Thread Rating:
  • 28 Vote(s) - 3.18 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
পাপ কাম ভালবাসা
চতুর্বিংশ পর্ব (#05)

সেদিন দেবায়নের কেবিনে বসে ছিল অনুপমা। দেবায়নের ফিরতে এখন তিন সপ্তাহ দেরি। টেবিলে ওর আর মামনির একটা ফটো, মুসৌরি বেড়াতে গিয়ে তোলা। ইন্দ্রনীল এর মাঝে অনুপমার সাথে আলাপ বাড়ানোর চেষ্টা করেছিল, কিন্তু সফল হয়নি। বিজনেস ছাড়া অন্য কোন কথাবার্তা বলতে গেলেই সুকৌশলে এড়িয়ে যেত। মাঝে মাঝে ওর পোশাকের, ওর সৌন্দর্যের তারিফ করতো। শুরু দিকে মাঝে মাঝে চকোলেট উপহার দিয়েছিল কেবিনে এসে, অনুপমা মিচকি হেসে সেই গুলো নিয়েছিল এবং বলে দিয়েছিল যে চকোলেট ওর পছন্দের জিনিস নয়। ইন্দ্রনীল ওর পছন্দের কথা জিজ্ঞেস করাতে উত্তরে বলেছিল ওর পছন্দের মানুষ দেবায়ন ওর খেয়াল ঠিক মতন রাখে। তারপরে আর ইন্দ্রনীল ওর পাশে বিশেষ আসতে সাহস করেনি। ইদানিং অনুপমা লক্ষ্য করেছে যে ইন্দ্রনীল শ্রেয়ার পেছনে ঘুরঘুর করছে, কিন্তু অনুপমা শ্রেয়াকে সাবধান করে দেয় সেই ব্যাপারে। শ্রেয়া হাসি মুখে জানিয়ে দেয় যে চামড়া বাঁচিয়ে জলে নামতে জানে।
ল্যাপটপ খুলে কাজে মন দিল, গত কোয়ার্টারের ব্যালেন্স সিট খুলে বসে পড়ল। ওয়েবসাইটের কাজে প্রচুর প্রতিদ্বন্দ্বী, তাই ছোটো ছোটো সফটওয়ারের কাজ নিতে হয়েছে। ব্যাঙ্গের ছাতার মতন ঘরে ঘরে, গলির আনাচে কানাচে আইটি কোম্পানি শুরু হয়েছে। যে কেউ একটা ল্যাপটপ আর কয়েকটা কম্পিউটার নিয়ে বসে পড়ছে কাজে। রূপকের ওপরে কাজের ভার অনেক বেশি, ছোটো ছোটো ওয়েবসাইটের কাজ গুলো ওই দেখে। গত কোয়ার্টারে দুটো বড় প্রোজেক্ট এসেছে, সুপর্ণা ম্যাডামের ওপরে সেই দুটো প্রোজেক্টের দায়িত্ব।
ইতিমধ্যে দেবায়নের সাথে মিস্টার হেরজোগের বেশ কয়েক বার কথা হয়ে গেছে। মিস্টার হেরজোগকে কি খাইয়েছে দেবায়ন? ওর সামনে পেছন ঘুরে ঝুঁকে যায়নি ত? মনে মনে হেসে ফেলে অনুপমা। যদিও মিস্টার হেরজোগ, অনিমেশ আঙ্কেলের কাছের লোক, কিন্তু দেবায়নের কথা শুনে মনে হল, ওকে বেশ সমীহ করে মিস্টার হেরজোগ। কারন অনুপমার অজানা নয়, কন্সট্রাকশন বিজনেসের বেশ বড় লাভের অংশ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে দেবায়ন, এবং সেই মতন কয়েক শো কোটি টাকা ওদের কন্সট্রাকশন কোম্পানিতে বিনিয়োগ করেছেন।
এয়ার বারলিন আর জারমেনিয়া এয়ারলাইন্সের প্রোজেক্ট পেলে কোম্পানি এক বছরে দাঁড়িয়ে যাবে বলে আশা করা যায়। শ্রেয়া, প্রোজেক্ট প্লানিং আর ডিজাইনিংয়ে ডুবে গেছে। ইতিমধ্যে এয়ার বার্লিনের আইটি’র ভেতরের এক লোকের সাথে কথাবার্তা করিয়ে দিয়েছে ইন্দ্রনীল। সেই কথা মতন ওদের প্রোডাক্ট তৈরির কাজ শ্রেয়া নিজের হাতে তুলে নিয়েছে। অনেকদিন পরে নিজের মনের মতন কাজ পেয়ে শ্রেয়া বেশ খুশি। অন্যদিকে, জার্মানি বেড়াতে পারবে সেই খুশিতে উড়ে বেড়াচ্ছে।
“কি করছিস?”
কাঁচের দরজা খুলে রূপক কেবনে ঢুকল।
অনুপমা, ল্যাপটপ স্ক্রিন থেকে মাথা উঠিয়ে রূপকের দিকে তাকিয়ে হেসে বলে, “এই কিছু না, লাস্ট কোয়ার্টারের ব্যালেন্স সিট দেখছিলাম।”
উৎসুক রূপক জিজ্ঞেস করে, “কি বলছে ব্যালেন্স সিট?”
অনুপমা মৃদু হেসে বলে, “শুরু দুটো কোয়ার্টারের চেয়ে গত কোয়ার্টারের আয় বেশি হয়েছে। বিশেষ করে তোর কাঁধে কাজের ভার বেড়ে গেছে।”
রূপক কলার উঁচু করে হেসে বলে, “তাহলে আমার মাইনে বাড়িয়ে দে।”
অনুপমা হেসে বলে, “কোম্পানি তোর, যা ইচ্ছে করে তেমন মাইনে নিয়ে নে। বল তো এখুনি মনীষাকে ডেকে লেটার বানিয়ে দেই?”
রূপক হাত নাড়িয়ে বলে, “তুই আর বদলাবি না!”
গলার স্বর নামিয়ে জিজ্ঞেস করে, “হ্যাঁ রে, ইন্দ্রনীল……”
অনুপমা ভুরু কুঁচকে জিজ্ঞেস করে, “ইন্দ্রনীল, কি করেছে?”
রূপক বলে, “না না, তেমন কিছু করেনি। তবে কথাবার্তায় মনে হল জার্মানিতে বেশ ভালো চেনা জানা।”
অনুপমা হেসে উত্তর দেয়, “ওরে পাগল। এই যে এয়ার বার্লিনের আর জারমেনিয়ার কথা হচ্ছে না, দুটোই মিস্টার হেরজোগের জন্য এসেছে। মিস্টার হেরজোগ, অনিমেশ আঙ্কেলের জানাশুনা ব্যাক্তি আর দেবায়নকে ভালো ভাবে চেনে।”
কথাটা বলে মনে হল ফেঁসে গেছে। ওদের অন্য ব্যাবসার কথা সবার অজানা।
রূপক ঠিক বুঝতে পারল না যে দেবায়ন, মিস্টার হেরজোগকে কি ভাবে জানে। ভুরু নাচিয়ে অনুপমাকে প্রশ্ন করে কি ভাবে দেবায়ন, মিস্টার হেরজোগকে চেনে। অনুপমা কথা ঘুরিয়ে বলে, “না মানে বাবার একটা পার্টিতে দেবায়নের সাথে মিস্টার হেরজোগের দেখা হয়েছিল আর সেই থেকেই আলাপ। তা তুই কি কিছু বলতে এসেছিস?”
রূপক খানিক ক্ষণ মাথা চুলকে বলল, “মানে আমি জার্মানি যেতে পারব না রে।”
অনুপমার চোখে প্রশ্ন বোধক চিহ্ন ফুটে ওঠে। রূপক উত্তরে বলে, “শ্রেয়া নেচে বেড়াচ্ছে জার্মানি যাবে, কিন্তু এদিকে এই মাসে তিনটে কাজের ডেলিভারি আছে, দুটো প্রোজেক্টের ডিপ্লয়মেন্ট আছে। এই সব ছেড়ে সাত দিনের জন্য বাইরে গেলে আমার কাজ মাঠে মারা যাবে।”
অনুপমা, “তাহলে কে যাবে?”
রূপক, “তুই ম্যাডাম কে পাঠা। এমনিতে এই প্রোজেক্ট আমার হাতে আসবে না তাই ম্যাডামের যাওয়াটা বাঞ্ছনীয়।”
অনুপমা মুখ শুকনো করে বলে, “ম্যাডাম তো যাবেই, আমি ভেবেছিলাম তোরা দুইজনে একটু হানিমুন করে আসবি। শ্রেয়াকে জানিয়েছিস তুই যে যেতে পারবি না?”
রূপক মুখ কাঁচুমাচু করে বলে, “না কিছু বলিনি। তুই আমার রক্ষাকত্রী, মা জগদ্ধাত্রী। শ্রেয়া আমাকে ছিঁড়ে খাবে একটা উপায় বল।”
অনুপমা একটু ভেবে বলল, “আমাকে অনেক দিন ধরে বায়না করে রেখেছে যে জার্মানি যাবে।”
রূপক বলে, “হ্যাঁ জানি। সেই জন্য গরম কাপড় কেনাকাটা হয়ে গেছে, ব্যাগ প্রায় প্যাক করে ফেলেছে।”
অনুপমা হেসে ফেলে শ্রেয়ার অবস্থা শুনে। অনুপমা একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে, “দ্যাখ ভাই, এতদিন শুধু গায়ে হাওয়া লাগিয়ে ঘুরে বেড়িয়েছিল। এই প্রথম বার, খুব খাটছে, প্রডাক্টের সব কাজ নিজের হাতে নিয়েছে। এই সময়ে যদি ওকে বলি যে তুই যাচ্ছিস না, তাহলে ওর মনের কি অবস্থা হবে একবার ভেবে দেখেছিস?”
রূপক ম্লান হেসে বলে, “তুই বলে দে কি করবো?”
অনুপমা বুক ভরে শ্বাস নিয়ে হেসে বলে, “আমি বিশেষ কিছু জানিনা, তবে দেবুর সাথে থেকে এইটুকু জেনেছি যে জীবনের ছোটো ছোটো খুশি গুলোই বেশি আনন্দ দেয়। প্রোজেক্ট কয়েক দিন দেরি হলে কি খুব অসুবিধে হয়ে যাবে?”
রূপক মোবাইলে কয়েকটা ই-মেল দেখিয়ে বলে, “দুটো প্রোজেক্টের ডেড লাইন গতকাল পার হয়ে গেছে। এই মাসের শেষের মধ্যে যদি ডেলিভারী না দিতে পারি তাহলে মার্কেটে নাম খারাপ হয়ে যাবে।”
কোম্পানি যতটা অনুপমার, ততটা রূপকের। রূপকের এই ভাব দেখে অনুপমার বেশ ভালো লাগে। অনুপমা ওকে বলে, “তুই এক কাজ কর। আজকে শ্রেয়া কে নিয়ে ডিস্কো যা, বেশ আনন্দ কর, তারপরে কাল সকালে আমি ওর সাথে কথা বলব।”
রূপক বলে, “কি বলবি?”
অনুপমা একটা বড় নিঃশ্বাস নিয়ে বলে, “না, এর থেকে ভালো, চল আমরা সবাই মিলে ডিস্কো যাই। সারা রাত মজা করি, তারপরে শ্রেয়াকে একবার বলে দেখব যে যদি একা যায়।”
রূপক হাঁফ ছাড়ে, “একা গেলে কোন চিন্তা নেই। যতই হোক দীপঙ্করদা, সুপর্ণা ম্যাডাম থাকবে সাথে।”
অনুপমা মিচকি হেসে বলে, “কেন ইন্দ্রনীলের ওপরে বিশ্বাস নেই বুঝি?”
রূপক অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে, “এক ফোঁটা নেই। প্রথম দিন থেকেই তোর দিকে কেমন ভাবে তাকিয়ে ছিল। ওর কাছে কি আর আমার বৌ ছাড়ি? যাই হোক, তাহলে সন্ধ্যের পরে কোথায় যাওয়া হচ্ছে।”
অনুপমা ফোন করে শ্রেয়াকে, কিন্তু শ্রেয়া কেবিনে নেই। নিজের কেবিন থেকে বেড়িয়ে এদিক ওদিকে দেখার পরে দেখে যে শ্রেয়া, ইন্দ্রনীলের ডেস্কে, ওর সাথে কোন বিষয়ে বেশ হাত নাড়িয়ে মাথা নাড়িয়ে কথা বলছে। ওর হাত মাথা নাড়ানো দেখে হেসে ফেলে, অনুপমা। রূপককে ডেকে দেখিয়ে বলে যে ওর বৌ এবারে হাত ছাড়া হয়ে গেল। ওদের দেখে শ্রেয়া হাসে আর রূপক ওকে অনুপমার কেবিনে আসতে বলে।
কেবিনে ঢুকে শ্রেয়াকে অনুপমা জিজ্ঞেস করে, “কি রে এত কি মাথা নাড়িয়ে গল্প করছিলিস?”
শ্রেয়া হেসে বলে, “ধুর বাবা, ওর সাথে কি আর কথা বলব। এই প্রোডাক্ট নিয়েই কথা বলছিলাম।”
অনুপমা ওকে জিজ্ঞেস করে, “পাবে যাবি?”
শ্রেয়া হাজার প্রশ্ন নিয়ে রূপকের দিকে তাকায়, রূপক অনুপমার দিকে দেখিয়ে বলে, “বুঝতেই পারছো, বর নেই অনেকদিন, তাই অনুর মন একটু খালি খালি লাগছে।”
শ্রেয়া অনুপমার গাল টিপে হেসে বলে, “ওগো বিরহিণী হরিণী। বেশ তো, আমাদের পুরাতন পার্ক হোটেলে যাওয়া যাক।”
অনুপমা, “ভাবছি শান্তনু আর মনীষাকে ডেকে নেব।”
শ্রেয়া, “হ্যাঁ হ্যাঁ ভালো হয়। সবাই কাজ করে করে একদম ম্যাদা মেরে গেছি। একটু গা হাত পা নাচালে বেশ ভালো লাগবে।”
রূপক মাথা চুলকে জিজ্ঞেস করে, “একবার ইন্দ্রনীল কে বলে দেখলে কেমন হয়।”
দুই ললনা রক্ত চক্ষু করে রূপকের দিকে তাকায়। রূপক আমতা আমতা করে বলে, “না মানে ছেলেটা এত বড় একটা ডিল করিয়ে দিচ্ছে। আমাকে বলছিল যে অফিসের পরে বাড়িতে গিয়ে বেশ বোর হয়। একটু আনন্দ খুঁজতে চাইছিল।”
গলার স্বর নামিয়ে মিচকি হেসে বলে, “খবরের কাগজের কলম থেকে বেশ কয়েকটা এস্কর্ট এজেন্সিকে নাকি ফোন লাগিয়েছিল।”
অনুপমা আর শ্রেয়ার চোখ বড় বড় হয়ে যায়। শ্রেয়া জিজ্ঞেস করে, “তুমি কি বললে ওকে?”
রূপক হেসে ফেলে, “আমি আর কি বলব। শালা হাতে পাইনি একটাও, খবরের কাগজে সবাই ভুয়ো মাল। একবার নাকি কে ওকে যাদবপুরের একটা জায়গায় ডেকেছিল, সেখানে গিয়ে মাল পাঁচ হাজার টাকা দিয়েছে কোন এক এজেন্টকে আর সেই এজেন্ট ফোন বন্ধ করে টাকা নিয়ে উধাউ।”
দুই ললনা হাসিতে ফেটে পরে। শ্রেয়া হাসতে হাসতে বলে, “বুঝতে পারছি, মাল টনটন করছে ভেতরে শুধু ঠিক মতন জায়গা চাই ঢালার। যাই হোক, পার্কে প্রচুর পাওয়া যাবে, মডেল অথবা এয়ারহস্টেস একটা জোগাড় হয়ে যেতে পারে ওর জন্যে। ওকে ছেড়ে দিয়ে দেখা যাবে কি মাছ তুলতে পারে ওর বঁড়শিতে।”
অনুপমা আর শ্রেয়া দুইজনে হেসে ফেলে ইন্দ্রনীলের অবস্থা ভেবে। মনীষা আর শান্তনুও ডিস্কো যেতে ইচ্ছুক, কোলকাতা আসার পরে রাতের কোলকাতা, বড়লোকের কোলকাতা ঘুরে দেখা হয়নি মনীষার। রূপক, ইন্দ্রনীলকে ডিস্কো যাওয়ার কথা বলে এবং সেই সাথে জানায় যে ওখানে গেলে ওর মনের মতন রমণীর খোঁজ পেতে পারে। ইন্দ্রনীল বেশ উৎসুক হয়ে ওঠে। ইতিমধ্যে অনুপমা, মামনিকে ফোনে জানিয়ে দেয় যে রাতে বাড়িতে খাবে না। দেবশ্রী প্রশ্ন করাতে উত্তরে বলে যে একটু বেড়াতে যেতে চায়।
বিকেলে অফিসের পরে শ্রেয়াকে নিয়ে নিজের বাড়িতে চলে আসে। ওর আলমারিতে ডিস্কোর উপযুক্ত পোশাক আশাকে ভর্তি। পায়েল ওদের দেখে মৃদু হেসে বলে, যে ওর ডিস্কো-থেকে যাওয়ার কোন ইচ্ছে নেই। দুই বান্ধবী পোশাক বদলে রাতের দিকে পার্কের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।
অনুপমার পরনে একটা হাঁটু পর্যন্ত চাপা সাদা জিন্স আর লাল রঙের ছোটো টপ। শ্রেয়া একটা গাড় নীল রঙের ছোটো হাত কাটা ইভিনিং পার্টি ড্রেস পরে। দুই পায়ে, কালো স্টকিংস, হাই হিল, ঠোঁটে লাল রঙ। শ্রেয়া যেন সেই রাতের অপ্সরা। জিজ্ঞেস করাতে বলে, যে রূপকের সাথে অনেকদিন সহবাস করা হয়নি। আজকে মাতাল হয়ে রূপককে টেনে নেবে নিজের বুকে। ওর কথা শুনে হেসে ফেলে অনুপমা। দেবায়ন থাকলে না হয় একটু বেশি সাজতো, যেহেতু শয়তানটা কাছে নেই সেহেতু জিন্স আর টপ পরেই বেড়িয়ে গেল।
রাত ন’টা নাগাদ, শ্রেয়া আর অনুপমা, পার্ক হোটেলে পৌঁছে যায়। রূপক, ইন্দ্রনীলকে সাথে নিয়ে কফি শপে ওদের জন্য অপেক্ষা করছিল। শ্রেয়াকে দেখে, আশেপাশের বেশ কয়েক জনের চোখ ঘুরে যায়। পরনের পোশাক, পাছার একটু নিচে এসে শেষ হয়ে গেছে, চলনের ফলে, দুই নরম পাছা দোলা খাচ্ছে আর পেছন থেকে এঁটে বসা পাছার ওপরে প্যান্টির দাগ স্পষ্ট হয়ে গেছে। শ্রেয়াকে দেখে রূপকের রক্ত চনমন করে ওঠে। শ্রেয়া ওর দিকে এগিয়ে গিয়ে ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে একটা গভীর চুম্বন এঁকে দেয়। সেই গভীর চুম্বন দেখে অনুপমার ধমনীর রক্ত চঞ্চল হয়ে ওঠে, কিঞ্চিত উত্তেজনায় গাল লাল হয়ে যায়।
 
Like Reply
Do not mention / post any under age /rape content. If found Please use REPORT button.
চতুর্বিংশ পর্ব (#06)

“ফিলিং এলোন মামওয়েজেল, মিস্টার বসাক কে ছাড়া খুব একা একা লাগছে, তাই না?”
কানের কাছে এসে জিজ্ঞেস করে ইন্দ্রনীল।
অনুপমা নিজেকে সামলে নিয়ে হেসে উত্তর দেয়, “একটু হ্যাঁ, একটু না।”
ইন্দ্রনীলের চোখ অনুপমাকে আপাদমস্তক নিরীক্ষণ করে বলে, “তোমাকে মন্দ লাগছে না। ইউ আর লুকিং গর্জিয়াস।”
অনুপমা মৃদু হেসে বলে, “ধন্যবাদ!”
আশে পাশে তাকিয়ে দেখে অন্যদের।
কথা বলতে বলতে ইন্দ্রনীলের চোখ এসে থেমে যায় ওর গভীর স্তন বিভাজিকার কাছে। পরনের টপ সামনের দিকে বেশ গভীর ভাবে কাটা, যার ফলে স্তন জোড়া মনে হয় যেন উপচে বেড়িয়ে এসেছে। ইন্দ্রনীলের উত্তপ্ত দৃষ্টিতে শরীরের রোমকূপ জেগে ওঠে, কিঞ্চিত উত্যক্ত হয়ে ওঠে কিন্তু মুখে কিছু বলতে পারে না। ঠিক সেই সময়ে মনীষা আর শান্তনু এসে পড়ে, অনুপমা বেঁচে যায় ওই উত্তপ্ত দৃষ্টি থেকে।
মনীষা, শ্রেয়ার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে, “খুব দেরি করিয়ে দিলাম নাকি?”
অনুপমা বলে, “না না, এমন কিছু দেরি হয়নি। রাত যত গভীর হবে, মদের নেশা রক্তে তত মাতন ধরাবে।”
ওর কথা শুনে সবাই হেসে ফেলে। অনুপমা মনীষার দিকে তাকিয়ে দেখে। মনীষা, একসময়ে দিল্লীতে থেকেছে, ওখানের পার্টিতে গেছে, তাই ওর পোশাকে পার্টির ছোঁয়া। পরনে একটা ছোটো সাদা শার্ট, তাঁর ওপরে একটা ছোটো জ্যাকেট চড়ানো আর একটা হাঁটু পর্যন্ত চাপা স্কার্ট। পায়ে মসৃণ ন্যুড স্টকিংস পড়েছে। মনীষা বেশ সুন্দরী দেখতে। শ্রেয়া আর মনীষাকে দেখে মনে হল যেন ওরা সত্যি ডিস্কোতে এসেছে, ওদের পাশে অনুপমা নিজেকে দেখে একটু ভাবনায় পরে যায়। নিজেকে দেখে মনে হয় যেন, বিকেলে বাজারে কেনাকাটার জন্য বেড়িয়েছে।
অনুপমা ঠোঁটে হাসি টেনে বলে, “চল যাওয়া যাক ভেতরে।”
সপ্তাহের মাঝের দিন তাই বিশেষ ভিড় ছিল না। এদিক ওদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে জোড়ায় জোড়ায় বসে সবাই। ড্যান্স ফ্লোর খালি, বাজনার আওয়াজ বেশ জোরে, সবাই নেশার তালে পা ঠুকছে আর এদিক ওদিকে চেয়ে দেখছে। সবাই যেন অপেক্ষায় আছে, ড্যান্স ফ্লোরে কেউ গেলে ওরা নেমে যাবে। পার্কের ম্যানেজার, মিস্টার সেনের চেনাশোনা তাই ওদের টেবিল পেতে বিশেষ কষ্ট হল না। একটা বড় কোনার টেবিলে ওরা ছয়জনে বসে পড়ল। হুইস্কির সাথে মুরগির ঠ্যাঙ বেশ আয়েশ করে খেতে খেতে এদিক ওদিকে দেখতে লাগলো। শ্রেয়া প্রায় রূপকের কোলের ওপরে বসে পড়েছে, মনীষা আর শান্তনু জড়াজড়ি করে বসে। টেবিলের একপ্রান্তে অনুপমা একা একা ভদকার গ্লাসে চুমুক দিচ্ছে আর অন্যপাশে ইন্দ্রনীল হুইস্কির গ্লাস হাতে নিয়ে এদিক ওদিক তাকিয়ে বেড়াচ্ছে।
বেশ কিছুক্ষণ পরে একদল মেয়ে ঢুকল, সবার পরনের পোশাক দেখে মনে হল, রাতের সঙ্গী খুঁজতে বেড়িয়েছে অথবা ওদের মতন বড়োলোক বাড়ির মেয়ে। সাথের ছেলের সংখ্যা দুই আর মেয়েদের সংখ্যা পাঁচ। ওই দলটা অনুপমাদের টেবিল থেকে বেশ কিছু দুরে বসে পড়ল। শ্রেয়া ভুরু নাচিয়ে অনুপমাকে ইঙ্গিতে জানিয়ে দেয় যে, এসে গেছে ইন্দ্রনীলের রাতের ভোজ। অনুপমা ভদকার গ্লাসে চুমুক দিয়ে হেসে ফেলে।
শ্রেয়া হুইস্কি শেষ করে রূপকের গলা জড়িয়ে আব্দার করে, “চল না ড্যান্স ফ্লোরে।”
অনুপমা বুঝে গেছে যে শ্রেয়ার রক্তে মাতন লেগে গেছে। রূপক একবার অনুপমার দিকে একবার শান্তনুর দিকে তাকায়। মনীষা, শান্তনুকে টেনে টেবিল থেকে উঠিয়ে ড্যান্স ফ্লোরে নিয়ে যায়। সেই দেখে, শ্রেয়া আর রূপক ড্যান্স ফ্লোরের দিকে পা বাড়ায়। শ্রেয়া অনুপমাকে হাত নাড়িয়ে নাচতে ডাকলে, অনুপমা মানা করে জানিয়ে দেয় যে ভদকা শেষ হলে যাবে। ওদের দেখাদেখি, বেশ কয়েক জোড়া ছেলে মেয়ে নাচের জায়গায় উঠে বাজনার তালেতালে নাচতে শুরু করে দেয়। কিছুক্ষণের মধ্যেই, আবহাওয়া গরম হয়ে ওঠে ওদের নাচের তালে।
মনীষার কোমর পেছন থেকে ধরে, শরীরের সাথে শরীর মিলিয়ে শান্তনু নেচে চলেছে আর শ্রেয়া রূপকের সামনে উদ্দাম তরঙ্গে নেচে চলেছে। আশেপাশের ছেলে মেয়েরা থেমে নেই। একদল মেয়েরা এসেছিল, তারা সবাই নাচের জায়গায় নেমে পড়েছে। অধিকাংশ টেবিল খালি হয়ে গেছে। কয়েকটা টেবিলে শুধু মাত্র ছেলেরা বসে, নাচ দেখতে দেখতে মদের গ্লাসে চুমুক দিচ্ছে। বাজনার তালেতালে অনুপমার পা নাড়ানো শুরু হয়ে যায়। ওর চোখ নাচের জায়গায়, দেবায়ন থাকলে পাগলের মতন নাচতো।
এমন সময়ে ইন্দ্রনীল গ্লাস হাতে ওর পাশে এসে বসে জিজ্ঞেস করে, “এখানে পা নাচিয়ে কি লাভ? চল ওখানে।”
অনুপমা মিষ্টি হেসে বলে, “ভদকা শেষ করে নিয়ে তারপরে যাচ্ছি।”
ইন্দ্রনীল ওর দিকে একটু সরে এসে বলে, “তোমাকে আজকে সত্যি বেশ দেখাচ্ছে।”
অনুপমা চোখ বড় বড় করে বলে, “হ্যাঁ আর বলতে হবে না। বাকিদের থেকে অন্যরকম লাগছে সেটা বল।”
ইন্দ্রনীল হেসে বলে, “ভিন্ন হওয়া ভালো। সবাই পার্টি পোশাকে আর তুমি এই সাধারন অথচ সুন্দর পোশাকে। সত্যি তুমি ভিন্ন।”
অনুপমা বলে, “হুম…… একা পেয়ে ফ্লার্টিং করছ আমার সাথে?”
ইন্দ্রনীল, “ভারতীয় মেয়েদের সৌন্দর্য আলাদা, বিশেষ করে বাঙ্গালী মেয়েদের। ঘন কালো লম্বা চুল, বড় বড় কালো চোখ……”
অনুপমা হেসে হাত নাড়িয়ে বলে, “হ্যাঁ অনেক হয়েছে রুপের বর্ণনা। তাই তো মনিকা দেলাকরিক্স কে পটিয়েছ তাই না?”
ইন্দ্রনীল হেসে ফেলে, “আমার গার্ল ফ্রেন্ডের নাম মনে আছে?”
অনুপমা বলে, “মনে কেন থাকবে না, অনেক কিছু মনে আছে।”
ইন্দ্রনীল ফিসফিস করে বলে, “তুমি কাছে ছিলে না তাই দুধের স্বাদ ঘোলে মেটাতে হয়েছে। এমনিতে ফ্রাঙ্কফুর্টে বাঙ্গালী কম যাও বা পাই সবাই এঙ্গেজেড। কিন্তু তোমার মতন সুন্দরী সত্যি পাওয়া ভার। মিস্টার বসাক নেই তাই একটু চান্স নিচ্ছি যদি তোমার আপত্তি না থাকে। এমনিতে অফিসে তোমার কাছে আসা দায়।”
অনুপমার চোখে একটু নেশার রঙ লেগে যায়। বুকের ওপরে আলতো চাপড় মেরে বলে, “কে বলেছে সাথে নেই, এইখানে সবসময়ে থাকে আমার দেবু।”
চাপর মারার ফলে ওর স্তন জোড়া দুলে ওঠে আর ইন্দ্রনীলের দৃষ্টি সেই পীনোন্নত স্তন যুগলের দিকে চলে যায়। ফর্সা ত্বকের ওপর থেকে চোখ সরাতে পারে না। দুই স্তন যেন কাপড় ফুঁড়ে বেড়িয়ে আসবে।
ইন্দ্রনীল স্তনের থেকে চোখ সরিয়ে অনুপমার ঠোঁটের দিকে তাকিয়ে বলে, “তোমাকে দেখতে একদম পারমিতা আন্টির মতন।”
অনুপমা, “উম্মম্ম সবাই তাই বলে।”
ইন্দ্রনীল গলার স্বর নামিয়ে ফিসফিস করে বলে, “আই মিন খুব সুন্দরী আর লাস্যময়ী।”
অনুপমা মিচকি হেসে জিজ্ঞেস করে, “কাকে মিন করতে চাইছ? আমাকে না……”
ইন্দ্রনীলের কান লাল হয়ে যায় লজ্জায়, “না না না, অন্য কিছু ভেব না। আমি তোমাকে বুঝাতে চেয়েছিলাম।” হাত বাড়িয়ে প্রশ্ন করে, “আমার সাথে নাচতে যদি অসুবিধে না থাকে।”
অনুপমা বুঝতে পারে যে ইন্দ্রনীল একটু সংগ চাইছে। নাচের জায়গায় সঙ্গ দিতে কোন অসুবিধে নেই তাই ভদকা শেষ করে হাত বাড়িয়ে দেয় ইন্দ্রনীলের দিকে, “চল তাহলে, দেখি ইউরোপিয়ানরা বাঙালিদের সাথে কেমন নাচতে পারে।”
ইন্দ্রনীল হেসে বলে, “জেনে রাখো, এই সব নাচ এই সব পার্টি সব কিন্তু ইউরোপ থেকে এসেছে।”
অনুপমা মিচকি হেসে বলে, “ওকে, দেখা যাক তাহলে কে কাকে নাচাতে পারে।”
ইন্দ্রনীলের সাথে নাচতে শুরু করে অনুপমা। কিছু পরে ইন্দ্রনীল ওর কোমরে দুপাশে দুই হাত রাখে, কিছু না বলে নাচে মেতে থাকে অনুপমা। ইন্দ্রনীলের গায়ের গন্ধের সাথে সুরা নাকে লেগে রক্তে মাতন শুরু করে দেয়, সেই সাথে নাচের উদ্দাম তালে চোখ ভারী হয়ে আসে। নাচের সাথে বেশ বুঝতে পারে যে ইন্দ্রনীলের ছাতি ওর স্তনের ওপরে এসে চেপে গেছে, মাঝে মাঝেই ইন্দ্রনীলের হাত ওর পিঠের ওপরে ঘুরে বেড়াচ্ছে। নেশায় বুঁদ কিন্তু সেই অজানা ছোঁয়ায় মেতে ওঠে অনুপমা। নাচের তাল ধীরে ধীরে উদ্দাম লয়ে চড়তে শুরু করে, আশেপাশের ছেলে মেয়েদের তাল সেই সাথে তুঙ্গে। এমন সময়ে পাছার ওপরে একটা হাতের চাপ অনুভব করে, ইন্দ্রনীলের হাত কখন কোমর ছাড়িয়ে ওর ভারী নরম পাছার ওপরে চলে আসে সেটা টের পায়নি। ইন্দ্রনীলের গভীর আলঙ্গনে কেঁপে ওঠে অনুপমা, পাছার ওপরে চাপ পড়তেই সোজা হয়ে যায়। এতটা ছাড় কি সত্যি দিতে চায়? মৃদু হেসে ইন্দ্রনীলের হাত পাছার ওপর থেকে সরিয়ে দেয়।
অনুপমা ইন্দ্রনীলের বুকের ওপরে হাত রেখে আলতো ঠেলে দিয়ে বলে, “কোমর থেকে হাত নিচের দিকে নিতে নেই ইন্দ্রনীল।”
ফর্সা চেহারা লাল হয়ে যায় ইন্দ্রনীলের আবার কোমরে হাত রেখে নেচে চলে। উদ্দাম নাচের ফলে বেশ ঘামিয়ে গেছে, শ্বাস ফুলে উঠেছে, সাথে দেবায়ন থাকলে এতক্ষণে সাপের মতন পেঁচিয়ে নাচতো, কিন্তু নেশা থাকা সত্ত্বেও ইন্দ্রনীলের সাথে সেই মনোভাব আনতে পারল না।
মিচকি হেসে ইন্দ্রনীল কে বলল, “হাঁফিয়ে উঠেছি, তুমি নাচতে চাইলে নাচতে পারো। আমি একটু বসব আর একটা ড্রিঙ্কস নেব।”
ইন্দ্রনীল ওকে কাছে টেনে কানে ফিসফিস করে বলল, “বাঙালি তাহলে ইউরোপিয়ানের কাছে হার মেনেছে।”
অনুপমা কপট হেসে হার মেনে যায়, “হ্যাঁ ইন্দ্রনীল, বাঙ্গালী হার মেনেছে ইউরোপিয়ানের কাছে।”
রূপক আর শ্রেয়া ওদের পাশেই নাচছিল, আশে পাশে বেশ কয়েকটা মেয়েও উদ্দাম তালে নেচে চলেছে। একটা মেয়ে ইন্দ্রনীলের দিকে তাকিয়ে মিচকি হাসি দিয়ে আহ্বান জানায় সাথে নাচার জন্য। অনুপমা ওদের দেখে, নাচের জায়গা ছেড়ে নিজেদের টেবিলে এসে বসে পরে। ইন্দ্রনীল এগিয়ে যায় সেই অচেনা মেয়েটার সাথে নাচতে। অনুপমা একটা ভদকা অর্ডার দিয়ে তাকিয়ে দেখে যে ইন্দ্রনীল আর সেই অচেনা মেয়েটা বেশ জড়াজড়ি করে নেচে চলেছে। রূপক ওর দিকে তাকিয়ে চোখ টিপে ইশারা করে, বেশ ভালো জমেছে। কিছু পরে রূপক নাচের জায়গা ছেড়ে চলে আসে আর শ্রেয়া তখন নেচে যায়। শ্রেয়া দুই চোখ বন্ধ করে, মাথা নাড়িয়ে, কোমর নাচিয়ে উদ্দাম তালে নেচে চলে।
রূপক হাফাতে হাফাতে অনুপমার পাশে ধুপ করে বসে বলে, “শ্বাস ফুলে গেল আমার কিন্তু আমার বউকে দ্যাখ।”
অনুপমা হেসে বলে, “নাচতে দে, অনেকদিন পরে এসেছি একটু মজা করবেই।”
রূপক একটা হুইস্কি নিয়ে বসে পরে, “রাতের কি খবর?”
অনুপমা বলে, “তোর কি খবর? কাকিমা এই অবস্থায় শ্রেয়াকে বাড়িতে ঢুকতে দেবে না। আমি ভাবছিলাম যে ইন্দ্রনীলকে ওর বাড়িতে নামিয়ে দিয়ে তোরা সোজা আমার বাড়িতে রাত কাটাবি। কাল সকালে ব্রেকফাস্ট টেবিলে আমি ওকে জার্মানির কথা বলব।”
রূপক আর অনুপমা ড্যান্স ফ্লোরের দিকে তাকিয়ে দেখে যে ইন্দ্রনীল সেই অচেনা মেয়েটাকে ছেড়ে শ্রেয়ার সাথে নাচতে ব্যাস্ত। অনুপমা মিচকি হেসে রূপকের দিকে তাকায়। রূপক হেসে ফেলে ওদের নাচ দেখে। শ্রেয়া দুই হাতে ইন্দ্রনীলের গলা জড়িয়ে আর ইন্দ্রনীলের হাত শ্রেয়ার কোমরে, একবার পিঠের ওপরে ঘুরে বেড়ায়। শ্রেয়ার রক্তে নেশার আগুন, শীত কালেও ঘামিয়ে গেছে। অনুপমা বাঁকা চোখে লক্ষ্য করে যে, ইন্দ্রনীলের হাত শ্রেয়ার পাছার ওপরে বারেবারে ঘুরে বেড়িয়ে আলতো পিষে দিচ্ছে। শ্রেয়ার সেদিকে খেয়াল আছে কি নেই সেটা আর ওর মুখ দেখে বোঝা গেল না। অনুপমা রূপকের দিকে তাকিয়ে দেখে, রূপক মদ গিলতে ব্যাস্ত, শ্রেয়া নেশায় বুঁদ হয়ে কি করছে সেদিকে আর খেয়াল নেই ওর।
বেশ কিছুক্ষণ নাচার পরে মনীষা আর শান্তনু ওদের পাশে এসে বসে পরে। মনীষা জিজ্ঞেস করে, “কাল কি সবার ছুটি মারার ইচ্ছে আছে নাকি?”
কপট রাগ দেখিয়ে হেসে বলে, “সবার সি এল কেটে নেব।”
মনীষা ড্যান্স ফ্লোরে শ্রেয়াকে দেখিয়ে বলে, “রূপক ভাই, তোমার বৌ মনে হয় না আজকে নাচ থামাবে। এর পরে বেলচা করে উঠিয়ে নিয়ে বাড়ি ফিরতে হবে ওকে।”
চারজনেই হাসিতে ফেটে পড়ে।
আরও বেশ কিছুক্ষণ নাচার পরে রূপক শ্রেয়াকে ডেকে নেয়। শ্রেয়া এক প্রকার টলতে শুরু করে, ওর খাওয়ার ইচ্ছে করে না, এক প্রকার রূপকের কাঁধের ওপরে ভর করে থাকে সারাটা সময়। রাতের খাবার সেরে, ইন্দ্রনীলকে বাড়িতে নামিয়ে দিয়ে বাড়ি ফিরে আসে। সারাটা রাস্তা শ্রেয়া একপ্রকার রূপকের কাঁধের ওপরে ঢলে পড়েছিল, অনেকদিন পরে ছাড়া পেয়েছিল তাই গলা পর্যন্ত নেশা করেছিল। বাড়ি পৌঁছানোর পড়ে, রূপক এক প্রকার কোলে করে শ্রেয়াকে নিয়ে গেস্ট রুমে ঢুকে পড়ে।
 
Like Reply
চতুর্বিংশ পর্ব (#07)

ওদের আওয়াজ পেয়ে পারমিতা নিচে নেমে আসে।
পারমিতা মেয়েকে জিজ্ঞেস করে, “কেমন কাটালি?”
অনুপমা মাকে জড়িয়ে ধরে বলে, “দারুন।”
পারমিতা বলে, “শ্রেয়া ড্রিঙ্ক করে একদম বুঁদ হয়ে গেছে দেখছি।”
অনুপমা হেসে ফেলে, “হ্যাঁ, অনেকদিন পরে ড্রিঙ্ক করেছে তাই আর হুঁশ নেই।”
নিজের রুমে ঢুকে অনুপমা দেখে যে, পায়েল নেই। প্রথমে একটু অবাক হয়ে যায়, তারপরে মা’কে জিজ্ঞেস করে পায়েলের কথা।
পারমিতা অঙ্কনের রুমের দিকে দেখিয়ে মিচকি হেসে বলে, “আমি রুমে ঢুকে যাওয়ার পরে পায়েল চুপিচুপি তোর ভাইয়ের রুমে গেছে।”
অনুপমা চোখ বড়বড় করে জিজ্ঞেস করে, “তুমি জানতে আর কিছু বলো নি?”
পারমিতা হেসে ফেলে মেয়ের কথা শুনে, “আশা করি এই বাড়িতে সবাই প্রাপ্ত বয়স্ক হয়ে গেছে। এই বাড়ির হবু বৌমা তো, এই টুকু ছাড় পেতেই পারে।”
মায়ের এই উদার রুপ দেখে খুব ভালো লাগে, পারমিতার গালে একটা চুমু খেয়ে বলে, “তুমি সত্যি অনেক বদলে গেছ।”
পারমিতা মেয়ের গাল টিপে বলে, “আর আদিখ্যেতা দেখাস না, যা রুমে যা। তোর ফোন না পেয়ে হ্যান্ডসাম ফোন করেছিল আমাকে।”
অনুপমার মাথায় হাত, “ইসসসস…… একদম ভুলে গেছি। এখুনি ফোন করছি ওকে।”
পারমিতা বলে, “এখন রাত তিনটে বাজে এখন আর করতে হবে না। তোর বাবা বিন্সার ফিরে এসেছে সেটা জানাতে ফোন করেছিল। কাল সকালে ওরা দেরাদুন যাবে।”
অনুপমা, “আচ্ছা, ওকে গুড নাইট।”
তারপরে নিজের রুমে ঢুকে পড়ে অনুপমা। পায়েল নেই, একটু খালি খালি মনে হয় রুম, তাও ভালো লাগে এই ভেবে যে পায়েল নিজের খোলস ছেড়ে বেড়িয়ে আসার চেষ্টা করছে।
সকালে খাবার টেবিলে সবার সাথে দেখা। পায়েল কলেজে যাওয়ার জন্য তৈরি, নিচে নেমে শ্রেয়া আর রূপক কে দেখে অবাক হয়ে যায়। শ্রেয়া জানায় যে গত রাতে ওরা সবাই মিলে ডিস্কো গিয়েছিল, পায়েল অনুপমার দিকে তাকিয়ে একবার দেখে। এমন ভাব যেন কেন ওকে বলা হয় নি। পায়েলের খোশ মেজাজ দেখে সবার বেশ ভালো লাগে। খাবার টেবিলে সবাই বসে, একথা সে কথার পরে অনুপমার দিকে রূপক চোখ টিপে ইশারা করে জার্মানির কথা বলার জন্য।
স্যান্ডউইচের ওপরে মেয়নিজ মাখাতে মাখাতে শ্রেয়া রূপককে জিজ্ঞেস করে, “তোমার ব্যাগ গোছানো হয়ে গেছে? আগামী সপ্তাহে আমরা যাচ্ছি।”
রূপক অনুপমার দিকে তাকায়, আর অনুপমা সেই প্রশ্নের উত্তরে বলে, “তুই কাল রাতে কি করেছিস তোর মনে আছে?”
শ্রেয়া হাজার প্রশ্ন নিয়ে অনুপমার দিকে তাকিয়ে থাকে। অনুপমা বলে, “গত রাতে তুই আর রূপক বেশ জড়াজড়ি করে নেচেছিস।”
শ্রেয়া রূপককে একটু কাঁধের ঠ্যালা দিয়ে বলে, “সত্যি এর চেয়ে বেশি কিছু করনি তো?”
রূপক কি উত্তর দেবে ভেবে পায়না। অনুপমা ওকে বলে, “তোর পাসপোর্ট কাল মনীষাকে দিয়ে দিস। ইতিমধ্যে এয়ার বার্লিনের থেকে ইনভিটেসান চলে আসার কথা। ওটা চলে এসে ভিসা পেতে অসুবিধে হবে না।”
জুসের গ্লাসে চুমুক দিয়ে শ্রেয়াকে জিজ্ঞেস করে, “তোরা বিয়ে কবে করছিস?”
রূপক আর শ্রেয়া দুইজনে ওর প্রশ্নে অবাক হয়ে যায়। অনুপমা হেসে বলে, “এত অবাক হওয়ার কি আছে। একদিন বিয়ে করবি, সেটাই জানতে চাইছি কবে করবি।”
রূপক, “আমাদের বিয়ে আর……”
অনুপমা ওকে চোখ টিপে চুপ করতে বলে আর শ্রেয়াকে জিজ্ঞেস করে, “তোরা হানিমুনে কোথায় যেতে চাস?”
শ্রেয়া রূপকের হাত খানা বুকের কাছে জড়িয়ে ধরে বলে, “যেখানে নিয়ে যেতে চাইবে সেখানে যেতে রাজি আমি।”
অনুপমা দুইজনের দিকে তাকিয়ে বলে, “লুক্রেন, সুইস আল্পস না মরিশাস না রোম? কোথায় যেতে চাস?”
শ্রেয়া ভুরু কুঁচকে প্রশ্ন করে, “কেন কেন, তুই কি আমাদের হানিমুন ফাইন্যান্স করবি নাকি?”
অনুপমা বলে, “প্লেনের বিজনেস ক্লাসের ভাড়া দিতে পারি।”
শ্রেয়া বলে, “সেটাও অনেক। যাই হোক, তোর মাথায় অন্য কিছু একটা চলছে।”
ধরা পরে গেছে অনুপমা, তাই হেসে বলে, “অফিসে অনেক কাজের চাপ।”
শ্রেয়া বলে, “হ্যাঁ অনেক কাজের চাপ, আমার শ্বাস নেওয়ার সময় নেই।”
অনুপমা বলে, “সবার কাঁধে অনেক কাজের চাপ। তোকে অনেকদিন পরে কাজের মধ্যে ডুবে থাকতে দেখে বড় ভালো লাগছে। তুই এক কাজ কর, তুই আর ইন্দ্রনীল আগে জার্মানি চলে যা।”
শ্রেয়া অবাক চোখে প্রশ্ন করে, “মানে?”
অনুপমা বলে, “দ্যাখ, আগে তুই ওখানে গিয়ে প্রোডাক্ট নিয়ে কথাবার্তা বলতে শুরু কর। ডিলের ব্যাপারে দীপঙ্করদা সব কাগজ তৈরি করে পৌঁছে যাবে আর টেকনিকালের জন্য সুপর্ণা ম্যাডাম পৌঁছে যাবে। তুই ততদিন ওখানে একটু ঘুরে বেড়িয়ে নিতে পারবি। ডিল ফাইনাল করতে তোর সাইন চাই, সব কিছু ফাইনাল করে সবাইকে নিয়ে ফিরে আসিস।”
শ্রেয়া রূপকের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে, “এই প্রোজেক্টে তুমি নেই?”
রূপক মাথা নাড়িয়ে জানিয়ে দেয়, “না সোনা, এই প্রোজেক্ট আমার নয়। এটার জন্য যে পরিমানে অভিজ্ঞতা দরকার সেটা আমার নেই। এই প্রোজেক্ট সুপর্ণা ম্যাডামের অধীনে হবে।”
শ্রেয়া জিজ্ঞেস করে, “তুমি যাবে কি যাবে না, ঠিক করে বল।”
রূপক আমতা আমতা করে বলে, “না ডার্লিং, আমি যেতে পারছি না।”
শ্রেয়া মাথা ঝাঁকিয়ে বলে, “তাহলে আমি যাচ্ছি না, প্রোডাক্টের জন্য আমি নিরঞ্জনকে পাঠিয়ে দেব, আর ডিল সাইন করার জন্য অনু চলে যাবে।”
অনুপমা হেসে ফেলে শ্রেয়ার অবস্থা দেখে, “এই পাগলি মেয়ে, মাত্র সাত দিন। শোন এক কথা, এই প্রোজেক্টের ওপরে আমাদের অনেক কিছু নির্ভর করছে, তুই এই কয়দিন ডুবে ছিলিস ডিজাইনিংয়ে, তুই ওদের আইটি ডিপার্টমেন্টের সাথে কথা বলেছিস। এই সময়ে তুই না গেলে পুরো ডিজাইন কেঁচিয়ে যাবে আর শেষ পর্যন্ত আমাদের হাত থেকে প্রোজেক্ট চলে যাবে। তুই কি চাস যে আমরা শুধু ওয়েবসাইট নিয়ে পরে থাকি?”
শ্রেয়া চুপচাপ একবার অনুপমার দিকে তাকায় একবার রূপকের দিকে তাকায়। অনুপমা বলে, “কি ভাবছিস? তোকে আমি চারশো ইউরো এক্সট্রা দেবো, মন খুলে শপিং করিস।”
কেনাকাটার আর টাকার অঙ্ক শুনে শ্রেয়ার চোখ চকচক করে ওঠে, মাথা নেড়ে খুশি হয়ে জানিয়ে দেয় যে যেতে রাজি আছে। রূপক বুঝিয়ে বলে যে কাজের চাপের জন্য যেতে পারবে না। শ্রেয়া জানিয়ে দেয় যে একাই যাবে। এত ছোটো বয়সে, এত বড় কাজের দায়িত্ত পেয়ে শ্রেয়া খুশি, নিজেকে বেশ বড় বড় মনে হয়।
কিছুদিনের মধ্যে এয়ার বার্লিনের কাছ থেকে আমন্ত্রন পত্র চলে আসে আর সবার ভিজা তৈরি হয়ে যায় সময় মতন। শ্রেয়া আর ইন্দ্রনীল কয়েক দিন পরে ফ্রাঙ্কফুর্টের উদ্দেশ্যে রওনা দেয় আর তার কিছুদিন পরে সব কাগজ পত্র তৈরি করে দীপঙ্করদা আর সুপর্ণা ম্যাডাম ফ্রাঙ্কফারটের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। শ্রেয়া চলে যাওয়ার পরে অফিসে বেশ ফাঁকা ফাঁকা মনে হয় অনুপমার। দেবায়ন নেই, শ্রেয়া নেই, পায়েল কোনদিন আসে, কোনদিন আসেনা। অনুপমা পায়েলকে অফিসে আসতে বিশেষ জোর করে না, কারন এই বছর ফাইনাল পরীক্ষা দেবে। বেশ কয়েক দিন কেটে যায় এই ভাবে।
সেদিন বিকেলে অনুপমা, কোম্পানির ব্যাঙ্ক স্টেটমেন্ট দেখছিল। একাউন্টে অতিরিক্ত দুই কোটি টাকা দেখতে পেয়ে ভাবতে বসে যে কোথা থেকে এলো এতো টাকা, অঙ্ক মেলে না কিছুতেই। ওদিকে দেবায়নের আসতে এখন দিন তিনেক দেরি। ডালহৌসি গেছে বাবার সাথে, আবার ফোন পাওয়া যাচ্ছে না। অফিসে আরো কিছু কাজ বাকি পড়েছিল, সেই সব সারতে সারতে রাত হয়ে যায়। ফোন করে মামনিকে বলে দেয় যে রাতে খেতে যেতে পারবে না। মন পড়ে থাকে দেবায়নের কাছে, তিন দিন পরে ফিরবে, তিন দিন যেন তিন বছর মনে হয়। হৃদয় বাগ মানে না, মিলনের কথা চিন্তা করলেই শরীর চনমন হয়ে ওঠে। কঠিন বাহুপাশে নিজেকে উজাড় করে দেওয়ার জন্য প্রান ছটফট করে ওঠে। ভাবতে ভাবতেই সারা শরীর কাঁটা দিয়ে ওঠে, জানু মাঝে শিরশির শুরু হয়ে যায়। কফি কাপে চুমুক দিয়ে ওদের পুরানো ছবি খুলে বসে পড়ে।
রাত আটটা বাজে, ব্যাগ গুছিয়ে ড্রাইভারকে ফোন করে বলে গাড়ি বের করতে। কেবিন থেকে বেড়িয়ে দেখে অফিস খালি, সার্ভার অপারেশান টিমের কিছু ছেলেরা শুধু রয়েছে। করিডোরের এক কোনায় রুপকের কেবিনে তখন লাইট জ্বালা দেখে থমকে দাঁড়ায়। এত রাতে এখন বাড়ি যায়নি ছেলেটা, কি করছে। দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকে দেখে যে রূপকের হাতে একটা গ্লাস আর ল্যাপটপ খুলে বসে।
অনুপমা ওকে জিজ্ঞেস করে, “কি ব্যাপার, বাড়ি যাবি না?”
রূপক খুব মনোযোগ সহকারে প্রোগ্রামিংয়ে ব্যাস্ত ছিল, হঠাৎ অনুপমার গলা পেয়ে থতমত খেয়ে যায়। মুখ তুলে তাকিয়ে বলে, “না মানে এই যাচ্ছি।”
রূপকের চেহারা বেশ ক্লান্ত, মাথার চুল উস্কখুস্ক দেখে অনুপমার মন কেমন করে ওঠে। শ্রেয়া থাকলে হয়ত ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিত অথবা ওকে সান্ত্বনা দিত। এদিকে দেবায়ন নেই যে ওকে শান্ত করে ওদিকে শ্রেয়া নেই যে রূপককে শান্ত করে।
অনুপমা কাঁধের ব্যাগ নামিয়ে রূপকের পেছনে দাঁড়িয়ে বলে, “তোকে খুব ক্লান্ত মনে হচ্ছে, কি হয়েছে?”
রূপক হুইস্কির গ্লাসে চুমুক দিয়ে বলে, “কিছু না, এমনি। এই কাজের চাপ আর কি।”
অনুপমা ওর মাথার চুলে আঙুল ডুবিয়ে টিপে দিতে দিতে বলে, “অফিসে হুইস্কি খাচ্ছিস?”
রূপক হেসে ফেলে, “এখন আমার সময়, অফিস ছুটির পরেই খাচ্ছি। যাই হোক তোর এত দেরি কেন?”
অনুপমা ওর গ্লাস থেকে একটা চুমুক দিয়ে বলে, “কিছু না, একটু কাজ বাকি ছিল, তাই দেরি হয়ে গেল।”
রূপক ল্যাপটপ ছেড়ে, গ্লাসে আরও একটু হুইস্কি ঢেলে নেয়। অনুপমার পাতলা নরম আঙুল ওর মাথার চুলের মধ্যে বিলি কেটে আরাম দেয়। আরামে রূপকের চোখ বুজে আসে। অনুপমা ঝুঁকে পরে রূপকের কাঁধের ওপরে, দুই হাতে দিয়ে ওর কাঁধের পেশি টিপতে শুরু করে। আরামে শরীর এলিয়ে চেয়ার হেলান দিয়ে বসে রূপক। কাঁধে মালিশের মাঝে মাঝে হুইস্কির গ্লাসে আরও দুটো চুমুক দেয় অনুপমা। রক্তে নেশা লাগতেই, রক্ত চনমন করে ওঠে অনুপমার। অনুপমা রূপকের পিঠের ওপরে ঝুঁকে পরে, কাঁধে মাথায় ওর রেশমি চুলে ঢেকে যায়। রূপক মাথা পেছনে হেলিয়ে দেয় আর অনুপমার মুখ ওর মুখের সামনে এসে যায়। চোখের সাথে চোখের তারা নিবদ্ধ হয়ে যায় হঠাৎ করে।
অনুপমা ফিসফিস করে জিজ্ঞেস করে, “কাকে ভাবছিস তুই?”
রূপক হাত উঁচু করে অনুপমার গলা জড়িয়ে নিজের মুখের ওপরে টেনে নামিয়ে দিয়ে বলে, “এখন অন্য কারুর কথা চিন্তা করছি না।”
রূপকের নাকে ভেসে আসে অনুপমার শরীরের মনমাতানো গন্ধ। রক্তে লাগে ঢেউ, ঠোঁট খুলে আলতো করে অনুপমার থুতনিতে একটা ছোটো চুমু খায়।
ভেজা ঠোঁটের পরশে অনুপমার শুকনো শরীর চনমনে হয়ে ওঠে। নরম স্তন চেপে ধরে রূপকের ঘাড়ের ওপরে। রূপক হাত পেছনে নিয়ে এসে অনুপমার কোমর জড়িয়ে ধরে। অনুপমা ঝুঁকে পরে ওর কপালে, নাকের ওপরে ঠোঁট ছুঁইয়ে দেয়।
রূপক ওর হাত ধরে সামনে নিয়ে এসে বলে, “বড় একা লাগছে একটু জড়িয়ে ধরবি?”
অনুপমার চোখ আধাবোজা হয়ে দুই হাত মেলে ওকে আহ্বান জানায়, “চলে আয়।”
রূপক দাঁড়িয়ে অনুপমাকে জড়িয়ে ধরে। অনেকদিনের অভুক্ত শরীর অনুপমার, কঠিন বাহুপাশে নিজেকে এলিয়ে দিতে বড় ভালো লাগে। রূপক দুই হাতে আস্টেপিস্টে জড়িয়ে ধরে অনুপমাকে, ঘাড় গুঁজে দেয় অনুপমার ঘাড়ে, নরম গালের ওপরে কর্কশ গাল থেকে কামাগ্নির স্ফুলিঙ্গ ঠিকরে বের হয়। রূপকের হাত ধীরে ধীরে অনুপমার পিঠের ওপরে আদর করে বেড়ায়। অনুপমা দুই হাতে রূপককে জড়িয়ে তৃষ্ণার্ত শরীরের তেষ্টা মেটাতে উন্মুখ হয়ে ওঠে। রূপকের ঠোঁট অনুপমার গাল ছুঁয়ে, ঠোঁটের দিকে অগ্রসর হয়। আবেগে দুই চোখ বন্ধ হয়ে যায় অনুপমার, ঠোঁট খুলে উষ্ণ শ্বাসে রূপকের মুখমন্ডল ভরিয়ে দেয়। দুই হাতে আঁজলা করে ধরে অনুপমার মুখ আর ঠোঁটের ওপরে ঠোঁট মিলিয়ে অধর সুধা আকণ্ঠ পান করে। দুই বিরহ কাতর নরনারীর শরীরে নেশার আগুনের সাথে সাথে মিলনের আগুন জ্বলে ওঠে।
রূপকের হাত দেহের মাঝে নেমে এসে জামার ওপরে দিয়েই অনুপমার এক পীনোন্নত স্তন মুঠোর মধ্যে নিয়ে আলতো চাপ দিয়ে আদর করতে শুরু করে দেয়। অনুপমার শরীর জ্বলে ওঠে, চনমন করে ওঠে সারা গায়ের রক্ত। বুক উঁচু করে রূপকের হাতের মধ্যে নিজের স্তন ঠেলে দেয়। রূপকের এক হাত নেমে আসে, জিন্সে ঢাকা পাছার ওপরে। অনুপমার এক স্তন ওর হাতের মুঠোয় অন্য স্তনের ওপরে রূপকের মুখ। এক হাতে নরম পাছা টিপে আদর করে দেয়। অনুপমার শ্বাসে লাগে কামনার আগুন, মাথা পেছনে হেলিয়ে সুখের সাগরে ভেসে যেতে প্রস্তুত। জানুসন্ধি মাঝে তিরতির করে রস বইতে শুরু করে দিয়েছে।
অনুপমার হাত নেমে আসে রূপকের প্যান্টের সামনে, কঠিন লিঙ্গের ওপরে। কঠিন লিঙ্গের ওপরে হাত ছোঁয়াতেই শরীর কেঁপে ওঠে অনুপমার। রূপক ওকে ঠেলে টেবিলের ওপরে বসিয়ে দেয়। দুই জানু মেলে দিয়ে জানু মাঝে দাঁড়িয়ে পরে রূপক। ঠোঁটের সাথে ঠোঁট মিলে উন্মাদের মতন পরস্পরকে চুম্বন করতে থাকে। সেই সাথে রূপকের হাত নেমে আসে জিন্সে ঢাকা জানুসন্ধির ওপরে। জিন্সের ওপর দিয়েই অনুপমার যোনিদেশে হাত চেপে ধরে।
যোনি বেদীর ওপরে হাতের চাপ অনুভব করতেই কেঁপে ওঠে তৃষ্ণার্ত রমণী। পরনের প্যান্টি যোনি রসে ভিজে, যোনি বেদীর ওপরে লেপটে গেছে। হঠাৎ করেই নেশা ঘোর কেটে যায়, রূপকের লিঙ্গের ওপর থেকে হাত সরিয়ে নিজেকে ছাড়িয়ে নেয়।
রূপকের হাত চেপে ধরে মাথা নাড়িয়ে অস্ফুট স্বরে রূপকের চোখের দিকে তাকিয়ে বলে, “না রূপক, আমাদের করা উচিত নয়।”
রূপক বুঝতে পারে নেশার ঝোঁকে কি করতে চলেছিল। বিদ্যুৎস্পর্শ করার মতন এক ঝটকায় অনুপমাকে ছেড়ে দাঁড়ায়। মাথা ঝাঁকিয়ে বলে, “সরি অনুপমা, সরি। মদের ঝোঁকে…… সত্যি বলছি আমি দুঃখিত। প্লিজ কিছু মনে করিস না।”
অনুপমার চোখ মুখ লাল, মাথার চুল অবিন্যাস্ত, পরনের প্যান্টি ভিজে উঠেছে তাও নিজেকে সামলে নিয়ে দাঁড়িয়ে পরে। রূপকের চোখের দিকে তাকাতে পারছে না। দুইজনেই মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকে কিছুক্ষণ।
অনুপমা ল্যাপটপের ব্যাগ উঠিয়ে, কেবিনের দরজা খুলে বাথরুমে ঢুকে পরে নিজেকে ঠিক করার জন্য। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে জিজ্ঞেস করে, যা করতে যাচ্ছিল, সেটা কি ঠিক না ভুল? এটা কি দেবায়নের সাথে প্রতারণা? দেবায়ন ওর পেছনে অনেকের সাথে যৌন সঙ্গম করেছে, এবং পরে বলেছে। অনুপমা সব মেনে নিয়েছে, কিন্তু ওর যদি পা ফস্কাত তাহলে কি দেবায়ন মেনে নিতে পারত? জানে না এর উত্তর।
অফিস থেকে বেড়িয়ে যাওয়ার আগে রূপকের কেবিনে টোকা মেরে নিচু কণ্ঠে বলে, “বেশি হুইস্কি খাস না আর তারাতারিও বাড়ি ফিরিস। বাইক চালাতে না পারলে একটা ফোন করে দিস, আমি গাড়ি পাঠিয়ে দেব।”
দরজা খুলে দেখল না যে, রূপক মাথা নিচু করে চুপচাপ বসে।
এর পরের বেশ কয়েকদিন দুইজনের মধ্যে কোন কথা নেই, সামনে এলেই পরস্পরকে এড়িয়ে যায়। এই আচরন অবশ্য কারুর চোখে ঠিক ধরা পরে না। অফিসের বাকি কর্মীরা উচ্চ পদস্থদের ব্যাপারে বিশেষ নাক গলায় না। অনুপমা এই ঘটনা দেবায়নের কাছ থেকে লুকিয়ে যায়।
 
Like Reply
 

চতুর্বিংশ পর্ব (#08)
দেবায়ন আসবে, অনুপমা বেশ খুশি। এক ঘন্টা আগেই এয়ারপোর্টে পৌঁছে যায় গাড়ি নিয়ে। এয়ারপোর্ট থেকে দেবায়ন সোজা নিজের বাড়ি যাবে আর বাবা বাড়ি ফিরে আসবে। অনুপমার ইচ্ছে রাতে দেবায়নের সাথে কাটায়, কিন্তু মামনি থাকলে সেটা সম্ভব নয়। এক মাস পরে বাড়ি ফিরছে, তাই নিজের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। রাস্তা থেকে একটা ফুলের তোড়া কেনে। এরাইভালে দাঁড়িয়ে বারেবারে ঘড়ি দেখে, সময় যেন আর কাটতে চায় না, ঘড়ির কাটা কেন যে বিকেল চারটায় এসে থামে না সেটাই চিন্তা করে। ওদিকে মামনি অফিসে হাফ-ডে করে বাড়ি ফিরে রান্না চাপিয়ে দিয়েছে।
কিছু পরে ব্যাগ হাতে দেবায়ন কে আর বাবাকে বেড়িয়ে আসতে দেখে অনুপমা লাফিয়ে ওঠে। পাশে বাবা তাই মনের উচ্ছ্বাস সামলে রেখে ফুলের তোড়া দেবায়নের হাতে তুলে দিয়ে পাশে দাঁড়ায়। দেবায়ন ওর কাঁধে হাত রেখে নিজের দিকে টেনে নেয়। এতদিন পরে অতি পরিচিত হাতের ছোঁয়া, অতি পরিচিত গভীর কণ্ঠস্বর, সব মিলিয়ে মনে হয় গলে পড়ে যাবে অনুপমা।
অনুপমা মিষ্টি হেসে জিজ্ঞেস করে, “কেমন আছিস?”
দেবায়ন হেসে উত্তর দেয়, “কেমন দেখছিস?”
বুকের ওপরে চিমটি কেটে বলে, “একটু রোগা হয়ে গেছিস মনে হচ্ছে।”
দেবায়ন ওর মাথার ওপরে নাক ঘষে ফিসফিসিয়ে বলে, “তুই ছিলিস না তাই রোগা হয়ে গেছি। এবারে আবার সব ঠিক হয়ে যাবে।”
দেবায়ন সামনে বসে আর মিস্টার সেনের সাথে গাড়ির অনুপমা পেছনে বসে। পথে যেতে যেতে বিগত এক মাসের হোটেলের গল্প করে। কখন ডালহৌসি, কখন বিন্সার, কখন সোলাং ভ্যালি। এবারে পুনে, ব্যাঙ্গালোর আর উটি যাওয়া হয়ে ওঠেনি। এই তিন জায়গায় গিয়ে হোটেলের মালিকানা স্বতঃ কেনা হয়ে গেছে। ওদের মালি কিছু দিনের মধ্যে কোলকাতা আসবে কাগজ পত্র ঠিক করে, সই সাবুদ নিতে। দেবায়ন চায় নি, মিস্টার সেন পারমিতাকে নিয়ে হোটেলের কাজে আবার বের হয়, তাই হোটেলের মালিকদের কোলকাতা ডাকা হয়েছে। কয়েক মাস পরে আবার বের হতে হবে, ব্যাঙ্গালোর, পুনে আর উটির উদ্দেশ্যে। তবে এইবারে একটা ভালো কাজ হয়েছে, মানালিতে মিস্টার সেনের এক বন্ধুর সাথে দেখা হয়ে যায়, তিনি নাগগার নামের একটা জায়গায় একটা রিসোর্ট বানাতে চায়, জায়গা তার আছে, আপেল বাগানের বেশ কিছু অংশে তিনি রিসোর্ট বানাতে চান। টাকা বিনিয়োগ করতে রাজি হয়েছে মিস্টার সেন এবং সেই সাথে মালিকানা। এই হোটেলের কন্সট্রাকশন নিজের কোম্পানি দ্বারা করাবে। এই সব কথাবার্তায় সময় কেটে যায়। অনুপমা আর দেবায়নকে বাড়িতে নামিয়ে দিয়ে, গাড়ি মিস্টার সেনকে নিয়ে বাড়ি ফিরে যায়।
এক মাসে পরে ছেলেকে দেখতে পেয়ে দেবশ্রী ভারী খুশি। এর আগে এতদিন বাইরে থাকেনি, হ্যাঁ ছেলে ছেড়ে একবার দিন পনেরোর জন্য দিল্লী যেতে হয়েছিল, কিন্তু দেবায়ন কখন মা ছাড়া অন্যের সাথে বাইরে যায় নি। মানালি থেকে মায়ের জন্য আনা শাল, অনুপমার জন্য আনা একটা ফারের জ্যাকেট, নিজের জন্য আর অঙ্কনের জন্য জ্যাকেট ইত্যাদি উপহার গুলো খুলে দেখায়। দেবশ্রী ভারী খুশি, ছেলেকে পেয়ে, সেই সাথে অনুপমা।
অনুপমা বাড়িতে ফোন করে জানিয়ে দেয় যে রাতে মামনির বাড়িতেই থেকে যাবে। এতদিন পরে কাছে পেয়েছে, তাই এক মুহূর্তের জন্য চোখের আড়াল করতে নারাজ। সারাক্ষণ মন আনচান করে কখন একটু নিবিড় সান্নিধ্য পাবে ওই পেশিবহুল ছাতির ওপরে। ওর আলিঙ্গনে বদ্ধ হয়ে বুকের ওপরে মাথাটা রেখে ঘুমাতে পারবে। রাতের খাওয়ার পরে দেবশ্রী শুতে চলে যায়, অনুপমা আর দেবায়ন সোফায় বসে টিভি দেখে। দেবশ্রী একবার অনুরোধ করেছিল যাতে অনুপমা তাড়াতাড়ি শুতে আসে, মনে মনে জানতো যে অনুপমা দেবায়নের রুমেই রাত কাটাবে।
সোফায় বসে অনুপমার কোমরে হাত জড়িয়ে কাছে ডেকে নেয়। দুই পা মুড়ে, শরীর কুঁকড়ে দেবায়নের বাহু মাঝে নিজেকে সমর্পণ করে দেয়। মত্ত সর্পিণীর মতন বিশাল দেহ কাঠাম জড়িয়ে ধরে, নিজেকে উজাড় করে দেয়। দেবায়ন ওর ঠোঁটে ঠোঁট মিলিয়ে, আকন্ঠ অধর সুধা পান করে। ফুলের মতন নরম দেহটাকে কোলে তুলে বিছানায় নিয়ে যায়। বহু দিন অভুক্ত ষাঁড়ের মতন ঝাঁপিয়ে পরে প্রেয়সীর কোমল দেহপল্লবের ওপরে, দুই হাতে পিষে নিঙরে একাকার করে দেয় কোমল দেহ। বুকের রক্ত মিলনেচ্ছুক, বেশি সময় নেয় না দুই কপোত কপোতী নিজেদের কে নিজেদের কাছে উজাড় করে মেলে ধরতে। সারা রাত ধরে ওদের মিলন খেলা চলে, কখন অনুপমা ওপরে, কখন দেবায়ন ওপরে, এইভাবে মিশে যায় প্রেমের খেলায়।
পরের দিন সকালে দুইজনে অফিসে হাজির। এই একমাসে অনেক কিছু বদলে গেছে। বেশ কয়েক জনের নতুন মুখ দেখতে পায়, সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্টে নতুন কয়েকজন ছেলে নিযুক্ত হয়েছে, প্রোডাক্ট ডিজাইনিংয়ে বেশ কয়েকজন মেয়ে নিযুক্ত হয়েছে।
প্রথমেই রূপকের কেবিনের দরজা ঠেলে ঢুকে পরে দেবায়ন, “কি রে শালা কি ব্যাপার। বৌ নেই বাড়া হাতে কি করছিস?”
রূপক থতমত খেয়ে যায়, তারপরে চেয়ার ছেড়ে উঠে দেবায়নকে জড়িয়ে ধরে, “কি রে বাল, কোন হিল্লি দিল্লী করে বেড়াচ্ছিস?”
সেদিনের পর থেকে অনুপমার আর রূপকের মধ্যে একরকম ভাববাচ্যে কথাবার্তা। এখন পর্যন্ত স্বাভাবিক হয়ে উঠতে পারেনি দুইজনে। দেবায়নের পেছনে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে। আড় চোখে রূপকের দিকে তাকায়, রূপক চোখ নামিয়ে দেয়।
দেবায়ন মজা করে রূপককে জিজ্ঞেস করে, “কি রে বাল, বৌ নেই কয় জনকে লাগিয়েছিস? অফিসে অনেক নতুন ফুল দেখছি যে?”
রূপকের কান লাল হয়ে যায় কথা শুনে, আমতা আমতা করে বলে, “ধুর বাল, আমি নিজের কাজেই ব্যাস্ত থাকি তাই এদিক ওদিক আর দেখা হয় না।”
দেবায়ন জিজ্ঞেস করাতে জানতে পারে যে, দিন তিনেকের মধ্যে শ্রেয়া ফিরে আসবে। এয়ার বার্লিনের প্রোজেক্ট ওরা পেয়ে গেছে, সেই সাথে জারমেনিয়া এয়ারলাইন্সের সাথে কথাবার্তা হয়েছে। দেবায়ন অনুপমাকে নিয়ে বেড়িয়ে যাবার আগে রুপককে বলে যে রাতে তিনজনে মিলে ডিস্কো যাবে। অনেকদিন পরে মোহময়ী, কল্লোলিনী কোলকাতার নিশার সৌন্দর্য আহরণ করতে চায়। অনুপমার বুক থমথম করে ওঠে, কিছুতেই রূপকের সাথে স্বাভাবিক হতে পারছে না।
নিজের কেবিনে ঢুকে, অনুপমাকে আবার জড়িয়ে ধরে। অনুপমা কপট অভিমান দেখিয়ে বলে, “এই কি করছিস, ছাড় শালা কুত্তা। এটা অফিস।”
দেবায়ন হেসে ওর গালে চুমু খেয়ে বলে, “আমার অফিস, আমার বৌ। যা ইচ্ছে তাই করব, যেখানে ইচ্ছে প্রেম করব।”
এমন সময়ে হঠাৎ রূপক এসে কেবিনের দরজা খুলে ঢুকে পরে। ভাবতে পারেনি যে দেবায়ন আর অনুপমা পরস্পরকে জড়িয়ে ধরে থাকবে, তাই বলে, “তোরা প্রেম করে নে, একটু পরে আসছি তাহলে।”
অনুপমা মাথা নিচু করে নিজেকে ছাড়াতে চেষ্টা করে, ওদিকে দেবায়ন ওকে টেনে ধরে বুকের সাথে মিলিয়ে রূপকের উদ্দেশ্যে বলে, “বাল তুই যখন ওর জন্মদিনের রাতে ওর সাথে করেছিলিস তখন এত লজ্জা পেতিস না। আজকে কি হল?”
কান লাল হয়ে যায় রূপকের, অনুপমার গলা শুকিয়ে যায়। অনুপমার ফ্যাকাসে চেহারা দেবায়নের চোখ এড়াতে পারে না। ওর থুতনি নাড়িয়ে রূপকের উদ্দেশ্যে প্রশ্ন করে, “তোদের মাঝে কি কিছু হয়েছে? আসার পর থেকে দেখছি তোরা বেশ ছাড়াছাড়া।”
রূপক আমতা আমতা করে বলে, “না না কিছুই হয়নি।”
অনুপমা কি করবে ভেবে পায় না, দেবায়ন ওকে শক্ত করে নিজের সাথে জড়িয়ে ধরে রেখেছে। নিজেকে কোনরকম ছাড়িয়ে গলা নিচু করে বলে, “তুই কাজ কর, আমি এখন আসছি। লাঞ্চের সময়ে কথা হবে।”
অনুপমার চুপচাপ হাভভাবে সন্দেহ হয় দেবায়নের, “কি ব্যাপার পুচ্চি সোনা, তোর আর রূপকের চেহারায় রঙ নেই কেন?”
চোখে চোখ রেখে অনুপমার থুতনি নাড়িয়ে বলে, “দুইজনে মিলে আমার পেছনে দুষ্টুমি করিস নি তো?”
অনুপমা রূপকের দিকে তাকাতে পারছে না, রূপক মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে। দেবায়ন বুঝতে পারে আসল ঘটনা আর ওদের চেহারা দেখে হেসে ফেলে, “বাল, এতে এতো চোর পুলিশ খেলার কি আছে।”
রূপকের দিকে চোখ নাচিয়ে অনুপমাকে জড়িয়ে ধরে চিবিয়ে জিজ্ঞেস করে, “কি রে, কেমন লাগলো আমার পুচ্চিকে?”
কান লাল হয়ে যায় অনুপমার, কোনোরকমে দেবায়নের বুকের মধ্যে সেঁধিয়ে যেতে চেষ্টা করে। রূপকের গলা শুকিয়ে যায়, কিন্তু হাসি টেনে বলে, “কই কিছু হয়নি তো।”
দেবায়ন হেসে বলে, “ধুর বাল, আমি কি বলেছি যে কিছু হয়েছে? তোর আর অনুর চেহারা বলছে যে অনেক কিছু হয়েছে, কিন্তু ঠিক জায়গায় মাল পড়েনি তাই দুইজনে দুইজনকে এড়িয়ে যাচ্ছিস।”
অনুপমা অবাক হয়ে যায় দেবায়নের পর্যবেক্ষণ শক্তি দেখে, এই দেবায়ন তো একমাস আগে কোলকাতা ছাড়েনি? তাহলে ওর আলিঙ্গনে যে দেবায়ন বদ্ধ, সেই কি তার পুচ্চু সোনা না অন্য কেউ?
দেবায়ন হেসে রূপককে কাছে ডেকে ফিসফিস করে বলে, “আমরা চারজনে মিলে কোথাও বেড়াতে যাবো। মনের সুখে যেটা অধরা রেখেছিস সেটা পূরণ করে নিস।”
বিকেলের মধ্যে, ডিস্কো-থেকে গিয়ে মদ উড়িয়ে, নেচেকুঁদে মন হালকা করে নেয় দেবায়ন। মনের মধ্যে প্রথমে একটু খচখচ করে উঠেছিল ঠিক, কিন্তু নিজের দিকে তাকিয়ে দেখে, অনুপমা ছাড়া কত মেয়েদের সাথে সঙ্গমে লিপ্ত হয়েছে, এমন কি অনুপমার মায়ের সাথেও। সেই অনুপমা যদি কিঞ্চিত ভুলবশত ওর বন্ধুর সাথে শারীরিক মিলন করে ফেলে তারজন্যে ওর মনে কিছু করার নেই। রূপক আর অনুপমাও শেষ পর্যন্ত পরস্পরের কাছে স্বাভাবিক হয়ে যায়।
কয়েক দিন পরে ফিরে আসে শ্রেয়া। যে শ্রেয়া কোলকাতা ছেড়েছিল আর বার্লিন জার্মানি থেকে যে শ্রেয়া ফিরে আসে, দুই জনের মধ্যে অনেক তফাৎ লক্ষ্য করা যায়। অনুপমা বুঝতে পারে যে শ্রেয়া কোলকাতা ছেড়েছিল, সে কাজ না করে ফল খেতে বেশি ভালবাসত, সারাদিন শুধু ল্যাপটপে চ্যাটিং করতে ভালবাসত আর ল্যাপটপে সিনেমা দেখত। যে শ্রেয়া ফিরে এসেছে, সে বেশ পরিপক্ক, কাজের ভার নিজের কাঁধে নিতে শিখেছে। একটা ডিলে সই করে এই কদিনে নিজেকে সত্যিকারের ডাইরেক্টর হিসাবে ভাবতে শিখেছে। অনুপমার কেবিনে বসলে অথবা লাঞ্চে একসাথে বসলে সেই পুরানো শ্রেয়াকে দেখা যায় না হলে, অফিসে বাকি সবার কাছে এক নতুন শ্রেয়া। কাজে বুঁদ, প্রোডাক্ট ডিজাইনিং নিয়ে বেশ তৎপর, এমন কি আজকাল আয় ব্যায়ের, একাউন্ট স্টেটমেন্ট মাঝে মাঝে চেয়ে দেখে, মাঝে মাঝে একাউন্টসে গিয়ে বসে কথাবার্তা বলে। শ্রেয়ার এই রুপ দেখে অনুপমার বেশ ভালো লাগে সেই সাথে একটু খটকাও লাগে, কেন শ্রেয়া একাউন্টস নিয়ে এত মাথা ঘামাচ্ছে?
একদিন লাঞ্চের সময়ে চারজনে একসাথে বসে সেসময়ে অনুপমা শ্রেয়াকে প্রশ্ন করে, “কি ব্যাপার তোর? আজকাল দেখছি তুই বেশ একাউন্টস দেখছিস?”
শ্রেয়া হেসে দেবায়নের দিকে তাকিয়ে উত্তর দেয়, “লেজার বুক দেখা কি আমার জন্য মানা? আমিও একজন ডাইরেক্টর।”
শ্রেয়ার চোখের চমক অনুপমার চোখ এড়ায় না, ওর চোখে চোখ রেখে জিজ্ঞেস করে, “জার্মানি বেড়িয়ে এলি, আমাদের জন্য কিছু নিয়ে এলি না।”
শ্রেয়া কপট দুঃখ প্রকাশ করে বলে, “ইসসসস একদম ভুলে গেছি, শুধু মাত্র রূপকের কথা মনে ছিল তাই ওর জন্য আনা হয়েছে।”
অনুপমা বলে, “আমাদের ভুলে গেলি না ওখানে গিয়ে অনেক কিছু হয়েছে যেটা লুকাতে চাইছিস?”
শ্রেয়া হাসিতে ফেটে পড়ে, “কি যে বলসি না তুই। যাঃ, শুধু কাজ করে গেছি ওই কয়দিনে।”
অনুপমা হেসে জিজ্ঞেস করে, “কেন দীপঙ্করদা বলছিল যে তুই নাকি ইন্দ্রনীলের সাথে বার্লিন, ফ্রাঙ্কফুর্ট, হেগ গেছিলিস?”
শ্রেয়া বুক ভরে শ্বাস নিয়ে বলে, “হ্যাঁ গিয়েছিলাম ওই সব জায়গায়। এয়ার বার্লিনের বেশ কয়েকটা অফিসে যেতে হয়েছিল, প্রোডাক্টের জন্য বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করতে যেতে হয়েছিল আমাকে।”
অনুপমা মাথা নাড়ায়, “ঠিক আছে বুঝতে পারছি, তুই এখন বেশ ব্যাস্ত মানুষ। আর যাই হোক, আমাদের ভুলে গেলেও চলবে কিন্তু দেখিস এই দৌড়ে যেন রূপককে ভুলে যাস না?”
শ্রেয়া, রূপকের হাত খানা নিজের হাতের মুঠির মধ্যে জড়িয়ে ধরে বলে, “দশ খানা নয়, পাঁচ খানা নয় আমার এই একখানা সোনামণি, এর কথা কি করে ভুলে যাব।”
শ্রেয়ার এই রুপ বদলের কথা দেবায়নকে জানায়। অনুপমার তীক্ষ্ণ চোখে কিছুই এড়াতে পারে না, ওর দৃষ্টি সবসময়ে শ্রেয়ার ওপরে নিবদ্ধ। অনেক কিছু লুকিয়ে রেখেছে শ্রেয়া, যেন অনেক কিছু জেনে ফেলেছে। সত্যি কি জানে যে ওদের দুটো কন্সট্রাকশন কোম্পানি আছে, জানে কি যে ওদের ছয় খানা হোটেল আছে? জানলে হয়ত একবার দেবায়ন অথবা ওকে প্রশ্ন করত, কিন্তু করেনি যখন তখন হয়ত জানে না এই সব বিষয়ে। শ্রেয়া ফিরে আসার পরেও শ্রেয়ার মতিগতি দেখে অনুপমা, ওকে অথবা রূপককে বেড়াতে যাওয়ার জন্য বলেনি।
মার্চে অঙ্কনের হাইয়ার সেকেন্ডারি পরীক্ষা আর তারপরে ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ট্রান্সের পরীক্ষা। পায়েলের কলেজের ফাইনাল জুলাইয়ে। অনুপমার কথা অনুযায়ী, পায়েল অফিসে আসা বন্ধ করে দিয়েছে, বাড়িতে বসে পড়াশুনায় মনোযোগ দিয়েছে। প্রতিদিন অফিস ফেরত, দেবায়ন দেখা করে যায়। ধীরে ধীরে অনেক সহজ হয়ে উঠেছে পায়েল। দেবায়নের সাথে হেসে কথা বলে, অঙ্কনের পরীক্ষার সময়ে ওর সাথে প্রত্যেক দিন কলেজে গেছে। সব মিলিয়ে আগের পায়েল খোলস ছেড়ে বেড়িয়ে এসেছে। আজকাল দেবায়নের সাথে খোশমেজাজে গল্প করে, রাতে বসে দুই বান্ধবী অনেকক্ষণ ধরে কলেজের গল্প করে। মাঝে মাঝে ছাড় পেলেই অঙ্কনের রুমে রাত কাটিয়ে আসে। ঢিলে চুড়িদার ছেড়ে চাপা সালোয়ার কামিজ, অথবা জিন্স টি শার্ট, বাড়িতে থাকলে হাফ প্যান্ট না হলে স্কার্ট পরে ঘুরে বেড়ায়। অনুপমা সব লক্ষ্য করে, মাঝে মাঝেই অঙ্কন ওর প্রেমিকাকে নিভৃতে একা পেলে জড়িয়ে ধরে চুমু খায়, এদিক ওদিকে হাত বুলিয়ে আদর করে দেয়।
অঙ্কন যাদবপুরে ইলেক্ট্রনিক্স টেলিকমিউনিকেশান পায়। বাড়ির সবাই খুশি। সেই খুশিতে একটা বড় পার্টি দেওয়া হয়, পার্টিতে অঙ্কনের বন্ধু বান্ধবী ছাড়াও অনুপমার বন্ধু বান্ধবীদের কেও আমন্ত্রন জানানো হয়। অনেকদিন পরে সঙ্গীতা আর প্রবালের সাথে দেখা হয়, ঋতুপর্ণা আর ধিমানকেও নিমন্ত্রন জানায়, পরাশর আর জারিনাও আসে সেই পার্টিতে। পুরানো পায়েলকে দেখে সবাই আনন্দিত। পায়েল নিজের পুরানো রুপ ফিরে পায়, কিন্তু এক মুহূর্তের জন্য অঙ্কনের কাছ ছাড়ে না। সেই দৃশ্য দেখে দেবায়ন আর অনুপমার বেশ ভালো লাগে।
এক বিকেলে অনুপমা দেবায়নকে প্রশ্ন করে, “হ্যাঁ রে, আমার একাউন্টে দুই কোটি টাকা কেউ জমা দিয়েছে। কি ব্যাপার, কোথা থেকে এসেছে ওই টাকা?”
দেবায়ন বলে, “আরে বাবা আমি একদম ভুলে গেছিলাম ওই টাকার কথা। ওই টাকা নিবেদিতা ম্যাডাম দিয়েছে।”
অনুপমা অবাক হয়ে যায় নিবেদিতার কথা শুনে, “নিবেদিতা দিয়েছে মানে?” মুখ হাঁ হয়ে যায় অনুপমার, কি ব্যাপার কিছুই বুঝতে পারে না।
দেবায়ন হেসে বলে, “ওই টা কন্সট্রাকশনের কাঁচা টাকা। পেছনের তারিখে একটা সফটওয়্যার ডিল দেখাতে হবে ওর কোম্পানির সাথে, তাহলেই ওই টাকা সাদা হয়ে যাবে।”
অনুপমা প্রশ্ন করে, “তুই ঠিক কি করছিস একটু খুলে বলবি? এই যে বাবার সাথে ঘুরে বেড়াস, এই দুটো কন্সট্রাকশন কোম্পানি এর ওপরে ছয়খানা হোটেল ডিল করছিস, এত সব টাকা কোথা থেকে আসছে?”
দেবায়ন হেসে উত্তর দেয়, “তোর সফটওয়্যার কোম্পানিতে কিছু আঁচ লাগবে না সেটা কোথা দিচ্ছি।”
অভিমান হয় অনুপমার, কি লুকাতে চায় দেবায়ন, “সেটা না হয় বুঝলাম কিন্তু আমাকে জানাতে দোষ আছে কি?”
দেবায়ন বুঝতে পারে যে প্রেয়সী একটু অভিমান করেছে, সবকিছু খুলে না বলা পর্যন্ত মানিনীর মান ভাঙ্গানো সম্ভব নয় তাই বলতে শুরু করে, “পুচ্চিসোনা, টাকায় টাকা বাড়ে। এই যে মাখন, দই নাড়াতে নাড়াতে অবশেষে দইয়ের ওপরে মাখন ভেসে ওঠে। ঠিক তেমনি টাকা, এদিক থেকে ওদিকে না নাড়ালে টাকা বাড়ে না। কখন এই কস্ট্রাক্সান কোম্পানি থেকে ওই কন্সট্রাকশন কোম্পানিতে টাকা নিয়ে যেতে হয়। দেখাতে হয় এই কোম্পানি ওকে কাজের অফার দিয়েছে। হোটেলের টাকা কন্সট্রাকশনে ঢুকাতে হয় কখন, দেখাতে হয় যে হোটেলের কন্সট্রাক্সান আমাদের কন্সট্রাকশন কোম্পানি করেছে। এই ভাবে সফটওয়ারে কাজ করাতে হয়। ভুয়ো কাজ দেখিয়ে টাকা ঘুরিয়ে কাঁচা টাকাকে সাদা করাতে হয়, কোনসময়ে কাজ দেখিয়ে নেট প্রফিট কম করিয়ে দেখাতে হয়। এই ভাবে টাকা ঘুরাতে ঘুরাতে, এর লেজার থেকে ওর লেজারে টাকা ঘুরে বেড়ায়। সফটওয়ারে টাকা দেরিতে আসে, কন্সট্রাকশনে তাড়াতাড়ি আসে, হোটেলে মন্দ আয় হয় না। মাঝে মাঝে হোটেলের আয় কম দেখাতে হয়, কেননা হোটেলে অনেক রকমের ট্যাক্স, সেই সব বাঁচানোর জন্য হোটেলের আয় কম দেখাতে হয় আর সেই খানে দেখাতে হয় যে সফটওয়ারে খরচ অথবা এটা ওটা কন্সট্রাকশনে খরচ। কন্সট্রাকশনে প্রচুর কাঁচা টাকা, এদিক ওদিক থেকে চলেই আসে। বুঝেছিস কিছু?”
অনুপমা কতকটা বোঝে, কতকটা বুঝতে পারে না, শুধু দেবায়নের গলা দুইহাতে জড়িয়ে ধরে বলে, “তুই আছিস তো আমাকে বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য, তাহলে আমার চিন্তা কোথায়?”
দেবায়ন বলে, “সেই জন্য বলি, টাকার চিন্তায় এত মাথা ঘামাস না। তুই সফটওয়্যার নিয়ে থাক। এখন এয়ার বার্লিন, এরপরে জারমেনিয়া এয়ারলাইন্স, তারপরে দ্যাখ ইউরোপে কেন, আফ্রিকায় পা রাখবে আমাদের কোম্পানি।”
চোখ বড় বড় করে দেখে দেবায়নের দিকে, “কি বলছিস তুই?”
দেবায়ন বলে, “হ্যাঁ রে, শুধু জার্মানি নয়, মিস্টার হেরজগের সাথে আমার কথা হয়েছে। এই যে আমাদের কন্সট্রাকসানে এত টাকা ঢেলেছে আর তার উপযুক্ত মুনাফা পাচ্ছে তাতে বেশ খুশি মিস্টার হেরজোগ। সাউথ আফ্রিকায় একটা রিয়াল এস্টেটে টাকা লাগাতে চলেছে, সেখানে আমাদের কোম্পানি কাজ করবে।”
অনুপমা বিশ্বাস করতে পারে না দেবায়নের কথা, “কি বলিস? সাউথ আফ্রিকা?”
দেবায়ন মিচকি গালের ওপরে আলতো চুমু খেয়ে বলে, “হ্যাঁ ডারলিং সাউথ আফ্রিকা। তবে সোজাসুজি কাজ নয়, কাজ করবে আমাদের লোক ভিন্ন নামে। ওই প্রোজেক্টের আর্কিটেকচার, ডিজাইন, ইনটেরিওর সব আমাদের লোক করবে, বেনামে করবে আর বেনামে টাকা আসবে। ইউরোতে পেমেন্ট হবে, ডলারের চেয়ে বেশি আয় হবে তাতে।”
অনুপমা বলে, “আমাদের কোম্পানি বাইরে যাবে?”
দেবায়ন হেসে বলে, “আমাদের মানে নিবেদিতার কোম্পানির লোক বাইরে যাবে। ওই কোম্পানিতে টাকা আনাতে চাই আমি। কিছু কাজ আমাদের কোম্পানিতে আসবে, না হলে মিস্টার হেরজোগের সন্দেহ হয়ে যাবে। সেটা হলে আমি দেখাতে পারব যে আমাদের নিজের কোম্পানিতে বিশেষ কাজ হয়নি আয় হয়নি আর সেই সাথে মিস্টার হেরজোগ যে পরিমান লাভ এইবারে আশা করেছেন সেই পরিমান তাকে দেওয়া হবে না। আমাদের টাকা উপার্জন কিছু উপায়ে করতে হবেতোনাকি?”
অনুপমা মাথা চুলকিয়ে বলে, “এই সবের প্যাঁচ ঘোঁচ কিছুই বুঝতে পারছি না।”
অনুপমার থুতনি নাড়িয়ে দেবায়ন দুষ্টু হেসে বলে, “পুচ্চি ডারলিং, তোকে এত মাথা ঘামাতে হবে না, তুই তোর সফটওয়্যার ফার্ম নিয়ে থাক।”
Like Reply
পর্ব চব্বিশ সমাপ্ত।
Like Reply
পঞ্চবিংশ পর্ব (#01)

এক মে মাস ঘুরে অন্য মে মাস চলে আসে। গত মে মাসে ওদের পরীক্ষা চলছিল আর এই মে মাসে, অনুপমা আবার একা বসে নিজের শীততাপ নিয়ন্ত্রিত কেবিনে। এবারে জারমেনিয়া এয়ারলাইন্সের ডিল করতে শ্রেয়ার সাথে দেবায়ন গেছে। মিস্টার হেরজোগের সাথে দেখা হয়ে যাবে আর বেশ কিছু ব্যাবসা সংক্রান্ত কথাবার্তা বলে আসবে। আজকাল বেশ ব্যাস্ত দেবায়ন, মাথার ওপরে শুধু মাত্র আইটি কোম্পানি নয়, সেই সাথে দুটো কন্সট্রাক্সান কোম্পানি আর ছয় খানা হোটেল দেখাশোনা করতে হয়। অনুপমা শুধু ছায়ার মতন ওর পেছনে লেগে থাকে, ওর ধমনীর রক্ত, ওর প্রাণ শক্তি। অফিসে থাকলে, মাঝে মাঝেই কেবিনে ঢুকে জিজ্ঞেস করা, “ফল খেয়েছিস?” “জুস টা একটু খেয়ে নে বাবা, প্লিস সোনা মণি।” “সিগারেট এত না খেলেই নয় কি? ধুর দে তোর প্যাকেট আমি এবারে তোর সাথেই সিগারেট খাবো।” “চল আর কাজ করতে হবে না, মামনি ডিনারের জন্য অপেক্ষা করছে।”
যতটা সময় কাছে পায়, এক পলকের জন্য চোখের আড়াল করে না, কাজের চাপে ওর চোখ মুখ, ওর চেহারা দেখে মাঝে মাঝে বড় কষ্ট হয়। চব্বিশ বছর বয়সে, বাবার সাথে থেকে ওই ফিজিক্স পড়া ছেলেটা কত বড় হয়ে গেছে। মোবাইলে ওর ফটোর দিকে এক ভাবে তাকিয়ে থাকে, আজ তিনদিন হল ফ্রাঙ্কফুর্ট গেছে, এবারে ফোনে বেশি লম্বা কথা বলা যায়নি, শুধু মাত্র, “কেমন আছিস? সাবধানে থাকিস। ঠিক সময়ে খাওয়া দাওয়া করিস।” এই সব ছাড়া আর কিছু কথা বলা গেল না।
গ্রীষ্মের খাঁ খাঁ দুপুরে, জানালার বাইরে তাকায়। কালো কাঁচের এপার থেকে বাইরের গরম যদিও বোঝা যায় না তবে, বেশ কিছু কাকের আনাগোনা আর দুরে নিচে মানুষের মাথার ছাতা জানিয়ে দেয় যে বাইরে খুব গরম। বুকের ভেতরটা খালি হয়ে যায়। মাঝে মাঝেই ঘুরতে বেড়িয়ে যায়, যদিও কাজেই যায় তাও কেন যায় বলে মনে হয়। অনুপমা কি চেয়েছিল এই জীবন? শুধু চেয়েছিল একটা ভালো বর যে দশটা পাঁচটা অফিস করে ওর কোলে ফিরে আসবে। নিজের একটা ছোটো বাড়ি হবে, দেয়ালে ওদের প্রেমের নাম লেখা থাকবে। পন্ডিতিয়ার বাড়িতে গত তেইশ বছরে ভালোবাসা খুঁজে পায়নি, দেবায়ন আসার পরেই ওই বাড়িতে ভালোবাসা বলে যে একটা মনের ভাব আছে সেটা সবাই যেন জানতে পারে। এতক্ষণ একটা ঘোরের মধ্যে ছিল, হঠাৎ ফোনটা বেজে উঠতেই ঘোর কেটে গেল। অচেনা মোবাইল নাম্বার, কে আবার এখন ফোন করেছে? ধুর ব্যাঙ।
“হ্যালো, আমি কি মিস অনুপমা সেনের সাথে কথা বলছি?”
ওপাশে এক সুরেলা নারীর কণ্ঠ স্বর।
সেই কণ্ঠ স্বর চিনতে পারল না অনুপমা তাই প্রশ্ন করে, “হ্যাঁ, কিন্তু আপনি কে? আপনাকে ঠিক চিনতে পারলাম না।”
খিল খিল করে হেসে ওঠে ওপাশের কণ্ঠ স্বর, “আমি অনন্যা, মানে অনন্যা বাসু। মনে আছে কি আমাকে?”
চিড়িক করে মাথার বাতি জ্বলে ওঠে, অনন্যা বাসু মানে ছোটো পর্দার নায়িকা অনন্যা বাসু। অনেকদিন দেখা সাক্ষাত নেই, শেষ দেখা হয়েছিল বাবার জি.এম হওয়ার পার্টিতে। ছোটবেলায় মায়ের সাথে ওর ফ্লাটে গেছে কিন্তু বিশেষ মেলামেশা কোনদিন ছিল না।
অনুপমা হেসে জিজ্ঞেস করে, “কি ব্যাপার, অনেকদিন পরে, মনে পড়েছে?”
অনন্যা খিলখিল করে হেসে উত্তর দেয়, “না রে, তোর বরের ফোন ট্রাই করছিলাম, পেলাম না তারপরে পারমিতা ম্যাডাম কে ফোন করলাম, ম্যাডাম আমাকে তোর নাম্বার দিল।”
অনুপমা জিজ্ঞেস করে, “বাপরে আমার নাম্বার খুঁজতে তাহলে অনেক ঝক্কি পোহাতে হয়েছে।”
অনন্যা বলে, “কেমন আছিস তুই? সেই কলেজ ফাইনাল দেওয়া সময়ে একবার ম্যাডাম তোকে নিয়ে আমার বাড়িতে এসেছিলেন, তারপরে তুই কোনদিন আমার বাড়িতে এলি না।”
অনুপমা হেসে বলে, “তুমি খুব ব্যাস্ত নায়িকা অনন্যাদি, তোমার কাছে আমাদের মতন চিনেপুটিদের জন্য কি আর সময় থাকে?”
অনন্যা একটু ব্যাথা ভরা স্বরে বলে, “সেই কবেকার কথা, এখন ধরে রেখেছিস?”
অনুপমা তির্যক হেসে বলে, “না না, অনন্যাদি ছাড়ো সে সব কথা।”
অনন্যা বলে, “কি করছিস আজকাল? তোর বর, মিস্টার বসাক, বিশাল বিজনেস ম্যান তাই না?”
অনুপমা মিচকি হেসে উত্তর দেয়, “বড় কি না জানি না, তবে খুব ব্যাস্ত থাকে এই যা।”
অনন্যা খিলখিল করে হেসে দেয়, “সব ছেলে গুলোই এই রকম হয়। একবার কাজ হাতে পেলে, শুধু টাকা আর টাকা, বউয়ের কথা আর মনে থাকে না ওদের। তুই শুনলাম অফিসে? কিসের অফিস তোর?”
অনুপমা বলে, “এই ছোটো খাট একটা সফটওয়্যার কোম্পানি খুলেছি।”
অনন্যা বলে, “বাপরে নিজের কোম্পানি। তুইতোবিজনেসে ঢুকে গেলি একেবারে। এই তোদের অফিসটা কোথায় রে?”
অনুপমা বলে, “রাসেল স্ট্রীটে, কেন?”
অনন্যা বলে, “তোদের সাথে অনেকদিন দেখা হয়নি তাই ভাবছিলাম একবার দেখা করব।”
অনুপমা অবাক হয়ে যায় দেখা করার কথা শুনে, “কি ব্যাপার অনন্যাদি, হটাত দেখা করতে চাও?”
মনে পড়ে যায় দেবায়নের কথা, গোয়াতে গিয়ে দেবায়ন অনন্যাকে বলেছিল যে ওর রেস্টুরেন্ট খুলতে টাকা দিয়ে সাহায্য করবে। সেই টাকা চাই নাকি অনন্যার? সোজাসুজি প্রশ্ন করে অনুপমা, “তুমি কি দেবায়নের বিষয়ে কথা বলতে চাও? পরিস্কার করে বলতে পারো দ্বিধা বোধ করোনা।”
অনন্যা এমন প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে ঠিক আশা করেনি, তাই আমতা আমতা করে বলে, “না মানে। এমনি তোদের সাথে দেখা করতে চাইছিলাম। যাই হোক তুই এখন ব্যাস্ত তাহলে ফোন রাখি। মিস্টার বসাক ফিরলে বলিস যে আমি ফোন করেছিলাম।”
হেসে ফেলে অনুপমা, “বলে ফেল না, কি হয়েছে। আমি আর দেবায়ন আলাদা নয়। ও কোথায় কি কি করেছে সব আমার জানা, আমার দেবায়ন আমার কাছ থেকে আজ পর্যন্ত কিছু লুকায় নি।”
অনন্যার গলা বসে আসে, “তাই মাঝে মাঝে ভয়। আমার ছোঁয়াতে তোদের এই অটুট বন্ধনে যদি কিছু হয়ে যায়। ছাড় তুই খুব ব্যাস্ত নিশ্চয় এখন? মিস্টার বসাক কবে ফিরছে?”
অনুপমা বলে, “দেবায়নের ফিরতে দিন চারেক দেরি আছে। তুমি স্টুডিও থেকে বাড়িতে কখন ফিরবে? তাহলে না হয় একবার দেখা করতাম।”
অনন্যা হেসে বলে বলে, “এইকয় দিন আউটডোর শুটিং করে শরীর খুব ম্যাজ ম্যাজ করছে তাই আজকে আর স্টুডিও যাইনি। বাড়িতে আসতে চাস নাকি?”
অনেকদিন দেখা হয়নি অনন্যার সাথে, এই প্রচন্ড গরমে মনের ভেতর খাঁ খাঁ করছে, একটু বের হলে বড় ভালো হয়। অনুপমা একটু ভেবে বলে, “ঠিক আছে আমি একটু পরে আসছি তোমার বাড়িতে।”
ব্যাগ গুছিয়ে, ড্রাইভারকে বলে সোজা অনন্যার বাড়িতে পৌঁছে যায়। একটা বহুতল ফ্লাট বাড়ির একটা বড় ফ্লাটে একা থাকে। অনেকদিন আগে এসেছে কিন্তু বাড়ি চিনতে ভুল হয় না অনুপমার। কলিং বেল বাজাতেই, অনন্যা নিজেই এসে দরজা খুলে দেয়। বসার ঘরে এসি চলছে, জানালায় পর্দা নামানো, বেশ একটা সুন্দর গন্ধে ঘর মমমম করছে। অনন্যা মনে হয় একটু আগেই স্নান করেছে, এলো চুলে গায়ে একটা ছোটো সিল্কের ড্রেসিং গাউন জড়িয়ে মিষ্টি হেসে অনুপমাকে ঘরের মধ্যে ডাকে। ঘরের চারদিকে তাকিয়ে দেখে, দেয়াল জুড়ে অনেক ছবি টাঙ্গানো, সব কটাই অনন্যার। টিভিতে যে সব এড দেখে, সেখানে অনেক মেকআপের কারসাজি থাকে, ছবির কারসাজি থাকে। অনন্যাকে দেখে মনে হল, একটু গোলগাল হয়ে গেছে আর কাজের চাপে চোখের কোলে কালি পরে গেছে। ওর শরীর থেকে মাদকতাময় এক মিষ্টি সুবাস নাকে এসে লাগে।
অনন্যা ওর হাত ধরে সোফায় বসিয়ে বলে, “বাপরে তাহলে মহারানীর এতদিন পরে আমার বাড়িতে আসার সময় হল।”
অনুপমা হেসে বলে, “তুমি মহারানী তাইতো তোমার দেখা পাওয়া ভার।”
অনন্যা বলে, “না রে আমি আর কি হতে পারলাম। কি খাবি? বিয়ার নিবি না ব্রিজার?”
হেসে ফেলে অনুপমা, “না না, আমি কিছু খাবো না। তুমি বসো তো, কাজের লোক নেই নাকি?”
অনন্যা দুটো পেপসি ফ্রিজ থেকে বের করে একটা অনুপমার হাতে ধরিয়ে ওর পাশে এসে বসে। পানীয়ের গ্লাসে চুমুক দিয়ে বলে, “নারে কাল অনেক রাতে উটি থেকে ফিরেছি তাই আর আজকে কাজের লোক আসেনি। তোকে দেখে পাক্কা কর্পোরেট বিজনেস উম্যান লাগছে। তুই কেমন আছিস বল। মিস্টার বসাক কোথায়?”
অনুপমা হেসে শার্টের ওপরে দুটো বোতাম খুলে ফেলে, এসি চালান অবস্থায়ও যেন একটু গরম লাগছে ওর। অনন্যার প্রশ্নের উত্তরে বলে, “দেবায়ন জার্মানি গেছে।”
এমন সময়ে অনন্যার ফোনে একটা ফোন আসে। অনন্যা ফোন নিয়ে ওকে বসতে বলে ভেতরে চলে যায় কথা বলতে। অনুপমা পানীয়ের গ্লাসে চুমুক দিতে দিতে এদিক ওদিকে তাকিয়ে দেখে। বসার ঘর বেশ সাজানো গুছানো এক নায়িকার বাড়ি যেমন সাজানো উচিত ঠিক সেই রকম আড়ম্বর আছে। ঘরে একটা সুরেলা বাদ্য যন্ত্রের সঙ্গীত বেজে চলেছে, মনে হয় পন্ডিত শিব কুমার শর্মার সন্তুর। কেমন যেন স্বপ্ন পুরীর মতন মনে হয় বসার ঘর। বেশ আয়েশ করে বসে সোফার ওপরে।
অনন্যা কিছু পরে ড্রেসিং গাউন ছেড়ে একটা জিন্সের হাফপ্যান্ট আর একটা ঢিলে টপ পরে নিজের বেডরুম থেকে বেড়িয়ে আসে। বড় গলার টপ এতই ঢিলে যে বাঁ কাঁধের নিচে নেমে এসেছে। বুকের দিকে তাকালেই বোঝা যায় যে নিচে ব্রা পড়েনি আর তাই নরম স্তন যুগল দুলে উঠছে অনন্যার হাঁটার ফলে। টপের পাতলা কাপড় ফুঁড়ে ওর স্তনের বোঁটা ফুটে উঠেছে।
অনুপমার পাশে বসে বলে, “তুই কিছু খাবি? পিতজা অর্ডার করব নাকি?”
অনুপমা হেসে বলে, “না না। তুমি বস আমার কাছে।”
এটা সেটা, কাজের কথা, অকাজের কথা, পারমিতার কথা এই সব কথায় সময় কেটে যায়। তারপরে অনন্যা লাজুক হেসে বলে, “জানিস একটা ছোঁড়া আমার প্রেমে পড়েছে, এই তার ফোন এসেছিল।”
অনুপমা চোখ বড়বড় করে প্রশ্ন করে, “কে সে? ফ্লিম লাইনের লোক না কোন বিজনেস ম্যান।”
অনন্যা তির্যক হেসে বলে, “বিজনেস ম্যানেরা সব বড় কুচুটে হয়, বিয়ের পরে ট্রফি ওয়াইফ হিসাবে রাখে। পারলে ক্লায়েন্টের বিছানায় দিতেও দ্বিধা বোধ করবে না। আমার এই বন্ধুটি একজন ফ্যাশান ফটোগ্রাফার। আমার বেশ কয়েকটা মডেলিঙের এসাইনমেন্ট করেছে আর সেই থেকে আলাপ। ছেলেটা মনে হয় বেশ ভালো।”
অনন্যা ওর মোবাইলে একটা ছেলের ছবি দেখিয়ে বলে, “সত্যজিত দত্ত, আমার চেয়ে দুই বছরের ছোটো।”
অনুপমা প্রশ্ন করে, “তাহলে আর দেরি কিসের, বিয়েটা সেরে ফেল আর কি। কত হল আসল বয়স, আঠাশ হবে তাই না?”
অনন্যা ওর থুতনি নাড়িয়ে বলে, “তুই দেখি আমার বয়স মনে রেখেছিস?”
সত্যজিতের ছবির দিকে তাকিয়ে বলে, “না রে, আগে একটু বাজিয়ে দেখি কেমন ছেলে। সবাই তো আর মিস্টার বসাকের মতন হয় না রে।”
অনুপমা মিচকি হেসে বলে, “হুম সবকিছু বুঝলাম। তা হঠাৎ কি ভেবে মনে পড়ল? সত্যি কথা বলো তো?”
অনন্যা মিচকি হেসে বলে, “আঠাশ হয়ে গেছে, একটু মুটিয়ে গেছি, তাই না?”
অনুপমা বলে, “কি যে বল না তুমি? এখন দারুন সুন্দরী তুমি।”
অনন্যা চোখ বড়বড় করে অনুপমার মুখের দিকে তাকিয়ে বলে, “আমার তো সব ক্যামেরা, মেকআপের কারসাজি, আসল সুন্দরী তো তুই।” এই বলেই জড়িয়ে ধরে গালে একটা চুমু খেয়ে নেয়।
অনুপমা গালে গাল ঠেকিয়ে হেসে বলে শরীর চেপে ধরে আদর করে বলে, “হুম্মম…… কি হয়েছে তোমার? কাজের পরে কি খুব গরম লাগছে? মনে হচ্ছে অনেকদিন সত্যজিৎ কাছে আসে নি।”
অনন্যা ওর গাল টিপে আদর করে বলে, “ধ্যাত, তুই না যাঃতা, তার চেয়ে বল যে তুই গরম হয়ে আছিস। মিস্টার বসাক খুব আদর করছে তোকে সেটা তোর শরীর দেখেই বুঝতে পারছি।”
অনুপমা পানীয়ের গ্লাসে চুমুক দিয়ে বলে, “আমাকে আদর করার আর সময় পায় কোথায়? সবসময়ে বাইরে থাকে যে।”
অনন্যা চোখ গোল গোল করে বলে, “হ্যাঁ হ্যাঁ জানা আছে। তোর বুক জোড়া যেমন ভাবে ফুলেছে তাতে বেশ বোঝা যাচ্ছে যে মিস্টার বসাকের হাত পড়েছে।”
লজ্জায় লাল হয়ে যায় অনুপমার গাল। অনন্যার গালে আলতো টোকা মেরে বলে, “তুমি না ভারী দুষ্টু মেয়ে অনন্যাদি।”
অনন্যাও কম যায় না, “সত্যি বল, খুব ভালোবাসে না তোকে?”
অনুপমা ওর হাত দুটি নিজের হাতের মুঠিতে নিয়ে বলে, “ছাড়ো অনন্যাদি। দেবায়ন তোমাকে কিছু দেবে বলেছিল, তাই না। কি করতে চাও ওই টাকা দিয়ে?”
হঠাৎ অনুপমার মুখে এই কথা শুনে বাকরুদ্ধ হয়ে যায় অনন্যা। কি বলবে ভেবে পায় না, সত্যি কি মানুষ এত খোলা মনের হয়? ওকে কবে দেবায়নকে বলেছিল সেই কথা আর এই মেয়েটা জানে আর মনে রেখেছে?
অনন্যা অনুপমার চোখের দিকে তাকিয়ে বলে, “আমি ভাবছিলাম বর্তমানে আমার ক্যারিয়ার এখন একদম তুঙ্গে। তাই এই তুঙ্গে থাকতে থাকতে সব কিছু গুছিয়ে নেওয়া ভালো, পরে হয়তো হাতে সময় থাকবে না। মিস্টার বসাক অনেকদিন আগে একটা আইডিয়া দিয়েছিল ছিল রেস্টুরেন্ট শুরু করার, আমারও বেশ লেগেছিল সেই আইডিয়াটা। কিন্তু সত্যজিতের ইচ্ছে একটা মেয়েদের পত্রিকা শুরু করার। এই ছোটো ছোটো প্রবন্ধ, গল্প, ফ্যাশানের ছবি। ওর এই পাবলিকেশানেও বেশ জানাশুনা আছে।”
অনুপমা বুক ভরে শ্বাস নিয়ে প্রশ্ন করে, “পত্রিকা শুরু করার জন্য কত টাকা চাই তোমার?”
অনন্যা খিলখিল করে হেসে বলে, “এই বিষয়ে সত্যজিতের সাথে বিশেষ কথা হয় নি। কিন্তু তুই এত মাথা ঘামাচ্ছিস কেন?”
অনুপমা অনন্যার হাতে চাপ দিয়ে মনোবল জুগিয়ে বলে, “তুমি চিন্তা করোনা অনন্যাদি, আমরা আছি। দেবায়ন ফিরে আসুক ওর সাথে কথা বলব। তুমি একটা এস্টিমেট বলে দিও সেই মতন ব্যাবস্থা করে দেব চিন্তা নেই।”
অনন্যা দুই হাতে জড়িয়ে ধরে অনুপমাকে, “তুই না খুব ভালো মেয়ে।” বলেই গালে একটা ভিজে চুম্বন এঁকে দেয়।
নারীর চুম্বনে অনভ্যস্ত নয়, পায়েলের সাথে বহুবার সমকামী খেলায় রত হয়েছে তাও কেমন যেন অস্বস্তি লাগে অনুপমার, “যাঃ অনন্যাদি ছাড়ো।”
অনন্যা ওর গালে হাত বুলিয়ে চিবুক নাড়িয়ে বলে, “তুই বড্ড সুন্দরী, সেই কবে ছোটো বেলায় তোকে দেখেছিলাম আর আজকের এই অনুপমা অনেক বেশি মিষ্টি রসালো আর সুন্দরী হয়ে উঠেছে। তোকে না……” অনুপমার মুখ আঁজলা করে ধরে কপালে একটা চুমু খায় অনন্যা।
অনুপমার হাত পা হঠাৎ এই নারী চুম্বনের ছোঁয়ায় যেন অবশ হয়ে আসে। ধীরে ধীরে অনন্যার ঠোঁট নামতে থাকে, ছোটো ছোটো বেশ কয়েকটা চুমু খায় ওর কপালে, ভুরুর ওপরে, শেষ পর্যন্ত ঠোঁটের কাছে এসে থেমে যায় অনন্যার ঠোঁট। অনুপমার হাত আপনা হতেই অনন্যার কোমর জড়িয়ে ধরে। অনন্যার চিকচিক করা দুই চোখের তারার ওর চোখের মণি নিবদ্ধ হয়ে যায়। অনন্যার আধাখোলা ঠোঁটের মাঝের উষ্ণ শ্বাস ওর ঠোঁট, থুতনির ওপরে বয়ে চলে। কেমন যেন একটা নেশার ঘোর লাগে অনুপমার, পানীয়ের সাথে কি কিছু মেশানো ছিল, না অনন্যার ঠোঁটের মাদকতায় নেশা লেগেছে ওর রক্তে। অনন্যার মাথার পেছনে হাত নিয়ে গিয়ে চুলের মুঠি ধরে, ওর লাল নরম ঠোঁট অনন্যার ফ্যাকাসে গোলাপি ঠোঁটের ওপরে বসিয়ে দেয়। দুই নারীর ঠোঁট মিলেমিশে যায়, আচ্ছাদনের ওপর দিয়েই দুই নারীর উন্নত স্তন জোড়া পরস্পরের সাথে পিষে সমতল হয়ে যায়।
অনুপমাকে ঠেলে সোফার ওপরে শুইয়ে দিয়ে ওপরে উঠে যায় অনন্যা। ঠোঁটের সাথে ঠোঁট মিলিয়ে চুমু খেতে খেতে ওর স্তনের ওপরে হাত নিয়ে যায়। জামার ওপর দিয়েই একটা স্তন আলতো করে মুঠির মধ্যে নিয়ে আদর করে দেয়। অনুপমা দুই হাতে অনন্যার কোমর জড়িয়ে ধরে, রক্তে কামনার আগুন জেগে ওঠে, জানুর মাঝে শিরশিরানি শুরু হয়ে যায়। নারীর চুম্বনে এত মাদকতা, অনেকদিন পরে সেই নারীর কোমল অধরের স্বাদ পেল। নিচের ঠোঁট দাঁত দিয়ে টেনে কামড়ে চিবিয়ে দিতে শুরু করে দিল। অনন্যার প্যান্টের ওপর দিয়েই ওর নরম তুলতুলে পাছার মাংস টিপে পিষে দিতে শুরু করে। পাছার ওপরে অনুপমার নরম আঙ্গুলের খামচি অনুভব করতেই অনন্যা, মিহি শীৎকার করে ওঠে, “উম্মম্ম আহহহহহ……” করে। অনন্যা, অনুপমার জামার ওপর দিয়েই ওর নরম তুলতুলে স্তন জোড়া খামচে ধরে চটকাতে শুরু করে।
অনুপমার শরীরে লাগে তীব্র কামনার আগুন। অনন্যার জানু মাঝে থাই গুঁজে দিয়ে চেপে ধরে অনন্যার যোনি দেশ। সাথে সাথে অনন্যা ওর মায়ের মাঝে হাত ঢুকিয়ে জিন্সের ওপর দিয়েই চেপে ধরে যোনি বেদি। একে অপরের যোনির ওপরে মৃদু আক্রমণ চালায়। কুলকুল করে যোনি রস বইতে শুরু করে অনুপমার যোনির ভেতর থেকে। অনন্যার হাতের চাপের ফলে কেঁপে ওঠে অনুপমার সারা শরীর। বেশ কিছু ক্ষণ দুই মত্ত নারী একে অপরের শরীর নিয়ে জামা কাপড়ের ওপর দিয়েই খেলে যায়। দুইজনে কিছুক্ষণ শরীর নিয়ে কামরা কামড়ি চটকা চটকি করে খেলে উঠে বসে। অনন্যার চেহারায় ফুটে ওঠে এক কামুক হাসি আর অনুপমার চেহারা ভেসে যায় কামনার লালিমা।
অনুপমা মিচকি হেসে অনন্যার দিকে তাকিয়ে বলে, “তুমি না খুব দুষ্টু, অনন্যাদি।” বলে নিজের ঠোঁট মুছে নেয়। তীব্র চুম্বনের ফলে গালের লালিমা বেড়ে গেছে, চুল খানিকটা অবিন্যস্ত হয়ে গেছে।
অনন্যা একটা দুষ্টু মিষ্টি হাসি দিয়ে বলে, “সত্যি বলতে কি জানিস অনু। তোর এই সেক্সি দেহ দেখে আর লোভ সামলাতে পারলাম না।” বলেই টুক করে একটা চুমু খেল অনুপমাকে।
অনুপমা গ্লাসের শেষ পানীয় টুকু গলায় ঢেলে বলল, “এবারে আমি আসি।”
অনন্যা ওর দুই হাত ধরে অনুনয় করে বলে, “এই কিছু মনে করিস না প্লিস। আমি না একটু এই রকম।”
অনুপমা ওর গালে হাত চোখ টিপে বলে, “না না কিছু না, বেশ একটু এঞ্জয় করলাম। তোমার না একদিন দেবায়নের সাথে ব্রেকফাস্ট খাওয়ার কথা আছে? সেদিন আমি আসব তোমাদের সাথে ব্রেকফাস্ট খেতে।”
অনন্যা পারলে মুখ লুকিয়ে ফেলে, “মিস্টার বসাক সেইসব কথা তোকে বলেছে?”
অনুপমা দুষ্টুমি ভরা একটা হাসি দিয়ে বলে, “দেবায়ন আমার কাছ থেকে এখন পর্যন্ত কিছু লুকায় নি। সত্যি বলো তো কয়বার দেবায়নের সাথে সঙ্গম করেছ তুমি?”
ওই কথা শুনে অনন্যার গাল কান লাল হয়ে যায় লজ্জায়, “যা শয়তান মেয়ে। তোকে ভীষণ আদর করে সেটাই অনেক। তোরা ভালো থাকলেই ভালো। মিস্টার বসাক এলে আসিস একদিন। আমি সত্যজিতকে বলে রাখবো তাহলে ওর সাথে দেখা হয়ে যাবে তোদের।”
অনুপমা দুষ্টুমি ভরা হাসি দিয়ে বলে, “কোন কুমতলব নয়তো? তোমার বয়ফ্রেন্ডের সাথে আমি করতে নারাজ কিন্তু।”
অনন্যা প্রচন্ড ভাবে মাথা নাড়ায়, “ওরে বাবা, না রে না একদম না। এই মাঝে মাঝে ক্লায়েন্টদের সাথে যাই, ওকে না জানিয়ে করতে হয় এইসব। তোদের কথা সত্যজিত কিছুই জানে না আর তোদেরকে ওর সামনে ওই ভাবে নিচু হতে দিতে পারি নাকি?”
অনুপমা ওকে জড়িয়ে ধরে ফিসফিস করে জিজ্ঞেস করে, “সত্যি কথাটা বললে না কিন্তু অনন্যাদি। দেবায়নের সাথে কয়বার সঙ্গম করেছিলে? কেমন লাগলো আমার দেবু কে?”
অনন্যা মিচকি হেসে চোখ টিপে বলে, “দুই বার করেছি তোর মিস্টারের সাথে। একবার র্যাডিসন ফোর্টে আর একবার গোয়াতে। খুউউউউউব ভালো রে তোর মিস্টার। মন ভরিয়ে দিয়েছিল।”
অনুপমা ওর গালে আলতো টোকা মেরে বলে, “হ্যাঁ সোনা দিদি, বুঝতেই পারছি যে আমার ছোঁড়াটাকে এবারে বেঁধে রাখতে হবে।”
অনন্যা ওর গালে গাল ঠেকিয়ে বলে, “তোদের দেখে একটা গান গাইতে ইচ্ছে করছে।”
অনুপমা প্রশ্ন করে, “কি গান?”
অনন্যা গেয়ে ওঠে, “ও চাঁদ, সামলে রেখো জোছনাকে। কারো নজর লাগতে পারে। মেঘেদের উড়ো চিঠি উড়েও তো আসতে পারে ও চাঁদ……. সামলে রাখো জোছনাকে।”
অনুপমা, “বুঝছি মনের মধ্যে অনেক প্রেম জেগেছে তোমার। সত্যজিৎকে ডেকে নাও আর ভালো করে আদর খাও। সোনাদিদি তাহলে আজকে আসছি। তুমি সত্যজিতের সাথে কথাবার্তা বলে ঠিক করে নাও।”
অনন্যা বলে, “হ্যাঁ সে সব দেখেই তোদের ফোন করব। মাঝে মাঝে ফোন করিস, ভালো লাগে।” চোখ টিপে বলে, “ব্রেক ফাস্টের কথা ভুলিস না। তোর মিস্টারকে সেই কবে বলেছিলাম, সে যে গেল আর দেখা দিল না।”
অনুপমা মিচকি হেসে মাথা নাড়িয়ে বিদায় জানায়। গাড়িতে উঠে আবার অফিসের দিকে রওনা দিচ্ছিল কিন্তু এমন সময়ে মামনির ফোন পেয়ে অবাক হয়ে যায়।
অনুপমা জিজ্ঞেস করে, “কি হয়েছে মামনি? হটাত এমন সময়ে ফোন করলে।”
দেবশ্রী হেসে ওকে জিজ্ঞেস করে, “রাতে কি খাবি, কাঁকড়া কিনে নিয়ে যাবো?”
অনুপমা বাচ্চা মেয়ের মতন খিলখিল করে হেসে ওঠে, “তুমি না সত্যি পারো বটে।”
দেবশ্রী বলে, “না রে, চোখের সামনে একটা অস্ট্রেলিয়ান কাঁকড়া দেখে তোর কথা মনে পরে গেল। তুই কাঁকড়া খেতে ভালবাসিস তাই।”
অনুপমা বলে, “আচ্ছা বাবা আচ্ছা।”
দেবশ্রী বলে, “তুই একটু তাড়াতাড়ি আসিস কিছু জরুরি কথা আছে।”
অনুপমা প্রশ্ন করে, “কি ব্যাপার মামনি?”
দেবশ্রীর কণ্ঠস্বর কিঞ্চিত গম্ভীর হয়ে যায়, “তুই আগে বাড়িতে আয়, তারপরে বলব।”
 
Like Reply
পঞ্চবিংশ পর্ব (#02)

অনুপমার আর অফিসে গেল না, ড্রাইভারকে বলে সোজা গাড়ি নিয়ে চলে আসে দেবায়নের বাড়িতে। দেবশ্রী আগেই বাড়িতে পৌঁছে যায়। ছেলে না থাকলেই এই মেয়েটা এসে দেখা করে যায়, বসে গল্প করে, বাচ্চা মেয়ের মতন এটা খাবে ওটা খাবে আব্দার করে। দেবশ্রী যথাসম্ভব চেষ্টা করে হবু বৌমার শিশু সুলভ আব্দার গুলো পূরণ করতে।
বাড়িতে ঢুকে দেখে যে মামনি কাঁকড়া ধুতে ব্যাস্ত। অনুপমা পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে ছোটো খুকির মতন আব্দার করে, “মামনি এবারে কাঁচা আমের সরবত খাওয়ালে না কিন্তু।”
দেবশ্রী হেসে বলে, “আচ্ছা বাবা কালকে না হয় বানিয়ে দেব। কাঁকড়ার সাথে কি খাবি, ফ্রাইড রাইস না শুধু ভাত?”
অনুপমা মামনির পেটে কাতুকুতু দিয়ে বলে, “তোমার মনে ছিল কাঁকড়ার কথা?”
দেবশ্রী হেসে ওঠে, “আরে বাবা ছাড় ছাড়, শয়তান মেয়ে কোথাকার।”
অনুপমা রোজকার মতন রান্নাঘরের স্ল্যাবের ওপরে পা তুলে বসে পরে হাতে একটা আম নিয়ে। দেবশ্রী ওকে আমটা কেটে দিতে চায়, কিন্তু অনুপমা আম খানা জলে ধুয়ে, টিপে টিপে নরম করে নিচের দিকে একটা ছোটো ফুটো করে চুষতে শুরু করে। ঠোঁটের কষ বেয়ে আমের রস নিচের দিকে বেয়ে পরে আর অনুপমা উলটো হাতে আবার সেই রস মুছে নেয়। সেই দেখে দেবশ্রী হেসে ফেলে।
আম চুষে খেতে খেতে অনুপমা প্রশ্ন করে, “তুমি কি বলবে বলছিলে?”
দেবশ্রী খানিকক্ষণ চুপ থাকার পরে অনুপমার চোখের ওপরে চোখ রেখে জিজ্ঞেস করে, “যা জিজ্ঞেস করব সব ঠিকঠিক উত্তর দিবি?”
মামনির এই চোখ কোনদিন দেখেনি অনুপমা তাই একটু ভয় পেয়ে যায়, দুচোখে বিস্ময় আর হাজার প্রশ্ন নিয়ে জিজ্ঞেস করে, “কি হয়েছে মামনি?”
বুকের ভেতরের ধুকপুকানি বেড়ে ওঠে। মামনি কি দেবায়নের রুমের মধ্যে কিছু পেয়েছে? এমন কিছু যাতে মামনির সন্দেহ হয়েছে। প্যান্টির বাক্স অথবা বাঙ্কের স্টেটমেন্ট অথবা অন্য কিছু। কি জানে মামনি?
দেবশ্রীর কাঁকড়ায় তেল নুন মাখাতে মাখাতে জিজ্ঞেস করে, “তোরা সূর্য আর মনিদিপাকে কি বলেছিস বা করেছিস?”
মাথায় বাজ পড়ার মতন চমকে ওঠে অনুপমা, এত দিন পরে সূর্য মনিদিপার প্রশ্ন কেন উঠছে? অনুপমার গলা শুকিয়ে কাঠ। হাতের সামনে মনিদিপা অথবা সূর্যকে পেলে ছিঁড়ে খাবে এমন মনের অবস্থা। ক্রোধ সামলে নিয়ে হাসি টেনে মামনির উত্তরে বলে, “কই কিছু করিনি তো? শুধু ওদের অনুরোধ করেছিলাম কোলকাতা ছেড়ে চলে যেতে।”
দেবশ্রী কাজ থামিয়ে ভুরু কুঁচকে অনুপমার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে, “শুধু অনুরোধ করেছিলিস, সত্যি বলছিস?”
ভেতরের রাগ লুকিয়ে খিলখিল করে হেসে ওঠে অনুপমা, “হ্যাঁ মামনি সত্যি বলছি। কিন্তু এতদিন পরে এই সব প্রশ্ন করছ কেন?”
দেবশ্রী আবার কাঁকড়া মেরিনেট করতে মন দেয়, “আজকে সকালে মণি ফোন করেছিল।”
কথাটা শুনতেই গলা শুকিয়ে আসে অনুপমার। মনিদিপা কি সবকিছু মামনিকে বলে দিয়েছে, তাহলে দেবায়ন আর ওর রক্ষে নেই। কাঁপা কণ্ঠে জিজ্ঞেস করে, “কি বলেছে?”
দেবশ্রী বলে, “খুব কাঁদছিল মেয়েটা, বারেবারে আমার কাছে ক্ষমা চাইছিল আর বলছিল যে দেবু যাতে ওদের সর্বনাশ না করে।”
চোয়াল শক্ত হয়ে ওঠে, রাগে কান লাল হয়ে যায় তাও কণ্ঠস্বর স্বাভাবিক রেখে জিজ্ঞেস করে, “আর কি বলেছে মামনি?”
দেবশ্রী ওর মুখের দিকে তাকিয়ে বলে, “এ ছাড়া বেশি কথা বলেনি আর বলেছে আমি যেন দেবায়নকে এই বিষয়ে কোন কথা না জানাই, তাই তোকে জিজ্ঞেস করলাম যে তোরা কি করেছিলি বা বলেছিলি ওদের। তোরা সত্যি বলতো কি করেছিস ওদের সাথে?”
অনুপমা বুঝতে পারে যে মনিদিপা ওর কথা রেখে দেবশ্রীকে কিছু জানায়নি, একটা স্বস্তির শ্বাস নেয় আর সেইসাথে রাগে গায়ের রক্ত গরম হয়ে যায়। কেন মনিদিপা এতদিন পরে ফোন করেছে? ওকি মামনিকে জানাতে চায় যে ওর সাথে দেবায়ন আর অনুপমা কি কি করেছে?
অনুপমা হাসি টেনে বলে, “না গো কিছুই করিনি ওর সাথে। তুমি ভালো করেই চেন সূর্য আর মনিদিপাকে, ওরা সব বানিয়ে বলছে তোমার কাছে।”
দেবশ্রী স্বস্তির শ্বাস নিয়ে বলে, “হ্যাঁ তা জানি যে ওরা কেমন। যাক শুনে শান্তি পেলাম যে তোরা ওদের কিছু করিস নি। কিন্তু দেবুর সর্বনাশের কি কথা বলছিল ও?”
অনুপমা আম খাওয়া ছেড়ে মামনিকে জড়িয়ে ধরে বলে, “ছাড়ো ওদের কথা। সব মিথ্যে কথা বলছে।”
খাওয়ার সময় কেটে যায় একথা সেকথায়, কিন্তু অনুপমার মনে ভিড় করে থাকে মনিদিপার ফোনের কথা? আবার কি ওরা দুইজনে কিছু বদ মতলব আঁটছে মামনিকে ফাঁসানোর জন্য। দেবায়ন নেই, দেবায়ন থাকলে না হয় একটা পরামর্শ নেওয়া যেত। কিন্তু দেবায়নের মাথা গরম, দেবায়নের জন্য অপেক্ষা করলে হয়ত রক্তারক্তি কান্ড ঘটিয়ে বসবে। সাপ যখন আবার ফনা তুলেছে, ফোঁস করার আগেই এবারে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে না হলে ভবিষ্যতে ফোঁস করার সাহস পেয়ে যাবে। কি করা যায়, সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে বাড়ি ফেরার সময়ে রূপককে ফোন করে সব জানায়। আরো জানায় যে আগামীকাল সকালে জলপাইগুড়ি যেতে চায় সূর্য আর মনিদিপার সাথে দেখা করতে। কিন্তু জানে না ওদের ঠিকানা অথবা ফোন নাম্বার। শেষ পর্যন্ত ঋতুপর্ণার আশ্রয় নিতে হয় অনুপমাকে। ঋতুপর্ণা জানিয়ে দেয় যে ওর বড়দা ওদের জন্য বাগডোগরা এয়ারপোর্টে অপেক্ষা করবে। কথা হয় যে ঋতুপর্ণার দাদা মনিদিপার বাড়ি চেনে, সেই চিনিয়ে দেবে আর সাথেই থাকবে।
সকালের ফ্লাইট ধরে রূপক আর অনুপমা জলপাইগুড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। মনের মধ্যে অজানা আশঙ্কা, কি হবে কি হবে। যদিও ওদের কাছে ওই রাতের সব ঘটনার ভিডিও করা আছে, তাও এক অজানা আশঙ্কায় বুক দুরদুরু করে কেঁপে ওঠে।
রূপক ওর হাতের ওপরে চাপ দিয়ে মনে বল জুগিয়ে জিজ্ঞেস করে, “কি ভাবছিস এত? আমি আছিতোসব ঠিক করে দেব।”
অনুপম হেসে বলে, “তোর আর দেবায়নের এক কথা সব ঠিক করে দেব। মারামারি খুনোখুনি ছাড়া আর কি ভাবে জানিস ঠিক করতে?”
রূপক হেসে ফেলে, কানের কাছে মুখ নিয়ে এসে বলে, “আরো একটা উপায় জানি কি করে অবস্থার সামাল দিতে হয়।”
অনুপমা না বুঝতে পেরে জিজ্ঞেস করে, “কি ভাবে?”
রূপক বলে, “দেবায়ন যেমন ভাবে মনিদিপাকে চড়িয়ে খেলিয়ে ছিপে তুলেছিল ঠিক সেইরকম ভাবে আমিও তুলতে জানি।”
কথা শুনে অনুপমার গাল লাল হয়ে যায়, “ধ্যাত শয়তান ছেলে।”
রূপকের উষ্ণ হাতের চাপে মনে বল পায় অনুপমা।
বেশ বেলার দিকে ফ্লাইট বাগডোগরা পৌঁছায়। ঋতুপর্ণার দাদা, গাড়ি নিয়ে অপেক্ষা করছিল। ঋতুপর্ণা বিস্তারে ওর দাদাকে জানায়নি, শুধু এইটুকু জানিয়েছে যে যদি ওদের কোন সাহায্য লাগে তাহলে যেন সাহায্য করে। মনিদিপার বাড়ি যাওয়ার পথে ঋতুপর্ণার দাদা রূপককে প্রশ্ন করে আসার কারন। রূপক কথা ঘুরিয়ে বলে একাজ সেকাজের কথা বলতে শুরু করে দেয়। সূর্যের বাড়ির কিছু দুরে গাড়ি থামিয়ে ঋতুপর্ণার দাদা বাড়ি দেখিয়ে দেয়। ওদের ফোন নাম্বার দিয়ে বলে যে কোন কিছুর অসুবিধে হলে যেন ডাকে। এই পাড়া ওর চেনা, কোন গন্ডগোল হলে এক ডাকে লোক জড়ো করে নিতে পারবে। অনুপমা মাথা নাড়িয়ে জানিয়ে দেয় যে অত কিছুর হয়তো দরকার পড়বে না।
রূপক আর অনুপমা বাড়ির সামনে এসে দাঁড়ায়। দুইতলা বাড়ি, ঋতুপর্ণার দাদা বলেছে যে একতলার একটা ছোটো কামরা নিয়ে থাকে সূর্য আর মনিদিপা। কি পরিস্থিতির সম্মুখীন হবে সেই আশঙ্কায় অনুপমার দুক দুরুদুরু করে ওঠে। বুক ভরে শ্বাস নিয়ে দরজার কড়া নাড়িয়ে অপেক্ষা করে। মাথার ওপরে কাঠফাটা রোদ যেন ঝলসে দেয় কোমল অনুপমাকে। এক অজানা আশঙ্কায় রোদে দাঁড়িয়ে দরদর করে ঘামতে শুরু করে দেয়।
কিছুপরে এক মহিলা দরজা খুলে ওদেরকে জিজ্ঞেস করে কে এসেছে। মহিলাকে দেখে প্রথমে ঠিক চিনতে পারে না অনুপমা, অবাক হয়ে থাকিয়ে থাকে মনিদিপার দিকে, একি হয়ে গেছে মনিদিপার শরীর। রোগা হয়ে গেছে, গলার কন্ঠি বেড়িয়ে এসেছে, দুই টানা টানা চোখ কোঠোরাগত, টোপা টোপা লালচে গালে সেই লালিমা নেই, পরনে একটা রঙ ওঠা কম দামি সুতির মাক্সি। পেটের দিকে নজর যেতেই বুঝতে পারল যে মনিদিপা গর্ভবতী। মনিদিপার চোখ জোড়া ছলকে ওঠে, ঠোঁট জোড়া কেঁপে ওঠে, ওদের হঠাৎ করে সামনে দেখে আতঙ্কে চেহারা ফ্যাকাসে হয়ে যায়।
অনুপমা বাড়ির দরজায় দাঁড়িয়ে মনিদিপার শুকনো চেহারা আর গর্ভবতী দেখে কি বলতে এসেছে সেটা ভুলে যায়। রূপকের হাতের ছোঁয়া পেতে সম্বিৎ ফিরে আসে অনুপমার।
মনিদিপা কাঁপা কণ্ঠে প্রশ্ন করে, “আচমকা কি মনে করে?”
অনুপমা মৃদু হেসে বলে, “কিছু না, এমনিই তোমাদের দেখতে এলাম।”
মনিদিপা একবার রূপকের দিকে তাকায় একবার অনুপমার দিকে, ভেতরে ডাকবে কি ডাকবে না এই ভাবে। অনুপমার তীক্ষ্ণ চাহনি ওর মনের দ্বিধা এড়াতে পারে না, নিজেই মনিদিপাকে বলে, “এতো দূর থেকে এসেছি একবার ভেতরে ডাকবে না?”
দরজা থেকে সরে দাঁড়ায় মনিদিপা। অনুপমা ঘরে ঢুকে চারদিক তাকিয়ে দেখে। ঘরটা এত ছোটো যে কেউ যদি আড়মোড়া ভাঙ্গে তাহলে হাত গিয়ে দেয়ালে ঠেকবে। মাথার ওপরে একটা সিলিং ফ্যান ঘুরছে নয় যেন কাঁদছে। এক পাশে একটা ছোটো রান্নাঘর, এত ছোটো যে একজন দাঁড়ালে দ্বিতীয় জনের দাঁড়ানোর জায়গা থাকে না। বিছানার চাদর রঙ ওঠা কিন্তু পরিষ্কার, খাটের তলায় যাবতীয় আসবাব পত্রে ভর্তি। ছয় বাই ছয়ের খাটটা ঘরের বেশির ভাগ জায়গা জুড়ে রয়েছে। একপাশে একটা ছোটো ফ্রিজ আর তাঁর ওপরে একটা ছোটো টিভি। ঘরের আনাচে কানাচে দীনতার ছাপ কিন্তু বেশ ছিমছাম পরিষ্কার করে রাখা। মনিদিপাকে দেখে মনে হল যেন শুয়ে ছিল, মাথার চুল অবিন্যাস্ত। অনুপমাকে খাটের ওপরে বসতে বলে মনিদিপা। রূপক, তীক্ষ্ণ চোখ একভাবে চেয়ে থাকে মনিদিপার দিকে, বুঝতে চেষ্টা করে কি চায় এই মহিলা আর তার স্বামী।
অনুপমা মনিদিপাকে প্রশ্ন করে, “তুমি কাল মামনিকে, মানে দেবায়নের মাকে ফোন করেছিলে?”
মনিদিপা উত্তরে কি বলবে ভেবে পায় না, “না মানে বউদিকে এমনি ফোন করেছিলাম।”
অনুপমা শান্ত কণ্ঠে প্রশ্ন করে, “হঠাৎ এতোদিন পরে কি মনে করে?”
রূপক, মনিদিপার চোখে চোখ রেখে কঠোর কণ্ঠে প্রশ্ন করে, “কোন বদ মতলব নিশ্চয় নয়। ওই দিনের সব ঘটনা কিন্তু ক্যামেরা বন্দি, সেটা নিশ্চয় খেয়াল আছে। তোমাদের মনে কি আছে কি নেই বলা মুশকিল।”
মনিদিপার গলা কেঁপে ওঠে ওই হিম শীতল গম্ভির কণ্ঠস্বর শুনে, “এতদিন পরেও আমাদের সর্বনাশ করতে চাও। মড়ার ওপরে খাঁড়ার ঘা না মারলে কি তোমাদের প্রাণে জল আসবে না?”
ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে বলে, “বড় কষ্টে আছি তাই ক্ষমা চেয়ে ফোন করেছিলাম যাতে আমাদের কষ্টের কিছু লাঘব হয়।”
অনুপমা রূপককে মৃদু ধমক দিয়ে শান্ত করিয়ে মনিদিপার হাত ধরে পাশে বসিয়ে সান্ত্বনা দিয়ে বলে, “কাঁদছো কেন? কেঁদো না।”
মনিদিপা ডুকরে কেঁদে ওঠে, “কি করব বলো? মা সমান বৌদির সাথে আমরা যা করেছি তাতে ভগবান আমাদের কোনদিন ক্ষমা করবে না।” পেটের ওপরে হাত বুলিয়ে কেঁদে বলে, “কোলকাতা ছেড়ে চলে আসার পরে আমি গর্ভবতী হয়েছিলাম কিন্তু সেই বাচ্চাটা পাঁচ মাসেই পেটের মধ্যে মারা যায়। আমি দিনরাত ঠাকুরকে ডাকতাম কিন্তু পাপের বোঝা আমাদের ঘাড় থেকে মনে হয় আর নামবে না, যদি না বৌদি আমাদের ক্ষমা করে।”
মনিদিপার চোখের জলে অনুপমার মন ভিজে যায়। রূপককে একটু বাইরে যেতে বলে, মনিদিপাকে জিজ্ঞেস করে, “বর্তমানে কত মাস চলছে তোমার?”
মনিদিপা চোখের জল মুছে পেটের ওপরে হাত বুলিয়ে বলে, “পাঁচ মাস চলছে।”
তারপরে অনুপমা ওদের কথা জিজ্ঞেস করাতে মনিদিপা এক এক করে সব খুলে বলে। কোলকাতা থেকে জলপাইগুড়িতে এসে সূর্য প্রথমে কোন কাজ পায়নি। বেশ কয়েক মাস বাপের বাড়িতে বসে ছিল কিন্তু কতদিন আর বসে খাওয়া যায়। বাবা নেই, গত হয়েছেন, দাদার ঘাড়ে বসে খেতে সূর্যের ভালো লাগে না। এই ছোটো ঘরে উঠে আসে ওরা আর ওর সব গয়না বিক্রি করে ঘর ভাড়ার টাকা আর খাওয়ার টাকা জোগাড় করে। তারপরে একটা কাঠের কারখানায় ক্যাশিয়ারের কাজ পায়। যা পায় তাতে কষ্টেশিষ্টে দুইজনের চলে যায়। প্রথম বাচ্চার সময়ে টাকার অভাবে ভালো ডাক্তার দেখাতে পারেনি, সরকারি হাসপাতালে দেখিয়েছিল কিন্তু কিছু ওষুধ বাইরে থেকে কিনতে হত। একটা প্রাইভেট ডাক্তার বলেছিল যে মনিদিপাকে খুব সাবধানে রাখতে আর নার্সিংহোমে ভর্তি করিয়ে দিতে কিন্তু সেই সময়ে ওদের কাছে কানা কড়িটাও ছিল না যে নার্সিং হোমে ভর্তি করাবে। দাদার কাছ থেকে ওষুধের খরচা পেয়েছিল কিন্তু নার্সিংহোমে ভর্তি করার মতন পয়সা জুগিয়ে উঠতে পারেনি। কথা গুলো শুনতে শুনতে অনুপমার দুই চোখ দিয়ে জলের ধারা বয়ে আসে।
গত বারের সময়ে বেশ কিছু ধার দেনা হয়ে গেছে ওদের তাই এইবারে অবস্থা আরও সঙ্গিন। এই বাচ্চাটা ওরা ঠিক চায়নি কিন্তু হঠাৎ করে এসে গেছে। মা হওয়ার ইচ্ছে সব মেয়েদের থাকে তাই এটাকে বাঁচিয়ে রাখতে তৎপর হয়ে ওঠে। কিন্তু ঠিক ভাবে সব হবে সেই ভেবে কুল কিনারা পায় না। ঠিক মতন খাওয়ার পয়সা নেই, ডাক্তারের পয়সা কোথা থেকে দেবে?
অনুপমা মনিদিপার গলায় হাত দিয়ে দেখে যে কণ্ঠহাড় দেখা যাচ্ছে, খুব শীর্ণকায় হয়ে গেছে একসময়ের সুন্দরী মনিদিপা। ও ভেবে এসেছিল যে মনিদিপা আর সূর্যকে শাসিয়ে যাবে মামনিকে ফোন করার জন্য কিন্তু এখানে এসে পরিস্থিতি দেখে মাথার মধ্যে সব অঙ্ক গুবলেট হয়ে যায়। ঘর বাড়ির পরিস্থিতি আর মনিদিপার অবস্থা দেখে বুক ফেটে এক অব্যাক্ত কান্না বেড়িয়ে আসে। কি করবে অনুপমা, বুক ভরে শ্বাস নিয়ে মনিদিপার গালে মাথায় হাত বুলিয়ে সান্ত্বনা দেয়।
ব্যাগে চার হাজার টাকা ছিল, সেটা বের করে ওর হাতে দিয়ে বলে, “এটা রাখো এখন আর তোমার বরের ব্যাঙ্ক একাউন্ট নাম্বার বল। আমি টাকা পাঠিয়ে দিচ্ছি এখুনি।”
চার হাজার টাকা হাতে নিয়ে মনিদিপা অনুপমার হাত ধরে ভেঙ্গে পরে কান্নায়, “তুমি সত্যি দেবী।”
অনুপমা ওর চোখের জল মুছিয়ে বলে, “আমি তোমাদের যথাযথ সাহায্য করতে পারি কিন্তু একটা শর্তে?”
মনিদিপা কান্না ভুলে ওর মুখের দিকে তাকিয়ে বলে, “কি শর্ত আবার?”
অনুপমা বড় শ্বাস নিয়ে বলে, “তুমি প্রতিজ্ঞা করেছিলে যে মামনিকে কোনদিন ফোন করবে না, সেই প্রতিজ্ঞা কিন্তু তোমরা রাখনি, মণি।”
মনিদিপা হাতের টাকা ওর দিকে ছুঁড়ে দিয়ে চেঁচিয়ে ওঠে, “আমাদের সর্বনাশ না করলে যেন তোমার প্রাণে শান্তি আসবে না?!”
অনুপমা মাথা ঠাণ্ডা রেখে ওর হাত ধরে পাশে বসিয়ে বলে, “আমার কথা পুরো না শুনে কেন বাজে বকছ, মণি? দয়া করে আগে আমার কথা পুরো শোনো তারপরে বোলো।”
চুপ করে বসে পরে মনিদিপা। অনুপমা বলে, “সূর্যকে বল কিছু একটার দোকান দিক আমি টাকা দেব তোমাদের। কত টাকা লাগবে এক লাখ, দুই লাখ না পাঁচ লাখ? যা লাগবে বল আমি দিতে রাজি।”
মনিদিপা হাঁ করে চেয়ে থাকে অনুপমার মুখের দিকে, এই মেয়ের বুকে কে বাস করে? সাক্ষাৎ অন্নপূর্ণা দেবীকে যেন সামনে দেখছে।
এমন সময়ে ধরাম করে দরজা খুলে সূর্য ঘরের মধ্যে ঢুকে পরে, পেছনে রক্ত চক্ষু রূপক।
সূর্য অনুপমাকে দেখে চেঁচিয়ে ওঠে, “এতদিন পরে দলবল নিয়ে আমাদের সর্বনাশ করতে এসেছ? বেড়িয়ে যাও আমার বাড়ি থেকে। আমি আমার মৃত বাচ্চার কসম খেয়ে বলছি যেদিন দেবায়ন কে হাতের সামনে পাবো সেদিন মেরে ফেলব……”
অনুপমা সূর্যকে রুদ্ররুপে দেখে থতমত খেয়ে যায়। মনিদিপা অস্ফুট চিৎকার করে সূর্যকে চুপ করতে বলে, “ওগো….. তুমি কিছু বোলো না গো। ওরা আমাদের সর্বনাশ করতে আসেনি।” হাতের টাকার তোড়া দেখিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলে, “আমাদের ভালোই করতে এসেছে ওরা। দয়া করে তুমি একটু ঠাণ্ডা হও।”
অনুপমা রূপকের দিকে তাকায়। রূপক গর্জে ওঠে সূর্যের ওপরে, কলার ধরে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে বলে, “আগে কথা শুনে তবে কথা বলবে না হলে মেরে এখানে এই মেঝের নিচে পুঁতে চলে যাবো কাকপক্ষী টের পাবে না।”
অনুপমা রূপককে ধমক দিয়ে সূর্যকে ছেড়ে দিতে বলে। রূপক সূর্যকে ধরে বসিয়ে দেয় খাটের ওপরে।
রূপক সূর্যের নাকের সামনে আঙুল নাড়িয়ে বলে, “আমরা ভেবেছিলাম যে তোমরা চুপচাপ থাকবে কিন্তু কাকিমাকে ফোন করে খুব ভুল করেছ। ভাগ্য ভালো যে দেবায়ন আসেনি। আমরা ওকে না জানিয়ে এখানে এসেছি। যদি ও জানতে পারে তাহলে এখানে এসে তোমাদের কচুকাটা করবে।”
অনুপমা এবারে রূপকের ওপরে রেগে গিয়ে বলে, “তুই একটু চুপ থাকবি? আমি ওদের সাথে কথা বলছি, আমাকে বলতে দে।”
অনুপমা সূর্যকে বুঝিয়ে বলার পরে সূর্য ক্ষান্ত হয়, “দেখো, আমি এখানে এসেছিলাম অন্য এক মনোভাব নিয়ে কিন্তু এখানে এসে তোমাদের অবস্থা দেখার পরে আর মনিদিপার এই অবস্থা দেখার পরে আমি ভাবনায় পরে গেলাম। তুমি এখানে কিছু একটার দোকান দিতে পারো, তাতে আমি সাহায্য করব চিন্তা নেই।” তারপরে হেসে মনিদিপার গালে হাত বুলিয়ে, “এত সুন্দরী বৌটার কি অবস্থা করেছ? আর ওই যে আসছে তাকে নিয়ে ভালো ভাবে থাকো।”
মনিদিপা ওকে সব কিছু খুলে বলে আরও বলে যে অনুপমা ওদের টাকা দেবে দোকান করতে। সব কিছু শুনে হতবাক হয়ে সূর্য, কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলে। কি ভেবেই না দেবশ্রী বৌদিকে ব্লাকমেল করেছে আর নিজেদের কামনা চরিতার্থ করেছে। সূর্য ক্ষান্ত হয় নিজের ভুল বুঝে। অনুপমা ওর কাছ থেকে ব্যাঙ্কের একাউন্ট নাম্বার নিয়ে পাঁচ লাখ টাকার একটা আর টি জি এস করে বলে টাকা আসতে দিন চারেক লাগবে ততদিনের জন্য এই চার হাজার তাকায় চালায় আর বউকে যেন ভালো ডাক্তার দেখায়। সব কিছু দেখেশুনে সূর্যের চেহারা লজ্জায় আর নিজের প্রতি ঘৃণায় কুঁকড়ে যায়। বারেবারে অনুপমার কাছে বিগত দিনের কার্যকলাপের জন্য ক্ষমা চায়।
বিকেল হয়ে মনিদিপা আর সূর্যের বাড়ি থেকে বের হতে। একদিকে দুপুরে কিছু খায় নি, তাই প্লেনে ওঠার আগে একটা বড় রেস্টুরেন্টে ঢোকে দুজনে। আকাশের সূর্য পশ্চিমে ঢলে গেছে, সন্ধ্যের ফ্লাইট মনে হয় ধরতে পারবে না। এদিকে বাড়িতে আসল ঘটনা কিছুই বলে আসা হয়নি। অনুপমা জানত যদি মামনিকে বলে তাহলে মামনি ওকে খুব বকবে আর মাকে বলাও যায় না এইসব কথা। কাজের আছিলায় দুইজনে বেড়িয়ে এসেছে।
খেতে খেতে রূপক ওকে জিজ্ঞেস করে, “আজ তাহলে আর বাড়ি ফেরা হচ্ছে না।”
অনুপমা ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বলে, “না আজ মনে হচ্ছে এখানেই থেকে যেতে হবে। বড্ড দেরি হয়ে গেল সরি।”
রূপক চোখ টিপে হেসে বলে, “শালী আধি ঘর ওয়ালি, রাতে একসাথে থাকতে না পারি একটু ছোঁয়া পেতেই পারি।”
অনুপমার গাল লাল হয়ে যায় লজ্জায়, “ধ্যাত শয়তান ছেলে, তুই আলাদা রুমে থাকবি আর আমি আলাদা রুমে থাকবো।”
রূপক ওকে আরও উত্যক্ত করে বলে, “সে না হয় থাকলাম কিন্তু…… এই গরমে তুই যে বেশ গরম হয়ে থাকবি। ঠাণ্ডা কে করবে তোকে?”
অনুপমা মিচকি হেসে বলে, “সেটা আর তোর চিন্তা করতে হবে না।”
রূপক একথা সেকথা বলতে বলতে বলে, “আমার কি মনে হয় জানিস, সূর্য ঠিক ভাবে মেনে নিতে পারেনি আমাদের এখানে আসাটা।”
অনুপমা ভুরু কুঁচকে প্রশ্ন করে তাকায় ওর দিকে। রূপক উত্তরে বলে, “যে ভাবে তোর আর মনিদিপার দিকে তাকিয়ে ছিল, আমার মনে হয় টাকা পাওয়ার পরেও ওর মনে শঙ্কা থেকে যাবে যে দেবায়ন ওদের কিছু করতে পারে।
অনুপমা প্রশ্ন করে, “তাহলে কি করা উচিত আমাদের?”
রূপক বলে, “দুই দানছত্র না খুলে একটু শাসিয়ে এলেই পারতিস। এখন টাকা পেয়ে ওদের লোভ বেড়ে যেতে পারে।”
অনুপমা হেসে ফেলে ওর কথা শুনে, “মণিকে ওই অবস্থায় দেখে সত্যি খুব খারাপ লেগেছে। না না, ওরা ওই রকম কিছু করবে না। আমার মনে হয় না যে সূর্যের আর সেই সাহস আছে যে কোলকাতা গিয়ে আমাদের কোন ক্ষতি করবে।”
রূপক বলে, “কিন্তু কাকিমাকে ফোন করতেই পারে অথবা দেবায়নকে। তখন কি করবি?”
অনুপমা বলে, “আমি দেবায়ন কে আগে থেকেই সব বুঝিয়ে বলে দেব। যদি কোনদিন সেই রকম কিছু হয় তাহলে ভেবে দেখা যাবে।”
এমন সময়ে অনুপমার চোখ পরে কয়েকটা টেবিল দুরে বসা এক দম্পতির দিকে। ভদ্রলোককে বেশ চেনা চেনা মনে হল, পাশে বসা মহিলা ওর দিকে পেছন করে বসে। মহিলাটি একটা চাপা হাতকাটা কামিজ আর জিন্স পরে, দেহের গঠন বেশ সুন্দর এবং ফর্সা। পরনের কাপড় বেশ দামী। পেছন থেকে মহিলাকে দেখেও বেশ চেনা চেনা মনে হল অনুপমার। একবার চেহারা দেখতে পারলে হয়। অনুপমা এক ভাবে তাকিয়ে থাকে ওই টেবিলের দিকে। মহিলা আর পাশের ভদ্রলোক বেশ খোশমেজাজে গল্প করছে, হাবভাব হাসি গল্প দেখে মনে হল দুইজনে পরস্পকে বেশ ভালো ভাবেই চেনে। লোকটার বাম হাত মাঝে মাঝেই মহিলার পিঠের ওপরে আদর করছে। মহিলাটি গল্প করতে করতে লোক টির কাঁধের ওপরে মাথা রেখে দিয়েছে। মুখের একপাশ দেখে থমকে যায় অনুপমা, পাশের ভদ্রলোক ওয়েটার কে ডাকে কিছু একটা অর্ডার দেওয়ার জন্য। অনুপমা ভদ্রলোকের চেহারা দেখে আকাশ থেকে পড়ে। এইভাবে ওদের কে এখানে দেখতে পাবে স্বপ্নেও আশা করেনি, বিশেষ করে পাশের ভদ্রলোককে।
 
Like Reply
পঞ্চবিংশ পর্ব (#03)

রূপক খেতে ভুলে গিয়ে অনুপমার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে। হতবাক অনুপমার দুই চোখে যেন আগুন ঠিকরে বের হচ্ছে। রূপক ওর কাঁধ আলতো ঝাঁকিয়ে প্রশ্ন করে, “কি রে কি হয়েছে? কাকে দেখছিস?”
অনুপমার চোখ অনুসরণ করে দেখে ওদের অদুরে এক দম্পতি বসে।
অনুপমার চোয়াল শক্ত হয়ে যায়। রূপকের হাতের ছোঁয়ায় সম্বিৎ ফিরে আসার পরে ওকে বলে, “আমি যদি হঠাৎ করে কিছু করে বসি তাহলে কি তুই আমার পেছনে দাঁড়াবি?”
রূপক হাঁ করে চেয়ে প্রশ্ন করে, “মানে?”
কি বলবে অনুপমা, ওদের পরিচয় কি ভাবে দেবে রূপকের কাছে? একদিনের ব্যবধানে ওর জীবন যেন ঘটনাবহুল হয়ে উঠেছে। একে গ্রীষ্ম কাল তায় গত রাত থেকেই শরীরের রক্ত গরম হয়ে আছে। এমত অবস্থায় চোখের সামনে বিশেষ করে ভদ্রলোককে দেখে মাথা ঠিক করে উঠতে পারে না। খাওয়া ভুলে হাতের মুঠি শক্ত হয়ে যায় অনুপমার।
গলা নামিয়ে রূপককে ওই দুই নর নারীর পরিচয় দেয়, “ওই যে ভদ্রলোক বসে আছেন, ওনার নাম মিস্টার ধৃতিমান দেবনাথ। মামনির আগের অফিসের দিল্লী অফিসের কলিগ। আমার সব থেকে অবাক লাগছে এই ভেবে যে এই ভদ্রলোক কবে কোলকাতা এসেছে আর কেনই বা মামনির সাথে দেখা করেনি?”
রূপক চেহারায় উৎসুক ভাব ফুটে ওঠে, “মিস্টার দেবনাথ কেন কাকিমাকে ফোন করবে?”
অনুপমা আসল কথা এড়িয়ে উত্তরে বলে, “মামনির অতি পরিচিত কলিগ, আমরা একসাথে মুসৌরি ঘুরতে গিয়েছিলাম।”
রূপক মাথা নাড়ায়, “আচ্ছা এটা ভাববার বিষয়, আর পাশের মহিলা কে?”
অনুপমা বুক ভরে শ্বাস নিয়ে বলে, “পাশের ভদ্রমহিলা, মিস নিবেদিতা চৌধুরী, বাবার খুব পরিচিত বান্ধবী। কোলকাতায় একটা কন্সট্রাকশান কোম্পানি আছে তাঁর।”
রূপক বিশেষ কিছু বুঝতে পারল না এদের একসাথে দেখে অনুপমা কেন এত হতবাক হয়ে গেছে, কিন্তু ওর চোখ মুখ দেখে এটা বুঝতে পারল যে অনুপমা যা বলেছে তার চেয়ে বেশি কিছু হয়ত জানতে পারবে না। ওকে জিজ্ঞেস করে, “ছাড় ওদের, চল হোটেলে যাই। রাতের কোন ড্রেসপত্র আনা হয় নি। তুই রুমে যা আমি আমার আর তোর জন্য একটা কিছু কিনে নিয়ে আসি। রাতে কি একটু ড্রিঙ্ক করা যেতে পারে?”
অনুপমা ওদের দিকে চোয়াল শক্ত করে তাকিয়ে থাকে, রূপকের কথা ওর কানেই ঢোকে না। উলটে রূপককে বলে, “আমি একটু আসছি রে। প্লিস এখানে বস, আর যদি ডাকি, প্লিস তাহলে আসিস।”
রূপক প্রশ্ন করে, “এই দাঁড়া, কোথায় যাচ্ছিস?”
রূপকের কথা শেষ হওয়ার আগেই অনুপমা উঠে ওদের টেবিলের দিকে হাঁটা লাগায়। ওদের সামনে দাঁড়িয়ে কপট মিষ্টি হেসে বলে, “হাই, হোয়াট আ সারপ্রাইস? এই রকম ভাবে আমাদের দেখা হবে আবার ভাবতে পারিনি।”
ধৃতিমান নিবেদিতার পিঠ থেকে হাত নামিয়ে ধড়মড় করে সরে বসে। সামনে অনুপমাকে দেখে ভুত দেখার মতন চমকে যায় দুইজনেই। নিবেদিতা নিজেকে সামলে নেয়, আশেপাশে ঘাড় ঘুরিয়ে একবার দেখে নিয়ে বুঝতে চেষ্টা করে যে অনুপমার সাথে আর কে আছে। তারপরে স্বাভাবিক স্বরে ওকে প্রশ্ন করে, “তুমি এখানে এই সময়ে? কি ব্যাপার, একা না সাথে কেউ আছে?”
নিবেদিতার প্রশ্ন এড়িয়ে অনুপমা চেয়ার টেনে সামনে বসে ওদেরকে প্রশ্ন করে, “এখানে বসলে আশা করি আপত্তি নেই।” ধৃতিমানের চোখে চোখ রেখে প্রশ্ন করে, “আপনি কবে এলেন দিল্লী থেকে?”
নিবেদিতা ভাবতে পারেনি যে অনুপমা, ধৃতিমানকে চেনে। নিবেদিতা হাজার প্রশ্ন নিয়ে ধৃতিমানের দিকে তাকিয়ে থাকে। অনুপমা তীর্যক হেসে ধৃতিমানকে বলে, “কি হল মিস্টার দেবনাথ? কবে এসেছেন দিল্লী থেকে? মল্লিকা কোথায়, ক্লাস টেনের ফাইনাল হয়ে গেছে? তো কেমন রেজাল্ট হয়েছে?”
অনুপমার কথা শুনে আর নিবেদিতার তীক্ষ্ণ দৃষ্টির ফলে ধৃতিমানের কান লাল হয়ে যায়। ধৃতিমান হাসতে চেষ্টা করে কিন্তু ওর হাসি মিলিয়ে যায় নিবেদিতার চাহনি দেখে।
নিবেদিতা, ধৃতিমানকে জিজ্ঞেস করে, “তুমি একে চেন? কবে থেকে চেন? কি ভাবে চেন।”
উত্তরের জন্য ধৃতিমানকে হাতড়াতে দেখে তীর্যক ভাবে হেসে ওঠে অনুপমা, “একেবারে তুমি তে পৌঁছে গেছেন দেখছি, মিস্টার দেবনাথ।”
নিবেদিতা হিম শীতল কণ্ঠে অনুপমাকে বলে, “আপনি না তুমি সেটা তোমাকে দেখতে হবে না। তুমি এখানে কি করতে এসেছ?”
অনুপমা ভুরু নাচিয়ে হেসে বলে, “ধরে নেওয়া যাক যে তোমার পেছন পেছন ধাওয়া করে এসেছি।”
নিবেদিতা অনুপমাকে প্রশ্ন করে, “তোমার বাবা জানেন তুমি এখানে?”
অনুপমা বলে, “মিস চৌধুরী, আমি কচি খুকি নই যে আমাকে কোথাও যেতে হলে বাবার অনুমতি নিয়ে যেতে হবে।”
নিবেদিতার চোয়াল শক্ত হয়ে ওঠে। কোনদিন অনুপমা অথবা পারমিতাকে ঠিক দেখতে পারতো না, তাই কঠিন স্বরে প্রশ্ন করে, “কি চাই তোমার এখানে?”
অনুপমা, ধৃতিমানের দিকে তাকিয়ে বলে, “নিবেদিতা ম্যাডাম, আমি শুধু মিস্টার দেবনাথের কাছ থেকে কিছু উত্তর চাই।”
নিবেদিতা, ধৃতিমানের দিকে তাকিয়ে থাকে। ধৃতিমান হাতের মুঠি শক্ত করে চরম ক্রোধে গজগজ করতে করতে প্রশ্ন করে, “কি উত্তর চাই তোমার?”
অনুপমা শীতল কণ্ঠে জিজ্ঞেস করে, “মামনি মানে, মিসেস বসাক কি জানেন যে আপনি কোলকাতা এসেছেন?”
ধৃতিমান মাথা নাড়ায়, “না, জানে না।”
অনুপমা সামনের দিকে ঝুঁকে ধৃতিমানের চোখে চোখ রেখে প্রশ্ন করে, “আপনি কবে কোলকাতা এসেছেন?”
ধৃতিমান গর্জে ওঠে, “তুমি কে যে আমি তোমার প্রশ্নের উত্তর দিতে যাবো।” রাগে গজগজ করতে করতে ধৃতিমান চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ায়, সেই সাথে হতবাক নিবেদিতা উঠে দাঁড়ায়। ধৃতিমান নিবেদিতার উদ্দেশ্যে বলে, “তুমি কি রুমে যাবে না এখানেই থাকবে?”
ধৃতিমানকে এই ভাবে রেগে ফুঁসতে দেখে নিবেদিতা অবাক হয়ে যায়, অনুপমাকে প্রশ্ন করে, “তুমি কি করে মিস্টার দেবনাথকে চেন?”
তির্যক হেসে উত্তর দেয় অনুপমা, “তোমার এত কাছের লোক মিস্টার দেবনাথ, যে হাসতে হাসতে খাওয়ার টেবিলে গড়িয়ে পড়ছিলে। আর কাকে চেনে আর কাকে চেনে না সেটা বলেনি তোমাকে? মিস্টার দেবনাথ কে প্রশ্ন করলে আশা করি সব উত্তর পেয়ে যাবে।”
চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে পরে অনুপমা, ওইখান থেকে সরে যাওয়ার আগে নিবেদিতার উদ্দেশ্যে বলে, “আর হ্যাঁ তোমার ভালোর জন্য বলছি, মিস্টার দেবনাথের সাথে জড়িয়ে পড়ার আগে একটু বাজিয়ে নেবে। কি জানি ভবিষ্যতে কি করে বসে!”
এই কালকের মেয়ে তাকে শেখাচ্ছে কি ভাবে মানুষ চিনতে হয়? নিবেদিতা রক্ত চক্ষু মেলে অনুপমার দিকে তাকিয়ে থাকে। অনুপমা বুক ভরে শ্বাস নিয়ে নিজের টেবিলে ফিরে আসে। পুরোটা সময় রূপক ওদের পর্যবেক্ষণ করছিল, একবার ভেবেছিল কাছে যায় কিন্তু অনুপমার ব্যাক্তিগত মামলায় নিজেকে জড়াতে চায়নি।
অনুপমা কাছে আসতেই রূপক জিজ্ঞেস করে, “কি হল?”
অনুপমা বলে, “চল যাই, ডিনার একপ্রকার হয়ে গেছে। আমি রুমে যাচ্ছি, তুই পারলে প্লিস আমার জন্য একটা ড্রেসিং গাউন অথবা নাইট শার্ট নিয়ে আসিস।”
রূপক আবার জিজ্ঞেস করে, “তোকে দেখে ঠিক সুবিধের মনে হচ্ছে না। কি হয়েছে বলবি ত? এখান থেকে ওদের চেহারা দেখে বুঝতে পারছিলাম যে আবহাওয়া বেশ গরম।”
সত্যি আবহাওয়া বেশ উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। ঘাড় ঘুরিয়ে নিবেদিতা আর ধৃতিমানকে লক্ষ্য করে, দুই জনের মধ্যে বেশ উত্তপ্ত কথোপকথন চলছে। রূপকের হাত ধরে অনুপমা বেড়িয়ে যায় রেস্টুরেন্ট থেকে। রূপককে কেনাকাটার জন্য বাজারে পাঠিয়ে দিয়ে নিজের রুমের দিকে পা বাড়ায়। মনের মধ্যে শত চিন্তা ভর করে আসে, বুকের রক্ত আকুলি বিকুলি এদিক ওদিক ছুটে বেড়ায়, এই দুই দিনের মধ্যে কত কিছু ঘটনা ঘটে গেল আর কত কিছুর মধ্যে জড়িয়ে পড়ল। না জড়ালেই পারত কিন্তু তাও জড়িয়েছে নিজেকে। কিঞ্চিত আশঙ্কা মনের মধ্যে ভর করে আসে, কেউ ওর সাথে রাতে কিছু করবে না তো? দেবায়ন না থাকলেও কি হয়েছে, রূপক সাথে আছে তো।
পাশাপাশি দুটো রুম বুক করা হয়েছিল রাতে থাকার জন্য। রূপক মজা করে বলেছিল যে একটা রুম বুক করলেই ভালো। কি কার্ড দিয়ে দরজা খুলে রুমে ঢুকে মনে হয় যেন শরীর ছেড়ে দিয়েছে। সারাদিনের ঝামেলা, ক্লেদ, ক্লান্তি ধুয়ে ফেলতে হবে। সেই কোন সকালে বাড়ি থেকে বেড়িয়েছে, তারপরে মনিদিপার বাড়িতে একচোট ঝক্কি ঝামেলা, এই রেস্টুরেন্টে এসেও আরেক ঝামেলা। ঝামেলা যেন অনুপমার সঙ্গী সাথী।
রাতে থাকার জন্য আসেনি, তাই জামা কাপড় বলতে কিছুই নেই সাথে। ল্যাপটপ আনেনি ভেবেছিল রাতের মধ্যে ফিরে যাবে বাড়িতে। এখন কোন বাড়িতে ফোন করা হয়নি, মা মামনি দুইজনেই চিন্তায় থাকবে। একে একে দুই বাড়িতে ফোন করে জানিয়ে দেয় যে কাজের চাপের জন্য জলপাইগুড়িতে থেকে যেতে হয়েছে। কাজের কথা শুনে কেউ বিশেষ উচ্চবাচ্চা করেনা। ফোনে খবরাখবর নেওয়ার পরে শরীর এলিয়ে দেয় নরম সাদা বিছানার ওপরে।
শীততাপ নিয়ন্ত্রিত রুম, শরীর অবশ হয়ে আসে ঠাণ্ডায়, একটু ঘুম ঘুম পায়। অনুপমা মাথা ঝাকা দিয়ে উঠে শার্ট আর জিন্স খুলে ফেলে। বাথরুমে ঢুকে পরনের শেষ আচ্ছাদন টুকু খুলে শাওয়ারের নিচে দাঁড়িয়ে পরে। ঠাণ্ডা জলের সাথে সারা দিনের ক্লেদ ক্লান্তি ধুয়ে মুছে যায়। অনেকক্ষণ ধরে স্নান করার পরে বুকের ওপরে তোয়ালে জড়িয়ে বাথরুম থেকে বেড়িয়ে আসে। ব্যাগে চিরুনি আর সামান্য প্রসাধনির জিনিস আছে তাতে কি আর মিস অনুপমা সেনের মন ভরে? ড্রেসিং টেবিলে নিজেকে একবার দেখে, ধুপ করে বিছানায় শরীর এলিয়ে দেয়। সামনে বিশাল এলসিডি টিভি, কি দেখবে কি দেখবে, এই ভেবে শেষ পর্যন্ত একটা নাম না জানা সাউথ ইন্ডিয়ান চ্যানেল খুলে বসে পরে। ওদের সঙ্গীতের তাল লয় বড় মধুর, বুলি না বুঝুক কিন্তু তাল লয় আর বাজনা শুনে মন ভরায়। ক্লান্তি আর ঠাণ্ডা হাওয়ার আবেশে চোখ বুজে আসে।
এমন সময়ে দরজায় ঠকঠক করে আওয়াজ শুনে চমকে ওঠে। আশঙ্কা জেগে ওঠে মনের মধ্যে, একা পেয়ে ধৃতিমান অথবা নিবেদিতা ওর রুমে এলো না ত? ওরা কি এই হোটেলেই উঠেছে, এটা জলপাইগুড়ির সেরা হোটেল, নিবেদিতা এখানে উঠতেই পারে, সেই সাথে ধৃতিমান। একটা ভুল হয়ে গেল যে ডেস্কে জিজ্ঞেস করা হয়নি ওদের ব্যাপারে।
কাঁপা গলায় প্রশ্ন করে, “কে?”
ওদিকে রূপকের গলার আওয়াজ পেয়ে স্বস্তির শ্বাস নেয়, “ওরে মেয়ে খোল দরজা।”
দরজা খুলে দাঁড়াতেই রূপকের চোখ আটকে যায় অনুপমার নধর কমনীয় দেহপল্লবের ওপরে। বুকের কাছে গিঁট দিয়ে বাঁধা সাদা তোয়ালে নেমে এসেছে ঠিক পাছার নিচ পর্যন্ত। দুই স্তন ফুলে উঠেছে সামনের দিকে, নিচে ব্রা পরা নেই তাই যেন দুই স্তন আরও ঠেলে সামনের দিকে বেড়িয়ে এসেছে। স্নানের পরে চেহারায় এক অন্য ধরনের চমক এসেছে, সারা শরীর চকচক করছে রুমের মৃদু আলোয়। রূপকের সামনে যেন এক জলপরী দাঁড়িয়ে, ওর অদ্ভুত সৌন্দর্যে হারিয়ে যায় রূপক।
রূপকের চোখের ভাষা পড়ে লজ্জায় মাথা অবনত হয়ে যায় অনুপমার। নিজেকে সঙ্গে সঙ্গে সামলে নিয়ে রূপককে জিজ্ঞেস করে, “এই ছেলে কি এনেছিস আমার জন্য?”
রূপক ওকে দেখে চোখ টিপে বলে, “বাল এনেছি। তোকে মাল একদম দারুন দেখাচ্ছে। আমাকে ছাড়াই স্নান সেরে ফেললি?”
অনুপমা ওর হাত থেকে ব্যাগ নিয়ে খুলে দেখে যে রূপক ওর জন্য একটা পাতলা স্লিপ এনেছে আর নিজের জন্য কিছুই আনেনি। অনুপমা ওকে প্রশ্ন করে, “কি রে তুই কিছু আনিস নি কেন?”
রূপক রুমের মধ্যে ঢুকে টেবিলের ওপরে হুইস্কির বোতল রেখে বলে, “কি আনব আমার জন্য? আমি এখন ভালো করে স্নান সেরে ন্যাংটো হয়ে বিছানায় পরে থাকব। এই রুমে কেউ কি দেখতে আসছে নাকি আমাকে?”
হেসে ওঠে অনুপমা, ওর হাসির কলতান রুমের দেয়ালে প্রতিধ্বনি হয় আর সেই সাথে রূপকের মন চঞ্চল হয়ে ওঠে এই সুন্দরীকে আলিঙ্গনে বেঁধে ফেলার। অনুপমা হেসে বলে, “যা তাহলে নিজের রুমে, গিয়ে যা খুশি করবি কর। নিজের জন্য হুইস্কি আর আমার জন্য কিছু আনিস নি?”
রূপক বলে, “আমি ভাবছিলাম একসাথেই হুইস্কি খাবো।”
অনুপমা বলে, “হুইস্কি! অনেকদিন খাইনি আচ্ছা তাই হবে। তুই তাহলে স্নান সেরে নে আমি ততক্ষণে কিছু কাবাব, সোডা আর বরফের অর্ডার দিয়ে দেই।”
রূপক ওর সামনে এসে, সদ্য স্নাত অনুপমার শরীরের মিষ্টি মাদকতা ঘ্রান নাকে টেনে বলে, “আমি আগেই বলেছিলাম একটা রুম নিতে, তুই শুনলি না।”
অনুপমা ওর গালে আলতো চাপড় মেরে বলে, “ধ্যাত শয়তান ছেলে কোথাকার, যা নিজের রুমে আর স্নান সেরে আয়।”
রূপক ওর কথায় কান না দিয়ে সেখানেই জামা খুলে ফেলে। অনুপমা মানা করার আগেই প্যান্ট খুলে শুধু মাত্র জাঙ্গিয়া পরে বাথরুমে ঢুকে পরে। ওর বলিষ্ঠ শরীর দেখে আর নিজের উন্মিলিত অঙ্গ দেখে বুকের রক্ত চঞ্চল অয়ে ওঠে। আসন্ন রাতের কথা ভাবতেই শরীরে কাঁটা দেয় অনুপমার, সত্যি কি রূপক ওর সাথে কিছু করবে। কে জানে কি হবে রাতে? ভাবতে ভাবতেই তলপেট চিনচিন করে আর জানুসন্ধি শিরশির করে ওঠে, নারী অঙ্গ ভিজে ওঠে সেই সাথে। কিঞ্চিত উত্তেজনার উদয় হয় মনের ভেতরে, বাথরুমের বন্ধ দরজার দিকে তাকায়, বহুদিন আগে একবার সঙ্গমে রত হয়েছিল রূপকের সাথে সেই শেষ, তারপরে দেবায়ন ছাড়া আর কারো লিঙ্গ ওর যোনির ভেতরে প্রবেশ করেনি। এই নিভৃতে অনুপমাকে একা পেয়ে রূপক যদি কিছু করে বসে তাহলে নিজেকে ভাসিয়ে দেবে সেই সাগরে। চার পাঁচ দিন হয়েছে দেবায়ন গেছে, কিন্তু শরীরের ভেতর যেন খালি হয়ে গেছে।
কিছু পরে স্নান সেরে কোমরে তোয়ালে জড়িয়ে বেড়িয়ে আসে রূপক। পেশিবহুল ছাতি দেখে অনুপমার চোখ চকচক করে ওঠে। দুইজনের চোখে অব্যাক্ত কামনার আভাস কিন্তু কেউ কোন কথা বলে না। পরস্পরের মুখের দিকে কিছুক্ষণ চেয়ে থাকে দুইজনে। অনুপমা নিজের লজ্জা লুকিয়ে বিছানার ওপরে উঠে সাদা চাদরে নিজেকে ঢেকে নেয়। ওই পেশিবহুল ছাতি আর দুই বাহু যেন ওকে প্রচন্ড ভাবে ডাক দেয়। আপনা থেকেই হাত নেমে আসে তলপেটের ওপরে। রূপকের চোখ থেকেথেকে অনুপমার কমনীয় দেহপল্লবের ওপরে ঘুরে বেড়ায়।
কিছুপরে রুম সার্ভিস এসে গ্লাস, কাবাব ইত্যাদি রেখে চলে যায়। রূপক একটা কাউচ টেনে বিছানার পাশে বসে গ্লাসে ড্রিঙ্ক বানায়। সামনের টিভির দিকে মন দিতে চায় অনুপমা।
“এই নে তোর ড্রিঙ্ক, সোডা দিয়েছি আর দেব কিনা একবার চেক করে নে।”
রূপক ওর দিকে গ্লাস বাড়িয়ে দিয়ে বলে।
রূপকের হাত থেকে গ্লাস নেওয়ার সময়ে দুইজনের আঙুল ঠেকে যায় আর রূপকের মনে হয় যেন বিদুতে ছোঁয়া খেয়েছে। অনুপমা ওর হাত থেকে গ্লাস নিয়ে চুপচাপ একটা চুমুক দিয়ে মাথা নাড়িয়ে জানিয়ে দেয় যে একদম ঠিক আছে ড্রিঙ্ক। বেশ কিছুক্ষণ কেউ কোন কথা বলে না। এ যেন একটা ঝড়ের পূর্বাভাসের মতন সারা জগত শান্ত হয়ে গেছে। ঝড় ঠিক কোন দিক থেকে ধেয়ে আসবে ঠিক মতন অনুধাবন করতে পারে না অনুপমা। ওকি গলে পড়বে আগে না রূপক ওর দিকে হাত বাড়াবে, সেই চিন্তায় আর সেই উত্তেজনায় দুই জানু গলতে শুরু করে দেয়।
অনেকক্ষণ পরে নীরবতা কাটানোর জন্য রূপক ওকে জিজ্ঞেস করে, “কি দেখছিস রে?”
অনুপমা চ্যানেল বদলে ন্যাট জিও চালিয়ে বলে, “সাউথ ইন্ডিয়ান গান শুনছিলাম। তোর ভালো না লাগলে এই বন বাদাড়, বাঘ সিংহ দেখতে পারি।”
রূপক হেসে বলে, “সামনে এত সুন্দরী একজন বসে থাকতে ওই সব দেখে কি হবে।”
অনুপমার চোখের মণি ওর চোখের ওপরে স্থির হয়ে যায়, “তুই কি সেই জন্য হুইস্কি এনেছিস?”
রূপক হেসে দেয়, “না রে মেয়ে। আমাকে একটুও বিশ্বাস নেই তোর?”
কাকে বিশ্বাস করবে, নিজেই যে ধরা দিতে চাইছে অনুপমা। তাও মনের ভাব লুকিয়ে বলে, “আজকাল শ্রেয়াকে রোজ দিচ্ছিস নাকি? যে এই কয়দিন না পেয়েই তোর থলে ভরে গেছে?”
রূপক মুখ বেঁকিয়ে উত্তর দেয়, “কোথায় আর হয়। আমার চেয়ে ওর যেন কাজ দশ গুন বেড়ে গেছে। শনি রবিবার যদিও বা একটু বেড়াতে বের হই তাহলে সেই বাইরে বাইরে কাটাতে হয়। একটু একা না পেলে কি আর ঠিক জায়গায় মাল ঢালা যায়?”
অনুপমা বলে, “বিয়ে সেরে ফেলতে অসুবিধে কোথায় তোদের?”
রূপক বলে, “কি যে বলসি না তুই। এখন পর্যন্ত ঠিক ভাবে দাঁড়াতে পারলাম না আর বিয়ে।”
অনুপমা বলে, “কিসের অসুবিধে তোদের?”
লজ্জায় পড়ে যায় রূপক, টাকার কথা কি আর মুখ ফুটে বলবে অনুপমার কাছে, “যদি সত্যি ঠিক ভাবে দেখা যায় তাহলে আমরা সবাই তোর তাকায় খাচ্ছি পড়ছি। আমি জানি না কেননা আমি কোনদিন ব্যালেন্স শীট দেখিনা তাও এই এক বছরে এমন কিছু আয় নিশ্চয় হয়নি যে আমাদের আয়ের টাকা আমরা খাচ্ছি।”
অনুপমা হেসে ফেলে ওর কথা শুনে, “ছাড় না ওই সব কথা। সবাই মিলেই তো কোম্পানি শুরু করেছি, রোদ বৃষ্টি ঝড় বসন্ত, যা হবে একসাথেই কাটাতে হবে তাই না।”
রূপক বলে, “হ্যাঁ সত্যি কথা, কিন্তু শ্রেয়াকে কে বোঝায় সেটা।”
কথা শুনে একটু দ্বিধায় পড়ে যায় অনুপমা, প্রশ্ন করে, “কেন কি হয়েছে শ্রেয়ার?”
রূপক বুঝতে পারে কথাটা বলে ভুল করেছে, ওদের নিজেদের ভেতরের কথা অনুপমাকে জানিয়ে দেওয়া ঠিক হবে না তাই কথা ঘুরিয়ে বলে, “আচ্ছা তুই বলছিলিস যে গত কোয়ার্টারে আয় বেশি হয়েছে। এয়ার বার্লিন এসে গেছে, আর এবারে জারমেনিয়া এয়ারলাইন্স এসে যাবে। কিন্তু আসল ইউরো কবে থেকে আসবে?”
অনুপমা গ্লাসে চুমুক দিয়ে বলে, “সেই সব ঠিক জানিনা, দেবায়ন জানে আর দীপঙ্করদা জানে। ব্যাবসার ব্যাপারে, টাকা পয়সার ব্যাপারে দীপঙ্করদা আর দেবায়ন আলোচনা করে। আমি শুধু ব্যালেন্স সিট দেখি আর একাউন্ট দেখি, তাতেই আমার শান্তি।”
রূপক হেসে বলে, “ছেলেটা একটা বট গাছ, সবার পেছনে বিশাল খুঁটির মতন সবসময়ে আছে। আচ্ছা এই যে মাঝে মাঝে উধাও হয়ে যায়, যায় কোথায়?”
অনুপমা মিচকি হেসে বলে, “বাবার সাথে এদিক ওদিক কাজের জন্য ঘুরতে যায় এই আর কি।”
অনুপমার ধীরে ধীরে চুমুক দেয়, একটা গ্লাস শেষ করতেই বেশ সময় লেগে যায়। ওদিকে রূপকের দুই গ্লাস শেষ, তৃতীয় গ্লাস শুরু করে বিছানার ওপরে উঠে বসে। অনুপমা একটু সরে তফাতে আধাশোয়া হয়ে ওর দিকে দেখে। রূপক বিছানার পেছন দিকে হেলান দিয়ে সামনের দিকে পা ছড়িয়ে বসে পরে। তোয়ালে ফুঁড়ে ঋজু পুরুষাঙ্গ উপরের দিকে একটা ছোটো পাহাড়ের মতন আকার ধারন করেছে ইতিমধ্যে। সেই ছোটো পাহাড়ের দিকে চোখ পড়তেই ঠোঁট চেপে ধরে অনুপমা, জানু ঘষে নিজের তলপেটের শিরশিরানি দমন করতে চেষ্টা চালায়। সুরার নেশা রক্তে লেগে কামনার আগুন ধীরে ধীরে জ্বলতে শুরু করে দিয়েছে ইতিমধ্যে।
রূপক ওর সারা অঙ্গে একবার চোখ বুলিয়ে চোখ টিপে বলে, “কি রে গরম হয়ে গেলি নাকি?”
অনুপমা গ্লাসে চুমুক দিয়ে বলে, “তুই শুতে যাবি না?”
রূপক বলে, “হ্যাঁ যাবো এই গ্লাস শেষ করে নেই তারপরে। তুই আর নিবি না?”
অনুপমা মাথা নাড়িয়ে জানিয়ে দেয় এই একটাই ওর শেষ। ক্লান্তির পরে ঠাণ্ডা জলে স্নান, তারপরে মদের নেশা, ওর শরীর অবশ হয়ে এসেছে ইতিমধ্যে। চোখের সামনে রুপকের ঋজু কাঠামো, চওড়া ছাতি আর পায়ের মাঝে তোয়ালের নিচে দাঁড়িয়ে থাকা পুরুষাঙ্গের দেখা পেয়ে আরও যেন অবশ হয়ে যায় ওর শরীর। স্তনের বৃন্ত দুটো ফুলে উঠেছে তোয়ালের নিচে, দুই পায়ের মাঝে কেমন যেন সুড়সুড়ি করছে।
রূপক ওকে জিজ্ঞেস করে, “এবারে ভাবছি একটা নতুন কিছু করব, মানে এই ওয়েবসাইট ছাড়া অন্য কিছু।”
অনুপমা বলে, “কি প্লান আছে?”
রূপক বলে, “কিছু সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট। জানি না কতটা কি আসবে, কিন্তু নতুন কিছু না হলে সেরকম কিছু অভিজ্ঞতা হচ্ছে না।”
অনুপমা বলে, “ঠিক আছে, একটা রোডম্যাপ তৈরি কর। দেবায়ন এলে, পরের বোর্ড মিটিংয়ে আলোচনা করা যাবে।”
রূপক ওর পাশে সরে এসে বলে, “হ্যাঁ রে তুই কিন্তু বলেছিলিস যে আমাদের শেয়ার বাড়িয়ে দিবি, সেটা মনে আছে তো?”
অনুপমা বলে, “হ্যাঁ বাবা হ্যাঁ, সব মনে আছে। এক বছর হলো না, আর এখুনি শেয়ার নিয়ে পড়ে আছিস।”
নেশা ঘোরে রূপক শেষ পর্যন্ত বলে ফেলে, “শ্রেয়া জানিস, ইদানীং খুব টাকা টাকা নিয়ে মেতে উঠেছে।”
অনুপমা ওর দিকে তাকিয়ে চোখের প্রশ্ন করে। উত্তরে রূপক বলে, “জানিস তো যে শুরু থেকেই বারো পারসেন্টে রাজি ছিল না। অনেক বলে বুঝিয়ে রাজি করিয়েছিলাম। গতবার ফ্রাংকফুর্ট থেকে আসার পরে কাজ শুরু করে নিজে, তারপর থেকে আমার কানের কাছে ঘ্যানর ঘ্যানর শুরু করেছে, দেবায়ন কে বলে শেয়ার বাড়ানোর জন্য। কি করি বলতো?”
অনুপমা ওকে বুঝিয়ে বলে, “দ্যাখ, রূপক, তোদের কাছে কোম্পানির অবস্থা অজানা নেই। পঞ্চাশজন কর্মীর মাইনে দিতে মাসে প্রায় বিশ থেকে ত্রিশ লাখ টাকা লাগে, তার ওপরে অফিসের ভাড়া, ইলেকট্রিক বিল, লাঞ্চের বিল, সব মিলিয়ে প্রতি মাসে পঞ্চাশ লাখ টাকা জলের মতন বেড়িয়ে যায়। আসে কত? কোন মাসে সাত লাখ এলো কি এলো না, শুধু মাত্র লাস্ট কোয়ার্টারে বিশ লাখ এসেছিল। এই কোয়ার্টারে খরচ বেশি। দুই মাসের ব্যাবধানে চারজন লোক জার্মানি গেছে, ওখানে থেকেছে, ওদের খরচ। কোম্পানি শুরু করেছিলাম কুড়ি কোটি দিয়ে, সেই টাকা দিনে দিনে শেষ হয়ে আসছে। একটা মোটা টাকা তুলে রাখা হয়েছিল ভবিষ্যতের জন্য কিন্তু দুই তিন মাস পরে সেই টাকায় হাত দিতে হবে, না হলে মাইনে দিতে পারব না।”
রূপক চিন্তায় পড়ে যায় ওর কথা শুনে, তাই ওকে জিজ্ঞেস করে, “তোর মাথায় খুব টেনশান তাই না?”
অনুপমা চোখ বুজে গ্লাসের শেষ পানীয় টুকু গলায় ঢেলে বলে, “অনেক টেন্সান, একবছরের আগেই বারো কোটি টাকা উধাও হয়ে গেল আর সেখানে আয় হল মোটে তিন কোটি, নেট প্রফিট কিছু নেই। সবাই ভাবে দেবায়ন খালি গায়ে হাওয়া লাগিয়ে ঘুরে বেড়ায় আর মাস শেষ হলে টাকা নেয়। আসলে ওই টাকার খোঁজে ঘুরে বেড়ায় বাবার সাথে, ও যদি বসে যায় তাহলে কাউকে মাইনে পেতে হবে না। এত গুলো লোক আমাদের মুখ চেয়ে বসে, মাঝে মাঝে এই সব চিন্তা করলে রাতে ঘুম আসেনা।”
দেবায়নের কথা আর কোম্পানির কথা বলতে বলতে মন আনমনা হয়ে যায় আর সেই সাথে ক্লান্তিতে চোখ বুজে আসে। গ্লাস নামিয়ে রেখে আড়ামোড়া ভেঙ্গে অনুপমা বলে, “আমার না খুব ক্লান্তি লাগছে।”
Like Reply
পঞ্চবিংশ পর্ব (#04)

রূপক গ্লাস নামিয়ে ওর কাঁধের ওপরে হাত রেখে বলে, “তুই শুয়ে পড়, আমি তোর কাঁধ টিপে দেই।”
অনুপমা হেসে বলে, “শয়তানি করিস না। যা এখান থেকে।”
অনুপমার মনের কোণে মিলনের এক ইচ্ছে জেগে ওঠে সেই সাথে জেগে ওঠে পাপবোধ। রূপকের সাথে সত্যি যদি আজ রাতে সঙ্গম করে তাহলে কি হবে ওর আর দেবায়নের সম্পর্কের? কিন্তু দেবায়ন ওকে ছাড়াও অন্যের সাথে সঙ্গমে লিপ্ত হয়েছে। প্রত্যেক বার অনুপমা ওর ব্যাভিচার মেনে নিয়েছে, কিন্তু দেবায়ন কি ওর এই বিপথ গামিনী হওয়া মেনে নেবে? এক প্রচন্ড দ্বন্দ আন্দোলিত হয় বুকের মাঝে।
রূপক নিজের লিঙ্গের অবস্থা দেখে হেসে ফেলে। সাইড ল্যাম্প নিভিয়ে মৃদু হলদে আলো জ্বালিয়ে দুইজনে পাশাপাশি শুয়ে পড়ে। বিছানায় রূপক শুতেই ওর সারা শরীরে এক অদ্ভুত হিল্লোল বয়ে যায়। অজানা এক ঢেউ আছড়ে পড়ে বুকের ওপরে।
একটু পাশ ফিরে শুতেই অনুপমার বুকের থেকে তোয়ালের গিঁট খুলে যায়, ওর এক স্তন বেড়িয়ে আসে তোয়ালের বাঁধন ছাড়িয়ে। রূপকের দিকে পেছন ফিরে শুয়েছিল তাই রূপক সেই দৃশ্য দেখতে পায়নি। তোয়ালে দুই স্তনের মাঝে কোনোরকমে গুঁজে চোখ বুজে শুয়ে থাকে। মনের এক গভীরে বড় ইচ্ছে করে কেউ ওকে একটু জড়িয়ে ধরে।
অনুপমা ঘাড় ঘুরিয়ে রূপকের দিকে দেখে বলে, “হ্যাঁ রে তুই কি ঘুমিয়ে পড়েছিস?”
রূপক মাথার নিচে হাত রেখে ছাদের দিকে তাকিয়ে কিছু একটা ভাবছিল। অনুপমার কথা শুনে ওর দিকে তাকিয়ে বলে, “কি হয়েছে তোর? ঘুম আসছে না তোর?”
অনুপমা প্রশ্ন করে, “না এমনি, তুই নিজের রুমে গেলি না কেন?”
রূপক ওর দিকে পাশ ফিরে শোয় আর উন্মুক্ত পিঠের ওপরে উষ্ণ শ্বাস অনুভব করতেই বুকের রক্ত ছটফটিয়ে ওঠে। একটু ছোঁয়ার আশা, একটু চুম্বনের আকাঙ্ক্ষা মনের কোণে জেগে ওঠে। রূপক মৃদু হেসে ওকে দুই হাতে জড়িয়ে ধরে পেছন থেকে। অনুপমার নরম মসৃণ পিঠের ত্বকের সাথে রূপকের ছাতির পেশি মিশে যায়। রূপকের বলিষ্ঠ বাহু ওর পেটের ওপরে এসে ওকে নিজের দিকে টেনে ধরে। ঘর্ষণের ফলে নিচের দিক থেকে তোয়ালে উঠে দুই নরম পাছা উন্মুক্ত হয়ে যায়। দুই নরম পাছার খাঁজে রূপকের কঠিন লিঙ্গের চাপ অনুভব করতেই শরীর শিরশির করে ওঠে। রূপকের হাতের থাবা ঠিক ওর স্তনের নিচে ওকে আস্টেপিস্টে জড়িয়ে ধরে থাকে। একাকী শীততাপ নিয়ন্ত্রিত রুমে, দুই নরনারীর শরীর মাঝে কামনার লেলিহান শিখা জ্বলে ওঠে ধীরে ধীরে।
রূপক ওর কানে কানে বলে, “তুই সত্যি বড় মিষ্টি রে অনু। দেবু নিশ্চয় তোকে খুব আদর করে।”
অনুপমা কি বলবে ভেবে পেল না, সত্যি ওর পুচ্চু সোনা কাছে থাকলে ওকে আদরে আদরে ভরিয়ে দেয়।
রূপক ফিসফিস করে বলে, “আমি দৃঢ় কণ্ঠে বলতে পারি যে জার্মানিতে দেবায়ন আর শ্রেয়া খুব মজা করছে।”
অনুপমা ঘাড় ঘুরাতেই রূপকের গালের সাথে ওর গাল থেকে যায়। নরম গোলাপি গালে একটা ছোটো চুমু খেয়ে রূপক বলে, “ওইখানে একা পেয়ে দেবায়ন আমার বউকে যে চুদবে না তার কি গ্যারান্টি আছে? ওইখানে দেবায়ন আমার বৌয়ের খেয়াল রাখছে আর এখানে আমি ওর বউয়ের খেয়াল রাখি।”
রূপকের মুখে সঙ্গমের কথা শুনে অনুপমার যোনি ভিজে যায়। যোনি পথ পিচ্ছিল হয়ে যায়, অজান্তেই জানু জোড়া পরস্পরের সাথে মৃদু ঘষতে শুরু করে।
অনুপমার চোখের তারা রূপকের চোখের ওপরে নিবদ্ধ হয়ে যায় আর মিষ্টি হেসে বলে, “আচ্ছা তাই বুঝি! শ্রেয়া যে ওইখানে যে দেবায়নের সাথে করবে, এটা জানিস কি করে?”
রূপক চোখ টিপে বলে, “যা বাবা, আগুন আর ঘি একসাথে থাকবে আর জ্বলবে না হতেই পারে না। আমি সিওর যে দেবায়ন ওকে চুদবেই চুদবে। এখন যদি ফোন করি তাহলে দেখবি সিওর যে ওরা দুইজনে ওইখানে চোদাচুদি করছে।”
অনুপমা বলে, “আর যদি শ্রেয়া না করতে দেয় তাহলে?”
রূপক একটু ভেবে বলে, “হুম, তাহলে কিছু করার নেই। আমি আর শ্রেয়া অনেকদিন চোদাচুদি করিনি, শ্রেয়া নির্ঘাত গরম হয়ে আছে। দেবায়নকে একা পেয়ে গুদ কেলিয়ে থাকবে দেখিস, তায় আবার বিদেশ গেছে। আমি বুক ঠুকে বলতে পারি যে দেবায়ন আমার বউয়ের ভালো খেয়াল রাখছে।”
অনুপমার বুকের মধ্যে কি যে হয়ে গেল নিজেই জানেনা। রূপকের দিকে মাথা হেলিয়ে চোখ বন্ধ করে দিল। কখন যেন ফিসফিস করে বলে উঠল, “আমাকে একটু জড়িয়ে ধরবি?”
রূপক ওর ঘাড়ের ওপর দিয়েই ওর কানের লতির ঠোঁটের মাঝে নিয়ে চুষে দিল। অনুপমার শ্বাস ফুলে উঠলো সেই চুম্বনে, একটা হাত রূপকের হাতের ওপরে রেখে নিজের স্তনের ওপরে নিয়ে আসে। শেষ পর্যন্ত পিছলে যায় ক্ষুধার্ত কামার্ত ললনা, বহুদিন পরে দয়িত ছেড়ে অন্য এক পুরুষের হাতে নিজেকে ছড়িয়ে দেয়।
কামঘন কণ্ঠে মিহি স্বরে বলে ওঠে কামিনী নারী, “তোর ছোঁয়ায় আজকে হারিয়ে যেতে ইচ্ছে করছে।”
রূপক, অনুপমার ঘাড়ের চুল সরিয়ে দিয়ে ঘাড়ের ওপরে আলতো উষ্ণ শ্বাস বইয়ে দেয়। সেই উষ্ণ শ্বাসে অনুপমার শরীর কেঁপে কেঁপে গেল। অনুপমা চোখ বন্ধ করে সামনের দিকে একটু ঝুঁকে “উম্মম্মম আহহহহ……” করে একটা মিহি আওয়াজ করল। অনুপমার বগলের তলা দিয়ে হাত গলিয়ে তুলতুলে স্তনের পাশের নরম তুলতুলে অংশে আঙুল দিয়ে টিপতে শুরু করে দিল। কঠিন উত্তপ্ত আঙুল পড়তেই মনে হল যেন ওর স্তন জোড়া এখুনি গলে যাবে। রূপকের থাবার মাঝে স্তনের কচি মাংস থরথরিয়ে ওঠে। স্তনের পেষণের ফলে অনুপমার শীৎকার একটু ঘন হয়ে আসে উত্তেজনায়। অনুপমা দুই চোখ বন্ধ করে রূপকের দেহের সাথে নিজেকে মিলিয়ে দিতে তৎপর হয়ে ওঠে। পেছন দিকে পাছা ঠেলে কঠিন লিঙ্গ নিজের পাছার খাঁজের মাঝে চেপে ধরে। রূপক ওর ঘাড়ে, কানের লতিতে, গালে অজস্র চুমু খায়।
চুমু খেতে খেতে বলে, “তুই বড় মিষ্টি রে অনু, তোকে কাছে পাওয়ার ইচ্ছে অনেকদিন থেকেই মনে কোনে ছিল।”
অনুপমা এক হাতে রূপকের মাথা ধরে ওর ঘাড়ের ওপরে নামিয়ে মিহি কণ্ঠে বলে, “আজ রাতে সেই শখ মিটিয়ে নে।”
রূপক, অনুপমাকে জড়িয়ে ধরে চিত করে শুইয়ে দিল। চিত হতে শুতেই অনুপমার তোয়ালে গা থেকে খুলে গেল। রূপকের চওড়া ছাতির নিচে অনুপমার নরম স্তন জোড়া আর পেটের পেশির নিচে ওর তুলতুলে পেট মিশে গেল। শীততাপ নিয়ন্ত্রিত রুম হলেও মনে হল যেন রুমে একটা অগ্নিকুণ্ড জ্বলে উঠেছে। অনুপমা জানু মেলে ধরে আর রূপকের কোমর সেই জানুসন্ধি মাঝে ধসে যায়। নগ্ন কঠিন লিঙ্গ ঘষা খায় নগ্ন যোনি বেদীর ওপরে। রূপক ওর মুখের ওপরে নামিয়ে নিয়ে আসে ওর ঠোঁট, কপাল থেকে চুমু খেতে শুরু করে। অনুপমা দুই হাতে রূপককে জড়িয়ে ধরে সেই কাম মিশ্রিত ঘন সিক্ত চুম্বন উপভোগ করে।
অনুপমা, রূপকের পায়ের ওপরে পা বেঁকিয়ে উঠিয়ে দিয়ে ওর দুই পা চেপে ধরে। রূপকের কোমর ধীরে ধীরে আগুপিছু হতে লাগলো। রূপকের কঠিন লিঙ্গে বারে বারে ঘষে গেল নরম তুলতুলে যোনি বেদীর ওপরে। উত্তপ্ত পুরুষাঙ্গের ছোঁয়া পেয়ে অনুপমার যোনির ভেতর ভিজে ওঠে, নিচের থেকে কোমর উঠিয়ে রূপকের ঘর্ষণের জবাব দেয়। দুই হাতে আস্টেপিস্টে রূপকের পেশীবহুল শরীর জাপটে ধরে। রূপকের পিঠের পেশির ওপরে হাত বুলিয়ে আদর করে মাঝে মাঝে নখের আঁচর কেটে দেয়। সারা শরীর ঘেমে যায় তীব্র কামনার লেলিহান শিখায়। কঠিন ঘর্ষণের ফলে অনুপমার যোনির ভেতরে রাগরসের বন্যা বইতে শুরু করে দেয়। রূপক, অনুপমার মাথার নিচে হাত দিয়ে মাথা তুলে ধরে গলায় চুম্বন খেতে শুরু করে। ফুলে ওঠা শ্বাসের ফলে নরম স্তন জোড়া রূপকের ছাতির সাথে মিশে যায়। অনুপমার চিবুক, গলা স্তনের উপরি ভাগে জিবের ডগা দিয়ে ছোটো ছোটো গোলাকার লালার দাগ কেটে দেয়।
ধীরে ধীরে রূপকের মুখ নেমে আসে অনুপমার দুই পীনোন্নত স্তনের ওপরে। উত্তেজনার ফলে দুই স্তন বৃন্ত ফুলে শক্ত হয়ে ওঠে। দুই স্তনের দুই পাশে হাত দিয়ে চেপে, স্তনের মাঝে মুখ ডুবিয়ে চুমু খায়। অনুপমা ওর মাথা বুকের সাথে চেপে ধরে সেই ভিজে উষ্ণ ঠোঁটের চুম্বন গভীর করে তোলে।
ঘাড় পেছন দিকে বেঁকিয়ে, বুক উঁচু করে এক উষ্ণ শীৎকার দেয়, “উফফফফ…… কি আরাম লাগছে রে… খেয়ে নে আমার মাই জোড়া!”
রূপক একটা স্তন হাতের মধ্যে নিয়ে টিপতে শুরু করে দেয় আর স্তন মুখের মধ্যে পুরে চুষতে শুরু করে দেয়। চরম কামনার উত্তেজনায় অনুপমা, “উম্মম্মম্মম্মম্মম…… আআআআআআআআ……” করে শীৎকার করা শুরু করে দেয়।
অনুপমার স্তন জোড়া বরাবর বাকি অংশ থেকে বেশি সংবেদন শীল। স্তনে হাত পড়তেই অনুপমা ছটফটিয়ে যায় আর দেবায়ন সেটা ভালো ভাবেই জানে বলে ওর স্তন নিয়ে বেশি খেলা করে। রূপকের কাছ থেকে ঠিক সেটাই চায় অনুপমা, তাই ওর মাথা ধরে জোরে জোরে স্তনের ওপরে ডলে দেয় আর শীৎকার করে, “উম্মম্মম্ম রূপক, তুই আমার বুকের বোঁটা ছিঁড়ে ফেল…… চিবিয়ে পিষে একাকার করে দে আমার মাই জোড়া। আজ রাতে আমার সবকিছু তোর আহহহহহহ, তোর নিচে শুয়ে চোখে সর্ষে ফুল দেখছি রূপক, ইসসসসসসসস…… আআহহহহহহহহহাআআআআআআ…… উম্মম্মম্মম…… খা খা খা…… আমার মাইয়ের বোঁটা ছিঁড়ে দে!”
এই আহ্বানের ডাকে রূপকের লিঙ্গ আরও ফুলে ওঠে, ওর কোমরের ধাক্কা আরও বেড়ে যায়, কিন্তু শিক্ত উত্তেজিত কামিনীকে বেশি করে উত্তেজিত করার জন্য পুরুষাঙ্গ যোনির ভেতরে ঢুকায় না, শুধু মাত্র যোনি চেরার ওপরে ডলতে থাকে। তার ফলে যোনি রসে রূপকের লিঙ্গ ভিজে ওঠে আর অনুপমার যোনি পাপড়ি রূপকের উত্তপ লিঙ্গ গিলে খাওয়ার জন্য হাঁসফাঁস করে।
অনুপমার স্তন জোড়া টিপতে টিপতে মুখ নিচের দিকে নামিয়ে আনে। অনুপমা ওর পিঠের ওপরে হাত বুলিয়ে, মাথার চুলে বিলি কেটে আদর করে ওর নিচে জানু মেলে শুয়ে থাকে। রূপকের ঠোঁট, মধ্যচ্ছদা বেয়ে, তুলতুলে নরম পেটের ওপরে চলে আসে। উত্তেজনায় অনুপমার নরম পেত ভেতরে ঢুকে যায়, শরীর টানটান হয়ে যায়। মাথা উঠিয়ে রূপকের দিকে তাকিয়ে দেখে।
রূপক ওর চোখের ওপরে চোখ রেখে একটু হেসে বলে, “কেমন লাগছে অনু?”
অনুপমা তখন কথা বলার শক্তি হারিয়ে ফেলে, ঠোঁট কামড়ে মিহি কামঘন কণ্ঠে বলে, “তুই পাগল করে দিলি রে।”
চুম্বনে, ঘর্ষণে, দলনে, পেষণে অনুপমার শরীরের রোমকূপ খাড়া হয়ে গেছে। জিবের ডগা দিয়ে নাভির ভেতর চেটে দিতেই, অনুপমা শিউরে ওঠে, যেন কোন এক উষ্ণ হাওয়ায় ওর শরীর বয়ে চলেছে এক অজানার পানে।
অনুপমা তীব্র শীৎকার করে ওঠে, “ওরে একি করছিস তুই, আমি পাগল হয়ে যাবো রে রুপক।”
 
ওর কাঁপুনি দেখে রূপক আরও উত্তেজিত হয়ে ওঠে আর বেশি করে নাভিতে চুমু খেতে শুরু করে দেয়। সেই সাথে নরম স্তন জোড়া হাতের মাঝে নিয়ে পিষে নিংড়ে সমতল করে দেয়।
অনুপমা কাতর কণ্ঠে ডাক দেয়, “ওরে রূপক কিছু কর প্লিস, না হলে আমি পাগল হয়ে যাবো।”
রূপকের লিঙ্গের পরশে অনুপমার যোনির ভেতরে বন্যা বয়ে যায়। নাভি ছেড়ে রূপক, অনুপমার মেলে ধরা জানুমাঝে মুখ নামিয়ে নেয়। শিক্ত নরম যোনি পাপড়ির ওপরে উষ্ণ শ্বাসের বন্যায় কামপাগল হয়ে যায় অনুপমা।
অনুপমার ফোলা নরম ফর্সা যোনিদেশ দেখে রূপক সম্মোহিতের মতন বলে, “ওরে অনু ডারলিং তোর গুদ কি সুন্দর দেখতে। এত সুন্দর করে তুই ট্রিম করেছিস মনে হচ্ছে যেন বাগান সাজিয়ে রেখেছিস। তোর গুদের রসে ভিজে গেছে তোর ট্রিম করা পিউবিক চুল আর রেশমি কালো চুল গুলো চকচক করছে। তোর অনেক রস বেড়িয়েছে রে, ডারলিং। তোর গুদের মিষ্টি ঝাঁঝালো গন্ধে পাগল হয়ে গেছি। তুই সত্যি অনুপমা, অতুলনীয়, রসালো, তুই সত্যি কত সুন্দরী আর কত রসালো।”
রূপকের উত্তপ্ত হাতের তালু মেলে নরম থাইয়ের ভেতরে রেখে থাই জোড়া মেলে ধরে যোনি চেরা বরাবর নিচ থেকে উপর দিকে চাটতে শুরু করে দেয়। গরম ভেজা জিভের পরশে, অনুপমার শরীর বেঁকে যায়, দুই হাতে বালিশ খামচে ধরে সেই তীব্র লেহনের সম্পূর্ণ আনন্দ উপভোগ করে।
কিছুপরে অনুপমার যোনি থেকে মুখ উঠিয়ে অনুপমার দিকে তাকায়। চরম আবেগে অনুপমার চেহারা লাল হয়ে গেছে। চরম পেষণে, দলনে অনুপমার বুক জোড়া, নরম পেট লাল হয়ে গেছে। নাভির চারপাশে দাঁতের দাগ ফুটে উঠেছে, স্তনের ওপরে কামড়ের লাল লাল ছোপ ছোপ দাগ ফুটে উঠেছে। আবার যোনি চেরা চাটতে চাটতে ওর নরম থাইয়ের ওপরে আঙুল বুলিয়ে আঁচড় কেটে দেয়।
অনুপমার ফোলা নরম যোনি খাবি খাওয়া মাছের মতন ধুকধুক করে রূপকের চোখের সামনে। যোনির চেরা থেকে দুটো পাপড়ি একটুখানি বেড়িয়ে এসেছে। দেখেই বোঝা যায় যে দেবায়ন বেশ আয়েশ করে এই যোনি ভেতরে আরামে লিঙ্গ সঞ্চালন করেছে। যোনি পাপড়ি জোড়া রসে ভিজে চকচক করছে।
অনুপমা বারেবারে ডেকে ওঠে, “উফফফফফ……… আহহহহহহহহহ……… উম্মম্মম্মম্মম তোর জিভ কি ভালো লাগছে রে।”
ওর মিষ্টি মধুর শীৎকারে রাত বেশি করে কাম ঘন হয়ে ওঠে।
অনুপমা, কামের তাড়নায় উন্মাদ হয়ে কাটা ছাগলের মতন কাতরাতে শুরু করে দেয়। রূপক অনুপমার ভগাঙ্কুরে জিব ঠেকানো মাত্রই কাম কাতর কামিনী শিরশিরিয়ে ওঠে। প্রচণ্ড ভাবে কেঁপে ওঠে কমনীয় দেহপল্লব। সেই সাথে তীব্র হয়ে ওঠে ওর কামনার শীৎকার। অনুপমা এক হাতে রূপকের মাথার চুল আঁকড়ে ধরে যোনির ওপরে চেপে ধরে ওর মাথা।
সেই সাথে লাস্যময়ী অনুপমা বাতাস কাঁপিয়ে শীৎকারে শীৎকারে রুম ভরিয়ে তোলে “উম্মম্মম…… রূপক খুব ভালো লাগছে…… আআহহহহহহহ চাট চাট আরও চাট আমার ক্লিট ভালো করে চেটে দে। হ্যাঁ আমার ক্লিট ভালো করে চেটে দে…… একটু জিভের ডগা দিয়ে নাড়া…… ওফফফফফ…… আমি পাগল হয়ে যাবো আজকে মনে হচ্ছে…… হ্যাঁ হ্যাঁ…… আমাকে মেরে ফেলবি মনে হচ্ছে……”
এর পরে যোনির মধ্যে আঙুল ঢুকিয়ে ঝড় তুলে দিল রূপক। সঙ্গে সঙ্গে অনুপমার শরীর বেঁকে গেল। কুনুইয়ে ভর দিয়ে অনুপমা উপরের শরীর নরম বিছানা ছেড়ে উপরে উঠে গেল, মাথা পেছন দিকে বেঁকে গেল। পেট ভেতরে সেঁধিয়ে গেল, শরীর শক্ত হয়ে গেল। যোনি পেশি গুলো, রূপকের আঙুল কামড়ে ধরল, মনে হল যেন ওর শরীরে কেউ শত সহস্র কাঠ পিঁপড়ে ছেড়ে দিয়েছে।
অনুপমার শরীরে রক্ত যেন ফুটতে শুরু করে দেয়, বন্ধ চিখের পেছনে লাল নীল হলদে আলো দেখতে পায়। বেশকিছু পরে অনুপমার শরীর ধরাম করে নরম বিছানার ওপরে পরে যায়। রূপকের মাথা দুই হাতে চেপে ধরে কাঁধের ওপরে দুই পা উঠিয়ে, যোনির সাথে রূপকের মাথা মিশিয়ে দিতে তৎপর হয়ে ওঠে। রূপকের হাত অনুপমার স্তনের ওপরে নিয়ে গিয়ে ভালো করে কচলাতে শুরু করে।
অনুপমা, রূপকের মাথার চুল আঁকড়ে ধরে ডাক ছাড়ে, “ওহহহহহহ আমার হয়ে যাবে…… আমার আসবে রে। আমাকে চেপে ধর প্লিস…… আমি উড়ে যাচ্ছি রে…… উফফফফফফফফফফ…………”
অনুপমার লাস্যময়ী কমনীয় দেহ বার কয়েক ভীষণ ঝাঁকুনি দিয়ে টানটান হয়ে যায়। রূপক ওর যোনির ওপরে ঠোঁট চেপে ওর রাগ রস চোঁচোঁ করে চুষে নেয়। যোনি গহ্বর ভাসিয়ে, বন্যার জলের মতন রস ঝরতে শুরু করে দেয়, আঠালো, ঝাঁঝালো রঙহীন মধুতে রূপকের মুখ ঠোঁট চিবুক ভেসে যায়।
রাগরস স্খলন করার পরে অনুপমার দুই পা শিথিল হয়ে আসে। কামক্লান্ত অনুপমার কমনীয় দেহপল্লব এলিয়ে যায় নরম বিছানায়। অনুপমার দুই নরম পীনোন্নত স্তন জোড়া শ্বাসের ফলে ঢেউয়ের মতন ওঠানামা করে। সারা শরীরে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমে ওঠে। রুমের হলদে আলোয় অনুপমার কমনীয় লাস্যময়ী শরীর আরও সুন্দরী দেখায়। ওর চোখ আধা খোলা, ঠোঁট জোড়া অল্প খোলা, সারা শরীরে সারা চেহারায় এক অনাবিল পরিতৃপ্তির হাসি আর আলোকছটা।
রূপক অনুপমার বুকের ওপরে শুয়ে ওকে জড়িয়ে ধরে। দুই উত্তপ্ত শরীর ঘেমে নেয়ে, ত্বকের সাথে ত্বক মিশে যায়।
রূপক ওর আধা খোলা চোখের ওপরে চোখ রেখে জিজ্ঞেস করে, “কেমন লাগলো ডার্লিং?”
অনুপমা ওর গলা জড়িয়ে নাকের সাথে নাকের ডগা ঘষে জিজ্ঞেস করে, “শ্রেয়ার সাথে এই ভাবে চাটাচাটি করিস বুঝি?”
রূপক হেসে ফেলে, “হ্যাঁ করি, সময় পেলেই করি। ওর গুদে এক ফোঁটাও বাল নেই, কিন্তু তোর গুদ দেখতে আরও সুন্দর।”
অনুপমা দুই পা মেলে ধরে, রূপকের কঠিন লিঙ্গ যোনি চেরা বরাবর চেপে থাকে। অনুপমার নরম মসৃণ ত্বকের সাথে রূপকের ঘর্মাক্ত ত্বক মিশে যায় আঠার মতন। দুই নরনারীর শরীরের ঘাম মিলে মিশে একাকার হয়ে যায়। রুপকের ছাতির পেশির নিচে অনুপমার দুই নরম গোল স্তন চাপা পরে চেপটে যায়। নুড়ি পাথরের মতন গরম আর শক্ত স্তন বৃন্ত রূপকের উত্তপ্ত ছাতির ভারে চেপটে গেল। দুই কঠিন বাহু মাঝে ঘন আলিঙ্গনে লাস্যময়ী রমণীকে বেঁধে ফেলে। চার হাতে পায়ে সাপের মতন পরস্পরকে জড়িয়ে ধরে দুইজনে।
অনুপমার নরম গোলাপি ঠোঁট রূপকের ঠোঁটের সাথে মিশে যায়। দুই চোখ বন্ধ করে সেই কাম ঘন চুম্বনের আনন্দ উপভোগ করে অনুপমার। জিবের বের করে রূপকের জিভের সাথে খেলা করতে করতে, ওর মুখের ভেতর থেকে নিজের যোনিরসের স্বাদ নেই। চুম্বনের সাথে নিজের যোনি রসের স্বাদ নিতে ওর বরাবর ভালো লাগে, ওই স্বাদ ওর শরীরের সবসময়ে এক অন্য রকমের শিহরণ জাগায়।
অনুপমা চোখ মেলে রূপকের মুখ আঁজলা করে ধরে কাম ঘন কণ্ঠে আব্দার করে, “তোরটা অনেক ক্ষণ থেকে আমাকে জ্বালাতন করছে, এবারে ঢুকিয়ে আমাকে প্লিস শান্ত কর।”
রূপকের কঠিন বাঁশের মতন লিঙ্গ অনুপমার যোনি চেরা বরাবর চেপে রয়েছে। রাগরসে লিঙ্গের চামড়া ভিজে গেছে। দুই জানু দুই দিকে মেলে দেয় অনুপমা। রূপক, কোমর নাড়িয়ে যোনিপথ বরাবর লিঙ্গের মাথা চেপে ধরে। শিক্ত যোনির পাপড়ি চকচকে লিঙ্গের মাথায় চুমু খেয়ে যায়। সেই পরশে, সেই আবেশে চোখ বুজে আসে অনুপমার।
অনুপমার মুখের দিকে তাকিয়ে রূপক জিজ্ঞেস করে, “এবারে ঢুকাই?”
অনুপমা ওর গালের ওপরে আদর করে একটা চাটি মেরে বলে, “শালা কুকুর, এত কিছু করার পরে আবার ন্যাকা চোদার মতন বলিস ঢুকাই?”
রূপক হেসে আব্দার করে বলে, “তুই নিজেই ঢুকিয়ে নে তাহলে।”
অনুপমা নিচের ঠোঁট কামড়ে মৃদু হেসে বলে, “তুই একটা কুত্তা!”
মিলিত দেহের মাঝে হাত ঢুকিয়ে রুপকের লিঙ্গ মুঠি করে ধরে নেয়। গরম কঠিন লিঙ্গ নরম হাতের তালুর মাঝে চাপা খেয়ে অনুপমা আরও কাম পাগল হয়ে ওঠে। ইচ্ছে করে রূপককে উত্যক্ত করার জন্য, লিঙ্গ মুঠি করে ধরে একটু উপর নিচ নাড়িয়ে যোনি চেরা বরাবর লিঙ্গের মাথা ঘষে দেয়। রূপক, অনুপমাকে জড়িয়ে ধরে কেঁপে ওঠে। ওর চোখের তারা, অনুপমার চোখের তারার ওপরে নিবদ্ধ হয়ে যায়। রূপক কোমর উঁচিয়ে যোনিপথ বরাবর নিজের লিঙ্গ নামিয়ে আনে। ধীরে ধীরে একটু একটু করে লিঙ্গের অধিকাংশ যোনি মন্দিরে ঢুকতে শুরু করে দেয়। ঠোঁট কামড়ে, যোনি পেশি শক্ত করে রূপকের কঠিন উত্তপ্ত পুরুষাঙ্গ নিজের মধ্যে আহ্বান করে নেয়। ওর মনে হয় যেন একের পর এক দেয়াল ভেদ করে এক গরম শলাকা ওর মধ্যে সেঁধিয়ে যাচ্ছে।
বেশ কিছুটা ঢুকতেই অনুপমা চোখ চেপে বন্ধ করে ঠোঁট কামড়ে একটা “উফফফফফফফ” করে শব্দ করে। যদিও মনে হয়, দেবায়নের চেয়ে আকারে একটু শীর্ণ তাও যোনির ভেতরে বহুদিন পরে এক ভিন্ন লিঙ্গের প্রবেশে, কেঁপে ওঠে অনুপমা।
রূপক অনুপমাকে দুই হাতে জড়িয়ে ধরে, বিছানার সাথে মিশিয়ে যোনি মন্থন করতে শুরু করে। নর নারীর আদিম কামনার খেলায় মেতে ওঠে দুইজনে। গোঙ্গানি আর মিহি কণ্ঠের শীৎকারে ঘর ভরে ওঠে। অনুপমা দুই হাতে রূপকের দেহ জড়িয়ে ধরে, ওর দুই পা রূপকের পায়ের ওপরে তুলে দিয়ে পেঁচিয়ে দেয়। প্রতি ধাক্কার সাথে সাথে অনুপমা নিচের থেকে কোমর উঁচিয়ে, যোনির ভেতরে রূপকের লিঙ্গ ঢুকিয়ে নেয় আর তালে তাল দেয়। ধীরে ধীরে রূপকের মন্থনের তাল গতি নেয়। অনুপমা, দুই হাতে দশ আঙ্গুলে রুপকের পাছার খামচে ধরে, আর প্রতি নিচের ধাক্কার সাথে সাথে, ওর পাছা ধরে লিঙ্গে নিজের মধ্যে টেনে নেয়। অনুপমার সারা শরীর সারা শরীর দুলতে লাগলো সঙ্গমের তালে তালে। অনুপমার নরম পিচ্ছিল যোনি গহ্বরের মধ্যে রূপকের কঠিন গরম লিঙ্গ চরম গতিতে ঢুকছে আর বের হচ্ছে। অনুপমার যোনি রসে ভরে উঠে জবজব করে। রুমের দেয়ালে শরীরের মিলিত শব্দ প্রতিধ্বনি হয়। অনুপমার কানের ভেতর থেকে যেন আগুনের হল্কা নির্গত হয়, চরম উত্তেজনায় উন্মাদ হয়ে ওঠে। শরীরের প্রতিটি ধমনী তীর বেগে রক্ত সঞ্চালন করে চলে, সারা শরীরে এক অদ্ভুত অনুভূতি ভর করে। তীব্র কামনার যৌন সঙ্গমের আগুনে ঝলসে, অনুপমা যেন আরো মিষ্টি আর মধুর হয়ে ওঠে। রূপককে জড়িয়ে ধরে ওর ঘাড়ে গলায় চুম্বনে চুম্বনে ভরিয়ে দেয় আর দুইজনের ঠোঁট বারেবারে মিশে যায়। অনুপমা বুঝতে পারে যে রূপকের লিঙ্গ কাঁপতে শুরু করেছে যোনির ভেতরে, সেই সাথে অনুপমার তলপেট কুঁচকে যায়, চরম মুহূর্তের আগের সময়ের খিঁচ ধরে আসে তলপেটে। পর পুরুষের সাথে অবৈধ কাম খেলা ওকে আরও বেশি করে উত্তেজিত করে তোলে। রূপক, অনুপমার শরীর বিছানার সাথে চেপে ধরে এক প্রবল ধাক্কায় সম্পূর্ণ লিঙ্গ শিক্ত পিচ্ছিল যোনির মধ্যে আমূল ঢুকিয়ে দিয়ে থরথর করে কেঁপে ওঠে।
রূপক ওর কানে কানে বলে, “ডার্লিং, আমার মাল বের হবে। বাইরে ফেলব না ভেতরে?”
অনুপমা তখন চরম কামনার তুঙ্গে, ভালো মন্দ বাছ বিচারের বালাই ওর মনের ভেতরে থাকে না। দুই জানুতে খিঁচ ধরে যায়, পায়ের পাতা জোড়া টানটান হয়ে যায়। রূপককে দুই হাতে জড়িয়ে, ওর পাছার পেছনে গোড়ালি একত্রিত করে নিজের মধ্যে ওকে টেনে ধরে।
রূপকের ঋজু কাঠামো দুই হাতে আস্টেপিস্টে জড়িয়ে ধরে কম্পিত কামঘন কণ্ঠে বলে, “উম্মম্মম্ম… প্লিস কথা না বাড়িয়ে ভেতরে ফেল, আমি পিল খেয়ে নেব।”
শরীরের সর্ব শক্তি যেন যোনি পেশির ওপরে ভর করে যায়। যোনির শিক্ত কোমল দেয়াল দিয়ে কঠিন লিঙ্গ কামড়ে ধরে। চাপা আঁটো কামড় খেয়ে রূপকের লিঙ্গ ছটফট করতে শুরু করে দেয়। রূপক ওকে নরম বিছানার সাথে চেপে ধরে কানের লতিতে চুমু খায়, তারপরে গালের ওপরে ঠোঁট চেপে উষ্ণ শ্বাসে স্নান করিয়ে দেয়।
অনুপমা বুঝতে পারল যে ওর শরীর আর ওর নেই, শুন্যে ভাসছে ওর দেহ। অনুপমা এক দীর্ঘ শীৎকারে থরথর করে কেঁপে উঠে শান্ত হয়ে যায়। দুইজনে একসাথে কামরস আর রাগরস স্খলন করে জড়াজড়ি করে শুয়ে থাকে। কারুর নড়া চড়ার শক্তি থাকে না। এক অদ্ভুত অনুভূতি শরীর মন ভাসিয়ে নিয়ে যায়।
 
Like Reply
পঞ্চবিংশ পর্ব (#05)

 
বেশ কিছুক্ষণ জড়াজড়ি করে শুয়ে থাকার পরে, রূপক ওকে ছেড়ে দিয়ে পাশে শুয়ে পরে। অনুপমা হাত পা ছড়িয়ে বেশ কিছুক্ষণ চরম আবেগের অনুভূতি গায়ে মাখিয়ে নেয়, তারপরে গায়ের ওপরে চাদর ঢেকে রূপকের দিকে মুখ করে শোয়। দুইজনে পাশাপাশি শুয়ে পরস্পরের চোখের দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসে। অনুপমার সারা চেহারায় চরম পরিতৃপ্তির আলোক ছটা, সেই সাথে রূপকের ঠোঁটে পরিতৃপ্তির হাসি। অনুপমা জানু মাঝে, যোনির মধ্যে আঙুল ঢুকিয়ে দুই নরনারীর মিশ্রিত তরল একটু বের করে রূপকের গালে লাগিয়ে দেয়।
রূপক হেসে উঠে বলে, “এই কুত্তা কি করছিস?”
অনুপমা খিল খিল করে হেসে বলে, “কেন রে কুত্তা, আমার ওইখানে চাটার সময়ে বেশ মন দিয়ে চাটছিলিস, এখন কেন ঘেন্না লাগছে রে তোর? আমাকে একা পেয়ে শেষ পর্যন্ত করেই ফেললি বল।”
অনুপমাকে জড়িয়ে ওর গালে চুমু খেয়ে বলে, “উম্মম্ম ডারলিং, এই রকম একটা সেক্সি বান্ধবী থাকলে কেউ কি আর দুরে থাকতে পারে? অনেকদিনের ইচ্ছে তোকে ভালো করে আদর করার, সেটা অবশেষে পূরণ হল।”
তারপরে চোখ বড়বড় করে বলে, “একবার দেবায়নকে ফোন করলে কেমন হয়।”
ভুরু কুঁচকে হেসে ফেলে অনুপমা, “ধ্যাত, কেউ জানে না আমরা জলপাইগুড়ি এসেছি। আর পুচ্চু যদি জানতে পারে যে তুই আমাকে একা পেয়ে লাগিয়ে দিয়েছিস তাহলে তোকে আর আস্ত রাখবে না।”
রূপক ওর দিকে হাত বাড়িয়ে অনুপমার হাত মুঠির মধ্যে নিয়ে বলে, “জার্মানিতে দেবু আমার বউকে লাগাতে পারে তাহলে আমি কেন ওর বউকে লাগাতে পারবো না? ওর সামনেই তোকে একদিন আবার লাগাবো দেখিস।”
অনুপমা ওর গালের ওপরে চাটি মেরে বলে, “চার জন একসাথে থাকলে ভালো। নে, এবারে একটু রেস্ট নে। কাল ভোরের ফ্লাইটে বাড়ি ফিরতে হবে। আর হ্যাঁ, একটা কথা মনে রাখিস, আমরা জলপাইগুড়ি কি কারনে এসেছি কেউ যেন ঘুণাক্ষরে না জানতে পারে।”
রূপক প্রশ্ন করে, “দেবায়ন কেও বলবি না?”
অনুপমা হেসে বলে, “সময় মতন ওকে আমি সব জানাবো চিন্তা নেই।”
রূপক অনুপমার গাল টিপে হেসে বলে, “উম্মম সোনামণি, তুই আমার খেয়াল রাখিস আমি তোর খেয়াল রাখব।”
জেনে বুঝেও অনুপমা প্রশ্ন করে, “তুই আমার কি খেয়াল রাখবি?”
রূপক ওর জানুমাঝে হাত দিয়ে যোনি বেদি চেপে ধরে বলে, “আমি তোর এখানের চুলকানির খেয়াল রাখব আর তুই আমার টাকার দিকে একটু খেয়াল রাখিস।”
অনুপমা তির্যক হেসে জবাব দেয়, “আমার চুলকানির কথা অত ভাবতে হবে না তোকে, তবে তোর এপ্রেসালের বিষয়ে দেবায়নের সাথে আলোচনা করব।”
শুধু মাত্র শারীরিক সুখের তাড়নায় অত সহজে বয়ে যাওয়ার পাত্রী নয় অনুপমা। শুধু মাত্র শারীরিক আনন্দের জন্য রূপকের সাথে সঙ্গমে লিপ্ত হয়েছিল, এই শরীরকে ব্যাবসা করতে নয়। অনুপমা পাশ ফিরে চুপচাপ চোখ বুজে পড়ে থাকে। সেই রাতে ওর আর ঘুম আসে না। কাম তাড়নায় সত্যি সত্যি রূপকের সাথে সঙ্গম শেষ পর্যন্ত করেই ফেলল। বুকের মধ্যে জেগে ওঠে কুণ্ঠাবোধ।
মাঝরাতে বিছানা ছেড়ে উঠে পাশ ফিরে দেখে, রূপক বেহুঁশের মতন পড়ে রয়েছে। চুপচাপ বাথরুমে ঢুকে নিজেকে আয়নায় দেখে। দুই ফর্সা স্তনের ওপরে আঙ্গুলের দাগ, বৃন্ত দুটোর চারপাশে দাঁতের আলতো দাগ। যোনি কেশ ওদের শরীরের মিশ্রিত তরলে ভিজে চ্যাটপ্যাট করছে। পেটের ওপরে নাভির চারপাশে খুব চুমু খেয়েছিল, সেই খানে একটু লালচে ছোপ পড়েছে। দুই মসৃণ ফর্সা জানুর ভেতরের ত্বকে নখের আলতো দাগ কাটা। সব মিলিয়ে অনুপমা নিজের শরীর দেখে চমকে যায়। ফোন নিয়ে বাথরুমের মেঝেতে বসে পড়ে, ফোন করবে কি করবে না ভাবতে থাকে। এই সময়ে কি ফোন পাবে ওর? বড় দোটানায় পড়ে যায় ওর হৃদয়।
পরের দিন ভোরের ফ্লাইট ধরে কোলকাতা ফিরে আসে দুইজনে। দুই বাড়ির কেউ জানতে পারল না জলপাইগুড়ি যাত্রার আসল কারন। পরের দিন থেকে অফিসে, অনুপমা আর রূপক স্বাভাবিক ভাবেই পরস্পরের সাথে ব্যাবহার করে। ওরা দুইজনে ছাড়া বাকি কেউ জানতে পারল না ওদের মধ্যে কি কি হয়ে গেছে। মাঝে মাঝে একা পেলে রূপক একটু রসিকতা করতে চেষ্টা করে সেই রাতের বিষয়ে, কিন্তু অনুপমা সেইসব আলোচনা এড়িয়ে যায়।
দুই দিন পরে জার্মানি থেকে দেবায়ন ফিরে আসে। ফিরে আসার পরে শ্রেয়ার চাল চলন বদলে যায়, পরপর দুটো ডিলে সাক্ষর করার পরে নিজেকে অনেক বড় মনে করে নেয়। দেবায়ন মনে মনে হাসে কিন্তু কিছু বলে না। ওদের ফিরে আসার কিছুদিন পরে, জার্মানি থেকে দুই এয়ারলাইন্স কোম্পানির আইটি টিম ওদের অফিস, কাজ, ইত্যাদি তদারকি করতে ভারতে আসে। সুপর্ণা ম্যাডাম আর তাঁর টিম কাজের মধ্যে ডুবে যায়। আগামী তিন মাসের মধ্যে এয়ার বার্লিনের প্রোজেক্ট ডেলিভারি করতে হবে আর বছরের শেষে জারমেনিয়া এয়ারলাইন্সের প্রোজেক্ট সারা অফিসে সাজসাজ রব। কিছু দিনের মধ্যেই অফিস রণক্ষেত্রে পরিনত হয়, প্রোজেক্ট ডেলিভারি যেন ওদের কাছে এক যুদ্ধের সাজ। অফিসের বেশির ভাগ লোক ওই দুই প্রোজেক্টে নিযুক্ত করা হয়।
যতবার ভাবে দেবায়নকে সব খুলে বলে দেবে, কিন্তু বলতে গেলেই মনে হত যেন ওর গলা শুকিয়ে এসেছে তাই সেই রাতের কথা দেবায়নকে আর জানানো হয়নি। এইবারে দেবায়ন অনুপমা আর রূপকের হাবভাবে সন্দেহ প্রকাশ করতে পারে না। রূপক মাঝে মাঝে অনুপমার দিকে হাতছানি দেয় কিন্তু অনুপমা সেই হাতছানিতে অত সহজে বয়ে যাওয়ার পাত্রী নয়। রূপক বুঝতে পারে, যে অনুপমা একজন লেলিহান অগ্নিশিখা, দূর থেকে আগুনের তাপ পোহানো ভালো, কাছে এলে হাত পুড়ে যেতে বেশি দেরি লাগবে না।
একদিন দুপুরে লাঞ্চের সময়ে ক্যাফেটেরিয়াতে দেবায়নকে না দেখতে পেয়ে ওর কেবিনে যায় অনুপমা। দরজা ঠেলে ঢুকে দেখে যে দেবায়ন কারুর সাথে ফোনে কথা বলছে। কথা বার্তা শুনে মনে হল ওর বাবার সাথেই কথা বলছে। অনুপমাকে দেখে ফোনে একটা কথা বলে রেখে দেয় দেবায়ন। দেবায়নের মুখের দিকে তাকিয়ে দেখে, চোখ লাল, মাথার চুল উস্কোখুস্কো, চেহারা দেখে মনে হল বেশ চিন্তামগ্ন।
অনুপমা ওকে প্রশ্ন করে, “কি হয়েছে রে? কোন অসুবিধে?”
দেবায়ন ওর প্রশ্ন এড়িয়ে হেসে জবাব দেয়, “তারপরে তোর কি খবর? কেমন চলছে কাজ?”
ওর প্রশ্ন শুনে অনুপমা অবাক হয়ে যায়। রোজ দিন ছেলেটা অফিসে আসে তাও কি জানেনা যে অফিসে কি হচ্ছে? ওকে পালটে প্রশ্ন করে, “তুই নিজেই দেখতে পারিস তো কাজের কি হচ্ছে। তুই দেখিস না কেন?”
দেবায়ন বলে, “আরে বাবা, তুই আছিস দেখার জন্য সেই জন্য ওইদিকে আর মাথা ঘামাতে চাই না।”
অনুপমা বলে, “কি ব্যাপার বলতো, একটু ঝেড়ে কাশ। ওই রকম ঝড়ো কাকের মত কেন দেখাচ্ছে তোকে?”
দেবায়ন বড় শ্বাস নিয়ে জবাব দেয়, “আমাকে কিছুদিন পরে বের হতে হবে। পুনে, উটি আর ব্যাঙ্গালোর। গতবার কাকুর যাওয়াতে ঠিক ভাবে হোটেলের ডিল হয়নি।”
অনুপমার মন কিছুতেই মানতে চায় না, এই কয়েক সপ্তাহ হল জার্মানি থেকে ফিরেছে। আসার পর থেকে ঠিক ভাবে দুইজনে একসাথে বসতে পারেনি, একটু আদর খেতে পারেনি, বুকে জড়িয়ে ধরতে পারেনি। এর মধ্যেই আবার যাওয়ার কথা শুনে মন খারাপ হয়ে যায় অনুপমার। দুই চোখ ছলছল করে ওঠে এক অব্যাক্ত বেদনায়। সত্যি, টাকা উপার্জনের দৌড়ে নিজের প্রেম প্রীতি ভালোবাসা হারাতে বসেছে।
অনুপমা উঠে ওকে জড়িয়ে ধরে বলে, “আমি যেতে দেব না এবারে।”
ছলছল চোখ দেখে দেবায়নের মন গলে যায়। দুইহাতে আস্টেপিস্টে জড়িয়ে ধরে নিজের বুকের সাথে মিলিয়ে নিয়ে বলে, “কি করতে পারি সোনা, বল। এই তিনটে হোটেলের ডিল না করতে পারলে খুব মুশকিলে পড়ে যাবো।”
অনুপমার ঠোঁট বেদনায় কেঁপে ওঠে, “আমি তোকে সত্যি নরকে নামিয়ে এনেছি।”
দেবায়ন ওর কপালে ঠোঁট চেপে আদর করে স্বান্তনা দিয়ে বলে, “এই রকম কেন বলছিস তুই? তুই আমার সর্বস্ব, তুই আমার প্রাণশক্তি। তুই কাঁদলে আমি যাই কোথায় বলতে পারিস?”
অনুপমা বলে, “নিজের প্রাণশক্তি বলতে ছারিস না আর মাসের মধ্যে কুড়ি দিন আমার কাছেই থাকিস না। একবার ভেবে দেখিস না আমি কি ভাবে থাকি। এই কয়দিনে কয়বার আমাকে একটু আদর করেছিস? তোকে বলার জন্য কত কথা বুকের মধ্যে জমে আছে, কিন্তু তোর কাছে সেই সব শোনার মতন সময় নেই।”
কথা গুলো শুনে দেবায়নের হৃদয় ভেঙ্গে আসে, ওর গালে চুমু খেয়ে আদর করে বলে, “ঠিক আছে পুচ্চিসোনা, কাঁদিস না। এইবারে তোকে সাথে নিয়েই যাবো। এই ডিল হয়ে গেলে অনেকদিনের জন্য বেড়ান বন্ধ।”
অনুপমা ওর জল ভরা চোখে দেবায়নের দিকে তাকিয়ে বলে, “সত্যি বলছিস না আমার মন রাখার জন্য বলছিস যে আমাকে নিয়ে যাবি।”
দেবায়ন ওর মুখখানি আঁজলা করে ধরে চোখের মাঝে চোখ রেখে বলে, “সত্যি বলছি, এই বারে তোকে আমার সাথে নিয়ে যাবো। তবে আমাকে একটা কথা দিতে হবে আমার কাজে ব্যাঘাত ঘটাস না যেন।”
অনুপমা প্রশ্ন করে, “মানে?”
দেবায়ন জবাব দেয়, “অনেক কিছু বিষয়ে সোজা আঙ্গুলে ঘী ওঠে না, সেই সব জায়গায় আঙুল বেঁকিয়ে ঘী তুলতে হয়।”
অনুপমা ওর হাতখানি বুকের কাছে চেপে ধরে, “আচ্ছা বাবা প্রমিস করছি যে তোর কাজের মধ্যে বাধা দেব না।”
সাথে যাবে এই শুনে অনুপমা বেশ খুশি হয়। দেবায়ন জানায় যে ওরা আগে মুম্বাই যাবে তারপরে পুনে। মুম্বাই যাওয়ার কথা শুনে মনের মধ্যে কৌতূহল জাগে। দেবায়ন হেসে জানিয়ে দেয় যে অচিরে ধীরে ধীরে সব কৌতুহল দুরে চলে যাবে।
পরের সপ্তাহে রবিবারে দুইজনে বেড়িয়ে পড়ে মুম্বাইয়ের উদ্দেশ্যে। চঞ্চল বুকের রক্ত, প্লেনের চাপার পর থেকেই আরও চঞ্চল হয়ে যায়। অদম্য জিজ্ঞাসা আর দমিয়ে রাখতে পারে না অনুপমা।
শেষ পর্যন্ত দেবায়নকে জিজ্ঞেস করে, “একটু ঝেড়ে কাশ না রে বাবা। কেন আমরা প্রথমে মুম্বাই যাচ্ছি।”
দেবায়ন জবাব দেয়, “অনেক মার প্যাঁচ আছে রে পুচ্চি। এই হোটেলের ডিল তিনটে এত সহজে হবে না।”
অনুপমা বলে, “কিসের মার প্যাঁচ?”
দেবায়ন বলে, “গত বার কাকু গেছিল, কিন্তু কাজ হয়নি। আমি অবশ্য অনেক আগে থেকেই একজন প্রাইভেট ইনভেস্টিগেটর লাগিয়েছিলাম ওই তিন হোটেলের মালিকের পেছনে। কিন্তু কাকু যখন গেছলেন ততদিনে ওর সম্পূর্ণ কাজ শেষ হয়নি।”
অনুপমা অবাক হয়ে প্রশ্ন করে, “প্রাইভেট ইনভেস্টিগেটর, সেটা কেন? কি জানতে চাস তুই ওদের ব্যাপারে?”
দেবায়ন হেসে জানায়, “কে কখন কোথায় থাকে, কার সাথে শোয়, কার সাথে খায়, কোথায় যায় সব নাড়ি নক্ষত্রের খবর জানা দরকার।”
অনুপমা বলে, “কেন?”
দেবায়ন, “এই সব বড় হোটেলের মালিকেরা কখন ধোয়া তুলসি পাতা হয়না। ওদের ফাক খুঁজে আড় পেতে কোপ না মারলে ওরা মচকাবে না। আর যদি না মচকায় তাহলে আমার কাজ হাসিল হবে না।”
একটু দোনামনা করে তারপরে বলে, “অনেক সময়ে নারীর শরীর কাজে আসে না, সেইখানে মাথা খাটাতে হয়, আঙুল বেঁকাতে হয় আর ওদের কোণঠাসা করতে হয়।”
অনুপমা বলে, “মানে?”
দেবায়ন হেসে জবাব দেয়, “মুম্বাই পৌঁছালেই সব জানতে পারবি।”
দুপুরের পরেই ওরা দুইজনে মুম্বাই পৌঁছে যায়। মুম্বাইয়ের এক নামকরা পাঁচতারা হোটেলে ওদের সুইট ভাড়া করা ছিল। রুমের মধ্যে ঢুকেই অনুপমাকে দুই হাতে জড়িয়ে মিশিয়ে নেয় নিজের সাথে। কোলকাতায় থাকলে, বাড়িতে অথবা অনুপমার বাড়িতে ঠিক একা পাওয়া যায় না। সেই বিরহ বেদনা দুই হাত দিয়ে আঁকড়ে নিঙরে নিতে চায়। দুইজনে একসাথে স্নান সেরে, ধবধবে নরম বিছানায় গা ভাসিয়ে দেয়। প্রেমের রসে পরস্পরকে ভিজিয়ে দেয়।
দুপুরের খাওয়া সেরে সারাদিন দুইজনে গাড়িতে চড়ে মুম্বাইয়ের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়ায়। মুম্বাইয়ের সব থেকে আকর্ষণীয়, জুহু বিচে বিকেলে এসে বসে। সূর্য বেশ কিছু আগেই পশ্চিমে ঢলে গেছে, পৌনে আটটা বাজে তাও আকাশে কমলা রঙের মাখামাখি। পেছনে সারি সারি নিওন বাতির মেলা, সারি সারি গাড়ি ধেয়ে চলেছে নিজেদের গন্তব্য স্থলে। গ্রীষ্মের গরম থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য সমুদ্রতটে প্রচুর লোকের ভিড়। জুহু বিচ যেন একটা মেলা। শিয়ালদা স্টেসানের চেয়ে মনে হয় তিন গুন লোক জড়ো হয়েছে বিচে। ওদের গাড়ি বিচের কিছু দুরেই দাঁড়ানো।
দেবায়নের ডান হাত নিজের দুই হাতে আঁকড়ে ধরে শরীরের সাথে শরীর মিশিয়ে হাঁটে। দুইজনে খালি পায়ে অনেকক্ষণ নোনা জলে ভেজা বালির ওপর দিয়ে পা ভিজিয়ে হাঁটে। এক যুগ পরে দুইজনের মনে হয় যেন পরস্পরকে আবার ফিরে পেয়েছে। আঙ্গুলের সাথে আঙুল পেঁচিয়ে যায়, অনুপমার বুক ভরে যায় শান্তিতে। দেবায়ন হাত ছাড়িয়ে ওর কাঁধে হাত রেখে নিজের সামনে দাঁড় করিয়ে দেয়। চোখের তারা পরস্পরের মণির ওপরে নিবদ্ধ হয়ে যায়। হটাত করে দুইজনের মনে হয় যেন চারপাশের কোলাহল কোথায় যেন উধাও হয়ে গেছে। এই কমলা রঙের বিস্তীর্ণ আকাশের নিচে, এই নির্জন সমুদ্র সৈকতে ওরা দুই নরনারী ছাড়া আর কেউ নেই। অনুপমার হাত উঠে আসে দেবায়নের বুকের কাছে। দুই হাতে অনুপমার কোমর ধরে নিজের দিকে টেনে নেয়। ঠোঁট নামিয়ে আনে ওই লাল গোলাপের পাপড়ির মতন নরম দুই কোয়ার ওপরে। ভালোবাসার চুম্বনে ঠোঁট মিলিয়ে হারিয়ে যায় দুইজনে। অল্পক্ষণ না অনেকক্ষণ, সময়ের চক্র যেন দুইজনের চারদিকে থমকে দাঁড়িয়ে পরে। চোখ বুজে আসে আবেগে, সেই চুম্বনে কোন রুদ্রতা নেই, নেই কামনার লেলিহান অগ্নি শিখা, আছে শুধু হারিয়ে যাওয়ার ভালোবাসা।
ঠোঁট ছেড়ে দেবায়নের চোখের দিকে তাকিয়ে মিহি সুরে প্রশ্ন করে, “আমার পাশে সবসময়ে এই রকম ভাবে দাঁড়িয়ে থাকবি তুই?”
দেবায়ন ওর মুখ আঁজলা করে ধরে নিয়ে বলে, “কেন থাকব না, নিশ্চয় থাকব।”
অনুপমা ওর হাতের ওপরে হাত রেখে, ওর তালুর উষ্ণতা গালে মাখিয়ে বলে, “তুই এই যে ঘুরে বেড়াস, মাঝে মাঝে ভয় হয়। এত কিছু পেয়ে যাওয়ার পরে হটাত যদি……”
কথাটা শেষ করতে পারে না অনুপমা, বুক দুরুদুরু করে কেঁপে ওঠে ওর, চোখের কোনে জল চিকচিক করে ওঠে।
দেবায়ন বুঝতে পারে ওর অব্যাক্ত ক্রন্দনের কারন। অনুপমার মাথা বুকের কাছে চেপে ধরে বলে, “আরে পাগলি তুই ভাবলি কি করে যে আমি তোকে ছেড়ে যেতে পারি। তুই আছিস বলেই আমি আছি। এই যে দেবায়ন তোর সামনে দাঁড়িয়ে এটা তোর জন্য দাঁড়িয়ে। তোকে যদি না পেতাম তাহলে আমি এতক্ষণে কোলকাতার কোন এক এঁদো কোম্পানিতে কেরানীর চাকরি করতাম। এই যে আজকে আমার মা আমাকে এত ভালোবাসে, তোর জন্য ভালোবাসে, নাহলে দিন দিন আমাদের মাঝে ব্যবধান বেড়ে যেত আর একদিন হয়ত দুইজনে দুইদিকে হারিয়ে যেতাম।”
এই এক কথা অনুপমার পক্ষেও প্রযোজ্য। ওর আলিঙ্গনে বদ্ধ যে ছেলেটা, তার জন্য নিজের বাবা মাকে কুড়ি বছর পরে ফিরে পেয়েছে। ওর বাড়িটা এক প্রকার সরাইখানার মতন ছিল, কেউ কারুর খোঁজ খবর বিশেষ রাখত না, সবাই যেন নিজের মধ্যে মত্ত। কোন এক জাদুর কাঠির ছোঁয়ায় দেবায়ন যেন সব কিছু ঠিক করে দিয়েছে। কুড়ি দিন হয়ে গেছে, জলপাইগুড়ির কথা কিছুই জানানো হয়নি, না মনিদিপা সূর্যের কথা, না নিবেদিতা ধৃতিমানের কথা না রূপকের সাথে সেই রাতের কথা। এই কয়দিনে বহুবার চেষ্টা করেছিল দেবায়নকে খুলে বলার, কিন্তু যেই বলতে যায় ওমনি ওর গলা শুকিয়ে আসে, জিব জড়িয়ে আসে। দেবায়ন অনায়াসে যেখানে যা করেছে ঠিক তারপরের দিন ওর কাছে এসে বলেছে। এমন কি মায়ের সাথে সেক্স করার পরেও ওকে এসে বলেছে। সেই কথা জেনে বুক ফেটে গেছিল কিন্তু ভালোবাসায় চিড় ধরেনি। আজ রাতে ওকে মনের কথা খুলে বলতেই হবে না হলে মরমে মরে যাবে অনুপমা।
দেবায়ন ওকে বলে, “চল এবারে রুমে যাই। কিছু কাজ বাকি আছে।”
হোটেলে ঢুকেই রিসেপশনিস্ট জানায় যে এক মহিলা ওদের জন্য কফিশপে অপেক্ষা করছে। মহিলার কথা শুনেই অনুপমার মনে প্রশ্ন জাগে, হঠাৎ করে মহিলার সাথে দেখা? কেন? দেবায়নের মুখের দিকে তাকাতেই, দেবায়ন মিচকি হেসে ওকে চুপ থাকতে বলে। জানিয়ে দেয় যে অচিরে সব পরিষ্কার হয়ে যাবে।
কফিশপে ঢুকে এদিক ওদিক দেখতেই একটা পঁচিশ ছাব্বিশ বছরের সুন্দরী মেয়ে ওদের দেখে হাত নাড়ায়। মেয়েটির পরনে গাঢ় নীল রঙের হাঁটু পর্যন্ত স্কার্ট, ছোটো হাতার গোলাপি টপ। টপের সামনের দিক বেশ উঁচু হয়ে ওদের দিকে উঁচিয়ে, মনে হল যেন দুই ভারী স্তন এখুনি পরিধান ফাটিয়ে বেড়িয়ে পড়বে। দুই পায়ে হাল্কা কালো রঙের ফিনফিনে স্টকিংস। মেয়েটির ত্বক উজ্জ্বল শ্যাম বর্ণের হলেও দেহের গঠন বেশ নধর আর লাস্যময়ী। প্রকৃতি দেবতা বেশ ভালো ভাবেই সাজিয়ে গুছিয়ে পাঠিয়েছে মেয়েটাকে ওদের সামনে। ঠিক যেই অঙ্গে যত টুকু প্রয়োজন তাঁর থেকে কিছুটা অধিক দিয়েই পাঠিয়েছে যাতে শরীর নিয়ে ভালোই খেলতে পারে। মেয়েটা অনুপমার মতন অত লম্বা না হলেও ভালো উচ্চতা।
মেয়েটার ঠোঁটের হাসি দেখেই অনুপমার মাথা গরম হয়ে যায়। ও না আসলে কি দেবায়ন এর সাথে রাত কাটাত? দেবায়ন এখন কি চায়? এই মেয়েটাকে সাথে নিয়ে ত্রিকোণ যৌনখেলায় মেতে উঠতে চায় নাকি? ও ভেবে এসেছিল, দেবায়নের সাথে নিভৃতে একাকী প্রেম করবে আর বুকের মাঝে জমে থাকা কথা গুলো উজাগর করবে।
 
Like Reply
পঞ্চবিংশ পর্ব (#06)

ওরা কাছে আসতেই, অনুপমার দিকে হাত বাড়িয়ে মেয়েটা নিজের পরিচয় দেয়, “আমি মিস কস্তুরী রঙ্গনাথন, প্রাইভেট ইনভেস্টিগেটর। গ্ল্যাড টু মিট ইউ মিসেস অনুপমা বসাক। কালকেই বসাক স্যার বলছিলেন যে মিসেস সাথে আসছেন।”
অনুপমা হতবাক হয়ে মেয়েটার সাথে হাত মিলিয়ে দেবায়নের দিকে তাকিয়ে থাকে। দেবায়ন চোখ টিপে ওর মুখ বন্ধ করতে ইশারা করে। চেয়ারে বসে পরে অনুপমা আর দেবায়ন, ওদের সামনের চেয়ারে বসে কস্তূরী।
দেবায়ন, কস্তূরীকে প্রশ্ন করে, “এখানে না বসে রুমে গেলে ভালো হয় না? সেখানে ডিনারের সাথে সাথে বাকি আলোচনা করা যাবে।”
অনুপমা চোখের ইশারায় দেবায়নকে প্রশ্ন করে যে সুইটে কেন ডাকা হচ্ছে। দেবায়ন ওকে শান্ত হওয়ার জন্য অনুরোধ করে। সুইটে ঢুকে, দেবায়ন খাবারের অর্ডার দেয় ডিনারে স্মোকড স্যালমন, লাজানিয়া আর রেড ওয়াইন। শুরুতে সাথে দামী স্কচ আর স্টারটারের জন্য ছোটো ছোটো চিংড়ি মাছ আর কাবাব।
বসার ঘরের একটা ছোটো কাউচে কস্তূরী আরাম করে বসে আর ওর সামনের লম্বা কাউচে দেবায়ন আর অনুপমা বসে। অনুপমার বুকের মাঝে হাজার প্রশ্ন ভিড় করে আসে, কেন এই মেয়েটা এখানে এসেছে, কি কাজের জন্য প্রাইভেট ইনভেস্টিগেটর নিযুক্ত, কি খবর নিয়ে এসেছে কস্তূরী আর সেই খবর নিয়ে দেবায়ন কি করতে চলেছে। ইতিমধ্যে রুম সার্ভিস এসে হুইস্কি আর কাবাব দিয়ে চলে যায়।
দেবায়ন একটা হুইস্কির গ্লাসে চুমুক দিয়ে, কস্তূরীকে জিজ্ঞেস করে, “কাজ আশা করি শেষ হয়ে গেছে। কি খবর এনেছ?”
সামনের টেবিলের ওপরে ল্যাপটপ খুলে কস্তূরী উত্তর দেয়, “তুমি যা যা বলেছিলে সেই মতন সব খবর জোগাড় করে নিয়েছি আর তোমার কথা অনুযায়ী কাজ সেরে ফেলেছি।”
 
অনুপমা একবার কস্তূরীর দিকে তাকায় একবার দেবায়নের দিকে।
দেবায়ন, কস্তূরীকে জিজ্ঞেস করে, “তাহলে দেখি কি খবর এনেছ?”
ল্যাপটপ খুলে কস্তূরী বলতে শুরু করে, “প্রথম উটির হোটেলের মালিক, এন.আর.পারিজাত। আময়িক ভদ্রলোক, খুঁজে পেতে স্বভাবে কোন ফাক ফোঁকর পাওয়া গেল না। স্ত্রী ছেলে মেয়েকে খুব ভালোবাসে। এক ছেলে ক্লাস টুয়েল্ভে পড়ে আর মেয়ে ক্লাস এইটে পড়ে। তাঁর স্ত্রী, গৃহবধূ। উটি ছাড়াও, মুন্নারে একটা হোটেল আছে, দুটো হোটেল বেশ ভালোই চলে, বেশ ভালো টাকা। ওইখানে কাজ হাসিল করতে তোমার পন্থা নিতে হয়।”
দেবায়ন বলে, “কাকে হাত করেছিলে? এইচ.আর ম্যানেজার না ফাইনেন্স ম্যানেজার?”
কস্তূরী হেসে দেয়, “তুমি বলেছিলে এইচ.আর. কে হাত করতে, সেটাই করেছি। আর যেমন ভাবা তেমন কাজ। ইতিমধ্যে বেশ কিছু লোক হোটেলের কাজ ছেড়ে চলে গেছে, নতুন লোকের অভাবে রিক্রুটমেন্ট বন্ধ। আর সেই জন্য গত দুই মাসে হোটেলে খুব চাপ। খালি হোটেল, কিন্তু ফুল অকুপেন্সি দেখাতে হচ্ছে লোকের অভাবে। ওদিকে লোক নিযুক্ত হচ্ছে না এইচ.আর. এর কারনে। তুমি গেলে গত কোয়াটারের ব্যালেন্স সিট দেখতে চাইবে। আমি খবর নিয়ে দেখেছি, গত কোয়ার্টারে ওদের আয় হয়েছে চার কোটি, আর এই কোয়ার্টারে আরও কমে গেছে। তার আগের দুই কোয়ার্টারে ওদের বেশ আয় হয়েছিল। একবার দশ কোটি, আর পরের বার আট কোটি। এবারে একেবারে নেমে যাওয়াতে হাঁফিয়ে উঠেছে পারিজাত। শুধু একটু ধাক্কা দিলেই পড়ে যাবে। যদি না পড়ে……”
দেবায়ন হেসে বলে, “না পড়লে এবারে নিস্তার নেই, আরও দুই কোয়াটার ওকে এই ভাবেই কাটাতে হবে।”
কস্তূরী হেসে বলে, “তোমার মাথা বড় প্যাঁচালো। যাই হোক যেটা ভালো বুঝবে সেটা করবে। আর হ্যাঁ, ওদের এইচ.আর. যে লোকটা, মিস্টার কার্তিকেয়ন, ওর সাথে তোমার মিট হবে পরশু দিন পুনেতে। সেই ভাবে ওকে বলা আছে।”
দেবায়ন মাথা নাড়িয়ে জানিয়ে দেয়, ঠিক আছে। অনুপমা হতবাক হয়ে দেবায়নের ব্যাবসার প্যাঁচ বুঝতে চেষ্টা করে।
দেবায়ন জিজ্ঞেস করে, “পুনের কি খবর? মিস্টার রজত পানিক্কর কেমন আছেন? ওর সম্বন্ধে কি জানতে পেরেছ?”
তার উত্তরে হেসে কস্তূরী বলে, “বহাল তবিয়েতে আছে বুড়ো। ও বুড়ো বেটা ঘাঘু মাল, এই বয়সেও মালের টনটন করে, কিন্তু মাল পড়ে না ঠিক জায়গায়।”
দেবায়ন হেসে ফেলে চোখ টিপে জিজ্ঞেস করে, “কেন তোমার সাথে কিছু করেছিল নাকি?”
কস্তূরীর গাল লাল হয়ে যায়, অনুপমা বুঝতে পারে শরীর কাজে লাগিয়ে কস্তূরী ওর কাজ হাসিল করেছে সেইখানে। লাজুক হেসে কস্তূরী উত্তর দেয়, “কিছুটা ঢলে পড়তে হয়েছে তবে তার সব টাকা আমি তোমার কাছ থেকে উসুল করে নেব।”
দেবায়ন হেসে দেয়, “সব পুষিয়ে দেব একবার এই তিনটে হোটেল হাতে আসুক।”
কস্তূরী হেসে মাথা নাড়িয়ে বলে, “পাঁচ লাখ টাকা এখন বাকি আছে, সেটা মনে আছে তো?”
দেবায়ন হেসে উত্তরে বলে, “হ্যাঁ বাবা হ্যাঁ, পাঁচ লাখ দেব তোমাকে। আর হানিমুনে তুমি স্কটল্যান্ড যেতে চেয়েছিলে তার বিজনেস ক্লাসের আসা যাওয়ার ভাড়া দেব।”
কস্তূরী দেবায়নের দিকে হাওয়ায় একটা চুম্বন ছুঁড়ে অনুপমার দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হেসে বলে, “কিছু মনে করো না যেন।”
অনুপমা কপট অভিমান দেখিয়ে হেসে কস্তূরীকে জিজ্ঞেস করে, “তুমি আবার আমার বরের সাথে ঢলে যাওনি তো?”
কস্তূরী হেসে জবাব দেয়, “না না মিসেস বসাক। আজ প্রথম মিস্টার বসাকের সাথে সামনা সামনি দেখা হচ্ছে। এতদিন ভিডিও চ্যাটিং করে গেছি আর ইমেইলে কথা বার্তা হয়েছে।”
দেবায়ন অভিমান ভরা চাহনি নিয়ে অনুপমার দিকে তাকায়। অনুপমা ওর হাত শক্ত করে জড়িয়ে ধরে কোলের মধ্যে।
কস্তূরী বলতে শুরু করে, “বুড়ো রজতের অনেক কেচ্ছা। বৌ থাকা কালিন একটা অন্য মেয়ের সাথে মেলামেশা ছিল। বৌ জানতে পারে ওদের ব্যাপার আর তারপরে আত্মহত্যা করে। এই নিয়ে কেস চলেছিল কিন্তু টাকা খাইয়ে সব বন্ধ করে দেওয়া হয়। ওর তিন ছেলের মধ্যে দুই জন বর্তমান। বড় জনের অনেকদিন আগেই গাড়ি দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়। বাকি দুইজনের কেউই হোটেল বিজনেসে আসবে না বলে ধরে নেওয়া যায়। কারন দুই ছেলেই ডাক্তার, একজন থাকে লন্ডনে আর একজন নিউজিল্যান্ডে। বুড়ো মরলে হোটেল পাবে ওর বড় বৌমা।”
কস্তূরী চোখ টিপে হেসে বলে, “কারন বর্তমানে বুড়োর এফেয়ার ওর বড় বৌমা, মেহেকের সাথে। মেহেক, চূড়ান্ত সেক্সি মহিলা, শরীরের আনাচে কানাচে যেন খিদে। বুড়োর পিঠের পেছনে মেহেক আবার একটা এফেয়ার করে বসে আছে এক ছোকরা ছেলের সাথে। বুড়ো শুধু ওর শরীর নিয়ে পড়ে থাকে, মেহেক ছেলেটাকে ভালোবাসে কিন্তু বুড়োর কবল থেকে মুক্তি না পাওয়া পর্যন্ত কিছু করতে পারছে না। ছেলেটার নাম শুভম, পুনের একটা আই.টি. কোম্পানিতে চাকরি করে, দিন পাঁচেক হল ক্যালিফোর্নিয়া গেছে কিছু অফিসের কাজে।”
এই বলে ল্যাপটপে বেশ কিছু ছবি দেখায়। ছবি দেখিয়ে এক এক করে পরিচয় করিয়ে দেয়, রজতের সাথে, মেহেকের সাথে আর শুভমের সাথে। বেশ কিছু ছবিতে বুড়ো রজত আর বড় বৌমা মেহেক বেশ পাশাপাশি জড়াজড়ি করে বসে। সিসিলির কোন সমুদ্র সৈকতে রজতের সাথে মেহেকের কিছু অন্তরঙ্গ ছবিও আছে। কোন ছবিতে রজতের হাত মেহেকের পিঠের খালি অংশে, কখন কাঁধে, কখন রজত আর মেহেক পরস্পরকে চুমু খাচ্ছে। এর পরে কস্তূরী, মেহেক আর শুভম বেশ কিছু অন্তরঙ্গ ছবি দেখাতে শুরু করল। বেশ কয়েকটা ছবি গোয়ার সমুদ্র সৈকতে তোলা, সেখানে মেহেক সাগরের ঢেউয়ে ছোটো বিকিনি পরে দোল খাচ্ছে আর তাকে জড়িয়ে ধরে আদর করছে শুভম। কস্তূরী এরপরে দেবায়নকে বিস্তারিত ভাবে সবার ঠিকানা, সবার ফোন নাম্বার, গাড়ির নাম্বার ইত্যাদি জানালো।
সব ছবি দেখার পরে দেবায়ন হেসে বলে, “ঠিক আছে পুনের ব্যাপার আমি সামলে নেব। এবারে ব্যাঙ্গালোরের কি খবর? মিস্টার দিলিপ কি করছে?”
ইতিমধ্যে রুম সার্ভিস এসে ওদের ডিনার দিয়ে যায়। স্মোকড স্যালমনের সাথে রেড ওয়াইন খেতে খেতে ওরা গল্প করে। অনুপমা জানতে পারল যে কস্তূরী, ব্যাঙ্গালোরের মেয়ে, সাইকোলজি নিয়ে পড়াশুনা করেছে। ইচ্ছে ছিল পুলিসে যাওয়ার কিন্তু গেল না, লোকের ওপরে নজর রাখার আর মেলামেশার বড় শখ তাই একটা প্রাইভেট ইনভেস্টিগেটর কোম্পানিতে চাকরি নেয়। ওর কাজ ছিল রিসেপশনিস্টের, কিন্তু ওর বস, প্রদীপের নেক নজরে কিছুদিনের মধ্যে চলে আসে ছোটো ছোটো কাজ হাতে নেয়। এর পরে নিজে থেকেই আলাদা হয়ে একা কাজ করে। দেবায়নের এই কাজ ওর কর্ম জীবনের সব থেকে বড় কাজ আর সেইজন্য দেবায়নকে ধন্যবাদ জানায় ওর ওপরে বিশ্বাস করার জন্য। ওর অনেকদিনের প্রেমিক, রুদ্রনাথ নায়ার, তার সাথে বিয়ে করতে চায়। ডিনার শেষে কস্তূরী ব্যাঙ্গালোর হোটেলের মালিক দিলিপের ব্যাপারে বলতে শুরু করে।
দিলিপ বিয়ে-থা করেনি। শুধু টাকা চেনে, আর কিছু চেনে না। টাকা ছাড়া আরও দুটো জিনিসের প্রতি ওর টান। এক মদ, দ্বিতীয় মেয়ে। যেহেতু বিয়ে করেনি তাই অবাধে মেয়েদের সাথে মেলামেশা করে, রোজ রাতে বিছানায় মেয়ে চাই। দিলিপের বিয়ে না করার কারন খুঁজতে গিয়ে জানা যায় যে কলেজে পড়াকালীন কণিকা নামের একটা মেয়েকে ভালবাসত। তাঁর সাথে বিয়ে না হওয়াতে শেষ পর্যন্ত আর বিয়ে করল না। সেই থেকে শুধু মদ, মেয়ে আর টাকা নিয়ে পরে থাকে। কস্তূরী আরো খোঁজ নিয়ে দেখেছে যে কণিকা বর্তমানে বিধবা। এইখানে দেবায়ন বেশ ফাঁপরে পরে যায়। ভাবতে বসে কি ভাবে মিস্টার দিলিপকে জব্দ করা যায়।
দেবায়ন প্রশ্ন করে, “এই কণিকার ব্যাপারে কোন খোঁজ খবর নিয়েছ কি?”
কস্তূরী হেসে উত্তর দেয়, “নিশ্চয় মিস্টার বসাক। বর্তমানে কণিকা মুসৌরির কাছে একটা মিশনারি কলেজে চাকরি করে, একটা ছোটো ছেলে আছে তাঁর।”
দেবায়ন মাথা চুলকে প্রশ্ন করে, “তারমানে দিলিপ এই কণিকার বর্তমান অবস্থার ব্যাপারে কিছুই জানে না।”
কস্তূরী মাথা নাড়ায়, “না জানে না। জানলে হয়ত মুসৌরি থেকে ফিরিয়ে নিয়ে আসতো।”
দেবায়ন ভীষণ চিন্তায় পড়ে যায়। দিলিপের কাছে টাকা আর নারী শরীরের প্রাচুর্য বর্তমান। ওকে এই সব দিয়ে ঠিক ভোলানো যাবে না। দেবায়ন, ভেবে কুল পায় না, এই ব্যাঙ্গালোরের ডিল কি করে সম্ভব হবে। চিড়িক করে জ্বলে ওঠে অনুপমার চোখ, কিন্তু কস্তূরীর সামনে চুপ করে থাকে, সময় হলে দেবায়নকে বুঝিয়ে দেবে।
ডিনার শেষে, দেবায়ন চেকবই বের করে একটা পাঁচ লাখ টাকার চেক কেটে কস্তূরীর হাতে ধরিয়ে দেয়। কস্তূরী, ল্যাপটপ গুটিয়ে, দেবায়নের হাতে একটা ছোটো মাইক্রো কার্ড দিয়ে জানিয়ে দেয় ছবি, তথ্য, কাগজ পত্রের স্ক্যান কপি, ঠিকানা, ফোন নাম্বার, গাড়ির নাম্বার ইত্যাদি। যা যা দেবায়ন চেয়েছিল, সব আছে এই মাইক্রো কার্ডে।
কস্তুরী চলে যাওয়ার পরে অনুপমা পোশাক বদলের জন্য বাথরুমে ঢোকে। সারাদিনের ক্লান্তি আর সারা সন্ধ্যের উত্তেজনা ধুয়ে ফেলে শরীর থেকে। ওদিকে বিছানায় একটা বারমুডা পরে দেবায়ন তাঁর প্রেমিকার জন্য অপেক্ষা করে। পরনের কাপড় বদলে একটা পাতলা ফিনফিনে স্লিপ চড়িয়ে দেয় গায়ে। স্লিপের নিচে শুধু ব্রা আর প্যান্টি পরা। স্লিপ ফিনফিনে হওয়ার জন্য ভেতরের ব্রা আর প্যান্টি পরিষ্কার দেখা যায়। অনুপমার গজ দাঁতের মোহিনী হাসি আর লাস্যময়ী রুপ থেকে দেবায়ন আর থাকতে পারে না। এক ঝটকায় অনুপমার নধর তুলতুলে দেহপল্লব কোলে তুলে আছড়ে দেয় বিছানার ওপরে। দেবায়নের বলিষ্ঠ শরীরের নিচে পিষে যায় অনুপমার নধর কমনীয় দেহপল্লব। চোখ বুজে দুই হাতে দয়িতের গলা জড়িয়ে নিজেকে উজাড় করে দেয়।
হঠাৎ মনের কোণে উদয় হয় অব্যাক্ত এক বেদনা, বন্ধ দ্বারের পেছনে অনেক কিছু লুকিয়ে রাখা কথা। না জানালে ওর বুক যে আজ রাতে ফেটে যাবে কিন্তু তাঁর আগে জানতে চায় যে সত্যি কি জার্মানি গিয়ে দেবায়ন আর শ্রেয়া কিছু করেছিল?
অনুপমার ঠোঁটে চুমু খাওয়ার সময়ে দেবায়ন অনুভব করে যে ওর প্রেয়সী হটাত করে ঠাণ্ডা হয়ে গেছে। অনুপমার চোখের কোণ চকচক দেখে দেবায়ন প্রশ্ন করে, “এই পুচ্চিসোনা, তোর আজকে হয়েছে কি বলতে পারিস? বিকেল থেকে শুধু তোর চোখে জল দেখছি।”
অনুপমাকে বুকের ওপরে জড়িয়ে দেবায়ন চিত হয়ে শুয়ে পরে। অনুপমা ওর বুকের ওপরে মাথা রেখে হৃদপিণ্ডের ধুকপুকানি শোনে মন দিয়ে। তার কিছু পরে মিহি দ্বিধা ভরা কণ্ঠে প্রশ্ন করে, “আমি একটা কথা জিজ্ঞেস করব ঠিক ঠিক উত্তর দিবি?”
অনুপমার সুন্দর গোল মুখ আঁজলা করে ধরে উত্তর দেয়, “আমি তোর কাছে খোলা বই তাও কি জানতে চাস বল।”
দ্বিধা জড়ানো কণ্ঠে অনুপমা প্রশ্ন করে, “জার্মানি গিয়ে তুই আর শ্রেয়া কি কিছু করেছিস?”
দেবায়ন হেসে ফেলে অনুপমার প্রশ্ন শুনে, “না রে পাগলি মেয়ে। তোকে না জানিয়ে কি কারুর সাথে আজ পর্যন্ত শুয়েছি?”
অনুপমার মনে তাও যেন একটা প্রশ্ন থেকে যায়, “সত্যি বলছিস আমাকে না আমার মন রাখার জন্য মিথ্যে বলছিস?”
দেবায়ন ওর গালে কপালে সারা মুখে অজস্র চুমু খেয়ে বলে, “এই তোকে ছুঁয়ে বলছি। আসলে জার্মানি গিয়ে অনেক কিছু ঘটেছে যেটা ঠিক আমিও বুঝে উঠতে পারছি না তাই আর তোকে বলা হয়নি।”
অনুপমা প্রশ্ন করে, “মানে? কি হয়েছে আর কি বুঝতে পারিস নি?”
দেবায়ন জানায় যে ওরা ফ্রাঙ্কফুর্টে পৌঁছানর পরে দেবায়ন ব্যাস্ত হয়ে যায় মিস্টার হেরজোগের সাথে আর মিস্টার মেরকেলের সাথে ওদের কন্সট্রাক্সান কোম্পানির ব্যাপারে। সুপর্ণা ম্যাডাম আর দীপঙ্করদা, জারমেনিয়া এয়ারলাইন্সের আইটি ডিপার্টমেন্ট আর মারকেটিং ডিপার্টমেন্টের সঙ্গে ব্যাস্ত হয়ে যায়। প্রথম কয়েক দিন শ্রেয়া সবার সাথেই ছিল, ইন্দ্রনীলও সাথেই ছিল। দিন দুই যেতে না যেতেই শ্রেয়া আর ইন্দ্রনীলের ব্যাবহার ওর চোখে লাগে। ইন্দ্রনীলের সাথে এই অন্তরঙ্গ ব্যাবহারের ব্যাপারে বেশ কয়েকবার ওকে জিজ্ঞেস করেছে এই ব্যাপারে, কিন্তু শ্রেয়া প্রতিবার সঠিক জবাব এড়িয়ে উত্তরে জানিয়েছিল যেহেতু ইন্দ্রনীল ওদের এই ব্যাবসা আনতে সাহায্য করেছে তাই ওর সাথে ভালো ব্যাবহার করছে। শ্রেয়া খুব চালাক মেয়ে, আর ওর মাথার মধ্যে কোন এক অভিসন্ধি চলছে, কিন্তু কোনদিকে ওর পা চলছে সেটা ঠিক বুঝে উঠতে পারল না। একরাতে দেবায়ন ওকে খেলাতে চেয়েছিল, ডিনারের পরে নিজের রুমে নিয়ে হুইস্কি খেতে দিয়েছিল কিন্তু শ্রেয়া সেই টোপ গেলেনি। খুব সুন্দর ভাবে এড়িয়ে গেছে দেবায়নকে।
সব শুনে অনুপমার বুক ফেটে চৌচির হয়ে যায়। প্রথমে নিজেকে ধিক্কার জানায় যে রূপকের কথায় ভেসে গিয়ে রূপকের সাথে সঙ্গমে লিপ্ত হয়েছিল, আর দ্বিতীয় ওই জলপাইগুড়ির কথা লুকিয়েছে।
অনুপমার চোখের বেদনা দেবায়ন ঠিক পড়ে ফেলে আর প্রশ্ন করে, “এই বারে ঠিক ঠিক বলত কি হয়েছে তোর?”
অনুপমা মাথা নিচু মুখ ঢেকে কাঁপা গলায় বলে, “আমি আর রূপক একদিন……”
হটাত করে দেবায়নের মাথা ঝনঝন করে ওঠে। অনুপমার মুখ নিজের দিকে তুলে দেখে যে ওর চোখ বন্ধ আর চোখের কোল থেকে একটা সরু জলের দাগ। দেবায়ন বুঝতে পারে যে কুণ্ঠাবোধে অনুপমার বুক ফেটে চৌচির হয়ে গেছে। পাপ পুন্য, ভালোবাসা, প্রতারণা সব কিছু মানুষের মনের বিভিন্ন অভিব্যাক্তি। ওর অনুপমা ওকে ভাল না বাসলে বুক ঠুকে এই কথা বলতে পারত না। যদি লুকিয়ে রাখত তাহলে হয়ত দেবায়ন কোনদিন জানতেও পারত না ওদের মাঝে কি হয়ে গেছে।
অনেকক্ষণ চুপচাপ থাকে দেবায়ন, তারপরে ওর গালে হাত দিয়ে বলে, “এতদিন চুপ করে ছিলিস কেন?”
অনুপমার গলা শুকিয়ে আসে, দুই চোখে শ্রাবনের বারিধারা, “জানিনা, বলতে সাহস পাচ্ছিলাম না। তোর সামনে করা এক জিনিস আর পেছনে করা অন্য জিনিস।”
দেবায়ন বলে, “সে তো আমিও অন্যের সাথে শুয়ে এসেছি, তাতে এত মাথা ব্যাথা কেন? লুকিয়ে রাখলেই পারতিস। তোকে দেখে অথবা রূপককে দেখে আমি এবারে সন্দেহ করতে পর্যন্ত পারিনি।”
অনুপমা ভাষা হারিয়ে চোখ বন্ধ করে ওর বুকে মাথা গুঁজে অঝোরে কাঁদে, “আমি আর পারছি না। রোজ মনে হত কেউ যেন আমাকে চড় মারছে। আমি তোকে খুব ভালোবাসি, বাকি তোর ওপরে……”
দেবায়ন ওর চোখের জল মুছে ওকে সান্তনা দিয়ে বলে, “শোন পুচ্চিসোনা, আমি তোকে ভালোবাসি আর তুই আমাকে ভালোবাসিস। আমাদের মাঝে সেটা বেঁচে থাকলেই সব থেকে বড়। জানি কিছু কথা বললে মনে হবে এক বিজ্ঞ ব্যাক্তির কথা, কিন্তু এই দেহ, এই রুপ কতদিন ধরে রাখা যায়? কেউ চিরকুমার নয়। যেখানে হৃদয়ের মিল থাকে সেখানে কোনদিন শারীরিক আনন্দ ফলপ্রসু হয় না। আজ আমরা এর সাথে ওর সাথে সেক্স করে, মদ খেয়ে, টাকা উড়িয়ে নেচে বেড়াচ্ছি। কিন্তু একসময়ে এই সব তেতো হয়ে যাবে। আসল প্রেম হচ্ছে একসাথে বুড়ো হওয়া, পরস্পরের সাদা চুলে রঙ মাখিয়ে দেওয়া, নকল দাঁত জলের গ্লাসে রাখা, চশমা খুঁজে দেওয়া, তখন তুই থাকবি আমার পাশে আর আমি তোর পাশে। গতকাল একটু বয়ে গিয়ে রূপকের সাথে কি করেছিস, অথবা আগামী কাল অন্য কারুর সাথে শুয়ে কাটাবি সেই নিয়ে আমার বিশেষ মাথা ব্যাথা নেই। যেদিন বুঝব যে সত্যি তুই আর……”
কথা শেষ করার আগেই দেবায়নের ঠোঁটের ওপরে হাত চেপে ফুঁপিয়ে কেঁদে ফেলে অনুপমা, ঠোঁটে ঠোঁট চেপে নিজেকে উজাড় করে দেয় দেবায়নের বাহুপাশে। সেই রাতে দুই নরনারী প্রেমের সুখের সাগরে অনন্ত কালের জন্য ভেসে যায়। প্রথম মিলনের চেয়েও সেই রাতের মিলন ওদের যেন আরও মধুর মনে হয়। অনুপমার মনে হয় যেন হারিয়ে যাওয়া ভালোবাসা আবার খুঁজে পেয়েছে।
 
Like Reply
পঞ্চবিংশ পর্ব (#07)

সকালে উঠে ব্রেকফাস্ট টেবিলে অনুপমা, দেবায়নকে দুষ্টু হেসে প্রশ্ন করে, “আমি না আসলে তুই কি কস্তূরীর সাথে রাত কাটাতিস?”
দেবায়ন মিচকি হেসে বলে, “যা সেক্সি মাল, ওকে দেখে যে কারুর মাল বসে বসে পড়ে যাবে।”
অনুপমা ওর গালে একটা আলতো চাটি মেরে কপট অভিমান দেখিয়ে বলে, “বৌ পাশে বসে তাও অন্য মেয়ের কথা চিন্তা করে।”
দেবায়ন টেবিলের তলা থেকে ওর তলপেটের কাছে হাত নিয়ে আলত টিপে বলে, “সোনা, ওর কথা তুই এনেছিস আমি আনিনি। তার মানে ওর সাথে তোর করার ইচ্ছে ছিল।”
অনুপমা আবার একটা চাটি মেরে বলে, “ধুর শয়তান। হাত সরা ওইখান থেকে।”
দেবায়নের হাত বেশ নিচে নামতে গিয়েও থেমে যায়।
অনুপমা ওকে জিজ্ঞেস করে, “তুই এই সব তথ্য নিয়ে কি ভাবে প্যাঁচ লাগাবি?”
দেবায়ন অনুপমার থুতনি নাড়িয়ে বলে, “আমি আগেই বলেছি, অনেক সময়ে চিরাচরিত পন্থা, মেয়েদের শরীর কাজে দেয় না। এই তিন জায়গা ঠিক সেই রকম জায়গা তাই কাকুর একটু অসুবিধে হয়েছিল। প্রথম হচ্ছে উটি, আমরা উটি যাবো পারিজাতকে ভালো ভাবে বুঝিয়ে বলব যে আমার হাতে হোটেল তুলে দিলে আবার স্বমহিমায় ফিরে আসবে না হলে এই যে গত কোয়ার্টারে চার কোটি আয় হয়েছে, সেটা কমে লাখে চলে আসবে। যদি না মানে তাহলে কিছুই করব না, ওর হোটেলের কর্মীদের একটু খেপিয়ে দেব। আগামী তিন চার মাসের মধ্যে কাজ হয়ে যাবে। কেননা আমাদের হাতে ওই হোটেলের পঁচিশ শতাংশ। আয় কমে গেলেই, বোর্ড মিটিংয়ে ওকে যা তা বলে অপমান করব। যদিও আসলে সেটা আমি করতে চাইনা, ওকে শুধু ভয় দেখাতে চাই। এই ভয়ে যদি কাজ হাসিল হয় তাহলে ব্যাস, হোটেলের পঞ্চান্ন শতাংশ আমাদের হাতে।”
অনুপমা ভুরু কুঁচকে প্রশ্ন করে, “এটা কি ঠিক উপায় হল, পুচ্চু?”
দেবায়ন বুক ভরে শ্বাস নিয়ে বলে, “কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে, একজন অনেক আলবাল বকে অনেকের হত্যা করিয়েছিল, সেই কথা পড়ে সবাই তাকে বাহবা দেয়। এইখানে কোনটা ভুল কাজ করছি আমি?”
অনুপমা বলে, “না মানে……”
দেবায়ন বলে, “ব্যাবসায় সব ঠিক আর আমি ওকে ব্লাকমেল করছি না পুচ্চি। রীতিমতন টাকা দিয়ে কিনতে চাই ওর হোটেল। এর পরে ওকে টাকাও দেব না।”
অনুপমা বলে, “আর এই পুনের হোটেল? হোটেলের আয় ভালো, মিস্টার রজত কেন তোকে ওর শেয়ার বিক্রি করে দেবে? এই রজত আর মেহেক, দুইজনেই বেশ পাক্কা খেলোয়াড়। এখানে ওদের প্যাঁচে খেলাতে বেশ মুশকিল হবে মনে হয়।”
দেবায়ন মাথা চুলকে বলে, “ওইখানে একটু ভাবতে হবে ঠিক কাকে আগে প্যাঁচে ফেলা যায়। দুইজনের অবৈধ সম্পর্ক সুতরাং যে কোন কাউকে জালে ফেলতে পারলে অন্য জন জালে জড়িয়ে যাবে। এখন কথা হচ্ছে আগে মেহেক না আগে রজত। একজন কে বাগে পেলেই দ্বিতীয় জন হাতের মুঠোর মধ্যে চলে আসবে।”
অনুপমা হেসে বলে, “আমার কি মনে হয় জানিস, প্রথমে আমাদের মেহেকের সাথে কথা বলা উচিত।”
দেবায়ন ভুরু কুঁচকে তাকিয়ে প্রশ্ন করে, “মেহেকের সাথে? আমি ভাবছিলাম রজতের সাথে সরাসরি কথা বলে পরিষ্কার হয়ে যাওয়া। মেহেকের সাথে কি কথা বলা যায়?”
অনুপমা হেসে বুক ঠুকে বলে, “না, মেহেকের সাথে কথা বললে বেশি কাজে দেবে। ওর সাথে আমাকে কথা বলতে দে।”
দেবায়ন চাপা গর্জে ওঠে, “না, আমি তোর মাথা ছুঁয়ে মিমির কাছে প্রতিজ্ঞা করছিলাম যে আমার কোন কাজে তোকে নামাব না। শুধু তোর জেদের জন্য তোকে নিয়ে আসা, দয়া করে এই সবে একদম মাথা গলাস না, প্লিস পুচ্চি।”
ওর কথা শুনে অনুপমা ওকে জড়িয়ে ধরে বলে, “একদিন আমি তোর অর্ধাঙ্গিনী হব। তখন তোর পাপ পুণ্যের বোঝা সবকিছু আমাকে মেপে নিয়ে ভাগ করতে হবে। মা’কে কিছু না জানালেই হল আর আমি মেহেকের সাথে কথা বলতে চাই ব্যাস, তাহলেই কাজ হয়ে যাবে। তুই নিজেই বলেছিস যে মায়ের পথে আমাকে হাটাবি না, আমি সেই পথে হাটছিনা শুধু মাথা খেলাতে চাই।”
দেবায়ন বড় শ্বাস নিয়ে বলে, “ঠিক আছে আলাপ দিয়ে শুরু করিস আমি শেষ করব।”
অনুপমা বলে, “ওকে, সেটাই করব। কিন্তু মেহেক কে কি ভাবে প্যাঁচে ফেলা যায় বলতো?”
দেবায়ন মিচকি হেসে বলে, “মিস্টার রজত রাঘব বোয়াল কিন্তু ওর হাতের চাবিকাঠি মেহেকের হাতে। মেহেক একদিকে রজতকে খেলাচ্ছে কারন ওইখানে টাকা পয়সা আছে, অন্যদিকে শুভমকে মনে হয় ভালোবাসে। মেহেককে এটা জানাতে হবে যে এই শুভমের ব্যাপারে রজতকে জানিয়ে দিলে ওর কি অবস্থা হতে পারে। এর মধ্যে অন্ধকারে একটা ঢিল ছোঁড়া যেতে পারে।”
অনুপমা মন দিয়ে ওর কথা শোনে। দেবায়ন বলে, “রজতের বড় ছেলে, রাজেশের মৃত্যুর পেছনে কে দায়ী। যদি একটু খুঁচিয়ে দেখা যায় তাহলে দেখবি আসল কথা বেড়িয়ে যাবে। আমার যতদূর মনে হয়, রজতের সাথে ওর বড় বৌমার অবৈধ সম্পর্ক রাজেশ মারা যাওয়ার আগে থেকেই ছিল। হতে পারে যে রজত আর মেহেক মিলে রাজেশকে মেরে ফেলেছে।”
অনুপমা হাঁ করে তাকিয়ে থাকে ওর মুখের দিকে, এত শত ভেবে দেখেনি অনুপমা। দেবায়ন হেসে ওর মুখ বন্ধ করে বলে, “দাঁড়া পুচ্চি ডারলিং, একবার সামনা সামনি পেলে মেহেকের কত চর্বি আছে সেটা বোঝা যাবে।”
অনুপমা মিচকি হেসে বলে, “মেহেক যা সেক্সি মহিলা, তুই খুব সহজে কিন্তু ওকে বিছানায় ফেলতে পারতিস আর সব উগড়ে দিত।”
দেবায়ন, অনুপমার থুঁতনি নাড়িয়ে আদর করে বলে, “না ডার্লিং না, মেহেক সেক্সি বটে কিন্তু মাথায় জটিল বুদ্ধি ধরে। ওর সাথে যৌন সঙ্গম করলেও ওর পেট থেকে অত সহজে কথা বের হবে না। ওকে সাপের প্যাঁচে না ফেললে ওই মাল কথা বলবে না। ওকে হাত করা সহজ কাজ কেননা আমাদের কাছে ওদের বিরুদ্ধে প্রচুর তথ্য আছে আর অনেক ফাক ফোঁকর আমাদের জানা যেখানে কোপ মারলেই ওরা নড়ে উঠবে।”
একটু থেমে চিন্তা গ্রস্থ হয়ে বলে, “মুশকিল হচ্ছ দিলিপ বাবু কে নিয়ে। সেইখানে কোন কিছুই খাটতে দেখছি না। ওইখানে শরীর দিয়ে অথবা টাকা দিয়ে কাজ হবে না। দিলিপের কাছে মেয়ের শরীর কোন কাজে আসবে না আর টাকার ব্যাপারে বেশ আঁটসাঁট।”
অনুপমা হেসে বলে, “পুচ্চুসোনা, দিলিপের ব্যাপার হৃদয়ের ব্যাপার, প্রেমের ব্যাপার। খুব সন্তর্পণে যদি দিলিপের নাড়ি ধরতে পারি তাহলে আমাদের কাছে চিরকাল ঋণী হয়ে থাকবে দিলিপ।”
দেবায়ন বলে, “মানে?”
অনুপমা বলে, “খুব সরল ব্যাপার কিন্তু কঠিন রাস্তা, দুই বিরহ কাতর প্রেমিক প্রেমিকাকে মিলিয়ে দাও। দেখবি তোর পায়ের ধুলো মাথায় করে রাখবে।”
দেবায়ন প্রশ্ন করে, “মানে কি বলতে চাইছিস? আমরা কণিকার সাথে দেখা করব আর ওকে বুঝিয়ে সুঝিয়ে ব্যাঙ্গালোর নিয়ে আসবো?”
অনুপমা হেসে ওর গাল টিপে বলে, “এইতো সোনা ভাবতে শিখেছে। কিন্তু আমরা উলটো টা করব। মানে দিলিপ বাবুর সাথে আগে দেখা করব তারপরে ওকে নিয়ে যাবো মুসৌরি।”
দেবায়ন, “তাহলে কাকে দিয়ে শুরু?”
অনুপমা বলে, “পুনে দিয়ে শুরু। ভুরি ভোজের আগে যেমন শুক্তো পাতে দেওয়া হয় তেমনি, শুরুতে লড়াই, তারপরে বুদ্ধির খেলা, শেষে ভালোবাসা। আগে আমরা পুনের কাজ হাসিল করব। প্রথমে মেহেকের সাথে দেখা করব তারপরে মিস্টার রজত। একবার আমাদের প্যাঁচে পরে গেলে ওইখান থেকে কাজ হাসিল করতে বেশি দেরি হবে না। তারপরে উটি মিস্টার পারিজাত, সেখানে তুই যে ভাবে চলতে চাস সেই ভাবে খেলে যাস। তারপরে আমরা যাবো ব্যাঙ্গালোর, মিস্টার দিলিপের সাথে দেখা করতে হবে বন্ধু হিসাবে বিজনেস ম্যান হিসাবে একদম নয়। দিলিপের সাথে আমি কথা বলব। পুরানো প্রেমের কথা শুনে আশা করি দিলিপ বাবু গলে যাবে আর ওকে নিয়ে আমরা যাবো মুসৌরি, সেখানে কণিকার সাথে মিলন। এইসবের মাঝে ঘুনাক্ষরেও যেন বিজনেসের কথা না ওঠে। কণিকার সাথে দেখা হওয়ার পরেই হোটেলের কথা উঠাবি তার আগে নয়।”
খাওয়া শেষ করে দেবায়ন অনুপমার গালে একটা চুমু খেয়ে বলে, “তাহলে আজ বিকেলেই বেড়িয়ে পরা যাক পুনের উদ্দেশ্যে।”
খাওয়া শেষ করে দুইজনে রুমে ফিরে যায়। রুমে ঢুকে দেবায়ন অনুপমা বলে, মেহেককে ফোন করতে সেই অনুযায়ী অনুপমা মেহেককে ফোন করে। অনুপমার গলার আওয়াজ শুনে মেহেক প্রথমে ওকে চিনতে পারে না। অনুপমা নিজের পরিচয় দেয় আর তারপরে মেহেক ওকে চিনতে পারে। মেহেক জিজ্ঞেস করে ফোনে কি কথা জানাতে চায়। অনুপমা জানায় যে রাতে ওর সাথে দেখা করতে চায় এবং ব্যাবসা সংক্রান্ত আর আনুসাঙ্গিক কিছু বিষয়ে কথা বলতে চায়। মেহেক নিজের বাড়ির ঠিকানা দিয়ে বলে যে বিকেলে বাড়িতে ওদের জন্য অপেক্ষা করে থাকবে।
দেবায়ন জিজ্ঞেস করে কেমন মনে হল মেহেকের সাথে কথা বলে। জবাবে অনুপমা জানায় যে মেহেক বেশ চতুর মহিলা, অনুপমার ফোন পেয়েই বুঝে গেছে যে হোটেলের ব্যাপারে কথা বলতে চায়।
বিকেলের ফ্লাইট ধরে দুইজনে পুনে চলে আসে। যে হোটেল কেনার ছিল, সেইখানে না উঠে একটা বড় হোটেলে রুম বুক করে। সন্ধ্যের পরে দুইজনে মেহেকের ফ্লাটে পৌঁছে যায়। উচ্চবিত্ত সমাজের মেয়ে অনুপমা, ভালো ভাবে জানে কি ভাবে নিজেকে প্রস্তুত করে নিতে হয় এই সব কাজের জন্য। হাঁটু পর্যন্ত চাপা ফর্মাল গাড় নীল রঙের স্কার্ট, গায়ে সাদা ডোরা কাটা জামা, গলায় একটা স্কার্ফ আর তার ওপরে একটা সামার কোট। দুই পায়ে ন্যুড স্টকিংস, হাতে ট্যাবলেট আর ডান হাতের কব্জিতে সোনার ঘড়ি। দেখে মনে হয় কঠোর এক ব্যাবসাদার নারী কাজ হাসিল করতে বেড়িয়েছে। ওর কথা মতন দেবায়ন গাঢ় বাদামি রঙের সুট পরে।
গাড়ি করে যেতে যেতে অনুপমা আরও একবার ট্যাবলেট খুলে মেহেক আর রজতের সব তথ্য দেখে নেয়। বহুতল ফ্লাট কমপ্লেক্সের দশ তলায় বেশ বড় ফ্লাট নিয়ে মেহেক থাকে তার ছোটো ছেলেকে নিয়ে। কলিং বেল বাজাতেই বাড়ির চাকর এসে দরজা খুলে দেয় আর ওদের বসার ঘরে বসতে বলে। বেশ বড়সড় ফ্লাট, সুন্দর ভাবে সাজানো গোছানো। অফুরন্ত টাকার ছড়াছড়ি সেটা দেয়ালের পেন্টিং আর শো কেসে রাখা পুতুল দেখেই বোঝা যায়। এই চেয়ে বেশি প্রাচুর্যে অনুপমা বড় হয়েছে, তাই ওর চোখে এই সব খুব সামান্য বলে মনে হয়।
কিছু পরে মেহেক বসার ঘরে ঢুকে অনুপমাকে আপাদমস্তক দেখে থমকে যায়। মেহেক ভাবতে পারেনি যে অনুপমা এত রুচিশীল মেয়ে। ওর পোশাক আর চেহারার অভিব্যাক্তি দেখে হন্তদন্ত হয়ে চাকরকে বলে ড্রিঙ্কস আনতে।
মেহেক ওদের বসতে বলে, “দাঁড়িয়ে কেন বস তোমরা। আমার সত্যি ভাগ্য যে মিস্টার বসাক এসেছে আমার বাড়িতে। এমনিতে প্রতিবার হোটেল দেখেই ফিরে যায়। আজকেই কি কোলকাতা থেকে এখানে আসা হয়েছে।”
অনুপমা মেহেক কে দেখে মিচকি হেসে বলে, “এত তাড়াহুড়ো করার কিছু নেই। কিছু বিশেষ কথা আছে তাই আসা।”
দেবায়ন মেহেকের সাথে হাত মিলিয়ে সোফায় বসে। অনুপমা মেহেককে জরিপ করে নেয় আপাদমস্তক। কস্তূরী ঠিকই বলেছিল, সুন্দরী আর লাস্যময়ী মহিলা মেহেক। শরীরের গঠন গোলগাল নধর আর চূড়ান্ত কামনার মাখামাখি। গায়ের রঙ অনুপমার চেয়ে একটু কম, কিন্তু ফর্সা বলাই চলে। হাঁটু পর্যন্ত একটা চাপা ইভিনিং ড্রেস পরা, তাতে শরীরের প্রতি অঙ্গ আর আকার ভালো করে বোঝা যাচ্ছে। স্তন বিভাজিকার অনেকটাই পোশাকের উপর থেকে বেড়িয়ে এসেছে। স্তন জোড়ার আকার বেশ সুন্দর গোলগাল। বিশেষ পাতলা না হলেও বেশ সুন্দর নরম কোমর আর বিশেষ দ্রষ্টব্য ওর দুই পাছা। নধর গোলগাল নরম পাছা একটু বেশি বড় আর পেছনের দিকে ফুলে রয়েছে। তার নিচে গোলগাল মসৃণ থাই, আলো যেন পিছলে পড়ছে ওই থাই জোড়ার মসৃণ ত্বকের ওপরে। ওর টানাটানা চোখ আর চাহনি দেখেই দেবায়ন বুঝতে পারে যে এই শরীরে অনেক খিদে, টাকার খিদে আর সেই সাথে যৌনতার খিদে দুটোই আছে। এখন এই অসামান্য সর্পিণী কি ভাবে দমন করবে অনুপমা সেটাই দেখার।
মেহেক সামনের ছোটো কাউচে বসে পানীয়ের গ্লাস ওদেরকে দিয়ে অনুপমাকে প্রশ্ন করে, “গত বার তোমার বাবা একা এসেছিলেন, তার আগে অবশ্য মিস্টার বসাক আর মিস্টার সেন এক বার ঘুরে গেছেন। এবারে তোমরা এলে কি ব্যাপার?”
অনুপমা হেসে বলে, “না এমনি, এবারে আমার মিস্টার একাই আসত, কিন্তু ওকে একা ছাড়তে ঠিক মন করলো না।”
মেহেক অবাক চোখে প্রশ্ন করে, “তোমরা কবে বিয়ে করলে?”
দেবায়ন হেসে ফেলে, “সমাজের চোখে বিয়ে অনুষ্ঠান হয়নি ঠিকই, কিন্তু মন বাঁধা। তাই না নিয়ে এসে পারলাম না।”
মেহেক মিচকি হেসে বলে, “হ্যাঁ সত্যি বলেছ। তা কি বিষয়ে কথা বলতে চাও আমার সাথে?”
অনুপমা কিছু একটা বলতে উদ্যত হচ্ছিলো, কিন্তু দেবায়ন ওকে থামিয়ে দিয়ে নিজেই বলতে শুরু করল, “এবারে ভাবলাম যে হোটেলের ভবিষ্যতের মালকিনের সাথে আগে দেখা করে যাই তাই তোমার কাছে আসা।”
মেহেক এক মন মোহিনী হাসি দিয়ে বলে, “আমি ওই হোটেলের বিষয়ে কিছুই জানি না। হোটেলের সব কিছু আমার শ্বশুর মশাই দেখেন।”
দেবায়ন পালটা হেসে জবাব দেয়, “আমি জানি তুমি হোটেলের বিষয়ে মাথা ঘামাও না। তুমি যে বিষয়ে মাথা ঘামাও সেই বিষয়ে কথা বলতে এসেছি আমরা।”
কথা শুনে মেহেকের ভুরু কুঁচকে যায়, গ্লাস নামিয়ে প্রশ্ন করে, “তোমার কথা ঠিক বুঝতে পারলাম না।”
দেবায়ন ওর চোখে চোখ রেখে প্রশ্ন করে, “তাহলে একটু খুলেই কথা বলা যাক তোমার সাথে। মিস্টার সেন, মানে আমার শ্বশুর মশাই এই হোটেল কিনতে চায়। এবারে বল কি করলে ওই হোটেল সুস্থ্যভাবে আমাদের হাতে আসবে।”
মেহেক হেসে জবাব দেয়, “আগেই বলেছি হোটেলের ব্যাপারে আমি কিছুই জানি না। কেন আমার সাথে এই ব্যাপারে কথা বলছ ঠিক বুঝতে পারছি না। তুমি ভালো ভাবে জানো আমি শ্বশুরের এই সব বিষয়ে একদম মাথা গলাই না।”
দেবায়ন, মেহেকের চোখের ওপর থেকে চোখ না সরিয়ে দৃঢ় শীতল কণ্ঠে বলে, “তুমি হবু মালিক হতে চলেছ। এটা ঠিক কথা না ভুল?”
মেহেক কপট হেসে জবাব দেয়, “শ্বশুর মশাই যা করবেন সেটা তাঁর ব্যাপার। আমি ছাড়া আরও দুই ছেলে আছে তাঁর।”
অনুপমা প্রশ্ন করে, “তোমার স্বামী, কতদিন হল গত হয়েছেন?”
মেহেকের গলার স্বর কঠিন হয়ে যায়, “হঠাৎ এই প্রশ্নের কি মানে?”
অনুপমা বলে, “তুমি চাকরি বাকরি কিছু করো না তাও এই বাড়ি কি ভাবে মেইনটেইন করছ?”
মেহেক একটু রেগে যায় অনুপমার প্রশ্ন শুনে, “সেটা তোমার জেনে দরকার?”
অনুপমা তির্যক হেসে বলে, “আমার দরকার শুধু এই জন্যে যে কি ভাবে ওই হোটেলের মালিকানা স্বতঃ আমি কিনতে পারবো।”
দেবায়ন মেহককে প্রশ্ন করে, “তুমি কি শুভম নামে কাউকে চেন?”
মেহেকের চেহারা হঠাৎ করে ফ্যাকাসে হয়ে যায়, কিন্তু বুদ্ধিদিপ্তা নারী চট করে নিজেকে সামলে নিয়ে জবাব দেয়, “কে শুভম? ওই নামে আমি কাউকে চিনি না। আর কেনই বা এই সব কথা আমাকে বলছ তুমি? আসলে কি চাই তোমাদের?”
অনুপমা হিম শীতল কণ্ঠে বলে, “হোটেলের মালিকানা চাই আর সেটার চাবি কাঠি তোমার হাতে। আমি তোমাকে ঠকিয়ে হোটেল চাইছি না, রীতিমতন টাকা দিয়ে কিনতে চাই হোটেল।”
এক সাথে দুই দিক থেকে প্রশ্নের বাণে জর্জরিত হয়ে মেহেক হাফিয়ে ওঠে। চোয়াল শক্ত হয়ে যায়, চেহারা লাল হয়ে যায়, “আমি বুঝতে পারছি না তুমি কি বলতে চাইছ।”
অনুপমা কিছু বলতে যায় কিন্তু দেবায়ন ওকে থামিয়ে হিম শীতল কণ্ঠে মেহেককে বলে, “দেখো মেহেক, আমরা তোমার ব্যাপারে আর মিস্টার রজতের ব্যাপারে আর শুভমের ব্যাপারে সব জানি।”
এবারে মোক্ষম অস্ত্র ছাড়ে অনুপমা, “আমি জানি তোমার সাথে মিস্টার রজতের অবৈধ সম্পর্ক আছে। নৈতিকতার কথায় যাবো না, কিন্তু তুমি সম্পর্কে মিস্টার রজতের বৌমা।”
মেহেক গর্জে ওঠে, “কি উল্টো পালটা বলছো! বেড়িয়ে যাও আমার বাড়ি থেকে না হলে আমি এখুনি পুলিস ডাকব কিন্তু।”
অনুপমা ট্যাবলেট খুলে ওর সামনে মিস্টার রজত আর মেহেকের সিসিলিতে তোলা বেশ কয়েকটা অন্তরঙ্গ ছবি দেখিয়ে বলে, “এর পরেও কি পুলিস ডাকতে চাও তুমি?”
ওই ছবি দেখে আতঙ্কে শিউরে ওঠে মেহেকের শরীর। চেহারা থেকে কেউ ওর সব রক্ত শুষে নিয়েছে। ঠোঁট কাঁপতে শুরু করে দেয়, কপালে ঘামের বিন্দু, গলা শুকিয়ে আসে মেহেকের। রক্ত চক্ষু থেকে চাহনি বদলে ভয়ার্ত রুপ নেয়। কম্পিত কণ্ঠে অনুপমা আর দেবায়নের দিকে তাকিয়ে বলে, “কি করে পেয়েছো এই ছবি?”
অনুপমা শীতল কণ্ঠে প্রশ্ন করে, “এটা সত্যি না মিথ্যে?”
নির্বাক মেহেক, কথা বলার শক্তি হারিয়ে মাথা নিচু করে বসে থাকে।
দেবায়ন সোফা ছেড়ে উঠে মেহেকের কাউচের পেছনে গিয়ে দাঁড়ায়। ওর কাঁধের কাছে হাত রেখে ঝুঁকে কানের কাছে ফিসফিস করে বলে, “আরো ছবি আছে আমাদের কাছে মেহেক। তোমার আর শুভমের গোয়ার অন্তরঙ্গ ছবি আছে। দেখতে চাও কি? একবার ভেবে দেখো মেহেক। তোমার আর মিস্টার রজতের ছবি পুলিসের হাতে চলে গেল আর তোমার স্বামীর মৃত্যুর বিষয়ে কেউ আবার ওদের কানে কিছু ফুসফুস করে বলে দিল। অথবা ওই ছবি গুলো নিউজিল্যান্ড আর লন্ডনে তোমার দুই দেওরকে পাঠিয়ে দিলাম। কি হবে তারপরে মেহেক? মিস্টার রজত কি করবে?”
শ্মশানের নিস্তব্ধতা নেমে আসে বসার ঘরে। শুধু মাত্র এসির শব্দ শোনা যায়। লাস্যময়ী মেহেকের চোখের কোল বেয়ে জল গড়িয়ে পরে। মাথা নিচু করে বারেবারে সেই জল মুছে নেয় কিন্তু অনুপমার দিকে তাকাতে সাহস পায় না। দেবায়নের ঠোঁটে ভেসে ওঠে এক ক্রুর হাসি, এবারে মাছ জালে ফেঁসে গেছে।
মেহেকের ফ্যাকাসে চেহারা আর চোখের জল অনুপমাকে একটু নাড়িয়ে দেয়, ওকে সান্তনা দিয়ে বলে, “শোনো মেহেক কেঁদো না। আমি তোমার ক্ষতি করতে এখানে আসিনি।”
দেবায়ন মেহেকের দুই কাঁধে আলতো হাতের চাপ দিয়ে আসস্ত কণ্ঠে বলে, “মেহেক আমরা শুধু এই টুকু চাই যে তুমি মিস্টার রজতকে রাজি করাও। আমাদের চূড়ান্ত অফার চল্লিশ শতাংশের জন্য ত্রিশ কোটি টাকা দিতে রাজি। এর পরেও তোমার কাছে কিন্তু হোটেলের ত্রিশ শতাংশ মালিকানা থেকে যাবে। আমি বিনা পয়সায় তোমাকে ঠকিয়ে তোমার হোটেল হাতিয়ে নিচ্ছি না। ভেবে নাও এটা তোমার বদনামের দাম আমাদের চুপ থাকার দাম।”
ডুকরে কেঁদে ওঠে মেহেক, “আমি কি ইচ্ছে করে ওর সাথে জড়িয়েছি?”
অনুপমা দেবায়নকে ইঙ্গিতে ফোনের রেকর্ডার চালু করতে বলে। মেহেক তার দুঃখের কাহিনী ওদের সামনে মেলে ধরে, “আমার শ্বশুর আমাকে টেনে নামিয়েছে এই বিপথে। আমার স্বামী আমাকে ঠিক ভাবে ভালবাসতে পারতো না, আর সেই সুযোগ নেয় আমার শ্বশুর। আমি কচি মেয়ে ছিলাম, যৌন খিদেতে জর্জরিত আমার পা পিছলে যায়, আর আমার শ্বশুর আমাকে সেই দেহের সুখ দেয়। তারপরে নিয়মিত আমাকে ওর বিছানা গরম করতে হয়। ওই রজত আমার শরীর একা ভোগ করার জন্য রাজেশকে পথ থেকে সরিয়ে দিয়েছে। হ্যাঁ, শরীরের খিদে মেটানোর জন্য আমি বিপথে গেছি আর বলতে পারো আমার স্বামীর মৃত্যুর জন্য একপ্রকার আমি দায়ী। কিছুদিন পরে বুঝলাম যে বুড়োর জ্বালা শুধু চোখের জ্বালা, আমার শরীর নিয়ে আরও কিছু করতে চায়। রাজেশ মারা যাবার পরে আমার শারীরিক চাহিদা বলে কিছু ছিল, রজত সেটা নিজের বিজনেসের কাজে লাগাল। আমি অবাধে অনেকের সাথে যৌন সঙ্গম করলাম, আর রজত হোটেল বিজনেস বাড়িয়ে নিল, সেই সাথে একটা গাড়ির শোরুম খুলে ফেলল। আর দিনে দিনে আমাকে টাকা দিয়ে সাজিয়ে দিল। আমাকে ভালোবাসার আর কেউ রইল না। কি না করেছি ওকে উত্তেজিত করার জন্য?! উলঙ্গ হয়ে ওর সামনে নেচেছি, বারান্দায় ব্রা প্যান্টি পরে দিনের বেলা দাঁড়িয়েছি, ওর সাথে পার্টিতে গেলে আমাকে ছোটো ড্রেস পরে যেতে হতো, আর নিচে প্যান্টি পড়তে দিত না, কখন কোন রেস্টুরেন্টে বসে আমার যোনির ওপরে হাত দিয়ে আমাকে উত্তেজিত করেছে কিন্তু বিছানায় এলেই পাঁচ মিনিটে শেষ হয়ে যায়। শেষ পর্যন্ত আমি ভালোবেসে ফেললাম একজন কে। চার বছর আগে একটা পার্টিতে গিয়ে শুভমের সাথে দেখা। খুব শান্ত শিষ্ট ভালো ছেলে। সেই রাতে আমি মদে চূড় হয়ে গেছিলাম, আমার শরীর হাতানর জন্য আশেপাশের মানুষ যেন উপচে পড়েছিল। শুভম আর তাঁর একজন বন্ধু আমাকে সেখান থেকে উঠিয়ে আমার ফ্লাটে পৌঁছে দিয়েছিল। তারপরে আমি শুভমের প্রেমে পরে যাই। হ্যাঁ হ্যাঁ আমি শুভমকে ভীষণ ভালোবাসি। কিন্তু এইসব রজত জানে না, জানলেই শুভমকে সরিয়ে দেবে অথবা আমার ছেলের ক্ষতি করবে। আমি এক প্রকার রজতের কেনা বাঁদী হয়ে আছি।”
কথা গুলো শুনতে শুনতে দেবায়নের মনে হলো যেন দ্বিতীয় পারমিতাকে চোখের সামনে দেখছে। অনুপমার হৃদয় শেষ পর্যন্ত নরম হয়ে যায় মেহেকের কথা শুনে।
ছলছল চোখে অনুপমা আর দেবায়নের দিকে তাকিয়ে বলে, “তোমরা আমার সাথে কি করতে চাও? আমাকে পুলিসে দিতে চাও না আমাকে রজতের সামনে উলঙ্গ করতে চাও?”
 
Like Reply
পঞ্চবিংশ পর্ব (#08)

অনুপমা মেহেকের হাত নিজের হাতের মুঠিতে নিয়ে বলে, “মেহেক তুমি কি চাও?”
অনুপমার হাতের ওপরে মেহেকের চোখের জল টপটপ করে পড়তে থাকে। দেবায়ন ওই চোখের জলে ভুলে যাওয়ার মতন মানুষ নয় তাই গর্জে ওঠে, “ওই কুমিরের কান্না আমার সামনে দেখিও না মেহেক। তুমি মিস্টার রজতকে রাজি করাবে সেটা……”
অনুপমা ওকে থামিয়ে দিয়ে শান্ত কণ্ঠে মেহেককে বলে, “তুমি কি চাও মেহেক?”
মেহেক ফুঁপিয়ে উঠে বলে, “আমি আমার অতীত ভুলে আমার ছোটো ছেলে নিয়ে এই বন্দিনী জীবন থেকে মুক্তি পেতে চাই। কিন্তু রজতের লোলুপ চোখ আমাকে তাড়িয়ে তাড়িয়ে বেড়ায়। সপ্তাহে তিন চার রাত ওর জন্যে ধরা বাঁধা, ওর গোলাম হয়ে থাকতে হয় আমাকে।”
অনুপমা জিজ্ঞেস করে, “শুভম কি বলছে? তোমাকে নিয়ে বেড়িয়ে যেতে পারে না কেন?”
মেহেক কাঁদতে কাঁদতে বলে, “ও খুব নিরীহ ভালো ছেলে তাই ওকে এই সব থেকে দুরে রেখেছি।”
অনুপমা বলে, “তুমি কি পারবে রজতের কাছ থেকে সাইন আদায় করতে?”
মেহেক চোখের জল মুছে কিছুক্ষণ ভেবে বলে, “আমি রজতের শেষ দেখতে চাই। তোমরা আমার পেছনে দাঁড়াবে?”
অনুপমা আর দেবায়ন মুখ চাওয়াচায়ি করে মেহেককে বলে, “তুমি যদি রজতকে খুন করতে চাও তাহলে কিন্তু আমরা তোমার সাথে নেই। আমরা খুনোখুনিতে কারুর সংগ দিতে নারাজ মেহেক। তোমাকে অন্য পন্থা অবলম্বন করতে হবে।”
মেহেক চিবিয়ে চিবিয়ে বলে, “খুব ইচ্ছে করে রজতকে খুন করি কিন্তু আমার পুত্রের জীবন ভেসে যাবে। তোমাদের চিন্তা নেই, কিন্তু আমাকে পাঁচ কোটি টাকা দিতে হবে।”
দেবায়ন ওর হাতে হোটেলের ফাইল তুলে দিয়ে হেসে বলে, “ঠিক আছে, তোমার নামে পাঁচ কোটি টাকা, তবে এই কাগজে রজতের স্বাক্ষর চাই। আর কোন চালাকি নয়, মেহেক।”
মেহেক ফাইলে হাত না দিয়ে চোখের জল মুছে বলে, “কাল দুপুরে তোমরা আমার ফ্লাটে এসো, আমি রজতকে এইখানে ডেকে নেব। ঘড়ির কাঁটা মিলিয়ে একদম দুটতে কলিং বেল বাজাবে। দু’বার বাজাবে তাহলে আমি বুঝে যাবো তোমরা এসেছ। বাকি আমার ওপরে ছেড়ে দাও, আমি ওকে নাচিয়ে দেব কালকে।”
অনুপমা হেসে বলে, “তোমার মাথা বেশ চলে।”
মেহেক অনুপমার হাত চেপে কানে কানে বলে, “মাথার চেয়ে আমার শরীর ওর কাছে বেশি চলে।”
দেবায়ন মেহেকের কথায় বিশ্বাস করতে পারে না। ওর ভিজে চোখের দিকে ভীষণ ভাবে তাকিয়ে বলে, “কোন চালাকি করতে চেষ্টা করো না মেহেক। পুনেতে আমার অনেক চেনাজানা আছে আর আমাদের কাছে তোমাদের ছবি আছে। যদি একটু এদিক ওদিক করেছ তাহলে এই সব ছবি কিন্তু তোমার দুই দেওরের কাছে পৌঁছে যাবে। আর সেই সাথে পুলিসের কাছে তোমার বয়ান চলে যাবে যে তুমি আর রজত মিলে রাজেশ কে হত্যা করেছ।”
মেহেক, অনুপমার দুই হাত ধরে কাতর কণ্ঠে বলে, “না না, এমন করো না প্লিস। আমি আমার একমাত্র পুত্রের নামে প্রতিজ্ঞা করছি কোন উলটো পাল্টা কিছু করব না। তোমরা কালকে এসো, আমি তৈরি থাকব রজতকে নিয়ে।”
অনুপমা ওকে শান্ত করে বলে, “ঠিক আছে মেহেক কাল আমরা দুপুরে আসবো। কিন্তু মেহেক তোমাকে পাঁচ কোটি টাকা এখুনি দেওয়া সম্ভব নয়। তোমাকে ত্রিশ পারসেন্ট দেব আবার পাঁচ কোটি, অনেক বেশি হয়ে গেল মেহেক।”
মেহেক চোখ টিপে মৃদু হেসে বলে, “না না, হোটেল পুরো তোমাদের হয়ে যাবে। রজত এমনিতেই ওর সত্তর পারসেন্ট আমাকে দিয়ে দিয়েছে শুধু মাত্র কাগজে স্বাক্ষর করেনি। আমার সত্তর পারসেন্ট তোমাকে দিয়ে দেব, তুমি শুধু আমাকে পাঁচ কোটি টাকা দিও, আমি আর শুভম এই সব ছেড়ে ক্যালিফোর্নিয়া চলে যাবো।”
অনুপমা প্রশ্ন করে, “ক্যালিফোর্নিয়া?”
মেহেক বলে, “শুভম কয়েকদিন আগে অফিসের কাজে ক্যালিফোর্নিয়া গেছে। ওখানে ওর এক বন্ধু আছে যে ওকে বলেছে ওখানে ওর চাকরি করিয়ে দেবে। রজত বেঁচে থাকতে আমি যদি দেশে থাকি তাহলে আমাকে ও শেষ করে দেবে। তাই দেশ ছেড়ে চলে যাবো এক ভিন্ন দেশে, আর সেখানে গিয়ে আমরা এক নতুন জীবন শুরু করব।”
অনুপমা বলে, “শুভম কি জানে এই বিষয়ে?”
মেহেক বলে, “শুভম একবার আমাকে বলেছিল এই কথা। এখান থেকে যদি তোমরা আমাকে বাঁচাতে পারো তাহলে আমি ওর সাথে কথা বলে নেব।”
দেবায়ন আর অনপমা মুখ চাওয়াচায়ি করে, মেহেকের কথায় ওদের ঠিক বিশ্বাস হয় না। কিন্তু মেহেক নিজের ছেলের নামে কথা দিয়েছে যে ও কোন কারচুপি করবে না।
দেবায়ন আর অনুপমা মেহেকের বাড়ি থেকে বেড়িয়ে পড়ে।
হোটেলে ফিরে দুইজনে জল্পনায় বসে, যদি মেহেক কিছু কারচুপি করে তাহলে ওদের সামনে কি কি পথ আছে খোলা। ওদের দুটো কস্ট্রাক্সান কোম্পানি এখানে আগেও কাজ করেছে, এখানের অনেক লোক, অনেক গুন্ডা ওদের চেনাজানা। দেবায়নের লোকবলের প্রয়োজন, যদি রজত কিছু উলটোপাল্টা পদক্ষেপ নেয় তাহলে এক যুদ্ধের জন্য তৈরি থাকতে হবে ওকে। দেবায়ন একজন চেনা কর্পোরেটরকে ফোনে জানায় যে ওর কিছু লোক প্রয়োজন। সংক্ষিপ্ত ভাবে কাজের বিবরন দেয় আর বলে দরকার পড়লে চড়াও হতে না হলে শুধু মাত্র পাশে দাঁড়াতে হবে। ওই কর্পোরেটর মিস্টার সেনকে চিনতেন তাই আর না করে না।
সারারাত দুইজনে আগামী দিনের উত্তেজনায় ঘুমাতে পারে না। সারা রাত জেগে নানা চিন্তা মাথার মধ্যে ভর করে আর ভাবে কি ভাবে নিজেদের বাঁচান যায় যদি ওরা কোন মুশকিলে পরে। শেষে দেবায়ন ঠিক করে যে অনুপমা ওপরে যাবে আর দেবায়ন নিচে বাকি লোকেদের সাথে দাঁড়িয়ে থাকবে। যদি অনুপমা মেহেকের বাড়িতে ঢোকার পরে ওকে দশ মিনিটের মধ্যে ফোন না করে তাহলে লোকজন নিয়ে দেবায়ন মেহেকের বাড়ি চড়াও করবে আর সেই সাথে পুলিসের কাছে যাবে। সব ঠিকঠাক করে শেষ রাতের দিকে ঘুমাতে যায় অনুপমা আর দেবায়ন।
ঠিক দুপুর বারোটা নাগাদ, লাঞ্চ সেরে মেহেকের বাড়ির উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে পড়ে। পথে বাকি লোকজন কে ডেকে নেয়। ওদের মার্সিডিজের পেছনে সার বেঁধে দুটো সাদা স্করপিও ভর্তি জনা দশেক লোক। অনুপমার বুক ধুকপুক করতে শুরু করে দেয়, কি হবে কি হবে সেই আশঙ্কায়। যদি মেহেক ওর কথা রাখে তাহলে কোন চিন্তা নেই কিন্তু সাবধানের মার নেই তাই আগে থেকে তৈরি হওয়া ভালো। দেবায়ন ওকে আসস্থ করে, অহেতুক চিন্তা করতে বারন করে। আশঙ্কা আর দুরন্ত উত্তেজনায় কাঁপতে শুরু করে অনুপমা, এটা যেন একটা নতুন অ্যাডভেঞ্চার ওর কাছে। নিয়মিত অফিসের কাজের চেয়ে এই উত্তেজনা ওকে বেশি উত্তেজিত করে তোলে। সারা রাস্তা দেবায়ন ওকে জড়িয়ে ধরে বসে থাকে।
ঠিক সময় মতন অনুপমারা পৌঁছে যায় মেহেকের ফ্লাটে। লিফট দিয়ে দশ তলায় চড়ে দুইজনে। দেবায়ন লিফটের কাছেই দাঁড়িয়ে থাকে আর অনুপমা এগিয়ে যায় মেহেকের ফ্লাটের দরজার দিকে। বুক ভরা শ্বাস নিয়ে একবার কলিং বেল বাজায়, একবার পেছন ফিরে ডেকে দেবায়নের দিকে। দেবায়ন ওকে সাহস দিয়ে দ্বিতীয় বার কলিং বেল বাজাতে বলে। অনুপমা দ্বিতীয় বার কলিং বেল বাজিয়ে দরজায় কান পেতে অপেক্ষা করে। দরজার ওপর পাশে পায়ের আওয়াজ শোনা যায়। অনুপমা ঘাড় ঘুরিয়ে দেবায়নকে দেখে ইশারায় জানায় যে কেউ আসছে আর দেবায়নকে লুকিয়ে যেতে অনুরোধ করে।
দরজা খুলে যায়। অনুপমা মেহেক কে দেখে অবাক হয়ে যায়। সুন্দরী লাস্যময়ী মেহেক একটা ছোটো ফিনফিনে স্লিপ পরে। স্তন জোড়া স্লিপের উপর থেকে ছলকে বেড়িয়ে এসেছে। স্তনের দিকে তাকাতেই অনুপমার শরীর ছনছন করে ওঠে, পীনোন্নত স্তন দুটো ওর দিকে উঁচিয়ে, স্তনের বোঁটা ফুলে রয়েছে আর পরিষ্কার ফুটে উঠেছে ফিনফিনে স্লিপের ভেতর থেকে। স্লিপের নিচে মেহেকের কমনীয় লাস্যময়ী অঙ্গ নিরাভরণ। ব্রা পরেনি, তাই স্তনের গাড় বাদামি বোঁটা দুটো পরিষ্কার দেখা যায় স্লিপের নিচে। নিচের দিকে চোখ যেতেই অনুপমা বুঝতে পারে যে মেহেক প্যান্টি ও পরেনি। দুই মসৃণ জানুর মাঝে কালো কুঞ্চিত কেশের গুচ্ছ চেখে অনুপমার শরীরে কামনার আগুন লাগে। অনুপমা যোনি শিক্ত হয়ে ওঠে সামনের লাস্যময়ী নারীর কমনীয় অঙ্গ দেখে। ওর কোমর পাতলা আর দুই পাছা সেই তুলনায় বেশ বড় আর থলথলে। মেহেকের শরীরের কামুকতা রন্ধ্রে রন্ধ্রে ফুটে উঠেছে। ঠোঁটে এক মন মোহিনী হাসি, চোখের তারায় কামনার আগুন আর শরীরের আনাচে কানাচে লেগে রয়েছে যৌনতা। ওর অবিন্যাস্ত চুল আর লাল গাল দেখে বোঝা যায় যে বাড়িতে মেহেক একা নয়, সাথে রজত আছে, আর দুইজনেই অন্তরঙ্গ শারীরিক সুখে মগ্ন ছিল।
মেহেক ওর দিকে চোখ টিপে ঠোঁটে আঙুল দিয়ে ইশারা করে চুপচাপ বসার ঘরে আসতে। বসার ঘরে ঢুকে দেখে যে সারা বাড়ির পর্দা নামানো, সারা বাড়িতে এক আলো আঁধারির খেলা চলছে যেন। মেহেক ওর চোখে কামনার আগুন দেখে চটুল হাসে আর ইশারায় জানায় যে ওর ঘরে রজত উলঙ্গ। দেবায়নের কথা জিজ্ঞেস করাতে অনুপমা ইশারায় জানায় যে ও সিগারেট খেতে নিচে গেছে, একটু পরে চলে আসবে। মেহেক ইঙ্গিতে জানিয়ে দেয় যে ও ঘরে ঢুকে দুই বার কাশলে যেন অনুপমা ঢুকে পড়ে।
এমন সময়ে ঘরের ভেতর থেকে রজত আওয়াজ দেয়, “কে এসেছে?”
মেহেক অনায়াসে বলে, “কেউ না। কেউ হয়ত ভুল করে কলিং বেল বাজিয়ে দিয়েছে।”
রজত বলে, “তোমার এত দেরি হচ্ছে কেন তাড়াতাড়ি এস?”
মেহেক বলে, “এই ডারলিং, এই আসছি জল খেয়ে।”
এই বলে মেহেক ফ্রিজ খুলে একটা জলের বোতল বের করে কিছুটা জল স্তনের ওপরে ছিটিয়ে দেয়। ভিজে স্লিপ স্তনের সাথে লেপটে যায় আর ওর দুই বড় বড় নরম স্তন সম্পূর্ণ অনাবৃতের মতন ফুটে ওঠে। অনুপমার শরীরের প্রতিটি ধমনী চঞ্চল হয়ে ওঠে। মেহেক ওর দিকে এক কামুকী হাসি দিয়ে স্তন নাড়িয়ে, পাছা দুলিয়ে শোয়ার ঘরে ঢুকে যায়। সোফায় বসে অনুপমা জানু চেপে ধরে, তলপেটের পেশিতে লেগেছে আগুন, সারা শরীর কামনার লেলিহান শিখায় জ্বলতে শুরু করে। চুপচাপ বসে দেবায়নকে এস.এম.এস করে জানিয়ে দেয় যে পথ পরিষ্কার।
কিছু পরে দেবায়ন এসে ঘরে ঢোকে আর অনুপমা ওকে ইশারায় জানিয়ে যে শোয়ার ঘরের মেহেকের মধ্যে খেলা শুরু হয়ে গেছে। কিছুপরে শোয়ার ঘর থেকে দুই বার কাশির আওয়াজ শুনে অনুপমা আর দেবায়ন উঠে দাঁড়ায়। ধীর পায়ে শোয়ার ঘরের পর্দা সরিয়ে ঘরের ভেতরে উঁকি মেরে দেখে যে, বিছানায় সামনের দিকে পা ছড়িয়ে উলঙ্গ হয়ে বুড়ো রজত আধা শোয়া। সুন্দরী মেহেক ওর দুই পায়ের মাঝে হাঁটু গেড়ে বসে, পাছা উঁচু করে মাথা নিচু করে রজতের অর্ধ শক্ত লিঙ্গ মুখের মধ্যে নিয়ে চুষছে। পাছার ওপর থেকে স্লিপ সরে গিয়ে মেহেকের দুই ফর্সা গোল নরম পাছা পেছন দিকে বেড়িয়ে এসেছে। দুই জানুর মাঝে ওর কুঞ্চিত কালো কেশে ঢাকা ফোলা যোনি দেখা যাচ্ছে। মেহেকের উলঙ্গ লাস্যময়ী দেহপল্লব আর রজতের লিঙ্গ চোষার দৃশ্য দেখে দেবায়নের পুরুষাঙ্গ মুহূর্তের মধ্যে কঠিন হয়ে যায়। আর অনুপমার যোনির ভেতরে তিরতির করে রসে ভরে যায়। নিজের অজান্তেই অনুপমা জানু চেপে ধরে আর বুকের কাছে হাত নিয়ে স্তন জোড়ার ওপরে আলতো বুলিয়ে আদর করে নেয়। ওর স্তনের বোঁটা ফুলে গেছে সামনের দৃশ্য দেখে। ওইদিকে বৃদ্ধ রজত, মেহেকের দুই স্তন হাতের মধ্যে নিয়ে টিপছে আর চোষার ফলে গোঙাচ্ছে।
অনুপমা মৃদু গলা খাঁকড়ে নিজেদের অস্তিতের জানান দেয় আর রজত ধরমরিয়ে ওঠে। চটুল মেহেক সেই সাথে ধড়মড়িয়ে উঠে গায়ের ওপরে চাদর ঢেকে দেয়। রজত কিংকর্তব্যবিমুড়ের মতন একবার মেহেকের দিকে তাকায় একবার দেবায়ন আর অনুপমার দিকে তাকায়। রজত অনুপমাকে চেনে না, কিন্তু দেবায়নের সাথে আগে দেখা হয়েছে, তাই ওকে চিনতে অসুবিধে হয় না।
বৃদ্ধ রজত আহত কণ্ঠে গর্জে ওঠে, “এ সবের মানে কি?”
মেহেকের চুলের মুঠি ধরে এক থাপ্পড় কষিয়ে দেয় নরম গালের ওপরে আর চেঁচিয়ে বলে, “তুই শালী রেন্ডি আমাকে ব্লাকমেল করতে চাস?”
দেবায়ন বিছানার পাশে এসে রজতের গলা চেপে ধরে বজ্র কঠিন কণ্ঠে বলে, “মিস্টার রজত পানিক্কর। তোমার অনেক রুপ দেখেছি, তোমার এই রুপ দেখে নিলাম এবারে।”
মেহেক নিজেকে রজতের কবল থেকে ছাড়িয়ে বিছানা থেকে উঠে দাঁড়ায়। রজতের দিকে কটমট করে তাকিয়ে বলে, “তোমাকে অনেক সহ্য করেছি রজত। বিগত দশ বছর তুমি আমার শরীর নিয়ে যথেচ্ছ খেলা করে গেছ, আর নয় রজত।”
রজত চেঁচিয়ে ওঠে মেহেককে গালাগালি দিতে শুরু করে, “তুই কামিনি রেন্ডি, তুই আমাকে ধোঁকা দিলি শেষ পর্যন্ত। তোকে টাকায় সাজিয়ে রেখেছিলাম। এই ফ্লাট, এই আসবাব পত্র, এই বিলাসিতা সব আমি তোকে দিয়েছিলাম, আর তুই কি না আমার সাথে……”
মেহেক কষিয়ে এক থাপ্পড় মারে রজতের গালে আর বলে, “তুই আমার রাজেশ কে মেরেছিস, নিজের ছেলেকে মেরেছিস আমার শরীর ভোগ করার জন্য। আমি পাগলি ছিলাম, শরীরের খিদের জন্য তোর সঙ্গ দিয়েছিলাম কিন্তু আর নয়। আমি একটু ভালোবাসা চাই, একটু বাঁচতে চাই আমার ছেলেকে নিয়ে আমি বাঁচতে চাই।”
রজত দেবায়নের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করে, “কি চাও তোমরা? আমার একটা ফোনে পুলিস, গুন্ডা সব এখানে চলে আসবে আর তোমাদের এখানে কেটে ফেলে দেবে।”
দেবায়ন অট্টহাসিতে ফেটে পরে, “মিস্টার রজত, আমি অতটা বোকা নই যে প্রস্তুতি ছাড়াই সাপের ঘরে হাত দেব। একবার জানালা দিয়ে নিচে চেয়ে দেখো। এই এরিয়ার কর্পোরেটর নিচে লোকজন নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। একটু বেগরবাই করলে ওরা উপরে উঠে আসবে আর তোমাকে এই অবস্থায় দেখে ফেলবে।”
রজত বিশ্বাস করতে পারে না দেবায়নের কথা তাই কোমরে একটা তোয়ালে জড়িয়ে জানালার কাছে গিয়ে নিচে দেখে। নিচে দুটো কালো স্করপিও গাড়ি আর অনেক লোকজন দেখে ওর সংশয় দূর হয়। বুড়ো রজত রাগে ক্ষোভে কাঁপতে কাঁপতে ধপ করে বিছানায় বসে পরে।
বৃদ্ধ রজত জালে জড়িয়ে ভেঙ্গে যায়। কাঁপা গলায় দেবায়নকে বলে, “কি চাই তোমাদের?”
দেবায়ন জবাব দেয়, “হোটেলের মালিকানা।” আর মেহেকের দিকে তাকিয়ে ইশারায় ফাইল আনতে বলে।
রজত ক্ষুব্ধ কণ্ঠে বলে, “আমার সবকিছু আমি দুই ছেলের নামে করে যাবো।”
মেহেক, বিছানার পাশের একটা ক্যাবিনেট থেকে একটা নীল রঙের ফাইল বের করে রজতের হাতে দিয়ে বলে, “অনেক লুকোচুরি খেলেছ আমার সাথে। বিগত দশ বছর ধরে আমার শরীর নিয়ে যথেচ্ছ খেলা করে গেছ। তুমি প্রত্যেক বার বল হোটেল আমার নামে করে দেবে কিন্তু আজ পর্যন্ত শুধু মাত্র কাগজ দেখিয়ে রেখে গেছ। এবারে এই কাগজে স্বাক্ষর কর।”
দেবায়ন চোয়াল শক্ত করে রজতের দিকে তাকিয়ে বলে, “মিস্টার রজত, চুপচাপ স্বাক্ষর করে দাও, না হলে ভিন্ন পথ অবলম্বন করতে আমি পিছ পা হব না।”
কাঁপা হাতে নীল ফাইল খুলে হোটেলের কাগজে স্বাক্ষর করে দেয় রজত পানিক্কর। বৃদ্ধ রজত, ক্ষুব্ধ হায়নার মতন তিনজনের দিকে তাকিয়ে আহত কণ্ঠে বলে, “তোমাদের সবাইকে আমি দেখে নেব।”
মেহেক ওই ফাইল অনুপমার হাতে তুলে দেয় আর চুপচাপ অনুপমার পেছনে এসে দাঁড়ায়।
দেবায়ন ওর ঘাড়ের পেছনে ধরে মাথা জোরে নাড়িয়ে দিয়ে বলে, “চুপচাপ এইবারে মেহেককে ছেড়ে এখান থেকে বেড়িয়ে যাও। ভবিষ্যতে যদি মেহেকের পেছনে লেগেছ তাহলে তোমার নিস্তার নেই। নিজের বড় ছেলেকে খুন করেছ শুধু মাত্র বৌমার শরীরের লোভে, নরকেও তোমার জায়গা হবে না মিস্টার রজত পানিক্কর।”
ফাইল খুলে দেবায়ন একবার কাগজ ঠিক ভাবে দেখে নেয়। মেহেকের স্বাক্ষর আগে থেকেই ওই কাগজে করা ছিল, সেই সাথে রজতের স্বাক্ষরের সাথে সাথে হোটেলের সত্তর শতাংশের মালিক হয়ে যায় মেহেক। রজত চুপচাপ, নিজের জামা কাপড় পরে আহত শেয়ালের মতন একপ্রকার টলতে টলতে ঘর ছেড়ে বেড়িয়ে যায়।
এতক্ষণ যেন ঘরে একটা যুদ্ধ হয়ে গেছে। মেহেকের ঠোঁটে মুক্তির হাসি আর বিজয়ীর হাসি ফুটে ওঠে দেবায়ন আর অনুপমার ঠোঁটে। মেহেকের পরনে তখন ভিজে স্লিপ। এতক্ষণ ঠিক ভাবে মেহেককে দেখেনি দেবায়ন। মেহেকের হাসির ফলে ওর দুই ভারী স্তন নড়ে ওঠে আর সেই সাথে স্তন বিভাজিকা স্লিপ ছেড়ে বেড়িয়ে আসে। মেহেক নিজের উন্মুক্ত লোভনীয় শরীর ঢাকার বিশেষ তাড়া দেখায় না।
সারা অঙ্গে ছন্দ তুলে, দেবায়ন আর অনুপমার দিকে তাকিয়ে হেসে বলে, “বাপরে একটা ঝড় গেল মনে হচ্ছে।”
তারপরে কিঞ্চিত চিন্তামগ্ন হয়ে বলে, “কিন্তু আমার ভয় করছে এখানে থাকতে। রজত যদি আমার সাথে অথবা আমার ছেলের সাথে কিছু করে?”
দেবায়ন ওকে আশ্বস্ত করে বলে, “যতদিন না তুমি ক্যালিফোর্নিয়া যেতে পারছ ততদিন জন্য আমি কর্পোরেটরকে বলে যাবো তোমার ওপরে নজর রাখতে।” এরপরে ফাইল দেখিয়ে বলে, “এর ট্রান্সফার কাগজ হাতে না পেলে আমি তোমাকে পাঁচ কোটি দেব না কিন্তু।”
মেহেক একটু ভেবে জবাব দেয়, “আমাকে এই রজতের কবল থেকে মুক্তি দেওয়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ। আমাকে আজ রাতেই এই ফ্লাট ছাড়তে হবে কারন এই ফ্লাট রজতের। আমার ছেলে কলেজ থেকে ফিরলেই ভাবছি আজ রাতেই ছেলেকে নিয়ে পুনে ছেড়ে মান্ডি চলে যাবো আমার এক বান্ধবীর কাছে। ওর ঠিকানা আমি তোমাকে দিয়ে যাবো। তুমি ট্রান্সফারের কাগজ পত্র তৈরি করে আমার কাছে চলে এসো আমি স্বাক্ষর করে দেব।”
অনুপমা মেহেকের সাথে হাত মিলিয়ে বলে, “এবারে আমাদের যাওয়া উচিত, মেহেক। তোমাকেও অনেক ধন্যবাদ আমাদের সাহায্য করার জন্য।”
মেহেক অনুপমাকে জড়িয়ে ধরে এক দুষ্টু মিষ্টি বলে, “মিষ্টি মুখ না করেই এমনি এমনি চলে যাবে।” অনুপমার হাত দুটি ধরে বিছানায় বসিয়ে বলে, “এত সুন্দরী একটা বান্ধবী পেলাম এত তাড়াতাড়ি এমনি এমনি ছেড়ে দেব না।”
অনুপমা আর দেবায়ন মুখ চাওয়াচায়ি করে। মেহেকের হাবভাব দেখে অনুপমার সন্দেহ জাগে, ওর মাথায় সত্যি অন্য কিছু নেই তো? হয়তো ওর সাথে শরীরের খেলায় মেতে উঠলো, আর অন্য কেউ এসে ওদের খুন করে অথবা আঘাত করে চলে গেল।
দেবায়ন, মেহেককে বলে, “সন্ধ্যের সময়ে একজনের সাথে দেখা করার আছে তাই আমাদের যাওয়া উচিত।”
মেহেক বুঝতে পারে যে দেবায়ন আর অনুপমা ওকে ঠিক মতন বিশ্বাস করতে পারছে না। মেহেক অনুপমার হাতে হাত রেখে চেপে ধরে বলে, “এখনও আমাকে অবিশ্বাস? সত্যি কি একটু বিশ্বাস আমাকে করতে পারো না?”
দেবায়ন ইচ্ছে ছিল এই নধর গোলগাল মেহেকের সাথে সঙ্গমে লিপ্ত হওয়া, কিন্তু মনের মধ্যে এক সংশয়। অনুপমার চোখেও বসন্তের মিলনের আগুন। মেহেকের নগ্ন লোভনীয় অঙ্গ প্রত্যঙ্গ দেখে দেবায়নের পুরুষাঙ্গ অনেকক্ষণ ধরেই দাঁড়িয়ে। দেবায়ন অনুপমার দিকে দেখে ইশারায় জানায় যে ওর অবস্থা খারাপ। তাড়াতাড়ি হোটেলে ফিরে অনুপমার সাথে সঙ্গম না করলে ওর পুরুষাঙ্গ ফেটে যাবে।
অনুপমা আলতো করে মেহেককে জড়িয়ে ধরে বলে, “আজ রাতে আর কোথায় যাবে মেহেক? আজকে এখানে কোথাও থেকে যেও। যদি মিষ্টি মুখ করাতে চাও, তাহলে সন্ধ্যের পরে আমাদের রুমে চলে এসো। এখন সত্যি আমাদের এক জায়গায় যাওয়ার আছে। এখানে কাজে এসেছি মেহেক।”
অনুপমা বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়ায়। দেবায়নের লোলুপ দৃষ্টি বারেবারে মেহেকের শরীরের আনাচেকানাচে ঘুরে বেড়ায়। প্রচন্ড গোলগাল আর মাংসল শরীর মেহেকের। অনুপমা যেমন একটি সুন্দর নরম গোলাপ, তেমনি মেহেকের শরীর যেন বড় ডালিয়া ফুলের মতন। দুই নারীকে একসাথে এক বিছানায় সঙ্গমের কথা ভাবতেই দেবায়নের লিঙ্গ দাঁড়িয়ে যায়। কিন্তু সংশয়ের জন্য মেহেকের আহবানে সাড়া দিতে পারে না ওরা দুইজনে। বেশ চালাকি করেই অনুপমা ওকে হোটেলে আসতে বলেছে। হোটেলের রুমে, একা মেহেক বিশেষ কিছু করতে পারবে না।
মেহেকের বাড়ি থেকে দুইজনে বেড়িয়ে আসে। গাড়িতে বসতেই, অনুপমা হাসিতে ফেটে পরে। প্যান্টের ওপর দিয়েই কঠিন পুরুষাঙ্গ চেপে ধরে বলে, “উমমমম, মেহেক একদম টসটসে মাল। তোর দেখি প্যান্ট ছোটো হয়ে গেছে ওকে দেখে।”
দেবায়ন ওকে জড়িয়ে গালের ওপরে নাক ঘষে বলে, “হ্যাঁ রে একদম রসে টইটম্বুর, তবে তোর চেয়ে একটু কম। যদি রাতে রুমে আসে তাহলে মন ভরে ওকে লাগানো যাবে।”
উত্তেজিত অনুপমা মিহি কণ্ঠে বলে, “উম্মম্ম…… বড় সেক্সি মেয়ে। ওর ফোলা নরম স্তন জোড়া দেখেই আমি পাগল হয়ে গেছিলাম। মনে হচ্ছিল চটকে দেই ওইখানে।”
দেবায়ন বলে, “ও যখন রজতের লিঙ্গ চুষছিল তখন ওর গোলগাল তুলতুলে পাছার ওপরে চাটি মারতে ইচ্ছে করছিল আর পাছার খাঁজে মুখ গুঁজে ওর যোনি চুষতে ইচ্ছে করছিল। ওকে দেখে মনে হচ্ছিল যেন পায়েল। ঠিক পায়েলের মতন বড় বড় নরম তুলতুলে পাছা, দোদুল্যমান দুই দুধ, আর দুধের ওপরে বড় বড় শক্ত বোঁটা।”
অনুপমা দেবায়নের লিঙ্গের ওপরে চাপ বাড়িয়ে বলে, “আমার ওই দুধ জোড়া চুষে খেতে বড় ইচ্ছে করছিল। যখন হাঁটছিল তখন বেশ দুলে উঠছিল ওর দুধ জোড়া আর ওর পাছা বেশ দুলছিল দুপাশে। উম্মম আর বলিস না মনে হচ্ছিল যে ওর নরম শরীরটা হাতের মধ্যে পেলে একেবারে চটকে খেয়ে ফেলি।”
দেবায়ন সমানে অনুপমার যোনির ওপরে আঙুল ঘষে আর বলে, “আজকে তোকে আমি কামড়ে চটকে শেষ করে দেব রে পুচ্চিসোনা।”
ওরা ভুলে যায় যে সামনের সিটে ড্রাইভার বসে। অনুপমা ওর গালে ঠোঁটে চুমু খেতে খেতে মিহি কণ্ঠে বলে, “করে যা সোনা করে যা। আমার আমার প্যান্টি ভিজে উঠেছে। আমার প্যান্টি যে কয়বার ভিজে শুকিয়ে ভিজে গেছে তার ইয়াত্তা নেই। কতবার যে ভেসেছি মনে নেই।”
দেবায়ন ওর জানুমাঝে হাত দিয়ে যোনির ওপরে চাপ দিতেই অনুপমা লাফিয়ে ওঠে। জানু মেলে হাতের ওপরে যোনিদেশ চেপে ধরে মিহি কণ্ঠে বলে, “রুমে গিয়েই আমাকে ভাসিয়ে দিস, আমি কিন্তু আর থাকতে পারছি না।”
দেবায়ন ওর গাল কামড়ে, যোনির ওপরে হাত ঘষতে ঘষতে ফিসফিস করে বলে, “সামনে ড্রাইভার না থাকলে এখানেই তোকে লাগিয়ে দিতাম।”
 
Like Reply
পঞ্চবিংশ পর্ব (#09)

পেছনের সিটে বসে লুকিয়ে লুকিয়ে পরস্পরের দেহের সাথে খেলতে খেলতে, হোটেল চলে আসে। কোনোরকমে হোটেলের রুমে ঢুকেই দুইজনে উলঙ্গ হয়ে পরস্পরের শরীরের ওপরে ঝাঁপিয়ে পরে। চোখের সামনে দাঁড়িয়ে মেহেকের উলঙ্গ লাস্যময়ী নধর দেহ। অনুপমার যৌন উত্তেজনা তুঙ্গে উঠে যায় আর সেই সাথে দেবায়নের। দুই মত্ত সাপের মতন পরস্পরকে পেঁচিয়ে ধরে সঙ্গমে লিপ্ত হয়। দেহের খেলা শেষে দেবায়ন আর অনুপমা জড়াজড়ি করে শুয়ে থাকে।
ঠিক সেই সময়ে মিস্টার কার্তিকেয়নের ফোন আসে। উটি হোটেলের এইচ.আর মিস্টার কার্তিকেয়নের সাথে ওদের দেখা করার কথা ছিল। কার্তিকেয়নকে জানিয়ে দেয় যে বিকেল পাঁচটা নাগাদ হোটেলের কফি শপে চলে আসতে।
পাঁচটা নাগাদ অনুপমা আর দেবায়ন, মিস্টার কার্তিকেয়নের সাথে দেখা করে। মিস্টার কার্তিকেয়ন জানায় যে উটির হোটেলে নতুন কোন লোক নিযুক্ত করা হচ্ছে না। লোকের অভাবে হোটেলের অকুপেন্সি দিনে দিনে কমে এসেছে আর অনেক ক্ষতি হচ্ছে মিস্টার পারিজাতের। মিস্টার পারিজাত রোজ দিন ওকে তাগাদা দেয় নতুন লোক খোঁজার কিন্তু দেবায়নের কথা মতন ইচ্ছে করেই নতুন লোক নিযুক্ত করছে না। একটা কোয়ার্টার কেটে যাবে, কিন্তু আগামী কোয়ার্টারে হয়ত ওকে ছাড়িয়ে দেবে। মিস্টার কার্তিকেয়ন সংশয় জানায় যে এই ভাবে চললে কিছু দিনের মধ্যে মিস্টার পারিজাত ওকে বের করে দিতে পারে। দেবায়ন জানিয়ে দেয় যে যদি মিস্টার পারিজাত ওকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করে তাহলে ওকে পুনের হোটেলে নিযুক্ত করা হবে। দেবায়ন আরও জানায় যে পরের দিন ওরা কোয়েম্বাটুর যাবে, আর তারপরের দিন ওরা উটি যাবে মিস্টার পারিজাতের সঙ্গে দেখা করতে। দেবায়ন কারতিকেয়ন কে আসস্থ করে বুঝিয়ে সুঝিয়ে পাঠিয়ে দেয়।
রুমে ফিরে এসে দেবায়ন অনুপমাকে বলে, “আমার মনে হয় না মেহেক আসবে, কারন মেহেক বলেছিল যে আজ রাতেই ছেলেকে নিয়ে পুনে ছেড়ে চলে যাবে।”
অনুপমা ওর গলা জড়িয়ে হেসে বলে, “খুব ইচ্ছে করছে না ওই টসটসে মালটাকে ভোগ করতে?”
দেবায়ন ওকে জড়িয়ে ধরে, নাকে নাক ঠেকিয়ে বলে, “উম্মম্ম হ্যাঁ তা একটা ইচ্ছে ছিল। ওই রকম নরম তুলতুলে মাল পায়েল ছাড়া আর কই পেলাম। এখন পায়েলের যা অবস্থা, তাতে ওর সাথে খেলা করা অসম্ভব ব্যাপার।”
অনুপমা ওর গাল কামড়ে ধরে বলে, “পায়েলের দিকে একদম নজর দিবি না। ভাইয়ের বৌ বলে কথা।”
কথা বলেই হেসে ফেলে অনুপমা, “আজকাল রোজ রাতে পায়েল আর অঙ্কন একসাথে রুমে থাকে।”
দেবায়নের চোখ বড়বড় হয়ে যায় সেই শুনে। অনুপমা হেসে বলে, “মা সব জানে। মাকে জিজ্ঞেস করলে বলে, বাড়ির হবু বৌমা, বেশি আর কি হবে ওদের বিয়ের আগেই হয়ত নাতি নাতনির মুখ দেখবে।”
দেবায়ন আর অনুপমা দুইজনেই অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে। ওদের হাসি হিল্লোল থমকে যায় দরজায় ঠকঠক আওয়াজ শুনে। অনুপমা দরজার আই হোলে চোখ রেখে দেখে যে দরজার বাইরে মেহেক দাঁড়িয়ে। ঠোঁট কামড়ে হসি সামলাতে পারে না অনুপমা। দেবায়নকে ইশারায় কাছে ডেকে কানে কানে বলে যে, মেহেকের প্রচুর চুলকানি ঠিক এসে গেছে রুমে। দরজা খুলতেই অনুপমা আর দেবায়ন থমকে যায়। মেহেকের সাথে একটা ছোটো ছেলে।
মেহেক সাথের বাচ্চাটার সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়, “আমার পুত্র, গৌরব। ক্লাস ফোরে পরে।”
দুপুরের মেহেক এক কামনার নারী, সুন্দরী আর চূড়ান্ত লাস্যময়ী ছিল, কিন্তু সামনে দাঁড়ানো মেহেকের রুপ ভিন্ন। একটা পাতলা নীল শাড়ি শরীরে জড়ানো, ছোটো হাতার ব্লাউজ গায়ে, কপালে টিপ ঠোঁটে লাল রঙ চোখের কোণে কাজল। সামনে দাঁড়ানো মেহেক এক মাতৃময়ীর প্রতিরূপ।
অনুপমা আর দেবায়ন দরজা ছেড়ে ওদের ভেতরে আসতে বলে। মেহেকে জানায় যে ওকে আজ রাতেই ফ্লাট ছাড়তে হতো, কারন ওই ফ্লাট রজতের নামে। ওর ভয়, রাতে যদি রজত লোকজন নিয়ে এসে ওদের ওপরে হামলা করে তাই নিজের জিনিস পত্র গুছিয়ে এই হোটেলেই উঠেছে। সকাল হলে পুনে ছেড়ে চলে যাবে আর একটা রাত নিজের মুক্তির স্বাদ নিতে চায় ওদের সাথে। দেবায়ন জিজ্ঞেস করে শুভমের কথা। মেহেক জানায় যে শুভম কাজের জন্য ক্যালিফোর্নিয়া গেছে, কিছুদিনের মধ্যে দেশে ফিরে আসবে। তারপরে চাকরি নিয়ে ওরা দুইজনে ক্যালিফোর্নিয়া চলে যাবে চিরতরে। শুভম ওর ছেলেকে ভীষণ ভালোবাসে। ত্রিশের মতন বয়স হলেও শুভম অনেক নিরীহ গোচরের ছেলে, আর সেইজন্য মেহেক ওকে এই সবের মধ্যে টানেনি। মেহেক আরও জানায় যে মান্ডিতে ওর বান্ধবী ওকে মাস তিনেক রাখতে রাজি হয়েছে। ওর হাতে যা পয়সা আছে তাতে মাস তিনেক চলে যাবে। অনুপমা বলে যে ওকে আপাতত দুই তিন লাখ টাকা দিতে পারে। একবার হোটেল হাতে চলে এলে পাঁচ কোটি টাকা ওর একাউন্টে দিয়ে দেবে। অনুপমার কথা শুনে মেহেক স্বস্তির শ্বাস নেয় আর বারেবারে ওদের ধন্যবাদ জানায় ওকে রজতের কবল থেকে বাঁচানোর জন্য।
ছোটো গৌরব মায়ের দিকে তাকায় একবার আরেকবার অনুপমার দিকে তাকায়। অঙ্কন যখন ছোটো ছিল, তখন ঠিক গৌরভের মতন দেখতে ছিল। গৌরভকে দেখে অনুপমার বড় মায়া হয়। অনুপমা জানিয়ে দেয় যে কোলকাতা ফিরেই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ওরা ট্রান্সফারের কাগজ তৈরি করে মেহেকের স্বাক্ষর নিতে চলে আসবে।
মেহেক মিচকি হেসে ওদের বলে, “দশ বছর পরে রজতের কবল থেকে মুক্তি পেয়েছি। আজ রাত আমি প্রান খুলে আনন্দ করতে চাই নাচতে চাই হাসতে চাই। তোমরা ডিনার ড্রিঙ্কসের অর্ডার দাও, আজকের রাতের বিল আমি দেব।”
অনুপমার কানে ফিসফিস করে চোখ টিপে বলে, “আমি ছেলেকে ঘুম পাড়িয়ে তোমাদের রুমে চলে আসছি তারপরে সারা রাত মজা করব। তোমার মিস্টাররে মতন অত ঋজু আর শক্ত পোক্ত আমার শুভম নয়।”
অনুপমা মিচকি হেসে উত্তরে জানায়, “আমার মিস্টারের কি দেখলে যে এত বাহবা দিচ্ছ?”
মেহেক চোখ ছোটো ছোটো করে দেবায়নের দিকে তাকিয়ে মিচকি হেসে বলে, “ওর চোখ দেখে অনেক কিছু বুঝেছি। তোমরা দুইজনে মিলে আমাকে যেমন ভাবে গিলছিলে মনে হচ্ছিল যেন ওইখানে আমাকে রেপ করছ।”
সবাই হাসিতে ফেটে পড়ে। দেবায়ন ফোন তুলে চারটে ভদকার অর্ডার দেয় আর সেই সাথে নিজের জন্য দুটো বড় স্কচ। মেহেক জানায় যে পুনেতে খুব ভালো সি ফুড একজায়গায় পাওয়া যায়। সেখান থেকে অর্ডার দেওয়া যেতে পারে। সেখানে ফোন করে স্কুইড আর লবস্টারের অর্ডার দেয় রাতের খাবার জন্য। গল্পে আর হাসাহাসিতে ওরা সবাই মেতে ওঠে। রাত যত গভীর হয়, তিনজনের রক্তের চঞ্চলতা বেড়ে ওঠে। সবার চোখে কামনার খিদে, সবাই সবার সান্নিধ্য পেতে চায়, কিন্তু বাচ্চা ছেলেটা না ঘুমিয়ে পড়া পর্যন্ত কিছু করা যাচ্ছে না। ডিনার আগেই চলে আসে। ডিনার সেরে গৌরবকে খাইয়ে ওর রুমে নিয়ে যায় ঘুম পাড়ানোর জন্য। যাওয়ার আগে অনুপমার গাল টিপে আদর করে বলে তৈরি হয়ে থাকতে।
মেহেক বেড়িয়ে যাওয়ার পরেই দেবায়ন লাফিয়ে ওঠে, “উফফফফফফ মাল, ভেতরে রস একেবারে ফুটছে মেহেকের!”
আসন্ন রাতের খেলার কথা ভেবেই অনুপমার বুকের রক্ত চঞ্চল হয়ে ওঠে। মেয়েলি স্বাদ নিতে ওর বেশ ভালো লাগে। দেবায়নের দিকে কামুকী হেসে বলে, “তোর এখন থেকেই খাড়া হয়ে গেছে মনে হচ্ছে!”
প্যান্ট খুলে নিজের শক্ত লিঙ্গ অনুপমার সামনে নাচিয়ে বলে, “এত শক্ত হয়ে গেছে যে তুই ওর ওপরে বসে থাকতে পারিস।”
অনুপমা ওর লিঙ্গের ওপরে ছোট্ট চাঁটি মেরে বলে, “সামলে রাখ, এক রাতে দুইজনকে সামলাতে হবে। মেহেক মনে হচ্ছে বেশ তৃষ্ণার্ত। অনেকদিন মনে হয় পাকা পোক্ত লিঙ্গ ওর যোনিতে ঢোকে নি।”
দেবায়ন ওর হাতখানা পুরুষাঙ্গের ওপরে চেপে ধরে বলে, “বিকেলেই তোর গ্যারেজে গাড়ি ঢুকিয়েছি, এইবারে মাল পড়তে দেরি হবে। চিন্তা নেই তোদের দুইজনকে একসাথে ফেলে সারা রাত সঙ্গম করতে পারব।”
অনুপমা একটা পাতলা স্লিপ হাতে নিয়ে বাথরুমে ঢুকে পরে। দেবায়ন জামা কাপড় ছেড়ে শুধু একটা বারমুডা পরে পানীয়ের জন্য অপেক্ষা করে। কিছু পরে রুম সার্ভিস এসে ওদের ড্রিঙ্কস দিয়ে চলে যায়। ততক্ষণে অনুপমা পোশাক বদলে স্লিপ পরে বাথরুম থেকে বেড়িয়ে আসে। ব্রা পড়েনি তাই ওর গোলগাল নরম স্তন জোড়া দুলতে থাকে সামনের দিকে। আসন্ন যৌন খেলার উত্তেজনায় ওর স্তনের বোঁটা দুটো ইতিমধ্যে ফুটে উঠেছে স্লিপের নিচে। নিচে একটা ছোটো প্যান্টি পড়েছে কেননা স্লিপ বেশ ছোটো, ঠিক পাছার নিচে এসে শেষ হয়ে গেছে ওর স্লিপ।
ওদের রুমের দরজা ভেজান ছিল, কারন ওরা মেহেকের অপেক্ষা করছিল। কিছু পরে মেহেক এসে রুমে ঢোকে। মেহেককে দেখে দেবায়নের লিঙ্গ টানটান হয়ে যায়। শাড়ি ছেড়ে মেহেক একটা হাল্কা নীল রঙের হটপ্যান্ট পড়েছে। চাপা হট প্যান্ট ওর নিম্নাঙ্গের সাথে লেপটে গেছে। দুই জানুর মাঝে ওর ফোলা নরম যোনিদেশ, তার আকার অবয়ব পরিষ্কার ফুটে উঠেছে। উর্ধাঙ্গে একটা ছোটো নীল রঙের টপ। বুকের দিকে দেখেই বোঝা যায় যে নিচে ব্রা পড়েনি। টপের কাপড় ফুঁড়ে ওর স্তনের বোঁটা দুটো ওদের দিকে উঁচিয়ে রয়েছে। মেহেকের নরম তুলতুলে পাছা দেখে দেবায়নের খুব চুমু খেতে ইচ্ছে করলো, মনে হল যেন এখুনি দুই থাবায় কচলে দেয় ওর দুই নরম থলথলে বড় বড় পাছা।
মেহেককে দেখে অনুপমা কাউচ ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে ওকে জড়িয়ে ধরে, আর ভেতরে আসতে বলে। মেহেক আর অনুপমা ভদকার গ্লাস হাতে নিয়ে বিছানার ওপরে বসে পড়ে। চোখের সামনে দুই লাস্যময়ী নারীর উন্মুক্ত কমনীয় দেহপল্লব দেখে দেবায়নের পুরুষাঙ্গ দাঁড়িয়ে যায়। বারমুডার নিচে বারেবারে নড়েচড়ে ওঠে। মেহেক আর অনুপমা দুইজনে গ্লাসে একটা ছোটো চুমুক দিয়ে দেবায়নের দিকে আর চোখে তাকায়।
মেহেক ওদের একটা লাস্যময়ী হাসি দিয়ে বলে, “তোমরা আমার চেয়ে অনেক ছোটো তাও তোমাদের সাথে কেমন যেন অন্তরঙ্গ হতে ইচ্ছে করছে।”
অনুপমা মেহেকের গালে আলতো চুমু খেয়ে বলে, “তোমার এমন কিছু বয়স হয়নি। তুমি এখন অনেকের মাথা ঘুরিয়ে দিতে পারো।”
মেহেক অনুপমাকে জড়িয়ে গালে গাল ঠেকিয়ে বলে, “তুমি ভারী মিষ্টি মেয়ে। এত কম বয়সে এত সব করো কি করে? মানে এই বিজনেস, কোম্পানি এই সব?”
অনুপমা হেসে জবাব দেয়, “ওই সব ছাড়ো, এখন মজা করার সময়। মদ খেয়ে নাচার সময়। তোমার কথা শুনি।”
মেহেক বলে, “আমার কথা অন্যদিন হবে।” অনুপমার গালে ভিজে ঠোঁটের একটা চুমু খেয়ে বলে, “তুমি না ভারী মিষ্টি। আর তোমরা যেমন ভাবে আমার দিকে তাকিয়ে ছিলে বিশেষ করে তোমার মিস্টার সেইক্ষণে বুঝে গেছিলাম যে তোমরা আমাকে চাও। মানে আমিও তোমাদের দেখে বেশ উত্তেজিত হয়ে গেছিলাম তাই তোমাদের বিকেলে থাকতে বলেছিলাম।”
অনুপমা ওকে বুঝতে দেয় না ওদের মনের সংশয়, তাই উত্তরে বলে, “না মেহেক, আমাদের একটা খুব জরুরি কাজ ছিল, তাই চলে আসতে হল। নাহলে সত্যি বলছি, আমার খুব ইচ্ছে করছিল তোমার এই সেক্সি নরম শরীর নিয়ে খেলার।”
মেহেক অনুপমার স্তনের ওপরে আলতো হাত বুলিয়ে বলে, “তোমার মিস্টার বেশ তোমাকে আদর করে তাই না?”
অনুপমা ঠোঁট চেপে দেবায়নের দিকে তাকিয়ে চটুল হেসে বলে, “আমার মিস্টার অনেক কিছুই করে। আজ রাতে দেখতে পাবে।”
মেহেক দেবায়নের পুরুষাঙ্গের ওপরে নজর দিয়ে বলে, “হ্যাঁ সেটা দেখতে পাচ্ছি। এর মধ্যেই তাল গাছ হয়ে গেছে। বেড়িয়ে এলে কি হবে?”
দেবায়ন ওদের দেখে আর থামতে পারে না, হুইস্কির গ্লাসে চুমুক দিয়ে একটা সিগারেট ধরায়। চোখের সামনে দুই লাস্যময়ী নারীর কথাবার্তা আর শরীরের খেলা দেখে দেবায়নের অবস্থা সঙ্গিন। প্যান্টের সামনেটা দাঁড়িয়ে গেছে তাঁবুর মতন। প্যান্টের ভেতরের কঠিন লিঙ্গের দীর্ঘ আর আকার ওপর থেকেই বেশ বোঝা যাচ্ছে। বিশাল লিঙ্গের আকার অবয়াব দেখেই মেহেক অস্থির আর সেই সাথে অনুপমার রক্ত চনমনে হয়ে উঠেছে আসন্ন রতি খেলার জন্য।
শুরু করতে হলে দেবায়ন আর অনুপমাকে শুরু করতে হবে, তাহলে মেহেক একটু স্বাভাবিক হতে পারবে। দেবায়ন কাউচ ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে অনুপমাকে টেনে বিছানা থেকে নামায়।
অনুপমা জিজ্ঞেস করে, “এই কি করছিস?”
দেবায়ন ওর কোমর জড়িয়ে কাছে টেনে বলে, “বউকে একটা চুমু খাবো।”
মেহেক হেসে বলে, “তোমার মিস্টার আজ রাতে তোমাকে খুব আদর করবে। প্যান্টের ভেতরে যা একটা বিশাল যন্ত্র রেখেছে সেটা দেখে আমি ভিরমি খাবার জোগাড়।”
ওর কথা শুনে দেবায়ন আর অনুপমা দুইজনে হেসে ওঠে। মেহেকের দিকে হাত নাড়িয়ে অনুপমা ঠোঁট চেপে হেসে বলে, “ইচ্ছে থাকলে স্বাদ নিতে পারো। আমার সামনে করলে কোন অসুবিধে নেই।”
মেহেক একটা কামুকী হসি দিয়ে জিজ্ঞেস করে, “তোমার সামনে তোমার মিস্টার আমার সাথে সঙ্গম করবে আর তোমার মনের মধ্যে কিছু হবে না?”
অনুপমা দেবায়নের চোখে চোখ রেখে ঠোঁটে একটা চুমু খেয়ে বলে, “বুকের জায়গাটা আমার থাকলেই হল।” দেবায়নের কঠিন লিঙ্গ হাতের মুঠির মধ্যে নিয়ে আলতো নাড়িয়ে বলে, “যাদের আমার ভালো লাগে তাদের সাথে এটা আমি মাঝে মাঝে ভাগ করে নিতে রাজি আছি।”
মেহেক চোখ বড় বড় করে প্রশ্ন করে, “কত জনের সাথে তোমার মিস্টার করেছে?”
অনুপমা হেসে জবাব দেয়, “তোমার ইচ্ছে থাকলে বল তাহলে ভাগ দিতে পারি। কার কার সাথে করেছে সেটা জেনে তোমার কি লাভ? আমার মিস্টারের অনেক অভিজ্ঞতা এই বিষয়ে।”
মেহেক হেসে বলে, “ওঃ তাই নাকি? দেখা যাবে আজ রাতে।”
দেবায়ন ওর কোমরে হাত দিয়ে ওকে কাছে টেনে নেয়। প্রেমিকের নগ্ন ছাতির সাথে অনুপমার কোমল উন্নত স্তন জোড়া ছুঁয়ে গেল। দেবায়নেরএক হাত ওর কোমরে দিয়ে ওকে কাছে টেনে নেয়। প্রেমিকের ছাতির সাথে নিজেকে মিশিয়ে দিতে তৎপর হয়ে ওঠে তৃষ্ণার্ত প্রাণ। ওদের সাথে অন্য এক রমণী বসে ওদের দেখছে এই ভেবেই দুইজনে প্রচন্ড কামোত্তেজিত হয়ে ওঠে। দেবায়ন ইচ্ছে করেই ওকে আরও কাছে টেনে ধরে, যাতে ওর নরম তুলতলে স্তনজোড়া দেবায়নের বুকের সাথে পিষে যায়।দেবায়নের বাম হাতের তালু পৌঁছে যায় অনুপমার পিঠের নিচের দিকে, ঠিক যেখানে শিরদাঁড়া শেষ হয়েছে। বুকের ওপরে বুকের চাপ, শরীরের উষ্ণতা পরস্পরের শরীরকে তপ্ত করে তোলে ধীরে ধীরে। দেবায়ন ওর মুখের ওপরে ঝুঁকে পরে। প্রেমিকের চোখের মনির মাঝে নিজের প্রতিফলন দেখতে পেয়ে অনুপমার হৃদয় গলে যায়। লাল নরম ঠোঁট জোড়া অল্প ফাঁক করে ওর দিকে একদৃষ্টে চেয়ে থাকে। দেবায়নের উষ্ণ শ্বাস ওর মুখমন্ডল ভাসিয়ে দেয়। দেবায়ন ঝুঁকে পরে ওর লাল রসালো ঠোঁটের কাছে। ঠোঁট জোড়া অল্প ফাঁক করে দেবায়নকে আহবান জানায়।ওর চোখ বন্ধ হয়ে আসে আবেগে, প্রেমিকের চুম্বনের অধীর অপেক্ষায় সারা শরীর অসাড় হয়ে যায়। অবশেষে দেবায়নের ঠোঁট ওর নরম লাল ঠোঁট ছুঁয়ে দেয়। দেবায়ন ওকে দুহাতে জড়িয়ে ধরে নিজের সাথে চেপে ধরে। অনুপমা দেবায়নের চুম্বনে সারা দেয়। ওর নিচের ঠোঁট মুখের মধ্যে নিয়ে আলতো করে চুষে দেয় দেবায়ন। নিথর হয়ে যায় অনুপমা সেই চুম্বনের পরশে। জিভ বের করে দেবায়নের মুখের মধ্যে ঢুকিয়ে দেয় আর জিভের ডগা দিয়ে আলতো করে দেবায়নের জিবের সাথে খেলা করে। ওদের চারপাশের সময় যেন থমকে দাঁড়িয়ে যায়।
হঠাৎ মেহেক হাততালি দিয়ে ওঠে, “উম্মম্ম এটা আমার জীবনের সব থেকে সুন্দর প্রেমের চুম্বন দেখলাম।”
অনুপমার সারা মুখ লাল, সেই সাথে দেবায়ন অনুপমার ঠোঁট ছেড়ে মেহেকের দিকে তাকিয়ে বলে, “তুমি কেন ওইখানে? আমাদের কাছে চলে এস।”
মেহেক বিছানা থেকে নেমে এসে ওদের কাছে দাঁড়ায়। অনুপমা ওকে কাছে টেনে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে। অনুপমা মেহেকের চেয়ে একটু লম্বা তাই ওকে জড়িয়ে ধরতে আরও সুবিধে হয়। অনুপমা মেহেকের বগলের তলা দিয়ে হাত বাড়িয়ে, উন্নত স্তন জোড়ার নিচে দুই হাত একত্রিত করে চেপে ধরে। চাপার ফলে উঁচু হয়ে ফেটে পড়ে মেহেকের পীনোন্নত স্তন যুগল। নরম তুলতুলে স্তন জোড়া ছলকে বেড়িয়ে যায় টপের অপর থেকে।
মেহেকে সাপের মতন নড়ে উঠে মিহি কণ্ঠে অনুপমাকে বলে, “তোমাদের ওই ভাবে চুমু খেতে দেখে আমার অবস্থা সঙ্গিন হয়ে গেছে।”
 
Like Reply
পঞ্চবিংশ পর্ব (#10)

অনুপমা ওর গালে গাল ঠেকিয়ে আদরের সুরে বলে, “চিন্তা নেই মেহেক। আজ রাতে আমরা দুইজনে মিলে তোমাকে সুখের সাগরে ভাসিয়ে দেব।”
বয়স বেশি হলেও মেহেক নিজেকে কচি অনুপমার আলিঙ্গনে ছেড়ে দেয়। মেহেক চুপচাপ গালের ওপরে অনুপমার গালের উষ্ণতা অনুভব করে। গালেগাল লেগে আগুনের ফুলকি ছুটে যায় দুই তপ্ত কামার্ত নারীর শরীরে। একটু পরে মেহেককে নিজের দিকে ঘুরিয়ে দাঁড় করায়। পীনোন্নত কোমল স্তন জোড়া পরস্পরের সাথে চেপে যায়, ফুলে ওঠে স্তনের পাশ। অনুপমার স্তন ছলকে ওঠে স্লিপের ওপর থেকে, আর টপের ভেতর থেকে মেহেকের স্তন ফেটে পড়ার জোগাড় হয়। অনুপমা ঠোঁট নামিয়ে আনে মেহেকের রসালো মিষ্টি ঠোঁটের কাছে। আলতো করে জিব বের করে চেটে দেয় মেহেকের রসালো লাল ঠোঁট। মেহেক নিজেকে উজাড় করে দিতে চেয়েও পারছে না, কেননা সামনে দেবায়ন বসে।
অনুপমা মেহেককে স্বাভাবিক হতে বলে, “নিজে নিজেই এখানে এলে, আর এখন লজ্জা পাচ্ছো?”
মেহেক, দেবায়নের দিকে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকায়। চোখ দুটি কামনার আগুনে আধবোঝা হয়ে গেছে, লাল ঠোঁটে লাস্যময়ী হাসি মাখা। অনুপমা ওর লাল নরম ঠোঁট চেপে ধরে মেহেকের গালে। দাঁত বের করে ছোটো একটা কামড় বসিয়ে দেয় মেহেকের গালের মাংসে।
মেহেক অনুপমার কথা শুনে চোখ টিপে বলে, “সত্যি বলতে বেশ কিছু অচেনা লোকের সামনে আমাকে উলঙ্গ হতে হয়েছে। কিন্তু সেই সব অন্য ব্যাপার, সেই খানে লজ্জাবোধ কোনদিন মনে আসেনি। আজকে মুক্ত প্রাণে, তোমাদের ভালোবাসা দেখে আবার করে লজ্জা পেলাম। আর সত্যি বলতে আজ এই প্রথম একজন নারীর সাথে রতি খেলায় নেমেছি আমি।”
মেহেক মাথা ঘুরিয়ে ঠোঁট নিয়ে যায় অনুপমার ঠোঁটের ওপর। মেহেক অনুপমার নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরে আর সেই সাথে অনুপমা ওর ওপরে ঠোঁটে নিজের ঠোঁটের ভেতরে নিয়ে নেয়। ঠোঁটের খেলা চলতে শুরু করে। আলিঙ্গন আর চটকা চটকির তালেতালে দুই লাস্যময়ী নারী দুলতে থাকে। মেহেক হাত নিয়ে যায় অনুপমার মাথার পেছনে, চুলের মুঠি ধরে মাথা কাত করে চুম্বনের তীব্রতা ঘন করে নেয়। মনে হয় অনুপমার ঠোঁটে যত রস, যত মধু আছে, এক চুম্বনে সব শুষে নেবে মেহেক।
দেবায়ন চুপচাপ সিগারেট টানতে টানতে দুই এক প্রেমিকার আর এক লাস্যময়ী নারীর কামুক খেলার দর্শক হয়ে বসে থাকে।
দুই নারী পরস্পরকে চুম্বনে চুম্বনে ঠোঁট, গাল ভরিয়ে দেয়। মেহেক দুই হাতে অনুপমার স্তন জোড়া টিপতে শুরু করে আর অনুপমার এক হাত নেমে আসে মেহেকের নধর নরম পাছার ওপরে। মেহেকের হাতের চাপের ফলে অনুপমার দুই স্তন স্লিপের থেকে বেড়িয়ে আসে। মেহেক বারে বারে ওর স্তন আর স্তনের বোঁটা টিপতে, চটকাতে শুরু করে। অনুপমার বোঁটা কামোত্তেজনায় ফুলে উঠেছে, সারা শরীরে বিদ্যুতের শিহরণ খেলে যায় নরম আঙ্গুলের চটকানিতে। অনুপমা এক থাবার মধ্যে, মেহেকের একটা পাছা ধরে টিপে পিষে দেয়। অনুপমার অন্য হাত মেহেকের জানুর মাঝে চলে যায় আর হটপ্যান্টের ওপর দিয়েই যোনির বেদি চেপে ধরে। যোনির রসে ভিজে মেহেক্র হটপ্যান্ট যোনির সাথে চিপকে থাকে আর তাঁর ফলে মেহেকের যোনির আকার অবয়াব পুরোপুরি পরিস্ফুটিত হয়ে ওঠে। যোনির ওপরে চাপ পড়তেই মেহেক ছটফটিয়ে ওঠে। কামনার জ্বালায় মেহেক দুই জানু মেলে দেয় আর অনুপমা, মেহেকের ফোলা নরম যোনি চেরার ওপরে আঙুল ঘষে তটস্থ করে তোলে। কিছু পরে ঠোঁটের চুম্বন থামিয়ে মেহেকের চোখের দিকে কামুকী চাহনি নিয়ে তাকায়। মেহেক ওর স্তন জোড়া চটকে ওকে উত্তেজত করে তোলে। দুইজনা দুইজনের মুখের ওপরে উষ্ণ শ্বাসের বন্যা বইয়ে দেয়।
মেহেকের যোনিবেদি আদর করতে করতে অনুপমা ওকে বলে, “তোমার যোনি রসে ভেসে যাচ্ছে যে?”
অনুপমার হাত জানু মাঝে চেপে ধরে কাম কাতর কণ্ঠে বলে, “তোমার আঙুল গুলো আমাকে পাগল করে দিচ্ছে যে।”
দেবায়ন বারমুডা থেকে লিঙ্গ বের করে নেয়। কঠিন লিঙ্গ তাল গাছের মতন মাথা তুলে আকাশের দিকে চেয়ে থাকে। একহাতে মদের গ্লাস, এক হাতের মুঠিতে লিঙ্গ, চোখের সামনে দুই লাস্যময়ী নারীর চরম কাম কেলি। দেবায়নের মনে হয় এই যেন ওর লিঙ্গ ফেটে যাবে। শরীরের সব রক্ত ওর লিঙ্গতে গিয়ে জমা হয়ে গেছে। লাল গোল লিঙ্গের মাথা, চামড়া থেকে বেড়িয়ে এসেছে আর আকাশের দিকে মাথা তুলে তাকিয়ে রয়েছে। ধীরে ধীরে নিজের শক্ত পুরুষাঙ্গের ওপরে হাত বুলাতে থাকে আর মদের গ্লাসে চুমু দেয়। দেবায়ন ওদের কামুক খেলার নির্বাক উত্তেজিত দর্শক হয়ে থাকে। ইচ্ছে করেই ওদের কাছে যায় না কারন অনেকদিন পরে চোখের সামনে জীবন্ত, দুই কামুক নারীর মেয়েলি রতিক্রীড়া দেখছে।
দেবায়ন মেয়েদের দিকে তাকিয়ে গ্লাসে চুমুক দিয়ে বলে, “আমাকে একটু দেখবে কি?”
দুই কামার্ত লাস্যময়ী নারীর চোখে কামনার আগুন, দুইজনের শরীরে অতি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ঘামের বিন্দু, না ঠিক ঘামের বিন্দু বললে ভুল হবে, দুই লাস্যময়ী রমণীর দেহের থেকে নির্গত কামনার তরল লাভা। দুই কামুক লাস্যময়ী রমণীর চোখে বাসনার তীব্রতা, ঠোঁটে কামনার মৃদু হাসি মাখা। মেহেক দেবায়নের উত্থিত নগ্ন লিঙ্গ দেখে চোখ বড় বড় করে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে।
অনুপমা, মেহেকের গালে চুমু খেয়ে দেবায়নের লিঙ্গ দেখিয়ে বলে, “মেহেক আমার মিস্টারের লিঙ্গের অবস্থা দেখেছ?” যোনি চেপে উত্তেজিত করে বলে, “তোমার যোনির রসে না ভেজা পর্যন্ত আমার মিস্টারের লিঙ্গ কিন্তু শান্ত হবে না।”
মেহেক ঠোঁট গোল করে সুখের এক শ্বাস বইয়ে বলে, “উম্মম্ম দেখেই মনে হচ্ছে আমার পেট, আমার যোনি সব কিছু ফাটিয়ে দেবে। তুমি কি করে অত বড়টা ভেতরে নাও?”
মেহেকের যোনির চেরায় আঙুল বুলিয়ে সেই সাথে অন্য হাতে স্তন টিপে বলে, “তোমার মধ্যে একবার ঢুকলে বুঝতে পারবে মেহেক।”
মেহেক চোখ বন্ধ করে একটা মিহি শীৎকার করে, “উম্মম্মম অনুপমা, আমার যোনি শিরশির করছে, আআআআআআ…… ডারলিং তোমার আঙ্গুলের ছোঁয়া আমাকে পাগল করে দিচ্ছে।”
দেবায়ন ওদের দেখে বলে, “সুন্দরীরা, ঘর যে গরম হয়ে উঠেছে। তোদের দেখে আমি তো পাগল হয়ে যাচ্ছি।”
মেহেক অনুপমার আলিঙ্গনে বাধা পরে ককিয়ে উঠে বলে, “আমি দাঁড়াতে পারছি না অনুপমা।”
ওর দুই থাই থরথর করে কেঁপে ওঠে সেই সাথে অনুপমার স্তনের ওপরে ওর মুঠি শক্ত হয়ে আসে। ওর ঘাড়ের ওপরে মাথা গুঁজে দেয় মেহেক।
মেহেক আর অনুপমা জড়াজড়ি করে বিছানায় উঠে যায়। মেহেক অনুপমার স্লিপ খুলে উলঙ্গ করে দেয়। অনুপমার পরনে শুধু মাত্র একটা ছোটো লাল প্যান্টি, যোনি রসে ভিজে সেই লাল প্যান্টি যোনির সাথে আটকে যায়। অনুপমা মেহেকের টপ খুলে ফেলতেই ওর বড় বড় নরম স্তন জোড়া দুলে দুলে বেড়িয়ে আসে। কামের উত্তেজনায় মেহেকের স্তনের বোঁটা ফুলে গেছে। কোমর নাড়িয়ে নিজের হট প্যান্ট খুলে ফেলে মেহেক। নিচে কিছুই পড়েনি তাই কাপড় খুলে মেহেক পুরো নগ্ন হয়ে যায়। দুই পায়ের মাঝে যোনিদেশ কুঞ্চিত কালো কেশে ঢাকা। মেহেকের নগ্ন নরম নধর দেহ দেখে অনুপমার খুব ইচ্ছে করে আরাম করে ওকে চটকাতে আর পিষতে। মেহেকের যোনি কেশে আঙ্গুলের আলতো আঁচর কেটে বলে, “এত চুল রেখেছ?”
মেহেক লাজুক হেসে অনুপমাকে চুমু খেয়ে বলে, “শুভমের ভালো লাগে আমার যোনি কেশ নিয়ে খেলতে। তোমার ওইখানে কি একদম কামানো?”
অনুপমা প্যান্টি খুলে উলঙ্গ হয়ে নিজের যোনি দেশ দেখিয়ে বলে, “আমার মিস্টার নিয়মিত আমার যোনি কেশ ট্রিম করে দেয়।”
যোনি বেদীর ওপরে সদ্য কামানো সুন্দর ভাবে সাজানো কেশের পাটি দেখে মেহেকের হাঁ হয়ে যায়। মিহি কণ্ঠে অনুপমার যোনির চেরায় আঙুল বুলিয়ে বলে, “তোমার মিস্টার বেশ আদর করে তোমাকে আর বেশ যত্নে রাখে তোমার যোনি?”
অনুপমা ওর গালে গাল ঠেকিয়ে দেবায়নের দিকে তাকিয়ে বলে, “হ্যাঁ ও আমার অনেক খেয়াল রাখে। আজ রাতে তোমার যোনির খেয়াল রাখবে।”
মাথার পেছনে তিনটে বালিশ দিয়ে দুই পা ছড়িয়ে মেহেক বিছানার ওপরে শুয়ে পরে। অনুপমা ওর নগ্ন দেখের ওপরে ঝুঁকে পরে। আঙুল দিয়ে মেহেকের যোনিচেরার ওপরে ধীরে ধীরে উপর নিচ করতে শুরু করে দেয়। মেহেকের যোনির রসে ওর আঙুল ভিজে চপচপে হয়ে যায়। অনুপমা আঙুল চেপে ধরে মেহেকের রস ভরা যোনিচেরার ওপরে, মাছের হাঁ হয়ে যায় যোনি গুহা, দুই কালচে পাপড়ি বেড়িয়ে আসে যোনি চেরা থেকে। সুখের জোয়ারে মেহেকের চোখ বুজে আসে, হাত চেপে ধরে অনুপমার হাতের ওপরে আর যোনির ওপরে আঙুল চালাতে ইশারা করে। সারা ঘর মেহেকের কামনার শীৎকারে গুঞ্জরিত হয়ে ওঠে, “উম্মম্মম ইসসস…… করো করো আরও জোরে জোরে আমার যোনিতে আঙুল দিয়ে ঘষে দাও।”
অনুপমা আরও কিছুক্ষণ মেহেকের যোনিচেরায় আঙুল বুলিয়ে রসে ভিজিয়ে, ভিজে আঙুল নিয়ে আসে মেহেকের ঠোঁটের কাছে। মেহেকের নাকে লাগে সোঁদা ঝাঁঝালো গন্ধ, নিজের রসে ভেজা অনুপমার আঙুল ঠোঁটের মধ্যে নিয়ে চেটে নেয়। কামনার সুখে আওয়াজ করে ওঠে দিয়া, “উমমমমমমম নিজের যোনি রস কোনদিন চাটিনি। উম্মম তুমি আজকে আমাকে এক অন্য সুখ দিয়েছ অনুপমা।”
প্রচন্ড কামুকী মেহেক নিজের যোনির ওপরে আঙুল দিয়ে খেলতে শুরু করে দেয়। মাঝে মাঝে ফোলা রসালো যোনির ওপরে ছোটো ছোটো চাঁটি মারে, থপথপ আওয়াজে ফোলা যোনি আরও ফুলে যায় আর লাল হয়ে ওঠে যোনির চারপাশ। রস গড়িয়ে ওর কালো কুঞ্চিত কেশ ভিজে চকচক করে।
অনুপমা মেহেকের স্তন জোড়া চটকাতে শুরু করে। স্তনের কালচে বাদামি বোঁটা শক্ত হয়ে যায় দুটি আঙ্গুর ফলের মতন। ঠোঁট নিয়ে যায় মেহেকের নরম বড়বড় স্তনের ওপরে, একটা স্তন মুখের মধ্যে নিয়ে চুষতে শুরু করে অনুপমা। একবার বোঁটা কামড়ে দেয় আবার স্তনের কিছু মাংস মুখের ভেতরে চুষে নিয়ে উপর দিকে টেনে ছেড়ে দেয়। থলথল করে ঢেউ খেলে যায় মেহেকের স্তনের ওপরে। মেহেক চরম সুখে গোঙাতে শুরু করে দেয়, “খাও বেবি, খাও। আমার স্তন জোড়া চুষে খেয়ে ফেল। স্তন থেকে দুধ বের দাও।”
অনুপমার মাথা চেপে ধরে নিজের স্তনের ওপরে। অনুপমার মুখ আক্রমনের ভাষায় মেহেকের স্তন নিয়ে চেপা পেষা খাওয়া শুরু করে দেয়।
অনুপমা নিজেকে মেহেকের ওপরে টেনে তোলে, স্তনের সাথে নরম স্তন চেপে যায়। অনুপমা দুহাতে ভর দিয়ে একটু উপরে উঠে মেহেকের কামার্ত মুখের দিকে তাকায়। মেহেক অনুপমার মাথার পেছনে হাত দিয়ে চুলের মুঠি ধরে ওর চোখের দিকে গভীর ভাবে তাকায়। সেই চোখের কামনার আগুন দেখে অনুপমা ধীরে ধীরে নিজের স্তন জোড়া মেহেকের স্তনের ওপরে চেপে পিষে দিতে শুরু করে। উত্তেজনায় আর চরম কাম কেলির ফলে দুই ফর্সা ত্বকের উর্বশী লাল হয়ে যায়। অনুপমার স্তনের বোঁটা মেহেকের স্তনের বোঁটার ওপরে চাপিয়ে দেয়, মেহেকে উন্মাদ হয়ে যায় কামনার সুখে। ডান পা উঠিয়ে অনুপমার কোমর জড়িয়ে ধরে নিজের তলপেটের সাথে অনুপমার তলপেট চেপে ধরে। অনুপমার পেট, তলপেট, জানুসন্ধি মানে সব অঙ্গ মেহেকের সারা অঙ্গের সাথে লেপটে যায়, ত্বকের সাথে ত্বক মিলিয়ে দেয় দুই কামার্ত ক্ষুধার্ত রমণী। অনুপমা, হাতের আঙুল মেলে আলতো করে বুলিয়ে আদর করে দেয় মেহেকের সারা মুখ মন্ডল। মেহেক জিব বের করে অনুপমার হাতের তালু লালার রস দিয়ে ভিজিয়ে দেয়। কিছু পরে অনুপমা ওর ঠোঁটের ওপরে ঝুঁকে ঠোঁট চেপে ধরে তীব্র চুম্বন এঁকে দেয় মেহেকের গোলাপি নরম ঠোঁটে। মেহেক জিব বের করে আর অনুপমা সেই গোলাপি জিভ নিজের ঠোঁটের ভেতরে নিয়ে চুষে দেয়। তীব্র চুম্বন মেহেককে সুখশ্রিঙ্গের উচ্চতম শিখরে ঠেলে তুলে দেয়। অনুপমার কোমর ধীরে ধীরে ওপর নিচ করতে শুরু করে, সেই সাথে তাল মিলিয়ে মেহেক নিচের থেকে কোমর উঁচিয়ে জানুসন্ধির সাথে জানুসন্ধি মিলিয়ে চেপে দেয়।
মেহেক তীব্র এক কামনার শীৎকার করে ওঠে, “বেবি, আর না, প্লিস এবারে কিছু করো, আমি যে সত্যি মরে যাবো।”
মেহেকের কামার্ত শীৎকারে কান না দিয়ে, চেপে পিষে একাকার করে দেয় মেহেকের নরম স্তন জোড়া। স্তনের শক্ত বোঁটা দুটি দুই আঙ্গুলের মাঝে নিয়ে গোল গোল করে ঘুরিয়ে দেয়। মেহেক মাথা ঝাঁকিয়ে জানিয়ে দেয় ওর চরম ক্ষণ আসন্ন। কোমর উপর দিকে উঠিয়ে যোনি বেদি চেপে ধরে অনুপমার নরম ফোলা যোনি বেদীর সাথে। কুঞ্চিত কালো কেশের সাথে অনুপমার সুন্দর করে ছাঁটা ছোটো কালো কেশ মিশে যায়। অনুপমা ওর স্তনের চারপাশে কামড় বসায়। সুখের সেই কামড়ের চরম স্পর্শ সহ্য হয়না মেহেকের, শরীর বেঁকে বিছানা ছেড়ে উঠে যায় হাওয়ায়, কোমর উঠিয়ে ঠেলে দেয় অনুপমার শরীর। অনুপমা ততোধিক শক্তি দিয়ে মেহেকের কামাগুনে ঝলসানো নরম তুলতুলে দেহখানি চেপে ধরে নরম বিছানার ওপরে। মেহেকে তীব্র শীৎকার করে ওঠে, “উফফফফফফ…… উফফফফফফ…… উসসসসস। আমার আসছে বেবি, আমাকে চেপে ধর।”
অনুপমা দুই মিলিত শরীরের মাঝে হাত নিয়ে মেহেকের যোনি চেপে ধরে। যোনির ভেতরে দুই আঙুল ঢুকিয়ে দিয়ে তীব্র বেগে ভেতর বাহির নাড়াতে শুরু করে দেয়। আঙুল নাড়াতে নাড়াতে মাঝে মাঝেই ফোলা নরম যোনির ওপরে ছোটো ছোটো চাটি মারে অনুপমা। আর সেই আলতো চাটি খেয়ে মেহেক কুঁকড়ে যায়। অনুপমা আবার মেহেকের যোনির মধ্যে দুই আঙুল ঢুকিয়ে তীব্র গতিতে সঞ্চালন শুরু করে দেয়। মেহেক দুই হাতে অনুপমাকে জড়িয়ে ধরে নিজের স্তনের সাথে ওর স্তন পিষতে শুরু করে দেয় আর ঠোঁট ফাঁক করে শীৎকার করে, “ইসসসসসস……… ওরে……… না বেবি……… উফফফফ…… উম্মম্মম্মম্মম্ম……… ইসসসসসসসস………”
কিছুক্ষণের মধ্যেই মেহেকের শরীর টানটান হয়ে যায়।
প্রবল শ্বাসের ফলে মেহেকের নরম বড় বড় স্তন জোড়া প্রবল ভাবে ওঠা নামা করে। দুজনের শরীর টানটান হয়ে যায়, আর অনুপমার আঙুল কামড়ে যোনি রসে ভাসিয়ে দেয়। রাগ স্খলনের পরে দুই কামার্ত রমণী সমান তালে হাফায়, শ্বাসের ফলে অনুপমার স্তনের ওপরে ঢেউ খেলে যায়। অনুপমা মেহেকের যোনির মধ্যে আঙুল চেপে ধরে থাকে আর মেহেক দুই হাতে আস্টেপিস্টে অনুপমাকে সাপের মতন পেঁচিয়ে ধরে থাকে। পায়ের সাথে পা পেঁচিয়ে, হাতের সাথে হাত। দুটি কমনীয় লোভনীয় নারীর শরীর যেন দলা পাকিয়ে গেছে একাকার হয়ে গেছে। দুই সাপের মিলনক্ষণের মতন পরস্পরের সাথে লেপটে জড়িয়ে থাকে।
মেহেকের হাতের বেড় কিছু পরে অনুপমার শরীর থেকে আলগা হয়ে যায়, নরম সাদা বিছানার ওপরে হাত পা মেলে চোখ বুঝে নিস্তেজ হয়ে শুয়ে পরে। অনুপমা ওর শরীরের ওপর থেকে নেমে পাশে শুয়ে ওর শরীরে আদর করে আঙুল বুলিয়ে দেয় আর দেবায়নের দিকে তাকিয়ে মিচকি মিচকি হাসে।
 
Like Reply
পঞ্চবিংশ পর্ব (#11)

মেহেকে অনুপমার গালে বুকে হাত বুলিয়ে আদর করে বলে, “সত্যি বলছি কোন মেয়ের সাথে এই খেলায় এমন সুখ পাবো ভাবিনি।”
অনুপমা ওর যোনির চেরায় আঙুল বুলিয়ে আদর করে বলে, “এবারে আমার মিস্টার তোমাকে একটু আদর করতে চায়।”
মেহেক দেবায়নের দিকে তাকাতেই দেখেতে পায় ওর বিশাল লিঙ্গ ফুলে তালগাছের মতন হয়ে গেছে। সেই দেখে মেহেক চটুল হেসে বলে, “না গো অনুপমা, তোমার আঙুল ওই দৈত্যের চেয়ে অনেক ভালো। তুমি আমার যোনি নিয়ে যথেচ্ছ খেলে যাও কিন্তু ওই দৈত্যকে দেখে একটু কেমন লাগছে।”
দেবায়ন হেসে বলে, “উম্মম আমার সেক্সি মিষ্টি মেহেক। চিন্তা নেই আমার বৌ সাথেই আছে, তোমার কষ্ট হলে ও ঠিক জানে কি ভাবে তোমার কষ্টের লাঘব করিয়ে দেবে।”
মেহেক তর্জনী নাড়িয়ে মনমোহক এক হাসি দিয়ে দেবায়নকে কাছে ডাকে, “সত্যি বলছি কত লিঙ্গ নিলাম এই যোনির মধ্যে। কিন্তু তোমার বউয়ের দুই আঙুল আর ওর চুম্বন পেষণে এক অন্য আনন্দ পেলাম।”
দেবায়ন লিঙ্গ নাড়িয়ে জিজ্ঞেস করে, “তাহলে কি আমার লিঙ্গ তোমার যোনির রসে মাখামাখি করতে পারবে না।”
অনুপমা মেহেকের যোনি কেশের মধ্যে নখের আঁচর কেটে উত্যক্ত করে দেবায়নকে বলে, “তোর জন্য এই রসে টইটম্বুর মাল টাকে তৈরি করলাম এবারে চলে আয়।”
দেবায়ন হাতের মদের গ্লাস শেষ করে, লিঙ্গ মুঠির মধ্যে ধরে নাড়াতে নাড়াতে বিছানার দিকে অগ্রসর হয়। অনুপমা মেহেকের পায়ের মাঝের কুঞ্চিত কালো কেশের মধ্যে নখের আঁচর কেটে ওকে আদর করে। মেহেক চোখ খুলে মিচকি হেসে দেবায়নের দিকে তাকায়। দেবায়ন বিছানার পাশে এসে দুই নারীর পাশে দাঁড়িয়ে থাকে। অনুপমা গলা বাড়িয়ে দেয় আর দেবায়ন ওর গালে, ঠোঁট কয়েকটা গভীর চুমু খায়, সেই সাথে ওর স্তনের ওপরে হাত বুলিয়ে আদর করে দেয়।
দেবায়ন মেহেকের দুই মেলে ধরা জানুর ওপরে হাত দিয়ে বিছনার শেষ প্রান্তের দিকে টেনে ধরে। মেহেক দুই পা মেলে ধরে এগিয়ে যায় আর দেবায়ন নিজের জানুসন্ধি মেহেকের জানুসন্ধির সাথে মিলিয়ে দেয়। বজ্র কঠিন লিঙ্গ চেপে যায় কালো কেশে ঢাকা রেশমি জঙ্গলের সাথে আর তাঁর নিচে লুকিয়ে থাকা যোনি চেরার সাথে। লিঙ্গের দীর্ঘ বরাবর চেপে যায় যোনির চেরা বরাবর। যোনি পাপড়ি চেরা থেকে বেড়িয়ে লিঙ্গের গরম ত্বকের ওপরে চুমু খায়।
যোনি ওপরে লিঙ্গের চাপ অনুভব করতেই মেহেকে নড়ে চড়ে ওঠে। মিহি কণ্ঠে বলে, “তোমার লিঙ্গ কি গরম গো।”
দেবায়ন কোমর নাচিয়ে যোনির চেরা বরাবর লিঙ্গ ঘষে মেহেককে উত্তেজিত করে বলে, “এবার তোমাকে আদর করে করে সঙ্গম করব।”
অনুপমা মেহেকের দুটি স্তন আর স্তনের বোঁটা চটকাতে চটকাতে বলে, “তোমার সাথে খেলার সময়েই বুঝেছিলাম যে তোমার যোনিতে অনেক কুরকুরি। আজকে আমার মিস্টার তোমার সব জ্বালা মিটিয়ে দেবে।”
মেহেক হাত বাড়িয়ে দেবায়নের চওড়া ছাতির ওপরে আঙুল মেলে আঁচড় কেটে আহ্বানের সুরে বলে, “উম্মম্ম দেবায়ন তোমার লিঙ্গের ছোঁয়া পেয়েই আমি পাগল হয়ে গেছি।একবার আমার যোনির ভেতরে ঢুকলে কি হবে সেটাই ভাবছি।”
দেবায়ন মেহেকের শরীরের ওপরে ঝুঁকে পরে ওর মুখ আঁজলা করে ধরে। প্রথমে কপালে তারপরে গালে ঠোঁটে গলায় চুমু খায়। দুই হাতে দুই নরম তালের মতন বড় বড় স্তন জোড়া মুঠির মধ্যে নিয়ে পিষে দেয়। ওইদিকে কোমর নাড়িয়ে যোনির চেরা বরাবর লিঙ্গ ঘষে দেয়। লিঙ্গের লাল মাথা বারেবারে যোনির উপরি ভাগের ভগাঙ্কুরে ডলে যায় আর মেহেকের কামত্তেজনা শতগুন বেড়ে ওঠে।
মেহেক মৃদু কণ্ঠে বলে, “একবার তোমার বৌ আমাকে উত্যক্ত করে আর এখন তুমি আমাকে উত্যক্ত করছ। প্লিস আমার ভেতরে তোমার ওই বিশাল লিঙ্গ ঢুকিয়ে আমাকে শেষ করে দাও।”
অনুপমা দেবায়নের গালে আলতো চাটি মেরে বলে, “এই কুত্তা, মেহেক গরম থাকতে থাকতে লাগিয়ে দে। ওর স্তন আর ওর শরীর নিয়ে আমি খেলছি। তুই ওর যোনির গরম আগে ঠাণ্ডা কর। অনেকক্ষণ থেকে কাটা মাছের মতন ছটফট করছে।”
দেবায়ন সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে মেহেকের যোনি দেশে হাত দিয়ে আদর করে দেখে যে যোনি একদম রসে ভিজে গেছে। হাতের মুঠির মধ্যে লিঙ্গ ধরে যোনি গুহার মুখে স্থাপিত করে। লিঙ্গের বিশাল লাল মাথা যোনি পাপড়ি ছুঁয়ে থাকে। একটু সামনের দিকে কোমর ঠেলে দিতেই অনায়াসে লিঙ্গ শিক্ত যোনির মধ্যে ঢুকে যায়। বহু সঙ্গমে পরিচিত যোনি একটা বিশাল লিঙ্গ নিজের ভেতরে ধারন করে কেঁপে ওঠে। নগ্ন লিঙ্গ যোনির দেয়াল ভেদ করে কিছুটা ঢুকে যায়।
মেহেকের দুই চোখ আধা খোলা, ঠোঁট আধা খোলা, চেহারায় মাখা কামনার তীব্র রঙ। ফিসফিস করে দেবায়নকে বলে, “দেবায়ন তোমার লিঙ্গ ভীষণ কঠিন আর ভীষণ বড়। আমার ভেতর পুড়িয়ে দিল, প্লিজ আমার ভেতরে একটু ধরে থাকো, আমি তোমার ওই বিশাল লিঙ্গ নিজের ভেতরে অনুভব করতে চাই।”
মেহেক দুই পাশে জানু ছড়িয়ে দেয় আর দেবায়ন এক প্রবল চাপে আমূল লিঙ্গ ওর শিক্ত পিচ্ছিল যোনির মধ্যে ঢুকিয়ে দেয়। সম্পূর্ণ লিঙ্গ প্রবেশ করতেই মেহেক চোখ বুজে, ঠোঁট চেপে আঁক করে ওঠে। ওর শ্বাস ফুলে ফেঁপে ওঠে।
শীৎকার করে ওঠে কামার্ত রমণী, “এই শয়তান ছেলে, তুমি কি আমাকে মেরে ফেলতে চাও? উম্মম্ম বাবা গো কি গরম, উফফফ, অনুপমা তোমার মিস্টার আমাকে মেরে ফেলল গো।”
দেবায়ন মিচকি হেসে ওর ওপরে ঝুঁকে পরে আমূল লিঙ্গ চেপে ধরে থাকে। অনুপমা বুঝতে পারে যে দেবায়নের লিঙ্গের মাথা সোজা মেহেকের যোনির শেষ প্রান্তে গিয়ে ঠেকেছে। অনুপমা হেসে মেহেকের মুখের ওপরে ঝুঁকে পরে আদর করে হাত বুলিয়ে দেয়। মেহেকের কপালে ঘাম দিতে শুরু করে, দুই হাতে অনুপমাকে জড়িয়ে ধরে থাকে আর দেবায়নের লিঙ্গের সম্পূর্ণ দীর্ঘ নিজের ভেতরে উপভোগ করে।
দেবায়ন ধীরে ধীরে কোমর পেছনে টেনে লিঙ্গের অর্ধেক, মেহেকের ভিজে চুপচুপে যোনির ভেতর থেকে টেনে বের করে।একহাতে মেহেকের নরম তুলতুলে স্তন চেপে ধরে আর পরক্ষনে এক জোর ধাক্কায় পুনরায়লিঙ্গ গেঁথে দেয় মেহেকের সিক্ত যোনিরমধ্যে। প্রথমে ধিমে তালে তারপরে তীব্র তালে শুরু হয়ে যোনি মন্থন। বারেবারে লিঙ্গের চাপে মেহেক ককিয়ে ওঠে আর কামঘন শীৎকারে ঘর ভরিয়ে দেয়, “উম্মম্মম…… ইসসস…… উম্মম্ম…… আহহহহ…… উম্মম্মম” ইত্যাদি।
অনুপমা দেবায়নকে আদেশের সুরে বলে, “সোনা ওর যোনি ফাটিয়ে সঙ্গম কর। মেহেকের নরম তুলতুলে শরীর নিঙরে পিষে সব রস চুষে নাও। ওর যোনির ভেতর থেকে রসে বন্যা বইয়ে দাও।”
মেহেককে চেপে ধরে ঠোঁটে ঠোঁট মিলিয়ে মেহেকের সব শীৎকার গিলে নেয় অনুপমা।
প্রচন্ড যৌনক্ষুধায় দেবায়নপাগল হয়ে যায়।মেহেকের যোনিরমধ্যে কামলালসার ক্ষুধার্তহায়নার মতন মন্থন শুরু করে দেয়।লম্বা লম্বা প্রবল জোরে লিঙ্গে ঠেলে ঢুকিয়ে মন্থন করে আর সেই সাথে দুই নরম তুলতুলে স্তন জোড়া ডলে পিষে একাকার করে দেয়।একবার অনুপমার হাত লাগে স্তনের ওপরে একবার দেবায়নের। দুই নরম স্তন, চারখানা হাতের আক্রমনে বিধ্বস্ত হয়ে যায়। চরম কামোত্তেজনায়দেবায়ন গোঙাতে শুরু করে আর সেই তালে মেহেক “ইসসস…… উম্মম্মম…… উফফফফ……” করে শীৎকার করতে থাকে। পাছা উঁচিয়ে দেবায়নের লিঙ্গের সাথে প্রতি মন্থনে তাল দেয় মেহেক। ঘামে ভিজে দুই শরীরের মিলনে থপথপ আওয়াজে ঘর ভরে ওঠে। তিনজনের মিলিত শীৎকারে, ঘামের গন্ধে, কামের গন্ধে ঘর ভরে ওঠে। মনে হয় যেন ওরা সময়ের শুরু থেকেই সঙ্গমে রত। দেবায়ন সোজা হয়ে মেহেকের পায়ের মাঝে দাঁড়িয়ে মন্থনে রত হয়। মেহেক দুই পায়ে দেবায়নের কোমর জড়িয়ে ধরে আর পাছা উঁচিয়ে দেবায়নের মন্থনরে সাথে তাল মেলায়। কিছুপরে মেহেকের শরীর অনুপমার আলিঙ্গনে বাঁধা পরে টানটান হয়ে যায়।
দুহাতে নিজের স্তন চেপে ধরে মেহেক তীব্র শীৎকার করে ওঠে, “উহহহহহ…… আমার আসছে…… ফেটে গেল…… অনুপমা আমাকে চেপে ধর…… ইউসসসস…… উম্মম্ম…… আআআআআ…… চেপে ধর…… ওরে…… আরও জোরে…… ইসসসস…… আমি শেষ এবারে…… দেবায়ন……”
দেবায়ন এক জোর ধাক্কা মেরে আমূল লিঙ্গ ঢুকিয়ে দিল মেহেকের পিচ্ছিল যোনির শেষ প্রান্তে। মেহেক ককিয়ে উঠল কঠিন লিঙ্গের প্রবল ধাক্কা খেয়ে, সারা শরীর অবশ হয়ে এল মেহেকের। প্রচন্ড লালসার উত্তেজনায় দেবায়নের শরীর কাঁপতে শুরু করে, সাথে সাথে মেহেকের নরম সাপের মতন কমনীয় দেহপল্লব কাঁপতে শুরু করে। রসালো যোনিরসিক্ত দেয়াল দেবায়নের বিশাল লিঙ্গের চারপাশে পিচ্ছিল একটা প্রলেপের মতন কামড়ে ধরে। মেহেকের যোনি পেশি প্রচন্ড আঁটো মনে হয়, এই যেন দেবায়নের লিঙ্গ কামড়ে ছিঁড়ে নেবে গোড়া থেকে! প্রচন্ড কাম উত্তেজনার চরম শিখরে পৌঁছে যায় মেহেক। কামরস তিরতির করে বেড়িয়ে এল মেহেকের যোনির ভেতর থেকে, ভিজিয়ে দিল দেবায়নের কঠিন উত্তপ্ত লিঙ্গ। মেহেকেরউষ্ণ যোনিরস কেশ চুইয়ে পাছার চেরা বেয়ে বিছানা ভিজিয়ে দেয়। প্রচন্ড কামোত্তেজনায় অনুপমা মেহেকের গলা চেপে ধরে ঠোঁটে ঠোঁট চেপে দেয়। মেহেক, অনুপমার নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরে, আর অনুপমা মেহেককে দুহাতে আস্টেপিস্টে জড়িয়ে ধরে।
দেবায়ন ঝুঁকে পরে অনুপমার গালে কামড় বসিয়ে দেয়। দেবায়নের লিঙ্গ ফুঁসতে শুরু করে, বীর্যপাত আসন্ন, অণ্ডকোষে আগুন লেগে যায়। মেহেকের যোনির পেশি কামড়ে ধরে থাকে গরম কঠিন লিঙ্গ। বেশ কয়েকবার দীর্ঘ কয়েকটা ধাক্কা দেওয়ার পরে লিঙ্গ পুরো টেনে বার করে নিয়ে আসে মেহেকের সিক্ত যোনির ভেতর থেকে, কিছুক্ষণ বাইরে রেখে শেষবারের মতন এক ধাক্কায় ঢুকিয়ে দেয় বিশাল লিঙ্গ।
দেবায়ন গুঙ্গিয়ে ওঠে, “মেহেক ডারলিং…… আমার হয়ে যাবে।”
মেহেক কোনোরকমে ককিয়ে কিছু বলতে চেতস আকরে কিন্তু অনুপমা ওকে চেপে ধরে বলে, “মেহেকের রসালো যোনি ভাসিয়ে দে তোর বীর্যে। ওর সারা শরীর তোর বীর্যে মাখামাখি হয়ে যাক।”
“আআআআ……” করে ওঠে দেবায়ন তারপরে অনুপমার আর মেহেকের মিলিত দেহের ওপরে আছড়ে পরে। সারা শরীর টানটান হয়ে যায় আর উষ্ণ প্রস্রবনের মতন ঝলকে ঝলকে বীর্য বেড়িয়ে এসে মেহেকের যোনি গহ্বর ভরিয়ে দেয়। বারেবারে মেহেক কেঁপে কেঁপে ওঠে অনুপমার গভীর আলিঙ্গনে বাঁধা পরে। রাগরস আর কামরস মিশে এক মিশ্রিত তরল মেহেকের যোনি গুহা ভরিয়ে বাইরে চুইয়ে পড়ে। বীর্য পতনের পরে দেবায়নের লিঙ্গ কিঞ্চিত শিথিল হয়ে আসে। মেহেকের সিক্ত রসালো যোনিরমধ্যে বেশ কিছুক্ষণ নরম লিঙ্গ গেঁথে রাখার পরে আলতো করে টান দিয়ে বের করে আনে। মেহেকের মিষ্টি রসালো যোনি যেন ওর লিঙ্গ ছাড়তেই চায় না। লিঙ্গ টেনে বের করে আনতেই, মেহেক একটু কেঁপে ওঠে। ঠাণ্ডা হাওয়া দেবায়নের গরম ভেজা লিঙ্গের ওপরে বয়ে যায়, এক অদ্ভুত অনুভুতি সারা শরীরে খেলে যায়।
মেহেক আর অনুপমা জড়াজড়ি করে দেবায়নের দিকে পরিতৃপ্তির হাসি মাখা চেহারা নিয়ে তাকায়।
দেবায়ন ঝুঁকে মেহেকের গালে গাল ঘষে কানে কানে বলে, “সেক্সি মেহেক, তোমার যোনিতে এখন অনেক রস বাকি আছে। সারা রাত তোমার সাথে সঙ্গমের খেলা খেলতে ইচ্ছে করছে। এই একবারেই এত রস ঝরিয়ে কেলিয়ে পড়লে কি করে হবে বেবি?”
মেহেক ফিসফিস করে বলে, “শেষ পর্যন্ত আমার যোনির ভেতরে বীর্য ফেলেই দিলে? জানো এর মধ্যে আমি মনে হয় তিন বার রস ঝরিয়ে দিয়েছি। আমার বয়ফ্রেন্ড আমাকে অনেকক্ষণ আদর করে, কিন্তু এতক্ষণ নিজেকে ধরে রাখতে পারে না।”
অনুপমার সামনেই মেহেককে আদর করে ওরনরম তুলতুলে স্তনের ওপরে আলতো চাটি মেরে বলে, “বেবি, মিষ্টি মেহেক। সত্যি বলছি তোমাকে একদম ছাড়তে ইচ্ছে করছে না।”
অনুপমা দেবায়নের চুলের মুঠি ধরে নাড়িয়ে দিয়ে বলে, “কুত্তা শালা, পাশে বৌ বসে তাও, অন্যের যোনির মধ্যে লিঙ্গ ঢুকিয়ে রয়েছে! তোর বউয়ের যোনির জ্বালা কে মেটাবে?”
দেবায়ন হেসে দেয় অনুপমার কথা শুনে। মেহেকের যোনির ভেতরে দুই আঙুল ঢুকিয়ে কিছুটা মিশ্রিত তরল আঙ্গুলে মাখিয়ে বের করে আনে আর অনুপমার ঠোঁটের কাছে নিয়ে যায়। অনুপমা ঠোঁট খুলে ওর আঙুল চেটে দুই শরীরের মিশ্রিত রস চুষে নেয়। তারপরে মেহেকের ঠোঁটের ওপরে ঝুঁকে ওর ঠোঁটে চুমু খেয়ে যোনি রস আর কাম রস মিশিয়ে ঢুকিয়ে দেয়। মেহেকে অনুপমার ঠোঁট থেকে বীর্য আর যোনি রসের মিশ্রণ চুষে নেয়।
মেহেক সেই রস চুষে বলে, “উম্মম্মম্ম তোমরা দুইজনে দারুন সেক্সি।”
মেহেক হাত পা ছড়িয়ে চিত হয়ে শুয়ে থাকে আর অনুপমা ওকে জড়িয়ে ওর পাশে বসে থাকে। কালো কুঞ্চিত যোনি কেশ সাদা হয়ে গেছে বীর্যের মাখামাখিতে।
অনুপমা চটুল হেসে মেহেককে জিজ্ঞেস করে, “কি বেবি, কেমন লাগলো আমার মিস্টার কে?”
মেহেক নাক কুঁচকে মজা করে হেসে বলে, “সো সো লাগলো, এমন কিছু নয়।”
অনুপমা দাঁত খিচিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে হেসে বলে, “মাল মিথ্যে বলার জায়গা পাও না! সঙ্গমের সময় তো কোঁত কোঁত করে পাছা উঁচিয়ে যোনি চেপে আদর খাচ্ছিলে!”
খিলখিল করে হেসে ফেলে মেহেক, উঠে বসে দেবায়নের গালে একটা ভিজে রসালো চুমু খেয়ে বলে, “না গো, মনে হল যেন একটা টর্নেডো বয়ে গেল আমার ওপর দিয়ে। তোমার মিস্টার অন্য ধাতুর।”
দেবায়নের শিথিল লিঙ্গ হাতের মুঠোর মধ্যে নাড়িয়ে দিয়ে বলে, “বাপ রে, নরম হওয়ার পরেও এত বড়।”
সাথে সাথে অনুপমাও দেবায়নের লিঙ্গ মুঠির মধ্যে ধরে নাড়িয়ে বলে, “কিরে কুত্তা, বউয়ের যোনিতে এখনো জ্বালা কছে কিন্তু। মেহেকের যোনিতে সব বীর্য ঢালিসনি তো?”
দেবায়ন হেসে দুই নারীর যোনির চেরায় আঙ্গুল বুলিয়ে আদর করে বলে, “আমার অণ্ডকোষে এখন অনেক বীর্য বাকি আছে। তোমাদের দুইজনকে সারা রাত ধরে সঙ্গম করতে পারি।”
মেহেক মিউ মিউ করে ওঠে, “আমি একদম ক্লান্ত হয়ে গেছি দেবায়ন। এবারে তোমরা দুইজনে সঙ্গম করো, আমি চললাম শুতে।”
অনুপমা অবাক হয়ে বলে, “এত তাড়াতাড়ি?”
মেহেক ওর ঠোঁটে চুমু খেয়ে আদর করে বলে, “বেবি, আমার ছেলেটা একা রুমে ঘুমিয়ে আছে।”
তিন নর নারী জড়াজড়ি করে কিছুক্ষণ শুয়ে রতিখেলার শেষ অনুভূতি টুকু সারা অঙ্গে মাখিয়ে নেয়। দেবায়ন মেহেকের সারা অঙ্গে হাত বুলিয়ে আদর করে দেয় আর মেহেক চুপচাপ ওদের দুই জনের দিকে নিস্পলক চেয়ে থাকে।
দেবায়ন উঠে বসে দুই রমণীকে প্রশ্ন করে, “এক একটা ড্রিঙ্কস হয়ে যাবে নাকি? একটা করে কিন্তু গ্লাস বাকি আছে।”
অনুপমা আর মেহেক দুইজনেই সমস্বরে বলে ওঠে, “হ্যাঁ হ্যাঁ ক্ষতি নেই।”
অনুপমা আর মেহেকের হাতে ভদকার গ্লাস ধরিয়ে নিজে একটা হুইস্কির গ্লাস নিয়ে ওদের মাঝে বসে পরে। মাঝ খানে অনুপমা, একপাশে মেহেক অন্য পাশে দেবায়ন।
মেহেকের চোখ হঠাৎ ছল ছল করে ওঠে, গ্লাস উঁচু করে হেসে বলে, “চিয়ার্স আমার মুক্তির জন্য।”
অনুপমা ওকে জড়িয়ে গালে চুমু খেয়ে বলে, “চিয়ার্স এক ভালো বান্ধবীর জন্য।”
দেবায়ন হাত বাড়িয়ে মেহেকের গালে ঠোঁটে আঙুল বুলিয়ে বলে, “চিয়ার্স এতো সুন্দর একটা ভালোবাসার খেলার জন্য।”
গ্লাস শেষে, মেহেক নিজের জামা কাপড় পরে বিদায় জানায়। অনুপমা স্লিপ গায়ে চড়িয়ে নেয় আর দেবায়ন একটা তোয়ালে কোমরে জড়িয়ে নেয়।
মেহেকের দুই চোখ ছলছল করে ওঠে। হঠাৎ করে মেহেক অনুপমাকে জড়িয়ে ধরে ভাবাবেগে বলে, “তোমাদের কি বলে ধন্যবাদ জানাবো জানি না। তোমাদের সাথে হয়তো আর কোনদিন দেখা হবে না আমার। যেখানেই থাকি উপরওয়ালার কাছে সর্বদা প্রার্থনা করব যে তোমাদের জুটি অটুট থাকুক।”
দেবায়ন আর অনুপমা ওকে জড়িয়ে ধরে বলে, “মেহেক, সত্যি বলতে কি জানো আমরা এখানে এসেছিলাম হোটেল কিনতে। এখানে এসে তোমাকে মুক্তি দিতে পেরে নিজেদের বড় ভালো লাগছে।”
মেহেক ওদেরকে বলে যে মান্ডি গিয়ে ওর বান্ধবীর বাড়ির ঠিকানা আর বাড়ির ফোন নাম্বার পাঠিয়ে দেবে। মেহেকে বেড়িয়ে যাবার পরে দেবায়ন আবার একবার হোটেলের কাগজ খুলে দেখে নেয়। ভালো করে একবার পড়ে দেখে সব লাইন তারপরে ব্যাগে ঢুকিয়ে অনুপমার পাশে শুয়ে পড়ে। অনুপমা আগে থেকেই এত আদর আর চটকা চটকিতে উত্তেজিত হয়েছিল। নরম শরীরে উষ্ণ হাতের ছোঁয়া পেতেই আবার ওর কাম পিপাসু প্রান জেগে ওঠে। সঙ্গে সঙ্গে দেবায়ন ওর প্রেমিকাকে নিচে ফেলে সঙ্গমে রত হয়। বিকেলে একবার অনুপমার সাথে মিলিত হয়েছিল আবার মেহেকের যোনির ভেতরে বীর্য ঢেলেছে। এবারে দেবায়নের লিঙ্গের কঠিনতা কমতে আর বীর্য স্খলন হতে অনেক দেরি হয়। প্রচন্ড সঙ্গম ক্রীড়ায় রত হয়ে বারে বারে প্রেয়সীকে চূড়ান্ত সুখের অধরা চুড়ায় নিয়ে যায় আর বারে বারে আছড়ে দেয় অনাবিল সুখের সাগর তীরে।
পরের দিন আর মেহেকের দেখা পায় না। ফ্রন্ট ডেস্কে জিজ্ঞেস করে জানতে পারে যে মেহেক খুব ভোরবেলা ওর ছেলে নিয়ে বেড়িয়ে গেছে। এবারে পালা, ঘুড়ির প্যাঁচের, এবারে ওদের যেতে হবে উটি। দুপুরের পরেই যাত্রা শুরু করে। পুনে থেকে মুম্বাই হয়ে কোয়েম্বাটুর পৌঁছাতে পৌঁছাতে ওদের বিকেল হয়ে যায়। আগে থেকেই গাড়ি বলা ছিল এয়ারপোর্টে। প্লেন থেকে নেমে গাড়ি করে সোজা উটি চলে যায়। পারিজাতের হোটেলে না উঠে অন্য একটা হোটেলে ওঠে। পুনে থেকে যাত্রা শুরু করার আগেই পারিজাতকে ফোনে জানিয়ে দিয়েছিল ওদের আসার কথা।
 
Like Reply
পঞ্চবিংশ পর্ব (#12)

রাতে উটি পৌঁছে মিস্টার সেনকে ফোনে জানিয়ে দেয় যে পুনের হোটেল এক প্রকার সম্পূর্ণ ওদের হাতে চলে এসেছে। মিস্টার সেন অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করেন কি ভাবে দেবায়ন এই দুঃসাধ্য কাজ সম্ভব করতে পেরেছে। অনুপমা ওর কাছ থেকে ফোন নিয়ে ওর বাবাকে জানায় যে কোলকাতা ফিরে সবিস্তারে সব কিছু জানিয়ে দেবে। ইতিমধ্যে দু’বার মিস্টার পারিজাতের ফোন চলে আসে ওদের খোঁজ খবর নেওয়ার জন্য। পারিজাত ব্যাবসাদার মানুষ হলেও মনের দিক থেকে দিলিপ বাবু আর মিস্টার রজতের মতন অতটা কুটিল মস্তিষ্কের ব্যাক্তি নয়।
পরের দিন দুপুরের পরেই দেবায়ন আর অনুপমা, পারিজাত বাবুর হোটেলে পৌঁছে যায়। মিস্টার সেন এই হোটেলের পঁচিশ শতাংশের মালিক তাই মাঝে মাঝে মিস্টার সেন এসে ঘুরে যান, তদারকি করে যান। এর আগেও মিস্টার সেনের সাথে একবার এখানে এসেছিল দেবায়ন, তবে অনুপমার জন্য উটি ভ্রমন প্রথম বার।
মিস্টার পারিজাত, বয়স পঞ্চাশের কাছাকাছি, মাথায় কাঁচা পাকা চুল, চোখে চশমা, চেহারায় এক আময়িক হাসি হাসি ভাব। পারিজাত বাবু অনুপমাকে দেখে বেশ খুশি হন। পারিজাত বাবু অনুপমার সাথে বাড়ির গল্পে মেতে ওঠে, ছেলে মেয়ের গল্পে মেতে ওঠে। পারিজাত বাবুর হাসি হাসি চেহারা দেখে অনুপমা একটু গলে যায়। দেবায়নকে একপাশে টেনে বলে যে এর সাথে চটুল পদ্ধতি না করে সোজা কোন উপায়ে হোটেলের কথা বলতে।
দেবায়ন হেসে বলে, “দ্যাখ পুচ্চি, পুনেতে রজতের সাথে যেটা আমরা করেছি সেটা তুই কুটিল চাল বলতে পারিস। কিন্তু এখানে আমি যা করছি সেটা ব্যাবসার মারপ্যাঁচ। দয়া করে এখানে মাথা ঘামাস না, প্লিস সোনা এই ডিল আমাকে করতে দে।”
ড্রিঙ্কসের গ্লাস হাতে তুলে পারিজাত বাবু দেবায়নকে প্রশ্ন করে, “এইতো কিছু দিন আগেই মিস্টার সেন এলেন। এর মধ্যেই আবার তুমি ঘুরতে এলে?”
দেবায়ন হেসে পারিজাতকে বলে, “এই এমনি এলাম। গত কোয়ার্টারে বেশ ভালো আয় হয়েছে আর এখন গরমের ছুটির মরশুম। তাই বর্তমান কোয়ার্টারে আয় কেমন হচ্ছে সেটা একবার দেখতে এলাম।”
পারিজাত বাবু মৃদু হেসে কথা ঘুরিয়ে বলে, “হ্যাঁ উটি ভালো জায়গা। মিস সেনের মনে হয় এই প্রথম উটি আসা।”
অনুপমা মাথা নাড়িয়ে বলে “হ্যাঁ।”
পারিজাত বাবু ওকে বলে, “তাহলে ভালো কথা। আজ রাতের ডিনার আমার বাড়িতে, তারপরে কাল উটি ঘুরে বেড়াও দুইজনে।”
দেবায়ন অত সহজে ভোলার মানুষ নয় তাই পাল্টা হেসে বলে, “আমন্ত্রন নিশ্চয় রক্ষা করব মিস্টার পারিজাত। কিন্তু একবার এই কোয়াটারের ব্যালেন্স সিটটা আর মান্থলি রিপোর্টটা দেখতে পেলে বড় ভালো হয়।”
পারিজাত বাবু একটু ফাঁপড়ে পরে যায় তাও পাক্কা ব্যাবসাদারের মতন উত্তর দেয়, “মিস্টার বসাক, যেমন মানুষের আসা যাওয়া লেগেই থাকে সেই মতন টাকার আসা যাওয়া লেগে থাকে। এখনো তো কোয়ার্টার শেষ হয়নি, শেষ হলেই আমি মিস্টার সেনকে রিপোর্ট পাঠিয়ে দেব।”
দেবায়ন পারিজাত বাবুর চোখে চোখ রেখে প্রশ্ন করে, “তাহলে এবারে আসল কথায় আসি মিস্টার পারিজাত।”
দেবায়নের গম্ভির কণ্ঠস্বর শুনে পারিজাত বাবু একটু নড়েচড়ে বসে। দেবায়ন ওকে বলে, “দেখুন মিস্টার পারিজাত। সেন আঙ্কেল কেন এসেছিলেন সেটা আমাদের অজানা নয়। আমি আজকে সেই কথা নিয়েই এসেছি।”
দেবায়নের মুখে হোটেলের কথা শুনে পারিজাত বাবুর মুখের আদল বদলে যায়। আময়িক চেহারা একটু ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। চশমা নামিয়ে টেবিলের ওপরে ঝুঁকে দেবায়নকে বলে, “মিস সেন আছেন তাই তোমাকে অনুরোধ করছি যে এই সব ব্যাবসার কথা আমরা পরে আলোচনা করবো। এখন উটি ঘুরে দেখো।”
অনুপমা একবার দেবায়নের দিকে তাকায় একবার পারিজাত বাবুর দিকে তাকায়। পারিজাত বাবু ওর মুখের দিকে তাকিয়ে হেসে বলে, “আরে মিস সেন, তুমি দেখি এখনো এই কাবাব টা খেলেই না। খেয়ে দেখো, খাশ লাখনউয়ের গেলাটি কাবাব।”
অনুপমা পারিজাত বাবুর কথায় একটু হেসে একটা কাবাব তুলে নেয়।
দেবায়নের মৃদু হেসে পারিজাত বাবুকে বলে, “মিস্টার পারিজাত, মিস সেন শুধু মাত্র সেন কাকুর মেয়ে নয়। ও আমার হবু সহধর্মিণী, সুতরাং ওর সামনে এই বিষয়ে আলোচনা করলে কিছু হবে না।”
পারিজাত বাবু চেয়ারে হেলান দিয়ে মুখের কাছে দুই হাত জড়ো করে গম্ভীর কণ্ঠে প্রশ্ন করে, “তাহলে কি চাও মিস্টার বসাক? আমি আমার কথা আগেই মিস্টার সেনকে জানিয়ে দিয়েছি। এখন আমি হোটেল বিক্রি করতে রাজি নই।”
দেবায়ন জবাব দেয়, “মিস্টার পারিজাত, গত কোয়ার্টারে নেট প্রফিট হয়েছে পাঁচ কোটি আর এই কোয়ার্টারে এখন পর্যন্ত আয় হয়েছে এক কোটি। ঠিক কি না?”
পারিজাত বাবু ভুরু কুঁচকে প্রশ্ন করে, “তুমি এত খবর জানলে কি করে?”
দেবায়ন জবাব দেয়, “পঁচিশ শতাংশের মালিকানা আমাদের কাছে। একাউন্টস যখন তখন চাইলেই আশা করি দেখতে পারি সেই অধিকার আমাদের আছে।”
পারিজাত বাবু চুপ করে থাকেন। দেবায়ন বলে চলে, “এই এক কোটি থেকে মাইনে দিয়ে, খাবারের বিল, ইলেকট্রিক বিল, ট্যাক্স ইত্যাদি মিটিয়ে এবারে কত হাতে থাকবে? দশ লাখের মতন হয়তো হাতে থাকবে আর নব্বুই লাখ বেড়িয়ে যাবে। তাহলে এই কোয়ার্টারে আমি পাচ্ছি মাত্র আড়াই লাখ টাকা। এত কমে কেন সন্তুষ্ট হবো একবার বলেন?”
এই কথা শুনে পারিজাত বাবুর চাহনি কঠিন হয়ে যায়, “ব্যাবসায় ওঠা নামা হতেই পারে মিস্টার বসাক।”
দেবায়ন দমবার পাত্র নয়, “হ্যাঁ ব্যাবসা মানেই ওঠা নামা। আজকে আমি রাজা কালকে আমি ফকির। কিন্তু ঢোকার সময়ে দেখলাম যে এই ছুটির মরশুমে হোটেল অনেক খালি। কি কারন জানতে পারি কি?”
পারিজাত বাবু বড় এক নিঃশ্বাস নিয়ে বলেন, “কি চাও খুলে বল।”
দেবায়ন বলে, “শুধু মাত্র আপনার ত্রিশ শতাংশ কিনতে চাই। আমাদের অফার ত্রিশ কোটি টাকা।”
পারিজাত বাবু, “মিস্টার সেন কে আমি আগেই বলেছি যে এই হোটেল আমি এখন বিক্রি করব না।”
দেবায়ন তির্যক হেসে বলে, “বেশ ভালো কথা মিস্টার পারিজাত। আজ আমি চলে যাচ্ছি। এই কোয়ার্টারের মিটিঙে সেন কাকুকে পাঠিয়ে দেব কিন্তু তার পরের মিটিংয়ে আমি নিজে আসব। আর তখন সবার সামনে আপনার হোটেলের ভ্যালু আর হোটেলের আয় ব্যায় নিয়ে আলোচনা করব। সেই মিটিঙে আপনার ফাইন্যান্স ম্যানেজার, এইচ আর ম্যানেজার, রেস্টুরেন্টের ম্যানেজার সবাই থাকবে। ভেবে দেখুন ওদের সামনে যখন আমি এই নিয়ে কথা বলব তখন আপনি কি বলবেন। ওরা সবাই চুপ থাকবে, কারন ওরা মাইনে পায় মিস্টার পারিজাত। ওদের মাইনে প্রতি বছর বাড়ে কিন্তু আমাদের টাকা কোন বছর বারে কোন বছরে কমে আসে। কিন্তু তাই বলে এক কোটি থেকে এক ধাক্কায় আড়াই লাখ? ধাক্কাটা খুব বেশি হয়ে গেল না মিস্টার পারিজাত? একবার ওদের একটু কম মাইনে দিয়ে দেখুন, দেখবেন ওরা কেমন আপনার দিকে তেড়ে আসে।”
অপমান আর বদনামের ভয়ে পারিজাত বাবু গুমরে ওঠেন, “সবার সামনে অপমান? ঠিক সহ্য করতে পারছি না মিস্টার বসাক। মিস্টার সেনের সাথে এতদিনের পরিচয়, আর তুমি তাঁর মান এইরকম ভাবে রাখলে?”
দেবায়ন বুক ভরা শ্বাস নিয়ে বলে, “মিস্টার পারিজাত, আপনি আমার থেকে অনেক বড়, আমি আপনাকে অপমান করতে চাই না। তাই শুধু অনুরোধ করছি যে হোটেলের মালিকানা বিক্রি করে দিন। আমি রীতিমত টাকা দিয়ে কিনতে চাই, দাম কম দিচ্ছি না। ভালোই টাকা দিচ্ছি।”
পারিজাত বাবু বলে, “ত্রিশ কোটি টাকা? জানো এই হোটেলের বর্তমান দর কত?”
দেবায়ন বলে, “হ্যাঁ জানি। এই হোটেলের বর্তমান ভ্যালু দেড়শো কোটি টাকা, কিন্তু যে হোটেল চলে না তার দাম কত হতে পারে মিস্টার পারিজাত? এই কোয়ার্টারে এই অবস্থা, এর পরে বর্ষা কাল, কোন টুরিস্ট এখানে আসবে না, তখন দাম আরও পড়ে যাবে।”
পারিজাত বাবু কোণঠাসা হয়ে যায়, “মিস্টার বসাক, পঞ্চাশ কোটির নিচে কি করে ডিল করি?”
দেবায়ন বলে, “ত্রিশ কোটি ঠিক দাম দিচ্ছি মিস্টার পারিজাত।”
দেবায়নের কথাবার্তা শুনে পারিজাত বাবু ভাবনায় পড়ে যায়। বেশ খানিকক্ষণ চিন্তা ভাবনা করে বলেন, “তোমাকে ত্রিশ শতাংশ দিয়ে দিলে আমার কাছে কি থাকবে? শুধু মাত্র পনেরো শতাংশ? জানোই তো যে বাকি কুড়ি শতাংশ আমার শালীর নামে লেখা।”
দেবায়ন হেসে ফেলে, “ওকে বুঝিয়ে ওঠার দায়িত্ব আপনার।”
পারিজাত বাবু বলে, “আচ্ছা একটা কথা বল। মানছি যে আমার হোটেলের আয় হঠাৎ কমে গেছে, কিন্তু তোমার হাতে পড়লে তুমি কি ভাবে হোটেলের আয় বাড়িয়ে দেবে?”
দেবায়ন হেসে জবাব দেয়, “মিস্টার পারিজাত, এই গতকাল আমি পুনেতে একটা ফোর স্টার প্রপার্টি কিনেছি, দেড়শো কোটি টাকার ডিল করে এসেছি। সেন কাকুর মুখে নিশ্চয় শুনেছেন যে আমাদের আরও তিনটে হোটেল আছে। সব মিলিয়ে একটা চেইন হোটেল দাঁড় করাতে চাই। নিজেদের কন্সট্রাকশান কোম্পানি আছে, কোন হোটেলের কন্সট্রাকশান করতে হলে নিজেদের কোম্পানি দিয়েই করাব।”
অনুপমার দিকে দেখিয়ে বলে, “আমার মিসেস নতুন একটা সফটওয়্যার কোম্পানি খুলেছে। এই হোটেল চেইনগুলো আমরা এক সাথে বেঁধে দিতে চাই। তাতে লাভ আছে, কোন হোটেল বেশি আয় করল, কোনটা কম। টাকা ঘুরাতে পারবো এই খান থেকে ওইখানে।”
নিরুপায় পারিজাত বাবু শেষ পর্যন্ত হেসে ফেলেন, “মিস্টার বসাক তুমি একদম তৈরি হয়েই এসেছ দেখছি।”
দেবায়ন হাত বাড়িয়ে দেয় পারিজাত বাবুর দিকে, “হ্যাঁ এক প্রকার। তাহলে কি রাতের ডিনার আপনার বাড়িতে না কোন রেস্টুরেন্টে করতে হবে?”
পারিজাত বাবু অনুপমার দিকে তাকিয়ে হেসে বলে, “না না মিস সেন প্রথম বার এসেছে, ডিনার আমার বাড়িতেই হবে। কি খেতে চাও বলো।”
অনুপমা হেসে বলে, “আপনি যা খাওয়াতে চাইবেন। আমরা অতিথি।”
পারিজাত বাবু বলে, “বেশ ঠিক আছে। একদম খাস দক্ষিণ ভারতের রাজার খাবার খাওয়াব।”
তারপরে দেবায়নের দিকে তাকিয়ে বলে, “আচ্ছা একটা কথা বল। নিজের এত বড় হোটেল থাকতে বাইরের হোটেলে কেন থাকতে গেলে? এটা কি ঠিক করলে?”
দেবায়ন হেসে ফেলে, “তখন জানতাম না যে ডিনার আপনার বাড়িতে হবে তাই……” বলেই পারিজাত বাবুর দিকে হাত বাড়িয়ে দেয়।
পারিজাত বাবু দেবায়ন সাথে হাত মেলায়। দেবায়ন ওর হাতে হোটেলের ফাইল তুলে দেয়। পারিজাত বাবু ফাইল খুলে চোখ বুলিয়ে অবাক হয়ে যায়, “এখানে তো লেখা পঁয়ত্রিশ কোটি, তাহলে তুমি ত্রিশ কেন বলছিলে?”
দেবায়ন হেসে ফেলে, “ব্যাবসাদারের মন, দরদাম না করলে কি আর মন ভরে মিস্টার পারিজাত। আপনাকে ঠকিয়ে কি লাভ আছে আমার বলুন। রিতিমত বাজার দর দিয়েই হোটেল কিনব।”
পারিজাত বাবু, অনুপমার দিকে তাকিয়ে হেসে বলে, “তোমার মিস্টার ভবিষ্যতে অনেক ওপরে উঠবে। তার কারন একটাই, ও হৃদয় দিয়ে ব্যাবসা করে, বাকি আমরা মাথা দিয়ে ব্যাবসা করি তাই সামনের লোককে ঠকাতে চেষ্টা করি।”
দেবায়ন বলে, “কেন মিছে লজ্জা দিচ্ছেন মিস্টার পারিজাত। আপনার কাছ থেকে আর সেন কাকুর কাছ থেকে আমার অনেক কিছু শেখার আছে।”
পারিজাত বাবু হেসে ফেলে ওর কথা শুনে, “হ্যাঁ সেটা বুঝতেই পারছি আর তাই এবারে মিস্টার সেন নিজে না এসে তোমাকে পাঠিয়েছে। যাই হোক, ওই হোটেল থেকে চেক আউট করে নাও এখুনি। সোজা আমার বাড়িতে চল। আমি কিন্তু কোন কথা শুনতে চাই না মিস্টার বসাক।”
অনুপমা আব্দারের সুরে দেবায়নকে বাংলায় বলে, “হ্যাঁরে এত করে বলছে চল।”
দেবায়ন প্রতি উত্তরে বলে, “হ্যাঁ চল। ডিল ঠিকঠাক হয়ে গেছে এবারে কোন চিন্তা নেই।”
পারিজাত বাবুর সাথে ওরা দুইজনে হোটেল থেকে বেড়িয়ে আসে। দেবায়ন অনুপমাকে নিয়ে হোটেল ঘুরিয়ে দেখায়। উটির নামকরা হোটেলের মধ্যে এটা অন্যতম। দুটো রেস্টুরেন্ট, দুটো ব্যাঙ্কুয়েট, পাঁচ তলা উঁচু বিশাল হোটেল। হোটেলের মালিকানা পেয়ে দুইজনেই বেশ উৎসাহিত। হোটেলের ম্যানেজার, রেস্টুরেন্ট ম্যানেজার আরও অন্য ম্যানেজারদের সাথে কথা বলে দেবায়ন। মিস্টার পারিজাত জানায় যে আগামী কোয়ার্টার শেষে, বোর্ড মিটিংয়ে হোটেলের হাত বদলের কথা সবাইকে আনুষ্ঠানিক ভাবে জানিয়ে দেবেন, আর সেই সাথে ওদের সবাইকে আমন্ত্রন জানান। অনুপমা হাসি মুখে আমন্ত্রন স্বীকার করে।
অন্য হোটেল থেকে চেক আউট করে ওরা পারিজাত বাবুর বাড়ি পৌঁছায়। পারিজাত বাবুর বাড়ি উটি থেকে একটু দুরে একটা ছোটো পাহাড়ের ওপরে, চা বাগানের পাশে। সামনে বিশাল লন, পেছনে ছোটো ছোটো সবুজ পাহাড়। এই মনোরম দৃশ্য কোলকাতায় দুর্লভ। পারিজাত বাবুর স্ত্রী, সুনন্দা ওদের বেশ আদর আপ্যায়ন করেন। ধনী হলেও তাঁর স্ত্রীর আচরন খুব আময়িক। রাতের বেলা ভুরি ভোজ সম্পন্ন করে পারিজাত বাবুর বাড়িতেই রাত কাটায়। রাতেই মিস্টার পারিজাত হোটেলের কাগজে স্বাক্ষর করে দেন আর বলেন যে তার শালীর সাথে নিজেই বোঝাপড়া করে নেবেন। দেবায়ন কথা দেয় যে তাঁর মুন্নারের হোটেলের ব্যাপারে দেবায়ন সাহায্য করবে।
পরদিন সকালে পারিজাত বাবুর গাড়ি ওদের কে কোয়েম্বাটুর পৌঁছে দেয়। এর পরে যাত্রা ব্যাঙ্গালোর। মিস্টার দিলিপ কঠিন লোক, কিন্তু এইখানে ওদের কে খুব সাবধানে পা ফেলতে হবে। ফ্লাইটে ওঠার আগে, কার্তিকেয়নকে ফোনে জানিয়ে দেয় যে, এক মাস পর থেকে আবার লোক নিযুক্ত শুরু করতে।
ব্যাঙ্গালোর নেমেই দেবায়ন, দিলিপ বাবুকে ফোন করে জানায় ওদের আসার কথা। ওদের পৌঁছানোর কথা শুনেই বিরক্ত হয়ে যান দিলিপ বাবু। ফোনেই দেবায়নকে কড়া কথা শুনিয়ে জানিয়ে দেয় যে গত বার মিস্টার সেনকে জানিয়ে দিয়েছিলেন যে হোটেলের শেয়ার তিনি বিক্রি করতে নারাজ। মিস্টার সেন অনেকদিনের চেনা তাই ভালো ভাবেই গত বার তাকে পাঠিয়েছিলেন, কিন্তু বারেবারে ওনাকে এই ভাবে বিরক্ত করলে তিনি মিস্টার সেনের কাছ থেকে শেয়ার কিনে নেবেন।
অনুপমার অনুরোধে দেবায়ন চুপ করে দিলিপ বাবুর কড়া কণ্ঠের জবাব শুনে যায়। গলার স্বর জড়ানো, তাই থেকে বুঝে যায় যে দিলিপ বাবু বর্তমানে নেশায় চুড়। দেবায়ন জানায় তার সাথে আগামী কাল একবার দেখা করতে চায়। দিলিপ বাবু জানিয়ে দেয় যে সকালে হোটেলে এসে দেখা করতে।
দেবায়ন চিন্তায় পড়ে যায়, কি ভাবে এই হোটেলের ডিল করা যায়। বেশ বড় থ্রি স্টার হোটেল, শহরের একদম মাঝখানে। এটা ছাড়াও দিলিপ বাবুর আরো একটা হোটেলে আছে ব্যাঙ্গালোরে আর সেটাও থ্রি স্টার। ব্যাঙ্গালোর বর্তমানে ভারতের অন্যতম ব্যাস্ত শহর, তথ্য প্রযুক্তির শহর আর প্রচুর লোকের আনাগোনা। এইখানে মাঝামাঝি হোটেল গুলো বেশি চলে আর তাই দিলিপ বাবু হোটেল হাত ছাড়া করতে চায় না।
পরের দিন সকালে দেবায়ন আর অনুপমা, হোটেলে পৌঁছে যায়। অনুপমা দেবায়নকে অনুরোধ করে মাথা ঠাণ্ডা রাখার জন্য আর যা কিছু কথা সব অনুপমা বলবে। পশ্চিমী আধুনিক পোশাক ছেড়ে অনুপমা একটা সুন্দর তুঁতে রঙের সালোয়ার কামিজ পরে। ওর অনুরোধে দেবায়ন সুট ছেড়ে সাধারন জিন্সের প্যান্ট আর সাদা শার্ট পরে। হাতে কোন রকমের কাগজ ফাইল নেয় না, খালি হাতেই হোটেলে ঢোকে। এর আগেও একবার মিস্টার সেনের সাথে হোটেল দেখতে এসছিল দেবায়ন। দেবায়নকে ঢুকতে দেখে সবাই নড়েচড়ে বসে। ফ্রন্ট ডেস্কের মেয়েটা নমস্কার জানায়। অনুপমা ওকে বলে যে মিস্টার দিলিপের সাথে দেখা করতে এসেছে। রিসেপ্সানিস্ট ওদেরকে কিছুক্ষণ বসতে বলে। দেবায়ন এদিক ওদিকে তাকিয়ে দেখে, লোকজনের আনাগোনা দেখেই বোঝা যায় হোটেল একদম ঠাসা। অনুপমা ওর হাত চেপে ধরে শান্ত হতে অনুরোধ করে। অনুপমার হাতের উষ্ণ ছোঁয়ায় বুকের অস্থিরতা কিছুটা লাঘব হয়।
কিছুক্ষণ পরে রিসেপ্সানিস্ট ওদের কে দিলিপ বাবুর কেবিনে নিয়ে যায়। অনুপমা দিলিপ বাবুকে দেখে হাত জোর করে নমস্কার জানায়। দিলিপ বাবুর বয়স চল্লিশ থেকে পঁয়তাল্লিশের মাঝামাঝি, দেখেই বোঝা যায় যে এক কালে বেশ সুপুরুষ এবং ফর্সা ছিলেন। বর্তমানে গায়ের রঙ তামাটে হয়ে গেছে। মদ খেয়ে মোটা হয়ে গেছেন, গলার নিচে, চোখের কোলে এবং পেটে চর্বি জমে গেছে। শরীরের প্রতি বিশেষ যত্ন নেন না, ঘন ঘন সিগারেট টানেন। ওনার কেবিন ধোঁয়াটে হয়ে গেছে সিগারেটের ধোঁয়ায় আর নাকে পোড়া গন্ধ ভেসে আসে। অনুপমার দম বন্ধ হয়ে যাবার জোগাড় তাও নিজেকে সামলে নেয়। দিলিপ বাবু লোলুপ দৃষ্টিতে অনুপমার মাথা থেকে পা পর্যন্ত ক্ষুধার্ত চাহনি ভরে জরিপ করে। অনুপমার মনে হয় যেন ওকে নগ্ন করে সারা অঙ্গে হাত বুলিয়ে মেপে নিচ্ছে। দিলিপ বাবুর লোলুপ দৃষ্টি দেখে দেবায়নের শরীরের রক্ত ক্রোধে টগবগ করে ফুটতে শুরু করে। তাও অনুপমা ঠোঁটে হাসি নিয়ে দেবায়নের দিকে তাকিয়ে ইঙ্গিতে মাথা ঠাণ্ডা রাখতে অনুরোধ জানায়।
দিলিপ বাবু পানপরাগ খাওয়া দেঁতো হাসি দিয়ে দেবায়নের দিকে হাত বাড়িয়ে হাত মেলায়, “কেমন আছো মিস্টার বসাক?”
দেবায়ন হাত মিলিয়ে অনুপমার সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়, “মিস অনুপমা সেন, মিস্টার সেনের একমাত্র কন্যে।”
নিজের সাথে অনুপমার সম্পর্ক গোপন করে যায় অনুপমার অনুরোধেই।
দিলিপ বাবু ওদের বসতে বলে সোজাসুজি হোটেলের কথায় চলে আসে, “মিস্টার সেন কে আমি পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছি যে হোটেল আমি এখন বিক্রি করব না। মিস্টার সেন আমার অনেকদিনের বন্ধু, সেই বন্ধুত্বের সম্পর্কে আমি চিড় ধরাতে চাই না।”
অনুপমা মিষ্টি হেসে বলে, “না না, মিস্টার দিলিপ, আসলে কি জানেন, ভাবলাম বাবার প্রপার্টি গুলো একবার ঘুরে দেখে আসি।”
অনুপমার গলা শুনে দিলিপ বাবু দেঁতো হেসে বলে, “হ্যাঁ হ্যাঁ, নিশ্চয় নিশ্চয়। এই হোটেল তোমার বাবার বটে, কেন দেখতে আসবে না, নিশ্চয় আসবে।”
অনুপমা এদিক ওদিকে তাকিয়ে বলে, “তাহলে একটু হোটেলটা ঘুরে দেখি।”
দিলিপ বাবু ফোন তুলে কাউকে ডাকতে যায় কিন্তু অনুপমা বাধা দিয়ে বলে, “আপনি যদি সাথে আসেন তাহলে কি খুব ক্ষতি হবে?”
দিলিপ বাবু যেন হাতে মোয়া পেয়ে গেছে এমন একটা হাসি দিয়ে গলে পড়ে বলে, “না না মিস সেন একদম না। তোমার মতন সুন্দরীকে আমি হোটেল ঘুরিয়ে দেখাব, এটা আমার ভাগ্য।”
অনুপমা আর দিলিপ বাবু উঠে দাঁড়ায়, একটু পেছনে দেবায়ন। রুম থেকে বের হতেই হোটেলের সব স্টাফ ওদের দিকে তাকায়। দেবায়ন ওদের কিছুটা পেছন থেকে অনুসরণ করে। দিলিপ বাবু ওদের কে রেস্টুরেন্ট দেখায়, বার দেখায়, বিভিন্ন ধরনের রুমের ব্যাপারে জানায়।
অনুপমা দিলিপ বাবুকে জিজ্ঞেস করে, “আপনার মিসেস কি করে মিস্টার দিলিপ?”
দিলিপ বাবু তির্যক হেসে বলে, “দুধ খেতে হলে কি আর গাই কিনতে হয় মিস সেন? আমি বিয়ে করিনি মিস সেন।”
অনুপমা প্রশ্ন করে, “কেন করেন নি? আপনি একজন ধনী সুপুরুষ ব্যাক্তি।”
দিলিপ বাবুর কোন পুরাতন জায়গায় খোঁচা লাগে আর সেই জায়গা অনুপমা আর দেবায়নের অজানা নয়। তাও দিলিপ বাবু দেঁতো হাসি হেসে বলে, “আরে তুমি দেখি আমার বিয়ে নিয়ে পড়ে আছো। ছাড়ো না ওই সব কথা। হোটেল দেখো, বার দেখো।”
অনুপমা দিলিপ বাবুর হাত ধরে অনুনয়ের সুরে জিজ্ঞেস করে, “বলুন না দিলিপ বাবু, আপনি কেন বিয়ে করেন নি?”
অনুপমার উষ্ণ নরম হাতের ছোঁয়ায় হটাত করে যেন দিলিপ বাবুর মন উদাস হয়ে যায়। একবার দেবায়নের দিকে তাকায় একবার অনুপমার দিকে। নিচের ঠোঁট কামড়ে মাথা দুলিয়ে উত্তর দেয়, “জীবনে টাকা কামাতে কামাতে ঠিক জীবন সাথী পেলাম না তাই আর বিয়ে করা হল না।”
অনুপমা হেসে ওর হাত ধরে বলে, “আপনার কত বয়স হয়েছে যে আপনি এখন আর বিয়ে করতে পারবেন না? আপনি চাইলেই আপনার বাড়ির সামনে লম্বা লাইন লেগে যাবে।”
ব্যাথা ভরা হাসি দিয়ে দিলিপ বাবু উত্তর দেয়, “হ্যাঁ মিস সেন, জানি। সত্যি কথা বলতে কি জানো বাড়ির সামনে…… ছাড়ো অইসব কথা……”
কথাটা বলতে বাধা পায় দিলিপ বাবু আর তাঁর কারন অনুপমা দেবায়নের অজানা নয় যে কাদের লাইন লাগে রোজ রাতে।
 
Like Reply
পঞ্চবিংশ পর্ব (#13)

অনুপমা বলে, “চলুন একটু আপনার রেস্টুরেন্টে গিয়ে বসি।”
রেস্টুরেন্টে ঢুকতেই সবাই একপায়ে খাড়া হয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে। হোটেলের দুই মালিক একসাথে রেস্টুরেন্টে ঢুকেছে। দেবায়ন আর অনুপমা টেবিলের একপাশে বসে আর দিলিপ বাবু ওদের সামনে বসে। দিলিপ বাবু খাবারের কথা জিজ্ঞেস করাতে অনুপমা জানায় যে ওরা খেতে আসেনি, আসলে দিলিপ বাবুর রুমের সিগারেটের ধোঁয়াতে ওর খুব কষ্ট হচ্ছিলো, তাই রেস্টুরেন্টে নিয়ে এসেছে। অনুপমার কথা শুনে হাসিতে ফেটে পড়ে দিলিপ বাবু। হাসতে হাসতে ওর পেট ফেটে যাবার জোগাড়, টেবিল চাপড়ে বলে, এই কথা ওকে কেউ আজ পর্যন্ত বলেনি। সবাই চোখ বুজে নাক বুজে ওর রুমের সিগারেটের ধোঁয়ার গন্ধ সহ্য করে নেয়।
দিলিপ বাবু বলে, “সত্যি বলতে বিগত পনেরো বছরে হাসতে ভুলে গেছি আমি।” তারপরে ওদের অবাক করে বলে, “আমি সব জানি মিস্টার বসাক। মিস অনুপমা সেন আপনার বাগদত্তা আমি জানি।”
দেবায়ন আর অনুপমা পরস্পরের মুখ চাওয়াচায়ি করে। এমন সময়ে দিলিপ বাবুর ফোনে কারুর ফোন আসে। দিলিপ বাবু ফোন ধরে বলেন, “না জেসমিন আজকে নয়। আজকে রাতে আমি একটু ব্যাস্ত থাকব। আরে না না…… অন্য কেউ নয়…… তোমার সাথে পরে কথা বলব…… আরে না না…… রাজিব কে বলে দেব তোমার টাকা দিয়ে দেবে……”
ওর কথাবার্তা শুনে বুঝে গেল যে রাতে জেসমিন নামে একটা মেয়ের আসার কথা ছিল ওর বাড়িতে। কিন্তু কি কারনে তাকে কাটিয়ে দিল সেটা ঠিক বুঝে উঠতে পারল না ওরা।
দিলিপ বাবু ওদের দিকে তাকিয়ে বলে, “আজ রাতে কি করছ তোমরা?”
দেবায়ন বলে, “কিছুই নয়। অনুপমাকে নিয়ে একটু শহর দেখব তারপরে কালকে বাড়ি ফিরব।”
দিলিপ বাবু দেবায়নের হাত ধরে বলে, “সত্যি বলতে অনেকদিন পরে আজকে একটু মন কেমন লাগছে। প্লিস আজ রাতে আমার বাড়িতে এসো, একসাথে ডিনার করব।”
অনুপমা হেসে বলে, “ঠিক আছে রাতে আপনার বাড়িতে আসবো।”
আরও বেশ কিছুক্ষণ দিলিপ বাবুর সঙ্গে বসে ওরা হোটেলে ফিরে যায়। হোটেলে ফিরে দেবায়ন কিঞ্চিত সংশয় ব্যাক্ত করে অনুপমার কাছে, কিন্তু অনুপমা ওকে আশ্বস্ত করে বলে যে দিলিপ বাবু রাতে তাঁর মনের কথা খুলে বলবে আর সেই সময়ে অনুপমা ওকে মুসৌরি ঘুরতে যাওয়ার কথা বলবে। দেখা যাক মুসৌরি বেড়াতে যাওয়ার কথা শুনে দিলিপ বাবু কি উত্তর দেন।
রাতে ওদের নিতে গাড়ি পৌঁছে যায়। গাড়ি করে দিলিপ বাবুর বাড়িতে পৌঁছায়। বেশ বড়সড় একতলা বাড়ি, দুটো সবসময়ের চাকর, ড্রাইভার ছাড়া আর কেউ থাকে না বাড়িতে। বসার ঘরে ওদের জন্য অপেক্ষা করছিলেন দিলিপ বাবু। সকালের সেই লোলুপ চোখের চাহনি আর তাঁর চেহারায় নেই। ওদের দেখে আময়িক হেসে অভ্যর্থনা জানায়। বাড়ির চাকর এসে ওদের সামনে খাদ্য পানীয় রেখে চলে যায়। অনুপমা আর দেবায়ন এদিক ওদিকে তাকিয়ে দেখে। বিশাল বড়লোক, তাই অনেক রকমের জিনিস পত্রে শোকেস ঠাসা। বাড়ির পরিচালনা চাকরদের হাতেই বলা চলে।
দেবায়ন দিলিপ বাবুকে প্রশ্ন করে, “আপনি একাই থাকেন এত বড় বাড়িতে?”
দিলিপ বাবু বলেন, “হ্যাঁ, একাই থাকি।”
দেবায়ন বলে, “আপনার বাবা মা ভাই বোন?”
দিলিপ বাবু বলেন, “বাবা মা অনেকদিন আগেই স্বর্গে চলে গেছেন আর ভাই হায়দ্রাবাদে থাকে।”
অনুপমা বলে, “আপনার একা থাকতে ভালো লাগে? মানে মাঝ মাঝে কি মনে হয় না যে সাথে কেউ থাকলে বড় ভালো হত?”
দিলিপ বাবু কাষ্ঠ হেসে বলেন, “হ্যাঁ মন চায় আর সেটা মাঝে মাঝে পুষিয়ে যায়।”
কথাটার তাৎপর্য দুইজনেই বুঝতে পারে।
কিছুপরে দিলিপবাবু ওদের মদের কথা জিজ্ঞেস করাতে দেবায়ন জানায় যে হুইস্কি তে ওর কোন অসুবিধা নেই, অনুপমা মদ খাওয়ার কথা মানা করে দেয়। দিলিপ বাবু চাকরকে ডেকে হুইস্কি আনতে বলে।
অনুপমা একটা কোল্ড ড্রিঙ্কসের গ্লাসে চুমুক দিয়ে জিজ্ঞেস করে, “আপনি কিন্তু আমার কথার উত্তর দিলেন না।”
দিলিপ বাবু পালটে প্রশ্ন করেন, “কি কথা?”
অনুপমা মিষ্টি হেসে বলে, “আপনি কেন বিয়ে করেন নি।”
দিলিপ বাবু বললেন, “কি হবে জেনে আমার কথা। এই তোমাদের দেখে বড় ভাল লাগছে এই শান্তি।”
অনুপমা আব্দার করে চেপে ধরে, “বলুন না প্লিস, কেন বিয়ে করলেন না। কেউ কি আপনাকে আঘাত দিয়েছে যে সেই আঘাত থেকে আর উঠতে পারলেন না আর……”
গুমরে ওঠেন দিলিপ বাবু, “না…… কেউ আমাকে আঘাত করেনি। না ও আমাকে আঘাত করতেই পারে না।”
দেবায়ন দিলিপ বাবুর হাতে হাত রেখে জিজ্ঞেস করে, “নাম কি তাঁর?”
দিলিপ বাবু মদের গ্লাসে চুমুক দিয়ে ছলছল চোখে দেবায়ন আর অনুপমার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে, “কেন আমার অতীত জানতে চাইছ তোমরা?”
অনুপমা ওর হাতের উষ্ণ পরশ ছুঁইয়ে বলে, “আপনার ওই চোখের পেছনে অনেক কিছু লুকিয়ে আছে। আপনি এত মদ খান কাউকে ভুলে থাকার জন্য। কেন নিজেকে এত কষ্ট দিচ্ছেন? একবার কাউকে মনের কথা খুলে বলুন দেখবেন মন অনেক হাল্কা হয়ে যাবে।”
এক ঢোকে হাতের গ্লাস শেষ করে নিচের ঠোঁট চেপে ধরে দিলিপ বাবু। হাত কাঁপতে শুরু করে দেয়, চোখের কোল একটু ছলকে ওঠে। দেবায়ন ওর হাতের চাপ বাড়িয়ে দিলিপ বাবুর মনে বল যোগায়।
দিলিপ বাবু বেশ কিছুক্ষণ চুপ থাকার পরে পকেট থেকে পার্স বের করে একটা সুন্দরী মেয়ের ছবি অনুপমার হাতে দেয়। ছবিটা দেখিয়ে বলেন, “কণিকা আমার প্রথম আর অন্তিম ভালোবাসা……”
কিছুক্ষণ চুপ থাকেন, কণ্ঠ স্বর কেঁপে ওঠে, “কণিকার সাথে দেখা হয়েছিল কলেজে পড়ার সময়ে। বড় মিষ্টি মেয়ে, ওর চোখ দুটো আমাকে বড় টানত। কিন্তু ওরা নিচু জাতের ছিল মানে সিডুল কাস্ট আর আমরা ', আর বিশাল বড়োলোক। কণিকার বাবা সামান্য সরকারি কেরানি আর আমার বাবা বিশাল ব্যাবসাদার। এই টাকা পয়সা প্রতিপত্তি আমাদের প্রেমের মাঝে চলে আসে। আমি বাবার সামনে দাঁড়াতে পারলাম না। আমার বাবা কণিকার বাড়িতে গিয়ে ওর বাবাকে যাচ্ছেতাই বলে অপমান করে আর তারপরে কনিকারা এই শহর ছেড়ে চলে যায়। তারপরে আমি প্রতিজ্ঞা করি যে আমি কোনদিন বিয়ে করব না। বাবা মারা যাওয়ার পরে আমি কণিকাকে খুঁজতে বের হয়েছিলাম। খুঁজে খুঁজে হায়দ্রাবাদ পৌঁছে জানতে পারলাম যে কণিকার বিয়ে হয়ে গেছে। নিজেকে ধিক্কার দিলাম যে সময় মতন নিজের প্রেমকে বাঁচাতে পারিনি বলে। তাই আর বিয়ে করা হল না, এই বুকে আর কাউকে রাখতে নারাজ, মিস সেন। তাই নিজেকে সবসময়ে মদে ডুবিয়ে রাখি।”
অনুপমা দিলিপ বাবুর হাত ধরে বলে, “আপনি আমাদের সাথে ঘুরতে যাবেন?”
অনুপমার কথা শুনে চমকে ওঠে দিলিপ বাবু, একবার দেবায়নের দিকে তাকায় একবার অনুপমার দিকে তাকায়, “কি বলছ তুমি? কোথায় বেড়াতে যাবো?”
দেবায়ন বলে, “মুসৌরি বেড়াতে যাবেন আমাদের সাথে?”
দিলিপ বাবু প্রশ্ন করে, “এত জায়গা থাকতে হটাত মুসৌরি কেন?”
দেবায়ন হেসে জবাব দেয়, “খুব সুন্দর পাহাড়ে ঘেরা জায়গা তাই। এই দুই বছর আগে আমরা মুসৌরি বেড়াতে গিয়েছিলাম।”
দিলিপ বাবুর মনে সন্দেহ হয় তাও হেসে জিজ্ঞেস করেন, “তোমরা ঠিক কি চাও বলো তো? তোমাদের ঠিক সুবিধার বলে মনে হচ্ছে না। মুসৌরি নিয়ে গিয়ে কি আমাকে মেরে ফেলতে চাও?”
অনুপমা মিষ্টি হেসে জবাব দেয়, “একবার আমাদের বিশ্বাস করে দেখুন।”
দিলিপ বাবু প্রশ্ন করেন, “ঠিক আছে, কবে যেতে হবে মুসৌরি?”
দেবায়ন উত্তরে বলে, “কালকেই আমরা বেড়িয়ে পড়ি।”
ঠিক হয় যে আগামী কাল দিল্লী হয়ে মুসৌরির পৌঁছাবে। দিলিপ বাবু সঙ্গে সঙ্গে ওদের টুর অপারেটর কে বলে প্লেনের টিকিট, দিল্লী থেকে মুসৌরি যাবার জন্য গাড়ি, হোটেল বুকিং ইত্যাদি সেরে ফেলেন। সবকিছু হয়ে যাবার পরে রাতে হোটেলে ফিরে দেবায়ন সংশয় ব্যাক্ত করে। অনুপমা বলে মুসৌরি গিয়ে যা হবার দেখা যাবে, দেবায়নের সংশয় অবান্তর নয় সেটা ভালো ভাবেই জানে। কস্তূরী ওদের কণিকার কলেজের ফোন নাম্বার বাড়ির ঠিকানা ইতাদ্যি দিয়েছিল।
পরেরদিন ভোরের প্লেন ধরে দিল্লী পৌঁছে যান তিনজনে। দিল্লী থেকে গাড়ি করে মুসউরি পৌঁছাতে পৌঁছাতে ওদের রাত হয়ে যায়। সারা রাস্তা দিলিপ বাবু বেশ চিন্তিত থাকেন আর বারেবারে দেবায়নকে প্রশ্ন করে হঠাৎ এই ঘুরতে আসার জন্য। দেবায়ন ওকে জানায় যে পরের দিন ওরা মুসৌরি ঘুরে বেড়াবে তারপরের দিন ওরা ধনোল্টি বেড়াতে যাবে। বেড়াবার প্লান শুনেও আশ্বস্ত হতে পারেন না দিলিপ বাবু।
পাহাড় বরাবর অনুপমাকে টেনেছে, দেশে বিদেশের নানা পাহাড়ি জায়গায় বাবা মায়ের সাথে ঘুরে বেড়িয়েছে কিন্তু এই বারের ঘুরতে আসা ঠিক অন্যবারের মতন নয়। এই বারে ওরা এসেছে দুই পুরানো প্রেমিক প্রেমিকাকে মেলানর জন্য যদিও তাঁর পেছনে ওদের অভসন্ধি অন্য কিছু পাওয়ার। দেবায়ন একটু বিরক্ত হয় এতকিছু করার পরেও যদি হোটেলের মালিকানা স্বত্তা হাতে না আসে তাহলে কি হবে, কিন্তু অনুপমার হাসিমুখ দেখে চুপ করে যায়। অনুপমার মাথায় ওই হোটেল, ব্যাবসা টাকা পয়সা নেই, ওর একটাই লক্ষ্য কণিকা আর দিলিপ বাবুর মিলন।
সকালে উঠেই অনুপমা আগে কণিকার কলেজে ফোন করে জেনে নেয় ওদের ছুটি কখন হয়। সেই মতন সারাদিন মুসৌরি ঘুরে বিকেলের দিকে গাড়ি নিয়ে ঠিক কলেজের সামনে পৌঁছে যায়। দিলিপ বাবু অবাক হয়ে ওদের প্রশ্ন করে যে ওরা কেন ওকে কলেজে এনেছে। কলেজের ছুটি হতেই অনুপমার বুকের ধুকপুকানি বেড়ে যায়। চোখ বন্ধ করে একবার কণিকার ছবি মনে এঁকে নিতে চেষ্টা করে। দিলিপ বাবুর কাছে দেখা ছবির সাথে কস্তূরী দেওয়া ছবির মুখের আদলে মিল থাকলেও কণিকা অনেক বদলে গেছে। দেবায়ন বারেবারে ঘড়ির দিকে তাকায় আর কলেজের গেটের দিকে তাকিয়ে থাকে।
কিছুপরে কণিকা কলেজের গেট থেকে বেড়িয়ে আসে। দেবায়ন দিলিপ বাবুর কাঁধে হাত রেখে কলেজের গেটের দিকে তাকাতে বলে। কলেজের গেটের দিকে তাকাতেই দিলিপ বাবু থমকে যান, কাকে দেখছে, নিজেকে ঠিক বিশ্বাস করতে পারে না। ঋজু কঠিন স্বভাবের মানুষটা শেষ পর্যন্ত কেঁপে ওঠে। অবাক হয়ে দেবায়নের দিকে নিস্পলক চোখে তাকিয়ে থাকে।
ওই দিকে অনুপমা কণিকার দিকে এগিয়ে যায়। অনুপমা কণিকার কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করে, “আপনি নিশ্চয় মিস কণিকা?”
অনুপমাকে দেখে কণিকা চিনতে পারে না। কণিকা মাথা নাড়িয়ে “হ্যাঁ” বলে অবাক চোখে তাকিয়ে থাকে অনুপমার দিকে। অনুপমা ওকে আঙুল দিয়ে দুরে দাঁড়িয়ে থাকা দিলিপ বাবু আর দেবায়নের দিকে দেখায়। পনেরো বছর পরে দিলিপ বাবুকে দেখে কণিকা থমকে যায়। হটাত মনে হয় যেন স্বপ্ন দেখছে, মাথা ধরে টলে পড়ে। কিন্তু তাঁর আগেই দিলিপ বাবু দৌড়ে এসে কনিকাকে ধরে ফেলে। কণিকা জল ভরা চোখ মেলে নিস্পলক তাকিয়ে থাকে দিলিপ বাবুর মুখের দিকে। সময় যেন ওদের চারপাশে দাঁড়িয়ে যায়। কণিকা নিথর হয়ে দিলিপ বাবুর মুখের দিকে চেয়ে থাকে অনেকক্ষণ।
অনেকক্ষণ না অল্পক্ষণ, কণিকা ধীরে ধীরে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে দিলিপ বাবুকে প্রশ্ন করে, “তুমি আমাকে খুঁজে পেলে কি করে?”
দিলিপ বাবুর কণ্ঠ স্বর জড়িয়ে আসে, “কেমন আছো তুমি, কণিকা?”
নিজের নাম শুনে, কণিকা চোখ বন্ধ করে নেয়। অনুপমার ওর মুখের দিকে চেয়ে বুঝতে পারে যে এতদিন পরে দিলিপ বাবুর কণ্ঠ স্বর শুনে নিজেকে সামলাতে পারছেন না।
কণিকা ধরা গলায় উত্তর দেয়, “ভালো আছি।”
এতদিন পরে পুরানো প্রেমিকাকে দেখে দিলিপ বাবু কি বলবেন কিছু ভেবে পান না। কিছু পরে নিজেকে সামলে নিয়ে কণিকা, অনুপমাদের পরিচয় জানতে চায়। দিলিপ বাবু ওদের পরিচয় দেন, কিন্তু কি ভাবে অনুপমা ওদের খুঁজে পেয়েছে সেটা দিলিপ বাবুর জানা নেই। অনুপমা আর দেবায়ন, ওদের অদুরে দাঁড়িয়ে থাকে। কিছুক্ষণ দিলিপ বাবু আর কণিকা নিজেদের মধ্যে কিছু কথাবার্তা বলে তারপরে কণিকা ওদের সবাইকে বাড়িতে আসতে নিমন্ত্রন জানায়। কণিকার পুত্র প্রেমজিতের কলেজের ছুটি আগেই হয়ে গেছিল, তাই ওরা পৌঁছানোর আগেই সে বাড়িতে ছিল। বাড়ি পৌঁছে কণিকা, বাকিদের সাথে প্রেমজিতের পরিচয় করিয়ে দেয়। প্রেমজিত, মুসৌরির এক কলেজে পরে, এখানেই বড় হয়েছে।
কণিকার বাড়ি একটা বাগানে ঘেরা এক তলা বাড়ি, দুটো ঘর একটা বসার ঘর, ছোটো হলেও খুব সুন্দর। সামনে বাগান, পেছনে সবুজে ঢাকা পাহাড় দেখে অনুপমা দেবায়নকে নিজের মনের ইচ্ছে ব্যাক্ত করে জানায় যে ভবিষ্যতে এমন একটা বাড়ি চাই ওর। সেই শুনে দেবায়ন একটু হেসে মাথা নাড়িয়ে জানিয়ে দেয় যে ডালহৌসি অথবা সোলাং উপত্যকায় যেখানে ওদের রিসোরট আছে সেখানে ইচ্ছে হলেই থেকে আসতে পারে।
রাতের খাওয়ার পরে দিলিপ বাবু জানান যে কনিকাকে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে এসেছে। কণিকা জানিয়ে দেন যে এই বয়সে দ্বিতীয় বার বিয়ে করা তাঁর পক্ষে সম্ভব নয় আর ছেলেও অনেক বড় হয়ে গেছে। বিগত দিনের কথা জিজ্ঞেস করাতে জানা যায় যে, দিলিপ বাবুর পিতা কণিকার বাবাকে অপমান করে আর তারপরে তারা সবাই ব্যাঙ্গালোর ছেড়ে অন্য এক শহরে চলে যায়। সেখানে কলেজের পড়াশুনা শেষ করে কণিকা আর তারপরেই তার বিয়ে হয়ে যায়। তাঁর স্বামী সেই সময়ে দেরাদুনে ন্যাশানাল ডিফেন্স একাডেমিতে চাকরি করতেন। বিয়ের ছয় বছর পরেই এক গাড়ি দুর্ঘটনায় তাঁর স্বামীর মৃত্যু হয়। তারপরে কণিকা আর ব্যাঙ্গালোর ফিরে যায় নি, মুসৌরিতে একটা মিশনারি কলেজে চাকরি নিয়ে এখানেই থেকে গেছে।
অনুপমা আর দেবায়ন কনিকাকে অনেক বুঝাতে চেষ্টা করে যে এক ধাক্কায় কোনদিন কারুর জীবন শেষ হয়ে যায় না। কণিকা বলেন যে তাঁর ছেলে এখন ক্লাস ফোরে পড়ে, সে যদি প্রশ্ন করে এই নতুন ভদ্রলোক কে, তাহলে কি জবাব দেবে কণিকা? এতদিন পড়ে হঠাৎ করে এসে হাত চাইলেই হয় না। ছেলের ইচ্ছে তাঁর চাহিদা সেটাই বর্তমানে কণিকার কাছে সব থেকে প্রধান তাই কণিকা মুসৌরি ছেড়ে যেতে নারাজ।
অনুপমা আর দেবায়ন, দিলিপ বাবুকে বুঝিয়ে বলে যে তাকে আরও বেশ কিছুদিন কণিকার সাথে মুসোউরিতে থেকে যেতে আর প্রেমজিতের সাথে মেলামেশা করতে। দিলিপ বাবুও কণিকার মনের অবস্থা অনুধাবন করেন। দুই দিনে ছোটো প্রেমজিতের চোখে অনেক প্রশ্ন, কে এই ভদ্রলোক, একে আগে কোনদিন দেখেনি, কেন ওর মায়ের সাথে এত হৃদ্যতা ইত্যাদি। ওর চোখের চাহনি দেখে দিলিপ বাবু থেকে যেতে রাজি হয়ে যান আর সেই সাথে কণিকার মন গলে যায়। কনিকাও চাইছিল যাতে দিলিপ বাবু কয়েক দিন ওদের সাথে থাকুক, প্রেমজিতের সাথে মেলামেশা করলে পরস্পরকে জানতে বুঝতে সুবিধে হবে। সময় মতন কণিকা পুত্রকে বুঝিয়ে উঠতে পারবেন তাঁর মনের ইচ্ছে।
এই দুই দিনে অনুপমা আর দেবায়ন হোটেলেই ছিল কিন্তু দিলিপ বাবু প্রথম দিন হোটেলে থাকার পরে কণিকার বাড়িতে থেকে গিয়েছিল। দেবায়ন যে কাজে এসেছিল সেটা আর তাঁর পক্ষে বলা সম্ভব হল না, তাই সেই বিষয়ে একটু চিন্তিত কিন্তু অনুপমা একপ্রকার খুশি। পনেরো বছর পড়ে দিলিপ বাবু তাঁর হারিয়ে যাওয়া ভালোবাসা খুঁজে পেয়েছে সেটা দেখেই অনুপমা খুশি।
ফিরে আসার আগের দিন রাতে কণিকার বাড়িতে রাতের খাবার সময়ে সবাই একসাথে বসে।
কণিকা অনুপমাকে প্রশ্ন করে, “তোমরা এত খবর কোথা থেকে পেলে সত্যি বলো তো?”
অনুপমা কথা ঘুরিয়ে, কনিকাকে শেষ অনুরোধ করে, “আপনি দিলিপ বাবুর সাথে ফিরে চলুন ব্যাঙ্গালোর।”
কণিকা একবার একটু দুরে বসা প্রেমজিতের দিকে দেখে আর একবার দিলিপ বাবুর মুখের দিকে তাকায়। শেষ পর্যন্ত হেসে বলেন, “দিলিপ যখন এত কষ্ট করে আমাকে খুঁজে বের করেছে তাহলে না ফিরে আর স্বস্তি নেই। তবে আমার কিছু সময়ের দরকার, মানে প্রেমজিতকে বুঝিয়ে রাজি করান। বর্তমানে ওকে বড় করা ওকে মানুষ করা আমার প্রধান উদ্দেশ্য।”
দিলিপ বাবু কণিকার হাতের ওপরে হাত রেখে আশ্বস্ত করার কণ্ঠে বলেন, “এবারে আর কোন উদ্দেশ্য তোমার একার হতে পারে না কণিকা। একবার যখন রাজি হয়েছ, তাহলে আমরা দুইজনে মিলে মিশে প্রেমজিতকে বড় করব। আমি জানি আমাদের দুইজনের পক্ষেই একটু বেশি কষ্টকর, তাই আমি কিছুদিনের জন্য এখানে থেকে যাবো তোমাদের সাথে। প্রেমজিতের সাথে মেলামেশা না করলে ও আমাকে কি ভাবে আপন করে নেবে?”
স্বস্তির শ্বাস নেয় অনুপমা। খাওয়া শেষে দিলিপ বাবু দেবায়নের হাত চেপে ধরে বলেন, “তোমাদের এই উপকার কি ভাবে পূরণ করব আমি ভেবে পাচ্ছি না।”
অনুপমা চোখ টিপে ইশারা করে দেবায়নকে। অনুপমার সেই চোরা ইশারা দিলিপ বাবু দেখে ফেলে হেসে দেন। দিলিপ বাবু বলেন, “তোমরা সত্যি অনেক দুষ্টু, অনেক শয়তান। প্রথম যেদিন এসেছিলে সেদিন বুঝে গিয়েছিলাম যে তোমরা এমনি এমনি আসোনি। কিন্তু তারপরে এই কয়দিনে যা ঘটিয়ে দিলে আমার জীবনে, আমার সব অঙ্ক ভুল হয়ে গেল। আমি জানি তোমরা কি চাও। চিন্তা নেই মিস্টার বসাক, তুমি আমাকে যা দিয়েছ তার বদলে আমার সব কিছু তোমার পায়ে লুটিয়ে দিলেও এই ঋণ আমি শোধ করতে পারবো না। আমি ব্যাঙ্গালোর ফিরি, তারপরে তোমাদের একদিন ডাকবো।”
অনুপমার মাথায় হাত রেখে বলে, “আমি তোমাকে আশীর্বাদ করি তুমি দীর্ঘজীবী হও, মানুষের মন জয় করো। টাকা পয়সা রোজগারের শত কোটি পন্থা আছে, কিন্তু মানুষের মন জয় করার একটাই পন্থা, সেটা ভালোবাসা। কোনদিন কোন রকমের কোন সমস্যায় পড়লে আমাকে একবার খবর দিও। আমি তোমাদের পাশে এসে দাঁড়াবো, আমার এই প্রান তোমাদের কাছে ঋণী।”
এরপরে অনুপমা আর দেবায়ন কোলকাতা ফিরে আসে পালা, তিলোত্তমা কোলকাতার বুকে।
Like Reply
ষষ্টবিংশ পর্ব (#01)

পাহাড় বরাবর অনুপমাকে খুব টানে। বাবা, মা ভাইয়ের সাথে আল্পস থেকে হিমালয় নানা পাহাড়ি জায়গায় ঘুরে বেড়িয়েছে। শেষের বার দেবায়নের সাথে এই মুসৌরি এসে অন্য এক অভিজ্ঞতা হয়েছিল। এই বারের অভিজ্ঞতা বিগত সব অভিজ্ঞতা ছাপিয়ে গেছে। আঁকা বাঁকা পথ ধরে নেমে চলেছে গাড়ি, ধীরে ধীরে আবহাওয়া গরম হতে শুরু করেছে। গাড়ি এসি কিন্তু অনুপমা ইচ্ছে করেই এসি না চালিয়ে শেষ বারের মতন প্রকৃতির ঠাণ্ডা হাওয়া শরীরে মাখিয়ে নিতে চেষ্টা করে। চুপচাপ দেবায়নের কাঁধে মাথা রেখে ওর হাত নিয়ে খেলা করে আর বাইরের দিকে তাকিয়ে থাকে। ওর চিন্তার তারে কিছুই বাঁধা নেই।
এই কয়দিন মুসৌরির নামকরা রিসোর্টে ছিল ওরা। মুসৌরি থেকে গাড়ি ভাড়া করে সোজা দিল্লী, দিল্লীতে একরাত কাটিয়ে তারপরের দিনের সকালের ফ্লাইটে কোলকাতা। অনুপমা রাস্তার খাবার একদম খেতে পারে না, তাই কণিকা ওদের জন্য রান্না করে খাবার প্যাক করে দিয়েছিল। ফিরে আসার দিন সকালে আরেকবার গাড়ি নিয়ে কণিকা আর দিলিপ বাবুর সাথে দেখা করতে যায়। কণিকা, দিলিপ বাবু আর প্রেমজিত, এই তিনজনের হাসি হাসি মুখ দেখে অনুপমার চোখের কোণে একচিলতে জল চলে আসে।
মুসউরিতে কণিকা আর দিলিপ বাবুকে দেখার পরে পাশের ছেলেটাকে একবিন্দুর জন্য চোখের আড়াল করতে নারাজ। কে জানে এই জীবন পথের কোন বাঁকে কি লুকিয়ে আছে। বড় ভালোবাসে দেবায়নকে, আর জানে যে ওর দেবায়ন ওকে ছেড়ে যাবে না, কিন্তু ভবিষ্যতের কথা কি আর বলা যায়?
দেবায়ন ওর মনের কথা বুঝতে পেরে ওকে জিজ্ঞেস করে, “কি হয়েছে তোর, এত চুপচাপ কে বসে আছিস?”
দেবায়নের বাজুর ওপরে নাক ঘষে বলে মিহি কণ্ঠে বলে, “কিছু না, এমনি বসে আছি। তোর কোলে মাথা রাখতে ভারী ভালো লাগছে তাই চুপচাপ বসে আছি।”
দেবায়ন ওর কপালে গালে কয়েকটা চুমু খেয়ে বলে, “সত্যি বলতে কি জানিস, আমি একা যদি আসতাম তাহলে হয়ত এত হৃদয় জিতে ফিরতাম না। কিছু না কিছু করে হোক হোটেল গুলো কিনতাম কিন্তু তোর জন্য আজকে যে মানুষ গুলোর ভালোবাসা আর আশীর্বাদ নিয়ে বাড়ি ফিরছি সেইগুলো শুধু আমার পুচ্চি সোনার পক্ষেই সম্ভব।”
অনুপমা হেসে ওর গালে গাল ঘষে বলে বলে, “পাগল ছেলে, একহাতে কোনদিন তালি বাজে না। তুই আমার পরিপূরক তাই আমি সম্পূর্ণ।”
গালে গাল ঘষতে গিয়ে অনুভব করে যে দেবায়ন দাড়ি কাটেনি তাই কপট রাগ দেখিয়ে বলে, “দাড়ি কাটতে পারিস না? গালের চামড়া উঠে গেল আমার।”
দেবায়ন ইচ্ছে করেই ওর গালে জোর করে গাল ঘষে বলে, “নে নে আরেকটু নে। তোর নরম গাল যা মাখন মনে হচ্ছে গালের ওপরে লেপে গেছে।” দুইহাতে ওকে জড়িয়ে পিষে ধরে বলে, “বড় ইচ্ছে করে তোকে আলুসিদ্ধের মতন চটকে মেখে পকেটে পুরে রেখে দেই।”
অনুপমা নাক কুঁচকে মিচকি হেসে বলে, “হ্যাঁ হ্যাঁ জানা আছে আর আদিখ্যেতা দেখাতে হবে না। তোর প্রেম শুধু মাত্র মুখের, কর্মে লবডঙ্কা। অইতো আমাকে না নিয়ে আসার প্লান ছিল তোর। আমি জেদ না করলে একাই আসতিস তাই না? আর হয়তো বা কস্তূরীর সাথে এমন কি মেহেকের সাথে রাত কাটিয়ে দিতিস।”
দেবায়ন হেসে ফেলে, “উম্মম্মম কস্তূরীর কথা জানি না তবে মেহেকের কথা মনে করিয়ে দিয়ে আমার প্যান্ট ছোটো করে দিলি। শেষ কবে মেহেকের ফোন এসেছে? ঠিক ভাবে মান্ডি পৌঁছে গেছে?”
অনুপমা মাথা নাড়িয়ে জানিয়ে দেয় যে মেহেকের ফোন এসেছে, মেহেক ঠিক ভাবে মান্ডিতে ওর বান্ধবীর বাড়িতে পৌঁছে গেছে। মেহেকের সাথে শুভমের কথাবার্তা হয়ে গেছে। মাস তিনেক পড়ে শুভম দেশে ফিরবে আর তারপরে ওরা সবাই দেশ ছেড়ে চলে যাবে। মেহেকের কথা শুনতে শুনতে দেবায়নের চোখ চকচক করে ওঠে আর অনুপমা কপট অভিমান দেখিয়ে বলে মেহেক যাবার আগে একবার ওদের দেখা করার জন্য ডেকেছে।
অনুপমা ভাবতে বসে যে সূর্য মনিদিপার কথা অথবা ধৃতিমান নিবেদিতার কথা দেবায়নকে জানাবে কি না। সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে শেষ পর্যন্ত সূর্য আর মনিদিপার কথা দিয়ে শুরু করে। অনুপমা জানায় যে মনিদিপা মামনিকে ফোন করে ক্ষমা চেয়েছিল, সেই কথা শুনে অনুপমা প্রথমে রেগে যায় আর জলপাইগুড়ি যায়। মনিদিপা ফোন করেছিল সেটা শুনেই রেগে ওঠে দেবায়ন, পারলে এখুনি জলপাইগুড়ি গিয়ে ওদের খুন করে। অনুপমা ওকে শান্ত করে, মনিদিপার শারীরিক অবস্থা আর ওদের আর্থিক দুরাবস্থার কথা জানায়। অনুপমার মুখে সব শুনে শেষ পর্যন্ত দেবায়ন ক্ষান্ত হয়। দেবায়ন একবার সূর্য আর মনিদিপার সাথে দেখা করার ইচ্ছে ব্যাক্ত করে কিন্তু অনুপমা ওকে চেনে তাই বারেবারে বলে দেয় যে দেখা করলেও ওদের সাথে আর যেন কোন দ্বন্দে না যায়। দেবায়ন হাসি মুখে জানায় যে অনুপমার আদেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করা ছাড়া ওর কাছে আর কোন গতি নেই।
ধৃতিমান আর নিবেদিতার কথা জানাতে দেবায়ন অনেকক্ষণ চুপ করে বসে অনুপমার মুখের দিকে চেয়ে থাকে। ওর মুখ দেখে অনুপমা ভাবনায় পড়ে যায়, এই নির্বাক চেহারা এক বিশাল ঝড়ের পূর্বাভাস। দেবায়ন জানায় যে নিবেদিতার ওপরে আলাদা নজর রাখবে আর ধৃতিমানের আসল উদ্দেশ্য জানতে চেষ্টা করবে।
এরপরে অফিসের কথা, জারমেনিয়া এয়ারলাইন্সের কথা, কবে থেকে এই প্রোজেক্টে টাকা আসতে শুরু করবে ইত্যাদি। দেবায়নের কাছে অনুপমা জানতে পারে যে দুটো প্রোজেক্ট প্রফিট শেয়ারিং হিসাবে। যেদিন ওদের সফটওয়্যার ওই এয়ারলাইন্স কোম্পানিতে বসানো হবে তাঁর পরের দিন থেকেই ওদের একাউন্টে টাকা আসতে শুরু করবে।
বিকেলের মধ্যে দিল্লী পৌঁছে যায়। রাতে অনুপমা বাবাকে ফোনে সব জানিয়ে দেয়। একরাত দিল্লী কাটিয়ে ওরা তারপরের দিন কোলকাতা ফিরে এলো। মিস্টার সেন, মেয়ের আর দেবায়নের কাজে ভারী খুশি। দেবায়ন আর অনুপমার মুখে সম্পূর্ণ বিবরন শুনে অবাক হয়ে যান। হেসে বলেন যে কন্যে উপযুক্ত পাত্র খুঁজেছে নিজের জন্য। পারমিতা প্রথমে একটু সংশয় ব্যাক্ত করলেও সব কিছু শুনে আর বুঝে ওঠার পড়ে কিছু বলে না। কৃতজ্ঞ চাহনি নিয়ে দেবায়নের দিকে তাকিয়ে থাকে, দেবায়ন তার কথা রেখেছে।
সেদিন রাতে পায়েলকে দেখে বড় খুশি। ওর পরীক্ষা শেষ হয়ে গেছে, পায়েল অধীর অপেক্ষায় ছিল কখন অনুপমা বাড়ি ফিরবে আর ওর সাথে মন খুলে গল্প করবে। সারা রাত দুইজনে চোখের পাতা এক করেনা, পুরনো দিনের স্মৃতি রোমন্থন, পায়েলের সাথে অনুপমার কত সমকামী খেলা, অনুপমার জন্মদিনের কথা, যেখানে সবাই সবার সাথে সঙ্গমে মত্ত হয়েছিল। অঙ্কনের কথা বলতেই দুইজনে চুপ করে যায়। ভাইয়ের কথা শুনতে অনুপমার একটু লজ্জা লাগে আর পায়েল মুখ ফুটে ঠিক বলে উঠতে পারে না অঙ্কনের কথা। তাও ওদের প্রেমের কথা আর সেই সাথে এই কয়দিন কি ভাবে কাটিয়েছে সেই সব গল্প করে।
পায়েল অফিসে যাওয়ার জন্য বায়না ধরে। অনুপমা জানায় যে মায়ের সাথে আর দেবায়নের সাথে কথা বলার পরেই পায়েল কে অফিসে যেতে দিতে পারে। দেবায়ন মানা করে না, অনেকদিন পায়েলের দেখা নেই। পুরানো দুষ্টু মিষ্টি পায়েল ফিরে এসেছে শুনেই দেবায়নের চোখ চকচক করে ওঠে আর অনুপমা ওকে ধমকে মেরে চুপ করিয়ে দেয়। মাকে জিজ্ঞেস করলে, পারমিতাও মেয়েকে বলে যে বাড়িতে থেকে থেকে পায়েলের এক ঘেয়ে লেগে গেছে তাই ওকে অফিসে জয়েন করিয়ে নিতে।
পরীক্ষার পরে প্রথম যেদিন পায়েল অফিসে জয়েন করবে সেদিন পায়লেকে বেশ আধুনিকা সাজে সাজায়। পায়েলের ইচ্ছে ছিল সাধারন একটা সালোয়ার কামিজ পরে যাওয়ার, কিন্তু অনুপমার ইচ্ছেতে ওকে একটা সাদা চাপা জিন্স আর টকটকে লাল রঙের শার্ট পড়তে হয়। ঠোঁটে গাড় বাদামি রঙ, চোখের কোলে কাজল, মেখে পায়েল যেন সারা কোলকাতা মাতিয়ে দিতে বেড়িয়েছে।
অফিসে পৌঁছান মাত্রই দেবায়ন আর রূপক ওকে দেখে পাগল। সারাদিন পায়েলকে নিয়েই দেবায়ন আর রূপক মেতে থাকে। ওদের এই আতিসহ্যেয় পায়েল হাফিয়ে ওঠে। অনুপমা চেয়েও ওকে দেবায়ন আর রূপকের হাত থেকে রেহাই দিতে পারে না। একবার পায়েলকে দেবায়ন নিজের কেবিনে বসিয়ে রাখে তারপরে লাঞ্চের পরে রূপক ওকে নিজের কেবিনে বসিয়ে রাখে।
অনুপমা, পায়েলকে মনীষার সাথে কাজে লাগিয়ে দেয়। ওকে মনীষার সাথে এইচ.আর এর এডমিনিস্ট্রেসান শিখতে বলে। রোজ লাঞ্চের সময়ে সব বন্ধুরা একসাথে মিলেই লাঞ্চ খায়। কোনদিন শ্রেয়ার কেবিনে কোনদিন অনুপমার কেবিনে দেবায়ন অথবা রূপকের কেবিন একেবারে মাছের বাজারের মতন, এদিকে ল্যাপটপ, ওদিকে কাগজ পত্র, একদিকে প্রিন্টার একদিকে আবার প্রেমিকার ফটো টেবিলে থাকতেই হবে। এই ছেলে দুটোর যেন নিজের প্রেম জাহির করা একটা স্বভাব। লাঞ্চের সময়ে বেশ হসি ঠাট্টা হয়। বিশেষ করে দেবায়ন আর রূপক মাঝে মাঝে পায়েলের পেছনে পড়ে যায়, না হলে মনীষা আছেই। অফিসে মেয়েদের সংখ্যা কম নয়, মাঝে মাঝে কে কি পোশাক পরে এসেছে অথবা কার পোশাকের ভেতর থেকে কোন অন্তর্বাস দেখা যাচ্ছে সেই সব নিয়ে গভীর আলোচনা শুরু হয়ে যায় রূপক আর দেবায়নের মাঝে। অনুপমা তিতিবিরক্ত হয়ে শ্রেয়া আর পায়েল কে নিয়ে মাঝে মাঝেই ওদের ছেড়ে উঠে আসে। ধুত্তোর! ছেলে দুটো কোম্পানি চালাবে না সেই কলেজের মতন এর তার ব্রা প্যান্টির রঙ দেখে বেড়াবে!
এয়ার বার্লিনের প্রোজেক্ট সমাপ্তির দিকে আর জারমেনিয়া এয়ারলাইন্সের কাজ দ্রুত গতিতে সমাপনের দিকে। শ্রেয়ার তত্বাবধনে কাজ খুব সুস্থ ভাবে এগিয়ে চলছে। একদিকে দুই কোম্পানির আই.টি সাথে আলোচনা করা, অন্যদিকে সুপর্ণা ম্যাডামের সাথে বসে টেকনিকাল ব্যাপারে আলোচনা করা, অতি নিপুণ হস্তে কাজ করে চলেছে। কাজের বিষয়ে শ্রেয়ার কোন ফাঁকি নেই কিন্তু সেই পুরানো শ্রেয়া হারিয়ে যাওয়াতে অনুপমার বড় ব্যাথা লাগে। লাঞ্চের সময়ে মাঝে মাঝে শ্রেয়া হারিয়ে যায় নিজের কাজের মধ্যে। ঠিক কি কাজে হারিয়ে যায় না ওর মাথায় অন্য কিছু ঘুরছে সেটা বুজে উঠতে পারে না অনুপমা। ওদের সামনে রূপকের সাথে ভালোই ব্যাবহার করে, কিন্তু অনুপমার শ্যেন দৃষ্টিতে বুঝতে পারে যে শ্রেয়া আর রূপকের মাঝে আগের যে বাঁধন ছিল সেটা অনেক কমে এসেছে। আজকাল রূপক কাজের চাপে দেরি করে বাড়ি ফেরে। আগে শ্রেয়া ওর জন্য অপেক্ষা করতো। কিন্তু ইদানিং শ্রেয়া আর অপেক্ষা করে না। ট্যাক্সি ধরে না হয় মনীষা আর শান্তনুর সাথে বাড়ি ফিরে যায়। দেবায়ন আর অনুপমার সাথে সেই আগের হৃদ্যতা যেন ধীরে ধীরে কমে এসেছে। কারন জিজ্ঞেস করলেই এড়িয়ে যায়, হেসে জানায় যে শুধু কাজের চাপে ব্যাস্ত থাকে। শত চেষ্টা করেও শ্রেয়ার পেট থেকে ওরা কেউ কোন কথা বের করতে পারে না। তবে অনুপমা একটা আঁচ করতে পেরেছিল যে হয়ত শ্রেয়া আর ইন্দ্রনীল মিলে কিছু একটা অভসন্ধি ফাঁদছে।
এদিকে বর্ষা কাল এসে যায়, কিছুদিনের মধ্যে এয়ার বার্লিনের প্রোজেক্ট ডিপ্লয় করতে আবার শ্রেয়া জার্মানি যাবে এবারে সাথে কয়েক জন টেকনিকাল লোকজন যাবে। শ্রেয়া এই প্রোজেক্ট ডেলিভারি আর জার্মানি যাওয়ার জন্য বেশ ব্যাস্ত।
সকাল থেকেই ঝিরি ঝিরি বৃষ্টি, বিশেষ কোন কাজ না থাকায় কিছুতেই একা মন বসাতে পারে না। একবার পায়েলকে ফোন করেছিল কিন্তু সে মনীষার সাথে ব্যাস্ত। দেবায়নের ফোন কয়েকবার বেজে গেল উঠাল না দেখে চিন্তায় পরে গেল। এই দুপুরে কি হল ছেলেটার। দেবায়নের কেবিনে ঢুকে দেখে যে কোন টেলিফোন বিল নিয়ে সে ব্যাস্ত। জিজ্ঞেস করাতে দেবায়ন বলে যে এইগুলো শ্রেয়ার গত চার মাসের মোবাইল বিল আর তার কল রেকর্ডস।
একটা চেয়ার টেনে পাশে বসে বিল দেখতে দেখতে প্রশ্ন করে করে, “কিছু পেলি নাকি?”
দেবায়ন উত্তরে মাথা নাড়িয়ে বলে, “না রে ঠিক আঁচ করতে পারছি না। বড় ঘাঘু মাল দুইজনে।”
অনুপমা বলে, “কেন? কি পেয়েছিস?”
দেবায়ন ওকে বিলগুলো হাতে ধরিয়ে বলে, “দ্যাখ একবার। প্রায় প্রত্যেক দিন রাতে ইন্দ্রনীল আর শ্রেয়ার কথা হয়, একনয় শ্রেয়া কল করে অথবা ইন্দ্রনীল কল করে। কিন্তু কোন কল দশ থেকে বারো সেকেন্ডের বেশি নয়। যদি ওদের মধ্যে কথাবার্তা, আলাপ আলোচনা, প্রেম প্রীতি চলে তাহলে এই কল গুলো নিশ্চয় দশ বারো সেকেন্ডের হবে না, তার চেয়ে বেশি হবে।”
অনুপমা খানিক মাথা চুলকে বলে, “ওরে পাগল, এখন ইন্টারনেটের যুগ। ওরা ফোনে কেন কথা বলতে যাবে? স্কাইপ আছে, সোজাসুজি ভিডিও চ্যাট করতে পারে ওরা।”
দেবায়ন বলে, “হুম, সেটা পারে। তুই কি শ্রেয়াকে কিছু জিজ্ঞেস করেছিস এই বিষয়ে?”
অনুপমা বলে, “আমি আর করিনি তবে পায়েল কথা বলতে চেষ্টা করেছে কিন্তু কিছুই জানতে পারেনি। এখন সত্যি মনে হচ্ছে ওকে কোম্পানিতে না নিলেই হয়ত ভালো হত। এত গভীর জলের মাছ যে হাতের নাগালেই আসছে না। তবে এইটুকু বলতে পারি যে শ্রেয়া আর ইন্দ্রনীল মিলে কোন অভসন্ধি আঁটছে। কি করা যায় বলতো?”
দেবায়ন কিছুক্ষণ চিন্তা করে বলে, “বড় চিন্তায় পরে গেলাম। শ্রেয়াকে নাড়ানো মহা মুশকিল। ওকে নাড়াতে সাহস পাচ্ছি না কারন ওকে নাড়ালেই রূপক হয়ত ক্ষেপে যেতে পারে। রূপক এই কোম্পানির রুটি জোগাড় করে, দৈনন্দিন টাকা কামায় রূপকের এই ছোটো ছোটো প্রোজেক্ট গুলো। আবার ওইদিকে ইন্দ্রনীলকে ঘাঁটানো বিপ্পজনক। অনিমেশ আঙ্কেলের সাথে মিস্টার হেরজোগের বেশ মেলামেশা। এই দুটো বড় প্রোজেক্ট ওর হাত ধরেই এসেছে, তার ওপরে মিস্টার হেরজোগ আমাদের কন্সট্রাক্সান কোম্পানিতে টাকা ঢেলেছে।”
খানিকক্ষণ মাথা চুলকে উৎসাহিত হয়ে বলে, “একটা উপায় আছে।”
অনুপমা উৎসুক হয়ে প্রশ্ন করে, “কি উপায়?”
দেবায়ন বলে, “শ্রেয়া আর ইন্দ্রনীলের মধ্যে ফাটল ধরিয়ে দিতে পারলে কেমন হয়?”
অনুপমা বলে, “সেটা কি ভাবে করতে চাস?”
মাথা চুলকায় দেবায়ন ভেবে উঠতে পারে না কি ভাবে ফাটল ধরাবে, “ইন্দ্রনীল জানে শ্রেয়া রূপকের গার্ল, ফ্রেন্ড সুতরাং সেইখানে গুড়ে বালি। উলটে যদি আমাদের হাতে ইন্দ্রনীল আর শ্রেয়ার কিছু তথ্য প্রমাণ চলে আসে তাহলে সেই দেখিয়ে রূপকের মনে চাপ সৃষ্টি করা যেতে পারে। আর সত্যি যদি শ্রেয়া রূপককে এখন ভালোবাসে, তাহলে এই সব ছেড়ে দেবে, আর রূপকের কাছে ফিরে আসবে। আর যদি ওর মাথায় অন্য কিছু চলে, তাহলে অনায়াসে আমরা রূপককে দিয়ে শ্রেয়াকে আমাদের কোম্পানি থেকে বের করে দিতে পারি।”
অনুপমা একটু চিন্তা করে। ওর মনে পড়ে যায় জলপাইগুড়ির রাতের কথা। রূপক ওকে জানিয়েছিল যে শ্রেয়া ইদানিং খুব টাকা নিয়ে মেতে উঠেছে। হতে পারে যে ইন্দ্রনীল ওকে কোন স্বপ্ন দেখিয়েছে আর শ্রেয়া সেই আলেয়া ধরার জন্য ছুটছে ইন্দ্রনীলের পেছনে। এবারে যদি নিজেই ওদের সাথে জার্মানি যায় তাহলে শ্রেয়া আর ইন্দ্রনীলের ওপরে নজর রাখতে পারবে।
অনুপমা ভেবে চিনতে বলে, “এবারে ভাবছি আমি ওদের সাথে জার্মানি যাবো।”
দেবায়ন হেসে বলে, “তুই কি গোয়েন্দা হতে চাস নাকি?”
অনুপমা চোখ টিপে বলে, “তাহলে কস্তূরীকে ডেকে নিলে হয়।”
দেবায়ন বলে, “ধুর শালা এখানে শুধু খরচ হয়ে যাবে, আসলে কোন আয় হবে না তাই কস্তূরীকে কাজে নামাতে চাই না। আমি ভাবছি যেমন চলছে চলতে দে, যেদিন গলা পর্যন্ত জল উঠে আসবে সেদিন ওকে চেপে ধরব। এখন পর্যন্ত সবকিছু শান্তিতে চলছে। এবার থেকে পায়েলকে বলেদিস ওর পেছনে যেন বেশি মাথা না ঘামায়।”
এমন সময়ে পায়েল এসে ওদের ঘরে ঢোকে। অফিস জয়েন করার পর থেকে পায়েল অনেক বদলে গেছে, অনেক হাসিখুশি খোলামেলা হয়ে উঠেছে। দেবায়ন দুষ্টু চাহনি নিয়ে পায়েলের দিকে তাকায়। পায়েল একটা হাঁটু পর্যন্ত নীল জিন্স আর চাপা শার্ট পড়ে এসেছিল, ওর নধর গোলগাল পাছার দুলুনি দেখেই দেবায়ন অস্থির হয়ে যায়।
দেবায়নের চোখের চাহনি দেখে অনুপমা কিঞ্চিত বিরক্ত হয়ে বলে, “তুই আর শুধরাবি না তাই না?”
দেবায়ন একটা দুষ্টুমি ভরা হাসি দিয়ে বলে, “আমার শালা কি রোজ খেজুরের রস চুষছে?”
পায়েল লাজুক হেসে অনুপমার দিকে তাকায়।
অনুপমা ওকে একটা চাঁটি মেরে বলে, “আমার ভাইয়ের বৌ, একদম ওর দিকে নজর দিবি না!”
দেবায়ন প্যান্টের সামনের দিকটা একটু ঠিকঠাক করে বলে, “তোর ভাইয়ের বউকে আমি লাগাতেই পারি আর ভাইয়ের বৌ হবার আগেই লাগিয়েছি যখন আমার শালী ছিল।”
পায়েল একটু লজ্জা পেয়ে রেগে গিয়ে দেবায়ন কে দুম দুম বেশ কয়েকটা কিল মেরে বলে, “এই তুই একটু থামবি? আমার কিছু কথা ছিল।”
দেবায়ন চোখ টিপে মিচকি হেসে বলে, “তুই আমার কোলে বসলে আমি তোর সব কথা শুনতে রাজি।”
অনুপমা ওর কান ধরে টেনে বলে, “শয়তান এটা অফিস। এটা আমার তোর বাড়ি নয়। কোলে বসাবে? ছেলের শখ দেখো!”
পায়েলের দিকে তাকিয়ে বলে, “তুই এই ছ্যাঁচোর টার কাছে আসতে গেলি কেন? চল আমার কেবিনে।” দেবায়নের কান টেনে বলে, “এই শালা কুত্তাটা একা একা ডান্ডা নাড়াক। কাল রাতে আর আমার কাছে আসতে চেয়েছিস কি কেটে হাতে ধরিয়ে দেব।”
যেহেতু দুই বাড়ির মধ্যে সবার জানা, তাই মাঝে মাঝে অনুপমা দেবায়নের বাড়িতে রাতে থেকে যায়, না হলে দেবায়ন অনুপমার বাড়িতে রাতে থেকে যায়।
দেবায়ন দুই সুন্দরী রমণীর হাতে নির্যাতিত হয়ে হেসে বলে, “তোদের মার খেতেও মিষ্টি লাগে। আচ্ছা বল কি বলার জন্যে এসেছিলিস?”
পায়েল ঠোঁট বেঁকিয়ে মিচকি এসে বলে, “আমি তোর কাছে আসিনি আমি অনুর খোঁজে এসেছিলাম।”
অনুপমা পায়েল কে নিয়ে দেবায়নের রুম থেকে বেড়িয়ে ওকে প্রশ্ন করে, “কি হয়েছে?”
পায়েল খিল খিল করে হেসে বলে, “বিশেষ কিছু হয়নি রে। তোর ভাইয়ের সাথে একটা পার্টিতে যাওয়ার আছে তাই বলছিলাম যে কখন বাড়ি যাবি?”
অনুপমা বড় বড় চোখ করে বলে, “হুম, সেখান থেকে কখন ফেরা হচ্ছে?”
পায়েল ফিসফিস করে বলে, “কাকিমাকে সামলে নিস হয়ত রাতে নাও ফিরতে পারি।”
অনুপমা ওর গাল টিপে হেসে বলে, “ওরে শয়তান, মেয়ে কোথায় যাচ্ছিস তোরা?”
পায়েল বলে, “বেশি দুরে নয়, ওর এক বন্ধুর জন্মদিন তাই যাচ্ছি।”
অনুপমা হেসে ফেলে, “জন্মদিন কি রকম জন্মদিন যে রাত কাটাতে হবে?”
পায়েল বুঝে যায় অনুপমার প্রশ্নের মানে তাই মিচকি হেসে বলে, “তুই পাগল নাকি? অইসব কিছুই হবে না অন্তত তোর ভাই আমার সাথে থাকলে কারুর জো নেই আমার ধারে কাছে আসে।”
অনুপমা ওর গালে হাত দিয়ে আদর করে বলে, “ওকে যাচ্ছিস যা, পারলে রাতেই ফিরে আসিস নাহলে একটা ফোন করে দিস।”
পায়েল বলে, “ঠিক আছে ফোন করে দেব।”
পায়েল ওর সিটে চলে যায় এমন সময়ে শ্রেয়া নিজের কেবিন থেকে বেড়িয়ে ওকে দেখতে পেয়ে ডাক দেয়, “একটু শুনিস তো?”
Like Reply
ষষ্টবিংশ পর্ব (#02)

অনুপমা ওর কেবিনে ঢুকে দেখে শ্রেয়া কারুর সাথে ফোনে কথা বলছে। ফোনের আওয়াজ শুনে বুঝে যায় যে শ্রেয়া ইন্দ্রনীলের সাথেই কথা বলছে।
অনুপমাকে ইশারায় চুপ থাকতে বলে শ্রেয়া ইন্দ্রনীলকে জিজ্ঞেস করে, “আচ্ছা এই যে নতুন প্রোজেক্টের কোন কোম্পানি? তুমি কি দীপঙ্কর’দা র সাথে কথা বলেছ?”
ইন্দ্রনীল বলে, “না এখন বলিনি, শুধু তোমাকে বলছি। তুমি না হয় বুঝে শুনে দিপঙ্ককর’দা র সাথে অনুপমার সাথে কথা বল।”
শ্রেয়া বলে, “কিসের প্রোজেক্ট?”
ইন্দ্রনীল, “সুইজারল্যান্ডের একটা ওষুধের কোম্পানির প্রোজেক্ট। এটা পাতি একটা এপ্লিকেশানের কাজ আর তার মেইনটেনান্স করা। প্রোজেক্ট বেশ বড়সড়, আর এককালীন বেশ মোটা অঙ্কের টাকা পাওয়া যাবে, তারপরে প্রতি মাসে মেইনটেনান্স আছেই।”
শ্রেয়া বলে, “ঠিক আছে তুমি আমাকে সবিস্তারে মেল কর আমি দেখছি কি করা যায়। এই নিয়ে আমি অনুর সাথে আর দেবুর সাথে কথা বলে নেব।”
ইন্দ্রনীল ফোন রেখে দিতেই অনুপমা ওকে জিজ্ঞেস করে, “কি ব্যাপার, কিসের প্রোজেক্ট?”
শ্রেয়া বলে, “একটা ওষুধের কোম্পানির জন্য এপ্লিকেশান ডেভেলপ করতে হবে।”
অনুপমা শ্রেয়ার চোখে চোখ রেখে তাকিয়ে বুঝতে চেষ্টা করে শ্রেয়ার মনের অভিপ্রায়, মেয়েটা আসলে কি করতে চলেছে। অনুপমা কিছুক্ষণ পরে ওকে প্রশ্ন বলে, “তুই যাচ্ছিস জার্মানি। তুই কি এইবারে এই ডিল করে ফিরবি?”
শ্রেয়া হেসে উত্তর দেয়, “তুই যদি বলিস তাহলে করেই ফিরব না হলে আবার যাওয়া সে অনেক খরচ। আমি ভাবছিলাম যে এইবারে যদি এই প্রোজেক্ট করি তাহলে রূপক কে সাথে নিয়ে যাবো। এইটা সফটওয়্যার এপ্লিকেশান, এটা ওর ডিপার্টমেন্ট করবে আশা করি।”
অনুপমা হেসে বলে, “তুই যা ভালো বুঝিস তাই করিস।”
শ্রেয়া কিছুক্ষণ অনুপমার দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করে, “হ্যাঁ রে একটা সত্যি কথা আমাকে বলবি?”
অনুপমা মাথা নাড়ায়, “কি কথা?”
শ্রেয়া বলে, “তুই কি আমার ওপরে ক্ষেপে আছিস?”
অনুপমা বলে, “কেন?”
শ্রেয়া বলে, “আমি জানি এই কয়দিনে আমি তোদের সাথে ঠিক ভাবে মেলা মেশা করিনি তাই তোরা সবাই আমার ওপরে ক্ষেপে আছিস। আমি সব বুঝতে পারি এই যে মাঝে মাঝে পায়েল এসে আমাকে প্রশ্ন করে, তুই করিস।”
অনুপমা বুক ভরে শ্বাস নেয়, এই হচ্ছে মোক্ষম সময় ওকে চেপে ধরার তাই ওকে প্রশ্ন করে, “আচ্ছা তুই আমাকে একটা সত্যি কথা বল। এখানে সবাই ব্যাস্ত, সবাই নিজেদের কাজে মেতে আছে, রূপক ব্যাস্ত, দেবু ব্যাস্ত, সুপর্ণা ম্যাডাম ব্যাস্ত কিন্তু তোর রুপ এত ভিন্ন কেন? তুই কেন নিজেকে সবার থেকে আলাদা করে রেখেছিলিস?”
শ্রেয়া খিলখিল করে হেসে বলে, “এই দ্যাখ কাজ হলেই তোকে ডাক দিলাম। দুপুরে লাঞ্চ এক সাথেই করি সবাই। তাহলে কই আলাদা করে রেখেছি?”
অনুপমা সোজাসুজি প্রশ্ন করে, “তোর সাথে ইন্দ্রনীলের বেশ হৃদ্যতা বেড়ে গেছে মনে হচ্ছে। এই যে আজকের ব্যাপারটা, ইন্দ্রনীল তোকে ফোন করল কিন্তু আমাকে অথবা দেবায়ন অথবা দীপঙ্করদা কে করল না। তোদের মাথায় ঠিক কি চলছে একটু খুলে বলবি? তোরা নিশ্চয় কিছু উলটোপালটা প্লান করছিস না।”
শ্রেয়া হঠাৎ ভুরু নাচিয়ে চাপা হেসে বলে, “উম্মম্ম, সরি অনু এখন কিছু বলতে পারছি না। সময় হলে সব বুঝিয়ে দেব।”
অনুপমা ভেবে পায় না আগামী দিনে ওর জন্য কি অপেক্ষা করছে। শ্রেয়া কি ওদের ভালো চায় না খারাপ চায়।
কিছু দিনের মধ্যে রূপকের সাথে শ্রেয়া আর এক দল টেকনিশিয়ান জার্মানি যাত্রা করে। এয়ার বার্লিনের প্রোজেক্ট ওদের সারভারে ডিপ্লয় করা হয় আর সেই সাথে ইন্দ্রনীল, শ্রেয়া আর রূপককে নিয়ে সুইজারল্যান্ডের ওষুধের কোম্পানির প্রোজেক্ট ফাইনাল করে ফেলে।
এইবারে শ্রেয়ার সাথে রূপকের যাওয়াতে অনুপমার মনের দ্বন্দ্ব আরও বেড়ে যায়। জলপাইগুড়িতে রূপক ওকে বলেছিল যে শ্রেয়া আর রূপকের হৃদ্যতা কমে এসেছে, কিন্তু এই বিজনেস ট্রিপে যাওয়ার ফলে অনুপমা বুঝে যায় যে রূপকও হয়তো ওদের সাথে জড়িত। হতে পারে এই বড় বড় প্রোজেক্টের আড়ালে ওরা নিজেদের কোন ছোটো ছোটো কাজ হাতিয়ে নিচ্ছে। একাউন্টস দেখে অথবা কাগজ পত্র দেখে কিছু বুঝে ওঠার উপায় নেই কারন বাইরের কাজ হয়ত বাইরে সেরে নেয় রূপক।
একদিন অনুপমার বাবার সাথে ওরা তিনজনে বসে এই গ্রুপ কোম্পানি নিয়ে আলোচনা করে। পুনের হোটেলের মালিকানা অচিরেই ওদের হাতে চলে আসবে। ইতিমধ্যে মেহেকের সাথে কথা বার্তা হয়ে গেছে আর সেই মতন ট্রান্সফার কাগজ তৈরি হয়ে গেছে। দিলিপ বাবু জানিয়েছেন যে তাঁর দ্বিতীয় হোটেল মিস্টার সেনের নামে করে দেবেন। দুটো কন্সট্রাক্সান কোম্পানি বেশ ভালো আয় করছে আর প্রতিশ্রুতি মাফিক মিস্টার হেরজোগকে তাঁর পাওনা সময় মতন মিটিয়ে দেওয়ায় হচ্ছে। সেই আলোচনায় দেবায়ন জানায় যে পায়েলকে বোর্ড মেম্বার বানানো হোক আর সেই সাথে ওদের মার্কেটিংয়ের প্রধান দীপঙ্কর’দা কেও বোর্ডে নেওয়া হোক। পায়েলের ব্যাপারে অনুপমা একটু দোনামনা করে, পায়েলকে কোন কিছুতে জড়াতে নারাজ। অফিসে গেলেও অনুপমা ওকে খুব আগলে রাখে আর বাড়িতে বাকিরা আগলে রাখে। দেবায়ন অনুপমা আর মিস্টার সেনকে বুঝিয়ে বলে শ্রেয়ার ব্যাবহার দিনে দিনে সন্দেহ উদ্রেক করেছে, ভবিষ্যতে বোর্ডে ওদের হাতে বেশি মেম্বার থাকলে শ্রেয়া যদি কিছু উলটো পাল্টা করার চেষ্টা কিওরে তাহলে ওকে ছাড়িয়ে দিতে অসুবিধে হবে না। অনুপমা বুঝতে পারে যে পায়েলকে শুধু মাত্র দল ভারী করার জন্য বোর্ড মেম্বারে নেওয়া হচ্ছে। আগামী বোর্ড মিটিঙে এই নতুন সদস্যদের নামাঙ্কিত করা হবে আর বাকিদের জানানো হবে।
কিছুদিন পরেই ওদের তৃতীয় বোর্ড মিটিং ডাকা হয়। ততদিনে শ্রেয়া আর রূপক জার্মানি থেকে ফিরে আসে আর সেই ওষুধের কোম্পানির ডিল করে আসে। এইবারে ইন্দ্রনীল জার্মানি থেকে আসে। অনুপমাই দেবায়নের হয়ে কথা বলতে শুরু করে। প্রথমে ওদের আয় ব্যয় নিয়ে আলোচনা চলে। এয়ার বার্লিনের প্রোজেক্ট সাথে চুক্তি ছিল প্রফিট শেয়ারিং তাই প্রথম সপ্তাহ থেকেই টাকা আসতে শুরু করে। মাস দুয়েক পরে জারমেনিয়া এয়ারলাইন্সের প্রোজেক্ট ডিপ্লয় করলে একি রকম ভাবে আয় শুরু হয়ে যাবে। প্রথম বছর শেষ হওয়ার আগেই ওদের আয় বেশ কয়েক গুন বেড়ে যাবে তবে ব্রেক ইভেন পয়েন্টে পৌঁছতে অনেক দিন লাগবে। বোর্ড মিটিঙে নতুন দুইজনকে বোর্ডে নেওয়ার কথা বলে অনুপমা, একজন পায়েল আর দ্বিতীয় দীপঙ্কর’দা।
সুপর্ণা ম্যাডাম আর মনীষা আগে থেকেই বোর্ড মেম্বার ছিল এবারে পায়েল আর দীপঙ্কর’দা নিযুক্ত হওয়াতে ইন্দ্রনীল ছাড়া বাকি সবাই খুশি। ইন্দ্রনীলের হাবভাব দেখে মনে হল সে বোর্ড মেম্বার হলে ভালো হত। রূপক জানায় যে সুইজারল্যান্ডের সফটওয়ারের কাজ বেশ এগিয়ে গেছে, সেটাও মাস দুয়েকের মধ্যে ডিপ্লয় করা যেতে পারে। মনীষা জানায় যে গত তিন কোয়ার্টারে অনেক খরচের ফলে আগামী বছরে ওদের মাইনে বাড়ানোর ব্যাপারে একটু চাপ আছে কারন, গত তিন চার মাসে যে হারে লোকবল বেড়েছে সেই হারে আয় বাড়েনি। এখন ওদের আয় সবার মাইনে দিতে পারে না। মনীষার কথা শুনে শ্রেয়া আর রূপক একটু দমে যায়, মুখ শুকনো করে অনুপমার দিকে চেয়ে থাকে। অনুপমা সবাইকে আশ্বস্ত করে বলে, যেহেতু এই বছরে তিনটে বড় প্রোজেক্ট এসেছে সুতরাং এই বছরে মাইনে ঠিক মতন না বাড়াতে পারলেও পুজোর সময়ে সবাইকে ভালো বোনাস দেওয়ার চেষ্টা করবে। দেবায়ন চুপচাপ সবার কথা শুনে যায়। অনুপমা ওর মতামতের কথা জিজ্ঞেস করলে বলে পরে জানিয়ে দেবে।
গ্রীষ্মের গরম কাটিয়ে বর্ষা ঋতু নেমে আসে জলের ধারা নিয়ে। সারা গ্রীষ্ম ওদের অফিস কাজেই গরম ছিল। বর্ষা নামতেই তৃষ্ণার্ত গাছ পালার মতন সবাই যেন গরম থেকে হাঁফ ছেড়ে বাঁচল। এর মাঝে দেবায়ন আর অনুপমা, পুনের হোটেলের ট্রান্সফার কাগজ তৈরি করে মান্ডি গিয়ে মেহেকের স্বাক্ষর নিয়ে আসে। সেখানে শুভমের সাথে দেখা হয়, আর শুভম ওদের জানায় যে মেহেক কে নিয়ে কিছু দিনের মধ্যেই ক্যালিফোর্নিয়া চলে যাবে। অনুপমা ওদের হাতে পাঁচ কোটি টাকার চেক তুলে দেয় আর ওদের শুভেচ্ছা জানায়। মিস্টার সেন আগেই পুনে পৌঁছে যান নতুন হোটেল ম্যানেজার নিযুক্ত করার জন্য। হোটেলের কাগজ পত্র নিয়ে দেবায়ন আর অনুপমা পুনে পৌঁছায়। মিস্টার সেন আলাদা করে একবার রজত বাবুর সাথে দেখা করে, অবশ্য সেই আলোচনায় দেবায়ন অথবা অনুপমা ছিল না তাই ওরা জানে না ওদের মাঝে কি কথা হয়। তবে রজত বাবুর সাথে কথা বলে আসার পরে মিস্টার সেনের চেহারা বদলে যায়, বেশ গম্ভির হয়ে দেবায়ন আর অনুপমার দিকে তাকিয়ে থাকেন কিছুক্ষণ তারপরে একপাশে ডেকে নিয়ে হেসে ফেলেন। তিনি বলেন কিছু কিছু জায়গায় চক্রান্ত করা ভালো কিন্তু একটু ভেবে চিন্তে চক্রান্ত করা উচিত। রজত বাবু পুনের বেশ বড় লোক, কিন্তু মিস্টার সেন কম যায় না। তিনি উলটে রজত বাবুকে শাসিয়ে এসেছেন যে যদি ভবিষ্যতে ওদের দিকে চোখ তুলে তাকায় তাহলে পায়ে হেঁটে বাড়ি ফিরতে হবে না। চার কাঁধে তুলে নিয়ে যেতে তাকে।
পুনের পরে ওরা সবাই উটি যায়। উটি হোটেলের বোর্ড মিটিংয়ে, মিস্টার পারিজাত হোটেলের নতুন মালিকের নাম ঘোষণা করে আর সেই সাথে মিস্টার সেনকে অভ্যর্থনা জানায়। কারতিকেয়নকে দেবায়ন আলাদা করে অনেক টাকা দেয় আর ভবিষ্যতে তাঁর জন্য জমি কিনে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়।
ব্যাঙ্গালোরে ওদের জন্য বেশ বড় একটা চমক অপেক্ষা করেছিল। দিলিপ বাবু কনিকাকে নিয়ে ব্যাঙ্গালোর ফিরে এসেছেন, কিছুদিনের মধ্যেই তাঁরা বিবাহ বন্ধনে বন্ধিত হবেন। প্রেমজিতের সাথে দিলিপ বাবুর আন্তরিকতা বেশ বেড়ে গেছে, যেখানেই যায় প্রেমজিতকে সাথে নিয়ে যায়। কণিকা, ব্যাঙ্গালোরের একটা কলেজে চাকরি পেয়ে গেছে। দিলিপ বাবু ওদের জানান যে কথা মতন দ্বিতীয় হোটেলের পঁচাত্তর শতাংশের মালিকানা দেবায়ন আর অনুপমার নামে লিখে দিতে চান আর বর্তমান হোটেলের আগে যেমন পঁচিশ শতাংশ মিস্টার সেনের নামে ছিল সেটা তেমনি থাকবে। দেবায়ন আর মিস্টার সেন খুশি, কিন্তু তার চেয়ে বেশি খুশি হয় অনুপমা। দিলিপ বাবু মদ ছেড়ে দিয়েছেন, কণিকার কড়া তত্তাবধনে রোজ সকালে উঠে ব্যায়াম করা, হাঁটতে যাওয়া ইত্যাদি করার ফলে অনেক সুস্থ হয়ে উঠেছেন। দিন তিনেক ব্যাঙ্গালোরে ছিল আর সেই কয়দিনে দিলিপ বাবুর মুখে শুধু মাত্র অনুপমা আর দেবায়নের জয়গান। আসার আগে অনুপমা, দিলিপ বাবু আর কণিকাকে জানিয়ে দেয় যে কি করে ওদের খুঁজে পেয়েছিল। অনুপমার মুখে সব কথা শুনে দিলিপ বাবু অবাক হলেও হেসে ফেলেন। তিনি বলেন অনেক সময়ে কয়লা খুঁড়তে খুঁড়তে হীরের সন্ধান পাওয়া যায়, হয়ত তার জীবনের এই ঘটনা এমন এক উদাহরন।
কোলকাতায় বর্ষা শেষ হতে অনেক বেশি সময় নেয় এমন কি মাঝে মাঝে দুর্গা পুজোর সময়ে বৃষ্টি নেমে আসে। ক্যালেন্ডার অনুযায়ী বর্ষা শেষ হয়ে যাওয়ার কথা কিন্তু বর্ষা যেন আর কোলকাতা ছাড়তে চায় না। বিগত ছয় মাসে দেবায়ন একবারের জন্য বাইরে যায়নি, দুই একদিনের কাজ ছাড়া আর সেই জন্য অনুপমা ভীষণ খুশি। পায়েলের সাথে গাড়িতে করে অফিসে আসত কিন্তু ফেরার সময়ে দেবায়নের বাইকে ফিরত। কোনদিন বৃষ্টিতে কাক ভিজে হয়ে গেলে দেবায়নের বাড়িতেই থেকে যেত অথবা দেবায়ন ওর বাড়িতে থেকে যেত। অফিস ফেরত, কোনদিন ফ্লুরিসে বসে গল্প করত, কোনদিন আহেলিতে গিয়ে বসত, কোনদিন পার্ক স্ট্রিটের মোড়ে দাঁড়িয়ে এগ রোল খেত। কাজের সাথে ভালোবাসার এক অদ্ভুত মেল বন্ধনে দুইজনেই ভেসে বেড়ায়।
সেদিন সকাল থেকেই ঝম ঝম করে বৃষ্টি শুরু হয়ে গিয়েছিল। কারুর কাজে তেমন মন ছিল না। লাঞ্চের পরে অনুপমা ব্যাঙ্কের একাউন্ট ডিটেলস দেখছিল, এক বছর ঘুরে আসার সময় এসে গেছে। ঠিক এক বছর আগে, এমন এক পুজোর আগেই ওদের কোম্পানি শুরু হয়েছিল। আজ এক বছর পরে বিগত এক বছরের আয় আর ব্যায় খুলে বসে। কুড়ি কোটি টাকা দিয়ে শুরু কোম্পানি, শুধু মাত্র পাঁচ কোটি টাকা ওর আর দেবায়নের জয়েন্ট একাউন্টে পরে রয়েছে। বাকি সব আয় কোম্পানি একাউন্টে, এই এক বছরে আয় শুধু মাত্র পাঁচ থেকে ছয় কোটি যার সবটাই মাইনে দিতে, ট্যাক্স দিতে, অফিসের ভাড়া দিতে ইত্যাদি বিল মেটাতে মেটাতে খরচ হয়ে গেছে। এদিকে দুই সপ্তাহ পরেই কোম্পানির বার্ষিক মিটিং। জার্মানি থেকে অনিমেশ আঙ্কেল এসেছেন আর ইন্দ্রনীল এসেছে। ইন্দ্রনীল আসাতে শ্রেয়ার চলন বলন বদলে গেছে। সেটা সবার চোখে না পড়লেও অনুপমা আর দেবায়নের চোখ এড়াতে পারেনি। মাঝে মাঝেই ইন্দ্রনীলকে শ্রেয়ার কেবিনে দেখা যায়, লাঞ্চের সময় টুকু ওদের সাথে লাঞ্চ করে কিন্তু বাকি সময়ে শ্রেয়া বেশ ছাড়া ছাড়া থাকে।
সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে ওর চোখ পড়ে নিবেদিতার দেওয়া দুই কোটি টাকার ওপরে, হ্যাঁ এক সময়ে নিবেদিতা ওর একাউন্টে দুই কোটি টাকা দিয়েছিল। সেই সাথে মনে পরে যায় ছয় মাস আগে জলপাইগুড়িতে নিবেদিতার সাথে আচমকা দেখা হয়ে যাওয়া। দেবায়নকে সেই ঘটনা জানিয়েছিল কিন্তু তারপরে কাজের চাপে সেই কথা মাথা থেকে উবে গেছে। দেবায়ন কি নিবেদিতা আর ধৃতিমানের ব্যাপারে কিছু খোঁজ খবর নিয়েছে? একবার জিজ্ঞেস করলে হয় কি হল। এমন সময়ে দেবায়ন ওর কেবিনের দরজা খুলে ঢোকে।
অনুপমা মিষ্টি হেসে বলে, “তুই না একশো বছর বাঁচবি। আমি তোর কথা মনে করছিলাম এখুনি।”
দেবায়ন ওর কাছে এসে গাল টিপে আদর করে বলে, “তুই আমার সাথে থাকবি তো?”
অনুপমা চেয়ারে বসে ছিল তাই ওর কোমর জড়িয়ে পেটের ওপরে মুখ ঘষে বলে, “তুই থাকলে আমিও থাকব। এবারে বল কেন এসেছিলি?”
দেবায়ন মাথা চুলকে বলে, “যদি কিছু মনে না করিস তাহলে আমার সাথে একটু বের হবি।”
অনুপমা ওর মুখের দিকে তাকিয়ে দেখে যে দেবায়নের ঠোঁটে মিচকি হাসি। কি চলছে আবার এই ছেলেটার মাথায়? দেবায়নকে জিজ্ঞেস করে, “বৃষ্টি যেকোনো মুহূর্তে আসতে পারে। কোথায় যেতে হবে?”
দেবায়ন ওর হাত ধরে টেনে উঠিয়ে বলে, “আমার ওপরে বিশ্বাস আছে তো? তাহলে আবার জিজ্ঞেস করছিস কেন?”
অনুপমা ওর গালে আলতো করে ঠোঁট ছুঁইয়ে বলে, “বিষ দিলেও অমৃত ভেবে গিলে নেব। চল কোথায় নিয়ে যেতে চাস।”
এইরকম জল ভেজা আবহাওয়ায় গাড়িতে চড়তে ইচ্ছে করে না তাই ব্যাগ গুছিয়ে দেবায়নের বাইকে চেপে বেড়িয়ে গেল। যাবার আগে পায়েলকে বলে গেল যেন অফিস ছুটি হলেই বাড়ি ফেরে। আকাশে কালো মেঘের খেলা, দুপুরের পরে বৃষ্টি একটু ধরে এসেছে তাই বাতাস বেশ ঠাণ্ডা আর ভিজে। রাস্তায় এদিকে ওদিকে জল জমে, দুইপাশের গাছ গুলো যেন এই স্নান সেরে উঠেছে। সূর্যের দেখা নেই, বিকেলের দিকে আবার বৃষ্টি নামতে পারে। পেছনে বসে দুই হাতে আস্টেপিস্টে দেবায়নকে জড়িয়ে ধরে নিজের শরীর মিশিয়ে দেয় ওর পিঠের ওপরে। নরম শরীর দেবায়নের উত্তাপ শুষে নিতে তৎপর হয়ে ওঠে। নরম বুকে পিঠের পেশির ছোঁয়ায় কেঁপে ওঠে অনুপমা, এই বৃষ্টির দিনে বড় দুষ্টুমি করতে ইচ্ছে করে, কিন্তু লোক মাঝে নিজেকে সামলে নেয়।
রাস্তায় যেতে যেতে অনুপমা দেবায়নকে জিজ্ঞেস করে, “হ্যাঁ রে, তোকে ধৃতিমানের ব্যাপারে একটু খোঁজ খবর নিতে বলেছিলাম সেটা কি নিয়েছিস?”
দেবায়ন মাথা নাড়িয়ে উত্তর দেয়, “হ্যাঁ নিয়েছি। ব্যাটা অনেক ঘাঘু মাল। নিবেদিতা ম্যাডামের কোম্পানিতে মার্কেটিং হেড হিসাবে জয়েন করেছিল এই জানুয়ারিতে। নিবেদিতা ম্যাডামকে একা পেয়ে হাত মারতে চেষ্টা করেছিল, এক লেঙ্গি মেরে শালাকে চুপ করিয়ে দিয়েছি।”
অনুপমা ওর মামনির সাথে ধৃতিমানের হৃদ্যতা অনেক আগেই আঁচ করেছিল কিন্তু কোনদিন সেটা দেবায়নকে খুলে বলেনি কারন দেবশ্রীর বারন ছিল। এবারে আবার নিবেদিতার পেছনে পড়েছে? লোকটা তাঁর মানে বিশেষ সুবিধের নয়।
অনুপমা প্রশ্ন করে, “মানে?”
দেবায়ন, “যেদিন তুই আমাকে নিবেদিতা আর ধৃতিমানের ব্যাপারে জানালি সেইদিন থেকেই ধৃতিমানের ব্যাপারে আমি একটু খোঁজ খবর লাগিয়েছিলাম। ওর ব্যাপারে অনেক কিছু জানতে পারলাম। ধৃতিমান নিবেদিতা ম্যাডামকে গল্প বলেছিল যে তাঁর স্ত্রী, রেনুকা এক গাড়ি দুর্ঘটনায় অনেক বছর আগে গত হয়েছেন, আর সেই গাড়ি দুর্ঘটনার আসল কারন তাঁর পুরনো প্রেমিকা, কল্পনার স্বপ্ন। এই গল্প শুনে আমার মন বলল এর পেছনের আসল ঘটনা অন্য কিছু। খোঁজ নেওয়ার জন্য এখানে ধৃতিমানের বাড়িতে গেলাম, পরিচয় দিলাম ওর কোম্পানির কর্তা হিসাবে। ধৃতিমানের মেয়ে, মল্লিকার সাথে দেখা হল। মল্লিকা বেশ বড় হয়েছে ক্লাস ইলেভেন পড়ে এখন, আমাকে দেখেই চিনতে পারল আর তোর কথা জিজ্ঞেস করল। আমি ওর সাথে কথা বললাম বেশ কিছুক্ষণ তারপরে ধৃতিমানের শ্বশুর শাশুরির সাথে কথা বললাম। ওদের সাথে কথা বলে একটা বিষয়ে একটু সন্দেহ জাগল মনের মধ্যে। ধৃতিমানের শ্বশুর মশায় আমাকে বললেন যে তাঁর কন্যের সাথে তাঁর জামাইয়ের সুহৃদ সম্পর্ক ছিল না। ধৃতিমান আগে একজনকে ভালবাসত, সেটা ফলপ্রসু না হওয়ার পরে রেনুকার সাথে বিয়ে হয়েছিল। বিয়ের পরে কয়েক মাস পর থেকে নাকি ওই কল্পনার সাথে আবার প্রেম ভালোবাসা শুরু হয়। তারপরে ধৃতিমানের মুম্বাইয়ের ঠিকানা চাইলাম ওদের কাছে, সেটা পেতে কোন অসুবিধে হল না। তোর মনে আছে গত মাসে দিন দুয়েকের জন্য মুম্বাই গেছিলাম আমি?”
অনুপমা মাথা নাড়ায়, “হ্যাঁ মনে আছে। তুই বলেছিলিস নিজের কোন কাজে যাচ্ছিস। তুই এই কাজে গেছিলিসি আমাকে বলিসনি কেন?”
দেবায়ন হেসে বলে, “মেয়েদের পেটে কি আর কথা থাকে, তাই আর তোকে বলিনি। তুই জানলে যদি মা কে বলে দিতিস তাই।”
অনুপমা ওর মাথায় চাটি মেরে বলে, “কুত্তা, বাকি পাঁচ জনের মতন আমি নই যে পেটের কথা রাষ্ট্র করে বেড়াব। জলপাইগুড়ির কথা মামনির কাছে বেমালুম চেপে গেছি আমি। মামনি কিছুই জানে এই সব বিষয়ে, উলটে আমার ভয় ছিল তোকে বললে তুই কি করে বসিস। তা মুম্বাই গিয়ে কি খবর নিয়ে এলি?”
দেবায়ন বলে, “মুম্বাই গিয়ে ধৃতিমানের মায়ের সাথে কথা বলে বিশেষ কিছু জানতে পারলাম না। তবে এইটুকু বললেন যে রেনুকা আর ধৃতিমানের সম্পর্ক বিশেষ ভালো ছিল না। তখন আমার মনের মধ্যে সন্দেহ জাগল, এই দুর্ঘটনা হয়ত ইচ্ছাকৃত ভাবে করা হয়েছে।”
অনুপমা আঁতকে ওঠে, “মানে?”
দেবায়ন বলে, “মানে ধৃতিমানের শ্বশুরের কথা আর ধৃতিমানের মায়ের কাছে সব কিছু শোনার পরে আমার কেমন যেন সন্দেহ হল। কোলকাতা ফিরে অন্ধকারে ঢিল ছুঁড়লাম। একদিন ধৃতিমানকে ডাকলাম আমাদের কন্সট্রাকশান অফিসে। আমাকে দেখে ভুত দেখার মতন চমকে উঠল। আমি ওকে চেপে ধরলাম সেই সাথে বললাম যে আমি বেহালা গিয়েছিলাম, মুম্বাই গিয়েছিলাম ইত্যাদি। আমি চেপে ধরে বললাম যে ওই কল্পনাকে খুঁজে পেতেও আমার কোন অসুবিধে হবে না। সুতরাং আসল কথা বলে ফেলা ভালো। ধৃতিমানের গলা শুকিয়ে কাঠ, আমি ওকে বললাম সত্যি কথা না বললে, আমি ওর মেয়েকে এখানে ডাকব আর তাঁর স্ত্রীর সাথে কেমন সম্পর্ক ছিল সেটা খুলে জানিয়ে দেব। ধৃতিমান অবশেষে ভেঙ্গে পড়ল, জানালো যে গাড়ি দুর্ঘটনা হয়েছিল সেটা সত্যি কিন্তু তিনি ড্রাইভার সিটে বসে ছিল যতক্ষণ না রেনুকার রক্তাক্ত দেহ প্রচুর রক্তক্ষরণের ফলে প্রানহীন না হয়ে গেল। ঠিক সময়ে লোকজন ডাকলে রেনুকা বেঁচে যেত কিন্তু ইচ্ছাকৃত ভাবেই ধৃতিমান রেনুকাকে ওই খানে মড়ার জন্য ছেড়ে দিয়েছিল।”
সব শুনে অনুপমার শরীরের রক্ত টগবগ করে ফুটতে শুরু করে দেয়, চাপা হুঙ্কারে দেবায়নের কানের কাছে বলে, “শুয়োরের বাচ্চাটা কোথায়?”
দেবায়ন বলে, “চিন্তা নেই, ওই সাপের বিষ দাঁত ভেঙ্গে দিয়েছি। নিবেদিতার সাথে কিছু করবে না।”
অনুপমা বলে, “কোথায় আছে? নিবেদিতার কোম্পানিতেই আছে নাকি এখন?”
দেবায়ন বলে, “নিবেদিতা ম্যাডামের কাছে আমি সবকিছু খুলে বলেছিলাম, নিবেদিতা ম্যাডাম একটু খানি ভেঙ্গে পড়েছিল কিন্তু সামলে নিয়েছে। কাজ ভালো করে লোকটা, এই কয় মাসে প্রচুর দুই নম্বরি করে টাকা কামিয়ে দিয়েছে আমাদের দুই কোম্পানিকে। তাই ওকে নিবেদিতা ম্যাডামের কোম্পানিতে থেকে ছাড়িয়ে সোজা আমাদের কোম্পানিতে নিযুক্ত করেছি। কাকুর সামনে আওয়াজ উঠানোর শক্তি আর সাহস নেই। আর আমার হাতে মোক্ষম অস্ত্র রয়েছে বেশি বেগড়বাঁই করলে সবার সামনে উলঙ্গ করে পেটাবো।”
অনুপমা ওকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে বলে, “তুই না একটা সত্যি……”
দেবায়ন বলে, “আমি কি?”
অনুপমা ঠোঁট কুঁচকে ওর ঘাড়ের কাছে আলতো চুমু খেয়ে বলে, “একটা দুষ্টু মিষ্টি পুচ্চু সোনা।”
কিছুক্ষণ পরে দেবায়ন একটা বাজারে বাইক থামিয়ে অনুপমাকে একটা বড় ফুলের তোড়া আর বেশ কিছু চকোলেট কিনতে বলে। অনুপমা প্রশ্ন করলে শুধু মাত্র হেসে জানায় যেখানে যাচ্ছে সেখানে এই উপহার গুলো লাগবে। অনুপমা চিন্তায় পরে যায়, কার বাড়িতে কার সাথে দেখা করার জন্য ওকে নিয়ে যাচ্ছে। বারেবারে প্রশ্ন করেও সঠিক উত্তর না পেয়ে কিঞ্চিত অভিমান করে বসে থাকে।
 
Like Reply




Users browsing this thread: 4 Guest(s)