Thread Rating:
  • 8 Vote(s) - 3.5 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
গল্পের মত বাস্তব
#81
(21-04-2020, 09:28 AM)Mr Fantastic Wrote: এই আপডেটের শেষ ভাগের প্রথম প্যারাগ্রাফটা সেরা লেখা হয়েছে, প্রেমের আবেগ আর অনুভূতি দারুন ভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে

অনেক ধন্যবাদ দাদা। ভালো লেগেছে জেনে খুব খুশি হলাম। সাথে থাকবেন। 
Like Reply
Do not mention / post any under age /rape content. If found Please use REPORT button.
#82
- নতুন কলেজটা বাড়ি থেকে বেশ খানিকটা দূরে | আমি পাড়ার হরেন দাকে বলে দিয়েছি, উনি তোমাকে দুবেলা ওনার রিক্সায় করে পৌঁছে দিয়ে আসবেন | ওখানে গিয়ে প্রিন্সিপাল ম্যামের সাথে যোগাযোগ করবে | আমার ওনার সাথে কথা বলা আছে, আশা করি বিশেষ অসুবিধা হবে না |

- হুমমমমম, আপনি এত তাড়াতাড়ি অল্প সময়ের মধ্যে যেভাবে নতুন কলেজে পড়ার, যাওয়া আসার ব্যাবস্থা করে দিলেন, তার জন্য কি বলে ধন্যবাদ জানাব আমি বুঝে উঠতে পারছি না | আসলে কোনো দিন ভাবিনি যে আমার মত একজন মেয়ের জন্যও কেউ এত কিছু করতে পারে | যেখানে আমার আপন জনেরাই কোনো দিনও ভাবল না সেখানে আপনি............. 

- থাক অনেক হয়েছে | সত্যিই যদি বুঝতে পারো তাহলে এইসব বাজে ভাবনা ছেড়ে একটু পড়াশোনায় মন দাও | এই কয়েকদিন এইসব কাজের জন্য আমিও দেখতে পারিনি | এখন কথা না বাড়িয়ে বই নিয়ে বসো, আমি ফ্রেস হয়ে আসছি |

............ বলে উনি তাড়াতাড়ি ফ্রেস হতে চলে গেলেন | ওনার মুখের ওপর কথা বলার সাহস হবে না আমার, তাই অগত্যা বই নিয়ে বসতেই হবে | কিন্তু মনে হচ্ছে আবার জ্বর আসছে | মাথাটা অল্প ব্যাথাও করছে | না না ওনাকে বলে লাভ নেই, এমনিই মানুষটা অনেক ছুটোছুটি করছে আমার পড়াশোনার জন্য | বললে যদি ভাবেন জ্বরের বাহানায় পড়া ফাঁকি দিতে চাইছি......... ভালোবেসে তো উনি কোনো দিনও কাছে আসবেন না, কিছু বলবেন ও না | তাছাড়া এখন আর আমি আশাও করি না | বকুনি দিলেও কথা তো বলেন, তাই এই পড়তে পড়তে ওনার সাথে যতটা সময় পাওয়া যায়......... সেটাই আমার প্রাপ্তি |

প্রায় দুঘন্টা সময় পার হয়ে গিয়েছে পড়তে পড়তে, আর বসে থাকতে পারছি না | চোখ জ্বালা করছে, মাথাটাও ঘুরছে | কি করি এখন, পড়ব না বললেই হাজারটা প্রশ্ন করবেন | আর যদি বুঝে ফেলেন জ্বর এসেছে তাহলে নিজের খেয়াল না রাখার জন্য আবার বকুনিও দেবেন | কি যে করি কিছুই বুঝে উঠতে পারছি না | এর আগেও বহুবার জ্বর হয়েছে, তখনও একলাই সামলেছি | কাকু কাকীমা থাকতেও একবারও পাশে এসে দাঁড়ায় নি, সুতরাং এবারও পারব | চুপ করে উঠে গিয়ে আরও একটা জ্বরের ওষুধ খেয়ে নিই, তাহলেই কমে যাবে আর উনি বুঝতেও পারবেন না | যেই ভাবা সেই কাজ | আস্তে আস্তে উঠতে যাবো............ 

- একটা পড়া বোঝাচ্ছি না??? কোথায় যাচ্ছো??!!! দরকার না হলে বলে দাও, শুধু শুধু খেটে মরব না |

- না মানে, আসলে আমি একটু বাথরুমে যাবো | যদি আপনি......... 

- ওহ, তা এতে এত লুকিয়ে চুরিয়ে যাওয়ার কি........ পরিস্কার বললেই হত | যাও, তাড়াতাড়ি এসো না হলে পড়াটা নষ্ট হয়ে যাবে |

- হুমমমমম, আসছি |

............... বলে সবে ঘরের দরজা পর্যন্ত গিয়েছি, হঠাৎ মাথাটা কেমন যেন ঘুরে উঠলো | চোখের সামনে সবকিছু কেমন যেন ঝাপসা লাগছে | স্যারের মুখটা এত কা....... কা...... কাছে..... ছে.... কেনন

***************************

- আঁখি, আঁখি কি হল তোমার???? চোখ খোলো!!!! কথা বলছো না কেন??!!!! 

উফ: মেয়েটা মোটে নিজের খেয়াল রাখে না | সারাদিন কিছু না কিছু....... এখন দেখো জ্বরে গা পুড়ে যাচ্ছে অথচ আমাকে কিছু বুঝতেই দেয় নি | আমি কি এতটাই পাষাণ যে অসুস্থ্যতার কথা শুনলেও জোর করে বসিয়ে রাখব বলে মনে হয় তোমার??!!!! তাড়াতাড়ি কোলে করে বিছানায় এনে শুইয়ে দিলাম | ছোটো বেলায় দেখেছি জ্বর হলে মা মাথায় জলপট্টি দিয়ে দিত | ডাক্তার বাবু আসতে এখনও কিছুটা সময় লাগবে, ততক্ষণ না হয় জলপট্টিই.......... 

ওর ওই অচেতন নিস্পাপ মুখটার দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে কতক্ষন যে এভাবে বসে ছিলাম খেয়াল নেই | হঠাৎ ডোর বেলটা বেজে ওঠায় সম্বিৎ ফিরতে খেয়াল হল ডাক্তার বাবু আসার কথা তো, হয়ত উনিই হবে | তাড়াতাড়ি গিয়ে ওনাকে ভিতরে নিয়ে এলাম | এতক্ষন ধরে জলপট্টি দেওয়ায় জ্বরটা অনেক কম মনে হলেও ও এখনও চোখ খুলছে না কেন???!!! 

- এখন জ্বরটা অতটা নেই ঠিকই, তবে শরীর খুবই দূর্বল | উনি কি ঠিক করে খাওয়া দাওয়া করেন না?? নিজের প্রতি যত্ন নেন না??? 

- সে আর বলতে, সারাদিন কিছু না কিছু ঘরের কাজ করেই চলেছে | না হলে আমার খেয়াল রাখতে ব্যাস্ত | কোনো কথা বললে শুনবে না |

- হুমমমমম, বুঝলাম |

- কেন স্যার, কি হয়েছে??!!! এনিথিং সিরিয়াস???!!!! দয়া করে বলুন না কি হয়েছে ওর!!!! ও, ও ঠিক আছে তো??!!!! 

- আরে আরে এত ব্যাস্ত হওয়ার কিছু হয় নি | ঠান্ডা গরমে একটু জ্বর এসেছে ঠিকই, তবে শরীর ভীষন দূর্বল | আমি একটা ইনজেকশন দিয়ে দিচ্ছি, আশা করি কাল সকালের মধ্যে জ্ঞ্যান ফিরে আসবে | তবে এখন কিছুদিন বিশ্রামের প্রয়োজন | আবার যদি অনিয়ম শুরু করে............. 

- না না ডাক্তার বাবু, আপনি চিন্তা করবেন না | একবার জ্ঞ্যান ফিরুক, তারপর দেখছি কেমন কথা না শোনে |

- হুমমমম, অসুবিধা হলে জানাবেন তাহলে | যদিও আশা করি আর কিছু হবে না, তাও |

- সে তো অবশ্যই | আমি কাল কেমন আছে আপনাকে অবশ্যই জানাব আর বিকেলে রক্তের রিপোর্ট গুলো নিয়ে তো যাবই, তখন আপনি ওকে আর একবার দেখে নেবেন |

- হুমমমম, সেটাই ভালো | চলি তাহলে | 

- হ্যাঁ হ্যাঁ, চলুন |

- অনিরুদ্ধ বাবু যাওয়ার আগে একটা কথা বলবো কিছু মনে করবেন না তো? আসলে একটু পার্সোনাল তো তাই |

- না না বলুন না, কিচ্ছু মনে করবো না |

- আপনি আমার থেকে অনেকটাই ছোটো, তাই তুমি করেই বলছি কিন্তু |

- হ্যাঁ হ্যাঁ, অবশ্যই | এত কিন্তু কিন্তু করার কি আছে, বয়সে আপনি আমার পিতৃতুল্য | আপনি তুমি বলতেই পারেন |

- হুমমমম, আসলে সবসময় বকাবকি করলেই হয় না | ভালো যখন বাসো, তখন ভালোবেসেও তো পাশে থাকা যায় | জেনে রাখবে এমন অনেক অসুখ আছে যা ওষুধে নয়, একটু ভালোবাসাতেই সেরে যায় |
আসলে ওর মুখ চোখ দেখে মনে হয় ও খুব একাকিত্বে ভোগে | মনমরা হয়ে থাকে | তোমাদের পারিবারিক ব্যাপারে কথা বলা ঠিক না | একজন ডাক্তার হয়ে হয়ত এত ব্যাক্তিগত বিষয়ে কথা বলা উচিত না | তবু তোমার, তোমার স্ত্রীর প্রতি এত ভালোবাসা, চিন্তা দেখে মনে হল বলতে | 

*******************************

"ভালোবাসা শুধু চায় ভালোবাসার সময়
 ভালোবাসলে ভালোবাসার পাশে থাকতে হয়
 হারিয়ে যাওয়ার ভয়ে যদি ভালোবাসা ব্যাথা পায়
 তখন, ভালোবেসে ভালোবাসাকে আপণ করে নিতে হয় |"
[+] 3 users Like eklasayan's post
Like Reply
#83
প্রেম যখন শুরু হয় সেই সময়ের অনুভূতি আর আবেগগুলি দারুন ভাবে বর্ণনা করা হয়েছে, hat's off
Like Reply
#84
দাদা আপডেটগুলো একটু দ্রুত পেলে ভালো হয়
Like Reply
#85
অনেকদিন পর এক অসাধারণ লেখা পেলাম।
Like Reply
#86
Wow ... Last katha gulo to darun ....
Like Reply
#87
দাদা আপডেটের অপেক্ষায় আছি
Like Reply
#88
Dada update taratari din ..
Like Reply
#89
আজ আপডেট আসছে তো?
Like Reply
#90
দাদা কি হারিয়ে গেলেন নাকি? না হারালে আপডেট নিয়ে আবার ফিরে আসুন।
Like Reply
#91
(22-04-2020, 09:11 AM)Mr Fantastic Wrote: প্রেম যখন শুরু হয় সেই সময়ের অনুভূতি আর আবেগগুলি দারুন ভাবে বর্ণনা করা হয়েছে, hat's off

অনেক ধন্যবাদ দাদা। আপনাদের ভালো লাগাতেই আমার প্রাপ্তি। সাথে থাকুন। 
Like Reply
#92
(22-04-2020, 10:27 PM)Mr Fantastic Wrote: দাদা আপডেটগুলো একটু দ্রুত পেলে ভালো হয়

চেষ্টা করি দাদা। আসলে ‌মাঝে মাঝে নিজের কিছু সমস্যা থাকে আর গল্পটা বুনতে একটু দেরি হয়ে যায় আর কি। তাও চেষ্টা করবো যত তাড়াতাড়ি আপডেট দেওয়ার। সাথে থাকবেন। 
[+] 2 users Like eklasayan's post
Like Reply
#93
(22-04-2020, 11:21 PM)bhaskar Wrote: অনেকদিন পর এক অসাধারণ লেখা পেলাম।

অনেক ধন্যবাদ দাদা। ভালো লেগেছে জেনে খুব খুশি হলাম। সাথে থাকবেন। 
Like Reply
#94
(23-04-2020, 12:39 AM)dreampriya Wrote: Wow ... Last katha gulo to darun ....

Onek Dhonnobaad. Bhalo legeche jene sotti khub khushi holam. Sathe thakun.
Like Reply
#95
(24-04-2020, 03:09 PM)Thumbnails Wrote: দাদা কি হারিয়ে গেলেন নাকি? না হারালে আপডেট নিয়ে আবার ফিরে আসুন।

হা হা হা !!! না না দাদা হারিয়ে যাই নি। আসলে সমস্যার জন্য একটু দেরি হয়ে গেল। আর গল্পটা বুনতে একটু সময় লাগছে। তবে কথা দিচ্ছি শেষ না করে হারিয়ে যাব না। সাথে থাকবেন। 
Like Reply
#96
উনি চলে গিয়েছেন অনেকক্ষন হল | তবু যে আঁখি এখনও কেন চোখ খুলছে না কে জানে!!!! এমনি সময় কিছু না কিছু করছেই আর সাথে অনর্গল কথা, রীতিমত ওকে বলে চুপ করাতে হত | অবশ্য ইদানিং আমায় দেখলে কিছু বলার আগেই একটু থমকে যেত | ডাক্তার বাবু যে কথা গুলো বলে গেলেন, তাহলে কি সেই জন্যেই?? আমি হয়ত সত্যি বড্ড বকাবকি করি মেয়েটাকে | কিন্তু কিছু না বললে যে উনি সারাদিন কিছু না কিছু ঘরের কাজেই ব্যাস্ত হয়ে থাকবে | তাতে তো আর এক ঝামেলা, একে তো পড়াশোনা যাবে তায় আবার খাটুনির জন্য অসুস্থ হয়ে যেতে পারে | তবে মানছি একটু বেশিই কড়া করে বলা হয়ে গিয়েছে, একটু নরম হয়ে বললেও হয়ত কাজ হত |

আমি মানছি আঁখি আমার ভুল হয়েছে, এবার তো তুমি চোখ খোলো.... কথা বলো!!! হ্যাঁ এতদিন আমি তোমায় কম কথা বলতে বলতাম কিন্তু আজ আমি বলছি, এই একবেলায় এই নিস্তব্ধতা আমায় গিলে খেতে আসছে | একলা থাকতে থাকতে নিস্তব্ধতাটাকে আপন করে নিয়েছিলাম, তাই তোমার অনর্গল কথা বলে যাওয়ায় হাঁপিয়ে উঠছিলাম | কিন্তু আজ যখন তুমি চুপ, তখন এই একটা বেলা কাটানো যে আমার পক্ষ্যে অসহ্য হয়ে উঠছে | এই কয়দিনেই যে সামান্য কারনে তোমার খিলখিলিয়ে হেসে ওঠা, ওই চঞ্চল চপল চাহনি, আমার জীবনের অপরিহার্য অঙ্গ হয়ে উঠেছে বুঝতেই পারিনি | আমি হেরে গিয়েছি স্বীকার করছি | তোমার থেকে দূরে থাকার প্রতিযোগিতায় আমি হেরে গিয়েছি | একবার চোখ খোলো, দয়া করে খোলো | এই প্রাণহীন নিস্তব্ধতায় গোটা বাড়িটা যে আমায় গিলে খেতে আসছে |

*******************************

( বাথরুমে গিয়ে কি ঘুমিয়ে পড়েছিলে??? পড়তে না ইচ্ছা হয় বলে দাও, বেকার খাটব না | আর ওসব কলেজে গিয়েও লাভ নেই | কাল সকালে উনি কলেজে যাবেন, ভাবলাম আগে থেকে একটু রিভাইস করে গেলে পড়া বুঝতে সুবিধা হবে, তা না উনি বাথরুমে যাব বলে ঘুরছেন )

- নননা.... না না, আমি পড়ব..... না... ননা.... যাব যাব কলেজে !!!!

- কি, কি হল আঁখি???!!!! কি বলছ?? কোথায় যাবে??!!! কিছু কষ্ট হচ্ছে??? আঁখি..... আঁখি...... 

- হ্যাঁ?!!!! 

- এত অস্থির হচ্ছ কেন!!?? আমি থাকতে তোমার কিচ্ছু হবে না | কিছু হয়নি সব ঠিক আছে | আমি আছি তো, ভয় পেয় না |

স্যারের কথায় একটু ধাতস্থ হতে বুঝলাম ওটা দু:স্বপ্ন ছিল | উফফফফ বড্ড ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম | কিন্তু আমি তো বাইরের ঘরে পড়ছিলাম, তবে এখানে, ঘরে কি করে এলাম...!!! তাড়াতাড়ি উঠতে যাব.........

- এক পাও নিচে নামাবে না | চুপ করে বসে থাকো |

- না, মানে ঠিক আছি | কিছু হয়নি তো |

- হ্যাঁ সেই, কতটা ঠিক আছো বুঝতেই পারছি | আচ্ছা তুমি কি ভাবো বলো তো নিজেকে?? খুব বুদ্ধিমান??!!! এতটা শরীর খারাপ একবারও বলতে পারো নি?? আমাকে কি এতটাই নিষ্ঠুর বলে মনে হয় তোমার??? যদি তোমার কিছু হয়ে যেত, আমি কি নিয়ে..... মমম... মা... মানে তুমি বললে না কেন?? 

- আসলে তেমন কিছু না, সামান্য একটু শরীর টা..... তবে আমি ঠিক আছি | এত চিন্তা করবেন না, প্লিজ | এমনিতেই সারাদিন কলেজ করেন, তারপর আবার আমার কলেজে ভর্তির জন্য এমন ছুটোছুটি করছেন | এমন চলতে থাকলে যে আপনার শরীর টা খারাপ হয়ে যাবে | 

- এতই যদি আমার কথা চিন্তা করো তাহলে নিজের খেয়াল রাখো না কেন?? সবসময় কিছু না কিছু কাজ করেই চলেছ, নিজের খাওয়া দাওয়ার দিকে পর্যন্ত খেয়াল রাখো না | এরপর কলেজ পড়াশোনা শুরু হলে কি করবে?? আজ যদি তোমার কিছু হয়ে যায় তাহলে আমি কাকে নিয়ে, কি নিয়ে থাকবো একবার ভেবে দেখেছ???

- শরীর থাকলে একটু তো এসব....... কিন্তু আপনার কথাটা তো ঠিক বুঝলাম না | সামান্য একটা ব্যাপার নিয়ে আপনি এতটা অস্থির হয়ে পড়ছেন কেন?? আজ আপনাকে এমন বিদ্ধস্ত লাগছে কেন???!!!! 

তোমাকে কি করে বোঝাই আঁখি, এই কয়েকটা ঘন্টা আমার কাছে কয়েকটা যুগের মত মনে হচ্ছিল | এতদিন নিজের অনুভূতি গুলো সম্পর্কে ধন্ধে ছিলাম ঠিকই, সমাজে চক্ষুলজ্জার ভয়ে আমি তোমাকে দূরে সরিয়ে রাখতে চেয়েছি, কিন্তু নিজের সাথে এই মানসিক দন্ধে যে আমি হাঁফিয়ে উঠেছি | তোমাকে হারিয়ে ফেলার ভয় যে কতটা ভয়াবহ হতে পারে, তা আজ আমি বুঝতে পেরেছি |

- কি হল স্যার কি ভাবছেন?? আসলে আপনার মুখে বরাবর তো রাগ দেখে, ইয়ে মানে গুরুতর কিছু কি??? ও: হো দেখুন তো এত রাত হয়ে গেল আপনার নিশ্চয়ই কিছু খাওয়া হয়নি | আজ তো রান্নার দিদিও আসেন নি আর আমি এখানে, আচ্ছা আপনি একটু বসুন আমি এখনই......... 

- এবার কিন্তু আমি সত্যিই খুব খুব রেগে যাব | তোমায় বললাম না বিছানা থেকে নামবে না | এতক্ষন যে জ্বরে বেহুঁশ হয়ে পড়েছিল, সে চলেছে আমার জন্য রান্না করতে | একদম ছটফট করবে না |

- কিন্তু আপনি রাতে.... মানে, কাল তো আবার কলেজ | আপনি কি সারারাত না খেয়ে...... আর আমারও তো খিদে পেয়েছে নাকি |

- ওহ হ্যাঁ তাই তো, তোমার তো এতক্ষন না খেয়ে থাকা উচিত নয় | রাতের ওষুধও আছে, আচ্ছা আমি কিছু বানিয়ে নিয়ে আসছি, কিন্তু তুমি এক পাও নামবে না বলে দিলাম |

- কি আপনি রান্না করবেন..... আমার জন্য!!! 

- কেন আমি কি প্রথমবার রান্না করছি নাকি?? তুমি আসার আগেও তো...... হ্যাঁ এই কয়েক মাস রান্নাঘরে যেতে হয়নি ঠিকই, হয়ত একটু অসুবিধা হবে, তাই বলে কি সব ভুলে গিয়েছি নাকি!!! 

- না মানে সেটা না, আসলে আমি থাকতে আপনি....... এটা কি ভালো দেখায় বলুন? 

- আর ভালো খারাপের বিচার করতে হবে না | চুপ করে শুয়ে বিশ্রাম নাও, আমি আসছি |

************************************

- আঁখি তুমি কি শুয়ে পড়েছ?? একবার একটু দরজাটা খুলবে....?? 

- হ্যাঁ আসছি | কিছু দরকার ছিলো স্যার??!!! 

- শুয়ে পড়েছিলে? 

- না না, একটু গান শুনছিলাম | কেন স্যার??!!! 

- হুমমমম, কয়েকটা কথা ছিল | তার আগে এই রাতের ওষুধ টা খেয়ে নাও দেখি |

- হুমমম, বলুন |

- শোনো কাল তোমার কলেজের প্রথম দিন | যেহেতু বছরের মাঝখানে ঢুকছ তাই কিছু নিয়ম কানুনও আছে | বেশিরভাগটা আমি করে দিলেও কিছু জিনিস প্রার্থীকেই করতে হয় | তাই কাল কলেজে যেতেই হবে | 

- আর হ্যাঁ, যে কথাটা বলতে এসেছিলাম সেটা হল, আজ ডাক্তার বাবু কিছু রক্তের পরীক্ষা করার কথা বলে গিয়েছেন | আর আমি চাই সেটা কালই করে ওনাকে একবার দেখিয়ে আসতে | আমি ল্যাবে ফোন করে দিয়েছি | ওরা কাল সকালেই লোক পাঠিয়ে দেবে বলেছে | আর বিকেলে পাঁচটা নাগাদ আমি তোমার কলেজের সামনে চলে যাব | তারপর ওখান থেকে........ 

- স্যার...... কি বলছেন এসব??!!! আমার কিছু হয়নি একদম সুস্থ আছি | আমি কোনো রক্ত দেব না প্লিজ | আমি আপনার সব কথা শুনব, ভালো করে পড়াশোনা করব, দোহাই আপনার আমার রক্ত নিয়ে নেবেন না |

- এমন ভাবে বলছ যেন তোমার সারা শরীর থেকে রক্ত বের করে নেবে | পরীক্ষা গুলো করার জন্য যেটুকু নমুনা দরকার ব্যাস ততটুকুই | এমন বাচ্ছাদের মতন করছ কেন??!!! 

- আমি বুঝতে পারছি একটুই নেবে, কিন্তু আমার তো কিছু হয়নি, শুধু শুধু পরীক্ষা করিয়ে কি লাভ??!! আর কাল প্রথম দিন তাড়াহুড়ো থাকবে, আর প্রথম দিন তো একটু আগে যাওয়াইই ভালো তাই না বলুন?? কাল সকালে তো একদমই সময় হবে না | আপনি ওদের না করে দিন |

- হুমমমম, কলেজে ১১টার মধ্যে পৌঁছলেই হবে | আর কোনটা দরকারি আর কোনটা নয় সেটা আমাকে বোঝাতে হবে না | কারন আমি তোমার মতামত নিতে না, নিজের সিদ্ধান্ত টা জানাতে এসেছি | সুতরাং কাল তৈরি থেকো আর হ্যাঁ, দরজা লক করার দরকার নেই, এমনি ভেজিয়ে রাখবে |

মহারাজাদের মত হুকুম শুনিয়ে তো উনি চলে গেলেন, কিন্তু সাথে আমার রাতের ঘুমটা দিলেন মাটি করে | কাল নতুন কলেজে যাব কত আনন্দে ছিলাম, দিল সব মাটি করে | আরে বাবা শরীর থাকলে একটু খারাপ তো হতেই পারে, তাতে এত রক্ত পরীক্ষা, ডাক্তার-বদ্যি করার কি আছে বুঝিনা | উহহহ: !!! কি যে করি কিছুই মাথায় আসছে না |

সকাল বেলা স্যারের ডাকে ঘুম চোখ খুলে দেখি আমি চেয়ারে বসে বসেই ঘুমিয়ে পড়েছিলাম | অবশ্য এত টেনশনের মধ্যেও যে ঘুম এসেছিল এটাই আশ্চর্যের বিষয় |

- তুমি এমন চেয়ারে বসে কেন?? রাতে ভালো করে ঘুম হয়নি?? কোনো কষ্ট হচ্ছিল?? আমাকে ডাকলে না কেন?? 

আহা কি আনন্দের কথা, নিজে আমার ঘুমের বারোটা বাজিয়ে এখন আবার জিগ্যেস করছেন ঘুম হল কিনা!!! কি বলি এখন, কেন ঘুম হয়নি........ 

- কি হল কি ভাবছ বসে বসে??? তোমাকে কাল বললাম না সকাল সকাল তৈরি হয়ে থাকবে, ওরা কিন্তু ঠিক সাতটায় লোক পাঠাবে বলেছে | ঝটপট উঠে ফ্রেশ হয়ে বাইরে এসো |

- ইয়ে মানে বলছিলাম কি স্যার, এসবের কি খুব দরকার ছিলো??!! আমি তো এখন সুস্থ, দেখুন কোনো অসুবিধা হচ্ছে না | ওদের আসতে না করে দিন না, প্লিজ |

- আবার কথা, ঝটপট ফ্রেশ হয়ে এসো | ওরা এসে গিয়েছে মনে হয়, আমি ওদের বসাচ্ছি |

হে ভগবান, আচ্ছা ঝামেলায় পড়া গেল তো | না গেলেও মুশকিল আবার গেলেও মুশকিল, কি যে করি!!!! বাইরে এসে দেখি একটা মোটা মুশকো মত লোক টেবিলে সরঞ্জাম গুলো সাজিয়ে আমার দিকে কুতকুত করে তাকিয়ে আছে | গিয়ে দাঁড়াতেই বলল......... 

- তাড়াতাড়ি আসুন, আমাকে অনেক গুলো জায়গায় যেতে হবে | তাড়া আছে |

- কি হল দাঁড়িয়ে রইলে কেন, এসো!!!! 

আমি ধীর পায়ে এসে সোফায় বসলাম | কিন্তু ভয়ে যে আমার হাত পা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে, কেমন যেন ভারশুন্য ভারশুন্য লাগছে | এসব দেখে পালাবো পালাবো ভাবছি, দেখি স্যার আমার হাতটা শক্ত করে ধরে বসে | করুন চোখে তাকিয়ে ওনার দিকে মিনতি করতে উনি আরও কড়া চোখে তাকালেন | আর আমার চোখ বাঁধ মানল না, দুচোখ বেয়ে জল গড়াতে লাগল |

- কি হল ম্যাডাম, কিছু অসুবিধা হচ্ছে??!! হাতের বাঁধনটা কি খুব শক্ত হয়ে গিয়েছে??? 

- না.... মানে আমি রক্ত..... 

- চুপ, একদম চুপ করে থাকো | আর আপনি যা করার করুন, কোনো অসুবিধা নেই |

স্যারের কথায় আমার বুক ফেটে কান্না এসে গেল | কিন্তু চক্ষুলজ্জার ভয়ে চুপচাপ রক্ত দিয়ে নিজের ঘরে পালিয়ে এলাম | উহ: বড্ড লেগেছে, কতটা রক্ত নিল!!! আর উনি কিছুই বললেন না!!!! 

*********************************

- আঁখি.... আঁখি.... কি হল দরজা খোলো | এমন করলে চলে?? আচ্ছা দেখি কি হয়েছে, কতটা লেগেছে | কি হল খোলো দরজাটা...... 

- না না খুলব না, আপনি খুব খুব খারাপ | আপনি সবার সামনে আমাকে বকলেন | আপনার সাথে কোনো কথা নেই |

- আচ্ছা কলেজে যাবে না তো তাহলে?? ঠিক আছে আমি ওদের জানিয়ে দিচ্ছি | তবে আজ না গেলে কিন্তু এডমিশন ক্যানসেল হয়ে যাবে |

- এই এই না না, খুলছি খুলছি | প্লিজ ফোন করবেন না | আপনি খালি আমাকে ধমকান কেন বলুন তো??? এটা কিন্তু একদম ঠিক না, খুব খারাপ |

- তাই বুঝি??? আমি খুব খারাপ??? কই আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বল দেখি!!!! 

এই বলে আমার থুতনিটা ধরে মুখটা তুলতে ওঁর চোখের দিকে তাকিয়েই সমস্ত মান অভিমান কেমন যেন ভুলে গেলাম | 

- কি হল কথা বলছ না কেন?? 

- না মানে কি বলব.....!! 

- বাহ: রে, এতক্ষন যে বলছিলে..... আমি খারাপ, তোমাকে বকাবকি করি, আমাকে পছন্দ না, এবার বলো | এখন তো তোমার সামনে দাঁড়িয়ে, বলো |

তাড়াতাড়ি ওনার সামনে থেকে সরে এলাম | এত কাছাকাছি ওনার চোখে চোখ রেখে কথা বলার ক্ষমতা আমার নেই | তাই পিছন ফিরে বললাম....... 

- ঠিকই তো আপনি খারাপই | কেন এমন বকলেন সবার সামনে?? কত্ত কষ্ট হল, আবার রক্তও দিতে হল, কত্ত ব্যাথা লাগল | বললাম কিছু হয়নি, আমি ঠিক আছি, আপনি শুনলেনই না |

ধীর পায়ে আমার কাছে এগিয়ে এসে, পিছন থেকে কানের কাছে মুখটা নামিয়ে বললেন........ 

- হুমমমম, বুঝলাম তুমি ঠিক আছো কিন্তু আমার মনের শান্তির জন্য এটা করা যে প্রয়োজন ছিল | তোমায় নিয়ে কোনো রকম ঝুঁকি যে আমি নিতে পারব না আঁখি | 

ওনার প্রতিটা নি:স্বাস নিজের ঘাড়ে অনুভব করতে পারছিলাম | আমি যে আবার ওনার প্রতি দুর্বল হয়ে পড়ছি!!! আবার যে মায়ার বাঁধনে জড়িয়ে যাচ্ছি!!! কিন্তু আর না | উনি হয়ত মানবিকতার খাতিরেই এসব..... তাই নিজেকে এত দুর্বল হতে দিলে যে চলবে না | আমাকে শক্ত হতেই হবে | কল্পনার মায়াজাল ছিঁড়ে বললাম......... 

- হুমমমম, চলুন না হলে কলেজের দেরি হয়ে যাবে যে |
[+] 3 users Like eklasayan's post
Like Reply
#97
দাদা ফাটাফাটি, প্রেমানুভূতির অসাধারণ বহিঃপ্রকাশ
Like Reply
#98
Wow ... Asadharon bornona .... Kub sundor premalap cholche nirobe ... Akon dekha jak ki hoi ....
Like Reply
#99
(25-04-2020, 11:10 AM)Mr Fantastic Wrote: দাদা ফাটাফাটি, প্রেমানুভূতির অসাধারণ বহিঃপ্রকাশ

অনেক ধন্যবাদ দাদা। সাথে থাকুন। 
Like Reply
(25-04-2020, 01:25 PM)dreampriya Wrote: Wow ... Asadharon bornona .... Kub sundor premalap cholche nirobe ... Akon dekha jak ki hoi ....

Thik. Dekha jak ki hoy. Onek Dhonnobaad. Sathe thakun. 
Like Reply




Users browsing this thread: