Thread Rating:
  • 28 Vote(s) - 3.18 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
পাপ কাম ভালবাসা
দেবশ্রী, “ঠিক আছে তাই হবে। ফাইনাল পরীক্ষার আগে, কলেজ শেষ হওয়ার আগে পর্যন্ত তোরা দুইজনে এই সব ব্যাপারে একদম মাথা খাটাবি না। আগে নিজেদের পড়াশুনা, কলেজ ঠিক ভাবে শেষ কর। আমি পারমিতা আর মিস্টার সেনের সাথে এই বিষয়ে বিস্তারিত কথা বলতে চাই। সবার কি ইচ্ছে সেটা জানার পরে আমি আমার সিদ্ধান্ত তোদের জানাব।” অনুপমার গাল টিপে আদর করে বলে, “ এখুনি যেন ভেবে বসিস না যে আমি তোদের কথা মেনে নিয়েছি। যা অনেক রাত হয়ে গেছে। আজ রাতে ছুটি দিচ্ছি, বেশি দুষ্টুমি যেন করিস না।”

অনুপমা অবাক হয়ে, খুশিতে দেবশ্রীকে জড়িয়ে ধরে গালে চুমু খেয়ে বলে, “তুমি আমার দুষ্টু মিষ্টি মামনি।”
দেবশ্রী, “হুম বুঝতে পারছি বেশ তেল মারা হচ্ছে। যা বদমাশ, আর হ্যাঁ কাল তাড়াতাড়ি উঠিস, কোথায় বেড়াতে নিয়ে যাবি কত ফলস দেখাবি বললি যে।”
অনুপমা, “উম্মম্ম মামনি, কাল আবার শপিং যাবো বিকেলে। কালকে তোমার জন্য একটা ভালো কার্ডিগান কিনে দেব আমি।”
দেবশ্রী অনুপমার গাল টিপে বলে, “আরে পাগলি মেয়ে। যেদিন তুই নিজের আয় করা টাকায় কিনে দিবি সেদিন আমি খুশি হব। তুই দশ টাকার কানের দুল কিনে দিলেও আমি সেদিন বুক ফুলিয়ে বলতে পারব যে আমার বউমা আমাকে কিনে দিয়েছে।”
অনুপমা আদুরে কণ্ঠে দেবশ্রীকে জড়িয়ে ধরে বলে, “মামনি, তুমি বড্ড ইমোশানাল করে দাও।”
দেবায়ন বুঝতে পারল যে হবু বউমা আর হবু স্বাশুরির মাঝে কিছুক্ষণ ভাবাবেগের আলাপ চলবে। দেবায়ন অনুপমাকে বলে, “আমি চললাম, তোমাদের ন্যেকামো শেষ হলে চলে এস।”
অনুপমার আর দেবায়ন, দেবশ্রীর রুম থেকে বেড়িয়ে নিজেদের রুমে ঢুকে পরে। নিজেদের রুমে ঢুকতেই দেবায়ন অনুপমাকে জড়িয়ে ধরে দুই হাতে। প্রসস্থ বুকের সাথে অনুপমার কোমল দেহ পিষে মিলিয়ে একাকার করে দেয়। চুম্বনে আদরে ভরিয়ে দেয় অনুপমার সুন্দর মুখ। অনুপমা দেবায়নের গলা দুই হাতে জড়িয়ে প্রেমের চুম্বন নিবিড় করে আহরণ করে। জীবন প্রদীপ থমকে যাওয়ার আগের মুহূর্তের মতন পরস্পরকে আদরে চুম্বনে ভরিয়ে তোলে জোড়া কপোত কপোতী। দেবায়ন অনুপমাকে কোলে তুলে বিছানায় নিয়ে যায়।
অনুপমাকে, বুকের উপরে ফেলে মুখখানি আঁজলা করে ধরে বলে, “তুমি না থাকলে আজকে আমি মায়ের সামনে কথা বলতে পারতাম না। জানিনা তুমি না থাকলে কি হত আমার।”
অনুপমা দেবায়নের চোখের মণির মধ্যে নিজের প্রতিচ্ছবি দেখে বলে, “এমন করে কেন বলছ, আমি তোমার পাশে সবসময়ে আছি। তোমাকে ছাড়া আমি আর কিছু ভাবতে পারিনা পুচ্চু সোনা।”
দেবায়ন, “আচ্ছা মাকে কি ভাবে পটালে বলতে পারো, তোমাকে আমার সাথে রাতে থাকতে দিল যে?”
অনুপমা দেবায়নের নাকের উপরে আঙুল ঘুরিয়ে বলে, “শুধু কি তুমি পারো মানুষ কে কথায় ভুলাতে, তোমার গার্লফ্রেন্ড অনেক কিছু পারে, বুঝলে।”
দেবায়ন, “সে বুঝলাম এবারে…”
অনুপমা ঠোঁটে দুষ্টুমির হাসি মাখিয়ে বলে, “এবারে আর কি, তুমি লাইট নিভিয়ে শুয়ে পরো আমি একটু গা ধুয়ে আসছি।”
দেবায়ন গেঞ্জি খুলে বিছানায় উঠে পরে। অনুপমা চোরা হাসি ঠোঁটে মাখিয়ে একটা পাতলা স্লিপ নিয়ে বাথরুমে ঢুকে পরে। দেবায়ন পার্সের থেকে কন্ডম বের করে বালিশের নিচে রেখে দেয়, নিভৃতে প্রেয়সীর সাথে ভালোবাসার খেলার জন্য আগে থেকে তৈরি হয়ে এসেছিল। আসন্ন কামকেলির উত্তেজনায় প্যান্টের ভেতরে লিঙ্গ ছটফট করে। অনুপমা কিছু পরে বাথরুম থেকে ছোটো স্লিপ পরে বেড়িয়ে আসে। ঘরের মৃদু আলোকে অনুপমাকে ঠিক যেন স্বর্গের এক নর্তকীর মতন মনে হয়। কোমরে হাত রেখে বেঁকে দাঁড়িয়ে, চোখে মিষ্টি আহবানের ঝিলিক। দেবায়ন বিছানা ছেড়ে উঠে অনুপমার সামনে হাঁটু গেড়ে বসে পরে। কোমরে হাত রেখে নরম পেটের উপরে গাল ঘষে দেয়। অনুপমা দেবায়নের চুলের মধ্যে আঙুল ডুবিয়ে দুই চোখের দিকে গভীর ভাবে তাকিয়ে থাকে।
দেবায়ন স্লিপের নিচে হাত দিয়ে অনুপমার নগ্ন পাছার ত্বকের উপরে তালু চেপে বলে, “তুমি বড্ড মিষ্টি পুচ্চিসোনা।”
অনুপমা, দেবায়নের চুলে বিলি কেটে বলে, “সোনা, তুমি মিষ্টি করে তুলেছ তাই মিষ্টি, তুমি যেমন রাখবে, তেমনি থাকব আমি।”
দেবায়ন, চুম্বনে আলিঙ্গনে উত্তেজিত করে তোলে প্রেয়সীকে, দুই প্রেমঘন কপোত কপোতী মেতে ওঠে শরীরের খেলায়। নিভৃতে নির্জনে একাকী বন্ধ দরজার পেছনে দেবায়ন আর অনুপমার পার্থিব শরীর ভালোবাসার চরমে এক হয়ে যায়।
দেবায়ন আর অনুপমা রুম থেকে বেড়িয়ে যাবার পরে অনেকক্ষণ দেবশ্রী একাকী বসে চিন্তা করে নিজের ভবিষ্যৎ। ছেলের আর হবু বৌমার খুশি দেখে টেবিলের উপরে রাখা অফার লেটার দেখল দেবশ্রীর। দিল্লী তাহলে আর যাওয়া হচ্ছে না। হৃদয়ের এককোণে ধৃতিমানের জন্য প্রেম জেগে উঠেছিল সেটা হয়ত আর ফলপ্রসু হবে না। ধৃতিমানের, আগবাড়িয়ে দেবায়নের সাথে আলোচনায় দেবশ্রী একটু ক্ষুধ। একবার মনে হয় ধৃতিমানকে ডেকে জানিয়ে দেওয়া উচিত যে ওর দিল্লী আসা হবে না এবং দেবায়নের সাথে ওদের সম্পর্কের ব্যাপারে কোন কথা হয় নি। ঠিক সেইসময়ে রুমের দরজায় টোকা শুনে অবাক হয়ে যায় দেবশ্রী। রাত অনেক, গায়ে শাল জড়িয়ে দরজা খুলে দেখে যে ধৃতিমান দাঁড়িয়ে। এতক্ষণ ধৃতিমানের কথাই ভাবছিল দেবশ্রী, চোখের সামনে ধৃতিমানকে দেখতে পেয়ে কথা ভুলে গেল। মনের মধ্যে একটু খুশির ছোঁয়া জেগে ওঠে। ধৃতিমান হেসে জিজ্ঞেস করে যে ভেতরে আসতে পারে না বাইরে দাঁড় করিয়ে রাখতে চায়। দেবশ্রী মৃদু হেসে জিজ্ঞেস করে এত রাতে আসার কারন আর ধৃতিমানকে রুমের মধ্যে আসতে বলে।
 
অষ্টদশ পর্ব (#05)
ধৃতিমান দেবশ্রীর দিকে ঝুঁকে কানেকানে বলে, “তুমি এমন ভাব করছ যেন আমার আসার কারন জানো না। যেতে বললে চলে যাবো, চিন্তা নেই তবে গুটি কয় কথা জিজ্ঞেস করার ছিল তাই তোমাকে এত রাতে ডিস্টার্ব করতে এলাম।”
দেবশ্রী হেসে বলে, “হ্যাঁ, তুমি ত রাতের ঘুম সকালের ঘুম কাড়তে ওস্তাদ। কি জিজ্ঞেস করতে চাও?”
ধৃতিমান রুমে ঢুকে সোজা বিছানায় বসে জিজ্ঞেস করে, “একটু কাছে আসবে না।”
দেবশ্রী হেসে মাথা নাড়িয়ে বলে, “তুমি না একদম যা তা, আচ্ছা বাবা আসছি।”
বলে ধৃতিমানের পাশে গিয়ে বসে।
ধৃতিমান দেবশ্রীর হাত নিজের হাতের মধ্যে নিয়ে বলে, “তুমি আমার ওপরে রেগে আছো তাই না।”
দেবশ্রী হাত না ছাড়িয়ে বলে, “তা আছি একটু রেগে। তুমি কেন দেবায়নের সাথে ওই চাকরির ব্যাপারে, দিল্লীর ব্যাপারে এখুনি কথা বলতে গেলে? তোমার মাথা খারাপ হয়েছে নাকি? প্রথম দিনে এমন ভাবভঙ্গি দেখালে ওদের মনে সন্দেহ হত না?”
ধৃতিমান, “এই দেখ, আমি অতশত ভাবি নি। এই একটু দেবায়নের সাথে আলাপ করতে ইচ্ছে হল, ওর মনের অভিপ্রায় জানতে ইচ্ছে হল তাই জিজ্ঞেস করলাম।”
দেবশ্রী, “দেখ ধৃতি, আমি ওদের দিল্লীর কথা জানিয়েছি, চাকরির কথা জানিয়েছি। দেবায়ন আর অনুপমা কোলকাতা ছাড়তে চায় না। আমি হয়ত দিল্লীতে ট্রান্সফার নেব না।”
ধৃতিমান, দেবশ্রীর কথা শুনে একটু আহত সুরে বলে, “আমি ভেবেছিলাম তুমি হয়ত দিল্লী আসবে। আমি প্লান করে নিয়েছিলাম যে তুমি এই অফিস জয়েন করলে আমি চাকরি বদলে অন্য চাকরি নিয়ে নেব। তুমি ডি.জি.এম আর আমি সামান্য একটা সিনিয়র মারকেটিং ম্যানেজার, এক অফিসে ঠিক ভালো দেখাবে না।”
দেবশ্রী ম্লান হেসে বলে, “পৌরুষতে লাগছে তাই না? না গো, দিল্লী আসা সম্ভব নয় আমার পক্ষে।”
ধৃতিমান, “আমি এক কাজ করতে পারি, আমি চাকরি বদলে কোলকাতা চলে আসি তাহলে কেমন হয়। শ্বশুর বাড়ি বেহালা, তার পাশে একটা ফ্লাট কিনে নেব। মলি ওর ঠাকুমার কাছে থাকতে পারবে।”
দেবশ্রী, “ধৃতি, তুমি কি মল্লিকার সাথে এই সব ব্যাপারে আলোচনা করেছ?”
ধৃতিমান মাথা নাড়ায়, “না করিনি, তবে মলি আমার কথার খেলাপ করবে না।”
দেবশ্রী, “প্লিস ধৃতি, ছেলে মেয়েরা এখন আর ছোটো নয়। একবার মল্লিকার মতামত নিয়ে নিও। একরাতে যে স্বপ্ন তুমি দেখিয়েছ সেই নিয়ে বাকি জীবন কাটিয়ে দেওয়া যায় কিন্তু আমাদের মিলনে যদি আমাদের সন্তানেরা খোলা মনে না নেয় তাহলে আমি মরেও শান্তি পাবো না ধৃতি।”
ধৃতিমান একটু চিন্তায় পরে যায়। দেবশ্রী আবার জিজ্ঞেস করে, “তুমি মল্লিকার সাথে কথা বলবে তো?”
ধৃতিমান মাথা দুলিয়ে বলে, “হ্যাঁ।”
দেবশ্রী, “তুমি যদি কোলকাতায় চলে আস তাহলে ও আমি ঠিক ভেবে উঠতে পারছি না, কি ভাবে ছেলের সাথে কথা বলব আমাদের বিষয় নিয়ে।”
ধৃতিমান নিজেও জানে না কি ভাবে মেয়ের সামনে এই ব্যাপার প্রস্তুত করবে। ধৃতিমানকে চিন্তিত দেখে দেবশ্রী বলে, “ধৃতি, রাত অনেক হয়েছে মল্লিকা একা রুমে আছে। আমার পাশের রুমে দেবায়ন আর অনুপমা। তুমি চলে যাও, ধৃতি, প্লিস একটু বোঝার চেষ্টা করো।”
ধৃতিমান মৃদু হেসে দেবশ্রীর কপালে একটা গভীর চুম্বন একে রুম থেকে বেড়িয়ে যায়। হোটেলের পেছনের দিকে ওর রুম, বড় কাঁচের জানালা দিয়ে দুরে দেরাদুন শহরের আলো ঝলমল করতে দেখা যায়। জানালার পাশে সোফায় বসে অনেকক্ষণ সেই দূর আলো গুলোর দিকে তাকিয়ে থাকে দেবশ্রী, প্রেমের টান দ্বিতীয় বার ওর মনকে দোলা লাগিয়েছে কিন্তু তার ভবিষ্যৎ সম্পর্কে অনিশ্চিত। ভেবেছিল দেবায়ন দিল্লীতে আসতে চাইবে, কিন্তু অনুপমা আর দেবায়নের কথা শুনে মনে হল সেই আশা দূর অস্ত। দেবশ্রী জানে না, মল্লিকা আদৌ দিল্লী ছেড়ে কোলকাতা আসতে রাজি হবে কি না। ওর হৃদয়ের ভালোবাসার নবীন কিরণ ফুটে ওঠার আগেই যেন পশ্চিম আকাশে ঢলে পড়েছে।
পরের দিন সকাল সকাল ব্রেকফাস্ট সেরে বেড়িয়ে পরে মুসউরি ঘুরতে। মল্লিকাকে সাথে ডেকে নেয় দেবশ্রী। অনুপমা জানায় যে মুসউরির অদুরে একটা জায়গা আছে অনেক উঁচু নাম নাগ টিব্বা। গাড়ি নিয়ে ওরা নাগ টিব্বার উদ্দশ্যে রওনা হয়ে যায়। নাগ টিব্বা বেশ উঁচু জায়গা, চারপাশে শুধু উঁচু উঁচু পাইন, দেবদারু বন। তার মাঝখান থেকে বেশ কিছু দূর ট্রেকিং করে গেলে পাহাড় চুড়ায় পৌঁছান সম্ভব। সময়ের জন্য আর দেবশ্রীর জন্য অনুপমা আর দেবায়ন সেই চুড়ার দিকে আর এগোয় না।
মল্লিকার সাথে অনুপমা বেশ মিশে যায়, গল্পের ছলে অনেক কিছু জিজ্ঞেস করে ওর ব্যাপারে। মল্লিকা জানায় যে ওর মা ওর ছোটো বেলায় গত হয়েছে, মাকে ঠিক ভাবে মনে নেই ওর। সেই শুনে অনুপমার মন ভারাক্রান্ত হয়ে ওঠে। ওর বাবা বাড়িতে বিশেষ থাকেনা বললেই চলে। মাসের দশ দিন বাড়ির বাইরে কাটায়, মল্লিকার দেখাশোনা ওর দিদা করে। ছোটো বেলা থেকে দিদার কাছেই মানুষ। মল্লিকা বলে যে ওর বাবা ওকে বিশেষ কোথাও ঘুরতে নিয়ে যায় না। গরমের ছুটির জন্য দিদা মামা বাড়ি, কোলকাতায় চলে গেছে। অনুপমা, মল্লিকাকে জিজ্ঞেস করে যে কোলকাতা কেমন লাগে। ছোটবেলা থেকে দিল্লীতে বড় হয়েছে মল্লিকা, মাঝে মাঝে ছুটি কাটাতে মামা বাড়ি বেহালা যায়। মল্লিকা জানাল যে কোলকাতা ভালো কিন্তু দিল্লীর মতন ওখানে ওর বন্ধু বান্ধবী নেই, কোলকাতা গেলে খুব একা একা মনে হয় ওর। মল্লিকার কথা শুনে দেবশ্রী ক্ষণিকের জন্য আহত হয়, মনের ভাব চেপে রেখে মল্লিকাকে বলে যে কোনদিন কোলকাতা গেলে যেন ওদের বাড়িতে যায়। মল্লিকা জানিয়ে দেয় যে পুজোর ছুটিতে মামা বাড়ি গেলে নিশ্চয় ওদের বাড়িতে বেড়াতে যাবে।
নাগ টিব্বা থেকে ফিরতে ফিরতে বিকেল হয়ে যায়, মাঝপথে খাওয়া দাওয়া সেরে সোজা মুসৌরি পৌঁছে একবার কেম্পটি ফলস ঘুরে আসে। বিকেলে মেয়েদের শপিং এ যেন নিত্য এককর্ম, অনুপমা একরকম জোর করেই দেবায়নকে নিয়ে যায়। কেনাকাটা সেরে রুমে পৌঁছায় ওরা। সারাদিন দেবশ্রীর সাথে কাটিয়ে মল্লিকা যেন এক নতুনত্তের স্বাদ খুঁজে পায়, এক স্বাধীনতার স্বাদ যেটা ওর বাবার কাছ থেকে পায়নি। হোটেলে ফেরার সময় মাতৃহীন মেয়েটার মুখের দিকে অনেকক্ষণ চেয়ে থাকে দেবশ্রী, মল্লিকার মনে নেই ওর মা দেখতে কেমন ছিল। হোটেলে ফিরে নিজের রুমে যাওয়ার আগে, দেবশ্রীকে জড়িয়ে ধরে বলে পরেরদিন যেন ঘুরতে গেলে সাথে নিয়ে যায়। মাতৃহীন কুসুমকলির ছোঁয়ায় দেবশ্রীর বুক কেঁপে ওঠে, ঘাড় ঘুরিয়ে একবার অনুপমা আর দেবায়নের দিকে তাকায়। মিষ্টি হেসে মল্লিকার কপালে চুমু খেয়ে জানিয়ে দেয় পরেরদিন ওকে সাথে নিয়ে যাবে।
পরের দিন দেরাদুন ঘুরতে যায়, সেখানে সহস্র ধারা দেখে ফিরে আসে। এই কয়দিন ধৃতিমান হোটেলেই ছিল, মল্লিকা ওদের সাথে ঘুরে বেড়িয়েছে। অনুপমার বেশ মনে ধরে যায় মল্লিকাকে, সুন্দরী ফুটফুটে মেয়ে। দেবায়নকে বলে যে অঙ্কনের জন্য একদম সঠিক মেয়ে, বড় হলে মল্লিকার সাথে অঙ্কনের বিয়ে দেওয়া যেতে পারে। দেবায়ন হেসে জানায় ওর শ্যালক বাবুর চারপাশে অনেক মেয়ে ঘোরাফেরা করে, কখন কাকে কি ভাবে মন দিয়ে ফেলবে এই কাঁচা বয়সে সেটা অঙ্কন নিজেই জানে না। অনুপমা হেসে ফেলে দেবায়নের কথা শুনে, ভাইকে ভালো ভাবে চেনে।
বুধবার খুব ভোরবেলা হোটেল থেকে চেক আউট করে বেড়িয়ে পরে দিল্লীর উদ্দেশ্যে। দেবশ্রী আর মল্লিকার সাথে দেখা করেনি, বুঝতে পেরে গেছিল মল্লিকার সাথে হয়ত আর কোনদিন দেখা হবে না, তাই মিছিমিছি একটা বাঁধন বাড়িয়ে কি লাভ। দেবশ্রীর ছেলে, দেবায়ন কোলকাতা ছেড়ে যেতে নারাজ, ধৃতিমানের একমাত্র কন্যে দিল্লী ছেড়ে আসতে নারাজ। এইমত অবস্থায় এই দুই তৃষ্ণার্ত নর নারীর মিলন দূর অস্ত। গাড়িতে উঠে দেবশ্রী অনেকক্ষণ চুপচাপ ছিল, নিজের চিন্তায় মগ্ন ছিল, হৃদয়কে বেঁধে নিয়ে নিজেকে প্রবোধ দেওয়ার প্রানপন চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছিল। চোখের কোণে একচিলতে অশ্রু টলমল করে আসে, বারেবারে মল্লিকার হাসি মুখ মনে পরে যায়। অনুপমা দেবশ্রীকে ওই টলমল অশ্রুর কারন জিজ্ঞেস করাতে, হেসে জানায় যে কিছু পুরানো কথা মনে পড়ে গেছে তাই এই অভাগির চোখে একটু জল এসে গেছিল। অনুপমা বেশ বুঝতে পারে তিনদিনে মল্লিকা ওর মামনির হৃদয় জয় করে নিয়েছে তার শিশুশুলভ বন্ধনে। কিছু প্রশ্ন করতে গিয়েও আর করে না অনুপমা, অনুপমা বুঝে যায় ওর মামনির লুক্কায়িত অশ্রুর আসল কারন। চিন্তায় মগ্ন অনুপমা, সুরাহা খুঁজে বেড়ায় চারপাশে, ওর মামনির হৃদয়ের কান্নার আওয়াজ ওকে তাড়িয়ে বেড়ায়। মুসউরি থেকে দিল্লী পর্যন্ত, বারো ঘন্টা গাড়িতে বিশেষ কারুর মুখে কথা ছিল না। দেবায়ন রাস্তার সৌন্দর্য দেখতে ব্যাস্ত ছিল, পেছনে বসে দুই রমণীর মনের আওয়াজ ওর কানে পৌছয় না।
সন্ধ্যের কিছু পরে দিল্লী পৌঁছে যায় ওরা। মুসৌরি থেকে দিল্লী পর্যন্ত সবাই চুপ করেছিল। গাড়ি দিল্লী ঢোকার পরে সবার মুখে কথা ফোটে। অনুপমা আর দেবায়ন এই ভ্রমণের গল্পে মেতে ওঠে। দেবশ্রী বসে ছেলে মেয়েদের কথা শোনে। গাড়ি আউটার রিং রোড দিয়ে যাওয়ার সময়ে, দেবশ্রী একবার সেই হোটেলের দিকে তাকায় যেখানে ও ছিল। গাড়ি এয়ারপোর্ট ঢোকার আগে একবার গুরগাওয়ের দিকে তাকায় যেখানে ওদের হেডঅফিস। অনুপমা বিষণ্ণতার কারন জিজ্ঞেস করলে দেবশ্রী এড়িয়ে যায় ওর উত্তর, হাসি মুখে জানিয়ে দেয় ওর মন খারাপ নয়। চোখের সামনে ছেলে আর হবু বউমা নিয়ে ঘুরতে এসেছে ওর মতন খুশি আর কে।
প্লেনে, দেবায়নের সিট অন্য দিকে পড়ে। দেবশ্রী আর অনুপমা পাশাপাশি বসে। দেবায়ন চেয়েছিল অনুপমার পাশে বসতে কিন্তু অনুপমা বুঝিয়ে বলে যে ও ওর মামনির পাশে বসতে চায়। প্লেনে ওঠার আগেই অনুপমা বাড়িতে ফোন করে জানিয়ে দিয়েছিল ওদের আসার কথা। পারমিতা জানিয়ে দিয়েছিল যে গাড়ি পৌঁছে যাবে এয়ারপোর্টে।
অনুপমা, দেবশ্রীকে জিজ্ঞেস করে, “মামনি একটা কথা জিজ্ঞেস করব কিছু মনে করবে না।”
দেবশ্রী, “কি জিজ্ঞেস করবি?”
অনুপমা, “মামনি, মুসৌরি থেকে ফেরার পথে তুমি অত চুপচাপ ছিলে কেন?”
দেবশ্রী ভাবতে পারেনি অনুপমা এমন একটা প্রশ্ন করবে। কিছুক্ষণ অনুপমার মুখের দিকে তাকিয়ে বুঝতে চেষ্টা করে অনুপমার মনের কথা। অনুপমার চোখ জোড়া বলে দেয় অনুপমা আর ছোটো মেয়ে নয়, চোখ কান খোলা রেখে অনেক কিছু বুঝতে শিখেছে। দেবশ্রীর বুক কেঁপে ওঠে অনুপমার চোখের প্রশ্ন দেখে, কথা ঘুরিয়ে বলে, “না মানে এমনি।”
অনুপমা বেশ বুঝতে পারে যে ওর মামনি কথা লুকিয়ে ফেলেছে, তাও মামনির মনের কথা জানার জন্য জিজ্ঞেস করে, “মামনি, তুমি ব্যাঙ্গালোর থেকে ফিরে মল্লিকাদের বাড়ি গিয়েছিলে, তাই না?”
ধরা পরে যায় দেবশ্রী, মাথা দুলিয়ে বলে, “হ্যাঁ, গিয়েছিলাম। আমার অফিস কলিগ, একসাথে টুরে ছিলাম, তার উপরে এবার বাঙালি, তাই ডিনারে ডেকে ছিল মিস্টার দেবনাথ।”
অনুপমা, দেবশ্রীর হাত ধরে বলে, “মামনি, মিস্টার দেবনাথকে তোমার ভালো লাগে?”
সত্যি কথা বলতে দ্বিধা বোধ করে দেবশ্রী। অনুপমা, দেবশ্রীর চোখের দিকে তাকিয়ে হেসে জিজ্ঞেস করে, “মামনি, মিস্টার দেবনাথের সাথে মুসৌরিতে দেখা হয়ে যাওয়া। সেটা নিশ্চয় কাকতালিয় নয় তাই না?”
কি উত্তর দেবে দেবশ্রী, প্লেনের এ.সির ঠাণ্ডায় হাত দুটি হিম শীতল হয়ে যায়। অনুপমা যদি দেবায়নকে সব বলে দেয়, তাহলে খুব লজ্জার ব্যাপার। ওর মা কারুর প্রেমে পড়েছে আর সেই লোক মিস্টার ধৃতিমান দেবনাথ, যে দিল্লী থাকে।
অনুপমা আসস্থ কণ্ঠে বলে, “মামনি এত ভাবছ কেন? ভাবছ আমি দেবায়নকে বলে দেব। না মামনি, তুমি যতক্ষণ না চাইবে, দেবায়ন কিছু জানতে পারবে না। তুমি সত্যি বল, মিস্টার ধৃতিমানকে তোমার ভালো লেগেছে, তাই না। সেই জন্য মুসউরিতে মেয়েকে নিয়ে ঘুরতে গিয়েছিলেন মিস্টার দেবনাথ। যাতে আমাদের সবার সাথে দেখা হয়, দুই পরিবার যাতে পরস্পরকে চিনতে পারে জানতে পারে।”
দেবশ্রী নির্বাক, সারা চেহারা রক্ত শূন্য হয়ে যায়। অনুপমা দেবশ্রীকে জড়িয়ে ধরে বলে, “মামনি তুমি কি চাও?”
এর উত্তর ঠিক জানে না দেবশ্রী, কম্পিত কণ্ঠে অনুপমাকে জিজ্ঞেস করে, “তোকে কে বলেছে আমি মিস্টার দেবনাথকে…”
অনুপমা, “মামনি, তোমার চোখ বলেছিল সব কথা ওই ধনোলটি গিয়ে। মামনি, আমাকে একটু বিশ্বাস করে নিজের মনের কথা বলবে না?”
দেবশ্রী মনে বল জুগিয়ে বলে, “জানিনা ঠিক আমি কি চাই। তবে তোদের মুখে হাসি ফুটে উঠলেই আমার সব থেকে বড় পাওনা।”
অনুপমা বুক ভরে নিঃশ্বাস নিয়ে বলে, “দিল্লী যেতে পারছ না বলে তোমার দুঃখ হচ্ছে তাই না? আচ্ছা মামনি, এই এক বছর পরে দেবায়নের নিজের কোম্পানি হয়ে যাবে, আমরা আমাদের জীবন নিয়ে ব্যাস্ত হয়ে যাব। তুমি কি করবে?”
দেবশ্রী ম্লান হেসে বলে, “আমি চাকরি করে যাবো।”
অনুপমা দেবশ্রীকে জড়িয়ে ধরে বলে, “না মামনি, আমাদের কাজ শুরু হলে তোমাকে চাকরি করতে দেব না। তোমার সেবার জন্য সবসময়ে লোক থাকবে আর যাতে তোমাকে কষ্ট না করতে হয়। তোমার বাড়ির সামনে একটা বড় গাড়ি, একটা ড্রাইভার দাঁড়িয়ে থাকবে সব সময়ে।”
দেবশ্রী হেসে ফেলে, “রাম না হতেই রামায়ন গাইছিস? না রে। একটা ফুটফুটে নাতনী অথবা নাতি হবে, তাকে নিয়ে থাকব আমি। তোরা যাবি অফিসে আর আমি থাকব আমার কুট্টি নাতি নাতনী নিয়ে।”
অনুপমা হেসে ফেলে দেবশ্রী কথা শুনে, “মামনি তুমি কথা ঘুরিয়ে দিলে আবার। তুমি যেতে পারছ না দিল্লী তাই দুঃখ হচ্ছে তাই না। কিন্তু মিস্টার দেবনাথ কোলকাতা চলে আসতে পারে ত? ওনার শ্বশুর বাড়ি ত বেহালাতে? উনি এখানে কোন কাজ খুঁজে নিতে পারেন।”
দেবশ্রী, “একটা সমস্যা আছে রে মা। দেবু যেমন কোলকাতা ছেড়ে বাইরে যেতে চায় না তেমনি মল্লিকা দিল্লী ছেড়ে আসতে চায় না। তারপরে মিস্টার দেবনাথের সাথে মোটে কয়েক দিনের আলাপ, আমি এখন পর্যন্ত গভীর ভাবে কিছুই চিন্তা ভাবনা করে দেখিনি। কি করে করব বল, এই যে তুই আমার সাথে এত গল্প করলি, এত মনের কথা বললি, অন্য কেউ কি আমার কথা বুঝত রে। তোদের ফেলে কোথাও গিয়ে যে শান্তি পাবো না।”
অনুপমা, “মামনি আমি যদি দেবায়ন কে বুঝিয়ে বলি।”
দেবশ্রী, “তুই কি বলতে চাস?”
অনুপমা, “মামনি, মানে আমাদের কলেজের শেষে আমরা নিজেদের কাজে ব্যাস্ত হয়ে যাব। তুমি আরো একা হয়ে যাবে তখন। আমি যদি দেবায়নকে বুঝিয়ে বলি, তাহলে কি তুমি বিয়ে করবে মিস্টার দেবনাথকে?”
দেবশ্রী অথই জলে পরে যায় অনুপমার কথা শুনে, কোনদিন ভাবতে পারেনি এই টুকু মেয়ে এত বড় কথা বলবে। হাঁ করে অনুপমার মুখের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে উত্তর দেয়, “না রে। আমার সূর্য পশ্চিমে ঢলে গেছে, তোদের সূর্য উদিয়মান। ওই একটা সুন্দর গান আছে না, তোমার হল শুরু আমার হল সারা। মিস্টার দেবনাথ আমার জীবনের পথের মাঝে এক পথিক মাত্র, ক্ষণিকের অতিথি, পথ চলতে একসময়ে হটাত দেখা হয়ে গেল, কিছু দূর একসাথে হাঁটলাম। তারপরে তার পথ অন্যদিকে বাঁক নেয় আমার পথ অন্যদিকে। আর আমাকে প্রতিজ্ঞা কর দেবুকে এই সব ব্যাপারে কিছু জানাবি না কোনদিন।”
অনুপমার চোখ ভিজে আসে ওর মামনির চোখের দিকে তাকিয়ে, একবার মনে হয় জড়িয়ে ধরে বলে মামনি তুমি চলে যাও, আমি দেবায়ন কে সব বুঝিয়ে বলে দেব। কিন্তু ওর মামনি নিজের হৃদয়কে বুঝিয়ে শান্ত করে নিয়েছে, মিস্টার দেবনাথ ওর জন্য নয়, ওর জীবনে একজন এসেছিল সেই শূন্য স্থান কেউ পূরণ করতে পারবে না।
অনুপমা ওর মামনির হাত বুকের কাছে নিয়ে বলে, “মামনি আমি প্রতিজ্ঞা করছি, কেউ জানবে না এই কথা। তবে মামনি আমাকে একটা কথা দিতে হবে, যদি মিস্টার দেবনাথ কোলকাতা চলে আসেন তাহলে কিন্তু তোমাদের একসাথে করার দায়িত্ত আমার।”
দেবশ্রী চেয়ে থাকে অনুপমার মুখের দিকে, এক কন্যের অপূর্ণ ইচ্ছে অনুপমা ভরিয়ে দেয়। দেবশ্রী অনুপমার মাথায় হাত বুলিয়ে হেসে বলে, “তুই আমার সোনা মেয়ে, এইরকম যেন থাকিস। সেটা পরের কথা, পরে ভেবে দেখা যাবে।”
কোলকাতা নেমে এয়ারপোর্ট থেকে বেড়িয়েই পারমিতার দেখা। অনুপমা অবাক হয়ে যায় মাকে দেখে, ভেবেছিল শুধু মাত্র গাড়ি পাঠিয়ে দেবে, ভাবতে পারেনি যে ওর মা ওকে নিতে আসবে। অনুপমা দৌড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরে ওর মাকে, “কি ব্যাপার তুমি চলে এলে?”
এয়ারপোর্টে পারমিতাকে দেখে দেবশ্রী একটু অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে, “বাপ রে তুমি নিজে চলে এলে আমাদের নিতে।”
পারমিতা, “কেন, তুমি ছেলে মেয়েকে নিয়ে বেড়াতে যেতে পারো আর আমি এই এয়ারপোর্ট থেকে তোমাদের বাড়ি পৌঁছে দিতে পারি না?”
দেবশ্রী হেসে বলে, “না না তা পারো। তুমি নাকি আমাদের বাড়িতে এসেছিলে? কি বলত, প্রথম বার এলে আর আমি ছিলাম না। এবারে কিন্তু একদিন আসতেই হবে।”
দেবশ্রীর কথা শুনে অনুপমা আর দেবায়ন মুখ টিপে হেসে ফেলে। ওদের হাসি দেখে পারমিতার কান লজ্জায় লাল হয়ে যায়। কোনোরকমে লজ্জা ঢেকে বলে, “তুমি আগে আমাদের বাড়িতে আসবে তারপরে আমি যাবো।”
দেবশ্রী, “ঠিক আছে, তা নাহয় গেলাম। কিন্তু তোমার জন্য যেগুলো এনেছি তাহলে সেগুলো নিতে কে আসবে?”
পারমিতা, “উফফ আর পারি না। ঠিক আছে পরের রবিবার আসব।” অনুপমার দিকে তাকিয়ে বলে, “তুই বেশ ভালো ঘুরেছিস মনে হচ্ছে? এই কয়দিনে একবার ফোন করিস নি, মামনিকে কাছে পেয়ে মাকে ভুলে গেলি।”
অনুপমা পারমিতাকে জড়িয়ে ধরে বলে, “না মা, সেটা নয়।”
অনুপমার গাল টিপে পারমিতা বলে, “বুঝি রে, মেয়ে যে বিয়ের আগেই স্বাশুরির হাতে চলে গেছে।”
দেবশ্রী হেসে বলে, “না না, তোমার মেয়ে অনেক ভালো। কোন জ্বালাতন করেনি, একটু শুধু বড় হয়ে গেছে, মায়েদের মনের কথা একটু বেশি বুঝতে শিখে গেছে।”
পারমিতা অবাক হয়ে অনুপমার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে, সত্যি মেয়ে অনেক বড় হয়ে গেছে। দেবায়ন আর দেবশ্রীকে লেক্টাউনে পৌঁছে দেয়। নামার আগে দেবশ্রী পারমিতাকে বলে যে আগামী রবিবার সপরিবারে নিমন্ত্রন রইল।
Like Reply
Do not mention / post any under age /rape content. If found Please use REPORT button.
উনবিংশ পর্ব (#01)

মুসৌরি ভ্রমণের পরের রবিবার, সকাল থেকে দেবশ্রী খুব ব্যাস্ত। কাজের লোক দিয়ে সব ঘর আগের দিন পরিষ্কার করে রেখেছিল। দেবায়ন নিজের ঘর নিজেই পরিষ্কার করে। দেবশ্রীর চিন্তা, মিস্টার সেন আর পারমিতা অনেক বড়োলোক, ওদের এই ছোটো বাড়িতে কি ভাবে মানিয়ে নেবে। গ্রীষ্মকাল বাড়িতে এ.সি লাগানোর মতন শখ কোনদিন হয়নি ওর। বারেবারে ছেলেকে জিজ্ঞেস করে, হ্যাঁরে মিস্টার সেনের গরম লাগলে কি করা যাবে? দেবায়ন আসস্থ করে জানিয়ে দেয় অইসব অবান্তর ভাবনা চিন্তা দূর করে দিতে। দেবায়ন, মায়ের সাথে কাজে সাহায্য করে। দেবায়ন বারবার বলে যে মিস্টার সেন অথবা পারমিতা, ওদের বাড়িতে এসে কোন রকম অসুবিধেতে পড়বে না। দেবশ্রীর মন তাও মানে না। দুপুরের জন্য, মাটন বিরিয়ানি সেই সাথে কষা মাংস। রাধাবল্লভি, ছোলার ডাল, ইত্যাদি বেশ কয়েক প্রকার ব্যাঞ্জন তৈরি করা হয়ে গেছে।
দুপুর বেলায় অনুপমা, বাড়ির সবাইকে নিয়ে পৌঁছে যায় দেবায়নের বাড়িতে। দুই পরিবারের মিলনে বাড়ি মুখর হয়ে ওঠে। গরমে ঘেমে যান মিস্টার সেন, সেই দেখে দেবশ্রী একটু ব্যতিব্যাস্ত হয়ে পরে। পারমিতা হেসে জানিয়ে দেয় একদিন ঘামিয়ে গেলে কোন মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যাবে না। দুপুরে খাবার সময়ে দেবশ্রী, মিস্টার সেনকে কম্পিউটার শিক্ষার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করে। অনুপমা আর দেবায়ন প্রমাদ গোনে, হয়ত দেবশ্রী মিস্টার সেনকে সব কিছু বলে দেবে। দেবশ্রী আর মিস্টার সেন একসাথে দেবায়নের দিকে তাকায়, দুইজনের চোখে ভিন্ন প্রশ্ন। দেবায়ন হালকা মাথা দুলিয়ে, “না” বলে। উত্তর একটা, কিন্তু ভিন্ন প্রশ্নের ভিন্ন অর্থ বহন করে সেই মাথা নাড়া। মিস্টার সেন দেবশ্রীকে বলেন, এই তথ্য প্রযুক্তির সময়ে সব ছেলে মেয়েদের কম্পিউটার শেখা একটু জরুরি। কোন শিক্ষা ফেলা যাবে না, ভবিষ্যতে কোন না কোন ভাবে কাজে লেগে যাবে। দ্বায়িতজ্ঞান পূর্ণ অভিবাবকদের মতন মিস্টার সেন আর দেবশ্রী, দেবায়ন আর অনুপমাকে কম্পিউটার শেখার জন্য অনুমতি দেয়। অনুপমা খাওয়ার পরে দেবশ্রীকে অনুরোধ করে যে ওদের ফার্মের প্লানের কথা এখুনি যেন ওর বাবাকে না জানায়। বুদ্ধিমতী দেবশ্রী জানিয়ে দেয় যে সময় হলে ওদের আই.টি ফার্মের কথা মিস্টার সেনের সাথে আলোচনা করবে।
গ্রীষ্মের ছুটির মাঝে একদিন দেবায়ন আর অনুপমা, পার্ক স্ট্রিটের একটা নামকরা কম্পিউটার সংস্থায় যায় খোঁজ খবর নিতে। এক বছরের ফাস্ট ট্রাক কোর্স, তাড়াতাড়ি সব শেখানর জন্য একটু পয়সা বেশি লাগবে সেই সাথে জানিয়ে দেয় যে সময় একটু বেশি দিতে হবে। দুটো সেমেস্টারে পঁয়তাল্লিশ হাজার টাকার কথা শুনে দেবায়ন একটু ইতস্তত করে, মাকে ফোনে জানায় টাকার কথা। দেবশ্রী জানিয়ে দেয় যত টাকা লাগে তার জন্য তৈরি। দেবায়ন আর অনুপমা নিজেদের নাম নথিভুক্ত করে। শনিবার আর রবিবার সারাদিন ক্লাস, সেই সাথে সপ্তাহে দুই দিন, মঙ্গলবার আর বৃহস্পতিবার বিকেলে দুই ঘন্টার ক্লাস। একদিকে কলেজের ফাইনাল ইয়ার, সেইসাথে কম্পিউটার ক্লাস। দেবায়ন আর অনুপমা বুঝতে পারে সামনের দিন গুলো ওদের নিঃশ্বাস ফেলার মতন সময় থাকবে না। কম্পিউটার সংস্থা থেকে বেড়িয়ে দেবায়ন আর অনুপমা, ফ্লুরিস কাফেতে বসে।
অনুপমা কফির কাপে চুমুক দিয়ে দেবায়নকে জিজ্ঞেস করে, “হ্যাঁ গো, আমি জিজ্ঞেস করছিলাম, এইসব আমরা পারব ত? মানে কলেজ আর কম্পিউটার একসাথে।”
এক প্রশ্ন দেবায়নের মাথায় ঘুরছিল, কিন্তু অনুপমাকে আসস্থ করে উত্তর দেয়, “হ্যাঁ হ্যাঁ, সব পারবো। তুমি কলেজের পড়াশুনাতে মন দাও আর আমি কম্পিউটার ক্লাসে।”
অনুপমা, “মানে, তুমি কি কলেজের পড়াশুনা ছেড়ে দেবে নাকি? গ্রাজুয়েশান না করলে মামনি কিন্তু তোমাকে আস্ত রাখবে না।”
দেবায়ন হেসে বলে, “না রে পাগলি মেয়ে। আমি বলছিলাম, তুমি আমাকে কলেজের নোটস দিয়ে হেল্প করবে আর আমি তোমাকে কম্পিউটার শিখিয়ে দেব। পড়াশুনা বন্টন করে নেব আমাদের মাঝে।”
অনুপমা, “দেখ পুচ্চুসোনা, আমার কম্পিউটার না শিখলেও চলবে। আমি ত শুধু তোমার সাথে কাটাব বলে জয়েন করেছি। কিন্তু একটা কথা জেনে রাখো, এই কম্পিউটার কিন্তু পরে করলেও চলবে। গ্রাজুয়েশানটা একটু ঠিক করে করে নাও।”
দেবায়ন, “উফফফ বাবা, সেই জন্য বলছি, তুমি ফিসিক্স পড় আর বাকি আমার ওপরে ছেড়ে দাও।”
অনুপমা, “তোমার মাথার মধ্যে কি ঘুরছে একটু পরিষ্কার করে আমাকে জানাবে?”
দেবায়ন একটু বিরক্তি প্রকাশ করে বলে, “তোমাকে কতবার এক কথা বলতে হয় একটু বলত? আমরা কলেজের পরে একটা আই.টি সফটওয়্যার ফার্ম খুলব ব্যাস আবার কি।”
অনুপমা দেবায়নের হাত ধরে মিনতির সুরে বলে, “সোনা, বড্ড ভয় করছে।”
দেবায়ন, “কম্পিউটার শিখছি বলে ভয় করছে? কেমন মেয়ে তুমি?”
অনুপমা, “না সোনা, সেটা নিয়ে ভয় নয়। জানিনা, তোমাকে ঠিক বুঝাতে পারছি না। মাঝে মাঝে মনে হয় খুব বড় একটা ঝড় আসবে।”
দেবায়ন অনুপমার মুখের দিকে তাকিয়ে দেখে যে প্রেয়সীর চোখ দুটি ছলছল করছে, কাঁধের উপরে হাত রেখে কাছে টেনে জিজ্ঞেস করে, “কি হল তোমার?”
অনুপমা, “আচ্ছা পুচ্চু, এই কম্পিউটার শিখে তুমি কোন চাকরি করতে পারো না?”
দেবায়ন অবাক হয়ে অনুপমার কথা শুনে, “হটাত এই প্রশ্ন কেন? নিজের বাবাকে অবিশ্বাস করছ তুমি?”
অনুপমার মনে ঠিক সেই কথাই জেগেছিল, প্রানের মানুষ যে অলীক স্বপ্নে নিমজ্জিত হয়ে গেছে সেটা দেখে একটু আহত হলেও সেটা লুকিয়ে ঠোঁটে হাসি টেনে বলে, “না মানে কিছু না। মানে আমরা পারবো ত এই সব করতে?”
কথা ঘুরিয়ে দেয় বুদ্ধিমতী অনুপমা, “আগামী সপ্তাহে কলেজ শুরু। কলেজে এবারে অনেক জোড়া পাখী দেখব। পরাশর জারিনা নতুন প্রেমে বিভোর, ওইদিকে আমাদের সেই পার্টিতে সঙ্গীতা আর মিচকে প্রবাল জুটি বেঁধে নিল। আচ্ছা একটা কথা বল, পরাশর আর জারিনা, ওদের সম্পর্কের কি হবে? না মানে আমার ত মনে হয় না দুইজনের বাড়ির কেউ মেনে নেবে। দুইটি ভিন্ন ধর্মের ছেলে মেয়ের সম্পর্ক। সমাজের চোখে খুব বড় ব্যাপার। ওদের পরিবার ওদের মেনে নেবে কি?”
দেবায়ন হেসে বলে, “চেষ্টা করতে দোষ কি? এই দেখ না, মানুষ আগে পাখী দেখে শুধু উড়ার স্বপ্ন দেখত। কেউ যদি এগিয়ে না এসে ডানা না লাগিয়ে চুপচাপ বসে থাকত তাহলে কি আজ প্লেন বলে কিছু হত? কাউকে ত পথ দেখাতে হয়, প্রেম কি আর ধর্ম, জাত পাত মানে? মানলে কি আর তুমি আর আমি এই জায়গায় বসে কফি খেতাম।” বলেই দেবায়ন অনুপমার গালে একটা ছোটো চুমু খেয়ে নেয়।
অনুপমা মিষ্টি হেসে বলে, “ধুত, তুমি না একদম শয়তান। এত লোকের মাঝে একি করলে? এটা কি লন্ডন নাকি?”
দেবায়ন হেসে বলে, “কাউকে একটা শুরু করতে হয়।”
অনুপমা, “এটা ভারতবর্ষ পুচ্চু। আরও এক হাজার বছর ধরে বয়ে যাবে এই গঙ্গার জল, কিন্তু এখানের মানুষের মনের বিচারধারা বদলাবে না পুচ্চু। এরা শিবলিঙ্গ পুজ করবে, ফুল বেল পাতা চড়াবে, দুধ মধু ঢালবে। কিন্তু সেই লিঙ্গ আর যোনির আসল অর্থ বুঝেও না বোঝার ভান করে পরে থাকবে, এই হল আমাদের দেশ। এরা খাজুরাহ, কোনারক দেখতে যাবে কিন্তু যৌনতা নিয়ে, যৌন শিক্ষা নিয়ে প্রকাশ্যে কথা বলতে লজ্জা পাবে, এই হল আমাদের দেশ। এরা নারীহত্যা করতে পিছপা হবে না, নারীদের উপরে অত্যাচার করতে পিছপা হবে না, কিন্তু মা কালী, মা দুর্গার পুজোতে লাখ লাখ টাকা চাদা দেবে, এই হল আমাদের দেশ। এরা ভালোবাসার সন্মান দিতে জানে না কিন্তু রাধা গোবিন্দর পুজোতে নেচে কুদে বেড়াবে, এই হল আমাদের দেশ।”
দেবায়ন হেসে ফেলে অনুপমার কথা শুনে, “হটাত দার্শনিক হয়ে উঠলে? ছাড়ো এসব কথা, মিমি সুন্দরীর কি খবর?”
অনুপমা ভুরু কুঁচকে হেসে বলে, “ধুর বাবা, পাশে বৌ বসে তাও স্বাশুরির দিকে নজর। একে নিয়ে আর পারা গেল না।”
দেবায়ন অনুপমা গাল টিপে বলে, “আচ্ছা না হয় ওর কথা না জিজ্ঞেস করলাম, একবার আমার পায়েল সুন্দরীর কথা শুনি।”
অনুপমা, “পায়েল ভালো আছে, প্রত্যেকদিন কথা হয় ফোনে। ওর বাবা বাড়ি ফিরে এসেছে তাই বিকেলে বাড়ি থেকে বের হওয়া এক প্রকার বন্ধ। কলজে খুললে আবার ওর দেখা পাবে।”
দেবায়ন অনুপমাকে বাড়িতে পৌঁছে দিতে যায়। সেখানে পারমিতার সাথে দেখা। আজকাল পারমিতা মাঝে মাঝে অফিসে যাওয়া শুরু করেছে। দেবায়নকে বাড়িতে দেখে পারমিতা বেশ খুশি, অনেকদিন পরে দেবায়নের সাথে দেখা। অনুপমা, মায়ের চেহারার লালিমা দেখে বুঝে যায় মায়ের মনের অভিব্যাক্তি, মনে মনে হেসে ফেলে। পারমিতা দেবায়নকে বলে আজকাল আর ওর দিকে নজর দিচ্ছে না। দেবায়ন হেসে জানিয়ে দেয় যে সময় হলে নিশ্চয় দেবে, বর্তমানে দেবায়নের মাথায় অনেক চিন্তা, অনেক কাজের ভার। পারমিতা হাসে, অনুপমার গাল টিপে জানিয়ে দেয় যে দেবায়নকে কেড়ে নেবে না। অনুপমা, মাকে জড়িয়ে ধরে জানিয়ে দেয় সেই বিশ্বাস টুকু দেবায়ন আর মায়ের উপরে আছে।
কলেজ শুরু হয়ে যায় এক সপ্তাহের মধ্যে। সেই সাথে শুরু হয়ে যায় কম্পিউটার ক্লাস। কম্পিউটার ক্লাসে বেশি ছাত্র ছাত্রী নেই, বিকেলে যাদের সাথে ক্লাস করে অনুপমা আর দেবায়ন, তারা সকলেই কর্মরত মানুষ, কাজের তাগিদায় আধুনিক তথ্য প্রযুক্তি শিখতে এসেছে। ক্লাসের ম্যাডাম, মিস সুপর্ণা চ্যাটারজি বেশ ভালো মহিলা, কম ছাত্র ছাত্রী থাকায় তার পড়ানোর বেশ সুবিধা। কম বয়সি শিক্ষিকা দেখে দেবায়নের অতি পুরাতন স্বভাব মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে। ক্লাসে মাঝে মাঝেই সুপর্ণাকে অবান্তর প্রশ্নে ব্যাতিব্যাস্ত করে তোলে, আর অনুপমা পাশে বসে বকে মেরে চুপ করিয়ে রাখে। ম্যাডামের পেছনে লাগতে পিছপা হয় না দেবায়ন।
প্রতিদিন সকালে পায়েল, অনুপমার বাড়িতে আসে সালোয়ার পরে, অনুপমার বাড়িতে ড্রেস বদলে, স্কার্ট টপ অথবা ছোটো জিন্স ফ্রিল শার্ট পরে দুই বান্ধবি গাড়ি নিয়ে কলেজে বেড়িয়ে পরে। কলজে খোলার বেশ কয়েক সপ্তাহ পরে পায়েলের চেহারায় এক খুশির ছোঁয়া ভেসে ওঠে। অনুপমা সেই হাসি সেই আনন্দের আলোক ছটা দেখে বুঝে যায় পায়েলের জীবনে এক নতুন ব্যাক্তির আগমন ঘটেছে। কলেজের পথে একদিন পায়েল জানায় যে একটা ছেলের সাথে ওর দেখা হয়েছে। অনুপমা সেই ছেলেটার সম্বন্ধে জানতে চাইলে পায়েল বলে যে ওর পিসতুতো দাদার এক বন্ধু, ডালহৌসিতে একটা অফিসে চাকরি করে। প্রেম প্রীতি পর্যন্ত কথা এখন যায়নি তবে ছেলেটাকে বেশ ভালো লেগেছে পায়েলের। অনুপমা মনে মনে হাঁফ ছেড়ে বাঁচে, তাহলে অঙ্কনের সাথে পায়েলের কোন সম্পর্ক নেই। অনুপমা জানতে চায় ছেলেটার সাথে কবে দেখা করাবে। পায়েল মিচকি হেসে জানিয়ে দেয় যে সময় হলে ছেলেটার সাথে দেখা করাবে। ছেলেটার নাম জানতে চাইলে জানায় যে অগ্নিহোত্রী বিশ্বাস, বাড়ি নৈহাটি।
অনুপমা কলেজে এসে দেবায়নকে পায়েলের কথা জানায়। দেবায়ন পায়েলকে উত্যক্ত করার জন্য বলে শেষ পর্যন্ত কি হাত ছাড়া হয়ে গেল? পায়েলকে সেই রাতের কথা মনে করিয়ে দেয় মজা করে। সঙ্গম সম্ভোগের সময়ে কামাবেগে পায়েল বলেছিল যে দেবায়নের জন্য ওর শরীর অবারিত দ্বার। পায়েলের গালের রঙ লাল হয়ে যায় লজ্জায়। অনুপমা, পায়েলকে জড়িয়ে ধরে কানেকানে বলে যে কথা না রাখলে কিন্তু দেবায়ন একদিন ওকে ধরে নিয়ে জোর করে সঙ্গম করবে। অনুপমা কথায় পায়েল শেষ পর্যন্ত হাল ছেড়ে দেয়। অনুপমা হেসে জানিয়ে দেয় যে ওরা মজা করতে চাইছিল।
গরমের ছুটির শুরুতে, দেবায়নের বাড়ির একরাতের পার্টি সব বন্ধু বান্ধবীদের মাঝে এক নতুন যোগসুত্র স্থাপন করে দেয়। সঙ্গীতা, ছোটো স্কার্ট, হাতা বিহীন টপ ছেড়ে সালোয়ার কামিজ অথবা লম্বা স্কার্ট পড়তে শুরু করে দিয়েছে। প্রবালের চোখ দেখলে বোঝা যায় দুই বছর আগেকার সেই প্রবাল এখন সঙ্গীতার প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে। শ্রেয়া, সঙ্গীতা, পায়েল আর অনুপমার বন্ধুত্ত আগে থেকেই বেশ ঘন ছিল, সেই এক রাতের পরে ওদের বন্ধুত্ত যেন আরো গভীর হয়ে উঠেছে। প্রবাল আগে কারুর সাথে বিশেষ কথা বলত না, ওর মুখে কথা ফুটেছে। ধিমান আর পরাশর আগে দেবায়নকে একটু অন্য নজরে দেখত কারন ওদের নজর অনুপমার দিকে ছিল, কিন্তু নিজেদের বান্ধবী পেয়ে যাওয়ার পরে আর সেই রাতের পার্টির পরে সবার মনের দ্বার যেন খুলে গেছে। ওদের ক্লাস একটু ছন্ন ছাড়া ছিল আগে, গ্রীষ্মের ছুটির পরে সবার রঙ সবার চালচলন পালটে যায়, দেখে মনে হয় যেন এক হাতের পাঁচ আঙুল সবাই, একটা আঙ্গুলে ব্যাথা পেলে সম্পূর্ণ হাত যেন ব্যাথায় ককিয়ে ওঠে।
একদিন লাঞ্চের পরে কোন ক্লাস ছিল না, সব বন্ধু বান্ধবীরা ফ্লুরিস কাফেতে চলে আসে আড্ডা মারতে। শ্রেয়া একবার অনুরোধ করেছিল রূপককে ডাকার জন্য, সবাই চেঁচিয়ে ওঠে যে বাইরের কাউকে ডাকা যাবে না। শেষ পর্যন্ত শ্রেয়া আর ধিমান চুপচাপ বসে পরে। গল্প চলাকালীন পায়েল কিছু পরে বাড়ি যাওয়ার জন্য অনুরোধ করে। অনুপমা আর সবাই কারন জিজ্ঞেস করাতে পায়েল জানায় যে তাড়াতাড়ি বাড়ি না ফিরলে ওর বাবা বকা দেবেন। পায়েলের বাবার সম্বন্ধে শ্রেয়া আর অনুপমা ভালো ভাবে জানে। পায়েল চলে যাবার জন্য প্রস্তুত, অনুপমা একবার মাথা উঠিয়ে আশেপাশে চোখ বুলায়। সাধারণত অনুপমা সাথে থাকলে পায়েল ওর সাথেই বাড়ি ফেরে, কারন পায়েলকে ওর বাড়িতে নেমে জামা কাপড় বদলে বাড়ি ফিরতে হয়। পায়েলের আচরনে অনুপমার মনে একটু সন্দেহ হয়, অনুপমা জোর করে জিজ্ঞেস করে পায়েলের বাড়ি ফেরার আসল কারন। এমন সময়ে পায়েলের মোবাইলে ফোন আসে। সবাই বুঝে যায় যে পায়েল কারুর সাথে দেখা করতে চলেছে। সব বান্ধবীরা পায়েলকে চেপে ধরে ওর মনের মানুষের কথা জিজ্ঞেস করে। চাপাচাপির ফলে শেষ পর্যন্ত পায়েল, সেই ব্যাক্তিকে জানিয়ে দেয় যে বন্ধুদের সাথে ঘুরতে বেড়িয়েছে তাই সেদিন আর দেখা করতে পারবে না। গল্পের মোড় ঘুরে যায় সবার প্রেম কাহিনীর দিকে। অনুপমা পায়েলকে তার প্রেম কাহিনী শোনানোর জন্য চেপে ধরে।
পায়েল মুখে লাজুক হাসি নিয়ে বলতে শুরু করে, “তোরা যখন মুসউরি বেড়াতে গেলি তার মাঝে একদিন আমি পিসির বাড়ি, নৈহাটি বেড়াতে গেছিলাম।”
সঙ্গে সঙ্গে সবার প্রশ্ন ছেঁকে ধরে অনুপমা আর দেবায়নকে, “এই কি রে তোরা কবে মুসউরি বেড়াতে গেছিলি? একা একা, তোদের সাহস কম নয় ত?”
দেবায়ন আর অনুপমা ফিকফিক করে হেসে ফেলে। পায়েল উত্তর দেয় অনুপমার হয়ে, “ওরে ছাগল, দেবায়নের মায়ের সাথে ওরা বেড়াতে গিয়েছিল। বিয়ের আগেই মেয়ে স্বাশুরিকে হাত করে নিয়েছে। দেবায়নের মা, বউমা বলতে একেবারে অজ্ঞান, পারলে কাল ওদের বিয়ে দিয়ে দেয়। আর ওইদিকে দেবায়নকে আর বলিস না, কাকু কাকিমা পারলে দেবায়নকে মাথায় করে রাখে। বর্তমানে দুই বাড়ির এমন সম্পর্ক, বুঝলি কিছু।”
অনুপমা একপ্রকার দেবায়নের কোলে শুয়ে ছিল, সেখান থেকে উঠে পায়েলের মাথায় চাটি মেরে জিজ্ঞেস করে, “ধুর শালা, তুই তোর গল্প বল না শুনি।”
পায়েল, “আমার গল্প বিশেষ কিছু না। পিসির বাড়ি নৈহাটি গেলাম সেখানে পিসতুত দাদার এক বন্ধুর সাথে দেখা হল। নাম অগ্নিহোত্রী বিশ্বাস, ডালহৌসিতে একটা এক্সপোর্ট কোম্পানিতে ভালো চাকরি করে তবে এই মাত্র কথা। দেখা সাক্ষাৎ হয়েছে কয়েক বার, ভালো ছেলে, তবে প্রপোস করেনি এখন। যেদিন প্রোপস করবে তারপরের দিন তোদের জানিয়ে দেব।”
পায়েলের মুখে নাম শুনে সঙ্গীতা একটু ভাবনায় পরে যায়, পায়েলকে জিজ্ঞেস করে ছেলেটা নৈহাটির কোথায় থাকে। পায়েল জানায়, যে নৈহাটির মীরা বাগানে ওদের বাড়ি। পায়েল কারন জিজ্ঞেস করে সঙ্গীতাকে।
সঙ্গীতা জানায়, “আমার মামা বাড়ি মীরা বাগানে, আমি ছেলেটাকে ভালো ভাবে না হলেও একটু চিনি। ছেলেটা একটু বকাটে আছে, তুই শুধু একটু সাবধানে থাকিস। পুজোতে মামাবাড়ি বেড়াতে গেলে অনেক বার দেখেছি প্যান্ডেলে বসে শালা ঝারি মারছে। প্রবলেম শালা ঝারি মারা নিয়ে নয়, তবে ওর আচার ব্যাবহার আমার ঠিক মনে হয় নি। কেমন ইতর ছোটলোকের নজর ওর। ও ডালহৌসিতে চাকরি করে কি না জানিনা।”
পায়েলের সাথে দিনে চার পাঁচের আলাপ, “কই না ত আমার সেইরকম কিছু মনে হল না ওকে দেখে? পিসতুতো দাদার ভালো বন্ধু, দেখতে শুনতে ভালো, বেশ পয়সা ওয়ালা বাড়ির ছেলে। ওদের নাকি বেশ বড় ব্যাবসা আছে স্টেসানের কাছে।”
সঙ্গীতা ম্লান হেসে বলে, “জানিনা ভাই, তবে একটু বাজিয়ে নিস। ফাটা ঢোল কিনে ফেললে কিন্তু সারা জীবন সেটা কাঁধে বইতে হবে।”
সঙ্গীতার কথা শুনে সবাই পায়েলের দিকে তাকিয়ে সাবধান করে দেয়। পায়েল জানিয়ে দেয় যে একবার ভালো ভাবে জেনে বুঝে নেবে তারপরে না হয় ভালোবাসা প্রেমের কথা চিন্তা করে দেখবে।
 
Like Reply
পায়েলের পরে সবাই সঙ্গীতাকে ছেঁকে ধরে ওদের প্রেমের গল্প শোনার জন্য। সঙ্গীতা চোরা চোখে একবার প্রবালের দিকে তাকায়, অনুপমা সঙ্গীতার থুতনি নাড়িয়ে বলে, “বাপরে, যে মেয়ের মুখে কিনা সকাল বিকেল খই ফুটত সেই মেয়ের চোখে লাজুক হাসি। ও মা গো, রাখি কোথায় এই মেয়েকে।”

প্রবালের দিকে তাকিয়ে চেঁচিয়ে বলে, “মাল আমার জন্মদিনে রান্না করতে করতে আমার সুন্দরী বান্ধবীকে হাতিয়ে নিলি। আমি কি পেলাম? আমার প্রেসেন্ট চাই।”
প্রবাল মাথা নিচু করে লাজুক হেসে অনুপমাকে জিজ্ঞেস করে, “কি চাস বল।”
ধিমান চেঁচিয়ে ওঠে, “অনুপমার জন্মদিনের মতন একটা ধাসু পার্টি চাই।”
ওই দিনের পার্টির কথা সব বন্ধু বান্ধবীদের মনে গাঁথা। সঙ্গীতা আর প্রবাল ছিল না কিন্তু সঙ্গীতা জানে সেই রাতে পার্টিতে কি হয়েছিল। সেই কথা মনে পরে যেতেই সঙ্গীতার সাথে সাথে অনুপমার মুখ লাল হয়ে যায়। দেবায়ন অনুপমার কানেকানে জিজ্ঞেস করে যে পার্টি একটা করা যেতেই পারে।
পেছন থেকে সমুদ্র চেঁচিয়ে ওঠে, “হ্যাঁ হ্যাঁ সেদিনের মতন পার্টি চাই।”
ধিমান আর দেবায়ন হেসে ফেলে সমুদ্রের কথা শুনে। দেবায়ন সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে বলে, “শালা চুপ করে যা। বেশি বকলে যেখান থেকে বেড়িয়েছিস সেখানে ঢুকিয়ে দেব আবার। বোকাচোদা, নিজের মুরোদ নেই ফাউ খেলে সেদিন পার্টিতে টিকে গেলি।”
তনিমার দিকে সবার নজর চলে যায়। তনিমা কোন রকমে শ্রেয়ার পেছনে মুখ লুকিয়ে নেয় লজ্জায়।
অনুপমা, সঙ্গীতা আর প্রবালকে বলে, “তোদের বিয়ে যেদিন হবে সেদিন একটা প্রেসেন্ট নেব।”
দেবায়ন এবারে পরাশরকে জিজ্ঞেস করে, “কি রে বাল, তুই শালা কি চুপ করে থাকবি?”
রজত, “শালা প্রেম করলি ত করলি শেষ পর্যন্ত জারিনা, একজন . মেয়েকে? তোর বাড়ির লোক ওর বাড়ির লোক মেনে নেবে? শালা তোকে কেটে গঙ্গার জলে ভাসিয়ে দেবে দুই বাড়ির লোক, সেটা ভেবেছিস।”
পরাশর, “প্রেম ভালোবাসা ভাই ধর্ম মানে না। জারিনা আর আমি ভালো ভাবে জানি আমরা কি করছি, এর পরিণতি তুই যা বলেছিস, সেটা ঘটার সম্ভাবনা আশি থেকে নব্বুই শতাংশ। তবে ওই যে বাকি থাকে দশ শতাংশ, আমরা আমাদের ভালোবাসা দিয়ে নিজেদের আত্মীয় সজ্জন পরিবারকে বুঝাতে চেষ্টা করব। যদি শেষ পর্যন্ত না হয় আমাদের মিল, তাহলে দেখা যাবে।”
সবাই হ্যাঁ হ্যাঁ করে ওঠে। বাধ্য হয়ে পরাশর মাথা চুলকিয়ে ওদের প্রেমকাহিনী গোড়া থেকে বলতে শুরু করে, “গত অক্টোবরে ঠিক পুজো শেষ হয়ে গেছে। এক সন্ধ্যেবেলায় আমি পার্ক সার্কাস ময়দানের কাছে দাঁড়িয়ে, বাড়ি যাবো বলে বাসের অপেক্ষা করছি। ঠিক পাশ দিয়ে একদল মেয়ে হেঁটে গেল, তার মধ্যে একজন ভারী সুন্দরী দেখতে। পাশের মেয়েদের সাথে দেখে বুঝলাম যে ও ., কিন্তু জারিনাকে দেখে একদম মনে হয় না। জারিনাকে দেখে মনে হল যেন স্বর্গ থেকে নেমে এসেছে একটা ডানা কাটা পরী, অরদিক থেকে আর চোখ ফেরাতে পারলাম না। হাতে কলেজের ব্যাগ, পরনে কলেজ ড্রেস দেখে বুঝতে পারলাম যে কলেজে পড়ে, কিন্তু বেশ ডাগর দেহের কাঠাম। একটা সিগারেট জ্বালিয়ে কিছুদুর ওদের পেছন পেছন হাটলাম। ওদের কথাবার্তা শুনে বুঝলাম ওরা কোচিং থেকে ফিরছে। তারপরে কলেজ ছুটি হলেই আমি পার্ক সার্কাস মোড়ে চলে যেতাম। প্রায় দিন আমি ওখানে ওর জন্য দাঁড়িয়ে থাকতাম ওই সময়ে। কোনদিন দেখা হত, কোনদিন হত না। মাঝে মাঝে জারিনা হাঁটতে হাঁটতে পেছনে তাকাত, আমি মুখ ঘুরিয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে পড়তাম। আবার যেই ওরা হাঁটতে শুরু করত আমি ওদের পিছু নিতাম। ওই দুই পা চলেই ওর প্রেমে পরে গেলাম আমি, জানি না তখন কি করব। কিন্তু জারিনার চোখের অধরা ভাষা আর রুপের টান প্রতিদিন বিকেলে আমাকে টেনে নিয়ে যেত ওই পার্ক সার্কাস মোড়ে। রোজদিন চোখে চোখে কথা হত কিন্তু মুখে কিছু বলার সাহস পেতাম না।”
অনুপমা, শ্রেয়ায় সবাই মাথা নাড়ায়, “তুই শালা সত্যি একটা সুন্দরীকে লাইন মেরেছিস। এবারে শালা বিয়ের পিঁড়িতে যাবি না কবর খানায় যাবি সেটাই দেখার।”
দেবায়ন অনুপমাকে থামিয়ে দিয়ে পরাশরকে বলে, “বাল, শুধু চোখেই দেখা না আরও কিছু হল। শালা, লাইনে আনলি কি করে?”
পরাশর, “বলছি বাড়া, বলছি। প্রত্যেক দিন ওর জন্য অপেক্ষা করতে যেন আমার ভালো লাগত। জারিনা মাঝে মাঝে হাঁটার গতি কমিয়ে দিত, আমি বুঝতে পারতাম বেশ। ওই শুধু চলার পথের সাথী হিসাবে একটু বেশিক্ষণ দেখা হত আমাদের। এর মাঝে ব্যাগড়া বাধায় চার পাঁচ খানা ছেলে, রোজ ওরা অইসময়ে ওই খানে দাঁড়িয়ে থাকে আর মেয়েদের দেখে কমেন্ট মারে। মেয়েগুলো কোনোরকমে ওদের না দেখে পাশ কাটিয়ে চলে যায়। মাঝে মাঝে জারিনা আমার দিকে করুন চোখে তাকিয়ে থাকত যখন ওই ছেলেরা কমেন্ট করত। একদিন মাথা খারাপ করা ব্যাপার হল। রাস্তায় কিছু একটা পড়েছিল আর তাতে হোঁচট খেয়ে জারিনা পরে গেল। বইয়ের ব্যাগ হাত থেকে ছিটকে গেল ওই ছেলেদের দিকে। সঙ্গে সঙ্গে ছেলেগুলোর হাসি আর লুটপুটি। একটা ছেলে ব্যাগ তুলে দিতে এসে মেয়েদের দিকে তাকিয়ে বেশ উগ্র মন্তব্য করল। আমার মাথায় রক্ত চেপে গেল সেই দেখে। শালা একদম ফিল্মি হিরোর মতন একটাকে ধরলাম আর কষিয়ে গালে একটা চড় কসালাম। ছেলে গুলোর বয়স বেশি না তবে শালা বাঞ্চোতদের দেখে মনে হচ্ছিল চুল্লু খাওয়া মাল। একটা ছেলে ছুরি বের করে আমাকে মারতে তেড়ে আসে। আমি যাকে ধরেছিলাম, তার শ্বাস নলি চেপে বললাম ছুরি দেখালে ওখানেই ওর গলা টিপে দেব। হই হট্টগোলে মেয়েরা বেশ ভয় পেয়ে গেল। এমন সময়ে একজন মাথার পেছনে বাড়ি মারল, আমি তাও যে ছেলেটাকে ধরেছিলাম তাকে ছাড়লাম না। ততক্ষণে জারিনা আর বাকি মেয়েরা চিৎকার করে লোকজন জড় করে ফেলে। বাকি ছেলেগুলো পালিয়ে যায় কিন্তু একটাকে ধরে রেখেছিলাম। লোকজন জড় হয়ে যে ছেলেটাকে ধরেছিল তাকে মারতে মারতে চলে গেল। আমার মাথায় যে বাড়ি মেরেছিল সেখানে বেশ ব্যাথা করছিল, ফুলে উঠেছিল। মাথায় হাত দিয়ে দেখি রক্ত পড়ছে। জারিনা আর মেয়েরা আমার মাথা থেকে রক্ত দেখে ঘাবড়ে যায়। আমি মাথায় হাত দিয়ে রাস্তায় বসে পড়লাম, জারিনা দৌড়ে এল আমার দিকে। ওর ভয়ার্ত মুখ দেখে আমার রক্ত বন্ধ, ব্যাথা বন্ধ হয়ে গেল। জারিনা সঙ্গে সঙ্গে ব্যাগ থেকে রুমাল বের করে আর একজনের জলের বোতল থেকে জল নিয়ে ভিজিয়ে আমার মাথায় চেপে ধরে। ওর নরম তুলতুলে আঙ্গুলের স্পর্শে, মাথার ব্যাথা উধাউ হয়ে বুকের ব্যাথা শুরু করে দেয়।”
রজত, “উরি বাস, একদম শাহরুক খান স্টাইল মেরেছিস। তারপরে কি মাথা ফাটা নিয়ে বাড়ি গেলি নাকি?”
পরাশর, “না রে, একবার ভেবেছিলাম যে কাকাকে একটা ফোন করি। আমার ছোটো কাকা, লাল বাজার ক্রাইম ব্রাঞ্চের ইন্সপেক্টর, তারপরে ভাবলাম এত ছোটো ব্যাপারে আর কাকাকে জ্বালাতন করা কেন। জারিনা জানাল ওর বাবা ডাক্তার, পাশেই ওদের বাড়ি। ওর বাবা বাড়িতেই আছেন। আমাকে নিয়ে ওদের বাড়িতে গেল। ব্যাস, একদম মাথায় বাড়ি খেয়ে রক্ত নিয়ে হিরোর এন্ট্রি নিলাম। জারিনাদের বেশ বড় দোতলা বাড়ি, পার্ক সার্কাস মোড় থেকে একটু ভেতরে। একতলায় ভাড়াটে আর ওর বাবার একটা চেম্বার। বিকেলে ওর বাবা চেম্বারে ছিলেন। বাড়িতে ঢোকার পরে জারিনার একদম অন্য রুপ। রাস্তায় বান্ধবীদের সাথে কোনদিন বেশি কথা বলতে শুনিনি কিন্তু বাড়িতে ওর মুখে যেন খই ফুটছে। ওর আম্মিজানের কাছে আমার কত তারিফ, কত কিছু। ওর আব্বাজান, ডক্টর মিসবাউল মতিন আনসারি, পিজি হস্পিটালের মেডিসিনের প্রফেসার। ওর বড় ভাই সঙ্গে সঙ্গে নিচে গিয়ে ওর বাবাকে ডেকে নিয়ে আসে। মাথায় ব্যান্ডেজ বাঁধা হল, মিষ্টি খাওয়ান হল। পরিচয় পর্ব শেষ হল। ওর দাদা, দানিস আন্সারি, দুর্গাপুর আর.ই কলেজে মেকানিকাল নিয়ে ফাইনাল ইয়ারে পড়ছে। ওর মা, নাজমা আন্টি খুব ভালো একদম মাটির মানুষ। কথায় কথায় জানতে পারলাম যে ঢাকায় ওদের মামাবাড়ি। ওর মায়ের সাথে কথাবার্তা পরিচয়ে বিশেষ গোঁড়া বলে মনে হল না। কেননা ওকে অথবা ওর মাকে বুরখা পড়তে দেখিনি। কথার ছলে একসময়ে জারিনা আমার ফোন নাম্বার নেয়।”
দেবায়ন, “বোকাচোদা গাঁড় মেরেছে। প্রপোসালের আগেই শ্বশুর বাড়ি এন্ট্রি মেরে দিলি? তোকে কিমা বানিয়ে দেয় নি ওর বাবা? তুই মাল বাড়িতে কি বললি বে? তোর বাবা জেঠা কি বলল?”
পরাশর, “না রে ওদের বাড়িতে ওদের দেখে আমার সেই রকম মনে হয়নি। মেয়েকে বাঁচিয়ে নিয়ে এসেছি বলে আর জারিনার হাসির ফোয়ারা দেখে মনে হয় আঙ্কেলের আমাকে একটু ভালো লেগে যায়। বাড়ি ফিরে আসার পরে মা জিজ্ঞেস করল আমার মাথা ফাটার কথা, আমি বানিয়ে একটা গল্প বললাম। ঘুমাতে গেলাম কিন্তু চোখের সামনে জারিনার মুখ ভেসে ওঠে। কিন্তু আমার মনে সংশয় থেকে গেল, সত্যি কি জারিনা আমার প্রেমে পড়বে? সংশয় দূর হয় গভীর রাতে। প্রায় রাত একটা বাজে, এক অজানা নাম্বার থেকে ফোন এল আমার কাছে। অন্য দিকে একটা মেয়ের গলা, প্রথমেই আমাকে জিজ্ঞেস করে আমি কেমন আছি, আমার মাথার ব্যাথা কেমন আছে। আমি থ, রাত দেড়টার সময়ে একটা মেয়ে আমাকে জিজ্ঞেস করছে আমি কেমন আছি। আমি তখুনি ভেবে দেখলাম মেয়েটা জারিনা ছাড়া আর কেউ হতে পারে না। ব্যাস আর কি, শুরু হল আমাদের লুকিয়ে প্রেম। আমি রোজ কলেজ ফেরত পার্ক সার্কাস মোড়ে ওর জন্য অপেক্ষা করে থাকতাম। ঠিক সময়ে ওরা যখন আসতো, তখন বাকিরা জারিনাকে ছেড়ে একটু এগিয়ে যেত। বাস স্টান্ড থেকে ওর বাড়ির দরজা পর্যন্ত পাশাপাশি হাটা। এই টুকু আমাদের হাতে প্রেমের সময়, গল্প করার সময়। আমি শুধু ওর সারাদিনের গল্প শুনতাম, কানের মধ্যে ওর গলার আওয়াজ ভরে উঠত কিন্তু মন ভরত না। তাই রাতে ওর বাড়িতে সবাই ঘুমিয়ে পড়ার পরে আমি ওকে ফোন করতাম, রাত দেড়টা দুটো কোনদিন সকাল চারটে পর্যন্ত ফোনে গল্প করে কাটিয়েছি।”
অনুপমা জিজ্ঞেস করে, “উম্মম্ম দারুন প্রেম করেছিস মাইরি। প্রোপস করেছিস কবে? কি ভাবে করলি একটু শুনি?”
পরাশর, “দাঁড়া দাঁড়া, এত তাড়াহুড়ো করলে গল্পের ধারা মাটি হয়ে যাবে। প্রোপস করেছিলাম এক অধভুত ভাবে, ঠিক ভাবিনি সেদিন যে আমি ওকে প্রোপস করব। প্রথম দিকে একা বেড় হতে বেশ ভয় ভয় করত, ওই যা রাস্তায় কথা। আমি একদিন জিজ্ঞেস করলাম আমার সাথে একা ঘুরতে যেতে ওর কোন অসুবিধে আছে নাকি। একা আমি আর ও বেড়াতে যাবো শুনে ওর চোখেমুখে খুশির ছোঁয়া লাগে। আমি ওকে পরীক্ষার আগে একবার দক্ষিণেশ্বর মন্দিরে নিয়ে যেতে চেয়েছিলাম, কিন্তু একটু সংশয় ছিল, জারিনা যাবে কি না। ভয় ভয় আমি জিজ্ঞেস করলাম, মন্দিরে যাবার কথা। আমাকে হেসে বলল, নিশ্চয় যাবে বলল আমি ওকে নিয়ে যদি জাহান্নুমে যাই তাহলে ও সানন্দে আমার সাথে যেতে রাজি। সেদিন আমাকে আরেকটা কথা বলল, বলল যে ভগবান মানুষের বিশ্বাসে থাকে, ভগবান মানুষের ভালোবাসায় থাকে। ভালোবাসা যেমন মন্দির মসজিদ দেখে না, তেমনি ভগবান * . শিখ ক্রিস্টান দেখে না। অনেক বড় কথা বলেছিল ওই ছোটো মেয়েটা আমাকে। সত্যি বলছি, মন্দিরে গিয়ে আমি দেখলাম ওর ভক্তি। মন্দিরে বেশির ভাগ মানুষকে দেখলাম শুধু পাথরের মূর্তিকে প্রনাম করতে, সেখানে জারিনাকে দেখলাম যেন নিজের মাকে প্রনাম করছে। কপালে মন্দিরের সিঁদুরের টিপ পরে তাকিয়েছিল আমার দিকে, হাঁ হয়ে গেছিলাম ওর মুখ দেখে। সেদিন মনে হয়েছিল ওই মন্দির প্রাঙ্গনে ওকে জড়িয়ে ধরি। তারপরে ওর পরীক্ষা চলে এল মার্চে, খুব ভয়। সে কয়দিন আর দেখা হল না। পরীক্ষার পরে দেখা সাক্ষাৎ একটু কমে যায়, বাড়ি ছেড়ে বের হতে পারে না। বাড়ি থেকে বের হলে সাথে ওর এক বান্ধবী, আহীদাকে নিয়ে আসত। লুকিয়ে চুরিয়ে বেশ কয়েকবার সিনেমা দেখতে গেছি তিনজনে, ব্যাস আর কি। তবে মাঝে মাঝে আহীদা আমাদের ছেড়ে দিত, শুধু বলে দিত যে বাড়ি ফেরার আগে যেন ওকে একটা ফোন করে দেওয়া হয় তাহলে আহীদা পার্ক সার্কাস মোড়ে দাঁড়িয়ে থাকবে।”
অনুপমা রেগে গিয়ে জিজ্ঞেস করে, “ধুর বাড়া, প্রোপস করলি কি করে সেটা বল?”
সবাই একসাথে চেপে ধরে পরাশরকে।
পরাশর হেসে বলে, “ওর পরীক্ষার পরে একদিন ওদের নিয়ে ঘুরতে বেড়িয়েছিলাম। এক বিকেলে মেট্রোতে একটা হিন্দি সিনেমা দেখার পরে আউট্রাম ঘাটের স্কুপে বসেছিলাম আমরা তিনজনে। আহীদা নিচে গেছিল আমাদের আইস্ক্রিম নিয়ে আসার জন্য। বিকেলের সূর্য ঠিক দ্বিতীয় হুগলী সেতুর পেছনে পাটে বসতে চলেছে। ঘোলা গঙ্গার জলে কমলা রঙ লেগেছে, জারিনা চুপ করে বসে সেই গঙ্গার জল দেখে চলেছে। আমি আলতো করে ওর কাঁধে হাত ছুঁইয়ে জিজ্ঞেস করলাম যে কি ভাবছে। আমার দিকে তাকিয়ে ওর মুখ শুকিয়ে গেল, আমি চমকে গেলাম ওর শুকনো মুখ দেখে। আমি ওকে শুকনো মুখের কারন জিজ্ঞেস করাতে ও বলল, যে কারন ওর জানা নেই। আমি ওকে নিজের দিকে টেনে নিলাম, বাম বাজুর উপরে মুখ ঘষে আমাকে বলল যে ওর খুব ইচ্ছে করছে এই ভাবে বসে থাকতে। আমি তখন ওকে জিজ্ঞেস করলাম যে সাড়া জীবন আমার সাথে এই রকম ভাবে বসতে চায় কি না। চুপ করে আমার দিকে না তাকিয়ে বুকের উপরে মুখ গুঁজে মাথা নাড়িয়ে বলে, ওই রকম ভাবে লুকিয়ে থাকতে চায়। আমি ওর মাথায় ছোটো চুমু খেয়ে বলেছিলাম যে ওকে আমি বুকের মাঝে লুকিয়ে রাখব। সেদিন দুই জনেই জানতাম আমাদের ভবিষ্যৎ অত প্রসস্থ নয়, আমাদের সম্পর্কের ধারা অতি সহজে সাগর সঙ্গমে মিলিত হবে না। হয়ত কোনদিন হবে না, কিন্তু ওই টুকু প্রেম, ওই টুকু ভালোবাসা দিয়ে বুক ভরিয়ে নিয়েছিলাম আমরা। আহীদা এসে দেখে যে আমি ওকে জড়িয়ে ধরে বসে। আহীদার হাতের ছোঁয়ায় জারিনার সম্বিৎ ফেরে। চোখ মুছে হেসে আহীদাকে বলে সব কথা। আহীদা চুপ করে শুনে বলে যে এই ভয় পেয়েছিল, জানত এইরকম কিছু একটা হতে চলেছে। সাবধান করে দেয় জারিনাকে কিন্তু সেই সাথে জানিয়ে দেয় যে আমাদের পালিয়ে বিয়ে করা ছাড়া আর কোন উপায় নেই। জারিনা পালিয়ে বিয়ে করতে নারাজ, ওর আব্বাজানের বুকের পাঁজর, আম্মির চোখের মণি। আমাকে বলে যে ওর বাড়িতে যেতে, বাড়ির সাথে কথা বলে সবকিছু ঠিক করতে। আমি তখন ওকে আমাদের বাড়ির ব্যাওয়ারে কিছুই জানাই নি।”
Like Reply
“আমাদের বাড়ি একদম গোঁড়া, জেঠু পুরানো দিনের মানুষ, বাবাকে হয়ত কিছু বুঝালেও বুঝবে কিন্তু জেঠুকে বুঝিয়ে ওঠা অসম্ভব। কাকার কথা কেউ কানে নেয় না বললেই চলে। আমি কাকিমাকে সব কথা জানিয়েছিলাম, কিন্তু কাকিমার কথা কেউ ধরতব্যের মধ্যে আনেনা। মাকে বলেছিলাম যে আমি যদি অন্য ধর্মের কাউকে ভালোবাসি তাহলে আমার বাড়ি কি সেই সম্পর্ক মেনে নেবে? মা এক কথায় মানা করে দিয়েছিল আমাকে। বলেছিল মায়ের ঠাকুর ঘরে ভিন্ন ধর্মের মেয়ের প্রবেশ নিষেধ। বাবাকে অথবা জেঠুকে জানাবার প্রশ্ন ওঠে না। একাত্তরে আমার ঠাকুরদাকে নাকি '.েরা মেরে ফেলে দিয়েছিল, সেই রাগ আজ পর্যন্ত বুকে পুষে রেখেছে। ওদিকে জারিনা এখন ওর বাবার কাছে আমাদের সম্পর্কের ব্যাপারে কিছুই জানায় নি। জারিনার মা কিছুটা জানেন তবে আন্টি কি করবেন ভেবে পাচ্ছেন না।

আব্বাজানকে একদিন না একদিন জানাতে হবে, সেইদিনের আশঙ্কা দিন গুনছে জারিনা। জারিনা জানে ভালো ভাবে যে আঙ্কেলকে জানালে বিশ্বযুদ্ধ শুরু হবে, জারিনা প্রস্তুত সেই বিশ্বজুদ্ধ সামাল দিতে। সব মিলিয়ে, আমার বাড়ি নাকচ করে দিয়েছে এক প্রকার আর ওইদিকে হয়ত আঙ্কেল জানলে কি হবে সেটা জানা নেই।”
 
উনবিংশ পর্ব (#03)
ধিমান মাথা চুলকে বলে, “শালা, তুই বাল একটা প্রেম করেছিস। হ্যাঁ গল্প শুনে মনে হচ্ছে প্রেম কাহিনী হচ্ছে একদম। লুকিয়ে চুরিয়ে প্রথম দেখা, লুকিয়ে চুরিয়ে সিনেমা দেখতে যাওয়া, আর বড় কথা হচ্ছে বাড়ির সাথে যুদ্ধ। আমি শালা তার মানে ঠিক মতন প্রেম করে উঠতে পারলাম না আর। ঋতুপর্ণাকে একটা বন্ধুর পার্টিতে দেখলাম, তারপরে সেই বন্ধুকে বললাম যে বাল একটু লাইন করিয়ে দে। ব্যাস, ঋতু প্রথম দেখাতেই গলে গেছিল তাই ঋতুকে কাবু করতে বিশেষ বেগ পেতে হয়নি। বাবা মা জানে ঋতুর কথা, বাবার একটু আপত্তি আছে কারন ঋতু নার্স, মায়ের একদম চোখের মণি হয়ে গেছে ঋতু। বাবাকে বশ করতে বিশেষ বেগ পেতে হবে না। অইদিকে ঋতুর পরিবারের দিক থেকে বিশেষ বেগ পেতে হবে না আশা করা যায়। ওর বাবা নেই, ওর মা জানেন আমাদের ব্যাপার। ওর মায়ের সাথে দেখা হয়েছে একবার আমার। আমাদের একদম নির্জলা, নির্ভেজাল প্রেম। কোন টানাপড়েন নেই, সোজা সরল গাড়ি একদম হাইওয়ে দিয়ে হাঁকিয়ে চলেছে।”
দেবায়ন হো হো করে হেসে বলে, “ভাই আমার অবস্থা এক। কলেজের প্রথম দিনে শালা হুমড়ি খেলাম অনুপমাকে দেখে।”
ধিমান, “শালা তুই একা না বে, অনেকে সেদিন হুমড়ি খেয়েছিল অনুপমাকে দেখে। বাল, তুই হাত মেরে নিলি।”
অনুপমা ভুরু কুঁচকে হেসে বলে, “বাল ছেঁড় তোরা, আমার পেছনে কলেজের অর্ধেক কেন শালা সারা কোলকাতা আমার পেছনে। এবারে সবাই যে যার মনের মানুষ পেয়ে গেছে, ব্যাস আবার কি। এবারে তনিমার একটা হিল্লে হলে হয়।”
দেবায়নের দিকে তাকিয়ে বলে, “তুমি কি আমাদের গল্প বলতে শুরু করে দিলে নাকি?”
দেবায়ন, “সবাই যখন বলছে তাই একটু বলে দেই আর কি।”
পায়েল হেসে বলে, “সেদিন শালা বৃষ্টি না হলে বড় ভালো হত। তাড়াতাড়ি ট্যাক্সি পেয়ে যেতাম আর এরা দুইজনে আটি চুষত।”
অনুপমা পায়েলের মাথায় টোকা মেরে বলে, “আমার ঘুম কেড়ে নিয়েছিল ও। আর কেন অপেক্ষা করতাম। সেদিন যদি কিছু না বলত তাহলে ট্যাক্সির নিচে চলে আসতাম।”
পরাশর, “ওকে ওকে ঠিক আছে, যে টুকু আছে সেই টুকু শুনি একটু।”
দেবায়ন, “যাই হোক সিঁড়িতে ধাক্কা খাওয়ার কথা কারুর অজানা নেই। তারপরে একটু বন্ধুত হল, তারপরে একদিন কফি হাউসে করলাম প্রোপস, ডারলিং একবারে গলে মোম। আমার মাকে কয়েক মাস আগে জানিয়েছি, মা অনু বলতে অজ্ঞান। আর কাকু কাকিমার এক অবস্থা, বাড়ির লোকের সাথে যুদ্ধ নেই, কথা কাটাকাটি নেই, একদম হাইওয়ে দিয়ে চলছে আমাদের প্রেমের গাড়ি। একটু এবর খাবড় না থাকলে ঠিক বোঝা যায় না যে হ্যাঁ প্রেম করছি।”
পায়েল চেঁচিয়ে বলে, “শালা তোর গল্প আমি সব জানি। তুই বাড়া আর বুক ফুলিয়ে কিছু বলতে যাস না।”
দেবায়ন পায়েলকে মিচকি হেসে বলে, “কেন সেদিন রাতে কি ডোজ ঠিক পড়েনি? আবার চাই নাকি?” অনুপমা, দেবায়নের বাজুতে চিমটি কেটে চুপ করে যেতে অনুরোধ করে।
গল্প করতে করতে সন্ধ্যে হয়ে যায়। বাড়ির উদ্দেশ্যে কিছু পরে সবাই রওনা দেয়। পথে যেতে যেতে অনুপমা পায়েলকে একবার অগ্নিহোত্রীর কথা জিজ্ঞেস করে। পায়েল সত্যি কথা বলে ফেলে, অনুপমাকে বলে যে অগ্নিহোত্রীর ব্যাপারে বিষদ কিছু জানা নেই তবে ওর পিসতুত দাদার বন্ধু হিসাবে ভালো লাগে এই মাত্র। পরিচয়ের পরের পর্বের দিকে এগোনোর আগে একবার অন্তত অগ্নিহোত্রীর ব্যাপারে সম্পূর্ণ জেনে নেবে।
পরাশরের সাথে দেবায়নের কথা হয়। পরাশর জানায় যে কিছু দিনের মধ্যে ঈদ, ঈদে জারিনার বাড়িতে জারিনার মা ওকে ডেকেছে। নিজেদের সম্পর্কের সম্বন্ধে কিছু কথাবার্তা বলতে চায় পরাশর, বুকের মধ্যে যুদ্ধের দামামা বাজছে তাও ভালোবাসা থেকে পিছিয়ে যাবার ছেলে নয়।
বাড়ি ফিরে অনুপমা দেখে যে ওর ভাই মুখ শুকনো করে বসে আছে। ভাইকে কারন জিজ্ঞেস করলে, অঙ্কন উত্তর দেয় যে একটা বাইকের বায়না ধরেছিল, বাবা বকে চুপ করিয়ে দিয়েছে। অনুপমা ভাইয়ের কথা শুনে হেসে ফেলে। মাকে জিজ্ঞেস করে বাইক না কিনে দেওয়ার কারন। পারমিতা জানায় যে অঙ্কনের ইদানিং পড়াশুনায় বিশেষ মন নেই। কোচিঙের স্যার নাকি একদিন পারমিতাকে ফোনে জানিয়েছে যে মাঝে মাঝে অঙ্কন কোচিঙয়ে আসে না। অনুপমা সব শুনে রেগে যায়। অঙ্কনকে খাবার পরে নিজের ঘরে নিয়ে যায়, জিজ্ঞেস করে কচিঙ্গে না যাবার কারন। মুখ দেখে অনুপমা বুঝতে পারে যে অঙ্কন প্রেমে পড়েছে। লাজুক হেসে অঙ্কন জানায় যে কয়দিন কোচিং যায় নি, সেই কয়দিন এক বান্ধবীকে নিয়ে সিনেমা দেখতে গেছিল। ভাইয়ের নতুন প্রেমের কথা শুনে অনুপমা উৎসুক হয়ে যায়। ভাইয়ের বান্ধবীর কথা জিজ্ঞেস করাতে, অঙ্কন জানায় যে কলেজের এক বান্ধবী, নাম গরিমা মিত্তল, মাড়োয়ারি মেয়ে। অনুপমা গরিমার ফটো দেখতে চাইলে, মোবাইলে একটা মেয়ের ফটো দেখায় অঙ্কন। মেয়েটা বেশ সুন্দরী, পাতলা আর ছিপছিপে গড়নের, মুখের গঠন ডিম্বাকৃতি, গায়ের রঙ বেশ ফর্সা। অনুপমার কাছে অঙ্কন বায়না ধরে যে বাবাকে বলে কয়ে ওকে বাইক দিয়ে হবে। অনুপমা জিজ্ঞেস করলে জানায় যে বাইকে গার্ল ফ্রেন্ড নিয়ে কোলকাতা ঘুরবে। অনুপমা হেসে ফেলে ছোটো ভাইয়ের কথা শুনে। অনুপমা সঙ্গে সঙ্গে রাতে দেবায়নকে ফোনে ভাইয়ের সব কথা জানিয়ে দেয়। দেবায়ন বলে যে ছেলে বড় হয়ে গেছে, নিজের মনের মতন সাথী খুঁজে পাওয়ার সময় হয়ে এসেছে। এখন খেলা ধুলা করে বেড়াবে কিছু দিন, মন ভরে গেলে হয়ত নতুন সাথী খুঁজতে বেড়িয়ে যাবে।
কয়েকদিন পরে বাবাকে অনেক অনুরোধ করে অঙ্কনের জন্য বাইক কেনা হয়। বাইক পেয়ে অঙ্কন ভারী খুশি, সেই সাথে অনুপমা জানিয়ে দেয় যে, এবারে যেন পড়াশুনাতে মন দেয় আর যেন কোনদিন কোচিং পালিয়ে সিনেমা দেখতে না যায়। অনুপমা, মাকে একদিন রাতে জানায় যে ওর ভাই প্রেম করছে। সেই শুনে পারমিতা খুব খুশি, অঙ্কনকে বলে গরিমাকে বাড়িতে ডাকতে। উচ্চমাধ্যমিকে যাবার পরে অঙ্কনের বয়সের সাথে সাথে আচরনের অনেক পরিবর্তন ঘটে, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে কথা বলা। আগে শুধু দিদির সাথেই মন খুলে কথা বলতে পারত, মায়ের কাছে মন খুলে কথা বলার অবকাশ কোনদিন পায়নি। মায়ের মুখে গার্লফ্রেন্ডের কথা শুনে অঙ্কন জানিয়ে দেয় যে ভবিষ্যতে একদিন নিজের গার্লফ্রেন্ডকে নিয়ে বাড়িতে আসবে।
অনুপমা আর দেবায়নের জীবনে নিঃশ্বাস ফেলার অবকাশ বিদায় নেয়। মঙ্গলবার আর বৃহস্পতিবার সকাল থেকে যেন সাজ সাজ রব পরে যায়, সকালে উঠে কলেজে দৌড়ানো, তারপরে কম্পিউটার ক্লাস, অনেক রাত করে বাড়ি ফেরা। দেবায়নকে ওর মা জানিয়ে দিয়েছেন যে কম্পিউটার ক্লাসে অনেক টাকা খরচ হয়ে গেছে, তাই টাকা একটু সঞ্চয় করে নিয়ে পুজোর আগে দেবায়নের জন্য বাইক কিনে দেবে। দেবায়ন বোঝে মায়ের কষ্ট, তাই বাইকের জন্য বেশি আব্দার করেনি। দেবশ্রী একদিন বিকেলে অফিস থেকে এসে বলে যে এক শুক্রবার অনুপমাকে নিয়ে বাড়িতে আসতে, অনেকদিন দেখা পায়নি হবু বৌমার। সেই শুনে দেবায়ন বেশ খুশি। দেবশ্রী, পারমিতাকে ফোনে জানিয়ে দেয় যে আগামী শুক্রবার অনুপমাকে বাড়িতে পাঠিয়ে দিতে, দিন দুই থাকবে দেবশ্রীর কাছে। রাতের বেলা দেবায়ন আর অনুপমা, ফোনে গল্প করে কাটিয়ে দেয়।
পরেরদিন বিকেলে কলেজের পরেই দুইজনে বাড়ি পৌঁছে যায়। সেদিন দেবশ্রী তাড়াতাড়ি অফিস থেকে ফেরে। হবু শ্বাশুরিকে দেখে অনুপমা বেশ খুশি। দেবশ্রী অনেকদিন অনুপমাকে দেখেনি তাই বেশ খুশি। অনুপমা আর দেবশ্রী রান্না ঘরে রান্নায় ব্যাস্ত। দেবায়ন বসার ঘরে বসে ওর জীবনের প্রধান দুই মহিলাকে দেখে।
অনুপমা মিচকি হেসে ঘাড় ঘুরিয়ে জিজ্ঞেস করে, “কি দেখছ এমন ভাবে?”
দেবায়ন, “কেন তোমাদের দেখতে দোষ আছে নাকি?”
দেবশ্রী হেসে বলে, “আজকে কিন্তু অনু আমার কাছে শোবে। ভুলেও বেড়াতে যাবার কথা ভাবিস না যেন।”
হেসে ফেলে দেবায়ন, “না না, তোমাদের দেখে মনে হচ্ছে কেউ তোমাদের আলাদা করতে পারবে না। এহেন অবস্থায় দুই সিংহীর মাঝে কেন এক ছোটো হরিণ শাবক নিজের প্রান দেয়?”
অনুপমা, “হ্যাঁ আর বলতে, তুমি হরিণ শাবক। তাহলে রাতে শুধু ঘাস খেয়ে থাকবে আর আমরা কষা মাংস আর লুচি খাবো।”
খাবার সময়ে দেবায়ন মাকে বলে, “মা, তোমার সাথে কিছু কথা ছিল।”
দেবশ্রী ভুরু কুঁচকে দেবায়নের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে, “আবার কি করলি তুই, না নতুন কিছু চাই তোর।”
দেবায়ন বলে, “না মা, এবারে প্রবলেম ঠিক আমার নয়। আমার এক বন্ধুর, পরাশর।”
অনুপমা দেবশ্রীকে বলে, “মামনি, তোমাকে কিছু একটা উপায় বের করতে হবে।”
দেবশ্রী অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে, “কি উপায়, কি ব্যাপার। সব কথা শুনি আগে তারপরে বিচার করা যাবে।”
দেবায়ন বলতে শুরু করে, “মা, আমাদের এক বন্ধু আছে পরাশর। আমাদের সাথে পড়ে। সেই ছেলে একটা '. মেয়েকে ভালোবাসে। মেয়েটার নাম জারিনা, বেশ মিষ্টি দেখতে। মুশকিল হচ্ছে, পরাশরের বাড়িতে কেউ জারিনাকে মেনে নেবে না। ওইদিকে জারিনার বাড়িতে জারিনার মা একটু নরম হয়েছেন। ঈদের পরে পরাশর জারিনার বাড়িতে গিয়েছিল। জারিনার আম্মিজান পরাশর আর জারিনার সব কথা জানে, মন মানতে চাইলেও সমাজ আত্মীয় সজ্জন যে মানতে চায় না। জারিনার বাবাকে জারিনার মা কথার ছলে পরাশর আর জারিনার ব্যাপারে কিছু আচ আগে থেকে দিয়েছিলেন। জারিনার বাবা পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছেন এহেন সম্পর্ক সম্ভব নয়। পরাশরকে বলেছেন যে মেয়েকে সেই ছেলেগুলোর হাত থেকে বাঁচিয়ে দিয়েছে বলে যেন ভাবে না যে মেয়েকে বিয়ে করতে পারবে। সেই কথা শুনে, পরাশর আর জারিনা খুব ভেঙ্গে পরে। জারিনা কান্নাকাটি জুড়ে দেয়, সেই সাথে আত্মহত্যার কথা বলে। মেয়ের মুখ দেখে ওর আব্বাজান কিছুটা নরম হন, কিন্তু জারিনার আব্বাজানের এক কথা, পরাশরকে ধর্মান্তরিত হতে হবে সেই সাথে জারিনার বাবা, পরাশরের পরিবারের সাথে কথা বলতে চায়। এখানে সমস্যা হচ্ছে যে, পরাশরের মা এক কথায় জানিয়ে দিয়েছে যে ভিন্ন ধর্মীর মেয়েকে বাড়ির বউমা করে আনতে নারাজ। কোন এক সময়ে পরাশরের ঠাকুরদাকে বাংলাদেশে '.েরা হত্যা করেছিল, সেই কথা নিয়ে আজো বসে আছে ওর বাবা জেঠা। পরাশর কি করবে কিছু ভেবে পাচ্ছে না।”
অনুপমা, “মামনি, তুমি আমাদের ডিকশনারি, তুমি কিছু উপায় বলে দাও।”
দেবশ্রী হেসে ফেলে, “তোরা দুইজনে কি সারা পৃথিবীর সমস্যার সমাধান করতে বেড়িয়েছিস?”
অনুপমা বায়না ধরে, “না মামনি, কিছু একটা তোমাকে করতেই হবে। জারিনার বাবাকে কিছু করে বুঝাতে চেষ্টা করতে হবে আর সেই সাথে পরাশরের বাড়িকে। জারিনার বাবা কিছুটা নরম হয়েছেন, এবারে পরাশরের বাড়িকে কি করে নরম করা যায় সেটা বলে দাও।”
দেবশ্রী বলে, “কেন? যেমন ভাবে জারিনা ওর বাড়িকে নরম করেছে তেমনি ভাবে মানসিক চাপ দিয়ে পরাশর নিজের পরিবারকে চাপে ফেলুক।”
দেবায়ন, “মা, সে কাজ করা হয়ে গেছে। ওর বাবা আর জেঠা ওকে ত্যাজপুত্র করে দেবে বলেছে। অইসব আত্মহত্যার কথা ধোপে টেকেনি পরাশরের বাড়িতে। ওর কাকাও কিছু বুঝিয়ে উঠতে পারেনি ওর বাবা জেঠাকে।”
দেবশ্রী, “কাল একবার পরাশরকে বাড়িতে ডাক, আগে ওর সাথে কথা বলে দেখি। আর আমি একজন বাইরের মানুষ হয়ে কি মুখে দুই বাড়ির সাথে কথা বলব?”
দেবায়ন আর অনুপমা বেশ চিন্তায় পরে যায়। দুই পরিবারের সাথে যেচে কথা বলা ঠিক নয়, যেখানে দেবশ্রী দুই পরিবারের কাউকে চেনে না। দেবশ্রী জানিয়ে দেয় যে পরাশরের সাথে কথা বলে সব কিছু জেনে তবে কিছু একটা বিচার করবে। পরের দিন যথারীতি পরাশর, দেবায়নের বাড়িতে আসে। সেই সময়ে অনুপমা অথবা দেবায়ন, দুইজনেই কম্পিউটার ক্লাসে ছিল, তাই পরাশরের সাথে দেখা হয় না। বিকেলে বাড়িতে ফিরে দেবায়ন, মাকে পরাশরের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করে। দেবশ্রী জানায় যে বর্তমানে ওদের পড়াশুনাতে মন দেওয়া উচিত। সময় মতন সব ঠিক হয়ে যাবে।
অনুপমা জিজ্ঞেস করে, “মামনি, কি করে ঠিক করবে তুমি?”
দেবশ্রী হেসে বলে, “পরাশরের মুখে সব কিছু শুনলাম। ওদের যৌথ পরিবার, ওর জেঠা বাড়ির কর্তা। ওর জ্যাঠা পুরানো দিনের মানুষ, শুনে মনে হল ভাঙ্গবে তবু মচকাবে না। ওর বাবাকে হয়ত বুঝান সম্ভব হবে, তবে মাথা ঠাণ্ডা করে কথা বলতে হবে। ওর কাকা ক্রাইম ব্রাঞ্চের ইন্সপেক্টর হলে কি হবে, বাড়িতে ভিজে বেড়াল। ওর মায়ের আর ওর কাকিমার কথা বলা যেতে পারে শুধু হেঁসেল ঠ্যালা ছাড়া আর কিছু নয়। এমন যৌথ পরিবার এখন এই কোলকাতায় আছে। ওর জেঠুর সামনে নাকি কারুর মুখ ফোটে না। অনেক ভালো ভালো শাল গাছ আমার সামনে নুইয়ে পড়েছে। যেখানে ছলকপটে কাজ হয় না, সেখানে ভালোবাসা দিয়ে কাজ হয়। ভাবছি একদিন দুই বাড়িকে আমাদের বাড়িতে নেমতন্ন করব। কিন্তু তার আগে কোন এক আছিলায় তোদের মধ্যে কাউকে পি.জি হসপিটালে গিয়ে জারিনার বাবার সাথে পরিচয় করতে হবে। তোদের দুই জনের মধ্যে কেউ এগিয়ে গেলে তারপরে না হয় আমি ওর বাবার সাথে পরিচয় করতে পারব। তারপরে, পরিচয় বাড়লে জারিনার পরিবারকে বাড়িতে নেমন্তন্ন করতে অসুবিধে হবে না। এবারে পরাশরের বাড়ি কি করে যাওয়া যায়। দেবায়ন আশা করি ওদের বাড়িতে গেছে, তাই অনায়াসে একদিন ওদের ডেকে বাড়িতে খাওয়ান যায়। ওই দিনে জারিনার বাবা মা আর পরাশরের বাবা মায়ের সাথে এক সাথে কথা বলব। সামনা সামনি দুই অভিভাবককে বসিয়ে কথা বলে বুঝিয়ে দেখি।”
অনুপমা দেবশ্রীকে জড়িয়ে ধরে গালে চুমু খেয়ে বলে, “তোমার কাছে সব কিছুর সমাধান আছে, তাই না মামনি।”
দেবশ্রী হেসে বলে, “গত কাল থেকে অনেক তেল মেরেছিস, তাই ভাবলাম একটু চেষ্টা করে দেখি।”
দেবায়ন, “কিন্তু কি করে জারিনার বাবার সাথে পরিচয় হবে? সেটা একটু বলে দাও?”
দেবশ্রী, “সব বুদ্ধি কি আমি দেব নাকি? যেমন করে পরাশর জারিনার বাড়িতে গেছে, ঠিক তেমন করে তোমাকে ওর বাড়ির লোকের সাথে পরিচয় করতে হবে।”
অনুপমা হেসে বলে, “চিন্তা নেই মামনি, পার্ক সার্কাস মোড়ে দাঁড়িয়ে আমি ওর ঠ্যাঙ ভেঙ্গে দেব, ব্যাস আবার কি। পরাশর সাথেই থাকবে, অগত্যা ওকে নিয়ে জারিনার বাড়িতে যেতেই হবে।”
সেই শুনে দেবায়ন অনুপমার চুল টেনে বলে, “মা এবারে তোমার বউমা কিন্তু আমার ওপরে চড়াও হচ্ছে। মারপিট করলে কিন্তু আমি ছেড়ে দেব না।” দুইজনে মারামারি শুরু করে দেয়।
দেবশ্রী মৃদু ধমক দিয়ে বলে, “ঠিক আছে, দেখা যাক, ওই ঠ্যাঙ ভাঙ্গতে হবে না। দেখি কাউকে পাই কিনা যে পি.জি হসপিটালে কাজ করে। তার মারফত একবার ডক্টর মিসবাউলের সাথে দেখা করে আসব।”
খাওয়া শেষ, দেবায়ন টিভি দেখতে ব্যাস্ত। মায়ের কড়া নির্দেশে অনুপমার ধারে কাছে যেতে পারেনি। গত রাতে ঘুমিয়ে যাবার পরে মায়ের রুমে উঁকি মেরেছিল দেবায়ন। যথারীতি, প্রেয়সীর অর্ধ নগ্ন শরীর দেখে ক্ষান্ত হয়ে থাকতে হয়েছে। শেষ পর্যন্ত নিজের বিছানায় এসে, লুক্কায়িত বাক্স থেকে অনুপমা, পারমিতার প্যান্টি বের করে নাকের কাছে শুঁকে আত্মরতি করে ঠাণ্ডা করতে হয়েছে নিজেকে।
সেদিন অনুপমা একটা পাতলা স্লিপ গায়ে দিয়ে দেবায়নের কোল ঘেঁসে বসে টিভি দেখছিল। টিভির দিকে বিশেষ মন ছিল না অনুপমার, মন বড় আনচান করছিল একটু দেবায়নের সান্নিধ্য পাওয়ার। দেবশ্রীর রুমের দিকে তাকিয়ে লুকিয়ে দুই জনে পরস্পরের ঠোঁটের মাঝে বিলীন হয়ে যায়। চুম্বনে মর্দনে কামাগ্নি জ্বলে উঠতে বিশেষ সময় নেয় না, কিন্তু কিছু করার উপায় নেই। দেবশ্রী নিজের রুম থেকে অনুপমাকে ডাক দেয়, বলে যে সোমবার ওদের কলেজ আর দেবশ্রীর অফিস, সুতরাং তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়তে যাতে সকাল সকাল উঠতে পারে। অগত্যা অনুপমা, দেবায়নের কোল থেকে উঠে শুকনো মুখে দেবশ্রীর রুমে ঢুকে পরে। দেবশ্রী কিছু অফিসের কাজে ব্যাস্ত।
রাতে মামনিকে অফিসের কাজে ব্যাস্ত দেখে অনুপমা জিজ্ঞেস করে, “তোমার অফিসে ইদানিং কি কাজ খুব বেড়ে গেছে?”
Like Reply
উনবিংশ পর্ব (#04)

দেবশ্রী, ল্যাপটপ থেকে মাথা তুলে অনুপমার দিকে তাকিয়ে হেসে বলে, “তা একটু বেড়ে গেছে।”
অনুপমা, “দিল্লীর কথা কি হল? তুমি কি ভেবেছ?”
ম্লান হেসে দেবশ্রী উত্তর দেয়, “তোরা যখন দিল্লী যাবি না তাহলে আমি গিয়ে কি করব? তাই আর সেই নিয়ে ভাবছি না। দেখি আরো কয়েক মাস এমনিতে আমি মিস্টার ঠাকুরকে একটু হিন্ট দিয়েছি যে আমার দিল্লী আসা হবে না। তাই মনে হয় আমার কাজ বেড়ে গেছে। কোলকাতা অফিসের সাথে সাথে অন্য অফিসের কাজ গুলো আমার ঘাড়ে ধিরে ধিরে এসে পড়ছে।”
অনুপমা জিজ্ঞেস করে, “মামনি একটা কথা জিজ্ঞেস করব?” দেবশ্রী জিজ্ঞাসু চাহনি নিয়ে অনুপমার দিকে তাকায়, অনুপমা জিজ্ঞেস করে, “মামনি, মিস্টার দেবনাথ অথবা মল্লিকা তোমাকে ফোন করে?”
প্রশ্ন শুনে দমে যায় দেবশ্রী, মুসউরি ভ্রমণের পরে বেশ কয়েক মাস খুব ফোনে কথা হত ধৃতিমানের সাথে। গত কয়েক সপ্তাহে সেই ফোনের কথা একটু কমে আসে। অনুপমার দিকে ম্লান হেসে বলে, “হ্যাঁ, কথা হয়, কিন্তু তুই কেন জিজ্ঞেস করছিস?”
অনুপমা হেসে বলে, “না এমনি জিজ্ঞেস করছি। মিস্টার দেবনাথ কিছু বলেছে তোমাকে, কোলকাতা আসছে কি ওরা?”
হেসে ফেলে দেবশ্রী, “তোর মামনিকে কি এই বয়সে বিয়ের পিঁড়িতে বসাতে চাস? তোর মাথা খারাপ হয়েছে নাকি?”
অনুপম হেসে দেয়, “না সেটা নয় মামনি, তবে তুমি বড্ড একা। আমি জানি অনেক কিছু তাই বলছিলাম। তুমি একবার মিস্টার দেবনাথ কে বলে দেখতে পারো কোলকাতায় আসার কথা। দেখো না কি বলে?”
দেবশ্রী, “আমার বলা কি সব? ওর একটা মেয়ে আছে না, মল্লিকার ইচ্ছে অনিচ্ছে বলে কিছু নেই নাকি?”
অনুপমা বলে, “হ্যাঁ তা আছে বৈকি। তুমি কি করবে কিছু ভাবলে?”
দেবশ্রী হেসে ফেলে অনুপমার কথা শুনে, “মেয়ে আমার অনেক বড় হয়ে গেছে। ছাড় অইসব আলোচনা, চল শুয়ে পরি।”
অনুপমা দেবশ্রীকে জড়িয়ে ধরে আব্দারের সুরে বলে, “মামনি প্লিস একটু দেবায়নের কাছে যাবো?”
দেবশ্রী ভুরু কুঁচকে হেসে বলে, “একদম দুষ্টুমি নয়। কাল সকাল সকাল ওঠা আছে, তোদের কলেজ আর আমার অফিস আছে।”
পরেরদিন কলেজে পৌঁছান মাত্র, পরাশর দেবায়নকে দেখে জড়িয়ে ধরে বলে যে পায়ের ধুলো দিতে। বাবা মায়ের কথা শুনে আর জারিনার বাড়ির কথা শুনে একপ্রকার দুই জনে আশা ছেড়ে দিয়েছিল। জারিনা ভেঙ্গে পড়েছে, চাইলেও দেখা করতে পারছে না পরাশরের সাথে। দেবায়নের মায়ের কথা শুনে একটা আশার ক্ষীণ আলো এই ঘন অন্ধকারে দেখা যাচ্ছে। পরাশর বলে যে দেবায়নের মা বলেছেন কোন ভাবে নাম পরিচয় না জানিয়ে জারিনার সাথে পরাশরের মায়ের সাক্ষাৎ করাতে হবে। জারিনাকে দেখে এক মেয়ে হিসাবে পছন্দ হয়ে গেলে তারপরে পরাশরের মায়ের মন গলানো সোজা হয়ে যাবে। কিন্তু কি ভাবে সেটা সম্ভব হবে সেটাই বুঝে পাচ্ছে না পরাশর। অনুপমা বলে যে একটা উপায় করে দেবে যাতে পরাশরের মায়ের সাথে জারিনা সাক্ষাৎ হয়। পরাশর, অনুপমাকে বলে যদি ওদের পরিবার রাজি হয়ে যায় জারিনা আর পরাশরের সম্পর্কে, তাহলে সারা জীবনের জন্য কৃতজ্ঞ থাকবে অনুপমা আর দেবায়নের কাছে। অনুপমা হেসে বলে, কাজের সময় যেন পাশে থাকে তাহলেই হবে। পরাশর বলে যে পি.জি হসপিটালে গিয়ে দেবায়নের মায়ের সাথে জারিনার বাবার পরিচয় করিয়ে দেবে। দেবায়ন, পরাশরের কানেকানে মজা করে জানায় যে জারিনার সাথে প্রথম রাত দেবায়ন কাটাতে চায়। সেই কথা শুনে পরাশর মারতে ছোটে দেবায়নকে।
একদিন শ্রেয়া আর অনুপমা, জারিনার কলেজ যায় জারিনার সাথে দেখা করতে। ওদের দেখে জারিনা অবাক হয়ে যায়। অনুপমা আর শ্রেয়াকে দুঃখের কথা জানায় জারিনা। পরাশরের সাথে শুধু ফোনেই কথা হয়, মাঝে মাঝে কলেজের অছিলায় দুই একবার দেখা করেছে, কিন্তু ভয় ভয়, ওদের একসাথে কেউ দেখে জারিনার বাড়িতে যদি বলে দেয় তাহলে ওর আব্বাজান বকাবকি করতে পারে। অনুপমা ওকে শান্ত করে বলে যে পরাশরের বাড়িতে যেতে হবে। সেই শুনে জারিনা যেন আকাশ থেকে পরে, জারিনা জিজ্ঞেস করে কি ভাবে পরাশরের বাড়িতে যাবে। জারিনা জানে পরাশরের মায়ের মতিগতি, এক ভিন্ন ধর্মের মেয়েকে বাড়িতে ঢুকতে দেবে কিনা সন্দেহ। অনুপমা হেসে বলে যে ওরা সব বন্ধু বান্ধবীরা পরাশরের বাড়িতে যাচ্ছে, পরাশরের মায়ের হাতের পায়েস খাবার জন্য। সেই আছিলায় জারিনাকে ওদের সাথে নিয়ে যাবে। ওদের বাড়িতে যাবার পরে সবাইকে বন্ধু হিসাবে পরিচয় দেওয়া হবে, কারুর নাম ঠিক জানানো হবে না। জারিনাকে কিছু করে পরাশরের মাকে হাত করতে হবে, রান্না ঘরের কাজে, বাড়ির কাজে সাহায্য করে কয়েক ঘন্টার মধ্যে পরাশরের মায়ের মন জয় করতে হবে। সব পরিকল্পনা শুনে জারিনার হাত পা ঠাণ্ডা হয়ে যায়। শ্রেয়া আর অনুপমা, জারিনাকে সাহস জুগিয়ে বলে যদি পরাশরকে বিয়ে করতে হয় আর পরাশরকে যদি ভালোবাসে তাহলে অনেক কিছু করতে হবে। জারিনা রাজি হয়ে যায় পরাশরের বাড়িতে যাবার জন্য, মুখে হাসি টেনে বলে সব কিছু করতে রাজি এমনকি পরাশরের সাথে জাহান্নুমে যেতে রাজি।
কলেজের বাইরে দেবায়ন, ধিমান আর পরাশর দাঁড়িয়ে ছিল। জারিনাকে নিয়ে বের হবার পরে ছয়জনে পরাশরের বাড়ির দিকে রওনা দেয়। সারা রাস্তা জারিনা পরাশরের হাত ছারেনা এক মুহূর্তের জন্য। দুইজনের বুকের ভেতরে ধুকপুকানি ক্রমশ বাড়তে থাকে। পরাশর আগে থেকে ওর মাকে জানিয়ে রেখেছিল যে কলেজের কয়েকজন বন্ধু ওর বাড়িতে দুপুর বেলা আসবে। সেই মতন পরাশরের মা সব বন্ধুদের জন্য পায়েস বানিয়ে রেখেছিল।
বাড়িতে ঢোকার আগে, জারিনাকে জড়িয়ে ধরে পরাশর। জারিনা কাঁপা কণ্ঠে জিজ্ঞেস করে ওর মা অপমানিত করে তাড়িয়ে দেবে না তো? দেবায়ন আর অনুপমা পরস্পরের দিকে চাওয়াচায়ি করে। অনুপমা বলে যে কেউ এখুনি নিজেদের পরিচয় দেবে না, শুধু কলেজের বন্ধু বান্ধবী বলে পরিচয় দেবে সবাই, কারুর নাম এখুনি বলবে না পরাশরের মায়ের কাছে। পরিকল্পনা মতন পরাশরের বাড়িতে ঢোকে সবাই। পরাশরের মা সবাইকে বসার ঘরে বসতে বলে। জারিনা, অনুপমা আর শ্রেয়ার মাঝখানে চুপচাপ বসে থাকে। অনুপমা জারিনাকে ঠেলে বলে যে ঘরের কাজে পরাশরের মাকে সাহায্য করতে। জারিনার ছোটো বুকে বাজতে শুরু করে যুদ্ধের দামামা। একবার সবার দিকে তাকিয়ে নেয়। পরাশর পারলে লুকিয়ে যায় কোথাও, ওর মা একবার জানতে পারলে কেটে ফেলবে জারিনা আর পরাশরকে। জারিনা রান্না ঘরের দিকে এগিয়ে যায় যেখানে পরাশরের মা ওদের জন্য খাবার প্লেটে সাজাচ্ছিলেন। জারিনাকে আসতে দেখে পরাশরের মা একটু হাসেন। জারিনা প্লেটের মধ্যে সবকিছু সাজাতে সাহায্য করে, সেই সাথে পরাশরের মায়ের সাথে গল্প করে মন ভুলানোর জন্য। প্লেটে খাবার সাজিয়ে বসার ঘরে আসে পরাশরের মা আর জারিনা। জারিনার কান লাল হয়ে গেছে, মুখ দেখে বোঝা যাচ্ছে যে আশঙ্কায় ওর বুকের খাঁচা ফেটে পড়ার যোগাড়। বসার ঘরে সবাইকে খাবার দেবার পরে পরাশরের মা চলে যান।
অনুপমা জারিনাকে ঠেলে পরাশরের মায়ের পিছু নিতে বলে। জারিনা একবার উপরের দিকে তাকিয়ে আরেকবার পরাশরের দিকে তাকিয়ে ঘর থেকে বেড়িয়ে যায়। বসার ঘরে সবাই নিস্তব্ধ, কারুর মুখে কোন কথা নেই, আসন্ন আশঙ্কায় সবার বুক দুরুদুরু করে কাঁপছে। কিছু পরে ভেতর থেকে হাসির কলতান শোনা যায়, জারিনা বেশ গল্পে মশগুল হয়ে গেছে পরাশরের মায়ের সাথে। বেশ কিছু পরে পরাশরের মা জারিনাকে নিয়ে বসার ঘরে ঢুকে সবার দিকে তাকায়। সবাই চুপ। পরাশরের মা বলেন যে বেশ ভালো পরিকল্পনা করেছে জারিনার সাথে সাক্ষাৎ করানোর। সেই সাথে পরাশরের মা জানান যে জারিনাকে তার পছন্দ আছে কিন্তু ওর জেঠু আর বাবাকে মানাতে একটু কষ্ট হবে। জারিনা হবু স্বাশুরিকে জড়িয়ে ধরে বলে যে যদি ওদের সম্পর্কের সুস্থ সুরাহা না হয় তাহলে গঙ্গায় ডুবে মরবে দুইজনে। পরাশরের মা হেসে ফেলে জারিনার কথা শুনে, সেই সাথে জানিয়ে দেন যে কিছু একটা ব্যাবস্থা করা যাবে তবে ওনার একার পক্ষে সম্ভব নয় ওর বাবাকে বোঝানো। দেবায়ন জানায় যে ওর মা সেই কাজে সাহায্য করবে। পরাশরের বাড়ির সবাইকে একদিন নেমতন্ন করবে দেবায়ন সেই সময়ে দেবায়নের মা চেষ্টা করবেন পরাশরের বাবার সাথে কথা বলতে। পরাশরের মা, জারিনার গলায় একটা সোনার হার পড়িয়ে দেয়। জারিনার চোখে জল চলে আসে সেই সাথে পরাশরের মায়ের চোখে জল চলে আসে। পরাশরের মা, পরাশরকে বলে যে ওদের জন্য আরো একদিন নেমন্তন্ন রইল সেদিন ওর হবু বউমা রান্না করবে। সে যা রান্না করবে তাই পরাশরের মা ওর জেঠুকে আর বাবাকে রাতে খেতে দেবে। জারিনা বলে যে রান্না করতে সে এখুনি প্রস্তুত।
বেশ কিছুক্ষণ গল্প করে পরাশরের বাড়ি থেকে সবাই বেড়িয়ে আসে। যাবার আগে অনুপমা আর দেবায়নকে জিজ্ঞেস করে নেমন্তন্নের কথা। দেবায়ন জানায় যে মায়ের সাথে কথা বলে একটা দিন ধার্য করে ওদের সবাইকে ডাকা হবে। দেবায়ন জানায় না যে সেদিন জারিনার বাড়ির লোক কেও নেমন্তন্ন করা হবে। বাড়ি থেকে বেড়িয়েই জারিনা, অনুপমাকে জড়িয়ে ধরে ট্যাক্সির মধ্যে। জারিনা আর পরাশর খুব খুশি, একটা বাধা কাটল, বাকি বাধা কি করে কাটবে সেই চিন্তায়। দেবায়ন জানায় সময়ের সাথে সাথে বাকি বাধা ধিরে ধিরে লুপ্ত হয়ে যাবে।
পরাশর এর মাঝে একদিন দেবায়নের মাকে পি.জি হসপিটালে নিয়ে জারিনার বাবার সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়। দেবশ্রী, জারিনার বাবা, ডক্টর মিসবাউল আন্সারির সাথে কথা বলেন পরাশর আর জারিনার সম্পর্কের ব্যাপারে। ডক্টর আন্সারি দেবশ্রীর কথা শুনে প্রথমে অবাক হয়ে যান। তিনি জানিয়ে দেন যে হসপিটালে এই সব আলোচনা করা ঠিক নয়। দেবশ্রী বলেন নিরুপায় হয়ে হাতপাতালে আসতে হয়েছে যেহেতু দেবশ্রী ডক্টর আন্সারিকে চেনে না তাই। ডক্টর আন্সারি হেসে প্রতি উত্তরে দেবশ্রীকে নিজেদের বাড়িতে ডাকেন একদিন। হাস্পাতাল থেকে বেড়িয়ে দেবশ্রী পরাশরকে বলে, কথা বলে দেখবে কত টা কি করা যায়। দেবশ্রী পরাশরকে আসস্থ সুরে বলে পড়াশুনায় মন দিতে, বিয়ে শাদির জন্য এখন একটা বছর হাতে সময় আছে। তাড়াহুড়োতে কোন কিছুর সুস্থ সুরাহা হবে না।
দেবায়ন আর পরাশরকে নিয়ে একদিন বিকেলে ডক্টর আন্সারির বাড়িতে যান দেবশ্রী। ডক্টর আন্সারি নিজের চেম্বারে সেদিন বেশ ব্যাস্ত ছিলেন। জারিনাকে দেখে দেবশ্রীর বেশ ভালো লাগে, সেই সাথে জারিনার মা, নাজমার সাথে কথাবার্তা হয়। নাজমা বলেন যে প্রথম দিন থেকেই পরাশর আর জারিনার ব্যাপারে তার সন্দেহ ছিল। তবে মেয়ের মুখে সব শুনে মায়ের মন শেষ পর্যন্ত গলে যায়। তার ভয় এই গোস্টি নিয়ে, এই গোসটির মাথারা এই শাদী নিকাহর বিরুদ্ধে যাবেন। ওইদিকে জারিনা বেঁকে বসে আছে, পরাশরকে বিয়ে না করতে পারলে গঙ্গায় ডুব দেবে। কিছুই বুঝে উঠতে পারছেন না নাজমা। দেবশ্রী, জারিনাকে মৃদু ধমক দিয়ে বলে আর যেন আত্মহত্যার কথা মুখে আনে না। ডক্টর আন্সারি কাজের ফাঁকে উপরে এসে দেবশ্রী আর বাকিদের সাথে দেখা করে যান। ডক্টর আন্সারি কি করবেন কিছু ভেবে পাচ্ছেন না। মেয়েকে খুব ভালবাসেন তবে এই গস্টি দ্বন্দের মাঝে পরে এক ঘরে হয়ত হতে হবে। ডক্টর আন্সারি বলেন পরাশর যদি ধর্মান্তরিত হয় তাহলে দুই জনের সম্পর্কের একটা সুরাহা হতে পারে। দেবশ্রী চিন্তিত, ওইদিকে নাজমা কিছু ভেবে পাচ্ছেন না। জারিনার চোখ ছলছল। দেবশ্রী বিশেষ কথা না বাড়িয়ে সপরিবারে নিজের বাড়িতে একদিন রাতের খাবারের নেমন্তন্ন করেন। দেবায়ন, পরাশর সবাই বেশ চিন্তিত, দেবশ্রী ওদের আস্বাস দিয়ে বলে যে কিছু একটা উপায় তিনি বের করবেন। ডক্টর আন্সারি জানিয়ে দেন যে পরাশরের বাড়ির সাথে দেখা করতে চান, দেবশ্রী জানিয়ে দেন যে সময় মতন সব ঠিক করে দেবেন।
বর্ষা কাল কেটে গেছে, মুসউরি থেকে বেড়িয়ে আসার পরে বেশ কয়েক মাস কেটে গেছে। আকাশে থোকা থোকা পোজা তুলোর মতন মেঘ ভেসে বেড়ায়। কলেজের সাথে সাথে দেবায়ন আর অনুপমার কম্পিউটার ক্লাস পুরোদমে চলে। এর মাঝে এক রবিবার, দেবায়ন পরাশরের বাড়িতে গিয়ে বাড়ির লোককে রাতের খাবারের জন্য নেমন্তন্ন করে আসে।
সকাল বেলাতেই অনুপমা দেবায়নের বাড়ি পৌঁছে যায় দেবায়নের মায়ের কাজে সাহায্য করার জন্য। পরাশর আর জারিনা বারেবারে অনুপমাকে ফোনে ব্যাতিব্যাস্ত করে তোলে। বারেবারে জিজ্ঞেস করে কোন অঘটন ঘটাবে কি না। পরাশর বেশ ভয়ে ভয়ে আছে, ওর বাবা গম্ভির প্রকৃতির মানুষ। পরাশরের মা একবার ওর বাবাকে বলতে চেষ্টা করেছিল জারিনার ব্যাপারে কিন্তু তিনি শুনতে নারাজ।
বিকেলে জারিনার সাথে, জারিনার মা বাবা দেবায়নের বাড়িতে পৌঁছে যায়। ওদের আসার কিছু পরেই পরাশরের বাবা মা পৌঁছে যায়। জারিনা একটা সুন্দর সাদা রঙের সালোয়ার পরে এসেছিল। দেবায়নের মা সবাইকে বসার ঘরে বসিয়ে গল্প করতে শুরু করেন। পরাশরের বাবা সুরঞ্জন বাবু, দেবায়নের মাকে এই নিমন্ত্রনের কারন জিজ্ঞেস করে। ডক্টর আন্সারিকে দেখে তার বুঝতে বিশেষ দেরি হয় না এই নিমন্ত্রনের আসল কারন। সুরঞ্জন বাবু কিঞ্চিত রেগে পরাশরের মায়ের দিকে তাকায়। দেবশ্রী কিছুক্ষণ সবার দিকে তাকিয়ে দেখে। পরাশর দাঁত পিষে শ্বাস রুদ্ধ করে দেবায়নের পেছনে দাঁড়িয়ে থাকে। জারিনা শক্ত করে অনুপমার হাত ধরে ওদের অদুরে দাঁড়িয়ে। দেবশ্রী দুই বাড়ির অভিভাবকদের দিকে তাকিয়ে বড় একটা নিঃশ্বাস নিয়ে আলোচনা শুরু করেন।
দেবশ্রী বলেন, “পরাশর আর জারিনা, ওদের ব্যাপারে আমার কিছু বলার আছে আপনাদের কাছে।”
পরাশরের মা, রঞ্জিকা, দেবশ্রীর দিকে তাকিয়ে সব বুঝতে পেরে যায়। নাজমা একবার পরাশরের দিকে তাকায়, অন্যদিকে রঞ্জিকা তার হবু বউমা, জারিনার দিকে তাকায়। পরাশর আর জারিনা, শ্বাস রুদ্ধ করে আসন্ন ঝড়ের আশঙ্কায় উৎকণ্ঠায় কাঠ হয়ে গেছে।
ডক্টর মিসবাহুল দেবশ্রীর উত্তরে বলেন, “দেখুন দিদি, আপনি জানেন যে দুই ভিন্ন ধর্মের মধ্যে বিবাহ আমাদের পক্ষে মেনে নেওয়া অসম্ভব। তাই আমি আপনাকে একটা উপায় বলেছিলাম যে যদি পরাশর ওর ধর্ম বদলে নেয় তাহলে এই নিকাহর ব্যাপারে আমার কোন অসুবিধে নেই।”
সুরঞ্জন বাবু চোয়াল শক্ত করে একবার পরাশরের দিকে একবার পরাশরের মায়ের দিকে তাকিয়ে হিম শীতল কণ্ঠে বলে, “তোমরা সব কিছু জানতে তাই তো? এই বিবাহ কিছুতেই সম্ভব নয়।”
ডক্টর মিসবাহুলের দিকে না তাকিয়ে উত্তরে বলেন, “কেন আমার ছেলে ধর্মান্তরিত হবে? এই বিয়েতে আমার মত নেই, এই সম্পর্ক হতে পারে না।”
পরাশরের মা প্রমাদ গুনে পরাশরের বাবাকে চুপ করতে বলে। দেবশ্রী শীতল কণ্ঠে বলেন, “কেন এই বিবাহ সম্ভব নয়? জারিনা কি দেখতে খারাপ? জারিনার কি কোন দোষ আছে? জারিনা পড়াশুনায় ভালো, কমার্স নিয়ে একটা বড় কলেজে পড়ছে। ভালো শিক্ষিত বাড়ির মেয়ে। ওর দাদা, দুর্গাপুর আর.ই কলেজে মেকানিকাল নিয়ে পড়ছে। এমত অবস্থায় আপনার আপত্তি কোথায়?”
দেবশ্রীর উত্তরে ডক্টর মিসবাহুল বলেন, “দেখুন দিদি, আমি বিশেষ কোন তর্কে যেতে চাই না। আমি জানি পরাশর কি করেছে না করেছে। আপনার সাথে আমার এই নিয়ে কথা হয়ে গেছে। আমার এই একটা শর্ত যে পরাশরকে ধর্মান্তরিত হতে হবে, তবেই আমি আমার মেয়ের নিকাহ ওর সাথে দেব।”
 
উনবিংশ পর্ব (#05)
সুরঞ্জন বাবু গম্ভির কণ্ঠে বলেন, “ছেলে ধর্মান্তরিত হলে আমি ওকে ত্যাজ্য পুত্র করে দেব। ওই রকম ছেলে আমার চাই না।”
পরাশর রেগে কিছু একটা বলতে যাচ্ছিল, দেবশ্রী পরাশরকে শান্ত করে বাকিদের উদ্দেশ্যে বলেন, “রাগের বশে কিছু করে বসলে সেটা সমস্যার সুরাহা হয় না, বরং এক নতুন সমস্যা তৈরি হয়। আমার কথা একটু শুনুন, তারপরে নিজেদের কথা বলবেন।”
ডক্টর মিসবাহুল বিচক্ষণ ব্যাক্তি তিনি চুপ করে থাকেন। সুরঞ্জন বাবু, দেবশ্রীর উদ্দেশ্যে বলেন, “আপনার এতে কি আসে যায়? ছেলে আমার, ও কাকে বিয়ে করবে না করবে সেটা আমরা ভেবে দেখব। পরাশর আমাদের বাড়ির বড় ছেলে। সেই হিসাবে ওর একটা কর্তব্য আছে কি নেই বাড়ির প্রতি।”
রঞ্জিকা এতক্ষণ চুপ করেছিলেন, কিন্তু সুরঞ্জন বাবুর এহেন মন্ত্যবে আহত হয়ে রাগত কণ্ঠে ধমকে ওঠেন, “প্লিস একটু মাথা ঠাণ্ডা করে কথা শোনো। এমন ভাবে রেগে গেলে কোন কিছুর সুরাহা হয় না।”
সুরঞ্জন বাবু চুপ করে যান।
দেবশ্রী ম্লান হেসে বলেন, “হ্যাঁ, আমার এখানে কোন স্বার্থ নেই। আমার ছেলের বন্ধু হিসাবে, পরাশর আমার কাছে এসেছিল, ওদের ভালোবাসা দেখে আমার মনে হল এদের একটা সুস্থ সুরাহা করা উচিত। নাহলে দুটি প্রান হয়ত হারিয়ে যাবে এই পৃথিবী থেকে। অন্তিমে কেউ সুখী হবে না।”
ডক্টর মিসবাহুল অবাক হয়ে বলেন, “আপনি নিঃস্বার্থে এদের জন্য করছেন?”
দেবশ্রী হেসে বলে, “না না, আজকাল কেউ কি আর নিঃস্বার্থে কাজ করে। আপনার মেয়ে সুরঞ্জন বাবুর বউমা হলে, ঈদে ওর হাতের বিরিয়ানি খেতে পারবো, পায়া, মটন কোর্মা কত কিছু খেতে পারবো। সেই স্বার্থে আমি এই কাজে নেমেছি।”
দেবশ্রীর কথা শুনে সবাই হেসে ফেলে শুধু মাত্র সুরঞ্জন বাবু ছাড়া। দেবশ্রী সুরঞ্জন বাবুর উদ্দেশ্যে বলেন, “আপনি একজন সরকারি উচ্চপদস্থ অফিসার, আপনি শিক্ষিত আপনি একটা কারন আমাকে দেন কেন জারিনা আপনার বাড়ির বউমা হতে পারবে না।”
সুরঞ্জন বাবু নিচু কণ্ঠে বলেন, “না মানে, বুঝতেই পারছেন কেন এই সম্পর্কে আমার অমত।”
দেবশ্রী, “ছেলে মেয়ে ভিন্ন ধর্মের সেই নিয়ে আপনার অমত। আপনি * , ডক্টর মিসবাহুল '., এই জন্য অমত।”
সুরঞ্জন বাবু মৃদু মাথা নাড়ান। দেবশ্রী বলে, “আমি ভগবান মানি, তবে ধর্মের নামে এই আচার ব্যবহার মানি না। আমি ধর্ম অথবা ভগবান একটু ভিন্ন ভাবে মানি, সময় আমাকে তাই শিখিয়েছে। আমি আপনাদের দুইজনকে আঘাত করতে চাই না, তবু বলি। এই ধর্ম আর তাঁর আচার ব্যাবহার মানুষের তৈরি, ভগবানের নয়। ভগবান গাছ পালা, নদী নালা, পশু পাখী মানুষ তৈরি করেছিলেন। তাই পৃথিবীর সব জায়গার গাছ পালা, নদী নালা, মানুষ এক রকমের দেখতে। সব জায়গার মানুষের একটা নাক, দুটো চোখ, দুটি হাত, দুটি পা। সবাই মুখ দিয়ে খায়, চোখ দিয়ে দেখে। একটা ছোটো বাচ্চা যখন জন্ম গ্রহন করে তখন সে জানে না তার ধর্ম কি। তার মুখ থেকে প্রথম শব্দ বের হয় কান্নার আওয়াজ, অ্যাঁ। সেই “অ্যাঁ” কান্নার আওয়াজ অনেকটা “মা” ডাকের মতন শোনায়। তাই “মা” ডাক পৃথিবীর সব ভাষাতেই এক। সেটা আলাস্কার কোন প্রত্যন্ত জায়গায় হোক, অথবা ইংল্যান্ডের রানীর বাড়ি হোক, অথবা চিনের দেয়ালের পেছনে হোক অথবা ভারতের কোন শহরে। মাকে সব বাচ্চা মা বলেই ডাকে। সেই ডাক তাদের শিখিয়ে দিতে হয় না, তেমনি ভালোবাসা কাউকে শিখিয়ে দিতে হয় না, সেটা বুকের ভেতর থেকে আসে। মানুষ যত বড় হয়, তারা নিজের সুবিধার্থে, পারিপার্শ্বিক ভৌগলিক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে নিজেদের ভাষা, ধর্ম আচার ব্যাবহার, জীবন শৈলী ইত্যাদি গঠন করে।”
দেবশ্রী সুরঞ্জন বাবুর দিকে তাকিয়ে বলেন, “ধরুন আপনার এক্সিডেন্ট হল, আপনাকে নিয়ে হাস্পাতালে যাওয়া হল। সেখানে আপনার রক্ত চাই, তখন কি আপনি জিজ্ঞেস করবেন রক্তদাতার নাম?”
সুরঞ্জন বাবু মাথা নাড়িয়ে বলেন “না”
দেবশ্রী বলেন, “আপনার শরীরে হয়ত ভিন্ন ধর্মীর রক্ত দিয়ে আপনাকে বাঁচিয়ে তোলা হল, সেখানে আপনার আপত্তি থাকবে না। আপনি কোনদিন রেস্তোরাঁতে খেতে যান না? সেখানে কোনদিন জিজ্ঞেস করেছেন যে শেফের ধর্ম কি? রেস্তোরাঁর সুস্বাদু খাবার আপনার ভালো লাগবে। যখন একটা জীবন অপারেশান থিয়েটারে ছটফট করে তখন এই সব কথা মাথায় আসে না। শুধু একটু ভালোবাসার সময়ে আপনাদের মাথায় আসে জাত পাত, ধর্ম বিদ্বেষ, উঁচু নিচু, বড়োলোক গরিব। এই সব জাত পাত ধর্ম বিদ্বেষ সব কিছু মানুষের মনের তৈরি। এই দুইজনের জন্য এই সব একটু দুরে রাখতে পারবো না আমরা?”
সুরঞ্জন বাবু আর ডক্টর মিসবাহুল চুপ। ঘরের বাকি সদস্য চুপ করে দেবশ্রীর কথা শুনে যায়। জারিনা অনুপমার হাত ধরে পাথর হয়ে গেছে। অনুপমার কানেকানে বলে যে এত কথা কেউ কোনদিন ওর আব্বাজানের সামনে বলতে সাহস পায়নি। অনুপমা জানিয়ে দেয় যে ওর মামনি অন্য ধাতুর তৈরি মানুষ, যত কঠিন লোহা হোক না কেন, তাদের হৃদয় গলাতে তিনি সক্ষম।
দেবশ্রী, ডক্টর মিসবাহুলের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করেন, “আপনি একজন নামকরা ডক্টর। আপনি যখন একজনের চিকিৎসা করেন, তখন তার রোগ চিকিৎসা করেন না তাকে নাম দেখে চিকিৎসা করেন। আমি আর্টসের ছাত্রী ছিলাম, বিজ্ঞান পড়িনি তবে আমি ছোটবেলা থেকে ছেলেকে পড়াতে পড়াতে একটু বিজ্ঞান শিখে ফেলি আর তাই দিয়ে বিচার করেছিলাম এই মহামহিম শক্তি কে। বোঝার চেষ্টা করেছি আসল ভগবানকে। আমার মধ্যে, একটা গাছের মধ্যে, একটা কুকুরের মধ্যে, একটা মাছের মধ্যে বহিরাঙ্গের অনেক তফাত কিন্তু ধর্মে বলে ভগবান সর্বত্র বিদ্যমান। আমি ও বলি ভগবান সর্বত্র বিদ্যমান, কিন্তু একটু অন্য ভাবে মানি। আমরা সবাই অনু পরমানু দিয়ে গঠিত। সবার দেহে সেই প্রোটন নিউট্রন এলেক্ট্রন আছে। সেই এটমের মধ্যে যে শক্তি সেই ভগবান। অমান্য করতে পারেন?”
ডক্টর মিসবাহুল মাথা নিচু করে বসে থাকেন। দেবশ্রী বলেন, “সেই শক্তি কিন্তু এই * , '., শিখ খ্রিস্টান, বৌদ্ধ তৈরি করেনি, করেছি আমরা কারন আমাদের মাথায় একটা ঘিলু বলে বস্তু আছে। আমরা ভাবনা চিন্তা করতে পারি আর তাই সকলকে হাতের মুঠিতে রাখার জন্য ভগবানের দোহাই দিয়ে একসময় তৈরি হয় এই ধরম। আমার বলার বক্তব্য এই টুকু, যে সামান্য একটা মানুষের তৈরি নিয়মের বাধা নিয়ে কেন দুই ছোটো ছেলে মেয়েকে আলাদা করে দেওয়া? তাতে কি ওরা সুখী হতে পারবে? একবার চেয়ে দেখুন ওদের চোখের দিকে তারপরে নিজেদের সিদ্ধান্ত নেবেন।”
ডক্টর আনসারি পরাশরের দিকে তাকায় আর সুরঞ্জন বাবু জারিনার দিকে তাকায়। দুই ছেলে মেয়ের চোখে জল, ছলছল থমথমে চেহারায় দুইজনে দাঁড়িয়ে। দেবশ্রী বলে, “তবে হ্যাঁ, আমি যখন বাড়িতে ডেকেছি ডিনারের জন্য তখন যেন না খেয়ে চলে যাওয়া না হয়।”
সুরঞ্জন বাবু হেসে মাথা নাড়িয়ে বলেন, “এত কথা আজ পর্যন্ত আমাকে কেউ বলেনি। আপনার সাথে যুক্তি তর্কে দার্শনিক তথ্যে পেরে ওঠা বড় কষ্টকর। আপনার বক্তব্য গভীর অর্থ বহন করে যা খন্ডন করা অসম্ভব। তবে আমাকে একটু ভাবতে সময় দেন।”
দেবশ্রী হেসে জিজ্ঞেস করে, “কি ভাবছেন? খাবার কথা না কবে বিয়ে দেবেন সেটার কথা?”
ডক্টর মিসবাহুল হেসে ফেলেন, “আপনার সাথে কথায় পেরে ওঠা বড় মুশকিল। কিন্তু সমাজ, আত্মীয় সজ্জনেরা কি বলবে?”
দেবশ্রী বড় নিঃশ্বাস নিয়ে বলেন, “আপনারা কি ছেলে মেয়েদের শুকনো মুখের দিকে একবার তাকিয়ে দেখেছেন? সত্যি কথা বলতে লোকেরা কি বলবে, আত্মীয় সজ্জনেরা কি বলবে সেই নিয়ে বড় মাথা ঘামাই। যাদের সুখ দুঃখে আমাদের দাঁড়ানো উচিত তাদের পাশে না দাঁড়িয়ে, তাদের কথা শুনতে ব্যাস্ত হয়ে যাই যারা হয়ত আমাদের খেয়ে আমাদের পেছনে নিন্দা করে বেড়ায়। আপনাদের কিছু হলে আপনার ছেলে বউমা, মেয়ে জামাই এসে দাঁড়াবে। দেবায়নকে নিয়ে আমি যখন অথৈ জলে পড়েছিলাম, তখন আমার কোন আত্মীয় আমার দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয় নি। আপনার দুই জনে একবার বুকে হাত দিয়ে বলতে পারবেন যে আপনাদের কোন আত্মীয় আপনাদের পেছনে আপনাদের নিন্দা করে নি?”
নির্বাক সুরঞ্জন বাবু, নির্বাক ডক্টর মিসবাহুল। দেবশ্রী হেসে বলেন অনুপমার দিকে দেখিয়ে বলে, “ওই যে আমার বউমা। সমাজ কে কি বলল না বলল তাতে আমার আসে যায় না। তবে ওই দুষ্টু মেয়েটার মুখের হাসির জন্য আমি সব কিছু করতে প্রস্তুত।”
সুরঞ্জন বাবু দেবশ্রীকে বললেন, “দিদি, সব বুঝলাম। আপনি যে যুক্তি দেখিয়েছেন সব মেনে নিলাম। আমাদের পরিবারের কথা একটু বলি আপনাকে। আমাদের যৌথ পরিবার, আমার দাদার দুই মেয়ে, তাদের বিয়ে হয়ে গেছে। আমার ভাইয়ের বিয়ে হয়েছে বছর আটেক আগে তার এক ছেলে এক মেয়ে। আর আমার ওই একটা ছেলে, পরাশর বাড়ির বড় ছেলে। সেই হিসাবে বউমা হবে বাড়ির বড় বউমা। ভবিষ্যতে তার কাঁধে সবাইকে পরিচালনা করার ভার আসবে। তাই আমি…”
কথা শেষ করতে দেয় না দেবশ্রী কারন তার অজানা নয়, তাই বললেন, “আমি সব জানি, পরাশর আমাকে সব কিছু বলেছে। দেখুন, আমি বলছি না আজকেই জারিনাকে আপনার বউমা করে নিয়ে যেতে। আপনি আপনার দাদাকে বুঝিয়ে বলুন, সময়ের সাথে সাথে মানুষের মতি গতি, মানুষের চিন্তা ধারা বদলায়। আশা করি আপনি সেই চেষ্টা করবেন। আর আসল কথা, বউমা কেমন লেগেছে সেটা আগে বলুন।”
নাজমা আর রঞ্জিকা এতক্ষণ চুপচাপ ছিলেন, কোন কথা না বলে শুধু দেবশ্রীর কথা শুনে গেছে। নাজমা বললেন, “জানেন দিদি, প্রথম যেদিন পরাশর মাথা ফাটিয়ে আমাদের বাড়িতে এসেছিল, সেদিন আমি মেয়ের মুখ দেখে বুঝে গেছিলাম, ওই ফাটা মাথার কারন।”
নাজমার কথা শুনে পরাশরের কান লাল হয়ে যায়, জারিনা পারলে অনুপমার পেছনে লুকিয়ে যায়।
সেই শুনে হেসে ফেললেন রঞ্জিকা, “আমার বাড়িতে দেবায়ন আর অনুপমা, জারিনাকে লুকিয়ে নিয়ে এসেছিল। আমি প্রথমে বুঝতেই পারিনি ওকে দেখে। তারপরে যখন দেখলাম যে ফুটফুটে মেয়েটা রান্না ঘরে এসে আমাকে সাহায্য করছে তখন আমার কাছে সব পরিষ্কার হয়ে গেল। বড় মিষ্টি মেয়ে। এত পাকা যে আমাকে বলে চোখে কাজল পড়লে নাকি আমার চোখ দুটি বড় বড় দেখাবে।”
রঞ্জিকা জারিনার দিকে দেখে হেসে ফেলে। জারিনা লজ্জায় অনুপমার পেছনে মুখ লুকায়। রঞ্জিকা সুরঞ্জন বাবুকে বললেন, “দেখো, সত্যি বলছি, বাড়িতে এই সব নিয়ে আলোচনা করা অসম্ভব। আমার আর কাকলির কথা কেউ শোনে না। দেবশ্রীদি’র মতন যুক্তি দিয়ে বুঝাতে আমি পারতাম না। আমি জানিনা তোমার কি মত, তবে বউমা আমার ভারী মিষ্টি।”
ডক্টর মিসবাহুল বললেন, “আমার একটু সময় চাই, মানে আমাদের পরিবার আরো গোঁড়া। সবাইকে বুঝিয়ে ওঠা, সবাইকে মানিয়ে ওঠা খুব দুষ্কর দুঃসাধ্য ব্যাপার। আমি যা ভেবে এসেছিলাম, সেই ভাবনা চিন্তা যুক্তি তক্ক আপনার দর্শন শাস্ত্রের কাছে নগন্য। আমি কোনদিন এই ভাবে ধর্মকে, ভগবানকে দেখিনি। আজকে আপনার কথা শুনে মনে হল আমরা কেন, পৃথিবীর সবাই যদি আপনার মতন চোখ খুলে একটু দেখতে পারত তাহলে পৃথিবী অনেক সুন্দর হয়ে উঠত। সত্যি বলতে আপনি আমার বিশ্বাস ভেঙ্গে গুঁড়িয়ে দিয়েছেন, এই প্রথম পরাজয়ে আমি দুঃখিত নেই। কিন্তু বুঝতেই পারছেন।”
সুরঞ্জন বাবু সমস্বরে বলেন, “একই অবস্থা আমার পরিবারের। দুঃসাধ্য তবে আপনার কথা শুনে মনে হল অসম্ভব কিছুই নয়।”
দেবশ্রী, “আমি পরিষ্কার বুঝতে পারছি আপনাদের দুইজনের পারিবারিক সমস্যার কথা। অনেক সময় আছে, জারিনার কলেজ শেষ হতে আরো তিন বছর বাকি। পরাশরের কলেজ শেষ হতে এক বছর বাকি। সময়ের সাথে অনেক কিছু বদলে যায়, আপনার সেই চেষ্টা করুন।”
ডক্টর মিসবাহুল মৃদু হেসে মাথা নাড়িয়ে বলেন, “দুই জনের পড়াশুনা শেষ হোক আগে তারপরে ব্যাবস্থা করব।”
সুরঞ্জন বাবু বুক ভরে একটা নিঃশ্বাস নিয়ে দেবশ্রীর দিকে তাকিয়ে হেসে জিজ্ঞেস করেন, “এস্ট্রে নিশ্চয় আপনার বাড়িতে পাওয়া যাবে না?”
দেবশ্রী হেসে ফেলে, “আমি সিগারেট খাই নাকি?”
দেবায়ন তাড়াতাড়ি একটা কাপে একটু জল নিয়ে টি টেবিলে রাখে। সুরঞ্জন বাবু একটা সিগারেট বের করে ডক্টর মিসবাহুলের দিকে এগিয়ে দেয়। ডক্টর মিসবাহুল হেসে বলেন যে একটাই ধরাতে, জারিনা জন্মাবার পরে সিগারেট খাওয়া ছেড়ে দিয়েছিলেন, তবে বেয়াই মশাইয়ের অনুরোধ উপেক্ষা করা কঠিন। নাজমা, ডক্টর মিসবাহুলের দিকে তাকিয়ে সিগারেট ধরাতে বারন করে। সুরঞ্জন বাবু হেসে বলেন, আর রাগ কেন এবারে হয়ত দুই বেয়াই মিলে সিগারেট খেয়ে মনের গ্লানি দূর করবে।
রঞ্জিকা হেসে বলেন, “দিদি, আপনার ওই এটম, নিউট্রন শুনে আমার পেটের ইলেক্ট্রন কামড় দিচ্ছে। আমি আমার বেয়ানকে নিয়ে রান্না ঘরে চললাম। আপনি যা ভালো বুঝবেন সেটা করুন।”
পরাশরের মায়ের কথা শুনে সবাই হেসে ফেলে। এতক্ষণ বাড়িতে যেন ছোটো একটা ঝড় বয়ে গেল। দেবশ্রীর সামনে বসে ছোটো দুই সোফায় ডক্টর মিসবাহুল আর সুরঞ্জন বাবু পরস্পরের দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে ফেলেন। দেবশ্রী, জারিনা আর পরাশরকে কাছে ডেকে সবাইকে প্রনাম করতে বলেন। জারিনা আর পরাশর, সুরঞ্জন বাবু আর ডক্টর মিসবাহুল কে প্রনাম করার পরে দেবশ্রীকে প্রনাম করে।
রঞ্জিকা পরাশরকে বলে, “দিদিকে একদম সাষ্টাঙ্গ প্রনাম করিস, নাহলে এই যাত্রায় কিছু সম্ভব হতো না।”
দেবশ্রী, জারিনা আর পরাশরের মাথা চুম্বন করে আশীর্বাদ করেন। জারিনার মুখে হাসি ফুটে উঠেছে। পরাশর দেবায়নকে কি বলে ধন্যবাদ জানাবে ভেবে পায় না। ডক্টর মিসবাহুল আর সুরঞ্জন বাবু নিজেদের মধ্যে কথা বলতে শুরু করেন। চারপাশের বদ্ধ আবাহাওয়ায় একটা খুশির আমেজ। বসার ঘরের দেয়ালে দেবায়নের বাবা, সায়ন্তনের একটা বড় ছবি ঝুলান। দেবশ্রী একবার সেই ছবির দিকে জল ভরা চোখে তাকায়। তারপরে দেবশ্রী ছেলে মেয়েদের জিজ্ঞেস করে, তোরা সন্তুষ্ট? চার জনে দৌড়ে এসে দেবশ্রীকে জড়িয়ে ধরে।
Like Reply
পর্ব 19 সমাপ্ত
Like Reply
Written By pinuram

 
বিংশ পর্ব (#01)
 
কিছুদিন ধরে পায়েলের চরিত্রের বেশ পরিবর্তন ঘটেছে। আগে যেমন অনুপমার সাথে রোজ দিন গাড়িতে করে কলেজে আসত, সেটা অনেক কমিয়ে দিয়েছে। জিজ্ঞেস করলে বলে যে বাসে আসাই ঠিক কেননা সকালে অনুপমার বাড়ির নাম করে একটু আগেই বেড়িয়ে যায় আর অগ্নিহোত্রীর সাথে দেখা করে। অগ্নিহোত্রী ওকে নিতে আসে তাই অনুপমার সাথে কলেজে আসা কমিয়ে দিয়েছে। তবে বিকেলে কোন কোন দিন পায়েল, অনুপমার বাড়িতে কলেজ ফেরত চলে আসে, কোন কোন দিন একা একা কলেজ ছুটি হবার আগেই বেড়িয়ে পরে। অনুপমার বাড়িতে আড্ডা মারার সময়ে অঙ্কন মাঝে মাঝে ওদের সাথে গল্প করে। অঙ্কনের নতুন প্রেম, গরিমার কথা পায়েলকে জানায় অনুপমা। পায়েলের ব্যাপারে অঙ্কনকে একদিন জানায় অনুপমা। পায়েল ইদানীং ছোটো স্কার্ট, চাপা টপ ছেড়ে লম্বা স্কার্ট আর জিন্স পড়া শুরু করেছে। মাঝে মাঝে সালোয়ার কামিজ পরে কলেজে আসে। ওর এই পোশাক আশাকের পরিবর্তন সবার চোখে পরে। সবাই জিজ্ঞেস করলে লাজুক হেসে উত্তর দেয় যে অগ্নিহোত্রীর পছন্দের কাপড় পড়তে হয় এবং পায়েল তাতে বেশ খুশি। মাঝে মাঝে সপ্তাহ শেষে উধাউ হয়ে যায়, অনুপমাকে ফোনে বলে যদি ওর বাড়ি থেকে কেউ জিজ্ঞেস করে তাহলে যেন জানিয়ে দেয় যে পায়েল অনুপমার সাথেই আছে। পায়েলকে অগ্নিহোত্রীর কথা জিজ্ঞেস করলে পায়েল হাসি মুখে এড়িয়ে যায় সেই প্রশ্ন, জানিয়ে দেয়যে সময় মতন অগ্নিহোত্রীর সাথে দেখা করিয়ে দেবে, সেই সাথে পায়েল জানায় যে বাড়ি থেকে পালান হয়ত হবে না। অনুপমা একটু অবাক হয়ে যায় সেই সাথে খুশি হয় যে পায়েল তার পুরানো চিন্তা ছেড়ে দিয়েছে। পায়েল বলে যে ওর বাবা মা হয়ত ওদের সম্পর্ক মেনে নেবে না, তবে বিয়ের যখন সময় হবে তখন নিশ্চয় সবাই মেনে নেবে। কথাটা হেঁয়ালির মতন হলেও, অনুপমা খুঁচিয়ে কিছু জিজ্ঞেস করে না।
দেবায়ন, অঙ্কনের কথা জিজ্ঞেস করে। অনুপমা জানায় যে অঙ্কন প্রেমে পরে অনেক বদলে গেছে। শনি, রবি বাড়িতে থাকে না বললে চলে। অনুপমা বার কয়েক গরিমার সাথে দেখা করার কথা বলেছিল, অঙ্কন কথা ঘুরিয়ে দেয়। অনুপমা বলেছে যে ওর জন্মদিনে বাড়িতে ডাকতে। অঙ্কন জানিয়েছে যে জন্মদিনে গরিমাকে বাড়িতে ডেকে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দেবে।
বর্ষার শেষে, শরতের মিষ্টি আভাসে আকাশ বাতাস মুখরিত। ইতিমধ্যে দেবায়ন বাইক কিনেছে, অনুপমার ইচ্ছে ছিল একটা স্টাইলিস্ট বাইক, কিন্তু দেবায়নের পছন্দ ছিল একটা ভারী বাইকের তাই শেষ পর্যন্ত বুলেট কেনে। বেশ ভারী গাড়ি, রাস্তা কাঁপিয়ে কলেজ কাঁপিয়ে আওয়াজ করে বের হয়। লম্বা চওড়া ছেলে দেবায়ন, পেছনে অনুপমাকে নিয়ে কলেজ থেকে বের হলে অনেকের চোখ ওদের দিকে তাকিয়ে থাকে। এতদিন পরেও অনুপমা ওই ছেলে গুলোর আর মেয়েদের চাহনি উপভোগ করে।
সামনে পুজো, সবাই ঠিক করে যে পুজোতে একসাথে ঠাকুর দেখবে, একসাথে পুজোর জামা কাপড় কেনা কাটা করবে। অগত্যা দেবায়ন আর অনুপমার ঠিক সময় হয়ে আর ওঠে না। কলেজের পরে দৌড়াতে হয় সোজা কম্পিউটার ক্লাসে, শনি রবিবারেও ওদের ক্লাস থাকে। সঙ্গীতা, শ্রেয়া মন মরা হয়ে যায়। পায়েল জানায় যে ওর পুজোর শপিং করা হয়ে গেছে। অনেকদিনের বন্ধুত্ব অনুপমার আর পায়েলের। গত দুই বছরে পায়েল অনুপমাকে ছেড়ে পুজোর জামা কাপড় কিনতে যায়নি। এবারে পায়েলের কথা শুনে খুব আহত হয় অনুপমা। দেবায়ন অনুপমাকে বুঝিয়ে বলে যে পায়েল হয়ত ওর প্রেমিকের সাথে শপিং করে নিয়েছে, এতে দুঃখ পাওয়ার কিছু নেই। পায়েল নিশ্চয় চিরকাল অনুপমার পাশে থাকবে না। অনুপমা আহত হলেও বোঝে দেবায়নের কথা।
কলেজে পালিয়ে একদিন সব বন্ধু বান্ধবী মিলে পুজোর শপিং করতে বের হয়। পায়েল লাঞ্চের আগেই উধাও হয়ে গিয়েছিল। সবাই ওর কথা জানে যে পায়েল অগ্নিহোত্রীর প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে, একমাত্র সঙ্গীতা ছাড়া কেউ অগ্নিহোত্রীকে দেখেনি। ধিমান, ঋতুপর্ণাকে ডেকে নেয় সাথে। অনেকদিন পরে ঋতুপর্ণার সাথে সবার দেখা।
দেবায়ন ঋতুপর্ণাকে দেখেই বলে ওঠে, “ডারলিং অনেক দিন পরে তোমার সাথে দেখা হল, কেমন আছো?”
দেবায়নের স্বভাব সবার পেছনে লাগা। ঋতুপর্ণা কিছু উত্তর দেওয়ার আগেই দেবায়ন ওর গায়ে ধাক্কা দিয়ে বলে, “ডার্লিং ওইদিন ঠিক জমল না। হবে নাকি একবার আরো।”
লজ্জায় ঋতুপর্ণার গাল কান লাল হয়ে যায়। ধিমান মারতে ছোটে দেবায়নকে, “শালা তোর বউকে গিয়ে কর না।”
দেবায়ন বলে, “ওরে ছাগল, বাঁশের চেয়ে কঞ্চির দর বেশি। শালী সবসময়ে একটু বেশি মিষ্টি হয়, সে যদি ঋতুর মতন সেক্সি হয় তাহলে কথা নেই।”
শ্রেয়া একটু রেগে যায় ওদের কথা শুনে, অনুপমাকে বলে, “এই তোর বরকে সাবধান করে দে।”
অনুপমা হেসে দেবায়নের কান টেনে ধরে বলে, “তুমি থামবে না এখানে তোমাকে পিটাব।”
ধিমান হেস বলে, “পুচ্চিসোনা কিন্তু রেগে গেছে এবারে আর ঢুকাতে পারবে না পুচ্চু বাবু।”
দেবায়ন হেসে বলে, “কত মাল আছে, ঋতু আছে, সঙ্গীতা আছে। আর শ্রেয়ার কথাই নেই, রূপক ওকে ছেড়ে অন্য কারুর সাথে লাইন মারতে ব্যাস্ত।”
শ্রেয়া রেগে যায় ওই কথায় এমনিতে রূপক আসেনি বলে শ্রেয়া রেগেই ছিল, “ধুর বাল, রূপকের কথা ছাড়। আমাকে না জানিয়ে অন্য কোথাও গাড়ি গ্যারেজ করলে টায়ার ফাটিয়ে দেব।”
সবাই হেসে দেয় শ্রেয়ার কথা শুনে। এসপ্লানেডে ঘুরে ঘুরে ওরা সবাই শপিঙ্গে ব্যাস্ত হয়ে পরে। পুজোর মরশুমে এস্পালনেড ভিড়ে ঠাসা। সব দোকানে প্রচুর ভিড়, সারা কোলকাতা যেন উপচে এস্প্লানেডে এসে পড়েছে। মেয়েরা নিজেদের জামা কাপড় কেনার চেয়ে, গল্পে বেশি ব্যাস্ত। দশ খানা দোকান ঘোরার পরে কারুর একটা পোশাক পছন্দ হয়। প্রবাল চুপ করে সঙ্গীতার পেছন পেছন ব্যাগ হাতে দাঁড়িয়ে। ধিমান আর দেবায়ন নিজেদের মধ্যে হাসাহাসি করে প্রবালকে দেখে।
ধিমান প্রবালকে বলে, “বাল এবারে সঙ্গীতার কামিজের নিচে ঢুকে যা একেবারে।”
প্রবাল চোখ পাকিয়ে তাকায় দেবায়ন আর ধিমানের দিকে। দেবায়ন হেসে ফেলে ওর চোখ পাকান দেখে, “ওরে, ওই রকম ভাবে তাকাস না সোনা। বড্ড ভয় করছে আমাদের।”
সঙ্গীতা, “এই তোরা থামবি একটু।”
ধিমান, “কেন ডার্লিং? তোর মেনুপুষুকে আঘাত করেছি তাই এত লেগে গেল?”
সঙ্গীতা, “কেন, তোর ঋতুকে যখন দেবায়ন বলছিল তখন কেন মারতে ছুটেছিলি?”
অনুপমা সঙ্গীতাকে বলে, “ঠিক ত বলেছে। তুই যা তাঁর উলটো প্রবাল।”
সঙ্গীতা ম্লান হেসে, “শেষ পর্যন্ত তুই? আমি ভেবেছিলাম…”
অনুপমা, “আরে আরে না না… এখানে আবার কান্না কাটি জুড়ে দিস না। সামনে পুজো, এখানে বন্যা হয়ে গেলে মুশকিল আছে।”
আবার সবার মধ্যে হাসির কলতান ওঠে। রূপক কোন এক কাজের জন্য আসতে পারে না তাই নিয়ে শ্রেয়ার সাথে সকাল থেকে এক চোট রাগারাগি হয়ে গেছে।
অনুপমা শ্রেয়াকে জিজ্ঞেস করে, “হ্যাঁ রে রূপক কেন আসতে পারেনি? কি বলেছে তোকে?”
শ্রেয়া, “মাতৃ ভক্ত ছেলে, মাকে নিয়ে শ্যাম বাজার যাবে শপিং করতে।”
দেবায়ন, “গাঁড় মারিয়েছে। বিয়ের পরে দেখিস ভাই, মায়ের আঁচলের তলায় লুকিয়ে থাকবে।”
সঙ্গীতা হেসে বলে, “যারা মায়ের আঁচলের তলায় লুকায়, বিয়ের পরে তারা বৌয়ের আঁচলের তলায় লুকায়।” স্বর নামিয়ে অনুপমার কানেকানে বলে, “আমারটা দেখছিস না, একদম ভিজে বেড়াল। আমি যদি ওকে বলি, প্রবাল আমার এখুনি আম খেতে ইচ্ছে করছে তুই এনে দে যেখান থেকে পারিস। প্রবাল সারা ভারত ঘুরে এনে দেবে।”
ঋতুপর্ণা ধিমানের দিকে তাকিয়ে বলে, “আমার টা বাবা একদম উলটো। ও যা ভাববে সেটা না হলে রণ মূর্তি ধারন করে।”
এমন সময়ে শ্রেয়ার কাছে রূপকের ফোন আসে। রূপকের ফোন পেয়েই শ্রেয়া রেগে যায়, “যাও তোমার সাথে আমার কোন কথা বার্তা নেই। সবাই বয়ফ্রেন্ড নিয়ে এসেছে আর তুমি তোমার মায়ের সাথে শপিং কর।”
রূপক শ্রেয়াকে সান্ত্বনা দিয়ে বলে, “আরে বাবা, তোমার ড্রেস কিনতে আমি আর তুমি একসাথে যাবো। আচ্ছা একটা কথা বল না, পায়েল কি তোমাদের সাথে?”
শ্রেয়া, “হটাত পায়েলের কথা জিজ্ঞেস করলে? কি ব্যাপার?”
রূপক, “মনে হল পায়েল কে দেখলাম একটা ছেলের সাথে শপিং করছে তাই জিজ্ঞেস করলাম।”
শ্রেয়া, “তা হতে পারে। পায়েল আজকাল খুব উড়ছে। লাঞ্চের আগেই কলেজ থেকে বেড়িয়ে গেছে। বলল যে অগ্নিহোত্রীর সাথে শপিঙ্গে যাবে তাই ত অনুর মুখ শুকনো।”
শ্রেয়া উৎসুক হয়ে জিজ্ঞেস ওরে, “হ্যাঁ গো ওর সাথে যে ছেলেটা আছে সে দেখতে কেমন? পায়েলের চয়েস নিশ্চয় ভালো হবে।”
সঙ্গীতা মুখ বেঁকিয়ে বলে, “অগ্নিহোত্রী দেখতে একটা বাঁদর।”
রূপক, “দূর থেকে দেখলাম। ফর্সা গায়ের রঙ, ভালোই দেখতে মনে হয়। আমার দিকে পেছন ফিরে দাঁড়িয়ে ছেলেটা। ওর সামনে দাঁড়িয়ে পায়েল। তবে মনে হল ছেলেটার বয়স পায়েলের চেয়ে কম।”
অনুপম আর সঙ্গীতা মুখ চাওয়াচায়ি করে। সঙ্গীতা শ্রেয়ার কাছ থেকে ফোন নিয়ে রূপককে জিজ্ঞেস করে, “সঙ্গের ছেলেটা কালো নয়? ওর চুল একটু লম্বা হবে।”
রূপক জানায়, “না ত, কেন অগ্নিহোত্রী কি কালো? তাহলে অগ্নিহোত্রী নয় এই ছেলে অন্য কেউ। ছেলেটার বয়স মনে হয় পায়েলের চেয়ে কম হবে।”
সঙ্গীতা, “ছেলেটা অগ্নিহোত্রী হতেই পারে না।”
অনুপমার দিকে দেখে সবাই। অনুপমা বলে, “আমাকে কেন দেখছিস তোরা? আমি প্রেম করেছি নাকি? দাঁড়া আমি পায়েল কে একটা ফোন করি।”
অনুপমা পায়েলকে ফোন করে, পায়েলের ফোন বেজে যায় কিন্তু পায়েল ফোন উঠায় না।
রূপক বলে, “হ্যাঁ, ফোন বের করেছে কিন্তু ফোন কেটে দিল মনে হল।”
শ্রেয়া, “হবে ওর কোন ভাইয়ের সাথে শপিং করতে বেড়িয়েছে। এত টেন্সান নিচ্ছিস কেন তোরা?”
রূপক হেসে ফেলে শ্রেয়ার কথা শুনে, “আরে বাল, ভাইয়ের সাথে একদম গায়ে গা লাগিয়ে, হাতের আঙুল পেঁচিয়ে দাঁড়িয়ে থাকবে নাকি? ধুর ওটা অন্য কেউ, ওর নতুন কোন বয়ফ্রেন্ড হবে। থাক ছাড়ো অসব কথা তোমাদের শপিং কেমন চলছে।”
অনুপম আহত হয় রূপকের কথা শুনে। রূপককে বলে এগিয়ে গিয়ে পায়েলের সাথে দেখা করতে। রূপক ফোন হাতে এগিয়ে যায় পায়েলের দিকে, ততক্ষণে পায়েল ওর সাথের ছেলেটাকে নিয়ে বাইকে করে বেড়িয়ে যায়। রূপক ওদের বলে, “ধুর বাল, পায়েল চলে গেল বাইকে।”
অনুপমা বড় আহত হয় পায়েলের ব্যাবহার শুনে। শ্রেয়া বলে, “ছাড় পায়েলকে, আমরা বাকি শপিং সেরে ফেলি। ও কার সাথে কি করছে সেটা সময় হলে জানা যাবে।”
সঙ্গীতা অনুপমা, দুইজনে চিন্তিত হয়ে বলে, “পায়েল এটা ভালো করছে না। আমাকে বলল অগ্নিহোত্রীর সাথে প্রেম করছে, কিন্তু ছেলেটা অগ্নিহোত্রী নয়। কি যে করছে মেয়েটা, ওর কপালে শেষ পর্যন্ত কি হবে ভগবান জানে।”
অনুপমা বাকি বন্ধুদের জানিয়ে দেয় যে ওর শরীর ভালো লাগছে না তাই তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরতে চায়। সবাই একটু অবাক হয়ে দেবায়নকে প্রশ্ন করে। দেবায়ন জানায় যে সকালে তাড়াতাড়ি বাড়ি থেকে বেড়িয়েছিল তাই ব্রেকফাস্ট করেনি, কিছু দিন থেকে অনুপমার প্রেসার একটু লো চলছে তাই শরীর খারাপ।
দেবায়ন অনুপমাকে নিয়ে বাড়ির উদ্দশ্যে রওনা দেয়। অনুপমা সারাটা রাস্তা মুখ ভার করে দেবায়নের পেছনে বসে থাকে। পায়েলের সাথের ছেল্টা যদি অগ্নিহোত্রী না হয়ে অন্য কেউ হয় তাহলে পায়েলের এত গোপনীয়তা কেন? শরতের ঠাণ্ডা বাতাসে অনুপমা, দেবায়নকে পেছন থেকে নিবিড় করে জড়িয়ে ধরে। বাইকে যেতে যেতে পিঠের উপরে চেপে যায় অনুপমার নরম শরীর। দেবায়নের পিঠ নরম তুলতুলে স্তনের পরশে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। দেবায়ন ঘাড় ঘুরিয়ে অনুপমার গালে একটা ছোটো চুমু খেয়ে জিজ্ঞেস করে এই বারে পুজোতে কোথায় বেড়াতে যেতে চায়। অনুপমা হেসে জানিয়ে দেয় যে এবারে কোথাও বেড়াতে যাবার পরিকল্পনা নেই, সবাই মিলে এইবারে পুজোতে আনন্দ হই হুল্লোড় করবে। অনুপমা জানায় যে, ওদের বাড়ির অদুরে ম্যাডক্স স্কয়ার, বলা যেতে পারে ওদের পাড়ার পুজো। ওর বাবা ওই পুজোতে অনেক টাকা চাদা দেয় সেই সাথে ক্লাবের সভাপতি। এবারে সারাদিন পুজোর প্যান্ডেলে বসবে আর সব বন্ধুদের নিয়ে আড্ডা মারবে। অনুপমা বলে একটা গাড়ি করে অষ্টমীর দিনে সব বন্ধু বান্ধবী ঠাকুর দেখতে বের হলে বেশ ভালো হয়। সেই শুনে দেবায়ন বেশ খুশি। পুজোর সময়ে সবার বাড়িতে একটু ছাড় পাওয়া যায়, দেবায়ন আর অনুপমার বাড়ি থেকে কোন রকমের অসুবিধে হবে না।
বাইক পন্ডিতিয়া থেকে ঘুরে অনুপমাদের বাড়ির দিকে ঢোকে। অনুপমা অনুরোধ করে একবার ম্যাডক্স স্কয়ারে নিয়ে যেতে, মাঠের মাঝে দুর্গা পুজোর প্যান্ডেল বানানো শুরু হয়ে গেছে। অনুপমাকে সবাই চেনে, ওই খানে। দেবায়নের সাথে অনুপমাকে দেখে একটা লোক হন্তদন্ত হয়ে এগিয়ে আসে। অনুপমা সেই ভদ্রলোককে হাঁপাতে দেখে কারন জিজ্ঞেস করে।
আগন্তুক, রঞ্জিত দাস, ক্লাবের মেম্বার, হাঁপাতে হাঁপাতে অনুপমাকে বলে, “হ্যাঁ রে, বিশাল কান্ড ঘটে গেছে। তুই তাড়াতাড়ি বাড়ি যা। আজকে মনে হয় সোমেশদা র কপালে দুঃখ আছে।”
অনুপমা আর দেবায়ন অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে, “কেন? কার কি হয়েছে?”
 
[+] 1 user Likes Mr Fantastic's post
Like Reply
একটা ছোটো চুমু খেয়ে জিজ্ঞেস করে এই বারে পুজোতে কোথায় বেড়াতে যেতে চায়। অনুপমা হেসে জানিয়ে দেয় যে এবারে কোথাও বেড়াতে যাবার পরিকল্পনা নেই, সবাই মিলে এইবারে পুজোতে আনন্দ হই হুল্লোড় করবে। অনুপমা জানায় যে, ওদের বাড়ির অদুরে ম্যাডক্স স্কয়ার, বলা যেতে পারে ওদের পাড়ার পুজো। ওর বাবা ওই পুজোতে অনেক টাকা চাদা দেয় সেই সাথে ক্লাবের সভাপতি। এবারে সারাদিন পুজোর প্যান্ডেলে বসবে আর সব বন্ধুদের নিয়ে আড্ডা মারবে। অনুপমা বলে একটা গাড়ি করে অষ্টমীর দিনে সব বন্ধু বান্ধবী ঠাকুর দেখতে বের হলে বেশ ভালো হয়। সেই শুনে দেবায়ন বেশ খুশি। পুজোর সময়ে সবার বাড়িতে একটু ছাড় পাওয়া যায়, দেবায়ন আর অনুপমার বাড়ি থেকে কোন রকমের অসুবিধে হবে না।

বাইক পন্ডিতিয়া থেকে ঘুরে অনুপমাদের বাড়ির দিকে ঢোকে। অনুপমা অনুরোধ করে একবার ম্যাডক্স স্কয়ারে নিয়ে যেতে, মাঠের মাঝে দুর্গা পুজোর প্যান্ডেল বানানো শুরু হয়ে গেছে। অনুপমাকে সবাই চেনে, ওই খানে। দেবায়নের সাথে অনুপমাকে দেখে একটা লোক হন্তদন্ত হয়ে এগিয়ে আসে। অনুপমা সেই ভদ্রলোককে হাঁপাতে দেখে কারন জিজ্ঞেস করে।
আগন্তুক, রঞ্জিত দাস, ক্লাবের মেম্বার, হাঁপাতে হাঁপাতে অনুপমাকে বলে, “হ্যাঁ রে, বিশাল কান্ড ঘটে গেছে। তুই তাড়াতাড়ি বাড়ি যা। আজকে মনে হয় সোমেশদা র কপালে দুঃখ আছে।”
অনুপমা আর দেবায়ন অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে, “কেন? কার কি হয়েছে?”
 
বিংশ পর্ব (#02)
রঞ্জিত বলে, “আরে আর বলিস কেন। তোর ভাই, অঙ্কন আর ওই সান্যাল ডাক্তারের মেয়ে পায়েল। কিছুক্ষণ আগে ওরা দুইজনে এখানে বসে গল্প করছিল। তোর ভাই আর পায়েল, দুইজনকে সেই ছোটো বেলা থেকে দেখে এসেছি। এই ত প্রেম করার বয়স, করুক না কে মানা করেছে। কিন্তু শালা, ওই বকাটে বাঞ্চোত শরত দে, সান্যাল ডাক্তারের পোঁদে তেল মারার জন্য ডাক্তারকে সব বলে দিয়েছে। তুই তাড়াতাড়ি বাড়ি যা, কমলেশ মেয়েকে ধমক ধামক দিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছে আর তোদের বাড়ি গেছে। আজকে মনে হয়, সোমেশদাকে পারলে খেয়ে ফেলবে।”
অনুপমা আর দেবায়ন সব কিছু বুঝে যায়। দেবায়ন বাইকে চড়া মাত্রই অনুপমার কাছে ওর মায়ের ফোন আসে, তাড়াতাড়ি বাড়িতে আসার জন্য বলে। দেবায়ন তাড়াতাড়ি বাড়ির দিকে বাইক ছুটিয়ে দেয়। অনুপমা রাগে দুঃখে দেবায়নের কাঁধ খামচে ধরে থাকে। কোনোরকমে বাইক দাঁড় করিয়ে দেবায়ন দৌড় লাগায় বাড়ির দিকে। অনুপমা হন্তদন্ত হয়ে ছুটে যায় বসার ঘরে। বসার ঘরে ঢোকা মাত্র চোখ যায় সোফায় বসা বাবার দিকে। পারমিতা এক দিকে ছেলের হাত ধরে দাঁড়িয়ে। সবার চোখ মুখ থমথমে, কমলেশ নামের ঝড় বয়ে চলে গেছে ওদের বাড়ি ঢোকার আগেই।
দেবায়ন আর অনুপমাকে দেখে, মিস্টার সেন গর্জে ওঠেন, “দ্যাখ তোর ভাইয়ের আর বান্ধবীর কান্ড। সাড়া পাড়ায় আমার মুখ ডুবিয়ে তবে ছাড়ল। এইবারে পুজোতে ভেবেছিলাম কোলকাতায় থাকব, কিন্তু ক্লাবের সবাই জেনে যাবে। কমলেশ যাতা বলে গেল আমাকে। আর কি বলি বল, আমি কি মানা করেছিলাম ওকে? শেষ পর্যন্ত কি না নিজের থেকে পাঁচ বছরের বড় একটা মেয়েকে প্রেম করেছে? পিটিয়ে ছাল খুলে দেওয়া উচিত। বাইক চাই, বাইক চাই, নাচানাচি দেখো ছেলের। ক্লাস ফাঁকি দিয়ে, কোচিং ফাঁকি দিয়ে শুধু প্রেম করে বেড়িয়েছে।”
অঙ্কন চুপ করে ওর মায়ের পেছনে দাঁড়িয়ে। দেবায়ন মিস্টার সেনকে শান্ত করে বলে, “আপনি একটু শান্ত হন, আগে বলুন পায়েলের বাবা কি বলেছে আপনাকে?”
মিস্টার সেন, “আচ্ছা তুমি বল, আমি কি তোমাদের কোনদিন মানা করেছি? তুমি আর অনু তোমার মায়ের সাথে মুসৌরি বেড়াতে গেলে, আমি মানা করেছিলাম? একবার অন্তত ওর মাকে জানাতে পারত যে ছেলে প্রেম করছে। প্রেম করেছে, সেটা বড় কথা নয় কিন্তু একটু দেখে শুনে করবে ত? অত বড় মেয়ে তার উপরে কমলেশ। আমি কমলেশকে অনেক দিন ধরে চিনি। একদম ইতর মনোবৃত্তির মানুষ। ডাক্তার হলে কি হবে মুখের ভাষা, মানসিকতা একদম ভালো নয়।”
অনুপমা অঙ্কনকে জিজ্ঞেস করে, “কি রে তোদের এতদিন ধরে জিজ্ঞেস করে গেলাম তোরা একটা উচ্চবাচ্চ পর্যন্ত করলি না।”
অঙ্কন চুপ করে পারমিতার পেছনে দাঁড়িয়ে ওর মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে। পারমিতা মেয়ের দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে বলে, “কি বলছিস তুই? পায়েল আর অঙ্কনের ব্যাপারে তুই জানতিস না?”
অনুপমা কাষ্ঠ হেসে উত্তর দেয়, “জানলে কি আর তোমার কাছে গরিমার কথা বলতাম?”
অনুপমা অঙ্কনকে বলে, “তুই উপরে যা, পরে তোর সাথে কথা হবে।”
অঙ্কন উপরে না গিয়ে অদুরে দাঁড়িয়ে থেকে ওদের কথা শোনে।
মিস্টার সেন বলেন, “কমলেশ খুব রেগে মেগে ঘরে ঢুকে তোলপাড়। আমার ছেলে নীচ, আমার ছেলে ইতর, আমরা ব্যাভিচারি। আমাদের নাকি আত্মসন্মান বোধ কিছু নেই, টাকা পয়সা আছে বলে সব কিছু করতে পারি আমরা। আমার মেয়ে ওর মেয়ের মাথা খেয়েছে। অঙ্কনকে ত প্রায় কান ধরে টানতে টানতে বাড়িতে নিয়ে এসেছিল। আমি কিছু বলার আগেই যাতা বলতে শুরু করে দেয়।”
পারমিতা মাথায় হাত দিয়ে সোফার উপরে বসে পরে, “সব ঠিক আছে, ছেলে প্রেম করেছে পর্যন্ত ঠিক আছে, কিন্তু পায়েল?”
দেবায়নের দিকে তাকিয়ে বলে, “না পায়েল নয়। তুমি ওকে কিছু করে বুঝাতে চেষ্টা কর দেবায়ন। পায়েল নয়, পায়েলকে মেনে নিতে খুব কষ্ট হচ্ছে।”
অনুপমা আর দেবায়ন পরস্পরের মুখ চাওয়াচায়ি করে। পারমিতার কথার অন্তর্নিহিত অর্থ ওদের অজানা নয়। দেবায়নের সাথে পায়েলের আর অনুপমার সম্পর্কে সম্পূর্ণ অবগত পারমিতা। সেই মেয়েকে বাড়ির বউমা হিসাবে মানতে বড় কষ্ট হয়।
নিরুপায় অনুপমা পারমিতাকে প্রবোধ দিয়ে বলে, “মা, আমাদের একটু ভাবতে দাও। সময় সব ঠিক করে দেবে, দাঁড়াও দেখি আগে পায়েল আর অঙ্কনের সাথে কথা বলে।”
পারমিতা, দেবায়ন আর অনুপমার দিকে কাতর কণ্ঠে বলে, “যাই কর, অঙ্কন প্রেম করেছে ভালো কথা কিন্তু আমি পায়েলকে ঠিক অঙ্কনের জন্য মেনে নিতে পারছি না। পায়েল ওর চেয়ে অনেক বড় আর পায়েলের ব্যাপার আমি সব জানি।”
অঙ্কন এগিয়ে এসে মাথা নিচু করে বলে, “দেখো তোমাদের জানাই নি সেটা আমার ভুল, তার ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। তবে পায়েলকে আমি ভালোবাসি আর পায়েল আমাকে ভালোবাসে। আমি জানতাম মা, দিদি, দেবায়নদা কেউ আমাদের এই সব মেনে নেবে না। তাই আমরা ঠিক করে নিয়েছিলাম যে আগামী পাঁচ বছরের জন্য দুইজনে লুকিয়ে রাখব আমাদের সম্পর্ক। এত তাড়াতাড়ি যে ধরা পরে যাবো সেটা স্বপ্নেও ভাবিনি।”
অঙ্কনের কথা শুনে মিস্টার সেন রেগে যান, “তুই একটা নচ্ছার ছেলে। পড়াশুনার নাম নেই তোর। রক্তের দোষ আর কোথায় যাবে। ভালো হত যদি …”
কথাটা শেষ করল না মিস্টার সেন, চোখে মুখে ফুটে ওঠে এক অব্যক্ত বেদনা। সঙ্গে সঙ্গে বুঝতে পেরে চুপ করে যান, কথাটা বলে খুব ভুল করেছে মিস্টার সেন।
পারমিতার চোখ ছলছল করে ওঠে মিস্টার সেনের সেই অব্যাক্ত বাক্য ভেবে। অনুপমা ওর বাবাকে ধমকে ওঠে, “তুমি কি বলছ ভাইকে? একটু ভেবে চিন্তে কথা বল।”
পারমিতা ছলছল চোখে মিস্টার সেনকে বলে, “এতোদিন তোমার ছেলে খুব ভালো ছিল তাই না? আর একটা কথা বলবে না তুমি আমার ছেলের সম্বন্ধে।”
মিস্টার সেন বুঝে যান যে অব্যাক্ত ওই বাক্যবাণ বড় নিষ্ঠুর, মুখ থেকে বের হয়ে যায়নি সেটাই বড় কথা। অঙ্কনের দিকে তাকিয়ে মিস্টার সেন গম্ভির কণ্ঠে বলেন, “তোকে উপরে যেতে বলা হয়েছে তুই এখানে দাঁড়িয়ে কি করছিস?”
অঙ্কন মাথা নিচু করে বলে, “বাবা কি বলতে চাইছে আমার রক্তের ব্যাপারে আমি জানতে চাই।”
সবাই নির্বাক হয়ে অঙ্কনের দিকে তাকিয়ে থাকে। পরিস্থিতির সামাল দেওয়ার জন্য দেবায়ন অঙ্কনকে বলে, “আরে বাবা কিছু না, রক্তের কথা কিছু না। তুই জানিস কাকু রাগের মাথায় মাঝে মাঝে উলটো পাল্টা বলে ফেলে। ব্যাপার হচ্ছে, তুই যখন খুব ছোটো ছিলিস, তখন তোর ব্লাডে হিমোগ্লোবিন কম হয়ে যায় একবার। সেই সময়ে বেশ কয়েক বোতল রক্ত চড়াতে হয়েছিল। সেসব কথা তোর মনে নেই। ওই রক্তের কথা বলা হচ্ছে আর কিছু না।”
অঙ্কন চুপ করে দেবায়নের দিকে তাকিয়ে বলে, “মা বাবাকে বলতে আমার কোন ভয় ছিল না। শুধু মাত্র দিদিকে ভয় ছিল বলে আমরা লুকিয়ে ছিলাম। আমি ভেবেছিলাম ওর কলেজ শেষ হলে আর আমার কলেজ শুরু হলে তারপরে আমরা তোমাদের আমাদের ব্যাপারে বলব। আমি পায়েলকে ভালোবাসি, ওকে ছাড়া আমি থাকবো না।”
ভাইয়ের থমথমে মুখ দেখে অনুপমা বলে, “তুই নিজের ঘরে যা, না হলে তুই আজকে দেবায়নের সাথে ওর বাড়ি চলে যা। আমরা আগে এই ব্যাপার নিয়ে আলোচনা করে দেখি। আমি জানি কমলেশ কাকু যখন জেনে গেছে পায়েলের এই ব্যাপার তখন ওর ওপরে খুব অত্যাচার হবে। দেখি কি করা যায়।”
মিস্টার সেন অঙ্কনের দিকে করুন চোখে তাকিয়ে বলেন, “তুই উপরে যা। পরে তোর সাথে কথা বলব।”
মিস্টার সেন মাথায় হাত দিয়ে চুপ করে বসে থাকেন। পারমিতা, মিস্টার সেনের পাশে বসে শান্ত হতে অনুরোধ করে। অনুপমা অথবা দেবায়নের মাথা কিছু কাজ করছে না, কি করবে কিছুই ভেবে পায় না দুইজনে। আগমনীর ঢাকের বাদ্যির জায়গায় বাড়ির পরিবেশ থমথমে হয়ে যায়। দেবায়ন, অঙ্কনকে বলে নিজের কাপড় গুছিয়ে নিতে। পারমিতা আর অনুপমা করুন চোখে দেবায়নের দিকে তাকিয়ে থাকে। অঙ্কন উপরে নিজের ঘরে চলে যাবার পরে দেবায়ন বলে, অঙ্কনের সাথে কথা বলে বিচার করে ওদের জানিয়ে দেবে। পারমিতা কিছুতেই পায়েলকে বাড়ির বউমা করতে নারাজ। অনুপমা মাথায় হাত দিয়ে বসে। মিস্টার সেন চুপ করে সোফায় বসে ড্রিঙ্ক করতে শুরু করে দেন।
দেবায়ন কিছু পরে অঙ্কনকে নিয়ে নিজের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। অনুপমা আর পারমিতা দুইজনে দেবায়নকে বারবার বলে যে করে হোক অঙ্কনকে বুঝাতে। দেবায়ন বলে যে চেষ্টা করবে, আগে অঙ্কনের কাছে সম্পূর্ণ গল্প শুনতে চায় দেবায়ন। অনুপমাদের বাড়ি থেকে বের হয়ে দেবায়ন ওর মাকে ফোন করে জানিয়ে দেয় যে সাথে অঙ্কন আসছে। অঙ্কনের কথা শুনে দেবশ্রী একটু অবাক হয়ে কারন জিজ্ঞেস করে। উত্তরে দেবায়ন জানায় যে বাড়িতে ফিরে সব কিছু মাকে খুলে বলবে।
কয়েকদিন পরেই মহালয়া আর তার আগেই এই রকম একটা কান্ড ঘটে যাওয়াতে দেবায়ন বেশ চিন্তিত। অঙ্কন চুপ করে পেছনে বসে, দেবায়নকে বেশ সমিহ করে চলে তাই বুকের মধ্যে দুরুদুরু শুরু হয়ে যায় ওর। বাড়িতে নিয়ে গিয়ে কি জিজ্ঞেস করবে, কি করবে কিছুই ভেবে পায় না।
বাড়িতে ঢুকতেই দেবশ্রী জানিয়ে দেয় যে পারমিতা ফোনে সব কিছু জানিয়ে দিয়েছে। দেবশ্রী একবার দেবায়নের দিকে তাকায় একবার অঙ্কনের দিকে। অঙ্কন চুপ করে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকে। দেবশ্রী ওর মনের অবস্থা সামাল দেবার জন্য হাত মুখ ধুয়ে খেতে বসতে বলে। অঙ্কনকে দেবায়নের রুমের মধ্যে পাঠিয়ে দিয়ে দেবশ্রী দেবায়নকে পায়েলের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করে। উত্তরে দেবায়ন জানায় যে পায়েল ওদের কলেজের বান্ধবী। দেবশ্রী বলে যে পারমিতা খুব আহত হয়েছে পায়েল আর অঙ্কনের ব্যাপারে জেনে। বারবার বলে দিয়েছে যে ছেলেকে কোন ভাবে বুঝিয়ে যেন পায়েলের থেকে দুরে সরিয়ে রাখে। দেবায়ন নিজের ঘরের দরজার দিকে তাকিয়ে দেখে যে অঙ্কন ওখানে দাঁড়িয়ে। অঙ্কনের থমথমে চেহারা দেখে দেবায়ন ভাবনায় পরে যায়। মাকে বলে, আগে অঙ্কনের সাথে কথা বলে তারপরে কোন এক সিদ্ধান্ত নেবে। অঙ্কন জানিয়ে দেয় যে কোন রকম উলটো সিদ্ধান্ত মানতে নারাজ। দেবায়নের চোয়াল শক্ত হয়ে যায় অঙ্কনের কথা শুনে। অঙ্কনের অবস্থা সঙ্গিন দেখে দেবশ্রী বলে যে আগে খাওয়া দাওয়া সারতে তারপরে সব কিছু জেনে বুঝে একটা বিচার করা যাবে।
খাওয়ার পরে দেবায়ন অঙ্কনকে নিয়ে নিজের রুমে চলে যায়। ঠিক সেই সময়ে অনুপমার ফোন আসে। চিন্তিত অনুপমা জানায় যে পায়েলের ফোন বন্ধ, পায়েলের বাড়ির ফোনে ফোন করেছিল কিন্তু কেউ ফোন তোলে নি। ওইদিকে মিস্টার সেন আর পারমিতা বেঁকে বসেছেন পায়েলের ব্যাপারে। অনুপমা, ওর মাকে অনেক বুঝাতে চেষ্টা করেছে, যে পায়েল মেয়ে হিসাবে খারাপ নয়। মন ভালো, মিষ্টি মেয়ে। বাড়ির প্রবল চাপে ওকে বাড়ির বাইরে উশ্রিঙ্খল করে দিয়েছে। বাড়িতে ওর বাবা মায়ের কাছে একটু ছাড় পেলে হয়ত পায়েল এতটা উশৃঙ্খল হয়ে উঠত না। কিন্তু পারমিতা কিছুই মানতে রাজি নয়। অঙ্কনের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে, দেবায়ন জানায় যে অঙ্কনের সাথে এখন কথা বলা হয়ে ওঠেনি।
রাতে অঙ্কনকে দেবায়ন জিজ্ঞেস করে পায়েলের কথা। অঙ্কন চুপ করে থাকে, দেবায়নের বাঘের মতন কণ্ঠ স্বর শুনে গলা শুকিয়ে যায়। দেবায়ন স্বর নরম করে আশস্ত করে জানিয়ে দেয় যে ওর বাবা মা সবাই পায়েলের বিরুদ্ধে। অঙ্কন কি বলবে ভেবে পায় না। দেবায়ন ওদের গল্প শোনার জন্য তৎপর হয়ে ওঠে, অঙ্কনকে বলে যে পুরো কাহিনী জানালে ওর জন্য কিছু করতে পারে।
বুক ভরে শ্বাস নেয় অঙ্কন, “তুমি সত্যি বলছো?”
দেবায়ন, “তোর গার্লফ্রেন্ড গরিমা, কেউ আছে কি ওই নামে? আর পায়েল যে আমাদের অগ্নিহোত্রীর কথা বলে বেড়াতো, কে সে লোক? সঙ্গীতার কাছে শুনেছি যে পায়েলের পিসতুতো দাদার বন্ধু, মানে অগ্নিহোত্রী আছে।”
অঙ্কন বলে, “অগ্নিহোত্রী আর গরিমা, দুই জনেই বর্তমান। তবে আমার গার্লফ্রেন্ড গরিমা নয়। গরিমা আমার ভালো বান্ধবী, প্রনবেশের গার্ল ফ্রেন্ড। আমাদের কাজে সাহায্য করার জন্য ওকে আমি সব কথা জানিয়েছিলাম। তোমাদের সামনে কাউকে প্রস্তুত করতে হত তাই গরিমা আমার গার্ল ফ্রেন্ড সাজতে রাজি হয়। আমি ওকে জানিয়েছিলাম যে এই খেলা হয়ত বেশ কিছুদিন খেলতে হবে। গরিমাকে সন্তুষ্ট করতে ওকে একটা ল্যাপটপ কিনে দিতে হয়েছে। দিদি আমাকে সেই টাকা দিয়েছিল।”
দেবায়ন, “হুম, গরিমার কথা বুঝলাম। কিন্তু তুই কি করে পায়েলের প্রেমে পড়লি? একটু খোলসা করে বল, কিছু লুকাস না।”
দেবায়নের ঠোঁটে বাঁকা হাসি ফুটে ওঠে, “আমি জানি তুই বড় হয়ে গেছিস, আর পায়েল কি রকম মেয়ে সেটাও আমার অজানা নয়।”
অঙ্কন বলতে শুরু করে ওদের গল্প। পায়েল পাড়ার মেয়ে, ছোটো বেলা থেকে অঙ্কন দেখে আসছে তবে আগে কোনদিন পায়েলকে দেখে ওর মনে কিছু হয়নি। প্রথম যেদিন পায়েল ওর দিদির সাথে ওদের বাড়িতে আসে সেদিনও পায়েলকে দেখে ওর কিছু মনে হয়নি। দিদির বাকি বান্ধবীরা বাড়িতে আসত, গল্প করত কিন্তু তাদের মধ্যে পায়েলকে ওর বড় ভালো লাগে। ভালো লাগার কারন, পায়েলের খোলামেলা পোশাক আর নধর দেহের গঠন। হাঁটতে চলতে যেন এক ঝঙ্কার বেজে উঠত অঙ্কনের চোখের সামনে। ওই ঝঙ্কারের আর মত্ত চালে পায়েলের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে যায় অঙ্কন। কিন্তু পায়েল ওর চেয়ে বয়সে অনেক বড় আর দিদির বান্ধবী তাই কোনদিন মুখ ফুটে পায়েলকে নিজের মনের কথা জানায় নি। দিদির সাথে মাঝে মাঝে পায়েল ওদের বাড়িতে থেকে যেত, রাতে গল্প করার সময়ে অথবা কোন আছিলায় পায়েলের সাথে গল্প করত। তখন পায়েলের হাবভাবে অঙ্কন বুঝতে পারত যে ওর প্রতি পায়েলের একটু সংবেদনশীল। কিন্তু বহুদিন ধরে দুই জনে শুধু চোখের দেখা আর কথা বলা ছাড়া নিজেদের মনের কথা কাউকে ব্যাক্ত করেনি।
 
বিংশ পর্ব (#03)
পায়েলের বাবা, ডক্টর কমলেশ সান্যাল খুব বদরাগী প্রকৃতির লোক। পায়েলের মা, সুজাতা, সেই তুলনায় অনেক নিরীহ আর রক্ষণশীল মহিলা। পায়েল অনেক বড় বয়স পর্যন্ত বাবা মাকে ঝগড়া করতে দেখেছে, এমনকি ওর বাবা ওর মায়ের গায়ে হাত তোলে, সেও দেখেছে। বাবাকে বাধা দিতে গেলে পায়েল অনেক বার মার খেয়েছে। কোন কারন ছাড়াই ওর বাবা ওর মাকে মারত, তরকারিতে নুন হলেও মারত, নুন না হলেও মারত। টাকা পয়সা সব কিছুই ছিল, কিন্তু কেন ওর মাকে ওর বাবা প্রায়দিন মারধোর করত সেই কারন ওর অজানা। একদিন পায়েল ওর মাকে জিজ্ঞেস করেছিল, ওর মা বলেছিল যে ওর বাবা বদরাগী, বাইরের কারুর কথা বলা, মেলা মেশা পছন্দ করে না, কোন কিছুতেই ভালো দেখে না। পায়েল কলেজে পড়ার সময় থেকেই আকাশে ওড়ার স্বপ্ন দেখত, বাড়ির চার দেয়ালের বাইরে উন্মুক্ত পৃথিবীতে বিচরন করার স্বপ্ন দেখত। কিন্তু ওর বাবার ভয়ে কলেজে থাকতে কোনদিন সেই স্বপ্ন পূরণ করতে পারেনি। কোন ছেলের সাথে কথা বলা দুরের কথা, কারুর দিকে তাকালেই ওর বাবা যেন ওকে গিলে ফেলবে এমন করত। তাও পায়েল সেই সময়ে লুকিয়ে চুরিয়ে প্রেম করেছে। অচেনা ছোঁয়ার কিছু স্বাদ নিয়েছে। পায়েল ছোটবেলা থেকে মেয়েদের কলেজ, মহাদেবী বিড়লাতে দিদির সাথে পড়াশুনা করেছে। সেই সময় থেকেই দিদির আর পায়েলের চেনাজানা। কলেজে পড়ার সময়ে থেকে দিদি, অনুপমার সাথে পায়েলের বন্ধুত্ত প্রগাড় হয়ে ওঠে। দিদির খোলামেলা পোশাক আশাক দেখে পায়েল উন্মুক্ত আকাশে ওড়ার স্বপ্ন দেখে। দিদির সাহায্যে পায়েল প্রথম স্বাধীনতার স্বাদ পায়, প্রথম ডিস্কো থেকে যাওয়া, প্রথম কোন বড় রেস্টুরেন্টে খাওয়া, মন খুলে কেনাকাটা করা সব দিদির জন্য করে। পায়েলের এই খোলামেলা পোশাক, নধর গঠনের জন্য অনেক ছেলেরা ওকে কাছে পেতে চেয়েছে। পায়েল সেই সময়ে উড়তে উড়তে অনেকের কাছে ধরা দিয়েছে। পায়েল জানত ওর বাবা যদি এই স্বভাবের কথা জানতে পারে তাহলে ওকে আস্ত রাখবে না, তাই পায়েলের বেশির ভাগ পোশাক দিদির আলমারিতে রেখে দিত। কলেজে যাবার আগে ওদের বাড়িতে এসে পোশাক পালটে তবে দিদির সাথে কলেজ যেত। বাধা অবস্থায় থাকতে থাকতে পায়েল হটাত করে মুক্তির স্বাদ পায় দিদির হাত ধরে, তাই পায়েল একটু বেশি রকমের উশ্রিঙ্খল হয়ে যায়। যদিও অঙ্কন ওর সব উশ্রিঙ্খলতার কথা জানে না, তবে জানে যে পায়েল মাঝে মাঝে মদ খেয়ে মাতাল হয়ে বাড়িতে ফিরত দিদির সাথে। সেদিন আর পায়েল নিজের বাড়িতে যেত না, দিদি ওকে নিজের কাছে রেখে দিত। এক পাড়ায় বাড়ি, তাই দিদির সাথে মেলামেশা করাতে ওর বাবা ওকে বিশেষ কিছু বলত না। পায়েল বলেছিল যে কোনদিন যদি কাউকে ওর মনে ধরে তাহলে তার সাথে বাড়ি থেকে পালিয়ে চলে যাবে আর ওর মাকে সাথে নিয়ে যাবে। বাড়ির ওই লোহার খাঁচা থেকে মুক্ত হতে চেয়েছিল কিন্তু ওর অদৃষ্টে মনের মতন মানুষ জুটল না। সবাই ওকে শুধু ভোগের বস্তু হিসাবে ব্যাবহার করে গেছে।
দেবায়ন চুপ করে অঙ্কনের কথা শুনে যায়। পায়েলের এই কাহিনী অনুপমা ওকে আগেই বলেছিল। অঙ্কনের মুখে সব শুনে একটু দমে যায়, অঙ্কন কি জানে যে ওর দিদির সাথে আর দেবায়নের সাথে পায়েলের শারীরিক সম্পর্ক হয়েছে? অঙ্কনের কথা শুনে মনে হল, পায়েল এই ঘটনা লুকিয়ে রেখেছে অঙ্কনের কাছ থেকে। দেবায়ন, অগ্নিহোত্রীর কথা জিজ্ঞেস করে।
অঙ্কন অগ্নিহোত্রীর কথা বলতে শুরু করে। পায়েল যত বড় হয়েছে, ওর দেহের গঠন তত সুন্দর আর লাস্যময়ী হয়ে উঠেছে। ওর পিসির বাড়ি নৈহাটি, পায়েলের যেতে ইচ্ছে করে না ওর পিসতুতো দাদার জন্য কিন্তু বাবার জন্য যেতে হয় পিসির বাড়িতে। ওর পিসতুতো দাদার কুনজর ছিল পায়েলের উপরে। পিসির বাড়িতে গেলে ওর পিসতুতো দাদা, বিনয়, কোন আছিলায় পায়েলের গায়ে হাত দিত, মাঝে মাঝে ওর বুকে পাছায় হাত দিত। আগে পায়েল কিছু বলত না, কিন্তু পরের দিকে পায়েলের এই সব ভালো লাগত না। পায়েল এই সব কথা কাউকে জানায়নি। এমনকি ওর পিসতুতো দাদা ওকে একদিন একা বাড়িতে পেয়ে, চুমু খেয়ে, স্তন টিপে পাছা টিপে আদর করেছিল। রাগে দুঃখে পায়েল কেঁদেছিল সারারাত, কিন্তু কাউকে বলতে পারে নি।
দিদি আর দেবায়ন গরমের ছুটিতে মুসউরি ভ্রমনে যায়। পায়েলের বাবা, ওকে কয়েক দিনের জন্য ওর পিসির বাড়ি নৈহাটিতে রেখে আসে। পায়েল প্রমাদ গোনে, বুঝতে পারে যে ওর দাদার হাতে ওর ;., হওয়া ছাড়া আর কোন গতি নেই। পায়েল এক মতলব আঁটে তখন, বিনয়ের বন্ধু অগ্নিহোত্রীর সাথে প্রেমের নাটক করে। পায়েল ভেবেছিল যে দুই বন্ধুর ভেতরে দ্বন্দ লাগিয়ে দেবে আর এই ভাবে ও বিনয়ের হাত থেকে ছাড়া পেয়ে যাবে আর যদি অগ্নিহোত্রীকে ভালো লেগে যায় তাহলে অগ্নিহোত্রীর সাথে পালিয়ে যাবে। নারীর লাস্যময়ী রুপ সব কিছু করতে পারে, সব কিছু পরিকল্পনা মাফিক হয়েছিল। অগ্নিহোত্রীর সাথে বিনয়ের মনমালিন্য ঘটিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছিল পায়েল। পায়েল অগ্নিহোত্রীকে নিজের প্রেমের জালে জড়িয়ে নিয়েছিল। কোলকাতা ফিরে আসার পরে, অগ্নিহোত্রীর সাথে বেশ কয়েকবার দেখা হয়।
দেবায়ন মন দিয়ে অঙ্কনের কাছে এই কাহিনী শুনতে শুনতে জিজ্ঞেস করে পায়েলের ব্যাপারে এত কিছু জানল কি করে? অঙ্কন বলে যে পরে এই সব ঘটনা এক এক করে পায়েল ওকে জানিয়েছে। অগ্নিহোত্রীর সাথে প্রেমের কথা পায়েল ওর দিদিকে কিছুটা বলেছিল কিন্তু সম্পূর্ণ বলেনি। পায়েল আর অঙ্কনের মাঝে আগে থেকেই একটু হৃদ্যতা ছিল কিন্তু প্রেম প্রীতি পর্যায় ছিল না। মাঝে মাঝেই দুইজনে ফোনে বেশ গল্প করত। সেই গল্পের আওয়াজ, একদিন ওর দিদি শুনে ফেলেছিল আর সেই নিয়ে প্রশ্ন করেছিল। তখন সেই কথা ঢাকার জন্য গরিমার নাম নেয় অঙ্কন। দেবায়নের কাছে এবারে চিত্র বেশ পরিষ্কার হতে শুরু করে।
প্রথম যেদিন অঙ্কন পায়েলকে ফোন করেছিল তখন পায়েলের সাথে অগ্নিহোত্রীর দেখা হয়নি। একদিন রাতে সাহস জুগিয়ে দিদির ফোন থেকে পায়েলের ফোন নাম্বার নিয়ে পায়েলকে ফোন করেছিল। কাঁপা গলার আওয়াজ শুনে পায়েল রেগে নাম জিজ্ঞেস করেছিল। অঙ্কন ভয় পেয়ে ফোন কেটে দিয়েছিল। কিছু পরে আবার ফোন করেছিল অঙ্কন, তখন কাঁপা গলায় জিজ্ঞেস করেছিল কেমন আছে পায়েল।
পায়েল দ্বিতীয় বার ফোন পেয়ে আরও রেগে যায়, অঙ্কন নিজের পরিচয় দিতে দ্বিধা বোধ করে আবার ফোন কেটে দেয়। রাতে ঘুমাতে পারেনা অঙ্কন, বারে বারে শুধু পায়েলের মুখ ভেসে ওঠে ওর চোখের সামনে। অনেক রাতে ওর ফোনে ফোন আসে পায়েলের। এবারে বুক ভরে শ্বাস নিয়ে অঙ্কন উত্তর দেয়, “আমি মানে তোমার সাথে একটু কথা বলতে চাইছিলাম, পায়েল দি।”
“পায়েল দি” শুনে পায়েল হেসে ফেলে, “হি হি, তুই? আমি ভাবছিলাম কে না কে আমাকে এত রাতে ফোন করে জ্বালাতন করছে। হটাত করে ফোন করলি? ঘুম আসছে না তোর?”
অঙ্কন পায়েলের হাসির কলতান শুনে খুশি হয়ে বলে, “না গো পায়েল দি, একদম ঘুম আসছে না।”
পায়েল, “কেন আসছে না? গার্ল ফ্রেন্ডের কথা মনে পড়ছে?”
অঙ্কন, “হ্যাঁ বটে আবার না বটে। ঠিক জানিনা কেন ঘুম আসছে না, তবে মনে হল তোমার সাথে একটু কথা বলি।”
পায়েল, “বাঃবা এত রাতে ছেলের প্রেম জেগেছে নাকি? তোর দিদি জানতে পারলে কিন্তু ছাল ছাড়িয়ে দেবে।”
অঙ্কন, “আমার ঘরের দরজা সবসময়ে বন্ধ থাকে। দিদি এত রাতে দেবায়নদা র সাথে হয়ত আড্ডা মারছে, আমার কথা শুনতেই পাবে না।”
পায়েল, “তোর কলেজ কেমন চলছে? সামনে পরীক্ষা, পড়াশুনা করছিস ঠিক ভাবে?”
অঙ্কন, “যা বাবা, তুমি দেখি আমার পড়াশুনা নিয়ে বসে গেলে। দিদির মতন কথা বলতে শুরু করে দিলে দেখি। আমি ভাবলাম একটু গল্প করব।”
পায়েল হেসে বলেছিল, “আচ্ছা বাবা, বল কি বলতে চাস।”
অঙ্কন তোতলায় একটু, কি বলবে ঠিক ভেবে পায় না। ওর মনের মাধুরী যাকে দূর থেকে দেখে এসেছে, ফোনে তার গলার আওয়াজ বড় মধুর শোনায়। অঙ্কনকে চুপ থাকতে দেখে পায়েল নিজেই বলে, “তোর কলেজের বান্ধবীদের কথা বল না হয়।”
অঙ্কন, “না গো পায়েল দি, সেইরকম কোন মনের মতন গার্ল ফ্রেন্ড খুঁজে পেলাম না।”
পায়েল খেলায় অঙ্কনকে, “কেমন গার্ল ফ্রেন্ড পছন্দ তোর?”
অঙ্কন মন বলতে শুরু করে “তোমার মতন সুন্দরী আর সেক্সি গার্ল ফ্রেন্ড পছন্দ আমার। তোমাকে আমার চাই”
সেই কথা গলা পর্যন্ত এসেছিল কিন্তু ঠোঁটে আনতে পারেনি অঙ্কন। তার বদলে বলে, “এই একটু বেশ সুন্দরী হবে। কলেজে সবাই যেন আমার উপরে হুমড়ি খেয়ে পরে। সবার নজর আমার টাকা উড়ানো আর দামী দামী গিফট পাওয়ার প্রতি। ঠিক মনের মতন কাউকে পাচ্ছি না।”
পায়েল, “আচ্ছা বাবা, একদিন দেখিস তোর মনের মতন কাউকে পেয়ে যাবি।”
অঙ্কন মনমরা হয়ে বলে, “জানিনা, তার সাথে দেখা হলে মুখ ফুটে বলতে পারব কি না?”
পায়েল, “কেন, কেন? এমন কে সে যে তাকে তুই মুখ ফুটে বলতে পারবি না?”
অঙ্কন, “না মানে, এখন দেখা পাইনি সেই রকম কাউকে তবে জানি না। ছাড়ো ওই সব, তোমার কথা বল।”
পায়েল হেসে দেয় অঙ্কনের আব্দার শুনে, “আমার কথা কি বলব তোকে? তুই কি আমার বন্ধু নাকি?”
অঙ্কন একটু আহত হয় পায়েলের কথায়, “তা যখন বলতে চাইছ না তাহলে ফোন রাখছি।”
পায়েল হেসে বলে, “বাপ রে ছেলের অভিমান কত। ফোন রাখলে কিন্তু কালকে বাড়ি গিয়ে নাক ফাটিয়ে দেব।”
Like Reply
অঙ্কন, “তাহলে শুনি তোমার বয় ফ্রেন্ডের কথা।”

অঙ্কন বিছানায় উঠে বসে, পায়েলের সাথে কথা বলতে বলতে ওর প্যান্টের ভেতরে লিঙ্গ টানটান হয়ে যায়। পায়েলের সাথে গল্প করতে করতে, মানস চক্ষে পায়েলের নধরকান্তি দেহ পল্লবের কথা চিন্তা করে অঙ্কন। ওর দিদির এ্যালবাম থেকে বেশ কয়েক দিন আগে লুকিয়ে আনা পায়েলের একটা ফটো দেখে রোজ রাতে বিনিদ্র রজনী কাটাত অঙ্কন। রোজ রাতে ভাবত নিজের প্রেয়সী হিসাবে। পায়েল মাঝে মাঝে ওদের বাড়িতে থাকলে ছোটো হাফ প্যান্ট আর হাত কাটা টপ পরে থাকত। পায়েলের নধর কোমল পাছার দুলুনি দেখে থাকতে পারত না অঙ্কন। রাতে কোনদিন ব্রা পড়ত না পায়েল, হাঁটা চলার সময়ে স্তনের দুলুনির সাথে নধর গোলগাল পাছার দুলুনি দেখে উন্মাদ হয়ে যেত। নিজের রুমের নিভৃতে একাকী পায়েলের নধর লাস্যময়ী অঙ্গ মানস চক্ষে উলঙ্গ করে সঙ্গমে রত হত অঙ্কন।
সেই শুরু ওদের কথা কাহিনীর, তবে শুধু ফোনে কথা বলা ছাড়া এগোতে পারেনি অঙ্কন। পায়েল জানত যে অঙ্কনের সাথে ওর প্রেমের সম্পর্ক কোনদিন সম্ভব নয়, তাই পায়েল ইচ্ছে থাকলেও কোনদিন নিজের মনের কথা বলেনি। এর মাঝে একদিন রাতে গল্প করতে করতে পায়েল ওকে অগ্নিহোত্রীর কথা জানায়। সেদিন বেশ দুঃখ পেয়েছিল অঙ্কন, মনের মধ্যে জমা আগুন ফেটে বের হবার যোগাড় হয়েছিল। ঈর্ষা বোধ করেছিল ওই না দেখা অগ্নিহোত্রীর উপরে। সেদিনের পরে বেশ কয়েকদিন অঙ্কন আর পায়েলের সাথে অভিমান করে কথা বলেনি। তবে পায়েলের সাথে বেশ কয়েকদিন পরে আবার কথা শুরু হয়। অঙ্কন ক্ষমা চেয়ে নেয় আর পায়েল হেসে সেই সব কথা ভুলে যায়। পায়েল তখন অগ্নিহোত্রীর প্রেমে গা ভাসিয়ে দিয়েছে। অঙ্কন শুধু ওদের প্রেমের গল্প শুনে যেত চুপ করে, বুক জ্বলে গেলেও কিছু বলতে পারত না।
দেবায়ন, অঙ্কনের কথা শুনে হেসে ফেলে বলে, পায়েলের মতন মেয়েকে দেখলে মরা সাপ পর্যন্ত ফনা তুলে দাঁড়িয়ে যাবে। অঙ্কন সেই কথা শুনে হেসে দেয়। দেবায়ন জিজ্ঞেস করে কি করে তাহলে অগ্নিহোত্রীর কবল থেকে পায়েলকে ছাড়িয়ে নিজের করে নিল।
অঙ্কন পরবর্তী ঘটনা বলতে শুরু করে। অগ্নিহোত্রী প্রচন্ড ইতর প্রকৃতির ছেলে, আসলে অগ্নিহোত্রী আর বিনয়ের মনমালিন্য কোনদিন ঘটেনি। অগ্নিহোত্রী পায়েলকে ফাঁসানোর জন্য নাটক করেছিল। বিনয় আর অগ্নিহোত্রীর মতলব আসলে অন্যকিছু ছিল, যেটা পায়েল ঠিক মতন জানে না। অগ্নিহোত্রী ওকে জানায় যে ডালহৌসিতে কোন এক্সপোর্ট কোম্পানিতে চাকরি করে। বেশ কিছুদিন অগ্নিহোত্রী পায়েলের সাথে বি.বা.দি বাগে দেখা করে। সঙ্গিতাদি পায়েলকে সাবধান করার পরে, পায়েল একবার অগ্নিহোত্রীর অফিস দেখতে চায়। আসলে বিনয়ের এক বন্ধু ডালহৌসিতে চাকরি করত, সেই অফিস দেখিয়ে অগ্নিহোত্রী বলে যে ওখানে চাকরি করে। পায়েল খুব খুশি হয়, একদিন পায়েল অগ্নিহোত্রীকে ওর বাড়ির কথা, বাবার কথা সব জানিয়ে বলে যে ওকে বিয়ে করতে হলে পালিয়ে বিয়ে করতে হবে। অন্ধ হয়ে গিয়েছিল পায়েল, দেখতে পায়নি অগ্নিহোত্রীর আসল চেহারা।
অগ্নিহোত্রী ওকে জানায় যে পায়েলকে নিয়ে পালিয়ে যেতে রাজি আছে। পায়েল বেশ খুশি, বাড়ি থেকে পালাবে। যেদিন পায়েল পালাবে, তার আগের দিন রাতে অঙ্কনের সাথে অনেক গল্প করে। অঙ্কনকে জানিয়েছিল যে পায়েল পালাবে। সেদিন অঙ্কন নিজেকে সামলে রাখতে পারেনি। ফোন ছেড়ে খুব কেঁদেছিল পায়েলের জন্য। সকালেই কলেজের নাম করে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে পরে। দিদির সাথেই বেড়িয়েছিল পায়েল কিন্তু মাঝ পথে নেমে যায়। গাড়ি কলেজে চলে যাবার পরে পায়েল অগ্নিহোত্রীকে ফোনে জানিয়ে দেয় যে পালানোর জন্য তৈরি। অগ্নিহোত্রী জিজ্ঞেস করে যে পায়েল বাড়ি থেকে কিছু নিয়ে এসেছে না খালি হাতে বেড়িয়ে পড়েছে। পায়েল অত শত ভাবেনি। অগ্নিহোত্রীর সাথে পালাবার খুশিতে শুধু মাত্র কয়েকটা জামাকাপড় আর কলেজের ব্যাগ নিয়ে বেড়িয়ে পড়েছিল। অগ্নিহোত্রী পায়েলকে শিয়ালদা স্টেসানের ওভারব্রিজের নিচে দাঁড়াতে বলে। পায়েল ওর কথা মতন ওভারব্রিজের নিচে অগ্নিহোত্রীর জন্য অপেক্ষা করে। বেশ কিছুক্ষণ পরে অগ্নিহোত্রী ওর সাথে দেখা করে, পায়েল ওকে দেখে বেশ খুশি। বুক ভরে শ্বাস নেয়, মুক্তির স্বাদ, স্বাধীনতার বাতাস, কে জানত ওর কপালে কি অদৃষ্ট অপেক্ষা করছে। পায়েল আর অগ্নিহোত্রী রাজাবাজারের দিকে হাঁটতে শুরু করে। অগ্নিহোত্রীকে জিজ্ঞেস করাতে উত্তর দেয় যে ওরা বম্বে পালিয়ে যাবে আর সেখানে অগ্নিহোত্রীর কোন এক বন্ধু আছে সে ওকে একটা কাজ দেবে। রাজাবাজারে আসার পরে অগ্নিহোত্রী পায়েলকে একটা গাড়িতে উঠতে বলে। গাড়ি দেখে পায়েলের সন্দেহ হয়, সেই সাথে অদুরে দাঁড়িয়ে থাকা বিনয় আর তার সাথে বেশ কয়েকটা ছেলেকে দেখতে পায় পায়েল। রাগে দুঃখে অপমানে পায়েলের চোখ ফেটে জল চলে আসে, অগ্নিহোত্রীর মুখোশ ছিঁড়ে কুটি কুটি হয়ে যায় পায়েলের সামনে। রাজাবাজার মোড়ের মাথায় দাঁড়িয়ে পায়েলকে জোর করে গাড়িতে তুলতে পারে না অগ্নিহোত্রী। পায়েল, অগ্নিহোত্রীর গালে সপাটে এক চড় কষিয়ে বলে প্রতারক, নীচ। দিদির কথা, সঙ্গিতাদির কথা ওর অনেক আগেই শোনা উচিত ছিল।
অঙ্কন সেদিন কলেজে যায়নি। সকালে কলেজ যাবার নাম করে মাঠের একপাশে লুকিয়ে ছিল। পায়েল আর দিদি বাড়ি থেকে বের হবার পরেই একটা ট্যাক্সি নিয়ে ওদের গাড়ির পেছনে অনুসরণ করে। মাঝ পথে পায়েল নেমে যেতেই, ট্যাক্সি দুরে দাঁড় করায় অঙ্কন। ট্যাক্সি ড্রাইভার হতভম্ব হয়ে জিজ্ঞেস করেছিল তার কারন। অঙ্কনের মাথায় শুধু শেষ বারের মতন পায়েলকে দেখার আকাঙ্ক্ষা প্রবল ভাবে জেগে উঠেছিল। ড্রাইভারকে বলে যে যত টাকা লাগে দেবে কিন্তু ওকে অপেক্ষা করতে হবে একটু। ড্রাইভার দাঁড়িয়ে থাকে, কিছু পরে পায়েল আরেকটা ট্যাক্সি চেপে শিয়ালদা চলে আসে। অঙ্কন ওর পেছন পেছন শিয়ালদা আসে। ট্যাক্সি থেকে নেমে পায়েল হারিয়ে যায় ভিড়ে, অঙ্কন পাগল হয়ে যায় পায়েলকে দেখতে না পেয়ে। একবার ভাবে যে পায়েলকে একটা ফোন করে বলে দেয় ওর মনের কথা, কিন্তু যদি পায়েল ওর প্রেম নিবেদন নাকচ করে দেয় তাহলে, সেই ভয়ে ফোন করে না। কিছু পরে দেখে একটা ছেলের সাথে পায়েল রাজাবাজারের দিকে হেঁটে যাচ্ছে। দূর থেকে পায়েলকে অনুসরণ করে সব দেখে।
অগ্নিহোত্রীকে চড় মারার পরে কাঁদতে কাঁদতে পায়েল রাস্তা পার করে, ঠিক তখন অঙ্কন ট্যাক্সি নিয়ে ওখানে পৌঁছে যায়। অঙ্কনকে দেখে পায়েল ভেঙ্গে পরে। ট্যাক্সিতে উঠে অঙ্কনকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলে পায়েল।
অঙ্কন পায়েলকে জড়িয়ে ধরে বলে, “আই লাভ ইউ পায়েলদি, আমি তোমাকে বড় ভালোবাসি পায়েলদি।”
পায়েল জল ভরা চোখে ওর দিকে তাকিয়ে বলে, “জানতাম অনেকদিন ধরে, যে তুই আমাকে ভালবাসিস। দুইজনে অন্ধ ছিলাম। তুই যার ভয়ে আমাকে বলিসনি সেই এক ভয়ে আমি ও তোকে বলিনি কোনদিন।”
অঙ্কন পায়েলকে জড়িয়ে ধরে বলে, “না গো পায়েলদি, আমি অন্ধ নয়, আমি অনেকদিন ধরে তোমাকে দেখে এসেছি। আমি সত্যি তোমাকে ভালোবাসি শুধু বলতে পারিনি দিদির ভয়ে আর তোমার ভয়ে। যদি নিবেদন করতাম আর তুমি যদি নাকচ করে দাও তাহলে সেই ধাক্কা হয়ত সহ্য করতে পারতাম না। সেই কারনে আর মুখ ফুটে বলতে পারলাম না তোমাকে।”
 
বিংশ পর্ব (#04)
অঙ্কন পায়েলকে জড়িয়ে ধরে বলে, “না গো পায়েলদি, আমি অন্ধ নয়, আমি অনেকদিন ধরে তোমাকে দেখে এসেছি। আমি সত্যি তোমাকে ভালোবাসি শুধু বলতে পারিনি দিদির ভয়ে আর তোমার ভয়ে। যদি নিবেদন করতাম আর তুমি যদি নাকচ করে দাও তাহলে সেই ধাক্কা হয়ত সহ্য করতে পারতাম না। সেই কারনে আর মুখ ফুটে বলতে পারলাম না তোমাকে।”
পায়েল নিজেকে ছাড়ানোর কোন চেষ্টা করেনি। অঙ্কনের আনকোরা আলিঙ্গনে নিজেকে সঁপে দিয়েছিল। বড় লোকের ছেলে অঙ্কন, উপহার পাওয়ার লোভে অনেক মেয়েরাই ওর কাছে এসেছে। কলেজে থাকতে বেশ কয়েক জন মেয়ের সাথে ছোটো খাটো শরীর নিয়ে খেলা, টপের উপর দিয়ে স্তনে আদর করা, চুমু খাওয়া এই সব করা হয়ে গেছে অঙ্কনের। কিন্তু যাকে ভালোবাসে, যাকে বুকে পেতে এতদিন ইচ্ছুক ছিল তাকে শেষ পর্যন্ত জড়িয়ে ধরে অঙ্কনের শরীরে বিদ্যুতের ঝটকা লাগে। নরম তুলতুলে শরীর ওর শক্ত আলিঙ্গনের মাঝে গলে যায়। পায়েল ওর জামার কলার ধরে ওর মুখের দিয়ে চেয়ে থাকে আর দুই জনের উষ্ণ শ্বাস পরস্পরের মুখ মন্ডলে ভালোবাসার প্রলেপ ছড়িয়ে দেয়।
পায়েল গভীর ভাবে অঙ্কনের হাসি হাসি চোখের দিকে তাকিয়ে বলেছিল, “শেষ পর্যন্ত যা ভয় করছিলাম সেটাই হল। আমি শেষ পর্যন্ত আমার প্রানপ্রিয় বান্ধবীর ভাইয়ের প্রেমে পড়লাম।”
দুইজনেই হেসে ফেলে।
ট্যাক্সি ড্রাইভার জিজ্ঞেস করে কোথায় যেতে চায়। পায়েল আর অঙ্কন পরস্পরের মুখ চাওয়াচায়ি করে বলে শিবপুর বোটানিকাল গার্ডেন যেতে চায়। ট্যাক্সি ড্রাইভার হেসে জিজ্ঞেস করে যে এতক্ষণ ধরে ট্যাক্সি ধরে রেখেছে, ভাড়া দেবার মতন টাকা ওদের আছে? অঙ্কন হাত খরচের জন্য অনেক টাকা পায়, শেষ হয়ে গেলে ওর ব্যাঙ্ক ওর দিদির পার্স আছেই। টাকার কথা চিন্তা করতে বারন করে দেয় অঙ্কন, ট্যাক্সি ড্রাইভারকে বলে যে, শিবপুরে গিয়ে ওরা ভাড়া মিটিয়ে ট্যাক্সি ছেড়ে দেবে।
ট্যাক্সি চলতে শুরু করে। পায়েলকে জড়িয়ে ধরে অঙ্কন বলে, “আর কোনদিন পালাবার মতলব করবে না, তাহলে আমি মারা যাবো।”
পায়েল ম্লান হেসে বলে, “উভয় সঙ্কটে পড়েছিরে। যদি তোর দিদি জানতে পারে, তাহলে আমাদের অবস্থা সঙ্গিন করে তুলবে। আর যদি পালাই তাহলে দেবায়ন যা ছেলে, মাটির নীচ থেকে আমাদের খুঁজে বের করে নিয়ে আসবে। কিন্তু আমাকে পালাতে হবেই, মাকে ওই নরক থেকে বের করে আনতে হবে।”
পায়েল জানে, অনুপমা আর দেবায়ন মিলে সূর্য আর মনিদিপার কি অবস্থা করেছিল। দুইজনের অনেক বুদ্ধি আর সেই সাথে দেবায়নের সাথে পেরে ওঠা অসম্ভব। অঙ্কন চিন্তায় পরে যায়। পায়েল ওকে, ছোটো ভাইয়ের মতন জড়িয়ে ধরে বলে, “তুই এত চিন্তা করিস না। কাউকে জানাব না এখুনি আমাদের ব্যাপার। আমার পালানো এখন ক্যান্সেল। বি.এস.সি.র পরে আমি পড়াশুনা চালিয়ে যাবো যতদিন না তোর পড়াশুনা শেষ হয়। আমার পড়াশুনা চলাকালীন আশা করি আমার বাবা আমাকে বিয়ে দেবে না আর যদি জোর করে দেয় তাহলে তখন না হয় তোর দিদির আর দেবায়নের শরণাপন্ন হওয়া যাবে। তুই কলেজ শেষ কর, ততদিনে তোর দিদি আর দেবায়নকে কিছু বুঝিয়ে রাজি করান যাবে। এবার থেকে আমি আর বিশেষ তোর বাড়িতে যাবো না, গেলেও আমরা খুব সাধারন ব্যাবহার করব যাতে কারুর সন্দেহ না হয়। যা কিছু করার বাড়ির বাইরে।”
অঙ্কন হেসে বলে, “জানো পায়েলদি, বড় কাউকে প্রেম করে মজা আছে। নিজেকে বিশেষ চিন্তা ভাবনা করতে হয়, বেশির ভাগ চিন্তা ভাবনা সেই করে। বেশ মিষ্টি আদর খাওয়া যায়।”
পায়েল ওর গালে ছোট্ট থাপ্পড় মেরে বলে, “ফাজিল ছেলে, শুধু আম খেলে কাজে দেবে? গাছে একটু জল দেওয়া চাই তো।”
সেদিন আর কলেজ যাওয়া হলনা অঙ্কনের। পায়েলের মুখের হাসি দেখে সব ভুলে গেল অঙ্কন। দুইজনে ট্যাক্সি চেপে বোটানিক্যাল গার্ডেন পৌঁছায় ঠিক দুপুরের দিকে। সারাটা রাস্তা দুইজনে হাত ধরে পরস্পরের মুখের দিকে তাকিয়ে বসে থাকে, যেন হারিয়ে যাওয়া মানিক খুঁজে পেয়েছে দুইজনে। বয়সের ব্যাবধান, পারিবারিক অসমানতা কাটিয়ে দুইজনে হারিয়ে যায়। বুকের ভেতরে দুরু দুরু, ওদের সব থেকে কাছের মানুষ, দিদি যদি জানতে পারে তাহলে তার মনের অবস্থা কি হবে।
গল্প করতে করতে অনেক রাত হয়ে যায়। অঙ্কন মিচকি হেসে চুপ করে বলে, ব্যাস এই শুরু ওদের প্রেমের। দেবায়ন মানতে রাজি নয়, আরও জানতে চায় কি হয়েছে। কবে প্রথম চুমু খেয়েছে পায়েলকে, শুধু চুম্বনে ক্ষান্ত ছিল না আরো কিছু হয়েছে পায়েল আর অঙ্কনের মাঝে। সেই কথা শুনে অঙ্কনের কান লাল হয়ে যায় লজ্জায়, মাথা নিচু করে পারলে বিছানার কোথাও লুকিয়ে যাবার চেষ্টা করে। দেবায়ন চেপে ধরে অঙ্কনকে, কারন দেবায়ন ভালো ভাবে জানে যে পায়েল কামুকি প্রকৃতির মেয়ে কিন্তু কয়েক মাস ধরে পায়েলের চরিত্রের যে পরিবর্তন ঘটেছে তাতে অত তাড়াতাড়ি নিশ্চয় পায়েল ধরা দেয়নি অঙ্কনের কাছে। আর অঙ্কনের প্রথম অভিজ্ঞতা জানতে বড় ইচ্ছুক দেবায়ন। অঙ্কন লজ্জায় পরে জানিয়ে দেয় যে আর কিছু হয়নি, শুধু মাত্র গল্প করত। বার কয়েক কোচিং পালিয়ে সিনেমা দেখতে গেছিল কিন্তু কোচিঙের স্যার বাড়িতে ফোন করে মাকে সব জানিয়ে দেওয়াতে সব পরিকল্পনা মাটি হয়ে যায়। তারপরে একদিন বাইকের জন্য বায়না ধরে। দিদির সাহায্যে শেষ পর্যন্ত বাইক কিনে দেয় ওর বাবা। বাইকে করে প্রতি শনি রবিবার কোলকাতার রাস্তায় ঘুরে বেড়িয়েছে। একবার ব্যান্ডেল চার্চ পর্যন্ত গিয়েছিল ওরা দুইজনে।
দেবায়ন কিছুতেই মানতে রাজি নয় যে অঙ্কন পায়েল কে চুমু পর্যন্ত খায়নি। লাজুক অঙ্কন কি বলবে ভেবে পায় না। দিদির বন্ধু হিসাবে বরাবর দেবায়নকে খুব সমিহ করে চলে আর বলতে গেলে একটু ভয় পায় ওর চেহারা আর গলার আওয়াজের জন্য। দেবায়ন অভয় দিয়ে বলে যে সব কথা না জানালে ও কিছু করতে পারবে না। অগত্যা অঙ্কন ওর প্রেমের অভিজ্ঞতার খাতা খুলতে শুরু করে।
সেদিন বোটানিকাল গার্ডেনে যখন ওরা দুই জনে নামল ট্যাক্সি থেকে, তখন অঙ্কনের খুব লজ্জা করছিল। কাঁধে কলেজ ব্যাগ আর পরনে কলেজ ড্রেস, পাশে পায়েল। পাঁচ বছরের বয়সের ব্যাবধান ওর চেহারার প্রতি বাঁকে আঁকা, খুব লজ্জা করছিল পায়েলের পাশে হাঁটার। মনে হচ্ছিল যেন এক দিদি তার ভাইকে নিয়ে গাছ পালা দেখাতে এসেছে। পায়েল দুই হাতে ওর হাত ধরেছিল। বাজুর কাছে পায়েলের নরম স্তনের ছোঁয়ায় শরীর গরম হয়ে গেছিল অঙ্কনের। পায়েল ওকে যতবার স্বাভাবিক হতে বলে তত যেন আড়ষ্ট হয়ে ওঠে অঙ্কন। পায়েল রেগে বলে যে এইরকম ভাবে হাঁটলে কিন্তু ও চলে যাবে। প্রথম দিনেই পায়েল কে বাঁচিয়ে নিয়ে প্রেমে পরে যদি হাত ছাড়া হয়ে যায় কি করবে অঙ্কন। শেষ পর্যন্ত ভয়ে ভয়ে হাতে হাত রাখে, আঙ্গুলের সাথে আঙুল পেঁচিয়ে যায়। অঙ্কনের দেহের প্রত্যেক রোমকুপ জেগে ওঠে। এতদিন কত মেয়ের সান্নিধ্য পেয়েছে তবে ঠিক এমনটি কোনদিন মনে হয়নি অঙ্কনের।
হাঁটতে হাঁটতে নদীর ধারে চলে আসে দুইজনে। বড় বড় ঘাসের আড়ালে নদীর দিকে একটা ছোটো খালি জায়গা পেয়ে বসে পরে। পায়েলের পরনে একটা লম্বা স্কার্ট আর ঢিলে টপ ছিল। বাড়ি থেকে বেড়িয়ে দিদির কাছে এসে আর জামা কাপড় বদলানো হয়নি তাই আর ছোটো ড্রেস পড়তে পারেনি পায়েল। অঙ্কন অবশ্য বলেছিল যে পায়েল লম্বা স্কার্ট আর পুরো জিন্সে বেশি সুন্দরী দেখায়। সেই কথা শুনে পায়েল ছোটো পোশাক পড়া ছেড়ে দিয়েছিল তারপরে। দিদির আলমারিতে এখন পায়েলের ছোটো জামা কাপড় গুলো রাখা আছে, বাড়িতে নিয়ে গেলে ওর বাবা ওকে খুন করে দেবে।
পায়ের কাছে গঙ্গার জল, সামনে চওড়া নদী কুলুকুলু বয়ে চলেছে। দুইজনে পাশাপাশি বসে, পায়েলের হাতের উপরে হাত রেখে চুপ করে থাকে অনেকক্ষণ, কারুর মুখে কোন কথা নেই। পায়েল ওর হাত খানা মুঠি করে ধরে গালের কাছে নিয়ে যায়। নরম গালের হাতের স্পর্শে অঙ্কনের শরীর শিহরিত হয়ে ওঠে। গালের ওপরে হাত ঘষে মিষ্টি করে অঙ্কনের দিকে তাকিয়ে থাকে পায়েল। লাল নরম ঠোঁট জোড়া অল্প ফাঁক করা, বড় বড় কাজল লাগানো চোখ যেন ওকে ডাক দেয়। অঙ্কন, বয়সের ব্যাবধান, দিদির সাবধান বানী ভুলে যায় ওই চোখের মুক আহ্বান শুনে।
পায়েল মিষ্টি হেসে ওর ঠোঁটের উপরে আঙুল রেখে বলে, “কি রে কি দেখছিস ই রকম ভাবে?”
অঙ্কনের কথা জড়িয়ে যায়, “তোমাকে দেখছি। তুমি ভারী সুন্দরী।”
পায়েল ওর হাত গালের উপরে চেপে বলে, “তাহলে পালাতে দিয়েছিলি কেন?”
অঙ্কন পায়েলের কপালে কপাল ঠেকিয়ে বলে, “পালাতে আর পারলে কই, সেই তো ধরে নিয়ে এলাম আমার কাছে।”
পায়েল হেসে বলে, “দুষ্টু ছেলে। অগ্নিহোত্রী যদি আমাকে নিয়ে চলে যেত তাহলে কি করতিস? আঙুল চুষতিস তুই?”
অঙ্কন, “কেন? দেবায়ন দা’র শরণাপন্ন হতাম। দিদি আর দাদার কাছে সব কিছুর ওষুধ আছে।”
পায়েল হেসে বলে, “জানি রে তোর দিদি আর দেবায়নের কথা।”
অঙ্কনের কথার অর্থ ভিন্ন ছিল। ঠিক জানে না তবে যেদিন দেবায়ন ওর মাকে বাড়িতে পৌঁছে দিয়েছিল সেদিনের পর থেকে মায়ের স্বভাবে বাবার স্বাভাবে অনেক পরিবর্তন দেখেছে। মা আর বাড়ির বাইরে বিশেষ যায় না, গেলেও নিজের গাড়ি নিয়ে অফিসে যায় আর বিকেলের আগেই বাড়ি ফিরে আসে। ওর দিদি আর মায়ের মধ্যে ছোটো বেলা থেকে যে ব্যাবধান দেখে এসেছে সেটা সম্প্রতি অনুপস্থিত। পায়েল জানে, দেবায়ন সূর্য আর মনিদিপার সাথে কি করেছিল।
সেদিন আর চুমু খাওয়া হল না। পায়েল ওর বাড়ির কথা, বাবা মায়ের কথা, অগ্নিহোত্রীর কথা সব খুলে বলে। সব কিছু বলার পরে পায়েল বেশ খানিকক্ষণ চুপ করেছিল অঙ্কনের অভিব্যাক্তি দেখার জন্য। অঙ্কন পায়েলের কাঁধে হাত রেখে জড়িয়ে ধরে বলেছিল যে সময় হলে ওকে এই সব পাঁকের থেকে মুক্ত করে নিয়ে আসবে। পায়েল তারপরে বলে ওর বিগত উশ্রিঙ্খল জীবনের কথা। পায়েল বলতে চেয়েছিল যে ওর অনেক বয়ফ্রেন্ড ছিল আর তাদের সাথে পায়েল কি কি করেছে। অঙ্কন বলেছিল যার সাথে যা করেছে সেইগুলো সব অতীত। অঙ্কন কিছু শুনতে নারাজ, অঙ্কন বলে আর ওর অতীত জেনে কাজ নেই। পায়েলের বর্তমান, পায়েলের ভবিষ্যৎ সুন্দর করে তুলবে বলে প্রতিজ্ঞা করে অঙ্কন। পায়েল ছলছল চোখে জড়িয়ে ধরেছিল অঙ্কনকে, ভেবে পায়নি ঠিক কি বলবে। গল্পে অনেক সময় কেটে যায়। অতীতের সব কিছু ভুলে হাসিতে মেতে ওঠে পায়েল। পায়েলকে সেদিন বাড়িতে নামিয়ে দিয়ে কোচিং চলে যায় অঙ্কন।
তারপর থেকে মাঝে মাঝে পায়েলের সাথে ঘোরা। কলেজ কলেজের দিন গুলোতে বিশেষ ঘুরতে মানা করে দিয়েছিল পায়েল, তাই আর কলেজ পালানো হয় না। তবে শনি রবিবার ওদের একদম নিজেদের। দিদি আর দেবায়ন শনি রবিবার সকাল থেকে কম্পিউটার ক্লাসে ব্যাস্ত থাকে। পায়েল ওর বাড়িতে বলে যে অনুপমার বাড়িতে যাচ্ছে, তাই ওর বাবা মা নিষেধ করেনি। অঙ্কনের কথা ওর মা জানত যে গরিমার সাথে বেড়াতে যাবে ছেলে, তাই সেখানেও নিষেধাজ্ঞা ছিল না। সবার চোখে ধুলো দিয়ে সবার নাকের নীচ দিয়ে চুটিয়ে প্রেম করে গেছে।
সেদিন ছিল শনিবার, আকাশ সকাল থেকে মুখ গোমড়া করে বসে। দিদি কম্পিউটার ক্লাসে বেড়িয়ে যাবার পরেই পায়েলের ফোন আসে, বলে যে এই বৃষ্টিতে আর ঘুরতে গিয়ে কাজ নেই, বাড়িতে বসে আড্ডা মারবে। পায়েলের বাবা মা, কল্যাণী ওর মাসির বাড়িতে গেছে। ওর মাসতুতো দিদি বিয়ের জন্য ছেলে দেখা হচ্ছে, সেদিন ওর মাসতুতো দিদিকে দেখতে আসার কথা। পায়েল বৃষ্টির আছিলায় জ্বরের ভান করে সকাল থেকে বিছানায় পড়েছিল। বাবা মা বেড়িয়ে যাবার পরেই বাড়ি ফাঁকা দেখে পায়েলের মন নেচে ওঠে পেখম তোলা ময়ুরের মতন। ফাঁকা বাড়ি শুনে অঙ্কনের মন উতলা হয়ে ওঠে, মিলনেচ্ছুক হয়ে ওঠে প্রান। কয়েক মাস পেরিয়ে গেছে সেদিনের পর থেকে, কিন্তু ঠিক ভাবে চুমু খেয়ে উঠতে পারেনি দুইজনে। অঙ্কন তাড়াতাড়ি স্নান সেরে জামা কাপড় পরে মাকে বলে বেড়িয়ে যায়। ওইদিকে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি শুরু, মা বারন করার আগেই বাইক নিয়ে বেড়িয়ে পরে।
পায়েলেকে কিছু উপহার দেওয়া হয়নি। গরিয়াহাটে গিয়ে একটা স্টোন অয়াসের লিভাইস কাপ্রি কেনে, সেই সাথে একটা দামী পারফিউম। মেয়েদের মন জয় করতে ওস্তাদ অঙ্কন। অনেক মেয়েদের উপহারের ছলে ভুলিয়ে স্তন, পেট নিয়ে খেলা করেছে, তবে পায়েল ভিন্ন। পায়েলের সাথে খেলা নয়, পায়েলের হৃদয় অর্জন করতে চায় অঙ্কন। কেনাকাটা সেরে বাইকে চড়ে পায়েলের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। তুমুল বৃষ্টি মাথায় করে পায়েলের বাড়ি যখন পৌঁছায়, ততক্ষণে অঙ্কন কাক ভিজে হয়ে যায়।
দু’তলার বারান্দায় দাঁড়িয়ে ওর জন্য অনেকক্ষণ ধরে অপেক্ষা করছিল পায়েল। অঙ্কনকে বাড়ির গেট খুলে বাইক ঢুকাতে দেখে দৌড়ে নিচে নেমে আসে। কাক ভিজে অঙ্কনকে দেখে খিলখিল করে হেসে ফেলে পায়েল। দরজায় দাঁড়িয়ে থাকা পায়েলের দিকে চোখ যায় অঙ্কনের। পরনে শুধু একটা ছোটো হাতার কামিজ, নিচে চুড়িদার পড়েনি তাই কামিজ খানা দুই পুরুষ্টু থাইয়ের মাঝখান অবধি এসে আর নেই। নধর দুই থাইয়ের নিচে ফর্সা পায়ের গুলি। বুকের দিকে দৃষ্টি যেতেই ছ্যাঁক করে ওঠে অঙ্কনের বুক। দুই নরম তুলতুলে স্তন জোড়া কামিজের ভেতরে যেন ছটফট করে ওর দিকে হাতছানি দিয়ে ডাকছে। কামিজের দুইপাশে কাটা, কোমরের একটু নীচ পর্যন্ত কাটা থাকার ফলে, থাইয়ের পাশ পুরো দেখা যাচ্ছে আর সেই সাথে গুরু নিতম্বের ফোলা নরম ভাব পরিষ্কার অনুধাবন করা যায়। অঙ্কন হাঁ করে দাঁড়িয়ে পায়েলের হাসি মুখ দেখে, মাথার চুল একটা পনি টেল করে মাথার পেছনে বাধা। একটা ছোটো চুলের গুচ্ছ, ডান গালের উপরে নেচে বেড়ায়। পায়েল ওর হাত ধরে বাড়ির ভেতরে নিয়ে দুতলায় নিয়ে যায়। পায়েলের হাতে জিন্সের প্যাকেট আর পারফিউমের বাক্স ধরিয়ে দেয়। পায়েল ওইগুলো সোফার উপরে রেখে অঙ্কনের গলা জড়িয়ে ধরে বলে যে অইসব আনার কি দরকার ছিল। গলা জড়িয়ে ধরতেই, অঙ্কনের বুকে চেপে যায় পায়েলের নরম স্তন জরা। অঙ্কন আড়ষ্ট হয়ে যায় প্রেমিকার বাহুডোরে বদ্ধ হয়ে।
পায়েল ওর মাথার চুলে আঙুল ডুবিয়ে ঝাঁকিয়ে বলে, “তুই একদম ভিজে গেছিস দেখছি। পাগল ছেলে, সোজা বাড়ি থেকে এখানে চলে আসা উচিত আর তুই কি আমার জন্য এই সব কিনতে গেলি? আমি চেয়েছিলাম নাকি তোর কাছে?”
অঙ্কন মাথা ঝাঁকিয়ে চুলের জল পায়েলের সারা মুখের উপরে ছিটিয়ে বলে, “বাঃরে, কিছু একটা আনতে হয় তাই আনলাম। খালি হাতে আসলে কি আর ভালো লাগত, বল?”
পায়েল ওকে সোফার ওপরে বসিয়ে একটা তোয়ালে দিয়ে মাথা মুছাতে মুছাতে বলে, “তুই এসে গেছিস আবার কি চাই আমার।”
 
Like Reply
বিংশ পর্ব (#05)

অঙ্কন মাথা ঝাঁকিয়ে চুলের জল পায়েলের সারা মুখের উপরে ছিটিয়ে বলে, “বাঃরে, কিছু একটা আনতে হয় তাই আনলাম। খালি হাতে আসলে কি আর ভালো লাগত, বল?”
পায়েল ওকে সোফার ওপরে বসিয়ে একটা তোয়ালে দিয়ে মাথা মুছাতে মুছাতে বলে, “তুই এসে গেছিস আবার কি চাই আমার।”
অঙ্কনের মাথা মুছিয়ে দেবার পরে পায়েল ওকে ভিজে জামা প্যান্ট ছাড়তে বলে। অঙ্কন বলে যে জামা কাপড় ছাড়লে পরবে কি, পায়েল হেসে বলে ওর বাবার একটা পায়জামা দিয়ে দেবে সেটা পরে থাকবে। অঙ্কন হেসে ফেলে ওর কথা শুনে। তোয়ালে আর পায়জামা নিয়ে অঙ্কন বাথরুমে ঢুকে ভিজে জামা প্যান্ট খুলে পায়জামা পরে বেড়িয়ে আসে। পরনের জাঙ্গিয়া ভিজে গেছিল, অগত্যা সেটাও খুলে বাথরুমে মেলে দিতে হয়। জাঙ্গিয়া ছাড়া পায়জামা পরে বেড়িয়ে আসতেই, সামনে দেখে যে পায়েল ওর দিকে পেছন ফিরে দাঁড়িয়ে কিছু কাজ করছে। হাওয়ায় পরনের কামিজ সরে যায়, ফর্সা পাছার কিছু অংশ দেখা যায় কামিজের নিচে। পরনের গোলাপি প্যান্টির এক ঝলক দেখা যায়। পায়জামার নিচে শুয়ে থাকা লিঙ্গ নড়েচড়ে ওঠে। অঙ্কনের হাত নিশপিশ করতে শুরু করে। বুকের মধ্যে জ্বলে ওঠে আগুন, পায়েলের নধর দেহপল্লব পারলে দুই হাতে চটকে কচলে একাকার করে দেয়। পায়েল বুঝতে পারে যে অঙ্কন বাথরুম থেকে বেড়িয়ে এসেছে। ওর দিকে ঘুরে দাঁড়িয়ে হাত বাড়িয়ে বলে দুপুরে কি খেতে চায়। অঙ্কন পারলে পায়েলের উপরে ঝাঁপিয়ে পরে ওকে খেয়ে ফেলতে প্রস্তুত। ওর দিকে ভালোবাসা আর প্রেমের আগুনে ভরা চাহনি নিয়ে থাকিয়ে থাকে অঙ্কন। বুকের রক্ত চঞ্চল হয়ে ওঠে পায়েলের, নিচের ঠোঁট দাঁতে চেপে দুষ্টুমি ভরা হাসি দিয়ে তাকায়।
পায়েলের সামনে দাঁড়ায়, অঙ্কনের বুকের মধ্যে ঢিপঢিপ করা শুরু। যুদ্ধের দামামা বাজতে শুরু করে, সারা শরীরের সব রোম কূপ খাড়া হয়ে যায়। উত্তেজনায় পায়েলের চোখের পাতা কেঁপে ওঠে সেই সাথে অঙ্কনের কান, গাল গরম হয়ে যায়। পায়েল অঙ্কনের চোখের দিকে আর তাকাতে পারেনা, চোখের পাতা বন্ধ করে মুখ উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকে। অঙ্কন আলতো করে পায়েলের কাঁধ ছোঁয়, পায়েল কেঁপে উঠে অঙ্কনের নগ্ন বুকের উপরে হাতের পাতা মেলে ধরে। নরম আঙ্গুলের তপ্ত পরশে অঙ্কনের বুকের ত্বক ঝলসে যায়। অঙ্কন ঝুকে পরে পায়েলের মুখের উপরে, শ্বাসের গতি বেড়ে ওঠে পায়েলের। কামিজের নিচে লুকিয়ে থাকা, দুই জোড়া নরম স্তন ফুলে ফুলে ওঠে। অঙ্কন ধিরে ধিরে মুখ নামিয়ে আনে পায়েলের মুখের উপরে, ঠোঁটের উপরে আলতো ফুঁ দিয়ে চুম্বনের প্রতীক্ষা করে। এত কাছে এত মিষ্টি গোলাপি নরম ঠোঁট, কিন্তু বুঝে উঠতে পারে না, ঠিক কি ভাবে চুমু খেলে ওর প্রেমিকাকে ভালোবাসায় ভরিয়ে দেবে। দেরি দেখে পায়েল চোখ খোলে, কাজল কালো চোখ জোড়া ভালোবাসায় চিকচিক করছে।
অঙ্কন পায়েলের নাকের উওপরে নাক ঘষে বলে, “আই লাভ ইউ পায়েল দি!”
দুই হাতে অঙ্কনের গলা পেঁচিয়ে ধরে পায়েল, মাথার পেছনে হাত দিয়ে অঙ্কনের মাথা নিজের উপরে টেনে ধরে ঠোঁটের উপরে ঠোঁট বসিয়ে দেয়। প্রথমে অঙ্কন বুঝে উঠতে পারেনা ঠিক কি হল। ঠোঁটে যেন নরম মাখনের প্রলেপ লেগে গেল, সেই সাথে অধরের মধু। অঙ্কনের হাত পায়েলের কোমর জড়িয়ে আলিঙ্গন নিবিড় করে নেয়। পায়েলের ঠোঁট ওর ঠোঁটের সাথে খেলা করে। অঙ্কনের মনে হয় যেন বৃষ্টি থেমে গেছে, চারপাশে যেন কেউ হাজার বাতি জ্বালিয়ে চলে গেছে, বন্ধ চোখের সামনে শুধু ছোটো ছোটো লাল, নীল কমলা আলোর ফুল্কি ফুটছে, ঠিক যেন দিওয়ালির রাতের আকাশের বাজির মতন। পায়েল জিব দিয়ে অঙ্কনের ঠোঁটের ফাঁক করে ভেতরে জিব ঢুকিয়ে দেয়। অঙ্কনের জিবের সাথে ওর গোলাপি মখমলের জিব খেলতে শুরু করে। অঙ্কনের দেহ অসাড় হয়ে যায় সেই সুমধুর স্পর্শে। পায়েলের নরম চাঁপার কলির আঙুল ওর মাথার চুল আঁকড়ে ধরে থাকে। পায়েলের নরম স্তন জোড়া, অঙ্কনের বুকের উপরে লেপটে সমতল হয়ে যায়। এতকাছ থেকে প্রেয়সীকে বাহুডোরে বেঁধে নেবে কল্পনা করেনি আগে। পাতলা কোমর আরও পাতলা মনে হয়, পায়েলের শরীরে যেন মাংস নেই শুধু মাখন আর তুলোইয় ভরা তুলতুলে নরম কিছু দিয়ে তৈরি। কামিজের ওপর দিয়ে সারা পিঠে আদর করে হাত বুলিয়ে দেয় অঙ্কন।
প্রেমঘন চুম্বন ছাড়িয়ে পায়েল ওর দিকে তাকিয়ে বলে, “তুই আমাকে ফিরিয়ে নিয়ে এসেছিস আর একটা চুমু খেতে এত দেরি করে দিলি কেন?”
অঙ্কন উত্তরের ভাষা হারিয়ে আবার পায়েলের ঠোঁটে একটা ছোটো চুমু খেয়ে নেয়। পায়েল ওর মাথায় ছোটো একটা চাঁটি মেরে হেসে বলে, “এবারে একটু পেট পুজো হয়ে যাক, তারপরে তোর সাথে সারাদিন গল্প করা যাবে।”
দেবায়ন হাঁ করে থাকে, এত রোম্যান্টিক নাকি ওর শালা। কথাবার্তায় বুঝেছিল যে অঙ্কন বেশ বড় হাত মারবে কিন্তু শেষ পর্যন্ত ওদের বান্ধবী পায়েলের প্রেমে পরবে সেটা আশাতীত ছিল। দেবায়নের মনে পরে অনুপমার সাথে প্রথম চুম্বনের কথা। যেদিন অনুপমাকে কবিতার বইখানা উপহার দিয়েছিল, তারপরের দিন দেবায়ন ক্লাসের পরে একা অনুপমাকে ক্লাসের মধ্যে ঢুকিয়ে, জড়িয়ে ধরে চুমু খেয়েছিল ওর লাল নরম ঠোঁটে। দুই কপোত কপোতীর সেই প্রথম চুম্বন। অনুপমার আগে কোন প্রেমিক অথবা ছেলে বন্ধু ছিল না যাকে চুমু খাওয়া যায় আর দেবায়নের কোন বান্ধবী ছিল না যাকে চুমু খাওয়া যায়। দুইজনের প্রথম প্রেমের চুম্বন, বড় মধুর সেই অধরের মিলন ক্ষণ। চুমু খেয়ে অনুপমা অবশ হয়ে গেছিল, দেবায়নের বুক ঠোঁট মাথা কেমন এক অধভুত অনুভূতিতে ভরে উঠেছিল।
দেবায়ন অঙ্কনকে জিজ্ঞেস করে যে আর কিছু হয়নি সেদিন, শুধু চুম্বনে ক্ষান্ত থেকেছিল না আরও দূর এগিয়ে ছিল। অঙ্কন কিছুতেই মুখ খুলতে নারাজ, কথা আটকে যায়, কান লাল হয়ে যায়। দেবায়ন বুঝতে পারে যে অঙ্কন আর পায়েল, সেদিন শুধু চুম্বনে ক্ষান্ত ছিল না আরও দূর ওরা এগিয়েছিল। দেবায়ন উৎসুক হয়ে ওঠে জানার জন্য আর অঙ্কন কিছুতেই মুখ খুলতে চায় না। দেবায়ন মিচকি হেসে জানিয়ে দেয় যে সম্পূর্ণ গল্প না শোনালে কিছুই করবে না। অগত্যা অঙ্কন ওদের প্রেমের পরবর্তী পর্যায়ের ঘটনা বলি বলতে শুরু করে।
পায়েল ওর মিউসিক সিস্টেমে আদনান সামির রোম্যান্টিক গান চালিয়ে দেয়, অঙ্কন সেই গান বন্ধ করে মোবাইল থেকে সেলিন ডিওউনের কান্ট্রি সংগ চালায়। গান নিয়ে কিছুক্ষণ দুইজনের মধ্যে বসচা শুরু হয় শেষ পর্যন্ত পায়েল, ছোটো অঙ্কনের জিদের কাছে ইচ্ছে করে হার মেনে ইংরাজি গান শুনতে বসে পরে। খাওয়া শেষে অঙ্কন আর পায়েল বসার ঘরে সোফার উপরে বসে। খালি গায়ে, একটা ঢিলে পায়জামা পরিহিত অঙ্কন আর পায়েল শুধু কামিজ গায়ে অঙ্কনের কোলে মাথা রেখে শুয়ে শুয়ে টিভি দেখে। পায়ালের নরম গালের স্পর্শে, ধিরে ধিরে মাথা চাড়া দিতে শুরু করে অঙ্কনের পুরুষ সিংহ বাবাজি। পায়েলের বুকের কাছে পেটের ওপরে অঙ্কনের হাত রাখা ছিল। কামিজের উপর দিয়েই, পায়েলের নরম পেটের উপরে আদর করে অঙ্কন। টিভির দিকে অঙ্কনের বিশেষ মন ছিল না, পাশে অর্ধশায়িত প্রেমিকাকে পেয়ে অঙ্কনের উত্তেজনা উত্তরাত্তর বেড়ে উঠে। আদর খেতে খেতে, পায়েলের চোখ বুজে আসে। অঙ্কনের হাত খানি জড়িয়ে ধরে নিজের বুকের উপরে চেপে ধরে। নরম স্তনের ছোঁয়া পেয়ে অঙ্কনের সারা শরীর কেঁপে ওঠে, কি করবে ভেবে না পেয়ে, কামিজের উপর দিয়েই আলতো করে পায়েলের স্তনের উপরে আঙুল বুলিয়ে দেয়। উত্তপ্ত আঙ্গুলের পরশে পায়েল কেঁপে উঠে অঙ্কনের দিকে তাকায়। আঙ্গুলের ডগায় ব্রার ছোঁয়া পায়। ব্রা ভেদ করে স্তনের বোঁটা ফুলে ফেঁপে ওঠে। অঙ্কনের আঙ্গুলের ডগা, ব্রার ওপর দিয়ে স্তনের বোঁটার চারদিকে আলতো ছুঁয়ে যায়। স্তনে নরম আঙ্গুলের স্পর্শে পায়েলের চোখ বন্ধ হয়ে আসে। দুইজনের শরীরে যেন বিজলি তরঙ্গ বয়ে যায়।
পায়েল মিহি আওয়াজ করে আধ খোলা ঠোঁটে, “আহহহহহ… বড় ভালো লাগছে… উম্মম্ম কি যেন হচ্ছে রে আমার… সোনা… ”
অঙ্কন কি করবে কিছু বুঝে পায় না। কামিজের ওপর দিয়ে, ব্রার ওপর দিয়ে আলতো চাপতে চাপতে বলে, “তুমি বড় মিষ্টি আর নরম পায়েলদি… আমি থাকতে পারছি না…”
অঙ্কন ঝুঁকে পরে পায়েলের মুখের উপরে। পায়েল দুই হাতে অঙ্কনের মাথা নিজের মুখের উপরে টেনে ধরে অধরে অধর মিলিয়ে তীব্র কামঘন চুম্বন এঁকে দেয়। অঙ্কন, পায়েলের কোমর জড়িয়ে ধরে নিজের ওপরে টেনে নেয়। পাগলের মতন চুমু খায় পায়েলের গালে, কপালে, কানের লতিতে। পায়েল ঘাড় উঁচু করে অঙ্কনের মাথা নিজের গলার কাছে ধরে। পাজামার নিচে শুয়ে থাকা লিঙ্গ বেড়ে ওঠে, ফুলে ওঠে পায়েলের নরম থাইয়ের নিচে পরে। পায়েল বুঝতে পারে অঙ্কনের লিঙ্গের কঠিনতা। পায়েল ইচ্ছে করে অঙ্কনের লিঙ্গের উপরে পেলব নধর থাই চেপে ধরে আর সঙ্গে সঙ্গে কেঁপে ওঠে অঙ্কন।
পায়েল কাতরে ওঠে “আহহহহহহ…… সোনা… আমার কিছু একটা হচ্ছে…”
পায়েলের কামিজের দুই পাশে হাত ঢুকিয়ে দিয়ে ওর প্যান্টির কোমরে হাত দেয়। নগ্ন মসৃণ ত্বকের উপরে তপ্ত আঙ্গুলের ছোঁয়ায় পায়েল পাগল হয়ে ওঠে। এতদিনে মনের মতন মানুষের হাতে নিজের শরীর সঁপে দেবে পায়েল। অঙ্কনের মুখ আঁজলা করে ধরে চুম্বনে চুম্বনে ব্যাতিব্যাস্ত করে তোলে। অঙ্কনের হাত পায়েলের নরম ভারী পাছার ওপরে চলে আসে, দুই হাতের থাবা মেলে প্যান্টির উপর দিয়ে পায়েলের নরম পাছা চেপে ধরে। পায়েলের নরম শরীরের ভারে অঙ্কন, সোফার উপরে শুয়ে পরে। পায়েলের কামিজ কোমরের উপরে উঠে যায়। দুই থাই মেলে অঙ্কনের লিঙ্গের উপরে নিজের ঊরুসন্ধি চেপে ধরে পায়েল। শক্ত লিঙ্গ বাড়ি খায় নরম যোনি বেদির উপরে। প্রথম কারুর যোনির ছোঁয়া পায় অঙ্কন নিজের লিঙ্গের উপরে। পায়েলের প্যান্টি তিরতির করে ভিজতে শুরু করে দেয়, সেই সাথে অঙ্কনের হাতের থাবা, পায়েলের পাছা চটকায়। পায়েল অঙ্কনের মুখের উপর থেকে মাথা তুলে বড় বড় চোখে কামাগ্নি জ্বালিয়ে অঙ্কনের চোখের ভেতরে তাকিয়ে থাকে। পায়েলের বাম হাত অঙ্কনের মাথার চুল আঁকড়ে ধরে থাকে, আর অন্য হাত দুইজনের প্যাঁচানো দেহের মাঝে অঙ্কনের লিঙ্গের কাছে চলে যায়। নরম আঙ্গুলের স্পর্শ বুঝতে পারে অঙ্কন। ওর তলপেটের নিচে ঠিক লিঙ্গের কাছে আলতো করে আঙুল বুলিয়ে উত্যক্ত করে তোলে। তীব্র কামানুভুতির বশে অঙ্কনের চোখ বুজে আসে।
অস্ফুট স্বরে গঙ্গিয়ে ওঠে অঙ্কন, “পায়েল দি আমার শরীরে কেমন যেন কিছু একটা হচ্ছে।”
বারেবারে কেঁপে ওঠে অঙ্কন, এই প্রথম কোন পূর্ণ নারী ওর লিঙ্গের এত কাছে ছুঁয়েছে আর প্রথম সুখানুভুতি দিয়েছে।
পায়েল, কামঘন মিহি কণ্ঠে বলে, “সোনা, আমি কিন্তু ভার্জিন নই। তোর আগে অনেক বয় ফ্রেন্ড ছিল আমার, প্লিস সোনা কিছু মনে করিস না। আমি তোকে বড্ড ভালোবাসি।”
অঙ্কনের তখন কিছু বলার মতন অবস্থা ছিল না। পায়েলের প্যান্টির ভেতরে হাত ঢুকিয়ে, নরম পাছার নগ্নতা উপভোগ করতে করতে বলে, “হ্যাঁ পায়েলদি, তুমি শুধু আমার, আমি কারুর সাথে আজ পর্যন্ত কিছু করিনি। তোমার জন্য আমি বসেছিলাম, তোমার অপেক্ষায় ছিলাম এতদিন।”
অঙ্কনের আঙুল, পায়েলের পাছার খাঁজ বেয়ে নিচের দিকে ঢুকে যায়। সিক্ত যোনির চেরায় আঙুলের ডগা স্পর্শ করে। পায়েলের পাছা শক্ত হয়ে যায়, উরু সন্ধি চেপে ধরে অঙ্কনের ঊরুসন্ধির উপরে।
পায়েল ঠোঁটে ঠোঁট চেপে ধরে, হাত নিয়ে যায় লিঙ্গের উপরে। অঙ্কনের সারা শরীর কেঁপে ওঠে, তলপেটের আগুন দাউদাউ করে জ্বলে ওঠে। সারা শরীর বেঁকে যায় অঙ্কনের, তীব্র কামানুভুতির বশে গরম হয়ে যায় শরীর। পায়েল পাজামার ওপর দিয়েই লিঙ্গের চারদিকে কোমল আঙুল পেঁচিয়ে ধরে। নরম আঙ্গুলের মাঝে ছটফট করে ওঠে কঠিন লিঙ্গ। পায়েল ওর লিঙ্গ মুঠি করে ধরে প্যান্টির ওপর দিয়ে যোনির চেরায় বুলিয়ে দেয়। অঙ্কন এক হাতে পায়েলের পাছা, অন্য হাতে পায়েলকে জড়িয়ে ধরে, পায়েলের যোনির ওপরে নীচ থেকে লিঙ্গের ধাক্কা মারতে থাকে। প্যান্টি সরিয়ে লিঙ্গের ডগা সিক্ত যোনি পাপড়ির ছুঁয়ে যায়। পায়েলের চোখ বন্ধ হয়ে যায় আসন্ন, সম্ভোগের উত্তেজনায়। অঙ্কনের শরীর টানটান হয়ে যায়, সব পেশি কুঁকড়ে যায়। তলপেট যেন কেউ চেপে ধরে, সারা শরীরের এক অধভুত অনুভূতি জাগে যেটা আগে কোনদিন জাগেনি। লিঙ্গের লাল মাথা, যোনির চেরায় একটু ঘষে দেয় পায়েল।
অঙ্কন পায়েলকে শেষ শক্তি টুকু উজাড় করে জড়িয়ে ধরে গঙ্গিয়ে ওঠে, “পায়েলদি, আমার কিছু একটা হচ্ছে পায়েলদি।”
পায়েল ওর কপালে, গালে চুমু খেতে খেতে বলে, “হ্যাঁ সোনা এমন হয়, প্লিস আমাকে চটকে পিষে ধর সোনা…”
পায়েল কিছু বুঝে ওঠার আগেই, লিঙ্গ বেয়ে উষ্ণ বীর্য লিঙ্গের মাথা থেকে ঝলকে ঝলকে বেড়িয়ে আসে। পায়েলের হাত, পায়েলের যোনি বেদি, পাজামা সব বীর্যে চপচপ হয়ে ভিজে যায়। হটাত বীর্য পতনে অঙ্কন ঘাবড়ে যায়। বীর্য স্খলনের সময়ে অস্ফুট গঙ্গিয়ে ওঠে অঙ্কন, বারেবারে পায়েলের নাম নিয়ে পিষে ফেলে নধর দেহ পল্লব ওর বাহুডোরে। কিছুক্ষণের মধ্যেই ওর কঠিন লিঙ্গ শিথিল হয়ে যায়। দুইজনে কামাবেগে পরস্পরকে সাপের মতন পেঁচিয়ে শুয়ে থাকে। কারুর মুখে কোন কথা নেই, শুধু প্রেমের প্রথম পরশের অনুভূতি নিজেদের শরীরের প্রতি অঙ্গে মেখে নেয়।
অনেকক্ষণ পরে পায়েল মাথা উঠিয়ে অঙ্কনের চোখের দিকে তাকিয়ে দুষ্টু মিষ্টি হেসে বলে, “দুত্তু তেলে, এত তাড়াতাড়ি ফেলে দিলি। বাবার পাজামা নষ্ট করে দিলি। একটু ধরে রাখতে পারলি না?”
অঙ্কনের কান লাল হয়ে যায় লজ্জায়, “কি করে ধরে রাখতাম বল। তুমি যা সেক্সি আর মিষ্টি আমি নিজেকে সামলাতে পারলাম না। আর সব থেকে বড় কথা, আমি যে আনকোরা তোমার কাছে। তোমাকে শিখিয়ে পড়িয়ে নিতে হবে যে, পায়েলদি।”
পায়েল ওর গালে ছোট্ট চুমু খেয়ে বলে, “এত কিছু করার পরেও আমাকে পায়েলদি বলে ডাকবি নাকি?”
অঙ্কন হেসে ফেলে বলে, “এতদিন পায়েলদি বলে ডেকে এসেছি, নাম ধরে ডাকতে কিছু সময় লাগবে পায়েলদি।”
পায়েল অঙ্কনের কান মুলে আদর করে বলে, “আবার পায়েলদি, এবার থেকে নাম ধরে ডাকবি বুঝলি।”
অঙ্কন পায়েলকে জড়িয়ে ধরে নাকের ওপরে নাক ঘষে আদর করে বলে, “আচ্ছা পায়েলদি, এরপরে নাম ধরেই ডাকব। তুমি বড় দুষ্টু মিষ্টি, তাই মিষ্টি বলে ডাকব এবার থেকে তোমাকে।”
পায়েল হেসে, ওর মুখ আঁজলা করে ধরে ঠোঁটের উপরে ঠোঁট ঘষে বলে, “উফফ, প্রেম যে উথলে উথলে পড়ছে। পাজামা ছাড় এবারে, আমি অন্য পাজামা দিচ্ছি। আর এই পাজামা বাথরুমে রেখে আসিস, এটা ফেলে দেওয়া ছাড়া আর উপায় নেই। আমার বাবা ডাক্তার মানুষ, কুকুরের নাক। গন্ধ পেয়ে গেলে আমাকে কেটে ফেলবে।”
পায়েল ওকে ছেড়ে উঠে আরেকটা পাজামা দেয় পড়তে। তারপরে দুইজনে জড়াজড়ি করে প্রেমের রসে অঙ্গ ভাসিয়ে গল্পে মজে যায়। পায়েল সেদিন বলে, একবার শুধু জন্মদিনে সব বন্ধু বান্ধবীদের ডাকতে পেরেছিল বাড়িতে, সেদিন বাড়িতে কেউ ছিল না তাই। পায়েল জানায় যে ওর পিসিও অনেক বদরাগী মহিলা। পিসির বাড়িতে ওর পিসে মশাই প্রায় ভিজে বেড়াল হয়ে থাকে। পিসির আস্কারা পেয়ে পিসতুতো দাদা, বিনয় কলেজের পড়াশুনা ছেড়ে একটা ব্যাবসায় নেমেছে ওই অগ্নিহোত্রীর সাথে। পায়েল যেতে চায়না ওর পিসির বাড়িতে, কিন্তু বাবা জোর করে ওকে নিয়ে যায়। বিনয়ের ব্যাবসার জন্য ওর পিসি ওর বাবার কাছ থেকে টাকা চেয়েছিল আর বাবা, দিদি দিদি করে টাকা দিয়ে দিয়েছে তার ভাগ্নেকে। বাবা কিছুতেই বোঝে না যে বিনয়, মামা মামা করে ওর বাবার মাথা ভেঙ্গে অনেক টাকা নিয়ে নিয়েছে। যেই টাকা ফুরিয়ে যায় ওমনি মামার কাছে এসে হাত পাতে। বিনয়ের নামে কোন বাজে কথা শুনতে নারাজ ওর বাবা। তাই কোনদিন সাহস পায়নি বিনয়ের বিরুদ্ধে কিছু বলার।
সবকিছু শোনার পরে দেবায়নের কান লাল হয়ে যায়। প্রচন্ড রাগ হয় বিনয়ের ওপরে। অঙ্কন বলে যে করে হোক ওর “মিষ্টি” কে বাঁচিয়ে আনতে। ডক্টর কমলেশ সান্যাল নিশ্চয় পায়েলের উপরে এবারে অনেক অত্যাচার শুরু করবে। দেবায়ন অভয় দিয়ে বলে যে পায়েলের কিছু হবে না। অনুপমার সাথে কথা বলে সব ঠিক করে দেবে। অনুপমার প্রিয় বান্ধবী পায়েল, নিশ্চয় অনুপমা পায়েলের জন্য কিছু ভাবছে এতক্ষণে। রাত ফুরিয়ে সকালের আলো পুব আকাশে উঁকি মারে। দেবায়ন মিচকি হেসে জিজ্ঞেস করে যে সেদিনের পরে পায়েলের সাথে আর কিছু কোনদিন হয়েছিল কিনা। অঙ্কনের কান লাল হয়ে যায়, মাথা নেড়ে জানিয়ে দেয় যে হ্যাঁ ওদের মধ্যে শেষ দেয়াল টুকু ভেঙ্গে গেছে। অঙ্কনের লাজুক মুখ দেখে দেবায়ন বুঝতে পেরে যায় যে পায়েলের সাথে পূর্ণ সহবাস করা হয়ে গেছে। দেবায়ন আর কিছু জিজ্ঞেস করে না অঙ্কনকে।
 
Like Reply
বিংশ পর্ব (#06)

সারা রাত ঘুমাতে পারেনি অনুপমা, সারা রাত বিছানায় জেগে কাটিয়ে দেয় অথবা নিজের ঘরে পায়চারি করে। কাকভোরে দেবায়নকে ফোন করে অনুপমা জিজ্ঞেস করে ওর ভাইয়ের কথা। দেবায়ন বলে যে অঙ্কনের মুখে সব শুনেছে, দেখা হলে সব কথা জানাবে। অনুপমা বলে যে গত রাতে অনেকবার পায়েলের ফোনে ফোন করতে চেষ্টা করেছে, কিন্তু ওর ফোন বন্ধ। বেশ কয়েক বার ল্যান্ডলাইনে ফোন করেছে কিন্তু প্রতিবার ওর বাবা তুলেছিল ফোন তাই কোন কথা না বলে ফোন কেটে দিয়েছে। দেবায়ন জানায় যে পায়েলের অবস্থা বড় খারাপ, এমত অবস্থায় কি করবে কিছু ভেবে পাচ্ছে না। অনুপমা অঙ্কনের সাথে কথা বলে শান্ত হতে বলে। দিদির আস্বাস বানী শুনে অঙ্কনের ধড়ে প্রান ফিরে আসে। মিস্টার সেন আর পারমিতাকে সামলে নেবে অনুপমা। দেবায়নকে বলে যে অঙ্কনকে বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে যেতে। অনুপমা বলে যে, অঙ্কন যেন ভুলেও এখন পায়েলের নাম বাড়িতে না নেয়। ওর বাবা মা দুইজনে খুব রেগে আছে অঙ্কনের উপরে।
সকাল বেলা মা জিজ্ঞেস করলে, দেবায়ন জানায় যে পরে বিস্তারিত ভাবে সব ঘটনা জানাবে। দেবশ্রী মাথা চাপড়ে জিজ্ঞেস করে যে দেবায়ন কি সারা পৃথিবীর সমস্যার সমাধান করতে বেড়িয়েছে? মায়ের কথা শুনে হেসে বলে যে, অন্তত যাদের ভালোবাসে তাদের সমস্যার সমাধান করতেই পারে। দেবশ্রী আলতো হেসে মাথা নাড়িয়ে বলে, যেন সাবধানে থাকে।
ঢাকের বাদ্যি বাজতে শুরু করেছে। ঘন নীল আকাশে পোজা তুলোর মতন মেঘের ভেলা ভেসে বেড়ায়, আকাশে বাতাসে আগমনীর সুরের দোলা লাগে। অঙ্কনের মনের বাতি দিন দিন নিভতে শুরু করে দেয়। ভাইয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে অনুপমা চিন্তিত হয়ে পরে। ষষ্ঠীর পুজো কিছুক্ষণের মধ্যে শুরু হবে। পারমিতা অনুপমাকে নিয়ে পুজোর মন্ডপে এসেছে। অনুপমার চোখ বারেবারে সুজাতা কাকিমাকে খোঁজে। প্রতিবছর সুজাতা কাকিমা ওদের সাথেই ষষ্ঠীর পুজো দেয়। এই কয়দিনে অনুপমা ওদের বাড়ি যেতে সাহস করেনি। সুজাতা কাকিমার দেখা না পেয়ে অনুপমা খুব চিন্তিত হয়ে পরে। দেবায়ন আর অনুপমার কথা মতন অঙ্কন নিজেকে শান্ত করে নেয়, বাড়িতে পায়েলের কথা আর ওঠায় নি সেদিনের পরে। কিন্তু রোজরাতে বাবা মা ঘুমিয়ে পড়ার পরে দিদির কাছে এসে মনের সংশয় ব্যাক্ত করত। নিরুপায় অনুপমার কাছে ভাইকে প্রবোধ দেওয়া ছাড়া আর কোন উপায় ছিল না।
সব বন্ধু বান্ধবী পুজোর আনন্দে মত্ত, শুধু মাত্র অনুপমা আর দেবায়ন চিন্তায় ঘুমাতে পারে না। অঙ্কনের মুখে পায়েলের বাড়ির ব্যাপারে যা শুনেছে তাতে এই টুকু বুঝতে পেরেছে যে পায়েল আর ওর মায়ের ওপরে ওর বাবা খুব অত্যাচার শুরু করবে। পুলিসের কাছে গিয়ে কাজ দেবে না। ওর বন্ধু বান্ধবীরা কেউ এই বিষয়ে কিছুই জানে না। সপ্তমির দিনে সব বন্ধু বান্ধবীদের ঘুরতে বেড়ানোর কথা ছিল, কিন্তু অনুপমা ওদের মানা করে দেয়। শ্রেয়ার খুব সন্দেহ হয় সেই ব্যাপারে কেননা বেড়ান, পার্টি, মজা করা ইত্যাদিতে সব থেকে আগে অনুপমা আর দেবায়ন এগিয়ে আসে। ওদের হাত ধরেই বাকিরা আনন্দের শরিক হয়। শ্রেয়া চেপে ধরে অনুপমাকে। শেষ পর্যন্ত অনুপমা থাকতে না পেরে শ্রেয়াকে সব কথা খুলে বলে। সপ্তমির দিনে আর ওদের ঠাকুর দেখতে যাওয়া হল না। অনুপমার বাড়িতে গেলে ওর মা বকাবকি করতে পারে সেই কারনে সব বন্ধু বান্ধবীরা একত্রিত হয় শ্রেয়ার বাড়িতে। জারিনা চিন্তিত আর সব থেকে ছোটো আর অনুপমার একটু আদুরের, তাই অনুপমার হাত ধরে সোফার উপরে চুপচাপ বসে।
অনুপমা, “একটা খবর আমার কাছে, যেটা একটু ভয়ের। ওদের বাড়ির যে কাজের লোক, তার সাথে আমাদের বাড়ির কাজের লোকের জানাশুনা আছে। তাকে দিয়ে খবর বের করেছি আমি।”
সবাই ত্রস্ত চোখে অনুপমার দিকে তাকিয়ে। অনুপমা দেবায়নকে সেই কথা বলতে বলে।
দেবায়ন, “অনুপমা বেশ কয়েক বার গেছিল পায়েলের বাড়িতে, কিন্তু ঢুকতে পারেনি। ব্যাপারটা হচ্ছে যে, সুজাতা কাকিমার শরীর খুব খারাপ হয়ে পড়েছে সেই দিনের পর থেকে। বলতে পারা যায় যে কাকিমা শয্যা শায়ি হয়ে গেছেন। এক নতুন কাজের লোক রাখা হয়েছে। সে কাউকে বাড়িতে ঢুকতে দেয় না। পুরানো কাজের লোকের কাছ থেকে পাওয়া খবর যে পায়েল বাড়িতে নেই, পায়েলের দেখা পাওয়া যায়নি ওই দিনের পর থেকে। এখন ঠিক বোঝা যাচ্ছে না যে পায়েলকে ওর পিসির বাড়ি নৈহাটি পাঠিয়ে দিয়েছে না বাড়িতে কোথাও আটক করে রেখেছে। কেননা ওই কাজের লোককে সেইদিনের পরে ছাড়িয়ে দেওয়া হয়।”
রূপক দাঁত কিড়মিড় করে দেবায়নকে বলে, “শালা, ওই ডাক্তারকে বাড়ি থেকে উঠিয়ে নিলে কেমন হয়। দুই ঘা মারলে শালা সব বলে দেবে।”
পরাশর বলে, “ভুলেও কিছু করতে যাস না। পায়েলের বাবা তিনি, আইন সম্মত মেয়ের ওপরে তার অধিকার বেশি। পুলিসে এফ.আই.আর করে দিলে আমার কাকাও বাঁচাতে পারবে না। আমি কাকাকে বলে দেখি। কিছু একটা পথ বলতে পারবে নিশ্চয়।”
অনুপমা, “কিছু করে কি ওর বাড়িতে ঢোকা যাবে না? মুশকিল হচ্ছে আমাদের সব বান্ধবীদের ওর বাবা চেনে। হয়ত ওই চাকরকে বলাই আছে যে কাউকে বাড়িতে ঢুকতে না দিতে।”
ঋতুপর্ণা বলে, “একটা উপায় আছে। আমাকে ওর বাবা দেখেনি কোনদিন, জানে না আমি ওর বান্ধবী। আমি কিছু একটা করে ওর বাড়িতে ঢুকতে পারি।”
ধিমান জিজ্ঞেস করে, “তুমি কি ভাবে যাবে? যেই তুমি বলবে যে তুমি ওর বান্ধবী অথবা তুমি সুজাতা কাকিমার সাথে দেখা করতে চাও, তখনি ওদের সন্দেহ হবে আর তোমাকে বাড়িতে ঢুকতে দেবে না। অপমান করে বার করে দেবে।”
সঙ্গীতা, “এক কাজ করা যায়। আমি কালকে নৈহাটি চলে যাবো আর আমার মামাতো দাদাকে সব কথা খুলে বলব। বিনয় আর অগ্নিহোত্রীকে চেপে ধরলে কিছু একটা কথা বের হতে পারে।”
পরাশর বলে, “ধর যদি ওই খানে না থাকে আর তোর দাদা ওদের মারধোর করে তাহলে কিন্তু আবার হিতে বিপরিত হতে পারে।”
অনুপমার গলা ধরে আসে, বুক কেঁপে ওঠে ভয়ে, “আমরা কি হাতে হাত দিয়ে বসে থাকব আর ওই মেয়েটার জীবন নষ্ট হয়ে যাবে আমরা থাকতে?”
দেবায়ন, “কি করতে চাও তুমি শুনি?”
পরাশর, “কাকাকে একবার বলে দেখি, কি উপায় করা যায়। আমার যতদূর মনে হয় আমরা এফ.আই.আর পর্যন্ত করতে পারবো না। কেননা ওর বাবা মা জীবিত আর ওর বাবা মা এখন পর্যন্ত মেয়ের ব্যাপারে পুলিসের কাছে কিছু বলেনি।”
জারিনা শেষ পর্যন্ত মুখ খোলে, “আমি একটা কথা বলব?”
পরাশর হেসে ফেলে, “তুমি চুপ করে থাক, ছোটো আছো এখন। হাতি ঘোড়া গেল তল মশা বলে কত জল।”
সবাই পরাশরের কথা শুনে হেসে ফেলে একমাত্র অনুপমা ছাড়া। অনুপমা সবাইকে চুপ করিয়ে জারিনার কথা শুনতে বলে।
জারিনা বলে, “আমার আব্বু ডাক্তার আর পায়েলদির বাবাও ডাক্তার। আব্বাজানকে বলে ওর বাবার খবর বের করতে পারি। হয়ত আব্বুর চেনা জানা কেউ হতে পারে যে পায়েলদির বাবাকে চেনে।”
পরাশর, “তাতে লাভ? ওর বাবার কথা জেনে আমাদের কি হবে? আমরা কি পায়েলের খবর জানতে পারবো? বাইরের কেউ যদি ওর মেয়ের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করে তৎক্ষণাৎ ওর বাবা সতর্ক হয়ে যাবে আর কিছুই বলবে না।”
অনুপমা, “আমার ভাইয়ের অবস্থা খুব খারাপ। একে ত বাবা মায়ের ভয়ে বাড়িতে কিছু বলতে পারছে না। আর ওইদিকে পায়েলের জন্য বেচারার রাতে ঘুম হচ্ছে না।”
শ্রেয়া হেসে বলে, “তোর ভাই প্রেম করার আর মেয়ে পেল না, শেষ পর্যন্ত কি না পায়েল? তুই ওকে আগে বলিস নি, যে পায়েলের বাড়ির কি অবস্থা।”
জারিনা শ্রেয়াকে হেসে বলে, “শ্রেয়াদি, প্রেম কি আর দিনক্ষণ, ধর্ম গোত্র নামধাম বয়স দেখে হয়? সেই যদি হত, তাহলে আমাকে আর পরাশরকে ডুবে মরে যাওয়া উচিত। সেটাই করতাম যদি না শেষ পর্যন্ত দেবশ্রী কাকিমা আমাদের দুই পরিবারের মাঝে সুরাহা করিয়ে না দিত।”
পরাশর দেবায়নকে বলে, “শেষ পর্যন্ত মনে হচ্ছে কাকিমার শরনাপন্ন হতে হবে আমাদের। দেবী দুর্গতিনাশিনী কি উপায় করেন একবার দেখা যাক।”
অনুপমা মুখ ভার করে বলে, “মামনি সব জানে, মামনি খুব চিন্তায় আছে। এর বেশি মামনি আর কি করতে পারে? পায়েলের বাবা যেই রকমের মানুষ সেখানে মামনিকে নিয়ে যেতে বড় ভয় করে।”
রূপক সবাইকে থামিয়ে বলে, “ভাই, শেষ কথা হচ্ছে যে আমাদের অপেক্ষা করা ছাড়া আর কোন উপায় নেই।”
পুজোর আনন্দ মাতামাতি কিছুই হল না শেষ পর্যন্ত। সবার কপালে চিন্তার রেখা। শ্রেয়ার বাড়ি থেকে বেড়িয়ে অনুপমাকে বাড়ি পৌঁছে দেয় দেবায়ন। বাড়ির যাবার রাস্তায় অনুপমা বলে যে ওর মাকে একটু বুঝানোর চেষ্টা করেছে, মা একটু নরম হয়েছে। মাও খুব চিন্তিত হয়ে পড়েছে পায়েলের ব্যাপারে। অনেকদিন ধরে আসে ওদের বাড়িতে তাই ওর বান্ধবী হিসাবে মায়ের খুব ভালো লেগেছিল। মা ক্ষণিকের জন্য রেগে গিয়েছিল, যখন জানতে পারে যে অঙ্কন পায়েলের প্রেমে পড়েছে। দেবায়ন হেসে বলে যে ওর মিমি ভালো, বুঝালে অনেক কিছু বোঝে। অনুপমা আলতো করে চাঁটি মেরে বলে দশমীতে ওর বাড়িতে সপরিবারে নিমন্ত্রন। দেবায়ন বলে যে সেটা ওকে না জানিয়ে ওর মাকে জানালে ভালো হয়। অনুপমা বলে ওর মা মামনির সাথে কথা বলে নেবে।
দুর্গা পুজো শেষ, কালী পুজোর আরও কয়েকদিন দেরি। রাতের অন্ধকার আকাশে মাঝে মাঝে কেউ বাজি ফুটিয়ে আকাশ আলোকিত করে দেয়। অনুপমার মনে শান্তি নেই, একা একা ছাদে দাঁড়িয়ে কালো আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে। মন পরে থাকে ওর প্রিয় বান্ধবীর কাছে। কোথায় আছে, কেমন আছে, কোন খবর পায়নি বিগত কুড়ি দিনে। পুজোর ছুটি শেষ, কলেজ আর দুইদিনের মধ্যে খুলে যাবে। সেই সাথে পরাশুনার চাপ বেড়ে যাবে। দশমীর পর থেকেই ওদের কম্পিউটার ক্লাস পুরদমে শুরু হয়ে যায়। প্রায় প্রতিদিন দেবায়নের সাথে দেখা হয়
প্রায় রোজ দিন একবার করে সন্ধ্যে বেলায় অনুপমা না হলে দেবায়ন একবার পায়েলের বাড়ির সামনে দিয়ে ঘুরে যায়, এই আশায় যদি কোন খবর পায় পায়েলের। অঙ্কন রোজ সামনের মাঠে গিয়ে চেয়ে থাকে পায়েলের অন্ধকার বাড়ির দিকে, যদি কারুর দেখা পাওয়া যায় সেই আশায়। লক্ষ্মী পুজোর পরেরদিন থেকেই পায়েলদের বাড়ির দরজায় তালা। কাউকে আসতে যেতেও দেখে না। আশে পাশের বাড়ির লোক কেউ জানে না ডক্টর কমলেশ পরিবার নিয়ে কোথায় গেছে। অন্ধকার বাড়ি দেখে অনুপমা আরো চিন্তায় পরে যায়। ওইদিকে অঙ্কনের অবস্থা শোচনীয়, ওর বন্ধুরা বুঝিয়ে সুঝিয়ে একটু ধাতস্ত করেছে। দুর্গা পুজোর সময়ে একটা দিনের জন্য বাড়ি থেকে বের হয়নি অঙ্কন। শুধু নিজের রুম আর খাবার সময়ে নিচে আসা ছাড়া কিছু করেনি, কারুর সাথে কথা পর্যন্ত বলে নি। পারমিতা ছেলের মতিগতি দেখে খুব চিন্তায় পরে যায়। মিস্টার সেন আর পারমিতা, ছেলের মনের অবস্থা বুঝে ওদের সম্পর্কের কথা মেনে নেয়। কিন্তু সব থেকে বড় চিন্তা, পায়েল কোথায়?
সঙ্গীতা, পুজোর পরেই ওর মামা বাড়িতে গিয়ে ওর মামাতো দাদা, রুদ্রকে সব কিছু জানিয়েছিল। সঙ্গীতার কাছে পায়েলের ছবি ছিল কিন্তু ওর বাবা মায়ের কোন ছবি ছিল না। রুদ্র সব কিছু শুনে বলেছিল যে ও আর তার বন্ধুরা অগ্নিহোত্রী আর বিনয়ের বাড়ির উপরে কড়া নজর রাখবে। সঙ্গীতা রোজদিন ওর দাদাকে ফোনে জিজ্ঞেস করে পায়েলের খবর, কিন্তু সেখানেও পায়েলের কোন খবর পাওয়া যায়না। লক্ষ্মী পুজোর দুইদিন পরে একদিন খবর আসে যে বিনয়ের বাড়িতে এক মহিলার মৃত্যু হয়েছে। রুদ্র খবর নিয়ে জানতে পারে যে বিনয়ের এক মামিমা মারা গেছেন। সেই শুনে সঙ্গীতা সঙ্গে সঙ্গে দেবায়ন আর অনুপমাকে ফোন করে। অনুপমা বুঝতে পারে যে পায়েলের মায়ের মৃত্যু হয়েছে, কারন পায়েলের বাবা আর পায়েলের পিসি দুই ভাই বোন। সেই খবর শুনে অনুপমা খুব ভেঙ্গে পরে। সঙ্গীতা খবর নিয়ে জানতে পারে যে এক রাতে, বিনয়ের মামিমা হার্ট এটাকে মারা যান।
কিছুদিন আগে সব বন্ধুরা আবার শ্রেয়ার বাড়িতে আলোচনা সভা বসায়। সঙ্গীতা সব কিছু জানায়। সেই খানে পরাশর বলে যে ওর সাথে ওর কাকার কথা হয়েছে। কাকা বলেছেন যে যতক্ষণ না ওদের বাড়ির লোক কিছু নালিশ জানায় ততক্ষণ পুলিসের হাত পা বাঁধা। আইন মত বন্ধু বান্ধবীরা কিছু করতে পারে না যতক্ষণ পায়েলের বাবা জীবিত। অনুপমা খুব ভেঙ্গে পড়েছিল পায়েলের মায়ের মৃত্যু সংবাদ পেয়ে, অঙ্কনকে সেই সব খবর জানানো হয় নি। অনুপমার ভয় এবারে হয়ত কোনদিন পায়ালের মৃত্যু সংবাদ কোন খবরের কাগজে পড়বে অথবা হয়ত জানতেও পারবে না যে পায়েলের মৃত্যু হয়েছে।
অনুপমার সম্বিৎ ফিরে আসে ওর মায়ের হাতের আলতো ছোঁয়ায়, “কি রে এত রাতে কি করছিস ছাদে?”
মাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলে অনুপমা। পারমিতা মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে শান্ত করে বলে, “কি করা যেতে পারে বল? সেদিন তোর বাবার আর আমার খুব রাগ হয়েছিল অঙ্কনের ওপরে। আমি পায়েলকে অনেকদিন ধরেই চিনি, তাই ঠিক মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছিল। আজ মনে হচ্ছে, সেদিন যদি জোর করে পায়েলকে বাড়িতে নিয়ে আসতাম তাহলে হয়ত মা মেয়ে দুই জনেই বেঁচে থাকতো।”
অনুপমা কাঁদতে কাঁদতে বলে, “না মা, পায়েলের কিছু হতে পারে না।”
পারমিতা বলে, “জানি না, তবে খুব ভয় হচ্ছে এখন। পায়েলের মা মারা যাবার পরে আরো ভয় করছে ওই মেয়েটার জন্য। পরাশরের কাকু কিছু করতে পারছে না?”
অনুপমা, “না মা, আমাদের হাত পা একদম বাঁধা। মা, আমার নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হয় মাঝে মাঝে, মনে হয় যেন পায়েল আমার বুকের উপরে চেপে বসে কেঁদে কেঁদে বলছে আমাকে বাচা অনু।”
অনুপমার করুন আর্তনাদে পারমিতা কি করবে কিছু বুঝে উঠতে পারে না, “হ্যান্ডসাম কি করছে। ওর মাথায় কিছুই কি আসছে না? এত বুদ্ধি রাখে আর পায়েলকে বাঁচানোর সময়ে ওর বুদ্ধি খালি হয়ে গেছে?”
অনুপমা, “মুশকিল ওখানেই মা। ওইদিকে পায়েলের পিসির বাড়ির উপরে সঙ্গীতার দাদা নজর রেখেছে, কিন্তু কথা হচ্ছে যে পায়েলের দেখা পায়নি। একবার পায়েলের দেখা পেলে না হয় কিছু করা যায়। পরাশরের কাকু বলেছে কোন প্রমান ছাড়া বিনয় অথবা অগ্নিহোত্রীকে পুলিসে আটক করতে পারবে না। যারাই পায়েলকে ধরে রেখেছে অথবা কিছু করেছে, তারা খুব সতর্ক ভাবে কার্যসিদ্ধি করেছে। এদিকে পায়েলদের বাড়ি বিগত দশ দিন থেকে বন্ধ, কেউ নেই বাড়িতে। পায়েলের বাবা নৈহাটি, পায়েল ওইখানে নেই, বাড়িতে নেই। সমস্যা ওইখানে যে কি হচ্ছে কিছুই ঠিক ভাবে জানা যাচ্ছে না।”
পারমিতা বুঝিয়ে সুঝিয়ে মেয়েকে নিচে নিয়ে আসে। অঙ্কন নিজের ঘরে জেগে বসে, সামনে বই খোলা কিন্তু পড়তে আর ভালো লাগে না ওর। মা আর দিদিকে নিচে নামতে দেখে একবার দরজা দিয়ে উঁকি মেরে দেখে। অঙ্কন বেড়িয়ে এসে মাকে জিজ্ঞেস করে, কোন খবর পাওয়া গেল পায়েলের? অনুপমা মাথা নাড়ায়, না কোন খবর পাওয়া যায়নি। শুকনো মুখে নিজের রুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দেয় অঙ্কন। পারমিতার মাঝে মাঝে ভয় হয় যে অঙ্কন রাগে দুঃখে কিছু করে না বসে।
রাতের খাওয়ার পরে দেবায়ন চুপচাপ বসার ঘরে বসে টিভি দেখে। ওর মা একবার জিজ্ঞেস করে পায়েলের কথা। দেবায়ন শুকনো মুখে জানিয়ে দেয় যে পায়েলের কোন খবর পাওয়া যায়নি। দেবশ্রী রাতের কাজ সেরে ঘুমাতে চলে যায়। টিভি দেখতে দেখতে দেবায়ন সোফার উপরেই ঘুমিয়ে পরে।
কত রাত ঠিক খেয়াল নেই, মায়ের ধক্কায় ধরমর করে উঠে বসে দেবায়ন।
দেবায়ন মাকে জিজ্ঞেস করে, “কি হল?”
দেবশ্রী ওর হাতে ফোন ধরিয়ে দিয়ে বলে, “অনুর ফোন এই নে কথা বল।”
ওই পাশে অনুপমার কাঁপা গলা শোনা যায়, “পায়েল পায়েল…”
দেবায়নের ঘুম কেটে গিয়ে চাপা চেঁচিয়ে ওঠে, “কি হয়েছে পায়েলের?”
অনুপমা কাঁপতে কাঁপতে বলে, “পায়েলের খবর পাওয়া গেছে, তুমি এখুনি আমার বাড়িতে এসো।”
 
Like Reply
বিংশ পর্ব (#07)

দেবায়নের ঘুম কেটে গিয়ে চাপা চেঁচিয়ে ওঠে, “কি হয়েছে পায়েলের?”
অনুপমা কাঁপতে কাঁপতে বলে, “পায়েলের খবর পাওয়া গেছে, তুমি এখুনি আমার বাড়িতে এসো।”
দেবায়ন মায়ের দিকে তাকায়। দেবশ্রী ওর জন্য জামা প্যান্ট নিয়ে তৈরি। দেবশ্রী, দেবায়নের মাথায় হাত বুলিয়ে বলে, “মেয়েটাকে বাঁচিয়ে ফিরিয়ে নিয়ে আয় আর যারা এর পেছনে আছে তাদের ছাড়িস না।”
দেবায়ন, মাকে জড়িয়ে ধরে বলে, “তুমি যখন একবার বলে দিয়েছ, তাহলে আর সেই শয়তানদের রক্ষে নেই।”
রাত তখন বারোটা বাজে। বাইক নিয়ে অনুপমার বাড়ির উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে পরে দেবায়ন। বাড়ি থেকে বেড়িয়েই রূপক আর ধিমানকে ফোনে করে অনুপমার বাড়িতে যেতে বলে, জানিয়ে দেয় যে পায়েলের খবর পাওয়া গেছে। রূপক জানায় যে শ্রেয়া ওকে জানিয়েছে, সেই মতন ও শ্রেয়াকে নিয়ে অনুপমার বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছে। ধিমান জানিয়ে দেয় কিছুক্ষণের মধ্যেই ও অনুপমার বাড়িতে পৌঁছে যাবে।
বাইকের শব্দ শুনে অনুপমা দৌড়ে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে এসে দেবায়নকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলে। বসার ঘরে ঢুকে দেখে যে শ্রেয়া, রূপক, ধিমান, সঙ্গীতা সবাই পৌঁছে গেছে। পারমিতা অঙ্কনকে জড়িয়ে ধরে একধারে বসে। মিস্টার সেন, চুপ করে সোফার উপরে বসে আছেন। অঙ্কন চুপ করে গুম মেরে সবার দিকে তাকিয়ে। দেবায়ন জিজ্ঞেস করে অনুপমাকে, কি খবর।
অঙ্কন বলে, “এই কিছু আগে, মানে রাত সাড়ে এগারোটা নাগাদ আমার কাছে একটা ফোন আসে। কার ফোন জানি না। সেই লোকটা আমাকে ফোনে বলল যে একটা মেয়ে ওকে আমার নাম্বার দিয়ে সাহায্য চেয়েছে। আমি বুকে হাত রেখে বলতে পারি যে ওই মেয়েটা মিষ্টি ছাড়া আর কেউ নয়। আমি এখুনি যাবো সেই লোকটার সাথে দেখা করতে আর মিষ্টি কে বাঁচাতে।”
দেবায়ন জিজ্ঞেস করে, “তুই কোথায় যাবি? লোকটা কে, কোথা থেকে ফোন করেছে কিছু জানিস? এত রাতে হয়ত কোন শত্রুর চাল হতে পারে। কি করে বিশ্বাস করা যায় যে লোক’টা সত্যি কথা বলছে?”
অঙ্কন রাগে দুঃখে চেঁচিয়ে ওঠে, “দিদির কিছু হলে তুমি কি করতে? এই রকম ভাবে হাতে হাত রেখে বসে থাকতে?” পারমিতা ছেলেকে শান্ত হতে বলে। অঙ্কন বলে, “আমার মন বলছে যে লোকটা মিথ্যে কথা বলছে না। লোকটা নৈহাটির কাছাকাছি, মালঞ্চ নামে একটা গ্রাম থেকে ফোন করেছে। আমি যেতে চাই দেবায়নদা, মিষ্টি আমাকে ডাকছে। আমি বুকে হাত রেখে বলতে পারি যে এর পেছনে বিনয় আর অগ্নিহোত্রীর হাত আছে। লোকটা যেই হোক আমি মিষ্টিকে বাঁচাতে যাচ্ছি। আমি ওকে বলেছি যে আমি আসছি। লোকটা আমাকে বলেছে যে কল্যাণী হাইওয়ের মোড়ের মাথায় দাঁড়িয়ে আমার জন্য অপেক্ষা করবে।”
দেবায়ন বলে, “ঠিক আছে। লোকটার ফোন নাম্বার আছে তোর কাছে?”
অঙ্কন দেবায়নকে সেই আগন্তুকের ফোন নাম্বার দেয়। রূপক ধিমানকে বলে যে এক বার ঋতুপর্ণাকে খবর দিতে, কারন লোকটা জানিয়েছে যে পায়েলের শরীর খুব খারাপ, কথা বলার মতন শক্তি নেই, ঋতুপর্ণার দরকার লাগতে পারে। ধিমান ঋতুপর্ণাকে মেস থেকে নিয়ে আসতে বেড়িয়ে পরে।
দেবায়ন আগন্তুককে ফোন করে, “আপনি কে? আপনি এত রাতে পায়েলের খবর কি করে জানলেন?”
ওপর পাশে সম্পূর্ণ গ্রাম্য কণ্ঠ স্বর ভেসে আসে, “বাবু, আপনারা তাড়াতাড়ি আসুন, নাইলে মেয়েডা মারা যাবে। আপনারা আসুন তারপরে আমি সব জানাবো। বাবু আমি চোর কিন্তু কোন মেয়ের ইজ্জত চুরি করিনা। বাবু আপনারা তাড়াতাড়ি আসুন।”
লোকটার কণ্ঠ স্বর শুনে দেবায়ন বুঝতে পারে যে হয়ত লোকটা মিথ্যে কথা বলছে না।
রূপক জিজ্ঞেস করে লোকটা কি বলল, দেবায়ন সবাইকে বলে যে ওদের বের হতে হবে নৈহাটির উদ্দেশ্যে। দেবায়ন অনুপমাকে বলে যে একবার পরাশরকে ফোনে জানিয়ে দিতে যাতে ও জারিনার বাবাকে বলে রাখে। পায়েলকে কি রকম অবস্থায় পাবে জানে না, ডাক্তারের দরকার পড়তে পারে। অনুপমা সোজা জারিনাকে ফোন করে। জারিনা জানিয়ে দেয় যে ওর আব্বুকে সব জানিয়ে দেবে। জারিনা পরাশরকে ফোনে সব ঘটনা জানায়। পরাশর দেবায়নকে ফোনে জিজ্ঞেস করে যে দরকার পড়লে কাকাকে নিয়ে চলে আসবে। দেবায়ন বলে যে এখুনি কোন দরকার নেই পুলিশের, আগে পায়েলকে বাঁচিয়ে নিয়ে আসুক তারপরে পুলিশে দেবে না নিজেরা বিচার করবে সেটা পরের ব্যাপার।
অনুপমার বাড়ি কিছুক্ষণের মধ্যে রণক্ষেত্রের পরিচালনা গৃহ হয়ে ওঠে। সঙ্গীতা ওর মামাতো দাদা, রুদ্রকে ফোনে সব জানিয়ে দেয়। রুদ্র জানিয়ে দেয় ওর বন্ধু বান্ধব নিয়ে কল্যাণী হাইওয়ের মোড়ে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করবে। ধিমান কিছুক্ষণের মধ্যে ঋতুপর্ণাকে নিয়ে উপস্থিত। ঋতুপর্ণা বেশ কয়েকটা স্যালাইন আর কিছু ইঞ্জেকশান, একটা আইস বক্সে নিয়ে এসেছে। দেবায়ন, অনুপমা আর শ্রেয়াকে বাড়িতে থাকতে বলে। দেবায়ন জানায় যে ওইখানে মারামারির মধ্যে মেয়েদের গিয়ে প্রয়োজন নেই। অনুপমা নাছোরবান্দা, পায়েলের সাথে যারা এই সব করেছে তাদের নিজে হাতে খুন করবে। পারমিতা আর শ্রেয়া কিছুতেই অনুপমাকে বুঝিয়ে উঠতে পারে না। শেষ পর্যন্ত দেবায়ন ধমক দেয় অনুপমাকে। ধমক খেয়ে থমথমে মুখে চুপচাপ বসে পরে অনুপমা। অঙ্কন যাবেই, ওকে বারন করা ঠিক হবে না বলে দেবায়ন ওকে আর বারন করে না। অনুপমাদের গাড়ি নিয়ে যাওয়া উচিত হবে না, তাই ধিমান একটা গাড়ির ব্যাবস্থা করেছে। রূপক বলে যে শুধু সঙ্গীতার ফোন ছাড়া বাকি সবার ফোন অনুপমার বাড়িতে রেখে যেতে।
রাত প্রায় সাড়ে বারোটার মধ্যে সবাই বেড়িয়ে পরে নৈহাটির উদ্দেশ্যে।
অনুপমা দেবায়নকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলে, “তুমি পায়েলকে বাঁচিয়ে নিয়ে এস। ও হয়ত জানে না যে ওর মা মারা গেছে। আমি ওকে আমার সব দিয়ে দেব, শুধু আমার বান্ধবীকে ফিরিয়ে নিয়ে এস।” চোখ মুছে বলে, “শয়তান গুলোকে ছেরো না একদম।”
দেবায়ন পারমিতাকে বলে, “মা এক কথা বলেছে, চিন্তা করো না। পায়েলকে নিয়ে আসব আর সেই সাথে বাকিদের ওইখানে কবর দিয়ে আসব।”
একটা সুমোর মধ্যে, দেবায়ন, রুপক, ঋতুপর্ণা, সঙ্গীতা আর অঙ্কন। ধিমানের হাতে স্টিয়ারিং, ছয়জনে বেড়িয়ে পরে নৈহাটির উদ্দেশ্যে। জানে না কি ওদের জন্য অপেক্ষা করছে। রাতের অন্ধকার কেটে, গাড়ি দ্রুত গতিতে নৈহাটির দিকে ধেয়ে চলে। সময়ের সাথে ওদের লড়াই, দেরি হলে যদি পায়েলকে বাঁচান না যায় সেই চিন্তায় দেবায়ন ঘেমে যায়, ধিমান পাগলের মতন গাড়ি চালায়। চারপাশে ঘন কালো আঁধার, রাস্তায় শুধু ট্রাক ছাড়া আর কোন গাড়ি নেই। কিছুক্ষণের মধ্যে ব্যারাকপুর ছাড়িয়ে যায়। ব্যারাকপুর পার হতেই সঙ্গীতার কাছে ওর দাদার ফোন আসে। সঙ্গীতা জানায় ওর দাদা, রুদ্রর সাথে সেই লোকটার দেখা হয়েছে। লোকটা সত্যি কথাই বলছে, না হলে এত রাতে কল্যাণী মোড়ে দাঁড়িয়ে থাকত না। ওদের জন্য সবাই ওখানে অপেক্ষায় আছে। তীব্র গতিতে গাড়ি চালায় ওরা। কিছুক্ষণের মধ্যে ওরা নৈহাটির কল্যাণী রোডের মোড়ে পৌঁছে যায়।
রুদ্র, ওদের জন্য অপেক্ষা করে দাঁড়িয়েছিল। সাথে প্রায় আরও দশ বারোটা ছেলে, সবার হাতে কিছু না কিছু, কারুর হাতে লাঠি, কারুর হাতে বড় ছুরি, কারুর হাতে দা। সবাই তৈরি এক রক্তাক্ত যুদ্ধের জন্য। রুদ্রকে দেখে সঙ্গীতা দৌড়ে যায়। গাড়ি থেকে দুটি মেয়েকে নামতে দেখে রুদ্র একটু ঘাবড়ে যায় বিশেষ করে ওর বোনকে দেখে। রুদ্র সঙ্গীতাকে আসার কারন জিজ্ঞেস করে। সঙ্গীতা জানায় যে পায়ল কে বাঁচাতে এসেছে। রুদ্র সেই আগন্তুককে ধরে এনে দেবায়নের সামনে এনে দাঁড় করায়। দেবায়ন তাকে সব ঘটনা জিজ্ঞেস করে।
অগন্তুক বলে, “বাবু আমি ছিঁচকে এক চোর, নাম জেনে আর কি হবে তাও বলি, আমার নাম শ্যাম। পুজোর মরশুম গ্রামের মানুষের কাছে পয়সা আসে এই সময়ে। গ্রামের দিকের সবার বাড়ি ঘরদোর আমার চেনা। ওই মালঞ্চের দিকে থাকি আমি। ওইখানে সমীর বাবুর অনেক জমিজমা, আম বাগান আর ফলের বাগান আছে। বেশ বড় লোক চাষা। বাগানের মাঝে ওদের একটা বেড়ার বাড়ি আছে যেখানে গরম কালে ওদের লোকেরা বাগান পাহারা দেবার জন্য থাকে।”
দেবায়ন জিজ্ঞেস করে, “এই সমীর বাবু কে?”
রুদ্র উত্তর দেয়, “অগ্নিহোত্রীর বাবার নাম সমীর। অনেক জমিজমা আছে আবার কাপড়ের ব্যাবসা আছে, বেশ বড়োলোক। পাড়ায় বেশ নাম ডাক, সেই সাথে খুব কুটিল প্রকৃতির লোক। তাবে চিন্তা করিস না তোরা, অগ্নিকে পেলে কুপিয়ে মারব। আমার বোনের বান্ধবী মানে আমার বোন।”
রুদ্র দুটো ছেলেকে বলল যে সঙ্গীতাকে বাড়িতে নিয়ে যেতে, ওদের সাথে সঙ্গীতাকে গিয়ে কাজ নেই। সঙ্গীতা অনিচ্ছা সত্বেও ওর মামাবাড়ি চলে যায়। রুদ্র তারপরে বলে, “ঋতুপর্ণার দরকার আছে। এক কাজ করা যাক, আমরা হাঁটতে থাকি ততক্ষণে ওর মুখে সব কথা শোনা যাক।”
গাড়ি বড় রাস্তায় দাড়ি করিয়ে সবাই দল বেঁধে মাঠের মাঝখান দিয়ে হাঁটতে শুরু করে। চারপাশে খালি মাঠ, মাঝ খান দিয়ে ভুতের মতন এগিয়ে চলে একদল ছেলে। শ্বাসের আওয়াজ আর পায়ের আওয়াজ ছাড়া কিছু শোনা যায় না। মাঝে মাঝে দূর থেকে শিয়ালের ডাক শোনা যায়, কোথাও দুরে ঝিঁঝিঁ পোকা একটানে সুর করে গান গেয়ে চলেছে।
শ্যাম তার কথা বলতে শুরু করে, “দুই তিন দিন ধরে দেখি সেই কুঁড়ে বাড়িটায় দুটো ছেলের আনাগোনা। তারমধ্যে একজন সমীর বাবুর ছেলে। গরম কালে ওইখানে মানুষ জন থাকে, কিন্তু এইসময়ে ওইখানে ছেলেদের দেখে আমার সন্দেহ হল। আমি তক্কে তক্কে থাকলাম, কি হচ্ছে জানার জন্য। আমি ওদের বাড়ির উপরে নজর রাখলাম, নিশ্চয় কিছু লুকিয়েছে, হয়ত চুরি করলে অনেক টাকা পাওয়া যাবে। আজ সন্ধ্যের পরে দেখলাম যে ছেলেগুলো বেড়িয়ে গেল ঘর থেকে, কিন্তু ভেতরে হ্যারিকেন জ্বালান। আমি চালের টালি সরিয়ে ভেতরে ঢুকে যা দেখি, তাতে আমার চোখ ছানাবড়া হয়ে গেল। একটা ঘরে যেখানে খড় বিচুলি, লাঙ্গল ইত্যাদি থাকে সেই ঘরে একটা মেয়ে বাঁধা। মেয়েটার গায়ে কাপড় নেই বললেই চলে, শুধু মাত্র একটা ছেঁড়া নোংরা কামিজ। আমি মেয়েটার মুখের উপরে ঝুঁকে নাকের কাছে হাত নিয়ে দিয়ে দেখলাম যে শ্বাস চলছে, কিন্তু খুব ধিরে। আমি কি করব কিছু ভেবে পেলাম না। এসেছিলাম চুরি করতে কিন্তু মেয়েটাকে দেখে বড় কষ্ট হল। মেয়েটা কোন রকমে চোখ খুলে আমার দিকে তাকাল। মেয়েটার চোখের করুন ভাষা দেখে আমি ওকে জিজ্ঞেস করলাম কে ওকে বেঁধে রেখেছে, ওর বাড়ি কোথায়? মেয়েটার কথা বলার মতন শক্তি ছিল না। আমি আমার জামা দিয়ে মেয়েটাকে ঢেকে দিলাম। আমি চোর হতে পারি বাবু, কিন্তু কোন মেয়ের গায়ে আজ পর্যন্ত হাত তুলিনি। মেয়েটা আমাকে কোনমতে ইশারায় ফোনের কথা জিজ্ঞেস করে। আমি আমার ফোন বের করে দিলাম। সেই ফোন হাতে ধরার মতন শক্তি ছিল না মেয়েটার হাতে। আমি এক একটা করে বোতামে আঙুল দিয়ে দেখালাম, আর সেই মতন আমাকে ইশারায় আপনার নম্বর জানাল। আমি যেরকম ভাবে ঢুকেছিলাম তেমনি বেড়িয়ে এলাম। আমি বের হবার কিছু পরে দেখলাম যে ওই দুজন ছেলে বাড়িতে আবার ঢুকেছে, ওদের হাতে খবরের কাগজে মোড়া মদের বতল। আমি বুঝতে পারলাম যে মদ খেয়ে এই মেয়েটার সর্বনাশ করবে ওরা। আমি সঙ্গে সঙ্গে আপনাকে ফোন করলাম।”
দেবায়ন অঙ্কনের দিকে তাকায়। অঙ্কনের দুই চোখে আগুন ঝরছে, দাঁতে দাঁত পিষে চিবিয়ে বলে, “আমি তোমাকে বলেছিলাম বিনয় আর অগ্নিহোত্রীকে ধরতে। যদি মিষ্টির কিছু হয় তাহলে আমি তোমাকে, মাকে আর বাবাকে কোনদিন ক্ষমা করব না।”
রূপক অঙ্কনকে বুঝিয়ে বলে, “দ্যাখ ভাই, আমাদের হাতে কিছু ছিল না। আমরা জানতাম না যে পায়েল কোথায়। প্রমান ছাড়া ওদের গায়ে হাত দিলে পুলিস কেস হয়ে যেত।”
অঙ্কন চিবিয়ে চিবিয়ে বলে, “দিদির কিছু হলে দেবায়নদা চুপ করে থাকত? তখন প্রমানের অপেক্ষা করত না নিশ্চয়।”
অঙ্কনের কথা শুনে দেবায়ন মাথা নিচু করে নেয়।
ঋতুপর্ণা অঙ্কনকে আসস্থ করে বলে, “ভাইটি, চুপ কর এখন। পায়েলের কিছু হবে না।”
সবাই আবার চুপচাপ হাঁটতে শুরু করে। বেশ কিছুদুর যাবার পরে, দুরে একটা বাগানের দিকে দেখিয়ে দেয় শ্যাম। বলে ওর মাঝে একটা বেড়ার ঘর আছে তার মধ্যে পায়েলকে বেঁধে রাখা হয়েছে। পা টিপে টিপে সবাই এগোতে শুরু করে দেয় বাড়ি টার দিকে। সব থেকে আগে দেবায়ন আর রুদ্র, দুইজনের হাতে বাঁশের লাঠি। ঠিক পেছনে ধিমান আর রূপক। রুদ্র একটা বড় ছুরি রূপকের হাতে ধরিয়ে দেয়। বাকি ছেলেরা পেছনে। রুদ্র ইশারায় ওর সাথে আসা ছেলেগুলোকে বলে বাড়ি ঘরে ফেলতে। বেড়ার ফাঁক দিয়ে ভেতরের হ্যারিকেনের আলো দেখা যায়। চারদিক নিস্তব্ধ, শুধু চাপা শ্বাসের আওয়াজ ছাড়া কিছু শোনা যায় না।
শ্যাম গলা নিচু করে দেবায়নকে বলে, “বাবু, দরমার বেড়া, এক লাথিতে ভেঙ্গে যাবে দরজা।”
রুদ্র আর দেবায়ন দরজায় এক সজোরে লাথি মারতেই দরজা খুলে যায়। বিনয় আর অগ্নিহোত্রী, বেশ আরাম করে একটা তক্তায় বসে মদ গিলছিল আর গল্প করছিল, কি ভাবে পায়েলকে ভোগ করা যায়। দরজা ভাঙ্গার শব্দে চমকে ওঠে দুইজনে। ওদের হাতের কাছে একটা লাঠি ছিল, সেই টা তুলে নিল বিনয়। কিন্তু কিছু বুঝে ওঠার আগেই দেবায়ন, রুদ্র আর রূপক ঝাঁপিয়ে পরে দুটি ছেলের উপরে। এলোপাথাড়ি কিল চড় ঘুসি মারতে শুরু করে দেয় দুইজনকে। ততক্ষণে রুদ্রের বাকি বন্ধুরা দৌড়ে ঘরের ভেতরে ঢুকে অগ্নিহোত্রী আর বিনয়কে বেঁধে ফেলে। শ্যাম চোর বলে যে দিদিমনি পাশের ঘরে। ধিমান পাশের ঘরের দরজা লাথি মেরে ভেঙ্গে দেয়। ভেতরের দৃশ্য দেখে ধিমান আর ঋতুপর্ণা হাঁ করে দাঁড়িয়ে থাকে। অন্ধকার স্যাঁতসেঁতে ঘর, একপাশে খড় বিচুলির গাদা। ঘরের এক কোনায় এক তাল ঘুঁটে, এক পাশে বস্তায় সার, খৈল রাখা। একটা বড় মাটির জালায় খৈল ভেজান, তার দুর্গন্ধে ঘরে টেকা দায়। কোন পশুকে হয়ত এত নোংরা অবস্থায় রাখা হয় না। দেবায়ন ঘরে ঢুকে পায়েলের দিকে তাকিয়ে দেখে। ওর অবস্থা দেখে চোখ ফেটে জল বেড়িয়ে আসে। ফর্সা রঙ আর ফর্সা নেই, কালী হয়ে গেছে। সুন্দরী পায়েলের সেই মূর্তি কালী মাখা, দেখলে মনে হয় যেন একটা শুকনো কঙ্কালের উপরে চামড়া জড়ানো। গায়ে একটা ছেঁড়া কামিজ ছাড়া নিচে কিছুই পরে নেই।
অঙ্কন দৌড়ে গিয়ে পায়লেকে জড়িয়ে ধরে। কাঁপা গলায় পায়েলকে জড়িয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে বলে, “মিষ্টি আমি এসে গেছি।” চোখ ভিজে আসে অঙ্কনের। পায়েল কোনোরকমে চোখ খুলে একবার অঙ্কনের মুখের দিকে তাকায়, ঠোঁট জোড়া নড়ে ওঠে কিন্তু গলা থেকে আওয়াজ বের হয় না। পায়েল, অঙ্কনের বুকে মাথা গুঁজে অজ্ঞান হয়ে যায়। অঙ্কন চিৎকার করে ওঠে, “মিষ্টি প্লিস সোনা, চোখ খোলো। প্লিস সোনা আমাকে ছেড়ে যেও না।”
শ্যাম অন্য ঘর থেকে একটা বোতলে জল নিয়ে ঋতুপর্ণার হাতে দেয়। ঋতুপর্ণা পায়েলের মুখে জল ছিটিয়ে দেয়। পায়েলের শরীরে এতটুকু শক্তি ছিল না যে চোখ খুলে একবার সবাইকে দেখে। কোনোরকমে শেষ সম্বলের মতন অঙ্কনের বুকে মাথা গুঁজে নিস্বার হয়ে পরে থাকে। অঙ্কন প্রাণপণে পায়েলকে বুকের কাছে জড়িয়ে ধরে সারা শরীরের উত্তাপ দিয়ে ভরিয়ে দেয়। ধিমান আর ঋতুপর্ণা ওর পাশে এসে বসে পড়ে।
 
Like Reply
বিংশ পর্ব (#08)

ঋতুপর্ণা ভালো ভাবে পায়েলকে দেখার পরে ধিমানকে বলে, “যার বেশি ভয় ছিল সেটা হয় নি, ওরা এখন রেপ করেনি পায়েলকে। তবে পায়েলের শারীরিক অবস্থা খুব খারাপ। এতদিন হয়ত ঠিক ভাবে খেতে পায়নি। শরীরে কিছু বেঁচে নেই, প্রচন্ড ডিহাইড্রেট হয়ে গেছে। প্রচন্ড ট্রমাতে ভুগছে। এখুনি ওকে স্যালাইন দিতে হবে, ওকে নিয়ে আমাদের বেড়িয়ে পড়া উচিত না হলে শেষ রক্ষা করতে বড় মুশকিল হয়ে যাবে।”
অঙ্কন পারলে বুকের মধ্যে লুকিয়ে ফেলে পায়েলকে। সব শক্তি দিয়ে আগলে ধরে থাকে, এমন কি ধিমানের উপরেও যেন ওর আর বিশ্বাস নেই। চোখে মুখে করুন ছাপ, বারেবারে পায়েলের মাথায় গালে হাত বুলিয়ে কানের কাছে বিড়বিড় করে চোখ খুলতে অনুরোধ করে। পায়েল অজ্ঞান, অঙ্কনের কাতর ডাক পায়েলের কানে পৌঁছায় না।
দেবায়ন চোখ বন্ধ করে একবার ভগবানের উদ্দেশ্যে প্রার্থনা জানায়। তারপরে ধিমানকে বলে, “তুই এদের নিয়ে বেড়িয়ে যা। রুদ্রের ফোন থেকে একবার পরাশরকে ফোন করে দে। জারিনার বাবাকে এমনিতে বলা আছে, সোজা জারিনার বাড়িতে নিয়ে চলে যাবি। একটা কথা মনে রাখিস, পুলিসে খবর একদম দিবি না।”
ধিমান জিজ্ঞেস করে, “কেন? এটা পুলিস কেস।”
অঙ্কন হুঙ্কার দিয়ে ওঠে, “পুলিস শালা কিছুই করতো না। ওর বাবা মা যে কমপ্লেইন করে নি। কেন যাবো পুলিসের কাছে? আমি ওদের খুন করে তবে যাবো।”
দেবায়ন অঙ্কনকে শান্ত করে বলে, “তুই তোর মিষ্টিকে পেয়ে গেছিস। এবারে তুই ওকে নিয়ে বেড়িয়ে যা এখান থেকে। বাকিদের কি করতে হয় আমি দেখে নেব।”
রুদ্রের ফোন থেকে অনুপমাকে ফোন করে দেবায়ন, “পায়েল কে পাওয়া গেছে। ভাই আর ঋতুপর্ণা পায়েল কে নিয়ে এখুনি রওনা দিচ্ছে। তুমি শ্রেয়াকে নিয়ে জারিনার বাড়িতে চলে যাও। পরাশরকে বলবে পার্ক সার্কাসের মোড়ে দাঁড়াতে। ওইখানে থেকে এদের নিয়ে জারিনার বাড়িতে চলে যায় যেন। পরাশরকে বলে দেবে যেন ওর কাকা এইসবের কিছু জানতে না পারে।”
অনুপমা কেঁদে ফেলে দেবায়নের কথা শুনে, “তাড়াতাড়ি নিয়ে এসো আমার কাছে। বড় দেখতে ইচ্ছে করছে ওকে।”
শ্রেয়া বলে, “তুই চিন্তা করিস না, আমি ঠিক করে নেব খানে। তুই কখন আসবি?”
দেবায়ন, “এখানে এখন কাজ বাকি তারপরে আমি আসব। আর হ্যাঁ এক বার আমার মাকে জানিয়ে দিস যে পায়েল কে পাওয়া গেছে।”
ঋতুপর্ণা বেড়িয়ে যাবার আগে ছেলে গুলোর দিকে তাকিয়ে দেবায়ন আর রূপককে বলে, “এরা যেন কালকের সূর্য না দেখতে পারে সেই ব্যাবস্থা করবে।”
দেবায়ন বলে, “তুমি শুধু পায়েলকে একটু দেখো, প্লিস। আমরা ছাড়া ওর আর কেউ দেখার নেই মনে হয়।”
রুদ্র ওর কয়েক জন বন্ধুকে বলে অঙ্কনদের গাড়ি পর্যন্ত পৌঁছে দিতে। ধিমান থাকতে চাইলে দেবায়ন বলে যে গাড়িতে ওকে দরকার। একা ঋতুপর্ণা আর অঙ্কন হয়ত পায়েলকে সামলাতে পারবে না। পায়েলের নিস্বার দেহ, অঙ্কন কোলে তুলে নেয়। ধিমান বেড়িয়ে যাবার আগে, রাগের বশে বিনয়কে খান পাঁচেক সজোরে লাথি মেরে বেড়িয়ে পরে। দেবায়ন বলে, কোলকাতা পৌঁছে যেন রুদ্রের ফোনে একবার ফোন করে জানিয়ে দেয় ওদের সংবাদ। ধিমান মাথা নেড়ে জানিয়ে দেয় যে সব সংবাদ দিয়ে দেবে। পায়েল কে নিয়ে বেড়িয়ে যায় সবাই।
দেবায়ন অন্য ঘরে ঢোকে, একটা হ্যারিকেন ছাড়া আর কোন আলো নেই। বিনয় আর অগ্নিহোত্রীর মুখ হাত পা বাঁধা। রুদ্র রূপক আর বাকিরা, ছেলে দুটোকে বেঁধে বেশ মার মেরেছে। শুধু গোঙ্গানো ছাড়া আর কোন আওয়াজ বের হয় না ছেলে গুলোর মুখ থেকে। দুটো ছেলে দেবায়নের দিকে রোষ ভরা চাহনি নিয়ে দেখে।
ছেলে গুলোর দিকে তাকিয়ে দেবায়ন জিজ্ঞেস করে, “তোদের মধ্যে বিনয় কে আর অগ্নিহোত্রী কে?” রুদ্র দেখিয়ে দেয় বিনয় আর অগ্নিহোত্রীকে।
দেবায়ন, রূপককে বলে, “বিনয়ের মুখ খুলে দে। ওর সাথে আমার কথা আছে।”
রূপক, বিনয়ের মুখ খুলে দিতেই বিনয় চাপা স্বরে চেঁচিয়ে ওঠে, “শালা আমার গায়ে হাত তুলেছিস তুই। তোকে এইখানে পুঁতে ফেলব। তুই আমাকে চিনিস না।”
রুদ্র গর্জন করে বলে, “তুই বাঞ্চোত জাত শয়তান। তোকে সবাই চেনে।”
দেবায়ন তির্যক হেসে বলে, “সকালের সূর্য দেখতে পেলে তবে না আমাকে পুঁতবি।”
দেবায়ন নিজের মোবাইল ফোন রূপকের হাতে ধরিয়ে বলে, “ভিডিও করতে শুরু করে দে। ওদের কাছে আমার অনেক কিছু জানার আছে তারপরে আমি ওদের বিচার করব।”
রুদ্রকে বলে, “বাকিদের বাইরে অপেক্ষা করতে বল। এই কথা শুধু তুমি আমি আর রূপকের মাঝে থাকবে।”
রুদ্র বাকি ছেলেদের বাইরে অপেক্ষা করতে বলে দেয়। রুদ্রের বন্ধুরা ঘরের বাইরে চলে যায়। রূপক দেবায়নের পেছনে দাঁড়িয়ে মোবাইলে ভিডিও রেকর্ড করতে শুরু করে। দেবায়ন বিনয়ের চুলের মুঠি ধরে গালে একটা সপাটে চড় কষিয়ে দেয়। ঠোঁটের কষ ফেটে গিয়ে রক্ত বের হয়। বিনয় কিছু বলার আগেই আরো একটা চড় গালে কষায় দেবায়ন। দেবায়নের কঠিন হাতের চড় খেয়ে বিনয় বুঝতে পারে যে এই বারে সুন্দরবনের বাঘের কবলে পড়েছে।
বিনয় বলে, “বড্ড পাপ করে ফেলেছি। দয়া করে ছেড়ে দাও আমাদের। আমি সত্যি বলছি, কোনদিন পায়েলের দিকে তাকাবো না।”
রুদ্র অগ্নিহোত্রীর মাথার পেছনে সজোরে এক লাথি মেরে বিনয়কে বলে, “বোকাচোদা ছেলে, করার আগে ভাবতে পারিস নি?”
দেবায়ন বিনয়ের সামনে হাঁটু গেড়ে বসে জিজ্ঞেস করে, “পায়েলকে এই ভাবে ধরে রাখার পেছনে কে?”
বিনয়, পাশে পরে থাকা অগ্নিহোত্রীর দিকে দেখিয়ে বলে, “আমি কিছু করিনি, আমি কিছু জানিনা। যা করার ওই করেছে পায়েলকে।”
গা জ্বলে ওঠে দেবায়নের। রুদ্র, মেঝেতে পরে থাকা অগ্নিহোত্রীকে বেশ কয়েকটা লাথি মেরে বলে, “মাদারচোদ আজকে তোর বাড়া কেটে তোকে খাওয়াব। একটা মেয়েকে এমন ভাবে ধরে রেখে কষ্ট দেওয়া বের করে দেব।”
দেবায়ন বলে, “সব কথা শুরু থেকে বল আমাকে। অগ্নিহোত্রী পায়েলের সাথে প্রেমের নাটক করেছিল কেন? পায়েলের বাবা কোথায়? পায়েলের মায়ের মৃত্যু কি করে হয়েছে? পায়েল এত দিন কোথায় ছিল? সব কথা বল। এমনিতেও তোরা আজকে মরবি, বলে মরলে তোদের ভালো। পায়েল কোলকাতা চলে গেছে। আমার এক বন্ধুর কাকা ক্রাইম ব্রাঞ্চের ইন্সপেক্টর। তুই না বললেও, কি করে বলাতে হয় সব কিছু জানা আছে আমাদের কাছে।”
বিনয় কোন রকমে কাতর মিনতি করে বলে, “আমি বলছি, সব বলছি। আসলে, আমার আর অগ্নিহোত্রীর অনেকদিন থেকেই পায়েলের ওপরে নজর ছিল। গত গরমের ছুটিতে পায়েল আমাদের বাড়িতে আসে। পায়েল শয়তানি করে অগ্নিহোত্রীর সাথে মিশে আমাদের মাঝে ঝগড়া বাঁধাতে চেয়েছিল। কিন্তু আমার আর অগ্নিহোত্রীর প্লান অন্য ছিল। আমরা নাটক করলাম যে আমাদের মধ্যে মনমালিন্য হয়ছে। অগ্নিহোত্রী পায়েলকে খেলিয়ে উঠাতে চেয়েছিল। আমাদের মতলব ছিল যে একবার পায়েলকে এই খানে উঠিয়ে নিয়ে চলে আসব আর ধরে রাখব। অগ্নিহোত্রী পায়েলকে ভোগ করবে পারলে ওকে বিক্রি করে দেওয়া হবে কোথাও। আমার মতলব ছিল মামাকে ব্লাকমেল করে মামার কোটি টাকার বাড়ি নিজের নামে করে নেওয়া। কিন্তু বাধ সাধল কপাল। যেদিন পায়েলকে উঠিয়ে নিয়ে আসার কথা, সেদিন কি করে পায়েল আমাদের দেখে ফেলে আর অইখান থেকে চলে যায়। সবার সামনে আমাদের সাহস হল না পায়েলকে জোর করে গাড়িতে তোলার। ইতিমধ্যে দেখলাম একটা ছেলে ট্যাক্সিতে এসে পায়েলকে নিয়ে চলে গেল।”
রূপক আর দেবায়নের গা চিড়বিড় করে জ্বলতে শুরু করে দেয়। রুদ্র অগ্নিহোত্রীর চুলের মুঠি ধরে ঝাঁকিয়ে জিজ্ঞেস করে, “কোথায় বিক্রি করার মতলবে ছিলিস তোরা?”
রুদ্র, অগ্নিহোত্রীর মুখ খুলে দিতেই, অগ্নিহোত্রী কেঁদে দেয় হাউহাউ করে।
অগ্নিহোত্রী বলে, “আমি ওকে বিক্রি করতে চাইনি। আমি ওকে বিয়ে করতে চেয়েছিলাম। বিনয় সব মিথ্যে কথা বলছে।”
বিনয়, অগ্নিহোত্রীর দিকে কটমট করে তাকিয়ে বলে, “মাদারচোদ ছেলে এখন মিথ্যে বলছিস? এখন মনে হয় তোর অন্য কিছু মতলব ছিল পায়েলকে নিয়ে।”
অগ্নিহোত্রী আর বিনয়ের মাঝে কথা কাটাকাটি শুরু হয়ে যায়। দেবায়ন দুইজনের মাথা একসাথে ঠুকে দিয়ে গর্জন করে ওঠে, “চুপ শালা বোকাচোদা ছেলে। বিক্রি করেছিস কি করিস নি, সেটা পরের কথা।” বিনয়কে বলে, “তুই বাকি কথা বল।”
বিনয় বলে, “আমাদের প্লান ভন্ডুল হয়ে গেল। এর বেশ কয়েক মাস পরে একদিন মামা মাকে ফোন করে বলে যে পায়েল নাকি একটা ছেলেকে ভালোবাসে। যে ছেলেটাকে ভালোবাসে সে নাকি পায়েলের বান্ধবীর ভাই। সেই শুনে মা সঙ্গে সঙ্গে সেই রাতেই কোলকাতায় মামার বাড়িতে চলে গেল। মা প্রথমে পায়েলকে বুঝাতে চেষ্টা করে যে এই সব ছেলেদের সাথে মেলা মেশা করা খারাপ। পায়েল কোন কথা শুনতে চায় না, ও বাড়ি থেকে চলে যাবার কথা বলে। সেই কথা শুনে মামা পায়েলকে বেধরক মারে। মামী বাধা দিতে এলে মামা মামীকে খুব মারধোর করে। মা ও মামীর উপরে খুব তোলপাড় করে, মামীকে বলে যে মামীর জন্য পায়েল খারাপ হয়ে গেছে। মারধোর করার পরে, মামা পায়েলকে একতলায় মামার চেম্বারের পেছনে একটা ছোটো বাথরুমে বন্ধ করে দেয়। মা, মামাকে বুদ্ধি দেয় পায়েলের যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিয়ে দিয়ে দিতে। আমি অনেক দিন আগেই মায়ের কান ভাঙ্গিয়ে রেখেছিলাম অগ্নিহোত্রীর কথা বলে। জানতাম একবার যদি অগ্নিহোত্রীর সাথে পায়েলের বিয়ে হয় তাহলে আমিও একটু সুখ পাবো, সেই সাথে কোটি টাকার বাড়ি পেয়ে যাবো।”
দেবায়ন দাঁত পিষে চুপচাপ শুনে যায় ওর কথাবার্তা। রূপক দেবায়নের পেছনে দাঁড়িয়ে সবকিছু মোবাইলে রেকর্ড করে। রুদ্র, অগ্নিহোত্রী আর বিনয়ের পেছনে দাঁড়িয়ে থাকে।
বিনয় বলে ওর কথা, “সেদিনের পর থেকে পায়েল নিচের বাথরুমে বন্দি হয়ে থাকে। মামা ওকে জোর করে, আর পায়েল জেদ ধরে বসে থাকে সেই অঙ্কন নামের ছেলেটার কাছে যাবে। মামা ওকে বাথরুম থেকে বের হতে দেয় না। ওই দিকে মামী কেঁদে কেঁদে সারা। শেষ পর্যন্ত থাকতে না পেরে একদিন মামাকে মারতে যায়। মামা বেগতিক দেখে মামীকে ঘুমের ইঞ্জেকশান দেয় বা ওইরকম কিছু একটার ইঞ্জেকশান দেয়। সেদিনের পর থেকে মামীকে কিছু একটা ইঞ্জেকশান দিয়ে নিস্তেজ করে রেখে দেয় মামা। বাড়িতে বাইরের কারুর প্রবেশ বন্ধ করে দেয়, বাড়ির পুরানো চাকরকে ছাড়িয়ে দেওয়া হয়। আমি মামাকে একদিন ফোন করে সব কথা জিজ্ঞেস করলাম, মামা আমাকে খুব ভালবাসত, মামা আমাকে সব কথা খুলে বলল। আমি মামাকে বুদ্ধি দিলাম, যে পায়েলকে যেন মামীর সামনে না আসতে দেওয়া হয়। আমি মামাকে বললাম যে এর মাঝে একদিন রাতে পায়েলকে নৈহাটি নিয়ে চলে আসব। কিন্তু এর মধ্যে একটা গণ্ডগোলে জড়িয়ে পড়লাম আমি, তাই আর সময় মতন কোলকাতা যাওয়া হল না। ওইদিকে অগ্নিহোত্রী আমাকে রোজ দিন পায়েলের কথা জিজ্ঞেস করত। আমি ওকে বলতাম যে পায়েল আর মামা এখন আমাদের হাতের পুতুল। যখন খুশি পায়েলকে নিয়ে আসা যায়। আমি জানতাম যে মামা ওকে বাথরুম থেকে কিছুতেই ছারবে না। একবার ছাড়া পেলে পায়েল পালিয়ে যাবে। মামা পায়েলের খাওয়া দাওয়া সব বন্ধ করে দিল যাতে পায়েলের পালাবার মতন শক্তি না বাঁচে। ওইদিকে মামা রোজদিন মামীকে কোন ইঞ্জেকশান দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে রেখে দিত।”
“কিছুদিন আগে, এক রাতে মামার ফোন। মা চমকে ওঠেন খবর শুনে। মামিমা মারা গেছে। আমি সঙ্গে সঙ্গে মাকে নিয়ে মামাবাড়ি চলে গেলাম। মামা মাকে বললেন যে মামিমাকে রোজ দিন যে ওষুধ বা বিষ দিচ্ছিল সেই কারনে মামিমা মারা গেছেন। কোলকাতায় মামিমার দেহের শেষকৃত্য করতে হলে পুলিস কেস হয়ে যাবে, সবাই আমরা ফেসে যাবো। মা মামাকে বলল মামিমার দেহ নৈহাটি নিয়ে চলে আসতে। আমি মামাকে একদিকে ডেকে বললাম যে মামা যদি ওই বাড়ি আমার নামে করে দেয় তাহলে আমি সবকিছু ঠিক করে দেব। মামা আমাকে বাড়ির দলিল হাতে ধরিয়ে বলে যে আমি এই বাড়ি আমার হয়ে গেল। আমি, মা আর মামা, মামিমার মৃতদেহ সেই রাতে মামার গাড়িতে করে আমাদের বাড়িতে নিয়ে চলে এলাম। রাতের অন্ধকারে এই খানে বলা হল যে মামীর হার্ট এটাকে মৃত্যু হয়েছে। এইখানে মানুষকে বোঝানো সহজ, ওইখানে মারা গেলে তোরা পুলিস নিয়ে আসতিস সেটাও একটা ভয় ছিল মামার। তাই এইখানে মামীর শেষকৃত্য করা হয়। পায়েল এই ব্যাপারে কিছুই জানে না। পায়েল জানেই না যে ওর বাবা ওর মাকে ওষুধ দিয়ে মেরে ফেলেছে।”
বিনয়ের কথা শুনে দেবায়ন রাগে কাঁপতে শুরু করে দেয়। গর্জন করে ওঠে বিনয়ের দিকে, “পায়েলের বাবা এখন কোথায়?”
বিনয় বলে, “আমাদের বাড়িতে।”
দেবায়ন, “তার মানে এতদিন ধরে পায়েল ওই বাথরুমে বন্ধ ছিল। কেউ খেতে পড়তে দেয় নি। কি রকম মানুষ ওই ডাক্তার? ওই শালা তোদের বাড়ি চলে আসার পড়ে পায়েলের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করেনি?”
বিনয়, “হ্যাঁ করেছিল। আমি বলেছি যে অগ্নিহোত্রী পায়েলকে নিয়ে দিঘা বেড়াতে গেছে। আসলে পায়েলকে ততদিন ওই বাড়িতেই আটকে রাখা হয়েছিল। দুই দিন আগে আমি আর অগ্নিহোত্রী রাতের অন্ধকারে, কোলকাতা গিয়ে পায়েলকে নিয়ে এইখানে রাখি। অগ্নিহোত্রীর প্লান ছিল বেশ কয়েক মাস ওকে রেপ করবে আর তারপরে একদিন ওকে বিক্রি করে দেবে।”
অগ্নিহোত্রী বলে, “বিনয় আমার নামে মিথ্যে বলছে। আমি কিছুই চাই নি ওর কাছ থেকে।”
রুদ্র, অগ্নিহোত্রীর চুলের মুঠি ধরে মেঝেতে মুখ ঘষতে ঘষতে জিজ্ঞেস করে, “শালা সত্যি কথা বল, না হলে এখুনি মেরে ফেলে দেব।”
রূপক রেগে গিয়ে মোবাইল ছেড়ে, ছুরি বসাতে যায় বিনয়ের গলায়। দেবায়ন বাধা দেয় রূপককে। রূপক কাঁপতে কাঁপতে গর্জে ওঠে, “এই দুটোকে মেরে ফেলা ভালো।”
দেবায়ন বলে, “দাঁড়া আমার কাজ এখন শেষ হয়নি।”
রুদ্র আর রূপক, দেবায়নের দিকে জিজ্ঞাসু চোখে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে, “তোর কি মতলব?”
দেবায়ন বড় এক শ্বাস নিয়ে বলে, “দাঁড়া, সময় হলেই জানতে পারবি। এবারে অগ্নিহোত্রীর কথা শুনতে হবে। ওর শুধু মাত্র পায়েলকে বিয়ে করার মতলবে ছিল না, অন্য কিছুর মতলব ছিল।”
অগ্নিহোত্রী শেষ পর্যন্ত সত্যি কথা বলে, “আসলে আমি পায়েলকে ভুলিয়ে বিয়ে করার মতলবে ছিলাম। বিনয়ের মুখে শুনেছিলাম ওদের বিশাল বাড়ি, সেই বাড়ির দাম প্রায় এক কোটির মতন। আমি বিয়ে করার পরে পায়েলকে বেশ কয়েক মাস ভোগ করতাম আর তারপরে বাড়ি পেয়ে গেলে পায়েলকে বিক্রি করার মতলবে ছিলাম। আমরা পায়েল কে এখানে এনে ওকে খাবার দাবার দিয়ে সুস্থ করে তারপরে একটু ভোগ করার মতলবে ছিলাম। কারন পায়েলের যা অবস্থা ছিল তাতে ওকে ভোগ করার মতন কিছু ছিল না, হয়ত মরেই যেত। ওকে এত তাড়াতাড়ি আমরা মারতে চাইনি।”
দেবায়ন ঘুরিয়ে এক ঘুসি মারে অগ্নিহোত্রীর মুখে। ফিনকি দিয়ে রক্ত বের হয় অগ্নিহোত্রীর মুখ থেকে। রুদ্র রাগে কাঁপতে কাঁপতে, অগ্নিহোত্রীর গলায় পা দিয়ে চেপে ধরে গর্জে ওঠে, “অনেক মেয়ের জীবন নষ্ট করেছিস তুই। কালকের সূর্য দেখতে পাবি না, এটা আমি বলছি। তোকে মেরে ফেললে ভাববো যে পৃথিবী থেকে একটা পাপ কম হয়েছে।”
প্রচন্ড মার খেয়ে মেঝেতে পরে কুঁকড়ে যায় অগ্নিহোত্রী। দেবায়ন অগ্নিহোত্রী আর বিনয়কে বলে, “তোরা অনেক পাপ করেছিস। পায়েলকে অনেক কষ্ট দিয়েছিস এমন কি খুন করতে চেষ্টা করেছিস। তবে একজন আরও আছে যার সাজা পাওয়া উচিত। পায়েলের বাবা, ডক্টর কমলেশ সান্যাল।”
রূপক আর রুদ্র জিজ্ঞাসু চোখে দেবায়নের দিকে তাকিয়ে থাকে। দেবায়ন বলে, “ওর বাবা, সুজাতা কাকিমাকে মেরেছে। পুলিস খুঁজে কোন প্রমান পাবে না কেননা তোরা কাকিমাকে পুড়িয়ে দিয়েছিস আর সব প্রমান শেষ করে দিয়েছিস।”
বিনয় মাথা নাড়িয়ে বলে, “হ্যাঁ। মামিমার ডেথ সারটিফিকেটে হার্ট এটাক লেখা।”
 
বিংশ পর্ব (#09)
দেবায়ন বলে, “পায়েলের বাবাকে মারতে হবে তোদের।”
রুদ্র আর রূপক হাঁ করে দেবায়নের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে, “সেটা কি করে সম্ভব?”
দেবায়ন বলে, “সব সম্ভব হবে। তার আগে পায়েলের বাড়ির দলিল আমার চাই। পায়েলের ভবিষ্যৎ আমার চাই।”
বিনয়, “পায়েলের বাড়ির দলিল আমি নিয়ে আসছি এখুনি, আমাদের ছেড়ে দে। আমরা কথা দিচ্ছি কোনদিন পায়েল কেন, মামাবাড়ির মুখ দেখব না।”
দেবায়ন, “উঁহু, তোদের ছেড়ে দিলে পাপ হবে। সুজাতা কাকিমার আত্মা শান্তি পাবে না।”
রূপক গর্জে ওঠে, “তোদের ছেড়ে দেবার কোন প্রশ্ন ওঠে না। পায়েলকে যেমন ভাবে কষ্ট দিয়েছিস, তারপরে তোদের মরে যাওয়া উচিত।”
দেবায়ন, “বিনয় আমাদের কাছে বাঁধা থাকবে। অগ্নিহোত্রী ঢুকবে বিনয়ের বাড়িতে, আগে ওই দলিল এনে আমাকে দেবে, তারপরে পায়েলের বাবাকে খুন করবে অগ্নিহোত্রী।”
বিনয় আর অগ্নিহোত্রী হাউমাউ করে কেঁদে ওঠে, “না খুন আমাদের দ্বারা হবে না।”
রূপক বিনয়কে এক লাথি মেরে বলে, “খুনের চেয়ে বড় পাপ, এমন ভাবে ধরে রেখে একজনকে কষ্ট দেওয়া। জ্যান্ত একটা মেয়েকে কষ্ট দিয়ে তার আত্মাকে মেরে ফেলা। তোরা পায়েলকে এক রকম মেরেই ফেলেছিলিস, ওই দিকে তোর মামা তোর মামীকে মেরে ফেলেছে। তোরা সবাই দোষী। দেবায়ন যা বলছে সেটা কর। এমনিতেও তোরা ধরা পড়বি, কেননা পায়েলকে দেখে পুলিস কেস হবে। পায়েল পুলিসকে সব বলে দেবে।”
অগ্নিহোত্রী বলে, “আচ্ছা যদি খুন করি ওর মামাকে তাহলে আমাদের ছেড়ে দেবে তোমরা।”
দেবায়ন হেসে বলে, “আমি ছেড়ে দেব।”
রূপক আর রুদ্র, রেগে যায় দেবায়নের ওপরে, “তুই কি বলছিস? এদের ছেড়ে কেন দেব? না মারলেও পুলিসের হাতে দেব।”
দেবায়ন, রূপক আর রুদ্রকে শান্ত করে বলে, “আগে আমার কাজ শেষ হোক তারপরে দেখছি।”
অগ্নিহোত্রীকে দেবায়ন জিজ্ঞেস করে, “হ্যাঁ রে, তোর বাবা বেশ বড়োলোক। তার মানে তোদের বাড়িতে নগদ টাকা আছে?”
অগ্নিহোত্রী, “হ্যাঁ আছে, তোমাদের কত টাকা চাই বল, আমি দেব। এক লাখ, দুই লাখ পাঁচ লাখ? এই পুজোর মরশুমে কাপড়ের ব্যাবসা দারুন চলেছে। বাড়িতে পাঁচ লাখ টাকা ক্যাস পড়ে আছে, আমি বাবার দেরাজ খুলে সব টাকা চুরি করে আনতে পারি এখুনি। সব টাকা তোমাকে দিয়ে দেব যদি আমাদের ছেড়ে দাও।”
দেবায়ন হাসতে হাসতে বলে, “হ্যাঁ, আমার টাকা চাই। বিনয় যাবে তোর বাড়িতে টাকা চুরি করতে আর অগ্নিহোত্রী যাবে বিনয়ের বাড়িতে পায়েলের বাবাকে মারতে। তারপরে তোদের ছেড়ে দেব আমি। এবারে বল, কার বাড়িতে কি করে ঢুকতে হয়?”
অগ্নিহোত্রী বিনয়কে বুঝিয়ে বলে, “ওই দু’তলার আমার রুমের জানালার একটা শিক খুলে যায়। সেই শিক সরিয়ে আমার রুমে ঢুকে যাবি। তারপরে নিচে চলে যাবি সিঁড়ি বেয়ে। বাবার রুম দেখেছিস তুই, বাবার কোমরে দেরাজের চাবি থাকে একটা দড়িতে বাঁধা। বাবা এখন আফিং মেরে মরার মতন ঘুমাচ্ছে। আমার টেবিলে কাঁচি পেয়ে যাবি, সেই কাঁচি দিয়ে খুব সহজে ওই দড়ি কেটে চাবি নিয়ে নিবি। বাবার মাথার কাছে যে দেরাজ আছে, তার নিচের তাকে একটা সিন্দুক দেখতে পাবি। চাবির থোকায়, সব থেকে বড় চাবিটা ওই সিন্দুকের। ওর মধ্যে পেয়ে যাবি পাঁচ লাখ টাকা।”
বিনয় দেবায়নকে বলে, “ওই টাকা দিলে আমাদের ছেড়ে দেবে তো?”
দেবায়ন বলে, “আগে অগ্নিহোত্রী পায়েলের বাবাকে খুন করে আসুক তারপরে।”
অগ্নিহোত্রীকে বলে, “তুই আগে বিনয়ের বাড়িতে ঢুকে পায়েলের বাড়ির দলিল আমার হাতে এনে দিবি। তারপরে আবার ঢুকে পায়েলের বাবাকে খুন করে বেড়িয়ে আসবি। পায়েলের বাবাকে যে খুন করেছিস তার প্রমান স্বরুপ ওইর মৃতদেহের ছবি তুই তোর মোবাইলে তুলে আনবি। ছুরি মারিস না, তাতে চেঁচামেচি হবে তুই ধরা পড়ে যাবি। পায়েলের বাবার মুখের উপরে বালিস চাপা দিয়ে মারবি। আর সব ঘটনা মোবাইলে রেকর্ড করে নিয়ে আসবি।”
অগ্নিহোত্রী, “ঠিক আছে তাই হবে, কিন্তু আমাদের ছেড়ে দিতে হবে তারপরে।”
দেবায়ন বিনয়কে বলে, “আগে বল কি করে তোর বাড়িতে ঢোকা যায়? কোথায় পায়েলের বাড়ির দলিল? কোথায় পায়েলের বাবা ঘুমিয়ে আছে?”
বিনয় বলে, “মামা, নিচের ঘরে ধুমিয়ে। মামার ঘরের পাশেই আমার ঘর। দলিল আমার আলমারিতে রাখা, আলমারিতে কোন তালা দেওয়া নেই, সুতরাং দলিল আনতে কোন কষ্ট হবে না। মামা ঘরের দরজা ভেজান থাকে, সহজে খুলে যাবে। আমার বাড়িতে ঢুকতে হলে পেছনের দরজা দিয়ে ঢুকতে হবে। পেছনের দরজায় শুধু খিল দেওয়া আছে, তালা মারা নেই। একটা তার দরজায় ঢুকিয়ে দিয়ে, একটু উপরের দিকে টান মারলে খিল খুলে যাবে আর অতি সহজে বাড়িতে ঢোকা যাবে।”
পরিকল্পনা মতন রুদ্র আর রূপক, বিনয় আর অগ্নিহোত্রীকে আবার বেঁধে ফেলে। রুদ্র ওর বন্ধুদের ঘরের ভেতরে ডেকে নিয়ে আসে। ওর বন্ধুরা রুদ্রকে জিজ্ঞেস করে কি ব্যাপার। রুদ্র সংক্ষেপে সব ঘটনা বলে, দেবায়নের পরিকল্পনার কথা বলে। রুদ্রের বন্ধুরা, ওদের ছেড়ে দেওয়ার কথা শুনে দেবায়নের ওপরে রেগে যায়। ওদের মধ্যে রুদ্রের এক বন্ধু, দেবাশিস, সে একটা খাঁড়া হাতে নিয়ে এসেছিল। তার রাগ অগ্নিহোত্রীর ওপরে বেশি ছিল। সে বলে, অগ্নিহোত্রীকে ছেড়ে দেওয়া যাবে না, ওকে খুন করবে। দেবায়ন সবাইকে ঠাণ্ডা করে বলে ওর কাজ এখন শেষ হয়নি। পরে জানাবে ওর পরিকল্পনা।
Like Reply
ছেলেরা অগ্নিহোত্রী আর বিনয়কে নিয়ে রাতের ঘন অন্ধকারে, বিনয়ের বাড়ির দিকে রওনা দেয়। রাত প্রায় তিনটে বাজে। তখন পর্যন্ত ধিমানের ফোন পায়নি। দেবায়ন একটু চিন্তিত, কি হল ওদের সাথে। কিন্তু গাড়িতে কারুর কাছে ফোন নেই যে একবার ফোন করে জিজ্ঞেস করে কত দূর পৌঁছেছে। দলের সব থেকে আগে, দেবাশিস হাঁটে খাঁড়া নিয়ে হাঁটছে, মাঝখানে বাকি ছেলেরা বিনয় আর অগ্নিহোত্রীর মুখ হাত বেঁধে একরকম টানতে টানতে নিয়ে চলেছে। রুদ্র, রূপক আর দেবায়ন দলের সব থেকে পেছনে।

রূপক আর থাকতে না পেরে দেবায়নকে জিজ্ঞেস করে, “তুই মাদারচোদ শেষ পর্যন্ত টাকার জন্য ওদের ছেড়ে দিবি? তুই শালা আরো জাত শয়তান।”
দেবায়ন রূপকের কাঁধে হাত রেখে শান্ত করে বলে, “আমি ছেড়ে দেব বলেছি। কিন্তু পায়েল তোর বান্ধবী, তুই ছেড়ে দিবি বা রুদ্র ছেড়ে দেবে, সেই কথা কি কেউ ওদের বলেছে?”
রুদ্র হেসে বলে, “তোর শালা শকুনের মাথা।”
রূপক বলে, “না রে। এই ছেলেটা না হলে অনেক কিছুই হত না। এর মাথা শকুনের নয়, এ শালা অনেক বুদ্ধি ধরে। যাই হোক, টাকা গুলোর কি হবে?”
দেবায়ন রুদ্রকে বলে, “দেখো, বিনয় আর অগ্নিহোত্রী পায়েলকে ধরে রেখেছে। আইনের চোখে ওদের এমন কিছু বড় সাজা হবে না। ওদের সাজা আমরাই দেব। কাছেই গঙ্গা তাই ত?”
রুদ্র মাথা নাড়ায়, “হ্যাঁ।”
দেবায়ন বলে, “ওর পাশে নিশ্চয় পুরনো কোন কারখানা থাকবে। যেমন ইট ভাটা অথবা লোহার কারখানা অথবা পাটের কারখানা?”
রুদ্র মাথা নাড়িয়ে জানায়, গঙ্গার পাড়ে বেশ কয়েকটা খালি পুরনো কারখানা আছে। সেখানে নিয়ে যাওয়া যেতে পারে।
দেবায়ন পরবর্তী পরিকল্পনা জানায়, “ওই দুইজনকে ওইখানে নিয়ে গিয়ে দুই জনের হাতে ছুরি দিয়ে বলা হবে পরস্পরকে খুন কর। যদি ওরা পরস্পরকে খুন না করে তাহলে ওদের গলায় পাথর বেঁধে নিয়ে যাওয়া হবে ব্যারাকপুর। ওইখানে ওদেরকে গঙ্গায় ডুবিয়ে দেব আর টাকা ডুবিয়ে দেব। আর যদি এখানে খুন করে তাহলে সব টাকা জ্বালিয়ে দেব সেখানে। কেউ যদি দেখে তাহলে এই ভাববে, যে টাকার জন্য একে অপরকে খুন করেছে। সকালে এক বাড়ির লোক জেগে দেখবে যে পায়েলের বাবা খুন হয়েছে। অন্য বাড়ি জেগে দেখবে যে পাঁচ লাখ টাকা চুরি গেছে। বাড়ির দুই ছেলেই নেই, পুলিস আসবে। ছেলেদের খোঁজ করা হবে। খুঁজে পাবে গঙ্গার ধারে দুটি লাশ আর পোড়া টাকা। অগ্নিহোত্রীর মোবাইলে পেয়ে যাবে পায়েলের বাবাকে কি ভাবে খুন করা হয়েছে। কেমন লাগলো আমার পরিকল্পনা?”
রূপক, দেবায়ন কে জড়িয়ে ধরে বলে, “গুরু, তোর পোঁদ মেরে একদিন তোকে সুখ দেব বাঞ্চোত।”
দেবায়ন বলে, “সমস্যা এখানেই শেষ নয় গুরু। পায়েলের বাবার খুন হবার পরে, পায়েলের পিসি পায়েলকে খুঁজতে কোলকাতা আসবে। এইখানে ততক্ষণে পুলিস কেস হয়ে যাবে। পায়েলের বাবা নিশ্চয় পায়েলের পিসিকে অনুপমা আর অঙ্কনের কথা বলেছে। সুতরাং পুলিস পায়েলের খোঁজে অনুপমার বাড়িতে আসতে পারে। সুতরাং পায়েলকে কোলকাতা থেকে সরিয়ে ফেলতে হবে। শেষ সম্বল আমাদের এই রেকর্ড করা ভিডিও। পায়েল কে নিয়ে আর টানাটানি নয়। ওর পিসিকে বলব যে পায়েলের ধারে কাছে আসলে এই ভিডিও পুলিসের হাতে তুলে দেব। পায়েলের জীবনে কেউ আর বাধা হয়ে আসবে না।”
কল্যাণী হাইওয়ের কাছে আসতেই রুদ্রের ফোন বেজে ওঠে। ওপাশে পরাশরের গলা পেয়ে দেবায়ন জিজ্ঞেস করে কি ব্যাপার।
পরাশর বলে, “হ্যাঁ সব ঠিক আছে। আমি ওদের পেয়ে গেছি। পায়েলকে আব্বাজান একটা প্রাইভেট নার্সিং হোমে নিয়ে গেছে। স্যালাইন চলছে। অবস্থা একটু সঙ্গিন তবে বেঁচে যাবে।”
পরাশরের কথা শুনে দেবায়নার রূপকের মনে শান্তি হয়।
দেবায়ন জিজ্ঞেস করে, “অনু কোথায়?”
পরাশর, “অনুপমা পায়েলের পাশে বসে। কিছুতেই বেডের পাশ থেকে ওঠানো যাচ্ছে না। তোর মা, মানে কাকিমা ফোন করে করে হয়রান। আমি জানিয়ে দিয়েছিলাম যে সব ঠিক আছে, তাও কাকিমা জেদ করে। শেষ পর্যন্ত কাকিমাকে নারসিং হোমে নিয়ে আসতে হল। কাকিমাকে পেয়ে অনুপমা এখন একটু ঠিক আছে। অঙ্কন বেশ ভেঙ্গে পড়েছে।”
পরাশর তারপরে গলা নিচু করে বলে, “শালা কেস খেয়ে গেছি।”
দেবায়ন অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে, “বাল, কি করেছিস তুই?”
পরাশর, “শালা এত রাতে বাড়ি থেকে বার হওয়াতে বাবা মায়ের সন্দেহ হয়। জিজ্ঞেস করে কারন, আমি আমতা আমতা করি। ততক্ষণে কাকা চলে আসে। কাকা চেপে ধরে আমাকে।”
পরাশরের হাত থেকে ফোন নিয়ে ওর কাকা, ইন্সপেক্টর নিরঞ্জন বলে, “শোনো দেবায়ন, এমন কিছু করবে না যাতে তোমরা মুশকিলে পরো। তুমি ওদের ধরে থাক, আমি এক ঘন্টার মধ্যে ফোর্স নিয়ে পৌঁছে যাবো। আমি ধিমান আর ঋতুপর্ণার মুখ থেকে সব ঘটনা শুনেছি, পায়েলেকে দেখেছি। তুমি চিন্তা করো না, এটা পুলিস কেস। এখান থেকে পুলিস কে হ্যান্ডেল করতে দাও।”
দেবায়ন চিবিয়ে বলে, “এতদিন পায়েল যখন বেপাত্তা ছিল তখন পুলিস কিছু করেনি। পুলিসের কাছে গেলে পায়েলের কিছুই হত না। সুজাতা কাকিমা আজ বেঁচে থাকতেন আর পায়েলের এই দুর্দশা হত না। সব শেষ হয়ে যাবার পরে পুলিস কি করবে? আমি পুলিস চাই না, এইখানে এদের খুন করব আমি। আপনার যা করার আছে করে নিন।”
নিরঞ্জন বাবু কড়া কণ্ঠে ধমকে বলেন, “কিছু করবে না। আমি নৈহাটি থানার ওসিকে ফোন করে দিয়েছি, ওরা এতক্ষণে বিনয়ের বাড়ি ঘিরে ফেলেছে। তোমরা এক পা এগোলে তোমাদের ধরবে। তোমরা কোথায় আছো সেটা বল?”
দেবায়ন আসেপাশের সবাইকে চুপ করতে নির্দেশ দিয়ে পরাশরের কাকাকে বলে, “কেন বলব আমরা কোথায় আছি? আমরা অনুপমার বাড়িতে আড্ডা মারছি। কোন প্রমান আছে আপনার কাছে যে আমরা নৈহাটিতে? আমি জানি আপনার কাছে কোন প্রমান নেই। বাড়ির সবাই এক কথায় বলবে যে আমরা অনুপমার বাড়িতে আড্ডা মারছি। আমাদের আলিবাই আছে, আপনার পুলিস আমাদের চুলের ডগা ধরতে পারবে না। কয়জনকে ধরবেন আপনি?”
ইন্সপেটর নিরঞ্জন আহত কণ্ঠে বলেন, “আমি জানি, তোমার বিরুদ্ধে কোন প্রমান আমি পাবো না তবে তুমি কেন একজনের রক্তে নিজের হাত নোংরা করতে চাও। আমি আসছি ওইখানে, তোমার যেখানে আছো সেখানে দয়া করে দাঁড়িয়ে থাক। আমি এসে সব ঠিক করে দেব।”
দেবায়ন কিছুতেই মানতে নারাজ, চিবিয়ে চিবিয়ে পরাশরের কাকুকে বলে, “পায়েলের দিকে একবার তাকিয়ে দেখেছেন? কি করে বলেন এর পরে যে এদের আমি ছেড়ে দেব? আমি পায়েলের বাবাকে পর্যন্ত খুন করব। সুজাতা কাকিমার কাছে ক্ষমা চাইতে পাঠাবো ওকে আর এই বিনয় আর অগ্নিহোত্রীকে।”
ইন্সপেক্টর নিরঞ্জন আহত কণ্ঠে বলে, “তুমি কিছুতেই শুনবে না তাহলে?”
দেবায়ন চাপা গর্জন করে ওঠে, “আপনার একটা ছোটো মেয়ে আছে তাই না? একবার ভেবে দেখুন এই অত্যাচার আপনার মেয়ের সাথে হয়েছে? কি করতেন আপনি? পুলিসের অপেক্ষা করতেন, না পাপীদের শাস্তি দিতেন?”
দেবায়ন মানতে নারাজ কিছুতেই, মাথায় রক্ত চড়ে যায় পুলিসের কথা শুনে। অগ্নিহোত্রীকে এক লাথি মেরে রাস্তায় ফেলে গলার উপরে পা বসিয়ে দিয়ে ফোনে গর্জন করে ওঠে, “আপনার পুলিসকে বলবেন বড় রাস্তার ধারে দুটি লাশ পরে আছে, যেন তুলে নিয়ে যায়। পায়েলের বাবাকে মারতে পারলাম না বলে দুঃখ হচ্ছে তবে যেদিন জেল থেকে ছাড়া পাবে সেদিন খুন করব আমি। তার জন্য যদি আমাকে চোদ্দ বছর অপেক্ষা করতে হয় রাজি আছি।”
অগত্যা নিরঞ্জন বাবু কিছুতেই দেবায়নকে শান্ত করতে পারে না। পুলিসের হস্তখেপের খবরে দেবায়নের মাথায় রক্ত চড়ে যায়। ফোন রূপককে ধরিয়ে এলোপাথাড়ি মারতে শুরু করে দেয় বিনয় আর অগ্নিহোত্রীকে। বিনয়ের নাক ফেটে রক্ত বের হয় আর অগ্নিহোত্রী দেবায়নের লাথি খেয়ে অজ্ঞান হয়ে যায়। দেবায়নের রুদ্র মূর্তি দেখে দেবাশিস, রুদ্র আর বাকি ছেলেরা ঘাবড়ে যায়। ওরা খুনের মতলব করে আসেনি। ওরা ভেবেছিল এই সব কান্ডের পরে ছেলেগুলোকে পুলিসের হাতে তুলে দেবে। কিন্তু দেবায়ন তখন কারুর কথা শোনার মতন অবস্থায় নেই। দেবাশিস আর রুদ্র জড়িয়ে ধরে দেবায়নকে। রাগে ক্ষোভে দুঃখে দেবায়নের শরীরে শত অসুরের শক্তি ভর করে।
দেবায়ন চাপা গর্জন করে ওঠে, “পুলিস আসার আগে তোদের মেরেই ফেলব। শালা, শুয়োরের বাচ্চা, তোদের বাঁচিয়ে রাখলে আমি কোনদিন পায়েলের সামনে দাঁড়াতে পারবো না।”
নিরঞ্জন বাবুর সাথে রূপকের কথা হয়। রূপক, দেবাশিস আর রুদ্রকে নির্দেশ দেয় যে দেবায়নকে ওইখান থেকে সরিয়ে নিয়ে যেতে। দেবাশিস কোনোরকমে দেবায়নকে টেনে অগ্নিহোত্রী আর বিনয়ের কাছ থেকে সরিয়ে নিয়ে যায়। রূপক কিছু পরে ওর কাছে এসে বলে যে দেবায়নের মা একবার দেবায়নের সাথে কথা বলতে চায়।
দেবশ্রী ফোন ধরে বলে, “বাবা, আমার কথা একবার শোন মন দিয়ে। নিরঞ্জন বাবু যাচ্ছেন যখন তখন আর এই সব উলটোপালটা কাজ করিস না। উনি বলেছেন যে উনি সব দেখে নেবেন, কি করতে হয় বিচার করে করবেন। নিরঞ্জন বাবু বিচক্ষণ ব্যাক্তি, ক্রাইম ব্রাঞ্চের ইন্সপেক্টর, পরাশরের কাকু, একবার অন্তত তাঁর কথা শুনে দ্যাখ।”
দেবায়নের চোখের সামনে ভেসে ওঠে পায়েলের অর্ধনগ্ন ক্ষত বিক্ষত দেহ। কানে বাজে অঙ্কনের কাতর আর্তনাদ, “মিষ্টি, আমি এসে গেছি সোনা। একবার চোখ খোলো।”
প্রেয়সী অনুপমার চোখের জল, “তুমি শুধু আমার কাছে ওকে ফিরিয়ে নিয়ে আস।”
ঋতুপর্ণার ডাক, “এরা যেন কালকের সূর্য না দেখতে পায়।”
দেবায়ন মাকে বলে, “পরাশর ওর কাকাকে বলেছিল পায়েলের কথা। তখন কোথায় ছিল ওর কাকা? কার পেছনে পুলিসের রুল ঢুকাচ্ছিল? ওর কাকা যা পারবে করে নিক আমার। আমাকে পুলিস দেখাতে যেও না, আমি আজকে এদের খুন করবই।”
দেবশ্রী ছেলেকে ধমক দেয়, “পায়েল ফিরে এসেছে, পায়েলের সাথে রেপ হয়নি। ওর মায়ের জন্য সত্যি খারাপ লাগছে। কিন্তু তুই কিছু করবি না। ওদের যা করার আইন করবে, এই আমার শেষ কথা।”
রুদ্র বেগতিক দেখে, দেবাশিস আর বাকি বন্ধুদের বলে অগ্নিহোত্রী আর বিনয়কে নিয়ে মাঠের দিকে চলে যেতে। রূপক আর রুদ্র ক্ষুব্ধ, রুদ্ররুপী দেবায়নের কাছে দাঁড়িয়ে থাকে। ঋজু দেবায়ন শেষ পর্যন্ত ভেঙ্গে পরে, অন্ধকার মাঠের মধ্যে বসে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে। চোখ ফেটে জল বেড়িয়ে আসে পায়েলের জন্য। এক ভালো বান্ধবীর এই সর্বনাশের প্রতিশোধ নিতে পারল না। সময় চলে যায়, দুরে মাঠের মধ্যে ছেলেরা বিনয় আর অগ্নিহোত্রীকে নিয়ে দাঁড়িয়ে। রাস্তার পাশে দেবায়ন বসে। রূপক আর রুদ্র নিরুত্তর হয়ে চুপচাপ বসে থাকে নিরঞ্জন বাবুর অপেক্ষায়।
 
বিংশ পর্ব (#10)
রুদ্র বেগতিক দেখে, দেবাশিস আর বাকি বন্ধুদের বলে অগ্নিহোত্রী আর বিনয়কে নিয়ে মাঠের দিকে চলে যেতে। রূপক আর রুদ্র ক্ষুধ, রুদ্ররুপী দেবায়নের কাছে দাঁড়িয়ে থাকে। ঋজু দেবায়ন শেষ পর্যন্ত ভেঙ্গে পরে, অন্ধকার মাঠের মধ্যে বসে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে। চোখ ফেটে জল বেড়িয়ে আসে পায়েলের জন্য। এক ভালো বান্ধবীর এই সর্বনাশের প্রতিশোধ নিতে পারল না। সময় চলে যায়, দুরে মাঠের মধ্যে ছেলেরা বিনয় আর অগ্নিহোত্রীকে নিয়ে দাঁড়িয়ে। রাস্তার পাশে দেবায়ন বসে। রূপক আর রুদ্র নিরুত্তর হয়ে চুপচাপ বসে থাকে নিরঞ্জন বাবুর অপেক্ষায়।
সময়ের কেটে যায় বন্যার জলের মতন, সবাই নিস্তব্ধ। দুরে দুটি জিপ, লাল আলো জ্বালিয়ে দ্রুত গতিতে ধেয়ে আসে। রূপক রাস্তার মাঝে দাঁড়িয়ে হাত নাড়াতে থাকে। দুটি জিপ ওদের দেখে ওদের সামনে এসে দাঁড়িয়ে পরে। সঙ্গে সঙ্গে বেশ কয়েকজন পুলিস গাড়ি থেকে নেমে ওদের ঘিরে দাঁড়ায়। নিরঞ্জন বাবু এগিয়ে এসে রূপককে জিজ্ঞেস করে দেবায়নের কথা। দেবায়ন মাথা নিচু করে রাস্তার পাশে, মাটিতে বসে।
নিরঞ্জন বাবু কাছে এসে দেবায়নের কাঁধে হাত রাখে। দেবায়ন জল ভরা ক্লান্ত চোখে নিরঞ্জন বাবুর দিকে তাকায়। সেই চোখের চাহনি দেখে নিরঞ্জন বাবু বুঝতে পারে যে দেবায়ন ফোনে যা বলেছিল এক বিন্দু বানিয়ে বলেনি, নিজের মনের কথাই বলেছিল। রুদ্র মাঠের মাঝে ওর বন্ধুদের দেখিয়ে বলে যে ওই খানে বিনয় আর অগ্নিহোত্রীকে ধরে রাখা হয়েছে।
নিরঞ্জন বাবু দেবায়নকে আসস্থ করে বলে, “দেখো দেবায়ন, এইখানে পুলিসের হাত পা বাধা ছিল। কোন কমপ্লেন ছাড়া আমরা কিছুই করতে পারতাম না। ওর বাবা মা কেউ কমপ্লেন করেনি। ছেলে মেয়েদের উপরে বাবা মায়ের অধিকার বেশি। কি করতে পারে আইন? আইন কানুন যে অন্ধ দেবায়ন।”
দেবায়ন চিবিয়ে বলে, “সর্বনাশ হয়ে যাবার পরে আইনের চোখ খোলে? রেপিস্টদের ধরে ধরে সবার সামনে ফাসি দেওয়ায় উচিত, তাহলে দেখবেন যে দেশে রেপ কমে যাবে, মেয়েদের ওপরে যে অত্যাচার হয় সব কমে যাবে। আর সুজাতা কাকিমা? তাঁর আত্মার কি হবে? আপনি পায়েলকে দেখেছেন? কথা বলেছে আপনার সাথে? কি বলেছে শুনি একবার?”
নিরঞ্জন বাবু চুপ করে মাথা নিচু করে বসে থাকে। পায়েলকে দেখে তাঁর মনের অবস্থা খুব খারাপ হয়ে গেছিল, শরীরে শুধু হাড় ছাড়া কিছু বেঁচে নেই পায়েলের, কথা বলার শক্তি নেই পায়েলের। ততক্ষণে পুলিস টিমের বাকিরা অগ্নিহোত্রী আর বিনয়কে ধরে জিপের কাছে নিয়ে আসে। নিরঞ্জন বাবু রেডিওতে খবর নিয়ে জেনে নেন যে বিনয়দের বাড়ি থেকে পায়েলের বাবা আর বিনয়ের মাকে গ্রেফতার করেছে নৈহাটি পুলিস। ওইখানে খুব হইচই চলছে। বিনয়ের বাবা আর সমীর বাবু লোকজন জড় করে পুলিসকে বাধা দিচ্ছে। নিরঞ্জন বাবু সঙ্গে সঙ্গে ব্যারাকপুরে কথা বলে পুলিস ফোর্সের ব্যাবস্থা করেন। বুঝে যান যে, অগ্নিহোত্রী আর বিনয়কে নিয়ে পাড়ার মধ্যে ঢুকলে চলবে না। একটা গাড়িতে বিনয় আর অগ্নিহোত্রীকে তুলে দিয়ে ওইখানে অপেক্ষা করতে বলে। অন্য একটা গাড়িতে, রুদ্র রূপক আর দেবায়নকে নিয়ে নিরঞ্জন বাবু, মীরা বাগানের দিকে যাত্রা শুরু করেন। পথে যেতে যেতে, রূপকের কাছে সব ঘটনা জানতে চান। রূপক, দেবায়নের মোবাইলে তোলা ভিডিও নিরঞ্জন বাবুকে দেখায়। ভিডিও দেখে নিরঞ্জন বাবু স্তব্ধ হয়ে যায়, চোয়াল বারেবারে শক্ত হয়ে আসে। মীরা বাগানে ঢুকতেই ওদের বেশ বেগ পেতে হয়। রাত চারটে বাজে, কিন্তু প্রায় সারা মীরা বাগান জেগে উঠেছে। পুলিস হিমসিম খাচ্ছে লোকজন সামলাতে। নৈহাটি থানার ওসি, নিরঞ্জন বাবুদের গাড়ি দেখতে পেয়ে এগিয়ে আসেন। নৈহাটি থানার ওসি বলেন যে, ডক্টর কমলেশ আর তাঁর দিদিকে গ্রেফতার করা হয়েছে কিন্তু কেউ মানতে চাইছে না।
নিরঞ্জন বাবু গাড়ি থেকে নেমে, পায়েলের বাবা আর পায়েলের পিসিকে দেখে। সমীর বাবু আর বিনয়ের বাবা এগিয়ে এসে নিরঞ্জন বাবুকে বলেন যে এরা নির্দোষ। দেবায়ন গাড়ি থেকে নামতে চায় কিন্তু বাকিরা ওকে গাড়িতে বসিয়ে রেখে দেয়। নিরঞ্জন বাবু ওদের বলে যে, সমীর বাবুর ছেলে অগ্নিহোত্রী আর বিনয় ধরা পড়েছে পুলিসের কাছে। ওরা সব কবুল করেছে এবং তার প্রমান আছে নিরঞ্জন বাবুর কাছে। নিরঞ্জন বাবু ওদের কে দেবায়নের মোবাইলে তোলা ভিডিও দেখিয়ে বলে যে এরপরে যা কিছু বলার, থানায় গিয়ে বলতে পারে। নিরঞ্জন বাবুর কথা শুনে আর ভিডিও দেখে স্তব্ধ হয়ে লোকেরা। পায়েলের বাবা আর পায়েলের পিসি ভেঙ্গে পরে তখন। নিরঞ্জন বাবু, নৈহাটি থানার ওসিকে নির্দেশ দেন যে এটা ক্রাইম ব্রাঞ্চের কেস, সুতরাং এদের লাল বাজারে নিয়ে যেতে হবে। পুলিসের একটা জিপে, পায়েলের বাবা আর পায়েলের পিসিকে নিয়ে পুলিস কোলকাতার উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। রুদ্রকে নামিয়ে দেওয়া হয় ওর বাড়িতে। সঙ্গীতা বাড়ি থেকে বেড়িয়ে এসে দাদাকে সব ঘটনা জিজ্ঞেস করে। দেবায়ন আর রূপকের সাথে দেখা করে সঙ্গীতা। নিরঞ্জন বাবু সঙ্গীতাকে জিজ্ঞেস করে যদি ওদের সাথে কোলকাতা ফিরতে চায় তাহলে বাড়ি পৌঁছে দেবে, সঙ্গীতাকে। রুদ্র জানিয়ে দেয় যে ওর বোনকে পরের দিন কোলকাতা পৌঁছে দেবে।
নিরঞ্জন বাবু গাড়িতে উঠে দেবায়নকে জিজ্ঞেস করে, “এবারে একটু শান্ত হবে? সবাই গ্রেফতার হয়ে গেছে। ওদের বিরুদ্ধে সব সাক্ষ্য প্রমান আমাদের কাছে আছে। পায়েলের বাবার যাতে যাবজ্জীবন হয় সেই মতন চার্জসিট ফাইল করা হবে।”
দেবায়ন জিজ্ঞেস করে, “বিনয় আর অগ্নিহোত্রীকে ছেড়ে দেবেন? কত বছর জেল হয় একটা মেয়েকে এমন ভাবে ধরে রেখে কষ্ট দিলে? আপনার আইন কি বলে?”
নিরঞ্জন বাবু গাড়ির ড্রাইভারকে গাড়ি চালাতে নির্দেশ দিয়ে চুপচাপ বসে থাকেন। দেবায়ন রাগে গজগজ করতে থাকে, রূপক চুপচাপ পাশে বসে থাকে। দেবায়নের চোখে মুখে হেরে যাওয়ার ছাপ পরিষ্কার ফুটে ওঠে।
রূপক ওকে বলে, “দ্যাখ ভাই, পায়েলকে শেষ পর্যন্ত বাঁচিয়ে ফিরিয়ে নিয়ে এসেছি এটা বড় কথা নয় কি? তুই কেন তোর হাত কারুর খুনে নোংরা করতে চাস। একবার নিরঞ্জন কাকুর কথা মেনে দ্যাখ, আমার মন বলছে যা হবে ঠিক হবে। পায়েলের বাবা গ্রেফতার হয়েছে, আইন তাকে উচিত সাজা দেবে। আইন আমাদের হাতে তুলে নেওয়া একদম উচিত নয়। একটু বুঝতে চেষ্টা কর। আমাদের সামনে অনেক বড় একটা জীবন পরে আছে, কেন ফালতু ফালতু পুলিসের খাতায় নিজের নাম লিখিয়ে বদনাম নিতে চাস তুই? একবার ভেবে দ্যাখ, সায়ন্তন কাকুর কথা। তুই কি ভাবছিস, কাকুর আত্মা শান্তি পাবে কোনদিন? কাকিমার কথা ভাব, তোর নাম পুলিসের খাতায় উঠলে সারা জীবন একটা খুনের অপবাদ তোর সাথে থেকে যাবে।”
দেবায়ন চুপ করে শুনে যায় রূপকের কথা। বিচার করার শক্তি লোপ পেয়েছে দেবায়নের, তাও মাথা নাড়িয়ে জানিয়ে দেয় যে চুপচাপ থাকবে। গাড়ি বড় রাস্তায় দাঁড় করায় নিরঞ্জন বাবু। সামনের গাড়িতে, অগ্নিহোত্রী আর বিনয় বসে। পেছনে পুলিসের দুটো জিপ, একটাতে বিনয়ের মা আর পায়েলের বাবা। নিরঞ্জন বাবু পেছনের পুলিসদের নির্দেশ দেয় যে সোজা লাল বাজারে নিয়ে চলে যেতে। বিনয়ের মা আর পায়েলের বাবাকে নিয়ে রওনা দেয় পুলিসের জিপ। নিরঞ্জন বাবু অন্য জিপ থেকে একজন ইন্সপেক্টর কে ডেকে কিছু কথা জিজ্ঞেস করেন। পাশের ইন্সপেক্টর একটা রিভলভার নিরঞ্জন বাবুকে দেয়। নিরঞ্জন বাবু আবার চুপচাপ গাড়িতে বসে গাড়ি চালাতে নির্দেশ দেয়। গাড়ি আবার কল্যাণী হাইওয়ে ধরে কোলকাতার উদ্দেশ্যে যাত্রা করে।
দুই পাশে ফাঁকা মাঠ, রাতের অন্ধকার কেটে দুটি গাড়ি দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলে। ব্যারাকপুর পেরিয়ে যাবার কিছুপরে নিরঞ্জন বাবু গাড়ি দাঁড় করাতে নির্দেশ দেয়। রূপক আর দেবায়নকে নিরঞ্জন বাবু গাড়ি থেকে নামতে অনুরোধ করেন। রূপক আর দেবায়ন, গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়ায়।
নিরঞ্জন বাবু দেবায়নকে বলে, “আইন ওদের শাস্তি দেবে আমি জানি।”
দেবায়ন আর রূপকের কাঁধে হাত রেখে বলে, “পায়েলকে আমি দেখেছি। অঙ্কনের কান্না আমি দেখেছি। পরাশর আমাকে আগেই বলেছিল এই সব কিন্তু আইনের হাত পা বাধা ছিল সেই সময়ে। আইন পুলিস তখন নিরুপায় ছিল, কিছু করার ছিল না আমাদের। পায়েলের আগের জীবন আমি ফিরিয়ে দিতে পারবো না, দেবায়ন আমাকে ক্ষমা করে দাও।”
নিরঞ্জন বাবু, অন্য ইন্সপেক্টরকে বলেন, “ওই দুটো কে নিয়ে মাঠের মধ্যে যাও, আর দৌড়াতে বল।”
ইন্সপেক্টর বিনয় আর অগ্নিহোত্রীর হাতকড়া খুলে মাঠের মধ্যে দৌড়াতে বলে, বলে ওদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। বিনয় আর অগ্নিহোত্রী দাঁড়িয়ে থাকে, পা নিঃসাড় হয়ে আসে ওদের। নিরঞ্জন বাবু গর্জে ওঠে, “যা পালা, কত জোরে পালাতে পারিস পালা। তোদের ছেড়ে দিলাম। তোদের বিরুদ্ধে এমন কিছু প্রমান নেই আমার কাছে, যা বলেছিস সব পায়েলের বাবার বিরুদ্ধে। তোদের ধরে নিয়ে গিয়ে কিছু করার নেই।”
অগ্নিহোত্রীকে বলে, “তোর বাবা সব ব্যাবস্থা করে দিয়েছে। হাবড়ার দিকে একটা গাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকবে। এই মাঠ ধরে দৌড়াতে থাক।”
অগ্নিহোত্রী আর বিনয়, এক বার পরস্পরের দিকে তাকায়। নিরঞ্জন বাবু আবার বলেন, “তোর বাবা আমাকে পাঁচ লাখ টাকা দিয়েছে তোদের ছেড়ে দেবার জন্য।”
একটু থেমে ম্লান হেসে বলেন, “কি করতে পারি বল, সমীর বাবুর কথা রাখতে হয় যে।”
হতভম্ব হয়ে দেবায়ন চেঁচিয়ে ওঠে নিরঞ্জন বাবুর দিকে, “কি করলেন আপনি? শালা পুলিস কে একদম বিশ্বাস করতে নেই।”
Like Reply
বিনয় আর অগ্নিহোত্রী, পাঁচ লাখ টাকার কথা শুনে নিরঞ্জন বাবুর কথা বিশ্বাস করে নেয়। মাঠে নেমে প্রানপন দৌড়াতে শুরু করে দেয়। দৌড়াতে দৌড়াতে মাঠের একপাশে একটা জঙ্গলের দিকে যায় অগ্নিহোত্রী আর বিনয়। রাতের নিস্তব্ধতা খান খান করে দুই খানা রিভলভার গর্জে ওঠে, দুম দুম দুম দুম দুম দুম… পর পর বেশ কয়েকটা গুলি। নিরঞ্জন বাবু আর অন্য ইন্সপেক্টর একসাথে গুলি চালায় অগ্নিহোত্রী আর বিনয়ের দিকে। দেবায়ন আর রূপক পরস্পরের মুখ চাওয়াচায়ি করে। বাকি পুলিসেরা দৌড়ে যায় বিনয় আর অগ্নিহোত্রীর দিকে। অন্ধকারে ঠিক বোঝা যায় না ওরা মরেছে না বেঁচে আছে। আরও দুটো গুলির আওয়াজ শুনতে পায় দেবায়ন। তারপরে নিস্তব্ধতা নেমে আসে হাইওয়েতে। দুরে কয়েকটা লরি দেখা যাচ্ছিল। তারা দুরেই দাঁড়িয়ে পরে পুলিসের লাল বাতি দেখে। নিরঞ্জন বাবু দেবায়নের দিকে তাকিয়ে ম্লান হেসে রেডিওতে খবর দেয় এম্বুলেন্স পাঠাতে। খবরে বলেন দুই কিডন্যাপিং কেসের আসামি পালাতে গিয়ে পুলিসের গুলিতে মারা গেছে তাদের লাশ পরে আছে ব্যারাকপুরের কাছে একটা জঙ্গলে।

ওদের গাড়িতে উঠিয়ে নিরঞ্জন বাবু দেবায়নকে বলে, “আমার মেয়ের সাথে এই রকম হলে আমি কারুর অপেক্ষা করতাম না। নিজে হাতে সব কটাকে গুলি করে মারতাম। সুজাতাদির আত্মার আর পায়েলের মুক কান্নার জন্য করেছি। এরা তোমাদের নার্সিং হোমে পৌঁছে দেবে। দুপুরে আমি আসব, তখন সব বুঝিয়ে বলে দেব।”
বাকি পুলিস দল আসার আগেই অন্য গাড়িতে করে দেবায়ন আর রূপককে কোলকাতায় পাঠিয়ে দেয় নিরঞ্জন বাবু। কোলকাতা পৌঁছাতে ওদের সকাল হয়ে যায়। গাড়ি সোজা ডক্টর মিসবাহুলের নার্সিং হোমের সামনে নামিয়ে দেয় ওদের।
নামিয়ে দেবার আগে একজন ইন্সপেক্টর ওদের বলে, “তোমরা একটা কথা মনে রাখবে। তোমরা কিছু দেখো নি তোমরা কিছু জানো না। তোমরা খবর পেয়ে পায়েল কে বাঁচাতে গেছিলে। পায়েলকে বাঁচিয়ে তোমরা অগ্নিহোত্রী আর বিনয়কে ধরে রেখেছিলে আর পুলিসকে খবর দিয়েছিলে। বিনয়ের কথা মতন, ওর মাকে আর মামাকে গ্রেফতার করে পুলিস। তারপরে তোমাদের নিয়ে আমরা চলে আসি।”
রূপক আর দেবায়ন মাথা নেড়ে জানিয়ে দেয় ওরা সব বুঝে গেছে।
নার্সিং হোমে ঢুকে দেখে সবাই দাঁড়িয়ে। দেবায়নের মা, মিস্টার সেন, অনুপমা, শ্রেয়া, পরাশর, জারিনা আর ধিমান। শ্রেয়া দৌড়ে এসে রূপকের হাত ধরে জিজ্ঞেস করে নৈহাটির ঘটনা। রূপক সংক্ষেপে সবাইকে নৈহাটির কথা জানায়, সেই সাথে জানায় যে পায়েলের বাবা আর পিসিকে পরাশরের কাকু গ্রেফতার করেছে। ওদের বিরুদ্ধে সুজাতা কাকিমাকে খুনের মামলা চলবে। রূপক পায়েলের কথা জিজ্ঞেস করে। ঋতুপর্ণা, আই.সি.ইউ বেড়িয়ে এসে জানায় যে পায়েল এই যাত্রায় বেঁচে যাবে। জ্ঞান ফেরা পর্যন্ত ওর মানসিক অবস্থা বলা কঠিন। দেবায়ন অনুপমাকে অঙ্কনের কথা জিজ্ঞেস করে। অনুপমা জানায় যে ভাই পায়েলের পাশেই বসে, ওকে ওইখান থেকে নড়ানো যাচ্ছে না একদম। সবাই চেষ্টা করে দেখেছে, কিন্তু ভাই বলেছে যে যতক্ষণ না পায়েল চোখ খুলবে ততক্ষণ ও ওর পাশে বসে থাকবে।
বারো ঘণ্টা পরে পায়েল চোখ খোলে। পারমিতা সকালেই নার্সিং হোমে চলে এসেছিল। অঙ্কন সারা সময়ে পায়েলের পাশেই বসে ছিল। সেদিনের রাতে বন্দুকের গুলিতে বিনয় আর অগ্নিহোত্রীর মৃত্যু হয় সেই কথা শুধু মাত্র দেবায়ন আর রূপক জানে। ইন্সপেক্টর নিরঞ্জন, ডক্টর মিসবাহুলের কাছে পায়েলের মানসিক অবস্থার কথা জানতে চায়। ডক্টর মিসবাহুল জানান যে পায়েলের মানসিক অবস্থা খুব সঙ্গিন, স্টেটমেন্ট দেবার মতন অবস্থায় পৌঁছায়নি তখন। নিরঞ্জন বাবু চিন্তায় পরে যান, চার্জশীট ফাইল করতে হলে পায়েলের স্টেট্মেন্টের খুব দরকার।
নিরঞ্জন বাবু, দেবায়ন ধিমান আর রূপককে থানায় ডাকেন। নিরঞ্জন বাবু এবং বাকি পুলিসের সামনে দেবায়ন আর রূপক সব কথা জানায়। মোবাইলের ভিডিও এবং রূপক আর দেবায়নের কথা মতন স্টেটমেন্ট তৈরি করা হয়। পায়েলের বাবা আর পায়েলের পিসি, ক্রাইম ব্রাঞ্চের কাছে সব কথা স্বীকার করে সেই মতন চার্জসিট তৈরি হয়। নিরঞ্জন বাবু সবাইকে নিয়ে পায়েলের বাড়িতে যায়। দরজার তালা ভেঙ্গে ঢুকে বাথরুমের জরিপ করে। পায়েলের বাবা দেখিয়ে দেয় যেখানে পায়েলকে বন্দি করে রাখা হয়েছিল। একতলার চেম্বারের পেছনে একটা ছোটো বাথরুম, বাথরুমের অবস্থা দেখে বোঝা যায় ওইখানে বিশেষ কারুর যাতায়াত নেই। প্রমান স্বরুপ সেখানে একটা দড়ি আর একটা গ্লাস পাওয়া যায়। তারপরে উপরে সুজাতা কাকিমার ঘরে ঢুকে তদারকি করে বাকি তথ্য প্রমান যোগাড় করে নিয়ে চলে যায় পুলিস। পুলিস ইতিমধ্যে পায়েলের মামা বাড়িতে খবর দেয়। পায়েলের মামা মামী এবং মামাতো দাদা নার্সিং হোমে পৌঁছে যান।
ডক্টর মিসবাহুল পায়েলের মানসিক অবস্থা নিয়ে একটু চিন্তিত হয়ে পড়েন। পায়েল একটু সুস্থ হওয়ার পরে নিরঞ্জন বাবুকে খবর দেওয়া হয়। নিরঞ্জন বাবু নার্সিং হোমে চলে আসেন পায়েলের স্টেটমেন্ট নিতে। পায়েল ওর মায়ের কথা জিজ্ঞেস করে, কারুর মুখে কোন কথা নেই সবাই পরস্পরের মুখ চাওচায়ি করা ছাড়া আর কোন উপায় থাকে না।
পায়েল বড় বড় ক্লান্ত চোখে জিজ্ঞেস করে, “মা কোথায়?”
পারমিতা, পায়েলের পাশে বসে জড়িয়ে ধরে বলে, “তুই ভালো হয়ে যা, তারপরে সব কথা বলব।”
পায়েল, পারমিতার কোল ঘেঁষে জড়সড় হয়ে জিজ্ঞেস করে, “সত্যি বল, আমার মা কোথায়?”
পারমিতা, দেবায়ন আর অনুপমার দিকে তাকিয়ে বলে, “দেবশ্রীদিকে একবার ডাকলে বড় ভালো হত।”
অনুপমা ওর মামনিকে ফোন করে। দেবায়নের মা অফিস থেকে কয়েক ঘণ্টার ছুটি নিয়ে নার্সিং হোমে চলে আসে। পায়েল দেবায়নের মাকে আগে কোনদিন দেখেনি। অনুপমা পরিচয় করিয়ে দেয় দেবায়নের মায়ের সাথে। নিরঞ্জন বাবু দেবায়নের মাকে ডেকে বলেন যে ওর স্টেটমেন্ট নেওয়া দরকার।
দেবশ্রী, পায়েলের পাশে বসে জিজ্ঞেস করে, “তোমার শরীর কেমন আছে এখন?”
পায়েল মাথা নাড়ায়, আগের থেকে একটু ভালো। দেবশ্রী ধিরে ধিরে পায়েলের কাছে সব কিছু জানতে চায়। পায়েল অঙ্কনের দিকে তাকিয়ে থাকে জল ভরা চোখে। অঙ্কন ওকে সাহস দিয়ে সব কিছু বলতে বলে। পায়েল এক এক করে সব কথা দেবশ্রীকে জানায়। পায়েলের বেদনা ভরা কাহিনী শুনে সবাই স্থম্ভিত হয়ে যায়। জন্মদাতা পিতা এত নিষ্ঠুর হতে পারে, সেটা ওকে না দেখলে বিশ্বাস করা যায় না। পিঠে বেল্টের কালসিটে দাগ দেখায়, কব্জিতে দড়ির দাগ। দিনে একটা রুটি আর এক গ্লাস জল ছাড়া কিছু খেতে দেওয়া হয়নি ওকে। ওর বাবা বলেছিল যেদিন অঙ্কনের চিন্তা ছেড়ে দেবে সেদিন ওকে বাথরুম থেকে মুক্তি দেবে। পায়েল জানত ওর পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে তাই জেদ ধরে বসে ছিল। অঙ্কনের চোখে জল চলে আসে সেই সব কথা শুনতে শুনতে। নিরঞ্জন বাবুর চোয়াল রাগে শক্ত হয়ে ওঠে, তিনি জানিয়ে দেন যে একটা স্টেটমেন্ট তিনি পরে তৈরি করে নিয়ে আসবেন সেখানে পায়েলের সই দিয়ে দিলে হয়ে যাবে। পায়েল বারেবারে ওর মায়ের কথা জিজ্ঞেস করে। দেবায়নের মা শেষ পর্যন্ত পায়েলের মায়ের মৃত্যুর কথা জানায়। পায়েল ডুকরে কেঁদে ওঠে তারপরে অজ্ঞান হয়ে যায়।
জ্ঞান ফেরার পরে পায়েল মামা, মামীর দিকে তাকিয়ে থাকে নিরুপায় হয়ে। পায়েলের অবস্থা দেখে ওর মামা ওকে তার সাথে নিয়ে যেতে চান। অনুপমা আর শ্রেয়া, পায়েলকে তার আত্মীয় সজ্জনের সাথে ছাড়তে নারাজ। নিজের বাবা আর নিজের পিসি যদি ওর সাথে এমন অত্যাচার করতে পারে তাহলে বাকিরা কেন পারবে না। অনুপমা আর শ্রেয়া কাউকে বিশ্বাস করতে পারে না। ওর মামা বলেন যে নিকট আত্মীয় হিসাবে পায়েলের ওপরে তার অধিকার আছে। নিরঞ্জন বাবু অবস্থার সামাল দেবার জন্য বলেন যে পায়েল, সাবালিকা হয়ে গেছে। পায়েলের মতামত ছাড়া কেউ ওকে নিয়ে যেতে পারে না। সবার চাপে পড়ে ওর মামা বিরক্ত হয়ে বলেন যে তারা পায়েলের দায়িত্ব গ্রহন করতে চায় না ভবিষ্যতে।
কলেজ শুরু হয়ে যায়। প্রতিদিন কেউ না কেউ পায়েলের সাথে নার্সিং হোমে থাকে। কোনদিন অনুপমা, কোনদিন সঙ্গীতা, কোনদিন শ্রেয়া। পায়েলকে ফিরে পেয়ে সবাই বেশ খুশি। পায়েল মানসিক ভাবে খুব ভেঙ্গে পড়ে। বারেবারে মায়ের কথা বলতে বলতে অজ্ঞান হয়ে যেত। ডক্টর খুব চিন্তায় পড়ে যায়। এইমত অবস্থায় পায়েলের দায়িত্ব গ্রহনের জন্য কে এগিয়ে আসবে সেই চিন্তায় পড়ে যায় সবাই। সেই সময়ে পারমিতা বলে যে, পায়েলের সব দায়িত্ব গ্রহন করতে রাজি আছে। অনুপমা আর অঙ্কন খুব খুশি হয় মায়ের কথা শুনে। মিস্টার সেন স্ত্রীর আর কন্যের কথা মেনে নিয়ে পায়েলকে বাড়িতে নিয়ে আসেন।
অনুপমার রুমেই পায়েলের থাকার ব্যাবস্থা করা হয়। অনুপমাই ওর সব দেখাশনার ভার নেয়। রাতের পর রাত অনুপমা ওর জন্য জেগে কাটিয়ে দেয়। পায়েল শারীরিক দিক দিয়ে সুস্থ হয়ে উঠলেও, কিছুতেই মেনে নিতে পারে না যে ওর বাবা ওর মাকে হত্যা করেছে। ওর মন মানতে চায় না যে ওর মা ইহলোকে আর নেই। রাতে ঘুম আসে না পায়েলের, ছোটো বাচ্চা যেমন থেকে থেকে মাকে খোঁজে, বিছানায় শুয়ে পায়েল মাকে খোঁজে। সারা রাত অনুপমা ওকে জড়িয়ে ধরে বসে থাকে। অঙ্কন পায়েলের মানসিক অবস্থা দেখে খুব চিন্তিত হয়ে পরে। পায়েল শরীর ঠিক হলেও ওর মানসিক পরিবর্তন ঘটে। উচ্ছল, চঞ্চল পায়েল আর সেই মেয়ে নয়। পায়েল খুব চুপচাপ এবং স্তিমিত হয়ে যায়। পায়েল আর নিজেদের বাড়িতে ফিরে যায় না, পারমিতা ওকে যেতে দিতে চায় না। জানে পায়েল নিজের বাড়িতে ফিরে গেলে ওর মায়ের কথা মনে পরে যাবে, একা অত বড় বাড়িতে থাকা অসম্ভব পায়েলের পক্ষে। পায়েলের বাড়িতে তালা বন্ধ, মাঝে মাঝে পায়েলের মামা ফোনে পায়েলের খবরাখবর নেয় তবে ধিরে ধিরে সেটাও কমে আসে।
Like Reply
পর্ব কুড়ি সমাপ্ত
Like Reply
[/size][/color]

 
একুবিংশ পর্ব (#01)
কম্পিউটার ক্লাসের প্রথম সেমেস্টার পার হয়ে যায়। নভেম্বর মাসের মাঝামাঝি, শীতকাল কোলকাতায় বেশ জাঁকিয়ে নেমে আসে। অনুপমাদের কম্পিউটারের প্রথম সেমেস্টার পরীক্ষা শেষ। ভালো অঙ্কে দুই জনে উত্তীর্ণ হয়।
ছেলের কঠিন পরিশ্রমের ফল দেখে দেবশ্রী বেশ খুশি হয়। দেবশ্রী, দিল্লী হেড অফিসে জানিয়ে দেয় যে তিনি দিল্লীতে জয়েন করতে পারবে না। দেবশ্রী বুঝতে পারে যে এই সিদ্ধান্তের জন্য মিস্টার ঠাকুর আর মিস্টার ব্রিজেশ ত্রিপাঠি বেশ আহত হবেন। তাই দেবশ্রী আগে থেকেই নতুন কাজ খুঁজছিল। দেবশ্রী পুরানো চাকরি ছেড়ে এক এয়ারলাইন্স অফিসে ডি.জি.এম এইচ.আর হিসাবে জয়েন করেন। নতুন অফিস, খুব বড় এবং দেশের নামকরা এয়ারলাইন্স কোম্পানি। কাজের ভার অনেক কম, তবে যে কাজ গুলো তাঁর কাছে আসে সেই গুলো বেশ গুরুত্বপূর্ণ। দেবায়নের ফাইনাল পরীক্ষার আর কয়েক মাস বাকি। তার পড়াশুনা, তার খাওয়া দাওয়া, তার শরীর, সব দিকে দেবশ্রীর কড়া নজর। দেবশ্রী বারেবারে ছেলেকে বলে যে সব কিছু মাথা থেকে বের করে দিয়ে শুধু কলেজের পড়াশুনায় মন দিতে। স্নাতক না হলে, এই বাজারে চাকরি পাওয়া বেশ কঠিন ব্যাপার।
পায়েল আর বাড়ি থেকে বের হয় না। অনুপমার রুমে নিজেকে বন্দি করে রেখে দেয় সারাদিন। কলেজে যাওয়া ছেড়ে দিয়েছে। পারমিতার দুশিন্তা দিনে দিনে বেড়ে ওঠে পায়েলের মানসিক অবস্থা দেখে। সাইকিয়েট্রিস্টের ওষুধ আর কাউন্সিলিং নিয়মিত চলে। কিন্তু পায়েলের মানসিক অবস্থার পরিবর্তন খুব ক্ষীণ। অঙ্কন ওকে নিয়ে বাইরে যেতে বললে কিছুতেই বাড়ির বাইরে যেতে চায় না। পারমিতা বাড়ি থেকে বের হওয়া বন্ধ করে দিয়েছে পায়েলের জন্য। অনুপমার কলেজ, ক্লাস ইতাদ্যির জন্য শুধু রাত ছাড়া পায়েলের সাথে দেখা হয় না। শুধু মাত্র ওকে আর অঙ্কনকে দেখলেই পায়েল একটু হাসে তাছাড়া আর কারুর সাথে কথা বলে না। প্রায় বন্ধু বান্ধবীরা এসে খবর নেয়, কিন্তু পায়েল পারমিতার আঁচলের পেছনে দাঁড়িয়ে থাকে চুপ করে।
একদিন রাতে খাবার সময়ে, মিস্টার সেন অনুপমাকে জিজ্ঞেস করে, “তোদের কম্পিউটার ক্লাসের কি খবর?”
এতদিন পরে ওর বাবা ওর পড়াশুনা, ওর কলেজ ইতাদ্যি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করছে দেখে অনুপমার খুব ভালো লাগে, “প্রথম সেমেস্টার শেষ হয়ে গেছে। ভালো মার্কস পেয়েছি আমরা।”
মিস্টার সেন, “কলেজের ফাইনাল পরীক্ষা কবে?”
অনুপমা, “আগামী বছর, গরমের ছুটির আগেই আশা করি।”
মিস্টার সেন, “পড়াশুনা কেমন চলছে আজকাল?”
অনুপমা হেসে বলে, “তুমি সত্যি জানতে চাও না মজা করছ?”
মিস্টার সেন হেসে ফেলেন মেয়ের কথা শুনে, “না রে মা। আমি সত্যি জিজ্ঞেস করছি। আর হ্যাঁ, একবার দেবায়নের ফোন নাম্বার দিস আমাকে। ওর সাথে কিছু কথা আছে।”
অনুপমা জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে বাবার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে, “কি এমন কথা যেটা তুমি আমাকে বলতে পারবে না?”
মিস্টার সেন হেসে বলেন, “বাঃ রে, শ্বশুর জামাইয়ে কি নিজেস্ব কিছু কথাবার্তা হতে পারে না।”
অনুপমা হেসে ফেলে বাবার কথা শুনে, “ঠিক আছে কালকে আমি ওকে কলেজে বলে দেব বাড়িতে আসতে।”
মিস্টার সেন বলেন, “না না তুই ওর ফোন নাম্বার আমাকে দে। আমি কথা বলে নেব।”
সবার খাওয়া দাওয়া হয়ে যাবার পরে। বসার ঘরে বসে থাকেন মিস্টার সেন। পায়েলকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে অনুপমা নিচে নেমে আসে। অনুপমা ওর বাবার সামনে একটা সোফায় বসে পরে।
মিস্টার সেন ড্রিঙ্কের গ্লাস টেবিলে রেখে জিজ্ঞেস করে, “কি ব্যাপার তুই ঘুমাতে যাস নি এখন?”
অনুপমা বাবার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে, “তোমার সাথে আমার কথা আছে।”
মিস্টার সেন, “কি কথা? তুই কি কোম্পানির ব্যাপারে জিজ্ঞেস করতে চাস?”
অনুপমা মাথা নাড়িয়ে বলে, “হ্যাঁ। তুমি বলেছিলে, এই বছরে কোম্পানি বিক্রি করে দেবে আর তুমি তোমার চাকরি বদলে অন্য চাকরি নেবে। কিছুই হয়নি, বাবা।”
মিস্টার সেন হুইস্কির গ্লাসে ছোটো চুমুক দিয়ে হেসে বলে, “কোম্পানির একটা গতি করব আমি। সেই সাথে অনেক কিছু ভেবেছি এই কয় মাসে। নতুন বছর, নতুন দিগন্তে পা রাখতে চাই আমি। তুই এত চিন্তা করছিস কেন? তুই কলেজের পড়াশুনা নিয়ে থাক। তুই ভাবছিস তোদের আই.টি কোম্পানির কথা, তাই ত? তার জন্য পয়সা চলে আসবে। আমি একবার দেবায়নের সাথে কথা বলতে চাই। তোর কি আমার অথবা দেবায়নের ওপরে বিশ্বাস নেই?”
কি উত্তর দেবে অনুপমা, ম্লান হেসে বলে, “ঠিক আছে, তুমি আর দেবায়ন যা ভালো বুঝবে তাই করো। এরপরে আমার আর কিছু বলার নেই।”
বিছানায় শুয়ে নিত্যদিনের মতন দেবায়নকে ফোন করে অনুপমা। ফোনে জানায় যে ওর বাবা ওর সাথে দেখা করতে চায়। দেবায়ন একটু চিন্তিত হয়ে যায়, সেই সাথে অনুপমা বলে যে বাবার কথায় সে নিজেও বেশ চিন্তিত। অনুপমা বলে দেয় যে, যাই করুক নিজের বিবেক বুদ্ধিকে সামনে রেখে যেন পা বাড়ায়।
পরের দিন দুপুর বেলা মিস্টার সেন দেবায়ন কে ফোন করে। মিস্টার সেনের ফোন পাবে সেটা দেবায়নের জানা ছিল। আগে থেকে প্রস্তুত ছিল উত্তরের জন্য। দেবায়ন অনুধাবন করেছিল যে ওর সাথে নিশ্চয় ব্যাবসা নিয়েই কথা হবে। মিস্টার সেন বলেন যে আগামী শনিবার, কম্পিউটার ক্লাসের পরে হোটেল * স্তান ইন্টারনেশানালে চলে আসতে। বিকেলে দুইজনে ওইখানে ডিনার করতে চায় সেই সাথে মিস্টার সেন কিছু কথা বলতে চান।
শনিবার কম্পিউটার ক্লাসের পরে বিকেলে হোটেল * স্তান ইন্টারন্যাসানালে চলে যায় দেবায়ন। অনুপমাকে আগে জানিয়ে দিয়েছিল যে ওর বাবা ওর সাথে দেখা করতে চায়। সেই মতন অনুপমা হেসে বলে যে বাবা ওকে বলেছে, আর বাবার কথা একটু বুঝে শুনে যেন পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়। আগে থেকে একটা টেবিল রিসার্ভ করে রেখেছিলেন মিস্টার সেন। দেবায়নের আগেই মিস্টার সেন হোটেলে পৌঁছে ওর জন্য লবিতে অপেক্ষা করে।
মিস্টার সেন, দেবায়নকে দেখে হাত বাড়িয়ে অভিবাদন জানিয়ে বলে, “বেশ ঝড় গেল আমাদের সবার উপর দিয়ে তাই না?”
দেবায়ন হেসে বলে, “তা গেল। কিসের জন্য আমাকে ডাকা?”
মিস্টার সেন হেসে বলেন, “কেন? আমাদের মাঝে কিছু কথা থাকতে পারে না?”
দেবায়ন, “হ্যাঁ নিশ্চয় পারে, তবে বাড়িতে হতে পারত সেই সব কথা।”
মিস্টার সেন, “হ্যাঁ হ্যাঁ বাড়িতে হতে পারত। এখানের শেফ আমার চেনা জানা। আমি লবস্টার আর সার্ক ফিন সুপের অর্ডার দিয়েছিলাম। পারমিতা আর অনুপমা, সার্ক ফিন সুপ খেতে ভালোবাসে না একদম। আমি ভাবলাম আমি একা কেন টেস্ট করব, তোমাকে ডেকে একবার টেস্ট করাই।”
দেবায়ন, “সার্ক ফিন সুপ! বাপরে যে হাঙ্গর আমাদের খায়, আমরা এখন তাকেই খাবো?”
মিস্টার সেন হেসে বলেন, “জীবন অনেকটা সেই রকম। আজকে যে তোমাকে খেল, সময় পেলে তুমি তাকে খাবে। বসো বসো।”
দেবায়ন চেয়ারে বসে জিজ্ঞেস করে, “কি ব্যাপার বললেন না ত? কি কারনে আমাকে ডাকা হয়েছে?”
মিস্টার সেন, “তুমি কি এখন পর্যন্ত কারুর সাথে তোমার আই টি কোম্পানির ব্যাপারে কথা বলেছ? মানে তুমি এক বার বলছিলে, যে রূপক যাদবপুরে আই.টি তে বি.টেক করছে?”
দেবায়ন, “না, শ্রেয়া আর রূপকের সাথে এখন পর্যন্ত কোন কথা হয়নি। তবে মায়ের সাথে আর অনুপমার সাথে কথা হয়েছে।”
মিস্টার সেন, “এই কয়দিনে রূপককে দেখলাম। বেশ ভালো ছেলে, মনের দিক থেকে বেশ ভালো। বন্ধুবতসল, ওর সাথে কাজ করতে ভালোই লাগবে। শ্রেয়া মেয়েটা বেশ শক্ত, আমার মেয়ের চেয়ে বেশি বুদ্ধি রাখে। অনু হৃদয় থেকে ভাবে আর শ্রেয়া মাথা খাটিয়ে ভাবে। তোমার কি মনে হয়?”
দেবায়ন হেসে ফেলে সেই সাথে মিস্টার সেন হেসে ফেলেন। মিস্টার সেন জিজ্ঞেস করেন, “দেবশ্রীদি কি বলল তোমাকে?”
দেবায়ন, “মা একবার আপনার সাথে কথা বলতে চান এই সফটওয়্যার কোম্পানির বিষয়ে।”
ততক্ষণে অয়েটার সার্ক ফিন সুপ দিয়ে যায়। মিস্টার সেন, দেবায়নকে সার্ক ফিন সুপ চেখে দেখতে বলে, বলে, “হ্যাঁ হ্যাঁ, সময় হলে কথা বলে নেব দেবশ্রীদি’র সাথে। এখন সব বাড়ির ব্যাপার স্যাপার, দেবশ্রীদি’কে না জানিয়ে ত কিছু করা যাবে না। হয়ত ভবিষ্যতে দেবশ্রীদির সাহায্য লাগতে পারে।”
দেবায়ন, “হ্যাঁ, মায়ের সাহায্য লাগবে। একা আমি সফটওয়্যার কোম্পানি তৈরি করতে পারবো না। আমি শুধু মাত্র টেকনিকাল দিক হয়ত দেখতে পারব বাকি দিক দেখার আছে।”
মিস্টার সেন হেসে বলেন, “আমাকেই ভুলে গেলে নাকি?”
দেবায়ন লজ্জায় পরে যায়, যে টাকা দিচ্ছেন তার কথা প্রথমে মাথায় আসেনি। দেবায়ন লজ্জিত মুখে বলে, “না না, মানে আপনি বলছিলেন যে এই সব ছেড়ে দেবেন তাই মানে।”
মিস্টার সেন বলেন, “দেখো, তোমাকে একটা কথা আজকে জানাতে চাই। আমি ভাবছি, আমার এই বিজনেসের গন্ডী একটু বড় করতে। ভালো ভাবে শোনো, তারপরে তোমার মতামত জানাবে।”
দেবায়ন সুপ খেতে খেতে মন দিয়ে শোনে মিস্টার সেনের কথা। মিস্টার সেন বলেন, “তোমার আই.টি কোম্পানি তৈরি করতে প্রাথমিক ইনভেস্টমেন্ট কুড়ি কোটি টাকার মতন লাগবে। তারপরে যতদিন না ব্রেক ইভেনে পৌঁছাবে ততদিন, ওই টাকা শুধু খরচার খাতায় যাবে। ব্রেক ইভেনে পৌঁছাতে একটা কম্পানিকে প্রায় পাঁচ সাত বছর লেগে যায়। ততদিনে এই টাকার পাহাড় কমে আসবে, আয় বিশেষ কিছুই হয়তো হবে না। সেই সব কথা কি একবার চিন্তা করেছ?”
দেবায়ন এতসব কথা চিন্তা করার সময় পায়নি। আসলে দেবায়ন এইসব ব্যাপার জানেই না, ওর পরিবারে কেউ কোনদিন ব্যাবসা করেনি অথবা কেউ অত বড়োলোক নয় যার নিজের একটা কোম্পানি থাকবে। দেবায়ন মাথা নাড়িয়ে জানায়, এই সব ব্যাপার কোনদিন চিন্তা করে দেখেনি।
মিস্টার সেন বলেন, “আমাদের কন্সট্রাকশন কোম্পানি অনেক দিনের। আগে বাবার কাছে ছিল, সেইখান থেকে আমার দাদা পায়। তারপরে সেটা আমাদের হাতে এসে পরে। সুতরাং এই কোম্পানি এখন অনেক টাকা লাভ করে। এক একটা প্রোজেক্টে পঞ্চাস থেকে ষাট শতাংশ লাভ হয়। সেই টাকা দিয়ে আরও একটা প্রোজেক্টে বিনিয়োগ করা হয়। এই ভাবে এই লাইনে টাকা ঘোরে। কন্সট্রাকশানে প্রচুর কাঁচা টাকা উড়ে বেড়ায়। কোলকাতার বাইরে অনেক কাজ করেছে আমাদের কোম্পানি। এই কোম্পানি সোনার ডিম দেওয়া হাঁস, এই কোম্পানি বিক্রি করা বোকামোর কাজ।”
দেবায়ন, মিস্টার সেনের কথা শুনে বলে, “কাকু, আপনি কিন্তু কাকিমা আর অনুপমার কাছে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন যে কোম্পানি বিক্রি করে দেবেন।”
মিস্টার সেন হেসে ফেলেন, “আরে বাবা, সেটা না হয় একটু ঝোঁকের বশে বলে ফেলেছিলাম। কিন্তু একটা সোনার ডিম দেওয়া হাঁসকে মেরে ফেলা সম্পূর্ণ বোকামো। তোমার ব্রেক ইভেনে পৌঁছাতে যদি দেরি হয় আর তার মাঝে তোমার টাকার দরকার পরে তখন তুমি কোথায় যাবে? কন্সট্রাক্সান কোম্পানি পুরদমে লাভে চলছে। তোমার কোম্পানিতে টাকার দরকার পড়লে খুব সহজে এই কোম্পানি থেকে টাকা নিয়ে তোমার কোম্পানিতে লাগানো যাবে।”
দেবায়ন চুপ করে ভাবতে শুরু করে এই ব্যাবসার মারপ্যাঁচ। তারপরে মাথা দুলিয়ে বলে, “হ্যাঁ তা সত্যি, কিন্তু আপনার মেয়ের চোখে আর কাকিমার চোখে আপনি যে অনেক নিচু হয়ে যাবেন। আপনি তাদের কথা দিয়েছিলেন। আর যদি কোম্পানি বিক্রি না করেন তাহলে সফটওয়্যার কোম্পানি যে খুলতে টাকা দেবেন, সেই টাকা কোথা থেকে আসবে?”
মিস্টার সেন দেবায়নের চোখে চোখ রেখে বলে, “দেবায়ন, কাকে কি ভাবে বুঝাতে হয় সেটা ভালো ভাবে জানি। তোমার আর অনুর স্বপ্নের আই.টি কোম্পানির ইনিসিয়াল ইনভেস্টমেন্ট, সেই টাকা আমার কাছে আছে। কুড়ি ত্রিশ কোটি টাকা বাজারে ছড়িয়ে আছে বিভিন্ন দিকে। আমার কন্সট্রাক্সান কোম্পানি বিক্রি না করলেও চলবে। আমি চাইছি নতুন বছরে নতুন কিছু করার, আমার ব্যাবসার দিগন্ত একটু একটু করে বাড়াতে চাই। একা পেরে ওঠা সম্ভব নয়, বাইরের কাউকে বিশ্বাস করা সম্ভব নয়। অঙ্কন অনেক ছোটো, মিতা আর অনুকে এত বড় পরিকল্পনার ব্যাপারে কিছুই জানাই নি। তুমি আমার এক মাত্র ভরসা।”
দেবায়ন একটু চিন্তায় পরে যায়। মিস্টার সেন হেসে জিজ্ঞেস করেন দেবায়নকে, “তুমি কি ভাবছ দেবায়ন? দেবশ্রীদি কিন্তু আমার কাছে জিজ্ঞেস করবে এই আই.টি কোম্পানির টাকার ব্যাপারে। এতদিনে দেবশ্রীদি কে যতটা বুঝেছি, আমার কাছ থেকে টাকা নেওয়াটা দেবশ্রীদি যে খুব সহজে মেনে নেবেন সেটা মনে হয় না। তাঁকে বোঝানোর দায়িত্ব আমার ওপরে ছেড়ে দাও, কেমন? তুমি আমার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা জানতে চাও না শুধু নিজের সফটওয়্যার কোম্পানি নিয়ে থাকতে চাও?”
দেবায়ন মহা ফাঁপরে পরে যায়। মা নিশ্চয় মিস্টার সেনের সাথে কথা বলবেন, সেই সময়ে যদি মিস্টার সেন বেঁকে বসেন তাহলে ওর সফটওয়্যার কোম্পানি তৈরি করার স্বপ্ন স্বপ্ন হয়েই থেকে যাবে। অনুপমাকে কি বুঝাবে, অথবা পারমিতা কি মিস্টার সেনের এই ব্যাপারে সম্মতি দেবে সেই নিয়ে প্রবল সংশয়ে ভোগে দেবায়ন। মিস্টার সেন দেবায়নের মুখের অভিব্যাক্তি দেখে অমনের কোথা বুঝে যায়। দেবায়ন চুপ করে সার্ক ফিন সুপ শেষ করে আর ভাবতে থাকে পরবর্তী পদক্ষেপ। না চাইতেই, ধন লক্ষ্মী ওর সামনে হেঁটে এসেছে। অনুপমার সাথে প্রেম করেছিল কারন অনুপমাকে খুব ভালবাসত, তার বাবার সম্পত্তির ওপরে কোনদিন ওর নজর ছিল না। কারন সেই সময়ে অনুপমা নিজেই জানত না যে ওদের একটা কন্সট্রাকশান কোম্পানি আছে। সাত পাঁচ ভেবে অবশেষে দেবায়ন মনস্থির করে যে মিস্টার সেনের সাথে হাত মিলিয়ে নেওয়া শ্রেয়। ওর ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল।
দেবায়ন সার্ক ফিন সুপ শেষ করে মিস্টার সেনকে হেসে বলেন, “আপনি তাহলে নতুন বছরে একটা বিজনেস এম্পায়ার গড়তে চলেছেন? তার মানে শুধু এই কন্সট্রাক্সান আর সফটওয়্যার ছাড়াও অন্য কিছু নিশ্চয় আপনার মনের মধ্যে আছে। আমাকে কি করতে হবে তার জন্য?”
মিস্টার সেন, অয়েটারকে ডেকে বলে লবস্টার আর রেড ওয়াইন নিয়ে আসতে। দেবায়ন হাঁ করে মিস্টার সেনের দিকে তাকিয়ে থাকে। মিস্টার সেন হেসে বলেন, “তুমি ওই রকম ভাবে দেখছ কেন আমার দিকে? আমি জানতাম তুমি আমার কথা মেনে নেবে, তাই আগে থেকেই লবস্টার অর্ডার করেছিলাম আর এবারে রেড ওয়াইনের সাথে লবস্টারের মজা নিতে নিতে আমরা পরবর্তী পদক্ষেপের আলোচনা করব। কাল রবিবার, বাড়িতে যাবার আশা করি তাড়া নেই আর তোমার বাইক আছে। তুমি ত আর অন্য কারুর সাথে নেই। তুমি আমার সাথে আছো। অত চিন্তা কিসের?”
দেবায়ন, “কিন্তু কাকু, আমি বিজনেসের ব্যাপারে সত্যি কিছু জানি না। সত্যি বলতে, আমি সফটওয়্যার কোম্পানি খুললে শুধু টেকনিকাল দিকটাই হয়ত দেখতাম।”
মিস্টার সেন হেসে বলেন, “না, এই রকম করলে চলবে না। তুমি আমার এম্পায়ারের উত্তরাধিকারী। তুমি একটা আনকোরা হীরে, আমি তোমাকে কাটবো, তোমাকে পলিশ করব। তুমি আমার চেয়ে বেশি চকচক করবে।”
দেবায়ন, “মানে?”
মিস্টার সেন, “আদব কায়দা, ব্যাবসার প্যাঁচ, কোথায় কার সাথে কি ভাবে কথা ববে, এই সব। তাহলে এবারে আমার পরিকল্পনা খুলে তোমাকে বলি।”
লবস্টার আর রাসিয়ান স্যালাডের সাথে, অয়েটার রেড ওয়াইন দিয়ে চলে যায়। মিস্টার সেন বলেন, “পরের বছর একটা নতুন বছর হবে আমাদের জন্য। তোমার হবে সফটওয়্যার কম্পনি, সেই সাথে কন্সট্রাক্সান আছেই। আমি হসপিটালিটি সেক্টর মানে হোটেল বিজনেসে ঢুকতে চাই। কন্সট্রাক্সানের লাভের অনেক টাকা সরিয়ে আমি হোটেল বিজনেসে লাগিয়ে দিয়েছি, কেউ জানে না এই বিষয়ে কারন সব ব্লাক মানি। ছয় খানা খুব ভালো ভালো রিসোর্টে আর হোটেলে আমার শেয়ার আছে তবে কারুর মালিকানা নেই। উত্তরাখন্ডের বিন্সারে একটা, একটা হিমাচলের ডালহৌসিতে, একটা মানালির কাছে সোলাং ভ্যালিতে, একটা ব্যাঙ্গালোরে বেশ বড় থ্রি স্টার হোটেল, একটা উটিতে রিসোর্ট এবং পুনেতে বড় থ্রী স্টার হোটেলে।”
দেবায়ন থ বনে যায় মিস্টার সেনের কথা শুনে। সামনে বসা ভদ্রলোক আর কোথায় কোথায় কি কি লুকিয়ে রেখেছে সেটা ভাবতে চেষ্টা করে। মিস্টার সেন হেসে বলেন, “তুমি অবাক হয়ে গেলে নাকি? এই গুলোতে শুধু আমার বেনামে শেয়ার কেনা ছিল তাই আর পারমিতাকে বলিনি।”
 
Like Reply
একুবিংশ পর্ব (#02)

দেবায়ন হেসে ফেলে, “আরো কিছু আছে নাকি কাকু? বলেই ফেলুন আজকে।”
মিস্টার সেন, “না না, আর নেই। এবারে আসল কথায় আসি। আমি চাই পরমিতকে কোম্পানি থেকে সরিয়ে দিতে। আর সেই শেয়ার নিবেদিতাকে দিতে। নিবেদিতা কিছু ভেঞ্চার ক্যাপিটালিস্ট যোগাড় করেছিল, তবে কেউ পঁচাত্তর শতাংশের জন্য রাজি হয়নি। আসলে আমি চাইনি তখন। পরমিতের শেয়ার নিবেদিতাকে দিয়ে দিলে আশা করি শান্ত হয়ে যাবে। এমনিতে নিবেদিতার আর পারমিতার একদম বনে না। কিন্তু তোমার কাকিমা অনেক করেছে, আর নয়। এবারে ওকে কন্সট্রাক্সান থেকে সরিয়ে নিয়ে পরিষ্কার কাজে লাগিয়ে দেব, হোটেলে। আর নিবেদিতা আমাদের এই কন্সট্রাক্সান দেখবে। তবে ওর কাছে থাকবে পঁয়তাল্লিশ শতাংশ, বাকিটা তোমার কাকিমার নামেই থাকবে। তবে তোমার কাকিমা আর কাজ করবে না। এবারে আসি হোটেলের কথায়। এই যে নতুন প্লান করেছি, সেই খানে অনেক টাকার দরকার। কিছু হোটেল বেশ ভালো চলে, কিছু হোটেল ঠিক চলে না। সব হোটেল গুলো আমি মালিকানা মানে একান্ন শতাংশ কিনতে চাই। কিন্তু এই মালিকানা সত্তা কিনতে গেলে টাকার দরকার পড়বে। আমি কন্সট্রাসানের জন্য ভেঞ্চার ক্যাপিটালিস্ট যোগাড় করেছি। সেই টাকা আমি সাইফন করব এই হোটেল গুলোর শেয়ার কেনার জন্য। তোমার সফটঅয়ারের টাকা বাজারে পরে আছে, যে কোন সময়ে তোলা যাবে।”
দেবায়ন মন দিয়ে সব কথা শুনে বলে, “আমি এখানে কোথায়?”
মিস্টার সেন হেলে বলেন, “তুমি আমার পাশে থাকবে, আবার কোথায়? অঙ্কনের এই কাজে মন লাগবে কি না সন্দেহ আর অঙ্কন এখন অনেক ছোটো। অনুপমা সফটওয়্যার দেখবে, শ্রেয়া আর রূপকের সাথে। পারমিতা, হোটেলে ইন্ডাস্ট্রি সামলাবে, নিবেদিতা কন্সট্রাক্সান সামলাবে। আমি আর তুমি, এই গ্রুপের মাথায় থাকব, তুমি এই গ্রুপের ভাইস প্রেসিডেন্ট। তাই একবার বলছিলাম যে গ্রাজুয়েশানের পরে এম.বি.এ করে নাও। অবশ্য আজকাল ডিস্টান্সে এম.বি.এ করা যায়। পরের বৃহস্পতিবার, রায়চকের র‍্যাডিসন ফোর্টে একটা বিজনেস পার্টি আছে। সেখানে একজন ভেঞ্চার ক্যাপিটালিস্ট আসবে, জার্মান ভদ্রলোক। তিনশ কোটি টাকার ইনভেস্টমেন্ট। নিবেদিতা ওইখানে থাকবে, তখন পরিচয় করিয়ে দেব নিবেদিতার সাথে। আর বাকি কথা তোমাকে পরে বলব।”
দেবায়ন মাথা নাড়ায়, “সব ঠিক আছে কাকু। কিন্তু আমার একটা কিন্তু আছে। এতো কিছু বলছেন, আমি পারব তো?”
মিস্টার সেন বলেন, “আজকে তুমি লবস্টার আর ওয়াইনের স্বাদ নাও। পরের বৃহস্পতিবার গাড়িতে যেতে যেতে বাকি কথা বলব। আর হ্যাঁ, অনুপমাকে এত কিছু আবার বলতে যেও না। একটু মাথা খাটাও, তুমি সব কিছুতে বড্ড হৃদয় লাগিয়ে ফেল। সেটা করলে কি আর বিজনেস করা যায়, মিস্টার বসাক?”
দেবায়ন লাজুক হাসে, “আপনি যা বলবেন করতে রাজি আছি।”
মিস্টার সেন হেসে বলেন, “তুমি আমার উত্তরাধিকারী। আমার একমাত্র জামাই যার ওপরে চোখ বন্ধ করে ভরসা করা যায়।”
মিস্টার সেন আর দেবায়ন, ডিনার শেষ করে। বাকি কথা, ওর পড়াশুনা আর কম্পিউটার শিক্ষা দিক্ষা নিয়ে হয়। ওরা টেবিল ছেড়ে উঠতে যাবে এমন সময়ে একটি সুন্দরী মেয়ের সাথে দেখা হয়। দেবায়ন বেশ কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে মেয়েটার দিকে, কোথায় যেন দেখেছে মেয়েটাকে। মেয়েটা বেশ সুন্দরী, চোখ দুটি বড় বড়, ভুরু জোড়া ধনুকের মতন বাঁকা, নাক টিকালো, মুখবয়াব অতি মধুর আকর্ষণীয়। মাথার চুল একপাশে ছাড়া বাম ঘাড়ের উপর দিয়ে সামনে এলিয়ে এসেছে। উজ্জ্বল শ্যামবর্ণা, ঠোঁট দুটো গাড় বাদামি লিপ্সটিকে মাখা। বাম কব্জিতে একটা সোনার ব্রেসলেট। পরনে হাত কাটা, হাঁটু পর্যন্ত কালো রঙের চাপা পোশাক। শরীরের অঙ্গ প্রত্যঙ্গের সাথে লেপটে। বুকের দিকে তাকাতেই দেবায়নের বুক ছ্যাঁক করে ওঠে, চাপা পোশাকের ভেতরে সুউন্নত দুই স্তন জোড়া মুক্তি পাবার জন্য যেন ছটফট করছে। বুকের দিকে গভীর খাঁজ, স্তনের ভেতরের নরম ফর্সা ত্বকের উপরে রেস্টুরেন্টের হলদে আলো পিছল খেয়ে যায়। শরীরের ঘঠন অতি লোভনীয়। নরম তুলতুলে পাছা জোড়া দেখে দেবায়নের শরীরের রক্ত চঞ্চল হয়ে ওঠে। দেবায়ন আড় চোখে মেয়েটার দিকে বারেবারে তাকায়। বয়সে ওর থেকে বছর তিন চার বড়ই হবে। কিন্তু কোথায় যেন দেখেছে মেয়েটাকে।
মেয়েটা মিস্টার সেনের দিকে এগিয়ে হেসে বলে, “কি ব্যাপার সেন স্যার আজকে ম্যামকে ছাড়াই ডিনার করছেন?”
মিস্টার সেন মেয়েটার দিকে হাত বাড়িয়ে অভিবাদন করে বলে, “তুমি এখানে, কি ব্যাপার। কারুর সাথে ডিনারের নিমন্ত্রন নাকি?”
মেয়েটা হেসে দেবায়নের দিকে তাকিয়ে মিস্টার সেনকে নিচু কণ্ঠে জিজ্ঞেস করে, “আজকে হটাত আপনার নেচার বদলে গেল বলে মনে হচ্ছে? কি ব্যাপার। পারমিতা ম্যাম জানে তো?”
মিস্টার সেন হেসে ফেলেন, “আরে না না। তোমাদের পরিচয় করিয়ে দেই, আমার বিজনেস পার্টনার, মিস্টার দেবায়ন বসাক।” আর মেয়েটাকে দেখিয়ে দেবায়নকে বলে, “একে চিনতে পারছ না? টি.ভি সিরিয়াল করে, অনন্যা বাসু।”
দেবায়ন এবারে চিনতে পারে মেয়েটাকে। অনন্যা বাসু, বাংলা টি.ভিতে বেশ কয়েকটা সিরিয়াল করেছে, সেই সাথে গোটা দুই সিনেমাতেও নায়িকার বোন, বান্ধবীর পার্ট করেছে। হাত বাড়িয়ে হাত মেলায় অনন্যার সাথে, “হ্যাঁ হ্যাঁ, তাই আপনাকে দেখে তখন থেকে মনে হচ্ছে কোথায় যেন দেখেছি।”
অনন্যা, দেবায়নের হাতে হাত মিলিয়ে বলে, “আপনার সাথে দেখা হয়ে বড় ভালো লাগলো। গ্ল্যাড টু মিট সাচ অ্যা হ্যান্ডসাম এন্ড ড্যাসিং ইয়াং ম্যান। কিসের বিজনেস আপনার?”
দেবায়ন হেসে বলে, “আমাকে কেন আর আপনি বলে ডেকে কষ্ট দিচ্ছেন…”
মিস্টার সেন সঙ্গে সঙ্গে দেবায়নের মুখ থেকে কথা কেড়ে নিয়ে বলে, “আমার সাথে বিজনেসে আছে, মিস্টার বসাক। আচ্ছা, তুমি তাহলে বৃহস্পতিবারে ঠিক সময়ে পৌঁছে যেও র‍্যাডিসন ফোরটে। তনুজার কি খবর? কালকে তনুজা কেও নিয়ে এসো।”
দুষ্টুমি ভরা ভুরু নাচিয়ে অনন্যা, মিস্টার সেনকে বলে, “হ্যাঁ হ্যাঁ আমারও তাই মনে হচ্ছে। আমি রাত নটার মধ্যে পৌঁছে যাবো। বাকি দুইজনকে বলা আছে ওরা আমার আগেই পৌঁছে যাবে। তনুজার সাথে না হয় আমি কথা বলে নেব, আপনি চিন্তা করবেন না। ওকে সঙ্গে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব আমার।”
দেবায়নের দিকে তাকিয়ে দুষ্টুমি ভরা হাসি দিয়ে জিজ্ঞেস করে, “আপনি আসছেন কি র‍্যাডিসন ফোরটে?”
মিস্টার সেন, দেবায়নের হয়ে উত্তর দেয়, “হ্যাঁ ও আসবে। যাই হোক ওই কথা রইল, বাকি কথা ফোনে বলে নেব।”
হোটেল * স্তান ইন্টারনেশানাল থেকে বেড়িয়ে মিস্টার সেন দেবায়নকে বলে, “এবারে রাতে ভালো করে ঘুমাবে, বুঝেছ? রাত পোহালে বুদ্ধি বাড়ে। আর এখুনি সব কথা সবাইকে জানাতে হবে না। আগে এক এক করে পদক্ষেপ নেই আমরা। ধিরে ধিরে সিঁড়িতে চড়ি। সব কিছু পরিকল্পনা মাফিক হয়ে গেলে সবাইকে জানাব। দেবশ্রীদি কে সময় হলে আমি ঠিক ম্যানেজ করে নেব। ভালো কথা, তোমার সুট আছে?”
দেবায়নের কোনদিন সুটের দরকার পড়েনি, তাই মাথা নাড়িয়ে জানিয়ে দেয় যে সুট নেই। মিস্টার সেন বলেন, “আমি অনুকে বলে দেব। আগামী কাল ক্লাসের পরে তোমাকে নিয়ে পার্ক স্ট্রিটের রেমন্ড শপে কিম্বা রেইড এন্ড টেলরে নিয়ে যাবে। বেশ পছন্দ মতন দুটি ভালো সুট কিনে নিও। আবার এটা ভেবে বস না যে শশুর দিচ্ছে বলে নেবে না।”
হেসে ফেলে দেবায়ন, “না না। সেই রকম কিছু নয়। ওকে তাহলে গুড নাইট।”
মিস্টার সেন চলে যাবার পরে দেবায়ন বাইকে চেপে ফিরে আসে বাড়িতে। বাড়িতে ঢোকা মাত্রই ওর মা জিজ্ঞেস করে, হ্যাঁরে এতক্ষণ মিস্টার সেনের সাথে কি কথা বলছিল? মায়ের প্রশ্ন যথাসম্ভব এড়িয়ে উত্তর দেয় যে, ওদের সফটওয়্যার কোম্পানির ব্যাপারে কথা বলার জন্য ডেকেছিলেন মিস্টার সেন। দেবশ্রী দেবায়নের কথা শুনে আহত হয়ে বলেন যে আগে পড়াশুনা তারপরে বাকি সব। তিনি মিস্টার সেনের সাথে কথা বলার অভিপ্রায় ব্যাক্ত করেন। মাকে বুঝিয়ে বলে দেবায়ন যে এখুনি কোন সিদ্ধান্তে পৌঁছায় নি, তবে আগামী বৃহস্পতিবার মিস্টার সেনের সাথে এক জায়গায় যেতে হবে কিছু কাজের জন্য। রাতে বাড়ি ফিরবে না। দেবশ্রীর সন্দেহ হয়, বলে যে অনুপমার সাথে কথা বলবে, সত্যি কি মিস্টার সেনের সাথে যাবে না অন্য কারুর সাথে। দেবায়ন হেসে বলে, সোজা মিস্টার সেনকে ফোনে জিজ্ঞেস করতে পারে।
দেবশ্রী ছেলের গালে আদর করে হাত বুলিয়ে বলে, “বাবা, যাই করিস। নিজের মান সন্মান বজায় রেখে করিস। তোকে এইখানে নিয়ে আসতে আমার বুকের রক্ত জল হয়ে গেছে।”
দেবায়ন মাকে জড়িয়ে ধরে বলে, “এত ভেব না মা। একবার আমার সফটওয়্যার কোম্পানি দাঁড়িয়ে যাক, তোমাকে মাথায় করে রাখব আমি আর অনু।”
দেবশ্রী, “দেখিস বাবা। যা শুতে যা। কাল আবার কম্পিউটার ক্লাস আছে তোদের।”
রাতের বেলা বিছানায় পরতেই, চোখের সামনে ভেসে ওঠে কালো চাপা পোশাকে পরিহিত অনন্যার দুষ্টু মিষ্টি মুখ। নধর গোলগাল বাঙালি ছাপে ভরা সুন্দরী। স্তন জোড়া বেশ বড় বড়, হাঁটা চলায় এক মত্ততার ছন্দ। মাথায় প্রশ্ন ঢোকে দেবায়নের, একটা বিজনেস মিটিঙয়ে এক জন অভিনেত্রীর কি দরকার? আর যে তনুজার কথা বলছিল অনন্যা সে কি নামকরা বাঙালি মডেল, তনুজা রায়? চোখ বুজে তনুজার নধর দেহপল্লবের স্বপ্ন দেখে দেবায়ন। একটা সাবানের বিজ্ঞাপন করেছে, মসৃণ খোলা পিঠের উপর দিয়ে জলের ফোঁটা গড়িয়ে পরে কোমর পর্যন্ত, কোমরের নিচে ফোলা নিতম্ব তোয়ালেতে ঢাকা। ভেজা চুল এলোমেলো হয়ে ডিম্বাকৃতি মুখবয়াবের কিছু অংশে দোল খায়। ফ্যাকাসে গোলাপি ঠোঁট জোড়া ঈষৎ খোলা, এক তীব্র যৌন আবেদন মাখা হাসি নিয়ে টি.ভি স্ক্রিনের দিকে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকায় শেষে। মনে পরে যেতেই প্যান্টের ভেতরে শিথিল লিঙ্গ শক্ত হয়ে ওঠে। আপনা হতেই প্যান্টের ভেতরে হাত চলে যায়, লিঙ্গ মুঠি করে ধরে নাড়াতে শুরু করে।
বাধ সাধে অনুপমার ফোন, “কি গো তুমি। বাড়ি ফিরে একটা ফোন পর্যন্ত করতে ভুলে গেলে? কি ব্যাপার তোমার? বাবার সাথে এত কি কথা হল?”
ধরমর করে বিছানায় উঠে বসে দেবায়ন, “না মানে, আমি তোমার বাবার কথা গুলো ভাবছিলাম।”
অনুপমা, “কি কথা হল তোমাদের?”
দেবায়ন, “কিছু না এমনি ওই সফটওয়্যার কোম্পানি নিয়েই কথা হল। কাকু জিজ্ঞেস করছিলেন যে এখন পর্যন্ত আমরা রূপক শ্রেয়ার সাথে কথা বললাম না বলিনি। আমি বলেছি, এখন পর্যন্ত কোন কথা হয়নি। এই সব আর কি। তোমার কি খবর? পায়েল ঘুমিয়ে পড়েছে?”
অনুপমা, “হ্যাঁ, পায়েল অনেক আগেই ঘুমিয়ে পড়েছে। আজকে ভাইয়ের সাথে একটু সামনের পার্কে বেড়াতে গেছিল, তাই মনটা অনেকদিন পরে বেশ ভালো আছে। আচ্ছা একটা কথা বল, বাবা বলল কালকে তোমাকে নিয়ে রেমন্ড শপে না হয় রেইড এন্ড টেলর যেতে। কি ব্যাপার হটাত সুটের কি প্রয়োজন পড়ল যে বাবা নিজে থেকে বলল?”
দেবায়ন, “পরের বৃহস্পতিবার একটা বিজনেস মিটিং আছে সেখানে যেতে হবে কাকুর সাথে তাই সুটের দরকার।”
অনুপমা, “তোমার সাথে কাল বিস্তারিত ভাবে কথা বলব। কিছু লুকাবে না, তাহলে মাথা ফাটিয়ে দেব একদম।”
দেবায়ন হেসে বলে, “না মা লক্ষ্মী তোমার কাছে কিছুই লুকাব না। কালকে ক্লাসের আগে সব বলব।”
পরের দিন কম্পিউটার ক্লাসে আসার পরেই অনুপমা দেবায়নকে গত রাতের আলচনার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করে। দেবায়ন ক্লাসের পরে অনুপমাকে সব কথা খুলে বলে। অনুপমা বেশ চিন্তিত হয়ে পরে ওর বাবার কথা শুনে। সব বলার পরে দেবায়ন অনুপমাকে জিজ্ঞেস করে ওদের করনীয় কি।
অনুপমা বলে, “বাবা ঠিক যে রকম বলছে, ঠিক সেই রকম করে যাও। দেখা যাক বাবা কি করতে চান। আমাকে কিছুই জানাওনি তুমি। আমি আর এই ব্যাপারে বাবার সাথে কথা বলব না। ঠিক সময়ে ব্রেক লাগিয়ে বেড়িয়ে আসাটা জরুরি। এই সময়ে বাবার কথা না মানলে, মামনিকে বলে দেবে বাবা আর মামনি খুব আহত হয়ে পরবে, খুব ভেঙ্গে পরবে। আমার মনে হয়, মা এই সব জানে তাই বাবা বলেছে যে মাকে ঠিক করে বুঝিয়ে নেবে। জানো, সত্যি বলছি বড় কষ্ট পেলাম। এখন মনে হচ্ছে তাড়াতাড়ি মামনির কাছে যেতে পারলে বেঁচে যাই।”
দেবায়ন অনুপমার কাঁধে হাত দিয়ে সান্ত্বনা দেয়, “এই কয়দিনে ঠিক যেমন চলেছে ঠিক তেমনি তুমি ব্যাবহার করবে।”
অনুপমা একটা বুদ্ধি দেয় দেবায়নকে, “বাবার সাথে গাড়িতে যাবে, সব কথাবার্তা আর ওখানে যা হবে তার কিছু কিছু ছবি অথবা ভি.ডি.ও করে রাখবে। আমি একবার দেখতে চাই। শেষ পর্যন্ত পুরাতন পন্থিতে চলতে হবে, দল ভেঙ্গে রাজত্ব করা।”
দেবায়ন জিজ্ঞেস করে, “মানে?”
অনুপমা হেসে বলে, “কোথাও একটা ভাঙ্গন ধরিয়ে এদের আসল অভিসন্ধি জানতে হবে। এখন শুধু অপেক্ষা করা আর চোখ কান খোলা রাখা ছাড়া উপায় নেই। কলেজ শেষ হোক, আমাদের সফটওয়্যার কোম্পানির কি করছে সেটা দেখা যাক। তারপরে সবার আচার ব্যাবহার দেখে পরবর্তী পদক্ষেপ নেবার কথা ভাবা যাবে।”
দেবায়ন মাথা নাড়িয়ে জানিয়ে দেয় যে অনুপমার কথা মেনে চলবে। রেইড এন্ড টেলরের দোকানে ঢুকে দুটো দামী সুট কেনা হল দেবায়নের জন্য, একটা ছাই রঙের অন্যটা ঘিয়ে রঙের। রঙ দুটো অনুপমার পছন্দ মতন কেনা হল, সেই সাথে দুটো শার্ট আর দুটো টাই। অনুপমা বলল যে এই সব যদি বাড়িতে নিয়ে যায় তাহলে ওর মামনি দেবায়নের ওপরে সন্দেহ করবে এবং বকাবকি শুরু করে দেবে। তাই অনুপমা বলল আগামী বৃহস্পতিবারে সোজা বাড়িতে চলে আসতে। সেখানে ড্রেস করে বাবার সাথে বেড়িয়ে যেতে। ও বাবাকে বলে রাখবে যে দেবায়ন বাড়িতেই আসবে। দেবায়ন অনুপমাকে নিবেদিতার কথা জিজ্ঞেস করে। অনুপমা জানায় যে নিবেদিতাকে ভালো চেনে না। কয়েক বার বাবার পার্টিতে এসেছে কিন্তু কোনদিন বাড়িতে আসেনি নিবেদিতা চৌধুরী।
মিস্টার সেন দেবশ্রীকে ফোনে বলেন যে দেবায়নের সাথে বিশেষ কিছু কাজের জন্য একটা রাতের জন্য চাই। দেবশ্রী সেদিন রাতে দেবায়নকে প্রশ্ন করে এই কাজের ব্যাপারে। দেবায়ন মাকে বলে ওদের সফটঅয়ার কোম্পানির ব্যাপারে একটা বিজনেস মিটিং রাখতে চান মিস্টার সেন তাই তাদের সাথে দেখা করার জন্য র*্যাডিসন ফোরট হোটেলে যাওয়া। দেবশ্রী বিশেষ ঘাঁটায় না ছেলেকে, শুধু একবার বলে যে পড়াশুনা মাথায় রেখে তবে যেন বাকি কাজ করে।
বৃহস্পতিবারে দুপুরের একটু আগেই দেবায়ন, অনুপমার বাড়িতে পৌঁছে যায়। অনুপমা সেদিন আর কলেজে যায় নি। দেবায়ন উপরে অনুপমার রুমে ঢুকে দেখে পায়েল বিছানায় লেপ মুড়ি দিয়ে শুয়ে। কিছুক্ষণ দরজায় দাঁড়িয়ে শুকনো পায়েলকে দেখে। ওকে দেখে বড় কষ্ট হয় দেবায়নের। অনুপমা ওকে ডেকে নিচে নিয়ে যায়।
পারমিতা দেবায়নকে দেখে বলে, “তুমি বেশ বড় হয়ে গেছ এই কয়দিনে। ব্যাবসা সামলাতে শিখে গেছ। অনুর পছন্দ করা সুট গুলো দেখলাম। বেশ দারুন মানাবে তোমাকে।”
একসময়ে একটু একান্ত পেয়ে কাছে এসে বলে, “আমাকে কি সত্যি ভুলে গেলে? এই কয় মাসে একবারের জন্য আমাকে মনে পড়েনি?”
দেবায়ন মৃদু হেসে বলে, “মিমি, তোমাকে ভুলি কি করে। তুমি কি ভোলার? সময় হাতে বড় কম, মিমি তাই কারুর দিকে ঠিক নজর দিতে পারছি না। সত্যি বলছি, সময় পেলেই তোমার কাছে আসব।”
পারমিতা, দেবায়নের গা ঘেঁষে চোখে দুষ্টুমি ভরা হাসি মাখিয়ে বলে, “আমি ঠিক সময় চুরি করে নেব তোমার জন্য। অনেকদিন তোমাকে পাইনি। মিষ্টি মিমি কিন্তু এখন শুধু তোমার কাছেই মিমি আছে।”
দেবায়ন পারমিতার চোখের দিকে তাকায়। পারমিতা নিচের ঠোঁট কামড়ে এক আবেদন মাখা হাসি দিয়ে বলে, “আজকে যেখানে যাচ্ছও সেখানে বেশ মজা করতে পারবে। দেখো বাবা, সেখানে এক সুন্দরী আসবে মন ভুলাতে।”
দেবায়ন জিজ্ঞেস করে, “কার কথা বলছ, অনন্যা?”
পারমিতা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে, “তোমার সাথে অনন্যার কবে দেখা হল?”
দেবায়ন, “গত শনিবার, হোটেল * স্তানে।”
পারমিতা, “না না অনন্যা নয়। গেলেই জানতে পারবে কে সেই চোর। একটু সাবধানে থেকো।”
অনুপমার ইচ্ছেতে দেবায়ন ছাই রঙের দামী সুট খানা পরে। কোনদিন টাই বাঁধেনি তাই অনুপমা ওর টাই বাঁধতে সাহায্য করে দেয়। মিস্টার সেন তৈরি, অনুপমা তখন দেবায়নকে সাজিয়ে যাচ্ছে। সামনের দিকে চুলের একটা গোছা কপালে একটু নামিয়ে দেয় কোনসময়ে তারপরে হেসে ফেলে আবার সেটা ঠিক করে দেয়। দেবায়ন বিরক্ত হয়ে বলে তাড়াতাড়ি করতে। অনুপমা দেবায়নের গালে চুমু খেয়ে একটা পেন জামার পকেটে গুঁজে দেয়। দেবায়ন জিজ্ঞেস করে এই পেন আবার কোন কাজে লাগবে। অনুপমা বলে এই পেনটা, ক্যামেরা ওয়ালা পেন, সাথে থাকলে দরকার পরবে। দুপুরের কিছু পরেই গাড়িতে করে মিস্টার সেন আর দেবায়ন রায়চকের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।
 
Like Reply
একুবিংশ পর্ব (#03)

পথে যেতে যেতে মিস্টার সেন বলেন, “কি ব্যাপার, টেন্সান নিচ্ছ কেন? এবারে একটু ফ্রাংক হও আমার সাথে। তুমি আমার উত্তরাধিকারী, আমার হবু জামাই। সবসময়ে আমার এক হাতের মধ্যে থাকবে তার বাইরে একদম যাবে না। সবসময়ে চোখ কান খোলা রেখে দেবে, এই রকম বিজনেস পার্টিতে খুব জরুরি। যদিও খুব কম সংখ্যক লোক আসবে।”
দেবায়ন, “কে কে আসছে?”
মিস্টার সেন, “জার্মানিতে আমার এক বন্ধু থাকে অনিমেশ সাহা, সে আসছে। আসলে এই ভেঞ্চার ক্যাপিটালিস্ট সেই যোগাড় করে দিয়েছে। মিস্টার ড্যানিয়েল হারজোগ আর তার সি.এফ.ও মিস্টার হেল্মুট মেরকেল। নিবেদিতা থাকবে আমার তরফ থেকে। আসল প্রেসেন্টেসান আর বেশির ভাগ আলোচনা আগেই হয়ে গেছে। শুধু একবার কোম্পানি দেখতে চায় আর ভবিষ্যতের রোডম্যাপ জানতে চায় এই আর কি। আমার চাহিদা পাঁচশো মিলিয়ন ইউরো, চারশো কোটি টাকার ভেঞ্চার দেখা যাক কোথায় গিয়ে ঠেকে।”
দেবায়ন জিজ্ঞেস করে, “কিন্তু কোম্পানি ত আরাইশো কোটি টাকার?”
মিস্টার সেন, “হ্যাঁ জানি, তবে ওই সেদিন তোমাকে বলেছিলাম না, তিন ধরনের অডিট রিপোর্ট তৈরি করতে হয়। যাই হোক, ভদ্রলোক বেশ ঘাঘু মনে হয় না দেবে। ওদের ফাইনাল অফার সাড়ে তিনশো মিলিয়ন ইউরো, আজকের পার্টি তার জন্য দেখা যাক কতদুর কি হয়।”
দেবায়ন, “আমি এখানে কি করব, বলতে পারেন?”
মিস্টার সেন, “তুমি কিছু করবে না, তোমাকে নিয়ে যাচ্ছি শুধু মাত্র অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য। এরপরে মানুষকে কি করে সামলাতে হয় সেটা এখন থেকেই জানা উচিত তোমার। কার সাথে কি ভাবে কথা বলবে, সামনের মানুষকে কি হিসাবে চিনবে। বুঝলে দেবায়ন, ব্যাবসায় মানুষ চার প্রকারের হয়। গরু, কুকুর, বাঘ আর শেয়াল। এই গরু প্রকৃতির মানুষ হচ্ছে নিরীহ, বুদ্ধিমান এবং আসল শিক্ষিত যাকে বলে। এই সব মানুষের সাথে ভালো ভাবে কথা বলবে, ভালো কাজ দেখাবে, ওদের মন জুগিয়ে চলবে দেখবে ওরা তোমার কাজ করে দেবে অথবা তোমাকে কাজ দিয়ে দেবে। তোমার কর্ম দক্ষতাকে ওরা সন্মান দেবে। দ্বিতীয় প্রকৃতির মানুষ হচ্ছে, কুকুর। ওরা সব সময়ে একটু কিছু চায়, কাজের চেয়ে বেশি চায় একটু তোষামোদি একটু উপহার। ওদের সামনে হাড্ডি রাখলেই ওরা লেজ নাড়াতে নাড়াতে তোমার কাছে চলে আসবে। মানে ওদের কে শুধু টাকা দেখিয়ে বশে আনতে পারবে। এদের চেনা বেশ সহজ, কেউ যদি তোমাকে বেশি স্যার স্যার করে, তাহলে বুঝবে সে কুকুর। তাকে টাকা দিয়ে, উপহার দিয়ে সহজে কাজ হাসিল করতে পারবে। সব থেকে কঠিন হচ্ছে এই বাঘ প্রকৃতির মানুষ। এরা শিক্ষিত, এরা পয়সাওয়ালা এরা আদব কায়দা জানা লোক। এরা সহজে গলে না, এদের সাথে মেপে কথা বলতে হয়, ডিপ্লমেটিক হতে হয়, মন জুগিয়ে চলতে হয় আর ভালো সংগ দিতে হয়। এরা প্রতিপত্তি সম্পন্ন ব্যাক্তি। মডেল অথবা হাই ক্লাসের মেয়েদের দিকে এদের নজর নয়, এদের নজর অন্য দিকে। যেটা সহজে পাওয়া যায় না তার দিকে এদের নজর থাকে, সেটাই তারা চায়। বুঝলে কিছু?”
দেবায়ন বুঝতে পারে, কেন মিস্টার সেন পারমিতাকে কাজে লাগিয়েছিল। মনের ভেতরে হাসে দেবায়ন, পাশে বসার মানুষটার মুখোশ অনেকদিন আগেই খুলে গেছে, তাও সচক্ষে প্রত্যক্ষ করে কিঞ্চিত ঘৃণা বোধ জন্মায়। এই মানুষকে দিয়েই ওর কাজ হাসিল হবে, তাই মাথা দুলিয়ে উত্তর দেয়, “হ্যাঁ, কিছু বুঝতে পেরেছি। সম্পন্ন বাড়ির ঘরোয়া মহিলা অথবা কোন নামি অভিনেত্রী চাই এদের।”
মিস্টার সেন বাঁকা হেসে বলেন, “খুব তাড়াতাড়ি বুঝতে পেরে গেছ তুমি। শেষে শেয়াল প্রকৃতির মানুষ। এরা হটাত করে বিত্ত আর শক্তি হাতে পেয়ে যায়। এরা খুব ধূর্ত কুটিল নেতা গোচরের মানুষ। এরা আগে ঠিক ভাবে খেতেই পেত না, কথাবার্তা ঠিক মতন বলতে জানে না, কিন্তু ওই শক্তি হাতে পাওয়ার পরে নিজেদের খুব বড় মনে করে। এদের যা দেবে তাই খাবে, এরা টাকা পয়সা খাবেই তাঁর সাথে মেয়ে দিতেও হয়। যে রকম মেয়ে দাও এদের চলে যায়। শুধু একটু গা গরম করা চাই এদের।”
দেবায়ন বাঁকা হেসে বলে, “হুম বুঝলাম। বেশ প্যাঁচ আছে এই ব্যাবসায় নামতে।”
মিস্টার সেন একটু চিন্তিত হয়ে বললেন, “জানো, নিবেদিতাকে নিয়ে একটু চিন্তায় পরে গেছি।”
দেবায়ন, “আপনি বলেছিলেন যে পরমিতকে সরিয়ে দেবেন, নিবেদিতাকে ও তাহলে সরিয়ে দেওয়া যায়।”
মিস্টার সেনের চোয়াল শক্ত হয়ে যায় দেবায়নের কথা শুনে, “না ব্যাপারটা সেরকম নয়। ঠিক তোমাকে বুঝিয়ে উঠাতে পারছি না। পরমিত দিল্লীতে থাকে, বোর্ড মিটিঙের সময়ে মাঝে মাঝে আসে কিন্তু প্রফিট নেবার সময়ে একদম ঠিক। নিবেদিতা কিছুতেই পরমিতকে দেখতে পারে না। নিবেদিতা কোম্পানির সব দেখা শুনা করে আর পঁচিশ পারসেন্ট। বেশ কয়েক বছর ধরে বলে আসছে ওর শেয়ার বাড়ানোর জন্য, কিন্তু তখন আমার কাছে অত টাকা ছিল না যে পরমিতের শেয়ার কিনে ফেলি। নিজের শেয়ার দিতে রাজি নয় মিতা। মিতার সাথেও বনে না নিবেদিতার। মিতা, কোম্পানির জন্য প্রচুর ক্লায়েন্ট যোগাড় করেছে, কিন্তু অফিসে যায় না, অফিসের গণ্ডগোলে মাথা ঘামায় না। সেই বুদ্ধি মিতার নেই। মিতা হচ্ছে গরু, ওকে একটু ভালোবেসে কথা বললে, একটু আদর দিলেই গলে যায়। তুমি সেদিন বলার পরে আমি ফিরে পেলাম ওকে। তাই এইসব থেকে ওকে দুরে সরিয়ে রাখার জন্য এবারের বিজনেস মিটিঙে ওকে আনিনি। ওইদিকে নিবেদিতা একটু রেগেই আছে। ও যে ফাইন্যান্সিয়ার এনেছিল তাকে আমি ইচ্ছে করেই নাকচ করে দিয়েছিলাম। ওকে পরমিতের শেয়ার দিলেও ওর মন একটু কেমন কেমন করে থাকবে। দেখা যাক আজকে কিছু বুঝিয়ে উঠতে পারি কিনা। নিবেদিতা একা ছোটো ছেলে কে নিয়ে থাকে, ওকে কোম্পানি থেকে সরিয়ে দেবার কোন প্রশ্ন ওঠে না।”
দেবায়ন জিজ্ঞেস করে, “আচ্ছা, এই জার্মান ভদ্রলোক কেন, মানে বিদেশি ফাইন্যান্সিয়ার কেন?”
মিস্টার সেন হেসে বলেন, “অনেক দুরের চিন্তা করেই আমি অনিমেশকে একটা ক্যাপিটালিস্ট খুঁজতে বলি। তোমার সফটওয়্যার কোম্পানিতে কাজে দেবে। বাইরের বড় বড় প্রোজেক্ট আসবে ওর হাত ধরে, তুমি একটু মিস্টার হারজোগকে হাতে করার চেষ্টা কর। দেশে যে সব প্রোজেক্ট পাবে তাতে মাসের খরচ, দৈনন্দিন খরচ উঠে আসবে। যতক্ষণ না কোন বড় প্রোজেক্ট হাতে পাবে ততক্ষণ তোমার কোম্পানির নাম হবে না। বড় প্রোজেক্ট মানে বেশি লাভ, বেশি টাকা। বাইরের বড় প্রোজেক্ট পাওয়ার জন্য একজন বাইরের মানুষের দরকার। ইউরোপে আমার বিশেষ জানাশোনা নেই আমার। অনুর মেসো ডাক্তার, ছেলে ডাক্তার ওদের দিয়ে এইসব কাজ হবে না। অনিমেশ ফ্রাংকফুর্টে বেশ বড় একটা ইউরোপিয়ান ব্যাঙ্কে চাকরি করে, বেশ বড় পোস্টে। অনেক চেনা জানা আছে, সেই সুত্রে বেড়িয়ে গেল এই হারজোগের কথা। আর এই হারজোগ হচ্ছে ইনভেস্টমেন্ট ব্যাঙ্কার। অনেক কিছুতে হাত ডুবিয়ে টাকা কামিয়েছে। ওর অনেক চেনাজানা আছে ইউরোপে।”
দেবায়ন, “আপনি এত কিছু এত আগে থেকে ভেবে রেখেছেন?”
মিস্টার সেন, “ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা করে রাখতে হয় না হলে কি করে হবে। যদি আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন না দেখি তাহলে উড়তে পারবো কি করে, মিস্টার বসাক।”
শীত কাল, তাড়াতাড়ি সন্ধ্যে নেমে আসে গঙ্গাবক্ষে। মিস্টার সেন, নিবেদিতা আর বেশ কয়েক জনকে ফোন করে জেনে নিলেন তারা কোথায়। নিবেদিতা জানাল তিনি পৌঁছে গেছে, অনিমেশ রাস্তায়, বাকিদের নিয়ে আসছে। বাকিরা পরে রওনা দেবে কোলকাতা থেকে। সন্ধ্যের একটু পরেই মিস্টার সেন আর দেবায়ন রায়চক, গঙ্গার ধারে র‍্যাডিসন ফোর্ট রিসোর্টে পৌঁছে যায়। ওদের নামে ছয় খানা রুম বুক করাছিল আগে থেকে। ম্যানেজার নিজে এসে, ডাইনিং আর মিটিঙের জায়গা দেখিয়ে দেয়। গঙ্গার পাশেই বেশ বড় হোটেল, উঁচু দেয়ালের পাশে সবুজ ঘাসে ঢাকা লন। তার একপাশে খোলা আকাশের নিচে মিটিঙের ব্যাবস্থা আর ডিনার। মিস্টার সেন, দেবায়নকে বলে একবার ম্যানেজারের সাথে গিয়ে রুম গুলো দেখে আসতে আর মিটিঙের জায়গা দেখে আসতে।
দেবায়ন এগিয়ে যেতেই এক মহিলা হাসি হাসি মুখে মিস্টার সেনের দিকে এগিয়ে আসে। ফর্সা সুন্দরী, আকর্ষণীয়, চোখে মুখে বুদ্ধিদিপ্তের ছটা। বয়স পয়ত্রিশের ওপারে নয়, দেহের গঠন বেশ আকর্ষণীয়। ঘিয়ে রঙের বিজনেস সুট আর খোঁপাতে দারুন দেখাচ্ছে মহিলাকে। মহিলার আদব কায়দা দেখে দেবায়ন বুঝতে পারে এই নিবেদিতা।
নিবেদিতা মিস্টার সেনকে দেখে মিষ্টি হেসে জিজ্ঞেস করে, “তুমি এত দেরি করে দিলে? শরীর কেমন আছে তোমার?”
মিস্টার সেন হেসে বলেন, “হ্যাঁ শরীর ঠিক আছে। দুই দিনে আর নতুন কি হবে। অঙ্কুশ আসতে চায় নি?”
নিবেদিতা একগাল হেসে বলে, “হ্যাঁ, বায়না ধরেছিল। বাবার মাথার বাকি চুল ছিঁড়ে ফেলেছে আর কি। আমি বাবাকে আর চাকরকে বলে এসেছি যে বেশি কান্না কাটি করলে টিভি চালিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিতে।”
মিস্টার সেন, “নিয়ে আসলে পারতে। একদম ছোটবেলা থেকেই বিজনেস করা শিখে যেত আর কি।”
কথাটা বলেই হেসে ফেলেন মিস্টার সেন।
নিবেদিতা মিস্টার সেনের বাজুতে ছোটো একটা চাঁটি মেরে বলে, “তুমি না যাতা। এখন অনেক ছোটো আছে।”
মিস্টার সেন, দেবায়নের সাথে পরিচয় করিয়ে বলে হেসে বলে, “অনুর ফিয়ান্সে, বাকি টা নিজেই পরিচয় সেরে ফেল।”
নিবেদিতা দেবায়নেকে আপাদমস্তক জরিপ করে হেসে বলে, “আচ্ছা এই দেবায়ন। সোমেশের মুখে তোমার নাম শোনার পর খুব দেখার ইচ্ছে ছিল তোমাকে।”
মিস্টার সেনকে বলে, “চল কফি শপে গিয়ে বসি। অনিমেশদা একটু পরেই চলে আসবে। তোমাদের পেছনেই মনে হয় ওদের গাড়ি ছিল।”
মিস্টার সেন আর নিবেদিতার মেলা মেশার মধ্যে দেবায়ন বেশ একটা আন্তরিকতা খুঁজে পায়। এই আন্তরিকতা কি শুধু ব্যবসা সংক্রান্ত না তাঁর চেয়ে কিছু বেশি, এই প্রশ্ন জাগে দেবায়নের মাথায়। এর উত্তর এখন নয়, শুধু পর্যবেক্ষণ করে যাওয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ। নিবেদিতা, মিস্টার সেনের পাশ ঘেঁষে দাঁড়িয়ে বেশ হাত মুখ নেড়ে হেসে হেসে কথা বলে। দেবায়ন কফি শপে না গিয়ে, সিগারেট ধরানোর আছিলায় বাইরে যায়। লনে দাঁড়িয়ে একটা সিগারেট জ্বালিয়ে অনুপমাকে আর মাকে ফোনে জানিয়ে দেয় যে ঠিক মতন রায়চকে পৌঁছে গেছে। অনুপমা, হেসে বলে যে বেশি যেন মদ না খায় আর নিজের চোখ কান যেন সর্বদা খোলা রাখে। সময় মতন পেছনে সরতে যেন পিছপা হয় না। দেবায়ন জানিয়ে দেয় যে বেশ সতর্ক থাকবে সব বিষয়ে।
কিছুপরে মিস্টার সেন বাকিদের নিয়ে লনে আসেন। মিস্টার সেন দেবায়নকে ডেকে মিস্টার ড্যানিয়েল হারজোগ, মিস্টার হেলমুট মেরকেল আর পুরানো বন্ধু, মিস্টার অনিমেশ সাহার সাথে আলাপ করিয়ে দেয়। অনিমেশ, দেবায়নের সাথে হাত মেলানর সময়ে একটু বাঁকা হেসে মিস্টার সেনের দিকে তাকায়। মিস্টার সেন মৃদু মাথা নাড়িয়ে কিছু একটা ইশারা করে, সেই ইশারা দেবায়নের চোখ এড়াতে পারে না।
কিছুক্ষণের মধ্যে, ড্রিঙ্কের আর স্টারটারের সাথে ওদের আলোচনা সভা শুরু হয়। মিস্টার হারজোগ বলেন কোম্পানির ব্যালেন্স সিট, কোম্পানি প্রোফাইল ইত্যাদি আগেই দেখে নিয়েছেন আর সেই সাথে এই কয়দিনে কোম্পানি দেখা আর বিভিন্ন কাজের সাইটে গিয়ে তদারকি করে দেখা হয়ে গেছে। সব ব্যাপারে বেশ সন্তুষ্ট তিনি, তবে ভবিষ্যতের রোডম্যাপ একবার জানতে চায় মিস্টার হারজোগ। মিস্টার সেন নিবেদিতাকে বলে ওদের রোডম্যাপের প্রেসেন্টেশান দিতে। নিবেদিতা ল্যাপটপ খুলে সব প্রেসেন্টেশান দেয়। সেই মতন জানায় যে আগামী দিনে ওরা চায় নতুন ভারটিকাল তৈরি করতে। এতকাল শুধু মাত্র হাউস বিল্ডিং কন্সট্রাক্সানে ছিল ওদের কোম্পানি, এবারে দুটি নতুন ভারটিকাল তৈরি করতে চায়। এক, রাস্তার কাজ, সেই জন্য বেশ কয়েকটা হাইওয়ের টেন্ডার ওরা পেয়েছে এবং অভার ব্রিজের কাজ, তাঁর টেন্ডার ওরা পেয়েছে। অন্য একটা ভারটিকালে ওরা বড় বিল্ডিং কন্সট্রাক্সানে হাত দিতে চায় যেমন বড় বড় হোটেল, বড় বড় মল। মিস্টার হারজোগ আর মিস্টার মেরকেল মন দিয়ে সব শোনার পরে বলেন, সব ঠিক আছে কিন্তু সাড়ে তিনশো মিলিয়নের উপরে ইনভেস্ট করা এখুনি সম্ভব নয়। দেবায়ন সব কথা মন দিয়ে শোনে। নিবেদিতা বলে যে দুটি নতুন ভারটিকাল তৈরি করতে অনেক খরচ আছে আর সরকারি কাজে একটু খরচ করে লাভের মাপ অনেক বেশি। সুতরাং বিনিয়গের যে রিটার্ন তিনি পাবেন সেটা মোটা অঙ্কের হবে। মিস্টার মেরকেল, ইনভেস্টমেন্টের রিটারনের ব্যাপারে কিঞ্চিত দ্বিমত প্রকাশ করে। তিনি বলেন, যে কুড়ি, পঁচিশ, তিরিশ এই ছকে রিটার্নে রাজি নন। রিটার্ন পারসেন্ট খুব কম। আগামী দশ বছরের জন্য টাকা ইনভেস্ট করবেন কিন্তু সেই তুলনায় রিটার্ন একটু বেশি দেওয়া উচিত। মিস্টার সেন বলেন, সাড়ে তিনশোর জায়গায় যদি চারশো মিলিয়ন ইউরো হয় তাহলে তিনি কুড়ি, সাতাশ, বত্রিশ হিসাবে রিটার্ন দিতে রাজি আছেন। সেই কথা শুনে, নিবেদিতা একটু দমে যায় কিন্তু মিস্টার সেনের কথার উপরে কথা বলতে পারে না। ওদের সামনে বসচা করা ঠিক নয়। মিস্টার মেরকেল বলেন যে অন্তিম অফার, তিনশো সত্তর মিলিয়ন ইউরো এবং রিটার্ন পারসেন্ট কুড়ি তিরিশ পঁয়ত্রিশ হিসাবে দিতে হবে। এই ডিলে রাজি থাকলে ডিল ফাইনাল করতে রাজি। মিস্টার সেন আর নিবেদিতা বিষণ্ণ হয়েও মানতে রাজি হয়ে যায়। ওদের টাকার খুব দরকার, কিন্তু লাভের অনেক অংশ মিস্টার হেরজোগ নিয়ে চলে যাবেন। মিস্টার সেন চান এই টাকায় হোটেল কেনার আর নিবেদিতা চায় পরমিতের শেয়ার কেনার। রায়চকে আসার সময়ে মিস্টার সেন দেবায়নকে সব ফাইল দেখিয়েছিল, সেই মতন লাভের কথা ওর মাথার মধ্যে আঁকা আছে। দেবায়ন চুপচাপ বসে একটা কাগজে কিছু একটা অঙ্ক কষে।
হটাত সবাইকে অবাক করে দিয়ে দেবায়ন বলে, “আই হ্যাভ অ্যা প্রোপোসাল। আমার একটা বক্তব্য আছে, মনে হয় সবার ভালো লাগবে এবং সবাই খুশি হবে।”
মিস্টার মেরকেলের দিকে তাকিয়ে বলে, “আমি যদি ফ্লাট পঁয়তাল্লিশ পারসেন্ট দেই আপনাকে তাহলে আপনি চারশো মিলিয়ন ইউরো ইনভেস্ট করবেন?”
মিস্টার সেন আর নিবেদিতা, অবাক হয়ে দেবায়নের দিকে তাকিয়ে থাকে। মিস্টার সেন চাপা গলায় বাংলায়, ওকে কথা বলতে বারন করে। দেবায়ন মিস্টার সেনকে আসস্থ করে বলে সব ঠিক করে দেবে।
মিস্টার মেরকেল আর মিস্টার হেরজোগ একটু ভেবে জিজ্ঞেস করে, “হোয়াট ইজ দা ক্যাচ? এখানে কিছু লুকানো শর্ত আছে মনে হচ্ছে, সেটা কি?”
দেবায়ন বলে, “পঁয়তাল্লিশ পারসেন্ট, প্রফিট শেয়ারিং আগামী দশ বছর। এটা এক মাত্র প্রযোজ্য যদি আপনি চারশো মিলিয়ন ইউরো ইনভেস্ট করেন তবেই। রাজি তাহলে ডিল… ভেবে দেখুন একবার।”
টেবিলে বসে পাঁচ জনেই দেবায়নের দিকে তাকিয়ে থাকে, সবাই বুঝতে চেষ্টা করে কি বলতে চাইছে এই কালকের ছেলেটা।
মিস্টার সেন চাপা ধমক দিয়ে দেবায়নকে বলে, “তোমাকে মুখ খুলতে বারন করেছিলাম। তুমি কি জানো তুমি কি প্রোপোসাল দিয়েছ?”
নিবেদিতা রেগে গিয়ে মিস্টার সেনকে জিজ্ঞেস করে, “এই রকম একটা মানুষকে সত্যি তোমাকে আনতে হত?”
দেবায়ন চাপা হেসে মিস্টার হারজোগের দিকে তাকায়। মিস্টার হারজোগ বলেন, “প্রপসাল ভেরি গুড, কিন্তু একটু সময় দিতে হবে। কাল সকালে ডিল ফাইনাল করলে কেমন হয়।”
 
Like Reply
একুবিংশ পর্ব (#04)

দেবায়ন হেসে ফেলে, “মিস্টার হারজোগ, কালকের সকালকে দেখেছে। আপনি সময় নিন তবে বেশি সময় নিলে কিন্তু হাত থেকে প্রফিট বেড়িয়ে যাবে।”
মিস্টার সেন আর থাকতে না পেরে দেবায়নকে বলে, “তুমি একটু আমার সাথে বাইরে এসো।”
মিস্টার মেরকেল হেসে বলেন, “ওকে, তুমি আমাদের একটু সময় দাও। একটু পরে জানাচ্ছি।”
মিস্টার সেন, দেবায়নকে লনের একদিকে নিয়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করে, “তুমি কি ভেবে ওই প্রোপোসাল দিলে? একবার আমাকে জিজ্ঞেস করার দরকার মনে করলে না? এটা খুব বড় ঔদ্ধত্য দেবায়ন। তুমি কি ভাবো নিজেকে? আমি তোমাকে ছাড় দিয়েছি বলে তুমি যা ইচ্ছে তাই করবে?”
দেবায়ন মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকে কিছুক্ষণ তারপরে বলে, “সরি কাকু, খুব সরি। আমি আপনাকে জিজ্ঞেস করতাম ঠিক, কিন্তু সময়ের অভাবে নিজেই বলে ফেলেছি। জানি আপনাকে আঘাত করেছি তবে একবার আমার পরিকল্পনা শুনুন। রিস্ক না নিলে প্রফিট করা যায় না, এটা আপনি আসার সময়ে শিখিয়েছেন। আর নিবেদিতা যা হ্যান্ডেল করতো সেটা নিজের জন্যেই করতো।”
মিস্টার সেন কিছুক্ষণ চুপ থাকার পরে জিজ্ঞেস করেন, “তুমি ঠিক কি ভাবছ? আমি যা ভাবছি তুমি কি সেটাই ভাবছ?”
দেবায়ন, “আপনি কি ভাবছেন সেটা জানা নেই তবে আমার পরিকল্পনা আপনাকে জানাই। আপনি দুশো টাকা আয় করলেন, নব্বুই চলে গেলে পরে থাকে একশো দশ। সেখানে দুই জায়গায় একশো একশো টাকা রোজগার করুন। মিস্টার হারজোগ পাবে শুধু পঁয়তাল্লিশ, আপনার কাছে পরে থাকবে একশো পঞ্চান্ন।”
মিস্টার সেন খুশি হয়ে বলে, “সত্যি শুনে বড় খুশি হয়েছি। এতদিন পরে মনে হল একদম মনের মতন মানুষ পেলাম যে আমার মতন করে ভাবে।”
দেবায়ন, “একটা নতুন সিস্টার কন্সট্রাক্সান কোম্পানি খোলা হবে। বর্তমান কোম্পানির লাভের থেকে পঁয়তাল্লিশ পারসেন্ট পেলে মিস্টার হারজোগ খুশি। নতুন কোম্পানির সম্পূর্ণ দায়িত্ব নিবেদিতা ম্যাডামকে দিয়ে দিন, সেও খুশি। দ্বিতীয় কোম্পানির লাভের টাকা পুরটাই আপনার আর এই কোম্পানির লাভের টাকার পঞ্চান্ন শতাংশ আপনার থাকল। কেমন লাগলো আমার পরিকল্পনা?”
মিস্টার সেন, দেবায়নকে জড়িয়ে ধরে বলে, “তুমি একজন বাঘ, তুমি পারবে সব সামলাতে। আমার আর চিন্তা নেই।”
দেবায়ন বলে, “এটা শুধু আপনার আর আমার মধ্যে। পরে ভালো ভাবে এই নিয়ে বিচার আলোচনা করা যাবে।”
মিস্টার সেন, দেবায়নকে জড়িয়ে ধরে বলে, “নিবেদিতাকে আমি বুঝিয়ে বলে দেব। তোমার পরিকল্পনা শুনে খুব খুশি হবে। অনেক করেছে নিবেরিতা, অনেক খেটেছে এই কোম্পানির জন্য। ওর অনেকদিনের স্বপ্ন পূরণ হয়ে যাবে।”
মিস্টার সেন আর দেবায়ন টেবিলে ফিরে আসে। নিবেদিতা মিস্টার সেনকে কিছু একটা জিজ্ঞেস করে। মিস্টার সেন দেবায়নকে দেখিয়ে বলে, বাকি কথা পরে জানিয়ে দেবে, তবে ওর এই প্রোপসালে মত আছে। মিস্টার হেরজোগ বলেন ওদের মত আছে এই ডিলে। বাকি ব্যাবস্থার কথা জিজ্ঞেস করে মিস্টার মেরকেল। নিবেদিতা হেসে বলে, সব ব্যাবস্থা একদম ঠিকঠাক। ব্যাবসার কথা শেষে সবার হাতে উঠে আসে শ্যাম্পেনের গ্লাস। নিবেদিতা বলে, মিস্টার হারজোগের জন্য বিশেষ ব্যাবস্থা, দামী ক্যাভিয়ার আনা হয়েছে কোলকাতা থেকে। মিস্টার মেরকেল হেসে বলেন একবার জ্যান্ত ক্যাভিয়ারের দর্শন করতে চান। নিবেদিতা ফোনে কারুর সাথে কথা বলে জানিয়ে দেয়, জ্যান্ত ক্যাভিয়ার ঠিক সময় মতন পৌঁছে যাবে। আলোচনা ছেড়ে সবাই বিভিন্ন গল্পে মেতে ওঠে। শ্যাম্পেন শেষে সবার হাতে স্কচের গ্লাস, একমাত্র দেবায়ন এক ছোটো বোতল বিয়ার নিয়ে একদিকে দাঁড়িয়ে থাকে। কিছু পরে মিস্টার হেরজোগ ওকে কাছে ডাকে। দেবায়নের ভারতীয় ইংরাজি আর মিস্টার হেরজোগের বিদেশি ইংরাজিতে দুইজনে কথা বলে।
মিস্টার হেরজোগ দেবায়নকে ডেকে বলে, “তুমি ফ্রাংকফুর্টে এসো, ওখানে তোমার দরকার।”
দেবায়ন হেসে ফেলে মিস্টার হেরজোগের কথা শুনে, উত্তর বলে, “না, মিস্টার হেরজোগ। আমি কোলকাতা ছেড়ে দিল্লী যেতে চাই না, ফ্রাংকফুর্ট কখনই নয়।”
মিস্টার হেরজোগ বলেন, “তাও আমার নিমন্ত্রন রইল। ঘুরতে এসো কোনদিন, জার্মানি বেশ ভালো দেশ। অনেক সুন্দর সুন্দর শহর আছে ঘুরে দেখার। তোমার এখানে গঙ্গা আমার ওখানে রাইন নদী, এক রকম সুন্দর। কখন কোন সাহায্য চাইলে দ্বিধা করো না।”
দেবায়ন, “হ্যাঁ নিশ্চয় আপনাকে মনে রাখব। এবারে ত আসা যাওয়া হবেই। কোলকাতা আর ফ্রাংকফুর্ট বেশি দূর মনে হবে না।”
নিবেদিতা কিছু পরে বেড়িয়ে গিয়ে মেয়েদের নিয়ে লনে আসে। দেবায়ন আড় চোখে অনন্যা আর তনুজাকে দেখে। ওদের সাথে আরও দুটো মেয়ে, তাদের দেবায়ন দেখেছে কোন বিজ্ঞাপনে। তনুজা আর বাকি মেয়েদের পরনে চাপা ইভিনিং পার্টি পোশাক। অনন্যা একটু অন্য সাজে সজ্জিত, গোলাপি রঙের পাতলা ফিনফিনে শাড়ি। হাতকাটা ব্লাউস, পিঠের দিকে শুধু মাত্র একটা গিঁট দিয়ে বাধা। নাভির বেশ কিছু নিচে শাড়ির গিঁট। নাভির চারপাশে ঈষৎ ফুলে থাকায় তীব্র যৌন আবেদনের ছটা নির্গত হচ্ছে ওর শরীর থেকে। নিবেদিতা, মেয়েদের সাথে সবার পরিচয় করিয়ে দেয়। সবাই বুফে ডাইনিঙ্গে মেতে ওঠে। খাবার সাথে গল্প, হাসি কথা বার্তা। মাঝে মাঝে নিবেদিতা আড় চোখে দেবায়নকে জরিপ করে আর মিস্টার সেনের সাথে কিছু নিয়ে কথা বলে। দেবায়ন একপাশে চুপচাপ নিজের থালা নিয়ে একটু খেতে ব্যাস্ত আর নিজের খেয়ালে ব্যাস্ত।
এই নিবেদিতার পরিচয় কি? মিস্টার সেনের সাথে এত হৃদ্যতা কেন? নিবেদিতা আর মিস্টার সেনের কথা বার্তায় বেশ একটা নিবিড় ভাব। অনন্যা আর তনুজা একদিকে খেতে খেতে গল্প করে। বাকি দুই মেয়ের এক জন মিস্টার অনিমেশের সাথে একজন মিস্টার মেরকেলের সাথে। দেবায়ন বুঝে যায় যে নিজেদের রাতের সঙ্গিনী বাছাই করা হয়ে গেছে।
খাবার পরে নিবেদিতা দেবায়নের কাছে এসে ওর রুমের কার্ড দেয়। রুমের কার্ড দেবার সময়ে নিবেদিতার হাত দেবায়নের হাতের উপরে বেশ কিছুক্ষণ থাকে। নরম হাতের স্পর্শে দেবায়ন নিবেদিতার দিকে তাকায়। নিবেদিতা মিষ্টি হেসে বলে ঠিক সময়ে রুমে চলে যেতে। গঙ্গার কনকনে ঠাণ্ডা হাওয়ায় সবাই কাঁপতে শুরু করে খাওয়ার পরে। কিছুপরে সবাই নিজের নিজের রুমের দিকে পা বাড়ায়। মিস্টার সেন ওকে বলেন তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়তে। দেবায়ন হেসে জানিয়ে দেয় একটা ফোন করে রুমে চলে যাবে।
সবে এগারোটা বাজে কিন্তু চারদিকে নেমে আসে ঘন কালো আঁধার। শীতের কারনে হোটেলের লোকজন সবাই হোটেলের মধ্যে। সবাই চলে যাবার পরে, দেবায়ন অয়েটারকে ডেকে একটা স্কচের অর্ডার দেয়। স্কচ আর একটা সিগারেট জ্বালিয়ে অনুপমাকে ফোন করে দেবায়ন। ওর মন বেশ খুশি, মিস্টার সেনকে অবিভুত করে দিয়েছে ওর এই পরিকল্পনা। কি করে এই কথা ওর মাথায় এসেছিল সেটা নিজেই জানে না।
অনুপমাকে সব কথা বলতেই, প্রেয়সী ওকে বলে, “তুমি ঠিক আছো? খাওয়া দাওয়া হয়েছে? মামনিকে পারলে একটা ফোন করে দিও। আর হ্যাঁ বেশি স্কচ মারাতে হবে না। রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পরবে। কাল মনে হয় না তুমি কলেজ যেতে পারবে। আমি কালকে তোমার জন্য ওয়েট করব বাড়িতে। শ্রেয়া এসেছে, সঙ্গীতা এসেছে, রাতে থাকবে। ওদের দেখে পায়েল বেশ খুশি আজকে।”
দেবায়ন, “দাও একটু ডারলিংয়ের সাথে একটু কথা বলি।”
অনুপমা, পায়েলকে ফোন দেয়। দেবায়ন জিজ্ঞেস করে, “কি রে তোর কি খবর? ঠাণ্ডায় জমে গেছিস নাকি?”
পায়েলের কণ্ঠস্বরে সেই পুরানো তেজ, পুরানো উচ্ছলতা আর নেই, মৃদু হেসে জিজ্ঞেস করে, “তুই নাকি আজকে সুট পড়েছিস?”
দেবায়ন বলে, “হ্যাঁ, ছাই রঙের সুট। তুই ত উঠে একবার দেখলি না। হ্যাঁরে, আমার শালা কোথায়?”
পায়েল, “পাশেই আছে। তোরা কেউ কি আমাকে একবিন্দুর জন্য চোখের আড়াল করিস? অনুকে, কাকিমাকে যত বলি আমি ঠিক আছি, কিন্তু কেউ শুনতে চায় না। শুধু অঙ্কনের সাথে ঘুরতে বের হলে একটু মনে হয় বাঁধন থেকে ছাড়া পেলাম।”
দেবায়ন বুক ভরে নিঃশ্বাস নিয়ে বলে, “অনুর আর কাকিমার ব্যাপারে আমি নাক গলাব না।”
পায়েল হেসে বলে, “তুই না বুঝালে কে বুঝাবে? আমার কথা শোনে না কেউ। দিদির সামনে অঙ্কনের মুখ ফোটে না। একা একদম ছাড়তে চায় না দেখে। আজকে আবার শ্রেয়া আর সঙ্গীতাকে ডেকেছে। প্লিস একটু কাকিমা আর তোর বউকে বুঝিয়ে বলিস।”
দেবায়ন, “এই ব্যাপারে আমি দুঃখিত ডারলিং। অনুর সেদিনে কাতর ডাক আজও আমার কানে বাজে আর ঋতুর কথাগুলো। আমি দুঃখিত পায়েল।”
পায়েল ম্লান হেসে বলে, “ঠিক আছে, তুই সাবধানে থাকিস। গুড নাইট।”
ফোন রেখে দিয়ে, অনুপমার কথা চিন্তা করছিল দেবায়ন। সত্যি কথা না বললে একসময়ে প্রেয়সীর কাছে ধরা পরে যেত, আবার বলে দিলে মিস্টার সেনের কাছে অসুবিধেতে পড়তে হত। কিন্তু ওর প্রেয়সী ওর চেয়ে অনেক বেশি বুদ্ধি রাখে।
“হ্যালো, একা একা দাঁড়িয়ে এখানে? আমি ওপরে তোমাকে খুঁজতে গেছিলাম।”
মিষ্টি একটা কণ্ঠ স্বর শুনে দেবায়ন ঘুরে দাঁড়ায়। পেছনে হাসি হাসি মুখে, গায়ে একটা শাল জড়িয়ে অনন্যা দাঁড়িয়ে।
দেবায়নের হাতের গ্লাস হাতে থেকে যায়। অনন্যার মুখের দিকে হাঁ করে তাকিয়ে থাকে, এত কাছে এত সুন্দরী একজনকে দেখতে পাবে ঠিক মানতে পারে না। এতদিন টি.ভি স্ক্রিনে দেখেছে ওকে। কোন সময়ে নায়িকার বোন, কোথাও নায়িকার বান্ধবী। ছোটো বাজেটের কয়েকটা সিনেমা করেছে, তবে সেই গুলো দেখে নি দেবায়ন। তাও দেবায়নের অনন্যাকে ভালো লাগত ওর বড় বড় চোখের জন্য আর একটু উজ্জ্বল শ্যামলা ত্বকের জন্য।
দেবায়নের দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলে, “তোমার সাথে আবার দেখা হয়ে বড় ভালো লাগলো।”
অনন্যার কথা শুনে দেবায়ন আকাশ থেকে পড়ল, বলে কি মেয়েটা। এই অসামান্য লাস্যময়ী তরুণী, নামকরা এক অভিনেত্রী আর মডেল। দেবায়ন, সিগারেটে বড় একটা টান মেরে মাথা ঝাঁকিয়ে বলে, “পাগল হলে নাকি? আমি ধন্য তোমার সাথে কথা বলতে পারছি। তুমি কি জানো, তুমি যদি একটা রুমাল ফেল সেটা তুলে ধরার জন্য হাজার লোক দৌড়ে আসবে।”
অনন্যা হেসে ওঠে খিলখিল করে, ওর মিষ্টি হাসির কলতানে হারিয়ে যায় দেবায়ন। অনন্যা দেবায়নের গায়ে ঢলে পরে বলে, “ধুর বাবা। যে লোক আমার রুমাল তুলে দেবে সে ত চিরকাল আমার রুমাল তুলতে ব্যাস্ত থাকবে, আমার দিকে দেখার সময় তাঁর কাছে কখন হবে তাহলে? আমি চাই আমার রুমাল না তুলে যে অদুরে দাঁড়িয়ে আমার দিকে দেখবে সে।”
দেবায়নের নাকে ভেসে আসে অনন্যার শরীরের মাদকতা ময় মিষ্টি গন্ধ। শীতের রাতে অনন্যার শরীরের ছোঁয়ায় দেবায়নের শরীর উত্তপ্ত হতে শুরু করে। দেবায়ন ওকে জিজ্ঞেস করে, “তুমি এখন জেগে কেন?”
অনন্যা হাতের গ্লাসে চুমুক দিয়ে বলে, “একটা সিগারেট দাও ত আগে। একা একা টান মেরে যাচ্ছও একটু দাও।”
দেবায়ন প্যাকেট থেকে একটা সিগারেট বের করে ওর হাতে দেয়। গাড় বাদামি রঙ মাখা ঠোঁটের মাঝে সাদা সিগারেট চেপে দেবায়নের দিকে ঝুঁকে পরে। দেবায়ন, লাইটার দিয়ে ওর সিগারেট জ্বালিয়ে বলে, “বেশ জমে ঠাণ্ডা পড়বে এবারে।”
অনন্যা, “সেন স্যার কেন যে র‍্যাডিসন চুজ করল বুঝে পেলাম না। এই সময়ে কেউ গঙ্গার ধারে আসে? এখানে আসতে হয় গ্রীষ্ম কালে গঙ্গার ঠাণ্ডা হাওয়া খেতে। এখন হাড় কনকনে ঠাণ্ডা হাওয়া বইছে, শুধু রুমে বসে গরম হওয়া ছাড়া আর কোন উপায় নেই।”
অনন্যা কথাটা বলেই হেসে ফেলে।
দেবায়ন হেসে বলে, “তাহলে যাও এখানে দাঁড়িয়ে কেন?”
অনন্যা হেসে বলে, “যাঃ বাবা। আমি তনুজাকে ওই জার্মান ভদ্রলোকের সাথে পাঠিয়ে দিলাম ইচ্ছে করে আর তুমি জিজ্ঞেস করছ আমি এখানে কেন? দাও দাও, তোমার রুমের কার্ডটা দাও। আর তাড়াতাড়ি সিগারেট শেষ করে চলে এস।”
দেবায়ন যেন হাতে চাঁদ পায়। স্বপ্নে ভাবেনি অনন্যার মতন এক অভিনেত্রী ওর এত কাছে এসে কোনদিন এই সব কথা বলবে। অনন্যা দেবায়নের অবাক চোখের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে, “কি ভাবছ এত? নিবেদিতা ম্যাডাম নিজে বলল আমাকে যে তোমাকে একটু দেখতে। তুমি সামান্য বিজনেস পার্টনার নয়। তোমার পরিচয় তার থেকে বেশি কিছু। যাই হোক অত শত আমার জেনে কি লাভ।”
দেবায়ন, পকেট থেকে রুমের কার্ড বের করে অনন্যার হাতে দেয়। কার্ড দেবার সময়ে ইচ্ছে করেই দেবায়ন অনন্যার হাত খানা নিজের হাতের মধ্যে ধরে রাখে। অনন্যা হাত ছাড়িয়ে দুষ্টুমি হাসি দিয়ে চলে যায়। হাতের গ্লাসের বাকি স্কচ এক ঢোকে গলায় ঢেলে নেয়। মাথা একটু ঝিম ঝিম করে ওঠে, সেই সাথে বাকি বেঁচে থাকা সিগারেটে লম্বা এক টান দিয়ে নিজের রুমের দিকে পা বাড়ায় দেবায়ন। কি হবে রাতে, একা নিভৃতে একটা রুমের মধ্যে এক সুন্দরী অভিনেত্রীর সাথে রাত কাটাবে। হাঁটতে হাঁটতে নিজের হাতে চিমটি কাটে দেবায়ন। না, ব্যাথা লাগলো, সত্যি ব্যাথা লাগলো, স্বপ্ন দেখছে না তাহলে। একবার অনুপমাকে জানালে হয়। কি বলবে প্রেয়সীকে? পায়েলের সাথে সেই রাতের পরে অনুর অঙ্ক ছাড়া অন্য কারুর কোলে মাথা রাখেনি। অনেকদিন পরে এক অন্য তরুণীর রুপ সুধা আকণ্ঠ পান করবে, ভাবতে পারছে না। বলা কি উচিত? না থাক, আগামী কাল সকালে বলবে। আগে দেখা যাক, অনন্যা কি করে।
দেবায়ন কলিং বেল বাজিয়ে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকে ভেতর থেকে কোন আওয়াজ আসে না। একটু ভাবনায় পরে যায়, কি হল। কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পরে আরেকবার কলিং বেল বাজায়। কিছুপরে দরজা খোলে অনন্যা। পোশাক বদলে একটা পাতলা স্লিপের উপরে একটা ড্রেসিং গাউন পরে। অনন্যা দরজা খুলে ইশারায় ওকে চুপ থাকতে বলে। দেবায়নের চোখ যায়, বিছানার সাইড টেবিলে। ওখানে একটা গ্লাসে মদ রাখা, একটা এশট্রেতে একটা সিগারেট জ্বলে জ্বলে অর্ধেক হয়ে গেছে। হয়ত দুটো কি তিনটে টান মারা হয়েছে তার বেশি নয়।
অনন্যা কণ্ঠস্বর বেশ চিন্তিত শোনায়, “এটা কি করে হল? কথা ছিল দশটা এপিসোডের সেটা কি করে কমিয়ে ছটা এপিসোড হয়?…… ম্যানেজার তুমি না আমি? …… কি? মোটে একুশ দিন শুটিং? ……… ওই এডের কি হল? সেই মার্চে? থাক এখন আর ডিস্টার্ব করো না আমি একটু ব্যাস্ত। কালকে ফিরে আমি নিজেই দেখব একবার।”
দেবায়ন রুমে ঢুকে সোফার উপরে বসে অনন্যাকে দেখে। অনন্যা, ফোন ছেড়ে চুপচাপ বিছানায় বসে সাইড টেবিলের গ্লাস উঠিয়ে পুরো মদ গলায় ঢেলে দেয়। ফোনের উপরে সব রাগ ঢেলে বিছানার একপাশে ফোন ছুঁড়ে দেয়। দেবায়ন গলা খ্যাঁকরে উঠতেই অনন্যা ওর দিকে তাকিয়ে ঠোঁটে হাসি টেনে মনের ভাব বদলে ফেলে।
অনন্যা হেসে ওর সোফার হাতলে বসে বলে, “সরি। কিছু মনে করো না।”
দেবায়ন বড় নিঃশ্বাস নিয়ে বলে, “তোমার মুড মনে হয় ভালো নেই? কি হয়েছে, আপত্তি না থাকলে জানতে পারি কি?”
অনন্যা, “ছাড়ো অইসব। নিত্যদিনের ব্যাপার আর নিত্যদিনের কাজকারবার। তুমি ড্রেস চেঞ্জ করবে না?”
দেবায়ন, “একটা কথা জিজ্ঞেস করতে পারি কি?”
অনন্যা দুম করে হেসে বলে, “না জিজ্ঞেস করতে পারো না।” তারপরে দেবায়নের গায়ের ওপরে ঢলে পরে বলে, “কি কথা?”
দেবায়ন, “কি নিয়ে কথা হচ্ছিল? তোমার প্রোফেশনাল কিছু মনে হল। না জানাতে চাইলে আমি জানতে চাইব না।”
অনন্যা, “এই মাসে শুধু একুশ দিন কাজ আছে। পরের তিন মাসে কিছু নেই, সেই একটা এডের কথা ছিল সেটা মার্চে, তাই একটু চিন্তায় আছি। যাই হোক সে সব নিয়ে মাথা ঘামিয় না।”
দেবায়ন, “তুমি মিস্টার সেনকে আগে থেকে চেন।”
অনন্যা, “হ্যাঁ, পারমিতা ম্যামের দৌলতে আগে থেকে চিনি। পারমিতা ম্যাম আমার জন্য করেছে।”
দেবায়ন ভুরু কুঁচকে জিজ্ঞেস করে, “মানে?”
অনন্যা দেবায়নের গায়ে ঢলে বলে, “ছাড়ো না ওই সব কথা। এত ব্যাক্তিগত কথাবার্তা জানতে নেই। বিজনেস আগেই শেষ হয়ে গেছে, নাউ জাস্ট প্লেসার, বেবি। শুধু তুমি আর আমি।”
 
[+] 1 user Likes Mr Fantastic's post
Like Reply




Users browsing this thread: 1 Guest(s)