Thread Rating:
  • 28 Vote(s) - 3.39 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Romance নষ্ট গলির মেয়ে (পতিতা) যখন বউ (সম্পূর্ণ)
#21
পর্ব-১৬
-----------------------------------



গাড়িতে উঠে বসেছে সোহান৷ ফোনটা এখন আবার বাজছে। আলিশা আবার ফোন করছে। এবার প্রচন্ড রকমে ক্ষেপে গেলো সোহান। কোনো মানে আছে এসব ছ্যাচড়ামির? ফোনটা কেটেই সাথে সাথে রুপমকে কল করলো সোহান। রিং হচ্ছে কিন্তু রিসিভ করছে না। রিং হতে হতে কেটেই গেলো কলটা। কলটা কাটতে না কাটতেই আলিশার কল এসে পড়েছে। এবারের কলটা রিসিভ করলো সোহান।
- সমস্যা কি তোমার?
- মায়া।
- মায়া কি তোমাকে কামড়েছে?
- এরচেয়ে বড় কিছু করেছে। তুমি আমাকে এত ভালোবাসতে। আজ ওকে পেয়ে আমাকে ভুলে গেলে?
- তোমাকে ভুলেছি আরও অনেক আগেই।
- জানি। তবু কেনো জানিনা তুমি মায়ার সাথে আছো মনে হলেই প্রচন্ড রকমে কষ্ট পেতে থাকি। অসহনীয় কষ্ট।
- তোমার কষ্ট হয়? ভুল বললে আলিশা। তোমার হিংসে হয়। এত হিংসে কোথায় পাও তুমি? নিজে তো বিয়ে শাদী করে দিব্যি সংসার জুড়িয়ে বসেছো। আমি করলে দোষ কোথায়?
- বাবার জোড়াজুড়িতে সংসার জুড়িয়েছি।
- বাচ্চাটা কি তাহলে বাবার জোড়াজোড়িতেই হয়েছে? বাবার জোড়াজোড়িতেই কি রুপমের সাথে ফিজিক্যালি এটাচড হয়েছো? রুপমের সাথে এক বিছানায় শুয়ে কি করবে না করবে সেগুলো নিশ্চয়ই তোমার বাপ তোমাকে শিখিয়ে দেয়নি। যা করেছো সম্পূর্ন নিজের ইচ্ছায় করেছো।
- আমি কিন্তু তোমাকেই বিয়ে করতে চেয়েছিলাম।
- ভালোই বলেছো। তোমার বাপ আমার নামে মামলা দিবে আর আমি তোমাকে বিয়ে করে ঘরে তুলবো তাই না? আমার রাগ হ্যান্ডেল করার এ্যাবিলিটি তোমার নেই। তোমাকে বিয়ে করলে আমাদের সংসার কখনোই টিকতো না।
- কাকে কি বলছো? তোমার কম গালি আমি হজম করি নি সোহান।
- গালি দেয়ার টাইমে চুপ থাকলেও পরে গিয়ে আমার উপর ঠিকই বিষ ঝেড়েছো।
- কেনো তোমার মায়া বুঝি বিষ ঝাড়ে না?
- কখনোই না। আমি যত যাই বলি না কেনো আমার বউ সব চুপচাপ হজম করে। আর আমি সব দেখেশুনেই বিয়ে করেছি। ও তোমার মতো ছ্যাচড়া না। যথেষ্ট ভদ্র। এজন্যই ওকে বিয়ে করেছি আমি।
- হোয়াট ডু ইউ মিন বাই ছ্যাচড়া?
- ছ্যাচড়া মিনস ছ্যাচড়া। তুমি চূড়ান্ত পর্যায়ের ছ্যাচড়ায় পরিনত হচ্ছো দিন দিন। আমি এখন বিবাহিত। তোমার লজ্জা করে না এভাবে আমাকে ডিস্টার্ব করতে?
- মোটেই না। কেনো লজ্জা করবে? তোমার উপর প্রথম অধিকার আমার। এরপর এসব মায়া টায়ার অধিকার।
আলিশাকে কষে দুগালে চড় মারতে ইচ্ছে হচ্ছে ওর৷ সেইসাথে রুপমের জন্য প্রচন্ড মায়াও হচ্ছে। ছেলেটা কত ভালো। আর আলিশা? উফফফ! আর ভাবতে পারছে না সোহান। রাগে দাঁত কিড়মিড়াচ্ছে আর আলিশাকে ইচ্ছেমতো গালি দিচ্ছে। গালি শুনেও আলিশার মাথাব্যাথা নেই। প্রতিটা গালির প্রত্যুত্তরে সোহানকে আই লাভ ইউ বলেই চলছে। ফোনটা কেটে দিয়েছে সোহান। রুপমকে ফের ফোন করেছে ও। এবার ফোনটা রিসিভ করেছে রুপম। রিসিভ হতে না হতেই সোহান একগাদা গালি শুনিয়ে দিলো রুপমকে। হুট করেই এতগুলো গালি স্তম্ভিত ফিরে পেতে কয়েক সেকেন্ড সময় লাগলো রুপমের।
- কি আশ্চর্য! এভাবে গালাগাল করছো কেনো সোহান?
- তোরে আরো গালি দেয়া উচিত ছিলো।
- আবার তুই তুকারিও করছো? হয়েছেটা কি?
- তোর বউ আমার কলিজা জ্বালায়া ফালাইতাসে।
- কি করেছে?
- গতকাল রাত থেকে লাগাতার ফোন মেসেজ দিয়েই যাচ্ছে। বউয়ের সাথে থাকোস তুই। তবু তোর বউ আরেক বেটারে জ্বালায় কেমনে? তুই ব্যাটা নাকে তেল দিয়া ঘুমাস আর তোর বউ আমারে জ্বালায়। আমার বউ এসব দেখলে আমার সংসারে আগুন জ্বলবে। তোর বউরে আমি বকা দেই সে আমাকে লাভ ইউ বলে। কি করোছ তুই সারাদিন? বউরে সময় দিতে পারোস না? তুই সময় দিলেই তো তোর বউ আমার পিছে লাগে না।
- আলিশা আবার শুরু করেছে এসব?
- হ্যা করছে। স্ক্রিনশট দিবো তোরে?
- আই এ্যাম এক্সট্রিমলি সরি সোহান।
- রাখ তোর সরি। আমার সংসারে যদি এসব নিয়া কোনো দ্বন্দ হয় তাহলে কিন্তু তোর সংসারেও আগুন জ্ালাবো।
- সোহান তোমার ওয়াইফ কি এটা নিয়ে রাগ করেছে? আমি কি ভাবিকে বুঝিয়ে বলবো ব্যাপারটা?
- মায়া এখনও এসব দেখেনি। তোর বউ যা শুরু করছে এসব বন্ধ না হলে আজকেই সব দেখে ফেলবে। ও এসব দেখলে নিশ্চয়ই আমাকে লাভ ইউ জানু লাভ ইউ বেবি বলে ঘুরে বেড়াবে না।
- সোহান তুমি ঠান্ডা হও। আমি আলিশাকে দেখছি।
- মানসিক রোগের ডাক্তার দেখা তোর বউকে। শালী পাগল হয়ে গেছে হিংসায়।
- হ্যা দেখাবো। তবু তুমি প্লিজ ঠান্ডা হও।
ফোনটা কেটে দিলো সোহান। এতক্ষনে নিজেকে কিছুটা হালকা লাগছে ওর।

কিচেনে আনমনে কাজ করছে মায়া। সোহানের কথামতো রান্না করেছে দুপুরে। খাবার সেড়েই সালমান বেরিয়ে গেছে শিমুর সাথে দেখা করতে। সবজি পাকোড়া ভিষন পছন্দ সোহানের। অফিস থেকে ফিরে আসলে নাস্তা খেতে দিবে সোহানকে। আলিশার কথা ভাবতে ভাবতে তেলের মধ্যে পাকোড়া দিতে গিয়ে হাতের আঙুলগুলো ডুবিয়ে দিলো তেলে। হালকা চিৎকার করলো মায়া। ডাইনিং টেবিল মুছছিলো রতন। মায়ার গলার আওয়াজ পেয়ে কিচেনে এসেছে সে। এসে দেখে মায়া হাত ঝাড়ছে। সিংকের ট্যাপ ছেড়ে বললো
- ভাবী ফোস্কা পড়ছে। শিগগির হাত কলের নিচে দেন।
কলিংবেলের আওয়াজ শুনে রতন দৌড়ে গেট খুললো। অন্যান্য সময় মায়া গেট খুলে দেয়। আজ রতনকে দেখে একটু অবাক হলো সোহান। ঘরে ঢুকতে ঢুকতে জিগ্গেস করলো
- মায়া কোথায়?
- ভাবী হাত পুইড়া ফালাইসে। রান্নাঘরে কলের নিচে হাত দিয়া দাড়ায়া আছে।
রতনের কথা শুনে সোজা রান্নাঘরে চলে গেলো সোহান। রান্নাঘরের দরজায় দাড়িয়ে মায়াকে বললো
- কি ম্যাম? হাত পুড়ে ফেললেন?
- হ্যা। আপনি ফ্রেশ হয়ে আসুন। আমি নাস্তা দিচ্ছি।
- নাস্তা পরে হবে। তুমি এসো আমার সাথে। মেডিসিন লাগাতে হবে।
- লাগাবো। আপনি ফ্রেশ হয়ে আসুন। আমি আসছি।
সোহান আর কথা না বাড়িয়ে মায়ার হাত টানতে টানতে রুমে নিয়ে আসলো। সোহান মায়ার আঙ্গুলে অয়েনমেন্ট লাগাচ্ছে সেই সাথে আঁড় চোখে ওকে দেখছে। মুখটা বেশ মলিন হয়ে আছে ওর। বুঝাই যাচ্ছে মনটা বিশাল রকমে খারাপ। মেডিসিন লাগিয়ে বিছানা ছেড়ে উঠতে উঠতে বললো
- এখানেই চুপ করে বসে থাকো। এক পাও নড়বে না। কথা আছে তোমার সাথে। আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি। এই রতন, আমার রুমে নাস্তা দিয়ে যাও তো।
কথাগুলো বলেই ট্রাউজার আর টাওয়েল হাতে ওয়াশরুমে গেলো সোহান। জানালার কাছে এসে দাঁড়ালো মায়া। গলির সামনে রিকশা আর গাড়িতে মিলিয়ে বেশ ভালোই জটলা পেকেছে। বেশ হাউকাউ হচ্ছে। রিকশা ড্রাইভার বকছে কার ড্রাইভারকে আর কার ড্রাইভার বকছে রিকশাওয়ালাকে। কেউ কারো দোষ স্বীকার করতে রাজি না। অনেকটা সময় ঝগড়া চলার পর এলাকার লোকজন এসে তাদের থামিয়েছে। পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক। রিকশাগুলো টুংটাং শব্দ করতে করতে যার যার গন্তব্যস্থলে যাচ্ছে। হুট করেই ঘরের লাইট অফ হয়ে গেলো। সোহান লাইট অফ করেছে। ঘাড় ঘুরিয়ে তাকাতেই মায়া দেখলো সোহান ওর একদম কাছাকাছি চলে এসেছে।
- লাইট অফ করলেন যে? আাসেন নাস্তাটা সেড়ে নিন।
সেখান সড়ে আসতে চাইলো মায়া। বাঁধ সাধলো সোহান। দুহাতে জানালার গ্রিল ধরে রেখেছে সে। এর মাঝখানে মায়া বন্দী হয়ে আছে। জানালার গ্রিলে পিঠ সেটিয়ে দাঁড়িয়ে আছে মায়া। মায়ার মুখের দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে ওর ঠোঁটে চুমু খেলো সোহান। এক হাতে মায়ার কোমড় জড়িয়ে ধরে অন্যহাতে মায়ার চুলের খোপা খুলে দিতে দিতে বললো
- কি হয়েছে?
- কিছু না তো?
- সত্যিই কিছু হয়নি?
ফোন বেজে উঠলো সোহানের। মায়া বললো
- আপনার ফোন এসেছে।
- আসুক।
- আলিশা ফোন করেছে বোধহয়। যান গিয়ে রিসিভ করুন।
মায়ার কোমড় আরে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললো
- ঘটনা তাহলে এখানে?
- কিসের ঘটনা?
- কলিজা পোঁড়ার ঘটনা।
- কিসের কথা বলছেন?
- কলিজা পোঁড়ার স্মেল এত্ত সুন্দর হয় আগে জানা ছিলো না। এর আগেও কলিজা পোড়াঁর স্মেল পেয়েছি। কিন্তু তেমন ভালো লাগেনি। আজ ভীষন রকমে ভালো লাগছে। কেনো জানো? সেই পোঁড়া গন্ধের মাঝে ভালোবাসার ঘ্রান খুঁজে পাচ্ছি। কেউ একজন খুব করে ভালেবাসতে শুরু করেছে আমাকে। তার ভালোবাসার ঘ্রানটা নাক দিয়ে ঢুকে ঠিক বুকের বা পাশটাতে যেয়ে প্রচন্ড রকমে আঘাত করছে। ব্যাথা করছে খুব। ব্যাথাটা খুব তৃপ্তির। মনে হচ্ছে বহুদিনের চাওয়াটা বুঝি পূরন হয়েছে। আচ্ছা সেই কেও একজনটা কি তুমি?
চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে মায়া। মায়ার চুলে হাত বুলাতে বুলাতে সোহান বললো
- মুখ ফুটে বলতে চাচ্ছো না? নো প্রবলেম। বলতে হবে না। আমি অনুভব করে নিবো।



চলবে.....
বিদ্যুৎ রায় চটি গল্প কালেকশন লিমিটেড 
http://biddutroy.family.blog
[+] 1 user Likes Biddut Roy's post
Like Reply
Do not mention / post any under age /rape content. If found Please use REPORT button.
#22
পর্ব-১৭
-----------------------------------



মায়া এখনও মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। লজ্জা পাচ্ছে মায়া। সত্যিটা ধরা পড়ে যাওয়ার লজ্জা। ইশ! কি ধরাটাই না খেলো! আচ্ছা সোহান কি ওর ভালেবাসাটাকে স্বাভাবিকভাবে গ্রহন করবে? নাকি নষ্ট গলির মেয়ে বলে ভালোবাসাটা গ্রহন করবে না? সোহানকে কি সরাসরি এ ব্যাপারে জিগ্গেস করবে? সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না মায়া। এভাবে আর সোহানের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে পারছে না। লজ্জা এবং দ্বিধা মিলিয়ে বড্ড অস্থির হয়ে যাচ্ছে সে। কিছুক্ষন সোহানের কাছ থেকে দূরে থাকাটা অতি আবশ্যক মনে হচ্ছে মায়ার।
- চুলোয় ভাত বসিয়ে আসছি।
- কাজের লোক আছে ঘরে।
- আমার কিছু হোমওয়ার্ক বাকি রয়ে গেছে। ওগুলো কমপ্লিট করে আসি।
- তুমি কি এখান থেকে পালাতে চাচ্ছো?
মায়া খুব অবাক হয় সোহানের ধারনা করার ক্ষমতা দেখে। মায়ার মুখ ফুটে কিছু বলার আগেই সব বুঝে নেয় সোহান। এমনটা তো নাকি শুধুমাত্র খিব প্রিয় কারো ক্ষেত্রেই অনুভব করা যায়। পূর্নিমার ছবিতে দেখেছে ও। নায়কের মনের খবর না জেনেই সব বলে দিতো পূর্নিমা। তাহলে কি মায়াও সোহানের প্রিয় কেউ? নাহ, এতটাও আশা করা ঠিক না। এতটাও আকাশচুম্বী স্বপ্ন দেখা মায়ার মতো মেয়েদের মানায় না। স্বপ্ন ভেঙে গেলে একদম আকাশ থেকে মাটিতে মুখ থুবড়ে পড়তে হবে। মিথ্যে আশা রেখে কষ্ট পাওয়ার শখ নেই মায়ার। মন থেকে বাদ দিতে চায় কথাগুলো। তবু একটা কথা মনের মধ্যে জোরপূর্বক উঁকি দিয়েই চলছে। সোহান তাকে ভালোবাসতেও তো পারে। ঐ তো আজ সকালেই না বললো দরকার পড়লে বিয়ে করে নিবে। ভালো না বাসলে কি কথাগুলো বলতো?
- কি চিন্তা করো?
- আচ্ছা আপনি কি....
- আমি কি?
- নাহ কিছু না।
- কি জিগ্গেস করতে চাচ্ছো বলে ফেলো।
- তেমন কিছু না।
- বুঝলাম তেমন কিছু না। যেমনই হোক আমাকে বলো। আমি শুনতে চাচ্ছি।
- না, আসলে...... রাতে কি খাবেন?
- কথা কেনো ঘুরাচ্ছো?
- আপনি আমাকে এতটা কিভাবে বুঝেন?
- তোমাকে বুঝার চেষ্টা করি তাই বুঝি।
- আমাকে কেউ কখনো বুঝতে চায়নি।
- সবাই আর আমি তো এক না।
- হুম সবার চেয়ে আলাদা আপনি।
- চলো ঘুরে আসি।
- কোথায়?
- জানি না। তুমি রেডি হয়ে এসো।
- আচ্ছা।
- মায়া, শুনো...
- জ্বি?
- শাড়ি পড়ে নাও। ঐযে কলাপাতা রঙের একটা শাড়ি কিনে দিয়েছিলাম না? ওটা পড়ে এসো।
মুচকি হেসে মাথা ঝাঁকালো মায়া। এর আগে মায়া নিজের ইচ্ছায় দুদিন শাড়ি পড়েছিলো। আজ সোহানের আবদারে শাড়ি পড়বে সে। সোহানের ফরমায়েশ মতো সাজতে ভীষন পছন্দ করে মায়া। আরো বেশি ভালো লাগে যখন মায়া সোহানের কথামতো সেজে তার সামনে যায়। আর সে একনজরে মায়ার দিকে তাকিয়ে থাকে। সোহানের নজরে একধরনের তৃপ্তি দেখতে মায়া।
আজও তার ব্যাতিক্রম হয়নি। ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে শার্টের হাতা ভাজ করে কনুইয়ের উপরে তুলছে সোহান। শাড়ি পড়ে পিছনে এসে দাঁড়ালো মায়া। আয়নাতে দেখা যাচ্ছে মায়াকে। আায়নাতেই তাকিয়ে মায়াকে দেখছে সোহান। ফের তার নজরে তৃপ্তি দেখতে পাচ্ছে মায়া। তবুও সোহানের মুখ থেকে একটুখানি প্রশংসা শোনার আশায় আছে মায়া।
- আমাকে কেমন লাগছে?
- কথা বলো না তো। দেখতে দাও।
আর কিছু বললো না মায়া। সোহান ওকে মনভরে দেখতে চাচ্ছে। মায়াকে মনভরে দেখাটা সোহানের একধরনের প্রিয় কাজ। সে কথা মায়ার অজানা নেই। কয়েক সেকেন্ড পর ঘুরে দাঁড়ালো সোহান। হাতে ঘড়ি পড়তে পড়তে বললো,
- নতুন করে তোমার প্রশংসা করতে হবে?
- নাহ৷ থাকুক। আপনার চোখ দেখে বুঝে নিবো।
পাশাপাশি রিকশায় বসে আছে সোহান আর মায়া। আজ সোহানের খুব শখ হয়েছে মায়াকে নিয়ে রিকশায় করে ঘুরে বেড়াবে আর বাদাম খাবে। মায়া বাদামের খোসা ছেড়ে সোহানের হাতে দিচ্ছে আর সোহান বাদাম চিবুচ্ছে।
- বৃষ্টি হবে মনে হচ্ছে
- কিভাবে বুঝলেন?
- ঠান্ডা বাতাস লাগছে গায়ে।
- একটা কথা বলি?
- একশটা বলো।
- হাসবেন না তো?
- কথা না শুনে কিভাবে বলবো আমার হাসি পাবে কি পাবে না?
- আপনার সাথে বৃষ্টিতে ভিজার খুব ইচ্ছে।
মায়ার দিকে তাকিয়ে রহস্যের হাসি হাসছে সোহান। মায়ার মুখে বাদাম ঢুকিয়ে দিয়ে বললো
- আমার সাথে ভিজবে?
- হুম
- পূর্নিমা কি সিনেমাতে নায়কের সাথে বৃষ্টিতে ভিজে?
- হুম। আবার নেচে নেচে গানও গায়।
ভীষন শব্দ করে হেসে উঠলো সোহান। মূহূর্তেই মুখটা কালো করে ফেললো মায়া। সোহান ফের পূর্নিমাকে নিয়ে হাসছে। বিরক্তিকর একটা ব্যাপার। মায়া বুঝে পায়না পূর্নিমাকে নিয়ে হাসার কি আছে? মুখটা অন্যদিকে ঘুরিয়ে ফেললো মায়া।
- মায়া,,,
- কি?
- এদিকে তাকাও।
- না।
- আরে তাকাও তো।
- আপনি পূর্নিমাকে নিয়ে হাসেন কেনো?
- আমি জানি না। ওর কথা শুনলেই কেনো যেনো আমার হাসি পায়। বিশেষ করে নেচে নেচে গান গাওয়ার ব্যাপারটা। আমাকেও কি এখন নাচতে হবে?
কথাটা বলেই ফের হাসতে শুরু করেছে সোহান। এবার মায়ারও হাসি পাচ্ছে। কোনোমতে হাসি চেপে রেখে মায়া বললো
- আমি কি আপনাকে বলেছি আমার সাথে নাচতে হবে?
- তুমি চাইলে একটু না হয় নেচে দেখালাম।
- এতটা করতে হবে না। আমার সাথে একটু বৃষ্টিতে ভিজলেই হবে।
মায়ার কথা শেষ হতে না হতেই গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি পড়তে শুরু করেছে।
- অলরেডি বৃষ্টি পড়া শুরুও হয়ে গেছে।
- ভিজবেন তো আমার সাথে? নাকি হুড তুলে দিবেন?
- অবশ্যই ভিজবো।
ধীরে ধীরে বৃষ্টির মাত্রা বেড়ে যাচ্ছে। সেই সাথে ঠান্ডা বাতাস। ফুটপাতে থাকা লোকজন ছুটছে কোনো ছাউনি বা দোকানের ভিতর একটু আশ্রয় নিতে। কেউবা রিক্সার হুড তুলে দিয়েছে নিজেকে বৃষ্টি থেকে আড়াল করতে। কেউ বৃষ্টিতে ভিজতে রাজি না। একমাত্র মায়া ছাড়া।
এতক্ষন অন্যদিকে তাকিয়ে ছিলো মায়া। আশপাশের লোকজনগুলোকে দেখছিলো। সোহান সেই কখন থেকে মায়ার দিকে তাকিয়ে আছে সেদিকে কোনো খেয়াল নেই মায়ার। তার বাঁ হাতটা আলতো করে চেপে ধরলো সোহান। সোহানের স্পর্শ পেয়ে সোহানের দিকে তাকালো মায়া।
- কিছু বলবেন?
- কেউ একজন সেই কখন থেকে তোমার দিকে তাকিয়ে আছে কিছু একটা বলার আশায়। কথাটা কি জানো? সেই কেউ একজন তোমাকে ভীষন রকমে ভালোবাসতে শুরু করেছে। তুমি হচ্ছো তার সুখে থাকার টনিক। তোমার নেশায় মানুষটা ভিতর থেকে তিলতিল করে শেষ হয়ে যাচ্ছে৷ মানুষটার শরীরের রগ গুলোতে বোধহয় আজকাল রক্তের বদলে তোমার ভালোবাসার নেশা ছুটোছুটি করে। মানুষটাকে চিনেছো? নাকি নামটা বলতে হবে?
ডানে বামে মাথা নাড়লো মায়া। মুখ থেকে কথা বেরোচ্ছে না ওর। প্রচন্ড রকমে সুখ ভর করেছে ওর উপর। এতদিন মাথায় ঘুরতে থাকা প্রশ্নগুলোর উত্তর আজ মিললো। কেউ একজন তাকে ভালেবাসে। সত্যিই ভালোবাসে। মানুষের চোখ মিথ্যা বলে না। সোহানের চোখও মিথ্যা বলছে না। এই মূহূর্তে নিজেকে নষ্ট গলির মেয়ে মনে হচ্ছে না মায়ার। মনে হচ্ছে গায়ে লেগে থাকা এতদিনের পুরোনো দাগটা বুঝি উঠে গেছে। সোহানের চোখের ভাষায় ডুবে আছে মায়া। চোখ উপছে পানি ঝড়ছে ওর। বৃষ্টির পানিতে চোখের পানি আড়াল হচ্ছে।




চলবে.....
বিদ্যুৎ রায় চটি গল্প কালেকশন লিমিটেড 
http://biddutroy.family.blog
[+] 2 users Like Biddut Roy's post
Like Reply
#23
পর্ব-১৮
-----------------------------------




বাসায় ফিরে এসে ভেজা শাড়ী গায়ে দিয়েই ফ্লোরে বসে আছে মায়া। ঘোরটা তার এখনও কাটেনি। কানের মধ্যে লাগাতার বেজেই যাচ্ছে, " কেউ একজন তোমাকে ভালোবাসে।" কথাটার মধ্যে কিছু একটা তো আছে। নেশা জাতীয় কিছু। ভয়ানক নেশা। পুরো শরীরটাকে অবশ করে দেয়ার ক্ষমতা আছে নেশাটার মধ্যে। মায়ারও এই মূহূর্তে শরীরটাকে অবশ মনে হচ্ছে। এজন্যই বোধহয় উঠে গিয়ে কাপড় পাল্টানোর জোরটা পাচ্ছে না।
কাপড় পাল্টে মাথা মুছতে মুছতে মায়ার রুমেএসেছে সোহান। মায়া এক দৃষ্টিতে ফ্লোরের দিকে তাকিয়ে আছে। এতটাই ঘোরের মাঝে ডুবে আছে যে সোহানের উপস্থিতি টের পেলো না সে। মায়ার মুখোমুখি হাঁটু ভেঙে বসলো সোহান। ওর গালে হাত দিয়ে জিগ্গেস করলো
- কি গো?
- হুম?
- কি ভাবছো এত মন দিয়ে? আর কাপড় পাল্টাচ্ছো না কেনো?
- হুম
- হুম হুম করছে কেনো? কেনো সমস্যা?
- নাহ।
- তাহলে?
- কিছু না।
- উঠো যাও। কাপড় পাল্টে আসো।
উঠে দাঁড়ালো মায়া। ড্রয়ার থেকে সালোয়ার কামিজের সেট হাতে নিয়ে ওয়াশরুমের দিকে এগুলো মায়া।
কিছুক্ষন আগেই একদম কাক ভেজা হয়ে বাসায় এসেছে সালমান। কাপড় পাল্টে সোহানকে খুঁজতে খুঁজতে মায়ার রুমে চলে এলো সালমান। খাটে বসে ফোন টিপছে সোহান।
- ভাইয়া?
- কি?
- ফ্লোরে পানি কিসের?
- ঐ তো মায়া ভিজা শাড়ি পড়ে এতক্ষন ফ্লোরে বসে ছিলো। শাড়ির পানি ওগুলো।
- ফ্লোরে বসে ছিলো কেনো? রাগ করে?
- আরে নাহ। এমনি।
- ও বোধহয় বেশ চুপচাপ স্বভাবের তাই না?
- কথা বলে। তবে বেশিও না কমও না। আমার সাথে তো বেশ ভালোই কথা বলে। তুই নতুন তাই হয়তোবা কথাটা একটু কম বলছে।
- হয়তোবা।
- তুই তো অনেক কথা বলিস। ওর সাথে কথা বলতে থাক। দেখবি ও তোর সাথে কথা বলবে।
- হুম সেটা তো করবোই। শিমুকে বলেছি মায়ার কথা।
- ওহ আসল কথাই তো জিগ্গেস করলাম না। শিমুর সাথে সব ঠিক হয়েছে?
- হুম হয়েছে। কানে ধরে উঠ বস করিয়েছে এই মেয়ে আমাকে?
- পাব্লিক প্লেসে?
- হ্যাঁ।
- ওসব কোনো ব্যাপার না। ভালোবাসায় এমন শাস্তি পাওয়াটা খুবই স্বাভাবিক।
- মায়াও কি দেয় নাকি?
সোহান উত্তর দেয়ার আগেই ওয়াশরুমের দরজা খুলে বের হতে হতে বললো
- মোটেই না। আমি কখনোই তোমার ভাইকে পানিশড করি না।
- মায়া, ঘটনা কি বলো তো?
- কি ঘটনা?
- আমি বাসা থেকে বের হওয়ার আগ পর্যন্ত একটু মরা মরা লাগছিলো। এখন খুব ফুরফুরে মনে হচ্ছে।
- হুম৷ একটা উত্তর খুঁজছিলাম। পেয়ে গেছি।
- কি উত্তর?
- উহুম। তোমাকে একদম বলা যাবে না।
- একান্ত গোপন কিছু?
- হুম। খুউউব গোপন।
চুল মুছছিলো মায়া। ওর হাত টেনে সামনে
এনে বসালো সোহান। মায়ার হাত থেকে তয়লাটা নিয়ে মাথা মুছে দিচ্ছে সে। বেশ রিল্যাক্স মুডে সালমানের সাথে গল্প করছে মায়া। সোহান চুপচাপ ওদের গল্প শুনছে আর মায়ার চুল মুছছে। রাত সাড়ে দশটা বাজে। বাসার কাজের লোক এসে বললো
- ভাই, রাত হইছে অনেক। খাবেন না?
- কয়টা বাজে?
- সাড়ে দশটা।
- কখন বাজলো? টেরই তো পেলাম না। যাও খাবার সাজাও টেবিলে। আমরা আসছি।
আলিশার বাসার ড্রইং রুমে বসে আছে তার বাবা আকরাম এবং বড় ভাই আদনান। পর্দার আড়ালে দাঁড়িয়ে আছে আলিশার ছেলে। মাথা নিচু করে বসে আছে বাপ- ভাই দুজন। প্রচন্ড তর্ক চলছে আলিশা রুপমের মাঝে। নির্বাক শ্রোতা হয়ে ওদের তর্ক শুনছে আাকরাম সাহেব এবং আদনান। এখানে জোর গলায় রুপমকে বলার কিছুই নেই তাদের। তারা দিব্যি বুঝতে পারছে দোষ তাদের মেয়ের। এই মূহূর্তে আকরাম সাহেবের মনে হচ্ছে মেয়ে জন্ম দিয়ে জন্ম-জন্মান্তরের ভুল করেছেন তিনি। কি বেইজ্জতটাই না হতে হচ্ছে তাকে।
- আপনি শুনতে পাচ্ছেন আপনার মেয়ের গলার জোর কত! অন্যায় করেও একটা মানুষ এভাবে কিভাবে ঝগড়া করতে পারে খুঁজে পাই না আমি।
- বাবা কি শুনবে? হ্যাঁ? কথা হচ্ছে আমার তোমার মাঝে। ওদের কেনো ডেকে এনেছো?
- তোমার অসভ্যতামি দেখানোর জন্য। মেয়েকে কি শিক্ষা দিয়ে বড় করেছে সেসব দেখানোর জন্য। এখন মুখ খুলেন না কেনো বাবা? বিয়ের সময় তো মুখ বড় করে বলেছিলেন এত লক্ষী মেয়ে নাকি পুরো বাংলাদেশ খুঁজে পাবো না। এই আপনার লক্ষীর নমুনা?
- বাবা আমি আসলে কি বলবো বুঝে পাচ্ছি না। আমার মেয়ে এসব করবে আমার ধারনার বাইরে ছিলো।
-এই মেয়ের মাথায় কয়দিন পরপরই সোহানের ভূত চাপে। কেনো? আমি কি ওকে কম ভালেবাসি? ও যেসব কাহিনী করে ওকে কবেই ঘর থেকে বের করে দিতো অন্য কেউ হলে। ওকে এখন পর্যন্ত ঘরে রেখেছি আমি। আদনান, তোমার তো ঘরে বউ আছে। তোমার বউ এসব করলে কি তাকে ঘরে রাখতে।
চুপ করে বসে আছে আদনান। উত্তর দেয়ার মতো ভাষা এবং ইচ্ছা কোনোটাই আপাতত খুঁজে পাচ্ছে না। ঘরের সবাই এখন চুপ৷ ফ্যানের আওয়াজ ছাড়া আর কোনো আওয়াজ শোনা যাচ্ছে না। কয়েক সেকেন্ড নীরবতা পালন করে মুখ খুললো রুপম।
- আপনাদের মেয়ে আপনারা নিয়ে যান। আমার দ্বারা এসব সহ্য করা আর সম্ভব না।
- রুপম, বাবা এভাবে বলো না।
- প্লিজ আর কোনো রিকুয়েস্ট করবেন না।
- বাচ্চাটার কথা ভাবো।
- এমন ভাবে বলছেন মনে হচ্ছে আমার ছেলেকে আপনার মেয়ে দেখাশোনা করে?আমার ছেলেকে আমিই পালবো। আপনার মেয়েকে কোনো দরকার নেই।
- কিহ্! আমি ছেলেকে দেখাশোনা করি না? তো করে টা কে শুনি? তোমার মা কবর থেকে উঠে এসে আমার ছেলের দেখাশোনা করে?
- দেখো আদনান তোমার বোনকে নিয়ে বের হও। ও কিন্তু আমার হাতে এখন থাপ্পড় খাবে।
সোফা ছেড়ে উঠে বসতো বসতে আদনান বললো,
- শুধু থাপ্পড় না। ও এরচেয়ে আরও বেশি কিছু ডিজার্ভ করে। থাপ্পড়, কিল- ঘুষি যা পারো সব দাও। পারলে মেরে ফেলো। মরার পর আমাদের খবর দিও। আমরা এসে দাফন দিবো। সেই সাথে মিলাদের ব্যবস্থাও করবো। শুনো বাবা, আমি গেলাম। তোমার বাড়িতে তুমি তোমার মেয়েকে নিয়ে আসবে কিনা সেটা একান্ত তোমার ব্যাপার। ওকে নিয়ে বাসায় ঢুকার আগে আমাকে ফোন দিয়ে জানিও। আমি আমার ওয়াইফ নিয়ে অন্য কোথাও চলে যাবো। এসব আজেবাজে মানুষের সাথে এক ছাদের নিচে থাকা সম্ভব না। ইজ্জত থাকবে না আমার।
হনহন করে বেরিয়ে যাচ্ছে আদনান। পিছন থেকে ইচ্ছেমতো মুখপ যা আসছে তাই বলছে আলিশা। সেসব কথার ধার ধারছে না আদনান। ওর মতে বাজে লোকের কথা কানে তুলতে নেই। কয়েক মিনিট পর আকরাম সাহেব উঠে দাঁড়ালেন। মেয়ের দিকে তাকিয়ে খুব ঠান্ডা এবং দৃড় কন্ঠে বললেন
- রুপম তোমাকে ঘরে রাখবে না। আমিও তোমাকে ঘরে নিবো না। অতএব তুমি যেদিক খুশি সেদিক যেতে পারো।
বাসা থেকে বেরিয়ে গেলেন আকরাম সাহেব। পর্দার চিপা থেকে ছেলেকে বের করে কোলে তুলে নিলো রুপম। সেও বাসা থেকে বেরিয়ে গেছে। বাপ বেটা আজ বাহিরে ডিনার করবে। রাগে পুরো শরীর কাঁপছে আলিশার। ফ্লোরে বসে হাউ মাউ করে কদছে।


চলবে.....
বিদ্যুৎ রায় চটি গল্প কালেকশন লিমিটেড 
http://biddutroy.family.blog
[+] 1 user Likes Biddut Roy's post
Like Reply
#24
দাদা গল্পটার নামঃ নষ্ট গলি
[+] 1 user Likes johny23609's post
Like Reply
#25
দারুন গল্পটা। আলাদাই একটা ভালোলাগা কাজ করে পড়তে পড়তে।
[+] 1 user Likes Sonabondhu69's post
Like Reply
#26
dada nxt update kokhn ashbe?? onk valo lagche golpota porte.
[+] 1 user Likes Lovehunter's post
Like Reply
#27
পর্ব-১৯
-----------------------------------




ড্রইংরুমে বসে টিভি দেখছে মায়া আর সালমান। ফোনে কথা বলছে সোহান। কলিংবেল বেজে উঠলো বাসার। সোফা ছেড়ে উঠে এসে গেইট খুলে দিলো মায়া। একজন মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। প্রচন্ড রকমে বিধ্বস্ত দেখা যাচ্ছে মেয়েটাকে। চুল আউল-ঝাউল হয়ে আছে। চোখ নাক ফুলে আছে। ফর্সা মুখটা লাল হয়ে আছে। মেয়েটাকে চিনে না মায়া। সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটাও ওকে দেখছে। একদম পা থেকে মাথা পর্যন্ত খুটেখুটে দেখছে মায়াকে মেয়েটা। কয়েক সেকেন্ড বাদে মুখ খুললো সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটা।
- তুমিই কি মায়া?
- হ্যাঁ।
- সরো এখান থেকে। আমি ভিতরে যাবো।
- কেনো সরবো? কে আপনি?
মায়ার প্রশ্ন শুনে সোফা ছেড়ে উঠে আসলো সালমান। আলিশা দাঁড়িয়ে আছে গেইটের বাহিরে। এতরাতে আলিশাকে দেখে কিঞ্চিৎ বিরক্ত সালমান। এই মেয়ে যখনই আসে কোনে না কোনো ঝামেলা বাঁধায়৷ আজও নির্ঘাৎ ঝামেলা করবে। তারউপর চোখ মুখ ফুলে আছে। তারমানে বাসা থেকে ঝগড়া করে এখানে এসেছে।
- তুমি এখানে কেনো?
- তোমার ভাই কোথায়?
-,ভাই কোথায় সেটা বলা জরুরি না। জরুরি হচ্ছে তুমি এতরাতে এখানে কেনো সেটা জানা। কেনো এসেছো?
- সোহানকে ভীষন প্রয়োজন।
- ভাইয়া বাসায় নেই। যাও এখান থেকে।
- আমি জানি ও ঘরেই আছে৷ প্লিজ আমাকে ভিতরে যেতে দাও
- সালমান, ইনি কি আলিশা?
- হ্যাঁ। তুমি জানো ওর কথা?
- হুম জানি। তোমার ভাই বলেছিলো। উনার সাথে এতরাতে কি কাজ আপনার?
- সেটা তো তোমার জানার প্রয়োজন নেই। যার কথা আমি তার সাথেই বলবো।
- উনি আর আমি আলাদা না৷ উনাকে বলা যে কথা আমাকে বলা একই কথা। আপনি আমাকে বলতে পারেন।
- তোমাকে কেনো বলবো?
- না বলতে পারলে চলে যান।
- এটা সোহানের বাসা। ওর বাসায় কে আসবে কে যাবে সেটার ডিসিশন ও নিবে। তুমি না।
পিছন থেকে এসে মায়ার কাঁধ জড়িয়ে ধরলো সোহান। আলিশাকে ভালোভাবে দেখছে সে।
- এটা মায়ার বাসা। আমার না। যেদিন বিয়ে করেছি সেদিন থেকে এই ঘর সংসার ওর নামে করে দিয়েছি। এই ঘরে কে আসবে কে যাবে সেসব ডিসিশন আামার বউ নিবে। আমার বউ। বুঝতে পারছো কথাটা? আমার গার্লফ্রেন্ড না, ও আমার বউ।
- তাহলে আমি কে?
- তুমি রুপমের বউ।
- রুপম যে আমাকে তোমার জন্য ঘর থেকে বের করে দিলো?
- আমার জন্য? কেনো? আমি কি করেছি?
- আমি তোমাকে ভালোবাসি সেসব তুমি রুপমকে বলেছো। ও আমাকে ঘর থেকে বের করে দিয়েছে। আব্বুও বাসায় যেতে নিষেধ করেছে। তোমাকে ভালেবেসেই তো ঘর ছাড়তে হয়েছে আমাকে। এখন তোমার ঘর ছাড়া আমি কোথায় যেয়ে উঠবো?
- আমার তো কোনো ঘর নেই। চিটাগাং যেটা আছে সেটা বাবার। এখানে যেটা আছে সেটা আমার বউয়ের। ও যদি তোমাকে ঘরে থাকতে দেয় তাহলে থাকতে পারো আমার কোনো আপত্তি নেই। কি গো? থাকতে দিবে ওকে এখানে?
- একদম না। আলিশা আপুকে বর্তমানে আমার কাছে কুমীর মনে হচ্ছে। খাল কেটে কুমীর ঢুকানোর মতো বোকা আমি না। যদি উনি হাজবেন্ড বাচ্চাসহ আমার বাসায় আসে তাহলে অবশ্যই মেহমানদারী করবো। দেখেন আপু ভালো ঘরের মেয়েরা এতরাতে হাজবেন্ডের ঘর ফেলে সাবেক প্রেমিকের বাসায় এসে উঠে না। সোহান যদি সিঙ্গেল থাকতো তাহলে নাহয় অন্য কথা ভাবতাম। কিন্তু সোহান তো আার একা নেই। উনার সাথে আমি আছি। আপনার এখানে এতরাতে আসাটা খুবই দৃষ্টিকটু মনে হচ্ছে। আর রুপম ভাই আমার হাজবেন্ডের জন্য আপনাকে ঘর থেকে বের করেনি। আপনার দোষেই আপনাকে ঘর থেকে বের করে দিয়েছে৷ বিয়ের পর কোনো বউ তার হাজবেন্ডকে ফেলে পুরোনো প্রেমিকের পিছনে ছুটবে এটা কোনে পুরুষই মেনে নিবে না। বাসায় যান। রুপম ভাইকে সরি বলেন। নিজের সংসারকে আগলে রাখার চেষ্টা করেন।
- সংসার সোহানের সাথে করার কথা ছিলো। রুপমের সাথে না।
- তাহলে করলেন না কেনো সোহানের সাথে সংসার? রুপম ভাইয়ের সাথে সংসার করছেন কেনো?
- শোনে মেয়ে, তোমাকে আমার অসহ্য লাগছে৷ সরো তো এখান থেকে। সোহানের সাথে কথা বলতে দাও।
- আপনাকে আমার আরো বেশি অসহ্য লাগছে। আসলে আমি এত ছ্যাচড়া মেয়ে মানুষ দেখে অভ্যস্ত নই তো তাই। তবু হজম করছি। মাথা যথেষ্ঠ ঠান্ডা রেখে কথা বলছি। মনে হয় বেশিক্ষণ ঠান্ডা রাখতে পারবো না। আপনি এখান থেকে চলে গেলেই বোধহয় আপনার জন্য ভালে হবে। আর নয়তো কখন আবার কি করে বসি!
- সোহান তোমার ওয়াইফ আমার সাথে মিসবিহেভ করছে।
- হ্যা করছে। এটা ওর বাসা। ওর বাসায় ও যা খুশি করতে পারে। আমি বলার কে?
- তুমি কি গাধা হয়ে যাচ্ছো? তোমার তেজ কোথায় গেছে? আগে তোমার উপর কোনো কথা বলতে পারতাম না। এখন তোমার বউ বলে কিভাবে?
- তোমার প্রশ্নের মাঝেই উত্তর আছে। বউ... তুমি ছিলে প্রেমিকা। আর মায়া হচ্ছে বউ। যে অধিকারটা প্রেমিকাকে দেয়া যায় না সেটা বউকে দিতে হয় না। বিয়ে হওয়ার সাথে সাথে অধিকারটা তার হয়ে যায়। পার্থক্যটা বুঝতে পারছো? অযথা নিজের সাথে মায়াকে কম্পেয়ার করো না। আমার জীবনে মায়া আর তোমার অবস্থান সম্পূর্ণ আলাদা।
আলিশা এগিয়ে এসে সোহানের হাত ধরে কিছু একটা বলতে এগিয়ে আসছিলো। বাঁধ সাধলো মায়া। সোহানের দিকে আলিশার এগিয়ে যাওয়া হাতটা ধরে ফেললো মায়া।
- আপনি বেডরুমে যান। আমি আলিশা আপুর সাথে কথা বলে আসছি।
সোহান নিজের রুমে চলে গেলো। রুপমকে ফোন করেছে সে। আলিশার দিকে প্রচন্ড বিরক্তি নিয়ে তাকিয়ে আছে মায়া। রাগে চোখ লাল হয়ে গেছে মায়ার।
- আমি প্রচন্ড রকমের হিংসুটে স্বভাবের। অন্য মেয়ে আমার হাজবেন্ডের দিকে তাকালে আমার সহ্য হয় না। আর সেখানে আপনি রাত বিরাতে মেসেজ, ফোন দিয়ে বিরক্ত করছেন। বাসায় এসে হাজির হয়েছেন। আমি সামনে দাঁড়িয়ে থাকা সত্ত্বেও উনার হাত ধরতে চাচ্ছেন। আপনি কি আসলেই মেয়ে মানুষ? একটা মেয়ে এতটা নির্লজ্জ কিভাবে হয়? ছিঃ! আপনি একটা জঘন্য মেয়ে মানুষ। চুপচাপ নিজের ঘরে ফেরত যান। আমাদেরকে বিরক্ত করতে আসবেন না। সারাদিন শেষে কোথায় হাজবেন্ডের সাথে একটু সময় কাটাবো তা না। কোথ্থেকে ফালতু ঝামেলা এসে হাজির হয়েছে।
শেষের কথাগুলো বলতে বলতে গেট লাগিয়ে দিলো মায়া। বাহিরে দাঁড়িয়ে লাগাতার গেট ধাক্কা দিচ্ছে আলিশা। প্রচন্ড চেঁচামেচি করছে ও৷ মায়া বেডরুমে যেয়ে সোহানকে বললো
- উনি তো খুব সিনক্রিয়েট করছে। লোকজন শুনছে এসব৷
- রুপমকে ফোন দিয়েছি। ও নিতে আসছে ওকে।
- আচ্ছা উনি কি পাগল?
- ভবের পাগল। স্বার্থে টান পড়লে পাগলামি শুরু করে।
মিনিট পনেরো পর রুপম এসেছে আলিশাকে নিতে। এতক্ষন দরজায় ধাক্কা দিয়েই গেছে আলিশা। হাত জ্বালা করছে খুব। তবু থামেনি ও। হাতে রক্ত জমাট বেঁধে লাল হয়ে গেছে। রুপম এসে কিছুক্ষণ টানা হেঁচড়া করেছে আলিশাকে। শরীরে সমস্ত শক্তি দিয়ে নিজেকে ছাড়িয়ে সোহানের দরজায় এসে ধাক্কা দিচ্ছে। পাশের ফ্ল্যাটের লোকজন দাঁড়িয়ে ওদের তামাশা দেখছে। অন্যান্য ফ্ল্যাটের লোকজন এসেও জড়ো হয়েছে এখানে। প্রচন্ড লজ্জা লাগছে রুপমের। দিশেহারা হয়ে আলিশাকে কোলে করে নিয়ে গাড়িতে বসালো রুপম। ঝড়ের গতিতে কার ড্রাইভ করছে সে। আলিশা রুপমের হাতে মুখে এলোপাতাড়ি চড় থাপ্পর দিয়েই যাচ্ছে আর মুখে যা আসছে তাই বলছে। প্রচন্ড কান্না পাচ্ছে রুপমের। আর সহ্য হচ্ছে না তার এসব যন্ত্রনা। অনেকটা দূরে এসে গাড়ি সাইড করে থামালো সে। স্টিয়ারিং এর উপর মাথা রেখে চিৎকার করে কাঁদছে রুপম। মনের বোঝাটা হাল্কা করার খুব বেশিই প্রয়োজন ছিলো ওর। দম আটকে মারা যাবার উপক্রম হচ্ছিলো। চোখের পানির সাথে বুকের ভিতরের চাপটা একটু একটু করে বেরিয়ে যাচ্ছে।




চলবে....
বিদ্যুৎ রায় চটি গল্প কালেকশন লিমিটেড 
http://biddutroy.family.blog
Like Reply
#28
পর্ব-২০
-----------------------------------




সোহানের বাসার ড্রইংরুমে মাথা নিচু করে বসে আছে রুপম। মুখোমুখি বসে আছে মায়া আর সোহান৷ আলিশাকে বাসায় লক করে এসেছে রুপম। সাথে করে ছেলেটাকে নিয়ে এসেছে যাতে আলিশা বাচ্চাটাকে মারধর না করতে পারে। রুপম জানে আলিশা এখন বাসায় তুমুল ভাংচুর চালাবে। বাচ্চাটা দেখলে ভয়ে বেহুঁশ হওয়ার উপক্রম হবে। তাই সাথে করে নিয়ে এসেছে। সালমানের বেডরুমে বসে এখন ইউটিউবে কার্টুন দেখছে। সোহানকে কিছু বলতে চাচ্ছে রুপম। কিন্তু গলার ঠিক মাঝখানটাতে এসে ঠেকে যাচ্ছে কথাগুলো। প্রায় বিশ মিনিট যাবৎ এভাবেই বসে আছে সে। এর মাঝখানে সোহান দুইবার জিগ্গেস করেছে পানি খাবে কিনা। সেই উত্তরটাও গলা দিয়ে আসছেনা রুপমের। সোহানও খুব বেশি জোরাজোরি করছে না কিছু বলার জন্য। সে বুঝতে পারছে রুপমের মনের অবস্থাটা এখন কেমন হতে পারে? সোহান ফের রুপমকে জিগ্গেস করলো
- তোমাকে অনেক স্ট্রেসড দেখাচ্ছে। স্ট্রং কফি খাবে? দিতে বলবো?
কোনোমতে গলায় শক্তি জুগিয়ে উত্তর দিলো রুপম।
- নাহ। একগ্লাস বরফ মিশানো পানি দেয়া যাবে? গলা পুরোপুরি শুকিয়ে গেছে।
মায়া সোফা ছেড়ে ছুটে গেলো ডাইনিং রুমে। ফ্রিজ থেকে বরফ বের করে বড় একটা গ্লাস পানিতে তিনটুকরা বরফ ছেড়ে দিলো।
রুপমের দিকে গ্লাস এগিয়ে দিলো মায়া। হাতে গ্লাস নিয়ে খুব দ্রুত পানি গিলছে সে। দেখে মনে হচ্ছে বিগত এক সপ্তাহ ধরে বোধহয় সে পানি খায় না। রুপমের মুখ দেখে বড্ড কষ্ট হচ্ছে মায়ার। করুন দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সে মানুষটার দিকে। পানি খেয়ে খুব বড় করে একটা নিঃশ্বাস নিলো রুপম। তার চোখে পানি ছলছল করছে। মায়ার দিকে তাকিয়ে বললো
- ভাবী আসলে....
গলায় কথা ধরে আসছে তার। থেমে গেলো সে। মায়া স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে মানুষটার চোখে পানি৷ এবার তারও কান্না পাচ্ছে। বহু কষ্টে চোখে পানি আটকে রেখেছে মায়া। কোনোমতে গলার স্বরটা ঠিক করে ফের বলতে শুরু করলো রুপম।
- ভাবী আমার বাচ্চাটা রাতে কিছু খায়নি। ওকে রেস্টুরেন্টে খাওয়াতে নিয়ে গিয়েছিলাম। খায় নি। ও আসলে ভয় পেয়েছে খুব আমাদের ঝগড়া দেখে। আপনি ওকে একটু খাইয়ে দিবেন প্লিজ?
মায়ারও গলা ধরে আসছে। মুখ ফুটে কিছু বললো না ও। উপরে নিচে মাথা ঝাঁকিয়ে রান্নাঘরের দিকে ছুটলো সে।
- রুপম?
- হুম?
- তুমিও তো বোধহয় খাওনি। হাত মুখ ধুয়ে আসো। আমি টেবিলে খাবার দিতে বলছি।
- প্লিজ সোহান আমি খাবো না। গলা দিয়ে খাবার নামবে আমার।
- যা হয়েছে ওগুলো আপাতত একটু সাইড করো। অল্প কিছু খেয়ে নাও।
- বিষ আছে ঘরে?
- কি ধরনের কথা বলছো?
- লজ্জায় কষ্টে আমার মরে যেতে ইচ্ছে হচ্ছে। চোখে মুখে অন্ধকার দেখছি আমি৷ মরে যেতে হচ্ছে। বাচ্চাটার কথা ভেবে এ ধরনের স্টেপ নিতে পারছি না। আমি মরে গেলে ছেলেটার কি হবে? আলিশার তো বাচ্চাটার দিকে কোনো খেয়ালই নেই।
- আসলে রুপম তোমাকে কি বলা উচিত এই মূহূর্ত্বে আমার জানা নেই। আমি যাস্ট চুপচাপ তোমার অভিযোগগুলো শুনতে পারবো। কিন্তু সলিউশন কি দিবো তা আমার জানা নেই।
- ওকে আমি প্রচন্ড রকমে ভালোবাসি সোহান। একতরফা ভালোবেসেই গেছি। ওর কাছ থেকে কখনো ভালোবাসা পাইনি৷ একজন ওয়াইফ তার হাজবেন্ডকে কিভাবে আগলে রাখে, কতটা যত্ন করে সেসব আমার জানা নেই। আলিশার কাছে কখনো সেসব পাইনি আমি। বিয়ের আগে খুব এক্সপেকটেশনস ছিলো আমার ম্যারিড লাইফটা একদম আদরে মাখামাখি টাইপ হবে। আমার ওয়াইফ আমার ছোটখাটো প্রতিটা বিষয় খেয়াল রাখবে। কিছুই হলো না জানো? কিচ্ছু পাইনি এই বিয়ে থেকে আমি। ওর প্রেগনেন্সির খবর যখন ও জানতে পারলো পুরোপুরি পাগল হয়ে গেলো এ্যাবরশন করানোর জন্য। নয়টা মাস ওকে যে কিভাবে কন্ট্রোল করেছি! উফফ! মনে হলে এখনো আমার দম আটকে আসে। প্রথম প্রথম ভাবতাম ও হয়তোবা আমার সাথে এডযাস্ট হতে আনকমফর্টেবল ফিল করছে। নিজের সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি ওকে নিজের করে নেয়ার জন্য। স্টিল নাউ চেষ্টা করেই যাচ্ছি ওকে আপন করে পাওয়ার জন্য। কিন্তু এই রুপমের দিকে তার একবারের জন্য ঘুরেও তাকাতে ইচ্ছে হয় না। মাঝেমাঝে নিজেকে রাস্তার কুকুর বিড়াল মনে হয়। নিজেকে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে প্রশ্ন করি, রুপম তুই কি মানুষ? নাকি রাস্তার ক্ষুদার্থ কুকুর যে কি না একটু ভালোবাসার আশায় এতগুলো বছর যাবৎ আলিশার পিছনে ঘুরেই যাচ্ছিস।
কথাটা বলেই হাউমাউ করে কান্না শুরু করলো রুপম। সালমানের রুমে বসে রুপমের ছেলেকে খাওয়াচ্ছে মায়া। বাচ্চাটা খুব তৃপ্তি সহকারে খাচ্ছে। খাওয়া প্রায় শেষের দিকে। মায়া ইতিমধ্যেই ভাব জমিয়ে ফেলেছে ওর সাথে। বাহির থেকে কান্নার শব্দ শোনা যাচ্ছে। ভাত মুখে নিয়ে বসে আছে সে।
- কি হলো বাবা? খাচ্ছো না কেনো?
- আন্টি... বাবা কি কাঁদে?
মায়া আর সালমান একজন আরেকজনের মুখ চাওয়াচাওয়ি করছে। বিছানা ছেড়ে সাথে সাথে উঠে দাঁড়ালো সালমান। বাচ্চাটাকে কোলে নিয়ে বারান্দার দিকে এগোতে এগোতে মায়াকে বললো,
- মায়া তুমি ওকে চাঁদ দেখিয়েছো?
- না তো।
- ধুর বোকা। তুমি আফিফকে চাঁদ দেখাওনি? কত্তবড় চাঁদ উঠেছে। একদম বড় গোল রুটির মতন দেখতে। চলো বাবা, আমরা চাঁদ দেখবো। তারা গুনবো। আর ভাত খাবো।
তারা গুনার কথা শুনে ব্যাপক খুশি আফিফ। ব্যাপারটা তার কাছে খুবই ইন্টারেস্টিং মনে হচ্ছে। আজ পর্যন্ত তারা কখনো সে গুনে দেখেনি। সালমানের কোলে থেকেই লাফালাফি শুরু করেছে তারা গুনবে সেই খুশিতে।
রুপমের দিকে আরও এক গ্লাস পানি এগিয়ে দিলো সোহান। এবার খানিকটা থেমে থেমে পানি খেলো সে। গ্লাসটা টি টেবিলের উপর রেখে আবার বলতে শুরু করলো রুপম।
- এই যে আমার এত প্রপার্টি অর্থ-বিত্ত। লাভ কি এসবের? আমার তো ঘরে শান্তি নেই। আমার চেয়ে ভালো আছে আমার অফিসের পিওন। তুমি ওকে চিনো না?
- আনিস নাম যে ওর কথা বলছো?
- হ্যা। তুমি জানো ওর বউটা প্রায়ই সেজেগুজে বক্সে ভরে খাবার নিয়ে আসে। অফিসের একটা কোনায় বসে ওর বউ ওকে মুখে তুলে খাইয়ে দিয়ে যায়। আমি আমার রুম থেকে বসে দেখি ওদের। তুমি জানো আনিসের মুখটা ঐ মূহুর্তে আমি বসে বসে দেখি৷ ও যে সুখে আছে সেটা তখন ওর মুখটা দেখলেই আমি বুঝি। অদ্ভুত ভালো লাগা কাজ করে। আবার আফসোসও হয়৷ আনিসের জায়গায় থাকলে খুব সুখে থাকতাম জানো। ওর হতে পারে অঢেল টাকা নেই। কিন্তু ও আমার চেয়ে বড়লোক। ওর ঘরে সুখ আছে যা আমার ঘরে নেই।
বেডরুমে বসে সিগারেট ফুঁকছেন সোহানের বাবা। কিছুক্ষণ আগেই তার একজন ক্লাইন্ট ফোন করেছিলো। কথায় কথায় সেই ক্লাইন্টের কাছ থেকে তিনি জানতে পারলেন তার বড় ছেলে বিয়ে করেছে। কিছুদিন আগেই নাকি এক পার্টিতে পরিচয় করিয়েছে সোহান তার ওয়াইফকে। ভদ্রলোক বেশ প্রশংসা করলেন মায়ার। ছেলের বিয়ের কথা অন্য লোকের মুখে শুনে এতক্ষণে তুফান চালানোর কথা ছিলো। কিন্তু তিনি যথেষ্ঠ ঠান্ডা মাথায় বসে সিগারেট ফুঁকছেন। তিনি যতটুকু সোহানকে চিনেন তার ছেলে এতটাও বেপরোয়া না যে বাপ মাকে ন জানিয়ে বিয়ে করবে। তার ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় বলছে সোহান বিয়ে করে নি। ঘটনা এখানে অন্যকিছু। আর যদি বিয়ে করেও থাকে নিশ্চিত মেয়ের মাঝে কোনো সমস্যা আছে। ফ্যামিলিকে জানিয়ে বিয়ে করতে গেলে বাবা অবশ্যই মেয়ের খেঁাজ নিবে সেটা সোহান জানে। নিশ্চিত এমন কোনো সমস্যা আছে যেটা বাবাকে জানানো যাবে না। তাই সে চুপচাপ বিয়েটা সেড়ে নিয়েছে। কিন্তু এখন সত্যিটা জানা খুব দরকার। সোহান কি বিয়ে করেছে নাকি করে নি? সোহানকে জিগ্গেস করে লাভ নেই। সত্যিটা বলার হলে অনেক আগেই বলে দিতো। খবরটা অন্যভাবে নিতে হবে। কাকে জিগ্গেস করবে? জাহিদকে? নাহ, সেও মুখ খুলবে না। সালমান? ওকে জিগ্গেস করা যেতে পারে। ছোট ছেলের নম্বরে ডায়াল করলেন তিনি। ফোন রিসিভ করছেনা সে।




চলবে....
বিদ্যুৎ রায় চটি গল্প কালেকশন লিমিটেড 
http://biddutroy.family.blog
Like Reply
#29
পর্ব-২১
-----------------------------------



পরদিন বিকালে ইজি চেয়ারে বসে চোখ বন্ধ করে কিছু একটা হিসেব মিলাচ্ছেন সোহানের বাবা নজরুল সাহেব। গতরাতে সালমানও যখন ফোন রিসিভ করলো না তখন তিনি ফোন করলেন অফিসের ম্যানেজার ইকবালকে। ইকবাল তার যথেষ্ট বিশ্বস্ত কর্মচারী। ইকবালকে দিয়ে সব খবর বের করা যাবে সেই আশায় তিনি ফোন দিলেন। গতরাতে ফোনে যা শুনলেন তার জন্য মোটেই প্রস্তুত ছিলেন না তিনি। কান বন্ধ হয়ে আসছিলো তার। এমনকি এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে উনি বধীর হয়ে আছেন। যথেষ্ঠ ঠান্ডা মাথায় ব্যাপারটা সামাল দিতে হবে। ম্যানেজারপর ভাষ্যমতে সোহান পুরোপুরি এই মেয়ের প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে। সোহানের সাথে এই ব্যাপারে কোনো কথা বলা মানেই অহেতুক সময় নষ্ট করা। ছেলের সাথে কথা বলে কোনো প্রকারের কূল কিনারা করতে পারবেন না সেকথা নজরুল সাহেব ভালোই জানেন। ছেলে তো তার কথা শুনবেই না, উল্টো ব্যাগ ট্যাগ গুছিয়ে মেয়েকে সাথে নিয়ে বিদেশ পাড়ি জমাবে। পরে এতবড় ব্যবসা সামাল কে দিবে? সালমানকে দিয়ে তেমন একটা ভরসা পান না নজরুল সাহেব৷ সোহানের বিজনেস পলিসি একদম হিংসে করার মতো। মাঝেমাঝে নিজের ছেলেকেই হিংসে হয় নজরুল সাহেবের। আবার গর্বও হয় খুব। সোহান বিজনেস জয়েন করার পর থেকে লাভের হার বেড়েছে তিনগুন। এই ছেলেকে হাতছাড়া করাটা হবে পুরোপুরি বোকামি৷ এতবড় বোকা নজরুল সাহেব নন। যা করার আড়াল থেকে করতে হবে৷ তিনি কিছুই জানেন না এমন ভাব নিয়ে বসে থাকতে হবে৷ বিশেষ করে সোহানের মায়ের কানে তো ভুলেও এ কথা দেয়া যাবে না। সে জানলে আজই ছেলের বাসায় যেয়ে ঝামেলা বাঁধিয়ে ফেলবে। মাথাটা ভনভন করছে নজরুল সাহেবের। ছেলের রুচির এতটা অধঃপতন হজম করতে পারছেন না তিনি।
একটা শপিং সেন্টারের সামনে এসে গাড়ি থামলো সালমানের। সাথে মায়াও আছে৷ শিমুর সাথে পরিচয় করানো হবে মায়াকে। তাই আজ এখানে আসা। ফুডকোর্টে বসে আছে শিমু৷ দূর থেকে সালমানকে দেখতে পাচ্ছে সে। সাথে করে একটা মেয়েকেও দেখা যাচ্ছে। মায়া হবে হয়তো৷ সালমান বলেছিলো গতকাল মায়ার কথা। যতটুক শুনেছে মায়া তারচেয়ে আরও বেশি সুন্দর। মাথার চুলগুলো খুব দ্রুত ঠিক করে নিচ্ছে শিমু। সেই সাথে সালমানের উপর বিরক্ত হচ্ছে। তার তো উচিত ছিলো মায়াকে সাথে করে নিয়ে আসছে এই কথাটা বলা। তাহলে আরেকটু ভালো করে সেজে আসা যেতো। হবু শ্বশুরবাড়ির লোকের সামনে যতটা সম্ভব নিজেকে সুন্দর করে প্রেজেন্ট করার তুমুল প্রচেষ্টা প্রতিটা মেয়ের মধ্যেই দেখা যায়। শিমুও তার ব্যাতিক্রম না। রাগটাকে আপাতত আড়াল করে ঠোঁটের কোনে মিষ্টি হাসির রেখা টেনে নিলো শিমু। আজ শিমুর পাশে মায়াকে বসার জায়গা করে দিলো সালমান। সালমানের মতে বিয়ের আগে এই দুজনের ভাব হওয়াটা অতি জরুরী। একদম কলিজার বান্ধবী টাইপ ভাব। তাহলে বিয়ের পর দ্বন্দ্ব হওয়ার আশংকা ৮০ শতাংশ কমে যাবে৷ বেশ ভালোই খোশ গল্প চলছে মায়া শিমুর মাঝে। শিমুর একটা বিশেষ গুন আছে৷ সে খুব দ্রুত মানুষকে আপন করতে জানে। আজও তার ব্যাতিক্রম হয়নি। ওদের দুজনের হাসির আওয়াজে আশপাশের টেবিলের লোকজন ওদেরকে দেখছে৷ সালমান উপভোগ করছে ব্যাপারটা। দুজন অপরিচিত মেয়ে কিভাবে আধাঘন্টার মধ্যে কলিজার বান্ধবী হয়ে যায় আবার ১৫ মিনিটের মধ্যে জানের দুশমন হয়ে যায়। মেয়ে জাতটাকে সালমানের কাছে প্রায়ই বড্ড বিচিত্র মনে হয়। এদের কারো সাথে মিশতেও দেরী নেই আবার ঝগড়া করতেও দেরী নেই। এসব ভাবতে ভাবতে আপন মনেই হেসে উঠলো সালমান। ঘাড় ডানদিকে ঘুরাতেই একটা টেবিলে চোখ আটকে গেলো সালমানের। সোহানের বয়সী একজন লোক মায়ার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখছে আর কফির মগে চুমুক দিচ্ছে। বেশ তৃপ্তি নিয়ে মায়াকে দেখছে লোকটা। মায়া যখনই অট্টহাসি দিচ্ছে তখন লোকটাও ওকে দেখে মুচকি হাসছে। লোকটার ভাবগতি বিশেষ ভালো ঠেকছে না সালমানের কাছে। বেশ বিরক্তি নিয়ে লোকটার দিকে অনেক্ষণ ধরে তাকিয়ে আছে সে। ব্যাপারটা লক্ষ্য করলো মায়া। সালমান কোথায় তাকিয়ে আছে সেটা দেখার জন্য সোজা তাকালো মায়া। ভয়ে দম আটকে যাচ্ছে মায়ার। মূহূর্ত্বে ঠোঁটের কোন থেকে হাসি সরে গিয়ে চোখে মুখে ভয় জায়গা করে নিয়েছে। শিমু খানিকটা অবাক হয়ে মায়াকে জিগ্গেস করলো
- কোনো সমস্যা মায়া?
শিমুর কথা শুনে মায়ার দিকে তাকালো সালমান। মায়া এখনও লোকটার দিকে তাকিয়ে আছে। লোকটা মায়ার দিকে তাকিয়ে বিদঘুটে একটা হাসি দিচ্ছে৷ সালমান মায়ার কাঁধে হালকা ধাক্কা দিয়ে বললো
- লোকটাকে চিনো তুমি?
- হুম?...না।
- তাহলে তাকে দেখে এতো ভয় পাচ্ছো কেনো? আর লোকটা সেই কখন থেকে তোমাকে দেখছে। কাহিনী কি?
সালমানের প্রশ্নে আরও ঘাবড়ে গেছে মায়া। এসির মধ্যেও ঘামতে শুরু করেছে সে৷
- মায়া কোনো সমস্যা হলে বলো। ব্যাটাকে এখনই সাইজ করে আসি।
- আমি বাসায় যাবো।
- কেনো?
- প্লিজ....
- সালমান আর কথা বাড়িও না। বেচারী ভয় পাচ্ছে। ওকে জলদি বাসায় নিয়ে যাও। পরে ধীরে সুস্থে ঘটনা শুনতে পারবে।
মায়াকে নিয়ে বেরিয়ে এসেছে সালমান। গাড়িতে শিমুও বসে আছে। যাওয়ার পথে ওকে বাসার সামনে ড্রপ করে দিয়ে যাবে। মায়া বারবার ঘাড় ঘুরিয়ে পিছনে তাকাচ্ছে৷ লোকটা পিছু নিয়েছে ওর। সোহানকে খুব প্রয়োজন এখন। খুব বেশি প্রয়োজন। অতীত ওর পিছু নিয়েছে৷ ওকে এক্ষুনি লুকাতে হবে। লুকানোর জায়গা পাচ্ছে না মায়া। হাত পা থরথর করে কাঁপছে। চোখে বারবার পানি এসে জমছে। মাথা ঘুরাতে শুরু করেছে মায়ার। মনে হচ্ছে দম বন্ধ হয়ে এখনি মরে যাবে। সোহানকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে হচ্ছে খুব। এতটাই শক্ত করে ধরতে ইচ্ছে হচ্ছে যেনো অতীতটা ওদের মাঝে না আসতে পারে।



চলবে....
বিদ্যুৎ রায় চটি গল্প কালেকশন লিমিটেড 
http://biddutroy.family.blog
Like Reply
#30
পর্ব-২২
-----------------------------------




নিজের রুমে দরজা আটকে খাটের এককোনায় দেয়ালের সাথে পিঠ ঠেসে বসে আছে মায়া। ফুঁপিয়ে কাঁদছে সে। ভয়ে কুঁকড়ে আছে পুরোপুরিভাবে। কাঁপুনি এখন পর্যন্ত থামেনি। ৪০-৪৫ মিনিট আগে সোহানকে ফোন করেছিলো মায়া। সোহান ফোন রিসিভ করেই মায়ার ফোঁপানোর আওয়াজ শুনতে পেলো। মায়াকে সে শুধু এতটুকু বলতে শুনেছে
- তুমি বাসায় আসো এক্ষুণি। লোকটা বাসার বাইরে দাঁড়িয়ে আছে। আমি ভয় পাচ্ছি।
ব্যস এতটুকু কথা শুনেই সোহান তার মিটিং ফেলেই দৌড়ে বেরিয়ে আসলো। বাসার বাইরে কে দাঁড়িয়ে আছে? কেনো দাঁড়িয়ে আছে? কাহিনী কি এসব কিছুই জানতে চাইলো না সোহান। আপাতত জানার কোনো ইচ্ছাও নেই। কানে শুধু একটা কথাই বাজছে তুমি বাসায় আসো এক্ষুণি। সোহান এতটুকুই বুঝতে পারছে মায়ার তাকে এখন খুব প্রয়োজন।।
সালমান বাহির থেকে কয়েকবার মায়াকে ডেকেছে। কোনো উত্তর দেয়নি মায়া। রাস্তার প্রচন্ড জ্যাম ঠেলে ঠিক ৪৮ মিনিট ১৩ সেকেন্ড পর সোহান বাসায় পা রাখলো। মায়ার রুমের দরজা ধাক্কাচ্ছে সে।
- মায়া আমি এসেছি। গেটটা খুলো।
সোহানের গলার আওয়াজ পেয়ে জানে পানি ফিরে এলো মায়ার। পড়িমরি করে দৌড়ে যেয়ে গেট খুলে দিলো মায়া। সোহানকে দেখে ঠোঁট ভেঙে বাচ্চাদের মতো কাঁদতে লাগলো সে। মায়াকে এভাবে কাঁদতে দেখে ওকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো সোহান।
- এই মেয়ে, কাঁদছো কেনো এভাবে?
-..............
- আসো, খাটে এসে বসো। সালমান পানি নিয়ে আয় তো একগ্লাস।
মায়ার অবস্থা দেখে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেছে সোহান। পরিস্থিতি কি থেকে কি হয়ে গেলো কিছুই মাথায় আসছে না সালমানের। মাথাটা চুল্কাচ্ছে প্রচন্ড রকমে। বিশ্রি পরিস্থিতি তৈরী হয়েছে। গ্লাস হাতে নিয়ে মায়ার সামনে দাঁড়িয়ে আছে সালমান। সোহান বহুভাবে মায়াকে সামলাতে চাচ্ছে। কিন্তু কোনাভাবেই কূল কিনারা করতে পারছেনা। মায়া কেঁদেই চলছে। একেবারে হেঁচকি তুলে ফেলেছে কাঁদতে কাঁদতে। এবার মেজাজ খারাপ হচ্ছে সোহানের। কিন্তু রাগ দেখানোটা হবে বোকামী। এমনিতেই ভয়ে জান চলে যাচ্ছে মেয়েটার। এবার সোহান রাগ দেখালে তো একেবারে বেহুঁশ হয়ে যাবে।
- মায়া আমার কিন্তু আর ভালো লাগছে না। তুমি বলবে কি হয়েছে?
-.............
- কোথায় গিয়েছিলি ওকে নিয়ে?
- শিমুর সাথে দেখা করাতে।
- কি হয়েছে ওখানে?
- একটা লোক মায়ার দিকে এমনভাবে তাকিয়ে ছিলো মনে হচ্ছিলো লোকটা মায়াকে চিনে। ওকে দেখে হাসছিলো মিটমিট করে। মায়া লোকটাকে দেখার পর থেকে ওর অবস্থা নাজেহাল হয়ে গেছে।
সোহানের বুঝতে বাকি নেই লোকটা কে ছিলো? মায়ার কাস্টমারদের মধ্যে কেউ একজন হবে হয়তো। সালমানকে এখান থেকে সরিয়ে দিতে হবে। মায়ার সাথে এক্ষুনি এ ব্যাপারে কথা বলাটা অতি জরুরী হয়ে দাঁড়িয়েছে।
- ইয়ে, সালমান তুই গ্লাসটা এখানে রেখে একটু তোর রুমে যা। আমি ওর সাথে কিছু কথা বলবো।
- সিউর।
গ্লাসটা বেডসাইড টেবিলের উপর রেখে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো সালমান৷ যাওয়ার সময় গেটটা আটকে দিয়ে গেলো। মায়ার গাল চোখ মুছে দিতে দিতে বললো,
- মায়া প্লিজ কান্নাটা থামাও। কে এসেছিলো আমাকে বলো।
- ইমন।
- তোমার কাস্টমার?
- হ্যাঁ।
- এমন জমের মতো ভয় পাচ্ছো কেনো লোকটাকে?
- সে খুব জঘন্য একজন মানুষ। এই লোকটা একদম শুরু থেকে আমার কাছে আসতো। মাঝে আট নয় মাস বিদেশ ছিলো কি একটা কাজে। প্রতি সপ্তাহে তিনদিন করে আমার এখানে আসতো। কি যে অত্যাচার করতো সারাটা রাত ধরে কাউকে বলে বুঝাতে পারবো না৷ আর কারো কাছে যেতো না। শুধু আমার কাছেই আসতো। জোনাকি বুবু অনেক টাকা হাতিয়েছে এই লোকের কাছ থেকে। বিদেশ যাওয়ার আগে লোকটা জোর করে আমার....
- তোমার কি?
- আম.... আমার ভিডিও বানিয়ে নিয়ে গিয়েছিলো।
কথাটা বলেঔ আবার কাঁদতে লাগলো মায়া। ওর কাঁধে হালকা থাপ্পড় দিয়ে সোহান বললো,
- গাধার মতো কাঁদছো কেনো? চুপ করো তো।
- ভিডিওটা করার পর আমাকে বলেছিলো সাত আটমাস তো তোমাকে পাবো না তাই ভিডিওটা নিয়ে যাচ্ছি।
- মেন্টালি সিক নাকি?
- বলতে পারেন অনেকটা তেমনই। উনার আচরনগুলো কেমন যেনো। অস্বাভাবিক ধাঁচের।
- মাইর খেলেই মাথা থেকে ভূত নিচে নেমে যাবে৷ এসব ফালতু লোকের ভয়ে তুমি এভাবে কাঁদছো? আশ্চর্য! সে কি তোমাকে খেয়ে ফেলবে? ওর সাহস আছে তোমাকে কিছু করার? দূর থেকে তোমাকে দেখতেই পারবে। এর চেয়ে বেশি কিছু করতে পারবে না৷
- আপনি বুঝতে পারছেন না৷ লোকটা খুব খারাপ।
- বি স্ট্রং মায়া। তুমি ঐ নষ্ট জায়গা থেকে এখানে এসেছো। এই সমাজে তোমার সারভাইভ করাটা অতটাও সহজ হবে না৷ তোমার অতীত কোনো না কোনো ভাবে তোমার সামনে আসবেই৷ তুমি না চাইলেও আসবে৷ সিচুয়েশান হ্যান্ডেল করতে শিখো। আমি সবসময় তোমাকে সেইভ করার জন্য থাকবো না। আমি তোমাকে সাপোর্ট দিতে পারবো। কিন্তু তোমার যুদ্ধ তোমাকেই সামাল দিতে হবে। আগামীকাল তোমার দোকানের উদ্বোধন করবো। তোমার উপর ব্যবসায়ের ভার দিবো। সেই তুমি যদি এভাবে ঘাবড়ে যাও তাহলে কিভাবে হবে? এভাবে ভয় পেলে তুমি কখনোই একটা নরমাল লাইফ লিড করতে পারবে না। নিজের লাইফ, ক্যারিয়ার কিছুই সাজাতে পারবে না। নাউ ইটস ইউর ডিসিশন। তুমি কি আমাকে নিয়ে ভালোভাবে মাথা উঁচু করে বাঁচতে চাও নাকি ভয়ে কুঁকড়ে বাকি জীবনটা কাটাতে চাও?
-..............
- উত্তর দাও মায়া।
- মাথা উঁচু করে বাঁচতে চাই।
- তাহলে এসব ইমন টিমন মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলো৷ শুধু নিজের ক্যারিয়ার আর আমার দিকে কনসেনট্রেট করো। কে তোমার পিছু নিলো, কে তোমাকে দেখে হাসলো এসব ভেবে মাথা খারাপ করো না।
-.............
- চেহারার কি হাল করেছো! চোখ মুখ ফুলে একদম ভূতের মতো দেখাচ্ছে তোমাকে৷ যাও মুখ ধুয়ে আসো৷
-..............
- কি হলো? যাও।
চোখ মুছতে মুছতে ওয়াশরুমে গেলো মায়া। ওকে সান্ত্বনা দিলেও সোহান নিজেই শান্ত হতে পারছেনা৷ মনের মধ্যে উশখুশ চলছে ভিডিওটা নিয়ে৷ ভিডিওটা যেভাবে হোক ডিলিট করাতে হবে। আর এই ইমনের একটা ব্যবস্থা করতে হবে যাতে মায়া নামক ভূত মাথা থেকে নেমে যায়। একটা দীর্ঘশ্বাস নিলো সোহান। কেউ জানাজানি হওয়ার আগেই পুরো ব্যাপারটা ধামাচাপা দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।




চলবে.....
বিদ্যুৎ রায় চটি গল্প কালেকশন লিমিটেড 
http://biddutroy.family.blog
Like Reply
#31
পর্ব-২৩
-----------------------------------




বিকেলের লাল কমলা রংয়ের আলোটা মায়ার বেডরুমের একপাশের দেয়ালে এসে লেপ্টে আছে। তৈরী হচ্ছে মায়া। শাড়ির আঁচলটা টেনে ঠিক করে নিচ্ছে। আর সোহান ফ্লোরে হাঁটু ভেঙে বসে মায়ার শাড়ির কুঁচিগুলো ঠিক করে দিচ্ছে। আজ সকালেই সোহান মার্কেট থেকে কিনে এনেছে শাড়ীটা। লালের উপর কমলা পাড়ের তাঁতের শাড়ি। শাড়িটা দেখা মাত্রই খুব মনে ধরেছিলো ওর। চোখের সামনে মায়া ভেসে উঠছিলো। কল্পনায় মায়াকে অপরূপ দেখাচ্ছিলো। কিন্তু বাস্তবে সোহানের মনে হচ্ছে সে একটা পরী দেখছে। শাড়ির কুঁচি ঠিক করে খাটে বেশ আয়েশ করে বসলো সোহান। গালে হাত দিয়ে মায়ার কানে ঝুমকা পড়া দেখছে। সোহানের এই মূহুর্তে মনে হচ্ছে মায়াকে নিয়ে কোথাও যাওয়ার দরকার নেই৷ মেয়েটাকে সামনে বসিয়ে রেখে সারা বিকেল, সন্ধ্যা, রাত পর্যন্ত ওকে দেখতে।
- ভাইয়া তোমরা রেডি?
- হুম? হ্যাঁ রেডি।
- বের হই চলো।
- হ্যাঁ আসছি। তুই নিচে গিয়ে গাড়িতে উঠে পড়।
মায়া হয়েছে?
- হ্যাঁ। আচ্ছা আমাকে কেমন দেখাচ্ছে?
- তেমন সুন্দর না। লাগছে আরকি মোটামোটি।
মূহূর্ত্বেই কালো হয়ে গেলো মায়ার মুখটা। আয়নায় নিজেকে ভালোভাবে দেখতে লাগলো। কোনো কিছুর কমতি রয়ে গেলো সাজে? সাজটা কি সুন্দর হয়নি?
- এখন আর দেখে লাভ নেই। চলো। দেরী হয়ে যাচ্ছে।
- সাজ ভালো হয়নি তাই না?
- হয়েছে মোটামুটি।
- কিসের কমতি? বলেন না?
- কিসের কমতি পরে বলছি। এখন চলো।
- নাহ। আগে বলুন।
- উফফ!
মায়ার হাত ধরে টানতে টানতে বাসা থেকে বের করে নিয়ে যাচ্ছে সোহান। মায়ার মনটা খারাপ হয়ে যাচ্ছে। আজ ওর দোকানের উদ্বোধন হবে। অথচ ওকে ভালো দেখাচ্ছে না। ব্যাপারটা বড্ড বেমানান। সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামতে নামতে সোহান বললো
- মাঝে মাঝে প্রেমিকার ত্রুটিগুলো ধরিয়ে দেয়াটা জরুরী। তবেই প্রেমিকা আমার প্রশংসার ক্বদর করবে। ঘটনা হচ্ছে তোমার কোনো ত্রুটি আমি দেখতে পাইনা। তাই মিথ্যা মিথ্যি তোমার ত্রুটি ধরলাম। তোমাকে পরীর মতো দেখাচ্ছে। লাল পরী। ইচ্ছে হচ্ছে রুমের দরজা আটকে তোমাকে সামনে বসিয়ে রেখে ঘন্টার পর ঘন্টা তাকিয়ে থাকি। কিন্তু সে সুযোগ কোথায়? আগে যদি জানতাম শাড়িটা তোমাকে এত মানাবে তাহলে এখন ভুলেও শাড়িটা এখন পড়তে বলতাম না। রাতে পড়তে বলতাম। ঘরের ভিতরে আসা জোছনার আলোতে তোমাকে সামনে বসিয়ে রাখতাম। আর ভাবতাম রুপালী জোছনায় একটা লাল পরী দেখছি।
সোহানের দিকে তাকিয়ে মুখ টিপে হাসছে মায়া। লজ্জা ভর করেছে ওর চোখে মুখে। সেই সাথে ভালোবাসাও।
- দেখো এমনিতেই তোমাকে দেখে মাথা খারাপ হয়ে যাচ্ছে। তারউপর এভাবে হাসি দিয়ে আমাকে আর পাগল করো না প্লিজ। একটা বিশেষ কাজে আমরা বেরুচ্ছি। কাজটা ঠিকমতো করতে দাও প্লিজ। বাসায় এসে আমার দিকে তাকিয়ে যত পারো মুখ টিপে হেসো৷ আমি দেখবো। বাসায় বসে পাগল হলে সমস্যা নেই। রাস্তাঘাটে বের হয়ে পাগল হলে সমস্যা আছে৷ কখন আবার রাস্তা ঘাটে তোমাকে জড়িয়ে ধরে চুমু টুমু খেয়ে বসি তার কোনো ঠিক নেই। সো প্লিজ হাসি বন্ধ করো।
নিচতলায় লিফট এসে থামলো। বেরিয়ে এলো সোহান আর মায়া। সোহান আগে হেঁটে যাচ্ছিলো। পিছন থেকে মায়া এসে সোহানের হাত টেনে আটকালো।
- কি? কিছু ফেলে এসেছো?
- আমাকে কি খুব সুন্দর দেখাচ্ছে?
- এতক্ষণ কি বললাম আমি?
- আরেকবার বলেন।
শব্দ করে হেসে ফেললো সোহান।
- আরো প্রশংসা শুনতে ইচ্ছে হচ্ছে?
- হুমমম। অন্নেএএএক ইচ্ছে হচ্ছে।
- উহুম। এখন না। রাতে বাসায় আসি। তুমি আজকে এই শাড়ি খুলবে না। বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে আবার এই শাড়ি পড়বে। সাজগোজ করবে।
সোহানের হাত শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো মায়া। ঠোঁটে বিস্তৃত হাসির রেখা ফুটে উঠেছে।
গাড়ির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে মায়া সোহান। গাড়ির ভিতরে বসে ওদের দুজনকে দেখছে সালমান। আজকাল সোহানকে দেখলে মনে একধরনের শান্তি পায় সালমান। সোহান প্রচন্ড একা একজন মানুষ। ভাইটার জীবনে সব ছিলো। কিন্তু আগলে রাখার মতো কেও ছিলো না। প্রচন্ড দুশ্চিন্তার রাত গুলোতে মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়ার কেও ছিলো না। আজ তার এমন কেও আছে৷ মায়া নামের একটা পরী আছে। ভাইয়ের সুখ চোখে মুখে দেখতে পায় সালমান। অন্যরকম একটা সুন্দর ভাব ফুটে উঠেছে সোহানের মুখে। সুখের সুন্দর।
সালমান বসে আছে ড্রাইভারের সাথে। পিছনের সিটে বসে আছে মায়া আর সোহান। মায়ার ডান হাতের উপর সোহান নিজের হাতটা রেখে বসে আছে। কিছুক্ষন পরপর মায়ার দিকে তাকাচ্ছে সে। গাড়ির লুকিং গ্লাসে সে দৃশ্য দেখছে সালমান। খুব উপভোগ করছে ব্যাপারটা ও।
দোকানের উদ্বোধন সেড়ে রাতে একটা পাঁচতারা হোটেল থেকে ডিনার কমপ্লিট করলো ওরা তিনজন। খুব বেশি মানুষ না। খুব কাছের দশ বারোজন লোক নিয়ে দোকানের উদ্বোধন সেড়েছে সোহান। শিমুও এসেছিলো। আজ ওর বান্ধবীর গায়ে হলুদ। তাই ওদের সাথে ডিনারে আসতে পারেনি। দোকান থেকেই সরাসরি কমিউনিটি সেন্টারে চলে গিয়েছিলো।
বাসায় ফিরতে ফিরতে রাত দশটা বেজে গেছে। ঘরে ফিরেই মায়াকে যেয়ে ফ্রেশ হয়ে রেডি হয়ে আবার সাজগোজ করতে বললো সোহান। নিজের রুমে যেয়ে সোহানও ফ্রেশ হয়ে নিলো। মায়ার রুমে এসে দেখে তখনও সে বের হয়নি। মায়ার শাড়িটা বিছানার উপর রাখা। কয়েক সেকেন্ড পর মুখ মুছতে মুছতে বেরিয়ে এলো মায়া। বিছানার উপর থেকে শাড়িটা হাতে নিলো মায়া। শাড়ির একপাশ কোমড়ে গুঁজতেই মায়ার হাত থেকে শাড়িটা নিয়ে নিলো সোহান। মায়ার কোমড়ে শাড়িটা গুঁজে দিচ্ছে সে৷
- আপনি শাড়ি পড়াতে পারেন?
- তেমন ভালো না।
- তাহলে আমাকে দিন। আমি পড়ে নিচ্ছি।
- উহুম। আমি পড়াবো। আমি তোমাকে সাজিয়েও দিবো।
মায়ার চোখে পানি ছলছল করছে৷ বড্ড আবেগী সে। অথবা বলা যেতে পারে ভালোবাসার কাঙাল। যত্ন ভালোবাসা না পেতে পেতে শুকিয়ে যাওয়া মরুভূমির অন্তরে পানি ঢালছে সোহান। ভালোবাসার ফুলগাছটা সেই পানি পেয়ে ধীরে ধীরে মনের চতুর্দিকে শক্ত শেকড় গজিয়ে উঠছে।



চলবে....
বিদ্যুৎ রায় চটি গল্প কালেকশন লিমিটেড 
http://biddutroy.family.blog
Like Reply
#32
পর্ব-২৪
-----------------------------------



একটু একটু করে চোখ মেলছে মায়া। ঘুম ভয়ানকভাবে আচ্ছন্ন করে রেখেছে ওর চোখ দুটোকে। সারারাত ভালোবাসায় বিভোর থেকে ভোররাতের দিকে সোহানের বুকে মুখ গুঁজে ঘুমিয়েছে মায়া। অনেক বেলা হয়েছে। ঘরের দেয়ালে রোদের তীব্রতা দেখে তাই বুঝা যাচ্ছে। হাত বাড়িয়ে বালিশের পাশে থাকা মোবাইলটা হাতে নিয়ে দেখলো ১১.১৪ মিনিট। চোখ কচলাতে কচলাতে শোয়া থেকে উঠলো মায়া। পাশে সোহান নেই। বোধহয় অফিস চলে গেছে।
ড্রেসিং টেবিলের উপর একটা সাদা কাগজের উপর তাজা লাল গোলাপ দেখা যাচ্ছে। বোধহয় সোহান রেখে গেছে। প্রচন্ড আগ্রহ নিয়ে খাট ছেড়ে ড্রেসিং টেবিলের কাছে এগিয়ে গেলো মায়া। হাত বাড়িয়ে গোলাপ আর সাদা কাগজটা নিলো। কাগজটা খুললো সে।

" বাবা সকালে ফোন করেছিলো। সিলেট যেতে হবে। খুব জরুরী কাজ পড়ে গিয়েছে। আমি আগামীকাল রাতেই চলে আসবো। কোনো এক অজানা কারনে তোমাকে ঘুমন্ত অবস্থায় অস্বাভাবিক রকমের সুন্দর দেখাচ্ছিলো। তোমাকে জাগাতে ইচ্ছে হয়নি। সিলেট যাওয়ার জন্য রেডি হয়েছি আর তোমার মুখের দিকে তাকিয়ে থেকেছি। এত মায়া কেনো তোমার মাঝে আমি বুঝে পাইনা।
এই শুনো,
আমি এসে পড়বো। খুব জলদি। নিজের খেয়াল রেখো। আর আমি আসার আগ পর্যন্ত বাসার বাহিরে যেও না।
কি ভাবছো? কথাগুলো ফোনে না বলে চিঠিতে কেনো বললাম? প্রেমিক হতে ইচ্ছে হলো তাই চিঠি লিখলাম।
ভালো থেকো।"

চিঠির উপর হাত বুলাচ্ছে মায়া। ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটে উঠেছে ওর। নাকের কাছে গোলাপটা নিয়ে সুবাস নিচ্ছে। ভালোবাসার সুবাস।

মোবাইলে কল এসেছে মায়ার। দৌঁড়ে যেয়ে ফোনটা হাতে নিলো মায়া। সোহানের ফোন এসেছে। এক মূহূর্ত্ব দেরী না করে কলটা রিসিভ করে নিলো ও।

-............
- হ্যালো।
-............
- কি হলো? রিসিভ করে কথা বলছো না কেনো?
- কোনো কথা নেই আপনার সাথে।
- কেনো?
- একে তো আমাকে ফেলে চলে গেলেন অথচ আমাকে একটা বার জাগানোর প্রয়োজন মনে করলেন না?
- তোমাকে জাগাতে ইচ্ছে হয়নি একদম। বিশ্বাস করো।
- আপনার উচিত ছিলো আমাকে ডেকে তোলা। আপনাকে একটা বার জড়িয়ে ধরতাম। দুদিন তো আপনাকে জড়িয়ে ধরতে পারবো না।
- জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে হচ্ছে খুব?
- হুম।
- তাহলে চলে আসি এক্ষুনি?
- নাহ। কাজ শেষ করে ঢাকা আসেন। এরপর পুরো একদিন সময় শুধু আমার। অন্য কাওকে দিতে পারবেন না।
- উহুম। একদিন না। দুদিন তোমার জন্য পুরোপুরি বরাদ্দ থাকবে।
- ওহ একটা কথা তো জিজ্ঞেস করলাম না। আপনি পৌঁছে গেছেন?
- হ্যাঁ। চলে এসেছি। আধাঘন্টা হয়ে গেলো।
- নাস্তা.....
- এই মায়া! আমার ক্লাইন্ট কল করছে৷ পরে কথা বলছি।

কল টা কেটে দিলো সোহান। চিঠিটা এখনো মায়ার হাতে। কি যেনো একটা আছে এই চিঠিটাতে। নেশা জাতীয় কিছু একটা। মায়া যত বার চিঠিটা হাতে নিচ্ছে ততবার মনে হচ্ছে ও শরীরের তাল হারাচ্ছে। মাথাটা ঝিমঝিম করছে।
কলিংবেল বাজছে বাসার। রতন যেয়ে দরজা খুলে দিয়েছে। মায়া বেরিয়ে এসেছে নিজের রুম ছেড়ে৷ মেইন ডোর দিয়ে ড্রইংরুমে ঢুকছেন একজন বয়স্ক লোক। লোকটা মায়ার পরিচিত। এর আগে মানুষটার ছবি দেখেছে ও৷ উনি সোহানের বাবা। মায়াকে পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখছেন উনি।



চলবে....
বিদ্যুৎ রায় চটি গল্প কালেকশন লিমিটেড 
http://biddutroy.family.blog
Like Reply
#33
পর্ব-২৫
-----------------------------------



-দাঁড়িয়ে আছো কেনো? বসো এখানে।
গুটিগুটি পায়ে নজরুল সাহেবের মুখোমুখি সোফাটায় বসলো মায়া। মাথার উপর ফুল স্পিডে ফ্যান চলছে৷ তবু কানের পাশ দিয়ে ঘাম বেয়ে পড়ছে মায়ার।
- পানি খাবে মায়া?
খানিকটা অবাক হলো মায়া। সোহানের বাবা ওর নাম জানেন। কিন্তু কিভাবে?
- শামীম ওকে এক গ্লাস পানি দাও তো।
পায়ের উপর পা তুলে সোফায় হেলান দিয়ে বসলেন নজরুল সাহেব। মায়ার দিকে পানির গ্লাস এগিয়ে দিলো শামীম। গ্লাসটা হাতে নিয়ে বসে আছে মায়া। হাতে থাকা গ্লাসটা সামান্য কাঁপছে। নজরুল সাহেব ঠান্ডা হাসি দিয়ে জিজ্ঞেস করলেন
- তুমি হয়তোবা ভাবতে পারো হুট করে আমি এখানে কেনো? তোমার নাম জানি কিভাবে? তাই না।
উত্তর দিচ্ছে না মায়া। প্রশ্নগুলো সত্যিই ওর মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। কিন্তু মুখ ফুটে বলার শক্তি বা সাহস কোনোটাই নেই।
- দেখো, আমি কম সময় নিয়ে এসেছি। অফিসে অনেক কাজ ফেলে এসেছি। ঘন্টা তিনেক পরই আবার ব্যাক করবো। এখানে আসার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছো তুমি। তোমার সাথে কিছু ব্যাপারে কথা বলবো এরপর চলে যাবো।
-.............
- তুমি তো বোবা না। তাহলে কথা বলছো না কেনো?
- জ্বি।
- সোহান আমার বড় ছেলে। সালমানের চেয়ে ওর প্রতি আমার এক্সপেকটেশন্স অনেক বেশি। আমার বিজনেস সামাল দেয়ার মতো যোগ্যতা সোহানের চেয়ে সালমানের অনেক কম৷ আমার প্রপার্টি কি পরিমান আছে সে কথা নিশ্চয়ই সোহান তোমাকো জানিয়েছে?
- জ্বি না।
- ও যদি না বলে থাকে তাহলে সেসব নিয়ে আমি তোমার সাথে কথা বলবো না। আশা করি এই কয়মাসে তুমি সেটা আন্দাজ করে নিয়েছো। দেখো মায়া, তোমার সাথে সোহানের বিয়ে হয়নি সেটা আমি জানি।
চোখ বড় করে নজরুল সাহেবের দিকে তাকালো মায়া। টি টেবিলের উপর থেকে পানির গ্লাসে চুমুক দিলেন নজরুল সাহেব। আবারও হেলান দিয়ে বসলেন সোফায়।
- এতটা অবাক হওয়ার কি আছে? সোহান আমার সন্তান। হতে পারে ও আমার কাছ থেকে দূরে থাকে। ও এখন বড় হয়ে গেছে। তারমানে তো এই না আমি ওর খোঁজ নিবো না। কখন কি করছে না করছে সেসব জানবো না। শুনেছি ও নাকি তোমাকে প্রচন্ড যত্নে রাখে। যত্নটা কিজন্য রাখে সে ব্যাপারে আমার জানা নেই। হতে পারে ও তোমাকে সত্যি ভালোবাসে আবার হতে পারে এটা ওর সাময়িক মোহ। এটা তোমাদের নিজস্ব ব্যাপার। তোমরা ভালো বলতে পারবে। আমি সেটা জানি না। তবে আমার ধারনা এটা মোহ। সোহানের এখন ত্রিশ চলছে। স্বাভাবিকভাবে ওর এই মূহুর্তে কাউকে প্রয়োজন যে ওর যত্ন নিবে। ওর চাহিদাগুলো মিটাবে৷ ওর একাকীত্ব দূর করবে৷ বলতে পারো তোমাকে ও এনেছে ওর রিফ্রেশমেন্টের জন্য। হতে পারে ও এখনই বিয়ে করার জন্য মেন্টালি প্রিপেয়ারড না৷ এজন্য তোমাকে নিয়ে এসেছে। তোমাকে কিছুদিন এখানে রাখবে। যখন মেন্টালি প্রিপেয়ারড হবে তখন তোমাকে আবার তোমার আগের জায়গায় ফেরত রেখে আসবে।
চোখে ছলছল পানি নিয়ে মায়া বললো,
- উনি আমাকে বলেছে ভালোবাসে। খুব ভালোবাসে।
- আচ্ছা ঠিকাছে ধরে নিলাম ও তোমাকে ভালোবাসে। তুমি ও তো ওকে ভালোবাসো তাই না?
-...............
- থাক বলতে হবে না। আমি উত্তর জানি। আচ্ছা মায়া যাকে ভালোবাসো তার মন্দ নিশ্চয়ই কখনো চাইবে না?
- না।
- তুমিই বলো, তুমি কি সোহানের যোগ্য? সোহানের পাশে কি তোমাকে মানায়? সোহানের স্ট্যাটাস আর তোমার স্ট্যাটাস কি ম্যাচ হয়? তোমার বাবার পরিচয়টা পর্যন্ত তুমি জানো না। তোমার মা আর তুমি একটা নষ্ট পাড়ায় বড় হয়েছো। সোহানকে আমরা কতটা যত্নে কতগুলো স্বপ্ন নিয়ে বড় করেছি জানো? সোহান সবাইকে বলে বেড়ায় তুমি ওর ওয়াইফ। তুমি কি এটা জানো ওর অফিসের কর্মচারীদের মাঝে তোমার ব্যাপারে কথা চলছে৷ তুমি কোত্থেকে এসেছো সেটা অফিসের কমবেশি সবাই জানে। কিন্তু সোহানের মুখোমুখি এসব কথা কেও বলতে পারে না ভয়ে। আজকে অফিস জানাজানি হয়েছে। কালকে সোসাইটির লোকজন জানাজানি হবে। কর্মচারীরা নাহয় ওর সামনে মুখ খুলে না চাকরি চলে যাবে সে ভয়ে৷ কিন্তু সোসাইটির লোক? ওরা নিশ্চয়ই চুপ করে থাকবে না। সোহানকে ইঙ্গিত দিয়ে অথবা সরাসরি তোমার ব্যাপারে কথা বলে বসবে। আবার তুমি কোথাও ওর সাথে বেড়াতো গেলে। তোমার পুরানো কোনো কাস্টমারের সাথে দেখা হয়ে গেলো। সোহানের সামনেই তোমাকে খারাপ প্রস্তাব দিয়ে বসলো। তখন কি হবে? ওর কতটা ইনসাল্ট হতে হবে আন্দাজ করতে পারছো? ও কি এধরনের বাজে ব্যাপারগুলোর মুখোমুখি হওয়ার যোগ্য? আজ যদি তোমার সাথে না জড়িয়ে আমাদের স্ট্যাটাসের কারো সাথে সম্পর্কে জড়াতো তাহলে নিশ্চয়ই ওকে এসব সমস্যার মুখোমুখি হতে হতো না। এই ব্যাপারগুলো কি আমার ছেলেকে শান্তিতে থাকতে দিবে? যাকে ভালোবাসো তুমি কি চাও না সে ভালো থাকুক? তার জীবনটা সুন্দর হোক?
নিঃশব্দে কাঁদছে মায়া। মনে হচ্ছে কেও গলা টিপে ধরে রেখেছে৷ নিজেকে তুচ্ছ থেকে আরো বেশি তুচ্ছ মনে হচ্ছে। উনার প্রতিটা কথা খুবই যুক্তিযুক্ত মনে হচ্ছে মায়ার। কথাগুলো সত্যি ছিলো। বাস্তবতাটা আজ বোধহয় একটু বেশিই নির্মম মনে হচ্ছে। নিজের পরিচয়টা এতদিন মেনে নিলেও আজ কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছে না মায়া। ইচ্ছে হচ্ছে গায়ের চামড়া কেঁটে আবার নতুন চামড়া লাগিয়ে নিতে। যে চামড়ায় কোনো ময়লা লেগে থাকবে না।
- এখন বাকিটা তোমার ইচ্ছা। তুমি কি সোহানকে ভালোবেসে ওর ক্ষতি করবে নাকি দূরে সরে গিয়ে ওর উপকার করবে। আমার যা বলার ছিলো আমি বললাম। তুমি কি সিদ্ধান্ত নিবে তা তুমি নিতে পারো। আসি।
সোহানের বাবা উঠে চলে গেলেন। মায়ার মাথায় কথাগুলো তীরের মতো বিঁধছে। মনে হচ্ছে যেনো মস্তিষ্কের ভিতরটা ক্ষত বিক্ষত হয়ে যাচ্ছে।
পুরো আধাঘন্টা ড্রইংরুমের সোফায় বসে ছিলো মায়া। এই আধাঘন্টায় মন খুলে কেঁদেছে এবং নিজের সাথে বোঝাপড়া করেছে । থাকবে না ও সোহানের জীবনে। চলে যাবে আগের জায়গায়। যাকে ভালোবাসে তার অপমান বা কষ্টের কারন সে হতে চায়না। পাশে থেকেই ভালোবাসতে হবে এমন কোনো কথা নেই। দূর থেকেও ভালোবাসা যায়। দূরে সরে গিয়ে যদি ভালেবাসার মানুষটা ভালো থাকে তবে তাই হোক। সবার গল্পের সমাপ্তি সুন্দর হয়না। ওর ভাগ্যে অসুন্দর সমাপ্তি ছিলো। ভাগ্যকে মেনে নিতে হবে। নিজের অবস্থানটাকে মেনে নিতে হবে। দাঁত মুখ শক্ত করে ব্যাগ গুছিয়ে নিয়েছে মায়া। রতনের হাতে একটা চিঠি ধরিয়ে বেরিয়ে এসেছে সংসার থেকে। ওর সংসার, যেটা সোহান ওকে বুঝিয়ে দিয়েছিলো। যা আজ এই এ মূহূর্ত্ব থেকে মায়ার জন্য প্রাক্তন হয়ে গেছে।



চলবে....
বিদ্যুৎ রায় চটি গল্প কালেকশন লিমিটেড 
http://biddutroy.family.blog
Like Reply
#34
পর্ব-২৬
-----------------------------------




বাসাতেই ফোনটা রেখে গেছে মায়া। মিটিং সেড়েই মায়ার ফোনে কল দিচ্ছে সোহান। দুইবার কল করার পর তিনবারের মাথায় কলটা রিসিভ করলো রতন৷
- ভাই.....
- মায়া কোথায়?
- ভাবী তো গেছে গিয়া।
- মানে?
- যেইখানতে আপনে তারে নিয়া আইছিলেন সেইখানে গেছে গিয়া। আপনের আব্বায় আইছিলো। ভাবীরে বহুতক্ষন বহুকিছু বুঝাইলো৷ ভাবী বড় সাহেবের বুঝ মাইন্না গেছে গিয়া।
- বাবা কি বলেছে ওকে?
- কইছে আপনের লগে ভাবী থাকলে নাকি আপনের বদনাম হইবো। আপনেরে অপমান দেখতে হইবো। আরো বহু কিছু কইসে। এরপর ভাবী আমার হাতে একখান চিঠি দিয়া ব্যাগ গুছায়া গেছে গিয়া। জিগাইসিলাম, ভাবী কই যান। আমারে কইলো আমারে যেখানে মানায় সেইখানে যাই।
সোহান দাঁত কিটমিট করছে। এই মিটিং টা চাইলে সালমানকে দিয়েই সামলানো যেতো। ওকে এমন পীড়াপীড়ি করে সিলেট পাঠানোর পিছনে এই কারন ছিলো তাহলে। সারাবছর ছেলের খবর থাকে না, আজ এসেছে ছেলের অপমান-সম্মান নিয়ে ভাবতে। বন্ধু মহলে যখন বাপ মায়ের পরকীয়ার কুকীর্তি নিয়ে আলোচনা হয় তখন বুঝি ছেলের অপমান হয়না? যেমন মেজাজ খারাপ হচ্ছে বাবার উপর তারচেয়ে দ্বিগুন খারাপ হচ্ছে মায়ার উপর। ইচ্ছে হচ্ছে থাপড়িয়ে চোয়ালের দাঁত সব ফেলে দিতে। আদরে আদরে ঠ্যাং বেশি লম্বা হয়ে গেছে৷ তাই ধেইধেই করে ঘরের বাইরে যাওয়ার শখ জেগেছে ওর। তুলে আছাড় মারলেই সব ঠিক হবে। বাবার নম্বরে ডায়াল করলো সোহান। ফোনের সুইচ অফ দেখাচ্ছে। এরপর কল করলো নজরুল সাহেবের পারসোনাল সেক্রেটারি মিজানের কাছে। কল রিসিভ করলেন উনি।
- হ্যালো স্যার....
- আপনার বড় সাহেব কোথায়?
- এইতো এখানেই।
- ফোনটা দিন।
মিজান ফোনটা নজরুল সাহেবের দিকে এগিয়ে বললো,
- সোহান স্যার ফোন করেছেন।
ফোনটা কানে নিলেন নজরুল সাহেব।
- হ্যাঁ সোহান বলো।
- আমাকে নিয়ে এত সমস্যা কেনো তোমার?
- কিসের সমস্যা?
- আমি যদি বাইরের বেশ্যা ঘরে তুলে এনে ভালো থাকি তাহলে সমস্যা কোথায়?
- দেখো ও আমাদের যোগ্য না। তোমার জন্য মেয়ে দেখছি। কয়েকটাদিন অপেক্ষা করো। আমি তোমার বিয়ের ব্যবস্থা করবো। যদি এখনই বিয়ে না করতে চাও তাহলে সমস্যা নেই। এংগেজমেন্ট করে রাখলাম৷ মেয়ের সাথে ঘুরবে ফিরবে। চাইলে লিভ টুগেদারেও যেতে পারো। সেটা তোমরা বুঝে নিও।
- মায়ার সাথে লিভ টুগেদারে ছিলাম সেটাতে সমস্যা কি?
- তুমি কি নিজের স্ট্যাটাস ভুলে গেছো? ঐ মেয়েটা প্রফেশনাল প্রস্টিটিউট। তুমি কেনো ওর পিছনে ছুটছো? তুমি আন্দাজ করতে পারবে না সোসাইটিতে এই মেয়েকে নিয়ে তোমার কতটা হেনস্তা হতে হবে। যতটুক সম্মান তোমার আছে পুরোটা তোমাকে হারাতে হবে।
- আমি ছোটবেলা থেকেই হেনস্তা হয়ে আসছি। তোমার আর মায়ের পরকীয়ার ব্যাপারটা এমন কোনো মানুষ বাদ নেই যে জানে না। তুমি যে আমার বয়সী মেয়ের সাথে বিগত সাত বছর যাবৎ ঘুরছো সেটা কি? এর আগে আরো দুই মহিলার সাথে প্রেম করেছো। ইচ্ছামতো টাকা পয়সা লুটিয়েছো। তুমি ভালো? যাদের সাথে ঘুরো তারা ভালো? তারাও প্রস্টিটিউট। পার্থক্য এতটুকুই তোমরা সেক্স করো ফাইভস্টার হোটেলে বা কোনো ডুপ্লেক্স ভিলায়। আর মায়ারা সেক্স করে পুরান ভাঙাচোরা বিল্ডিং বা টিনের ঘরে। তোমরা ঐ মেয়েদের পিছনে লাখ টাকা ঢালো প্রতিমাসে। মায়ারা পায় ২-৩ হাজার করে। আর মা? মায়ের পরকীয়ার কথাও কম বেশি সবাই জানে৷ এগুলো নিয়ে সোসাইটির লোকজন, ফ্রেন্ড সার্কেলে কম কথা শুনিনি। আর আমি কি দুধে ধোঁয়া তুলসী পাতা? মায়ার আগেও তিন চারটার সাথে ফিজিক্যাল রিলেশন ছিলো আমার। সে হিসাব করতে গেলে মায়া আর আমার মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই৷ ও আমার জীবনে আসার পর থেকে মনে হয়েছে হ্যাঁ আমি বেঁচে আছি। আমি নিঃশ্বাস নিতে পারছি। শান্তির ঘুম ঘুমাতে পারছি। প্লিজ এই শান্তিটুকু আমার কাছ থেকে কেড়ে নিও না। যদি তোমার বা মায়ের কোনো সমস্যা থাকে মায়াকে মেনে নিতে বা তোমাদের যদি মনে হয় মায়ার কারনে তোমাদের অপমান হতে হবে। তাহলে ঠিকাছে, আমি আমার মায়াকে নিয়ে অন্য কোথাও চলে যাবো। তোমাদের ফ্যামিলিতে আমি কখনো পা দিবো না। ধরে নিও সোহান নামের কেও তোমাদের জীবনে কখনো ছিলোই না।
- দেখো সোহান, তুমি খুব ভালো করেই জানো আমি তোমাকে ছাড়া অচল। বিজনেসটা তোমাকে ছাড়া আমি মেইনটেইন করতে পারবো না। সালমানের হাতে দায়িত্ব দেয়া মানে ব্যবসাটাকে মাঝ সমুদ্রে ভাসিয়ে দেয়া। তুমি যত যাই করো না কেনো তোমার সাথে যেভাবে পারি আমি রিলেশন টিকিয়ে রাখবো। তাই হয়তো আজ এভাবে বলার সাহস পাচ্ছো। যাইহোক বড় হয়েছো। যথেষ্ট বুদ্ধিমান ছেলে তুমি। যদি ঐ মেয়েকে নিয়ে তুমি সিরিয়াস হয়ে থাকো তাহলে বিয়ে করে নাও। আমি চট্টগ্রামে রিসিপশন পার্টির এ্যারেঞ্জ করি। ঢাকায় তো সবাইকে বলে বেড়াচ্ছো তুমি বিয়ে করেছো। রিলেটিভরা তোমার বিয়ের খবর শুনলে বলবে পার্টি দেইনি কেনো?
- মায়ার কথা তোমাকে কে বলেছে?
- এক ক্লাইন্ট বললো। কোন পার্টিতে নাকি মায়াকে দেখেছে। বললো তুমি নাকি বউ নিয়ে গেছো। তখনই খটকা লেগেছিলো বিয়ে করলে তো আমাদের অবশ্যই জানাতে। খবর নিলাম ম্যানেজারের কাছ থেকে। ম্যানেজার সব বললো মায়া কে, কি করে। অফিসের কোন এক এমপ্লয়ি নাকি বাকি এমপ্লয়িদের বলে বেড়াচ্ছে মায়া কি করতো। সেখান থেকে ম্যানেজার জানতে পেরেছে। দেখো তুমি যদি ওকে নিয়ে বাকি লাইফ কাটাতে চাও তাহলে মায়ার অতীত ধামাচাপা দেয়ার ব্যবস্থা করো। কোনোভাবেই এসব কথা তোমার মা, রিলেটিভ কাওকে জানতে দেয়া যাবে না।
- হ্যাঁ সেটা আমি দেখছি।
- তোমার বোধ হয় আমাদের উপর অনেক ক্ষোভ তাই না?
- ক্ষোভ রেখে লাভ কি? তোমরা কি আমার জন্য যার যার পরকীয়া ছেড়ে দিবে? সালমান আর আমি ছোট থেকে অবহেলা পেয়েই বড় হয়েছি। মানুষ হয়েছি বাড়ির কাজের লোকদের হাতে৷ থাক বাবা। সেসব আমি আর বলতে চাই না। আমি জাস্ট শান্তি চাই। আর তুমি আজকের কাজটা খুব বেশিই জঘন্য করেছো। মেয়েটা চলে গেছে। প্লিজ ফের কখনো এ ধরনের কথা মায়াকে বলবে না। ওকে নিয়ে সমস্যা থাকলে আমাকে বলো। ওকে নিয়ে আমি দূরে চলে যাবো। রাখি।
কলটা কেটে দিলো সোহান। সামনেই বসা ছিলো জাহিদ। সে জানে এখনই সোহান ওকে প্লেনের টিকেট বুক করতে বলবে। জাহিদ ফোনে কথা চলাকালীন অবস্থাতেই টিকেট বুক করে ফেলেছে।
- জাহিদ...
- জ্বি স্যার?
- খোঁজ নিয়ে দেখোতো টিকিট আছে কিনা ঘন্টা দুয়েক পরের?
- আছে স্যার। বুক করে ফেলেছি।
- তামাম দুনিয়াতে তুমিই একজন মানুষ যে কিনা আমি কিছু বলার আগেই আমার মনের কথা বুঝে ফেলো। মায়ার সাহসটা চিন্তা করো একবার। ও ঐ জায়গায় আবার চলে গেছে। ছোটলোকের বাচ্চা। বেশি আদর করেছি তো তাই আদরের মর্ম দিলো না। আচ্ছা টিকিট পেলে কেমন করে?
- ভাগ্য ভালো ছিলো স্যার। তিনটা সিট খালি ছিলো। দুটো সিট বুক করে নিয়েছি।
- চলো তাহলে। এয়ারপোর্টে যাই।
- জ্বি স্যার।
এয়ারপোর্টে যাওয়ার পথে সালমানকে কল করলো সোহান। ফোন করে শুধু এতটুকু বললো,
- দুই ঘন্টার মধ্যে ঢাকা এয়ারপোর্টে থাক। আমি আসছি।
- শোনো জাহিদ, আমি মায়াকে আজই বিয়ে করবো। তুমি ওদের এলাকার মসজিদের মুয়াজ্জিন বা ইমাম যাকে পাও নিয়ে আসবে। আর আমি গাড়ি নিয়ে সরাসরি মায়ার গলিতে যাবো।
- জ্বি স্যার।


চলবে....
বিদ্যুৎ রায় চটি গল্প কালেকশন লিমিটেড 
http://biddutroy.family.blog
[+] 1 user Likes Biddut Roy's post
Like Reply
#35
dada akbare post kore dile onk valo hoito. suspense e vugte hoito na. ?
Like Reply
#36
পর্ব-২৭
-----------------------------------



ঢাকা এসে পৌঁছেছে জাহিদ আর সোহান। গাড়িতে উঠে বসেছে মায়ার গলির উদ্দেশ্যে। সাথে সালমানও আছে। ইতিমধ্যে চার পাঁচবার সোহানকে জিজ্ঞেস করে ফেলেছে আমরা কোথায় যাচ্ছি? উত্তরে কিছুই বলেনি সোহান। বিরক্ত লাগছে সালমানের। এবার বেশ চেঁচিয়েই জিজ্ঞেস করলো।
- যাচ্ছি কোথায় আমরা? বলতে পারছো না?
- তোকে কিছু কথা বলবো। মন দিয়ে শুনবি।
- কি?
- মায়াকে আমি বিয়ে করিনি।
চোখ বড় হয়ে গেছে সালমানের। সেই সাথে কপালের মাঝেও কয়েকটা ভাঁজ পড়ে গেছে।
- তাহলে মায়া কি হয় তোমার?
- আগে আমাকে কথা শেষ করতে দে। এরপর কথা বলিস। মায়া আসলে নরমাল কোনো মেয়ে না৷ ও একজন প্রফেশনাল প্রস্টিটিউট ছিলো। জন্মসূত্রে। আমি ওকে ঐ পাড়া থেকে মোটা অংকের টাকা দিয়ে আমার কাছে নিয়ে এসেছিলাম। ওর কাছে আমি প্রচন্ড শান্তি পাই। ভালোওবাসি খুব। আমি চাই ও আর দশটা নরমাল মেয়েদের মতো লাইফ লিড করুক। ওকে পুরো সম্মানটুকু দিতে চাই।
-..............
- সালমান, আমার উপর খুব মেজাজ খারাপ হচ্ছে তাই না?
- আমার এই মূহূর্ত্বে কিভাবে রিএ্যাক্ট করা উচিত ভেবে পাচ্ছি না।
- আজ সাড়ে এগারোটার দিকে বাবা এসেছিলো। বাবা মায়ার সম্পর্কে সব জেনে গেছে। এখানে এসে ওকে অনেক ধরনের কথা শুনিয়েছে। তাই ও চলে গেছে। এখন আমি যাচ্ছি ওর পাড়াতে। আজই ওকে বিয়ে করবো। তুই আমার ভাই। তাই তোকে নিয়ে যাচ্ছি। আর কেও থাকুক বা না থাকুক আমি চাই তুই আমার সামনে থাক বিয়ের সময়।
-ওহ্। আমি তো নয়টার দিকেই চলে গেলাম শিমুর সাথে দেখা করতে। তাই বাবা আসার খবর জানি না।
- সত্যিটা জানার পর মায়াকে মেনে নিতে তোর অসুবিধা হবে তাই না?
- তুমি ওকে নিয়ে খুশি তো?
- আমাকে দেখে বুঝিস না?
- ব্যস। তুমি আমাকে কিছু বলোনি। আমিও কিছু শুনিনি। মায়া কোত্থেকে এসেছে সেসব আমার জানার দরকার নেই। ও কেমন সেটা জানার দরকার। আর সেটা আমি জানি। আজকের পরে এই ব্যাপারে কোনো কথা আমি শুনতে চাই না। তুমিও বলবে না। এতদিন ওর সাথে আমার সম্পর্ক যেমন যাচ্ছিলো তেমনই থাকবে।

সোহানের চোখে মুখে স্বস্তি ফুটে উঠেছে। পরম যত্নে ছোট ভাইয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো সে।

-বাবার সাথে কথা হয়েছে?
- হুম।
- কি বলেছো?
- যা শোনানো অতি জরুরী ছিলো তাই শুনিয়েছি।
- বাবা কি বললো?
- মায়াকে নিয়ে চলে যাবো বলার পর বললো এভাবে না থেকে বিয়ে করো। আমি পার্টির এ্যারেঞ্জ করি।
- হা হা হা। ঘাবড়ে গেছে। তোমার জিদ কেমন তা তো জানা আছে।
- হুম।
- তো খালি হাতে বিয়ে করবে? বিয়ের শাড়ী, জুয়েলারি কিছু কিনে নিয়ে যাও।
- ঐ বেঈমানের জন্য একটা সুতাও নিবো না। যেটা পড়ে আছে সেটা পড়েই বিয়ে করবে।
- এত ক্ষেপে আছো কেনো? ঠান্ডা হও। আজ তোমার বিয়ে।
- ক্ষ্যাপার মতো কাজ করলে তো ক্ষেপবোই। ও কোন সাহসে বাসা থেকে বের হলো? বাবা কি বললো না বললো সেসব শুনে বের হয়ে গেলো। আমি যে ভালোবাসলাম সেটার কোনো মূল্য নেই?
- আচ্ছা, হতে পারে বাবার কথা শুনে নিজেকে আর কন্ট্রোল করতে পারেনি। তাই হয়তো.....
-আমি এত কিছু জানিনা। ও বের হবে কেনো এটা হচ্ছে মূল কথা। আমি ওকে যাওয়ার আগে না করে গেছি বাসা থেকে যেনো না বের হয়। তবু কেনো বের হলো? আমি কি কুকুর বিড়াল? আমার কোনো দাম নেই?

সালমান জানে মায়ার উপর ঝাল মিটানোর আগ পর্যন্ত সোহান ঠান্ডা হবে না। তাই সে চুপ করে গেলো।

মায়ার পাড়াতে এসে গাড়ি থামলো। জাহিদ নেমে চলে গেলো পাশের গলিতে। ওখানে মসজিদ থেকে হুজুর নিয়ে আসতে৷ সোহান আর সালমান সেই গলি দিয়ে হেঁটে ভিতরের দিকে যাচ্ছে। এমন সরু গলিতে গাড়ি নিয়ে ঢুকা সম্ভব না। তাই গাড়িটা গলির মাথাতেই ড্রাইভারকে বসিয়ে রেখে এলো সোহান।

জানালার পাশে বসে আছে মায়া। সেই প্রথমদিনের মতো। যেখানে সোহান ওকে প্রথমবারের মতো দেখছিলো। নিচে থেকে মায়ার দিকে নজর পড়লো সোহানের। আজ আর সেদিনের মতো মুগ্ধতা তৈরী হচ্ছে না। মেজাজ চরম থেকে চরম স্তরে পৌঁছে যাচ্ছে। ইচ্ছে হচ্ছে এই মূহূর্ত্বে চুলের মুঠিতে ধরে হেঁচড়াতে হেঁচড়াতে নিচে নিয়ে আসতে। সালমানকে নিচে দাঁড় করিয়ে সোজা দোতলায় মায়ার রুমে চলে গেলো সোহান। সজোরে ধাক্কা দিয়ে মায়ার রুমের দরজাটা খুললো। আওয়াজ পেয়ে চমকে উঠলো মায়া। বিছানায় শুয়ে ছিলো মায়ার মা বিউটি। এভাবে সোহানকে ঘরে ঢুকতে দেখে শোয়া থেকে লাফিয়ে উঠে বসলেন।
মায়ার দিকে এমন ভাবে সোহান তাকিয়ে আছে যেনো মনে হচ্ছে ওকে এই মূহূর্ত্বে জ্যান্ত মাটিতে পুঁতে ফেলবে। চোখজোড়া প্রচন্ড রাগে লাল হয়ে আছে সোহানের। আর মায়ার চোখ লাল হয়ে গেছে অনবরত কাঁদতে কাঁদতে। সোহানকে দেখে কান্নার মাত্রা আরো বেড়ে গেছে ওর। সোহান এগিয়ে এসে মায়ার ডান হাত ধরে হেঁচকা টান দিয়ে বললো
- নিচে চল।
- বাবা, আপনে আমার মাইয়্যাডারে কই নিয়া যাইবেন?
- কোনো কথা বলবেন না আপনি। মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে আপনার মেয়েকে আমার দায়িত্বে নিয়েছি। অতএব আমাদের মাঝে কোনো ধরনের কোনো কথা আপনি বলবেন না।
- ঐ তুই নাম।
- হাত ছাড়েন।
- কিহ্? আবার বল?
- হাত ছাড়েন।
এবার মায়ার দু হাতের বাহু ধরে টেনে খাট থেকে নামালো সোহান৷ কোলে তুলে নিলো মায়াকে। মায়ার বাম হাতে ছোট একটা কাঁচের বোতল দেখা যাচ্ছে। সোহান জানে এটা কিসের বোতল। চাইলে এখনই এই বোতল হাতে নেয়ার অপরাধে ওর হাত ভেঙে দিতে পারতো। তবে সে এখন তেমন কিছুই করবে না। বিয়েটা হোক। এরপর বাসায় নিয়ে ওকে জন্মের শিক্ষা দিবে৷ সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামছে মায়াকে নিয়ে। মায়া লাগাতার চেঁচামেচি করে যাচ্ছে, "আমাকে ছাড়ুন"।
অন্যান্য ঘরগুলো থেকে মেয়েরা বেরিয়ে এসেছে তামশা দেখার জন্য। তাদের কাছে মনে হচ্ছে যেনো সিনেমা দেখছে। সোহানের পিছু পিছু বাকিরাও নেমে আসছে শেষ অব্দি কি হয় দেখার জন্য। জোনাকি যেখানে বসে কাস্টমারদের সাথে দরদাম ঠিক করে সেখানে মায়াকে নিয়ে ঢুকলো সোহান। জোনাকি সোফায় দু পা উঠিয়ে পান চিবুচ্ছে আর পুরোনো দিনের গান শুনছিলো,
- হাওয়া ম্যা উড়তা যায়ে, মোরা লাল দুপাট্টা মাল মাল কা.....

সোহানকে দেখে দু পা নিচে নামিয়ে বসলো। পানের পিক দানীতে ফেলে বললো,
- কোনো সমস্যা? মাইয়্যাডারে এমনে কোলে নিয়া আইলেন যে।
- ও পালিয়ে এসেছে বাসা থেকে। তাই আজ ওকে বিয়ে করবো। যাতে আর কোথাও ছুটতে না পারে। মায়ার রেগুলার কাস্টমার কারা ছিলো ওদের নাম ঠিকানা সব রেডি করো। কাগজে লিখে আমাকে দাও। আর আরেকটা ছেলে আছে। ওর কাছে নাকি মায়ার ভিডিও আছে। ঐ ছেলের এড্রেস অতি জরুরী। ওরটা সবার আগে আমাকে ব্যবস্থা করে দিবে।
- কিয়ের ভিডু স্যার? ঐ যে নীল ভিডু?
- কিহ্? নীল ভিডিও কি?
- ঐ যে কুকামের ভিডু করে না ওগুলা?
- ওহ্। হ্যাঁ ওগুলা।
- চিন্তা কইরেন না৷ পাইয়া যাইবেন।
- টাকা লাগবে?
- না। যেই টাকা দিছেন তাতেই চলবো। ছেমড়ি দুপুরে আইছে পরেই কইছিলাম তোরে এই জায়গায় রাখুম না। স্যার অনেকটি টাকা দিছে আমারে। তুই যে পালায়া আইছোস তোরে আবার ধইরা নিয়া যাইবো দেখিস। সে তোরে ভালোবাসে। পুরুষ মাইনষের চোখ দেখলেই বুঝতে পারি। সে তোরে খালি ব্যবহারের লাইগা নেয় নাই। বিউটিও অনেক্ষণ বুঝাইসে। ছেমড়ি খালি এক কথাই কয় একট রাতই তো। এরপর সব ঝামেলা শেষ হয়া যাইবো।
- ওর ঝামেলা শেষ করাচ্ছি আমি।

পিছন থেকে জাহিদ এসে ডাক দিলো সোহানকে।
- স্যার...
ঘাড় ঘুরিয়ে তাকিয়ে দেখে সালমান আর জাহিদ দাঁড়িয়ে আছে। সাথে একজন হুজুর। দেখে মনে হচ্ছে সুযোগ পেলে এখনই এখান থেকে দৌঁড়ে পালাবে।
- বিয়ে কি উনি করাবে?
- জ্বি স্যার।
- শুরু করেন।

বিবাহ প্রক্রিয়া শুরু করে দিয়েছেন কাজী। আপাতত তিনি মায়ার মুখের দিকে তাকিয়ে আছেন কবুল শোনার জন্য। মায়া মুখে কুলুপ এঁটে রেখেছে। সোহান খুব পীড়াপীড়ি করছে কবুল বলার জন্য। হাতের বিষের বোতলটা খুলে সোহানকে বললো
- আমাকে একদম জোর করতে আসবানা। আর নয়তো আমি বিষ খেয়ে মারা যাবো।

মায়ার গালে কষে থাপ্পর লাগালো সোহান। থাপ্পড় এতটাই জোড়ে ছিলো যে টাল সামলাতে না পেরে ফ্লোরে পড়ে গেলো ও। হাত থেকে বিষের বোতলটা ছিটকে পড়ে গেলো। হাত ধরে আবার টেনে তুললো সোহান।
- কবুল বলবি নাকি আবার থাপ্পড় খাবি?
- কবুল।



চলবে....
বিদ্যুৎ রায় চটি গল্প কালেকশন লিমিটেড 
http://biddutroy.family.blog
Like Reply
#37
পর্ব-২৮
-----------------------------------



বিয়ে সেড়ে মাত্রই বাসায় ফিরেছে ওরা। মায়াকে নিজের রুমে যাওয়ার জন্য ইশারা দিলো সোহান। চুপচাপ মাথা নিচু করে রুমে চলে গেলো মায়া। সালমানও চলে গেলো নিজের রুমে। খানিকক্ষণ বিশ্রাম করবে তাই। বড় একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে সোফায় গা ছেড়ে হেলান দিয়ে বসলো সোহান। প্রচন্ড পানির পিপাসা লেগেছে ওর। মনে হচ্ছে পুরো এক জগ বরফ ঠান্ডা পানি এখনই শেষ করে ফেলবে। রতনকে ডেকে এক গ্লাস ঠান্ডা পানি দিতে বললো সোহান৷ চোখ বন্ধ করে সোফার উপর ঘাড় ফেলে বসে আছে সে৷ কিছুক্ষণ পর পানি নিয়ে এলো রতন। এক গ্লাস পানি খাওয়ার পর আবার আরেক গ্লাস পানি চাইলো সোহান৷ রতন পের গ্লাস পানি এনে দিলো সোহানকে। একটু পরপর থেমে থেমে পানি খাচ্ছে সোহান।
- রাতের রান্না হয়েছে?
- না ভাই৷ তরকারী কাইটা রেডি করতাছি।
- রান্না করতে হবে না। টাকা দিচ্ছি বাহির থেকে খাবার কিনে আনো।
- আইচ্ছা।
- মায়ার চিঠিটা কোথায়?
- আমার ঘরে।
- নিয়ে আসো।
- আইচ্ছা।
পা থেকে মোজা গুলো খুলে সোফার পাশে ফ্লোরে ছুঁড়ে মারলো সোহান। হালকা গরম পানিতে গোসল করাটা এই মূহূর্ত্বে অতি জরুরী বলে মনে হচ্ছে। তবে তার চেয়ে আরো বড় জরুরী কাজটা হলো মায়াকে শায়েস্তা করা।
- ভাই,,,, চিঠি।
চিঠিটা হাতে নিলো সোহান। খুব বেশি বড় না। মাত্র চার লাইনের চিঠি।
" আমি তোমায় না দেখি
তুমি আমার না হও
আমি যত দূরে যাই চলে
তুমি কাছে রও।"
পানি খাওয়ার পর রাগ কিছুটা স্তিমিত হয়ে এসেছিলো। চিঠি পড়ার পর মনে হলো সেই রাগের আগুনে কেরোসিন পড়েছে। হাতের মুষ্টিতে চিঠিটা নিয়ে দুমড়ে মুচড়ে ফেলেছে সোহান। পায়ের কাছে বাসায় পড়ার রাবারের স্যান্ডেলগুলো পড়ে ছিলো। একটা স্যান্ডেল হাতে নিয়ে মায়ার রুমে গেলো সোহান। মায়া বারান্দায় দাঁড়িয়ে বাহিরে তাকিয়ে আছে। রুমের গেট আটকে দিয়ে বারান্দা থেকে মায়ার চুলের মুঠি ধরে ঘরে নিয়ে আসলো সোহান। পায়ের স্যান্ডেল দিয়ে এলোপাথাড়িভাবে পেটাচ্ছে মায়াকে।
- কবি হবি তুই? কবি হওয়ার শখ জাগছে? তুই আমারে চার লাইনের কবিতা লিখে ঐ পাড়ায় আবার গেছোস? ছোটলোকের বাচ্চা। বেঈমান। আমারে রাইখা যাওয়ার এত্ত শখ তোর? দূরে যাবি আমারে রাইখা?
জুতা ফেলে এবার দুগালে লাগাতার চড় দিতে থাকলো সোহান।
- এত্ত শখ কেন আমারে রাইখা যাওয়ার? হ্যাঁ? কোনো কিছুর অভাব রাখছি? ভালোবাসা সম্মানে কোনো অভাব রাখছি? মাথায় তুলে রাখছি তোরে আমি। ঐ লোক আমার বাপ হইছে তো কি হইছে? তুই জানোস না তার সাথে আমার সম্পর্ক কেমন? ঐ লোক এটা সেটা এসে বলবে আর তুই ঘর ছেড়ে চলে যাবি? আমি তোর কিচ্ছু না?একটাবার মনে করলি না আমি চলে গেলে সোহানের কেমন কষ্ট লাগবে? সোহান তো আবার একা হয়ে যাবে? আমাকে দুই পয়সার দাম দিতে মন চায় না? আমার কষ্ট হয় না? আমি মানুষ না? আমার কি কোনো ফিলিংস নাই? ঐ লোক তোরে কি বললো না বললো ঐটা তোর কাছে মূখ্য আর আমার ফিলিংস? ঐটা মূখ্য না? কেমনে বের হয়ে গেলি তুই? ঐ এই সংসার কি তোর না? আমি কি তোর হাতে সংসার বুঝায়া দেই নাই? তুই তোর সংসার ফালায়া কেন বের হইলি?
ফুঁপিয়ে কাঁদছে মায়া। সোহানের অভিযোগ মাখা কথাগুলো ছুরির মতো কলিজায় গিয়ে বিঁধছে। মানুষটার ভালো চাইতে গিয়ে খুব বেশি কষ্ট দিয়ে ফেলেছে। সোহানকে খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো মায়া।
- সরি।
এক ধাক্কায় মায়াকে নিজের বুক থেকে সরিয়ে খাটের উপর ফেলে দিলো সোহান। প্রচন্ড রাগে ফুঁসছে ও। চোখে পানি নেই। অথচ কষ্টের গভীরতা সোহানের চোখে স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে মায়া।
- একদম ভালোবাসা দেখাতে আসবি না। তুই আমাকে কখনো আপন ভাবিসনি। আমি একাই তোকে ভালোবেসে গেছি।
- আমি আপনাকে ভালোবাসি। সত্যিই ভালোবাসি।
- তার নমুনা আজকে আমি দেখেছি। আমি তোকে এত ভালোবাসি। তবু তুই কিভাবে ভাবতে পারলি তুই চলে গেলে আমি ভালো থাকবো? আমার শরীরের একটা অঙ্গ হয়ে গিয়েছিস তুই। তোকে ছাড়া আমি শান্তি পাই না। বুঝিস না? আমাকে বুঝতে ইচ্ছা হয় না তোর তাই না? ভালোই তো বাসিস না। বুঝবি কিভাবে? দূরে যাওয়ার খুব শখ তাই না? যা। দূরেই থাক তুই। আমার কাছে তোকে আসতে হবে না৷ কথাও বলতে হবে না। তোকে ভালোবেসে বিপদে পড়ে গেছি। তোকে চোখের সামনে না দেখলে তো আমিই দম আটকে মরে যাবো। তাই তোকে আবার ফেরত এনেছি। যাতে তোকে চোখের সামনে দেখে এটলিস্ট নিঃশ্বাসটুকু নিতে পারি। তোর কাছেও আমি আসবো না। তোর সাথে আজকের পরে আর কোনো কথাও বলবো না। তুই থাক তোর মতো।
মায়ার রুম থেকে বেরিয়ে নিজের রুমে বেরিয়ে গেলো সোহান। পিছু পিছু যাচ্ছে মায়া।
- প্লিজ আমাকে মাফ করে দিন। বড়সড় একটা ভুল করে ফেলেছি।
মায়ার মুখের উপর ঠাস করে দরজাটা আটকে দিলো সোহান। আলমারী থেকে গেঞ্জি ট্রাউজার বের করে ওয়াশরুমে চলে গেলো গোসল সাড়তে। বাহির থেকে ডাকছে মায়া,
- শুনছেন, দরজাটা একটু খুলুন প্লিজ। আমাকে মাফ চাওয়ার একটা সুযোগ তো দিন।
বিগত আধাঘন্টা যাবৎ দরজা ধাক্কাচ্ছে
মায়া। বারবার এক কথা বলেই যাচ্ছে দরজাটা একটু খুলুন। আমার কথাগুলো একটু শুনুন। সালমান এসে কয়েকবার ডেকে গেছে। ভেতর থেকে কোনো সাড়াশব্দ আসছে না। সোহান গোসল সেড়ে চুপচাপ ফ্যানের নিচে মাথা দিয়ে শুয়ে আছে। যত খুশি দরজা ধাক্কাতে থাকুক। মায়ার সাথে কোনো কথা বলবে না সে৷ মেয়েটা জঘন্য খারাপ। তাই তো ওকে ফেলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল।



চলবে....
বিদ্যুৎ রায় চটি গল্প কালেকশন লিমিটেড 
http://biddutroy.family.blog
Like Reply
#38
পর্ব-২৯
-----------------------------------




সালমানের কাছ থেকে টাকা নিয়ে রতন আর শামীম গেছে বাহির থেকে খাবার আনতে। সালমান নিজের রুমে বসে কথা বলছে শিমুর সাথে। গুনে গুনে পুরো দুঘন্টা পার হয়ে গেলো। মায়ার হাজার ডাকের পরও দরজা খুললো না সোহান। এমনকি ভিতর থেকে একটু আওয়াজ করলো না৷ এই দুঘন্টায় তিনটা সিগারেট শেষ করেছে সোহান৷ বাহিরে দরজায় মাথা ঠেকিয়ে বসে ফ্লোরে বসে আছে মায়া। মাথাটা প্রচন্ড রকমে ঘুরাচ্ছে ওর। সকাল থেকে না খেয়ে আছে। তারউপর সকাল থেকে কেঁদেই যাচ্ছে। আপাতত ওর আর কান্না পাচ্ছে না। চোখের সামনে ধীরে ধীরে সব ঘোলাটে হয়ে আসছে। বসে থাকার ক্ষমতাটা শেষ হয়ে আসছে ওর। গলা শুকিয়ে আসছে প্রচন্ড রকমে। পানি খাওয়া দরকার। ফ্লোর ছেড়ে ডাইনিং টেবিলের কাছে গেলো মায়া। নূন্যতম জোর পাচ্ছে না শরীরে। হাত পা কাঁপছে ওর। পানির গ্লাসটা হাতে নিতেই চোখের সামনে সমস্ত কিছু অন্ধকার হয়ে গেলো। হাত থেকে গ্লাসটা পড়ে ভেঙে গেলো। ফ্লোরে লুটিয়ে পড়লো মায়া। ভাঙা কাঁচের উপর বাম হাতটা পড়লো। কনুই থেকে কব্জি পর্যন্ত চারটা কাঁচের টুকরা ঢুকেছে। গ্লাস ভাঙার আওয়াজ পেয়ে ফোন কানে নিয়েই রুম থেকে বেরিয়ে এলো সালমান। মায়াকে ফ্লোরে পড়ে থাকতে দেখে ফোন ফেলে মায়ার কাছে ছুটে এলো সালমান। বাহির থেকে সজোরে চিৎকার করলো সে।

- ভাইয়া, জলদি বের হও। মায়া সেন্সলেস হয়ে গেছে।

সালমানের চিৎকার শুনে বিছানা ছেড়ে লাফিয়ে উঠলো সোহান। রুম থেকে বেরিয়ে এসে দেখে মায়াকে কোলে তুলে নিয়েছে সালমান। মায়ার রুমের দিকে যাচ্ছে সে। সালমানের পিছু পিছু সোহানও যাচ্ছে। চেহারা থেকে মূহূর্ত্বে রাগটা সরে গিয়ে দুশ্চিন্তার ছাপ ভেসে উঠেছে। মায়াকে খাটে শুইয়ে দিলো সালমান। মায়ার পাশে হেলান দিয়ে বসেছে। সোহান। একহাতে মায়ার কপালে হাত দিয়ে অন্য হাতে মায়ার হাত শক্ত করে ধরে রেখেছে সোহান। মায়ার বাম হাতটা বিছানার সাথে লেগে আছে। হালকা গোলাপী রঙের চাদরটায় লাল রক্ত লেপ্টে যাচ্ছে। রক্ত দেখে আৎকে উঠলো সোহান। মেয়েটা আবার রগ কাটলো না তো। বাম হাতটা ওর হাতে নিয়ে ভালোভাবে দেখছে সোহান।
নাহ, রগ কাটেনি। কাঁচ বিঁধেছে।

- সালমান, এক গ্লাস পানি আন। আর স্বপন ভাইয়ের নাম্বারটা আছে না?
- হ্যাঁ।
- উনাকে কল করে বল সোহান ভাইয়ের ওয়াইফ সেন্সলেস হয়ে গেছে৷ হাতে কাঁচের টুকরাও ঢুকেছে। এখনি বাসায় আসতে বল।
- যাচ্ছি।
- পানিটা আগে দিয়ে যা।
- হুম হুম৷ দিচ্ছি।

রুমের এসি ছেড়ে দিলো সোহান। ডাইনিং টেবিলের উপর থেকে এক জগ পানি আর গ্লাস দিয়ে গেলো সালমান। জগ থেকে একটু একটু পানি নিয়ে মায়ার মুখে ছিটাচ্ছে সোহান। তাতে কোনো লাভ হচ্ছে না। মুখের উপর ছিটিয়ে থাকা পানিগুলো টিস্যু দিয়ে মুছে দিচ্ছে সোহান। মায়া চোখ খুলছে না৷ মনে হচ্ছে যেনো কলিজায় কামড় লেগে আছে৷ দুশ্চিন্তায় কপালের মাঝে ভাঁজ পড়ে গেছে সোহানের।

- ভাইয়া, স্বপন ভাইকে ফোন করেছিলাম।
- কি বললো?
- দুই তিন মিনিট লাগবে আসতে।
- উনি চেম্বারে না?
- ছিলো। আমাদের বাসার সামনে দিয়েই উনার বাসায় ফিরছিলো। আমাদের গলিতেই আছে। চলে আসবে।
- মায়া তো চোখ খুলছে না।
- টেনশন নিও না। আসলে ও তোমার রাগ দেখে অভ্যস্ত না তো। তাই বেশি ভয় পেয়েছে। ঠিক হয়ে যাবে।
- হাত থেকে তো ব্লিডিং হচ্ছে। কাঁচগুলো কি বের করবো?
- না। ওয়েট করো। স্বপন ভাই আসুক।

বাসার কলিংবেল বাজছে। খুব দ্রুতগতিতে সালমান যেয়ে দরজা খুললো। স্বপন ঘরে ঢুকতে ঢুকতে বেশ অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো,

- সোহান বিয়ে করেছে? সিরিয়াসলি?
- হ্যাঁ।
- শুনলাম না তো কিছু।
- আমরা সামনে অনুষ্ঠান করবো। তাই এখন কাওকে জানাইনি।
- কোন রুমে?
- ঐ যে। ঐটাতে।

স্বপন দেখা মাত্রই বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো সোহান। মায়ার পাশে বসার জায়গা করে দিলো স্বপনকে। মায়ার মুখের দিকে একনজর তাকালো স্বপন। এরপর নজর গেলো হাতের দিকে। ফোনে সালমান বলেছিলে হাতে কাঁচ ঢুকেছে। কাঁচগুলো আগে বের করতে হবে। মায়ার হাতটা ঘেটেঘুটে দেখছে স্বপন। তিনটা ছোট কাঁচের টুকরা আর একটা মাঝারি সাইজের টুকরা আছে। মোটামুটি বড় একটা অংশ কেঁটেছে কিন্তু সেখানে কাঁচ নেই।

- সালমান?
- জ্বি?
- নিচে যাও। আমার গাড়িতে সার্জারি কিট আছে। আর মেডিসিনের নাম লিখে দিচ্ছি। ফার্মেসি থেকে নিয়ে আসো৷
- আচ্ছা।

কাগজে ঔষধের নাম লিখে দিলো স্বপন। সালমান নিচে গিয়েছে মেডিসিন আর সার্জারী কিট আনতে। সোহানকে পাশে বসতে বললো স্বপন। ড্রেসিং টেবিলের সামনে থেকে বসার টুল টেনে এনে স্বপনের মুখোমুখি বসলো সোহান।

- বিয়ে করেছো কবে?
- এইতো ৪ মাস হয়ে যাচ্ছে।
- তোমার সাথে গত সপ্তাহেও দেখা হয়েছে। কই কিছু বললে না তো?
- মনে ছিলো না।
- মেয়েকে দেখে তো মনে হচ্ছে বয়স একদম কম।
- হ্যাঁ। ১৮ বছর।
- এতটুকুন একটা মেয়েকে এভাবে কেও মারে সোহান?

স্বপনের মুখের দিকে নিশ্চুপ তাকিয়ে আছে সোহান।

- মেয়ের দিকে একবার তাকিয়ে দেখো তো। দুগালে হাতের আঙুলের ছাপ স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে। ছয়মাসও হয়নি বিয়ে করেছো। এখনই এভাবে মারামারি শুরু করে দিয়েছো। হাতে কাঁচ ঢুকলো কিভাবে? গ্লাস টাইপ কিছু দিয়ে মেরেছো?
- না৷ ভাঙা কাঁচের উপর পড়ে গিয়েছিলো।
- পড়ে গিয়েছে নাকি ধাক্কা দিয়েছো?
- না না। ধাক্কা দেইনি। পড়ে গিয়েছে।
- বয়স বাড়ছে তোমার। এখনও নাকের ডগায় রাগ চড়ে থাকে তোমার। এগুলো কোনো কথা? মেয়েকে যদি এভাবে মারো তাহলে কি ও তোমার সংসার করবে?
- বাসা থেকে চলে গিয়েছিল। এজন্যই মেরেছি।
- তাই বলে এভাবে মারবে? দেখো তো মেয়েটা অজ্ঞান হয়ে গেছে।
- আমি আসলে বুঝিনি এমন কিছু ঘটে যাবে।
- রাগটা কমাও সোহান। আর কত? বিয়ে শাদী করেছো। এখন নিজের উপর কন্ট্রোল আনো। এত ছোট বউ পেলে তো কোলে বসিয়ে রাখতাম সারাক্ষণ। আর তুমি কিনা এভাবে মারলে।

চোখ পিটপিট করছে মায়ার। স্বপন দেখতে পেয়ে উঠে দাঁড়ালো। সোহানকে ইশারা দিলো মায়ার পাশে বসার জন্য। রুম থেকে বেরিয়ে এলো সে। তার মতে এই মূহুর্তে চোখ মেলে সোহানকে চোখের কাছে দেখাটা মায়ার জন্য খুব জরুরী।


চলবে....
বিদ্যুৎ রায় চটি গল্প কালেকশন লিমিটেড 
http://biddutroy.family.blog
Like Reply
#39
পর্ব-৩০
-----------------------------------



কিছুক্ষণ আগেই মায়ার হাত ব্যান্ডেজ করে দিয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে গেছে স্বপন। বিছানায় হেলান দিয়ে বসে আছে মায়া। ওর মুখোমুখি বসে প্লেটে ভাত মাখাচ্ছে সোহান।

- হা করো।
ডানে বামে মাথা নাড়লো মায়া। সোহানের মুখে বিরক্তির স্পষ্ট ছাপ ভেসে উঠছে।

- খাবে না কেনো?
- মাফ করেছেন আমাকে?
- মাফ না করলে মুখে তুলে খাইয়ে দিতাম না।
- আপনার মুখ দেখে মনে হচ্ছে রেগে আছেন।
- হ্যাঁ রেগে আছি। চুপচাপ খাও। তাহলে আর রাগ করবো না।
- গলা দিয়ে খাবার ঢুকবে না।
- কেনো?
- কেমন মুখ করে বসে আছেন। আপনাকে এভাবে দেখতে আমার একদম ভালো লাগে না। অশান্তি লাগে।

মাথা নিচু করে চেহারা স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছে সোহান। কিন্তু পারছে না। আসলে ও রেগে নেই। চেহারায় এখন যা ভেসে উঠছে সেটা পুরোটাই হচ্ছে দুশ্চিন্তা। কিন্তু মায়া সেটাকে ধরে নিয়েছে রাগ৷

- এক্ষুনি চেহারা স্বাভাবিক করাটা কি খুব জরুরী?
- হুম।
- পারছি না।
- আমি কি আপনাকে খুব কষ্ট দিয়ে ফেলেছি?

ভাতের প্লেটটা বিছানার উপর রেখে মায়াকে এক হাতে টেনে নিজের বুকে জড়িয়ে ধরলো। সোহানের বুকে কান পেতে হৃদস্পন্দন শুনছে। আওয়াজটা ওর বড্ড আপন। এই আওয়াজটাতে নিজের অস্তিত্ব খুঁজে পায় মায়া।

- সত্যি কথা বলবো?
- হুম।
- কষ্টের চেয়ে ভয় পেয়েছি বেশি। তোমাকে কোনোভাবেই হারাতে চাই না। বলতে পারো তুমি আমার বেঁচে থাকার অবলম্বন হয়ে গিয়েছো। তুমি চলে গেলে আমি কাকে নিয়ে বাঁচবো বলো?

বুকের উপর থেকে মাথাটা সরিয়ে সোহানের চোখের দিকে তাকালো মায়া। সোহানের কন্ঠে অভিযোগ, ভয় দুটোই টের পাচ্ছে ও। সোহানের মুখে হাতাচ্ছে মায়া।

- আমি খুব বোকা। বোকা একটা মেয়েকে মন দিয়ে বসেছেন।
- হুম ভবিষ্যৎ অন্ধকার।
- যাক অবশেষে আপনার মুখে সামান্য হলেও হাসি দেখতে পেলাম। আমাকে ভাত খাওয়াবেন না?

সোহানের বুকে হেলান দিয়ে বসে আছে মায়া। ভাতের প্লেট একহাতে নিয়ে, অন্যহাতে মায়াকে খাইয়ে দিচ্ছে।

- মায়া....
- হুম?
- আর কখনো এমন করবে?
- মাথা খারাপ? আপনার হাতে মার খাওয়ার শখ নেই আমার। আপনি খুব জোরে চড় মারেন।
- সরি।
- সরি বলতে হবে না। আমি জানি আপনি আমাকে এমনি এমনি মারেননি। দোষটা আসলে আমার। পাগল ছাগলের মতো এমন একটা সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত হয়নি। আপনাকে একটাবার বলা উচিত ছিলো৷ জানেন আমি তো মরে যাবো সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছিলাম? ভেবেছিলাম রাতে বিষ খাবো।
- জ্বি। জানি আমি। আপনার হাতে বিষের বোতল দেখেছি। এজন্যই আপনাকে জুতাপেটা করেছি।

শব্দ করে হাসছে মায়া৷ মায়ার হাসিতে বেশ অবাক হচ্ছে সোহান।

- হাসছো কেনো?
- জুতার বাড়ি খেয়ে বুদ্ধি সুদ্ধি জায়গামতো এসে গেছে৷ আর জীবনেও এমন বোকামী করবো না।
- আমি বুঝিনা আমার রাগ এত সহজে কিভাবে হজম করো? তোমাকে এত মারলাম তবু একটু রাগ হওনি আমার উপর?
- আপনাকে ভালোবাসি৷ তাই হজম করতে অসুবিধা হয়না৷ আর সবচেয়ে বড় কথা আপনাকে আমি আমার মনের কোন জায়গায় বসিয়েছি তা আপনি জানেন না। কোনোদিন বুঝিয়ে বলতেও পারবো না। আপনার দশটা গুনের মাঝে একটা দোষ মেনে নেয়া কোনো ব্যাপার না।
- সবাই তো দোষটাই দেখে।
- সবাই তো ভাবে আমি পঁচে গেছি। কিন্তু আপনি তো আমাকে সুবাস ছড়ানো ফুল ভাবেন। যেই পুরুষ আমার মতো মেয়ের মাঝে ভালোবাসা খুঁজে পায়। বেঁচে থাকার অবলম্বন খুঁজে পায় তার দোষ কিভাবে দেখি বলেন তো?

মুখ বাঁকিয়ে হাসলো সোহান। প্লেট থেকে শেষ লোকমাটা নিয়ে মায়ার মুখে তুলে দিলো সে।
- আরো ভাত নিবো?
- উহুম। পেট ভরে গেছে।
- বসো। পানি নিয়ে আসছি।

পানির গ্লাস হাতে রুমে আসলো সোহান। মায়ার দিকে এগিয়ে দিলো গ্লাসটা। গ্লাস হাতে নিয়ে মায়া বললো

- আপনি খাবেন না?
- হ্যাঁ। এখন খাবো।
- ওহ৷ চলুন খাবেন।
- তুমি কোথায় যাচ্ছো?
- ওমা! আপনি খাবেন না! আপনার প্লেটে খাবার বেড়ে দিবো।
- চুপ করে শুয়ে থাকো৷
- পরে শুবো। আপনার খাওয়া শেষ হোক। এরপর।
- আমি তর্ক একদম পছন্দ করি না।
- জানি তো।
- তাহলে করছো কেনো?
- বউরা অহেতুক তর্ক করবে এটা খুব স্বাভাবিক ব্যাপার।

হেসে ফেললো সোহান। মায়ার গাল টেনে বললো,

- ইশশ! বউ বউ ভাব চলে এসেছে।
- ওমা! বিয়ে হয়েছে না আমার! ভাব তো আসবেই। আরও কত কি আসবে।
- কত কি আসবে মানে?
- দারোগা ভাব আসবে আমার মাঝে৷ আপনাকে আমি প্রচুর শাসন করবো। আমার কথার বাহিরে গেলে ঘরে তুফান শুরু করে দিবো। রান্নাঘরের পাতিলগুলো ফ্লোরে আঁছাড় দিবো। আপনাকে ঘরের বাহিরে দাঁড় করিয়ে রাখবো। আপনাকে ছেড়ে চলে যাওয়ার হুমকি দিবো।
- সবই ঠিকাছে৷ শেষের লাইনটা ছাড়া। এবার তো চুলের মুঠি ধরেছি। ফের ছেড়ে যাওয়ার কথা বললে চুল একদম গোঁড়া থেকে উপড়ে ফেলবো৷ একটা চুলও মাথায় থাকবে না।

সোহানের গলা পেঁচিয়ে ধরলো মায়া।
- চলে যাওয়ার হুমকি যদি না দেই তাহলে বউ হলাম কিসের?
- অন্যের দুর্বলতা নিয়ে মজা করতে খুব ভালো লাগে তাই না?
- উহুম মজা না৷ আপনার রাগের আড়ালে লুকিয়ে থাকা ভালোবাসাটা দেখতে ভালো লাগে।



চলবে....
বিদ্যুৎ রায় চটি গল্প কালেকশন লিমিটেড 
http://biddutroy.family.blog
Like Reply
#40
পর্ব-৩১
-----------------------------------




মায়ার মাথায় পানি ঢালছে সোহান। ঘুমানোর সময় তো ঠিকই ছিলো। জ্বরটা এসেছে ঘন্টাখানেক হবে হয়তো। জ্বরটা কখন এসেছে সেটা জানে না সোহান। খাওয়া শেষে মায়াকে রুমে পাঠিয়ে সালমান আর সোহান মিলে ম্যাচ দেখছিলো টিভিতে। ম্যাচ শেষে রুমে এসে মায়ার মাথার বালিশটা ঠিক করতে গিয়ে ওর কপালের স্পর্শ লেগেছিলো সোহানের হাতে। তখনই টের পেয়েছে মায়ার জ্বর এসেছে। মায়া কি যেনো বিড়বিড় করছিলো। কিছুই বুঝতে পারেনি সোহান। দেরী না করে বাথরুম থেকে আধা বালতি পানি ভর্তি করে নিয়ে এসে মায়ার মাথায় ঢালছে৷ চোখ বন্ধ করে রেখেছে মায়া। কাঁপা গলায় সোহানকে ডাকছে ও।

- এই.....
- খুব কষ্ট হচ্ছে মায়া?
- এই.....
- হুম, শুনছি তো।
- কোথায় আপনি?
- এইতো তোমার মাথার কাছে।

মাথার ওপাশে হাতড়িয়ে সোহানকে স্পর্শ করার চেষ্টা করছে মায়া। সোহানের গেঞ্জির গলায় হাত ঠেকলো। গেঞ্জিতে খামচে ধরে সামনের দিকে টেনে আনলো ও।

- অ্যাই.....
- হুউউম?
- চুমু খাবো।
- হ্যাঁ দিবো। আগে মাথায় পানি ঢালি।
- না। এখনি।

মায়ার কপালে চুমু খেলো সোহান। চোখ মেলে তাকালো মায়া। চোখজোড়া লাল হয়ে আছে। ঠিকমতো চোখ মেলতে পারছে না। তবুও বহু কষ্টে সোহানের দিকে আধখোলা চোখে তাকালো ও।

- চোখ জ্বালা করছে খুব।
- দাঁড়াও পানি দিয়ে দিচ্ছি।
- উহুম। পানি না। চুমু খাবো।
- চুমু খেলে চোখের জ্বালা কমবে?
- হুউম। কমে যাবে।

মনে মনে হাসলো সোহান।
মায়ার চোখজোড়ায় চুমু খেলো সে। সোহানের গেঞ্জি এখনো খামচে ধরে রেখেছে মায়া। গেঞ্জি ধরে ফের টানাটানি করছে।

- আরো চুমু খেতে চাও?
- না। ঘুমাবো।
- আচ্ছা ঘুমাও। আমি মাথায় পানি ঢালি।
- ঢালতে হবে না। খাটে আসেন।
- তারপর?
- আপনি বসে থাকবেন। আমি আপনার কোলে বসে ঘুমাবো।

মায়ার আবদারে প্রচন্ড হাসি পাচ্ছে সোহানের। সেই সাথে ভালোবাসাটাও বাড়ছে। সত্যিই মেয়েটা ছোট। প্রচন্ড আহ্লাদী। এত আহ্লাদী তো ছিলো না। গত একমাস যাবৎ আহ্লাদটা বাড়ছে ওর। ভালোই লাগে সোহানের। খুব উপভোগ করে ব্যাপারটা।

-গেঞ্জিটা ছাড়ো। তোমার মাথাটা মুছে দিতে হবে।
- না, মুছবো না৷ কোলে ঘুমাবো।
- মাথা না মুছলে ঠান্ডা লেগে যাবে তো।
- ওহ তাইতো। আপনি মুছে দিবেন?
- আমি ছাড়া আর কে মুছে দিবে?
- হুম। তাও কথা।
- এখন ছাড়ো।

গেঞ্জিটা ছেড়ে দিলো মায়া। বালতিটা বাথরুমে রেখে বারান্দা থেকে মায়ার তয়লাটা নিয়ে আসলো সোহান। মায়াকে ধরে শোয়া থেকে উঠিয়ে বসালো৷ চুলগুলো খুব যত্ন নিয়ে মুছে দিচ্ছে সে।

- আমাকে কোলে নিবেন না?
- নিবো তো।
- কখন?
- এইতো এখনি।

সোহানের বুকে গা এলিয়ে দিলো মায়া। মায়ার ভেজা চুলের পানিতে সোহানের গেঞ্জি একটু একটু করে ভিজে যাচ্ছে৷ ভেজা চুলে নাক ডুবালো সোহান। এক হাতে চুলের গোঁড়ায় হাতাচ্ছে সে৷ অন্য হাতে মায়াকে জড়িয়ে ধরেছে। মায়াকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিলো সোহান। দু'বাহুডোরে মায়াকে বন্দী করে ফেলেছে৷ মায়ার ঠোঁটজোড়া প্রবলভাবে টানছে সোহানকে। মায়ার ঠোঁটে নিজের ঠোঁট স্পর্শ করতেই মনে পড়লো মায়া অসুস্থ। মেয়েটার আজ জ্বর এসেছে৷ খুব দ্রুত সরে এলো সোহান। খাটের বাম পাশের বালিশটাতে মায়াকে শুইয়ে দিলো সোহান। ডান পাশের বালিশে নিজে শুয়ে মায়াকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরলো সোহান।



চলবে.....
বিদ্যুৎ রায় চটি গল্প কালেকশন লিমিটেড 
http://biddutroy.family.blog
[+] 1 user Likes Biddut Roy's post
Like Reply




Users browsing this thread: 6 Guest(s)