22-08-2020, 02:49 PM
সাগ্নিকের প্রস্তাবে প্রায় আঁতকে উঠলো বিদিশা ।
- একী বলছো তুমি , এতো অন্যায় , শেষটায় একটা কিছু হয়ে গেলে পুলিশ কেস হবে ।
- তোমাকে পারতেই হবে , প্রেমিক বিপদে পড়লে সব প্রেমিকারই উচিৎ তাকে সাহায্য করা । আর আমি তো বলছি , তুমি শুধু বিয়েটা করবে ,কনে বিদায়ের সময় আমি তোমায় বদলে বোনকে গাড়ীতে তুলে দেব ।
- রাজী হয়ে যাও মা । সাগ্নিক এতো করে বলছে ,তুমি একটু সাহায্য করলেই আমার সুতপাটা পার হয়ে যায় । আর ওর একটা বিয়ে হলেই আমি তোমার আর সাগ্নিকের বিয়েটা দিয়ে দেব । ঘরে সোমত্ত বোন থাকতে দাদা কী করে বিয়ে করে বলো ।
বিদিশার কোনো প্রতিবাদই সাগ্নিকের কানে গেলনা । শেষটায় সুতপা সেজে পাত্র পক্ষের সামনে বসতে হল । দু-চার কথায় ওদের পছন্দ হয়ে গেল বিদিশাকে । পাত্র বিরাট ব্যবসায়ী । প্রচুর পয়সার মালিক ও সুপুরুষ । পাত্রের মা বললেন - আমাদের কোনো দাবিদাওয়া নেই ,আমরা শুধু সুতপার মতো এমন একজন সুন্দরীকে ঘরের বউ করে আনতে চেয়েছিলাম ।
এরপর বিয়ের দিন ঠিক হয়ে যায় ।
পাত্র পক্ষ চলে যেতেই সাগ্নিক বিদিশার ঘনিষ্ঠ হতে চেষ্টা করে ।
- উফ তুমি না থাকলে আমার কুরূপা বোনটার একটা হিল্লে হতো না । সূর্য তখন অস্ত যাচ্ছে । দিনের কম আলোয় চারিদিকের পরিবেশ মায়াবী । সাগ্নিকের প্রতি তীব্র ঘৃণা নিয়ে পৃষ্ট হতে হতে বিদিশা কোনও রখমে বললো , বোনের বিয়েটা হয়ে গেলেই তুমি আমাদের ব্যাপারটা ফাইনাল করবে ।
রাত্রি দশটায় লগ্ন । সাগ্নিকের মা বিউটি পার্লার থেকে লোক আনিয়ে বিদিশাকে আগে ভাগে সাজিয়ে দিয়েছে । এখন সুতপার সাজ চলছে ।
যেখানে বিয়ের মঞ্চ , সেখানে সাগ্নিক কাউকে ঘেঁষতে দিচ্ছে না । রাত্রি বারোটায় বিদিশার কুসুমডিঙা হয়ে গেলো । অর্থাৎ পার্থ , বিদিশাকে সুতপা জ্ঞানে সিঁথিতে টকটকে লাল সিঁদুর ঘষে দিল । আর ঠিক তখনই কারা যেন বরকর্তার কানে কানে কি একটা বললো , আর তাতেই চঞ্চল হয়ে উঠলেন বরকর্তা । বিয়ের অনুষ্ঠান শেষ হতেই বরকর্তা আর বরের জনাকয়েক বন্ধু বিদিশা আর পার্থকে একরকম জোর করে টেনে তুললো গাড়ীতে । সাগ্নিক কিছু বলার আগেই গাড়ী ছুটলো দুবরাজপুর । সুতপার কপাল তো পুড়লোই , সঙ্গে বিদিশারও । কান্নায় ভেঙে পড়লো বিদিশা । গাড়ী তখন ছুটছে দুবরাজপুর ।
কে যেন বললো - ছি ছি ফর্সা মেয়ে দেখিয়ে কালো মেয়ে গছানো , তুই চিন্তা করিস না পার্থ , এখন থেকে বিদিশা তোর বউ , বেশী ঝামেলা করলে কোর্ট পুলিশ হবে ।
উৎকণ্ঠা আর উপহাস নিয়ে কালরাত্রি যেমন তেমন কাটলো বিদিশার । পরের দিন সকালে বউভাত আর রাতে ফুলশয্যা । বউভাতের দুপুর গড়িয়ে যত বিকেল হচ্ছিল , গলাটা তত শুকিয়ে কাঠ হচ্ছিলো বিদিশার । আজ রাতেই যদি পার্থ ..... ছি ... ছি ....
বিকেল হতেই পার্থর মা এসে বিদিশার চিবুক তুলে ধরে বললো , এবার তো সাজতে বসতে হবে তোকে । তারপর মেয়ে রাখীর দিকে তাকিয়ে বললেন - এইবার তুই বউমাকে আমার ঘরে নিয়ে গিয়ে আচ্ছা করে সাজিয়ে দে । এক্ষুনি রোহিতের বন্ধুরা এসে এই ঘরে খাটটা সাজাবে । বিদিশার বুক কেঁপে ওঠে ।
বিদিশা আয়নার সামনে একটা টুলে জড়োসড়ো হয়ে বসে , ঘরে হালকা চলছে এসি , দরজাটা ভেজানো , খাটের ওপর গহনাপত্র ,বেনারসী , আর রাজ্যের সাজের জিনিস ড্রেসিং টেবিলে । রাখী কোনও কথাই বলছে না । বিদিশার চুল তিন ভাগে ভাগ করে একভাগ মাথার ওপর তুলে ব্যাক কম্ব করছে । ঘরে অস্বস্তিকর নীরবতা ।
সাগ্নিকের কথা মনে পড়ে বিদিশার । সেই কলেজ জীবনের প্রেম ওদের , তখন বিদিশার বয়েস ষোলো , আজ পায়ে পায়ে দশটা বছর ঘুরে গেছে , সাগ্নিকের বাবা মারা যাওয়ার পরই বাবার রেলের চাকরীটা সে পায় , বোনের আগে বিয়ে আর চাকরী পার্মানেন্ট হলে তবে বিয়ে এই বলে তাকে ঝুলিয়ে রেখেছিলো সাগ্নিক আর আজ ভাগ্যের পরিহাসে সম্পূর্ণ অচেনা পরিবেশে সে , কলকাতা থেকে কতদূরে ,এই বিয়ে মেনে নিতে গেলে পার্থর শয্যা সঙ্গিনী হতে হবে তাকে , আর না মেনে নিলে সাগ্নিক কী আসবে তাকে উদ্ধার করতে !
রাখী এখন -ও কিছু কথা বলছেনা । যেন কিছুই হয়নি এরখম একটা ভাব । সে ব্যস্ত খোঁপা বাঁধার কাজে । একটার পর একটা কাঁটা মেরে যাচ্ছে ঠোঁট থেকে নিয়ে ।
- বিদিশা এবার ব্লাউসটা খুলে ,ভেতরেরটা পরে নে ।
রাখী একটা লাল অন্তর্বাস এগিয়ে দেয় বিদিশার দিকে ।
বিদিশার মুখ থমথমে । সদ্য পরানো সিঁদুরে তার সিঁথি লালে লাল ।
- কীরে তাড়াতাড়ি কর ।
বিদিশা যন্ত্রের মতো আজ্ঞা পালন করতেই , রাখী ব্রেসিয়ারের হুকটা পিঠের দিকে আটকে দেয় । একটা মিষ্টি গন্ধ ছড়িয়ে পড়ছে ঘরে । রাখী খাবলা খাবলা করে পাউডার তুলে বিদিশার নির্লোম বাহুসন্ধিতে আর পিঠে ঘষে দিতে থাকে । আর ঠিক সেই সময়েই বিলোল কঠাক্ষ নিয়ে পার্থর বন্ধুর বউ ঘরে ঢোকে । বিদিশা নাম ভুলে গেছে তার ।
- কী আর তো মাত্র কয়েক ঘন্টা , তারপরেই তো রিকশার হর্ন বাজাবে ড্রাইভার । মেয়েটির ইঙ্গিতে রাখী হেসে ওঠে ।
সে ফাউন্ডেশনের শিশি খুলে বেশ করে বিদিশার হাতে মুখে গলায় কাঁধে আর পিঠে মাখাতে মাখাতে বলে - বিয়ে যখন হয়েছে তখন ফুলশয্যা তো হবেই । কী বল রুবী ?
এরা এমনিতে ভালোই । এতো বড়ো প্রতারণা পরেও এরা বিদিশাকে কিচ্ছু বলেনি ।
সাহস সঞ্চয় করে বিদিশা ।
- আমাকে তোমরা দয়া করো , জোর করে আমাকে দিয়ে এই কাজ করানো হয়েছিল ।
রাখী সেদিকে ভ্রূক্ষেপ করে না । বিদিশার মুখটা তুলে , ভুরুতে আই ব্রাও পেন্সিল বোলাতে বোলাতে বলে - তা বললে আমরা কেন শুনবো ? অগ্নিসাক্ষী করে তোদের বিয়ে হয়েছে , এখন তুই আইন সম্মত ভাবেই আমাদের বাড়ীর বউ । নিমন্ত্রিতরা একে একে এসে পড়ছে । চোখ বন্ধ কর , চোখ বন্ধ কর , আইশ্যাডো লাগাবো ।
কথা বলতে পারেনা বিদিশা । রাখীর হাত দ্রুত চলছে । আইশ্যাডো আইলাইনার আর তারপর গাঢ় করে মাস্কারা পরায় চোখের পল্লবে বেশ ঘন করে ।
বিদিশা প্রমাদ গোনে । তার চোখের সামনে সাগ্নিকের অপ্রস্তুত মুখটা ভেসে ওঠে ।
রুবী বলে - বিদিশা তোকে স্বাভাবিক হতে হবে । ভাগ্যকে মেনে নিতে শেখ । তোদের বিয়েটাতো আর হয়নি , বিয়েটা হয়েছে পার্থর সঙ্গে । দুবরাজপুরে পার্থর অনেক বন্ধু , সবাইকার বিয়ে হয়ে গেছে , ও খুব ভালো ছেলে । ও তো কোনও দোষ করেনি । তুই ওর জীবনটা কেন ছারখার করে দিবি বল ?
বিদিশা নিরুত্তর ।
রাখী বিদিশার কন্টোর করে নিয়েছে এতক্ষনে । সে বিদিশাকে হাসতে বলে কানের পাশ দিয়ে টেনে ব্লাশ অন করতে থাকে গালে । সুযোগ বুঝে সেও বলে - যাই বলো , আমার দাদাভাইয়ের ভাগ্যটা কিন্তু ভালো , নইলে এরাম ফ্লিম এক্ট্রেস শ্রাবন্তী মার্কা বউ পায় , বল ?
বিদিশার মনের অবস্থা বোঝানো যাবে না । নাই বা হল সে আর সাগ্নিক স্বামী -স্ত্রী । কিন্তু স্বামী স্ত্রী র মধ্যে যা যা হয় , তা সবই হয়ে গেছে তাদের এই দশ বছরের প্রেমে ।
বিদিশার বাবার কথা মনে হয় - পই পই করে তিনি সাগ্নিকের সঙ্গে মিশতে বারণ করেছিলেন । আজ মেয়ের শুভ দিনে , কোন মুখ নিয়ে আসবেন তিনি !
সাজ প্রায় শেষ ,এবার চন্দন পরানোর পালা । রুবী চিবুক তুলে ধরে বিদিশার - প্রতিরক্ষা আছে তো ,আজ তোকে রাখী যা সাজাচ্ছে , তাতে না বিয়ের বছর ঘুরতে না ঘুরতেই রাখীকে একটা ভাইপো এনে দিস । রাখী ও রুবী একসাথে হেসে ওঠে , বিদিশাকে অপ্রস্তুতে ফেলে ।
সাগ্নিক এলো তখন যখন বিদিশার সাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে । বাইরে চেঁচামেচি শুনেই রুবী দৌড়ে গেল । রাখী কড়া ধমক দিলো বিদিশাকে । তুই এখানে চুপচাপ বোস , যা বলার বাড়ীর বড়োরা বলবে । বিদিশাকে উর্ধমুখী করে বসিয়ে কপালে ছিমছাম চন্দন পরাতে শুরু করে দিল । পার্থ আর তার বাড়ীর লোকজন প্রায় জোর করেই সাগ্নিককে অন্য জায়গায় নিয়ে গেল । বাইরের চেঁচামেচি ভালো করে শুনতে পাচ্ছিলো না বিদিশা । সানাই শুরু হয়ে গেছে ।
কিছুক্ষণ বাদে রুবী ঘরে ঢুকে হাসতে হাসতে ঢলে পড়লো - কী ভীতু লোক মাইরি এই সাগ্নিকটা । পুলিশের নাম করতেই মানে মানে কেটে পড়লো ।
বিদিশার সাজ শেষ । রাখী তেলাকুচোর মতো টকটকে লাল করে দিয়েছে বিদিশার ঠোঁট ।
সন্ধে থেকে বউ বসা চেয়ার -এ সেজেগুজে বসে থাকতে থাকতে ঘামছিলো বিদিশা , আর তৎক্ষণাৎ রাখী বউদির মুখটা পাফ করে দিচ্ছিলো । সাগ্নিক চলে গেলেও ওর মন সব সময় একটা কু গাইছিলো । যেন এখনই কোনও বড়ো ঝামেলা হবে । এই পরিস্থিতির দিকে সাগ্নিক তাকে ঠেলে দিয়েছে । সাগ্নিকের প্রতি একটা তীব্র ঘৃণা নিয়ে মনে মনে ভগবানকে ডাকছিলো বিদিশা । পার্থ যতবার ই যাতায়াত করছিলো ততোবার ই বিদিশাকে লক্ষ্য করছিলো । চোখাচোখি হতেই বিদিশা চোখ নামিয়ে নিচ্ছিলো । নিমন্ত্রিতরা আসতে আসতে চলে যেতে শুরু করেছে , এর ই মাঝে এক ফাঁকে বিদিশা আর পার্থকে নিমন্ত্রিতদের মাঝে বসিয়ে খাইয়ে দিয়েছে বিদিশার শাশুড়ি । রাত যত গভীর হচ্ছে ,ততো বিদিশাকে নার্ভাস দেখাচ্ছিল । সারাজীবন ভালোবাসলো যাকে তাকে সে পেলনা । ভাগ্যের পরিহাসে যাকে পেল ,তাকে সে চেনে না । কিন্তু তার জীবন এখন তাকে যেদিকে নিয়ে যাচ্ছে , সেই পথ পয়েন্ট অফ নো রিটার্ন ।
সব কাজ মিটে রাত প্রায় বারোটা নাগাদ পার্থ যখন এলো , বিদিশা তখন ড্রেসিং টেবিলের সামনে কুশন দেওয়া টুলে বসে । সে নিজেই ফুল ছড়ানো খাট থেকে নেমে এসেছে । পার্থ দরজা বন্ধ করে ওর কাঁধে এসে হাত রাখলো । মেয়েদের চিনতে অসুবিধা হয়না । এই আহ্বান অধিকারের ।
একটু ভারী শোনালো পার্থ -র ডাক বিদিশার কানে ।
- বিদিশা শোবে চল , রাত অনেক হল ।
- আপনি যান ,আমি না হয় ....
- সে কী তাই আবার হয় নাকী ? এখনতো আমরা অতি আপনজন ।
- আপনিতো জানেন , আমি আর একজনকে ভালো ....
-বাসতে ,আজকের রাতের পরে তুমি আমাকে শুধু ভালোবাসবে । পার্থ মিটিমিটি হাসছে ।
- তা হয়না
- খুব হয় , পার্থ আচমকা বিদিশাকে ওর বাহু ধরে তুলে ওর খোঁপার নিচে ঘাড়ে আঙ্গুল দিয়ে একটু আলতো স্পর্শ করলো বিদিশার লাবণ্য । তারপর একলহমায় ওকে পাঁজকোলা করে তুলে নিলো ....
- আমরা এখন স্বামী -স্ত্রী । সুতরাং আর পাঁচটা স্বামী -স্ত্রী র মতোই আমাদের মধ্যে এখন সব কিছু হবে - যা সব স্বামী স্ত্রীর মধ্যেই হয়ে থাকে ।
পরদিন বিদিশার ঘুম ভাঙলো যখন তখন পার্থ তৈরী হয়ে গেছে । বাড়ী ভর্তি লোক । এই অবস্থায় বেরোবে কী করে বিদিশা । পার্থ বুঝিবা বিদিশার মন বুঝতে পারলো । ও হেসে বললো - তোমাকে আবার এই অবস্থায় বেরোতে হবে না । আমি রাখীকে পাঠিয়ে দিচ্ছি ।
কিছুক্ষন বাদে ভিজে তোয়ালে আর বিলোল কঠাক্ষ নিয়ে বিদিশার ননদ এলো ।
- দাদাভাই বুঝি কাল সারারাত তোকে বড্ডো জ্বালিয়েছে ?
রাখীর বুকে মুখ লুকিয়ে বিদিশা আদুরে গলায় বললো - বড্ডো ।
End
- একী বলছো তুমি , এতো অন্যায় , শেষটায় একটা কিছু হয়ে গেলে পুলিশ কেস হবে ।
- তোমাকে পারতেই হবে , প্রেমিক বিপদে পড়লে সব প্রেমিকারই উচিৎ তাকে সাহায্য করা । আর আমি তো বলছি , তুমি শুধু বিয়েটা করবে ,কনে বিদায়ের সময় আমি তোমায় বদলে বোনকে গাড়ীতে তুলে দেব ।
- রাজী হয়ে যাও মা । সাগ্নিক এতো করে বলছে ,তুমি একটু সাহায্য করলেই আমার সুতপাটা পার হয়ে যায় । আর ওর একটা বিয়ে হলেই আমি তোমার আর সাগ্নিকের বিয়েটা দিয়ে দেব । ঘরে সোমত্ত বোন থাকতে দাদা কী করে বিয়ে করে বলো ।
বিদিশার কোনো প্রতিবাদই সাগ্নিকের কানে গেলনা । শেষটায় সুতপা সেজে পাত্র পক্ষের সামনে বসতে হল । দু-চার কথায় ওদের পছন্দ হয়ে গেল বিদিশাকে । পাত্র বিরাট ব্যবসায়ী । প্রচুর পয়সার মালিক ও সুপুরুষ । পাত্রের মা বললেন - আমাদের কোনো দাবিদাওয়া নেই ,আমরা শুধু সুতপার মতো এমন একজন সুন্দরীকে ঘরের বউ করে আনতে চেয়েছিলাম ।
এরপর বিয়ের দিন ঠিক হয়ে যায় ।
পাত্র পক্ষ চলে যেতেই সাগ্নিক বিদিশার ঘনিষ্ঠ হতে চেষ্টা করে ।
- উফ তুমি না থাকলে আমার কুরূপা বোনটার একটা হিল্লে হতো না । সূর্য তখন অস্ত যাচ্ছে । দিনের কম আলোয় চারিদিকের পরিবেশ মায়াবী । সাগ্নিকের প্রতি তীব্র ঘৃণা নিয়ে পৃষ্ট হতে হতে বিদিশা কোনও রখমে বললো , বোনের বিয়েটা হয়ে গেলেই তুমি আমাদের ব্যাপারটা ফাইনাল করবে ।
রাত্রি দশটায় লগ্ন । সাগ্নিকের মা বিউটি পার্লার থেকে লোক আনিয়ে বিদিশাকে আগে ভাগে সাজিয়ে দিয়েছে । এখন সুতপার সাজ চলছে ।
যেখানে বিয়ের মঞ্চ , সেখানে সাগ্নিক কাউকে ঘেঁষতে দিচ্ছে না । রাত্রি বারোটায় বিদিশার কুসুমডিঙা হয়ে গেলো । অর্থাৎ পার্থ , বিদিশাকে সুতপা জ্ঞানে সিঁথিতে টকটকে লাল সিঁদুর ঘষে দিল । আর ঠিক তখনই কারা যেন বরকর্তার কানে কানে কি একটা বললো , আর তাতেই চঞ্চল হয়ে উঠলেন বরকর্তা । বিয়ের অনুষ্ঠান শেষ হতেই বরকর্তা আর বরের জনাকয়েক বন্ধু বিদিশা আর পার্থকে একরকম জোর করে টেনে তুললো গাড়ীতে । সাগ্নিক কিছু বলার আগেই গাড়ী ছুটলো দুবরাজপুর । সুতপার কপাল তো পুড়লোই , সঙ্গে বিদিশারও । কান্নায় ভেঙে পড়লো বিদিশা । গাড়ী তখন ছুটছে দুবরাজপুর ।
কে যেন বললো - ছি ছি ফর্সা মেয়ে দেখিয়ে কালো মেয়ে গছানো , তুই চিন্তা করিস না পার্থ , এখন থেকে বিদিশা তোর বউ , বেশী ঝামেলা করলে কোর্ট পুলিশ হবে ।
উৎকণ্ঠা আর উপহাস নিয়ে কালরাত্রি যেমন তেমন কাটলো বিদিশার । পরের দিন সকালে বউভাত আর রাতে ফুলশয্যা । বউভাতের দুপুর গড়িয়ে যত বিকেল হচ্ছিল , গলাটা তত শুকিয়ে কাঠ হচ্ছিলো বিদিশার । আজ রাতেই যদি পার্থ ..... ছি ... ছি ....
বিকেল হতেই পার্থর মা এসে বিদিশার চিবুক তুলে ধরে বললো , এবার তো সাজতে বসতে হবে তোকে । তারপর মেয়ে রাখীর দিকে তাকিয়ে বললেন - এইবার তুই বউমাকে আমার ঘরে নিয়ে গিয়ে আচ্ছা করে সাজিয়ে দে । এক্ষুনি রোহিতের বন্ধুরা এসে এই ঘরে খাটটা সাজাবে । বিদিশার বুক কেঁপে ওঠে ।
বিদিশা আয়নার সামনে একটা টুলে জড়োসড়ো হয়ে বসে , ঘরে হালকা চলছে এসি , দরজাটা ভেজানো , খাটের ওপর গহনাপত্র ,বেনারসী , আর রাজ্যের সাজের জিনিস ড্রেসিং টেবিলে । রাখী কোনও কথাই বলছে না । বিদিশার চুল তিন ভাগে ভাগ করে একভাগ মাথার ওপর তুলে ব্যাক কম্ব করছে । ঘরে অস্বস্তিকর নীরবতা ।
সাগ্নিকের কথা মনে পড়ে বিদিশার । সেই কলেজ জীবনের প্রেম ওদের , তখন বিদিশার বয়েস ষোলো , আজ পায়ে পায়ে দশটা বছর ঘুরে গেছে , সাগ্নিকের বাবা মারা যাওয়ার পরই বাবার রেলের চাকরীটা সে পায় , বোনের আগে বিয়ে আর চাকরী পার্মানেন্ট হলে তবে বিয়ে এই বলে তাকে ঝুলিয়ে রেখেছিলো সাগ্নিক আর আজ ভাগ্যের পরিহাসে সম্পূর্ণ অচেনা পরিবেশে সে , কলকাতা থেকে কতদূরে ,এই বিয়ে মেনে নিতে গেলে পার্থর শয্যা সঙ্গিনী হতে হবে তাকে , আর না মেনে নিলে সাগ্নিক কী আসবে তাকে উদ্ধার করতে !
রাখী এখন -ও কিছু কথা বলছেনা । যেন কিছুই হয়নি এরখম একটা ভাব । সে ব্যস্ত খোঁপা বাঁধার কাজে । একটার পর একটা কাঁটা মেরে যাচ্ছে ঠোঁট থেকে নিয়ে ।
- বিদিশা এবার ব্লাউসটা খুলে ,ভেতরেরটা পরে নে ।
রাখী একটা লাল অন্তর্বাস এগিয়ে দেয় বিদিশার দিকে ।
বিদিশার মুখ থমথমে । সদ্য পরানো সিঁদুরে তার সিঁথি লালে লাল ।
- কীরে তাড়াতাড়ি কর ।
বিদিশা যন্ত্রের মতো আজ্ঞা পালন করতেই , রাখী ব্রেসিয়ারের হুকটা পিঠের দিকে আটকে দেয় । একটা মিষ্টি গন্ধ ছড়িয়ে পড়ছে ঘরে । রাখী খাবলা খাবলা করে পাউডার তুলে বিদিশার নির্লোম বাহুসন্ধিতে আর পিঠে ঘষে দিতে থাকে । আর ঠিক সেই সময়েই বিলোল কঠাক্ষ নিয়ে পার্থর বন্ধুর বউ ঘরে ঢোকে । বিদিশা নাম ভুলে গেছে তার ।
- কী আর তো মাত্র কয়েক ঘন্টা , তারপরেই তো রিকশার হর্ন বাজাবে ড্রাইভার । মেয়েটির ইঙ্গিতে রাখী হেসে ওঠে ।
সে ফাউন্ডেশনের শিশি খুলে বেশ করে বিদিশার হাতে মুখে গলায় কাঁধে আর পিঠে মাখাতে মাখাতে বলে - বিয়ে যখন হয়েছে তখন ফুলশয্যা তো হবেই । কী বল রুবী ?
এরা এমনিতে ভালোই । এতো বড়ো প্রতারণা পরেও এরা বিদিশাকে কিচ্ছু বলেনি ।
সাহস সঞ্চয় করে বিদিশা ।
- আমাকে তোমরা দয়া করো , জোর করে আমাকে দিয়ে এই কাজ করানো হয়েছিল ।
রাখী সেদিকে ভ্রূক্ষেপ করে না । বিদিশার মুখটা তুলে , ভুরুতে আই ব্রাও পেন্সিল বোলাতে বোলাতে বলে - তা বললে আমরা কেন শুনবো ? অগ্নিসাক্ষী করে তোদের বিয়ে হয়েছে , এখন তুই আইন সম্মত ভাবেই আমাদের বাড়ীর বউ । নিমন্ত্রিতরা একে একে এসে পড়ছে । চোখ বন্ধ কর , চোখ বন্ধ কর , আইশ্যাডো লাগাবো ।
কথা বলতে পারেনা বিদিশা । রাখীর হাত দ্রুত চলছে । আইশ্যাডো আইলাইনার আর তারপর গাঢ় করে মাস্কারা পরায় চোখের পল্লবে বেশ ঘন করে ।
বিদিশা প্রমাদ গোনে । তার চোখের সামনে সাগ্নিকের অপ্রস্তুত মুখটা ভেসে ওঠে ।
রুবী বলে - বিদিশা তোকে স্বাভাবিক হতে হবে । ভাগ্যকে মেনে নিতে শেখ । তোদের বিয়েটাতো আর হয়নি , বিয়েটা হয়েছে পার্থর সঙ্গে । দুবরাজপুরে পার্থর অনেক বন্ধু , সবাইকার বিয়ে হয়ে গেছে , ও খুব ভালো ছেলে । ও তো কোনও দোষ করেনি । তুই ওর জীবনটা কেন ছারখার করে দিবি বল ?
বিদিশা নিরুত্তর ।
রাখী বিদিশার কন্টোর করে নিয়েছে এতক্ষনে । সে বিদিশাকে হাসতে বলে কানের পাশ দিয়ে টেনে ব্লাশ অন করতে থাকে গালে । সুযোগ বুঝে সেও বলে - যাই বলো , আমার দাদাভাইয়ের ভাগ্যটা কিন্তু ভালো , নইলে এরাম ফ্লিম এক্ট্রেস শ্রাবন্তী মার্কা বউ পায় , বল ?
বিদিশার মনের অবস্থা বোঝানো যাবে না । নাই বা হল সে আর সাগ্নিক স্বামী -স্ত্রী । কিন্তু স্বামী স্ত্রী র মধ্যে যা যা হয় , তা সবই হয়ে গেছে তাদের এই দশ বছরের প্রেমে ।
বিদিশার বাবার কথা মনে হয় - পই পই করে তিনি সাগ্নিকের সঙ্গে মিশতে বারণ করেছিলেন । আজ মেয়ের শুভ দিনে , কোন মুখ নিয়ে আসবেন তিনি !
সাজ প্রায় শেষ ,এবার চন্দন পরানোর পালা । রুবী চিবুক তুলে ধরে বিদিশার - প্রতিরক্ষা আছে তো ,আজ তোকে রাখী যা সাজাচ্ছে , তাতে না বিয়ের বছর ঘুরতে না ঘুরতেই রাখীকে একটা ভাইপো এনে দিস । রাখী ও রুবী একসাথে হেসে ওঠে , বিদিশাকে অপ্রস্তুতে ফেলে ।
সাগ্নিক এলো তখন যখন বিদিশার সাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে । বাইরে চেঁচামেচি শুনেই রুবী দৌড়ে গেল । রাখী কড়া ধমক দিলো বিদিশাকে । তুই এখানে চুপচাপ বোস , যা বলার বাড়ীর বড়োরা বলবে । বিদিশাকে উর্ধমুখী করে বসিয়ে কপালে ছিমছাম চন্দন পরাতে শুরু করে দিল । পার্থ আর তার বাড়ীর লোকজন প্রায় জোর করেই সাগ্নিককে অন্য জায়গায় নিয়ে গেল । বাইরের চেঁচামেচি ভালো করে শুনতে পাচ্ছিলো না বিদিশা । সানাই শুরু হয়ে গেছে ।
কিছুক্ষণ বাদে রুবী ঘরে ঢুকে হাসতে হাসতে ঢলে পড়লো - কী ভীতু লোক মাইরি এই সাগ্নিকটা । পুলিশের নাম করতেই মানে মানে কেটে পড়লো ।
বিদিশার সাজ শেষ । রাখী তেলাকুচোর মতো টকটকে লাল করে দিয়েছে বিদিশার ঠোঁট ।
সন্ধে থেকে বউ বসা চেয়ার -এ সেজেগুজে বসে থাকতে থাকতে ঘামছিলো বিদিশা , আর তৎক্ষণাৎ রাখী বউদির মুখটা পাফ করে দিচ্ছিলো । সাগ্নিক চলে গেলেও ওর মন সব সময় একটা কু গাইছিলো । যেন এখনই কোনও বড়ো ঝামেলা হবে । এই পরিস্থিতির দিকে সাগ্নিক তাকে ঠেলে দিয়েছে । সাগ্নিকের প্রতি একটা তীব্র ঘৃণা নিয়ে মনে মনে ভগবানকে ডাকছিলো বিদিশা । পার্থ যতবার ই যাতায়াত করছিলো ততোবার ই বিদিশাকে লক্ষ্য করছিলো । চোখাচোখি হতেই বিদিশা চোখ নামিয়ে নিচ্ছিলো । নিমন্ত্রিতরা আসতে আসতে চলে যেতে শুরু করেছে , এর ই মাঝে এক ফাঁকে বিদিশা আর পার্থকে নিমন্ত্রিতদের মাঝে বসিয়ে খাইয়ে দিয়েছে বিদিশার শাশুড়ি । রাত যত গভীর হচ্ছে ,ততো বিদিশাকে নার্ভাস দেখাচ্ছিল । সারাজীবন ভালোবাসলো যাকে তাকে সে পেলনা । ভাগ্যের পরিহাসে যাকে পেল ,তাকে সে চেনে না । কিন্তু তার জীবন এখন তাকে যেদিকে নিয়ে যাচ্ছে , সেই পথ পয়েন্ট অফ নো রিটার্ন ।
সব কাজ মিটে রাত প্রায় বারোটা নাগাদ পার্থ যখন এলো , বিদিশা তখন ড্রেসিং টেবিলের সামনে কুশন দেওয়া টুলে বসে । সে নিজেই ফুল ছড়ানো খাট থেকে নেমে এসেছে । পার্থ দরজা বন্ধ করে ওর কাঁধে এসে হাত রাখলো । মেয়েদের চিনতে অসুবিধা হয়না । এই আহ্বান অধিকারের ।
একটু ভারী শোনালো পার্থ -র ডাক বিদিশার কানে ।
- বিদিশা শোবে চল , রাত অনেক হল ।
- আপনি যান ,আমি না হয় ....
- সে কী তাই আবার হয় নাকী ? এখনতো আমরা অতি আপনজন ।
- আপনিতো জানেন , আমি আর একজনকে ভালো ....
-বাসতে ,আজকের রাতের পরে তুমি আমাকে শুধু ভালোবাসবে । পার্থ মিটিমিটি হাসছে ।
- তা হয়না
- খুব হয় , পার্থ আচমকা বিদিশাকে ওর বাহু ধরে তুলে ওর খোঁপার নিচে ঘাড়ে আঙ্গুল দিয়ে একটু আলতো স্পর্শ করলো বিদিশার লাবণ্য । তারপর একলহমায় ওকে পাঁজকোলা করে তুলে নিলো ....
- আমরা এখন স্বামী -স্ত্রী । সুতরাং আর পাঁচটা স্বামী -স্ত্রী র মতোই আমাদের মধ্যে এখন সব কিছু হবে - যা সব স্বামী স্ত্রীর মধ্যেই হয়ে থাকে ।
পরদিন বিদিশার ঘুম ভাঙলো যখন তখন পার্থ তৈরী হয়ে গেছে । বাড়ী ভর্তি লোক । এই অবস্থায় বেরোবে কী করে বিদিশা । পার্থ বুঝিবা বিদিশার মন বুঝতে পারলো । ও হেসে বললো - তোমাকে আবার এই অবস্থায় বেরোতে হবে না । আমি রাখীকে পাঠিয়ে দিচ্ছি ।
কিছুক্ষন বাদে ভিজে তোয়ালে আর বিলোল কঠাক্ষ নিয়ে বিদিশার ননদ এলো ।
- দাদাভাই বুঝি কাল সারারাত তোকে বড্ডো জ্বালিয়েছে ?
রাখীর বুকে মুখ লুকিয়ে বিদিশা আদুরে গলায় বললো - বড্ডো ।
End
একজন আসল মহিলা হলেন তাঁর পুরুষের ব্যক্তিগত পর্নস্টার