Thread Rating:
  • 19 Vote(s) - 3.47 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
বিপ্লব পোদ্দার- ব্যাংকার অফ দ্যা ইয়ার - Copy
#41
আমার হৃদয়ে রমার অংশই সর্বাধিক। ‘না রমা জুলি নয়’ এই কথাটাই তাই বারবার করে ভেসে আসতে লাগলো। আমার তো আর কলার আইডি নেই, তাই ল্যান্ড ফোনে কে ফোন করেছে তা ওর পক্ষে বোঝা সম্ভব নয়। শেষ উপায় রমার মোবাইলে ফোন করা। যদি সত্যিই ও শর্মাজীর সাথে থেকে থাকে তাহলে আশেপাশের ট্রাফিকের আওয়াজেই আমি তা বুঝে যাবো। কল লাগালাম রমার মোবাইলে। সুইচড অফ। চোখদুটো হতাশায় বন্ধ করে নিলাম। মনিদা খুন হয়েছিল শুক্রবার। শুক্রবার অফিসে চরম ব্যস্ততা ছিল। ফিরতে একটু দেরী হবে এটা বলার জন্য ওকে ফোন করেছিলাম। একদম একি অবস্থা ছিল। ল্যান্ড ফোনে কেউ ফোন রিসিভ করেনি। রমার মোবাইলটা সুইচ অফ বলছিল। বাড়ি ফিরে দেখলাম বিছানার ওপর রমার ঘামে ভিজে প্যানটিটা পড়ে রয়েছে। সাধারনত সালোয়ার পরে বাইরে না বেরলে রমা প্যানটি ইউস করেনা। সঙ্গে সঙ্গে রমাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম ‘রমা, তুমিকি কোথাও গিয়েছিলে?’ কিছুটা চমকে উঠেছিল রমা। ও তারপর উত্তর দেয় ‘কই না তো’। আরও অনেক অনেক ঘটনা রয়েছে এবং তার সাথে যোগ হয়েছে রমার এই ফোন না ধরা। রমাকি সত্যিই আমায় ছলনা করে চলেছে। নিজের মনকে বিশ্বাস করাতে পারছিলাম না। আবার ল্যান্ড ফোনে একবার ফোন করলাম। সেই একি ক্রিং ক্রিং করে শব্দ হোল আর তারপর ফোনটা কেটে গেলো। হতাশা শুধুই হতাশা। চোখদুটো বন্ধ করে পড়ে রইলাম। এইভাবে কতক্ষন গাড়িটা চলেছে খেয়াল নেই। বাইপাশের ঠাণ্ডা হাওয়া আর সারাদিনের ধকল; সবমিলিয়ে এতো ক্লান্তি এসেছিল কখন ঘুমিয়ে পড়েছিলাম খেয়াল নেই। ড্রাইভারের প্রচণ্ড জোরে একটা চিৎকারে ঘুমটা ভাঙল। ‘স্যার, ওই যে গাড়িটা’। চোখ খুলে দেখি, বাইপাশের একধারে গাড়িটা পার্ক করা আছে। আমাদের গাড়িটা ঠিক ওর পেছনে পার্ক করা হোল। আমরা দুজনেই দৌড়ে গাড়িটার কাছে গেলাম। আবার দুটো মৃতদেহ, শর্মাজী আর শর্মাজীর ড্রাইভার। আশপাশটা সম্পূর্ণ জনহীন। একজনকেও দেখা যাচ্ছেনা। খালি কয়েকটা গাড়ি প্রচণ্ড স্পীডে বেরিয়ে চলে যাচ্ছে। ড্রাইভারের মুখের দিকে একবার তাকালাম। ভয়ঙ্কররকম ভয় পেয়ে গেছে। আমাকে ফিসফিস করে বলতে শুরু করল ‘স্যার, চলুন এখান থেকে পালিয়ে যাই, নয়ত পুলিশ কেসে ফেঁসে যাবো’। সত্যি ও ঠিকই বলছে, এই অবস্থায় যদি আমাদের কেউ দেখে ফেলে তাহলে স্বয়ং ভগবানও আমাদের বাঁচাতে পারবেনা। দ্রুত গাড়িটা স্টার্ট করে আবার অফিসের দিকে যেতে শুরু করলাম। কাল রাতে রঞ্জন খুন আর আজ সকালে চিন্ময় খুন আর এখন শর্মাজী খুন। কোন উর্বর মস্তিস্কের সিরিয়াল কিলার এতো দ্রুত খুন করার চেষ্টা করেনা কারন এতে ধরা পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল হয়। তাহলে কেন? কেউকি পথের কাঁটাগুলোকে সরিয়ে দিয়ে নিজেকে সেফ স্থানে রাখতে চাইছে। কিন্তু কে? রঞ্জন, চিন্ময়, শর্মাজী মৃত। তাহলে কে? সন্দেহ করার মত একজনই বাকি রয়েছে তিনি বিজয়দা। মধুকর ভিলা থেকে প্রায় ফিল্মি আদবকায়দায় পালিয়ে আসার সময় থেকেই বিজয়দার ওপর আমার প্রবল সন্দেহ। কিন্তু, সত্যি বলতে বিজয়দা ঠিক কিভাবে এই ঘটনার সাথে জড়িত তা এখনো আমার কাছে পরিস্কার নয়। ভাবলাম আরও একবার রমাকে ফোন করি। বাড়ির ল্যান্ড ফোনে ফোন করে লাভ নেই কারন আমি সিওর যে বাড়িতে নেই। রমার মোবাইলে আবার একবার ফোনটা লাগালাম। অদ্ভুতভাবে এবার রিং হোল অথচ কিছুক্ষন আগেও সুইচ অফ ছিল। বার ৬-৭ রিং হওয়ার পরই রমা রিসিভ করল। আমার মাথা থেকে যেন একরাশ কালো মেঘ নেমে গেলো। ‘হ্যালো, রমা তুমি কোথায়? তুমি জানো তোমায় কতবার ফোন করেছি আমি। তোমার মোবাইল সুইচ অফ...’ আমার কথাটা সম্পূর্ণ হওয়ার আগেই রমা বেশ কাঁপা কাঁপা গলায় বলে উঠল ‘বিপ্লব, তুমি কোথায়? আমায় এক্ষুনি তোমার সাথে দেখা করতে হবে’ ওর কথাটা মোটামুটি বুঝতে পারলেও ভয়েসটা ক্লিয়ার আসছিলনা। আশপাশ থেকে বেশ কিছু বাস ট্রামের শব্দে বিশাল একটা নয়েস তৈরি হচ্ছিল। এতোটুকু বুঝলাম যে রমা খুব ভয়ের মধ্যে রয়েছে। আমি বললাম ‘রমা তুমি কোথায় আছো বল আমি এক্ষুনি আসছি’ মনে হয় রমা আমার কথাটা শুনতে পেলো না। ‘হ্যালো, হ্যালো’ বলতে বলতে লাইনটা কেটে গেলো। এ এক ভয়ঙ্কর বিপদ। রমা কোথায় আছে তা না জানলে ওকে কোনমতেই উদ্ধার করা সম্ভব নয়। আমি আবার একবার ওকে ফোন করতে যাচ্ছি দেখি আমার মোবাইলেই ফোন চলে এলো। কার ফোন না দেখে সঙ্গে সঙ্গে রিসিভ করে নিলাম। ‘হ্যালো রমা তুমি কোথায়? প্লিস বল তুমি কোথায়? আমি সত্যিই খুব চিন্তায় আছি’ আমাকে সম্পূর্ণ স্তম্ভিত করে দিয়ে ওপাশ থেকে এক পুরুষ কণ্ঠ ভেসে এলো। ‘আরে বিপ্লব বাবু আপনি কোথায় বলুন তো? কতবার বলেছি যে নিজেকে শারলক হোমস ভাববেন না। যা কিছু হবে পুলিশকে জানাবেন। আবার আপনি একা একা...’ আমার আর সহ্য হচ্ছিলনা। প্রচণ্ড জোরে চিৎকার করে বললাম ‘বিজয়দা, আমার স্ত্রী ছাড়া এই পৃথিবীতে সত্যিই আমার কেউ নেই। ওর কোন ক্ষতি যেন না হয়’ বিজয়দার উত্তরটা ছিল ভয়ঙ্কর রহস্যময়। ‘নিজেকে একটু বেশীই স্মার্ট ভেবে ফেলেছেন আপনি। রমাদেবী কি করে বিপদ কাটিয়ে উঠবেন তা আমি জানিনা। কিন্তু আপনি ভাবুন আপনি নিজের বিপদটা কিকরে কাটাবেন?’ যেন মাথার ওপর বাজ পড়ল। বিজয়দা কি আমায় হুঁশিয়ারি দিচ্ছেন। নিজের অজান্তেই বলে ফেললাম ‘আপনি কি বলতে চান?’ সঙ্গে সঙ্গে ওপাশ থেকে ঠাণ্ডা গলায় যা ভেসে এলো তা আমার হৃদয়ে কম্পন ধরাতে বাধ্য। ‘যেদিন মনীন্দ্র বাবু খুন হয়েছিলেন হোটেলের ঠিক বাইরে আপনার স্কুটার পার্ক করা ছিল। হোটেলের পারকিং লিস্টে আপনার স্কুটারের নাম্বার পাওয়া গেছে। পার্ক করেছিলেন ঠিক ৯-১০.০০ এর মধ্যে। মনিবাবুকে ওপর থেকে নীচে ফেলে দেওয়া হয় ঠিক সাড়ে ৯ টার সময়’ আর সত্যিই নিজেকে সংবরন করা সম্ভব ছিলনা। প্রচণ্ড জোরে চিৎকার করে বলে উঠলাম ‘বিজয়দা আপনি কি মনে করেন খুনগুলো আমি করছি। আর আপনি বোধ হয় এটা ভুলে গেছেন যে হোটেলে মনিবাবু উঠেছিলেন তার ঠিক উল্টো দিকেই আমার অফিস। অফিস যাওয়ার পথে হোটেলটা বাঁ দিকে পরে তাই মাঝে মধ্যে ওখানে আমি গাড়িটা পার্ক করে দি। সেদিন অর্ধেক রাস্তা যাওয়ার পর আমি ফেরত আসি। শর্মাজীর লোণের কাগজ অফিসেই ফেলে এসেছিলাম। ওটাই আনতে যাই। সাক্ষী হিসেবে আমি...’ আর বলতে পারলাম না, কিকরে বলি সাক্ষী হিসেবে আমি শর্মাজীর নাম বলতে পারি, ও তো মৃত। ফোনে হলেও বিজয়দার অট্টহাস্য চিনতে আমার খুব একটা অসুবিধে হলনা। ‘সাক্ষী হিসেবে কার নাম আপনি পেশ করবেন বিপ্লব বাবু? শর্মাজী? শর্মা তো মরে ভূত হয়ে গেছে’ আমার মাথাটা বনবন করে ঘুরতে শুরু করে দিলো। শর্মাজী যে মারা গেছে তা বিজয়দা কিকরে জানলেন? আমার কোন জবাব দেওয়ার আগেই বিজয়দা বলে উঠলেন ‘চিন্ময়ের খুন হওয়ার সময়ও ঘটনাস্থলে আপনি ছিলেন’ এবার আর আমার পক্ষে নিজেকে সংবরন করা সম্ভব ছিলনা। চেঁচিয়ে বলে উঠলাম ‘রাষ্ট্র ব্যাবস্থা আপনাদের অস্ত্র দিয়েছে, শক্তি দিয়েছে তার মানে তো এটা নয় যা ইচ্ছে তাই বলবেন। চিন্ময়ের খুন হওয়ার সময় তো আগে ঘটনাস্থলে আপনি পৌঁছেছিলেন’ আমার কথা সম্পূর্ণ হওয়ার আগেই বেশ জোরে একটা অট্টহাস্যের সাথে বিজয়দা বলে উঠলেন ‘কই না তো আমি তো ঘটনাস্থলে খুন হওয়ার অনেক পরে গেছিলাম। এক সোর্স এর দেওয়া ইনফরমেশন পেয়ে গেলাম আর দেখি আপনি দাঁড়িয়ে আছেন, আপনার হাতে রক্তের দাগ। কি বিপ্লব বাবু, চার্জশিটটা কেমন হবে বলুন তো? ওহ মিডিয়া থেকে পলিটিসিয়ান প্রত্যেকেই একদম চেটে পুটে খাবে’ নিজের কানকেই বিশ্বাস হচ্ছিলনা। কিছুটা হতাশার সুরে আমি বললাম ‘বিজয়দা, কোন প্রমান ছাড়া আপনি কিছুতেই আমায় গ্রেফতার করতে পারবেন না’ আবার একটা অট্টহাস্য। ‘আপনার বাবা কি এমএলএ না আপনার মেসোমশাই মন্ত্রী? কে বলল পুলিশ কোন প্রমান ছাড়া কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনা। শুধু একটা শক্তিশালী চার্জশিট বানাতে হয়’ আর সত্যি ধৈর্য রাখা সম্ভব ছিলনা। ‘আপনার যা করার করে নিন, পারলে ফাঁসি কাঠে চড়িয়ে দিন। এখনো দেশে গনতন্ত্র বলে...’ আমায় আবার থামিয়ে দিয়ে বিজয়দা কিছুটা উপহাস করেই বলে উঠলেন ‘একি ভুতের মুখে রামনাম শুনছি তো। বিপ্লব আর গনতন্ত্র। ওরে বাবা, বিপদে পড়লে যেমন মানুষ মন্দিরে যায় বিপ্লবও তাহলে গনতন্ত্রের কথা বলে’ সত্যিই আমার উত্তর দেওয়ার কিছুই ছিলনা। নিজেকে কিছুটা শান্ত করে বললাম ‘আপনি কি চান বিজয়দা? আপনি কার পক্ষে, সত্যের না মিথ্যার?’ প্রায় এক মিনিট নীরবতা। ‘আমি আপনাকে একটা শিক্ষা দিতে চাই, এমন শিক্ষা যা আপনি সারাজীবন মনে রাখবেন। কাল সকাল ৬ টায় আমি আপনাকে গ্রেফতার করব। ওপরমহল থেকে এই কেসটার চার্জশিট বানিয়ে ফেলার জন্য প্রচুর চাপ দিচ্ছে। আমার কাছে যা মেসিনারি আছে তাতে অনায়াসেই আপনাকে গ্রেফতার করা যায়’ আমার মুখ দিয়ে একটাও কথা বেরোল না। জানি বাঘের মুখে পড়ে গেছি, তবুও ঠাণ্ডা মাথার মানুষকে ছুঁতে বাঘও দুতিন বার ভাবে। তাই নিজেকে একটু সংবরন করে বললাম ‘বিজয়দা, যদি আমি পালিয়ে যাই তাহলে?’ আবার একটা অট্টহাস্য। ‘আপনি তো ড্রাইভারের পাশে বসে আছেন তাই তো। একবার আড় চোখে ওর প্যান্টের পকেটের দিকে তাকান’ কিছুটা বিস্মিত হয়েই আমি তাকালাম। প্যান্টের পকেটটা উঁচু হয়ে রয়েছে। ‘কি দেখলেন আর কি বুঝলেন?’ আমি ভেবেচিন্তে কিছু জবাব দেওয়ার আগেই বিজয়দা বললেন ‘ও পুলিশের ইনফরমার। ৭ বছর জেল খেটে এখন জামিনে মুক্ত। আমার এক বাক্যে ও আপনার মাথায় টুক করে একটা গুলি মেরে লাশটা বাইপাশে ফেলে চলে আসবে’ ভয়ে আমার হাত পা থরথর করে কাঁপতে শুরু করে দিলো। চুপ করে বসে থাকলাম। ‘পালাবার কোন চেষ্টা করবেন না। আপনাকে প্রতি মুহূর্তে কেউ না কেউ নজর রাখছে’ আমি জানি আমি চক্রব্যূহের মধ্যে পড়ে গেছি। এখান থেকে পালানো প্রায় অসম্ভব। মোবাইলটা কানে দিয়ে চুপ করে বসে থাকলাম। আবার একবার আড় চোখে ড্রাইভারের দিকে তাকালাম। ‘বিজয়দাকে আমার প্রনাম জানাবেন’ ড্রাইভারের কথায় আমার বুকের ধুকপুকানিটা ১০০ গুণ বেড়ে গেলো। ‘বিপ্লব বাবু, শারলক হোমস হওয়ার জন্য আমাদেরকে ২ বছরের ট্রেনিং দেওয়া হয়। আপনাদের মত সাধারন লোক যদি শারলক হোমস হয়ে যায় আমরা খাবো কি!’ আমার কাছে কোন দ্বিতীয় রাস্তা ছিলনা, শুধুমাত্র বিজয়দার কথা শুনে যাওয়া ছাড়া। ‘এই পুলিশের চাকরিটা করার জন্য আমি ২ খানা এসি ঘরের চাকরি ছেড়েছি বিপ্লব বাবু। আপনি তো এখনো জুলিকেই খুঁজে বার করতে পারলেন না। ওহ সরি, সত্যি বলতে চিনতে চাইলেন না। ভালোবাসা, বুঝলেন বিপ্লব বাবু ভালোবাসা এটা মানুষকে অন্ধই বানিয়ে এনেছে চিরকাল’ ফোনটা কেটে দিলেন বিজয়দা। ওনার শেষ কয়েকটা কথা হয়ত আমার কাছে অমৃতবানীর সমান। সত্যি ভালোবাসা, এই শব্দটার জন্য আমি কেরানী হয়েই জীবনটা কাটিয়ে দিলাম। চোখ দুটো বুজে ভেবে চলেছি, দেখি আবার ফোন। জানি রমাই ফোনটা করেছে। কিছুতেই মন চাইছিলনা ফোনটা রিসিভ করতে। বারবার মায়ের কথাগুলো মনে পড়ে যাচ্ছিল ‘বিপ্লব বাবা, সোনা আমার, আমাদের কথাও একটু ভাব। তুই একটা নিম্নবিত্ত পরিবারের ছেলে। এভাবে একটা মেয়ের জন্য পাগল হয়ে যাস না বাবা। কত সরকারী চাকরির পরীক্ষা বেরোয়, ওগুলোর জন্য পড়, তুই একটা সরকারী চাকরি পেলে আমাদের অবস্থা ফিরে যাবে, কত কষ্ট করে তোকে আমরা পড়িয়েছি বল তো?’ সেদিন নিজেকে সামলাতে পারিনি কেঁদে মায়ের কোলে মাথা গুঁজে দিয়েছিলাম। ‘মা, আমি রমাকে ছাড়া বাঁচব না মা। ওর বাড়িতে আমাদের বিয়েটা কিছুতেই মেনে নেবেনা। আমাকে একটা চাকরি জোগাড় করতেই হবে মা। নয়ত আমি রমাকে হারিয়ে ফেলব’ মায়ের চোখেও জল ছিল, ‘দেখ যা ভালো বুঝিস, তবে তোর বাবাও মানবে না। তোর জন্য আমরা সবই ছেড়েছি। তোর বাবা, কখনো মানবে না’ না আমার বিয়েটা আমার বাবা মেনে নেয়নি কখনো। প্রথমে এই ব্যাঙ্কের চাকরিটা জোগাড় করা তারপর রমাকে বিয়ে করে একটা ভাড়া বাড়িতে উঠলাম। শ্রেনী বৈষম্যই এই সমাজের সবচেয়ে বড় রোগ। অনেক পরে বুঝেছি, একটা বড়লোকের মেয়েকে বিয়ে করেই জীবনটা নষ্ট করেছি। মায়ের কথা, বাবার কথা, পুরনো বন্ধুদের কথা এগুলো যত মনে পড়ছিল, বুকের মধ্যে একরাশ ঘৃণা জমা হচ্ছিল। ফোনটা বাধ্য হয়েই রিসিভ করলাম। ‘বিপ্লব, আমার কথাটা মন দিয়ে শোন...’ ভালো লাগছিলনা আর রমার ওই ন্যাকা ন্যাকা মিষ্টি মিষ্টি কথাগুলো শুনতে। ওকে মাঝপথেই থামিয়ে দিলাম। ‘রমা, তুমি কি সত্যিই আমায় ভালোবাসো? পারবে আমি যদি তোমায় এক্ষুনি হাওড়া ব্রিজ থেকে ঝাঁপ দিতে বলি, ঝাঁপ দিতে। রমা তোমাকে না পেলে সত্যিই আমি আত্মহত্যা করতাম। রমা তুমি আমায় ঠকিয়েছ। রমা আমার ওই বস্তাপচা আইডিওলজিই ঠিক। শ্রেনী চরিত্রই শেষ কথা। আমার উচিত হয়নি তোমার মত একটা বড়লোকের আদুরে মেয়েকে ভালোবাসা। তোমার জন্য আমি আমার বাবা মার কাছে ছোট হয়ে গেছি’ আমি নিজেও বুঝতে পারিনি যে আমার কণ্ঠস্বর ক্রমশ এতো তীব্রতর হয়ে যাবে। ট্যাক্সিচালক কিছুটা ঘাবড়ে গিয়েই গাড়িটা রাস্তার একপাশে দাঁড় করায়। ফোনের অপর প্রান্ত থেকে তখন রমার ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠার শব্দ ভেসে আসছে। ‘বিশ্বাস কর বিপ্লব, আমি তোমায় ঠকাই নি। আমি তোমায় আজও ভালোবাসি আগের চেয়ে অনেক বেশী ভালোবাসি। আমি প্রতি মুহূর্তে তোমার খেয়াল রাখার চেষ্টা করি’
[+] 1 user Likes Raj1100's post
Like Reply
Do not mention / post any under age /rape content. If found Please use REPORT button.
#42
মাথাটা বনবন করে ঘুরছিল ‘খেয়াল রাখার চেষ্টা কর! এতবড় মিথ্যে কথাটা তুমি বলতে পারলে। কোনোদিন ভেবেছ ওই পুরনো বাড়িটায় আমার বাবা মা একা একা কি করে থাকে? তুমি জানো শেষ দশ বছরে প্রতিদিন আমার মাঝরাতে ঘুম ভেঙে যায়। একবারও বুঝতে পেরেছ, আমি কষ্ট পাই বলে। তোমার মুখে হাঁসি ফোটানোর জন্য আমি কি করিনি রমা! ক্লাউন সেজেছি ব্যাঙ্কে কেরানীর চাকরি করেছি, নিজের আইডিওলজি ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছি, তুমি কি করেছ রমা’ রমার বুজে আসা গলাটা থেকে একটাই শব্দ বেরোল ‘আমি জানি বিপ্লব তুমি আমায় বিশাল ভুল বুঝেছ। কিন্তু আমি তোমায় সত্যি প্রচুর ভালোবাসি বিপ্লব’ আর শালা শুনতে ভালো লাগছিলনা। ‘ভালোবাসা’ এর মানে কি? তাই শালা বুঝলাম না। নিশ্চয়ই ভালোবাসা মানে এই নয় একটা বড়লোকের মেয়ের আজীবন চাকরে পরিনত হয়ে যাওয়া। রমার ওপর আমার দুঃখটা শুধু একটাই জায়গায়। আমি ফোনটা কেটে দিলাম। জানি রমাও প্রচণ্ড অভিমানী ঘুরে ফোনটা আর ও করবেনা। নাহ, এরকম মাগীর মত ফিচফিচ করলে হবেনা। চোখদুটো ভালো করে মুছে ডান দিকে তাকালাম। দেখি ড্রাইভারটি অত্যন্ত গম্ভীর হয়ে সামনের দিকে তাকিয়ে রয়েছে। ‘ভাই তুমি তো দাগী আসামী। হাড়কাটা গলি বা সোনাগাছিতে যাতায়াত আছে নিশ্চয়ই’ আমার এই আকস্মিক কথাটা শুনে ড্রাইভার ভাই তো পুরো পিলে চমকে গেলো। আমি আবার বললাম ‘সেরকম কিছু করেছ কি?’ এবার একটু আমতা আমতা করে ওর জবাব এলো ‘সেরকম মানে? কি বলছেন?’ একটু মুচকি হেঁসে উত্তর দিলাম ‘এই বিডিএসএম মানে দড়ি দিয়ে হাত পা বেঁধে রেন্দি চোঁদা বা ওইধরনের কিছু?’ ‘আরে দাদা, কি যে বলেন। আমরা কি আর হাইফাই মাগী চুদি। আমরা তো পেটো বেশ্যাতেই খুশি থাকি’ বুঝলাম মালটার ওইদিকে একটু আধটু যাতায়াত রয়েছে। টোপটা দিয়েই দিলাম। ‘আপার ক্লাস কল গার্ল কে চুদবে? একদম ফুল বিডিএসএম। টাকা নিয়ে ভাববে না’ বেশ কিছুক্ষন চুপ করে থাকার পর উত্তর এলো ‘হ্যাঁ, দাদা, আপনি যদি পাইয়ে দেন, কেন হাতছাড়া করব’ আমিও জিজ্ঞেস করলাম ‘একটা ফাঁকা ঘর জোগাড় করতে পারবে। আমার আবার একটা শখ রয়েছে। যতই হাইক্লাস মাগী চুদি না কেন ওই হাড়কাটা গলি বা সোনারগাছির ভেতরেই চুদব। ওখানে মজাই আলাদা’ সঙ্গে সঙ্গে উত্তর এলো ‘আরে দাদা, কোন চিন্তা করবেন না। হাড়কাটা গলিতে আমার খাতা চলে। প্রচণ্ড জোরে চিৎকার করে উঠলাম ‘দেখি তোমার ফোনটা। একটা মাগী আছে নাম জুলি। প্রথমে রং নাম্বার বলবে। তারপর নিজেই অন্য একটা নাম্বার থেকে কল করবে। যে রেট ই বলুক না কেন হ্যাঁ বলে দেবে। আর একটা কথা একটু আপার ক্লাসদের মত কথা বল। নাও ডায়াল করে দিয়েছি কথা বলে নাও। আর হ্যাঁ, একটু খেয়াল কর তো গলাটা কি একটু ধরা ধরা লাগছে? নাও কথা বল’ কানটা খাড়া করে পেতে রাখলাম। অনেকক্ষণ রিং হোল কিন্তু কেউ রিসিভ করল না। ‘দাদা, ফোন তো রিসিভ ই করলনা’ ড্রাইভারের দিকে একটু মুচকি হেঁসে বললাম ‘কয়েক মিনিটের মধ্যে একটা আননোন নাম্বার থেকে ফোন আসবে। রিসিভ করবে’ কথাটা শেষ হতে না হতেই অন্য একটা নাম্বার থেকে ফোন এসে গেলো। আমিও সজাগ হয়ে থাকলাম। ‘হ্যালো জুলি?’ ‘একদম কাজের কথায় চলে আসছি। তোমার নাম্বার ইন্টারনেটের একটা সাইট থেকে পেয়েছি। বহুদিনের শখ তোমায়। কি? আরে কথাটা তো বলতে দাও’ আমি কানটা খাড়া করে পেতে রেখেছিলাম। দুখানা আবেগ; আনন্দ ও দুঃখ। আনন্দে বুকটা উথাল পাতাল হয়ে যাচ্ছে এই ভেবে যে আন্দাজে আমার মারা ঢিলটা একদম ঠিক জায়গায় লেগেছে। আর যন্ত্রণা; থাক সে আর কাকে বোঝাবো! হৃদয় ভাঙ্গার যন্ত্রণা তো নিম্ন ও মধ্যবিত্তের রোজকার সম্বল। ড্রাইভার আমার দিকে তাকিয়ে বলল ‘কি নাম্বার দিয়েছেন দাদা, বলল তোমার নাম্বার পুলিশকে দিচ্ছি কয়েক মিনিটের মধ্যে পুলিশই তোমায় ফোন করবে’ আমি আর নিজেকে সামলাতে পারলাম না। প্রচণ্ড জোরে অট্টহাস্য করে উঠলাম। মনে মনে বিড়বিড় করলাম ‘হ্যাঁ, পুলিশ, পুলিশই ফোন করবে’ মুহূর্তের মধ্যে অন্য একটা আননোন নাম্বার থেকে কল এলো। ড্রাইভার ফোনটা রিসিভ করল। এই কণ্ঠস্বরটি চিনতে পারা আমার পক্ষে অত্যন্ত দরকার। কানটা একদম সজাগ করে রইলাম। হ্যাঁ, যা ভেবেছিলাম ঠিক তাই। এই রাশভারী কণ্ঠস্বরটা কি আমি কোনোদিন ভুলতে পারি। ‘ওকে। হ্যাঁ, আমার গাড়ির নাম্বার এক্সক্সক্স। আর আধ ঘণ্টার মধ্যে কলেজ স্ট্রিটে ঢুকে যাচ্ছি। কলেজ স্কয়ারের সামনে অপেক্ষা করব। ওকে নো প্রবলেম’ ফোনটা কেটে ড্রাইভার ভাই আমার দিকে তাকিয়ে বলল ‘দাদা, ২ লাখ বলছে’ আমি শুধুই মুচকি হাসলাম। আরও একটা প্রশ্ন রয়ে গেছে। তাই করেই ফেললাম ‘আচ্ছা, ভাই, জুলির গলাটা কি একটু ধরা ধরা লাগছিল?’ কিছুক্ষন চুপ করে থেকে ও উত্তর দিলো ‘হ্যাঁ, একটু ভারী ভারী লাগছিল’ আমাদের গাড়িটা ক্রমশ কলেজ স্ট্রিটের দিকে এগিয়ে চলেছে। বুকের মধ্যে একরাশ যন্ত্রণা যেমন রয়েছে এই ১০ বছর ধরে চেপে থাকা সমস্ত যন্ত্রণার একটা প্রতিশোধ নেওয়ার আনন্দও রয়েছে। ‘ভাই, আমার কিন্তু কয়েকটা শর্ত আছে। প্রথমত তুমি আরও ২-৩ জনকে জোগাড় কর। আর আন্যাল সেক্স ছাড়া অন্য কোনকিছু হবেনা। উফ জাস্ট ভাবতে পারছিনা। আপার ক্লাস কল গার্লকে আমরা সবাই মিলে পোঁদ মারব। ওর হাত পা দড়ি দিয়ে জানলার গরাদের সাথে বেঁধে রাখবো। সারা ঘর জুড়ে পানের পিকের দাগ। উফ জাস্ট ভাবতে পারছিনা’ ড্রাইভারটা কিছুটা নার্ভাস হয়েই উত্তর দিলো ‘দাদা, কোন প্রবলেম হবেনা তো? যদি...’ হয়ত ও ভাবতে পারেনি আমি এভাবে চেঁচিয়ে উথব। ‘মাদারচোঁদ ওই রেন্দিটার জন্য আমার জীবনটা নষ্ট হয়ে গেছে। ও মরে গেলেও আমার কোন কষ্ট নেই’ ও আর বেশী কথা বাড়াল না। আমাদের গাড়িটা মহানগরের বুক চিড়ে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে শুরু করল। চোখ দুটো বুজে নিলাম। এই কলকাতাতেই আমি জন্মেছি, জীবনে প্রথম প্রেমে পড়েছি। কত হেঁটেছি এই রাস্তায়। দুচোখ মেলে দেখতে থাকলাম আমার স্বপ্ন সুন্দরীকে আর ভেসে এলো এক নিম্নবিত্তের চোখে দেখা কলকাতা শহর। ‘রমা, আর দুটো মাস সময় দিতে পারবে! তুমি তো জানোই আমার অঙ্কটা প্রচণ্ড স্ত্রং। খালি ইংলিশ আর জিকেটা একটু ঘষে মেজে নিতে হবে’ ‘না, বিপ্লব তুমি সত্যি আমায় ভালোবাসো না। আমায় ভালবাসলে এভাবে শুধু নিজের কথাটাই ভাবতে পারতে না। তুমি জানো, আজ এক ডাক্তারের সম্বন্ধ এসেছিল। তুমি কি বোঝ কত কষ্টে আমি ওই সম্বন্ধটা আঁটকে দিয়েছি। আমার বাবা মা দাদারাও তো চায় যে আমি তাড়াতাড়ি সেটেল হয়ে যাই’ ‘রমা, আমার বাবা আমায় প্রচুর কষ্ট করে পড়িয়েছে। তুমি তো জানো আমাদের ওই পানের দোকানটায় সেরম কোন আয় নেই। আমি যদি একটা গরমেনট জব পেয়ে যাই, তাহলে পুরো সংসারটাই দাঁড়িয়ে যাবে’ ‘তুমি কি করে এই কথাগুলো বলছ বিপ্লব। একবারও বুঝতে পারছ না আমার ওপর দিয়ে কি ঝড় বয়ে যাচ্ছে। আর আমি তো তোমায় সারাজীবন প্রাইভেটে জব করে যেতে বলছি না। আগে আমাদের বিয়েটা হয়ে যাক তারপর তুমি চেষ্টা করতে থাকো’ ‘তুমি কি বিপ্লব, এখন আমরা সংসারী। তুমি জানো, একটা ছেলের বিয়ের পর কত দায় দায়িত্ব হয়। তুমি বলছ সরকারী চাকরির চেষ্টা করবে। একবারও তোমার হুঁশ আছে বিপ্লব, ৮০০০ টাকায় সংসারটা কিকরে চলবে?’ ‘দেখো রমা, আজকাল তো মেয়েরাও চাকরি করে। তুমিও যদি প্রাইভেটে একটা চাকরি করতে তাহলে আমিও পড়াশুনা করে একটা গরমেনট জবের জন্য চেষ্টা করতে পারি’ ‘তুমি কি বলছ বিপ্লব! জানো যদি বাবা সত্যি জানতে পারে টাকা রোজগারের জন্য আমি ওই প্রাইভেট এর নোংরা পরিবেশে গেছি, তাহলে সত্যিই হয়ত তোমাকে কখনো জামাই বলে মেনে নেবেনা’ ‘রমা কেন প্রতিটা কথায় তুমি তোমার বাবা, তোমার বাড়ি এগুলো টেনে নিয়ে আসো। তোমার বাবা মুখে সোনার চামচ নিয়ে জন্মেছে আমি নই। জীবনে অনেক কষ্ট করেছি রমা। টিউশন করে কলেজের খরচা তুলেছি। তোমার দাদা তো আমার সাথে পড়ত! ও জীবনে করেছে টা কি? বড়লোকের জানোয়ার ছেলে একটা। খালি ডাইলগবাজী আর দেখনদারী’ ‘বাহ বাহ চমৎকার। এই তো কলেজে শিখেছ। তোমাদের গোটা পৃথিবী সেই ৯০ এর দশকেই ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছে। কেউ তোমাদের আর ধর্তব্যের মধ্যেই রাখেনা। সেই গরীব, বড়লোক বিত্তের কচকচানি। তোমরা কবে বুঝবে বিপ্লব, যুগটা পাল্টাচ্ছে। এখন আর ওই থিওরি মানুষ খাচ্ছেনা। তোমার ক্যারিয়ার তোমার ওই বস্তাপচা তত্বই নষ্ট করেছে আমি নই’ ‘বিপ্লব, তুমি কি মানুষ না পশু! কি হবে রঞ্জনদার কথাটা মেনে নিলে। ও তো বলেছে যে ওই কাজটায় ওর প্রায় ১৫ লাখের প্রফিট তার থেকে ১০ লাখ আমাদের ধার হিসেবে দিয়ে দেবে। কে আগে? আমাদের ছেলে না তোমার ওই বস্তাপচা আইডিওলজি?’ ‘রমা, বাবাইকে আমিও ভালোবাসি, নিজের প্রানের চেয়ে বেশী ভালোবাসি। কিন্তু ওকে বাঁচাতে অন্যকে আমি পথে বসাতে পারবো না। কোনমতেই পারবো না। আদর্শ বলে একটা জিনিষ আজও আমার মধ্যে রয়েছে, সে যতই আমি বড়লোকের মেয়ের চাকর হয়ে যাই না কেন!’ ‘চাকর! বাহ ভালো বলেছ তুমি। এই তোমার ভালোবাসা। বিপ্লব তুমি ভালোবাসার মধ্যেও রাজনীতির রং খুঁজে বেড়াও। নিজের ছেলেকে বাঁচানোর চেয়ে একটা গরীব মানুষকে বাঁচানো তোমার কাছে বেশী দামী হয়ে গেলো। কি পাবে, একটু নাম, লোকের প্রশংসা। আমি কিচ্ছু চাইনা আমি শুধু বাবাইকে দেখতে চাই’ ‘দেখো রমা, আমি তো বাবাইএর বদলে অন্যের ভালো করছিনা, আমি শুধু বাবাইএর ভালোর জন্য অন্যের ক্ষতি করতে চাইনা’ ‘তুমি মানুষ নয়, তুমি জানোয়ার। কেন আমায় ভালোবাসার স্বপ্ন দেখিয়েছিলে। বাবা, ঠিকই বলত ছেঁড়া কাঁথার ভালোবাসা জানলা দিয়ে পালিয়ে যায়। তুমি আমায় ভালোবাসো না বিপ্লব। তুমি বাবাইকেও ভালোবাসো না। তুমি শুধু নিজেকে ভালোবাসো। তুমি শুধু অন্যের মুখ থেকে নিজের ব্যাপারে ভালো ভালো কথা শুনতে চাও’ ‘আর এভাবে একটা মানুষকে শেষ করে দিওনা রমা। আমি জীবনে চুরিও করিনি, ডাকাতিও করিনি। তোমায় ভালোবেসে ফেলেছিলাম। তোমরা বড়লোক, তোমাদের বাড়িতে মানবে না এটা জেনেই তো আমরা ভালবেসেছিলাম। রমা, তোমায় বলিনি এতদিন। আমি কিডনি বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আজকের মধ্যেই জানতে পেরে যাবো কবে যেতে হবে’ ‘বাহ, চমৎকার। আবার সেই চে গুএভারা হওয়ার ইচ্ছে। তোমাদের চে কবেই মরে ভূত হয়ে গেছে। তুমি কিডনিটা বিক্রি করলে আমাদের হবে কি! একবারও ভেবেছ বিপ্লব। বিপ্লব বেরিয়ে আসো তোমার ওই বস্তাপচা তত্ব থেকে। এটা বিপননের দুনিয়া। তোমরা পিছিয়ে পড়েছ বিপ্লব’ ‘রমা একটাবার মুখ ফুটে কথা বল। রমা রোজ অফিস থেকে এসে তোমার দিকে তাকিয়ে থাকি। রোজ ভাবি আজ তুমি ঠিক কথা বলবে। রমা কেন তুমি কথা বলনা। ডাক্তার আমাকে প্রচুর বকে, বারবার করে বলে একবারের জন্যও আমি চেষ্টা করছিনা। রমা বোঝ এইভাবে তুমি একটা মারাত্মক ব্যাধির দিকে চলে যাচ্ছ। তোমার কিছু হয়ে গেলে আমার কি হবে রমা? আমি কি করে বাঁচব? তুমি ছাড়া তো আমার আর কিছুই নেই, কেউ নেই। সবাই দূরে সরিয়ে দিয়েছে। রমা, একটু জিভটা নাড়াও, চেষ্টা কর তুমি ঠিক পারবে’ ‘বিপ্লব তুমি খুনি। তুমি বাবাইকে মেরে ফেলেছ। তোমায় কক্ষনো ক্ষমা করব না বিপ্লব। তুমি সারা জীবন একটা বস্তাপচা তত্ব আঁকড়ে পড়ে থাকলে। একবারও আমাদের কথা ভাবলে না। আমায় একটু বিষ দাও বিপ্লব’ ‘আমায় তুমি এভাবেই শেষ করে দাও রমা, এভাবেই প্রতি মুহূর্তে নিজের চোখে ছোট ছোট হতে হতে আমি মরতে চাই। আমি আমার বাবা, মাকে দেখিনি। তোমার চোখেও কখনো নায়ক হয়ে উঠতে পারিনি। আমি তোমার থেকে এগুলোই শুনতে চাই রমা। কিন্তু রমা, তুমি বল, যা তোমার মনে আসে তাই বল। আজ ৬ মাস পর তুমি কিছু বললে। রমা আর তুমি নীরব হবেনা কোনোদিন। প্রতি মুহূর্তে আমায় দায়ী করে যাও...’ ‘দাদা, কলেজ স্ট্রীট এসে গেছে’ শুনে যেন মনে হোল এক পৃথিবী থেকে অন্য এক পৃথিবীতে এসে নামলাম। গলা দিয়ে কোন কথা বেরোচ্ছে না, ড্রাইভারটা ফ্যালফ্যাল করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। নোনতা বিস্বাদ জলে আমার পুরো মুখ ভিজে যাচ্ছে। শুধু বাঁ হাতটা উঁচু করে অঙ্গভঙ্গি করে বোঝালাম ‘একটু জল, আমি একটু স্বাভাবিক হতে চাই’ ও নীচে নেমে দোকান থেকে একটু জল জোগাড় করতে গেলো। আমার শরীর আর পারছেনা। কোনরকমে মাথাটা সামনের ডেকটার ওপর রেখে দিলাম। চোখদুটো বন্ধ করে পরে থাকলাম। ‘একটা মানুষ জীবন্ত জ্বলে যাচ্ছে। দাউদাউ করে জ্বলছে। আমি জানলার রেলিং ধরে দেখছি। ভয়ঙ্কর একটা আর্তনাদ। ‘বিপ্লব তোমার ছেলে বাঁচবে না, বিপ্লব আমার অভিশাপ রইল তোমার ছেলে কষ্ট পেতে পেতে মরবে। এই টাকাটা আমার ৩ মেয়ের বিয়ের জন্য রেখেছিলাম। ওদের বিয়ে ভেঙে গেছে। বিপ্লব, তুমিও সেই নেতাদেরই মত যারা প্রতিদিন আদর্শকে ;., করে চলেছে। বিপ্লব তুমি যদি সাচ্চা হতে এতো কষ্টেও তুমি নিজেকে বিক্রি করতে না। বিপ্লব তোমার ছেলে মরবে এর চেয়েও বেশী কষ্ট পেয়ে মরবে। তুমি বাবাইকে বাঁচাতে পারবে না বিপ্লব। মিলিয়ে নিয়ো আমার কথাটা’ ‘মেসোমশাই আমার কথাটা শুনুন’ প্রচণ্ড জোরে চিৎকার করে উঠলাম আমি। দেখি ড্রাইভার ভাই হন্তদন্ত করে হাতে একটা জলের মগ নিয়ে আমার দিকে ছুটে আসছে। ‘কি হয়েছে দাদা? শরীর খারাপ লাগছে? নিন চোখে মুখে একটু জল দিন’ ওর দিকে একবার তাকালাম। না ওকে আমি বোঝাতে পারলাম না কেন প্রতি রাতে হথাত আমার ঘুম ভেঙে যায়।
Like Reply
#43
কেন আজ ১০ বছর ধরে স্বাভাবিক একফোঁটা ঘুম আমার জীবন থেকে চলে গেছে। গ্রীষ্মের প্রখর রৌদ্রে আকস্মিক বজ্রপাতের মত করেই আমার মোবাইলটা বেজে উঠল। রমা কামাতুর হয়ে পাগল হয়ে উঠেছে। আমি কিছুতেই রমার থেকে নিজের ঠোঁটদুটোকে মুক্ত করতে পারছিনা। কিন্তু ফোনটা আমায় রিসিভ করতে হবেই। কোনোক্রমে নিজেকে মুক্ত করলাম। রমার দুই চোখে শুধুই হতাশা। রমার কপালে একটা চুমু খেয়ে খাটের দিকে গেলাম। দেখি রবির ফোন। ফোনটা রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে রবির কাঁপা কাঁপা গলাটা ভেসে এলো। “বিপ্লবদা, তুমি আমায় বাঁচাও। আমি মরে যাবো বিপ্লবদা। সত্যি বলছি বিশাল রকম ফেঁসে গেছি” প্রায় এক নিস্বাসে কথাগুলো বলে ফেলল রবি। আমার তো কিছুই মাথায় ঢুকছে না। শুধু এটাই বুঝলাম নতুন এক রহস্য এবং নতুন এক ঝামেলা আসতে চলেছে। রবি আমার অফিসে সবচেয়ে কাছের লোক। নিজেহাতে ওকে আমি কাজ শিখিয়েছি। আমি বললাম “কি হয়েছে রবি, এরকম বলছিস কেন?” সঙ্গে সঙ্গে ভেসে এলো রবির উত্তর; “বিপ্লবদা, আমি থানায় অনেককিছু গোপন করেছি। এখন ভয় লাগছে। বিপ্লবদা, মনে হচ্ছে মনীন্দ্রবাবুর খুনে আমি ফেঁসে যাবো” আমার তো মাথা খারাপ হয়ে গেলো, রবির মত ভালো একটা ছেলে আর হয়না। আমি ওকে বললাম “রবি, কি হয়েছে? আমায় সবকিছু তুই খুলে বল” সঙ্গে সঙ্গে কাঁপা কাঁপা গলায় রবির উত্তর এলো “আমি জানি মনীন্দ্রবাবুকে কে খুন করেছে? আমি এবার কি করব বিপ্লবদা? আমি তো ফেঁসে গেছি” আমার মুখ দিয়ে শুধু একটাই কথা বেরোল “কে খুন করেছে?” “বিপ্লবদা, আমি তোমার সাথে এক্ষুনি দেখা করব, তুমি কোথায় বল। বাইরে কোথাও আসবে কি?” ওর কথা শুনে আমারও এটাই মনে হোল সত্যি এইসময়ে আমার রবির পাশে দাঁড়ানো উচিত। “রবি আমার বাড়িতে তো গেস্ট এসেছে, তুই এক কাজ কর আমার বাড়িতে চলে আয়” আমি জানি ও ঠিক আসবে। “ঠিক আছে দাদা আমি আসছি” ফোনটা কেটে দেওয়ার পর সত্যিই মনটা খুব খারাপ লাগছিল। রবি ছেলেটাকে আমি সত্যি খুব পছন্দ করি। অফিসে সিনিয়ারদের যথেষ্ট সম্মান দেয়, আচার-ব্যবহার ও খুব ভালো। ইস এরকম একটা ছেলেই কিনা মার্ডার কেসে ফেঁসে যাবে। রমাকে সব কথা খুলে বলতে মন গেলো। এতক্ষন খেয়াল করিনি, এখন হথাত ই একটা কথা মাথায় এলো, রমা জানত আমি থানায় গেছি। রমা জানত মনিদা খুন হয়েছেন। অথচ থানা থেকে আসার পর এই ব্যাপারে একটাও প্রশ্ন ও আমায় করেনি। কিছুক্ষন আগের রমার ওই আমার শরীরের প্রতি ঢলে যাওয়ার ঘটনাটা মনে পড়ে গেলো। রমা কি তাহলে সত্যিই ডেসপারেট হয়ে উঠেছে? ওকি শুধুই একটা পুরুষ শরীর চায়। রমা বারান্দায় একটা চেয়ারে বসে ছিল। আমি একটু উঁকি মেরে দেখলাম ও কিসব লেখালিখি করছে। আমার আর ওর কাছে যাওয়ার মন হলনা। হয়ত ১০-১৫ মিনিটের মধ্যেই রবি এসে যাবে।
END
Like Reply
#44
গল্পটা এই ভাবে শেষ হয়েছিল না আগের forum এ
Like Reply
#45
মাথায় কিছুই ঢুকলো না পুলিশের সাথে ওর ওয়াইফ ছিলো তার পর কি হলো? জুলিই বা কে কোথায় আসতে বল্লো ২ লাখ টাকা নিয়ে! ডাইবারে সাথে নিয়ে কোথায় গেলো? কিছুই তোহ মাথায় ডুকলো না এতো রহস্য যে মাথার উপর দিয়া গেছে। কেউ কি সহজ সরল ভাষায় আমারে বুঝাতে পারবেন লাস্ট আপডেটে কি বুঝাতে চেয়েছে?
Like Reply
#46
Please make the story end with clear disclosure to all suspense.
Like Reply
#47
I need further details
Like Reply
#48
ei golpe aro update chilo. ekhane end chilo na. karur kache purota thakle post korun. darun golpo eta. xossip er best thriller er ekta
Like Reply
#49
(03-02-2020, 11:51 PM)cuckold_husband Wrote: ei golpe aro update chilo. ekhane end chilo na. karur kache purota thakle post korun. darun golpo eta. xossip er best thriller er ekta

er theka beshi nai amir kache .
Like Reply
#50
(04-02-2020, 10:34 PM)Raj1100 Wrote: er theka beshi nai amir kache .

accha no prob
Like Reply
#51
kichui bujlam na !
gossip google photo adda ( Bengali boudi didi by sbsb )
https://photos.app.goo.gl/uH4u9D6hARcQFiP79

[+] 1 user Likes 212121's post
Like Reply
#52
আরো অনেক লম্বা ছিল আর শেষ হয়েছিল এই গল্প , আমি পড়েছিলাম বলেই জানি।

তবে এখন আর কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না , দুর্ভাগ্য আমাদের।

Like Reply




Users browsing this thread: 1 Guest(s)