Thread Rating:
  • 25 Vote(s) - 3.16 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Adultery যেমন করে চাই তুমি তাই/কামদেব
।।৬৪।।


       অনেক পুরানো দিনের কথা মনে পড়ল। বলদেবের সঙ্গে প্রথম কথা। “তুমি আমাকে তাড়িয়ে দেবে নাতো? ” দেবের সেই করুণ মুখটা চোখের সামনে ভেসে ওঠে, গুলনার ফুফিয়ে কেদে উঠল। আজ সত্যিই তাকে তাড়িয়ে দিলাম আমি? কিছু একটা বলতে চাইছিল দেব,কি ভুতে পেয়েছিল আমাকে তার কথায় কর্ণপাত করিনি। দেব তো বানিয়ে কথা বলতে জানে না,কথাটা শুনলে কি এমন হতো? অনুতাপে দগ্ধ হতে থাকেন গুলনার এহসান।
ফোন বাজছে,গুলনারের চিন্তায় ছেদ পড়ে। বেশবাস বিন্যস্ত করে খাট থেকে নামতে গিয়ে শুনতে পেলেন আব্বুর রাশভারী গলা। কান খাড়া করে দরজায় কান পাতে। “তুমি কোথাও যেও না,আমি আসছি। ” কে হতে পারে? কাকে যেতে নিষেধ করলেন? কোনো পেশেণ্ট? রুদ্ধশ্বাসে অপেক্ষা করেন আব্বু হয়তো তার দরজায় টোকা দেবেন। 
--কি হইল,এত রাতে কে ফোন করল?
এতো আম্মুর গলা।বন্ধ দরজার আড়ালে দম চেপে দাঁড়িয়ে থাকেন।
-- অযত্নে ফেলাইয়া রাখলে লোহাতেও মরিচা ধরে এতো রক্ত মাংসের একটা মানুষ।
--কি কন কিছুতো বুঝতে পারিনা। 
--এইখানে ফেলাইয়া উনি গেছেন রোজগার করতে।
--কার কথা কও?
--তোমার মেয়েরে জিজ্ঞেস করো।আমি আসতেছি।
 অযত্নে ফেলাইয়া রাখলে লোহাতেও মরিচা ধরে....।আব্বুর কথাটা কানে বাজে। উচ্ছ্বসিত কান্নার বেগ বাধ ভেঙ্গে দেয়।গুলনার নিজেকে সামলাতে পারেন না। বিছানায় উঠে চাদর মুড়ি দিয়ে ফুপিয়ে কেদে ফেললেন  গুলনার জেগে ছিলেন যেন বুঝতে না পারেন। সব চুপচাপ সাড়া শব্দ নেই। চোখ ছাপিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ে। এত রাতে কোথায় কোথায় ঘুরছে কে জানে। বয়স হয়েছে লেখা পড়াও কম শেখেনি কিন্তু বাস্তব বুদ্ধি হলনা। কাল সকালে সবাইকে কি বলবেন ভেবে কামনা করেন যেন কোনদিন সকাল নাহয়। রাতের আঁধারে এই পোড়ামুখ লুকিয়ে থাকতে চান।
ইউসুফকে কিছু বলেন নাই,শুধু বলেছেন,উত্তরা। সাহেবরে বেশ উত্তেজিত বোধ হয়। ইউসুফ মিঞা ফাকা রাস্তায় তীব্র গতিতে গাড়িরএক্সিলেটারে চাপ দিল।উত্তরার নীচে  দক্ষিনে ভাবঘুরেরা গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। গাড়ির ভিতর থেকে দেখতে পেলেন,তাদের মধ্যে অন্ধকারে একটা লোক বসে আছে।
— ইউসুফ ঐ লোকটারে এইখানে ডাকো।ইউসুফ গাড়ি থেকে নেমে দ্বিধান্বিত ভাবে এগিয়ে গেল। তার চোখ কপালে ওঠার জোগাড়। কারে দেখতেছেন,এতো দামাদ সাহেব।
— আসেন,আপনে এইখানে কি করতেছেন?
--আস্তে সবাই ঘুমায়।বলদেব ঠোটে আঙুল দিয়ে ফিসফিসিয়ে বলল।
ইউসুফ মিঞা নীচু গলায় বলল,আপনে উঠে আসেন। 
— চাচা! মণ্টি আসছে?
— সাহেব আসছেন। আপনি আসেন।
ইউসুফ গাড়ির দরজা খুলে দিলেন,বলদেব গাড়িতে উঠে দেখল বসে আছেন ড.রিয়াজ। বলদেবের বুকে জমে থাকা কান্নার অর্গল খুলে গেল,আব-বু-উউউ।
— চুপ করো। তোমার কোন দোষ নাই। ড.রিয়াজ বুঝতে পারেন তার দামাদে নেশা করেছে।
ইউসুফ গাড়ী ছেড়ে দিলেন। ড.রিয়াজ আপন মনে ভাবেন, দামাদের আর দোষ কি। তিনি ডাক্তার তিনি জানেন শরীরের পরিচর্যা না করলে শরীর বিগড়াবে,শরীর তো জড় পদার্থ না। স্বামীকে ফেলে রেখে উনি গেছেন রোজগার করতে,মণ্টির বাস্তব বুদ্ধি কবে হবে?
এহসান মঞ্জিলের নীচে গাড়ি থামতে করিম মিঞা বেরিয়ে এল।ড রিয়াজ বললেন,তুমি ঘুমাও নাই?
--ঘুমায়ে ছিলাম শব্দ পেয়ে আসলাম।
--নীচে গেষ্ট রুমটা খুলে দাও।দেব তুমি করিমের লগে যাও।
নীচে গাড়ীর শব্দ পেয়ে বিছানায় উঠে বসলেন গুলনার।কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে খাট থেকে নেমে দরজা ফাক করে বাইরে দেখলেন।বারান্দার লাইট নিভে গেল।তাহলে দেব আসেনি?কোথায় গেছিল আব্বু?আলগোছে দরজা খুলে পা টিপে টিপে নীচে নেমে এলেন।কাউকে দেখতে না পেয়ে চোখ ছল ছল করে।নিঝুম রাতে বুকের দুপ দুপ শব্দ শোনা যাচ্ছে।হঠাৎ নজরে পড়ে করিমের ঘরে আলো জ্বলছে।দরজার কাছে গিয়ে মৃদুস্বরে ডাকলেন,করিম তুমি কি ঘুমাইছো?
--কে?দরজা খুলে গুলনারকে দেখে করিম বলল,অপা আপনে?
--একটু আগে আব্বু আসল না?
--জ্বি ডাক্তার সাহেব আর দামাদজী আসলেন।
--দেব কোথায়?
--গেষ্ট রুমে ঘুমায়।
--ডাকো তো।
করিম বেরিয়ে দরজায় হাত দিয়ে দেখল ভেজানো গুলনারকে বলল,অপা দরজা খুলা।ডাকব?
--থাক তুমি শুয়ে পড়ো।
করিম নিজের ঘরে গিয়ে দরজা বন্ধ করে শুয়ে পড়ল।গুলনার এদিক ওদিক দেখে গেষ্ট রুমে ঢূকল।লাইট জ্বালতে গিয়ে হাত সরিয়ে নিল জ্বালল না।অন্ধকারেও বোঝা যায় খাটের উপর কুকড়ে শুয়ে আছে।গুলনার বলল,এখানে কি করছেন?
বলদেব বুঝতে পারে মণ্টির গলা তবু সাড়া দেয়না।
--কি হল শুনতে পাননি,এখানে কি করছেন?
বলদেব শুয়ে শুয়েই বলল,মণ্টি এইটা তোমার বাড়ী না এহেসান মঞ্জিল আব্বুর বাড়ী।
উড়নি দিয়ে চোখ মুছল গুলনার।একেবারে ছেলেমানুষ এই মানুষের সঙ্গে সে কি ব্যবহার করেছে।নিজেকে সামলে নিয়ে বললেন,উপরে চলেন।
--কেন উপরে যাব?
--আমি বলছি উপরে যাবেন।
বলদেব খাট থেকে নেমে বালিশটা বগলদাবা করে যেতে উদ্যত হলে গুলনার বললেন,বালিশ নিয়ে কোথায় যান বালিশ রাখেন।
বলদেব একবার আড়চোখে মণ্টিকে দেখে বালিশ নামিয়ে রাখল।গুলনারের সঙ্গে সিড়ি বেয়ে উঠতে লাগল।আবার কি কপালে আছে মনের মধ্যে চিন্তা।বিড় বিড় করে বলে নিজেও ঘুমাবে না অন্যরেও ঘুমাতে দেবে না।কথাটা কানে যেতে গুলনার ঘুরে দাঁড়িয়ে বলেন,কি বললেন?
--তোমাকে কিছু বলিনি আমি নিজে নিজে বললাম। 
ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে নাইট ল্যাম্প জ্বালিয়ে আলো নিভিয়ে মশারি তুলে বিছানায় উঠে শুয়ে পড়লেন গুলনার।বলদেব চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে।গুলনার বললেন,ঘুমাবেন বললেন তাহলে খাম্বার মত দাঁড়িয়ে আঁছেন কেন?
অপরাধী মুখ করে বলদেব বলল,মণ্টি তুমি জানতে চাও না কোথায় গেছিলাম?
--আমি কিছু জানতে চাই না।এই রাত আমি ভুলতে চাই।
--আমার গায়ে বমীর গন্ধ পাও নাই?
--আবার ওই কথা?কি বললাম শোনেন নি?
--কিন্তু আমার গায়ে নোংরা ক্লেদ মাখা এই শরীর নিয়ে কিভাবে তোমার পাশে ঘুমাবো?
গুলনার উঠে বসলেন।মশারী তুলে দেবের দিকে তাকিয়ে থাকেন।বলদেব অপরাধী মুখ করে মাটির দিকে তাকিয়ে থাকে।গুলনার কাছে এসে বলেন,আমার দিকে তাকান।
বলদেব চোখ তুলে তাকালো।গুলনার বললেন,আপনি বলেন নি মন না-পাক নাহলে শরীর না-পাক হয়না?
চলুন আপনাকে গোসল করিয়ে শরীরের ময়লা ধুয়ে দিই।
নিজে জামা খুলে দেবকে নিয়ে সংলগ্ন বাথরুমে ঢূকলেন।সম্পূর্ণ নিরাবরন করে সারা গায়ে সুগন্ধি সাবান মাখাতে মাখাতে বলেন,যা খাইলে সহ্য হয়না তা খাওনের দরকার কি?
--সাবানটায় ভারী সুন্দর গন্ধ।
--যার তার সাথে খাওয়া আমার পছন্দ না।
--আমি ইচ্ছা করে খাইনি।
--হ্যা ভুতে খাওয়াইছে।
ডলে ডলে সাবান ঘষে শাওয়ারের নীচে দাড় করিয়ে স্নান করিয়ে তোয়ালে দিয়ে গা-মুছিয়ে দিলেন।বলদেব বলল, তোমার পায়জামা ভিজে গেছে।
--শুধু পায়জামা ভেজা দেখলেন?
--মণ্টি আমার ইচ্ছা করছে তোমারে স্নান করিয়ে দিই।
--যাক একটা ইচ্ছা তবু মুখ ফুইটা বললেন।
গুলনার চুপ করে লক্ষ্য করেন দেব সযত্নে বাহুমূল কুচকি পাছার ফাকে ঘষে ঘষে সাবান লাগাচ্ছে।চোখে মুখে খুশি উপচে পড়ছে।দুই উরুর ফাকে কচলে কচলে সাবান ঘষতে গুলনারের শরীরে শিহরন খেলে যায় দু-হাতে দেবকে জড়িয়ে  ধরে।বলদেব বলল,এইটা কি করলে?আমার সারা গায়ে সাবান লেগে গেল।
--আপনার ভাল লাগেনি?
বলদেব মুচকি হাসে।গুলনার হাতে পায়ে পেচিয়ে ধরে দুজনে শাওয়ারের নীচে দাড়ায়।বাস্তবিক গুলনার অনুভব করে আজকের সমস্ত দুঃখ যন্ত্রণা পানি হয়ে গড়িয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে।একসময় স্নান শেষ হয়।ওরা বিছানায় এসে শুয়ে পড়ে।কিছুক্ষন শুয়ে থাকে ঘুম এসে না।বলদেব জিজ্ঞেস করে,মণ্টি ঘুমিয়েছো?
গুলনার পাশ ফিরে কনুইয়ে ভর দিয়ে বলেন,আমি তোমাকে অনেক কুকথা বলেছি– ।
— না না মণ্টি তুমি আমাকে কিছুই বলো নাই। যন্ত্রণায় তুমি হাত-পা ছুড়েছো অজান্তে তার দু-একটা আঘাত হয়তো আমাকে লেগেছে।
চিত হয়ে শুয়ে গুলনার বলদেবকে বুকের উপর তুলে নিলেন। বলদেব দেখে শুয়োপোকার রোমের মত খোচা খোচা পশম ভোদার চারপাশে। জিজ্ঞেস করে,সেভ করো নাই।
— কটাদিন কিভাবে কেটেছে আমার সেভ করবো তার সময় কোথা?
বলদেব নীচু হয়ে ভোদায় চুমু দিল। গুলনার বলেন,একটু পরেই ভোর হবে তাড়াতাড়ি করো।
বলদেব প্রবিষ্ট করাতে গুলনার উমহু বলে কাতরে ওঠেন।
— ব্যথা পেলে?
— সারা রাত যে কষ্ট পেয়েছি সেই তুলনায় কিছুই না। তুমি বীজ ঢালো।
মণ্টি যাতে কষ্ট না পায় তাই নীচে নেমে হাটুতে ভর দিয়ে অঙ্গ চালনা করে। গুলনার চিত হয়ে শুয়ে মুখ টিপে হাসতে হাসতে অঙ্গ চালনা এবং সন্তানের জন্য আকুলতা প্রত্যক্ষ করেন।
সুর্যোদয়ের সাথে সাথে ভোদায় শুরু হল উষ্ণ বীর্যের জোয়ার। গুলনার পাছাটা তুলে ধরে যাতে সম্পুর্ণ ভিতরে প্রবেশ করে। এক বিন্দুও নষ্ট না হয়।
— কি বীজ দিলে? ব্যাটা না মেয়ে?
— তোমার মত ফুটফুটে মেয়ে।
— কিন্তু আমার যেনি মনে হয় ব্যাটা।
গুলনার পোষাক পরে দেবের কপালে চুমু দিয়ে বললেন, এইবার ওঠেন। আর লোক হাসাইয়েন না। মনে আছে তো কলেজ যাইতে হবে?
বলদেব উঠে বসে জিজ্ঞেস করে,মণ্টি তুমি মুন্সিগঞ্জে আবার কবে যাবে?
— আর কোনদিন যাবোনা।
হতবাক বলদেব হা করে চেয়ে থাকে। কি বলছে মণ্টি বুঝতে চেষ্টা করে। তারপর খাট থেকে লাফিয়ে নেমে জড়িয়ে ধরে গুলনারকে,জিজ্ঞেস করে সত্যিই? কি ভেবে আবার বলে, সারাদিন কি করবা তাহলে?
— কিছু একটা তো করতে হবে। ভাবছি এবার সঙ্গীতটা সিরিয়াসলি নিতে হবে।
— মণ্টি তুমি আমাকে মাপ করেছো?
— সেটা মুখে বলতে হবে?
বাড়িতে কেউ নেই,সবাই বেরিয়ে গেছে। টেবিলে খাবার সাজাচ্ছেন নাদিয়া বেগম। গুলনার ঢুকে বলেন,করিম আমারে খাইতে দেও,দেরী হইয়া গেছে।
— ক্যান তুই কোথায় যাবি? আমার বলা গেল কই?
— বলা কেডা? অত ভাত দিছো কারে? মা তুমি কি মানুষটারে মারতে চাও?
— তুই নজর দিবি না। এই বয়সে খাইবো না তো কবে খাইবো?
— আম্মু মণ্টি বলছে আমার সাথে কলেজে যাবে। বলদেব ঢুকে বলল।
মণ্টি চোখ পাকায়। নাদিয়া বেগম অবাক হয়ে একবার মণ্টিকে আর একবার জামাইয়ের দিকে দেখেন। গুলনার মুখ ফিরিয়ে মুচকি হাসেন। জামাইটা হইছে বউয়ের ন্যাওটা। অভিমান হয় তিনি জামাইকে এত যত্ন করেন অথচ যে বউ কাল তারে এত গাউলাইল তারে ছাড়া চলে না? মাইয়াডা ফুরফুরাইয়া উড়তাছে দেইখা নাদিয়া বেগমের ভাল লাগে।
ড জাভেদ শামীম ফোন ধরলেন,হ্যা বলুন...আজকে জয়েন করেছেন...এহসান মঞ্জিলে থাকেন....হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ড আহমেদের নাম শুনেছেন...হ্যা-হ্যা ওর দামাদ..কোনো সমস্যা...আচ্ছা রাখছি।  
[+] 7 users Like kumdev's post
Like Reply
Do not mention / post any under age /rape content. If found Please use REPORT button.
এইতো এবার রাতের কালো অন্ধকারের মেঘ সরে গিয়ে সকালের নতুন সুর্য উঠেছে !
" কেটেছে একেলা বিরহের বেলা আকাশ কুসুম চয়নে
সব পথ এসে মিলে গেল শেষে তোমার দুখানি নয়নে, নয়নে..."
[+] 2 users Like Mr Fantastic's post
Like Reply
খুব ভালো লাগল আজকের আপডেট। 
রেপু দিলাম। 
[+] 1 user Likes buddy12's post
Like Reply
যাক এবারের মতো মাফ করে দিলাম !
আগে যদি একবারও এদিক ওদিক দেখে লালা ঝরে , সত্যি সত্যি নুনু কেটে বলদ বানিয়ে রেখে দেবো !!!

Angry Angry
[+] 3 users Like ddey333's post
Like Reply
।।৬৫।।


    নাদিয়া বেগম মেয়ের প্রতি বিরক্ত।এতকাল বাড়ি থাকতো না ভাল ছিল এখন বাড়ি থেকে সারাক্ষন জামাইয়ের উপর খবরদারি।জামাইয়ের খাওন কমাইয়া দিছে।কলজে যায় সেইটা কিছু না ছুটি হইলে বাড়ি আসব তানা তারে লইয়া বাইরে ঘুইরা বেড়ায়।এত ভালবাসা কই আছিল এতদিন।কে দেবের দেখাশুনা করছে।কোনো দরকার পড়লেই আম্মু আম্মু কইরা ছুইটা আসতো।
 কলেজে আজ বি.এসের পঞ্চম দিন। সকালেই একটা ফোন পেল। অভিনন্দন জানিয়েছেন মৌসম। প্রসঙ্গক্রমে অনুরোধ করলেন,সেদিনের ঘটনা যেন উভয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে। দুর্ঘটনা মনে রাখতে নেই,বলদেব দুশ্চিন্তা করতে নিষেধ করল। ফোন রেখে নিজের মনে হাসল, অভিনন্দন আসলে অজুহাত।জাভেদ শামীম স্যার জিজ্ঞেস করছিলেন মিসেস নূরের সঙ্গে কিছু হয়েছে কিনা?মৌসমকে সেকথা বলেনি।
কলেজ নেই সময় কাটতে চায় না।ভোর বেলা রেওয়াজ করা ছাড়া কোনো কাজ নেই।  গুলনার নিজেই কাজ বেছে নিয়েছেন প্রতিদিন দেবকে আনতে যাওয়া। ঘড়ির দিকে তাকিয় দেখলেন ছুটির সময় হয়েছে। গাড়ী নিয়ে কলেজের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়ে। আজ নতুন ড্রাইভার,মামুন চলে যাবে গাড়ীটা তাকে দিয়েছে। ছুটির সময় হয়ে এসেছে ক্যাম্পাসের একদিকে গাছের নীচে অপেক্ষা করতে লাগলেন।
ইতিমধ্যে বি.এস ছাত্রীমহলে বেশ জনপ্রিয়,সকলে বিশেষ করে পুরুষ শিক্ষকরা সেটা ভালভাবে নিতে পারেনি। শেষ ক্লাস শেষ করে সবে বেরিয়েছে একটি মেয়ে এসে বলল, স্যর একটা কথা জিজ্ঞেস করবো?
বিএস হেসে জিজ্ঞেস করে,কি নাম তোমার?
— জ্বি রাবেয়া।
— শোনো রাবেয়া ক্লাসের পর আমি কথা বলতে পছন্দ করি না।
— স্যরি স্যার।
— বলো তুমি কি জানতে চাইছিলে?
— না মানে আপনি পড়াতে পড়াতে ডিকনস্ট্রাকশন তত্ত্বের কথা বললেন…যদি আরেকটু ক্লিয়ার করে বলতেন– ।
— প্রসঙ্গক্রমে বলেছি,মুল বিষয়ের ক্ষেত্রে খুব গুরুত্ব পুর্ণ নয়। কোন কিছুকে বিপরীত ভাবে দেখা বা ব্যাখ্যা করা। যেমন আমি তোমার কান ধরলাম– ।
লজ্জায় রাবেয়ার মুখ লাল হয়ে গেল। বিএস মৃদু হেসে বলল, না না আমি তোমার কান ধরছি না। মনে করো কান ধরা হল,তুমি লজ্জা পেলে। কার্য কান ধরা কারণ লজ্জা পাওয়া। এইটি সাধারণ ব্যাখ্যা। এবার বিপরীত ভাবে,কার্য তুমি লজ্জা পেলে কারণ তোমার কান ধরা হয়েছে।
রাবেয়া আচমকা পায়ে হাত প্রণাম করে বলল,আসি স্যর?
ছুটি হয়ে গেছে অঞ্জনা বাড়ির দিকে,সামনের দিক থেকে জমিলা হাপাতে হাপাতে এসে বলল,এ্যাই অঞ্জনা গেটের কাছে গাছ তলায় ঐ ভদ্রমহিলাকে দ্যাখ,কেমন যেন চেনা চেনা লাগছে। সিনেমা আর্টিষ্ট নয়তো?
অঞ্জনা ভ্রু কুচকে ভদ্রমহিলাকে দেখে বলল,আমার চেনা। তারপর ছুটে কাছে গিয়ে বলল,অপা আপনি এখানে?
গুলনার মনে করতে পারেন না মেয়েটি কে?
— আমি অঞ্জনা,সাহানা আমার বড় অপা।
— অহ অঞ্জনা? এবার মনে পড়েছে। তোমার দিদির নাম রঞ্জনা?
জমিলা এগিয়ে আসে। অঞ্জনা বলে,এর নাম জমিলা আমার বন্ধু বলে কিনা আপনাকে কোথায় দেখছে।
— আপনে টিভিতে গান গান? জমিলা যেন কি আবিস্কার করল।
— এক-আধ বার  প্রোগ্রাম করেছি। তোমার মেমারী খুব শার্প।
দূর থেকে বিএসকে আসতে দেখে ওদের মধ্যে চাঞ্চল্য দেখা যায়। গুলনার জিজ্ঞেস করেন,কি ব্যাপার?
— অপা ঐ যে আসছেন বিএস হেবভি পড়ায়,ওনার ক্লাস কেউ মিস করতে চায় না।
গুলনার তাকিয়ে দেখলেন,দেব আসছে। মেয়েগুলো এই বয়সে এতো ফক্কড় হয়ে গেছে। কথার কি ছিরি ‘হেবভি পড়ায়। ‘ সাদা পায়জামা গেরুয়া পাঞ্জাবি অবিন্যস্ত চুল হাওয়ায় উড়ছে,ব্যক্তিত্বশালী নায়কের ভঙ্গিতে কলেজ প্রাঙ্গন পেরিয়ে আসছে। একে বাচ্চা ছেলের মত স্নান করাচ্ছিলেন ভেবে হাসি পেল। মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকেন গুলনার।  দেবের নজরে পড়তে কাছে এসে জিজ্ঞেস করে,কতক্ষন? 
লজ্জায় অঞ্জনা জমিলা পালিয়ে গেল। তাদের দিকে দেখে জিজ্ঞেস করে দেব,কি বলছিল ওরা?
— কখন ঘণ্টা পড়েছে কি করছিলে এতক্ষন?
— ক্লাস থেকে বেরিয়েছি একটি মেয়ে এসে নানা প্রশ্ন– ।
— আর অমনি গলে গেলে? মেয়েরা তোমাকে খালি প্রশ্ন করে কেন?
— আচ্ছা আমি কি কেজি কলেজের ছাত্র? রোজ এভাবে নিতে আসো?
— আপত্তি করলে আসবো না।
— তোমার সঙ্গে কথা বলা যাবে না। তুমি আমার বউ না অভিভাবিকা?
গুলনার মৃদুস্বরে গান গায়,তোমা ছাড়া আর এ জগতে মোর কেহ নাই কিছু নাই গো। দেবের চোখ চলে যায় গুলনারের পেটের দিকে,তারপর বলে,ভিতরের মানুষটা আছে কেমন?
গুলনারকে একরাশ লজ্জা ঘিরে ফেলে। লজ্জা পেলে মেয়েদের দেখতে ভাল লাগে, তাইতো বলে লজ্জা নারীর ভুষণ।
— তোমার বডী ল্যাঙ্গুয়েজ মোড অফ স্পিকিং অনেক বদলে গেছে দেব।
— আগের মত চাষাড়েভাব নেই?
দূর থেকে অঞ্জনারা অবাক হয়ে দেখে মণ্টি অপার সঙ্গে বিএস কথা বলছেন। ওরা আলোচনা করে,মন্টি অপাকে কি আগে থেকে চিনতেন? মণ্টি অপা বিএসের প্রেমিকা নয়তো?
— আমি তা বলি নাই। খালি ব্যাকা ব্যাকা কথা। চলো গাড়িতে ওঠো। গুলনারের কথায় অবাক হয় বলদেব। জিজ্ঞেস করে, গাড়ি কোথায় পেলে?এটা মামুনের গাড়ী না?
— হ্যা মামুনের গাড়ী।
— মামুনের গাড়ি? মামুন আসছে নাকি?
— মামুন বিদেশ যাইবো,গাড়িটা আমারে দিয়া যাবে। নতুন ড্রাইভার রাখছে আব্বু।
গাড়ির কাছে যেতে একটী বছর ত্রিশের ছেলে এসে সালাম করে দাড়ালো। গুলনার পরিচয় করিয়ে দিলেন,এর নাম মুস্তাক। আর ইনি ডাক্তার সাহেবের দামাদ।
মুস্তাক মুচকি হেসে স্টিয়ারিঙ্গে বসে। গাড়ি চলতে শুরু করে। দেবের হাত কোলে নিয়ে বসে থাকেন গুলনার। মনে মনে ভাবেন মেয়ে কলেজ না হয়ে ছেলেদের কলেজ হলে ভাল হতো।ঘাড় ঘুরিয়ে দেখল জানলা দিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে দেব।মনে মনে ভাবে এই লোকটা অধ্যাপক কলেজে পড়ায় সবাই ওকে সমীহ করে।ভিতরে ভিতরে একেবারে ছেলেমানুষ।কিছু হলেই মণ্টী মণ্টি,মৃদু হাসি ফোটে। গাড়ি শহরের কাছাকাছি এসে গেছে। স্ট্যণ্ডে অটোর সারি। দেবের চোখ আটকে যায় অটো স্ট্যাণ্ডে একজনকে দেখে।
— মুস্তাকভাই গাড়ি থামাও। এ্যাই সায়েদ মিঞা– -সায়েদ মিঞা।
লোকটি অবাক হয়ে গাড়ির দিকে তাকায়। ততক্ষনে গাড়ি থেকে নেমে পড়েছে দেব। লোকটি এগিয়ে আসে।
— ছোটভাই আমারে চিনতে পারো নাই? তুমি তো সায়েদ?
— জ্বি। আপনি– ?
— আরে আমি বলদেব,ভুলে গেলে? আম্মু কেমন আছে?
— ওহ বলাভাই? তারপর মুখে ছায়া নেমে আসে বলে,আমুর শরীর ভাল না। হার্টের ব্যামো,ডাক্তার রিয়াজরে দেখাইতে আনছি। এ্যাপয়ণ্টমেণ্ট পেয়েছি অনেক ধরাধরি করে পনেরো দিন পর। হোটেলে উঠেছি,মেলা খরচ। ভাবী আসছে সাথে।
— তুমি গাড়িতে ওঠো।
সায়েদ ড্রাইভারের পাশে বসল। দেব বলল,মুস্তাক ভাই ড.রিয়াজের চেম্বারে চলো।
গুলনার চুপচাপ বসে আছেন কোন কথা বলছেন না। এই প্রথম নিজে নিজে দেবকে একটা সিদ্ধান্ত নিতে দেখলেন। চেম্বারে ঢুকতে বাধা পেল,একজন পথ আটকে বললেন, কোথায় যাবেন?
— আমি পেশেণ্ট না,ড.রিয়াজের সঙ্গে একটা কথা বলে চলে যাবো।
ভদ্রলোক একটী স্লিপ এগিয়ে দিয়ে বললেন,এইখানে নাম লিখে দিন। উনি একদিনে পনেরোটার বেশি রোগী দেখেন না।
গাড়িতে বসে গুলনার সব দেখছেন। বিরক্ত হয়ে দেব স্লিপে নিজের নাম লিখে দিল। কিছুক্ষন পরেই দেবের ডাক এলো। ভিতরে ঢুকতে ডাক্তার বললেন,বসুন।
দেব অবাক,আব্বু কি তারে চিনতে পারছেন না?
— বলুন আপনের জন্য কি করতে পারি?
— আব্বু একটা পেশেণ্ট দেখতে হবে।
— এ্যাপয়ণ্টমেণ্ট আছে? এ্যাপয়ণ্টমেণ্ট ছাড়া আমি রোগী দেখি না।
— মণ্টিরও এ্যাপয়ণ্টমেণ্ট লাগবে? দেব উঠে দাঁড়ায়।
— মণ্টি কে?
— আমার বউ।
ডাক্তার রিয়াজ চশমার ফাক দিয়ে চোখ তুলে দেবকে দেখে বলেন,বসো বসো। অত রাগলে চলে? দেব আবার বসে।
— এই পেশেণ্ট তোমার কে?
— আব্বু আমি আগে যার আশ্রয়ে ছিলাম আম্মু বলতাম– ।
--কোথায় থাকেন?
--এইখানে একটা হোটেলে উঠেছেন।
— ঠিকানা লিখে রেখে যাও। ফেরার পথে দেখতে যাবো।
দেব গম্ভীরমুখে গাড়ীতে এসে বসল। সায়েদ সামনে। গুলনার জিজ্ঞেস করেন,ডাক্তার কি বললেন?
— কি বলবেন? যেমন মেয়ে তেমন তার বাপ। সায়েদ কোন হোটেলে উঠেছো,সেখানে নিয়ে চলো। মণ্টি তুমি যাবে তো?
কানের কাছে মুখ এনে ফিসফিস করে বললেন গুলনার,আর তোমারে একা ছাড়ি?
--তুমি কি একাই এসেছো?
--ভাবী আসছে।টুনিঅপা বাড়ীতে আসছে। 
মনু বড়ভাই সবার কথা মনে পড়ে।আম্মু তাকে প্রথম ছাত্র পড়ানোর দায়িত্ব দিয়েছিল আজ সেই শিক্ষকতা তার পেশা। 
[+] 7 users Like kumdev's post
Like Reply
"মেয়েরা তোমাকে খালি প্রশ্ন করে কেন ?"

মন্টিও প্রশ্নটা মেয়েদের মতোই করলো।
[+] 1 user Likes buddy12's post
Like Reply
"মেয়েরা তোমাকে খালি প্রশ্ন করে কেন ?"

মন্টিও প্রশ্নটা মেয়েদের মতোই করলো।
Like Reply
পুরোনো চরিত্রগুলোও একসূত্রে বাঁধা হচ্ছে ভালোই, আর দেবের পরিবর্তনটা দেখে ভালো লাগল, এটা হওয়া দরকার ছিল।
[+] 1 user Likes Mr Fantastic's post
Like Reply
(11-07-2020, 01:10 PM)buddy12 Wrote: "মেয়েরা তোমাকে খালি প্রশ্ন করে কেন ?"

মন্টিও প্রশ্নটা মেয়েদের মতোই করলো।

হাঃ হাঃ হাঃ, কিছু মেয়ের নিজের স্বামী বা প্রেমিকের প্রতি তীব্র অধিকারবোধ থাকে, মন্টিও সেরকম  Big Grin
[+] 2 users Like Mr Fantastic's post
Like Reply
যাক আমার মাথাটা এবার একটু শান্ত হলো
দাদারা কিছু মনে করবেন না মাথা গরম হয়ে গেছিলো তাই গালাগালি করছিলাম বলদেব কে
আসলে কেন জানিনা , এইটা ভেবে কষ্ট হচ্ছিলো যে মন্টির মতো সঙ্গিনী কে ছেড়ে কেউ ........
যাক ছেড়ে দিন
এবার বেশ ভালো লাগছে ...

Smile Heart Smile Heart
[+] 2 users Like ddey333's post
Like Reply
।।৬৬।।


সাধারণ হোটেল,দোতলায় দুইখান ঘর নিয়েছে সায়েদ। বেল টিপতে দরজা খুললো মুমতাজ বেগম। সায়েদের সঙ্গে অপরিচিত লোক দেখে দ্রুত সরে গেল। সায়েদ মজা পায় বলে,কি ভাবী চিনতে পারো নাই?
— কে আসলো রে? কে সায়েদ নাকি? বিছানায় শুয়ে রাহিমা বেগম জিজ্ঞেস করেন।
সায়েদ মায়ের কাছে গিয়ে বলে,আম্মু তোমার ব্যাটা আসছে।
বলদেব কাছে এগিয়ে গেল,ঘাড় ঘুরিয়ে বলদেবকে দেখে বলেন,বলামিঞা না? সাথে কে বউ নাকি? একেবারে পরীর মত দেখতে।
মুমতাজ অবাক হয়ে দেখে বলদেবকে,অনেক বদলে গেছে একেবারে চেনাই যায় না। ঠাকুর-পোর বউ ভারী সুন্দর সিনেমা আর্টিষ্টের মত। বলদেব মুমতাজকে লক্ষ্য করে বলে,ভাবীজান কেমুন আছেন?
— ভাল। আপনে মানে তুমি কেমন আছো? ছেলেরা মাঝে মধ্যে তোমার কথা বলে।
— ওরা কই?
— ফুফার কাছে আছে,টুনি আসছে তো। টুনির পোলা হইছে।
গুলনার আড় চোখে মুমতাজকে দেখেন,দুজনের সম্পর্কটা বোঝার চেষ্টা করেন। বলদেব মণ্টির সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়,এই আমার বউ মণ্টি। এই বড়ভাইয়ের বউ।
— বিয়ার দিন দেখছি।আরো সুন্দর হইছে।বিয়ার পর সুখী হইলে সুন্দর হয়। মুমতাজ বলে।
সেদিনের কথা গুলনারের কিছু মনে নেই। রহিমা বেগমকে মনে আছে আবছা। সায়েদ বলে,আমি চা বলে আসতেছি।
— বলারে কিছু খাইতে দে। আহা মুখ শুকায়ে গেছে। রহিমাবেগম বলেন। গুলনার বুঝতে পারে উনি দেবের খাবার ব্যাপারটা এখনো মনে রেখেছেন। ঘর থেকে বেরিয়ে গিয়ে ব্যালকনিতে গিয়ে দাড়ালেন গুলনার। দেবও সেখানে গিয়ে বলে,সবাই বলে,আমি খাইতে ভালবাসি।
— না না এখন না। গুলনার আপত্তি করেন।
— মণ্টি তুমি কোনদিন না চাইতে বলেছো খাও?
উলটা অভিযোগ। গুলনার এদিক-ওদিক দেখে বলেন,আচ্ছা খাও। কিন্তু বেশিক্ষন না।
দেব দু-হাত গুলনারের কাধের উপর রেখে মাথা নীচু ঠোটে ঠোট স্থাপন করে।
— উম-উম না না বলে গুলনার ঠেলে দিলেন দেবকে। ক্ষিধা মিটছে?
— না আরো বেড়ে গেল।
— বাড়লেও আমার কিছু করনের নাই। গুলনার ঘরে ঢুকে এলেন।
ভিতর থেকে রহিমা বেগম ডাকেন,বলা গেল কই,এদিকে আসো বাজান।
— মা কথা কইয়েন না। ডাক্তার আপনারে কথা কইতে নিষেধ করছে। মুমুতাজ আম্মুকে বলে।
— ছাড়ান দাও তো ডাক্তারের কথা। মায়ে ব্যাটার লগে কথা কইবো না?
বলদেব এগিয়ে কাছে যেতে রহিমা বেগম পাশে বসতে ইঙ্গিত করেন। বলদেব বসলে জিজ্ঞেস করেন,তুমি অখন কি করো?
— আমি একটা কলেজে পড়াই।
— পড়াও? দেখছো বৌমা একদিন আমি অরে পড়াইতে লাগাইছিলাম,ব্যাটা আমার সেই কামে লাইগা রইছে।
পুরানো দিনের কথা মনে পড়ে। মাটি কাটার কাজ ম্যাসেজ করা বাগান করা ইত্যাদি নানা কাজ করলেও দেব পড়ানোর কথা ভাবেনি। আম্মুই প্রথম তার নাতিকে পড়ানোর দায়িত্ব দিয়েছিলেন। গুলনারের উৎসাহে দেব এম.এ পাস করেছে তার ইচ্ছেতে অধ্যাপনা পেশায় নিযুক্ত হলেও দেব ছেলে পড়াতে পারবে সে কথা প্রথম মনে হয়েছিল আম্মুর। একজন বেয়ারা একটা ট্রেতে খাবার সাজিয়ে ঢুকল। রুমালি রুটি আর রেজালা। রহিমা বেগম বলেন,খাও তোমরা খাও।
প্রতি প্লেটে দুটো করে রুটী ছিল। প্লেট নিয়ে নিজের প্লেট থেকে একটা রুটি দেবের প্লেটে তুলে দিলেন গুলনার। মুমতাজ আড় চোখে লক্ষ্য করে মজা পায়। কিছুক্ষন পরে সেই ছেলেটি টি-পটে চা দুধ চিনি নিয়ে ঢুকতে মুমুতাজ বলে,তুমি যাও,আমরা নিয়ে নেবো। ছেলেটি চলে যেতে মুমতাজ সবাইকে চা পরিবেশন করে। শ্বাশুড়িকেও আধ কাপ চা দিল। সবে শেষ হয়েছে চা খাওয়া সায়েদ ঢুকলো ডাক্তার রিয়াজকে নিয়ে। পিছনে ইউসুফ খান হাতে একটা অ্যাটাচি। মুমুতাজ একটা চেয়ার এগিয়ে দিল। ডাক্তার স্টেথো দিয়ে পরীক্ষা শুরু করেন। ইতিমধ্যে ইউসুফ অ্যাটাচি খুলে পাশে রেখেছে। প্রেশারের যন্ত্র নিয়ে প্রেশার মাপলেন। সায়েদের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করেন, ইসিজি রিপোর্ট আছে?
সায়েদ ইসিজি এক্সরে এগিয়ে দিল। ড.রিয়াজ গম্ভীরভাবে চোখ বুলালেন জিজ্ঞেস করলেন,কেমন আছেন?
— আমার ব্যাটা আসছে অখন আমি সুস্থু।
— ব্যাটায় কাম হইবো না,অক্সিজেন দেওন লাগবে। তারপর সায়েদের দিকে ফিরে বলেন,নার্সিং হোমে নিয়ে যেতে হবে এখনই,আমি নার্সিং হোমে থাকবো।
— ডাক্তার সাব খারাপ কিছু?
— বয়স হইছে,তুমি নিয়া আসো।
মেয়ে জামাইয়ের দিকে একবার ফিরেও দেখলেন না,গটগট করে চলে গেলেন। সায়েদ গুলনারের দিকে তাকালেন। গুলনার বলেন,টাকা না চাইলে দিতে হবে না।
দেব বলে,সায়েদ তোমরা নার্সিং হোমে আসো,আমি আম্মুরে নিয়ে যাচ্ছি।
রহিমা বেগমকে ধরে ধরে সিড়ি দিয়ে নামিয়ে গাড়িতে তোলে দেব। গুলনার আর দেব উঠে নার্সিং হোমের দিকে গাড়ি ছোটালেন। দেবের এই সেবার মনোভাব মুগ্ধ করে গুলনারকে। রহিমা বেগমকে নার্সিং হোমে ভর্তি করে ফেরার পথে গাড়িতে গুলনার জিজ্ঞেস করেন,তোমার ভাবী কি যেনি নাম তোমার দিকে হা কইরা কি দেখতেছিল?
— মুমতাজ বেগম। তুমি জিজ্ঞেস করতে পারতে কি দেখতেছে? কে কি ভাবে কে কি দেখে সেইটা কি আমাকে বলতে হবে?
— আহা এতে রাগনের কি আছে?
— আমি রাগ করি নাই। মণ্টি রাগ না করলে একটা কথা বলি,তোমার এত ঐশ্বর্য আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে দেখেছো কখনো? তবু অন্যের সামান্য পুজির উপর ঈর্ষা করো কেন?
গুলনার রাগ করেন না,দেবের হাত বুকে চেপে ধরে বলেন,ঐশ্বর্য আছে তাই খালি চুরি যাওনের ভয়। নাইলে কিসের ডর?
বাড়ি ফিরতে একটু রাত হল। ড.রিয়াজ তখনো ফেরেন নি। নাদিয়া বেগম মেয়েকে একান্তে জিজ্ঞেস করেন,কি হইছিল রে মণ্টি,জামাই ক্ষেপছিল ক্যান?
— কে বলল ক্ষেপছিল?
— ডাক্তার ফোন কইরা সব বলছে।
— আমি জানি না কখন ক্যান ক্ষেপছিল?
— বাড়িটা পাগলে ভইরা গেল। আগে ছিল এক পাগল ডাক্তার আর অখন জুটছে তার পাগল জামাই।
দেব ক্ষেপেছিল বিশ্বাস করতে পারে না। এত নরম মানুষ,আব্বু মনে হয় মস্করা করে থাকবে। আগে যেখানে থাকতো সেখানে সবাই দেবকে ভালবাসে। শুধু ভালোবাসা নয় বিশ্বাস করে। এ বাড়ীর সবাই এমন কি কাজের লোক পর্যন্ত দেবকে খুব পছন্দ। অবাক লাগে সে কেন এত ক্ষেপে উঠেছিল এমন মানুষটার উপর।
[+] 5 users Like kumdev's post
Like Reply
হেঁ হেঁ, খাওয়া নিয়ে মশকরা করা ঠিক না, সুযোগ পেলেই পেটপুজো করা আমাদের বাঙালিদের বৈশিষ্ট।
[+] 1 user Likes Mr Fantastic's post
Like Reply
।।৬৭।।



      খাওয়া দাওয়ার পর বিছানায় আধশোয়া হয়ে শুয়ে আছেন গুলনার এহসান। দুপুরে ঘুমানোর অভ্যাস নেই। দেবের ক্লাস রুটিনের একটা নকল চেয়ে নিয়েছেন। চোখ বুলিয়ে দেখেন আজ চারটে-পয়তাল্লিশে শেষ ক্লাস। পাঁচটার একটু আগে পৌছালে হবে। সকলে বলে দেবের খাওয়ার ব্যাপারে কোন বাছবিচার নেই। কাল রাতে ভাল মতন টের পেয়েছেন গুলনার। পেটে বাচ্চা আছে তাই পেটের উপর চড়েনি কিন্তু পাগলের মত শরীরটাকে নিয়ে কি না করেছে। খুব ঘনিষ্ঠ বন্ধুকেও বলা যায় না।অথচ প্রায় তিন বছরের উপর হবে এক ফ্লাটে থেকেছে পাশের ঘরে বিয়ে করা বউ একবার উকি দিয়েও দেখেনি।এক একসময় তারই মনে হতো দেব কেন নিষেধ অমান্য করে তার উপর জোর করছে না।দেব তার কাছে বিস্ময়। নুসরত অফিস থেকে ফিরে কত গল্প করতো দেবকে নিয়ে,গুলনারের মনে হয়েছিল দেব সম্পর্কে নুসরতের একটা দুর্বলতা আছে। পরে তার ভুল ভাঙ্গে। মেয়েটি ভদ্র কি ব্যাপারে বাবার সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায় বাড়ি ছেড়ে চাকরি করতে এসেছিল। এখন কোথায় আছে কে জানে?মাথার উপর পাখা ঘুরছে ক্লান্তিহীন। বাড়িতে এখন মা ছাড়া কেউ নেই। মামুন হাসপাতালে যায় নাই,ট্যাক্সি নিয়ে বন্ধুদের সংগে আড্ডা দিতে গেছে। কাল চলে যাবে ভেবে মনটা খারাপ লাগে। মা খালি ওর জামা কাপড় গুছায়। গুছানোটা অজুহাত,আসলে মামুনের জামা কাপড় ঘাটতে ভাল লাগে। আব্বু চাপা মানুষ বাইরে থেকে তাকে বোঝা যায় না। সবসময় মুখে নির্বিকার ভাব আটা। মামুন একমাত্র বংশধর। তার প্রতি আব্বুর টান থাকা স্বাভাবিক। গুলনার কি চিরকাল বাপের বাড়িতে থেকে যাবেন? এই ব্যাপারে দেবকে দোষ দেওয়া যায়না। গুলনার জানেন ওকে বললেই বলবে সেইটা ঠিক কথা। চলো আমরা অন্য কোথাও যাই। নিরাপত্তা নিয়ে মাথা ব্যথা নেই সব অবস্থার সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারে। নীচে গাড়ির শব্দ পাওয়া গেল,সম্ভবত মুস্তাক ফিরে এসেছে। কলেজে পুচকে পুচকে মেয়েগুলোর আলোচ্য হয়ে উঠেছে দেব। পছন্দ না হলেও গুলনার বোঝেন কারণটা কি? দেব এমনভাবে কথা বলে কথা বলার স্টাইলটাই হৃদয়কে স্পর্শ করে। বয়স ইত্যাদির ব্যবধান লজ্জা সংকোচের পর্দা খসে যায়। নিজেও বুঝেছেন মর্মে মর্মে। একটা অচেনা অজানা মানুষ তাই সহজে আম্মুর এত কাছের হয়ে যেতে পারল। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখেন সাড়ে তিনটে বাজে। এবার তৈরী হওয়া যাক। বিছানা ঘেষটে নামতে গিয়ে পাছায় জ্বালা অনুভব করেন। উঃ রাক্ষসটা এমন কামড়েছে দাত বসিয়ে দিয়েছে।
সালোয়ার কামিজ পরবেন আজ। চুল আচড়ে পিছনে একটা বাঁধন দিলেন। বেশি সাজগোজ তার পছন্দ না। বার কয়েক পেটের উপর হাত বুলিয়ে আয়নার দিকে দেখলেন। দেবের আম্মু বলছিলেন,পরীর মত দেখতে। অবশ্য তার রুপ নিয়ে দেবের কোন মাথা ব্যথা আছে বলে মনে হয় না। সে চেনে কেবল মণ্টিকে। মণ্টির কাছেই তার সব রকমের প্রত্যাশা। মামুন সকাল সকাল আজ বাড়ি ফিরবে বলে গেছে।নার্সিং হোমে গেলেও তাড়াতাড়ি ফিরে আসবেন।
মায়ের ঘরে উকি দিয়ে দেখলেন,ঘুমোচ্ছে। করিমকে বলল,মাকে বলিস অপা কলেজে গেছে। সিড়ি দিয়ে নেমে দেখলেন,মুস্তাক গাড়ির মধ্যেই বসে আছে। তাকে দেখে দরজা খুলে দিল। বেশিক্ষন অপেক্ষা করতে হল না,মিনিট দশেকের মধ্যে নজরে পড়ল সাদা পায়জামা গেরুয়া পাঞ্জাবি কাধে কালো ঝোলা ব্যাগ। ব্যাগটা গুলনারের দেওয়া দেখে চিনতে পারেন।
— কাধে ব্যাগ কেন?
— অফ পিরিয়ডে সময় কাটেনা তাই বই রাখি।
— বই? কি বই?
— দর্শন না মনস্তত্বেরবই,বেশ ভাল লাগছে জানো। মনস্তাত্বিক জ্ঞান থাকলে কমুনিকেট করতে অনেক সুবিধে হয়।
তারপর হেসে বলে,জানো যারা পথে ঘাটে পকেট মারে চুরি করে তাদেরও বেশ মনস্তাত্বিক জ্ঞান আছে।
— তুমি চুরি করবা নাকি?
— তা বলতে পারো। তবে টাকা পয়সা না– ।
মণ্টি মুখ তুলে তাকায়, দেব নীচু হয়ে বলে,তোমার মন।
— শোনো চুরি করতে করতে লোভ বাড়ে অন্যমনের দিকে যদি হাত বাড়াও– ।
কথা শেষ করতে না দিয়ে দেব বলে,চুরি করে কোথায় রাখবো বলো? তোমার মন আমার হৃদয়জুড়ে আছে আর জায়গা থাকলে তো।
নার্সিং হোমে যখন পৌছালো ভিজিটিং আউয়ারস তখনো শুরু হয়নি। নীচে লোকজন অপেক্ষমান। ভীড়ের মধ্যে নুসরতকে দেখে অবাক হয় গুলনার। ও এখানে কেন? কেউ কি আছেন এখানে? তাকে দেখতে পেয়ে এগিয়ে আসে নুসরত,মণ্টিদি কেমন আছো?
বলদেব অন্য একজনকে দেখে মনে করার চেষ্টা করে ভদ্রলোককে কোথায় দেখেছে, চেনা চেনা মনে হচ্ছে। মনে পড়ে যায় জয়নাল দারোগা, যিনি সুপারিশ করে তাকে পাঠিয়েছিলেন।
— স্যর আপনি এখানে?
জয়নাল অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকেন। বলদেব বলে,আমি বলদেব। চিনতে পারছেন না?
জয়নাল ভুত দেখার মত চমকে উঠে বলেন,হ্যা হ্যা কেমন আছো? কি করো?
— আমি একটা কলেজে পড়াই।
জয়নাল মনে মনে ভাবেন তার ভুল হচ্ছে নাতো? আমতা আমতা করে বলেন, আপনাকে দারোগাবাড়িতে রিজানুর সাহেবের বাড়িতে পাঠিয়েছিলাম?
— হ্যা,আমি এখন এখানে থাকি।
— আট-ন বছর আগের কথা। অনেক বদলে গেছে। আপনি অধ্যাপনা করেন?
— জ্বি। বিবাহ করেছি। আগের চাকরি ছেড়ে দিয়েছি।
— মইদুল খবর দিল ভাবীজান এখানে ভর্তি হয়েছেন।রিজানুরের খবর জানতাম না।
এমন সময় নুসরত এল গুলনারকে নিয়ে,আব্বু মণ্টি-দি ড.রিয়াজের মেয়ে। আমার বন্ধুর মত। একসময় আমরা একসঙ্গে থাকতাম।
গুলনার এবং জয়নাল দারোগা আলাপ করে। দেবের পুরানো অনেক কথা বলেন জয়নাল। ইতিমধ্যে সময় হয়ে গেল,একে একে সবাই উপরে উঠতে লাগল। মুমুতাজ সায়েদও এসে পড়েছে। একেবারে শেষে দেব আর নুসরত উপরে উঠল।
নুসরত জিজ্ঞেস করে,দেব তুমি কেমন আছো? বেশ দেখতে লাগছে তোমাকে।
— প্রশ্ন এবং উত্তর দুটোই আপনি দিয়ে দিলেন। আমার বলার কিছু থাকলো না।
নুসরত হেসে বলে,তোমার সঙ্গে স্যরের দেখা হয়? উনি এখন ঢাকায় আছেন।
বলদেব এক মুহুর্ত ভেবে বলে,উদ্দেশ্য না থাকলে দেখা হয়না তা বলবো না কিন্তু কদাচিৎ। যেমন আজ তোমার স্যরি আপনার সঙ্গে আমার দেখা হওয়া বা আপনার বাবার দেখা হওয়া। আমার জীবনে আপনার বাবার গুরুত্বপুর্ণ একটা ভুমিকা আমি অস্বীকার করতে পারিনা।
জয়নাল দারোগা অত্যাচারী মারকুট্টে বলে শুনে এসেছে। আজ দেবের কাছে বাবার অন্য এক পরিচয় জেনে নিজেকে লজ্জিত বোধ করে নুসরত।
— তুমি এখন অধ্যাপক আমাকে ‘তুমি’ বলতে পারো।
— ধন্যবাদ। অবস্থান মানুষের সম্পর্ককে এভাবে বদলে দেয়।
— একটা কথা তুমি হয়তো জানো না,ম্যাডাম তোমাকে ভালবাসতেন।
— দেখ নুসরত আমার ইচ্ছে করছে কোথাও বসে তোমার সঙ্গে অনেক্ষন কথা বলি। কিন্তু– কিন্তু– ।
— চলো না ওদিকটায় লোকজন কম।
দুজনে নার্সিংহোমের শেষ প্রান্তে স্বল্প পরিসর একটা জায়গায় এসে বসলো। বলদেব শুরু করে, তুমি ভালবাসার কথা তুললে। এই শব্দটা নিয়ে আমার বেশ ধন্দ্ব আছে। প্রেম ভালবাসা অতি পবিত্র এবং চিরস্থায়ী একটা সম্পর্ক এরকম আমরা মনে করি। কিন্তু বাস্তবিকই কি তাই?
— তাই নয় বলছো?
— আমি কিছুই বলতে চাই না,আমি জানতে চাই। ধরো একটি মেয়ে একটি ছেলের প্রেমে পড়ল। তার মনে হল ছেলেটিকে ছাড়া বাঁচবে না। বাড়ির লোকজন তাকে বোঝালো,ছেলেটির আর্থিক অবস্থা শিক্ষা উপার্জন তেমন ভাল নয়। বিকল্প হিসেবে অন্য একটি ছেলেকে উপস্থিত করলো যার শিক্ষা আর্থিক অবস্থা আগের ছেলেটির তুলনায় অনেকগুণ উন্নত। মেয়েটির মনে ধীরে ধীরে সৃষ্টি হল বিরুপতা সে দ্বিতীয় ছেলেটিকে ভালবেসে ফেলল। প্রেমের স্থায়ীত্ব সম্পর্কে এর পর আস্থা রাখা যায় কি?
— দেব তুমি খুব নির্মম। হেসে বলে নুসরত জাহান।
— আবার ভুল করছো,কেউ নৃশংস ঘটনা ঘটালো আর যে সেই ঘটনার বিবরণ দিল তাকে বলবো নির্মমতা? মেয়েটি ছেলেটিকে প্রত্যাখ্যান করলো তার দোষ নেই একে বলে ভাবের ঘোরে চুরি করা। এবার আসি জেনিফার ম্যাডামের কথায়। আগের কথা জানিনা কিন্তু যখন থেকে তার সঙ্গে আমার পরিচয় তাতে আমার মনে হয়েছে,উনি যে কারণেই হোক পুরুষ বিদ্বেষী। তুমি দেখোনি পুরুষ আসামীদের কি প্রচণ্ড অত্যাচার করতেন। জুতো পায়ে পুরুষাঙ্গ পিষ্ঠ করে আমোদ পেতেন। উনি ছিলেন ডোমিনেটিং টাইপ যার ফলে কখনো ক্ষিপ্ত হয়ে আত্ম নিগ্রহও করতেন। এসবের পিছনে কারণ হতাশার জ্বালা।
নুসরতের চোখে মুগ্ধতা।কত জটিল বিষয় কত সহজ করে বলে যাচ্ছে দেব।নিজের মত জোর করে চাপিয়ে দেওয়া নয় কেবল বিষয়টাকে ছবির মত উপস্থিত করা।এবার তোমার বিবেচনা।   
গুলনারের খেয়াল হয় দেবকে দেখছেন না,কোথায় গেল? রহিমা বেগমের ঘর থেকে বেরিয়ে এদিক-ওদিক দেখেন।একটু অন্যমনস্ক হয়েছো কি উধাও।স্থির হয়ে এক জায়গায় থাকতে পারেনা।
[+] 6 users Like kumdev's post
Like Reply
(10-07-2020, 02:03 PM)Mr Fantastic Wrote: রুদ্ধশ্বাস পরিস্থিতি, চাপা উৎকন্ঠা !

সব উৎকণ্ঠার অবসান হতে চলেছে।অনেক ধন্যবাদ ধৈর্য ধরে লেখাটা পড়েছেন।
[+] 2 users Like kumdev's post
Like Reply
(10-07-2020, 02:03 PM)Mr Fantastic Wrote: রুদ্ধশ্বাস পরিস্থিতি, চাপা উৎকন্ঠা !

উৎকণ্ঠার অবসান হতে চলেছে।অনেক ধন্যবাদ ধৈর্যধরে লেখাটা পড়ার জন্য। Namaskar
[+] 2 users Like kumdev's post
Like Reply
আপনার গল্প আর আমরা ধৈর্য ধরে পড়বো না তাই আবার হয় নাকি? গোগ্রাসে গিলি আমরা। পুরোনো চরিত্ররা একে একে ফিরে আসছে, ভালো লাগছে দেখে। ফারীহার সঙ্গেও দেখা হবে কি? আর সেই প্রথম মহিলাটি যিনি দেবকে সারোগেট ফাদার হিসেবে ব্যবহার করেছিলেন?
[+] 2 users Like Mr Fantastic's post
Like Reply
yourock yourock clps clps clps khub bhalo
[+] 2 users Like Nickname123's post
Like Reply
"অবস্থান সম্পর্ক বদলে দেয়।"

রেপু দিলাম ।
[+] 1 user Likes buddy12's post
Like Reply
 
।।৬৮।।


   গুলনার নীচে নেমে এসে মুস্তাককে জিজ্ঞেস করেন,সাহেব এসেছিলেন? মুস্তাক কিছু বলতে পারে না। গুলনার আবার উপরে উঠে এলেন। কোথায় গেল লোকটা? সব সময় তক্কে তক্কে রাখা যায়? সঙ্গেই তো ছিল। ভাবখানা মা তার ছেলে হারিয়েছেন। ওর জন্য রহিমা বেগমকে দেখতে আসা আর বাবু উধাও? কোথায় যেতে পারে? একজন জুনিয়ার ডাক্তার দেখা হতে জিজ্ঞেস করেন,ম্যম আপনি কি স্যরকে খুজছেন?
স্যর মানে আব্বুর কথা বলছেন,গুলনার বলেন,না কাউকে খুজছি না।
আরে ঐদিকে মনে হচ্ছে নুসরত কার সঙ্গে কথা বলছে। একটু এগিয়ে বুঝতে পারলেন কাধ থেকে ঝুলছে কালো ঝোলা ব্যাগ। ছিঃ শেষ পর্যন্ত নুসরতের সঙ্গে? তার আগেই সতর্ক হওয়া উচিত ছিল। নুসরত জানে দেব বিবাহিত, নিজেকে বাবার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে বলেছিল ‘আমরা বন্ধু’ এই কি বন্ধুত্বের নমুনা? কি এত গভীর আলোচনা
হচ্ছে যে তার উপস্থিতি টের পাচ্ছে না? গুলনার একটা দেওয়ালের আড়ালে দাঁড়িয়ে পড়ে। সেখান থেকে দেখা না গেলেও স্পষ্টশোনা যাচ্ছে প্রেমালাপ।
— তুমি জিজ্ঞেস করছো তোমাকে কেমন লাগতো? দেব বলে।
উঃ এতদুর? গুলনার ভাবেন।
– আমি যদি বলি তোমার প্রতি আমি ছিলাম নিস্পৃহ তাহলে হবে সত্যের অপলাপ। তোমার কথা শুনতে আমার ভাল লাগতো। অপেক্ষা করতাম তুমি কখন আমাকে ডেকে বলবে ‘ দেব এই ফাইলটা দিয়ে এসো…আমার জন্য টিফিন নিয়ে এসো। ‘ তোমার কাজ করতে আমার ভাল লাগতো।
সত্যবাদী যুধিষ্ঠির,আমি বিয়ে না করলে চিরকাল তোমাকে ফাইল বইতে হতো। গুলনার ভাবেন।
— আমারও ইচ্ছে করতো তোমার কথা শুনতে। নুসরত বলে।
— কিন্তু সে ইচ্ছে প্রসারিত হয়নি মানে আমার চাকরি শিক্ষাগত যোগ্যতা ইচ্ছেকে প্রসারিত হতে দেয়নি। একই কারণে আমিও ইচ্ছেকে অবদমিত করেছি। মিষ্টির দোকানে সাজানো মিষ্টি দেখে লালাক্ষরণ হলেও যখন বুঝতেপারি পকেটে পয়সা নেই আমরা ইচ্ছেকে প্রশ্রয় দিইনা।
— তুমি বলছো ঐ ঘটনা ঘটেছিল বলে মণ্টিদি তোমাকে গ্রহণ করতে বাধ্য হয়েছিল?
বলদেব নিজের মনে হাসল,তারপর আবার শুরু করে,ঐ ঘটনার জন্য জেনিফার আলম অমন প্রস্তাব দিতে সাহসী হয়েছিলেন,আর জেনিফার যদি উদ্যোগী না হতো আমি স্বপ্নেও মণ্টিকে বিবাহের কথা ভাবতাম না। হয়তো অন্য কোন মেয়েকে বিয়ে করতাম বা অবিবাহিত জীবন কেটে যেত। কিন্তু আমি মনে করিনা মণ্টি বাধ্য হয়ে বিবাহ করেছে। ওর অসম্ভব মনের জোর তাছাড়া পিছনে ছিল সামাজিক আর্থিক সাপোর্ট।
গুলনার সজাগ তার প্রসঙ্গে কি বলে দেব?
— নুসরত তুমি কিছু মনে কোরনা একটা কথা বলি। তুমি চেয়েছিলে একটি ফিনিশ পুতুল রঙ চং করা চোখ মুখ আঁকা সুন্দর একটি পুতুল কিন্তু মণ্টির অসম্ভব আত্ম প্রত্যয়ের কথা তোমায় বলেছি। নিজের বউ বলে বলছি না ওকে যতটা জেনেছি,ও একতাল মাটি নিয়ে নিজের মত করে নিজ হাতে গড়ে নিয়েছে পুতুল। মণ্টিকে বাদ দিয়ে আমার অস্তিত্ব কল্পনাও করতে পারিনা। ও আমার অক্সিজেন এক মুহূর্ত ওকে ছাড়া আমি বাঁচতে পারবো না।
— মণ্টীদিকে না পেলে তুমি আত্মহত্যা করতে?
— তোমার কথার শ্লেষ আমি গায়ে মাখছিনা।
গুলনারের চোখ ঝাপসা হয়ে আসে। এতো স্তুতি নয়,অকপট স্বীকারোক্তি।
— মানুষ মরণ শীল। ইচ্ছে অনিচ্ছে নিরপেক্ষ,প্রতিদিন আমরা তিল তিল করে এগিয়ে চলেছি অসহায় সেই মৃত্যুর দিকে। কিন্তু ঝড়ের হাত থেকে প্রদীপ শিখার মত চেষ্টা করা উচিত যাতে নিভে না যায়। প্রদীপ শিখা কি জানো? আমাদের মনুষ্যত্ব।শারীরি মৃত্যু না হলেও মনুষ্যত্বের মৃত্যু হতো। একবার পা পিছলে যেতে যেতে বেঁচে গেছি কে আমাকে রক্ষা করেছিল জানো?
— কে মণ্টি?
— না ডাক্তার রিয়াজ আমার শ্বশুর। মণ্টিও তাকে চিনতে পারেনি। তোমরা ড.রিয়াজকে একজন বড় চিকিৎসক হিসেবে জানো আমার কাছে আব্বু একজন বড় মানুষ।
আর আড়ালে থাকা সম্ভব হয় না,চোখে জল মুছে গুলনার যেন হঠাৎ ওদের আবিষ্কার করেন,একী আপনি এখানে? ওদিকে আপনার আম্মু আপনার জন্য হেদিয়ে মরছেন।
বলদেব ভ্রু কুচকে এগিয়ে এসে বলে, একী তোমার চোখে কি হল,এত লাল কেন?
— থাক আর ঢং করতে হবে না। ভেবেছেন এইসব বলে পার পাবেন? আর কবে বুদ্ধি হবে আপনার? সারারাত আপনার জন্য নার্সিং হোম খোলা থাকবে?
আচমকা মণ্টিকে জড়িয়ে ধরে বলদেব বলল,একে বলতো?
নুসরত লজ্জা পায় বলে,কে আবার তোমার বিবি।
--আমার ফ্রেণ্ড ফিলজপফার আবার গাইড।
--কি হচ্ছে কি ছাড়ুন লজ্জা সরম বলে কিছু থাকল না।গুলনার নিজেকে ছাড়িয়ে নিলেন।
দেবকে নিয়ে রহিমা বেগমের কেবিনে নিয়ে আসেন গুলনার।নুসরত অন্যত্র চলে গেল।
দেব ঢুকতে মুমুতাজ বলে,ঐতো বলা মিঞা আসছে।
রহিমা বেগম তাকিয়ে হাসলেন। এতক্ষন কইছিলা বাজান?
— বাইরে,ভিতরে এত ভীড়– ।
— জয়নাল তুমারে চিনতে পারে নাই অথচ ঐ তুমারে পাঠাইছিল। নুসরতরে তো তুমি চিনতা– ।
— চিনতাম,জানতাম না উনি স্যরের মেয়ে।
— আমার সায়েদের লগে কেমুন লাগবো?
সায়েদ বাঁধা দিল,আম্মু ডাক্তার তোমারে কথা কইতে নিষেধ করল তুমি মানবা না?
— এতদিন চুপ কইরা ছিলাম বইলাই সেনা কাণ্ডটা ঘটলো।
সায়েদ ঘর থেকে বেরিয়ে গেল,করো তুমি বক বক।
মুমতাজ মিটমিট করে হাসছিল। বলদেব জিজ্ঞেস করে,কি ভাবীজান আম্মু কি কয় আমারে তো বলেন নাই?
— তুমি তো তবসুমরে দেখছো। ভারী দেমাগ ছিল, ছ্যাকা দিয়া পলাইছে।
বলদেব চুপ করে থাকে,আবার সেই প্রেম। অরূপকে ছেড়ে রূপের প্রতি মোহ? নুসরত কিছু বলেনি তাকে,সে কি জানে না?
এ্যাণ্টিবাইওটিক দিয়ে এখন ভাল আছেন রহিমা বেগম। দিন চারেক পর ছেড়ে দেওয়া হবে। আব্বু বলেছেন ইসিজি রিপোর্ট ভুল ছিল। কাল আসা সম্ভব না,মামুনকে এগিয়ে দিতে বিমান বন্দরে যেতে হবে। মণ্টির খুব প্রিয় মামুন। সেও অপাকে খুব ভালবাসে।
গাড়িতে বসে বলদেব ভাবে যাক ভালয় ভালয় সব মিটলো।পুরান দিনগুলোর কথা মনে পড়ে।আম্মু বলেছিল বলারে পেটে ধরেনি কিন্তু বুকে জায়গা দিয়েছে।বিধাতা কোন ধাতুতে মেয়েদের গড়েছে ভেবে দিশাহারা বোধ করে। 
গুলনার জিজ্ঞেস করেন কি ভাবতেছেন?
--কিছু না। দেব হেসে বলল।
--আমারে কওয়া যায়না।
--জানো মণ্টি জাত ধর্ম উচ্চ নিম্ন বিত্ত নির্বিশেষে প্রত্যেক মেয়েদের মধ্যে একটা কুঠুরি থাকে,যেটা ছেলেদের থাকে না।
--সেটা আবার কি?
--সেখানে চাপা থাকে অন্য একটা সত্ত্বা যাকে বলা যায় মাতৃসত্ত্বা।না হলে জানা নাই চেনা নাই রক্তের কোনো সম্পর্ক নেই আগে কখনো দেখেনি একটা চিঠি নিয়ে হাজির হয়েছিলাম।শুধু মা বলে ডেকেছি।সেদিন থেকে আম্মু আমাকে নিজের ছেলেদের থেকে আলাদাভাবে দেখেনি। 
গুলনার অবাক হয়ে দেবকে দেখে।মেয়েদের মধ্যে এই সত্ত্বা যাদের চোখে পড়েনা তারা বিধাতার করুণার পাত্র। দেব কথা শেষ করে মাথাটা মণ্টির কোলে এলিয়ে দিল।গুলনার সামনে মুস্তাকের দিকে তাকিয়ে মাথাটা ঠেলে তুলে দিয়ে নীচু গলায় বললেন,কি হচ্ছে কি উঠেন আমি আপনার বিবি,আম্মু না।
গুলনার অন্যদিকে তাকিয়ে মুখ টিপে হাসেন।
এহসান মঞ্জিলে যখন গাড়ী থামল তখন সন্ধ্যে নেমেছে।  
খাবার টেবিলে গল্প হল অনেক রাত অবধি। আম্মু মাঝে মাঝে কেদে ফেলছিলেন। ড.রিয়াজ চুপচাপ একেবারে নির্বিকার।
— ভাগ্যিস বিয়ার আগে আমি বিদেশ গেছিলাম। বিবিকে উদ্দেশ্য করে বলেন ড.রিয়াজ।
— আমি আপনের কাছে কিছু শুনতে চাইনি। নাদিয়া বেগম বিরক্তির সঙ্গে বলেন।
মণ্টি আর মামুন চোখাচুখি করে হাসি বিনিময় করে। করিম কি বুঝলো কে জানে ফিক করে হেসে ফেলে। নাদিয়া বেগম ধমক দেয়,বলদের মত হাসিস ক্যান রে? দূর হ আমার চোখের সামনে থিকা।
করিমএ বেরিয়ে গেল। গুলনার দেবকে দেখেন,বলদ শুনে তার কোন ভাবান্তর হয় কিনা? কেননা মাঝে মধ্যে তিনিও দেবকে বলেন,বলদ। নাদিয়া বেগম পর মুহুর্ত্তে করিমকে ডাকেন, অ্যাই করিম কই গেলি?
— তুমি তারে বাইরে যাইতে কইচো। ড.রিয়াজ বলেন।
করিম ঢুকতে বলেন,চোখে দেখিস না,বলারে ভাত দে।
— আম্মু অরে আর ভাত দিবেন না। গুলনার বলেন।
ড রিয়াজ বললেন,মণ্টি মা তুমি আম্মুরে নিয়া সকাল সকাল যাইও।আ্মারে চেম্বার হইয়া যাইতে হবে।
আব্বুর মুখে মা-ডাক খচ করে মনে বাজে।আগেও অনেকবার শুনেছেন কিন্তু দেবের মুখে কথাগুলো শোনার পর বিষয়টা খেয়াল হল।নারীর মধ্যে মাতৃসত্ত্বা।আড়চোখে দেবকে দেখেন নিশ্চিন্তে খেয়ে চলেছে।আশপাশে কে আছে না  আছে সেদিকে হুশ নেই।  
[+] 5 users Like kumdev's post
Like Reply
clps clps clps clps clps
[+] 1 user Likes Nickname123's post
Like Reply




Users browsing this thread: 9 Guest(s)