Thread Rating:
  • 38 Vote(s) - 3.39 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Thriller অঞ্জলী দি
#21
১৪ পর্ব

অমিতের প্লেন সময়মতো ল্যান্ড করলো। রোহিত, মঞ্জু, বন্যা রিসিভ করতে এসেছে। মনি শংকর আর তার স্ত্রীও এসেছে। কোম্পানীর বেশ কিছু কর্মকর্তাও এসেছেন। তবে অঞ্জলীকে কোথাও দেখা গেল না। অমিত আসছে খবরটা পাবার পর থেকেই কি এক অজনা শংকায় বুকটা দুরু দুরু করছে অঞ্জলীর। থেকে থেকে লজ্জায় লাল হয়ে যাচ্ছে আবার পরক্ষণেই বিমর্ষ দেখাচ্ছে। এয়ার পোর্টে মনি শংকরের মূখোমূখি হওয়া এড়ানোর জন্যই অঞ্জলী ইচ্ছা থাকা স্বত্বেও সাথে আসেনি। এদিকে ইমিগ্রেশন থেকে বেরিয়েই অমিত রোহিতকে দেখতে পেল। তাকে প্রণাম করলো। মনি শংকর প্রণাম করতে দিল না বুকে টেনে নিল। দুই বৌদিকেও প্রণাম করলো অমিত। মেঝ বৌদি বুকে জড়িয়ে ধরে কেদেঁ ফেললেন। মঞ্জুও চোখ মুছলো।

অমিতের চোখ পড়লো অদূরে সিড়ির উপর দাড়ানো বন্যার উপর। বড় বৌদির কার্বন কপি। অঞ্জলীর চেহারার সাথেও কিছুটা মিল আছে। অমিতই প্রথম কথা বললো, “মাই সুইট লেডি, দূরে দাড়িয়ে কেন?”
“যাক বাবা চোখে পড়লাম তাহলে? আমি তো ভেবেছিলাম তোমাদের সিনেমার আড়ালে আমি বুঝি হারিয়েই গেলাম।”
অমিত কথা না বলে হাত বাড়াল। ঝাপ দিল বন্যা। আছড়ে পড়লো অমিতের বুকে। পলকা শরীরটাকে শূন্যেই ক্যাচ করলো অমিত। টেনে নিল বুকের মাঝে।
আরও একজনকে খুজছে অমিতের চোখ। কিন্তু সে নেই এদের মাঝে। বুকের ভিতরটায় একটু মোচড় দিয়ে উঠলো। জেনেশুনেই অঞ্জলী আসলো না? রাজ্যের অভিমান বাসা বাধলো বুকে। কাউকেই কিছু জিজ্ঞেস করলো না।
এয়ার পোর্টের ঝামেলা সেরে অমিত ইচ্ছা করেই মনি শংকরের গাড়িতে উঠলো। এটা আগে, রোহিতের গাড়ি পরে, তার পরে এল কোম্পানীর গাড়ি। গাড়ি থামলো এসে রোহিতের ফ্লাটের সামনে। মঞ্জূ মনি শংকরকে লক্ষ্য করে বললো, “মেজ ঠাকুর পো তোমরাও থেকে যাও। আজ রাতে সবাই এক সাথে ডিনার করবো।”
“আমার একটু তাড়া আছে বৌদি, বিন্দু থাকুক। আমি রাতে এসে তোমাদের সাথে জয়েন করবো।”
বিন্দু মনি শংকরের স্ত্রী। স্বামীর কানের কাছে মূখ নিয়ে ফিস ফিস করে বললো, “আবার গিলতে বসে যেও না। তাহলে কেলেংকারীর আর সীমা থাকবে না।” সবাইকে আড়াল করে মনি শংকরও চোখ রাঙ্গাল, “চুপ করো।”

ঘরে ফিরেই বন্যা ফোন লাগাল অঞ্জলীকে। “জানো মাসিমনি, আমার ছোট কাকুকে তুমি যদি দেখতে। কি হ্যান্ডসাম। একদম প্রিন্স। তোমাদের শাহরুখ আর সালমান আমার কাকুর সামনে কিছু্*ই না।”
“তাই নাকি” ওপাশ থেকে অঞ্জলী জবাব দেয়। “তা হলে তো একবার টিকেট করে দেখতে যেতে হয়। তা তোর কাকিমা দেখতে কেমন রে?”
“কাকিমা? মেঝ খুড়ির কথা বলছ তুমি?”
“তোর ছোট খুড়ির কথা বলছি।”
“হায় ভগবান, ছোট কাকু তো বিয়েই করেনি।”
“ওমা এত বড় ধেড়ে ছেলে এখনও বিয়ে করেনি?”
“বাহ তাতে কি বিয়েতো তুমিও করনি?”
“আচছা তোর ছোট কাকু আমার কথা কিছু জানতে চাইল?”
“নাতো? তিনি কি তোমায় চেনেন?”
“মনে হয় চেনেন না” অঞ্জলী ফোন রেখে দিল।
“কেমন করে ভুলে গেলে রাজকুমার” অঞ্জলীর বুক চিরে দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এল।

""পৃথিবীটা রঙ্গমঞ্চ আমরা সবাই অভিনেতা"" !! Sad

[+] 3 users Like Kolir kesto's post
Like Reply
Do not mention / post any under age /rape content. If found Please use REPORT button.
#22
(13-09-2020, 11:31 AM)Mr Fantastic Wrote: কেন রাগ করেছিলেন কেন ?  উনি তো সেরা গল্প লিখছেন দেখছি একেবারে, কি ভাষা ! কি ঘটনাক্রমের বর্ণনা ! কি নৈপুণ্য, আহা !

Onekei golpota nijer name chalacchilo bivinno website e.uni admin deronek request korleo  tara kono action na newai uni frustrated hoye bondho kore den amar jotodur mone pore.
[+] 2 users Like TheLoneWolf's post
Reply
#23
(13-09-2020, 09:22 PM)Kolir kesto Wrote: ১৪ পর্ব

অমিতের প্লেন সময়মতো ল্যান্ড করলো। রোহিত, মঞ্জু, বন্যা রিসিভ করতে এসেছে। মনি শংকর আর তার স্ত্রীও এসেছে। কোম্পানীর বেশ কিছু কর্মকর্তাও এসেছেন। তবে অঞ্জলীকে কোথাও দেখা গেল না। অমিত আসছে খবরটা পাবার পর থেকেই কি এক অজনা শংকায় বুকটা দুরু দুরু করছে অঞ্জলীর। থেকে থেকে লজ্জায় লাল হয়ে যাচ্ছে আবার পরক্ষণেই বিমর্ষ দেখাচ্ছে। এয়ার পোর্টে মনি শংকরের মূখোমূখি হওয়া এড়ানোর জন্যই অঞ্জলী ইচ্ছা থাকা স্বত্বেও সাথে আসেনি। এদিকে ইমিগ্রেশন থেকে বেরিয়েই অমিত রোহিতকে দেখতে পেল। তাকে প্রণাম করলো। মনি শংকর প্রণাম করতে দিল না বুকে টেনে নিল। দুই বৌদিকেও প্রণাম করলো অমিত। মেঝ বৌদি বুকে জড়িয়ে ধরে কেদেঁ ফেললেন। মঞ্জুও চোখ মুছলো।

অমিতের চোখ পড়লো অদূরে সিড়ির উপর দাড়ানো বন্যার উপর। বড় বৌদির কার্বন কপি। অঞ্জলীর চেহারার সাথেও কিছুটা মিল আছে। অমিতই প্রথম কথা বললো, “মাই সুইট লেডি, দূরে দাড়িয়ে কেন?”
“যাক বাবা চোখে পড়লাম তাহলে? আমি তো ভেবেছিলাম তোমাদের সিনেমার আড়ালে আমি বুঝি হারিয়েই গেলাম।”
অমিত কথা না বলে হাত বাড়াল। ঝাপ দিল বন্যা। আছড়ে পড়লো অমিতের বুকে। পলকা শরীরটাকে শূন্যেই ক্যাচ করলো অমিত। টেনে নিল বুকের মাঝে।
আরও একজনকে খুজছে অমিতের চোখ। কিন্তু সে নেই এদের মাঝে। বুকের ভিতরটায় একটু মোচড় দিয়ে উঠলো। জেনেশুনেই অঞ্জলী আসলো না? রাজ্যের অভিমান বাসা বাধলো বুকে। কাউকেই কিছু জিজ্ঞেস করলো না।
এয়ার পোর্টের ঝামেলা সেরে অমিত ইচ্ছা করেই মনি শংকরের গাড়িতে উঠলো। এটা আগে, রোহিতের গাড়ি পরে, তার পরে এল কোম্পানীর গাড়ি। গাড়ি থামলো এসে রোহিতের ফ্লাটের সামনে। মঞ্জূ মনি শংকরকে লক্ষ্য করে বললো, “মেজ ঠাকুর পো তোমরাও থেকে যাও। আজ রাতে সবাই এক সাথে ডিনার করবো।”
“আমার একটু তাড়া আছে বৌদি, বিন্দু থাকুক। আমি রাতে এসে তোমাদের সাথে জয়েন করবো।”
বিন্দু মনি শংকরের স্ত্রী। স্বামীর কানের কাছে মূখ নিয়ে ফিস ফিস করে বললো, “আবার গিলতে বসে যেও না। তাহলে কেলেংকারীর আর সীমা থাকবে না।” সবাইকে আড়াল করে মনি শংকরও চোখ রাঙ্গাল, “চুপ করো।”

ঘরে ফিরেই বন্যা ফোন লাগাল অঞ্জলীকে। “জানো মাসিমনি, আমার ছোট কাকুকে তুমি যদি দেখতে। কি হ্যান্ডসাম। একদম প্রিন্স। তোমাদের শাহরুখ আর সালমান আমার কাকুর সামনে কিছু্*ই না।”
“তাই নাকি” ওপাশ থেকে অঞ্জলী জবাব দেয়। “তা হলে তো একবার টিকেট করে দেখতে যেতে হয়। তা তোর কাকিমা দেখতে কেমন রে?”
“কাকিমা? মেঝ খুড়ির কথা বলছ তুমি?”
“তোর ছোট খুড়ির কথা বলছি।”
“হায় ভগবান, ছোট কাকু তো বিয়েই করেনি।”
“ওমা এত বড় ধেড়ে ছেলে এখনও বিয়ে করেনি?”
“বাহ তাতে কি বিয়েতো তুমিও করনি?”
“আচছা তোর ছোট কাকু আমার কথা কিছু জানতে চাইল?”
“নাতো? তিনি কি তোমায় চেনেন?”
“মনে হয় চেনেন না” অঞ্জলী ফোন রেখে দিল।
“কেমন করে ভুলে গেলে রাজকুমার” অঞ্জলীর বুক চিরে দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এল।

এই অংশগুলো কি আপনি লিখছেন এবার ?
Like Reply
#24
(১৫ পর্ব)

রাতে খাবার টেবিলে সবাই অনেকদিন পর একত্র হলো। পরিবারের সকল লোকজন। শুধু পিসিমা নেই। আর নেই অঞ্জলী। তবে এখানে যা কিছু ঘটছে তার রানিং কমেন্ট্রি পাচ্ছে অঞ্জলী বন্যার কাছ থেকে। রোহিত এখন পরিবার প্রধান। বয়সের তুলনায় একটু বেশী বুড়িয়ে গেছে। তাকে বেশ চিন্তিত আর বিমর্ষ দেখাচ্ছে। মনি শংকর বেশ একটু গম্ভীর। বাদবাকী সবাই খুব হ্যাপী মুডে আছে। কথার খই ফুটছে বন্যার মূখে। অমিত হাসিখুশী।

আগের মতই কম কথা বলা মানুষ। পরিবারের সান্নিধ্য উপভোগ করছে। বড় বৌদি নিজের হাতে অনেকগুলি আইটেম করেছেন। আহ কি অপূর্ব স্বাদ! টেবিলের এক মাথায় অমিত। তার দুপাশে রোহিত আর মনি শংকর। মনি শংকরের পাশে বিন্দু আর রোহিতের পাশে বন্যা। মঞ্জু বসেনি। সে খাবার তদারক করছে। হরবর করার মাঝখানে খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা ইস্যু সামনে নিয়ে এল বন্যা।

“আচ্ছা বাবা, তোমরা এমন হাড় কেপ্পন কেন গো? আমার ছেলেটা যে এত বড় হলো তার বিয়ে থা দেবার নাম করছো না?” দেখার পর থেকেই বন্যা ঘোষণা দিয়েছে অমিত তার ছেলে।
“বেশ তো ছেলেকে কাছে পেয়েছ এখন থেকে তুমিই না হয় যোগাড় যন্ত্র করো?” রোহিত হেসে জবাব দেয়।
“সেই ভাল। আমি আর ছোট মা মিলে এক মাসের মাঝে আমার ছেলের বিয়ে দেব।” বন্যা বিন্দুকে ছোট মা বলে ডাকে। বিন্দুর সন্তানাদি নেই। বন্যাকে সে সন্তানের মত স্নেহ করে। আর বন্যা তো মার চেয়ে ছোট মাকেই বেশী জানে। এখন আলাদা আলাদা ফ্লাট হয়ে যাওয়ায় ছোট মাকে ভীষন মিস করে বন্যা।
রোহিত বার দুই গলা খাকারী দিয়ে সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করলো। তার পর বললো, “অমিত, আমরা আমাদের সহায়-সম্পদ ভাগ করে নিয়েছি। বলা যায় ঠাকুরমা নিজের হাতে ভাগ করে দিয়ে গেছেন। তোর ভাগে আছে রায় ইলেক্ট্রনিক্স আর রায় টেক্সটাইল মিলস। তোর দেয়া পাওয়ার অব এটর্নীতে আমি এ গুলি চালাচ্ছি। আমি চাই তুই তোর সম্পদ বুঝে নে।”
“বড়দা এসব মিল ফ্যাক্টরীতে আমি আগেও ছিলাম না এখনও নেই। কদিনের জন্য বেড়াতে এসেছি আমার মত থাকতে দে।” অমিত নিস্পৃহ। রুই মাছের মুড়োটা মনি শংকরের পাতে তুলে দিল অমিত।
“না না বড়দা ঠিকই বলেছে,” মনি শংকর প্রতিবাদ করে, “তুই তোর কোম্পানী বুঝে নে। বড় দার বয়স হয়েছে। আমি যতটুকু জানি কোম্পানীগুলির পজিশন তেমন ভাল না।” মাছের কাঁটা বেছে অমিতের পাতে দেয় মনি শংকর। খুব ছোট বেলা থেকেই অমিত কে মাছের কাটা বেছে দেয় সে।
“হ্যা অমিত, আমি নানান দিকে মন দিতে গিয়ে ব্যবসটা ভাল চালাতে পারছি না। তুই এবার একটু দেখ ভাই।” রোহিত আবারও বলে।
“তোমরা কি শান্তিমত ছেলেটাকে খেতে দেবে না ব্যবসা করবে?’ এবারে বেশ তেতে উঠে মঞ্জু।
ডিনারের পর মনি শংকর আর বিন্দু চলে যায়। ঠিক হয় রাতে স্পেশাল গেস্ট রুমে থাকবে অমিত। যাবার আগে মেজ বৌদি অমিতের ঘরে ঢুকে। অমিত আধশোয়া হয়ে ছিল। বিন্দুকে দেখে সোজা হয়ে বসে। বিন্দু বিছানাতেই বসে অমিতের পাশে।
“তা রাজা বাবুর কি বিয়ে থা করার ইচ্ছে আছে না লিভিং টুগেদার করেই জীবন কাটিয়ে দেবে?”
“কি সব যা তা বলছ বৌদি?” অমিতের ফর্সা চেহারা লজ্জায় লাল হয়ে যায়।
“যা তা হলে তো ভালই। আমরা নিশ্চিন্তে কনে খুজতে পারি। তা কেমন বৌ চাই রাজা বাবু?”
অমিত বুঝলো বৌদিকে কাটাতে না পারলে তার কপালে খারাবী আছে। তাই পাল্টা আক্রমনের কৌশল করে বললো, “তোমার মত।”
মূহুর্তে চোখ কপালে উঠে গেল বিন্দুর। অমিতের পিছনের আয়নায় সে নিজেকে দেখতে পাচ্ছে। কত হবে বয়স? অমিতের চে সামান্য ছোট হবারই সম্ভাবনা। ফর্সা সুন্দর আটোসাটো শরীর। বাচ্ছা কাচ্ছা হয়নি বলে এখনও কুমারী মেয়েদের আদল যায়নি। যে কোন পুরুষ তাকে দেখলে দ্বিতীয়বার তাকাতে বাধ্য।
“আমার মতো?”
“হ্যা তোমার মত”
“আমার মত পেত্নী বিয়ে করবে কেন তুমি? তোমার জন্য আমি রাজ কুমারী খুজেঁ আনবো।”
“তার মানে আমাকে কুর্নিশ করতে করতে ঘরে ঢুকতে হবে।”
“জ্বী না তোমাকেই কুর্নিশ করবে। মেয়েদের কুর্নিশ করাতে জানতে হয়।” বিন্দু অমিতের নাক টিপে দিল।
“এসব আমি কেমন করে জানবো?”
“সময় আসুক, না হয় আমিই শিখিয়ে দেব? এবার ঘুমাও।”
অমিতের মাথার চুলগুলো এলোমেলো করে দিল বিন্দু। এগিয়ে এসে চুমো খেল কপালে। তার পর চলে গেল। খুব সাবলীল। কোন পাপ, কোন জড়তা বা কামনা চোখে পড়লো না।
বিছানায় শুয়ে এপাশ ওপাশ করছে অমিত। তার ঘুম আসছে না। কয়েক সপ্তাহ হয়ে গেল সে দেশে আছে। এত কাছে তবু অঞ্জলীর সাথে দেখা হচ্ছে না। জীবনটা এত জটিল কেন? অমিত কিছুতেই অঞ্জলীকে চোখ থেকে সরাতে পারছে না।
হঠাত করেই মোবাইল বাজলো। ম্যাগীর ফোন। “হ্যালো” বলতেই ওপাশ থেকে ম্যাগীর চাপা গলা শুনা গেল। “যে খানেই থাকো রাতে সাবধানে থেকো। আমি আততায়ী আশংকা করছি।” লাইন কেটে গেল।
এ ধরণের ফোনের ক্ষেত্রে কল ব্যাক করতে মানা আছে। হয়তো কেউ ওয়াচ করছে। সামান্য সুযোগে কথা বলেছে ম্যাগী। মেয়েটার বুদ্ধি খুব তীক্ষ্ণ। ম্যাগী সতর্ক করার মানে হল সতর্ক হতে হবে। অমিত আত্ম প্রকাশ করার আগেই মনি শংকরের কাছে পৌছে গেছে। কল লিস্ট থেকে ম্যাগীর নামটা মুছে দিয়ে বিছানার উপর উঠে বসলো অমিত। না আসা ঘুম আরো দূরে চলে গেল। ঘরের সব লাইট অফ করে দিলো। কোল বালিশটাকে বিছানায় রাখলো একদম মানুষের মত করে। চাদর দিয়ে ঢেকে দিল। একটু দূর থেকে দেখলে মনে হবে কেউ চাদর মুড়ি দিয়ে শুয়ে আছে। ঘর ছেড়ে বেরিয়ে এল অমিত। টোকা দিল বন্যার দরজায়।
কোন প্রশ্ন না করেই বন্যা দরজা খুললো। তার ধারণা ছিল মা এসেছে। কিন্তু দরজায় অমিতকে দেখে চমকে উঠলো। “ছোট কাকু তুমি?”
“হ্যা রে মা ঘুম আসছে না।”
“এস এস ভিতরে এস।”
ভিতরে ঢুকে অবাক হয়ে গেল অমিত। রুমটা যে এত বড় তা বাইরে থেকে বুঝার উপায় নেই। খাট, পড়ার টেবিল, মিউজিক সিস্টেম, কম্পিউটার সিস্টেম, টেলিভিশন, জিম এ্যাপারেটাস, ড্রেসিং টেবিল, সোফাসেট কি নেই? একদম স্বয়ং সম্পূর্ণ একটা রুম।

ঘরে ঢুকে সোফায় বসলো অমিত। মাথাটা হেলান দিয়ে চুপচাপ শুয়ে থাকলো চোখ বন্ধ করে। তাকে খুব চিন্তিত মনে হচ্ছে।
“ছোট কাকু তোমার কি শরীর খারাপ?”
“না, আসলে কেন জানিনা ঘুম আসছে না। একা একা বোর ফিল করছিলাম।”
“ভালই হল। আমি আরও ভাবছিলাম তুমি ঘুমিয়ে পড়েছ। নইলে আমিই যেতাম।”
“কেন রে?”
“তোমার আমেরিকার গল্প শুনবো বলে।”
“ঠিক আছে বলবো”
“জান ছোট কাকু, আমাদের পুরনো বাড়িটা না এখন অনাথ আশ্রম হয়েছে। আমার মাসিমনি সেটা চালায়। মাসিমনিকে চেন তুমি?”
“এখন মনে করতে পারছি না, তবে নিশ্চই চিনি।”
“খুব সুন্দর। এই দেখ তার ছবি।”
হাত বাড়িয়ে পড়ার টেবিল থেকে একটা ফ্রেমে বাধানো ছবি আনে বন্যা। স্টিল ছবি। দু্*ই পাশে অঞ্জলী আর মঞ্জূ মাঝখানে বন্যা। ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে আছে হাসিমূখে। সদ্য তোলা ছবি।
অমিত তাকিয়ে দেখে। কিছু বলে না। আসলে তার ভিতরে ঝড় বইছে। এলো মেলো চিন্তার ঝড়। কোন কিছুই নির্দিষ্ট করে ভাবতে পারছে না ।
বন্যার চোখ এড়ায় না অমিত অন্যমনস্ক। সে ছবিটা সরিয়ে নেয়। তার মনে হয় অমিত খুব ক্লান্ত আর চিন্তিত। বিশ্রাম দরকার। সে অমিতের সোফার পিছনে দাড়িয়ে কপালে হাত রাখে। “ছোট কাকু, তুমি চোখ বুজে চুপ করে শুয়ে থাক আমি ম্যাসেজ করে দিচ্ছি। আরাম পাবে।”

সত্যি সত্যি বন্যার সরু আর নরোম আংগুলের ছোয়ায় কিছুক্ষণের মধ্যে ঘুমিয়ে পড়ে অমিত। বন্যা তার মাথাটা নামিয়ে এনে নীচে একটা বালিশ দিয়ে দেয়। পা দুটো আলগোছে তুলে দেয় সোফার উপর। নির্নিমেষ তাকিয়ে থাকে বন্যা অমিতের ঘুমন্ত মূখের দিকে। অজান্তেই মূখ দিয়ে বেরিয়ে আসে “হোয়াট অ্যা ম্যান!”
ঘন্টাখানেক ঘুমিয়েছে অমিত। তার চেতনায় ঘুমের ঘোরেও সতর্কতা ছিল বলে হঠাত করেই ঘুম ভেংগে গেল। কে যেন তার বুকের উপর শুয়ে আছে। নড়াচড়া না করে বুঝার চেষ্টা করলো। মূহুর্তেই মনে পড়লো সে বন্যার ঘরে। মোবাইলের আলোয় দেখল মেয়েটা মেঝেতে বসে তার বুকের উপর মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়েছে। খুব সন্তর্পণে মাথাটা তুলে ধরলো অমিত। তার পর পাজা কোলা করে নিয়ে গেল বিছানায়। ঘুম না ভাংগিয়ে শুইয়ে দিল। চাদরটা টেনে দিয়ে ফিরে এল সোফায়।
মুচকি হাসি ফুটলো বন্যার ঠোটে। অমিত জানেনা তাকে পাঁজা কোলা করার সময়েই ঘুম ভেংগে গেছে বন্যার। তারপরও ঘুমের ভান করে দেখতে চেয়েছে কি করে অমিত। অন্ধকার ঘরে একটা সোমত্ত মেয়েকে বুকের উপর পেয়েও ভাবান্তর হয়নি। এই না হলে প্রিন্স। ছোট বেলা থেকে যার গল্প কেবল শুনেই আসছে। দেখার সুযোগ হয়নি। আজ যখন হল তখন সত্যি সত্যি গর্বে বুকটা ভরে গেল তার।
আরও ঘন্টাখানেক পর অমিত ফিরে এল নিজের রুমে। কিন্তু বিছানায় গেল না। বাথ রুমের দরজাটা আধ খোলা রেখে বসে রইল কমোডের উপর। এক সময় অধৈর্য হয়ে পড়লো সে। ম্যাগীকে মনে হল ফালতু কথা বলেছে। তার পরও বসে রইল। অপেক্ষা কষ্টকর । কিন্তু এর ফল সব সময়ই ভালো।
ভোর রাতের দিকে এল ওরা। সংখ্যায় তিন জন। কালো কাপড়ে মূখ ঢাকা। পানির পাইপ বেয়ে উঠেছে। বারান্দার রেলিং টপকে ভিতরে ঢুকলো। প্রথমে দরজা খোলার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু পারলো না। ছিটকানী লাগানোর পরেও বাড়তি সতর্কতা হিসাবে তলায় কাঠের গুড়ি দিয়ে ঠেক দিয়ে রেখেছে অমিত। দরজা খুলতে না পেরে করিডোরের দিকের জানালার কাঁচ ভেংগে ফেললো। পর পর তিনটে গুলি করলো বিছানা লক্ষ্য করে।
গত কিছু দিন টানা বৃষ্টি হয়েছে। আজ দুপুরে একটু খানি সূর্য়ের ঝলক দেখা দিয়েই মিলিয়ে গেছে। গ্রামে গঞ্জে বন্যার আভাষ। সন্ধ্যে থেকে আবার আকাশের মূখ ভার। রাত বাড়ার সাথে সাথে প্রথমে গুড়ি গুড়ি তার পর মূষলধারে বৃষ্টি শুরু হলো। আশ্রমের দীঘির পাড়ে বাধানো ঘাটে বসে আছে অঞ্জলী। তার মন ভাল নেই। দীঘির জলে বৃষ্টির ফোটার শব্দ একটানা শুনলে মনে হয় কেউ গান গাইছে। কষ্টের গান। বিরহের গান। “এ ভরা ভাদর , মাহ ভাদর শূণ্য মন্দির মোর।” গুন গুন করে মেঘদূত আবৃত্তি করছে। দীঘির মতই টুই-টুম্বুর যৌবন আজ শেষ পথে। ভাগ্য কি নিষ্ঠুর খেলাটা্ই না খেলছে ওকে নিয়ে। অনেক অনেকক্ষণ ধরে ঘাটলায় বসে বৃষ্টিতে ভিজছে অঞ্জলী। মাথার উপর বৃষ্টির ফোটা পড়ে কানের পাশ, ভুরু, চোখের পাতা আর থুতনি বেয়ে নীচে গড়িয়ে পড়ছে। বৃষ্টির জলের সাথে ধুয়ে মুছে একাকার হয়ে যাচ্ছে অশ্রু জল। কিন্তু বুকের কষ্ট তাতে বাড়ছে বৈ কমছে না।
মাঝরাতের পর ঘরে ফিরে এল অঞ্জলী। আয়নার সামনে দাড়িয়েঁ ভেজা কাপড় ছাড়লো। একে একে সব। একটা সূতাও নেই পরনে। এত সুন্দর একটা শরীর। অথচ কারো কোন কাজে আসলো না। তোয়ালে দিয়ে ভাল করে মাথা মুছলো। খুব সুন্দর করে সাজলো। ব্রা প্যান্টি পড়ে একটা ট্রাকস্যুট চাপালো গায়ে। মাঝ রাতে এমন উদ্ভট আচরণ বোধগম্য নয়। পায়ে স্নীকার পড়লো। পিস্তলটা নিল। সাতে একটা স্পেয়ার ম্যাগজিন। ট্র্যাক স্যুটের উপর রেইন কোট চাপালো। অন্ধকার রাতের সাথে কালো রেইন কোট মিশে গেল একাকার হয়ে।
গাড়ি চালিয়ে চলে এল রোহিতের বাড়ির সামনে। মাইলখানেক দূর থেকেই গাড়ির হেড লাইট অফ করে দিয়ে ভুতের মত এগিয়ে এল। পার্ক করলো মেইন রোডের পাশে সাইড রোডের একদম এক কিনারায়। দুই লাইট পোস্টের মাঝখানে অন্ধকার মত স্থানে। গাড়ির রং ডার্ক ব্লু। ফলে বিশেষ নজর দিয়ে লক্ষ্য না করলে কেউ দেখতে পাবে না। টহল পুলিশের ভয় আছে। তবে সেটা ম্যানেজ করে নিয়েছে থানার তরুণ ইন্সপেক্টর সুব্রতকে ফোন করে। সুব্রত একসময় আশ্রমে ছিল। অঞ্জলীকে মাতৃজ্ঞান করে। “আপনি নিশ্চিন্তে বেড়াতে যান মিস। কেউ কিচ্ছু বলবে না। যদি এসকর্ট লাগে আমাকে বলবেন।”
“না না আমি শুধু একটু ঘুরে বেড়াবো। বৃষ্টি ভেজা মাঝ রাতের শহর দেখা হয়নি কখনও।”
প্রায় দুই ঘন্টা হলো অঞ্জলী বসে আছে বাড়ির সামনের রাস্তায় গাড়ি পার্ক করে। বৃষ্টির বেগ আরও বেড়েছে। এক হাত দূরের জিনিসও দেখা যায় না। অঞ্জলী নাইট গ্লাস চোখে নিয়ে রোহিতের বাড়ির দিকে তাকিয়ে আছে। সে যে আসলে কেন এখানে এসেছে, কি দেখতে চায় নিজেই জানে না। অমিত রাতের বেলা বারান্দায় আসবে আর সে দূর থেকে দেখতে পাবে এমন পাগলামী শুধু কল্পনাতেই মানায়। প্রেমিক প্রেমিকারা মনে হয় আসলেই পাগল।

সুনসান নীরবতার মাঝখানে ক্লান্ত অঞ্জলী আবারও নাইট গ্লাস তুললো। রাতের অন্ধকার ভেদ করে তার সামনে রোহিতের দোতলার বারান্দা লাফ দিয়ে এগিয়ে এল। খোলা বারান্দার রেলিং টপকাচ্ছে তিনজন মূখোশধারী লোক। মাই গড। কারা ওরা। পানির পাইপ বেয়ে নেমে আসছে দ্রুত। লাইট না জ্বালিয়ে গাড়ি স্টার্ট দিল অঞ্জলী। যারাই হোক তাদের এ পথ দিয়েই যেতে হবে।
একটা ছেলে জানালা দিয়ে গুলি করছিল। বাকী দুজন দুদিক থেকে তাকে কাভার দিচ্ছিল। প্রথম গুলির পরই চীৎকার শুনতে পেল আতাতায়ীর দল। খুব জোরে নয় তবে মরণ চীতকার। হকচকিয়ে গেল তারা। সেকেন্ডের ব্যবধানে আরো দুটি গুলি করলো। তারপর রেলিঙ টপকে পানির পাইপ বেয়ে নেমে গেল।
লোকগুলির রেলিঙ টপকানো পর্যন্ত অপেক্ষা করলো অমিত। তার পর বাথরুম থেকে বেরিয়ে দরজা খুলে বারান্দায় এসে উকি দিল। একটা গাড়ি স্টার্ট নেবার আওয়াজ পেল অমিত। পালাচ্ছে ওরা। মিশন সফল করে পালিয়ে যাচ্ছে। ভয়ে গা কাঁটা দিল তার। বেঁচে আছে এ আনন্দে ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দিল। ম্যাগী সাবধান না করলে আজ মরে ভুত হয়ে থাকতো অমিত। প্রথম গুলির মাজল ফ্লাশ দেখে বুদ্ধি করে চীতকার করেছিল। তাই আততায়ীরা বুঝতে পারেনি চাদরের তলায় অমিত নয় বালিশ রয়েছে।
পড়িমড়ি করে পালাচ্ছে আততায়ীর দল। লক্কর ঝক্কর মার্কা গাড়ি। কখন যে স্টাট বন্ধ হয়ে যায় তার ঠিক নেই। লাইট জ্বালাতে পারছে না ধরা পড়ার ভয়ে। খুব দ্রুত মেইন রোডে উঠে এল। টের পেল না তাদের পিছনে পিছনে আসছে অঞ্জলীর গাড়ি। এটারও লাইট অফ। লেটেস্ট মডেলের আধুনিক গাড়ি। নিঃশব্দ ইঞ্জিন। বেশ দূরত্ব রেখে ফলো করছে অঞ্জলী। ফাঁকা রাস্তায় ঝড়ের বেগে পালাচ্ছে ওরা। পেছনে আঠার মত অঞ্জলীর গাড়ি। মিনিট বিশেকের মধ্যে গাড়িটা রায় টেক্সটাইলের প্রাইভেট রাস্তার দিকে বাক নিল। মূহুর্তেই সিদ্ধান্ত নিল অঞ্জলী। গতি বাড়িয়ে আচমকা যমদূতের মত পিছন থেকে ধাক্কা মারলো। গাড়িটা উল্টে রাস্তা থেকে খাদের দিকে গড়াতে লাগলো। সাঁ করে বেরিয়ে গেল অঞ্জলী। তার নিজের গাড়িতে এমন কি একটা আঁচড়ও লাগেনি। যদি লোকগুলি বেঁচে থাকে তো ভাল। মরে গেলেও তার বিন্দুমাত্র ভ্রুক্ষেপ নেই। গাড়ি চালিয়ে ঘোর পথে চলে এল আশ্রমে। ভোর হতে আর বাকী নেই তেমন। আশ্রম জাগবে এখুনি।
হতভম্ব অমিত বুঝতে পারছে না তার কি করা উচিত। পর্দা টেনে দিয়ে রুমের লাইট জ্বালালো সে। চাদর বা কোল বালিশে কোন ছিদ্র নেই। তিনটে বুলেটই বিপরীত দিকের দেয়ালে ঠুকে চল্টা তুলে চ্যাপ্টা হয়ে পড়ে আছে। তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে আততায়ীরা গুলি করেছিল এটা কি প্রকাশ করবে সে বাড়ির লোকদের কাছে? নাকি চেপে যাবে? অনেক ভেবে চিন্তে চেপে যাওয়াই স্থির করলো। বুঝতে হবে কার কি প্রতিক্রিয়া। কাউকে সতর্ক করতে চায় না সে।
খুব ভোরে উঠার অভ্যাস বন্যার। আজ বেশী রাতে ঘুমানোর কারণে তখনও ঘুমিয়ে ছিল। ঘুম ভাংলো ফোনের শব্দে। এ অসময়ে ফোন পেয়ে মেজাজ তিরিক্ষি হয়ে গেল তার। চোখ বন্ধ রেখেই খিস্তি দিল “হু ইজ দ্যাট বোগাস?”
“গুড মর্নিং বন্য, মাসিমনি বলছি।”
“তুমি এত সকালে?” আড়মোড়া ভেংগে হাই তুললো বন্যা। “বলেছি না আমাকে বন্য বলবে না।”
“হা হা হা ঠিক আছে বন্য আর তোমাকে বন্য বলবো না।”
“মাসিমনি আবার? কেন ফোন দিয়েছ বলো।”
“না মানে কাল তো তোরা অনেক আনন্দ ফুর্তি করলি। ভাবলাম একটু খবর নেই।”
“ফুর্তি না ছাই। খেয়েদেয়ে সবাই টুক করে ঘুমিয়ে পড়লো। কাকুর সাথে একটু গল্প করবো তাও হলো না।”
“এত পথ জার্নি করে এসেছেন ক্লান্ত ছিলেন নিশ্চই।”
“জানো মাসিমনি রাতের বেলা না কাকু আমার ঘরে এসেছিল।” হরবর করে রাতে যা কিছু ঘটেছে সব বললো অঞ্জলীকে।
সব শুনে অঞ্জলী বললো, “তা তোমার এ বিখ্যাত কাকুর সাথে আমাকে একটু আলাপ পরিচয় করিয়ে দাও!”
“চলে এস একসাথে ব্রেক ফাস্ট করবো।”
ভয়ে, আতংকে, অস্থিরাতায় কাতর হয়ে আছে অমিত। এ কি সর্বনাশা খেলার মূখে পড়লো। কে তাকে হত্যা করতে চায়? মেজদা এতটা নীচে নেমে গেল সম্পত্তির লোভে? অথচ কাল রাতেও তাকে ছোট বেলার মত মাছের কাঁটা বেছে দিয়েছে। মানুষের আলো আর অন্ধকারের চেহারায় এত ফারাক কেন? এজন্যই কি ঠাকুরমা তার দেশে আসার ব্যাপারে নিস্পৃহ ছিলেন? এজন্যই কি পিসিমা তাকে দ্রুত দেশ ছাড়তে বলেছিলেন? কার কাছে যাবে অমিত? কে আছে বান্ধব?
তার কেবলই মনে হতে লাগল এ দুঃসময়ে একজন বান্ধব খুব বেশী দরকার। ম্যাগী তার জন্য জীবন দিয়ে দেবে। কিন্তু বাইরের মানুষ হওয়ায় তেমন কাজে আসবে না। আত্মীয়দের কারো উপরেই ভরসা রাখতে পারছে না। অমিত কি ভয়ে দেশ ছেড়ে চলে যাবে? কোথায় যাবে অমিত? কে আছে স্বজন?
আছে। স্বজন আছে। তার মনের ভিতর থেকেই কে যেন বললো। দুঃসময়ের সাথী অঞ্জলী আছে। জীবনটা যখন বখে যাওয়ার পথে ছিল তখন তার মমতা আর ভালবাসাই অমিতকে আজকের পর্যায়ে এনেছে। ঠাকুরমার অঢেল টাকাকড়ি তার কোনই কাজে আসেনি। কিন্তু অঞ্জলীর বুকভরা ভালবাসা তাকে ট্র্যাকে ফিরিয়ে এনেছিল। আজকের অমিত সে তো অঞ্জলীরই অবদান। তার কাছেই যাবে অমিত। একটা সাপোর্ট আর একটা নিরাপদ আশ্রয় দরকার।
বড়দা তার কালো শেভ্রোলেটা ছেড়ে দিয়েছে। ড্রাইভারকে গাড়ি বের করতে বলে খুব তাড়াতাড়ি তৈরী হলো অমিত। বাইরে গরম। জিনস আর ফতোয়া পরলো। পায়ে রাবার সোলের কেডস। খুবই ক্যাজুয়াল। আয়নায় একবার দেখে নিল। মন্দ না। ফর্সা ভরাট স্বাস্থ্যের মানুষ। যা পরে তাতেই মানায়। একটা আর্মস থাকলে একটু সেইফ বোধ করতো। কিন্তু এদেশে তার লাইসেন্স নেই। গাড়ির কাছে এসে কি মনে করে ড্রাইভারকে ছেড়ে দিল। নিজেই ড্রাইভ করবে। ড্রাইভার কাচুমাচু করছিল। “বড় স্যার রাগ করবেন” ইত্যাদি বলে। কিন্তু অমিত কাটিয়ে দিয়েছে।
আশ্রমের গেইটে এখনও পুরনো দারোয়ান রামলাল ডিউটি করে। দারোয়ান হলেও এ বাড়িতে তাকে যথেষ্ট সম্মান করা হতো। ছোট বেলায় অমিত তার কাঁধে পিঠে চড়েছে। হর্ন বাজাতেই রামলাল গাড়ির কাছে এসে সেলাম ঠুকে বললো, “কার কাছে যাবেন বাবুজী?” বয়স হয়েছে রামলালের। কিন্তু এখনও শক্ত সমর্থ। এক্স আর্মি ম্যান। একদম কেতা দুরস্ত।
“রামু কাকা, আমি অমিত, আমাকে চিনতে পারছো না?” গাড়ির কাচ নামিয়ে অমিত গলা বাড়ায়।
রামলাল চিনতে পারে না। তরুণ অমিতের সাথে এ লোকের অনেক তফাত। মূখ ভর্তি দাড়ি থাকায় আরও বেশী অচেনা লাগে। রামলাল অসহায় ভংগী করে। “আমি চিনতে পারছি না বাবুজী, আমাকে বলেন আপনি কার কাছে যাবেন?”
“অঞ্জলীর কাছে যাবো।”
“মা জননী তো খুব সকাল বেলা বেরিয়ে গেছেন। আপনি তার অফিসে বসুন।”
এধরণের সমস্যা অমিতের মাথায় ছিল না। রামলাল তার দায়িত্বে অটল। কেউ এসে যতক্ষণ পরিচয় নিশ্চিত না করবে ততক্ষণ সে মানবে না। তবে খুব সম্মান করে অফিস রুমে বসতে দিল। রিসেপশনে সুদীপাকে জানিয়ে গেল ইনি মা জননীর মেহমান।
সুদীপা মেয়েটি বুদ্ধিমতী আর স্মার্ট। সে অমিতকে কফি দিল। তার পর অন্য রুমে গিয়ে অঞ্জলীকে ফোন দিল।

“ম্যাডাম আমি যদি ভুল না করে থাকি ভদ্রলোক বিদেশী সাংবাদিক মহিলার হাজবেন্ড আব্রাহাম গোমেজ। কিন্তু এখন বলছেন তার নাম অমিতাভ রায় চৌধুরী। আমি বুঝতে পারছি না আমার কি করণীয়।”
“তুমি সার্বক্ষণিক তার কাছাকাছি থাক। তিনি যেখানে যেতে চান, যা করতে চান মানা করো না। আমি আসছি।” অঞ্জলী ড্রাইভারকে গাড়ি ঘোরাতে বলল। সে যাচ্ছিল রোহিতের বাড়িতে। অমিতকে দেখবে বলে। এখন ম্যাগীর বাসার পথ ধরলো।
সুদীপা রাখতেই অঞ্জলী ম্যাগীকে ফোন দিল। “ম্যাগী তুমি কি একবার আশ্রমে আসবে? আমার জরুরী দরকার। বিপদে পড়েছি তোমার সাহায্য লাগবে।”
“ঠিক আছে আমি আসছি।”
“রেডি হও পাঁচ মিনিটের মধ্যে আমি তোমাকে পিক করবো”

ম্যাগী সকাল থেকে অসংখ্যবার অমিতকে ট্রাই করেছে। কিন্তু পাচ্ছে না। অমিতের ফোন সুইচড অফ। আসলে রাতের বেলার আততায়ী হামলার আগে আগে অমিত ফোনের সুইচ অফ করে রেখেছিল যাতে আচমকা বেজে উঠে তার অবস্থান ধরা না পড়ে। উত্তেজনা আর অস্থিরতায় অন করতে ভুলে গেছে। ম্যাগী খুব ভয় পেয়ে গেল। অমিতের কিছু হয়নি তো? অমিত কে পাওয়া যাচ্ছে না আবার অঞ্জলীর জরুরী ফোন। সে দ্রুত সিড়ি বেয়ে নেমে এল। নীচে আসতেই দেখল অঞ্জলীর গাড়ি ব্রেক কষছে। ঠিক দশ মিনিটের মাথায় আশ্রমে পৌছে গেল তারা। ম্যাগীকে সাথে নিয়ে খুব দ্রুত বেগে অফিস রুমে ঢুকলো অঞ্জলী।

""পৃথিবীটা রঙ্গমঞ্চ আমরা সবাই অভিনেতা"" !! Sad

[+] 3 users Like Kolir kesto's post
Like Reply
#25
১৬ পর্ব


অঞ্জলীর অনুপ্রবেশ অমিত টের পেলো না। সে নিবিষ্ট মনে দেয়ালের কিছু ছবির দিকে তাকিয়ে আছে। একটা ছবিতে দেখা যাচ্ছে বাড়ির লনে অঞ্জলীর সাথে সে ব্যাডমিন্টন খেলছে। রায় পরিবারের অভ্যন্তরীণ প্রতিযোগিতা। ঠাকুরমা থেকে শুরু করে সকলে অংশ গ্রহণ করতো। সে বার সিংগেলস এ ফাইনাল খেলেছিল অমিত আর অঞ্জলী। এটা তারই ছবি। অমিত চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। খুব স্মৃতি কাতর নস্টালজিক ছবি।

“কেমন আছ অমিত?” অঞ্জলী কথা বললো। অবিকল ম্যাগীর গলায়।

“ম্যাগী তুমি?” বলতে বলতে ঘুরলো অমিত এবং অঞ্জলীকে দেখে ভুত দেখার মত চমকে উঠলো।

“ভয় পেয়ো না ম্যাগীও আছে।” অঞ্জলী সামনে থেকে সরে দাড়াতেই ম্যাগীকে দেখতে পেল অমিত।

“না মানে ইয়ে ” আকস্মিক ম্যাগীর কন্ঠ শুনে আর অঞ্জলীকে দেখে অমিতের হতভম্ব ভাব এখনও কাটেনি। সে বুঝতে পারছেনা কি বলবে।

“এসবের কোন দরকার ছিল না অমিত। বউ নিয়ে অনেক আগেই তুমি দেশে এসেছ। আশ্রমে ঢুকেছ নাম ভাড়িয়ে। বিয়ের কথাটা গোপন রেখেছ। আসলে কার কাছ থেকে কি লুকাতে চাইছ তুমি আমি জানিনা।”

“তুমি যা বলছ সেটা ঠিক নয় অঞ্জলী।” অমিত নিজেকে ডিফেন্ড করার চেষ্টা করে।

“কোনটা ঠিক আর কোনটা না এ নিয়ে তর্ক করতে চাইনা অমিত। তুমি কেমন আছ বল।” অঞ্জলীর কন্ঠ নিরুত্তাপ।

“ভাল” হঠাত গম্ভীর হয়ে যায় অমিত। অঞ্জলীর নিস্পৃহ আচরণ তার ভাল লাগছে না।

“নাস্তা হয়নি এখনও তাই না?” চলো আমারও ক্ষিধে পেয়েছে। “ভাল কথা তোমার বউ খুব সুন্দর হয়েছে। আমার খুব ভাল লেগেছে ওকে। কনগ্রাচুলেশন।”

“অঞ্জলী, তোমার একটা ভুল হচ্ছে।” এবার ম্যাগী কথা বলে।

“শুন মেয়ে, পরিচয়ের আগে যা বলেছ, যা করেছ তা ভুলে যাও। আমি তোমার বরের তালতো দিদি। তুমিও আমাকে দিদি বলবে। এ দেশে এটাই নিয়ম।”

“অঞ্জলী তুমি কারো কথা শুনতে চাইছো না কেন?” অমিতের রাগ গলায় প্রকাশ পায়নি এখনও।

“আমার যত টুকু মনে পড়ে তুমি আমাকে দিদি বলতে। আমেরিকান পরিবর্তনটা আমার ভাল লাগছে না। এস নাস্তা করবে।” অঞ্জলী তার ভিতরের আবেগটাকে ধরে রাখার চেষ্টা করছে।

“কর্মচারীদের সাথে বসে আমি নাস্তা করি না।” অমিতের মাথায় হঠাত রক্ত চড়ে গেছে। অঞ্জলীর এমন আচরণ তার কাছে প্রত্যাশিত নয়।

“অনাথ আশ্রম রায় গ্রুপের কোন প্রতিষ্ঠান নয় মিঃ চৌধুরী। রায় গ্রুপ এর ডোনর মাত্র। এমন ডোনর আরও অনেক আছে।”

অঞ্জলী অমিতের রাগটাকে আরো উস্কে দিতে চাইছে। কারণ অতীতের কোন সম্পর্কের স্মৃতি তার দাম্পত্য জীবনে ছায়া ফেলুক এটা অঞ্জলী চায় না। মানুষটা সুখী হোক। তার নিজের কষ্টটাকে বুকের ভিতরেই চাপা দিল অঞ্জলী্। যে সম্মান আর যে ভালবাসা এ যুবকের কাছ থেকে পেয়েছে এ স্মুতিটুকু নিজের করেই অঞ্জলী বাকী জীবনটা কাটিয়ে দিতে পারবে। আজ ঠাকুর মা নেই। তার আশ্রয়ে অঞ্জলী আজ সমাজে মাথা উচু করে বাঁচতে পারছে। সেই কৃতজ্ঞতা সে ভুলবে কেমন করে?

হৃদয়ে রক্তক্ষরণ থামাতে পারছে না সে। ইচ্ছে করছে অমিতকে বুকের মাঝে জড়িয়ে ধরে চুমোয় চুমোয় পাগল করে দিতে। কাল সারা রাত বাইরে বাইরে কাটিয়েছে। একনজর দেখার জন্য ঘন্টার পর ঘন্টা রাস্তায় বসে থেকেছে। এখন তার স্বপ্নের রাজকুমারকে সামনে পেয়েও তার কাছে যেতে পারছে না। হাহাকার করা কান্নার আওয়াজ বুকের ছাতি ভেদ করে বেরিয়ে আসতে চাইছে। মনে মনে প্রতিজ্ঞা করে অঞ্জলী কোন ভাবেই দূর্বলতাকে প্রশ্রয় দিলে চলবে না। যে সুখে আছে তাকে সে রকম থাকতে দিতে হবে।

অঞ্জলীর পাল্টা আক্রমণে দিশেহারা বোধ করছে অমিত। তার সবচে বেশী রাগ হচ্ছে ম্যাগীর উপর। গবেট মেয়েটাই তাকে ধারণা দিয়েছে অঞ্জলী তার জন্য অপেক্ষা করে আছে। সে জন্যই এমন পাগলের মত ছুটে এসেছে তার কাছে। কিন্তু অঞ্জলীর এমন নিস্পৃহ আচরণ চোখে আংগুল দিয়ে বুঝিয়ে দিচ্ছে অমিত তার কেউ নয়। অতীত এখন কেবলই অতীত। অঞ্জলীর কথায় তীব্র অপমানিত বোধ করে অমিত। তার নীল রক্তে বিস্ফোরণ ঘটে।

“ওয়েল মিস্ চ্যাটার্জী, আই এম সরি ফর মাই ইগনোরেন্স।” তার গলা গম গম করে উঠে। “ম্যাগী চলো” খপ করে ম্যাগীর হাত ধরে টান দেয় অমিত। আচমকা টানে অমিতের বুকের উপর এসে পড়ে ম্যাগী। তাকে বাম বগলের সাথে চেপে ধরে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে যায় অমিত।
নিজেকে আর ধরে রাখতে পারে না অঞ্জলী। হু হু করে কান্নায় ভেংগে পড়ে। আর কত পরীক্ষা নেবে ঠাকুর!

“ম্যাডাম” ইন্টারকমে সুদীপা।
“বল সুদীপা”
“অতিথিরা চলে গেছেন। আজকের পেপারে রায় গ্রুপের একটা খবর আছে।”
“পাঠিয়ে দাও।”

“পিকআপ ভ্যান এ হামলা ঃ কর্মচারী আহত” শিরোনামে স্থানীয় একটা পত্রিকায় সংবাদ বেরিয়েছে। নিজস্ব সংবাদদাতার বরাত দিয়ে বলা হয়েছে গত রাত ভোরের কিছু আগে মালামাল পরিবহনের সময় রায় গ্রুপের একটি পিকআপভ্যান ছিনতাইকারীদের কবলে পড়ে। তারা কর্মচারীদের মারধর করে মালামাল লুটে নিয়ে যায়। চলে যাবার সময় তারা গাড়িটাকে ধাক্কা মেরে পাশের খাদে ফেলে দেয়। গাড়িটাতে অনেক মূল্যবান ফেব্রিক্স ছিল। যার বাজার মূল্য প্রায় পাঁচ লক্ষ টাকা। আহত কর্মচারীদের একজনের অবস্থা আশংকাজনক। দুজনকে প্রাথমিক চিকিতসার পর ছেড়ে দেয়া হয়েছে। দেশের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে খবরে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে।

খবরটা খুব তা*্তপর্যপূর্ণ। এ ঘটনার আড়াল দিয়ে লাখ পাচেক টাকার মাল সরানোর একটা সুযোগ পেল অসত কর্মচারীদের একটা গ্রুপ। তারা জামাই বাবুর বাড়ির রেলিঙ এ কেন গিয়েছিল, কেন এমন পড়িমড়ি করে পালাচ্ছিল তার কোন ব্যাখ্যা খুজেঁ পায় না অঞ্জলী। সে যখন ধাক্কা দেয় পিকআপটাতে কোন মাল সামানা ছিল না। জামাই বাবুকে বিষয়টা জানানো দরকার। ফোন তুলতে গিযে আবার রেখে দিল অঞ্জলী। কারণ এতে ধাক্কার সাথে সে জড়িয়ে পড়বে।

সুব্রতকে ফোন দিল সে। ওপাশ থেকে সুব্রতর গলা পেতেই বললো, “আজকের পেপারে রায় গ্রুপের বিষয়টা দেখেছ?”
“ইয়েস মিস।
“আমার কেন জানি ধারণা এক্সিডেন্টটা সাজানোও হতে পারে। এর আড়ালে কেউ মালামাল সরাচ্ছে।”
“এনি ক্লু মিস?”
“না নিছক আমার অনুমান। ভাল কথা রায় টেক্সটাইল এর মূল মালিক অমিতাভ রায় চৌধুরী এখন দেশে আছেন, জান?”
“ইয়েস মিস। উপরতলার লোকদের খবর আমাদের রাখতেই হয়।”
“কোন যোগসূত্র খুজেঁ পাচ্ছ?”
“আপনি বলতে চাইছেন আশ্রমে অনুপ্রবেশ, মনি শংকর বাবুর উপর হামলা, অমিত বাবুর দেশে ফেরা আর আজকের এ ভ্যান লুট এসবের মাঝে কোন যোগসূত্র আছে কিনা?”
“তুমি আগের মতই বুদ্ধিমান আছ, নষ্ট হওনি।”
“আপনার আশীর্বাদ মিস।
“আর একটা কথা, বড়লোকদের অনেক অচেনা শত্রু থাকে। আমি অমিতের নিরাপত্তা নিয়ে ভাবছি।”
“আমি একটা চোখ রাখবো মিস।”
“থ্যাংকিউ বেটা, মামনির কাছে চা খেয়ে যেও।”

সারা রাস্তা গাড়িতে কোন কথা বললো না অমিত। খুব রেগে আছে। ম্যাগী পড়েছে উভয় সংকটে। অঞ্জলী বা অমিত কেউ তাকে বিশ্বাস করছে না। মেজাজ বিগড়ে আছে তারও। পুরো ঘটনার জন্য নিজেকে দায়ী ভাবছে সে। ফোন করে জানিয়ে দিল আজ অফিসে যেতে পারবে না। অমিতকে বললো, “হোটেলে চল।”

হোটেলই তার অস্থায়ী নিবাস। মনি শংকর বলেছিল ফ্লাটের ব্যবস্থা করে দেবে। কিন্তু ম্যাগী মানা করে দিয়েছে। অল্প দিনের বিষয়। হোটেলে ফিরে অমিতের কাছ থেকে আততায়ী আক্রমণের কথা শুনে ঘাবড়ে গেল ম্যাগী। তার আশংকাই সত্যে পরিণত হয়েছে।
“শুন তোমাকে সাবধানে থাকতে হবে।”
“আমার একটা আর্মস দরকার ছিল, খুব অসহায় বোধ করছি।” অমিত বললো।
“আমারটা নেবে? সব জায়গায় ডিক্লেয়ার করা আছে।”
“কিন্তু এটা আমি ইউজ করলে বেআইনী হয়ে যাবে। বরং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ে একটা দরখাস্ত করি।”
“গুড আইডিয়া, তোমার আমেরিকান পাসপোর্ট আছে। আমি দুতাবাসকে দিয়ে তদ্বির করাতে পারবো।”

ইতোমধ্যে নাস্তা চলে এসেছে। ম্যাগী হোটেলে ফিরে আগে রুমসার্ভিসকে ফোন করে নাস্তার কথা বলেছিল। অমিত খেতে বসে খেতে পারলো না। রাতের ঘটনার পর সকালে অঞ্জলীর আচরণ সব মিলিয়ে তার ক্ষুধা তৃষ্ণার অনুভুতি লোপ পেয়েছে।

“তুমি এত ভেঙ্গে পড়ছো কেন? সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে।”

“কিছুই ঠিক হবে না। আমার এক জীবনের অপেক্ষা বৃথা হয়ে গেল। যে মানুষটাকে আমি রেখে গিয়েছিলাম তার ছিটে ফোটাও এখনকার অঞ্জলীর মাঝে নেই। আমার একটুখানি হাসি মূখের বিনিময়ে সে নিজের জীবন দিয়ে দিতে পারতো।”

“আজও তাই দিচেছ। শুধু তুমি বুঝতে পারছো না। শুন, তোমার এখানে বেশীক্ষণ থাকা ঠিক হবে না। মনি শংকরের অফিসের লোকজন এটা চেনে। তোমার সাথে আমার যোগাযোগটা আরও কিছু দিন গোপন রাখতে চাই। হিল্টনে তোমার জন্য একটা রুম বুক করছি।”

“গোপন রইল কোথায়? অঞ্জলীতো সবটাই জানে।”
“জানে না, অনুমান করেছে। সেটা নিশ্চিত হবার জন্যই আমার গলা নকল করেছে সে। রিসেপশনিস্ট মেয়েটা আগেরবার তোমাকে আমাকে একসাথে দেখেছিল। ভুলটা এখানেই হয়েছে।”

“তা হলে এখন আর এসব গোপন করে কি হবে?”
“তোমার কি ধারণা অঞ্জলী জনে জনে বলে বেড়াবে তুমি আমি স্বামী স্ত্রী হিসাবে হোটেলে ছিলাম? মোটেও না। আমি আজই তার সাথে কথা বলবো। তার ভুল ভাংগাবো।”

“যা খুশী কর। আমার আর কিছুই ভালো লাগছে না।”

মনে মনে হাসলো ম্যাগী। অবশ্যই যা খুশী করবে। এই অস্থির, অসহায়, নির্ভরশীল অমিতকেই তো সে খুঁজছে দিনের পর দিন। অঞ্জলী ভালবাসে তো বাসুক না। সেও অমিতকে ভালবাসে। সেও তাকে চায়। নিজের দেশ ছেড়ে, কর্ম ছেড়ে কিসের আশায় পড়ে আছে এখানে? এই একটা মানুষকে ভালবেসেইতো? ভালবাসাকে পূর্ণতা দিতে যা খুশী তাই করবে ম্যাগী।

“আমি না ফেরা পর্যন্ত ঘর থেকে বেরোবে না, কারো ফোনও রিসিভ করবে না। তোমার ফোনটা মনে হয় সুইচড অফ আছে, তেমনই থাক।”
অমিত উপরে নীচে মাথা নাড়লো সম্মতির ভংগীতে।

ম্যাগী বেরিয়ে গেল। অমিত দেখল ম্যাগীর টেবিলে একটা জনি ওয়াকারের বোতল । ছিপি খোলা হয়নি। মাঝে মাঝে পার্টিতে এক দুই চুমুক দিলেও ড্রিংকস এ অভ্যস্ত হয়নি অমিত। কি মনে করে বোতলটা খুলে সরাসরি গলার ভিতর ঢাললো খানিকটা। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে আবার। দেখতে দেখতে বোতলটা অর্ধেক হয়ে গেল। বেশ নেশা মত হয়েছে তার। মনের মাঝে ফুরফুরে চাংগা একটা ভাব আসতে শুরু করেছে।

কে বলেছে দেবদাস মরে গেছে? ধ্বংসের বীজ সবার মাঝেই উপ্ত। সময় সুযোগে আমরা সবাই দেবদাস। হা হা হা হা হা। অমিত হাসছে। মাতালের হাসি।
“নেশার লাটিম ঝিম ধরেছে/ চোখের তারায় রঙ লেগেছে/ আজ কোন দুঃখ নেই/
নেই কোন ভাবনা/এমনি করে দিন যদি যায় যাক না।” গান গাইতে গাইতে অমিত ভাবছে “বাহ্* মাতাল হয়ে গেলাম নাকি?” প্রফেসর ড. অমিতাভ রায় চৌধুরী মদ খেয়ে হোটেল রুমে মাতলামী করছে। কোন সাংবাদিক জানলে ব্যানার হেডিং করে দেবে। হা হা হা হা হা হা।

ম্যাগী আসলেই একটা জিনিয়াস। মাত্র এক ঘন্টার মধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ে অমিতের জন্য স্মল আর্মসের আবেদন জানাল। দেশের বিশিষ্ট জ্বালানী বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ড. অমিতাভ রায় চৌধুরীর নিরাপত্তার জন্য এটা বিশেষ প্রয়োজন। হোটেল হিল্টনে স্যুইট বুক করলো। অ্যারাবিয়ান ব্যবসায়ী দম্পতি হিসাবে। কারণ অমিতের সাথে এখন আর খোলামেলা দেখা করার সুযোগ নেই। অ্যারাবিয়ান শেখের বউ হিসাবে * পড়ার সুযোগে নিজেকে আড়াল করতে পারবে। সে অনর্গল আরবী বলতে পারে। অমিত বলতে না পারলেও বুঝে। কাজেই কারো সন্দেহ উদ্রেক না করেই অমিতকে কাভার করতে পারবে সে। রোহিতের শেভ্রোলেটা আশ্রমের সামনেই রয়ে গেছে। একটা বিএম ডব্লিউ ভাড়া করলো সে। অমিতের অ্যারাবিয়ান নামে। কখনও নিজে ড্রাইভ করবে। প্রয়োজন হলে ড্রাইভার নেবে।

রুমে ফিরে দেখল অমিত চুপ করে শুয়ে আছে। প্রচুর মদ খেয়েছে। নেশার ঘোরে আছে সে। এতে ম্যাগীর কোন অসুবিধা নেই। বরং ভালই হলো। অমিতের কাপড় চেইঞ্জ করলো সে। শেখদের ড্রেস পরালো। নিজেও কালো *য় আপাদমস্তক ঢেকে নিল। অমিতের চাপ দাড়ি, উজ্জল গোর বর্ণ আর উচ্চতার কারণে সহজে বুঝার উপায় নেই। আলখেল্লা আর পাগড়ি পরার পর একদম শেখ শেখ মনে হচ্ছে।

হোটেলের লবীটা একবার দেখে নিয়ে সন্তর্পনে বেরিয়ে এল রুম ছেড়ে। অমিতকে ধরে আছে কনুইয়ের কাছে। দ্রুত উঠে গেল গাড়িতে। কেউ তাদের দেখতে পেল না। দ্রুত ড্রাইভ করে চলে এল হিল্টনে। রিজার্ভেশন আগেই ছিল। চট করে ঢুকে গেল স্যুইটে। বাইরে ঝুলিয়ে দিল “ডোন্ট ডিস্টার্ব সাইন।”

অ্যারাবিয়ান শেখদের ইন্ডিয়া ভ্রমণের মসহুর কাহিনী সকলেই জানে। কেউ তাদের ডিস্টার্ব করলো না।

অঞ্জলীর ফোনে সেই যে ভোর বেলা ঘুম ভাংলো আর ঘুমাতে পারলো না বন্যা। কিছুক্ষন
এপাশ ওপাশ করে উঠে পড়লো। নাইটি চেঞ্জ করে ট্র্র্যাক স্যুট পড়লো। জিমের ব্যাপারে তার কোন আপোষ নেই। মাসিমনির কাছ থেকে মার্শাল আর্টে দীক্ষা নিয়েছে। এখন প্র্যাকটিস করছে একটা ক্লাবে। ছোট কাকুও নাকি খুব ভাল জিমন্যাস্ট। তার কাছ থেকে টিপস নিতে হবে। সে ঘরের মাঝেই হালকা ওয়ার্ম আপ সেরে নিল। শরীর মোটামুটি ঘেমেছে। নিঃশ্বাস বেশ দ্রুত। ছোট্ট বুক দুটো উঠানামা করছে। ছোট কাকুর রুমে যাবার আগে আয়নায় একবার তাকালো। বেশ লাগছে ওগে দেখতে। যেন একটা সদ্য ফোটা ফুল। আয়নায় তাকিয়ে হঠাত কেমন যেন একটু লজ্জা পেলো। সে বড় হয়েছে। এভাবে কাকুর বুকের উপর ঘুমিয়ে পড়া মোটেও উচিত হয়নি। আচ্ছা কাকু যখন ওকে কোলে করে বিছানায় নিয়ে গেল তখন কাপড়-চোপড় ঠিক ছিল তো? যতই ভাবে ততই তাকে লজ্জা এসে গ্রাস করে।

বন্যা যখন অমিতের রুমের দরজা নক করছে, অমিত তথন অঞ্জলীর অফিস রুম থেকে ম্যাগীকে নিয়ে বেরিয়ে আসছে। বন্যা ভাবলো হয়তো কোথাও মর্নিং ওয়াক করতে বেরিয়েছে। কিন্তু যখন বেলা বাড়ার পরও ফিরলো না তখন চারদিকে খোঁজ পড়লো। কোথায় যেতে পারে কেউ ভেবে পেল না। ব্রেকফাস্ট টেবিলে অমিতকে দেখতে না পেয়ে যারপর নাই হতাশ হলো রোহিত। রীতিমতো মঞ্জুকে বকাঝকা শুরু করলো, “কেমন বউদি তুমি? এত বছর পর দেশে এলো তুমি তার কোন খোঁজই রাখছো না।” মঞ্জু খুব লজ্জা পেল। এটা তার উচিত হয়নি।

বন্যা অঞ্জলীকে ফোন দিল। “মাসিমনি সকাল থেকে ছোট কাকুকে খুজেঁ পাচ্ছি না। তুমি কিছু বলতে পারবে?”
“আমি কি তোমার ছোট কাকুর পি এ? আমাকে জিজ্ঞেস করছ কেন?”
“না মানে আমি সবখানে খোঁজ করছি তো তাই তোমার এখানেও করলাম। তুমি এত রেগে রেগে কথা বলছ কেন মাসিমনি? শরীর খারাপ?”
“সরি মা, আসলে কাজের চাপ তো অন্যমনস্ক ছিলাম।”
“জান কাকুকে কোথাও খুজেঁ পাচ্ছি না। বাবা খুব অস্থির হয়ে আছেন। তিনি ড্রাইভার ছাড়া বাবার গাড়িটা নিয়ে বেরিয়েছেন। এত বছর পর এ দেশের রাস্তাঘাট সম্পর্কে ধারণা আছে কিনা কে জানে?”
“তুমি কিছু ভেবো না মা, যেখানেই থাকুন তিনি ভাল আছেন।”

অঞ্জলী বলতে পারলো না কিছুক্ষণ আগেই তার এখানে ছিল অমিত। বিদেশিনী সুন্দরী স্ত্রীকে নিয়ে সে মৌজেই আছে। জীবন যৌবন যার ধ্যান করে কাটিয়ে দিল সে তাকে এমন করে চিট করবে ভাবতেও পারেনি অঞ্জলী। কি এমন হতো যদি সে সরাসরি বউকে পরিচয় করিয়ে দিতো? অঞ্জলী তো কোনদিন তাঁর চলার পথে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়নি? “কেন এমন কষ্ট দিলে অমিত? কেন আমার কাছে সহজ ভাবে বললে না দেখতো অঞ্জলী বউটা পছন্দ হয় কিনা? তোমার বউ তো জানে আমি তোমাকে কতটা ভালবাসি। এর পরও এই লুকোচুরি লুকোচুরি খেলা কেন? কেন আমার ভালবাসাকে এমন ভাবে অপমান করলে?” আপন মনে একা একা বিড় বিড় করছে অঞ্জলী। ঘোর কাটেঁ সুদীপার ফোনে।
“ম্যাডাম বড় স্যারের গাড়িটা আশ্রমের সামনে পার্ক করা আছে। রামলাল জানালেন, সকালের মেহমান এ গাড়ি করে এসেছিলেন। গাড়িতে ড্রাইভার নেই।”
“ঠিক আছে দীপা আমি দেখছি।”

অমিত গাড়ি নিয়ে যায় নি। গেল কোথায়? ম্যাগীর নাম্বারে ফোন দিলে জানা যাবে। কিন্তু ফোন দিতে ইচ্ছে করলো না। এই মেয়েটাকে এত ভালবেসে শেষ পর্যন্ত এই প্রতিদান? কিন্তু সময় গড়ানোর সাথে সাথে তার টেনশন বাড়তে লাগলো। অমিত বাড়িতে না বলে বউ নিয়ে মস্তি করছে। সেতো আগে থেকেই করছিলো। হঠাত এমন ঢাকঢোল পিটিয়ে উদয় হওয়া আবার বিলীন হওয়া এর পেছনে কোন উদ্দেশ্য আছে কি? ম্যাগী, অমিত দুজনই তাকে একটা কিছু বলতে চেয়েছিল। সে শুনেনি। কোথাও ভুল হলো নাতো? সবার আগে ওকে খুজেঁ বের করা দরকার।

সুব্রতকে ফোন দিল অঞ্জলী। “কি খবর ব্যাটা?
ওপাশ থেকে সুব্রতর গলা শুনা গেল, “এভরিথিং ইজ অলরাইট মিস। আমি পরিস্থিতি অবজারভ করছি।”
“অমিত কি তোমাদের অবজারভেশনে আছে?”
“সর্বশেষ তাকে আপনার এখান থেকে বেরিয়ে একজন মহিলাসহ হোটেল ম্যাডিসনে আসতে দেখা গেছে।”

“এটুকু আমি জানি। মহিলা একজন সাংবাদিক। আশ্রমের উপর নিউজ করেছিলেন। তারা কি এখনও হোটেলেই আছেন?”

“এক মিনিট হোল্ড করুন মিস।”
অঞ্জলী কানে ফোন ঠেকিয়ে অপেক্ষা করছে। মিনিট দুই পরে সুব্রত জানালো,
“সাংবাদিক মহিলার হোটেল রুমে কেউ নেই। তিনি মিঃ মনি শংকরের পি এস হিসাবে কাজ করছেন। আজ অফিসে যান নি। এ মুহুর্তে তিনি আমাদের ওয়াচ এ নেই। মিঃ অমিতকেও লোকেট করা যাচ্ছে না।”

” তুমি জান ব্যাটা মিঃ অমিত খুব ইম্পরটেন্ট পারসন। তার নিরাপত্তার বিষয়টা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আই এক্সপেক্ট ইউর পারসোনাল এটেনশন।”

“আই এম টেকিং ওভার দি রেসপনসিবিলিটি মিস।”

“থ্যাংক ইউ ব্যাটা।

সুব্রতর ইনফরমার নজর রাখছে রায় টেক্সটাইলের আহত লোকটার উপর। কে আসছে, কে যাচ্ছে, কার কার সাথে কথা বলছে সব নোট করছে সে। এদিকে ম্যাগী লক্ষ্য করেছে হঠাত করেই সিধুর কর্মততপরতা খুব বেড়ে গেছে। মিল আর মনি শংকরের চেম্বারে ঘন ঘন আসা যাওয়া করছে। বেশী বেশী ফোন করছে। যখন তখন কাকে কাকে যেন ধমকাচ্ছে। চোখে মূখে সারাক্ষণ সতর্কতা আর লুকোচুরি ভাব।
এদিকে মনি শংকরও খুব উত্তেজিত । সে দিন বাজিতে বড় অংকের দাও মেরেছে। ম্যাগীর ধারণা দুজন মিলে বড় রকমের একটা কিছু ঘটাতে যাচ্ছে। ম্যাগী সিদ্ধান্ত নিল এ বিষয়টা জানতে হবে। সে মনি শংকরকে মোটামুটি প্রশ্রয় দিতে শুরু করলো।
“স্যার আমি খুব বোর ফিল করছি। অফিসের পরে আমার তেমন কিছু আর করার
নেই। ভাল কোন বিষয় পাচ্ছি না যা নিয়ে কোন এক্সক্লুসিভ করা যায়। ভাবছি ফিরে যাবো।”

“বলো কি? সময় না কাটলে আমার সাথে চলো। মাঠে রেইস দেখবে। একবার এটার স্বাদ পেলে আর ছাড়তে ইচ্ছা করবে না।”

“আমি হত দরিদ্র রিপোর্টার আমার কি আর ওসবে মানায়?”

“আজ বিকেলে ফ্রি থাকলে চলো একবার ঘুরে আসি।”

“ঠিক আছে স্যার, আমার সঙ্গ যদি আপনার ভাল লাগে তবে যাব বৈকি?”
“একবার সিধুকে ডাক।” মনি শংকর একটা নাম্বার এগিয়ে দিল ম্যাগীকে।
ম্যাগী নাম্বারটায় চোখ বুলাল। মনে মনে দুইবার আওড়ে গেথে রাখলো মনের পর্দায়। তারপর মনি শংকরের টেবিল থেকে ফোন দিল সিধুর মোবাইলে।

কাগজে কলমে সিধু রায় টেক্সটাইলের স্টোর ইনচার্জ। কিন্তু মনি শংকরের কাছ থেকে সে নিয়মিত একটা মাসোহারা পায়। বিনিময়ে রায় টেক্সটাইল যেন কোন মতেই লাভের মূখ না দেখে সে বিষয়টা নিশ্চিত করতে হয়ে সিধুকে। মনি শংকর চায় লোকসানের কারণে বিরক্ত হয়ে রোহিত মিলের দায়িত্ব ছেড়ে দিক। অবশ্য অমিত ফিরে আসায় সব হিসেব নিকেষ বদলে গেছে। অমিত যদি দায়িত্ব বুঝে নেয় তবে পুরনো ছক তেমন কাজে আসবে না।

সিধু আছে মহা আরামে। প্রতিষ্ঠানকে লোকসান করানোর জন্য এক দিকে চুরি করে মালামাল গায়েব করছে। আবার অন্যদিকে মনি শংকরের কাছ থেকে মাসোহারা পাচ্ছে। সংগোপনে তার নিজস্ব একটা এজেন্ডাও আছে। ম্যানেজমেন্ট তাদের দুষ্কর্ম সম্পর্কে কমবেশী জানে। কিন্তু ইউনিয়নের ভয়ে হোক বা কোন অজ্ঞাত কারণেই হোক কেউ এটা নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছে না। মনি শংকরের সাথে আত্মীয়তার সূত্রে সে এমডিরও প্রিয়ভাজন। ফলে ম্যানেজার নিজেও সিধুকে সমঝে চলেন। যে যার মত লুটেপুটে খাচ্ছে। বেশ কিছু কর্মচারী আছে যাদের সুনির্দিষ্ট কোন কাজ নেই। তারা মাসে মাসে বেতন গুণছে। এরা সবাই সিধুর লোক। তাদের একমাত্র কাজ হলো পালা করে সিধুর বিকৃত কামনা চরিতার্থ করা। সবাই তারা সিফলিসে আক্রান্ত।

সিধু এল আধা ঘন্টা পর। মনি শংকর তার কাছে রায় টেক্সটাইলের আহত লোকটা সম্পর্কে জানতে চাইল। “এ ব্যাটা এরকম আধমরা হলো কি করে?”
“একটা গাড়ি পিছন থেকে ধাক্কা মেরেছিল। ব্যালেন্স রাখতে পারেনি।”
“মিলের কি অবস্থা”
“আমরা এটাকে ইস্যু করে একটা মুভমেন্টের চেষ্টা করছি। অযৌক্তিক কম্পেনজেশন আর সিকিউরিটি ক্লেইম করবো। ব্যাটা যদি মারা যায় তাহলে মুভমেন্ট আরও জমে যাবে।”

“তোমাদের কি ধারণা, মূল মালিক দায়িত্ব বুঝে নেবেন?”

“তিনি যাতে ঘাবড়ে যান সে জন্যই আমরা এ মুভমেন্টের ব্যবস্থা করছি। কারণ তিনি দায়িত্ব বুঝে নিলে আমরা সবাই লুজার হবো।”

“বড়দার হাতে দায়িত্ব থাকলে তোমার আর তার লাভ হতে পারে। কিন্তু আমার তো তোমাকে পোষার ক্ষতি ছাড়া কোন লাভ নেই।”

“দেখুন জামাই বাবু, সব ইনভেস্টমেন্টেরই রিটার্ন পেতে একটা টাইম গ্যাপ প্রয়োজন। আপনাকে ধৈর্য ধরতে হবে।”

“ধৈর্য ধরতে ধরতে তো ফতুর হয়ে গেলাম।”

মাত্র তিন দিনের মাথায় আর্মসের লাইসেন্স পেল অমিত। এক্ষেত্রে ম্যাগীর দৌড়ঝাপের পাশাপাশি পুলিশ ইনস্পেক্টর সুব্রতর ভূমিকার ছিল প্রশংসনীয়। লাইসেন্স পাবার পর ম্যাগীকে নিয়ে একটা ৯ এম এম ল্যুগার কিনলো অমিত। এক সময় শুটিং ক্লাবের মেম্বার ছিল। ক্লোজ রেঞ্জে তার হাত নেহাত খারাপ না। রিফ্লেক্সও ভাল। প্রচুর অ্যামুনিশনও কিনলো। বন্দুকের দোকানের মালিক হাসতে হাসতে বললো “স্যার কি কোন যুদ্ধে যাচ্ছেন?” অমিত জবাব দিল না। তবে সে যুদ্ধে যাচ্ছে এতে কোন সন্দেহ নাই।

গত কিছু দিন ধরে অমিত টের পাচ্ছে কে বা কারা তাকে সারাক্ষণ ফলো করছে। সে ফেউ এর অস্তিত্ব টের পাচ্ছে কিন্তু সনাক্ত করতে পারছে না। তবে ম্যাগীর অ্যারাবিয়ান সাজার কৌশলটা খুব কাজে দিয়েছে। শেখের কাভারে যতক্ষণ থাকে ততক্ষণ তাকে কেউ ফলো করে না। কাভারটা অটুট রাখার জন্য খুব সতর্ক থাকে অমিত। নতুন করে কোন আক্রমণ হয়নি। কেউ ভয়টয়ও দেখায়নি। তার মানে এই নয় যে, অমিত নিরাপদ। তার ধারণা প্রতিপক্ষ তাকে অসতর্ক হবার অপেক্ষায় আছে।

ম্যাগীর প্রতি যারপর নাই কৃতজ্ঞ অমিত। তার দুঃসময়ে এমন বুক পেতে আগলে আছে যে তাকে ছাড়া অমিত কিছুই ভাবতে পারে না। শুধু জীবন বাঁচানো নয়, বেঁচে থাকাটা সুন্দর করার জন্য যা কিছু করা দরকার সবই করছে সে। জীবন শুধু আদর্শের উপর বেঁচে থাকে না। এর জন্য জীবনটাকে উপভোগও করতে হয়। প্রাণ ভয়ে তাড়া খাওয়া, প্রেমিকার কাছ থেকে আঘাত পাওয়া একটা মানুষের জীবনকে অর্থবহ করে তুলেছে । সে দিন হোটেল রুমে ম্যাগীর সাথে এমন চমrকার এক সময়ই কাটিয়েছে সে।

মদ খেয়ে মাতাল হয়ে ছিল অমিত। তবে চেতনা লোপ পায়নি। ম্যাগী তাকে ম্যাডিসন থেকে হিল্টনে নিয়ে এসেছিল শেখ সাজিয়ে। রুমে ঢুকেই বিছানায় ঝাপিয়ে পড়েছিল অমিত। শিশুর মত অঝোর ধারায় কাঁদতে শুরু করেছিল। অঞ্জলীর বিরহ সে মেনে নিতে পারেনি। উপুর হয়ে থাকা অমিতের পিঠে পরম মমতায় হাত রেখেছিল ম্যাগী। কাঁদতে বারণ করেনি। ছোট বেলায় বাবা মা হারা এই মানুষটা যার ছত্র-ছায়ায় বড় হয়েছিল আজ তিনি নেই। নেই তার একমাত্র ভালবাসার মানুষ অঞ্জলী। ম্যাগী সাইকোলজি পড়েছে। সে জানে ছোটবেলায় মাতৃহারা শিশু তার ভালবাসার নারীর মাঝে মায়ের ছায়া খোজেঁ। অঞ্জলী কিছুটা সিনিয়র আর কেয়ারিং বিধায় অমিত একই সাথে মা আর প্রেমিকা দুজনকেই দেখে তার মাঝে। এ ভালবাসা বড় তীব্র আর আবেগময়। তাই অমিত কাঁদছে। কাঁদুক। কেঁদে কেঁদে তার মন হালকা হউক।

কষ্ট পাওয়া মানুষকে সান্ত্বনা দেবার ভাষা বা কৌশল কোনটাই জানা নেই ম্যাগীর। তবে জড়িয়ে ধরে রাখলে খুব দ্রুত সামলে উঠে। ম্যাগী তাই করলো। উপুর হয়ে থাকা অমিতের মাথাটা কোলের উপর টেনে নিল। ধারণা করেছিল অমিত বাধাঁ দেবে। কিন্তু অমিত চুপ করে রইল। তার উরুতে মূখ গুজেঁ অনেক অনেক সময় ধরে কাঁদলো। ম্যাগী পুরোটা সময় তার পিঠে হাত বুলিয়ে গেল। এক সময় অমিত পাশ ফিরলো। কোলের উপর মাথা রেখেই চিত হলো। ম্যাগী তার চুলে বিলি কাটতে থাকলো। বাম হাত দিয়ে বিলি কাঁটার পাশাপাশি ডান হাত বুকের উপর রেখে আলাতো বুলাতে লাগলো।

একদৃষ্টে তাকিয়ে ছিল ম্যাগী। কি সুন্দর একটা মানুষ। কত অসহায় আর বিপদেই না পড়েছে এখানে এসে। কোথাও এতটুকু দাঁড়াবার স্থান নেই। কত বড় লোকের সন্তান। অথচ নিজের দেশে নিজের একটা মাথা গুঁজার ঠাই নেই। নিরাপদ বোধ করতে পারে এমন কোন স্বজন নেই। ভালবাসার মানুষের সাথে ভুলবুঝাবুঝিতে চরম কষ্টে আছে এখন। বুকের ভিতর আবেগ উথলে উঠে তার। ঘাড়ের নীচে হাত নিয়ে মাথাটা তুলে চেপে ধরে বুকের সাথে। তারপর আলতো চুমু খায় ঠোটে। নেশার ঘোরে অমিতের লজিক ছিল খুব দূর্বল। মাথাটা পরিষ্কার কাজ করছিল না। সুস্থ সবল যুবা পুরুষ।
শরীর খুব দ্রুত সাড়া দিল। তারা পরস্পরকে পছন্দ করে। দীর্ঘ দিন এক বাড়িতে বসবাস করেছে। এক বিছানায় রাত কাটিয়েছে। বোঝাপড়ায় কোন ঘাটতি কখনও ছিল না। ম্যাগীর চুমুর জবাবে অমিতও চুমু দিল। চার ঠোট একত্র রেখেই ম্যাগী ফিস ফিস করলো, “আই লাভ ইউ ম্যান।”

পাগড়িটা রুমে ঢুকেই খুলে ফেলেছিল অমিত। ম্যাগী এবার তার আলখেল্লাও খুলে নিল। নীচে একটা স্যান্ডো গেঞ্জি। আহ কি ভীষণ পৌরুষদীপ্ত ফিগার। সামান্য নড়াচড়াতেই কিলবিল করছে পেশী। আস্তে আস্তে পাজামার ফিতেটা খুলে দিল ম্যাগী। তারপর পায়ের দিকে টান দিতেই সেটা কোমড় থেকে নেমে গেল। নিতম্বে আটকা পড়ায় অমিত পাছাটা উচু করে ঢিল দিল। পাজামা চলে গেল ম্যাগীর হাতে। শুধু বক্সার আর গেঞ্জি। অমিতকে লাগছে যেন রেস্টলিং তারকা। এখুনি রিং এ লাফিয়ে পড়বে। ম্যাগী চাইছিল তার কাপড় চোপড় অমিত খুলে নেবে। নিজেরটা নিজে খুলতে বেশ লজ্জা পাচ্ছিল ম্যাগী। কিন্তু পরে বুঝতে পারলো অমিত সেই সুক্ষ অনুভুতির পর্যায়ে নেই। বাধ্য হয়ে নিজের কাপড় চোপড় নিজেই ছাড়লো ম্যাগী। শুধু ব্রা আর প্যান্টি পরা অবস্থায় আগেও অমিতের সাথে শুয়েছে ম্যাগী। কিন্তু অমিতের ভাবান্তর হয়নি। আজ নেশার ঘোরেই হোক কিংবা অঞ্জলীর প্রত্যাখ্যান জনিত বেদনায়ই হোক অমিত আজ তাকে রেসপনস করছে। এর চে বেশী কিছু ম্যাগীর দরকার নেই।

তবে প্রথমবার বলেই হয়তো ম্যাগীর লজ্জা কাটেনা। সে চাইছে অমিত তার উপর ঝাপ দিক, চিরে ফুরে শেষ করে ফেলুক। কিন্তু অমিতের কাছ থেকে সেটা পাওয়া যাচ্ছে না। চোখে মূখে একরাশ লজ্জা নিয়েই ম্যাগী বিছানায় গড়ান দিল। উঠে এল অমিতের বুকের উপর। গেঞ্জির উপর দিয়ে বুকের হালকা লোম বেরিয়ে আছে। ম্যাগী লোম গুলি ধরে একটু একটু করে পাকাতে শুরু করলো। বুঝতে পারছে তলপেটের নীচে অমিতের উত্থান দৃঢ় থেকে দৃঢ়তর হচ্ছে। ম্যাগী তার শরীরের ভার সম্পূর্ণ অমিতের উপর ছেড়ে দেয়। চাপ খেয়ে জাংগিয়ার ভিতরে ফনা তুলতে থাকে অমিতের বাড়া। সরাসরি গুতো মারে ম্যাগীর তলপেটে। এটাকে চাপমুক্ত করার জন্য ম্যাগী আরো উপরে উঠে আসে। ঘন দাড়ির উপর দিয়ে মূখটাকে দুই হাতে ফ্রেম করে। তারপর চুমু খায় লালচে মোলায়েম ঠোটে। অমিতের গুফগুলি ছোট করে ছাটা। ফলে চুমু খেতে গেলে ঠোটের উপর খোঁচা লাগে। এই সুড়সুড়ি অন্যরকম উত্তেজনা আনে শরীরে। ম্যাগী জ্বলতে শুরু করে। পুরুষ পার্টনার কম সক্রিয় এমন সংগম ম্যাগী ইতোপূর্বে আর কখনও করেনি। সে নিজে আস্তে আস্তে আগ্রাসী হয়ে উঠছে। কুটুস করে কামড়ে দেয় অমিতের ঠোট। অমিত নিজের দুই ঠোটের মাঝে ম্যাগীর নীচের ঠোটটাকে চেপে ধরে চুষতে থাকে। হাত দুটি আস্তে আস্তে সক্রিয় হয় অমিতের। ম্যাগীর পিঠের উপর হাত নিয়ে ব্রার হুক খুলে দেয়। ছাড়া পেয়ে বুক দুটি টেনিস বলের মত বাউন্স করে। একটু লম্বাটে। গ্রীপ হয় চমrকার । অমিতের বিশাল থাবায় বুক দুটি নিষ্পেষিত হতে থাকে। ভাল লাগার আমেজটা সাই সাই করে চড়তে থাকে ম্যাগীর। একটু একটু ব্যথা বোধ হয়। কিন্তু সুখের তুলনায় সেটা কিছুই না। অমিত যদি থেমে যায় সে ভয়ে সে ব্যথাটা চেপে যায়। মাইয়ের উপর অমিতের হাতের চাপ আর ঠোটে তার চোষণ খেয়ে ম্যাগীর জল কাটতে শুরু করে। তার মূখ দিয়ে আহহহ্*, উমমমমমমমম্* ধরণের আরামদায়ক শব্দ বেরিয়ে আসতে থাকে। ম্যাগী নিজেকে সম্পূর্ণ ছেড়ে দেয় অমিতের হাতে। ওয়ার্ম আপ শেষ হয়েছে। জাত খেলোয়াড় এবার নিজে থেকেই খেলা দেখাবে।

অমিত ঠোট ছেড়ে দিয়ে এবার ম্যাগীর একটা বোটা মূখে পুরে নেয়। দুই হাতে গোড়ার দিকে চেপে রেখে একবার এটা আরেকবার ওটার বোটা চুষতে থাকে পালা করে। একই সাথে মর্দন আর চোষণ খেয়ে ছটফট শুরু করে ম্যাগী। সে এত উত্তেজিত হয় যে, অমিতের গেঞ্জি খুলার চেষ্টা করে তর সইতে না পেরে টান দিয়ে ছিড়ে ফেলে। উত্তেজিত হলে তার এরকমই হয়। সে ধীরে সুস্থে কিছু করতে পারে না। নীচে জাংগিয়ার দিকে হাত বাড়াতেই অমিত পাছা তুলা দিয়ে সেটাকে লুস করে দেয় যাতে ছিড়তে না হয়। ছাড়া পেয়ে অমিতের বাড়া মহারাজ ম্যাগীর দুই রানের মাঝখান দিয়ে আকাশের দিকে মাথা তুললো। রানের চিপায় জিনিসটার আকৃতি অনুভব করে শিহরণ খেলে গেল ম্যাগীর শরীরে। মাঝে মধ্যে যে সব লোকের সাথে সেক্স করেছে তাদের বেশীরভাগই ছেলে ছোকরা। দু একজন ছিল আবার বেশী বয়সী। এমন ম্যাচিউরড ইয়ংম্যান এই প্রথম তাকে চুদতে যাচ্ছে। ভাবতেই কেমন জানি লাগছে তার।

""পৃথিবীটা রঙ্গমঞ্চ আমরা সবাই অভিনেতা"" !! Sad

[+] 2 users Like Kolir kesto's post
Like Reply
#26
১৭ পর্ব



ম্যাগী রান দুটি একত্রে চেপে বার বার অমিতের বাড়ার সাইজ অনুভব করতে চাইছে। আর এমন মাইনকা চিপায় পড়ে অমিতের বাড়া যেন রাগে ফুসছে। তেড়ে ফুড়ে দুনিয়াটা একাকার করে দিতে চাইছে স্পেনিয়ার্ড ষাড়ের মত। ম্যাগীর পরনে এখনও প্যান্টিটা রয়েছে। ভিজে জবজবে হয়ে গেছে এটা। অমিতের চোষণ আর মর্দনে যোনীতে বান ডেকেছে ম্যাগীর। কান দুটি দপ দপ করে জ্বলছে। ইচ্ছে করছে আখাম্বা বাড়াটাকে গোগ্রাসে গিলে ফেলে। কিন্তু ম্যাগী পাকা খেলোয়াড়। সে জানে মাছকে কিভাবে খেলিয়ে বড়শিতে গাথতে হয়। অমিতের খোলা বুকে নিপলস দুটোকে খামছে ধরে ম্যাগী। এটা পুরুষদের বেশ উত্তেজিত করে।


অমিত শোয়া থেকে ম্যাগীকে বুকে নিয়েই উঠে বসলো। তার পর কোলের উপর তুলে নিয়ে সটান দাড়ালো মেঝের উপর। পলকা শরীরটা মাথার উপর তুলে শূণ্যে পাক খাওয়ালো। ম্যাগীর মনে হলো সে যেন শিশু পার্কের চড়কিতে চড়ে পাক খাচ্ছে। একটুও বাঁধা দিল না। শুধু দু হাতে গলা জড়িয়ে ধরে উপভোগ করলো অমিতের আদর। ঘোরানো শেষ হলে অমিত ম্যাগীকে দাড়ঁ করালো মেঝের উপর। রসে ভেজা প্যান্টিটার দুপাশে আংগুল ঢুকিয়ে নিতম্ব থেকে নামিয়ে দিল। পা গলিয়ে বের করে নিল।প্যান্টিটা ছুড়ে ফেলে খানিকটা পিছিয়ে গেল অমিত। যেন শিকারের আগে শিকারী তার শিকার জরীপ করছে। সম্পূর্ণ নিরাভরণ হতেই দু’হাতে চোখ ঢাকলো ম্যাগী। হাজার হলেও পুরুষের মুগ্ধ দৃষ্টির সামনে যে কোন মেয়ে লজ্জা পেতে বাধ্য। কাছে এসে আলতো করে চোখের উপর থেকে হাত দুটো সরিয়ে দিল। দুই হাতের তালু দিয়ে মূখটাকে দুপাশ থেকে ধরে সরাসরি তাকালো চোখের দিকে। আবেগ আর মায়াভরা চাহনী। ম্যাগীর বুক ভরে গেল সুখের আতিশয্যে। বছরের পর বছর ধরে এরকম আবেগময় আদরের অপেক্ষায় ছিল ম্যাগী। তার ঠোট দুটি তির তির করে কাঁপছে। অমিতের আগ্রাসী ঠোট নেমে এল ম্যাগীর কম্পমান ঠোটের উপর।


চুমোয় চুমোয় পাগল হয়ে যাবার দশা হলো ম্যাগীর। বুকটাকে এমন ভাবে দলাই মালাই করছে যে মনে হচ্ছে গোড়া থেকে না ছিড়ে যায়। শক্ত হাতের চাপে ব্যাথা ব্যাথা সুখ। দুই ঠোটের মাঝে নিপল নিয়ে মাথাটা বিদ্যুতের গতিতে এপাশ ওপাশ করতে থাকে অমিত। এমন আগ্রাসী সাকিং সহ্য করতে পারেনা ম্যাগী। উহ আহ চীrকার শুরু করে। অমিত থামে না। এক সময় সারা শরীর ঝাকুনি দিয়ে স্থির যায় ম্যাগী। তার জল খসে গেছে।


জোর করে অমিতের মূখটাকে বুক থেকে সরিয়ে দেয় ম্যাগী। তার কিছুটা বিরতি দরকার। সে দাড়ানো অবস্থাতেই কিছুক্ষণ অমিতের গায়ে হেলান দিয়ে বিশ্রাম নেয়। তার পর অমিতকে দাড় করিয়ে রেখে নিজে হাটু গেড়ে বসে তার সামনে। অমিতের ঠাটানো বাড়াটা একদম তার মূখের দিকে তাক করা। যেন কামান থেকে এখুনি গোলা ছুড়বে। উত্তেজিত বাড়াটাকে তার বিশাল মনে হয়। মাথার মুন্ডিটা এত সুন্দর যে তাকিয়ে থাকতেই ইচ্ছে করে। ম্যাগী প্রথমে গোড়ায় হাত চেপে ধরে। তার পর মুন্ডিটায় চুমু খায় আলতো করে। চার পাশে জিব বুলিয়ে ভিজিয়ে নেয়। তার পর পুরো মুন্ডিটা মূখের ভিতর নিয়ে দুই ঠোট খাজেঁর মাঝে চেপে ধরে। চাপ অক্ষুণ্ণ রেখে জিবের ডগা দিয়ে মুনডির ছিদ্রটা চাটতে থাকে। অমিত গো গো আওয়াজ তুলে। নাকের ফুটো বড় হয়ে যায়। নিঃশ্বাস ভারী আর দ্রুত হয়। চাটতে চাটতে বাড়াটাকে যথা সম্ভব গলার ভিতর নেবার চেষ্টা করে ম্যাগী। পুরোটা পেরে উঠে না। অমিতের মুন্ডি সরাসরি গলার পিছনে ধাক্কা খায়। বেইসটা চেপে ধরে দ্রুত মূখ উঠানামা করে ম্যাগী। ওকে মূখচোদা করতে অমিতের ভীষণ ভাল লাগে। এক সময় ঘরময় উমউম উমআম, হুমহুম শব্দ উঠে। অমিতের ক্লাইমেক্স চরমে উঠে। সে ম্যাগীকে সাবধান করে। মূখ সরিয়ে নিতে বলে। কিন্তু ম্যাগী সরায় না। দুই হাতে অমিতের কোমরের নীচটা ঝাপটে ধরে সে অমিত যাতে পিছিয়ে যেতে না পারে।


সময় আসন্ন হয়ে এলে অমিতেরও আর করার কিছুই থাকে না। সে দুই হাতে ম্যাগীর মাথার পিছনটা চেপে ধরে । তার পর সেকেন্ডে একশবার গতিতে ঠাপাতে থাকে তার মূখের ভিতর। ঠোটের কষা, গলা ছিড়ে যাবার দশা হয় ম্যাগীর্ । সে এখন আর ঠোট দিয়ে চাপ দিচ্ছে না। শুধু ঠোটটা আটকে রেখেছে চার পাশে। সাকিং করতেও শক্তি ব্যয় করছে না। সব করছে অমিত। সে শুধু অমিতকে জড়িয়ে রেখেছে। এক সময় মনে হলো অমিতের পাছার দাবনা দুটো শক্ত হয়ে গেছে। বাড়াটা মনে হল লোহার পাইপের চেয়েও শক্ত। হঠাত স্থির হয়ে গেল অমিত। তার পর মাল ছেড়ে দিল। বলকে বলকে বীর্য বেরিয়ে এল। এত তীব্র অর্গাজম আর এত মাল ম্যাগী কখনও দেখেনি। সব চেটে পুটে খেয়ে নিল। তার পর দুজন দুজনকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে পড়লো মেঝের উপর।


মনি শংকর হিরো না ভিলেইন? খুব ধাঁধায় পড়ে গেল ম্যাগী। তার সাথে কাজ করছে আজ প্রায় দু সপ্তাহ হয়ে গেল। অসম্ভব সুন্দর আচরণ তার। স্টাফদের সাথে, বন্ধুদের সাথে, সামাজিক ক্ষেত্রেও। বিপরীত লিংগের প্রতি তার আকর্ষণ সুতীব্র। কাউকে পছন্দ হলে আর কোন কথা নেই। ছলে বলে তাকে ভোগ করতে হবে। মদের নেশায় আকন্ঠ ডুবে থাকে। আর তখন সে হয়ে যায় অমানুষ। রেসের মাঠে একের পর এক সম্পদ খুইয়ে চলেছে। মাঝে মাঝে এক আধবার জিতে যায়। আর এ নেশাটাই তাকে বার বার টেনে নেয় মাঠে। ব্যবসায় কোন মন নেই। দু’হাতে টাকা উড়ায়। সত্যিকারের জমিদারী চালচলন। শুধু জমিদারীটা নেই।

রোহিতের সাথে মনি শংকরের ভিতরে ভিতরে তীব্র দ্বন্ধ। বাইরে থেকে বুঝার উপায় নেই। এ সংঘাত স্বার্থের সংঘাত। তবে অমিতের সাথে সম্পর্কটা বুঝা সত্যি দুষ্কর । সে চাইছে অমিতের মিলটা যেন রোহিত একা ভোগ না করে। আবার সেটা করতে গিয়ে যা করছে তাতে অমিতের ক্ষতি হচ্ছে। সে যে অমিতের শুভাকাংখী নয় সেটাও পরিষ্কার।

প্রশ্ন হলো অমিতকে মেরে ফেললে কার লাভ? তাকে গুলি করার উদ্দেশ্য কি ভয় দেখানো না হত্যা করা? অমিত যদি মারা যায় সকল ভাইবোন সম্পত্তিটা সমান হারে পাবে। বেশী লস হলো রোহিতের। আবার বেঁচে থাকলে লাভও বেশী হলো রোহিতের যতদিন মিল তার দায়িত্বে আছে। সে ক্ষেত্রে মনি শংকর ধীরে ধীরে মিলটাকে ধ্বংস করে দেবে। রোহিতের পক্ষে সেটা সামাল দেয়া সম্ভন না। যদি অমিত নিজে দায়িত্ব বুঝে নেয় তবে সকলেরই লোকসান। তার মানে অমিতের উপস্থিতি সকলের জন্যই অস্বস্তিকর।
সবচে ভাল হয় এখানকার সহায়-সম্পদ যদি সে বিক্রি করে দিয়ে আমেরিকা ফিরে যায়। কিন্তু অমিত তা করবে না। পৈত্রিক সম্পদ সে বিক্রি করবে না। এতে বাপ-ঠাকুর্দা আর বিশেষ করে ঠাকুরমার প্রতি অসম্মান প্রদর্শন করা হয়। আবার নিজে সে ব্যবসায়ী নয়, শিল্পপতি নয়। সে একজন বিজ্ঞানী। তার কাজ পড়াশুনা আর গবেষণা। কাজেই মিল ফ্যাক্টরী সে সামলাতেও পারবে না।
এসব বিবেচনা করে ম্যাগী তাকে একবার বলেছিল, “এসব মাথা থেকে মুছে ফেলে চলো আমেরিকা ফিরে যাই।” অমিত রাজী হয় নি।

“আমি কাপুরুষ না। কেউ আমার জানালা দিয়ে দুটো গুলি করলো আর আমি ইদুরের মত লেজ গুটিয়ে দেশ ছেড়ে পালাবো, তা হয় না? আমাকে এর শেষ দেখতে হবে।”
সবচে বড় কথা আজও অঞ্জলী মনের কোন হদীস করতে পারেনি অমিত! তার সাথে একটা শেষ বুঝপড়া তো তাকে করতেই হবে।

যখন বিপদ এল তখন ম্যাগীর কোন বিচার বিশ্লেষণই কাজে এল না। অমিতের প্রাক্তন কলেজে বিজ্ঞান ভবনের উদ্বোধন হবে। দেশের নামকরা সব মানুষদের দাওয়াত করা হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রী নিজে ভবন উদ্বোধন করবেন। সে উপলক্ষ্যে প্রাক্তন কৃতি ছাত্রদের একটা সংবর্ধনাও দেয়া হবে। অমিত এ কলেজের সেরা ছাত্রদের একজন। শুধু তাই নয় কিছু দিন আগেই বিকল্প জ্বালানী উদ্ভাবন বিষয়ক তার ও তার সহযোগী ডেনিস বিজ্ঞানীর যৌথ লেখাটি বিশ্বব্যাপী আলোড়ন তুলেছে। পত্রিকা টিভিতে একাধিক সাক্ষাতকার দিয়েছে অমিত। বলতে গেলে এখন সে রীতিমতো বিখ্যাত মানুষ।

ম্যাগী বার বার বারণ করেছিল। “দেখ এটা এমন একটা অনুষ্ঠান যেখানে আমি তোমার সাথে যেতে পারবো না। একা একা বিপদ হতে পারে।” কথাটা অমিতের অহমে লাগলো। একটা জলজ্যান্ত পুরুষ মানুষ নিজের দেশে একটা বিদেশী মেয়ের সাহায্য ছাড়া ঘর থেকে বেরুতে পারবে না এটা কেমন কথা?
“বিপদের ভয়ে আমি মূখে আংগুল দিয়ে চুপ করে ঘরে বসে থাকবো, এটা হয়? আর তুমি তো সারা জীবন আমার সাথে থাকবে না? তখন কি আমাকে চলতে হবে না? বাধা দিও না, আমাকে এখানে এটেন্ড করতেই হবে।”
অমিতের যুক্তি অকাট্য। অগত্যা কাঁধ ঝাকিয়ে চুপ করে গিয়েছিল ম্যাগী।

অমিতের শিক্ষকদের মাঝে মাত্র দুজন এখনও কলেজে আছেন। একজন বর্তমানে প্রিন্সিপাল। তিনি অমিতকে খুব সাদরে বরন করলেন। তার সাথে আরও দুজন প্রাক্তন ছাত্র অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছে। মন্ত্রী মহোদয় এলেন, ফিতা কাটলেন । তার পর স্বভাব সুলভ রাজনৈতিক বক্তৃতা দিয়ে বিদায় হলেন। অমিতও রওয়ানা হলো বড়দার শেভ্রোলে নিয়ে। সে নিজেই ড্রাইভ করছিলো। কলেজটা শহরের একেবারে শেষ প্রান্তে। মাঝ খানে কয়েক কিলোমিটার একদম ফাঁকা। দু পাশে গজারী বন। তার মাঝখান দিয়ে রাস্তা। কালো পীচ ঢালা আঁকাবাঁকা পথ। উপর থেকে দেখলে মনে হয় যেন একটা অলস অজগর শুয়ে আছে।

অমিত খুব সতর্ক হয়ে ড্রাইভ করছে। ম্যাগীর কথা মনে আছে তার। কিছুদূর আসতেই বুঝতে পারলো কেউ তাকে ফলো করছে। একটা ডার্ক-ব্লু গাড়ি। সে স্পীড বাড়ালো। পিছনের গাড়িও স্পীড বাড়ালো। সে আবার কমিয়ে দিল। পিছনের গাড়ি সাথে সাথে স্পীড কমিয়ে দিল। একটা ভদ্র দূরত্ব বজায় রাখছে সব সময়। এমন দূরত্ব যেখান থেকে অমিত গাড়ির ড্রাইভার বা প্যাসেন্জার কাউকে দেখতে পাচ্ছে না। একটু একটু নার্ভাস লাগছে তার। একবার ভাবলো ম্যাগীকে ফোন দেবে। কিন্তু অহমিকাবোধ তাকে থামিয়ে দিল। দেখতে দেখতে বন পথ পার হয়ে এল অমিত। একটু যেন হাপ ছাড়লো।

বন যেখানে শেষ হয়ে ঘন লোকালয় শুরু হয়েছে সেখানে রাস্তার উপর একটা জটলা দেখতে পেল অমিত। গাড়ির স্পীড কমাতে বাধ্য হলো। দূর থেকে হর্ন বাজাচ্ছে। কিন্তু লোক গুলির মাঝে সরে যাবার কোন লক্ষণ দেখলো না। তাদের পাশ কাটানোর জন্য গাড়িটাকে একদম রাস্তার কিনারায় নিয়ে এল সে। তাও বের হতে পারলো না। এক সময় বাধ্য হয়ে ব্রেক কষে থেমে গেল। মিররে তাকিয়ে দেখল পিছনের গাড়িটা উধাও। সামনের লোকগুলিকে স্থানীয় শ্রমিক মজুর টাইপের মনে হচ্ছে। কোন কিছু নিয়ে ঝগড়া করছে তারা। অমিতের দিকে কেউ ফিরেও তাকাচ্ছে না। তার পরও কোটের উপরের দুটো বোতাম খুলে দিল অমিত। শোল্ডার হোলস্টারে চাপ দিয়ে ল্যুগারটা স্পর্শ করলো। একটু যেন স্বস্তি পেল মনে।

লোকগুলি কিছুতেই রাস্তার উপর থেকে সরছে না। আবার তার দিকে কর্ণপাতও করছে না। ফলে বাধ্য হয়ে গাড়ির কাঁচ নামালো অমিত। কয়েকজন মূর্খ শ্রমিক এমন রাস্তা বন্ধ করে জটলা করছে এটা তার একটুও ভাল লাগলো না। বুঝতে পারলো নেমে ধমক দিতে হবে। হুইল লক করে বাম দিকের দরজা খুলে এক পা বাইরে দিয়েই বুঝলো চরম ভুল করেছে অমিত।

পা আর মাথা একই সাথে বের করেছিল সে। কেউ একজন ধাই করে একটা মুগুর চালালো মাথা লক্ষ্য করে। দূর্দান্ত রিফ্লেক্স এর কারণে মাথাটা সরিয়ে নিতে পারলেও কাধঁটা বাঁচাতে পারলো না। মনে হলো সব হাড় গুড়ো হয়ে গেছে। বাম হাতটা ঝুলছে কাধ থেকে যেন এখুনি খসে পড়বে। চোখে সরষে ফুল দেখল অমিত। ব্যাথায় নাক চোখ মূখ কুচকে গেল তার। পিস্তলের দিকে হাত বাড়াতে গিয়ে বুঝলো সময় নেই। মুগুরটা আবার নেমে আসছে। ততক্ষণে শরীরটা গাড়ি থেকে বের করে ফেলেছে সে। সাই করে সেধিয়ে গেল মুগুরধারীর বুকের সাথে। শূণ্যে বাতাস কেটে বেরিয়ে গেল মুগুর। ফলে ভারসাম্য হারালো মুগুরধারী। কাত হয়ে যাওয়া শরীরটাকে ডান হাত দিয়ে ধরলো। তারপর ছুড়ে মারলো গাড়ির উপর দিয়ে বনের ভিতর। একদম আক্ষরিক অর্থেই পাখির মত উড়ে গেল লোকটা। ততক্ষণে তাকে ঘিরে ফেলেছে জটলার লোকজন।

সবচে কাছের লোকটার চুল খামচি দিয়ে ধরলো অমিত। তার মাথাটাকে বেইস করে লাফ দিল ডান দিকে। যেন পোল ভোল্টার বুবকা উড়াল দিল আকাশে। পড়লো গিয়ে সবচে দূরে দাড়ানো লোকটার বুকের উপর পা দিয়ে। শূণ্যে ভাসার আগ মূহুর্তে চুল ধরা লোকটার মাথাটা ঝাকি দিল নীচের দিকে। গাড়ির কিনারায় মূখ থুবড়ে পড়লো সে। যার বুকের উপর পা দিয়ে পড়েছিল অমিত সে আর উঠে দাড়ালো না। অমিত সোজা হতে যাবে এমন সময় একটা পাথরের টুকরা এসে আঘাত করলো সরাসরি বুকের মাঝে। হুস করে সব বাতাস বেরিয়ে গেল। এলোমেলো হয়ে গেল সে। টলতে টলতে এগিয়ে এল গাড়ির দিকে। যেন নতুন হাটতে শিখেছে কোন বাচ্চা শিশু। দুপাশ থেকে চারজন লোক এসে অমিতের দুই হাত মুচড়ে ধরলো। তার পর ঠেসে ধরলো গাড়ির সাখে। সামনে থেকে আর একটা লোক ধারালো চা পাতি নিয়ে তেড়ে এল। থামলো এসে অমিতের পায়ের রেঞ্জের বাইরে। বাম হাতটা মোটেই নাড়াতে পারছে না অমিত। ডান হাত অক্ষত থাকলেও মুচড়ানো হাত দুটিতে ব্যাথা পাওয়া ছাড়া আর কিছুই করতে পারলো না অমিত। চা পাতিওয়ালা তার বাম দিকে চা পাতি তুললো। এক কোপে গলা কাটবে। চোখে চোখ রেখে বললো, “গুড বাই অমিত স্যার।”

চোখ বন্ধ করে ফেললো অমিত। মৃত্যু অনিবার্য। কাজেই হাত টানাটানি করে লাভ নেই। পেশীতে ঢিল দিল। চোখে ভাসলো ঠাকুরমার অনিন্দ সুন্দর মূখ, ম্যাগীর খুনসুটি, অঞ্জলীর অফুরান ভালবাসা আর বন্যার প্রগলভতা। মা-বাবার ঝাপসা স্মৃতিও খানিক উকি দিয়ে গেল মনে। শৈশব, কৈশোর, তারুণ্য আর যৌবনের সকল সুখ স্মৃতিগুলিই তার মনে এল। কারো জন্য কিছু ফেলে রেখে গেল কি? না। কারো উপর কোন অভিমান অভিযোগ নেই। স্বর্গ অথবা নরক দেখা হলে বিধাতা পুরুষকে শুধু একটা কথাই জিজ্ঞেস করবে অমিত “সব কিছুই যদি দিলে তবে এমন অসহায় করে পৃথিবীতে পাঠালে কেন?” অমিত ভাবছে আর অপেক্ষা করছে কখন ঝপাত করে গলা কেটে মাথাটা লুটিয়ে পড়বে। কিন্তু ব্যাটা চাপাতি নিযে দাড়িয়ে আছে কেন? নাকি অমিত মরে গেছে আর মৃত্যুর পর এসব স্বপ্ন দেখছে!! হঠাrকরেই সময় যেন স্থির হয়ে গেছে। বিশ্ব চরাচরে কিছুই নড়ছে না সব স্থির। অমিতের মনে হলো সে যেন অনন্তকাল ধরে মৃত্যুর অপেক্ষা করে আছে।

তার পর এক সময় অনেক দূর থেকে একটা চীrকার ভেসে এলো। প্রথমে একজনের কন্ঠে তার পর অনেকের কন্ঠে। অমিত ভাবলো মৃত্যুর পর নিশ্চই আত্মীয়স্বজন কান্না কাটি করছে। সে চোখ মেললো্ । বাহ! পরজগত তো দেখি ইহ জগতের মতই। একই রকম গাছ পালা, মানুষজন, শব্দ আর কোলাহল। চাপাতিওয়ালার হাতে একটা ছিদ্র দেখা গেল। সেখান থেকে ফিনকি দিয়ে রক্ত ছুটছে। চাপাতি ছিটকে পড়েছে দূরে। দুই পাশের লোক গুলিকেও দেখা গেল অমিতের হাত ছেড়ে সবাই নিজ নিজ হাটুর নীচে হাত দিয়ে চীrকার করছে। ঘটনা কি ? যারা ওকে মেরেছে তারাই ওর জন্য কান্নাকাটি করছে? জগতের সব নিয়ম কানুন বদলে গেল নাকি? তারপর অনেক দূর থেকে ভেসে এল পুলিশের সাইরেনের শব্দ। সাথে সাথে লোকগুলি পড়িমড়ি করে ছুটে পালালো। আর তখনই তীব্র ব্যথায় ঝাকুনী খেল অমিতের শরীর। সম্বিত ফিরে এল তার।

নিশ্চই পিছন থেকে পুলিশ ওকে ফলো করছিল। দুষ্কৃতকারীদের আক্রমণ করতে দেখে তাকে উদ্ধার করার জন্য গুলি করেছে। কিন্তু আশে পাশে তাকিয়ে কোন গাড়ি দেখতে পেল না অমিত। সাইরেনের শব্দটাও নেই। কাধ আর বুকে আগুন জ্বলছে। জ্ঞান হারাবার আগেই ওকে লোকালয়ে পৌছাতে হবে। গাড়ির স্টার্ট বন্ধ হয়নি। কোন রকমে শরীরটাকে দরজা দিয়ে গলিয়ে স্টিয়ারিঙ হুইলে বসলো। লেফটহ্যান্ড ড্রাইভ। ডান হাত ভাল থাকায় কোন সমস্যা হলো না। কয়েক কিলো মিটার যেতেই প্রথম যে হাসপাতালটা পড়লো সেটার সামনে গাড়ি থামালো সে। গাড়ি থেকে নামতে নামতে বন্যাকে ফোন দিল। কেন দিল সে জানে না। হয়তো নাম্বারটা সামনে ছিল তাই। জ্ঞান হারাবার আগে মোবাইল মূখের সামনে নিয়ে শুধু হাসপাতালের নামটা উচ্চারণ করতে পারলো।

বন্যা কলেজ থেকে বাসায় ফিরছিলো । ছোট কাকুর একটা অসম্পূর্ণ কল পেয়ে যারপর নাই বিস্মিত হলো সে। তবে বুদ্ধি হারালো না। নিশ্চই ছোট কাকু বা অন্য কারো কোন বিপদ হয়েছে। সে তrক্ষণাত গাড়ি ঘুরিয়ে হাসপাতালের দিকে রওয়ানা হলো। বাবা দেশে নেই। যেতে যেতে সে তার মা আর ছোট মা অর্থাr বিন্দু কে ফোন দিল। তবে কাউকেই সে ক্লিয়ার করে কিছু বলতে পারলো না। শুধু তার অনুমানের কথা জানালো। প্রত্যেকেই তাকে হাজারটা প্রশ্ন করলো। সে কারো প্রশ্নের জবাব দিতে পারলো না।

স্টিয়ারিঙএর উপর মাথা রেখেই জ্ঞান হারালো অমিত। তার পিছন পিছনেই ব্রেক করলো আর একটা ডার্ক-ব্লু গাড়ি। সেখান থেকে একজন মানুষ নামলো। অমিতকে বের করে নিয়ে গেল হাসপাতালের ইমার্জেন্সীতে। কর্তব্যরত ডাক্তার অমিতকে দেখেই চিনতে পারলো। দ্রুত তাকে ওটিতে নেয়া হলো। পেপারস সাইন করাতে এসে দেখা গেল অমিতকে যারা নিয়ে এসেছিল তারা নেই। তাতে সমস্যা হলো না। কয়েক মিনিটের মাঝেই প্রথমে বন্যা এবং প্রায় একই সাথে বিন্দু আর মঞ্জূ এসে হাজির হলো। অপারেশন চলার মাঝেই এল মনি শংকর । সাথে তার পি এস ম্যাগী। রোহিত খবর পেয়ে সাথে সাথেই দেশের পথে রওয়ানা দিল।

আঘাত বেশ গুরুতর। কাঁধ এবং বুক দুজায়গাতেই কম্পাউন্ড ফ্রাকচার হয়েছে। জীবনের আশংকা নেই। তবে সুস্থ হতে সময় লাগবে। মনি শংকর ম্যাগীকে মঞ্জূ আর বন্যার সাথে পরিচয় করিয়ে দিল। বিন্দু ওকে আগে থেকেই চেনে। মনি শংকর যখন ম্যাগীর পরিচয় দিল আমার পিএস, বিন্দু তখন মূখ বাঁকা করলো। যার অর্থ পিএস না রক্ষিতা সবই আমি জানি। মনি শংকর সেটা লক্ষ করলেও আর কেউ সেটা বুঝতে পারলো না। রাতে মঞ্জু থাকতে চেয়েছিল। কিন্তু রোহিত ফিরে আসছে তার পক্ষে থাকা সম্ভব না। বন্যা কিছুতেই ছোট কাকুকে ছেড়ে যাবে না। বিন্দুও না। ঠিক হলো রাতে বন্যা আর বিন্দু অমিতকে এটেন্ড করবে। মঞ্জু, ম্যাগী খোঁজ খবর নেবে। ফিরে আসার আগে মনি শংকর ডাক্তারের সামনে দাড়ালো। “ডক্টর, অমিত আমার ভাই, আগামীকাল সকালে আমি তার সাথে কথা বলতে চাই।” কি ছিল তার কন্ঠে কে জানে। ডাক্তার কাচুমাচু হয়ে শুধু বললো, “আমি চেষ্টা করবো স্যার।”

সারা রাত দু চোখের পাতা এক করেনি বন্যা। ঠাই জেগে বসে রয়েছে অমিতের মাথার পাশে। বিন্দু বার বার করে বলেছে, “তুই একটু ঘুমিয়ে নে, আমি তো আছি, তোর শরীর খারাপ করবে।” কিন্তু বন্যা শুনেনি। বরং জোর করে বিন্দুকে ঘুমুতে পাঠিয়েছে। “তুমি যাও তো ছোট মা। এ বয়সে রাত জাগলে বরং তোমার ক্ষতি হবে।”

“ওরে আমার বুড়ি, কি এমন বয়স হয়েছে আমার? তোর ছোট কাকুর চেয়েও আমার বয়স কম।”

“ঠিক আছে বাবা ঠিক আছে। তুমি আমার ছোট্ট খুকী। এখন যাওতো! একটু ঘুমাও গে।”

সুইংডোর ঠেলে বিন্দু চলে গেল পাশের রুমে। বন্যা ঘরময় পায়চারী করছে আর খানিক পর পর অচেতন অমিতের যন্ত্রণাকাতর মূখের দিকে তাকাচ্ছে। সদ্য তরুণীর ছোট্ট বুকটাতে কি গভীর মায়া যে খেলা করছে তা বলে বুঝানো যাবে না। অচেতন অবস্থার মাঝেই অমিতের প্রতিটি মৃদু মুভমেনেন্টর সাথে বন্যার মূখের অভিব্যক্তি পাল্টে যাচ্ছে। ব্যাথাটা যেন অমিত নয় বন্যা নিজে অনুভব করছে। হঠাr মনে হলে দূর্ঘটনার খবরটা মাসিমনিকে জানানো হয়নি। রাত প্রায় দুটো বাজতে চলল । কিছু যায় আসে না। তার সুখ-দুঃখের সবচে প্রিয় সাথী হলো মাসিমনি। দুনিয়ার এমন কোন কথা নেই যা সে তার মাসিমনির সাথে শেয়ার করে না। তার সাথে তার সময়ের কোন বালাই নেই। দরজা খুলা রেখেই ক্যাবিনের বারান্দায় চলে এল সে।
ফোন করলো মাসিমনিকে। প্রথমবার রিং হতেই অঞ্জলী রিসিভ করলো। যেন রাত দুটো পর্যন্ত জেগে বসেছিল ফোন ধরার জন্য।

“কি হয়েছে বন্য মা?”

“তুমি জেগে ছিলে?”

অঞ্জলী জবাব না দিয়ে পাল্টা প্রশ্ন করলো, “কেন ফোন দিয়েছ বল?”

“ছোট কাকু গুরুতর আহত হয়েছেন।”

“এখন কেমন আছেন তিনি?”

“জানি না। সেন্ট্রাল হাসপাতালে রয়েছেন। আমি আর ছোট মা তাকে এটেন্ড করছি। ডাক্তার বলেছেন জীবনের আশংকা নেই। তবে সেরে উঠতে সময় লাগবে। কাকুর খুব কষ্ট হচ্ছে মাসিমনি।” ডুকরে কেঁদে উঠলো বন্যা। ক্যাবিনে যাতে শব্দ না যায় সে জন্য নিজেই মূখে হাতচাপা দিল। অঞ্জলীর ওপাশ থেকেও কি ফোপানোর শব্দ পাওয়া গেল একটা? নিজের কান্না চাপতে ব্যস্ত থাকায় বন্যা বিষয়টা বুঝতে পারলো না।

“তুমি সাবধানে থেকো মা। আর কাকুর দিকে খেয়াল রেখো। আমার ফোন খোলা আছে। যখন খুশী আমাকে রিং করে জানিও।”

রোহিত খুব চিন্তিত আর বিমর্ষ। ট্যুর অসমাপ্ত রেখে ব্যাংকক থেকে ফিরে এসেছে। বাসায় না গিয়ে এয়ারপোর্ট থেকে সরাসরি হাসপাতালে এল সে। এক মাত্র কন্যা আর স্ত্রীকে নিয়ে রোহিত ভালই ছিল। নিজের অংশ থেকে আয় রোজগার মন্দ হচিছল না। আবার অমিতের মিল থেকে মূনাফা না হলেও এর একটা ফিনান্সিয়াল এক্সপোজার ছিল। কিছু অসr কর্মচারীর লোভের কারণে মিলটা মূনাফার মূখ দেখছে না। ওদের নিয়ন্ত্রণ করাও সম্ভব নয়। এক দিকে ইউনিয়ন আর এক দিকে স্থানীয় সন্ত্রাসী গ্রুপ মিলটাতে আস্তানা গেড়েছে। ওদের ম্যানেজ করেই চলে যাচ্ছিল কোন রকমে। কিন্তু অমিত আসার পর সব কেমন জানি গোলমাল হয়ে গেল।

রোহিত যখন হাসপাতালে এল তখনও ভোরের কুয়াশা কাটেনি। তার গাড়িটা মেইন গেইটে আসার আগে আগে সাঁ করে একটা ডার্ক-ব্লু বেরিয়ে গেল। সে লাউঞ্জে অপেক্ষা করছে। এখন তাকে ভিতরে যেতে দেবে না। বন্যাকে খবর দেয়া হয়েছে। বিন্দুকে অমিতের কাছে রেখে বন্যা এসেছে বাবার কাছে। রোহিতকে দেখতে পেয়েই কান্নায় ভেংগে পড়লো সে। “বাবা, ছোট কাকু….”কথা শেষ করতে পারল না। কান্নার দমকে গলার স্বর বুজে এল। রোহিত হাত বাড়িয়ে মেয়েকে বুকে টেনে নিল।
“ডোন্ট ওয়ারী ব্যাটা, এভরিথিং উইলবি রাইট।” মেয়ের পিঠে সান্ত্বনার চাপড় দিল রোহিত।

সাতটা নাগাদ জ্ঞান ফিরলো অমিতের । চোখ মেলে দেখল বিন্দু বসে আছে তার মাথার পাশে। শরীরটা ভীষণ ভারী। কাধঁ আর বুকে প্লাস্টার। প্রথমে বুঝতে পারলো না সে কোথায় আছে, কি করছে। সামান্য নড়াচড়ায় তীব্র ব্যাথা লাগলো তার। ব্যাথার চোটে চোখ দিয়ে পানি এসে গেল। সেই সাথে মনে পড়লো সব কিছু। বিন্দু সরাসরি তাকিয়েছিল তার দিকে। ব্যাথার ধরণটা দেখে কেঁপে উঠলো বুকের ভিতর। আঁচল দিয়ে অমিতের চোখের কোণ মুছে দিল।
“নড়াচড়া করো না ঠাকুর পো।”

“আমি এখন কোথায় মেজবৌদি?”

""পৃথিবীটা রঙ্গমঞ্চ আমরা সবাই অভিনেতা"" !! Sad

[+] 2 users Like Kolir kesto's post
Like Reply
#27
১৮ পর্ব



“এটা হাসপাতাল। তুমি আঘাত পেয়েছ। তোমার চিকিrসা চলছে। কোন কথা বলো না। আমি ডাক্তারকে খবর দিচিছ।” বেল টিপে সিস্টারকে ডাকলো বিন্দু। সিস্টার ডাক্তারকে খবর দিল।


বিন্দু অমিতের জ্ঞান ফেরার খবর মনি শংকরকে জানাল, বন্যাকেও মোবাইলে ইনফরম করলো। মনি শংকরকেও জানালো। কিছুক্ষণ পরেই ডাক্তার এল ক্যাবিনে। তার পেছন পেছন এল রোহিত, বন্যা এবং মনি শংকর। অমিতকে কথা বলতে দেখে ডাক্তারের মূখে হাসি ফুটলো। রসিকতা করতেও ছাড়লো না। “এটা নিশ্চই সিআইএ ‘র কাজ। তারা চায় না বিকল্প জ্বালানী উদ্ভাবনের ফর্মূলা ওরা ছাড়া আর কারো হাতে থাকুক। ঘাবড়াবেন না স্যার, কোটি কোটি মানুষের সুখের ভার যে কাধেঁ সে কাঁধ এত সহজে ভাংবে না।” কথা শেষ করে ঘুরতেই ডাক্তার মুখোমূখি হলো মনি শংকরের। “ওয়েলডান ডক্টর, থ্যাংকিউ।


মাথার চুল ছিড়তে ইচ্ছে করছে ম্যাগীর। এত করে বারণ করা স্বত্বেও অমিতকে সে থামাতে পারেনি। এখন বিষয়টা এমন এক পর্যায়ে গেছে যে সে কিছুতেই আর অমিতের সাথে খোলাখুলি দেখা করতে পারছে না। বাইরে সে একজন সাংবাদিক আর মনি শংকরের টেম্পোরারী পিএস। একমাত্র অঞ্জলী জানে অমিতের সাথে তার যোগাযোগ আছে। সেটাও জানে ভুল। অঞ্জলীর ধারণা সে অমিতের স্ত্রী। যে করেই হোক এ ভুল ভাংগাতে হবে। অমিতের কাছাকাছি থাকার ব্যবস্থা করতে হবে।


সে ফোন তুললো, “অঞ্জলী আমি তোমার সাথে একটু দেখা করতে চাই।”

“আমার মনটা ভাল নেই ম্যাগী। আমরা পরে সাক্ষাত করি?”

“না, আজ এখুনি, কোথায় আসব বল?”

“তোমার সাথে আমার দেখা করতে ইচ্ছে করছে না ম্যাগী, তুমি কিছু মনে করো না।”

“অবশ্যই করবো, তোমার মন আছে আমার মন নেই?”

“তা থাকবে না কেন? স্বামীর এমন অবস্থায় স্ত্রীর মনইতো সবচে বেশী খারাপ হয়।”

“জাস্ট শাট আপ। আমি ওর স্ত্রী নই। ফোনে সব বলতে চাইনা। আমি আসছি।”


ম্যাগী যখন আশ্রমে এল অঞ্জলীর সাথে দেখা করতে তখন বিকেল গড়িয়ে গেছে। দীঘির পাড়ে মন খারাপ করে বসেছিল অঞ্জলী। এসময়ে কেউ তাকে বিরক্ত করে না। ম্যাগী নাছোড়বান্দা। তাই বাধ্য হয়ে সুদীপা মোবাইলে অঞ্জলীকে রিং দিল।

“সরি ম্যাডাম, সাংবাদিক মহিলা এমন করে বলছেন যে আপনাকে বিরক্ত করতে হলো।”

“ঠিক আছে, পাঠিয়ে দাও।”


অঞ্জলীর চোখের নীচে কালির ছাপ। চোখে মূখে রাজ্যের ক্লান্তি। বিষন্ন, মলিন। ম্যাগীর খুব মায়া হলো ওকে দেখে।

“একি হাল হয়েছে তোমার” খুব আন্তরিক ভাবেই বললো ম্যাগী।


“আমার কথা বাদ দাও, তুমি কেন এসেছ বল?”


“অমিত খুব বিপদের মধ্যে আছে, ওকে বাঁচাতে হবে।”


“কেউ তো মানা করছে না, এ ক্ষেত্রে আমার কি করার আছে?”


“তোমার করার আছে, কারণ তোমার জন্যই আজ তার এ বিপদ।”


“হোয়াট ননসেন্স?”


“যতই গালি দাও এটাই সত্য। আমি চেষ্টা করেছিলাম ওকে আমেরিকা ফিরিয়ে নিতে। কিন্তু সে যাবে না। তোমাকে ছেড়ে সে কিছুতেই যাবে না?”


“আমার সাথে তার কিসের সম্পর্ক?” অঞ্জলী রেগে গেল।

“সেটা তুমি জান আর অমিত জানে, আমাকে চোখ রাঙিয়ে কোন লাভ নেই।” ম্যাগীও কড়া গলায় জবাব দেয়।


“স্ত্রী হও আর গার্লফ্রেন্ড হও, সম্পর্ক যা কিছু সবই তোমার সাথে। আমার সাথে তার কোন সম্পর্ক নেই।”


“তুমি আউট অব জেলাসী এসব বলছ। অমিত আর তুমি পরস্পরকে ভালবাস। আমি জানি।”


“জাস্ট শাট আপ। আমি তোমার প্রতি জেলাস হবো কেন? মন খারাপ করেছি আমার কাছে সম্পর্কটা লুকিয়েছ বলে।”

“তোমার কাছে কিছুই লুকানো হয়নি। আমরা দিনের পর দিন একই ছাদের তলায়, একই ঘরে, একই বিছানায় রাত কাটিয়েছি। কিন্তু আমাদের মাঝে কোন সম্পর্ক নেই। কোন দিন সে সচেতনভাবে আমার দিকে ফিরেও তাকায়নি। ম্যাক্সিমাম আমাকে তার প্রাইভেট সেক্রেটারী বলতে পার।”


“বিশ্বাস করতে বলছ?”


“বিশ্বাস করা না করা তোমার ব্যাপার।”


সে ম্যাগীর হাত চেপে ধরলো, “তুমি সত্যি জান সে আমাকে ভালবাসে?”


“জানি, আর তুমিও যে তাকে ভালবাস এটা নিশ্চিত হবার জন্যই এত নাটক। তবে তুমি এয়ার পোর্টে না যাওয়াতে অমিত খুব হতাশ হয়েছিল।”


“মনি শংকরকে এড়ানোর জন্যই আমি এয়ারপোর্টে যাইনি”


“তুমি কি জান, প্রথম দিন রাতেই তার উপর আততায়ী হামলা করেছিল? তোমার কাছে সেটাই বলতে এসেছিল সে। আর তুমি তাকে অপমান করে তাড়িয়ে দিয়েছিলে। তোমার কাছে ছুটে এসেছিল আশ্রয়ের আশায়। আর অভুক্ত অসহায় মানুষটাকে তুমি আঘাত করেছিলে নিষ্ঠুরভাবে।”

“আসলে আমি চাইনি আমার জন্য পিছুটান থেকে তার দাম্পত্য জীবনে কোন ছন্দ পতন ঘটুক।”


“ভুল করেছিলে তুমি”


অঞ্জলী চুপ মেরে গেল। তাই যদি হয় তাহলে অমিতের উপর খুব অন্যায় করা হয়েছে। সে ঝর ঝর করে কেঁদে ফেললো।


“আমাকে ওর কাছে নিয়ে চলো ম্যাগী।”


“আমার পক্ষে সেটা সম্ভব নয়। এখানে আমি অমিতের কেউ না। আচ্ছা তুমি কি ধারণা করতে পার কারা অমিতের উপর হামলা করতে পারে?”


“না আমার কোন ধারনা নেই।”


কিছু বিষয় আছে যা কখনও শেয়ার করতে হয় না। কারও সাথেই না। ঠাকুরমা-অঞ্জলী-মঞ্জুর সম্পর্ক, অমিত-ঠাকুরমার সম্পর্ক, অমিত-সরলার সম্পর্ক, অঞ্জলী-ম্যাগীর সম্পর্ক বা অমিত-ম্যাগীর সম্পর্কগুলি শেয়ার করার মত নয়। এগুলি তাদের নিজেদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে। এধরণের সম্পর্কগুলি যদি গোপন না থাকে তবে জগত সংসারে বিশৃংখলা দেখা দেবে। তেমনি কিছু কাজও গোপন রাখতে হয়। যেমন অঞ্জলী কাউকে বলেনি কিছু লোককে গাড়ি ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেবার কথা। এমনকি ম্যাগী, অমিত বা সুব্রতকেও না। আবার ওরা যে অমিতের আততায়ী তাও জানে না। তেমনি অঞ্জলী কখনও কাউকে বলবে না সেদিন অমিতকে সেইভ করার কথা।


অমিত যেদিন প্রথম আক্রান্ত হলো সেই রাত থেকেই ডার্ক-ব্লু গাড়িতে করে তাকে ফলো করে আসছে অঞ্জলী। গাড়িটা ভাড়া করা এবং দূরের একটা গ্যারেজে রাখা হয়। সে নিজে ড্রাইভ করে। গোপনীয়তার জন্যই সে একা কাজ করে। মাঝে মাঝে সে অমিতকে হারিয়ে ফেলে। বিশেষ করে ম্যাগী যখন তাকে শেখের ছদ্মবেশে হোটেলে নিয়ে রাখতো তখন। বাকী সময়টা অনেক দূর থেকে অমিতকে ফলো করে অঞ্জলী।


কলেজে বিজ্ঞান ভবন উদ্বোধনের দিনও তাকে অনুসরণ করছিল। বন পথে অমিত আক্রান্ত হবার আগ মূহুর্তে অঞ্জলী তার পিছনেই ছিল। যখন অমিত গাড়ি ব্রেক করলো তখন অঞ্জলী তার গাড়ি বনের মধ্যে ঢুকিয়ে দিয়েছিল। সে যখন পার্ক করায় ব্যস্ত তখনই অমিত আক্রান্ত হয়। চীrকার করে সাবধান করার সময় ছিল না। তাই সরাসরি গুলি করে অঞ্জলী। তবে সতর্ক ছিল যাতে কেউ মারা না যায়। আর পুলিশের সাইরেনের শব্দওয়ালা খেলনাগাড়ি এখন ফুটপাতেই পাওয়া যায়। ভয় দেখানো আর ডাইভারশন তৈরী করার জন্য খেলনা গাড়ি দিয়ে আওয়াজ করেছিল অঞ্জলী। তার পর গাড়ি নিয়ে অমিতকে ফলো করেছে হাসপাতাল পর্যন্ত। হাসপাতালের কাছে গিয়ে অমিত জ্ঞান হারিয়েছিল। তখন অঞ্জলীই তাকে ইমারজেন্সীতে নিয়ে যায়। সে পুরুষের ছদ্মবেশে ছিল। তাই বন্যা ঢুকে তাকে দেখেও চিনতে পারেনি। বন্যা ঢুকার পর সে সেখান থেকে সরে পড়ে। তার পর আবার রাত দশটা থেকে হাসপাতালের গেটে বসে থাকে ভোরে রোহিত ঢুকার আগ পর্যন্ত। এসব তথ্য সে কাউকেই শেয়ার করবেনা। যেমন পুলিশের ভয় আছে, তেমনি শত্রুরাও সতর্ক হয়ে যাবে। তবে সে সত্যি জানে না কারা অমিতকে হামলা করতে পারে।


অমিতকে যারাই আক্রমণ করুক, অঞ্জলী তাদের খুজেঁ বের করে শাস্তি দেবে। চরম শাস্তি। এ্টা তার একার যুদ্ধ। এখানে সে কাউকে সাথে নেবে না। ম্যাগী বা সুব্রতকেও না। যদি রায় পরিবারের ভিতরেই থাকে ভিলেইন তবে পুলিশ বা ম্যাগী দূর্বল সহযোগী।


একটা বিরাট হলঘরের মাঝখানে একটা টেবিলের একপাশে লাইন ধরে দাড়িয়ে আছে সাতজন লোক। টেবিলের অপর পাশে একজন লোক চুপ করে বসে আছে। একটা উজ্জ্বল আলো টেবিলটাকে দুইভাগে ভাগ করেছে। একভাগে টেবিলসহ সিংগেল লোকটা অন্ধকারে। তাকে দেখাচ্ছে একটা ছায়ার মত। অন্যভাগে দাঁড়ানো সাতজন আলোর ভিতর। বসা লোকটা এক এক করে সাতজনকে একটা লাঠি দিয়ে গুতো দিয়ে পরীক্ষা করছে। নাক-মূখ থেতলা, পাজর ভাংগা, হাত ছিদ্র, হাটু ভাংগা, উরু ছিদ্র, পায়ের পাতা অর্ধেক প্রায় নেই। “বাহ তোদেরকে এমন আদর করে মারলো কে রে” ছায়ার খ্যান খ্যানে কন্ঠ। “বুঝাই যাচ্ছে তোদের জানে মারতে চায়নি। তোদের মত অপদার্থ পুষে আমার কি লাভ শুনি? সাতজন মানুষ একটা অপ্রস্তুত লোককে ঘায়েল করতে পারলি না, শীট!!!

“বস্* লোকটার গায়ে অসুরের শক্তি। আর অসম্ভব ক্ষিপ্র। তাও আমরা শেষ করতে পারতাম। কিন্তু কোথা দিয়ে যে পুলিশ চলে এল বুঝতেই পারলাম না।”


“প্রশ্নটা আমারও” ছায়া বললো, “পুলিশ আসার কথা না। হুম, আমি দেখছি। এবারের মত বেঁচে গেলি। আগামী একমাস গর্তে লুকিয়ে থাকবি। তোমাদের চাঁদ বদন যেন বিশ্ব চরাচরে কেউ দেখতে না পায়। আর একটা কথা সাতজন সাত দিকে থাকবি। নাউ গেট লস্ট।”


নিজের ঘরে বসে অমিতের সাথে তোলা তার ছবি গুলি দেখছিল অঞ্জলী। অনেক অনেক ছবি। বড় বড় পাঁচটা এলবাম। নানান ঘটনার, নানান ধরণের স্মৃতি। কিছু কিছু ছবি আছে খুবই অন্তরংগ। দেশ ছাড়ার আগে তাদের মাঝে সম্পর্কটা খুবই ঘনিষ্টতায় রূপ নিয়েছিল। যেদিন অমিতের রেজাল্ট হলো সেদিনই প্রথম অমিতকে চুমু খেয়েছিল অঞ্জলী। গাঢ়, কঠিন চুমু। নির্জন পার্কের বেঞ্চিতে বসে দুহাতে জড়িয়ে ধরে চুমু খেয়েছিল। তবে অনভ্যস্ত অমিত রিটার্ন করেনি। লজ্জায় লাল হয়ে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থেকেছে। উত্তেজিত অঞ্জলী মনেপ্রানে চাইছিল অমিত তাকে ভোগ করুক। তার টুইটুম্বুর যৌবনসুধা চেটেপুটে খাক অমিত। কিন্তু অমিত লজ্জা কাটিয়ে উঠতে পারেনি। অঞ্জলী অতিষ্ঠ হয়ে মূখ ফুটে বলেছে “আমায় আদর কর রাজ কুমার, তোমার অঞ্জলীকে তুমি গ্রহণ কর।” তার গলা ফ্যাসফেসে, প্যান্টি ভিজে উরু বেয়ে রস গড়িয়ে পড়ছে। অমিত শুধু তাকে জড়িয়ে ধরে দুই স্তনের মাঝখানে মূখ লুকিয়ে চুপ করে থেকেছে। ছোট্ট শিশু যেমন করে মায়ের বুকে মূখ লুকায়। অঞ্জলী বুঝেছে অমিতের আরও সময় লাগবে। সে আর বাড়াবাড়ি করেনি। এসব ঘটনার এর ছবি সে মোবাইল ক্যামেরায় তুলে রেখেছে। আজ এত দিন পর এসব ছবি দেখতে দেখতে চোখটা ঝাপসা হয়ে আসে তার।


হঠাr মোবাইলের শব্দে সম্বিত ফিরে তার। রাম লালের ফোন।

“বলো রামু কাকা”

“মা জননী, আমি একবার তোমার ঘরে আসবো?”

“ওমা এস, এত ফরমালিটির কি আছে?”

“ঠিক আছে মা জননী, আমি আসছি”


রামলাল দারোয়ান। আসলে দারোয়ান না বলে তাকে সিকিউরিটি ইনচার্জ বলা ভাল। লেখা পড়া জানে। আর্মিতে ছিল। সুবেদার বা হাবিলদার এধরণের কিছু। চির কুমার। জগত সংসারে আপনার বলতে কেউ নেই। অসম্ভব সাহসী আর বিশ্বাসী। এ বিশাল বাড়ির প্রতিটি কোণায় কোণায় তার নজর আছে। তার নজর এড়িয়ে একটা পাখীও গলাতে পারে না। তবে যাদের অনুমতি আছে তাদের ব্যাপারে কখনও নাক গলায় না। ঠাকুরমা তাকে ভীষণ স্নেহ করতেন। প্রতিমা, অমিত কিংবা তাদের বয়সী রায় বাড়ির প্রায় সকল ছেলে মেয়ে তার কোলে পিঠে মানুষ হয়েছে। বিশেষ করে অমিত ছিল তার চোখের মনি। ছোট বেলা মা-বাবা হারানোর কারণে ঠাকুরমার মত রামলালও ছিল অমিতের প্রতি এক্সট্রা কেয়ারিং। রাজ শেখর রায় চৌধুরীও আর্মিতে ছিলেন। তিনি ছিলেন ইঞ্জিয়ারীং কোরের লোক। রামলাল একসময় তার অধীনে ছিল। সে সময় এক অপারেশনে রাজশেখর তার জীবন বাচিয়েঁ ছিলেন। ব্যাস, তখন থেকেই রামলাল মুফতে পাওয়া জীবনটাকে রায় বাড়ির জন্য উrসর্গ করতে এক পায়ে খাড়া। এ বাড়ির লোকজনও তাকে সম্মানের চোখে দেখে।


দরজায় নক হতেই ভেতর থেকে অঞ্জলী ডাকলো, “এস রামু কাকা।” রামলাল ঘরে ঢুকে নমস্কার করে এক কোণায় কাচুমাচু হয়ে দাড়িয়ে রইল। অঞ্জলী বিছানায় আধশোয়া ছিল। তাকে দেখে উঠে বসলো। পাশের একটা চেয়ার দেখিয়ে তাকে বসতে বললো। রামলাল কিছুতেই বসবে না। অঞ্জলীকে সে ঠাকুরমারচেও বেশী সমীহ করে। অঞ্জলী উঠে গিয়ে হাত ধরে টেনে এনে চেয়ারে বসিয়ে দেয়।

“শুন রামু কাকা, এখন তো অফিস আওয়ার নয়, তুমি আমার ঘরে আমার অতিথি। চুপটি করে বসো, চা খাও।”


অঞ্জলী তাকে চা-জল খাবার দেয়। নিজেও এক কাপ চা নিয়ে তার সামনে বসে। “এবার বল কি জন্য এসেছ?”

অঞ্জলীর আন্তরিকতা সবসময়ই ভাললাগে তার। আজ যেন সেটা বেশী করে চোখে পড়লো। বড় মা জননী ছাড়া এত সম্মান আর কেউ করে না। তার চোখের কোন চিক চিক করে উঠলো। তবে প্রফেশনাল বলে বুঝতে দিল না।

“আমার একবেলা ছুটি দরকার মা জননী।”

“কোথাও বেড়াতে যাবে?”

“না গো মা জননী, রাজা বাবুকে দেখতে যাব। সেদিন তিনি এসেছিলেন। আমি চিনতে পারিনি। যখন পারলুম তখন তিনি আহত। আমার বড় মায়া লাগছে মা জননী।”


“বেশ তো যাও। আর শুন, তুমি কিন্তু গাড়ি নিয়ে যাবে। রাজা বাবুর ভিজিটর বলে কথা। কোন অজুহাত করবে না । এটা আমার হুকুম। আমি ড্রাইভারকে বলে দিচ্ছি।”


“আজ্ঞে মা জননী।”

ঘরে ফিরে নিজের সবচে সুন্দর জামাটা বের করলো রামলাল। তার পর লোহার বড় সেফটা খুললো। সেফটা এত বড় যে এর মাঝে অনায়াসে দুতিনজন মানুষ দাড়িয়ে থাকতে পারবে। এটা দেয়ালের সাথে লাগানো একটা বিল্ট ইন সেফ। শুধু সামনের দরজাটা লোহার তৈরী। এটার মধ্যে কি আছে সে ছাড়া কেউ জানে না। তার ঘরে কেউ কখনও ঢুকেও না। সেফের ভিতর থেকে পলিথিনে মোড়ানো দুটি ফোল্ডার বের করলো সে। একটাতে একটা ব্লু প্রিন্ট। আর একটায় একপাতার একটা হাতে লেখা দুই শীট কাগজ। অনেকটা চিঠির মত। একটা শীট খুব পুরনো। আর একটা শীট এর ফটোকপি। ব্লু প্রিন্টায় একবার চোখ বুলিয়ে রেখে দিল সেফে। হাতে লেখা কাগজের ফটোকপিটা খুব সাবধানে পাঞ্জাবীর বুক পকেটে নিল। তারপর ঘরের দরজায় তালা দিয়ে বেরিয়ে এসে গাড়িতে উঠলো।


ড্রাইভার জিজ্ঞেস করলো “কোথায় যাবো?”

“সেন্ট্রাল হাসপাতাল”


রামলাল যখন হাসপাতালে পৌছাল তখন সন্ধ্যে উতরে গেছে। ডাক্তার রাউন্ড শেষ করে গেছেন। অমিতের আঘাতটা বাইরে থেকে বুঝা যায় না। ভিতরে খুবই ক্ষতি করেছে। কাধেঁর আঘাতটা তেমন গুরুতর নয়। তবে বুকের আঘাতটা খুবই মারাত্মক। বুকের খাঁচার হাড় ভেংগে ছোট টুকরা মাংসের সাথে গেথে গেছে। ভাংগা হাড় জোড়া লাগার চেয়েও মাংসের ভিতর সেধিয়ে থাকা হাড়ের টুকরা অপসারণ করা জরুরী। ডাক্তার সন্দেহ করছেন অপারেশন ছাড়া শুধু মেডিসিনে সেটা সম্ভব নয়। ব্যথাটাও সারছে না সেজন্যই। পেইন কিলার তেমন কাজ করছে বলে মনে হয় না।


রামলালের হাতে দুটো প্যাকেট। কিছু ফলমুল এনেছে সে তার রাজা বাবুর জন্য। ঘরে ঢুকে দেখল বন্যা একটা চেয়ারে চুপ করে বসে আছে। অমিত আধা ঘুম আধা জাগরণের মাঝখানে ব্যথায় কাঁতরাচ্ছে। বন্যাকে দেখে হাত তুলে নমস্কার করলো রামলাল। “দিদি মনি, রাজা বাবু এখন কেমন আছেন?”

“বেশী ভাল না রামু দা, ব্যথায় খুব কষ্ট পাচ্ছেন।”

“আমি কি কথা বলতে পারবো?”

“বল তবে খুব সংক্ষেপে।”

“ঠিক আছে দিদি মনি, আমি শুধু কিছু সময় বসে থাকবো। ততক্ষণ আপনি বিশ্রাম নিতে পারেন।”

বন্যা কিছু সময়ের জন্য পাশের রুমে যায়। বিন্দু বিকালে চলে গেছে। রাতে আবার আসবে। রামলাল থাকা অবস্থায় একটু বিশ্রাম নিলে মন্দ হয় না।


রামলাল একটা টুল টেনে অমিতের মাথার কাছে বসলো। কপালে একটা হাত রেখে দেখল তার গায়ে তীব্র জ্বর। কপালে হাতের ছোয়া পেয়ে অমিত চোখ মেলে তাকালো। উঠে বসার চেষ্টা করতেই রামলাল হাতের ইশারায় থামিয়ে দিল।

“কেমন আছেন রাজা বাবু, আমি সেদিন আপনাকে চিনতে পারিনি। আমাকে ক্ষমা করে দিবেন।”

অমিত ভাল হাতটা দিয়ে রামলালের একটা হাত চেপে ধরলো। কোন কথা বললো না। রামলালও চুপ করে বসে রইল অমিতের হাত মুঠিতে নিয়ে। অনেক অনেকক্ষণ পর ফিস ফিস করে বললো, “ভু-ভারতে কার এত বড় বুকের পাটা আমার রাজাবাবুর গায়ে হাত দেয়। একবারটি আমাকে দেখিয়ে দিন। আমি মশা মারার মত করে ওদের পিষে মারবো।”

শ্বাপদের মত জ্বলে রামলালের চোখ। আততায়ীদের পেলে যে মশা মারার মতই মারবে তাতে কোন সন্দেহ নাই। অমিত কথা বলে না। শুধু হাতের চাপ সামান্য একটু বাড়ে। রামলাল পাশের রুমের দরজার দিকে একবার দেখে। তারপর পাঞ্জাবীর পকেট থেকে সন্তর্পণে ভাজ করা চিঠিটা অমিতের হাতে দেয়। ফিস ফিস করে বলে, “বড় মা জননী মৃত্যুর আগে আমার হাতে দিয়ে বলেছিলেন কাকপক্ষীর অগোচরে এটা যেন আমি আপনাকে দেই। আপনার সাথে দেখা হবার আগে যদি মরে যাই তাহলে যেন ধ্বংস করে ফেলি। লোক জানাজানি হলে নাকি আপনার বিপদ হবে। এখানে কি আছে আমি জানি না। মূল কপি নিরাপদে আছে। এটা ফটোকপি। একবার চোখ বুলিয়ে আমাকে ফেরত দিবেন। সুস্থ্য হলে এটা নিয়ে যা করার করবেন।”


অমিত চোখ বুলাল। বাংলা ইংরেজিী মেশানো একটা মামুলী চিঠি। এটার গোপনীয়তার গুরুত্ব অমিত বুঝতে পারলো না। হয়তো ঠাকুরমার কথাকে প্রাধান্য দিতে গিয়েই রামলাল এটা বলেছে। তবুও সাবধান হলো অমিত। চিঠিটা পড়লো। তারপর ফিরিয়ে দিলো রামলালকে। তার ফটোগ্রাফিক মেমোরী। একবার পড়েছে। জীবনে আর কোন দিন ভুলবেনা।


Dear বিদ্রোহী রাজকুমার,

আমার চিঠি যখন পাবে আমি তখন পরপারে। যাবার আগে আমি আমার সকল Asseet তোমাদের মাঝে ভাগ করে দিয়েছি। আমার নিজের বলতে গেলে এখন আর কিছুই নেই। আমি জানি তুমি ভালো মানুষ হিসাবেই বড় হয়েছ। ফলে আমার ভাগাভাগি নিয়ে প্রশ্ন তুলবে না। তবে জগতে ছোট বড় সবধরণের মানুষ আছে। সবার কাছে সবটা পছন্দ নাও হতে পারে। যাই হোক পারিবারিক বন্ধন বজায় রাখার চেষ্টা করো। কোম্পানী চালাতে হলে Bank আর Union এই দুটোর উপরই তোমাকে নির্ভর করতে হবে। তবে বিশ্বাস করার ক্ষেত্রে সতর্ক থেকো। তোমার Knowledge-Attitude-Endevour তোমাকে পথ দেখাবে। শুধু A নয় আমি তোমাকে A টু Z ভালবাসি।


ইতি


ঠাকুরমা


চিঠির মাথা মুন্ডু তার মাথায় কিছুই ঢুকল না। তবে প্রতিটা শব্দ মনে গেথে রাখলো। যাবার আগে রামলাল অমিতের কপালে নাক ছোয়াল। সন্তানহীন রামলালের কাছে অমিত সন্তানের মত। চাকর-মনিবের কোন ব্যবধান এখানে একেবারেই নেই।


রামলাল চলে যাবার কিছুক্ষণ পরেই সুব্রত এলো অমিতের কেবিনে। মনি শংকর গত রাতেই একটা ডায়রী করেছিল থানায়। ডায়রীর সূত্রে অমিতের সাথে কথা বলার জন্য সুব্রত এসেছে। তখনও বন্যা একাই অমিতকে এটেন্ড করছিল। বিন্দু এসে পৌছায়নি। সুব্রত এসে ডাক্তারের অনুমতি নেয়। তারপর অমিতেরও সম্মতি নেয়। অমিত যখন জানাল সে কথা বলতে পারবে তখন সুব্রত বন্যার দিকে তাকিয়ে হাত জোড় করে। বন্যা বুঝতে পারে সুব্রত একা কথা বলবে।


বন্যা চলে যেতেই সুব্রত বলে, “স্যার আমি দুঃখিত আপনার নিরাপত্তায় আমরা যথেষ্ট ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারিনি। গত দুই দিন আমি একটা স্মাগলার গ্রুপকে তাড়া করছিলাম সীমান্ত পর্যন্ত। তবে কথা দিচ্ছি হামলাকারীদের আমি আইনের আওতায় এনে উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করবো।”


“থ্যাংকিউ অফিসার।”

“স্যার আপনি কি কাউকে চিনতে পেরেছেন?”

“না”

“কাউকে সন্দেহ করেন?”

“না”

“স্যার আমি আপনাদের অনাথ আশ্রমে মানুষ। মিস অঞ্জলীকে আমরা মায়ের মত জানি। এই আশ্রম আমার মত শত শত ছেলে মেয়েকে জীবনের পথ দেখিয়েছে। আপনি আমাকে পুলিশ না ভেবে একজন গুণমুগ্ধ সেবক হিসাবে সব কিছু খুলে বলতে পারেন।”

“আসলে আমার কোন শত্রু আছে এটাই ভাবতে পারছি না।”

“আক্রমণকারীরা ঠিক কি চাইছিল আপনার কাছে?”

“কিছু চায় নি। সরাসরি আক্রমণ করেছে।”

“হাসপাতালে আমি পুলিশ প্রহরার ব্যবস্থা করছি। আপনি নিশ্চিন্ত থাকুন।”

“না অফিসার, এটা আমার ভাল লাগবে না।”

“ঠিক আছে স্যার, আপনার যা মর্জি।”


হঠাr টেবিলের উপর রাখা বন্যার মোবাইলটা কেপেঁ উঠলো। ভাইব্রেশন মুডে দেয়া ছিল। বার দুই কাপার পর থেমে গেল। অনৈতিক তবুও পুলিশের কৌতুহল বলে কথা। সুব্রত কলার এবং তার নাম্বারটায় দ্রুত চোখ বুলিয়ে নিল। পাশের রুম থেকে বন্যা কিছুই বুঝতে পারলো না। অমিতকে নমস্কার জানিয়ে বেরিয়ে এল হাসপাতাল থেকে।


ইন্সপেক্টর সুব্রতকে খুব চিন্তিত মনে হচেছ। একজন বিজ্ঞানী মানুষ পনের বছর পর দেশে ফিরে এসেই আততায়ী হামলার শিকার হবে আর সে কোন প্রোটেকশন পাবেনা সেটা কেমন কথা? কোন দিক থেকেই কোন হদীস করতে পারছে না সুব্রত। তার সামনে অমিতসহ রায় পরিবারের সকল সদস্যের মোবাইল নাম্বার রয়েছে। এর বাইরে দুজন খুব গুরুত্বপূর্ণ মানুষের নাম্বার আছে এরা হলো অঞ্জলী আর ম্যাগী। বিভিন্ন ঘটনায় এই বিদেশী মহিলার সাথে রায় পরিবারের যোগসূত্র পাওয়া যাচ্ছে। বিশেষ করে অমিতের সাথে তার একটা গোপন যোগাযোগ আছে সন্দেহ নাই। তার সোর্স যতবার অমিতকে হারিয়ে ফেলেছে ততবারই আগে অথবা পরে ম্যাগীকে তার সাথে দেখা গেছে। এ বিষয়ে মিঃ অমিতকে সরাসরি জিজ্ঞেস করতে পারলে ভাল হতো। কিন্তু এমন একজন সম্মানী মানুষের ব্যক্তিগত বিষয় পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদের বিষয় হলে ভাল দেখায় না।


রায় গ্রুপের সকল কোম্পানীর অনেক গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তা, ইউনিয়ন লীডার, গাড়ি দূর্ঘটনায় আহত কর্মচারী এদের মোবাইল নাম্বারও আছে তার কাছে। সবগুলি নাম্বারের কললিস্ট, সবগুলি মানুষের গতিবিধি এসব পর্যালোচনা করে একটা ছক তৈরী করলো সুব্রত। মেধাবী অফিসার হিসেবে তার খ্যাতি আছে। একটা সুরাহা সে করবেই।


তার আগে অমিতের নিরাপত্তার বিষয়টি দেখা দরকার। সে সাদা পোশাকে দুজন পুলিশকে হাসপাতালে পাঠিয়ে দিল। এদের একজন রোগী হিসাবে আর একজন তার এটেন্ডেন্ট হিসাবে হাসপাতালে এল। সকলের অগোচরে তারা অমিতের রুমের প্রতি লক্ষ্য রাখছে। তার একমাত্র ভয় হলো বড় বাবুর ঘুষ খাবার প্রবণতা। যদি কোন সন্ত্রাসী গ্রুপ এর পেছনে থাকে তবে বড়বাবু নির্ঘাত তাদের কাছ থেকে পয়সা খাবেন এবং সুব্রতকে সঠিক দায়্ত্বি পালন করতে দেবেন না। এজন্য সুব্রত এমন দুজনকে হাসপাতালে পাঠিয়েছে যারা ব্যক্তিগতভাবে সুব্রতর কাছে ঋণী।


বেশ রাত পর্যন্ত মনি শংকর তার অফিসে কাজ করছিল। ম্যাগীও ছিল সেখানে। গুরুত্বপূর্ণ কাজের সময় সে মোবাইল অফ রাখে। ফলে বিন্দু কিছুতেই মনি শংকরকে ধরতে পারছিল না। সে বাধ্য হয়ে তখন পিএকে ধরলো।


ম্যাগী হ্যালো বলতেই বিন্দুর বিদ্রুপাত্মক গলা শুনা গেল, “তুমি আর তোমার বস কি নিয়ে ব্যস্ত শুনি? মোবাইলটাও অফ রেখেছে!”


ম্যাগী শান্ত গলায় জবাব দিল, “আমি ব্যস্ত নই ম্যাডাম। তবে বস ভিতরে কি নিয়ে ব্যস্ত আমি তা জানি না। বলুন আমাকে কি করতে হবে।”


“তুমি দয়া করে তোমার প্রিয় বসকে একটা খবর দাও যে আমি হাসপাতালে যাচ্ছি অমিতকে এ্টেন্ড করতে।”


“ঠিক আছে ম্যাডাম, আমি স্যারকে জানিয়ে দিচ্ছি। আর যদি কিছু মনে না করেন, আমার একটা অনুরোধ আছে।”


“বল কি বলতে চাও”


“আমার রাতের বেলা তেমন কোন কাজ নেই। আপনি যদি চান আমি অমিত স্যারকে এটেন্ড করতে পারি।”


“তাহলে তোমার বসকে দেখবে কে?”


“অফিস টাইমে বসকে আমিই দেখব। তবে রাতের বেলা সেটা আপনার কাজ।”


“হুম বুলিতো ভালই শিখেছ! বিদ্যে আছে বুঝা যাচ্ছে। তোমার বসকে ফোনটা দাও।”


ম্যাগী মনি শংকরকে ল্যান্ড ফোনের কানেকশন দিল। রেগে উঠতে গিয়ে ওপাশ থেকে বিন্দুর গলা পেয়ে থেমে গেল মনি শংকর। বরং উrকন্ঠা নিয়ে জানতে চাইল, “এনি প্রবলেম?”


“তোমার পি এ টাকে রাতের বেলা একটু ছেড়ে দিলেও তো পার নাকি?”


“ওকে তোমার দরকার?”

“কথার কি ছিরি দেখ, ওকে আমার দরকার হবে কেন, আমার দরকার তোমাকে?”


“হেয়ালী রাখ না প্লীজ। আমি খুব আপসেট আছি। কি বলতে চাও পরিষ্কার করে বল।”


“মেয়েটাকে বন্যার সাথে অমিতের হাসপাতালে পাঠালে কেমন হয়?”


“কেমন হয় জানি না। ও তো আমার অফিস স্টাফ, পারসোনাল কাজের কথা কেমন করে বলি?”


“পারসোনাল সেক্রেটারী পারসোনাল কাজ করবেনাতো কে করবে শুনি?”


“ঠিক আছে বাবা আমি বলে দেখি। যদি রাজী হয় তবে তুমি নিয়ে গিয়ে বন্যার সাথে পরিচয় করিয়ে দিও।”


“ঠিক আছে”


মনি শংকর বলতেই ম্যাগী রাজী হয়ে গেল। “নো প্রবলেম স্যার। আমার তো এমনিতেই সময় কাটছে না। তার উপর মিঃ অমিত একজন মার্কিন সিটিজেন। আমারও একটা দায় আছে বৈকি?”


মনি শংকর বিন্দুকে জানাল ম্যাগী রাজী হয়েছে। বিন্দু তখন ম্যাগীকে বাসায় আসতে বলে দিল। তার ইচ্ছা ছিল মেয়েটাকে দুটো কড়া কথা বলে মনের ঝাল মেটাবে। কিন্তু ম্যাগী যখন বাসায় এল দশ মিনিটের মাথায় বিন্দু তার ধারণা পরিবর্তন করলো। বিদেশী মেয়ে মানেই পতিতা নয়। ম্যাগীকে তার ভাল লেগে গেল।হাসপাতালে যাবার আগে ম্যাগীকে সে খেতে দিল। ততক্ষণে বিন্দু ম্যাডাম থেকে মেজ বৌদি হয়ে গেছে। আর বিন্দুর সম্বোধন “হ্যা রে ম্যাগী” তে পৌছে গেছে। ম্যাগী যখন বললো, “মেজ বৌদি তুমিও বসো না।” তখন বিন্দু অবাক হয়ে গেল। বলল, “তুই খা, আমি তোর বসকে নিয়ে খাব।”

“বসকে নিয়ে খাবে না বসকে খাবে?”


ম্যাগীর কথায় বিন্দু লজ্জায় লাল হলো। অবাক হয়ে ম্যাগী ভারতীয় মেয়েদের এই লাস্যময় দিকটা লক্ষ্য করলো। বললো, “তুমি কি জান মেজ বৌদি তুমি কতটা সুন্দর?”


বিন্দু আর ম্যাগীকে ঘাটালো না। ঠোট কাটা মেয়ে । কথা বাড়ালে আরও কত কি বলে বসবে কে জানে?


বিন্দু যখন ম্যাগীকে নিয়ে হাসপাতালে পৌছাল তখন রাত প্রায় নটা। অমিত চোখ বন্ধ করে আছে। বন্যা তার মাথার কাছে চেয়ারে বসে একটা বইয়ের পাতা উল্টাচ্ছে। অমিতের শারিরীক অবস্থার কোন পরিবর্তন হয়নি। জ্বর নামছে না। ডাক্তার ইনফেকশন আশংকা করছেন। তাদের ধারনা অপারেশন করে ভাংগা হাড়ের টুকরা সরাতে হবে। আগামী কাল বিশেষজ্ঞ ডাক্তাদের একটা বোর্ড বসবে। সব জেনে বিন্দুর মনটা খারাপ হয়ে গেল। সে ম্যাগীকে বন্যার সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়ে বললো, “ও তোমার সাথে রাতে থাকবে। খুব ভাল মেয়ে। আর আমার মোবাইল খোলা থাকবে। যখন খুশী তুমি ফোন দিও।”


“তুমি ভেবো না ছোট মা। সে আমি ঠিক সামলে নেব।”


“নিজের দিকে খেয়াল রাখিস ব্যাটা, তোর পড়াশুনার ক্ষতি হচ্ছে।”


“মোটেই না। আমি ঠিক পড়াশুনা করছি। ছেলেটা সেরে উঠলেই আমি সবটা কাভার করে নেব।”


তারা কেউ জানে না, সুব্রতর পুলিশ ছাড়াও আরও দুটি নাইট গ্লাস আলাদা আলাদাভাবে দূর থেকে অমিতের ক্যাবিনে আসা যাওয়া লক্ষ্য করছে।


সকাল বেলা পুজো শেষে অঞ্জলী নাস্তা করতে বসবে এমন সময় গেইট থেকে রামলাল ফোন দিল, ” মা জননী ইনস্পেক্টর সুব্রত বাবু আপনার সাথে দেখা করতে চান।”

“পাঠিয়ে দাও রামু কাকা।”

সুব্রত এসে অঞ্জলীর পা ছুয়ে প্রণাম করলো। তার পর অনুযোগ করে বললো, “আপনি খুব মলিন হয়ে গেছেন মিস্*। এত চিন্তা করার কিছু নেই। অমিত স্যার ভাল হয়ে যাবেন।”

“নাস্তা করেছ ব্যাটা?”

“ইয়েস মিস। তবে আপনার হাতের চা খাব।”


সুব্রতকে বসিয়েই অঞ্জলী নাস্তা সারলো। তার পর চা নিয়ে বসলো দুজন মূখোমূখী। অসম্ভব ব্রিলিয়ান্ট ছেলে সুব্রত।পচিশ ছাব্বিশ বছর বয়স হবে। পনের বছর বয়সে তার কলেজের হেড মাস্টার তাকে অঞ্জলীর কাছে নিয়ে আসে। মাধ্যমিকে ব্রিলিয়ান্ট রেজাল্ট করা ছেলেটি মূহুর্তেই মন কাড়ে অঞ্জলীর। এক সৌম্য দর্শন কিশোর। জগত সংসারে কেউ নেই। অতীব কষ্টে এটুকু পড়াশুনা করেছে। আর এগুতে পারছে না। তার সব দায় নিজ কাধেঁ তুলে নেয় অঞ্জলী। সুব্রত হয়ে যায় আশ্রমের একজন। পড়াশুনা শেষ করে পুলিশে যোগ দেয় সে। অসম্ভব সাহসী, সrআর কর্তব্য পরায়ণ। অঞ্জলী নিজ হাতে তাকে মার্শাল আর্ট শিখিয়েছে। এখন তো সুব্রতর ব্ল্যাক বেল্ট রয়েছে।

“বলো ব্যাটা কেন আমাকে দরকার পড়লো?”

“মিস আমি ঠিক বুঝতে পারছি না কি ভাবে বলবো, তবে না বললেই নয়। মিস ম্যাগী আর অমিত স্যারের সম্পর্ক বা যোগসূত্রটা আমি ব্যাখ্যা করতে পারছি না।”


“ও আচ্ছা। আসলে অমিত আর ম্যাগী আমেরিকায় একই ফ্লাটে থাকে। তাকে অমিতের সহকারী বা এ ধরণের কিছু বলতে পার। আমার ও প্রথম দিকে ভুল হয়েছিল। মনে করেছিলাম সে বুঝি অমিতের গার্ল ফ্রেন্ড বা ওয়াইফ। পরে ম্যাগী নিজে বিষয়টা আমার কাছে ক্লিয়ার করেছে। অমিতকে অসম্ভব ভালবাসে মেয়েটা। আর সেজন্যই আমেরিকা থেকে এখান অবদি চলে এসেছে।”

“তারা একসাথে হোটেলে ছিলেন।”

“ঠিকই বলেছ। সেটাও আমি জানি। তবে তাদের মাঝে কোন অনৈতিক সম্পর্ক নেই।”

“আপনি যদি বলেন তাহলে অবশ্যই নেই। থাকলেও সেটা আমার মাথা ব্যথার কারণ হতো না। মিস বন্যার সাথে গত রাতে তিনিও হাসপাতালে ছিলেন।”

“আমি জানি।”

""পৃথিবীটা রঙ্গমঞ্চ আমরা সবাই অভিনেতা"" !! Sad

[+] 2 users Like Kolir kesto's post
Like Reply
#28
১৯ পর্ব


“অমিত স্যারের কোম্পানী দুটি এককভাবে রোহিত স্যার ভোগ করছেন। তো এটার আইনগত ভিত্তি কি?”

“অমিতের পাওয়ার অব এটর্নী দেয়া আছে। ঠাকুর মা থাকা অবস্থাতেই এটা করা হয়েছিল অমিত আমেরিকা যাবার আগে।”

“ধরুণ অমিত স্যার আজ মারা গেলেন। তাতে কোম্পানী দুটির কি হবে? বা তার সম্পত্তির উত্তরাধিকার কে হবেন?”

“অমিতের কোন উইল আছে কিনা আমি জানি না। না থাকলে বিধি মোতাবেক কোম্পানী সকল ভাইবোনের মাঝে ভাগ হয়ে যাবে।”

“আপনার কি ধারণা অমিত স্যার সম্পত্তি বিরোধের শিকার না কোন অপরাধী চক্র এর পেছনে কাজ করছে?”

“বুঝতে পারছি না। দুটোই হতে পারে আবার কোনটাও না হতে পারে।”

“মনি শংকর স্যারের শ্যালক, তথা কথিত সাধুপুরুষ সিধু, তার সম্পর্কে বলেন।”

“তেমন কিছু জানি না। তবে বদ টাইপের লোক। ইউনিয়নের সাথে যোগসাজস আছে। টেরোরিস্টদের সাথেও হাত আছে। কোম্পানীর জন্য ক্ষতিকর।”


“যদি এমন হয় রায় পরিবারের কেউ ফেসে যান, আপনার কি ভুমিকা হবে?”

“অমিতের আততায়ীদের শাস্তি পেতে হবে। সেটা যেই হোক।”

“আপনি সাবধানে থাকবেন। আপনার ডার্ক ব্লু গাড়িটা আইডেন্টিফাইড হয়ে গেছে।”

“শুধু তোমার কাছে না সবার কাছে?”

“আপাততঃ আমার, যে কোন মূহুর্তে অন্যরাও জেনে যাবে।”

“ধন্যবাদ ব্যাটা সতর্ক করার জন্য।”

অ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটারটা চোখের সামনে নিয়ে খুব তীক্ষ্ণ চোখে তাকালেন আর এম ও মেয়েটার দিকে। তার পর বললেন, “আগে কোথাও কাজ করেছ?”

“মেয়েটা ডানে বামে মাথা নাড়লো।”

“প্র্যাকটিকেল এক্সপিরিয়েন্স ছাড়া কাজ করা খুব কঠিন।”

“আমি শিখে নেবো স্যার।”

“হুম।

মালিক হলে কত আনাড়িকেই না চাকুরী দেয়া যায়। মনে মনে বিরক্ত হলেও আর এম ও আর কিছু বলার সাহস পেল না। মালিকের আত্মীয় বলে কথা। ডিরেক্টর বাবু তাকে আগেই ফোনে জানিয়েছিলেন তার গ্রামের কোন এক গরীব আত্মীয়ের মেয়েকে নার্সের চাকুরী দিয়েছেন। আজ রাতেই যে কোন সময় আসতে পারে মেয়েটা। আজ থেকেই ডিউটিতে বহাল করে দেয়া ভাল।

সুব্রত চলে যাবার পর অঞ্জলী বেশ ভাবনায় পড়ে গিয়েছিল। সে যে অমিতকে ফলো করছে সেটা সুব্রত জেনে গেছে। তার মানে এখন তাকে অন্য পথ ধরতে হবে। সে হাসপাতালের পরিচালকের নাম্বার খোজেঁ বের করলো। ঠাকুরমার প্রাইভেট সেক্রেটারী হিসাবে অনেক উপরতলার মানুষদের সাথে যোগাযোগ ছিল তার। কৌশলটা ঠাকুরমা শিখিয়েছিলেন। এ পৃথিবীতে কোন কিছুই মাগনা নয়। আজ যার উপকার করছো, লিখে রাখ; সময় সুযোগমত চেয়ে নেবে। এই হাসপাতাল আধুনিকায়নে অর্থ সংকটে ছিলেন মালিক পক্ষ। ঠাকুরমার গ্যারান্টিতে ব্যাংক লোন পায় তারা। বিষয়টা নোট করা আছে অঞ্জলীর কাছে। ফোনে পরিচালককে পেয়েই প্রসংগটা উত্থাপন করলো অঞ্জলী সুকৌশলে। তারপর একটা চাকুরী চাইল নার্সের। আশ্বস্ত করলো এই বলে যে তার নার্সিং প্রশিক্ষণ আছে। কাজ চালাতে কোন সমস্যা হবে না। আশ্রম ছেড়ে নার্সের চাকুরী কেন প্রয়োজন এ প্রশ্নের কোন জবাব অঞ্জলী দিল না। শুধু বললো, “আপনি অপারগ হলে আমি অন্য কোথাও ট্রাই করবো।”

“না না মিস চ্যাটার্জি আমি তা বলিনি। নিশ্চই আপনার কোন প্রয়োজন আছে। আমি অ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটারসহ আপনাকে আর এম ও ‘র কাছে পাঠিয়ে দিচ্ছি।

সেন্ট্রাল হাসপাতালের নার্স হিসাবে বহাল হয়ে গেল অঞ্জলী। নার্সের পোষাকে দারুণ লাগছে তাকে। মেকাপ নিয়ে মূখের আদলটাকে এমনভাবে পরিবর্তন করেছে যে কেউ তাকে চিনতে পারবে না। গলার স্বর পাল্টে ফেলেছে। সামনাসামনি কথা বললেও তাকে চেনা কষ্টকর হবে।

প্রতাপ হাজরাকে দেখেই থানার বড়বাবু অসহায় বোধ করতে লাগলেন।এটা মন্ত্রী মশায়ের চামচা।হেন মন্দ কাজ নেই যা সে করতে পারে না।ছিচকে সিধেল চোর থেকে রাজনৈতিক প্রশ্রয় পেয়ে আজ বেশ হোমড়া-চোমড়া হয়ে পড়েছে।ওর সবচে খারাপ দিক হলো ব্ল্যাক মেইলিং।নানা গোপন তথ্য যোগাড় করে সেটা দিয়ে ব্ল্যাক মেইল করে কাজ আদায় করে।আস্ত একটা হারামীর বাচ্চা।তবে মনে যাই থাকুক, মূখে তার অমায়িক হাসি। “আসুন আসুন প্রতাপ বাবু, তা বলুন কি সেবা করতে পারি?”

“বেশী তেলাবেন না বড় বাবু, প্রতি মাসে আপনাকে মাইনের দশগুণ টাকা আমরা দেই্।তো সে টাকা যোগাড় করতে আমাদেরওতো কিছু কাজ করতে হয় নাকি?”
“আমি ঠিক আপনার কথা বুঝতে পারছি না।”
“আমার লোকদের পিছনে আপনি বিনা নোটিশে পুলিশ লেলিয়ে দিয়েছেন।তারা সাতজন লোককে আহত করেছে।তাও আপনি বুঝতে পারছেন না?”
“সত্যি আমি বুঝতে পারছি না প্রতাপ বাবু।আপনার লোকদের তাড়া করার কোন নির্দেশ আমি দিইনি।”
“তা হলে কি আকাশ থেকে পুলিশ এসেছিল?”
“ওয়েট ওয়েট, আমার নতুন একজন অফিসার আছে।রগ ত্যাড়া, দেখি তার কাজ কি না?”

বড় বাবু সুব্রতকে ডেকে পাঠালেন।সুব্রত এসে প্রতাপ হাজরাকে দেখেই যা বুঝার বুঝে নিল। কেউ না জানলেও সুব্রত’র ধারণা অঞ্জলী মিসই অমিতকে উদ্ধার করেছেন। কিন্তু প্রতাপ হাজরার লোকজন ধরে নিয়েছে এটা পুলিশের কাজ। আর বড় বাবুকে যেহেতু নিয়মিত ঘুষ দেয়া হয় তাদের কাজ নির্বিঘ্নে করার জন্য তাই এখন কৈফিয়ত চাইতে এসেছে। সুব্রত এসে স্যালুট করে দাঁড়িয়ে রইল। বড় বাবু প্রতাপ হাজরাকে দেখিয়ে বললেন, “ইনি প্রতাপ বাবু, মন্ত্রী বাহাদুরের খাস লোক। বড়ই প্রতাপশালী। দিন দুই আগে তাদের কোন লোককে পুলিশ বন পথে আক্রমণ করেছিল। তুমি জান ঘটনাটা?”
“স্যার, আমাকে আর একটু ক্লিয়ার করতে হবে। বুঝতে পারছি না”
এবারে প্রতাপ হাজরা নিজে মূখ খুললেন, “দুই দিন আগে একজন লোকের সাথে আমার কয়েকজন কর্মচারীর বচসা হয়। তখন পুলিশ আমার কর্মচারীদের গুলি করেছে।”
“ভেরী স্যাড স্যার,” সুব্রত ইতোমধ্যে মোবাইল রেকর্ডার চালু করে দিয়েছে, “কার সাথে কি নিয়ে বচসা হয়েছিল স্যার?”
লোকটা এতটাই ডেসপারেট যে থানায় বসে নিজেদের অপরাধ সম্পর্কে কথা বলতে একটুও দ্বিধা করছে না।
“দেখুন, সব বিষয়ে প্রশ্ন করবেন না। আমি এখানে জবানবন্দি দিতে আসিনি। আমার লোকদেরকে কে এবং কেন গুলি করা হয়েছে আমি জানতে চাইছি।”
“আমিও তো বিষয়টা বুঝার চেষ্টা করছি প্রতাপ বাবু। সারাদিন চোর-গুন্ডা ঠেংগাই। এর মাঝে কোন ঘটনার কথা বলছেন আমিতো সেটাই বুঝতে পারছি না।”

“আমাদের এক ক্লায়েন্টের প্রতিপক্ষ, নাম অমিত রায়। তাকে আমার ক্লায়েন্টের রাস্তা থেকে সরে যাবার জন্য ভয় দেখাচ্ছিল আমার লোকজন গজারী বনের পথে। সেখানে পুলিশ গুলি করে আমার লোকদের আহত করে।”
“আচ্ছা দাড়ান, দিন দুই আগে গজারী বনের শেষ মাথায় একজন লোককে গাড়ি থেকে নামিয়ে বেদম পেটাচ্ছিল কিছু দুষ্কৃতকারী। দেখে মনে হয়েছিল তাকে মেরে ফেলবে। আমি বাধ্য হয়ে তাকে বাঁচানোর জন্য গুলি ছুড়ি। তারা কি আপনার লোক ছিল?”

“হ্যা আমার লোক ছিল। আমার ট্যাক্সের পয়সায় বেতন খাবেন, আমার গাটের টাকায় ঘুষ খাবেন আবার আমার লোকদের দুষ্কৃতকারী বলে গুলি করবেন এটা কেমন কথা হলো অফিসার?”

সুব্রতর ফর্সা মূখটা রাগে লাল টকটকে বর্ণ ধারণ করেছে। কিন্তু সে জানে এটা মাথা গরমের খেলা নয়। মাথা খাটানোর খেলা। এ ব্যাটা ঘুটি মাত্র। এ কে ব্যবহার করেই তার ক্লায়েন্টের কাছে পৌছাতে হবে। সে অসহায় ভংগী করে বড়বাবুর মূখের দিকে তাকালো। বললো,
“স্যার আমি কেমন করে বুঝবো এরা প্রতাপ বাবুর লোক। আমাকে আগে থেকে কেউ ইনফরম করেনি।”
বড় বাবু সুযোগটা লুফে নিলেন। বললেন, “দেখুন প্রতাপ বাবু, যা হয়েছে তা একটা ভুল বুঝাবুঝি মাত্র। আপনারা ক্ষমতার কাছাকাছি লোক। দেশের জনগণের মংগলের জন্য কাজ করতে গিয়ে কোথাও যদি আপনারা একটু কঠোর হন তো সেটা আমাদের আগে থেকে ইনফরম করা দরকার। আপনি সুব্রতকে আপনার কন্টাক্ট নাম্বারটা দিন। কারণ আমি মাঠে থাকি না। মাঠ দাবড়ে বেড়ায় সুব্রত।”
“ঠিক আছে অফিসার এর পর আর যেন এরকম ঘটনা না ঘটে।”

""পৃথিবীটা রঙ্গমঞ্চ আমরা সবাই অভিনেতা"" !! Sad

[+] 2 users Like Kolir kesto's post
Like Reply
#29
২০ পর্ব


সুব্রত সম্মতি সূচক মাথা নাড়লো। প্রতাপ বাবু তার গোপন কন্টাক্ট নাম্বার সুব্রতকে দিয়ে বিদায় নিল। যাবার আগে বড়সড় দুটো বান্ডেল রেখে গেল টেবিলের উপর। সুব্রত লোভী চোখে তাকিয়ে রইল টাকাগুলির দিকে। বড় বাবু বুঝলেন আদর্শের ভুত নেমে গেছে সুব্রতর মাথা থেকে। তিনি একটা বান্ডিল ছুড়ে দিলেন সুব্রতর দিকে। সুব্রত এদিক ওদিক তাকিয়ে সন্তর্পনে পকেট থেকে রুমাল বের করে ঢেকে ফেলল বান্ডিলটা। তারপর রুমালসমেত চালান করে দিল ইউনিফর্মের পকেটে।

নিজের রুমে ফিরে মোবাইলে রেকর্ড করা সব কথা কপি করলো ল্যাপটপে। পাসওয়ার্ড দিয়ে সেইভ করলো। ফাইলটা এটাচ করলো তার একটা ই-মেইল এ। সেটা সেন্ড করলো তারই ভিন্ন একটা ই-মেইল একাউন্টে। তারপর মোবাইল থেকে ডিলিট করে দিল ফাইলটা। প্রতাপ হাজরার কন্টাক্ট নাম্বার রেখে দিল মগজে। তার পর ব্যাংকে গিয়ে রুমালসহ টাকার বান্ডিলটা রেখে এল সেফটি লকারে।
তিন তিনটে সূতা এখন তার হাতে । মনটা ফুরফুরে। গানের একটা কলি গুণ গুণ করতে করতে বেরিয়ে এল চেম্বার ছেড়ে।

""পৃথিবীটা রঙ্গমঞ্চ আমরা সবাই অভিনেতা"" !! Sad

[+] 4 users Like Kolir kesto's post
Like Reply
#30
(২১ পর্ব)

তিন দিন পর একটা জটিল অপারেশন হলো অমিতের। মাংসের ভিতর সেধিয়ে যাওয়া হাড়ের টুকরা গুলি বের করা হলো। অপারেশনে তেমন কোন সমস্যা হয়নি। তবে রেয়ার গ্রুপের এ নেগেটিভ রক্তের প্রয়োজন ছিল। ব্লাড ব্যাংকে রক্ত পাওয়া যাচ্ছিল না। অমিতের ভাগ্য ভাল মনি শংকর আর রামলাল দুজনের রক্তই এ নেগেটিভ। অপারেশনের সময় মনি শংকর হাসপাতালেই ছিল। সে সরাসরি রক্ত দিল। খবর পেয়ে ছুটে এল রামলাল। তার কাছ থেকেও রক্ত নেয়া হল। আশ্রমের ছেলে মেয়েরা লাইন ধরে এসে দাঁড়ালো হাসপাতালের সামনে। সকলেই রক্ত দিতে চায়। পরীক্ষা করে আঠার বছরের উর্দ্ধে এমন কয়েকজনকে চিহ্নিত করে রাখা হলো। যদি ভবিষ্যত দরকার হয়। ম্যাগী অভিভুত হয়ে গেল মানুষের প্রতি মানুষের ভালবাসার এমন ধরণ দেখে। পশ্চিমা জগতে এমনটি কল্পনা করাও দুষ্কর।

চব্বিশ ঘন্টা পর জ্ঞান ফিরলো অমিতের। আইসিইউ থেকে ক্যাবিনে স্থানান্তর করা হয়েছে। সব মিলিয়ে আজ ৭ দিন হলো বন্যা হাসপাতালে। কিছুতেই সে অমিতকে ছেড়ে যাবে না। বিন্দু, মঞ্জু মাঝে মাঝে আসে। রোহিত, মনি শংকরও খবর রাখে। ম্যাগী রাতে বন্যার সাথে থাকে। অঞ্জলী দিনের বেলা যথারীতি আশ্রমের কাজ করে। রাতে নার্সের ডিউটিতে হাসপাতালে থাকে। তবে সে কোন পার্টিকুলার প্যাশেন্টের ডিউটি করে না। বরং সব ক্যাবিনগুলিতে কার কি প্রয়োজন সেসব খোঁজখবর রাখে। মালিকের লোক হিসাবে একটা নাক উচু ভাব ধরে রেখেছে। এতে সুবিধা হলো ক্যাবিন গুলিতে যখন তখন ঢুকার পাশাপাশি অনাবশ্যক গল্পগুজবের হাত থেকে রেহাই পেয়েছে। তার ছদ্মবেশ বজায় রাখার জন্য এটা বেশ সহায়ক। অঞ্জলীর ধারণা একবার যখন হামলা হয়েছে, তখন আবারও হামলা হবে। আক্রমণটা কোন দিক দিয়ে আসে সেটা বুঝাই মুশকিল। সে চারদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখছে। অমিতের ক্যাবিনে ঢুকার সময় সে সবসময় মূখে মাস্ক ব্যবহার করে। বলা তো যায় না, এতগুলি পরিচিত মানুষ, কেউনা কেউ চিনে ফেলতে পারে।

অপারেশনের পাঁচদিনের মাথায় অমিতের অবস্থা বেশ উন্নতির দিকে গেল। আগের ব্যান্ডেজ খুলে নতুন ড্রেসিং করা হয়েছে। ঘা টান ধরে এসেছে। ব্যাথাও কমে আসছে। তবে ভাংগা হাড় জোড়া নিতে কমপক্ষে ছয়মাস সময় লাগবে। ডাক্তার বলেছেন এত দিন অমিতকে হাসপাতালে থাকতে হবে না। ঘা শুকালেই তাকে রিলিজ করে দেয়া হবে। মঞ্জু এসে জোর করেই বন্যাকে নিয়ে গেল। অমিতই ফোন করে মঞ্জু বৌদিকে বলেছে বন্যাকে নিয়ে যাবার জন্য। ঠিক হলো বিন্দু আর ম্যাগী রাতে অমিতকে এটেন্ড করবে।
গত কিছুদিনে ম্যাগী রায় পরিবারের প্রায় সকল সদস্যের সাথে পরিচিত হয়েছে। এখন সে আর শুধু অফিস স্টাফ নয়। পরিবারের একজনের মত হয়ে গেছে। যে তাকে সবচে অপছন্দ করতো সেই বিন্দুর সাথে তার সবচে বেশী ভাব হয়েছে। চমতকার বন্ধুত্ব হয়েছে বন্যার সাথেও।
বিকালে বন্যা চলে যাওয়ার পর অঞ্জলী ঢুকলো অমিতের ক্যাবিনে। এসময়ে ডাক্তার নার্স বা ভিজিটর কেউ আসবে না। ক্যাবিনে ঢুকেই ভিতর থেকে ছিটকিনী আটকালো। অমিত চোখ বন্ধ করে ছিল। খুট করে শব্দ হতেই চোখ মেলে তাকালো। অঞ্জলীর তখনও মূখ ঢাকা। সে পায়ে পায়ে এগিয়ে এল বিছানার কাছে। মূখের কাপড় সরালো। তারপর একদৃষ্টে তাকিয়ে রইল অমিতের দিকে। মিনিটখানেকের মাথায় অমিতের ঠোট দুটি কাপতে শুরু করলো। দীর্ঘ পনের বছরের দুঃখ কষ্ট অভিমান একসাথে উথলে উঠেছে। সবাইকে ফাকি দিতে পারলেও অমিতকে ফাকি দিতে পারলো না অঞ্জলী। জনম জনম ধরে যে দুটি চোখ বুকের ভিতরে লালন করে আছে অমিত সে চোখ চিনতে মুহুর্ত মাত্র দেরী হয়নি তার। এদিকে দাড়িয়ে থেকেই দু’চোখে বন্যা বয়ে গেল অঞ্জলীর। একদম বাকরুদ্ধ হয়ে গেল সে। কথা বলতে পারছে না। অমিত শুয়ে থেকেই ডান হাতটা বাড়িয়ে দিল। অঞ্জলীর ইচ্ছা হলো অমিতের বুকে ঝাপ দেয়। কিন্তু বড় খারাপ সময়ে তাদের দেখা হলো। অমিতের বাড়ানো হাতটা ধরে বিছানার কিনারায় বসলো অঞ্জলী। এক হাতে অমিতের হাতটা বুকের সাথে চেপে রাখলো, আরেকটা হাত মাথার উপর রেখে চুলে বিলি কাটতে কাটতে বললো, “খুব কষ্ট হচ্ছে সোনা?”

অমিত অঞ্জলীর কথার জবাব দিল না। শুধু বললো, “একি হাল হয়েছে তোমার? আমি না হয় অসুস্থ। কিন্তু তোমাকে এমন দেখছি কেন?”
আজ নিয়ে একুশ দিন অঞ্জলী এক মিনিটের জন্য দুচোখের পাতা এক করেনি। কিন্তু অমিতকে সে কথা বলা যাবে না। “তুমি সুস্থ হও সব ঠিক হয়ে যাবে।”
“আমাকে এখান থেকে নিয়ে চলো। নিজের বাড়িতে নিজের ঘরে ছাড়া আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে।”
আর মাত্র দু তিনটে দিন কষ্ট করো সোনা। আম ঠিক তোমাকে নিয়ে যাব। আর আমি তোমার ক্যাবিনের পার্টিশনের ওপাশেই আছি। যে কোন প্রয়োজনে পার্টিশনে টোকা দিলেই আমি চলে আসবো।”
“একটা চিঠি পেয়েছি আমি। ঠাকুরমার লেখা। এর মাথা মুন্ডু কিছু বুঝতে পারছি না।”
অমিত চিঠির বিষয় বস্তু সবটা অঞ্জলীকে বললো। সব শুনে বেশ কয়েক মিনিট চুপ করে রইল অঞ্জলী। তারপর বললো, “ভেবোনা আমি এর অর্থ উদ্ধার করতে পারবো।”

হাতটা ছেড়ে দিয়ে গভীর করে চুমু খেল অঞ্জলী অমিতের ঠোটে। নাকে নাক ঘষলো। অঞ্জলীর ভালবাসায় অপত্যের ভাগ থাকে বেশী। আর এটাই পাগল করে অমিতকে। “এবার যেতে হবে মানিক, আমি এখানে একজন নার্স মাত্র। কারো কাছে আমার পরিচয় প্রকাশ করো না।”
গত কিছুদিন থেকে বিন্দুর মনটা খুব ভাল। মনি শংকরের এধরণের পরিবর্তন তার জন্য খুবই আনন্দের। জেদী মেয়ে বিন্দু। মনি শংকর যখন থেকে পরনারীতে আসক্ত হয়েছে তখন থেকে সে মনি শংকরকে কাছে ঘেষতে দেয় না। ফুটন্ত যৌবন নিয়ে আলাদা বিছানায় ঘুমায়। মনি শংকর ড্রিংক করে অন্য মেয়েদের সাথে ফুর্তি করে অনেক রাতে ঘরে ফিরে। বিন্দুর দিকে ফিরেও তাকায় না। অনেক কষ্টে দিনটা কেটে গেলেও বিন্দুর রাত যেন কিছুতেই কাটতো না। কিন্তু গত কিছু দিন যাবত মনি শংকরের মাঝে একটা পরিবর্তন লক্ষ্য করেছে। মদ খাওয়া বেশ কমিয়ে দিয়েছে। রেসের মাঠে যাওয়াও কমেছে। সবচে বড় কথা গত দুই তিন সপ্তাহ কোন মেয়ের কাছে যায়নি মনি শংকর।
তার ধারণা ছিল ম্যাগী নামক বিদেশী মেয়েটা বুঝি তার নতুন রক্ষিতা। কিন্তু ম্যাগীর সাথে কথা বলে, সময় কাটিয়ে বিন্দুর ধারণা পরিবর্তন হয়েছে। ম্যাগীর ভাষ্য মতে বস কখনও তার দিকে খারাপ নজরে তাকায়নি। এ ধরণের পরিস্থিতির মূখোমূখি হতে পারে এটা ধরে নিয়েই সে কাজে যোগ দিয়েছিল। কিন্তু বসের মাঝে সেকরম কোন আগ্রহ লক্ষ্য করেনি। এমন কি দিন দুই তার সাথে রেসের মাঠেও গিয়েছে। সেখানেও কোন আনডিউ অ্যাডভান্টেজ নেবার চেষ্টা তার মাঝে ছিল না।
বিন্দু সবটা মিলাতে পারে না। এক সময় তার কাছে মনে হতো মনি শংকর প্রচন্ড স্বার্থপর একটা মানুষ। নিজের সুখ, আয়েশ আর তৃপ্তির বাইরে কোন কিছুই কেয়ার করে না। এখন সেটা পাল্টাতে শুরু করেছে। ছোট ঠাকুর পো হাসপাতালে ভর্তি হবার পর থেকে তার মাঝে অন্য রকম দায়িত্ববোধ তৈরী হয়েছে। বিশেষ করে সেদিন যখন ছোট ঠাকুরপোকে মনি শংকর নিজের শরীরের রক্ত দিল তখন বিন্দুর কিযে ভাল লেগেছে তা বলে বুঝাতে পারবে না। স্বামীকে নিয়ে গর্বে অহংকারে তার বুকটা ভরে গেছে। কি অসম্ভব পৌরুষদীপ্ত মানুষ মনি শংকর! বড় লোকের সন্তান। অনেকের আভিজাত্য থাকে, তবে সেটা উপভোগ করতে পারে না। মনি শংকর পারে। সে যখন যেখানে যায় সেখানেই সে ফোকাসে থাকে। তার সামনে বাদবাকী সবাই ম্লান হয়ে যায়। এ হেন মনি শংকর যদি দুএকটা মেয়েছেলে নিয়ে আমোদ ফুর্তি করেই থাকে তো করুক না? উপমহাদেশের রাজা বাদশা নবাবদের হারেম তো মশহুর। বিন্দু মনি শংকরকে ক্ষমা করে দিল।
খুব ভোরে মন্দিরে গিয়ে পুজো দিল বিন্দু। সদ্য স্নান করেছে। লাল পেড়ে সাদা সূতী শাড়ী তার পরনে। পুজোর ডালায় ঠাকুরের প্রসাদ নিয়ে ঘরে ঢুকে দেখে মনি শংকর বিছানায় বসে আড়মোড়া ভাংছে। ছুটির দিনে একটু দেরীতে উঠে মনি শংকর। বিন্দুকে এ অবস্থায় দেখে অবাক হয় সে । এক দৃষ্টে তাকিয়ে থাকে। বিন্দুর খুব লজ্জা লাগে। আবার স্বামীর এ দৃষ্টিটা ভালও লাগে। হাতের ডালাটা একটা টেবিলের উপর রেখে মনি শংকরকে বলে,” একটু উঠে দাড়াবে?”
কি ছিল বিন্দুর গলায় কে জানে, মনি শংকর বিনা বাক্য ব্যয়ে উঠে দাড়ালো। গলায় আচল জড়িয়ে স্বামীকে আভুমি প্রণাম করলো। বিন্দুর মাথায় হাত রাখলো সে। তারপর দুই বাহুতে ধরে টেনে পাগলের মত জড়িয়ে ধরলো বুকে। স্বামীর বুকে মাথা রেখে ফুপিয়ে কেঁদে উঠলো বিন্দু। ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেল মনি শংকর। কিছুই বুঝতে পারছে না।
জগত সংসারে একটাই মানুষ আছে যাকে ঘাটায় না মনি শংকর। সে হলো বিন্দু। সে নিজে যেমন বেয়াড়া, বিন্দু তার চে হাজারগুণ বেয়াড়া। তার জিবের ধার ইস্পাতের ফলার চেয়েও বেশী। নিত্যদিন তাকে ফালা ফালা করে। আজ কি হলো এমন? মনি শংকর ভেবে পায় না। সে হাতের চেটো দিয়ে বিন্দুর অশ্রু মুছায়। তারপর আরও শক্ত করে জড়িয়ে রাকে বুকের মাঝে। বিন্দু ডালা থেকে পুজোর ফুল নিয়ে মনি শংকরের বুকে কপালে ছোয়ায়। তারপর প্রসাদ হাতে দিয়ে বলে, “খাও।”
“কি হয়েছেরে বউ?” অনেক বছর আগের আটপৌরে ভাষায় সম্বোধন করে মনি শংকর। দুজন বাসি বিছানায় পাশাপাশি বসে আছে।
“কিছু হয় নি। তোমাকে প্রণাম করতে ইচ্ছে হল তাই।”
বিন্দুর চিবুকটা তুলে ধরে টুক করে চুমু খেল মনি শংকর তার ঠোটে। গভীর করে তাকালো তার চোখে। “তোমার কি হয়েছে গো?” বিন্দুর গলায়ও আটপৌরে আভাষ।
“কিছু হয় নি। তোমাকে চুমু খেতে ইচেছ হলো তাই।”

হেসে ফেললো বিন্দু। মনি শংকরের মাঝে আগের সেই হিউমর ফিরে আসছে। ভাবতেই ভাল লাগছে তার। বিন্দুর হাসি যেন বিদ্যুতের ঝলক। চোখ ফেরানো দায় হলো মনি শংকরের। বিন্দু হঠাত করেই মনি শংকরের সামনে হাটু গেড়ে বসলো। তারপর আচলটা সামনে বাড়িয়ে বললো, “মা দুর্গা আসছেন। তার আগে যদি তোমার কাছে কিছু চাই দেবে?”
মনি শংকর ধারণা করলো পুজোয় কোন দামী অলংকার বা অন্য কিছু হয়তো বিন্দু চাইবে। সে বিনা দ্বিধায় বললো, “তোমার দরিদ্র স্বামীর যা কিছু আছে সবটাই তোমার বিন্দু, বলো তুমি কি চাও।” বর দেবার ভংগীতে হাত উচু করলো মনি শংকর।
“আমি তোমাকে চাই, আমার স্বামী মনি শংকরকে চাই।”
বিন্দুর কথা সবটা কানে যায়নি মনি শংকরের। সে বললো, “তথাস্তু” বলার পর খেয়াল হলো বিন্দুর কথার মর্মার্থ। তারপর স্রেফ বাকরুদ্ধ হয়ে গেল সে ।

বিন্দুর সেদিকে খেয়াল নেই। অসম্ভব খুশীতে ঝলমল করে উঠলো তার মূখ। মনি শংকরকে ঠেলে ওয়াশ রুমে পাঠালো সে। “ভিতরে সব কিছু দেয়া আছে। যাও ফ্রেশ হয়ে এসো।”
সময় নিয়ে গোসল সারলো মনি শংকর। এর মাঝে বেডরুমটাকে অন্য রকম করে ফেললো বিন্দু। উইন্ডো স্ক্রীন থেকে শুরু করে বেড শীট পর্যন্ত সব কিছু চেঞ্জ করেছে। ফ্লাওয়ারভাসে টাটকা রজনী গন্ধা। ঘরটা ম ম করছে। ল্যান্ড ফোনের কর্ড খুলে রাখলো। মোবাইলের সুইচ অফ করে দিল। দরজার ছিটকানী ভিতর থেকে আটকে দিল। সব গুলি পর্দা টেনে দিয়ে লুকানো লাইটগুলি জ্বেলে দিল। আলো দেখা যায়, এর উতস বুঝা যায় না। এসিটা এমনভাবে এডজাস্ট করা যে বুঝার উপায় নেই এসি চলছে। অথচ কোন গরম অনুভুত হচ্ছে না।খুব হালকা করে মিউজিক বাঁজছে। প্রেমের গান। চেনা সুর, অচেনা কথা। শুনলেই মন ভালো হয়ে যায়। খুট করে শব্দ হলো বাথ রুমের দরজায়। মনি শংকর কোমড়ে বড় একটা সাদা টাওয়েল জড়িয়ে বেরিয়ে এল। এসেই সরাসরি ধাক্কা খেল বিন্দুর সাথে। একদম বুকে বুকে। বিন্দু প্রস্তুত ছিল। দাড়িয়ে ছিল ধাক্কার জন্য। তাই পড়ে গেল না। দুই হাতে গলা জড়িয়ে ধরে চুমু খেল স্বামীর ঠোটে। তারপর নিয়ে গেল ড্রেসিং টেবিলের সামনে। আর একটা তোয়ালে দিয়ে মনি শংকরের মাথা আর শরীর খুব ভাল করে মুছে দিল।

""পৃথিবীটা রঙ্গমঞ্চ আমরা সবাই অভিনেতা"" !! Sad

[+] 3 users Like Kolir kesto's post
Like Reply
#31
২২ পর্ব
ছোট্ট কর্নার টেবিলে দুটো প্লেট আর একটা ঢাকনা দেয়া বাউল। বিন্দু সেখানে নিয়ে গেল মনি শংকরকে। ঢাকনা তুলতেই ভুনা খিচুরির সুগন্ধে জিবে জল এসে গেল মনি শংকরের। হঠাত করেই যেন খিদে মাথাচাড়া দিয়ে উঠলো। প্লেটের দিকে হাত বাড়াতেই বিন্দু বাঁধা দিল, “উহু! আজকের দিনটা শুধু আমার। চুপটি করে বসো।” মনি শংকর সত্যিকার আনন্দ উপভোগ করতে লাগলো। কতদিন বিন্দুর নিজের হাতের রান্না ভুনা খিচুড়ি খায় নি।

একটাই প্লেট নিল বিন্দু । ভাপ উঠা গরম খিচুরী নিল তাতে। তারপর চামচ দিয়ে খাওয়াতে শুরু করলো মনি শংকরকে। ভুনা খিচুড়ি বাংগালী পরিবারের সাধারণ খাবার। কিন্তু সেটা অসাধারণ হয়ে গেল বিন্দুর রান্না আর পরিবেশনার কারণে। মনি শংকরও একটা চামচ নিল। তারপর বিন্দুকে মূখে তুলে দিল খিচুড়ি। খাওয়া দাওয়ার মাঝখানে কেউ কোন কথা বললো না। শুধু আজ থেকে পনের/ষোল বছর আগে ফিরে গেল তাদের স্মৃতি। নতুন বউ বিন্দুকে নিয়ে আদিখ্যেতার অন্ত ছিলনা মনি শংকরের। যৌথ ডাইনিং ছেড়ে নিজেদের ঘরে এমনি করে দুজন দুজনকে খাওয়াতে গিয়ে পিসিমার কত বকুনী যে খেয়েছে।
খাবার শেষে আচলে মূখ মুছে দিল বিন্দু। উঠে বিছানার কাছে যেতেই মনি শংকর দেখল ছোট টি টেবিলে চায়ের সরঞ্জাম সাজানো। দুজনের জন্য চা ঢেলে মূখোমুখি বসলো বিন্দু আর মনি শংকর। কাপে চুমুক দিয়ে মনি শংকর জানতে চাইল, “এর পর?”
“তুমি ছোট ঠাকুরপোকে রক্ত দিয়েছে দেখে আমার যে কি ভাল লেগেছে, জান?”
“আশ্চর্য, আমার ভাইকে আমি রক্ত দেব না তো বাইরের লোক রক্ত দেবে?’
“ভাই ভাইকে রক্ত যেমন দেয়, তেমনি রক্ত নেয়ও?”
“কি যে তুমি বল না?”
“এই শুন, বট ঠাকুরপো ছোট ঠাকুরপোর কোম্পানী নিয়ে যা খুশী করুন গে। তুমি এ বিষয়ে মাথা ঘামাবে না।”
“কি বলছ তুমি?’
“ঠিকই বলছি। আমাদের কোন সন্তানাদি নেই। রক্তের সম্পর্কের কেউ নেই। ছোট ঠাকুরপোকে রক্ত দিয়ে যে সম্পর্কটা তুমি সৃষ্টি করলে আমি চাই মা দূর্গার আশীর্বাদে সেটা আরও বাস্তব হোক।”
“বুঝলাম না”
“আমার একটা সন্তান চাই মেজ চৌধুরী। আমার বুকের হাহাকার তুমি শুনতে পাও না। তুমি সব মন্দ কাজ ছেড়ে দাও। দেখবে মা দূর্গা আমাদের দিকে মূখ তুলে চাইবেন।”

এমন সময়ে এমন একটা দূর্বল পয়েন্টে বিন্দু আঘাত করবে মনি শংকর ভাবতেও পারেনি। সে ভ্যাবাচেকা খেয়ে চুপ করে রইল। বিন্দু আবার বলতে শুরু করলো, “আজ সারাদিন তুমি আমার সাথে থাকবে। এ ঘরের বাইরে একটা পাও দেবে না। বাইরের কোন অশুচি তোমাকে স্পর্শ করার আগে আমি তোমাকে আমার মাঝে চাই। তোমার শুচী শুদ্ধ দেহমন আমাকে দাও। মা দূর্গা ধরাদামে অবতীর্ণ হয়ে আমাদের মনোবাসনা পূর্ণ করবেন, আমাদের সন্তান দেবেন।”
এক সন্তানহীন বুভুক্ষু মাতৃ হৃদয়কে কষ্ট দিতে মন চাইলো না মনি শংকরের। তার ব্যক্তিগত বিশ্বাস যাই হোক, বিন্দুর বিশ্বাসটাকে সে অটুট রাখবে বলেই সিদ্ধান্ত নিল। জগতে কত কিছুইতো ঘটে যার কোন ব্যাখ্যা নেই। মনি শংকর চা শেষ করলো। বিন্দুও। তার পর ঝট করে বিন্দুকে বগলদাবা করে একদম বুকের উপর তুলে নিল মনি শংকর। বিশাল দেহী মনি শংকরের বুকের মাঝে মূখ গুজলো বিন্দু। ভাললাগায়, ভালবাসায় আপ্লুত দেহ মন।
কে বলে স্বামী-স্ত্রীতে প্রেম হয় না? প্রেম করতে জানতে হয়।
বিন্দুকে বুকের মাঝে চেপে ধরেই বিছানায় নিয়ে গেল মনি শংকর। আলতো করে শুইয়ে দিল বিছানার উপর। অসাধারণ মাদকতাময় একটা ঘ্রাণ আছে বিন্দুর শরীরে। ষোল বছর আগে ফুল শয্যায় যেটা ফুলের ঘ্রাণ বলে মনি শংকর ভুল করেছিল। বিন্দুর শরীরের পরতে পরতে লুকানো যৌবন। উপছে পড়ছে লাবন্য। বাম বাহুর উপর নিল বিন্দুকে। বিন্দু চিত হয়ে। মনি শংকর বাম দিকে কাত হয়ে একটা পা তুলে দিল বিন্দুর উপর। ডান হাতের তর্জনী আস্তে করে ছোয়াল বিন্দুর আবেদনময়ী ঠোটে। আদরে সোহাগে কেঁপে কেঁপে উঠছে বিন্দু। কত দিন পর। প্রিয়তম পুরুষকে আপন করে বুকের মাঝে পাওয়া। চোখ বন্ধ করে আদর উপভোগ করছে সে। বাম হাত বিন্দুর ঘাড়ের নীচে দিয়ে বুকের সাথে চাপ বাড়াচ্ছে মনি শংকর। ডান হাতে আস্তে আস্তে প্যাচ খুলছে শাড়ির। অফুরন্ত সময় তার হাতে। বিন্দু আজ সারাদিনের জন্য তাকে বেধেছে। মনি শংকরও বাধা পড়ে মজা পাচ্ছে। কোমড় থেকে উপর পর্যন্ত শাড়িটা খোলা হয়ে গেলে থামলো মনি শংকর। বিন্দুর স্বাস্থ্য ভাল। দুধের সাইজ ৩৬ সি। ঢলঢলে নয়। নরোম তুলতুলে কিন্তু টাইট। অনেক যত্নে লালন করা। অনেক চেষ্টায় ধরে রাখা। লাল ব্লাউজের উপর দিয়ে আলতো করে হাত বুলায় মনি শংকর। সেই ফুল শয্যার রাতের মত। সেদিন এ গুলি আরও অনেক ছোট ছিল। পনের ষোল বছরের কিশোরীর স্তন। ৩২ এর বেশী হবে না। তখনকার চে এখনকার স্তনগুলি সাইজে আর গড়নে অনেক বেশী আবেদনময় এবং আকর্ষণীয়।
দুহাত পিঠের নীচে নিয়ে বিন্দুকে বুকের সাথে গভীরভাবে জড়িয়ে ধরে মনি শংকর। শারীরিক আবেদনের সাথে হৃদয়ের আবেগ উথলে উঠে। এমন প্রেমময়ী এক নারীকে এতদিন অবহেলা করেছে বলে অপরাধবোধটা তাকে আরও বেশী বিন্দুর প্রতি আকৃষ্ট করে। সাদারং শাড়িটা কোমড়ের কাছে দলা হয়ে জমে আছে। কোমড়ের কাছ থেকে গিট ছাড়িয়ে শাড়িটা ছুড়ে ফেলে নীচে। বিন্দুর পরনে পেটিকোট আর ব্লাউজ। পেটে এতটুকু মেদ নেই। মসৃণ পেটে হাত বুলায় মনি শংকর। বিন্দুর সারা শরীরে শিহরণ খেলে যায়। আহ কত দিন পর! নিজেকে তার নতুন বউয়ের মত মনে হয়। লজ্জায় কুকড়ে যেতে থাকে। ষোল বছর সংসার করলেও প্রথম কয়েকটা বছর সে সেক্স বা স্বামী সোহাগ কিছুই বুঝতো না। মনি শংকর কাপড় খুলেছে, আচড়ে কামড়ে খামছে তাকে ক্ষত বিক্ষত করেছে। তারপর ইয়া বড় বাড়া দিয়ে গাদন মেরে রক্তাক্ত করে ছেড়ে দিয়েছে। যখন সংগম উপভোগ করা শুরু করলো, যখন স্বামী চিনতে শুরু করলো তখন থেকেই মনি শংকর বিপথে। ব্যাস বিন্দুর দরজাও তার জন্য বন্ধ হয়ে গেল। আজ পরিপূর্ণ নারী বিন্দু বড় ভাল লাগায়, বড় ভালবাসায় মনি শংকরকে কাছে পেয়েছে। তার চোখে মূখে ব্রীড়া। মনি শংকরের দারুণ ভাল লাগে বিন্দুর এ রূপটি।
লাল ব্লাউজটা মাংস কেটে বসে আছে শরীরের মাঝে। মনি শংকর অভিজ্ঞ হাতে উপরের হুকটা খুলে দিল। সামান্য ছাড়া পেয়ে স্তন গুলি এমন চাপ দিচ্ছে যে মনে হচ্ছে বাকী হুক গুলি ছিড়ে যাবে। পটাপট খুলে দিল মনি শংকর বাকী হুক গুলিও। ব্লাউজটার হাতা গলিয়ে বের করে ফেলে দিল নীচে। শাড়ির উপরেই পড়লো সেটা। ব্লাউজ বের করার সময় মন শংকর বিন্দুর উন্মুক্ত বগলের দেখা পেল। মসৃণ এবং পরিষ্কার। বিন্দুর রুচিবোধ সবসময়ই উন্নত ছিল এখনো আছে। অফ হোয়াইট ব্রাটা একদম বিন্দুর শরীরের রং এর সাথে মিশে আছে। নরোম সূতী ব্রা। ভিতরে মাখনের পিন্ডটা মনে হচ্ছে খুবই সলিড। মনি শংকর হাত দিল না। প্রাণ ভরে দেখল স্ত্রীর স্তনের গড়ন। বোটা দুটি শক্ত হয়ে আছে। ব্রার ভিতরে এর আভাষ স্পষ্ট। এবার পেটিকোটের ফিতায় হাত দিল মনি শংকর। গিটঠুটা খুলে দিয়ে ডান হাতে পেটি কোটটা কোমড় গলিয়ে নীচে নামিয়ে দিল। সেটাও পড়লো শাড়ি আর ব্লাউজের পাশে। বিন্দুর পরনে এখন শুধু ব্রা আর প্যান্টি। দূর থেকে দেখলে কোন কাপড় আছে বলে মনে হবে না।
মানুষ কত সুন্দর হতে পারে!! বিন্দু যেন ভোগ ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদ থেকে বেরিয়ে আসা এক মডেল। মাগীবাজ মনি শংকর জীবনে এত মেয়ে চুদেছে যে, সে নিজেও তার হিসাব জানে না। কিন্তু নিজের ঘরে নিজের বউটা এত সুন্দর এত আবেদনময়ী সে ফিরেও তাকায়নি। বউটাও তাকে এতদিন দূরে সরিয়ে রেখেছে। আজ যেন পাগল হয়ে গেল মনি শংকর। অপলক তাকিয়ে রইল বিন্দুর মূখের দিকে। বিন্দু চোখ বুজে ছিল। মনি শংকরের নড়াচড়া থেমে যেতেই চোখ খুলে তাকালো সে। দেখল তার মূখের দিকেই তাকিয়ে আছে মনি শংকর। হোক স্বামী। তবুও পুরুষের মুগ্ধ দৃষ্টির সামনে লজ্জা পায় না এমন নারী জগতে বিরল। বিন্দু লজ্জায় লাল হয়ে গেল। মূখ লুকালো মনি শংকরের চওড়া বুকে।
এবার মনি শংকর ঘুরিয়ে বিন্দুকে বুকের উপর তুলে নিল। লোমহীন মসৃণ বুক। স্নান করে মনি শংকর কোন জামা কাপড় পড়েনি। শুধু কোমড়ে একটা টাওয়েল জড়ানো ছিল। বিন্দুকে বুকের উপর নিতে গিয়ে কোমড়ের টাওয়েল কোমড়েই রইল, ধনটা মাস্তুলের মত সোজা হয়ে রইল আকাশের দিকে মাথা তুলে। দশাসই মনি শংকরের বাড়াটাও অনেক লম্বা আর চওড়া। বিন্দু শুয়ে আছে মনি শংকরের বুকের উপর। একদম আপাদমস্তক প্রতিস্থাপিত। এ ক্ষেত্রে দুই রানের ফাক দিয়ে বাড়াটাকে দাড়াবার সুযোগ দেয়া ছাড়া আর কোন উপায় থাকে না। বিন্দু তাই করলো। প্যান্টি ঘেষে মনি শংকরের বাড়া বিন্দুকে রান চুদা করছে। আর বিন্দু স্বামীর চোখে তাকিয়ে তার টকটকে লাল ঠোট দুটিকে নিজের দু ঠোটের মাঝে নিয়ে কমলার কোয়ার মত চুষছে। দুজনের মাঝে লড়াই শুরু হলো কে কার ঠোট চুষতে পারে। বিন্দু মনি শংকরের হাত দুটি বিছানার সাথে চেপে ধরলো। তারপর পুরুষ যেমন ;., করার সময় জোর করে চুমু খেতে চেষ্টা করে তেমনি মনি শংকরকে জোর করে চুমু খেতে লাগলো বিন্দু। স্ত্রীর হাতে ধর্ষিত হবার খেলায় মনি শংকর দারুণ মজা পেতে লাগলো। অনভিজ্ঞ, আনাড়ি বিন্দু নয়। এ হলো অভিজ্ঞ আর পরিপূর্ণ এক নারী। মাত্র কয়েক মূহুর্তে মনি শংকরকে নাচিয়ে তুললো সে।
ধ্বস্তা ধ্বস্তি করে এক সময় হাত দুটি ছাড়াতে সক্ষম হলো মনি শংকর। বুকের উপর উপুর হয়ে থাকা বিন্দুর পিঠের উপর হাত নিয়ে অভিজ্ঞ হাতের এক টিপে ব্রার হুক খুলে ফেলল। বাধন মুক্ত হয়ে চাবুক খাওয়া ঘোড়ার মত লাফ দিল বিন্দুর বুক। মনি শংকর পজিশন নিয়েই ছিল। একটা নিপল সটান গিয়ে পড়লো মনি শংকরের মূখে। খপ করে সেটাকে দু ঠোটের মাঝখানে চালান করে দিয়ে দাতের হালকা চাপে আটকে নিল। বেশী নড়াচড়া করলে বোটায় টান পড়বে। তাই চুপ করে গেল বিন্দু। দুই হাতে দু টি স্তন চেপে ধরলো মনি শংকর। তার মস্ত থাবায় ৩৬ সাইজের দুধ সহজেই গ্রীপ হলো। হাতের চাপ বজায় রেখে একবার এ বাট আর একবার ও বাটে মূখ লাগিয়ে ছাগল ছানার মত চুষতে লাগলো। অনেক দিন পর পুরুষ ঠোটের স্পর্শ। বিন্দুর ভিতরে বিদ্যুতের মত শিহরণ জাগছে। ভাললাগাটা ছড়িয়ে পড়ছে শিরায় শিরায়। থেকে থেকে সংকোচিত হচ্ছে বিন্দুর যোনী। রসে ভিজে সপসপ করছে প্যান্টি। ভেজা প্যান্টি ঘষা খাচ্ছে মনি শংকরের তলপেটে। আর লজ্জায় মরমে মরে যাচ্ছে বিন্দু। ধ্যাত, গর্দভটা যদি আগেই প্যান্টিটা খুলে নিত তাহলে এমন লজ্জা পেতে হতো না। বিন্দু না চাইলেও তার দুই থাইয়ের চাপ পড়ছে মনি শংকরের বাড়ায়। আর চাপ খেয়ে ফুস ফুস করে বিদ্রোহ করছে তার আখাম্বা বাড়া।
বিন্দু ভাবলো বাড়া মহারাজের একটু ট্রিটমেন্ট দরকার। সে আস্তে করে মনি শংকরের বুকের উপর থেকে উঠে পড়ে তার পেটের উপর আড়াআড়ি কাত হলো। তার পর কোমড়ের কাছে জড়িয়ে থাকা টাওয়েল টা ছুড়ে ফেলে দিল তার শাড়ি আর ব্লাউজের উপর। বিন্দুর পিঠ মনি শংকরের দিকে। তাই সে কি করছে তা মনি শংকর দেখতে পাচ্ছে না। তবে বুঝতে পারছে যখন বিন্দু তার বাড়া মুন্ডিটায় আলতো করে চুমু খেল। তার পর বেইসটাতে হাত রেখে খুব হালকা করে জিব বুলালো বাড়ার গায়ে। মনি শংকর কেপে কেপে উঠছে। তার হাত দুটি বেকার। বিন্দুর পিঠ আর নিতম্ব দেখা ছাড়া তার আর কোন কাজ নেই। সে আড়াআড়ি বিন্দুর পা দুটি টেনে বুকের প্রায় কাছে নিয়ে এল। পাছা যদি দেখতেই হয় কাছে থেকে দেখবে। সে প্যান্টির ভিতর আংগুল ঢুকিয়ে বের করে আনলো পা গলিয়ে। ভরাট পাছা উন্মুক্ত হলো তার চোখের সামনে। সুডৌল, সুগঠিত নিতম্ব। হালকা আলোয় চিক চিক করছে। ভেজা প্যান্টির রস লেগে আছে।
হঠাত একটা কাজ পেয়ে গেল মনি শংকর। একা একা মজা নেবে বিন্দু এটা তো মেনে নেয়া যায় না। বিন্দু আগের মত উপরেই রইল। শুধু তার গুদ চলে এল মনি শংকরের মূখের উপর আর মূখ চলে গেল বাড়ার উপর। বিন্দুর হাটু আর কনুই বিছানায়। সে হাত দিয়ে না ধরে মনি শংকরের বাড়া চুষছে। তার গুদ টা মনি শংকরের মূখের থেকে সামান্য সামনে। পিছন থেকে দুই আংগুলে গুদটা ফাক করে ধরে তার ভিতরে জিব ছোয়াল মনি শংকর। সেই চির চেনা নোনতা স্বাদ। কিছুক্ষণের মধ্যেই পাগল হয়ে গেল দুজন। বিন্দু আগেই বলে দিয়েছে বাইরে মাল আউট করা যাবে না। তাই সতর্ক হলো মনি শংকর। থামিয়ে দিল বিন্দুকে। দীর্ঘ শৃংগারে আগুনের মত উত্তপ্ত হয়ে আছে বিন্দু। মনি শংকর মাল ধরে রাখলেও বিন্দু জল ধরে রাখতে পারেনি।
উঠে বসে সামান্য বিরতি নিল বিন্দু। হাসলো লজ্জা মেশানো হাসি। এক গাদা অলংকার ছাড়া তার শরীরে আর কোন সূতা নেই। হাতের শাখা আর চূড়ি ছাড়া সব খুলে নিল মনি শংকর। উদ্দাম সংগমের সময় অলংকার বাধার সৃষ্টি করে। তারা বাচ্চা চাইছে। মেইল ডমিনেটিং ক্লাসিক পজিশন এর জন্য সবচে উত্তম। মাথার নীচের বালিশটা বিছানার মাঝামাঝি নিয়ে এল সে। তার পর বিন্দুকে চিত করে শোয়াল। বালিশের উপরে রইল পাছা। মাথার নীচে কিছুই নেই। এতে গুদের ছেদা কিছুটা উর্দ্ধমূখী হয়ে রইল। এ ভাবে সংগম করলে সম্পূর্ণ বীর্যটাই গুদের ভিতরে ধারণ করা সম্ভব হয়। তাদের দুজনের কারোই দৃশ্যতঃ কোন সমস্যা নেই। বড় বড় ডাক্তাররা বলছেন, “চেষ্টা চালিয়ে যান। ঠাকুর কৃপা করতে পারে। আপনাদের শারীরীক কোন সমস্যা নেই।”
বিন্দুর দৃঢ় বিশ্বাস মনি শংকর যদি সব মন্দ কাজ ছেড়ে দেয় তবে সে সন্তানের মা হতে পারবে। প্রিয় কিছু ত্যাগ করার মধ্য দিয়ে অধিক প্রিয় কিছু পেতে হয়। মনি শংকর তার সাথে একমত হয়েছে। আজ তাদের প্রথম চেষ্টা। সর্ব শেষ হাসপাতালের নার্স লাবন্যকে চুদেছিল মনি শংকর। প্রায় এক মাসের উপর হতে চললো। এর মাঝে আর কোন নারী সংস্পর্শে আসেনি সে।
মনি শংকর খুব যত্নের সাথে বিন্দুর পা দুটি নিজের কাধে তুলে নিল। গুদ টা হা হয়ে আছে। বাড়াটা সুন্দর করে সেট করলো গুদের মূখে। বাড়া আর গুদ দুটোই ভেজা সপসপে। আলতো চাপে মুন্ডিটা ঢুকালো প্রথম। একটু থামলো। হাসলো বিন্দুর মূখের দিকে তাকিয়ে। একটু নার্ভাস। তারপর হঠাত চাপ দিয়ে পুরো নয় ইঞ্চি সেধিয়ে দিল একবারে। বিন্দু খুবই টাইট। তাই বেশ লাগলো তার। কিন্তু বুঝতে দিল না। ব্যাথাটা হজম করলো হাসি মূখে। পুরো বাড়া ঢুকে যাবার পর আবারও থামলো মনি শংকর। তারপর আস্তে আস্তে ঠাপ শুরু করলো।
ঘরের মিউজিক তখন দ্রুত লয়ে বাজছে। বিন্দু হিসাব নিকাশ করেই সব সেট করেছে। বিটের তালের সাথে ছন্দ খুজে নিল মনি শংকর। ধীরে ধীরে গতি এবং চাপ বাড়াচ্ছে। নীচ থেকে তল ঠাপ দিয়ে তাল মেলাচ্ছে বিন্দু। এভাবে প্রায় টানা পনের মিনিট বিরতিহীন ঠাপ চালিয়ে গেল মনি শংকর। মাঝে মাঝেই পাছাটা বালিশ থেকে শূণ্যে তুলে তার বাড়াটাকে কামড়ে ধরছে বিন্দু। মাথা নাড়ছে বিছানার উপর এপাশ ওপাশ। দুই হাতে খামছে ধরছে মনি শংকরের পিঠ। কখনও নখ বসে যাচেছ মাংসের ভিতর। বিন্দুর উন্মাদনা উপভোগ করছে । মনি শংকর বুঝতে পারছে বিন্দু একাধিকবার জল খসিয়েছে। এটাও বুজতে পারছে তার নিজেরও সময় হয়ে এলো। মাঝখানে বিরতি নিলে ঘন্টা নাগাদ চুদতে পারে মনি শংকর। কিন্তু চটি বইতে যাই লেখা থাক অভিজ্ঞতায় সে জানে এরকম বিরতি নিয়ে দীর্ঘ সময় চুদায় যতটা ক্লান্ত হয় ততটা মজা হয় না। শেষের দিকে ইজাকুলেশনের সময় সেনসেশন কমে আসে। সবচে বড় কথা পার্টনারের জলখসার আগমূহুর্তে বিরতি নিলে তার পরিপূর্ণ তৃপ্তি হয় না। পরে সাতবার চুদেও অতৃপ্তি মেটানো যায় না। পর্নস্টাররা নেশার ঘোরে ক্যামেরার সামনে যাই করুক, সে জানে সুস্থ স্বাভাবিক নারী টানা দশমিনিট গাদন খেলে তিনবার জল খসাবে। বিন্দুর ইতোমধ্যে খসে গেছে। তাই সে বিরতি দিল না। তার ঠাপের গতি ও ফোর্স দুটোই একসময় চরমে উঠলো। বিন্দুর শীrকার এবং চীrকার একাকার হয়ে গেল। “উউউউউ, আআআআআআআহ, হুউউউউম, মরে গেলাম চৌধুরী। আহ আহ আর পারছিনা। এবার শেষ কর। আহ মাগো, গেলাম রে। ঢাল এবার ঢাল।” নিজের দুই হাত আর হাটুর উপর ভর মনি শংকরের। বিন্দুমাত্র চাপ নেই বিন্দুর উপর। শুধু বাড়ার আসা যাওয়ার চাপ ছাড়া। বিন্দু তার দুই পা কোমড়ের পাশ দিয়ে মনি শংকরের পিঠের উপর নিয়ে কেওড়া দিয়ে ধরেছে। মুন্ডিটা ভিতরে রেখে সম্পূর্ণ বাড়াটা মনি শংকর বাইরে বের করে আনছে। তারপর সজোরে ঠেলে দিচ্ছে পুরোটা। ঠেকছে গিয়ে বিন্দুর নাভী পর্যন্ত। হুচুতফুচুত হুচুতফুচুত হুচুতফুচুত শব্দ বেরিয়ে আসছে। বলবান সক্ষম পুরুষের চোদনের ধরণই আলাদা। কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে মনি শংকরের। দাত চেপে আছে পরস্পরের সাথে। ফাক দিয়ে বাতাস বেরিয়ে শব্দ হচ্ছে হুইসেলের মত। শেষ মূহুর্তে এসে স্রেফ উন্মাদ হয়ে গেল মনি শংকর। চোখের দৃষ্টিতে আসেনা এমন দ্রুততায় পৌছাল ঠাপের গতি। তার পর একসময় শ্রাবণের ধারার মত একুল ও কুল ছাপিয়ে শুরু হলো বীর্যপাত। যেন ভিসুভিয়াস লাভা উদগীরন করছে। বলকে বলকে বেরিয়ে আসছে গাঢ়, গরম বীর্য। বিন্দু একদম চুপ করে রইল পুরোটা সময়। মনি শংকরকে দুইহাতে বুকের সাথে চেপে জড়িয়ে ধরে রাখলো। শুধু মনি শংকরের থলি আর বাড়ার সংকোচন প্রসারণ ছাড়া সমস্ত নড়াচড়া স্থির। এভাবে সম্পূর্ণ বীর্য ধারণ করলো নিজের ভিতর। স্খলন শেষেও মনি শংকরকে বিচ্ছিন্ন হতে নিষেধ করলো। একই ভাবে জড়িয়ে রাখলো দীর্ঘ সময়। প্রায় আধা ঘন্টা পর মনি শংকরের লিংগটা শিথিল হয়ে এল। খুব সাবধানে লিংগ বিচ্ছিন্ন করলো মনি শংকর। কিন্তু বিন্দু একটুও নড়াচড়া করলো না। ঠায় চুপ করে রইল প্রায় এক ঘন্টা। মনে মনে ঠাকুরকে ডাকলো। সন্তানের জন্য প্রার্থনা করলো।

""পৃথিবীটা রঙ্গমঞ্চ আমরা সবাই অভিনেতা"" !! Sad

[+] 3 users Like Kolir kesto's post
Like Reply
#32
২৩ পর্ব

মনি শংকর ফ্রেশ হয়ে এসে দেখলো বিন্দু একভাবেই আছে। সেও বিন্দুকে নাড়ালো না। শুধু মাথার কাছে বসে তার মাথাটা তুলে নিল নিজের উরুর উপর। বিন্দু দুই হাতে মনি শংকরের দুই হাত চেপে ধরে রাখলো। কেউ কোন কথা বললো না। শুধু হাতের চাপ বাড়া আর কমার মধ্য দিয়ে তাদের হৃদয়ের সব কথা বলা হয়ে গেল। বিন্দু ভুলে গেল সব অভিমান। নতুন মনি শংকরের জন্ম হলো আজ সকালে।

এটাই মা দুর্গার কৃপা যে বাঙ্গালী ঘরের বউ সময়ে মা দূর্গার চেয়েও শক্তিশালী হয়ে উঠে।
আগামীকাল অমিতকে রিলিজ করা হবে। সে এখন সম্পূর্ণ সুস্থ। সর্বশেষ এক্স-রে তে দেখা গেছে ভাংগা হাড়গুলি সব জোড়া লাগতে শুরু করেছে। শরীরের কোথাও কোন ব্যথা বা ইনফেকশান নেই। বাম হাতের মুভমেন্ট একদম সাবলীল। অমিতের ডাক্তার লোকটা সবসময়ই রসিক। তিনি দেখে টেখে অমিতকে পাঞ্জা দেখিয়ে বললেন, “কি মিঃ চৌধুরী হবে নাকি এক রাউন্ড?” অমিত হাসলো । সেরে উঠায় তারও ভাল লাগছে। তবে বেশ দূর্বল।
অমিত কোথায় উঠবে সেটা এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি। বন্যা চাইছে ছোট কাকু তাদের বাসায় উঠবে। মনি শংকর তাকে নিজের কাছে রাখতে চাইছে। এ প্রস্তাব দুটি প্রকাশ পেয়েছে। ম্যাগীর গোপন ইচ্ছা অমিত হোটেলেই ফিরে আসুক। আর অঞ্জলী চায় অমিত তাদের পুরনো বাড়িতে ফিরে যাক। বাড়িটাকে আশ্রমের জন্য দান করা হলেও মূল বসতবাড়িটা মালিকদের বসবাসের জন্যই রাখা আছে। যদিও পুরনো আমলের জমিদার বাড়ির আদলে তৈরী এ বাড়িতে মালিকদের কেউ আর থাকে না। নিরাপত্তার জন্য এটা বেশ উপযোগী। তাই অমিতেরও ইচ্ছা সে সেখানেই উঠবে। কিন্তু হোটেলে উঠা বা পুরনো বাড়িতে এ বিষয় দুটি এখনও মনে মনে রয়ে গেছে।
অমিতের কেবিনের পাশেই নার্সেস স্টেশন। রাত নটা থেকে ভোর ছটা পর্যন্ত অঞ্জলীর ডিউটি। তবে সে সন্ধ্যে ছটা নাগাদ চলে আসে । আবার ডিউটি শেষ করে ফিরতে ফিরতে সকাল আটটা মত বেজে যায়। কাজে ভাল। কথা বলে কম। দায়িত্বশীল। তার মূল কাজ হলো নার্সদের ডিউটি সমন্বয়। কাজটা সে ভালমতই করছে। তাকে সারাক্ষণ নার্সেস স্টেশনে পাওয়া যায়। এক মিনিটের জন্য ফাকি দেয় না। ফলে কয়েকদিনের মাঝেই সকল ডাক্তারের কাছেই তার গ্রহণযোগ্যতা তৈরী হয়ে গেল। অঞ্জলীও সারাক্ষন অমিতকে চোখে চোখে রাখতে পেরে খুশী। তবে সে অমিতের কেবিনে ঢুকে না।
গত কদিন ধরে হাসপাতালে রোগীদের চাপ তেমন একটা নেই। নার্সেস স্টেশনে বসে অঞ্জলী চেয়ারে হেলান দিয়ে গভীর মনোযোগের সাথে ঠাকুরমার চিঠিটা বিশ্লেষণ করছিল। তার মাথাটা একদম অমিতের মাথার পাশে। মাঝখানে কেবল একটা হার্ডবোর্ড পার্টিশান। তবে অমিত সেটা জানে না। অমিত জানে অঞ্জলী তার আশে পাশেই কোথাও আছে। কিন্তু এতটা কাছে তার সে ভাবেনি। যাই হোক অঞ্জলী চিঠিটার তেমন কোন হদীস বের করতে পারলো না। তার ধারণা খুব সহজ কোন একটা সংকেত লুকিয়ে আছে এখানে অথচ সহজে চোখে পড়ছে না।
কিছুক্ষণ মাথা ঘামিয়ে বিরক্ত হয়ে তার মনে হল, অমিতকে পার্টিশানের এপাশ থেকে একটা কিস করলে কেমন হয়? তাকিয়ে দেখল আশেপাশে কেউ নেই। সে চকাস শব্দ করে পার্টিশানের গায়ে কিস করলো। অমিত কি টের পেল সেটা? না। কিস করলাম, অথচ যাকে করলাম সে জানতে পারলো না। বাহ্* বেশ মজার তো। কিছু একটা মাথায় আসতে চাইছে অঞ্জলীর। কিন্তু আবার মিলিয়ে যাচ্ছে। তার মাথায় শব্দটা ঘুরপাক খাচ্ছে। কিস। KISS. নানা ভাবে উচ্চারণ করছে আর ভাবছে। হঠাত করেই সূত্রটা পেয়ে গেল অঞ্জলী। ইলেভেন নাইন নাইনটিন স্কোয়ার। হা হা হা হা। পেন্সিল আর নোট প্যাড নিয়ে বসে গেল সে। দ্রুত হিসাব কষছে।
নাইট গ্লাসটা চোখ থেকে নামিয়েই প্রতাপ হাজরা হাসপাতালে তার লোককে ফোন দিল। “এই শালা গর্দভ আর কত দিন অপেক্ষা করতে হবে? আগামীকাল রিলিজ হয়ে গেলে তখন তো তুই তার টিকির সন্ধানও পাবি না।”
“দেখুন আপনার সব কথা আমি মানছি। কিন্তু বাস্তব অবস্থাও আপনাকে দেখতে হবে। সব সময় কেউ না কেউ কেবিনে আছে। ব্যাটা নিজেও এখন বেশ সজাগ। সবচে বড় কথা এখানে দুটো টিকটিকি রয়েছে।”
“শাট আপ। বড় বাবুর সাথে কথা হয়েছে। কোন টিকটিকি ফিকি থাকবে না।”
“আছে। দুজন। একজন প্যাশেন্ট আর একজন এটেনডেন্ট।”
“শালাতো জ্বালিয়ে মারলো দেখছি। আচ্ছা ঠিক আছে আমি ওদের সরাবার ব্যবস্থা করছি। এর পর যেন আবার অন্যকোন অজুহাত তুলো না। তাহলে তোমার সব গুমোড় আমি পত্রিকা অফিসে পাঠিয়ে দেব।”

চুপসে গেলেন ডাক্তার অমলেশ মূখার্জী। জীবনে একটাই পাপ করেছিলেন তিনি। আর সেটা ছিল এই প্রতাপ হাজরার পাতা ফাঁদ। সেই ফাঁদ থেকে এখন আর বেরোতে পারছেন না। এক তরুণীর সাথে অবৈধ সম্পর্ক হয়েছিল তার। সে সূত্রে প্রেগনেন্ট হয়ে যায় মেয়েটি। পরে তাকে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে অ্যাবরশন করানো হয়। আসলে মেয়েটা ছিল প্রতাপ হাজরার রোপন করা এজেন্ট। তাদের সকল অপকর্ম গোপন ভিডিওতে ধারণ করা আছে প্রতাপ হাজরার কাছে। এটাই তার অপরাধ ব্যবসার পুঁজি। ব্ল্যাক মেইলিং। হাজারো মানুষকে ফাঁসিয়ে রেখছে সে। যখন যাকে প্রয়োজন তাকেই ব্যবহার করে। যেমন আজ করছে হাসপাতালের সিনিয়র কনসালটেন্ট ডাক্তার অমলেশ মুখার্জীকে।
অমিতের কেবিনে ঢুকার আগে এর সামনে দিয়ে একবার হেটে গেলেন তিনি। আশেপাশে তেমন কেউ নেই। নার্সেস স্টেশনে নতুন নার্সটাকে দেখা যাচ্ছে নোট বুকে কি যেন লিখছে। ঘরের ভিতর অ্যা্টেনডেন্ট মেয়েটা আছে। সে কোন সমস্যা নয়। তিনি রাউন্ডের নাম করে এ কেবিন ও কেবিনে একবার করে ঢু মারলেন। তারপর সন্তর্পনে ঢুকে পড়লেন অমিতের কেবিনে।
অমিত ঘুমাচ্ছে। পাশের রুমে বন্যাও ঘুমিয়ে পড়েছে। আজ ম্যাগী আসেনি। বিন্দু, মঞ্জু দুজনই আসতে চেয়েছিল, বন্যা ভাগিয়ে দিয়েছে। অমিতের কেবিনে ঢুকে দ্বিধায় পড়ে গেলেন ডাক্তার অমলেশ মূখার্জী। তিনি জীবন দেন জীবন হরন করেন না। একজন ঘুমন্ত মানুষকে ঠান্ডা মাথায় খুন করার মত নীচ মানসিকতা তিনি অর্জন করতে পারেননি। তার বিবেক তাকে আটকে রাখছে। অ্যাপ্রনের পকেটে সিরিঞ্জটা আছে। খালি সিরিঞ্জ। সুইটা শরীরে ফুটিয়ে জাস্ট প্লাঞ্জারটা পুশ করে দিলেই হবে। ঘুমের মাঝেই মারা যাবে মারা যাবে অমিত। হার্ট অ্যাটাকে। খুন বলে প্রমাণ করতে পারবে না কেউই। তিনি যদি ব্যর্থ হন প্রতাপ হাজরা তার ভিডিও প্রকাশ করে দেবে। তার সংসার ভেংগে যাবে। মেয়েটার বিয়ে হবে না। ;., আর অ্যাবরশনের দায়ে জেল হবে তার। যাবজ্জীবনও হতে পারে। আহ! আর ভাবতে পারছেন না তিনি। পকেটে হাত দিয়ে সিরিঞ্জটা স্পর্শ করলেন।
রাত বারটার পর ইমারজেন্সী কল ছাড়া কোন ডাক্তার কেবিন রাউন্ড দেয় না। ডাক্তার অমলেশ মুখার্জীকে রাউন্ডে বেরোতে দেখে অঞ্জলীর ধারণা হলো কোথাও কোন ইমারজেন্সী দেখা দিয়েছে। কিন্তু যে দুটি কেবিনে তিনি ঢুকলেন সেখানে কোন ইমারজেন্সী রোগী নেই। তার মনে খটকা লাগলো। সে নোট প্যাডে লেখার ভান করে চোখের কোণে ডঃ মূখার্জীকে ধরে রাখলো। যখন ইতি উতি তাকিয়ে ডাক্তার বাবু অমিতের কেবিনে ঢুকলেন তখনই অঞ্জলী উঠে দাড়ালো। দ্রুত দরজার সামনে এসে দেখল ডাক্তার বাবু অমিতের বিছানার পাশে দাড়িয়ে ইতস্ত করছেন।অমিত ইমারজেন্সী কোন রোগী নয়। তার কেবিন থেকে কলও করা হয়নি। রুটিন ডিউটিও নয়। নিশ্চই কোন বদ মতলব আছে। অঞ্জলী তার পিছনে দরজার আড়ালে ঠাই দাড়িয়ে রইল। ডাক্তার বাবু টেরই পেলেন না। অনেকক্ষণ ইতস্ত করে তিনি যখন খালিক সিরিঞ্জটা বের করলেন তখন অঞ্জলী তার উদ্দেশ্যটা বুঝতে পারলো। সিনেমায় এরকমটি দেখেছে সে।
মূহুর্তেই সে তার করণীয় ঠিক করে ফেলল। ডাক্তার বাবু সিরিঞ্জটা পুশ করতে যাবেন এমন সময় পিছন থেকে তার কব্জি চেপে ধরলো অঞ্জলী। পিস্তলটা ঠেকালো একদম ঘাড়ের মাঝখানে। ঘাড়ে পিস্তলের ছোয়া আর কব্জিতে অঞ্জলীর হাত পড়তেই জমে ফ্রিজ হয়ে গেলেন ডাক্তার বাবু। অঞ্জলী কোন শব্দ না করে চোখের ইশারায় বের হতে বললো। ডাক্তার সোজা হতেই সিরিঞ্জসহ হাতটা ঠেলে আবার অ্যাপ্রনের ভিতর ঢুকিয়ে দিল অঞ্জলী। পিস্তলটা মুঠি করে নিজের অ্যাপ্রনের পকেটে রাখলো। আংগুলটা ছুইয়ে রইল ট্রিগার। ডাক্তারের একদম বগলদাবা হয়ে বেরিয়ে এল কেবিন থেকে। গভীর রাতে ডিউটিরত ডাক্তার-নার্স রোমান্স কোন অস্বাভাবিক ঘটনা নয়। দুজন স্বাভাবিক ভাবে হেটে চলে এল অমলেশ মূখার্জীর চেম্বারে।
চেম্বারে ঢুকে দরজা লক করলো অঞ্জলী। তারপর খুব আস্তে করে জিজ্ঞেস করলো, “কেন ডক্টর?” অমলেশ মূখার্জী মূখ খুললো। ভয়ে কাপতে কাপতে বলল সব কিছু। অঞ্জলীর মায়া হলো না। এধরনের মেরুদন্ডহীন কেচো টাইপ লোক বেঁচে থাকলে সমাজে আরও অসংখ্য অমিতকে জীবন দিতে হবে। অঞ্জলী তার পকেট থেকে মোবাইলটা বের করলো। তারপর রেকর্ডার অন করে এতক্ষণ ডাক্তার বাবু যা বললেন তা প্লে করে শুনালো। ডাক্তারের ছুচোর মত মূখটা আরও লম্বাটে হয়ে গেল। খুব আস্তে কিন্তু কঠিন কন্ঠে বললো অঞ্জলী, “আপনার বেঁচে থাকাটা আরও কষ্টদায়ক হয়ে গেল ডক্টর। রেকর্ডটা পুলিশের হাতে চলে যাবে।” পিছন ফিরে না তাকিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে এল অঞ্জলী। তাকে ডাক্তারের চেম্বারে ঢুকতে বা বেরুতে কেউ দেখেনি।
সকাল বেলা হাসপাতাল জুড়ে হৈ চৈ শুনা গেল। ধড়মড় করে উঠলো বন্যা। “কি হয়েছে রে মা?” অমিত জানতে চাইল। কয়েক মিনিট পর ফিরে এসে বন্যা জানালো, “এক ডাক্তার বাবু কাল রাতে তার চেম্বারে হার্ট অ্যাটাকে মারা গেছেন।”

“শীট!” গর্জে উঠলো প্রতাপ হাজরা। ডাক্তার অমলেশ মুখার্জীর মৃত্যুর খবর বেরিযেছে পত্রিকায়। সেটা দেখেই তার রাগ। রাত থেকেই গজরাচ্ছিল সে। কাজ শেষ করে ফোন করার কথা ছিল। কিন্তু ডাক্তারের কোন ফোন পায়নি। সর্ব শেষ তাকে অমিতের কেবিন থেকে বেরিয়ে নিজের চেম্বারে আসতে দেখা গেছে। সাথে এক সুন্দরী নার্স।
“শালা বুড়ো বয়সে মৌজ করতে গিয়ে মরেছে নিশ্চই।” সে সিদ্ধানেইত এল। অমিত লোকটাতো অসম্ভব ভোগাচ্ছে। এ ব্যাটার জন্য তার প্রেস্টিজ পাংচার হবার যোগাড়। এবার যা করার সে নিজেই করবে।

অঞ্জলী খুব শান্তভাবে নিল ডাক্তারের মৃত্যু সংবাদটাকে। মোবাইল থেকে ডিলিট করে দিল ডাক্তারের কথাবার্তা। অন্য সকলের সাথে মিলে দুঃখ প্রকাশ করলো। তার পরিবারের সদস্যদের সমবেদনা জানালো। মনে মনে গেথে রাখলো অমলেশ বাবুর মেয়ের বিয়ে আর ছেলের পড়াশুনার বিষয়টা দেখতে হবে।
খুব দ্রুত একটা ছুটির দরখাস্ত লিখলো অঞ্জলী। জরূরী প্রয়োজনে গ্রামে যেতে হবে এরকম কারণ দেখিয়ে। তার পর সহকর্মীদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেল। ফিরে এল ঘন্টা দুই পরে তার স্বাভাবিক গেট আপ এ। অমিত রিলিজ হবে বেলা এগারটায়। ম্যাগী আর বিন্দু ছাড়া সবাই এসেছে। বিন্দু অমিতের জন্য ঘরদোর গোছগাছ করছে। তাকে সহযোগিতা করছে ম্যাগী।

""পৃথিবীটা রঙ্গমঞ্চ আমরা সবাই অভিনেতা"" !! Sad

[+] 4 users Like Kolir kesto's post
Like Reply
#33
২৪ পর্ব

ঠিক হয়েছে এবার মনি শংকরের বাড়িতে উঠবে অমিত। বন্যা খুব মন খারাপ করেছিল। বিন্দুর কথায় শেষ পর্যন্ত থেমেছে। যে কদিন অমিত মনি শংকরের বাড়িতে থাকবে সে কদিন বন্যাও সেখানে থাকবে। এতে বিন্দুর আনন্দ দ্বিগুণ হয়ে গেল। মেয়েটাকে সে যে কি পরিমাণ ভালবাসে তা কল্পনারও বাইরে। নিজের সন্তান থাকলে তাকেও বোধ হয় এতটা ভালবাসতো না। মনি শংকরও তাকে ভালবাসে। রাশভারী মনি শংকর বন্যার সাথে হয়ে যায় শিশু।
ঘর গোছাতে গোছাতে শিস বাজাচ্ছে বিন্দু। ম্যাগী তাকে সহযোগিতার নামে ঝামেলাই করছে বেশী। এটা ওখানে রাখ, ওটা সেখানে রাখ। এরই মাঝে ঘরের পর্দা পাল্টেছে তিনবার। শেষমেষ অস্থির হয়ে বিন্দু ধমক দিলো, “হ্যারে ম্যাগী, এত জ্বালাতন করছিস কেন বলতো? আমার দেবরকে আমি যেভাবে রাখি সে সেভাবেই থাকবে।”
“তাই নাকি? খুব ভাবছিল তোমাদের মাঝে তাই না?”
“ওমা সেকি কথা! থাকবে না কেন? ছোট ঠাকুরপো ছিল আমাদের বাড়ির প্রাণ।”
“আর তুমি ছিলে তার প্রাণ ভোমড়া।”
প্রস্তুত ছিল ম্যাগী। তাই সময় মত সরে যেতে পেরেছে বিন্দুর থাপ্পড় থেকে। তাদের খুনসুটি দেখে বুঝার উপায় নেই দুজন পৃথিবীর দুই গোলার্ধের বাসিন্দা। তাদের মাঝে না আছে কোন সম্পর্ক, না আছে কোন সাদৃশ্য। তবুও কি সুন্দর পারিবারিক আবহ।
“দাঁড়া এবার ঠাকুরপোকে লাগাবো তোর পিছনে।”
“তোমার ঠাকুরপোকে আমার সামনে পিছনে কোনদিক থেকেই লাগাতে পারবে না।”
“ছি! কথার কি ছিরি দেখ? এই ঢ্যামনি তোর কি লজ্জা শরম বলে কিছু নেই?”
“হুম! কৃষ্ণ করলে লীলা আর আমি করলে দোষ, তাই না? আচ্ছা মেজবৌদি তোমার ছোট ঠাকুরপোর বিযে দিচ্ছ না কেন?”
“দেব, এবার নিশ্চই দেব। ভাল একটা মেয়ে খুজেঁ পেলেই দেব। আছে নাকি তোর খুজেঁ কোন মেয়ে?” হঠাত বিন্দুর খেয়াল হলো এ বিষয়ে ম্যাগী কেন কথা বলছে। এটা তো তার বিষয় নয়। পাহারা দিতে গিয়ে আবার প্রেমে পড়েনিতো মেয়েটা?
“এই তুই ঠাকুরপোর বিয়ে নিয়ে এমন উতলা হলি কেন রে? ওর প্রেমে পড়িস নি তো?”
“সে আর বলতে। জনম জনম ধরে তোমার ঠাকুরপোর প্রেমে আমি হাবুডুবু খাচিছ।”
“উফ তোর ঢ্যামনামি আর গেল না।”
“শুন মেজবৌদি, সুযোগটা দ্বিতীয়বার নাও আসতে পারে তাই সময় থাকতেই বলে রাখছি, তোমার ঠাকুরপো অঞ্জলীদির প্রেমে মজনু হয়ে আছেন গত দেড় যুগ ধরে।
“সব কিছু নিয়ে ঠাট্টা করবি নাতো! অঞ্জলী আমাদের পরিবারেরই একজন প্রায়। ওতো ঠাকুর পোর চে বয়সে বড় আর বাল বিধবা।”
“যিশুর কিরে বৌদি, এটা ঠাট্টা নয় ।
“তুই জানলি কি করে?”
“আমি সাংবাদিক, আমাকে জানতে হয়। জানাটাই আমার কাজ।
“হায় ভগবান, বলিস কি রে হতচ্ছারী?
“অঞ্জলীদি সারা জীবন আই বুড়ো থেকে গেলেন সেতো তোমার ছোট ঠাকুরপোর জন্যই।”
“ওমা সে কি জানতো নাকি যে ঠাকুরপো পনের বছর পরে তার জন্য দেশে ফিরে আসবেন?”
“সে তারমত অপেক্ষা করে গেছে, আসলে আসবে না আসলে নাই।”
“কিন্তু অঞ্জলীও তো বিয়েথা করে সংসারী হয়ে যেতে পারতো। তার সাথে তো ঠাকুরপোর যোগাযোগ ছিল না।”
“তোমার ঠাকুরপোও সে ঝুকি নিয়েই অপেক্ষা করেছে।”
“তোর কথা যদি সত্যি হয় তবে শীঘ্র্ই আমি দুটির চার হাত এক করে দেব।”
“তাই দাও। এ যুগে এমন পৌরাণিক প্রেম খুব বিরল।”
“আচ্ছা তুই এত খবর যখন জানিস তো বল দেখিনি তোর বস কোথায় কি করে বেড়াচ্ছে?”
“আমার বস একজন সিংহ হৃদয় একজন মানুষ মেজ বৌদি। মাথা কাজ করে কম। হৃদয় কাজ করে বেশী। তাই লাইনে থাকতে পারেন না। বখে যাওয়া ধনীর দুলাল, যাকে তুমি আবার লাইনে ফিরিয়ে এনেছ।”
অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল বিন্দু এই বিদেশী মেয়েটার দিকে। তার চোখ কি কিছুই এড়ায় না?


চারটে গাড়ি। রোহিতের শেভ্রোলে, মনি শংকরের বিএমডব্লিউ, মঞ্জুর পোর্সে আর অঞ্জলীর বেন্টলী। শেভ্রোলেটা অমিত নিজে ড্রাইভ করে, অঞ্জলীও বেন্টলী নিজে ড্রাইভ করে। মনি শংকর আর মঞ্জুর গাড়ী চালায় ড্রাইভার। সকলে মিলে মিটিং করে সিদ্ধান্ত নিল অমিত শেভ্রোলে নিয়ে মাঝখানে থাকবে। তার সাথে থাকবে বন্যা। সামনে মনি শংকর। পিছনে মঞ্জু আর রোহিত। আর সবার পিছনে থাকবে অঞ্জলী। হাসপাতালের সকল ফরমালিটিজ শেষ হবার পর কিছু রয়ে গেছে কিনা সেটা দেখার জন্য অঞ্জলী ফিরে গেল অমিতের কেবিনে। ভিতরে ঢুকে মনি শংকরকে মেসেজ দিল, “দাদা, কাউকে বুঝতে না দিয়ে অমিতের কেবিনে একবার আস। এক্ষুণি।”
অঞ্জলীর দুঃসাহস দেখে মেজাজ সপ্তমে উঠে গেল মনি শংকরের। তার পরও চুপ থাকলো। খুব ক্যাজুয়াল ভংগীতে অমিতের কেবিনে ঢুকলো। ঠোটে আংগুল রেখে অঞ্জলী মনি শংকরকে কথা বলতে নিষেধ করলো। তার পর নোট প্যাড নিয়ে দ্রুত লিখলো, “দাদা অতীতের কথা ভুলে যাও। অমিতকে ভালবাস তাই বলছি। কাল রাতেও অমিতের উপর অ্যাটেম্পট হয়েছে। আমার ধারণা আবারও হবে এবং সেটা পথে হবার সম্ভাবনাই বেশী। আগের পরিকল্পনা বাদ দাও। শেষ মূহুর্তে অমিতকে নিয়ে তুমি আলাদা গাড়ীতে উঠ।”

শত্রু-মিত্র যাই হোক অঞ্জলীর বুদ্ধির উপর তার আস্থা আছে। আর যেহেতু মনি শংকর নিজে সাথে থাকবে কাজেই অঞ্জলীর পরিকল্পনা মেনে নিল। গাড়ি ছাড়ার একদম শেষ মূহুর্তে পুলিশ জীপ নিয়ে সুব্রত এসে হাজির হলো। নিজেই ড্রাইভ করছে। স্টার্ট বন্ধ না করেই মনি শংকর আর অমিতকে বললো, “উঠে পড়ুন, কুইক।” কেউ কিছু বুঝে উঠার আগেই সাঁ করে বেরিয়ে গেল সুব্রত। পিছন পিছন গেল মনি শংকরের গাড়ি। ড্রাইভার একাই আছে সেটায় । তারপর মঞ্জু আর রোহিত তাদের পোর্সেতে।এবং সবশেষে অঞ্জলীর সাথে বন্যা। শেভ্রোলেটা পরে রইল হাসপাতালের সামনের রাস্তায়। সকলেই খুব দ্রুত সুব্রতকে ফলো করছে। তারা এক কিলোমিটারমত গিয়েছে কি যায়নি, বিকট শব্দে হাসপাতালের সামনে বিস্ফোরিত হলো রোহিতের শেভ্রোলে। টাইম বোমা ছিল গাড়িতে।
দশ মিনিটের মধ্যে মনি শংকরের বাড়ির সামনে পৌছে গেল গাড়ির বহর। লাফ দিয়ে নামলো অমিত আর মনি শংকর। অন্য গাড়ি গুলি থেকে প্যাসেঞ্জাররা এখনও নামা শুরু করেনি সুব্রত রওয়ানা দিল হাসপাতালের পথে। বিস্ফোরণের শব্দ তাদের কানে যায় নি। তবে ওয়াকি টকিতে কোডেড মেসেজ পেয়েছে সুব্রত। হাসপাতালের সামনে পৌছে দেখল বিরাট জটলা। প্রিন্ট আর ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার কর্মীরা ক্যামেরা হাতে ব্যস্ত। সে নামতেই সবগুলি ক্যামেরা ঘুরে গেল তার দিকে। হরবর করে প্রশ্ন করছে সবাই। “শেষ মূহুর্তে আপনি ড. অমিতাভ রায় চৌধুরীকে লিফট দিয়েছেন। আপনি কি আগে থেকেই জানতেন এরকম কিছু ঘটবে।” সুব্রত জবাব দিল না। দুজন কনস্টেবল আর একজন হাবিলদার ছিল সেখানে। তাদের কাছ থেকে জানলো কেউ হতাহত হয়নি। আশেপাশের দুএকটা দোকানপাটের কাচঁ ভেংগে গেছে। আর গাড়িটা সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়েছে। অনুসন্ধানী চোখে জায়গাটা জরীপ করছে সুব্রত। কোন আলামত পাওয়া যায় কি না। হঠাত করেই তার হাতের রুমালটা পড়ে গেল। কেউ লক্ষ্য করলো না রুমাল তুলার সময় এর সাথে একটা ফেঠে যাওয়া পিতলের টুকরাও ঢুকে গেল সুব্রতর পকেটে।
আবারও ছেকে ধরলো সংবাদকর্মীরা। সুব্রত শুধু বললো,” আমি কিছু জানতাম না বা অনুমান করিনি। রুটিন পেট্রোলে এদিক দিয়ে যাচ্ছিলাম। ভিভিআইপি লোকদের গাড়ি বহর দেখে ইনস্টান্টলী লিফট দেবার প্রস্তাব দেই। তারাও রাজী হন। থ্যাংক গড। একটা দূর্ঘটনা থেকে রক্ষা পাওয়া গেল।” নমস্কার জানিয়ে গাড়িতে উঠে গেল সুব্রত। আসলে তাকে ফোন করে ডেকে এনেছিল অঞ্জলী। গোপনীয়তার জন্য কারো সাথে কিছু শেয়ার করেনি।
পোর্চে দাঁড়িয়ে ছিল বিন্দু্। পাশে ম্যাগী। মনি শংকর অমিতকে নিয়ে ভিতরে ঢুকে গেল। মঞ্জু আর রোহিত নামতেই এগিয়ে এল বিন্দু। অনেক অনেক দিন পর তারা এল মনি শংকরের বাড়িতে। অঞ্জলী নামলো না। বন্যাকে নামিয়ে দিয়ে গাড়ি ঘুরিয়ে চলে গেল। রোহিত আর মঞ্জুকে ম্যাগীর হাতে ছেড়ে দিয়ে ফিরতেই দেখল অঞ্জলী চলে যাচ্ছে। হায় হায় করে উঠলো বিন্দু। কিন্তু ততক্ষনে দেরী হয়ে গেছে। অঞ্জলী চলে গেছে মেইন গেইটের কাছে।
সে ঝাড়ি দিল বন্যাকে,”মাসিমনিকে নামতে বললে না কেন?”
“বলেছি তো, তার নাকি অনেক কাজ পড়ে আছে।”
“কাজ না ছাই, আমাদের বাড়িতে নামবে না তাই।”
“তুমি নিশ্চই দাওয়াত করনি?”
“আমি না করলেই বা, তুই করতে পারিসনি?”
“তোমার বাড়িতে আমার মাসিমনিকে আমি কেন দাওয়াত করবো”
খপ করে বন্যার মাথার পিছনে চুলের গোছা মুঠি করে ধরলো বিন্দু। ঝাকুনি দিতে দিতে বললো, “এটা কার বাড়ি বল?”
“ভুল হয়ে গেছে ছোট মা, এটা আমার বাড়ি, এবার ছাড়ো লাগছে।”
“ফের যদি ভুল হয় একটা চুলও রাখবো না তোর মাথায়” বলেই টেনে একদম বুকের কাছে নিয়ে গেল বন্যাকে। তারপর নাকে নাক ঘষে, গাল টিপে আদর করে দিল।
বন্যা ছাড়া এ প্রজন্মের আর কেউ নেই রায় পরিবারে। তাই আঠার পার করেও বন্যা শিশুই রয়ে গেছে সবার কাছে। যৌক্তিক আর অযৌক্তিক নেই, বন্যার চাওয়া, আব্দার আর মতামতই ফাইনাল। তবে মেয়েটা বড় শার্প আর রেশনেল। বড় লোকের আদুরে মেয়ের কোন বৈশিষ্ট্য তার মাঝে নেই। বরং খুবই রেসপনসিবল আর কেয়ারিং। তবে মেজাজী আর ডানপিটে। ছোট বেলার অমিতের সকল বৈশিষ্ট্য তার মাঝে আছে। পড়া শুনায় ভাল। ক্লাসিক্যাল আর মডার্ন দু ধরনের নাচেই তালিম নিয়েছে মায়ের কাছে। বিন্দুর কাছে গান আর অঞ্জলীর কাছে মার্শাল আর্ট। পড়াশুনার চাপে নাচ আর গান বেশী দূর আগায়নি। তবে মার্শাল আর্টের চর্চা অব্যাহত রয়েছে। মঞ্জুর বার বার বারণ সত্বেও এটা সে চালিয়ে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে গ্রীন বেল্ট পেয়েছে। আর এক ধাপ গেলেই অঞ্জলীর সমান হয়ে যাবে। ভাল ব্যাডমিন্টন আর টেবিল টেনিস খেলে। ছোট মার আদর খেয়ে বন্যা সোজা চলে গেল বসার ঘরে।
বসার ঘরে রোহিত আর মঞ্জু রয়েছে। বন্যা এসে বসলো দুজনের মাঝখানে। রিমোট কন্ট্রোল নিয়ে টিভির সুইচ অন করলো। সাথে সাথেই লাফ দিয়ে খবরটা চোখে ঠেকল।
ব্রেকিং নিউজ। সেন্ট্রাল হাসপাতালের সামনে পার্ক করে রাখা একটি গাড়ি বিস্ফোরিত। এ গাড়িতে ড. অমিতাভ রায় চৌধুরীর যাবার কথা ছিল। শেষ মূহুর্তে পুলিশ তাকে এসকর্ট করে বাসায় পৌছে দিয়েছে। অল্পের জন্য বেচে গেছেন তিনি। আজই মাঝ রাতের দিকে এ হাসপাতালের একজন ডাক্তার হার্ট অ্যাটাকে মারা গেছেন। এ দুয়ের মধ্যে সম্পর্ক থাকতে পারে বলে অভিজ্ঞ মহল ধারণা করছে। ড. রায় একজন আন্তর্জাতিক জ্বালানী বিশেষজ্ঞ। কিছু দিন আগেই তার উপর আততায়ী হামলা হয়েছে। আশংকা করা হচেছ কোন আন্তর্জাতিক অপরাধী চক্র দেশের এ কৃতি সন্তানের জীবননাশ করতে চাইছে। তার যথাযথ নিরাপত্তা বিধান করা হয়নি বলে সাধারণ মানুষের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে। বিষয়টি যথাযথ তদন্ত হবে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
রোহিত, মঞ্জু, বন্যা প্রত্যেকের চোখ আটকে আছে টিভির পর্দায়। কেউ কোন কথা বলছে না। চোখের পলক ফেলছে না। দম আটকে আছে তিন জনেরই। খবর শেষ হতে প্রথম দম ফেললো রোহিত। কিন্তু কোন কথা বললো না। মঞ্জু বললো, “রক্ষে কর ভগবান, হচ্ছে কি এসব?” স্বামীর দিকে তাকিয়ে অনুযোগ করলো। যেন রোহিত সব কিছু জানে। সবচে কঠিন প্রতিক্রিয়া হলো বন্যার মাঝে। ফোস করে নিঃশ্বাস ছাড়লো। তার পর উর্দ্ধমূখে দৌড় দিল অমিতের ঘরের দিকে। এক ঝটকায় দরজা খুলে ঘরে ঢুকলো।মনি শংকর আর অমিত দুজনেই ছিল ঘরে। “ছোট বাবা” বলে চীতকার করে ঝাপ দিল মনি শংকরের বুকে।
“হোয়াট হ্যাপেন বেবী! এনিথিং রঙ?”
মনি শংকরের বুক থেকে মূখ না তুলেই অমিতের দিকে আংগুল তুললো। কিন্তু কিছু বলতে পারলো না। সব কথা তার মূখের কাছে এসে আটকে যাচ্ছে। অমিত এটাকে তার স্বাভাবিক প্রগলভতা হিসাবেই ধরে নিল। কিন্তু মনি শংকর জানে বন্যা এখন অনেক ম্যাচিওরড। নিশ্চই সিরিয়াস কিছু।
অনেক কসরতের পর মূল কথাটা জানা গেল। ততক্ষণে বিন্দু, ম্যাগী, রোহিত, মঞ্জু সবাই এ ঘরে এসে হাজির। অমিত সবাইকে শান্ত হতে বললো। তারপর পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার জন্য বিন্দুকে বললো, “মেজ বৌদি তোমার লাঞ্চ কতদূর বল। আমি খুব ক্ষুধার্ত।”
তার পর মঞ্জুর দিকে ফিরে আবার বললো, “বড় বৌদি, মূখটাকে এমন আমসি করে রেখেছ কেন? যা হবার হয়েছে। আমি এখনো বেঁচে আছি দ্যাটস অল। এসো, আমাকে শাওয়ার নিতে হেল্প করবে।”
বন্যা আর রোহিত ফিরে গেল বসার ঘরে। অমিতকে নিয়ে মঞ্জু গেল ওয়াশ রুমে। বিন্দু কিচেনে। মনি শংকর ম্যাগীকে ডেকে নিয়ে গেল বাইরের লনে। “আমার হয়ে ইনস্পেক্টর সুব্রতকে থ্যাংকস জানাও। বল রায় পরিবার তার বিষয়টা মনে রাখবে।”

সে নিজে রিং করলো অঞ্জলীর নাম্বারে। অঞ্জলী রিসিভ করতেই মনি শংকর বললো, “তোমাকে ক্ষমা করে দিলাম। দুপুরে আমাদের সাথে লাঞ্চ করলে খুশী হবো।”
“কিন্তু দাদা” অঞ্জলীর কন্ঠে দ্বিধা। কিছু বলতে গিয়েও যেন থেমে গেল।
“কোন কিন্তু নয়, আমি নিজে তোমাকে নিতে আসবো। তৈরী থেকো।” লাইন কেটে দিল মনি শংকর।
অমিতের স্নান শেষ হয়েছে। ওয়াশ রুমে প্লাস্টিকের চেয়ার পেতে অমিতকে বসিয়ে হালকা গরম জলে স্নান করিয়েছে মঞ্জু। এ কাজটা ছোটবেলায় ঠাকুরমা করতেন। বড় বৌদি যখন তার পিঠ রগড়ে চুলে শ্যাম্পু করছিল তখন সেই ছোটবেলার মতই অমিত চেচামেচী করছিল চোখে শ্যাম্পু গিয়েছে বলে।
“চেচিও না ঠাকুরপো, বন্যা বড় হয়েছে। বুঝতে পারলে প্রেস্টিজ পাংচার।”
পিঠে সাবান ডলতে ডলতে মঞ্জু আবার শুরু করলো, “আচ্ছা ঠাকুরপো, তেমার মনে আছে ঠাকুরমা যখন তোমাকে স্নান করাতেন, তুমি প্রতিবার আমার সফট শ্যাম্পুটা চাইতে।”

অমিত কথা বললো না, শুধু উপরে নীচে মাথা দোলালো।
“এবার বিয়ে থা করে থিতু হও ঠাকুরপো। বন্যাটা কোলে পিঠে ওঠার বয়স পেরিযেছে। তোমাদের ছেলেপিলে হলে একটু যদি সময় কাটে।” বড়বৌদি জল ঢালা শেষ করলেন। তারপর বড় টাওয়েল হাতে দিয়ে বললেন, “এর পরের অংশে আর আমি থাকতে পারছি না।”
অমিত এবারও কথা বললো না, শুধু উপরে নীচে মাথা দোলালো। কথা বললেই ধরা পড়ে যাবে সে কাঁদছে। চোখে শ্যাম্পু যাওয়ায় সুবিধা হলো, তার চোখের জল বড়বৌদি দেখতে পেল না।
বসার ঘরে রোহিতকে সংগ দিচ্ছিল মনি শংকর। বড় বৌদি আর অমিত এসে যোগদিল তাদের সাথে। বন্যাও এল। সে মোটামুটি স্বাভাবিক হয়েছে। সবাই আসার পর বেরিয়ে পড়লো মনি শংকর। ড্রাভারকে গাড়ি বের করতে বললো। কিন্তু সাথে নিল না। অঞ্জলীকে আনতে গেল নিজে ড্রাইভ করে।
মনি শংকর গাড়ি নিয়ে একদম মূল বাড়ির ভিতর বারান্দার সামনে চলে এল। অঞ্জলী তৈরী ছিল। মনি শংকর পৌছাতে সে শুধু বললো, “দাদা, একটুখানি নামবে?” মনি শংকর নামলো। অঞ্জলী উবু হয়ে প্রণাম করলো তাকে। সোজা হয়ে বললো, “অমিত বড় ভাগ্যবান তোমার মত একটা দাদা আছে তার।”
“তুমিও ভাগ্যবতী, আমি তোমারও দাদা। এবার গাড়িতে ওঠ।” ব্রেক রিলিজ করতে করতে একটা টিস্যু এগিয়ে দিল মনি শংকর অঞ্জলীর দিকে। অঞ্জলীর চোখে জল মনি শংকরের চোখ এড়ায়নি।
হায়রে জগত। কত দ্রুতই না মানুষের সম্পর্ক বদলায়!!

""পৃথিবীটা রঙ্গমঞ্চ আমরা সবাই অভিনেতা"" !! Sad

[+] 3 users Like Kolir kesto's post
Like Reply
#34
২৫ পর্ব

বিন্দুর হাতের রান্নার আলাদা যাদু আছে। তীব্র উত্তেজনা আর টেনশনের পর খাবার টেবিলে শেষ পর্যন্ত সবাই রিল্যাক্সড ছিল। ম্যাগীর নিকট থেকে অমিত আর অঞ্জলীর সম্পর্কের কথা জানার পর বিন্দু নতুন দৃষ্টিতে অঞ্জলীকে দেখতে লাগলো। বয়সে তার চে কিছুটা বেশী হবে। অথচ বন্যার পাশে তাকে প্রায় বন্যার মতই লাগছে। আটপৌঢ়ে সূতীর শাড়ী পরনে। কিন্তু কি সুন্দর ই না লাগছে ওকে।

সিটিং অ্যারেঞ্জমেন্টও বিন্দু সচেতনভাবেই করলো। দুটিকে পাশাপাশি বসার সুযোগ দিয়ে ওদের প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা। টেবিলের এক মাথায় রোহিত অপর মাথায় মনি শংকর । বাম পাশে মঞ্জু আর বন্যা, ডান পাশে অমিত আর অঞ্জলী পাশা পাশি। বার বার বলার পরও ম্যাগী বসলো না। সে বিন্দুকে সহায়তা করবে। শখ করে বিন্দুর একটা শাড়ি পড়েছে। ফলে তার অবস্থা দাড়িয়েছে দেখার মত। সে হাটছে যেন ছোট বাচ্চা মাত্র হাটা শিখেছে। আচঁল কোনভাবেই গায়ে রাখতে পারছে না। শাড়ির পাড় বার বার পাযের নীচে চলে যাচেছ আর সে হোচট খেতে খেতে কোনরকমে সামলে উঠছে। ওর অবস্থা দেখে সবাই বেশ এনজনয় করছে। বিন্দু বুঝতে পেরে সোজা ওকে বসিয়ে দিল টেবিলে। অমিতের পাশে। দুই পাশে দুই নায়িকা । বিষয়টা অমিত খেয়াল করেনি। কিন্তু বিন্দুর মাথায় ঠিকই খেলেছে। খাবার পরিবেশনের ফাকে সে দেখার চেষ্টা করছে কার সাথে অমিতকে বেশী মানায়। সে কোন সিদ্ধান্তে আসতে পারে না।
“বন্যা মা, আমার সাথে একটু কিচেনে আয় তো” বিন্দু কাউকে কিছু বুঝতে না দিয়ে বন্যাকে ডেকে নেয়।
মূখের উপর আংগুল রেখে ফিস ফিস করে বলে, “খেয়াল করেছিস তোর ছোট কাকুর সাথে দুজনকেই কেমন মানিয়েছে। আমি যে কোন একজনকে চুজ করতে পারছি না। খাবার ফাকেঁ একটু খেয়াল করিসতো। এজন্যই তোকে ডেকেছি। এখন এখন এই ডিশটা হাতে করে নিয়ে যা।”

বুদ্ধিমতি বন্যার জন্য ইশারাই কাফি। সে ডিশটা হাতে নিয়ে টেবিলে ফিরে এল। তার পর ইচ্ছে করেই অমিতকে এটা সেটা এগিয়ে দেবার নাম করে বার বার ওদের দিকে তাকাচ্ছে। আসলে দুজনই চমতকার ম্যাচ করেছে অমিতের সাথে। বন্যাও কোন সিদ্ধান্তে আসতে পারলো না। তবে অঞ্জলীর প্রতিই সামান্য একটু বেশী টান মনে হলো। ওরা তিন ভাইই মৃদুভাষী। বন্যা ছাড়া মেয়েরাও কেউ প্রগলভ নয়। তাই খাবার টেবিলে তেমন কথা বার্তা হলো না।
লাঞ্চের পর ম্যাগীকে নিয়ে মনি শংকর অফিসে চলে গেল। রোহিতও অফিসের দিকে যাবে। যাবার আগে মঞ্জুকে নামিয়ে দিয়ে যাবে। অঞ্জলী রোহিতের সাথেই বেরুতে চাইছিল। কিন্তু বিন্দু যেতে দিল না। “তুমি একটু থাক না ভাই। বন্যাটা কত দিন শান্তিমত ঘুমায় না। এটা ঘুমাক। তুমি আর আমি একটু গল্প করি।”
অঞ্জলী কথা বাড়ালো না। রয়ে গেল বিন্দুর সাথে। বন্যা সত্যি সত্যি তার রুমে ঢুকে ঘুমিয়ে পড়লো। গত কয়েক সপ্তাহ একটানা ঘুমের মাঝে কাটিয়েছে অমিত। তাই সে বিছানায় শুয়ে শুয়ে একটা ম্যাগাজিনের পাতা উল্টাচ্ছিল। বিন্দু অঞ্জলীকে বললো, “তুমি একটু ঠাকুরপোকে সংগ দাও। আমি চারটে নাকে মূখে দিয়েই আসছি। তোমাদের সাথে গল্প করতে।”
“ঠিক আছে বৌদি, কোন অসুবিধা নেই।”
অঞ্জলী ঢুকতেই সোজা হয়ে বসলো অমিত। পিঠে বালিশের ঠেক দিয়ে হেলান দিল খাটের কিনারায়। অঞ্জলী মাথার দিককার সিংগেল সোফাটায় বসলো। কেউ কোন কথা বলছে না। কেবল তাকিয়ে আছে দুজন দুজনের দিকে। দাড়ি কামিয়ে ফেলেছে অমিত। তার ফর্সা মূখটা আরও ফরসা লাগছে। বুকের ভিতরে ধুকপুক ধুকপুক হাতুড়ি পেটানোর শব্দ পাচ্ছে অঞ্জলী। অমিতেরও একই অবস্থা। স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে তারা মূখোমূখো হতে পারেনি আজও। কিন্তু আবেগের রাশ টানলো অঞ্জলী। বন্যা আছে, মেজ বৌদি আছে। ধরা পড়লে কেলেংকারী হয়ে যাবে।

তারচে এ সুযোগে ঠাকুরমার চিঠিটা নিয়ে কথা বললো অঞ্জলী।
“আচ্ছা ঠাকুরমা অক্সফোর্ড গ্রাজুয়েট ছিলেন না?”
“হ্যা, কেন বলো তো?” অমিত বুঝতে পারলো না অঞ্জলী কেন এ বিষয়ে জানতে চাইছে।
“তোমার ভাষ্যমতে চিঠিটা ঠাকুরমার নিজের হাতে লেখা এবং Asset বানানটা তিনি লিখেছেন Asseet. তাই না?”
“হ্যা” অমিত ছোট্ট করে জবাব দেয়।
“তোমার কি ধারণা ঠাকুরমা ভুল করেছেন?”
“তাইতো মনে হয়”
“আমার তা মনে হয় না। আমি চিঠির ভাষা আর শব্দের ব্যবহার দেখে ধারণা করেছি এটা তিনি ইচ্ছা করে করেছেন এবং বিশেষ একটা কিছু বুঝাতে চেয়েছেন।”
“বুঝলাম না।”
“একটা গল্প শুন। আমি যখন ক্লাস নাইনে পড়ি তখন টুয়েলভ ক্লাসের এক ছেলে আমাকে একটা প্রেম পত্র লিখেছিল। পত্রের শেষে একটা কথা লিখা ছিল 11.9.19 square. বলতো এটার অর্থ কি?”
“KISS” নাম্বার গুলিকে লেটার এ কনভার্ট করলে পাওয়া যায়।
“এক্সাক্টলী।” চমতকার একটা হাসি দিল অঞ্জলী। প্রিয়তম পুরুষটি যদি হয় বুদ্ধিমান তবে জীবন অনেক সুন্দর হয়। “এখন ঠাকুরমার চিটির ওয়ার্ডগুলিকে নাম্বারে কনভার্ট করো। তুমি একটা বক্তব্য পাবে।”
“এটা তুমি পরে করো। এখন আমার বুকে একটু হাত বুলিয়ে দাও। খুব ব্যথা হচ্ছে।”
“ব্যথা যে হচ্ছে না সেটা বুঝতে পারছি। ঠিক আছে হাত বুলিয়ে দিচ্ছি। কিন্তু কোন ধরণের দুষ্টুমী নয়। বন্যা আর মেজবৌদি আছেন।”

অঞ্জলী আলতো করে হাত রাখলো অমিতের বুকের উপর। একটা সাদা গেঞ্জি পরেছে অমিত। সাথে জীনস। অমিতের বুকে হাত রাখতে গিয়ে অঞ্জলীকে বেশ খানিকটা সামনে ঝুকতে হয়েছে। ফলে তার আচল খসে গেছে কাঁধ থেকে। লো কাট ব্লাউজের উপর দিয়ে অর্ধেকের বেশী ক্লিভেজ দেখা যাচ্ছে। ব্রা টা সাদা। ৩৪ সি হাসফাস করছে বেরিয়ে আসার জন্য। অমিতের একটা হাত অলসভাবে রাখা ছিল অঞ্জলীর থাইয়ের উপর। সেটা একটু চঞ্চল হয়ে উঠছে। অমিত কখনও সীমা লংঘন করে না। যেহেতু অঞ্জলীর নিষেধ আছে সে হাতটা সরিয়ে নিল। তারপর বললো, “সোজা হও আমার ব্যথা ভাল হয়ে গেছে।”
এমন সময় গলা খাকারী শুনা গেল দরজার কাছ থেকে। “কিন্তু দাড়িয়ে থাকতে থাকতে আমারতো হাত ব্যথা হয়ে গেছে।”
ঝট করে সোজা হল অঞ্জলী। ঘুরে দাড়িয়ে দেখল ট্রে হাতে বিন্দু দরজায় দাড়িয়ে। দ্রুত এগিয়ে গিয়ে ট্রে টা নিজের হাতে নিল অঞ্জলী।
“দাড়িয়ে থাকলে তো পা ব্যথা হয় বৌদি, হাত কেন?”
“কারণ হাতে তোমাদের জন্য কফি।”
“আর এটা নিয়ে এতক্ষণ দাড়িয়ে ছিলে তুমি, সেই কখন থেকে অপেক্ষা করে আছি তোমার হাতের কফির পান করবো বলে।”
“তুমি যে এর চে মজার কিছু পান করছিলে ঠাকুরপো তাই ঢুকিনি।”
“কি বলছ বৌদি?”
“থাক আর লজ্জা পেতে হবে না। তুমি আমার সুন্দরী ননদিনীর রূপসুধা পান করছিলে।”
“তুমি না একটা যা তা।”
“হয়েছে হয়েছে আমি সব জানি।”
এবার অঞ্জলী কথা বললো, “এটা কিন্তু ঠিক হচ্ছে না বৌদি, আমাকে ডেকে এনে নিন্দে মন্দ করছো।
“ও মা তা আ আ আই! ঠিক আছে । পরে যেন বৌদিকে দোষারোপ করো না।”
“প্লিজ বৌদি” অঞ্জলী বিন্দুর হাত চেপে ধরে, “বন্যা আছে, শুনতে পেলে মান ইজ্জত বলে আর কিছু থাকবে না।”

“ঠিক আছে বন্যা শুনবে না। শুধ বল কবে থেকে চলছে এ শখের বৃন্দাবন?”
“আমি বলছি বৌদি,” অমিত কথা বললো, “তুমি যখন থেকে এ বাড়িতে বৌ হয়ে এলে প্রায় তখন থেকেই। কেউ জানতো না। শুধু ঠাকুরমা একটু আঁচ করতে পেরেছিলেন। এখন আমাকে বল তুমি জানলে কি করে?”
“ওমা তোমরা একজন আরেকজনের হাত ধরাধরি করে চোখ দিয়ে গিলবে আর আমি বুঝতে পারবো না?” বিন্দু ইচ্ছা করেই ম্যাগীর কথা এড়িয়ে গেল।

কফি খেতে খেতে তিনজনই হারিয়ে গেল অতীতের স্মৃতি রোমন্থন করতে। তাদের কথার মাঝখানে বেরসিকের মত হানা দিল সুব্রত’র ফোন।
“মিস, ডাক্তার অমলেশ মুখার্জীর মৃত্যুটা স্বাভাবিক নয়, তার ঘর থেকে আমি একটা সিরিঞ্জ উদ্ধার করেছি। সুইয়ের ডগায় রক্তের ফোটা লেগে রয়েছে। পরীক্ষা করলে হাতের ছাপও পাওয়া যাবে। হত্যা না আত্ম হত্যা আপনি জানেন কিছু?”
“না ব্যাটা, আমার ধারণা নেই।”
“আপনাকে একটু থানায় আসতে হবে। আমি কি গাড়ি পাঠাবো?”
“সহজ করে বললে হয় অ্যারেস্ট করতে চাইছ।”
“ক্ষমা করবেন মিস। আপনিই আমার শিক্ষক।”
“আমি কি দশমী পর্যন্ত সময় পেতে পারি ব্যাটা? পুজোর মাঝে কারও মনো কষ্টের কারণ হতে চাইনা।”
“আপনাকে অবিশ্বাস করার মত স্পর্ধা আমার নেই। তাই হবে।”

অঞ্জলী ফোন কেটে দিল। বিন্দু আর অমিত বার বার জানতে চাইল কি হয়েছে। কে কাকে অ্যারেস্ট করতে চাইছে। কিন্তু অঞ্জলী জবাব দিল না।

""পৃথিবীটা রঙ্গমঞ্চ আমরা সবাই অভিনেতা"" !! Sad

[+] 4 users Like Kolir kesto's post
Like Reply
#35
(২৬ পর্ব)


অঞ্জলী আসলেই অলরাউন্ডার। ঠাকুরমার চিঠিটার মর্ম প্রায় উদ্ধার করে ফেলেছে। কিছু কিছু সংশয় এখনও আছে। তবে সেটা কিছু দিনের মধ্যেই নিরসন হবে বলে তার বিশ্বাস। এ ক্ষেত্রে মোটামুটি একটা ঝুকিঁ নিতে হবে। আর অমিত ঝুকিঁটা নেবে বলেই সিদ্ধান্ত নিল। অঞ্জলীর উপর আস্থা রেখে আজ পর্যন্ত ঠকেনি। তার আগে পুরো বিষয়টা আরও ভালভাবে বুঝার জন্য একটা ট্রায়াল দেবার সিদ্ধান্ত নিল।

বার বার তর্ক করলো ওরা দুজন। বার বার প্রথম থেকে শুরু করলো। অঞ্জলী ব্যাখ্যা করতে লাগলো, ” Asseet শব্দটির ভ্যালু ৬৯। তুমি জান এটা অনেক অর্থ বহন করে।”
“আমি কেমন করে জানবো, আমি কি তোমার সাথে ৬৯ করেছি?” অমিত ঠাট্টা করে।
“একদম ফাজলামো করো না। খুব সিরিয়াস। আমার ধারণা ঠাকুরমা বুঝাতে চাইছেন তিনি যা লিখেছেন কখনও কখনো তার উল্টো অর্থ করতে হবে। যেমন তিনি বলেছেন আমি আমার সকল Asseet তোমাদের মাঝে ভাগ করে দিয়েছি। আমার কাছে এর অর্থ হলো তিনি তার সকর সম্পদ তোমাদের মাঝে ভাগ করে দেননি। কিছু সম্পদ গোপন রয়ে গেছে। এজন্যই তিনি ইচ্ছা করে বানানটি ভুল লিখেছেন।”

“তার মানে তিনি মাটি খুড়ে কিছু সোনাদানা হীরে জহরত তার ঘরের মেঝেতে লুকিয়ে রেখেছেন? কোদাল শাবল নিয়ে তাহলে আজই পুরনো বাড়ির মেঝে খুড়তে শুরু করে দিই?”
অমিতের রসিকতা অঞ্জলী গায়ে মাখে না। ” তিনি বলেছেন, কোম্পানী চালাতে হলে Bank আর Union এই দুটোর উপরই তোমাকে নির্ভর করতে হবে। সাধারণ ভাবে ব্যাবসার জন্য ব্যাংকের সাথে লেনদেন আর ফ্যাক্টরীতে ইউনিয়নের সাথে দেনদরবার তোমাকে করতেই হবে। তুমি শব্দ দুটিকে একত্র করে উল্টে দাও। দাঁড়াচ্ছে ইউনিয়ন ব্যাংক। রায় গ্রুপের মেজর লেনদেন এই ব্যাংকের সাথে। ঠাকুরমার পিএস হিসাবে আমি বিষয়টা ভাল করেই জানি। Bank এর ভ্যালু ২৮ আর Unionএর ভ্যালু ৭৩। আবার দুটো সংখ্যারই অংক গুলির যোগফল ১০। আমার যুক্তি বলছে এটা ইউনিয়ন ব্যাংকের লকার সার্ভিসের সাথে সম্পৃক্ত।”
“ওরে বাপস্*! তার মানে মাটির নীচে নয়। বড় বড় ব্যাগ নিয়ে ব্যাংকে গিয়ে বলতে হবে ঠাকুরমা আমার জন্য আপনাদের লকারে কিছু টাকা রেখে গেছেন। টাকা গুলি দিয়ে দিন। ব্যাগ ভরে নিয়ে যাই।”

“যতই রসিকতা কর আমি এখানে বেশ একটা ক্লু দেখতে পাচ্ছি।খেয়াল কর তার পরের কথা, তোমার Knowledge-Attitude-Endevour তোমাকে পথ দেখাবে। এখানে পথ হলো পাসওয়ার্ড। আর শব্দ গুলির নিউমেরিক ভ্যালু ৯৩-১০০-১০৪ হলো সেই পাসওয়ার্ড যা দিয়ে তুমি ডিজিটাল লকার খুলতে পারবে।”

“মানলাম কাল সকালে ব্যাংকে গিয়ে ডিজিটাল লকার খুলে ধন-সম্পদ সব বের করে নিয়ে আসবো। কিন্তু শুধু A নয় আমি তোমাকে A টু Z ভালবাসি এই শেষ লাইনটার কি মানে দাড়ঁ করাবে তুমি। আমি তোমাকে এক থেকে ছাব্বিশ পর্যন্ত ভালবাসি?”
“এ কথার অর্থও আমি বের করেছি। তবে বলার আগে আমায় একটু আদর করে দাও রাজ কুমার।”
প্রবল ব্যক্তিত্বের অধিকারী অঞ্জলীর মূখ থেকে এমন কথা শুনে ভিতরটা তরল হয়ে গেল অমিতের। এক পাগল করা আকর্ষণ আছে অঞ্জলীর। কামনা নয় মুগ্ধতার দৃষ্টি মেলে তাকিয়ে থাকে অমিত। তার পর টেনে নেয় বুকের মাঝে। অনেক অনেকক্ষণ চেপে ধরে রাখে বুকের মাঝে। চওড়া বুকে মূখ গুজে পেলব বাহুতে অঞ্জলী জড়িয়ে রাখে অমিতের গলা। প্রিয় পুরুষের সান্নিধ্য উপভোগ করে। দীর্ঘ সময় পর অমিত হাতের বাধন ঢিলে করে। তাকায় চোখ তুলে দুজন দুজনের দিকে। তার পর পাগলের মত চুমু খায় অমিত অঞ্জলীর ঠোটে। জীবনে এই প্রথম। প্রথম কোন পুরুষ ভালবেসে অঞ্জলীকে চুমু খেল। এর আগে বার দুই অঞ্জলী অমিতকে চুমু খেয়েছে। কিন্তু অমিত রিটার্ন করেনি। আজ তার আগ্রাসী চুম্বনে অস্থির হয়ে উঠে অঞ্জলী। তার নাকের ফুটো বড় হয়ে যায়। নিঃশ্বাস দ্রুত হয়। রক্তে এড্রিনালিন দাপাদাপি করে। নিজেও গাঢ় চুম্বনে সিক্ত করে অমিতকে। অমিত আস্তে করে ব্লাউজের উপর দিয়ে হাত ছোয়ায় অঞ্জলীর শক্ত খাড়া স্তনাগ্রের উপর। কিন্তু নিজেকে সামলায় অঞ্জলী। “না রাজকুমার, আর না, এবার ছাড়।”

অঞ্জলীর সামনে অমিত বরাবরই সুবোধ বালক। সে অনিচ্ছা স্বত্ত্বেও অঞ্জলীকে ছেড়ে দেয়। তারা ভদ্রস্থ হতে না হতেই দরজার বাইরে একাধিক কন্ঠে খিলখিল হাসির শব্দ শুনা যায়। লজ্জায় অধোবদন অঞ্জলী দৌড়ে গিয়ে দরজা খুলে। কিন্তু কাউকে দেখতে পায় না। নিশ্চই বিন্দু বৌদি আর বন্যা। দরজার আড়াল থেকে ওদের লক্ষ্য করছিল। অঞ্জলীকে আসতে দেখে সটকে পড়েছে।

“তুমি কিন্তু শেষ লাইনটার ব্যাখ্যা এখনও দাওনি।” অমিত ঠাকুরমার চিঠি প্রসংগে ফিরে যায়।
“লজ্জা লাগছে যে, কেমন করে বলি?”
“চোখ বন্ধ করে বলো, মেয়েদের লজ্জা সব চোখে।”
“ঠাকুর মা বলতে চেয়েছেন শুধু অঞ্জলী নয়, আমিও তোমাকে আর অঞ্জলীকে ভালবাসি। আরও পরিষ্কার করলে হয়, তিনি আমাদের ভালবাসাকে স্বীকৃতি দিয়েছেন।”

অমিতের মূখটা খুবই উজ্জল হয়ে উঠলো। এই একটা বিষয়ে তার মনে একটু খুত ছিল। ঠাকুরমার অনুমোদনবিহীন একটা কাজে তার মনে সংশয় ছিল। আজ সেটুকুও দূর হয়ে যাওয়ায় সত্যি সত্যি তার মনটা ভাল হয়ে গেল। “আমি তোমাকে আর একটা চুমু দেব।”
“না বাইরে বিন্দু বৌদি আর বন্যা রয়েছে। তারা আমাদের দেখছে।”

বিন্দু অঞ্জলীকে ছাড়লো রাতের ডিনারের পর।

ঠাকুরমার মৃত্যুর পর অঞ্জলী ইউনিয়ন ব্যাংকে তেমন একটা আসেনি আর। অনেকদিন পর বলে ম্যানেজার ছাড়া নতুন স্টাফরা কেউ চিনতে পারলো না। বর্তমান ম্যানেজার তখন ছিল সদ্য জয়েন করা এক তরুণ অফিসার। সে খুব খাতির যত্ন করলো তাকে। বিগ ক্লায়েন্টের বিগ এন্টারটেইনমেন্ট। কর্পোরেট কালচারে অঞ্জলী অভ্যস্ত। ভাব ধরে রেখেই সে তাদের লকার সার্ভিস সম্পর্কে জানতে চাইল। জানতে চাইল কতটা নিরাপদ আর কতটা গোপনীয়।
তোতা পাখীর মত বুলি ফুটলো ম্যানেজারের মূখে। “আমরা সুইস ব্যাংক নই। তবে এ কথা গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি আমাদের সার্ভিস তাদের চেয়ে কোন অংশে কম নয়। সবচে বড় কথা কোন পরিস্থিতিতেই আমরা আমাদের ক্লায়েন্টের গোপনীয়তা ডিসক্লোজ করি না। এ লকার ভাংগা সম্ভব নয়। এটার পাসওয়ার্ড হ্যাক করা যায় না। এমনকি শত বছর আনক্লেইমড থাকলেও আমরা কাস্টমারের খোঁজ করি না। কারণ আমাদের কাছে কোন রেকর্ডই থাকে না কোন লকারটা কাকে দেয়া হয়েছে। আমরা শুধু আমাদের এম্পটি লকারগুলির খবর বলতে পারি।”

“হুম।” বিজ্ঞের মত মাথা নাড়লো অঞ্জলী। “আমি কি একবার এরিয়াটা ঘুরে দেখতে পারি?”
“অবশ্যই ম্যাডাম, আসুন।”

ম্যানেজারের পিছন পিছন অঞ্জলী লকার রুমের দিকে গেল। নানান রকমের ফরমালিটিজ মেইনটেইন করার পর তারা সেখানে ঢুকতে পারল। বিরাট এলাকা। দশটা বড় আকারের রুম। প্রতিটা রুমে দশটা করে বুথ আর প্রতিটা বুথে একটা করে লকার। তেমন খালি নেই। অঞ্জলীর টার্গেট হলো দশ নম্বর রুমের দশ নম্বর বুথ।

“আচ্ছা ধরুন আমি যদি এক নম্বর রুমের এক নম্বর বুথের লকারে কিছু রাখতে চাই পারবো?”
“না খালি নেই।”
“পাঁচ নাম্বার রুমের পাঁচ নাম্বার বুথের লকারে?”
“সেটাও খালি নেই।”
“দশ নাম্বার রুমের দশ নাম্বার বুথের লকারে?
“তাও খালি নেই।”
“ব্যাটার আপনি আমাকে বলুন কোনটা কোনটা খালি আছে।”
ম্যানেজার বেশ কটা খালি লকারের নম্বর বললো যার মধ্যে দশ নম্বর রুমের নয় নম্বর বুথের লকারটা রয়েছে। তার এটাই পছন্দ হলো।
তারা ফিরে এল ম্যানেজারের রুমে। ম্যানেজার তাকে বার বার করে বলে দিল “লকারগুলি সম্পূর্ণ ডিজিটাল লক। আপনি আপনার নিজস্ব পাসওয়ার্ড দিয়ে একবার বন্ধ করে দিলে এটা আর কেউ খুলতে পারবে না। এমন কি আপনার নামধাম এবং কোন লকারটি আপনি ভাড়া নিয়েছেন তারও কোন রেকর্ড আমাদের কাছে থাকবে না। শুধু আপনাকে আমরা একটা কোড নাম্বার দেব। যেটা দিয়ে আপনি আমাদের সিস্টেমে ঢুকতে পারবেন। তারপর আপনার নিজস্ব একটা পিন নম্বর সেট করে সিস্টেম থেকে বের হয়ে আসবেন। এই পিন যার কাছে থকাবে সেই আমাদের সিস্টেমে ঢুকতে পারবে। সিস্টেমে ঢুকে পিন নম্বর সেট করে এন্টার করলে যদি ম্যাচ করে তাহলে গ্রীন লাইট জ্বলবে এবং আপনি লকার রুমে ঢুকবার সুযোগ পাবেন। তারপর আবার নিজস্ব পাসওয়ার্ড দিয়ে বুথ খুলতে হবে এবং আর একটা পাসওয়ার্ড দিয়ে লকার খুলতে হবে।”

“এ তো মহা জটিলতা। এত সব মনে রাখবো কি ভাবে?”
“সরি ম্যাডাম, ক্লাইয়েন্টের নিরাপত্তার কথা ভেবেই আমাদের এটা করতে হয়েছে। আপনাকে দেখানোর জন্য আমি যখন প্রবেশ করি তখন আমাকেও একই ভাবে লকার রুমে ঢুকতে হয়েছে। আমার নামে এখানে একটা লকার রয়েছে। আর আমরা কখনও এক সাথে দুজন ক্লায়েন্টকে লকার এরিয়ায় ঢুকতে দেই না। একবারে একজন। এবং সম্পূর্ণ খালি হাতে। ঢুকতে হবে।”

“উফফফ। একদম হাপ ধরে গেছে অফিসার। কাল পরশু আবার আসবো। কিছু অর্নামেন্ট রাখবো আমি।”

“আমিও তাই ধারণা করেছি। অর্নামেন্ট আর ডকুমেন্টস এ দুটোই মানুষ বেশী রাখে। ঠিক আছে ম্যাডাম। আপনার যদি এসকর্ট লাগে বলবেন। আমরা এসকর্ট দিয়ে ভ্যালুড ক্লাইয়েন্টকে সহায়তা করে থাকি। এর জন্য এক্সট্রা কোন ফি নেই।”
“থ্যাংক্যু অফিসার। আই এম রিয়েলি কনভিনসড।”
“আমরা রায় গ্রুপের অনেক পুরনো আর বিশ্বস্ত ব্যাংকার ম্যাডাম। আপনি জানেন গ্রান্ড ম্যাম আমাদের খুব পছন্দ করতেন।”
ম্যানেজার অঞ্জলীকে গাড়ি পর্যন্ত এগিয়ে দিল। অঞ্জলীর বার বার মনে হতে লাগলো কাজটা সে শেষ পর্যন্ত করতে পারবে। সে ভীষণ উত্তেজিত বোধ করলো।

ব্যাংকের লকার সিস্টেমের সব কথা শুনে অমিত বললো, “বাদ দাও। ঠাকুরমা আদৌ কোন লকার ভাড়া করেছিলেন কিনা সেটারই যখন কোন রেকর্ড নেই তুমি কেমন করে তা খুজেঁ বের করবে! তার পর সেটা খুলে তোমার ধন রত্ন হাতাবে!”
“ধন রত্ন আদৌ যদি কিছু থাকে তবে সেটা আমার নয় তোমার।”
“যার ই হোক এ সব বিষয় নিয়ে মাথা ঘামাতে আমার ইচ্ছা করছে না।”
“তো কি ইচ্ছা করছে মাই লাভ!”
“আমি কাশী যাব। পিসিমাকে নিয়ে আসবো। তিনি তোমার অভিভাবকের কাছে বিয়ের প্রস্তাব দেবেন।”
“আমার অভিভাবক কে হবে? জামাই বাবু না দিদি?”
“একজন হলেই হলো।”
“খুব রোমান্টিক তাই না?”
“আচ্ছা কনে দেখার সময় তুমিও কি সাথে আসবে না তোমার গুরুজনেরাই কেবল দেখে যাবে? বর পণ কিছু দিতে হবে জানি। কি চাই গো তোমার?”
“অর্ধেক রাজত্ব আর রাজকন্যা।”
“রাজ্যটা ছোট। তবে তার পুরোটাই তোমাকে দেয়া হবে। আর তোমার মনোরঞ্জনের জন্য এই সেবাদাসী সারাক্ষণ হাজির থাকবে।”

মূল বাড়ির সবুজ লনে দুজন হাটছিল আর কথা বলছিল। এ দিকটায় অঞ্জলী ছাড়া আর কেউ আসে না। তারা হাটছিল পাশাপাশি। অঞ্জলীর একটা হাত অমিতের মুঠিতে ধরা। তার আংগুল গুলি একটু একটু কাঁপছে। প্রথম প্রেমে পড়া কিশোরীর মত লাগছে ওকে।

ব্যাংক থেকে ফেরার পথে অমিতকে মনি শংকরের বাসা থেকে তুলে এনেছে অঞ্জলী। বন্যা সাথে আসতে চেয়েছিল। বিন্দু কষে একটা ধমক দিয়েছে। “মাসিমনি আর ছোট কাকু প্রেম করবে, সেখানে তুমি কেন কাবাব মে হাড্ডি হতে যাবে শুনি?”
ঝিলিক দিয়ে উঠে বন্যার চোখ, “ছোট মা, তুমি ভাল কথা মনে করেছ। মাকে তো এখনো বলাই হয়নি তার আই বুড়ো বোনটা আমার কাকুর ঘাড়ে চেপেছে।”

খপ করে বন্যার চুলের মুঠি ধরলো বিন্দু। এটা তার সবচে প্রিয় একটা কাজ। বন্যার মাথার পিছনের ঝুটিটা চেপে ধরা। “এই বাঁদর মেয়ে সব কথা মাকে বলতে হবে কেন? ছোট মা জেনেছে তাতে হবে না? আর মাসিমনির নিন্দে করছিস বলে দেব ওকে?”

“উফ্*! না! ছাড়ো তো ছোট মা! লাগছে আমার। মাসিমনিকে তুমি কিছু বলতে যেওনা কিন্তু!”
“ঠিক আছে ছাড়লাম। তবে আশ্রমে যাওয়া হবে না তোমার। তুমি আমার কাছে থাকবে।”
দুই প্রজন্মের দুই নারী। কি যে গভীর বন্ধুত্ব!

ঠিক হল পরদিন সকালে অঞ্জলী আর অমিত যাবে ইউনিয়ন ব্যাংকে। রাতে অমিত অঞ্জলীর এখানেই খাবে। ম্যাগীকে আসতে বলেছে। সুব্রতও আসবে। ওরা যথা সময়েই এল। সুব্রতই ম্যাগীকে পিক করেছে।

ইদানীং সুব্রত আর ম্যাগীর মাঝে বেশ সুন্দর একটা বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছে। অমিতকে কেন্দ্র করেই তাদের মাঝে আলাপ এবং সে সূত্রে ফ্রেন্ডশীপ। এটা আরও গভীরতা পেয়েছে ম্যাগীর আন্তর্জাতিক যোগাযোগের কারণে। হায়ার স্টাডিজের জন্য সুব্রত অনেকদিন থেকে একটা স্কলারশীপের চেষ্টা করে আসছিল। ডিপার্টমেন্ট অনুমতিও দিয়েছে। কিন্তু সুব্রত স্কলারশীপ যোগাড় করে উঠতে পারছিল না। ম্যাগীর কানে সেটা যেতেই সে তার সাংবাদিক কানেকশান কাজে লাগিয়ে খুব অল্প দিনের মাঝেই দুটো অফার ম্যানেজ করে দিয়েছে। আগামী বছরের কোন এক সময় হায়ার স্টাডিজের উদ্দেশ্যে উড়াল দেবে সুব্রত।

সুব্রত বা ম্যাগী কারো ঘর সংসার নেই। অফিসের পরে অফুরন্ত সময়। সময়টা তারা ইদানীং বেশ উপভোগ করছে। আজ যেমন দুপুর থেকেই দুজন শপিং এ বেরিয়ে ছিল। ম্যাগী জেনেছে শারদীয় দুর্গা পুজা বাংগালী * সমাজের প্রধানতম উতসব। এক্সমাসের মত এদিনে সবাই সবাইকে গিফট করে। সুব্রত ম্যাগী আর অঞ্জলীর জন্য গিফট কিনলো। ম্যাগীও সুব্রত, অঞ্জলী এবং রায় পরিবারের প্রায় সবার জন্য গিফট কিনলো। সুব্রত স্রেফ দুটি শাড়ি কিনলো। একটা অঞ্জলী আর একটা ম্যাগীর জন্য। কিন্তু ম্যাগী একেক জনের জন্য একেক রকমের গিফট কিনলো। এ ক্ষেত্রে সুব্রত ছিল তার কনসালটেন্ট। কাপড়-চোপড়ের বাইরে ম্যাগী অঞ্জলী আর বন্যার জন্য কানের দুল এবং অমিতের জন্য রিং কিনলো। অলংকার গুলিতে ডায়মন্ড বসানো। এ পছন্দের পিছনে কি কারণ ম্যাগী ঠিক জানে না। সুব্রত বলেছে সে কিনেছে। কেনার পর গিফট প্যাকেটগুলি সুব্রত তার কাছে রেখে ম্যাগীকে হোটেলে গিয়ে রেডী হতে বলেছে। সন্ধ্যের পর নিজে ড্রাইভ করে ম্যাগীকে নিয়ে এসেছে আশ্রমে।

গিফট পেয়ে অঞ্জলী অমিত দুজনেই খুশী হলো। অঞ্জলী শাড়িটা রেখে দিল দশমীর দিন পড়বে বলে। কিন্তু দুল জোড়া তখুনি পড়ে ফেললো। খুব মানিয়েছে ওকে। অমিতও রিংটা সাথে সাথে পড়লো। রিংটা পড়লো সে মধ্যমায়। ওয়েডিং রিং পড়ার জন্য অনামিকা খালি রেখেছে। এটা নিয়ে ম্যাগী একটু ঠাট্টা মশকারাও করেছে। তাদের ডিনার হয়েছে প্রাণবন্ত। ডিনার টেবিলে অমিত-অঞ্জলী আর সুব্রত-ম্যাগী দৃষ্টি বিনিময় হয়েছে। পরস্পরের কাছে ধরাও পড়েছে। আবার ভান করেছে কিছুই হয়নি।

ডিনার শেষে অমিতকে মনি শংকরের বাসায় আর ম্যাগীকে হোটেলে পৌছে দিল সুব্রত। অঞ্জলী সাথে আসতে চেয়েছিল। কিন্তু অমিত বারণ করেছে। সারাক্ষণ হয় পুলিশ না হয় অন্য গার্ড নিয়ে চলতে তার ভাল লাগে না। বাসায় পৌছে অঞ্জলীকে ফোন দিয়ে কনফার্ম করেছে। সুব্রত নামতে চায়নি। কিন্তু বিন্দু তাকে কফি না খাইয়ে কোন ভাবেই ছাড়লো না। ম্যাগীও সুযোগ পেয়ে গিফট গুলিকে সবাইকে পৌছে দিল। বন্যা কানের দুল পেয়ে খুব খুশী হলো। যখন জানলো মাসিমনি সাথে সাথে দুল জোড়া পড়েছে সেও সাথে সাথে পড়ে নিল।

সুব্রত যখন ম্যাগীকে হোটেলের সামনে ছাড়লো তখন রাত প্রায় দশটা। নামার আগে ম্যাগী সুব্রতকে বললো, “অভ্যেস থাকলে এসো, এক বোতল শ্যাম্পেইন আছে আমার কাছে।”
“নো থ্যাংকস” স্মিত হেসে মানা করলো সুব্রত।

বিদায়ী হ্যান্ডশেকটা একটু বেশীক্ষণ স্থায়ী হলো। হাতটা যতক্ষণ ধরে রাখলে আলাদা কোন অর্থ হয় না তার চে বেশী সময় ধরে রাখলো দুজনেই।

ম্যানেজারকে আগে থেকে কিছুই ইনফরম করেনি অঞ্জলী। সরাসরি এসে হাজির হয়েছে। অমিত রয়েছে সাথে। বিজনেস স্যুটে দারুণ মানিয়েছে তাকে। লবীতে ঢুকতেই ম্যানেজার তাদের সিসিটিভিতে দেখতে পেয়ে হন্তদন্ত হয়ে ছুটে এল। অঞ্জলী পরিচয় করিয়ে দিল, “ড. অমিতাভ রায় চেৌধুরী, ডিরেক্টর রায় গ্রুপ।”
“আই নো হিম ভেরী ওয়েল ম্যাডাম। হি ইজ নাও অ্যা সেলিব্রেটি।”

সকল ফরমালিটিজ ম্যাইনটেইন করে অঞ্জলী তার হ্যান্ড ব্যাগ নিয়ে লকার রুমের উদ্দেশ্যে গেল। সেখানে তাকে আবার অনেক ফরমালিটিজ মেইনটেইন করতে হলো। কোন বিস্ফোরক দ্রব্য, বেআইনী দ্রব্য নেই সে মর্মে ডিক্লারেশন দিতে হলো। সেখানে তাকে একটা পিন নম্বর দেয়া হলো। অঞ্জলী সিস্টেমে ঢুকে ব্যাংকে পিন নম্বর চেইঞ্জ করে নিজস্ব পিন নম্বর সেট করলো। সে নাম্বার দরজায় সেট করে দশ নম্বর রুমে ঢুকলো। তার পর নয় নম্বর বুথে একটা পাসওয়ার্ড সেট করলো। তারপর লকারে আবার পাসওয়ার্ড সেট করে লক করলো।

এবার শুরু হলো তার আসল উত্তেজনা। কারন দশ নম্বর রুমে ঢুকার জন্য যে যে পাসওয়ার্ড সেট করেছে সেটা দিয়েই ঢুকতে পারবে। কিন্তু দশ নম্বর বুথে শুধু ওনারের পাসওয়ার্ড লাগবে। দুর্গা দুর্গা বলে সে পুশ করলো ১০০। সাথে সাথে ক্লিক শব্দে বুথের দরজা খুলে গেল। দেরী না করে আবার পুশ করলো ১০৪। এন্টার দিয়ে দম বন্ধ করে দাড়িয়ে রইল। এক সেকেন্ড পর লকারের দরজায় গ্রীন লাইট জ্বললো। তবুও অঞ্জলীর মনে হলো অনন্তকাল। লকার রুমে ঢুকার আগেই তার হাতে গ্লাভস পরা ছিল। মেটালিক নবটা ঘুরাতেই দরজা খুলে গেল।

ভিতরে একটা ছোট প্যাকেট। ওয়াটার প্রুফ, ফায়ার প্রুফ কাগজে মোড়া। প্যাকেটটা হ্যান্ড ব্যাগে ভরে আবার লক করলো যথা নিয়মে। দ্রুত কাজ করছে। কিন্তু সতর্ক রইল যাতে ভুল না হয়। তারপর বেরিয়ে এল বাইরে। ম্যানেজারের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে অমিতকে নিয়ে গাড়িতে উঠলো।

""পৃথিবীটা রঙ্গমঞ্চ আমরা সবাই অভিনেতা"" !! Sad

[+] 3 users Like Kolir kesto's post
Like Reply
#36
এই গল্পটা লেখক এই পর্যন্ত লিখেই অসমাপ্ত রেখেছে!!! কেউ কি এটা সমাপ্ত করতে ইচ্ছুক ! Namaskar

""পৃথিবীটা রঙ্গমঞ্চ আমরা সবাই অভিনেতা"" !! Sad

Like Reply
#37
পুরোটাই একসাথে দিয়ে দিলেন ! পড়ার সময় পাচ্ছি না, থ্রিলার তাড়াহুড়ো করে পড়া ঠিক না, ওতে অনেক তথ্য বাদ চলে যায়। অল্প অল্প করে পোষ্ট করলে পড়তে সুবিধা হতো।
Like Reply
#38
(14-09-2020, 08:19 PM)Mr Fantastic Wrote: পুরোটাই একসাথে দিয়ে দিলেন ! পড়ার সময় পাচ্ছি না, থ্রিলার তাড়াহুড়ো করে পড়া ঠিক না, ওতে অনেক তথ্য বাদ চলে যায়। অল্প অল্প করে পোষ্ট করলে পড়তে সুবিধা হতো।

এবার ধীরে সুস্তে পড়ুন কারণ আপডেট দেরিতে হবে। কারন এখন যা আসবে সব নতুন

""পৃথিবীটা রঙ্গমঞ্চ আমরা সবাই অভিনেতা"" !! Sad

[+] 1 user Likes Kolir kesto's post
Like Reply
#39
গল্পটার সমস্যা শুরু এখান থেকেই। পুরো গল্পে কোথাও রহস্যের গন্ধ পাওয়া যায়নি। হঠাৎ লেখক একটা রহস্যর জাল বুনেছে। আর সেই কারনেই লিখতে সমস্যা হচ্ছে। তাই সবার কাছে অনুরোধ গল্পটা পড়ার পর চুপিচুপি চলে না যেয়ে ,আমার পড়ে কোথায় কি ধারনা করলেন , ছোট করে হলেও দুটি মন্তব্য করে যাবেন।
তাতে করে আমিই লিখি বা যে লিখুক তার একটু লিখতে সুবিধা হবে।

""পৃথিবীটা রঙ্গমঞ্চ আমরা সবাই অভিনেতা"" !! Sad

[+] 2 users Like Kolir kesto's post
Like Reply
#40
যারা মাসুদ রানা/কাজী আনোয়ার হোসেনের লেখা পড়েছেন তারা হয়তো ভাল আন্দাজ করতে পারবেন। কারন গল্পের এই জায়গায় উনি বলেছিলেন যে গল্পে মাসুদ রানার মতো একটা রহস্য আনার চেষ্টা করবেন। নতুন কেউ শেষ করলে বলবো নিজের মতো করে শেষ করতে, নিজের কল্পনায় যেভাবে হয় আরকি। তাও বলবো প্লিজ শেষ করুন কেউ। in fact, Xossip এ আমার যোগ দেওয়ার একমাত্র কারণ ছিলো এই গল্পটা পড়া।
[+] 1 user Likes TheLoneWolf's post
Reply




Users browsing this thread: 1 Guest(s)