Thread Rating:
  • 26 Vote(s) - 3.31 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Romance রূপাই নদীর রূপকথা/কামদেব
#21
দারুন হচ্ছে দাদা আপডেট টা। চালিয়ে যান সাথে আছি।  
আসুন আমরা সবাই চটি গল্প উপভোগ করি।
[+] 1 user Likes Mr.Wafer's post
Like Reply
Do not mention / post any under age /rape content. If found Please use REPORT button.
#22
আবারও মনে হচ্ছে দময়ন্তীর সাথে মনার প্রেম আদৌ হবে না
[+] 1 user Likes Mr Fantastic's post
Like Reply
#23
।।৯।।


     মলিনাবৌদির বাড়ি থেকে বেরিয়ে কেমন বিস্বাদ লাগলো। আমি কি বলেন্দ্র মোহন হয়ে যাচ্ছি?বাবার কথাই কি ঠিক,রক্তের দোষ?মেয়েদের সঙ্গে জবরদস্তি করতে পারি না একী আমার দুর্বলতা নাকি ভাবের ঘরে চুরি? দময়ন্তী ঠিক বলেছে কেউ ডাকলেই যেতে হবে? একটা চিন্তা মনের মধ্যে বুজকুড়ি কাটে, বুকে অনন্ত পিপাসা--মুখে না বাবা,ওসব পাপ। সেদিক দিয়ে মলিনাবৌদির মধ্যে কোন ভণ্ডামি নেই।মানুষের ক্ষিধে পায় ঘুম পায় কান্না পায় --তখন খাই-ঘুমোই-কাঁদি। আর ওটা পেলে, না বাবা ওসব করেনা ! লোকে মন্দ বলবে।ছিঃ তুমি না ভাল মেয়ে।এসব ভাবছি কিন্তু ভিতরে ভিতরে এক গুরু মশায় চোখ পাকিয়ে বলবে, এটা সিতা  সাবিত্রীর দেশ--এখানে ওসব চলবে  না   পরকালে  গিয়ে  প্রায়শ্চিত্ত করতে হবে।  বোজোদির শেখানো  মন্ত্র কিছুকাল জপ করা হচ্ছেনা। আমার ইচ্ছাশক্তি প্রখর  এই শক্তিবলে অসাধ্য সাধন করতে পারি।
বোজোদির ভরে দেওয়া গোয়ার গোবিন্দটা গর্জে ওঠে, প্রায়শ্চিত্ত না ছাই করতে হবে। ওসব পরকাল দেখা  যাবে পরকালে। ধূমকেতুর মত ভোলা এসে হাজির, মনাদা তোমাকে কল্যানদা দেখা করতে বলেছে।
--আমার এখন সময় নেই। কথাটা মুখ ফসকে বেরিয়ে গেল।
--মনাদা তোমাকে একটা কথা বলি,কাউকে বোলনা। কয়েক মুহূর্ত ইতস্তত করে বলে ভোলা, পার্টি-ফার্টি তোমার মত ভাল মানুষের কাজ না।
--তুই কি খারাপ  মানুষ?
--আমার  কথা ছাড়ো, আমি তো শালা মানুষই না।ভোলা চলে গেল।
হাটতে হাটতে স্টেশনের কাছে চলে এসেছি। একটা ট্রেন ঢুকেছে পিল পিল করে লোক বেরোচ্ছে,রিক্সাওলারা ভেঁপু বাজাচ্ছে।
হিজলতলি সেই আগের মত নেই।ভেবেছিলাম দময়ন্তী হয়ত এই ট্রেনে আসতে পারে, ভীড়ে  দময়ন্তীকে দেখলাম না। বাড়ির পথ ধরি।হঠাৎ কানে এল, কিরে মনা।
তাকিয়ে দেখলাম,মানিকদা দোকান থেকে ডাকছে। মানিকদা গ্রাজুয়েশন করেছেন বেশ কয়েক বছর আগে। এদিক ওদিক ঘোরাঘুরি করেছেন চাকরির চেষ্টায়। শেষে হাল ছেড়ে দিয়ে সামান্য পুঁজি নিয়ে রাস্তার ধারে এই দোকান খুলে বসেছেন।
--মানিকদা কেমন আছো?
-- মাসিমা কেমন আছেন?
--মা? আছে  একরকম।
--সরোজ আর ফিরবে না?
--কি করে বলবো--কারো মনের কথা কি বলা সম্ভব?
ভুটভুট করে কেলোর বাইক এসে থামে। কেলোর পরনে ছোপ ছোপ হাফ প্যান্ট আর টি শার্ট।দোকানে এসে বলল, পান পরাগ দু-পাতা।
পান পরাগের পাউচ ছিড়ে মুখে ফেলে ভ্রু কুচকে আমার দিকে তাকালো। মানিকদা একবার আমাকে একবার কেলোকে  দেখেন।ব্যাটা ছেদো মস্তান আমার মধ্যে আতঙ্ক চারিয়ে দেবার চেষ্টা করছে। জিজ্ঞেস করলাম, কিছু  বলবে?
--বেশসি বাড় বেড়-ওনা--।আঙ্গুল তুলে ঘাড় নাড়িয়ে বলে কেলো।
--এ্যাই কেলো শুনে রাখো আমি কারো হুকুমের গোলাম নই।
--যাঃ বাবা এসব কথা আমাকে বলছ কেন? আমি তোমাকে কোন হুকুম করেছি?
 দোকানের সামনে ভীড় জমতে থাকে সেদিকে তাকিয়ে কেলো বলে, কি  চাই এখানে? পাতলা হও পাতলা হও।
 ভীড় নড়ে না।বাইকে উঠে ফটফটিয়ে চলে গেল কেলো। মানিকদা বলল, কাজটা ভাল করলিনা।
কি করে বোঝাবো মানিকদাকে আমি কিছু করিনি।বোজোদি ভরে দিয়ে গেছে আমার মধ্যে এই গোয়ার গোবিন্দকে।ব্যাটা বলা নেই কওয়া নেই হঠাৎ চাগাড় দিয়ে ওঠে। দোকান থেকে বেরোচ্ছি অনুরাধাদির সঙ্গে দেখা।ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করে,তুই মনোজ মানে মনা না?
--তুমি তো অনুদি ফেমাস লোক,কবি অনুরাধা বসুকে কে না চেনে?
--খুব পাকা হয়েছিস।মাসিমা কেমন আছেন? খাসা চেহারা করেছিস। তোর কথাই ভাবছিলাম,দাড়া কথা আছে।
মানিকদার দোকান থেকে কি যেন কিনল।তারপর দোকান থেকে বেরিয়ে বলল,তোর কোন কাজ নেই তো?চল হাটতে হাটতে কথা বলি।
দাদার বন্ধু সুগতদার বোন এই অনুরাধাদি।বাড়িতে যাতায়াত ছিল একসময়।সেই সূত্রে দাদার সঙ্গে একটা রিলেশন গড়ে উঠেছিল।কিম্বা অনুরাধাদিই দাদার প্রতি দুর্বল হয়ে পড়েছিল।সুগতদা অঙ্কে দাদার চেয়েও ভাল ছিল। দাদার একটা ক্ষমতা ছিল কোথাও প্রয়োজনীয় কিছু পেলে ব্লটিং পেপারের মত শুষে নিতে পারতো।সুগতদার কাছ থেকে অঙ্কের জটিল রহস্য তার কিশোরী বোনের সান্নিধ্য দাদা ব্লট  করে নিয়েছিল।অনুদি ভেবেছিল তার দেওয়া সব যেন স্থায়ী আমানত পরে সুদে আসলে দশ গুণ হয়ে ফিরে আসবে।দাদা  কলকাতায় কলেজে পড়তে যাবার পর সেই আমানত লিকুইডেশনে চলে গেল। দাদার ডায়েরিতে পড়েছি দাদা লিখেছিল,ভালবাসা-টাসার চেয়ে জীবনে সফল হয়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোটাই জরুরি।ভালবাসা তখন আপনি ধরা দেবে।ভাববাদী চিন্তায় মশগুল থাকতে ভালবাসে কবিরা--শব্দের পর শব্দ সাজিয়ে জীবনের দিকে পিঠ ফিরিয়ে যারা পারিজাত ফুলের পকোড়া ভেজে খায়। কেউ যদি মুখের কথায় ভর করে আকাশ কুসুম রচনা করে সে দায় অন্যে বইবে কেন?কথা বলে কোনোদিন মনে হয়নি দাদার প্রতি কোনো অভিমান অনুদির মনের মধ্যে লালিত হচ্ছে। দাদার সঙ্গে যাই হোক ছোটবেলা থেকেই অনুদি আমাকে বেশ ভালবাসত।বীণাপাণি গার্লস কলেজের ইতিহাসের দিদিমণি।বিয়ে-থা করেনি 'জীবনের দিকে পিঠ ফিরিয়ে' কবিতা লেখে। খান পাঁচেক বই বেরিয়েছে। বিভিন্ন পত্রিকায় লেখা বের হয়।
--শুনেছি গ্রাজুয়েশন করেছিস আর পড়লি না কেন?
--কলকাতায় গিয়ে পড়া বুঝতেই পারছো--এখন কি সে অবস্থা আছে?
--চাকরি-বাকরির চেষ্টা করছিস না?মাসিমা আছেন,তোর ভবিষ্যৎ আছে।
--চাকরি পেতে গেলে যে ক্যালি দরকার,আমার তা নেই।
--কি করে বুঝলি,চেষ্টা করেছিস?
--বার কয়েক ভাইবা-তে চান্স পেয়েওছিলাম।
--তাহলে আটকালো কোথায়?
--যা সব প্রশ্ন করে তার মানেই বুঝতে পারিনা। চাকরি করতে চাও কেন? কি বলবো ? চাকরি নাহলে বিয়ে হবে না।
রিনরিন করে হেসে ওঠে অনুদি,তোর যা চেহারা চাকরি না করলেও অনেক মেয়েই তোকে বিয়ে করবে।
মেয়েদের এত নির্বোধ ভাবিনা অনুদিকে বললাম, এসব শুনে শুনে এখন আর ভাল লাগেনা।
--কি ভাল লাগে তোর?
--এইযে তোমার সঙ্গে কথা বলছি বেশ ভাল লাগছে।
অনুদি গম্ভীর হয়ে গেল।চুপচাপ হাটতে থাকি এক সময় বলে,তুই আমার দুটো কাজ করে দিবি?
আমাকে দেখলে কি সবার কাজের কথা মনে পড়ে? ভাবে হয়তো বেকার হাবাগোবা টাইপ একটু খাটিয়ে নেওয়া যাক।
--কি কাজ খুব শক্ত কিছু নয়তো?
--তা একটু শক্ত বইকি? মনে হচ্ছে বৃষ্টি নামবে। আমাকে একটু এগিয়ে দে।
--কি কাজ বললে না তো?
--তুই অন্য রকম সহজ সরল।
অনুদি কি দাদার কথা ভেবে বলল?বললাম, বোকাও বলে অনেকে।
--আমি তা মনে করিনা।
--বললে নাতো কি কাজ?
--হ্যাঁ কাল বিকেলে আয় তখন বলবো। বাড়ি চিনিস তো?
বাসায় ফিরে ঘরে এসে বসলাম।লাইট জ্বালতে ইচ্ছে করল না।মলিনাবৌদির ব্যাপারটা পাঁকের মত গায়ে জড়িয়ে আছে।বোজোদির কথা মনে পড়ল।চোখ বুজে বসে আছে আমি যেতেই চোখ খুলে বলল,গোসাইয়ের ধ্যান করতেই গোসাই হাজির।
--বোজোদি তুমি এখানে একা একা থাকো তোমার ভয় করে না?
--একা কোথায় সে আমার সঙ্গে সঙ্গে থাকে। 
--সে কে?
--আমার মনের মানুষ,যার সাধনায় পড়ে আছি।
--তুমি কার সাধনা করো?
ব্রজবালা আমার চিবুক ছুয়ে গান ধরল,তুমি আমার জীবন মরণ/তুমি আমার সাধন ভজন/আমার ঠাই তোমার ছিরি চরণে।
--ধ্যেৎ।আমি ত মানুষ।মানুষের কেউ সাধনা করে নাকি?
খিল খিল করে হেসে উঠল বোজোদি।হাসি থামিয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরে বলল,আমার বলদা গোসাই।মানুষের সাধনা করব কেন?তুমার মধ্যে আমার মনের মানুষের সন্ধান পেয়েছি গো।
--চোর ডাকাত আসলে তোমাকে মনের মানুষ রক্ষা করতে পারবে?
--কি চুরি করবে?আমার আছে কি?সব তো তুমার জিম্মায় দিয়ে ফেলেছি গুসাই।
--তুমি মেয়ে মানুষ--।
--বুঝিছি গুসাই তুমার কিসির ভয়?বেড়া ভেঙ্গে শরীর পেতি পারে কিন্তু মনের বেড়া ভাঙ্গবে সাধ্য কার,সে চাবি গুসাই ছাড়া কেউ খুলতে পারবে না গো।
বোজোদি এক মুহুর্ত কিভাবে তারপর বলল,দ্যাখো গুসাই শরীর নষ্ট হয় না,নষ্ট হয় মন।মন নষ্ট হলে তা ধুয়ে আর সাফ করা যায় না।
--তোমার কথা আমি কিছুই বুঝতে পারি না।
--তুমার বুঝে দরকার নাই।যতদিন বাঁচি শুধু একবার দেখা দিয়ে যেও,তাহলিই আমার শান্তি।বুকের কাপড় সরিয়ে আমার মাথা চেপে ধরল।শরীর নষ্ট হয় না নষ্ট হয় মন।কথাটা ভেবে এই মুহুর্তে মনের গ্লানি কিছুটা দূর হয়।জানোয়ারগুলো বোজোদির শরীর ছিড়ে খুড়ে খেয়েছে কিন্তু কে জানে মনটাকে স্পর্শ করতে পারেনি হয়তো?
ঘরে ঢুকে লাইট জ্বেলে মা জিজ্ঞেস করে,অন্ধকারে বসে কি ভাবছিস?সারাদিন কোথায় থাকিস?লোকজন এসে ফিরে যায়।
--কে এসেছিল?
--অতুল এসেছিল ওর বউ বাড়ী ছেড়ে চলে গেছে। ভেবেছিল এখানে এসে থাকতে পারে।
--রেবতিবৌদি চলে গেছে?
--বেশ মেয়েটা কেন যে চলে গেল? বিজুর যা মুখ একটু মানিয়ে চলতে কি হয়?
বৌদির কথাটা মনে পড়ল,আমি তো মানুষ।কোথায় গেল কার পাল্লায় পড়ল কে জানে?বাবা বলত এই সমাজে একা মেয়েমানুষ নিরাপদ নয়।
[+] 9 users Like kumdev's post
Like Reply
#24
অনুদি আবার কিরকম কাজের কথা বলে দেখা যাক, আমার তো চোরের মন বোঁচকার দিকে
Like Reply
#25
Wow .... Bes darun akta golpo .... Bes tortoriye egiye cholche .....
Like Reply
#26
দারুন দাদা
Like Reply
#27
।।১০।।


    ঘুম থেকে উঠে মনে পড়ল অনুদি কি কাজ দেবে বলেছিল।খাওয়া দাওয়া করে বসলাম ডায়েরি নিয়ে। সুর্য হেলে পড়েছে পশ্চিমে। ডায়েরি শেষ করে এনেছি প্রায়। শেষ দিকটা বড় করুণ। বলেন্দ্র মোহনের বল কমে গেছে। শারীরিক শক্তি সামর্থ্য তেমন নেই।কঠিন যৌন ব্যধিতে আক্রান্ত শুয়ে শুয়ে দিনাতিপাত হয়। ....বড় অন্যায় করিয়াছি মণির প্রতি। ....একবার যদি বউমার দেখা পাইতাম তাহা হইলে মার্জনা ভিক্ষা চাইতাম....আমি জানি বউমা আমার জগদ্ধাত্রী  আমার প্রতি মণির যত ঘৃণাই থাকুক ব্রৃদ্ধ সন্তানটিকে তিনি ফিরাইয়া দিতে পারিতেন না....।
মা চা নিয়ে এল।
--মা তোমাকে একটা কথা বলবো?
--কি কথা? শোন যেখানেই যাস অত রাত করে ফিরবি না
--ঠাকুরদা যদি তোমার কাছে ক্ষমা চায় তুমি তাকে মাপ করতে পারবে?
--যত আজেবাজে কথা। আমার কাজ আছে--।
--বলো না মা?
মা এক মুহূর্ত কি যেন ভাবেন,শোন মানু দোষেগুণে মানুষ--সব সময় মানুষের ভাল দিকটা  দেখবি তাহলে দেখবি পৃথিবী কত সুন্দর।তোর বাবাকে বলেছিলাম একবার খোজ নিতে--।মেয়েদের তোরা মানুষ বলে  ভাবলে তো? মার গলা ধরে আসে।
আমি আমার উত্তর পেয়ে গেছি। সত্যি মা আমার জগদ্ধাত্রী। বলেন্দ্র মোহনের চিনতে ভুল হয়নি। এখন একবার বেরোতে হবে। দেখি অনুরাধাদি কি কাজ দেয় আবার? কবিরা খুব সংবেদনশীল হয় শুনেছি।
অনুরাধাদি সেজেগুজে কোথাও বের হচ্ছে মনে হল।আমার আসার কথা কি খেয়াল নেই? খুব সাদামাটা সাজগোজ। দীর্ঘদেহি চওড়া পিঠের উপর ছড়ানো একরাশ কালো চুল। কাঁধে একটা ঝোলা ব্যাগ।দময়ন্তীর চুল কাঁধ অবধি ছোট করে ছাটা।
--কোথাও যাচ্ছো?
--হ্যা তোর জন্য অপেক্ষা করছি,চল।
--কি কাজ দেবে বলেছিলে তুমি?
--এইতো কাজ।
হাটতে হাটতে স্টেশন অবধি গিয়ে ট্রেনে উঠলাম।দুটো স্টেশন পর মাজদিয়া। কলকাতার বিপরীত দিকে,আগে এদিকে আসি নি। কলকাতায় গেছি অনেকবার।অনুদি বলেছিল দুটো কাজের কথা,ওর সঙ্গে যাওয়া হচ্ছে এক নম্বর।স্টেশন থেকে বেরিয়ে রিক্সা স্ট্যাণ্ড,তারা রিক্সা নিয়ে এগিয়ে আসতে অনুদি বলল, আজ হেটে যাবো।সঙ্গে ভাই আছে।
অনুদি মনে হল প্রায়ই এদিকে আসে।পাকা রাস্তা ছেড়ে কাচা রাস্তায় নামলাম।আম-জাম-তেতুল-বকুল-কদম-শিমুলের ঘন নিবদ্ধ জটলা।নীচে আশ শ্যাওড়া-আকন্দ-গোয়ালালতা-ভুতচিংড়ের ঠাস বুনট তার মধ্য দিয়ে সুঁড়ি পথ।
--মনা ভাল লাগছে না?
--কোথায় যাচ্ছি বললে নাতো?
--সাস্পেন্স।গেলেই দেখতে পাবি।মুচকি হাসল অনুদি।
বিশাল ভাঙ্গাচোরা জীর্ণ বাড়ির নীচে এসে যাত্রা শেষ হল।বাড়ির সামনে আগাছায় ভরা জঙ্গল।ভিতরে ঢুকে দেখলাম ক্ষয়া ক্ষয়া সিঁড়ি উপরে উঠে গেছে। সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে একটা বৈঠকখানা গোছের ঘর।পরিস্কার পরিচ্ছন্ন বোঝা গেল ঝাড়পোছ হয়। আমরা ঢুকতে পাশের ঘর থেকে একটি বছর কুড়ি-বাইশের ফুটফুটে সুন্দরি  মেয়ে বেরিয়ে এসে বলল, দিদি আপনি?
মেয়েটি কুমারী না বিবাহিত বোঝার উপায় নেই।অনুদি বলল, তোর ছেলে কোথায়?
মেয়েটি হেসে বলল, দস্যিপনা করে এখন মার কাছে ঘুমোচ্ছে।দাড়ান,আনছি।
--না থাক ঘুমোক।মাসিমার শরির কেমন আছে?
ভীতর থেকে কে যেন ডাকলেন, কে এলরে ইন্দ্রাণী?
--অনুদি এসেছেন মা।
অনুদি আমার কাছ থেকে ঝোলা ব্যাগ নিয়ে  তার ভিতর থেকে একগোছা টাকা বের করে ইন্দ্রাণীর হাতে দিল। একটু ইতস্তত করে টাকাটা নিয়ে বলল, দিদি মামলা কতদিন চলবে? আর ভাল লাগছেনা।
--তোকে ওসব ভাবতে হবেনা। তোকে যা বলেছি মন দিয়ে কর। পিএসসি পরীক্ষা এগিয়ে এল।তোর উপর অনেক ভরসা আমার।
মাথা নীচু করে দাঁড়িয়ে থাকে ইন্দ্রানি,তারপর বলে ,দিদি বোসো  চা করি।
--না বসবোনা,অনেক কাজ আছে।আসিরে।
নীচে নামতে একটা ছায়ামূর্তি এগিয়ে এল, আমি কুদ্দুস।
--ওঃ ভাইজান? কেমন আছেন?
--আপনি এসেছেন দেখে আসলাম।
--কোন অসুবিধে হচ্চেনা তো?
--দিদিমণি আপনি কিছু ভাববেন না।আপনার ভাইজান থাকতে কোন হারামি ওদের ক্ষতি করতে পারবে না।
--সেই ভরসাতে আমি নিশ্চিন্তে যেতে পারছি।কোন দরকার হলে আমার কলেজে চলে আসবেন। এখন আসি?
পাখিরা বাসায় ফিরে গেছে, একটু পরেই সন্ধ্যে নামবে। এবার অন্য পথে চলেছে। ক্রমশ রহস্যময়ী হয়ে উঠছে অনুদি।
--কিরে অত দূরে থাকলে কথা বলবো কি করে? পাশে পাশে আয়।
বড় বড় পা ফেলে অনুদির পাশে যেতে জিজ্ঞেস করল, কেমন দেখলি?
--কিসের কথা বলছো?
--আমি ইন্দ্রাণীর কথা বলছি।
--মহিলা বেশ সুন্দরি।
--ইন্দ্রাণী পলাশ পুরে থাকতো,আমার ছাত্রী। ওর রুপই ওর কাল হয়েছে।
--আপনা মাংসে হরিণা বৈরী। আমি চর্যাপদের শ্লোক আওড়ালাম।
--বাঃ বেশ বলেছিস তো। রুপই মেয়েদের শত্রু। ক্লাস টেনে উঠে এক ঠগের পাল্লায় পড়েছিল,তার বোলচালে ভুলে বিয়ে করে।পরে জানা গেল ছেলেটির কোন উপার্জন নেই বেকার ইন্দ্রাণীকে বিপথে নেবার চেষ্টা করে।বুদ্ধিকরে তার খপ্পর থেকে  বেরিয়ে আমাকে সব জানায়।ডিভোর্সের মামলা চলছে,আমি ওকে নিজের পায়ে দাড় করাবার চেষ্টা করছি।আমার বিশ্বাস ও পারবে।
--কিন্তু আমাকে এখানে আনলে কেন তা কিন্তু বলনি।
--তুই ওকে বিয়ে করতে পারবি?
--কেন পারবো না?
--বিয়ে করে খাওয়াবি কি?
--সেই একটা সমস্যা। অনুদি আমি একটা অপদার্থ আমাকে দিয়ে তোমার কোন কাজ হবেনা।
--কি করে বুঝলি?
--বোজোদি বলত গোসাই তোমার বড় দোষ তুমি বানিয়ে কথা বলতে পারো না।
অনুদি ভ্রু কুচকে আমাকে লক্ষ্য করে কি যেন বোঝার চেষ্টা করে। তারপর বলে, একটা কথা বলি হয়তো একটু রুঢ় শোনাবে।তুই একটা অলস গা-বাচানো স্বার্থপর মায়ের কষ্ট না-বোঝা কি বলবো যাচ্ছেতাই--।
--থাক আর বলতে হবেনা।অনুদি তুমি আমাকে ভর্ৎসনা করে আনন্দ পেতে চাও--পাও। কিন্তু আমার জন্য চিন্তা কোরনা।
--কিজানি কেন চিন্তা করছি? আসলে আমি জীবনের অপচয় সহ্য করতে পারিনা।মনুষ্যত্বের স্খলন আমাকে যন্ত্রণা দেয়।
অনুদি কবি তাই হয়তো উপলব্ধিগুলো এত সুন্দর করে প্রকাশ করতে পারে।আমরা একটা নদীর কাছে চলে এসেছি। নদীর ধারে দিগন্ত বিস্তৃত ফসলের ক্ষেত। চাদের আলোয় ঝিলমিল করছে নদীর জল।
--এটা কি নদী অনুদি?
--নদীর নাম রুপাই।হিজলতলিতে  দেখেছিস সেখানে জন বসতিতে এক রূপ এখানে একটু বন্য রূপে।
রূপাই এদিকে এসেছে?  গদ গদ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে অনুদি।আমার কাঁধে হাত রেখে জিজ্ঞেস করে,তুই সিগারেট খাস?
--কখনো খেয়েছি এক-আধটা।
--মাঝে মাঝে মন ভারাক্রান্ত হলে এখানে আসি।বসে বসে শুনি রুপাইয়ের রূপ কথা।কত কথা বলে যায় নীরবে।ব্যাগের ভিতর থেকে সিগারেট বের করে আমাকে একটা দিল,নিজেও একটা ঠোটে গুজে ধরাল। ইতিপুর্বে অনুদিকে সিগারেট খেতে দেখিনি।কবিদের জীবন যাপনই আলাদা।একরাশ ধোয়া  ছেড়ে অনুদি আবৃত্তি করে,

নদীর বাতাসে শোন বিলাপের ধ্বনি
বালির অতলে জল কাপে নিরবধি
আমিও এসেছি আজ রুপাইয়ের তীরে
তোমার পায়ের চিহ্ন খুঁজে,-- অগোচরে
আমি শুধু শূন্য গুনি, গুনে মন ভোর
প্রতি অঙ্গ লাগি কাঁদে প্রতি অঙ্গ মোর।
কি সুন্দর লাগছে দেখতে অনুদিকে চাদের আলোর সিলুয়েটে।কানের পাশ দিয়ে এক গুচ্ছ চুল কাপছে বাতাসে।যেন কোন তাপসী অনন্ত অপেক্ষায়।  অনুদি কার পায়ের চিহ্ন খুঁজে ফিরছে?
[+] 7 users Like kumdev's post
Like Reply
#28
এক কথায় অপূর্ব
[+] 1 user Likes Mr Fantastic's post
Like Reply
#29
Wow ... Asadharon hocche .... Bes onnorokom ....
Like Reply
#30
।।১১।।


             আধার নেমে এসেছে। অনুদি এক ঘোরের মধ্যে মনে হয়। দুজনে বসে আছি পাশাপাশি। রুপাই রূপকথা বলে? অদ্ভুত লাগে অনুদির কথা। জিজ্ঞেস করি ,তুমি রুপাইয়ের কথা শুনতে পাও?
--শোনা যায় না উপলব্ধি  করতে হয়। দুই পাড়ে নিত্য ঘটে চলেছে কত অত্যাচার অবিচার অনাচার তার সাক্ষী রুপাই। রুপাই আমাদের মায়ের মত তা সত্বেও  অকৃতজ্ঞ-পাষণ্ড সন্তানদের প্রতি মুখ ফিরিয়ে নেয়নি রুপাই।স্নেহ-মমতা দিয়ে ভরিয়ে তুলেছে।
নতুন কথা শুনছি।এইসব কথা যেন আমার বুকে চাপা ছিল এতদিন।
--তোকে একটা কথা জিজ্ঞেস করবো? অসুবিধে থাকলে বলিস না।
--কি কথা বলো,তোমাকে আমি সব কথা বলতে পারি।
--ব্রজবালার সঙ্গে তোর কেমন সম্পর্ক ছিল?
--জানো অনুদি বোজোদি আমাকে খুব ভালবাসতো--।
--তা নয় তুই কিছু করিস নি তার সঙ্গে?
--বোজোদি বলতো, গোসাই তোমার-আমার একদিন মিলন হবে। বিশে-কেলোরা আমার নামে মিথ্যে বদনাম দিয়ে বাবার কাছে মার খাইয়েছে।জানো আমার মা বিশ্বাস করেনি এমন  কি দময়ন্তীও--।  
--তুই কোন মেয়ের সঙ্গে কোনদিন  কিছু করিস নি?
কি জানতে চাইছে অনুদি? হঠাৎ এসব কথা জিজ্ঞেস করছে কেন? কিছু কি শুনেছে?
--কি করবো?
--থাক তোকে বলতে হবেনা।অনুদি আমার মনের অবস্থা বুঝেছে।
অনুদি নদীর দিকে তাকিয়ে বলে, তোর মধ্যে কোন হিপোক্রিসি নেই তুই  খুব  সরল।তোর এই গুণ মেয়েদের আকর্ষণ করে বেশি।যে চায় সে পায় না,যে চায়না তাকেই উজাড় করে দেয় সবাই।
--কিন্তু আমি তোমাকে সত্যি কথাটা বলিনি।
--মিথ্যে করে বানিয়ে বলতেও পারিস নি।
--বলিনি।ইতিস্তত করে বলি, শুনলে আমাকে ঘেন্না করবে। আমি না জানো অনুদি, রেবতী বউদির না খুব কষ্ট--।
--কে রেবতী?
--পলাশপুরে থাকে অতুলদার বউ। অতুলদা তাকে সুখি করতে পারেনি। একদিন রাতে ঘুমিয়ে আছি আচমকা--বলল আমি তো একজন মানুষ।
--ধুর বোকা।দেওয়ার মধ্যে একটা আনন্দ আছে ,মুস্কিল হচ্ছে সবাই মর্যাদা দিয়ে গ্রহণ করতে পারে না। অনুদি আমার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে, আর কখনো কারো সাথে--।
--ঝ্য আমার লজ্জা করে।
--আমাকে বলতেও লজ্জা?
-- জানো অনুদি মলিনাবৌদির গায়ে যা জোর না তোমাকে কি বলব।
অনুদি অবাক হয়ে আমাকে জিজ্ঞেস করে,যার স্বামী জেলে আঁছে?
--হ্যাঁ। একদিন একটা পুটুলি আমাকে রাখতে দিল। কদিন পর সেই পুটুলি ফেরত দিতে গেলাম--।
--কি ছিল পুটুলিতে?
--তখন জানতাম না পরে জেনেছি--সোনার বিস্কুট ছিল।
--ও ঐজন্য পুলিশ কিছু পায়নি?তুই খুব ঝুঁকির কাজ করেছিস অবশ্য না জেনে--।
--মলিনাবৌদিরও খুব কষ্ট তুমি না দেখলে বিশ্বাস করবে না। ভীষণ মায়া হয় ,আচ্ছা অনুদি মেয়েদের কি খুব কষ্ট হয়?
অনুদি বিষণ্ন চোখে রূপাইয়ের অন্য পারের দিকে তাকিয়ে আছে কোনো কথা বলে না।মানুটা সরোজের একেবারে বিপরীত।শুধু নিজের স্বার্থ ছাড়া কিছু বোঝে না।মানুর  নিজের জন্য চিন্তা নেই অন্যের কষ্ট নিয়ে ভেবে আকুল।মেয়েদের কেমন কষ্ট হয় ওকে কীভাবে বোঝাবে।এতো বলে বোঝানো যায় না জীবন দিয়ে বুঝতে হয়।
অনুদি চুপ করে আছে দেখে জিজ্ঞেস করি, অনুদি তোমার খুব ঘেন্না হচ্ছে তাই না?
অনুদি অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে আমার মুখের দিকে তারপর স্মিত হেসে আমাকে বুকে জড়িয়ে বলে,তোর মনটা এখনো নষ্ট হয়নি। আমার কাছে তোর সম্মান অনেক বেড়ে গেল। তুই এক নতুন অভিজ্ঞতা তোকে কথা  দিতে হবে  আমি যা বলবো তুই করবি?
বোজোদি যখন নিজের সঙ্গে আমাকে চেপে ধরত তখন সে জায়গা আলগা করে নিত,স্তন তলপেটের স্পর্শ পেতাম আমি।বোজোদি  বলেছিল,মন নষ্ট হলে সব নষ্ট, আমার সারা মন জুড়ে শুধু গোসাই--আর কিছু নাই গো।বোজোদি নেই কিন্তু সেই ভ্যাদলা মূলের গন্ধ আজও বেশ অনুভব করতে পারি।
--কিরে কিছু বললি নাতো?অনুদি জিজ্ঞেস করে।
--কঠিন কাজ না হলে করবো না কেন?
অনুদির বুকের উষ্ণতায় মন সতেজ হয়ে উঠল।আজকের এই সন্ধ্যা বড় মনোরম।
--এবার ওঠ,তাড়াতাড়ি বাড়ী  ফিরতে হবে। পরশুদিন একটা বই  প্রকাশ উপলক্ষে বাড়িতে কয়েকজনকে ডেকেছি--অনেক কাজ বাকি।
--কি হবে সেখানে?
--কবিরা আসবে, কলকাতা থেকেও আসবে কবিতা-পাঠ আলোচনা--তুই আসবি?
--আমি কি করবো?আমি কি কবিতা লিখি?
--শুনতে ভাল লাগেনা? শুনবি--।চল, এখান থেকে স্টেশন বেশি দূর না।
অনুদির হাত আমার কাঁধে একটা সুন্দর গন্ধ অনুদির গায়ে। একসময় অনুদি বলে, তুই আজ আমাকে যা বললি আর কাউকে বলবি না। তুই জানিস ব্রজবালাকে কে খুন করেছে?
--মলিনাবৌদি বলেছে নকুড়দালাল রেপ করে খুন করেছে।
--মলিনা কি করে জানলো?
--সঙ্গে কেলোরা ছিল।ওদের সঙ্গে বৌদির খুব ভাব।
--মলিনাকে এড়িয়ে যাবি,কোথা থেকে বিপদ আসে কে বলতে পারে।
আমার কাঁধে অনুদির ঝোলা তার উপর কাঁধে অনুদির হাত চলতে অসুবিধে হচ্ছে।কিছুক্ষণ নীরবে চলার পর অনুদি জিজ্ঞেস করে, তুই কাউকে কোনদিন  ভালবেসেছিস?
কথাটা শুনে হাসি পেল।এখন বাড়ির যা অবস্থা রাত পোহালে কি হবে সেই চিন্তা,তখন এইসব ভালবাসা-টাসার কথা হাস্যকর মনে হয়।চাপা নিঃশ্বাস ছেড়ে বললাম, ওসব বিলাসিতা আমাকে মানায় না।
--না মানাবার কি আছে?
--বারে আমার কি টাকা আছে?টাকা না থাকলে কে আমাকে ভালবাসবে বলো?
--তুই এত জানলি কি করে?
--দাদাকে দেখলাম না? বড়লোকের মেয়ে দেখে সব ভুলে গেল।
--সব মেয়ে টাকার জন্য ভালবাসেনা। দীর্ঘশ্বাস ফেলে  বলে অনুদি।
বড় রাস্তায় পড়তে অনুদি কাঁধ থেকে হাত নামিয়ে নিয়ে বলল, দে আমার ব্যাগ দে।
ট্রেনে উঠে  অনুদি গম্ভীর অন্য চেহারা। হিজলতলিতে নেমে বলল, পরশু আসবি কিন্তু অনেক কথা আছে।কাল বাড়ীতে আছি অনেক কাজ বাকী।
রিক্সার প্যাক প্যাক ধ্বনিতে মুখর স্টেশন চত্বর। মা বলেছে বেশি দেরি করবিনা। দ্রুত পা চালালাম বাড়ির দিকে। মেয়েদের বুকের উষ্ণতা কি প্রেরণা সঞ্চার করে? রুপাইয়ের তীরে অনুদির বুকে মাথা রেখে সেরকম অনুভূতি হল। রমেশদার বাড়ির কাছে  এসে থমকে দাঁড়ালাম।জানলায় দাঁড়িয়ে মলিনাবৌদি রাস্তার দিকে তাকিয়ে আছে।মনে হচ্ছে দেখেনি দ্রুত সরে এলাম। একটু ঘুরে অন্য পথ ধরলাম।
[+] 12 users Like kumdev's post
Like Reply
#31
দাদা এই গল্পটা সম্পুর্ণ হয়েছিলো না গসিপ এ
[+] 1 user Likes sorbobhuk's post
Like Reply
#32
অনুদিও বাকিদের মতো আবার না হয়
Like Reply
#33
।।১২।।



                  রুপাই নদী আমার কাছে নতুন নয়, কাল  অনুদি আমাকে দেখালো রুপাইয়ের এক  নতুন রূপ। কবিরা এভাবেই দেখে তাদের চারপাশে প্রতিনিয়ত ঘটে চলা সাধারণ ঘটনাকে। বলেন্দ্র মোহনের ডায়েরি পড়তে পড়তে যেভাবে বিস্মৃত অতীত জীবন্ত হয়ে ওঠে চোখের সামনে রুপাই যেন নিরন্তর লিখে চলেছে সেইভাবে সময়ের  দিনলিপি।
সকাল বেলা মা চা দিয়ে বলল,সারাদিন টো-টো করে ঘুরে বেড়ালে চলবে?
--তুমি কেবল ঘুরে বেড়াতে দেখো।
--জানি না বাপু তোর যে কি হবে?
মা অন্য কাজে চলে গেল।রোজ এইসব বলাই এখন মায়ের অভ্যাস হয়ে দাড়িয়েছে।  ভাবছি একবার লাইব্রেরিতে ঘুরে আসবো, বরেনদার সঙ্গে কথা বলতে বেশ লাগে।সন্ধ্যে হবার মুখে লাইব্রেরীর দিকে পা বাড়ালাম। বরেনদা কবি নয় অফিস থেকে ফিরে লাইব্রেরি খুলে বসে বইয়ে ডুবে থাকেন সারাক্ষণ।আমাকে দেখেই বরেনদা জিজ্ঞেস করলেন, কি ব্যাপার মনোজমোহন? অনেকদিন পরে এলে? দাদার সঙ্গে তারপর যোগাযোগ  হয়েছে?
--শুনেছি দাদা এদেশে  ফিরেছে।এখনো যোগাযোগ হয়নি।
--কাল কোথায় গেছিলি?
--অনুদির সঙ্গে মাজদিয়া।জানেন, রুপাইনদী ওদিকটা অন্যরকম। আপনি দেখেছেন বরেনদা?
--হিজলতলিতে অনেক ময়লা জমেছেরে--নদীর চেহারা বদলে দিয়েছে।আক্ষেপের সুর বরেনদার গলায়।
বরেনদার কথা কখনো কখনো দুর্বোধ্য মনে হয় বুঝতে পারিনা।তা হলেও শুনতে ভাল লাগে। একটা বই পালটে বেরোতে যাবো বরেনদা জিজ্ঞেস করেন, সেদিন মানিকের দোকানে কি হয়েছিল রে?
মনে পড়ল সেদিন কেলোর সঙ্গে গোলমালের কথা। বললাম, মানিকদার সঙ্গে কথা বলছি  কেলো এসে ফালতু চমকাতে এল--।
--ওদের এড়িয়ে চলাই ভাল,সমাজের দুষ্ট ক্ষত। তারপর কি ভেবে বললেন, গায়ে ময়লা পড়লে তো গা ঝাড়া দিতেই হবে।
লাইব্রেরি থেকে বেরিয়ে পার্টি অফিস অতিক্রম করে কিছুটা যেতেই ভোলা এসে দাঁত বের করে বলল, মনাদা খেল জমেছে।
--তোর চাকরির কিছু হল?
--ধ্যুৎ কল্যাণদা দেবে চাকরি?  ফিস ফিস করে বলল, এবার কল্যানদার ক্যালানি খাবার সময় হয়ে এসেছে।
--কে ক্যালাবে?
--নকুড় দালালের সঙ্গে কিচাইন  হয়ে গেছে,রঞ্জিতদাসের গ্রুপে ভিড়েছে,হি-হি-হি।
নকুড়বাবু অঞ্চলের একজন বড় প্রোমোটর,অবজ্ঞা করে লোকে দালাল বলে।ভোলার মুখে এসব শুনে ভাবি  ভোলা এসব কি  কথা বলছে? ভোলার বিধবা মা লোকের বাড়ী কাজ করে ছেলের মুখে অন্ন যোগায়।মা চিরকাল থাকবেনা,কি করবে তখন ভোলা, কে দেখবে ওকে? বললাম, তোর এসব কথায় কাজ কি?চিরকাল চামচাগিরি করে কাটাবি? কিছু একটা করার চেষ্টা কর।
ভোলাকে রেখে এগিয়ে যাই 'কিছু একটা কর' কথাটা কানের মধ্যে অনুরণিত হতে থাকে।মা আমাকে এই কথাটাই বলে। আমি কি ভোলার থেকে আলাদা? খুব অসহায়  মনে হয় নিজেকে। মনে হয় রুপাইয়ের ধারে গিয়ে বসে রূপকথা শুনি।অনুদি বলছিল রূপাইয়ের কথা অনুভবে শুনতে হয়।
--মনাদা-মনাদা।
পিছন ফিরে দেখলাম আবার ছুটতে ছুটতে আসছে ভোলা। আবার কি গোপন কথা বলতে আসছে।হাঁপাতে হাঁপাতে এসে বলল,তোমাকে ডাকছে।
--ডাকলেই যেতে হবে? তোকে বলেছি না আমি কারো হুকুমের গোলাম না?
--যাঃ বাবা আমাকে বলছো কেন? দিদিমণি বলল তাই বললাম। ভোলা একটু মনক্ষুন্ন।
দিদিমণি? তাকিয়ে দেখলাম দূরে দাঁড়িয়ে আছে অনুরাধাদি।
সারাদিন অনুষ্ঠানের আয়োজনে ব্যস্ত ছিল।বাইরে থেকে অনেক সম্মানীয় লোকজন আসবে। কাল মনার সঙ্গে কথা বলে অনেক কিছু জানলো।ভেঙ্গে না বললেও মনে হয় ও পাঁকে পড়ে চুদতে বাধ্য হয়েছে।ওর মনটা খুব নরম।সব শুনেও এক কথায় ইন্দ্রানীকে বিয়ে করতে রাজী হয়ে গেল। কিন্তু এভাবে চললে নষ্ট হয়ে যাবে কিছু একটা করা দরকার।মানুষ জড় পদার্থ নয় যে যেখানে যেমন অবস্থায় ফেলে রাখবে ঠিক তেমনি থাকবে চিরকাল?
কাছে যেতে অনুদি বলে,কানে আজকাল কম শুনিস নাকি?
--আমি আজকাল কম শুনি, কম দেখি, অনুদি আমি দিনদিন যাচ্ছেতাই হয়ে যাচ্ছি।আমার আর কিচছু হবে না।
--যা বলছি মন দিয়ে শোন। ভেবেছিলাম সকালে আসবি,তোর কিসের যে এত ব্যস্ততা বুঝিনা।আজ তো হলনা--কাল সক্কালে উঠে শিয়ালদা এই ঠিকানায় চলে যাবি। সুদেষ্ণা আমার বন্ধু, ওকে এই বইটা আর চিঠিটা দিবি। কি বলে মন দিয়ে শুনবি।
বইটা নিয়ে দেখলাম প্রচ্ছদে লেখা 'রুপাইয়ের রূপকথা।' তার নীচে অনুরাধা বসু।
--তোমার বই?
--হ্যাঁ। কাল অবশ্যই যাবি।সন্ধ্যেবেলা বাড়িতে আসবি, মনে আছে তো?
--সেই কবিদের ব্যাপার? আমি কি করবো?
--তুই আসবি একটা জিনিস পরীক্ষা করে দেখতে চাই।
অনুদির চোখে রহস্যের আলো ঝিলিক দিয়ে গেল। কবিদের বোঝা মুস্কিল, কখন যে কি মুডে থাকে।এম.এ পড়ার ইচ্ছে ছিল কিন্তু ঈশ্বর আমাকে পরীক্ষা থেকে নিস্কৃতি দিয়েছে।
কাল একগাদা কাজ ভাবতে ভাবতে বাড়ীর দিকে যাচ্ছি কিছুটা অন্য মনষ্ক। ডাক্তার সেনের অ্যাটেনড্যাণ্ট নিরঞ্জন বাবু তক্কে তক্কে ছিলেন বোধহয়, চেম্বার অতিক্রম করতে যাব এসে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি এই রাস্তা দিয়ে যাও না আজকাল?
--মাঝে মাঝে যাই,কেন?
--একবার উপর থেকে ঘুরে যাও।ফিস ফিস করে বললেন।
--আরেক দিন যাবো।আজ দেরী হয়ে গেছে।
--গরীবকে কেন বিপদে ফেলবে? দেখা দিয়েই চলে যেও।
--এর মধ্যে বিপদের কি আছে?
--মালিকের মেয়ে বলে কথা--কদিন ধরে বলেছে--।
অগত্যা উপরে উঠতে হল।বসার ঘরে কেউ নেই। আমি ঢুকতে মিসেস সেন এলেন বললেন,অনেকদিন পরে এলে।কেমন আছো?
--ভালই।আপনি?
--ওই একরকম। দিয়া তোমার খোজ করছিল।তোমার মোবাইল নেই?
--বেকার ছেলে মোবাইল দিয়ে কি করবো? হেসে জিজ্ঞেস করলাম, ও কলেজ থেকে ফিরেছে?
--পরীক্ষা হয়ে গেছে এখন তো কলেজ যাচ্ছেনা।
জানতাম না দময়ন্তীর ডাকনাম দিয়া। দিয়া মানে কি প্রদীপ? মিসেস সেন চলে যাবার আগে বললেন,তুমি বোসো।যেতে যেতে ইঙ্গিতে একটা ঘরের দরজা দেখিয়ে দিলেন।
আমি সেই ঘরে ঢুকে দেখলাম দময়ন্তী উপুড় হয়ে কি যেন পড়ছে ।পরনে টি-শারট আর থ্রি-কে।এমনি স্লিম চেহারা পায়ের গোছ বেশ ভারী, প্যাণ্টের ভিতর হতে বেরিয়ে। আমার সাড়া পেয়ে চিত হয়ে উঠে বসল।বেশ বাচ্চা বাচ্চা লাগছে দেখতে।ভাবলেশহীন গম্ভীর মুখ।ঝগড়াঝাটি করেছে নাকি?  
বিছানায় উঠে বসে আমাকে বসতে ইঙ্গিত করে  বলল, আজকাল নাকি কাব্যচর্চা শুরু করেছো?
--তা পারলে তো নিজের একটা পরিচয় হতো।
--কথার যাদুতে আমাকে ভোলাতে পারবেনা।সোজাকরে কথা বলতে পারো না? অনুরাধা বসুর সঙ্গে মাজদিয়া যাও নি? তোমার চেয়ে বয়সে কত বড় জানো?
--বড় তো কি হয়েছে? তুমি কি যা-তা বলছো? অনুদি  আমাকে স্নেহ করে,শুনলে কি ভাববে বল তো?
--ভাবলো তো বয়ে গেল! আমি কাউকে ভয় পাইনা।
--উর-ই বাবাঃ দিয়া জ্বলে উঠেছে--।
ভ্রু কুচকে আমাকে দেখে বলে, দিয়া? এ নাম কি করে জানলে?আমি তো তোমায় বলিনি?
--তোমার আপত্তি আছে? তাহলে বলবো না।
--না আপত্তি নেই কিন্তু সবার সামনে বলবে না। শোনো আমাকে তুমি ফাকি দিতে পারবে না,সেই চেষ্টা করবে না।
--তোমাকে কেন,আমি কাউকে ফাকি দিতে চাইনা। আচ্ছা তুমি বলো আমি কি তোমার সঙ্গে কখনো বিশ্বাস ভঙ্গ করেছি?
--যাকে বিশ্বাস করিনা সে আমার কি বিশ্বাস ভঙ্গ করবে?তোমার হাতে ওটা কি বই?
বইটা নিয়ে উল্টে-পাল্টে দেখে আমাকে জিজ্ঞেস করে,সন্দীপ মজুমদার কে?
--আমি কি করে বলবো?
--কবি অনুরাধা বসু বইটা তোমাকে দেয়নি, জনৈক সন্দীপবাবুকে দিয়েছে? তাকে পৌঁছে দেবার দায়িত্ব তোমার?তুমি বেয়ারা।
বুঝলাম ক্ষেপে আছে,সব কথার সব সময় গুরুত্ব দিতে নেই।সিঁড়িতে পায়ের শব্দ শুনে ঘুরে দেখি ডাক্তার সেন ঢুকছেন।যাক বাঁচা গেল আপাতত জেরা হতে মুক্তি!আমাকে দেখে ডাক্তার সেন ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করেন, তোমাকে আগে দেখেছি? কেমন চেনা চেনা লাগছে মুখটা।কোথায় দেখেছি তোমায়---?
--অনেকদিন আগে বাবাকে নিয়ে চেম্বারে এসেছিলাম--।
--ওঃ হ্যাঁ মনে পড়েছে,তোমার এক দাদা বিদেশে থাকে--।তা তুমি কি করো?
--বছর দুই আগে গ্রাজুয়েশন করেছি।
--এখন তাহলে পোষ্ট গ্রাজুয়েশন?
--আজ্ঞে না।এখন কিছু করিনা।  
--মানে বেকার?মেয়ের উপর চোখ বুলিয়ে নিয়ে বললেন, চাকরির চেষ্টা করতে পারো।অন্তত রাস্তার ধারে একটা জায়গা নিয়ে দোকান দিতে পারো? দেখো ভাগ্য কোথায় নিয়ে ফেলে--ভাগাড়ে না রাজপ্রাসাদে?
ফুসে ওঠে দময়ন্তী,তুমি ওকে অপমান করছো?
--চুপ করো! অনেক অপমান করেছো তোমরা  আর  অপমানিত হতে চাইনা। ডাক্তার সেন চোয়াল চেপে বলে ঘরে ঢুকে গেলেন।
দময়ন্তীর মুখ লাল মাথা নিচু করে বসে আছে।
--দিয়া বিশ্বাস করো, আমি কিছু মনে করিনি।
--আমি মনে করেছি। নিজের মোবাইলটা হাতে গুজে দিয়ে বলে, এইটা রাখো।আমি দিয়েছি কাউকে বোলনা।এখন যাও পরে কথা হবে।
--এইটা আবার-।দিয়ার মুখের দিকে তাকিয়ে কথা শেষ করতে পারিনা।দিয়া অন্যঘরে চলে গেল। মিসেস সেন ঢুকলেন, চা নিয়ে।
--তুমি একা বসে আছো? দিয়া কোথায়?
--ও মনে হয় পাশের ঘরে। 
--ওমা সেকি!তোমাকে একলা বসিয়ে--কি যে করি মেয়েটাকে নিয়ে?তুমি চা খাও।
আমি দ্রুত চা নিঃশেষ করে বলি,আমি এখন আসি?
-- আচ্ছা বাবা আবার এসো।
আমি চা খেয়ে বেরিয়ে পড়লাম। দময়ন্তী যেন প্রদীপের মত--সন্ধ্যাদীপের মত দিব্যি জ্বলছে হাওয়ায় নিভু-নিভু  আবার দপ করে জ্বলে ওঠে। রাস্তার আলোতে পকেট থেকে মোবাইলটা বের করে দেখি,বেশ দেখতে।অবাক লাগে এই ছোট্ট যন্ত্রটা দিয়ে যেখান থেকে খুশি লোকে কথা বলে। কিন্তু কিভাবে চালাতে হয় জানি না।আমাকে কেন দিল? কোনদিন আমাকে কেউ কিছু দেয়নি দিয়াই প্রথম আমাকে একটা জিনিস দিল।সঙ্গে আবার একটা তার দিয়েছে। 
[+] 9 users Like kumdev's post
Like Reply
#34
দময়ন্তী তো মনোজের প্রেমে পাগল, কিন্তু এই প্রেমের পরিণতি পাওয়া যথেষ্ট চাপের আছে
[+] 1 user Likes Mr Fantastic's post
Like Reply
#35
Bes sundor hocche ....
[+] 1 user Likes dreampriya's post
Like Reply
#36
(18-04-2020, 09:51 PM)Mr Fantastic Wrote: দময়ন্তী তো মনোজের প্রেমে পাগল, কিন্তু এই প্রেমের পরিণতি পাওয়া যথেষ্ট চাপের আছে

ঠিক বলেছেন দাদা।
আসুন আমরা সবাই চটি গল্প উপভোগ করি।
[+] 1 user Likes Mr.Wafer's post
Like Reply
#37
Akon dekha jak ai prem r ki porinoti ki hoi ....
[+] 1 user Likes dreampriya's post
Like Reply
#38
।।১৩।।


     কলেজ-কলেজের পাঠ শেষ, কাজ-কম্ম নেই,বেলা করে ঘুম থেকে ওঠা অভ্যাস। সময়মত উঠতে পারবো কিনা দুশ্চিন্তা নিয়ে রাতে ঘুমিয়েছি।সুর্য ওঠার আগেই আমি উঠে পড়লাম ঘড়িতে সবে চারটে বাজে ভাবছি আবার শুয়ে পড়বো কিনা? ঝুঁকি নেওয়া সমীচীন হবে না।যদি ঘুমিয়ে পড়ি ঠিক সময় উঠতে না পারি? বাথরুম সেরে বেরোতে কোথায় যেন পিড়িং করে শব্দ হল। মনে পড়ল কাল রাতে দময়ন্তী একাটা মোবাইল ফোন দিয়েছিল।
অপটু হাতে সুইচ টিপে দেখলাম মেসেজ এসেছে। গুড মর্নিং মন।...দিয়া।
সকাল বেলায় দিয়ার মেসেজ পেয়ে আলোকিত হয়ে উঠল চরাচর।দারুণ তো,দুজনের দেখা হল না কিন্তু কথা এসে গেল।লোকের হাতে মোবাইল দেখেছি কিন্তু হাতে ধরে দেখার সুযোগ হয়নি।ভোর বেলা আমার কথা দিয়ার মনে পড়েছে।কেউ একজন কারো কথা ভাবলে কারই না ভাল লাগে?বিশেষ করে দিয়ার মত সুন্দরী মেয়ে যদি হয়?দিয়ার মুখটা মনে পড়তে মনটা মিইয়ে গেল,গম্ভীর সব সময় রাগী-রাগী ভাব--একটু হাসতে পারেনা?ঐটুকু মেয়ে অত কি চিন্তা তোমার?
শিয়ালদা স্টেশনের খুব কাছে আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রোডের উপর সন্দীপ মজুমদারের অফিস খুঁজেপেতে অসুবিধে হলনা। ঘরে ঢুকে দেখলাম সুন্দর পরিপাটি করে সাজানো একটা দেওয়ালে প্রায় ছাদ সমান উঁচু বই ভর্তি তাক।হাফ রাউণ্ড টেবিলের পেটের ভিতর বসে আছেন সুবেশা এক মহিলা।দেওয়ালে ঈশ্বর চন্দ্র রবীন্দ্রনাথ বিবেকানন্দের ছবি।
--সন্দীপ মজুমদার?
--হ্যা বলুন।আমি তার স্ত্রী সুদেষ্ণা।
--আমি মনোজমোহন--।
--ও আপনি?বসুন-বসুন। সুদেষ্ণা বললেন।
আমি বসতে বসতে বই এবং চিঠি এগিয়ে দিয়ে বললাম, আপনি আমাকে 'তুমি' বলবেন।
--ও শিয়োর।তুমি অনুরাধার ভাই?
একটা ফোন কল রিসিভ করে আমার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলেন,তোমার বাইওডাটা এনেছো?
বাইওডেটা মানে রেজাল্ট? এগিয়ে দিলাম।
মনোযোগ দিয়ে দেখলেন সুদেষ্ণা।সাহেবি পোশাক সুদর্শন চোখে মোটা ফ্রেমের চশমা এক ভদ্রলোক ঢুকে বললেন,তুমি ব্যস্ত আছো?
সুদেষ্ণা হেসে বললেন,তুমি? এই দ্যাখো তোমার শালি কি পাঠিয়েছে? আর এ মনোজ--।
--বহুকাল দেখিনা অনুরাধাকে।আমার দিকে তাকিয়ে বল্লেন,কেমন আছেন অনুরাধা?
--ভাল আছেন।
--তোমাকে কেন পাঠিয়েছে,বুঝতে পারছো?সুদেষ্ণা জিজ্ঞেস করেন।
--কিছুটা পারছি।
--বাকিটা তোমাকে বুঝিয়ে দিচ্ছি। আমরা দুজনে মিলে এই সেন্টারটা চালাই। এটা ছাড়া আমাদের পাচটা ব্রাঞ্চ আছে। মেনলি বিসিএস আইএএস ইউপিএসসি মিস্লেনিয়াস গাইড করি।এছাড়া কয়েকটা ব্রাঞ্চে রেল এসএসসিও গাইড করা হয়। অনুরাধার ইচ্ছে তুমি বিসিএস করো।তোমাকে খাটতে হবে।আশাকরি অনুরাধা না বুঝে তোমাকে পাঠায়নি। তোমার রেজাল্ট দেখলাম--ওকে।
--টাকার ব্যাপারে একটু যদি বলেন।
সুদেষ্ণা হাসলেন,তোমাকে সব বলবো। তুমি আগে বলো খাটতে পারবে কিনা।এটা আমাদের প্রেসটিজের ব্যাপার। হ্যাঁ বিসিএস-এ চার্জ ফিফটি থাউসেণ্ড তবে একবারে দিতে হবেনা।
--তা হলে বোধহয় হলনা।হতাশ গলায় বললাম।
উঠে দাড়াতে সুদেষ্ণা বললেন,তুমি বড় অস্থির,বোসো।টাকার কথা তোমাকে ভাবতে হবেনা,বোসো।
পাশে দাঁড়িয়ে সন্দিপবাবু বইটা খুলে মনে হল পড়ছেন।সেদিকে তাকিয়ে সুদেষ্ণা বলেন,কি ব্যাপার শালির কবিতায় ডুবে গেলে যে?
--ভদ্রমহিলার লেখার স্টাইলটা রিয়েলই প্রশংসার দাবী রাখে। শোনো যে কথা বলছিলাম--একটু ওঘরে চলো--।
--যাও যাচ্ছি। শোনো মনোজ তুমি নৈহাটি ব্রাঞ্চে জয়েন করো কাল থেকেই। কয়েকমাস পরেই পরীক্ষা।চা আসছে একটু বসো।আমি একটা কাজ সেরে আসছি।
কিছুক্ষন পর ফিরে এসে বললেন,তোমাকে অনেক্ষন বসিয়ে রেখেছি।
--না না আমার কোনো তাড়া নেই।
--শোনো সেশন শুরু হয়ে গেছে তুমি কালই নৈহাটি সেণ্টারে জয়েন করো।
--কিন্তু ম্যাম--।
--আর কথা নয় অনেক দেরী হয়ে গেছে।ফোন বাজতে উনি ফোন ধরলেন।আমি অফিস থেকে বেরিয়ে আসি।
স্টেশনে ভীড় গিজ গিজ করছে লোক।ভীড়ের মধ্যে ঠেলে ঠুলে ট্রেনে ঢুকে দেখলাম বসার জায়গা নেই।ভিতরে না ঢুকে ফুটবোর্ডে দাঁড়িয়ে থাকি।ঘামছি ট্রেন ছাড়লে একটু হাওয়া আসবে।ট্রেন নড়ে উঠলো যাক স্বস্তি।বিধান নগর পৌছাতে নজর পড়ল পিছনে এক কোনায় বসে আছে দময়ন্তী।পাশে একজন বয়স্ক লোক এমন ভাবে ঘেষে বসে মনে হচ্ছে ওর পরিচিত।আমাকে মনে হয় দেখেনি।
--এ্যাই গুণ্ডা।হাত নেড়ে মনে হল আমাকে ডাকছে।
আশপাশের লোকজন আমাকে অবাক হয়ে দেখছে। আমি চোখ বুজে হাতল ধরে দাঁড়িয়ে থাকি।
--এ্যাই গুণ্ডা শুনতে পাচ্ছো না? 
একজন খুচিয়ে আমাকে বলল,আপনাকে ডাকছে মনে হয়।
নিরুপায় হয়ে ভীড় গুতিয়ে ওর সামনে গিয়ে বললাম,কি ব্যাপার?
--একটু চড় থাপ্পড় দিতে হবে তাই ডাকলাম।
পাশের বয়স্ক লোকটি অস্বস্তি বোধ করে।
--আমিই পারতাম--।
বয়স্ক লোকটি তড়াক করে উঠে দাঁড়িয়ে দরজার দিকে এগিয়ে গেল।বুঝলাম ভদ্রলোক নামবেন তাই বসার জন্য আমাকে ডেকেছে। দময়ন্তী সেই ফাকা জায়গা দেখিয়ে বলল,বোসো।
দমদম ছেড়ে গেল ভদ্রলোক নামলেন না।দময়ন্তী ওর দিকে তাকাতে মুখ ঘুরিয়ে নিলেন।
--শালা হারামী তখন থেকে কনুই মারছে।যত সরে যাচ্ছি তত আরো এগিয়ে আসছে।
এতক্ষনে বুঝলাম কেন আমাকে ডেকেছে,জিজ্ঞেস করি,তুমি গুণ্ডা বললে কেন আমার নাম জানো না?লোকে হা-করে আমাকে দেখছিল।
দময়ন্তী ফিক করে হেসে বলল,গুণ্ডা ইজ মাই ফেভারিট।ওদের মধ্যে ফাইটিং স্পিরিট আমার খুব ভালো লাগে।
--গুন্ডা ভাল লাগে?বাপি কেলোকেও তোমার ভাল লাগে?
--ধ্যৎ ওগুলো গুণ্ডা নাকি?ওরা তো ছিচকে।
--আমি যদি তোমাকে দমু বলে ডাকি তোমার ভালো লাগবে?
ঘাড় ঘুরিয়ে আড়চোখে আমাকে এক পলক দেখে বলল,নো প্রবলেম তোমার ভাল লাগবে বলবে।  

হিজলতলিতে নামলাম তখন রাত আটটা। আবার ফোন বেজে উঠল,কানে লাগাতে শুনতে পেলাম,কনগ্রাচুলেশন দময়ন্তী--। যাঃ বাবা! কে মেয়েটা? এর আগেও ফোন এসেছে কয়েকবার। এতো এক ঝামেলা হল।এককথা কতবার বলা যায়? আবার পুনরাবৃত্তি করলাম, আপনি ভুল করছেন--। ফোন কেটে গেল। একবার ভাবলাম অনুদিকে খবরটা দিয়ে যাই। কিন্তু এভাবে ভীড়ের মধ্যে যাওয়া ঠিক হবে কি? বাড়ী গিয়ে আসতে হলে রাত হয়ে যাবে।
ভোলার সঙ্গে দেখা,খুব খুশি। হাতে একটা প্যাকেট দেখিয়ে বলল, মনাদা যত রাত হোক তোমাকে যেতে বলেছে দিদিমণি। হেভি খাওয়া-দাওয়া। ভোলা আর দাঁড়ালো না।মনেহল ভোলার হাতে খাবারের প্যাকেট।
স্নান করে নিলাম।ভোলা এসেছিল কোথায় থাকিস সারাদিন?
মনে পড়ল ভোলা বলেছিল, ভাবছি এতরাতে যাব কিনা? হঠাৎ খেয়াল হয় ম্যাডাম সুদেষ্ণা একটা চিঠি দিয়েছেন অনুদিকে দেবার জন্য। ইশ আসার পথে দিয়ে আসতে পারতাম।না, যেতেই হচ্ছে। আমি আসছি মা বলে বেরিয়ে পড়লাম।মলিনা বৌদির বাড়ির কাছে আসতে সতর্ক হলাম। খানিক এগোতে নজরে পড়ল দুজন পুরুষ-মহিলা অন্ধকারে দাঁড়িয়ে ঘনিষ্টভাবে আলাপরত। একজনেকে চিনতে পারলাম মলিনাবৌদি।রমেশদা ফিরে এল নাকি? রমেশদা বাড়িতেই কথা বলতে পারতো।হাটার গতি বাড়িয় দিলাম।
অনুদির বাড়ির দরজা খোলা, এক ভদ্রলোককে দেখলাম বেরিয়ে যেতে। একটু ইতস্তত করে ঢুকে পড়লাম। মনে হচ্ছে অনুষ্ঠান শেষ,একে একে অতিথিরা চলে যাচ্ছেন। ওদের মধ্যে অনুদিকেও দেখলাম,আমাকে দেখেও যেন দেখেনি এমনভাবে কথা বলছে। একটা টেবিলে দেখলাম কয়েকটা খালি বোতল।কিসের বোতল কিছুটা অনুমান করতে পারি। একটা সুন্দর মাতাল করা গন্ধ ছড়িয়ে আছে সারা ঘরে।সুগতদা-বৌদি কি বাড়ি নেই নাকি? এখন ভাবছি, না-এলেই ভাল হত। চিঠিটা কাল সকালে দিলে মহাভারত অশুদ্ধ হতনা।সবাই চলে গেল আমার দিকে ফিরেও দেখছেনা কেউ। এতক্ষণে অনুদির নজরে পড়ল আমাকে, মৃদু হেসে বলল, দাঁড়িয়ে আছিস কেন,ভিতরে আয়।
মনে হল অনুদির দাড়াতে অসুবিধে হচ্ছে,কথা জড়িয়ে যাচ্ছে। ইতস্তত করে ঘরে ঢুকলাম। অনুদি জিজ্ঞেস করল,সুদেষ্ণা কি বলল?
আমি চিঠিটা এগিয়ে দিলাম।
--কি লিখেছে,পড়।
--তোমার চিঠি আমি পড়বো?
--তুই আমি কি আলাদা?আমি বলছি পড়।
আমি চিঠি খুলে দেখলাম সংক্ষিপ্ত চিঠি।
--জোরে পড়,না হলে বুঝবো কি করে?
--"প্রাণ প্রতিম বন্ধু অনুরাধা, শুভ জন্মদিনে সন্দীপ এবং আমার পক্ষ হতে জানাই আন্তরিক শুভকামনা। ছন্নছাড়া জীবন আর কতদিন? পরের জন্য অনেক করেছিস এবার নিজের প্রতি দয়া কর। আমি বলি কি একটা বিয়ে করে জীবনকে শৃংখলার নিগড়ে বাঁধ। সব পুরুষকে এক তৌলে ফেলে বিচার করলে ভুল হবে। সন্দীপ আমাকে দোষারোপ করে এভাবে একটা প্রতিভার অপচয় তুমি কিভাবে সহ্য করো সুষি? একদিন আয় অনেক কথা আছে।ইতি--তোর সুদেষ্ণা।"
চিঠি পড়ে অনুদির দিকে তাকিয়ে দেখলাম ছল ছল করছে চোখ।জিজ্ঞেস করি, আজ তোমার জন্মদিন? আমাকে বলোনি তো?
ম্লান হেসে অনুদি বলে,তুই ও ঘরে হ্যাঁঙ্গার থেকে আমার কালো নাইটিটা নিয়ে আসবি?বড় ক্লান্ত লাগছে রে।
আমি পাশের ঘরে গেলাম। বুঝতে পারলাম সুগতদা বৌদি কেউ বাড়িতে নেই। হ্যাঙ্গারে পরপর অনেকগুলো নাইটি ঝুলছে। কালো নাইটিটা নিয়ে এঘরে এসে দেখলাম, শাড়ি খুলে ফেলেছে অনুদি,পরনে কেবল পেটিকোট আর জামা। পৌনে ছফুট দীর্ঘ, চুল এলিয়ে আছে পিঠে। অনুদিকে মনে হচ্ছে গান্ধার শিল্পের কোন প্রস্তর খোদিত রমণী মুর্তি।
--হা করে কি দেখছিস? নাইটিটা দে।
চেয়ার ছেড়ে হাত বাড়িয়ে নাইটীটা নিতে গিয়ে টাল খেয়ে পড়ছিল।আমি ধরে সামলাবার চেষ্টা করি। একটা হাত অনুদির স্পঞ্জের মত নরম স্তনের উপর পড়ল।
--উঃ মাগো এখুনি পড়ছিলাম!
--কেন খাও এসব?
--তুই বুঝি পছন্দ করিস না?
--না তা নয়--পড়লে কি হত বলতো?
--পড়বো কেন তুই আছিস কি করতে? পিছনের হুকগুলো খুলে দে।
অনুদি কি বলছে? আমি হুক খুলে দেবো?আমার দিকে পিছন ফিরে বলে, ক্যাবলার মত দাঁড়িয়ে আছিস কেন? তোকে কি বললাম শুনিস নি?
আমার হাত-পায়ে কাঁপন শুরু হল। কান দিয়ে আগুন বেরোচ্ছে। পিছনে দাঁড়িয়ে কাপা-কাপা হাতে হুক খুলতে থাকি সামনে যেতে ভয় হয় কি জানি কি দেখবো? সামনে যেতে হলনা হুক খোলা হলে অনুদি ঘুরে দাঁড়িয়ে বলে, এইতো লক্ষি ছেলে।
উপরিভাগ সম্পুর্ন নগ্ন। বালু পাথরের মত রং,দিয়ার মত ফর্সা নয়। স্তনযুগল ঈষৎ নতমুখী। আমার দৃষ্টি মাটিতে চোখ তুলে তাকাতে পারছিনা। অনুদি গুনগুন করে গান গাইছে 'আমার সকল নিয়ে বসে আছি সর্বনাশের আশায়----।'
--অনুদি তুমি শুয়ে পড়ো,আমি আসি--?
--শুয়ে পড়বো কিরে, খাবো না? তুই খেয়েছিস?
বেশিক্ষিন দাঁড়ালে কি জানি কি হয়?শরীরের মধ্যে কেমন করছে।এখান থেকে বেরোতে পারলে নিশ্চিন্ত।বললাম, বাড়ি গিয়ে খাবো।
--তার মানে? তুই আমার গেস্ট আজ এখানে খাবি।
--মা চিন্তা করবে।অনুদি আমি যাই?
--মাসিমা চিন্তা করবে কেন? আমার কোন দায়িত্ব নেই? আমি খবর দিয়ে দিয়েছি।
--তুমি গেছিলে আমাদের বাড়ি? গলায় বিস্ময়।
--পাগল! এই অবস্থায় আমি মাসিমার কাছে যাই? ভোলাকে দিয়ে খবর দিয়েছি।
--ভোলা? আমি তো জানতাম ভোলা কল্যানদার চামচা। তোমারও চামচা নাকি?
--ভোলা কারো চামচা নয়,ভোলা ক্ষিধের দাস।
খুব সহজ কথা কিন্তু বুকের মধ্যে ছ্যত করে বাজে।আমি ভোলাকে চিনতে পারিনি। অনুদিকে বলি, তুমি ভোলার জন্য কিছু করতে পারো না?
--আমাদের কলেজে একজন পিওন নেবে।দেখি সেখানে ঢোকাতে পারি কিনা?
মনে পড়ল একটু আগে সুদেষ্ণা মজুমদারের চিঠির কথা। 'পরের জন্য অনেক করেছিস--।'অনুদিকে এই মুহূর্তে মনে হয় মুর্তিময়ী করুণা আর দাদার ব্যাবহারে লজ্জিত বোধ করি।
--কি ভাবছিস আয় খাবি আয়।
আমার গলা শুকিয়ে এসেছে,খাবো কি? অনুদি আমার অবস্থা বুঝতে পেরে বলে,আয় সহজ করে দিই।
অনুদি আমার গলা জড়িয়ে ধরে নিজের বুকে চেপে ধরে। নরম বুকে মুখ ডুবে যায়।নিশ্বাস নিতে পারিনা। একটা অবস্থায় সবাই এক। অতৃপ্ত রেবতিবৌদি নিরক্ষর মলিনাবৌদি বিদুষী অনুদিতে কোন ফারাক থাকেনা। আমাকে ছেড়ে দিয়ে অনুদি বলে, তোর নামের মানে জানিস?
--মন হতে জাত মনোজ। আমি বললাম।
--মনোজ মানে অনঙ্গ কামের দেবতা। তুই খুব সরল এই জন্য তোকে আমার ভাল লাগে। হিপোক্রিটদের আমি দুচোখে দেখতে পারিনা।তুই মন দিয়ে পড়াশুনা কর,অনেক ভরসা তোর উপর। তুই আমার কাছে একটা চ্যালেঞ্জ,আমার মুখ রাখিস সোনা। সন্দীপের গাইডেন্সে আমি সিয়োর তুই পারবি।তাড়াতাড়ি খেয়ে নে,তারপর তোকে একটা গল্প শোনাবো।
একটা বোতলে খানিকটা পানিয় ছিল,সেটুকু গেলাসে ঢালল অনুদি,প্রায় আধ গেলাসের উপর।আমি বললাম,আবার অতটা খাবে?
--কি করবো,কত দাম জানিস?নষ্ট করবো? এককাজ করি দুজনে ভাগ করে নিই?
--কিছু হবেনা তো?
--কি হবে আমি তো আছি।অনুদি আর একটা গেলাসে অর্ধেক দিল আমাকে।
অনেকদিনের ইচ্ছে একটু স্বাদ নেবার। রাতের দিকে রিক্সাওলারা খায়, সস্তার পানিয়। একচুমুক দিলাম,খারাপ লাগল না। ঝিমঝিম ভাব এল।অনুদিকে বললাম, তোমাকে একটা কথা বলবো?
অনুদি চোখ মেলতে পারছেনা।একটা মাংসের টুকরো মুখে দিতে গিয়ে থেমে গেল।
বললাম, তোমার বন্ধু ঠিকই বলেছেন,তুমি এবার বিয়ে করো।
অনুদি মাংসের টুকরো মুখে দিয়ে চিবোতে থাকে,একসময় আমাকে চমকে দিয়ে বলে, তুই আমাকে বিয়ে করবি?
দময়ন্তী একদিন বলেছিল অনুদি বয়সে আমার চেয়ে বড়। এখন বুঝতে পারছি কেন বলেছিল। কখন এনে দিয়েছি অথচ অনুদি নাইটিটা গায়ে দেয়নি।গা ছমছম করছে।
কিছু বললিনা তো? অনুদি জিজ্ঞেস করে আবার।
--আমি তোমার চেয়ে ছোট--।
--বউকে বরের চেয়ে জ্ঞানে বুদ্ধিতে বয়সে ছোট হতেই হবে? যাতে চিরকাল দাবিয়ে রাখতে পারে--তাই না?
--না মানে আমি বেকার নিজেরই কোন ঠিক নেই,বউকে কি খাওয়াবো বলো?
অনুদি বেসিনে মুখ ধুতে ধুতে বলে,সে সব তোকে ভাবতে হবেনা।আমি আমার বরকে খাওয়াবো।
বুঝতে পারছিনা আমার কি নেশা হয়ে গেছে?যা হচ্ছে সব কি সত্যিই? আমি বললাম, ঠিক আছে তুমি যা বলবে।
অনুদি পেটিকোট খুলতে লাগল। ঐ একটিমাত্র বস্ত্র অনুদির পরনে ছিল।
--অনুদি তুমি কি করছো?
--যার উপর ভরসা করে কাটাবো সারা জীবন তার পরীক্ষা নেবো না?
পেটিকোট খুলে নীচে পড়ে গেল।সম্পুর্ণ অনাবৃত অনুরাধা বসু। সারা ঘর আলোকিত রূপের ছটায়। মুগ্ধ বিস্ময়ে তাকিয়ে আছি। অনুদি এগিয়ে এসে আমাকে উলঙ্গ করল, বাধা দেবার শক্তি নেই আমার।আমি মেঝেতে বসে পা জড়িয়ে ধরে বলি, আমি কি পারবো?
অনুদি আমাকে তুলে দাড় করিয়ে জড়িয়ে ধরল। হাত দিয়ে আমার ধোন চেপে ধরে বলে, বাঃ বেশ লম্বা তো কিন্তু এত নরম কেন?
--আমি কি করবো?
--ঠিক আছে তোকে কিছ করতে হবেনা,আমিই করছি।
আমাকে খাটে বসিয়ে মেঝেতে হাঁটু গেড়ে বসে ধোনটা মুখে পুরে নিল।আমাকে বলল,তুই আমার কাঁধটা টিপে দে।
অবাক ব্যাপার কিছুক্ষণের মধ্যে শিথিল লিঙ্গ শক্ত কাঠের মত হয়ে গেল। মুখ থেকে বের করে ধোনের দিকে তাকিয়ে অনুদি বলল, সত্যিই সার্থক তোর নাম, তুই মুর্তিমান কামদেব।
প্রসঙ্গ বদলাবার জন্য বলি, তুমি কি গল্প বলবে বলেছিলে--।
--তোর মনে আছে? হ্যাঁ বলবো সেই গল্প।ভিতরে তোর ত্রিশূল গেঁথে নিয়ে বলবো।
[+] 7 users Like kumdev's post
Like Reply
#39
As I suspected, Anuradha has a different feeling about Monoj
Like Reply
#40
Ja ki sob hoye gelo ! Vablam doymonti nayika hobe .... Dur ai anu kotha theke elo . Anur sathe anno kaoke jutiye dilei hoi.
Like Reply




Users browsing this thread: 6 Guest(s)