23-09-2020, 03:04 PM
১ম পর্ব
বারাসাত জায়গাটা বর্তমানে একটা শহরে পরিণত হয়েছে আর এখন থেকেই শুরু আমার এই নতুন পল্পের। বর্তমানে এক উচ্চবিত্ত পরিবার তার সর্বময় কর্তা অখিল স্যান্যাল কিন্তু দেশ ভাগের সময় যখন এই বারাসাতে আসেন তখন তার সাথে ছিল তার পরিবার - মা-বাবা এক বিধবা বোন সাথে তার এক বছরের মেয়ে, ওনার স্ত্রী আর এক ছ বছরের পুত্র সন্তান - অমিত। অখিল বাবু পেশায় উকিল ওনার বাবা - নিখিল বাবু বাংলাদেশে ওকালতি করতেন। সব হারিয়ে শুধু কিছু টাকা আর স্ত্রীর কিছু স্বর্ণালংকার নিয়ে আসতে পেরেছিলেন আর তাই দিয়েই ধীরে ধীরে তিনি একটুকরো জমির উপর একটা বসত বাড়ি বানিয়েছেন।
নিজর একমাত্র ছোট বোন সুমনা সেও বিয়ের আগেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ইরতিন্ন হয়। তার বিয়েও দেওয়া হয় এক উচ্চবিত্তের ঘরে। সুমনার বিয়ের দু-বছরের মাথায় তাদের এক কন্যা সন্তানের জন্ম হয়। কিন্তু মেয়ের যখন ছমাস বয়েস তখনি এক দাঙ্গায় শ্রীজীব- সুমনার স্বামী - প্রাণ হারায়। আর সেই শোক সৈতে না পেরে ওর বাবাও মারা যান উনি বিপত্নীক ছিলেন। সংসারে একমাত্র ছেলে, ছেলের বৌ - সুমনা তাদের ছমাসের মেয়ে সুপর্ণা।
অখিলের বাবা -মা খুবই ভেঙে পড়েছিলেন আর দিন দিন চারিদিকে দাঙা বাড়তে লাগল আর সেখানে থাকা আর নিরাপদ নয় দেখে অখিল ওর বাবাকে ব্যাপারটা জানাতে তিনিও অখিলের কোথায় সম্মতি দিলেন। সুমনা নাতনিকে নিয়ে সপরিবারে বারাসতে চলে আসেন তারপর থেকেই এই গল্পের শুরু।
বাবাকে বিশ্রাম দিয়ে নিজে ওকালতি করতে শুরু করলেন। বছর তিনেকের ভিতরেই ওকালতির পসার বেশ বেড়ে উঠতে লাগল সাথে অর্থের আমদানিও। অখিল সুমনাকে নিজের পেশার সাথে যুক্ত করে নিয়েছে। মামলার নথিপত্র মামলার তারিখ সব কিছুই সুমনা সামলাতে লাগল আর দেখতে দেখতে সমস্ত জিনিস নিজের আয়ত্তে নিয়ে নিল।
এদিকে সুমনার মেয়ে সুপর্ণা বড় হচ্ছে পাঁচে পা দিলো আর অখিলের ছেলে অমিত এগারো। দুই ভাই-বোনে খুব ভাব বাড়ির কাছেই এক সরকারি কলেজে ওদের পড়াশোনা চলছে।
আদালতে যাতায়াতের ফলে অনেক উকিল মহুরী সবাই সুমনাকে চেনে। সেরকমই এক উকিলের সাথে সুমনা জড়িয়ে পরে। অল্প বয়েসের উকিল - সমির সিনহা - সুমনার দাদার কাছে জুনিয়র হিসেবে ঢুকেছিল। বেশ বড় বংশের সন্তান বাবা আয়কর বিভাগের একজন আধিকারিক।
সমির ওর বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান। দেখতে একদম রাজপুত্রের মতো। লম্বা চওড়া গায়ের রং বেশ ফর্সা আর ভীষণ মেধাবী। খুব অল্প দিনেই অখিলের মন জয় করে নিলো সমির। একদিন অখিলের নজরে আসে ওদের ঘনিষ্টতা। সুমনার বয়েস আর সমিরের বয়েস একই আর সুমনাকে দেখলে যে কোনো পুরুষের মন চাইবে তার সান্নিধ্যে আসতে। এক্ষেত্রেও এর কোনো অন্যথা হলোনা।
অখিল সুমনার ব্যাপার নিয়ে বাবার সাথে কথা বলল - নিখিল বাবু বললেন দেখো যদি ছেলের বাড়ির লোক রাজি থাকে তো আমার আপত্তি নেই , তুমি কথা বলো সমিরের মা-বাবার সাথে।
অখিল এক শনিবার সোমিরকে জিজ্ঞেস করল - তুমি কি সুমনাকে ভালোবাসা ?
সমির একটু ঘাবড়ে গিয়ে তোতলাতে লাগল - মানে ঠিক বুঝলাম না।
অখিল - তুমি আর সুমনা যে ভাবে মেলামেশা করছো সেটা সকলের কাছে ধরা পরে গেছে। তাই তুমি আমাকে বলো যে সুমনাকে তুমি কি চোখে দেখো ?
সমির - দেখুন আমি সুমনাকে খুবই পছন্দ করি ওর কাছে থেকে ওর ব্যাপারে আমি সবটাই শুনেছি। কিন্তু আমাকে ও ভালোবাসে বিয়ে করতে পারবে না বলেছে। আমি আমার মা-বাবাকেও সুমনার কথা বলেছি ওঁনাদের কোনো আপত্তি নেই। আমার মা সুমনার সাথে কথা বলতে চেয়েছেন সুমনা রাজি নয় আমাদের বাড়ি যেতে।
অখিল - সেটা আমার উপর ছেড়ে দাও আমি সুমনার সাথে কথা বলব। সুমনা রাজি হলে তুমি কি ওকে বিয়ে করবে ?
সমির - নিশ্চই আর সবটাই নির্ভর করছে সুমনার উপর।
অখিল- ঠিক আছে তোমার বাড়ির ঠিকানা আর ফোন নম্বর দাও সুমনা রাজি হলে আমি ফোন করব আর আগামী কাল সন্ধ্যে বেলা তোমাদের বাড়ি যাবো। আশাকরি তোমার মা-বাবা থাকবেন বাড়িতে।
সমির খুব খুশি হয়ে বলল - মা-বাবা থাকবেন কোনো অসুবিধা নেই।
সমিরের থেকে ফোন নম্বর আর ঠিকানা নিয়ে বাড়ি ফিরলেন অখিল।
একটু বিশ্রাম নেবার পর বাড়ির চেম্বারে গিয়ে বসলেন।
একটু বাদেই সুমনা এলো আগামী কালের কি কি মামলা আছে সে গুলো অখিলকে বলল।
কাজ শেষে সুমনা উঠতে যেতেই অখিল বলল- একটু বোস তোর সাথে কিছু কথা আছে।
সুমনা মনে মনে এই ভয়টাই পেয়েছিলো ওর বাবাকে ভয় করেন কিন্তু দাদাকে ও ভীষণ বই পায়। কেননা সেদিন কোর্টের ফাঁকা চেম্বারের ভিতর সমীর যে ভাবে ওকে জড়িয়ে ধরে চুমু খেয়েছিলো সেটা দাদার চোখে পড়েছে। সমীরের হাত দুটোও ওর বুকের উপর ছিল।
সুমনা বসতে অখিল বলল - দেখ তুই কি সমীরকে ভালোবাসিস ?
সুমনা মুখ নিচু করে বসে আছে ওর মুখ থেকে কোনো কথা বেরোল না। অখিল তাগাদা দিলো - কি রে চুপ করে বসে আছিস কেন ?
সুমনা কিছুটা ঘাবড়ে গিয়ে বলল - না না সে রকম কিছু নয়।
অখিল - তা হলে আমি কি যা দেখেছি বা যা সবার কাছে থেকে জেনেছি সেগুলি কি ভুল আর কদিন আগে কলকাতা হাইকোর্টে গেছিলি তোরা দুজনে আর ফিরলি রাত ৯টা আর তোদের দুজনকে একটা হোটেল থেকে বেরোতে দেখেছে আমার পরিচিত একজন। এগুলো তাহলে কি ?
সুমনার উত্তরের অপেক্ষা না করে আবার বললেন - আমি জানি শরীরের খিদে তোমার আছে আর আছে একদম নিজের আর কাছের কারোর সান্নিদ্ধ পাবার আকাঙ্খা। এটা কোনো অন্যায় নয় তবে অন্যায় সেটাই আইনত স্ত্রী না হয়েও সমীরের সাথে শারীরিক সম্পর্ক রাখা। এতে বদনাম হবে আর আরো অনেক সুযোগ সন্ধানী মানুষ এর সুযোগ নিতে চাইবে যেটা আমি কখনোই বরদাস্ত করতে পারবোনা।
সুমনা সব শুনছে আর ওর চোখ দিয়ে টপ টপ করে জল পড়ছে। নিজের মনে সাহস এনে এবার বলল - দাদা আমাকে ক্ষমা করে দাও সমীরকে আমি ভালোবেসে ফেলেছি আমি ওকে ছাড়া বাঁচবোনা। কিন্তু আমি বিধবা আমার একটা মেয়ে আছে আমাকে বিয়ে করলে সমীরদের পরিবারের বদনাম হবে। আর তাই...........
অখিল চেয়ার ছেড়ে উঠে এসে পরম স্নেহে ওর মাথায় হাত দিয়ে বললেন - নারে বোন আজকাল এই রকম বিয়ে অনেক হচ্ছে এতে কোনো অন্যায় হবেনা। তুই যদি রাজি থাকিস আমি তোদের দুজনের বিয়ে দেব। আর তুই তোর মেয়ের কথা ভাবছিস ওর ভার আমার উপর ছেড়ে দে আমার কাছে যেমন অমিত তেমনি সুপর্ণা। আমার দুই ছেলে মেয়ে আর ওরা দুজনে আমার কাছেই থাকবে সে নিয়ে তোকে ভাবতে হবেনা।
এবার বল কালকে কি আমি সমীরের মা-বাবার সাথে কথা বলব কি না?
সুমনা দাদাকে যতটা রাগী ভাবতো এখন কথা শুনে মনে হচ্ছে যে দাদার ভিতরে একজন দরদী মানুষ লুকিয়ে আছে আর সেটা বুঝতে পেরে সুমনার সব ভয় ও ধারণা ভেঙে গেল। এ যেন এক নতুন মানুষ বন্ধুর মতো।
সুমনা উঠে দাদার পায় হাত দিয়ে প্রণাম করে বলল - তুমি যেটা ভালো মনে করবে সেটাই করো আমার আপত্তি নেই।
অখিল হেসে বলল - এই কথাটা বলার জন্যে এতো সময় নষ্ট করলি বোকা মেয়ে চল রাত হয়েছে খেতে হবে তো নাকি।
সেদিন আর কোনো কথা হলো না দাদার সাথে খাওয়া সেরে সুমনা নিজের ঘরে শুতে এলো কালকে দাদা সমীরের বাড়ি যাবে কথা বলতে যদি সমীরের বাবা রাজি না হন ও একা থাকবে কি করে সমীরকে ছাড়া। সমীর যে সুখের স্বাদ দিয়েছে সেদিন।
সমীর সেদিন জোর করে হোটেলে নিয়ে গেছিলো আর সম্পূর্ণ উলঙ্গ করে যে ভাবে ওর সব বাধা সরিয়ে নিজের মস্ত বড় ধোন ঢুকিয়ে দিয়েছিলো আর টানা আধ ঘন্টা ধরে কোমর দুলিয়ে গেছিলো এখনো সেটা ভাবতেই দু পায়ের ফাঁকে রস জমতে শুরু করছে। সুমনার বুকের উপর বড় বড় দুটো মাইকে দোলে মুচড়ে শেষ কর দিয়েছিলো। ভীষণ সুখ পেয়ে ছিল সুমনা। এই সুখ ছাড়া এখন ও আর কিছুই ভাবতে পারছেনা। তাই সমীরকে ছাড়া এই জীবন এগিয়ে নিয়ে ও কিছুতেই পারবেনা।
পরদিন অখিল সমীরকে ফোন করে ওর যাবার খবর দিলো আর ঠিক সন্ধ্যে ছটা নাগাদ সমীরদের বাড়ি পৌঁছলো। মাঝারি আকারের বেশ সুন্দর বাড়ি ওদের। দেখে মনে হচ্ছে সমীরের বাবা বেশ সৌখিন মানুষ বাড়িটা সাজিয়েছেন খুব সুন্দর করে।
সমীর এগিয়ে এসে বলল - আসুন স্যার বাবা-মা আপনার জন্য অপেক্ষা করছেন।
অখিল ভিতরে ঢুকল সমীরের বাবা এগিয়ে এসে হাত বাড়ালেন আমি সৌমেন আর ইনি আমার স্ত্রী যুথিকা - আসুন বসুন। অখিল নিজের পরিচয় দিয়ে ওদের দুজনের সামনে একটা সিঙ্গেল সোফাতে গিয়ে বসলেন।
সৌমেন বাবু বললেন - দেখুন আমার ছেলের পছন্দের উপর ওর মা ও আমার পুরো ভরসা আছে তাই আমি সেসব কথায় যেতে চাইনা। শুধু জানতে চাই যে খুব তাড়াতাড়ি যদি বিয়েটা হয় তো আপনাদের কোনো আপত্তি আছে কিনা ?
অখিল - না না আমার সেটাই ইচ্ছে যত তাড়াতাড়ি ওদের বিয়েটা হয়ে যায় ততই ভালো।
একজন পরিচারিকা ট্রেতে করে এক প্লেট মিষ্টি ও চা নিয়ে অখিলের সামনে রাখল। আর বাকি দু কাপ চা সৌমেন বাবু ও যুথিকা দেবীর সামনে রাখল।
সৌমেন বাবু বললেন নিন মশাই একটু মিষ্টি মুখ করুন।
অখিল - দেখুন আমি মিষ্টি ভালোবাসি কিন্তু এতো গুলো খেতে পারবোনা।
সৌমেন - চেষ্টা করে দেখুন যদি একান্তই না পারেন তো আপনার জুনিয়রকে ডেকে নিন। দুজনে মাইল অনেক মামলাই তো জিতেছেন এটাতেও জিতবেন। সৌমেন বাবু হাঁক দিলেন সমু এদিকে এস।
সাথে সাথে সমীর এলো বলল নাও তোমার সিনিয়রের সাথে বসে মিষ্টি গুলো শেষ করো।
সমীর বাধ্য ছেলের মতো অখিলের পাশে বসে আর একটা চামচ দিয়ে খেতে শুরু করল।
সব শেষে অখিল জিজ্ঞেস করলেন - কিছু মনে করবেন না একটা কথা জিজ্ঞেস করতে চাই যদি অনুমতি দেন
সৌমেন বাবু - আরে অটো কিন্তু কিন্তু করছেন কেন এখন থেকে তো আমরা আত্মীয় যা বলার বলে ফেলুন।
অখিল - মানে আপনাদের কোনো দেন-পাওনা থাকলে যদি বলেন তো খুব ভালো হয়।
সৌমেন বাবু একটু গম্ভীর হয়ে বললেন - দেখুন আমরা ছেলে বিক্রি করতে চাইনা শুধু ছেলের জন্য একজন জীবন সঙ্গিনী আনতে চাই। সুতরাং ও সব দেন-পাওনার কথা আর ভুল করেও তুলবেন না আর যদি তোলেন তো এই বিয়েতে আমাদের মত নেই।
অখিল দু হাত জুড়ে উঠে দাঁড়িয়ে বললেন - আমাকে মাফ করবেন খুব ভুল কথা বলে ফেলেছি। এরকম ভুল আর হবে না। তবে আমি আমার বোনের হুবু স্বামীকে যদি কিছু দেই তাতেও কি আপনাদের আপত্তি আছে ?
সৌমেন - দেখুন আপনাদের ইচ্ছেকে সন্মান জানিয়েই বলছি কিছুই দিতে হবেনা শুধু বইয়ের জন্ন্যে যেটুকু না হলে নয় সেটুকুই করবেন আর আপনার বোনকে আপনি কি দেবেন বা দেবেন না সেটা আমাদের অধিকারের বাইরে।
পনেরো দিনের মাথায় একটা ভালো দিন ঠিক হলো সন্ধ্যে লগ্নে বিয়ে। যথারীতি অখিলদের বাড়িতে একটা সাজ সাজ রব উঠলো। সুমনা খুব খুশি সমীরের মতো ছেলেকে স্বামী হিসেবে পাচ্ছে। সুমনার মেয়ে এসে জিজ্ঞেস করল - মা তুমি আমার জন্ন্যে নতুন বাবা আনবে ?
সুমনা একটু চুপ করে থেকে উত্তর দিলো - হ্যা মা তোমার বাবা তোমাকে খুব ভালোবাসবে আদর করবে।
সুপর্ণা - নতুন বাবাও কি আমাদের সাথে এই বাড়িতেই থাকবে?
সুমনা - না মা বাবার নিজের বাড়ি আছে সেখানেই আমাকে নিয়ে যাবে তোমার নতুন বাবা।
সুপর্ণা - আমি কিন্তু ওখানে যাবোনা আমি দাদাকে ছেড়ে কোথাও যাবোনা বলেই দৌড়ে চলে গেল।
বিয়ের দিন অনেক কোলাহলের মধ্যে দিয়ে দুজনের মালা বদল সাতপাকে ঘোরা শেষে সিঁদুর দান। পরদিন বাসি বিয়ে সেটাও খুব সুন্দর ভাবে হলো সবাই খুশি। সন্ধ্যে বেলা বিষাদের ছায়া নেমে এলো অখিলের বাড়িতে। সুমনার বিদায় বেলায় সবাই মনমরা অখিলের চোখে জল।
তবে সেটা সাময়িক কেননা পরদিন বৌভাত তার সব তত্ত্ব সাজান শুরু হয়ে গেল।
পরদিন সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ সবাই সমীরদের বাড়ি পৌঁছলো।