Posts: 143
Threads: 3
Likes Received: 126 in 50 posts
Likes Given: 2
Joined: Jan 2019
Reputation:
16
25-03-2020, 03:21 AM
(This post was last modified: 25-03-2020, 03:26 AM by eklasayan. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
গ্র্যাজুয়েশান সবেমাত্র শেষ হয়েছে আকাশের | খুব ঝক্কি গিয়েছে শেষ কয়েক মাস | কলকাতা ইউনিভার্সিটির আন্ডারে তিনটে বছর অনার্স টিকিয়ে রাখা, তাও আবার ফিজিক্স এ | তাই এবার ঠিক করেছে কিছুদিন আর কোনো চাপ নেবে না | চুটিয়ে ঘুম আর প্রান খুলে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিয়ে সময় কাটাবে | ইচ্ছা আছে সম্ভব হলে কাছে পিঠে কদিনের ট্যুরও করে আসবে, ওই তাজপুর কিম্বা মন্দারমনি টাইপ আর কি | ঘোরার ঘোরাও হয়ে যাবে আর তার সাথে মস্তির মস্তিও | অবশ্য বাইরে সচরাচর যাওয়া হয়না কখনই আকাশের, ওই চিন্তা-ভাবনা অবধিই থেকে যায় | তার একটা বড় কারন হোলো বাড়ির একমাত্র ছেলে, মা আর বৃদ্ধা দিদাকে নিয়ে আকাশের পৃথিবী | আকাশ যখন অনেক ছোটো, মানে অনেকটাই তখন বাবা নামক উজ্জ্বল নক্ষত্রটি আকাশের আকাশ থেকে ঝোড়ে গিয়েছিলো | ক্যান্সারে মারা যান আকাশের বাবা, মানে মি: মিত্র | এক কথায় যাকে বলে অমায়িক মানুষ ছিলেন আকাশের বাবা | পাড়ার সবাই এখনও এক কথায় বলে পার্থদার মত লোক হয় না | অবশ্য আকাশ বাবার মত অতটা না হলেও অমায়িক ভদ্র বলাই চলে | মাঝে মধ্যে একটু আধটু দুষ্টুমি চলে যেটা কেউই তেমন ধর্তব্যের মধ্যে রাখে না | তাই মাকে আর দিদাকে ফেলে চট করে কোথাও যেতে পারে না আকাশ | কারন জানে, মুখে প্রকাশ না করলেও দুই মহিলাই বেশ ঝামেলার মধ্যে পরে বাড়ির একমাত্র পুরুষ সদস্যটি উপস্থিত না থাকলে |
যাই হোক, সে সব তো পরের কথা | প্ল্যান হবে, মেম্বার ঠিক হবে, তার পরে যাওয়া | আপাতত পরীক্ষা শেষের প্রথম রবিবারটা জমিয়ে কম করে ১২টা অবধি ঘুমাবেই ঠিক করে রেখেছে | আর সেই মতই আস্তাবলের সমস্ত ঘোড়া বেচে দিয়ে স্বপ্নরাজ্যের রাজকুমার হয়ে দিব্যু ঘুরে বেরাচ্ছিলো বেচারা | কিন্তু ওই যে বলে না, ওপরে একজন আছেন, যিনি ঠিক করেন যে ঠিক এর পরের মূহুর্তে ঠিক কি হতে চলেছে | আর সেই নিয়ম মেনেই স্বপ্নরাজ্যে বেশিক্ষন আর বিচরন করা হয়না রাজকুমার আকাশের | ৮:১০ নাগাদ মা এসে হাঁক ডাক শুরু করে দেয় | প্রথমে সাড়া দিচ্ছিলো না আকাশ, কিন্তু যখন দেখলো কানের পর্দারা ছেড়ে দে মা, কেঁদে বাঁচি টাইপ হচ্ছে তখন একপ্রকার বাধ্য হয়েই চেঁচিয়ে ওঠে
"কি হোলো কি, দুদিন হতে পারলো না পরীক্ষাটা শেষ হয়েছে, বললামই তো আজ বেলা করে উঠবো"
মাও ওদিকে নাছোড়বান্দা |
"ওঠ সোনা, আজ একটু তাড়াতাড়ি উঠতে হবে | খুব দরকার না হলে ডাকতাম না বাবু, প্লীজ উঠে পর"
"উফফফ!! তোমাদের এই দরকার আর জিবনেও শেষ হবে না, কিছু আনার থাকলে রাতে বলতে পারো না? বাড়ি ফেরার পথে তাহলে নিয়ে আসতে পারি তো"
মা হেসে ফেলে উত্তর দেয়
"যা আনার সেটা তো কাল রাতে নিয়ে আসতে পারতি না, এখনই আনতে যেতে হবে, নাহলে তো বলেই দিতাম সোনা"
মাথা চুলকাতে চুলকাতে এবার মুখটা একটু তুলে মার দিকে আধখোলা ঘুমন্ত চোখ নিয়ে তাকায় আকাশ |
"মানে? কিছুই তো বুঝলাম না | একটু ঝেড়ে কাশো তো, কি এমন জিনিষ যা এখনই আনতে হবে? "
"আরে বাবা, জিনিষ না রে পাগল, একজন জলজ্যান্ত মানুষ"
"কি!!! এত সকালে আবার কে আসছে? আর আমাদের আত্মীয়-স্বজন যাদের আসার মত তারা তো সবাই আমাদের বাড়ি চেনেই, এতে ঢাক-ঢোল পিটিয়ে আমায় আনতে যেতে হবে কেনো? "
মা এবার আকাশের পাশে বসে মাথার এলোমেলো চুলে হাত বুলাতে বুলাতে বলে,
"আরে না, যে আসছে সে আমাদের বাড়ি আগে কখনও আসেনি | আর বলতে গেলে কলকাতায় এসেছেই হয়ত গোটা দু-তিন বার"
এবার একটু উঠে বসে আকাশ | কিছুতেই বুঝে উঠতে পারে না মা কার কথা বলছে | সকাল সকাল ঘুম থেকে তোলার জন্য আবার কোনো হেঁয়ালি করছে না তো? জিজ্ঞাস্যু দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে থাকে মা এর দিকে |
"বুঝতে পারিস নি তো, বলছি শোন | আমাদের টাকির বাড়ির দুটো বাড়ি পরে নির্মল কাকুকে তোর মনে আছে? "
মাথা চুলকাতে চুলকাতে স্মৃতি রোমন্থন করার চেষ্টা চালায় আকাশ, কিন্তু কিছুতেই ঠিক ঠাওর করে উঠতে পারে না | আসলে প্রায় ১২ বছর ওখানে যাওয়া হয়নি আকাশের, তাই সব কেমন যেনো ধোঁয়াশা হয়ে গিয়েছে |
মা মনের অবস্থা বুঝতে পেরে আবার শুরু করে,
"আরে বাবা, তোর দিদাকে ফুলদি ফুলদি করে ডাকতো, খুব ভালোবাসতো তোকে, তুই ছোটোবেলায় গেলেই তোকে নিয়ে বিকেলে ইচ্ছামতির ধারে ঘুরতে নিয়ে যেতো আর গরম গরম মালপোয়া খাওয়াতো | আমাদের বাড়ি আসলেই তুই বলতি ওই যে মাপ্পো কাকু এসেছে আর বেড়ানোর জন্য লাফালাফি জুড়ে দিতি"
ঝাপসা হলেও এবার বেশ মনে পড়েছে আকাশের, বেঁটে করে একটু শ্যামবর্ণের মানুষটিকে | সত্যি বেশ ভালো মানুষটা আর ওকে নিয়ে সত্যি অনেক ঘোরাঘুরিও করত আর ও যা খেতে চাইতো তাই কিনে দিতো | দিদাকেও খুব স্নেহ করত আর দিদাও খুব ভালোবাসে সেটা ও জানে ভালো করে | কারণ দিদা বলত প্রায়ই নির্মল তো আমার নিজের মায়ের পেটের ভাই, কারণ রক্তের সম্পর্ক না থাকলেও কমও ছিলো না তার থেকে |
"হ্যাঁ, মনে পড়েছে | তো কি হয়েছে বলো এবারে, উনি কলকাতা আসছেন তাই ওনাকে আনতে যেতে হবে, তাই তো? "
"আরে বাবা না না"
"তাহলে? "
"ওনার মেয়ে, বিথী |"
"বিথী?? সে আবার কোথা থেকে গজালো? "
"তোর না মনে থাকাটাই স্বাভাবিক | তখন তুই নিজেই কত ছোটো,আর ও তো তখন আরো ছোটো ছিলো"
"যাই হোক, তা সে হঠাৎ করে কলকাতা আসছে কেনো? আর আমার তাকে আমাদের বাড়িতে নিয়ে আসতে হবে কেনো? "
"এই তোর সমস্যা জানিস তো | পুরোটা না শুনেই বাড়ি মাথায় করিস"
"আচ্ছা বলো বলো, শুনছি"
"বিথী এবার উচ্চ মাধ্যমিকে খুব ভালো রেসাল্ট করেছে | ওর ইচ্ছা কলকাতার কোনো ভালো একটা কলেজে ভর্তি হবে | তাই নির্মল কাকু যখন এটা তোর দিদাকে জানায় তখন তোর দিদা কথা দিয়েছে যে কোনো চিন্তা নেই, এখানের কোনো একটা ভালো কলেজে ওর ভর্তির ব্যাবস্থা হয়ে যাবে এত ভালো রেসাল্ট যখন | আর ভর্তি না হওয়া অবধি বিথী আমাদের এখানেই থাকবে | আর তুই তো জানিস তোর দিদা নির্মল কাকুকে কতখানি ভালোবাসে"
পুরো ব্যাপারটা এবার অনেকখানি পরিস্কার হয় আকাশের কাছে | যেকটা দিন একটু আরাম করে ছুটি কাটাবে ভেবেছিলো সব মাথায় উঠলো, কারন ও ভালো করেই জানে দিদা এসবের ঝক্কি এবার ওর ঘাড়েই ঝোলাবে | মানে এই কলেজে কলেজে নিয়ে ঘোরা, ফর্ম তোলা, ভর্তি সবটাই ওর ওপর দিয়ে যাবে আর কি | দিদার দেওয়া কথা, সেটাও এদিকে ফেলতে পারবে না, নাহলে ভদ্রমহিলা এখনি ইমোশানাল ব্ল্যাকমেল করে পুরো বাড়ি মাথায় তুলবে |
"যা বাবা, আর দেরি করিস না | বিথী বাসে করে ধর্মতলা আসছে, ৯:৩০টার মধ্যে চলে আসবে | তুই আর দেরি না করে রেডি হয়ে বেরিয়ে পর সোনা, আজকাল যা সময় এসেছে, একা একটা মেয়ে, পথঘাট ঠিক মতন চেনে না, তাও আবার কলকাতার মত শহর | কিসের থেকে কি হয়ে যায়, বুঝিসই তো"
হেরে যাওয়া সৈনিকের মন নিয়ে অগত্যা আস্তে আস্তে বিছানা ছাড়লো আকাশ
"আমি রেডি হচ্ছি, তুমি শুধু একটু চা বানিয়ে দাও"
"ওমা কেনো, তুই ব্রেকফাষ্ট করে যা, তোর রেডি হতে হতে আমার হয়ে যাবে"
"না না, ওসবের দরকার নেই | তুমি শুধু একটু চা দাও, যেতে যখন হবেই তখন ধর্মতলায় গিয়েই একবারে কচুরি টচুরি কিছু খেয়ে নেবো"
মা ছেলেকে রাজি করাতে পেরেছে এই আনন্দে দিদার উদ্দেশ্যে বলতে বলতে বাইরে যায়
"তোমার নাতি রেডি হচ্ছে, চিন্তা কোরো না, বিথীকে নিয়ে ঠিক মতো চলে আসবে, আমি সব বুঝিয়ে দিয়েছি"
এদিকে রাগে গজগজ করতে করতে হাতে ব্রাশ নিয়ে বাথরুমে ঢুকে যায় আকাশ
"দাড়াও বুড়ি, কোনদিন সত্যি সত্যি তোমায় গ্রামের বাড়িতে রেখে আসবো | ইমোশানাল ব্ল্যাকমেল করা বেড়িয়ে যাবে তখন"
Posts: 912
Threads: 1
Likes Received: 867 in 546 posts
Likes Given: 3,345
Joined: Dec 2018
Reputation:
40
Darun suru dada .... Egiye cholun
•
Posts: 6,494
Threads: 21
Likes Received: 6,992 in 3,702 posts
Likes Given: 12,097
Joined: Feb 2020
Reputation:
239
•
Posts: 1,127
Threads: 3
Likes Received: 741 in 509 posts
Likes Given: 613
Joined: Feb 2020
Reputation:
29
•
Posts: 143
Threads: 3
Likes Received: 126 in 50 posts
Likes Given: 2
Joined: Jan 2019
Reputation:
16
সকাল সকাল চা-বিস্কুট খেয়ে আর দিদার থেকে আরও অতিরিক্ত কিছু জ্ঞ্যানকে পুঁজি করে প্রবল অনিচ্ছা সত্ত্বেও বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়ে আকাশ | হাতিবাগান মোড় থেকে বাস ধরবে | টাউন কলেজের পাশের গলিতে একতলা কিন্তু বেশ বড় আর ছিমছাম সাজানো বাড়ি আকাশদের | রাস্তার মোড়ে আসতেই তিনবন্ধুর সাথে দেখা | গোদের ওপর বিষফোঁড়ার মতই রব্বারের আড্ডা বাদ দিয়ে চূড়ান্ত বিরক্তি নিয়ে গন্তব্যের দিকে রওনা দেয় আকাশ |
প্রায় ১৫ মিনিট পর হাতিবাগান মোড় থেকে ধর্মতলাগামী বাসে চেপে বসে আকাশ | কিছুক্ষন যাওয়ার পর হঠাৎ মনে পরে যে মা ওই মেয়েটার যে ছবিটা দিল মোবাইলে সেটা তো দেখাই হয়নি | চট করে মোবাইলটা বার করে একবার ভালো করে দেখার জন্য, নাহলে আবার ওই ভীড় ভাট্টার মধ্যে খুঁজে পাওয়া বড় মুস্কিল হয়ে যাবে | ছবিটা একঝলক দেখে একটু গেঁয়ো টাইপ ই মনে হোলো আকাশের | যদিও ছবিটাতে বোঝার মত তেমন কিছু নেই কারন কেমন যেনো ভোটার কার্ডে তোলা ছবির মত এসেছে ছবিটা | তবে দেখে মুখটা চিনে নিয়ে আসার মত | নিজের একাউন্ট একটু ঘেঁটে টেটে নিয়ে মোবাইলটা আবার পকেটে চালান করে দেয় | একটু পরেই নামতে হবে আবার |
ধর্মতলা বাসডিপোতে নেমে একটু এদিক ওদিক দেখে নিয়ে হাঁটা শুরু করে আকাশ | সোজা গিয়ে হাজির হয় হাসনাবাদ-ধর্মতলা ডিপোর সামনে | জিজ্ঞাসাবাদ করে জানতে পারে বাস এখনও ঢোকেনি | মনে মনে ভাবে, ভালোই হল, একটু কিছু খেয়ে নেওয়া যাক | ওই ডিপোর পাশেই একটা ঝুপড়ি মত দোকান থেকে দু'পিস ডিম পাউরুটি আর এক কাপ চা নিয়ে খেতে থাকে | পাউরুটি শেষ করে চা খেতে খেতে মোবাইলটা বার করে বিথীর ফটোটা দেখতে থাকে যাতে এসে গেলে চিনে নিতে পারে, অন্য কোথাও ভুল করে যদি একবার চলে যায় তাহলে মা আর দিদা ওকে আস্ত রাখবে না | আর তাছাড়া, একা একটা মেয়ে, কলকাতার রাস্তায় অনেক বিপদেও পড়তে পারে ওকে না পেলে |
চা খেতে খেতে ছবিটা দেখছিলো ইতিমধ্যেই কে যেন পিছন থেকে ওর পিঠে দুটো টোকা মেরে বলল "আকাশদা? "
থতমত খেয়ে পিছনে ঘুরে দ্যাখে হালকা হাসি মুখ নিয়ে বিথী দাঁড়িয়ে | ওকে এইভাবে ওর পিছনে দেখে একটু অবাক হয়ে যায় আকাশ | কোথা থেকে টপকালো মেয়েটা? ভূত-প্রেত নাকি?
"তুমি আমার পিছনে কোথা থেকে এলে? তোমার বাস তো সামনেটায় এসে দাঁড়ানোর কথা"
"আমি এখনই নামলাম বাস থেকে | ওই দিকটায় নামিয়ে দিয়েছে | আর সামনের দিকটায় ভীড় ছিলো তাই এই পিছন ঘুরে এলাম"
"আচ্ছা চলো, জার্নি করে এসেছো এতটা | তাড়াতাড়ি বাড়ির দিকে রওনা দি"
তারপর নিজের একটা বড় ভুল বুঝতে পেরে জিভ কেটে বলে
"তোমার খিদে পেয়েছে নিশ্চই | আগে তোমায় কিছু খাইয়ে নি চলো"
"না, না | আমি বাড়ি থেকে পেট ভরে খেয়ে এসেছি গো | আর বাসেও টুকটাক খেয়েছি, তাই পেট ভর্তি | একবারে দুপুরে খাবো "
"কিচ্ছু খাবে না? "
"না গো এখন আর কিছু খাবো না, তবে... "
"কি বলো? থেমে গেলে কেনো? যা দরকার নির্দ্ধিদায় বলে ফ্যালো"
"একটু জল হলে ভালো হয় | জলতেষ্টা পেয়েছে খুব"
"হ্যাঁ, নিশ্চই | দাও ব্যাগ গুলো আমার কাছে দাও আর ওদিকটা চলো | আমি ওদিক থেকে জল কিনে নিচ্ছি | এদিকটা অনেক ভীড়"
"আরে না না, তুমি চলো, ব্যাগ আমি নিতে পারবো"
"আরে ধুর তাই আবার হয় নাকি | দাও ব্যাগদুটো আমায় দাও আর ঠিক আমার পিছন পিছন এসো"
আকাশ ব্যাগ নিয়ে সামনের দিকে হাঁটা দেয় আর বিথী ঠিক ওর পিছন পিছন বাধ্য মেয়ের মত ওকে অনুসরন করতে থাকে | পিছনে তাকিয়ে মাঝে মাঝে দেখে নেয় মেয়েটা ঠিকমতো আসছে কিনা | হঠাৎ নিজেকে জিবনে প্রথমবারের জন্য অভিভাবক টাইপ মনে হতে থাকে | নিজের মনেই একটু হেঁসে দেয় আকাশ যদিও সেটার কোনোরকম প্রকাশ মুখে পড়ে না |
একটু দুর এগিয়ে একটা ফাঁকা যায়গা দেখে দাঁড়ায় দুজনে | পাশের দোকান থেকে এক বোতল মিনারেল ওয়াটার কিনে এনে বিথীর হাতে দেয় | বিথী জল খেতে খেতে ও ফোনটা বের করে একটা উবের ভাড়া করে | দিদার কড়া নির্দেশ মেয়েটা বাসে করে অনেকটা রাস্তা আসবে, ভুলেও যেনো আবার বাসে করে না নিয়ে যায়, ট্যাক্সি ভাড়া করে |
উবের চালকের ম্যাপ দেখতে দেখতে আড় চোখে একবার বিথীর আপাদমস্তক জরিপ করে নেয় আকাশ | নাহ: , ছবি তো যতটা মনে হচ্ছিলো ততটা না হলেও একটু গেঁয়োই বলা চলে | তবে কেমন যেনো এক অদভূত সরলতা আর স্নিগ্ধতা আছে মেয়েটার মধ্যে | খুব ফরসা না হলেও ঠিক শ্যামবর্ণ বলা চলে না, চুল টা ভালোই বড় মনে হয়, মাথার নিচ থেকে একটা মাঝারি সাইজের খোঁপা করার পরেও প্রায় কোমরের নিচ অবধি পৌঁছে গিয়েছে | নীল রঙের চুরিদারে খুব সাধারন হলেও বেশ লাগছে | আর ওইটুকু সময়ে খুঁটিনাটি না বুঝতে পারলেও তন্বী শরীরে যে সমুদ্রের ঢেউ ভালোই আছে সেটা বুঝতে তেমন অসুবিধা হয় না আকাশের |
দেখতে দেখতে ক্যাব ড্রাইভার গাড়ি নিয়ে ওদের লোকেশানে উপস্থিত হয়ে যায় | ব্যাগ পত্র গাড়ির ডিকিতে রেখে দুজনে গাড়িতে চেপে রওনা নিজেদের গন্তব্যের দিকে | দুজনেই চুপচাপ জানলা দিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে বসে থাকে বেশ কিছুক্ষন | অবশ্য দুজনের চুপ থাকার কারন ভিন্ন | একজন বেশ উৎসাহের সাথে কলকাতার সব অলি গলি, দোকানপাট, ব্রীজ এইসব দেখতে থাকে আর একজন সদ্য পরিচিত একটি মেয়েকে কি আর বলবে সেই ভেবে চুপ | কিন্তু হটাৎ ই আকাশের মনে একটা প্রশ্নের মেঘ জমাট বাঁধে | কিন্তু সেটা কি করে বলবে এইসব ভাবতে ভাবতে একটু গলা খাঁকিয়ে ওঠে | আচমকা ওই আওয়াজ শুনে ওর দিকে তাকায় বিথী, এতে লাভ হয় আকাশের, বলার সুযোগটা পেয়ে যায়
"আচ্ছা, তুমি আমায় চিনলে কি করে? আমি তো তোমায় দেখতে পাইনি "
প্রশ্নটা শুনে আবার আগের মতই একটা হাল্কা হাসির সাথে উত্তর দেয় বিথী
"আসলে বাপি আমায় আগেই তোমার ছবি দিয়ে দিয়েছিল ফোনে | আর আমি যেখানটায় নামলাম তার ঠিক সোজাসুজি একটু দুরেই তুমি দাঁড়িয়ে চা খাচ্ছিলে | তাই চিনতে তেমন অসুবিধা হয়নি"
"তাও ওখানটা তো বেশ ভালোই ভীড় ছিলো | অতজনের মধ্যে আমায় ঠিক চিনতে পেরেছো, তাও আবার যেখানে আগে কখনও আমায় দেখোইনি | যথেষ্ট প্রশংসনীয় তোমার দৃষ্টি"
বিথী হাসিটা এবার আর একটু উজ্জ্বল করে
"কে বলেছে তোমায় আগে দেখিনি? বাবার কাছে তোমার বেশ কিছু ছবি আছে | দিদুন পাঠিয়েছিল বাবাকে | আর একটা কথা জানো আকাশদা? "
"কি? "
"নিজের মানুষকে হাজার মানুষের ভীড়ের মধ্যেও ঠিক চিনে নেওয়া যায় | অসুবিধা হয় না |"
কথাটা শেষ করেই আবার আগের মতই রাস্তার দিকে তাকিয়ে থাকে বিথী |
কিন্তু এই ছোট্ট একটা কথা আকাশের মনে কেমন যেনো মেঘ জমাট বাঁধিয়ে দেয় |
না চাইতেও ওর দিকে তাকিয়ে থাকে | মেয়েটার মধ্যে এক অমায়িক নিজস্বতা আছে | কিন্তু "নিজের মানুষ" বলতে কি বোঝালো ও? কে ওর নিজের মানুষ? আমি?
Posts: 143
Threads: 3
Likes Received: 126 in 50 posts
Likes Given: 2
Joined: Jan 2019
Reputation:
16
(25-03-2020, 05:01 AM)dreampriya Wrote: Darun suru dada .... Egiye cholun
ধন্যবাদ । সাথে থাকুন।
•
Posts: 143
Threads: 3
Likes Received: 126 in 50 posts
Likes Given: 2
Joined: Jan 2019
Reputation:
16
(25-03-2020, 09:01 AM)Mr Fantastic Wrote: শুরুটা ভালোই হচ্ছে
ধন্যবাদ । সাথে থাকুন।
•
Posts: 143
Threads: 3
Likes Received: 126 in 50 posts
Likes Given: 2
Joined: Jan 2019
Reputation:
16
(25-03-2020, 09:57 AM)Mr.Wafer Wrote: ভালই শুরু।
ধন্যবাদ । সাথে থাকুন।
•
Posts: 912
Threads: 1
Likes Received: 867 in 546 posts
Likes Given: 3,345
Joined: Dec 2018
Reputation:
40
Wow ....Darun .....Kub valo update .... Next updater opekkhay roilam ...
•
Posts: 6,494
Threads: 21
Likes Received: 6,992 in 3,702 posts
Likes Given: 12,097
Joined: Feb 2020
Reputation:
239
•
Posts: 1,127
Threads: 3
Likes Received: 741 in 509 posts
Likes Given: 613
Joined: Feb 2020
Reputation:
29
দাদা দারুণ হচ্ছে, কিন্তু বড্ড ছোট আপডেট!!!!!! ।
•
Posts: 143
Threads: 3
Likes Received: 126 in 50 posts
Likes Given: 2
Joined: Jan 2019
Reputation:
16
ক্যাব থেকে বাড়ির ঠিক সামনে নেমে পড়লো দুজনে | বিথী নেমে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকল একপাশে আর আকাশ ড্রাইভারের নির্দিষ্ট ভাড়া মিটিয়ে বিথীকে নিয়ে বাড়ির গেট খুলে ভেতরে ঢুকলো |
কলিং বেল বাজাতেই আকাশের মা এসে দরজা খুলে ওদের ভেতরে ঢুকিয়ে নিলো | আকাশের মাও বিথীকে বেশ ছোটোবেলাতেই দেখেছিলো | তাই এতদিন পর দেখে আবেগে আপ্লুত হয়ে বলল
"কিরে মা, কত বড় হয়ে গিয়েছিস তুই | চেনাই যাচ্ছে না তো তোকে | যাই হোক, আসতে কোনো অসুবিধা হয় নি তো রে? "
বিথী নিজের স্বভাবসিদ্ধ মিষ্টি হাসিমুখ নিয়ে জবাব দিলো
"না না, কোনো অসুবিধা হয়নি | আকাশদা খুব ভালোভাবে যত্ন নিয়ে আমায় নিয়ে এসেছে"
এই বলে আকাশের দিকে তাকিয়ে হাসি বিনিময় করলো |
আকাশও ছোট্টো হাসির মধ্যে দিয়ে তার উত্তর দিলো |
এবার ড্রয়িং রুম দিয়ে ভেতরে ঢুকতেই দিদার সাথে দেখা | সোফায় বসে অপেক্ষা করছিল দিদা | ওকে দেখতে পেয়েই একগাল হাসি নিয়ে উঠে দাঁড়ালো |
বিথী এসেই প্রথমে দিদার পায়ে প্রণাম করতে গেলে দিদা কাঁধটা ধরে বুকে টেনে নিলো |
"থাক থাক মা, খুব ভালো থাকো আর অনেক বড় হও, তুমি ঠিক আছো তো মামনি? কোনো অসুবিধা হয়নি তো আসতে? "
আকাশ এতক্ষনে বুঝে গিয়েছে এখানে থাকা মানেই এখন এসবই চলবে | তাই ও সঙ্গে সঙ্গে মাকে বলল
"বলছি ওর ব্যাগ গুলো কোন ঘরে রাখবো? "
মা, ডানদিকের দ্বিতীয় ঘরটা দেখিয়ে দিয়ে বললো
"ওটায় রেখে দে | বিথীর জন্য ওই ঘরটা ভালো করে সাজিয়ে গুছিয়ে রেখেছি |"
আকাশ সোজা ওখান থেকে ঘরের দিকে পা বাড়ালো | ঘরে ঢুকে একটু অবাকই হল আকাশ |বেশ পরিপাটি করে সাজানো হয়েছে ঘরটা | একটু ঈর্ষান্নিত মন নিয়েই বিড় বিড় করে উঠলো
"বাবা, আমার ঘরটা তো মা কোনোদিন এত ভালো করে গুছিয়ে দেয় নি, উল্টে পান থেকে চুন খসলে খালি বকবক করে"
সাথে সাথে এটাও বুঝে গেলো এই অতিথি আর পাঁচটা সাধারন অতিথি না | অনেক কাঠখর অপেক্ষা করছে ওর কপালেও এই সদ্দ্য আগত অতিথিকে কেন্দ্র করে | ব্যাগ দুটো ওপরের সেল্ফে রেখে নিজের মনেই বলল, যতসব আদিখ্যেতা |
আকাশ বেরোতে বেরোতেই আকাশের মা বিথীকে নিয়ে ঘরে ঢুকলো আর আকাশ সোজা নিজের ঘরে চলে গেলো কারণ না হলে একের পর এক আদেশ আসতেই থাকবে |
বিথী যে নিজের থাকার ঘরটি দেখে খুব খুশি হয়েছে তা তার মিষ্টি হাসির মধ্যে দিয়েই প্রকাশ পাচ্ছিলো | আকাশের মা সেটা যথাযথ অনুমান করেই বলল
"কিরে মামনি, পছন্দ হয়েছে তো? "
বিথী মিষ্টি হাসিমুখটি নাড়িয়ে হ্যা, খুব পছন্দ হয়েছে সেটা বুঝিয়ে দিলো |
তাও আকাশের মা বলে দিলো যদি কোনোরকম অসুবিধা হয় বা কিছু লাগে তাহলে যেনো লুকিয়ে না রাখে
"মামনি, কিছু অসুবিধা হলে আমাদের নির্দিধায় বলবি | আর তোর ওপাশের সামনের ঘরটাই আকাশদার | ওকেও বলতে পারিস যদি কিছু দরকার হয় |"
বিথী মাথা নাড়িয়ে জানিয়ে দিলো
"আচ্ছা"
আকাশ আর বিথী দুজনেই স্নান সেরে বেরোতে বেরোতেই দুপুরের খাওয়ার ডাক পড়লো |
বিথী একটা ঘিয়ে রঙের সালোয়ার কামিজ পরে বেরিয়ে এলো | সবে স্নান করেছে বলে ভেজা চুলগুলো ছেড়ে রেখেছে | ড্রয়িং রুমে আসার পথে আকাশের ঘরের পর্দার ফাঁক দিয়ে দেখতে পেলো খুব মন দিয়ে চুল আঁচরাচ্ছে | নিজের মনেই একটু হেঁসে টেবিলের কাছে গিয়ে দাঁড়ালো |
টেবিলে দিদা বসেই ছিলো আর আকাশের মা সব খাবার দাবারের বাটি প্লেট সব ঠিকঠাক করছিলো | বিথী হাসিমুখে বলল
"কাকিমা আমিও তোমার হাতে হাতে করে দি, দাও"
"এ মা না না মামনি, তুমি এতটা জার্নি করে এসেছো | তুমি বসে পড়ো আমার হয়ে গিয়েছে গোছানো"
তারপরেও বিথীকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে দিদা বলল
"কিরে মা, খেতে বোস | দাঁড়িয়ে আছিস কেনো? "
বিথী আসতে করে উত্তর দিলো
"আকাশদা আসুক | তারপর না হয় একসাথে বসবো|"
এই শুনে আকাশের মা মুচকি হেসে জোরে ডাক দিলো আবার
"এই যে লাটসাহেব আপনার কি হয়েছে? আমরা সবাই অপেক্ষা করছি আপনার জন্য"
আকাশ ততক্ষনে ঘর থেকে বেরিয়ে সোজা মার দিকে তাকিয়ে একটু রাগ নিয়ে উত্তর দিলো
"শোনো মা, ঘরের মধ্যে সবসময় এরকম চিল্লামিল্লি করবে না তো, বিরক্তি লাগে"
কথাটা শেষ করেই বাঁদিকে দাঁড়ানো বিথীর দিকে চোখ পড়লো |
সদ্যস্নাত ভেজা খোলা চুলে বেশ লাগছিলো বিথীকে | আগের থেকে অনেকটা অন্যরকম | হয়ত ক্লান্তিটা অনেকটা কেটে গিয়েছে বলেই | ঘিয়ে রঙের সালোয়ারে বেশ মানিয়েছে বিথীকে | ওর পাশে দাঁড়িয়ে এক মূহুর্ত পর্যবেক্ষন করে নিলো বিথীকে | খোলা চুল কোমর ছাড়িয়ে নেমে গিয়েছে আরও খানিকটা নিচে |
"তুই না এলে বিথীও বসছিলো না | তাই ডাকতে বাধ্য হলাম | না হলে তো আপনার ঠিক থাকে না কতক্ষন লাগাবেন |"
এই শুনে একটু ইতস্তত হয়ে বিথীর দিকে তাকালো
"একি,তুমি বসোনি কেনো? আমি তো আসছিলামই | আচ্ছা বসো বসো |"
সবাই মিলে টেবিলে খেতে বসেই আকাশের চক্ষু চড়কগাছ | মাংশের সাথে দুরকমের চুনোমাছ | আকাশ মাছ মোটেই পছন্দ করে না কখনোই, আর চুনোমাছ তো একদমই না | আকাশের মা সবাইকে ভাত দিতে দিতে বিথীকে বললো
"মামনি, তুই ছোটো মাছ খুব ভালোবাসিস তো খেতে | তাই আর কি রান্না করবো ভেবে না পেয়ে দুরকমের মাছ করেছি | তোর অসুবিধা হবে না তো খেতে? "
"না না কাকিমনি, ছোটো মাছ আমার খুব প্রিয় | আমি খুব ভালো খাই এগুলো"
বিথীর মুখে কথাগুলো শোনার পর আকাশের মনে হলো কে যেনো ফিসফিস করে ওর আর এক কানে বলছে
"বাছাধন,হয়ে গেলো তোমার ছুটির দিনগুলোর দফারফা"
মা আকাশের পাতে খাবে না জেনেও একটু মাছ দিতে গেলেই তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলো আকাশ |
"আরে কি করছো কি? তুমি জানো না আমি এসব চুনোমাছ খাইনা | আমায় দিচ্ছো কেনো? আমায় খালি মাংশ দাও"
এই শুনে বিথী আকাশের দিকে তাকিয়ে অকপটে বললো
"আকাশদা তুমি চুনোমাছ খাও না? চুনোমাছ কিন্তু শরীরের জন্য খুব ভালো | বিশেষ করে চোখের জন্য | তোমার খাওয়া উচিত কিন্তু"
আকাশ এই অকপট বিজ্ঞপ্তি শুনে যথেষ্ট বিরক্ত হলেও মুখে কিছু না বুঝিয়ে চুপচাপ মাংশ দিয়ে খেতে শুরু করে দিলো | আড় চোখে মাঝে মাঝে বিথীর দিকে তাকিয়ে মনে হচ্ছিলো ও ম্যান ইউ এর সাপোর্টার হয়ে যেনো ম্যান সিটির কোন হার্ডকোর ফ্যান এর সাথে খেতে বসেছে | মনে মনে ভাবতে লাগলো বাচ্চা মেয়ে, অল্প বয়সে বেশি বুঝে ফেলেছে সবকিছু | দূরত্ব বজায় রেখে চলতে হবে এই মেয়ের থেকে, নাহলে আবার কখন কি বলে বসে তার ভরসা নেই | কোনোমতে খাওয়া শেষ করে "আমি উঠলাম" বলে হাত মুখ ধুয়েই হাঁটা দিলো নিজের ঘরের দিকে |
দুপুরে মা আর দিদা একটু ভাত ঘুম দেয় | তাই ওরা নিজেদের রুমে শুতে চলে গিয়েছে | এদিকে বিথী বেশ ক্লান্ত থাকা সত্ত্বেও ওর দুচোখের পাতা এক করতে পারছিলো না | আসলে অন্য বিছানায় প্রথম প্রথম এরকম হওয়াটাই স্বাভাবিক | তাই এদিক ওদিক করা ছাড়া আর কোনো উপায় ছিলো না | কিছুক্ষন পর ওদিকের ঘর থেকে অরিজিত সিং এর বেশ কিছু মিষ্টি হিন্দি গান ভেসে আসতে লাগলো | বুঝতে অসুবিধা হলো না যে আকাশ গান চালিয়েছে | অরিজিত সিং বিথীর খুব পছন্দের | তাই নিজের মনেই গানের সাথে গুনগুন করতে করতে কখন যে দুই চোখের পাতা এক হয়ে গিয়েছে নিজেই বুঝতে পারে নি |
শাঁখের আওয়াজে ঘুম ভেঙে বুঝতে পারলো সন্ধ্যে হয়ে গিয়েছে | তরিঘরি উঠে হাত মুখ ধুয়ে বাইরে বেরিয়ে এলো | সোফায় দিদা বসে টিভি দেখছিলো আর আকাশের মা সব ঠাকুরদের ধূপ দেখাচ্ছিলো | বিথীকে দেখে দিদা হেঁসে ওকে সোফায় বসতে বললো |
"ঘুম হয়ে মা? "
"হ্যাঁ দিদান, খুব ভালো ঘুম হয়েছে"
আকাশের মার ততক্ষনে সন্ধ্যে দেওয়া হয়ে গিয়েছে | ওদের কাছে এসে বললো
"মামনি, তুই দিদার সাথে একটু গল্প কর, আমি চা বসাচ্ছি"
বিথী কয়েকবার নিজে চা করার কথা বললে আকাশের মা ভালোবাসার ধমক দিয়ে ওকে বসিয়ে দিলো
"বাচ্চা মেয়ে, চুপ করে বসো এখানে | আমি চা করে নিয়ে আসছি"
তারপর বিথীর মাথায় হাত বুলিয়ে হেঁসে রান্নাঘরের দিকে চলে গেলো |
চা আসতে আসতে দিদা ওর থেকে বাড়ির সবার আর গ্রামের বাকি পরিচিতদের কিছু কিছু খবরাখবর নিয়ে নিলো |
একটা চা এর কাপ টেবিলে রেখে ওদের দুজনকে দুটো কাপ আর সাথে এক ট্রে বিস্কুট রেখে আকাশের মা রাখা কাপ টা তুলে নিলো |
বিথী ওইদিকে তাকিয়ে বললো
"তুমি চা খাবে না কাকিমনি? "
"হ্যাঁ খাবো, কিন্তু তার আগে লাটসাহেবকে চা টা দিয়ে আসি"
বিথী সাথে সাথে চা এর কাপটা নিজের হাতে নিয়ে কাকিমনিকে জোর করে বসিয়ে দিলো
"না না, তুমি চা খাও | আমি আকাশদাকে চা দিয়ে আসছি"
চা এর কাপ নিয়ে আকাশের ঘরের দিকে যেতেই দিদা আসতে আসতে মাকে বললো
"দেখেছিস রমা, মেয়েটা কি লক্ষ্মী | একদিনেই কেমন সবাইকে নিজের করে নিয়েছে"
"হ্যাঁ মা, একদম ঠিক বলেছো"
আকাশের রুমের দরজা খোলাই ছিলো তাও বিথী দরজার সামনে দাঁড়িয়ে একবার ডাক দিলো
"ভেতরে আসতে পারি? চা নিয়ে এসেছি"
সাথে সাথে ভেতর থেকে আওয়াজ এলো
"আরে এসো এসো"
ভেতরে ঢুকতেই দেখলো আকাশ একটা গেঞ্জি আর একটা ফর্মাল পাজামা পরে রেডি হচ্ছে বেরোনোর জন্য | ঘরের চারদিকটা একটু চোখ বুলিয়ে যা বুঝলো তাতে মনে হলো ছেলেটা যথেষ্ট আগোছালো |
"তুমি কি কোথাও বেরোচ্ছো? "
"হ্যাঁ, ওই বন্ধুদের সাথে পাড়ার মোরের চা এর দোকানে একটু আড্ডা দিতে যাবো"
"ও আচ্ছা, তোমার চা টা কোথায় রাখবো? "
"এই তো আমায় দাও"
চা এর কাপটা আকাশের হাতে দিয়ে বেরিয়ে এসে সোফায় বসলো | কাকিমনি জিজ্ঞাসা করলো
"ও কি উঠেছে? "
"হ্যাঁ, রেডি হয়ে কোথায় যেনো বেরোচ্ছে"
আকাশ ঘর থেকে বেরিয়ে টেবিলে ফাঁকা কাপটা রেখে বেরোতে যাবে এমন সময় যথারীতি দিদা বাঁধ সাধলো |
"বাবু তুই কি এখানেই যাবি না অন্য কোথাও? "
"না দিদা, এই মোড়ে"
"তাহলে এক কাজ কর না, বিথীকে একটু নিয়ে যা না সাথে করে | বেচারী বাচ্চা মেয়ে, আমাদের সাথে বসে একা একা কি করবে"
আকাশের ওইসময় মনে হচ্ছিলো ওর যদি অদৃশ্য হয়ে যাওয়ার ক্ষমতা থাকতো তাহলে হয়ত ওর থেকে খুশি আর কেউ হতো না |
"আমি তো মোড়ের মাথায় আড্ডা দিতে যাচ্ছি, ও ওখানে গিয়ে কি করবে"
"আরে ওখানে কেনো নিয়ে যাবি, আমি বললাম ওকে নিয়ে একটু হাতিবাগান মার্কেটটা ঘুরিয়ে নিয়ে আয় | ওর যদি টুকটাক কিছু কেনার থাকে তাহলে কিনেও নিতে পারবে"
আকাশ বুঝে গেলো যে ওর সন্ধ্যের আড্ডাটাও আজ মাটি হতে চলেছে | তাই একটু বিরক্তিভরা দৃষ্টি নিয়ে বিথীর দিকে তাকালো | বেচারি এতক্ষন বেশ উৎসাহের সাথে আকাশের দিকে তাকিয়ে ছিলো কিন্তু ওর ওইরকম চাহনি দেখে কেমন যেনো ইতস্তত পরিস্থিতির মধ্যে পড়ে গেলো | তাই মনে ইচ্ছা থাকলেও বেরোনোটা কাটানোর চেষ্টা করলো |
"না না দিদা, আমার এখন কিছু কেনার নেই | যখন দরকার হবে আমি নিজে থেকেই বলবো |আকাশদা তুমি বরং যেখানে যাচ্ছিলে যাও"
কিন্তু আকাশ ভালো করেই জানে দিদার মাথায় একবার যখন ঢুকেছে সেটা ওকে দিয়ে করিয়েই ছাড়বে | আর তা যদি না হয় তাহলে রাতে আবার অন্তত: একশোখানা ইমোশানাল অত্যাচারের সম্মূখীন হতে হবে ওকে | তাই সাথে সাথে মুখের ভাব ভঙ্গীমা বদলে দিয়ে বিথীকে বললো
"না না কোনো ব্যাপার না | আমার তেমন জরুরী কাজ নেই | চলো তোমায় মার্কেট থেকে ঘুরিয়ে আনি"
বিথী কয়েকবার না না করলেও দিদা একপ্রকার জোর করেই ওকে রেডি হতে পাঠিয়ে দিলো
"যা না মা, একটু ঘুরে আয় | খুব বড় মার্কেট এখানে | ভালো লাগবে তোর, যা ওর সাথে ঘুরে আয়"
অগত্যা বিথীও রেডি হয়ে বেরিয়ে পড়লো আকাশের সাথে |
ময়ূরপঙ্খী রঙের সালোয়ার পরে আকাশের পাশে হাঁটছিলো বিথী | আকাশের কেমন যেনো নিজেকেই একটু বেমানান লাগছিলো ওর পাশে আর তার সাথেই দিদার ওপর আরও রাগ হচ্ছিলো | দিদা আগে কিছুই বলতে পারে না, তাহলে আর একটু ভালো কিছু পরে আসতাম, ধুর|
মোড়ে যেতেই দুই বন্ধুর সাথে দেখা হয়ে যায় ওদের | দুজনেই জিজ্ঞাসু তার সাথে সাথে বেশ ভালোলাগার রেশ নিয়ে তাকিয়ে আছে বিথীর দিকে | আকাশ ভালো করেই চেনে ওর বন্ধুদের | কাল থেকেই বন্ধুমহলে এটা আলোচ্য বিষয় হয়ে উঠবে | তাও নিরুপায় হয়ে সৌজন্যতাবোধ দেখিয়ে ওদের একে অপরের সাথে পরিচয় করিয়ে দিলো |
"বিথী ওরা হলো আমার ছোটবেলার বন্ধু | ও দীপ আর ও সমর | আর ও হলো আমার কাকুর মেয়ে, বিথী"
দীপ সবে হাত বাড়িয়ে হ্যান্ডসেক করতে যাচ্ছিলো কিন্তু বিথী হাত জোর করে নমস্কার করায় একটু বেয়াকুব হয়ে ওরাও তাই করলো |
পরিস্থিতি বুঝতে পেরে আকাশ সঙ্গে সঙ্গে বিথীকে নিয়ে ওখান থেকে এগিয়ে গেলো
"আচ্ছা, তোরা গল্প কর | আমি আজ ওকে নিয়ে মার্কেটটা একটু ঘুরে আসি"
হাতিবাগানের রাস্তায় ভর সন্ধ্যেবেলা যথারীতি ভীড় উপচে পড়ছে | দুজনে পাশ কাটিয়ে কাটিয়ে কোনোমতে মার্কেটের ভেতর দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে | ধাক্কাধাক্কি আর গরমের মধ্যে বিথীর এইভাবে হাঁটতে একদম ভালো লাগছিলো না
"আমার এরকম ভীড় ভাট্টার মধ্যে ধাক্কাধাক্কি করতে একদম ভালো লাগে না"
"আমারও"
"এখানে কোনো বসার যায়গা নেই? "
"গঙ্গার ঘাট আছে, কিন্তু এই রাতে ওখানে না যাওয়াটাই ভালো"
"ওহ"
একটু মনমরা হয়ে চুপচাপ আকাশের পাশে পাশে হাঁটতে থাকে | দুজনেরই এই ভীড়ে হাঁটাটা বিরক্ত লাগছে বুঝতে পেরে আকাশ বিথীকে হাতিবাগান মোড়ে দাঁড় করিয়ে দিলো |
"বিথী, এটা স্টার থিয়েটার | নিচে সিনেমা হল দেখতেই পাচ্ছো, কিন্তু ওপরে একটা সুন্দর বসার যায়গা আছে | যাবে? "
স্টার থিয়েটারের ওপরে সত্যি খুব সুন্দর একটা রুফ টপ আছে, মানে খোলা আকাশের নিচে টেবিল চেয়ার পাতা | চা, কফি, স্ন্যাক্স খেতে খেতে সুন্দর গল্প করা যায় | তার সাথে সাথে মাঝে মাঝে ভালো গান বাজনার প্রোগ্রামও হয় |
এতক্ষনে বিথীর ধরে যেনো প্রাণ ফিরে এলো | তাই এক মূহুর্ত সময় নষ্ট না করেই মত দিয়ে দিলো
"হ্যাঁ হ্যাঁ সেই ভালো | চলো ওখানেই যাই"
দুজনে সিঁড়ি দিয়ে অর্ধেকটা ওঠার পর আকাশ বিথীকে একটু দাঁড়াতে বলে রুফ টপের দুটো এন্ট্রির কুপন কেটে নিলো | তারপর সোজা ওপরে উঠে গেলো বিথীকে সাথে নিয়ে | আকাশ ছোটো থেকেই এখানে এসেছে, তাই সবকিছুই জানা, কিন্তু বিথী প্রথমবার আসায় ওর খুব ভালো লাগলো খোলা আকাশের নিচে এই বসার আর গল্প করার যায়গাটা |
অনেক অল্প বয়সী ছেলে মেয়ে দলে দলে বসে জমিয়ে আড্ডা আর তার সাথে খাওয়া-দাওয়া করছে | বিথী চারদিকের সেইসব মন দিয়ে দেখছিলো তখনই আকাশের ডাকে ওর দিকে তাকালো | আকাশ পাশেই একটা ফাঁকা টেবিল দেখে ওকে ওখানে বসতে ইশারা করলো | দুজনে বসে যায়গাটা নিয়ে টুকটাক কথা বলার পর আকাশ জিজ্ঞাসা করলো
"কি খাবে বলো? "
"না না, আমি কিছু খাবো না"
"সেকি তাই হয় নাকি, অন্তত: চা বা কফি খাও"
অনেক বলা কওয়ার পর ঠিক হলো দুজনে দুটো চা আর সাথে আকাশ জোর করেই দুটো চিকেন স্যান্ডউইচ অর্ডার দিলো |
বিথী সমানে এদিক ওদিক দেখতে দেখতে হঠাৎ নিজের মনেই বলে উঠলো
"ইশশশ!! কি সব ড্রেস পরেছে"
আকাশ কিছু বুঝতে না পেরে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে ওর দিকে তাকালো
"আমায় কি কিছু বললে? "
"না না, তোমায় না"
"তাহলে? "
"না কিছু না"
"আরে বলো, কোনো ব্যাপার না, কি হয়েছে? "
বিথী ডানদিকের একটা টেবিলে বসা কিছু মেয়েদের দিকে ইশারা করে বললো
"ওই যে ওরা, ওগুলো কোনো ড্রেস হলো? "
আকাশ ওর আঙুল বরাবর দেখে বুঝতে পারলো ও কি বলতে চাইছে, তাই ওকে বুঝিয়ে বললো
"আসলে, কলকাতায় এগুলোই নর্মাল বিথী | এগুলোই এখনকার ফ্যাশন, এতে খারাপের কিছু নেই"
বিথী একটু রাগের সাথে তাকালো আকাশের দিকে
"শোনো আকাশদা, আমিও খারাপ বা ভালো সেইসব বিচার করছি না | কিন্তু শালীনতা বলে একটা ব্যাপার আছে মেয়েদের | ফ্যাশন আমিও বুঝি | একটা মানুষের কাছে তার ফ্যাশন সেটাই যেটায় সে নিজে সাবলীল এবং তার সাথে সাথে নিজের কাছে সুন্দর | ওরা ওরকম ড্রেস পরেছে সেটা খারাপ না কিন্তু ওটাকে ওইভাবে মানিয়ে নিয়ে চলাটা হলো আসল |
আর একটা কথা বলি তোমায়, মেয়েদের আসল অলঙ্কার তার আভরণে, তার শৃঙ্গারে, তার লজ্জায় | একটা বইকে তুমি যতই যত্নে রাখো না কেনো, তাকে যদি তুমি সুন্দর করে মলাট দিয়ে সাজিয়ে রাখো, আগে সেটাই তোমার দৃষ্টি আকর্ষণ করবে"
বিথীর কথা শেষ হতে হতেই ওদের অর্ডার চলে আসে | কিন্তু বিথীর কথা গুলো কোথায় যেনো আকাশের মনের আকাশের মেঘটাকে আবার জমাট বাঁধিয়ে দেয়, হয়ত আরো একটু গভীর ভাবে | বিথী চা এর কাপটা হাতে নিয়ে নির্লিপ্তভাবে মাথা নিচু করে ফুঁ দিতে থাকে আর ওদিকে চা এর কাপ হাতে নিয়ে ওর দিকে হাঁ করে তাকিয়ে থাকে আকাশ
"কে এই মেয়েটা? বয়স অনুযায়ী একটু বেশী পাকা পাকা কথা বলে ঠিকই, কিন্তু প্রতিটা কথায়, প্রতিটা মত যেনো খুব নিজের, খুব খাঁটি | সত্যি এক অদভূত চূম্বকীয় আকর্ষণ শক্তি আছে মেয়েটার মধ্যে | নাহ: , নিজেকে বাঁচিয়ে চলতে হবে এর থেকে, নাহলেই বিপদ |"
Posts: 6,494
Threads: 21
Likes Received: 6,992 in 3,702 posts
Likes Given: 12,097
Joined: Feb 2020
Reputation:
239
Story building darun hochhe, but regular update pele valo hoy
Posts: 912
Threads: 1
Likes Received: 867 in 546 posts
Likes Given: 3,345
Joined: Dec 2018
Reputation:
40
Wow ... Bro next update taratari din ....
•
Posts: 38
Threads: 1
Likes Received: 7 in 4 posts
Likes Given: 23
Joined: Jul 2019
Reputation:
0
•
Posts: 6,494
Threads: 21
Likes Received: 6,992 in 3,702 posts
Likes Given: 12,097
Joined: Feb 2020
Reputation:
239
আপডেট কই? এই গল্পটার কিন্তু সাম্প্রতিককালের অন্যতম সেরা গল্প হওয়ার রসদ রয়েছে, ঠিকঠাক implement করতে হবে শুধু
Posts: 244
Threads: 2
Likes Received: 419 in 235 posts
Likes Given: 26
Joined: May 2019
Reputation:
14
এই গল্পটা ছেড়ে দিলেন কেন দাদা?অসাধারণ একটি গল্প ছিল।
Posts: 1,553
Threads: 0
Likes Received: 1,534 in 965 posts
Likes Given: 5,238
Joined: Jan 2019
Reputation:
190
সুন্দর গল্প ।
যথারীতি অসমাপ্ত ।
Posts: 912
Threads: 1
Likes Received: 867 in 546 posts
Likes Given: 3,345
Joined: Dec 2018
Reputation:
40
Dada etar update din ....
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,410 in 27,674 posts
Likes Given: 23,734
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
|