Poll: এই গল্প কি চলবে
You do not have permission to vote in this poll.
হ্যা ?
100.00%
4 100.00%
না ?
0%
0 0%
Total 4 vote(s) 100%
* You voted for this item. [Show Results]

Thread Rating:
  • 2 Vote(s) - 3 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
গল্প-তুইতেই আমি (নতুন রানিং)
#1
Heart 
?তুইতেই আমি?
লেখিকাঃইসরাত আয়রা ইচ্ছে
পর্বঃ১

??

নানু বাড়ি থেকে বাসায় ফিরলাম মাত্র।আমার চোখ জোড়া এদিক ওদিক কিছু খুজছে। এটা আমার অভ্যাস বলা চলে।
ফ্রেশ হবার প্রয়োজন অনুভব করলাম কারণ শরীরটা অনেক টাই ক্লান্ত। হঠাৎ করেই ঝড়ের বেগে কেউ একজন এসে জড়িয়ে ধরল।খুবই চেনা স্পর্শ। আবেশে আমার চোখজোড়া বুঝে এলো। এত জোড়ে জড়িয়ে ধরেছে যে আমার ঘোর কাটতেই  হাসফাস লাগছিলো।

--আহান কি করছেন ছাড়ুন।আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে তো।

তার ঘোরটা কাটে নি হয়তো। কাধে গাড়ো নিশ্বাস এর   আভাস পাচ্ছি।তাই আর বাধা দিলাম না।থাকুক না এভাবে ক্ষতি কি?
কতোটা সময় এভাবে কেটে গেলো  বলাটা দায়।

-- ইচ্ছে কই তুই আসছিস না যে ফ্রেস কি হলি? আর কতো ক্ষন? তোর আব্বু অপেক্ষা করছে তো।

আম্মুনি আমার রুমে ঢুকতে ঢুকতেই কথাটা বলছিল।আহানের তখনও কোনো হেলদোল নেই।ছেলেটা ঘুমিয়ে গেলো না তো??ভাবতেই হাসি পেল,,,,,,,,মনে হচ্ছে যেন এতদিন পরে সস্তির নিশ্বাস ফেলছে।তাকে ছেড়ে কি বেশিদিন দূরে রইলাম? কিন্তু আমি দূরে থাকলে কি তার আদোও কিছু এসে যায়?

আম্মু তাকে আমাকে এভাবে দেখতে অভ্যস্ত তাই কিছু মনে করলেন না।ছোট্টোবেলা থেকে এভাবেই করে আসছে সে।আর সে আমার থেকে হাতে গুনা 2 বছরের ছোট।।কারণ কাকতালীয় ভাবে তার আর আমার জন্মদিন একদিনেই।। তারসাথেই বড় হয়ে ওঠা । তাকে আপনি বলার পিছনে তার অদ্ভুত অবদান রয়েছে।।।

আচ্ছা আম্মুকি জানে তার জড়িয়ে ধরার ধরনটা এখন আর ছোটো বেলার মতো নেই?সেটা আমি বুঝি। সে নিজেই হয়তো বুঝে না মন যা চায় সে তাই করে ক্যনো করে নিজেই জানে না।কবে জানবে সে?

এইবার একটু জোরেই ডাকলাম। নিজে থেকে ছাড়ানোর চেষ্টায় লেগে গেলাম এবং ফাইনাললি আমি সফল

--হ্যা রে আহান। তোর টুকিকে ছাড়া তুই কি দুইটা দিন ও থাকতে পারিস না? ওর বিয়ে হলে কি করবি কিভাবে থাকবি হুম?

আহান হয়তো চোখটা মুছল।আম্মুনির দিকে তাকিয়ে

--ভালো মা মোটেই 2 দিন না।হাতে গোনা ২০ দিন ৬ ঘন্টা  মিনিট মনে নেই ছাড়। কিভাবে পারলে বলবে?আমায় নিতে চাও না তাই এমন টা করেছো নইলে আমার এক্সাম এর মধ্যেই কেন? হোয়াই ভালো মা?

-- দ্যাখ আমার বাবা টার রাগ হয়েছে। বাবা তুই তো সমস্যাটা জানিস বল বাবা।তোর ভালো নানু কতোটা অসুস্থ হয়ে  গেছিল।আর ইচ্ছেরও এক্সাম শেষ হয়ে গেছিল এতো  অভিমান করে না সোনা।

--হ্যা আর অভিমান। আমার অভিমান এর মূল্য দেয় নাকি কেউ।চাইলে টুকিকে আমাদের বাসায় রেখে জেতে পারতে

-- কিন্তু তোর নানু যে অকেই দেখতে চাইল বাবা

-- অজুহাত দেখাবে না ভালো মা। আমি যাই। আর হ্যা তোমার মেয়ের জন্য ঘর জামাই আনবো বুঝলে।ওকে ঘরের বাইরে পাঠাবো না। যতদিন এমন ঘর জামাই হওয়া ছেলে না পাই ততোদিন ওর বিয়ে হবে না।গেলাম

-- হাহাহায়া আচ্ছা কিন্তু আমাদের সাথে খেয়ে তো যা।

না যাই যাই বলতে বলতে চলে যাওয়া থাকা ছেলেটার দিকে তাকিয়ে আছি আমি অপলক দৃষ্টিতে। কি সুন্দর দেখতে আচ্ছা ছেলেদের কি এতো সুন্দর হওয়া উচিত?বিশেষ করে চোখে কি এত মায়া থাকা উচিত? আর ঠোঁট জোড়া....... মনে হচ্ছে আবার ভাষা হারিয়ে ফেলছি।।।। প্রায়ই প্রশ্ন করি  উত্তর কই পাই  আবার তাকে দেখেই হারাই।  

সে ও কি হারায়? হারায় না আমি জানি হারায় না।। হারালে বুঝি আমার সাথে ওমন রুক্ষ বিহ্যাভ আর সুক্ষ্মরাগ দেখাতেন?আর তাহলে বিয়ে দিতে কেন চাইবে আমায়। অন্য মেয়েদের সাথে ক্যানো ঘুরবে। আহান আপনার শেষ কথায় আমারও খুব অভিমান লেগেছে খুব।আর হ্যা যাবার  আগে একবার কি তাকানো যেতো না?মহাভারত কি খুব বেশি অশুদ্ধ হতো? হতো না হয় একটু,,,,,কি এমন ক্ষতি হতো?  নাহ তার মনে কিচ্ছু নেই কিচ্ছু না  কিচ্ছু না।আমাকে সে একদমই দেখতে চায় না।

তাহলে তার জড়িয়ে ধরা টা কেন অন্যরকম লাগে আমার?তার বুকের কম্পন বার বার আমায় কেন তাকে নিয়ে ভাবতে বাধ্য করে?আমি চাইনি তো ভাবতে,,,,,আমি জানি তো আমার ভাবা ভুল,,,,

আচ্ছা মানলাম কিছুই নেই তার ভিতর কিন্তু আমার যে মনে  হলো সে কেদেছে।

খুব কেদেছে? যাবার আগে যেমন দেখে গেছি তেমন তো সে নেই। খুব উষ্ক লাগল যে।
পরীক্ষায় কি খুব প্রেসার যাচ্ছে?? হবে হয়তো।  

ভাবতে ভাবতেই ওয়াসরুম ঢুকে  গেলাম। আম্মুনি কখন যে গেল টের পেলাম না। ভাবনায় এতই বিভোর
ছিলাম? তার ভাবনায়?


আমিও বা তাকে নিয়ে কেন ভাবছি ভাববো না আমি। আচ্ছা তার অভিমান টা কার উপর? আম্মুনির নাকি আমার?

লং সাওয়ার নিয়ে বেড়োলাম।গুন গুন করে গান গাইতে খেতে যাচ্ছি।

আমারও পরানও যাহা চায়,,,,,

আচ্ছা কি চায়?

??

যেতে  যেতে পরিচিত হই।আমি ইসরাত আয়রা ইচ্ছে অনার্স ফার্স্ট ইয়ারে  পড়ি।আর আমার পিচ্চি আপনি টা হলো আয়মান ইসলাম আহান।সে এইচএসসি দিচ্ছে।আমাদের সম্পর্ক টা হলো আমরা রিলেটিভ না কেউ কারো। কিন্তু কথায় আছে রক্তের সম্পর্কের চেয়ে আত্মার সম্পর্ক টা গভীর  হয়।

অতীতে যাওয়া যাক,,,,,,

আমার আম্মুনি আর ভালো মা ছোটো বেলার বেস্ট ফ্রেন্ড। একজন কাদলে অন্যজন কাদবে একজন হাসলে অন্যজন হাসবে। আমার মনে হয় একজন কাশলে অন্যজন কাশত একজনের বাথরুম পেলে অন্য জনের পেত। যাক বাবা সে এক অটুট  বন্ধন যা বলার ভাষা রাখে না।ইভেন আমার আম্মুনি প্রেম শুরু করেছিলো বিধায় ভালো মা ও প্রেম করেছিলেন ভালো বাবার সাথে।

আমার নানা ভাই মারা যাওয়ায় আম্মুনির ফ্যামিলি চালানোর কেউ ছিল না। আম্মুনিরা দুই বোন খালামনি আম্মুনির থেকে ছোট আর আম্মুনি ইন্টার দিয়েছে সবে মাত্র।আম্মুনির কাকারা তার বিয়ের জন্য খুব প্রেসার দিতে ছিল আর নানুও কিছু বলতে পারছিলেন না তাদের মুখের উপর।

আব্বুর তখন সবে মাত্র জব হয়েছে।ভালো জব হলেও ফ্যামিলি ছিলো আব্বুর উপর নির্ভরশীল।আব্বু তাই  বিয়ে টা দেরিতেই করতে চেয়েছিলো। কিন্তু আম্মুনির এমন অবস্থায় তৎক্ষনাৎ বাসায় বিয়ের প্রস্তাব দিলেন এবং ফলস্বরূপ বিয়ে।কাকাদের আপত্তি ছিলো  না কাধ থেকে বোঝা নেমেছিলো তাদের বলতে গেলে। খালামনির ভরনপোষণও আব্বু করত তার নিজ দায়িত্ব থেকে।।

এত কিছুর পরে ভালো মার কান্না শুরু হলো  ভালো বাবার সাথে তারও এখনই বিয়ে করা চাই ই চাই।তার বান্ধবীর বিয়ে হলো সে কি বসে থাকবে নাকি?
ভালো বাবারা ফ্যামিলিগতো দিক দিয়ে সচ্ছল ছিলেন কিন্তু তখন তার চাকরি হয় নি লেখাপড়াই   শেষ  হয় নি। ভালো মায়ের আহাজারিতে সে লেখাপড়ার পাশাপাশি তার বাবার বিজনেস সামলানো শুরু করল আর তার বাবা তাতে খুশি হয়ে ভালো মার সাথে বিয়ে দিতে রাজি হলেন আর ভালো বাবার ফ্যামিলি ভালো হবার কারণএ ভালো মায়ের ফ্যামিলি থেকে বিয়েতে আপত্তি করলেন না।

দুই বান্ধবীর ইচ্ছে ছিলো তাদের ছেলে মেয়েদের বিয়ে দিবে।প্লান মাফিক   সব কিছুই ঠিক ছিলো কিন্তু হঠাৎ একদিন ভালোমায়ের মিসক্যারেজ হবার কারণ এ বাচ্চাটা নষ্ট হয়ে যায়। তবুও আশা ছিল আমি যেন ছেলে হই অনেক আল্লাহর কাছে চাইল কিন্তু আল্লাহর হুকুম  আমি সদ্য বালিকা। আমার দুই বছর পরে একই দিনে আহান এর জন্ম। আমাদের নিয়ে তাদের আফসোস এর শেষ নেই।।এই গল্প যে কতবার শুনেছি তার ইয়াত্তা নেই। কিন্তু তাদের সপ্ন  ছিল আমার যদি আর একটা বোন হয় ওকে আহান এর বউ করবে। কিন্তু সেই আশায় জল ঢেলে আমার একটা ভাই হলো।

আর শেষ বার আল্লাহ মুখ তুলে তাকালো কারণ আহান এর একটা বোন হলো।। সেই খুশিতে  নাকি টানা ৫ দিন  গরীব লোকদের খাওয়ানো হয়েছিলো।

ওদের ই কি সুখ  বিয়ের আগেই জানবে বর কে। অবশ্য ওদের এখন ও  কেউ জানায় নি। ভাই এবার নাইন এ উঠল আর পিচ্চু এইটএ এবার। ভাইয়ের নাম আয়ান আর পিচ্চুর নাম ইশাল।

আয়ান ইশাল এই দুইজনের মধ্যে  ভাব বরাবরি বেশি।তা দেখে আম্মু ভালো মায়ের খুশি চোখে জল নাকে সর্দি।

তাও ভালো আহান এর মতো এতো ঝগড়াটে না ওরা কেউ।

আম্মু ভালো মা এর চিল্লাপাল্লাতে আব্বু ভালোবাবা এক জায়গায় জমি কিনে ঘর বানালো পাশাপাশি এবং এক ডিজাইন সব কিছুতে। ঘর দুইটা পালটানো যাবে বলা চলে। মাঝে মাঝে আব্বু আর ভালো বাবার কষ্টের গল্প শুনি।আসলেই কি মেয়েরা জামাইদের এত প্যারা দেয়? আমিও কি দেব?আমার জামাই-ও কি আব্বু ভালোবাবার মতো ভালো হবে?

আমার আর আহানের রুম দুইটা একদম সোজাসোজি। চাইলেই  তাকে দেখা যায় কিন্তু বদের হাড্ডি জানালা অফ করে রাখে সবসময়। কিন্তু আমি অফ করলে তুলকালাম। ঝড় যায় এক বিশাল ঝড়।

??

খাবার টেবিলে   বসলাম। তখনই  আব্বু জিজ্ঞেস করল,,,,,

চলবে,

 
[+] 1 user Likes Raj Bai 23's post
Like Reply
Do not mention / post any under age /rape content. If found Please use REPORT button.
#2
পর্বঃ২

???

খাবার টেবিলে বসলাম। তখনই আব্বু জিজ্ঞেস করল 
---মামুনি আহান এর এক্সাম গুলো কেমন হচ্ছে রে? ব্যস্ততায় খোজ খবরই নেয়া হলো না ছেলেটার।ওর এক্সাম অবশ্য খারাপ হবে না। তবুও খবর তো নিতে হয় জানিস তো ছেলেটা কতো অভিমানী। এখনও বাচ্চাই রয়ে গেছে।। (কথাগুলো বলে আব্বু হাসল খানিকটা) 

---না আব্বু তার এক্সাম এর খবর আমি জানি না।

(জানব কি করে একবারও কি ফোনটা তুলেছে আমার???যতবার ফোন দিয়েছি কেটে দিয়েছে। মেসেজ করলে ব্লক করে রেখেছে এইভাবে প্রত্যেকটা দিন এভয়েড করেই গেছে।মাঝে মধ্যে তার সুন্দরী বান্ধবী দের নিয়ে ছবি আমাকে পাঠিয়েছে। এই ২০ দিনে কিছু পিকচার আর একটাই বাক্য =তোকে খুব জালাবো আমি খুব যেমনটা আমায় জালাচ্ছিস। কিন্তু আমার মাথায়ই আসে না তাকে আমি কিভাবে জালাচ্ছি।এভাবে ১৫দিন চলার পরে আমি একদমই দমে গেছিলাম। কল মেসেজ দেয়া কমিয়ে দিলাম। হাতে গুনে গুনে দিনে ১০ বার কল আর ৩০ টা মেসেজ দিতাম।কিন্তু নো রিপ্লাই ২/৩ দিন পর পর নাইকাদের ছবি) 

---একটু খবর তো নিতে পারতি মামুনি। ছেলেটা তোর সব দিকের খেয়াল রাখে তুই এইটুকুন রাখতেই পারিস।
 
-- আম সরি আব্বু আমার ভুল হয়ে গেছে আমি আজই জিজ্ঞেস করে তোমাকে জানাবো কেমন?

তখনি আম্মু বলে উঠল 

--ক্লান্ত থাকলে তোমার যাওয়ার দরকার নেই। আমি আর তোমার আব্বু এখনই যাব। কতদিন হলো শিরিনকে দেখি না।

--আচ্ছা তুমি যাও আমি কেন?আই নিড রেস্ট। তোমার মতো স্ট্রং নেই আমার শরীর।আমার বয়স হয়েছে।

-- কতো আর হয়েছে ৫০ ই তো।এতেই বুড়ো হয়ে গেছ নাকি বুঝি না।আমার সালমান খান শারুখ খান এর বয়স জানো? ওরা এখনও কচি কচি নাইকার সাথে ১৮ বছর বয়সি যুবক দের মতো রোম্যান্স করে আর তুমি কিনা দুই ঠ্যাং ফেলে পাশের বাসায় যেতে পারবে না?

--আম্মু আব্বুর হয়তো সত্যি খারাপ লাগছে জোর কেন করছ? আর তুমি তো ভালো মায়ের সাথে গল্প করবে আব্বু কি করবে ওখানে গিয়ে ভালো বাবাও হয়তো অফিসে। ছেড়ে দাও আম্মু।

-- আচ্ছা আমি গেলাম।ময়নাকে বল সব গুছিয়ে রাখতে 

আসলে আম্মু যা ই করুক আর বলুক আব্বুকে ছাড়া সে চলতে পারে না দু কদমও।

???

বেলকুনির দোলনাটায় বসলাম।মেঘলা আকাশ, হালকা বাতাস তার তালে তালে গাছপালার দোল,নিশ্চুপ নিরিবিলি পরিবেশ মন ভালো হতে, শরীরকে সতেজ করতে আর কি চাই।
কিছু একটা ভাবতেই মনে আবার বিষাদ ছেয়ে গেলো। মনের অজান্তেই গুংগুনিয়ে গান ধরলাম 

?আমার হিয়ার মাঝে লুকিয়ে ছিলে 
        দেখতে আমি পাই নি তোমায় 

এইটুক গাইলাম এরমধ্যেই 

--কে তোর হিয়ার মাঝে রে তোর হিয়া আছে নাকি? কই দেখি তো

হ্যা এটা আহান। পাশে আর একটা মেয়েও আছে। চিনি আমি মেয়েটাকে নিশুতি নাম।আহানের ফ্রেন্ড গার্লফ্রেন্ড সবটাই বলা চলে। আমাদের বাসা থেকে ১৫ মিনিট দূরে নিশুতির বাসা।

--দেখবেন কি? আমি তো যাস্ট গান গাইতে ছিলাম।  

-- নাহ গান শুধু গলা দিয়ে গাইছিলি না তুই ভিতর থেকেই গাইছিস।কেউ মনে আছে নাকি তোর?

--থাকলে আপনি জানতেন না? কেউ নেই আমার মনে

-- আচ্ছা তোর গান গাইতে হবে না। কানে কাকের আওয়াজ এর মতো বাজে।এই যে দ্যাখ আমি নিশুতি পড়ছিলাম। আর তুই এমন ক্যা ক্যা শুরু করলি যে উঠে আসতে হলো বেলকুনিতে শুধু তোকে থামানোর জন্য 

---সরি আহান।আমি বুঝতে পারি নি আপনার পড়ায় সমস্যা হবে বুঝলে আমি গাইতাম না।আর হ্যা আপনার এক্সাম গুলো কেমন হচ্ছে?

--ভালোই সুপার। তুই ছিলি না তাই আর আমার এক্সাম ভালো না হয়ে পারে?

--হ্যা হয়তো। 

আহান বেলকুনির র‍্যালিং এর খুব কাছে এসে খপাত করে চুল টেনে ধরল।চোখএর ইশারায় নিশুতিকে যেতে বলল। আমার চুল লম্বা হওয়ায় আর দুই বেলকুনির দুরত্ব কম হওয়ায় চুল টেনে নিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়ালো।আমি ব্যাথা পেয়ে দাঁড়িয়ে গেলাম। আর সে চুল আঙুলে পেচাতে পেচাতে পিছনের দিকে যাচ্ছিলো এক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে 

-- আহান আমার লাগছে খুব লাগছে

( বলতেই চুল ছেড়ে দিল)

ব্যাথায় চোখে পানি চলে এলো দৌড়ে রুম এ এলাম ।খাটে বসলাম। আমি আহানকে আমার চোখের পানি দেখাতে চাই না।

--কিরে দৌড়ে এলি যে চোখ এর জল লুকাতে? আমি তর কান্না দেখার জন্য এত কিছু করলাম আর তুই

-- আপনি বেলকুনি টপকে আবার এসেছেন পরে যান যদি?

--তা নিয়ে তোর ভাবতে হবে না।আজ নতুন আসছি না আমি।

কথাটা বলতে বলতে আমার চোখেরজলের ফোঁটা টা আঙুল দিয়ে ধরল।কিছুক্ষণ তাকিয়ে মুখে নিলো। 

--হ্যা রে তোর চোখের পানি এত তিতা কেন?
 
থমকে গেলাম ওর কাজ দেখে কান্না ভুলে গেলাম তার উপর এমন কথা।

--আমি জানতাম চোখের পানি নোনা হয়।

-- হ্যা আমিও জানতাম কিন্তু তোর চোখ এর পানি খেয়ে ধারণা পালটাতে বাধ্য আমি।ওই তুই নিম বা এলোভেরা খাও নাকি?

-- কই না তো

-- আচ্ছা বলতে বলতে আমার মাথাটা ওর বুকে নিয়ে নিলো পরম আবেশে।

মনে হয় যেন আমি ছোট আর সে বড়। তার বাধনটা শক্ত হচ্ছিলো ক্রমশ।।আমিও বাধা দিলাম না কারণ আমার অস্থির বুকের পাথর গলছিল যেন।

--ইচ্ছে ভালো বাবা কোথায়। ঘুমিয়েছে?

--হহুম

--ভালো মা তো আমাদের বাসায় দুই তিন ঘন্টায় বাসায় যাবে না তাই না?

-- হুম।

--তুই কি করবি এখন?

--আপনি গেলে ঘুমাবো।জার্নি করেছিতো। টায়ার্ড লাগছে।

-- আচ্ছা ঘুমিয়ে পর। 

--আপনি যাবেন না?

-- কেন আমি আছি বলে তোর ভালো লাগছেনা তাই না?

বলেই আমায় ছেড়ে উঠে গেলো । আমি টলমল চোখে তাকিয়ে আছি যার অর্থ আমি এখনই যেতে বলি নি।এভাবে আমি কিছুক্ষণ থাকতে চাই।

কি ভেবে পিছনে দিকে তাকালো।আমার চোখ এর দিকে তাকিয়ে আবার এসে আমার পাশে বসল মাথাটা বুকে নিলো হাত দিয়ে চোখ মুছে দিলেন। 

--ঘুমিয়ে পর

--এভাবে?

কথাটা বলার সাথে সাথে আমায় বুকে নিয়ে শুয়ে পরল। আমি অবাক হলাম এমন করে নি কখনও ।কিন্তু কিছু বল্লাম না।আমার শরীর কেপে উঠছিল।

-- উশখুশ কেন করছিস ইচ্ছে?

--না মানে আমার আনইজি লাগছে

কিছু না বলে তার শরীর এর উপর থেকে আমাকে নামিয়ে তার হাতের উপর সোয়ালো।
তার দিকে এক নাগারে তাকিয়ে আছি। আর সে আমার দিকে ভ্রু নাচিয়ে জিজ্ঞেস করল কি?

আমি মাথা নেড়ে বললাম কিছু না।মনের বিষাদ টা সরে গেছে কেমন সুখ সুখ লাগছে সব কিছু

--আপনাকে উষ্কখুষ্ক লাগছে আহান

--তোকেও

কিছুক্ষণ থেমে বলল

-- তুই অনেক দিন দূরে ছিলি টুকি অনেক দিন 

আমার কিছুই বলার নেই আসলেই তাকে ছেড়ে দুইটা দিন দূরে থাকা হয় নি।বেড়াতে গেলে তাকে নিয়ে যেতাম বা তার সাথে আমি যেতাম। 

হটাৎ আমার গলায় মুখ ডুবালো,,,,,,,,,,,,,

চলবে,
[+] 1 user Likes Raj Bai 23's post
Like Reply
#3
পর্ব:৩

???

আমার কিছুই বলার নেই আসলেই তাকে ছেড়ে দুইটা দিন দূরে থাকা হয় নি।বেড়াতে গেলে তাকে নিয়ে যেতাম বা তার সাথে আমি যেতাম। 

হটাৎ আমার গলায় মুখ ডুবালো,,,,,,,,,,,,,

ঘটনার আকস্মিকতায় আমি নিস্তব্দ।আচ্ছা ছেলেরা কাছে আসলে তো মেয়েদের অস্বস্তি হয় যাকে বলে পরপুরুষ এর ছোয়া মেয়েরা মেনে নিতে পারে না কিন্তু আমার ভালো লাগছে কেন এত? তাহলে সে কি আমার আপন কেউ? তাকে কি আমার মন নিজের অজান্তেই এত আপন করে নিল? আমার তো তাকে ভালো লাগে অসম্ভব ধরনের ভালো লাগে কিন্তু শুধু ভালোলাগার মানুষ কাছে এলে তো তাকে মেনে নেওয়া যায় না তাহলে কি ভালোবা,,,,,,,

না না তা কিভাবে তার মুখে সারাদিন অন্য মেয়েদের নাম থাকে সে হয়তো কাউকে ভালোবাসে।আর তার যা মনে আসে সে তাই করে এই ব্যাপারটা সিরিয়াস নেয়া মানেই বোকা সাজা।

কিন্তু সে এত অস্থির কেন? কিসের এই অস্থিরতা? 

--আহান আপনি উঠুন।কি হয়েছে আমাকে খুলে বলুন।আমি এভাবে থাকতে পারছি না আহান 
 
--(নো রিপ্লাই)

-- আহান আমার সুরসুরি লাগছে আহান।।আপনি কি ঘুমিয়ে গেলেন আহান?

--একটাও কথা বলবি না টুকি।এতক্ষণ পেরেছিস। আরও পারবি।তোর সুরসুরি কতটা তা আমাকে জানাতে আসিস না।আমাকে এভাবে থাকতে দে। আর নয়তো এতক্ষণ যা ভাবছিলি তাই ভাব।।ভাবার মধ্যে থাকলে কিছু টের পাওয়া যায় না। 

--হুহ।কিন্তু আহান আপনার না কাল এক্সাম? 

-- আমি এভাবে কিছুক্ষণ থাকতে চাইইইইইইইইই

এবার ভয় পেয়ে গেলাম আর কিছু বলার আর সাহস আমার নেই।আল্লাহর কাছে একটাই কথা বলসি আল্লাহ আমাকে ধৈর্য দাও।এভাবে সে কখনও করে না কখনও না

হঠাৎ মনে হলো গলায় একটা চুমু দিয়েছে

আমি আহান বলে চিল্লাতে আ অক্ষর টা উচ্চারণ করেছি তার আগেই আমার গলা থেকে মুখ উঠিয়ে মুখে আঙুল দিয়ে 

--হুসসসসসস একটা আওয়াজও করবি না তুই,,,, গলা টিপে দেব একেবারে 

আমি শুধু ফেলফেলিয়ে তাকিয়ে আছি। কি হচ্ছে এসব?আমার সাথেই কেন? আহান ই বা কেন?এই ছেলেটাকে আমি কোলেও নিয়েছি। নিজে হাটতে পারতাম না ঠিক মতো তাও আমি তাকে কোলে নিয়ে হেটেছি।আমার কোল থেকে পরে গিয়ে তার মাথাও ফেটেছে। ছোটোবেলার একটা সৃতি আজও খুব হাসায় আমায়।যখন আহান কে হসপিটাল থেকে বাসায় আনা হলো 

--ভায়ো(ভালো) মা ইতা তি তুলাম(তোমার) বাবু?

--হ্যা মা এটা আমাল বাবু। 

--এতাতে(এটাকে) আমাল কুলে দিবে?

-- হ্যা মা

--আচ্ছা ভায়ো মা এটা কি আমাল বল হবে?

--বর?

--হ্যা হ্যা(মাথা ঝাকিয়ে)

--মা বর দের তো বড় হতে হয় কিন্তু এই বাবু টা তো তোমার থেকে ছোট?

--না এটা আমালই বল হবে। নইলে আমি লাগ কলব

-- আচ্ছা মা এটা তোমারই বর

--ইয়ে তি মদা(মজা)

আহান এর কামড়ে হুস ফিরলো।

-- তুই আমার মাথায় হাত বুলাচ্ছিস কেন রে?

আমি কিছু বলতে পারলাম না কখন এ কাজ করেছি আমি জানি না।মাথা টাই গেছে আমার।

কি বলব মাথায় আওরাচ্ছি

--আসলে কি হয়েছে আহান আপনি আমার ছোট ভাইয়ের মতো তো তাই ছোট ভাইকে,,,,,,,,,

আমি আর কিছু বলতে পারলাম না ওর চোখ দুটো লাল হয়ে গেছে দেখে আমার আত্মা কেপে উঠেছে

--ঘুমা তুই। তোর উপর দিয়ে ধকল গিয়েছে অনেক। গেলাম আমি

--হুম

উঠে গিয়েও আবার ফিরে এলেন।

--আচ্ছা আমি মাথায় বিলি কেটে দি? ঘুমা

--হুম

আহাম্মক এর মতো তাকিয়ে হুম হুম করে যাচ্ছি এ কাকে দেখছি আমি? ২০দিন দূরে রইলাম তার মধ্যে এত চেঞ্জ।ভাবতে ভাবতেই ঘুমিয়ে গেলাম।

???

ঘুম থেকে উঠে দেখি ঘড়ির কাটা রাত ১১ টা ছুই ছুই। 

--আল্লাহ এতক্ষন ঘুমালাম আমি।আম্মু আয়ান কি একটু ডাকেও নি আমায়

-- ডেকেছে কিন্তু তুই উঠিস নি

হঠাৎ আহান এর গলা পেয়ে চমকে গেলাম।আহা সে আমার টেবিলে বসে মন দিয়ে পড়াশুনা করছে।

--অহ হবে হয়তো। সবাই কি ঘুম আহান? আর আপনি এখানে যে,,,,

-- আমি এখানে তাতে তোর কোনো প্রবলেম হচ্ছে? 

--না আপনি থাকলে আমার প্রবলেম হবে কেন? আমি ফ্রেস হয়ে আসছি

???

ফ্রেস হয়ে এসে দেখলাম আহান আমার ফোন ঘাটছে এখন কিছু বলা মানে ৩য় বিশ্বযুদ্ধ যেয়েচেয়ে ডেকে আনা।তাই শান্ত ভাবেই বল্লাম

-- আহান খেয়েছেন আপনি?আমি ক্ষিদে পেয়েছে খাব

--(আমার দিকে তীক্ষ্ম এক দৃষ্টি) খেয়েছি খেয়ে নে তুই 

সোজা রুম থেকে বের হয়ে খাবার রুম এ গিয়ে খাবার নিয়ে উপরে চলে এলাম।কেন যেন মনে হলো খায় নি সে। তাই এই কাজ

এসেই আহান এর সামনে বসে ভাত মেখে মুখে ধরলাম কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে লোকমাটা মুখে নিলো।

??? 

দুইজন এর খাওয়া শেষ করে রুমে এসে বসলাম।আজকে যা করল তাই নিয়ে ইকটু ভয় করছে মনে। কিন্তু মানুষটা আহান তাই আবার এক দীর্ঘশ্বাস টেনে বিশ্বাস আস্থা বুকে নিয়ে নিলাম

--টুকি এদিকে আয় । এই জিনিসটা আমার বেজে যাচ্ছে বার বার

আমার কেমিস্ট্রি নিয়ে অনার্স পড়ার কারণে বিষয় টা বুঝিয়ে দিতে পারলাম।তার মানে এই কারণে এত রাতে এখানে তার আসা।

হঠাৎ উঠে দাঁড়াল।

-- চলে যাবেন আহান?

--না বেলকুনিতে আছি । কফি নিয়ে আসতে পারবি?

--হ্যা হ্যা। আপনি দোলনায় বসুন আমি আসছি ১০ মিনিট 

???

রাতের বেলা বেলকুনিতে লাল নীল সবুজ ড্রিমলাইট গুলো জ্বললে অদ্ভুত সুন্দর দেখায়। যেটা ভাষায় প্রকাশ করা দায়। বেল্কুনির চারপাশ ছোট ছোট গাছপালা টব ভর্তি ফুল গাছ। গার্ডেনিং আমার অনেক গুলো শখ এর মধ্যে অন্যতম।  

আহানের পাশে বসলাম 

--আহান কফি

আহান হান বাড়িয়ে নিলেন কিছু বললেন না।।একচুমুক দিয়ে বললেন

--১৫ দিন ধরে কেন যেন কফি টার স্বাদের মতো জীবন টা লাগছে (গম্ভীর ভাবে সামনের দিকে তাকিয়েই বললেন কথা টা)

আমি তার দিকে তাকানো তখন।মনে মনে ভাবছি কেমন কফি বানালাম যে তার জীবন কফির স্বাদের মতো লাগছে??এত গম্ভীর হয় না তো সে এত সহজে। ভাবতে ভাবতেই মুখে দিলাম কফিটা 

--ওয়াক ছি। কফিটা এত তিতে তিতে লাগছে।সরি আহান । আমি আবার বানিয়ে আনছি। আমি আসলে চেক করতে ভুলে গেছিলাম

বলেই আহান এর হাতের কফিটা নিতে গেলাম।আহান নিতে দিলেন না

--আমি খেতে পারছি ইচ্ছে

--তবুও 

--পারছি তো খেতে 

 হঠাৎ মাথায় এল আহানের কথাটা তার জীবনটা তিতে তিতে লাগছে কেন?কি হলো এত চিল মুড এ থাকা ছেলেটার,,,,,,, কি হলো হঠাৎ?

--আচ্ছা আপনি এটা খান আমি আবার ভালো করে বানিয়ে আনছি সেটাও খাবেন কেমন?

বলেই উঠতে নিলাম। সে আমার হাত ধরে টান দিলেন।আমি গিয়ে সোজা তার গায়ের উপর পরলাম।তাড়াতাড়ি করে উঠে গেলাম।সে আবার হাত টেনে দুরত্ব না রেখে তার পাশে বসালো । আমার কাধে মাথা রাখল। আমার থেকে লম্বা হওয়ার মাথা রাখায় সমস্যা হচ্ছিলো তার। আবার উঠে বলল তোর আর একটু লম্বা হওয়া উচিত ছিলো। একটু সরে বস।

সরে বসার পর আবার আমার কাধে মাথা রাখল 

--আহান আপনার কি কোনো কারনে মন খারাপ? 

(চুপ)

মাথায় হাত বুলিয়ে আবার ডাকলাম

--আহান 

,,,,

--আহান

--ইচ্ছে? 

--হুম

--আচ্ছা তুইতেই কি আমি?

,,,,,,,

চলবে,
[+] 1 user Likes Raj Bai 23's post
Like Reply
#4
পর্বঃ৪

???
মাথায় হাত বুলিয়ে আবার ডাকলাম

--আহান 

,,,,

--আহান

--ইচ্ছে? 

--হুম

--আচ্ছা তুইতেই কি আমি?

--মানে?ঠিক বুঝলাম না আমি

--কিছু না ছেড়ে দে । আমিও বুঝতে পারছি না কিছু তুই কিভাবে বুঝবি?

শুধু মাথাটা দোলালাম দুপাশে  

--আসলে বুঝতে পারলেও হয়তো মানতে পারছি না বা মানাতে পারছি না নিজেকে। ক্ষনে ক্ষনে উত্তেজিত হয়ে পরছি।কিছু একটা হচ্ছে আমার সাথে বুঝলি?

মাথাটা আমার কাধ থেকে তুললো। 

আর আমি বোবার মতো কথা শুনে যাচ্ছি। আসলে অস্পষ্ট কথা তৎক্ষনাত আমি বুঝতে পারি না।

আহান আবার বললেন 

-- জানিস এখন মাঝে মধ্যেই অনেক সুখ সুখ লাগছে।এই ধর মনে হচ্ছে জেনো দমকা বাতাস আমার মন ছুয়ে যাচ্ছে। ইউ নো আই ক্যান ফিল দিস ফিলিংস ডিপলি এন্ড আই এনজয় দিস ফিলিংস ফ্রম দা কোর অফ মাই হার্ট।

 (আবার থেমে)

-- ফিলিংস রিয়ালি গুড,টেস্টি,হেলদি 

বলেই হাহাহাহা করে হেসে চলছেন

--আহান আপনি কি আমায় কোনো খাবার এর কথা বলছেন? আমি আসলেই বুঝতে পারছি না আহান।আপনার কি আমাত হাতের কড়া কফিটা ভালো লেগেছে?(ভাবতেই চোখ আপন ইচ্ছায় চকচক করে উঠল)
আহান আপনার উপর এক্সাম প্রেসার চলছে তাই হয়তো কফি টা বেশ কাজ করছে।আমি আজ নেট এ অবশ্যই সার্চ দিয়ে কড়া কফির উপকারীতা দেখে নেব।কেমন?

--এই থাম তো তুই।কি একটা মুডে ছিলাম। দিলি তো দিলি তুই আর তোর কফি মিলে দিলি। সর পাশ থেকে সর,,, দূরে গিয়ে বস 

দূরে গিয়ে বসলাম এতদিন পর আমার সাথে একটু সাভাবিক ভাবে কথা বলছিলো। সবসময় তো ঝারির উপরেই রাখেন আমায়।আজ সেও বলল তাই আমিও তার কমপ্যানি দিতে গেলাম। তাতেও ঝারি বাহ রে বাহ

--টুকি যা তো আমার জন্য একটা বেড কুশান নিয়ে আয়।

নিয়ে এসে জিজ্ঞেস করলাম কি করব এবার

-- দে আমায় বস তুই দোলনার ওই কিনারায় 

বসার সাথে সাথে আমার কোলের উপর মাথা রেখে কুশান টা জরিয়ে ধরে দোলনায় পা উঠিয়ে শুয়ে পরলেন।

আজ অনেক বার অবাক হবার কারণ এ এবার আর অবাক হলাম না শুধু ভাবছি হলো টা কি তার?কিন্তু আমার কেমন জানি ফিল হচ্ছে খুব কেমন জানি,,,,, 

--ইচ্ছে 

--হুম

--আকাশের চাঁদটা দেখেছিস?

--হম। 

--তুই কি আমায় তুমি বলবি?

-- এবাবা না না আপনি আমায় ভুতের ভয় দেখিয়ে তুমি বলা থামিয়েছেন।এখন নিশ্চয়ই আমি ভুলে তুমি বললে আবার ঝারবেন?আগের মতো। 
আমায় সবসময় বলতেন ওই ইচ্ছে দেখিস না আমি তোর থেকে লম্বা স্বাস্থ্যবান হয়ে গেছি। আমায় আবার যদি আপনি ছাড়া ডেকেছিস খবর করে দিবো।ভালো মা ভালো বাবা তোকে শিখিয়েছে না যে বড়দের আপনি বলতে হয় শিখিয়েছে?আবার তুমি বলবি? বল বলবি আর একবার বল,,,, 

মাঝে মাঝে হুটহাট এসে বলতেন ইচ্ছে তুমি বল আমায়

যেই না মনের ভুলে বলতাম আপনি গালে একটা লাগিয়ে দিতেন

আহানের মতো অভিনয় করে দেখালাম এতক্ষণ। আহান আমার কোলে শোয়া অবস্থায় আমার দিকে তাকিয়ে আমার কথা শুনছে

--আচ্ছা ইচ্ছে তখন আমি কোন ক্লাস এ পড়ি আর তুই কোন ক্লাস এ? 

--আমি এইট আর আপনি সেভেন। বলতে গেলে সিক্স আপনি তো একটা ক্লাস পরেন নি

--হ্যা আর এখন তুই অনার্স আর আমি ইন্টার শেষ করলাম। এখনও বাচ্চা রয়ে গেলি বড় কবে হবি?
বোধ বুদ্ধি কবে হবে?

--হ্যা হ্যা হয়ে যাবেনে
(কথা বারালেই অপমানিত হতে হবে চুপ থাকাই বেটার)

-- আর হইছিস তুই,,,,,
মাথায় বিলি কেটে দে আমি ঘুমাবো অনেক দিন ভালো ভাবে ঘুম হয় না

--এভাবে?

--হুম(গম্ভীর ভাবে)

--আপনার পড়া কমপ্লিট?আর একবার দেখতেন

--হ্যা। আর এক্সামের রাতে আমি তোর মতো পড়তে পারি না। এমনিই দুবার রিভাইজ দিয়েছি

-- ওকে

তার মাথায় বিলি কেটে দিচ্ছি সে ঘুমচ্ছেন। চাঁদের দিকে তাকিয়ে তার বলা কথা গুলো ভাবছি।অনেক ভাবাভাবি, ক্যালকুলেশন, পারি তো গিয়ে ক্যালকুলেটর এনে তার কথা ক্যালকুলেট করি,,,,,, তারপর যা মাথায় এলো। তাতে আমি সত্যিই সারপ্রাইজড। আবার মন খারাপ হয়ে গেলো যা ভাবলাম তা যদি ভুল হয়?যদি নিরাশ হতে হয়?তাই ভাবলাম সপ্ন দেখব না। সময় কথা বলবে

তার মুখের দিকে তাকালাম বাইরের অন্ধকারের মধ্যে বেল্কুনিতে লাল নীল আলো। কি অদ্ভুদ মায়াবী চোখ কি সুন্দর এক ঝাক চুল।কিছু চুল কপালে।। ঠোঁট টা কেমন ছোট করে আছে।এত সুন্দর কেন উনি?এতোওও কেন? কেন এত মায়া ওই বুজে থাকা চোখে?উনার বাম গালে একটা তিল। দেখেই মনে হলো আমার ডান গালে একই জায়গায় একটা তিল আছে।তিল টা জানো তার মুখের মায়া দিগুন করে দেয়।

গায়ে একটা হাতা বড় টি-শার্ট এর অর্ধেক ফোল্ড করা আর ট্রাউজার সব মিলিয়ে আমার সপ্নের পুরুষ। অগোছালো মানুষ টাকে যে আমার খুব ভালো লাগে খুব,,,,,

???

সকালের আজান এ ঘুম ভাংলো। আহান গুটিশুটি দিয়ে এখনো ঘুম।সারারাত বসেই ঘুমিয়েছি।ঘুম চোখেই আহানের মাথায় হাত বুলিয়ে ডাকলাম। সে আরমোরা ভেঙে আমার পেটে মুখ গুজে কোমর জড়িয়ে ধরলো।এমন কাজে আমার চোখের ঘুম বিদায় জানিয়ে চলে গেল

এবার রীতি মতো কাপছি। আহানের মাথা টেনে সরানোর চেষ্টায় ব্যস্ত হয়ে গেলাম।এভাবে আমি এক সেকেন্ড ও থাকতে পারব না এক সেকেন্ডও না ইমপসিবল

--মা আর একটু ঘুমাই না

-- আমি মা না আহান আমি ইচ্ছে ইচ্ছে।আপনি পিলিজ উঠুন পিলিজ্জজ্জ

আমার লাফালাফিতে সে চোখ খুলল নিজের অবস্থান দেখে এক লাফের উঠে বসল

--সরি আমি ঘুমে ছিলাম বুঝতে পারি নি

তারপর আর কিছু না বলে সে বেলকুনি লাফিয়ে নিজের রুম এর দিকে গেলো সাইড এঙ্গেল থেকে দেখে আমার মনে হলো সে হাসছে

???

আয়নার সামনে দাড়িয়ে হেয়ার ব্রাশ করছি।কিছুক্ষন পর পর হেসেও উঠছি। কি কারণে এমন কাজ করছি তা আমার অবচেতন মনই ভালো জানে । আমি জানি না। হঠাৎ মনে হলো একটু শাড়ি পরলে মন্দ হয় না

নীল রং এর শাড়ি নিলাম পরার উদ্দেশ্যে। 

শাড়ি পরে এসে নিজে আয়নায় দেখছি । হাল্কা করে ডিপ পিংক লিপ্সটিক টা দিলাম।চুল হাটুর কিছুটা উপরে,,,, লম্বা চুল টা খুলে দিলাম।অতি ফরসা না হলেও শ্যামলা ভাব টা চেহারায় নেই। আম্মু সব সময় বলে আমার গায়ের রং টা পারফেক্ট। চোখে কাজল দিলাম। ভ্রু টা আল্লাহ সুন্দরই বানিয়েছে তাই কখনও প্লাক করার কথা ভাবি নি।আমার বান্ধবীরা খুব জালায় আমাকে এই নিয়ে। এরপর কানে ঝুমকো।

খুব একটা সাজগোজ করা হয় না বললেই চলে। আজ নিজেকে দেখতে নিজের খুব ভালো লাগছে।নিজেকেই নিজে বলে উঠলাম খুব মিস্টি লাগছে।

নুয়ে শাড়ির কুচিগুলো আবার ঠিক করছি,,,উঠে দাঁড়িয়ে সামনে আহান কে দেখলাম এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তো আছেই। তার চোখ দেখে কেন জানো মনে হলো সে মুগ্ধ হয়েছে
মুখে বললাম

--আহান আপনি কিছু বলবেন?

,,,,,,,,,,,,,,

--কলেজ ড্রেস পরা যে এক্সাম দিতে যাচ্ছেন?আব্বু আম্মুকে বলতে এসেছেন?

কোনে উত্তর না পাওয়ায় বলে উঠলাম

--আপনি আমাকে এভাবে কেন দেখছেন?শাড়ি পরেছি তাই? আসলে আমি মানে,,,,,,আমি শাড়ি এখন ই খুলে রাখব এমনিই পরে দেখলাম আরকি

সে কোনো কথা না বলেই চলে গেলেন আমার ভাইয়ের ডাকে। 

মাথাটা খুব ভন ভন করছে আমার খুব খুব।ওনার চোখ এমন কেন?

???

 --আম্মু আহান কেন এসেছিলো? 

-এক্সাম দিতে যাবে বলতে এসেছিলো। তোকেও বলতে গিয়েছিলো বলেনি?

কিছু না বলে রুম এ চলে এলাম।

???

রাতে আহান মেসেজ দিয়ে বললেন। 

--তোর পিক পাঠা আজ যা তুলেছিস

-- সরি আহান আমি পিক তুলি নি। আপনার এক্সাম কেমন হলো? 

--এখনি শাড়ি পর পিক দিবি আমায় 

--আহান আমি শুয়েছি জানালা দিয়ে দেখতে পাচ্ছেন নিশ্চয়ই এখন এত রাতে কিভাবে?

--আমার কি এখন তোর রুম এ আসতে হবে?

চলবে,
Like Reply
#5
পর্বঃ৫

???

--আহান আমি শুয়েছি জানালা দিয়ে দেখতে পাচ্ছেন নিশ্চয়ই এখন এত রাতে কিভাবে?

--আমার কি এখন তোর রুম এ আসতে হবে?

???
সকাল হয়েছে। রাতের কথা ভেবে মিটিমিটি হাসছি। বিছানা ছেড়ে উঠিনি এখনও। এত সুখ সুখ বাতাস বইছে যে আমার এমন লাগছে আমি উড়ে যাব।

রাতে তখনই আহান অনলাইন থেকে চলে গেল অনেক ফোন কল করেও পেলাম না তাকে। বুঝাতেই পারলাম না শাড়ি পরতে মুড এর প্রয়োজন আছে।রাতের বেলায় ঘুম রেখে কেউ শাড়ি পরে নাকি?নিজেকে স্নিগ্ধ লাগলেই শাড়ি পরা যায়। চোখ লেগে এসেছিলো একটু।বোধ করি তার ৫ মিনিট পরেই আমাকে টেনে টুনে বিছানা থেকে তুলে বসালো। 

--তোকে শাড়ি পরার টাইম দিয়েছিলাম আর তুই ঘুমালি?

-- কই আপনি অনলাইন থেকে যাবার সময় এই কথা বলেন নি তো।

--শাড়ি কই তোর?

এটা বলেই নিজে গিয়ে শাড়ি বেছে বুছে আনলেন।লাল একটা শাড়ি। আমি শাড়ি পরি না একেবারেই।। কোনো অকেশনেও পরি না কিন্তু আম্মু তবুও প্রত্যেক অকেশনেই কিনে দেয় আমাকে।জিজ্ঞেস করলে বলে এখন আমার কথায় শাড়ি পরো না কিন্তু সেই মানুষ যখন জীবনে আসবে আর শাড়িতে তোকে দেখতে চাইবে তখন খুব কাজে দেবে এই শাড়িগুলো বুঝলি(মাথায় গাট্টা মেরেল)

আচ্ছা এই কি সেই মানুষটা? আহান?আহান কি আমাকে ভালোবাসে আমার মতো? আমার মতো মানে কি আমিও ভালোবাসি?
আল্লাহ কি ভাবছি মন টা কি ভাবছে? এতো গভীরভাবে কখনও তো ভাবি নি।।ভালো লাগত লাগে খুব লাগে কিন্তু নিজেই নিজের কথার প্যাচে পরে যাচ্ছি।দুইদিন ধরে মনটা খুব আউল ফাউল বকছে,,,,এই মন বেশি বুঝতে যেও না অকে?

--কিরে কথা কানে যায় না? শাড়ি নে পর গিয়ে।

হাতে নিয়ে হাটা দিলাম মুখে কিছু বললাম না।শাড়ি পরা আমার আম্মু আমাকে ভালো ভাবেই শিখিয়েছে।

মাকে বলতাম এখন শাড়ি পরা শিখে কি করব আমি ? 

মা বলতেন 

--কেন রে ইচ্ছু তুই কি চাস সে পরিয়ে দিক? অন্য মেয়ে দের মতো নেকু নেকু করবি না একদম।ছেলেরা সুযোগ পেলে কিছুতেই ছাড়ে না।তোর মা প্রেম করে বিয়ে করেছে মনে রাখবি সব এক্সপেরিয়েন্স আছে তোর মায়ের।

--নিজে এক্সপেরিয়েন্স করেছ আর আমি করলেই দোষ এ কেমন বিচার আম্মু?

-- সব ছেলেরা ভালো হয় না বুঝলি।বিশ্বাস যোগ্য ছেলে পাওয়া সোনার হরিণ পাওয়ার সমান। তুই যে ভালো ছেলে পাবি তার গ্যারান্টি কি?তাই শিখিয়ে রাখছি যাতে সুযোগ নিতে না পারে অযুহাতে।দেখবি পরাতে পারে না তাও বলবে চেষ্টা করে দেখতে পারি।জীবন এ যখন সে আসবে সব বুঝে যাবি

--হুম মা।

--কেউ কেউ আবার সাজাতে চায় বুঝলি? দেখবি ছেলেরা সাজানোর সময় নিজেদের চোখ মুখ খিচিয়ে টেনে টুনে কপালে হাজার টা ভাজ ফেলে দুই ঠোট একসাথে ভাজ করে এমন ভাব করবে যেন ৩য় বিশ্ব যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে,, আবার যখন কানের দুল পরাতে যাবে একশো বার জিজ্ঞেস করবে ব্যাথা পাচ্ছ না তো। সাজানোর শেষে গাল এপাশে নাড়িয়ে দেখবে ওপাশে নাড়িয়ে দেখবে। নিজের মন মতো হলে বলবে পারফেক্ট। 

আম্মু এক ধ্যানে কথা গুলো বলল খুব আবেগ মিশিয়ে

-- এইসব করে আব্বু তাই না?এখনও করে?

আম্মু লজ্জা পেয়ে গেলো। 

--ধুর কিসব বলিস? পেকে গেছিস খুব।,,,,যাই হোক।।
কিন্তু মনে রাখবি সবার কেয়ারিং টা ভালোবাসা হয় না কারো কারোটা অভিনয়ও হয়,কেউ লালসায় ভালো না বেসে অভিনয় চালিয়ে যায়,বা কেউ বাধ্য হয়ে।তাই তো বললাম সোনার হরিণ 

???

বাথরুম থেকে শাড়ি পরে বের হয়ে এলাম।আহান তাকিয়ে আছে আর আমি কাচুমাচু করছি। 
সে কিছুক্ষণ পর গলা খাকারি দিয়ে বললেন

--আয় সাজ অল্পসল্প নয়তো খালি খালি লাগবে ছবিতে অবশ্য এভাবেও(থেমে) ভালো আর কি। 

হাত টা ধরে ড্রেসিংটেবিলের সামনে নিয়ে গেলো। কসমেটিক্স দেখাচ্ছে আর জিগ্যেস করছে এটা কি ওটা কি,,আমিও তার উত্তর দিচ্ছি। আমার হাতে একটা সিম্পেল লকেট দিয়ে বললেন 

--নে এটা গলায় ঝুলা

--এটাকে গলায় ঝুলানো বলে না আহান

--জানি জানি শেখাতে আসিস না।পড়া বাদ দিয়ে এসব শিখতে আসি নি।

লিপ্সটিক সিলেক্ট করে দিলেন আর বললেন কাজলটাও দিতে।তারপর এক পা উঠিয়ে দেয়ালের সাথে ঠেস দিয়ে শরীর এর ভর টাও দেয়ালে ছেড়ে দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।

নিজের কাছে তার তাকানো টা কেমন কেমন অনুভূতি হলেও চুপচাপ সেজে চলছি।

--আচ্ছা তোর বড় কানের দুল আছে না? হ্যা হ্যা ওগুলো। লাল লাল হ্যা ওই কানের দুল টা পরবি 

কানের দুল পরছি 

--ইচ্ছে ব্যাথা পাচ্ছিস না?

দেখলাম সুক্ষ্ম চোখ টা খিচিয়ে রেখেছে

--না আহান এতে ব্যাথা লাগে না

সাজা শেষে বলে উঠলেন 

-- পারফেক্ট লাগছে তোকে। 

আমার ঠোঁট আপন ইচ্ছায় হেসে উঠল আর মন? সে পেলো প্রশান্তি। আম্মুর কথা গুলো বার বার মনে পরে যাচ্ছে। 

--এই দাঁড়া তো ছবি তুলব।

--আরে এভাবে প্রতিবন্ধীর মতো দাড়াতে বলি নি।নিজের ফোন এ যেমন পাংকি পুংকি দিয়ে তুলিস ওভাবে রিয়াকশন দে

--ওকে 

--আবার কাচুমাচু করছিস।ওকে একা একা নিজের ফোন এ তুলে আমাকে পাঠাবি।এখন আমি যেভাবে বলব সেভাবে দাঁড়াবি অকে?

--অকে

বারান্দায় নিয়ে এলো। প্রথমে গাছের পাশে দাঁড় করিয়ে বিভিন্ন ভাবে ছবি তুললেন।রেলিং ঠেস দিয়ে কিছু ছবি।নাইট মুড আধো আলো আধো অন্ধকার,রঙিন আলো ।তার তোলা প্রত্যেকটা ছবিই খুব সুন্দর হয়েছে।ছবি তোলা শেষে রেলিং ধরে দারালাম। সেও সাম্নের দিকে ফিরে আমার পাশে দাঁড়িয়ে পরল।একটু পরে তার হাত আমার কাধে ,,, আমি শাড়ির আচল খামচে ধরলাম।একবার তাকিয়ে দেখলাম সেও সাম্নের দিকেই ফেরা।আমার দিকে তাকাচ্ছে না।চোখের পলকেই টান দিয়ে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলেন। 

হঠাৎ এমন কাজে তার দিকে ফিরলাম সে ও আমার দিকে ফিরলেন। চোখ মুখ খুব কাছাকাছি। 

আস্তে করে বললেন 

--স্মাইল পিলিজ

আমি মুচকি হেসে দিলাম সাথে সেও।

খেয়াল করলাম একহাতে ফোন ধরে মোমেন্ট টাকে ক্যাপচার করেছে।

দেখাতে বললাম দেখালেন না। লাফিয়ে নিজের ঘরে চলে গেলেন। আমি দাঁড়িয়ে আছি রেলিং ধরে। তিনি দরজাটা আটকেছেন বেশ শব্দ করে।আমি পলকবিহীন দরজার দিকে তাকিয়ে আছি।নিঃশব্দে দরজা খুলে বললেন।।

--শাড়ি পরবি না আর কখনো। রাস্তার পাগল দৌড়ে চলে আসবে। আমি বাবা পাগল টাগল তাড়াতে পারব না। 

--অপমান করলেন নাকি প্রশংসা? 

আচ্ছা সে তো নিজের হাতে আমায় সাজালেন না।তাহলে আম্মু যে বলেছিলো,,,,,,,,,,

???

আজ আহানের এক্সাম শেষ। সেইদিনের পরে আর রুম থেকে বের হয় নি।আমাদের বাসায় ও আসে নি। মাঝে মধ্যে মেসেজ দিয়ে পড়াশুনার আপডেট জিজ্ঞেস করলে বলত ভালোই চলছে।কিন্তু আর কোনো মেসেজ এর রিপ্লাই দিতেন না।

কিন্তু আমি জানি সে আমাকে দেখছেন জানালা দিয়ে ।আচ্ছা জানালার গ্লাসটা এমন হতো যে বাইরের লোকটাও ভিতরের মানুষকে দেখতে পেত। আমার জন্য সেটা ভালো হতো। খুব ভালো হতো।

পরের দিন,,,

চলবে,
[+] 1 user Likes Raj Bai 23's post
Like Reply
#6
পর্বঃ৫

???

--আহান আমি শুয়েছি জানালা দিয়ে দেখতে পাচ্ছেন নিশ্চয়ই এখন এত রাতে কিভাবে?

--আমার কি এখন তোর রুম এ আসতে হবে?

???
সকাল হয়েছে। রাতের কথা ভেবে মিটিমিটি হাসছি। বিছানা ছেড়ে উঠিনি এখনও। এত সুখ সুখ বাতাস বইছে যে আমার এমন লাগছে আমি উড়ে যাব।

রাতে তখনই আহান অনলাইন থেকে চলে গেল অনেক ফোন কল করেও পেলাম না তাকে। বুঝাতেই পারলাম না শাড়ি পরতে মুড এর প্রয়োজন আছে।রাতের বেলায় ঘুম রেখে কেউ শাড়ি পরে নাকি?নিজেকে স্নিগ্ধ লাগলেই শাড়ি পরা যায়। চোখ লেগে এসেছিলো একটু।বোধ করি তার ৫ মিনিট পরেই আমাকে টেনে টুনে বিছানা থেকে তুলে বসালো। 

--তোকে শাড়ি পরার টাইম দিয়েছিলাম আর তুই ঘুমালি?

-- কই আপনি অনলাইন থেকে যাবার সময় এই কথা বলেন নি তো।

--শাড়ি কই তোর?

এটা বলেই নিজে গিয়ে শাড়ি বেছে বুছে আনলেন।লাল একটা শাড়ি। আমি শাড়ি পরি না একেবারেই।। কোনো অকেশনেও পরি না কিন্তু আম্মু তবুও প্রত্যেক অকেশনেই কিনে দেয় আমাকে।জিজ্ঞেস করলে বলে এখন আমার কথায় শাড়ি পরো না কিন্তু সেই মানুষ যখন জীবনে আসবে আর শাড়িতে তোকে দেখতে চাইবে তখন খুব কাজে দেবে এই শাড়িগুলো বুঝলি(মাথায় গাট্টা মেরেল)

আচ্ছা এই কি সেই মানুষটা? আহান?আহান কি আমাকে ভালোবাসে আমার মতো? আমার মতো মানে কি আমিও ভালোবাসি?
আল্লাহ কি ভাবছি মন টা কি ভাবছে? এতো গভীরভাবে কখনও তো ভাবি নি।।ভালো লাগত লাগে খুব লাগে কিন্তু নিজেই নিজের কথার প্যাচে পরে যাচ্ছি।দুইদিন ধরে মনটা খুব আউল ফাউল বকছে,,,,এই মন বেশি বুঝতে যেও না অকে?

--কিরে কথা কানে যায় না? শাড়ি নে পর গিয়ে।

হাতে নিয়ে হাটা দিলাম মুখে কিছু বললাম না।শাড়ি পরা আমার আম্মু আমাকে ভালো ভাবেই শিখিয়েছে।

মাকে বলতাম এখন শাড়ি পরা শিখে কি করব আমি ? 

মা বলতেন 

--কেন রে ইচ্ছু তুই কি চাস সে পরিয়ে দিক? অন্য মেয়ে দের মতো নেকু নেকু করবি না একদম।ছেলেরা সুযোগ পেলে কিছুতেই ছাড়ে না।তোর মা প্রেম করে বিয়ে করেছে মনে রাখবি সব এক্সপেরিয়েন্স আছে তোর মায়ের।

--নিজে এক্সপেরিয়েন্স করেছ আর আমি করলেই দোষ এ কেমন বিচার আম্মু?

-- সব ছেলেরা ভালো হয় না বুঝলি।বিশ্বাস যোগ্য ছেলে পাওয়া সোনার হরিণ পাওয়ার সমান। তুই যে ভালো ছেলে পাবি তার গ্যারান্টি কি?তাই শিখিয়ে রাখছি যাতে সুযোগ নিতে না পারে অযুহাতে।দেখবি পরাতে পারে না তাও বলবে চেষ্টা করে দেখতে পারি।জীবন এ যখন সে আসবে সব বুঝে যাবি

--হুম মা।

--কেউ কেউ আবার সাজাতে চায় বুঝলি? দেখবি ছেলেরা সাজানোর সময় নিজেদের চোখ মুখ খিচিয়ে টেনে টুনে কপালে হাজার টা ভাজ ফেলে দুই ঠোট একসাথে ভাজ করে এমন ভাব করবে যেন ৩য় বিশ্ব যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে,, আবার যখন কানের দুল পরাতে যাবে একশো বার জিজ্ঞেস করবে ব্যাথা পাচ্ছ না তো। সাজানোর শেষে গাল এপাশে নাড়িয়ে দেখবে ওপাশে নাড়িয়ে দেখবে। নিজের মন মতো হলে বলবে পারফেক্ট। 

আম্মু এক ধ্যানে কথা গুলো বলল খুব আবেগ মিশিয়ে

-- এইসব করে আব্বু তাই না?এখনও করে?

আম্মু লজ্জা পেয়ে গেলো। 

--ধুর কিসব বলিস? পেকে গেছিস খুব।,,,,যাই হোক।।
কিন্তু মনে রাখবি সবার কেয়ারিং টা ভালোবাসা হয় না কারো কারোটা অভিনয়ও হয়,কেউ লালসায় ভালো না বেসে অভিনয় চালিয়ে যায়,বা কেউ বাধ্য হয়ে।তাই তো বললাম সোনার হরিণ 

???

বাথরুম থেকে শাড়ি পরে বের হয়ে এলাম।আহান তাকিয়ে আছে আর আমি কাচুমাচু করছি। 
সে কিছুক্ষণ পর গলা খাকারি দিয়ে বললেন

--আয় সাজ অল্পসল্প নয়তো খালি খালি লাগবে ছবিতে অবশ্য এভাবেও(থেমে) ভালো আর কি। 

হাত টা ধরে ড্রেসিংটেবিলের সামনে নিয়ে গেলো। কসমেটিক্স দেখাচ্ছে আর জিগ্যেস করছে এটা কি ওটা কি,,আমিও তার উত্তর দিচ্ছি। আমার হাতে একটা সিম্পেল লকেট দিয়ে বললেন 

--নে এটা গলায় ঝুলা

--এটাকে গলায় ঝুলানো বলে না আহান

--জানি জানি শেখাতে আসিস না।পড়া বাদ দিয়ে এসব শিখতে আসি নি।

লিপ্সটিক সিলেক্ট করে দিলেন আর বললেন কাজলটাও দিতে।তারপর এক পা উঠিয়ে দেয়ালের সাথে ঠেস দিয়ে শরীর এর ভর টাও দেয়ালে ছেড়ে দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।

নিজের কাছে তার তাকানো টা কেমন কেমন অনুভূতি হলেও চুপচাপ সেজে চলছি।

--আচ্ছা তোর বড় কানের দুল আছে না? হ্যা হ্যা ওগুলো। লাল লাল হ্যা ওই কানের দুল টা পরবি 

কানের দুল পরছি 

--ইচ্ছে ব্যাথা পাচ্ছিস না?

দেখলাম সুক্ষ্ম চোখ টা খিচিয়ে রেখেছে

--না আহান এতে ব্যাথা লাগে না

সাজা শেষে বলে উঠলেন 

-- পারফেক্ট লাগছে তোকে। 

আমার ঠোঁট আপন ইচ্ছায় হেসে উঠল আর মন? সে পেলো প্রশান্তি। আম্মুর কথা গুলো বার বার মনে পরে যাচ্ছে। 

--এই দাঁড়া তো ছবি তুলব।

--আরে এভাবে প্রতিবন্ধীর মতো দাড়াতে বলি নি।নিজের ফোন এ যেমন পাংকি পুংকি দিয়ে তুলিস ওভাবে রিয়াকশন দে

--ওকে 

--আবার কাচুমাচু করছিস।ওকে একা একা নিজের ফোন এ তুলে আমাকে পাঠাবি।এখন আমি যেভাবে বলব সেভাবে দাঁড়াবি অকে?

--অকে

বারান্দায় নিয়ে এলো। প্রথমে গাছের পাশে দাঁড় করিয়ে বিভিন্ন ভাবে ছবি তুললেন।রেলিং ঠেস দিয়ে কিছু ছবি।নাইট মুড আধো আলো আধো অন্ধকার,রঙিন আলো ।তার তোলা প্রত্যেকটা ছবিই খুব সুন্দর হয়েছে।ছবি তোলা শেষে রেলিং ধরে দারালাম। সেও সাম্নের দিকে ফিরে আমার পাশে দাঁড়িয়ে পরল।একটু পরে তার হাত আমার কাধে ,,, আমি শাড়ির আচল খামচে ধরলাম।একবার তাকিয়ে দেখলাম সেও সাম্নের দিকেই ফেরা।আমার দিকে তাকাচ্ছে না।চোখের পলকেই টান দিয়ে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলেন। 

হঠাৎ এমন কাজে তার দিকে ফিরলাম সে ও আমার দিকে ফিরলেন। চোখ মুখ খুব কাছাকাছি। 

আস্তে করে বললেন 

--স্মাইল পিলিজ

আমি মুচকি হেসে দিলাম সাথে সেও।

খেয়াল করলাম একহাতে ফোন ধরে মোমেন্ট টাকে ক্যাপচার করেছে।

দেখাতে বললাম দেখালেন না। লাফিয়ে নিজের ঘরে চলে গেলেন। আমি দাঁড়িয়ে আছি রেলিং ধরে। তিনি দরজাটা আটকেছেন বেশ শব্দ করে।আমি পলকবিহীন দরজার দিকে তাকিয়ে আছি।নিঃশব্দে দরজা খুলে বললেন।।

--শাড়ি পরবি না আর কখনো। রাস্তার পাগল দৌড়ে চলে আসবে। আমি বাবা পাগল টাগল তাড়াতে পারব না। 

--অপমান করলেন নাকি প্রশংসা? 

আচ্ছা সে তো নিজের হাতে আমায় সাজালেন না।তাহলে আম্মু যে বলেছিলো,,,,,,,,,,

???

আজ আহানের এক্সাম শেষ। সেইদিনের পরে আর রুম থেকে বের হয় নি।আমাদের বাসায় ও আসে নি। মাঝে মধ্যে মেসেজ দিয়ে পড়াশুনার আপডেট জিজ্ঞেস করলে বলত ভালোই চলছে।কিন্তু আর কোনো মেসেজ এর রিপ্লাই দিতেন না।

কিন্তু আমি জানি সে আমাকে দেখছেন জানালা দিয়ে ।আচ্ছা জানালার গ্লাসটা এমন হতো যে বাইরের লোকটাও ভিতরের মানুষকে দেখতে পেত। আমার জন্য সেটা ভালো হতো। খুব ভালো হতো।

পরের দিন,,,

চলবে,
[+] 2 users Like Raj Bai 23's post
Like Reply
#7
অসাধারণ হচ্ছে, আশাকরি মাঝপথে থেমে যাবেননা,সময় নিয়ে হলেও সম্পুর্ণ আপডেট দিবেন।
[+] 1 user Likes Rakimul's post
Like Reply
#8
(16-09-2023, 12:32 AM)Rakimul Wrote: অসাধারণ হচ্ছে, আশাকরি মাঝপথে থেমে যাবেননা,সময় নিয়ে হলেও সম্পুর্ণ আপডেট দিবেন।

চেষ্টা করছি তবে রবিবার করে পোস্ট করবো।
Like Reply
#9
পর্বঃ৬

???

কিন্তু আমি জানি সে আমাকে জানালা দিয়ে দেখছেন ।আচ্ছা জানালার গ্লাসটা এমন হতো যে বাইরের লোকটাও ভিতরের মানুষকে দেখতে পেত। আমার জন্য সেটা ভালো হতো। খুব ভালো হতো।

পরের দিন সকাল বেলা খাবার টেবিলে খাচ্ছি সবাই মিলে।

আয়ানঃআপু তোকে আজকে কেমন একটা লাগছে

--কেমন?

--কেমন যেন

--কেমন বল না 

--লাইক আ দেবদাসী ।

--মানে কি তোর এমন মনে হলো কেন?

আব্বু আম্মু মুখ বুঝিয়ে হাসছে।আবার ভাব নিচ্ছে কিছুই না।।তবুও হাসি কন্ট্রোল করতে পারছে না এমন একটা অবস্থা। 

--আব্বু তুমিও হাসছো? তোমার ছেলে আমাকে এভাবে বললো তুমি কিছু বলবে না?

--না মামুনি আমারও মনে হচ্ছে তুমি দেবদ,,,,ওই আর কি মানে আয়ান যা বলল তাই আর কি

--আমি রেগে যাচ্ছি আম্মু। ওরা এইভাবে কেনও বলছে আমাকে

আম্মু একটু হেসে,,

--এই এই তোমরা এইভাবে কেন বলছো?

-- আপু তুই কি জানো তোর এক পায়ে জুতা নেই?হাহাহাহা

সবাই হাসছে। চেক করে দেখলাম সত্যিই আমার পায়ে জুতা নেই।

--খেয়াল না থাকতেই পারে ইটস নরলাম। তাই বলে দেবদাসী বলবি?

--হ্যা অবশ্যই আমি শুনেছি প্রেমের শোকে এমন অবস্থা হয়ে যায়। আপু বিরহ কি বেশি? পাত্তা দিচ্ছে না নাকি? তোর ভাই আছে এক্সপার্ট চিন্তা কি ? মেয়ে পটাতে পারছি তোর জন্য দরকার পরলে ছেলেও পটালাম।কুল কুল

--এই তো তুই এক্সপার্ট তাই না? তাহলে লেখা পড়া লেখা বাদ দিয়ে এই করা হয়। আম্মু তোমার ছেলের অবস্থা দেখ?শেষে তোমার আর ভালো মায়ের বেয়াইন হওয়ায় হস্তক্ষেপ করতেছে মানা যায়? 

--সত্যি আপু????? ইশাল আমার??????(লাফ দিয়ে উঠে) 

আব্বু বলে উঠল
-- কি বলছ কিসের বেয়াইন?কিসের ইশাল? ইচ্ছে তোমার কথায় ভুল আছে (চোখ টিপ দিয়ে)

-- (শিট ভুলেই বলে ফেললাম এখন কি হবে?)

এর মধ্যেই আম্মু বলে উঠল
--না সত্যি না আয়ান ও মজা করেছে।কিন্তু তুমি এখন ই এসব করছ আয়ান?আমি তোমাকে কতো বুঝিয়েছি না? এইচএসসি এক্সাম দিলে আমি নিজে তোমার জন্য মেয়ে খুজে দেব?

--আম্মু আমি খুব ভালো করেই জানি আপু মুখ ফসকে সত্যি কথা বলে।ভূগোল বুঝিয়ো না আর।সমস্যা নেই আমি তা ভাবছি না ভাবছি প্রিয়া নুসরাত আনিকার কি হবে?? মেয়েগুলো কষ্ট পাবে খুব।কি আর করার? 
কিন্তু আম্মু তোমার ছেলে তোমার তোমার সপ্ন পূরণ করবেই তাতে যা হোক 

ভাই মাহাত্ম্যা গান্ধির ভাব নিয়ে উঠে চলে গেল আর আমাদের গলায় খাবার আটকে যাওয়ার অবস্থা। এইটুক বয়সে এই টেন এ উঠে নি তাতেই এই।তাও একটা হলেও মানা যেত।আম্মুর কি হলো জানি না তার চোখ ভরা পানি দেখে আমি আর আব্বু আর একবার অবাক হলাম

--আম্মু তুমি কাদছো কেন?

-কাদব না? ছেলেটা আমার মুখে হাসি ফুটাতে তিন তিনটা গার্লফ্রেন্ড বিসর্জন দিলো।এ যে আমার পরম সৌভাগ্য।

--হ্যা ইশাল এর ও সৌভাগ্য। বাচ্চা মেয়েটার পিছনে এখনি লেগে গেছে গিয়ে দেখ। সব পাগল(আব্বু)

--আসলেই তো ওই বাদর ছেলে এদিক আয়য়য়য়য়য়য়(আম্মু)

আয়ান এর মধ্যেই রেডি হয়ে এলো। নতুন প্যান্ট শার্ট চোখে সানগ্লাস। পারফিউম এর ঘ্রাণ এ নাক চিরছে আমাদের।

--এই তুই যাচ্ছিস কই? স্কুলএ কেউ রংড্রেস এ যায়? 

-- নাহ ইশাল কে স্কুল দিয়ে আসব।ভালো বাবার আর কষ্ট করতে হবে না। আমিই আজ থেকে,,,, 

এরমধ্যেই আব্বু চেচিয়ে আম্মুকে বললেন।

--এই তোমার ছেলে তোমার মতোই হয়েছে সামলাও এবার।চোখ এ থুথু দিয়ে কান্না করো এবার এই হলো ছেলের উদারতা। তোমার মেয়ের আগে এই ছেলেকে বিয়ে দিতে হবে দেখ

আব্বু হনহনিয়ে চলে গেল।আম্মু আয়ানকে কাছে ডাকলো

--শোনো আয়ান ইশাল খুব ছোট ওকে এসব কিছু বলবে না ।ওর পরাশুনায় ডিসটার্ব হয় এমন কিছু করবে না।শুধু খেয়াল রাখবে বাইরের কেউ ওর দিকে নজর না দেয়। তাহলে এসে আহান ভাইয়াকে বলবে কেমন?নিজে যাবে না তুমি এখনও ছোট। নিজেকে খুব বড় মনে করো তুমি,,, লম্বা হলেই বড় হয় না।আমি তোমাকে বেশি কিছু বললাম না তুমি ছোট বিধায়।পড়ালেখা না করলে আর ভালো রেসাল্ট না আসলে সব আশা বাদ বুঝলে। এইটা তোমার সাথে কনডিশন আমার 

আম্মুর শান্ত কথা আয়ান হয়তো বুঝেছে আর সিরিয়াস ভাবেই বিষয়টা নিয়েছে । ওর মুখ দেখেই আমি বলতে পারি কখন ও সিরিয়াস আর কখন ফান করে।

???

আয়নার সামনে রেডি হচ্ছি ভার্সিটি যাব বলে।আজ ইকটু হাল্কা লিপ্সটিক দিতে মনে চাইলো।লিপ্সটিক হাতে নিয়ে ঠোঁটে দিবো ঠিক তখনই

--দিবি না লিপ্সটিক।

এতদিন পরে আহানের গলা।চমকে পিছনে তাকালাম।আমার চোখ তৃষ্না মেটাতে ব্যস্ত হয়ে পরল।ছেলেটা কি ঘরের ভিতরে থেকে আর একটু ফরসা হয়ে গেলো? ঠোঁট টা কি আর একটু লাল হলো? ধ্যান ভেঙেই শুনলাম

--তুই ঠোঁটে লিপ্সটিক দিলে রাস্তার পাগল এসে চুমু খেয়ে যাবে। তাই এটা না চাইলে দিস না,,,চাইলে দিতে পারিস

এসব শুনার পরে আমার আর লিপ্সটিক দেয়ার ইচ্ছে নেই।জীবন এর প্রথম বার নিজে থেকে চাইলাম তাও।লিপ্সটিক রাখতে রাখতে বললাম

--দিলাম না আহান তাতে কি আছে আমার লিপ্স এমনিই পিংক।

-এএহহহহ ওনার ঠোঁট পিংক।পাতিলের কালি চিনিস?

--হ্যা আহান আর বলতে হবে না আমি তো আয়নায় ফেস বিউটি মুড লাগিয়ে দেখি তাই হয়তো ভুল দেখেছি নিজেকে সরি

-- বুঝেছিস।কথা সেটা না কথা হলো । আমার সাথে চল ঘুরতে যাব।

এতক্ষণ পচিয়ে ঘুরতে নেয়া?কি সাদ

-- আহান যাব না আমি

--না গেলে নাই। ভেবেছিস কি পা ধরব?এভাবে যে ইচ্ছে আপু ইচ্ছে আপু চলো পিলিজ তোমাকে ছাড়া আমি যাব না।

--না আহান আমি এটা সপ্নেও ভাবি না।আপনি একাই যান

 এতো ইগনোর করে আসছে এতদিন পরে তাও আবার এসেই পচানি। যাব না আমি হবে কি তাতে ভাবছে কি উনি? উনি ছাড়া ছেলে নেই নাকি

-- অকে গেলাম। এরপর যেন বায়না ধরিস না।

বলেই চলে গেলো। জীবন এ ধরব না আমি। হয়েছে টা কি পেয়েছে টা কি?

???

নিচে নেমেই অবাক। আহানের ঢঙ্গী ফ্রেন্ড আরিয়া সহ দুইটা ছেলে ফ্রেন্ড নিশুতি তানিয়া রাইনা বসে আছে।সবাই আমার ছোট।সবাই আহানের ফ্রেন্ড। 

--কেমন আছো আপি? (আরিয়া)

-- এইতো আপু ভালো তুমি

--ভালো ছিলাম এখন আর নেই। তোমার প্রতি আমি জেলাসি আগেই ছিলো এখন আরও বেশি বাড়ল আপি।( বলেই জড়িয়ে ধরল)

অন্য সবার সাথেও কথা হলো। কিন্তু আরিয়ার জেলাসির কারণ আজও জানতে পারলাম না।ভাবনা ফেলে জিজ্ঞেস করলাম 

--কোথাও যাচ্ছ তোমরা?

--হ্যা আপু ঘুরতে। তোমাকে আহান ডাকতে গেলো তুমি তো যাবে না(নিশুতি)

 
এর মানে ওই ঢঙ্গী আহানের সাথে যাবে আর একশো বার গায়ের উপর পরবে।আমি কিছুতেই বুঝি না একটা মেয়ে এতো বার গায় কিভাবে পরে।কথায় না কথায় সব সময় গায়েই পরবে।আহানকে একা ছাড়া যাবেই না।ওটা আমার আহান আমার অধিকার। কি আমার আহান?কিছুক্ষণ ভেবে হ্যা আমারই আহান।ফাইনাল

--কে বলল যাবো না।অবশ্যই যাবো 

--না ইচ্ছে তোকে নিবো না আমি

--আমি যাবো আহান পিলিজ। আম সরি।আমাকে না নিয়ে যাবেন না

-- ন্যাকা ন্যকা না করে ভার্সিটি যা

-- না

--তুই যাবি তোর ঘাড় যাবে

???

বাধ্য হয়েই ভার্সিটি আসতে হলো নইলে ছোটদের সামনে মাইর খেতে হতো।কেন যে আজ আহানের সাথে লাগতে গেলাম তার ফলস্বরূপ,,,,,,,,,, কপাল 

ভার্সিটি যেতে পারলাম না তার আগেই ছেচড়া গুন্ডা টাইপ ছেলেটা পিছনে লাগল।এই ছেলেটার জন্য ভার্সিটি আসতে আমার মনে চায় না।

পউশিঃদেখলি শুরু হয়ে গেছে

--হুম তাই ই দেখছি।আজ আমার মেজাজ খুব খারাপ। কি করব কিছু জানি না।বাট কিছু করব তা জানি

--দ্যাখ ওর বাবার টাকা আছে আর গুন্ডা টাইপ তাই এতো দেমাক। ভাবে যে পিছনে ঘুরলেই রাজি হয়ে যাবি।

আমাদের ফিসফাস কথার মাঝেই আকাশ নামক ছেছড়া ভাল্লুক আমায় নিয়ে গানের সুর ধরল

?ও সুন্দরী মনে কেন দোলা দিয়ে যাও

আজ কি হলো জানি না পিছনে ঘুরেই এক থাপ্পড়। থাপ্পড় মেরে নিজেই নিজের মুখে হাত চেপে ধরলাম।। এ আমি কিভাবে করলাম???আমাকে দেখে পউশিও মুখে হাত দিলো।

আমি কি করব দিক না পেয়ে পউশির হাত ধরে উল্টো বাসার পথ ধরলাম।

???

বাসায় না গিয়ে সোজা আহান এর রুমে এসেই দেখি। সে বাসায়ই আছে। ওর বন্ধুরা কেউ নেই একাই আছে।মনে পরল তাদের ঘুরতে যাবার কথা ছিলো । যায় নি তাহলে? কিন্তু কেন?

এত কিছু ভাবার সময় নেই।তার রুমে দৌড়ে ঢুকলাম।

-- আয়ান আয়ান বিপদ হয়ে গেছে।দুর্টঘনা হয়ে গেছে

--দুর্টঘনা কি?

--সরি দুর্ঘটনা হয়ে গেছে।

--আচ্ছা শান্ত হয়ে বল।শ্বাসকষ্ট উঠে যাবে

তার সামনে একটা চেয়ার টেনে আমাকে চেয়ারে বসিয়ে পানি খাওয়ালেন।মাথায় হাত দিয়ে শান্ত হতে বললেন কিন্তু আমি নিজেকে কন্ট্রোল এ আনতে পারছি না।আমাকে চমকে দিয়ে আমার গলা জরিয়ে ধরলেন।
আমি শান্ত হয়ে গেছি ,,,, ভয় আর নেই,,, কি জন্য ভয় পাচ্ছিলাম তাও ভুলে গেছি।শুধু ফিল করছি ফিল,,,,, পৃথিবী এতো কেন সুন্দর? 

চলবে
Like Reply
#10
পর্বঃ৭

???

তার সামনে একটা চেয়ার টেনে আমাকে চেয়ারে বসিয়ে পানি খাওয়ালেন।মাথায় হাত দিয়ে শান্ত হতে বললেন কিন্তু আমি নিজেকে কন্ট্রোল এ আনতে পারছি না।আমাকে চমকে দিয়ে আমার গলা জরিয়ে ধরলেন।
আমি শান্ত হয়ে গেছি ,,,, ভয় আর নেই,,, কি জন্য ভয় পাচ্ছিলাম তাও ভুলে গেছি।শুধু ফিল করছি ফিল,,,,, পৃথিবী এতো কেন সুন্দর? 

ভালোবাসলে বুঝি তার ছোয়া এতটা মধুর হয়?সুখ সুখ বাতাস বয়? এক বুক ভালোবাসা এসে মনের ভিতর টাকে শিতল করে দেয়?না আছে ভয় না আছে সংশয়। তাকে আরও শক্ত করে নিজের অজান্তেই জড়িয়ে ধরছি,, আরও আরও শক্ত করে,,,,,,দূরত্বের জড়িয়ে ধরা মনটা হয়তো মানতে পারছে না।আরও কাছে চাই।তার সাথে মিশে যেতে চাই। 

-- ইচ্ছে ইচ্ছে তুই কি আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরতে চাইছিস?

আহানের এমন কথা আমি প্রথমে বুঝতে পারলাম না।নিজের কৃৎ কাজের খেয়াল আসাতে খুবই লজ্জা পেলাম।কি ভাববেন আহান? ইস কি যে করি,,,, এমন লজ্জাজনক কাজ করলাম। তাড়াতাড়ি করে ছাড়িয়ে নিতে চাইলাম নিজেকে।কিন্তু ছাড়াতে পারলাম না আমি।আহান মোটা গলায় বললেন

--এতক্ষণ আমি ছাড়াতে পারছিলাম না।এখন আমিও তো ছাড়ব না।নে শক্ত করে জড়িয়ে ধর,,,ধর বলছি ধর।

কিছু বলছি না শুধু কাচুমাচু করছি।কিছু বলার মুখ আছে নাকি।এরপর থেকে আহান পাশে আসলে আমি খুব সাবধানে থাকব খুব।একদম তার মাঝে হারাবো না।আচ্ছা কেউ কি ইচ্ছায় হারায় নাকি?? হারিয়ে যাওয়ায় তো নিজের হাত থাকে না,,,,,,, থাকে মনের হাত।।আর এই পচা মন কারো কথা শুনে না,,, মাথারও না,,,,আমি তো অনেক দূরের কেউ।।।নাহ মন কে কনট্রোল করা যাবে না।তাহলে কি আহান এর পাশে আর আসব না? উহ মাথা হ্যাং হয়ে যাচ্ছে ।

--ভাবাভাবি শেষ হলে আসেন জরিয়ে ধরেন।আপনার মনোবাসনা পুরন করেন।

--আহান আপনি ভুল ভাবছেন।আমি,,,,,,,

-- লজ্জাও পাস আমার কাছে? 

এই বলেই খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরলেন। তারপরে সামনের চুলগুলো দুহাত দিয়ে সরিয়ে কানের পিছনে গুজে দিলেন।কপালে হালকা ঠোঁটের ছোয়া পেলাম।মনে হলো সাথে সাথে সরিয়ে নিলেন ঠোঁট। আমি চোখ খুলে বড় বড় করে তার দিকে তাকালাম।সে ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে থুতিয়ে বলে উঠলেন,,,,

--কি জানো বলতে এসেছিস তুই,,,আর কি সব শুরু করলি। লজ্জাসরম বাজারে কতো দামে বেচে এসেছিস কে জানে,,, কি বলবি বল বল 

নিজেও তো করলেন আর শুধু আমাকেই কথা শুনালো।মনটা খারাপ হয়ে গেল। আর কখনও পাশে আসব না আপনার আহান।আপনাকেও আসতে দেব না। মন খারাপ নিজের ভেতরে রেখে ভার্সিটির ব্যাপার টা খুলে বললাম। 

সে আমার দিকে এগিয়ে আসতে আসতে বললেন।

--বাপরে বাপ তোর তো ভালই সাহস। অনায়াসেই শাবানার পদবী দেয়া যায় তোকে । আমার উপর রাগ না থাকলে নিশ্চয়ই প্রতি দিনের মতো গান শুনেই চলে যেতি তাই না?

--হ্যা তা হয়তো যেতাম।

আমার কাছে এসেই ঠাস করে গালে এক চড় লাগিয়ে দিলেন।তার চড় ক্লাস নাইন পর্যন্ত খেয়েছি। বড় হবার পরে আর মারেনি।হাতে পায় মাথায় মেরেছে কিন্তু গালে না। গালের চড়টা নিতান্তই লজ্জা জনক হয়।কিন্তু আমি কষ্ট পেলাম খুব কষ্ট পেলাম।তার মুখের উপর কিছু বলার সাহস নেই আমার । ফোনটা পকেটে ভরে হনহনিয়ে চলে গেলেন। যাওয়ার সময় শুধু বললেন বাসায় চলে যেতে। 

ওখানে দাঁড়িয়ে কিছুক্ষণ কাদলাম। তারপরে রুম থেকে বেড়িয়ে ভালো মায়ের কাছে গিয়ে গলা জরিয়ে ধরলাম।

--কে আমার ইচ্ছু মা টা নাকি?

--কেন ভালো মা আমাকে বুঝি ভুলেই গেছ?

--না আপুনি তোমাকে আম্মু একদম ভুলে নি।আমার থেকে বেশি মনে করে হুম(ইশাল)

--ওরে বাবা তাই নাকি?আমার পিচ্চু বোনটার কি এই নিয়ে কোনো কষ্ট আছে?

আঙুল দিয়ে দেখালো একটু।যে একটুর পরিমাপ করার সাধ্য আমার নেই।

 হেসেই বললাম 
--বাবা এতো অনেক

--হুম্মম্মম(ইশাল)

--মা তুই কি খাস না ঠিক মতো। মিষ্টি একটা মেয়ে মরার মতো হয়ে যাচ্ছিস। আর গালে কিসের দাগ?

তোমার গুনধর ছেলে স্টাম্প মেরেছে। তার সাথে আমার আড়ি হুহ।
মুখে বললাম

--কিছু না ভালো মা,, চুলকে এমন করেছি।।(ওরনা দিয়ে ঢাকার বৃথা চেষ্টাও করলাম)

--ওহ আচ্ছা।ছোট বেলায় তো আহানের থাপ্পড় এ গাল ফুলাতি।দিনে দিনে তোরা কতো বড় হয়ে গেলি

(আর আজও ) 

--হুম ভালো মা এখন সে আর মারে না।আই লাভ ইউ ভালো মা আসি এখন

???

বিদায় নিয়ে বাসায় ফিরলাম।মন খারাপের পরিমাণ এতো যে রীতি মতো ফ্লোরে গড়াগড়ি দিচ্ছি।তবুও কিছু কাজ হচ্ছে না।শুধু কানে থাপ্পড় এর শব্দ বাজতেছে।আয়ান একবার আমার রুম এ উকি দিয়ে গেলো। একটু পরে শুনছি চিল্লাচ্ছে আর বলছে আম্মু আপু পাগল হয়ে গেছে।

-- শালা তোর বাপ পাগল হইছে।ওহ সরি ওর বাপ আমার বাপ এক বাপ
 

চুল ছিড়ব না কি করব।পাগল পাগল লাগছে।আমায় মারল? একদম ভালোবাসে না ভালোবাসলে মারতেই পারত না।

???

সন্ধা হতেই আজ জানালা, ব্যালকুনির দরজা বন্ধ করে দিলাম।এই প্রথম এমন করলাম।তবুও কষ্ট কমছে না।

রাত ১২ টা।ব্যালকুনির দরজা বন্ধ করে তার এপাশে দরজায় ঠেস দিয়ে বসে আছি। একটু আগে ধপাশ করে একটা শব্দ কানে এলো। মন খারাপের গভীরতা এতো ছিলো যে তা কানে কড়া নাড়লেও মাথা পর্যন্ত কড়া নাড়ল না।

খসখস শব্দে নিচের দিকে তাকালাম।দরজার নিচ থেকে একটা কাগজ এসেছে। কাগজটা খুলে এটা কে দিয়েছে তা বুঝতে আমার আর ভাবতে হলো না।একটা সরি পর্যন্ত বলল না সোজা হুমকি। 

[দরজা খোল নয়তো আরও এক হালি এক ডজন থাপ্পড় খাবি]

খুলব না আমি পেয়েছি কি,,,,খুলব না তো খুলবোই না

আরও কয়েকটা টোকা দিলেন দরজায়।তারপর একটা জোড়েসোড়ে লাথি দিলেন। তারপর সব নীরব। আর কোন শব্দ নেই। যা করে করুক আমার কি তাতে,,, অকারণে কেন মারবেন হু?আমার বুঝি কষ্ট হয় না এই বলেই আবার কেদে দিলাম।

???

আয়ান আহানকে ফোন দিলো আহান তখন হাতে একটা গ্লাস ধরেছে ভাঙার উদ্দেশ্যে। ঠিক তখনই ফোন করার কারণে আহান কিছুটা বিরক্তি নিয়ে ফোন রিসিভ করল

--হ্যা আয়ান বল

--আহান ভাই কেমন আছো?

-- কি ব্যাপার এতো ভালো হলি কিভাবে ভাবাই যায় না।।তুই আমার ভালো থাকার খবর নিচ্ছিস?তা কি কাজ বলে ফেল মাথা ঠিক নেই এমনিতেই 

-- এই এই তোমাদের হয়েছে কি হ্যা,, ইচ্ছে আপু চুল টানছে ফ্লোরে গড়াগড়ি দিচ্ছে আর তোমার মাথা খারাপ। তা তোমার উপসর্গগুলো বলো তো মাথা খারাপ ছাড়াও আর কি কি করছে?

আহান ইচ্ছের কর্মকান্ড শুনে মনে মনে হাসল।আবার খারাপও লাগলো মেয়েটা খুব কষ্ট পেয়েছে। 

--বাজে বকা থামা

--আচ্ছা,,ভাই আমার মনে হয় আপু প্রেমে পড়ছে।এগুল প্রেমের উপসর্গ না বলো?

-- কি? তুই সিউর? 

--আরে হ্যা আমারও এমন করতে মন চাচ্ছে তাই বুঝলাম

--তোর কার জন্য এমন মনে চাচ্ছে আবার?

--ওটা বাদ দাও। তোমার কি হয়েছে বলো

-- কানের নিচে একটা দেব।,,,,দেখবি ডিরেক্ট হয়ে গেছে,,,,বল বলছি

--তুমি তো আমার শালা হবা কি আর বলবো,,,লজ্জা লাগে তো

--ওরে বাবা তুই জেনে গেছিস। নিশ্চয়ই গাধাটা ভুলে বলেছে 

--তুমি জানতে ভাই? আর আমায় বললে না।এমন মীরজাফর এর মতো করতে পারলা?তোমার বোনের জামাই এতো গুলা মেয়ের পিছনে ঘুরে তুমি তো জানতে আমার বিষয়ে সব তাও বাধা দিলে না।

--কজ তুই সিরিয়াস না ফান করতি,,, শোন পিচ্চু এসএসসি দিক আমি ঠিক করে দেব তোদের সব,,, শুধু খেয়াল রাখবি ওর মাথায় অন্য কোনো ছেলে না ঢুকে।এইবার এর বদলে আমায় হেল্প কর।দরজা খোল আমি তোদের ছাদের দরজায় দাঁড়িয়ে আছি

--ছাদ লাফিয়ে এসেছো এতো রাতে আমার কাছে? কোনো কাজ?

--না তোর বোনের কাছে।ভালো মা ভালো বাবা ঘুম না?

--হুম ঘুম

--তাহলে খোল।

--আসছি



দরজা খুলে  

--কাহিনি কি বলো তো ভাই,, এতো রাতে বোনের ঘরে ছেলে ঢুকতে দিব জিজ্ঞাসাবাদ করে নি

-- পেকে গেছিস খুব। যা নিজের রুম এ যা

-- তা ভাই কাহিনি এই,,,,এই জন্য এতো চুল টানাটানি? 

--তুই এইবার মুখ থামা

আয়ান চিন্তিত ভাব নিয়ে বললো 

-- মেয়ে আর পেলে না অই বুড়ির উপর শেষমেষ 

এই বলেই আয়ান গান গাইতে গাইতে আগেই দৌড় লাগালো।

?পাগল মন মনরে মন কেন এতো কথা বলে

 আহান দৌড়ে আয়ানকে ধরে হাত মুচড়ে ধরে বলল এই কথা জানো তোর বোন ওই হাবাটা না জানে

--জানে না????(মুখ এত্তো বড় হা করে)

--না। ভালো মা ভালো বাবা ইশাল কাউকেই বলবি না।নইলে তোর লাইনের তার কেটে দিব আর জীবন এ সংযোগ প্রদান করবে না।

-- কি যে বলো ভাই আমি অনেক ভালো ছেলে

এখন যা ইচ্ছের দরজায় কড়া নাড়।আমার গলা শুনলে দরজা খুলবে না



--কে রে?

--আপু আমি বই রেখে গেছি নিতে আসছি

--হ্যা সব আমার রুমেই রাখ রাখ আর কাজ কি,,,,সবাই আমায় জ্বালা 

দরজা খুলে আহানকে দেখে দরজা অফ করতে গেলে আহানের শক্তির সাথে পেরে উঠল না। আহান ঢুকেই দরজা আটকে দিলো।
ইচ্ছে ভয়ে ঢকঢক করছে।এরপর কি হবে ওর ধারণার বাইরে। 

আহান এগোচ্ছে আমি পিছিয়ে যাচ্ছি। দরজার সাথে ধাক্কা খেলাম এর সোজা মানে হলো আমার পথ শেষ। আহান আমার একদম কাছে এসে হঠাৎ নুয়ে পড়লো।আমি লাফিয়ে উঠলাম।উঠে দাঁড়িয়ে আমাকে হাতের কাগজের টুকরা গুলো দেখালেন। যেটাকে আমি নিজ হাতে টুকরো করেছি। ঠকঠক করে কাপছি। এতো কাপছি যে আহান হয়তো অপ্রস্তুত হয়ে পড়ল।

--কি হয়েছে এতো কেন কাপছিস?চোখের সামনে কি বাঘজাতীয় কিছু দেখছিস?( কাধ ঝাকিয়ে)

আমি নিশ্চুপ।আমার কাপাকাপি থামেনি। আরও বাড়ল বুঝি

--আমার চিঠি পরেছিস?

--আমি কোন চিঠি পাই নি আহান(আমতা আমতা করে)

--তাহলে ভুতে ছিড়েছে??

--হুম,,,, না না 

--তাহলে?

--আমি বলেই কেদে উঠলাম

চলবে,
Like Reply
#11
পর্বঃ৮

???
--আমার চিঠি পরেছিস?

--আমি কোন চিঠি পাই নি আহান(আমতা আমতা করে)
--তাহলে এগুলো কি ভুতে ছিড়েছে??
--হুম,,,, না না 
--তাহলে?
--আমি বলেই কেদে উঠলাম
--তো এমন মহৎ কাজ করে কাদছিস কেন?
--আমার ভুল হয়ে গেছে আহান।আমি আর জীবনে জানালা দরজা আটকাবো না,আপনার কোনো জিনিস ছিড়ব না। যত্ন করে রেখে দেব,,,কাউকে ধরতেও দেব না।আমাকে বকবেন না পিলিজ আপনি যা বলবেন আমি তাই করব

-- যা বলবো তাই?
--হ্যা
--সিউর?
--হ্যা হ্যা(দুই হাত মুখে চেপে ধরে মাথা নাড়াচ্ছি)
--সিউর তো

--হ্যা বলেও ঘাবড়ে গেলাম কি এমন বলবে? তাকে কোনো বিশ্বাস নেই একদম বিশ্বাস নেই

--আমার সামনে,,, 

--কি?

--আমার সামনে,,,

--কি?
এই ফাজিল টা কি বলে কে জানে,,,,এর শিরায় শিরায় শয়তান দৌড়াদৌড়ি করে

এরপর আহান আয়েশ করে বসলেন খাটের উপর। বললেন

--১০০ বার কান ধরে উঠ বস কর তো ঝটপট 

--কিইইইইইইইই

--এই হাবা আস্তে ভালো মা এসে যাবে 

--ওহ হ্যা মানে কি আহান আমি এই বয়সে,, আমি যে এখন আর ছোট নেই 

--তুই ছোট নেই? কই দেখি তো,, (বিছানা থেকে উঠতে উঠতে)

--কি নায়ায়ায়া(ভয়ে দুই কদম সরে গেলাম সব কিছু ঠিকঠাক আছে তবুও জামাকাপড় টেনে টুনে ঠিক করায় ব্যস্ত হয়ে গেছি আমি)

--কেন?
--কান ধরছি ধরছি আপনি এগোবেন না পিলিজ আমার ভয় করছে
--গুড গার্ল,, বলে নিজের জায়গায় গিয়ে বসলেন

বিনা বাক্যে কান ধরে উঠা বসা ছাড়া গতি নেই আমার।উঠছি বসছি উঠছি বসছি
--আহান আর পারছি না।আমার পেটে ব্যথা ছিলো এমনিতেই আমার দাড়া আর হচ্ছে না আহান
--চুপ চাপ উঠবস করবি অজুহাতে চলবে না

সত্যিই খুব কষ্ট হচ্ছে।কষ্টে চোখ দিয়ে দু ফোটা জল বেড়োলো।তখনই আহানের গলা
-- বলতে পারতি সমস্যা আছে কাদার কি আছে
--বলেছিলাম 
--আচ্ছা সরি টুকি বুঝিনি আমি ।বেশি কষ্ট হয়েছে?
-- নাহ 
--তাহলে আবার করাই?
--নায়ায়ায়া
--আয় বস পানি খা

বিছানায় বসালেন আমাকে,,দৌড়ে গিয়ে পানি ঢেলে আনলেন,নিজের হাতে খাওয়ালেন,আমার ওরনা দিয়ে মুখ মুছালেন। তার কেয়ার আমাকে খুব মুগ্ধ করে,,, সে এমনই আমাকে কাদাবে কিন্তু তার সামনে কাদলে সেটা কখনোই সহ্য করবে না।রাগ বেশি থাকলে বলবে ঘরে গিয়ে কাদ আর না থাকলে পাশে বসিয়ে এভাবেই যত্ন করবেন।ভালোবাসা উপলব্ধি করার পর থেকে এসব আরও ভালো লাগে। কেমন ভালো লাগে তার ব্যাখ্যা দেয়া কোন মতেই সম্ভব না।ভালোবাসায় যে ডুব দেয় সেই বুঝি এই সুখ অনুভব করতে পারে।আমিও এই দুনিয়ার সেই সুখ অনুভব করার ভাগ্যটা বুঝি এবার অর্জন করেই নিলাম

আহান পানির গ্লাস রাখতে রাখতে বললেন কি এতো ভাবছিস আমার দিকে তাকিয়ে? 

আমতা আমতা করে উত্তর দিলাম না কিছু না এমনি দেখছি

--আরিয়া আমাকে কখন এভাবে দেখে জানিস ? 

-- কখন?

-- যখন ও আমার উপর নতুন করে প্রেমে পড়ে। ওর প্রেম দিনে অনেক বার নতুন হয় ইনফ্যাক্ট আমাকে দেখলেই হয়

আমি ভীষম খেলাম।নিজের বোকামিতে আর রাগ লাগছে আরিয়ার ব্যাপারটা শুনে। আমার আহানের দিনে মেয়েটা কেন তাকাবে? হুম? আমার আহান আমি তাকাবো ওই মেয়ে কেন? কেন? কেন? হোয়াই?

--কেন আহান আপনি কি ওর এমন ভাবে যত্ন করেন?

মুচকি হেসে ফেললেন যা চোখ এড়ায় নি আমার। আমার পাশে এসে বসতে বসতে বললেন
-- যত্ন নিচ্ছি বলে তাকিয়ে আছিস?

--না তো(এর সাথে কথা বাড়ায় মানুষ?,,, নিজেই ফেসে যাব তাই চুপ থাকাই বেটার মনে হচ্ছে)

আহান নিজেই আর প্রসঙ্গ টা না টেনে বললেন

--ছেলেটা এতো দিন তোকে ডিসটার্ব করে বলিস নি কেন?আজ থাপ্পড় মেরে নিজেই ভয় পেয়ে দৌড় লাগালি,,,,৷ সাহসীকতার কি পরিচয় দিলি বলবি আমাকে?এই জেনারেশন এ এসে মেয়েদের এভাবে হলে চলবে না মোটা মাথায় কিছু ঢুকেছে?

--থাপ্পড় মেরেছি তো ভয় পাই আর যা করি।আমাকে কেন মারলেন (অভিযোগের স্বরে)

--একই কাজ ছেলেটা প্রতিদিন করত ইচ্ছে।তুই প্রথম দিন মারলে আমি মারতাম না তোকে। প্রথম দিন মারিস নি তুই ছেলেটাকে,আর যেদিন থেকে এসব শুরু করেছে সেদিনই এসে বলিস নি আমাকে,,,, তাহলে তোকে মারবে না তো কি গলায় মালা পরাবো?

--আহান আপনি ওই ছেলের থেকে অনেক ছোট।ছেলেটা আমার থেকে এক ইয়ারের বড়। আমি কিভাবে আপনাকে বলতাম?

--আমি ছোট আমি ছোট? চাইলে বাচ্চার বাপ হয়ে যেতে পারি জানিস তুই? আমাকে ছোট বলে,,
এই তুই বডি দেখেছিস আমার?ছোট লাগে তোর থেকে? 

--নাহ কিন্তু বয়সে তো,,,আর আপনাকে তো আমার কাছে কিউট একটা বেবি ফেসের ছেলে মনে হয়।কাছে পেলে যেসব বাচ্চাদের গাল টেনে দিতে মন চায় আপনার গালও টেনে দিতে মন চায় হিহি

--চুপ একদম চুপ আমি তোর থেকে বড় মাথায় রাখবি।আমি তোর থেকে কি? বড়। নইলে তোকে দিয়েই এক্সপেরিমেন্ট করে বুঝিয়ে দেব আমি বড় নাকি বেবি 

--কিসের এএক্সপেরিমেন্ট? আর এটাকে বড় বলে না ম্যাচুরিটি বলে।আপনার আমার থেকে ম্যাচুরিটি বেশি কিন্তু বড় না

--আবার জ্ঞানউহ এ তুই চুপ করবি? দাড়া তোর শাস্তি শেষ হয় নি

বলেই চটাং করে বিছানায় শুয়ে পরল,,

-- নে পা টেপ।সারা রাত পা টিপে দিবি

--এই রাতে? আমি ঘুমাবো না?

--না ঘুমাবি না।আমি ঘুমাবো মেয়েদের এতো ঘুমাতে নেই দুইদিন পরে বিয়ে করে শশুড় বাড়ি চলে যাবি তখন দেখবি রাত জাগা কাকে বলে

মনে মনে বলছি আমার শশুর বাড়ি দূরে হবে কেন যে পাঠাতে হবে আর রাতই বা জাগতে হবে কেন হুম? 

--আচ্ছা রাত জাগতে হবে কেন আহান?

-উহ হু রে তুই মানুষ হবি কবে,,এখন রাত জাগবে কেন তাই শিখাবো?শিখালে খুব খারাপ হয়ে যাবে,,,, পা টেপ নয়তো রাত জাগা শিখিয়ে দেব।

শেষ কথাটা কানের খুব কাছেই এসে বললেন। আমার কি হলো জানি না তার দিকে আর তাকাতে পারছি না।বিনা বাক্যেই পা টিপছি। আর উনি পা দুলাচ্ছে আর বলছে তোর পা টিপা হচ্ছে না ইচ্ছে।আচ্ছা সে যদি এভাবে পা দুলায় আমি কিভাবে ভালো ভাবে কাজটা করবো? সব ইচ্ছে করে করছে সব।

হঠাৎ করে বলে উঠলেন 

--তুই নাকি কাকে ভালোবাসিস?

--আমতা আমতা করে বললাম কি যে বলেন আমি আবার কাকে। কে বলল আপনাকে?

--নাহ শুনলাম ফ্লোরে প্রচুর গড়াগড়ি দেয়ার কম্পিটিশন করছিস। আর আয়ান বলল তোর মধ্যে বেশ কিছু দিন ধরে প্রেম প্রেম ভাব,,,,,

--ওই আয়ানটাই নষ্টের মূল। ওর খবর আছে

কানের কাছে এসে বললেন ভালোবাসাতে ক্ষতি নেই। স্বাস্থ্যের জন্য ব্যাপক ভালো 

-- কেমন ভালো সময় হলে শিখাবো।পা টিপ পা টিপ।হ্যা এদিক এদিকটায় হ্যা হ্যা

 ওনার এমন কাজে খুব রাগ হওয়ার কথা কিন্তু কেন জানি না আমার ভালোই লাগছে। সারাজীবন এভাবে পা টিপেও যদি তার সাথে থাকা যায় আমি রাজি খুব রাজি হিহি।

মনে মনে হাসছিলাম নিজের বেখেয়ালে তা যে সত্যিই ভ্যাক ভ্যাক করে হাসছিলাম তার টের আমি পাই নি।তা বুঝলাম আহানের কথায়

--হাসি থামিয়ে আমার কথা শুন

নিজের কাজ কর্মে আমি সত্যিই অবাক হচ্ছি।

--হ্যা হাসছি না বলুন

--আমরা ৫ দিন পরে ঘুরতে যাচ্ছি। ভাবছি দূরে যাব কোথাও একটা । 

--আমরা কারা ফ্যামিলির সবাই?

--না

--আপনার বন্ধুদের সাথে? আমি তো যাচ্ছি তাই না আহান?

-- না আমরা ফ্রেন্ড সার্কেলরা যাচ্ছি। 

--কে কে? শুধু ছেলেরা?

--না আয়রা নিশুতি রাজ শুভ

--আমিও তো তাহলে যেতে পারি

--না পারিস না আমি নেবো না।

--আপনি তো আমাকে ছাড়া ঘুরতেও যান না তাহলে 

-- যাইনি যাব।তুই তো বেড়িয়ে এলি।

-- তখন কার সিচুয়েশন আপনি জানেন আহান

--হু তো? 

পা টেপা থামাতে বলি নি আমি 

-- সরি বলেই কথা না বাড়িয়ে নিজের মতো চুপ করে কাজ করছি।সেও কোন কথা বলছেন না।

কখন চোখ লেগে এলো জানি না। আহানের পেটের উপর আমার মাথা ধুম করে পরল।মেয়েদের ঘুম যতই গাড়ো হোক কোনো ছেলের সংস্পর্শে আসলেই তা ভেঙে যাবেই। ঘুমের ঘোরে পরে গেছি উঠতে চেয়েও পারলাম না ততক্ষণে আহান আমার মাথায় হাত রেখেছে।সে এখন কি করবে তা দেখার লোভে আমিও আর নড়লাম না ঘুমের ভান ধরেই পড়ে রইলাম।

আহান সেভাবেই মাথায় হাত বুলাচ্ছে আর বলছে খুব খারাপ ব্যবহার করি তোর সাথে?এসব নিয়েই তো আমি বেঁচে আছি। কষ্ট পায় না কেমন? টুকি তোকে যেদিন থেকে সুখ দিবো সেদিন থেকে আর কখনও কাদাবো না আমি কখনোও না। 

এদিকে খুশিতে আমার নাচতে মন চাচ্ছে কিন্তু আমি নিরুপায়।আমি যে তার অন্যরকম ছোয়ার অর্থ পেয়ে গেছি।কবে দেবে সেই সুখ আমায় কবে?ভালোবাসে উনি আমাকে? কই ভালোবাসি তো বললো না।তবুও তার আদর মাখা গলা যেনো আমায় এক অন্য অনুভূতির জগতের জানান দিলো। 

 আহানের ধারণা মতে ইচ্ছের ঘুম খুব কড়া আর তাই সে নিশ্চিন্তে ইচ্ছের গালে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। 

কিছুক্ষণ পরে আমার হাত দুইটা ধরে টেনে উঠিয়ে তার বুকের উপর আমার মাথা রাখলেন তারপর টাইড করে জড়িয়ে ধরলেন। পেটের গান টা ভালোই লাগছিলো আমার। ছোট বেলায় মায়ের পেটের উপর সটাং হয়ে শুয়ে পেটের দারুণ গান টা উপভোগ করতাম তারপরে এই আহানের।মায়া মায়া লাগছিলো। অনুভব করলান বুকের ঢিপঢিপ আওয়াজ টা আরও অধিক সুন্দর আরও অধিক। কি সুন্দর রিদাম।এই বুকের ঢিপঢিপ আওয়াজ এর সাথে হারিয়ে যাচ্ছি আমি ।এমন মনে হচ্ছে এই ঢিপঢিপ আওয়াজ আমার প্রতিদিন চাই প্রতিক্ষণ চাই। আহানের বুকে হালকা করে নিজের অজান্তেই ঠোঁট ছোঁয়ালাম। সে কি সুখ আর চুরি করে এমন কাজ করাতে এত আনন্দ হয় তা আগে জানতাম না আমি সত্যি জানতাম না।অচেনা জগৎ চিনতে এতো ভালো লাগা কাজ করে,,,, আমি আরও নতুন জগৎ চিনতে চাই আরও আরও

এদিকে আহান ইচ্ছেকে বুকের উপর থেকে নামিয়ে নিজের হাত ছড়িয়ে হাতের উপর শোয়ালো।

আমার সারা মুখে আঙুল দিয়ে আকিবুকি করছে।ধুর বাবা শুরশুরি লাগে তো।এভাবে কতক্ষণ করবে কে জানে?

ওনার আঙুলটা আমার ওষ্ঠদ্বয়ে আকিবুকি শুরু করলেন।আমার শরীর শীতল হয়ে আসছে। কোথায় হারিয়ে যাচ্ছি আমি জানি না সত্যিই জানি না।জানব কি করে সব টার সাথেই যে নতুনভাবে পরিচিত হচ্ছি আমি।নতুন ভাবে।আহানের কেমন লাগছে আমি জানি না।তখনি আহানের গলা

--কি মিষ্টি তুই!এতো মিষ্টি ঠোঁট নিয়ে কেউ একটা ছেলের পাশে এমন নিশ্চিন্তে ঘুমায়?ভুল করে ফেলি যদি? এই ভুলের কিন্তু শাস্তি হয় না 

এই বলেই খানিকটা হাসলেন।
আসলেই আহান আমি নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে নেই ঠিকি কিন্তু ঘুমের ভান ধরে আছি নইলে আপনিই আমার থেকে চরম বিরক্তিতে পরে যাবেন। এতো শক্ত কথার পিছনে আপনার আদর মাখা গলাটা আমাকে শুনাতে চান না তা আমি বুঝে গেছি।
আমার ঠোঁট ধরে রীতিমতো টানাটানি শুরু করে দিয়েছে।কি করছে এগুলা।আহান আবার বলছে

--আমি পারছি না আমার ভুলটা করতে মন চাচ্ছে ইচ্ছে।তুই জানলে কি হবে উহ। তুই বল কোন ছেলে পারে এই অবস্থায় সাধু হয়ে থাকতে সে হিসেবে আমার চাওয়া সামান্য,, খুবই 

কি করতে চাইছেন উনি।এবার আমারই বুক ঢিপঢিপ না ঢপঢপ করছে। লজ্জা লাগছে সব লাগছে।কিছু ভুল বলেননি উনি।কিন্তু কি করতে পারে?আবার উনি বলছেন

--এই ভুল একবার করলে যে বার বার করতে ইচ্ছে করবে কিন্তু এমন সুযোগ আমি পাব কই? আবার কিছুটা থেমে বললেন রাতের বেলা চুপি চুপি তোর রুমে আসতেই পারি।বেশি কিছু না এইটুকুন দুষ্টমি করব যেদিন তোকে সবটা বলব খুব করে সরি বলে দেব রাগ করবি না কেমন?এমন ছোয়া এই প্রথম কেমন হবে আমি জানি না। আই আম সো এক্সছাইটেড।তুই তেই যে আমি তোকেই ছুবো সমস্যা কি? আমারই আমানত তুই শুধু আমার।

আবার উনি খিলখিলিয়ে হাসছেন।

আমি তার কথা কান পেতে খুব মনযোগী হয়ে শুনছি কিছু একটা হবে আমার সাথে খুব বুঝতে পারছি খুব।কিন্তু কি হবে? তাই ভাবছি।নিজেকে নিয়ে ভয় পাচ্ছি আরও বেশি।ধরা না খেয়ে যাই।কেন যে ঘুমের ভান ধরতে গেলাম আফসোস করছি খুব করে।

আমার এমন ভাবনার মধ্যেই হঠাৎ করে ঠোঁটে স্পর্শ পেলাম।আকস্মিকতায় চোখ নিজে নিজেই খুলে গেছে।আহানের চোখ তখন বন্ধ। তার প্রত্যেক কাজের মতোই মনযোগের এই কাজটাও।এমনটাই তাকে দেখে মনে হচ্ছে আমার।আর আমি? আমি আমাকেই ভুলে যাচ্ছি এ এক অন্য অনুভূতি। ঠোঁটের স্পর্শ এমন হয়,,,এমন অনুভূতি। নতুন ভাবে এত কিছু কেন শিখাচ্ছে সে আমাকে? এটা বুঝলাম ভালোবাসার মানুষ এর ছোয়া কখনও খারাপ লাগে না প্রথম বারেও না,অনিচ্ছায় হলেও না। আমি এক ধ্যানে তাকিয়ে আছি কতক্ষণ পরে তিনি নিজেকে আমার থেকে সরালেন আমি জানি না।

সে চোখ খুলে আমাকে তাকিয়ে থাকতে দেখে ছিটকে দূরে সরে গেলেন।আমি ততক্ষণে চোখ বুঝেছি কাজ হবে কি? দেখে ফেলেছেন উনি।

নিচের দিকে তাকিয়ে আছে অপরাধীর মতো। আমি কি করব কি বলবো বুঝতে পারছি না আস্তে আস্তে করে উঠে বসলাম। আজ নিজের বোকামির জন্য এমনটা হলো ।তাই আমি নিচে দিকে তাকিয়ে আছি।
আহান আস্তে করে সরি বললেন।এরপর বললেন ঘুমের অভিনয় করে ঠিক করিস নি।
তারপরে ব্যালকুনির দরজা খুলে নিজের ঘরে চলে গেলেন। 
আমি তাকিয়ে আছি আমার চমক কাটছে না একদম না। 
আমি ভাবছি এখনো ওটা লিপকিস ছিলো? লিপকিস খেতে এমন হয়?


চলবে,
Like Reply
#12
পর্বঃ৯

???

আহান নিচের দিকে তাকিয়ে আছে অপরাধীর মতো। আমি কি করব কি বলবো বুঝতে পারছি না আস্তে আস্তে করে উঠে বসলাম। আজ নিজের বোকামির জন্য এমনটা হলো তাকেও লজ্জিত হতে হলো ।আমিও নিচে দিকে তাকিয়ে আছি।

আহান আস্তে করে সরি বললেন।এরপর বললেন ঘুমের অভিনয় করে ঠিক করিস নি একদম।উঠেই ব্যালকুনির দরজা খুলে নিজের ঘরে চলে গেলেন। আমি তাকিয়ে আছি আমার চমক কাটছে না একদম না। আমি ভাবছি এখনো ওটা লিপকিস ছিলো? লিপকিস খেতে এমন হয়?

তার মনের কথাগুলো জেনে আমার খুশিতে নাচতে মনে চাচ্ছে।কি করব কই যাব।পারলে তো ডানা থাকলে সারা আকাশ টাই ঘুরে আসতাম।ভালোবাসার কথাগুলো কি মিষ্টি হয়!!!!তার কথাগুলো খাওয়া গেলে এতক্ষণে আমার ডায়বেটিস হয়ে যেত ।কিন্তু আমি তো কিছু একটা খেয়ে ফেলেছি।হ্যা লিপকিস খেয়ে ফেললাম এবার আমার ডায়বেটিস হবে না তো?খুব চিন্তার বিষয় !!! ভাবতে হচ্ছে!!!!!
আমার মিষ্টি যে খুব পছন্দ। আর এর থেকে বড় কথা লিপকিস ও আর খেতে পারবো না। নাহ ডায়াবেটিস আসিস না আমার কাছে আমি মরে যাব।কি লজ্জার ব্যাপার লিপকিস খেতে পারবো না বলে মরে যাব বলছি।

সে কি লজ্জাগুলোও সাথে করে নিয়ে গেলেন নাকি!!!!!উহ মরেই যাব।

 বসা অবস্থায় বিছানার সাথে মাথা মিলিয়ে দিচ্ছি আবার আবার উঠছি।উহ পাগল পাগল লাগছে।আমাকে সেও আমাকে সেও ভালো*** অনেক লজ্জা লাগছে। বিশ্বজয় করে ফেলেছি আমি আমার এমন খুশি লাগছে। কারণ সেই তো ছিলো আমার বিশ্ব।

দৌড়ে আয়নার সামনে গেলাম।টকটকে লাল লিপ্সটিক টা পরলাম। চুল গুলো খুলে দিলাম।আয়নার সামনে নিজেকে দেখছি বার বার।এমন পাগলামো কখনো করা হয় নি আমার। ইচ্ছে তো করছে দৌড়ে গিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরি। নাহ লজ্জার বিষয় মেয়ে মানুষ এর কিছু থাকুক না থাকুক লজ্জা ভরপুর থাকতে হয়।

???

এরপরে ৫ দিন আহানের খোঁজ নেই বাসায় গিয়েও পেলাম না। দরজা টাকিয়েও খুলাতে পারলাম না।৫ টা দিন এতো কষ্ট হয়েছে যা প্রকাশ করতে আমার ভাষা ব্যর্থ।কি জানি কতো দিন এভাবে করবেন।তার মধ্যে গিলটি ফিলটা খুব বেশি কাজ করে ছোটবেলা থেকেই হয়তো সেটাই আমার থেকে দূরে থাকার প্রধান কারণ। সেদিনের জন্য নিজেকেই বার বার দোষ দিচ্ছি। আসলেই একটু সুখের লোভ করতে নেই কখনোই।ভাগ্যে থাকলে সারা জীবনের জন্যই আসবে।একদিনের সুখের কারণে সারাজীবন হারানোটা বোকামির শামিল। 

আজ আকাশটা খুব গম্ভীর । আমার মতো অভিমান জমেছে হয়তো আকাশের বুকে । আচ্ছা আকাশকে কে কষ্ট দিলো???বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা খুব বেশি।আজ খুব ভিজবো। ভিজে ভিজে কাদবো।এমনি কান্নার থেকে বৃষ্টির মধ্যে কান্নার প্রশান্তি সবচেয়ে বেশি হয়। যতটা শান্তি বৃষ্টির মধ্যে কেঁদে পেয়েছি ততটা শান্তি আমি কোনো কান্নায় পায় নি।আর এই শান্তি পাওয়া যায় হয়তো প্রিয়জনের বুকে।

???

শোকের মধ্যে আছি তাই সাদা জামাটা গায়ে পরলাম।তারপরে টুকটুক করে হাটতে হাটতে ছাদে পৌছালাম।ভালো মায়েদের ছাদের ওপাশ টায় একজন পকেটের মধ্যে হাত দিয়ে । গায়ে টি-শার্ট থ্রী কোয়াটার প্যান্ট,আর এলোমেলো চুল।আমার উল্টা দিকে ফিরে আছে। আমাকে দেখেনি সে এখনও।এটাই সুযোগ তাকে দুচোখ ভরে দেখে নেয়ার। সেদিনের রাতে অতটা কাছে এসে তারপরেই এতটা দূরে যাওয়া আমার এই অবুঝ মনটা মানতে পারে নি।নিজের থেকে ছোট এই ভেবে খুব লজ্জাও লাগছে। কিন্তু ছোটবেলা থেকে তো আমিই তার কাছে ছোট ছিলাম।আর নিজের কাছেও বড়ো লাগেনি মূল কথ হতেই দেয় নি বড়ো।

ছাদের খুব পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম।এরমধ্যেই আকাশের ডাক। আমি সত্যিই ভয় পেয়ে গেলাম।ভয় পাওয়ার মতোই ছিলো। কিন্তু মুখে শব্দ করিনি। সে শুনে ফেললে চলে যায় যদি শুধু এই ভয়ে।ভালোবাসা অজান্তেই কতো কি শিখিয়ে দেয় আমাদের। ভাবতে ভাবতেই আহানের গলা

--আকাশের ডাক ভয়ই যখন পাশ ভিজতে কেন আসিস

আমি ভাবছি আমাকে না দেখে পিছনে না ফিরে বুঝলো কিভাব আমি এসেছি?মনের টান? ধুর হয় নাকি এইটা কি বোঝেনা সে বোঝেনা নাটক?

তখনই আবার আহানের গলা।আমার দিকে ঘুরে বললেন

--আন্দাজ করে ছিলাম কারণ বৃষ্টি নামবে আর তুই ভিজবি না এটা কখনো হয় নি

--কিন্তু এসে গেছি তা কিভাবে বুঝলেন?

--দরজায় হালকা শব্দ হয়েছিলো । আর যখন নিরিবিলি পরিবেশে একা থাকবি ২য় ব্যক্তি আসলে তার উপস্থিতি অনুভব করা যায়। 

--অহ আচ্ছা

 একভাবে তাকিয়ে থেকে আমার কাছে আসছে আর তার সাথে দৌড়ে দৌড়ে বৃষ্টিও আসছে,, নিমিষেই ভিজিয়ে দিলো গা।আমি তার দিকে তাকিয়ে আছি সে আমার দিকে।সে তাদের ছাদের পাশে এসে দাঁড়ালো।দুই ছাদের কর্ণারে দাঁড়িয়ে আমরা। কিছুটা দূরের কৃষ্ণচূড়া গাছ নিজের বেগেই দুলছে।দুরত্ব হাফ হাতও হবে না আমাদের মাঝে ।কি জানি কোন ঘোরে চলে গেলাম।ঘোর কাটলো তার হাতের ছোঁয়ায়। আমার ঠোঁটের কোণে হালকা হাসির রেশ পড়ল।হাতটা আবার সরিয়ে নিলেন তার হাতে কৃষ্ণচূড়ার পাতা।বুঝলাম এটা তুলতেই গালে হাত দিয়েছে।নীরবতা ভেঙে বলে উঠলাম

--কিছু বলছেন না যে

--কিছু বলার নেই 

--আমাদের ছাদের আসুন না পিলিজ

--এসে কি হবে? 

--কিছুইনা।আমি তো লাফাতে পারি না আসুন পিলিজ আসুন।

সে তাদের দরজার দিকে হাটা দিলেন। আমি ভয় পেয়ে গেলাম।এতো দিন পরে পেলাম আর এভাবে চলে যাবে? বার বার ডাকছি কিন্তু ফিরে তাকালেন না। দরজা পর্যন্ত গিয়ে দরজাটা বাইরে থেক আটকালেন।লাফিয়ে আমাদের ছাদের এলেন।আমাদের দরজাও বাইরে থেকে আটাকালেন কি করতে চাইছে আমি বুঝতে পারছি না।

তারপরে আমার দিকে হেটে হেটে এলেন।তৃপ্তির হাসি ফুটলো আমার মুখে।কারণ এখন তিনি কিছুক্ষনের জন্য আমার কাছেই থাকবে তার নিশ্চয়তা আমি পেয়ে গেছি। 

হাত ধরে ছাদের মধ্যের দিকটায় এসে বসে পরলেন আমাকে নিয়ে।

--৫ দিন কোনো দেখা কেন দেন নি আহান?

--আজ তো দিলাম।

--জানালা দিয়ে হাত নেড়ে কতো ডেকেছি। জানালা খুলেন নি শুধু কি আমার ছটফটানি দেখেই মজা নিলেন?

--মজা নিলাম কে বললো? 

--আজ ভুলে আমার সামনে পরলেন?

--হুম হয়তো 

কি জানি ছোট্ট বুকটায় নিমিষেই অভিমান জমলো অনেকটা।উঠে পড়লাম। যাই বলে হাটা দিলাম।পিছন থেকে হাতে টান পড়লো। বসা অবস্থায়ই আমার হাত টেনে ধরেছেন।জিজ্ঞেস করলাম

---কি?

কিছু না বলেই টান দিয়ে বসিয়ে দিলেন।ব্যাথা পেলাম কিন্তু কিছু বললাম না। নিজের একদম কাছে বসিয়ে আমার কাধে মাথা দিতে গেলেন।কিন্তু লম্বা হওয়ার কারণে আরাম করতে না পেরে ঠেসে আমার মাথায় তার কাধে রাখলেন।আর এক হাত দিয়ে জড়িয়ে নিলেন।
মুখে কিছু বললাম না কিন্তু বুকে একরাশ সস্তিতে ভরে গেলো আমার।

--আম সরি ইচ্ছু

--এই ৫ দিনের জন্য

--না সেদিন রাতের জন্য আমার খুব গিলটি ফিল হচ্ছে।

এমনিই বিষয়টা আমার কাছে লজ্জার তাকে কি বলে সান্ত্বনা দেব তাই ভাবছি কিছু মুখ দিয়ে বের হচ্ছে না।কিন্তু কিছু তো বলতেই হবে।

--বাদ দিন আহান।আমার এই ৫দিনের জন্য সরি চাই

--কথা এড়িয়ে যাচ্ছিস।

--না তো

--অন্যের মনের কথা চুরে করে শোনাটা ব্যাড হ্যাবিট ইচ্ছু।

--সরি

হঠাৎ আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরলেন।আবার সাথেই সাথেই ছেড়ে দিলেন।

মুখ ফসকেই বলে ফেললাম ছাড়লেন কেন?

--দিন দিন নষ্ট হয়ে যাচ্ছিস জানিস তা?

--কই না তো

-- টানা দুদিন ঠোঁট ধরে টেনেছিস।ঘুমাতে গেলেও মুখে হাত কি স্বভাব এগুলো? 

-- মিথ্যা 

--দেখেছি আমি।চুপ থাক।ঠিক করে বস তো

-- বসেছি কেন?

আমার কোলে মাথা রেখে সটাং হয়ে সুরে পড়লেন।বললেন

-মুখে বৃষ্টি পরছে মাথা নুইয়ে রাখ যাতে মুখের উপর না পরে।

আমি সেভাবেই রাখলাম

--এভাবে তাকিয়ে আছেন কেন?

--কই?

--আমি দেখেছি 

--তাহলে তুইও তাকিয়ে ছিলি আমি তাকালে তো প্রবলেম দেখছি না। 

নীরব হয়ে অন্য দিকে ফিরে বাতাসের কারণে গাছের দোল দেখছি।আর উনি আমার মুখের থুতনি বেয়ে যে সোজা পানি পরছে সেখানে মুখ আনলেন।না ছুয়েই আবার শুয়ে পরলেন ।দেখেও না দেখার মতো করে আছি 

--ইচ্ছে 

-- হুম

--চুল কটা খুলে দে না,,,

তার আবদারের সুর যেন আমার মন ছুয়ে গেল।তরিঘরি করে হাত উঠিয়ে চুলের কাটা খুলতে লাগলাম।

উনি হঠাৎ ওড়না ধরে টান দিলো।কি হলো বুঝে ওঠার আগেই বললেন

--সরি ওড়না উঠে গেছিলো ভয় পাশ না।বৃষ্টি হচ্ছে নেশা করিনি যে উল্টা পাল্টা করবো। 

আমার কিছু বলার ভাষা নেই।উনি উঠে বসলেন চুল টেনে বললেন বৃষ্টির দিনে সাদা জামা আর ছেলেদের সামনে যাওয়া দুটোই নিষিদ্ধ তোর জন্য।তারপর ছাদ লাফিয়ে হনহনিয়ে চলে গেলেন,,,,,,,

???

বৃষ্টি থামা পর্যন্তই ভিজলাম। থামলে নিচে নেমে এলাম।নিজের রুমে গিয়ে ফ্রেস হয়ে নিচে এলাম হাঁচি দিতে দিতে। 
 কাউকে না দেখে চিল্লিয়ে বললাম
--আম্মু আমাকে গরম পানি করে দাও ঠান্ডা লেগেছে।

আয়ান আম্মুর রুম থেকে ডাক দিলো। গিয়ে দেঝি আহানের ফ্যামিলির সবাই আম্মুর রুমে।আহানের দিকে একপলক তাকিয়ে বললাম।

--কি হয়েছে সবাই জড়ো হয়েছো যে?

-- তোর নানু অসুস্থ বুঝলি(আম্মু)

-- কি বলো যাব না আমরা? 

--হ্যা আহানের মা বাবা আমরা সবাই যাব।কিন্তু আহান বেকে বসেছে তার এডমিশনের ক্লাস নাকি শুরু হয়ে গেছে।অকে একা রেখে কিভাবে যাই বল তো(আম্মু)

--আমাদের এবার খালাম্মাকে দেখতে যেতেই হবে। তোর পরীক্ষার মধ্যে তখন যেতে পারলাম না এখন যদি আবার না যেতে পারি(ভালো মা)

--ইচ্ছে তো কয়দিন আগেই একবার গেছে(আম্মু)

আম্মুর মুখের কথা টেনে আহান বললেন

---হ্যা ভালো মা আমিও তাই বলছি। ইচ্ছে তো একবার গেছে আর যাওয়ার দরকার নেই।ও আমাকে রান্না করে খাওয়াবে(আহান)

এরপর আহান আমার দিকে তাকিয়ে ভয়ংকর বাকা হাসি দিলো,,

চলবে,
Like Reply
#13
পর্বঃ১০
???
আম্মুর মুখের কথা টেনে আহান বললেন
---হ্যা ভালো মা আমিও তাই বলছি। ইচ্ছে তো একবার গেছে আর যাওয়ার দরকার নেই।ও আমাকে রান্না করে খাওয়াবে(আহান)
এরপর আহান আমার দিকে তাকিয়ে ভয়ংকর বাকা হাসি দিলো,,
সবাই আহানের কথায় সম্মতি জানালো।এমন না যে আমার খারাপ লাগছে।আহানের সাথে আলাদা কিছু সময় একসাথে পাওয়া যাবে সেটা আমার জন্য আনন্দের। বলতে গেলে প্রচুর আনন্দের। কিন্তু আমি অন্য একটা বিষয়ও খুব ভাবছি আহানের ক্লাস শুরু হয় নি আর যদি হতোও সে এটেন্ড করতেন না।বেড়াতে গেলে যাওয়াই যেত। মিথ্যা বলে নিজেও থাকলেন আমাকেও রাখলেন।
?
দুই ঘন্টার মধ্যে বাসার মানুষগুলো তৈরি হয়ে গেল। আমি আর আহান গেট পর্যন্ত গেলাম।আম্মু যাওয়ার আগে ১০০ বার বলে গেলেন আহানকে এখনই যেন আমার প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো নিয়ে আহানের বাসায় সিফট করি। যেহেতু আহানের এডমিশন ওর বইখাতা টানাটানি বেশি হয়ে যাবে। কবে আসবে তার সিউরিটি দিতে পারলেন না। নানুর শরীরের অবস্থার উপর ডিপেন্ড করছে।আমাকে বললেন যাতে আহানের খাওয়া দাওয়ায় কোন সমস্যা না হয়।আমিও হাঁচি দিচ্ছি আর সম্মতি জানাচ্ছি। অবশেষে নিজেদের গাড়ি করেই চলে গেলেন।
-- হাঁচি দিচ্ছিস কেন এতো?
--ঠান্ডা লেগে গেছে হয়তো।
--ও আচ্ছা।কি কি জিনিস লাগবে ১০মিনিট টাইম দিলাম গুছিয়ে নে।আমি আসছি বাইরে থেকে। এসে একবারে সব নিয়ে তালা দিয়ে তারপরে ঘরে যাব। আর তোর রুমের ব্যালকুনির দরজাটা দিবি না।বাইরে থেকে আমি দিয়ে দিব কখন কি লাগবে ওখান থেকেই বিনা কষ্টে আনা যাবে ।
তার বুদ্ধির লা জাবাব,,,,মাথা নেড়ে হাটা দিলাম।
???
আস্তেধীরে কাজ করছি শরীর আসলেই টানছে না।সব গুছিয়ে বসলাম এরমধ্যেই আহান এসে ব্যাগ নিয়ে হাটা দিলেন।
তাদের বাসায় নিয়ে আমাকে নিচ তলায় একটা রুম এ দিয়ে হনহনিয়ে উপরে চলে গেলেন।
উপর থেকে চিল্লিয়ে বললেন রান্না করতে হবে না খাবার বাইরে থেকে এনেছি কাল থেকে করিস।
আমিও তাই খুশি মনে বিছানায় গা এলিয়ে দিলাম। আসলেই শরীর বিছনাটাই চাইছিলো।
?
যখন ঘুম থেকে উঠলাম দেখলাম পাশে বসে আহান মনযোগ সহকারে জলপট্টি দিচ্ছে আমার মাথায়।শরীরের উত্তাপে বুঝলাম গায়ের জ্বরের তীব্রতা।জ্বর আসলে আমার হুস উড়ে যায়। অবস্থা বেহাল।পিটপিট করে আহানের সেবা করা টা বড্ড ভালো লাগার জানান দিলো আমার মনে।
আবার ঘুমিয়ে গেলাম,, পরের বার যখন চোখ খুললাম দেখলাম আমার মুখে বিরিয়ানি টিপে টিপে ঢুকানোর ট্রাই করে যাচ্ছে আহান। 
চোখ খুলে বললাম
--ডাকতে পারতেন আমাকে ঘুমের মধ্যে আম্মুর মতো খাওয়াতে বসলেন কেন?
আমার কোনো কথার জবাব না দিয়ে বললেন আমি যাবার পরেও তুই এক ঘন্টা কেন ভিজলি কেন? হোয়াই?
তার হুংকারে আমার কান্না পেল।
--এখন কাদ কাদ।আমার সেবা করতে ওনাকে রেখে গেছে আর উনি প্রথম দিনেই আমাকে দিয়ে খাটিয়ে মারছে।জ্বর উঠলে যে তুই আধা পাগল হয়ে যাস তখন কি তোর শশুর এসে সামলাবে???
--নাহ আপনি।আমাকে একদম কষ্ট দিবেন না আমি কেদে দিব
--হ্যা পাগলের প্রলাপ শুরু হয়ে গেছে,,, ভালো ভালো। হাত তালি,,,,,নে খা উদ্ধার কর আমায়
--আপনি তো বিপদে পরেন নি উদ্ধার কিভাবে করবো?
--হ্যা আসলেই আয় মা খা । আমি খাওয়াতে পারি না এমনিতেই
আহানের ভালো লাগছে না তা নয়।ঘুমের ঘরে ইচ্ছেকে খেতে দেখতে আহানের ছোটবেলা থেকেই ভালো লাগতো। আহান চিন্তায় আছে মেয়েটা পাগলামি শুরু করলে থামাবে কি করে?আবার নিজেকে নিজেই অভয় দিচ্ছে তার ভালোবাসা তাকেই সামলাতে হবে।
--হুম নে খা,, হা কর হ্যা জোরে হা কর না বাপ
-- আহান আমি আপনার মা বাপ?
--না বউ
-- সত্যি?
--এবার খাও
ইচ্ছের জ্বরের ঘোড়টা বেরেছে। এখন আহান যাই বলুক সব সাভাবিক ভাবেই নিবে কিছুই মনে করবে না তাই নিশ্চিন্তে আহান আজ মন খোলা কথা বলতে পারবে। তাই ভেবে আহানের মনে অদ্ভুত এক আনন্দ লাগছে।আবার ভয়ও লাগছে অজানা কারণে,,,
ইচ্ছের খাওয়া হলেও ঔষধ খাওয়াতে যুদ্ধ করতে হলো।আর শেষমেষ বমি। আহানের হাতে বমি পরল বিছানার চাদরে পরলো।কিন্তু বমি থামছে না দৌড়ে বেসিনে গেল আবার বমি আর আহান কোনো মতে হাত মুছে ইচ্ছের মাথা চেপে ধরলো। বমি করার পরে আর মেয়েটার দিকে তাকাতে পারছে না আহান। কি অবস্থা নেতিয়ে গেছে একেবারে।
ঘর পরিষ্কার করে,বিছানার কাপড় চেন্জ করে ইচ্ছেকে জামা চেন্জ করতে বললো।
কিন্তু সে এক ধ্যান এ আহানের দিকে তাকিয়েই আছে
--ইচ্ছু ভালো মেয়ে তুই যা জামা পাল্টে আয়
--আহান আপনি কি সুন্দর কি কিউট। আচ্ছা আপনার বুকে পশম আছে ?(চিন্তিত ভাব নিয়ে)
--নেই তো?
--কি বলেন আমি কি ধরে টান দিবো?,,,,আমার এক বান্ধবী বলেছে কি শুনবেন?
আহান তাজ্জব বনে গেলো। এই মেয়ে কাদের সাথে মিশে,,ওর কথায় পাত্তা না দিয়ে বললো
--না একদম শুনবো না।ঔষধ ফেলে দিলি বমি করে,,, এখন জ্বর বাড়ছে আর ভুল ভাল বকছিস
তারপরে হাতে জামা দিয়ে জোর করেই বাথরুমে ঢুকিয়ে দিলো। আর হুমকি দিল
--যতক্ষন জামা না পালটাবি বাথরুমেই আটকে রাখবো
ইচ্ছে ভদ্রমেয়ের মতো জামা পাল্টালো।বাথরুম থেকে ধরে ধরে বিছানায় বসিয়ে দুই পিচ কেক খাওয়ালো তারপর খুব সাবধানে বুঝিয়ে শুনিয়ে ঔষধ খাওয়ালো।
?
আহান ইচ্ছেকে একা নিচে রাখতে সাহস পাচ্ছে না।কিছু না ভেবেই কোলে করে দু তলায় নিজের রুমের বিছানায় নিয়ে গেল।
শোয়ানোর পরে ইচ্ছে আহানের গলা আর ছাড়ছে না।
--কি হলো গলা ছাড় উঠবো
--শুনবেন বুকে পশম থাকলে,,,,
--না একদম শুনবো না সুস্থ হ বুকে পশম শিখাবো তোকে
--আরে শুনুন
--বুকে পশম থাকলে ভালোবাসা বাড়ে।আপনার নেই এইটা আমার জন্য খুব টেনশনের,,,ভালোবাসা বাড়বে কিভাবে?
(ইচ্ছের কথা গুলো ক্রমশ জড়িয়ে জড়িয়ে যাচ্ছে।)
আহান হালকা হাসলো 
--পারছিস না ঠিক মতো কথা বলতে আবার এই নিয়ে টেনশন হচ্ছে কি করে?
--খুব হচ্ছে,,,,,,,, আহান আহান
--হুম বল
--আপনাকে আরও কাছ দিয়ে দেখাবেন?
--আমাদের ফেস এর মধ্যে গ্যাপ খুবই কম গলাই তো ছাড়ছিস না।।এর থেকে কাছে কি দেখবি।ঘোলাটে দেখবি ট্যাড়া হয়ে যাবি,,।
-- কেন সেদিন রাতের মতো,,,কতটা কাছে ছিলেন এখন অনেক দূরে আপনি আহান অনেক
--এই দূর?
আহান কি বলবে বুঝতে পারছে না।কিন্তু ইচ্ছে সুস্থ হবার পরে এসব মনে করে লজ্জা পাবে কিনা আহানের সামনেই আর না আসে।
-- ছাড়বি কিনা?
--না ছাড়বো না কোনো ছাড়াছাড়ি নেই।আমার পাশে শুয়ে পরুন না
--হ্যা পাগলের পাশে সুবো তারপর নিজের বিপদ নিজে ডাকবো?
আহানের মাথায় দুষ্ট বুদ্ধি চাপলো। সে পকেট থেকে ফোন টা বের করে ভিডিও অন করে সাবধামে পাশে রাখলো,,, ইচ্ছের এসব পাগলামি সব সময় পাওয়া যাবে না
--আহান নড়াচড়া করতাছেন কেন?
-- ছাড় না আমাকে কেন পাগলামি করছিস?
-- আমি খুব সুস্থ সাভাবিক ভাবেই কথা বলছি।
বলেই গালে টুক করে চুমু দিয়ে দিল।আহান অবাক হয়ে ইচ্ছেকে দেখছে। ইচ্ছে কিটকিট করে হাসছে আর লজ্জা পাচ্ছে এমন একটা ভাব করছে।এভাবে বেশিক্ষন চলতে থাকলেই ক্ষতি খুব ক্ষতি। ইচ্ছের গায়ে কতটা জ্বর তা চুমো খেয়ে মাপা হয়ে গেছে আহানের কিন্তু কি করে ঘুম পাড়াবে ভাবছে
-- তোর আমাকে ভয় করছে না?
--কেন ভয় করবে?আচ্ছা রাত কয়টা বাজে?
-- ১২ টা হবে ৭ ঘন্টা ঘুমিয়েছিস। রাত টাও ঘুমিয়ে নে
-- ওটা দাও না একটা
--আমি তোকে কি বলছি আর তুই আমাকে কি বলছিস?ওয়েট ওয়েট আমাকে তুমি কেন বললি?
--সরি মিসটেক দিন না একটা
আহানের আর কিস করতে হয় নি।ইচ্ছে নিজেই আবার আহানের মুখ গালে চেপে চুমু খেয়ে নিয়েছে
--আমি পাগল হয়ে যাব পাগল
--কেন?পাগল কেন?আসুন সুয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিন না
--হুহ তা ছাড়া উপায় আছে না ঘুমালে আজ তোকে ছাড়াতে পারবো না।
আহান পাশে সুতেই ইচ্ছের আবদার বিলি কেটে দিন মাথাটা কেমন ঘুর ঘুর করতেছে এরপরেই শক্ত করে গলা জরিয়ে ধরলো। দুরত্ব নেই দুজনের মাঝে,,,,ইচ্ছে ঘোরের মধ্যে কিন্তু আহানের তো খুব কষ্ট হচ্ছে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে!!!!
ভালোবাসার মানুষ এতো কাছে থাকলে নিজেকে সামলাতে যেকোনো ছেলেই হিমশিম খাবে। প্রেমটা হলেও কথা থাকতো। আহানের মন চাচ্ছে সব ছেড়ে এক দৌড় লাগাক নয়তো মাথা যা বলছে তাই করুক।
--আল্লাহ এমন বিপদে কোনো ছেলেকে ফেল না
--কেমন বিপদ ?আচ্ছা বাদ দিন আমার না কেমন কেমন করছে আহান
--এই জ্বর নিয়ে কেমন কেমনও করে তোর?আমার গা পুড়ছে অলরেডি
--হুম
--চুপ হয়ে গেলি কেন?
--আহান আপনাতেই কি আমি?

ইচ্ছের এমন ধির স্থির কথা আহানের বুক কাপিয়ে দিলো।এতো তাড়াতাড়ি পূর্ণতার কথা শুনবে ভাবে নি।জ্বরকে নিজের অজান্তেই থ্যাংকস জানালো আহান।তারপরে আহান নিজেও জড়িয়ে ধরলো।
এর মধ্যেই ইচ্ছে বললো
--আমার সুরসুরি পাচ্ছে
--পাক।
আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো আহান।গলায় চটপট করে চুমু একে দিলো বেশ কয়টা।ইচ্ছে কেপে উঠলো তা আহানের বুঝতে বেগ পেতে হলো না
--সুরসরি দিচ্ছেন কেন গলায়?
গলা থেকে মুখ উঠিয়ে আহান বললো
--সুরসুরি চিনিস তুই?
--হ্যা
--কচু চিনিস
-- তাহলে এটা সুরসুরি না কচু ছিলো?
-- তোর জানতে হবে না
ইচ্ছে লাফিয়ে উঠে বসে বললো
--আমি জানি
-- বাহ কি বলতো
আমিও উঠে বসলাম
--বলবো বলবো কিচ্ছু জানেন না দেখছি আপনি।মাথা ঘুরিয়ে পরে যাব তার আগে বিছানায় হেলান দিয়ে বসিয়ে দিন তো
-- হ্যা দিচ্ছি এবার বল
--হ্যা শুনুন । ইটস কলড সে,,,
--থামলি কেন বল
-- আরে বুঝেন না? সে,,, সে,,
-- না বুঝিনি বল(আহান বুঝেও এমন করছে। ইচ্ছের পেটের কথা আজ নিমিষেই সে সব জানতে পারবে তাই ভেবেই হাসছে)
--সে,,,,,, ধুর লজ্জা করছে।।।সে যাই হোক বিপরীত লিঙ্গের প্রতি এট্রাকশনের ফলে এইটা হয়।সায়েন্সের স্টুডেন্ট জানেন না?
--হ্যা বুঝলাম।তোর ও তাহলে এটা হয়েছে মাত্র?
-- নাহ আমার হয় না।(প্রাউড নিয়ে বললো কথাটা)
-- তাহলে তোর যে সুরসুরি পায়
--সেটা সুরসুরি ওটা না।জানেন জানেন
--না বললে জানবো কিভাবে?
--আমার ফ্রেন্ড রিতু। ও সব বলে আমাকে
--তা কি কি বলে?
--ওই বয়ফ্রেন্ডের সাথে হাপিস হিপিস। প্রায়ই হয় ওদের
-- হোয়াট ইজ হাপিস হিপিস?
ইচ্ছের এসব শুনে আহানের মাথায় রাগ উঠছে এসব কেউ কাউকে বলে নাকি কিন্তু নিজেকে দমাতে হবে। ঠাণ্ডা রাখলো নিজেকে
--আরে ওই তো,,,,, বলতে লজ্জা করছে। আর আপনার সামনে আরও লজ্জা।
-- তা তোর সাথে কিছু হলে তুইও কি বলিস?
--নাহ আমার লজ্জা লাগে এসব বলতে। আর হয়েছেই বা কি একটা লিপকিস মাত্র।জানেন লিপকিস খেতে হেব্বি মজা। আমার জীবনে প্রথম এটা হিহি
--তা তোর ভালো লেগেছে?
আহান হাসছে আর ভাবছে সুস্থ থাকলে এমন কখনোও আমার সাথে বলতে পারত না
--হুম বলেই আহানের কলার টেনে নিজের কাছে আনলো।
--আহান আপনার ঠোঁট কি সুন্দর টকটকে লাল তাই এত প্রোপসাল পান তাই না?
-- কি জানি। কেন?
--আমার ও বেশ খেতে মনে চায় তাই।
এটা বলেই ইচ্ছে সেই এক লজ্জা পেল।আহান সুযোগে বললো
-- খা তো পারলে দেখি কেমন খেতে পারিস
?
ইচ্ছে এই নিয়ে ২০ বার আহানের মুখের সামনে এসে ফিরে গেছে।আহান খুব কষ্টে হাসি চাপিয়ে রেখেছে।সামনে এসে চোখ বুঝছে আবার ফিরে যাচ্ছে। হাসারই কথা
--নাহ পারছিই না আহান
--এবার আর তোকে সুযোগ দিব না
-- এই বার লাস্ট আর একবার সুযোগ দিন
-- না আর না
-- পিলিজ
--না দিব না অনেক দিছি পারিস না তুই
--আচ্ছা এবার বলেই আহানকে কোনো কথা বলার সুযোগ না দিয়ে জামার কলার টেনে ঠোঁটের উষ্ণতার জানান দিলো।
আহান অবাক হয়ে থেমে থাকলেও পরে ইচ্ছের সাথে নিজেও সাড়া দিলো। আহান আসলে সত্যিই ভাবেনি ইচ্ছে পারবে তাই ই মজা করে কিস করতে বলেছিলো।আহানের মনে হলো জ্বরের ঠোঁটের উষ্ণতা সত্যিই আলাদা।
সবচেয়ে হাসির ব্যাপার ইচ্ছে সারা রাতের মধ্যে আহানের ঠোঁট ছাড়েনি।আহান খুব কষ্টে চুপচাপ এই অত্যাচার সহ্য করেছে।সারারাত পাগলামি করেছে চুমু খেয়েছে আবার ছেড়ে বলেছে আহান আপনার ঠোঁট টা কি মিষ্টি ।
শেষরাতের দিকে ঘুমিয়ে পরেছে।আহান হাফ ছেড়ে বেচেছে।ইচ্ছের জামা কাপড় ওড়না ঠিক করে দিয়ে গায়ে চাদর টেনে দিয়ে দ্রুত বিছানা ছেড়ে উঠে সোফায় শুয়ে পরলো।আসলেই মেয়েটার ঘুমন্ত চেহারায় তাকিয়েই জীবন পাড় হয়ে যাবে। কি মিষ্টি কি মিষ্টি,,,, আহানের মুখ একরাশ হাসি নিয়ে পরে আছে হাসির রেশ কাটছেই না। তখনি আবার মনে পরলো ইচ্ছের কথাটা 
"আহান আপনার ঠোঁট কি মিষ্টি "
আহান দোয়া করছে ইচ্ছে রাতের কথা যেন ভুলে যায় নয়তো আমার সামনে আর আসবে না।এক ঘরে থেকে দূরত্ব একেবারি সহ্য করবে না আহান। দূরে থাকার জন্য এতো কাঠখড় পুড়িয়ে রাখেনি ইচ্ছেকে সে।

চলবে,
Like Reply
#14
খুব খুব সুন্দর, অসাধারণ।

চালিয়ে যান,
[+] 1 user Likes Rakimul's post
Like Reply
#15
(17-09-2023, 12:33 AM)Rakimul Wrote: খুব খুব সুন্দর, অসাধারণ।

চালিয়ে যান,



সাথে থাকুন।
Like Reply
#16
পর্বঃ১১

???

আহান দোয়া করছে ইচ্ছে রাতের কথা যেন ভুলে যায় নয়তো আমার সামনে আর আসবে না।এক ঘরে থেকে দূরত্ব একেবারি সহ্য করবে না আহান। দূরে থাকার জন্য এতো কাঠখড় পুড়িয়ে রাখেনি ইচ্ছেকে সে।

আহান ইচ্ছেকে বাকি রাতটুকুও দুচোখ ভরে দেখলো। সূর্য উঠি উঠি তখন আহানের চোখ দুটো লেগে এলো। 

আহানের যখন ঘুম ভাংলো তখন তখন সে দেখলো ইচ্ছে সোফার সামনে হাটু গেরে বসে আহানের মুখের কাছে বড় বড় চোখ করে খুব উৎসুক দৃষ্টিতে কি যেন দেখছে।

আহান চোখ খুলতেই ইচ্ছে ছিটকে দূরে পরলো।

-- কিরে ভয় পেয়েছিস নাকি? লাফিয়ে ৫ হাত দূরে সরে গেলি যে।

--কি হলো কথা বল। কই দেখি জ্বরটা ক কমেছে। এদিক আয় তো।

ইচ্ছের কোন নড়চড় নেই।শেষে আহান ইচ্ছের হাত ধরে টেনে উঠিয়ে পাশে বসালো। ইচ্ছের মাথায় হাত দিয়ে জ্বর মাপছে আর বলছে।

-- বাহ তোর জ্বরটা দেখছি নেমে গেছে। যাক আমার হাতে জাদু আছে মানতে হবে,,,, তুই কি বলিস?

-- হু হু

-- কি হু হু । কি দেখছিলি সত্যি করে বল তো

আমতা আমতা করে বললাম

-- কিছু না আহান আপনাকে জাগানোর জন্য সামনে বসেছিলাম

-- হ্যা এতো সামনে যে পারতি তো মুখের মধ্যে ঢুকে পরতি। 

-- কি বলেন আহান।এমন কি করিনি আমি

-- দেখেছি আমি,,,,তো অনুবীক্ষন যন্ত্র এনে দেব নাকি দূরবীক্ষন?তোর এই নিক্ষুত পর্যবেক্ষনের জন্য কোনটা চাই?

-- কিচ্ছু চাই না আমার( মন খারাপ করে)

-- কি হয়েছে ইচ্ছু বলবি?কাল সারা রাত ঘ্যানঘ্যান করে আমাকে ঘুমাতে দিস নি।এখন ঘুম থেকে উঠে কি শুরু করলি বলবি?

-- হ্যা হ্যা এটাই। আপনাকে আমি কিভাবে কিভাবে জালায়ছি? ( ইকটু থেমে) 
না মানে আম্মু তো আমার জ্বর কুমলেই কির্তীকলাপ গুলো বলতো।তাই আর কি আপনার সাথে কি করেছি বলতেন যদি,,,,,,

ইচ্ছের উৎসুক ভংগী দেখে আহান কিছুটা আচ করলো। 
আহান বুঝতে পারে ইচ্ছের হালকা হালকা রাতের কথা মনে পরছে কিন্তু সে নিজে সিউর হতে পারছে না তাই ঘুরিয়ে পেচিয়ে জিজ্ঞেস করছে 

-- অনেক ভাবে,,,জালাইছিস কয়টা শুনতে চাস?

--সব গুলোই বলুন না? (ইচ্ছে খুবই উৎসুক ভংগী তে লাফিয়ে উঠল তার ধারণা সত্যি কিনা এটা জানতে পারবে এই ভেবে)

--হ্যা বলছি বলছি উটকল মাছের মতো লাফ দিস না।অবশ্য যা করেছিস লাফ দেয়ার মতোই।

আমতা আমতা করে বলে উঠলো

--কি করেছি আমি? দুষ্ট কিছু? 

আহান মনে মনে হাসলো। সে যে ভয় পেয়েছিলো তা হয় নি এখন সে এই বোকাটাকে কিছু একটা বুঝিয়ে দেবে। 

-- প্রথমে বমি করলি।তারপরে জামা কাপড় চেয়ে টেনে টুনে নিয়ে চেন্জ করে নিলি। আমার মনে দয়া হলো মাতালের মতো করছে মেয়েটা,,,ভাবলাম একে অন্তত নিচে রাখা যায় না।তাই আমি আমার রুমে নিয়ে এলাম তোর হাত ধরে হাটিয়ে হাটিয়ে।।তোকে বিছানায় বসিয়ে রেখে আমি টিভি দেখলাম কিছুক্ষণ। এরমধ্যেই তুই চিল্লিয়ে উঠলি। জিজ্ঞেস করতেই বললি আমার হিশি পেয়েছি সাথে ওটাও,,,, বুঝিস তো ওটা কি তাই না?

-- কিইইইইইই???? এমন আমি কোনোদিন ও করিনি আহান

-- কি জানি করতি হয়তো ভালো মা মানসম্মনের ভয়ে বলতেন না। তারপরে কি হলো শোন

--না আমি শুনবো না একেবারেই শুনবো না।

আহান পারে তো ছাদে গিয়ে প্রান খোলা হাসি দিয়ে আসে।সে আর হাসি চাপিয়ে রাখতে পারছে না। ইচ্ছের মুখ মোটামোটি লাল হয়ে এসেছে।হাসি চাপিয়েই বললো 

--আরে শুন।তারপরে এতো বললাম যে ইচ্ছু ওয়াসরুমে যা কিন্তু তুই কথাই শুনছিস না। তুই নাকি বিছানায় ই সব করবি।।বার বার ওই মুড এ বসছিলিও জানিস তো। কোন মুড বুঝেছিস তো? হাগু মুড বলেই আহান হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাচ্ছে।

-- কিইইইইই( ইচ্ছে মনে মনে ভাবছে ঘাট হয়েছে তাকে জিজ্ঞেস করে)

--আরে হ্যা আমি তো ভয়ে শেষ । আমার বিছানা বুঝি আর বিছানা রইলো না এই বুঝি হাগা খানা হয়ে গেলো। সে কি এক অবস্থা ইচ্ছু তুই এমন করিস জানলে তোর জ্বর এসেছে দেখেই আমি সাথে সাথে তোকে বাসায় রেখে আসতাম।ভাগ্যিস ঠেলে ঠুলে ওয়াসরুম পাঠাতে পেরেছিলাম

--কি সর্বনাশ এসব সে করেছে ভাবতেই ইচ্ছের গায়ে কাটা দিচ্ছে। 

ইচ্ছে পারে তো মাটির নিচে ঢুকে যায়। 

ইচ্ছে লাফ দিয়ে উঠে যেতে চাইলো।আহান হাত টেনে পাশে বসিয়ে ইচ্ছের পায়ের উপর নিজের এক পা উঠিয়ে দিল যাতে নড়তে না পারে।ইচ্ছের মুখের অবস্থা এমন ছেড়ে দে মা কেদে বাচিঁ। নিজের ভাবনায় ভুল হয়েছে তাই আবার ঠিক করে ভাবলো এটা হবে ছেড়ে দেন হবু বর কেদে বাচিঁ।

--আমাকে ছাড়ুন।এটা কোন ধরনের আটকনো? পা দিয়ে চেপে ধরে।

-- চুপ একদম চুপ 

ইচ্ছে ঝাড়ি খেয়ে একেবারে চুপ আর যাই হোক আহানকে সে প্রচুর ভয় পায়। নিজের বাবার থেকেও বেশি ভয় পায়।কিন্তু হাসির মধ্যে হঠাৎ রাগের কারণ ইচ্ছে খুজে পেল না।

আহানও রাগ রাগ মুখ করে রইলো। তারপর গম্ভীর মুখে বললো

-- তোর মুখে কোনো সমস্যা আছে?উম উম টাইপ সমস্যা আর কি

--মানে?(আহান কি বলছে ইচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছে না)

--না মানে তোর হাগাহাগির পালা শেষ করে ঘুমালি ঠিকই কিন্তু আমি ঘুমাতে পারলাম না।

--কেন?

-- কারণ মুখ ঠোঁট উঁচু করে টানা দু ঘন্টা উম উম করলি জানিস তো?কাউকে খিস্তি টিস্তি দিচ্ছিলি নাকি? না মানে তোর **দোষ টোষ হওয়ার অভ্যাস আছে নাকি?ছেলেদের হয় জানি। আমার আবার যথেষ্ট এক্সপেরিয়েন্স আছে বুঝলি তো? রাতে তোকে দেখে বসে বসে ভাবছিলাম মেয়েদেরও হয় কিনা?হয় হয়?

ইচ্ছের এবার ইচ্ছে করছে আয় কেউ ফ্লোরটা ফাঁকা করে দে আমি নিচে ঢুকে যাই । তাতেও বিপত্তি নিচে তো আরও এক তলা আছে তারপরে মাটি।উহ আল্লাহ

-- নাউজুবিল্লাহ কি বলেন এসব।দেখুন আমাকে ছাড়ুন। আমি এমন কিছু করছি আমার বিশ্বাস হচ্ছে না 

ইচ্ছে মনে মনে ভাবছে সপ্ন দেখলাম আপনাকে কিস করছি। আর আমি কিনা এমন করছিলাম ছি ছি। ইশ আজ আমার নাক কাটা গেলো। ধুর নাক দিয়ে উম উম করা যায় নাকি!! হায়রে আজ আমার মুখ কাটা গেলো। 

ইচ্ছের প্রলাপগুলো নিশব্দই রয়ে গেলো। আহানকে ঠেলে পা সরিয়ে কোনো মতে দৌড় লাগালো।

আর আহান হাসতে হাসতে সস্তির নিশ্বাস ফেললো। যাক পাগলটা আর তাকে সন্দেহ করবে না।ঘুম থেকে উঠেই ছি-আই-ডি দের মতো লেগে পরেছিলো।আহান হাসতে হাসতেই ওয়াসরুমে ঢুকে সাওয়ার ছেড়ে দিলো।রাতের কথা ভেবে হাসির বেগটা যেন আরও বেড়ে গেলো। সে কি ভয়ানক চুমু বাপরে বাপ,,,রাতে এক পর্যায় আহানের নিজেকে ছোট খাটো একটা ললিপপ মনে হচ্ছিলো। ইচ্ছের অবস্থা এমন ছিলো যে ৫বছরেএ বাচ্চা ললিপপ পেয়েছে ছাড়বেই না।

???

আহান নিচে নেমে দেখলো ইচ্ছে কিচেনে কিছু একটা করছে।চুল গুলো খোপা করা ওড়না কেমন একটা গিট্টু দিয়েছে গায়ে জড়িয়ে। পাক্কা গিন্নি গিন্নি লাগছে ইচ্ছেকে।

আহানের তখনই মনে মনে ইচ্ছেকে পিছন থেকে জড়িয়ে ঘাড়ে কয়েকটা চুমু খেয়ে নিলো।আফসোস বাস্তবে কিছুই প্রভাব পড়লো না। 

-- কিরে হাগুরানী কি বানাচ্ছিস? কি খাওয়াবি আমাকে?

--আপনি আমাকে আর একবার হাগুরানী বললে আমি চলে যাব যেদিক দু চোখ যায় সেদিক চলে যাব বলে দিলাম

ইচ্ছেএ কথায় স্পষ্ট রাগ ফুটে উঠেছে। 

-- ওওরে বাবা রাগতে জানিস তুই?জীবনে প্রথম তোকে রাগতে দেখলাম।আর একটু রেগে দেখা তো।দারুণ লাগছে তোকে। রাগ রাগ

ইচ্ছে হাতে কিছু একটা নিয়ে আহানের সামনে এসেই পুরো গালে লাগিয়ে দিলো।আহান কি আর ছেছেড়ে দেয়ার পাত্র।সে ইচ্ছে কে ভুত বানালো। আহানের শক্তির কাছে ইচ্ছে সামান্য পিঁপড়া মাত্র

-- যাহ গোসল করতে যা।পিপড়ের শক্তি নিয়ে লড়তে আসিস মা আর।কি বানাচ্ছিস পরাটা? আমি ভাজতে পারি যা তুই। দাঁড়িয়ে আসিস কেন?সাদা বিলাইর বাচ্চার৷ মতো লাগতেছে তোকে। বড় কোনো বিড়াল তোকে দেখলেই মুখে করে নিয়ে যাবে।( হাসতে হাসতে)

-- আপনাকে আমি দেখে নেব হুহ

-- আমি দেখাতে চাই।।কি কি দেখবি লিস্ট কর।আমি খুব ফ্যামস পারসোন জানিস তোজপরে আর সুযোগ পাবি না দেখে রাখ

--চাই না আমি সুযোগ।যারা দেখতে চায় তাদের দেখান

-- তাই নাকি দেখাবো? তোর লাগবে না?(খোচা মেরে)

ইচ্ছে আর জবাব না দিয়েই হনহনিয়ে হেটে চলে গেলো । এই ছেলের সাথে একটা কথা উত্তর দেয়া মানে তুমি ফেসেছো।আর ইচ্ছে তো নিজেই ফাসতে চাইছে অনিচ্ছায় হলেও ফাসতে চাইছে। প্রাণ পাখি যে ওখানেই বেশি দিন বাঁচবে না এই প্রাণ পাখি ছাড়া তাতে যতই পচানি খাক আর যা করুক। প্রয়োজন হলে ইচ্ছে পচে মরতেও রাজি।

চলবে,
Like Reply
#17
পর্বঃ১২

???

ইচ্ছে গোসল সেরে এসে দেখে আহান পরাটা ভাজা অলমোস্ট কমপ্লিট করে ফেলেছে।তাই দুটো অমলেট করে ফেললো দ্রুত করে।

?

আহান নিজের প্লেট থেকেও খাচ্ছে আর ইচ্ছে তার খাবার যখনই মুখে নিতে যাচ্ছে তখনই ঠিক মুখের সামনে থেকে খাবার টেনে নিয়ে নিজে খেয়ে ফেলছে।

ইচ্ছে একপর্যায়ে চরম বিরক্ত চেহারা নিয়ে জিজ্ঞেস করল 
--আমি কি খাব না নাকি সব আপনি নিয়ে নিচ্ছেন।

--না খেলে নাই

-- ঠিক আছে তাহলে আপনিই খান। 

ইচ্ছে প্লেটটা আহানের সামনে দিয়ে দিলো।আহান খাচ্ছে তো খাচ্ছে।ইচ্ছেকে একবার সাধেও নি।ইচ্ছে রাগ করে উঠে বললো 

--পাশে যে হাতির পেটি মানুষ নিয়ে খেতে বসে ছিলাম বুঝতেই পারি নি।হাতির খিদে পায় বিড়ালের খিদে পায় না বুঝলেন?

এটা বলেই রুমের মধ্যে হনহনিয়ে চলে গেল ।আহান হাল্কা হেসে ওর প্লেটের খাবার খেয়ে নিলো।ইচ্ছের জন্য নিজের প্লেট টা নিয়ে চলে গেলো ইচ্ছের কাছে।

-- ওই বিলাই করিস কি?

ইচ্ছে সুয়ে আছে অন্যদিকে ফিরে

-- কথা বল,,,, দ্যাখ বিড়ালের জন্য আমার চাবানো হাড্ডিগুলো এনেছি।আয় খা

ইচ্ছের এবার সত্যিই খুবই রাগ হচ্ছে।এভাবে অপমান? শেষমেষ কিনা তার চাবানো হাড্ডি খাবে?কিন্তু হাড্ডি এলো কই দিয়ে আমি তো মাংস রান্না করি নি!!!!

ইচ্ছে এবার আর একটা বালিস নিয়ে মাথা চাপা দিলো।কিন্তু বেশিক্ষন পারলো না আহানের ধমকে বাচ্চা বিলাইর মতো গুটিশুটি দিয়ে উঠে বসলো।আহান নিজেই ইচ্ছের মুখে খাবার ধরলো। 

--কিরে নে হা কর

ইচ্ছের রাগ ভয় যেন বরফ থেকে পানি হয়ে গেছে।ছেলেটা তাকে কতো ভালোবাসে কিন্তু সামনা সামনি কেন কিছু বলে না? কিছু বললে তো ইচ্ছেও দুই কথা বলতে পারে।ইচ্ছের যে আজকাল খুব ভালোবাসার কথা বলতে ইচ্ছা করে।খুব

--হ্যা তাকিয়েই থাক। আমাকেই খাবি নাকি? খেতে পারিস আয় খা তবে একটা কথা বউরা যেমন ভাবে খায় তেমনভাবে মোটেই খেতে দিবো না আমি বলে দিলাম হুম

আহানের মুখভঙ্গি আর কথায় ইচ্ছে ফিক করে হেসে দিলো।

--এখন হাসবি ইচ্ছু তুই?আমি কতক্ষণ ধরে খাবার ধরে আছি নাকি বউদের মতো খাওয়ার শখ জেগেছে?

ইচ্ছে লজ্জা পেয়ে গেলো আহান দিন দিন মুখ কাটা
  হয়ে যাচ্ছে। 
-- না না খাচ্ছি তো দিন । 

আহান ইচ্ছের মুখে খাবার দিতে গিয়ে নিজেই বার বার মুখ হা বানিয়ে ফেলছে।।শেষমেষ বলে ফেললো 

--প্রথম তো অভ্যাস হয়ে যাবে।
 বলে হাল্কা করে হাসলো । 

ইচ্ছে তাকিয়ে তাকিয়ে আহানের হাসি দেখছে। কি সুন্দর সে হাসি। তার ভ্যাম্পায়ারের মতো দুই পাশের উপরের নিচের দাত চারটা অন্যদের থেকে এই দাত তার বেশিই বড়।এতে তার সৌন্দর্য দিগুণ বেড়ে যায়। ভালোবাসার মানুষের সব কিছুই অত্যন্ত সুন্দর হয় কারণ ভালোবাসার দৃষ্টি অসুন্দর বা কটু হয় না কখনো। 

???

 
রাতে ঝুম বৃষ্টি নেমেছে সাথে বর্জপাত হচ্ছে।আহান এই সুযোগ টা একেবারেই ছাড়েনি।দৌড়ে নিচে নেমে এসেছে।যা ভেবেছে তাই হয়েছে।ইচ্ছে ভয়ে গুটিশুটি মেরে আছে।ঘরের মধ্যে নিচ তলায় ইচ্ছে একা তাই ভয়টা বেশিই পাচ্ছে। 

-- কিরে ভয় পাচ্ছিস?

ইচ্ছে চমকে তাকালো।
--হ্যা অল্প পাচ্ছি আর কি 

--রাতের বেলা ভাবলাম তুই একা ভয় পাবি তাই নিতে এলাম।আমার রুমে শুয়ে পরবি আয়।আমি সোফায় ঘুমিয়ে নেব আর আমায় ভয় লাগলে আমার পাশের রুমটায় শুবি চল।

ইচ্ছে উঠে দাঁড়িয়ে বললো 

--আপনাকে কেন ভয় লাগবে হুম? চলুন

--আমার কিন্তু ভয় লাগে

--কেন?

-- কিছুনা এমনি ( আমি তোর ললিপপ আর মাংসের হাড্ডি হতে চাই না নিজেকে শামলানো দায় হয়ে যায় রে। অবশ্য আজ এমন সম্ভাবনা নেই কারণ তোর জ্বর নেই)
কই চল

--চলুন

???

ইচ্ছেকে শুয়ে পরতে বলে আহান ব্যালকুনিতে গিয়ে দাঁড়ায়।

ইচ্ছে সিগারেটের গন্ধ পেয়ে ব্যালকুনির দরজায় গিয়ে দেখে আহান সিগারেট টানছে।ইচ্ছে বেশ রাগী সুরেই বলে

--আহান আপনি এগুলো কবে থেকে খান?

আহান সাভাবিক গলায় উত্তর দেয়

--তুই যে বিশদিন ছিলি না তখন তুই যাওয়ার পাঁচ দিন পর থেকে খাই। 

--কিন্তু আপনি তো খেতেন না।।।হঠাৎ? 

--খেতাম না এখন খাই। ওই ১৫ দিন টানা খেয়েছি।তারপর ৫ দিনে দুইটা আর এখন ৫দিনে একটা খাই।আর আমি নাইন-টেনে দুই একবার খেয়েছিলাম। 

-- কিন্তু কি এমন হলো? ( ইচ্ছের সাহস থাকলে গালে একটা থাপ্পড় লাগাতো কিন্তু সে সাহস ইচ্ছের নেই)

-- একটা বস্তুর জন্য খেয়েছিলাম।

ইচ্ছে মনে মনে ভাবছে ইচ্ছে তো কোনো বস্তু না তাহলে???নাকি তাকেই বস্তুর সাথে তুলনা করলো?এই লোক টা আমাকে সব সময় অপমান করবে।

ইচ্ছে আর কিছু না ভেবে আহানের মুখ থেকে সিগারেট টেনে নিয়ে নিজের খেতে নিলো।পরের পরিনতি যা হওয়ার ছিলো তাই হলো । কাশতে কাশতে ইচ্ছের হিচকি উঠে গেলো। আর আহান হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাচ্ছে।

-- খাবি আরও খা খা 

ইচ্ছে কোনো মতে কাশি থামিয়ে বললো আমার মাথায় টাক দিন আস্তে করে। কাশছি তো দেখছেন না?

আহান ইচ্ছা করে জোরেই টাক দিলো।

--এইভাবে কাশি থামায়?আপনি তো রীতি মতো আমাকে মারতে চাচ্ছেন।
আমি ভিতরে গেলাম ভিজে যাচ্ছেন ভিতরে আসুন।

আহান ইচ্ছেকে যেতে দেয় না।ইচ্ছেকে টেনে এনে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে।ইচ্ছে ফ্রিজড হয়ে যায় আহানের এমন কাজে।কিছু বলছে না কিন্তু ভিতরে তোল পাড় হয়ে যাচ্ছে। বৃষ্টিস্নাত রাত শুধু দুটো মানুষ আর মানুষটি যদি হয় ভালোবাসার। ইচ্ছে রীতিমতো কাপছে।সরিয়ে দেওয়ারও সাহস নেই জড়িয়ে ধরারও সাহস নেই।

নিরবতা ভেঙে আহান বললো

-- তুই কি পিচ্ছি একটা মেয়ে রে ইচ্ছু

ইচ্ছে কাপতে কাপতে বললো 
-- আমার দুই বছরের ছোট আপনি।

--সাইজ দ্যাখ।আমার কানের নিচে পরিস তুই।ছোট বেলায় ভালো মা কে বলতি আম্মু আম্মু আহান যে কমপ্লান খায় ওইটা আমার চাই আমার কমপ্লানে লম্বা হয় না

আমি আহানে হাসি শুনছি কি সুন্দর হাসির সেই শব্দ। আহান তার থুতনি আমার কাধে রাখল।দাড়ির খোচা লাগছে অনবরত আর ঘাড়ে পরছে গরম নিশ্বাস। আমার শ্বাস কখন ঘনো হয়ে গেছে নিজেই টের পাই নি

--এত জোরে শ্বাস নিচ্ছিস কেন?

আহানের এমন কথায় রীতিমতো শ্বাস আটকে ধরলাম।ধুর এরকম ভাবে ভালোবাসার মানুষের সাথে মিশে থাকা যায় নাকি?শুধু তো জোরে জোরে শ্বাস নিলাম শ্বাসকষ্ট উঠে নি এটাই কপাল আমার।সে বুঝে না কেন আমি জোরে জরে নিশ্বাস নিচ্ছি?বাচ্চা?

-- কিরে মরলি নাকি এইবার তো আর শ্বাসই ছাড়ছিস না। কি আজব ব্যাপার রে ইচ্ছু!!!! 

 ইচ্ছের কার্যকলাপে আহান নিশব্দে হেসে চলছে। যা ইচ্ছেকে সে একদন্ড বুঝতে দিচ্ছে না।

-- কই ছাড়ছি না ছাড়ছি তো আহান।আবার গলা খাকারি দিয়ে বললো 

--আমি খাটো নই আহান পাচ ফিট চার মোটামোটি ঠিক আছি।আর পুরুষদের আপনার মতো লম্বায় মানায়।আমার বর আপনার মতো লম্বা হলেই হবে।

--হ্যা তোর বর আমার মতো লম্বা হলেই হবে।আমি যদি আরও লম্বা হই তর বরও সেটুকু লম্বা হবে দেখিস!!!

ইচ্ছে কিছু না বলে নিশব্দে হাসছে।ভালোবাসা এখন পানির মতো পরিষ্কার দুজনের কাছেই।জীবন কতো সুন্দর। কিন্তু আফসোস সুন্দর সময় বেশির ভাগ মানুষেরই স্থায়ি হয় না।

আহান ইচ্ছের কপাল চেক করছে।

-- কি হচ্ছে আহান আপনি কপাল চেক করছেন কেন?

--দেখছি জ্বর এলো কিনা।

-- কেন আপনি কি চান জ্বর হোক? 

--হুম(আনমনেই)জিভকেটে আবার বললো না না কি যে বলিস। আমার রুমকে আমার হাগাখানা বানানোর একদমই ইচ্ছা নেই বাবা।,,

--আপনি আবার আমাকে পচানি দিচ্ছেন।(এটা বলে আহানের হাত ছাড়িয়ে ঘরে গিয়ে বিছানায় শুয়ে পরলো।)

আহানও পিছু পিছু এসেছে।আহান বুঝতে পারে ইচ্ছে কিছুটা রেগে গেছে।আহান যখন বাইরে ছিলো তখন বৃষ্টির বেগ বেশি থাকায় জামা অনেকটাই ভিজে গেছে।তাই জামা খুলে অন্য জামা টা খুজতে গিয়ে দেখে বিছানায়,, ইচ্ছের মাথার পাশে। 

ইচ্ছে চোখ খুলে তার দিকে আহানকে খালি গায় আসতে দেখে ভয় পেয়ে যায়। 

মনে মনে ভাবছে কি হবে এখন? আহান কি ঐসব করবে?সে তো আহানকে একদমই বাধা দিতে পারবে না এবার কি কিছু হয়েই যাবে?উহ প্রথম বার কেমনে কি হবে?কি করবে?শুনছি কামড়ায় আমাকেও কামড়াবে?দাগ হয়ে যায় যদি? ভালো মা আম্মু যদি দেখে ফেলে? কি ভাববে কি বলবে? ইচ্ছে আর কিছু ভাবতে পারলো না।মাথা ভন ভন করছে মষ্তিস্ক শূন্য শূন্য লাগছে।

ইচ্ছের এমন ভাবনার মধ্যে আহান ইচ্ছের পাশ দিয়ে জামা নিয়ে গায়ে পরলো।আহান ইচ্ছের সামনে তুরি বাজিয়ে বললো অপেক্ষা আরও বড় কর।তারপরে ধপাস করে সোফায় শুয়ে পরলো।

ইচ্ছে এবার চরম লজ্জা পেল।কি ভাবলো আর কি হলো? সে জীবনে আর কিছু ভাববে না জীবনেও না।নিজের ভাবনা নিজেকে এতো লজ্জা দেয় ইচ্ছে এই প্রথম বার টের পেল।
কিন্তু আহান কি বুঝতে পেরেছে?নাউজুবিল্লাহ অসতাগফিরুল্লাহ। 
অপেক্ষা বড়ো করতে বলেছে সে কি লজ্জার কথা,,,,।কি ভাবলো।তওবা তওয়া। ইচ্ছে চোখ বুঝে ঘুমিয়ে পরার আগ পর্যন্ত তওবা পরেছে। মনে মনে ঠিক করেছে এই মন নেক্সট টাইম কিছু ভাবলে কঠিন দন্ড দেবে কঠিন।কঠিনতম কঠিনতর।হুহ

চলবে,
Like Reply
#18
?তুইতেই আমি?
লেখিকাঃইসরাত আয়রা ইচ্ছে
পর্বঃ১৩

???
 

এরপরে দুইদিন এভাবেই কেটে গেলো। আমাদের ভালোলাগার গল্প গুলো দিনে দিনে যেন বেড়েই চলছে।। সুযোগ বুঝে আমাকে খাওয়ানো, চুল টেনে দেয়া মাথায় তেল দিয়ে দেয়া।আমার হাতের কাজ কেড়ে নেওয়াই ছিলো আহানের কাজ।

বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছি সকালের খুব মিষ্টি একটা রোদ মুখে পরছে।এই রোদ গায়ে পরলে আলাদা ভালো লাগা তৈরি হয়। গায়ে মেখে নেয়া যায় অনায়াসেই। লুকানোর প্রয়োজন হয় না নিজেকে।

পিছন থেকে চুলে টান লাগলো। বুঝতেই পারলাম আহানের কাজ।

-- আহান লাগছে তো আমার

--লাগুক।মেয়েদের সহ্য শক্তি বেশি থাকতে হয় বুঝলি?পৃথিবীতে সব থেকে বেশি ব্যাথা সন্তান প্রসবের ব্যাথা। একটা মেয়ে মানুষ সহ্যের অধিক ব্যাথা সহ্য করে সন্তান পৃথিবীতে আনে। আর তুই কিনা এতেই আহান লাগছে

মানুষটার সভাবই জ্ঞান দেয়া জ্ঞান দেয়া হয়ে গেছে।

-- ওটা সবাই সময় মতো সহ্য করে।আমি সেটা মনে করে এখন ব্যাথা সহ্য করবো নাকি?

-- আচ্ছা ছেড়ে দিলাম। কি রান্না করবি?

--প্রতিদিন যা করি

-- দিনে দিনে তুই অলস হয়ে যাচ্ছিস জানিস তো একদম অলস। তোকে এখন উচিত মাটির কাজ করে যেসব মহিলা অনাদের সাথে একটা বাংলা শাড়ি পরাইয়া নামিয়ে দেয়া।আহ আমার চোখে ভাসছে জানিস তো তাতে যদি অলসতা কাটে। কি সুন্দর হবে সেই দৃশ্য আহ

--আপনি এটা বলতে পারলেন আহান?আপনাকে প্রতি বেলা গরম খাবার খাওয়াই না আমি? 

-- হ্যা প্রযুক্তিই দিলো তোদের কাজ সহজ করে।

ইচ্ছে মিনমিন করে বললো 
-- আপনি কি করেন হ্যা।শুধু কম্পিউটার ফোন আর আমার পিছনে লাগা

-- দিলি আমার মন ভেঙে দিলি। আমার কাজ নিয়ে কেউ খোটা দিলো না এই জীবনে আর তুই কিনা কি সাহস তোর 

--সরি আহান আমি আর কখনো বলবো না

এর মধ্যেই ইচ্ছের ফোনে কল এলো। 

-- কিরে ফোন আসছে ধর

-- হুম ধরছি।

-- আমি যাব?পারসোনাল ফোন হতে পারে

--না যাবেন কেন?আর কিসের পারসনাল? এক মিনিট  

ইচ্ছে দিপুর ফোন রিসিভ করলো।ওপাশের কথা শুনা যাচ্ছে না।
-- হ্যা হ্যালো দোস্ত। 
.হ্যা ভালো আছি তুই কেমন আছিস?
.আজ বিকেলে? নারে আসতে পারবো না। সমস্যায় আছি।
. এমন কি কাজ যে আজ দেখা করতেই হবে?
.অস্থির? কেন? কি অপেক্ষা করতে পারছিস না কিছুই বুঝতে পারছি না.
. আচ্ছা আসবো। হ্যা কথা দিলাম আসবো। ওরে বাবা হ্যা আসবো। 

ফোন কাটতেই আহান জিজ্ঞেস করলো
-- কি বললো তোর দিপু

-- আমার দিপু কখন হলো?

-- ওই হইলে হয় বল

-- বললো বিকালে দেখা করতে।আপনি কি বিজি আহান?নইলে আপনি আমার সাথে যাবেন। 

-- হ্যা তুই না বললেও যেতাম। আফটার অল আমার...

-- কি?

-- চিনি

--মানে?

-- চিনি চিনি সুগার

-- আমি সুগার?

-- হু

-- কি জানি বাবা আপনার কথা আমি৷ বুঝি না

-- বুঝাতে বলিও না

???

বিকেল বেলা দিপুর সাথে দেখা করতে যাব তাই তৈরি হয়ে নিলাম।আহানকে গিয়ে দেখি সে হাতের ওয়াচ আটকাচ্ছে।কি হ্যান্ডসাম লাগছে।খোচা খোচা চাপ দাড়িই যেন তার সৌন্দর্য বৃদ্ধির প্রধান কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমি তার দিকে অপলকভাবে তাকিয়ে আছি। সে কখন আমার সামনে এলো খেয়াল করতেই পারি নি।

-- দেখা হয়ে গেলে চল চারটা বেজে গেছে।

-- আর একটু দেখি না

-- না আর দেখে না

ঘোরের মধ্যে কথাটা বলে ফেললাম খেয়ালি করি নি।সেও সাভাবিকভাবেই নিলো।তাই আর কথা বাড়িয়ে লজ্জায় পরার মানেই হয় না।হাত ধরে টানতে টানতেই নিচ পর্যন্ত নিলো। দরজা লক করে বাইক নিয়ে আমার সামনে দাড়ালো। 

-- উঠ

উঠে বসতেই বললো

-- আমার কিন্তু বার বার ব্রেক কষার রোগ আছে সামনের দিক সামলানোর দায়িত্ব তোর... পরে আমায় খারাপ ভাবিস না।আমি ভালো নিসন্দেহে ভালো ছেলে।স্কুল কলেজে আমার মেইলি খারাপ রেকর্ড নেই।

দাত খিচিয়ে বললাম 
-- জানি আহান।আমি আমাকে খুব সামলে রাখবো। আপনাকে আমার সামনের বিষয় নিয়ে টেনশনে মাথা ফাটাতে হবে না কেমন?

-- নাহ ফাটাচ্ছি না।আমি ভদ্র ছেলে তো অ্যালার্ট করলাম নইলে বলবি সুযোগ নি

-- হ্যা আহান আপনি ভালো সেটা আমার থেকে কেউ ভালো জানে না।আপনাকে চিনলে একমাত্র আমিই চিনি

-- তুই আমার চরিত্রের দিকে আঙুল তুললি?

আস্তে করে বললাম
-- চোরের মনে... বাকিটুক বাকিই রাখলাম।আহান হয়তো শুনতে পায় নি।নইলে আমার গর্দান যেত।আহান আপনি যাবেন কিনায়ায়ায়ায়া

-- যাচ্ছি তো।

এই বলে বাইক চলতে শুরু করলো।

--তা দিপু ভাইর কাছে যাওয়ার এতো তাড়া কেন?

-- আমার অনেক তাড়া আহান।তাড়া ছাড়া আমার চলেই না।আমার সব কিছুতে তাড়া...শুধু আপনি জানেন না বোঝেন না

-- হ্যা ভাবার বিষয়। ভেব্ব দেখবো জানা যায় কিনা...

???

পার্কে বসে আছি। আমি আহান একপাশে আর দিপু অন্য পাশে।মাথার উপরে বড় ছাতা ছায়া দিচ্ছে।আহান আসায় দিপু বেশ বিরক্ত তা দিপুর চেহারায় স্পষ্ট । কপালে আঙুল টানতে টানতে বলেই ফেললো 

-- আহান ছোট ভাই কি কোনো কাজে এসেছো?

-- হ্যা এই যে আপনি ইচ্ছেকে ডাকলেন। তাই এলাম। বলতে গেলে একপ্রকার কাজেই এসেছি।

-- মাঝে মাঝে তো ইচ্ছেকে আপনি বা আপু করেও ডাকতে পারো

আহান হাল্কা হেসে বললো না পারি না

-- ওহ।সেটা তোমাদের ব্যাপার।আসলে ছোট ভাই আমার ইচ্ছের সাথে আলাদা কিছু কথা আছে। তুমি কি একটু যাবে? 

আহান যে রাগ করেছে তার মুখেই ফুটে উঠেছে।ইচ্ছে তরিঘরি করে বলে উঠল।

-- কেন আহান কেন যাবে? আপনি বসেন আহান।দিপু তুই কি বলবি বল। আহানের সামনে আমার শুনতে প্রবলেম নেই সো তোর বলতে প্রবলেম হবার কথা না নিশ্চয়ই?

-- তোর আপনির সামনে কেমনে বলি আমাদের একটা প্রাইভেসি আছে না?

-- আমাদের ভুল বললি। কই আমার তো প্রাইভেসি নেই।তোর কি এমন কথা যে প্রাইভেসি প্রয়োজন? আমি আদোও বুঝতে পারছি না দিপু

দিপু আহানের দিকে তাকিয়ে হালকা বিরক্তি মাখা অনিচ্ছাকৃত হাসি দিয়ে বললো 
-- অকে আহান তোমার সাথে আমার মোস্ট ইমপরটেন্ট সময়টা শেয়ার করছি।

আহান কোনো উত্তর না দিয়ে হাত মুঠ করে বসে আছে।

--ইচ্ছে একটু দাড়াবি?  

-- কেন?

আমি আহানের দিকে তাকাতে আহান ইশারায় দাড়াতে বললো। 

আহানও উঠে দাঁড়ালো।দিপু এবার আহানের পাশে এসে কানে ফিসফিসিয়ে বললো 

--তুমি দাঁড়ালে কেন শালা বাবু?

-- শালাবাবু আমাকে যে দাঁড়াতেই হবে।

-- মানে?আমি তোমার শালা কেমনে ভাই তুমি আমার শালা...

-- কিছু না দিপু ভাই কাজে যাও

দিপু ইচ্ছের সামনে গিয়ে হুট করে হাটু গেড়ে বসে পরলো।পকেট থেকে একটা ছোট বক্স বের করলো। বক্সটা খুলে একটা আংটি।আংটিটা হাতে নিয়ে বললো 

-- ইচ্ছে উইল ইউ মেরি মি?(কিছুটা থেমে করুন চোখে) আই রিয়েলি লাভ ইউ দোস্ত 

দিপুর এমন কাজে আমি সত্যিই অবাক হয়ে গেছি।অবাকের চরম পর্যায় আমি। আমার সাথে মাঝে মাঝে মজা করে বলতো তুই আমার জিএফ লাগিস।আবার নিজেই বলতো দোস্ত সিরিয়াস নিবি না। আম জোকিং।এর আগেও ফ্রেন্ডস রা একসাথে ঘুরেছি।বাট আজকে এমন কাজ করবে আমার ভাবনার বাইরে।

--এইগুলা কি দিপু।উই আর ফ্রেন্ডস গুড ফ্রেন্ডস। এগুলো কি? প্রথমেই বিয়েতে চলে গেছিস।

দিপু মিষ্টি হেসে বললো 
-- তোকে আমি জীবনে চাই ইচ্ছে।জীবনে পেতে হলে বিয়ে আবশ্যক। রিস্ক নিতে চাই না তাই আগেই বুক করতে চাইছি

এই বলেই আমার হাত ধরতে গেলো খুব সম্ভব আংটি পরানোর জন্য।

আহান এতক্ষণ চুপ করে হাত মুঠ করে সহ্য করেছে কিন্তু আর করলো না।দিপু ধরার আগেই ইচ্চের বাম হাতটা নিজের হাতের মুঠোয় মুষ্টিবদ্ধ করে নিলো।আহানের এমন কাজে দিপু বেশ আহত হলো।কিছুক্ষণ তাকিয়ে বলেই ফেললো।

-- আহান ওর হাতটা ছাড়ো আমার কাজ সম্পুর্ন হয় নি

-- দিপু ভাই উঠে দাঁড়ান।এভাবে বসিয়ে অপমান করার ইচ্ছা আমার নেই। একটু আগে আপনাকে শালাবাবু বললাম তার জবাব টা মুখে দিতে চাচ্ছি না।আমার কাজেই জবাব পেয়ে যাবেন। 

দিপু অবাক হয়েই উঠে দাড়ালো।
--কি দেখাবে দেখাও।

আহান নিচু হয়ে কয়টা বড় ঘাস ছিড়লো। ঘুরিয়ে পেচিয়ে রিং টাইপের বানালো।

-- দিপু ভাই আমি এই ঘাসের রিংটা ইচ্ছের সামনে ধরবো আর আপনি আপনার সোনার বা ডায়মন্ডের হোয়াটএভার.. রিংটা ইচ্ছের সামনে ধরবেন।দেখেন কি হয়।

দিপু কিছুক্ষণ হাসলো।
-- বোকা তুমি আহান মেয়ে মানুষ চেনো না।তোমার আরও বড় হতে হবে বুঝলে তো।ছোট মানুষ আবেগে পরেছো।ইচ্ছের তোমায় স্নেহ করে। তুমি তার মূল্য দিলে না যাই হোক ছোট মানুষের আবদার রাখতে হয় কে যেন বলেছিলো।তাই তোমার কথা রাখলাম

-- উওর না হয় পরেই দিলাম ভাই যা বললাম তাই করেন।

আহান দিপু আমার সামনে রিং দুইটা ধরলো। আমার রিংটা বেছে নিতে একটু কষ্ট হয় নি আর না পরতে হয়েছে দোটানায়।আমি খুব সহজেই আহানের ঘাসের রিং টা ওর হাত থেকে হাতে পরে নিলাম মুখে সীমাহীন হাসির ঝলকানি।এটা ভেবে মন তৃপ্তি পেল যে আহান নিজের জিনিস বুঝে নিতে জানে।আর আহানের ঠোঁটে বাকা হাসি ঝুলে আছে।আমার এমন কাজে দিপুর মাথায় আকাশ ভেঙে পরলো। 

-- তুই এটা কি করলি ইচ্ছে।

আমাকে কোনো উত্তর দিতে হয় নি। তখনই আহান বলে উঠে 

-- দিপু ভাই আপনাকে মেয়েদের সামনে বসিয়ে অপমান করি নি আপনার ভাগ্য ভাবতে পারেন।আহান কাউকে ছেড়ে দেয় না।আবার বড়োদের সম্মানেও কমতি রাখে না।শালাবাবু আপনাকে কেন বলেছি বুঝেছেন আশা করি।ইচ্ছে আমাকে স্নেহ করে না.. কি করে তাও বুঝেছেন অবশ্যই আফটার অল ফিটার তো খান না সেহেতু বোঝার কথা।আয়মান আহানের টাকার অভাব নেই। ওমন ডায়মন্ডে ভরিয়ে দিতে পারবো আমি।আর কি বললেন মেয়েদের চিনি না?ইচ্ছেকে আপনার গোল্ডডিগার মনে হয়? তাহলে সরি টু ছে আপনি মেয়েদের চিনেছেন ইচ্ছেকে চিনেন নি।কিন্তু আমি ইচ্ছেকে চিনেছি অন্য মেয়েদের চিনি নি।আমি ইচ্ছেকে চিনি যখন আমার বয়স ৫ মিনিট । ওর থেকে এতো বছরে দূরে থেকেছি মাত্র ২০দিন।এক বছরের ফ্রেন্ডশিপে কি আর চিনলেন?নাথিং। আমি ওর মধ্যে কখনো বিলাশিতা অহংকার চাহিদা দেখেনি।সো আবারও বলি ইচ্ছেকে চিনতে ভুল করেছেন।আসি দিপু ভাই

আহানের চোখের তীক্ষ্ণ ইশারায় দিপু কেপে উঠলো।এইটুক ছেলের ম্যাচুরিটিতে দিপু সত্যিই অবাক।

আহানের দিকে আমি এক ভালোবাসার দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছি।কি সুন্দর বললেন উনি। এখন খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে করছে খুব খুব।দিপুকে থ্যাংকস ওর জন্য আমাদের বিষয়টা সহজ হয়ে গেছে।কিন্তু লজ্জা যে বেড়ে গেলো? ধুর তাতে কি ভালোবাসায় লজ্জা বিশেষ ভুমিকা রাখে।ভালোবাসা। 

চলবে,
Like Reply
#19
পর্বঃ১৪

???

আহানের দিকে আমি এক ভালোবাসার দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছি।কি সুন্দর বললেন উনি। এখন খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে করছে খুব খুব।দিপুকে থ্যাংকস ওর জন্য আমাদের বিষয়টা সহজ হয়ে গেছে।কিন্তু লজ্জা যে বেড়ে গেলো? ধুর তাতে কি ভালোবাসায় লজ্জা বিশেষ ভুমিকা রাখে।ভালোবাসা ছাড়া কে কবে ভালো থেকেছে?থেকেছে কি?প্রাক্তনের কাছে পাওয়া কষ্ট গুলো ভেবে যতই কেউ বলুক ওর দেয়া কষ্ট গুলো তো নেই এতেই আমি ভালো আছি কিন্তু গভীর ভাবে ভাবলে দেখা যায় প্রাক্তনের সাথে যখন সম্পর্কটা শুরু হয়ে ছিলো সেই সুখের, সেই ভালো থাকার গল্পের সাথে এই ভালো থাকার গল্পের আকাশ পাতাল তফাত আছে। যে প্রতারণার শিকার হয়েছে সে এটা ভেবেই সুখ নেয় যে নিত্যনতুন কষ্টটুকুই নেই। এটাই তার ভালো থাকা কিন্তু সত্যিকারের অর্থে সে ভালো নেই সে সুখী নয়।কখনোও ভালোবাসার মুহুর্ত গুলোর সুখ ভালোবাসার মানুষ সাথে না থাকলে অনুভব করা যায় না যত দিন না পরিপূরক এসে জায়গা ভরাট করছে।মানুষ ভালোবাসার কাঙাল।সবাই চায় আমার ভালোবাসা থাকুক।পিওর লাভারদের ক্ষেত্রে বেশি হয়।ধোকাবাজদের উদাহরণ টানাও ভুল তারা ভালোবাসাই চায় না কখনও তাদের থাকে শুধুই কামনা।

আহান ভালোবাসে আমায় খুব ভালোবাসে।এটা ভাবতেই মন আরও নেচে উঠলো।সজ্ঞানে ভালোবাসা প্রকাশ প্রথম বার হলো। আহান আমার প্রতি এত কনফিডেন্স ছিলো বাপরে বাপ।ছোট বেলা থেকে আমাকে পড়তে পারতো সে।এটা খুব সাভাবিক ব্যাপার কারণ ভালোবাসা মনের মধ্যে বাসা বাধলে তা শুধু মনেই বিদ্যমান থাকে না। ভালোবাসার মানুষ সামনে আসলে চোখ নাক মুখ শরীর এমনকি চুলও সার্থপরের মতো কথা শোনে না,নিজের প্রকাশে ব্যস্ত হয়ে পরে।যে যার নিজের গতিতে ভালোবাসা প্রকাশ করতে থাকে ।আমার ভালোবাসাও হয়তো আমার চোখ নাক মুখ শরীরের বিটলামির জন্য তার কাছে ধরা পড়ে গেছে।

-- দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে না হেসে বাইকে বস।হর্ন বাজাচ্ছি তুই কি কান বন্ধ করে থাকিস ইচ্ছে? 

এতক্ষণ হাসছিলাম? কি অদ্ভুত আমি তো শুধু মন দিয়ে ভাবছিলাম। আচ্ছা সে এতো নরমাল কেন? কই নরম স্বরে ডাকবে হাত ধরে বসাবে ... তা না খিট খিট কেন শুরু করেছে।রাগ কিসের এতো? 

-- রাস্তায় থাপ্পড় না খেতে চাইলে উঠে বসসস ইচ্ছে আমার রাগ হচ্ছে।

-- বসছি বসছি।

আমি হাত নেড়ে দিপুকে টাটা দিলাম।দিপু বলদের তিন নাম্বার কর্মীর মতো তাকিয়ে আছে।হয়তো আমাদের আচার-আচরণ এতো কাছ থেকে দেখে নি কখনো তাই

.....

বাসার সামনে বাইক থামলো।

-- ইচ্ছে তুই বাসায় থাক।আমি দেড় ঘন্টা পরে এসে যাবো।

-- আমার ভয় করবে আহান।সন্ধা হয়ে এসেছে একা থাকা সম্ভব না।আমাকেও নিয়ে চলুন পিলিজ। 

আহান কপালে হাত বুলিয়ে কিছু একটা ভাবলো।

-- আচ্ছা যাচ্ছি না।ঘরে যা। আমি বাইক রেখে আসছি।

-- আচ্ছা।বলে মন খারাপ করে ঘরের ভিতরে পা বাড়ালাম।কিসের এত গাম্ভীর্যতা হ্যা? এই যে একটু আগে আমি ওনার দেয়া রিংটা গ্রহণ করলাম এতে যে আমাদের এক প্রকার প্রেম শুরু হয়ে গেছে বোঝেন উনি?কই আমার সাথে একটু প্রেম প্রেম কথা বলবে তা না,,, চিবিয়ে খাওয়া মুড নিয়ে আছেন।ভাল্লাগে না।

.....

ফ্রেস হয়ে মাগরিবের নামাজ পরে নিলাম। ড্রেসিং টেবিলের সামনে চুল আচরাচ্ছি।আয়নায় আহানের কায়া দেখা যাচ্ছে। আমার পিছনে এসে দাড়ালেন।আমি একরাশ লজ্জা নিয়ে ঘুরে তার দিকে তাকালাম।সাথে সাথে আমার গালে ঠাস করে এক চড় লাগালেন।পিনপতন নীরবতার মাঝে শব্দটা বেশ বেমানান।রুমের মধ্যে প্রতিধ্বনিও হয়েছে।আমার লজ্জা মাখা মুখ নিমিষেই অবাক হওয়া চোখ নিয়ে তাকালো।চোখের ভিতরে একটু একটু করে পানি জমছে।যেকোনো সময় বাধ ভেঙে গড়িয়ে পরবে।আমি গালে হাত দিয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছি আর সে রাগে রীতিমতো কাপছে।অন্য গালে মারতে নিয়েও হাত মুঠ করে আবার ফিরিয়ে নিলেন।আমার কি দোষ আমি জানি না।মুখে জিজ্ঞেস করার সাহসটুকুও পাচ্ছি না।এতো সুখের মাঝে এমন ব্যবহারও মেনে নিতে পারছি না।চোখের পানি আর বাধ মানলো গড়িয়ে পরতে শুরু করে দিয়েছে। 

আহান চিল্লিয়ে বলা শুরু করলো

-- তোকে আমি বলেছিলাম তোর পিছনে কোনো ছেলে লাগলে তুই আমাকে জানাবিইইই।।আগের বার নিজে থাপ্পড় মেরে ভয় পেয়ে বাসায় এসে বলেছিস।দিপু ভাই আজ তোকে ফার্স্ট টাইম ভালোবাসার ইঙ্গিত দিয়েছে?এটা আমি মানবো নায়ায়ায়ায়ায়া।আরে কোনো মেয়ের পিছনে দশ মিটার দূরে থেকেও কোনো ছেলে ঘুরলে মেয়েরা ইশারা ছাড়াই বুঝে যায়। তুই বুঝিস নি????????

আহানের চিৎকারে বার বার কেপে উঠছি।তার মুখ যেন থামছেই না।

--আর কে কে ঘুরে তোর পিছনে বল বললল।তুই কেন জানাসনি আমাকে। জানালে আমি একদিনও আর তোর দিকে চোখ বাড়ানোর সুযোগ দিতাম নায়ায়ায়ায়া।যে ভাইকে থাপ্পড় মেরেছিলি সে ওই দিনের পরে তোর পিছনে এসেছে আর? তুই ভেবেছিস কি তোর মাইরে সে ভয় পেয়েছিলো???? আরে পরের দিন তোকে রেপ করার প্লান করেছিলো। ওর যা অবস্থা করেছি বলেই হাসতে শুরু করলো আহান।

সত্যিই আমি ভাবছিলাম গুন্ডাটা আমার থাপ্পড়ে ভয় পেয়েছে।কিন্তু আহান...আর ভাবতে পারলাম না আহানের চিৎকারে

-- আমি তোর ক্লাসে ছোট তাই তোর বিষয় সব খবর পাওয়া আমার সম্ভব হয় না।তোর উপর বিশ্বাস ছিলো তুই আমাকে বলবি কিন্তু তুই বলিস না আমি ছোট বলে?????এটা তোর যুক্তি?? আমি ছোট ???? চাইলে বাচ্চার বাপ হয়ে যেতে পারি। আমাকে ছোট লাগে তোর?????? আয় আমি ছোট নাকি বড়ো দেখাই। ছোটরা যা পারে না তাই করে দেখালেই তাহলে তো বুঝবি আমি বড় তাই না?

আমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই গায়ের ওড়না টেনে নিলো।তার রাগ এমন চরম পর্যায় যাবে তা ভাবার বাইরে ছিলো আমার। এখন কি করবো। আমি হিস্কি দিয়ে কেদে চলছি তাতে আহানের কোনো মাথা ব্যাথা নেই। আহান এতোই ডেসপারেট হয়ে গেছে।

তার অবাধ্য হাত গুলো আমার শরীর ছুয়ে দিচ্ছে অবাধ্য ভাবে। ঠোঁট দিয়ে আমার ঠোঁটে ভালোবাসার পরশের বদলে কামড়ে রক্তাক্ত করে দিচ্ছে।আর কিছু অনুভব করার জন্য আমার মস্তিষ্ক কাজ করছে না।

ইচ্ছে অজ্ঞান হয়ে যাওয়ায় ভর পুরোপুরি ছেড়ে দিয়েছে।নিচে পরে যেতে নিলেই আহান আকড়ে ধরলো। এতক্ষণে আহানের খেয়াল এলো সে ইচ্ছের সাথে রাগের বসে কতটা ভুল করতে যাচ্ছিলো।অলরেডি কতটা করে ফেলেছে।মেয়েটা যে নরম সভাবের চাপা তা আহানের জানা তবুও কেন এমন করলো নিজেই বুঝতে পারছে না।রাগ এতটা ছিলো? ।মেয়েটাকে কি এবার বোরকা পরাবে নাকি সেটা ভাবছে। এই মেয়ের দিকে কেউ তাকাক সেটুকুই সহ্য করার ক্ষমতা আহানের নেই তা আহান হারে হারে টের পাচ্ছে।

ইচ্ছেকে তাড়াতাড়ি কোলে নিয়ে বিছানায় সুয়ে দিলো।কপালে একটা চুমো একে দিলো আলতো করে।ওড়নাটা নিচ থেকে কুড়িয়ে উঠালো।গায়ে জরিয়ে দিলো। চুলগুলো গুছিয়ে কপালে আর একটা চুমো আকলো।নিজের কাজের জন্য ঘৃণা হচ্ছে।কিন্তু এক ঘরে থেকে আগের বারের মতো আড়াল হওয়াও সম্ভব না।দেয়ালে কতক্ষণ ইচ্ছা মতো ঘুষি দিলো আহান।হাত অনেকটাই রক্তাক্ত হলো। তারপর হাত ধুয়ে গ্লাসে হাল্কা পানি নিয়ে ইচ্ছের পাশে বসলো।আবার কপালে চুমো একে হাত টা নিজের হাতের মধ্যে আলতো ভাবে আকড়ে ধরলো । আহত কন্ঠে বললো "আম সরি পাখি তুই যে প্রতিবাদও করতে পারিস না আমার উপর রাগের বসে ভুলেই গেছিলাম। আম সরি পাখি সত্যি সরি" 

ইচ্ছের চোখে মুখে পানি ছিটাতেই ইচ্ছের সেন্স ফিরে এলো। কিছুক্ষণ চোখ মুখ কুচকিয়ে আহানকে দেখে ইচ্ছের কিছু আগের কথা মনে পরে যায়। অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে ফুপিয়ে কেদে ওঠে। এবার আহানও কান্না করে দেয়।মূলত ইচ্ছের কান্না সহ্য করতে পারে না বলেই ইচ্ছে কান্না করার সময় আহান দূরে সরে যায় সামনে আসে না।আহানের কান্নার হালকা আওয়াজ পেয়ে ইচ্ছে মুখ ঘুরিয়ে তাকায়। দেখে আহান কাদছে।এবার কি করবে নিজেই বোকাবনে গেছে।ইচ্ছে সোয়া থেকে উঠে বসতে চায় কিন্তু পারে না।সোয়া অবস্থায় আহানকে জিজ্ঞেস করে

-- আপনি বাচ্চাদের মতো কাদছেন কেন আহান?কি হয়েছে?বলুন

-- আম সরি পাখি আম রিয়েলি সরি ইচ্ছু পাখি।
এই বলে আহান ইচ্ছেকে জড়িয়ে ধরলো।আহানের মুখ থামছে না নন্সস্টপ বলেই যাচ্ছে ।শুধু এক কথাই বলছে আম সরি ইচ্ছুপাখি আম সরি।আর কখনো হবে না।আম সরি

ইচ্ছে কিছুতেই থামাতে পারছে না বুঝাতেও পারছে না সে রাগ করে নি...মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে কিন্তু কান্নার বেগ বাড়ছেই। ছেলেরা এতো কাদে? কে বলবে এই ছেলের রাগে একটু আগে আমার কলিজা কেপেছে?

চলবে,
Like Reply
#20
পর্বঃ১৫

???

আহান তখনই উঠে নিজের রুমের দরজা লাগিয়েছে শত বার ডেকেও দরজা খুলতে পারি নি। খেতেও আসে নি। তাই আমিও না খেয়ে রাত ৯ টার দিকে শুয়ে পড়লাম কখন ঘুমিয়ে গেছি নিজেই জানি না।

.

কানের পাশে বিড়ালের প্রকট আওয়াজে ঘুম ভেঙে গেল।ধরফরিয়ে উঠতে গিয়ে পরে যেতে নিলাম।কিন্তু কেউ একজন আমাকে বাচিয়ে নিলো।ভাবছি বিছানা এতো ছোট কিভাবে হয়ে গেলো? ঘুম থেকে উঠে চটপট করে কিছু মাথায় ঘুরে না আমার।এখনও তেমিন সমস্যায়ই ভুগছি। চোখ কোচলে ভালো ভাবে তাকিয়ে দেখি পাশে কোনো বিড়াল নেই কিন্তু বড়ো বিড়াল আছে একটা । আহান।আশপাশ তাকিয়ে দেখলাম এটা রুম নয়। তাহলে কি? আমার সামনের জায়গায়টা মোমবাতি আর ফ্লাওয়ারসে ভরপুর। উপরের দিকে তাকিয়ে দেখি আকাশ দেখা যাচ্ছে । এবার নিজের অবস্থানের দিকে তাকিতে দেখি আমি দোলনায়। বুঝতে পারলাম ছাদের দোলনায় আছি।কিন্তু এখানে কিভাবে এলাম?

-- কি মাথায় সব ঘুরানো হয়ে গেছে তোর? 

-- আহান আমি ছাদের দোলনায় কিভাবে এলাম? আমি না বিছানায় ছিলাম?

-- হ্যা ছিলি 

-- তাহলে এখানে?

-- কোলে করে এনেছি।ঘুমালে তোর হুস জ্ঞান কখনও থাকে না আর থাকবে বলেও আশা করি না।

-- তা ঠিক আছে কিন্তু 

-- কিন্তু টিন্তু বাদ।এখন আমি যা বলবো তাই কর।

আমার হাত ধরে টেনে ছাদের কোণাটায় আনলেন।হাতে বোতল দিয়ে বললেন মুখে পানি দে।ঘুমের রেশ কাটে নি তোর। তাই কিছু দেখতে পারছিস না তুই।

মুখ ধুয়ে আসলেই নিজেকে ফ্রেশ লাগছে।আহান হাত থেকে বোতল নিয়ে এক পাশে রাখলেন।আমার ওড়না দিয়ে আমার মুখ মুছে দিলেন। আর সাথে সাথে চোখ টাও বেধে দিলেন।আমার হাত ধরে আবার দোলনায় আবার বসিয়ে দিয়েছেন।হাত ছাড়ার আগে বললেন যখন চোখ খুলতে বলবো তখন খুলবি।আমি তার কথা সায় দিতে মাথা এলিয়ে দিলাম।

কিছুক্ষণ পরে আমার চোখের বাধন পিছন থেকে নিজেই খুলে দিলেন।চোখের সামনের দৃশ্য দেখে আমি মুখ হা করে রইলাম। উনি জিজ্ঞেস করলেন কেমন লাগছে? কি বলবো ভাষা পাচ্ছি না।কিছুক্ষণ আগেই যেটা আমার কাছে শুধু মোম আর ফুল মনে হয়েছিলো। সেটা সারা ছাদ জুরে লাভ সেইপ ধারণ করে।এত্তগুলা মোমবাতি দিয়ে লাভ সেইপ করা।প্রত্যেকটা লাভের মাঝে একটা করে গোলাপ ফুল।লাভগুলো যেখানে শেষ হয়েছে সেখানে আহান দাঁড়িয়ে আছে।পাশ থেকে গেলো কখন? এতোই মগ্ন ছিলাম।ওখান থেকেই চিল্লিয়ে বললো প্রত্যেক টা লাভের মধ্যে থেকে গোলাপগুলো তুলে নিয়ে আয়।

আমি অবাক চোখেই তাকিয়ে আছি 

-- কিরে নিয়ে আয় 

আমি একএকটা লাভের মধ্যে ঢুকে ফুলগুলো হাত দিয়ে তুলছি। একটা সাদা গোলাপ একটা লাল একটা সাদা একটা লাল। এভাবে ১০টা ফুল তুললাম ফুলুগুলো তোলার সময় মনে হচ্ছিলো একেকটা প্রাপ্তি এগুলো আমার। ভালোবাসা পুর্ণতা পাওয়ার একেকটা ধাপ,একেকটা অধ্যায়। আমার মনে হচ্ছে এই ধাপগুলো যত তারাতাড়ি পার করতে পারবো আমার ভালোভাসার প্রাপ্তি ততই আমার সন্নিকটে। দ্রুত করে তুলে শেষ লাভ টার মধ্যে পা দিতেই আহান বললো থেমে যা।আমি দাঁড়িয়ে পরলাম কিন্তু মন চাইছে না আর প্রাপ্তির পথে দেরি। 

-- আহান এগারো নাম্বার লাভের মধ্যে কোনো ফুল নেই যে।

-- ওখানে তুই দাঁড়িয়ে থাকবি।নইলে দেখা যাবে আমার উপর ঝাপিয়ে পরলেও পরতে পারো।এমনিই আমি ছোট বাচ্চা বুড়ো কেউ আমার গায়ে পরলে সমস্যা।

সামনে কি হবে তার আগ্রহে আমি এতই ব্যস্ত যে তার কথায় আমি আপাতত কান দিচ্ছি না।

 
কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে মুচকি হাসলেন।আমার হাত ধরে লাভের মধ্যে থেকে বের করে দাড় করালেন।ইচ্ছের উৎসুক দৃষ্টি দেখে আহান আবারও হাসলো। কানের কাছে এসে ফিসফিসিয়ে বললেন ধৈর্য শক্তি বাড়ানো অতি অপরিহার্য অন্তত তোর জন্য।টাইম মেশিন পেলে তো এখনই ঘুরিয়ে ফিউচার দেখে নিতি।

কি জানি তার সব কথায় আমার একরাশ লজ্জা লাগছে শুধু।চোখের দিকে চোখ তুলে তাকাতেই পারছি না। খুব সাহস করে একবার তাকালাম।দেখলাম তার তাকানোর ভংগী পাল্টে গেছে।অন্য এক চোখের ভাষা। এটাই কি তবে ভালোবাসাময় তাকানো। যে চোখের দিকে তাকানোর পর আর একবার তাকানোর মতো সাহস করাই দায় হয়ে পরেছে।যদি হারিয়ে যাই? অনেক কিছু দেখার বাকি যে....

 আমার সামনে হাটু গেড়ে বসে পরলেন।এবার আমি তার চোখের দিকে তাকিয়ে আছি।ব্লু কালারের শার্টে কি সুন্দর ই না লাগছে তাকে।কবি সাহিত্যিকরা শুধু মেয়েদের রূপের বর্ণনা কেন দিয়েছে আমার জানা নেই।আমি কবি হলে তার সৌন্দর্যের ব্যাখ্যা করেই জীবন পার করে দিতাম।খানিকটা হাসলাম। নিজের মনের ভিতরেই হাসিটা চাপা রইলো।

--ইচ্ছে

তার ডাকে তার দিকে মনযোগ দিগুণ বাড়িয়ে দিলাম কিন্তু জবাব দিলাম না।

আহান আমার দিকে একটা কাগজ বাড়িয়ে দিয়ে পড়তে বললো। কিন্তু আমার আর পরতে হলো না 

--'' তোর চোখের দিকে তাকানো থেকে বিরত থাকতে
পারছে না আমার চোখ… পারছে না। পারছে না মনের কথা চাপা রাখতে
এভাবে আমাকে আকৃষ্ট করতে দয়া হচ্ছে না একটু?'' 

'' আমার স্বপ্নগুলো তোর চোখে কাজল হয়ে লেগে থাকবে!
তোমার চোখের ঘষা লাগাতেই তা চারিদিকে ছড়িয়ে পড়বে॥"(এইটুকের বানীতে অন্য কেউ)
❤️❤️

আহানের গলার আওয়াজে আমি মত্ত প্রায়।তার কথাগুলোয় হাত পা কাপছে আমার। তার কথাগুলো কানে বাজছে আমার "দয়া হচ্ছে না একটু?"

আর ভাবতে পারলাম না। আমার দিকে আর একটা কাগজ বাড়িয়ে দিলেন 

"তোর গানের কথা হতে ব্যস্ততায় ভরপুর আমার এই শহর "

এভাবে একের পর এক কাগজ বাড়িয়ে দিচ্ছে আমি পড়ার আগেই সে বলে দিচ্ছে

"তোর নদীর বালি হতে ব্যস্ত আমার এই মন... দেখিস তুই? বুঝিস তুই?"

"আমার অনুভবের খাতার পৃষ্ঠা যে দিনে দিনে ভারী হচ্ছে।টের পেয়েছিস? ওজনটা বইতে পারবি তো?"

"সকালের রোদের শুভ্রতায় মিষ্টি হাসি হবি আমার?"

" আমার ক্লান্তির অবসান হবি কি?"

এর পরের প্রত্যেকটা কাগজ খুলে ভালোবাসি শব্দটা লেখা পেয়েছি বারংবার। কিন্তু তিনি মুখে বলেন নি।নতুন কাগজ পাওয়ার আশায় হাত বাড়াতেই হাতে একগুচ্ছ ফুল ধরিয়ে দিয়ে অন্যরকম শীতল এক আওয়াজে বললেন "ভালোবাসি"।

আমার বুকের ভিতরও শীতল হয়ে গেলো। এই মুহুর্তে আমার মনে হলো কাঙ্ক্ষিত ভালোবাসার মানুষের মুখে ভালোবাসি শব্দটা পৃথিবীর সবচেয়ে সুুখী শব্দ।এই জাদুর শব্দ যার কানে আসবে সেই হয়ে যাবে সুখী মানুষ। ম্যাজিকের মতো। 

-- তোর উত্তরের অপেক্ষা আমি করবো না ইচ্ছে। আমি জানি তুই আজ বোবা হয়ে যাবি

একটা রিং বের করে আমার সামনে ধরলেন আমার হাত নিজ গতিতেই তার দিকে এগিয়ে গেলো। 

-- উইল ইউ মেরি মি ইচ্ছুপাখি?

-- ইয়েস 

চোখ দিয়ে কয়েক ফোটা জল গড়িয়ে পরলো।আহান চোখ মুছিয়ে বললো। জানিস আজ আমি পৃথিবীর সবথেকে সুন্দর দৃশ্য দেখলাম। রাত দুটোয় আবছা আবছা মোমবাতির আলোয় ভালোবাসার প্রাপ্তিতে কান্নারত এক রমনী।অবাক করা বিষয় মুখে তার একরাশ হাসি। জানিস তো আমি যদি আর্টিস্ট হতাম এই কনছেপ্টটা আমার জন্য বেস্ট হতো। 

তাকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে ঝাপিয়ে পরলাম তার বুকে।আমার মতে পুরুষের বুকের মধ্যে বেশ কিছু রুম থাকা উচিত এই যে আমার এখন বুকের মধ্যেখানে ঢুকে যেতে মন চাইছে? আমি শুধু রুমের অভাবে ঢুকতে পারছি না।এসব ভাবছি কাদছি হাসছি।হ্যা সুখী আমি খুব সুখী। 

চলবে,
Like Reply




Users browsing this thread: 1 Guest(s)