Thread Rating:
  • 39 Vote(s) - 3.46 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Romance ভোদার সামনে সবাই কাদা/কামদেব
#61
চমৎকার লাগছে দাদা, এখনো পর্যন্ত সুচির মনে নীলের প্রতি প্রেম বেঁচে আছে।
Like Reply
Do not mention / post any under age /rape content. If found Please use REPORT button.
#62
Suchir sathe ki Neil er deka hobe ??
Like Reply
#63
[৩২]


      মাসীমণি অনিকে প্রণাম করার পর মাম্মিকে প্রণাম করলে সুরঞ্জনা পা সরিয়ে নিলেন না  পাথরের মূর্তির মত দাঁড়িয়ে ছিলেন।চোখের পাতায় চিক চিক করছিল জল। অনি পারমিতা এসেছিল স্টেশন পর্যন্ত তুলে দিতে।অনি বলল,পৌছে খবর দিও।
ট্রেন ছেড়ে দিলে পারু হাসতে হাসতে হাত নাড়ছিল সুচি জানে পারুটা খুব চালু হাসি দিয়ে বুকের কষ্টটা ঢেকে রাখতে চাইছে।ট্রেনের চিহ্ন মিলিয়ে যেতে পারু অনিকে জড়িয়ে ধরে কেদে ফেলল।অনির্বান বাধা দিল না।সব সময় বাধা দিতে নেই।
কমলাবাড়ি উচ্চ মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়।দোতলা এল টাইপ বাড়ি। একাদশ-দ্বাদশ ধরে বারোশোর উপর ছাত্রী। ছাত্রীদের হস্টেলে আমার মত জনা পাঁচ-ছয় শিক্ষিকার থাকার ব্যবস্থা।অধিকাংশ স্থানীয় এবং আর বাকীরা আশপাশ অঞ্চল থেকে আসেন।
রাতে শুয়ে শুয়ে টুকুনের কথা ভাবছিলাম,ভীষণ দুষ্টু হয়েছে।বেশ ছিলাম মাসীমণির বাড়িতে,একা থাকতে থাকতে এটাও অভ্যাস হয়ে যাবে।কিশোর বয়সের কথা মনে পড়ল।কলেজে পড়ার সময় কখনো মনে হয়নি একদিন আমিও পড়াবো। কলেজেই প্রথম দেখা নীলের সঙ্গে,বোকা বোকা নিরীহ ধরনের ছেলেটাকে দেখে কেমন ভাল লেগে গেল। একদিন মাসিকের প্যাড ওর গায়ে পড়েছিল ভেবে হাসি পায়। বোকাটা কিছুই জানতো না। এখন কোথায় আছে কি করে কে জানে।মাম্মি বলছিল ওরা আর পাড়ায় থাকে না।প্রথম প্রথম ওর জন্য মন কেমন করতো,এখন আর করে না।সত্যি কথা বলতে কি বিয়ে ব্যাপারটা   এখন তেমন নাড়া দেয় না।সত্যিই জীবনটা বেশ মজার।
হস্টেলের থেকে কলেজের দুরত্ব আধ মাইল মত। ভালই লাগছে কম বয়সী মেয়েদের মধ্যে, ধীরে ধীরে মানিয়ে নিচ্ছে সুচিস্মিতা।কলেজের সম্পাদক সুখেন বর্মন বেশ সজাগ কলেজ নিয়ে।মাঝে মাঝেই কলেজে আসেন খোজ খবর নিতে।প্রথম দিন নানা প্রশ্নের মধ্যে একটা প্রশ্ন ছিল,ম্যাডাম এত বয়স হল বিয়ে করেন নি কেন?
–চাকরির সঙ্গে এটা কি খুব সম্পর্কিত?
–হে-হে না না এমনি জানতে ইচ্চে হল তাই–কিছু মনে করবেন না।
হেড মিস্ট্রেস সুপর্ণা মিত্র মুখ টিপে হাসছিলেন।পরে একান্তে বলেছিলেন,মেয়েদের সঙ্গে  কথা বলতে উনি পছন্দ করেন।মেয়ে হয়ে জন্মেছেন এই উৎপাত সহ্য করতে হবে।তার উপর আপনি বিয়ে করেন নি।
সুখেনবাবু স্থানীয় রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত,ব্যবসায়ী মানুষ।কলেজের জন্য অনেক টাকা দিয়েছেন তিনতলা করার জন্য খুব দৌড়াদৌড়ি করছেন।দেখতে দেখতে গ্রীষ্মাবকাশের সময় ঘনিয়ে আসে। একদিন টিফিনের সময় ছুটির ঘণ্টা পড়ে গেল।মেয়েরা হোই-হোই করে বই নিয়ে দিল ছুট।সুচিস্মিতা চেষ্টা করেও তাদের থামাতে পারে না। শিক্ষক কক্ষে এসে জানতে পারে কি মিটিং হবে সেজন্য ছুটি।
সুচিস্মিতা বিরক্ত হল,একটা নোটিশ দেওয়া উচিত ছিল।আঙ্গুরদি সবাইকে চা দিতে লাগল।কলেজেই চা করেন,পুরানো চতুর্থ শ্রেনীর কর্মী। সবার কথা শুনে বোঝা গেল গ্রীষ্মাবকাশের আগে কলেজের বার্ষিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হবে সেই ব্যাপারে সুখেনবাবু দিদিমণিদের সঙ্গে কথা বলতে চান।উনি হেড মিস্ট্রেসের ঘরে বসে আছেন।বড়দির কথা মনে পড়ল।উনি মেয়েদের সঙ্গে কথা বলতে ভালবাসেন।
বড়দির বয়স খুব বেশি নয় মনে হয় পাঁচের ঘরে।কলেজে আসেন সেজেগুজে বয়স হলেও একটা লাবণ্য আছে চেহারায়। একটু পরেই সুখেনবাবুকে নিয়ে বড়দি এলেন।বড়দি জিজ্ঞেস করেলেন,চা খাওয়া শেষ তো?
সুখেনবাবু এসেছেন একটা জরুরী ব্যাপারে আলোচনা করার জন্য। নিন শুরু করুণ।
সুখেনবাবু ঠোট চিরে হাসলেন। প্রতিবার আমাদের কলেজে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়।এবার আমাদের অনুষ্ঠানের একটা আলাদা গুরুত্ব আছে।….অনেক ছাত্রীকে ভর্তি  করতে পারিনা   স্থানাভাবের জন্য দিদিমণিদের তা অজানা নয়।…..আমরা স্থির করেছি আমাদের বিল্ডিং   তিনতলা করলে বিষয়টা সুরাহা হতে পারে।……সেই উদ্দেশ্যে এবার অনুষ্ঠানে ডিআই এবং ডিএমকে আমন্ত্রণ করবো।যদি তাদের আনা সম্ভব হয় তাহলে সরকারী সাহায্যের ক্ষেত্রে খুব সুবিধে হবে।….আমি বড়দির কাছে শুনেছি মিস বোসের কথা উনি যদি কিছু দায়িত্ব নেন…. ওনার এই বিষয়ে জ্ঞান আছে।তাছাড়া অন্যান্য ব্যাপার সবাই মিলে ঠিক করবেন।আপনাদের উপর নির্ভর করছে অনেক কিছু।
ঘণ্টা খানেক সভা হল।বুঝলাম আমাকে মেয়েদের নিয়ে কিছু করাতে হবে।হস্টেলে ফিরে ভাবতে বসলাম কি করা যায়।স্থির করি একটা ড্যান্স ড্রামা করাবো।তার আগে একটা স্ক্রিপ্ট তৈরী করা দরকার। যাক ভালই হল সময় কাটাবার একটা সুযোগ পাওয়া   গেল।
অনেক ভেবে কদিন পর রামায়নের একটা কাহিনী নিয়ে স্ক্রিপ্ট লিখে ফেললাম–“শবরীর প্রতীক্ষা।” বড়দিকে দেখালাম পড়ে বললেন,বাঃ সুন্দর হয়েছে। ট্র্যাজেডি বাঙ্গালীর প্রিয় বিষয়।এখন দেখুন মেয়েরা কেমন করে?আচ্ছা একটা কথা জিজ্ঞেস করব?
--কি কথা বড়দি?
সুপর্ণা মিত্র হাসলেন।ঠোটে ঠোট টিপে এক পলক সুচিস্মিতাকে দেখে বললেন,আপনি এরকম  একটা বিষয় চয়েস করলেন কেন?অবশ্য প্রশ্নটা ব্যক্তিগত।
--না না ঠিক আছে।দেখুন বড়দি খুব একটা ভেবে চিন্তে করেছি তা নয়।রামায়ণে এই এপিসোডটা ভাল লেগে গেল তাই।
সুপর্ণা মিত্র হাসলেন।
বড়দির সবুজ সংকেত পেয়ে পুরোদমে শুরু করে দিলাম রিহার্সাল। ছন্দাদি আবৃত্তি   শ্রীলেখাদি কুইজ কণ্টেষ্টের দায়িত্ব নিয়েছেন।অনসুয়া চিত্র প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করছে।
প্রায় প্রতিদিন টিফিনে ছুটির পর রিহার্সাল শুরু হয়ে যায়।সারা কলেজ জুড়ে যেন কর্ম যজ্ঞ চলছে।কলেজ পরিধি ছাড়িয়ে বার্তা রটে গেল সমগ্র অঞ্চলে।কলকাতা থেকেও নাকি কেউ কেউ আসাছেন।একদিন হন্তদন্ত হয়ে সুখেন্দুবাবু এলেন।খুব উচ্ছসিত মনে হল।ডি এম সাহেব সম্মতি জানিয়েছেন, ডি আই সাহেব আপত্তি করতে পারবেন না। নাচ থেমে গেছিল, সুখেন্দু বাবু অপ্রস্তুত।
–আমি আসায় অসুবিধে হল?অপ্রতিভ সুখেন্দু বাবু জিজ্ঞেস করেন।
মাঝে মাঝে কোমরে আচল জড়িয়ে নেচে দেখিয়ে দিতে হচ্ছে।একটু অস্বস্তি হলেও মুখের উপর না বলতে পারলাম না।
— “শবরীর প্রতীক্ষা” বিষয়টা কি?
–রামায়নের একটা তুচ্ছ উপকাহিনী। মতঙ্গ ঋষির আশ্রমে সেবিকা শবরী। তাকে   বোঝানো হয়েছে… একদিন শ্রীরাম চন্দ্র আসবেন সেদিন মুক্তি হবে শবরীর।অধীর প্রতীক্ষায় থাকে শবরী।একদিন সত্যি সত্যি শ্রীরাম চন্দ্র এলেন।শবরীর প্রতীক্ষার অবসান হল সে অগ্নিতে আত্মাহুতি দিয়ে যাত্রা করলো অনন্তলোকে।
সুখেন্দুবাবু মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকেন।একসময় হুশ হয় লজ্জিত হয়ে বলেন,করূণ কাইনী।শুনেই চোখে জল এসে গেছে। না আগে দেখতে চাই না তাহলে নাটকের মজা চলে যাবে। আমি ডি এম সাহেবের সঙ্গে দেখবো।আপনার উপর অনেক ভরসা   আমার।
দিদিমণিদের মধ্যে আলোচনা শুরু হয়ে গেল।মিস বোসের রূপ দেখে সম্পাদক মশাই মজেছেন।আসলে সুচিস্মিতার এতখানি গুরুত্ব তাদের সহ্য হচ্ছিল না। কলেজের মাঠে বাঁশ পড়লো,ধীরে ধীরে গড়ে উঠল প্যাণ্ডেল। থানার ও সি একবার ঘুরে গেলেন সরেজমিনে।কলেজের আশপাশে যে সব রোমিওদের ভীড় বাড়ছিল তারা ওসি কে দেখে বুঝল জায়গাটা তাদের কাছে নিরাপদ নয়।অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে অঞ্চলে বিপুল প্রত্যাশা সৃষ্টি হয়েছে।তাছাড়া দিদিমণিদের মধ্যেও কৌতূহল নতুন এসে কি এমন করে সুচিস্মিতা। সব মিলিয়ে   তীব্র মানসিক চাপ তৈরী হয়।মেয়েগুলো কেমন করবে ওরাই সুচিস্মিতার ভরসা।
[+] 5 users Like kumdev's post
Like Reply
#64
[৩৩]


        হ্যালো মাইক টেশটিং …ওয়ান…টু…থ্রি….।সকাল থেকে ব্যস্ত কমলাবাড়ি কলেজ প্রঙ্গন।সুচিস্মিতা মেয়েদের বলেছে তিনটের মধ্যে যেন সবাই কলেজে চলে আসে।  অনসুয়া   নেপথ্য হতে পাঠ করবে।ওর গলার স্বর বেশ মিষ্টি।অনেক খেটেছে সুচিস্মিতা তা ছাড়া   আর কিইবা করতে পারে,কেমন করবে মেয়েরা কে জানে।অনসুয়াও স্ক্রিপ্টের তারিফ করেছে।
সন্ধ্যে নামার আগেই ভরে গেল মাঠ। সুপর্ণা মিত্র সুন্দর সেজে এসেছেন।অনসুয়া মুচকি হেসে বলল,বড়দি পার্লারে গিয়ে সেজে এসেছেন। একটা ঘরে মেয়েদের সাজাচ্ছেন মেক আপ ম্যান। সুচিস্মিতা তাকে সাহায্য করছে।সুখেনবাবু ধুতি পাঞ্জাবী পরে একেবার বর বেশে হাজির।ডি এমের গাড়ি আসার সঙ্গে সঙ্গে পুলিশের ভীড় অনুষ্ঠানের গুরুত্ব বাড়িয়ে দিল।ডি এম সাহেবের একপাশে সুখেন বাবু আর একপাশে ডি আই মিঃ চাকলাদার। দিদিমণিদের মধ্যে ব্যস্ততা শুরু হল বড়দি মঞ্চে ঢুকে সবাইকে নমস্কার করলেন।
সুখেনবাবু উঠে ঘোষণা করলেন,মাননীয় ডি এম সাহেবকে আমাদের মধ্যে পেয়ে   সম্মানিত বোধ করছি।তিনি ব্যস্ততার মধ্যেও আমাদের আবানে সাড়া দিয়ে   এখানে   এসেছেন সে জন্য কলেজের পক্ষ হতে তাকে আমাদের আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাই। আমাদের মধ্যে উপস্থিত আছেন বিদ্যালয় পরিদরশক মি.চাকলাদার তাকেও আমাদের কৃতজ্ঞতা   জানাই।এবার বিশিষ্ট অতিথিদের মাল্যভুষিত করে বরণ করার পালা।
সুখেনবাবু বড়দির দিকে তাকালেন।বড়দি চোখের ইশারায় কি যেন বলে একটা চিরকুট এগিয়ে দিলেন। সুখেবাবু চিরকুটে চোখ বুলিয়ে বললেন,আমাদের বিদ্যালয়ের ছাত্রী শ্রীমতী জয়ী সরকার প্রধান অতিথিকে মাল্যদান করছে।
একটি সুবেশা পুতুলের মত মেয়ে মালা নিয়ে মঞ্চে বসা ডি এম সাহেবের গলায় পরিয়ে   দিল।করতালিতে মুখর হল,সুখেনবাবু আবার বললেন,এবার অতিথিকে মাল্যদান করবে   আমাদের বিদ্যালয়ের ছাত্রী শ্রী মতী সুলেখা সান্যাল।
সুচিস্মিতা চন্দনের টিপ দিয়ে সাজাচ্ছে শবরী রুপী দেবজয়াকে।বাইরে তখন সুখেনবাবুর বক্তৃতা শুরু হয়ে গেছে।বিদ্যালয়ের প্রশংসা ডিএম সাহেবে প্রশংসা কি কষ্টের মধ্যে বিদ্যালয় চালাতে হচ্ছে ইত্যাদি নানা বিষয় নিয়ে তিনি বললেন।পরিশেষে  আকুলভাবে ডি এম সাহেবের সহযোগিতা কামনা করলেন।বক্তৃতা শেষ করে বললেন,এবার আমি   আমাদের জেলা শাসক শ্রী নীলাভ সেনকে কিছু বলার জন্য অনুরোধ করছি।শ্রী নীলাভ সেন।
নামটা কানে যেতে সুচিস্মিতার হাত কেপে যায়। নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছে না।দ্রুত সাজানো শেষ করে বাইরে বেরিয়ে আসে।আড়াল থেকে দেখে,মাইকের সামনে   দাঁড়িয়ে এক ভদ্রলোক।এক মাথা কালো চুল কানের কাছে চিক চিক করছে কয়েক গাছা রুপোলি চুল।চোখে ভারী ফ্রেমের চশমা।একী নীল?চেনাই যাচ্ছে না।সেই বোকা বোকা চেহারা আর নেই।ঠোটের নীচে গাম্ভীর্য। তার ভুলও হতে পারে। মাননীয় সভাপতি,জেলা পরি দর্শক এবং প্রধান শিক্ষিকা অন্যান্য সহকারী শিক্ষিকা শিক্ষাকর্মী সর্বোপরি আমার স্নেহের ছাত্রী বৃন্দ।উপস্থিত অন্যান্য সুধী বৃন্দ,আজকের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের প্রধান আকর্ষণ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকার কাছে শুনলাম,ছাত্রীদের দ্বারা পরিবেশিত হবে “শবরীর প্রতীক্ষা”,আপনারা তার জন্য অধীর আগ্রহে প্রতীক্ষা করছেন আমি জানি।নিয়ম রক্ষার খাতিরে দু-একটা কথা আমি বলছি। আজ আমার মনে পড়ছে ছাত্র জীবনের কথা।জীবনের সব থেকে গুরুত্ব পুর্ণ  ছাত্র জীবন।জীবনের এক চরম অধ্যায় কৈশোর শেষ হয়ে যৌবন অভিমুখে যাত্রা…আজও আমাকে হাতছানি দেয় সেই কলেজ জীবন। বড় হলে একদিন তোমরাও বুঝবে।….. শিশু কিশোর চিত্ত ঈশ্বরের আবাসন।এখানে কোন মালিন্য নেই।এদের সাহচর্যে দূর হয়ে যায় হৃদয়ের সমস্ত গ্লানি।…আমার বাড়িতেও একটা ছেলে আছে। সারাক্ষন তার মায়ের সঙ্গে কাটে….সারাদিন খাটা খাটনির পর বাড়ি ফিরে তার সংস্পর্শে যখন আসি মনের সমস্ত ক্লান্তি অবসাদ যেন মুহুর্তে সরে   গিয়ে পাই অপার শান্তি... ভদ্রলোক বিবাহিত? এত বয়স হয়েছে বিয়ে হওয়া স্বাভাবিক।সুচিস্মিতার চোখ ঝাপসা  হয়ে এল।
…..আমাকে এমন সময় ডাকা হল যখন আমার বদলির খাড়া ঝুলছে মাথার উপর …অন্যত্র বীরভুমে…তবু আমি কথা দিচ্ছি যাবার আগে যতদুর সম্ভব কিছু একটা করে  যাবো…সম্পাদক মশাইকে অনুরোধ অফিসে তিনি যেন দেখা করেন…তাছাড়া ডি আই সাহেব থাকলেন অতি অমায়িক মানুষ….সবাইকে আমার প্রীতি-শুভেচ্ছা ভালবাসা ও নমস্কার জানিয়ে আজকের মত শেষ করছি।
ভদ্রলোক কোন কলেজে পড়তেন বললে বোঝা যেতো উনি নীল কিনা?নামের মিল থাকলেও কথা বলার ঢং একেবারে অন্য রকম।একবার ইচ্ছে হল সামনা-সামনি হবে কিনা পরমুহুর্তে নিজেকে সংযত করে সুচিস্মিতা।কি দরকার বিয়ে-থা করে সংসারী   হয়েছে   যদি নীলও হয় তাহলে মিথ্যে বিড়ম্বনা বাড়িয়ে কি লাভ?সাজ ঘরে ফিরে দেখল প্রস্তুতি সারা।সবাই তার জন্য অপেক্ষা করছে।সুচিস্মিতা জিজ্ঞেস করে, অনসুয়া কোথায়?
মেয়েরা বলল,দিদিমণি অনসুয়াদি মাইক ম্যানের সঙ্গে কথা বলে সব ব্যবস্থা করতে গেছেন।
দর্শক আসনের সামনের সারিতে নীলাভ সেন তার একপাশে বড়দি   অন্যপাশে   মি.চাকলাদার।পর্দা উঠতে সুরু হল  দিদিমণিদের "নব আনন্দে জাগো" উদবোধনী সঙ্গীত।
অনসুয়া এসে খবর দিল,ডিএম সাহেবের তাড়া আছে।বড়দি বললেন, উদবোধনী সঙ্গীতের পরই নাচ শুরু করতে হবে।পুরস্কার বিতরণী পরে। বিরক্তিকর লাগে এভাবে হুট করে ফরমাশ করলে হয়?তাগাদা দিল সুচি,তাড়াতাড়ি করো দেবজয়া।দেবজয়ার প্রধান ভুমিকা।অনসুয়া মাইকে ঘোষণা করল,মঞ্চ গুছিয়ে নিতে দু-মিনিট সময় চেয়ে নিচ্ছি।কিছুক্ষণ পর আবার পর্দা উঠল,আলো জ্বলতেই মঞ্চে নাচের ভঙ্গীতে দাঁড়িয়ে থাকা দেবজয়া ধীরে ধীরে চোখ তোলে।শুরু হল "শবরীর প্রতীক্ষা।"
 মঞ্চে আশ্রম পরিবেশ।সবাই মুগ্ধ হয়ে   দেখছে। পিছন থেকে বর্ণণা করছে অনসুয়া।দেখতে দেখতে নীলাভ সেন বলেন, রামায়ণে রাম-রাবণের কথা আছে জানি।এইসব ছোটো ছোটো উপকাহিনীর খবর সবাই জানে না।স্ক্রিপ্ট কোথায় পেলেন?
–আমাদের দিদিমণিরাই সব করেছেন।বড়দি বললেন।
–বেশ সুন্দর নাচছে কিন্তু।
–কেউ নাচ শেখে না।দিদিমণিরাই ট্রেণ্ড করেছেন।
–উনি নিশ্চয় নাচ জানেন?
–শান্তি নিকেতনের ছাত্রী ছিলেন।
পাশে বসা সুখেন বাবু অত্যন্ত বিরক্ত।ইচ্ছে ছিল ডি এমের পাশে বসবেন তার আগেই সুপর্ণা মিত্তির বসে পড়েছে।এমন ঢলাঢলি জানে ডি এম দেখে একেবারে গদগদ।বিয়ে হয়েছে ঘরে স্বামী আছে তবু ছোকছোকানি গেলনা।দেখো কেমন সেজেছে যেন কচি খুকি।সুপর্ণা মিত্র লক্ষ্য করেন ডি এম সাহেবের চোখ চিকচিক করছে।চোখাচুখি হতেই নীলাভ সেন লজ্জিতভাবে বলেন,আমি একটু সেণ্টিমেণ্টাল।রুমালে চোখ মুছলেন। শবরীর ভুমিকায় মেয়েটির চোখের ভাষায় ফুটে উঠেছে হাহাকার। বুকের চাপা বেদনা যেন শারীরি ভঙ্গীতে স্পষ্ট।
শেষ পর্যন্ত থাকতে পারলেন না ডি এম সাহেব।ওসি এসে খবর দিলেন,এস পি সাহেব কি জরুরী ব্যাপারে কথা বলতে চান।নীলাভ সেন দুঃখ প্রকাশ করে বিদায় নিলেন।সুখেন বাবু এগিয়ে দিতে গিয়ে স্মরণ করিয়ে দিলেন,স্যর আমি দু একদিনের মধ্যে দেখা করছি।
–অবশ্যই দেখা করবেন।
অনুষ্ঠান শেষ হতে রাত এগারোটা বেজে গেল।সবাই খুব প্রশংসা করলো। এত অল্প সময়ের প্রস্তুতিতে এমন সুন্দর হবে কেউ ভাবেনি।অন্যান্য দিদিমণিরা সামনে  প্রশংসা করলেও ভিতরে ভিতরে আশাহত।ধারণা ছিল হাস্যকর কিছু হবে। রামায়নের কাহিনী কেউ এখনকার দর্শক ভাল ভাবে নেবে না।কাল প্রায় সবাই বাইরে থেকে আসছে। আধুনিক গান গম্ভীরা গানের দল প্রভৃতি অংশ নেবে। সুচিস্মিতা এসে খোজ করতে জানলো ডি এম চলে গেছেন।মনে একটা আফশোস রয়ে গেল জানা হল না কে এই নীলাভ সেন? অবশ্য একদিক দিয়ে ভালই হল যদি ইনি নীলু হন তাহলে হয়তো কষ্ট পেতো।
দিন তিনেক পর আবার কলেজ শুরু হল।দুদিন পর গরমের ছুটি তাই কেমন একটা গাছাড়া   ভাব।ছুটি পড়লে মাসীমণির কাছে যাবে,কতদিন দেখা হয় না টুকুনের সঙ্গে তাছাড়া পারমিতা আছে।
[+] 7 users Like kumdev's post
Like Reply
#65
দেখা হতে হতেও হল না। সুচি কথা রেখেছে কিন্তু নীলাভ পারলো না
Like Reply
#66
কেমন একটা ব্যথা অনুভব করছি যেনো..
[+] 1 user Likes Sonabondhu69's post
Like Reply
#67
thrilling story . mone hoy kanika madam er sange gobardhon babur samparka hobe ,se ekhan abar neta ,local councilor . Nilu emotional ,se suchike faki dite parena . Emotional loke kauke faki dite parena.
Like Reply
#68
…আমার বাড়িতেও একটা ছেলে আছে। সারাক্ষন তার মায়ের সঙ্গে কাটে….সারাদিন খাটা খাটনির পর বাড়ি ফিরে তার সংস্পর্শে যখন আসি মনের সমস্ত ক্লান্তি অবসাদ যেন মুহুর্তে সরে গিয়ে পাই অপার শান্তি... ভদ্রলোক বিবাহিত? এত বয়স হয়েছে বিয়ে হওয়া স্বাভাবিক।সুচিস্মিতার চোখ ঝাপসা হয়ে এল।


Nilu bie koreni. Ekhane EKTA CHELE bole se nijeke mention koreche ......
[+] 3 users Like ddey333's post
Like Reply
#69
[৩৪]


     আজ কলেজে শেষদিন।কালথেকে শুরু হবে গ্রীষ্মাবকাশ।ছুটির পর শিক্ষিকাদের কক্ষে   আলাপ চলছে।কাল থেকে কারো সঙ্গে কারো দেখা হবে না তাই যাবার আগে একটু হাল্কা আলোচনা। বড়দি বেশ মজার কথা বললেন,আচ্ছা ঐ ডি এম কি ম্যারেড?
–কেন বড়দি হাতে কোন মেয়ে আছে নাকি?ছন্দাদি বললেন।
–ম্যারেড।শুনলেন না ওর বাড়িতে একটা ছেলে আছে।
–হ্যা হ্যা তাইতো খেয়াল ছিল না।দেখে কিন্তু ম্যারেড মনে হয় না।
সবাই হো-হো করে হেসে উঠল।কৃষ্ণাদি বললেন,দেখে বুঝতে পারেন?
–না ঠাট্টা না।মেয়েদের কপালে সিন্দুর দেখলে বোঝা যায় ছেলেদের ঐসব বালাই নেই কিন্তু বিয়ের পর আচার ব্যবহারে ছেলেদের মধ্যে একটা পরিবর্তনের ছাপ পড়ে।
এবার কেউ হাসলো না।সবার মনে হয় বড়দির কথা উড়িয়ে দেবার মত না।
--যা লাল্টু চেহারা এতবড় পোস্টে চাকরি করেন এতদিনেও কি বিয়ে হবে না?কৃষ্ণাদি চিন্তিত গলায় বললেন।
--বাদ দাও উনি টাকার প্রতিশ্রূতি দিয়েছেন এটাই আমাদের সাফল্য।বড়দি বললেন।
--বড়দি না আচালে বিশ্বাস নেই,ওরকম অনেকেই বলে। আগে টাকা আসুক।
--আমার ভদ্রলোককে সেরকম মনে হলনা।
ছন্দাদি জিজ্ঞেস করলেন,আপনার কেন এমন মনে হল?
--আমি পাশে বসেছিলাম,নৃতনাট্য দেখতে দেখতে উনি বার বার রুমাল দিয়ে চোখ মুছছিলেন।এমন হৃদয়বান মানুষ মিথ্যে বলতে পারেনা।
সুচিস্মিতা চুপচাপ কিছু বলছে না।ডিএমকে সবার নজরে পড়েছে।মেয়েদের এই  হ্যাংলামী ভাল লাগে না। পরিবেশ কেমন গম্ভীর হয়ে যায়।ছন্দাদি বলেন,ছুটিতে কার কি প্লান আছে?কেউ কি বেড়াতে যাচ্ছো?
–একদিন সুচিস্মিতার বাড়ি গেলে হয় না?আমার শান্তি নিকেতন দেখা হয় নি। অনসুয়া বলে।
–আহা কথার কি ছিরি! তোমার না হয় বিয়ে হয়নি,আমরা ওকে ছেড়ে তোমাদের সঙ্গে ঘুরতে বয়ে গেছে।
এবার সবাই হো-হো হাসিতে ভেঙ্গে পড়ে।অনসুয়া অপ্রস্তুত বোধ করে এদিকটা সে ভেবে   দেখেনি। বাড়িতে তার বিয়ের কথা চলছে।একে একে সবাই চলে যায়।সুপর্ণা মিত্র নিজের ঘরে বসে কিছু কাজ সারছেন।অনসুয়া সুচিস্মিতার রুমমেট,দুজনে হস্টেলে যাবার আগে বড়দির সঙ্গে দেখা করতে এল।সুচিস্মিতা বলল,আমরা আসি বড়দি।
–ওঃ মিস বোস?একটু বোসো,আমিও যাবো।
দুজনে মুখ চাওয়া চাওয়ি করে,বড়দি বলেন,তুমিও বোসো।
বড়দি হাতের কাজ শেষ করে বললেন,আবার একমাস কি বলো?
আঙ্গুরদি চাবি নিয়ে অপেক্ষা করছে।বড়দি বের হতে ঘরে তালা দিল।বড়দি ভুল করে  ছাতা ফেলে এসেছিলেন,আঙ্গুরদি ছাতাটা দিয়ে গেল। চলতে চলতে এক সময় সুপর্ণা মিত্র বলেন,মিস বোস তোমাকে একটা কথা বলি।
সুচিস্মিতা চিন্তিত বড়দি বিয়ে নিয়ে কিছু বলবেন নাতো?
–তুমি কেন বিয়ে করোনি সে ব্যাপারে আমার কিছু বলার নেই।একটা কথা খুব আন্তরিক ভাবে বলছি,তুমি লেখো।তোমার লেখার হাত খুব ভাল।একসময় আমার লেখালিখির খুব ঝোক ছিল–।
–ছাড়লেন কেন?
সুপর্ণা মিত্র দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলেন,পারিবারিক জীবনে আমি সুখী,কোন ক্ষোভ নেই সে ব্যাপারে।কিন্তু ওর এইসব লেখালিখি ইত্যাদি ব্যাপারে কোন ইন্টারেষ্ট নেই।একজন কেউ যদি পাশে থেকে উৎসাহ না দেয় বেশিদিন দম রাখা যায় না।ডিএম সাহেবকে দেখে কথা বলে ওকে আমার একজন ইন্টেকচুয়াল বলে মনে হয়েছে।আমরা পাশাপাশি বসে অনেক আলাপ করেছি। নিজের মধ্যে অন্য রকম একটা অনুভুতি…।
অনসুয়া হাতে চাপ দিল সুচিস্মিতার।সুচিস্মিতা আমল দেয় না বড়দির কথা বোঝার চেষ্টা করে।
–বিয়ের পর সব কিছুই মনের মত হয় না,আমরা মানিয়ে নিই। সবারই এরুকম মুহুর্ত আসতে পারে কখনো কিন্তু সামাজিক ইনহিবিশন তাকে পরিণত হতে দেয় না।সুপর্ণা মিত্রকে নতুন করে চিনছে সুচিস্মিতা।দৈনন্দিন কাজের মধ্যে মানুষটাকে এভাবে দেখার সুযোগ ঘটেনি।পরস্পর মিশলেও আমরা কতটুকু চিনতে পারি পরস্পরকে?
–এইদেখো কথা বলতে বলতে রিক্সাস্ট্যাণ্ড ছেড়ে চলে এসেছি।সুপর্ণা মিত্র বললেন। মিস বোস কি আজই চলে যাবেন?
–হ্যা বড়দি আজ রাতের গাড়িতে উঠবো তাহলে ভোরবেলা পৌছে যাবো।সুচিস্মিতা বলে।
–যা বললাম মনে রাখবে।
সুচিস্মিতা হেসে সম্মতিসুচক ঘাড় নাড়লেন।বড়দি চলে যেতে অনসুয়া বলল,প্রেমের বীজ এখনো শুকিয়ে যায় নি।
–বীজ মাটির তলায় চাপা থাকে জল বাতাস পেলেই অঙ্কুরিত হবার চেষ্টা করে।
সুচিস্মিতার কথা শুনে চোখ বড় করে অনসুয়া তাকে দেখে।জিজ্ঞেস করে,তোমার মধ্যে কি বীজ চাপা আছে?
সুচিস্মিতা হেসে বলে,মাটির নীচে আমি কি দেখেছি,হয়তো আছে।
ট্রেন রাত নটায় এখন একটূ গড়িয়ে নেওয়া যেতে পারে।গোছগাছ আগেই সারা। বাথরুমে গেল সুচিস্মিতা,চোখে মুখে জল দেয়।হু-হু করে কেদে ফেলে।কান্নার কি হল বুঝতে পারে না কিন্তু ভাল লাগছে কাদতে।কিছুক্ষন কাদার পর বাথরুম থেকে বেরিয়ে এল।অনসুয়া   চেঞ্জ করে বিছানায় শুয়ে কি যেন ভাবছে।
–আচ্ছা সুচিস্মিতা একটা কথা বলবে?
–কি কথা?
–এমন কিছু না।তুমি কারো সঙ্গে প্রেম করেছো?এত বয়স হল বিয়ে করোনি তার পিছনে কোনো কাহিনী লুকিয়ে নেইতো?
সুচিস্মিতা হাসে মনে মনে,ভাবে কি বলবে?পাশের খাটে শুয়ে বলে,বিশ্বাস করো এর উত্তর আমার জানা নেই।
–বুঝলাম না।
–প্রেম করিনি বলতে পারবো না আবার প্রেম করেছি তাও বলা ঠিক হবেনা। আর বিয়ে করিনি কারণ বিয়ে করার মত কাউকে পাইনি।
–বুঝেছি তার মানে একতরফা?
–এক না দুই তরফা আমার জানা নেই।কি ব্যাপার এখন এসব নিয়ে পড়লে?
অনসুয়া কিছুক্ষন চুপ করে জানলা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে থাকে।তারপর একসময় নিজে   নিজেই বলে,তুমি বলছিলে না মাটির তলায় বীজ চাপা থাকে।ঠিকই বলেছো,বীজ চাপা ছিল কিন্তু পচে গেছে।আর অঙ্কুরিত হবে না।
ঘরের পরিবেশ ভারী হয়ে উঠল।হাল্কাভাবে বলা কথা অজ্ঞাতসারে অনসুয়ার কোথাও গিয়ে স্পর্শ করেছে হয়তো। কৌতুহল দমন করে সুচিস্মিতা ঘুমোবার চেষ্টা করে। অনসুয়ার মন অতীতের পথ ধরে হেটে চলেছে,কথা বলতে ইচ্ছে করে না। কলেজ যাবার পথে দেখতো চাতকের মত দাঁড়িয়ে একটি ছেলে।পরে নাম জেনেছে অতীন।দেখতে দেখতে কেমন মায়া পড়ে যায়। একদিন ওকে অতিক্রম করে আবার পিছন ফিরে তাকায়।তাতেই অতীনের সাহস বাড়ে,এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করে, আপনার নামটা জানতে পারি?
–পাঁচি।
–আমার নাম কি জানেন?
–আমার জানার দরকার নেই।
–আপনার নামের সঙ্গে আমার নামের খুব মিল।
–আপনার কি নাম?
–পচা।
হাসি সামলাতে পারে না অনসুয়া।অতীনও হেসে বলে,আপনার নামের যা আদ্যক্ষর আমারও তাই।অনসুয়া শুরু অ-দিয়ে অতীনও।
–তাহলে আমার নাম জিজ্ঞেস করছিলেন কেন? কপট রাগত গলায় জিজ্ঞেস করে   অনসুয়া।
–আসলে আলাপ করতে ইচ্ছে হল তাই।
–ঠিক আছে কলেজ এসে গেছে আপনি যান।
–ওভাবে বললে যাবো না।
–কি ভাবে বলতে হবে?
–বলো এখন তুমি যাও।
এইভাবে শুরু অতীনের সঙ্গে সম্পর্ক।দ্বিধা দ্বন্দের দোল দোলায় কেমন জড়িয়ে পড়ে।একেই বলে বয়সের ধর্ম।নির্জনতায় পেলে বুক খামচে ধরতো।উন্মুক্ত কোমরে চাপ দিত। আপত্তি করতো আবার ভালও লাগতো।একদিন কলেজ তাড়াতাড়ি ছুটি হতে দুজনে একটা পার্কে একটু নির্জনতায় গিয়ে বসল।এদিক-ওদিক তাকিয়ে আচমকা একটা হাত জামার মধ্যে ঢূকিয়ে মাই টিপতে লাগল অতীন।
অনসুয়া আপত্তি করে,কি হচ্ছে কি,কেউ দেখবে।
–কে দেখবে?
–আর না আর না..তনু…।
অতীন হাত বের করে কোমরে শাড়ির বাধনের মধ্যে হাত ঢোকাতে গেল।অনসুয়া   বলে,ন-না তনু কি হচ্ছে কি-বলে হাত চেপে ধরে।
–প্লিজ অনু প্লিজ একবার শুধু হাত দেবো।জোর করতে থাকে অতীন।
–ন-না বলছি–।বলতে না বলতে গুদের বাল মুঠীতে চেপে ধরে অতীন।
–ঊঃ লাগছেএএএ..।হাত ধরে হ্যাচকা টান দিল অনসুয়া।
একগুচ্ছ বাল সমেত হাত বেরিয়ে এল।চোখে জল এসে গেল অনসুয়ার।উঠে দাঁড়িয়ে   বলে,জানোয়ার ইতর…।
অতীন দাত বের করে বলে,এ্যা তুমি খুব রেগে গেছো,আচ্ছা বাবা স্যরি।কা্ন মলছি–হলতো?
–ইতর কোথাকার।তোমার কান ছিড়ে দেবো..স্কাউণ্ড্রেল।দপদপিয়ে পার্ক থেকে বেরিয়ে   গেল অনসুয়া।
লোক আসা শুরু হয়েছে পার্কে অতীন আর বাধা দেবার চেষ্টা করে না। অনসুয়ার কি   রকম দাদা পুলিশ অফিসার কয়েকদিন তাকে কলেজ পৌছে দিয়েছে এবং অতীনের  খোজ নিয়েছে।অতীন আর ধারে কাছে ঘেষেনি,সময় নষ্ট না করে অন্য শিকারে মন দিয়েছে।এই লম্পটটাকে প্রেমিক ভেবেছিল মনে করে গ্লানি বোধ করে অনসুয়া।
সন্ধ্যে বেলা ঘুম ভেঙ্গে সুচিস্মিতা জিজ্ঞেস করে,তুমি ঘুমাও নি?
–না ঘুম আসছে না।তুমি শুয়ে থাকো ,আমি চা নিয়ে আসছি।চা আনতে ক্যাণ্টিনে চলে গেল অনসুয়া।
[+] 6 users Like kumdev's post
Like Reply
#70
(02-05-2020, 04:53 PM)ddey333 Wrote: …আমার বাড়িতেও একটা ছেলে আছে। সারাক্ষন তার মায়ের সঙ্গে কাটে….সারাদিন খাটা খাটনির পর বাড়ি ফিরে তার সংস্পর্শে যখন আসি মনের সমস্ত ক্লান্তি অবসাদ যেন মুহুর্তে সরে   গিয়ে পাই অপার শান্তি... ভদ্রলোক বিবাহিত? এত বয়স হয়েছে বিয়ে হওয়া স্বাভাবিক।সুচিস্মিতার চোখ ঝাপসা  হয়ে এল।


Nilu bie koreni. Ekhane EKTA CHELE bole se nijeke mention koreche ......

হতেও পারে, নীল পরোক্ষ ভাবে হয়তো নিজের মায়ের কথাই বলেছে
Like Reply
#71
অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় রইলাম
Like Reply
#72
[৩৫]
   

         সংরক্ষিত কামরা।সবাই ঘুমোবার আয়োজনে ব্যস্ত। সুচিস্মিতা জানলার ধারে হেলান দিয়ে বসে আছে। এমনিতে রাতে ট্রেনে ঘুম আসে না,একা মেয়ে ঘুমের ঘোরে কাপড় চোপড় সরে গেলে সবাই ড্যাবডেবিয়ে দেখবে ভেবে ঘুমের প্রশ্নই আসে না।জানলা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে দেখে নিঝুম অন্ধকার।তার মাঝে নক্ষত্রের মত টিপ টিপ করে জ্বলছে আলো।ঘুমে অচেতন গ্রাম গুলো সরে সরে যাচ্ছে। কোথায় ছিল আজ কোথায় এসে পড়ল।এই কলেজে পড়াবে কোনদিন ভেবেছিল? মনে পড়ল বড়দির কথা ডিএমসাহেবকে দেখে বিবাহিত মনে হয় নি।সত্যি কি বিয়ে করেন নি ভদ্রলোক? নীলাভ সেন কি তার পরিচিত সেই নীলু? নিজেকে ধমক দেয় কি হবে এসব ভেবে।নীলুর ইচ্ছে ছিল এম এ পাস করে অধ্যাপনা করবে।কোথায় আছে সে কে জানে?হয়তো কোনো কলেজে মাসীমণির মত লেকচার দিচ্ছে।  নীলাভ নামটা খুব সাধারণ ,একই নামের দুজন থাকা সম্ভব।নীলুকে একবার দেখার ইচ্ছে হয়।সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে,ট্রেনের যান্ত্রিক শব্দের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নাক ডাকছে কেউ কেউ। সামনে লোয়ার বার্থে লোকটা এমন ভাবে শুয়েছে লুঙ্গিটা না উঠে যায়। একবার বাথরুম যাওয়া দরকার। টাকা পয়সা হ্যাণ্ডব্যাগে ট্রলিতে কিছু জামা কাপড়।কাউকে দেখতে বলবে তার উপায় নেই।যে চোর সেও পড়ে আছে মটকা মেরে সুযোগের অপেক্ষায়।হ্যাণ্ড ব্যাগ হাতে নিয়ে,ট্রলিটা বসার জায়গায় তুলে রেখে এগিয়ে গেল বাথরুমের দিকে।
বাথরুমের দরজার কাছে পৌছে শুনতে পেল ভিতর থেকে অদ্ভুত শব্দ। কিসের শব্দ বোঝার জন্য কান খাড়া করে থাকে।হুউম–হুউম শব্দ।কেউ কি কিছু ভেঙ্গে নেবার চেষ্টা করছে নাত? আশ পাশে কোন চেকার বা পুলিশ কাউকে দেখছে না।দরজা ভিতর থেকে বন্ধ।নিজের জায়গায় ফিরে দেখল সিটের উপর পড়ে আছে ট্রলিটা।আবার বাথরুমের দিকে গেল।দরজা খুলে দুজন মহিলা   পুরুষ বেরিয়ে এল।মহিলাটি মাথা নীচু করে তাকে অতিক্রম করে চলে গেল।পুরুষটি চোখাচুখি হতে মৃদু হাসল। সুচিস্মিতার মুখ লাল হল একটু আগের কথা ভেবে।শরীর চনমন করে ওঠে।কথাবার্তা শুনে মনে হল ওরা স্বামী-স্ত্রী। তাহলেও এভাবে   বাথরুমের  সঙ্কীর্ণ পরিসরে ভেবে লজ্জায় লাল হয় সুচিস্মিতা।
বাথরুমে ঢুকতে গা ঘিনঘিন করে।কাপড় তুলে বসে করুণভাবে তাকিয়ে থাকে গুদের দিকে।গুদটাকে কি দুখী-দুখী মনে হচ্ছে? জল দিয়ে সযত্নে গুদ ধুয়ে হাত বুলিয়ে আদর করে।চোখ ছাপিয়ে জল আসে।কল খুলে চোখে মুখে জলের ঝাপটা দিয়ে বেরিয়ে এল। ট্রলি তেমনি আছে নিজের জায়গায়।নামিয়ে সিটের নীচে ঢুকিয়ে দিল। জানলার কাঁচ নামিয়ে হেলান দিয়ে বসে চোখ বোজে।ট্রেনের চাকার যান্ত্রিক শব্দে একটা ছন্দ আছে।যেন বলছে,”পিছে নয় আগে   চলো…পিছে নয় আগে চলো।” না আর পিছন দিকের কথা ভাববে না সুচিস্মিতা। নীলু যেখানে আছে ভালো থাকুক। বিয়ে করে স্ত্রী পুত্র নিয়ে সুখে থাকুক। তার কোন দোষ নেই, তাকে না বলে কয়ে চলে এসেছে।পর জন্ম বলে কিছু আছে কি না জানা নেই যদি থাকে   তখন দেখা যাবে। মাসীমণি কত বছর বাদে আবার বিয়ে করে বেশ সুখে আছেন। হাবভাব চলন বলন সব বদলে গেছে।সুখী মানুষের মুখ দেখলেই বোঝা যায়।যদি অনির মত কেউ আসে জীবনে তাকে কি নীলের জায়গায় বসাতে পারবে সুচিস্মিতা?নীলের জায়গা মানে? সত্যিই কি তার হৃদয়ে কোনো জায়গা নীলের জন্য ছিল? সব গোলমাল হয়ে যায়।নিজেকে নিজেই চিনতে পারে না।
একদিন নীলের প্রতি যাতে কোনো অন্যায় না হয় সেজন্য বাড়ি ছেড়ে মাসীমণির কাছে যেতে রাজি হয়েছিল।আবার চোখে জল চলে আসে। কে যেন খ্যাস্ খেসে গলায় বলে, আপনি শোবেন নাই?
আঁচল দিয়ে চোখ মুছে তাকায়,একটি মহিলা মানে মহিলার মত পোষাক চেহারা পুরুষালি  তাকেই লক্ষ্য করে আবার বলে,আমি এখানে বসবো?
সুচিস্মিতা পা গুটিয়ে জায়গা করে দিল।সম্ভবত হিজরে হবে জায়গা খালি  পড়ে আছে বসলে কি হবে। একজন সঙ্গি পাওয়া গেল।
–কোথায় যাবেন?
সুচিস্মিতা বলে,বোলপুর।
–আমি কলকাত্তা যাবে।এখানে নাচের পোজ্ঞাম ছিল।শালা শেষে ঝামেলায় জড়িয়ে গেলম।
হিজরেদের ভাষা সাধারনের থেকে আলাদা।সপ্রশ্ন দৃষ্টি মেলে তাকায় সুচিস্মিতা।
–আমি দরজায় দরজায় ছেলে নাচিয়ে বেড়াই না,ডান্স করি।অদ্ভুত চোখ টিপে বলে, কারো মনে ধরলে এক্সট্রা ইনকাম।এই জন্যই তো ফাসলাম পুলিশ রেড হল হাজতবাস। নসিব আচ্ছা শালা থানায় একজন বড় অফসার ছিল বড়িয়া দিল,তার মেহেরবানিতে সায়রা ছাড়া পেয়ে গেল।
এর নাম তাহলে সায়রা?এক্সট্রা ইনকামের কারণ বুঝতে অসুবিধে হয় না। অবাক লাগে এরা কিভাবে যৌন আনন্দ দেয়? কেমন এদের যৌনাঙ্গ কোন ধারণা নেই তার।পাশের লোয়ার বার্থের ভদ্রলোক চিত হয়েছে পা দুট ভাজ করা।যা আশঙ্কা   করেছিল, লুঙ্গি উঠে গেছে হাটু অবধি। লুঙ্গির ভিতরে গভীর অন্ধকার।ট্রেন যখন প্লাটফরম পার হচ্ছে জানলা দিয়ে আলো এসে পড়ে।স্বল্প আলোয় নজরে পড়ে কালো বালের মধ্যে  ইঞ্চি তিনেকের মত পুরুষাঙ্গ। নিরীহ নেতিয়ে আছে। সুচিস্মিতা মুখ ঘুরিয়ে জানলা দিয়ে বাইরে তাকাল।
–এখানে বসেছি আপনার নাপসন্দ?
–না না আপনি বসুন।
–তাহলে মুখ ঘুরায়ে নিলেন,কথা বলছেন না।
–সারা বছর আপনার নাচের প্রোগ্রাম থাকে?
–শীত কালেই বেশি থাকে।
–অন্য সময় কি করেন?
–আপনি আউরত আপনার কাছে শরম নেই। ঘরে কাষ্টোমার আসে। আচ্ছা আচ্ছা মস্তান গুণ্ডা দেখলম আমাদের এইটার কাছে একেবারে গাণ্ডু বনে যায়। দেখেন বহিন, চুতকি নেশায় আদমি ভুত বনে যায়।
সুচিস্মিতার শরীর ঘিনঘিন করে উঠল।এ কেমন সহযাত্রী? বার্থের দিকে তাকিয়ে দেখে গভীর ঘুমে ডুবে আছে সব।হিজরেরাও শরীরের বিনিময় উপার্জন করে? অনেক কিছু জানতে ইচ্ছে করছে লজ্জায় জিজ্ঞেস করতে পারছে না। একটা লোক বার কয়েক ঘুরে গেল।মনে হল আড়াল থেকে সায়রাকে ইশারা করছে।সায়রা একটু ইতস্তত করে সুচিস্মিতার দিকে তাকায়।সায়রা বলে,মালুম হচ্ছে কাস্টোমার।
তারপর উঠে চলে গেল।দুজনে একটু পরে পিছন দিকে গেল।যাবার সময় সায়রা সুচিস্মিতার দিকে আড়চোখে তাকিয়ে চোখ টিপল।ভাল লাগে না সুচিস্মিতার,বুক ঢিপঢিপ করে।সে ছাড়া কামরায় কেউ জেগে নেই।মানুষের সঙ্গে ভাল ব্যবহার কতলেও বিপদ।এমনভাবে চোখ টিপল যেন আমি ওর সমান কেউ। ট্রেনের হুইশল বাজছে ঘন ঘন।সম্ভবত ট্রেন স্টেশনে ঢুকছে। সায়রা কোথায় গেল?কিভাবে ওরা যৌণ মিলন করে সেসব চিন্তা ছেড়ে নামার জন্য প্রস্তুত হতে থাকে।পারু মনে হয় এখন ঘুমে অচেতন।
ট্রেনের দরজায় পৌছে অবাক, এই ভোরে প্লাটফর্মে পুলিশে পুলিশ ছয়লাপ।সুচিস্মিতা বোঝার চেষ্টা করে কি ব্যাপার?কোনো গোলমাল হয়নি তো?একটা দিক পুলিশ কর্ডন করে রেখেছে যে কারণে যাত্রীসাধারণের যাতায়াতের পরিসর কিছুটা সংকীর্ন, ভীড় ঠেলে ধীরে ধীরে বহিঃপথের দিকে ট্রলি টানতে টানতে এগোতে থাকে।যেতে যেতে কানে এল নতুন ডিএম এসেছেন।মুহূর্তে ঝিলিক দিয়ে উঠল ডিএম সাহেব বদলির কথা বলছিলেন।একবার মুখটা দেখতে পেলে ভাল হতো কিন্তু যেভাবে কর্ডন করে রেখেছে  কাছে যাবার কথা ভাবা যায় না।সারা শরীর জড়িয়ে আছে ক্লান্তি।এইসব ভিআইপিদের জন্য সাধারন মানুষের ভোগান্তির একশেষ।
[+] 5 users Like kumdev's post
Like Reply
#73
" মিলন হবে কত দিনে, আমার মনের মানুষের সনে " Smile
Like Reply
#74
অসাধারন❤️
[+] 1 user Likes Sonabondhu69's post
Like Reply
#75
Waiting for the climax !!
Durdhorsho lekhoni . Suchi ke amra sukhi ebong sampurna dekhte chai.
No more tears for Suchismita please !!!!
[+] 1 user Likes ddey333's post
Like Reply
#76
একটাই আশঙ্কা নীলাভ যদি সত্যিই বিবাহিত হয়...
Like Reply
#77
15 hours no update. Very unusual from Sir Kumdev !
[+] 1 user Likes ddey333's post
Like Reply
#78
হ্যাঁ এতক্ষনে তো উনি আপডেট দিয়ে দেন সাধারণত
Like Reply
#79
অসাধারন হচ্ছে
Like Reply
#80
[৩৬]


       নীলাঞ্জনার ঘুম ভেঙ্গে যায়।বুকের মধ্যে মুখ গুজে অনি।খাট থেকে নেমে নাইটি গায়ে   চাপিয়ে দেখে অনি গভীর ঘুমে অচেতন।আবছা আলো এসে পড়েছে অনির উলঙ্গ শরীরে। কাল রাতে অনেক পরিশ্রম করিয়েছে বেচারীকে দিয়ে।ঠেলেঠুলে কোমরে জড়িয়ে দিল   লুঙ্গিটা।মনে হল কলিং বেল বাজলো। কে এল এত সকালে?নীলাঞ্জনার কপালে ভাজ পড়ে।আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে অবিন্যস্ত চুল ঠিক করে দরজার দিকে এগিয়ে গেল।দুধঅলা এত সকালে আসে না।ঘাড় ঘুরিয়ে দেওয়ালে ঘড়ির দিকে দেখল,চারটে বেজে দশ মিনিট। দরজা খুলে অবাক,একী সুচি তুই?
–ছুটি পড়ে গেল চলে এলাম।একগাল হেসে বলে সুচিস্মিতা।টুকুন কোথায়?
–টুকুন দিদির সঙ্গে ঘুমোচ্ছে।যতক্ষন ঘুমিয়ে থাকে শান্তি।
নীলাঞ্জনা দরজা বন্ধ করে চাপাকে ডাকতে গেলেন।চাপা জেগে বসে আছে।চা করার ফরমাস করে বলেন,কিরে রাতে ঘুমোস নি?
–কি করে ঘুম আসবে বলো?
ঠোটে ঠোট চেপে এক মুহুর্ত ভেবে নীলাঞ্জনা বলেন,কিছু না করলে খালি খালি ধরলো?
–বিশ্বাস করো মাওবাদী টাদী ও কিসসু জানে না।ফুপিয়ে কেদে ফেলে চাপা।
–আচ্ছা তুই চা কর,দেখি কি করা যায়।সুচি এসেছে।

সুচিস্মিতা দরজা ভেজিয়ে চেঞ্জ করতে থাকে।নীলাঞ্জনা বাইরে শব্দ করতে বলল,এসো।
নীলাঞ্জনা চিন্তিত মুখে ঘরে ঢুকে জিজ্ঞেস করেন,তুই কখন রওনা দিয়েছিস?
–কাল রাতে।ভোরবেলা এসে পৌছেছে ট্রেন।
–মুখ ধুয়ে নে,চাপা চা করছে।এদিকে হয়েছে এক ঝামেলা।চাপা কান্না কাটি শুরু করেছে।
–কেন?কি ঝামেলা?
–ওর ভাইকে পুলিশে ধরেছে।দেখি একজন উকিল-টুকিল ধরে কিছু করা যায় কি না?তুই একটু গড়িয়ে নে।
--পারু ওঠেনি?
--ও উঠবে এত সকালে?  পারুর আকাশে এখনো চাঁদ জ্বলজ্বল করছে।
অনির্বান ঘুম থেকে উঠে মুখ হাত ধুয়ে প্রস্তুত হতে থাকে।নীলাঞ্জনা জিজ্ঞেস করল,তুমি রেডি?
–আমি চা খেয়েই বেরবো।অনির্বান বললেন।
–আমিও যাবো তোমার সঙ্গে।নীলাঞ্জনা বলেন।
চাপা চা নিয়ে ঢুকলো।নীলাজনা জিজ্ঞেস করেন,তোমার ভাইয়ের নাম কি ?
–সুদাম মাহাতো।সাতপাচে থাকে না,পাটি-ফাটি কিছু বোঝেই না।
–ঠিক আছে আমরা যাচ্ছি।তুমি চিন্তা কোর না।সান্ত্বনা দিলেন নীলাঞ্জনা।
পারমিতার ঘুম ভেঙ্গে গেছে,বিছানা ছেড়ে ওঠেনি।বেরোবার আগে নীলাঞ্জনা পারুর ঘরে গিয়ে বললেন,আমরা বেরোচ্ছি।ভাই রইল দেখো।সুচি এসেছে।
--দিদিভাই এসেছে!কোথায়?তড়াক করে বিছানায় উঠে বসে।
--ঘূমোচ্ছে।এখন বিরক্ত কোর না।সারারাত জার্নি করে এসেছে।
ব্যাজার মুখে শুয়ে পড়ে পারমিতা।
অনির্বান ঢুকে বলল,গুড মর্নিং মিতা।
--মর্নিং।অনি তুমি যাচ্ছো না?
--আমরা দুজনেই যাচ্ছি।
ওরা বেরিয়ে যেতে ঘাড় উচু করে ঘড়ি দেখল।আটটা বেজে গেছে।পারমিতা বিছানা  ছেড়ে উঠে মনে মনে বলল,ঘুম বের করছি। গলা চড়িয়ে বলল, চাপামাসী চা দাও।
সুন্দর নাচছে দেবজয়া।চোখে মুখে আকুতি।আলোর রঙ বদলাচ্ছে।নীল আলোতে স্বপ্নিল পরিবেশ তৈরী হয়। মুগ্ধ দৃষ্টিতে দেখছে সুচি।
--সুচি তুমি এখানে?
পিছন ফিরে দেখল নীল।
--কত খুজেছি তোমায়।
-- বানিয়ে বলার স্বভাব তোমার গেলনা,মিথ্যুক কোথাকার?
--বিশ্বাস কর চোখ ছুয়ে বলছি।নীলু এগিয়ে এসে কাধে হাত রাখে।তুমি আমার গায়ে হাত দেবে না, হাত সরাও।এক ঝটকায় হাত সরিয়ে দিল।
পারমিতা অবাক হয়ে হাত সরিয়ে নিয়ে বলল,দিদিভাই আমি।
সুচিস্মিতা চোখ মেলে তাকিয়ে পারুকে দেখে বলল,তুই এখানে?
--কিসব আবোল তাবোল বলছো?স্বপ্ন  দেখছিলে নাকি?
সুচিস্মিতা উঠে বসে বলল,নিজে সারারাত ঘুমিয়ে এখন আমাকে জ্বালাতে এলি?মাসীমণি কোথায়?
--অনি মামণি বেরিয়েছে,তোমাকে বলেনি?
--ও হ্যা চাপাদির ভাইকে পুলিশে ধরেছে।
মারমিতা গলা তুলে বলল,চাপামাসী চা জল খাবার হল?
সুচিস্মিতা চাদর সরিয়ে বসার জায়গা করতে পারমিতা বসে জিজ্ঞেস করে,গরমের ছুটি কতদিন?
--প্রায় মাস খানেক।
--কাকে স্বপ্ন দেখছিলে বলতো?পারুর মুখে দুষ্টু হাসি।
চাপা দুটো প্লেটে লুচি তরকারী নিয়ে এসে বলল,এখানে দেবো?
পারু হাত বাড়ীয়ে প্লেট দুটো নিয়ে বলল,দশ মিনিট পর চা দিও।
সুচি উঠে চোখে মুখে জল দিয়ে ফিরে এসে বলল, ছুটির আগে কলেজে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হল।তোকে খুব মিস করছিলাম।
--তুমি গান গেয়েছো?
--মেয়েদের দিয়ে একটা নৃতনাট্য করিয়েছি।
--চণ্ডালিকা না নটির পুজো?
--আমি স্ক্রিপ্ট বানিয়েছি শবরীর প্রতিক্ষা।
--তুমি বানিয়েছো?
--হ্যা ব্যাগে আছে তোকে পড়াবো।তোর মতামত জানতে চাই।
--ওদের কেমন লেগেছে?
--বলল তো ভালোই।জানিস ডিএম এসেছিল।দেখতে দেখতে ওর নাকি চোখে জল এসে গেছিল।
--কই দেখি তোমার স্ক্রিপ্ট?
সুচি খাওয়া শেষ করে উঠে ব্যাগ থেকে স্ক্রিট বের করে পারুর হাতে দিল।সুচি জানে তার বোনটি  এমনিতে হালকা কথাবার্তা বললেও  ওর মধ্যে একটা চিন্তাশীল বিচক্ষন মন আছে।পারু স্ক্রিপ্ট নিয়ে গভীর মনোযোগ দিয়ে চোখ বোলাতে থাকে।
সুচি অধীর আগ্রহে প্রতীক্ষা করে পারু কি বলে?পাতা ওল্টাতে ওল্টাতে এক সময় গুম মেরে কি যেন ভাবে।পড়ছে কি পড়ছে না বোঝা যায় না।চাপা চা দিয়ে গেল।
চায়ে চুমুক দিয়ে সুচি জিজ্ঞেস করে, কিরে কি ভাবছিস?
--দিদিভাই তোমাকে একটা কথা জিজ্ঞেস করব?
সুচি সন্ধিৎসু চোখে তাকায়।
--তুমি নীলদাকে এখনো ভুলতে পারোনি তাই না?
--ওখানে নীলুর নাম কোথায় পেলি?
--তুমি কিন্তু আমার প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে যাচ্ছো।
--ভুলব কেন?নীলু পাঞ্চালিদি বন্দনা শ্রীময়ি ধনেশ সুদীপ--।
--থাক আর বলতে হবে না। আমার উত্তর পেয়ে গেছি।দিদিভাই ওকে কোনোদিন দেখিনি ভবিষ্যতেও দেখব কিনা জানি না আস্তে আস্তে আমিও ওর প্রেমে পড়ে গেছি।
--পড়াচ্ছি,খুব ফাজিল হয়ে গেছিস? শোন পারু ছেলেটা খুব সাদাসিধে সরল কলেজে ওর এই সিমপ্লিসিটি ভালো লেগেছিল।এরকম সবার ক্ষেত্রেই হতে পারে।কলেজে চেনা জানার মধ্যে তোর অনেকের মধ্যে একজনকে একটু আলাদা এরকম মনে হয়নি কখনো?
পারমিতা হাসল।এক মুহূর্ত ভেবে বলল,পড়তে ভালই লেগেছে।তোমার আরেকটি গুণ আবিষ্কার করলাম।এবার এটা কতটা বাস্তবায়িত করতে পেরেছে তোমার ছাত্রীরা সেটা তুমি বলতে পারবে।স্ক্রিপ্টের মধ্যে একটা মেলাঙ্কলি সুর মনকে আচ্ছন্ন করে।
ডিএমের নাম নীলাভ সেন পারুর কাছে চেপে গেল সুচি।ওকে বললে আবার এই নিয়ে ঠাট্টা তামাশা শুরু করে দেবে।
টুকুন ঘুম থেকে উঠে সুচির কোলে উঠে বসেছে।সুচি জিজ্ঞেস করল কেমন আছো?
-- বালো।তুমি বালো আছো?

যাক বেলা হল স্নানে যেতে হবে।স্নান করলে শরীর ঝরঝরে হবে।সুচি জিজ্ঞেস করে,কিরে তুই যাবে না আমি যাবো?
--তুমিই যাও ধকল করে এসেছো।স্নান করলে ফ্রেশ লাগবে।এসো আমার কাছে এসো।হাত বাড়িয়ে টুকুনকে নিল পারু।
তোয়ালে নিয়ে বাথরুমে ঢুকলো।পারুকে অনেক কথা বলেনি ওকে বলেই বা কি হবে?চকিতে একটা চিন্তা মনে ঝিলিক দিয়ে গেল।একদিন এখানকার ডিএম অফিসে গেলে কেমন হয়?অন্তত ব্যাপারটা কনফার্ম হওয়া যেতো।নীলুই ডিএম কিনা আর এই ডিএম বিয়ে করেছে কিনা?বড়দি বলছিল বিয়ের পর ছেলেদের আচরণ যেমন হয় এর নাকি সেরকম নয়।ঠোটে এক চিলতে হাসি খেলে যায়।
পার্টি অফিসের সামনে জিপ এসে দাড়াতে  কমরেড জেপি জিপ থেকে নেমে পার্টি অফিসে ঢুকে চেয়ারে বসলেন।সবাই চুপচাপ দাদা কি বলেন শোনার জন্য।
--বরেন ডিএমের সঙ্গে এ্যাপয়ণ্টমেণ্ট হয়েছে?
--হ্যা সিকদারবাবুর সঙ্গে ফোনে কথা হয়েছে।
--ডিএমের বয়স বেশী না বিয়ে করেনি।ভাগ্যিস জানতে পেরেছি।জামদানী শাড়ি কিনে বসে আছি।ডিএম কি শাড়ী পরবে?
সবাই জেপির রসিকতায় হো-হো করে হেসে উঠল।
-- কটায় এ্যাপয়ণ্টমেণ্ট কিছু বলেছে?
--ভিজিটং আউয়ারসে যেতে হবে।দশটা থেকে এগারোটা।
ডিএমকে  দেবার জন্য উপহার সামগ্রীর মধ্যে থেকে শাড়ীটা সরিয়ে রাখা হল জেপির নির্দেশে।জেলায় কোনো ডিএম এলে পার্টির পক্ষ হতে উপহার দেওয়া রেওয়াজ চলে আসছে।
স্নান করে সবাই অপেক্ষা করছে।টুকুনকে খাইয়ে দেওয়া হয়েছে মাসীমণী এলে খাবে বলে বসে আছে সুচি।চাপারানি হাসদা রান্না ঘরে বসে ভাবছে ভাইয়ের কথা। দিদিমনির ফেরার অপেক্ষায় বসে আছে।
নীলাঞ্জনা ফিরলেন তখন প্রায় একটা বাজে।পারু জিজ্ঞেস করে,ছেড়েছে?
--তোর অনুকে জিজ্ঞেস কর।কোথা থেকে একটা ঘাটের মড়া উকিল ধরে এনেছে ভাল করে কথা বলতেই পারে না।
--আমি এইসব করেছি নাকি কখনো?অনির্বান বলল।
--কি হয়েছে বলবে তো?চাপাদি অস্থির হয়ে বসে আছে।
অনির্বান ব্যাপারটা বিশদে বলে,পুলিশ ভ্যানে আসামীদের নামাতে দেখল ওর মধ্যে সুদাম নেই।খোজ নিতে জানাল থানায় খোজ নিতে।গেলাম থানায় সেখানে ওসি গৌরাঙ্গবাবু বললেন,আসামীদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।জিজ্ঞেস করলাম ধরলেন কেন আবার ছেড়েই বা দিলেন কেন?ভদ্রলোক রেগে গিয়ে বলল,আপনি  কে?
ঝামেলার ভয়ে কথা বাড়ালাম না। থানা থেকে বেরোতে এক কনেস্টবল বলল,নয়া ডিএম এসছিল থানায়।খুব বকাবকি করেছে।ব্যাস তারপর সবাইকে ছেড়ে দিয়েছে।
ঝুটমুট ধরেছিল।
যাক ছাড়া পেয়েছে চাপা আড়াল থেকে সব শুনছিল,জিজ্ঞেস করল,দিদিমণি এবার খেতে দিই।
--কিরে তোরা খাসনি?তোরা তো খেয়ে নিতে পারতিস।
সবাই একসঙ্গে খেতে বসে যায়।সুচি খেতে খেতে বড়দির কথাটা ভাবে,এমন হৃদয়বান মানুষ মিথ্যে বলতে পারেনা।নিজের উপর ভীষণ রাগ হয়।যখন নামটা শুনলো তখন বেরিয়ে কেন ভালোভাবে দেখল না ওটা নীলু নাকি অন্য কেউ?
[+] 6 users Like kumdev's post
Like Reply




Users browsing this thread: 3 Guest(s)