Thread Rating:
  • 28 Vote(s) - 3.18 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
পাপ কাম ভালবাসা
ষষ্টবিংশ পর্ব  (#০৩)

সারাটা রাস্তা অভিমানিনী অনুপমা একটাও কথা বলে না, কিন্তু তাতে কি হয়, দেবায়ন কি আর চুপ করে থাকার ছেলে! বারে বারে ক্লাচ ব্রেক কষে নিজের পিঠের ওপরে ঝাঁকিয়ে ফেলে দুষ্টু মিষ্টি পুচ্চি সোনাকে।
“ধ্যাত, কি যে করে না ছেলেটা” বলেই মাথায় একটা চাঁটি কষিয়ে বলে, “ঠিক ভাবে বাইক চালালে চালা, না হলে নেমে যাবো।”
দেবায়ন হেসে উত্তর দেয়, “উফফফ মাইরি, শেষ পর্যন্ত বাইকের ব্রেকের চোটে তোর মুখ ফুটলো।”
অনুপমা আর থাকতে না পেরে পেছন থেকে দেবায়নের কোমর জড়িয়ে নিজের সুউন্নত কোমল স্তন যুগল ওর পিঠের ওপরে পিষে উত্তপ্ত করে বলে, “এই ফুলের বোকে নিয়ে আমাকে নিয়ে কোথায় যাচ্ছিস একটু বল না রে।”
দেবায়ন মিচকি হেসে উত্তর দেয়, “আরে বাবা একটু দাঁড়া, একটু পরেই দেখতে পাবি।”
বাইপাস ছাড়িয়ে তেরো নম্বর ট্যাঙ্ক দিয়ে সল্টলেকে ঢুকতেই অনুপমার শরীরে চাপা উত্তেজনা দেখা দেয়। এই এলাকায় নিবেদিতার বাড়ি, তাহলে কি দেবায়ন ওকে নিবেদিতার বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছে নাকি? মনের মধ্যে সংশয় কিন্তু দেবায়ন উত্তর দিতে নারাজ। ওদের চেনাজানা আর কোন বন্ধুবান্ধবী এই এলাকায় থাকে না। এপাশ ওপাশ দেখতে দেখতে বাইক রাস্তার পর রাস্তা পার করে একটা দুইতলা বেশ সুন্দর বাড়ির সামনে এসে দাঁড়িয়ে পরে। অনুপমা এর আগে কোনোদিন নিবেদিতার বাড়িতে আসেনি। শুধু কয়েকবার বাবার পার্টি গুলোতে মাঝে মাঝে দেখা পাওয়া যায়, তা ছাড়া নিবেদিতার সাথে কোন সম্পর্ক বিশেষ নেই। বেশ কয়েকদিন আগে জলপাইগুড়িতে গিয়ে ধৃতিমান আর নিবেদিতাকে একসাথে দেখেছিল। তার আগে কোনোদিন কথা পর্যন্ত বলেনি ওর সাথে।
অনুপমা শত প্রশ্ন নিয়ে দেবায়নের দিকে তাকায়। দেবায়নের বাইকের আওয়াজ শুনেই একটা চাকর নীচে এসে দরজা খুলে দেয়। অনুপমা আরো অবাক হয়ে যায়, এরা কি আগে থেকেই ওদের প্রতীক্ষা করছিল? কার বাড়ি, কি পরিচয়, কিছুই জানা নেই? তবে হাতের চকোলেট আর ফুলের স্তবক দেখে ওর সন্দেহ শেষ পর্যন্ত দুর হয়ে যায়। নিশ্চয় এই চকোলেট অঙ্কুশের জন্য আর ফুলের স্তবকটা নিবেদিতার জন্য। দেবায়নের ওপরে রাগ করবে না খুশি হবে কিছুই বুঝে পায়না।
দেবায়ন অনুপমাকে ইঙ্গিতে বাড়ির দিকে যেতে অনুরোধ করে। ধীর পায়ে বসার ঘরে ঢুকে সন্দেহ দুর করে অনুপমা। অনুপমা এদিক ওদিকে তাকিয়ে দেখে, ওদের বাড়ির মতন অত বড় না হলেও বেশ বড় বসার ঘর। এক পাশের দেয়াল জুড়ে বিশাল কাপবোর্ড, তারমাঝে নিবেদিতার সাথে ছোট্ট অঙ্কুশের অনেক ছবি। অঙ্কুশকে কোনোদিন চাক্ষুষ দেখেনি অনুপমা তবে ছোট ছেলেটার মাথায় ঝাঁকড়া চুল, গাল দুটো টোপা টোপা, বেশ নাদুসনুদুস মায়ের আদরের ছেলে। ওকে দেখেই নিজের ভাইয়ের কথা মনে পড়ে যায় অনুপমার। ছোট বেলায় অঙ্কন অনেকটা এইরকম দেখতে ছিল। যত বড় হল তত বাঁদরামি বেড়ে গেলেও কোনোদিন দিদির আঁচল ছাড়েনি। ইসসস, ওর আঁচল, কোনোদিন শাড়ি পড়েনি অনুপমা।
মিষ্টি এক কণ্ঠস্বরে অনুপমা ঘুরে তাকায়, “কেমন আছো? আমি ভেবেছিলাম তোমরা লাঞ্চে আসবে।”
নিবেদিতা দেখতে বেশ সুন্দরী, পরনে একটা ঢিলে প্যান্ট আর শার্ট। ততক্ষণে বাইক পার্ক করে দেবায়ন বসার ঘরে ঢুকে পড়েছে। অনুপমা স্মিত হেসে নিবেদিতার হাতে ফুলের স্তবক ধরিয়ে দিয়ে বলে, “ভালো আছি।” দেবায়ন মৃদু মাথা দোলায় নিবেদিতাকে দেখে।
ওদের এই কুশল সম্ভাষণ দেখে অনুপমার মনে সন্দেহের উদ্রেক হয়। দেবায়ন যা ছেলে, মেয়ে দেখেলেই খোঁড়া হয়ে যায়, লাগাতে পারলেই হল। আর যদি নিবেদিতার মতন সুন্দরী আর শিক্ষিতা হলে কথাই নেই।
নিবেদিতা অনুপমার হাত ধরে সোফায় বসিয়ে বলে, “তোমাদের অনেক আগেই আমার ডাকা উচিত ছিল।”
অনুপমা মাথা দোলায়, সত্যি হ্যাঁ। ছোটবেলা থেকে ওদের এই কন্সট্রাকশান কোম্পানি নাকি একপ্রকার নিবেদিতার রক্ষণাবেক্ষণে ছিল তাও কেন বাবা এই মহিলাকে নিজের বাড়িতে কোনোদিন নিয়ে আসেনি। শুধু কি মায়ের জন্য? না এর পেছনে আরো কিছু লুকিয়ে আছে, যেটা হয়ত ওর পুচ্চু জানে কিন্তু ওকে কিছুতেই বলছে না। দেবায়নের মুখের দিকে তাকিয়ে বোঝার উপায় নেই। আজকাল অফিসে বসে চারদিকে ঘোরাফেরা করে দিনে দিনে অনেক বদলে গেছে ওর পুচ্চুসোনা।
অনুপমা স্মিত হেসে উত্তরে বলে, “এই’ত চলে এলাম। কিন্তু তোমার ছেলেকে দেখতে পাচ্ছি না যে? কোথায় গেল?”
নিবেদিতা হেসে উত্তর দেয়, “দাদুর সাথে সামনের পার্কে খেলতে গেছে একটু পরেই চলে আসবে। তোমার কথা বল। অনেক বড় হয়ে গেছ, নিজে একটা কোম্পানি সামলাচ্ছ। তার ওপরে আবার এদিক ওদিকের দেখা শোনা।”
অনুপমা হেসে বলে, “না না, আমি কিছুই দেখি না। বাইরের কাজ দেবায়ন দেখে, মারকেটিংয়ের জন্য দিপঙ্করদা আছে আর…..”
নিবেদিতা হেসে বলে, “আমি সব জানি। তোমার কোম্পানিতে কে আছে, কে কি করে সেই সব আমি জানি।”
নিবেদিতাকে ঠিক কি বলে সম্বোধন করবে সেটা বুঝে উঠতে পারে না অনুপমা। কাকি না মাসি না শুধু নিবেদিতা? নিবেদিতা ওর চেয়ে বয়সে বড়, এইভাবে নাম ধরে ডাকতে কেমন যেন গলায় আটকে যায়। একটা কাজের মেয়ে ততক্ষণে ওদের জন্য ঠাণ্ডা পানীয় আর বেশ কিছু মিষ্টি ফল তার সাথে প্যাস্ট্রি, একটা বড় কেক ইত্যাদি নিয়ে সেন্টার টেবিলের ওপরে রেখে চলে যায়। খাবারের পরিমান দেখে অনুপমার চক্ষু চড়ক গাছ। স্বল্পাহারী অনুপমা, তায় আবার অফিসে বসে বসে ইদানিং মোটা হয়ে যাচ্ছে বলে পায়েলের কাছে নালিশ জানায়, এত খাবার খাবে কি করে?
অনুপমা খাবারের পরিমান দেখে আঁতকে উঠে বলে, “একি করেছ তুমি? একে দেখো মোটা হয়ে যাচ্ছি আর তুমি একদিনে আমাকে খাইয়ে মেরে ফেলবে নাকি?”
দেবায়ন মিচকি হাসে ওর দিকে তাকিয়ে। অনুপমা ওকে বলে, “কি রে কিছু বল?”
দেবায়ন মাথা নাড়িয়ে বলে, “না না, এর মধ্যে আমি নেই। তোমরা দুইজনে ঠিক করে নাও কি করবে।”
নিবেদিতা ওর হাত ধরে বলে, “দেখো অনুপমা, আমি কিন্তু লাঞ্চে ডেকেছিলাম, তোমার দেবায়ন যদি না নিয়ে আসে তাহলে কি করতে পারি বল। কিন্তু ডিনার এইখানে সেরে যেতেই হবে।”
অনুপমা আকাশ থেকে পড়ে, “ডিনার? না না, মাকে বলা নেই চিন্তা করবে।”
নিবেদিতা হেস ফেলে, “আচ্ছা আমি না হয়, সোমে… তোমার বাবাকে ফোন করে দিচ্ছি।”
তৎক্ষণাৎ অনুপমার কান খাড়া হয়ে যায়, বাবার নাম ধরতে গিয়েও ধরল না নিবেদিতা। একদম ঘাসে মুখ দিয়ে চলার মেয়ে নয়, মাথায় বেশ বুদ্ধি রাখে। যদিও অনেক কিছুই ওর অজানা আর সংশয়ের উত্তর পাওয়ার মতন সুত্র ওর হাতে নেই তাও নিবেদিতার আতিথিয়তায় বেশ অবাক হয়ে যায়।
নিবেদিতা শেষ পর্যন্ত ওর বাবাকে ফোন করে জানিয়ে দেয়, যে অনুপমা আর দেবায়ন রাতের খাওয়া দাওয়া সেরেই বাড়ি ফিরবে। অগত্যা অনুপমা একবার দেবায়নের দিকে তাকায়। ছেলেটা একটা কথাও বলছে না, চুপচাপ খবরের কাগজ মুখস্ত করছে আর মাঝে ওদের দিকে আড় চোখে তাকিয়ে দেখে নেয়। কি হল, ওর? সবাইকে সন্দেহ করতে পারে কিন্তু শেষ পর্যন্ত পুচ্চু? হতেই পারে না, কেউ যদি ওর পায়ের তলায় নিজের গলা কেটেও বলে দেবায়ন প্রতারক তাতেও অনুপমা বিশ্বাস করবে না। এই ছেল্টার জন্য, ওর প্রানের বান্ধবী পায়েলকে ফিরে পেয়েছে, এই ছেলেটার জন্য বাবা অনেকটা সোজা হয়েছে, মায়ের সাথে হারিয়ে যাওয়া সম্পর্ক আবার সেতুবন্ধ হয়েছে। কি চলছে এই ছেলেটার মনে? বলবে না, আজকাল অনেক কথাই সহজে বলে না। এদিক ওদিক করে এড়িয়ে যায় তবে পরে নিজের মুখেই বলে।
অঙ্কুশ আর নিবেদিতার বাবা বেশ কিছু পরে ঘরে ঢোকে। নিবেদিতার বাবাকে দেখে দুইজনেই উঠে দাঁড়িয়ে পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করে। অনুপমা অঙ্কুশকে কাছে ডেকে হাতে চকোলেট ধরিয়ে দেয়। লাজুক ছেলে মায়ের দিকে একবার তাকায় তারপরে হেসে ওর হাত থেকে চকোলেট নিয়ে এক পাশে বসে। দেবায়ন আর অঙ্কুশ বন্ধুত্ত পাতিয়ে নেয় কিছুক্ষণের মধ্যেই। অঙ্কুশকে চোখের সামনে দেখে অনুপমা হেসে ফেলে, একদম ছোট বেলায় অঙ্কন যেমন লাজুক ছিল ঠিক তেমন।
ওকে কাছে ডেকে জিজ্ঞেস করে, “কোন ক্লাসে পড়ো তুমি?”
অঙ্কুশ জবাব দেয়, “ক্লাস ফোরে।”
Like Reply
Do not mention / post any under age /rape content. If found Please use REPORT button.
ষষ্টবিংশ পর্ব (#০৪)

নিবেদিতা ওকে ডেকে বলে, “ছেলেদের নীচেই ছেড়ে দাও চল আমার সাথে একটু উপরে চল।”
অগত্যা অনুপমা কি করে, শেষ পর্যন্ত দেবায়ন, অঙ্কুশদের নীচে বসার ঘরে ছেড়ে দিয়ে নিবেদিতার পেছন পেছন উপরে চলে আসে। ওদের মতন ডুপ্লেক্স বাড়ি, নীচে রান্না ঘর, খাওয়ার ঘর, লবি স্টাডি আর একটা অতিথিদের ঘর, উপরের সব শোয়ার ঘর। উপরে ওঠার সময়ে নিবেদিতা জানায়, যেহেতু তার বাবার একটু চলাফেরা করার অসুবিধে আছে তাই বাবা নীচেই থাকেন। ছেলেকে নিয়ে নিবেদিতা উপরে থাকে। ছেলের ঘর আলাদা। নিজের ঘরে নিয়ে গিয়ে বিছানার উপরে অনুপমাকে বসিয়ে দিয়ে আলমারি খোলে নিবেদিতা।
আলমারি থেকে একটা দামী জিন্স আর জ্যাকেট বের করে ওর হাতে দিয়ে বলে, “এটা আমার বাড়িতে আসার উপহার।”
অনুপমা আশ্চর্য চকিত হয়ে নিবেদিতার দিকে তাকিয়ে থাকে। এতদিনে কিছুই করেনি আর হঠাৎ এত আন্তরিকতার অর্থ কি? অনুপমা মানা করে, “না না, এই সব আমি নিতে পারব না।”
নিবেদিতা ওর হাত ধরে বলে, “কেন নিতে পারবে না? আমি কি পর? ছোটবেলা থেকে তোমাদের জানি, শুধু এই কয় বছরে সেই মতন ভাবে তোমাদের সাথে দেখা সাক্ষাৎ হয়নি এই যা।” একটু থেমে বলে, “তুমি সত্যি বড় ভাগ্যবান, অনুপমা। দেবায়নের মতন একজন কে পাশে পেয়েছ।” বলে স্মিত হাসে।
নিবেদিতা কতটা দেবায়নকে চেনে? অনন্যার মতন না ওর মায়ের মতন করে চেনে? বড় প্রশ্ন, আজকাল কোথায় কি লুকিয়ে করে আসে জানা যায় না।
দেবায়নের জন্য একটা দামী স্যুটের পিস বের করে হাতে ধরিয়ে বলে, “এটা দেবায়নের”, আরো একটা একটা স্যুটের পিস ওকে হাতে দিয়ে বলে, “এটা অঙ্কনের জন্য।” তারপরে একটা বেশ সুন্দর ডিজাইনার সালোয়ার কামিজ বের করে ওর হাতে দিয়ে বলে, “এটা পায়েলের জন্য।”
অনুপমা অবাক চোখে একবার জিনিসের দিকে দেখে একবার নিবেদিতার স্মিত হাসিহাসি মুখের দিকে চেয়ে থাকে। পায়েলের কথাও এর অজানা নয়। অর্থাৎ নিবেদিত ওদের পরিবারের সম্পর্কে অনেক কিছুই জানে। একবার অন্তত জিজ্ঞেস করা উচিত কি ভাবে এত কথা জানতে পারল।
শেষ পর্যন্ত কৌতুহল দমিয়ে না রেখে অনুপমা প্রশ্ন করে, “আচ্ছা তুমি এত সব আমাদের জন্য কিনতে গেলে কেন?”
নিবেদিতা উত্তর দেয়, “কিছু না এমনি কিনেছি। বন্ধুদের কি উপহার দিতে মানা আছে নাকি?”
কিন্তু অনুপমা ওর জন্য কিছুই আনেনি যে। সব দেবায়নের দোষ, যদি আগে থেকে ছেলেটা সব জানত তাহলে ওকে কেন বলল না। অবশ্য ওকে বললে কোনোদিন এই বাড়িতে পা রাখত না অনুপমা।
অনুপমা উপহারের পরিমান দেখে বিস্মিত হয়ে যায়, প্রত্যেকটাই বেশ দামী আর দারুন সুন্দর। নিবেদিতাকে মজার ছলে বলে, “এই দেখো, এতগুলো জিনিস কি করে নিয়ে যাবো বলো তো? এসেছি বাইকে, তার ওপরে আবার বৃষ্টি বাদলার দিন।”
নিবেদিতা হেসে ফেলে, “তুমি আর বল না বুঝলে। আমি গাড়ি করে তোমাকে বাড়ি পৌঁছে দেব খানে। নাও চল এবারে নীচে যাওয়া যাক। তোমাদের জন্য ক্র্যাব আনিয়েছিলাম, ওইটাকে ম্যারিনেট করে রেখেছি। একটু গ্রিল করতে হবে সেই সাথে ফ্রেঞ্চ ব্রেড। তুমি ক্যাভিয়ার খাও?”
অনুপমা হাঁ করে বেশ খানিকক্ষণ ওর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকার পরে প্রশ্ন করে, “তুমি করেছে কি? আমাদের আজকে শেষ খাওয়া খাওয়াবে নাকি? আর সত্যি বলতে ক্যাভিয়ার আমার কেমন যেন খেতে লাগে, তবে ভদকায় আপত্তি নেই।” বলেই হেসে ফেলে।
নিবেদিতা মাথা দোলায়, “আচ্ছা, চল নীচে চল। রেড ওয়াইন দিয়ে ক্র্যাবটা ভালোই লাগবে। ক্যাভিয়ার খেতে হবে না। আমারো বিশেষ ভালো লাগে না, কিন্তু তুমি আসবে জেনেই ওই সব আনা।”
অনুপমা মাথা নাড়ায়, “মাত্র তিনজনে খাবে আর তার জন্য ক্যাভিয়ার? তুমি না সত্যি…..”
নিবেদিতা উত্তরে ওর দিকে হাত বাড়িয়ে হেসে বলে, “আমরা কি বান্ধবী হতে পারি?”
বাড়ির সব থেকে বড় অনুপমা, মায়ের আদর সম্প্রতি পেয়েছে, তবে ওর কোনোদিন মনে হয়নি ওর একটা বড় দিদি হোক তাও নিবেদিতাকে দেখে মনে হল একটা দিদি থাকলে মনে হয় ভালো হত। কিন্তু মনের গভীরে একটা সংশয় দেখা দেয়। হঠাৎ করে এত অন্তরিকতা, এত হৃদ্যতা। পুচ্চুকে জিজ্ঞেস করতেই হবে এর অর্থ। নিশ্চয় এর পেছনে গুঢ় কোন রহস্য লুকিয়ে আছে যেটা কিছুতেই ওর চোখের সামনে উন্মোচিত হচ্ছে না। একবার বাবার নাম ধরে ডাকতে গিয়েও ডাকেনি। তবে কি? হতেও পারে নাও হতে পারে। জলপাইগুড়িতে সচক্ষে ধৃতিমানের সাথে রেস্টুরেন্টে বেশ আন্তরিক মুহূর্তে দেখা পেয়েছিল। বাবার সাথে হলে হঠাৎ আবার ধৃতিমানের সাথে হৃদ্যতা কেন বাড়াতে যাবে?
একটা বড় ব্যাগের মধ্যে নিবেদিতা উপহার গুলো গুছিয়ে ওর হাতে ধরিয়ে দেয়। নিবেদিতার পেছন পেছন নীচে নেমে এসে দেখে দেবায়ন আর অঙ্কুশ টিভিতে ভিডিও গেম খুলে বসে গেছে। ওকে নীচে নামতে দেখে দেবায়ন একবার ওদের দিকে তাকায়। নিবেদিতা রান্না ঘরে ঢুকে যায়। কাজের মেয়ে ততক্ষণে সবজি কাটাকাটি সেরে ফেলেছে।
অনুপমা হাতের জিনিসপত্রের ব্যাগ দেখিয়ে দেবায়নকে বলে, “এইগুলো তোর, নিয়ে যা।”
দেবায়ন হাসে, “আমাকে দিয়েছে নাকি যে আমি নেব? ওইগুলো তোর জন্যে আনা হয়েছে।”
ওর পাশে এসে ফিসফিস করে জিজ্ঞেস করে, “আসার পর থেকে ঘাপটি মেরে পড়ে আছিস। ব্যাপারটা কি একটু খোলসা করে বলতো? তোর ওই মিচকি হাসি দেখে মনে হচ্ছে তুই অনেক কিছুই জানিস কিন্তু বলছিস না আমাকে।”
দেবায়ন ওর গালে হাত দিয়ে আদর করে বলে, “কিছু না রে।”
চোখ টিপে মিচকি হেসে ওকে প্রশ্ন করে, “নিবেদিতার সাথেও কিছু হয়েছে নাকি রে তোর? একটু ঝেড়ে কাশ বাছাধন। না হলে কিন্তু আর আমাকে ছুঁতে দেব না।”
দেবায়ন হেসে ফেলে, “কি যে বলিস না। নিবেদিতা ভালো মেয়ে, খুব ভালো মেয়ে।” গলা নামিয়ে ওকে উত্যক্ত করে ফিসফিস করে বলে, “যা ফিগার মাইরি আর যা সুন্দরী ভেবেছিলাম লাগাবো কিন্তু না…..”
সঙ্গে সঙ্গে অনুপমা ওর বুকের ওপরে এক চাঁটি বসিয়ে দিয়ে চাপা অভিমানী কণ্ঠে বলে, “ফুটো থাকলেই হলো তাই না শয়তান।”
ওকে আলতো জড়িয়ে ধরে দেবায়ন উত্তর দেয়, “বর্তমানে একটাতেই খুশি আছি।”
ইসসস স্থান কাল একদম দেখে না পুচ্চু। সামনে অঙ্কুশ বসে, ওইপাশে নিবেদিতা হয়ত রান্নাঘর থেকে ওদের দেখে ফেলেছে। এইভাবে সর্ব সমক্ষে ওকে যে কোনোদিন জড়িয়ে ধরেনি সেটা নয় তবে সেই সব ভিন্ন পরিস্থিতি ছিল। হয়ত কোন মলে অথবা পার্কে অথবা বন্ধু বান্ধবীদের মাঝে কিন্তু একজনের বাড়িতে এসে এইভাবে জড়িয়ে ধরবে। লজ্জা বড় লজ্জা।
আলতো করে ওর হাত ছাড়িয়ে বলে, “ওইদিকে তোর জন্য ক্যাভিয়ার আর ক্র্যাব আনা হয়েছে।”
দেবায়নের চোখ কপালে উঠে যায়, “সত্যি বলছি এর বিষয়ে আমার অজানা। আর সত্যি বলছি এই উপহারের বিষয়ে আমার অজানা ছিল।”
অনুপমা ভুরু কুঁচকে প্রশ্ন করে, “তার মানে আগে থেকে এই লাঞ্চের ইনভিটেশান ছিল। তুই আমাকে বলিসনি কেন তাহলে? দেখ একদম খালি হাতে এসে গেছি। বাড়িতে একটা ছোট ছেলে তার জন্যেও কিছুই আনা হয়নি।”
দেবায়ন মাথা চুলকে উত্তর দেয়, “আসলে কি জানিস একটু ধন্ধে ছিলাম। হয়ত আগে তোকে বললে তুই মানা করে দিতিস। আমি চাইছিলাম তোকে এই পরিবাররে সাথে মিশাতে।”
অনুপমা প্রশ্ন করে, “কারন কি জানতে পারি কি?”
ততক্ষণে রান্না ঘর থেকে নিবেদিতা ওকে ডাক দেয়, “অনুপমা একটু এদিকে আসবে?”
রান্না ঘরে ঢুকে দেখে এক এলাহি ব্যাপার সাজিয়ে বসে নিবেদিতা। একেবারে বিদেশী কুইজিন সাজানো। বেশ বড় লাল অস্ট্রেলিয়ান ক্রাব, রেড ওয়াইন আর বিভিন্ন হার্বস দিয়ে ম্যারিনেট করে রাখা। গ্রিলে ঢুকিয়ে দিল, তৈরি হতে বেশ কিছুটা সময় লাগবে। নিবেদিতা ওকে বলে শুধু দাঁড়িয়ে থাকতে। নিজের বাড়িতে রান্না ঘরে কোনোদিন ঢোকেনি, তবে মামনির কাছে গেলেই রান্নাঘরে ঢুকে পরে। মামনির ওপরে ওর সব জোর খাটে। কচি মেয়ে হয়ে যায় মামনিকে পেলে। রান্নাঘরের স্লাবে বসে ছোট্ট মেয়ের মতন পা দোলাতে দোলাতে গল্পে মেতে ওঠে বৌমা আর শ্বাশুরি। ওর জন্য আপেল, পেয়ারা কলা ইত্যদি কেটে কেটে দেয় আর খেতে খেতে পা দুলিয়ে গল্পে মাতে। অফিসে কি কি হল, কার সাথে কি হল। মাঝে মাঝেই দেবায়নের নামে নালিশ ইত্যাদি।
ওইদিকে বাইরে ঝড় শুরু হতেই অনুপমা একটু চিন্তায় পড়ে যায়। পায়েলের জন্য গাড়িটা অফিসেই ছেড়ে এসেছে। ঝড় বৃষ্টি হবে সেটা যে একদম বুঝতে পারেনি তা নয়। তবে অনেকদিন পরে পুচ্চুর সাথে খোলা বাইকে বসে কোলকাতার বৃষ্টিতে ভেজার মজাই আলাদা। আজকাল মাসের মধ্যে কুড়ি পঁচিশ দিন বাইরে কাটায়, কাছে আর তাহকে কতক্ষণ। ওর চিন্তামগ্ন চেহারা দেখে নিবেদিতা অভয় দিয়ে বলে, বেশি ঝড় হলে ওর গাড়ি ওকে ছেড়ে আসবে। হেসে মাথা নাড়ায় অনুপমা। আসার পর থেকে যে পরিমান আন্তরিকতা দেখিয়েছে তাতে সন্দেহ নেই হয়ত শেষ পর্যন্ত বললেই ফেলল, এত ঝড় বৃষ্টি নিয়ে আর বাড়ি ফিরে কাজ নেই রাতে ওর বাড়িতেই থেকে যেতে।
রাত নটা’র আগে কোনোদিন খায় না অনুপমা, তবে দশটার মধ্যে ওদের খাওয়াদাওয়া শেষ হয়ে যায়। সকাল সকাল সবাইকে উঠতে হয়। যখন কলেজ ছিল তখন না হয় দেরি করে ঘুম থেকে উঠত কিন্তু এখন অফিস থাকে।
সন্ধ্যের পরেই নিবেদিতা ওদের খেতে দিয়ে দেয়। খাওয়ার সময়ে বসে নিবেদিতা আর অনুপমা কোথায় কোথায় ঘুরতে গেছে সেই নিয়ে গল্পে মেতে ওঠে। এই কর্ম সুত্রে দেবায়ন এদিকে ওদিকে একটু আধটু বেড়িয়েছে, কিন্তু অনুপমা আর নিবেদিতার মতন বিদেশ ভ্রমন করেনি। পিসা, লিওন থেকে নরওয়ে সুইডেনের গল্প, অস্ট্রেলিয়ার গ্রেট ব্যারিয়ার রিফ থেকে গিজার পিরামিডের গল্প।
সেই সাথে অঙ্কুশ যোগদান করে ওদের বলে, “জানো, ইজিপ্টে গিয়ে উঠের পিঠে চেপে মাম্মার কি ভয় করেছিল। আমি কিন্তু একটুও ভয় পাইনি।”
ঠিক একদম অঙ্কনের মতন, জন্তু জানোয়ারদের একটুও ভয় পায়না। ছোটবেলায় মায়ের কাছে আবদার করেছিল কুকুর পুষবে কিন্তু অনুপমার একদম ইচ্ছে ছিল না বাড়িতে কোন জন্তু জানোয়ার আসুক। এমা, কুকুর বেড়াল ওর পায়ের কাছে ঘোরাফেরা করবে, আবার আদিখ্যেতা দেখিয়ে ওর বিছানায়, ছিছি।
খাওয়া দাওয়া পর্বের মাঝে ওর কাছে পায়েলের ফোন আসে। ফোন তুলেই আশঙ্কাজনক কণ্ঠে ওকে জিজ্ঞেস করে, “হ্যাঁ রে তুই আর দেবায়ন কোথায় আছিস?”
অনুপমা ওর আতঙ্কে ভরা কণ্ঠ শুনে প্রশ্ন করে, “কি হয়েছে? এমন কাঁপছিস কেন?”
পায়েল ওকে বলে, “তাড়াতাড়ি বেলভিউতে চলে আয়। রুপকের অ্যাকসিডেন্ট হয়েছে।”
সঙ্গে সঙ্গে শরীরের সব স্নায়ু সতর্ক হয়ে যায়। খাওয়া থামিয়ে দেবায়নের দিকে ছলছল আশঙ্কাজনক চেহারা নিয়ে বলে, “রুপকের এক্সিডেন্ট হয়েছে।”
দেবায়ন আঁতকে ওঠে, “কি করে কখন হল?”
পায়েল সেই সমন্ধে কিছুই জানায় নি শুধু মাত্র ওদের বেলভিউতে যেতে বলেছে। নিবেদিতার অত সাজানো খাবার আর খাওয়া হল না। অবশ্য সেটা নিবেদিতাও বুঝতে পারে। ওই দিকে বাইরে ঝড়ের সাথে সাথে বৃষ্টি শুরু হয়ে গেছে। এইভাবে বাইকে করে যাওয়া অসম্ভব ব্যাপার। নিবেদিতা দেবায়নের হাতে গাড়ির চাবি ধরিয়ে ওদের তাড়াতাড়ি হসপিটালে রওনা হবার জন্য বলে। নিবেদিতাকে কি বলে ধন্যবাদ জানাবে অনুপমা বুঝতে পারে না।
বুকের মধ্যে ধুকপুকানি বেড়ে ওঠে। কিছুদিন পরেই বোর্ড মিটিং আর তার আগেই রুপকের দুর্ঘটনা। হঠাৎ করে চারদিক কেমন যেন গুলিয়ে যায় অনুপমার। শক্ত হাতে বৃষ্টি মাথায় করে গাড়ি ছুটিয়ে দেয় দেবায়ন। বাইপাস ধরে সল্টলেক থেকে পার্ক স্ট্রিট যেতে বেশি সময় যদিও লাগে না কিন্তু বৃষ্টির দিনে কোলকাতার রাস্তা গাড়ি চালানোর পক্ষে দুঃসাধ্য হয়ে ওঠে। পাকা ঝাঁ চকচকে রাস্তা আর গ্রাম্য মাটির রাস্তার মধ্যে কোন তফাৎ থাকে না। তাও এপাশ ওপাশ থেকে গাড়ি গুলোকে কোনোরকমে পেছনে ফেলে দুরন্ত গতিতে দেবায়ন গাড়ি চালায়।
অনুপমা ততক্ষণে বাবাকে ফোন করে জানতে পারে যে রুপক বিকেলে অফিসে পরে বাড়িতে ফিরছিল। সাথে শ্রেয়া ছিল না, কাজের জন্য অফিসে ছিল। শ্রেয়াকে বাড়িতে নিয়ে যাবে বলে অপেক্ষা করেছিল, কিন্তু শ্রেয়া ইচ্ছে করেই ওকে বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়। বাড়ি যাওয়ার পথে একটা স্করপিও ওর বাইকের পেছনে ধাক্কা মারে যার ফলে, পেছনের চাকা গাড়ির নীচে চলে যায়। রাস্তায় জল থাকার ফলে রুপক বাইক থেকে পড়ে যায়। বিশেষ চিন্তার কোন কারন নেই, মাথায় হেলমেট ছিল তাই রক্ষে আর পরনে রেইনকোট ছিল তাই বেশি লাগেনি। তবে ডান পায়ের হাড়ে একটু চিড় দেখা দিয়েছে। দুর্ঘটনা যদিও সামান্য তবুও দেবায়ন আর অনুপমার মনে সন্দেহ হয়। হঠাৎ বোর্ড মিটিংয়ের আগেই রুপকের এক্সিডেন্ট? কি ব্যাপার? এর পেছনে কি শ্রেয়ার হাত আছে? ইন্দ্রনীলের সাথে কি শ্রেয়া কোন চক্রান্ত করছে? কিন্তু তাই বলে ওর এতদিনের ভালোবাসার ওপরে নিশ্চয় আঘাত হানবে না। কি জানি শ্রেয়ার মতিগতি ইদানিং খুব সন্দেহজনক। অফিসে রুপকের চেয়ে বেশি ইন্দ্রনীলের সাথে কাটায়।
হন্তদন্ত হয়ে নার্সিং হোমে ঢুকে দেখে ওর বাবা, শ্রেয়ার দাদা, রুপকের বাড়ির লোকজন উপস্থিত। ইন্দ্রনীলকে দেখে অনুপমা একটু আশ্চর্য হয়। ইন্দ্রনীল ওদের দেখে একটু তফাতে সরে যায়। এইভাবে চোরা চাহনি নিয়ে তাকান ঠিক ভালো মনে মেনে নিতে পারেনা অনুপমা। দেবায়ন ওকে শান্ত হতে অনুরোধ করে। অনুপমা বাবাকে জিজ্ঞেস করাতে জানতে পারে শ্রেয়া আগে পায়েলকে ফোন করেছিল, তাই পায়েল ওদের ফোন করে।
দেবায়নকে সাথে নিয়েই রুপকের সাথে দেখা করতে যায়। বেডের ওপরে শুয়ে রুপক, পায়ে হাতে ব্যান্ডেজ। শ্রেয়ার চোখ জোড়া ছলছল, রুপকের হাতখানি নিজের হাতের মধ্যে নিয়ে পাশে বসে।
ওদের দেখতে পেয়েই শ্রেয়া চাপা চেঁচিয়ে ওঠে, “কেন এসেছিস? রুপক মরে গেছে না বেঁচে আছে সেটা দেখতে এসেছিস?”
দেবায়ন আর অনুপমা দুইজনে অবাক হয়ে যায় ওর কথা শুনে। কি বলছে শ্রেয়া? অনুপমা ওর দিকে এগিয়ে গিয়ে প্রশ্ন করে, “তুই কি যা তা বলছিস?”
শ্রেয়া ঝাঁঝিয়ে ওঠে, “ওই তোর দেবায়ন আমার রুপককে এক্সিডেন্ট করিয়েছে।”
অনুপমার চোয়াল শক্ত হয়ে যায়। এখুনি ঠাস করে একটা চড়ে শ্রেয়ার দাঁত গুলো ফেলে দিতে ইচ্ছে করে ওর। কিন্তু পেছনে তাকিয়ে দেখে দরজায় ইন্দ্রনীল ওর বাবা আর বেশ কয়েকজন দাঁড়িয়ে। শ্রেয়াকে এক কোনার দিকে টেনে নিয়ে গিয়ে বলে, “মাথা ঠাণ্ডা কর তুই। সামান্য একটা এক্সিডেন্টে এত মাথা খারাপ করলে কি হয়? পুচ্চু এই কাজ কেন করতে যাবে? পুচ্চু আর রুপক ভালো বন্ধু, তুই আমার ভালো বান্ধবী।”
শ্রেয়া চিবিয়ে চিবিয়ে উত্তর দেয়, “হ্যাঁ জানা আছে তুই আমার কত ভালো বান্ধবী। আমি শেয়ার বাড়াতে চেয়েছিলাম তাই রুপককে তোরা মেরে ফেলতে চেয়েছিলিস তাই না?”
অনুপমা ওর হাতের ওপরে মুঠি শক্ত করে ধরে বলে, “দ্যাখ শ্রেয়া, এটা হসপিটাল না হলে এক চড়ে তোর দাঁত ভেঙ্গে দিতাম আমি।” মাথা ঝাঁকিয়ে আক্ষেপের সুরে বলে, “বাবার কথা অনেক আগেই আমার শোনা উচিত ছিল।”
শ্রেয়া দাঁতে দাঁত পিষে ছলছল চোখে ওকে বলে, “হ্যাঁ, এখন আমাদের কোম্পানি থেকে সরাতে পারলে নিজেদের লাভ। বাইরের প্রোজেক্ট গুলো এসে গেছে এবারে আর আমাদের কেন দরকার পরবে বল। রুপকের মাথা কাজে লাগিয়ে নিজের কোম্পানি দাঁড় করালি আর এখন যখন কাজ শেষ হয়ে গেল তখন সরিয়ে দেওয়ার মতলব করলি।” কিছুক্ষণ থেমে ওকে বলে, “এই বোর্ড মিটিংয়ে আমি রেজিগনেশান দেব আমার শেয়ারের টাকা তৈরি রাখিস।”
রাগে দুঃখে অনুপমার শরীর কেঁপে ওঠে। আশে পাশে লোকজন না থাকলে সপাটে একটা চড় কষিয়ে দিত শ্রেয়ার গালে।
দেবায়ন এতক্ষণ চুপচাপ ওদের কথা শুনে যাচ্ছিল। অনুপমার কথা শেষ হতেই ওর দিকে তেড়ে গিয়ে বলে, “শোন শ্রেয়া, আমি যদি সত্যি চাইতাম রুপককে সরাতে তাহলে ওই পা ভেঙ্গে পড়ে থাকত না। তোকে ওর চিতা জ্বালাতে হতো। আর তুই কোন মুখে শেয়ারের কথা বলছিস রে? এই একটা বছর শুধু গায়ে হাওয়া লাগিয়ে ঘুরে বেড়িয়েছিস আর কিছুই করিসনি। গত কয়েক মাস একটু গা হাত পা নাড়িয়েছিস শুধু। যদি রুপক বলে তবেই শেয়ার পাবি।”
শ্রেয়া একবার আশেপাশে দেখে দেবায়নের দিকে ঝাঁঝিয়ে ওঠে, “তোকে পুলিসে দেইনি তোর ভাগ্য ভালো।”
আর থাকতে পারে না অনুপমা, শেষ পর্যন্ত ওর হাত উঠে যায়। থাপ্পরটা মারতে গিয়েও মারামারিতে যায় না, দাঁতে দাঁত পিষে ওর দিকে রক্ত চক্ষু হেনে বলে, “তোর টাকা এই কোম্পানিতে নেই, সুতরাং তুই একটা পয়সাও পাবি না।”
শ্রেয়া চোয়াল শক্ত করে উত্তর দেয়, “কোম্পানি আইন আমার জানা আছে অনু। আমি ঘাসে মুখ দিয়ে চলি না। আমার পাওনা বাবদ দশ কোটি টাকা তৈরি রাখিস। পরশুদিন বোর্ড মিটিং আমার পাওনা আমাকে মিটিয়ে দিস।”
দেবায়ন তেড়ে যায় ওর দিকে, “তুই আমাদের আইন দেখাবি?”
অনুপমা সমস্বরে বলে ওঠে, “একটা টাকাও দেবো না তোকে। কি করতে পারিস আমি দেখে নেব।” তারপরে দেবায়নের হাত ধরে ওর ঘর ছেড়ে বেড়িয়ে যায় অনুপমা।
বাইরে দাঁড়িয়ে লোকজনের সাথে ইন্দ্রনীল দাঁড়িয়ে ছিল। ওদের কথাবার্তা নিশ্চয় ইন্দ্রনীল শুনেছে। বাবাকে সাথে নিয়ে ওরা নার্সিং হোম থেকে বেড়িয়ে পরে। ততক্ষণে বৃষ্টি বেশ কিছুটা ধরে গেছে, তাই অনুপমা ওর বাবার সাথে গাড়ি করে বাড়ি ফেরে আর নিবেদিতার গাড়ি ফেরত দেওয়ার জন্য দেবায়ন বেড়িয়ে পরে। যাওয়ার আগে অনুপমা ওকে রাতের বেলা ফোন করার কথা বলে দেয়।
মাথা কাজ করছে না কিছুতেই। হটাত করে রুপকের এক্সিডেন্ট হল কি করে? বাইকের অবস্থা নাকি বেশ সঙ্গীন কিন্তু সেই তুলনায় রুপকের এমন কিছু আঘাত লাগেনি। হতে পারে ভাগ্যের জোরে রুপক বেঁচে গেছে। পুচ্চুকে ফাঁসানোর জন্য কে আক্রমন করতে পারে রুপককে? শ্রেয়া না ইন্দ্রনীল? শ্রেয়ার কথাবার্তা শুনে মনে হয় অনেক গভীর জলের মাছ এই মেয়ে। বাবা ওকে সাবধান করে দিয়েছিল, কিন্তু সেই সময়ে বান্ধবী প্রীতি দেখিয়ে সেই সব উপেক্ষা করে দিয়েছিল। তখন যদি একবার বাবার কথা শুনতো, তাহলে এই দিন দেখতে হত না ওদের।
Like Reply
ষষ্টবিংশ পর্ব (#০৫)

অনুপমা সারা রাস্তা গাড়িতে এক প্রকার গজগজ করতে করতে বাড়ি ফেরে। সোমেশ একবার শুধু জিজ্ঞেস করে মেয়েকে কি হয়েছে হসপিটালে। আগে মেয়ে একদম কথাবার্তা ঠিক ভাবে বলতো না, ইদানিং একটু আধটু বলে, তাও বেশির ভাগ ওই কোম্পানি সংক্রান্ত। সোমেশ পারমিতা কোনোদিন ছেলে মেয়ের কাছের লোক ছিল না।
অনুপমা উত্তর দেয়, “তোমার কথা অনেক আগেই শোনা উচিত ছিল আমার, জানো।”
সোমেশ মেয়েকে জিজ্ঞেস করেন, “তোর কি মনে হয়, কি কারন হতে পারে? দেবায়ন কি কিছু ধরতে পেরেছে?”
অনুপমা মাথা নাড়ায়, “না গো, আমরা কিছুই ঠিক ভাবে বুঝে উঠতে পারছি না। তবে বাবা, তোমাকে বলে দিচ্ছি, অনিমেশ আঙ্কেলের ছেলে যদি এর মধ্যে হয় তাহলে কিন্তু কাউকেই আমি ছেড়ে দেব না।”
সোমেশের কপালে চিন্তার রেখা দেখা দেয়, “এর মধ্যে ইন্দ্রনীল আবার কি করল?”
অনুপমা বলে, “ইদানিং শ্রেয়া আর ইন্দ্রনীল বেশ গভীর ভাবে মেলামেশা করছে। দুইজনে একসাথে জার্মানি গেছে। এই যে ইন্দ্রনীল এসেছে, অফিসে কাজের চেয়ে বেশি ইন্দ্রনীলের সাথে ঘোরাফেরা করে শ্রেয়া।”
সোমেশ চিন্তামগ্ন হয়ে শুধু মাত্র একটা হুম করে শব্দ করেন। বাড়ি প্রায় কাছাকাছি চলে এসেছে, সেই সাথে বৃষ্টিটাও একটু ধরে গেছে। ড্রাইভার ওদের নামিয়ে দিয়ে গ্যারেজে গাড়ি রাখতে চলে যায়। বাড়িতে ঢোকার আগে সোমেশ মেয়েকে বলে, “তোর সাথে একটু কথা আছে। তুই ড্রেস চেঞ্জ করে নীচে আসিস।”
অনুপমা জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে বাবার দিকে তাকায়। সচারাচর ব্যাবসা কোম্পানি সংক্রান্ত যা কথাবার্তা আলোচনা হয় সব দেবায়নের সাথেই করে। কোনোদিন ওর সাথে ব্যাবসা অথবা কোম্পানি সংক্রান্ত কোন আলোচনা করে না। করলেও ওর মাথায় কিছুই ঢোকে না। যতক্ষণ না দেবায়ন শুদ্ধ বাংলা ভাষায় ওকে বুঝিয়ে দেয় ততক্ষণ সবকিছু কেমন যেন আরবি, ফার্সি ভাষার মতন মনে হয়। অনুপমা মাথা দুলিয়ে জানিয়ে দেয় আসবে।
বাড়িতে ঢুকতেই পায়েলের সামনাসামনি। এতক্ষণ উৎকণ্ঠায় জেগে ছিল বাকিরা। শ্রেয়ার সাথে যে রাগারাগি হয়েছে সেটা খুলে আর বলে না শুধু জানিয়ে দেয় যে বাইকের এক্সিডেন্ট এমন কিছু গুরুতর নয়, শুধু মাত্র ডান পায়ের হাড়ে একটু চিড় ধরেছে, ক্রেপ ব্যান্ডেজ লাগিয়ে দিয়েছে ডাক্তার, আগামী কাল সকালের মধ্যে ছুটি পেয়ে যাবে। নিজের ঘরে ঢুকে জামা কাপড় ছেড়ে আগে দেবায়নকে ফোন করে। কি করছে ছেলেটা, যা মাথা গরম রাতেই না কিছু করে বসে। তবে মামনি নিশ্চয় এতক্ষণে ওকে বকে ঝকে শান্ত করিয়ে দিয়েছে। ফোন বারেবারে রিং হয়ে গেল, একটু চিন্তায় পড়ে যায় অনুপমা। সঙ্গে সঙ্গে মামনিকে ফোন করে। দেবশ্রী জানিয়ে দেয় এখন পর্যন্ত বাড়িতে ফেরেনি, এইসবে নিবেদিতার বাড়িতে পৌঁছেছে, ওর বাড়িতে গাড়ি রেখে বাড়ি পৌঁছালে ফোন করতে বলবে।
রাত জেগে বসে থাকে অনুপমা, বিছানায় শুয়ে এপাশ ওপাশ ধপাস করে শুধু। এত দেরি লাগে নাকি সল্টলেক থেকে লেকটাউন আসতে? না নিশ্চয় বাইক নিয়ে কোথাও আবার বেড়িয়ে পড়েছে।
একটু পরেই দেবায়নের ফোন পেয়ে ঝাঁঝিয়ে ওঠে, “কোথায় মরতে গেছিলিস তুই? ফোন করতে পারিস না।”
প্রেয়সীকে শান্ত করিয়ে বলে, “বাইরে বৃষ্টি পড়ছে সেটা খেয়াল আছে? বাইক নিয়ে কি করে ভিজতে ভিজতে বের হওয়া যায় বলতো?”
অনুপমা জানালার বাইরে তাকিয়ে দেখে, এক নাগারে ইলশেগুরি ঝড়ে পড়ছে। সেদিকে খেয়াল ছিল না এতক্ষণ, এসির আওয়াজে বৃষ্টির ছাঁটের শব্দ কানে যায়নি। ঘরে পায়েল থাকলে না হয় তাও কিছু একটা বলতে পারতো, কিন্তু সে তো এতক্ষণে ভাইয়ের কোলে মাথা রেখে কোথায় চলে গেছে কে জানে।
অনুপমা জিজ্ঞেস করে, “কি করা যায় বলতো? এদের সাথে নিয়ে চলা খুব মুশকিল।” হঠাৎ খেয়াল হয় দরজার বাইরে কেউ দাঁড়িয়ে।
সোমেশ গলা খাঁকড়ে জানিয়ে দেয় দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছে। ইসসস, অনুপমা সঙ্গে সঙ্গে স্লিপের ওপরে ড্রেসিং গাউন চাপিয়ে নেয়। বাবা কিছু বলবে বলছিলেন কিন্তু সেই কথা বেমালুম খেয়ে ফেলেছে। দেবায়নকে পরে ফোন করবে বলে উঠে চলে যায়। বাবাকে বলে, “একটু দাঁড়াও আমি আসছি।”
সোমেশ উত্তরে বলেন, “ঠিক আছে, তুই ঠিকঠাক হয়ে নীচে আয়, আমি অপেক্ষা করছি।”
দৌড়ে বাবার পেছন পেছন নীচে নেমে যায় অনুপমা। হঠাৎ মধ্যরাত্রে কি আলোচনা করবে বাবা? চাপা উত্তেজনায় মন চঞ্চল হয়ে ওঠে।
সোফায় বসে বাবাকে জিজ্ঞেস করে, “কি বলবে বলছিলে?”
সোমেশ একটা ফাইল থেকে একটা কাগজ বের করে ওর হাতে দিয়ে বলে, “একটা কথা তোদের জানানো হয়নি। মানে ইচ্ছে করেই তখন জানাইনি। আসলে তোদের ওই কোম্পানিতে অনিমেশের দশ কোটি টাকা লগ্নি করা আছে।”
অনুপমা আকাশ থেকে পড়ে, “তুমি বলেছিলে সব টাকা নাকি তোমার?”
সোমেশ মাথা দোলায়, “হ্যাঁ সব টাকা আমার। তবে অনিমেশ অনেক ধরেছিল তাই ওর দশ কোটি টাকা তোর কোম্পানিতে লগ্নি করিয়েছি এই যা।”
অনুপমা ঝাঁঝিয়ে ওঠে বাবার ওপরে, “আজ এক বছর হতে চলল, এতদিন কেন বলনি এই কথা?”
সোমেশ ওকে শান্ত করে বলেন, “দ্যাখ, ইন্দ্রনীল যদি শ্রেয়ার সাথে মিলিত থাকে তাহলে তোদের কোম্পানির পক্ষে একটা আশঙ্কাজনক খবর এটা। আমি এত বুঝতে পারিনি আগে। আমার যতদূর মনে হয়, তুই যে ইন্দ্রনীলকে বোর্ড মেম্বার না বানিয়ে পায়েলকে বানিয়েছিস তার প্রতিশোধ স্বরূপ ওরা তোদের কাবু করতে চেষ্টা করবে।”
অনুপমা ভাবনায় পরে যায়, “কি করতে বলছ তাহলে? একটু পরামর্শ দাও।”
সোমেশ একটু চিন্তিত হয়ে বলেন, “শোন, যদি শ্রেয়া রেজিগনেশান দেয় আর তোর কাছ থেকে শেয়ারের টাকা চায় তাহলে ওকে সোজা কোর্টে নিয়ে যাবি। টাকা ওর হাতে একদম দিবি না। দ্বিতীয়, যদি ইন্দ্রনীল এই দশ কোটি টাকার বিষয়ে কিছু বলে তাহলে ওকে সোজা বলে দিবি ওর বাবার যেন আমার সাথে দেখা করে। তুই বলে দিবি ওই দশ কোটি টাকার সম্বন্ধে তুই কিছু জানিস না। অনিমেশ আমাকে টাকা দিয়েছল ওর বাবা যেন এই সব আলোচনা আমার সাথে করে, তোর সাথে নয়।”
অনুপমা বেশ চিন্তায় পড়ে যায়। শ্রেয়া হুমকি দিয়েছে রেজিগনেশান দিয়ে দেবে। শ্রেয়া ছেড়ে দিলে রূপক নিশ্চয় ছেড়ে দেবে। ওদের সাথে যদি ইন্দ্রনীল মিলিত থাকে তাহলে সেও ছেড়ে দেবে। ওদের কোম্পানি অথৈ জলে ভেসে যাবে তাহলে। চিন্তিত অনুপমা বাবাকে জিজ্ঞেস করে, “ইন্দ্রনীল, শ্রেয়া আর রুপক একসাথে যদি কোম্পানি ছেড়ে দেয় তাহলে কোম্পানি ভেসে যাবে। বাইরের প্রোজেক্ট গুলোর প্রচণ্ড ক্ষতি হয়ে যাবে। সেটাই খুব চিন্তার।”
সোমেশ বলেন, “কাল একবার দীপঙ্করকে আমার অফিসে পাঠিয়ে দিস। দেখা যাক কি করা যেতে পারে। এইদুই দিন দেখ ওরা কি করছে। আর আগামী পরশু তো তোদের বোর্ড মিটিং তাই না?”
অনুপমা মাথা দোলায়, “হ্যাঁ।”
সোমেশ বলেন, “ঠিক আছে। বেশি চিন্তা করিস না। আমি না হয় নিজেই একবার জার্মানি যাবো আর মিস্টার মেরকেল আর হেরজোগের সাথে আলোচনা করে আসব।”
রাতে আর দেবায়নকে ফোন করা হল না।
পায়েলকে এইসব ঝামেলার থেকে দূরে সরিয়ে রাখাই বাঞ্ছনীয়, তাই বিশেষ কিছুই ওকে বলেনি। পরের দিন রূপক হসপিটাল থেকে ছুটি পেয়ে যায়, তাই শ্রেয়া সারাদিন ওর বাড়িতেই কাটিয়ে দেয় অফিসে আসেনি। তবে ইন্দ্রনীল অফিসে এসেছিল। তারপরের দিন বোর্ড মিটিং। মিটিংয়ের প্রস্তুতিতে সেদিন কেটে গেল দুই জনার। একবার দিপঙ্কদার সাথে দেবায়ন আর অনুপমা আলোচনা সেরে নিল, যদি ইন্দ্রনীল অফিস ছেড়ে দেয় তাহলে কি করা যেতে পারে। জার্মানি আর ইউরোপের জন্য অতি শীঘ্র একটা ছেলে খুঁজতে হবে। বাবার নির্দেশ মতন দুপুরের পরে দীপঙ্করকে বাবার সাথে আলোচনা করতে বলে। বাইরের প্রোজেক্ট গুলো সুপর্ণা ম্যাডামের তদারকিতে কাজ হচ্ছিল তাই তাতে বিশেষ অসুবিধে হওয়ার কথা নেই। তবে এগ্রিমেন্ট অনুযায়ী এয়ারলাইন্স কোম্পানি গুলো চাইলে মাঝপথে প্রোজেক্ট বন্ধ করে দিতে পারে বলে মনীষা ওদের জানিয়ে দেয়, সেই নিয়ে বেশ চিন্তিত দেবায়ন আর অনুপমা।
অনুপমা পায়েলকে সিঙ্গে নিয়ে সকালেই অফিসে পৌঁছে গিয়েছিল। বৃষ্টি মাথায় করে, দেবায়ন সময় মতন অফিসে পৌঁছে যায়। যদিও ওদের বোর্ড মিটিং দ্বিতীয় অর্ধে, ইন্দ্রনীল এসে গেছে আর নিজের ডেস্কে বসে কাজে মগ্ন। শ্রেয়া আর রূপক তখন আসেনি। একবার মনীষাকে জিজ্ঞেস করে, ওদের খবর নিতে। মনীষা ফোন করাতে শ্রেয়া জানিয়ে দেয়, দ্বিতীয় অর্ধে বোর্ড মিটিংয়ের আগেই ও আর রূপক অফিসে পৌঁছে যাবে। কার মনে কি চলছে কিছুই ঠিক ভাবে বোঝা যাচ্ছে না। এত সকালে ইন্দ্রনীলকে নিজের ডেস্কে বসে থাকতে দেখে ধন্ধে পড়ে যায় অনুপমা।
দেবায়নকে জিজ্ঞেস করে, “কি ব্যাপার বলতো?”
দেবায়ন হেসে বলে, “হবে হয়ত নিজের রেজিগনেশান লেটার টাইপ করছে।”
সেদিন পায়েল শাড়ি পরে এসেছিল, দেবায়ন ওকে নিয়েই মেতে ওঠে। “কি রে মাল একদম ফুলটুসি হয়ে সেজে এসেছিস। গতকাল রাতে ভাই বেশ লাগিয়েছে তাই না?” পায়েল লজ্জায় লাল হয়ে যায়, আর দেবায়ন ততই চেপে ধরে ওকে, “হ্যাঁ রে, সত্যি করে বলতো কে বেশি ভালো লাগিয়েছে? আমি না ভাই?”
অনুপমা ওর ওপরে রেগে গিয়ে বলে, “তুই ওকে ছেড়ে একটু আমার কথা শুনবি।”
ওর কোমর জড়িয়ে কাছে টেনে বলে, “না শুনবো না দেখব। একটু নাচ?”
অনুপমা এক চাঁটি মারে ওর ঊরুসন্ধির ওপরে, “ধ্যাত, একটু পরে বোর্ড মিটিং। মাথা কাজ করছে না আর ছেলে বাঁড়া নিয়ে পরে আছে।”
পায়েল ওদের দেখে লজ্জায় লাল হয়ে বলে, “এই আমি আসছি রে। সময় হলে আমাকে ডেকে নিস।”
দেবায়ন ওর হাত ধরে কাছে টেনে বলে, “ইসসস লজ্জায় মরে যাই। যাচ্ছিস কোথায় রে?”
দেবায়নের একপাশে প্রেয়সী অনুপমা, অন্যপাশে পায়েল। ওদের কাঁধে হাত দিয়ে গলা নামিয়ে বলে, “বোর্ড মিটিং করা হবে না বোর্ড সেক্স করা যায় বলতো।” বলেই পায়েলের নধর গোলগাল নরম পাছার ওপরে আলতো চাঁটি মারে। সুগোল মাংসল পাছা জোড়া দুলে ওঠে আর দেবায়ন ওর নরম পাছা আলতো করে চেপে ধরে।
পায়েল ওর হাত নিজের পাছার ওপরে থেকে সরিয়ে দিয়ে বলে, “তুই তোর বৌকে নিয়ে পড়ে থাক, আমি চললাম।”
অনুপমাও রেগে যায় একটু, “অফিসের মধ্যে করিস কি বলতো?”
দেবায়ন হেসে বলে, “কেন অফিসে বুঝি সেক্স করা মানা?”
অনুপমা ঝাঁঝিয়ে ওঠে, “হ্যাঁ মানা। অন্তত অন্যদের সাথে মানা।”
দেবায়ন ওকে পেছন থেকে আস্টেপিস্টে জড়িয়ে ধরে বুকের সাথে মিশিয়ে দিয়ে বলে, “তোর সাথে মানা নেই যখন তাহলে চল কনফারেন্স হলে। টেবিল টা বেশ বড়, ওর ওপরে তোকে শুইয়ে দিয়ে চালু করি।”
অনুপমা অভিমানী কণ্ঠে বলে, “ছাড় ছাড়।” পায়েলকে বলে, “তুই বের হ কেবিন থেকে। এই পাগলা ষাঁড় ক্ষেপে গেছে। এই দুঃশাসন যদি তোর বস্ত্র হরনে নামে তাহলে কোন কেষ্ট তোকে বাঁচাতে পারবে না কিন্তু।”
পায়েল ওদের দেখে মিচকি হেসে কেবিন থেকে বেড়িয়ে যায়। দেবায়ন ওর ঘাড়ের ওপরে মাথা গুঁজে মরালী গর্দানে চুম্বনে চুম্বনে ভরিয়ে দেয়। সকাল সকাল প্রেমিকের উত্তপ্ত ঠোঁটের ছোঁয়ায় অনুপমার বুকের রক্তে হিল্ললের দেখা দেয়। সারা অঙ্গ শিরশির করে ওঠে ভালোবাসার জ্বালায়। দেবায়নের হাত দুইখানি নিজের শরীরের চারপাশে শক্ত করে বেঁধে চোখ বুজে চুপচাপ ওর পুরু উষ্ণ ভিজে ঠোঁটের পরশ সারা গালে, গর্দানে কানের লতিতে মাখিয়ে নেয়। মনের মধ্যে ধরা পড়ে যাওয়ার ভয়ে কামোত্তেজনা চরমে উঠে যায় দুইজনার। বেশ কিছুক্ষণ প্রেমিকের হাতের নিবিড় আলিঙ্গন পাশে বদ্ধ হয়ে থাকে। এমন সময়ে কেবিনের ফোন বেজে ওঠে। দেবায়ন ফোন তুলতেই, মনীষা জানিয়ে দেয় যে শ্রেয়া আর রূপক এসে গেছে।
অনুপমা মিহি কণ্ঠে দেবায়নকে বলে, “এইবারে ছাড়। দেখ গিয়ে রুপকের কি অবস্থা।”
দেবায়ন শেষ বারের মতন দুইহাতে ওকে পিষে ধরে বলে, “ইসসস এই বৃষ্টি ভেজা দিনে তোকে ছাড়তে একটুও ইচ্ছে করছে না।”
আদুরে কণ্ঠে অনুপমা ওকে বলে, “তোর শরীরের উষ্ণতা কাটিয়ে আমারো যেতে ইচ্ছে করছে না কিন্তু কি করা যাবে বল। শিরে সংক্রান্তি, ওরা দুইজনে এসে গেছে। হয়ত এতক্ষণে ইন্দ্রনীলের সাথে একসাথে বসে জল্পনা শুরু করে দিয়েছে।”
দেবায়নের বাহুপাশ থেকে নিজেকে মুক্ত করে কেবন থেকে দুইজনে বেড়িয়ে আসে। ইন্দ্রনীল নিজের ডেস্কে তখন পর্যন্ত বসে। খোঁড়াতে খোঁড়াতে রূপক ওদের দিকে হাসিহাসি মুখ করে এগিয়ে আসে। দেবায়ন আর অনুপমা পরস্পরের দিকে চাওয়াচায়ি করে।
দেবায়ন হেসে রূপককে বলে, “কি বাল ছাল ছেলে তুই। ঠিক ভাবে বাইক চালাতে জানিস না নাকি রে?”
রূপক মৃদু হেসে জবাব দেয়, “আরে এত বৃষ্টি হচ্ছিল যে কিছুই দেখতে পাচ্ছিলাম না। তার ওপরে কি ভাবে শালা ওই স্করপিওটা পেছন থেকে ধাক্কা মারল। বাল।”
অনুপমা ভুরু নাচিয়ে জিজ্ঞেস করে, “শ্রেয়ার কি খবর।”
রূপক গলা নামিয়ে উত্তর দেয়, “একটু পরেই মিটিং, ওইখানে সব পরিস্কার হয়ে যাবে।”
অনুপমা ওকে প্রশ্ন করে, “একটা সত্যি কথা বল। তুই কি রেজিগনেশান দিচ্ছিস?”
রূপক কিছু না বলে একটু হেসে দেয়। ওদের সন্দেহ হয়, কিন্তু রূপক কোন উত্তর দেয় না।
লাঞ্চের পরে কনফারেন্স রুমে বসে মিটিং শুরু হয়। লম্বা বিশাল টেবিলের একপাশে দেবায়ন বসে, ওর বাম পাশে অনুপমা আর ডান পাশে পায়েল। ঠিক দেবায়নের উলটো দিকে শ্রেয়া বসে, যেন একটা যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়েই বসেছে। হিমশীতল কঠিন চেহারা দেখে মনের ভাব আঁচ করা কঠিন। ওর একপাশে রূপক অন্য পাশে ইন্দ্রনীল। শ্রেয়া এক মনে নিজের ট্যাবলেটে কিছু একটা লিখে চলেছে। মাঝে মাঝে দেবায়নের দিকে আড় চোখে দেখে নেয়। দীপঙ্করদা, মনীষা আর সুপর্ণা ম্যাডাম এসে গেছেন। শুরু হয়, ওদের সারা বছরের কাজকর্ম নিয়ে। দেবায়ন বলতে শুরু করে, শ্রেয়া চুপচাপ শুনে যায়। মনীষা তারপরে ব্যালেন্স সিট নিয়ে আলোচনা শুরু করে, তারপরে দীপঙ্করদা ওদের আগামী বছরের মার্কেটিং স্ট্রাটেজি নিয়ে কথাবার্তা বলে। অর্ধেক আলোচনা অনুপমার মাথার ওপর দিয়ে বেড়িয়ে যায়। তীক্ষ্ণ চোখে শুধু মাত্র শ্রেয়াকে জরিপ করে যায়। শ্রেয়া কম যায় না, ওর চোখে চোখ রেখে বেশ কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে। হঠাৎ করে অনুপমার ফোনে একটা এস এম এস আসে। এস এম এস পড়ে অনুপমার চক্ষু চড়ক গাছ। শ্রেয়া পাঠিয়েছে। ছোট্ট এস এম এস, শুধু লেখা, “আই এম সরি।” শ্রেয়ার দিকে তাকাতেই শ্রেয়া, আলতো করে চোখ বন্ধ করে কিছু একটা ইশারা করে। ওর মাথা ঘুরে যায়, কি চলছে আসল শ্রেয়ার মনে ভেতরে। সেদিনের হসপিটালে দেখা শ্রেয়ার চোখ আর এই মুহূর্তে শ্রেয়ার চোখ একদম আলাদা।
সব শেষে দেবায়ন শ্রেয়ার উদ্দেশ্যে বলে, “তোর কিছু বলার নেই?”
শ্রেয়া, গলা নামিয়ে ইন্দ্রনীলের সাথে কিছু কথাবার্তা বলে। অনুপমা দেবায়নকে, শ্রেয়ার পাঠানো এস এম এস দেখায়। দেবায়ন অবাক হয়ে রূপক আর শ্রেয়ার দিকে তাকায়। ওদের চোখে আবার আগের সেই দৃঢ়তা, কুটিল রেখা। কি চলছে সেটার আভাস পাওয়া যায় না।
শ্রেয়া গলা খাঁকড়ে বলতে শুরু করে, “সব ডাইরেক্টর যখন এইখানে আছে তখন আমার কয়েকটা বিষয়ে কিছু বলার আছে। সবাই ওয়ার্কিং বোর্ড মেম্বার, কিছু না কিছু করে এই কোম্পানিতে দিয়েছি। পায়েল কি দিয়েছে?”
ওই কথা শুনে দেবায়নের কান লাল হয়ে যায়। অনুপমার চোখে রক্ত উঠে যায়। দৃঢ় কণ্ঠে উত্তর দেয়, “আমার পাশে থাকে সেটাই তোর পক্ষে জানা যথেষ্ট। এর থেকে বেশি কৈফিয়ত তোকে দেব না আমি।”
শ্রেয়া স্মিত হেসে বলে, “বেশ তো, তাহলে গত বোর্ড মিটিঙে ইন্দ্রনীলকে কেন মেম্বার বানানো হয়নি? একটা কারন দে?”
অনুপমা একবার দেবায়নের দিকে তাকিয়ে ওকে উত্তর দেয়, “ওকেও বানানোর কথা চিন্তা করা হয়েছে। কিন্তু হঠাৎ করে এই কথা এইখানে উঠছে কেন?”
শ্রেয়া স্মিত হেসে বলে, “দ্যাখ, তোর কোম্পানি বলে তুই যা ইচ্ছে তাই করতে পারিস না। আমার এই কোম্পানিতে বারো পারসেন্টের শেয়ার আছে সুতরাং আমিও কথা বলতে পারি।”
 
Like Reply
ষষ্টবিংশ পর্ব  (#০৬)

অনুপমা ঠাণ্ডা গলায় উত্তর দেয়, “নিশ্চয় বলতে পারিস। তোর কাজ কর্ম নিয়ে কোনোদিন আমরা তোকে কিছু বলিনি। জার্মানি থেকে ফিরে এসে তুই ভীষণ ভাবে কাজে ডুবে গেছিস সেটা আমাদের কোম্পানির পক্ষে খুব ভালো। নিজেই ডিজাইনিং সামলে নিয়েছিস, নিজে থেকে জার্মানি ঘুরে ওদের সাথে কথাবার্তা আলোচনা করেছিস।”
শ্রেয়া ঠাণ্ডা গলায় বলে, “হ্যাঁ করেছিলাম, ভেবেছিলাম কাজ করলে অন্তত আমার শেয়ার বেড়ে যাবে। কিন্তু ফল হল উলটো। পায়েলকে শেয়ার দেওয়া হল কিন্তু আমার কাজের ফল স্বরূপ আমার শেয়ার বাড়ানো হল না। কারন জানতে চাই না।”
পায়েলকে খুব কম, নাম মাত্র শেয়ার শেয়ার দিয়ে বোর্ড মেম্বার বানানো হয়েছিল, যাতে অনুপমার দল ভারী হয়। সেই খবর শ্রেয়ার কাছে চলে গেছে। ইদানিং ব্যালেন্স সিট, কাগজ পত্র নিয়ে বেশ ঘাঁটাঘাঁটি করেছে সেটা অনুপমার অবিদিত নয়। ওর চেহারা কঠিন হয়ে যায়। ঠাণ্ডা গলায় শ্রেয়াকে উত্তর দেয়, “কারন যখন জানতে চাস না তাহলে নিজের কথাটা বল। তুই কি চাস।”
শ্রেয়া কিছুক্ষণ থেমে ওর দিকে একটা কাগজ এগিয়ে দিয়ে বলে, “আমি ডাইরেক্টর পদ থেকে রেজিগনেশান দিচ্ছি।”
এটা আগে থেকেই ওরা বুঝতে পেরে গেছিল। তাই বিশেষ আশ্চর্য হল না অনুপমা। কাগজ হাতে নিয়ে দেবায়নের দিকে এগিয়ে দিল। সাদা কাগজে শুধু মাত্র দুই লাইন লেখা, শ্রেয়া অবিদিত কারনে ডাইরেক্টর পদ স্বেচ্ছায় ছেড়ে দিচ্ছে। দেবায়ন একবার পড়ে নিয়ে পায়েলের দিকে এগিয়ে দিল পড়ার জন্য।
শ্রেয়া বাকিদের দিকে তাকিয়ে বলে, “প্লিজ, যদি কিছু মনে না করো তাহলে আমাদের একটু একা ছেড়ে দেবে প্লিস।”
ওর কাতর কণ্ঠের আবেদন শুনে সবাই দেবায়ন আর অনুপমার দিকে তাকায়। দেবায়ন একবার শ্রেয়া রুপকের দিকে দেখে, একবার দীপঙ্করদা, মনীষা আর সুপর্ণা ম্যডামের দিকে তাকায়। অনুপমা ওদের অনুরোধ করে কনফারেন্স হল থেকে চলে যাওয়ার জন্য। শ্রেয়া এ আবার কোন নতুন খেলায় নেমেছে। সেটা অনুধাবন করতে বেশ অসুবিধে হচ্ছে।
বাকিরা চলে যাওয়া পরে, কনফারেন্স হলের টেবিলের একদিকে পায়েল, অনুপমা আর দেবায়ন বসে, আর ঠিক তার উলটো দিকে শ্রেয়া, ইন্দ্রনীল আর রূপক বসে।
শ্রেয়া ওদের উদ্দেশ্যে বলে, “আমার শেয়ারের টাকা তৈরি আছে কি?”
অনুপমার চোয়াল শক্ত হয়ে যায়, “তুই কোর্টে যা, সেইখানে তোকে দেখব।”
শ্রেয়া স্মিত হেসে বলে, “আচ্ছা তাই হবে।” তারপরে ইন্দ্রনীলের দিকে দেখে বলে, “তোমার কিছু বলার নেই?”
ইন্দ্রনীল গলা খাঁকড়ে বলে, “হ্যাঁ মানে, আমিও রেজিগনেশান দিচ্ছি। মানে এইভাবে বাইরে বাইরে কাটিয়ে কাজ ভালো লাগছে না। ভেবেছিলাম ওই দুটো এয়ারলাইন্সের প্রোজেক্ট আসার পরে আমি ডাইরেক্টর হব কিন্তু সেটা হতে পারলাম না তাই ছেড়ে দেব বলে ঠিক করেছি।”
অনুপমা বাঁকা হেসে শ্রেয়ার দিকে তাকিয়ে বলে, “এই গুলো তাহলে সব তোর ফন্দি।”
শ্রেয়া বাঁকা হেসে বলে, “হ্যাঁ।”
দেবায়ন চাপা গর্জন করে ওঠে, “তুই আস্তিনের সাপ।”
শ্রেয়ার চোখ ছলছল করে ওঠে, ঠোঁট একটু কেঁপে ওঠে, কিন্তু ওর কথার উত্তর না দিয়ে চোখের কোল মুছে নেয়। বুক ভরে শ্বাস নিয়ে ইন্দ্রনীলকে বলে, “তোমার রেজিগনেশান লেটার কি মেইল করে দিয়েছ না প্রিন্ট আউট দেবে?”
ইন্দ্রনীল পকেট থেকে একটা কাগজ বের করে ওর দিকে এগিয়ে দেয়। শ্রেয়া একবার পরে নীচে সই করতে অনুরোধ করে দেবায়ন আর অনুপমার দিকে ইন্দ্রনীলের রেজিগনেশান লেটার এগিয়ে দেয়। পাকা গাল ভরা ইংরেজিতে লেখা বেশ লম্বা চওড়া রেজিগনেশান পত্র, শ্রেয়ার ছোট চিঠির থেকে অনেক অনেক আলাদা।
দেবায়ন ওই চিঠিতে চোখ বুলিয়ে রুপকের দিকে তাকিয়ে বাঁকা হেসে বলে, “এইবারে কি তুই রেজিগনেশান দিচ্ছিস?”
রূপক কিছু না বলে চুপ করে চোখ টিপে কিছু একটা ইশারা করে জানাতে চায়। সেই ইশারা ওদের বোধগম্য হয় না। শ্রেয়া উঠে দাঁড়িয়ে সবার উদ্দেশ্যে বলে, “ইন্দ্রনীল একটা নতুন কোম্পানি খুলতে চায় আর তার জন্য টাকার দরকার। ওর কাছ থেকে আমি জেনেছি এই কোম্পানিতে ওর দশ কোটি টাকা লগ্নি করা আছে।”
অনুপমার চোয়াল শক্ত হয়ে যায় সেই কথা শুনে। এই বিষয়ে দুইদিন আগে বাবার মুখে শুনেছিল, শ্রেয়া যে এত ডুবে ডুবে জল খেয়েছে সেটা আগে থেকে বুঝতে পারেনি। শ্রেয়া ইন্দ্রনীলের উদ্দেশ্যে বলে, “ওই টাকা তোমার নয় নিশ্চয়।”
ইন্দ্রনীল মাথা নাড়ায়, “না, ওই টাকা বাবা, সেন আঙ্কেলকে দিয়েছিল।”
শ্রেয়ার কণ্ঠ স্বর হঠাৎ করে বদলে যায়, “তাহলে ওই টাকার ওপরে তোমার কোন অধিকার নেই। অনিমেশ আঙ্কেলকে বল সেন কাকুর সাথে কথা বলতে।”
শ্রেয়ার এই কণ্ঠ স্বর শুনে অনুপমা আর দেবায়ন বিস্মিত হয়ে যায়। এই কথাটাই ওর বাবা সেদিন রাতে ওকে বলেছিল, তাহলে কি এই বিষয়ে শ্রেয়া ওর বাবার সাথে আলোচনা করে নিয়েছে?
ইন্দ্রনীল কিছু বুঝতে না পেরে ওকে প্রশ্ন করে, “মানে? এতদিন কি তাহলে তুমি আমার সাথে ছলনা করে গেছ?”
শ্রেয়া কঠিন চোখে ইন্দ্রনীলের দিকে তাকিয়ে বলে, “তুমি করনি আমাদের সাথে?” অনুপমার দিকে তাকিয়ে ছলছল চোখে বলে, “সরি রে সোনা। তোকে আগলে রাখার জন্য গেম খেলতে হয়েছিল।” চোখের কোল মুছে বজ্র কণ্ঠে ইন্দ্রনীলকে বলে, “এইখানে আসার আসল উদ্দেশ্য সেটা একবার ঝেড়ে কাশা, না হলে ওই” দেবায়নের দিকে আঙ্গুল দেখিয়ে আর রুপকের দিকে তাকিয়ে বলে, “দুই বাঘ বসে আছে তোমাকে ছিঁড়ে খাবার জন্য।”
ইন্দ্রনীলের গলা শুকিয়ে আমতা আমতা করে কিছু বলতে চেষ্টা করে। শ্রেয়া ঝাঁঝিয়ে ওঠে, “প্রথম দিন থেকেই তোমার ওপরে আমার সন্দেহ ছিল। তুমি ভালো মনে এইখানে আসোনি। তবে তোমার আসল উদ্দেশ্য ধরার জন্য নিজেকে বিলিয়ে দিতে হয়েছিল।”
অনুপমার কান লাল হয়ে যায় এই কথা শুনে। কি বলছে শ্রেয়া? শ্রেয়া বলে চলে, “তাই না ইন্দ্রনীল? তুমি আর তোমার বাবা এইখানে এসেছিলে আসলে অনুপমাকে হাতাতে। র‍্যাডিসন ফোর্টের সমাবেশে যখন তোমার বাবা দেখলেন যে সেন আঙ্কেলের বিশাল টাকা, তখন যেচে এই কোম্পানিতে টাকা ঢাললেন আর তোমাকে এইখানে ওকে হাতানোর জন্য পাঠালেন। বাবা ছেলে মিলে বেশ ফাঁদ পেতেছিলে তাই না?” কাঁপা কান্না জড়ানো অথচ দৃঢ়কণ্ঠে বলে, “তোমার পেট থেকে কথা বের করার জন্য শেষ পর্যন্ত তোমার সাথে শুতে হয়েছে। তবে মদের নেশায় আর আমার শরীরে নেশায় তোমার পেট থেকে কথা বের হয়েছে।”
ইন্দ্রনীল আহত কণ্ঠে বলে, “তুমি আমার সাথে এত বড় প্রতারণা করলে?”
শ্রেয়া চেঁচিয়ে ওঠে ওর দিকে, “চুপ, একটা কথা বলবে না। প্রতারণা? কাকে বলে প্রতারণা তুমি জানো। তুমি কি কি করেছ আমার সাথে আর কি কি বলেছ সেই সব আমার কাছে রেকর্ড করা আছে। বলো তো নন্দনে সত্তর এম এম ফ্লিম চালাতে পারি।”
ইন্দ্রনীল রুপকের দিকে দেখিয়ে বলে, “ওর এক্সিডেন্ট, সেটা?”
দেবায়ন অনুপমা অবাক, কি চলছে কনফারেন্স হলে? শ্রেয়া প্রায় কেঁদে ফেলে, “তোমাকে বিশ্বাস করানোর জন্য ওই জঘন্য খেলা খেলতে হয়েছিল। স্করপিওর ড্রাইভার আমার চেনা তাই শুধু মাত্র ওকে ফেলে দিতে বলেছিলাম। আর আসলে রূপক জানত, কিন্তু বৃষ্টি পড়ে থাকায় হাড় ভেঙ্গেছে, না হলে সেটাও হত না। জানো কত বড় পাথর বুকে রেখে আমাকে তোমার সাথে এই ছলনার খেলায় নামতে হয়েছে? প্রতিবার কান্না পেত কিন্তু ওই দুইজনকে আগলে রাখার জন্য আমাকে করতে হয়েছিল না হলে তুমি আর তোমার বাবা বেশ নিখুঁত ফন্দি এঁটেই এসেছিলে রাজকন্যে আর রাজ্য হাতিয়ে নিতে। আমার অনু আর দেবুকে এইভাবে বিচ্ছেদ করা? না, কারুর পক্ষে সম্ভব নয়।”
ইন্দ্রনীল আহত কণ্ঠে বলে, “তুমি যে রেজিগনেশান দিয়েছ, সেটা তাহলে কি মিথ্যে?”
অনুপমার দিকে ছলছল চোখে তাকিয়ে বলে, “সেটা ওর ব্যাপার। চিঠিটা ঠিক ভাবে পড়লে দেখতে পারতে। আমি শুধু মাত্র ডাইরেক্টর পদ থেকে রেজিগনেশান দিয়েছি, কাজ করব না সেটা কোথাও লেখা নেই। এর পরে আমাকে রাখবে কি রাখবে না সেটা ওর ব্যাপার। তবে ওর সাথে ছলনা? আমার গলায় পাড়া দিলেও করতে পারব না। জানো ওরা কি ধরনের? ওই পায়েল বসে আছে, দেখেছ? ওকে ওরা কোথা থেকে বাঁচিয়ে এনেছে সেটা তোমার ধারনার বাইরে। কেন আমি ব্যালেন্স সিট দেখতাম জানো? গত এক বছরে কুড়ি কোটি টাকার মধ্যে পনেরো কোটি টাকা খরচ হয়ে গেছে, আর আয় বলতে মাত্র পাঁচ কোটি টাকা। আমি শুধু নেচেই বেড়াতাম আর টাকা উড়িয়ে বেড়াতাম। যা দিয়েছে ওই মেয়েটা দিয়েছে আর যা করেছে ওই ছেলেটা করেছে।”
অনুপমার দিকে তাকিয়ে বলে, “হ্যাঁ, আমি সব জানি। প্লিজ, আমাকে পারলে ক্ষমা করে দিস।”
ইন্দ্রনীল উঠে দাঁড়িয়ে চাপা কণ্ঠে চিবিয়ে শ্রেয়া আর বাকিদের উদ্দেশ্যে বলে, “তোমাদের সবাইকে আমি দেখে নেব।”
শ্রেয়া ওর দিকে এক পা এগিয়ে এসে বলে, “বেশি দেখতে যেও না ইন্দ্রনীল। এতদিন আমার সাথে কি কি করেছ, সেই সিডি তোমার পেয়ারের গার্ল ফ্রেন্ড, কি নাম যেন? ও হ্যাঁ, মনিকা দেলাকরিক্স, লন্ডনে থাকে তাই না? এতক্ষণে পৌঁছে গেছে। রাইন না হলে থেমসের জলে তোমাকে কেটে ভাসিয়ে দেবে। ইমেল দেখতে চাও?”
বলে হাতের ট্যাবলেট খুলে দেখায় ওকে।
আহত ইন্দ্রনীল কাঁপতে কাঁপতে শ্রেয়ার দিকে তেড়ে আসে। অনুপমা উঠে দাঁড়ায় সাথে সাথে রূপক ভাঙ্গা পা নিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে গর্জে ওঠে ইন্দ্রনীলের দিকে, “এক পা এগোলে, ধড় থেকে মাথা আলদা করে দেব।”
রূপককে ওই ভাবে গর্জে উঠতে দেখে দেবায়ন উঠে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করে, “তুই জানতিস তাহলে বলিস নি কেন?”
রূপক মাথা নাড়িয়ে ইন্দ্রনীলের দিকে দেখিয়ে বলে, “শ্রেয়ার বারন ছিল তাই বলিনি, সরি।”
আহত পরাজিত ইন্দ্রনীল রাগে ক্ষোভে গজগজ করতে করতে সব কিছু হারিয়ে চলে যেতে উদ্যত হয়। সবার দিকে তাকিয়ে চিবিয়ে চিবিয়ে বলে, “কি ভাবে ওই প্রোজেক্ট গুলো তোমাদের হাতে আসে সেটা দেখে নেব আমি।”
শ্রেয়া হেসে ফেলে ওর কথা শুনে, “সে গুড়ে বালি ইন্দ্রনীল। তোমার সাথে আমি বার্লিন, হেগ, ফ্রাঙ্কফুর্ট এমনি এমনি ঘুরে বেড়াইনি। আসলে আমি ওই জায়গায় গিয়ে এয়ারলাইন্স কোম্পানির বিভিন্ন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনা করেছি। মিস্টার হেরজোগ আর মিস্টার মেরকেলের সাথেও দেখা সাক্ষাৎ করেছি। দুইজনে আমাকে আশ্বস্ত করেছিলেন যে দেবায়ন যখন আছে তখন এই প্রোজেক্ট কিছুতেই হাতছাড়া হবে না।”
ইন্দ্রনীল মাথা নিচু করে পরাজিত হয়ে ক্ষোভে গজগজ করতে করতে কনফারেন্স হল থেকে বেড়িয়ে যায়।
ইন্দ্রনীল চলে যেতেই। শ্রেয়ার দিকে তাকিয়ে অনুপমা বলে, “এত কিছু হয়ে গেল আর তুই আমাকে একটুর জন্য জানালি না কেন?”
দেবায়ন রূপককে একটা লাথি কষিয়ে বলে, “শালা বাল চোদা চোদনা ছেলে আমাদের বললে কি ক্ষতি হত?”
শ্রেয়া চোখের কোল মুছে মৃদু হেসে উত্তর দেয়, “আসলে বলতে চেয়েছিলাম, কিন্তু ইন্দ্রনীল অনেক ঘাঘু মাল। মার্কেটিংয়ের ছেলে, অনেক লোক চড়িয়ে বেড়ায়। আমাদের কথাবার্তার ধরন ধারন দেখলেই আঁচ করতে পারত যে আমি তোদের সব কিছু বলে দিয়েছি। তোদের এই যে ক্ষোভের দুঃখের অভিব্যাক্তি এখন ফুটে উঠেছে, তোরা যদি আগে থেকে জেনে যেতিস, তাহলে সেটা আর ফুটে উঠত না। সেটা যদি একবারের জন্য ইন্দ্রনীল টের পেয়ে যেত তাহলে ওর পেট থেকে কথা বের করতে পারতাম না। তবে হ্যাঁ, আরো একজন এই বিষয়ে জানত।”
দেবায়ন আর অনুপমা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে, “কে?”
পায়েল ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়িয়ে বলে, “আমি।”
অনুপমা কেঁদে ফেলে প্রায়, “তুই? কিন্তু…” শ্রেয়াকে জড়িয়ে ধরে অনুপমা, “তুই না সত্যি একটা মেয়ে মাইরি।”
তিনজনে একপ্রকার একটু মেয়েলী কান্না কাটি সেরে ফেলে। রুপকের ভাঙ্গা পায়ের ওপরে এক লাথি কষিয়ে জিজ্ঞেস করে, “সেই জন্যে শালা তুই হসপিটালে চুপ মেরে ছিলিস তাই না?”
রূপক মাথা দোলায়, “হ্যাঁ, আর তোদের পেছনে ইন্দ্রনীল দাঁড়িয়ে ছিল।”
পায়েল ওদের বলে, “আমি ইচ্ছে করেই তোদের ঘাটাইনি কেননা বুঝতেই পারছিস। বেশি ঘাঁটালে যদি আমার পেট থেকে কথা বের হয়ে যায় তাই। আর শ্রেয়া শুরু থেকে আমাকে বলে রেখেছিল।”
দেবায়ন ওকে আলতো চাঁটি মেরে বলে, “আজ রাতে তোকে বেশ আদর করব।”
পায়েল ওর পাশে সরে এসে বলে, “মেরে ফেলবো এইবারে।”
অনুপমা, শ্রেয়ার চোখের জল মুছিয়ে বলে, “এই সব করতে করতে তোর যদি কিছু হয়ে যেত?”
শ্রেয়া হেসে বলে, “হত না, মনিকাকে বলা আছে সব। জার্মানিতে ফিরলে ওর জন্য খাঁড়া নিয়ে অপেক্ষা করছে।”
দেবায়ন হাতপা ছুঁড়ে বলে, “উফফফ শালা এইকয় মাস যা গেল কি যে বলি।”
শ্রেয়া বলে, “হ্যাঁ জানি।”
দেবায়ন ওর গালে টোকা দিয়ে বলে, “ফ্রাঙ্কফুর্টের হোটেলের বাকিটা তাহলে রাতে সেরে ফেলি কি বল?”
শ্রেয়া ওর পাশে ঘন হয়ে বলে, “যদি অনু অনুমতি দেয় তাহলে।”
রূপক চেঁচিয়ে ওঠে, “এই বাল, নিজের বৌকে লাগা না শালা।”
পায়েল মৃদু হেসে বলে, “এই আমি এইবারে আসছি রে।”
শ্রেয়া চেঁচিয়ে ওঠে, “কেন কোথায় যাবি? আজকে আর কাজ নয়, আজকে…..”
দেবায়ন ওর কথা টেনে বলে, “সারা রাত জম্পেশ পার্টি।”
অনুপমা খিলখিল করে হেসে ফেলে, “ভদকা এন্ড রাম…..”
রূপক বলে, “উফফফ মাইরি, তোর পেটে একবার হুইস্কি পড়লে তুই যে কি হয়ে যাস।”
অনুপমার কান লজ্জায় লাল হয়ে যায়, “যাঃ এমন কি হয়েছে রে?”
শ্রেয়া ভুরু কুঁচকে রুপকের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে, “কবে কোথায় কি করেছ?”
দেবায়ন অবাক হয়ে রূপককে জিজ্ঞেস করে, “কি রে বাল, শ্রেয়া জানেনা জলপাইগুড়ির কথা?” শ্রেয়াকে জড়িয়ে ধরে বলে, “তুই শালী ফ্রাঙ্কফুর্টে আমাকে লাগাতে দিলি না, ওইদিকে জলপাইগুড়ি গিয়ে রূপক আর আমার বৌ হুইস্কি মেরে নিজেদের বাঁড়া গুদ এক করে দিয়েছিল।”
শ্রেয়া, দেবায়নের গালের ওপরে চাঁটি মেরে বলে, “এই একদম মিথ্যে কথা বলবি না। আমি এসেছিলাম, তুই শালা আদিখ্যেতা দেখিয়ে আমাকে চটকে আদর করে পাঠিয়ে দিলি।”
দেবায়ন আর রূপক সমস্বরে বলে ওঠে, “তাহলে আজ রাতে পার্টি। অঙ্কনের কি হবে?”
পায়েল ওদের থেকে একটু তফাতে সরে দাঁড়িয়ে বলে, “যাঃ পাগল আমি নেই। মদ খেয়ে তোরা যা শুরু করবি সেটা আমার জানা আছে।”
রূপক বলে, “আচ্ছা বাবা ঠিক আছে। বুঝতে পারছি, অঙ্কনের সামনে অনুকে ওইভাবে…..”
অনুপমা ওর দিকে তেড়ে যায়, “আর একটা পা বাকি আছে কুত্তা, এইবারে ওইটা ভেঙ্গে দেব।”
রূপক ওকে জড়িয়ে ধরে বলে, “তুই আমার তৃতীয় পা ভাঙ্গিস।”
অনুপমা হাসতে হাসতে কনুই দিয়ে ওর বুকে গুঁতো দিয়ে বলে, “ভাবছি বাকিদের ডেকে নেব, কিন্তু জায়গা? সেইবারে মামনি বাড়ি ছিল না তাই পুচ্চুর বাড়িতে করতে পেরেছিলাম এইবারে?”
দেবায়ন হেসে বলে, “চিন্তা নেই, আগামী কাল উটির রিসোর্টে যাবো। এখুনি চারদিকে ফোন করে দেখ কে কে যাবে, শান্তনুকে বলে সেই মতন প্লেনের টিকিট করিয়ে নেই।”
পায়েল মাথা নাড়িয়ে বলে, “আমি আর অঙ্কন যাবো না।”
অনুপমা হেসে বলে, “না তোদের যেতে হবে না।”
শ্রেয়া ওকে জড়িয়ে ধরে বলে, “ইসসস তোকে খুব মিস করব।”
পায়েল ওর গালে আলতো টোকা দিয়ে বলে, “সেটা একটু করব তবে…..”
শ্রেয়া বলে, “জানি, ভাইয়ের প্রেমে এখন প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছিস তুই।”
ওইখানে বসে সবাইকে ফোন করা হয়, একদিনের মধ্যে যাওয়া একটু মুশকিল, তাও ধীমান আর ঋতুপর্ণা জানিয়ে দেয় বিকেলের মধ্যে ওদের জানিয়ে দেবে। সঙ্গীতা যাওয়ার জন্য লাফিয়ে ওঠে কিন্তু শান্ত শিষ্ট প্রবাল জানে ওইখানে গেলে কি হবে তাই পিছিয়ে যায়। জারিনার বাড়ি থেকে মানা করে দেয় তাই পরাশর পিছিয়ে যায়। শেষ পর্যন্ত ঠিক হল, ছয়জনে মিলে উটি যাবে। সেই মতন শান্তনুকে বলে প্লেনের টিকিট কাটা হয়। দেবায়ন মিস্টার পারিজাতকে বলে দেয় ওরা কইম্বাতুর হয়ে আগামী কাল বিকেলের মধ্যে উটি পৌঁছে যাবে। সব একদম তৈরি, শুধু রাত পার করা বাকি।
 
Like Reply
ষষ্টবিংশ পর্ব (#০৭)

সন্ধ্যের মধ্যে বৃষ্টি মাথায় নিয়ে সবাই মেতে ওঠে আগামী কালের ভ্রমনের জন্য। ভাঙ্গা পা নিয়ে রূপক কি করে যাবে সেটাই শ্রেয়ার চিন্তা, কিন্তু রূপক নাচানাচি করতে শুরু করে দেয়। একটা পা ভেঙ্গেছে কি হয়েছে, আসল পা একদম ঠিক আছে!
শান্তনু জানায় পরেরদিন ভোরের বেলা প্লেন, চেন্নাই হয়ে কোইম্বাতুর যেতে হবে। সরাসরি প্লেনের টিকিট পাওয়া যায়নি। ঋতুপর্ণা আর ধীমান রাতের বেলাতেই ব্যাগ গুছিয়ে হাজির হয়ে যায় অনুপমার বাড়িতে। রূপক আর দেবায়ন জানিয়ে দেয় সকালে এয়ারপোর্টে দেখা হবে, দুইজনে মদ খাবে বলে বাইকে করে বৃষ্টি মাথায় করে অফিসের পরে বেড়িয়ে যায়। শ্রেয়া রাতের মধ্যে নিজের জিনিস পত্র গুছিয়ে অনুপমার বাড়িতে পৌঁছে যায়।
বাড়িতে হুলুস্থুলুস কান্ড। অনুপমার ঘরে আড্ডার আসর বসে। অনেকদিন পরে সবাইকে একসাথে দেখে বাড়ির লোকেরাও বেশ খুশি, বিশেষ করে পায়েল। এক বছর আগে, অফিস খোলার সময়ে ঋতুপর্ণার সাথে দেখা হয়েছিল তারপরে আর দেখা সাক্ষাৎ হয়নি ওর সাথে। পায়েল যাচ্ছে না শুনে ঋতুপর্ণা আক্ষেপ করে কিন্তু শ্রেয়া কারন জানাতে ঋতুপর্ণা ওকে আর অঙ্কনকে খুব ক্ষেপায়। অঙ্কন একবার দিদির দিকে লাল মুখো বাঁদরের মতন মুখ করে তাকিয়ে ওদের ওইখান থেকে বেরিয়ে যায়। চারজন মেয়ে মিলে বাড়ি মাথায় করে তোলে, একা ধীমানের পক্ষে সামলানো মুশকিল হয়ে পরে। বিশেষ করে শ্রেয়া আর অনুপমা ধীমানকে একপ্রকার কোণঠাসা করে ধরে।
শ্রেয়া ধীমানের মাথায় চাঁটি মেরে বলে, “কি রে এতদিন তোদের দেখা পাইনি কেন? ঋতুর ঋতুস্রাব বন্ধ হয়ে গেছে নাকি?”
ঋতুপর্ণা মিচকি হেসে উত্তর দেয়, “তোদের কি অবস্থা? এক অফিসে কাজ করিস, এক সাথে থাকিস। মনে হচ্ছে প্রতিদিন এপিঠ ওপিঠ করে বাঁড়া বদল করা হয়?”
অনুপমা হেসে ফেলে, “হল আর কই…..” শ্রেয়ার দিকে অভিমানী চাহনি নিয়ে তাকায়, “মেয়েটা গত ছয়মাসে…..”
পায়েল ওর কথা টেনে বলে, “কাজে খুব ব্যাস্ত ছিল শ্রেয়া। ফ্রাঙ্কফুর্ট, হেগ, বার্লিন এইসব করে বেড়িয়েছে।”
ঋতুপর্ণা কিঞ্চিত বিস্ময়ে ওদের দিকে তাকিয়ে বলে, “বাপরে, এর মধ্যে কয়বার বিদেশ গেলি?”
শ্রেয়া, অনুপমাকে জড়িয়ে ধরে বলে, “কাজের জন্য গিয়েছিলাম। এ না থাকলে এই ভারতের চৌহিদ্দি পেরাতে পারতাম না।”
অনুপমা ওর গালে চুমু খেয়ে বলে, “তুই এক কাজ কর, আমি হোটেল দেখি আর তুই সফটওয়্যার কোম্পানিটা দেখ।”
শ্রেয়ার চোখ জোড়া চিকচিক করে ওঠে, মাথা নাড়িয়ে বলে, “না আর নয়। এইবারে শুধু কাজ, আগামী বছরের মধ্যে দ্বিতীয় এয়ারলাইন্সের প্রোজেক্ট কমপ্লিট করে ডিপ্লয় করতে হবে। তারপরে আবার দেখি…..”
অনুপমা ওর গালে চাঁটি মেরে বলে, “অন্তত আগামী দুইদিন কাজের কথা ছেড়ে অন্য কিছু বল।”
শ্রেয়া নেচে ওঠে, “ঠিক আছে।”
পায়েল আড়মোড়া খেয়ে লাজুক হেসে বলে, “এই আমি শুতে চললাম।”
বলে স্লিপের কাপবোর্ড খুলে স্লিপ হাতে বাথরুমে ঢুকে পড়ে। ওর দিকে তাকিয়ে শ্রেয়া আর ঋতুপর্ণা অনুপমাকে জিজ্ঞেস করে, “কি রে কোথায় যাচ্ছে ও?”
অনুপমা মিচকি হেসে উত্তর দেয়, “আর কোথায় যাবে। মোল্লার দৌড় মসজিদ পর্যন্ত আর পায়েলের দৌড় ভাইয়ের ঘর পর্যন্ত।”
সেই শুনে সবার চক্ষু চড়ক গাছ। ধীমান গলা নামিয়ে বলে, “কাকু কাকিমা অনুমতি দিয়ে দিয়েছে?”
অনুপমা মাথা দোলায়, “কি আছে, ঘরের বৌমা কয়েকদিন আগেই না হয় ঘরে চলে এসেছে এই যা। ভাইয়ের কলেজ শেষ হলেই বিয়ে দিয়ে দেওয়া হবে, না হলে কন্ডম আর পিলে বেশি টাকা খরচ হয়ে যাচ্ছে।”
সবাই হেসে ফেলে অনুপমার কথা শুনে। পায়েলকে গোলাপি পাতলা স্লিপ পরে বাথরুম থেকে বেড়িয়ে আসতে দেখে ধীমান নিজের লিঙ্গ একটু ঠিক করে নেয়। নধর গোলগাল পায়েলের পাছার দুলুনি সেই আগের মতন। বড় বড় মাংসল পাছার দুলুনি দেখে ধীমানের লিঙ্গ ফুঁসতে শুরু করে দেয়। গোলাপি স্লিপের তলায় ব্রা পড়েনি, নিচের গাঢ় রঙের প্যান্টির রঙ পরিস্কার দেখা যাচ্ছে।
শ্রেয়া, ঋতুপর্ণা ওর দিকে দেখে বলল, “ওহে সোহাগিনী কামিনী। এত ফুলটুসি সেজে যাচ্ছও, দেখো খাট যেন ভেঙ্গে না পড়ে। আর হ্যাঁ, ওই প্যান্টি পরে কি লাভ! সেই তো খুলেই শুবি, এইখানেই খুলে দে।”
পায়েলের চোখ মুখ কান গরম হয়ে যায় লজ্জায়, সঙ্গে সঙ্গে নিজের দিকে তাকিয়ে দৌড়ে বাথরুমে ঢুকে একটা তোয়ালে গায়ে জড়িয়ে নেয়। বাইরে ছেলে মেয়েগুলো যেভাবে বুভুক্ষুর মতন ওর দিকে তাকিয়ে আছে, তাতে ধীমানের চেয়ে শ্রেয়া আর ঋতুপর্ণাকে বেশি ভয় লাগলো। পায়েল আর ঋতুপর্ণা, শ্রেয়ার কান্ড দেখে মনে মনে হেসে ফেলে অনুপমা। এই পায়েল দুই বছর আগে, বন্ধু বান্ধবীদের সামনে উলঙ্গ হতে লজ্জা পেত না। মুখে কোন কথা আটকাত না, যাকে যা পারত বলে দিত। আগে কত জনের সাথে যৌন সঙ্গমে মেতেছে তার ঠিক নেই আর সেই পায়েল আমূল বদলে গেছে। পর্দার আড়াল থেকে গলা খাঁকড়ানির আওয়াজ অনুপমা ফিকফিক করে হেসে ফেলে।
চোখ পাকিয়ে পায়েলকে বলে, “এটা খুব বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে পায়েল। ভাইকে বলে দিস এত বাড়াবাড়ি কিন্তু ভালো নয়।”
পায়েল একটু লজ্জা পায়, নবৌঢ়া বধুর মতন মাথা নাড়িয়ে বলে, “ঠিক আছে।”
শ্রেয়া বুক চেপে, “উফফফফ মাইরি আর পারিনা।” দরজার দিকে তাকিয়ে অঙ্কনের উদ্দেশ্যে বলে, “নাক টিপলে দুধ বের হবে আর এখুনি ওইখান থেকে দুধ বের করতে…..”
অনুপমা কটমট করে তাকাতেই শ্রেয়া চুপ করে যায়।
ঋতুপর্ণা ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে রাত এগারোটা বাজতে চলল। ধীমানকে বলে একবার দেবায়ন আর রূপককে ফোন করে দেখতে। যদি আসত তাহলে বেশ মজা হত। শ্রেয়া জানিয়ে দেয় ওদের আজকে না ডাকাই ভালো, দুইজনে কোথায় মদ খেয়ে পরে থাকবে তার নেই ঠিক। এই বাড়িতে এলে কারুর রক্ষে নেই। ধীমান জানিয়ে দেয় ওর ঘুম পাচ্ছে, ঋতুপর্ণা ওকে বলে দেয় নিচের গেস্টরুমে গিয়ে শুয়ে পড়তে। অনুপমার ঘরেই তিন বান্ধবী রাত কাটাবে।
ধীমান ইয়ার্কি মেরে কাতর কণ্ঠে শ্রেয়া আর অনুপমাকে বলে, “দেখিস বাবা, পাঁচটা দশটা নয় ওই একটা বউ আমার। পারলে আমার জন্য সকালে একটু রেখে দিস, না হলে আর কি করব বল।”
ঋতুপর্ণা ঝাঁঝিয়ে ওঠে, “তুমি যাও তো এইখান থেকে।”
অনুপমা ঋতুপর্ণাকে বলে, “তোর ইচ্ছে থাকলে ওর সাথে চলে যেতে পারিস, কোন আপত্তি নেই।” বলেই ধীমানের দিকে চোখ টিপে হেসে বলে, “দেখ ভাই, ভেসলিন আছে পেছনের জন্য। চাই নাকি বল?”
ঋতুপর্ণা কটমট করে অনুপমার দিকে তাকিয়ে হেসে ফেলে। আসলে অনুপমার ইচ্ছে ছিল শ্রেয়ার সাথে একটু একান্তে থাকার। এতদিন যে শ্রেয়া একাই যুদ্ধ করে গেছে সেই সব কথা জানার খুব ইচ্ছে ছিল। ঋতুপর্ণা আর ধীমান নীচে গেস্ট রুমে শুতে চলে যায়।
শ্রেয়া নিজের জিন্স খুলে, ব্রা খুলে গায়ে স্লিপ গলিয়ে নেয়। দুই বান্ধবী শুধু মাত্র গায়ে একটা স্লিপ গলিয়ে বিছানার ওপরে শুয়ে পরে। শ্রেয়া বালিশ খানা বুকের ওপরে আঁকড়ে ধরে চোখ বন্ধ করে বেশ কিছুক্ষণ চুপচাপ পড়ে থাকে। ওকে ওইভাবে চুপ হয়ে পরে থাকতে দেখে অনুপমা ওকে জিজ্ঞেস করে, “কি রে তোর কি হল।”
স্মিত হেসে শ্রেয়া উত্তর দেয়, “কিছু না এই এমনি ভাবছি ওই দুটোর কথা। একটা বারের জন্য ফোন করল না শালা গান্ডুচোদা ছেলে গুলো।” বলেই শ্রেয়া হেসে ফেলে। ওর চোখ দুটো হঠাৎ করে অনুপমাকে দেখে কেমন ভাসাভাসা হয়ে যায়।
অনুপমা ওর মনের অবস্থা বুঝে জিজ্ঞেস করে, “তুই এত সব একা একা কেন করতে গেলি?”
শ্রেয়া ওকে জড়িয়ে ধরে বলে, “কিছু না এমনি। ছাড় না ওইসব।”
অনুপমা ওকে জোর করে জিজ্ঞেস করে, “এমনি এমনি কি করে তোকে ছেড়ে দেই বল। তুই যেখানে পা রেখেছিলিস সেখানে তোর আসন্ন বিপদ হতে পারত। ওই বিদেশে তোর অভিসন্ধি যদি ইন্দ্রনীল ধরতে পেরে যেত তাহলে কি হত?”
শ্রেয়া বালিশ আঁকড়ে মাথা নিচু করে বলে, “জানি না কি হত। মাঝে মাঝে ভয় যে করেনি তা নয় তবে…..”
অনুপমা ওর মুখ আঁজলা করে ধরে কপালে চুমু খেয়ে বলে, “আর এমন পাগলামি করবি না। প্লিজ অন্তত আমাকে না জানিয়ে করবি না।”
শ্রেয়া মাথা নাড়ায়, “না আর করব না।”
অনুপমা ধরা গলায় বলে, “জানিস যখন মনে হত আমার শ্রেয়া আর আমার নেই তখন…..”
শ্রেয়া কেঁদে ফেলে, “জানি, তোর চোখ দেখে নিজের কেবিনে বসে, নিজের খাটে শুয়ে কাঁদতাম। কিন্তু তোকে বলে ফেললেই সব ভন্ডুল হয়ে যেত।” তারপরে দাঁতে দাঁত পিষে বলে, “ইন্দ্রনীলকে আমি ছাড়ব না। ওর শেষ…..”
শ্রেয়াকে শান্ত করে বলে, “দেখা যাক বাবা কি করেন। এইবারে একটু ঘুমা তো, অনেক করেছিস।”
শ্রেয়া অনুপমার গলা জড়িয়ে ঘাড়ে মুখ গুঁজে দেয়। দুই কমনীয় সুন্দরীর শরীর একে ওপরকে ধীরে ধীরে নিজেদের বাহু ডোরে বেঁধে ফেলে। অনেকদিন পরে এক নারীর ছোঁয়া পেয়ে অনুপমার শরীরে আগুনের মাতন লেগে গেল। কলেজের শুরুর দিকে, যখন দেবায়নের সাথে দেখা হয়নি, তখন ওর সঙ্গিনী ছিল প্রানের বান্ধবী পায়েল। সেই পায়েল আজকাল ভাইয়ের অঙ্ক শায়িনী, আগের পায়েল আর নেই। শ্রেয়ার গভীর আলিঙ্গনে হারিয়ে যেতে ইচ্ছে করে খুব। স্লিপের ওপর দিয়েই শ্রেয়ার পিঠের ওপরে হাত বুলিয়ে দেয়। ধীরে ধীরে শ্রেয়ার হাত ওর পিঠের ওপরে ঘুরে বেড়াতে শুরু করে দেয়। দুই জনে দুইজনার মুখের দিকে তাকায়। দুইজোড়া চোখে এক অব্যাক্ত আগুন, শ্রেয়ার স্তন জোড়া একটু একটু ফুলে উঠেছে। অনুপমার স্তনের বোঁটা জোড়া ফুলে ওঠে শ্রেয়ার নরম স্তনের ছোঁয়ায়। স্লিপের ভেতর থেকে দুইজনের শরীরের আগুন ওপরের শরীরের ছড়িয়ে পড়তে দেরি হয় না।
শ্রেয়া ওর মুখ খানি আঁজলা করে ধরে আলতো করে নাকের ওপরে নাক ঘষে দেয়। খোলা ঠোঁটের ভেতর থেকে উষ্ণ শ্বাস একে ওপরের ঠোঁট ভিজিয়ে দেয়। অনুপমা, শ্রেয়ার কোমর জড়িয়ে ধরে চিত হয়ে শুয়ে পড়ে, নীচে অনুপমা ওপরে শ্রেয়া। দুই জোড়া কোমল স্তন যুগল একে ওপরের সাথে পিষে যায়। ধীরে ধীরে শ্রেয়া চোখ বুজে অনুপমার ঠোঁটের ওপরে নিজের ঠোঁট নামিয়ে আনে। নিঃশব্দে দুই তৃষ্ণার্ত বান্ধবীর ঠোঁট মিলে মিশে একাকার হয়ে যায়। অনুপমা দুই পেলব ঊরু মেলে ধরে তার মাঝে শ্রেয়ার নধর দেহ পল্লবকে বেঁধে ফেলে। পিঠের ওপরে হাত বুলিয়ে ওর স্লিপ মাথা থেকে গলিয়ে শ্রেয়াকে নগ্ন করে দেয়।
পাগলের মতন একবার নিচের ঠোঁটে চুমু একবার ওপরে ঠোঁটে চুমু খেয়ে দুইজনা দুইজনকে অতিষ্ঠ করে তোলে। চুম্বন শেষে নগ্ন শ্রেয়া নিজের স্তন জোড়া অনুপমার স্তনের ওপরে চেপে ধরে মিষ্টি করে বলে, “তুই না ভারী শয়তান।”
অনুপমা ওর নরম পাছা জোড়া হাতের থাবার মধ্যে খামচে ধরে নিজের ঊরুসন্ধি বান্ধবীর ঊরুসন্ধির সাথে মিশিয়ে দেয়। পাছার ওপরে ছোট ছোট থাবায় পিষতে পিষতে জিজ্ঞেস করে, “কিসের শয়তানি করলাম রে?”
শ্রেয়া ওর ঠোঁটের ওপরে জিব বুলিয়ে অনুপমার লালা চেটে বলে, “জলপাইগুড়িতে রুপকের সাথে কি করেছিস সেটা জানাসনি কেন?”
অনুপমার দুই চোখে হঠাৎ রঙ যায়, “এই কি যে বলিস না তুই। যাঃ মদের ঝোঁকে একটু হয়ে গিয়েছিল।” বলেই ওর পাছার ওপরে আলতো চাঁটি মেরে হিল্লোল তুলে দেয়।
শ্রেয়া নিজের স্তন জোড়া অনুপমার স্তনের ওপরে ঘষতে ঘষতে জিজ্ঞেস করে, “আর কেমন লাগলো রে?”
অনুপমা চোখ পাকিয়ে নাক কুঁচকে মজা করে বলে, “সেই রকম কিছু না।”
কিন্তু বারেবারে মনে পরে যাচ্ছিল জলপাইগুড়ির সেই রাতের কথা। মদের ঝোঁকে পাগলের মতন একে ওপরের ওপরে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল সেই রাতে। যদিও ওর পুচ্চু ওকে প্রতিবার পাগল করে তোলে কিন্তু এক ভিন্ন স্বাদের আস্বাদন কে না করতে চায়। মনে পড়তেই অনুপমার শরীরের কাঁটা দিয়ে দেয় আর সেই সাথে ওপরে শ্রেয়াকে দেখে ঊরুসন্ধিতে কামনার তরল আগুন বয়ে যায়।
নিজের বুকের ওপরে অনুপমার রোমকূপের শিহরণ অনুভব করে শ্রেয়া সঙ্গে সঙ্গে ওর ঊরুসন্ধির ওপরে হাত চেপে ধরে। তিরতির করে যোনি রসে ভিজে যাওয়া পান্টি অনুপমার যোনির সাথে লেপটে যায় আর শ্রেয়া ইচ্ছে করেই সেই প্যান্টির কাপড় সরিয়ে আলতো করে ওর যোনি চেরায় আঙ্গুল বুলিয়ে উত্যক্ত করে বলে, “উম্মম সোনা….. ভেবেই গায়ে কাঁটা দিচ্ছে তাই না? ইসসস কি করেছিল যে তোকে সেটা একবার শুনতে ইচ্ছে করছে…..”
শ্রেয়ার উত্তপ্ত আঙ্গুল ওর যোনি চেরার ওপরে পড়তেই অনুপমার শরীর টানটান হয়ে যায় কামোত্তেজনায়। ওর হাতের দিকে নিজের ঊরুসন্ধি ঠেলে দিয়ে শ্রেয়াকে বলে, “এই যাঃ তুই যদি পুচ্চুর সাথে কিছু না করতে পারিস সেটা কি আর আমার দোষ?”
শ্রেয়া ওর যোনির ওপরে আঙ্গুল বুলাতে বুলাতে আক্ষেপের সুরে বলে, “কি করব বল, ওইদিকে ইন্দ্রনীল আমার জন্য অন্য একটা ঘরে অপেক্ষা করছিল। যদিও দেবুকে ছেড়ে ওর কাছে যাওয়ার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে ছিল না তবুও যেতে হয়েছিল। সেই রাতেই আমাকে অনেক ঘটনা বলল।”
অনুপমা ওকে জড়িয়ে ধরে বিছানার ওপরে গড়িয়ে যায়। শ্রেয়াকে চিত করে শুইয়ে দিয়ে নিজের স্লিপ খুলে ওর ওপরে উঠে পড়ে। দুইপাশ থেকে শ্রেয়ার দুই নরম স্তন পিষে এক করে দিয়ে বলে, “পুচ্চুকে না পেয়ে ভালোই হল, না হলে তোর এই সুন্দর মাইগুলো ছিঁড়ে খেত, আর আমি ঠিক ভাবে চুষতে পারতাম না।”
শ্রেয়ার স্তন বৃন্তদুটো শক্ত হয়ে ফুটে ওঠে নরম শৃঙ্গের ওপরে। ভীষণ কামাবেগে ললনার চোখের পাতা ভারী হয়ে আসে। সুন্দরী বান্ধবীর হাতের ছোঁয়ায় এক অদ্ভুত অনুভুতি সারা শরীরে দেখা দেয়, এই অনুভুতি ওর প্রেমিকের ছোঁয়া থেকে অনেক আলাদা, নরম আর ভীষণ ভাবে মিষ্টি। শ্রেয়ার শরীর বেঁকে যায়, বুক উপরের দিকে অনুপমার মুখের দিকে ঠেলে মিহি কণ্ঠে বলে, “উফফফ এই ছিল তোর মনে, তাই ঋতুপর্ণাকে নীচে পাঠিয়ে দিলি?”
অনুপমা জিব বের করে একটার পরে একটা স্তনবৃন্তের ওপরে জিব বুলিয়ে চেটে দিয়ে বলে, “হ্যাঁ রে সোনা। তোকে কাছে পেয়ে ঠিক থেমে থাকতে পারলাম না।”
অনুপমা, উভলিঙ্গের প্রতি সমান কামুকী, যেমন পায়েলের শরীর নিয়ে খেলতে ভালবাসতো তেমন প্রেমিক দেবায়নকে ভালবাসতো। কিন্তু দেবায়নের ছোঁয়া পাওয়ার পর থেকে পায়েলের শরীর আর তেমন একটা ভালো লাগতনা। এতদিন পরে শ্রেয়াকে পেয়ে আবার সেই পুরানো সমকামী ভালোবাসা জেগে ওঠে। শ্রেয়ার দুই স্তন চটকাতে চটকাতে একটার পর একটা স্তনের বোঁটা মুখের মধ্যে নিয়ে চুষতে শুরু করে দেয়। গরম শ্বাসে শ্রেয়ার গলা, গর্দান ভাসিয়ে দিয়ে অজস্র চুম্বনে ভিজিয়ে দেয় শ্রেয়ার ত্বক। কোমল স্তন জোড়া অনুপমার মুখের লালায় ভিজে যায় আর চোষার ফলে লালচে রঙ ধরে। ধীরে ধীরে অনুপমার ঠোঁট শ্রেয়ার মধ্যচ্ছদা বরাবর নিচের দিকে নামতে শুরু করে। শ্রেয়া চোখ বুজে দুই হাতে বালিশ খামচে ধরে পরে থাকে আর ঠোঁট কামড়ে মিহি কামঘন শীৎকারে ঘর ভরিয়ে দেয়।
স্তন জোড়া হাতের মধ্যে নিয়ে পিষে দিতে দিতে অনুপমার মুখ নেমে আসে শ্রেয়ার নরম পেটের ওপরে। নাভির চারপাশে জিবের ডগা বুলিয়ে ওকে কামোত্তেজিত করে তোলে। ওর নাকে ভেসে আসে নিজের গায়ের গন্ধ, এক নারীর রাগ রসের তীব্র ঝাঁঝালো গন্ধ। শ্রেয়ার কোমর বিছানা ছেড়ে উঠে যায়। অনুপমা ওর ঊরুর মাঝে হত দিয়ে দুই ঊরু দুইপাশে ঠেলে ধরে। শ্রেয়া দুই ঊরু মেলে অনুপমার মাথা চেপে ধরে নিজের ঊরুসন্ধির ওপরে। প্যান্টি সরিয়ে ভিজে চকচকে ছোট করে ছাঁটা যোনিকেশে আবৃত নরম ফোলা যোনিচেরার অপরে ঠোঁট গোল করে চেপে ধরে তীব্র কামঘন এক চুম্বন একে দেয়।
শ্রেয়া কামজ্বালায় ছটফট করে ওঠে। সুন্দরী বান্ধবীর মাথা নিজের যোনির ওপরে চেপে ধরে মিহি কামঘন কণ্ঠে ডাক ছেড়ে ওঠে, “ইসসস কি করিস….. এতদিন কোথায় ছিলিস সোনা?”
অনুপমা জিব দিয়ে যোনি চেরা বরাবর চেটে ওর যোনি নির্যাস চুষে নেয়। রাগরস জিবে লাগতেই তৃষ্ণার্ত অনুপমা কামোন্মাদ হয়ে ওঠে। যোনির চারপাশে ছোট ছোট চুমু দিয়ে ভরিয়ে শ্রেয়াকে তীব্র কামনার উত্যুঙ্গ শৃঙ্গে নিয়ে যায়। নাকের ওপরে ছোট ছোট করে ছাঁটা যোনি কেশের ছোঁয়া পেয়ে আরো বেশি পাগলিনী হয়ে যায়। দেবায়নের লিঙ্গ চোষার সময়ে যেমন ওর নাকের ওপরে দেবায়নের যৌন কেশ এসে লাগে এই অনুভুতি তার থেকে অনেক ভিন্ন। নরম রেশমি ছোট করে ছাঁটা যোনিকেশের ওপরে চুমু খেয়ে শ্রেয়াকে পাগল করে তোলে।
শ্রেয়া থাকতে না পেরে বেঁকে যায়, অনুপমার দুই পা ধরে নিজের দিকে টেনে আনে। অনুপমা বুঝে যায় শ্রেয়া কি চায়, তাই দুই ঊরু মেলে নিজের ঊরুসন্ধি শ্রেয়ার মুখের ওপরে নিয়ে যায়। উপরে অনুপমা, নিজের দুই ঊরু মেলে শ্রেয়ার মাথা উরুমাঝে নিয়ে ঊরুসন্ধি ওর মুখের সামনে মেলে ধরে আর শ্রেয়ার ঊরুসন্ধি নিজের মুখের সামনে মেলে যোনির ওপরে জিবের আক্রমন চালায়।
শ্রেয়ার নরম সুউন্নত স্তন যুগল অনুপমার তলপেটের ওপরে পিষে যায় অন্যদিকে অনুপমার নরম স্তন যুগল শ্রেয়ার তলপেটের ওপরে পিষে যায়। দুই বান্ধবী নিজেদের যোনি নিয়ে এক মত্ত কামক্রীড়াতে মেতে ওঠে। অনুপমা দুই আঙ্গুল ঢুকিয়ে দেয় শ্রেয়ার শিক্ত কোমল আঁটো যোনির মধ্যে। আঙ্গুল দুটো ধীরে ধীরে যোনির মধ্যে সঞ্চালন করতে করতে শ্রেয়ার ভগাঙ্কুরে জিবের ডগা দিয়ে চেটে চেপে ধরে। মাঝে মাঝে দাঁতের মধ্যে নিয়ে অথবা ঠোঁটের মধ্যে ভগাঙ্কুর নিয়ে ছোট্ট অতি সংবেদনশীল দানাটা পিষে ধরে। শ্রেয়ার নধর শরীর অনুপমার কামুকী নধর শরীরের নীচে ছটফট করে ওঠে।
অনুপমা দুই পাছার নরম পিন্ড দুই হাতের থাবার মধ্যে পিষে ধরে শ্রেয়া। ওর মুখের সামনে হাঁ করে খুলে যায় অনুপমার যোনি গহ্বর। শিক্ত নরম যোনি হতে নিঃসৃত কামরস শ্রেয়ার ঠোঁট ভিজিয়ে দেয়। নাকের মধ্যে নারীর তীব্র কামরসের ঝাঁঝালো মাতাল করা আঘ্রান ওকে পাগল করে তোলে। অনুপমার পাছা দুই হাতে চটকে ধরে যোনির ওপরে ঠোঁট বসিয়ে চুষে নেয় প্রিয় বান্ধবীর শরীরের কাম নির্যাস। জিবের দগা দিয়ে বান্ধবীর যোনি চেরা চেটে চুষে একাকার করে দিতে তৎপর হয়ে ওঠে।
দুই সুন্দরী ললনা একে ওপরকে ভালবাসায় আর কামনার জ্বালায় জ্বলতে জ্বলতে পরস্পরকে ভরিয়ে দিতে তৎপর হয়ে ওঠে। এইভাবে যোনি নিয়ে অনেকক্ষণ খেলার পরে দুইজনের শরীর জ্বলতে শুরু করে দেয়। বুঝে যায় অনুপমা এরপরে নিজেকে ধরে রাখা সম্ভবনয়। শ্রেয়ার মুখের ওপরে ঊরুসন্ধি চেপে ধরে ওর শ্বাস রুদ্ধ করে দেয়। শ্রেয়া ওর পাছার নরম পিন্ড দুটো হাতের মধ্যে নিয়ে চটকাতে চটকাতে অনুপমার যোনির মধ্যে দুই আঙ্গুল ঢুকিয়ে তীব্র বেগে সঞ্চালনে মেতে ওঠে।
অন্যপাশে অনুপমা, শ্রেয়ার যোনির মধ্যে আঙ্গুল সঞ্চলানের সাথে সাথে ভগাঙ্কুর চুষে তীব্র কামনার আনন্দ প্রদান করে। দুই সুন্দরী নিজেদের রাগ রস প্রস্রবন করে একে ওপরের মুখমন্ডল ভরিয়ে, শ্রান্ত হয়ে নিজেদের জড়িয়ে ধরে শুয়ে পড়ে।
শ্রেয়ার শরীরের ওপর থেকে নেমে পাশে শুয়ে ওকে জড়িয়ে ধরে। শ্রেয়ার পায়ের ফাঁকে নিজের একটা ঊরু, আর নিজের পায়ের ফাঁকে শ্রেয়ার একটা ঊরু। হাতে পায়ে সাপের মতন পরস্পরকে পেঁচিয়ে ধরে দুই বান্ধবী আলতো আলতো চুমুতে একে ওপরে মুখমণ্ডল ভরিয়ে দেয়।
শ্রেয়া ওর মুখ আঁজলা করে ধরে টলটল চোখে ওর দিকে তাকিয়ে বলে, “এইভাবে এত ভালবাসলে মনে হচ্ছে রূপককে ছেড়ে তোকে নিয়েই পরে থাকি।”
অনুপমা মিষ্টি হেসে ওর লাল নরম ঠোঁটের ওপরে আলতো কামড় বসিয়ে দিয়ে বলে, “আমি কিন্তু পুচ্চুকে ছারছি না। তুই কাছে থাকলে তোকে একসাথে দুইজনে মিলে…..”
শ্রেয়া নাক কুঁচকে মিষ্টি করে মুখ ভেঞ্চে বলে, “আমার রূপক কি বানের জলে ভেসে আসা ছেলে? কিন্তু সোনা ওর পা ভাঙ্গা একটু দেখে…..”
অনুপমা ওকে জড়িয়ে স্তনের সাথে স্তন মিলিয়ে মিষ্টি করে বলে, “আচ্ছা বাবা আচ্ছা, রুপকের খেয়াল আমি রাখব। তোর চিন্তা নেই” চোখ টিপে নাকের ওপরে আলতো কামড় বসিয়ে বলে, “পুচ্চু কিন্তু তোকে ছেড়ে দেবে না। ওর কিন্তু কিছুই ভাঙ্গা নেই…..”
অনুপমার পাছা চটকে নিজের ঊরুসন্ধির সাথে বান্ধবীর ঊরুসন্ধি চেপে ধরে বলে, “প্লিস আর বলিস না। ফ্রাঙ্কফুর্টের কথা মনে পরে যাচ্ছেরে….. ইসসস কি ভাবে জড়িয়ে ধরেছিল আমাকে….. আমার মাই দুটো স্লিপের ওপর দিয়েই একটু চটকে পিষে আদর করে দিয়েছিল। তলপেট ছাড়িয়ে ওর হাত নেমে গেছিল আমার প্যান্টির কাছে। ওর ওই বিশাল গরম বাঁড়া আমার পাছার ওপরে চেপে ধরেছিল। উম্মম্মম গা শিরশির করছে উটির কথা ভেবেই। কখন যে তোর দেবু আমাকে একটু ভালো করে করবে…..”
অনুপমা মিষ্টি হেসে বলে, “ব্যাস, রাত পোহালে দেবু তোর।” চোখ পাকিয়ে বলে, “শুধু কিন্তু উটি, তার বেশি আর দিতে পারলাম না…..”
শ্রেয়া হেসে ফেলে, “শুধু উটি, তার বেশি আর চাই না!”
সকাল থেকেই ওদের বের হবার তোড়জোড় লেগে যায়। খাবার টেবিলে অনুপমা আর শ্রেয়া, ঋতুপর্ণাকে নিয়ে পড়ে। “এই এত জোরে জোরে কেন করছিলিস? উপর পর্যন্ত আওয়াজ আসছিল।”
ঋতুপর্ণা লজ্জায় পড়ে যায়, অবশ্য শ্রেয়া আর অনুপমা নিজেদের নিয়েই এত মশগুল ছিল যে চারপাশের পৃথিবীর খবর নেওয়ার মতন ওদের কাছে সময় অথবা ইচ্ছে ছিল না। শ্রেয়া আর অনুপমার মুখের হাসি দেখে পায়েলের বেশ খুশি।
 
[+] 1 user Likes Mr Fantastic's post
Like Reply
ষষ্টবিংশ পর্ব (#০৮)

ধীমান শ্রেয়াকে আলতো ধাক্কা মেরে বলে, “কিরে দেবুকে করবি না আমাকে? চোখে যা রঙ লেগেছে সেই রঙ দেখে আর থাকতে পারছি না।”
আসলে গতরাতের প্রিয় বান্ধবীর সাথে খেলার রঙ এখন কাটেনি ঠিকভাবে। তাও শ্রেয়া ওর কানেকানে বলে, “তুই আমাকে করিস, আর ঋতুকে না হয় রূপক আর দেবায়নের সাথে ছেড়ে দেওয়া হবে।”
ধীমান একপাশে অনুপমাকে জড়িয়ে ধরে অন্যপাশে শ্রেয়াকে জড়িয়ে ধরে বলে, “ঠিক আছে সুন্দরীরা। তোরা আমার বাঁড়ার খেয়াল রাখিস আর ওই দুইজনে মিলে আমার প্রেমিকার খেয়াল রাখবে।” চোখ টিপে ঋতুপর্ণাকে বলে, “কি সোনা, এইবারে কারটা পেছনে আর কারটা সামনে?”
বাইরে আবার বৃষ্টি শুরু, একটু পরেই ওদের বেড়িয়ে পড়তে হবে। কথা ছিল, দেবায়ন আর রূপক সোজা এয়ারপোর্টে পৌঁছে যাবে। গতরাতে দুইজনে মিলে আকন্ঠ বিষপানের মতন মদ খেয়ে মাতলামো করেছে। এমনকি মাতাল হয়ে রুপকের পশ্চাৎদেশে বেশ কয়েকটা লাত্থি ঝেড়ে দিয়েছে। এক প্রকার শাসিয়ে দিয়েছে, উটিতে রূপক একদম শ্রেয়াকে ছুঁতে পারবে না। সেই নিয়েও খাবার টেবিলে খানিকটা হাসাহাসি হয়ে যায়। ব্রেকফাস্ট টেবিলে ভাগ্যিস বাড়ির বড়রা অথবা অঙ্কন ছিল না। সকাল সকাল সোমেশ আর অঙ্কন খেয়ে দেয়ে নিজেদের কাজে বেড়িয়ে গেছে। পারমিতা সোফায় বসে ওদের এই হাসি মজা উপভোগ করছিল। এতদিনে শ্রেয়া আর অনুপমার মাঝে চলা উত্তপ্ত লাভার ফল্গু নদী যদিও জানত না, তাও ওদের একসাথে দেখে বেশ ভালো লাগে।
খাওয়া দাওয়া সেরে সবাই বেড়াতে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়ে যায়। শ্রেয়া একটা চাপা হালকা রঙের জিন্স আর হালকা গোলাপি রঙের টপ পরে, অনুপমার পরনে সাদা রঙের জিন্স আর আকাশী রঙের চাপা টপ, ঋতুপর্ণা একটা হাঁটু পর্যন্ত স্কার্ট আর চাপা টপ পরে তৈরি। তিন দেবী সারা শহর মাতাল করার মতন করে সেজে বেড়িয়ে পরে। একা ধীমান, ওদের তিনজনকে দেখে ঠিক কি করবে ভেবে পায় না।
পারমিতা ওদের বারবার সেই ছোটবেলার মতন পাখী পড়া করিয়ে দেয়, “বর্ষা কাল বেশি ভিজবি না, দক্ষিন ভারতে বৃষ্টি বেশি হয়। কেন যে তোদের উটি যেতে হত সেটাই বুঝে পেলাম না? দেবায়নকে বললে বিন্সারে অথবা দেরাদুনে রিসোরট বুক করা যেত না?”
অনুপমা মাকে জড়িয়ে ধরে বলে, “মা, আমরা আর কেউই আর সেই আগের মতন ছোট মেয়ে নই, সবাই বড় হয়ে গেছি। আর এইজন্যে উটি যাচ্ছি” গলা নামিয়ে কানেকানে বলে, “স্যুইট গুলো খুব সুন্দর আর বেশ বড় বড় তাই। ওর জানালা খুললেই জঙ্গল আর ছোট পাহাড়।”
বাড়ি থেকে চারজনে গাড়ি নিয়ে বেড়িয়ে পড়ে এয়ারপরটের দিকে। সামনের সিটে অনুপমা, পেছনে ঋতুপর্ণা, ধীমান আর শ্রেয়া। ঋতুপর্ণাকে একপ্রকার কোলের ওপরে টেনে বসিয়ে নেয় ধীমান। সিটের আড়ালে, টপের ভেতর থেকে হাত ঢুকিয়ে নরম পেটের ওপরে হাত রেখে চেপে ধরে। হাতের ওপরে হাত দিয়ে প্রেমিকের হাতের উত্তাপ নিজের শরীরের সাথে মাখিয়ে নেয় ঋতুপর্ণা।
শ্রেয়া মিচকি হেসে ধীমান আর ঋতুপর্ণাকে দেখে বলে, “ওরে পাগল, গতরাতের মাখামাখি এখন কাটেনি নাকি?”
অনুপমা লেকটাউন মোড়ে দেবায়নকে ফোন করে ডেকে নেয়। কথা মতন রূপক আর দেবায়ন ওদের জন্য অপেক্ষা করে ছিল। যাওয়ার পথে ওদের গাড়িতে উঠিয়ে নিয়ে ওদের যাত্রা শুরু হয়। ছয় বন্ধু বান্ধবী, উটিতে গিয়ে কি যে হবে সেটা ভেবেই ঋতুপর্ণা ধীমানকে জড়িয়ে ধরে।
গাড়ির সামনে বসে দেবায়ন আর অনুপমা। একটা সিটের মধ্যে অনুপমাকে এক প্রকার কোলের ওপরে বসিয়ে নিয়েছে। পাশে ড্রাউভার তাই ওদের মধ্যে বিশেষ কথাবার্তা হয় না। পেছনে পায়ে ক্রেপব্যান্ডেজ বেঁধে রূপক বসে, শ্রেয়া বারেবারে ওর পায়ের কথা জিজ্ঞেস করে। ধীমান এক প্রকার ঋতুপর্ণাকে কোলের মধ্যে টেনে ধরে রেখেছে, যদি হাতছাড়া হয়ে যায় এর মধ্যেই?
অনুপমা ঘাড় ঘুরিয়ে রূপককে জিজ্ঞেস করে, “কাল রাতে কি করলি রে তোরা?”
রূপক হেসে উত্তর দেয়, “তোর নীচে কিছু লাগছে?”
অনুপমা ভুরু কুঁচকে তাকায়, সত্যি লাগছে। জিন্স ভেদ করে প্রেমিকের উদ্ধত লিঙ্গ ওর পাছার খাঁজের মাঝে এক প্রকার আটকে, আর দেবায়ন কষে দুই হাতে ওকে জড়িয়ে ধরে কোলের ওপরে বসিয়ে গাড়ির তালেতালে পাছার মাঝে লিঙ্গ ঘষে চলেছে। ড্রাইভার পাশে থাকা সত্ত্বেও, দেবায়নের নিষ্ঠুর হাত ওর পেটের ওপরে জামার ওপর দিয়েই ওর নরম পেট আদর করে চলেছে। পিঠের ওপরে ঘাড়ের কাছে প্রেমিকের উত্তপ্ত শ্বাসের ঢেউ ওকে পাগল করে তোলে। দেবায়নের হাতের ওপরে হাত রেখে বাহুপাশ আরো নিবিড় করে নেয় নিজের শরীরের চারপাশে। এই কঠিন বাহুপাশে বদ্ধ হয়ে হারিয়ে যাওয়ার আনন্দ আলাদা, এই প্রসস্থ ছাতির মধ্যে মাথা রেখে যে নিরাপত্তার অনুভুতি পায় সেটার অনাবিল আনন্দ থেকে বঞ্চিত হতে ক্ষণিকের জন্য মন মানতে চায় না।
দেবায়ন ওর ঘাড়ের ওপরে আলতো চুমু খেয়ে বলে, “কতকাল আর কতকাল অপেক্ষা করতে হবে।”
ঋতুপর্ণা পেছন থেকে উত্তর দেয়, “তুই শালা কাল রাতে কাট মেরে দিলি, না হলে কি মজা হত বলতো?”
ধীমান ঋতুপর্ণার মাথায় চাঁটি মেরে বলে, “ইসসস….. কাল রাতে তোমার মনে এই ছিল?”
ঋতুপর্ণা লজ্জায় পড়ে বলে, “না না, কাল রাতে আমি তোমার সাথেই ছিলাম, এই সকাল থেকে মানে…..”
রূপক হাত বাড়িয়ে ঋতুপর্ণার ঊরু ছুঁয়ে বলে, “তাহলে প্লেনে আমার পাশে বসবে, ব্রেকফাস্ট করিয়ে দেব।”
শ্রেয়া চোখ পাকিয়ে বলে, “তোমার না পা মচকে গেছে? আবার প্লেনে কি করবে?”
দেবায়ন হেসে উত্তর দেয়, “আরে চিন্তা করছিস কেন, আসল পা একদম ঠিক আছে। গত রাতে বাঁড়া….. ইসসস না না….. আর না…..”
গল্পের মোড় ঘুরিয়ে দেয় অনুপমা, দেবায়নকে জিজ্ঞেস করে “কোইম্বাতুরে আমাদের নিতে কি মিস্টার পারিজাত আসবে?”
দেবায়ন মাথা নাড়ায়, “না মিস্টার পারিজাত আসছে না, তবে দুটো গাড়ি পাঠিয়ে দেবে।”
ঋতুপর্ণা বলে, “দুটো গাড়ি কেন রে, একটাতে সহজেই আমরা চলে যাবো।”
দেবায়ন হেসে মাথা নাড়ায়, “না রে, গাড়িতে মজা করা যাবে না, সরি ডারলিং। যা করার সুইটে গিয়ে।”
শ্রেয়া হেসে উত্তর দেয়, “তোরা ঠিক থাকলেই হল, এইখানে যা শুরু করেছিস প্লেনের যাত্রীরা না ভির্মি খায়।”
বৃষ্টির জন্য প্লেন এক ঘন্টা লেট, দেবায়ন রাতেই ইন্টারনেটে ওয়েব চেকইন করে নিয়েছিল, তাই মনের মতন সিট পেতে কোন অসুবিধে হয়নি। কোলকাতা চেন্নাই, বোইং ড্রিম্লাইনার, চওড়া দেহের বিশাল প্লেন, আকাশে উঠলে মনে হয় ছোট একটা হোটেল চলছে। একসাথে সিট নয় কারুর, সবারই দুটো করে জানালা নিয়ে সিট। সিকিউরিটি চেক করে লাউঞ্জে বসে থাকা ছাড়া কোন গতি নেই ওদের। অনুপমার জন্য প্লেনে ওঠা একটা ছেলে খেলা, ইদানিং এদিক ওদিকে ব্যাবসার কাজে হোটেলের কাজে বেড়াতে হয় বলে দেবায়নের এই এয়ারপোর্ট এক রকম, কিন্তু ঋতুপর্ণা অতটা সম্ভ্রান্ত অথবা সচ্ছল বাড়ির মেয়ে নয় যে রোজদিন প্লেনে চাপবে। ওর জন্য এই প্লেনে চাপা দ্বিতীয় বার শ্রেয়ার জন্যেই প্রায় এক। অনুপমার অফিসে কাজ করার আগে কোনোদিন প্লেনে চাপেনি। ওদের এই চেকইন, সিকিউরিটি চেক ব্যাপার, কোলকাতা এয়ারপোর্টের লাউঞ্জ দেখে চোখ ধাধিয়ে যায়। কফি শপে বসে ছয়জনে গল্পে মেতে ওঠে।
ইলশেগুঁড়ি বৃষ্টি নিয়েই প্লেন কোলকাতার মাটি ছাড়ে। সবাই নিজেদের সঙ্গী নিয়েই বসে।
দেবায়নের হাত খানি নিজের হাতের মুঠোর মধ্যে নিয়ে আঙ্গুল গুলো নিয়ে খেলা শুরু করে দেয় অনুপমা। অনেকদিন পরে আবার একসাথে কোথাও ঘুরতে যাওয়া। সেই অনেকদিন আগে হোটেলের কাজে একবার বেড়াতে হয়েছিল, উটি, ব্যাঙ্গালোর আর পুনে তারপরে দেবায়নের সাথে আর বেড়াতে যাওয়া হয়নি। প্লেন মাটি ছেড়ে ওঠার পরে অনুপমা, দেবায়নকে জিজ্ঞেস করে, “হঠাৎ উটি কেন, কোলকাতার কাছে পিঠে কোন রিসোর্ট বুক করে নিলেই হতো।”
দেবায়ন ওর কাঁধ জড়িয়ে ধরে কাছে টেনে বলে, “রথ দেখা আর কলা বেচা দুটোই হবে তাই উটি।”
অনুপমা ওর কথার মানে বুঝতে দেরি হয়না, কিঞ্চিত অভিমানী কণ্ঠে বলে, “ভাবলাম একটু মজা হবে আর কি না?”
দেবায়ন হেসে বলে, “আরে মজা হবে সব হবে, তার ,মধ্যে কিছু কাজ এই আর কি। ব্যাস। আসলে, চেইন হোটেলের জন্য একটা ওয়েবসাইট, সফটওয়্যার বানাতে হবে সেটার এখন পর্যন্ত কিছুই করা হল না। রূপক শ্রেয়া সাথে আছে, সুতরাং ডিজানিং আর প্রোডাক্ট নিয়ে মাথা ব্যাথা নেই। মিস্টার পারিজাতের সাথে খুলে আলোচনা করা যাবে। দ্বিতীয়, উটিতে একটা বাজেট হোটেল নির্মাণ করতে চাই। এই রিসোর্ট ফাইভ স্টার রিসোর্ট, অকুপেন্সি একটু কম কিন্তু বাজেট হোটেল হলে টাকা মোটামুটি চলে আসবে। মিস্টার পারিজাতের সাথে ওই ব্যাপারে একবার কথাবার্তা হয়ে গেলে পরের বার নিবেদিতাকে নিয়ে আসব কন্সট্রাক্সনের জন্য।”
অনুপমা মুখ ভার করে জানালার বাইরে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকার পরে বলে, “মাথায় ওই চিন্তা ছাড়া আর কোন চিন্তা আসে না।”
অভিমানী প্রেয়সীর টলটল চোখ দেখে দেবায়নের বুকের মাঝে ব্যাথা দেখা দেয়। কাছে টেনে নরম গোলাপি গালে নাক ঘষে বলে, “এই সোনা, এর মধ্যে রেগে গেলি কেন? আরে বাবা, মজা করব, দারু খাবো, নাচব গাইব, তারমধ্যে একটু সময়ের জন্য ছুটি দিস ব্যাস আমি আমার কাজ সেরে নেব।”
অনুপমা তেড়ে উঠে যায় সিট ছেড়ে, সামনের সিটে ধীমান বসেছিল, ওর কাঁধ ঝাঁকিয়ে বলে, “এই ছেলে এইখানে এসে বস আমি ওর পাশে বসব না।”
দেবায়ন দেখল এ যে ভারী বিপদ, এইভাবে প্রেয়সী ক্ষেপে গেলে মহা মুশুকিল, সারা ছুটির মজা কেঁচিয়ে যাবে। ধীমানের মাথায় চাঁটি মেরে বলে, “সিট ছেড়ে উঠলে কিন্তু মেরে ফেলে দেব।”
অনুপমা চাপা কণ্ঠে ধীমানকে বলে, “তুই আসবি না আমি উঠে যাবো।”
নিরুপায় ধীমান একবার দেবায়নের দিকে তাকায় একবার অনুপমার দিকে, দুইজনেই ওর সহপাঠী দুইজনেই ওর বন্ধু, কাকে ছেড়ে কার কথা রাখবে। শেষ পর্যন্ত ধীমান শ্রেয়াকে বলে, “এই মেয়ে তুই আমার সিটে এসে বসতে পারিস?”
ঋতুপর্ণা হেসে ফেলে, “দেখ দুইজনের কথা রেখেছে ধীমান এইবারে যেখানে বসার সেইখানে বসে পড়। একটু পরেই চেন্নাই এসে যাবে তারপরে মারামারি কাটাকাটি সব হবে।”
অনুপমার কোমর পেঁচিয়ে ধরে দেবায়ন ওকে নিজের কোলে বসিয়ে বলে, “এত ঝাঁজ দেখাচ্ছিস কেন? দেখ সোনা একটু ভাব একটু মাথা ঠাণ্ডা করে চিন্তা করে দেখ। তুই এদিকে ওদিকে দানছত্র খুলেছিস, সূর্যকে ইতিমধ্যে ছয় লাখ টাকা দিয়েছিস ওর দোকানের জন্য, তারপরে আবার অনন্যাকে কথা দিয়ে এসেছিস যে সত্যজিতের পত্রিকার খুলতে টাকা দিবি। এরপরে এমন অনেকে আসবে, তুই টাকা দিয়ে সাহায্য করবি…..”
অনুপমা ওর চোখে চোখ রেখে বলে, “তাতে কি হয়েছে, আছে তাই দিচ্ছি। তোকে না জানিয়ে কি দিয়েছি? সূর্যকে আর.টি.জি.এস আমি তোকে জিজ্ঞেস করার পরেই করেছি আর অনন্যাদির ব্যাপারে এখন পর্যন্ত ও আমার সাথে আর কথা বলেনি তাই আমিও আর বলিনি। যাই হোক আসল কথা হচ্ছে তুই আমাকে ভুলে গেছিস।”
দেবায়নের চোয়াল শক্ত হয়ে যায় অনুপমার টলটল চোখ দেখে। ওই চোখে জল, না না। অনুপমার মুখ আঁজলা করে ধরে ঠোঁটের কাছে ঠোঁট এনে নরম করে বলে, “ঠিক আছে, উটিতে শুধু আমরা আর কিছু না।”
অনুপমা ওর হাতের ওপরে হাত রেখে গালে চেপে ধরে বলে, “সত্যি?” দেবায়ন মাথা দোলায়, “হ্যাঁ।”
অনুপমা ওর নাকের ওপরে নাক ঘষে মিষ্টি কণ্ঠে বলে, “আর আমার পাশ থেকে কোথাও যাবি না বুঝলি। এইকটা দিন শুধু সবাই মিলে মজা করব, খাবোদাবো ঘুরবো বেড়াবো।”
অনুপমার নজর এড়িয়ে দেবায়ন একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে, কিন্তু ধরা পড়ে যায়। ওর চোখের থেকে আড়াল করে নিঃশ্বাস নেওয়া অসম্ভব। শেষ পর্যন্ত মিষ্টি হেসে অনুপমা ওকে বলে, “ঠিক আছেরে বাবা, করিস তুই।”
দেবায়ন ওকে জড়িয়ে ধরে গালে আলতো চুমু খেয়ে বলে, “তুই ডারলিং, মনের কথা ঠিক বুঝে যাস।”
এতদিন শ্রেয়ার ঝামেলায় নিবেদিতার কথা একদম মনে ছিল না, কিন্তু কিছু আগে দেবায়নের মুখ থেকে নিবেদিতার নাম শুনেই ওর কথা মনে পরে যায়। নিবেদিতার সাথে দেবায়নের কি সম্পর্ক, ওদের হৃদ্যতা কতটা গভীর, এর পেছনে কি কিছু রহস্য লুকিয়ে আছে যেটা দেবায়ন ওর কাছ থেকে লুকিয়ে গেছে? জানতে ইচ্ছে করে তাই দেবায়নকে প্রশ্ন করে অনুপমা, “আচ্ছা আমাকে একটা সত্যি কথা বলবি?”
দেবায়ন মাথা দোলায়, “হ্যাঁ।”
অনুপমা ওর চোখে চোখ রেখে ওর হাত নিজের হাতের মধ্যে শক্ত করে ধরে জিজ্ঞেস করে, “নিবেদিতার রহস্য কি? কেন হঠাৎ এতদিন পরে আমাকে নিয়ে নিবেদিতার বাড়িতে গেলি? ওর আর তোর মাঝে কি চলছে অথবা কি ঘটেছে যেটা আমি জানি না।”
বুক ভরে শ্বাস নেয় দেবায়ন, চোখ দেখে মনে হল এইবারে একটু বেকায়দায় পড়ে গেছে। অনুপমার ওই চোখের দিকে আর তাকানো যাচ্ছে না তাও না তাকালে ওর মিথ্যে ধরা পড়ে যাবে। একটু থেমে একটু চিন্তা করে উত্তর দেয়, “সত্যি বলতে নিবেদিতা আর আমি বেশ ভালো বন্ধু।”
অনুপমা ভুরু কুঁচকে প্রশ্ন করে, “কত ভালো বন্ধু, শ্রেয়ার মতন না পায়েলের মতন।”
দেবায়ন মাথা নাড়িয়ে হেসে ফেলে, “না না, ওইরকম ভাবছিস কেন। সঙ্গীতার মতন ভালো বন্ধু আমরা।”
অনুপমা স্মিত হেসে প্রশ্ন করে, “সত্যি বলছিস? অত সুন্দরী নিবেদিতাকে হাতের কাছে পেয়েও ছেড়ে দিয়েছিস বলতে চাস?”
দেবায়ন ওর হাতের ওপরে হাত রেখে বলে, “এই তোকে ছুঁয়ে বলছি। নিবেদিতা আর আমার মধ্যে শুধু ভালো বন্ধুত্তের সম্পর্ক ব্যাস আর কিছু না। আমাদের কোম্পানির সিস্টার কোম্পানির মালিকানা ওর হাতে, ওর কোম্পানির হাত ধরে আমাদের হাতে অনেক টাকা আসে তাই ওর সাথে সম্পর্ক ভালো রাখতেই হয়। এই যে হোটেল গুলোর এক্সপানশন হবে, তার জন্য সব কাজ ওই কোম্পানি দিয়ে করানো হবে। আমাদের টাকা ঘুরে ফিরে আমাদের পকেটে আর এর মাঝ থেকে ইনভেস্টরের টাকাও আমাদের পকেটে।”
না, ওর পুচ্চুর চোখ মিথ্যে বলছে না। নিবেদিতার সাথে দেবায়নের শুধুমাত্র একটা ভালো সম্পর্ক সেটা ওর চোখ দেখেই মনে হল না হলে এতক্ষণে নিশ্চয় ওর কাছে খুলে বলে দিত ঠিক যেমন ফ্রাঙ্কফুর্টে গিয়ে শ্রেয়ার সাথে হয়েছিল অথবা র‍্যাডিসন ফোর্টে গিয়ে অনন্যার সাথে হয়েছিল। পরেরদিন ওর কাছে এসে সব বলে দিয়েছিল ওর পুচ্চু। অনুপমা হেসে বলে, “দেখ সোনা, অত কি ঘুরছে সেটা জানি না অথবা জানতে চাই না। যার উত্তর খুঁজছিলাম সেটা পেয়ে গেছি।”
এরপরে চেন্নাই নামা পর্যন্ত ওদের বিভিন্ন গল্পে কেটে যায়। চেন্নাই একঘন্টার ট্রানজিট সময়, এর মাঝে সবাই নিজের নিজের বাড়িতে ফোন করে জানিয়ে দেয় ঠিক মতন চেন্নাই পৌঁছে গেছে। ওইখান থেকে আবার একটা প্লেনে চেপে সোজা কোইম্বাতুর। কোইম্বাতুর ছোট শহর তবে বেশ সচ্ছল শহর। ওদের জন্য দুটো গাড়ি কোইম্বাতুর এয়ারপোর্টে অপেক্ষা করছিল। মেয়েরা একটা গাড়িতে উঠে পরে আর ছেলেরা অন্য গাড়িতে। কোইম্বাতুর থেকে উটি যেতে ঘন্টা তিনেক সময় লাগবে বলে ড্রাইভার জানায়। তবে বর্ষার জন্য পাহাড়ি রাস্তায় একটু সময় বেশি লাগতে পারে।
 
Like Reply
ষষ্টবিংশ পর্ব (#০৯)

উটি পৌঁছাতে ওদের সন্ধে হয়ে যায়। রিসোর্টে পৌঁছে দেখে এক এলাহি ব্যাপারের আয়োজন করেছেন মিস্টার পারিজাত। দেবায়নের অনুরোধ অনুযায়ী মিস্টার পারিজাত ওদের জন্য দুটো স্যুইট তৈরি করে রেখে দেয়। যদিও ওদের দুটো স্যুইটের দরকার পড়বে না, থাকবে দুই রাত, আর সেই দুই রাত সবাই একটা স্যুইটেই কাটাবে।
হোটেলের মালিককে ওইভাবে ওদের সাদর আপ্পায়ন করতে দেখে শ্রেয়া রূপক ঋতুপর্ণা আর ধীমানের কেমন খটকা লাগে। হোটেল কার? অনুপমার না মিস্টার পারিজাতের? হোটেলের লোকজন সব তটস্থ, মিস্টার বসাক আর মিস সেন আসছে শুনে মনে হয় সবাই বেশ নড়ে চড়ে বসেছে নিজেদের কাজে।
শ্রেয়া অনুপমাকে একপাশে ডেকে জিজ্ঞেস করে, “কি ব্যাপার বলতো, এই হোটেল কার? এত আদর আপ্পায়ন কি ব্যাপার?”
অনুপমা স্মিত হেসে জানায়, “এই হোটেল আমাদের।”
শ্রেয়ার চক্ষু চড়ক গাছ, “বলিস কি?” বাকিরা সমান আশ্চর্য হয়ে যায় সেই কথা শুনে।
দেবায়ন ওদের এই হাঁ করা মুখের দিকে চেয়ে বলে, “এই রকম আরো বেশ কয়েক জায়গায় আমাদের হোটেল আছে, সব মিলিয়ে ছয়খানা হোটেল তবে আরও কয়েকটা কেনার অথবা তৈরি করার পরিকল্পনা চলছে। সব মিলিয়ে আগামী পাঁচ বছরে অন্তত বারো খানা হোটেল দাঁড় করাতে হবে বিভিন্ন ট্যুরিস্ট জায়গায়।”
শ্রেয়া ওর পিঠ চাপড়ে চোখ পাকিয়ে বলে, “এত ডুবে ডুবে জল খাস তোরা?”
দেবায়ন হেসে উত্তর দেয়, “না না, তেমন কিছু না। এই সব করতে করতে পকেটে আর টাকা নেই এরপরে বিড়ি ধরাতে হলে তোর পার্স থেকে টাকা মারতে হবে।”
শ্রেয়া হেসে বলে, “ঠিক আছে ধার দিয়ে দেব তোকে চিন্তা করসি না।”
পাশাপাশি বেশ বড় দুটো স্যুইট। একটা মাস্টার বেডরুম, একটা ড্রয়িং রুম আর একটা ছোট স্টাডি। সবাই একটা স্যুইটে ঢুকে পড়ে। বিকেলের চা খেয়ে সবাই একটু হাত পা ঝেড়ে রিসোর্ট দেখতে বেরিয়ে পড়ে। অনুপমা এর আগে এক বার মাত্র এসেছে, তাই ওদের রিসোর্ট দেখাবার জন্য ফ্লোর ম্যানেজারকে নির্দেশ দেয় মিস্টার পারিজাত। দেবায়ন ইতিমধ্যে মিস্টার পারিজাতের সাথে গল্পে মেতে গেছে। অনুপমা আড় চোখে একবার দেবায়নকে দেখে নেয়। দেবায়ন মিস্টার পারিজাতের সাথে আলোচনায় ব্যাস্ত, ওর কাজে ব্যাঘাত ঘটাতে ঠিক মন চায় না, পুরো গ্রুপ কোম্পানির জন্য বাবা আর দেবায়ন উঠে পড়ে লেগেছে। দেবায়ন পাশে না থাকলে ওদের জীবন গতে বাঁধা এক ভিন্ন ছন্দে কাটত। দশটা পাঁচটা কাজ সেরে বাড়ি ফিরে রান্না করা টিভি দেখা। এই বন্ধুদের সাথে ঘুরতে বেড়াতে যাওয়া সেটা আর হয়তো হয়ে উঠত না। মাঝে মাঝেই যে পার্টি করে সেটাও হয়ত আর হয়ে উঠতো না। তবে মাঝে মাঝে বুকের মধ্যে খাঁ খাঁ করে ওঠে, মাসের বেশির ভাগ দিন ছেলেটাকে কাছে পায় না বলে। বাকিদের নিয়ে ফ্লোর ম্যানেজার কার্তিকেয়নের সাথে রিসোর্ট ঘুরে দেখে অনুপমা।
এর মাঝে একজন বেয়ারা এসে খবর দেয়, মিস্টার বসাক ওদের জন্য রেস্টুরেন্টে অপেক্ষা করছেন। তিন ঘণ্টা পথ, গাড়িতে এসে খিদেও পেয়ে গেছে তারপরে রাতে কি হবে ঠিক নেই, খেয়েদেয়ে নেওয়া ভালো। এই ভেবে অনুপমা বাকিদের নিয়ে রেস্টুরেন্টে চলে আসে। মিস্টার পারিজাত আর দেবায়ন রেস্টুরেন্টে বসে ওদের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। ওদের দেখে দেবায়ন এক এক করে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়। খাবারের আয়োজন বেশ এলাহি, চেন্নাই থেকে বিশেষ করে ওদের জন্য স্কুইড আর লবস্টার আনা হয়েছে, যদিও স্কুইড অনুপমা বিশেষ পছন্দ করে না। ঋতুপর্ণা আর শ্রেয়া খাবারের আয়োজন দেখে হাঁ।
অনুপমাকে কানেকানে জিজ্ঞেস করে ঋতুপর্ণা, “এই কি রে, এর বিল কে দেবে?”
অনুপমা হেসে বলে, “তুই যা পারবি খা, বিলের কথা তোকে চিন্তা করতে হবে না।”
একটা ব্রেডের ওপরে কমলা রঙের ছোট ছোট দানার মতন দেখে শ্রেয়া ওকে জিজ্ঞেস করে, “এইগুলো কি রে?”
অনুপমা ওকে বলে, “এইগুলো মাছের ডিম আর ওটা ফ্রেঞ্চ ব্রেড। যতদূর সম্ভব স্যালমন রোএ, এক প্রকারের ক্যাভিয়ার, যদিও আমার এইগুলো বেশি ভালো লাগে না তবে পুচ্চু বেশ ভালো খায়। রেড ওয়াইনের সাথে খেয়ে দেখ ভালো লাগবে।”
ধীমান গলা নামিয়ে ইয়ার্কি মেরে ওকে জিজ্ঞেস করে, “হ্যাঁ রে ডাল ভাত আলুপোস্ত পাওয়া যাবে না এইখানে?”
অনুপমা হেসে বলে, “কেন কন্টিনেন্টাল খেতে ভালো লাগছে না।”
ধীমান হেসে উত্তর দেয়, “শালা আমরা কুত্তার জাত, এত ঘি খাওয়া হয়ত পেটে সইবে না তাই বললাম।”
মিস্টার পারিজাত ওদের দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারেন যে এত আয়োজন দেখে ওদের বেশ অবাক লাগছে তাই উত্তরে বললেন, “আচ্ছা আগামী কাল লাঞ্চ আমার বাড়িতে, একদম দক্ষিন ভারতীয় খাওয়া খাওয়াবো তোমাদের।”
দেবায়ন স্মিত বাকিদের দিকে তাকায়, অনুপমা মাথা দুলিয়ে সায় দেয়। খাওয়া দাওয়া সেরে সবাই একটা সুইটে ঢুকে পড়ে। ড্রয়িং রুমে দেয়াল জুড়ে বিশাল টিভি, তিনদিকে বেশ বড় বড় সোফা, একপাশে একটা কাঁচের খাওয়ার টেবিল, একপাশে মিনিবার। ওদের জন্য আগে থেকেই বেয়ারা হুইস্কি ভদকা ব্রিজার বিয়ার সোডা বরফ আর ছয়খানা কাট গেলাস রেখে গেছে, সেই সাথে চিপস আর কাজু পেস্তা বাদাম কিসমিস ইত্যাদি। শোয়ার ঘরে সুপার কিং সাইজের বেড, পায়ের দিকে আবার একটা ডিভানের মতন। কাঁচে ঘেরা বিশাল বাথরুমে একটা গোল টাব।
কাঁচের দেয়াল দেওয়া বাথরুম দেখে ঋতুপর্ণা ওকে জিজ্ঞেস করে, “এই হ্যাঁ রে, এই কাঁচ দেওয়া বাথরুম কেন?”
অনুপমা ওকে জড়িয়ে ধরে মজা করে বলে, “তুই চান করবি আর আমরা দেখব।”
ধীমান ধরাম করে বিছানায় লাফিয়ে উঠে একটু নেচে কুঁদে বলে, “যাঃ শালা আমি ভাবলাম বেশ শক্ত পোক্ত হবে খাট কিন্তু এ যে দেখি খুব নড়ে।”
রূপক একটু খুড়িয়ে খুড়িয়ে হেঁটে বিছানায় বসে ওদের দিকে তাকিয়ে বলে, “এই আমি কিন্তু বেশিক্ষণ দাঁড়াতে পারছি না একটু বসলাম রে।”
শ্রেয়া দৌড়ে যায় ওর ভাঙ্গা পাটা বিছানায় তুলে ভালো করে বসিয়ে দিয়ে বলে, “হ্যাঁ হ্যাঁ তুমি বস।”
ঋতুপর্ণা চোখ টিপে বলে, “দাঁড়াতে পারছে না?”
অনুপমা সমস্বরে ইয়ার্কি মেরে বলে, “তাহলে তুই হাত মারিস তবে বিছানায় বসে নয়, ওই পাশের ওই চেয়ারে বসে। এইবারে বিছানা আমাদের জন্য ছেড়ে দে।”
অনুপমাকে পেছন থেকে আস্টেপিস্টে জড়িয়ে ধরে দেবায়ন, ওর ঘাড়ের ওপর থেকে চুল সরিয়ে মরালী গর্দানে ঠোঁট চেপে ধরে বলে, “বিছানায় কি করবি?”
নধর সুডৌল পাছার খাঁজে দেবায়নের কঠিন লিঙ্গের পরশ পেয়ে শরীর সিরসির করে ওঠে অনুপমার। পেটের ওপরে, দেহের চারপাশে দেবায়নের কঠিন বাহুপাশের মধ্যে হারিয়ে যেতে ইচ্ছে করে, ইসসস এদের সাথে না নিয়ে এলে বড় ভালো হত, একা একা এত সুন্দর জায়গায় শুধু মাত্র পুচ্চুকে নিয়ে কাটাতে পারত তাহলে। ঘাড়ের ওপরে শিক্ত ঠোঁটের উষ্ণ পরশে ওর ধমনীর রক্ত চঞ্চল হয়ে ওঠে মিলনের অপেক্ষায়। কে কার সাথে শেষ পর্যন্ত সঙ্গমে মেতে উঠবে তার ঠিক নেই তবে এই যে ভালোবাসার আলিঙ্গনে বাঁধা পরে আছে সেটা আর ছাড়াতে চায় না।
দেবায়নের ঠোঁট ওর কানের লতি খুঁজে নিয়ে দুল সমেত ঠোঁটের মধ্যে পুরে চুষতে শুরু করে দিয়েছে। দুই হাত দেবায়নের হাতের ওপরে রেখে পাছা পিঠ ওর দিকে চেপে ধরে নিজেকে বিলীন করে দিতে তৎপর হয়ে ওঠে। আবেগে অনুপমার চোখের পাতা ভারী হয়ে আসে। হাত উঁচু করে দেবায়নের মাথা আঁকড়ে ধরে ঘাড় বেঁকিয়ে ওর ঠোঁট খুঁজে নেয় অনুপমার নরম গোলাপি রসালো ঠোঁট। প্রেমিকের অধর কামড়ে ধরে চোখ বুজে হারিয়ে যায় অনুপমা।
সম্বিত ফেরে শ্রেয়ার গলা শুনে, “এই কি রে, ড্রিঙ্কসের আগেই মাতাল হয়ে গেলি নাকি তোরা?”
অনুপমা চোখ খুলে দেখে, ঋতুপর্ণাকে নিয়ে ধীমান বিছানায় উঠে বসে গেছে আর শ্রেয়া রূপককে জড়িয়ে ধরে ওর বুকের ওপরে মাথা রেখে শুয়ে ওদের দিকে তাকিয়ে। অনুপমা ওদের দেখে মজা করে বলে, “বাঃরে আমি একা কি এইখানে মাতাল হতে এসেছি নাকি? তোরা তো দেখি বেশ বিছানা জুড়ে বসে গেলি, আমাদের জায়গা কোথায়?”
রূপক ওর পাশের জায়গায় হাত চাপড়ে বলে, “উম্মম ডারলিং তুই উঠে আয় জায়গা ঠিক হয়ে যাবে।”
কিন্তু দয়িতের বাহুপাশ ছেড়ে যেতে আর ইচ্ছে করেনা অনুপমার। এত জোরে চেপে ধরে রয়েছে যে ছাড়িয়ে যাওয়া ওর পক্ষে দুঃসাধ্য। অনুপমা দেবায়নের দিকে ঘাড় ঘুরিয়ে বলে, “কি রে ছাড়বি না আমাকে?”
দেবায়ন অনুপমার চোখে চোখ রেখে বলে, “তোকে ছেড়ে দিলে তোর জায়গা কে নেবে এই রাতে?”
শ্রেয়া মাথা দোলায়, “আবার সেই ফ্রাঙ্কফুর্ট?”
দেবায়ন একটা হাত বাড়িয়ে দেয় শ্রেয়ার দিকে, “হ্যাঁ সেই ফ্রাঙ্কফুর্ট, ছোট বারান্দা, গভীর রাত শুধু আমি আর তুই।”
ঋতুপর্ণা আর অনুপমা সমস্বরে প্রশ্ন করে, “কি হয়েছিল রে ফ্রাঙ্কফুর্টে?”
শ্রেয়া রুপকের পাশ থেকে উঠে দেবায়নের পাশে চলে আসে। এক হাতের আলিঙ্গনে অনুপমা অন্য হাতে শ্রেয়াকে জড়িয়ে পিষে ধরে দুই সুন্দরীকে। শ্রেয়া দেবায়নকে বলে, “বাকিটা আজ রাতে…..”
অনুপমা ওর বুকের ওপরে আলতো চাঁটি মেরে মজা করে বলে, “আমরা তাহলে দর্শক, দেখি তোরা কি করেছিলি।”
শ্রেয়া ওর মুখ আঁজলা করে ধরে ঠোঁটে ঠোঁট মিলিয়ে বলে, “এক রাতের জন্য আমাকে আর ওকে ছেড়ে দিতে হিংসে করবি না তো?”
অনুপমা ওকে জড়িয়ে ধরে বলে, “পিঠের পেছনে হলে হিংসে করতাম কিন্তু চোখের সামনে একবার দেখতে ইচ্ছে হচ্ছে।”
ঋতুপর্ণা ইতিমধ্যে ধীমান আর রুপকের মাঝে বসে পড়ে। রুপকের হাত ঋতুপর্ণার স্কার্টের নীচে চলে গেছে, ওর পুরুষ্টু ঊরু আদর করতে করতে প্রায় ঊরুসন্ধির কাছে চলে গেছে। ধীমান ঋতুকে জড়িয়ে ধরে ঠোঁটে ঠোঁট মিলিয়ে গভীর চুম্বন এঁকে দেয়।
অনুপমা আর শ্রেয়াকে আলিঙ্গন মুক্ত করে দেবায়ন ওদের বলে, “তোরা বস আমি ড্রিঙ্কসটা তৈরি করি ততক্ষণে।”
দেবায়ন ড্রিঙ্কস তৈরি করার জন্য ট্রেতে মদের বোতল আর গেলাস নিয়ে বিছানার মাঝখানে রাখে। তিন মেয়ে বিছানা ছেড়ে নেমে নিজেদের পোশাক খুলে শুধুমাত্র অন্তর্বাস পরে বিছানায় বসে পড়ে। অনুপমার পরনে ক্ষুদ্র লাল রঙের ব্রা আর প্যান্টি, ঋতুপর্ণার সাদা রঙের আর শ্রেয়ার পরনে নীল। তিনজন লাস্যময়ী ললনাকে অর্ধ নগ্ন দেখে তিন ছেলের লিঙ্গ প্যান্টের ভেতর থেকে ছাড়া পাওয়ার জন্য হাঁসফাঁস করে ওঠে। মচকানো পা নিয়ে রূপক একটু নড়ে চড়ে বসে। শ্রেয়া ওর পাশ ঘেঁসে বসে ওকে প্যান্ট খুলতে সাহায্য করে দেয়। রুপকের প্যান্ট খুলতেই ওর লিঙ্গ সটান দণ্ডবৎ হয়ে তিন সুন্দরী অর্ধনগ্ন ললনার তীব্র মাদকতা ময় সৌন্দর্যকে প্রণতি জানায়।
দেবায়ন মেয়েদের জন্য ব্রিজার দিয়ে শুরু করে, অনুপমার জন্য ভদকা আর নিজেদের জন্য বরফ দিয়ে হুইস্কি। রুপকের দিকে হুইস্কির গেলাস এগিয়ে দিয়ে বলে, “জলপাইগুড়িতে হুইস্কি মেরে আমার বৌকে খুব চুদেছিলিস তাই না? এইবারে আমার সামনে একটু হয়ে যাক কি বল?”
রুপকের কান লাল হয়ে যায় কিঞ্চিত লজ্জায় আমতা আমতা করে বলে, “আরে না না সেই রকম কিছু না।”
অনুপমা ওর পিঠের ওপরে চাপড় মেরে বলে, “তুই না, একদম যাতা।”
অনুপমাকে জড়িয়ে ব্রা’র ওপর দিয়েই ওর স্তন জোড়া আদর করে দেবায়ন বলে, “বাঃরে আমি কি আর জলপাইগুড়িতে দেখতে গিয়েছিলাম কি ভাবে করেছিস?”
রূপক সমস্বরে বলে ওঠে, “ফ্রাঙ্কফুর্টে তোর কে.এল.পি.ডি হয়েছিল সেটার কি?”
দেবায়ন, শ্রেয়ার নরম পাছার ওপরে হাত বুলিয়ে বলে, “কে.এল.পি.ডি শোধ আজকে নেব আবার কি!”
রূপক ঋতুপর্ণার দিকে তাকিয়ে বলে, “ডারলিং আজকে তুমি কার কোলে চাপবে আর কারটা পেছনে নেবে?”
ঋতুপর্ণা ওর লিঙ্গের চারপাশে আলতো নখের আঁচর কেটে বলে, “আজ কারুর পিছনে নেব না, শুধু সামনে। তবে তোমার পা ভাঙ্গা তাই ভাবছি তোমার কোলে উঠবো।” চোখ টিপে শ্রেয়ার দিকে তাকিয়ে বলে, “তোর চিন্তা নেই, ওর পায়ের ভালো খেয়াল রাখব আমি।”
শ্রেয়া মিচকি হেসে ঋতুপর্ণার স্তনের ওপরে হাত বুলিয়ে বলে, “তুই নার্স তুই ভালো বুঝবি কার কোথায় কষ্ট। আর সেই কষ্ট কি ভাবে লাঘব করা যায় তার উপায় তোর জানা।”
দেবায়ন শ্রেয়াকে জড়িয়ে ধরে ধীমানের দিকে চোখ টিপে কিছু একটা ইশারা করে। সেই ইশারা ঋতুপর্ণা ধরতে পেরে হেসে ফেলে। শ্রেয়া কিছু না বুঝে দেবায়নকে জিজ্ঞেস করে, “এইখানে আমাদের মধ্যে ইশারায় কথাবার্তা একদম চলবে না। যা বলার আছে খোলাখুলি বলে দে।”
দেবায়ন শ্রেয়াকে কোলের ওপরে টেনে ধরে ওর গালে চুমু খেয়ে বলে, “শুরুতে ফ্রাঙ্কফুর্ট, তারপরে লেকটাউন!”
অনুপমা বুঝে যায় ধীমান আর দেবায়ন শ্রেয়ার সাথে কি করতে চলেছে। মানস চক্ষে ওদের এই চরম যৌন সহবাস দেখেই অনুপমা চোখ টিপে দেবায়নকে ইশারায় জানিয়ে দেয় শ্রেয়াকে আস্টেপিস্টে চরমে তুলে দিতে। নিরুপায় রূপক ফ্যালফ্যাল করে একবার দেবায়নের দিকে তাকায় একবার ধীমানের দিকে তাকায়। ওর বুঝতে দেরি লাগে না, শ্রেয়ার সাথে কি হয়তে চলেছে। শ্রেয়াকে সাবধান করে দেওয়ার আগেই ঋতুপর্ণা ওর দিকে কটমট করে তাকিয়ে চুপ করিয়ে দেয়।
শ্রেয়া বোকার মতন হেসে অনুপমাকে জিজ্ঞেস করে, “এই প্লিস বল না….. তোরা কি ফন্দি করেছিস?”
ধীমান শ্রেয়ার পাশে এস বসে ওর ব্রা খুলে দেয়। শ্রেয়া হাত উঁচু করে ব্রা খুলে নিজেকে ধীমানের কোলে সঁপে দিয়ে মিহি কণ্ঠে জিজ্ঞেস করে, “মারবি না তো আমাকে?”
দেবায়ন ওর পুরুষ্টু জঙ্ঘার ওপরে হাত বুলিয়ে ঊরুসন্ধির কাছে আলতো আদর করে বলে, “সারপ্রাইজ ড্রালিং, সারপ্রাইজ। তবে তোকে কষ্ট দেব না।”
দেবায়নের লিঙ্গ মুঠি করে ধরে আলতো নাড়িয়ে বলে, “ইসসস কষ্ট দেব না….. ন্যাকা সেদিন রাতে বড় কষ্ট হয়েছিল কিন্তু। রাতে ঠিকভাবে ঘুমাতে পারিনি।”
দেবায়ন ওর প্যান্টি খুলে উলঙ্গ করে বলে, “আজকে আমার বাঁড়া গুদে নিয়ে ঘুমিয়ে পড়িস।”
ততক্ষণে ঋতুপর্ণা, রুপকের লিঙ্গ নিয়ে খেলা শুরু করে দিয়েছে। অনুপমা দেবায়নের পাশে বসে ওর লিঙ্গ মুঠি করে ধরে নাড়াতে নাড়াতে শ্রেয়াকে বলে, “দেখ তোর জন্য আমার বরকে রেডি করে দিচ্ছি, ওই দিকে ঋতু তোর বরের খেয়াল রাখছে সুতরাং ডার্লিং একটু সবুর কর সব বুঝতে পারবি।”
ধীমান শ্রেয়াকে বিছানায় শুইয়ে ওর স্তন দুই হাতের মধ্যে নিয়ে চটকাতে শুরু করে দেয়। কামনার আবেগে শ্রেয়ার চোখ বুজে আসে। ধীমান ওর বুকের ওপরে ঝুঁকে পড়ে একের পর এক স্তন মুখের মধ্যে নিয়ে চুষে দেয় আর অন্য স্তন হাতের মুঠির মধ্যে নিয়ে ডলে পিষে ধরে। শ্রেয়ার দুই পুরুষ্টু ঊরু জোড়ার ভেতরে হাত দিয়ে ওর দুই জঙ্ঘা মেলে ধরে ঊরুসন্ধির ওপরে দেবায়ন ঝুঁকে পড়ে। শিক্ত নরম যোনির ওপরে মুখ রেখে আলতো চুমু খায়। শ্রেয়ার শরীরে কামনার হিল্লোল দেখা দেয়। দেবায়ন ওর শিক্ত নরম যোনি গহ্বর চেটে চুষে চুম্বনে ভরিয়ে তোলে।
 
Like Reply
ষষ্টবিংশ পর্ব (#১০)

 
ঋতুপর্ণা অন্যদিকে রুপকের লিঙ্গ মুখের মধ্যে নিয়ে চুষতে শুরু করে দেয়। রূপক সামনের দিকে পা ছড়িয়ে বসে ঋতুপর্ণার মাথার ওপরে হাত রেখে মুখ মেহন উপভোগ করে। অনুপমা দেবায়নের লিঙ্গ হাতের মধ্যে নিয়ে হস্ত মৈথুনে রত হয়। কিছু পর ধীমান শ্রেয়াকে ছেড়ে অনুপমার পেছনে এসে বসে ওকে জড়িয়ে ধরে। অনুপমা দেবায়নের লিঙ্গ ছেড়ে নিজেকে ধীমানের কোলে সঁপে দেয়। ধীমান ওর কাঁধের ওপরে চুমু খেতে খেতে ওর গাল গর্দান চুমুতে চুমুতে ভরিয়ে তোলে। দুই হাতে অনুপমার নিটোল কোমল স্তন জোড়া থাবার মধ্যে নিয়ে আদর করে দেয়। ধীরে ধীরে ধীমান অনুপমাকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে ওর ওপরে চলে আসে। প্যান্টি খুলে দিয়ে শিক্ত কোমল যোনির মধ্যে আঙ্গুল সঞ্চালনে মেতে ওঠে। একহাতের আঙ্গুল অনুপমার শিক্ত যোনির মধ্যে সঞ্চালনে মেতে আর অন্য হাতে সুডৌল স্তন যুগল থাবার মধ্যে নিয়ে পিষে ধরে। কামকাতর অনুপমা কামাবেগে ছটফট করতে শুরু করে দেয়। রূপক একপ্রকার ঋতুপর্ণাকে কোলের ওপরে টেনে ধরে ওর ওপরে বসিয়ে দেয়। পায়ের ব্যাথা নিয়ে বিশেষ কিছু করার সাধ্য নেই, ঋতুপর্ণা সেইদিকে খেয়াল রেখে নিজেকে ওর কাছে উজাড় করে দেয়। রুপকের ঊরুসন্ধির ওপরে দুই জঙ্ঘা মেলে বসে নিজের স্তনজোড়া রুপকের মুখের দিকে ঠেলে দেয়। রূপক এক এক করে দুই স্তন নিয়ে খেলায় মেতে ওঠে। ওর লিঙ্গ ঋতুপর্ণার যোনির নীচে চাপা পরে থাকে। সবার মুখে শুধু তীব্র কামনার শীৎকার, “উম্মম্ম আহহহ ইসসস…..” ইত্যাদি শব্দে ঘর ভরে ওঠে।
ঋতুপর্ণা রুপকের হাতের পেষণে ককিয়ে ওঠে, “হ্যাঁ রে টিপে ধর….. খেয়ে ফেলো আমার মাইগুলো ছিঁড়ে দাও….. উফফফ আর পারছি না….. করো করো করো…..”
ধীমান অনুপমার শিক্ত যোনির মধ্যে আঙ্গুল সঞ্চালন করতে করতে বলে, “উম্মম মাইরি কি রস রে তোর গুদে….. লাস্ট কবে দেবায়ন তোকে চুদেছিল….. রে ডারলিং?”
অনুপমা ওর মাথা আঁকড়ে ধরে নিজের যোনির ওপরে চেপে ধরে বলে, “পুচ্চু আমাকে করে না, কুত্তাটা আমাকে একদম ভালোবাসে না….. তুই একটু ভালো করে চেটে দে…..”
দেবায়ন শ্রেয়ার যোনির ওপর থেকে মাথা উঠিয়ে অনুপমার স্তন চটকে বলে, “আচ্ছা তাই নাকি? তোকে কাল রাতে তাহলে বেশ করে লাগাবো…..”
শ্রেয়া থাকতে না পেরে দেবায়নের লিঙ্গ মুঠি করে ধরে নিজের যোনির মুখে স্থাপন করে বলে, “আমার গুদ চেটে পাগল দিলি রে দেবু….. প্লিস এইবারে ঢুকিয়ে দে রে আর থাকতে পারছি না…..”
ঋতুপর্ণা রুপকের লিঙ্গ মুঠি করে ধরে নিজের যোনি মুখে স্থাপন করে ধীরে ধীরে নিজেকে নামিয়ে আনে। রূপক এক হাতে ঋতুপর্ণার পাছা খামচে ধরে অন্য হাতে একটা স্তন হাতের মুঠির মধ্যে ধরে উপরের দিকে কোমর উঁচিয়ে ঋতুপর্ণার যোনির মধ্যে লিঙ্গ ঢুকিয়ে দেয়। ঋতুপর্ণা ওর কাঁধের ওপরে হাত রেখে ঊরুসন্ধি রুপকের ঊরুসন্ধির সাথে মিশিয়ে দুইজনার যৌনাঙ্গ মিলিয়ে দেয়। তারপরে ধীরে ধীরে কোমর নাচিয়ে উদ্দাম সঙ্গমে মেতে ওঠে।
শ্রেয়ার মেলে ধরা জঙ্ঘা মাঝে হাঁটু গেড়ে বসে ধীরে ধীরে নিজের লিঙ্গ শ্রেয়ার শিক্ত কোমল যোনির মধ্যে ঢুকিয়ে দেয় দেবায়ন। শ্রেয়া চোখ বুজে ঠোঁট কামড়ে দুই হাতে বিছানার চাদর আঁকড়ে ধরে দেবায়নের বৃহৎ লিঙ্গের সঞ্চালন উপভোগ করে। দেবায়ন সম্পূর্ণ লিঙ্গ শ্রেয়ার আঁটো যোনির মধ্যে প্রবেশ করিয়ে দিয়ে কিছুক্ষণ ধরে রাখে। শ্রেয়ার শরীরে কাঁপুনি ধরে যায়। দেবায়ন ওর স্তন জোড়া হাতের মুঠির মধ্যে নিয়ে ধীরে ধীরে কচলাতে কচলাতে যোনির মধ্যে লিঙ্গ সঞ্চালন করতে শুরু করে দেয়।
ধীমান অনুপমাকে চিত করে শুইয়ে দিয়ে ওর পিঠের ওপরে ঝুঁকে পরে। এগিয়ে আসে শায়িত শ্রেয়ার মুখের কাছে। দুহাতে আঁজলা করে বান্ধবীর মুখ ধরে ঠোঁটের সাথে ঠোঁট মিলিয়ে দেয়। ধীমান, অনুপমার উঁচু হয়ে থাকা পাছার খাঁজে মুখ গুঁজে ওর যোনি চেটে ওকে কামোত্তেজিত করে তোলে।
কামোন্মাদ রমণী অনুপমা, ধীমানের জিবের ওপরে যোনিদেশ ঘষতে ঘষতে বলে ওঠে, “প্লিস এইবারে কর…..”
ধীমান দুই হাতে অনুপমার কোমর ধরে পেছন থেকে ওর যোনির মধ্যে লিঙ্গ ঢুকিয়ে সঙ্গমে মেতে ওঠে। সঙ্গমের তালেতালে ঝুলে থাকা দুই বড় বড় নিটোল নরম স্তন জোড়া দুলতে শুরু করে দেয়। ওর পিঠের ওপরে ঝুঁকে দুই স্তন হাতের মধ্যে নিয়ে চটকে ধরে ধীমান আর তীব্র গতিতে আঁটো যোনির মধ্যে লিঙ্গ সঞ্চালনে মেতে ওঠে।
এইভাবে কিছুক্ষণ সবাই নিজেদের নিজেদের সঙ্গিনীদের নিয়ে মেতে থাকে। দেবায়ন কিছুক্ষণ পরে শ্রেয়াকে জড়িয়ে ধরে চিত হয়ে শুয়ে পড়ে। বুকের ওপরে শ্রেয়াকে পিষে ধরে নিচের থেকে ওর শিক্ত পিচ্ছিল যোনির মধ্যে তীব্র গতিতে লিঙ্গ সঞ্চালনে মেতে ওঠে। ধীমান সুযোগ বুঝে অনুপমার যোনির মধ্যে থেকে লিঙ্গ বের করে শ্রেয়ার পেছনে হাঁটু গেড়ে বসে পড়ে। ঋতুপর্ণা এতক্ষণ ধরে রুপকের কোলে নাচানাচি করে শ্রান্ত হয়ে নেমে পড়ে। দণ্ডবৎ রুপকের লিঙ্গ তখন দাঁড়িয়ে। অনুপমা ওর দিকে দেখে মিচকি হেসে রুপকের কোলের ওপরে জঙ্ঘা মেলে উঠে পড়ে। রূপক অনুপমাকে নিজের কোলে উঠতে দেখে আর থাকতে পারে না। পায়ের ব্যাথা ভুলে অনুপমার পাছা খামচে ধরে নীচের থেকে এক ধাক্কায় শিক্ত সদ্য মন্থিত পিচ্ছিল যোনির মধ্যে লিঙ্গ ঢুকিয়ে চরম সঙ্গমে মেতে ওঠে।
ঋতুপর্ণা শ্রেয়ার উঁচু হয়ে থাকা পাছার ওপরে চাঁটি মেরে ওকে কামোত্তেজিত করে তোলে। দুই পাছার মণ্ড দুইপাশে টেনে ধরে পায়ু ছিদ্রের ওপরে থুতু ফেলে ভিজিয়ে শিক্ত করে দেয়। এতক্ষণ শ্রেয়া যেটা বুঝতে পারেনি সেটা ঋতুপর্ণার থুতু অনুভব করে বুঝতে পারে ধীমান কি করতে চলেছে।
শ্রেয়া ককিয়ে ওঠে, “প্লিস না না…..” বলে ছটফট করে ওঠে। রূপক ছাড়া সবাই হেসে ফেলে। দেবায়ন ততখনে শক্ত করে শ্রেয়াকে জড়িয়ে ধরে ওর ভিমকায় লিঙ্গ শ্রেয়ার যোনির শেষ প্রান্তে ঠেকিয়ে দেয়। শ্রেয়া ককিয়ে ওঠে কিন্তু ওর ছটফটানি কোন কাজে দেয় না। দেবায়নের বাহুপাশ অনেক কঠিন, ওর থেকে মুক্তি পাবার আশা নেই।
শ্রেয়ার নরম পাছার ওপরে বেশ কয়েকটা চুমু খায় ধীমান, তারপরে ওর পিঠের ওপরে ঝুঁকে কানে কানে বলে, “দেখ ডারলিং একদম ব্যাথা লাগবে না, খুব নরম করে করব। বাঁধা দিস না প্লিস সোনা আমার…..”
নিচের থেকে দেবায়ন তখন পর্যন্ত ওর যোনির মধ্যে লিঙ্গ ধরে রেখে মিচকি হেসে বলে, “তোর ওই ফুটোটা রূপক কোনোদিন মারবে না, আমাদের এইবেলা একটু মারতে দে….. প্লিস…..”
অগত্যা শ্রেয়া নিজেকে ওদের দুইজনার কাছে ছেড়ে দেয়। ধীমান শ্রেয়ার পায়ুছিদ্র থুতু দিয়ে বেশ করে ভিজিয়ে লিঙ্গ পায়ুছিদ্রের মুখে স্থাপন করে। লিঙ্গের ডগা পায়ুছিদ্র ছুঁতেই শ্রেয়া ককিয়ে ওঠে। দেবায়ন ওর স্তন জোড়া দুই হাতে আদর করে চটকিয়ে ওর ঠোঁট গাল চুম্বনে চুম্বনে ভরিয়ে দেয়। দেবায়নের কামঘন চুম্বনে শ্রেয়ার শরীর অবশ হয়ে আসে। সেই সুযোগে ধীমান ধীরে ধীরে একটু একটু করে শ্রেয়ার পায়ুছিদ্রে নিজের লিঙ্গ প্রবেশ করিয়ে দেয়। শ্রেয়ার শরীর কাঠ হয়ে যায়। শরীরে নড়াচড়ার ক্ষমতা থাকে না, ওর দেহ যেন ভরে উঠেছে। একদিকে দেবায়নের বৃহৎ কঠিন লিঙ্গ অন্যদিকে ধীমানের কঠিন লিঙ্গ ওকে ভরিয়ে দিয়েছে। ধীমান ওর কোমরের দুইপাশে হাত রেখে হাঁটু গেড়ে সোজা হয়ে বসে ধীরে ধীরে পায়ুছিদ্রে লিঙ্গ সঞ্চালনে মেতে ওঠে। অন্যদিকে দেবায়ন শ্রেয়ার আঁটো পিচ্ছিল যোনির মধ্যে লিঙ্গ সঞ্চালনে মেতে ওঠে।
অনুপমার রূপককে জড়িয়ে ধরে নিজেকে উজাড় করে রুপকের লিঙ্গের তীব্র মন্থন চোখ বুজে উপভোগ করে চলে। এতক্ষণ ধীমানের লিঙ্গ ওর যোনির মধ্যে ঢুকে ঝড় তুলে দিয়েছিল এখন সেই জায়গায় রুপকের লিঙ্গ আরো এক প্রবল ঝড় তুলে দিয়েছে। রূপক ওর পাছা খামচে ধরে নিচের থেকে কোমর উঁচিয়ে প্রবল বেগে লিঙ্গ সঞ্চালনে মেতে ওঠে।
ঋতুপর্ণা একা একা রূপক আর অনুপমার পাশে শুয়ে জঙ্ঘা মেলে নিজের যোনির মধ্যে আঙ্গুল ঢুকিয়ে স্বমেহনে মেতে ওঠে। বেশ কিছুপরে ধীমান নিজের লিঙ্গ শ্রেয়ার পায়ুছিদ্র থেকে বের করে নেয়। নিজের প্রেয়সীর মেলে ধরা জঙ্ঘা মাঝে হাঁটু গেড়ে বসে ধীরে ধীরে ঋতুপর্ণার যোনির মধ্যে লিঙ্গ ঢুকিয়ে সঙ্গমে মেতে ওঠে। ঋতুপর্ণাকে পেঁচিয়ে ধরে চিত হয়ে শুয়ে পরে ধীমান, নিচের থেকে কোমর উঁচিয়ে প্রেয়সী ললনার পিচ্ছিল আঁটো যোনির মধ্যে তীব্র সঙ্গমের ঝঞ্ঝা তুলে দেয়। দুইজনে একে ওপরকে সাপের মতন পেঁচিয়ে ধরে ভালোবাসার মারামারি করতে করতে কামনার শিখরে পৌঁছে যায়। ঋতুপর্ণার ঠোঁটের সাথে ঠোঁট মিশিয়ে যোনি ভরিয়ে নিজের কামরস ঝরিয়ে দেয় ধীমান। সেইখনে ঋতুপর্ণা আর পিছিয়ে থাকে না, ধীমানের বুকের ওপরে শুয়ে যোনিদেশ ওর লিঙ্গের সাথে মিশিয়ে দিয়ে নিজের রাগ রস স্খলন করে নিস্তেজ হয়ে পরে যায়।
চরম যৌন সঙ্গমের ফলে শ্রেয়ার শরীর লাল হয়ে গেছে, পাছার ওপরে ধীমানের হাতের দাগ স্পষ্ট। দেবায়নের শরীরের ওপরে নিস্তেজ হয়ে এলিয়ে পরে তীব্র যৌন সহবাস উপভোগ করে। দেবায়ন ওকে জড়িয়ে ধরে আবার চিত হয়ে শুয়ে যায়। শ্রেয়ার ওপরে উঠে, ভিমকায় কঠিন লিঙ্গের আঘাতে শ্রেয়ার কোমল শরীর ছিন্নভিন্ন করে দেয় দেবায়ন। শ্রেয়া কামনার জ্বালায় জ্বলতে জ্বলতে দেবায়নের নীচে শুয়ে ছটফট করতে করতে তীব্র সঙ্গম সুখ উপভোগ করে।
রুপকের লিঙ্গ অনুপমার যোনির মধ্যে ছটফট করতে শুরু করে দেয়। অনুপমা বুঝতে পারে রুপকের চরম ক্ষণ আসন্ন, কিন্তু নিজের যোনির মধ্যে প্রেমিকের মধু ঢালতে চায় তাই মন্থন থামিয়ে ওর চোখে চোখ রখে ঠোঁট চুম্বন করে। রূপক ওকে জড়িয়ে ধরে লিঙ্গ সঞ্চালন থামিয়ে দেয়। ব্যাথা পা নিয়ে শ্রেয়ার ওপরে উঠে আসা ওর পক্ষে একটু কষ্টকর তাই অনুপমার দিকে কাতর চোখে তাকিয়ে অনুরোধ করে মন্থন করে যেতে।
অনুপমা মিষ্টি হেসে ওকে বলে, “চিন্তা নেই বেবি, তোকে ঠিক ভাবে আমরা সবাই মিলে ধরাধরি করে শ্রেয়ার ওপরে ছেড়ে দেব।”
ওর কথা শুনে দেবায়ন মন্থন থামিয়ে হেসে ফেলে, “শালা এমনি হয় না আবার ন্যাকড়া জড়িয়ে বৌকে চুদবে। শখ দেখ। না না….. আগে শ্রেয়ার হয়ে যাক তারপরে আমার বৌকে করব….. তুই বাঁড়া হাতে বসে থাক…..”
শ্রেয়ার শরীরে আর একফোঁটা শক্তি নেই যে উঠে রুপকের কোলের ওপরে বসবে। তাও রুপকের ওই অবস্থা দেখে শেষ পর্যন্ত শ্রেয়া দেবায়নের লিঙ্গ নিজের যোনির মধ্যে থেকে বের করে দিয়ে ওকে বলে, “ইসসস আমার বরের পা ভেঙ্গেছে বলে তোরা ওকে হেটো করবি…..”
অনুপমা ওর ঠোঁটে চুমু খেয়ে বলে, “হেটা করব কখন বলিনি ডারলিং….. আমি জানি শেষ পর্যন্ত সবাইকে নিজের বরের কোলেই ফিরতে হয়। কামনার জ্বালা জুরিয়ে আসার পরে একটু ভালোবাসার ছোঁয়া না পেলে কি আর মন ভরে। শুধু চাইছিলাম এইবারে পুচ্চু আমাকে করুক এই যা…..”
শ্রেয়া উঠে বসে দেবায়নের লিঙ্গ মুঠি করে ধরে হেসে বলে, “এই নে তোর পুচ্চুর বাঁড়া, এইবারে ভালোবাসা কর…..” এইবলে রুপকের কোলে উঠে ওর লিঙ্গ নিজের যোনির মধ্যে প্রবেশ করিয়ে দেয়।
সুন্দরী তৃষ্ণার্ত প্রেয়সীকে কাছে টেনে নেয় দেবায়ন। সামনা সামনি হাঁটু গেড়ে দুইজনে বসে একে অপরকে চুম্বনে চুম্বন ভরিয়ে দেয়। অনুপমার উন্নত কোমল স্তন জোড়া দেবায়নের প্রশস্ত ছাতির ওপরে পিষে যায়। দেবায়ন ওর কোমরের দুইপাশে হাত দিয়ে নিজের কোলের ওপরে টেনে ধরে। দুই পেলব নধর গঙ্ঘা মেলে ধরে ঊরুসন্ধি দেবায়নের লিঙ্গের দিকে এগিয়ে দেয় অনুপমা। প্রেমিকের উদ্ধত কঠিন লিঙ্গ ঠিক নিজের স্থান খুঁজে ঢুকে পড়ে। দুই হাতে দেবায়নের গলা জড়িয়ে দুই পা দিয়ে ওর কোমর পেঁচিয়ে ধরে অনুপমা। এক হাতে নিজের ভার সামলে অন্য হাতে সুন্দরী মিষ্টি প্রেয়সীর কোমর জড়িয়ে উদ্দাম ভালোবাসার খেলায় মেতে ওঠে ওরা। প্রেমের খেলায় খেলে এক সময়ে নিজেদের কামরস স্খলন করে পরস্পরকে জড়িয়ে ধরে বিছানায় এলিয়ে পড়ে।
দেবায়ন অনুপমাকে কোলে তুলে সোফার ওপরে জড়াজড়ি করে শুয়ে পড়ে। বিছানায় একপাশে ঋতুপর্ণা আর ধীমান জড়াজড়ি করে পড়ে থাকে অন্যপাশে রূপক আর শ্রেয়া। ভালোবাসা আর কামনার চরম খেলার পরে কারুর শরীরে চোখ খুলে তাকানোর শক্তি থাকে না। বেশ কিছুক্ষণ পরে অনুপমা দেবায়নের বুকের মধ্যে মুখ ঘষে ওর গায়ের ঘ্রাণ টেনে নিজের বুক ভরিয়ে নেয়। অনেক শান্তি এই বুকের মাঝে লুকিয়ে থাকার, ওর হৃদপিণ্ডের ধুকপুক শব্দ ওর কানে এক মধুর সঙ্গীত, ওর শরীরের উষ্ণতা ওকে প্রচন্ড শীতের রাতে আগুনের ছোঁয়া দেয়, ওই ঈগলের মতন বাহুডোরে বাঁধা পরে বুকের মধ্যে এক অনাবিল নিরাপত্তার ভাব দেখা দেয়। দেবায়নের হাতের ওপরে হাত রেখে বাহুপাশ আরো নিবিড় করে নেয় নিজের নগ্ন কোমল দেহ পল্লবের চারপাশে। নিজেকে ওর শরীরের মধ্যে মিশিয়ে দিয়ে নিস্তেজ হয়ে চুপচাপ পড়ে থাকে।
বেশ কিছুক্ষণ পরে ধীমান উঠে ওদের বলে, “হ্যাঁ রে ড্রিঙ্কসের কি হবে? কাজু কিসমিস পেস্তা কতকিছু দিয়ে গেল। শালা এই মেয়েদের দেখে ওই মদের মাতলামো আর হবে না নাকি?”
রূপক হেসে ফেলে, “হ্যাঁ রে শালা, এইবারে মদ খেয়ে আরো এক প্রস্থ হবে।”
শ্রেয়া কোনরকমে ওর বুকের ওপর থেকে মাথা উঠিয়ে বলে, “আমার শরীরের আর শক্তি নেই।”
সেই সুর অনুপমা আর ঋতুপর্ণার ঠোঁটে। তিনজন মেয়েকে এত পিষে ধরে সঙ্গম করেছে তিন ছেলে যে ওদের শরীরে আর শক্তি বেঁচে নেই।
অনুপমার ঘাড়ে গর্দানে চুমু খেয়ে দেবায়ন ওর কানেকানে বলে, “একটু ড্রিঙ্কস করে আরো একবার হবে নাকি?”
অনুপমা ওর লিঙ্গ হাতের মুঠির মধ্যে নিয়ে চেপে ধরে বলে, “এইবারে যদি করতে আসিস তাহলে কেটে রেখে দেব।”
সেই শুনে রূপক আর ধীমান হেসে ফেলে। শ্রেয়া রুপকের অণ্ডকোষ চেপে ধরে মজা করে বলে, “কিছু আর বেঁচে আছে নাকি?”
শ্রেয়ার নরম স্তন যুগল আলতো মর্দন করে রূপক বলে, “কোলে বসো, জানতে পারবে!”
ঋতুপর্ণা মাথা ঝাঁকিয়ে ধীমানকে বলে, “আমি কিন্তু আর নেই, এইবারে তুমি রুপকের পেছনে ঢুকিয়ে দিও আর দেবায়ন না হয় ওর মুখে।”
অনুপমা আর শ্রেয়া হেসে ফেলে ওর কথা শুনে। ওরা সমস্বরে বলে, “একদম ঠিক বলেছিস মদ না খেয়েই ছেলে গুলোর এই অবস্থা মদ খেলে কি যে হত জানি না। এইবারে নিজেদের আছে যে ফুটোটা আছে তাতেই নিজেদের সন্তুষ্ট করুক চল আমরা ওই সুইটে যাই।”
অনুপমা আর শ্রেয়া বিছানা ছেড়ে উঠে পরে স্লিপ পরে নেয় আর নীচে একটা র‍্যাপার পরে নেয়। ওদের যেতে দেখে ঋতুপর্ণা টপ আর স্কার্ট পরে নেয়। দেবায়ন আর বাকিরা হাঁ হাঁ করে ওঠে কিন্তু মেয়েরা আর দাঁড়ায় না, ওরা ছেলেদের ওই সুইটে রেখে অন্য স্যুইটে শুতে চলে যায়।
পরেরদিন উটি আর আশেপাশের জায়গা ঘুরে বেড়িয়ে কেটে যায়। বিকেলে শ্রেয়া আর রূপককে নিয়ে দেবায়ন, অনুপমার উপস্থিতিতে হোটেলের প্রোজেক্টের সম্বন্ধে মিস্টার পারিজাতের সাথে আলোচনা করে। একটা হোটেল চেন তৈরি করে ইন্টারনেটের মাধ্যমে সবাইকে একসাথে বেঁধে দিতে চায়।
সেদিন রাতে আর ওদের সামুহিক যৌন সহবাস হয় না, সারা রাত গল্পে করেই কাটিয়ে দেয় সবাই।
রূপক একটা প্রস্তাব রাখে সবার সামনে, “আমরা কোনোদিন সবাই মিলে কোথাও ঘুরতে যাইনি, একবার গেলে কেমন হয়।”
শ্রেয়া ওকে চিমটি কেটে বলে, “ইসসস আবার সেই সবাই মিলে চোদাচুদি?”
ওর কথা শুনে সবাই হেসে ফেলে। ঋতুপর্ণা মাথা নাড়িয়ে বলে, “আর নয় রে, এই শেষ অনেক হয়েছে।”
রূপক সমস্বরে বলে, “আরে না না, আমি সেই রকম ঘুরতে যাওয়ার কথা বলছি না। আমি বলছিলাম কোন দুর পাহাড়ে যাওয়ার কথা।”
পাহাড় বরাবর অনুপমাকে টানে, নির্জীব পাথরে মানুষকে অনেক কিছু শিক্ষা দেয়। দেবায়নের হাত নিজের হাতের মুঠির মধ্যে নিয়ে বলে, “কোথায় যাবো?”
রূপক ওদের বলে, “ট্রেকিংয়ে গেলে কেমন হয়।”
সবাই একসাথে মাথা দুলিয়ে সম্মতি জানিয়ে বলে, “হ্যাঁ হ্যাঁ দারুন হবে। এই শহরের দৌড়ের থেকে কয়েক দিন নিশ্চিন্তে পাহাড় নদী জল জঙ্গল প্রকৃতির মাঝে কাটানো বেশ লাগবে।”
দেবায়ন ওকে জিজ্ঞেস করে, “কোথায় যেতে চাস?”
রূপক বলে, “উত্তরাখন্ড খাটলিং গ্লেসিয়ার, এই দশ পনেরো দিনের মতন ট্রেকিং। তেহেরি থেকে গুট্টু হয়ে হাঁটা পথ। মাঝে পাহাড়ে আমরা তাঁবুতে রাত কাটাবো।”
মেয়েরা লাফিয়ে ওঠে, অনুপমা আর শ্রেয়া নেচে ওঠে, “হ্যাঁ হ্যাঁ, বেশ মজা হবে। আচ্ছা গ্লেসিয়ারে বরফ থাকবে? তুই এই সম্বন্ধে জানলি কি করে?”
রূপক ওদের প্রশ্নের উত্তর দিয়ে বলে, “বেশ কয়েকদিন ধরে একটা টুর অপারেটর থেকে ইমেল পাচ্ছিলাম। তাতে ভারতের বিভিন্ন ট্রেকিংয়ের জায়গার বিবরন দেওয়া ছিল, সেইখান থেকে এই জায়গা দেখে বেশ লাগলো। আরো আছে, যেমন মিলাম গ্লেসিয়ার, নন্দাদেবী ট্রেক, হর-কি-দুন, গঙ্গোত্রী গ্লেসিয়ার ইত্যাদি। আমার এই খাটলিং বেশ ভালো লাগলো, তাই জানালাম। এর পরে তোদের মতামত।”
ওদের দলের মধ্যে কেউই কোনোদিন ট্রেকিং করেনি তাই কারুর সেই বিষয়ে কোন অভিজ্ঞতা নেই। অনুপমা দেবায়নের হাতখানি কোলের মধ্যে চেপে ধরে বলে, “পুচ্চু যেখানে নিয়ে যাবে সেখানে চোখ বন্ধ করে যেতে রাজি আছি।”
দেবায়ন ওকে জড়িয়ে ধরে কাছে টেনে বলে, “তাহলে কাল রাতে পালিয়ে ছিলিস কেন?”
সবাই হেসে ফেলে ওর কথা শুনে। দেবায়ন রুপকের দিকে তাকিয়ে বলে, “ঠিক আছে, তুই সব প্লান প্রোগ্রাম কর সব ঠিক করে আমাদের জানা। কবে যেতে হবে কি করে যেতে হবে ইত্যাদি।”
[+] 1 user Likes Mr Fantastic's post
Like Reply
পর্ব ছাব্বিশ সমাপ্ত।
Like Reply
পর্ব ২৭ (#০১)

উটি থেকে ফেরার পরে দেবায়ন বসে ছিল না, নিবেদিতাকে সঙ্গে নিয়ে বিভিন্ন হোটেলের জায়গা গুলোতে কাজের জন্য বেরিয়ে পড়েছিল। সাতদিন এদিক ওদিক ঘুরে কাজ সেরে এই গতকাল বাড়িতে ফিরেছে। প্লেন থেকে নেমে সোজা পন্ডিতিয়া, অনুপমার বাড়িতে।
কান পেতে শুনলে বাইরে ইলশেগুঁড়ির শব্দ শোনা যায়। ইসসস এই ভোরে উঠতে কারুর ভালো লাগে নাকি? তাও আবার প্রেমিকের কোল ছেড়ে? চাদরের তলায় আস্টেপিস্টে ওকে জড়িয়ে ধরে দেবায়ন ঘুমিয়ে। ঘাড়ের ওপরে তপ্ত শ্বাস গতরাতের কথা মনে করিয়ে দেয়। চাদরের তলায় দুইজনেই নগ্ন। নরম পাছার মসৃণ ত্বকের ওপরে দেবায়নের উত্তপ্ত লিঙ্গের ছোঁয়ায় শরীরে শিহরণ দেখা দেয়। গত রাতের পাগলামির ছবি চোখের সামনে ভেসে উঠতেই ওর হাত খানি গালের কাছে টেনে চুমু খায়। রাতের খাবার পরেই গেস্টরুমে ঢুকে পড়েছিল দুইজনে।
মা মজা করে ওর কানে ফিসফিস করে বলেছিল, “দেখিস হ্যান্ডসাম যেন খাট না ভেঙ্গে ফেলে?”
অনুপমা, মায়ের কাঁধে আলতো ধাক্কা মেরে বলেছিল, “হ্যাঁ, তোমার গালের রঙ দেখে বুঝতে পারছি বেশ।”
মেয়ের মুখে ওই কথা শুনে লজ্জায় পড়ে গেছিল পারমিতা। এক বছরের ওপরে হয়ে গেছে, শুধু মাত্র স্বামী সোমেশ ছাড়া আর কারুর সাথে যৌন সঙ্গম করেনি আর হবু জামাই দেবায়নের সঙ্গে নয়। মেয়ের কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়ে ভালোবাসার খেলা খেলতে একটুর জন্য যে মন চায়নি সেটা নয়, কিন্তু মেয়ের মুখ দেখে আর সেই পথে পা বাড়ায়নি।
গতরাতে খাওয়ার টেবিলে বসে সেই প্রথম দিনের মতন অনুপমার পায়ের ওপরে পা রেখে দেবায়ন সুরসুরি দিয়েছিল। ভাগ্যিস এইবারে আর ভুল করে পারমিতার ঢিলে প্যান্টে পা দেয়নি অথবা সোজা যোনির মধ্যে আক্রমন করেনি। ভুলের এইবারে কোন জায়গা ছিল না, কারন পারমিতা একটা ঢিলে প্যান্ট পরেছিল, আর অনুপমা একটা ছোট স্কার্ট পরেছিল। পায়ের পাতাতে পা রাখতেই দেবায়ন বুঝে গিয়েছিল কার পায়ের ওপরে এইবারে সুরসুরি দিচ্ছে। পাশে অঙ্কন বসেছিল তাই বিশেষ কিছু করতে পারেনি। তাও ওই বদমাশ ছেলেটা হাঁটু পর্যন্ত নখের আঁচড় কেটে বারেবারে ওকে উত্যক্ত করে তুলেছিল গত রাতে। আর রাতের কথা? বাথরুম থেকে শুরু আর বিছানায় শেষ, উদ্দাম পাগল হয়েছিল দুইজনে। উটির এক সপ্তাহ পরে দেবায়নকে কাছে পেয়ে তৃষ্ণার্ত চাতকের মতন হাঁ করে চেয়েছিল প্রেমের বারিধারা। যা দিয়েছে তাই হৃদয় ভরে গ্রহন করেছে।
কোনোরকমে দেবায়নের বাহুপাশ থেকে নিজেকে মুক্ত করে উঠে পড়ে অনুপমা। ওর চুলে বিলি কেটে খোঁচা দাড়ি ভর্তি গালের ওপরে চুমু খায়। এতক্ষণে পায়েল অঙ্কন নিশ্চয় উঠে গেছে। অঙ্কন সকাল সকাল বেড়িয়ে যায় কলেজে তাই পায়েল সকাল সকাল উঠে পরে। অবশ্য বাড়ির বাকিরাও উঠে পড়ে। তবে সেদিন অনুপমার উঠতে দেরি হয়ে যায়, আর তার কারন স্বরূপ আরো একবার চুমু খায় দেবায়নের গালে। চাদর উঠিয়ে একবার ওর নেতিয়ে পড়া অস্ত্রটা দেখে নেয়। ইসসস, এইটা দিয়েই ঘায়েল করেছিল ওকে।
গালে হাত বুলিয়ে ওকে ডাকে, “উঠে পড়, অফিস আছে।”
ঘুমঘুম চোখ খুলেই ওকে জড়িয়ে ধরে নিজের ওপরে ফেলে দেয় দেবায়ন। চুলের মধ্যে নাক মুখ গুঁজে আদুরে গলায় বলে, “আর একটু শুতে দে না প্লিস। এত তাড়াতাড়ি কোথায় যাবো?”
ওর নাকের ওপরে নিজের নাক ঘষে মিষ্টি করে বলে, “অফিসে যেতে হবে না? গত রাতে বাড়ি যাসনি, মামনি এইবারে প্যাঁদাবে!”
দেবায়ন ওর মাথার পেছনে হাত রেখে মাথাটা নিজের ওপরে টেনে ধরে। ঠোঁটের ওপরে আলতো চুমু দেয়। অনুপমার চোখ বুজে আসে, সকাল সকাল এমন ভাবে জড়িয়ে ধরলে কি কারুর আর বিছানা ছেড়ে উঠতে ইচ্ছে করে? আলতো আলতো চুমু খেয়ে বহু কষ্টে ঠোঁট ছেড়ে বলে, “দাঁত মেজে স্নান সেরে ফেল।”
গেস্ট রুম ছেড়ে বাইরে বের হতেই মায়ের মুখোমুখি। পারমিতা মেয়েকে মিচকি হেসে জিজ্ঞেস করে, “কি রে হ্যান্ডসাম এখন পর্যন্ত ওঠেনি?” ওর টোপা দুই গালে চিমটি কেটে আদর করে বলে, “উফফফ কি ভাগ্য, নীচে মেয়ে জামাই আর ওপরে ছেলে বৌমা। কি যে করি আমি…..” বলেই হেসে ফেলে।
অনুপমা ভুরু নাচিয়ে মিচকি হেসে মাকে বলে, “কেন গো, তোমার খুব হিংসে হচ্ছে নাকি আমাকে? যাও না, ভেতরে যাও, তোমার হ্যান্ডসামকে ঘুম থেকে তুলে দাও।” মাকে জড়িয়ে কানেকানে ইয়ার্কি মেরে বলে, “সকালের দিকে কিন্তু বেশি ভালো লাগে বুঝলে।” বলেই মায়ের নধর গোল নরম পাছা জোড়া একটু চেপে ধরে।
পারমিতা সকাল সকাল মেয়ের মুখে কামুক ভাষা শুনে কিঞ্চিত উত্তেজিত হয়ে যায়।
ঠিক সেই সময়ে ওর বাবা ওপর থেকে স্নান সেরে নীচে নেমে এসে দেখে মা মেয়েতে কোলাকুলি করছে। হেসে মেয়েকে আর স্ত্রীকে জিজ্ঞেস করে, “এমন কি আলোচনা চলছে!”
পারমিতা স্বামীকে হেসে বলে, “মা মেয়ের কথা, এতে বাইরের কারুর আসার দরকার নেই।”
সত্যি এক ধাক্কায় ওদের জীবন অনেক পালটে গেছে। আর যে পালটে দিয়েছে সে এখন গেস্ট রুমে চাদরের তলায় উলঙ্গ হয়ে শুয়ে।
অনুপমা উপরে নিজের ঘরে চলে যায়। পায়েল স্নান সেরে তৈরি, ভাইয়ের জন্য খাবার টেবিলে অপেক্ষা করছে। তাড়াতাড়ি স্নান সেরে জামা কাপড় পরে নীচে নেমে দেখে দেবায়ন উঠে গেছে। স্নান সারেনি, এখন চোখ ঘুম ঘুম ভাব লেগে। বাবার সাথে বসে কি সব ব্যাবসা সংক্রান্ত আলোচনা চলছে। এত সকালে ওই আলোচনা শুনে বিরক্তবোধ করে অনুপমা।
দেবায়ন আর বাবার ওপরে ঝাঁঝিয়ে উঠে বলে, “সকাল সকাল অন্য কিছুর আলোচনা হতে পারে কি? আর তুই এখন স্নান করিস নি কেন?”
সোমেশ মাথা নাড়িয়ে আক্ষেপের সুরে দেবায়নকে বলে, “যাও তৈরি হয়ে নাও।”
দেবায়ন গেস্ট রুমে ঢুকে যায়, তৈরি হওয়ার জন্য।
খাবার টেবিলে বসে সোমেশ মেয়েকে জিজ্ঞেস করে, “একবার তোর অ্যাকাউন্টেন্ট কে বলিস ব্যালেন্স শিটটা নিয়ে দুপুরের পরে আমার কেবিনে আসতে।”
অনুপমা বাবাকে জিজ্ঞেস করে, “কেন কি হয়েছে?”
সোমেশ মেয়েকে জিজ্ঞেস করে, “কত ব্যালেন্স পড়ে আছে?”
অনুপমা খানিক চিন্তা করে উত্তর দেয়, “সাড়ে চার কোটির মতন। এই পুজোর পরে কয়েকটা প্রোজেক্ট ডেলিভার হয়ে যাবে তখন কিছু টাকা আসবে।”
সোমেশ ওকে জিজ্ঞেস করে, “ইউরোপের জন্য ছেলে খুঁজেছিস?”
অনুপমা মাথা নাড়ায়, “না।”
সোমেশ মেয়েকে মৃদু বকুনি দেয়, “করিস কি?”
অনুপমা মুখ বেঁকিয়ে উত্তর দেয়, “আমি কি জানি, কি লাগবে না লাগবে। এখুনি তো দেবায়নের সাথে আলোচনা করছিলে, ওকেই বল না।”
সোমেশ মেয়ের রাগ দেখে হেসে ফেলে, “হ্যাঁ হ্যাঁ ওকে বলে দিয়েছি, আজকে অফিসে গিয়ে দীপঙ্করের সাথে এই বিষয়ে আলোচনা করবে। আর হ্যাঁ, শ্রেয়ার কথা কিছু ভাবলি?”
অনুপমা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে, “মানে? ওর কি হল? ওকি তোমার কাছে এসেছিল?”
সোমেশ হেসে বলে, “না রে, ও কেন আমার কাছে আসতে যাবে। আমি এমনি জিজ্ঞেস করলাম এই আর কি।”
মাথা নাড়ায় অনুপমা, শ্রেয়ার কথা একদম যে মনে ছিল না সেটা নয়। তবে উটি থেকে ফেরার পরে দেবায়ন আবার বেরিয়ে গিয়েছিল তাই আর সেই বিষয়ে আলোচনা করা হয়নি। উটি থেকে ফিরে শ্রেয়া নিত্যদিনের মতন অফিস করে গেছে, নিজের শেয়ার অথবা মাইনে নিয়ে কিছুই উচ্চবাচ্য করেনি। একবার ভেবেছিল শ্রেয়াকে ডেকে ওর শেয়ার ফিরিয়ে দেয়, তারপরে মনে হয়েছিল যার জন্য পায়েল কে ডাইরেক্টর বানানো হয়েছিল সেটার আর দরকার নেই। পায়েলের শেয়ার শ্রেয়াকে দিলে কেমন হয়। কিন্তু এইসব নিয়ে দেবায়নের সাথে কোন কথাবার্তা হয়নি ওর।
ওদের একটু দেরি হয়ে যায় অফিসের দিকে যাত্রা করতে। বাড়িতেই সাড়ে ন’টা বাজে। দেরি দেবায়নের জন্য হয়েছিল, ছেলেটাকে তাড়াতাড়ি স্নান সারতে বলল, কিন্তু বাথরুমে ঢুকে আর বের হয় না। শেষ পর্যন্ত অনুপমা গেস্ট রুমের বাথরুমে ঢুকে পড়ে দেখার জন্য আর সেটাই কাল হল। সকাল সকাল বাথরুমের দরজা বন্ধ না করেই উলঙ্গ হয়ে সাওয়ারের তলায় দাঁড়িয়ে সিগারেট টানছিল দেবায়ন। অনুমাকে দেখে আর থাকতে পারেনি, ওর মুখ চেপে, বেসিনের ওপরে ঝুঁকিয়ে দিয়ে পেছন থেকে ওর স্কার্ট টেনে নামিয়ে দেয়। কচলাকচলির ফলে ওর যোনি শিক্ত হয়ে ওঠে আর সঙ্গে সঙ্গে দেবায়ন ওর টপের ওপর দিয়ে দুই স্তন মুঠি করে ধরে এক ধাক্কায় পেছন থেকে লিঙ্গ ঢুকিয়ে দেয় যোনির মধ্যে। একটু দুরেই সবাই বসার ঘরে বসে, ধরা পরে যাওয়ার উত্তেজনায় দুইজনের কামোত্তেজনা চরমে উঠে যায়। ঘাড় ঘুরিয়ে দেবায়নের গলা জড়িয়ে পাছা উঁচু করে কঠিন লিঙ্গের সঞ্চালন নিজের শিক্ত পিচ্ছিল যোনির মধ্যে উপভোগ করতে করতে রাগমোচন করে। ইসসস কি যে করে না ছেলেটা। সারা অঙ্গে কামকেলির তীব্র সুখের ছটা মাখিয়ে বাথরুম থেকে বেড়িয়ে আসে অনুপমা। গেস্ট রুমে ঢুকে সঙ্গে সঙ্গে নিজের জামা কাপড়, চুল চেহারা ঠিক করে নেয়। বাইরে বেড়িয়ে দৌড়ে নিজের ঘরে, ঠোঁটের লিপস্টিক দেবায়নের পেটে, গালের লালিমা বেশ ভালোই লাগছে।
ব্রেকফাস্ট সেরে তিনজনে অফিসের জন্য বেড়িয়ে পড়ে। গাড়িতে বসে কিছুতেই আর অশান্ত মনকে শান্ত করতে পারে না, ওইদিকে দেবায়ন বেশ নিরুত্তাপ। সেই দেখে আরো রেগে যায় অনুপমা। একবার ভাবে অশান্ত মনকে সান্ত করার জন্য শ্রেয়ার ব্যাপারে আলোচনা শুরু করবে। কিন্তু পাশে পায়েল, যদি পায়েল ভেবে বসে ওকে খর্ব করা হচ্ছে তাই আর শ্রেয়া সংক্রান্ত কোন আলোচনা করে না। এই কয়দিনে দেবায়ন আর নিবেদিতা যেখানে ঘুরে বেড়িয়েছে সেই নিয়ে ওদের গল্প চলে। উটি থেকে ব্যাঙ্গালোর হয়ে বিন্সার, ডালহৌসি, সোলাং ভ্যালি সর্বত্র ঘুরে বেড়িয়েছে, কাজে না অন্য কিছু? দেবায়নকে বারেবারে খেপিয়ে তোলে অনুপমা।
দেবায়ন হেসে মাথা দুলিয়ে ওকে আরো উত্যক্ত করে জবাব দেয়, “উফফফ নিবেদিতা, মাইরি মারাত্মক মাল। বিন্সারে রুম খালি ছিল না তাই একটা রুমেই রাত কাটাতে হয়েছে।”
অনুপমা ওই কথা শুনে হতবাক হয়ে প্রশ্ন করে, “মানে? গতকাল রাত্রে এইসব বলিসনি ত?” বলেই ওর চুলের মুঠি ধরে আদর করে মারতে শুরু করে দেয়।
দেবায়ন হেসে পেছনে বসা পায়েলকে বলে, “দ্যাখ দ্যাখ, আমি কিছু করিনি তাই এত মার খেতে হচ্ছে। দেখিস ভাইকে, কোথাও কোন মেয়েকে দেখলে যেন এই ভাবে মারিস না।”
পায়েল চুপচাপ মিচকি হেসে উত্তর দেয়, “অঙ্কন ওইসব করে না।”
অনুপমা পায়েলের গালে আলতো চাঁটি মেরে বলে, “বাপ রে এত বিশ্বাস? সব ছেলে এক বুঝলি, প্যান্টের মধ্যে একটা…..” সামনে ড্রাইভার বসে তাই আর কথাটা শেষ করল না।
অফিসে ঢুকে দেখে ইতিমধ্যে শ্রেয়া এসে গেছে, রূপক খোঁড়াতে খোঁড়াতে একবার ডেভেলপার দিকে একবার অপারেশান টিমের দিকে ব্যাতিব্যাস্ত হয়ে ঘোরাফেরা করছে। সুপর্ণা ম্যাডাম মাথায় হাত দিয়ে বসে, অপারেশান টিমের সবাই রুপকের হুঙ্কারে কাঁপছে। এই অবস্থা দেখে কি ঘটেছে জানার জন্য অনুপমা আর দেবায়ন এগিয়ে যায়।
জিজ্ঞেস করাতে রূপক জানায়, “আরে আমাদের সার্ভার হ্যাক হয়েছে। জারমেনিয়া এয়ারলাইন্সের প্রোজেক্ট আর ডেটা উড়ে গেছে।”
অনুপমা মাথায় হাত দিয়ে বসে পরে। দেবায়ন প্রশ্ন করে, “ব্যাকআপ ছিল না?”
রূপক উত্তর দেয়, “ব্যাক আপ ছিল, রিস্টোর করতে একদিন লাগবে। সেটা চিন্তার কথা নয়, চিন্তার কথা হচ্ছে ফায়ারওয়াল থাকা সত্ত্বেও কি করে হ্যাক হয়।” মাথা চুলকে বলে, “শালা বড় ঘাঘু মাল যে করেছে, চেক রিপাবলিকের আই পি এড্রেস, শালা ধরা মুশকিল।”
শ্রেয়া দাঁতে দাঁত পিষে বলে, “শালা আমি জানি কে করেছে। একবার হাতে পেলে মেরে ফেলবো। এটা নির্ঘাত ইন্দ্রনীলের কাজ।”
অনুপমা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে, “ইন্দ্রনীল? ও তো মার্কেটিংয়ের লোক, এই নেটওয়ার্ক সম্বন্ধে এত সব জানবে কি করে?”
শ্রেয়া মাথা নাড়িয়ে বলে, “না না আমার মন বলছে এটা নির্ঘাত ইন্দ্রনীলের কাজ। ইউরোপে ওর অনেক বন্ধু বান্ধব আছে, তাদের কাউকে দিয়ে অতি সহজে এই কাজ করানো যেতে পারে।”
দেবায়ন রূপককে শান্ত করে বলে, “আচ্ছা ঠিক আছে রে বাবা। একদিন সময় লাগবে তো, ঠিক আছে। তুই ওই রিস্টোর করা শুরু করে দে।”
তারপরে দেবায়ন চলে যায়। অনুপমা আর শ্রেয়া নিজের কাজে ডুবে যায়। একটু পরে অনুপমা, দেবায়নের কেবিনে ঢুকে শ্রেয়ার বিষয় নিয়ে আলোচনা করে। দেবায়নের মত আছে, তবে এখুনি পায়েল কে ডাইরেক্টর পদ থেকে সরালে হয়ত পায়েল আহত হবে তাই কে বলে নিজেদের থেকে পাঁচ পারসেন্ট শেয়ার শ্রেয়াকে দিয়ে দিতে। অনুপমা খুব খুশি হয়ে শ্রেয়াকে কেবিনে ডাকে।
শ্রেয়া কেবিনে ঢুকতেই দেবায়ন ওকে জড়িয়ে ধরে বলে, “উম্মম সুন্দরী কেমন আছিস? সকাল সকাল মাথা গরম?”
শ্রেয়া রাগে গজগজ করতে করতে বলে, “মাদার চোদ ইন্দ্রনীল, হাতের কাছে পেলে ওকে কেটে গঙ্গার জলে ভাসিয়ে দেব।”
অনুপমা হেসে বলে, “আচ্ছা থাক সেই কথা। কিছু আলোচনা করার আছে তোর সাথে একটু বস।”
শ্রেয়া একবার দেবায়নের দিকে তাকায় একবার অনুপমার দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে প্রশ্ন করে, “কি বিষয়ে?”
অনুপমা ওর হাত দুইখানি নিজের হাতের মধ্যে ধরে বলে, “তুই ওই রেজিগনেশানের ব্যাপারে কিছু বললি না তো আর?”
শ্রেয়া ম্লান হেসে উত্তর দেয়, “সেটা তোর ব্যাপার, আমার কাজ কাজ করা সেটাই করে যাচ্ছি আর কিছু চাই না।”
দেবায়ন ওর মাথায় চাঁটি মেরে বলে, “সকাল সকাল গীতা পড়েছিস নাকি রে?”
শ্রেয়া মিচকি হেসে বলে, “নারে গীতা নামে আমাদের কোন বান্ধবী নেই যার শরীর আমি পড়ব।”
অনুপমা ঠোঁট ফুলিয়ে বলে, “এই আমি মজা করছি না কিন্তু। আমরা একটা চিন্তা ভাবনা করেছি।” শ্রেয়ার চোখে হাজার প্রশ্ন, তার উত্তরে অনুপমা ওকে বলে, “আমরা ভেবেছি তোর শেয়ার বাড়িয়ে সতেরো করে দেব।”
শ্রেয়া ভুরু কুঁচকে হাত টেনে প্রশ্ন করে, “হঠাৎ এক লাফে সতেরো, কি ব্যাপার?”
দেবায়ন তার উত্তরে বলে, “না মানে রূপক একবার বলেছিল অনুকে তাই।”
ওই কথা শুনে শ্রেয়া বড় আশ্চর্য হয়ে প্রশ্ন করে, “কি বলেছিল কবে বলেছিল?”
অনুপমা মিচকি হেসে বলে, “ওই জলপাইগুড়িতে রূপক আমাকে বলেছিল বারো পারসেন্ট থেকে বাড়িয়ে দিতে। তাই আমরা ভেবেছি যে পায়েলের শেয়ার তোকে দিয়ে দেব।”
শ্রেয়া একটু আশ্চর্য চকিত হয়ে প্রশ্ন করে, “সত্যি রূপক বলেছিল? আচ্ছা, দেখি ওর সাথে কথা বলে।”
একটু থেমে চিন্তিত কণ্ঠে বলে, “পায়েলের পাঁচ পারসেন্ট আমার কেন? ওকে সরিয়ে দিলে মনঃক্ষুণ্ণ হতে পারে। আর হ্যাঁ, আমি শেয়ার চাই না আর ডাইরেক্টর হতে চাই না। শুধু ডিজাইনার আছি ভালো আছি।”
অনুপমা অভিমানী কণ্ঠে বলে, “এত রাগ আমাদের ওপরে?”
শ্রেয়ার চোখ জোড়া ছলকে ওঠে, “না রে, রাগ অভিমান কিছু নয়, এই এমনি বেশ ভালো আছি। বন্ধুত্বের মধ্যে টাকা পয়সা এসে গেলে সম্পর্কের টান কমে যায়, ওটা পারলে রুপকের নামে করে দিস না হলে থাক।”
দেবায়ন শ্রেয়ার গাল টেনে বলে, “না রুপকের নামে হবে না। তোর ছিল তোর থাকবে। তুই ভেবে নিস তোকে কিছু দেওয়া হয়নি ব্যাস তাহলে আর কোন চিন্তা থাকবে না।”
শ্রেয়া টলটল চোখে অনুপমাকে বলে, “তোরা দুটো না একদম পাগল।”
অনুপমা ওকে জড়িয়ে ধরে বলে, “আর তুইও, পাগলে পাগল চেনে…..”
দেবায়ন দুইজন কে জড়িয়ে ধরে বাক্যটা শেষ করে বলে, “আমি চিনি গুদু…..”
Like Reply
পর্ব ২৭ (#০২)

শেয়ার নিয়ে শ্রেয়া নির্বিকার, টাকার অঙ্ক বাড়ল কি কমল সেটা নিয়ে ওর বিশেষ মাথাব্যাথা নেই। আগের মতন কাজে ডুবে যায় কিন্তু হাতে বেশি টাকা পেয়ে রূপক বেশ খুশি। কে বা কারা ওদের সার্ভার হ্যাক করেছিল সেটা আর ধরা যায় না তবে কাজের বিশেষ ক্ষতি হয়নি, কারন ডেটা আর প্রোগ্রামের ব্যাকআপ ছিল, একদিনের মধ্যে ডেটা রিস্টোর করে কাজ শুরু হয়ে যায়।
কয়েকদিন পরেই ওদের গ্রুপ কোম্পানির অ্যানুয়াল মিটিং, হোটেলের মালিকদের আর ম্যানেজারদের ডাকা হয়েছে, দুটো কন্সট্রাকশান কোম্পানির কর্মচারীদের ডাকা হয়েছে সেই সাথে অনুপমাদের সফটওয়্যার কোম্পানির সবাইকে ডাকা হয়েছে। নিবেদিতা আর অনুপমার ওপরে অ্যানুয়াল মিটের সব ভার তাতেই ওরা দুইজনে খুব ব্যাস্ত। মিস্টার হেরজোগ আর মিস্টার মেরকেল, জারমেনিয়া এয়ারলাইন্স আর এয়ার বার্লিনের আই টি ডিপার্টমেন্টের কর্তারা আসবে বলে জানিয়েছে।
দেবায়ন, মিটের জায়গা ঠিক করার জন্য বাবার সাথে হোটেল র‍্যাডিসন গেছে। ওই হোটেলে বেশ বড় লন আছে, সেই সাথে গঙ্গার ধারে তে বেশ ভালো হবে। অনুপমা চুপচাপ নিজের কেবিনে বসে অ্যানুয়াল মিটের কথা চিন্তা করছিল। কি মেনু হবে, কারা কারা আসছে তাদের ফাইনাল লিস্ট, বাইরে থেকে যারা আসবে তাদের কারুর কারুর জন্য র‍্যাডিসনে রুম বুক করা হয়েছে, কারুর জন্য পার্কে অথবা * স্তান ইন্টারন্যাশনালে। লাঞ্চের সময় হয়ে গেছে সেটা খেয়াল নেই ওর। এমন সময়ে শ্রেয়া আর পায়েল দড়াম করে ওর দরজা খুলে কেবিনে ঢুকে পরে। ওদের ওই ভাবে ঢুকতে দেখ একটু আশ্চর্য হয়ে যায় অনুপমা।
শ্রেয়া সামনের চেয়ার টেনে বলে, “এই তুই কি রে, লাঞ্চের সময় হয়ে গেছে আর এত কি নিয়ে পড়ে আছিস তুই?” পায়েল চুপচাপ শ্রেয়ার পাশে একটা চেয়ার নিয়ে সামনে বসে পড়ে।
অনুপমা হেসে জিজ্ঞেস করে, “কি এনেছিস আজকে?”
শ্রেয়া ওর ল্যাপটপ বন্ধ করে বলে, “দেবু নেই বলে কি খাওয়া দাওয়া ভুলে গেছিস?”
অনুপমা হেসে উত্তর দেয়, “না না সেরকম কিছু নয়। এই অ্যানুয়াল মিটের ব্যাবস্থা করছিলাম। নিবেদিতা ম্যাডামের সাথে এর পরে দেখা করতে যাবো।”
শ্রেয়া ঝাঁঝিয়ে ওঠে, “ওই সব জানিনা, সামনে পুজো, পুজোর বাজারের কি হবে?” পায়েলের দিকে তাকিয়ে বলে, “কিরে, আমি কি সব বলব আর তুই বেশ আম খাবি তাই না?”
পায়েল স্মিত হেসে ওকে বলে, “তুই যে ভাবে আক্রমন করেছিস তাতে আমি আর কি বলব।” তারপরে অনুপমাকে বলে, “রূপক এইবারে ধরেছে ট্রেকিংয়ে যেতে। কি করব?”
উফ, এই রূপক, কয়েকদিন থেকে নেচে বেড়াচ্ছে ট্রেকিংয়ে যাবে। কে কে যাবে এখন সেটাই ঠিক করা হল না, কে না কে ওকে ইমেল করেছে আর সেই নিয়ে খাটলিং গ্লেসিয়ার যাবে তাই নিয়ে জল্পনা কল্পনা শুরু করে দিয়েছে।
শ্রেয়া ওর হাত ধরে টেনে উঠিয়ে বলে, “আজকে আর কোন কাজ নয়, চল পুজোর বাজার করতে বেরিয়ে পড়ি।”
অনুপমা পায়েলের দিকে তাকায়, পায়েল স্মিত হেসে মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দেয় যে পুজোর বাজার করতে যেতে রাজি। অনুপমা জানায় ওকে একবার নিবেদিতার কাছে যেতে হবে কিছু বিষয়ে আলোচনা করার জন্য। পায়েল, শ্রেয়া কেউ নিবেদিতাকে চেনে না তাই ওকে প্রশ্ন করে নিবেদিতার পরিচয়। অনুপমা একটু ভেবে নিবেদিতার পরিচয় দেয়, ওদের কন্সট্রাকশান কোম্পানির কর্ণধার হিসাবে।
তিনজনে রাসেল স্ট্রিটের অফিস থেকে বেড়িয়ে সোজা মিন্টো পার্কে, নিবেদিতার অফিসে চলে যায়। ওদের দেখে নিবেদিতা একটু অবাক হয়ে যায়। কোনোদিন অনুপমা ওদের অফিসে আসেনি আর যখন এসেছে একেবারে সাথে দুই বান্ধবী নিয়ে এসেছে।
নিবেদিতা একটু ব্যাতিব্যাস্ত হয়ে পরে অনুপমাকে দেখে। অনুপমা ওকে ক্ষান্ত করে বলে, “আরে এত হুড়োহুড়ি কেন লাগিয়েছ? সবাই বান্ধবী।” পায়েল আর শ্রেয়ার সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়।
নিবেদিতা হেসে পায়েলকে বলে, “কেমন আছো?”
পায়েল অবাক হয়ে যায়, অনুপমা আলতো মাথা দুলিয়ে ইশারায় জানায় নিবেদিতা ওর সম্পর্কে সব কিছু জানে। তারপরে অনুপমা ওকে জানায় যে ওরা সবাই পুজোর বাজার করতে বের হবে, যদি নিবেদিতা সঙ্গে যায় তাহলে খুব ভালো হয়। সেই শুনে নিবেদিতাও বেশ খুশি হয়ে যায়। অনুপমার মাথায় শুধু মাত্র একটা চিন্তা ঘোরাফেরা করে, সত্যি কি বিন্সারে নিবেদিতা আর দেবায়ন একটা রুমে ছিল?
অদম্য কৌতূহল শেষ পর্যন্ত দমিয়ে রাখতে না পেরে অনুপমা নিবেদিতাকে এক সময়ে কানেকানে প্রশ্ন করে, “বিন্সারে কি হয়েছিল?”
হঠাৎ ওই প্রশ্ন শুনে নিবেদিতা ঘাবড়ে যায়, উত্তর দেয়, “কি হয়েছিল?”
অনুপমা ওর চেহারা দেখে বুঝতে পারে দেবায়ন ওকে ইয়ার্কি মেরে বলেছে, তাও প্রশ্ন করে, “রিসোর্ট কেমন ছিল?”
নিবেদিতা স্মিত হেসে উত্তর দেয়, “হ্যাঁ ঠিকঠাক, তবে অনেক কাজ বাকি। একটা সুইমং পুল, একটা বাচ্চাদের পার্ক, বেশ কিছু এক্সপান্সানের কাজ করতে হবে এই যা। কেন দেবায়ন তোমাকে কিছু বলেনি এই ব্যাপারে?”
অনুপমা মাথা নাড়ায়, “না গো, এই সবে আমার কি কাজ। আজকাল কোথায় কি কি করে আসে আমাকে সব বলে নাকি?”
নিবেদিতা হেসে বলে, “এই রকম বল না, সারাটা সপ্তাহ শুধু তোমার গুণগান করে বেড়িয়েছে।” ওর গাল টিপে বলে, “এক সময়ে আমার কান ঝালাপালা হয়ে গেছিল পুচ্চির কথা শুনে।”
“পুচ্চি” এই ডাক শুধু মাত্র দেবায়ন আর ওর মধ্যে সীমিত। সেই নাম নিবেদিতার ঠোঁটে শুনে বুঝতে পারে, না সারাটা সময় শুধু মাত্র ওর কথাই হয়েছে এদের মাঝে।
মিন্টো পার্কের নিবেদিতার অফিস থেকে চারজনে বেড়িয়ে, গাড়ি নিয়ে সোজা, এস্প্লানেড। আকাশে কালো মেঘ তাও বাঙ্গালীরা পুজোর বাজার করতে বেড়িয়েছে, পুজো বলে কথা, সামান্য কালো মেঘ কি আর তাতে বাধ সাধতে পারে। রাস্তায় তিল ঠাইয়ের জায়গা নেই, চারদিকে লোকে লোকারণ্য। কোন ছেলে সঙ্গে নেই, ভিড় ঠেলে এগুতে একটু অসুবিধে হয়, এত ভিড়ে কেনাকাটা করতে অনুপমা অভ্যস্ত নয়। এতদিন দেবায়ন অথবা মায়ের সাথে বেড়িয়েছে, ওকে আগলে রাখার জন্য পাশে দেবায়ন থাকত এইবারে নেই। ভিড় ঠেলে এগোতে এগোতে এমন সময়ে ওর মামনি, দেবশ্রীর ফোন আসে।
দেবশ্রী ফোন করে বলে, “হ্যাঁ রে তুই কোথায়?”
অনুপমা উত্তর দেয়, “এই শ্রেয়া আর পায়েলকে নিয়ে একটু শপিং করতে বেড়িয়েছি। কি হয়েছে বল না?”
দেবশ্রী একটু থেমে ওকে প্রশ্ন করে, “দেবু কখন বাড়ি ফিরবে কিছু বলে গেছে কি?”
অনুপমা জানে দেবায়নের ফিরতে রাত হবে, রেডিসন থেকে সোজা আবার ব্যান্ডেল যাবে বাবার সাথে তারপরে ফিরবে। তাই দেবশ্রীকে উত্তর দেয়, “ওর ফিরতে রাত হবে কেন কিছু কাজ আছে নাকি?”
দেবশ্রীর একটু চিন্তিত কণ্ঠে ওকে বলে, “এখুনি একটু বাড়িতে আসতে পারবি? একটু কথা ছিল।”
বন্ধুদের নিয়ে শপিং করতে বেড়িয়েছে এরমাঝে মামনির ফোন। মামনির গলা শুনে মনে হল একটু চিন্তিত তাই পাল্টা প্রশ্ন করে, “কি হয়েছে তোমার?”
দেবশ্রী উত্তর দেয়, “তেমন কিছু না। মণির ছেলে হয়েছে…..”
সেই খবর শুনে অনুপমা আনন্দিত হয়ে বলে, “এত ভালো খবর কিন্তু তোমাকে কে খবর দিল?”
দেবশ্রী একটু থেমে ওকে বলে, “না রে ওরা এখানে মানে….. তুই একটু বাড়িতে আসতে পারবি, জরুরি দরকার আছে।”
সূর্য মনিদিপা কোলকাতায় শুনে অনুপমা আশ্চর্য হয়ে যায়। ওদের জলপাইগুড়ি থাকার কথা, সেই মতন দেবায়নকে রাজি করিয়ে ওদের ছয় লাখ টাকা দিয়ে এসেছিল দোকান করার জন্য। মনিদিপা ছেলে হয়েছে সেটা সুখবর বটে কিন্তু ওদের বারবার করে বলে এসেছিল যাতে ওরা কোনোদিন মামনির সাথে সম্পর্ক করার চেষ্টা না করে তা স্বত্তেও ওরা ফোন করেছে? ভাবতেই রাগে অনুপমার গা জ্বলে ওঠে।
অনুপমা মামনিকে প্রশ্ন করে, “কোথায় আছে ওরা, কি কথা হয়েছে ওদের সাথে?”
দেবশ্রী ওর কণ্ঠস্বর শুনে একটু ঘাবড়ে গিয়ে বলে, “তুই প্লিস দেবুকে কিছু বলিস না পারলে একটু তাড়াতাড়ি মানে দেবু বাড়ি ফিরে আসার আগে আমার এখানে আয়।”
তীক্ষ্ণ বুদ্ধিমতী অনুপমার বুঝতে দেরি হয় না যে মনিদিপা আর সূর্য সোজা মামনির বাড়িতে এসেছে। শ্রেয়া আর পায়েলকে বলে অফিসে চলে যেতে আর নিবেদিতার কাছে ক্ষমা চেয়ে নেয়। বলে একটা জরুরি কাজে ওকে এখুনি বের হতে হবে। শ্রেয়া বারেবারে জিজ্ঞেস করলেও উত্তর দেয় না। নিবেদিতা বাকিদের নিয়ে বেড়িয়ে পরে অফিসে দিকে আর অনুপমা একটা ট্যাক্সি ধরে সোজা লেক টাউনে দেবায়নের বাড়ি পৌঁছে যায়।
দেবশ্রী ওর জন্য বসার ঘরে অপেক্ষা করছিল। বাড়িতে ঢুকেই মনিদিপা আর সূর্যকে দেখে আশ্চর্যের সাথে সাথে রেগে ওঠে। দেবশ্রী অনুপমার চেহারা দেখে বুঝতে পারে যে অনুপমা রেগে গেছে ওদের দেখে, কিন্তু নিরুপায়।
অনুপমা কঠিন কণ্ঠে সূর্য আর মনিদিপাকে প্রশ্ন করে, “কি মনে করে একেবারে এই বাড়িতে আসা হয়েছে?”
সূর্য এক কোনায় দাঁড়িয়ে, মনিদিপা ছোট ছেলে কোলে ওকে বলে, “প্লিস খুব বিপদে পরে বৌদির স্মরনে এসেছি। আমি জানতাম তুমি রেগে যাবে কিন্তু আমরা বড় নিরুপায়।”
অনুপমা হিমশীতল কণ্ঠে প্রশ্ন করে, “কেন নিরুপায়? তোমাকে ছয় লাখ টাকা দিয়ে এসেছিলাম দোকান দিতে। চুপচাপ ওইখানে ব্যাবসা করতে পারতে। আবার আমাদের জীবনে কোন ব্যাঘাত ঘটাতে এসেছ? আর এসেছ যখন তখন এই বাড়িতে কেন?” সূর্যের দিকে আঙ্গুল তুলে বলে, “তোমার মনে নেই কি বলেছিলাম?”
ওর কঠিন কণ্ঠস্বর শুনে দেবশ্রী ওকে শান্ত করে বলে, “যা হবার হয়ে গেছে, এইবেলা ওদের ক্ষমা করে দে, মা।”
অনুপমা অবাক হয়ে মামনিকে বলে, “তুমি কি মানুষ মামনি? যা হবার হয়ে গেছে আর আমরা ভুলে যাবো?”
দেবশ্রী মাথা নিচু করে বসে থাকে সেই সাথে সূর্য আর মনিদিপার মাথা নিচু হয়ে যায়। অনুপমা ওদের কোলকাতা আসার কারন জিজ্ঞেস করে।
উত্তরে সূর্যের বদলে মনিদিপা বলে, “কিছুটা আমাদের ভুল আর আমাদের কপাল। তুমি যে ছয় লাখ টাকা দিয়েছিলে তার মধ্যে তিন লাখ দিয়ে একটা ছোট দোকান খুলেছিল সূর্য আর বাকি তিন লাখ একটা চিটফান্ডে দিয়েছিল। সেই চিট ফান্ড টাকা খেয়ে পালিয়ে গেছে। দোকানের অনেক কিছু বাকি পড়ে যায়, দোকান কয়েক মাস পরে উঠে যায়। আবার আমরা সেই পথে বসে যাই।”
অনুপমার চোয়াল শক্ত হয়ে যায়, কঠিন কণ্ঠে মনিদিপাকে বলে, “সেটা তোমাদের আগে ভাবা উচিত ছিল মনিদিপা। বারেবারে তোমাদের টাকা আমি দিতে পারব না। সেবারে অনেক কষ্টে দেবায়নকে রাজি করিয়ে টাকা দিয়েছিলাম কিন্তু আর নয়।” কিছুক্ষণ থেমে বলে, “এখন কোথায় উঠেছ?”
মনিদিপা মাথা নাড়িয়ে বলে, “সোজা জলপাইগুড়ি থেকে এইখানে এসেছি আর কোথায় যাবো বল?”
অনুপমা আহত সাপের মতন ফোঁস করে ওঠে, “কেন, তোমাদের অসুবিধে আমাকে ফোন করতে পারোনি?”
আহত সূর্য মিনমিন করে বলে, “না মানে, ভাবলাম তুমি সেই বারে টাকা দিয়েছ এইবারে যদি বৌদি…..”
মামনি সামনে বসে আছে সেটা অনুপমা ভুলে যায়, প্রচন্ড রাগে চেঁচিয়ে বলে, “মামনি কি করবে? দেবায়ন আসার আগে তোমাদের এই বাড়ি থেকে চলে যেতে হবে।”
সূর্য কাতর কণ্ঠে বলে, “কোথায় যাবো? এইখানে আর কে আছে আমাদের?”
অনুপমা মাথা ঝাঁকিয়ে বলে, “এতদিন এই কোলকাতায় ছিলে কোন চেনাজানা কারুর বাড়িতে থাকো কিন্তু আর এক পয়সা তোমরা পাবে না।”
অগ্নিশর্মা অনুপমাকে শান্ত করে দেবশ্রী বলে, “তুই একটু শান্ত হয়ে দেখ কি করা যেতে পারে। এই ছোট বাচ্চা নিয়ে ওরা কোথায় যাবে?”
তখনি কোলের ছোট বাচ্চাটা কেঁদে ওঠে, সেই কান্না শুনে অনুপমার মন কিছুটা গলে যায়। মনিদিপা আর সূর্যকে বলে, “তোমাদের মাথা গোঁজার জায়গা আছে কি?”
সূর্য মাথা দুলিয়ে জানায় আছে।
অনুপমা ওদের বলে, “আচ্ছা তাহলে সেইখানে থাকো। কয়েকদিনের মধ্যে আমি দেখি কি করতে পারি।”
অনুপমা মনিদিপার কোল থেকে ছোট ছেলেটাকে কোলে নিয়ে দেখে, বেশ টাবুটুবু গোলগাল মিষ্টি দেখতে বাচ্চাটা। ছোট্ট নরম হাত বাড়িয়ে অনুপমার গাল ছুঁয়ে দেয়। অনুপমা শেষ পর্যন্ত রাগ ভুলে ছেলেটাকে কোলে নিয়ে হেসে ফেলে। আলতো মাথা নাড়িয়ে স্মিত হেসে বলে, “এই তোর জন্য বুঝলি রে শয়তান ছেলে…..”
বিনামেঘে বজ্রাপাতের মতন বাড়ির সামনে অনুপমার বাবার গাড়ি এসে দাঁড়ায়। ওই গাড়ি থেকে দেবায়ন কে নামতে দেখে বাড়ির মধ্যে সবার গা হাত পা ঠাণ্ডা হয়ে যায়। অনুপমা আর দেবশ্রী মুখ চাওয়াচায়ি করে, কিছু করে হোক দেবায়নকে সরাতে হবে। যদি দেবায়ন ওদের বাড়িতে সূর্য আর মনিদিপাকে দেখে ফেলে তাহলে মাথায় রক্ত চড়ে যাবে। সঙ্গে সঙ্গে অনুপমার মাথায় বুদ্ধি খেলে যায়, নিজের ব্যাগ উঠিয়ে মামনির গালে ছোট্ট চুমু খেয়ে বেড়িয়ে যায়।
দেবায়ন বাড়িতে ঢোকার আগেই সামনের দরজা খুলে এক গাল হেসে ওকে বলে, “তুই এত তাড়াতাড়ি ফিরে এলি? র‍্যাডিসন ফোরটে কি হল?”
ওদের বাড়িতে এই বিকেলে অনুপমাকে দেখে দেবায়ন আশ্চর্য হয় না, কেননা ওর জন্য এই বাড়ির দরজা সবসময়ে খোলা। তাও স্মিত হেসে জিজ্ঞেস করে, “মা কখন বাড়িতে ফিরেছে?”
অনুপমা ওকে বাইরেই দাঁড় করিয়ে রেখে বলে, “আরে না আমার একটু কাজ ছিল তাই এসেছিলাম।” ওর হাত নিজের হাতের মধ্যে নিয়ে বলে, “তুই প্লিস আমার সাথে একটু পুজোর শপিং করতে যাবি?”
দেবায়ন অবাক হয়ে ওকে বলে, “সেই রায়চক থেকে এসেছি একটু বাড়িতে বসতে দে তারপরে না হয় যাবো।”
অনুপমা কাতর কণ্ঠে আবদার করে, “প্লিস প্লিস, ওই দেখ গাড়ি দাঁড়িয়ে আছ চল না একটু।”
সুন্দরী প্রেয়সীর কাতর কণ্ঠের ডাক উপেক্ষা করার যো ওর নেই তাই অগত্যা আবার গাড়িতে উঠে অনুপমার সাথে শপিং করতে বের হতে হয় ওকে। গাড়িতে উঠেই দেবায়নের চোখ বাঁচিয়ে দেবশ্রীকে একটা এস এম এস করে জানিয়ে দেয় সূর্য আর মনিদিপাকে বাড়ি থেকে সরিয়ে দিতে আর রাতে ফোন করে এই বিষয়ে কথাবার্তা বলবে। ঘুণাক্ষরে যদি দেবায়ন এই বিষয়ে টের পায় তাহলে আর রক্ষে নেই।
সেদিনের মতন সূর্য আর মনিদিপাকে দেবায়নের হাত থেকে বাঁচাতে সক্ষম হয় অনুপমা। সেদিন শপিং করতে বিশেষ মন ছিল না ওর, মাথায় শুধু ঘুরছিল সূর্য আর মনিদিপাকে কি করে ওর চোখ বাঁচিয়ে সাহায্য করা যায়। ব্যাঙ্কে ওদের জয়েন্ট একাউন্ট, এতগুলো টাকা তুললে অতি সহজে দেবায়নের কাছে ধরা পড়ে যাবে, যদিও দেবায়ন কোনোদিন প্রশ্ন করে না ব্যাঙ্কের খাতা কোনোদিন নিজে খুলে দেখেও না। টাকার দরকার পড়লে ওর পার্স হাতড়ায় না হলে ওর কাছেই হাত পাতে। কিন্তু তাই বলে এত গুলো টাকা দেবায়নকে না বলে দেবে, সেটা মন মেনে নিতে পারে না। সূর্য আর মনিদিপা যখন আবার কোলকাতা ফিরে সোজা দেবায়নের বাড়িতে এসছে, নিশ্চয় কিছু কুমতলবে এসেছে। যদি সত্যি ওদের টাকার প্রয়োজন হত অথবা বিপদে পড়ত তাহলে হয়ত একবারের জন্য ওকে ফোন করত কিন্তু সেটা করেনি। কত টাকা চায় ওরা, কত টাকা দিলে সূর্য আর মনিদিপা চুপ থাকবে? একবার মনিদিপার শারীরিক অবস্থা দেখে বিগলিত হয়ে টাকা দিয়েছিল, এইবারে আবার কোলে ছোট ছেলে নিয়ে এসেছে। ফেলে দিতে চাইলেও ফেলে দেওয়া যায় না কিছুতেই। অন্তত ওর হৃদয় অতটা পাথর হয়ে যায়নি এখন। শত ভাবনা মাথায় ভর করে। দেবশ্রীও এই বিষয়ে দেবায়নকে কিছু জানায় না।
কয়েকদিন পরে সূর্যের দেওয়া ঠিকানায় অনুপমা একা গিয়ে ওদের সাথে দেখা করে।
 
Like Reply
পর্ব ২৭ (#০৩)

কয়েকদিন পরে সূর্যের দেওয়া ঠিকানায় অনুপমা একা গিয়ে ওদের সাথে দেখা করে। জলপাইগুড়ির থেকে সর্বস্বান্ত হয়ে কোলকাতায় ফিরে মনিদিপা আর সূর্য একটা ছোট ঘর ভাড়া নিয়ে থাকা শুরু করেছে। কথায় কথায় অনুপমা জানতে পারে, সূর্য ওর দেওয়া টাকা একটা চিটফান্ডে ঢুকিয়েছিল, ওর সাথে আরো অনেকে টাকা দিয়েছিল সবাই টাকা হারিয়ে এক রকম পথে বসে গেছে। অনুপমা ওদের বলে যদি এতই ওদের টাকার দরকার ছিল তাহলে ওকে বলতে পারত, কিন্তু ভুয়ো চিটফান্ডে টাকা কেন দিতে গেল। নিরুত্তর সূর্য আর মনিদিপা। অনুপমা ভেবে পায় না কি ভাবে কোথা থেকে টাকা যোগাড় করবে।
ওর কাছে দশ হাজার টাকা ছিল সেইগুলো মনিদিপার হাতে তুলে দিয়ে বলে, “এই টাকা এখন রাখো, পরে দেখছি কি করতে পারি।”
মনিদিপা ওর হাত ধরে কাতর কণ্ঠে বলে, “সত্যি বলছি আমরা এইখানে কোন বদমতলবে আসিনি। ভেবেছিলাম গতবার তোমার কাছে হাত পেতেছি এইবারে যদি বৌদি ক্ষমা করে দিয়ে থাকে তাহলে হয়ত বৌদি আমাদের সাহায্য করবে।”
অনুপমা কঠিন কণ্ঠে উত্তর দেয়, “মামনির কাছে যাওয়াটা তোমাদের বড় ভুল হয়ে গেছে। দেবায়নের বাড়ি যাওয়া তোমাদের মোটেও উচিত হয়নি। তোমাদের কোলকাতায় থাকা মোটেও চলবে না, জলপাইগুড়ি ফিরে যাও। কারন একবার যদি দেবায়ন এই সব জানতে পারে তাহলে কিন্তু তোমাদের নিস্তার নেই। এই শেষ বারের মতন আমি টাকা দেব আর নয় এর পরে কিন্তু তোমাকে কথা দিতে হবে যে আর মামনির ধারে কাছে আসবে না। যদি আস তাহলে আমি নিজে দেবায়নকে সব বলে দেব আর তোমাদের ওই…..”
মনিদিপা আঁতকে ওঠে, “জলপাইগুড়ি ফিরে যাওয়ার মতন অবস্থা নেই আমাদের। ওইখানে ফিরে গেলে সূর্যকে কেউ ছেড়ে দেবে না। ওকে ধরে মেরে ফেলবে। না না এই শেষ বারের মতন আর আমরা তোমাদের ধারে কাছে আসব না।”
অনুপমা প্রশ্ন করে, “কি করেছে সূর্য? কারা ওকে মেরে ফেলবে?”
মনিদিপা মাথা নিচু করে বলে, “সূর্যের সাথে সাথে অনেকের টাকা ওই চিটফান্ডে লেগেছে। সূর্য দোকানের সাথে সাথে ওই চিটফান্ডের এজেন্ট ছিল। যাদের টাকা গেছে তারা হন্যে হয়ে সূর্যকে খুঁজছে। সবার ধারনা সূর্য এই সব জানত। সেই জন্য আমরা একরাতের মধ্যে জলপাইগুড়ি ছেড়ে পালিয়ে এসেছি।”
বড় ভাবনায় পড়ে যায় অনুপমা। এমন সময়ে মনিদিপার ছোট ছেলেটা শিশু কণ্ঠে কিছু একটা আওয়াজ করে ওঠে। মনিদিপার ছোট ছেলেকে দেখে অনুপমার মন গলে যায়, ওকে কোলে নিয়ে মনিদিপাকে জিজ্ঞেস করে, “কি নাম রেখেছ?”
মনিদিপা স্মিত হেসে উত্তর দেয়, “শুভায়ন বোস।”
মিচকি হাসে অনুপমা, বাচ্চাটাকে বুকের কাছে জড়িয়ে ধরে বলে, “দেখিস তোর দাদার মতন হস নে যেন।”
ওর কথা শুনে অনুপমার সাথে সাথে মনিদিপাও হেসে ফেলে। তারপরে ওর হাত ধরে কাতর প্রার্থনা জানিয়ে বলে, “প্লিস কিছু একটা কর। আমি কথা দিচ্ছি এরপরে এমন ভুল আর হবে না।”
কিছুদিন পরে অনুপমা, নিবেদিতার কাছ থেকে কোন এক অছিলায় টাকা চেয়ে প্রায় তিন লক্ষ টাকার মতন সূর্যকে দেয়। অনুপমার টাকা চাওয়াটা নিবেদিতার মনে একটু খটকা লাগে, কোটিপতির মেয়ে, নিজের এত বড় কোম্পানি, দেবায়ন ঘুরে ঘুরে এত টাকা কামায় তাও কেন অনুপমা ওর কাছে হাত পাতল?
জিজ্ঞেস করাতে শেষ পর্যন্ত নিবেদিতাকে গল্প বানিয়ে বলে অনুপমা, “কিছু না গো, আমার এক বন্ধু খুব বিপদে পড়েছে। ওই বন্ধুর ব্যাপারে দেবায়ন কিছুই জানে না তাই তোমার কাছ থেকে চাইলাম। আসলে কি জানো, বাড়িতে কারুর কাছে হাত পাতলে সবাই দেবায়নকে বলে দেবে।”
নিবেদিতা ইয়ার্কি মেরে ওকে জিজ্ঞেস করে, “হঠাৎ এমন কোন বন্ধু তোমার যে শেষ পর্যন্ত দেবায়নকে লুকিয়ে টাকা দিতে হচ্ছে?”
ওর অর্থ অনুপমা কি দেবায়ন ছাড়া অন্য কারুর সাথে প্রেম করে?
অনুপমা মিচকি হেসে মাথা নাড়িয়ে বলে, “তুমি যা ভাবছ সেই রকম কিছুই নয়। তবে প্লিস দেবায়নকে এই সব যেন বল না তাহলে খুব বিপদে পড়ে যাবো।”
নিবেদিতা ওর হাত ধরে অভয় দিয়ে বলে, “আমার যা কিছু তা সব তোমার আর কথা দিলাম দেবায়ন এর সম্বন্ধে কিছুই জানবে না।”
এনুয়াল মিটের দিন কাছে চলে আসে। অনুপমার সব বন্ধুদের আমন্ত্রন জানানো হয়। দেবায়ন আর সোমেশবাবু, শান্তনু আর একজন এডমিনের লোক নিয়ে সকালেই রেডিসন ফোরটে পৌঁছে গেছে। এনুয়াল মিটের জন্য অনুপমা একটা দামী ডি.এন.কে.ওয়াই কালো রঙের ব্যাকলেস ইভিং গাউন পরে। পারমিতা যথারীতি শাড়ি পরে সেই সাথে পায়েলকেও শাড়ি পড়তে হয়। ওরা অঙ্কনকে নিয়ে বিকেলের মধ্যেই রায়চকের দিকে রওনা দেয়। যাবার আগে অনুপমা বারেবারে মাকে সাবধান করে দিয়ে বলে যেন মিটে বেশি মদ না খায়, মনের মধ্যে বহু পুরানো ভয়টা আবার মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে। পারমিতা একপ্রকার মদ খাওয়ায় ছেড়ে দিয়েছে, শুধু বাড়িতে সোমেশের সাথে মাঝে মাঝে সাঝে একটু আধটু প্রেম করার সময় খায়। মাথা নাড়িয়ে বাধ্য মেয়ের মতন জানিয়ে দেয় যে মদ খাবে না একদম।
অনুপমা জানিয়ে দেয়, মামনিকে সঙ্গে নিয়ে ও ঠিক সময়ে রেডিসন ফোর্টে পৌঁছে যাবে। গাড়ি নিয়ে লেকটাউন পৌঁছে দেখে দেবশ্রী তখন তৈরি হয়নি।
মামনিকে এক ধ্যাতানি দিয়ে বলে, “কি হল যাবে না, তাড়াতাড়ি তৈরি হও।”
দেবশ্রী মিষ্টি হেসে উত্তর দেয়, “তোদের অফিসের অ্যানুয়াল পার্টিতে আমি গিয়ে কি করব বল? ওইখানে সব অফিসের লোকজন থাকবে। আমি বুড়ি মানুষ, বড় বেমানান লাগবে। প্লিস সোনা কিছু মনে করিস না।”
ছোটবেলা থেকে মায়ের ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত। ভাই আর বোন একে ওপরের পরিপূরক হয়েই বড় হয়েছে। মা’কে পেয়েছে দেবায়নের সাথে প্রেম করার পরে। তবে পারমিতা যে ছেলে মেয়েদের ভালবাসত না সেটা কখনই নয়। মায়ের ভালোবাসা অনেকটা মামনি ওকে দিয়েছে।
অনুপমা নাছোড়বান্দা, দেবশ্রীকে জড়িয়ে ধরে বলে, “তুমি বুড়ি কে বলেছে, মামনি? অ্যানুয়াল মিট হয়েছে ত কি হয়েছে। তোমার জন্য এই অ্যানুয়াল মিট, তোমার আশীর্বাদ ছাড়া কি আর আমরা এতটা পথ পাড় করে আসতে পারতাম? কখনই না।” আদুরে কণ্ঠে বলে, “মামনি তুমি না গেলে কিন্তু আমিও যাবো না। প্লিস মামনি তোমাকে যেতেই হবে।”
শেষ পর্যন্ত মেয়েটার জোরাজুরিতে দেবশ্রী তৈরি হয়ে নেয়। পথে যেতে যেতে সঙ্গীতা আর প্রবালকে সঙ্গে নিয়ে নেয়। শ্রেয়া আর রূপক, বাকিদের নিয়ে পৌঁছে যাবে। অনেকদিন পরে সঙ্গীতার সাথে দেখা হওয়াতে বেশ গল্পে মেতে ওঠে। প্রায় ঘন্টা খানেক বাদে, সন্ধ্যে নাগাদ ওদের গাড়ি রায়চকে পৌঁছে যায়।
এর মাঝে নিবেদিতা বারেবারে ফোন করে জানতে চায়, উদ্যক্তার দেরি হলে কি করে হবে। সত্যি কথা, অনুপমা আর নিবেদিতা এই মিটের উদ্যক্তা আর নিজের দেরি হয়ে গেল। ফোনে ক্ষমা চেয়ে নেয় নিবেদিতার কাছে। সেদিনের পরে দেবায়নকে আর ওদের বন্ধুত্তের মাঝে মধ্যস্ততা করতে হয়নি, আপনা থেকেই কেমন যেন নিজের মতন করে মিশে গেছে অনুপমা আর নিবেদিতা।
নিবেদিতাকে বেশ কয়েকবার নিজের বাড়িতে ডেকেছিল অনুপমা কিন্তু কাজের আছিলায় অতি সুকৌশলে আমন্ত্রন এড়িয়ে গেছে। ওদের দেখা সাক্ষাৎ সবসময়ে বাড়ির বাইরেই হয়েছে, এক নয় অফিসে না হয় কোন রেস্টুরেন্টে অথবা নিবেদিতার বাড়িতে।
গাড়ি থেকে নামতেই নিবেদিতার মুখোমুখি। মেয়েরা সব রূপের ডালি সাজিয়ে এসেছে এই মিটে। নিবেদিতার পরনে একটা গাড় নীল রঙের পাতলা শাড়ি, হাতকাটা ব্লাউজ যার পিঠের দিক অনেকটা উন্মুক্ত। অতীব সুন্দরী লাস্যময়ী নিবেদিতাকে দেখে একটু হাসে অনুপমা।
ওকে দেখেই কপট ঝাঁঝিয়ে ওঠে নিবেদিতা, “দেখো মেয়ের কান্ড, এত দেরি করলে হয়? সবাই প্রায় এসে গেছে আর আসল লোকের দেখা নেই। এইদিকে আবার আকাশের অবস্থা খারাপ। মিটিং লনে হবে না ব্যাঙ্কোয়েট করা হবে?”
অনুপমাদের নামতে দেখে দেবায়ন এগিয়ে আসে ওদের দিকে। মাকে দেখতে পেয়ে বেশ খুশি। দেবশ্রী ছেলেকে হেসে বলে, “তুই তো আর দেখিস না আমাকে, তাই এই মেয়েটার সাহায্য নিতে হয়।”
দেবায়ন মাথা চুলকিয়ে উত্তর দেয়, “আমি আর ও আলাদা কোথায় হলাম মা?”
অনুপমা একটু লজ্জা লাগে সেই কথা শুনে তাই বলে, “তুই চুপ কর তো, আলাদা অনেক আলাদা। এই যেমন তুই মামনিকে দেখিস না আমি দেখি। তুই কোলকাতা থাকিস না আমি থাকি।”
নিবেদিতার সাথে মামনির পরিচয় করিয়ে বলে, “মিস নিবেদিতা চৌধুরী, বাবার কন্সট্রাকশান কোম্পানির…..” নিবেদিতা করজোড় করে দেবশ্রীর সাথে কুশল বিনিময় করে।
কথাটা টেনে বাকিটা দেবায়ন পরিচয় দেয়, “নিবেদিতা ম্যাডাম আমাদের ভালো বান্ধবীন বলতে পারো এই পরিবারের একজন।”
নিবেদিতার চেহারা হঠাৎ করে ফ্যাকাসে হয়ে যায়, দেবায়ন স্মিত হেসে মাথা নাড়ায় নিবেদিতাকে দেখে। অনুপমা বিষয়টা লক্ষ্য করে। সত্যিই পরিবারের মতন নিবেদিতা, কারন অনেক দিন ধরেই বাবার সাথে নিবেদিতার ব্যাবসায়িক সম্পর্ক, যদিও বাড়িতে যাতায়াত নেই।
অনুপমাও হেসে বলে, “হ্যাঁ মামনি, নিবেদিতা ম্যাডাম আমাদের খুব ভালো বান্ধবী।”
দেবশ্রীকে দেখে মনীষা এগিয়ে এসে কুশল বিনিময় করে। অনেকদিন পরে শান্তনু আর মনীষার সাথে দেবশ্রীর দেখা হয়। ওদের দেখে পারমিতা এগিয়ে আসে, কিন্তু পাশে নিবেদিতাকে দেখে একটু দুরেই দাঁড়িয়ে পরে। দেবশ্রীর সাথে চোখাচুখি হওয়াতে দেবশ্রী ওর কাছে চলে যায়। মেয়েরা যারাই শাড়ি পরে এসেছে তাদের শাড়ির ভাঁজে ভাঁজে শরীরের অঙ্গ প্রত্যঙ্গের ছটা বিচ্ছুরিত হচ্ছে। একমাত্র দেবশ্রী ছাড়া বাকিদের শাড়ি যেন সুন্দরী লাস্যময়ীদের দেহ অনাবৃত করে দেখাতে প্রস্তুত। পারমিতার পরনে একটা কালো ফিনফিনে শাড়ি, গভীর বক্ষবিদলনের বেশ কিছুটা উন্মুক্ত। আঁচলে যদিও ঊর্ধ্বাঙ্গ ঢাকা তবে পাতলা আঁচলের নীচে কিছুই যেন আর ঢেকে নেই। সেই এক অবস্থা নিবেদিতার। পিঠের দিকটা অনেক কাটা, মনে হয় অন্তর্বাস পরেনি এমন মনে হচ্ছে দেখে।
পারমিতাকে দেখে দেবশ্রী হেসে বলে, “মেয়ে যত বড় হচ্ছে তত যেন তোমার বয়স কমছে।”
পারমিতা দেবশ্রীর হাত চেপে হেসে বলে, “কি যে বলেন না দিদি। আসুন বাকি সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দেই।” বলে দেবশ্রীকে নিয়ে অন্যদিকে হাঁটা দেয়।
নিবেদিতা দেবায়নকে একপাশে টেনে জিজ্ঞেস করে, “তুমি অনন্যাকে ফোন করেছিলে?”
অনন্যা আসবে সেটা অনুপমা জানত না তাই অবাক হয়ে ওদের প্রশ্ন করে, “অনন্যাদি আসছে নাকি? কই গেস্ট লিস্টে নাম নেই তো।”
নিবেদিতা মিচকি হেসে ওকে উত্তর দেয়, “না না আছে, ফাইনাল গেস্ট লিস্টে ওর নাম আছে।”
দেবায়ন মাথা দুলিয়ে জানিয়ে দেয় অনন্যাকে ফোন করে এমনকি ওকে কার্ড পাঠিয়ে আমন্ত্রন জানানো হয়েছে। ওর হয়তো শুটিং সেরে আসতে একটু দেরি হবে কিন্তু যখন কথা দিয়েছে তখন নিশ্চয় আসবে। সেই সাথে চোখের ইশারায় নিবেদিতার সাথে দেবায়নের কিছু কথা হয়ে যায় যেটা অনুপমার বোধগম্য হয়না।
নিবেদিতা চলে যাওয়ার পরে অনুপমা ওর বাজু আঁকড়ে ধরে জিজ্ঞেস করে, “আমাকে কেমন লাগছে বললি না তো?”
দেবায়ন ওর কাঁধের ওপরে হাত রেখে কাছে টেনে বলে, “তুই পোশাকেও সুন্দরী আর বিনা পোশাকেও সুন্দরী।” বলেই ওর কপালে একটা চুমু খেয়ে নেয়।
সর্ব সমক্ষে এইভাবে জড়িয়ে ধরে চুমু খেতেই অনুপমা একটু লজ্জা পেয়ে যায়। ওইদিকে ওদের বন্ধু বান্ধবীরা সবাই এসে গেছে। শ্রেয়া, পায়েল, ঋতুপর্ণা, সঙ্গীতা সেই সাথে তাদের সাথীরাও। কিন্তু বেশিক্ষণ ওদের সাথে গল্প করতে পারে না অনুপমা আর দেবায়ন। ওদের ডাক সব দিকে, এক এক করে সবার সাথে ঘুরে ফিরে একটু কথা বলতে হয়।
একদিকে নাচের জায়গা, সেটা এখন খালি। একদিকে লম্বা টেবিলে বুফে খাবারের ব্যাবস্থা, একদিকে মদের বার আর স্টার্টারের ব্যাবস্থা।
এমন সময়ে ওর বাবা ওদের কাছে এসে দেবায়নকে ডেকে বলে, “কি হল দেবায়ন, এইবারে মিটের বক্তৃতাটা দাও। এটা কোম্পানির আমাদের প্রথম মিট, সুতরাং তোমার হাত দিয়েই শুরু হোক।”
দেবায়ন মাথা নাড়িয়ে মৃদু হেসে বলে, “না কাকু আমার হাত দিয়ে নয়, এটা অনুপমার হাত দিয়ে শুরু করা হোক।”
অনুপমার সাথে সাথে সোমেশ বাবু অবাক হয়ে যায়। অনুপমা মুখ চেপে আঁতকে উঠে জিজ্ঞেস করে, “হ্যাঁ আমাকে বলির পাঁঠা পেয়েছিস তাই না? প্লিস সোনা আমি যাবো না।”
দেবায়ন ওর হাত দুটো ধরে অভয় প্রদান করে বলে, “মনে রাখিস একটা কথা, তুই কারুর চেয়ে কোন অংশে কম নস। তুই এগিয়ে যা আমি তোর পেছনে আছি। আর মনে রাখিস, এই যে চারপাশে যা দেখছিস সেই সবের পেছনে দুই মহিলার অসামান্য অবদান আছে।” অনুপমা চোখের ইঙ্গিতে প্রশ্ন করে, “কে?”
উত্তরে দেবায়ন ওর কানে কানে বলে, “মিমি আর নিবেদিতা।” অবাক চোখে অনুপমা ওর দিকে তাকিয়ে থাকে।
দেবায়ন ধীরে ধীরে ওর হাত ছাড়িয়ে নিয়ে মঞ্চের দিকে যেতে বলে। ধীর পায়ে মঞ্চের দিকে হাঁটতে হাঁটতে অনুপমা একবার জনারন্যের দিকে তাকিয়ে দেখে। প্রায় দুশোর মতন লোক ওর দিকে উন্মুখ হয়ে তাকিয়ে। কোলকাতার বেশ কয়েক নামী ব্যাক্তি এসেছেন, দুটো কন্সট্রাকশান কোম্পানির কর্মচারীরা এসেছে, ওদের সফটওয়্যার কোম্পানির সবাই এসেছে, বাইরে থেকে হোটেলের মালিক আর হোটেলের ম্যানেজারেরা এসেছে, বিদেশ থেকে লোকজন এসেছে। এত লোকের সামনে দাঁড়িয়ে হটাত করে অনুপমার বড় একা মনে হয়। কিন্তু ওর পেছনে দাঁড়িয়ে, ঋজু দেহের লম্বা চওড়া ছেলেটা, যার বাহুপাশে চোখ বুজলে ঘুম পায়, যার বুকে মাথা রাখলে নিরাপত্তার আভাস পাওয়া যায়, তার ছোঁয়ায় এক জাদু আছে। ওকে দেখে স্মিত হেসে মাথা দোলায় দেবায়ন। ওর ওই হাসি দেখে অনুপমা বুকে বল পায়। কিন্তু দেবায়ন ওর কানে কানে কি বলতে চাইল? মঞ্চে উঠতেই একজন ওর দিকে মাইক এগিয়ে দেয়। না এতটা কোনোদিন আশা করেনি অনুপমা। হ্যাঁ, দেবায়নের সাথে দেখা হওয়ার আগে ভেবেছিল ওর জীবন খুব সাধারন হবে, পড়াশুনা শেষে একটা বড় লোকের বাড়িতে বিয়ে হবে, হয়ত চাকরি করবে কি করবে না সেটা জানা নেই, অনিশ্চয়তা ওর জীবনের একটা বড় অঙ্গ হতে পারত। মাইক হাতে নিয়ে একবার মায়ের দিকে দেখে, একবার নিবেদিতার দিকে দেখে একবার ওর মিষ্টি মামনির দিকে দেখে। সবাই হাঁ করে ওর দিকে চেয়ে।
Like Reply
পর্ব ২৭ (#০৪)

অনুপমা খানিকক্ষন চুপ করে থাকার পরে মাইক নিয়ে বলে, “আজকে আমাদের সেন গ্রুপ অফ কোম্পানির প্রথম অ্যানুয়াল মিট।”
সবাই চুপ, সবার কান ওর দিকে। অনুপমা বলে, “আমি জানিনা এনুয়াল মিটে কি বলতে হয়, তাও সবাইকে অশেষ ধন্যবাদ জানাই। একটা ছাদ দাঁড় করাতে গেলে অন্তত পক্ষে তিন খানা থামের দরকার পরে। এই গ্রুপ কোম্পানির বিষয়ে জানি না তবে আমার জীবনের তিন খানা থাম, তিন মহিলা…..”
সবাই উৎকণ্ঠায় ওর দিকে তাকিয়ে। অনুপমা প্রথমে ওর মায়ের দিকে তাকিয়ে হাত নেড়ে ডেকে বলে, “আমার মা, মিসেস পারমিতা সেন, যার ভালোবাসায় এতদুর এসেছি।” পারমিতার চোখে জল চলে আসে। চোখের কোল মুছতে মুছতে মেয়ের দিকে এগিয়ে যায়। তারপরে অনুপমা, দেবশ্রীর দিকে তাকিয়ে হাত নেড়ে মঞ্চে ডেকে বলে, “আমার মামনি, মিস্টার দেবায়নের মা, যার আশীর্বাদে এই জায়গায় দাঁড়িয়ে আছি।” দেবশ্রী অবাক হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে থাকে, কি বলছে মেয়েটা? অনুপমা কাতর চোখে মামনিকে মঞ্চে আসতে অনুরোধ করে। অগত্যা দেবশ্রী ধীর পায়ে মঞ্চের দিকে এগিয়ে যায়। তারপরে অনুপমা, নিবেদিতার দিকে তাকিয়ে কাছে ডেকে বলে, “আমার বান্ধবী, মিস নিবেদিতা চৌধুরী যার অক্লান্ত পরিশ্রমের জন্য আজকে আমরা এইখানে একত্রিত হয়েছি।” হতবাক নিবেদিতা দাঁতের মাঝে আঙ্গুল কেটে চোখের জল সংবরণ করে অনুপমার দিকে নিস্পলক নয়নে তাকিয়ে থাকে। অনুপমা ওকেও হাত নাড়িয়ে কাছে ডাকে। তারপরে মাইকে বলে, “মহিলারাই এই জগতের জন্মদাত্রী। আজকের রাত তাই মেয়েদের রাত। এই পৃথিবী সব মেয়েদের জন্য” হাত মুঠি করে হাওয়ায় উঁচিয়ে চিৎকার করে বলে, “লেডিস, ড্যান্স ফ্লোর অনেকক্ষণ থেকেই খালি পরে। আজকে নো ব্যালেন্স সিট, নো বড় এন্ড ছোট, কার কাছে কি আছে, কার কাছে কি নেই। একটা রাত এইসব ভুলে….. লেটস পার্টি হার্ড…..”
মঞ্চে দাঁড়িয়ে চার মহিলাকে দেখে সবাই হাততালি দেয়। গুঞ্জনে ভরে ওঠে রেডিসনের লন, আকাশে মেঘের গুরগুর শুরু হয়ে যায়। সেই উপেক্ষা করে অনুপমা মাইক নিয়ে চেঁচিয়ে, “মেয়েরা দেখিয়ে দাও, ওই আকাশের কালো মেঘের গুরগুর চড়চড় ধ্বনি আমরা ভয় করিনা।”
মঞ্চ থেকে নেমে এসেই দেবায়ন কে জড়িয়ে ধরে বুকে মাথা গুঁজে দেয়। ওর মাথা বুকে চেপে নিচু কণ্ঠে জিজ্ঞেস করে, “কি হল তোর?”
মাথা নাড়ায় অনুপমা, “কিছু না।” ওর গলা ধরে এসেছে এতক্ষণে। কথা বলার শক্তি হারিয়ে ফেলেছে। মনে হচ্ছে, এই বুকের মধ্যে ঢুকে পড়লে ভালো হত।
ওকে ওইভাবে দেবায়নের বুকে মাথা গুঁজে থাকতে দেখে নিবেদিতা ওদের দিকে এগিয়ে এসে ওর কাঁধে হাত রাখে। নরম হাতের পরশে অনুপমার সম্বিত ফিরে আসে। নিবেদিতাকে দেখে চোখের কোল মুছে মিষ্টি হাসি দেয়। নিবেদিতা স্মিত হেসে ওকে জিজ্ঞেস করে, “তুমি কি ওইখানে উঠে একটু পাগল হয়ে গেছিলে?”
অনুপমা দেবায়নের বাজু দুই হাতে আঁকড়ে ধরে বলে, “আমাকে পাগল করার লোক আর ঠিক করার লোক আমার পাশেই আছে।”
মিটের সাথে পার্টি কিছুক্ষণের মধ্যে জমে ওঠে। পারমিতা আর নিবেদিতা পরস্পরকে অতি মার্জিতভাবে অতি সুকৌশলে এড়িয়ে চলেছে। পারমিতা, দেবশ্রীকে নিয়ে একপাশে গল্পে মেতে ওঠে। নিবেদিতা আর অনুপমা কথা বলতে বলতে ভিড়ের দিকে এগিয়ে যায়। কম বয়সী ছেলে মেয়েরা ততক্ষণে নাচের জায়গায় উঠে নাচ করতে শুরু করে দিয়েছে।
ভিড়ের এক কোনায় হটাত করে ওর চোখ ধৃতিমানের দিকে চলে যায়। ধৃতিমানের হাতে একটা মদের গেলাস, ওর ঠাণ্ডা বরফের মতন চোখের সাথে চোখাচুখি হতেই ওর মেরুদন্ড দিয়ে হিমশীতল এক ধারা বয়ে যায়। একপাশে নিবেদিতাকে দেখে, অন্য পাশে দূরে দাঁড়িয়ে মায়ের সাথে মামনিকে দেখে। বাবার কোম্পানিতে চাকরি করছে ধৃতিমান, এই মিটে আসবে সেটা স্বাভাবিক কিন্তু ওর কথা একদম মাথায় ছিল না অনুপমার। এই সমাগমে কিছু করে বসবে না তো? অতটা সাহস নেই তবে যদি মামনির সামনে পরে যায় তখন কি হবে? সঙ্গে সঙ্গে হন্তদন্ত হয়ে দেবায়নের কাছে দৌড় লাগায়।
হাঁপাতে হাঁপাতে দেবায়নকে একদিকে টেনে নিয়ে গিয়ে বলে, “সর্বনাশ হতে একটু বাকি আছে রে।”
দেবায়ন অবাক হয়ে ওকে জিজ্ঞেস করে, “কি হয়েছে একটু খুলে বল।”
দূরে এক কোনায় দাঁড়িয়ে থাকা ধৃতিমানের দিকে দেখিয়ে অনুপমা বলে, “ধৃতিমানের কথা একদম ভুলে গিয়েছিলাম। একদিকে মামনি অন্যদিকে নিবেদিতা। ওদের সামনে পরে গেলে কি হবে?”
দেবায়নের সাথে ধৃতিমানের চোখাচুখি হয়, ওর ওই চাহনি দেখে চিন্তায় পড়ে যায়। খানিকক্ষণ পরে কিছু একটা চিন্তা করে ওর কাঁধে চাপ দিয়ে অভয় প্রদান করে বলে, “চিন্তা করিস না, আমি ওকে কিছু করে হোক এখান থেকে পাঠিয়ে দিচ্ছি।”
ঠিক সেই সময়ে রূপক ওইখানে চলে আসে। ওকে দেখে দুইজনে চুপ হয়ে যায়। রূপক ওদের ওইভাবে দাঁড়িয়ে থাকার কারন জিজ্ঞেস করাতে দেবায়ন জানায় ওরা এমনি দাঁড়িয়ে আছে। মঞ্চের বক্তৃতা দেওয়ার পরে অনুপমা একটু ভাবাবেগে গলে গিয়েছিল তাই ওর কাছে দাঁড়িয়ে আছে। ওদের ওইখানে ছেড়ে দিয়ে দেবায়ন ভিড়ের মধ্যে এগিয়ে যায়, ধৃতিমানের দিকে।
রূপক সেটা লক্ষ্য করে অনুপমাকে প্রশ্ন করে, “হ্যাঁ রে ওই লোকটা সেই লোকটা না, যাকে আমরা মিস চৌধুরীর সাথে জলপাইগুড়িতে দেখেছিলাম?”
অনুপমার মুখ ফ্যাকাসে হয়ে যায়, ভেবেছিল হয়ত রূপক চিনতে পারবে না কিন্তু। অনুপমা মাথা নাড়িয়ে অসম্মতি জানিয়ে বলে, “কই না তো?”
হাতের গেলাসে চুমুক দিয়ে ধৃতিমানের দিকে ভালো ভাবে তাকিয়ে রূপক ওকে বলে, “আরে কিছু একটা লুকাচ্ছিস তুই। ওই ভদ্রলোক জলপাইগুড়ির সেই ভদ্রলোক, কিন্তু এই মিটে কেন?”
অনুপমা ধরা পড়ে গেছে তাই ওকে সত্যি বলে দেয়, “আসলে ওই ভদ্রলোক বাবার কন্সট্রাকশান কোম্পানিতে চাকরি করে।”
রূপক মাথা দুলিয়ে বলে, “হুম, তাহলে মিস চৌধুরীর সাথে কিছু একটা হবে।”
অনুপমা ম্লান হেসে উত্তর দেয়, “না, নিবেদিতাকে ওর হাত থেকে বাঁচানোর জন্যেই দেবায়ন গেছে। এই মিটে কিছু যদি করে বসে সেই ভয়ে।”
রূপক ভুরু কুঁচকে ওর দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করে, “মানে? ওর সাথে মিস চৌধুরীর সম্পর্ক কেটে গেছে?”
অনুপমা মাথা দোলায়, “হ্যাঁ।”
রূপক হাতের গেলাস এক চুমুকে শেষ করে বলে, “ওই লোকটাকে কি এইখান থেকে তাড়াতে হবে? বল এখুনি লেগে পড়ছি।”
অনুপমা ওর বাজুতে ছোট চাঁটি মেরে বলে, “তুই আর পুচ্চু, মারামারি কাটাকাটি ছাড়া কিছু জানিস?”
ওর কাঁধে হাত রেখে কাছে টেনে কানেকানে বলে, “আরো একটা জিনিস করতে পারি কিন্তু শালা ছেলে না হলে ঠিক লাগিয়ে দিতাম।” বলেই হেসে ফেলে।
অনুপমা ওকে নিয়ে বন্ধু বান্ধবীরা যেখানে দাঁড়িয়ে গল্প করছিল সেই দিকে এগিয়ে যায়। শ্রেয়া, পায়েল, ভাই অঙ্কন, সঙ্গীতা প্রবাল, ধীমান ঋতুপর্ণা সবাই একদিকে দাঁড়িয়ে নিজেদের মধ্যে গল্পে মশগুল। কিছু পরে দেবায়ন ফিরে এসে ওদের সাথে যোগদান করে। অনুপমার সাথে চোখের ইশারায় কথা হয়ে যায় যে ধৃতিমানকে ঠিক করে দিয়েছে। বহু লোকের মাঝে তারপরে আর ধৃতিমানকে দেখা যায় না।
অনুপমা আর দেবায়ন আবার বন্ধুদের ছেড়ে সবার সাথে দেখা করার জন্য বেড়িয়ে পরে। এমন সময়ে ওদের দেখা অনন্যার সাথে হয়। অনন্যাকে দেখে অনুপমা বেশ আশ্চর্য হয়ে যায়, ওর পাশে আবার এক অচেনা আগন্তুক।
অনন্যা ওর হাত ধরে হেসে বলে, “বাপ রে তুই একদম পাক্কা বিজনেস ওম্যান হয়ে গেছিস দেখছি।”
অনুপমা স্মিত হেসে দেবায়নের বাজু আঁকড়ে ধরে বলে, “হ্যাঁ, এই ছেলেটার জন্য হতে হল।”
অনন্যা পাশের আগন্তুকের সাথে দেবায়নের পরিচয় করিয়ে বলে, “সত্যজিত, বলেছিলাম তোকে মনে আছে?”
অনুপমা হাত বাড়িয়ে সত্যজিতের সাথে হাত মিলিয়ে কুশল সম্ভাষণ আদান প্রদান করে।
দেবায়ন অনন্যাকে প্রশ্ন করে, “তোমার মানে…..”
অনন্যা কাতর চোখে ওর দিকে তাকিয়ে উত্তর দেয়, “প্লিস আজকে নয়।” তারপরে অনুপমাকে বলে, “হ্যাঁ রে একটু সময় হবে তোর?”
অনুপমা ভুরু নাচিয়ে প্রশ্ন করে কি ব্যাপারে কথা বলতে চায়। উত্তরে অনন্যা ওকে বলে, “তোরা দুইজনেই এইখানে আছিস আর সত্যজিত এসেছে। মানে ঐযে মিস্টার বসাক বলেছিল।”
অনুপমা বুঝতে পারে কি বিষয়ে অনন্যা ওর সাথে আলোচনা করতে চায় তাই হেসে ওকে বলে, “সরি অনন্যাদি, আজকে রাতে শুধু পার্টি। তুমি সময় করে একদিন আমার অফিসে এসো না হয় বাড়িতে এসো ওইখানে এইসব নিয়ে আলোচনা করা যাবে।”
দেবায়ন মিচকি হেসে ওকে জিজ্ঞেস করে, “কত টাকার ধাক্কা লাগাতে চাও?”
অনন্যা সত্যজিতের দিকে একবার দেখে বলে, “সেই রকম একটা প্লান করে নিয়েছি তবে হাতে টাকা নেই তাই শুরু করতে পারছি না।”
সত্যজিত ওকে উত্তর দেয়, “মানে এই ষাট থেকে আশি লাখ টাকার মতন লাগবে।”
অনুপমা আর দেবায়ন মুখ চাওয়াচায়ি করে। তারপরে দেবায়ন মিচকি হেসে সত্যজিতের সামনেই অনন্যার কাঁধে আলতো ধাক্কা মেরে বলে, “চার পাঁচ লাখ টাকা হলে না হয় এখুনি দিয়ে দিতাম। কিন্তু আশি লাখ টাকা, এটা বিনিয়োগের ব্যাপার। কি রকম রিটার্ন পাবো সেই বিষয়ে কিছু জানা নেই।”
অনুপমা ওকে মৃদু বকুনি দিয়ে থামিয়ে দিয়ে বলে, “প্লিস দেবায়ন এইখানে বিজনেস নয়।” অনন্যাকে হেসে উত্তর দেয়, “প্লিস ওর কথায় কিছু মনে কর না, তোমাদের লাইন অব বিজনেস, প্রোজেকশান, স্ট্রাটেজি সব নিয়ে একদিন আমাদের বাড়িতে এসো আলোচনা করা যাবে।”
দেবায়ন মিচকি হেসে অনন্যাকে বলে, “আজকে প্রথম কিস্তির রিটার্ন পেলে বড় ভালো হত।”
অনন্যা ওর দিকে কাতর চোখে তাকিয়ে বলে, “তুমি না বড্ড শয়তান…..” বলেই ওকে আলতো একটা চাঁটি মারে। ওদের ওইভাবে মিশতে দেখে সত্যজিতের একটু কেমন কেমন মনে হয়।
বহু মানুষের চোখ ওদের দিকে, ছোট পর্দার নায়িকা অনন্যাকে দেখে অনেকেই ওর সই নিতে এগিয়ে আসে। অনুপমা আর দেবায়ন ওদের ছেড়ে আবার অন্যদিকে এগিয়ে যায়। দেবায়নকে জিজ্ঞেস করে জানতে পারে, ধৃতিমানকে ও মৃদু শাসিয়ে রায়চক থেকে কোলকাতা পাঠিয়ে দিয়েছে। অনুপমা মাথা দোলায় আলতো করে। রাত যত বেড়ে ওঠে, তত বেড়ে ওঠে আকাশের গুরগুর চড়চড় ধ্বনি আর তত বেড়ে ওঠে নাচের তাল আর সঙ্গীত। নাচের ফ্লোরে অনেকেই উঠে নাচতে শুরু করে দিয়েছে। অনুপমার নাচের জায়গায়, বেশ কয়েক জন সুন্দরী ছোট চাপা আঁটো পার্টি পোশাক পরিহিত মেয়েদের দেখা পায়। গানের তালে তালে বিদেশী অথবা হোটেলের মালিকদের সাথে বেশ জড়াজড়ি করে নাচছে। ওদের অফিসের লোকজন, ছেলে মেয়েরা উদ্দাম নাচে ব্যাস্ত। সবাইকে দেখে আর দেবায়নের বাজু ধরে একপাশে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে।
 
Like Reply
পর্ব ২৭ (#০৫)

দেবায়ন এখন অফিসে আসেনি। বাবা এইবারে গোয়া গেছে একটা নতুন রিসোর্টের ব্যাপারে। দেবায়নকে সাথে নিয়ে যাবে বলেছিল কিন্তু অনুপমার অনুরোধে এইবারে আর দেবায়ন যায়নি। সকাল থেকে ঝিরঝিরি বৃষ্টি শুরু হয়ে গেছে। এই বৃষ্টিতে মামনির কাছে থাকলে, সোনামুগ ডালের খিচুড়ি আর ইলিশ ভাজা খাওয়া যেত। এই বৃষ্টি মাথায় নিয়ে ছেলেটা কোথায় যে বের হল? সকালে ফোন করে বলেছিল যে অফিসে আসতে একটু দেরি হবে কিন্তু কত দেরি? লাঞ্চের সময় হয়ে গেছে প্রায়। কোলকাতায় থাকলে এমন দেরি করে না, যদি কেনাকাটা কিছু করার থাকে তাহলে ওকে সাথেই নিয়েই বের হয়। কাজ থাকলে ওকে বলে যেত কোথায় যাচ্ছে। কিন্তু না, কি বলল, “এই একটু দোকানে যাবো।” কেন যাবি কোন দোকানে যাবি কিছুই বলল না। বৃষ্টির ভিজে হাওয়ায় হৃদয় বড় উদাস হয়ে যায় অনুপমার। পাগল বাউলের মতন খালি নেচে বেড়ায় এদিক ওদিক।
বেচারি অনুপমার খুব বড় অভিযোগ, সব প্রেমিকেরা তাদের প্রেমিকাদের নানান ধরনের উপহার দেয়, কিন্তু দেবায়ন ওকে আজ পর্যন্ত কিছুই দেয়নি। অবশ্য তাতে ওর ভুল ছিল না যে তা নয়, কলেজে পড়ার সময় থেকেই দেবায়নকে টাকা খরচ করতে দিত না, কিন্তু তাই বলে চাকরি পাওয়ার পরে ওকে একটা উপহার দেবে না? না না, এতটা ওর ওপরে অভিযোগ করা ঠিক নয়। গতবার যখন বিন্সার, ডালহৌসি কাজে গেছিল তখন ডালহৌসি থেকে ওর জন্য একটা সুন্দর ফারের জ্যাকেট কিনে এনেছিল। যদিও ওর কাছে প্রচুর জ্যাকেট, তাও ওর দেওয়া জ্যাকেট খানা ওর বেশ পছন্দ হয়েছিল।
এইসব ভাবছিল অনুপমা নিজের হাত দেখে, আঙ্গুল গুলো বড্ড খালি শুধু একটা সোনার আংটি ছাড়া কিছুই নেই। ঠিক তখন দেবায়ন কাঁচের দরজা খুলে ভেতরে ঢুকে ওকে দেখে হাসে। কি ব্যাপার, চোখে যেন এক শয়তানি হাসি, আবার কোথায় কি করে এসেছে দেবায়ন? আর পারা গেল না এই ছেলেটাকে নিয়ে, নিশ্চয় কোথাও কোন মেয়ে দেখেছে আর সেই গল্প জুড়ে বসবে, না হয় কোন ডিল ফাইনাল হবে সেই নিয়ে আলোচনা। কিন্তু এই চেহারা আর এই মিচকি হাসি কেমন যেন ঠেকায়। কোনোদিন এমন ভাবে মাথা চুলকে হাসতে দেখেনি ওকে। না না, একবার ওর সামনে এসেছিল এই ভাবে মিচকি হাসতে হাসতে, সে বহুদিন আগের কথা।
ওর সামনে দাঁড়িয়ে ওর দিকে তাকিয়ে স্মিত হেসে প্রশ্ন করে দেবায়ন, “কি রে কি করছিস?”
অনুপমা উঠে দাঁড়িয়ে ওর গলা জড়িয়ে নাকে নাক ঘষে মিষ্টি করে বলে, “তোর কথা ভাবছিলাম।” তারপরে কিঞ্চিত অভিমানী কণ্ঠে ওকে বলে, “সবার বয়ফ্রেন্ডরা কত কিছু দেয়…..”
ডান হাতে বাম হাত নিয়ে আলতো চেপে চোখ চোখ রেখে বলে দেবায়ন, “আমি সত্যি তোকে কিছু দেইনি কোনোদিন?”
ওই প্রগাঢ় ভালোবাসার চাহনির সামনে লজ্জায় পরে যায় অনুপমা, মাথা নিচু করে আলতো ঝাঁকিয়ে বলে, “না মানে…..”
ওর বাম হাত ঠোঁটের কাছে এনে হাতের তালুতে ছোট চুমু খায় দেবায়ন। তপ্ত ভিজে ঠোঁটের পরশে অনুপমার শরীর শিহরিত হয়ে যায়। আপনা হতেই দেবায়নের কলারে হাত উঠে যায়। দেবায়ন ওর দিকে একভাবে চেয়ে রয়েছে, দুই চোখে প্রেমের ধিকিধিকি আগুন, ওকে ঝলসে দেওয়ার আগের মুহূর্তে নিয়ে যায়। নিজেকে ওর প্রশস্ত বুকের ওপরে আছাড় মারতে উদ্যত হয় অনুপমা। দেবায়ন ঝুঁকে ওর বাম হাতের আঙ্গুল একটা একটা করে মুখের মধ্যে নিয়ে গোড়া থেকে ডগা পর্যন্ত চুষে দেয়। কেঁপে ওঠে অনুপমা, চোখের পাতা ভারী হয়ে আসে। কি করছে ছেলেটা, এটা যে অফিস। এইভাবে কতক্ষণ দাঁড়াতে পারবে, নিজেকে সংবরণ করে রাখতে পারবে? ওর দেহের প্রত্যেক স্নায়ু উন্মুখ হয়ে ওঠে দেবায়নের দেহের সাথে মিলিয়ে যাওয়ার জন্য। অনুপমার অনামিকা মুখের মধ্যে নিয়ে অনেকক্ষণ ধরে চুষে দেয় তারপরে অনামিকা বের করে আনে মুখের মধ্যে থেকে।
তিরতির করে ভীষণ প্রেমের জ্বরে কাঁপতে কাঁপতে দেবায়নকে গভীর আবেগজনিত কণ্ঠে জিজ্ঞেস করে, “কি করছিস তুই?”
দেবায়ন ওর অনামিকা চেপে ধরে, আঙ্গুলে শক্ত ধাতুর গোলাকার কিছু একটা ঠেকে। দেবায়ন ওর চোখে চোখ রেখে খুব নিচু কণ্ঠে প্রশ্ন করে, “বুড়ি হয়ে আমার মাথার পাকা চুল তুলে দিতে দিতে আমার সাথে ঝগড়া করবি?”
দেবায়ন ওর অনামিকায় কিছু একটা ঠেলে দেয়। হাতের চাপের মধ্যে বুঝতে পারে ওর আঙ্গুলে একটা আংটি। চোখ জোড়া ভরে আসে অনুপমার। চোখের পাতার সাথে সাথে ঠোঁট জোড়া কেঁপে ওঠে অনুপমার। আলতো মাথা নাড়িয়ে প্রগাঢ় আবেগজড়িত কণ্ঠে বলে, “করব রে, খুব ঝগড়া করব। তুই তোর দাঁতের পাটি ভুলে যাবি আর আমি খুঁজে দেব।”
দেবায়ন আবেগজড়ানো কণ্ঠে বলে, “সত্যি তুই খুঁজে দিবি? আর তোর চোখের চশমাটার কি হবে?”
দেবায়নের নাকের ওপরে নাক ঘষে বলে, “তুই আমাকে দেখিয়ে দিবি আর কি। আমি ওষুধ খেতে ভুলে গেলে কি হবে?”
উত্তর দেয় দেবায়ন, “ঘড়িতে অ্যালার্ম দিয়ে রাখব, মোবাইলে অ্যালার্ম দিয়ে রাখব।”
অনুপমা ওর বুকের ওপরে মাথা রেখে জিজ্ঞেস করে, “কবে থেকে শুরু করব এই খোঁজাখুঁজি?”
দেবায়ন ওর মুখ আঁজলা করে ধরে বলে, “এই ডিসেম্বর থেকে শুরু করলে কেমন হয়?”
মাথা উঁচু করে ওর চোখের দিকে তাকায় অনুপমা। আলতো ঠোঁট মেলে এগিয়ে দেয় দেবায়নের দিকে। ওর চোখের পাতা ভারী হয়ে আসে ওই কথা শুনে। দেবায়নের ঠোঁট নেমে আসে ওর লাল নরম ঠোঁটের ওপরে। মিশে যায় দুই জোড়া কপোত কপোতীর ঠোঁট। অনুপমার আঙ্গুলে একটা বড় সলিটায়ার হীরের আংটি।
চুম্বন শেষে, ওর বুকের মধ্যে মাথা গুঁজে চুপচাপ পরে থাকে অনেকক্ষণ। দেবায়ন ওকে আস্টেপিস্টে জড়িয়ে ধরে বুকের সাথে মিশিয়ে দেয়। এইবারে ওর রাত আর বড় হবে না, এই বারে ওর আর ঠাণ্ডা লাগবে না। ওর বুক আর খালি থাকবে না। আয়নার সাথে আর কথা বলতে হবে না। রোজ সকালে ওকে ফোন করে উঠাতে হবে না। রাতে “গুড নাইট” কিস হাওয়ায় দিতে হবে না। ওর জামা চুরি করে পড়তে হবে না। অনেক কিছু “হবে না” তালিকা শেষ হয়ে যাবে ওর জীবনে।
আঙ্গুলের আংটিটা দেখে, সোনার আংটির ওপরে একটা বড় হীরে। এই কিছুক্ষণ আগেই কত অভিযোগ নিয়ে নিজের সাথে কথা বলছিল আর ঠিক তখনি….. পুচ্চু কি ওর মনের কথা শুনতে পারে নাকি? ছলছল চোখে ওর দিকে তাকিয়ে কাঁপা আবেগভরা কণ্ঠে বলে, “তুই কি আমার মনের কথা শুনতে পেরেছিলি?”
দেবায়ন আলতো মাথা দোলায়, “হঠাৎ করে আজ সকালে বৃষ্টি দেখে বুকটা বড় ফাঁকা হয়ে গেল। মনে হচ্ছিল তুই কাছে থাকলে দুইজনে বাইকে করে এই বৃষ্টিতে ভিজতে বের হয়ে যেতাম।”
অনুপমা ওর বুকের ওপরে একটা কিল বসিয়ে আদুরে কণ্ঠে বলে, “বললি না কেন?”
ওর গালে আলতো চুমু খেয়ে দেবায়ন উত্তর দেয়, “তাহলে এই সারপ্রাইস হত কি করে?”
আবার দেবায়নকে দুইহাতে জড়িয়ে ধরে বলে, “খুব সুন্দর হয়েছে রে আংটিটা। মামনিকে বলেছিস?”
দেবায়ন মাথা নাড়ায়, “না মানে এখন মা’কে বলিনি ভাবছি তুই আমার সাথে বাড়ি চল, দুইজনে একসাথে মা’কে বলব।”
একটু লাজুক হেসে বলে, “আর বাকিদের?”
দেবায়ন মাথা নাড়ায়, “এখন নয়, বাকিদের না হয় ওই ট্রিপে গিয়ে বলব যে ডিসেম্বরে আমরা বিয়ে করছি।” ওর কোমর জড়িয়ে কাছে টেনে বলে, “চল কোথাও বেড়িয়ে পরি এই বৃষ্টিতে।”
সেই শুনে নেচে ওঠে অনুপমা, চোখ জোড়া চকচক করে ওঠে ওর, “কোথায় যাবো?”
দেবায়ন মিচকি হেসে বলে, “কোলকাতায় রাস্তার অভাব আছে নাকি? পারলে না হয় দুরগাপুর হাইওয়ে ধরা যাবে। যতদূর যাওয়া যায় যাবো তারপরে আবার বাইক ঘুরিয়ে বাড়ির পথ ধরব।”
“নক নক….. কৌন হ্যায়? নক নক….. কৌন হ্যায়?” অনুপমার ফোন বেজে ওঠে, এটা মায়ের রিং টোন। এই এমন সময়ে মা ফোন করল হঠাৎ করে, কি ব্যাপার? হৃদয়ে প্রবল উচ্ছাস, ঠিক পেছনে থেকে ওকে জড়িয়ে ধরে দেবায়ন ওর ঘাড়ের ওপরে নাক ঘষে উত্যক্ত করে তোলে ওকে। আঙ্গুলের আংটি দেখে মাকে বলার জন্য অধীর হয়ে ওঠে।
ফোন তুলেই মাকে বলে, “জানো মা আজকে কি হয়েছে।”
পারমিতা ওকে জিজ্ঞেস করে, “কি হয়েছে?”
লাজুক হেসে প্রবল উচ্ছাসে দেবায়নের হাত খানি বুকের কাছে টেনে বলে, “পুচ্চু আমাকে একটা সলিটেয়ার দিয়েছে।”
পারমিতা অন্যপাশ থেকে খুশি হয়ে বলে, “এতদিনে তাহলে তোরা বিয়েটা সারছিস।”
মাথা দোলায় অনুপমা, “হ্যাঁ…..”
পারমিতা ওকে জিজ্ঞেস করে, “হ্যান্ডসাম কি কাছে আছে নাকি?”
দেবায়ন মিচকি হেসে উত্তর দেয়, “হ্যাঁ মিমি, তোমার মেয়েকে এইবারে তোমার বাড়ি থেকে নিয়ে আমার কাছে রাখব ভাবছি।”
পারমিতা কিঞ্চিত ধরা গলায় বলে, “বারন কে করেছে, সে তো অনেকদিন আগেই নিয়ে গেছ।”
দেবায়ন উত্তর দেয়, “এইবারে একদম পাকাপাকি ভাবে নিয়ে যাবো।”
পারমিতা জিজ্ঞেস করে, “দেবশ্রীদি জানে?”
অনুপমা উত্তর দেয়, “না এখন মামনিকে জানানো হয়নি। আজ রাতে জানাবো।”
দেবায়ন বলে, “তুমি আর মা একটা ভালো দিনক্ষণ ঠিক কর, আর তর সইছে না।”
পারমিতা অন্যদিক থেকে হেসে বলে, “ইসসস আর তর সইছে না, সব হয়ে গেল আর কি বাকি আছে?”
অনুপমা হেসে বলে, “অনেক কিছু বাকি, ওর মাথার পাকা চুল তুলে দেওয়া বাকি, আমার চশমা হারিয়ে যাওয়া আর ওর দ্বারা খুঁজে পাওয়া বাকি…..”
পারমিতা হেসে বলে, “আচ্ছা হয়েছে, বুঝতে পারছি তোর মনে বিয়ের ফুল ফুটছে। যার জন্য ফোন করেছিলাম। তোরা দুইজনে একসাথে আছিস যখন ভালোই হল। অনন্যা আর সত্যজিত এসেছে, তোদের সাথে ওর পত্রিকার সম্বন্ধে কিছু আলোচনা করতে চায়।”
অনুপমা কপালে করাঘাত করে, দুই দিন আগে অনন্যা ওকে ফোন করে বলেছিল যে পত্রিকার সম্বন্ধে আলোচনা করার জন্য ওর বাড়িতে আসতে চায়। অনুপমা একদম ভুলে গেছে, এমন কি দেবায়নকে বলতেও ভুলে গেছে। আসলে এনুয়াল মিটের পর থেকেই এয়ার বার্লিনের প্রোজেক্ট নিয়ে শ্রেয়ার সাথে এত ব্যাস্ত ছিল যে অন্য কোন বিষয় নিয়ে ভাবার সময় ছিল না ওর কাছে।
মা’কে উত্তরে বলে, “উফফফ একদম ভুলে গেছি….. আচ্ছা এক কাজ কর ওদের কিছুক্ষণ বসতে বল আমরা এই এক ঘন্টার মধ্যে আসছি।”
ফোন ছেড়ে দেবায়ন কে সবিস্তারে অনন্যার বিষয়ে জানায়। ফোনে ওর সাথে অনন্যার শুধু মাত্র একটু কথাবার্তা হয়েছিল। প্রোজেকশান, লাইন অফ বিজনেস, স্ট্রাটেজি এইসব ওর মাথায় ঢোকে না তাই এই বিষয়ে বাবার সাথে আর দেবায়নের সাথে আলোচনা করার কথা বলেছিল। দেবায়ন সব শুনে একটু মন মরা হয়ে যায়, অনুপমাও একটু মন মরা হয়ে যায়। এই ভিজে আবহাওয়ায় ঘুরতে যেতে বেশি ভালো লাগে এর মধ্যে আবার ব্যাবসা সংক্রান্ত আলোচনা করতে বসতে হবে ভেবেই মন কিঞ্চিত ভারাক্রান্ত হয়ে যায়। কিন্তু কি করা যাবে, অনন্যা একদম বাড়ি পৌঁছে গেছে, আবার মায়ের সাথে অনন্যার বেশ ভালো সম্পর্ক। দেবায়ন আর অনুপমা কিছুক্ষণের মধ্যেই গাড়ি নিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। পথে যেতে যেতে অনুপমা জানায় ওদের আশি থেকে নব্বুই লাখ টাকার দরকার।
বাড়িতে পা রাখতেই ওর মা ওকে জড়িয়ে ধরে, “বাপ রে শেষ পর্যন্ত আমার মেয়ে বড় হয়ে গেল।” আবেগ জড়িত, মাতৃস্নেহে দেবায়নের দিকে তাকিয়ে নিচু কণ্ঠে বলে, “মেয়েটাকে একটু দেখো।”
অনুপমা মা’কেজড়িয়ে ধরে বলে, “প্লিস মা, এখুনি শুরু করোনা তো।”
হাতের বড় হীরের আংটি দেখে পারমিতা ওকে বলে, “তোর ভাগ্য সত্যি ভালো।”
দেবায়ন মিচকি হেসে বলে, “ভাগ্য আমার ভালো। যাই হোক এইবারে আগে কাজ সারি তারপরে বাড়ি ফিরতে হবে। মাকে এখন জানানো হয়নি। আজ রাতে অনু কিন্তু আমাদের বাড়িতে থাকবে।”
পারমিতা দেবায়নের গালে আলতো টোকা মেরে হেসে বলে, “আমার বাড়ির মেয়ে অনেকদিন আগেই শ্বশুর বাড়িতে পা রেখে দিয়েছে, আর কি কিছু বলতে পারি?”
অনন্যা আর সত্যজিত বসার ঘরে ওদের জন্য অপেক্ষা করছিল। ওদের সামনে এই বিষয়ে কিছু আর আলোচনা করা হল না। সামান্য কুশল সম্ভাষণের পরেই সোজা প্রত্রিকা সম্বন্ধে আলোচনায় বসে গেল। সত্যজিত ফাইল এনেছিল, ল্যাপটপে বেশ কয়েকটা প্রেসেন্টেসান বানিয়ে এনেছিল, সেই গুলো দেখাল। ইতিমধ্যে ওদের পাব্লিকেশানের একটা নাম ঠিক করা হয়েছে, পত্রিকার একটা নাম ঠিক করে নিয়েছে “ফুলের ঝুড়ি”। সত্যজিত নিজে ফটোগ্রাফার, এই পাবলিকেশান লাইনে বেশ চেনাজানাও আছে, বেশ কয়েকজন সম্পাদক সম্পাদিকার সাথে ইতিমধ্যে কথাবার্তা আলোচনা সেরে নিয়েছে। আগামী বড়দিনে পত্রিকার শুরু করতে চায়।
সব শুনে দেবায়ন স্মিত হেসে জানায়, “দেখো মিস্টার সত্যজিত, এমনিতে এই পাবলিকেশান লাইনে বিনিয়োগ করা বেশ ঝুঁকির ব্যাপার। আজকাল ইন্টারনেটের যুগ, মানুষে বই খুব কম পড়ে। মাসে কয়টা কপি বিক্রি করতে পারবে? তুমি যে প্রোজেকশান দেখিয়েছ সেটা পাঁচ বছরে এচিভ করতে পারবে বলে আমার সন্দেহ আছে।”
সত্যজিত একটু দমে যায় ওর কথা শুনে। অনেক আশা ভরসা নিয়ে অনন্যার কাছে শুনেই এদের কাছে এসেছিল। দেবায়ন তাও ওকে বলে, “আশি লাখ টাকা বিনিয়োগ করা খুব বড় ঝুঁকি। এত টাকা বিনিয়োগের আগে আমাকে একবার সেন কাকুর সাথে বিস্তারিত আলোচনা করতে হবে।”
অনন্যা মাথা নাড়িয়ে ওকে বলে, “বাঙালী মেয়েরা এখন বাড়িতে বসে বই পড়ে। আর শুধু যে পত্রিকা বেচে আমাদের টাকা আসবে সেটা নয়। বিজ্ঞাপনেও টাকা আসবে সেই নিয়ে তোমার চিন্তা নেই, শুধু প্রাথমিক ইন্ধন আমাদের নেই।”
পারমিতা দেবায়নের দিকে তাকিয়ে বলে, “প্লিস দেবায়ন, আমি সোমেশকে বুঝিয়ে বলে দেব, শুধু তুমি না কর না। অনন্যা অনেক করেছে, ওর জন্য এইটুকু করতেই হবে।”
পারমিতা আর অনন্যা কি ভাবে ওদের কন্সট্রাকশান কোম্পানিতে কাজ এনেছে সেই বিষয়ে দেবায়ন ভালো ভাবেই জানে।
অনুপমা এর মধ্যে নেই তাই স্মিত হেসে মাথা নাড়িয়ে জানিয়ে দেয়, “আমি এই বিষয়ে কিছুই বলতে পারব না, অনন্যাদি। ও আর বাবা যে সিদ্ধান্ত নেবে সেটাই চূড়ান্ত।”
দেবায়ন খানিক ভেবে স্মিত হেসে বলে, “কাকিমা যখন বলছে তখন দিতে পারি। তবে আমার কয়েকটা শর্ত আছে।”
সত্যজিত জিজ্ঞেস করে, “কি শর্ত?”
দেবায়ন উত্তরে বলে, “ব্রেক ইভেনে না পৌঁছানো পর্যন্ত কাকিমা তোমাদের এই পাবলিকেশানের এম ডি হয়ে থাকবে, তারপরে দেখা যাবে। আর বোর্ড অফ ডাইরেক্টরের মধ্যে পায়েল কে নিতে হবে। অনুপমার অত সময় নেই, কিন্তু পায়েল মাঝে মাঝে তোমাদের অফিসে যেতে পারে।”
সত্যজিত আর অনন্যা মুখ চাওয়াচায়ি কর নিচু কণ্ঠে নিজেদের অধ্যে আলোচনা করে ওদের জানায়, এই শর্ত ওরা মানতে রাজি। দেবায়ন জানিয়ে দেয়, কিছুদিনের মধ্যেই মিস্টার সেনের সাথে বিস্তারিত আলোচনা করে ওদের এই পত্রিকার টাকা দিয়ে দেবে।
সেই সাথে দেবায়ন অনন্যাকে মিচকি হেসে বলে, “সেই দিন রাতে তুমি বলছিলে ষাট লাখ টাকা আর এই কয়দিনে একেবারে নব্বুই লাখ টাকা হয়ে গেল?”
সত্যজিত হেসে বলে, “না না সেটা একটা ইনিসিয়াল এস্টিমেট মাত্র ছিল, আসলে আমরা সব অঙ্ক কষে নিয়ে তারপরে এসেছি। আর হাতে একটু বেশি থাকলে একটু ভালো হয়।”
দেবায়ন অনন্যাকে হেসে বলে, “বেশ তো, ভালো কথা, কিন্তু…..” চোখ টিপে হেসে বলে, “এত বড় অঙ্কের টাকার বিনিয়োগের পরিবর্তে আমার কিছু চাই।”
পারমিতা ওর কথার অন্তর্নিহিত অর্থ বুঝে চোখ পাকিয়ে দেবায়নের দিকে তাকিয়ে বলে, “প্লিস দেবায়ন…..”
অনন্যা পারমিতাকে থামিয়ে দিয়ে হেসে দেবায়নকে বলে, “না না, কি চাও বলো? কোথাও যেতে হবে কি?”
দেবায়ন উত্তরে জানায়, “তুমি একবার মিস চৌধুরীর সাথে কথা বলে নিও।”
অনুপমা লক্ষ্য করে অনন্যা বেশ গলে পড়ে আদুরে কণ্ঠে দেবায়নের সাথে কথাবার্তা বলছিল। আলোচনা শেষে খাওয়া দাওয়া শেষে, সত্যজিত স্মিত হেসে দেবায়নের সাথে হাত মিলিয়ে বলে, “একদিন বাড়িতে ডিনারে এসো।”
অনুপমাকে চোখ টিপে হেসে বলে অনন্যা, “ব্রেকফাস্টের নেমন্তন্ন রইল কিন্তু, ভুলে যাস না…..”
অনুপমা ওর গালে গাল ঠেকিয়ে নিচু কণ্ঠে বলে, “সত্যজিত থাকলে হবে না কিন্তু…..”
উত্তরে অনন্যা নিচু কণ্ঠে ফিসফিস করে বলে, “না না, ডিনারের পরে সত্যজিত থাকে, না বাড়ি চলে যায়। চিন্তা নেই ব্রেকফাস্ট আমরা একসাথেই করব।”
দেবায়ন হেসে সত্যজিতের সাথে হাত মিলিয়ে জানায়, “ঠিক আছে একদিন ডিনারে অনন্যার বাড়িতে দেখা হবে।”
 
Like Reply
পর্ব ২৭ (#০৬)

রেডিসনে এনুয়াল মিটেই রূপক, বন্ধুদের কাছে খাটলিং গ্লেসিয়ার ট্রেকিংয়ের কথা বলেছিল। সেই শুনে অনেকে যেতে রাজি হয়ে যায়। পরাশর যেতে রাজি হয়ে যায়, জারিনা জানায় যাওয়ার জন্য ওর আব্বাজানকে রাজি করিয়ে নেবে। সঙ্গীতা লাফাতে শুরু করে দেয় ঘুরতে যাওয়ার কথা শুনে, অগত্যা প্রবালের তাই কিছু আর বলার থাকে না। ঋতুপর্ণা, ধীমান এক কথায় রাজি। শ্রেয়া আর পায়েল এই অজানা অচেনা জায়গায় যেতে একটু দ্বিধাবোধ ব্যাক্ত করে, কারন ওদের দলের মধ্যে কারুর ট্র্যাকিঙে যাওয়ার অভিজ্ঞতা নেই। দেবায়ন বুঝিয়ে বলে, কোন কিছুর প্রথমদিন সবার জীবনে একদিন না একদিন আসে। অনুপমার ভাই, অঙ্কন প্রেয়সী পায়েলের চাপে পড়ে আর না করে না, তবে বড়দের সাথে যেতে একটু দোনামোনা করে, বিশেষ করে জানে রূপক আর দেবায়ন কি রকমের ছেলে। ওর একবার কারুর পেছনে লাগলে তাকে না কাঁদিয়ে ছাড়ে না। রূপকের ওপরে সব কিছু পরিকল্পনার করার ভার কারন ওই বেশ উৎসাহী। ইন্টারনেট ঘেঁটে একটা ট্রেকিঙ্গের সাইটে লগইন করে একজনের সাথে আলোচনা করে অনেক কিছুর খোঁজ খবর ইতিমধ্যে নিয়ে নিয়েছে। অনুপমা আর দেবায়ন জানায়, খরচের সিংহ ভাগ ওরা দিতে রাজি। সেই সাথে অনুপমা আরো জানায় একজন অভিজ্ঞ চেনাজানা লোক সঙ্গে থাকলে বড় ভালো হয়। অফিসে এই নিয়ে কথাবার্তা চলে, সেই সময়ে ওরা জানতে পারে যে শান্তনু দিল্লীতে থাকার সময়ে বার পাঁচেক বিভিন্ন জায়গায় ট্রেকিংয়ে গেছে। ঠিক হয় যে শান্তনু আর মনীষাকেও সঙ্গে নেওয়া হবে। মনীষা পাহাড়ের মেয়ে, কিন্তু কোনোদিন ট্রেকিংয়ে যায়নি, তাই বেশ উৎসাহী। সব মিলিয়ে চোদ্দ জনের দল, বেশ বড় দল হলে যাওয়া সুবিধা। শান্তনুকে দলের নেতা হিসাবে মনোনীত করা হয়, আর বড় কারন সে অভিজ্ঞ আর দ্বিতীয়, দলের সব থেকে বড়, ওদের চেয়ে চার বছরের বড়। দলে সব থেকে বড় শান্তনু আর সব থেকে ছোট জারিনা আর অঙ্কন, বাকিদের বয়স মোটামুটি এক সবাই কলেজের বন্ধু।
পুজোর আগেই একদিন বিকেলে অফিসের পরে অনুপমাদের অফিসের কনফারেন্স রুমে ট্রেকিংয়ের আলোচনা পরিকল্পনার সভা বসে। ঠিক হয় একাদশীর দিনে ওরা সবাই কোলকাতা থেকে রওনা দেবে। শান্তনু আর রুপকের ওপরে সব কিছুর ভার। অনুপমা দেশ বিদেশে অনেক পাহাড়ে ঘুরে বেড়িয়েছে, কিন্তু সুউচ্চ হিমালয়ের হাতছানি ওকে প্রবল ভাবে ডাক দেয়। শ্রেয়া, পায়েল ঋতুপর্ণা বেশ উৎসাহী ওদের কাছে পাহাড় বলতে দার্জিলিং, সিমলা কুলু মানালি আর সিকিম এর চেয়ে বেশি দুর কোথাও যায়নি। জারিনা আর সঙ্গীতা কোনোদিন পাহাড়ে যায়নি। ছেলেদের একমাত্র দেবায়ন ছাড়া মধ্যে অনেকে পাহাড়ে বেড়াতে গেছে।
ওই টিম মিটিঙে দেবায়ন বিশেষ করে জারিনা আর অঙ্কনকে বলে, “দেখ ভাই আমরা বেড়াতে যাচ্ছি, ওইখানে কিন্তু কেউ বড় কেউ ছোট নয় আর জানিস তো আমাদের অবস্থা…..”
রূপক ওর কথা টেনে নিয়ে বলে, “আমাদের কিন্তু কোন ট্যাক্স নেই, না কথাবার্তার, না…..”
পায়েল মুখ না খুললেও পাশে বসা অনুপমাকে আলতো ধাক্কা মেরে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলে, “ওই সব হলে কিন্তু আমি আর অঙ্কন যাবো না।”
অনুপমা ওকে অভয় দিয়ে বলে, “আরে না না এইবারে ওইসব উল্টোপাল্টা কিছুই হবে না সেই নিয়ে তোর চিন্তা নেই।”
দেবায়ন সেটা শুনে ফেলে ইয়ার্কি মেরে বলে, “আমি তোর জন্য চার প্যাকেট কনডোম নিয়ে যাবো, হয়েছে?”
জারিনার কান লজ্জায় লাল হয়ে যায় সেই শুনে। মনীষা হেসে ফেলে দেবায়নের কথা শুনে।
শান্তনু ওদের এই আলোচনা থামিয়ে বলে, “সব থেকে আগে আমাদের শারীরিক অবস্থার কথা চিন্তা করতে হবে। খাটলিং গ্লেসিয়ার ট্রেকিং বেশ কষ্টকর ট্রেকিং, দিন দশেকের মতন তাঁবুতে থাকা আর হাঁটা। কখন উঁচু চড়াই কখন উতরাই। সেই মতন প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য প্রত্যেককে আমি মর্নিং ওয়াক করতে উপদেশ দেব।”
মনীষা ওকে আলতো ঠ্যালা মেরে বলে, “বাপরে, চোরের মায়ের বড় গলা, রোজদিন ঠিক সাড়ে আটটায় ঘুম থেকে উঠবে আর তড়িঘড়ি করে অফিসে আসবে। তোমার জন্য প্রায় দিন আমার লেট হয়ে যায়।”
শান্তনু কিঞ্চিত লজ্জা পেয়ে বলে, “যার বউ অফিসের এইচ.আর. সেই অফিসে লেট আসাতে ক্ষতি কি।”
ওই শুনে সবাই হেসে ফেলে।
জারিনা জানায়, বাবার কাছ থেকে সব ওষুধপত্র যোগাড় করে একটা বড় ফার্স্ট এইডবক্স আর বেশ কিছু ঠাণ্ডার জন্য ইনজেকশান নিয়ে যাবে। সেদিনের মতন সভা শেষ হলে সবাই কেনা কাটা করতে ব্যাস্ত হয়ে পরে। রূপক আর শান্তনুর ওপরে সব ভার, দলের নেতা শান্তনু আর রূপক ডান হাত, অনুপমা আর দেবায়ন ওদের পকেট। সবার একটা করে রাকস্যাক আর একটা ছোট ব্যাগ কেনা হয়। অনুপমার কাছে প্রচুর ভারী জ্যাকেট ছিল তাই শ্রেয়া আর পায়েলকে কোন জ্যাকেট কিনতে হয় না, তবে বাকিদের জন্য জ্যাকেট দস্তানা ইত্যাদি কেনা হয়। তাঁবুর সরঞ্জাম ঘনসিয়ালি থেকে নিয়ে নেওয়া হবে, গাইড আর মালবাহক লোকের ব্যাবস্থা ঘুট্টু নামক গ্রামে হয়ে যাবে বলে শান্তনু জানায়। এডমিনে থাকার ফলে এইসবের খবর আর ব্যাবস্থা করার কৌশল ওর বেশ ভালো করেই জানা।
ঠিক হয় একদশীর দিন বিকেলে প্লেনে চেপে সোজা দিল্লী। ধীরে ধীরে ঘুরতে যাওয়ার দিন কাছে চলে আসে। পুজো এক রকম হইহুল্লোড়ে কাটিয়ে একাদশীর দিন বিকেলে সবাই নিজেদের জিনিস পত্র নিয়ে কোলকাতা এয়ারপোর্টে উপস্থিত। ওদের ছাড়তে বাড়ির অনেকে এসেছে, বিশেষ করে জারিনার বাবা মা। প্রথম বার মেয়েকে এইভাবে একা বাইরে ছাড়ছে বলে একটু উদ্বেগ প্রকাশ করে। এয়ারপোর্টে পারমিতা এসেছিল, সেই জারিনার বাবাকে অভয় দিয়ে বলে এতগুলো ছেলে মেয়ে একসাথে যাচ্ছে কোন অসুবিধে হবে না। বিশেষ করে শান্তনু ওদের দলের মধ্যে সব থেকে বড়, বাকিদের চেয়ে বেশি অভিজ্ঞ।
প্লেন কোলকাতার মাটি ছাড়তেই সবাই নেচে ওঠে, মুক্তির স্বাদ, সুউচ্চ হিমালয়ের হাতছানি, হিমশীতল গ্লেসিয়াররে ডাক, পনেরো দিন শুধু মাত্র প্রকৃতির কোলে কাটাবে। এই কয়দিনে অনুপমা আর পায়েল ছাড়া কেউই মর্নিং অয়াক করেনি সেই নিয়ে একটু হাসা হাসি হয় প্লেনে। প্লেনের বাকি যাত্রীরা চোদ্দ জনের একটা ট্রেকিং টিম দেখে ভির্মি খেয়ে যায়। সাধারনত যে ভারতীয়রা ট্রেকিংয়ে যায় তারা অধিকাংশ ট্রেনে যাতায়াত করে, তাই অনুপমাদের দেখে করে প্লেনের বাকিরা একটু তাকিয়ে থাকে। ওরা কি আর চুপ করে থাকার মানুষ?
রূপক প্লেনে উঠেই পেছনে বসা পরাশরকে চেঁচিয়ে বলে, “এই শালা কেউ একটু জানালা খুলে দে বড্ড গরম লাগছে। এইখানে মনে হয় এসি নেই।”
সেই শুনে সবার হাসাহাসি শুরু হয়ে যায়। শ্রেয়া একজন বিমান সেবিকাকে ডেকে ইয়ার্কি মেরে বলে, “আচ্ছা, ওই টয়লেটে কেউ পটি করলে কি নীচে পড়ে যাবে?”
এয়ার হোস্টেস হাসবে না কাঁদবে কিছু ভেবে পায় না। ভাবে এইগুলো একদম গেঁয়ো নাকি? ঋতুপর্ণা চেঁচিয়ে বলে, “না না, তোর পটি এই শুন্যে উড়তে উড়তে পাখীদের খাদ্য হয়ে যাবে।”
শ্রেয়া হঠাৎ শান্তনুকে বলে, “টিম লিডার আমাদের খিদে পেয়েছে। ডিনারের কি ব্যাবস্থা।”
শান্তনু পেছন থেকে চেঁচিয়ে বলে, “সুন্দরীরা একটু চুপচাপ বসে থাকো, একটু পরেই খাবার সার্ভ করা হবে।”
মনীষা আর ঋতুপর্ণা চেঁচিয়ে ওঠে, “আজ আমাদের নিরামিষ।”
এক কোনা থেকে পরাশর চেঁচিয়ে ওঠে, “আমি কিন্তু মাছের ঝোল আর ভাত।”
দেবায়ন চেঁচিয়ে ওঠে, “টিম লিডার আমার হুইস্কি কোথায়?”
সেই সাথে তাল মেলায় রূপক আর ধীমান, “স্কচ অন রক্স বেবি।”
ওদের চেঁচামেচিতে প্লেনের বাকি যাত্রীরা রিতিমতন ভিরমি খেয়ে যায়।
প্লেনে ওঠার পর থেকে প্রবাল মুখে কুলুপ এঁটে চুপ। হাওয়ার চাপ কমে যাওয়ার ফলে ওর কান ভোভো করছে। সঙ্গীতার হাত খানি মুঠি করে ধরে চুপচাপ সিটে বসে। সেটা ধীমান দেখতে পেয়ে মজা করে বলে, “ওরে বাল, তোর বউ নিয়ে কেউ পালিয়ে যাবে না। প্লেনের মধ্যে কেউ নিয়ে আর পালাবে কোথায়। এইবারে একটু ছেড়ে দে।”
সঙ্গীতা উল্টে ওকে ধমক দিয়ে চুপ করিয়ে বলে, “চুপ কর, প্লেনে চাপলে ওর মাথা ঘোরে।”
দেবায়ন সিট থেকে উঠে ওর মাথায় চাঁটি মেরে ইয়ার্কি মেরে বলে, “তোর জিন্স নয়, শাড়ি পরে আসা উচিত ছিল। ওকে আঁচলের তলায় লুকিয়ে রাখতিস তাহলে ভালো হত।”
অনুপমা ওদের বলে, “আরে আরে আঁচলের তলায় অনেক কিছু লুকানো আছে রে প্রবাল, লাগা একটু মুখ লাগা।”
এই ভাবে মজা করতে করতে ওরা রাতের বেলা দিল্লী পৌঁছায়। শান্তনু জানায়, ভোর বেলা একটা চোদ্দ সিটের বাস ওদের জন্য ঠিক করা হয়েছে। দিল্লী থেকে এই বাসে চেপেই ওরা হৃষীকেশ হয়ে ঘুট্টু যাবে। ঘুট্টু থেকে ওদের ট্রেকিংয়ের শুরু।
দিল্লীতে রাত কাটিয়ে তারপরের দিন সকাল বেলায় একটা ছোট বাসে চেপে সবাই হৃষীকেশের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। দিল্লী ছাড়ার আগে, দেবায়ন রূপক আর ধীমান বেশ কয়েক বোতল হুইস্কি, রাম ইত্যাদি মদ কিনে নিয়েছিল। সারাটা রাস্তা হাসি মজা করতে করতে কেটে যায়। হৃষীকেশ পৌঁছাতে ওদের বিকেল হয়ে যায়। দেবায়ন, অঙ্কন আর অনুপমা ছাড়া বাকিদের হৃষীকেশ আগে থেকে ঘোরা ছিল। তাও সন্ধ্যের পরে সবাই হৃষীকেশ ঘুরে বেড়িয়ে দেখে। পুজোর পরে একটু ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা ভাব এসে গেছে পাহাড়ের পাদদেশে। হৃষীকেশ থেকে পাহাড় শুরু, ওদের হোটেলের পেছনে পাহাড়, গঙ্গার জল এইখানে খুব ঠাণ্ডা। এর ওপরে গেলে জলের তাপমাত্রা কত কম্বে সেই নিয়ে জল্পনা কল্পনা শুরু হয়। হৃষীকেশে ওরা দশ দিনের খাবার দাবার কেনাকাটা করে নেয়। ম্যাগি, চাল ডাল, আলু ইত্যাদি। শান্তনু জানিয়েছে, রাতে যদি নিজেরা রান্না না করতে পারে তাহলে একটা রান্নার লোক সাথে নিয়ে যাবে। জারিনা আর ঋতুপর্ণা জানিয়ে দেয় ওরা রান্না করতে রাজি। পরাশর হেসে বলে, পাহাড়ি পথে হাটার পরে দেহে আর শক্তি থাকবে না যে রান্না করতে বসবে।
মেয়েদের মধ্যে বিশেষ করে শ্রেয়া, ঋতুপর্ণা আর অনুপমার খুব চিন্তা স্নান করবে কি করে। দেবায়ন মজা করে বলে, “ভিলাঙ্গনা নদীর ঠাণ্ডা জলে তোরা স্নান করে আমাদের কোলে চেপে যাস আমরা তোদের ঠিক গরম করে দেব।”
ধীমান একটু নেচে নেয় সেই শুনে, “এইবারে কে কার কোলে চাপবে সেটা কিন্তু আমি ঠিক করে দেব।”
রূপক হেসে শান্তনুর কাঁধ চাপড়ে বলে, “কি বস, আমরা সবাই কিন্তু ঠোঁট কাটা, মুখে কোন ট্যাক্স নেই।”
মনীষার দিকে চোখ টিপে উত্তর দেয় শান্তনু হেসে বলে, “তাতে অসুবিধে নেই শুধু আমার বউটা যেন বেঁচে ফিরে আসে।”
সেই শুনে লজ্জায় মনীষার কান গাল লাল হয়ে যায়। এমন একটা দলের সাথে আগে কোনোদিন কোথাও যায়নি। ওরা যে এতটা ঠোঁট কাটা আর এই সব বিষয়ে কথাবার্তা বলবে সেটা ভাবেনি।
দেবায়ন চোখ টিপে শান্তনুকে জিজ্ঞেস করে, “বস, আজ রাতে কি কান খুচাবে না অন্য কিছু?”
শান্তনু মুখ গোমড়া করে বলে, “না রে ভাই, কান খুচাবো….. কি করি বলো পাউরুটিতে জ্যাম লেগে আছে। আশা করি কাল শেষ হয়ে যাবে।”
মনীষা সেই শুনে ওকে মারতে শুরু করে দেয় আর বাকিরা সবাই হেসে ফেলে।
হৃষীকেশ থেকে কাক ভোরে ওরা সবাই বাসে চেপে বেড়িয়ে পড়ে ঘুট্টুর উদ্দেশ্যে। একশো সত্তর কিলোমিটার পথ, এরপরে যেতে হবে তেহেরি, ঘনসিয়ালি হয়ে ওদের যেতে হবে ঘুট্টু। তেহেরি শহর আর নেই, বাঁধের ফলে গঙ্গার স্তর বেড়ে গেছে যার ফলে শহর উঠে গেছে। হৃষীকেশ ছাড়াতেই ওদের বাস ধীরে ধীরে সরু আঁকা বাঁকা পাহাড়ি পথে ধরে চড়াই উঠতে শুরু করে দেয়। সরু পথ, দুই ধারে উঁচু সবুজ পাহাড়। বাস একবার ডানদিকে মোড় নেয় কিছুপরেই আবার বাম দিকে মোড় নেয়। বারকোট পার হতেই পায়েল বমি করতে শুরু করে দেয়, সেই দেখাদেখি সঙ্গীতা আর শ্রেয়ার বমি পেয়ে যায়। বারকোটের পরে একটা ছোট বসতি জায়গায় থেমে জল খাবার খেয়ে একটু বিশ্রাম নিয়ে আবার যাত্রা শুরু। প্রবাল, পরাশরের শরীর একটু খারাপ হয়ে যায় পাহাড়ের আঁকা বাঁকা পথে। শান্তনু দেবায়ন বেশ চিন্তায় পড়ে যায়। জারিনা সঙ্গে ওষুধ এনেছিল সেই গুলো খেয়ে মোটামুটি সবাই সুস্থ হয়ে যায়। তেহেরি ড্যাম ছাড়িয়ে, গঙ্গা পার হয়ে আরো দুর ওদের যেতে হবে। তেহেরি পৌঁছাতেই দুপুর, ঘনসিয়ালি পৌঁছাতে আরো বেশ কয়েক ঘণ্টা লেগে যাবে। ড্যামের জন্য বড় ভারী গাড়ি চলার ফলে তেহেরির পর থেকেই রাস্তার অবস্থা খুব খারাপ। ঘনসিয়ালির পরে বলতে গেলে রাস্তা আর নেই। কালী বাগি থেকে ছোট ব্রিজ পার করে ভিলাঙ্গনা নদীর ওপাড়ে যায় ওদের বাস। দুর উত্তরে সুউচ্চ তুষারে ঢাকা হিমালয় পর্বত মালা দেখে সবার দেহ মন ভালো হয়ে ওঠে। ওই দুরের তুষারে ঢাকা কোন এক শৃঙ্গের নীচে ওদের গন্তব্য স্থল। খাটলিং গ্লেসিয়ার গলে তৈরি হয়েছে ভিলাঙ্গনা নদী।
ঘুট্টুতে একটা রেস্ট হাউসে ওদের থাকার ব্যাবস্থা করা হয়েছিল। মেয়েদের সেই রেস্ট হাউস বিশেষ পছন্দের নয়, বিশেষ করে পায়েল আর অনুপমার। সেটা হওয়ার কথা, বড় লোকের মেয়ে সর্বদা ফাইভ স্টার হোটেলে থেকে এসেছে, ছোট রেস্ট হাউসে কি করে কাটাবে।
এই নিয়ে অনুপমার সাথে শান্তনুর একটু বচসা হয়ে যায়, “এই খানে রাত কাটানো যায় নাকি? সবাই এত ক্লান্ত হয়ে এসেছে আর এই জায়গায় কিছুই পাওয়া যায় না।”
শেষ মেশ দেবায়ন ওদের বুঝিয়ে বলে, “পুচ্চি আমরা এইখানে ফাইভ স্টার রিসোর্টে কাটাতে আসিনি। এটাই শেষ রেস্ট হাউস, এরপরে টেন্টে থাকতে হবে।”
অনুপমা ঝাঁঝিয়ে ওঠে, “বেশ তো, টেন্টে থাকব সেটাই ভালো।”
দেবায়ন শান্তনুকে অন্যদিকে পাঠিয়ে অনুপমাকে শান্ত করে, “আচ্ছা বাবা, এর চেয়ে ভালো কিছু এইখানে পাওয়া সম্ভব নয়। একটা রাতের ব্যাপার, এরপরে যখন ঘুরে আসবি তখন দেখবি এই রেস্ট হাউস তোর কাছে ফাইভ স্টার মনে হবে।”
কথাটা না বুঝতে পেরে অনুপমা পায়েল ওকে জিজ্ঞেস করে, “কি করে?”
দেবায়ন হেসে বলে, “এরপরে শুধু মাত্র টেন্ট আর আমাদের মুখ দেখতে পাবি। এই ঘুট্টুর পর থেকে আমরা জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে সরু পাহাড়ি রাস্তা ধরে হেঁটে হেঁটে এগিয়ে যাবো। দশ দিন পরে যখন ক্লান্ত হয়ে ফিরে আসব তখন এই বিছানা দেখে মনে হবে, আহহহ….. কি আরাম।”
দুইজনেই সেই শুনে হেসে ফেলে। উত্তরের তুষারে ঢাকা পর্বত মালা থেকে বয়ে আসা কনকনে ঠাণ্ডা হাওয়া ওদের কাঁপিয়ে দেয়। ঘুট্টুতে ওদের জন্য গাইড, রঞ্জিত আর জনা দশেক পোর্টার(কুলি) তৈরি ছিল। রঞ্জিতের বাড়ি তেহেরিতে ছিল, কিন্তু সেই শহর উঠে যাওয়ার পরে নিজের গ্রামে ফিরে যায়। এইখানে অথবা উত্তরকাশিতে গিয়ে বিভিন্ন ট্রেকিংয়ের গাইডের কাজ করে। মালবাহী ছেলে গুলো বাড়ি এই ঘুট্টু, গাঙ্গি, রীহ এইসব ছোট ছোট গ্রামে। রেস্ট হাউসের সামনের খোলা জায়গায় রাতের বেলা ক্যাম্প ফায়ার তৈরি করে সবাই গল্পে মেতে ওঠে। রঞ্জিত জানিয়ে দেয়, ঘুট্টু থেকে রীহ দশ কিলোমিটার পথ। রাস্তার প্রথম দিকে একটু চরাই তারপরে বন জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে পায়ে হাঁটা পথে ওদের এগোতে হবে। এতটা পথ বাসে যাত্রা করার পরে কারুর দেহে বেশিক্ষণ রাত জাগার শক্তি ছিল না। কোন রকমে খাওয়া সেরে স্লিপিং ব্যাগের ভেতরে সবাই সেঁধিয়ে যায়।
ভোর পাঁচটায় ওদের গাইড রঞ্জিত এসে ওদের ঘুম থেকে উঠিয়ে দেয়। ঘুম ঘুম চোখে দেবায়নকে জড়িয়ে ধরে অনুপমা কাতর কণ্ঠে বলে, “উঠতে হবে নাকি? কটা বাজে?”
দেবায়ন গভীর নিদ্রায় ছিল তাই ওর কথা শুনতে পায়নি। স্লিপিং ব্যাগে অন্যদিকে ফিরে কাত হয়ে আবার ঘুমিয়ে পড়ে। অনুপমা ওকে আরো জড়িয়ে ধরে স্লিপিং ব্যাগের মধ্যে সেঁধিয়ে যায়। এই ঠাণ্ডায় ওর গায়ের গরমে সকালের ঘুম আর কিছুতেই ছাড়তে চায় না। এমন সময়ে শ্রেয়া আর ঋতুপর্ণা এসে ওদের ধাক্কা দিয়ে তুলে দেয়। বেশি দেরি করলে রীহ পৌঁছাতে দেরি হয়ে যাবে। সবার এই প্রথম বার ট্রেকিংয়ে যাওয়া তাই সবাই বেশ উৎসাহী। গরম জলে স্নান সেরে, ব্রেকফাস্ট সেরে সবাই বেরিয়ে পড়ে রীহের উদ্দেশ্যে। খাবারের ব্যাটারি, তাঁবুর সরঞ্জাম, বড় বড় ব্যাগ নিয়ে মালবাহী ছেলেরা অনেক আগেই রীহের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়ে দিয়েছে। ওরা আগে থেকেই একটা ভালো জায়গা দেখে তাঁবু খাটিয়ে দুপুরের রান্নার যোগাড় করবে বলে ওদের গাইড রঞ্জিত ওদের জানিয়ে দেয়। ছেলেদের পিঠে নিজেদের একটা ব্যাগ আর মেয়েদের কাছে ছোট ব্যাগে শুধু মাত্র জলের বোতল। ঋতুপর্ণা, অনুপমা আর জারিনা বেশ শক্তপোক্ত, তাই নিজেদের ছোট ব্যাগ নিজেরাই বহন করে। অন্যদিকে শ্রেয়া নিজের ব্যাগ রুপকের ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়েছে, মনীষা এক প্রকার খালি হাতেই নাচতে নাচতে যাত্রা শুরু করে। অঙ্কন পায়েলের পাশ আর ছাড়ে না, সেই নিয়ে ওদের সবার মধ্যে বেশ হাসাহাসি হয়।
 
Like Reply
পর্ব ২৭ (#০৭)

রঞ্জিত জানায়, প্রথম কিছুটা খুব কষ্ট হবে তারপরে একবার হাঁটার ছন্দ পেয়ে গেলে তখন হাঁটতে আর কষ্ট হবে না। ঠিক তাই হল, শুরুতে চড়াই, আশেপাশে বিশেষ গাছ পালা নেই শুধু মাত্র উঁচু উঁচু পাইন গাছ ছাড়া। দুর উত্তরের কনকনে ঠাণ্ডা হাওয়া ওদের সামনে থেকে দৌড়ে এসে ওদের ঘায়েল করতে প্রস্তুত। একপাশে গভীর খাদের মধ্যে নিয়ে ভিলাঙ্গনা নদী কুলুকুলু শব্দে, মত্ত ছন্দে পাহাড় কেটে, পাথরের বাঁধা উপেক্ষা করে বয়ে চলেছে মোহনার পানে। তেহেরিতে গিয়ে এই নদী ভাগীরথীর সাথে মিশে নীচে নেমে যাবে গঙ্গা হিসাবে। চারাপাশের মনোরম দৃশ্য দেখতে দেখতে সবাই ধীর পায়ে এগিয়ে যায়।
যাত্রা শুরুর পূর্বে রঞ্জিত ওদের সবার হাতে একটা লাঠি দিয়ে দিয়েছিল, বলেছিল এই লাঠির ভর দিয়ে পাহাড়ে চড়তে বেশ সুবিধা হয়। প্রথমে সবাই লাঠি দেখে হাসাহাসি করেছিল কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যেই লাঠিটাই সর্বস্ব সম্বল বলে মনে হয় সবার। দলের একদম শুরুতে রঞ্জিত চলছে আর একদম শেষে মনীষা আর শান্তনু।
কিছদুর গিয়ে অনুপমার পা আর চলে না। এক হাত দেবায়নের কাঁধে ভর দিয়ে কোনরকমে হাঁটতে হাঁটতে বলে, “উফফফ মাগো এই জায়গায় কেউ আসে নাকি?”
শ্রেয়া ওইদিকে রুপকের ওপরে ঝাঁঝিয়ে ওঠে, “তুমি বেড়ানোর আর জায়গা খুঁজে পেলে না?”
বাকি মেয়েদের চেয়ে ঋতুপর্ণা আর জারিনা বেশ উচ্ছল প্রানবন্ত, ওদের দেখে অনুপমা আর মনীষা বুকে বল পায়। অনুপমা জারিনাকে জিজ্ঞেস করে, “কি রে মেয়ে, এত নাচছিস কেন?”
জারিনা ওর কথা শুনে হেসে বলে, “অনুদি, সত্যি বলছি এইরকম জায়গায় আনার জন্য অনেক ধন্যবাদ।”
অনুপমা হেসে বলে, “ওরে আমি আনিনি তোদের, এই সব প্ল্যান ওই রূপকের।”
শ্রেয়া হেসে বলে, “এক বার কোলকাতা ফিরি তারপরে দেখি কে কাকে ধন্যবাদ দেয়।”
পেছন থেকে শান্তনু চেঁচিয়ে বলে, “একবার খাটলিং পৌঁছে এই কথা বল। তখন ধন্যবাদ দেওয়ার ভাষা খুঁজে পাবে না।”
হাঁটতে হাঁটতে অনেকেই হাঁপিয়ে ওঠে, একটু থেমে জল মুখের মধ্যে নিয়ে আবার হাঁটা শুরু। এখন আর ওদের বিশেষ ঠাণ্ডা লাগছে না, অনেকেই জ্যাকেট খুলে দিয়েছে। ভোরের আলো সদ্য স্নান করিয়ে দেয় আশেপাশের সবুজে ঢাকা গাছ পালা ঝোপ ঝাড় কে। আরো একটু হেঁটে যাওয়ার পরে সামনে আসে ঘন জঙ্গল। সেই জঙ্গল দেখে অনেকের ভয় করে, এই রকম জঙ্গল ওরা শুধু মাত্র সিনেমাতে দেখে ছিল। ওদের মনে হয় সত্যি সত্যি ওরা কোন রোমাঞ্চকর সিমেনার মধ্যে ঢুকে পড়েছে।
অনুপমার এখন আর ক্লান্তি লাগে না, অন্য মেয়েদের সাথে গল্প করতে করতে হেঁটে চলে জঙ্গলের ভেতর দিয়ে। মনীষা শান্তনুকে ছেড়ে ওদের কাছা কাছি চলে এসেছে। একদম শুরুর দিকে ঋতুপর্ণা আর জারিনা, তাদের পেছনে শ্রেয়া, পায়েল অনুপমা সঙ্গীতা আর মনীষা। অনুপমা একবার পেছনের দিকে দেখে। ধীমান, দেবায়ন আর রূপক একদম পেছনে, নিশ্চয় কোথাও বসে সিগারেট ফুঁকছে ওরা। শান্তনু এগিয়ে গিয়ে ওদের হাঁটতে বলে, বলে যে ধীমান দেবায়ন একটু মদ্য সেবন করে আসছে। সেই শুনে অনুপমা একটু রেগে যায়, ঘুরতে এসেও মদ খেতে হবে নাকি?
চেঁচিয়ে ডাক দেয় দেবায়নকে, “পুচ্চু তাড়াতাড়ি চলে আয়।”
গাছ পালা ভর্তি জঙ্গলের মাঝে সরু পায়ে হাঁটা পথ, রীহ, গাঙ্গি ওইদিকে আরো অনেক ছোট ছোট গ্রাম আছে সেই গ্রামের বাসিন্দারা বাইরের জগত থেকে এক প্রকার বিচ্ছিন্ন থাকে, এই পথে যেতে যেতে ওদের মনে হয় যেন কোন স্বপ্ন পুরীর মধ্যে দিয়ে হেঁটে চলেছে ওরা। এক মাস আগেই বর্ষা শেষে গাছ পালা সব সবুজ পাতায় ঢাকা, পায়ের তলায় স্যাঁতস্যাঁতে মাটি, চারপাশে ছোট ছোট জংলি ফুলের গাছ, লতাপাতা, কোথা থেকে কোন পাখীর ডাক শোনা যায়, একপাশে একটা ছোট নাম না জানা পাহাড়ি নদী গর্জন করতে করতে এগিয়ে চলেছে মোহনার পানে।
শ্রেয়া ওকে বলে, “ইসসস আমার না গান গাইতে ইচ্ছে করছে।”
মনীষা বলে, “গাও, কে বারন করেছে।”
শ্রেয়া গেয়ে ওঠে, “ইয়ে কাঁহা আআআআ গয়ে হম” অনুপমাকে জড়িয়ে ধরে বলে, “তেরে সাথ চলতে চলতে….. তেরি বাহো মে ইয়ে জানম….. মেরি জিস্মোওও যা পিঘলতে…..”
অনুপমা গায়, “তু বদন মেয় তেরা ছায়া, তু না হ’ত মেয় কাঁহা হু….. ”
ঋতুপর্ণা সামনে থেকে চেঁচিয়ে বলে, “আরে আরে হল হল না, অমিতাভের কবিতা কেউ বলবে না নাকি?”
শান্তনু গেয়ে ওঠে, “ইয়ে রাত হ্যায় ইয়া তুমহারি জুলফে খুলি হুয়ি হ্যায়…..”
মনীষা হেসে বলে, “ডার্লিং এটা আমার চুল…..”
সবাই হেসে ফেলে। গান গাইতে গাইতে জঙ্গল পার করতে করতে ওদের রীহ পৌঁছাতে পৌঁছাতে দুপুর গড়িয়ে যায়। পাহাড়ের কোলে একটা সমতল খাদের পাশে অবস্থিত পটে আঁকা ছবির মতন ছোট গ্রাম রীহ, বাইরের জগত থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন। এই গ্রামে ছোট একটা রেস্ট হাউস আর বেশ কয়েকটা বাড়ি ঘর আছে। ওদের জন্য আগে থেকেই ওদের গাইড জায়গা ঠিক করে রেখেছিল। মাল বাহকেরা ওদের অনেক আগেই ওইখানে পৌঁছে গিয়েছিল। ওরা সবাই এইখানকার বাসিন্দা, রোজদিন এই পাহাড়ি রাস্তায় যাতায়াত করে, ঘুট্টু থেকে রীহ, দশ কিলোমিটার পথ অনুপমাদের ছয় ঘন্টা লেগে যায়, কিন্তু মাল নিয়ে ছেলেগুলো অনায়াসে তিন ঘন্টায় সেই পথ পাড় করে উপস্থিত। মাল বাহক ছেলেরা তাঁবু খাটিয়ে দিয়েছে, একজন ওদের জন্য রান্নাও শুরু করে দিয়েছে। সবার আলাদা আলাদা ছোট ছোট তাঁবু, গোল করে বাঁধা হয়েছে, মাঝখানে খালি জায়গা। একপাশে টয়লেট করার তাঁবু, একপাশে রান্না করার তাঁবু, অন্যপাশে মাল বাহকদের জন্য তাঁবু খাটান হয়ে গেছে।
ছয় ঘন্টা হেঁটে অনেকের পায়ের অবস্থা খুব খারাপ। ওদের একটু দূরে দুটো দল তাঁবু গেড়েছে। রঞ্জিত খোঁজ নিয়ে ওদের জানায়, একটা জার্মানি ফ্রান্সের দল, যারা ওডেন’স কল যাবে, আর দ্বিতীয় একটা পাঞ্জাবী দল যারা মাসার তাল যাবে। বিদেশী দলটার সরঞ্জাম অনেক বেশি, কারন ওডেন’স কল নাকি রীতিমত মাউন্টেনিয়ারিং করে উঠতে হয়। ওডেন’স কল হয়ে ওরা কেদারনাথ যাবে, অনেক দিনের পরিকল্পনা।
তাঁবুর মাঝখানের খালি জায়গায় পৌঁছেই অনুপমা সবুজ ঘাসে ঢাকা মাটির ওপরে সটান শুয়ে পড়ে, ওর পাশে দেবায়ন শুয়ে পরে। দেবায়নকে জড়িয়ে ধরে প্রেমাবেগে বলে, “ইসসস জীবনটা এইভাবে কেটে গেলে বড় ভালো হত।”
দেবায়ন ওকে জড়িয়ে গালে ছোট চুমু খেয়ে বলে, “কি করতিস এইখানে?”
দুরের ছোট ছোট বাড়ি দেখিয়ে বলে, “ওর একটার মধ্যে আমাদের একটা বাড়ি হত, তুই ওই খেতে কাজ করতিস আমি তোর জন্য ঘরে বসে রান্না করতাম।”
দেবায়ন হেসে ওর বাম হাতের অনামিকা দেখিয়ে বলে, “আর এটার কি হত?”
অনুপমা স্মিত হেসে বলে, “তুই পাশে থাকলে এই হীরের আংটি জলে ফেলে দিতে পারি।” বলেই ওর গলা জড়িয়ে গালে একটা চুমু খায়।
ওদের ওইভাবে জড়াজড়ি করে ঘাসে শুয়ে থাকতে দেখে ঋতুপর্ণা আর শ্রেয়া কাছে এসে ফেরিওয়ালার মতন একটা সুর টেনে বলে, “চাই….. নাকি কন্ডোম চাইইইই….. দশ টাকায় তিনটে কন্ডোম….. বেশ ভালো কন্ডোম, ঢুকলে পরে মনে হবে না…..”
দেবায়ন ঋতুপর্ণার হাত ধরে টেনে পাশে বসিয়ে বলে, “রাতে চলে আসিস কন্ডোম ছাড়াই ঢুকিয়ে দেব…..”
গরম জলে হাত মুখ ধুয়ে সবাই খেতে বসে যায়। আলুসিদ্ধ আর খিচুড়ি রান্না করেছিল সঙ্গে আসা রান্নার লোক। সবাই বেশ ক্লান্ত, খেয়েদেয়েই সবাই ঘুমিয়ে পরে। তাঁবুতে ঢুকে অনুপমা দেবায়ন কে জড়িয়ে সঙ্গে সঙ্গে নিদ্রা দেবীর কোলে ঢলে পড়ে।
ছেলেরা অনেক আগেই উঠে গিয়েছিল। অনুপমা উঠে দেখে পাশে দেবায়ন নেই, বাইরে ওদের হাসির আওয়াজ শোনা যায়। চোখ ডলতে ডলতে বাইরে বেড়িয়ে দেখে মাঝখানের ফাঁকা জায়গায় অনেক শুকনো কাঠ জড় করা হয়েছে, রাত বাড়লে ওই কাঠে আগুন জ্বালিয়ে বনফায়ার করা হবে। বেশ মজা হবে। বিকেলে যখন সবাই ওঠে ততক্ষণে সূর্য পাটে বসার সময় হয়ে গেছে। চারপাশের ঘন জঙ্গল থেকে ভেসে আসা ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক, আরো কত রকমের পোকা মাকরের গুনগুন শব্দ, একপাশ থেকে ভেসে আসা একটানা নদীর কুলুকুলু ধ্বনি, পরিবেশ টাকে মোহাচ্ছন করে দেয়।
রঞ্জিত জানায়, দুটো মাল বাহি ছেলের বাড়ি এই গ্রামেই তাই বাকি মাল বাহি ছেলেরা আজ রাতে ওর বাড়িতে থেকে যাবে। আগামী কাল সকালে রীহ থেকে গাঙ্গি যাওয়া হবে।
চা খাবার দাবার খেতে খেতে সন্ধ্যে নেমে যায়। শুকনো কাঠে আগুন জ্বালিয়ে বনফায়ার জ্বালানো হয়। চারপাশে গোল করে সবাই জোড়ায় জোড়ায় বসে গল্পে মেতে ওঠে। রূপক ধীমান ইতিমধ্যে মদ তৈরি করতে শুরু করে দিয়েছে। মেয়েরা জানিয়ে দেয় ওর মদ খাবে না, তবে শ্রেয়া আর অনুপমার একটু রাম নিতে আপত্তি নেই।
কি করা যায়, কি করা যায়, ঋতুপর্ণা বলল, “একটা খেলা খেললে কেমন হয়?”
সবাই জিজ্ঞেস করে, “কি?” ঋতুপর্ণা উত্তর দেয়, “ট্রুথ ওর ডেয়ার।”
দেবায়ন বলে, “খেলতে পারি তবে যা বলা হবে সেটা যেন কেউ না না করে আর যা জিজ্ঞেস করা হবে তার যেন সঠিক উত্তর পাওয়া যায়।” সবাই হ্যাঁ হ্যাঁ করে ওঠে, বেশ মজা হবে।
ধীমান বাকিদের মানে, প্রবাল, অঙ্কন শান্তনু মনীষা এদের বলে, “দেখ ভাই আমরা সবাই বন্ধু আর খুব খোলামেলা। এইখানে সঙ্কোচ করলে কিন্তু চলবে না।”
মনীষা আর জারিনা একটু দোনামনা করার পরে সম্মতি জানায়।
সঙ্গীতাকে প্রবাল এক প্রকার পেঁচিয়ে ধরে। অনেকক্ষণ পরে প্রবাল মুখ খোলে, “ঠিক কি করতে হবে এই খেলায়?” সঙ্গীতা ওকে খেলার নিয়ম কানুন বুঝিয়ে দেয়। প্রবাল স্মিত হেসে মেনে যায়।
দেবায়ন মনীষাকে দেখে বলে, “তুমি টিম লিডারের বউ সুতরাং তোমার থেকেই শুরু করা যাক।” মনীষা মাথা দুলিয়ে সম্মতি দিলে দেবায়ন ওকে জিজ্ঞেস করে, “তুমি বল, ট্রুথ ওর ডেয়ার?”
মনীষা উত্তর দেয়, “ট্রুথ।”
রূপক হাঁ হাঁ করে হেসে ওঠে, “ওকে ম্যাডাম, শুনেছিলাম তোমার ব্রেডে গতকাল জ্যাম লাগানো ছিল সেটা কি এখন লাগানো চলছে না হয়ে গেছে?”
মনীষা মুখ কাঁচুমাচু করে মিচকি হেসে বলে, “লাগানো শেষ হয়ে গেছে।”
দেবায়ন শান্তনুর কাঁধ চাপড়ে বলে, “ব্যাস তাহলে পাঁচদিনের কাজ আজ রাতে পূরণ করে নিও।”
ওর পাশে শান্তনু বসে, রূপক ওকে জিজ্ঞেস করে, “ট্রুথ ওর ডেয়ার?”
শান্তনু বলে, “ডেয়ার।”
ধীমান ওকে বলে, “আচ্ছা বেশ, তোমার সুপারম্যান পছন্দ না অরন্যদেব পছন্দ? যাকে পছন্দ সেই মতন কাপড় পর।”
শান্তনু হেসে বলে, “আরে বাবা এটা কলেজে অনেকবার হয়ে গেছে অন্য কিছু দাও।”
মনীষা হাঁ হাঁ করে ওঠে, “কলেজে হয়েছে তো কি হয়েছে। তোমাকে করতে হবে এটাই নিয়ম।”
উত্তর থেকে ভেসে আসা কনকনে ঠাণ্ডা হাওয়ায় ওরা সবাই পাশের সঙ্গীর কোলে সেঁধিয়ে যায়। দেবায়ন একপ্রকার অনুপমাকে কোলের মধ্যে বসিয়ে নিয়েছে। হাতে মদের গেলাসের সাথে সাথে সঙ্গে আনা মাংসের কাবাব খেতে খেতে সবাই হেসে ফেলে মনীষার কথা শুনে।
অগত্যা শান্তনু উঠে দাঁড়িয়ে বলে, “অরন্যদেব করতে পারি।” সবাই হেসে বলে তাই কর। শান্তনু প্যান্ট খুলে, জ্যাকেট খুলে জামা আর জাঙ্গিয়া পরে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকে। ঠাণ্ডায় ওর লিঙ্গের অবস্থা খারাপ, সেটা আর নিজের জায়গায় খুঁজে পাওয়া যায়না।
সেই দেখে ধীমান হেসে মনীষাকে বলে, “ম্যাডাম, ওর যে বাঁড়া নেই আজ রাতে কি করে কাটাবে?” আবার হাসির কলতান ওঠে।
তার পাশে ধীমান আর ঋতুপর্ণা। এইবারে মনীষা ঋতুপর্ণাকে জিজ্ঞেস করে, “ট্রুথ ওর ডেয়ার।” ঋতুপর্ণা উত্তরে ট্রুথ বলে। শ্রেয়া সঙ্গে সঙ্গে ওকে জিজ্ঞেস করে, “প্রথম বার তোর পেছনে কে ঢুকিয়েছিল?”
ঋতুপর্ণা লজ্জায় পড়ে ধীমানের দিকে তাকায়। ধীমান ভুরু কুঁচকে ওকে বলে, “আমার দিকে এইভাবে তাকিয়ে কি হবে ডার্লিং, উত্তর দাও।”
ঋতুপর্ণা মাথা চুলকে মুখ কাঁচুমাচু করে উত্তর দেয়, “নার্সিং পড়ার সময়ে একটা বয় ফ্রেন্ড ছিল, সঞ্জীব।”
সবাই হিহি করে হেসে ওঠে। ধীমান চোখ বড় বড় করে বলে, “ওই ছোট্ট বাঁড়া শেষ পর্যন্ত তোমার পেছনে ঢুকিয়েছিল?”
ঋতুপর্ণা ওকে মারতে মারতে বলে, “উত্তর দিয়ে দিয়েছি ব্যাস আর নয়।”
এরপরে ধীমানের পালা, ধীমান সঙ্গে সঙ্গে ডেয়ার করতে রাজি হয়ে যায়। খেলা এইভাবে চলতে থাকে একের পর এক। প্রবালকে বলা হয়, সঙ্গীতার যোনি রসের ভিস্কোসিটি কত। জারিনাকে বলা হয়, পরাশরের লিঙ্গের ভলিউম মেপে জানাও। পায়েল বুঝতে পারে অঙ্কনকে ওরা সবাই বেশ ফাঁদে ফেলবে। এইভাবে এক এক করে সবাইকে বেশ বেকায়দায় ফেলে খেলা ঘুরে চলে।
খেলা চলতে চলতে অন্ধকার চিরে একটা ছেলের আবির্ভাব হয়। ভুত দেখার মতন সবাই চমকে ওঠে। ছেলেটা মনে হয় ওদের পোর্টার দলের কেউ, জ্যাকেট পরা, মাথায় টুপি।
দেবায়নকে এসে বলে, “বাবু কিছু টাকা চাই।”
দেবায়ন অবাক হয়ে প্রশ্ন করে, “তুই কে?”
রঞ্জিত ওদের সঙ্গে ছিল না, অনেক আগেই খেয়ে দেয়ে নিজের তাঁবুতে ঢুকে ঘুমিয়ে পড়েছে। পোর্টার দের কারুর নামধাম ওদের জানা নেই। তাও ছেলেটাকে দেখে ওদের দলের পোর্টার বলেই মনে হয় দেবায়নের। ছেলেতা উত্তরে বলে ওদের দলের রাজু পোর্টার। মদ খাওয়ার জন্য একটু টাকা চায়।
দেবায়ন পকেট থেকে টাকা বের করে দিতে গেলে ছেলেটা বলে, “না বাবু, মানে আপনাকে একটু আমার সাথে আসতে হবে। মানে ওইদিকে আমাদের পোর্টার দলের সর্দার দাঁড়িয়ে আছে, ওর হাতে টাকা দিলে ভালো।”
দেবায়ন অনুপমাকে কোল থেকে নামিয়ে বলে, “এই শোন আমি ওদের টাকা দিয়ে আসছি, ব্যাস এই যাবো আর আসব।”
অনুপমা ওর হাত ধরে বলে, “তাড়াতাড়ি আসিস, তুই না থাকলে একদম ভালো লাগে না।”
ওর কপালে চুমু খেয়ে দেবায়ন চলে যায়। ট্রুথ আর ডেয়ার খেলা আবার শুরু হয়ে যায়। খেলা চলতে থাকে কিন্তু অনুপমার মন পড়ে থাকে দেবায়নের জন্য। অনেকক্ষণ হয়ে গেছে এখন আসার আর নাম নেই। কোথায় গেল ছেলেটা, বলে গেল এখুনি আসছি। বাকিরা এখন খেলায় মত্ত, কিন্তু অনুপমা বারেবারে দেবায়নের যাওয়ার পথের দিকে চেয়ে দেখে। নদীর কুলুকুলু ধ্বনি, পাহাড় থেকে ভেসে আসা কনকনে ঠাণ্ডা হাওয়া ওর মনের গভীরের উৎকণ্ঠা আরো চাগিয়ে দেয়। বারেবারে বাম হাতের অনামিকার জ্বলজ্বলে আংটির দিকে তাকায় আর পেছন ঘুরে যেদিকে দেবায়ন গেছে সেদিকে চেয়ে থাকে। সামনে আগুন জ্বলছে, সবাই বেশ মজা গল্প করছে কিন্তু অনুপমার মন আর কিছুতেই মানে না। পোর্টারদের টাকা দিতে এত দেরি লাগে নাকি?
শ্রেয়া ওর পাশে এসে জিজ্ঞেস করে, “কি রে মন খারাপ লাগছে নাকি?”
অনুপমা ম্লান হেসে মাথা দুলিয়ে বলে, “হ্যাঁ রে এতক্ষণ হয়ে গেল এখন আসছে না।”
আরো কিছুক্ষণ কেটে যায়। দেবায়ন গেছে প্রায় এক ঘন্টা হতে চলল, এত দেরি করা উচিত নয়। শুধু মাত্র টাকা দেবে আর চলে আসবে। শেষ পর্যন্ত থাকতে না পেরে রূপক আর ধীমানকে বলে, “এই প্লিস তোরা একটু দেখে আয় না দেবু কোথায় গেছে।”
রূপক হেসে ওর কথা উড়িয়ে দিয়ে বলে, “আরে বাবা এই নির্জন স্থানে আর কি হবে। শালা ওই পোর্টার দের সাথে হয়ত দেশী গিলতে বসে গেছে চলে আসবে।”
অনুপমা কাতর কণ্ঠে ওকে অনুরোধ করে, “প্লিস, একবার, এক ঘন্টা হয়ে গেল।”
ধীমান কিছু একটা বলতে যায়, ঋতুপর্ণা ঝাঁঝিয়ে ওঠে, “তোমাদের একবার যেতে কি হয়েছে? গিয়ে দেখো না দেবায়ন কোথায় গেল।”
পরাশর প্রবাল উঠে দাঁড়িয়ে বলে, “আচ্ছা আচ্ছা আমরা যাচ্ছি।”
পরাশর চলে গেল, ধীমান রূপক চলে গেল। ওদের খেলা ভেঙ্গে গেল। অনুপমা প্রবল উৎকণ্ঠায় উঠে দাঁড়িয়ে যেদিকে ওরা গেছে সেদিকে একভাবে তাকিয়ে থাকে। একপাশে পায়েল অন্য পাশে শ্রেয়া ওকে প্রবোধ দেয়, এই ত চলে আসবে এত চিন্তা করছিস কেন? কিন্তু অনুপমার মন আর মানে না। বারেবারে আঙ্গুলের আংটি ঘষে দেখে আর বুকের মধ্যে চেপে ধরে। হঠাৎ করে এক দমক ঠাণ্ডা হাওয়া ওকে এসে কাঁপিয়ে দেয়।
অঙ্কন দৌড়াতে দৌড়াতে এসে দিদির সামনে দাঁড়িয়ে হাঁপাতে হাঁপাতে বলে, “দিদিভাই দিদিভাই, দেবায়নদাকে পাওয়া যাচ্ছে না।”
শ্রেয়ার ভাবে অঙ্কন মজা করছে তাই জিজ্ঞেস করে, “কি উল্টোপাল্টা বলছিস তুই। কেন বেচারির সাথে এই সময়ে মজা করছিস?”
অনুপমা ওই কথা শুনে কেঁপে ওঠে, হটাত করে ওর বুক ফাঁকা হয়ে যায়। অঙ্কন হাঁপাতে হাঁপাতে ওদের বলে, “দিদিভাই ওদিকে চল…..” বলে দুর নদীর দিকে আঙ্গুল দিয়ে দেখায়।
আপনা হতেই অনুপমার হাত মুঠি হয়ে যায়, ওর চোখ জোড়া ভরে ওঠে, গায়ে কাঁটা দিয়ে ওঠে। পুচ্চুকে পাওয়া যাচ্ছে না মানে? কি বলতে চাইছে ভাই? না, মদ খেয়ে কিছু হয়ে গেল না তো? যদি অঙ্কন মজার ছলে বলে থাকে তাহলে ওকে মেরে ফেলবে।
ধীমান এমন সময়ে দৌড়াতে দৌড়াতে ওদের কাছে আসতেই অনুপমা কাঁপতে কাঁপতে ওকে জিজ্ঞেস করে, “দেবুকে পেলি?”
ধীমান মাথা নাড়িয়ে উত্তর দেয়, “না রে কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না।”
শ্রেয়া ওকে জিজ্ঞেস করে, “রূপক আর শান্তনু কোথায়?”
ধীমান ওদের উত্তর দেয়, খাদের কিনারায়, নদীর পাশে দাঁড়িয়ে আছে, ওরা। খাদের কথা শুনে অনুপমার মাথা ঘুরে যায়, শরীর টলতে শুরু করে দেয়। না, এটা হতে পারে না। মাথার ওপরে আকাশ বনবন করে পাক খেতে শুরু করে, ধীমানের চেহারা, শ্রেয়া পায়েলের চেহারা ধীরে ধীরে কেমন আবছা হয়ে যায় অনুপমার চোখের সামনে। টলতে টলতে পরে যাওয়ার আগেই ধীমান ওকে ধরে ফেলে।
Like Reply
পর্ব সাতাশ সমাপ্ত
Like Reply
পাপ কাম ভালোবাসা [পর্ব ২৮] প্রতিশোধ না পরিণতি?


ট্রুথ এন্ড ডেয়ার ঘুরতে ঘুরতে, অনুপমার কাছে চলে আসে। রূপক ওকে জিজ্ঞেস করাতে অনুপমা একবার দেবায়নের দিকে তাকিয়ে উত্তর দেয়, “ট্রুথ।”

সঙ্গে সঙ্গে সঙ্গীতা ওকে প্রশ্ন করে, “দেবায়ন অনেকের সাথে শুয়েছে, এইবারে বুকে হাত দিয়ে বল এই সব জানার পরে তোর কোনোদিন হিংসে হয়নি?”

অনুপমা বড় বেকায়দায় পড়ে যায়, দেবায়নের হাত বুকের কাছে টেনে ওর দিকে তাকিয়ে থাকে একভাবে। সত্যি বলতে একবার খুব খারাপ লেগেছিল যখন জানতে পারে দেবায়ন ওর মায়ের সাথে সহবাস করেছে। ওর চোখের ভাষা দেবায়ন পড়ে ফেলে কানেকানে বলে, আসল সত্য বাঁচিয়ে অতি কৌশলে যেন উত্তর দেয়।

অনুপমা মিচকি হেসে উত্তর দেয়, “হ্যাঁ একবার হয়েছিল, তবে আমি প্রান দিয়ে জানতাম যে পুচ্চু শত জনের সাথে শুয়ে আসার পরেও ওর বুকের মধ্যে শুধু মাত্র আমার জায়গা থাকবে, তাই পরে আর হিংসে হয়নি।”

রূপক, ধীমান একসাথে ওকে প্রশ্ন করে, কে কে। অনুপমা সুকৌশলে সেই প্রশ্ন এড়িয়ে বলে, “একবার প্রশ্নের উত্তর দেব ব্যাস হয়ে গেছে উত্তর এইবারে পুচ্চুর টার্ন।”

এমন সময়ে একটা অন্ধকার ফুঁড়ে একটা ছেলের আবির্ভাব হয়। ছেলেটাকে দেখে মনে হল ওদের মাল বাহকের মধ্যে কেউ। ছেলেটা দেবায়নের কাছে এসে অনুরোধ করে, “বাবু কিছু টাকা চাই।”

দেবায়ন একবার আপাদমস্তক ছেলেটাকে দেখে জিজ্ঞেস করে, “তুই কে?”

ছেলেটা অবাক হয়ে উত্তর দেয়, “বাবু আমি রাজু পোর্টার। আপনাদের খাবারের ব্যাটারি নিয়ে একদম আগে ছিলাম।”

দেবায়ন মাথা দোলায়, “আচ্ছা, কিসের জন্য টাকা চাই?”

ছেলেটা মুখ কাঁচুমাচু করে উত্তর দেয়, “বাবু আমরা একটু মদ খাবো তাই টাকা চাই।”

এতক্ষণ অনুপমাকে কোলে জড়িয়ে ধরে আগুনের সামনে বসে ছিল দেবায়ন, তাও পকেট থেকে পার্স বের করে ছেলেটাকে জিজ্ঞেস করে, “কত টাকা চাই তোদের?

ছেলেটা একটু হেসে আমতা আমতা করে বলে, “না মানে, ওইপাশে আমাদের দলের লোকেরা দাঁড়িয়ে আছে। ওইখানে গিয়ে দিলে বড় ভালো হয়।”

“আচ্ছা” দেবায়ন মুখ কাঁচুমাচু করে অনুপমাকে ছেড়ে দিয়ে উঠে দাঁড়ায়। অনুপমা কিছুতেই ওকে ছাড়তে চায় না, উল্টে ছেলেটাকে বলে, “তোমরা টাকা নিয়ে চলে যাও আবার ওকে ওইখানে কেন যেতে হবে।”

ছেলেটা আমতা আমতা করে বলে, “না মানে একটু কথা ছিল তাই।”

দেবায়ন মাথা নাড়িয়ে অনুপমাকে বলে, “আচ্ছা বাবা, দেখি না ওরা কি বলতে চাইছে।” বাকিদের দিকে তাকিয়ে বলে, “তোরা চালিয়ে যা, আমি একটু আসছি।”

ছেলেটার সাথে দেবায়ন গ্রামের অন্যপাশে, ঘন জঙ্গলের দিকে হাঁটা লাগায়। যেতে যেতে এপাশ ওপাশ দেখতে দেখতে ছেলেটাকে জিজ্ঞেস করে ওর বাড়ি কোথায়, কবে থেকে এই পোর্টারের কাজ করছে ইত্যাদি। ছেলেটা উত্তর দেয়, কিছু ওর কানে ভেসে আসে কিছু শুনতে পায়না। দেবায়ন একটু তাড়াতাড়ি হাঁটছিল আর ছেলেটা ওর পেছনে পেছনে হাঁটছিল।

কথাবার্তা থামিয়ে দেবায়ন হাঁটতে হাঁটতে রাতের সৌন্দর্যে হারিয়ে যায়। একটা সিগারেট ধরিয়ে, চারপাশে তাকিয়ে দেখে। মাথার ওপরে ঘন কালচে নীল আকাশে কোটি কোটি তারার ঝিকিমিকি, আকাশ গঙ্গা পরিস্কার এই আকাশে দেখা যায়, যেটা শহরের আকাশে এক দুর্লভ দৃশ্য। উত্তরের সুউচ্চ হিমালয় থেকে ভেসে আসা কনকনে ঠাণ্ডা হাওয়া ওর শরীর কাঁপিয়ে দেয়। হাঁটতে হাঁটতে ওরা দুইজনে একটা খাদের কিনারায় চলে আসে। একপাশ থেকে ছোট ছোট ঝর্না বয়ে গভীর খাদের নীচে বয়ে চলা পাহাড়ি নদীর সাথে মিশে গেছে। সরু রাস্তার অন্যপাশে ঘন বন, রডেনড্রন, পাইন কেদার ইত্যাদি উঁচু উঁচু পাহাড়ি গাছপালায় ঘেরা, একটানা ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক কানে ভেসে আসে।

হাঁটতে হাঁটতে খাদের কিনারায় এসে দেখে কেউ দাঁড়িয়ে নেই। পেছন ঘুরে ছেলেটাকে জিজ্ঞেস করতে যাবে, কি রে….. কিন্তু পেছনে কেউ নেই। হটাত ওর বুক ছ্যাঁত করে ওঠে। আসলে কে এই ছেলেটা, কি কুমতলবে ওকে এই নির্জনে ডেকে এনেছে? দূরে গ্রামের ছোট ছোট ঘর বাড়ি গুলোর আলো অনেক আগেই নিভে গেছে। আরো দূরে ওদের বন ফায়ারের আলো দেখা যাচ্ছে। আপন মনে হাঁটতে হাঁটতে অনেকদুরে চলে এসেছে সেটা বুঝতে বাকি থাকে না।

হটাত ওর পেছনে জঙ্গলের মধ্যে থেকে খসখসে পাতার ওপরে কারুর পা ফেলার আওয়াজে চমকে ওঠে। ঘুরে গাছের দিকে তাকানোর আগেই ওর মাথার পেছনে কেউ একজন একটা লাঠি দিয়ে সজোরে বাড়ি মারে। এমনিতে চারপাশ অন্ধকার, তারপরে এই ঠাণ্ডায় আচমকা মাথার পেছনে লাঠির বাড়ি খেয়ে চোখে অন্ধকার দেখে দেবায়ন।

মাথা ধরে পেছনে ঘুরে তাকিয়ে দেখে অন্ধকারে দাঁড়িয়ে এক পুরুষের মূর্তি, হাতে একটা লোহার রড। মাথার পেছনে হাত দিয়ে গরম রক্ত অনুভব করতে পারে। হাত মুঠি করে দাঁতে দাঁত পিষে আগন্তকের দিকে এগিয়ে যায়, ঠিক তখনি ওই আগন্তুক দ্বিতীয় বার ওর মাথার ওপরে রড দিয়ে বাড়ি মারে। চোখে সর্ষে ফুল দেখে দেবায়ন

ওই অন্ধকারে ঢাকা আগন্তুকের দিকে চেঁচিয়ে ওঠে, “মাদারচোদ, তুই কে?”

পরিস্কার ইংরেজিতে গম্ভির চাপা কণ্ঠে গর্জে ওঠে অন্ধকারে ঢাকা সেই আগন্তুক, “তোকে মারার জন্য অনেকদিন থেকেই ফন্দি করছিলাম। শেষ পর্যন্ত এইখানে তোকে একা পেয়ে গেলাম।”

দেবায়ন মাথায় হাত দিয়ে বুঝতে চেষ্টা করে এটা কার কণ্ঠস্বর। বেশ চাপা গভীর কণ্ঠস্বর, শুনেই মনে হচ্ছে আসল আওয়াজ ঢাকার জন্য গলার স্বর ভারী করে কথা বলছে সেই আগন্তুক। ইংরেজিতে কথা বলছে, নিশ্চয় বুঝতে দিতে চায় না কোথাকার মানুষ, বাঙ্গালী হতে পারে অবাঙ্গালী হতে পারে। মুখের ওপরে মাফলার বাঁধা, অন্ধকারে মুখ দেখা যাচ্ছে না কিছুতেই, গায়ে লম্বা ওভারকোট, কত বয়স সেটাও জানা সম্ভব হচ্ছে না। কপাল বেয়ে সরু রক্তের রেখা দেখা দেয়। টাল সামলাতে না পেরে দেবায়ন সামনের আগন্তুকের দিকে ঢলে পড়ে।

সঙ্গে সঙ্গে ওই আততায়ী ওর কলার ধরে গলা টিপে ধরে চাপা ভারী কণ্ঠে বলে ওঠে, “সবাই ভাববে তুই পা ফসকে এই নদীতে পরে গেছিস। কেউ জানবে না তোর আততায়ী কে।” বলেই এক ধাক্কা মেরে খাদের মধ্যে ফেলে দেয়।

হঠাৎ করে শুন্যে ভাসমান মনে হয় নিজেকে। চোখের সামনে শুধু মাত্র অনন্ত অন্ধকার, তাও হাতড়ে হাতড়ে কিছু বুনো ঝোপ ঝাড় আঁকড়ে ধরে প্রানে বাঁচতে চেষ্টা করে দেবায়ন। ওপরে দিকে তাকিয়ে দেখে ওই আততায়ী খাদের কিনারায় দাঁড়িয়ে ঠিক ওর ওপরে। এক হাত বাড়িয়ে আততায়ীর পা ধরে নিচের দিকে টানতে চেষ্টা করে কিন্তু ওই আততায়ী লোহার রড দিয়ে ওর হাতে বাড়ি মারে এবং সেই সাথে হাতের ওপরে পা দিয়ে পিষে দেয়।

ব্যাথায় আর্তনাদ করে ওঠে দেবায়ন সেই সাথে গর্জে ওঠে, “তোকে হাতে পেলে দেখে নেব।”

অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে আততায়ী, “বাঁচলে তবে তো দেখবি। আমার সর্বস্ব ছিনিয়ে নিয়েছিস, মৃত্যুই তোর আসল পরিণতি। এটাই আমার প্রতিশোধ।”

বলেই ওর মাথায় রডের বাড়ি মারতে যায়, দেবায়ন মাথা সরিয়ে নিতেই রডের বাড়ি সোজা ওর কাঁধে এসে লাগে আর ওর কাঁধের একটা হাড় নড়ে যায়। ধরে থাকা ঝোপের ওপর থেকে ওর হাতের থাবা হালকা হয়ে যায়। লম্বা চওড়া দেহের ভার মাধ্যাকর্ষণ শক্তি নিচের দিকে টানতে শুরু করে দেয়। শেষ পর্যন্ত আর ধরে রাখতে না পেরে ওর হাত আপনা হতেই সেই মাটি ছেড়ে দেয়। শুন্যে ভাসমান হয়ে দেবায়নের দেহ নিচের দিকে গড়িয়ে পড়তে শুরু করে দেয়।

নীচে নদীর জলে পড়ার আগে একবার ওর বুক ডাক ছাড়ে, “পুচ্চি ইইইইইইইইই……” হয়তো এই আওয়াজ কোনোদিন ওর পুচ্চির কানে যাবে না, হয়ত এই রাতের নিস্তব্ধতা খানখান করে চলে যেতেও পারে।

ঝপাং, করে দেবায়নের অর্ধ অচৈতন্য দেহ কনকনে বরফ গলা জলের মধ্যে গড়িয়ে পরে। ওর জ্যাকেট ভিজে যায়, ওর জামা ওর জিন্স ভিজে যায়। পিঠের পেছনে একটা পাথর এসে ধাক্কা খায়, মনে হল শির দাঁড়ার কয়েকটা হাড় নড়ে উঠল। প্রবল স্রোতস্বিনী পাহাড়ি নদী ওর দেহ ভাসিয়ে নিয়ে চলে এক অজানা পথের দিকে। জানে না কোথায় যাচ্ছে জানে না ওর পুচ্চি কোনোদিন ওর সন্ধান পাবে কি না।

ধীরে ধীরে দেবায়নের চোখের পাতা ভারী হয়ে আসে। চারপাশে শুধু ঘন কালো অন্ধকার আর মৃত্যুর হাতছানি ছাড়া আর কিছু নেই। কানে ভেসে আসে নদীর গর্জন তা ছাড়া আর কোন আওয়াজ দেবায়নের অচৈতন্য কর্ণ কুহরে প্রবেশ করে না। এই জীবনে অনেক পাপ করেছে, নিজের প্রেমিকা অনুপমার মায়ের সাথে যৌন সহবাসে লিপ্ত হয়েছে। এক সময়ে নিজের গর্ভ ধারিনি মা’কেও সেই চরম কামের বশে জড়িয়ে ধরেছিল। বড় পাপ, এযে বড় পাপ। কামের বশে অনেকের সাথে যৌন সঙ্গমে লিপ্ত হয়েছে। ব্যাবসার ক্ষেত্রে অনন্যার দেহ এমন অনেক মডেলের দেহ ব্যাবহার করেছে। পুনের হোটেলের মালিক রজত পানিক্করের থেকে ওর হোটেল ছিনিয়ে নিয়েছে, এমন ভাবে বহু জায়গায় ব্যাবসার মারপ্যাচে কাজ হাসিল করেছে। যেখানে টাকা দিয়ে কাজ হয়েছে সেখানে টাকা দিয়েছে, যেখানে মেয়েদের শরীর দিয়ে কাজ হয়েছে সেখানে অনন্যা, তনুজার মতন মেয়েদের ব্যাবহার করেছে, যেখানে ওকে হুমকি দিতে হয়েছে সেখানে রীতিমতন হুমকি দিয়ে কাজ হাসিল করেছে। অনেকের অনেক গোপন খবর জেনে ফেলেছে এর মধ্যে, তাহলে কি তাদের মধ্যে কেউ ওকে খুন করল? কে হতে পারে এই আততায়ী? সোমেশ কাকু? ধৃতিমান, সূর্য, সত্যজিত অনিমেশ না ভাড়া করা কেউ? কে ভাড়া করতে পারে একে? উত্তর জানা নেই দেবায়নের কারন ওই আততায়ী ওকে মারার আগে উত্তর দিয়ে যায়নি। ওই আততায়ীর পরিচয় পাওয়া আর সম্ভব নয় কারন ওর দেহ এই প্রবল নদীর ধারায় এক অজানা পথে পাড়ি জমিয়ে দিয়েছে। ওই আততায়ী আসলে কে? কি কারনে ওর এই ভীষণ পরিণতি ঘটল? কে নিল প্রতিশোধ, না ওর দুষ্কর্মের পাপের পরিণতি?

কনকনে ঠাণ্ডা জলে ভাসতে ভাসতে দেবায়নের শরীর নিঃসাড় হয়ে যায়। একটুক্ষণ না অনেকক্ষণ, সময়ের ঠিক পায় না। একসময়ে দেবায়ন চোখ মেলে অবাক হয়ে যায়। চারপাশের অন্ধকার কেটে ওর চারপাশে জোরালো সাদা আলো আর মৃদু কুয়াশায় ঢাকা। নিচের দিকে তাকিয়ে দেখে, হালকা মোলায়েম মেঘের ভেলার ওপরে দেবায়ন বসে। চারপাশে তুলোর মতন হালকা মোলায়েম মেঘ ঘুরে বেড়াচ্ছে। যেদিকে তাকায় সেদিকে শুধু মাত্র জোরালো সাদা আলোয় ভর্তি। নির্মল শীতল মলয় বইছে চারপাশে, আলোয় কোন ঠাণ্ডা ভাব অথবা গরম ভাব নেই, মনে হল যেন চির বসন্তের এক স্থানে পৌঁছে গেছে। হাতের দিকে তাকাতেই চমকে ওঠে, ছোট ছোট দুটো হাত, আঙ্গুল গুলো ছোট ছোট। পঁচিশ বছরের একটা ছেলের এত ছোট আঙ্গুল কি করে হতে পারে? মুখে গালে হাত দিয়ে দেখে, না এই চেহারা ওর নয়। এই গাল বেশ ফুলো ফুলো, বুকের দিকে, নিচের দিকে তাকিয়ে দেখে বুঝতে পারে দেবায়ন আর পঁচিশ বছরের যুবক নয়, ছোট এক শিশু দেবায়ন শুধু মাত্র একটা লাল প্যান্ট আর একটা সাদা গেঞ্জি পরে মেঘের ভেলায় বসে।

এমন সময়ে সামনের কুয়াশা কাটিয়ে এক সুঠাম পুরুষের আবির্ভাব হয়। সেই সুপুরুষ ব্যাক্তি কে দেখেই দেবায়ন চিনতে পারে, ওর বাবা, সায়ন্তন বসাক দাঁড়িয়ে। ওর বাবা ওর দিকে দুই হাত বাড়িয়ে এগিয়ে এসে সামনে হাঁটু গেড়ে বসে পড়ে। মিষ্টি হেসে দেবায়ন ছোট ছোট পায়ে বাবার দিকে হাত বাড়িয়ে এগিয়ে যায়।

ঠিক তখনি বহু দুর থেকে এক মিষ্টি নারী কণ্ঠের আর্তনাদ ওর কানে ভেসে আসে, “পুচ্চুউউউউউউ…… তুই কোথায়?”

শিশু দেবায়ন এদিক ওদিকে তাকিয়ে দেখে। ওই নারী কণ্ঠ কাকে ডাক দেয়? এই পুচ্চুকে? পেছন ফিরে তাকিয়ে দেখে ওর মা দুই হাত বাড়িয়ে ছল ছল চোখে ওর দিকে কাতর ভাবে তাকিয়ে হাত নাড়ছে। দুই বড় বড় কাজল কালো চোখে আশ্রুর বন্যা বইয়ে ওর মা ওকে ডাক দেয়, “আয় বাবা, আমার কোলে ফিরে আয় সোনা। তুই ছাড়া আমার আর কেউ নেই রে…..”

সামনে ওর বাবা ওর সামনে হাঁটু গেড়ে বসে। দেবায়ন একবার মায়ের দিকে তাকায় একবার বাবার দিকে তাকায়। কার কাছে যাবে কিছুতেই ঠিক করে উঠতে পারে না। শেষ পর্যন্ত বাবার দিকে তাকিয়ে আধো আধো কণ্ঠে বলে, “তুমি চকোলেট এনেছ?”

ওর বাবা হাতের মুঠি মেলে একটা চকোলেট দেখিয়ে মাথা দুলিয়ে ওকে ডাক দেয়। ঘাড় ঘুরিয়ে মায়ের দিকে তাকায় দেবায়ন। মায়ের ঠিক পেছনে এক অতীব সুন্দরী বাচ্চা মেয়ে দাঁড়িয়ে। মাকে চিনতে অসুবিধে হয় না কিন্তু পেছনে দাঁড়ানো, রুপোলী সুতোর বোনা জালের পোশাক পরিহিত সেই সুন্দরী কন্যের পরিচয় জানে না দেবায়ন। ওই সুন্দরী মেয়েটার টানাটানা চোখ জোড়া ছলছল করে ওঠে ওকে দেখে।

ওর মা আবার ওকে ডাক দেয়, “বাবারে আমাকে ছেড়ে যাস না। তুই ছাড়া আমার আর কেউ নেই রে বাবা।”

পেছনে দাঁড়ানো মেয়েটার ঠোঁট জোড়া ফুলে ওঠে, গোলাপি গাল বেয়ে অঝোর ধারায় অশ্রু ঝড়ে পরে। দেবায়ন একবার বাবার হাতের দিকে দেখে, একটা ছোট চকোলেট হাতে ওর বাবা স্মিত হেসে ওর জন্য অপেক্ষা করছে।

দেবায়ন মিষ্টি হেসে মাকে বলে, “মা মা, বাবা আমার জন্য চকোলেট এনেছে। এই বারে আমি বাবার সাথে যাই।

ওর মা আর্তনাদ করে ওঠে, “না বাবা দয়া করে আমাকে একা ফেলে যাস নে…..”

দেবায়ন ধীরে ধীরে বাবার দিকে হাঁটতে শুরু করে দেয়। আবার কানে ভেসে আসে বহুদুর থেকে ভেসে আসা এক নারী কণ্ঠের আর্তনাদ, “পুচ্চুউউউউউউ তুই কোথায়?”

দেবায়ন জানে না কে এই পুচ্চু। দেবায়ন জানে না হঠাৎ করে এত ছোট কি করে হয়ে গেল। দেবায়ন জানে না, কি করে বাবার দেখা পেল। দেবায়ন জানে না কি করে এই সাদা মেঘের রাজ্যে এসে পৌঁছে গেল। অনেক প্রশ্নের উত্তর দেবায়নের অজানা রয়ে যায় তাও বাবার দিকে এগিয়ে যায়।
 
Like Reply
     পাপ কাম ভালোবাসা [পর্ব ২৯][শেষ পর্ব]


পর্ব ২৯ (#০১)



মুখের ওপরে জলের ছিটা পড়তেই অনুপমার জ্ঞান ফেরে। চোখ খুলে শ্রেয়াকে দেখেই ডুকরে কেঁদে ওঠে অনুপমা, “পুচ্চুকে পেলি?”
শ্রেয়া ওর কপালে হাত বুলিয়ে মৃদু মাথা নাড়িয়ে বলে, “না রে এখন পাওয়া যায়নি। তবে তুই চিন্তা করিস না…..”
চারপাশে সবাই ওকে ঘিরে দাঁড়িয়ে, সবার চোখে মুখে চাপা উৎকণ্ঠার ছাপ। সবাই এইখানে আনন্দ ফুর্তি করতে এসেছিল, অকস্মাৎ এই দুর্ঘটনায় সবাই সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছে। রূপক, শান্তনু রঞ্জিত খাদের চারপাশে খুঁজে খুঁজে কোন চিহ্ন না পেয়ে হয়রান হয়ে ফিরে এসেছে। অনুপমা চুপচাপ বসে ভাঙ্গা বুক আর অসীম বেদনা নিয়ে সবার দিকে ছলছল চোখে তাকায়। এক ধাক্কায় ওর সাধের পৃথিবী উজাড় হয়ে গেছে। ওর মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে। দেবায়ন ছাড়া কোলকাতা ফিরে যাওয়া ওর পক্ষে কিছুতেই সম্ভব নয়। দেবায়ন ছাড়া নিজেকে ভাবতে পারছে না কিছুতেই। ওর অঙ্গে, ওর হৃদয়ের সর্বত্রে ওর ভালোবাসার ছাপ অঙ্কিত। অনামিকার আংটি ওকে বারবার মনে করিয়ে দেয় এই ডিসেম্বরে ওদের বিয়ের কথা চলছিল। স্বপ্ন দেখেছিল এই পাহাড়ের কোলে ঘর বাঁধবে। শ্রেয়ার বাহুপাশ থেকে থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে কুঁকড়ে বসে যায়। ওকে ছাড়া ওর জীবনে রঙ উবে গেছে।
অনেকক্ষণ চুপ করে বসে থাকার পরে গাইড রঞ্জিতকে অনুপমা জিজ্ঞেস করে, “তোমার দলের একটা পোর্টার এসেছিল ওকে ডাকতে, সে নিশ্চয় জানে দেবায়ন কোথায়। তাকে ডাক।”
রূপক উত্তরে বলে, “না রে ওই ছেলেটা ভুয়ো। রাজু নামে আমাদের দলে কোন পোর্টার নেই। আমার মনে হয়…..”
অনুপমা বিস্ফোরিত চোখে রূপকের দিকে তাকিয়ে থেকে জিজ্ঞেস করে, “ওই নামে পোর্টার নেই মানে? তাহলে পুচ্চুকে…..”
দৃষ্টি আবার ঝাপসা হয়ে আসে অনুপমার, কিছু আর ভাবতে পারছে। কম্পিত কণ্ঠে রূপককে জিজ্ঞেস করে, “তুই কোথায় কোথায় পুচ্চকে খুঁজেছিস?”
রূপক, শান্তনু সবাই জানায় ওরা চারদিকে দেবায়নকে খুঁজেছে কিন্তু কোথাও ওর চিহ্ন পাওয়া যায়নি। অনুপমা নিজেই ওকে খুঁজতে যাওয়ার ইচ্ছা প্রকট করে। সবার মানা করা সত্ত্বেও অনুপমা একাই যেদিকে দেবায়ন গিয়েছিল সেদিকে হাঁটা দেয়। ওকে ওইভাবে উন্মাদিনীর মতন হাঁটতে দেখে পায়েল আর শ্রেয়া দৌড়ে এসে ওকে ধরে ফেলে। কিন্তু অনুপমা ওদের হাত ছাড়িয়ে হাঁটতে হাঁটতে খাদের কিনারায় চলে আসে। চারপাশ অন্ধকারে ঢাকা, শুধু মাত্র ঝিঁঝিঁ পোকার আওয়াজ আর গভীর খাদের নীচে বয়ে চলা পাহাড়ি নদীর গর্জন ছাড়া আর কোন শব্দ শোনা যায় না।
গলা ছেড়ে ডাক দেয় অনুপমা, “পুচ্চুউউউউউউ…… তুই কোথায়?”
ওর হৃদয় ভাঙ্গা বেদনা যুক্ত কণ্ঠস্বর সামনের পাহাড়ে আর জঙ্গলে প্রতিধ্বনি হয়ে ওর কানে ফিরে আসে। অনুপমা বারেবারে ডাক দেয় কিন্তু পাথরের পাহাড় থেকে কোন উত্তর আসে না। বাকিরা সবাই টর্চ নিয়ে খাদের নিচের দিকে খোঁজে কিন্তু কোথাও দেবায়নের চিহ্ন পাওয়া যায় না। এপাশ ওপাশ খুঁজতে খুঁজতে অঙ্কন কিছু একটা দেখতে পেয়ে বাকিদের ডাক দেয়। অনুপমা দৌড়ে যেতেই অঙ্কন ওর হাতে দেবায়নের পার্স ধরিয়ে দেয়। পার্স দেখেই অনুপমার চোখ ছলছল করে ওঠে, বুকের মধ্যে পার্স লুকিয়ে দেবায়নের নাম ধরে বারেবারে ডাক দেয়। কিন্তু ওর শূন্য ডাকের সারা আর পাওয়া যায়না। টর্চের আলোয় খাদের পাশে রক্তের দাগ দেখে অনুপমার বুক আতঙ্কে কেঁপে ওঠে। শেষ পর্যন্ত পুচ্চু কি সত্যি সত্যি ওকে ছেড়ে চলে গেছে?
দেবায়নের বিরহে সম্পূর্ণ উন্মাদ হয়ে যায় অনুপমা। বাম হাত বুকের কাছে চেপে পুনরায় গলা ফাটিয়ে ডাক দেয় অনুপমা, “পুচ্চুউউউউ প্লিস সোনা তুই এইভাবে আমাকে ছেড়ে যেতে পারিস না।”
টর্চের আলোয় চারপাশে খুঁজে দেবায়নের পার্স ছাড়া কিছুই পাওয়া যায়না। খাদের কিনারা থেকে বেশ কিছু মাটি পাথর ধ্বসে গেছে। ওই দেখে বাকিদের ধারনা হয় যে দেবায়ন এই খাদের মধ্যে হারিয়ে গেছে। কিন্তু অনুপমার হৃদয় কিছুতেই মানতে নারাজ যে দেবায়ন আর ওদের মাঝে নেই। অনুপমা খাদের কিনারায় চুপচাপ কুঁকড়ে বসে পড়ে, দেবায়নের পার্স বুকের কাছে চেপে ধরে উচ্চস্বরে বারেবারে ডাক দেয়। শ্রেয়া, পায়েল ওকে ধরে থাকে পাশে বেদনায় অনুপমা খাদের মধ্যে ঝাঁপ দেয় এই আশঙ্কায়। বাকিরা সবাই টর্চ নিয়ে এপাশ ওপাশ খুঁজে ক্লান্ত এক সময়ে টেন্টের দিকে হাঁটা দেয়, কিন্তু অনুপমা ওই জায়গা থেকে কিছুতেই নড়তে চায় না। অনুপমা জেদ ধরে বসে থাকে, দড়ি নিয়ে আসো, এই রাতেই দড়ি বেয়ে ওই খাদের মধ্যে নামতে চায়। নদীর তীরে নিশ্চয় কোথাও দেবায়নকে খুঁজে পাওয়া যাবে। এই কনকনে ঠাণ্ডা জলে দেবায়ন বেশিক্ষণ থাকলে ওর হাইপোথারমিয়া হয়ে যাবে, ওর মৃত্যুর আশঙ্কা আরো বেড়ে যাবে।
অনুপমাকে কিছুতেই শান্ত করা সম্ভব হয় না দেখে শেষ পর্যন্ত শ্রেয়া ওকে খুব বকুনি দিয়ে বলে, “এই রাতে এই খাদের মধ্যে নামবি, তুই পাগল হয়েছিস নাকি?”
সারা রাত অনুপমা ওই খাদের কিনারায় কনকনে ঠাণ্ডায় বসে থাকে। নিরুপায় হয়ে শ্রেয়া আর পায়েল একটা স্লিপিং ব্যাগ ওর শরীরে জড়িয়ে দেয়। জানে ওই খাদে না নামা পর্যন্ত অনুপমাকে এইখান থেকে নড়ানো সম্ভবপর নয়। অগত্যা বাকিরাও সবাই পালা করে অনুপমাকে পাহারা দেয়।
সারা রাত বসে ভাবে অনুপমা, কে ওর দেবায়ন কে এই নির্জন স্থানে এসে মারতে চেষ্টা করতে পারে। ওর সন্দেহের তালিকার মধ্যে অনেকের নাম আসে, কিন্তু কারুর দিকে সন্দেহের তীর হানার আগে তথ্য প্রমান সংগ্রহ করতে হবে। ওকে এই ভাবে কাঁদলে চলবে না। এই খবর মামনির কানে পৌঁছালে মামনি খুব ভেঙ্গে পরবে, মামনিকে সামলাতে হবে।
সকালের সূর্য পুব দিক থেকে উঁকি মারতেই অনুপমা রঞ্জিতকে অনুরোধ করে দেবায়নকে খোঁজার জন্য। নিজেই খাদের কিনারা ভালো ভাবে তল্লাসি চালিয়ে বেশ কিছু তথ্য উদ্ধার করতে সক্ষম হয়। দেবায়নের পায়ে স্নিকার পরা ছিল, সেই পায়ের ছাপের সাথে সাথে আরো এক জোড়া জুতোর ছাপ পাওয়া যায়। জুতোর ছাপে বুঝতে অসুবিধে হয় না যে দেবায়ন আর আততায়ীর মাঝে বেশ ধস্তাধস্তি হয়েছিল। আশেপাশে ঝোপ ঝাড়ে রক্তের দাগ দেখতে পেয়েই অনুপমার বুক কেঁপে ওঠে। খাদের বেশ নীচে বেশ কিছু ঝোপ ঝাড় উপড়ে গেছে, মাটি ধসে নিচের দিকে নেমে গেছে। একদিকের একটা ঝোপের মধ্যে একটা সিগারেট প্যাকেট আর একটা আধা খাওয়া সিগারেট পাওয়া যায়। সিগারেট প্যাকেট দেখে অনুপমা জানায় এই ব্রান্ডের সিগারেট দেবায়ন খায়। আততায়ীর পায়ের ছাপ জঙ্গলের দিকে মিলিয়ে গেছে। রূপক ধীমান প্রবাল সবাই জঙ্গলের মধ্যে ঢুকে পড়ে সেই আততায়ীকে খোঁজার জন্য কিন্তু পায়ের ছাপ কিছু দুর গিয়ে পাতা ভর্তি মাটির ওপরে হারিয়ে যাওয়াতে আর খুঁজে পাওয়া সম্ভব হয় না। সবাই ভীষণ উদ্বেগ নিয়ে ফিরে আসে জঙ্গল থেকে।
রঞ্জিত গ্রাম থেকে আরো ছেলে জোগাড় করে দড়ি দিয়ে খাদের মধ্যে নদীর কিনারায় নামিয়ে তল্লাসি চালায়। শান্তনু জানায় এটা খুনের মামলা সুতরাং একবার পুলিসকে খবর দেওয়া উচিত। রীহ থেকে সব থেকে কাছের পুলিস স্টেসান, ঘনসিয়ালি পৌঁছাতে একদিন লেগে যাবে। শান্তনু আর পরাশর, একজন পোর্টার নিয়ে ঘুট্টু হয়ে ঘনসিয়ালি চলে যায় পুলিসকে খবর দিতে।
সন্ধ্যের পরে অনুপমার বাবা, মিস্টার সোমেশ সেন রীহতে এসে হাজির হন। সেই সাথে শান্তনু আর পরাশর পুলিস নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে যায়। বাবাকে দেখে খুব অবাক হয়ে যায় অনুপমা। বাবাকে কে খবর দিয়েছে, বাবা কি করে এত তাড়াতাড়ি এইখানে এসে পৌঁছাল?!
অনুপমা অবাক হয়ে বাবাকে জিজ্ঞেস করে, “তোমাকে এই ঘটনার খবর কে দিল?”
শান্তনু জানায়, “আমি তোমার বাড়িতে ফোন করেছিলাম। কাকিমা জানালেন যে সেন কাকু দেরাদুনে কাজের জন্য এসেছিলেন।”
অনুপমার মনে ভয় ঢোকে, যদি এই দুর্ঘটনার খবর মামনির কানে পৌঁছায় তাহলে কি হবে। চরম উৎকণ্ঠায় শান্তনুর দিকে ছলছল চোখে তাকাতে শান্তনু জানায়, “চিন্তা নেই দেবায়নের মাকে এই বিষয়ে কিছুই এখন জানানো হয়নি।”
অনুপমা হিমশীতল চাহনি নিয়ে বাবার দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করে, “তোমার দেরাদুনে আসার কথা ছিল না। হঠাৎ এমন কি কাজ পড়ল যে তুমি দেরাদুনে এসেছ?”
মেয়ের হিমশীতল কণ্ঠস্বর শুনে সোমেশবাবু অবাক হয়ে গম্ভীর কণ্ঠে বলেন, “কি বলতে চাস তুই?”
অনুপমা একভাবে বাবার চোখের দিকে তাকিয়ে থেকে উত্তর দেয়, “না কিছু না, এখন কিছুই বলতে চাই না আমি।”
পুলিস ইনস্পেকটর রোহন কাটিয়াল ঘটনা স্থল তল্লাসি করে সুত্র প্রমান একত্রিত করে ফেলেন। অনুপমা পুলিসকে জানায় একটা পাহাড়ি কম বয়সী ছেলে দেবায়নকে ডাকতে এসেছিল, ওকে খুঁজে বের করতে পারলে দেবায়নের খবর আর আততায়ীর পরিচয় জানা সম্ভব হবে। পুলিস খুনের মামলার দায়ের করে জানায় ওদের থানায় স্কেচ আর্টিস্ট নেই। আততায়ীর সাথের ছেলেটার স্কেচ তৈরি করার জন্য ওদের নিউ তেহেরি থানায় অথবা দেরাদুনে অথবা হৃষীকেশে যেতে হবে। রূপক একটু আধটু আঁকতে জানত, যে ছেলেটা এসেছিল তার একটা স্কেচ বানিয়ে পুলিসের হাতে তুলে দেয়। পুলিস ইন্সপেক্টর অনুপমাকে জিজ্ঞেস করে ওর কাকে সন্দেহ। অনুপমা ছলছল চোখে সবার দিকে একবার তাকায়। কাকে সন্দেহ করবে অনুপমা? ওর যে চিন্তা শক্তি লোপ পেয়ে গেছে। অনুপমা পুলিসকে জানায় ওদের ব্যাবসা অনেক বিস্তৃত, ব্যাবসা ক্ষেত্রে দেবায়নের প্রচুর শত্রু থাকতে পারে কিন্তু এই নির্জন স্থানে এসে একেবারে ওকে খুন করার মতন পরিকল্পনা করতে পারে এমন কাউকে ওর সন্দেহ হয় না। তবে কারুর দিকে সন্দেহের আঙ্গুল তোলার আগে নিজেই একবার খুনের উদ্দেশ্য যাচাই করে দেখতে চায়। প্রাথমিক তদন্ত সেরে পুলিস ইন্সপেক্টর জানায় এই ছেলেটার খোঁজ পেলে ওদের জানিয়ে দেবে।
সেদিন সারাদিনে নদীর দুইপাড় খানাতল্লাসি চালিয়েও দেবায়নের কোন খোঁজ পাওয়া যায়না। সন্ধ্যের পরেও অনুপমাকে কিছুতেই ওই খাদের কিনারা থেকে নড়ানো সম্ভব হয়না। দুইদিন টানা অনুপমা ওইখানে একভাবে বসে থাকে দেবায়নের প্রতীক্ষায়। ওর মন যে কিছুতেই মানতে নারাজ যে ওর পুচ্চু আর এই পৃথিবীতে নেই।
শ্রেয়া আর পায়েল, ঋতুপর্ণা সঙ্গীতা সবাই ওকে একা ছাড়তে নারাজ। যা হবার সবাই একসাথে মোকাবিলা করবে বলে বদ্ধপরিকর। আশায় বুক বেঁধে বসে থাকে অনুপমা এই বুঝি হটাত করে ওর পুচ্চু ওর পাশে এসে দাঁড়াবে, ওকে জড়িয়ে ধরবে, ওর গালে চুমু খেয়ে বলে উঠবে, “এই একটু লুকিয়ে মজা দেখছিলাম।” কিন্তু না, আরো একদিন কেটে যায়….. দেবায়নের পরশ ওর কাঁধে আর স্পর্শ করে না।
দেবায়নের নিখোঁজ হওয়ার দুর্ঘটনায় সবার হৃদয় ভারাক্রান্ত হয়ে ওঠে, সবাই সারাদিন মন মরা হয়ে বসে থাকে। কেউই আর রীহতে ওইভাবে ভারাক্রান্ত মন নিয়ে পড়ে থাকতে চায় না। পরের দিন পুলিসের লোকের সাথে রঞ্জিতের লোকেরাও খাদের মধ্যে নেমে নদীর দুই পাড়ে খানা তল্লাসি চালায় কিন্তু দেবায়নের কোন চিহ্ন পাওয়া যায়না দেখে সবার সংশয় হয় যে দেবায়ন সলীল সমাধি নিয়েছে। সেই কথা অনুপমা কিছুতেই মানতে চায় না, ওর মন বলছে দেবায়ন এখুনি কোথা থেকে বেড়িয়ে এসে ওকে জড়িয়ে ধরবে। পুলিস, রঞ্জিত শান্তনু সবাই অনুপমাকে অনুরোধ করে কোলকাতা ফিরে যেতে। সবার ধারনা বদ্ধমূল হয় যে দেবায়ন আর বেঁচে নেই, এই উঁচু খাদ থেকে ওই পাহাড়ি নদীতে পরে কেউ বেঁচে থাকতে পারে না।
ভগ্ন হৃদয়ে চতুর্থ দিন সকালে সবাই রীহ থেকে ঘুট্টুর পথ ধরে। ভাঙ্গা বুক নিয়ে অনুপমা এদিক ওদিক তাকাতে তাকাতে আর বারেবারে দেবায়নের নাম ধরে ডাকতে ডাকতে এগিয়ে চলে। বারেবারে ওর আর্ত কণ্ঠস্বর পাহাড়ের গায়ে লেগে ওর কানে ফাঁকা আওয়াজ হয়েই ফিরে আসে। ওদের গাড়ি ঘুট্টুতে অপেক্ষা করছিল। সেই গাড়ি করে সবাই হৃষীকেশের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। গাড়ি ঘুট্টু ছাড়তেই ডাক ছেড়ে কেঁদে ওঠে অনুপমা। শ্রেয়া আর পায়েল ওকে চেপে ধরে সিটে বসিয়ে দেয়। একদম সামনের সিটে চুপচাপ ওর বাবা বসে মেয়ের এই অবস্থা দেখে খুব মুষড়ে পড়েন। কি কারনে মেয়ে ওনাকে সন্দেহ করে বসল সেটা এখন তাঁর কাছে পরিস্কার হলো না।
হৃষীকেশ পৌঁছাতে ওদের বেশ রাত হয়ে যায়। সারা রাত অনুপমা চোখের পাতা এক করতে পারে না, যেই ওর চোখ বুজে আসে তখনি ওর মনে হয় এই বুঝি দেবায়ন এসে ওকে ডাকবে, ওকে জড়িয়ে ধরবে। সারা রাত শ্রেয়া আর পায়েল ওকে ঘিরে বসে থেকে থেকে শেষ রাতে দুইজনে ওর পাশে ঘুমিয়ে পরে। সকালের দিকে অনুপমা নিজের ব্যাগ ঘুছিয়ে নেয়, এই ভাবে দেবায়নকে ফেলে চলে যেতে ওর মন মানতে চায় না।
সকালে অনুপমা শ্রেয়াকে ডেকে বলে, “আমি পুচ্চুকে ছাড়া এইখান থেকে এক পা নড়ব না।”
শ্রেয়া আর পায়েল প্রমাদ গোনে, একা একা ওকে এইভাবে এইখানে ছাড়তে কিছুতেই ওদের মন মানতে চায় না। শ্রেয়া মাথা নাড়িয়ে জানিয়ে দেয়, “তুই না গেলে আমিও কোথাও যাবো না।”
শ্রেয়ার এই গভীর বন্ধু প্রীতি দেখে অনুপমার ভগ্ন হৃদয় আরো ডুকরে কেঁদে ওঠে। ওর হাত ধরে বলে, “তুই কেন এইখানে আমার সাথে পড়ে থাকবি? তুই বাড়ি যা।”
পায়েল ওর হাত ধরে ধরা গলায় উত্তর দেয়, “আমাকে দেবায়ন ফিরিয়ে নিয়ে এসেছিল, ওকে না ফিরিয়ে নিয়ে আসা পর্যন্ত আমিও তোর পাশ ছাড়ছি না।”
ম্লান হেসে উত্তর দেয় অনুপমা, “তুই একটা পাগলী মেয়ে।” ভাইয়ের হাত কাছে টেনে ওর হাতের মধ্যে পায়েলের হাত দিয়ে বলে, “তোর সাথে ভাই আছে রে পায়েল। পুচ্চু ছাড়া আমার আর কে আছে, বল? আমাদের সম্বন্ধে তুই অনেক কিছু জানিস না, সেইগুলো তোর অজানা থাকাই ভালো। শুধু এইটুকু জেনে রাখ পুচ্চু আর মামনি ছাড়া আমার নিজের বলতে এই পৃথিবীতে কেউ নেই। ওকে যদি ফিরিয়ে নিয়ে আসতে পারি তাহলে কোলকাতা ফিরব না হলে আর ফিরব না।”
পায়েল আর অঙ্কন কেঁদে ফেলে ওর কথা শুনে, “দিদিভাই প্লিস এই ভাবে আমাদের ছেড়ে যাস না।”
শ্রেয়া ছলছল চোখে ধরা কণ্ঠে ওকে মৃদু বকুনি দিয়ে বলে, “ফিরবি না মানে? আমার মন বলছে দেবায়নের কিছু হয়নি, ওই শয়তানটা এইখানে কোথাও লুকিয়ে আমাদের সাথে মজা করছে।” চোখের জল মুছতে মুছতে বলে, “একবার শালাকে হাতের কাছে পাই পেদিয়ে বৃন্দাবন দেখিয়ে তবে ছাড়ব।”
অনুপমা ওর হাত ধরে বলে, “শোন শ্রেয়া, তুই আমার একটা কাজ করবি?”
শ্রেয়া ছলছল চোখে জিজ্ঞেস করে, “কি?”
অনুপমা ওর হাত ধরে অনুরোধ করে, “লক্ষ্মীটি তুই বাড়ি ফিরে যা। আমি ওকে খুঁজে তবেই ফিরব। যদি আমি না ফিরি…..”
বলতে বলতে ওর গলা ধরে আসে। শ্রেয়া আর পায়েল ওকে জড়িয়ে ধরে ভেঙ্গে পরে। অনুপমা শ্রেয়াকে বলে, “তাহলে তুই মামনির খেয়াল রাখিস। দেবায়ন ছাড়া মামনির আর কেউ নেই রে…..”
বলতে বলতে ভেঙ্গে পড়ে অনুপমা। ওর কানে মামনির হাহাকার আর্তনাদ ভেসে আসে। একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে ওর মামনির কি অবস্থা হতে পারে সেটা অনুধাবন করতে পেরে হাউহাউ করে কেঁদে ফেলে। চোখের জল মুছে শ্রেয়ার হাত ধরে অনুরোধ করে, “দয়া করে তুই পায়েল আর ভাইয়ের খেয়াল রাখিস আর অফিসের সবার খেয়াল রাখিস।”
 
Like Reply
পর্ব ২৯ (#০২)

কথাটা শেষ করে নিজের ব্যাগ কাঁধে নিয়ে হোটেল থেকে বেড়িয়ে পড়ে অনুপমা। শ্রেয়া আর পায়েল দৌড়ে এসে ওকে বাধা দিতে যায়, কিন্তু অনুপমা মাথা নাড়িয়ে জানিয়ে দেয় দেবায়নের আততায়ীকে শাস্তি না দেওয়া পর্যন্ত আর বাড়ি ফিরবে না। অনুপমা নিজের সিদ্ধান্তে অটল, সবাই কিংকর্তব্যবিমুঢ়ের মতন ওর দিকে চেয়ে থাকে হাঁ করে। রূপক আর ধীমান এগিয়ে আসে ওর সাথে যাওয়ার জন্য।
অনুপমা রূপককে থামিয়ে দিয়ে বলে, “না রে রূপক, শ্রেয়াকে পায়েলকে সামলাতে তোর দরকার পড়বে। তুই চলে গেলে ওরা সবাই অথৈ জলে পড়ে যাবে।”
পরাশর তখন নিজের ব্যাগ কাঁধে ওর পাশে এসে দাঁড়িয়ে বলে, “তুই একা কেন যাবি, আমিও তোর সাথে যাব চল।”
অবাক চোখে অনুপমা ওর দিকে তাকিয়ে ম্লান হেসে জিজ্ঞেস করে, “তুই আবার কেন এত কষ্ট করবি?”
পরাশর ওর কাঁধ চাপড়ে নিচু কণ্ঠে উত্তর দেয়, “তোর অত মাথা ব্যাথা নিতে হবে না। চল বেড়িয়ে পরি অনেকটা পথ আমাদের যেতে হবে। ঘুট্টু পৌঁছাতে পৌঁছাতে সন্ধে হয়ে যাবে।”
অনুপমা ওকে আর মানা করতে পারে না। গাড়িতে ওঠার আগে একবার সবার দিকে তাকিয়ে দেখে অনুপমা। পায়েল, অঙ্কন, শ্রেয়া সবার চোখে জল। জারিনা, সঙ্গীতা ঋতুপর্ণা চুপচাপ দাঁড়িয়ে। ওর বাবা, সোমেশ বাবু নির্বাক হয়ে গেছেন। অঙ্কন ছলছল চোখে দিদির দিকে একভাবে তাকিয়ে থাকে, হয়ত দিদির সাথে এটাই শেষ দেখা।
গাড়ি ছাড়ার আগে অঙ্কন দৌড়ে এসে দিদিকে জড়িয়ে ধরে বলে, “তুই কথা দে ফিরে আসবি।”
ভাইকে কি ভাবে সান্ত্বনা দেবে ভেবে পায় না অনুপমা। নিজেও জানে না যে পথে নেমেছে তাঁর শেষ কোথায়, তাও ভাইকে বুকের মধ্যে জড়িয়ে ধরে প্রবোধ দেয়, “আমি ফিরব, নিশ্চয় ফিরব আর দেবায়নকে সাথে নিয়েই ফিরব।”
আর বেশি দাঁড়ায় না অনুপমা, জানে বেশি দাঁড়ালে ওদের দেরি হয়ে যাবে। পরাশর আর অনুপমা, হৃষীকেশ থেকে আবার ঘনসিয়ালির রাস্তা ধরে। গাড়ি আবার হৃষীকেশ থেকে পাহাড়ি সঙ্কীর্ণ পথ ধরে উঠতে শুরু করে দেয়। এইবারে এই পাহাড় আর ওকে টানে না। চুপচাপ অঙ্ক কষতে শুরু করে অনুপমা। দেবায়নের নিরুদ্দেশের পেছনে কার হাত হতে পারে। ওর বাবা সোমেশ সেন, এত তাড়াতাড়ি রীহতে কি করে পৌছাল? বাবার ওপর থেকে সন্দেহ দুর করার জন্য অনুপমা মাকে ফোন করে।
পারমিতা মেয়ের গলা শুনেই উদ্বেগ জনিত কণ্ঠে জিজ্ঞেস করে, “তুই কেমন আছিস? কি হয়েছে।”
সংক্ষেপে মাকে সব কথা জানিয়ে এটা জানাতে ভোলে না যেন ওর মামনিকে কিছু না জানানো হয়। পারমিতা জানায় দেবশ্রীকে এখুনি কিছুই জানাবে না কিন্তু কতদিন এই সংবাদ দেবশ্রীর কাছ থেকে লুকিয়ে রাখবে। অনুপমা জানায় ঘন সিয়ালি থেকে ফিরে এসে নিজেই মামনিকে জানাবে সম্পূর্ণ ঘটনা তারপরে যা হবার নিজেই মোকাবিলা করবে। জানে একবার এই খবর মামনির কানে পৌঁছালে মামনি মূর্ছা যাবে, কিন্তু কিছুই করার নেই। বাবার কথা জিজ্ঞেস করলে জানতে পারে, ওদের চলে যাওয়ার পরের দিন দেরাদুনের হোটেলের মালিকের সাথে কোন এক বিষয়ে আলোচনা করার জন্য সোমেশ বেড়িয়ে পড়েন। যাওয়ার সময়ে বলে যান ফিরতে বেশ কয়েকদিন দেরি হবে। বাবা কি সত্যি দেরাদুনে গিয়েছিলেন না দেবায়নের পিছু নিয়েছিলেন? দেবায়ন বাবার অনেক ক্ষতি করেছে, চাকরি ছাড়তে হয়েছে, হয়তো বাবা এর মধ্যে জেনে ফেলেছে যে ওর মায়ের সাথে এক সময়ে দেবায়নের শারীরিক সম্পর্ক হয়েছিল। দেবায়নের নামে যদিও কোন কোম্পানি নেই তবুও দেবায়ন বাবার পথ থেকে সরে গেলে কোম্পানির সব কিছুর ওপরে বাবার এক ছত্র অধিপতি হবে। কিন্তু বাবার কাছে দেবায়ন সোনার ডিম দেওয়া হাঁস, এমত অবস্থায় কি বাবা সত্যি দেবায়নকে নিজের পথ থেকে সরাতে চাইবে?
পরাশর ওকে জিজ্ঞেস করে, “এর পেছনে তোর কাকে সন্দেহ হয়।”
বুক ভরে শ্বাস নেয় অনুপমা, “সন্দেহ অনেক কিন্তু ঠিক ধরতে পারছি না কে হতে পারে।”
পরাশর ওকে বলে, “সব সন্দেহ ভাজনদের একটা তালিকা বানানো যাক, তারপরে খুনের উদ্দেশ্য ঠিক করতে হবে।”
অনুপমা মাথা দোলায়, “হ্যাঁ ঠিক বলেছিস। ওকে খুন করার পেছনে আসল উদ্দেশ্য কি ছিল সেটা যদি সঠিক ভাবে জানা যায় তাহলে আততায়ীকে ধরা আমাদের পক্ষে সহজ হয়ে যাবে।”
ওদের গাড়ি বারকোট পৌঁছাতেই অনুপমার ফোনে ইনসপেক্টর রোহণের ফোন আসে। ফোনে ইনসপেকটর জানায় নদীতে একটা মৃত দেহ পাওয়া গেছে। সেই শুনে অনুপমার বুক কেঁপে ওঠে, চরম আশঙ্কায় থরথর করে কাঁপতে শুরু করে অনুপমা। পরাশর জানতে চায় সেই মৃতদেহের পরনে কি ছিল। জামা কাপড়ের বিবরন আর দেহের বিবরন শুনে অনুপমা শ্বস্তির শ্বাস নেয়, বুঝে যায় ওই মৃত দেহ দেবায়নের নয়। তাও ইনস্পেক্টর ওদের নিউ তেহেরির হসপিটালে এসে মৃতদেহ শনাক্ত করতে অনুরোধ করে।
ঘনসিয়ালি থানায় গিয়ে সব থেকে আগে পুলিস ইন্সপেক্টিরের সাথে দেখা করে ওরা। তারপরে পুলিসের সাথে নিউ তেহেরির হসপিটালে গিয়ে মৃতদেহ সনাক্ত করে। অনুপমা আর মর্গে ঢুকতে চায় না, পরাশর শনাক্ত করে এসে জানায় ওই মৃতদেহ দেবায়নের নয়। ইনস্পেকটর রোহন জানায় এই দুইদিনে ওরা সেই ছেলের কোন সন্ধান পায়নি। অনুপমা জানায় নিজেই একবার রীহতে গিয়ে আবার দেবায়নের খোঁজ করবে। অনুপমা বদ্ধ পরিকর আগে দেবায়নের খোঁজ করবে তারপরে আততায়ীর খোঁজে যাবে। অনুপমা জানে এই অভিপ্রায় ইনস্পেকটরকে জানালে সে বাধা দেবে তাই আর তাকে কিছু না জানিয়েই পরাশরকে নিয়ে ঘুট্টুর উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে পড়ে।
ঘুট্টূ পৌঁছে সব থেকে আগে গাইড রঞ্জিতের খোঁজ করে অনুপমা। রঞ্জিতকে জানায় দেবায়নকে খুঁজতে যেতে চায়।
সব শুনে রঞ্জিত ওকে বলে, “ম্যাডাম, স্যার কে খুঁজতে আমাদের কোন আপত্তি নেই তবে আপনাকে একটা সত্যি কথা বলি। এই পাহাড়ি নদী আর ওই উঁচু খাদ থেকে কেউ পড়ে গেলে তার বাঁচার আশঙ্কা খুব কম। যদি বেঁচে থাকেন স্যার, তাহলে এতদিনে এই আশেপাশের গ্রামের কোন লোক ইতিমধ্যে খুঁজে বের করে নিত। কিন্তু এই চার পাঁচ দিনে আশেপাশের কোন গ্রামের কেউই স্যারকে দেখেনি। তবে আমি জিজ্ঞাসাবাদ করে দেখছি একজন সন্দেহ জনক ব্যাক্তিকে কয়েকদিন আগে এই এলাকায় দেখা গিয়েছিল।”
অনুপমা উৎসুক হয়ে জিজ্ঞেস করে, “সেই লোকের বিষয়ে কি কিছু জানতে পেরেছেন?”
রঞ্জিত ওদের নিয়ে একজনের বাড়িতে যায়। টালির ছাউনি দেওয়া পাহাড়ের এক গ্রাম্য বাড়ি। ওদের এত রাতে দেখে এক বৃদ্ধ বাড়ি থেকে বেড়িয়ে আসে। রঞ্জিত ওই এলাকার লোক, সেই ওই বৃদ্ধের সাথে পাহাড়ি ভাষায় কথাবার্তা বলে অনুপমাদের জানায়, এই বৃদ্ধ ভদ্রলোক কয়েকদিন আগে এক পাঞ্জাবী লোককে একা একা এইখানে ঘোরাফেরা করতে দেখেছিল। তারপরে অবশ্য সেই পাঞ্জাবী লোকের কোন হদিস পাওয়া যায়নি। সেই পাঞ্জাবী ভদ্রলোক এক একা একটা ব্যাগ তাঁবু ইত্যাদি নিয়ে একাই এইদিকে ঘুরতে এসেছিল বলে ওই বৃদ্ধকে জানায়। সোজা রাস্তা ছেড়ে গ্রামের পথ আর জঙ্গলের পথ ধরে রীহের দিকে যাত্রা করে। বৃদ্ধ জঙ্গলের মধ্যে ছাগল চড়াতে গিয়ে সেই পাঞ্জাবী লোকের দেখা পায়। আরো জিজ্ঞাসাবাদ করে ওরা জানতে পারে যে কয়েকদিন পরে, অর্থাৎ যেদিন এই দুর্ঘটনা ঘটে তাঁর আগের দিন পর্যন্ত ওই পাঞ্জাবী লোকটাকে জঙ্গলের মধ্যে ঘোরাফেরা করতে দেখা যায়। সেই লোকের উচ্চতা মাঝারি, দেহের গঠন মাঝারি, বয়স আন্দাজ পঁয়তাল্লিশ পঞ্চাসের মাঝামাঝি। বৃদ্ধ এক উল্লেখযোগ্য তথ্য ওদের দেয়। দাড়ি গোঁফ থাকা সত্ত্বেও সেই পাঞ্জাবীটা ঘনঘন সিগারেট টানছিল। সাধারনত এত পাঞ্জাবীরা সিগারেট খায় না। সেই শুনে অনুপমা পরাশরের দৃঢ় বিশ্বাস হয়, আসলে বেশ ভুষা বদলে নকল দাড়ি গোঁফ লাগিয়ে পাঞ্জাবী সেজে আততায়ী এই জায়গায় দেবায়নের অপেক্ষা করেছিল। বৃদ্ধ ওদের এর চেয়ে বেশি আর কিছু বলতে পারল না।
সেই রাতে রঞ্জিতের অনুরোধে পরাশর আর অনুপমা ওর বাড়িতে রাত কাটায়। রঞ্জিত জানায় ওর পক্ষে যতদূর সম্ভব সাহায্য সে করবে।
রাতের বেলা পরাশর ওকে জিজ্ঞেস করে, “তোর কাকে সন্দেহ হয়? কে দেবায়নের সব থেকে বড় শত্রু?”
অনুপমা কিছুক্ষণ ভাবতে বসে, এমন প্রচুর গোপন বিষয় আছে যা গোপন থাকা বাঞ্ছনীয়। তাই পরাশরকে সব কিছু জানানো উচিত হবে না। বিশেষ করে বর্তমানে অনুপমার সন্দেহ নিজের বাবার ওপরে প্রবল। দেবায়ন বাবার সব থেকে বড় পথের কাঁটা হতে পারে, দ্বিতীয় সূর্য, নিজের আর স্ত্রী মনিদিপার অপমানের বদলা নিতে দেবায়নকে মারতে পিছপা হবে না। তৃতীয় ধৃতিমান, দেবায়ন এক সময়ে একও অপদস্থ করেছিল তার বদলা নিতে ধৃতিমান নিশ্চয় মুখিয়ে থাকবে। চতুর্থ, ইন্দ্রনীল আর অনিমেশ আঙ্কেল, যে ভাবে ওদের হাত থেকে রূপক আর দেবায়ন সব কিছু ছিনিয়ে নিয়েছে তাতে তারাও দেবায়নের ওপরে প্রতিশোধ নেওয়ার ফাঁক খুঁজবে। পঞ্চম, পুনের হোটেলের মালিক রজত পানিক্কর, এক রকম ব্ল্যাকমেইল করেই ওর কাছ থেকে হোটেল হাতিয়ে নিয়ে পথে বসিয়ে দিয়েছে দেবায়ন। বাবাকে ছাড়া বাকি সবার নাম আর উদ্দেশ্য পরাশরকে জানায়। অনুপমা বলতে শুরু করে আর একটা পরাশর একটা প্যাডের মধ্যে সব কিছু লিখতে শুরু করে।
সব শুনে পরাশর ওকে বলে, “এক বার ওই ছেলেটাকে পেলে বড় ভালো হত কিন্তু যখন ছেলেটাকে পাওয়া যাচ্ছে না তখন আমাদের মনে হয় রীহের ওই জঙ্গলে একবার যাওয়া উচিত। এক রাতে নিশ্চয় ওই আততায়ী রীহ থেকে ঘুট্টু হেঁটে আসেনি। এই রাস্তা ওর অজানা সুতরাং যতদূর মনে হয় এই কয়দিন ওই আততায়ী ওই জঙ্গলে গা ঢাকা দিয়েছিল।”
অনুপমা মাথা দুলিয়ে বলে, “হ্যাঁ ঠিক বলেছিস। তবে আমাদের আসল উদ্দেশ্য দেবায়নকে খুঁজে পাওয়া। আগে আমরা দেবায়নকে খুঁজতে নামবো ওই খাদের মধ্যে তারপরে আততায়ীকে খুঁজবো।”
পরের দিন সূর্যের আলো ফোটা মাত্রই ওরা রীহের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। এইবারে দশ কিলোমিটার যেতে ওদের আর ছয় ঘন্টা লাগলো না। অনুপমার বুকে যুদ্ধের দামামা বাজতে শুরু করে দেয়, ওর শরীরে নতুন রক্তের সঞ্চার হয়, দেবায়নকে খোঁজার এক নতুন সাহস আর শক্তি নিয়ে দুপুরের আগেই রীহ পৌঁছে যায় ওরা। সাথে দুইজন পোর্টার নিয়ে গিয়েছিল।
রঞ্জিতের সাথে খাদের কিনারায় এসে পুনরায় ওই জায়গাটা তদারকি করে দেখে। প্রথম দিনে যযে পায়ের ছাপ গুলো ওরা দেখেছিল এতদিনে বহু পায়ের ছাপের ফলে সেই ছাপ গুলো মাটিতে মিশে গেছে। তাও কিছুটা আন্দাজ করে যেদিকে আগে আততায়ীর পায়ের ছাপ গিয়েছিল সেদিকে ওরা হাঁটতে শুরু করে দেয়। বেশ কিছুটা দুর গিয়ে আন্দাজ মতন আততায়ীর পায়ের ছাপ অনুসরন করে জঙ্গলের মধ্যে ঢুকে পড়ে। এদিক ওদিক ভালো ভাবে দেখতে দেখতে পরাশর আর অনুপমা এগিয়ে চলে, পেছনে রঞ্জিত আর দুটো ছেলে। ঘন জঙ্গল, উঁচু উঁচু দেবদারু পাইন ইত্যাদি গাছে ভরা, ভিজে মাটি নরম পাতা আর ঘাসে ঢাকা। বেশ কিছদুর গিয়ে একটা খালি জায়গা দেখে ওরা থেমে যায়। ঘন জঙ্গলের মাঝে বেশ কিছুটা জায়গা সদ্য পরিষ্কার করে তাঁবু খাটানোর আর থাকার চিহ্ন দেখতে পায়। অনুপমার সন্দেহ দুর হয়ে যায়, এই জায়গায় নিশ্চয় ওই আততায়ী বেশ কয়েকদিন থেকেছে। সঙ্গে সঙ্গে রঞ্জিত পরাশর আর অনুপমা চারপাশে তথ্য প্রমান যোগাড় করার জন্য লেগে পড়ে। খুঁজে খুঁজে একটা খালি সিগারেট প্যাকেট পায়, বেশ কিছু প্লাস্টিকের ব্যাগ, বেশ কিছু বিস্কুটের প্যাকেট ম্যাগির প্যাকেট জলের বোতল ইত্যাদি খুঁজে পায়। রঞ্জিত সব কিছু একটা প্লাস্টিকের ব্যাগের মধ্যে জড় করে অনুপমার হাতে তুলে দেয়। আরো বেশ কিছুক্ষণ এদিক ওদিক খুঁজে নদীর দিকে চলে আসে। রঞ্জিত জানায় বৃদ্ধের বিবরনের কোন পাঞ্জাবী লোককে নিচের দিকে নামতে দেখেনি সুতরাং ধরে নেওয়া যায় ওই আততায়ী রীহ ছাড়িয়ে উপরের দিকে হয়ত উঠে গেছে নয়ত আরো গভীর জঙ্গলের পথ ধরে অন্যপাশ দিয়ে নেমে গেছে।
ওইখানে আরো বেশ কিছখন খোঁজাখুঁজি করার পরে তিনজনে তাঁবুতে ফিরে আসে। পরাশর ব্যাগের মধ্যে থেকে সিগারেট প্যাকেট বের করে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখে অনুপমাকে প্রশ্ন করে, “তোর জানাশোনার মধ্যে কেউ কি এই সিগারেট খায়?”
বেশ দামী সিগারেট প্যাকেট দেখে অনুপমা স্মিত হেসে বলে, “তুই নিজেই এই সিগারেট খাস…..”
পরাশর হেসে ফেলে, “বেশ বলেছিস। সাধারন অথচ দামী সিগারেট। ধরে নেওয়া যেতে পারে আততায়ী বড়লোক, রুচিবোধ সম্পন্ন ব্যাক্তি। আমাদের সন্দেহের তালিকা অনুযায়ী কে কে এই সিগারেট ব্যাবহার করতে পারে?”
অনুপমা একটু ভেবে বলে, “সবাই এই সিগারেট ব্যাবহার করতে পারে। যদিও আমি রজত পানিক্করের সাথে আমাদের বিশেষ পরিচয় হয়নি তবে আমাদের সামনে সে কখন সিগারেট ধরায়নি। অনিমেশ, ধৃতিমান সূর্য সবাই এই সিগারেট খেতে পারে।”
মনে মনে অঙ্ক কষে, ওর বাবা সাধারণত চুরুট খায়, তবে মাঝে মধ্যে সিগারেট খায়। বাবার নাম এখন পর্যন্ত পরাশরকে জানানো হয়নি।
পরাশর জিজ্ঞেস করে, “এর পরের কি করনীয় আমাদের?”
অনুপমা বলে, “কাল রঞ্জিতকে বলে আমি নিজেই ওই খাদের মধ্যে রেপ্লিং করে নামবো আর নদীর কিনারা ধরে নিচের দিকে খুঁজতে খুঁজতে যাবো।”
পরাশর ওকে বলে, “খুব বিপদজনক হয়ে যাবে ব্যাপারটা।”
দুঃখিত, ভারাক্রান্ত মনে অনুপমা ওকে বলে, “বিপদ বলে আমার জীবনে আর কিছু নেই। যখন দেবায়ন আমার পাশেই নেই তখন আর বেঁচে থেকে কি লাভ।”
বলতে বলতে ওর গলা ধরে আসে। বারেবারে হাতের আংটি গালে ঘষে বুকের মধ্যে চেপে ধরে দেবায়নের পরশ খুঁজতে চেষ্টা করে।
সারা রাত অনুপমা ঘুমাতে পারে না, পরাশর অনেকক্ষণ জেগে বসে ওকে পাহাড় দিয়েছিল কিন্তু শেষ রাতের দিকে পরাশরের চোখের পাতা ভারী হয়ে আসে। শেষ রাতের দিকে অনুপমা তাঁবুর বাইরে দাঁড়িয়ে দুর পাহাড়ের দিকে একভাবে তাকিয়ে থাকে। হয়ত ওই দূরে পাহাড়ে কোথাও ওর পুচ্চু লুকিয়ে আছে, হয়ত ওর সাথে লুকোচুরির খেলা খেলে যাচ্ছে। একবার যদি ছেলেটাকে ধরতে পারে তাহলে খুব বকুনি দেবে। কখন যে মাটিতে বসে বসে ওর চোখ লেগে গিয়েছিল সেটা আর টের পায়না। ঘুম ভাঙ্গে সকালের পাখীর ডাকে। পুবের আকাশের সূর্যের লালিমার ছটা সোজা ওর চেহারায় এসে পড়তেই চোখ খুলে যায়। সামনে বিস্তীর্ণ বনভূমি, একপাশে নদী।
পরাশর তৈরি হয়ে ওর কাছে এসে জিজ্ঞেস করে, “রাতে ঘুমোসনি নিশ্চয়। একা একা এইখানে বসে কি করছিলি?”
অনুপমা ম্লান হেসে বলে, “অপেক্ষা করা ছাড়া আর কি করার আছে আমার বল।”
এমন সময়ে রঞ্জিত দৌড়াতে দৌড়াতে এসে ওকে বলে, “ম্যাডাম একটা খবর পাওয়া গেছে।”
চাপা উত্তেজনায় অনুপমার বুকের ধুকপুকানি থেমে যায়। কাঁপা গলায় জিজ্ঞেস করে, “কি খবর।”
রঞ্জিত ওকে বলে, “ঘুট্টুর নিচের দিকের এক গ্রামের একজন গত রাতে নদীতে একজন ছেলেকে ভেসে যেতে দেখে নিজের বাড়িতে এনে রেখেছে। এই মাত্র আমাকে একজন খবর দিল। যতদূর মনে হয় দেবায়ন হতে পারে।”
অনুপমার ওই শুনে রঞ্জিত আর পরাশর কে নিয়ে সঙ্গে সঙ্গে বেড়িয়ে পরে গ্রামের দিকে। ওর পা আর মাটিতে পরে না, হাঁটার বদলে দৌড়াতে শুরু করে অনুপমা। কি অবস্থায় দেখবে, কি রকম আছে, বেঁচে আছে না শেষ দেখা দেখতে পাবে সেই আশঙ্কায় ওর হৃদপিণ্ড বারেবারে লাফিয়ে উঠে গলায় চলে আসে।
রীহ থেকে ঘুট্টূ প্রায় ওরা দৌড়াতে দৌড়াতে আসে। ওদের ওই ভাবে দৌড়ে আসতে একজন দৌড়ে এসে রঞ্জিতকে খবর দেয় নদীতে ভেসে আসা লোকের ব্যাপারে। সেই ছেলেটাকে সঙ্গে নিয়ে সেই বাড়ির মধ্যে যায় অনুপমা। নদীর পাশে পটে আঁকা ছবির মতন গ্রাম। একটা ছোট পাহাড়ের ওপরে একটা বাড়ি দেখিয়ে সেই ছেলেটা বলে ওই বাড়িতে নদীর থেকে উঠিয়ে আনা দেহকে রাখা হয়েছে। দৌড়াতে দৌড়াতে তিনজনে পাহাড়ের সিঁড়ি বেয়ে বাড়িতে ঢোকে। ছোট বাড়ির মধ্যে লোকজন উপচে পড়ছে।
অনুপমাদের দেখে বাড়ির কর্তা বেড়িয়ে আসতেই ওকে জিজ্ঞেস করে দেবায়নের ব্যাপারে। বাড়ির কর্তা ওদের নিয়ে ভেতরের ঘরের মধ্যে ঢুকতেই বিছানায় শুয়ে থাকা দেবায়নকে দেখে অনুপমা কেঁদে ফেলে। চেহারা সাদা হয়ে গেছে, বাম পা দুমড়ে গেছে, কপালে গভীর ক্ষতের দাগ। বাড়ির কর্তা দেবায়নের শরীর একটা মোটা কম্বল দিয়ে ঢেকে দিয়েছে আর বিভিন্ন ক্ষতের জায়গায় পাহাড়ি জড়িবুটির প্রলেপ লাগিয়ে দিয়েছে।
দেবায়নকে দেখেই অনুপমা ওকে জড়িয়ে ধরে বুকে মাথা রেখে কেঁদে ফেলে। বারেবারে ওর গালে কপালে হাত বুলিয়ে জিজ্ঞেস করে, “প্লিস একবার চোখ খোল সোনা, দেখ তোর পুচ্চি এসে গেছে, প্লিস একবারের জন্য চোখ খোল।”
বাড়ির কর্তা, রাজীব ওদের জানায়, “চারদিনের মতন মনে হয় এই নদীর জলে ভেসে এসেছিল। খুব শক্ত প্রাণ আর আপনার ভালোবাসা খুব প্রবল, নচেত কেউ ওই খাদের মধ্যে এই পাহাড়ি নদীতে পড়ে গিয়ে প্রানে বাঁচে না। এঁকে এখুনি কোন হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া উচিত। আমি যতদূর সম্ভব বাঁচাতে চেষ্টা করেছি কিন্তু পায়ের হাড় ভেঙ্গে গেছে, হাত ভেঙ্গে গেছে, মাথায় গভীর চোট লেগেছে, মনে হয় শিরদাঁড়ায় চোট পেয়েছে। এক্সরে না করা পর্যন্ত ভেতরের ক্ষয় ক্ষতি কিছুই বুঝে ওঠা সম্ভব নয়।”
অনুপমা ওকে জড়িয়ে ধরে গালে কপালে চুমু খেয়ে বারেবারে ডাক দেয়, কিন্তু সেই ডাক আর দেবায়নের কান পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে না। দেবায়ন অচৈতন্য অবস্থায় বিছানায় ঘাড় কাত করে শুয়ে থাকে। অনুপমাকে ওই অবস্থায় দেখে পরাশর কি করবে কিছুই ভেবে পায় না। দেবায়নকে ফিরে পেয়ে অনুপমার বুক ভরে ওঠে, শেষ পর্যন্ত ওর পুচ্চু আবার ফিরে এসেছে।
 
Like Reply




Users browsing this thread: 9 Guest(s)