Thread Rating:
  • 37 Vote(s) - 3.3 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
WRITER'S SPECIAL বিজয়ের বিসিএস জয়
#1
Rainbow 
বিজয়ের বিসিএস জয়
© মহাবীর্য্য দেবশর্ম্মা

উৎসর্গঃ বাঙ্গালার সেই সকল বেকার যুবক যুবতীদের উদ্দেশ্যে, যাহারা এখনও লড়িতেছে দাঁতে দাঁত চাপিয়া, হার না মানিয়া সেই সমস্ত অসীম লড়াইয়ের যোদ্ধাদের প্রতি এই অধম লেখকের সামান্য নিবেদন 

পর্ব্বঃ ১

১৩ই অগ্রহায়ণ, সোমবার

   
ডায়েরি আমি লিখি নে। লিখি নে দুইটী কারণে, প্রথমতঃ, আমার এই নিস্তরঙ্গ জীবনের প্ৰতিটী দিবসই একরঙ্গা, একঘেয়ে। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের এক কাহিনীতে পড়িয়াছিলাম, আকাশ কখনো পুরাতন হয় না। দুই-একবার গগন পানে চাহিয়া দেখিয়াছি কথাটী মিথ্যা নহে। কিন্তু, আমার এই জীবন আকাশ তো নহে, না তাহার মধ্যে বিশালতা আছে আর না নূতন রঙ। যদি কিছু আছে তো তাহা হইল নিকষ অন্ধকার। ঘোর তমসাচ্ছন্ন সেই অন্ধকার! তাহার না আদি আছে না অন্ত। সুখ দুঃখ নাকি নিরবধি চক্রাকারে আবর্ত্তিত হইতেছে! কই, আমি তো তাহা দেখি না, আমি দেখি শুধুই দুঃখ! সুখ ছিল একদা সত্য কিন্তু যবে হইতে দুঃখ আসিয়াছে, সে আর যায় নাই তাই বোধকরি সুখ ও আর আসে নাই! প্রথম যখন এই অন্ধকার আসিল, তখন এত মাথা ঘামাই নাই, উহা এত ঘনীভূতও তখন হয় নাই কিন্তু আস্তে আস্তে সেই অন্ধকার চাপিয়া বসিল, আষ্টেপৃষ্ঠে আমারে জড়াইয়া ধরিল! দমবন্ধ হইয়া আসিল, হাঁসফাঁস করিতে লাগিলাম, প্রাণপণে তাহার করালগ্রাস হইতে মুক্তির চেষ্টা করিলাম কিন্তু সকলই বৃথা, সে অন্ধকার যেন আমারে গ্রাস করিয়া আমাতেই মিলিয়া গেল। এখন আমি ওই অন্ধকারকেই স্বীকার করিয়া লহিতেছি। আমার এই জনমে এই দুঃখ যাইবে বলিয়া তো মনে হয় না!

দ্বিতীয়তঃ আমার অলসতা! যে কোন কার্য্য করিবার প্রাক্কালেই আমি হাঁফাইয়া যাই! "কাজটা শুরু তো কর! তাহার পরে হাঁফাবি!" মনকে যতই বুঝায় সে বুঝে না উল্টা আমাকেই আমার মন বুঝায়, "যখন হাঁফাইতেই হইবে তখন কার্য্য করিবার আগেই হাঁফায় লই, পরে হাঁফাইলে বিস্তর সময়ের ফালতু খরচ হইবে!" বেশীরভাগ কালে, দেখা গিয়াছে হাঁফানোই হইয়াছে শুধু, কার্য্য আর হয় নাই!

তবুও, আজ লিখিতেছি! এই কারণে নহে যে লিখিতে ইচ্ছা করিতেছে! লিখিতেছি কারণ পরিস্থিতি আমাকে লিখিবার আজ্ঞা দিয়াছে।
আমার বাবা আমাকে বড়ই ভালোবাসে, আমার মা ও। তাহাদের যাহা সাধ্য সেই অনুযায়ী তাঁহারা আমাকে মানুষ করিয়াছে বা বলা ভাল করিবার চেষ্টা করিয়াছে, আমি মানুষ হইতে পারি নাই তাহা আলাদা বিষয়! তাহারা আমাকে ইস্কুলে ভর্তি করিয়াছে আমি কেলাস্ ফাঁকি দিয়া ডাংগুলি খেলিয়াছি, প্রাইভেটে পড়িতে পাঠাইয়াছে আমি বন্ধুদের সাথে রকে বসিয়া আড্ডা মারিয়াছি। কালেজে লোকে স্নাতক হইতে যায় আমি প্রেম করিতে গিয়াছি, সস্তার হোটেলে লাল নীল সংসারের স্বপ্ন বুনিয়াছি আর তাহার পর যখন সেই প্রেম মুখে লাথি দিয়া পিছনের জানালা গলিয়া পলাইয়া গিয়াছে তখন কাঁদিয়াছি নীরবে আঁধারে বসিয়া। সেই প্রেমের বিরহ ভুলিতে সিগারেট ধরিয়াছি, বিরহ ভুলি নাই তবে নেশা হইয়া গিয়াছে। অর্থাভাবে সেই সিগারেট ছাড়িয়া এখন বিড়ি টানিতে হয় কিন্তু টানিতে ছাড়ি নাই! মাঝে মাঝে পিছন ফিরিয়া নিজের ফেলিয়া আসা পথখানি দেখিলে মনে হয় জগদীশ্বর আমার মস্তকে শুধু গোময়ের হাঁড়ি বসাইয়া দিয়াই ক্ষান্ত হন নাই, সংসারের যাবতীয় অপদার্থতার শিরোমণিও করিয়াছেন!

তবু আমি বাঁচিয়া আছি! বাঁচিয়া আছি বলা অনুচিৎ হইবে বলা ভাল মরিয়া যাই নাই। বাঁচিয়া থাকা আর মরিয়া না যাওয়ার মধ্যে যোজন তফাৎ আছে। একবার, আমার বন্ধু তারাপদর বাটীতে গিয়াছিলাম, যাইয়া দেখি তাহার পিতামহ চেয়ারে বসিয়া টাইমস্ পড়িতেছে। আমি বেশ অবাক হইয়া তারাপদকে জিজ্ঞাসা করিলাম, তোর দাদু তো ভালই ইংরাজি পড়িতে পারে! তারাপদ হাসিয়া বলিল, তা পারিবে না, আমার ঠাকুরদা সেই আমলের দুবার ম্যাট্রিক ফেল! আমি ফ্যালফ্যাল করিয়া ভাবিলাম আমি কালেজ অব্দি গিয়াও ঠিকঠাক বাংলা রিডিং পড়িতে পারিনে, চারিখানা শব্দ লিখিলে তাহার তিনটাতে বানান ভুল থাকে আর ইহার ঠাকুরদা ম্যাট্রিকে দু-দুবার ফেল করিয়াও ইংরাজি পেপার পড়িতেছে! 
সেই অবধি আমি বুঝিয়াছি, আমি কোন কম্মের নই! আমি হইলাম সেই আগাছা যাহার থাকা না থাকায় সংসারের কিস্যু যায় আসে না। আমার দৃঢ় বিশ্বাস আমি মরিলে, আমার মা বাপ ছাড়া আর কেহ কাঁদিবে না আর তিনদিন, মাত্তর তিনদিন লাগিবে সবার আমাকে ভুলিয়া যাইতে! তবুও, আমার কষ্ট হয় নাই। পকেট হইতে একটা বিড়ি বাহির করিয়া সুখ টান দিয়া সকল মন খারাপ ধুঁয়ার সহিত বিসর্জ্জন দিয়া দিই। 

বাপ- মায়ে আমার নাম রাখিয়াছিল বিজয়, যাহার জন্মাবধি কেবল পরাজয়ে জীবন ভরা, যে কস্মিনকালেও জয় কী বস্তু তাহা জানে নাই তাহার নাম দিয়াছে বিজয়! ইহা তো সেই কানা ছেলের নাম পদ্মলোচন হইল।

কিন্তু, আজ কেন জানি দিনটা বড় অন্য। দিন দুই আগে সময় কাটিতে ছিল না দেখিয়া, বাসার প্রাচীন কাঠের আলমারী খানি খুলিয়া পুরাতন কাগজ পত্তর ঘাঁটিতে ছিলাম। বেশ কয়েকটা খাতা চোখে পড়িল। উহাদের পাতা বিবর্ণ হলুদ হইয়া গিয়াছে, কিন্তু সেই পাতায় মুক্তার মত ঝকঝকে হাতের লেখায় আমার বাবার বেশ কয়েকটা দিনলিপি লিপিবদ্ধ রহিয়াছে। আজ দুই দিন ধরিয়া উহাই পড়িতেছিলাম। 

আমার পিতার বিসিএস হইবার বড্ড শখ ছিল কিন্তু হইতে পারে নাই, মেধার অভাব ছিল না, কিন্তু পয়সা কড়ির বিস্তর অভাব ছিল। তাহার পরেও চেষ্টা করিয়াছিল কিন্তু হইতে পারে নাই! আমি যখন জন্মাইয়াছিলাম আমার বাবার বড় ইচ্ছা হইয়াছিল আমি যেন বিসিএস হই! অদ্ভুত লাগিতেছে ভাবিতে যে বাবা আমাকে কোনদিন তাহার এই স্বপ্নের কথা বলে নাই। কেন বলে নাই জানি না, হয়তো ভাবিয়াছিল তাহার সন্তান এক মস্ত লোক হইবে কিন্তু পরে যখন বুঝিল, আমি নিতান্তই গাধা যাহাকে শত পিটিলেও ঘোড়া হইবে না তখন বোধকরি আর নিজের স্বপ্নের কথা বলা সঙ্গত বোধ করে নাই। 

ভাবিতেছি, চুপে চুপে একবার এই গাধা ঘোড়া হইবার চেষ্টা করিলে কেমন হয়। বুড়ো বুড়িকে কষ্ট আর হতাশা ছাড়া কিছুই তো দিলেম না শেষ বয়েসে যদি একটু আনন্দ দিতে পারি! তাই, এই ডায়েরি লেখা, কোন একদিন যদি সত্য সত্যই বাপ মায়ের মনে একবিন্দু খুশী আনিতে পারি তবে, পিছন ফিরিয়া এই দিনগুলি দেখিব ফিরিয়া। এই অন্ধকারকে শেষবার চেষ্টা করি ধ্বংস করার, অপদার্থ হইতে পদার্থ হইবার অন্তিম চেষ্টা করা যাউক।

আগামীকাল প্রভাতেই একবার নিখিলদার বাটীতে যাইব, সে বৎসর খানেক ধরিয়া সরকারী চাকুরীর চেষ্টা করিতেছে, হয়তো এই পথের হদিস তাহা হইতে পাইলেও পাইতে পারি। আজ আর লিখিব না, ঘুম আসিতেছে বড্ড, অনেকদিন পর, আজ বড্ড ঘুমাইতে ইচ্ছা করিতেছে, মন বলিতেছে একখানা নিশ্চিন্তের ঘুম দিতে, এই প্রথম সে আমাকে বাধা দেয় নাই, এই প্রথম সে আমাকে কোন কার্য্য করিবার আজ্ঞা দিয়াছে!
                            Namaskar
[Image: 20230923-133529.png]
Like Reply
Do not mention / post any under age /rape content. If found Please use REPORT button.
#2
অন্যতম সেরা সৃষ্টি। হ্যা অনেক সরল এই লেখা কিন্তু এর মাঝেই লুকানো বহু ছাত্র ছাত্রীর হাহাকার। নিজের ইচ্ছা ভুল ত্রুটি গুন সব মিলিয়ে যখন হাতে অবশিষ্ট থাকে শুধুই হতাশা তখন হয়তো কোনো আলোকবিন্দু অপেক্ষায় থাকবে একদিন ঠিক সেই পথিক সন্ধান পাবেই। লক্ষে পৌঁছাক বা বিফল হোক তার ওই হন্টনই হইভ তাহার সেরা বিজয় ♥️♥️
[+] 1 user Likes Baban's post
Like Reply
#3
(09-12-2022, 08:23 PM)মহাবীর্য্য দেবশর্ম্মা Wrote:
বিজয়ের বিসিএস জয়
© মহাবীর্য্য দেবশর্ম্মা

উৎসর্গঃ বাঙ্গালার সেই সকল বেকার যুবক যুবতীদের উদ্দেশ্যে, যাহারা এখনও লড়িতেছে দাঁতে দাঁত চাপিয়া, হার না মানিয়া সেই সমস্ত অসীম লড়াইয়ের যোদ্ধাদের প্রতি এই অধম লেখকের সামান্য নিবেদন 

পর্ব্বঃ ১

১৩ই অগ্রহায়ণ, সোমবার

   
ডায়েরি আমি লিখি নে। লিখি নে দুইটী কারণে, প্রথমতঃ, আমার এই নিস্তরঙ্গ জীবনের প্ৰতিটী দিবসই একরঙ্গা, একঘেয়ে। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের এক কাহিনীতে পড়িয়াছিলাম, আকাশ কখনো পুরাতন হয় না। দুই-একবার গগন পানে চাহিয়া দেখিয়াছি কথাটী মিথ্যা নহে। কিন্তু, আমার এই জীবন আকাশ তো নহে, না তাহার মধ্যে বিশালতা আছে আর না নূতন রঙ। যদি কিছু আছে তো তাহা হইল নিকষ অন্ধকার। ঘোর তমসাচ্ছন্ন সেই অন্ধকার! তাহার না আদি আছে না অন্ত। সুখ দুঃখ নাকি নিরবধি চক্রাকারে আবর্ত্তিত হইতেছে! কই, আমি তো তাহা দেখি না, আমি দেখি শুধুই দুঃখ! সুখ ছিল একদা সত্য কিন্তু যবে হইতে দুঃখ আসিয়াছে, সে আর যায় নাই তাই বোধকরি সুখ ও আর আসে নাই! প্রথম যখন এই অন্ধকার আসিল, তখন এত মাথা ঘামাই নাই, উহা এত ঘনীভূতও তখন হয় নাই কিন্তু আস্তে আস্তে সেই অন্ধকার চাপিয়া বসিল, আষ্টেপৃষ্ঠে আমারে জড়াইয়া ধরিল! দমবন্ধ হইয়া আসিল, হাঁসফাঁস করিতে লাগিলাম, প্রাণপণে তাহার করালগ্রাস হইতে মুক্তির চেষ্টা করিলাম কিন্তু সকলই বৃথা, সে অন্ধকার যেন আমারে গ্রাস করিয়া আমাতেই মিলিয়া গেল। এখন আমি ওই অন্ধকারকেই স্বীকার করিয়া লহিতেছি। আমার এই জনমে এই দুঃখ যাইবে বলিয়া তো মনে হয় না!

দ্বিতীয়তঃ আমার অলসতা! যে কোন কার্য্য করিবার প্রাক্কালেই আমি হাঁফাইয়া যাই! "কাজটা শুরু তো কর! তাহার পরে হাঁফাবি!" মনকে যতই বুঝায় সে বুঝে না উল্টা আমাকেই আমার মন বুঝায়, "যখন হাঁফাইতেই হইবে তখন কার্য্য করিবার আগেই হাঁফায় লই, পরে হাঁফাইলে বিস্তর সময়ের ফালতু খরচ হইবে!" বেশীরভাগ কালে, দেখা গিয়াছে হাঁফানোই হইয়াছে শুধু, কার্য্য আর হয় নাই!

তবুও, আজ লিখিতেছি! এই কারণে নহে যে লিখিতে ইচ্ছা করিতেছে! লিখিতেছি কারণ পরিস্থিতি আমাকে লিখিবার আজ্ঞা দিয়াছে।
আমার বাবা আমাকে বড়ই ভালোবাসে, আমার মা ও। তাহাদের যাহা সাধ্য সেই অনুযায়ী তাঁহারা আমাকে মানুষ করিয়াছে বা বলা ভাল করিবার চেষ্টা করিয়াছে, আমি মানুষ হইতে পারি নাই তাহা আলাদা বিষয়! তাহারা আমাকে ইস্কুলে ভর্তি করিয়াছে আমি কেলাস্ ফাঁকি দিয়া ডাংগুলি খেলিয়াছি, প্রাইভেটে পড়িতে পাঠাইয়াছে আমি বন্ধুদের সাথে রকে বসিয়া আড্ডা মারিয়াছি। কালেজে লোকে স্নাতক হইতে যায় আমি প্রেম করিতে গিয়াছি, সস্তার হোটেলে লাল নীল সংসারের স্বপ্ন বুনিয়াছি আর তাহার পর যখন সেই প্রেম মুখে লাথি দিয়া পিছনের জানালা গলিয়া পলাইয়া গিয়াছে তখন কাঁদিয়াছি নীরবে আঁধারে বসিয়া। সেই প্রেমের বিরহ ভুলিতে সিগারেট ধরিয়াছি, বিরহ ভুলি নাই তবে নেশা হইয়া গিয়াছে। অর্থাভাবে সেই সিগারেট ছাড়িয়া এখন বিড়ি টানিতে হয় কিন্তু টানিতে ছাড়ি নাই! মাঝে মাঝে পিছন ফিরিয়া নিজের ফেলিয়া আসা পথখানি দেখিলে মনে হয় জগদীশ্বর আমার মস্তকে শুধু গোময়ের হাঁড়ি বসাইয়া দিয়াই ক্ষান্ত হন নাই, সংসারের যাবতীয় অপদার্থতার শিরোমণিও করিয়াছেন!

তবু আমি বাঁচিয়া আছি! বাঁচিয়া আছি বলা অনুচিৎ হইবে বলা ভাল মরিয়া যাই নাই। বাঁচিয়া থাকা আর মরিয়া না যাওয়ার মধ্যে যোজন তফাৎ আছে। একবার, আমার বন্ধু তারাপদর বাটীতে গিয়াছিলাম, যাইয়া দেখি তাহার পিতামহ চেয়ারে বসিয়া টাইমস্ পড়িতেছে। আমি বেশ অবাক হইয়া তারাপদকে জিজ্ঞাসা করিলাম, তোর দাদু তো ভালই ইংরাজি পড়িতে পারে! তারাপদ হাসিয়া বলিল, তা পারিবে না, আমার ঠাকুরদা সেই আমলের দুবার ম্যাট্রিক ফেল! আমি ফ্যালফ্যাল করিয়া ভাবিলাম আমি কালেজ অব্দি গিয়াও ঠিকঠাক বাংলা রিডিং পড়িতে পারিনে, চারিখানা শব্দ লিখিলে তাহার তিনটাতে বানান ভুল থাকে আর ইহার ঠাকুরদা ম্যাট্রিকে দু-দুবার ফেল করিয়াও ইংরাজি পেপার পড়িতেছে! 
সেই অবধি আমি বুঝিয়াছি, আমি কোন কম্মের নই! আমি হইলাম সেই আগাছা যাহার থাকা না থাকায় সংসারের কিস্যু যায় আসে না। আমার দৃঢ় বিশ্বাস আমি মরিলে, আমার মা বাপ ছাড়া আর কেহ কাঁদিবে না আর তিনদিন, মাত্তর তিনদিন লাগিবে সবার আমাকে ভুলিয়া যাইতে! তবুও, আমার কষ্ট হয় নাই। পকেট হইতে একটা বিড়ি বাহির করিয়া সুখ টান দিয়া সকল মন খারাপ ধুঁয়ার সহিত বিসর্জ্জন দিয়া দিই। 

বাপ- মায়ে আমার নাম রাখিয়াছিল বিজয়, যাহার জন্মাবধি কেবল পরাজয়ে জীবন ভরা, যে কস্মিনকালেও জয় কী বস্তু তাহা জানে নাই তাহার নাম দিয়াছে বিজয়! ইহা তো সেই কানা ছেলের নাম পদ্মলোচন হইল।

কিন্তু, আজ কেন জানি দিনটা বড় অন্য। দিন দুই আগে সময় কাটিতে ছিল না দেখিয়া, বাসার প্রাচীন কাঠের আলমারী খানি খুলিয়া পুরাতন কাগজ পত্তর ঘাঁটিতে ছিলাম। বেশ কয়েকটা খাতা চোখে পড়িল। উহাদের পাতা বিবর্ণ হলুদ হইয়া গিয়াছে, কিন্তু সেই পাতায় মুক্তার মত ঝকঝকে হাতের লেখায় আমার বাবার বেশ কয়েকটা দিনলিপি লিপিবদ্ধ রহিয়াছে। আজ দুই দিন ধরিয়া উহাই পড়িতেছিলাম। 

আমার পিতার বিসিএস হইবার বড্ড শখ ছিল কিন্তু হইতে পারে নাই, মেধার অভাব ছিল না, কিন্তু পয়সা কড়ির বিস্তর অভাব ছিল। তাহার পরেও চেষ্টা করিয়াছিল কিন্তু হইতে পারে নাই! আমি যখন জন্মাইয়াছিলাম আমার বাবার বড় ইচ্ছা হইয়াছিল আমি যেন বিসিএস হই! অদ্ভুত লাগিতেছে ভাবিতে যে বাবা আমাকে কোনদিন তাহার এই স্বপ্নের কথা বলে নাই। কেন বলে নাই জানি না, হয়তো ভাবিয়াছিল তাহার সন্তান এক মস্ত লোক হইবে কিন্তু পরে যখন বুঝিল, আমি নিতান্তই গাধা যাহাকে শত পিটিলেও ঘোড়া হইবে না তখন বোধকরি আর নিজের স্বপ্নের কথা বলা সঙ্গত বোধ করে নাই। 

ভাবিতেছি, চুপে চুপে একবার এই গাধা ঘোড়া হইবার চেষ্টা করিলে কেমন হয়। বুড়ো বুড়িকে কষ্ট আর হতাশা ছাড়া কিছুই তো দিলেম না শেষ বয়েসে যদি একটু আনন্দ দিতে পারি! তাই, এই ডায়েরি লেখা, কোন একদিন যদি সত্য সত্যই বাপ মায়ের মনে একবিন্দু খুশী আনিতে পারি তবে, পিছন ফিরিয়া এই দিনগুলি দেখিব ফিরিয়া। এই অন্ধকারকে শেষবার চেষ্টা করি ধ্বংস করার, অপদার্থ হইতে পদার্থ হইবার অন্তিম চেষ্টা করা যাউক।

আগামীকাল প্রভাতেই একবার নিখিলদার বাটীতে যাইব, সে বৎসর খানেক ধরিয়া সরকারী চাকুরীর চেষ্টা করিতেছে, হয়তো এই পথের হদিস তাহা হইতে পাইলেও পাইতে পারি। আজ আর লিখিব না, ঘুম আসিতেছে বড্ড, অনেকদিন পর, আজ বড্ড ঘুমাইতে ইচ্ছা করিতেছে, মন বলিতেছে একখানা নিশ্চিন্তের ঘুম দিতে, এই প্রথম সে আমাকে বাধা দেয় নাই, এই প্রথম সে আমাকে কোন কার্য্য করিবার আজ্ঞা দিয়াছে!

আপনার ফোন নম্বর চাই আমি , এরকম মনের মিল থাকলে কথা বলা খুব দরকার Heart Namaskar clps
[+] 2 users Like ddey333's post
Like Reply
#4
যে কোনো প্রথম সারির পত্রিকায় স্থান পাওয়ার যোগ্য এই রচনা  clps

[Image: Shocked-Open-Asianpiedstarling-size-restricted.gif]

[+] 2 users Like Sanjay Sen's post
Like Reply
#5
(09-12-2022, 09:46 PM)ddey333 Wrote: আপনার ফোন নম্বর চাই আমি , এরকম মনের মিল থাকলে কথা বলা খুব দরকার Heart Namaskar clps

মনের মিল থাকিলে আর আপনিতে কেন রহিয়াছ তুমিতেই আসিয়া যাও মিত্রবর। তবে এই কাহিনীর সবে শুরু হইল, দ্বিতীয়পর্ব্ব আশা করি সোমবারের প্রভাতে আসিয়া যাইবে। তবে কাহিনী গতিপথ একটু ঢিমিতালে চলিবে ওইটুকু সহ্য করিও।
                            Namaskar
[Image: 20230923-133529.png]
Like Reply
#6
(09-12-2022, 09:49 PM)Sanjay Sen Wrote: যে কোনো প্রথম সারির পত্রিকায় স্থান পাওয়ার যোগ্য এই রচনা  clps

প্রথম সারির পত্রিকা! না মহাশয়, এই অধমের সামান্য কলমকে অত বড় করিয়া দেখাইবেন না, বদহজম হইয়া যাইবে আমার। কাহিনীর আরম্ভ যদি ভাল লাগিয়াছে তবে মধ্যে মধ্যে এই উত্তরণ যাত্রায় দর্শন দিয়া যাইবেন আশা করি বিজয় আপনাদিগকে নিরাশ করিবে না।
                            Namaskar
[Image: 20230923-133529.png]
Like Reply
#7
(09-12-2022, 08:44 PM)Baban Wrote: অন্যতম সেরা সৃষ্টি। হ্যা অনেক সরল এই লেখা কিন্তু এর মাঝেই লুকানো বহু ছাত্র ছাত্রীর হাহাকার। নিজের ইচ্ছা ভুল ত্রুটি গুন সব মিলিয়ে যখন হাতে অবশিষ্ট থাকে শুধুই হতাশা তখন হয়তো কোনো আলোকবিন্দু অপেক্ষায় থাকবে একদিন ঠিক সেই পথিক সন্ধান পাবেই। লক্ষে পৌঁছাক বা বিফল হোক তার ওই হন্টনই হইভ তাহার সেরা বিজয় ♥️♥️

  ডায়েরি বলিয়াই সরলে আনিলাম আর বিজয়ের যা চরিত্র সেই অনুযায়ী বর্তমান ঘরানাই লিখায় উপযুক্ত, সে ডায়েরিতে জ্ঞানগর্ভে লিখিলে তাহার কাহিনীর সত্যতা আর যৌক্তিকতা লহিয়া প্রশ্ন উঠিয়া যাইবে তবে সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম লেখন শৈলীর পরিবর্তন ঘটিবে যেমন যেমন বিজয় হন্টন দিবে
                            Namaskar
[Image: 20230923-133529.png]
Like Reply
#8
Rainbow 
উত্তরণ সিরিজ


বিজয়ের বিসিএস জয় 
© মহাবীর্য্য দেবশর্ম্মা

 

১৪ই অগ্রহায়ণ, মঙ্গলবার


প্রথমাংশ
  
 সূর্যোদয় আমার সমগ্র জীবনে বারকয়েক দেখিয়াছি, প্রতিবারই ঢুলুঢুলু চোখে বিস্তর বিরক্তির সহিত বিছানা ছাড়িয়াছি, ঐ যে বলিয়াছিলাম আমার মন কায়ক্লেশ একেবারে সহ্য করিতে পারে না, রাত্তিরে মধ্যরাত্রি অবধি টিভির পর্দায় চোখ আটকাইয়া সকালে নয়টা অবধি কোলবালিশ চাপিয়া নাক ডাকাইয়া দিই। সকালে ব্রাশ করিতে করিতে মায়ের গঞ্জনা শুনি, বাবার আনন্দবাজার সম্মুখে লহিয়াও নিরানন্দ মুখে গোমড়া বদনে বসিয়া থাকা দেখিতে দেখিতে সুড়ুক সুড়ুক শব্দে চায়ের কাপে চুমুক মারি! 
বাবার সহিত শেষ ভাল ভাবে কবে কথা হইয়াছিল? সেই যেইবার ইস্টবেঙ্গল মোহনবাগানের ডার্বি হইল বোধহয় সেই দিন। ইস্টবেঙ্গলকে হারাইয়া দুইজনে চিংড়ির মালাইকারি খাইয়াছিলাম, তাহার পূর্ব্বেও আর হয় নাই আর তাহার পরেও আর হয় নাই। আমিও মাথা ঘামাই নাই, বাবাও আগ্রহ রাখে নাই।
চা খাওয়া হইলে বিড়ি লহিয়া প্রাতঃক্রিয়া হেতু বাথরুমে ছুটি! বাহির হইয়া কিছু গলাধঃকরণ করিয়া বাসা হইতে বাহির হইয়া যাই আড্ডা মারিতে, বাটীতে থাকিলে বিস্তর সমস্যা হয়, সারাদিন মায়ের গজগজানি শুনিতে হইবে "অমুকের ছেলে এই করল সেই করল! হেথায় মস্ত চাকুরী পাইল! অমুক ব্যাবসা করিয়া কলকেতায় মস্ত ফ্ল্যাট কিনিয়া লইল! তোর যে কবে কী হইবে!" মাথার ছাতামাথা এক করিয়া দেয় বুড়ি বকে বকে! আর তা না হইলে, "এই দোকান হইতে হাট আনিয়া দাও রে, অমুক মিস্তিরিকে ডাকিয়া দাও রে, জলের কল কাজ করিতেছে না!" সত্য বলিতে এত ঝামেলা আমার পোষায় না বাপু! খামোখা বাবা যখন অবসরের পর ঘরেই আছে তখন সকল কার্য্য তাহাকেই করিতে বল! বয়েস হইয়াছে, ঘরে পড়িয়া সারাদিন রামকৃষ্ণ-বিবেকানন্দ কী বলিয়াছে, গুলাম আলীর গজল শুনিতে শুনিতে সেই সকল পড়িয়া ফালতু সময় নষ্ট করে! বিস্তর পয়সার খরচ, বই তো আর ফিরি'তে কেহ বিলায় না, রীতিমতো গাঁটের কড়ি খরচা করিয়া কিনিতে হয়, উপরন্তু ঘর বোঝাই! দুইটা আলমারী শুধু বইয়েই ভরা! ষাটে আসিয়া লোকে আস্থা চ্যানেলেই ট্যেম পাস করে তাহাতে খরচের বালাই নাই। ওই পয়সা রাখিয়া দিলে ভবিষ্যতে আমার কাজে আসিবে। নিজের তো বৃদ্ধকাল আসিয়াছে ছেলের তো পুরো সংসার জীবন পড়িয়া আছে সেইটা ভাবিবে না! অহেতুক ফালতু বই-পত্তর কিনিয়া গাদা গাদা টাকার খরচ করিয়া দিবে! আমারে দেখ, পেপার অব্দি ছুঁই না, টিভিতে যখন সকল খবর পাইয়া যাই, অহেতুক পেপারের খরচা! ওই টাকায় এক কিলো মুর্গা মাংস আনিয়া বেশ জ্যুৎ করিয়া খাওন যায়! বেকার ছেলে হইবার আরেকটী ভাল দিক আছে, বিবাহের সমস্যা নাই। খুব শখ উঠিলে দু-পাঁচশ খরচা করিলেই ঘন্টাখানেকের জন্য নারী পাইতে সমস্যা নাই, আর হাতে টাকা না থাকিলে, দরজা বন্ধ করিয়া টিভিতে একটি নীল ছবি চালাইয়া দাও, কাম চরমে উঠিয়া গেলে বাথরুমে গিয়া হাতের কাজ সারিয়া লও একদম যাকে বলে সিম্পিল ব্যাপার আর কী! হে হে! বিদেশী মেয়েগুলো সেই জিনিস! উঃ কেন যে ইংরাজ হইলাম না!

আজ কিন্তু একটু অন্যরকম হইয়া গেল সকল কিছু, গতকাল রাত্তিরে শুইতে যাইবার সময় কী মনে হইল অ্যালার্ম ঘড়িখানি আনিয়া উহাতে ভোর পাঁচটায় দম দিলাম। কেন জানি মনে হইল সকালে উঠিতে হইবে! রাত্তিরে আমার মনে আছে ঠিক দশটার সময় শুইতে গিয়াছিলাম। দম দিবার সময় কেহ যেন মাথার মধ্যে বলিতেছিল, আর্লি ট্যু বেড অ্যাণ্ড আর্লি ট্যু রাইজ! সেই কোন ইশকুলে পড়িবার সময় শুনিয়াছিলাম কে জানিত এই বয়সে আসিয়া সেই দুই লাইন মাথায় স্ট্রাইক মারিবে। 
"যে ব্যাক্তি সূর্য্যের আগে উঠে আর পৃথিবী ঘুমাইতে যাইবার পরে নিদ্রায় যায় তাহাকে কখনও হীন ভাবিও না সে সকল অসাধ্য সাধন করিতে পারে!" কে বলিয়াছিল? বাবা বোধহয়, মাধ্যমিকের টেস্ট পরীক্ষার পর! বুড়া কখনও কখনও কিঞ্চিৎ ভাল ভাল কথাও কহে!

রাত্তিরে বড় চমৎকার ঘুমাইয়াছিলাম। কোন স্বপ্ন দেখি নাই, শান্তির ঘুম ঘুমাইয়াছি। হঠাৎ ঘুম ভাঙ্গিল, শরীরখানা বেশ ঝরঝরে লাগিতেছিল। সহসা স্মরণে আসিল অ্যালার্ম বাজে নাই! তবে কী দেরী হইল উঠিতে? ঘুটঘুটে অন্ধকার ঘর, বালিশের তলা হইতে হাতড়াইয়া টর্চ জ্বালাইয়া দেখিলাম ঘড়ির কাঁটা খাঁটি ভোর চারিটার ঘর দেখাইতেছে। দম ভোর পাঁচটায় দিয়া আছে, অর্থাৎ এক ঘন্টা পূর্ব্বেই উঠিয়া গিয়াছি। অন্য সময় হইলে শুইয়া পড়িতাম আজ আর ইচ্ছা হইল না, ভাবিলাম লোকে বলে সূর্যোদয় দেখিতে দারুন লাগে, আজ একবার দেখি! ঝটপট শয্যা ছাড়িয়া ব্রাশ করিয়া লহিলাম, কী মনে হইল নিজ হাতেই রান্নাঘরে গিয়া চা বানাইলাম, চা খাইবামাত্র প্রকৃতি ডাক দিল, প্রাতঃক্রিয়াদি করিয়া আসিয়া দেখিলাম সাড়ে চারিটা বাজিয়া গিয়াছে। আস্তে আস্তে ছাতে উঠিলাম, পুব আকাশ সবে রঙিন হইতেছে, পাখিসকল কিচিরমিচির করা শুরু করিয়া দিয়াছে, এমন দৃশ্য অপূর্ব। কী মনে হইল, করজোড়ে উদিত সূর্য্যের পানে চাহিয়া ছোটবেলায় শেখা মন্ত্রখানি আউড়াইতে লাগিলাম, 

ঔঁ জবাকুসুম, সঙ্কাশং কাশ্যপেয়ং মহাদ্যুতিম্ 
খন্তারিং সর্ব পাপঘ্ন প্রণতোহস্মি দিবাকরম্। এহি সূর্য সহস্রাংশু তেজরাশি জগৎপথে অনুকম্পায় মাং ভক্তায় গৃহাং অর্ঘ্যং দিবা করম্। 
এস অর্ঘ্যং কর্ম্মদায়িনী নমঃ ঐং শ্রীং সূর্যায় নমঃ।

বাবার বোধহয় মর্নিং ওয়াকে যাইবার সময় হইয়াছিল। ছাতের কার্নিশে আমাকে বসিয়া দেখিতে থাকিয়া জিজ্ঞেস করিল, "কে রে? কে ওইখানে?" আমি জবাব দিলেম, "বাবা আমি! বিজয়!" বাবা একটু অবাক হইয়া প্রশ্ন করিল, "কী ব্যাপার এত সকালে? ঘুমাস নাই?" উত্তর দিলাম, "ঘুমাইয়াছি ওই সূর্যোদয় দেখিতেছিলাম।" বাবা জবাব শুনিয়া আর কিছু না বলিয়া বাহির হইয়া গেল।

একটু বেলা হইবার পরে ছাত হইতে নামিতেই দেখিলাম হরিপদ আনন্দবাজার দিতে আসিতেছে। আমি ডাকিয়া বলিলাম, "হরিপদ দা, টাইমস আছে?" হরিপদ জবাব দিল "আছে।" আমি বলিলাম, "তাহা হইলে একটা দিয়া যাও আর ইহার পর হইতে সপ্তাহে একটী টাইমস দিয়া যাইবে!" হরিপদ মাথা হেলাইয়া বলিল, "তাহা হইলে রবিবার রবিবার দিয়া যাইব।" বাবা আনন্দবাজার দেখিতে দেখিতে আড়চোখে আমার দিকে বার দুয়েক দেখিল কিছু বলিল না, আমিও চুপচাপ টাইমস খানি বগলে দাবিয়া ভিতরঘরে চলিয়া গেলাম।

বাবার জন্য মা চা বানাইতেছিল, আমিও আমার জন্য কেটলিতে জল দিতে বলিলাম। টাইমসের পাতা উল্টাইতেছি, মাথায় কিছুই ঢুকিতেছে না এত কঠিন ভাষা! তবুও জোর করিয়াই পড়িবার চেষ্টা করিতেছি, একখানি প্রতিবেদন লহিয়া বসিয়াছি, হাতে কলম নিয়া, যেইখানে বুঝিতে পারিব না দাগাইয়া দিব পরে সংসদের লাল কাভারের মোটা যে ডিকশনারী রহিয়াছে উহা দেখিয়া মানেগুলি খাতায় লিখিয়া লইব তাহার পর মুখস্ত করিয়া লইব এই পরিকল্পনা করিয়াছি। দেখা গেল রিডিং পড়িতেই কালঘাম ছুটিয়া যাইতেছে, শব্দের মর্ম্ম বুঝা তো ঢের ঢের দূর। তবুও হাল ছাড়িলাম না। প্রতিবেদনের নব্বই শতাংশ জুড়িয়া কেবল দাগিয়া গেছি। হায় রে! আমার ইংরাজি ভয়াবহ! তবুও দাঁতে দাঁত চাপিয়া প্রতিবেদনখানি শেষ করিয়া আনিয়াছি এমন সময় মা চা লইয়া আসিল। বিস্কুট সহযোগে কাপখানি দিতে দিতে বাবাকে বলিল, "আজ একবার গজেনের দোকান যাইতে হইবে, চিনি ফুরাইয়া গিয়াছে আরও জিনিস কিছু আছে।" বাবার উত্তরের আগেই কেন জানি আমি বলিয়া উঠিলাম, "বাবা থাকুক আমি যাইতেছি!" বাবা পাতা উল্টাইতে উল্টাইতে গাঁক গাঁক করিয়া বলিল, "না! তোমাকে অত উপকার করিবার দরকার নাই, শেষে ভুলভাল কিছু আনবি তখন আবার সমস্যা। আমাকেই ফের ছুটিতে হইবে।" অন্যসময় হইলে আমি বুড়াকে এমন ব্যাভারের জন্য চেল্লাইয়া দুকথা শুনাইয়া দিতাম! কিন্তু, আজ কেন জানি একটুও রাগ হইল না! শান্তভাবেই বলিলাম, "আরে! ফর্দ্দ থাকিবে তো! ভুল হইবে কেন! তাছাড়া, আমি একটু নিখিলদার বাড়ীতে যাইব, গজেনের দোকান তো ঐ পথেই পড়িবে, আনিয়া দিব।" মা একটু আমতা আমতা করিয়া বলিল, "কিন্তু এত মাল একসাথে?" আমি  বলিলাম, "আরে সাইকেলে যাইব তো! দাও দাও থলিগুলা দাও, আর ফর্দ্দটা লহিয়া আস।" মা বলিল, "এই মাসের রেশনটাও আনিতে হইত, আটা শেষের মুখে।" আমি বলিলাম, "বেশ তো, সুনীলের রেশন দোকান তো? এগারোটার দিকে ভীড় কম থাকে, লাইন দিবার প্রয়োজন থাকিবে না, তখন আনিয়া দিব তুমি রেশনকার্ডটাও সঙ্গে দিয়া দাও একসাথে সব নিয়ে ফিরিব।" বলিয়া আমি ভিতরঘরে তৈয়ার হইতে গেলাম, যাইতে যাইতে শুনিলাম, মা বলিতেছে, "কী ব্যাপার বলো তো, খোকন আজ বড় অন্যরকম ব্যবহার করিতেছে!" বাবার উত্তর পাইলাম, "হুঁ! দুইটা বিষয় হইতে পারে, এক, মাথার ভরে উল্টিয়া পড়িয়া গিয়াছে আর তা না হইলে আমাদের জ্বালাইতে নূতন নাটক শুরু করিয়াছে!"




(ক্রমশঃ)
                            Namaskar
[Image: 20230923-133529.png]
Like Reply
#9
অসামান্য লেখনী , আপনার উপস্থিতি এই ফোরামের মর্যাদা অনেক বাড়িয়ে দিয়েছে !!
clps Namaskar
[+] 1 user Likes ddey333's post
Like Reply
#10
Rainbow 
একটি কাহিনীর পাঠকসংখ্যা বুঝাইয়া দেয় সেই কাহিনীটি লোকে পছন্দে করিতেছে নাকি করে নাই। আপনাদিগের মন্তব্য উহা বুঝিতে আরই সাহায্য করে। এখনও পর্যন্ত্য যাহা বুঝিতেছি নন-ইরোটিক এই কাহিনীটি হয়তো আপনাদের মনে ধরিতেছে না, পাঠক সংখ্যা কমিতে কমিতে শূণ্যে না নামিয়া যায় সেই ভয় পাইতেছি। তবু আপনারা যাঁহারা পড়িতেছেন, তাঁহারা যদি সামান্য কষ্ট করিয়া একটি মন্তব্য করিয়া দেন তো বাধিত হই।
                            Namaskar
[Image: 20230923-133529.png]
Like Reply
#11
এই ফোরামে এর আগে অনেকগুলি নন-ইরোটিক অথবা সম্পূর্ণরূপে প্রেমের (যৌনতা ছাড়া) উপন্যাস, গল্প বা অনুগল্প লেখা হয়েছে .. তার মধ্যে আমিও বেশ কিছু লিখেছি। কোনো কোনো লেখকের গল্প নিজেদের মতো করে সফলতা পেয়েছে আবার হয়তো কোনো গল্প মুখ থুবড়ে পড়েছে। morning shows the day .. তাই প্রথম পর্ব পড়ে আপনার লেখা এই উপন্যাস যে অনেক দূর যাবে এ কথা বলা যায়। 

এবার আসি এই পর্বের প্রসঙ্গে .. খুব ছোট হলেও পর্বটা বেশ উপভোগ্য। 'সাধু ভাষায়' লিখতে আপনি স্বাচ্ছন্দ বোধ করেন এবং ওটাই আপনার ইউএসপি সেটা এতদিনে বুঝে গিয়েছি। কিন্তু এই উপন্যাসের প্রথম পর্ব পড়ে কেন জানিনা আমার মনে হলো, এটি বোধহয় 'চলিত ভাষায়' লিখলেই অতিমাত্রায় দৃষ্টি আকর্ষণ করতো পাঠকদের।
[+] 2 users Like Bumba_1's post
Like Reply
#12
(10-12-2022, 03:54 PM)মহাবীর্য্য দেবশর্ম্মা Wrote: একটি কাহিনীর পাঠকসংখ্যা বুঝাইয়া দেয় সেই কাহিনীটি লোকে পছন্দে করিতেছে নাকি করে নাই। আপনাদিগের মন্তব্য উহা বুঝিতে আরই সাহায্য করে। এখনও পর্যন্ত্য যাহা বুঝিতেছি নন-ইরোটিক এই কাহিনীটি হয়তো আপনাদের মনে ধরিতেছে না, পাঠক সংখ্যা কমিতে কমিতে শূণ্যে না নামিয়া যায় সেই ভয় পাইতেছি। তবু আপনারা যাঁহারা পড়িতেছেন, তাঁহারা যদি সামান্য কষ্ট করিয়া একটি মন্তব্য করিয়া দেন তো বাধিত হই।

সম্মানিত লেখক,

আপনার প্রতিটি কাহিনী অসাধারণ। নন-ইরোটিক গল্পের পাঠক সংখ্যা সীমিত হওয়াটা স্বাভাবিক ধরেই আপনাকে এগিয়ে যাওয়ার অনুরোধ করছি। যেহেতু, ফোরামটি চটি গল্পের তাই পাঠকগণ যৌন সাহিত্য পড়তেই এখানে আসেন। তারমানে এই নয় যে, নন-ইরোটিক সাহিত্যের পাঠক নেই। অনেক পাঠক এখানে গল্প পড়েন কিন্তু কমেন্ট করেন না, আবার অনেক গেস্ট পাঠক রয়েছেন তারা রেজিস্ট্রেশন না করায় কোন প্রকার মন্তব্য করতে পারেন না। আপনি নিশ্চিত থাকুন, আপনার লেখার নিজস্ব কিছু পাঠক রয়েছেন। তাই অনুরোধ থাকবে তাদের জন্য লিখুন, ভিউয়ার কাউন্ট না করাই শ্রেয়।
[+] 1 user Likes S.K.P's post
Like Reply
#13
[Image: 20221210-202454.png]
                            Namaskar
[Image: 20230923-133529.png]
Like Reply
#14
EKHON E BOLAR SAMOY ASENI, TOBU ..... BHALO LAGCHE.
[+] 1 user Likes saibalmaitra's post
Like Reply
#15
(10-12-2022, 03:54 PM)মহাবীর্য্য দেবশর্ম্মা Wrote: একটি কাহিনীর পাঠকসংখ্যা বুঝাইয়া দেয় সেই কাহিনীটি লোকে পছন্দে করিতেছে নাকি করে নাই। আপনাদিগের মন্তব্য উহা বুঝিতে আরই সাহায্য করে। এখনও পর্যন্ত্য যাহা বুঝিতেছি নন-ইরোটিক এই কাহিনীটি হয়তো আপনাদের মনে ধরিতেছে না, পাঠক সংখ্যা কমিতে কমিতে শূণ্যে না নামিয়া যায় সেই ভয় পাইতেছি। তবু আপনারা যাঁহারা পড়িতেছেন, তাঁহারা যদি সামান্য কষ্ট করিয়া একটি মন্তব্য করিয়া দেন তো বাধিত হই।

এই নিয়ে একদা আমিও অনেক ভেবেছি ভায়া। আমার লিখিত নন - ইরোটিক ও ইরোটিক এর মধ্যে পাঠকদের সংখ্যার তফাৎ অনেক। তখন ভেবেছি আর এগোবো না এদিকে। কিন্তু তারপরে যখন দেখেছি যারা যারা পড়েছে তাদের অনেকেরই কমেন্ট জ্বলজ্বল করছে। সেগুলো দেখে পুনরায় অনুপ্রেরণা পেয়েছি ও একের পর এক লিখে গেছি। তুমি যখন সেসব পড়া শুরু করবে নিজেই বুঝতে পারবে। আমি সেদিন হাল ছেড়ে দিলে এতগুলো অন্যরকম লেখা কি এক পর্যন্ত লিখতে পারতাম? তোমায় pm করে যেটা লিখেছি সেটা সেটা নিয়ে ভেবো। ঐভাবে এতো তাড়াতাড়ি কোনো ডিসিশন নিওনা যেন। 

আমি আগেই বলেছি পাঠক সংখ্যায় পরিবর্তন আসবে কিন্তু কিছু মানুষ সর্বদা মনে রেখে দেবে তোমায়। তোমার লেখা হোক তাদের জন্য। তাই লিখে যাও।

এবারে আসি পর্বে আবারো মনকারা পর্ব একটা!! হটাৎ সন্তানের ইউ পরিবর্তন গুরুজনের পক্ষে মেনে নেওয়া কষ্টকর তাই ওই শেষের অংশটুকু বেশ মজার ছিল কিন্তু তার পূর্বের বাকি সমস্ত অংশটুকু সত্যিই মানুষ হিসেবে চিনতে শেখায়। আজ যা শক্ত কাল তাই সরল হতে বাধ্য। শুধু চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। সাথে যদি ভালোবাসাও বৃদ্ধি পায় সেই কাজের প্রতি তবে তো কথাই নেই!!

এমন গল্প এখানে দেখে আমার এক সত্তা বলছে এসব কি দেখছি এখানে!! আরেক সত্তা বলছে ওরে পাগলা তুইও তো এই পাগলের দলেই পড়িস  Big Grin
[+] 3 users Like Baban's post
Like Reply
#16
সাধু ভাষায় আপনার দখল অনবদ্য তবে আমার মত নিতান্তই সাধারণ চলিত ভাষার মানুষের পক্ষে শব্দের অর্থ বুঝিয়া হজম করা একটু কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে। তাই হয়তো অনেকেই এতো সুন্দর একখানা রচনা এড়িয়ে যাবার চেষ্টা করে। আমি বলছি না যে আপনি আপনার স্ট্রং জোন ছেড়ে বেড়িয়ে আসুন আমি কেবল আমজনতার কথা বলার চেষ্টা করেছি।


এবার আসি আপনার রচনা সম্পর্কে, খুবই সাধারণ একটা প্লট তবে সেটাই অতুলনীয় হয়ে উঠেছে অসংখ্য শিক্ষিত যৃবক যুবতীদের জীবনের সাথে এটা কানেক্টেড হয়ে গিয়ে। আমার মত বেকার দের কিংবা একটা কাজের সন্ধানে অবিরাম ছোটে চলা একজন যুবকের মনের ভেতরের হাহাকার এখানে স্পষ্ট হয়ে উঠছে। আসন্ন আপডেটের জন্য অপেক্ষায় রইলাম।
Shy হাত বাড়িয়ে ছুঁই না তোকে, মন বাড়িয়ে ছুঁই।
 দুইকে আমি এক করি না, এক কে করি দুই।। Shy
[+] 1 user Likes nextpage's post
Like Reply
#17
অসামান্য লেখনীখানি তেজে বলীয়ান হইয়াছে। তাহার বল মধ্যাহ্ন সূর্যের ন্যায় দীপ্যমান। এই শর্ম্মা সত্যই দেবলোকের আশীর্ব্বাদ ধন্য।
[+] 2 users Like Laila's post
Like Reply
#18
চমৎকার আপডেট দাদা
[+] 1 user Likes Jibon Ahmed's post
Like Reply
#19
বড় ভাল্লাগল
[+] 1 user Likes chitrangada's post
Like Reply
#20
পরের আপডেটের প্রতীক্ষাতে আছি। 
[+] 1 user Likes ddey333's post
Like Reply




Users browsing this thread: 1 Guest(s)