাইল ঘাঁটাঘাটি করে না.. তবুও! থাক! কী দরকার।
বুকুন ‘টাইপিং’ দেখা গেল। অর্থাৎ কিছু একটা মেসেজ লিখছে।
আমি নিজেই লিখলাম, ‘তোদের খাওয়া দাওয়া হয়েছে?’
ওর উত্তর এল, ‘কাল অঞ্জলি দিতে যাবি তো? নটায় অঞ্জলি কিন্তু পুরুত মশাই আজ বলে গেছে।‘
তারপরে আমার দ্বিতীয় মেসেজের উত্তর: ‘ছেলে আর মাকে খাইয়ে দিয়েছি। আর আমি এখনই খাব কি? আমার বর তো আড্ডা দিতে গেছে টাউনে। ওর বেশ কিছু বন্ধু আছে ওখানে।‘
‘ও আচ্ছা। তোর বর কি টাউনের ছেলে না কি?’
‘না। ওদের বাড়ি তো কলকাতাতেই। কিন্তু বিয়ের পরে কী করে যেন সব আলাপ হয়েছে এদের সঙ্গে। জানি না আমি ঠিক। বলে না সে সব। মদ খাওয়ার সঙ্গী এরা।‘
‘ওহো। ভালই তো। শ্বশুরবাড়ির পাড়ায় মদ খাওয়ার সঙ্গী থাকলে মন্দ কী?’
‘হ্যাঁ। তা আর মন্দ কী! শ্বশুর-শাশুড়ীর সামনে মাতাল হয়ে রাতবিরেতে ফিরে ঝামেলা করবে – খারাপ আর কি বল!’
‘ও। মদ খেয়ে ফিরে ঝামেলা করে না কি?’
‘বাদ দে ওসব কথা। এত্তদিন পরে দেখা হল তোর সঙ্গে। ওসব কথা তোকে বলতে ভাল লাগছে না এখন।‘
যেমন কথায়, তেমনই লেখাতেও – কতদিনকে ‘কত্তদিন’ লিখবেই বুকুন।
--
৫
আমি যখন কলকাতায় কলেজে পড়তে চলে গেলাম, তারপর থেকে ওর বিয়ে হয়ে যাওয়া পর্যন্ত যত চিঠি লিখেছিল বুকুন – সবগুলোতেই থাকত ওর এই কথাগুলো – ‘কত্তদিন’, ‘এত্তবড়’..
আরও কতকিছু যে লিখত মেয়েটা – সব চিঠি অনেকদিন রেখে দিয়েছিলাম। কিন্তু দিল্লিতে এম বি এ পড়ার সময়ে যেদিন মায়ের চিঠিতে জানতে পারলাম বুকুনের বিয়ে ঠিক হয়েছে, তার পরের দিন ক্লাসে না গিয়ে ফাঁকা হোস্টেলের বাথরুমে নিয়ে গিয়ে সঅঅঅব চিঠি জ্বালিয়ে দিয়েছিলাম।
ঘরে ফিরে বালিশে মুখ গুঁজে কাঁদতে কাঁদতেই কখন ঘুমিয়ে পড়েছিলাম খেয়াল নেই।
সেই সরস্বতী পুজোর বিকেল থেকেই মনে মনে বুকুনকে আমার জীবনের সঙ্গী করে নিয়েছিলাম।
কথাটা ওকে জানিয়েছিলাম আরও কিছুদিন পরে – আমার ফাইনাল পরীক্ষার পরে।
কথাটা শুনতে শুনতে আমার চোখের দিকে হাঁ করে তাকিয়ে ছিল ও, আর তারপরেই মাথাটা নামিয়ে নিয়ে আমার হাতে আলতো করে একটা ভালবাসার চিমটি কেটেছিল।
ওর মা আর আমার মা-ও বুঝত যে আমাদের দুজনের মধ্যে কিছু একটা আছে। আমার মা জানতে চেয়েছিল একবার – কিন্তু এড়িয়ে গিয়েছিলাম।
ওর মা কিন্তু জানত সবটাই। বুকুন সবই বলেছিল – শুধু বিলের মাঠের মতো গোপন ঘটনাগুলো বাদ দিয়ে।
কিন্তু প্রায় দুই দশক আগের গ্রামের সমাজ, তাই ওর মা তাঁর স্বামীকে কিছু জানান নি মেয়ের ব্যাপারে।
তাই যেদিন এম এ ফার্স্ট ইয়ারে পড়া মেয়ের বিয়ের সম্বন্ধ প্রায় পাকা করে এসেছেন বলে ঘোষণা করলেন অফিস থেকে ফিরে, সেদিন মা-মেয়ে প্রথমে হতবাক, আর তারপর বিস্তর কান্নাকাটি আর অশান্তিও করেছিল দুজনে। কিন্তু তার বাপকে নাকি টলানো যায় নি।
ছেলে ভাল চাকরি করে টাটায়..এমন ছেলে পাওয়া কঠিন .. তা ও কোনও দাবী নেই ছেলের বাড়ির!
এম এ পড়া শেষ করে কী করবে মেয়ে? চাকরী? হা হাহা.. ছেলেরাই চাকরী পাচ্ছে না.. আর মেয়েরা করবে চাকরী.. থাক তো বাড়িতে বসে.. আমার মতো ডেইলি প্যাসেঞ্জারি করলে খবরাখবর রাখতে দেশ-দুনিয়ার!!!!!
এ সবই নাকি গোটা পাড়াকে জানিয়ে জানিয়ে বলেছিলেন বুকুনের বাবা।
আর ওই ঝামেলা চলেছিল বেশ কয়েক দিন ধরে।
ওদের পড়শিরাই জানিয়েছিল আমার মা কে। আমার মায়ের কানে এসেছিল পড়শিদের কাছ থেকে।
বুকুন অবশ্য একটা শব্দও জানায় নি আমাকে। হঠাৎই হারিয়ে গিয়েছিল।
মায়ের কাছে চিঠিতে জিগ্যেস করেছিলাম কয়েকবার.. প্রথমে একটু এড়িয়ে গিয়েছিল, কিন্তু তারপরে বলেছিল সবটা।
পুরনো সেই সব কথা ভাবতে ভাবতে হঠাৎই খেয়াল করলাম আরও বেশ কয়েকটা মেসেজ এসেছে বুকুনের।
‘আচ্ছা, তোর তো ছেলে, না রে রবি দা?’
কত্ত বড় হয়ে গেছে নিশ্চই! কোন ক্লাস রে?’
‘নিয়ে এলে পারতি বৌদি আর ছেলেকে’
আমি একটা মেসেজেই জবাব দিলাম: ‘ছেলের ক্লাস টু। ওদের গ্রাম ব্যাপারটাই ভাল লাগে না.. আর পুজোর সময়ে কলকাতা ছেড়ে আসবে?’
ও জবাব দিল, ‘আমি প্রতিবছর আসি। পালিয়ে আসি আসলে রোজকার জীবন থেকে।‘
‘পালিয়ে আসিস কেন?’ লিখলাম আমি।
‘বললাম না বাদ দে ওসব কথা। তোকে বলতে ভাল লাগছে না এখন রে।‘
হঠাৎই লিখল, ‘তোর সঙ্গে কথা বলতে ইচ্ছে করছে। একা আছিস রবিদা? ফোন করব?’
এর জবাবে কিছু না লিখে আমি-ই ফোন করলাম। রাত প্রায় এগারোটা তখন – পরস্ত্রীকে সেই সময়ে ফোন করা উচিত কী না সেটা না ভেবেই।
একবার রিং হতেই ধরল সে।
ঠিক যেভাবে কলকাতা বা দিল্লিতে পড়ার সময়ে আমি ফোন করলেই একবার রিং হতেই ফোনটা তুলে হ্যালো বলত বুকুন।
তখন মোবাইল তো দূর অস্ত, বাড়িতে ফোনও ছিল না আমাদের গ্রামের কারও বাড়িতে। টাউনে বুকুনের এক বান্ধবীর বাবা ব্যবসায়ী। তার ফোন ছিল।
অনেক দিন আগে থেকে চিঠি লিখে ও জানাত যে কোন সময়ে ও ওই বান্ধবীর বাড়িতে যাবে আর আমরা একটু কথা বলে নিতে পারব।
তখন রাত এগারোটার পরে এস টি ডি চার্জ চারভাগের এক ভাগ হয়ে যেত.. কিন্তু দিনের বেলা ফোন করতে আমার পকেট থেকে ভালই টাকা গলে যেত। তাই তিন চার মাস পরে হয়তো মিনিট দুয়েকের কথাতেই সন্তুষ্ট থাকতে হত আমাদের।
ফোন করার দিন-সময় জানিয়ে রাখতাম চিঠি দিয়ে। সেই মতো ও বান্ধবীর বাড়িতে চলে যেত।
কয়েকবার যে চিঠি সময়মতো না পৌঁছনয় বা বান্ধবীর বাড়িতে কোনও অসুবিধা থাকায় এরকমও হয়েছে, আমি ফোন করেছি, অন্য কেউ ফোন তুলেছে। আর টাকা গচ্চা গেছে আমার।
তবে যখন ফোনে পেতাম আমরা দুজনে দুজনকে, তখন কথাবার্তা শেষ হতো একটা ‘মুআ’ ‘মুআ’ শব্দে.. খুব আস্তে আস্তে বলতে হত সেটা – হোস্টেল থেকে বেশ কিছুটা দূরের এস টি ডি বুথটা একেবারে রাস্তার ওপরে.. আর হয়তো আমার পরে আরও কয়েকজন অপেক্ষা করছে ফোন করার জন্য। আর বুথে বসে থাকতেন যে মাসীমা, তাঁর কানেও যাতে ওই শব্দগুলো না যায়, সেটাও খেয়াল রাখতে হত।
তবে সেটাই আমাদের কাছে তখন অনেক পাওয়া.. পরের ছুটিতে বাড়ি আসার আগে হস্টেলের কমন বাথরুমের বন্ধ দরজার ভেতরে তা দিয়েই কাজ চালাতে হত আমাকে!
ছুটিতে বাড়ি এলে অবশ্য সেই সব না-পাওয়া ভাল করেই পুষিয়ে দিত বুকুন – বিলের মাঠে – ঝোপের পেছনে। কোনও কার্পণ্য করত না ও – তবে যেটা করতে আমার খুব ইচ্ছে করত, সেটা কখনও করতে দেয় নি।
ওর এক কথা – ‘এখন না বউভাতের রাতে হবে। সেদিনের জন্য কিছু তো বাকি রাখ।‘
সেই রাত আমাদের দুজনের জীবনে এসেছিল ঠিকই, কিন্তু বউভাতের রাতে বিছানায় আমাদের দুজনের বিছানাতেই অন্য মানুষ ছিল।
‘এত্তদিন পরে.. যাহ, আমিও তো তোর মতো এত্ত বলে ফেললাম..’, খুব চাপা স্বরে কথাগুলো বললাম বুকুনকে ওর মোবাইলে।
এখন আর এস টি ডি বুথ থেকে বান্ধবীর বাড়ির ফোনে নয় – দুজনেই কথা বলছি একান্ত গোপনীয়তায় – রাতের আঁধারে – যখন আমাদের দুজনের বউভাতের রাতের দুই পার্টনার কেউই কাছে নেই।
ও পাশ থেকে খিল খিল করে হেসে উঠল বুকুন.. ‘বল কত্তদিন পরে ফোনে কথা হচ্ছে.. সেই আগের মতো চিঠি দিয়ে বন্ধুর বাড়িতে গিয়ে ফোন ধরে তিন মিনিট হওয়ার আগেই কথা শেষ করতে হবে না এখন’ বলেই আবার হাসি। ওর গলার স্বরটা যদিও এখনও চাপা।
‘সকালে তোকে দেখার পর থেকেই খুব মনে পড়ছে রে রবিদা সেইসব কথা।‘
কয়েক সেকেন্ড চুপ করে থাকলাম।
‘সব কিছুই কি আার নিজেদের চাওয়া পাওয়া মতো হয়ে রে।‘
সেই ছোটবেলা থেকে শেষবার বিলের মাঠে বসে যেদিন চুমু খেয়েছিলাম বুকুনকে – এম এস সি সেকেন্ড ইয়ারের পড়ার সময়ে পুজোর ছুটিতে বাড়ি থেকে ফিরে যাওয়ার আগের দিন বিকেলে - সেদিন পর্যন্ত আমি আর ও তুই তোকারি-ই করে এসেছি আর ও আমাকে চুমু খেতে খেতেও রবিদা বলেই ডেকেছে।
একবার জিগ্যেস করেছিলাম বিলের মাঠে দুষ্টুমি করার সময়ে।
‘আচ্ছা, বিয়ের পরে কি আমাকে সবার সামনে রবিদা বলে ডাকবি তুই?’
‘ইইইশশশ.. বদমাশ.. ..’ বুকে কয়েকটা কিল মেরেছিল বুকুন।
‘তোর জেঠতুতো বউদি যা শয়তান না.. পম্পিদি.. তোর মায়ের কাছ থেকে জেনেছে বোধহয় কিছু.. আমাকে সেদিন কলেজ থেকে ফেরার সময়ে ধরেছিল.. বাড়ি যাওয়ার আগে কী বলে জানিস?? ইইইই বাবাআআআ.. আমি তো লজ্জায় মরেই যাই!’ একটানা বলে গেল বুকুন।
সেই সরস্বতী পুজোর দুপুরে বিলের মাঠের ব্যাপারটার পর থেকেই বুকুন শব্দটা মনে এলেই ‘বুক’ শব্দটাও আমার মাথায় চলে আসত। তা বুকুন যখন বলছিল আমার জেঠতুতো বউদির সঙ্গে ওর কথোপকথোন, তখন বুকুনের সঙ্গে মিল খাওয়া শব্দটা শরীরের যে জায়গাকে বোঝায়, সেখানেই ঘুরছিল আমার হাত দুটো। তখন আমরা দুজনেই এসব ব্যাপারে সপ্রতিভ হয়ে উঠেছি।
সেই অবস্থাতেই জিগ্যেস করেছিলাম, ‘বউদি আবার কি বলল?’
‘বলে কি.. তুই আমার দেওরটাকে তো রবিদা বলে ডাকিস.. তারমানে তুই ওর বোন? আর বোনের সঙ্গে করলে কী বলে জানিস তো.. .. বান.. দিয়ে গালিটাও শুনিয়ে তোর বউদি বলেছিল এবার থেকে আমার দেওরটাকে ওই কথাটা বলেই ডাকব .. আড়ালে.. খুব হেসে পালিয়েছিল তোর বউদি... আমি তো .. মানে.. ইশশ শশ বউদি কী করে কথাগুলো বলল রে.’ আমার হস্তশিল্পের আঘাতের মধ্যেই নিজে নিজে বিলের মাঠে বসে কথাগুলো বলেছিল বুকুন।
‘এ বাবাআআআআ.. আমি বাঞ্চোৎ?’ আমার মুখ থেকে বেরিয়ে গিয়েছিল কথাটা।
বেশ জোরে ঘুষি মেরেছিল বুকুন আমার বুকে।
তবে আমার আর বাঞ্চোৎ হওয়া হয় নি।
Posts: 72
Threads: 2
Likes Received: 27 in 19 posts
Likes Given: 0
Joined: Mar 2019
Reputation:
14
-- ৬ --
বেশ কিছুক্ষণ কথা হয়েছিল সে রাতে। তারপরে হঠাৎই বুকুন বলেছিল, ‘শোন রবিদা, মনে হচ্ছে ও এসে গেছে। এখন রাখি। কাল প্যান্ডেলে দেখা হবে। কাল কিন্তু ও থাকবে সঙ্গে।‘
‘আচ্ছা’ বলে ফোনটা রেখে দিয়েছিলাম। অনেকক্ষণ ঘুম আসে নি সপ্তমীর রাতে। তারপরে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম, খেয়ালই নেই। পরের দিন সকালে ঘুম ভেঙ্গেছিল মায়ের ডাকে। চা খেতে খেতে হোয়াটস্ অ্যাপ চেক করে নিয়েছিলাম – বউ একটা ছবি পাঠিয়েছে রাত তিনটের সময়ে – আত্মীয়-বন্ধুদের সঙ্গে তোলা সেলফি – কোনও একটা পুজো প্যান্ডেলের সামনে তোলা! ভালই এঞ্জয় করছে রাতভর!
যার মেসেজ আশা করেছিলাম – তার কাছ থেকে সেই কাল রাতের পরে আর কোনও মেসেজ নেই।
স্নানটান সেরে তৈরী হয়ে নিয়েছিলাম প্যান্ডেলে যাব বলে। মা আশপাশের বাড়ির মাসিমা-কাকিমাদের সঙ্গে রিক্সা করে একটু আগে চলে গেল। আমি পড়ে বেরলাম সাইকেল নিয়ে।
অষ্টমীর অঞ্জলি শুরু হতে তখনও দেরী আছে। পাড়ার বেশ কিছু বন্ধু বান্ধব – তাদের বউ ছেলে মেয়ে নিয়ে এসেছে অঞ্জলি দিতে। কাল এদের কয়েকজনের বাড়ি গিয়ে আড্ডা দিয়ে এসেছি। বাকি কয়েকজনও জেনেছে যে আমি এসেছি। গ্রামে এলেই ওদের বাড়ি যাই, তাই বউ-ছেলে-মেয়েদের সঙ্গেও পরিচয় আছে আমার।
ওদের সঙ্গে আড্ডা দেওয়ার ফাঁকেই দেখলাম বুকুনের বর আসছে ছেলে আর শাশুড়িকে নিয়ে। বুকুনকে আগেই দেখে নিয়েছি – কালকের মতোই স্টেজের ওপরে পুজোর কাজে ব্যস্ত।
দূর থেকে দেখে মনে হল ওর শাড়িটা বোধহয় কমলা রঙের পাড় দেওয়া সাদা শাড়ি। সঙ্গে বোধহয় কমলা ব্লাউজ। আগের দিনের মতোই আঁচলটা কোমরে গুঁজে রাখা। আমাকে বোধহয় এতদূর থেকে খেয়াল করে নি।
বুকুনের বরকে আসতে দেখে আমার কয়েকজন বন্ধু বলল, ‘ওই যে আসছে মালটা!’ আমার দিকে তাকিয়ে এক বন্ধু বলল, ‘রবি, এ কে জানিস তো? বুকুনকে মনে আছে তোর? ওর বর আর ছেলে। একেবারে লুচ্চা একটা। প্রতিবার গ্রামে এসে একটা না একটা ক্যাচাল বাধায় মাল খেয়ে।‘
আমার আর বুকুনের সম্পর্কটা এরা সবাই জানত। বুকুনের বিয়ে হয়ে যাওয়ার পর থেকে তাই এতগুলো বছরে ওর নামটাও আর আমার সামনে বলত না ওরা। কিন্তু ওর বরকে আসতে দেখে ওদের নিজেদের তৈরী নিয়মই ভাঙ্গল।
‘ও তাই নাকি? কাল হঠাৎই প্যান্ডেলে দেখা হয়েছিল বুকুনের সঙ্গে। ওদের বাড়ি নিয়ে গিয়ে বরের সঙ্গে আলাপও করিয়ে দিয়েছে। কথা বলে মনে হয় নি তো যে ক্যাচাল করার লোক!’বললাম আমি।
‘ও প্রথম দিনেই দেখা হয়েছে তোর সঙ্গে?’ এক বন্ধু ফাজলামি করল।
আরেক জন বলল, ‘আরে জানিস না। গ্রামে এলেই কিছু না কিছু ঝামেলা করবেই। একবার আমার সঙ্গে হয়েছিল, দিয়েছিলাম একটা থাবড়া।’
পাশ থেকে ওর বউ বলল, ‘ভদ্রলোক এমন ভাবে তাকিয়ে থাকেন না মেয়েদের দিকে, গা জ্বলে যায়। যেন জীবনে মেয়ে দেখে নি – গিলে খায় একেবারে। পাড়ার জামাই বলে কিছু বলতেও পারি না। আপনার বন্ধু সেটা বলতে গিয়েছিল বলেই তো ঝামেলা শুরু হল।‘
আমি বললাম, ‘ভদ্রলোক তো খুব ভাল চাকরী করেন, উঁচু পোস্টে!’
বন্ধুদের মধ্যে কে একজন বলল, ‘তাতে কী হয়েছে?’
এইসব কথাবার্তার মধ্যেই বুকুনের বর আমাদের দিকে তাকাতে তাকাতেই প্যান্ডেলের দিকে আসছিল। বন্ধুদের সঙ্গে আমাকে দেখে আর এদিকে এল না। গালে চড় খাওয়ার কথা মনে পড়ে গেল বোধহয়!
বুকুনের মা বোধহয় খেয়াল করেন নি আমাকে।
অঞ্জলি শুরু হল – আজ ভীড় বেশি কালকের থেকে। বন্ধু আর তাদের বউরা কেউ কেউ এগিয়ে গেল ভেতরে – অঞ্জলি দিতে।
শেষের দিকে আমরা বাকিরা গেলাম। আজ আর স্টেজের বেশি কাছাকাছি যাই নি। সঙ্গে বন্ধুরা আছে, বুকুনের বরও থাকতে পারে কাছে পিঠে। বুকুন আমার সঙ্গে কথা বললে ওরা কি ভাববে!
আগের দিনের মতোই হাতে হাতে ফুল-বেলপাতা দিতে দিতে আমার সঙ্গে চোখাচুখি হল ওর। কিন্তু আজ আর কিছু বলল না। দূর থেকে ঠিকই আন্দাজ করেছিলাম – সাদা শাড়ির পাড়টা গাঢ় কমলা রঙের – সঙ্গে কমলা ব্লাউজ। বেশ ঘেমে গেছে বোঝাই যাচ্ছে।
পাশ থেকে এক বন্ধু কনুই দিয়ে গোঁতালো, ওর দিকে তাকিয়ে দেখি ঠোঁট টিপে হাসছে। আমি রিঅ্যাক্ট করলাম না!
অঞ্জলির পরে বাইরে এসে আবার কিছুক্ষণ গুলতানি চলল। মা-মাসিমা-কাকিমারা এখনও ভেতরেই বসে আছে পুজো দেখছে।
দেখি বুকুনের বর আমার দিকে এগিয়ে আসছে। যতই বন্ধু আর ওদের বউরা এই লোকটা সম্বন্ধে কিছুক্ষণ আগে খারাপ কথা বলে থাকুক – কালকেই মাত্র আলাপ হয়েছে – আড্ডাও হয়েছে, তাই আমিও মুখে একটু হাসি টেনে বললাম, ‘কি খবর? অঞ্জলি দেওয়া হল?’
‘হ্যাঁ। তো এখন কি প্ল্যান তোমার?’ জিগ্যেস করল বুকুনের বর। কালকে আলাপের একটু পরেই ও বলেছিল, ‘আমি না বেশিক্ষণ আপনি-টাপনি বলতে পারি না। আর তুমি তো বউয়ের বন্ধু, তাই ছোটই হবে – তুমি বলছি.. কেমন?’ আমি আপত্তি করি নি!
জবাব দিলাম, ‘কোনও প্ল্যান নেই। এদিক ওদিক ঘুরব – আড্ডা দেব – আর কি!’
‘দুপুরে ফাঁকা আছ?’
‘কেন?’
‘মাল টাল খাও তো নাকি? বসবে নাকি?’
‘দুপুরবেলা? না না! আর আমি সেরকম খাই না.. মাঝে সাঝে পার্টিফার্টিতে গেলে খাই একটু। তবে গ্রামে এসে দুপুরে খাব না দাদা।‘ স্পষ্ট করেই বললাম।
‘তাহলে রাতে বসি চলো। আমার কিছু বন্ধুবান্ধব আছে টাউনে। ওখানে যাব। তোমার বন্ধুও যাবে আজ... আড্ডা হবে। এখন চলি বুঝলে?’
বুকুনও কি মদ খায় নাকি? সেই প্রশ্নটা আর করা হল না! এটাও বলা হল না যে আমি বুকুনের বর আর তার বন্ধুদের সঙ্গে বসে মদ খেতে রাজি কী না! ওর বর ছেলে আর শাশুড়িকে নিয়ে এগিয়ে গেল রাস্তার দিকে।
টুং করে একটা মেসেজ এল মোবাইলে। বার করে দেখি একটা সেভ না করা নম্বর থেকে মেসেজ। কাল রাতেই মাত্র এই নম্বরটা চিনেছি আমি।
লেখা আাছে, ‘চলে যাস না রবিদা’
বন্ধুরা আর ওদের বউয়েরা কয়েকজন বাড়ির দিকে পা বাড়িয়েছে। আমাকে জিগ্যেস করল, ওদের কারও বাড়ি যাব কী না। মা আছে পুজো প্যান্ডেলে – সেকথা বলে ওদের কাটিয়ে দিলাম।
পুজোর অঞ্জলি শেষ হয়েছে। প্যান্ডেল বেশ ফাঁকা হয়েছে। মা আর মাসিমা-কাকিমারা এগিয়ে আসছে। রিক্সা করে বাড়ি যাবে।
আমি বললাম ‘পরে যাব একটু। তুমি এগোও।‘
আরও কিছুক্ষণ এদিক ওদিক করার পরে আবারও সেই নাম দিয়ে সেভ না করা নম্বর থেকে মেসেজ। ‘প্যান্ডেল থেকে একটু এগিয়ে গিয়ে দাঁড়া। আমি আসছি।‘
সাইকেলটা নিয়ে হাঁটতে হাঁটতে একটু এগিয়ে গেলাম।
বুকুন বোধহয় চাইছে না সবাই দেখুক যে ও আমার সঙ্গে হেঁটে বাড়ি ফিরছে পর পর দুদিন।
মিনিট পাঁচেক পরেই হন্তদন্ত হয়ে এল ও।
‘কী রে রবি দা। জেঠিমা চলে গেছে?’
ও আমার মা কে জেঠিমা বলে ছোট থেকেই।
‘হুম। এই তো গেল।‘
‘তুই কোথাও যাবি এখন?’
‘না । কেন রে?’
‘আমার এখন বাড়ি যেতে ইচ্ছে করছে না। বাড়ি গেলেই অশান্তি আছে একটা। কোথাও বসবি একটু?’
‘আমাদের বাড়িতে চল,’ বললাম আমি।
‘বাড়িতে? জেঠিমা কী মনে করবে!’
‘কেন কিছু মনে করবে? আমি তো কাল বললাম যে তোদের বাড়ি গিয়েছিলাম!’
‘ও বলেছিস?’
‘চল তাহলে’
‘সাইকেলে উঠবি নাকি?’ হঠাৎ হেসে বললাম।
‘ধ্যাৎ। বদমাশ।‘
ও এইভাবেই বদমাশ কথাটা বলত ছোটবেলায় – বিলের মাঠে যখন আমরা দুজনে খুব ঘণ হয়ে বসে থাকতাম, অথবা আমার সাইকেলের রডে চাপিয়ে যখন ফিরতাম সন্ধ্যেবেলার অন্ধকার, ফাঁকা রাস্তা দিয়ে, সেইসময়ে।
কলেজ-ইউনিভার্সিটির ছুটিতে এসে বুকুনকে নিয়ে সাইকেলে ঘোরাটা আমার ফেভারিট পাসটাইম ছিল।
বুকুনও আমার ছুটির সময়গুলো নিজের কলেজ-পড়াশোনায় ফাঁকি দিয়ে আমার সঙ্গে ঘুরত। দুজনের বাড়ির মায়েরাই কখনও আপত্তি করে নি। তবে তারা তো আর জানত না যে বিলের মাঠে আমরা কী করি, বা সাইকেলে চাপিয়ে নিয়ে আসার সময়ে কী করি! তাহলে যতই কলেজ-ইউনিভার্সিটিতে পড়ি না কেন, মেরে বাড়ি থেকে বার করে দিত হয়তো দুজনকেই।
অত বছর আগে গ্রামের উঠতি বয়সের মেয়েদের মধ্যে স্কার্ট পড়ার চল ছিল না, সালোয়ার পড়ত অনেকে। কিন্তু বিলের মাঠে যেতে হলে আমি বুকুন শাড়ি পড়ে আসত।
প্রথমবার কলেজ থেকে ছুটিতে যখন এসেছিলাম, প্রথম বিকেলেই বিলের মাঠে গিয়েছিলাম দুজনে। পড়ন্ত বিকেল তখন।
বুকুন একটা গাঢ় সবুজ রঙের সালোয়ার কামিজ পড়ে এসেছিল।
একটা গাছে আড়ালে বসেই ওর মুখটা টেনে নিয়েছিলাম নিজের দিকে। ও আঁকড়ে ধরেছিল আমার কাঁধদুটো।
সেদিনই আরও কিছুটা পড়ে ওর ওই সালোয়ার নিয়ে ঝামেলায় পড়েছিলাম আমি। ফিতে খুলতে গিয়ে জট পাকিয়ে ফেলেছিলাম।
অনেকক্ষণের চেষ্টায়, তড়বর তড়বর করে অনেক বকাঝকার পরে যখন গিঁটটা ও নিজেই ছাড়াতে পেরেছিল, তখনই উঠে পড়ে বুকুন বলেছিল, ‘রবিদা বাড়ি চল। ভাল্লাগছে না আজ।‘
অবাক হয়ে আমিও উঠে দাঁড়িয়েছিলাম। সেদিন সাইকেলেও ওঠে নি। পাশাপাশি হাঁটতে হাঁটতে প্রায় কোনও কথা না বলেই বাড়ি চলে এসেছিলাম।
কয়েকবার জিগ্যেস করেছিলাম, ‘তোর হলটা কী?’
‘কিছু না। একটা জিনিষও যদি ঠিক মতো করতে পারিস।‘
চুপ করে গিয়েছিল ও।
আমি পড়েছিলাম আতান্তরে – সালোয়ারের ফিতেতে যদি অনভ্যস্ত হাতে গিঁট পড়ে যায়, আমি কী করব!!
বুকুনের মেজাজ দেখে আর সেদিন কথা বাড়াই নি।
চলে যাওয়ার আগে শুধু বলেছিল, ‘কাল টাউনে সিনেমা দেখতে যাব। কলেজ যাওয়ার পথে টিকিট কেটে রাখব। ম্যাটিনি শো। সময়মতো পৌঁছে যাস গাধা।‘
বুকুন চলে গিয়েছিল।
পরের দিন কলেজ পালিয়ে ও সিনেমা দেখতে গিয়েছিল। শাড়ি পড়েছিল ও সেদিন। তারপর থেকে আমি এলে ও শাড়ি-ই পড়ত।
এই যে কাল আর আজ – দুদিন ওর সঙ্গে দেখা হল – সেই শাড়িতেই!
আজ বুকুন যে গাঢ় কমলা রঙের ব্লাউজটা পিঠের দিকে বেশ কিছুটা কাটা। আমার বন্ধুদের বউরাও আজকাল সালোয়ার কামিজ বা কেউ কেউ বেড়াতে গেলে জিনস টিন্সও পড়ে – ফেসবুকে ছবি দেখেছি। তবে গ্রামে থাকলে এতটা পিঠ খোলা ব্লাউজ পড়তে চট করে কাউকে দেখি নি।
বুকুন তো এখন আর গ্রামের মেয়ে না। সে জামশেদপুর ঘুরে কলকাতার সল্টলেকবাসী।
টুকটাক কথাবার্তার মধ্যেই ও জিগ্যেস করেছিল, ‘হ্যাঁ রে রবিদা প্যান্ডেলের বাইরে আমার বর তোকে কী বলছিল রে?’
আমি ওর প্রশ্নের জবাব না দিয়ে কিছুক্ষণ আগে শোনা বন্ধু আর ওদের বউদের কাছে শোনা কথাগুলো বললাম।
‘তোর বর কি গ্রামে এসে মদ খেয়ে ঝামেলা করে নাকি? শুনলাম!’
‘সে অনেক কথা রে রবিদা। এই জিনিষ এতগুলো বছর ধরে সহ্য করতে বাধ্য হচ্ছি। আরও অনেক কিছুই করতে হয় আমাকে, যেগুলো তোকে বলতে পারব না!’
‘যেমন?’
‘থাক না রবিদা। এত্তবছর পরে দেখা হল। পুজোর কটা দিনের আনন্দ আর মাটি করে দিস না প্লিজ।‘
চুপ করে গেলাম। কখনই আমি বুকুনের ইচ্ছা-অনিচ্ছার ওপরে নিজের মত চাপাই নি। এখনও ও যখন বলতে চাইছে না, তখন আর কথা বাড়ালাম না আমিও।
‘দুপুরবেলায় মদ খাওয়ার কথা বলছিল তোর বর। আমি না করে দিয়েছি। তখন আবার সন্ধেবেলায় টাউনের বন্ধুদের আড্ডায় আমাকে যেতে বলল। তুই-ও নাকি যাবি?’
‘ইশশ... কী শুরু করেছে কী লোকটা! ছি ছি!’ মুখে আঁচল চাপা দিল বুকুন।
‘তুই ও ওর বন্ধুদের সঙ্গে মদের পার্টিতে যাস নাকি?’
বাড়িতে আসার আগে পর্যন্ত ওর মুখ দিয়ে আর একটা কথাও বেরয় নি।
বুকুনকে দেখে মা একটু অবাক হল – তবে কয়েক সেকেন্ডের জন্য।
তারপরেই বুকে জড়িয়ে ধরে বলল, ‘কতদিন পরে এলি রে মা। আয় বোস।‘
--
-- ৭ --
‘কেমন আছ জেঠিমা তুমি?’ মায়ের গলা জড়িয়ে ধরেই জিগ্যেস করেছিল বুকুন।
‘আর আমার থাকা না থাকা, তোর খবর বল। জামাই, নাতি সব কেমন আছে? এসেছে তো ওরা? তোর সঙ্গে তো এই পুজো প্যান্ডেলেই দেখা হয় বছরে একবার করে। বাড়িতে তো আর আসিস না সেই কতবছর!’
কতবছর পরে যে বুকুন আমাদের বাড়িতে এল, সেই হিসাব আমি, মা, বুকুন – তিনজনেই জানি। কিন্তু কেউই আর সেই হিসাবটা বলল না মুখ ফুটে।
ওর বাবার চাপে পড়েও বিয়েতে মত দেওয়ার আগে প্রথমে ওর মা দুতিন বার, পরে ও নিজেই নাকি একবার এসেছিল এ বাড়িতে – আমার মায়ের কাছে।
ওর মা নাকি আমার মাকে বোঝানোর চেষ্টা করেছিল যে আমি যেন খুব তাড়াতাড়ি একটা ভাল চাকরী যোগাড়েরর চেষ্টা করি। ওর বাবাকে বুঝিয়ে শুনিয়ে মাস-দুতিনেক পিছিয়ে দিতে পারবে বুকুনের মা। ততদিনে আমি যদি চাকরী পেয়ে যাই, তাহলে বুকুনের বিয়েটা যে আমার সঙ্গেই দেবে ওরা, সেটাও বলেছিল ওর মা।
আমাকে পড়াশোনা শেষ না করে চাকরী যোগাড়ের চেষ্টার কথায় রাজি হয় নি আমার মা। তাই আমাকে কিছু জানায়ও নি তখন।
এ সবই অনেক পরে মায়ের কাছ থেকে শুনেছিলাম আমি।
না বুকুন, না ওর মা – আমাকে কিছুই জানায় নি।
শেষে নাকি বুকুন নিজেও এসেছিল – তবে সেটা আমাকে পড়া ছেড়ে চাকরী যোগাড়ের কথা বলতে না!
মায়ের কাছে ক্ষমা চাইতে।
খুব নাকি কেঁদেছিল সেদিন মায়ের কাছে বসে।
দুই মা-ই তো আসলে আমাদের সম্পর্কটা জানত খুব ভাল করে – বিশেষত বুকুনের মা। সেই যখন আমি কলেজে পড়তে কলকাতা চলে যাওয়ারও আগে ওদের বাড়িতে গেলেই বুকুনদের বাড়ির পিছনে পুকুর পাড়ে বসে বসে গল্প করতাম ঘন্টার পর ঘন্টা – তখন থেকেই ওর মা কিছু্ একটা আন্দাজ করেছিল।
নজরও রাখত বাড়ির জানলা দিয়ে আমাদের ওপর।
সেখানেই প্রথম ওর মায়ের কাছে ধরা পড়ে যাই আমরা – ঘটনাটা বিলের মাঠে আমাদের ‘প্রথম দিন’-এর বেশ কয়েক মাস পরের।
অন্য দিনের মতোই দুপুর বেলা খাওয়া দাওয়া করে ওদের বাড়িতে গিয়েছিলাম গল্প করতে। আমাদের গ্রামে কারেন্ট ছিল সবার বাড়িতেই, কিন্তু সেই সময়ে বারে বারেই লোডশেডিং হত। ওদের ঘরে বসে বসে গল্প করতে করতে কারেন্ট চলে গিয়েছিল। গরম কাল, তাই বুকুন আর আমি ওর মা কে বলে পুকুরপাড়ে গিয়েছিলাম গল্প করতে।
জায়গাটায় বেশ ফুরফুরে হাওয়া দিত – চারদিকে অনেক গাছ – আম, কাঁঠাল, কলা। ঘন্টা কয়েক গল্প করে বাড়ির দিকে আসার সময়ে আমি আলতো করে বুকুনের হাত ধরেছিলাম। ও ঝট করে চারদিকে তাকিয়ে নিয়েছিল যে অন্য কেউ দেখছে কী না, তারপরেই আমার হাতটা হাল্কা করে টেনেছিল – পাশেই ছিল একটা বড়সড় আমগাছ। ওটার চওড়া গুঁড়িতে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে আমাকে নিজের দিকে টেনে নিয়েছিল বুকুন। বেশী টানতে হয় নি আমাকে।
আমরা ভেবেছিলাম মোটাসোটা গুঁড়িটার আড়ালে আমাদের ওই সেকেন্ড দশেক হঠাৎ লুকিয়ে পড়া কারও চোখে পড়বে না।
কিন্তু কে জানত যে ঠিক সেই সময়েই আমাদের ডাকতে পুকুরের দিকে আসছিলেন কাকিমা, মানে বুকুনের মা।
আমাদের লুকিয়ে পড়তে দেখে তখন কিছু বলেন নি। আমরা ঘরে ফেরার পরে চা জলখাবার দিয়েছিলেন। কিন্তু তারপরে আমি ওদের বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসার পরে বুকুনকে গম্ভীর গলায় জিগ্যেস করেছিলেন, ‘তোমরা আমগাছের আড়ালে কী করছিলে?’
মায়ের কাছ থেকে প্রশ্নটা শুনে প্রথমে বুকুন ঘাবড়ে গিয়েছিল। কিন্তু গলা না কাঁপিয়ে ও পাল্টা জিগ্যেস করেছিল, ‘আমগাছ? কোন আমগাছ? কী করলাম আবার?’
ও ঠিকই বুঝেছিল যে মা দেখে ফেলেছিলেন ওই সেকেন্ড দশেক হারিয়ে যাওয়া।
মা মেয়েতে কিছুক্ষণ কথা হয়েছিল আমগাছ না পুকুরপাড় – কোন জায়গায় গল্প করছিলাম আমরা – সেটা নিয়ে।
ওর মা আর কিছু বলে নিজে লজ্জিত হতে চান নি বোধহয়! তাই আর কথা বাড়ান নি সেদিন। শুধু নাকি বলেছিলেন এবার থেকে ঘরে বসেই গল্প কোরো তোমরা।
ইঙ্গিতটা বুঝে নিতে বুকুনের দেরী হয় নি।
পরে যখন ও আমাকে বলছিল ঘটনাটা, আমি তো বলেই ফেলেছিলাম, ‘ইশশশ.. আর কোনওদিন কাকিমার মুখোমুখি দাঁড়াতে পারব না।‘
বুকুন আলতো করে আমার হাতে চাপ দিয়েছিল। তবে তারপর থেকে ও-ই বেশী আসত আমাদের বাড়িতে। এই যেমন আজ ওকে দেখে বাড়ির, বরের, বাচ্চাদের সব খবরাখবর নেওয়ার পরেই বলল, ‘রবি তোর ঘরে নিয়ে যা বুকুনকে। আমি চা জলখাবার দিচ্ছি ওখানেই। লুচি করছি।‘
‘আমাদের বাড়িতেও তো লুচি। চলো জেঠি, আমি রান্নাঘরে যাই তোমার সঙ্গে,’ বলল বুকুন।
মা-ও হয়তো বুঝল যে বুকুন এখন আর সেই ছোট নেই যে কারণে-অকারণে আমাদের বাড়িতে এসে রবিদার খোঁজ করত পড়া দেখে নেওয়ার ছলে। আর তারপরে যখন শুনত আমি নিজের ঘরে পড়ছি, তখন পা টিপে টিপে ঘরে ঢুকেই পেছন থেকে আমার চোখ টিপে ধরত দুহাতে।
চেনা হাত, চেনা ছোঁয়া, তাই মুহুর্তেই বুঝে যেতাম কে, তবুও ও এই খেলাটা খেলত।
কিন্তু এখন যে রবির বয়স হয়েছে, বিয়ে, ছেলেপুলে হয়েছে, বুকুনেরও তাই, সেটা প্রথমে মা-র মাথায় বোধহয় ছিল না। তাই সরাসরি আগের মতোই ওকে আমার ঘরে নিয়ে যেতে বলল।
বুকুনেরও নিশ্চই লজ্জা করছিল যে এত্তগুলো বছর পরে আমাদের বাড়িতে এসেই আমার ঘরে চলে যাওয়ার কথায়। তাই বুদ্ধি করে রান্নাঘরে গিয়ে মাকে লুচি ভাজায় হেল্প করার কথা বলল। মেয়েদের যে কতকিছু মুহুর্তের মধ্যে ভেবে নিয়ে কথা বলতে হয় মনের ইচ্ছা লুকিয়ে রেখেও!
আঁচলটা কোমরে গুঁজে নিয়ে বুকুন মায়ের সঙ্গে চলে গেল লুচি ভাজতে। আমি নিজের ঘরে যেতে যেতে বললাম, ‘মা এক কাপ চা আগে পেলে ভাল হত। তারপরে লুচি খেতাম।‘
মা বলল, ‘দাঁড়া করছি।‘
ঘরে এসে একটা সিগারেট ধরিয়ে প্যাকেট আর লাইটারটা টেবিলের ওপরে রাখলাম। আজকাল আর লুকিয়ে রাখি না। আগে কলেজ বা ইউনিভার্সিটি থেকে বাড়ি এলে, এমন কি চাকরী পাওয়া, বিয়ে হয়ে যাওয়ার অনেক পর অবধিও সিগারেট দেশলাই টেবিলের ওপরে এভাবে রাখতাম না।
টেবিলটা বাবা করিয়ে দিয়েছিলেন অনেক ছোটবেলায়। সেক্রেটারিয়েট টেবিল, - মাঝখানে সবুজ রেক্সিন, সঙ্গে কাঠের চেয়ার।
এক মুখ ধোঁয়া ছেড়ে চেয়ারটাকে একটু টেনে নিয়ে গিয়ে জানলার ধারে বসলাম।
এই চেয়ারে বসেই আমি পড়াশোনা করতাম আর মাঝে মাঝে ভর দুপুরে বুকুন হামলা করত পেছন থেকে দুহাত দিয়ে চোখ চেপে ধরে – আমাকে চমকে দেওয়ার ব্যর্থ খেলায়!
একবার কলেজের ছুটিতে এসেও দুপুরে পড়ছিলাম আমি। ফিরে গিয়েই বোধহয় কোনও পরীক্ষা ছিল। মা দুপুরে খাবার সময়েই বলেছিল, ‘সারাদিন টোটো করে ঘুরছিস, একটুও তো বই খাতা বার করতে দেখি না। ছুটিতে বাড়ি এলে তোর পড়াশোনা সব বন্ধ!’
আমারও খেয়াল হয়েছিল যে কলেজ খুললেই পরীক্ষা। তাই বইপত্রগুলো একটু নাড়াচাড়া করছিলাম অথবা কোনও রেফারেন্স বই থেকে নোট তৈরী করছিলাম।
হঠাৎই পেছন থেকে অতি পরিচিত হাতে আমার চোখদুটো ঢাকা পড়ে গেল। বুঝেইছিলাম কে এসেছে! বুকুনের হাতদুটো বেশ গরম ছিল।
ওর হাতের আড়ালে চোখ রেখেই জিগ্যেস করেছিলাম, ‘কী রে, তোর হাতের তালুটা গরম কেন? জ্বর এসেছে নাকি?’
বলে নিজের হাতটা তুলে ওর হাতে বুলিয়ে দিয়ে বোঝার চেষ্টা করছিলাম গায়ে জ্বর আছে না কি!
ও চেয়ারের পেছনে দাঁড়িয়ে নিজের গায়ে আমার মাথাটা আরও একটু টেনে নিয়ে ফিস ফিস করে বলেছিল, ‘হুম রবিদা, জ্বর এসেছে। কামজ্বর।‘
বলেই আমার মাথাটাকে পেছন দিকে আরও একটু টেনে নিজের গায়ে চেপে ধরেছিল। আমি বুঝতে পেরেছিলাম, ওর শরীরের কোন অংশে আমার ব্রহ্মতালুটা গিয়ে ঠেকেছে! ওই জায়গাটাও তো আমার চেনা – দেখি নি যদিও সরাসরি কখনও, তবুও স্পর্শতো পেয়েছি!
‘এই কী হচ্ছে বুকুন। বাড়িতে মা আছে!’ ধমক দিয়েছিলাম একটু।
‘না নেই! আমাকে দরজা খুলে দিয়ে জেঠি বলল পাশের অন্তুদের বাড়ি যাচ্ছে। অন্তুর মার সঙ্গে গল্প করতে। তোর নিজের বাড়ির ব্যাপারে আমি বেশি জানি, বুঝেছিস রবিদা?’ কথা বলতে বলতেই ও নিজের মুখটা আমার চুলের মধ্যে গুঁজে দিয়েছিল। আমি সেই যে ওর জ্বর দেখার জন্য ওর হাত ধরেছিলাম, আমার হাতটা সেখানেই রয়ে গিয়েছিল। আর বুকুনের কথা শুনে অন্য হাতটাও উঠে গিয়ে ছুঁয়েছিল ওর আরেকটা হাত।
--
•
Posts: 72
Threads: 2
Likes Received: 27 in 19 posts
Likes Given: 0
Joined: Mar 2019
Reputation:
14
-- ৮ --
সিগারেটের ছাইটা জানলা দিয়ে বাইরে ঝেড়ে ফেললাম। হাতে মোবাইলটা তুলে নিয়ে মেল আর হোয়াটস্ অ্যাপ মেসেজগুলো দেখতে শুরু করলাম – যেন সেই দুপুরের কথাটা ভুলে যাওয়ার জন্য নিজের সঙ্গেই লড়াই করা।
কিন্তু পারলাম কই! মেইল চেক করা শেষ করে যেই হোয়াটস্ অ্যাপে ঢুকেছি, তখনই বুকুনের কাল রাতের মেসেজগুলোর দিকে চোখ গেল। আর নিজের অজান্তেই ওর ডিসপ্লে প্রোফাইলের ওপরে আঙ্গুলটা গিয়ে পড়ল – ওর ছবিটা একটু বড় হয়ে ভেসে উঠল আমার স্ক্রীনে – একই সঙ্গে আমার মনেও!
মা না থাকার সুযোগ আমরা দুজনেই সেদিন নিয়েছিলাম – যার জন্য অনেক লুকোচুরি করে বিলের মাঠে যেতে হত! তাও বেশী কিছু করতে পারতাম না, কে না কে এসে পড়ে – এই ভেবে! তার ওপরে বুকুনের দিক থেকে তো একটা গন্ডি টানাই ছিল যে কতদূর আমি যেতে পারি, তার নিশানা করার গন্ডি!
কিন্তু হঠাৎ করেই ভরদুপুরে মা পাশের বাড়িতে গল্প করতে চলে যাওয়ায় ও নিজেই সেই গন্ডিটা ভাঙ্গতে শুরু করেছিল প্রথম থেকে।
আমি একবার জিগ্যেস করেছিলাম, ‘দরজাটা বন্ধ করে এসেছিস তো রে?’
ও আমার মুখটা নিজের দিকে টেনে নিতে নিতে ছোট্ট স্বরে বলেছিল, ‘হুম’
তারপরে যা যা ঘটেছিল, তার জন্য আমরা দুজনের কেউ আগে থেকে তৈরী ছিলাম না। দুজনের কাছেই সেটা ছিল অজানাকে জানতে চাওয়া, দেখতে চাওয়া, পরখ করতে চাওয়ার প্রথম চেষ্টা। এত বছরের চেনা শরীরটাকে নতুন ভাবে চেনার অদম্য আকর্ষণ!
ও আমার পেছন থেকে সামনে এসে কোলে বসে পড়েছিল – এই চেয়ারটাতেই বসেছিলাম আমি তখনও।
তারপরে যখন ওকে নিয়ে গিয়ে আলতো করে শুইয়ে দিয়েছিলাম বিছানায় আর বুকুনের শরীরের একেকটা পরত খুলছিল আমার চোখের সামনে আর আমার চোখদুটো যেন আরও ঠেলে বেরচ্ছিল বিস্ময়ে।
ও বলেছিল, ‘অ্যাই রবিদা, কী দেখছিস ওরকম করে? লজ্জা করছে, ধ্যাত শয়তান!’
মুখে শয়তান বললেও সেই শয়তানটাকেই আরও জোরে আঁকড়ে ধরছিল ও সেই দুপুরে। দুজনে দুজনকে অনেকক্ষণ ধরে পরখ করে দেওয়ার সুযোগ পেয়েছিলাম সেদিন।
কিন্তু সুযোগের পূর্ণ সদ্বব্যবহার করে উঠতে পারি নি আমরা কেউই।
আমার যেন সেদিন ট্রেন ধরার ছিল – এত তাড়াতাড়ি করেছিলাম সেদিন আমি! তাই আগেভাগেই আমি নিসৃত হয়েছিলাম – শেষ বাধা আর পেরতে পারি নি সেদিন!
হাপাতে হাপাতে আমার মুখ দিয়ে বেরিয়েছিল, ‘যাহ! হয়ে গেল বাইরেই!’
বুকুনও হাপাচ্ছিল। তার মধ্যেই পিঠে আলতো করে হাত রেখে ভরসা দিয়ে বলেছিল, ‘আরেকদিন হবে রে রবিদা! ভাবিস না। এরকম হয় শুনেছি প্রথমবারে। আমি তো রইলাম!‘
‘এই নে রবি দা, তোর চা। কী করছিস, বৌদির সঙ্গে চ্যাট?‘ বলেই ওর সেই ট্রেড মার্ক ফিচেল হাসি।
কলেজের ছুটির দুপুরে আমার খাটে শুয়ে বুকুনের বলা কথাগুলোর রেশটা তখনও কানে ছিল, হঠাৎই অন্য কথা কানে এল!
এই এতগুলো বছর মুহুর্তের মধ্যে পেরিয়ে বর্তমানে চলে আসতে হল আমাকে!
‘নাহ। তার তো এখন বোধহয় ভোররাত!’জবাব দিলাম আমি।
‘সে কি কেন?’ নিজের জন্যও এক কাপ চা করে এনেছে বুকুন। সেটায় একটু চুমুক দিয়ে জিগ্যেস করল।
‘ ভোর তিনটের নাগাদ কোন পুজো প্যান্ডেলের সামনে থেকে সেলফি তুলে পাঠিয়েছে। তারপরে কখন বাড়ি ফিরেছে, কখন ঘুমিয়েছে কে জানে!’ চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে বললাম আমি। বুকুন পাশে আমার খাটে বসছিল তখন।
এটা অবশ্য সেই পুরণো খাটটা নয় – যেটা সেই কলেজে পড়ার সময়ে আমার ঘরে ছিল!
বিয়ের সময়ে নতুন খাট করিয়েছিলাম। আগেরটা সিঙ্গল বেড ছিল। এটা ডবল বেড।
‘দেবে নিশ্চই! ও, পুজো প্যান্ডেলেও গিয়ে থাকতে পারে!’ আলতো করে কথাগুলো বললাম।
‘তা তুই চা নিয়ে এসে যে রবিদা বলে ডাক দিলি! তোর তো এ স্বভাব ছিল না! চোখ চেপে ধরতিস,’ হেসে বললাম আমি।
বুকুন মাথাটা নামিয়ে নিল। হতে পারে আমার মনের ভুল – তবুও যেন মনে হল একটা বড় নিশ্বাস ছাড়তে গিয়েও যেন একটু চেপে নিল নিজের মধ্যেই ও।
কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই আমার দিকে সরাসরি তাকিয়ে জিগ্যেস করল, ‘তোর মনেএএএ আছে সেসব?’
কথাটায় হাল্কা ব্যঙ্গ করার সুর শুনলাম যেন!
একটা লম্বা শ্বাস নিয়ে বললাম, ‘মনে থাকবে না?’
বলেই সিগারেটের মাথায় জমে যাওয়া ছাইটা ঝাড়ার জন্য জানলার দিকে মুখ ফেরালাম – হয়তো বুকুনের চোখের দিকে তাকাতে চাইছিলাম না!
‘তুই চা টা শেষ কর, আমি যাই। জেঠির বোধহয় আলুভাজা হয়ে গেল। আমি লুচিগুলো ভেজে নিয়ে আসছি।‘
আমার বিয়ের সময়ে তৈরী ডবল বেড খাট থেকে ও ঝট করে উঠে পড়ল। কিন্তু চায়ের কাপটা নিয়ে যখন বসেছিল, তখন মনে হয়েছিল একান্তে একটু আড্ডা দিতেই বোধহয় এসেছে! মনের ভুল আমার? কে জানে!
--
-- ৯ --
চা টা শেষ হওয়ার আগেই মায়ের গলা পেলাম, ‘তোর জলখাবারটা কি ঘরে দেব?’
আমি কিছু বলার আগেই আরেকটা গলা বলে উঠল, ‘কেন জেঠি! রবিদাও আমাদের সঙ্গেই টেবিলে এসে খাক না! গল্প করতে করতে খাওয়া যাবে!’
এবার জবাব দিলাম, ‘আমি আসছি টেবিলে।‘
অনেকগুলো লুচি একটা বিরাট থালায় নিয়ে যেতে যেতে বুকুন আমার ঘরে উঁকি দিয়ে বলে গেল, ‘তাড়াতাড়ি আয় রবি দা। ঠান্ডা হয়ে যাবে।‘
টেবিলে গিয়ে বসতেই মা আলুভাজার একটা বড় বাটি নিয়ে চলে এল।
আমার আর মায়ের পাতে গোটা চারেক, আর নিজের পাতে দুটো লুচি নিয়ে আলুভাজা বেড়ে দিল বুকুন।
‘তুই দুটো নিলি কেন? আরও নে!’ মা বলল।
‘আমাকে তো আবার বাড়ি গিয়েও সবার সঙ্গে খেতে হবে! এটা তো বাড়তি হয়ে গেল!’ মুখে হাল্কা হাসি নিয়ে বলল বুকুন।
আমি তখন সবে দুনম্বর লুচির শেষ অংশটা কিছুটা আলুভাজা মুখে ঠেসেছি, তখনই বুকুন বলল, ‘জেঠি, চলো না আজ দুপুরের শোতে সিনেমা দেখে আসি একটা! টাউনের নতুন হলটাতে একটা ভাল সিনেমা এসেছে। মা, তুমি আর আমি যাই চলো। অ্যাই রবিদা, তিনটে টিকিট কেটে নিয়ে আসিস তো।‘
যাহ, আমি বাদ লিস্ট থেকে, মনে মনে ভাবলাম। মুখে বললাম, ‘কী সিনেমা রে?’
‘ব্যোমকেশ’ জবাব দিল বুকুন।
‘না বাবা দুপুরে আমি একটু না গড়িয়ে নিলে আজকাল পারি না রে! তোর মার তো চোখের অবস্থা ভাল না, সিনেমা দেখতে যাবে?’ মা বলল লুচি খেতে খেতে।
‘কতদিন হলে গিয়ে সিনেমা দেখা হয় না,’ মনে একটু আশা নিয়ে বললাম, যদি মা-কাকিমাদের দলে আমাকেও নিয়ে নেয় বুকুন।
‘চলো না বাবা একটা দিন তো! রাতে বেশী ঘুমিয়ে নিও না হয়। রবিদা, টিকিটের টাকা আমি দেব কিন্তু। ছোটবেলায় মা-জেঠিদের কাছ থেকে এটা ওটা বলে টাকা নিয়ে বন্ধুদের সঙ্গে কত্ত সিনেমা দেখতে গেছি.. আজ আমি দেখাবো। ভাল দেখে সাইডের তিনটে সিট নিস রবিদা।‘
আমি যে বললাম কতদিন হলে গিয়ে সিনেমা দেখি না – সেই কথাটা বোধহয় কানেই তুলল না বুকুন। তিনটে টিকিট কাটতে বলল।
‘না রে মা। আমি আর যাব না। তুই আর তোর মা যদি যায় তো যাক, রবিকে নিয়ে যা বরং,’ বলল মা।
‘ধুর চলো না বাবা! ভাবলাম তোমাদের দুজনকে নিয়ে যাব, তুমি যদি না যাও, তাহলে বাদ দাও!’ কথাগুলো বলে নিজের থালাটা নিয়ে উঠতে উঠতে বলল বুকুন। দুটো তো মাত্র লুচি নিয়েছিল, কথা বলতে বলতেই শেষ ওদুটো।
‘জেঠি, আমি যাই বুঝলে। বাড়িতে গিয়ে আবার লুচি ভাজতে হবে। তোমার জামাই আর ছেলেটা না খেয়ে আছে এতক্ষণ। অনেক দেরী হয়ে গেল গো।‘
‘হ্যাঁ হ্যাঁ তুই এগো! জামাই আর নাতিটা তো না খেয়ে আছে!’
বুকুন রান্নাঘরে থালা নামাতে গেল বোধহয়।
আমি মা কে বললাম, ‘আচ্ছা তুমি কী বলো তো? ও বলছে তোমাদের নিয়ে সিনেমা দেখতে যাবে, তুমি বলছ রবিকে নিয়ে যা! ওকে নিয়ে আমি সিনেমা দেখতে যাব! কী বলছ ভেবে বলবে তো! কী যে ঝামেলায় ফেল না!’
আমি দরজার দিকে পেছন ফিরে বসেছিলাম, তাই খেয়াল করি নি কখন বুকুন এসে পেছনে দাঁড়িয়েছে। মায়ের চোখের দিকে তাকিয়ে পেছনে ঘুরে দেখি বুকুন দাঁড়িয়ে আছে দরজা ধরে। ওর মাথাটা সামান্য নামানো, নিজের দাঁত দিয়ে ওর নীচের ঠোঁটটা সামান্য কামড়ে ধরা।
‘আসি জেঠি’, বলে বেরিয়ে গেল বুকুন।
‘আয় মা’।
বুকুন বেরিয়ে গেল, আমার দিকে আর না তাকিয়েই।
বাকি লুচি আর আলুভাজাগুলো মা ছেলেতে বিশেষ কথা না বলেই খেয়ে নিলাম।
‘আরেক কাপ চা খাবি নাকি?’ জিগ্যেস করল মা।
‘নাহ। আমি একটু বেরচ্ছি। দুপুরে ফিরব।‘
‘বেশী দেরী করিস না যেন,’ যেমনটা সবসময়ে বলে এসেছে মা।
সাইকেলটা নিয়ে আবার রাস্তায় বেরলাম। বহুদিন পরে সাইকেল চালানো হচ্ছে সকাল বিকেল। কলকাতায় থাকলে দিনের কোনও না কোনও সময়ে আধঘন্টা ট্রেডমিলটায় চড়তেই হয়। প্রথম প্রথম পিয়ালীর কড়া নজর থাকত, এখন অভ্যেস হয়ে গেছে।
পিয়ালীর কোন বন্ধু নাকি বলেছিল তোর বরের বেশ ছোট্ট একটা ভুঁড়ি উঁকি দিচ্ছে কিন্তু। বেশ লাগছে। আর তার নিজের বরের নাকি চল্লিশ পেরনোর আগেই বড়সড় ভুঁড়ি হয়ে গেছে। রাতে ওপরে চড়লে ওজনটা নিতে নাকি বেশ কষ্ট হয় পিয়ালীর সেই বন্ধুর!
সেই শুনেই পরের রবিবার দুপুরে আমাদের রুটিন রতিক্রিয়াটা করতে না দিয়ে আমাকে জোর করে নিয়ে গিয়ে একটা ট্রেডমিল কিনে এনেছিল। রাতে পুষিয়ে দেবে, সেটাও বলেছিল কানে কানে, গলা জড়িয়ে ধরে।
রবিবার দুপুরের রতিক্রিয়াটা আমাদের রুটিন হয়ে গেছে বেশ কয়েক বছর ধরে। সপ্তাহের অন্য দিনগুলোতে সকালে ওঠা, ছেলেকে কলেজের জন্য তৈরী করা – এসব করতে হয় বলে রাত জাগতে পারবে না – বলেই দিয়েছে পিয়ালী। তাই শনিবার রাত আর রবিবার দুপুর – এই দুটোই সময় আমাদের।
সাপ্তাহিক রুটিন ভেঙ্গে সেই রবিবার রাতে বিছানায় সঙ্গ পাওয়ার জন্য সন্ধ্যেবেলা আমাকে আধঘন্টা ধরে ট্রেডমিলে দৌড়তে হয়েছিল। রাতে যখন আমি পিয়ালীর ওপরে চড়ছি, তখন সে গলা জড়িয়ে ধরে বলেছিল, ‘এর থেকে বেশী ভুঁড়ি বাড়লে কিন্তু করতে দেব না।‘
বলে গলাটা ধরে নিজের দিকে টেনে নিয়েছিল পিয়ালী।
সেদিন প্রায় আধঘন্টা পড়ে যখন দুজনেই ক্লান্ত হয়ে কাৎ হয়ে পাশাপাশি শুয়ে রয়েছি - তখনই পিয়ালীকে হাসতে হাসতে বলেছিলাম, ‘তুমিও তো ট্রেডমিল করলে পার। তাহলে আমার ওপরেও চাপটা কমে!’
একটু আগেই টের পেয়েছিলাম, আমার বউয়ের ওজনটাও খুব কম বাড়ে নি!
‘কীঈঈ? আমি মোটা হয়ে যাচ্ছি! যাও তাহলে আর করতে হবে না, স্লিম দেখে কাউকে খুঁজে নাও গিয়ে’ কপট রাগ দেখিয়েছিল আমার বউ।
তবে পড়ে জেনেছিলাম ও নিজেও নিয়মিত ট্রেডমিল করে নিজেকে ফিট রাখার জন্য।
সাইকেল চালাতে চালাতে কখন যে টাউনের দিকে যাওয়ার বড় রাস্তায় চলে এসেছি খেয়ালই করি নি।
ছোটবেলায় এই রাস্তা দিয়েই বুকুন আর আমি পাশাপাশি কত সাইকেল চালিয়ে এদিক ওদিক যেতাম!
তখন রোগা হওয়ার জন্য আমাদের এই গ্রাম গঞ্জে কেন, শহরেও বোধহয় কারও ট্রেডমিল ছিল না! লোকে তখন অত হেলথ কনশাসও ছিল না।
বুকুন অবশ্য কোথাও থেকে জেনেছিল যে রোজ সাইকেল চালালে শরীর ফিট থাকে। কথাটা আমাকে একবার বলেছিল – কলেজের ছুটিতে বাড়িতে এসে দুজনে বেরিয়েছিলাম সাইকেল নিয়ে – তখন।
তাই ও সব জায়গায় সাইকেলে চেপেই যেত।
সাইকেল চালাতে চালাতে হঠাৎই মনে পড়ল কথাটা।
সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে টাউনের নতুন সিনেমা হল মুভি ম্যাজিকের কাছে এসে পড়েছি, খেয়ালই করি নি। আগে গ্রাম-মফস্বলে সিনেমা হলের নাম হত শ্যামলী, চিত্রা, আরাধনা – এসব। এখন কলকাতার ছোঁয়া লেগেছে – হলের নাম মুভি ম্যাজিক!
বুকুন তখন বলছিল সিনেমা দেখতে যাওয়ার কথা। মনে মনে ভাবলাম, কিনে নেব তিনটে টিকিট! একবার ভাবলাম ওকে না জিগ্যেস করে টিকিট কাটলে আবার রাগারাগি না করে। তারপরে ভাবলাম, নাহ কিনেই ফেলি। কী আর হবে!
হলটা নতুন। ঝাঁ চকচকে। এদিক ওদিক তাকিয়ে সাইকেল স্ট্যান্ড খুঁজে পেলাম। সাইকেলটা রেখে লক লাগিয়ে খুঁজতে লাগলাম কাউন্টারটা কোন দিকে।
রোগাপটকা একটা লোক প্রাইভেট সিকিউরিটি এজেন্সির পোষাক পরে হাতে লাঠি নিয়ে বিড়ি খাচ্ছিল।
হাসি পেল লোকটাকে দেখে! এর যা চেহারা, কাকে কি সিকিউরিটি দেবে কে জানে!
ওকেই জিগ্যেস করলাম, ‘দাদা টিকিট কাউন্টারটা কোন দিকে?’
বিড়ির ধোঁয়ায় বোধহয় কাশি এসে গিয়েছিল। তার মধ্যেই বলল ‘সামনে ডানদিকে আমাদের বক্স অফিস’।
আবারও হাসি পেল। টিকিট কাউন্টার বলেছি বলে ওর বোধহয় প্রেস্টিজে লেগেছে! কলকাতার মাল্টিপ্লেক্সে যদি বক্স অফিস থাকে, তাহলে আমাদের টাউনের হলে কেন টিকিট কাউন্টার থাকবে!
‘ধন্যবাদ’ বলে ওই রোগা গার্ডের দেখিয়ে দেওয়া দিকে এগোলাম।
কাউন্টার, থুড়ি, বক্স অফিসের সামনে বেশী ভিড় নেই। আগেকার হলের মতো লোহার গ্রিল দেওয়া খুপরি ঘর না, কাঁচ লাগানো কাউন্টার। মাঝখানে কথা বলার জন্য গোল গর্ত, নীচে টাকা দেওয়া আর টিকিট নেওয়ার চৌখুপি।
বাইরে বোর্ড লাগানো আছে কোন ছবি কটার সময়ে। আগের মতো একই ছবি নুন, ম্যাটিনি, ইভনিং আর নাইটে চলে না। সেই বারোটা, তিনটে, ছটার শো টাইমিংও পাল্টে গেছে। বুকুন বলেছিল ‘ব্যোমকেশ’ দেখবে। সেটার শো টাইম দেখলাম ৩-৪৫।
কাউন্টারের ভেতরে যে এ সি চলছে, সেটা টের পেলাম গোল গর্তের সামনে মুখটা রাখতেই। ভেতরে টাই পড়া এক যুবক। আগে বুকিং ক্লার্করা হতো হাড়জিড়জিড়ে বুড়ো। সবসময়ে মুখে বিড়ি।
তিনটে পয়তাল্লিশের ব্যোমকেশের তিনটে টিকিট বলতেই এখনকার স্মার্ট বুকিং ক্লার্ক তার সামনে পেতে রাখা সিটিং প্ল্যান দেখিয়ে বলল, ‘স্যার লাল দাগ দেওয়া সিটগুলো বুকড। বাকিগুলোর মধ্যে কোনটা নেবেন?’
আমি অতশত না ভেবে বললাম ভাল দেখে তিনটে দিন ব্যালকনিতে। কোনও একটা সাইড থেকে দেবেন। কত তিনটে?’
সে কম্পিউটারে কীসব টাইপ করে আমাকে বলল ‘দেড়শো টাকা স্যার।‘
দুটো একশো টাকার নোট দিয়ে কম্পিউটার প্রিন্ট আউট নিয়ে দেখে নিলাম সিনেমার নাম, সময় সব ঠিকঠাক আছে কী না। আগেকার মতো পাতলা ঘুড়ির কাগজে ছাপা টিকিট না এটা!
এই টিকিট নিয়েই একবার কী ঝামেলা আমাদের বাড়িতে!
তখনও মা আমার আর বুকুনের সম্পর্কটা জানত না। ছোট থেকেই ও যেমন আমাদের বাড়িতে যেত আসত, তার বাইরে মা আর কিছু ভাবে নি।
কিন্তু হায়ার সেকেন্ডারির পরে একদিন আমার জামার পকেটে কীভাবে যেন টিকিটের কাউন্টারপার্ট থেকে গিয়েছিল। আগের দিন ম্যাটিনি শোতে বুকুনকে নিয়ে সিনেমায় গিয়েছিলাম। ব্যালকনিতে একটা সাইডে দুটো সীটে দুজনে বেশ ঘন হয়ে বসে সিনেমাটা দেখেছিলাম। আমাদের দুজনেরই হাত মাঝে মাঝে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছিল। তখনই বুকুন কুটুস করে চিমটি কাটছিল। ফিস ফিস করে বলছিল, ‘কী হচ্ছে রবিদা। হলে অন্য লোক আছে তো!’
হল থেকে বেরিয়ে আমরা যখন বিলের মাঠে বসেছিলাম খুব কাছাকাছি, তখন দুষ্টুমি করে বুকুন জানতে চেয়েছিল, ‘রবিদা, সিনেমার গল্পটা কী বলত!’
‘ধুর সিনেমার দিকে মন ছিল নাকি আমার,’ হেসে বলেছিলাম আমি।
‘সে আর মনে থাকবে কী করে, যা অসভ্যতা শুরু করেছিলি!’
সেই বিকেল থেকে প্রায় সন্ধ্যে পর্যন্ত বুকুনের সঙ্গে কাটানোর আমেজটা রাতে আর পরের দিন সকালেও ছিল। ফুরফুরে মেজাজেই আড্ডা দিতে গিয়েছিলাম। দুপুরে বাড়ি ফিরে দেখি মায়ের মুখটা থমথমে।
‘বেশী লায়েক হয়ে গেছ, তাই না? সবে তো হায়ার সেকেন্ডারি দিয়েছ!’
অবাক হয়ে তাকিয়েছিলাম মায়ের দিকে। কেসটা কী মেপে নেওয়ার চেষ্টা করছিলাম।
‘কী ব্যাপার মা?’
‘জানো না কী ব্যাপার! সিনেমা দেখতে গিয়েছিলে? আমাকে না বলে?’
তখনও বাড়িতে লুকিয়েই সিনেমা দেখতে হত আমাদের।
বুঝলাম মা হয়তো কারও কাছ থেকে শুনেছে – কেউ হয়তো আমাকে দেখে ফেলেছে হলে ঢোকা বা বেরনোর সময়ে।
আমার প্রথমে মাথায় এল সঙ্গে বুকুন ছিল, এটা কেউ মায়ের কানে লাগিয়ে দেয় নি তো!
তাহলে তো সর্বনাশ!
আমি মায়ের কথার জবাবে একটু আমতা আমতা করে বলেছিলাম, ‘ওই বন্ধুরা বলল, তাই গিয়েছিলাম। তোমাকে কে বলল।‘
বোঝার চেষ্টা করছিলাম বুকুন সঙ্গে থাকার ব্যাপারটা মায়ের কানে পৌঁছেছে কী না!
‘বন্ধু-রা? টিকিট তো ছিল দুটো!’
ইশশশ, সবসময়ে সিনেমার টিকিট রাস্তায় ফেলে দিই, কাল আর খেয়ালই ছিল না। মা নিশ্চই কাচতে দেওয়ার সময়ে খুঁজে পেয়েছে।
তবে ভাগ্যিস মা আর কিছু জানতে চায় নি যে কে ছিল সঙ্গে।
এভাবেই একবার পকেটে বিড়ির কুচো তামাক পেয়ে সাংঘাতিক রাগ করেছিল মা। প্রায় মারতে বাকি রেখেছিল।
সেদিন বিকেলে বিলের মাঠে বসে যখন বুকুনকে বলছিলাম সিনেমার টিকিট মায়ের হাতে পড়ে যাওয়ার ঘটনা, ও হাতের তালুতে কপালটা নামিয়ে দিয়ে বলেছিল, ‘ইশশশশ। একটু খেয়াল করবি তো! তুই কী রে! ভাব তো একবার জেঠিমা আর কিছু জানতে চাইলে কী হত!’
ওর কোলে শুয়ে পড়েছিলাম আমি তখন। আমার বুকের ওপরে ওর হাতদুটো রাখা ছিল। সেদুটোতে আলতো করে আঙুল বোলাতে বোলাতে বলেছিলাম, ‘কাল সিনেমা হল থেকেই আমার যা অবস্থা হয়েছিল, তারপর এখানে এসে.. খেয়ালই ছিল না যে পকেটে টিকিটের পার্টটা রয়ে গেছে।‘
‘শয়তান কোথাকার। তুই কাল যা করছিলি হলে বসে! ইশ!’
‘ইশের কী আছে! আমরা তো ছিলাম লাস্ট রোয়ের কোনে!’
‘তুই ইচ্ছে করেই ওই সীট নিয়েছিলি না? অসভ্যতা করবি বলে!’
আমি জবাব না দিয়ে বুকুনের একটা হাত তুলে নিয়ে আমার ঠোঁটের ওপরে রেখে ওর চোখের দিকে তাকিয়েছিলাম। ও অন্য হাতটা দিয়ে আমার মাথার চুলে বিলি কেটে দিচ্ছিল।
‘তুই আমার যা অবস্থা করেছিলি না রে, সারারাত ঘুমোতে পারি নি। দুষ্টু কোথাকার।‘
‘কেন কেন? ঘুমোস নি কেন?’
‘বুঝিস না? বদমাশ!’
‘বল না বল না.. কী হয়েছিল .. ঘুমোস নি কেন?’
নিজের মুখটা ওর কোলে শুয়ে থাকা আমার মুখের খুব কাছে নিয়ে এসে বলেছিল ‘তোর হাতের ছোঁয়াগুলের মনে পড়ছিল, আর কেঁপে কেঁপে উঠছিলাম আমি ভেতরে ভেতরে! বুঝেছ হাঁদারাম!’
তারপরে আমার ঠোঁটের ওপরে থাকা ওর হাতটা সরিয়ে নিয়ে গিয়ে সেই জায়গায় নিজের ঠোঁটা চেপে ধরেছিল বুকুন – অনেকক্ষণ ধরে।
---
•
Posts: 72
Threads: 2
Likes Received: 27 in 19 posts
Likes Given: 0
Joined: Mar 2019
Reputation:
14
-- ১০ --
টিকিট কেটে সাইকেলটা নিয়ে একটু হেঁটে এসে একটা সিগারেট ধরিয়ে ভাবছিলাম বুকুনকে ফোন করে জানাব সিনেমা দেখার কথাটা।
তখনই বুক পকেটে রাখা মোবাইলটা কুর কুর করে বেজে উঠল। স্ক্রীণে সেই সেভ না করা, কিন্তু ভীষণ চেনা নম্বরটা।
কল রিসিভ বাটনটা টিপেই কানে দিয়ে বললাম, ‘বল’।
‘কোথায় তুই এখন?’ প্রশ্ন এল ওপার থেকে।
‘তোকেই ফোন করতে যাচ্ছিলাম এক্ষুণি। টাউনে এসেছি, নতুন যে হলটা হয়েছে মুভি ম্যাজিক বলে, সেখানে। ৩.৪৫ এ ব্যোমকেশের শো। তিনটে টিকিট কেটেছি। তুই মা আর কাকিমা আসবি,’ এক নিশ্বাসে কথাগুলো বলে ফেললাম।
‘তোকে তো টিকিট কাটতে বলি নি রবিদা! আমি যাব না,’ কথাটা শেষ করেই ফোনটা কেটে দিল।
মনে মনে ভাবলাম, যাহ শালা। এখনও সেই ছোটবেলার মতো মান-অভিমান করে মেয়েটা!
তক্ষুনি আবারও কলব্যাক করা ঠিক হবে না। একটু সময় দিয়ে দেখি। এই ভেবে সাইকেলে চেপে বসলাম।
বাড়ি যাব। আড্ডা দেওয়ার মুড নেই এখন। আরেকবার স্নান করে খেয়ে দেয়ে ঘুম দেব একটা। গেলই না হয় কিছু টাকা জলে, কী আর করা যাবে!
তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরে আসতে দেখে মা ব্যস্ত হয়ে জিগ্যেস করল, ‘কী রে, আড্ডা দিবি বলে বেরলি, এত তাড়াতাড়ি ফিরে এলি যে! শরীর খারাপ না কি?’
আমি বললাম, ‘না গো। গরম পড়েছে। টাউনে গিয়েছিলাম তো। তাই আর রোদে ঘুরতে ভাল লাগছে না। যাই হোক সিনেমার টিকিট কেটে এনেছি। তুমি আর না না করো না। কাকিমা আর বুকুনকে নিয়ে দেখে এস সিনেমাটা। ভাল লাগবে।‘
‘বললাম যে আমি যাব না সিনেমা দেখতে! কেন কাটতে গেলি!’
‘অত কথা আর বলতে ভাল লাগছে না। তুমি যাবে, ব্যস।‘
নিজের ঘরে চলে গেলাম। পোষাক পাল্টে পাখাটা চালিয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিয়ে একটা সিগারেট ধরালাম। হাতে মোবাইলটা নিয়ে হোয়াটস্অ্যাপটা চেক করতে গিয়ে দেখলাম বুকুন ম্যাসেজ পাঠিয়েছে।
‘এত্তগুলো টাকা বেকার খরচ করলি। আমি যাব না সিনেমা দেখতে। মাকে রাজী করিয়েছি। ছেলে তো ব্যোমকেশের কথা শুনেই লাফাচ্ছে। ওরা দুজন যাক। সঙ্গে তুই বা জেঠিমা যাস।‘
লম্বা মেসেজের ছোট্ট উত্তর দিলাম, আমারও যে একটু অভিমান হয়েছে, সেটা বোঝানোর জন্য।
‘মাকে বলেছি যেতে। বাকি দুটো টিকিটের কী হবে, তুই ঠিক কর।‘
ও অনলাইন নেই। তাই তক্ষুনি মেসেজটা দেখতে পেল না।
আমি সিগারেটটা শেষ করে একটু চোখ বুজলাম।
মিনিট দশেক পরেই হবে বোধহয়, মোবাইলটা বাজল।
বুকুন ফোন করেছে আবার। মুডটা অফ ছিল। তাই ধরলাম না ওর ফোন।
মোবাইলটা বেজে বেজে বন্ধ হয়ে যাওয়ার একটু পরে হোয়াটস্অ্যাপ খুলে দেখি ও মেসেজ করেছে ‘ওকে’ বলে।
মানে আমার মা, ওর মা আর ওর ছেলে সিনেমা দেখতে যাবে। মাকে বলতে হবে তাড়াতাড়ি খাওয়া দাওয়া করে নিতে।
‘আমরা দুই বুড়ি পারব যেতে? সঙ্গে আবার একটা বাচ্চা!’
‘চেনা রিকশা ঠিক করে দেব। ও-ই আবার নিয়ে আসবে। ঘুরে এস তোমরা।‘
খাওয়া দাওয়া সেরে নিয়ে বুকুনকে ফোন করলাম।
‘বল’
‘মা যাবে। জেঠিমা আর তোর ছেলেকে নিয়ে আমাদের বাড়িতে চলে আসিস তিনটে নাগাদ। চেনা একটা রিকশা ঠিক করে দেব। সে-ই আবার ফিরিয়ে আনবে। দেরী করিস না।‘
‘পারবে মা আর জেঠিমা দুজনে? সঙ্গে আবার ছেলেটাও থাকবে!’
‘মনে হয় না অসুবিধা হবে। মা কে বুঝিয়ে দেব। আর এই সব হলের স্টাফরাও সাহায্য করে, অন্তত কলকাতায় তো করেই।‘
‘ঠিক আছে, তিনটে নাগাদ পৌঁছে যাব তোদের বাড়িতে। আচ্ছা, আমার বর কি তোকে আর ফোন করেছিল সন্ধ্যেবেলার ব্যাপারে?’
‘না তো!’
‘ও আচ্ছা।‘
‘কিছু বলেছে তোকে?’
‘সে তো খাওয়া দাওয়া করে বেরল বোধহয় কোথাও মদ খেতেই গেল।‘
‘ও। দুপুরেই মদ খেতে বেরিয়েছে?’
‘হুম। এই তো করে ছুটির দিনে!’
‘যাক। তুই কাকিমা আর ছেলেকে নিয়ে চলে আসিস।‘
‘হুম।‘
ফোন রেখে দিল বুকুন।
কয়েক ঘন্টা আগের রাগ-অভিমান টের পেলাম না ওর গলায়।
মা সময়মতোই তৈরী হয়ে গিয়েছিল। আমি পাড়ার মোড়ে গিয়ে একটা চেনা রিকশা ডেকে আনলাম। তাকে বলে বুঝিয়ে দিলাম যে কটার সময়ে ফেরত আনতে হবে। কোন জায়গায় দাঁড়াবে – সব। মাকেও সেসব বোঝাচ্ছিলাম, তখনই দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ হল।
‘ওই বোধহয় এসে গেল ওরা,’ মা বলল।
দরজা খুলে দেখি ঠিকই, বুকুন মা আর ছেলেকে নিয়ে এসেছে।
কাকিমাকে দেখে আমার মা বলল, ‘কী যে সব করে এরা! এই বয়সে নিজেরা কি আর সিনেমা দেখতে যেতে পারি আমরা!’
বুকুনের ছেলেটা বেশ স্মার্ট।
‘তোমরা ভয় পাচ্ছ কেন বল তো দিদা! আমি জানি মাল্টিপ্লেক্সে কী করে যেতে হয়। কলকাতায় তো কত দেখি আমরা।‘
‘বাবা, খুব পাকা হয়ে গেছ তো তুমি দাদু। আমাদের তাহলে গাইড করো।‘
মা, কাকিমা আর বুকুনের ছেলেকে নিয়ে রিক্সাটা বেরিয়ে গেল।
বুকুন আমার দিকে সামান্য মাথাটা তুলে বলল, ‘রাগ করেছিস রবিদা?’
‘কেন? রাগ করার মতো কিছু করেছিস নাকি তুই?’
‘ওই যে বললাম সিনেমা দেখতে যাব না আমি!’
কথাটার জবাব না দিয়ে আমি জিগ্যেস করলাম, ‘তুই কি বাড়ি চলে যাবি? কেউ তো নেই। ভেতরে আয় গল্প করা যাবে।‘
বলে আমি ঘরে ঢুকলাম।
ও আমার পেছন পেছন ঘরে ঢুকে দরজাটা বন্ধ করল।
নিজের ঘরে ঢুকে বললাম, ‘বোস’।
ও জবাব দিল, ‘চা খাবি? করব?’
বলে দরজার দিকে ঘুরতে যাচ্ছিল।
আমি ওর একটা হাত ধরে ফেললাম, ‘চা করতে হবে না এখন, পরে করিস।‘
‘হাতটা ছাড় রবিদা। যখন ধরার কথা ছিল, তখন আসিস নি। এখন হাত ধরতে হবে না।‘
বুকুন কথাগুলো বলল বটে, কিন্তু আমার হাত থেকে নিজের হাতটা ছাড়িয়ে নেওয়ার কোনও চেষ্টাই করল না ও।
এক পা কাছে এগিয়ে গিয়ে গলাটা নামিয়ে আমি বললাম, ‘গোটা ব্যাপারটা তো আমি জানতামই না! তুই তো কিছুই জানাস নি যে তোর বিয়ে ঠিক হয়েছে। হঠাৎ করেই চুপ করে গিয়েছিলি তুই। তারপর মার কাছে জানতে পেরেছিলাম। ততদিনে তো অন্যের বউ!’
ওর হাতের তালুতে ধীরে ধীরে আঙুল বোলাচ্ছিলাম আমি।
এটা ছোটবেলায় প্রেম করার সময়ে ওকে উত্তেজিত করে তুলত মনে আছে।
ও একই জায়গায় স্থির হয়ে দাঁড়িয়েছিল। বুকুনের চোখ দুটো বন্ধ, নীচের ঠোঁটটা দাঁত দিয়ে হাল্কা চেপে রাখা।
এবার বুকুনের অন্য হাতের কব্জিটা হাল্কা করে ধরে নিজের দিকে সামান্য টানলাম।
একটা লম্বা নিশ্বাস নিল ও।
চোখদুটো বন্ধ করে রেখেই প্রায় শোনা যাচ্ছে না, এমন গলায় বলল, ‘তোকে এত্তবছর পরেও খুব মিস করি রে রবিদা।‘
এই কথাটা শোনার আগে পর্যন্তও আমার একটা সংশয় ছিল যে আর এগনো ঠিক হবে কী না!
কিন্তু সেটা কেটে গেল ওর মিস করার কথায়। নিজের দিকে এক ঝটকায় টেনে নিলাম বুকুনকে।
একটা লম্বা নিশ্বাস নিয়ে নিলাম দুজনেই, কারণ পরের বেশ কিছুটা সময় যে দুজনের কেউই দম নিতে পারব না, এটা দুজনেই জানি আমাদের বিবাহিত জীবনের এক্সপিরিয়েন্স থেকে।
---
- ১১ -
আমরা দুজনেই দুজনের চোখের দিকে পাতা না ফেলে তাকিয়ে রইলাম কয়েক মুহুর্ত। তারপর বুকুনই ওর মুখটা আমার মুখের দিকে এগিয়ে দিল ঠোঁটটা অল্প একটু ফাঁক করে দিয়ে। আমার মুখটা সামান্যই এগতে হল। ওর জিভের স্বাদ সেই যে ছোটবেলায় সরস্বতী পুজোর দিন পেয়েছিলাম হঠাৎ করে বিলের মাঠে, তারপরে আরও অনেকবার পেয়েছি।
প্রায় কুড়ি বছর পরে স্বাদটা একটুও বদলায় নি।
এর মধ্যে আমি অন্য দুজনের জিভের স্বাদ গ্রহণ করেছি অবশ্য – একজন তো আমার বউ পিয়ালী, তবে তারও আগে দিল্লিতে সহপাঠিনী গুরপ্রীতের।
বুকুনের বিয়ে হয়ে যাওয়ার পরের মাসগুলোতে যে যখন আমি একরকম বিধ্বস্ত চেহারা নিয়ে এম বি এ ক্লাসে যেতাম, সেই সময়েই আমার দিকে নিজে থেকেই কিছুটা এগিয়ে এসেছিল গুরপ্রীত।
বুকুনের কথা, ওর হঠাৎ চলে যাওয়া, সব কিছুই গুরপ্রীতকে খুলে বলে মন কিছুটা হাল্কা করার চেষ্টা করেছিলাম। ধীরে ধীরে আমার অনেক গোপন কথাই জেনে গিয়েছিল গুরপ্রীত, আমিও ওর কথা জেনেছিলাম।
তারপর একদিন আমাকে নোটস শেয়ার করার জন্য ও নিজের বাড়িতে নিয়ে গিয়েছিল। জানতাম না সেদিন ওর বাড়িতে আর কেউ ছিল না।
নোটস শেয়ার করেছিলাম ঠিকই, কিন্তু আরও কিছু শেয়ার করার প্ল্যান আগে থেকে করে রেখেছিল গুরপ্রীত। ও জানত যে বাড়ি ফাঁকা থাকবে, সেই সুযোগেই আমাকে নিয়ে গিয়েছিল সেদিন।
সেদিনই প্রথম গুরপ্রীতের জিভের স্বাদ পেয়েছিলাম আমি, তারপর গোটা শরীরেরও।
সেদিনই আমি কুমারত্ব হারিয়েছিলাম, যেটা হারানো চেষ্টা করেছিলাম একবার কলেজ ছুটির সময়ে বাড়িতে, নিজের ঘরে, বুকুনের কাছে।
সে আর হল কই!
গুরপ্রীতের সঙ্গে সম্পর্কটা ধীরে ধীরে শরীরিই হয়ে গিয়েছিল। ও সেটাই চাইছিল হয়তো। তবে উজার করে শরীরি ভালবাসার শিক্ষা দিয়ে গিয়েছিল আমাকে ওই বছর দেড়েকে।
পাশ করার পরেই কানাডায় ওর কাকা জেঠাদের কাছে চলে গিয়েছিল গুরপ্রীত। আর যোগাযোগ হয় নি।
তারপরে ফুলশয্যার রাতে আমার গ্রামের বাড়ির এই ঘরেই আমি তৃতীয় নারীর স্বাদ পেয়েছিলাম।
গুরপ্রীতের শেখানো আদবকায়দা ব্যবহার করেছিলাম পিয়ালীর ওপরে। ওর আগে কোনও এক্সপিরিয়েন্স ছিল না, তাই আমার গুরু মারা বিদ্যে, অর্থাৎ গুরপ্রীতের শেখানো ভালবাসার কায়দা কানুন দেখে কুপোকাৎ হয়ে গিয়েছিল পিয়ালী।
ও হয়তো ভেবেছিল আমি গ্রামের ছেলে, এসব ব্যাপারে আমি আর কী জানব!
তারপর থেকে বিছানায় আমিই রাজা!
এতগুলো বছর পরে বুকুনের জিভের স্বাদ নিতে গিয়ে হঠাৎই পুরণো কথাগুলো মনে পড়ল।
এদিকে বুকুন আমার হাত থেকে নিজের হাতদুটো ছাড়িয়ে নিয়ে আমার মাথার পেছন দিকটা চেপে ধরেছিল চুলগুলো মুঠো করে। আমার হাত ওকে যেন কিছুটা সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য ওর পিঠে, শিরদাঁড়ায় ঘুরছিল। কখনও কোমরের কাছে চেপে ধরছিলাম, কখনও আর একটু নীচে মাংসল অংশটায়। ওর গলা দিয়ে ‘মম.. মম’ করে একটা গোঙানির আওয়াজ বেরচ্ছিল। আমাকে আরও আঁকড়ে ধরছিল আমার প্রথম প্রেম বুকুন।
দুজনে কতক্ষণ যে ওইভাবে ছিলাম, তা জানি না, কিন্তু ওইসব সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতেই ব্যালান্স হারিয়ে ধপাস করে আমি বিছানায় পড়লাম, বুকুন আমার ওপরে।
তখনই আমাদের মুখের মাঝে একটুখানি ফাঁক হল – এতক্ষণ পরে।
আমার ওপরে শুয়ে, চুলগুলো মুঠি করে ধরে ঠোঁটের কোনে একটু হাসি এনে ফিস ফিস করে বুকুন বলল, ‘এত ভাল চুমু খেতে শিখলি কার কাছে রে?’
কথার জবাব না দিয়ে ওর মাথাটা আমার দিকে টেনে আনলাম আমি। তারপর ও-ই দায়িত্ব নিয়ে নিল সবকিছুর।
আমাদের দুজনের বুক একে অন্যকে পিষছে, বুকুনের কোমর আমার কোমরকে। ওকে শান্ত করার চেষ্টা করলাম একটু পিঠে, কোমরে হাত বুলিয়ে দিয়ে, কখনও বা আরও একটু নীচে। কিন্তু তাতে ও শান্ত তো হলই না, উল্টে আরও পাগলামি শুরু করে দিল।
একটা সময়ে আমাদের দুজনের গা থেকেই একে একে জামাকাপড়গুলো গা-ছাড়া হতে শুরু করল।
পেটিকোটের ফিতেটা যখন আমি অভ্যস্ত হাতে খুলে দিলাম একটানেই, তখন বুকুন হাসতে হাসতে বল, ‘মনে আছে বিলের মাঠে একবার আমার সালোয়ারে ফিতে খুলতে গিয়ে জট পাকিয়ে কী কান্ড করেছিলি!’
‘তারপরে এতবছর প্র্যাক্টিস করেছি না!’ আমিও হেসে জবাব দিলাম।
তার পরের মিনিট পাঁচেকের মধ্যেই আমরা আদম আর ইভের পোষাকে!
বেশ কিছুটা সময় নিয়ে আমরা দুজনে দুজনের নিরাভরণ শরীরদুটো পরখ করলাম। দেখা শেষ হয়ে গেলে স্বাদ নিতে শুরু করলাম শরীরের নানা জায়গার।
কখনও আমি ওপরে, কখনও বুকুন, কখনও ৬৯।
অষ্টমীর সেই বিকেলে বুকুন যেন পাগল হয়ে গিয়েছিল। আমিও যে হই নি, তা নয়। কিন্তু যতই সময় গড়াচ্ছিল, ততই বুকুনের পাগলামিটা বাড়ছিল।
আমার মনে হচ্ছিল যে ওর ওই পাগলের মতো আদর করায় একটু বাধ না সাধলে এবারও হয়তো আমরা আসল বাধাটা পেরতে পারব না – যে বাধাট প্রায় ২২ বছর আগে এই ঘরেই একবার পেরনোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছিলাম। যদিও সেদিন আমারই দোষ ছিল – বাইরেই নিসৃত হয়েছিলাম।
এবার তাই আর সেটা যাতে না হয়, তারজন্য আমার কোমরের কাছে বসে মুখ ভরিয়ে নিয়ে বসে থাকা বুকুনের কাঁধদুটো ধরে টেনে আনলাম।
‘সোনা এবার আয়। শুয়ে পড়। আর পারছি না। আবার সেই দিনের মতো বাইরেই বেরিয়ে যাবে।‘
ও সাড়া দিল মুহুর্তে।
পা দুটো এমনভাবে ভাঁজ করে ছাদের দিকে তুলে দিয়েছিল, যেন V চিহ্ন দেখাচ্ছে – জয় করতে পেরেছে অবশেষে – ‘এত্ত বছর’ পরে!
আমি প্রবেশ করার পরে ওর বুকের দুপাশে জেগে থাকা দুই পাহাড়ের শিখরে, কখনও দুই পাহাড়ের মাঝের উপত্যকায় মুখ ডুবিয়ে দিচ্ছিলাম, কখনও আবার গাঢ় খয়েরী পর্বতশিখরে আমার দুটো আঙুল চেপে দিচ্ছিলাম।
কোমর দোলানোতে কোনও ছন্দপতন তো হয়ই নি, উল্টে মাঝে মাঝে ছন্দ পাল্টাচ্ছিল। কখনও খুব দ্রুত লয়ে, কখনও আলাপের ভঙ্গিতে – ধীরে ধীরে।
বুকুন এরই মাঝে একবার ভীষণভাবে আমার হাতের বাজুদুটো খামচে ধরেছিল। ওর কোমরটা বিছানা থেকে একটু উঠে গিয়েছিল। ওর শরীরটা বেঁকেচুড়ে গিয়েছিল, চোখ প্রায় বন্ধ! মুখ দিয়ে একটা অস্বাভাবিক গোঙানির আওয়াজ।
এ আওয়াজ আর ভঙ্গি আমার চেনা, রমনের সময়ে ঠিক কখন শয্যাসঙ্গিনীর এ অবস্থা হয়, আমার যেমন জানা, বুকুনেরও নিশ্চই জানা আছে!
তখন আমার কোমর দোলানোর ছন্দ আর এক্সপ্রেস বা মেল ট্রেন নয়, একেবারে মালগাড়ির ধীর গতিতে চলছিল।
বুকুন কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে আবারও যখন আমার সঙ্গে তাল মেলাচ্ছিল, তার বেশ খানিকক্ষণ পরে যখন মনে হয়েছিল যে সময় ঘনিয়ে আসছে।
প্রোটেকশন ছিল না কোনও – স্বাভাবিকভাবেই। কেউই তো এটা আগে থেকে ভাবি নি! নাহলে আজ টাউনে গেলাম, কন্ডোমের একটা প্যাকেট কিনে আনতেই পারতাম!
শেষ যখন ঘনিয়ে আসছে, তখন ওর চোখের দিকে ইশারায় জানতে চেয়েছিলাম কী করব, কোনও প্রোটেকশান নেই যে!
ও চোখের ইশারাতেই জানিয়েছিল, ভয় নেই, ভেতরে ফেলতেই পারি।
ওর কথাই রেখেছিলাম সেদিন।
একটু পরে প্রায় বেদম হয়ে যখন আমরা দুজনেই হাপাতে হাপাতে বিছানায় চিৎপাত, তখন ও-ই বলেছিল যে নিয়মিত পিল খায় ও। তাই ভয়ের কিছু নেই।
‘উফ... এত্তগুলো বছর পরে, শেষমেশ হল বল রবি দা!’
আমি ওর দিকে তাকিয়ে হেসে জড়িয়ে ধরেছিলাম।
‘আমার এই প্রথম অর্গ্যাজম হল। কখনও আগে হয় নি এরকম!’ আমাকে অবাক করে দিয়ে বলল বুকুন।
‘মানে?’ ওর দিকে কাৎ হয়ে শুয়ে জিগ্যেস করেছিলাম।
‘বলব তোকে একদিন। আজ থাক।‘
আরও কিছুক্ষণ পরে জামাকাপড় পরে পরিষ্কার হতে গিয়েছিলাম বাথরুমে। বুকুন ফ্রেশ হয়ে এসে চা করে এনেছিল আমাদের দুজনের জন্য।
ঘড়ি দেখছিলাম আমরা – ওদের সিনেমা প্রায় শেষ হতে চলল।
চা খেয়ে বুকুন চলে গিয়েছিল সেদিন।
যাওয়ার আগে গালে আলতো একটা চুমু।
•
Posts: 72
Threads: 2
Likes Received: 27 in 19 posts
Likes Given: 0
Joined: Mar 2019
Reputation:
14
- ১১ -
বুকুন চলে যাওয়ার পরে ঘরে এসে একটা সিগারেট ধরিয়েছিলাম।
কিছুক্ষণ পরে মা ফিরল। বুকুনের মা আর ওর ছেলে ওই রিকশাতেই বাড়ি চলে গেল।
মা বলল, 'উফ কী দারুণ হল রে!'
'আর সিনেমাটা?'
'বইটাও দারুণ, তবে এরকম হল আমি জীবনেও দেখি নি। বসতেই গা ডুবে গেল চেয়ারে। বুকুনের ছেলে আবার আমাদের শেখালো চেয়ারটা কীভাবে হেলানো যায়। টাউনে আগে যেসব সিনেমা দেখেছি - সব কাঠের চেয়ার।'
'দেখলে তো? আমি জোর করে পাঠালাম বলে এরকম একটা এক্সপেরিয়েন্স হল!'
'সত্যি রে! চা খাবি তো?'
মা একটু পরে চা করে এনে দিল।
চা খেয়ে আমি বললাম 'একটু আড্ডা দিতে বেরচ্ছি। দেরী হতে পারে, চিন্তা করো না।'
'বেশী দেরী করিস না।'
'তুমি খেয়ে নিও।'
এক বন্ধুকে তার বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে আরেকজনের বাড়িতে আড্ডায় বসা হল। আরও কয়েকজন জুটল। চা, সিঙাড়া, চানাচুর আর আড্ডা - শেষ হতে হতে বেশ রাত হয়ে গেল।
বাড়ি ফিরে তাই তাড়াতাড়ি খেয়ে নিয়ে নিজের ঘরে চলে এসেছিলাম।
মনে হল বউ-ছেলের সঙ্গে পুজোর মধ্যে সেভাবে কথাই হয় নি। মজাতেই আছে নিশ্চই, তবু ফোন করাটা আমার কর্তব্য।
পিয়ালীর মোবাইলে ফোন করলাম – তিন চার বার – বেজে গেল, কেউ ধরল না।
তারপর বাড়ির ল্যান্ড কয়েকবার রিং হওয়ার পরে ঘুম জড়ানো গলায় ফোনটা ধরল ছেলে।
‘কেমন আছিস রে? বাবাকে ভুলেই গেলি?’
‘খুব ঘুরছি দুদিন ধরে। টায়ার্ড.. তুমি ভাল আছ? ঠাম্মা?’
‘ভাল আছি.. এলি না তো এখানে.. অন্যরকম পুজোর মজা হত!’
‘হুম..রাখি?’
‘তোর মাকে দে..’
‘মা নেই তো! পার্টি করতে গেছে বন্ধুদের সঙ্গে’
‘তুই একা আছিস নাকি!! এত রাতেও ফেরে নি? কোথায় গেছে রে?’
‘মঞ্জুমাসি আছে বাড়িতে.. কোথায় গেছে মা জানি না। কলেজের বন্ধুদের সঙ্গে গেল..’
মঞ্জু আমাদের বাড়ির কাজের মাসি। তার কাছে ছেলেকে রেখে দিয়ে রাত সাড়ে বারোটা পর্যন্ত কোথায় পার্টি করতে গেছে পিয়ালী? ফোনও তো ধরছে না!
চিন্তায় পড়ে গেলাম আমি!
ছেলেকে বললাম, ‘আচ্ছা ঠিক আছে, তুই ঘুমিয়ে পড়.. ভয় পাস না।‘
আবার একটা সিগারেট ধরালাম.. আমার চিন্তা হচ্ছিল – এত রাত অবধি একা একা পার্টি করতে তো কখনও দেখি নি পিয়ালীকে – তাও আবার কলেজের বন্ধুদের সঙ্গে!! কোন বন্ধু, কোথায় গেছে, কিছুই বুঝতে পারছিলাম না.. হঠাৎই একটা অচেনা নম্বর থেকে ফোন এল।
কানে দিয়ে হ্যালো বলতে ওপার থেকে তারস্বরে গান আর হুল্লোড়ের আওয়াজ। তার মধ্যেই একটা পুরুষ কন্ঠ বলার চেষ্টা করছিল যে সে পিয়ালীর বন্ধু! পিয়ালী তাদের সঙ্গেই একটা পার্টিতে আছে, আমার ফোন ধরতে পারে নি, তাই পিয়ালীই বলেছে আমাকে ফোন করে জানাতে যে সে ঠিক আছে।
পুরুষ কন্ঠটা কার, চিনতে পারলাম না।
তবে শেষে সে বলল, পিয়ালী যে ঠিক আছে, সেটা বোঝানোর জন্য হোয়াটসঅ্যাপে ভিডিও পাঠাচ্ছে একটু পরে।
অপেক্ষা করতে থাকলাম আমি বউ যে ঠিকঠাক আছে, সেই প্রমান আসার।
আবারও একটা সিগারেট।
টিং টিং করে হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ ঢুকল। এই নম্বরটাও অচেনা।
একটা ভিডিয়ো এসেছে।
খুললাম সেটা – দেখতে দেখতে কখন যে আমার দুই আঙ্গুলের মাঝখান থেকে সিগারেটটা পড়ে গেছে, খেয়ালই করি নি।
প্রচন্ড জোরে গান-বাজনার আওয়াজ আর কিছুটা আধো অন্ধকার ঘরে উদ্দাম নাচানাচি করছে কিছু মহিলা-পুরুষ।
ওই মহিলাদের মধ্যেই একজনকে চিনতে পারলাম – আমার বউ!
সে ছোটবেলায় নাচ শিখেছে জানতাম বিয়ের সময়েই। কিন্তু এখনও যে এরকম শরীর দুলিয়ে নাচতে পারে, সেটা জানতাম না।
ভিডিয়োতেই দেখতে পেলাম তিনচারটে পুরুষ বন্ধুর সঙ্গে বেশ ঘনিষ্ঠভাবে উদ্দাম নৃত্য চলছে। মধ্যমনি আমার বউ।
তার যে বুক থেকে আঁচল খসে গেছে, সেটা তার খেয়ালই নেই, কিন্তু আমার নজর এড়ালো না।
নাচের মধ্যেই দেখলাম দুদিক থেকে দুজন পুরুষ – তারা কারা চিনতে পারলাম না – পিয়ালীর শরীরের নানা জায়গায় হাত বোলাচ্ছে। আমার বউও একজনের কাঁধে হাত দিয়ে কোমর দোলাচ্ছে, আরেকজনের বুকের খুব কাছাকাছি আমার বউয়ের আঁচল খসে যাওয়া উদ্ধত বুক।
এ যদি আমার বউ না হত, তাহলে হয়তো দৃশ্যটা বেশ উপভোগই করতাম। কিন্তু ছেলেকে বাড়িতে একা রেখে দিয়ে পিয়ালী এ কাদের সঙ্গে কোথায় গেছে এসব করতে!!!
ভিডিয়োটা দেখা শেষ হওয়ার আগেই একটা টেক্সট মেসেজ এলো – কী বস, তোমার বউ ঠিকঠাক আছে কী না দেখলে তো? আমরা বারাসাতের দিকে এক বন্ধুর বাগানবাড়িতে এসেছি – সকালের মধ্যে তোমার বউকে বাড়ি দিয়ে আসার দায়িত্ব আমার। আমি তমাল – পিয়ালীর সঙ্গে কলেজে পড়তাম।
সকাল হতে অনেক দেরী! ততক্ষণ আমাকে না ঘুমিয়েই কাটাতে হবে বুঝলাম!
কিন্তু একের পর এক সিগারেট খেতে খেতে যে কখন চোখটা লেগে এসেছিল, খেয়ালই করি নি।
মোবাইলের আওয়াজে তন্দ্রাটা কাটল।
বুকুনের ফোন।
মোবাইলেই দেখলাম রাত প্রায় দুটো। পিয়ালীর খোঁজ করতে গিয়ে আর বুকুনকে ফোন করা হয় নি রাতে। কিন্তু তা বলে এত রাতে ফোন করছে কেন?
গলাটা নামিয়ে বললাম, ‘বল, কী হল? এত রাতে?’
‘ও এখনও ফেরে নি রবিদা!’
‘কে?’
‘বর’
‘মানে? কোথায় গেছে? ফোন করিস নি?’
‘করেছিলাম, ধরছে না। কোথায় গেছে জানি না। সন্ধ্যেবেলায় টাউনের কোন বন্ধুর বাড়িতে যাবে বলে বেরিয়েছে – মদ খাওয়ার আসর নিশ্চই। রাত করেই ফেরে, কিন্তু কখনও এত রাত হয় নি, আর ফোনও সবসময়ে ধরে। কী করব আমি এখন রবিদা?’
‘কার বাড়ি গেছে জানিস? কোন পাড়ায়?’
‘নতুন পাড়ায় একজন আছে জানি, শিবেন বলে। বাড়িও চিনি। কিন্তু তার কাছেই গেছে না অন্য কোথাও জানি না তো!’ বুকুনের গলাটা ভেজা ভেজা লাগল।
‘কারও ফোন নম্বর নেই?’
‘না রে’
মনে মনে ভাবলাম কী অবস্থা – একদিকে আমার বউ তার কলেজের বন্ধুদের সঙ্গে উদ্দাম পার্টি করছে এদিকে বুকুনের বর কোথায় মাল খেতে গিয়ে এখনও বাড়ি ফেরে নি!!
কয়েক সেকেন্ড ভেবে নিয়ে বললাম, ‘আমি সাইকেল নিয়ে বেরচ্ছি। তোকেও যেতে হবে! আমি তো ওই শিবেনের বাড়ি চিনি না!’
‘এত রাতে বেরবো তোর সঙ্গে?’
‘কী করবি আর? না হলে অপেক্ষা কর সকাল অবধি। আমাকেও সকাল অবধি ওয়েট করতে হবে – বউ পার্টি করতে গেছে তার কলেজের বন্ধুদের সঙ্গে – ছেলে বাড়িতে কাজের মাসির কাছে একা!’
‘অ্যাঁ !!! সে কি!!’
তারপরেই বুকুন বলল, ‘তুই আয় সাইকেল নিয়ে। আমি মাকে ঘুম থেকে তুলে বলি ব্যাপারটা।‘
‘হুম।‘
আমি মায়ের ঘরের দরজায় দাঁড়িয়ে টোকা দিলাম কয়েকবার।
ঘুম জড়ানো গলায় মা বলল, ‘কে রে? রবি?
‘মা শোনো আমি একটু বেরচ্ছি। বুকুনের বর এই রাত দুটোর সময়েও বাড়ি ফেরে নি। ও ফোন করেছিল। সে ফোনও ধরছে না। আমি একটু বেরিয়ে দেখি।‘
‘দাঁড়া বাবা। আসছি।‘
ঘরের লাইট জ্বালিয়ে বাইরে বেরলো মা।
‘কী ব্যাপার রে! রাত আড়াইটে বাজতে চলল, এখনও বাড়ি ফেরে নি!’
আমি আর বললাম না যে তার পুত্রবধূও বাড়ি ফেরে নি এখনও – সারা রাত ফিরবেও না।
‘কোথায় খোঁজ করতে যাবি এখন তুই?’
মাকে আর বললাম না যে টাউনে হারা উদ্দেশ্যে খুঁজতে বেরতে হবে পুরণো প্রেমিকার স্বামীকে।
‘তুমি চিন্তা কর না। আমি বাইরে থেকে তালা দিয়ে যাচ্ছি। তুমি ঘুমোও গিয়ে।‘
‘টর্চ নিয়ে যাস একটা।‘
‘তোমার দরকার হলে ফোন কর। মোবাইল সঙ্গে আছে।‘
একহাতে টর্চ অন্য হাতে সাইকেলের হ্যান্ডেল ধরে দরজা খুলে বেরিয়ে তালা দিয়ে দিলাম।
পুজোর নবমী আজ। হাল্কা কুয়াশা আছে। শীতের আমেজ রয়েছে, তবে ঠান্ডা লাগছে না।
বুকুনের বাড়ির কাছাকাছি গিয়ে ওকে ফোন করলাম একটা। দরজায় নক করা ঠিক হবে না।
রিং হতেই ও ফোন ধরে বলল, ‘এসে গেছিস? বেরচ্ছি।‘
ওর মা দরজা খুলল।
আমি একটু এগিয়ে গিয়ে দেখলাম কাকিমার ঘুম লাগা চোখে উদ্বেগ।
গলা নামিয়ে বলল, ‘দেখ রবি রাত আড়াইটে বাজল, তার বাড়ি ফেরার নাম নেই। মেয়েটাকে এখন বেরতে হচ্ছে। তুই দুদিনের জন্য এসে ঝামেলায় পড়লি। ওইসব ছাইপাশ খেয়ে রাস্তাঘাটে পড়ে থাকলে কাল সকালে যদি কেউ দেখে ফেলে বেইজ্জতের একশেষ হব আমরা! সবই কপাল!!‘
‘ঝামেলার কী আছে কাকিমা। এটা তো কর্তব্য!’
আমার বউকে বাড়ি ফিরিয়ে আনার কর্তব্যও তো করবে তার কলেজের কোন বন্ধু তমাল!!
বুকুন বেরিয়ে এল ভেতর থেকে।
কাকিমা বলল, ‘বেশী দেরী করিস না তোরা। এদিক ওদিক দেখে চলে আয়।
‘তুমি দরজা দিয়ে দাও। রবিদা আছে তো। চিন্তা কর না।‘
কাকিমা দরজাতেই দাঁড়িয়ে রইলেন।
সাইকেলটা হাঁটিয়েই নিয়ে যাচ্ছিলাম আমি। বুকুন সাইকেলের অন্য দিকে।
ওদের বাড়ির মোড়টা ঘোরার পরে বললাম, ‘বস সাইকেলে।‘
একবার তাকাল আমার দিকে, তারপর কথা না বলে সাইকেলের সামনের রডে উঠে বসল।
বুকুন এভাবেই যখন ছোটবেলায় সাইকেলের রডে বসত, তখন কতকিছুই না ভাবতাম মনে মনে।
ওকে কী বলব আমার বউয়ের ব্যাপারটা?
নাহ থাক! এমনিতেই বেচারা চিন্তায় রয়েছে, তার ওপরে ওকে আবার এসব বলে চিন্তা বাড়ানোটা ঠিক হবে না।
জিগ্যেস করলাম, ‘ওই শিবেন ছাড়া আর কারও বাড়ি চিনিস – যেখানে তোর বর গিয়ে থাকতে পারে?’
‘আরেকটা বাড়ি চিনি, কিন্তু তার নাম ভুলে গেছি। একবার আসার পথে বাড়িটা দেখিয়ে বলেছিল তার বন্ধুর বাড়ি।‘
‘কোন দিকে সেটা?’
‘দূর আছে তাদের বাড়ি। হাইওয়ের দিকে যেতে হবে টাউন পেরিয়ে।‘
‘ও আচ্ছা। চল দেখা যাক।‘
বুকুনের বগলের তলা দিয়ে গিয়ে আমার দুটো হাত সাইকেলের হ্যান্ডেলটা শক্ত করে ধরে রয়েছে। প্যাডেল করতে গিয়ে ওর কোমরে আমার থাইয়ের ছোঁয়া লাগছে। ওর চুলের গন্ধ লাগছে নাকে। ওর চুলের গন্ধটা নেওয়ার জন্য মাথাটা একটু ঝুঁকিয়েছিলাম। ও বোধহয় টের পেয়েছিল আমার নিশ্বাস। মাথাটা একটু আমার দিকে ঘুরিয়ে হাতে একটা আলতো করে চিমটি কেটে বলল, ‘দুপুরে তোর আশ মেটে নি রবিদা?’
‘এত বছরের না পাওয়া – অত অল্পে কি আশ মেটে?’
এবার আর শুধু চুলের গন্ধ নেওয়ার জন্য না, মুখটাই নামিয়ে দিলাম ওর চুলের মধ্যে, তারপরে কানের লতিতে।
‘এরকম দুষ্টুমি করতে গিয়ে আবার কিন্তু ফেলে দিবি তুই আমাকে সাইকেল থেকে! মনে আছে সাইকেল চালানো শেখাতে গিয়ে ফেলে দিয়েছিলি!’
‘মমম মনে থাকবে না?’
---
- ১২ -
গ্রামের রাস্তা থেকে আমরা ততক্ষণে টাউনের রাস্তা ধরে নিয়েছি। কোথাও কোনও কাকপক্ষী নেই – মানুষ তো দূরের কথা।
অথচ এটাই যদি কলকাতা শহর হতো, তাহলে পুজোর সময়ে এত রাতেও রাস্তায় গাড়ির জ্যাম লেগে থাকত, শয়ে শয়ে লোকের সামনে এভাবে পুরণো প্রেমিকাকে সাইকেলের রডে বসিয়ে তার বরের খোঁজ করতে যাওয়ার আগে দুবার ভাবতে হত।
আবার এটাই যদি কলকাতা হত, আর আমি শহরে থাকতাম পুজোর সময়ে, তাহলে পিয়ালীও হয়তো তার কলেজের বন্ধুদের সঙ্গে বারাসাতের কোনও বাগানবাড়িতে সারারাতের পার্টিতে গিয়ে মদ খেয়ে উত্তাল নাচ করত না!
কিছুক্ষণ আর বিশেষ কোনও কথা হল না আমার আর বুকুনের।
সামনে একটা গলি দেখিয়ে বুকুন বলল, ‘ওই গলিটায় চল রবিদা। এবার আমাকে সাইকেল থেকে নামিয়ে দে রে।‘
‘শিবেনের বাড়ি এই গলিতে?’ জানতে চাইলাম আমি।
‘হুম’ বলে ছোট্ট জবাব দিল বুকুন।
গলির ভেতরটা বেশ অন্ধকার। টর্চ জ্বালালাম আমি।
কয়েকটা বাড়ি পেরিয়ে একটা দোতলা বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে বুকুন বলল, ‘এই বাড়ি।‘
আমি সাইকেলটা স্ট্যান্ড করিয়ে ওকে নিয়ে সামনের ছোট্ট গ্রিলের গেট খুলে ভেতরে ঢুকলাম। সদর দরজায় টর্চ মেরে দেখলাম কোথায় বেল রয়েছে।
চারদিক নিস্তব্ধ, তাই বেলটা বেশ জোরে বেজে উঠল।
কিন্তু ভেতর থেকে কোনও সাড়াশব্দ পেলাম না। আবারও একবার বেল দিতে যাব, ভেতরের কোনও ঘরে একটা আলো জ্বলে উঠল – দেখতে পেলাম জানলা দিয়ে।
আরও মিনিট খানেক পরে এক মহিলার গলা পেলাম, ঘুমে জড়ানো।
‘কে?’
জবাব দিল বুকুন, ‘দিদি, আমি শিবেনদার বন্ধু অর্ণবের স্ত্রী বুকুন।‘
কয়েক মুহুর্তে দরজাটা একটু ফাঁক হল। সদরের বাইরে কোলাপসিবল গেট লাগানো রয়েছে।
উঁকি দিল একটা মুখ।
‘আরে দিদি, আপনি, এত রাত্তিরে? কী হয়েছে?’ জিগ্যেস করলেন ওই মহিলা।
‘সরি এত রাতে ডিসটার্ব করলাম। অর্ণব এখনও বাড়ি ফেরে নি, মোবাইলও ধরছে না। ওর এখানকার আর কোনও বন্ধুর বাড়ি তো চিনি না, তাই আমার পাড়ার দাদাকে নিয়ে আপনাদের বাড়িতে এসেছি। শিবেনদা কি বাড়িতে?’ জানতে চাইল বুকুন।
মহিলা আমার দিকে একবার তাকিয়ে বললেন, ‘আসুন আসুন ভেতরে।‘
চাবি দিয়ে কোলাপসিবল গেটটা খুলতে খুলতে বললেন শিবেনের বউ।
‘না না ভেতরে আর আসব না। শিবেনদা কি আছে বাড়িতে? অর্ণব কোথায় যে গেছে, সেটাও কিছু তো বলে যায় নি।‘
শিবেনের বউ বললেন, ‘শিবেন বাড়ি ফিরেছে কিছুক্ষণ আগে। কোথায় গিয়েছিল সেটা তো জানি না। প্রচুর মদ খেয়ে এসে মরার মতো ঘুমোচ্ছে। আপনারা ভেতরে আসুন। ওদের কয়েকজন বন্ধুর নম্বর আছে আমার কাছে। ফোন করে দেখছি অর্ণবদা কোথায় আছে কেউ বলতে পারে কী না।‘
আমরা দুজনের উনার পেছন পেছন গিয়ে বসার ঘরে ঢুকলাম। শিবেনের বউ ভেতরের ঘরে গিয়ে একটু জোর গলাতেই বরকে ডাকছে শুনতে পেলাম।
বেশ কিছুক্ষণ পরে নেশা জড়ানো একটা গলার আওয়াজ পেলাম ভেতরের ঘর থেকে।
নিশ্চই শিবেনেরই গলা, কিন্তু কী বলছে সে বাইরের ঘরে বসে বুঝতে পারলাম না।
তবে আরও কিছুক্ষণ পরে প্রথমে শিবেনের স্ত্রী বেরিয়ে এল, পেছনে টলোমলো পায়ে একটা পেটমোটা লোক – হাফপ্যান্ট পড়ে।
জড়ানো গলায় শিবেন যা বলল তার অর্থ হল বুকুনের বর আর শিবেন এক সঙ্গেই ছিল। কিন্তু অর্ণবের নেশাটা একটু বেশী-ই হয়ে গেছে, তাই ওরা যার বাড়িতে বসে মদ খাচ্ছিল, সেই আশুতোষের বাড়িতেই শুয়ে পড়েছে। বাড়িটা টাউনের অনেকটা বাইরে – হাইওয়ের দিকে। শিবেনের সঙ্গে আরেক বন্ধু ছিল, সে-ই বাইকে করে নামিয়ে দিয়ে গেছে ওকে, নাহলে ও-ও বাড়ি ফেরার মতো অবস্থায় ছিল না।
বুকুনের মুখটা কালো হয়ে গেছে, ও মাথা নীচু করে শুনে গেল সবটা। তারপরে শিবেনের স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে বলল, ‘সরি দিদি আপনাদের এত রাতে অসুবিধা করলাম এভাবে। আসি আমরা। নমস্কার।‘
‘আরে না না, অসুবিধার কী আছে। কর্তা বাড়ি না ফিরলে, কোনও খোঁজ না পেলে চিন্তা তো হবেই। তারপর আপনারা এখানে থাকেন না!’ বলতে বলতে আমাদের পেছন পেছন শিবেনের বউও এগিয়ে এসেছিল দরজার দিকে।
প্রায় যখন দরজার বাইরে চলে এসেছি, তখন শিবেন পেছন থেকে জড়ানো গলায় বলে উঠল, ‘আসলে আশুর বউ আর শালী ছিল তো আজ – যা নাচছিল ওরা দুই বোন মাল খেয়ে, সেই দেখে আমাদেরও সকলেরই একটু বেশী চড়ে গিয়েছিল। আশুর শালীর সঙ্গে নাচতে নাচতেই ওর গায়ে পড়ে গিয়ে অর্ণব সেই যে বিছানা নিল, তারপরে আর তোলাই গেল না। ওর সঙ্গেই বোধহয় শুয়ে আছে.. হেহেহেহে।‘
আমি, বুকুন আর শিবেনের বউ স্তব্ধ, আমাদের পা নড়ছে না।
শিবেনের বউ মাথাটা নামিয়ে নিয়েছে। বোধহয় ভাবতে পারে নি অর্ণবের কীর্তিটা এভাবে তার বউয়ের সামনে ফাঁস করে দেবে নিজের বর।
কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে ব্যাপারটা সামাল দিতে স্বামীর দিকে ঘুরে বলল, ‘অনেক বকবক করেছ – যাও ঘুমোও গিয়ে। নেশার ঘোরে কোথায় কী বলছ সেটা খেয়াল রাখতে পার না!!‘
তারপর আমাদের দিকে তাকাল শিবেনের স্ত্রী – আবারও মাথাটা নামিয়ে নিল।
ধীর গলায় বলল, ‘না করলাম মুখ খুলতে, শুনল না।‘
বুকুন আমার জামাটা ধরে সামান্য টান দিল, ‘চল রবিদা। আসি দিদি।‘
বাইরে বেরিয়ে এসে সাইকেলের স্ট্যান্ডটা তুলে ধীরে ধীরে প্রায় অন্ধকার গলি দিয়ে এগিয়ে চললাম আমি আর বুকুন।
বড়রাস্তা থেকে সামান্য আলো আসছিল।
--
•
Posts: 72
Threads: 2
Likes Received: 27 in 19 posts
Likes Given: 0
Joined: Mar 2019
Reputation:
14
১৩
সাইকেল একদিকে, অন্যদিকে বুকুন।
বড়রাস্তায় ওঠার আগেই আমার হাতের বাজুটা জড়িয়ে ধরে হাউ হাউ করে কেঁদে ফেলল বুকুন।
ওকে কাঁদতে দিলাম বেশকিছুক্ষণ।
তারপরে ধীরে ধীরে বললাম, ‘বাড়ি চল।‘
কাঁদতে কাঁদতেই ও বলল, ‘কোন মুখে বাড়ি যাব রবিদা? সে কার সঙ্গে শুয়ে আছে মদ খেয়ে – সেটা শুনতে হল ওর বন্ধুর কাছ থেকে – তার বউয়ের সামনে!’
সাইকেলটা আমার কোমরের কাছে হেলিয়ে রেখে অন্য হাতটা আস্তে আস্তে বুকুনের পিঠে রাখলাম।
‘এখন তো বাড়ি চল। অন্ধকার রাস্তায় দাঁড়িয়ে এভাবে কাঁদিস না। রাত প্রায় তিনটে বাজে!’
আরও মিনিট দশেক সেভাবেই দাঁড়িয়ে থাকতে আর কাঁদতে দিলাম বুকুনকে।
তারপর আবারও বললাম, ‘শোন, যে বলেছে, আর যার সামনে বলেছে – তাদের কাউকেই তুই চিনিস না। তাও আবার একজন মদের ঘোরে বলেছে ব্যাপারটা। সকালে উঠে হয়তো মনেই থাকবে না। অপমানিত হওয়ার ব্যাপারটা মাথা থেকে মুছে ফেল।‘
‘আর তুই? তুইও তো জানলি তোর বুকুন কী সুন্দর আছে! কী দারুণ সংসার করছে তোর বুকুন!’
‘আমার কাছে আবার তোর অপমান! চল সোনা বাড়ি চল। ভোর হতে চলল।‘
এবার পিঠে আর ঘাড়ে একটু চাপ দিলাম।
বুকুনের শরীর যে আমার গায়ে লেপ্টে রয়েছে, সেটা এতক্ষণে নজর করলাম। আমার হাত জড়িয়ে ধরে কাঁদার সময়ে তার বুকটা আমার হাতের বাজুতে চেপে গিয়েছিল। সোনা শব্দটা শুনে বুকুন একঝলক মুখ তুলে তাকাল।
‘রবিদা, আমাকে আবার ফিরিয়ে নে তোর কাছে।‘
কথাকটা বলেই মফস্বল শহরের বড়রাস্তার হাল্কা আলোতেই আমাকে জড়িয়ে ধরল বুকুন।
আমার জামার বুকের কাছটা ওর কান্নার জলে একটু একটু করে ভিজতে লাগল।
ওর পিঠে, ঘাড়ে ধীরে ধীরে হাত বুলিয়ে দিচ্ছিলাম আমি।
আমাদের দুজনেরই চোখ বন্ধ ছিল।
ওর কানের কাছে মুখটা নিয়ে গিয়ে ফিসফিস করে বললাম, ‘তুই কোথাও তো যাস নি বুকুন। আমার কাছেই তো ছিলি এতগুলো বছর! এমন একটা দিনও যায় নি যেদিন তোর কথা মনে পড়েনি। ফিরে আসার কথা বলছিস কেন?’
বুকুন আমাকে দুহাত দিয়ে আরও জোরে চেপে ধরল।
ওইভাবেই বেশ কিছুক্ষণ কেটে গিয়েছিল। আমাদের দুজনের চটক ভাঙ্গল কাছাকাছি কোথাও একটা কুকুর ডেকে ওঠার শব্দে।
বুকুনের বাঁধন একটু আলগা হল। বললাম, ‘কাকিমা চিন্তা করছে খুব। চল।‘
বুকুন আমার কাছ থেকে সামান্যই সরে দাঁড়াল, যাতে আমি একটু ঘুরে সাইকেলটায় উঠতে পারি।
সামনের রডে বসল বুকুন।
প্যাডেল করতে থাকলাম আমি।
হ্যান্ডেল ধরে থাকা আমার হাতদুটোর ওপরে সাইকেলে উঠেই নিজের হাতদুটো রেখেছিল বুকুন। ওর শরীর আমার খুব কাছে এখন।
প্যাডেল করতে করতেই ওর মাথার চুলে নাক ডুবিয়ে ছোট্ট একটা চুমু খেলাম আমি।
ও গা এলিয়ে দিল আমার দিকে। ওর চোখ থেকে হু হু করে জলের ধারা যে নেমে আসছে, সেটা অন্ধকার রাস্তায় সাইকেল চালাতে চালাতেই টের পেলাম।
হঠাৎই আকাশ থেকেও দু এক ফোঁটা জল পড়ল।
আর তারপরেই দশমীর ভোরে আকাশ ভেঙ্গে বৃষ্টি শুরু হল।
--
১৪
তড়িঘড়ি বুকুন আর আমার সাইকেল নিয়ে দৌড়ে একটা বড় অশ্বথ গাছের নীচে গিয়ে দাঁড়ালাম বৃষ্টির হাত থেকে বাঁচতে।
অন্ধকার চারদিক, তারমধ্যে বৃষ্টি বেড়েই চলেছে। বড় গাছটা ভাগ্যিস ছিল, নাহলে দুজনকেই কাক ভেজা হয়ে যেতে হত এতক্ষণে।
তবুও বৃষ্টির ছাঁট গায়ে লাগছে।
সাইকেলটাও ভিজছে।
‘একটু সরে আয়, অসময়ের বৃষ্টিতে ভিজলে জ্বরটর হয়ে যাবে,’ বলল বুকুন।
এমন নয় যে আমরা দুজন অনেক দূরে দাঁড়িয়েছিলাম।
ওর আহ্বানে আরও কিছুটা সরে দাঁড়ালাম ওর দিকে – একেবারেই গায়ে গায়ে।
বৃষ্টি শুরু হতেই বুকুন শাড়ির আঁচলটা গায়ে জড়িয়ে নিয়েছিল। এতক্ষনে আঁচলটা বেশ ভিজে গেছে – তবুও সেটাই গায়ে জড়িয়ে রেখেছে বুকুন।
আমার আর বুকুনের হাতের বাজু, পা, কোমড় এ ওকে ছুঁয়ে রয়েছে – বৃষ্টির ছাঁট থেকে বাঁচতে।
আমি পকেট থেকে সিগারেট বার করে লাইটারটা হাওয়া থেকে আড়াল করে সিগারেট ধরানোর চেষ্টা করছিলাম।
ঠিক তখনই বুকুন আমার হাতের বাজুটা জড়িয়ে ধরল আর আমার কাঁধে মাথাটা হেলিয়ে দিল।
সিগারেটে একটা টান দিয়ে বুকুনের কাঁধে হাত রাখলাম আমি।
ওর বুক ততক্ষণে আমার শরীর স্পর্শ করছে।
ফিস ফিস করে বলল, ‘আজ যা শুনলাম, তারপর কীভাবে ওর সাথে থাকব রবিদা?’
ওর কাঁধ, কানের লতিতে আলতো করে আঙুল ছুঁইয়ে দিতে দিতে বললাম, ‘সে সব পরে ভাবা যাবে। এখন কাল সকালে ঠিক ঠাক বাড়ি তো ফিরুক অর্ণব। আর এখানে থাকার সময়ে ও নিয়ে একটা কথাও বলবি না। কাকিমাকেও বারণ করে দিবে যেন এই বিষয়টা না তোলে। অর্ণবের অ্যাটিচিউড কেমন থাকে সেটা লক্ষ্য কর আগে। অত ভাবিস না।‘
বুকুন ততক্ষনে আমার কাঁধে, হাতের বাজুতে নাক, মুখ ঘষতে শুরু করেছে।
আমার আঙুলগুলোও ওর কান, কাঁধ ছুঁয়ে নামছে ধীরে ধীরে নীচের দিকে।
এবার একটা হাতের বদলে দুটো হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরল বুকুন আমাকে।
আমি দু পা পিছিয়ে গিয়ে বড় অশ্বথ গাছের গুঁড়িটাতে ঠেস দিলাম। বুকুন দুহাতে আমার পিঠ খামচে ধরে বুকে, গলায়, কানে নাক, মুখ ঘষতে শুরু করল। আমার সিগারেট না ধরা হাতটা ওর আঁচল ঢাকা পিঠে ঘুরছিল – কখন ওর ঘাড়ে, কখনও ওর শিরদাঁড়ায় – একবার ধীরে ধীরে ওর শাড়ির আঁচল আর ব্লাউজে ঢাকা ব্রায়ের স্ট্র্যাপটা ছুঁয়ে কোমড় অবধি নামছে, তারপর আবারও ধীরে ধীরে ওপরে উঠছে।
সিগারেটটা ফেলে দিলাম – একটা হাত আটকিয়ে ছিল, এখন সেটাও ফ্রি হয়ে গেল।
বুকুনের একটা হাত আমার পিঠ থেকে সরে এসে আমার পাঞ্জাবি জামা আর গেঞ্জির নীচ দিয়ে ঢুকে গিয়ে বুকের কাছে খামচে ধরছে, আর আমার গলায় কখনও জিভ দিয়ে চেটে দিচ্ছে, কখনও হাল্কা কামড় বসাচ্ছে।
আমাদের দুজনের তলপেট একে অপরকে চাপ দিচ্ছে - কখনও আবার ডানদিক বাঁদিক করে আদর করছে ওরা একে অপরকে।
আমার পাজামার ভেতরে ক্রমশ জেগে উঠছে একটা ময়াল সাপ – খুঁজে বেড়াচ্ছে জঙ্গলের রাস্তা।
--
১৫
বৃষ্টির ছাঁট যতই বাড়ছে, ততই যেন বুকুনের আদরের বহর বাড়ছে।
আমার পাঞ্জাবি আর গেঞ্জিটা প্রায় গলার কাছে তুলে দিয়ে আমার বুকে আঁচড় দিচ্ছে, কামড়াচ্ছে। একটা পা ভাঁজ করে একটু তুলে দিয়ে নিজের কোমরটা ঘষছে আমার তলপেটে।
আমার হাতদুটোও আর নিজের কন্ট্রোলে নেই তখন। কখনও একটা হাত বুকুনের কোমরটা খাবলে ধরছে, কখনও কোমর থেকে আরও নীচে নেমে যাচ্ছে – ওর নিতম্বের ওপরে।
বুকুন আমার বুকে অনেকক্ষণ আদর করে মাথাটা সামান্য তুলে জিভটা বার করল, আমিও ওর ইঙ্গিতটা ধরে ঠোঁট ফাঁক করে টেনে নিলাম ওর ঠোঁট।
দুই প্রায় চল্লিশ ছোঁয়া নারী-পুরুষ বৃষ্টির মধ্যে ঘন অন্ধকারে গাছতলায় দাঁড়িয়ে যে এরকম কিছু করতে পারে, তা যদি ঘুণাক্ষরেও কেউ টের পায়, তাহলে যে আমাদের দুটো পরিবারকেই চিরকালের মতো গ্রাম ছাড়া হতে হবে, আরও কী কী ঘটতে পারে – সেই সব কথা আমাদের দুজনের কারও মাথাতেই নেই তখন।
তখন আমি ব্যস্ত, বলা ভাল বুকুনের নিতম্বের ওপরে হস্তসঞ্চালনে। আর তার ফলে যে ওর পায়ের দিক থেকে শাড়ী-পেটিকোট ধীরে ধীরে ওপরের দিকে উঠে আসতে শুরু করেছে, সেটা কি আর সে খেয়াল করে নি!
কিন্তু আমাকে বাধা দেওয়ার বদলে সে উল্টে নিজের কোমর আমার তলপেটে পাজামার ফুলে থাকা জায়গায় আরও জোরে ঘষতে শুরু করল দুই হাতে আমার মাথাটা আঁকড়ে ধরে।
আমি তখন একপায়ে খাড়া। মানে, একটা পা মাটিতে, অন্য পা দিয়ে বুকুনের পা ঘষছি ধীরে ধীরে। ওর শাড়ি-পেটিকোট তখন আমার হাতের টানে উঠে এসেছে ওর হাঁটুরও ওপরে।
আমার মাথা থেকে একটা হাত সরিয়ে সে সরাসরি আমার পাজামার ফুলে ওঠা জায়গাটায় চেপে ধরল।
আমি উঁক করে একটা আওয়াজ করলাম নাক আর গলা দিয়ে। মুখ তো বন্ধ সেই কখন থেকে।
পাজামার ওপর দিয়ে বোধহয় বুকুন ওর কাঙ্খিত জিনিষটা পাচ্ছিল না ঠিক, তাই চেষ্টা করছিল পাজামার দড়িটা খোলার।
ওর মুখ থেকে নিজেকে সামান্য সরিয়ে কানের কাছে ফিস ফিস করে বললাম, ‘এবার খোল দেখি আমার পাজামার দড়িটা!! ছোটবেলায় তো বিলের মাঠে তোর সালোয়ারের দড়িতে গিঁট পড়িয়ে দিয়েছিলাম বলে মেজাজ করেছিলি!!’
আমি হি হি করে হাসতেই বুকুনের ছোট্ট জবাব, ‘শয়তান কোথাকার’!
তবে সেই শয়তানের পাজামার দড়ি গিঁট না ফেলেই ঝট করে খুলেও ফেলল সে। তারপরে নিজের কাজে মন দিল। আর আমি আমার কাজে – যদিও আমার কাজ যে খুব একটা বাকি নেই, সেটা জানি। ওর শাড়ী-পেটিকোট যতটা তোলার প্রয়োজন, ততটা প্রায় তুলেই ফেলেছি আমি।
আর একটাই মাত্র আবরণ সরানোর কাজ বাকি আমার।
তবে বুকুন এ ব্যাপারে আমার থেকে এগিয়ে। সে অপ্রয়োজনীয় দুটো আবরণই আমার কোমর থেকে সরিয়ে দিয়েছে।
আমি তখন তার হাতের মুঠোয় পিষ্ট হচ্ছি।
বুকুনের কাঁধদুটো ধরে দুজনে জায়গা বদল করে নিলাম। ও এখন অশ্বত্থ গাছের গুঁড়ির দিকে মুখ করে – দুই হাতে গাছের গুঁড়িটা আগলে রেখেছে। আমি রাস্তার দিকে পেছন করে বুকুনের সঙ্গে লেপ্টে রয়েছি।
গাছের গুঁড়ি আর বুকুনের বৃষ্টি-ভেজা ব্লাউজের তলায় থাকা বুকের মাঝে পিষে যাচ্ছে আমার একটা হাত।
অন্য হাতটা বুকুনের কাঁধে।
বুকুনের কোমরে লেগে থাকা তিনকোনা শেষ আবরণটা কী ভেবে আর সরালাম না, মনে হল থাক – ওটা আর নামাবো না।
কিন্তু আমার ময়াল সাপটা যে জঙ্গল খোঁজার জন্য অসম্ভব খেপে উঠেছে – সে কি আর কোনও বাধা মানবে?
মানলও না। বুকুনই মানতে দিল না বলা চলে।
নিজের হাতেই ঝপ করে সাপের মাথাটা ধরে ফেলে শেষ লজ্জাবস্ত্রের পাশ দিয়েই জঙ্গলে ঢোকার পথ দেখিয়ে দিল সে আমার সাপটাকে।
একটা আঁআআক করে শব্দ বেরলো ওর মুখ থেকে। তারপরে মাঝে মাঝে হাল্কা শীৎকার। ওর গলা দিয়ে হয়তো একটু জোরেই বেরচ্ছিল, কিন্তু প্রচন্ড বৃষ্টির আওয়াজে ওর মুখের বেশ কাছে থাকা স্বত্ত্বেও আমার কানে সেগুলো খুব হাল্কা হয়েই আসছিল।
কিন্তু অনেক দূর দিয়ে বৃষ্টির শব্দের মধ্যেও একটা ট্রাক বা ভারী কোনও গাড়ি যাওয়ার আওয়াজ পেলাম। একটা কুকুর ডেকে উঠল কোথাও। হয়তো সে-ও আমাদেরই মতো বৃষ্টির হাত থেকে বাঁচতে আশ্রয় নিয়েছে কোনও গাছতলায়!
আমরা দুজনেরই যে দম একটু একটু করে কমে আসছে সময়ের সাথে সাথে, সেটা বোঝা যাচ্ছিল আমাদের লয় বাড়া অনুভব করেই।
লয় আরও বাড়াতে বলল বুকুন হাল্কা স্বরে। যতটা সম্ভব চেষ্টা করলাম।
কিন্তু তার ফলেই হোক আর যে কোনও কারণেই হোক, লয় কিছুটা বেড়ে যাওয়ার পরে আর বেশীক্ষণ কসরৎ দেখাতে হল না ওস্তাদজীকে। একটু যেন হঠাৎই গানের আসর শেষ হয়ে গেল।
বুকুনের কানের কাছে মুখ নিয়ে বললাম, ‘তোর হল?’
‘মমমম আগেই হয়েছে আমার!’
‘ওহ বুঝি নি তো!!’
‘আর বুঝে কাজ নেই। বৃষ্টি ধরে আসছে বোধহয়। ঠিক হতে দে।‘
পরিষ্কার হওয়ার জন্য জলের অভাব নেই। গাছের আড়াল থেকে ওই অবস্থাতেই সামান্য হাতটা বাড়াতেই আঁজলা ভরে জল নিয়ে প্রথমে নিজে, তারপরে বুকুনকে একটু পরিষ্কার করে দিলাম।
ও বলছিল বটে, ‘ধ্যাত, তোকে করতে হবে না। নিজেই ধুয়ে নিচ্ছি।‘
কিন্তু আমি আঁজলা ভরা জল দিয়ে ওকে পরিষ্কার করে দেওয়ার সময়ে বাধাও দেয় নি।
তারপর আর শুকনো হওয়ার দরকার ছিল না। কারণ আবারও তো বৃষ্টিতে ভিজতেই হবে আমাদের।
তবে পোষাকআশাক একটু সভ্য-ভদ্র করে নিলাম দুজনেই – যদিও আমাদের জামাকাপড় দেখার জন্য রাস্তায় এই ভোর চারটের সময়ে বৃষ্টির মধ্যে অন্ধকারে কেউই দাঁড়িয়ে থাকবে না!! তবুও!!
একটা সিগারেট ধরালাম।
বুকুন বলল, ‘আমাকেও একটা দে তো। খাব।‘
‘অ্যাঁ?’
‘দে না। কয়েকবার খেয়েছি আমি।‘
ভেজা প্যাকেট থেকে সিগারেট বার করে ওর দিকে এগিয়ে দিলাম। বলল, ‘ধরিয়ে দে। ওটা পারি না, কাশি হয়ে যায় খুব।‘
আমার মুখের সিগারেটটা বার করে ওর দিকে এগিয়ে দিলাম।
‘ইশ তোর খাওয়াটা দিচ্ছিস!! যাক কী আর হবে, তোর মুখের ভেতরটাই তো খেলাম এক্ষুনি!!’ সিগারেটটা দুই আঙ্গুলে চেপে ধরে হাসতে হাসতে বলল বুকুন।
আমি সদ্য বার করা অন্য সিগারেটটা ধরিয়ে নিলাম।
দুজনে তখনও গা ঘেঁষাঘেষি করে দাঁড়িয়ে।
বৃষ্টি কমার লক্ষণ নেই।
‘কী করবি রে! দুই বাড়িতেই তো চিন্তা করছে। ফোন করে দিবি একটা?’ বললাম আমি।
‘না। তাহলে আরও চিন্তা করবে। ভাববে কোথায় আটকিয়ে পড়েছি। তার থেকে মা, জেঠিমা জানে যখন তুই আছিস সাথে বেশী ভাববে না।‘
সিগারেটটা শেষ হয়ে গেল, বৃষ্টি শেষ হল না।
হঠাৎই বুকুন বলল, ‘চল ভিজেই যাই! যাবি?’
‘শীত শুরু হচ্ছে। ভিজলে জ্বরজারিতে পড়বি।‘
‘হুম তা ঠিক। জ্বর হলে বর হয়তো আমার সেবা করার জন্য বাড়িতে বসে থাকবে বন্ধুর বউ-শালীর সঙ্গে না শুয়ে!’
একটা বাকা হাসি দিল বুকুন।
আমি কথা না বাড়িয়ে ওর কাঁধে একটা হাত রেখে সামান্য চাপ দিলাম।
ও একটা হাত তুলে আমার হাতের ওপরে রাখল। তারপর বলল, ‘চল বেরই।‘
--
•
Posts: 72
Threads: 2
Likes Received: 27 in 19 posts
Likes Given: 0
Joined: Mar 2019
Reputation:
14
১৬
সাইকেলের হ্যান্ডেলটা ধরে গাছের নীচ থেকে বেরনোর মিনিট খানেকের মধ্যেই চুপচুপে ভিজে গেলাম দুজনে। দুজনের শরীর আর মন একটু আগে একবার ঠান্ডা হয়েছে, এবার শরীর আরও ঠান্ডা হল।
এতটাই, যে একটু শীত শীতও করতে লাগল আমার। বুকুন আমার হাতটা জড়িয়ে ধরে রেখেই হাঁটছে।
জিগ্যেস করলাম, ‘সাইকেলে বসবি?’
‘এই অন্ধকার আর বৃষ্টির মধ্যে সাইকেল চালাতে হবে না তোকে। পড়ে টড়ে যাবি, আমাকেও ফেলবি! হেঁটেই চল।‘
আমার পাশেপাশে হাঁটছিল বুকুন।
একবার বলল, ‘ইশ, যা তা হল বল রবিদা! রাস্তার মধ্যে, গাছের তলায় এইভাবে! হি হি হি।‘
আমি কথা না বলে এক হাতে ওর কাঁধটা জড়িয়ে ধরলাম।
এখনও এই মাঝবয়সী প্রেমিকযুগলকে দেখার কেউ নেই, আমাদের কাউকে লজ্জা পাওয়ারও নেই!
ও আবার বলল, ‘কাল থেকে যখনই ওই রাস্তা দিয়ে যাব আর গাছটা দেখব, তখন আমার কিন্তু লজ্জা করবে খুব!’
খিক খিক করে হাসতে লাগল বুকুন।
টুকটাক কথাবার্তা বলতে বলতে মিনিট কুড়ির মধ্যেই ওদের বাড়ির সামনে পৌঁছিয়ে গেলাম।
ও ঘরে ঢুকে যাওয়ার আগে বললাম, ‘ভাল করে গা মাথা মুছে নিস। আর কাল অর্ণব বাড়ি এলে কোনও সীন ক্রিয়েট করিস না। ও যদি মুখ খোলেও তুই আর কাকি চুপচাপই থাকিস। বেশী কথা এখানে বললে আশপাশের বাড়িতে জানাজানি হবে, আরও কেলো হবে।‘
‘হুম’ বলে বাড়িতে ঢুকে গেল।
বেশী শব্দ না করে তালা খুলে বাড়িতে ঢুকলাম। মা বোধহয় এখনও ঘুমোচ্ছে।
জামাকাপড় ছেড়ে গা, মাথা ভাল করে মুছে শুকনো বারমুডা আর টিশার্ট পড়ে একটা সিগারেট ধরালাম।
তারপর লাইটটা নিভিয়ে দিয়ে শুলাম একটা পাতলা চাদর টেনে নিয়ে।
ঘুম কিছুতেই আসছে না। পিয়ালী বাড়ি ফিরল কি? না এখনও মদ খাচ্ছে আর বন্ধুদের সাথে উদ্দাম নাচ করছে – না কি আরও বেশী কিছু?
হঠাৎই খেয়াল হল – আজ অর্ণব যেমন তার বন্ধুর বউ আর শালীর সাথে নাচতে নাচতে তাদের গায়ের ওপরেই পড়ে গিয়ে শুয়ে আছে – পিয়ালীর অবস্থা যে সেরকম হয় নি তা গ্যারান্টি আছে কোনও!
কে জানে বউ কার সাথে শুয়েছে – এক না একাধিক!!
পিয়ালী কলকাতার মেয়ে – চিরকালই পার্টি – বন্ধুবান্ধব নিয়ে হুল্লোড় এসব করতে ভালবাসে। সেইসব পার্টিতে মদ তো থাকবেই – আমাদের বাড়িতেও হয় সেইসব পার্টি। আমিও মাঝে মাঝে থাকি। আর বাড়ির বাইরেরগুলো তে ঠিক হয় জানি না, তবে একটা আন্দাজ ছিল।
কলেজ ইউনিভার্সিটিতে তো নাকি গাঁজা টাজাও খেয়েছে বেশ অনেকবার – এসব পিয়ালীর কাছ থেকেই শোনা।
আজকের পার্টিতে কি মদ ছাড়া গাঁজাও ছিল?
পিয়ালী সব কিছু একসাথে খেয়ে সম্পূর্ণ আউট হয়ে যায় নি তো?
একবার মনে হল ধুর, ভেবে কী করব! কিছু তো করা যাবে না এখান থেকে! যা করছে করুক। কিন্তু তারপরেই আবার মনে হল আমি শহরে নেই আর ছেলেকে রাতে একা রেখে দিয়ে (যদিও কাজের মাসি আছে) সে পার্টি করছে সেই কোন বাগানবাড়িতে! সেখানে কি অন্য বন্ধুদের বউরা আছে?
কথাটা খেয়াল হতেই হোয়াটসঅ্যাপে পাঠানো ওই তমালের ভিডিওটা আবার চালালাম।
নজর করার চেষ্টা করলাম যে অন্য কোনও মেয়েকে দেখা যায় কি না। তবে আধো অন্ধকারে ভাল করে বোঝা গেল না ঘরে বাকি আর কারা আছে, শুধু মনে হল দু একটা মেয়েলী গলা পেলাম। তারা কারা কে জানে!
মোবাইলটা পাশে রেখে চোখ বুজলাম।
সকাল সকাল বাড়িতে ফোন করতে হবে ছেলেকে। আর তারপরে বুকুনকে।
ঘরের লোক ফিরল কী না জানতে হবে!!
--
১৭
চোখ বুজেও অনেকক্ষণ জেগেই ছিলাম।
একদিকে বুকুনের সাথে এতবছর পরে আবারও সম্পর্ক তৈরী হওয়া, অন্য দিকে পিয়ালীর পার্টি করা। একদিকে পুরণো প্রেমিকার ফিরে আসা, অন্য দিকে বিয়ে করা বউ!
হাবিজাবি ভাবতে ভাবতে কখনও একটা চোখের পাতা লেগে এসেছিল।
মোবাইলের আওয়াজে চোখ খুললাম। অনেকক্ষণ আগেই সকাল হয়ে গেছে বুঝলাম।
ঘুমচোখে এদিক ওদিক হাতড়িয়ে মোবাইলটা হাতে নিয়ে দেখলাম কলকাতায় আমার বাড়ির নম্বর থেকে ফোন।
কী হল আবার, ভেবেই কলটা রিসিভ করলাম, ওপারে ছেলের গলা।
‘কী গো মা তো এখনও আসে নিইই!!’
‘সে কি, এখনও আসে নি? হুম, দাঁড়া খোঁজ নিচ্ছি। তুই ব্রাশ করে কিছু খেয়ে নে। মাসি আছে তো?’
‘মাকে ফোন করেছি, ধরে নি। মাসি আছে। ব্রাশ করা হয়ে গেছে তো সেই কখওওন.. এত বেলায় কেউ ব্রাশ করে!’
‘ও আমি ঘড়ি দেখি নি বাবু। খেয়েছিস কিছু?’
‘মাসি ব্রেকফাস্ট বানাচ্ছে।‘
‘আচ্ছা আমি দেখি তোর মা কে!’
ফোনটা ছেড়ে দিয়ে কাল রাতে আসা হোয়াটস অ্যাপ মেসেজগুলো চেক করলাম – একবারেই পেয়ে গেলাম ওই তমালের নম্বর।
রিং করতে গিয়েও ভাবলাম আগে একবার পিয়ালীকেই ট্রাই করি।
রিং হয়ে হয়ে কেটে গেল, কেউ ফোন ধরল না।
তিনবারের পর চেষ্টা করলাম ওই তমালকে ফোন করতে।
সে-ও কি আর ধরবে ফোন!
তবুও খোঁজ নেওয়াটা আমার কর্তব্য।
নাহ। কেউই ফোন ধরছে না।
একটু চিন্তা হচ্ছে এখন – হল কি পিয়ালীর। সারারাত মদ খেয়ে আর হুল্লোড় করে কি অসাড়ে ঘুমোচ্ছে এখনও না কি অন্য কোনও ঝামেলায় পড়ল?
পিয়ালীকে হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ করলাম কল মী ব্যাক। বাড়িতেও ফোন কর, ছেলে ভাবছে কেন বাড়ি পৌঁছও নি বলে।
ভুরুটা কুঁচকে ভাবছি আর কোনও ভাবে খবর নেওয়া যায় কী না, পিয়ালীর অন্য বন্ধু-বান্ধবদের কয়েকজনকে চিনি, কিন্তু তাদের নম্বর নেই আমার কাছে!
ছেলেটা একা আছে, তাহলে কি তাড়াতাড়ি ফিরে যাব কলকাতা? মাকে কী বলব – তার পুত্রবধূ মদ খেয়ে পার্টি করে রাতে তো নয়ই এই এত বেলাতেও বাড়ি ফেরে নি!! তাই কলকাতা ফিরতে হবে!! অসাধারণ।
এমনিতেই মায়ের সাথে পিয়ালীর খুব একটা বনিবনা নেই, তার ওপরে এই খবর দিলে তো হয়েছে!!
তখনই মনে হল একবার বুকুনকেও ফোন করা দরকার – ওর বর বাড়ি ফিরল কী না জানা উচিত।
একবারেই ফোনটা ধরল বুকুন।
‘আমি ভাবলাম সারারাত জেগে হয়তো দেরী করে ঘুম থেকে উঠবি, তাই আর সকালে ফোন করি নি। সে ফিরেছে কিছুক্ষণ আগে। মোটামুটি ঠিকঠাক অবস্থায়। লেবু জল চেয়ে খেল। এখন স্নানে ঢুকেছে। আমি আর জিগ্যেস করি নি কোথায় ছিলে রাতে, মা-ও জানতে চায় নি কিছু। অর্ণবও নিজে থেকে কিছু বলে নি,’ ফোনটা ধরেই একটানা কথাগুলো বলে থামল বুকুন।
‘হুম’, বললাম আমি।
বুকুনের পাল্টা প্রশ্ন, ‘বৌদি বাড়ি ফিরেছে তো সকালে?’
কী আর বলব, ‘না, এখনও না’ বলতে হল।
‘সে কি ! এত বেলাতেও ফেরে নি? ছেলে কার কাছে? বৌদিকে ফোন করেছিলি তুই?’ জানতে চাইল।
‘ছেলে কাজের মাসির কাছে আছে। মা ফেরে নি দেখে সে-ও ফোন করেছিল, আমিও ফোন করেছিলাম। পিয়ালী ফোন ধরছে না। একজন বন্ধু যে ওই পার্টিতে ছিল, সে-ও ফোন তুলল না। বুঝতে পারছি না কতক্ষণ অপেক্ষা করব।‘
‘সে কি রে! তুই চেষ্টা করতে থাক বারে বারে। জানাস কিন্তু কী হল!‘
‘হুম’ বলে ফোন ছেড়ে দিলাম।
আমার গলার আওয়াজ পেয়েই মা চা করেছিল। এতক্ষনে সেটা নিয়ে ঘরের বাইরে থেকে বলল, ‘রবি চা হয়ে গেছে।‘
‘হুম, দাও।‘
মা দেখলাম গম্ভীর মুখে ঘরে ঢুকল। টেবিলে চায়ের কাপটা রেখেই জিগ্যেস করল, ‘পিয়ালী বাড়ি ফেরে নি রাতে?’
চমকে তাকালাম মায়ের দিকে, বুঝে গেলাম বাইরে থেকে বুকুনকে যা বলছিলাম, একতরফা শুনেই বুঝে গেছে!
‘না। ছোটবেলার বন্ধুদের সঙ্গে একটা গেট টু গেদার ছিল ওদের। ওর বন্ধুরা আমাকে বলেইছিল সকালে বাড়ি পৌঁছিয়ে দেবে। কিন্তু বেশ বেলা হল, তাই ভাবছিলাম!’
‘ফোনও তো ধরছে না?’
‘সবই তো শুনেছ, আবার আমার মুখ থেকে জানতে চাইছ কেন?’
‘আমি আর জেনে কী করব!’
চলে গেল মা ঘর থেকে।
দরজার কাছে গিয়ে মুখ ঘুরিয়ে বলল, ‘বুকুনের বরকে কোথায় পাওয়া গেল কাল?’
‘এক বন্ধুর বাড়িতে থেকে গিয়েছিল। রাত হয়েছে বলে আর আসে নি। আর ফোনে চার্জ ছিল না।‘
কথা না বাড়িয়ে চায়ের কাপ আর মোবাইলটা আবার হাতে নিলাম। রিং করলাম পিয়ালীকে। প্রথমবার ধরল না।
আরেকটা চুমুক দিয়ে দ্বিতীয়বার চেষ্টা করলাম। যখন মনে হচ্ছিল যে এবারও ধরবে না, তখনই ওপার থেকে এক পুরুষ কন্ঠ এল।
‘হ্যালোওওওও’ কথাটা জড়িয়ে গিয়ে আমি শুনলাম ‘হ্যাওওওওও’
বলেই যেন আবার ঘুমিয়ে পড়বে গলাটা।
তাড়াতাড়ি জিগ্যেস করলাম, ‘পিয়ালী কোথায়?’
‘ওওওরাআআ অন্য ঘরেএএ। ঘুমেএএর দেশে! কে বলছেএএএননন?’
অন্য ঘরে ঘুমের দেশে কথাটা বলে নিজেই বেশ মজা পেল – তাই ওই পুরুষকন্ঠ খ্যাক খ্যাক করে একটু হেসে নিল।
‘পিয়ালীকে ডেকে তুলুন আর ফোনটা দিন ওকে প্লিজ,’ একটু জোর গলায় কথাটা বলাতে কাজ হল বোধহয়।
ওদিকের ওই পুরুষের নেশাটা একটু কাটল বোধহয়।
জিগ্যেস করল, ‘আপনি কে বলছেন?’ এখনও বেশ জড়ানো গলা।
‘আমি ওর হাসব্যান্ড।‘ একটু দাঁত চিপেই বললাম।
‘ও। আচ্ছা ওকে ঘুম থেকে তুলতে পারি কি না দেখি।‘
ফোনটা কানে নিয়েই যে সে অন্য কোনও ঘরের দিকে যাচ্ছে, সেটা টের পেলাম। আবারও জিগ্যেস করলাম, ‘আপনারা এখন কোথায় আছেন?’
‘এই আমাদের এক বন্ধুর বাড়িতে। নিউ টাউনে।‘
‘কাল রাতে আপনাদের পার্টি তো বারাসাতের দিকে কোন বাগানবাড়িতে ছিল!’
‘হ্যা, সেখান থেকে চারটে নাগাদ বেরিয়ে এই তমালের বাড়িতে এসেছিলাম আমরা তিনজন।‘
‘ও আর বাকিরা?’
‘বাকি যে পেরেছে বেরিয়ে গেছে, যে পারে নি, ওখানেই ঘুমোচ্ছে। বোঝেনই তো –গেট টু গেদারে সবাই একটু বেসামাল ছিলাম’।
কথা শেষ হতেই ওই পুরুষকন্ঠ শুনলাম ডাকছে ফিস ফিস করে, ‘এই পিয়ালী.. পিয়ালী.. এএএএএইইই.. ওঠ, তোর বর ফোন করেছে..ওঠঠঠঠঠ।‘
মিনিট খানেকের চেষ্টাতেও আমার বউয়ের যে ঘুম ভাঙ্গল না, সেটা বুঝলাম। তবে তার মধ্যে আরেকটা পুরুষকন্ঠ পেলাম – একটু চাপা স্বরে – কী হয়েছে রে শালা – পিউকে ডাকছিস কেন বাঁড়া!’
প্রথম পুরুষ মুখ থেকে ফোনটা সরিয়ে নিয়ে দ্বিতীয় পুরুষকে কিছু একটা বলল, বোধহয় জানাল যে পিউয়ের বর ফোন করেছে।
আর কিছু শোনা গেল না, তবে বুঝলাম ফিসফাস চলছে নিউ টাউনের ওই ঘরে।
সেকেন্ড তিরিশেক পরে প্রথম পুরুষকন্ঠ বলল, ‘বস, পিয়ালী তো ঘুমোচ্ছে এখনও। ছোটবেলার বন্ধু হলেও গায়ে হাত দিয়ে ঠেলতেও পারছি না, হেহে হে .. ওঠানোর চেষ্টা করি জল টল ছিটিয়ে। আপনাকে ফোন করাচ্ছি বস। বাই দা ওয়ে আমার নাম সুরজিৎ।‘
‘ও হাই। ঠিক আছে দেখুন কখন ওঠে আপনাদের বন্ধু। আমি রবি।‘
ফোনটা রেখেই দিচ্ছিলাম, সুরজিৎ হঠাৎই বলল, ‘পিয়ালী ঠিক আমার বন্ধু নয়, ও তমালের ক্লাসমেট ছিল। তমাল আর আমি কলিগ। সেই সূত্রে পিয়ালীর সাথে টুকটাক আলাপ। এটা আমারই ফ্ল্যাট আসলে।‘
আমি দেখতে পেলাম না ঠিকই, কিন্তু বুঝলাম আমার ভুঁরুটা কুঁচকে গেছে বেশ!
কলেজের বন্ধুর অফিস কলিগের বাড়িতে মদ খেয়ে বেহুঁশ হয়ে পড়ে আছে বউ! আর পিয়ালী যে ওই তমালের পাশেই শুয়ে আছে, সেটা আর বলে দেওয়ার দরকার নেই।
সুরজিতের সাথে আর কথা না বাড়িয়ে বললাম, ‘ও আচ্ছা। উঠলে ফোন করবেন। আর কাইন্ডলি যদি পিয়ালী ওঠা পর্যন্ত ওর ফোনটা আপনার কাছেই রাখেন, দরকারে যাতে ফোন করলে কেউ ধরে ফোনটা।‘
‘নিশ্চই নিশ্চই,’ বলে কলটা কেটে দিল সুরজিৎ।
তমালের নামও শুনি নি, আর তার কলিগ সুরজিতের নামও কখনও শুনি নি পিয়ালীর কাছে!
কিন্তু সুরজিতের কথা শুনে তো মনে হল তমালের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ আছেই, দেখাটেখাও নিশ্চই হয় – সেই সূত্রেই পিয়ালীর সাথে সুরজিতের আলাপ হয়েছে!
এত স্বল্প পরিচয়ে কারও বাড়িতে রাতে থেকে যাওয়া যায়!!
সিগারেট ধরালাম একটা।
ভাল লাগছে না একদম।
তবুও বাড়িতে ফোন করে ছেলেকে বললাম, যে মা একটু পরে আসবে। কাজের মাসির সাথেও কথা বলে দুপুরের খাবারের ব্যবস্থা করতে বললাম, আর আমি যে রাতে বাড়ি পৌঁছিয়ে খাব, সেটাও বুঝিয়ে বলে দিলাম মাসিকে।
ততক্ষণে ঠিক করেই নিয়েছি, যে বিকেল বিকেল বেরিয়ে পড়ব, রাত দশটা নাগাদ পৌঁছে যাব কলকাতা।
আজ দশমী, তাই বিজয়ার প্রণামটা ঝট করে সেরেই বেরিয়ে যাব।
বন্ধুদের বাড়িতে সবাই মিলে ছোটবেলার মতো বিজয়া করতে যাওয়ার প্ল্যান হয়েছিল। সেটাতে আমার থাকা হবে না।
তবে বুকুনদের বাড়িটা ঘুরে যাব।
স্নানে ঢুকলাম।
মা কিছু জলখাবার বানিয়েছিল, খেয়ে নিয়ে একটু ঘুম দিলাম আবার।
মাঝে বেশ কয়েকবার মোবাইলের দিকে তাকিয়ে ভেবেছি পিয়ালীকে ফোন করব, কিন্তু তারপরে দেখলাম, ঘুম থেকে উঠলে সুরজিতের কাছে শুনে নিশ্চই ফোন করত। তা যখন করে নি, তার মানে এখনও ঘুমোচ্ছে। শুধু শুধু সুরজিতকে এমব্যারাস করার মানে হয় না।
বুকুনকে শুধু মেসেজ করে জানিয়ে দিয়েছি যে পিয়ালী এক বন্ধুর বাড়িতে রাতে থেকে গেছে।
ঘুম ভাঙল মায়ের ডাকে। দুপুর হয়েছে। মোবাইলটা দেখলাম – নাহ কোনও মিসড কল নেই পিয়ালীর ফোন থেকে।
মাকে বললাম যে বিকেলে বিজয়ার প্রণাম সেরেই বেরিয়ে যাব।
মা আর কিছু জানতে চাইল না।
--
১৮
তমাল ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে কফি আর সিগারেট খাচ্ছিল। ঘন্টা দুয়েক আগে একবার কফি খেয়েছে। সেটা সুরজিৎ বানিয়ে দিয়ে গিয়েছিল। এবারেরটা ও নিজেই বানিয়েছে। মোবাইলে একটু আগেই সময় দেখেছে প্রায় দুটো বাজে।
ও শুনতে পেল নীচ থেকে মাইকের আওয়াজ। নিউটাউনের ওই হাউসিং কমপ্লেক্সের পুজো প্যান্ডেল থেকে মাইকে ঘোষণা হচ্ছিল ‘যারা প্রতিমা বরণ করতে চান, তারা এখনই মন্ডপে চলে আসতে পারেন। বরণের পরে সিঁদুর খেলা চলবে সন্ধ্যে ছটা পর্যন্ত।‘
সুরজিৎ ওর বউ-বাচ্চাদের পিক করবে শ্বশুরবাড়ি থেকে, তাই তমালকে কোনওমতে ঠেলেঠুলে তুলে দিয়ে সে বারোটা নাগাদ বেরিয়ে গেছে।
বলে গেছে বার বার, বিকেলের পরে যেন তমাল আর পিয়ালী ওর ফ্ল্যাটে কোনওমতেই আর না থাকে – ওর বউ বাড়ি ফিরে এসে দেখলে লঙ্কাকান্ড বাধিয়ে দেবে!
নবমীর রাতে বউ বাচ্চা কেউ বাড়িতে ছিল না বলে তমাল আর পিয়ালীকে ভোর রাতে আসতে দিয়েছে। বারবার করে কথাগুলো বুঝিয়ে দিয়ে গেছে সুরজিৎ।
কফিটা শেষ করে ব্যালকনি থেকে ঘরে এল তমাল।
এখনও শরীর জুড়ে ক্লান্তি। ভাবল আর একটু গড়িয়ে নেওয়া যায়। দুটোর সময়ে ডেকে দেবে পিয়ালীকে। কালকে হুল্লোড়ের রেশ তো ছিলই, তারপরে ভোররাতে সুরজিতের বেডরুমে বেশ কয়েক ঘন্টার শারীরিক পরিশ্রম!
বিছানায় ঘুমিয়ে থাকা পিয়ালীর দিকে তাকাল তমাল।
মনে মনে বলল, ‘উফফ এই মাঝ তিরিশেও তুই পারিস পিউ!! কী স্ট্যামিনা মাইরি তোর এখনও!!’
পাশে ঘুমিয়ে থাকা কলেজের বান্ধবী – এক সময়ের কিছুদিনের গার্লফ্রেন্ড – বা বলা ভাল শরীরি বন্ধু পিয়ালীর গায়ে একটা পাতলা চাদর রয়েছে, কিন্তু তমাল ভাল করেই জানে পিউর শরীর আর এই চাদরের মাঝে আর কোনও কাপড় নেই! সেটা অবশ্য যে কেউ দেখলেই বুঝতে পারবে – চাদরটা তো আর পরিপাটি করে পিয়ালীর গায়ে নেই! আর ঢাকা অংশগুলোর নীচ থেকেই পিয়ালীর শরীরের নানা অঙ্গ প্রত্যঙ্গের আভাস ফুটে উঠেছে।
চাদরের ভেতর থেকে ফুটে ওঠা পিয়ালীর শরীরের এক আধটা অঙ্গ আঙ্গুল দিয়ে ছুঁয়ে দেখছিল তমাল, কখনও আবার দুই আঙ্গুল দিয়ে মুচড়ে দিচ্ছিল পর্বত শিখরের মতো পিয়ালীর শরীরের উঁচু হয়ে থাকা অংশটা।
সামান্য নড়ল পিয়ালী।
তমাল মনেমনে ভাবল এর পর আবার কবে সুযোগ পাওয়া যাবে কে জানে, আরেকবার হবে না কি!
‘এএইইইইই কী দুষ্টুমি করছিসসসসস সকালবেলায় বাবু!’ ঘুম জড়ানো গলায়, চোখ বন্ধ অবস্থাতেই একটু পাশ ফিরতে ফিরতে বলল পিয়ালী।
তমালের আঙ্গুলের ছোঁয়ায় পিয়ালীর ঘুম ভাঙ্গছে!
জবাব না দিয়ে তমালের আঙ্গুল চাদরে ঢাকা বান্ধবীর শরীরের অন্য অংশের খোঁজ শুরু করল।
‘মমমম আর না। অনেক দুষ্টুমি করেছিস রাত থেকে। বাড়ি যেতে হবে তো আমাকে’, চাদরের তলা থেকে দুটো হাত বাড় করে আড়মোড়া ভাঙ্গল পিয়ালী। চাদরটা শুধু ওর বুক অবধি ঢাকা এখন।
‘সকাল? এখন? কটা বাজে বল তো বাবু?’ আদুরে গলায় বলল তমাল।
‘কটা?’
‘দুটো পাঁচ’
তড়াক করে উঠে বসতে গিয়ে গা থেকে চাদরটা খসে গেল পিয়ালীর। সঙ্গে সঙ্গেই সেটা তুলে নিল বুকের ওপরে।
‘কটা বাজে বললি?’
‘দুটো পাঁচ বাজে’।
‘শীট ... শীট...ডাকিস নি কেন আমাকে! ছেলে বাড়িতে একা রয়েছে!!!!!! ’ একটু গলা তুলেই বলতে বলতে বিছানা ছেড়ে উঠে পড়ল পিয়ালী – চাদরটা বিছানাতেই পড়ে রইল। সেদিকে আর খেয়াল করল না পিয়ালী।
এদিক ওদিক খুঁজে নিয়ে একে একে আন্ডারগার্মেন্টসগুলো পড়তে শুরু করল সমানে চলল তমালকে ইংরেজীতে অ্যারিস্ট্রোক্র্যাটিক গালাগালি।
শাড়িটা পড়তে গিয়েও বলল, ‘ওয়াশরুমটা কোন দিকে যেন?’
তমালও গালাগালির তোড়ে ডিফেন্সলেস হয়ে পড়েছে। তার না হয় সংসার নেই, কিন্তু পিয়ালীর যে সংসার আছে, বাড়িতে ছেলেকে একা রেখে শুধু ওর কথায় রাতভর পার্টি করেছে, তারপরে বন্ধুর ফ্ল্যাটে এসে ওর শরীরের খিদে মিটেয়েছে নানা ভাবে – এসব কথা তমালের মাথায় আসে নি এতক্ষণ!
পিয়ালীর কথার তোড়ে ওরও মনে হয়েছে, আগেই ডেকে তুলে পিয়ালীকে বাড়ি পৌঁছে দেওয়া উচিত ছিল ওর।
তমালও পোষাক পড়তে শুরু করেছিল, হাতে ইশারায় ওয়াশরুম দেখিয়ে দিল।
একবার চোখ তুলে দেখে নিল স্বল্পবসনা এই মাঝবয়সীর হেঁটে যাওয়াটা, কলেজে পড়ার সময়ে দিনরাত যার স্বপ্নে বিভোর হয়ে থাকত তমাল।
এবার কীভাবে ম্যানেজ করবে ওর বাড়ি, কে জানে, মনে মনে ভাবল তমাল।
কী মনে হতে আদ্ধেক পোষাক পড়েই ও কিচেনে গিয়ে কফির জল চড়িয়ে দিল দুজনের জন্য।
পিয়ালীকে এককাপ কফি করে দেওয়া দরকার।
হঠাৎ আরও দায়িত্বের কথা মনে পড়ল তমালের। বিছানা, ঘর সব পরিষ্কার করে রেখে যেতে হবে, যাতে সুরজিতের বউ বাড়ি ফিরে এসে কিছু বুঝতে না পারে।
ঘরের বড় আলো জ্বালিয়ে চাদরটাদর ভাঁজ করতে করতেই পিয়ালী বাথরুম থেকে বেরিয়ে এল।
তমালের দিকে একটা কড়া দৃষ্টি দিয়ে পেটিকোট, ব্লাউজ – শাড়ি পড়তে লাগল একে একে, সঙ্গে চলল বাক্যবাণ।
‘তোর কথায় আমি পার্টিতে গেলাম ছেলেকে রেখে – সেখানে যা হওয়ার হয়েছে, এখানে আসতে বললি, তা-ও এলাম! তোর এই টুকু সেন্স কাজ করল না যে আমাকে সকালে বাড়ি ফিরতে হবে? আমি ঘুমিয়ে পড়লাম আর তুই বা তোর ওই কলিগ কেউ ডাকলি না! তারপরে আবার গায়ে হাত বোলাচ্ছিলি!! জানোয়ার।‘
তমাল বুঝল এই কথার জবাব দিতে গেলে আরও ক্যাচাল হবে। চেঁচামেচি করতে পারে, পাশের ফ্ল্যাট কারও কানে গেলে বিপদ আছে।
তাই চুপচাপ বিছানাটা ঠিকঠাক করে দিয়ে ভাল করে দেখে নিল, কোথাও কিছু পড়ে আছে কী না – তাদের কয়েকঘন্টা দুষ্টুমির চিহ্ন।
হঠাৎই কী খেয়াল হতে বালিশটা তুলল, নীচ থেকে একটা ছোট্ট কাগজের রঙচঙে মোড়ক বার করে পকেটে ঢোকাতে যাচ্ছিল, কিন্তু পিয়ালীর চোখে পড়ে গেল সেটা!
‘দেখি প্যাকেটটা,’ শাড়ির আঁচলটা ঠিক করতে করতে একটা হাত বাড়াল পিয়ালী।
তমালও বিনাবাক্যব্যয়ে ছোট্ট চৌকো কাগজের প্যাকেটটা এগিয়ে দিল।
তমাল জানে এরপর কী বড় ঝড় আসতে চলেছে।
ভাবতে ভাবতেই এগিয়ে এল – ঝড়, আর সাথে পিয়ালী।
‘তিনটেই তো রয়েছে দেখছি প্যাকেটে !! ইউজ করিস নি তুই!!’ বিছানায় ধপ করে বসে পড়া তমালের থুতনিটা বেশ জোরেই তুলে ধরে জিগ্যেস করছে পিয়ালী।
‘না‘
‘মানে? কেনওওও!!!! মুখ তোল, এদিকে তাকিয়ে কথা বল! ইউজ করিস নি মানে কি? ঠিক করে বল স্কাউন্ড্রেল! হোয়্যার ডিড ইউ কাম? কোথায় ফেলেছিস?’
তমাল বলল, ‘আমরা কেউই ভেতরে ফেলি নি!’
‘আমরা কেউ মানে?’ আরও অবাক হয়ে জানতে চাইল পিয়ালী। শাড়ীর আঁচলটা তখনও ঠিকমতো কাঁধে পিন দিয়ে লাগায় নি ও, সেটা মাটিতে গড়াগড়ি খাচ্ছে।
‘দিস ইজ ড্যাম সিরিয়াস তমাল। আর কে জয়েন করেছিল তোর আর আমার সাথে?’
‘সুরজিৎ ছিল তো। তোর মনে নেই কিছুই?’
‘শীট..’ বলে বিছানায় বসে পড়ল পিয়ালী হাতের তালুতে কপালটা নামিয়ে।
মিনিট খানেক পড়ে তমাল পিয়ালীর কাঁধে হাত দিয়ে কিছু বলার চেষ্টা করতেই ফেটে পড়ল পিয়ালী।
এক ঝটকায় কাঁধ থেকে তমালের হাতটা সরিয়ে দিয়ে বেশ জোর গলায় পিয়ালী বলে উঠল, ‘কী মনে করেছিস তুই? আই অ্যাম আর হোর? হ্যাঁ? আমি মদ খেয়ে আউট হয়ে গেছিলাম আর সেই সুযোগে কলিগের ফ্ল্যাটে নিয়ে এসে তোরা দুজনে মিলে.. ইশ!!!! আমি ভাবতেও পারছি না! ছি!’
‘তুই তো জেগেই ছিলি পিউ। বাধা দিস নি তো আমাদের কাউকে। নিজেই উল্টে বললি সানরাইজ দেখতে দেখতে করব – ব্যালকনিতে নিয়ে গেলি আমাদের দুজনকে! কিছুই মনে পড়ছে না?’
‘মানে? ব্যালকনিতেএএএএ??? কী বলছিস তুই যা তা!!!! হতেই পারে না! এতটা নেশা তো আমার বারাসাত থেকে বেরনোর সময়ে হয় নি! এখানে আসার পরে কী হল সত্যি করে বল তমাল! না হলে কিন্তু তোকে মেরেই ফেলব আমি!’
তমালের গলাটা এক হাতে খামচে ধরল পিয়ালী।
‘তুই এখন ওঠ, বাড়ি চল। গাড়িতে যেতে যেতে কথা বলব। এমনিতেই অনেক দেরী হয়ে গেছে!’
তমাল একটু শান্ত করতে চাইল পিয়ালীকে।
কথাটা খেয়াল হল পিয়ালীরও। উঠে শাড়িটা তাড়াতাড়ি ঠিক করে নিয়ে নিজের মোবাইলটার খোঁজ করল। এদিক ওদিকে তাকিয়ে বলল, ‘আমার ফোনটা কোথায়? একটা রিং কর তো!’
‘বোধহয় ড্রয়িং রুমে আছে। সুরজিৎ ফোন ধরেছিল মনে হচ্ছে যেন সকালবেলায় – তোর বর ফোন করেছিল।‘
‘অ্যাঁ!!!! বরের ফোন ধরতে গেল কেন?’
‘আরে কী করে জানবে?
‘গান্ডু নাকি, বরের নাম্বার হাবি বলে সেভ করা আছে, লেখা পড়তে পারে না তোর বন্ধু?’
‘ঘুমের ঘোরে খেয়াল করে নি হয়তো?’
‘কী জানতে চেয়েছিল রবি – তোকে কিছু বলেছে সুরজিৎ?’
‘আমিও তখন ঘুমের ঘোরে ছিলাম। ও ফোনটা ধরে তোকে একবার ডাকতে এসেছিল মনে আছে। কী কথা হয়েছে জানি না।‘
‘আই এম ফাক্ড টুডে। কে যে তোর কথায় পার্টিতে যেতে গেলাম। ইশশ!’
বলতে বলতে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল পিয়ালী।
তমাল একবার শেষবারের মতো ঠিক করে ঘরটা দেখে নিল, কোথাও কোনও চিহ্ন রয়ে গেছে কী না ভোররাত থেকে যা যা হয়েছে এই ফ্ল্যাটে – সেসবের। যদিও এই ঘরে বিশেষ কিছু হয় নি – যা হওয়ার সবই ড্রয়িং রুম আর ব্যালকনিতেই হয়েছে। তবুও সাবধানের মার নেই।
তারপর ঘরের দরজা খোলা রেখেই ড্রয়িং রুমের দিকে পা বাড়াল। এতক্ষণে খেয়াল হল পিয়ালীর জন্য কফিটা বানানো হয় নি।
‘এক কাপ কফি খাবি তো?’
‘এই ভরদুপুরে কফি! না। বাদ দে। তাড়াতাড়ি বেরো এখন।‘
তমাল কিচেনে গিয়ে গ্যাসে চড়ানো কফির ফুটন্ত জলটা ফেলে দিয়ে গাড়ির চাবি নিয়ে জুতো পড়ল।
পিয়ালী দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়েই ফোনে মেসেজ বা কিছু চেক করছে।
দরজার বাইরে বেরিয়ে একটু জোরেই টেনে বন্ধ করল তমাল। পাশেই পিয়ালীও ছিল।
দরজা বন্ধ করার শব্দে সুরজিতের ফ্ল্যাটের দিকে মুখ ঘুরিয়ে তাকালেন এক মধ্য বয়সী দম্পতি। তারা লিফট ধরার জন্য অপেক্ষা করছিলেন। ভদ্রমহিলার হাতে প্রতিমা বরণ করার ডালা – সিঁদুর মিষ্টি, পান – এসব। তাঁর ভুরুটা একটু কুঁচকালো, যে দুজন সুরজিৎ দত্তের ফ্ল্যাট থেকে বেরিয়ে এল, তারা অচেনা। স্বামীর মুখের দিকে তাকালেন তিনি একবার, তারপর আবারও দত্তদের ফ্ল্যাট থেকে বেরনো দুজনের দিকে।
মনে মনে ওই ভদ্রমহিলা ভাবলেন সুরজিৎ তো দুপুরে বেরনোর সময়ে বলে গেল শ্বশুরবাড়ি যাচ্ছে বউ বাচ্চাকে আনতে। ওর বউ রুচিকা তো পরশুই বাপের বাড়ি গেছে সন্ধ্যে বেলার কালচারাল প্রোগ্রামের পরে।
তাহলে এরা দুজন কে!!
ততক্ষনে পিয়ালী আর তমালও লিফটের সামনে পৌঁছে গেছে। আর লিফটাও নীচ থেকে এসে দাঁড়িয়েছে আটতলায়।
দরজা খোলার পরে চারজনেই উঠল লিফটে।
ভদ্রলোক এতক্ষণ কোনও কথা বলেন নি, শুধু আড়চোখে তমাল – পিয়ালীকে দেখে গেছেন আর মাঝে মাঝে নিজের বউয়ের সাথে চোখাচুখি হয়েছে উনার।
ভদ্রমহিলার তো পেট ফুলে ঢোল হয়ে উঠছে, কতক্ষনে বরণটা শেষ করেই বাকিদের জানাতে হবে ব্যাপারটা।
কিন্তু নিজের বরের সাথেও একটু আলোচনা করা দরকার। সুরজিৎ আর বউ বাচ্চা কেউ নেই। ওদের ফ্ল্যাট থেকে বেরনো, এখন লিফটে প্রায় গা ঘেঁষে দাঁড়ানো এই দুজন কারা!
--
•
Posts: 72
Threads: 2
Likes Received: 27 in 19 posts
Likes Given: 0
Joined: Mar 2019
Reputation:
14
১৯
নিজে কী অবস্থায় থাকবে, এটা ভেবে তমাল ওর গাড়ি আনে নি কাল। সুরজিতের গাড়িতেই গিয়েছিল পার্টিতে।
সুরজিতের ফ্ল্যাট থেকে বেরনোর আগেই একটা ক্যাব বুক করে নিয়েছিল। সেটা গেটের বাইরেই অপেক্ষা করছে।
পিয়ালীকে নিয়ে সেটাতে উঠে পড়ল তমাল।
গাড়িতে বসেই পিয়ালী গলা নামিয়ে বলল, ‘বাকি কথা আর শুনতে ইচ্ছা করছে না। জাস্ট তোর বন্ধুর কাছ থেকে জেনে বলে দে আমার বরের সাথে তার কী কথা হয়েছে। বাড়িতে তো আমাকেও সেরকমই বলতে হবে।‘
তমাল ফোন করল সুরজিতকে।
‘হুম বেরিয়ে গেছি। জাস্ট জানতে চাইছি পিয়ালীর বরের সাথে তোর কী কী কথা হয়েছে – কী বলেছিস ওকে, সেটা একটু পিয়ালীকে বলে দে.. ফোনটা দিচ্ছি ধর।‘
তমালের হাত থেকে মোবাইলটা নিয়ে কানে লাগিয়ে পিয়ালী শুধু ‘হুম’ বলল। এরা দুজন তাকে নিয়ে যা করেছে কাল রাত থেকে তারপরে আর বাড়তি কথা বলার ইচ্ছা নেই ওর।
মাঝে মাঝে শুধু হু, আচ্ছা বলে তমালকে ফোনটা দিয়ে দিল। মুখটা ঘুরিয়ে বাইরের দিকেই দেখতে লাগল পিয়ালী।
পাশে বসা লোকটার সাথে যে কখনও কলেজে পড়ত বা কম বয়সে শরীর নিয়ে সামান্য কিছু একস্পেরিমেন্ট চালিয়েছে, সেসব ভাবতেও এখন ঘেন্না লাগছে।
এখন আর ওর বুঝতে বাকি নেই যে ওকে নিয়ে কী কী করা হয়ে থাকতে পারে সুরজিতের ফ্ল্যাটে।
তার আগে পার্টিতেও শেষের দিকে কী করেছিল, সেসবও মনে নেই। তবে একটু ফ্লার্ট করছিল গোড়ার দিকে, সেটা মনে আছে।
ওর পেছনে যে বেশ ব্যথা সেটা সকালে বাথরুমে গিয়েই টের পেয়েছিল। কারণটাও আন্দাজ করতে পারছে – নিশ্চই এই দুজনেরই অবদান ওই ব্যথাটা!!
মনে মনে ভাবল ছি! এটা ও কি করল! এতটা নীচে নামল কী করে ও। বাড়িতে ছেলেকে একা ফেলে রেখে দিয়ে।
এখন রবি কী ভাবে রিঅ্যাক্ট করে কে জানে। সুরজিতের কাছ থেকে কতটা শুনেছে, কী মানে দাঁড় করিয়েছে – কে জানে!
নিউ টাউন থেকে সল্ট লেক হয়ে বাইপাস – গোটা রাস্তাই আজ ফাঁকা। তাই ক্যাবটা বেশ জোরেই চলছে।
এখন আর বাড়িতে বা রবিকে ফোন করবে না। একবারে বাড়ি ঢুকে ফোন করবে। কীভাবে ছেলেকে আর রবিকে ম্যানেজ করবে, সেসবই ভাবছিল পিয়ালী।
ওর মুড দেখে তমালও একটু ঘাবড়ে গেছে। দু একবার কথা বলার চেষ্টা করেছিল, কিন্তু পিয়ালীর দিক থেকে কোনও সাড়া না পেয়ে এখন চুপ করে গেছে।
বাড়ির সামনে চলে এল চল্লিশ মিনিটের মধ্যে।
ক্যাব থেকে নামার আগে শুধু একবারই তমালের দিকে তাকিয়ে বলল, ‘আর কখনও কনট্যাক্ট করার চেষ্টা করিস না।‘
বেশ জোরেই দরজাটা বন্ধ করে নিজের ফ্ল্যাটবাড়ির দিকে এগল পিয়ালী।
দরজায় বেল দিতেই ভেতর থেকে ছেলের গলার আওয়াজ পেল পিয়ালী।
একটা লম্বা শ্বাস নিয়ে তৈরী হল ছেলের মুখোমুখি হওয়ার জন্য।
--
২০
কাজের মাসি দরজা খুলতেই পিয়ালীর ওপরে প্রায় ঝাঁপিয়ে পড়ল ছেলে।
‘কোথায় চলে গিয়েছিলে তুমিইইই,’ মাকে জড়িয়ে ধরে প্রায় কেঁদেই ফেলল ও।
‘কোথাও যাই নি বাবু.. এই তো আমি, আসতে দেরী হল,’ ছেলেকে আর মিথ্যে বলতে পারল না পিয়ালী।
বেশ কিছুক্ষণ ছেলেকে আদর করে কাজের মাসিকে বলল, ‘আমাকে বেশী করে লেবু দিয়ে অল্প চিনি আর নুন দিয়ে একটু সরবৎ করে দাও তো।‘
‘আমি একটু চেঞ্জ করে নিই বাবু?’
ছেলেকে কোল থেকে নামিয়ে টিভিতে কার্টুন চ্যানেল চালিয়ে দিল পিয়ালী।
বেডরুমে গিয়ে বিছানায় বসে পড়েছিল মাথাটা হাতের তালুতে রেখে।
ছেলেকে তো সামাল দেওয়া গেল আপাতত, রবিকে কীভাবে ফেস করবে ও।
আরওপরে তমাল আর সুরজিৎ কী কী করেছে কে জানে, যদি কিছু হয়ে যায় তখন মুখ দেখাবে কী করে!
কিছুই মাথায় আসছে না ওর। কেন যে যেতে গেল পার্টিতে.. ইশ!!!!
ভাবতে ভাবতেই মাসি লেবুর জলটা নিয়ে এল।
সেটা হাতে দিতে দিতে বলল, ‘বৌদি, তোমার বোধহয় একটু বেশী খাওয়া হয়ে গিয়েছিল রাতে! কিছু মনে কর না, এসব তো আমাদের ঘরে সামলাতে হয় মাঝে মাঝে, বর তো গলা পর্যন্ত গিলে আসে। ঠান্ডা জলে স্নান করে নাও। কিছু মুখে দাও, শরীর ঠিক হয়ে যাবে।‘
লেবুর জলটা ঢক ঢক করে খেতে খেতে কাজের মাসির কথা শুনল পিয়ালী। ইশ কাজের মাসির সামনেও এক্সপোজড হয়ে গেলাম!! ছি! ছি! ও বুঝে গেল যে বৌদি মদ খেয়ে হুল্লোড় করেছে সারা রাত আদ্ধেক দিন! ইশশ!
কিন্তু যা হওয়ার হয়ে গেছে, সেটা তো আর পাল্টানো যাবে না।
মাসির কথার জবাব না দিয়ে জিগ্যেস করল, ‘ছেলে দুপুরে খেয়েছে?’
‘ওই ভুলিয়ে ভালিয়ে টি ভি চালিয়ে দিয়ে খাইয়েছি। সকাল বেলায় খুব কাঁদছিল, তারপর প্যান্ডেলে নিয়ে গেলাম, একটু ভুলেছিল। আবার দুপুরে খেতে বসে কাঁদছিল। তুমি স্নান করে নাও। আমি খাবার গরম করি।‘
চলে গেল মাসি।
স্নানে যাওয়ার আগে রবিকে ফোন করা দরকার।
ও ঠিক করে নিয়েছে কী বলবে বরকে।
নম্বরটা ডায়াল করতেই প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই ফোনটা তুলল, যেভাবে হ্যালো বলল রবি, সে যে ওয়ারিড, তা এক সেকেন্ডেই বুঝে গেল পিয়ালী।
একটু থেমে থেমে সময় নিয়ে বলল, ‘আমি বাড়িতে। ঠিকই আছি। বেশী ড্রিংক করা হয়ে গিয়েছিল, তাই এতদূর না এসে তমালের এক বন্ধুর ফ্ল্যাটে থেকে গিয়েছিলাম।‘
রবি যাতে আরও ওয়ারিড না হয়ে পড়ে, তার জন্য দলা পাকিয়ে উঠতে চাওয়া কান্নাটা গলার কাছেই কোনওমতে আটকে রাখল পিয়ালী।
রবিকে বারণ করল পিয়ালী তাড়াতাড়ি ফিরে আসতে - ওর আজ নিজেকে একটু গুছিয়ে নেওয়ার সময় দরকার। রবি রাতের মধ্যে ফিরে এলে নিজেকে সামলাতে পারবে না – যদি বরের বুকে মাথা রেখে সব কিছু বলে ফেলে তার পরিণতি কী হতে পারে, তা বুঝতে অসুবিধা হওয়ার কথা না পিয়ালীর।
অনেক বুঝিয়ে শুনিয়ে – কেঁদে – ফোনেই চুমু-টুমু দিয়ে রবির ফিরে আসাটা আটকাল পিয়ালী।
ফোনটা ছেড়ে একটা লম্বা নিশ্বাস নিয়ে চোখটা বুজে রইল কয়েক মিনিট।
তারপরে উঠে গিয়ে বেডরুমের দরজাটা লক করে দিয়ে ওয়াড্রোব থেকে পরিষ্কার জামাকাপড়, আন্ডারগার্মেন্টস বার করল। চুলটা খুলে ফেলে নিজেকে একবার দেখল ওয়াড্রোবের দেওয়ালে লাগানো বডি সাইজড আয়নায়, তারপরে ঢুকে গেল বাথরুমে।
গিজারটা চালিয়ে দিল প্রথমেই – তারপরে স্নানঘরের চারদেওয়ালের নিজস্ব স্পেসে মুখোমুখি হল বড় আয়নাটার।
এই ফ্ল্যাটটা যখন সাজানো হচ্ছিল, তখন পিয়ালী-ই এই বড় আয়নাটা লাগিয়েছিল নিজেদের বেডরুমের সঙ্গের বাথরুমে।
রবি জিগ্যেস করেছিল বাথরুমে এতবড় আয়না দিয়ে কী করবে!
বরের দিকে হাল্কা করে একটা চোখ টিপে বলেছিল, ‘যখন করব, তখন দেখবে কী করি!’
রবি কথা বাড়ায় নি আর সেদিন।
যেদিন শিফট করেছিল ওরা এই ফ্ল্যাটে, সারাদিন ধরে ঘরদোর গোছানোর পরে সন্ধেটা একান্ত নিজেদের করে সামান্য ওয়াইন নিয়ে ব্যালকনিতে গল্প করতে করতে কাটিয়েছিল ওরা দুজনে। ছেলে সেদিন সারা সন্ধ্যে কার্টুন চ্যানেল দেখার পারমিশান পেয়ে গিয়েছিল না চাইতেই।
ব্যালকনির মেঝেতে গা ঘেঁষে বসেছিল ওরা দুজনে। সেটা বর্ষাকাল ছিল না, তবুও সেদিন হাল্কা বৃষ্টি পড়ছিল। এত উঁচুতে ফ্ল্যাট – তাই হাওয়াও দিচ্ছিল বেশ। হাল্কা বৃষ্টি আর হাওয়ায় ওদের দুজনেরই একটু শিরশির করছিল – তাই ওরা দুজনে আরও কাছাকাছি সরে আসছিল ক্রমশ।
একটা সময়ে রবি আর পিয়ালী দুজনে দুজনকে জড়িয়ে ধরেছিল - বোধহয় ঠান্ডার হাত থেকেই বাঁচতে!!!
তার একটু পরেই ব্যালকনির কাঁচের দরজার পেছনে থাকা ভারী পর্দাটা সামান্য সরিয়ে উঁকি দিয়ে দেখে নিয়েছিল ভেতরটা – কোনও ব্যাঘাত আসবে না ভেতর থেকে (থ্যাঙ্কস টু কার্টুন !) - নিশ্চিত হয়েই মেঝেতে ওয়াইনের চার নম্বর পেগের আধ খাওয়া গ্লাসটা নামিয়ে রেখে পিয়ালী উঠে বসেছিল রবির কোলে।
হাল্কা গোলাপী রঙ্গের সিল্কের নরম নাইট গাউনটা একটু টেনে তুলে নিয়েছিল হাঁটুর কাছে! অন্য কোনও কারণ নেই – রবির কোলে বসতে সুবিধা হবে – এই ভেবে।
তার পরের মুহুর্তেই বরের মুখটা টেনে নিয়েছিল নিজের বুকে।
রবির পেটেও তখন সমপরিমান ওয়াইন।
তবুও সে ওয়াইনের মায়াটা তখনই ত্যাগ না করতে পেরে এক হাতে গ্লাস আর অন্য হাতে বউয়ের পিঠ বেড় দিয়ে ধরেছিল।
--
২১
ওয়াইনের মায়া কাটিয়ে গ্লাসটা বেশ কিছুক্ষণ পরে নিজেই নামিয়ে রেখেছিল রবি – যখন বুঝতে পারল যে ওয়াইনের থেকেও ভাল কিছুতে ওর মুখটা ভরে গেছে আর সেই বস্তুটি তখনই গিলে ফেলাও যাবে না – অনেকক্ষণ ধরে ভক্ষণ করতে হবে।
পিয়ালী বরের মুখে নানা ভাবে ওই সুস্বাদু খাদ্যটি গুঁজে দিচ্ছিল – আর পতি দেবের শরীর মন জুড়িয়ে যাওয়ার আনন্দে নিজেও উৎফুল্ল হয়ে উঠছিল। মাঝে মাঝেই ছোট ছোট শীৎকার দিয়ে সেটা বরকে জানাচ্ছিলও।
ওর বরের তখনও মুখ ভর্তি – সে একমনে কামড়িয়ে, চুষে ভক্ষণ করে চলেছে পিয়ালীকে।
তার বরের পরিতৃপ্তিটা পিয়ালী টের পাচ্ছিল নিজের তলপেটের তলায়।
রবির মাথা ভরা চুলের মধ্যে নিজের মুখটা গুঁজে বলেছিল, ‘উফ কী খোঁচাচ্ছে বল তো তখন থেকে!’
রবি ঠিকমতো জবাব দিতে পারে নি – কারণ তার মুখভর্তি খাবার যেটা পিয়ালীই তাকে খাইয়ে দিচ্ছিল।
ওদের তখন আর শীত শীত ভাবটা কেটে গিয়েছিল।
পিয়ালী রবির কানে হাল্কা একটা কামড় দিয়ে আর্তি জানিয়েছিল ‘ভেতরে চল সোনা।‘
দুজনে কয়েক সেকেন্ড সময় নিয়ে নিজেদের একটু ঠিক ঠাক করে নিয়ে ব্যালকনির মেঝে থেকে ওয়াইনের গ্লাস দুটো তুলে ভারী পর্দাটা সরিয়ে ড্রয়িং রুম হয়ে নিজেদের বেডরুমের দিকে পা বাড়িয়েছিল।
ছেলে তখনও কার্টুনে মগ্ন। সেদিকেই তাকে আরও বেশ কিছুক্ষণ আটকিয়ে রাখার জন্য একটা চিপসের প্যাকেটা ধরিয়ে দিয়েছিল পিয়ালী।
ছেলে হয়তো ভেবেছিল আজ মায়ের হল টা কী – কার্টুন চিপস এক সাথে!!!
অন্য দিন তো চাইলেই বকা দেয়! আর আজ এদুটোর সঙ্গে আবার গাল টিপে আদরও করে দিয়ে বলল দেখ বাবু বসে বসে!
পিয়ালী বেডরুমের দরজাটা ভেতর থেকে লক করেই সেটাতেই ঠেস দিয়ে বেশ কিছুক্ষণ দাড়িয়ে ছিল – একটা পা হাঁটু থেকে একটু ভাঁজ করে দরজায় ঠেকানো – পিঠও দরজায় ঠেস দেওয়া – দুটো দাঁত দিয়ে নীচের ঠোটের একটা কোণ কামড়িয়ে ধরে বরের দিকে তাকিয়েছিল চোখটা একটু ছোট করে।
আসলে ঠিক বরের দিকে নয়, বরের দুই পায়ের মাঝখানটায় তাকিয়েছিল পিয়ালী।
রবি তখন বিছানাতে বসেই ছিল।
নাইটগাউনটা আবারও ব্যালকনির কায়দায় একটু উঠিয়ে নিয়ে রবির কোমরের দুদিকে পা ছড়িয়ে চেপে বসেছিল পিয়ালী।
এবার রবির হাতে ওয়াইন গ্লাস ছিল না – বড় বড় চুমুকে শেষ করে বেডসাইড টেবিলে রেখে দিয়েছে ও – পিয়ালী ছেলেকে চিপস দিয়ে আসার মধ্যেই।
বউ কোলে চেপে বসতেই তার কোমরটা জড়িয়ে ধরে নিজের কোমরের দিকে আরও টেনে নিয়েছিল রবি।
তারপরের বেশ অনেকটা সময় সঙ্গমরত দুটো সাপ যেমন এ ওকে জড়িয়ে ধরে নানা কায়দায় – সেই ভাবে ওরা দুজনেও একে অন্যকে জড়িয়ে ধরছিল।
তবে এখানে ফারাক একটাই – মাঝে মাঝেই শীৎকারের আওয়াজ বেরচ্ছিল পিয়ালীর গলা দিয়ে – কিছুটা সাবধানী আওয়াজ – যাতে কার্টুনের আওয়াজ না ছাপিয়ে যায় ওর এই ভাললাগার, ভালবাসার শব্দ।
বউয়ের নাইট গাউনের কোমরে জড়িয়ে থাকা সিল্কের বেল্টটা সবে খুলতে যাবে রবি, তখনই পিয়ালী বরের হাতদুটো চেপে ধরেছিল।
চোখদুটো একটা ছোট করে বরের দিকে তাকিয়ে দুদিকে মাথা নেড়ে বারণ করেছিল খুলতে।
রবি একটু অবাকই হয়েছিল, ‘হঠাৎ করে কী হল পিউ?
নিজের মুখটা বরের মুখের আরও কাছে নামিয়ে এনে প্রায় ফিস ফিস করে বলেছিল, ‘এখানে নয় বাবু – আমার সাজানো নতুন বাথরুমে..’
আয়না লাগার পরে সেই বিশাল বাথরুমে প্রমাণ সাইজের বাথটাবও বসিয়েছে পিয়ালী – ওর বরের আদরের পিউ।
‘ও হো.. তাই বলো..’
বউকে কোলে করেই নিয়ে যেতে গিয়েছিল রবি – তবে সেটা আর পারে নি। পিয়ালী বরের পিঠে হাল্কা একটা চাপড় মেরে বলেছিল, ‘এভাবে নিয়ে যেতে গিয়ে ফেলে দিলে কিন্তু সবটাই মাটি – বাথরুমের বদলে তোমাকে হসপিটালে নিয়ে দৌড়তে হবে!’
তাই আর নিজের শক্তি পরীক্ষা না করে রবি কোল থেকে বউকে নামিয়ে দিয়েছিল।
কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই ওরা দুজনে বড় আয়নাটার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে পড়েছিল।
সামনে পিয়ালী, ঘাড়টা ডানদিকে সামান্য কাৎ করে দেওয়া।
পেছনে দাঁড়িয়ে রবি বউয়ের ঘাড়ের বাঁদিকে চুমু দিচ্ছিল আর জিভ বুলিয়ে দিচ্ছিল।
রবির হাতদুটোও থেমে ছিল না – বউয়ের শরীরের সামনের নানা জায়গায় ঘুরে বেড়াচ্ছিল সেদুটো।
আর পিয়ালী এক হাতে রবির হাতের চলাফেরা আটকানোর চেষ্টা করছিল, অন্য হাতটা আবার একেবারে উল্টো কাজ করছিল !
পেছনে থাকা রবির ঘাড়টা জড়িয়ে ধরে তার মাথাভর্তি চুলগুলো ঘেঁটে দিচ্ছিল।
পিয়ালী আয়নাটা লাগানোর সময়ে ভেবেছিল ওদের দুজনের ভালবাসাটা চোখের সামনে দেখবে সে – কিন্তু আজ যখন সেটা করছে ওরা, তার চোখ আবেশে প্রায় বুজে এসেছে – দেখতে খুব একটা পাচ্ছে না সে।
সেই অবস্থাতেই কখন যে গা থেকে সিল্কের নাইট গাউনটা সরিয়ে দিয়েছিল রবি, সেটা খেয়ালই করে নি।
ওর আবেশ কেটেছিল যখন ওকে পাঁজাকোলা করে নিয়ে আয়ানার ঠিক মুখোমুখি বসানো বাথটাবটাতে শুইয়ে দিয়েছিল রবি, সেই সময়ে।
ওদের দুজনেই তখন আদিম মানব-মানবী।
--
•
Posts: 72
Threads: 2
Likes Received: 27 in 19 posts
Likes Given: 0
Joined: Mar 2019
Reputation:
14
২২
শরীরে হাল্কা গরম-ঠান্ডা মেশানো জলের ছোঁয়া লাগতেই পিয়ালীর বুজে থাকা চোখটা খুলে গিয়েছিল।
‘ইইশ.. কী করছ তুমি...বাথটাবে!!!!!! মমমম.. পাজি’, বলে বরের পিঠে আদরের কিল মেরেছিল ও।
আবারও আবেশে চোখ বুজে এসেছিল পিয়ালীর। কিন্তু ও খুব ভালই ফীল করতে পারছিল যে ওর বর শরীরটা নিয়ে ঠিক কী কী করছে – কখনও নাভিমূলে, কখনও আরও কিছুটা নীচে – ট্রিম করা পিউবিক হেয়ারের মাঝে ঘুরছিল রবির জিভটা, আর ওর হাতদুটো পিষে দিচ্ছিল পিয়ালীর স্তনবৃন্তদুটো।
পিয়ালীর আর খেয়াল ছিল না যে শখ করে লাগানো আয়নায় বরের এই আদরটা দেখার।
তাই ও বুঝতেও পারে নি যে কখন রবি হাল্কা গরম-ঠান্ডা মেশানো জলের কলদুটো চালিয়ে দিয়েছে আর বাথটাবটা ধীরে ধীরে ভরে উঠছে।
টাবের দুদিকে পা ছড়িয়ে বরের আদর খেতে খেতে হঠাৎই পিয়ালী সেদিন খেয়াল করেছিল যে ওর পেছনে জলের ছোঁয়া – চোখটা সামান্য খুলে দুষ্টুমি ভরা হাসি দিয়ে বরকে নিজের দিকে আরও টেনে নিতে নিতে বলেছিল, ‘বাবা! জলকেলি? অ্যাঁ? খুব শখ হয়েছে, না?’
রবি ওর প্রশ্নের জবাবে নিজের জিভটা পিয়ালীর মুখের ভেতরে গুঁজে দিয়েছিল সেই রাতে।
সেদিন টাব ভর্তি জলের ভেতরে ওরা স্বামী স্ত্রী যে কতক্ষণ জলকেলি করেছিল, তার ওদের কাররই মনে নেই – কিন্তু রবির আর পিয়ালীর – দুজনেরই শরীর থেকে জল নিসৃত হয়ে সেদিন মিশে গিয়েছিল বাথটাবের নাতিশীতোষ্ণ জলে।
তারপরে আরও বেশ কিছুক্ষণ ওরা ওই ভাবেই শুয়ে ছিল – আদম আর ইভের মতো।
আজ এতদিন পরে, পিয়ালীর কাছে আদম নেই – ও একাই ইভ হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে ওর শখের আয়নাটার সামনে।
সেদিনের সেই সম্ভোগের কথা ভাবতে ভাবতে কখন যে একে একে শাড়ী, ব্লাউজ, পেটিকোট, ব্রা, প্যান্টি – সব কিছু ওর শরীর ছেড়ে বাথরুমের মেঝেতে আশ্রয় নিয়েছে, পিয়ালীর সেটা খেয়াল নেই।
সারারাত, বিশেষ করে ভোররাতে দুই আধা চেনা পুরুষের অত্যাচারের পরে পিয়ালীর শরীর বোধহয় চাইছিল একটু ভালবাসা, একটু উষ্ণতা – ওর, একান্তভাবেই ওর, রবির কাছ থেকে।
কিন্তু রবি যে কাছে নেই, সেটা বোধহয় পিয়ালী অবচেতন মনেও খেয়াল করেছিল। তাই রবির বদলে বিরাট বড় আয়নায় নিজের প্রতিবিম্বটাকেই রবি মনে করে নিজের শরীরটা চেপে ধরেছিল আয়নায়।
আর ধীরে ধীরে আত্মসম্ভোগ শুরু করেছিল – কিছুটা যেন ওই ভোররাতের অত্যাচারের গ্লানি কাটিয়ে উঠতে।
--
২৩
‘এইইই মনীষা, কোথায় ছিলে এতক্ষণ? বরণ হয়ে গেল তোমার? আমি তো কাউকেই খুঁজে পাচ্ছি না এসে থেকে,’ একহাতে বরণডালা, অন্য হাতে ওই মনীষার কাঁধটা ধরে এক নিশ্বাসে কথাগুলো বলে গেলেন মিসেস পূর্ণিমা দাস।
মি. দাস পুজোর প্যান্ডেলে ঢুকেই কেটে পড়েছেন সমবয়সী ফ্ল্যাটওনারদের খোঁজে।
এই একটাই দিন সিঁদুর খেলার সময়ে কচি কচি মেয়েগুলোকে একটু ভাল ভাবে দেখা যায় – সারা বছরই তো ওই তিরিশ বছরের পুরণো বউয়ের মুখ দেখা!
সিঁদুরখেলার দিন বৌদি-কাকিমাদের দেখার অভ্যেস অবশ্য শুধু মি. দাসের মতো বুড়োদের নয়, অনেক ছেলে ছোকরারাও এই দিনের অপেক্ষায় থাকে।
প্যান্ডেলের একপাশে চেয়ারে বসে বসে কচি কচি বৌমাদের দিকে হাসি হাসি মুখে তাকিয়ে থাকতে থাকতে নিজেদের জোয়ানবয়সের স্মৃতি রোমন্থন করছিলেন মি. দাস আর তাঁরই মতো কয়েকজন বয়স্ক।
‘দেখো ভায়া দাস, আমাদের সময়েও সিঁদুর খেলার দিনে কাকিমা-বৌদি দেখতাম, তারাও একটু প্রগল্ভই থাকত, কিন্তু আজকাল মেয়েদের যেন একটু বেশীই খোলামেলা দেখি। বেশীক্ষণ তাকিয়ে থাকা মানে শুদুমুদু শরীরকে কষ্ট দেওয়া। কী বলো? হে হে হে,’ নিজেই নিজের রসালো কথায় একটু হেসে দিলেন মি. বোস।
গতবছর ছেলের বিয়ে দিয়েছেন – বৌমার সঙ্গে মিসেস বোসও এসেছেন কমপ্লেক্সের পুজোয় সিঁদুর খেলতে।
তবে নিজের স্ত্রীর দিকে এখন খুব একটা নজর নেই তাঁর। তিনি বৌমা আর তার সঙ্গী-সাথীদের দিকেই বেশী দেখছেন।
মি. দাসের মনে পড়ছিল ছোটবেলায় তাঁদের বাগবাজার পাড়ার পুজোয় কত দুষ্টুমিই না করেছেন এই দিনে – সেই সব।
‘আজকাল তো আবার সিঁদুর খেলার পোজ দিয়ে খুব ছবিও তোলে কমবয়সী মেয়েরা। xossip বলে একটা সাইট আছে, সেখানে এই সিঁদুর খেলার কত সব ছবি, দেখেছ তো মি. বোস?’ জিগ্যেস করলেন মি. দাস।
‘বাবা, তুমি তো দেখি সিঙ্কিং সিঙ্কিং ড্রিঙ্কিং ওয়াটার হে। xossip সাইটও দেখ নাকি? হে হে! বেশ বেশ।‘
‘কী আর করব বল ভায়া, ওই সব ছবি টবিই তো দেখি, আর মনে মনে বলি তুমি কি কেবলই ছবি!’
দুই বুড়োর কথার মধ্যেই মি. বোসের বৌমা এগিয়ে এসে দুজনকে পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করল। দুজনেরই নজর ছিল বৌমার ঝুঁকে পড়া শাড়ির আঁচলের ভেতরের দিকে।
নেহাত বন্ধুর পুত্রবধূ, তাই মি. দাস বেশীক্ষণ তাকাতে পারলেন না। কোনও মতে বললেন, ‘থাক মা, দীর্ঘজীবি হও।‘
মি. বোসের পুত্রবধূও জানে তার শাড়ির আঁচলটা একটু ঝুঁকে গিয়েছিল। দেরী না করে অন্য দিকে সরে গেল সে। মনে মনে বলল, ‘ঢ্যামনা’।
আর তার শাশুড়ী মণীষা বোস ততক্ষনে মিসেস দাসের কাছ থেকে সবিস্তারে শুনছেন সুরজিতদের ফ্ল্যাট থেকে মধ্যবয়সী একটা লোক আর এট মহিলার বেরিয়ে আসার গল্প।
সুরজিত দত্তর ফাঁকা ফ্ল্যাটে ওই দুজন কী করছিল, তা নিয়ে যখন জল্পনা চলছে, তখনই সেখানে যোগ দিলেন সাত তলার মাধবী দেবী।
সব শুনেটুনে বললেন, ‘আজকাল যে কী কী সব শুনি! শেষে কী না আমাদের বিল্ডিংয়েও এসব! আমার মনে হয় সুরজিত আর নন্দিনীর সাথে কথা বলা দরকার গো।‘
‘না না, কী দরকার আগ বাড়িয়ে বলতে যাবার! হতে পারে ওরা কোনও রিলেটিভ। আমরা যা ভাবছি সেরকম কিছুই নয় হয়তো। বলতে গিয়ে মুখ পুড়বে,’ মত দিলেন মণীষা বোস।
তার পুত্রবধূটি তখন এগারো তলার কমলিকার বরের ক্যামেরার সামনে পোজ দিচ্ছে সিঁদুর খেলার ছবি তোলাতে।
কমলিকা আর ও প্ল্যান করেছে xossip এ একটা অ্যাকাউন্ট খুলে সিঁদুর খেলার বেশ কিছু ছবি দেবে। প্রচুর লোক দেখে নাকি xossipএ এইসব ছবি – আর কী কী সব কমেন্ট – কী খারাপ খারাপ কথা.... ইশশশশ.. কান মাথা লাল হয়ে যায়, আবার ভেতরে যে কীরকম একটা ফিলিং হয়.. উফফফফফ।
কমলিকা দেখিয়েছে বাঙালী বৌদি বলে একটা থ্রেড আছে xossipএ। সেখানে প্রতিবছর দোল, সিঁদুর খেলার প্রচুর সেক্সি ছবি থাকে। এবার ওরাও দেবে।
তবে কমলিকার বরকে বলা হয় নি সেসব – যে কেন ছবি তোলানো হচ্ছে।
সিঁদুর খেলা হচ্ছিল বুকুন আর রবিদের পাড়ার পুজোতেও।
রবি যায় নি।
ও প্রায় রেডিই হয়ে গিয়েছিল বেরোবে বলে। তখনই পিয়ালীর ফোনটা এল।
বউয়ের কথা শুনে ব্যাগটা আবার ঘরে নিয়ে গিয়ে রেখে দিয়েছে, মাকে বলেও দিয়েছে যে ও এখনই ফিরে যাচ্ছে না। তবে রবি নিজেই বুঝতে পারছে যে ওর মনটা ভাল নেই।
একটাই কথা ওর মনে ঘুরপাক খাচ্ছে – পিয়ালী কাল রাতের পরে আজ ওই তমালের সাথে কোথায় ছিল?
শুয়েছে তমালের সাথে, বা ওই সুরজিৎ - যে ফোন ধরেছিল সকালে – তার সাথে?
সাত পাচ ভাবতে ভাবতে মাকে বলে বাড়ির বাইরে বেরল রবি। সাইকেল নিয়ে।
পাড়ার মোড়ে গিয়ে একটা সিগারেট ধরিয়ে চুপচাপই টানছিল। তখন ফোন এল বুকুনের।
‘বেরিয়ে পড়েছিস? কোনও খবর পেলি বৌদির?’ প্রথমেই জিগ্যেস করল বুকুন।
‘হম। সে ফিরেছে বাড়ি। একটু আগে। ফোন করেছিল। আমাকে কলকাতা ফিরতে মানা করল। তাই যাচ্ছি না এখন।‘
সকাল থেকে বারেবারেই ফোন আর হোয়াটসঅ্যাপ করে পিয়ালী ফিরল কী না সেই খোঁজ নিয়েছে বুকুন।
রবিও জিগ্যেস করেছে অর্ণব কেমন আছে, কাল রাতের কথা কিছু বলছে কী না – এসব।
বুকুন খুব একটা উত্তর দেয় নি, শুধু বলেছে, ‘না কোনও কথা বলে নি কালকের ব্যাপারে।‘
এখন জিগ্যেস করল, ‘তুই কি বাড়িতে না বেরিয়েছিস কোথাও? রিকশার আওয়াজ পাচ্ছি যে!’
‘একটু বেরলাম। ভাল লাগছে না আর বাড়িতে থাকতে। তুই বেরবি?’
‘ভাবছিলাম বরণটা করে আসি। তুই যাবি প্যান্ডেলের দিকে? তাহলে আসছি আমি,’ বলল বুকুন।
‘আয় তাহলে। ওদিকেই যাচ্ছি।‘
সিগারেটটা শেষ করে সাইকেলে উঠে প্যাডেল ঘোরালো রবি।
কিছুক্ষণের মধ্যেই প্যান্ডেলে পৌঁছিয়ে গেল ও। একটু অপেক্ষা করতেই দেখতে পেল রিকশা থেকে নামছে বুকুন – তাঁতের শাড়ি পড়েছে, হাতে বরণ ডালা।
আশেপাশে অনেক চেনাজানা লোক, তাই বুকুনের দিকে আর এগিয়ে গেল না ও।
বুকুনও দেখতে পেয়েছে রবিকে, একবার তাকিয়ে সোজা চলে গেল প্যান্ডেলের দিকে।
মিনিট দশেক পরে দুই গালে সিঁদুর মেখে বেরিয়ে সরাসরিই চলে এল রবির দিকে।
রবি বুঝতে পারে নি যে বুকুন হঠাৎ করে পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করে ফেলবে।
‘এই কী করছিস... আরে...’ বলার আগেই হাল্কা করে প্রণাম সেরে উঠে দাঁড়িয়েছে বুকুন।
‘তুই তো বয়সে বড়, না কি?’ মুখটা টিপে হেসে বলল বুকুন।
‘তা বলে সবার সামনে? ধুর! কী যে করিস!’
‘চল বাড়ি চল। বেশীক্ষণ ভাল লাগছে না। কালকেই ফিরে যাব ভাবছি,’ বলল বুকুন।
‘কেন রে? এখন বাড়ি ফিরলে বরং অশান্তি বাড়বে। তার থেকে আমার মনে হয় আরও কিছু দিন থাক এখানে। একটু থিতোতে দে।‘
‘মায়ের সামনে মুখ দেখাতে পারছি না রে রবিদা।‘
‘হুম। কী আর করবি বল। কিন্তু আমার মনে হয় তোর কলকাতায় না ফিরে এখানেই থেকে যাওয়া উচিত আরও কিছু দিন। প্লাস আমিও তো আছি। কলকাতা চলে গেলে আবার কবে কীভাবে দেখা হবে, তার ঠিক আছে!’
একদিকে সাইকেল, অন্যদিকে বুকুনকে নিয়ে ধীরে ধীরে হাঁটছিল রবি।
‘নেহাত ছেলেটা আছে, না হলে আমি আজই জানোয়ারটাকে একটা লাথি মেরে বাড়ির বাইরে বের করে দিতাম। একটু থাকতে ইচ্ছা করছে না ওই ইতরটার সাথে।‘
‘একটা সত্যি কথা বলব, ভুল বুঝিস না আমাকে। বলব?’
রবির মুখের দিকে জিগ্যাসু দৃষ্টিতে তাকাল বুকুন।
‘অর্ণব কাল বন্ধুর শালী বা বউয়ের সঙ্গে মদ খেয়ে নাচানাচি করে শুয়ে পড়েছে – আরও কিছু করেছে কী না জানি না – তবে এটাও তো ঠিক – তুই আর আমিও কিন্তু অনেক কিছুই করেছি গত কদিনে। সেদিক থেকে দেখতে গেলে তো আমরা দুজনেও তো একই অপরাধ করেছি!’
‘তোর আর আমার মধ্যে যা হয়েছে, তার সাথে অর্ণবের ওই কান্ডটা তুলনা করছিস! তোর মাথা ঠিক আছে তো রবিদা?’
‘মাথা ঠিকই আছে রে সোনা। কিন্তু ঠান্ডা মাথায় ভেবে দেখ – অর্ণব যেমন পরনারীর সাথে রাত কাটিয়েছে, তুই-ও তো পরপুরুষের সাথে – আই মীন – একেবারে পাবলিকলি – কী করেছিস!’ একটু মজা করেই বলতে চেষ্টা করেছিল রবি, কিন্তু ফল হল উল্টো।
পাশ দিয়ে একটা রিকশা যাচ্ছিল। হঠাৎই সেটাকে ডেকে উঠে পড়ল – রবির সাথে কোনও কথা না বলে।
রবি হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে রইল কিছুক্ষণ।
মনে মনে ভাবল, যা বাবা কী বললাম ! ঠিক কথাই তো বলেছিলাম – ওর বর এক মহিলার সাথে, আর ও আমার সাথে – ব্যাপারটাতো আলটিমেটলি এক! এতে এত রাগের কী আছে ওর মাথায় ঢুকল না।
বুকুন কোনওমতে চোখের জল চেপে রেখেছিল বাড়ি পৌঁছন অবধি।
তাড়াতাড়ি বরণডালাটা ঠাকুর ঘরে নামিয়ে রেখেই দৌড়ল বাথরুমে।
দরজাটা বন্ধ করেই হাউ হাউ করে কেঁদে ফেলল।
--
•
Posts: 72
Threads: 2
Likes Received: 27 in 19 posts
Likes Given: 0
Joined: Mar 2019
Reputation:
14
২৪
‘ও মা, দরজা খোল মা! ও মা..’ বেডরুমের দরজায় ধাক্কা দিচ্ছিল পিয়ালীর ছেলে। ঘর আর বাথরুমের দরজা পেরিয়ে ছেলের ডাক কানে যায় নি পিয়ালীর। ও তখনও বাথরুমের দেওয়ালে শখ করে লাগানো বড় আয়নাটাতে নিজের অবয়বের ওপরেই নিজের সত্যিকারের শরীরটা চেপে ধরেছিল।
আয়নার ওপরে ওর বুক, পেট, কোমর, জঙ্ঘা, থাই – সব চেপে বসেছিল।
পিয়ালীর মনে পড়ছিল রবির সাথে এই ফ্ল্যাটে শিফট করার সন্ধ্যায় বাথরুমের টাবে সম্ভোগের কথা।
তারপরে কখন যে আয়নার সামনে থেকে সরে গিয়ে সে একাই টাবে শুয়ে পড়েছে, সেটা খেয়ালও করে নি ও।
দুটো পা বাথ-টাবের দুদিকে তুলে দিয়ে অল্প করে গরম-ঠান্ডা মেশানো জলের ধারা পড়ছিল আর টাবটা একটু একটু করে ভরে উঠছিল।
পিয়ালী একদিকে নিজের স্তনবৃন্তদুটোকে মুচড়িয়ে দিচ্ছিল – ঠিক যেভাবে রবি সেদিন আঙ্গুলের কারসাজি দিয়ে ওকে অসম্ভবরকম জাগিয়ে তুলেছিল – সেইভাবে।
সেদিন রবিকে ও যেভাবে আদর করছিল, আজও সেভাবেই আদর করতে লাগল – ওর মনেই হচ্ছিল না যে রবি সেই তার সাথে এই বাথটাবে।
একটা হাত যখন বুকে, অন্য হাতটা ততক্ষণে নিজের নাভিমূল হয়ে আরও বেশ কিছুটা নীচে নেমে গিয়েছিল পিয়ালীর – যেন রবিরই আঙ্গুলগুলো ঘোরাফেরা করছে সেখানে।
ওর চোখ দুটো তখনও পুরোপুরিই বোজা – নাহলে ঠিকই হয়তো টের পেত যে বাথটাবে ও একাই শুয়ে আছে, সঙ্গে রবি নেই।
একটা সময়ে নিজের যোনিপথে নিজের আঙ্গুলের ছোঁয়া পেতেই কেঁপে উঠল পিয়ালী।
ওপরের পাটির কয়েকটা দাঁত দিয়ে নীচের ঠোঁটটা কামড়ে ধরল আর মাথাটা আরও হেলিয়ে দিল, যেমনটা সেই প্রথম সন্ধ্যেবেলায় রবির বুকে হেলিয়ে দিয়েছিল আদর খাওয়ার সময়ে।
পিয়ালীর আঙ্গুলগুলো খুব ধীরে ধীরে ওর নিজেরই যোনিপথের দুটো দিক কখনও চেপে ধরছে, কখনও ডলে দিচ্ছে।
একটা সময়ে একটা আঙ্গুল সামান্য প্রবেশ করালো ভেতরে – রবিও এইভাবেই সেদিন তার বুড়ো আঙ্গুলটা প্রবেশ করিয়েছিল তার ভেতরে।
ততক্ষণে বাথটাবটা জলে বেশ কিছুটা ভরে উঠেছে – জল প্রায় তার যোনির নীচের দিকে ছুঁতে চলেছে।
চোখ বুজে নিজের শরীর মন্থন শুরু করেছিল পিয়ালী।
পা দিয়ে কলটা বন্ধ করে দিয়ে জল আর বেশী ভরে ওঠা আটকিয়ে দিয়েছিল একটু আগেই।
যোনির ভেতরের দেওয়ালগুলোতে যখন নিজের আঙ্গুলগুলো ছুঁয়ে দিচ্ছিল পিয়ালী, তখন ওর কেন যেন মনে হল আজ ভোররাতেই এই জায়গাগুলোকে মন্থন করেছে দুই পরপুরুষ! তমালকে চেনে সেই ইউনিভার্সিটি থেকে, আর তার শরীরের সামান্য অংশ তার আগেই চেনা, কিন্তু সুরজিৎ একেবারেই অচেনা পুরুষ।
পিয়ালীর মনের একটা কোণ ভরে উঠল লজ্জায়, আরেকটা দিক বলছিল এই মধ্য তিরিশেও সে তার মানে দু-দুটো পুরুষকে একা সামলানোর ক্ষমতা রাখে – বিয়ের এত বছর পরেও!! লজ্জা মেশানো সেই গর্বের মুহুর্তটাকে ধরে রাখতে সে একটার বদলে আরও একটা আঙ্গুল প্রবেশ করালো ভেতরে।
আজ ভোর রাতে যখন ওই দুই ‘পরপুরুষ’ তাকে সম্ভোগ করেছিল, সেই সময়টা তার একেবারেই মনে নেই – তাই সে এঞ্জয় করেছিল, না আকুতি জানাচ্ছিল ছেড়ে দেওয়ার জন্য – না কি দুই ‘পরপুরুষ’-এর সামনে নগ্নতা ঢাকতে বৃথা চেষ্টা করেছিল – কিছুই তার মনে নেই এখন। কিন্তু এখন একবার রবির ছোঁয়া আর একবার ওই দুই অচেনা পুরুষের ছোঁয়া তার মনের একেকটা কোনে হানা দিতে লাগল বারে বারে।
কখনও সুরজিতের আঙ্গুলের ছোঁয়া লাগছিল তার উত্থিত স্তনবৃন্তে, কখনও বা তমালের জিভ স্পর্শ করছিল তার নিম্নাঙ্গট।
চোখ বুঁজে সেই দৃশ্য কল্পনা করতে করতে কেঁপে কেঁপে উঠছিল পিয়ালী... আবার পরমুহুর্তেই তার মনে পড়ে যাচ্ছিল রবির সাথে এই বাথটাবে শুয়েই তার সেই সন্ধ্যের সঙ্গমের কথা – যখন বাথটাবের অল্পপরিসরের মধ্যেই তার বর উপুড় হয়ে শুয়ে পড়ে চেখে নিচ্ছিল তার কামরস।
একই সাথে এই তিন তিন জন পুরুষের ছোঁয়া যেন পিয়ালীকে পাগল করে তুলছিল ক্রমশ।
‘সবকটার একই সাথে মনে আসার দরকার ছিল? উফ..’ নীচের ঠোঁটটা জোরে কামড়ে ধরে মনে মনে বলল পিয়ালী।
তার গলা দিয়ে বেরিয়ে আসছিল কখনও ইংরেজী, কখনও বা বিশুদ্ধ বাংলায় আকুতি.. যার মানেটা দাঁড়ায়.. ‘উফফ.. প্লিজ .. পারছি না আর সোনা..’ – এই জাতীয় শব্দ।
পিয়ালী কিছুক্ষণের মধ্যেই তিনটে পুরুষের প্রতিনিধি হিসাবে নিজের অভ্যন্তরে প্রবেশ করিয়েছিল নিজেরই তিনটে আঙ্গুল।
প্রথমে ব্যথায় কঁকিয়ে উঠেছিল, কিন্তু সেটা ক্ষণস্থায়ী – বাথটাবের জল আর নিজের দেহরস মিলিয়ে তার ভেতরটা তখন ভীষণ রকম পিচ্ছিল – তাই ব্যথাটা বেশীক্ষণ থাকে নি।
অন্য হাতের দুটো আঙ্গুলগুলো কখনও হিমালয় পর্বতের শিখরে উঠছে, কখনও বা পাহাড় চূড়া থেকে কিছুটা নেমে আসছে বেসক্যাম্পে।
বহুদিন পরে এভাবে নিজেকে মন্থন করছিল পিয়ালী।
বিয়ের পরে বোধহয় এরকমভাবে নিজেই নিজেকে ভালবাসে নি ও – দরকারও হয় নি রবির কল্যানে।
কিন্তু আজ ওর ভীষণ দরকার...
কতক্ষণ ধরে যে সে স্বমেহন করেছিল, সেটা খেয়াল নেই, কিন্তু যখন বাথটাবের জলে ওর শরীর থেকে স্রোতের মতো বেরিয়ে আসা তরল মিশে গিয়েছিল – তখন ওর গলা দিয়ে যে ডেসিবেলে আওয়াজ বেরচ্ছিল, তা দেওয়ালীর আগে পরে হলে কোর্টের ঠিক করে দেওয়া শব্দদূষনের মাত্রা থেকে খুব কম হত না।
নেহাৎ ছেলে বা কাজের মাসির কানে পৌঁছয় নি সেই শব্দ কারণ বাথরুম আর বেডরুম – দুটো ঘরেরই দরজা বন্ধ ছিল।
নাহলে হয়তো কাজের মাসি ভেবে বসত বৌদির আবার শরীর খারাপ লাগছে বোধহয়!
স্বমৈথুন শেষে বেশ কিছুক্ষণ নিস্তেজ হয়ে পড়েছিল ও – বাথটাবের ভেতরেই।
ধীরে ধীরে জলস্তর বাড়ছিল – আর ওর তৃষ্ণার্ত শরীরটা ভিজিয়ে শান্ত হয়ে আসছিল।
একটা সময় সম্বিৎ ফিরল পিয়ালীর।
বাথ জেল লাগিয়ে নিজের শরীরটা পরিষ্কার করে নিয়ে উঠে দাঁড়াল ভেজা শরীরেই।
বড় আয়নাটায় নিজের চেহারটা দেখতে দেখতেই গায়ে জড়িয়ে নিল বাথটাওয়েলটা।
তারপর মুখ টিপে একটু হেসে বাথরুম থেকে বেরিয়ে এল।
তখনই ওর খেয়াল হল যে ছেলে বেডরুমের দরজায় নক করছে।
ওদের বেডরুম থেকে বহুদূরে, ওর শ্বশুরবাড়ির গ্রামের এক বাড়ির বাথরুমের দরজাতেও সেই সময়ে নক করছিল কেউ।
‘কী হল রে মা... শরীর খারাপ লাগছে নাকি? দরজা খোল.. কী রে?’
পিয়ালীদের ফ্ল্যাটের বাথরুম থেকে অনেক দূরে, তার শ্বশুরবাড়ির গ্রামের এক বাড়ির বাথরুমের দরজাতেও প্রায় একই সময়ে ধাক্কা পড়ছিল – ঠিক যেমনটা পিয়ালীর ছেলে বেডরুমের দরজায় ধাক্কা দিচ্ছিল।
‘ও বুকুন মা.... কী হল রে?’
বুকুনের মা বারে বারে দরজায় ধাক্কা দিচ্ছিলেন তখন।
দরজার ছিটকিনিটা লাগিয়েই দরজায় ঠেস দিয়ে বাথরুমের মেঝেতে বসে পড়েছিল বুকুন – প্যান্ডেল থেকে প্রতিমাবরণ সেরে এসেই।
চোখ দিয়ে তখন অঝোর ধারায় জল নেমে আসছে – যেটা সে রিকশায় আসতে আসতে কোনও মতে সামলিয়ে ছিল।
রবিদা কী করে পারল কথাগুলো বলতে? সে আর রবিদা কি এই প্রথম কাছাকাছি এসেছিল? সেই কোন ছোটবেলাতেই তো নিজেকে সমর্পন করেছিল ওর হাতে – তারপরে এত্তগুলো বছর পরে প্রথমবার মিলিত হয়েছিল কাল দিনের বেলা – আবার ভোররাতে – হলই না হয় সেটা নির্জন রাস্তায় – বৃষ্টির মধ্যে, গাছের নীচে! কিন্তু তা বলে অর্ণবের কেচ্ছার যা বর্ণনা তাকে শুনতে হয়েছে তার বন্ধুর মুখ থেকে, তার বন্ধুপত্নীর সামনে – তার সঙ্গে তাদের দুজনের মিলনের ঘটনাটা তুলনা করে ফেলল রবিদা!
সেটা নিয়ে আবার মজা করারও চেষ্টা করছিল রবিদা।
কথাটা শুনে বুকুনের মনে হয়েছিল একটাই জবাব দেয় – ‘রবিদা – তুমিও? তোমরা সব পুরুষমানুষ কি একইরকম? তোমাকে অন্যরকম ভাবতাম এত্ত বছর। এখন দেখছি ভুল ভেবেছি – ভুল চিনেছি।‘
জবাবটা তার মুখে এসে গেলেও মুখ থেকে আর বেরয় নি।
সে উঠে পড়েছিল রিকশায়। ভাগ্যিস ঠিক সেই সময়েই রিকশাটা দেখতে পেয়েছিল!
‘ছি রবিদা, ছি!’ আবারও মনে মনেই কথাটা বলে সটান উঠে পড়েছিল রিকশায়।
এখন বাথরুমের নি:সঙ্গতায় বসে তার মনে হচ্ছে এত্তগুলো বছর কি তাহলে রবিদাকে মনে রেখে দেওয়া, তাকেই মনে প্রাণে ভালবেসে যাওয়াটা তার ভুল হয়েছিল?
রবিদার জন্যই তো সে অর্ণবের সাথে বিয়ের পরেও, অর্ণব অত ভালবাসা দিতে এগিয়ে আসার পরেও নিজেকে গুটিয়েই রেখেছে এত্তগুলো বছর ধরে।
সে সব কি তাহলে মিথ্যে?
মায়ের ডাকটা বেড়েই চলেছে – আর বেশীক্ষণ ভেতরে থাকলে সন্দেহ করতে পারে।
তাই বুকুন বলল, ‘ঠিক আছি আমি। বেরচ্ছি।‘
চোখে মুখে জলের ছিটে দিয়ে মুখটা একটু মুছে নিয়ে যখন বাথরুমের দরজা খুলল বুকুন, তার মুখ দেখেই ওর মা বুঝলেন মেয়ে বাথরুমের দরজা বন্ধ করে কাঁদছিল।
কেন কাঁদছিল মেয়ে, সেটা মা হয়ে বুঝতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয় তাঁর।
--
২৫
বাথরুম থেকে বেরনোর সময়েই পিয়ালী ঠিক করে নিয়েছিল এরপরে ও কী করবে! ছেলেকে তাড়াতাড়ি খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিল। কাল ভোরে ওঠা আছে।
বুকুনও ভেবে নিয়েছে যে কী করবে ও।
পরের দিন ভোরের ট্রেন ধরে যখন পিয়ালী ছেলেকে নিয়ে শ্বশুরবাড়িতে ঢুকল, পাশ দিয়ে যে রিকশাটা বেরিয়ে গেল, এক ভদ্রলোক, ভদ্রমহিলা আর একটা বাচ্চাকে নিয়ে, সেটা যে বুকুন ওর বর আর ছেলে ছিল, তা পিয়ালী বুঝতে পারল না।
কিন্তু রবিদাদের বাড়ির সামনে যে ভদ্রমহিলা আর বাচ্চা ছেলেটা রিকশা থেকে নামল, তারা যে রবিদার বউ আর ছেলে, সেটা বুঝতে বুকুনের বাকি থাকল না।
যতক্ষণ পারল রবিদার বাড়িটার দিকেই তাকিয়ে রইল ও – আড়চোখে।
কলকাতা যাওয়ার ট্রেনে উঠে কদিন আগে এড করা একটা নম্বর কন্ট্যাক্ট লিস্টে গিয়ে ব্লক করে দিল ও।
সমাপ্ত
Posts: 3,314
Threads: 78
Likes Received: 2,091 in 1,391 posts
Likes Given: 767
Joined: Nov 2018
Reputation:
122
dada apnake ekhane dekhe khubi valo laglo . asa kori notun lekha pabo
•
Posts: 72
Threads: 2
Likes Received: 27 in 19 posts
Likes Given: 0
Joined: Mar 2019
Reputation:
14
(16-03-2019, 10:40 AM)ronylol Wrote: dada apnake ekhane dekhe khubi valo laglo . asa kori notun lekha pabo
ধন্যবাদ। xossip বন্ধ হওয়ার পরে নতুন লেখা আর হয়ে ওঠে নি। তবে দুটো গল্প xossipএ শেষ করা হয় নি। ইচ্ছা আছে এখানে সেই দুটো শেষ করার।
•
Posts: 3,314
Threads: 78
Likes Received: 2,091 in 1,391 posts
Likes Given: 767
Joined: Nov 2018
Reputation:
122
16-03-2019, 10:54 AM
(This post was last modified: 16-03-2019, 10:54 AM by ronylol.)
(16-03-2019, 10:47 AM)Uttam4004 Wrote: ধন্যবাদ। xossip বন্ধ হওয়ার পরে নতুন লেখা আর হয়ে ওঠে নি। তবে দুটো গল্প xossipএ শেষ করা হয় নি। ইচ্ছা আছে এখানে সেই দুটো শেষ করার।
দাদা আপনার "হানিমুন ডায়েরী" যদি আবার শুরু করেন খুব খুশি হতাম
•
Posts: 868
Threads: 5
Likes Received: 667 in 484 posts
Likes Given: 136
Joined: Jan 2019
Reputation:
93
(16-03-2019, 10:54 AM)ronylol Wrote: দাদা আপনার "হানিমুন ডায়েরী" যদি আবার শুরু করেন খুব খুশি হতাম
উনি ঠিকই বলেছেন। গল্পটা দারুণ হচ্ছিল। দেখুন, যদি আবার নতুন করে শুরু করতে পারেন গল্পটাকে আরেকবার।
BEAUTY LIES IN THE EYES OF THE BEHOLDER
•
Posts: 72
Threads: 2
Likes Received: 27 in 19 posts
Likes Given: 0
Joined: Mar 2019
Reputation:
14
(16-03-2019, 10:54 AM)ronylol Wrote: দাদা আপনার "হানিমুন ডায়েরী" যদি আবার শুরু করেন খুব খুশি হতাম
আচ্ছা। দেখি আবারও শুরু করা যায় কী না..
•
Posts: 3,314
Threads: 78
Likes Received: 2,091 in 1,391 posts
Likes Given: 767
Joined: Nov 2018
Reputation:
122
(16-03-2019, 10:57 AM)Uttam4004 Wrote: আচ্ছা। দেখি আবারও শুরু করা যায় কী না..
দেখি না দাদা যেখানে শেষ করেছেন সেখান থেকেই শুরু করুন ।
•
Posts: 72
Threads: 2
Likes Received: 27 in 19 posts
Likes Given: 0
Joined: Mar 2019
Reputation:
14
(16-03-2019, 11:00 AM)ronylol Wrote: দেখি না দাদা যেখানে শেষ করেছেন সেখান থেকেই শুরু করুন । আজ্ঞা শিরোধার্য.. : ;)
•
Posts: 237
Threads: 0
Likes Received: 196 in 134 posts
Likes Given: 157
Joined: Jan 2019
Reputation:
10
দাদা, আপনার বাইনোকুলার গল্পটি এখানে অন্যের মাধ্যমে প্রকাশ হওয়ার পর তীব্র ভাবে আশা করেছি যে এবার হয়তো সরাসরি আপনার দেখা এখানে পাবো! যাক এখানে আপনাকে দেখে খুব ভাল লাগছে! এবার আমাদের আশ মিটিয়ে দিতে পারবেন আশা করি!!
•
Posts: 72
Threads: 2
Likes Received: 27 in 19 posts
Likes Given: 0
Joined: Mar 2019
Reputation:
14
(17-03-2019, 11:12 PM)ব্যাঙের ছাতা Wrote: দাদা, আপনার বাইনোকুলার গল্পটি এখানে অন্যের মাধ্যমে প্রকাশ হওয়ার পর তীব্র ভাবে আশা করেছি যে এবার হয়তো সরাসরি আপনার দেখা এখানে পাবো! যাক এখানে আপনাকে দেখে খুব ভাল লাগছে! এবার আমাদের আশ মিটিয়ে দিতে পারবেন আশা করি!!
অনেক ধন্যবাদ এভাবে আমার কথা ভাবার জন্য। ভাল থাকবেন... আপনাদের আশা কতটা মেটাতে পারব জানি না, চেষ্টা করব।
•
|