Thread Rating:
  • 14 Vote(s) - 3.29 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Misc. Erotica স্বীকারোক্তি (প্রথম পর্ব)
#1
স্বীকারোক্তি

(উপন্যাসের প্রথম ভাগ, পূর্বতন ক্সসিপে ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত।)


।। ১ ।।



আজও মনে পড়ে সেই দিনটা।

 
ব্যাচেলর জীবনের দুই কামরার ফ্ল্যাট। কয়েক বছর হল চাকরিতে ঢুকেছি। বাড়ি থেকে দূরে, নতুন পরিবেশ, অচেনা শহর, আস্তে আস্তে সব মানিয়ে গেছে। কর্মজীবনে একের পর এক পদোন্নতি, নিশ্চিত মসৃণ ভবিষ্যতের দিকে একটা একটা করে পদক্ষেপ। রোববারের অলস বিকেলে শুয়ে সিলিঙের দিকে তাকিয়ে এলোপাথাড়ি ভেবে চলেছি। মনের মধ্যে কি চলছিল নিজেও বুঝে উঠতে পারছিলাম না। ভাবনারা অনবরত আসা যাওয়া করছে, তার মধ্যেই মনের কোণে জেগে উঠেছে অপরাধবোধ। এগুলো কি ঠিক করছি? ও কি ভাববে? আবার এসব কল্পনা করছি জানতে পারলে... সিলিঙ থেকে চোখটা অজান্তেই চলে গেল পাশের দিকে। ও এখন অঘোরে ঘুমোচ্ছে।
 
কিছুক্ষণের জন্য ভাবনারা আমায় ছেড়ে চলে গেল। তাকিয়ে তাকিয়ে নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসতে চায়। এই নারী কি সত্যিই বাস্তব, না আমার অলীক কল্পনা? দ্বিতীয়টা ভাবার কোনও কারণ নেই, প্রায় পাঁচ বছর হতে চলল দুজনে প্রেম করছি। কলেজ ফেস্টে আলাপের প্রথম দিনটার বয়স তারও প্রায় এক বছর বেশি। সুতরাং ইঞ্চি কয়েক দূরে শায়িতা ঐ সুন্দরীকে আর যাই হোক অচেনা বলা চলে না। সেই টানা টানা চোখ, বন্ধ থাকায় আঁখিপল্লবগুলো আরো আকর্ষণীয় লাগছে। বালিশের ওপর এলিয়ে থাকা সেই এক ঢাল কালো চুল, বিছানার স্বল্প পরিসরে যাদের সবার জায়গা হয়নি বলে অনেকে অভিমানে লুটিয়ে মাটিতে গড়াগড়ি। দুই ভ্রূর মাঝখানে সেই পরিচিত ভঙ্গিমায় পরা টিপ, এখন অবশ্য সঙ্গত কারণেই নিজের জায়গা থেকে একটু সরে গেছে। সেই পুরন্ত ঠোঁট, জেগে থাকলে যারা কারণে-অকারণে প্রায়শই স্ফুরিত হয় অভিমানে, এখন যদিও কিঞ্চিৎ দ্বিধাবিভক্ত। সেই উন্নত চিবুক, সেই মরাল গ্রীবা যার প্রান্তভাগ গিয়ে মিশেছে চেনা পাহাড়ি উপত্যকায়। তারপরেই শুরু হয়েছে অসামান্য খাড়াই, দুইদিকের উত্তুঙ্গ প্রতিস্পর্ধী পর্বতশৃঙ্গে যার যাত্রা। চেনা হৃদ্স্পন্দনের ছন্দে সেই উচ্চ পার্বত্যভূমিতে নিয়মিত হারে মৃদু ভূকম্পনের আভাস। পাহাড়চুড়োয় চেনা বৃন্তেরা অবশ্য ঘুমোয়নি, মিলনের তৃপ্তিতে এখনও তারা জেগে আছে মাথা উঁচু করে। পাহাড়ি ঢাল বেয়ে নেমে গিয়ে চেনা প্রান্তরে মিশেছে, হাল্কা মেদের চিহ্নসমেত। সুগভীর নাভি ছাড়িয়ে একটু দূরত্বে লতাগুল্মের জঙ্গলে আচ্ছাদিত গোপন গহন গিরিখাত; চেনা, বলাই বাহুল্য। তারও পরে দুই রম্ভাসদৃশ জঙ্ঘা আয়েশে ছড়ানো একটু বাঁদিক ঘেঁষে, পরিচিত ভঙ্গিতে।
 
কতবার অ্যাডভেঞ্চার করেছি ঐ পরিচিত নারীদেহের অলিগলিতে, প্রতিটি রোমকূপ আমার কাছে চেনা। তবুও আজ এত অপরিচিতা মনে হয় কেন? তাকিয়ে থেকেও আশ আর মেটে না, ঠিক যেন পরস্ত্রীকে দেখার রোমাঞ্চ। নাঃ, কি হচ্ছে এসব, নিজের মনকে ধমকাই। চোখ ফেরালাম অন্যদিকে, দেয়ালের কাছে ট্রলিব্যাগটা দাঁড় করানো। এয়ারলাইন্সের ট্যাগটা এখনও ছেঁড়া হয়নি। বাড়ি থেকে ফিরেছি গত সোমবার, জামাকাপড়-জিনিসপত্র কাবার্ডে না গুছিয়ে রাখার জন্য সকালেই একপ্রস্থ বকুনি খেতে হয়েছে। মনে পড়তেই হাসি পেয়ে গেল। বকুনির মধ্যেই যখন ওর জন্য আনা 'সারপ্রাইজ গিফ্ট'গুলো ব্যাগ থেকে বেরোল, মুখের অবস্থাটা ছিল দেখবার মত। শাড়িটা যে খুবই পছন্দ হয়েছে সেটা বুঝতেই পারছিলাম কারণ বকুনির সুরটা তার পর থেকে আদুরে বিড়ালিনীর মত শোনাচ্ছিল। আর লেস দেওয়া ডিজাইনার ব্রায়ের প্যাকেটটা দেখে তো মনে হল কেউ এক কৌটো আবির লেপে দিয়েছে ওর গালে। যাক্ পরিশ্রম সার্থক। ছোড়দার বিয়ের পরদিন সবার দৃষ্টি এড়িয়ে কিনতে বেরোনোটা তবে বিফলে যায়নি।
 
বিফলে যে একেবারেই যায়নি সেটা তো পরিষ্কার। সকাল থেকে এখন অবধি মোট তিনবার বিছানার চাদর প্লাবিত হয়েছে রাগমোচনে। আজ পর্যন্ত তো এক দিনেও এতবার কখনও হয়নি, আর একবেলায়... ! শেষবার মিলিত হবার পরে যখন আমার বুকে মুখ গুঁজে পড়েছিল তখন ওর চোখেও কি একটা ছিল। মিলনের আবেশ,বিস্ময় আর অবিশ্বাস মাখানো সেই দৃষ্টিতে। অবাক আমি নিজেও কম হইনি। মানছি প্রায় ষোল-সতের দিন পরে দুজনের দেখা এবং... কিন্তু নিজের মধ্যে এতটা উত্তেজনা এর আগে কি কখনও অনুভব করেছি? নিশ্চিত যে এর জন্য অন্য কোনও কারণ দায়ী নয়? ছোড়দার বৌভাতের দিন যা হয়েছিল সেটা...
[+] 1 user Likes অনঙ্গপাল's post
Like Reply
Do not mention / post any under age /rape content. If found Please use REPORT button.
#2
।। ২ ।।



আর পাঁচটা বাঙালি বাড়ির বিয়ের অনুষ্ঠানে যেমন অলস ব্যস্ততা থাকে বৌভাতের দিনে, সেদিনটাও তার ব্যতিক্রম ছিল না। টুকটাক কায়িক শ্রম বাদে আমারও তেমন কাজ নেই, এদিকে মন পড়েছিল উদ্যান-নগরীতে। সকাল থেকেই অভিমানিনীর ফোন আসছে কিছুক্ষণ অন্তর, একা থাকার বিরহের জ্বালায় সে নিজের সমস্ত ক্ষোভ উজাড় করে দিচ্ছে, সাথে বিয়েবাড়িতে অন্য মেয়েদের ঝাড়ি মেরে আমি নাকি সুখেই আছি-জাতীয় অনুযোগ। উৎসুক অতি-কৌতূহলী আত্মীয়দের কান বাঁচিয়ে মানিনীর মানভঞ্জন করতে অনবরত বাথরুমে আশ্রয় নিতে হচ্ছে, নয়তো ছাদে। মা কয়েকবার দেখল ব্যাপারটা। সেরেছে! বেশিক্ষণ এমন চললে চাপ হয়ে যাবে। ফোনাফুনিটা কিছুক্ষণের জন্য বন্ধ না রাখলেই নয়। বিরহিনী রাধা সে কথা শুনে তেলে-বেগুনে জ্বলে উঠল, আরেক বিপত্তি!

 
"হ্যাঁ এখন আমার সাথে কথা বলতে খুউউউব অসুবিধে হচ্ছে, সে আর জানিনা!"
"ব্যাপারটা বোঝার চেষ্টা কর সোনা, আর কতবার এভাবে বাথরুমে সেঁধিয়ে থাকব, ডায়েরিয়া তো হয়নি। বাড়িভর্তি লোক..."
"থাক আমায় বোঝাতে হবে না"
"তুই শুধু শুধু রাগ করছিস"
"হ্যাঁ আমি তো শুধু শুধুই রাগ করি"
"আচ্ছা কালই তো ফেরার প্লেন, তারপর যতখুশি গালমন্দ করিস, আদর করিস"
"আহা, খুব শখ! আমার মোটেও তোকে আদর করার ইচ্ছে নেই"
"ঠিক আছে, আমিই নাহয় আদর করব একতরফা"
"কেউ তোর কাছে দয়া চায়নি"
"তোর মনে হচ্ছে দয়া করে আদর করি আমি?"
"নয়তো কি?"
"কতদিন হাতে জোড়া তরমুজ নিইনি, হাতগুলো নিশপিশ করছে"
"অ্যাই, আবার শুরু করলি!"
"সত্যি বলছি, এত তেষ্টা পাচ্ছে... কেমন আছে রে ওদুটো?"
"নিজে এসে দেখে নিস"
"একই রকম আছে, নাকি বিরহ যন্ত্রণায় আরেকটু ফুলে গেছে?"
"উফ্ফ্ জানি না আমি, অসভ্য ছেলে!"
"বটে? অসভ্যতা করার সময় তো মনে হয়না তোর খুব একটা খারাপ লাগে বলে?"
"চুপ কর! এখন তো ওখানে অসভ্যতা করছিস আমায় একা ফেলে গিয়ে"
 
অভিমানের সময় এদের যুক্তিবোধ কাজ করে না, আবহমান কাল এরকমভাবেই চলে আসছে। নাঃ, সত্যিই তো মেয়েটা এতদিন একা একা রয়েছে, আমার সাথেই অবসর সময়টা থাকে বলে অফিসেও তেমন বন্ধুবান্ধব নেই দু-একজন ছাড়া।
 
"আচ্ছা আচ্ছা মিষ্টু রাগ করে না। তুই নাহয় স্বাতীর কাছ থেকে ঘুরে আয় আজকের দিনটা, কাল থেকে তো..."
"স্বাতী নেই, ওরা কোদাইকানাল গেছে"
"তাহলে অন্তরাদির..."
"উফ্ফ্ বলছি না! পুরো গ্রুপটাই গেছে, সঞ্জীব ছাড়া"
"ওওওও কি ব্যাপার? তুই যাসনি বলে যায়নি নাকি?"
"ন্যাকামি করিস না"
 
এইবার মহাশয়াকে বাগে পেয়েছি। সঞ্জীব ওর অফিসের কলিগ, একই ব্যাচে জয়েন করেছে, এবং গোটা অফিস জানে ওর প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে বয়ফ্রেণ্ড আছে জানা সত্ত্বেও। আমাকে বহুদিন আগেই বলেছে কথাটা, প্রচ্ছন্ন গর্বটা চাপা দেওয়ার কোনওরকম চেষ্টা না করেই। একটু খ্যাপানো যাক।
 
"তাহলে ওর সাথেই কোথাও ঘুরে আয়"
"ফের ন্যাকামি... ?"
"কেন সে বেচারা কি দোষ করেছে?"
"তুই ভাল করেই জানিস কেন, আর এও জানিস যে আমি যাব না"
"আচ্ছা সতীরানী, আমার ঘাট হয়েছে"
 
জানি একথাটায় কাজ হবেই। আমার প্রতি অত্যধিক পজেসিভ বলেই হোক বা স্বভাবগুণে, ও অতি সন্তর্পণে পরপুরুষদের ছোঁয়া এড়িয়ে চলে। আজকের দিনে এটা খুব স্বাস্থ্যকর লক্ষণ নয়। এজন্য মাঝেমাঝে সতীরানী বলে খোঁচা দিই, আর ও চিড়বিড়িয়ে ওঠেএই শব্দটা একদম সহ্য করতে পারে না।
 
"কি ভেবেছিস, আমি যেতে পারব না ওর সাথে?"
"দুজনেই জানি যে সেটা কোনওদিন হবার নয়"
"তাই নাকি! ফর্ ইয়োর কাইণ্ড ইনফর্মেশান, ও আজকেই আমায় লাঞ্চে যেতে বলেছিল"
"এবং তুই যথারীতি যাসনি"
"তুই... কি বলতে চাস?"
 
মনে মনে একচোট হেসে নিলাম। এবার ফাঁদে পড়েছ সুন্দরী!
 
"বলছি ও ডাকবে সেটা তো স্বাভাবিক, তেমনি তুই যে যাবি না সেটাও আমি জানি"
"এক্সকিউজ মি! আমি কি করব না করব আমার পার্সোনাল ব্যাপার"
"অফ্ কোর্স"
 
ফোনের ওপ্রান্ত খানিক নীরব। তারপর দ্বিধাজড়িত প্রশ্ন-
 
"বাট যাওয়াটা কি ঠিক হবে?"
"কেন?"
"আহ্ ন্যাকামো করিসনা তো। জানিস না কেন?"
"দ্যাখ ও তোর কলিগ, একদিন লাঞ্চে গেলে মহাভারত দারুণ অশুদ্ধ হয়ে যাবে না"
"কিন্তু... অফিসের বাকিরা জানলে?"
"কার এত খেয়ে দেয়ে কাজ আছে বল তো? সবাই জানে যে তুই পাক্কা সতীরানী"
"আবার!"
"আচ্ছা আচ্ছা সরি। এবার রেডি হ, কটা বাজে দ্যাখ"
"দাঁড়া আগে ওকে ফোন করি"
"ওকে ম্যাম। আমি একটু চান করে আসি, তোর কিছু বলার থাকলে টেক্সট করে দিস"
 
ফোন রাখার পর একটু স্বস্তি পেলাম। এবারে তৈরী না হলে মা নির্ঘাত চেঁচাবে। আপাতত এদিকটা সামলে নিই তারপরে নাহয় ওকে ফোন করব।
 
চান করতে গিয়ে একটা অদ্ভুত অনুভূতি হল। আমার প্রেমিকা অন্য কারোর সাথে লাঞ্চ ডেটে যাচ্ছে। কথাটা ভেবেই কেমন লাগছে, আগে কোনওদিন ওকে অন্য কোনও পুরুষের সাথে দেখিনি বলেই কি? ধুর্ তাই হবে, এ নিয়ে ভাবার কোনও মানে হয়! কিন্তু কথাটা মাথা থেকে তাড়াতেও পারছি না। আচ্ছা ছেলেটার ওর প্রতি ব্যথা আছে সেটা কতটা সিরিয়াস? নাকি শুধু মাত্র ক্রাশ? ওর প্রতি কেউ আকৃষ্ট হলে অবশ্য একেবারেই দোষ দেওয়া যায়না। যাকগে এ নিয়ে ভেবে কি হবে। কিন্তু... একি? এতটা ঠাটিয়ে গেল কেন? কেন আবার, এতদিন ওকে কাছে পাইনি, ঠাটানোর আর দোষ কি! উফ্ ওর জামবাটির মত স্তনগুলো যে কতদিন চটকাইনি। ওগুলোর কথা ভেবেই জিভে জল চলে এসেছে। এখনও বোধহয় একটু সময় আছে। চান করতে পাঁচ মিনিট বেশি সময় নিলে কেউ কিছু বলবে না।
 
চান করে বেরিয়ে চুল আঁচড়াচ্ছি, একইসাথে তৃপ্ত আর একটু পরিশ্রান্ত লাগছে। এমন সময় ফোনে টিং টিং। ও বাবা, এতগুলো টেক্সট মেসেজ!
 
"কল্ড হিম, গোয়িং ফর লাঞ্চ অ্যাট হিজ প্লেস"
"হোয়াট শুড আই ওয়্যার"
"শাড়ি পরাটা বাড়াবাড়ি হয়ে যাবে কি?"
"কিরে বল?"
"আর ইউ নট ওকে উইথ দিস হানি? প্লিজ টেল মি"
 
মোবাইলটা নিয়ে কাঁপা কাঁপা হাতে টাইপ করলাম। শুধু শেষটার রিপ্লাই।
 
"অফ কোর্স আই অ্যাম ডার্লিং"
[+] 2 users Like অনঙ্গপাল's post
Like Reply
#3
।। ৩ ।।



মেসেজের ডেলিভারি রিপোর্টের পাঁচ সেকেণ্ড না যেতেই ফোন। জ্বালাতন! টাওয়েলটা ছাড়ারও কি সময় দেবে না?
 

"বল পিপি"

 

নামটার ছোট্ট ইতিহাস আছে। একদা আমার সাথে মল-ভ্রমণকালে কিছু তৃষ্ণার্ত দর্শকের জুলজুল তাকিয়ে থাকা দেখে উষ্মা প্রকাশ করেছিল। নারীরা, বিশেষত যাঁরা আকৈশোর পুরুষের দৃষ্টিমারফত প্রেরিত অঞ্জলি পেয়ে অভ্যস্ত, তাঁরা যে উত্তর জানা থাকা সত্ত্বেও মাঝেমধ্যে এহেন প্রশ্নের অবতারণা করেন সে কথা সর্বজনবিদিত।

 

"কি যে এরা দেখে হাঁ করে গড নোস্!"

"এমন পিপি তো আর চট করে দেখা যায় না"

"পিপি? পিপি স্ট্যাণ্ডস ফর হোয়াট?"

 

অগত্যা ব্যাখ্যা করতে হয়। পিপি হল 'পীনপয়োধরা'-র ল্যাটিন হরফের সংক্ষিপ্ত রূপ। কনভেণ্ট শিক্ষিতাকে শব্দটার মানে বুঝিয়ে বলতে আমায় এই মারে কি সেই মারে।

সেই থেকে পিপি।

 

আমার গলা পাওয়ামাত্র ওপ্রান্ত ঝংকার দিয়ে উঠল।

 

"উফ্ কোথায় ছিলিস তুই? একটাও রিপ্লাই নেই, কি করছিলিস?"

"আরে সকাল থেকে তো ফোন কানেই রয়েছি, চানটা করার সময় দিবি তো অন্তত নাকি? তোর মত ভোর পাঁচটায় উঠে চান আমার দ্বারা হয় না"

"এতক্ষণ লাগে চান করতে?"

 

উত্তরটা চেপে যাওয়াই শ্রেয়।

 

"তুই রেডি হয়েছিস?"

"সেজন্যই তো টেক্সট করেছিলাম তোকে, কি পরে যাই বল তো?"

"আপনি যা পরবেন তাতেই মানাবে সম্রাজ্ঞী, এমনকি যদি কিছু নাও পরেন তাতে সবচেয়ে ভাল..."

"আবার ইয়ার্কি, বল না ঠিক করে প্লিজ"

"পর যেটা তোর মন চায়"

"শাড়ি পরব? অকোয়ার্ড হবে না সেটা?"

"দুর এত ভাবিস কেন? যাবি তো কয়েক ঘণ্টার জন্য"

"ওকে ওকে, উম্ম্ম্ম কোনটা পরে যাই বল না?"

"নীলটা পরে যা যেটা গত পুজোয় কেনা"

"তোর দেওয়া শাড়িটা? না না ওটার সাথে ম্যাচিং ব্লাউজ নেই"

"কি ভুলভাল বলছিস, ওটা পরেই তো দিওয়ালিতে এসেছিলিস, মনে নেই?"

"উফ্ ওটা স্লিভলেস রে হাঁদা"

"সো হোয়াট?"

"আছে, তুই বুঝবি না"

 

বুঝতে ঠিকই পেরেছি, আমার আবদারে ব্লাউজটা বেশ সংক্ষিপ্তাকারে বানানো হয়েছিল। পরলে ওর বাহুমূল, পেলব হাত, কাঁধের ডৌল, বুকের চাতাল অনেকটাই উন্মুক্ত হয়ে পড়ে; পুরুষ দর্শকের মনে ঝড় তুলে, অন্য নারীদের ঈর্ষান্বিত ক'রে। তাই এত দ্বিধা। তাই লজ্জা।

 

"তাহলে তুঁতে রঙেরটা পর"

"আমার আবার তুঁতে রঙের শাড়ি কোথায় পেলি তুই?"

"যাচ্চলে কদিন আগেই তো পরেছিলি"

"হায় ভগবান! কোন অন্ধের হাতে এনে ফেলেছ আমায়? ওটা মভ কালার হাঁদারাম"

 

এই হল ডাবল এক্স ক্রোমোজোমের মহিমা, তুঁতে আর মভের মধ্যে সূক্ষ্ম বিচার করে! কি করে বোঝাই শাড়ির আবরণে ঘেরা নারীটি দ্রষ্টব্য, তার পোষাকের রঙের তারতম্যে আমাদের কিস্সু এসে যায় না। তুঁতে-মভ-বেগুনি-গোলাপীর চাইতে শঙ্খিনী-পদ্মিনী-চিত্রিনী-হস্তিনীর প্রকারভেদটাই আগে ধরা পরে পুরুষচোখে, বাকি সব তো গৌণ।

 

"আচ্ছা বেশ মভ, মভটাই পরে যা"

"ধ্যাত্, ওটায় বিচ্ছিরি ভাঁজ পড়ে গেছে, আয়রন না করলে পরা যাবেনা"

 

এ তো মহা গেরো!

 

"আয়রন করা গুলোর মধ্যেই একটা পর তবে"

"বললি যা হোক, তোকে দিয়ে যদি কোনও কাজ হয়"

"আরে চটে যাচ্ছিস কেন, যেটা হোক পর না"

"একটাও পছন্দ হচ্ছে না, দুর ভাল্লাগে না"

"আলমারি ভর্তি শাড়ির মধ্যে একটাও আপনার অঙ্গে ওঠবার যোগ্য নয়?"

"তুই থামবি? সালওয়ার পরেই যাব"

"বেশ তো ঐ ময়ূরকণ্ঠী রঙের..."

"থাক তোকে কিচ্ছু ডিসাইড করতে হবে না, আমাকেই বুঝে নিতে দে"

 

দূরভাষ যোগ আচমকাই বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল। ম্যাডামের রাগ হয়েছে। এটা অবশ্য নিয়মিত ব্যাপার, কোনও কিছুতে সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগলেই তার সব রাগ এসে পড়ে আমার ওপর। যাক এখন না ঘাঁটানোই ভাল, নিজের মত শৃঙ্গার-প্রসাধন করলে রাগ আপনিই উবে যাবে।

কি মনে হতে একটা টেক্সট করলাম।

 

"জম্পেশ করে সাজুগুজু করিস আর এই অধমকে যাওয়ার আগে একবার চক্ষু সার্থক করার সুযোগ দিস"

 

নো রিপ্লাই। মুঠোফোন নীরব। কিন্তু আমার থেকে থেকে এরকম হচ্ছে কেন? তোয়ালেতে তাঁবুর আবির্ভাব, আবার! একটু আগেই তো বাথরুমের নিভৃতে শান্ত করে এলাম। নাহ্ ওকে সত্যিই বড্ড মিস করছি। কালকে ফিরে গিয়েই ওর ফ্ল্যাটে একবার ঢুঁ মারতে হবে।

ভাবনার মাঝেই বাইরে থেকে কাকিমার উচ্চগ্রামে আহ্বান, বৌভাতের জন্য সবাই একে একে যেতে আরম্ভ করেছে, একমাত্র দেবর হিসেবে আমারও যাওয়াটা কর্তব্য বৈকি। কিন্তু এদিকে যে... চেঁচিয়ে বলে দিলাম বাকিদের রওনা দিতে, আমি ছোড়দার বাইক নিয়ে সময়মত পৌঁছে যাব। হাজার হোক সে নতুন বর, আজকের দিনে দ্বিচক্রযানে চড়ার অনুমতি পাবেনা। যদিও ভালমতই জানি দূরবাসিনীকে একবার চোখের দেখা না দেখে এখন আমি কোথাও নড়তে পারব না। অন্তত রেডি হয়ে থাকি যাতে অনুষ্ঠানবাড়ি গিয়ে ঝাড়টা কম খেতে হয়।

 

ঘড়ির কাঁটা নিজের নিয়মে আবর্তিত হয়ে চলেছে। পাঁচ, দশ, পনেরো করে করে প্রায় পঁয়তাল্লিশ মিনিট অতিক্রান্ত। এরইমধ্যে জেঠুর দু'বার ফোন করা হয়ে গেছে, ক্রুদ্ধ তিরস্কারের সাথে দায়িত্বজ্ঞান সম্পর্কিত ছোটখাট ভাষণ শোনার মাঝেই মোবাইলে টেক্সট অ্যালার্টের শব্দ। জেঠুকে কোনওরকমে নিরস্ত করে ফোন রেখে মেসেজবক্স খুলতেই অভীপ্সিত বার্তা।

 

"ক্যান ইউ কাম টু স্কাইপে নাউ?"

 

তড়িঘড়ি ল্যাপটপ অন করতে করতেই ফোনে উত্তর পাঠিয়ে দিলাম, "এসো সখী"। উঃ এই ইন্টারনেটটা এত দেরি করে কেন? কয়েক সেকেণ্ডকে মনে হচ্ছে যেন অনন্তকাল। অবশেষে স্কাইপের নীল জানলা খুলতেই দেখি আকাঙ্ক্ষিত মহিলাটির নামের পাশে সবুজ আলো জাজ্বল্যমান। কয়েকটা অধৈর্য চ্যাটও আছে তবে সেগুলো পড়ার এখন ফুরসত নেই। ভিডিওতে কল যাওয়ামাত্র ওপাশ থেকে সংযোগস্থাপন, এত বিস্ময়ও অপেক্ষা করে ছিল আমার জন্য?

 

কম্পিউটার স্ক্রিনের ওপারে একটি অপ্সরা, যেন দেবলোকের সভায় যাওয়ার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করেছে অনেক যত্নে। মর্ত্যের সামান্য মানুষের চোখ ধাঁধিয়ে গিয়েছিল, একটু ধাতস্থ হতে সময় লাগল তার। এ কি অপরূপ বেশ! জলপাইরঙা তনুতে সমুদ্রনীল শাড়ি, তার সাথে মানানসই নীল আভরণ হাতে-কানে-গলায়, কপালে নীল বিন্দি, অধররাগের আলতো প্রলেপ বিম্বোষ্ঠে, আর... আর অঙ্গে শোভিত স্লিভলেস বক্ষাবরণী যা নিয়ে একটু আগের মনকষাকষি। আবৃত করার ছলে আরও যেন প্রকট করেছে দু'কূল উপচানো ভরা যৌবন। চমকের উপর চমক, ঈষদচ্ছ ব্লাউজের ভিতর নীলরঙা কাঁচুলি দৃশ্যমান।

 

আনত চোখে ও বসেছিল ওয়েবক্যামের সামনে, হয়তো আমাকে স্বাভাবিক হওয়ার সময়টুকু দিতে। তারপর লজ্জারুণ দৃষ্টিতে তাকাল, চাহনিতে অব্যক্ত জিজ্ঞাসা, যেন বলছে "কেমন লাগছে আমায়?" অজস্র উড়ন্ত চুমুতে ভরিয়ে দিলাম ল্যাপটপের পর্দা, কয়েক মুহূর্ত ধরে ও সিক্ত হল চুম্বনস্নানে, তারপর ঠোঁট মুচড়ে একটা অপার্থিব ভঙ্গিমায় আমার কাঠিন্য বাড়িয়ে দিল কয়েকগুণ। সেটা ওর নারীইন্দ্রিয় সহজেই ধরতে পেরেছে, চোখের ইশারায় জানতে চাইল নীচে কি অবস্থা। কোনওরকম দ্বিধা না করে ল্যাপটপের ডালা নামিয়ে নিজের লৌহকঠিন অবস্থা দেখালাম। একইসাথে ওর চোখে তৃপ্তি আর কৌতুকের ঝিলিক খেলে গেল, গালে আবির ছড়িয়ে পড়ল আরেক পোঁচ। বাড়িতে এখন বোধহয় কেউ নেই, কান পেতে আওয়াজ শোনার চেষ্টা করলাম- নাঃ কিছু শোনা যাচ্ছে না। দূর কেউ থাকলে থাকবে, এখন আমার মন নিজের বশে নেই, একটানে খুলে নামিয়ে নিলাম প্যাণ্ট আর অধোবাস। ফুঁসে উঠতে থাকা উত্থান তীব্র লালসায় চেয়ে রইল ওপারের মাদকতাময়ী রূপসীর দিকে। তার চোখেও ঝরে পড়ছে কামনা, অধর স্ফুরিত। কয়েক মুহূর্ত দুজনেই স্থাণু, তারপর শব্দ তরঙ্গ বেয়ে একটা অর্ধস্ফুট আকুতি ভেসে এল।

 

"আই মিস ইউ সো মাচ হানি"

"মিস ইউ টু বেবি"

"ডাইং টু বি ইন ইয়োর আর্মস"

"আই ওয়ান্না মেক লাভ টু ইউ সেক্সি"

 

মদির কটাক্ষে আমায় বিদ্ধ করে একটা অদ্ভুত দেহভঙ্গি করল, পীনোন্নত বুকজোড়া চোখের আরো কাছে এখন। আর বোধহয় নিজেকে ধরে রাখতে পারব না। নিষ্ঠুর রমণী সেটা উপলব্ধি করেই বিদায় চাইছে।

 

"এবার যাই? কিপ মিসিং মি"

"সো উইল হি"

 

নীচের দিকে ইঙ্গিত করলাম।

 

"নটি বয়েজ"

 

আদুরে স্বরে কথাটা বলে একটা বিদায়চুম্বন, তারপরেই সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল।

অনেক হয়েছে, বেরোনোর আগে আরেকবার মুক্ত না হলেই নয়। সন্তর্পণে লাগোয়া বাথরুমে ঢুকলাম। স্নানঘরের নির্জনে নিজের পৌরুষকে তীব্র পেষণ করছি, বন্ধ চোখের পাতায় ভেসে উঠছে নীলবসনা সুন্দরীর প্রতিচ্ছবি। একটা একটা করে আবরণ উন্মোচিত হচ্ছে, পেষণের গতি বেড়ে যাচ্ছে কয়েকগুণ। আঃ কি ভীষণ রিরংসা, যেন ভিতরটা ফেটে চৌচির হয়ে যাবে; গোটা শরীরটা অণু-পরমাণুতে বিভক্ত হয়ে বাতাসে ভেসে যেতে চাইছে, আছড়ে পড়তে চাইছে দু'হাজার কিলোমিটার দূরের প্রযুক্তি নগরীতে অবস্থিত প্রিয়তমার দেহে। খুঁজে নিচ্ছে তার শরীরের অন্ধিসন্ধি, কল্পনায় দলিত মথিত করছে উদ্ভিন্নযৌবনাকে।

 

সহসা মোবাইলে পরিচিত টেক্সট আগমন ধ্বনি।

 

"অলমোস্ট দেয়ার। বাট তুই কিন্তু আমায় থেকে থেকে ফোন করবি না। উম্ম্ম্ম ওকে? লাভ ইউ সুইটি"

 

মনের অন্দরে কি যেন একটা হল। একটা বিস্ফোরণ, বা ঐ জাতীয় কিছু। নিজেকে আর ধরে রাখতে পারলাম না, কেউ যেন আমায় এক অতলস্পর্শী খাদের দিকে গড়িয়ে দিয়েছে। মুক্তি, নাকি বন্ধন? জানি না।

 

যুগান্তরের পর চেতনা ফিরে আসতে দেখি সেই বাথরুমেই দাঁড়িয়ে রয়েছি। চারপাশ ভেসে যাচ্ছে কামনার লাভাস্রোতে। এঃ এটা পরিষ্কার না করে গেলেই নয়।
দুর্বল পায়ে বেরিয়ে এলাম খানিক পর। ঘড়ির কাঁটা সবেগে দৌড়চ্ছে। আজ প্রচুর গালাগাল জুটবে। আপনমনেই হেসে ফেললাম। ইজন্ট দ্যাট ওয়ার্থ ইট?
[+] 2 users Like অনঙ্গপাল's post
Like Reply
#4
।। ৪ ।।



এমন অদ্ভুত পরিস্থিতিতে আগে কোনওদিন পড়িনি।
 
 
বৌভাতের অনুষ্ঠানে চারিদিকে আনন্দের ফোয়ারা ছুটছে। নতুন বৌদির প্রশংসায় গুরুজন স্থানীয়রা পঞ্চমুখ, স্নেহের বশে নয়তো নিতান্ত লৌকিকতার স্বার্থে। ছোটদেরও উৎসাহের অবধি নেই, একটা আস্ত অপরিচিত বাড়িময় দৌরাত্ম্য করে বেড়ানোর সুযোগ পেয়েছে, মারধর-বকুনির বালাই নেই, শাসন হলেও তাতে প্রশ্রয়ের ভাগটাই যে বেশি কচিকাঁচারা সেটা বিলক্ষণ বোঝে। সঙ্গে পরিবারের নবতম সংযোজনটির ব্যাপারে হাল্কা কৌতূহলও রয়েছে। ওদিকে মাঝবয়সীর দল সাংসারিক কূটকচালিতে ব্যস্ত, নিজ নিজ কর্তা বা গিন্নীকে ঠাট্টা ইয়ার্কির ছলে নির্দোষ তীরে বিদ্ধ করার এমন উপলক্ষ বড় একটা তো আসে না! মাঝেসাঝে উত্তেজনার বশে শ্লেষের পরিমাণ বেড়ে গেলে আবহাওয়া উত্তপ্ত হয়ে উঠছে, তখন নারদের ভূমিকায় অবতীর্ণ হচ্ছে বাকিরা। মিঠেকড়া বাক্যালাপের আঁচ পোয়াচ্ছে কমবেশি সবাই। রোজকার বাঁধাধরা নিয়মের আগল খুলে গেছে, আদিরসাত্মক টিপ্পনীতেও কারও ভ্রূকুঞ্চন নেই। দুয়ারে বসন্ত আগতপ্রায়, সঙ্গতি রেখে সবার মন তাই উদার, কোনরকম মালিন্য রেখাপাত করতে পারছে না। আর সদ্য যৌবনের চৌকাঠ পেরোনো বা পেরোতে চলাদের তো কথাই নেই, তাদের আজ মেঘের ওপর দিয়ে হাঁটার পালা। সন্ধ্যায় দুদিন আগে পরিচয় হওয়া আগন্তুকদের কে কোন সাজে বরণ করবে সেই ভাবনায় মশগুল। আসরের কোণে দৈবাৎ কাউকে দেখা যায় জানলার বাইরে উদাস তাকিয়ে। নির্ঘাত বর অফিস থেকে ছুটি পায়নি, বিরহিনীর তাই প্রাণপণ চেষ্টা নিজের ম্লান মুখখানা সকলের চোখের আড়ালে রাখার। সে রসভঙ্গ অবশ্য কিছুক্ষণের জন্য। তারপরেই নিজেকে আবার ভাসিয়ে দিচ্ছে বাকিদের সাথে, সম্মিলিত আনন্দসাগরে।
 
কেবল একটিমাত্র যুবক শতচেষ্টা সত্ত্বেও পারছে না, পারছে না এই আনন্দযজ্ঞের অংশীদার হতে। তার মন পড়ে আছে 'অন্য কোথাও, অন্য কোনওখানে'
 
গত পাঁচ বছরে একটা ব্যাপারে কিছুতেই অবন্তিকা তার পুরুষসঙ্গীটিকে হার মানাতে পারেনি। ভারতীয় সমাজে পুরুষহৃদয়ের যে চিত্র অঙ্কিত রয়েছে, তার সর্বাঙ্গে সঙ্কীর্ণ পজেসিভনেসের গাঢ় দাগ। নারী তার কাছে কামনার বস্তু, আরাধ্যা দেবী, তাকে সে পেতে চায় বিভিন্ন রূপে। নারীস্বাধীনতার বুলি মুখে আউড়িয়ে আর প্রগতির ধ্বজা উড়িয়ে বিতর্কসভায় শোরগোল ফেলে দিয়ে যখন সে ঘরে ফিরে আসে, নিজস্ব রমণীটিকে তখন চলতে হয় তার অঙ্গুলিহেলনে। এমনকি সে কতটা (অ)শালীন পোষাক পরবে বা কোন কোন পরপুরুষের সাথে কতক্ষণ এবং কতখানি দূরত্ব রেখে কথা বলবে, সে বিষয়েও তার সিদ্ধান্তই শেষ কথা। অন্তত ভারতীয় নারীদের একটা বড় অংশের তেমনই অভিযোগ। কখনও দীর্ঘশ্বাস ফেলে, কখনও নেহাত খেলাচ্ছলে। সত্যিমিথ্যে জানা নেই, বাস্তবে দু'রকম নজিরই মেলে। দুর্ভাগ্যের বিষয় অবন্তিকা এমন দোষারোপের সুযোগ আজ পর্যন্ত পায়নি।
 
কারণ আর সব ব্যাপারে যাই হই, এ প্রসঙ্গে আমি খুব একটা মাথা ঘামাই না। হয়তো তার জন্য ওর একনিষ্ঠতাই দায়ী। বিশদে ভেবে দেখিনি।
 
আজ্ঞে হ্যাঁ, অবন্তিকা, আমার ''আমার সর্বস্বও বলতে পারেন। যাকে একটু আগে রাগিয়ে দিয়ে প্রকারান্তরে বাধ্য করেছি ওর কলিগের বাড়িতে লাঞ্চের নিমন্ত্রণে যেতে। নির্জন ফ্ল্যাটে, কারণ সঞ্জীব একাই থাকে। এবং সর্বোপরি যার পরিচয় আমার ''-র প্রেমে দ-হয়ে থাকা প্রেমিক। অন্য পুরুষের অধিকৃত জেনেও ওকে যে একান্তভাবে চায়।
 
কেন করলাম? কেন আবার, আমি একজন প্রগতিশীল, উদারমনস্ক, না-শভিনিস্ট প্রেমিক, তাই। আমার প্রেমিকার স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ আমার রুচিবিরুদ্ধ, তাই। ওর একনিষ্ঠতায় আমার পরিপূর্ণ আস্থা রয়েছে, তাই। ওর দেহের শুচিতার চাইতে ওর হৃদয়ের ভালবাসা আমার পাথেয়, তাই।
 
নিজের মনকে প্রবোধ দেওয়ার সময় মানুষ এ-ই করে। বোঝেও না যে সবার কাছে ফাঁকি চলে, কেবল নিজের কাছে ছাড়া।
 
অশান্ত মন পড়ে আছে ঘড়ির কাঁটার দিকে। আধ ঘণ্টা, এক ঘণ্টা, দেড় ঘণ্টা, দুঘণ্টা, সোয়া দুঘণ্টা, আড়াই ঘণ্টা, দুঘণ্টা সাঁইত্রিশ মিনিট... ওহো ভুল বললাম। এ ঘড়ির কাঁটা নেই। শুধু ডিজিটাল ডিসপ্লেতে সংখ্যা দিয়ে সময়ের সূচক। তবে সময় দেখাটাই একমাত্র উদ্দেশ্য নয়। বারংবার দেখতে হচ্ছে কোনও মিস্ড কল অ্যালার্ট আছে কিনা, বা মেসেজবক্সে অপঠিত কোনও বার্তা। এতবার মোবাইল পকেট থেকে বার করে শুধু সময় দেখলে যা হয়, অতি-উৎসাহী দর্শকের চোখে ধরা পড়তে বাধ্য। কোথাও কিছু নেই, বড়পিসি হঠাৎ বলে উঠল,
 
"কি ব্যাপার রে অন্তু, কোথাও যাবি নাকি?"
"অ্যাঁ, না তো, কেন?"
"এতবার মোবাইল বার করে দেখছিস তো তাই ভাবলাম..."
 
বাক্যটা উহ্য রইল তবে ইঙ্গিতটা নয়। হাওয়ায় ভাসমান সে ইঙ্গিত লুফে নিতে কয়েক মুহূর্তের দেরী, ফিল্ডার জেঠিমা।
 
"কোথায় আবার যাবে, কনেযাত্রীদের গাড়ি আসতে কতক্ষণ বাকি সেটাই দেখছে থেকে থেকে"
"সে তো এখনও অনেক বাকি, সাতটার আগে এসে পৌঁছবে বলে মনে হয়না", ওপাশ থেকে ছোটপিসির ফোড়ন।
"সাতটা কি বলছিস, আটটার আগে এসে উঠতে পারে কিনা দ্যাখ্। কিন্তু তাই নিয়ে তোর এত মাথাব্যথা কিসের?", বড়পিসির ধরতাই।
"সেকি দ্যাখোনি সেদিন দিদিভাই, সন্তুর বৌয়ের মাসতুতো বোন কেমন আমাদের অন্তুর খবরাখবর নিচ্ছিল, কোথায় থাকে, কি করে, মাস গেলে কত পায়!", কাকিমা সম্ভবত গুগলের করেস্পণ্ড্যাণ্ট, এই বিয়েটার কভারেজ ফ্রিল্যান্স করছে।
 
সন্তু ছোড়দার ডাকনাম। ছোটবৌদির মাসতুতো বোন দীপান্বিতা, বিয়ের দিন যে সাদা বাংলায় 'হেভি মাঞ্জা' দিয়েছিল, থেকে থেকে 'ঝাড়ি মারছিল' এবং শেষে ছলছুতোয় আলাপও করে গিয়েছিল। আর এইমাত্র হাসির হররা ওঠা ঘর থেকে যে বেরিয়ে এল, সেটা আমি।
 
এরা পারেও বটে। বিষের সঙ্গে খোঁজ নেই, কুলোপানা চক্কর! বাণপ্রস্থে যাওয়ার বয়সে প্রাণে এত রস আসে কোথা থেকে দেবা ন জানন্তি। নেহাত গুরুজন, তাই মনে মনেও গালাগালটা দিতে পারছি না। আপাতত এখান থেকে কেটে পড়াই শ্রেয়। ভাবতে না ভাবতেই সামনে রিংকুদি। ছোটপিসির মেয়ে। ঠিক এই মুহূর্তে আমার অবস্থাটা ওর চেয়ে ভাল এখানে কেউ বুঝবে না।
 
চাকরির পোস্টিং পাওয়ার পর প্রথমদিকে ভিনরাজ্যের শহরে রিংকুদিই ছিল আমার গাইড। এবং অন্যদিক থেকে দেখলে অস্বস্তির জায়গাও বটে। স্বাভাবিক কারণেই। বাঙালি মধ্যবিত্ত বাড়ি, প্রেম করা সংক্রান্ত নিষেধাজ্ঞার ভয় না থাকলেও জানতে পারলে অসংখ্য প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হবে, উপরন্তু সারাক্ষণ উদ্বিগ্ন মাতৃদেবীর দুশ্চিন্তা সামলানোর গুরুভার। রিংকুদি অবশ্য একেবারেই পেটপাতলা স্বভাবের নয়, যথেষ্ট বুদ্ধিমতী। তবু দ্বিধা কাটিয়ে ওকে আমার ''-র কথাটা জানাতে পারিনি। দুজনের বাসস্থান শহরের দুইপ্রান্তে হওয়ায় এ নিয়ে তেমন ভাবনা ছিল না। কিন্তু ভবিতব্য খণ্ডাবে কে?
 
বছর দেড়-দুই আগে এক রবিবারের বিকেল, মিঞাবিবি শপিংয়ে বেরিয়েছি। প্রায় গোটা সকালটা বিছানায় আদর আর ভালবাসাবাসির পর দুজনেরই মেজাজ ফুরফুরে। আমার কনুই বাঁধা পড়েছে ওর কোমল বাহুপাশে, থেকে থেকে সুবর্তুল নারীস্তন পুরুষালি পেশীর সংস্পর্শে আসছে, তড়িৎস্পৃষ্ট হচ্ছে দুই মন। একদিকের কাঁধ ঢেকে রয়েছে ওর খুলে রাখা মেঘবরণ চুলে। দুজন দুজনাতে বিভোর। অকস্মাৎ ছন্দপতন। বিশালায়তন মলের প্রবেশদ্বারের সামনে রিংকুদি। এক্কেবারে সামনাসামনি। 'জাস্ট বান্ধবী' বলে উল্লেখ করার কোনওরকম অবকাশ নেই, এতটাই ঘনিষ্ঠভাবে দুজনে দাঁড়িয়ে। রিংকুদিও জোর চমকেছিল, তবে সামলে নিয়ে একটা মুচকি হাসি ঠোঁটের কোণে রেখে ওর সাথে আলাপ-পরিচয় পর্ব শুরু করে দেয়। সহজাত নারীপ্রবৃত্তিতে ওরও মিশে যেতে তেমন অসুবিধে হয়নি। গোটা ব্যাপারটায় আমার ভূমিকা ছিল নীরব দর্শকের। পরে অবশ্য দুজনের কাছ থেকেই আলাদা ভাবে টিটকিরি হজম করতে হয়েছিল।
 
সেই থেকে পরিবারের একজন অবন্তিকার ব্যাপারে ওয়াকিবহাল। বাস্তবে ওর সাথেই রিংকুদির তুলনামূলকভাবে বেশি যোগাযোগ আছে। একদিক থেকে সেটা কিছুটা স্বস্তিদায়ক। তবে এর খেসারতস্বরূপ কালেভদ্রে রিংকুদির সাথে দেখা হলে কিছুটা টীকাটিপ্পনী সহ্য করতে হয়। আজও ওর মুখে ফুটে ওঠা কৌতুকচিহ্ন দেখে বুঝলাম তার ব্যতিক্রম হবে না। তাই সই, প্রবীণাদের খোরাকের বিষয়বস্তু হওয়ার চাইতে সে অনেক বেশি সহনীয়।
 
"কার কথা বলছে রে ছোটমাইমা?"
 
রিংকুদির প্রশ্নে বুঝলাম বাজে আলোচনার শেষাংশ ওরও কানে গেছে।
 
"ধুর, কেউ না, ছোড়দার এক শালি"
"কোনজন? ঢ্যাঙামত, ন্যাকা আধো-আধো স্বরে কথা বলে যে?"
 
ধন্য এদের পর্যবেক্ষণশক্তি।
 
"তুই চিনিস নাকি?"
"ঐ, একটা-দুটো কথা হয়েছে, বেশিক্ষণ পোষায়নি। তোকে তো সারাক্ষণ মাপছিল"
"প্লিজ এবার তুই আর শুরু করিস না"
"এবার না হয় বাড়িতে অবন্তিকার কথাটা বলেই দে"
"মাথা খারাপ!"
"এত ভয় পাচ্ছিস কেন? আর অবন্তিকাকে দেখলে কেউ তোকে ঐ নেকুর ব্যাপারে বদার করবে না"
"যেচে বাঁশ নিতে পারছি না এখন, বিশ্বাস কর"
"ওকে বুঝলাম... কেমন আছে রে মেয়েটা, অনেকদিন কথা হয়নি ওর সাথে"
"হুমম্ ঠিকই আছে", প্রসঙ্গটা এড়ানোই ভাল।
"তুই তো এবারে প্রায় দু'সপ্তাহ আছিস, ও কি করছে ওখানে একা একা? বোর হচ্ছে নিশ্চয়ই"
 
জ্বালাতন। মেয়েরা নিজেদের বেডরুমের গল্প শেয়ার করতে এত পছন্দ করে, সময় সময় সেটা চূড়ান্ত বিড়ম্বনার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। উনি নির্ঘাত আমার দিদির সাথে বিছানাপ্রসঙ্গ আলোচনা করেছেন, কারণ রিংকুদি কি ইঙ্গিত করছে বোঝা শক্ত নয়। ঐ আলোচনার দিকে কোনওমতেই যাওয়া চলবে না, তার চেয়ে সত্যিটা বললে যদি অব্যাহতি মেলে।
 
"নাঃ দিব্যি আছে, ইন ফ্যাক্ট আজ এক কলিগের বাড়ি গেছে লাঞ্চে"
"গুড ফর হার। ওর সেই আশিকও সেখানে গেছে নাকি?", রিংকুদির চোখেমুখে ঝিলিক দিচ্ছে দুষ্টুমি।
 
প্রবল ভিরমি খাওয়ার জোগাড়। মানে???
 
"তুই... তুই, মানে কার কথা বলছিস?"
"কেন ওর অফিসের সেই কলিগ, সঞ্জীব। অবন্তিকা যে বলেছিল তুই সব জানিস?"
 
আমি বাক্যহারা। কি জবাব দিই এর?
 
"হ্যাঁ তা জানি বটে, ইয়ে... মানে, সেই সঞ্জীবের বাড়িতেই গেছে", কোনওমতে বললাম। এবার অবাক হওয়ার পালা রিংকুদির।
 
"আর ইউ সিরিয়াস? আমি কিন্তু ঠিক মেলাতে পারছি না"
"কি বল তো?"
"ওকে যতদূর চিনি, শি অ্যাভয়েডস দ্যাট গাই। আই মিন ইটস নট দ্যাট বিগ ডীল, আর অন্যদের সামনে ইটস অলসো সেফ আই গেস"
"অ্যাক্চুয়ালি, ও একাই গেছে"
"হোয়াট???", বিস্ময়ে রিংকুদির চোখ ছানাবড়া।
 
নাঃ এ যে হিতে বিপরীত হল। একটা অপরাধবোধ চারিয়ে যাচ্ছে বুকের ভেতর, পুরো সত্যিটাই বলে দেওয়া দরকার।
 
"আসলে ও যেতে চাইছিল না ঠিক, আমিই কিছুটা জোর করে...", রিংকুদির হাঁ বুজতে চাইছে না, কোনওক্রমে শেষ করি নিজের বাক্যটা, "পাঠালাম"
"হ্যাভ ইউ গন ক্রেজি অন্তু?"
"কেন?"
"কেন? তুই জিজ্ঞেস করছিস কেন? কিছু একটা অঘটন ঘটে যায় যদি?"
 
রিংকুদির মুখে এখন আর কৌতুকের লেশমাত্র নেই। কপালে আর ভ্রূ-তে অনেকগুলো ভাঁজ। কয়েকটা দুশ্চিন্তার, বাকিগুলো সম্ভবত বিরক্তি থেকে। বিরক্তিটা কার ওপর সেটা অনুমান করাও দুরূহ নয়। মরিয়া হয়েই কিছুটা গাম্ভীর্য আনার চেষ্টা করলাম।
 
"দ্যাখ সবসময় ছেলেদের নীচুনজরে দেখিস না। ওর কাছে যা শুনেছি, সঞ্জীব যথেষ্ট ভদ্র ছেলে। মরাঠি ব্রাহ্মণ, লেখাপড়াতেও উঁচুদরের। সব ছেলেকেই রেপিস্ট ভাবা আজকের দিনে একটা ফ্যাশন হয়ে দাঁড়িয়েছে", একটানা কৈফিয়ত দিয়ে যেতে হল, জানি না বিশ্বাসযোগ্য হয়েছে কিনা। রিংকুদি চুপ করে আছে, ঠোঁট কামড়ে নিজের মনে কি যেন ভাবছে। ফাঁড়াটা কি এযাত্রা কেটে গেল?
 
"মে বি ইউ আর রাইট, আফটার অল ছেলেটাকে আমি চিনি না, সো আই শ্যুড নট বি জাজমেণ্টাল", অবশেষে মুখ খুলেছে রিংকুদি, "বাট মেক শিওর, গড ফরবিড ইফ এনিথিং হ্যাপেন্স, দ্যাট ইউ স্ট্যান্ড রাইট বিসাইড হার"
"এনিথিং ব্যাড মানে..."
"তুই যথেষ্ট বড় হয়েছিস, আমি কি বলেছি তার মানে না বোঝার মত কচি আর নোস... ছেলেটা যদি ফাঁকা ফ্ল্যাটে ওর সাথে অসভ্যতা করে তার দায় তুই এড়াতে পারিস না", ওঘর থেকে কারোর ডাকে সাড়া দিয়ে রিংকুদি উঠে গেল। ওর রাগত দৃষ্টি আর সশব্দ পদক্ষেপে বেশ বুঝলাম আমার ওপর ভালমত চটেছে।
 
একটা ফাঁকা ঘর দেখে সুড়ুৎ করে ঢুকে পড়লাম। এদিকটায় তেমন কেউ নেই, কিছু সময়ের জন্য আমার খোঁজ না করতে এলে বাঁচি। একটু একাকিত্বের প্রয়োজন এখন। বিমনাভাবে জানলা দিয়ে কর্মব্যস্ত শহরের একফালি ছবির দিকে তাকিয়ে আছি। মনে চিন্তারা আনাগোনা করছে। কি মনে হতে একবার মোবাইলটা বার করে দেখলাম। না কোনও ফোন, না টেক্সট। প্রায় চার ঘণ্টা হতে চলল শেষবার যোগাযোগ হয়েছে ওর সাথে। রিংকুদির শেষ কথা গুলো মাথা থেকে তাড়াতে পারছি না। সত্যি যদি তেমন কিছু ঘটে যায়? যদি ওকে একা পেয়ে ছেলেটা কিছু করে বসে? নাঃ আর ভাবতে পারছি না। চোখ বুজে এল আপনা থেকেই। মাথার ভেতর এক অজানা, অদেখা ফ্ল্যাটের দৃশ্যপট ভেসে উঠেছে।
 
শেষ বিকেলের মরা আলোয় ঘরটা আধো-অন্ধকার। উঁচু উঁচু জানলাগুলোর পর্দা পরিপাটিভাবে টানা, একপাশ দিয়ে কোনমতে চুরি করে গোধূলির আলো ঢুকছে। সেই আলোয় দৃশ্যমান একটা সিঙ্গল কট, ব্যাচেলরের জন্য পর্যাপ্ত হলেও দুজন মানুষের পক্ষে অপ্রতুল। তার উপর বসে নীল শাড়িপরিহিতা এক এলোকেশী সুন্দরী। চোখের পাতা বন্ধ, টানা টানা আঁখিপল্লব আরো মোহময়ী লাগছে। ঈষৎ পুরন্ত ঠোঁট কাঁপছে তিরতির। বুকের আঁচল খসে পরে আছে কোমরের নীচে। উন্মুক্ত সুগভীর নাভিদেশ, দ্রুত শ্বাসের তালে ওঠানামা করছে ভারী বুক। স্বল্পদৈর্ঘ্যের ব্লাউজ আর সংক্ষিপ্ততর কাঁচুলির শাসন অগ্রাহ্য করে স্বাধীন হতে চাইছে বর্ষার সুপক্ব তালকে লজ্জা দেওয়া স্তনজোড়া। নারীটি উদ্গত উত্তেজনাকে দমন করতেই বুঝি এলিয়ে পড়ল তার ঠিক পিছনে বসে থাকা সবল পুরুষটির গায়ে। আকার-আকৃতিতে সে আমার প্রায় সমান, তবুও একবারই কমন গ্যাদারিঙে আলাপ হওয়া ছেলেটাকে চিনতে এতটুকু ভুল হল না, সঞ্জীব। দুই বাহু দিয়ে বেষ্টন করে রয়েছে আমার প্রেয়সীকে, একটা হাত কোমরের কাছে খেলা করে বেড়াচ্ছে, অন্যটা ব্যস্ত ব্লাউজের উপরিভাগের লোভনীয় খাড়াই ঢাল বেয়ে নামতে। ওর মুখ হারিয়ে গেছে রূপসীর গভীর নেকলাইনে, তপ্ত শ্বাসের হল্কায় কেঁপে উঠছে রমণীশরীর। আলতো চুম্বনে তার কাঁধের অনাবৃত ডৌল সিক্ত, পুরুষের দাঁত নরম কানের লতিতে আক্রমণ শানাতেই হিসিয়ে উঠল ও। ধীরে ধীরে সে কানের লতি চুষছে সঞ্জীব, আর তার দুই হাত এখন ব্যস্ত আমার পছন্দের ডিজাইনে বানানো বক্ষাবরণীর হুকে। একটা একটা করে অর্গল খুলছে, একটু একটু করে উন্মুক্ত হচ্ছে আমার প্রেমিকার স্তন, আর সেই উদ্ভাসে গোটা ঘর যেন আলোয় ভরে উঠছে। ওর চোখ এখনও বন্ধ আবেশে, রক্তিম অধরে উপরের দাঁতের পাটির চাপ ক্রমবর্ধমান। লোভী পুরুষের জিভ লেহন করে নিচ্ছে গোলাপী আভাময় গালের সঞ্চিত সবটুকু মধু। কামনার প্রতিবর্তে ওর মুখ আস্তে আস্তে ঘুরে গেল সেদিকে। চোখ বন্ধ, তবু একপক্ষকাল উপোসী ঠোঁট খুঁজে নিল বহুদিনের তৃষ্ণার্ত ঠোঁটকে, মিশে গেল একবিন্দুতে। লেহন করছে, প্রবল আগ্রাসে তারা খেলা করছে পরস্পরের সাথে। সঞ্জীব এখন চুষে চলেছে প্রেয়সীর উষ্ণ বিম্বোষ্ঠ, আস্বাদ নিচ্ছে তার কামনাসিক্ত মিষ্টি লালার, যা আমার পরমপ্রিয়। দুই থাবার তৎপরতায় এতক্ষণে বহু আকাঙ্ক্ষিত সেই কাজ সম্পূর্ণ হয়েছে। শেষ হুকটিও তাদের মালকিনের আব্রুরক্ষার অসমযুদ্ধে পরাভূত। নতমস্তকে রণভূমি ত্যাগের সময়টুকু পেল না তারা, প্রবল এক টানে ঐ পরপুরুষ নির্মমভাবে ছুঁড়ে ফেলে দিল নীল স্লিভলেস ব্লাউজ। ধর্ষিতা রমণীর মত মাটিতে লুটিয়ে পড়ে আছে আমার প্রিয়ার বক্ষাবরণী। ধর্ষক তখন ব্যস্ত ওর কাঁচুলিবদ্ধ স্তনজোড়া দলিত মথিত করতে। প্রবল নিষ্পেষণে কামনাবিষ্ট কুচযুগ সমুন্নত, উত্তপ্ত বোঁটাগুলো শেষ লজ্জাবস্ত্রের আচ্ছাদন উপেক্ষা করে জেগে উঠেছে জ্বলন্ত ভিসুভিয়াসের ন্যায়, অচেনা আঙুলের ছোঁয়াতে তাদের ভিতর কাঁপন জাগছে আরো আরো। মোবাইলের রিংটোন বেজে উঠল।
 
আচমকাই উধাও দৃশ্যপট, অদেখা ঘরের আশ্লেষদৃশ্য মুছে গিয়ে ফিরে এসেছে পরিচিত রাস্তা। আমি এখনও জানলা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে, পকেটের মুঠোফোন জানান দিচ্ছে কারওর বার্তালাপের ইচ্ছা। আর, আর... এ কি সত্যি? বাস্তব? কখন নিজের অজান্তে হল এমন? ডানহাতের মুঠোয় দৃঢ়ভাবে ধরা আমার জাগ্রত পৌরুষ। দৈর্ঘ্য-প্রস্থ-বেধ নিয়ে কখনওই হীনম্মন্যতার কারণ ঘটেনি, বরং ওর চোখে বরাবর মুগ্ধ বিস্ময় দেখে শ্লাঘা অনুভব করেছি; কিন্তু আজকের উত্থান অতীতের সব রেকর্ডকে ধুয়েমুছে দিয়েছে!
 
ফোনটা বেজেই চলেছে, ওর নয়তো? তড়িঘড়ি পকেট থেকে বের করে নামটা দেখে নিরাশ হলাম। আমার উৎকণ্ঠিতা নয়, রিংকুদির 'নেকু'এ কেন এখন রসভঙ্গ করে? যা হোক কুটুমবাড়ি বলে কথা, ফোনটা ধরা কর্তব্য, জেঠুর দুপুরবেলার উপদেশাবলী মনে পড়ে গেল।
 
"বলো দীপান্বিতা"
[+] 2 users Like অনঙ্গপাল's post
Like Reply
#5
।। ৫ ।।


সন্ধের মহানগরী। আকাশের কোণ থেকে সূর্যের শেষ রক্তাভাটুকু আরেকটি রবিবারকে বিদায় জানিয়েছে বেশ কিছুক্ষণ হল। সপ্তাহের কর্মব্যস্ততা শুরুর আগে শহরের ব্যস্ত রাজপথেও যেন আলস্যের ছোঁয়া। উইকেণ্ড উদযাপনকারীদের প্রমত্ত হুল্লোড় বাদ দিলে ইতিউতি কিছু নিঃসঙ্গ পথচারী আর ক্রেতার আশায় অপেক্ষমান বিষণ্ণগম্ভীর কতিপয় দোকানদার, প্রাণের চিহ্ন বলতে এটুকুই চোখে পড়ে। না, একটু ভুল হল। রাস্তার প্রান্ত বরাবর দুদিকেই কিছুদূর অন্তর আলোকমালায় সেজে ওঠা বহুতলগুলিকে ভুললে চলবে না, বহু নতুন জীবনের গাঁটছড়া বাঁধার সাক্ষী তারা। সারিসারি রক্তখদ্যোতের মত জ্বলতে থাকা টুনিবাল্বের আলো যেন আগামীর দিশারী, নীরবে বয়ে এনেছে ফাল্গুনের আগমনবার্তা।
 
এমনই একটি আলোকোজ্জ্বল বহুতলের সামনে ঠায় দাঁড়িয়ে আছি গত দশ মিনিট। সময়ের হিসেবটা অবশ্য ঘড়িমাফিক, আমার ব্যক্তিগত ধারণা অন্ততপক্ষে আধঘণ্টা। আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতাবাদের সহজ প্রাঞ্জল উদাহরণটা মনে করে নিজেকে চাঙ্গা করার একটা ব্যর্থ প্রয়াস ইতিমধ্যেই করে ফেলেছি। লাভের লাভ কিছু হয়নি। মলমাসের অবসানে বাঙালির ঘরে ঘরে শুভ পরিণয়ের ধুম। আর কে না জানে, নিমন্ত্রণবাড়ি যাওয়ার আগে চার ঘণ্টা সাজসজ্জা-প্রসাধনে এবং আরো চার ঘণ্টা তার সংশোধনে বঙ্গনারীকুল ব্যয় না করলে গোটা বিবাহোৎসবটাই মাটি। অতএব অপেক্ষা। অনাদিঅনন্তকাল ব্যাপী অপেক্ষা, কখন কনেযাত্রীদের গাড়ি এসে পড়বে এবং সুসজ্জিত দাঁতের পাটি বার করে তাদের যথোচিত অভ্যর্থনা জানাতে হবে। এমনিতে এসমস্ত পারিবারিক ব্যাপারে সামাজিক শিষ্টাচারের দায়িত্ব কখনওই আমার ওপর বর্তায় না, কিন্তু আজ নেহাত একজনের অনুরোধে বাধ্য হয়ে...
 
বিকেলে ফোন আসতেই প্রমাদ গুনেছিলাম, না জানি কি অপেক্ষা করছে। তবে আজকের দিনটায় এজাতীয় উপদ্রব এলেও কিছু করার নেই জেনে গাম্ভীর্যের মুখোশ টেনে কথোপকথন শুরু করি। ফল হয় উল্টো।
 
"বাব্বাঃ কি গম্ভীর! বরের ছোট ভাই না বড় জেঠু?"
 
রীতিমত অপ্রস্তুত আমি। সদ্যপরিচিতার কাছ থেকে শুরুতেই ন্যাকা-ন্যাকা গলায় এমন সপাটে অভিযোগ ধেয়ে আসবে এ বোধহয় চিন্তার বাইরে ছিল। কোনওমতে সামাল দেওয়ার চেষ্টা করতে হয়।
 
"আমার গলাটা এরকমই, পছন্দ হোক বা না হোক"
"এম্মা, সে কথা বলিনি। ইশ্শ্ তুমি রাগ করলে?"
 
সত্যি, রিংকুদি ঠিকই বলেছে। এ যে দেখছি...
 
"নো ইটস্ ওকে। বলো হঠাৎ ফোন? ওদিকে সব ঠিকঠাক তো?"
"ইয়া এভরিথিং ইজ ফাইন। বাট একটা প্রবলেম হয়েছে..."
"সে কি? কারোর শরীর টরির খারাপ হল নাকি?"
"নো, বললাম না এভরিথিং ইজ ফাইন। বাট আসলে দ্য থিং ইজ আমাদের যে ড্রাইভারটা যাবে সে নর্থের দিকে তেমন চেনে না। আর আমরাও কেউ আই মীন ঐদিকটা যাইনি"
"সেটা এমন কিছু অসুবিধে নয়, অ্যাড্রেস তো জানোই, দরকার পড়লে কাছাকাছি এসে আমাদের যে কাউকে একটা ফোন করে দিলেই হবে"
"ওঃ ওকে, বাট তুমি কি একটু গেটের কাছে থাকতে পারবে? তাহলে ইট উইল বি ইজিয়ার ফর আস টু লোকেট..."
"বেশ তো, থাকব, বেরোনোর সময় শুধু একবার জানিয়ে দিও"
"গ্রেট, থ্যাঙ্কস আ লট গো। আই হোপ আই অ্যাম নট... আই মীন উই আর নট বদারিং ইয়ু টু মাচ"
"সার্টেইনলি নট"
 
এত বাজে অজুহাত বোধহয় এরকম ন্যাকা মেয়েরাই দিতে পারে। ড্রাইভার নাকি ডিরেকশান জানে না!
পাতি লাইন করার চেষ্টা ছাড়া কিছু নয়। বিরক্তির মধ্যেও হাসি পেল, ওকে এই ব্যাপারটা এক্ষুণি বলতে হবে।
 
পকেট থেকে মোবাইল বের করতে গিয়েও অজান্তেই হাতটা থেমে গেল, চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছি ওর শেষ মেসেজটা। এই মুহূর্তে তো ওকে কিছু বলা যাবে না, ও এখন এক পরপুরুষের ফ্ল্যাটে। সম্ভবত ভীষণ ব্যস্ত।
 
আচ্ছা এটা কি ধরনের ছেলেমানুষি করছি, ও তো নিজে থেকে যেতে চায়নি, আমিই প্রকারান্তরে বাধ্য করে পাঠালাম। এখন ওর ওপর রাগ করাটা স্রেফ বালখিল্যতা ছাড়া কিছু নয়। আর ফ্ল্যাটে গেলেই কি ঘনিষ্ঠ হতে হবে নাকি? এসব তো হীনম্মন্যতায় ভোগা দুর্বল পুরুষদের ভাবনা, আমায় মোটেই মানায় না। কিন্তু এখনও ফোনই বা করছে না কেন? লাঞ্চে গিয়েছিল, তা দ্বিপ্রহর গড়িয়ে আরও প্রায় চারটি ঘণ্টা কেটে গেছে। সুবোধ কলিগটি কত কোর্সের মধ্যাহ্নভোজের আয়োজন করেছিল? নাঃ মাথা থেকে প্রসঙ্গটাকে তাড়ানো দরকার। অতিথিসমাগমও শুরু হল বলে, এইবেলা ধরাচুড়ো পরে নেওয়া যাক।
 
অন্যমনে পোষাক পরিবর্তন করে নেমে এসেছি প্রবেশ-তোরণের কাছে। কনেযাত্রীদের গাড়ি রওনা দিয়েছে অবশেষে, সে বার্তাও মুঠোফোন মারফত পৌঁছে গেল। অতঃপর প্রতীক্ষা। কখন যে আসবে?
 
রাস্তার বিপরীতে একটা অন্ধকার পার্ক, পথবাতির চুঁইয়ে পড়া আলোর ক্ষীণ আভাসে যেটুকু দৃশ্যমান তা থেকে মনে হয় খেলাধুলোর পাট বহুদিন চুকে গেছে, এখন পরিত্যক্ত, হয়তো রাত বাড়লে অসামাজিক কাজকর্মের ভরসাস্থল। তরল আঁধারে দোলনা, সি-স, পীথাগোরাসের অতিভুজ-আকৃতির স্লিপ- সব কেমন হিমযুগের প্রস্তরীভূত প্রাগৈতিহাসিক পশুদের মত ঠায় দাঁড়িয়ে। আচ্ছা হঠাৎ করে যদি ওরা জেগে ওঠে? দ্যুৎ, যত্তসব উদ্ভট চিন্তা... দুপুর থেকে কি যে শুরু হয়েছে মাথার মধ্যে। 'স্বপ্ন নয়, শান্তি নয়, ভালবাসা নয়/ হৃদয়ের মাঝে এক বোধ জন্ম লয়'অসংখ্য ঘুণপোকারা কুরে কুরে খাচ্ছে মস্তিষ্কের অগুনতি কোষ। মস্তিষ্ক, না হৃদয়? দুটো কি আলাদা করা যায়? করা সম্ভব? জটিল সে প্রশ্নের উত্তর আমার অজানা। সমগ্র সত্তা প্রাণপণ চেষ্টা করছে মনটাকে অন্যদিকে সরিয়ে রাখতে। যতবারই চোখের পাতা বন্ধ করছি, ভেসে উঠছে আধো-আলোছায়ায় আচ্ছন্ন একটা অপ্রশস্ত ঘর। উঃ কি দুর্বিষহ এই দৃশ্যকল্প! মনের মধ্যে আরেকটা মন জেগে উঠে প্রতিবাদ জানায়। অতই যদি দুর্বিষহ হবে তবে ঐ কাঠিন্যের উৎস কি? কি কারণ দুপুরে স্নানঘরে সহসা বিস্ফোরণের?
 
আর পারছি না, দমবন্ধ হয়ে আসছে। অসহ্য এ প্রতীক্ষা। কখন আসবে কনেযাত্রীদের গাড়ি?
 
কখন আসবে, ওর ফোন?
 
ভগবান বলে কেউ থেকে থাকলেও তাঁর অস্তিত্ব বড়ই বায়বীয়, আজ অবধি প্রমাণ করা যায়নি। শুধু কিছু ব্যতিক্রমী মুহূর্তে তাঁর উপস্থিতি টের পাওয়া যায় যখন মানুষের একান্ত মনোবাঞ্ছা তিনি পূরণ করেন। তবে আমার মত নাস্তিকের প্রতি দয়াপরবশ হওয়ার কারণটা বোধগম্য হল না। সে না হোক, তিনি যে আছেন, ভীষণভাবেই আছেন সেটা উপলব্ধি করলাম ঠিক সেইসময় কয়েকগজ দূরত্বে কনেযাত্রীদের বাসটাকে থামতে দেখে। কিছু সেকেণ্ডের অপেক্ষা, বাড়ির চত্বরে আর তিলধারণের জায়গা রইল না। লোকলৌকিকতা, কুটুম্বিতা, ব্যজস্তুতি, ব্যজনিন্দা, পরনিন্দা-পরচর্চা- বিয়েবাড়ির আবশ্যিক উপকরণের সবই মজুত। কোনওকালে ভিড়ভাট্টা আমার তেমন পছন্দ নয়, আজ তারই আড়ালে নিজের অশান্ত মনের টানাপড়েনকে দিব্যি লুকিয়ে ফেললাম।
 
অচেনা-আধাচেনা মানুষজনের কোলাহল, চোখধাঁধানো সাজপোষাকের উগ্রতা, রকমারি বিদেশী সুগন্ধির ঘ্রাণে ভারী বাতাস আর হরেক আত্মীয়-সম্বোধন- এসবের মাঝে চোখে পড়ল সুসজ্জিতা একটি যুবতীকে, লাজনম্র নয়নে আমার দিকেই এগিয়ে এল, যদিও উন্নতনাসা আর উদ্ধত চিবুকে রূপের অহমিকা স্পষ্ট। দিন দুই আগে বিবাহবাসরে বা আজ বিকেলের ফোনালাপে কথা বলার তেমন আগ্রহ বোধ করিনি বরং উপেক্ষাই করতে চেয়েছি। ঠিক এই মুহূর্তে ওকেই সম্ভবত আমার সবথেকে বেশি প্রয়োজন। চুলোয় যাক আতিথেয়তা, পরিবারের সম্ভ্রম। কোনওদিকে ভ্রূক্ষেপ না করে মেতে উঠলাম আলাপচারিতায়। আত্মীয়-পরিজনদের সামনে বেশি কথা বলতে অস্বস্তি হবে হৃদয়ঙ্গম করামাত্র দীপান্বিতাকে নিয়ে সটান ছাদে। কিছুটা অবাকই হয়েছে, তবে হঠাৎ পাওয়া নিভৃতির পুলক ওর চোখমুখ থেকে ঠিকরে বেরোচ্ছে। অতিথিসমাগমের এটা ব্যস্ততম সময়, আমন্ত্রিত জনসংখ্যার অধিকাংশই নীচে। হাতেগোনা কিছু স্বভাব-ধূমপায়ী আর খোলা হাওয়ার সন্ধানে ভিয়েনের গোটা দুই কারিগর ব্যতিরেকে এই নিরালায় আমাদের কূজনে কান পাতার জন্য কেউ নেই। তাও কথাবার্তা যা হচ্ছে নিম্নগ্রামে। অন্তরঙ্গতার জন্য সে একদিক থেকে ভালই। বিশেষত বার্তালাপের উদ্দেশ্য যখন মূলত পরস্পরের সান্নিধ্যলাভ। দখিনা হাওয়ায় সম্মুখবর্তিনীর খোলা চুল উড়ছে, মুখমণ্ডলে অবাধ্য ঝাঁপ দিলে তার ভাগ্যে জুটছে শাসন, আর স্খলিত স্বাধীনচেতা আঁচলের উপরি প্রাপ্তি শিথিল প্রশ্রয়। নির্বিকারে লক্ষ্য করে যাই। বাঙ্ময় চোখের তারায় কৌতূহল, আকুতি; ঈষৎ স্ফুরিত ওষ্ঠে না-বলতে পারা কথাদের ভিড়। যৌবনমদে গরবিনী গ্রীবা সামান্য তির্যক, হৃদয়াবেগ দমনে অপারগতা পরিস্ফুট অঞ্চলপ্রান্তে চঞ্চল আঙুলের অশান্ত যাতায়াতে। ভাললাগার রোমাঞ্চে স্ফীত বক্ষের স্পন্দন কিঞ্চিৎ দ্রুততর। মনকে নিরাপদ দূরত্বে রেখে উপভোগ করি, ক্ষতি কি?
 
না, অপরাধবোধ জাগছে না, কেনই বা জাগবে? কথার ফাঁকে একটু আগে দেখে নিয়েছি, মোবাইলের কললিস্ট আর অপঠিত বার্তা, দুয়েরই ভাঁড়ার শূন্য। সাড়ে সাতটা বেজে গিয়েছে। একা আমিই কি নীরবে প্রতীক্ষা করে যাব?
 
আমারও আছে উপেক্ষার ভাষা।
[+] 2 users Like অনঙ্গপাল's post
Like Reply
#6
।। ৬ ।।



রাত বাড়ছে, মধুযামিনী সমাগতপ্রায়। মিলন-আকাঙ্ক্ষায় উন্মুখ দুইটি হৃদয় অধৈর্য হয়ে উঠছে, জনারণ্যের মাঝে ঘনিষ্ঠ হওয়ার সুযোগের অভাবে অসহিষ্ণু দু'জোড়া চোখ থেকে থেকে নিবদ্ধ হচ্ছে পরস্পরের প্রতি। কখন সেই মাহেন্দ্রক্ষণ আসবে, একের বাহুডোরে বাঁধা পড়বে অন্যজনের তনুলতা, নিঃশ্বাসে নিঃশ্বাস মিশে যাবে, কানে কানে হবে অস্ফুটে উচ্চারণ, "প্রতি অঙ্গ লাগি কাঁপে প্রতি অঙ্গ মোর"। হাত বাড়ালেই তার হাত, তবু এই মুহূর্তে ছোঁয়ার অনুমতি নেই, এতটাই অনতিক্রম্য সে দূরত্ব। একটুকু নিরালার প্রত্যাশায় দুইজনেই লুকিয়ে চাপা দীর্ঘশ্বাস ফেলে।
 
ছোড়দা আর নতুনবৌদির কথা বলছি।
 
আকাশে পূর্ণচন্দ্রের উদ্ভাসে চরাচর সাদা চাদরে ঢাকা বিস্রস্তকেশ রাজকুমারীর মত অভিমানী দেখাচ্ছে। মাঘ আর ফাল্গুনের সন্ধিক্ষণে শহরে মলয় মারুতের আবির্ভাব। ভূরিভোজের তাড়নায় অতিথিরা সকলে নীচের তলায় নেমে গেছে, ফাঁকা ছাদ তাই আরও রোম্যাণ্টিক, আরও নিবিড়। একটানা আলাপচারিতার পর কথার অভাবে নিঃশব্দে দাঁড়িয়ে থাকি আমরা, মাঝেমাঝে আড়চোখে অন্যজনকে লক্ষ্য করা। কথার অভাবে, না একটু আগের দুর্ঘটনার অভিঘাত?
 
প্রাকৃতিক প্রয়োজনের তাগিদে অথবা মলিন হতে থাকা প্রসাধনে নতুন রূপটানের প্রণোদনায়, অথবা দুটোইদীপান্বিতা রেস্টরুমে যাওয়ামাত্র ফোন বার করে পরিচিত নম্বরে ডায়াল। কিছুক্ষণ বাজতে না বাজতেই সুরেলা কলার টিউন নির্মমভাবে থামিয়ে দিয়ে দুর্বোধ্য বিজাতীয় ভাষায় খেদপ্রকাশ,মর্মার্থঃ এই উপভোক্তা এখন আপনার সাথে বার্তালাপে ইচ্ছুক নন। অধৈর্য হয়ে তৎক্ষণাৎ বার্তাপ্রেরণ করলাম, "কি করছিস? কোথায় আছিস? আর ইউ ওকে?" শতচেষ্টা সত্ত্বেও এতক্ষণের জমিয়ে রাখা উৎকণ্ঠা চেপে রাখা গেল না। কিন্তু মুঠোফোন বোবার মত চেয়ে আছে। ব্যাপারটা কি? ঈর্ষা আর অভিমানকে হঠিয়ে মনের দখল নিচ্ছে দুর্ভাবনারা। ও ঠিক আছে তো? প্রায় দশ মিনিট অতিক্রান্ত, দীপান্বিতা যে কোনও মুহূর্তে চলে আসবে হয়তো। আসুক, পরোয়া করি না। আবারও ফোন লাগালাম। আবারও সেই পরিণতি। কয়েক সেকেণ্ড পরে মেসেজ, সম্ভবত আমায় করা ওর ক্ষুদ্রতম টেক্সট, "বিজি নাউ"।
 
আটটা বেজে গেছে অনেকক্ষণ আগে, লাঞ্চ ডেট এখনও চলছে। ব্যস্ত থাকবে সেটাই তো স্বাভাবিক! মনের ভেতরটা ধীরে ধীরে অসাড় হয়ে যাচ্ছে, কেমন নির্লিপ্ত-নিশ্চিন্ত বোধ জাগছে ক্রমশ। সবই মায়া, কেউ কারওর নয়। গোটা জগতটা আদতে একটা প্রহসনের মঞ্চ।
 
"হাই, বোর হচ্ছিলে খুব? ডিড আই টেক টু লংসো সরি গো"
 
রিনিরিনি আওয়াজে সম্বিৎ ফিরল। এতক্ষণের বিলম্বের কারণটা একপলক দেখেই বোঝা যাচ্ছে। চুলটা আরেকটু পরিপাটি ভাবে খোলা, ঠোঁটে ওষ্ঠরঞ্জনীর প্রলেপ দৃষ্টি এড়িয়ে যাবার নয়, বুকের কাছে ব্লাউজটা যেন সামান্য উন্মুক্ত আগের চেয়ে, শাড়িটাও ষড়যন্ত্র করে অন্যদিকে খানিকটা সরে গেছে। মন মাতাল করা মৃদুমন্দ সুরভি ভেসে আসছে ঈষৎ দৃশ্যমান বিভাজিকা থেকে। চোখেমুখে চাপা আবেদন, সামান্য বিভক্ত ওষ্ঠাধরে চটুল ইঙ্গিত। নিজেকে আর ধরে রাখতে পারলাম না।
 
প্রায় এক মিনিট গোটা ছাদ নীরব, শুধু কিছু অর্ধস্ফুট শীৎকার বাদ দিলে অখণ্ড মৌনতা। শ্বাস নেবার তাগিদে একটু বিচ্ছিন্ন হলাম।
 
"এইমাত্র লাগালাম লিপস্টিকটা", দীপান্বিতার চোখে মৃদু ভর্ৎসনার সাথে প্রশ্রয়। এটুকুরই অপেক্ষা ছিল, কথাটা ভাল করে শেষ হবারও সুযোগ পেল না। পুনরায় মৌনতা। মুখে তপ্ত শ্বাসের হল্কা, ঘাড়ের কাছে রক্তরাঙা ম্যানিকিওরড নখগুলো আরও গভীরভাবে বসে যাচ্ছে, পেলব স্তন উন্মুখ হয়ে নিজেদের মেলে ধরেছে আমার পুরুষালি বুকে। আস্তে আস্তে ওর চুলের মধ্যে খেলা করছে আমার আঙুল, অভিজ্ঞ হাতে চুলের গোড়ায় মৃদু চাপ দিচ্ছি, নারীশরীর কেঁপে উঠছে থরথর। নীচের ঠোঁটে হাল্কা কামড়ের আভাস পেলাম, সাথে সাথে প্রত্যুত্তর। অন্য হাতে বেষ্টন করা বাইশটি বসন্ত পেরনো ক্ষীণকটি। দুষ্টুমির ইচ্ছে জাগল, সামান্য স্থান পরিবর্তন করতেই মুঠোয় তানপুরার খোল। বাসন্তীরঙা শাড়ির উপর থেকেই মর্দন করছি নধর নিতম্ব, নিজস্ব নারীর মত গুরুনিতম্বিনী না হলেও যথেষ্টই পরিপুষ্ট। পুরুষহাতের নিষ্পেষণে কাঁপন ছড়িয়ে পড়ল নারীদেহে। কাঁধ জড়িয়ে থাকা মৃণালভুজ আরো একটু ঘনিষ্ঠভাবে টেনে নিল নিজের দিকে। হাতে এখন নিটোল স্তনের মসৃণতা, হল্টার নেক ব্লাউজের আস্তরণের ওপর থেকে অনুভব করছি তার উষ্ণতা, তার জ্যামিতিক গঠন। তালুতে আগুন ধরাচ্ছে উন্মুখ হয়ে জেগে থাকা সুদৃঢ় নারীবৃন্ত। প্রবল মথনে মোমের মত গলে যাচ্ছে সদ্যপরিচিতা,নিজেকে সঁপে দিচ্ছে গভীর আলিঙ্গনে।
 
বহু যুগের ওপারে পরস্পরের ঠোঁট বিচ্ছিন্ন হল। বড় বড় দুই চোখ তাকিয়ে রয়েছে স্থির, অতিরিক্তের আর্তি নিয়ে। নাভিমূলে আলতো হাত রাখতেই ফের কম্পন, ছিন্নলতার মত আমার বুকে আশ্রয় নিল।
 
"যাওয়ার আগে একবার মীট করবে?"
"কাল সকালেই ফ্লাইট"
 
এক আকাশ অভিমান নিয়ে তাকিয়ে রয়েছে দীপান্বিতা, ঠোঁটের অভিব্যক্তিতে ঝরে পড়া অনুযোগ। একটুক্ষণ নীরবে ওর মিষ্টি মুখের দিকে তাকিয়ে চুল ঘেঁটে দিলাম। আসন্ন বিচ্ছেদের আভাস পেয়েই চোখ ছলছল। বেদনার্ত দৃষ্টিতে অন্যদিকে তাকিয়ে নিজেকে সামলানোর চেষ্টা করল।
 
"সামার ইন্টার্নশিপের একটা অফার আছে এনসিবিএসে", একটু থেমে পাদপূরণ, "ওটা ব্যাঙ্গালোরে"
 
আঁতকে ওঠার কথা, উঠলাম না। নিজের মধ্যে প্রতিটি শব্দের মর্মোদ্ধার করতে করতেই শান্তভাবে আরেকবার এই নারীকে বুকে টেনে নিয়েছি, "কন্ট্যাক্ট কোরো"
 
আরো কিছু নীরব মুহূর্ত কেটে গেল, আপাতত শেষবারের মত তাজা নতুন নারীঘ্রাণ ফুসফুস ভরে নিলাম, "চলো নীচে যাই, লাস্ট ব্যাচের বেশি দেরি নেই"। মৌন সম্মতি জানিয়ে বাধ্য মেয়ের মত সিঁড়ির দিকে পা বাড়াল দীপান্বিতা। ছাদের দরজার কাছে এসে আবারও নিবিড় আলিঙ্গন, পার্থক্য বলতে উদ্যোগটা এবার আমার তরফ থেকে নয়। চুমুতে ভরিয়ে দিতে দিতেই চমকে দিয়ে প্যাণ্টের ভিতরের উথথানকে নিজের মুঠোবন্দী করেছে। কয়েক সেকেণ্ডের প্রবল বিমর্দনে আমি হতবাক, তীব্রকঠিন। মিষ্টি করে চোখ মেরে শেষ একটা চুম্বন, তারপরই লাজুক মুখে হরিণীর মত তরতর করে সিঁড়ি বেয়ে নেমে গেল। ও জানে ঠিক এই অবস্থায় আমি বাকিদের সামনে যেতে পারব না।
 
পাপবোধ? কই, জাগছে না তো! কয়েকপল দাঁড়িয়ে রইলাম, অভিজ্ঞতাটা নিজের মধ্যে জারিত হওয়ার সময়টুকু দিয়ে। ভালই কাটল ছুটিটা। অজান্তেই পকেট হাতড়ে মোবাইলটা বার করেছি, ডিজিটাল সূচক আস্তে আস্তে নয়ের দিকে এগোচ্ছে। এখনও রিক্ত মেসেজবক্স।
 
“কা তব কান্তা কস্তে পুত্রঃ, সংসারোহয়মতীববিচিত্রঃ”
 
এবার আরও নীচে নামার পালা।
[+] 1 user Likes অনঙ্গপাল's post
Like Reply
#7
।। ৭ ।।



নীল, তারপর সাদা, আবার নীল, আবার সাদা। পর্যায়ক্রমে নীল আর সাদার আধিপত্যের দৌড়, কার ভাগে শেষমেষ জিত আছে জানার চাইতে প্রতিযোগিতাটাই বুঝি মুখ্য। নীলের মধ্যে আবার রকমফের, কখনও গাঢ় নীল তো তারপরেই আকাশী, আবার কোথাও ধূসরবর্ণ গম্ভীর নীল। সাদার মাঝেও রয়েছে প্রভেদ, পুরোটাই একটানা ধবলশুভ্র নয়, জায়গায় জায়গায় খয়েরির ছিটে। স্বর্গলোকে যাওয়ার পথ কি এরকমই হয়? দুর এই কচি বয়সে স্বর্গারোহণের কোনওরকম বাসনা নেই। এটা মনে হয় মেঘের দেশ, চতুর্দিকে মেঘেদের রাজত্ব। নীল মেঘ, সাদা মেঘ, কয়েক জায়গাতে ভীষণদর্শন কালো মেঘেরও দেখা মিলল, রাগের চোটে এক্ষুণি যেন মাটিতে আছড়ে পড়বে। মেঘ থেকেই তো বৃষ্টি, ক্লাস থ্রি-তে ভূগোল বইতে দেখা সেই ছবি। তীরচিহ্ন দিয়ে কিভাবে জল থেকে বাষ্প, বাষ্প জমে মেঘ, তার থেকে বৃষ্টি সব একেবারে জটিল করে বোঝানো। বৃষ্টিপাতের কারণ না বলতে পারলেই বনানী ম্যাডাম বেঞ্চের ওপর গোটা পিরিয়ড দাঁড় করিয়ে রাখতেন। সে তবু মন্দের ভাল, শোভনা ম্যাডামের ক্লাসে ইতিহাসের উত্তর ভুল বলেছ কি পিঠে দমাদ্দম স্কেলের বাড়ি, তখন 'চোখে নামে বৃষ্টি'আচ্ছা বৃষ্টিতে শেষ কবে ভিজতে হয়েছিল? নভেম্বর? হ্যাঁ, প্যাণ্টালুনসের কিসব সেল চলছিল, বাহাদুরি দেখিয়ে ছাতা নিয়ে যাইনি। হবি তো হ সেদিনই আকাশ ভেঙে অঝোরধারে বরিষণ। অনবরত গজগজ শুনতে শুনতে আর এক হাতে অ্যাপারেলস ভর্তি প্যাকেট, অন্যহাতে একচিলতে বাহারি লেডিজ ছাতা নিয়ে জলের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করে হাঁটার যৌথ খেলা। অনর্থক বীরত্বের তিরস্কার, সাথে হাত ধরাধরি করে জলের ছাঁট থেকে বাঁচাতে সোহাগভরে কাছে টেনে নেওয়া। খোলারাস্তায় জনসমুদ্রের মাঝে নৈকট্যের আতিশয্যে অতিরিক্ত দুষ্টুমি করে ফেললে, হোক না সে ছাতার আড়ালে, শাস্তি দেওয়া জলের তলায় পা মাড়িয়ে। উঃ, এত আলো কিসের?
 
প্রায়স্বচ্ছ কাঁচের আবরণ ভেদ করে আলোর রশ্মি সটান এসে পড়ছে মুখের ওপর। সারি দেওয়া মেঘেদের মাঝে একদল অনুপস্থিত, সেই ফাঁক গলে অর্কদেব উঁকি মারার সুযোগ পেয়ে গেছেন। যেটুকু তন্দ্রা দুচোখের পাতায় অবশিষ্ট ছিল, পাবলিক অ্যাড্রেস সিস্টেমে বিমানসেবিকার যান্ত্রিক ঘোষণার চোটে তাও উধাও। কাল রাতে শুতে এমনিতেই দেরি হয়েছে, সকালের ফ্লাইট ধরার তাড়ায় ভোর-ভোর ওঠা, ক্লান্তিতে সারা শরীর বিদ্রোহ করছে। আরেকটু ঘুমিয়ে নিলে হয়, কিন্তু এদিকে বিমানসেবিকার কথামত 'থোড়ি হি দের মে' ব্যাঙ্গালোরের 'হাওয়াই আড্ডায়' পৌঁছে যাব। অগত্যা নিরুপায় হয়ে নিজেকে সজাগ রাখা। নেমেই আবার অফিস ছুটতে হবে। যন্ত্রণা! একটা হাফ সিএল নিয়ে নেব? নাঃ এবারের ছুটিতে অনেকগুলো খরচ হয়ে গেছে, তার চেয়ে কোনওমতে দিনটা পার করে বিকেল-বিকেল বাড়ি ফিরে লম্বা ঘুম দিলেই চলবে। অবশ্য দিন খারাপ গেলে সন্ধ্যা নামার আগে পরিত্রাণ জুটবে না, মরুকগে এতশত ভেবে লাভ কি, নেমেই একটা কড়া করে ডাবল কফি নিয়ে নেব নাহয়।
 
ভাবনার মাঝেই অবতরণের প্রস্তুতি। প্লেনের চাকা প্রযুক্তিনগরীর মাটি ছোঁয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই চেনা ভিড়, ঠেলাঠেলি, গাদাগাদি করে যাত্রীবাহী বাসে চড়ে টার্মিনাস। নামেই এয়ারলাইন্স, যেন সকাল ন'টার আপ লক্ষ্মীকান্তপুর লোকাল! তাড়াহুড়ো করে কনভেয়র বেল্ট থেকে মালপত্র উদ্ধার পর্ব, ফাঁকে ফাঁকে বাড়িতে পৌঁছ-সংবাদ প্রেরণ। লাউঞ্জ থেকে বেরিয়ে অপেক্ষমান বাসগুলোর একটাতে বসে দম নেওয়ার সময় পেলাম। ওকেও কি জানাব? এখন বোধহয় অফিস যাওয়ার প্রস্তুতিতে মগ্ন, বিরক্ত করা ঠিক হবে না। নাঃ, কাল রাতে পইপই করে বলে দিয়েছিল সকালে নেমেই খবরটা জানাতে, এরপর এই ছুতোয় মান-অভিমানের পালা আরম্ভ হলে সন্ধেবেলাই ছুটতে হবে ঘুম-টুম ফেলে। মধ্যপন্থা অবলম্বন করা যাক। "রিচড সেফলি। গোয়িং স্ট্রেট টু দি অফিস।"
 
টিংটিং। সফল বার্তাপ্রেরণের আশ্বাসবাণী।
 
এবার গন্তব্যে পৌঁছনোর অপেক্ষা, অফিস আসতে ঢের দেরি, প্রায় ঘণ্টাখানেক ঘুমিয়ে নেওয়ার অবসর পাওয়া যাবে। তড়িঘড়ি কণ্ডাক্টরকে ডেকে দায়িত্ববান যাত্রীর মত টিকিটটা কেটে রাখছি যাতে পরে নিদ্রার ব্যাঘাত না ঘটে, পকেট থেকে পরিচিত বার্তাগমন ধ্বনি।
 
"দ্যাটস গ্রেট। গেটিং রেডি, উইল কল ইউ অন দ্য ওয়ে। হ্যাভ সামথিং ইম্পর্ট্যাণ্ট টু টেল ইউ। হোপ ইউ আর নট অ্যাংগ্রি"
 
কে কার ওপর রাগ করে! মনটা ভারি হয়ে গেল।
 
"ওকে ডিয়ার"
 
ভাগ্যিস মেসেজের মধ্যে মানুষের মনের পুরোটা প্রতিফলিত হয় না, ধরা পড়ে না মুখের অভিব্যক্তিও। জানলা দিয়ে বাইরে তাকালাম। বেলা খুব একটা কম হয়নি, তাও এ শহরের ইতিহাস আর ভূগোল বলে এখন আকাশ এমন মেঘলা থাকাটা অস্বাভাবিক নয় মোটেই। আমার মনের আকাশও মেঘাচ্ছন্ন গত রাত থেকে,তাই বোধহয় সূর্যালোকের অভাবটা আরও বেশি চোখে লাগছে। নিদ্রাহীনতার ক্লান্তি আর মানসিক দ্বন্দ্বের টানাপড়েনে কখন চোখ লেগে গেছে নিজেও টের পাইনি। ঘুম ভাঙল সহযাত্রীর ডাকে, মুঠোফোন বেজে চলেছে শব্দের জলতরঙ্গ ছড়িয়ে সে কথাই জানান দিতে। ধড়মড়িয়ে উঠে বসলাম, যাক অফিস আসতে এখনও কিছুটা দেরি আছে, পেরিয়ে গেলে আরেক কেলেংকারি হত। আশ্বস্ত হয়ে ফোনে চোখ বোলালাম, বাপরে, তিনটে ডাকছুট, একটা অপঠিত বার্তা। কলব্যাক করলাম, ওপারে অবন্তিকা।
 
"ঘুমিয়ে পড়েছিলিস?"
"ঐ একটু চোখ লেগে গেছিল। সরি কলগুলো শুনতে পাইনি"
"ইটস ওকে হানি, জানি তুই খুব টায়ার্ড আছিস"
"হুম, তুই কি অফিস পৌঁছেছিস?"
"নোপ, স্টিল অন মাই ওয়ে। অ্যানাদার টেন টু ফিফটিন মিনিটস"
"ঠিক আছে", কি বলব, ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না, এমন তো কখনও হয়নি আগে ওর সাথে?
"তুই ঠিক আছিস তো? তোর গলাটা কেমন শোনাচ্ছে, আর ইউ নট ওয়েল?"
"না না এভরিথিং ইজ ফাইন"
"শিওর হানি?"
"হ্যাঁ, জাস্ট একটু স্লিপ ডিপ্রাইভড। বাড়ি ফিরে ঘুমিয়ে নেব বেশি করে তাহলেই..."
"তো এখনই চলে যা না, আজ নয় একটা লিভ নিলি"
"না রে অফিসে যেতেই হবে একবার"
"ওকে, অ্যাজ ইউ উইশ", ওর গলাটা কি ম্রিয়মাণ লাগছে?
"তুই কি আজ, মানে... সন্ধেবেলায়, ইউ ওয়ান্না ক্যাচ আপ?"
"অ্যাকচুয়ালি অ্যাবাউট দ্যাট, তোকে বলা হয়নি", খানিক থেমে, "... আমি বম্বের কনফারেন্সটায় যাচ্ছি"
 
এর জন্য একেবারেই তৈরী ছিলাম না, বহুদিন আগে থেকে শুনে আসছি ঊর্ধ্বতনদের পরোক্ষ চাপ সত্ত্বেও ও যেতে নারাজ। শুধু এটাই বা কেন, বেশিরভাগ কনফারেন্সই ও এড়িয়ে যায় নানা ছলছুতোয়। হাতেগোনা যে কবার গেছে তা শুধু মহিলা সহকর্মীরা সঙ্গে ছিল সেই ভরসায়, এবারে তো তারা কেউ যাচ্ছে না বলে জানি। হিসেবটা মিলছে না।
 
ও কি আমার মন পড়তে পারে? বহুবার প্রশ্নটা নিজেকে করেও সদুত্তর পাইনি, তবে আমার এখন নিশ্চিত ধারণা, পারে।
 
"ইউ মাস্ট বি ওয়ান্ডারিং কেন সাডেনলি ডিসিশানটা চেঞ্জ করলাম?"
 
প্রশ্নটা যখন আন্দাজ করেই নিয়েছেন, উত্তরটাও আপনিই দিন দেবী।
 
"দ্য থিং ইজ", ও যেন কোনও কারণে ইতস্তত করছে, "প্রজেক্টটার কোর সেকশনের প্রেজেন্টেশনটার চাংক আমার বানানো, অন্য যে পার্টনার যাচ্ছে সে এটা ঠিকমত হ্যাণ্ডেল করতে পারবে না"
"আই সি! কিন্তু সেটা এরকম লাস্ট মোমেণ্টে জানানোর মানে কি? দিস ইজ নট প্রফেশনাল"
 
ওপ্রান্ত মুহূর্তখানেক নীরব। তারপর...
 
"দি আদার পার্টনার ইস সঞ্জীব, সো... ইউ নো হাউ শাই হি ইজ উইথ মি", ভুলটা তৎক্ষণাৎ সংশোধন করল, "আই মিন, হি ইউজড টু বি"
 
কাল রাতের কথোপকথনের পর এই সংশোধনটার সত্যিই প্রয়োজন। প্রসঙ্গটা এড়াতে অন্য প্রশ্নে যেতে হল, "কবে যাওয়া? টিকিট ম্যানেজ করতে পেরেছিস"
"ইয়া, আজ সকালেই অফিসের এজেণ্ট কনফার্ম করেছে, বাট ট্রেনে যেতে হবে, নো ফ্লাইট টিকিট অ্যাভেইলেবল, নট উইদিন দেয়ার বাজেট"
"ট্রাস্ট মি, ট্রেনস আর মাচ বেটার দ্যান ফ্লাইটস দিজ ডেজ। তাছাড়া ডিসট্যান্সও এমন কিছু নয়... সো যাচ্ছিস কবে?"
"টুনাইট, ইলেভেন পিএম"
"ওঃ দেন নো ক্যাচিং আপ টিল ইউ রিটার্ন?"
"নো, সরি হানি"
"সো নাউ ইটস মাই টার্ন টু বি অ্যালোন ইন দিস সিটি ফর আ ফিউ ডেজ"
"ফর ফিউয়ার ডেজ", নিজেকে যে বেশিদিন একা থাকতে হয়েছে এই সামান্য ব্যাপারটাও এরা মনে রাখবে এবং বারংবার মনে করিয়ে দেবে... "আই উইল বি ব্যাক বাই স্যাটারডে ইভনিং"
"এতদিন? কদ্দিন ধরে কনফারেন্স চলবে?"
"থ্রি ডেজ। স্টার্টস ডে আফটার টুমরো, র*্যাপ আপ বাই ফ্রাইডে"
"বুঝলাম, তাহলে আজকে সি অফ করতে যাব স্টেশনে"
"নোওও, ডোণ্ট", মাঝপথেই প্রস্তাবটা মুলতুবি হয়ে গেল, "প্লিজ নো, অফিসের কলিগরা থাকবে"
"তারাও ট্রেনে যাচ্ছে?"
"হ্যাঁ, আই মিন...", যেন শ্বাসরোধ করে কথা বলছে এমন চাপা গলায় উত্তর এল, "আমি আর সঞ্জীব"
"ওঃ ওকে"
"আমার জন্যই ও ফ্লাইট টিকিট ক্যানসেল করে ট্রেনের বুকিং করাল, বলল একা মেয়েদের জন্য এসব জার্নি সেফ নয়"
 
সাফাই দিচ্ছ প্রিয়তমা? কোনও প্রয়োজন নেই, আমার মনের মধ্যে কি চলছে তা যদি জানতে...
 
"আর ইউ অ্যাংগ্রি হানি?", ত্রস্ত স্বরে প্রশ্ন ভেসে এল।
"আরে না না, বরং এটা একদিক দিয়ে সেফ হয়েছে, আজকাল যা অবস্থা রাস্তাঘাটের..."
"আর ইউ শিওর ইউ আর নট..."
"ট্রাস্ট মি, আই রিয়েলি অ্যাম"
"আর ইউ অ্যাংগ্রি অ্যাবাউট ইয়েস্টারডে?"
 
হাসি পেয়ে গেল, আমি রাগ করব কালকের জন্য? নিজের মনের ভেতরটা যদি খুলে ওকে পড়াতে পারতাম। কি জবাব দেব একটু ভেবে নিই। মনশ্চক্ষে দেখতে পাচ্ছি ও এখন অভ্যাসবশত ডানদিকের নীচের ঠোঁটটা কামড়ে রয়েছে, উত্তরের অপেক্ষায়। নাঃ, অযথা হয়রানি করার মানে হয় না কোনও।
 
"অফ কোর্স আই অ্যাম বেবি, সেণ্ট পারসেণ্ট"
 
পুরোপুরি যে নিশ্চিন্ত হতে পারিনি জানি, তবে ছোট্ট করে শ্বাস পড়ার শব্দে বুঝলাম বুকের ভার অনেকটাই লাঘব হয়েছে। আবারও হাসি পাচ্ছে, ঐ গুরুভার বক্ষের অধিকারিণীর সাথে কথাটা এক্কেবারে বেমানান। বলতে গিয়ে চেপে গেলাম, বাড়ি থেকে ফিরেই ঝাড় খাওয়াটা উচিত কাজ হবে না।
 
"ওকে হানি, আই হ্যাভ রিচড দেয়ার। উইল কল ইউ লেটার, ওকে? বাই", সেকেণ্ডের ভগ্নাংশের বিরতি, তারপর, "ম্মমুয়াহহ"
 
দূরভাষযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল। মনের মধ্যেও মেঘের আঁধার সরিয়ে রোদ্দুরের উঁকিঝুঁকি। এইজন্যই কি এত চোখে হারাই ওকে? জানি না, জানতেও চাই না বোধহয়। আমার গন্তব্য এসে গেছে, মনটাকে সংযত করা দরকার। বহুদিন পরে অফিসে ঢুকছি, আজ কোনওক্রমেই কাজে ভুল কাম্য নয়।
 
বাক্সপ্যাঁটরা গুছিয়ে কসরত করে নামতে হল। এই গন্ধমাদনের বোঝা সারাদিন বইতে হবে? অন্তত ট্রলিব্যাগটা কেয়ারটেকারকে বিকেল পর্যন্ত গছানো যায় কিনা চেষ্টা করে দেখি, তারপর তো সুযোগ পেলে আমিই কাট মারব... কেজো ভাবনাদের মাঝে মোবাইলে দৃষ্টি যেতেই গলাটা শুকিয়ে কাঠ। সেই অপঠিত মেসেজ, বার্তাপ্রেরিকার নাম- দীপান্বিতা! নামটা কাল রাত থেকেই যেন বিস্মৃতির অতলে তলিয়ে গিয়েছিল, অথচ তার কিছুক্ষণ আগে ছাদের ওপর... মনের ভেতরে পাপবোধটা ধীরে ধীরে নিজের অস্তিত্ব জানান দিচ্ছে।
 
"হোপ ইউ হ্যাভ রিচড সেফলি... অ্যাম ফিলিং সো লোনলি হিয়ার, মিসিং ইউ টনস... উইশ ইউ কুড স্টে আ বিট লংগার"
 
শিরদাঁড়া বেয়ে হিমস্রোতের নেমে যাওয়াটা টের পেতে একটুও কষ্ট হল না। এমন আহাম্মক আমি, এরই মধ্যে ভুলে মেরে দিয়েছি যা যা হয়েছে... অবশ্য মনেরই বা দোষ কি? কাল ফিরে আসার পরে চ্যাটে ও যা বলল তারপর...
 
এমন অবিস্মরণীয় রাত কটাই বা আসে এক জীবনে?
[+] 2 users Like অনঙ্গপাল's post
Like Reply
#8
।। ৮ ।।



"ওরে এবার তো তোরা বেরো, অনেক রাত হয়েছে, ওদেরকে আর জ্বালাতন করিস না"
"কেন গো বড়মাইমা, সবে সাড়ে এগারোটা বাজে, আমরা থাকলে কি ওদের গল্প করতে অসুবিধে হবে?"
"তোর না সামনে পার্ট ওয়ান ঝিল্লি? কাল কলেজ নেই? বেশি রাত করে শুলে সকালে উঠতে পারবি?"
"ও কাল কলেজ যাবে কি গো, আজ যে আমরা সারারাত নতুন বৌদির সাথে আলাপ করব"
"আলাপ করার সময় পরে অনেক পাবি তোরা, এখন চল তো বাপু, নতুন বৌমা কিছু পালিয়ে যাচ্ছে না"
"ছোড়দাও তো পালিয়ে যাচ্ছে না জেঠিমা"
"আর যদি পালায় তবে নতুনবৌদিকে নিয়েই পালাবে, চিন্তা কোরো না"
"হিহিহিহি"
"উফ এই ধিঙ্গি মেয়েগুলো বড় অবাধ্য হয়েছে, দাঁড়া তোর মাকে ডাকছি, সে এসে ব্যবস্থা করুক"
 
দোতলায় ছোড়দার ঘর থেকে ভেসে আসা তর্জন আর কলকাকলিতে গোটা বাড়ি মুখর। বিয়ে নামক প্রতিষ্ঠানের ঝক্কি বড় কম নয়, একটা গোটা উৎসবের আয়োজন। আইবুড়োভাত থেকে শুরু হয়ে বিয়ের দিনের নানা আচার-উপচার, শতেক নিয়মের গেরো, বধূবরণ, কালরাত্রি, বৌভাতের অনুষ্ঠান- সমস্ত পার করে বৃত্ত এসে সম্পূর্ণ হয় পুষ্পাভরিত যৌথ শয্যায়। দুটি প্রাণের একসাথে জীবনের পথে চলার শুভ সূচনা এই মধুলগ্নে। তবে সে পথের শুরু কণ্টকাকীর্ণ। ফুলে যেমন রয়েছে কাঁটার জ্বালা, নবদম্পতির প্রথম (অন্তত সমাজস্বীকৃত) মিলন দুর্বিষহ করতে হাজির অনূঢ়া বা সদ্যবিবাহিত নবযৌবনার দল। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে কি ঘটতে যাচ্ছে সে কল্পনায় তারা ভিতরে ভিতরে যারপরনাই উত্তেজিত; উচ্ছৃংখল, বল্গাহারা আদিম রসিকতার ইঙ্গিতে প্রায়শই তা প্রকট হয়ে পড়ছে। 'কলকল্লোলে লাজ দিল আজ নারীকণ্ঠের কাকলি'... বাড়ির প্রতিটি দেওয়াল রণিত হচ্ছে সে কলতানের ঝংকারে।
 
চিলেকোঠায় দশ ফুট বাই দশ ফুটের নিজস্ব কোটরে বসে থাকা আমার মনে অবশ্য এসব বিন্দুমাত্র রেখাপাত করতে পারছে না। করবেই বা কি করে? ঘণ্টা দেড়েক আগে আসা ফোনটার পর থেকেই ধীরে ধীরে সমস্ত বাহ্যচেতনা লোপ পেয়েছে। বিকেল থেকে জমানো উৎকণ্ঠা... বিকেলই বা বলি কেন, দুপুরে ও সঞ্জীবের সাথে লাঞ্চ ডেটে রওনা দেওয়ার পর থেকেই তো... একটু একটু করে জমে যা সন্ধে নাগাদ অভিমান, আর সবশেষে রাগের আকার নিয়েছিল, ফোনে ওর গলা শোনামাত্র সেসব কোথায় উধাও! না, ভুল হল, শুধু ঐ মাদকতাময়ীর স্বরের জন্য নয়, দূরভাষে ওর ঈষৎ কাঁপা-কাঁপা গলায় যা বলল তাতে যেন কি এক অজানা রহস্যের আভাস।
 
...
 
খাওয়া-দাওয়ার পাট তখন সবে চুকেছে, অতিরিক্ত গুরুভোজনের পর পৃথুলাতর হওয়া এক লতায়পাতায় আত্মীয়ার কাছে নিজের কর্মজীবন ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কৈফিয়ত দাখিল করতে করতে বিরক্ত হচ্ছি; কিন্তু উপায় কিছু নেই, এগুলো না করলে 'অসামাজিক', 'উন্নাসিক', 'উন্মার্গগামী' ব্যাচেলরের তকমা জুটতে বেশি দেরি হবে না। খানিক আগে দীপান্বিতাও বিদায় নিয়েছে, অবশ্য সকলের দৃষ্টি এড়িয়ে আজকের মত দ্বিতীয়বার চোখ মেরে, একটা ফ্লাইং কিস দেওয়ার পরে। হাতের বিচিত্র মুদ্রায় ফোনে যোগাযোগ রাখার ইশারা করতেও ভোলেনি। যান্ত্রিকভাবে একবার ঘাড় নাড়া, এছাড়া কোনও প্রতিক্রিয়া ছিল না আমার তরফ থেকে। সায়াহ্নকালীন ব্যভিচারের জন্য়ই হোক বা অন্য কোনও কারণে, একটা অবসাদ আস্তে আস্তে গ্রাস করছিল গোটা শরীর-মনকে। উপরন্তু কাল থেকে আবার সেই চেনা ছকের জীবন, অফিস-বাড়ি-কর্মব্যস্ততা-দৌড়ঝাঁপ, এসব ভেবে মনটা আরও বিস্বাদ হয়ে যাচ্ছে। নিমপাতা খাওয়া মুখে শুভানুধ্যায়ী মহিলার উপদেশ গিলছি, এমন সময় রাধিকার দূতী হয়ে মোবাইলে চেনা মেসেজবার্তার ধ্বনি। ভক্তকে তবে দেবীর মনে পড়েছে?
 
"আয়্যাম ফ্রি নাউ। কল মি হোয়েনএভার ইউ আর"
 
হৃৎপিণ্ডের অলিন্দ-নিলয়ে রক্তেরা সহসা দ্রুতগামী। 'অফিসের দরকারী ব্যাপার' বলে আত্মীয়াটিকে কাটালাম, তিনি অবশ্য এ অজুহাতে মোটেই প্রসন্ন হতে পারেননি, বাঁকা চোখে গতিবিধি লক্ষ্য করে যাচ্ছেন। তাতে আমার ছেঁড়া যায়। ভগ্ন আসরে ইতিউতি ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ভিড়ের মাঝেই একফাঁকে জায়গা করে ফোন লাগালাম। শ্যামের বাঁশি বিফলে গেল না, তিন সেকেণ্ডেই শ্রীমতীর সাড়া-
 
"কোথায় তুই?"
"রিসেপশানেই..."
"এখনও শেষ হয়নি?"
"তোর নিজের বিয়েতে দশটার মধ্যেই সবাইকে ভাগিয়ে দিবি বুঝি? পাবলিকে ক্যালাবে ধরে"
"উফফ ডোণ্ট বি রিডিক্যুলাস! বাড়ি কখন ফিরবি?"
"তা তো বলতে পারছি না, আরও একটু দেরি তো হবেই... তুই বল না কি বলবি, এখানে আমি ফ্রিই আছি"
"না, বাড়ি গেলে গিভ মি আ কল"
"কি ব্যাপার বল তো? সিরিয়াস কিছু?"
"বললাম তো বাড়ি ফিরে কল করিস"
"আরে বেকার টেনশানে ফেলছিস কেন! খারাপ কিছু হয়েছে নাকি? তুই ঠিক আছিস? এনিথিং রং?"
"নো আয়াম অলরাইট"
"তবে কি?"
"ডু ইউ ট্রাস্ট মি?"
"মানে???"
"বল না... ডু ইউ ট্রাস্ট মি?"
"আরে কি ব্যাপার কিচ্ছু না বলে..."
"জাস্ট আনসার দিস, ডু ইউ ট্রাস্ট মি? ইয়েস অর নো?", ওপ্রান্ত থেকে অধৈর্যস্বরে ধমক এল।
"তুই নিজেই জানিস ভাল করে"
"আর ইউ গোয়িং টু টেল মি অর নট?"
"অফ কোর্স আই ডু, এতে জিজ্ঞেস করার কি আছে?"
"পরে বলব"
"এখনই বল না, তুই কোথায়?"
"ঘরে ঢুকেছি জাস্ট, ডিনার প্যাক করে নিয়ে এলাম"
"আর লাঞ্চ কেমন হল?"
"বললাম তো কল মি আফটার রিচিং হোম"
"সাসপেন্স ক্রিয়েট করছিস কেন এত?"
"আহহ বলছি তো... কল মি হোয়েন ইউ আর অ্যালোন"
"কটা অবধি জেগে থাকবি?"
"আই উইল বি অ্যাওয়েক, ডোণ্ট ওয়ারি"
"কাল অফিস নেই?"
"সে নিয়ে তোকে ভাবতে হবে না"
"আচ্ছা আচ্ছা ঠিক আছে"
"ডিনার হয়ে গেছে?"
"টেন কোর্স, বিয়েবাড়িতে যেমন খ্যাঁটন হয়"
"গ্রেট, আমি ততক্ষণ করে নিই, কেমন? বাই"
 
সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল, রাজনন্দিনীর মতিগতি বোঝা ভার। এই শাসন তো এই আদর। এই মেঘ, এই রোদ্দুর। কিন্তু ব্যাপারটা কি? সঞ্জীবের সাথে কোনও ঝামেলা? লুকিয়ে গেল কি না কে জানে... উঁহু, একটু পরেই তো বলবে বলল। তবে? আচ্ছা, হঠাৎ ট্রাস্টের কথাই বা তুলল কেন? কিসের ট্রাস্ট?
 
তবে কি... তবে কি...
 
দুপুরে স্নানঘরে মনের মধ্যে ফুটে ওঠা ছায়াছবিরা ভেসে উঠল। সত্যিই কি ওরকম কিছু হয়েছে? এ যে কল্পনারও অতীত! ওর মত মেয়ের পক্ষে... নাহ আর ভাবতে পারছি না। এক্ষুণি বাড়ি ফিরতে হবে যাহোক করে। জানি গালাগাল খাব তবু এখন ভিতরে গিয়ে জানতে হচ্ছে কারা শিগগিরি রওনা দেবে বাড়ির দিকে। 'কাল সকালের ফ্লাইট, ব্যাগ গোছানো হয়নি বলে এখন না গেলেই নয়, আবার ভোরে ওঠা'- এটাই সবচেয়ে মোক্ষম অজুহাত। এক দৌড়ে রিসেপশানের জটলার মাঝে, একে তাকে প্রশ্ন করে পেয়েও গেলাম সন্ধান, জেঠুর শালা-শালাজ রাতেই ফিরবেন, তাঁদের গাড়িটা আমাদের বাড়িতে রাখা অতএব ভাড়া করা গাড়িটা যাবে ওনাদেরকে বাড়ি অবধি নামিয়ে দিতে। হাতে চাঁদ পাওয়া আর কাকে বলে? অম্লানবদনে এক ঝুড়ি মিথ্যে বলে বাইরে যেতে পা বাড়িয়েছি, টনক নড়ল... ভাগ্যিস!
 
দে ছুট, দে ছুট, দোতলায় উঠে সোজা তত্ত্ব রাখা রয়েছে যেখানে সেই ঘরে গিয়ে হাজির। যথারীতি একদঙ্গল নিকটাত্মীয়া কৌতূহলী-অভিজ্ঞ চোখ মেলে পর্যবেক্ষণে ব্যস্ত। কোন সামগ্রীর গুণাগুণ... অর্থাৎ বিনিময়মূল্য কেমন সে বিষয়ে সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম বিচার চলছে। মেঝেতে সার দিয়ে রাখা অনেক যত্নে সাজানো ট্রেগুলোর একটা টপ করে তুলে নিলাম। বিচারকমণ্ডলী ক্ষুব্ধ, ব্যথিত, কেউ কেউ সশব্দেই বিরক্তি জানান দিলেন।
 
"বাড়ি যাচ্ছি তো, একটা নিয়ে গেলাম যাতে পরে তোমাদের বেশি প্রবলেম না হয়"
 
ব্যাখ্যাটা সন্তোষজনক হয়েছে কিনা জানি না, ঘুরে তাকিয়ে ওনাদের মুখের অভিব্যক্তি থেকে সেটা আঁচ করার সময় বা ইচ্ছে কোনওটাই নেই। উর্ধ্বশ্বাসে নেমে সোজা অপেক্ষমান যাত্রীদের কাছে।
 
"স্যরি, একটু দেরি হয়ে গেল"
 
এনারাও কি বিরক্ত? হলে হবেন, কিছু করার নেই। এখান থেকে আমাদের বাড়ি কিছু না হোক দশ মিনিট লাগবে যেতে। আমার মনের মধ্যে নিষিদ্ধ উত্তেজনার যে ঝড় এখন বইছে, তার বহিঃপ্রকাশ থ্রি-পিস স্যুটের ট্রাউজারের ওপরে এরই মধ্যে ফুটে উঠেছে। সময় যত এগোবে, কল্পনারা ততই ডানা মেলবে ইচ্ছেমত, আর তার প্রভাব আরো বৃহৎ, আরো কঠিন হয়ে দেখা দেবে গাড়ির সিটে বসে থাকা আমার অধোবাসে। ঐ দুই বৃদ্ধ-বৃদ্ধাকে সে ভয়ানক দৃশ্য থেকে আড়াল করতে রক্ষাকবচ তত্ত্বের এই ট্রে।
 
ছোড়দাকে আজ ফুলশয্যার আবেগঘন মুহূর্তে তার মামা-মাইমার হার্টঅ্যাটাকের খবর শুনিয়ে আমার কি লাভ?
[+] 2 users Like অনঙ্গপাল's post
Like Reply
#9
।। ৯ ।।




ল্যাপটপটা খোলা, যদিও তার পর্দা ঢাকা নিকষ অন্ধকারে। ঘরের একটিমাত্র জানলা, উঁকি দিলে রাতের আকাশ দেখা যায়। বৃত্তাকার চাঁদ সেখানে আলো ছড়িয়ে চলেছে এখনও। তবে সন্ধের মত অত উজ্জ্বল নয়। খানিক বাদেই অস্ত যাওয়ার পালা, হয়তো তাই খানিক বিষণ্ণ; ফ্যাকাসে মুখে মৃদু ছায়া। মায়াময় জ্যোৎস্নার ছোট্ট একটা ভগ্নাংশ আপন খেয়ালে ঢুকে এসেছে এই চিলেকোঠার ঘরে। অস্পষ্ট আলো মেখে ঘরের সামান্য ক'টা আসবাব আধা-দৃশ্যমান, হঠাৎ দেখলে মনে হয় যেন কারা বসে আছে নিশ্চুপে। আর বসে আছে ঘরের মালিক, যে আগামী ভোরেই পাড়ি দেবে দু'হাজার কিলোমিটার দূরের এক শহরের উদ্দেশে, অনির্দিষ্টকালের জন্য যার পায়ের চিহ্ন পড়বে না এই ঘরে। বসে আছে ল্যাপটপের আঁধার ঘেরা পর্দার দিকে চেয়ে। 'স্লিপ' মোডে থাকার দরুণ কিপ্যাডের অস্তিত্ববাহী প্রতিপ্রভ আলোক বিচ্ছুরণে আঁধার খানিক তরল, চোখ সয়ে গেলে সে পর্দায় নিজের আবছায়া প্রতিচ্ছবি দেখা যায়। ঐ প্রতিবিম্ব কি বাস্তব, না কোনও স্বপ্নলোকের বাসিন্দার? কিছুক্ষণ আগে সে-ই কি নিজের প্রেমিকার সাথে চ্যাটে মগ্ন ছিল এই চেয়ারে বসে? সামনের ল্যাপটপের পর্দা তখন বৈদ্যুতিন উদ্ভাসে আলোকিত, আন্তর্জালের কারসাজিতে পর্দার ওপ্রান্তে ভেসে উঠেছিল প্রিয়ার মুখ। জানলার দিকে চোখ চলে যায়।
 
বাড়িতে এখনও বলিনি ওর কথা। যথাসময়ে সে সংবাদ প্রকাশিত হবে এবং কোনও আপত্তি আসার সম্ভাবনাও ক্ষীণ। তবু বাড়ির আর সকলের কাছে আমি আপাতত সিঙ্গল। হয়তো সেজন্যই এখানে সকলের চোখ-কান এড়িয়ে ফোনে ওর সাথে প্রেমালাপ করলে এত বছর পরেও নিষিদ্ধ প্রণয়ের রোমাঞ্চ জাগে। ফোনে আদর-ঝগড়া-খুনসুটি সারার পরে যতবার বাইরে একচিলতে আকাশের দিকে তাকিয়েছি, ওকেই দেখেছি। নীল আকাশে পেঁজা তুলোর মাঝে, বর্ষার মুখভার চিত্রপটে, প্রখর নিদাঘের খাঁ খাঁ মধ্যাহ্নে, হিমঋতুর কুয়াশার অস্বচ্ছ চাদরের ফাঁকে, সোডিয়াম ভেপার প্রতিফলিত রাতের আকাশে তারাদের চালচিত্রে। প্রতিবার আসমানের ক্যানভাসে ফুটে উঠেছে চিরচেনা দুই আয়ত চোখ, আর কল্পনা করেছি সে সুন্দরীকে নিজের বাহুপাশে, এই ঘরের মধ্যে। নানা ভাবে, নানা ভঙ্গিমাতে। জানলার ধারে দাঁড়িয়ে আনমনে এলো চুল মেলে দিয়েছে ও, আর আমি সে উন্মুক্ত কেশরাজির আঘ্রাণ নিতে নিতে তার মাঝে হারিয়ে গিয়েছি স্বর্গসুখে। কখনও সে চেয়ারে-বসা আমায় পিছন থেকে এসে জড়িয়ে নিয়েছে নিজের বুকের ওম-এ, কানে কানে অস্ফুটে শুনেছি প্রেমমুগ্ধা নারীর সোহাগ-সম্ভাষণ। সিঙ্গল খাটের একচিলতে পরিসরে দুজন দুজনের শরীরের উত্তাপে গলে মিশে একাকার হয়েছি অজস্রবার। কল্প-রমণের শেষে রমণী পরিশ্রান্ত, তার চুলের ঢেউয়ে দেখেছি ভোরের প্রথম আলোর নরম প্রতিফলন। নির্নিমেষ বিস্ময়ে চেয়ে থেকেছি আয়তাক্ষীর দিকে।
 
“খোলা জানালার ধারে মাথা রেখে
কত শিশির পড়েছে কবরীতে
কেন ঊষার আলোকে মিশে আমি
আহা পারিনি তোমায় ডেকে দিতে”
 
টেবিল-ঘড়ির টিকটিক ছাড়া আর কোনও শব্দ মগজে প্রবেশ করছে না। বাধ্য হয়ে উঠে পড়ি, অন্ধকারের মধ্যে আর কাঁহাতক বসে থাকা যায়! দরজার একপাশে অসম্পূর্ণ গুছিয়ে রাখা ট্রলিব্যাগ ও অন্যান্য সরঞ্জাম, সন্তর্পণে তাদের পেরোলেই চৌকাঠ, তারপর প্রশস্ত ছাদ। বাতাসে এখনও হিমেল কামড়। কিন্তু অস্থির মন সেসবের পরোয়া করে না। দিগন্তবিস্তৃত নীল শামিয়ানার নীচে এসে দাঁড়াতেই এতক্ষণের গুমোট ভাব উধাও। আঃ, শান্তি। মন বুঝি দখিনা হাওয়ার পরশের জন্য উন্মুখ হয়ে ছিল। বিনিদ্র রাত্রিযাপনের শ্রান্তিতে চোখ জুড়িয়ে আসতে চায়। সাথে সাথে মনের বায়োস্কোপে সচল কয়েক ঘণ্টা আগের স্মৃতিরা।
 
...
 
জেঠুর শ্যালক-দম্পতিকে বিদায় জানাতে গিয়ে বেকার খরচ হয়ে গেল পাক্কা দশটা মিনিট। কোনও মানে হয়? উদ্বাহবন্ধনের আসরে এলেই বয়স্কা মহিলাদের সামাজিকতা যেন উথলে ওঠে! পাঁচ বছরে সাকুল্যে একবার যার সঙ্গে দেখা, আধ ঘণ্টার সুযোগে তার নাড়ি ও নক্ষত্রের বায়োডেটা না নিলে বোধহয় এদের রাধাবল্লভীগুলো হজম হয় না। সিঁড়ি দিয়ে দুদ্দাড়িয়ে উঠতে উঠতেই দূরভাষে সংযোগ স্থাপনের চেষ্টা, কিন্তু এ যে বেজেই চলেছে... ব্যাপারটা কি? ঘুমিয়ে পড়ল নাকি? অধৈর্য হয়ে আবার ফোন, আবার। তৃতীয় বারেও বেজে বেজে কেটে যাওয়ার ঠিক প্রাকমুহূর্তে ওপাশ থেকে সাড়া, "উফফ একটু টয়লেটে গেছি কি কলের পর কল করতে লেগেছে!"
 
যাক, ধড়ে প্রাণ এল, অন্তত ঘুমিয়ে পড়েনি। আজ রাতটা কথা না বলে কাটাতে হলে উত্তেজনার চোটে যে কি দশা হত... একহাতে তত্ত্বের ট্রে আর অন্য কানে মুঠোফোন ব্যালান্স করার ফাঁকে কোনওমতে ঘরের তালাটা খোলার চেষ্টা করতে থাকি, "তুইই তো বললি বাড়ি গিয়ে ফোন করতে"।
 
"বাব্বাঃ, অন্তুবাবুর আর তর সইছে না দেখছি! রিং করেই যাচ্ছে, করেই যাচ্ছে, কি ব্যাপার?", আমার যেমন ওকে রাগানোর জন্য বিশেষণ 'পিপি', 'সতীরানী', ওরও পাল্টা সম্ভাষণ 'অন্তুবাবু'
"ব্যাপার আর কি, তুই তো বলবি কি হল না হল", সোজাপথে না গিয়ে বরং সাবধানে খেলি।
"হুম্ম, তোর রিসেপশান এত ফাস্ট শেষ হয়ে গেল?", এ যে দেখি কথাটা এড়িয়ে যায়।
"না এখনও চলছে, তবে ভাঙা হাট, শেষ হওয়ার দিকে"
"আর তুই বাড়ি চলে এসছিস?", মৃদু কৌতুকের আভাস ওর গলায়।
"ওদের কখন হবে কে জানে, বেকার বোর হয়ে কি লাভ, তাই কেটে পড়লাম"
"তাই? আর কোনও রিজন নেই?"
"আর কি কারণ থাকবে?", বোকা সাজার একটা শেষ চেষ্টা।
"হাউ ডু আই নো?", পাল্টা ন্যাকামি... যা শুধু ওকেই মানায়।
"আই ওয়াজ মিসিং ইউ", এবারে আমি অকপট।
"উম্মম্মম্ম... রিয়েলি???", গলাটা ঠিক আদুরে বিড়ালিনীর মত, তাতে ঝরে পড়ছে প্রশ্রয়-আদর-প্রেম...
"ইয়েস দি এনটায়ার ডে। ইউ ক্যান্ট ইম্যাজিন", বিস্তারিত হয়ে লাভ নেই, এটুকুই বলি।
"হোয়াই? ওয়্যার ইউ জেলাস?"
"সর্ট অফ... তুই বল এবার কি করলি সারাদিন, এতক্ষণ ফোনই বা করিসনি কেন?", অনেক অনেক ক্ষণ থেকে বালির বাঁধ দিয়ে আটকে রাখা প্রশ্নের স্রোত আর বাধা মানতে চাইছে না।
"হুম্ম সেটা বলব বলেই আই কলড ইউ", আহ্লাদী গলায় হঠাৎই সতর্কতার সুর।
 
কয়েক সেকেণ্ডের নীরবতা। দু'পারেই। বুঝতে পারছি না কি বলব, ও-ও চুপ করে আছে, হয়তো মানসিক প্রস্তুতি নিচ্ছে। আমার বুকে মৃদু ঘা পড়তে আরম্ভ করেছে ...
 
"উম্ম তুই কি স্কাইপে আসতে পারবি? লেট হয়ে যাবে না তো?"
"না না, অফ কোর্স পারব"
"শিওর হানি? কাল কিন্তু তোর আর্লি মর্নিং ফ্লাইট"
"আরে কোনও চাপ নেই, আমি এখনই লগ ইন করছি"
"এখন না, একটু বাদে। আমি মাম্মার সাথে কথা বলে নিই, কেমন?"
"ওকে"
 
কথোপকথনে দাঁড়ি পড়তেই গা ঝাড়া দিয়ে উঠলাম, খুব দ্রুত কিছু কাজ সারতে হবে। ল্যাপটপের পাওয়ার অন করে ইন্টারনেটে সংযোগ স্থাপিত হতে কয়েক সেকেণ্ডের বিলম্ব, তারই মধ্যে জবর জং সাজপোষাক ছেড়ে ঘরোয়া বেশ ধারণ। স্কাইপে কানেক্ট করতে করতেই চোখে পড়ল খাটের কোণে রাখা ট্রেটার দিকে। ওটার জন্য পরে রসভঙ্গ হতে পারে, তার চেয়ে ভাল এখনই দোতলায় যথাস্থানে জমা করে আসি। ক্ষিপ্রগতিতে রেখে ফিরে আসতে গিয়ে আরেক বিপত্তি, বড় এবং ছোট দুই পিসিই ফিরে এসেছেন! তাদের মুখোমুখি হওয়া মানেই একপ্রস্থ জেরা চলবে বেশ কিছুক্ষণ। শেয়ালের কুমির ছানা দেখানোর মত আবারও ব্যাগ গোছানোর অজুহাত দিলাম, সঙ্গে এবারে লেজুড়, "খুব টায়ার্ড লাগছে, তাড়তাড়ি শুয়ে পড়ব, কাল ভোরেই আবার বেরোনো আছে"। ভাগ্য সহায়, এতেই পরিত্রাণ মিলল। পিসিমা-জেঠিমাদের সামনে 'বাছার স্বাস্থ্য'-রূপী বাণের এই ঘোর কলিতেও মার নেই!
 
কিন্তু এখনও তো তার কোনও সাড়াশব্দ পাওয়া যাচ্ছে না। না মেসেজ, না মিসড কল, স্কাইপেতে তার লাজুক হাস্যোজ্জ্বল মুখের পাশে সবুজ বাতিটাও নিষ্প্রভ। অগত্যা অপেক্ষা। এক একটা সেকেণ্ড যেন এক একটা প্রহর। কড়িকাঠের দিকে হাঁ করে তাকিয়ে আছি, নীচ থেকে একে একে সকলের আগমনের সংবাদ রাত্রির বুক চিরে ভেসে আসছে চিলেকোঠার ঘর পর্যন্ত। একটাই ভরসা, আলো নেভানো আছে, আজ আর কেউ বিরক্ত করতে আসবে না বোধহয়। এমনিতেই ঘুম উড়ে গেছে দুচোখের পাতা থেকে। কাল সকালে উঠতে প্রাণান্ত হবে।
 
কত ঘণ্টা, কত মিনিট, কত সেকেণ্ড তার হিসেব জানা নেই, তবে কোনও এক সময় দেবীর করুণা হল। স্কাইপের জানলায় তার কল-আগমনের মিঠে সুর। তড়িঘড়ি কল অ্যাকসেপ্ট করার পর মুহূর্তেই ছোটখাট ধাক্কা বুকের বাঁদিকে। এলোকেশী প্রেয়সী ল্যাপটপ সামনে রেখে খাটে আধশোয়া, অঙ্গে দ্বিস্তরীয় অর্ধস্বচ্ছ হাউসকোট। রাত্রিবাসের নামমাত্র আবরণের ভিতর দৃশ্যমান পরিচিত মানবীশরীরের সবকটি রেখা, যাবতীয় বাঁক। অবাধ্য চুলের রাশি ছড়িয়ে পড়েছে গ্রীবায়, কাঁধে, বুকের উচ্চতায়। দুপুরের প্রসাধনের অবশিষ্টাংশ এখনও লেগে ইতিউতি, গালে হাল্কা রক্তাভা। দুচোখের নীচে কাজলের সাথে ক্লান্তির আলতো প্রলেপ মুখখানা আরও মোহময়ী করে তুলেছে। ঠোঁটে ঈষৎ চটুলতা খেলা করছে নাকি আমারই দেখার ভুল, কে জানেবঙ্কিম গ্রীবার নীচে শুরু প্রশস্ত ঢালের মসৃণতায় ঘরের আলো পিছলে কি অপূর্ব বিভ্রম! স্বল্পদৈর্ঘ্যের রাতপোষাকের বাঁধন উপেক্ষা করে ফণা তুলে রয়েছে উদ্ধত দুই স্তন, স্বচ্ছ আবরণের ভিতর প্রকট তাদের শীর্ষে জেগে থাকা পাকা টসটসে খয়েরিবর্ণ করমচা-রা। স্বাভাবিক আলস্যে পায়ের উপর পা ভাঁজ করে রাখায় হাউসকোট উত্থিত অনেকটাই, ফলে উন্মুক্ত হয়ে পড়েছে জোড়া কলা-বৌ। তাদের সুঠাম পেলবতায় প্রতিফলিত হচ্ছে মায়াবী নৈশ-আলো, তরঙ্গ যোগাযোগের এপারে থাকা নির্বাক প্রেমিকের দু'চোখ ধাঁধিয়ে দিয়ে। আঁখির তারায় মিলনের তৃষ্ণাভরা মদির কটাক্ষ, বিদ্ধ করছে দয়িতকে। অনুচ্চারিত আহ্বানের হাতছানি দেহের পরতে-পরতে। মুহূর্তেকের জন্য শ্বাসরোধ হয়ে এল, কি অসামান্য দমবন্ধ করা সৌন্দর্য, চোখ ফেরানো যায় না! দুপুরের সুসজ্জিতা আর খোলামেলা এই রূপসী কি একই নারী?
 
"অ্যাই, কি দেখছিস হাঁ করে?", জলতরঙ্গের আওয়াজে সম্বিৎ ফিরল। মুখে কোনও কথা জোগাচ্ছে না, অনেক কষ্টে দু'টো অক্ষর উচ্চারণ করতে পারলাম...
"তোকে"
"কেন আমি কি আলিপুর জু'র বাঘ?"
"না"
"দেন?"
"বাঘিনী"
"হোয়ায়ায়ায়াট???"
 
একটু দম নিলাম, বাতাসের অভাবে কথা বলতেও কষ্ট হচ্ছে।
 
"স্বর্গের অপ্সরা দেখেছিস?"
"নাউ ডোণ্ট গিভ মি দ্যাট ক্র্যাপ যে আমায় অপ্সরা লাগছে, এসব বস্তাপচা লাইন আজকাল আরচলে না’
"না তোকে মোটেও অপ্সরাদের মত লাগছে না’
"দেন?, ক্ষীণকণ্ঠে প্রশ্ন ভেসে এল।এই উত্তরের জন্য প্রস্তুত ছিল না একেবারেই।
"তোকে দেখলে তারাও জেলাস হয়ে পড়ত’
"ওহ কাম অন, দিস ইজ ভেরি ব্যাড’
"সিরিয়াসলি, ইন্দ্র তোকে দেখে এক সেকেণ্ডেই বের করে দিত’
"মানে?
"আর শুধু ইন্দ্র কেন, বিষ্ণু-শিব-সূর্য-চন্দ্র, মায় ব্রহ্মাবুড়োরও তোকে দেখলে দাঁড়িয়ে যাবে’
"ইশশ অসভ্য ছেলে...’
"অসভ্যতার এখনই কি দেখলি, কাল গিয়ে পৌঁছই তার পর দেখাব’
"থাক, খুব হয়েছে’
"আচ্ছা বল এবারে, সারাদিন কি করলি’
 
সুন্দরীর কলকল সহসাই স্তব্ধ। নতমুখে কি যেন ভাবছে।
 
"কি রে বল, তোর বয়ফ্রেণ্ডের কি খবর? তোকে আজ শাড়িতে দেখে তারও দঁড়িয়ে গেছিল নিশ্চয়ই"
"উফফ তুই থামবি?"
"নট আনটিল ইউ পুট ইয়োর জুসি নিপলস ইন মাই মাউথ"
 
এবারে কোনও প্রত্যুত্তর নেই, আনতনয়নে ভেবেই চলেছে। হঠাৎ তাল কাটল নাকি? বেশ তো ছিল এইমাত্র।
 
"হোয়াট ইজ দ্য ম্যাটার বেবি? এনিথিং রং? কিছু লুকোস না আমার কাছে, প্লিজ"
 
একটু যেন ভরসা পেল, শিথিল দেহভঙ্গি মুহূর্তেই টানটান। এক পলক কি ভেবে সরাসরি তাকিয়েছে আমার চোখে।
 
"লাইটটা একটু জ্বাল"
"কেন?"
"আহহ জ্বাল না! তোর মুখটা ঠিকমত দেখা যাচ্ছে না"
 
অগত্যা। টিউব না জ্বেলে মৃদু রাতবাতিটা জ্বালালাম, দৈবাৎ কেউ এসে পড়লে ঘুমের ভান করতে পারব।
 
"এবারে বল, আর টেনশানে রাখিস না আমায়"
"ইউ নো, আজ আমার শাড়ি পরে যাওয়া উচিত হয়নি"
 
মস্তিষ্কের ভিতর সাইরেন বেজে উঠল যেন, হার্টবিটও বোধহয় মিস হল কয়েকটা। যা ভেবে আত্মরতি করেছিলাম সেটাই কি তবে... ?
 
(পরের পোস্টে বাকিটা...)
[+] 2 users Like অনঙ্গপাল's post
Like Reply
#10
"অ্যাণ্ড ডেফিনিটলি নট দ্যাট ব্লাউজ"আমায় নিরুত্তর দেখে ক্ষণেক থামলতারপর কেটে কেটে উচ্চারিত হল, "হি ওয়াজ টার্নড অন বাই মি সিন্স দ্য মোমেণ্ট আই সেট ফুট ইন হিস ফ্ল্যাট"
"ও তোকে কেন ডেকেছিল?", কাঁপা কাঁপা গলায় কোনওমতে জিজ্ঞেস করলাম।
"অফিসেরই দরকারে... জানি তুই বিশ্বাস করবি না এটা..."
"না নাআই ট্রাস্ট ইউ হোল হার্টেডলি বেবি"পুরোটা জানতে হবে আমায়যে কোনও মূল্যে। অবশ্য... কথাটা সত্যিওকে অবিশ্বাস করার কোনও কারণ নেই আমার দিক থেকে।
"রিয়েলি হানিথ্যাঙ্ক ইউ সো মাচ"ওর চোখেমুখে কৃতজ্ঞতার সাথে চাপা স্বস্তি।
"তারপর কি হল?", ভিতর ভিতর অধৈর্য হয়ে পড়ছি।
"ইয়াঅ্যাকচুয়ালি ইউ নো হোয়াট... আই ক্যুড সি আ স্মল বালজিং উইদিন হিজ শর্টসঅলদো হি ট্রায়েড হিজ বেস্ট টু হাইড দ্যাট"
"ওকেতারপর?"
"উই হ্যাড লাঞ্চ অ্যাণ্ড দেন জাস্ট চ্যাটিং... আই ওয়াজ অন হিজ বেডআর ও সামনে চেয়ারে বসেছিল। আফটার সাম টাইম ও ল্যাপটপে ওর একটা প্রজেক্ট দেখাতে আরম্ভ করল অ্যাণ্ড উই ওয়্যার ডিসকাসিং অ্যাবাউট দ্য প্রবলেম হি'জ ফেসিং... অল অফ আ সাডেন আই স হিজ বালজ ইজ গ্রোয়িংআই ওয়াজ রিয়েলি সারপ্রাইজড বাট চোজ টু ইগনোর ইট"একটু দম নেওয়ার জন্য থামল ও, "দেন ইট ওয়াজ নট পসিবল অ্যাট অল টু ইগনোর। ইট ওয়াজ হিউউজ!" ওর চোখে লজ্জাগালেও তার ছোঁয়া লেগেছে। ঈষৎ ত্রস্ত ভাবে তাকিয়ে আছে আমার দিকে।
 
আর আমি এই প্রান্তে বাক্যহারা। মুখে কোনও কথা ফুটছে নাউত্তেজনায় শরীরের রক্তকণিকারা দাপাদাপি শুরু করেছে। ওয়েবক্যামের অবস্থানটা একটু আগেই কিঞ্চিৎ ঘুরিয়ে দিয়েছি যাতে ও দেখতে না পায় আমার পৌরুষের কাঠিন্য এখন আমার দৃঢ়মুষ্টির ভিতরথেকে থেকে প্রবলভাবে নিপীড়িত হচ্ছে নিষিদ্ধ রোমাঞ্চের আস্বাদনে। মুখের পেশীগুলো যথাসম্ভব স্থির রেখেছিও বুঝতে না পারে...
 
আমার প্রতিক্রিয়ায় বোধহয় আশ্বস্ত হল ওমুহূর্ত কয়েকের জন্য ঠোঁট টিপে কি যেন ভাবছে। দ্বিধাদ্বন্দ্বের সমস্ত চিহ্ন মুছে যাচ্ছে ওর মুখ থেকেমনকে প্রস্তুত করছে। অবশেষে... দৃঢ়সঙ্কল্পে বলতে শুরু করল,
 
"আফটার সামটাইম আই রিয়েলাইজড হোয়াট দ্য প্রবলেম ওয়াজ। অ্যাজ আই ওয়াজ লিনিং টুওয়ার্ডজ হিজ ল্যাপিআমার... আমার আঁচল সরে গিয়েছিল... অ্যাণ্ড হি ক্যুড সি অলমোস্ট মাই হোল ক্লিভেজ... ঐ ব্লাউজটা এত ছোট যে... হি স মাচ অফ দিজ টু বিগ গার্লস। ও গড হানিহিজ শর্টস ওয়াজ অ্যাট ইটস ফুল স্ট্রেচ!"
"কত বড় ছিল ওর... বালজিং?"
"হোয়াটআই মিন..."এবারে স্বাভাবিকভাবেই একটু ইতস্তত করছে ও। ওর কথার মাঝে কথা বলে খেইটা নষ্ট করে দেওয়ার জন্য নিজেকে ধমকাচ্ছিএমন সময় লজ্জামাখা গলায় উত্তর এল, "বিগার দ্যান ইয়োরস"
 
পাথরের মত মুখে চেয়ে আছি পর্দার ওপ্রান্তেআমার প্রেমিকার চোখের তারায় বিচিত্র অনুভূতিদের খেলা দেখছি। ওর ধারণাতেও নেই এইমাত্র উদ্গত কি বিশাল বিস্ফোরণকে কোনওমতে চাপা দিয়েছে আমার শরীরআমার বজ্রমুষ্টি। কেমন একটা ঘোরের মধ্যে আস্তে আস্তে ডুবে যাচ্ছে ওচোখের পাতা ভারী হয়ে এসেছেঠোঁটে কাঁপন ধরেছে তিরতিরএই শেষ মাঘেও কপালে-গলায় বিন্দু বিন্দু ঘামনাকের পাটা স্ফুরিত হচ্ছে অনবরত। একটানা ছন্দে বিরামহীন ভাবে বলে চলল,
 
"আই ডোণ্ট নো হানি হোয়াট হ্যাপেনড টু মি... মে বি আই ওয়াজ স্টোনড... ওর ঐ হিউজ বালজিং দেখে কেমন আনইজি লাগছিলশরীরটা আনচান আনচান করছিলআঁচলটা সরিয়ে যে বুবস গুলো ঢাকা দেব সে ক্ষমতাও ছিল নাযাহোক করে ল্যাপির দিকে কনসেন্ট্রেট করছিলাম... একটুপর বুঝলাম ওর অবস্থাও খারাপথেকে থেকে আমার... দিকে তাকাচ্ছে। ও নিজেও সিচুয়েশানটা বুঝেছিলতাই টেনশানটা কাটানোর জন্য জিজ্ঞেস করল আমি একটু ফ্রেঞ্চ ওয়াইন খাব কিনা... অ্যাণ্ড আই ওয়াজ লাইকওকে। তো ও ওয়াইন আনতে গেল অ্যাণ্ড আই ওয়াজ ট্রাইং ভেরি হার্ড টু ক্যাচ মাই ব্রেথ। আফটার দ্যাট ও ওয়াইনের বটল আর দুটো পেগ নিয়ে এল অ্যাণ্ড উই স্টার্টেড ড্রিংকিং। আমরা নর্ম্যাল হওয়ার চেষ্টা করছিলাম বাট ফ্রম অল দ্য টেনশান অ্যাণ্ড হিজ হিউজ... আই ওয়াজ স্টিল শেকিং আ লিটলমাই ফিংগার্স ওয়্যার শেকিং অ্যাণ্ড দেন... আই স্পিলড সাম ওয়াইন রাইট অন টপ অফ মাই বুবস! আই ওয়াজ সো এমব্যারাসড হানিআর আমি হাঁদির মত আঁচলটা না ঢেকেই বসেছিলাম তো ওয়াইন ড্রিপ করে করে আমার... ক্লিভেজে চলে এসছিলআই ডিডণ্ট নো হোয়াট টু ডু! সঞ্জীব আমার জন্য গিয়ে দৌড়ে একটা টিস্যু নিয়ে এল বাটবাট... আমাকে দিতে গিয়ে ও নিজেই সাডেনলি মুছতে স্টার্ট করলআই... ফেল্ট হিজ ফিংগার্স অন মাই ক্লিভেজ অ্যাণ্ড হি গট সো টার্নড অন দ্যাট ও... ও ওয়াইনটা আমার বুবস থেকে লিক করতে থাকল! অ্যাণ্ড আই ওয়াজ স্টানডআমার ওকে আটকানোর ক্ষমতাও ছিল না। ও আমার বুবসগুলো পাগলের মত চুষছিলটিপছিলচাটছিল... লাইক আ ম্যাড ম্যান অ্যাণ্ড দেন সাডেনলি হি বিট মি সোওও হার্ডসি"
 
মন্ত্রমুগ্ধ শিশুর মত দেখলাম আমার দয়িতার শরীরের এক অপূর্ব বিভঙ্গে হাউসকোটের বহির্ভাগ খসে পড়লজ্যামিতি-পরিমিতির নির্ভুল মাপে গড়া উদ্ধতযৌবনা নারীদেহ এখন আচ্ছাদিত সংক্ষিপ্ত একখণ্ড স্যাটিনের কাপড়ে। যৌবনের দীপ্তি ছড়িয়ে পড়ছে গোটা অঙ্গেঅপ্রত্যাশিত অভিজ্ঞতার বর্ণনায় রোমাঞ্চিত রমণীর শরীরে প্রতিটি রোমকূপ জাগ্রত। আরআর... ডান স্তনের নিটোল মসৃণ ত্বকেবহু উঁচুতেস্তনবলয়ের গণ্ডীর কাছে পুঞ্জীভূত রক্তের রঙে আঁকা একটি ছোট্ট ক্ষতচিহ্ন। আমার প্রেমিকার স্তনে তার একলা প্রেমিকের ভালবাসার দংশন-অভিজ্ঞান!
 
"আই স্ল্যাপড হিম অ্যাণ্ড হি কেম ব্যাক টু সেন্স ইম্মিডিয়েটলি... ও খুব কান্নাকাটি করছিলবারবার বলছিল যে ও এই অফিসের চাকরি ছেড়ে দেবে আর আমি যেন ওকে পারলে ক্ষমা করি একদিন। আজ আমার কাছে স্বীকারও করেছে যে ও আমায় প্রথম দিন থেকেই ভালবাসে আর সেজন্যই... আমাদের জুনিয়র ব্যাচের পরিণীতার প্রোপোজাল অ্যাকসেপ্ট করেনি। ছেলেটা খুবই ভালহি ইজ রিয়েলি আ গুড গাইবারবার বলল যে তোমার বয়ফ্রেণ্ডকে বোলো দ্যাট হি ইজ ড্যাম লাকি আর ও যেন আমাকে খারাপ না ভাবেহি ডাজন্ট ওয়ান্ট টু বি আ কাবাব মে হাড্ডি বিটুইন আস। আমি ওকে অনেক কষ্টে শান্ত করেছিশেষটায় তো ওকে অনেকক্ষণ বুকে জড়িয়ে রেখে... আই ওয়াজ ফিলিং সো সো উইয়ার্ডতুই ছাড়া আর কাউকে তো কোনওদিন এভাবে হাগ করিনি... বাট নাউ উই আর ওকেআই হোপ এভরিথিং উইল বি নর্ম্যাল বিটুইন আস হেন্সফোর্থ... এইতুই কিছু বলছিস না কেনরাগ করেছিসহানিকথা বল... কি রেঅ্যাই অন্তুকি হল??? চুপ করে আছিস কেনপ্লিজ কিছু একটা বল... আর ইউ অ্যাংগ্রি হানিআমাদের মধ্যে কিচ্ছু নেই ট্রাস্ট মিইট ওয়াজ জাস্ট অ্যান অ্যাক্সিডেণ্টনাথিং এলস..."
 
বাহ্যজ্ঞান লুপ্ত হয়েছে জানি না কতক্ষণওর শেষের কথাগুলো মনে হচ্ছিল সুদূর গ্রহান্তর থেকে ভেসে আসা কিছু অর্ধস্ফুট শব্দ। অনেক কষ্টে শরীরের সব শক্তি জড়ো করে কোনওমতে বললাম, "আই ট্রাস্ট ইউ বেবিএবারে ঘুমোতে যাইবড্ড ঘুম পাচ্ছে"তারপরেই স্কাইপে যোগ বিচ্ছিন্নঅ্যাকাউণ্ট থেকে লগ আউটল্যাপটপকে ঘুমের দেশে পাঠানো- অভ্যস্ত যান্ত্রিকতায় কয়েক লহমায় সব সম্পন্ন।
 
টলতে টলতে উঠে গেলাম লাগোয়া স্নানঘরেএকে একে ছেড়ে ফেলছি টিশার্টবারমুডা। শরীরে একটা সুতোও অবশিষ্ট নেইগোটা গা পুড়ে যাচ্ছে তাপমাত্রায়। জ্বরে নয়বিজাতীয় কামে। দুচোখ বুজে গেছেবন্ধ চোখের পাতায় পরপুরুষের সবল আলিঙ্গনে প্রবল ভাবে নিষ্পিষ্ট হচ্ছে প্রণয়িনীর কোমল তনুতীব্র পেষণে দলিত সুপক্ব পয়োভারশিকারী দাঁতের আচমকা হানায় ক্ষতবিক্ষত উন্নত স্তনবৃন্তেরা।
 
কয়েক পলবা কয়েক যুগ। কিভাবে সময়টার ব্যাখ্যা দেওয়া যায় জানি না। তারপরে সেই অনিবার্য বিস্ফোরণ। ফুঁসতে থাকা কাঠিন্যের মর্মস্থল থেকে ঝলকে ঝলকে বেরোল পৌরুষের সান্দ্র অধক্ষেপ। তরল হয়ে মিশে গেল স্নানঘরের মাটিতেআমায় কিছুক্ষণের জন্য সম্পূর্ণ নিঃস্ব করে দিয়ে। ক্লান্তিশান্তিশ্রান্তি সব একাকার। এবার পরিচ্ছন্ন হওয়ার পালা। বেরিয়ে আসার আগে ধুয়ে দিলাম স্মরগরলের শেষ বিন্দুটুকু।
 
মোবাইলের উজ্জ্বল পটভূমিতে একটি বার্তা অপেক্ষারত। "আই অ্যাম ইয়োরসওনলি ইয়োরস। ট্রাস্ট মি হানি। কল মি টুমরো আফটার ইউ রিচ। হ্যাপি জার্নি।" শেষে একটা চুম্বনোদ্যত মুখের অভিব্যক্তি।
 
দ্বিধাহীন ভাষায় টাইপ করলাম মনের কথা, "ইউ আর মাইন। ইউ অলওয়েজ উইল বি। কাণ্ট ওয়েট টু সি ইউ।"
 
...
 
ছাদের আলসে ধরে দাঁড়িয়ে আছিরাত কত হল খেয়াল নেই। মাথার উপরে নীল চন্দ্রাতপে খোদিত কালপুরুষঅনাদি-অনন্তকাল ধরে অতন্দ্র প্রহরায় রত। দূর পৃথিবীর ম্লানিমা তাকে স্পর্শ করতে পারে না।
 
ঘরে ঢুকে এলামকিছুক্ষণ পরেই পুব আকাশ লাল হয়ে উঠবেভোরের পাখিরা জানান দেবে সময় হয়েছে আমার যাওয়ার। ততক্ষণ যাহোক করে জেগে থাকি। ল্যাপটপের ডালা নামিয়ে রাখলামসময়মত ব্যাগে ভরে রাখতে হবে। চেয়ারে বসে আছি আচ্ছন্নের মতঅ্যালার্মের শব্দ কখন কানে আসে সেই ভাবনায় সচল মস্তিষ্কের একাংশ।
 
মুখের ওপর কার যেন স্পর্শকোমলভাবে ছুঁয়ে যাচ্ছে চোখের পাতাকপালের সমতলঠোঁটের কোণ। মুখের রেখায় সোহাগের মৃদু পরশ বুলিয়ে ঘুম পাড়াচ্ছে। কে ওকার অবাধ্য চুলেরা এসে ঢেকে দিল আমার দৃষ্টিচোখ মেলে দেখতে চাইছিঘন আঁধারে কিছুই ঠাহর হয় না। শুধু অনুভবে ধরা পড়ে কে যেন আলতো জড়িয়ে রয়েছেঅহর্নিশি। ঐ তো এক চিলতে আলো এসে পড়ল তার মুখে। বিস্রস্ত ঘন কেশ মুখময় এলোমেলো ছড়িয়েনিশ্চিন্তে বোজা দু'খানি চোখে খেলা করে যায় দেয়ালা।
 
“খোলা জানালার ফাঁকে আলো-ছায়া
দেখো তোমার নয়নে খেলা করে
শুধু মাধবীলতার ফুলগুলি
ঐ ঘুমের আবেশে ঢলে পড়ে”
 
কাক ডাকছে। জানলার ফাঁক গলে ঢুকে আসা ভোরের বালার্কচ্ছটায় ঘুম ভেঙে গেলস্বপ্নটাও।
[+] 1 user Likes অনঙ্গপাল's post
Like Reply
#11
।। ১০ ।।



এ এক আশ্চর্য দ্বীপ। চেনা পৃথিবীর থেকে যেন সহস্র যোজন দূরে রয়েছি। অদ্ভুত রকমের শান্ত নিস্তব্ধতা বিরাজ করছে চারিদিকে, বাতাসে বুনো গন্ধ। উঁচু-নীচু তরঙ্গায়িত ভূমির ওপর হাঁটছি, এটা কোথায়? সামনে খাড়া পাহাড় সোজা উঠে গেছে আকাশ লক্ষ্য করে, শীর্ষদেশ দেখা যায় না। উল্টো দিকে চোখ ফেরালাম। দূরে ঘন বনানীর আভাস, মাঝে বিস্তীর্ণ অধিত্যকার ব্যবধান। জনপ্রাণীর সাড়া নেই, আকাশ ঢেকে রয়েছে মেঘের আস্তরণে। কেমন মায়াময় পরিবেশ। কিন্তু আমি একা কেন? এখানে এলাম কি করে? গন্তব্যই বা কোথায়? ঐ দুর্লঙ্ঘ্য পাহাড় ডিঙোনোর সাধ্য নেই, একমাত্র উপায় জঙ্গলের মধ্যে পথ খুঁজে নেওয়া। মোহাচ্ছন্নের মত পা বাড়ালাম। জায়গাটা কেমন চেনা-চেনা অথচ ঠাহর করতে পারি না। কোথা থেকে একটা শব্দ আসছে। বড় অদ্ভুত শব্দ, সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে বাড়ছে-কমছে, কিন্তু হারিয়ে যাচ্ছে না, মিলিয়ে যাচ্ছে না বাতাসে। জঙ্গলের মধ্যে কি তবে কোনও কুহকিনীর বাস? দুরুদুরু বক্ষে আরও এগিয়ে যাই, কি এক অজানা আকর্ষণ আমায় টেনে নিয়ে যাচ্ছে মায়াবী সম্মোহনে। শব্দটা এখন স্পষ্টতর, কিন্তু তবুও ভাল করে বোঝা যায় না। যেন কারও দূরাগত অস্ফুট গোঙানি। কোন ভয়ানক লুকিয়ে আছে ঐ শ্যামলিমার অন্দরে? রহস্য ক্রমশ যত ঘনীভূত হচ্ছে, ভিতরের কৌতূহল হয়ে উঠছে তীব্রতর। জয় করার অদম্য বাসনায় এক পা এক পা করে এগিয়ে চলেছি, জঙ্গলের একেবারে সামনে এসে থমকালাম এক মুহূর্ত। যা থাকে কপালে। আমার সাহস, আমার পৌরুষই একমাত্র সম্বল। শব্দটা বাড়তে বাড়তে সমগ্র সত্তা আচ্ছন্ন করে ফেলেছে। অজানা শঙ্কায় চোখ বন্ধ,তারপর... অজানিতার গভীরে এক মরণপণ ঝাঁপ। তরু-লতা-গুল্মের আড়ালে হারিয়ে গেলাম।
 
...
 
রবিবারের সাতসকাল, মেঘেদের দৌরাত্ম্যে আধফোটা রোদ তেমন সুবিধে করতে পারছে না। সপ্তাহভর কম্পিউটারের পর্দায় মুখ গুঁজে রাখা ব্যস্ত শহর উইকেণ্ডের উদ্দাম রাতপার্টির পর এখন চাদরের ভিতর গভীর সুষুপ্তিতে আচ্ছন্ন। গুটিকয় ব্যতিক্রমের মধ্যে একজন আমি। না একটু ভুল হল, একা নই, আরও একজন রয়েছে। প্রায় কাকডাকা ভোরে এসে হাজির সে অতিথি, এখন বিছানার ওপরে অর্ধশয়ান। বিশ্রাম নয়। তার নিরাবরণ দেহের প্রতিটি বিন্দুতে চুম্বনের গভীর দাগ এঁকে দিচ্ছি, শরীরের পাহাড়-উপত্যকা-গিরিখাত-অরণ্য বেয়ে খেলা করে চলেছে তিন সপ্তাহ কর্মবিরতিতে থাকা অবাধ্য আঙুলেরা। ইচ্ছেমত পেষণ আর পীড়নের দৌরাত্ম্যে থেকে থেকে শিউরে উঠছে উপোসী নারীশরীর, প্রবল কামোত্তেজনায় দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে। কমনীয় দেহলতা বেঁকেচুরে দিকস্থিতি পরিবর্তন করছে বারংবার। স্বল্পপরিসর শয্যায় স্থানাভাব, পুরুষালি হাত দু'টো তাই বাধ্য হচ্ছে তাকে শাসন করতে। দস্যুর মত ঐ কোমল দেহবল্লরীকে আছড়ে ফেলছে বিছানায় সতর্ক যত্নে, যাতে আঘাত না লাগে। কঠিন বাহুর আলিঙ্গনের স্বাদ পেয়ে মানবী আরও বল্গাহারা, এলিয়ে দিচ্ছে নিজেকে প্রবল পুরুষের পেশীতে। রোমাঞ্চিত শরীরে স্পষ্ট অধিকতর নিষ্পেষণের আহ্বান-ইঙ্গিত। অঙ্গপ্রত্যঙ্গের বিচিত্র বিভঙ্গে সৃষ্টি হচ্ছে পুরুষের বুকে আগুন ধরানো হরেক মুদ্রা, হঠাৎ দেখলে বাৎসায়নের স্বহস্তে চিত্রিত বলে ভ্রম হয়। নীল পর্দার মায়াবী দৃশ্যপটে আজ অবধি দেখা সমস্ত অচেনা রমণীদের আবেদনও ম্লান হয়ে যায় তার কাছে। অনির্বচনীয় এ সৌন্দর্য ব্যাখ্যার অতীত। দুষ্টুমি-মাখানো মিষ্টি হাসির সাথে শরীর উপচে পড়া লাস্যের হৃদয়ভেদী সম্মেলন, বুঝি কবির কলমকেও হার মানায়।
 
“পীনপয়োধরভারভরেণ হরিং পরিরভ্য়সরাগং”
 
দীর্ঘ অদর্শনের পর মিলনের প্রত্যাশায় উন্মুখ নারী আহ্লাদী স্তনভার মিশিয়ে দিচ্ছে দয়িতের আলিঙ্গনে। আপনা থেকেই মথিত হতে চাইছে, রভস আবেশে চোখদুটি অর্ধনিমীলিত। কানে কানে সোহাগ-বার্তা, আরও নিবিড়ভাবে পাওয়ার আমন্ত্রণ।
 
“কাপি কপোলতলেমিলিতা লপিতুং কিমপি শ্রুতিমূলে।
চারু চুচুম্ব নিতম্ববতী দয়িতং পুরকৈরনুকূলে”
 
উচ্ছল আবেগভরে হাত টেনে নিয়ে গুরুনিতম্বে স্থাপন করছে নির্লজ্জা, পরক্ষণেই প্রবল মর্দনে বিহ্বল গালে লজ্জারুণ আভা। নিষিদ্ধ গহ্বরের প্রবেশদ্বারে প্রেমিক-আঙুলের অনুপ্রবেশের চেষ্টা ধরা পড়ামাত্র টানা টানা চোখ পাকিয়ে ছদ্ম শাসনের ভঙ্গি, একইসাথে পিছনদিকে নরম পাছা বিভঙ্গে দুলিয়ে গোপনে সম্মতি দেওয়া। সংকীর্ণ সে গুহায় মধ্যমার অবাধ্য যাতায়াতে উত্যক্ত মুক্তকেশী ছটফটিয়ে ওঠে বলিষ্ঠ বাহুপাশের মধ্যে। কোমল তনুর সঞ্চালনে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে স্বাধীন নারী মুখ ফেরায়। ক্ষণিকের অপেক্ষা, তারপরই এলিয়ে পড়ে প্রেমাস্পদের গায়ে। সুগঠিত দুই উরুতে ভর দিয়ে প্রতিস্থাপন করে আপন দেহ, কঠিন পৌরুষে মিশিয়ে দেয় সুডৌল নিতম্ব। লৌহকাঠিন্যের নির্মম পরশে থির থির কেঁপে ওঠে, অভিভূত দুই চোখ বুজে আসে আপনা থেকে। সহজাত আকাঙ্ক্ষায়  তাকে জড়িয়ে ধরি অনেক যত্নে, কামনায়, তৃপ্তিতে। বিপরীত দেয়ালের আয়নাতে ফুটে ওঠে প্রেমঘন দুই নরনারীর চিত্র। অবাক বিস্ময়ে চেয়ে দেখি কি অপরূপ অবহেলায় মেঘবরণ কেশ মরাল গ্রীবার একদিকে ঝর্নার মত নেমে গিয়েছে, সলাজে ঢেকেছে সুউচ্চ গিরিযুগল। পুরোটা নয়, আংশিক, স্বাভাবিক কারণেই। বন্ধ চোখের পাতায় মিলনের হরষ, আরও মিলনের পিয়াস; মেঘ-রোদ্দুরের লুকোচুরি। নিঃশ্বাস থমকে যায়। এ কি স্বপ্ন, না প্রখর বাস্তব?
 
আধুনিক পাশ্চাত্য কামসূত্রে সঙ্গমের আগে দীর্ঘ সোহাগবিনিময়ের নিদান দেওয়া রয়েছে। প্রচলিত লবজে 'ফোরপ্লে''মহাজ্ঞানী মহাজন যে পথে করে গমন...'তাঁদের দেখানো পথে চলে ঠকিনি মোটেই, কিন্তু এখন সেটা মেনে চলা...  যৌথ আলিঙ্গনে দুজনের শরীরে চকমকির ঘর্ষণে জ্বলে ওঠা আগুন নিবিড়তর নৈকট্যের প্ররোচনায় দাবানলের মত ছড়িয়ে পড়েছে। বদ্ধ ঘরে একে অন্যের উষ্ণতার সান্নিধ্যে এসে দুজনেরই শরীরে ঘামের রেখা, ওর তীব্র ফেরোমোন-ঘ্রাণের সাথে স্বেদগন্ধ মিশে আমায় বিবশ করে তুলছে... নাক ডুবিয়ে দিচ্ছি অনাবৃত ঘাড়ে, কাঁধে। কামনাবহ্নির জ্বালায় ছটফট করে উঠছে ও, অধর স্ফুরিত, ঘন ঘন শ্বাসে তীব্র হল্কা। অজানা প্রতিবর্তে মদিরাক্ষী ফিরে তাকাল, চার চোখে জ্বলে উঠল মদনাগুন। কোনও কথা হল না, শব্দ খরচ হল না একটিও, দৃষ্টির নীরব সম্মতিতে নরনারী মেতে উঠল আদিম খেলায়। দুই হাতের বেষ্টনীতে ওর ঈষৎ মেদযুক্ত কটিদেশ, সবল এক টানে প্রেয়সী বিছানায় শায়িতা... চিরাচরিত ইভের বিভঙ্গে, দুই জঙ্ঘা প্রসারিত করে আহ্বান জানাল ক্রমশ কঠিনতর হয়ে উঠতে থাকা আদমকে। প্রকৃতির প্রাচীনতম দ্বৈতযুদ্ধ, একইসাথে দ্বন্দ্বে-মিলনে ভরপুর। সাড়া দিতে একমুহূর্তও দেরি হল না, ফুঁসতে থাকা কামনার সাপ উদ্যত ফণা তুলে প্রবেশ করল তৃণাচ্ছাদিত গহ্বরে। কর্ষণ করছে জমি। অর্ধস্ফুট শীৎকার ভেসে এল... ব্যথার নয়, পুলকের। কর্ষণরত হলকে নিজের আরও গভীরে নিতে চাওয়ার আকুতিতে হলধরকে উত্তেজিত করার অস্ত্র। অব্যর্থ শরে বিদ্ধ হয়েছে পুরুষ, প্রবল বেগে কর্ষণ শুরু, সুতীব্র ঘর্ষণে তোলপাড় হচ্ছে দু'টি শরীর। আনন্দে-আবেগে-শিহরণের আতিশয্যে জান্তব শব্দে মুখর মানব-মানবী, ঘরের প্রতিটি কোণ ভরে উঠছে বিচিত্র ধ্বনিতে। মাটির গহিনে জেগে উঠেছে সুপ্ত আগ্নেয়গিরি, খুলে গেছে লাভার উৎসমুখ।
 
গলন্ত লাভাস্রোত ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে চরাচর। সমস্ত জমি একে একে ডুবে গেল, জন্ম নিল দিগন্তবিস্তৃত মহাসমুদ্র। সে সাগরের তলায় কোনও অচিন খনিতে রাখা আছে অমৃতভাণ্ড। কেউ তার সন্ধান পায়, অনেকে পায় না। না মিললে কোনও ক্ষতি নেই, পেলে সার্থক হয় জীবন। অমৃতের মাহাত্ম্য অবশ্য না পেলেও ক্ষুণ্ণ হয় না এতটুকু, বারবার তার সন্ধানে ডুব দেয় পুরুষ। আমিও এর ব্যতিক্রম নেই। অমৃতভাণ্ডের হদিস অবশ্য দীর্ঘ অভিজ্ঞতায় অনেকবার পেয়েছি, তবু আরও আরও পেতে সাধ যায়। অমৃতে অরুচি, সে বোধহয় কেবল মূর্খের। উদ্যমী পুরুষ অমৃতলাভের বাসনায় প্রাণপাত করে, করেই চলে, একসময় তার উপলব্ধি জাগে- এর চেয়েও বড় আকর্ষণ অসীম সাগরের অজানা প্রান্তসমূহ আবিষ্কার। গন্তব্যের চাইতেও বেশি টান অ্যাডভেঞ্চারের নেশায়।
 
সাগর সেঁচার মুহূর্তে এতসব মাথায় থাকে না। শুধু প্রবল মন্থনে রত হই অবিরত। অমৃত উঠল না হলাহল, সে হিসেব মনের কোণে স্থান পায় কই? সেখানে শুধু একজনের শরীর ভেসে ওঠে। প্রবল আশ্লেষে সে দাঁতে চেপে ধরে নিজের অধর, পরমুহূর্তে শরীরজুড়ে প্রবল ভূমিকম্পের অভিঘাতে কেঁপে ওঠে পক্ববিম্বোষ্ঠ।
 
“পীনপয়োধরপরিসরমর্দ্দন নির্দয়হৃদয়কবাটং”
 
পুরুষদেহের নীচে নিষ্পিষ্ট হতে থাকে কোমল গুরুবক্ষ, নিজ হৃদস্পন্দনের চাঞ্চল্য চারিয়ে দেয় প্রেমিকের বুকে। রমিত হওয়ার তালে তালে দুলতে থাকে বুকের ওপরে লুটিয়ে থাকা হার, যা এখন ওর একমাত্র অঙ্গাভরণ। প্রণয়ানুরাগে অনুরক্তা নারী কামনা করে প্রবলতর বিদলন, স্বতপ্রবৃত্ত হয়ে পুরুষের হাত টেনে নেয় পেলব দুই পাহাড়চুড়োয়, নির্দয় পেষণের অভিলাষে।
 
“নখলিখিতঘনস্তনভারং”
 
নির্মম নখের আঘাতপ্রত্যাশী স্তন মথিত হতে থাকে ভিতর ভিতর, জেগে ওঠে উন্মুখ বৃন্তেরা। নিজেকে সামলাতে পারি না আর, লোভী দাঁতের আক্রমণে ছিন্নভিন্ন করি সুউচ্চ পার্বত্যভূমির মসৃণতা। আঙুলের মাঝে উৎপীড়ন চলে সুদৃঢ় বোঁটার ওপরে, তারা দৃঢ়তর হয়ে নিজেদের ব্যাকুল সম্মতি জানায়। ও হিসিয়ে ওঠে, দশনাঘাতে ভরিয়ে দেয় আমার বলিষ্ঠ পুরোবাহু, কাঁধ, বুকের কঠিন পেশী। মিলন রভসে আপাদমস্তক শিহরিত হতে হতে উত্তেজিত রমণী তুলে ধরে কলসাকৃতি নিবিড় নিতম্ব, সবল সুগঠিত জানুদ্বয় অজগরের মত পেঁচিয়ে নেয় প্রেমাস্পদের কোমর, পাকে পাকে বেষ্টনীতে আকৃষ্ট করে রহস্যাবৃত কৃষ্ণগহ্বরের আরও অভ্যন্তরে। কর্ষণের বেগ বেড়ে চলে, সেই ছন্দে বেড়ে চলে মানব-মানবীর হৃদস্পন্দন। বহু দিনের উপবাসী দুটি দেহ একে অন্যকে ভরিয়ে দেয় আদরে-সোহাগে-যন্ত্রণায়। বহির্বিশ্বের বাকি সব বিস্মৃত এখন। সত্যি, তা কেবল এই দুর্নিবার বাঁধভাঙা সঙ্গম।
 
সময় কেটে যায়, মিনিট থেকে ঘণ্টা। দিন থেকে মাস। বছর থেকে যুগ। যুগের পর যুগ আদিম মানব আর মানবী এভাবেই মিলিত হয়ে আসছে। তেজোদীপ্ত নক্ষত্র ব্যাখ্যাতীত কোনও কারণে অসীম গতিতে ধাবিত হয় মহাজাগতিক ব্ল্যাকহোলের কন্দরের দিকে, মহাকর্ষ বলের প্রণোদনায়। বিজ্ঞান সে বলের সন্ধান পেয়েছে বহুকাল, কিন্তু কি তার উৎস? এখনও সে উত্তর লুকিয়ে কালের গর্ভে। নর-নারীর আদিমতম আকর্ষণের কারণই বা কি? কেউ জানে না। হয়তো সে উত্তর জানা যাবে না আদৌ। হয়তো কোনও উত্তর নেই। হয়তো প্রশ্নটাই অর্থহীন, শাশ্বত শুধু সেই... অনস্বীকার্য, অনিবার্য আকর্ষণ। যে রসায়নের কোনও ক্ষয় নেই, লয় নেই, নেই কোনও ব্যাখা।
 
সময়ের প্রচলিত ধারণার বাইরে চরাচরব্যাপী অসীমতায় এক জীবন কাটিয়ে আবার ফেরত আসি আমরা রুক্ষ বাস্তবের মাটিতে। নিজেদের আবিষ্কার করি একে অপরের বাহুবন্ধনে। তীব্রতম গতিতে আমার পৌরুষ সেচন করছে ওর মন্থনপাত্র। উথাল পাথাল করা আবেগে নারীযোনি নিজের ভিতরে পুরুষ-কাঠিন্যকে ধারণ করে চলে, উদ্দীপিত করে প্রবলতর সিঞ্চনে। অপারবিস্তৃত মহাসমুদ্রে দু'জনে ভেসে চলেছি, সহসা... অনতিদূরে দেখা মেলে বহুআকাঙ্ক্ষিত অমৃতভাণ্ডের। দীর্ঘ অদর্শন সঞ্জাত অভিমানে আকুল প্রেমীযুগল উন্মত্ত হয়ে ওঠে, প্রবল প্রতিযোগিতায় রত হয়। দু'জনেই চায় মিলনসাথীটিকে সে অমৃতধারায় স্নান করাতে, তার আকণ্ঠ পিপাসা মেটাতে। দ্বন্দ্ব আর মিলনের যৌথ উৎসবে প্রবলভাবে আন্দোলিত হতে থাকে আমার এককশয্যার খাট। তীব্র শীৎকার ধ্বনিতে ঘর ভরে যায়। অবশেষে এল মাহেন্দ্রক্ষণ।
 
শৃঙ্গারশীর্ষে চরম সুখের আকর। সে সুখের স্বাদ নিতে নিতে লুপ্ত হয় আমাদের বাহ্যজ্ঞান, তীব্র নিষ্পেষণে দলিত মথিত করি পরস্পরকে। নারীর রাগমোচনের আভাস পেয়ে উদ্দাম পৌরুষ আর ধরে রাখতে পারে না নিজেকে, সমস্ত সত্তা উজাড় করে দেয় বাঁধভাঙা স্খলনে। তার উষ্ণতার ভাপে ছটফটিয়ে ওঠে মানবীশরীর, পাগলিনীর মত বইতে থাকে। এতদিনকার জমানো স্রোত ভাসিয়ে নিয়ে যায় খাটের চাদর, বেডকভার। শেষবিন্দুটুকু নিংড়ে দিতে থাকে প্রেমিকের রেতঃস্পর্শে। আঃ, অবশেষে মুক্তি। ভালবাসার তীব্র প্রকাশে অবসন্ন হতে থাকে দু'টি শরীর। আলগোছে আলিঙ্গনে জড়িয়ে থাকে পরস্পর। পরম মমতায় শ্রান্ত পুরুষের মাথা নিজের বুকের মাঝে টেনে নেয় চিরকালীন নারী।
 
ধীরে ধীরে সমে ফেরে রতিতৃপ্ত প্রণয়ীযুগল, অমোঘ নিয়মে একে অপরের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়।


(পরবর্তী পোস্টে বাকি অংশ...)
[+] 2 users Like অনঙ্গপাল's post
Like Reply
#12
রমণ শেষে ক্লান্ত দু’টি দেহ শুয়ে আছে পাশাপাশি। যেন বজ্রপাতে আধপোড়া দু’খানা গাছ। কারওর মুখে কোনও কথা নেই। যে ঘর একটু আগেও ভরে ছিল তীব্র শীৎকারে, এখন সেখানে বিরাজমান অখণ্ড নীরবতাযদিও দু’জনেই জানি আমাদের ঠোঁটের কাছে ভিড় করে আছে না-বলা হাজারো শব্দের দল। নিস্তব্ধতার মাঝে সে অব্যক্ত কথারা ইথার তরঙ্গ বেয়ে পরস্পরের কাছে গোপন বার্তা পৌঁছে দেয়। সঙ্গমশেষে কেবল শরীরেরা বিচ্ছিন্ন হয়েছে, দু’জনের হৃদয়ের যোগাযোগ এখনও অটুট। মিলন-মুহূর্তে চোখে চোখে যে নীরব কথোপকথন তা শব্দের রূপ ধরে এক না এক সময় বাঙ্ময় হয়ে উঠবে ভবিষ্যতে। সেই কঠিন প্রহরের মানসিক প্রস্তুতিতে ব্যস্ত উভয় পক্ষ, বোধহয় এই মায়াবী সকাল শুরুর অনেক আগে থেকে।
 
পরের কথা পরে ভাবা যাবে, আপাতত এই মধুর বর্তমানকে চুটিয়ে উপভোগ করার পালা। পাশ ফিরে দেখলাম ডানহাত আড়াআড়ি ভাঁজ করে তার ওপর মাথা রেখে ও শুয়ে আছে। চোখদু’টো বোজা, ঈষৎ নিদ্রালু ভাব। হৃদস্পন্দনের গতি এখনও পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়নি, উত্থিত দুই বুক নিঃশ্বাসের তালে কিঞ্চিৎ দ্রুত ওঠানামা করছে। দীর্ঘ উপবাসভঙ্গের পর এমন আগ্রাসী মিলনের তাড়সে উত্তেজনার প্রশমন হতে সময় নিচ্ছে সামান্য বেশি। ঋজু, উন্নত দুই বৃন্তে তারই আভাস। দুষ্টুমির ইচ্ছে জাগল, বাঁদিকের বোঁটায় আঙুল ছুঁইয়েছি, আলতো করে এক মোচড়। নারীদেহে মৃদু শিহরণ। আবারও, এবারে আগের থেকে বেশ খানিকটা জোরে। ত্রস্ত শরীরে হিল্লোল, সাথে মৃদু ঝংকার।
 
“উম্মম্ম কি হচ্ছে নটি বয়?”
 
গলায় যত না বিরক্তি তার চেয়ে অনেকখানি প্রশ্রয়। পরবর্তী আক্রমণ ডান দিকে। কোনও এক অজ্ঞাত কারণে দুই স্তনবৃন্তের মধ্যে এটি একটু বেশি পুরুষ্টু। তার পূর্ণ সদ্ব্যবহার করল আমার আঙুলেরা। এবার ঝংকারের মাত্রা একপর্দা চড়ায়।
 
“অ্যাইই মার খাবি কিন্তু!”
 
চোখ অবশ্য যথারীতি বন্ধই রইল, প্রশ্রয়ের অনুপাতও কমেছে বলে মনে হল না। এরকম হলে তো সাহসের মাত্রা বাড়বেই। এবার তাই যৌথ আক্রমণ চলল দু’দিকের বাদামি আঙুরে। আর শুধু মোচড়ানো নয়, বেশ জোরে টিপে দিয়েছি। সাথে সাথে ঝেঁঝেঁ উঠেছে বামাকণ্ঠ।
 
“কি হচ্ছেটা কি???”
 
চোখও খুলেছে, দৃষ্টিতে রাগের অভিব্যক্তি ফুটিয়ে ওপাশ ফিরে শুলো। অভিজ্ঞ প্রেমিক আমি, এই রাগ যে নির্ভেজাল কপট তা আমার থেকে ভাল কেউ জানে না। তবে শোওয়ার দিক পরিবর্তন করায় দুই বিপুল স্তন আপাতত আমার নাগালের সামান্য বাইরে। কিন্তু হায় অবলা নারী! বিধাতা যে তোমায় দু’হাত ভরে এত দিয়েছেন! সারা অঙ্গে রূপের ছড়াছড়ি, সে কি বিফলে যাবে? হাতের কাছেই ওর গুরুনিতম্বের শোভা। উলটোনো কলসির মত শ্রোণিদেশ খাটের ওপরে এলিয়ে রয়েছে রাজেন্দ্রানীর উদ্ধত গরিমায়। অবাধ্যতা করতে গিয়ে সহসা থমকে থেমে গিয়েছে আঙুলগুলো। কি অপরূপ এই দৃশ্য! লোভাতুর দৃষ্টি তাকিয়ে রইল বেশ খানিকক্ষণ, নীরবে পান করল অনির্বচনীয় সৌন্দর্য। কয়েক সেকেণ্ডের ব্যাপার অবশ্য। কমনীয় পশ্চাদ্দেশে চিমটি অনুভূত হতেই ফের নারীর তিরস্কার।
 
“অ্যাইইই!!! খুব বাড় বেড়েছে না?”
 
তার কথায় পূর্ণ সমর্থন জানিয়ে উপর্যুপরি আরও গোটাকয়েক চিমটি সুপ্রশস্ত নিতম্বদেশের বিভিন্ন প্রান্তে। রমণী এবার কাঁদোকাঁদো।
 
“উঁউঁউঁ হানি ইট হার্টস!”
 
পূর্বঅভিজ্ঞতা বলে এসমস্ত ক্ষেত্রে নারীশরীরকে নির্যাতনের হাত থেকে নিষ্কৃতি দেওয়ার একটা ভাল দিক রয়েছে। কিছুক্ষণের জন্য সে কল্পতরু হয়ে যায়, তখন মনোগত সুপ্ত বাসনা প্রকাশ করলে সুফল মিললেও মিলতে পারে। মনের ভিতরে জমানো বহুদিনকার নিষিদ্ধ ইচ্ছেটা চাগাড় দিয়ে উঠল। আমার পৌরুষও যথোচিত ভঙ্গিতে জানান দিল তার সম্মতি। ওর নিরাবরণ পিঠের আরেকটু কাছে এগিয়ে গেলাম। সদ্যোত্থিত পুরুষাঙ্গ স্বাভাবিক নিয়মেই হাল্কা ধাক্কা মেরেছে নিতম্বিনীর পিছনে। পরিচিত স্পর্শে সচকিত ও, গলায় সামান্য খুশির আভাস, সম্ভবত এত দ্রুত আমার ‘জেগে ওঠা' আশা করেনি।
 
“উম্মম্ম কি চাই?”
 
নীরব রইলাম, তৎপর হল আমার আঙুলেরা। না, দুষ্টুমি করতে নয়। মিলন-পরবর্তী বিশ্রম্ভালাপের সময়ে (ওর ভাষায়  যা ‘পিলো-টক’) ভাবের আদানপ্রদানের জন্য একপ্রকার যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করি আমরা। একে অন্যের শরীরের অন্তরঙ্গ জায়গায় আঙুল দিয়ে লিখে নিজের মনের কথা প্রকাশ করা। নিতান্ত খেলাচ্ছলেই আবিষ্কার, হয়তো পৃথিবীর আরও অনেক প্রেমিকযুগলের মত।
 
প্রথমে একটু সমস্যা হলেও দীর্ঘদিনের চর্চার অভ্যাসে আর একে অন্যের মনের কথা পড়তে পারার সৌজন্যে পাঠোদ্ধারে এখন কোনও অসুবিধে হয় না। বিশেষত ও আমার থেকেও দড় এই ব্যাপারে। নিঃসঙ্কোচে লিখে যাই মনের গোপনে জমানো বার্তা। উলটোদিকে ঘুরে থাকা অবস্থাতেই ও আগ্রহভরে পড়তে থাকে আপনমনে। বার্তাপ্রেরণ শেষ হতে না হতেই বিস্ময়ে ফেটে পড়ে গুরুনিতম্বিনী।
 
“হোয়ায়ায়ায়ায়াট!!! ইউ ওয়ান্না ফাক মাই অ্যা...”
 
এমন আকস্মিক চাহিদায় অভিভূত ও, হয়তো সে কারণে বা সহজাত লজ্জাবশে কথাটা শেষ করতে পারে না আর। নির্বাক তাকিয়ে থাকে আমার মুখের দিকে, পিছন ফিরে... বিস্ময়-লজ্জা-ভর্ৎসনার মিশ্র ব্যঞ্জনা খেলে যায় ওর চোখে। বহুদিন আগে পায়ুমৈথুনের বাসনা প্রকাশ করায় বকুনি খেতে হয়েছিল। এত বছর পরে আবার সেই অনুরোধ আসতে পারে এ বোধকরি ওর কল্পনারও অতীত। প্রতিক্রিয়া আসে না কোনও, নীরবে শয্যাত্যাগ করে উঠে যায় স্নানঘরের দিকে। পিছন থেকে ওর গজগমনের দিকে নিশ্চুপে চেয়ে থাকি। প্রতি পদক্ষেপের সাথে দুলতে থাকা শ্রোণিভার কেঁপে কেঁপে উঠছে, অনাবৃত নরম পাছা অপরূপ বিভঙ্গে নেচে চলে নৃত্যপটীয়সীর হাঁটার ছন্দে। কলেজজীবন অবধি ভরতনাট্যম শিখেছিল, এখনও তার প্রভাব দৃশ্যমান। অজান্তেই দীর্ঘশ্বাস পড়ে... হায় নিবিড়নিতম্বিনী, যদি জানতে!
স্নানঘর থেকে বারিধারার মৃদু শব্দ ভেসে আসে। চিত হয়ে শুই, দৃষ্টি সিলিং-এর দিকে। মন ভেসে চলে মেঘেদের ওপর দিয়ে... সত্যি, সকালটা যেন স্বপ্নের মত কাটছে। ভোরবেলা মেসেজের রিনিঠিনি শব্দে ঘুম ভেঙে গেছিল, ডিজিটাল ঘড়ির সময় কিছুক্ষণ হল পাঁচের ঘর ছাড়িয়েছে। চেনা নম্বর থেকে বার্তা।
 
“জাস্ট গট আপ, উইল রিচ ইয়োর প্লেস ইন অলমোস্ট ফর্টি ফাইভ মিনিটস”
 
ঘুমচোখ রগড়ে ভাল করে পড়লাম আরেকবার। সবে তো উঠেছে, পঁয়তাল্লিশ মিনিটের মধ্যে কি করে আসবে কে জানে! রেডি হতেই কিছু না হোক আধ ঘণ্টা, তারপর এতটা পথ আসা... ক্যাব ধরলে অন্তত কুড়ি মিনিট, কিন্তু এত ভোরে সেই ঝুঁকি নেবে না জানি, বাসেই আসবে। সেক্ষেত্রে আধ ঘণ্টার কমে কোনওমতেই... ভাবনার মাঝে ছেদ, আরও একটা বার্তার আগমনধ্বনি।
 
“প্লিজ ব্রাশ ইয়োর টিথ ইম্মিডিয়েটলি, প্লিজ”
 
কি যে সব হচ্ছে পাঁচসকালে! যাই হোক, মহারানীর হুকুম যখন, তামিল করা ছাড়া গতি নেই। শয্যাত্যাগ করার আগে সহজাত আলস্যে আরও এক প্রস্থ গড়িয়ে নিই... এই রে, সাড়ে পাঁচটা বেজে গেছে! ঘুমচোখে দাঁত মাজছি, ভয়ে ভয়ে একটা চোখ রয়েছে ঘড়ির দিকে, এসে পড়লেই মুশকিল। ঘ্যানরঘ্যানর শুরু হয়ে যাবে, এতদিন বিরহযন্ত্রণার পর প্রথম দেখার আমেজটাই তখন মাটি। যাক, মুখ ধোওয়া পর্ব শেষ, অন্তত গালাগাল খেতে হবে না এই নিশ্চিন্তিতে খাটে এসে ঝিমোনোর উদ্যোগ করছি, কলিং বেলের সুমধুর ঘণ্টি!
 
এসে গেছে! এত তাড়াতাড়ি! কিভাবে?
 
দরজা খুলতেই টের পেলাম, কিভাবে। যে মেয়ে ভোরবেলা উঠেই রোজ স্নান করে, সুসজ্জিত না হয়ে সচরাচর বেরোতে চায় না বাড়ির বাইরে, নিখুঁত প্রসাধনের প্রতি যার সদাসতর্ক দৃষ্টি... সে দাঁড়িয়ে আছে সামনে, না কোনও প্রসাধন, না সাজের ঘটা। অবাধ্য চুলগুলোও কেমন রুক্ষ, হাওয়ায় উড়ছে এলোমেলো, নির্ঘাত চান করেনি! পরনে একটা অযত্নের টিশার্ট আর জিনস, কাঁধে ঢাউস ব্যাগ... বোধহয় হাতের কাছে যা পেয়েছে তাই গলিয়েই চলে এসেছে। তাও যে কি অপরূপা লাগে!
 
পুরোটা লক্ষ্য করতে বড়জোর দু’ থেকে তিন সেকেণ্ড সময় পেয়েছিলাম। তারমধ্যেই অভিমানিনী এসে ঝাঁপিয়ে পড়েছে বুকে। চমকের পর চমক! স্পষ্ট বুঝলাম ভিতরে কোনও অন্তর্বাস নেই, নিবিড় আলিঙ্গনে আমার বুকে পিষ্ট হতে থাকা ওর কোমল স্তন আর ভোরের শীতল হাওয়ার স্পর্শে তীক্ষ্ণমুখী বোঁটারা সে কথাই জানান দিল।
 
সে মারাত্মক আলিঙ্গন থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার সুযোগ হয়েছে মাত্র কিছু মিনিট আগে। মাঝের কয়েকটা ঘণ্টা এখন শুধু সুখস্মৃতি। স্মৃতির ভাঁড়ারে ফের ডুব দিলাম। রোমন্থন করছি। শরীর-মন ফিরে যেতে চাইছে, ফিরে পেতে চাইছে ঐ মুহূর্তগুলো...
 
“অ্যাই, চান করবি?”
 
চটকাটা ভেঙে গেল। স্নানঘরের দরজায় দাঁড়িয়ে ও। ভিজে চুল থেকে, শরীরের সমস্ত রেখা থেকে চুঁইয়ে পড়ছে জলের ধারা। দরজাটা আধেক খোলা, তবু সেই পরিসরেই যেটুকু দেখা যাচ্ছে, যে কোনও পুরুষের বুকে ঝড় উঠবে। মাদকতাময় বিভঙ্গে এক পায়ে ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে, পীনোন্নত স্তন সিক্ত হয়ে আরও মোহময়ী করে তুলেছে ওকে। দু’চোখে খেলা করছে ফের জেগে উঠতে থাকা কামনার বহ্নি। সারা শরীর জুড়ে কামনার ঢল, অমোঘ আকর্ষণে হাতছানি দিচ্ছে নিজস্ব পুরুষকে। মাত্র একবারের মিলন এ নারীর ক্ষুধা বাড়িয়ে তুলেছে শতগুণ, সর্বগ্রাসী চাহনিতে পুড়িয়ে চলেছে আমার সর্বাঙ্গ। আপনা হতেই কঠিন থেকে কঠিনতর হয়ে উঠল উত্থিত পৌরুষের ধ্বজা।
 
“উম্মম্ম অ্যাই হানি...”
 
দ্বিতীয়বার আহ্বানের প্রয়োজন ছিল না কোনও, লাফ দিয়ে উঠে পড়লাম। জীবনে গুটিকয়বার এই বিরল সৌভাগ্য হয়েছে, আজই যে আবার হবে কে জানত! সত্যি এই সকালটা যেন শেষ না হয় কোনওদিন। স্নানঘরে ঢুকে দেখি প্রেয়সী চুলে শ্যাম্পু ঘষছেন, দুই হাত মাথার ওপর তোলা। এমন ভঙ্গিতে গুরুস্তনীদের কেমন লাগে অভিজ্ঞব্যক্তি মাত্রেই জানেন... যাঁরা দেখেননি তাঁরা কল্পনাও করতে পারবেন না সে অনির্বচনীয় অনুভূতি। বহুজাতিক মহার্ঘ্য কেশপ্রসাধনীর সুরভিতে আমোদিত বাথরুমের চৌহদ্দি, আর অনন্যভঙ্গিমায় দাঁড়িয়ে থাকা ঐ সুন্দরী। চূর্ণকুন্তল অবহেলায় লেপটে আছে ঘাড়ে, বঙ্কিম গ্রীবায়, গালের নরম জমিতে... কবোষ্ণ জলের স্পর্শে ফুটে থাকা বৃন্তশোভা... জলের স্বচ্ছ আস্তরণের চাদরে ঢাকা নগ্নিকার প্রতি রোমকূপে রোমাঞ্চের ছোঁয়া... হঠাৎ ভুলে গেলাম কাকে দেখছি। এ কি সাগরের অতল নীল জলের নীচ থেকে উঠে আসা কোনও জলপরী, না আমার বিভ্রম? উত্থিত লিঙ্গ আরও তীব্র আকার ধারণ করেছে, অনুভূমিকের ওপরের পর্যায়ে এখন তার অবস্থান। প্রেয়সীর চোখ আলতো ভাবে ছুঁয়ে গেল তাকে, তার দুর্বোধ্য দৃষ্টিতে কৌতুকের ঝিলিক। রমণী এখনও নীরব। আমন্ত্রণের অপেক্ষায় কাজ কি, যখন নারীর গোটা শরীর বাঙ্ময় হয়ে উঠে আহ্বান জানাচ্ছে? ধীর নিশ্চিত পায়ে এগিয়ে গেলাম তার দিকে, সেও বুঝি এর প্রতীক্ষাতেই ছিল। বিনা বাক্যব্যয়ে আশ্লেষে আবদ্ধ হল দুই নরনারী, মেতে উঠছে কামকেলিতে। শাওয়ারের ঝরনাতলায় ঈষদুষ্ণ জলের আঁচে উত্তপ্ত হচ্ছে আলিঙ্গন। পুরুষের ভালবাসার স্পর্শে আর বারিধারার প্ররোচনায় সিক্ততর হয়ে উঠছে নারী। দয়িতের নবোত্থানকে দেখছে মুগ্ধনীরব দৃষ্টিতে। হাতে নিয়ে বোঝার চেষ্টা করল দৈর্ঘ্য-প্রস্থ, চোখেমুখে তৃপ্তির সাথে ফুটে উঠল তারিফ। দু’জনেই বুঝেছি স্নানঘরের অন্দরে ঘটে যাওয়া এ-ই আমার সর্বোৎকৃষ্ট উত্থান। ওর চোখে তাকালাম, স্পষ্ট ইশারা গভীর থেকে আরও গভীরে যাওয়ার। কালক্ষেপ না করে প্রোথিত করছি নিজেকে ওর উর্বর ভূমিতে, অস্ফুট শীৎকারে কেঁপে উঠল একবার। পুনর্মিলনের আবেশে মদির দু’চোখ বোজা, স্নানঘরের ভেজা দেয়ালে চেপে ধরেছে নিজের পিঠ, এবারে প্রত্যাশা গাঢ়তর মন্থনের।
 
রতিসুখসারে গতমভিসারে মদনমনোহরবেশম্
ন কুরু নিতম্বিনি গমনবিলম্বনমনুসর তং হৃদয়েশম্”
 
অস্থির হাতে নিষ্পেষিত করছি উন্নত দুই স্তন, রমণের গতিবেগ ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাচ্ছে। না, এত দ্রুত নয়, এবারের সঙ্গম হবে আরও দীর্ঘ, আরও মধুর। নিবিড়তর মিলনের অভীপ্সায় হারিয়ে যাচ্ছি মানবীর দেহাভ্যন্তরে, মিশিয়ে দিচ্ছি নিজেকে ওর শরীরের প্রতিটি তন্তুতে, প্রতিটি কোষে। অবগাহন করছি আপন নারীর কানায় কানায় ভরা দেহপাত্রে। এখন সিনানের পালা।
 
“পিপি”
“উঁউঁ?”
“এই পিপি”
“উম্মম্ম কি???”, মিলনের আবেশে রসভঙ্গের আশঙ্কায় ওর গলায় প্রচ্ছন্ন বিরক্তি, চোখ তখনও বুজে।
 
বিক্ষিপ্ত মনকে অনেক কষ্টেও বাগ মানাতে পারলাম না, অবাধ্য প্রশ্নটা ছিটকে বেরিয়ে এল...
 
“ওরটা কি এর থেকেও বড় ছিল?”
 
সামান্যকটা শব্দ উচ্চারণ করতে গিয়েও গলাটা শেষদিকে কেমন কেঁপে গেল, তার সঙ্গেই টের পেলাম প্রশ্নের সাথে সাথে আমার উত্থিত পৌরুষ আরেকটু দৃঢ়, আরেকটু কঠিন হয়ে উঠল ওর নরম আতপ্ত গভীরে।
 
বিস্ফারিত নয়নে ও তাকিয়ে আছে আমার দিকে, যেন ওর চোখের তারায় কোনও পরপুরুষের প্রতিবিম্ব!
[+] 2 users Like অনঙ্গপাল's post
Like Reply
#13
।। ১১ ।।



জীবনে এমন কিছু মুহূর্ত আসে যখন সামান্য একটা ভুলের জন্য চারপাশটা ওলটপালট হয়ে যায়। ছোট্ট একটা কথা, চোখের সামান্য ইশারা, অবহেলায় মুখ ঘুরিয়ে নেওয়া- বদলে দিতে পারে অনেক কিছু। ক্ষণিকের প্রভাব কি সুদূরপ্রসারী! অথচ ঘটনাটা যখন ঘটছে ঠিক সেইসময় কিন্তু আঁচও পাওয়া যায় না তার। বোঝা যায় না কি হতে চলেছে এর ফলশ্রুতি। আর পাঁচটা সাধারণ মুহূর্ত থেকে তাকে আলাদা করে চিনে নেওয়া দায়। ঘটমান বর্তমান থেকে ভবিষ্যতের দিকে এক পা-এক পা করে যেতে যেতে যখন চারদিকের চেনা পৃথিবীটা ক্রমশ পালটে যেতে থাকে, পরিকল্পিত ছকের বাইরে অজানা সরণী বেয়ে হাঁটতে শুরু করে জীবন, মনকে তখন প্রশ্ন করি আমরা, 'কি করে এমন হল?' সদুত্তর পেতে মন অনুসন্ধান শুরু করে, ক্ষিপ্র গোয়েন্দার মত অতীতের সমস্ত ফাইল ধুলো ঝেড়ে বার করে খুঁজতে থাকে আতিপাঁতি। অণুবীক্ষণের নীচে ফেলে যাচিয়ে নেয় প্রতিটি খণ্ডমুহূর্ত। কম্পিউটার সায়েন্সের পরিভাষাতে যা 'ব্যাকট্র্যাকিং অ্যালগরিদম', কার্যকারণ পরম্পরার সেই সূত্র ধরে অবশেষে সে উপনীত হয় কঠোর নির্মম সত্যে। বিনা বাক্যব্যয়ে আমাদের সামনে তুলে ধরে সেই মুহূর্ত, যেখান থেকে জীবন বেঁকে গিয়েছিল কোনও অচেনা মোড়ে। বইতে শুরু করেছিল অন্য এক খাতে যার ঢেউগুলো ভাসিয়ে নিয়ে যেতে থাকে পরিচিত জীবনের নিশ্চিন্ত নিরাপদ গণ্ডির থেকে দূরে, আরও দূরে। দুর্নিবার স্রোতের মুখে ভেসে যাওয়ার মুহূর্তে আমরা অক্ষম প্রতিরোধের চেষ্টা করি খড়কুটো আঁকড়ে ধরে। হায়, সময় যে বহতা নদী! জীবনের শুরু থেকে শেষ অবধি একমুখী তার যাত্রা। উৎস থেকে মোহনার দিকে সে চঞ্চলা রমণী 'নেচে চলে যেন নটিনী', কোথায় কোন অববাহিকায় কে অবহেলায় পড়ে রইল দেখার তার ফুরসত কই?
 
আর যার চোখের সামনে একটু একটু করে ঘটে এই অনিবার্য পরিবর্তন, কি হয় তার পরিণতি? নিষ্ফলা বালির বাঁধে যখন বাধা মানে না নির্দয়া স্রোতস্বিনী, তখন? শূন্য দৃষ্টিতে তার চলে যাওয়া দেখা ছাড়া আর কিই বা করার থাকে? সময়ের চাকা, সে তো উলটোদিকে ঘুরবে না কোনওদিন। টাইম মেশিনের অলীক প্রকৌশল বিদ্রূপভরে মুখ ভ্যাংচায় কল্পবিজ্ঞানের পাতা থেকে। কে সেই অপরাধী যার দোষে এমনটা ঘটল? মনকে চোখ ঠারা চলে না, সে জানে কার দোষে। হৃদয়ের আবছা আয়নাতে নিজেরই প্রতিফলনের দিকে চেয়ে থাকে মূক দৃষ্টি।
 
চোখের সমান্তরালে, ফুটকয়েক উঁচুতে স্থাবর সিলিঙ। খাট থেকে বোবা চোখ মেলে তাকিয়ে আছি সেদিকে। কয়েক ঘণ্টা আগে ঐ সিলিঙই নীরব সাক্ষী ছিল আমাদের উদ্দাম ভালবাসাবাসির। এখন সেখানে ক্যালেইডোস্কোপের খেলা। মেঘের আড়াল থেকে একটু একটু করে পরিস্ফুট হওয়া সকালের আলো জানলার গ্রিলের মধ্যে দিয়ে অনুপ্রবেশ করেছে কারওর অনুমতির তোয়াক্কা না করে। পেশাদার জাদুকরের মত নিজের ভোজবাজি দেখাতে ব্যস্ত, তার রঙ্গমঞ্চ ঘরের দেওয়াল বা মাথার ওপরের সিলিঙ। সিলিঙটাও বোধহয় স্বস্তি পেয়েছে এমন নির্দোষ সভ্যভব্য ‘আট থেকে আশি’-মার্কা চালচিত্র দেখে। স্বাভাবিক,ভোর ইস্তক একঘেয়ে প্রাপ্তবয়স্ক ছবি চোখের সামনে চলছে, কাঁহাতক আর ভাল লাগে! স্বাদবদলের প্রয়োজন সবারই আছে, সে মানুষ হোক বা ঘরের সিলিঙ।
 
খাটে একা একা শুয়ে এসবই ভেবে চলেছি। অবান্তর, আবোল-তাবোল। কিছুই নয়, মনটাকে অন্যদিকে ঘোরানোর ব্যর্থ চেষ্টামাত্র। বিক্ষুব্ধ অবচেতন তোলপাড় হচ্ছে সেই মুহূর্তটার কথা ভেবে। যদি ফিরে যাওয়া যেত আবার, যদি ফিরিয়ে নেওয়া যেত প্রশ্নটা? যে প্রশ্ন প্রেমিকাকে করা অনুচিত, প্রেমশাস্ত্রের পাঠে যে প্রশ্ন ঘোরতর নিষিদ্ধ। আর... কে না জানে নিষিদ্ধের হাতছানি কি প্রবল। সে অদম্য আকর্ষণ উপেক্ষা করব এতটা বীতস্পৃহ আমি নই। কিন্তু এতবড় নির্বোধও তো নই যে অমন অন্তরঙ্গ সময়ে ওরকম একটা প্রশ্ন...
 
অনবধানে জ্যামুক্ত তীর ফিরিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা ধনুর্ধরের থাকে না, তার কাজ তখন কম্পিতবক্ষে আগুয়ান শরকে লক্ষ্য করা। এ পর্যন্ত সকলেই জানে। প্রবাদবাক্য সাধারণত মিথ্যে হয় না। সাধারণত... কিন্তু তীর যদি লক্ষ্যভেদ করে? যদি অজ্ঞাত কারণে শরাহত হয় কোনও অজানা শত্রু যার অস্তিত্বই ছিল কার্মুকের অগোচর? ঠিক কেমন হয় তখন তার মনের অবস্থা? বিস্মিত? পুলকিত? চমৎকৃত? নাকি এ সবই মিলেমিশে থাকে অথবা... অথবা, এর বাইরে ব্যাখ্যাতীত কোনও অনুভূতি? যেমনটা আমার হয়েছিল স্নানঘরে...
 
...
 
কি করে ফেললাম? কেন জিজ্ঞেস করতে গেলাম এটা? অতি বড় মূর্খও এমন ভুল করবে না আর আমি কি না... ও ঠায় চেয়ে আছে আমার চোখের দিকে। নিষ্পলক দৃষ্টিতে মিশে অপার বিস্ময়, তার সাথে নীরব ভর্ৎসনা। এখনও আমাদের দেহ পরস্পরে সম্পৃক্ত, ঝিরিঝিরি বারিধারা শাওয়ার থেকে নেমে ভিজিয়ে দিচ্ছে একবিন্দুতে মিশে থাকা আলাদা দুটো শরীরকেওর নরম জমিতে দৃঢ়প্রোথিত হয়ে আমার উত্তুঙ্গ পৌরুষ, ছন্দোবদ্ধ মিলনের গতিতে যান্ত্রিকভাবে কেঁপে কেঁপে উঠছি দুজনেই। দাঁড়িয়ে থাকার দরুণ সম্ভব ছিল না স্বাভাবিক ভঙ্গিতে মিলিত হওয়া, ওর কোমল তনু তাই ঢলে পড়েছে স্নানঘরের বাষ্পসিক্ত দেওয়ালে, সুগঠিত বাম জঙ্ঘা পরম আদরে বেষ্টন করে দয়িতের কোমর। ঈষৎ তির্যক দেহভঙ্গির কারণে উন্নত স্তনেরা কি মোহময়ী এক বিভঙ্গে আমার বক্ষলগ্না। কবোষ্ণ জলের মনোরম স্পর্শে জাগ্রত দুই বৃন্ত বারংবার আছড়ে পড়ছে প্রেমিকের বলিষ্ঠ বুকে। সুডৌল দুই হাত পেলব আলিঙ্গনে আলতো করে জড়িয়ে। নমনীয়, অথচ দৃঢ় সে আলিঙ্গনপুরুষকে যা নিশ্চিতভাবে বেঁধে ফেলে নারীর চিরন্তন বাহুপাশে। রতিক্রীড়ার তালে তালে সঙ্গতি রেখে সুপুষ্ট নিতম্ব আঘাত হানছে ওয়ালপেপারের গায়ে, বিচিত্র শব্দ তুলে। সবই মুহূর্ত কয়েক আগের মত, শুধু... আবেশে বোজা চোখের পাতারা এখন উন্মীলিত। সপ্রশ্ন দৃষ্টি সরাসরি নিবদ্ধ আমার দৃষ্টিতে। মর্মভেদী চাহনি যেন আমার চামড়া-অস্থি-স্নায়ু বিদীর্ণ করে দেখে নিচ্ছে মনের অতল অবধি। একটাও কথা বলেনি ও, কিন্তু নিরুচ্চার জিজ্ঞাসায় প্রতিধ্বনিত বুকের ভিতরটা। ঐ চোখের চাওয়ার সামনে বেশিক্ষণ প্রতিরোধের ক্ষমতা নেই। অথচ... কি কৈফিয়ত দেব এই অমার্জনীয় অপরাধের?
 
"জাস্ট কিডিং", নিজের মুখ থেকে বেরোনো কথাগুলো নিজেরই কানে কি ভীষণ হাস্যকর শোনালো! ও কিছু বলছে না। তপ্ত শরীর এখনও নিয়মিত গতিতে পৌরুষের লাঞ্ছনা ধারণে ব্যস্ত, চোখজোড়া ঠায় চেয়ে আমার মুখের দিকে। আর ফেরবার পথ নেই, যা থাকে কপালে। মিথ্যেটাকে যে কোনও মূল্যে গ্রহণযোগ্য করে তুলতে মরিয়া আমি, ঠোঁটের কোণে একচিলতে হাসি ফোটানোর আপ্রাণ চেষ্টা করি।
 
"তুই সত্যিই সিরিয়াসলি নিলি কথাটা? পারিসও বটে"
 
পরিস্থিতি লঘু করার এর থেকে ভাল উপায় মাথায় আসছে না। এই ঠুনকো আশ্বাসে কাজ হবে কোনও? দুরুদুরু বুকে প্রতীক্ষা করি, আমার কাঠিন্য তখনও ওকে অখণ্ড মনযোগে গেঁথে চলেছে। একটা হাত আপনা থেকে উঠে যায় পুরুষ্টু বোঁটায়, উদ্বেল বৃন্তকে পীড়ন করে। কোনও প্রত্যুত্তর আসে না ওর থেকে, আয়ত চোখদু'টি আবারও মুদে যায়, টানা টানা আঁখিপল্লবে ফের রতিসুখের প্রতিভাস। অজান্তেই স্বস্তির নিঃশ্বাস পড়ে আমার। যাক, এখনকার মত ফাঁড়াটা কেটেছে। বেমক্কা প্রশ্নটার কথা ভেবে এবার নিজের ওপরে রাগ হচ্ছে। এসবই গত এক সপ্তাহব্যাপী অদ্ভুতুড়ে চিন্তাগুলোর বহিঃপ্রকাশ। কি যে ছেলেমানুষিতে পেয়ে বসেছে! আগের রবিবার দুপুরে আচমকা ভেসে ওঠা দৃশ্যকল্প থেকে শুরু, তারপরের কদিন নিয়মিতভাবে সেই চিন্তাকে প্রশ্রয় দিয়ে আজ এই দুরবস্থা। যতবার মনকে শাসন করতে গিয়েছি ফল হয়েছে উলটো। অসুস্থ ভাবনারা আরও বেশি করে ভিড় করেছে মনের ভিতর, চেতন-অবচেতনকে গ্রাস করেছে ধীরে ধীরে। বিশেষত সেদিন রাতে ওর আধখোলা বুকের চুড়োয় সঞ্জীবের দশনচিহ্ন দেখার পর... প্রতিবর্তেই বুঝি দৃষ্টি চলে গেল সেই বিশেষ স্থানটিতে। এতক্ষণে জলধারায় ভিজতে ভিজতে দু'জনেরই শরীরময় স্বচ্ছ আস্তরণ, ভাল ঠাহর হচ্ছে না। তাও এত কাছ থেকে তো ভুল হওয়ার কথা নয়। কোথায় সে দংশনের দাগ? নিষ্কলঙ্ক বিপুল বক্ষদেশ লুটিয়ে পড়ছে আমার বুকের ঘন জঙ্গলে। যেন জোড়া দুই পায়রা ছটফটিয়ে বেড়াচ্ছে থেকে থেকে। ওখানেই সঞ্জীব... আঃ আবারও সেই! বিকৃত চিন্তারা ফিরে আসছে, মস্তিষ্কের দখলদারি ধীরনিশ্চিত গতিতে তাদের অধিকারে। মাথার ভিতর অসংখ্য পোকা কিলবিলিয়ে উঠছে, কুরে কুরে খাচ্ছে আমার যুক্তি-বুদ্ধি-বোধ। রমণের মাঝেই চোখ বন্ধ করে ফেলি, ও যেন ঘুণাক্ষরেও বুঝতে না পারে আমার মনের অবস্থা। বন্ধ চোখের পাতায় আবার সেই দৃশ্যপট, সঞ্জীবের সাথে ও... আর ভাবতে পারি না। কে ঐ প্রেমিক, যে ওকে নির্দয়ভাবে আদর করে চলেছে? ওটা কি সঞ্জীব, না আমি? এখন কার সাথে ও কামকেলিতে মত্ত জলের অবিরাম বর্ষণের মাঝে? আমি, নাকি... ? মস্তিষ্কময় বিস্ফোরণ হতে থাকে ছোট-বড়, আর আমার বোধবুদ্ধি ঘুলিয়ে যায়। রমণের গতিবেগ বৃদ্ধি পেতে থাকে ক্রমশ। ওর আতপ্ত যোনিপাত্রে আমূল বিদ্ধ লৌহশলাকা বাড়তে থাকে দৈর্ঘ্যে-প্রস্থে-আয়তনে, বাড়তে থাকে তার তাপমাত্রা। লোহিত-তপ্ত... শ্বেততপ্ত। দিগ্বিদিকজ্ঞানশূন্য পুরুষ উন্মাদের মত ছিন্নভিন্ন করে চলে নারীর কোমল অভ্যন্তর। ভীমগতিতে সে মন্থন করে আমার একান্ত আপন প্রেমিকাকে... কে ও? আমি? সঞ্জীব? মনের মধ্যে বিদ্যুচ্চমকের মত উদয় হয় মারাত্মক এক প্রশ্নেরঃ তবে কি আমিই এখন সঞ্জীব? সহস্র অচেনা কণ্ঠ সম্মিলিত সাড়া দেয়- "হ্যাঁ"। কে ওকে এমন তীব্রভাবে নিষ্পেষণ করছে? আবারও সমস্বরে জবাব আসে- "সঞ্জীব"। হৃদয়ের অচেনা গলিঘুঁজিতে অনুরণিত হতে থাকে সে উত্তর। হাজার ডেসিবেলের আর্তনাদে কানে তালা লেগে যায়। সহসা এই বধিরতায় আপাদমস্তক কেঁপে ওঠে আমার। উদ্ভ্রান্তের মত চোখ খুলি। দেখি সেই আগেরই মত রমণের ছন্দে স্পন্দিত হচ্ছে প্রিয়তমা, তালে তালে দুলে উঠছে ওর নগ্নদেহ। অবিশ্রান্ত বারিধারায়, প্রিয়মিলনের তৃপ্তিতে, যৌনসুখের বিহ্বলতায় সারা অঙ্গে তার রূপের মাধুরী ছড়িয়ে পড়েছে। ধন্দে পড়ে যাই, এ কি কোনও শাপগ্রস্তা কিন্নরী, না আমারই প্রেয়সী? আমার, নাকি... না আমার নয়, এই মুহূর্তে স্নানঘরের একান্ত ঘেরাটোপে কোথাও আমার অস্তিত্ব নেই। নামহীন এক বোধ জন্ম নেয় মনের গহিনে। এখন আমি সঞ্জীব। যার ওটা নাকি... "বিগার দ্যান ইয়োরস", মধুক্ষরা সলজ্জ স্বর কানের মধ্যে বেজে ওঠে। তবে তো এই সামান্য রতিক্রীড়ায় কাজ হবে না! যে পৌরুষের দর্প যত বেশি তার আস্ফালনও ততোধিক হওয়া উচিত। আজই ওকে হাতেনাতে সে প্রমাণ দেব।


(পরবর্তী পোস্টে বাকি অংশ...)
[+] 2 users Like অনঙ্গপাল's post
Like Reply
#14
হঠাৎ কোথা থেকে এক দানব এসে ভর করে আমার শরীরে। না না আমার তো নয়... যাকগে এখন অতশত ভাবার সময় নেই। গোটা শরীরে রক্তকণিকারা ছুটে বেড়াচ্ছে, মাথার ভিতরে জান্তব হুঙ্কার। বহু বহু যুগ আগে আমার পূর্বপুরুষ এ পৃথিবীর বুকে দিনগুজরান করত হিংস্র প্রাণীদের সাথে দৈনিক সংগ্রাম করে। তখন মানুষে আর পশুতে প্রভেদ কতটুকুই বা ছিল? সেই আদিম মানবের রক্ত বইছে আমার শিরায়, ধমনীতে। প্রাণের ভিতর অনেক গভীরে এখনও বসত করে রক্তলোলুপ সে শ্বাপদ। সভ্যতা আর আধুনিকতার মোড়কে তাকে অনুক্ষণ ঘুম পাড়িয়ে রাখতে হয়। কিন্তু আজ, এই মুহূর্তে মনের কোটরে বাসা বাঁধা বিকৃত জৈবিক তাড়নায়  সে বেরিয়ে এল, বেরিয়ে এল নখ-দাঁত বার করে। আরক্ত চোখে একবার নিরীক্ষণ করল নিজের দুই কামলোলুপ থাবার অধিকারে এলিয়ে পড়া রিরংসায় বিবশ নারীটিকে। পলকের মধ্যে তাকে সজোরে ঠেসে ধরেছে স্নানঘরের দেওয়ালে। হ্যাঁচকা টানে নারীর ডান জঙ্ঘাও তার কোমরে উঠে এল, দুই সুডৌল রম্ভাসদৃশ উরু বেষ্টন করে আছে পুরুষ-পশুর শ্রোণীদেশ। শরীরের সবটুকু অংশ মাটি থেকে শূন্যে, নয়তো রমণকারীর অঙ্গে ভর দিয়ে। আচমকা এই পট-পরিবর্তনে রমণী বিস্মিতা, ভূপতনের আতঙ্কে আরও নিবিড় আলিঙ্গনে বেঁধেছে প্রেমিকের ঘাড়-গলা-পিঠ। ঘটনার আকস্মিকতায় বিহ্বল হয়ে আবেশে বন্ধ চোখ খুলে দয়িতকে অবাক দৃষ্টিতে দেখছে। সে চাহনিতে পুলক-ত্রাস-চমক-বিমুগ্ধতা মিলেমিশে বিচিত্র ভাবের ব্যঞ্জনা। তার দূরতম ধারণাতেও নেই কে এই পুরুষ। সে প্রেমিকপ্রবর নয়, বিকৃত কামের জ্বালায় উন্মাদ এক নররাক্ষস। প্রেয়সীকে অন্য প্রেমিকের সাথে কল্পনা করে যার পৌরুষ আজ দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হয়ে উঠেছে। নির্মম গতিতে সমূলে বিদ্ধ করছে নারীকে, জরায়ুমুখে আঘাত হানছে একের পর এক। কর্কশ কাঠিন্যের প্রহারে ব্যথাতুরা রমণী আর্তনাদ করে উঠল। সে শব্দে যারপরনাই উল্লসিত পুরুষের ভিতরে লুকিয়ে থাকা জন্তু, নিষ্ঠুরতর রমণে ছিঁড়েখুঁড়ে ফেলছে পেলব নারীদেহ। বলিষ্ঠ দুই হাতের তালুতে প্রবলভাবে নিষ্পেষিত কমনীয় জঘনদেশে রক্তাভা, পরিচিত শরীরের প্রতিটি রোমকূপ আক্রোশে দলিত-মথিত করছে। অচেনা রমণ-পীড়নে অনভ্যস্ত কোমল তনু ক্রমশ সাবলীল, পাশবিক নিষ্পেষণের মাঝে প্রবল রতিসুখ খুঁজে নিচ্ছে ধীরে ধীরে। বর্বর পুরুষকে সোহাগে-লাস্যে আরও নিবিড় করে বাহুডোরে টেনে আহ্বান জানাচ্ছে সবলতর মর্দনের। জান্তব পৌরুষ সে ডাকে সাড়া দিয়েছে। নারীর আর্দ্র যোনিদেশে ধাতব পিস্টনের মত বারংবার আছড়ে পড়ছে নির্দয় কাঠিন্যে, যেন প্রজ্বলিত কামাগ্নিতে শুষে নেবে তার কামনাঘন লাভার শেষ বিন্দুটুকু। প্রচণ্ড মৈথুনের তালে দ্রুতলয়ে ওঠানামা করছে স্ফুরিতাধর মানবী, চরম সঙ্গমসুখে তার অভ্যন্তর ভেসে যাচ্ছে, স্খলিত হচ্ছে। মিলনাবেশে বন্ধ দুই চোখের পাতায় সাতরঙা রামধনুর খেলা। শাওয়ারের কৃত্রিম বারিপাতে সিক্ত স্তনদু'টি প্রবল আবেগে আরও আরও স্ফীত, মরুদেশীয় দ্রাক্ষাফলের আকার নেওয়া উন্মুখ বৃন্তদ্বয় ভিতরের বাঁধভাঙা জোয়ারে যেন ফেটে পড়বার উপক্রম। আসন্ন রাগমোচনের উত্তেজনায় রোমাঞ্চিত নারীর সংযমের বাঁধ ভেঙে গেল, উথালপাথাল অট্ট-শীৎকারে ভরে যাচ্ছে স্নানঘর। ফ্ল্যাটের সীমানির্ধারক দেওয়ালের পুরু গাঁথনিকে উপেক্ষা করে ছড়িয়ে পড়ছে প্রতিবেশী ঘরগুলিতে। বাঁধভাঙা দুকূলপ্লাবী নারীর লুপ্তপ্রায় চেতনা সে সব খেয়াল করার অবস্থায় নেই, অবসন্ন দেহে পুরুষের গায়ে এলিয়ে পড়ার প্রাকমুহূর্তে শুধু টের পেল নিজের গভীরে প্রমত্ত পৌরুষের উদ্দাম বিস্ফোরণ।
 
রমণের উত্তেজনা এখন স্তিমিত, রেতঃস্খলনের সাথে সাথেই উধাও প্রাণের কন্দরে লুকিয়ে থাকা বন্য পশু। ধীরে ধীরে জান্তব প্রবৃত্তিকে সরিয়ে ফিরে আসছে প্রেম, নিজস্ব নারীর প্রতি ভালবাসা পুনরায় জাগরূক হৃদয়ে। মানবীশরীরের প্রতিকোণে পরম যত্নে সাবান মাখিয়ে দিচ্ছে, জলের ঝাপটায় দূর করছে জমে থাকা ক্লেদ। তীব্রমৈথুনের অবসাদ মুছে গিয়ে শ্রান্ত প্রিয়তমা আবারও নিজেকে ফিরে পাচ্ছে, ফিরে পাচ্ছে প্রেমাস্পদের বাহুবন্ধনে। নীরবে পুরুষকে ঝরনাধারায় স্নান করাচ্ছে সেও। দু'জনের মুখে কোনও ভাষা নেই, শব্দের অনবরত যাতায়াত কেবল পরস্পরে নিবদ্ধ দু'জোড়া চোখের বাঙ্ময় দৃষ্টিপাতে।
 
যৌথস্নান শেষ, ঘরে ফিরে ক্লান্ত দেহটাকে এলিয়ে দিয়েছি বিছানার নরম আশ্রয়ে। সুদীর্ঘ মানসিক আর শারীরিক পরিশ্রমের পর কথা বলার সামান্যতম শক্তিটুকুও আর অবশিষ্ট নেই। ও ব্যস্ত স্নান সমাপনান্তে ভিজে চুল শুকোতে। স্খলিতকেশ উন্নত বুকের ওপরে মেলে চালু করেছে হেয়ারড্রায়ার,একটু একটু করে শুষ্ক হচ্ছে মেঘবরণ কেশ। একটানা যান্ত্রিক শব্দের প্ররোচনায় অবসন্ন চোখের পাতা বুজে আসতে চায়। শিথিল দেহ নিদ্রাবেশে শিথিলতর।
 
সহসা অজানা প্রতিবর্তে তন্দ্রা ছুটে যায়। চোখ পড়ে ওয়ার্ড্রোবের মানুষপ্রমাণ দর্পণে। আলুলায়িতকেশ নারী আয়নার মধ্যে দিয়ে অনিমিখ তাকিয়ে রয়েছে আমার দিকে। দুর্বোধ্য সে জটিল দৃষ্টিতে এক আকাশ জিজ্ঞাসা। ও কি তবে সবই বুঝতে পেরেছে?
 
শিরদাঁড়া বেয়ে হিমস্রোত নেমে যায়।
 
...
 
প্রশ্নোত্তরের পালা তবে অনিবার্য, মনে মনে ভাবি। অগত্যা... নিয়তিকে তো আর খণ্ডাতে পারব না। এত ভয় পাওয়ারই বা কি আছে? মনকে শক্ত করা বিশেষ দরকার। কি আর হবে বড়জোর, একটু বকাঝকা, খানিকটা রাগ-অভিমান। তার বেশি তো কিছু নয়। সে কি আর নিত্যদিনই হচ্ছে না, কারণে-অকারণে? হয়তো তিরস্কারের বহরটা একটু বেশি মাত্রায় হবে, সেটা আমার প্রাপ্যও বটে। কিন্তু স্নানের সময় যেমন নিজেকে ছেড়ে দিল আমার ওপর, ওরকম বন্য যৌনতায় সঙ্গ দিল অমন মারাত্মক প্রশ্ন করার পরেও তাতে দুর্ভাবনার তেমন কারণ নেই। খামোখাই এত ভেবে যাচ্ছি।
 
মনের ভিতরে লুকিয়ে থাকা বিরুদ্ধ মন সাথে সাথে বাগড়া দেয়। এতটা আত্মপ্রত্যয়ের সত্যিই কি কোনও ভিত্তি আছে? শুধোয় সে। এমনও তো হতে পারে তখন আর ও প্রশ্নটা করেনি, মুলতুবি রেখেছিল। দুজনে মিলিত হচ্ছি এতদিন পরে, অপ্রিয় জিজ্ঞাসায় মৈথুনকালে ব্যাঘাত ঘটাতে কোন উপবাসী নারীই বা চায়! সেক্ষেত্রে অন্তিম জিজ্ঞাসা কিন্তু এখনও বাকি। দর্পণে প্রতিবিম্বিত নারীর মুখাবয়বে ফুটে ওঠা প্রশ্নের রেখারা অন্তত তেমনই ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছে। অতএব আসন্ন বিপর্যয়ের জন্য মানসিক প্রস্তুতি নিতে আরম্ভ কর। সময় ঘনিয়ে এল বলে।
 
ক্লান্ত, অবসন্ন মনের প্রাঙ্গণে শুম্ভ-নিশুম্ভের লড়াই চলতে থাকে। বিরক্ত হয়ে উঠি, এই টানাপড়েন আর ভাল লাগে না। ব্যাপারটা চেপে গেলে কেমন হয়? আগের যে মিথ্যাচরণে তখনকার মত বিপদ কাটিয়ে উঠেছিলাম সেটারই যদি পুনরাবৃত্তি করি, ও কি আর বুঝতে পারবে? উঁহু, মেয়েদের সন্দেহ এত সহজে নিরসন করা গেলে পৃথিবীর অর্ধেক পুরুষ আজ কত সুখী হত! ওভাবে হবে না। তাছাড়া, তাছাড়া... স্নানের ঘরে যে শ্বাপদ আমার মধ্যে জেগে উঠেছিল তাকে নিবৃত্ত করব কোন উপায়ে? সে তো আবারও ফিরে ফিরে আসবে। প্রতিবার নবোদ্যমে, নতুন অস্ত্রসম্ভার সাজিয়ে। গত এক সপ্তাহ যাবৎ অবচেতনে যা চলেছে তার প্রভাব কতদূর অবধি পড়বে আমাদের জীবনে? আজকে তার ছোট্ট একটা নমুনা ট্রেলারেই তো শিউরে উঠতে হয়!
 
তবে কি সব সত্যি স্বীকার করে নেব? ওর কাছে হাট করে খুলে দেব নিজের মনের জানলা? তারপর? তারপর যদি ওর মন ভেঙে যায়? ছেড়ে চলে যায় আমাকে... না না, এ কোনওমতেই হতে দেওয়া যায় না। একটা বিকল্প রাস্তা আমায় খুঁজে বের করতেই হবে। অশান্ত মন অস্থির পদচারণা করে চলে, চোখ চলে যায় অজান্তেই ওয়ার্ড্রোবের আয়নার দিকে। চুল শুকোনোর পর্ব শেষ, এখন যৎকিঞ্চিৎ প্রসাধনে ব্যস্ত ও। অপাঙ্গে লক্ষ্য করে আমায়। পরক্ষণেই অবহেলাভরে দৃষ্টি সরিয়ে নেয়, মনোযোগ দেয় শৃঙ্গারে।
 
...চলে গেছি ইহাদের ছেড়ে;
ভালবেসে দেখিয়াছি মেয়েমানুষেরে,
অবহেলা করে আমি দেখিয়াছি মেয়েমানুষেরে,
ঘৃণা করে দেখিয়াছি মেয়েমানুষেরে;
আমারে সে ভালবাসিয়াছে, আসিয়াছে কাছে,
উপেক্ষা সে করেছে আমারে, ঘৃণা করে চলে গেছে,
যখন ডেকেছি বারেবারে, ভালবেসে তারে;
তবুও সাধনা ছিল একদিন, এই ভালবাসা;
আমি তার উপেক্ষার ভাষা
আমি তার ঘৃণার আক্রোশ
অবহেলা করে গেছি”
 
হতাশ হয়ে আবার শুয়ে পড়ি। আনমনে দেখতে থাকি সিলিঙের ক্যানভাসে বহিরাগত আলোর ঝিকিমিকি তুলির টান। অবান্তর কথাদের ভিড়ে ক্লান্ত মন কখন যেন ঘুমে ঢলে পড়ে।
 
"অ্যাই সরে শো না একটু"
 
নিদ্রালু দু'চোখ পরিচিত গলার শব্দে জেগে ওঠে। তাকিয়ে দেখি, ও। ছুটির দিনগুলো এই ফ্ল্যাটে যাপনের সুবিধার্থে ওর কিছু ঘরে পরার জামা এখানে স্থায়ীভাবে রাখা থাকে। তারই মধ্যে সংক্ষিপ্তাকার একটা নাইটি নামেমাত্র গায়ে জড়িয়েছে, দেহের বেশিরভাগটাই অনাবৃত। আমাকে ঠেলে সরিয়ে দেয় দেওয়ালের দিকে। সামান্য একচিলতে জায়গা বার করে শরীর এলিয়ে দেয়। সারা সকাল ওর ওপর দিয়েও কম ধকল যায়নি। তাই বোধহয় এত চুপচাপ। সেটাই কারণ, না কি... জিজ্ঞেস করার মত সাহস আমার নেই, তার চেয়ে মুখ বুজে পড়ে থাকাই শ্রেয়। সিঙ্গলবেড খাট, দুজনের স্থান সংকুলান হতে গেলে কিছুটা দৈহিক ঘনিষ্ঠতা অনিবার্য। দু'জনেই খানিকক্ষণ নীরব, কেবল পাশাপাশি শায়িত দু'টি শরীরে নিরুচ্চারে উত্তাপ বিনিময় হতে থাকে। অভ্যাসমত অঙ্গে দেওয়া হাল্কা বিদেশি সুগন্ধির ছোঁয়া, তার মৃদু সৌরভে আবিষ্ট হয়ে পড়ছে আমার সমগ্র সত্তা। জানলার বাইরের কোনও গাছ থেকে বিরহী এক কোয়েলের কুহুতান ভেসে আসে, যেন ঋতুরাজের আগমন-নির্ঘোষ - 'বসন্ত জাগ্রত দ্বারে'পর্দার ফাঁক দিয়ে ঘরের ভিতরে অনধিকার প্রবেশকারী আলোর তীব্রতায় সহসা হেরফের, সিলিঙের ক্যালেইডোস্কোপের চালচিত্র সে অভিঘাতে চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যায়, আবারও ভেসে ওঠে নতুন এক নকশা নিয়ে। কেমন মায়াবী, স্বপ্নালু পরিবেশ। আহা যদি সারা জীবনটাই এমনভাবে কাটত, দু'জনে পাশাপাশি শুয়ে, নির্ঝঞ্ঝাট...
 
আচমকাই আমার দিকে পাশ ফিরেছে। ওর পা আমার গায়ের ওপর, পেলব বাহু বেড়াজালে বেঁধেছে ডান কাঁধ। কোমল স্তনভার উন্মুক্ত পুরুষবুকের জঙ্গলে আলতো ভাবে পিষ্ট হচ্ছে, বাঁদিকের গালে ওর নি:শ্বাসের উষ্ণ পরশ, চোখেমুখে আলগোছে হানা দিচ্ছে দু'এক গাছি চূর্ণ কুন্তল। একেই কি স্বর্গসুখ বলে?
 
"তুই সত্যিই জানতে চাস?"
 
হঠাৎ মৌনতাভঙ্গের কারণে প্রথমটায় একটু অসুবিধে হল কথাটার মর্মার্থ উপলব্ধি করতে। জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকি।
 
"যেটা তখন বললি... চানের সময়, সত্যি জানতে চাস?", গলায় সামান্য অসহিষ্ণুতার আভাস। এই রে! এত তাড়াতাড়ি জেরা আরম্ভ হয়ে গেল? যা থাকে কপালে... একবার গলাখাঁকারি দিলাম।
 
"মানে এক্স্যাক্টলি কিসের কথা বলছিস..."
"আহহ ন্যাকামো করিসনা", এবারে উষ্মাটা আর প্রচ্ছন্ন রইল না কণ্ঠস্বরে, "খুব ভাল করেই জানিস কিসের কথা বলছি"
 
কি উত্তর দেব এর? এতটা সোজাসুজি প্রশ্ন, সত্যি বলতে আশা করিনি। মনের মধ্যে ব্যাপারটাকে একটু গুছিয়ে নিতে থাকি। বেফাঁস কিছু না বেরিয়ে যায় মুখ দিয়ে! ও কিন্তু সামান্যতম সময়টুকুও দিতে রাজি নয়। সঙ্কোচ ঝেড়ে ফেলে নিজেই আবার জিজ্ঞেস করল,
 
"তুই জানতে চাস তো সঞ্জীবেরটা তোর থেকে বড় কিনা?"
 
এমন সরাসরি আঘাতের জন্য মন একেবারেই প্রস্তুত ছিল না, প্রশ্নের অভিঘাতে কেমন অসাড় হয়ে গেল। নির্জীবভাবে ঘাড়টা কোনওমতে নাড়িয়ে সম্মতিজ্ঞাপন করলাম।
 
"আর ইউ অ্যাবসোলিউটলি শিওর? নিতে পারবি তো?"
 
নির্দয়া এই নারীকে কেমন অচেনা লাগে। এটা কি পাল্টা প্রতিশোধের পালা? স্নানের সময় উন্মত্ত পাগলামির বদলা নিচ্ছে এইভাবে? নাকি... আমার কৃতকর্মের ফল?
 
"বাই অ্যাটলিস্ট টু অর থ্রি ইঞ্চেস"
 
কানের মধ্যে কে যেন গরম শলাকা ঢুকিয়ে দিয়েছে। বধির হয়ে গেছি, চারপাশের কোনও শব্দ আমায় আর স্পর্শ করতে পারছে না। কর্ণকুহরে একটানা ধ্বনিত হচ্ছে পরিমাপটা, "অ্যাটলিস্ট টু অর থ্রি ইঞ্চেস"। বোধহয় একটু মায়া হল ওর, বাহুপাশে আরও নিবিড়ভাবে টানল।
 
"জেলাস?", নরম স্বরে প্রশ্ন ভেসে এল। কি জবাব দেব বুঝতে পারছি না। বাস্তবিকই উত্তরটা আমার অজানা। কিভাবে ব্যাখ্যা করা যায় সেই অনুভূতি? 'ঈর্ষান্বিত' বললে যে সত্যের ঘোর অপলাপ হবে।
 
বোবার শত্রু নেই। মৌন থাকাই এখন শ্রেষ্ঠ পন্থা। ওর দিকে আর তাকাতে পারছি না, অস্বস্তি হচ্ছে ঐ ডাগর আয়ত চোখের তীব্র চাহনির সামনে। যেন মর্মস্থল ভেদ করে পড়ে নেবে আমার মনের অন্ধকারে লুকিয়ে থাকা সমস্ত গূঢ়রহস্য। দৃষ্টি গিয়ে পড়ে নাইটির শাসন মানতে না চাওয়া ওর বেআব্রু বুকের মসৃণ চাতালে। নিটোল উদ্ধত স্তন সম্পূর্ণ নিদাগ, নিষ্কলুষ। গভীর বিভাজিকার বাঁ পাশে আবেদনমুখর তিল বাদে আর কিছুই দেখা যায় না। কোথায় হারিয়ে গেল সেই দশনচিহ্নসে কি তবে আমার দুঃস্বপ্নের একটা অংশমাত্র? আণুবীক্ষণিক তীক্ষ্ণতায় খুঁজতে থাকি ওর বুকের প্রতিটি বিন্দু, প্রতিটি কোষ... উন্মাদ দৃষ্টির সামনে ফালাফালা হয়ে যায় গভীর চড়াই-উতরাই, উপত্যকাভূমি।
 
"কি খুঁজছিস?"
 
আবারও আচমকা প্রশ্নে আমি স্থাণু। অব্যক্ত কথারা কিছুতেই আর ভাষা হয়ে বেরোতে পারছে না। মূক চাহনি তাকিয়ে থাকে ওর দিকে। হিমস্বরে আপনা থেকেই উত্তর দিল,
 
"সেরে গেছে। বম্বে যাওয়ার পর সঞ্জীব অয়েন্টমেন্ট লাগিয়ে দিয়েছিল"
[+] 2 users Like অনঙ্গপাল's post
Like Reply
#15
।। ১২ ।।




ছেলেবেলায় স্কুল থেকে একবার সায়েন্স সিটিতে নিয়ে গিয়েছিল। আন্দাজ ক্লাস ফোর বা ফাইভে। তখন বয়স অল্প, পৃথিবীটাকে অন্য চোখে দেখতাম। সর্ব বিষয়ে জানতে চাওয়ার অদম্য কৌতূহল কাজ করত মনের ভিতর। প্রশ্নগুলো কিছুতেই আর ফুরোতে চাইত না। অনন্ত জিজ্ঞাসার মাঝে জীবনের গতি ছিল সহজ-সরল, একরৈখিক, একমাত্রিক। অনর্থক জটিলতার স্থান ছিল না কোনও, বোধকরি জটিলতা শব্দের মানেটাও আটকে ছিল সিঁড়িভাঙা অঙ্কের ধাপে ধাপে। একদিকে সুপ্ত বাসনা ছিল ‘বড় হয়ে’ দুনিয়াটাকে মুঠোয় পোরার, তেমনই বিস্মিত হতাম অল্পেতেই। তৎকালীন বাইপাসের সুনসান জনহীন প্রান্তরে বিজ্ঞান-নগরীর সুবিশাল গম্বুজাকৃতি প্রেক্ষাগৃহে বসে অপার বিস্ময়ে দেখেছিলাম আফ্রিকা মহাদেশের অন্যতম ভয়ঙ্কর অরণ্য সেরেঙ্গিটির বুকে বিচিত্রদর্শন হরেকরকম জীবজন্তুর কাণ্ডকারখানা। জলে-ডাঙায়-অন্তরীক্ষে তাদের বর্ণময় জীবনযাত্রার ক্যামেরাধৃত অংশবিশেষ নিরীক্ষণ করে কৈশোরের পথে পা বাড়ানো বালকের সেদিন বাক্যি হরে গিয়েছিল। কি এক অদ্ভুত ঘোরে আচ্ছন্ন হয়ে পড়েছিল সে। বন্ধুদের বিদায় জানিয়ে সন্ধে-নামা অন্ধকারে বাড়ি ফেরার পরেও সেই ঘোর কাটেনি অনেকক্ষণ। রাতে ঘুমোতে যাওয়ার সময় চোখের পাতা জুড়ে ছিল সদ্য নাম-জানা বন্য প্রাণীদের দল; তাদের শিকার ধরার রকমারি পদ্ধতি, অলস গৃহস্থালীতে বেড়ে ওঠা শাবকদের প্রতি জান্তব অপত্যস্নেহ, তপ্তখরার ঊষর দিনে জলপান বিরতিতে খাদ্য-খাদকের অদ্ভুত সহাবস্থান। অন্ধকারাচ্ছন্ন মহাদেশের এক আকাশ আলোর নীচে অবিরাম বেজে চলা আদিবাসীদের ঢাকের দ্রিমিদ্রিমি শব্দের আড়ালে কখন যেন দু’চোখে জড়িয়ে এসেছিল ঘুমের চাদর।
 
তারপর কেটে গিয়েছে দেড় দশকেরও বেশি। প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়মে সেদিনের প্রায়-কিশোর আজ পরিণতবয়স্ক যুবা। একটার পর একটা ধাপ পেরোতে পেরোতে জীবন ক্রমে জটিল থেকে জটিলতর। মুঠোয় দুনিয়াটাকে নেওয়ার অলীক স্বপ্ন সে আর দেখে না, বরং এই গ্রহেরই মত গোলাকৃতি নরম কিছুর স্পর্শে উৎফুল্ল হয় হাতের স্নায়ু-পেশীরা। জনবিরল ই.এম. বাইপাসই বা আজ কোথায়? নিত্যনতুন রেস্তোঁরা, শপিং মল আর আবাসনের বিনির্মাণে মুখ ঢেকে ফেলা সড়ককে বর্তমানে চেনা দায়। পুরনো জগতটা চোখের সামনে খোলনলচে সমেত একটু একটু করে বদলেছে, বদলেছে ভিতর-বাইরের আমিটাও। সেরেঙ্গিটি শব্দটা এখন বহুলশ্রুত, তার সম্বন্ধে কোনও কিছু জানার প্রয়োজন হলে মাউসের কয়েকটা ক্লিকেই উইকিপিডিয়া, গুগল, ইউটিউব এনে হাজির করে রাশি রাশি তথ্যের ভাণ্ডার।
 
গতিময় জীবনে পরিবর্তনের ভিড়ে হারিয়ে যাওয়া সেই আফ্রিকান ঢাকের সহসা নিনাদে হৃদয় আজ তাই স্বভাবতই উদ্বেল। মিহি সুরেলা নারীকণ্ঠে বোমাবর্ষণ হচ্ছে একের পর এক, আর বুকের মাঝে প্রলয়ঙ্কর ভূকম্পনে টালমাটাল এত বছরের সম্পর্কের ভিত। যে শক্ত জমির ওপরে দাঁড়িয়ে দু’জনে রচেছিলাম ভালবাসার যৌথ ইমারত, তার মাটি আলগা ঝুরো ঝুরো হয়ে নড়িয়ে দিচ্ছে তাজমহলের প্রতিটি মিনার। কয়েকশ’ বছরের স্থাপত্য কীর্তি বুঝি কয়েক সেকেণ্ডের প্রলয়েই ধূলিসাৎ হবে। কি অদ্ভুত নিয়ম এই ভাঙাগড়ার খেলায়!
 
প্রকৃতি যখন প্রলয়ঙ্করী, মানুষ তার সামনে অসহায় শিশু। নির্বাক হয়ে দেখে চলে তাণ্ডবের উল্লাস, চোখে নামে আশঙ্কার ছায়া। সব হারানোর ভয়ে আচ্ছন্ন সত্তা হাঁটু গেড়ে করজোড়ে ভিক্ষা চায় নিঠুরা দেবীর কাছে। পুরুষ ও প্রকৃতির রসায়নও সেইরকমই অনিশ্চয়তায় ভরপুর। দৈহিক বলে বলীয়ান পুরুষ নারীকে ভাবে অবলা, নিজের হাতের ক্রীড়নক, শরীরখেলার সামগ্রী। আপন অধিকারবলে গ্রাস করতে চায় অসহায়া রমণীকে। সহসা কোনও এক বিশেষ মুহূর্তে সে মায়াবিনী নিজের জাল বিস্তার করে। তার আশ্চর্য ভোজবাজির সামনে দুর্দমনীয় পুরুষ তখন নীরব দর্শকমাত্র। নিঃসহায়, নিঃসম্বল। নতজানু হয়ে দেখে চলে স্বৈরিণীর মায়ামুকুরে নিজ প্রতিবিম্ব। সৃষ্টির আদিকাল থেকে প্রবহমান এ পরম্পরা... ‘সেই ট্র্যাাডিশন সমানে চলিতেছে’।
 
নিঃসহায় আমিও। নতজানু নই অবশ্য, আপন নারীর বাহুপাশে আবদ্ধ। নিস্পন্দ শুয়ে আছি ওর দেহের উত্তাপ গায়ে মেখে, কোমল স্তনের উষ্ণ স্পর্শে, লুটিয়ে পড়া বিস্রস্ত চুলের বেড়াজালে। শুধু বুকের ভিতর মাদলের আদিম শব্দ একটানা বেজে চলেছে। আপাতদুর্বোধ্য সে শব্দের ভাষা জানি আমি। আর জানে ও। এ ভাষার পাঠ নেই কোনও বিদ্যালয়ের পাঠ্যসূচীতে, কোনও শিক্ষাপর্ষদ নিজেদের পাঠ্যক্রমে এ ভাষা অনুমোদন করেন না। তবুও আমরা তা শিখি, শিখে যাই... প্রকৃতির পাঠশালাতে। এ ভাষার নাম ঈর্ষা। বিস্তারিত অর্থে যৌনঈর্ষা। নারীর স্বেচ্ছাচারে ক্ষতবিক্ষত পুরুষের সাধ্য কি সে ভাষা ভুলে যাওয়ার!
 
...
 
‘কাঁহা খো গ্যয়ে জনাব?
 
জলতরঙ্গের আওয়াজে সম্বিৎ ফেরে। স্মৃতিরা একে একে ভিড় করে আসছিল... কলকাতার বাড়িতে স্নানঘরের নির্জনতা, অনুষ্ঠানবাড়ির একান্ত নিভৃতে পাওয়া বিকেলের অংশবিশেষ, চিলেকোঠার প্রায়ান্ধকারে স্কাইপ চ্যাট। কি বিচিত্র এই জীবন, কি বর্ণময় তার গতিপ্রকৃতি! মূর্খের মত কল্পনার জাল বুনে গিয়েছি একের পর এক, ঘুণাক্ষরেও যদি জানতে পারতাম বাস্তবে কি ঘটছে, ঘটতে চলেছে...
 
‘তুই চেয়েছিলি? না ও নিজেই...’
 
বাক্যটা অসমাপ্ত থেকে যায়, ইঙ্গিতটা নয়। আবারও তীব্র চোখে দেখছে আমায়। যেন বোঝার চেষ্টা কেন আমার এই জিজ্ঞাসা।
 
‘হোয়াই আর ইউ আস্কিং দিস?
‘মানে কিছু না, এমনিই...’, আমতা আমতা করতে থাকি। নিজের কাছেই যে স্পষ্ট নয় প্রশ্নটা!
‘হাউ ডাজ ইট ম্যাটার টু ইউ?
 
মনের গভীরে পুনরায় ডুব দিতে হয়। না, আত্মসমীক্ষার জন্য নয় একেবারেই। জুতসই কোনও জবাবের সন্ধানে।
 
‘আসলে ভেবেছিলাম ফিরে এসে মলম লাগিয়ে দেব, তা সে সুযোগ আর হল কই’
 
স্ত্রীজাতিকে বশে আনার এই এক মোক্ষম অস্ত্র। আত্মসমর্পণ করো, সাথে কিছুটা স্তাবকতা। বুঝতে সে সবই পারবে, আবার সব বুঝে নির্লজ্জ তোষামোদে গলেও যাবে ঠিক। পদ্ধতিটা অবশ্য ন্যায়সঙ্গত নয়, তা প্রেমে আর রণে সেসব কে কবে মেনেছে?


যথারীতি কাজ হল। উদ্ধত ভাব প্রশমিতআয়ত চোখের তারায় কৌতুকের আভাস। যেন জরিপ করতে চাইছে পুরুষের আর্তির গভীরতা।

 

‘ওওওঅন্তুবাবুর রাগ হয়েছে অন্যকে দিয়ে কাজটা করিয়েছি বলে?

‘রাগ কেন হবেতবে এটা এক্সপেক্ট করিনি”এবারে আমি অকপট’

‘কি এক্সপেক্ট করিসনিপরপুরুষকে নিজের বুকে হাত দিতে দেব?

‘ঠিক তা নয়তবে তোর যা ইমেজ...’চোখ বড় বড় করছে দেখে পাদপূরণে ইচ্ছাকৃত খোঁচা দিই সামান্য‘হাজার হোক সতীরানী বলে কথা!’

 

একটু থমকাল। ‘সতীরানী’ সম্বোধনের চিরকালীন স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া নেইদূরমনস্ক চোখে কি যেন ভাবছে। ব্যাপারটা কিরহস্যময়ী যে ক্রমশ আরও রহস্যের আবর্তে নিয়ে যাচ্ছে! নাঃএই উৎকণ্ঠা আর নেওয়া যায় না। উত্তরের আশায় অল্প ফোলা বাম স্তনের ওপর মৃদু চাপ দিই। আঙুলে লাগে কি এক অজানা উষ্ণতার ছোঁয়া।

 

‘মে বি নট এনিমোর’যেন বহুদূর থেকে ভেসে আসে ওর কণ্ঠস্বর।

‘মানে?

‘আই থিংক ইউ মে নাউ স্টপ কলিং মি দ্যাট’

‘কল ইউ হোয়াটসতীরানী?নীরবে ঘাড়ের ঈষৎ সঞ্চালনে বুঝিয়ে দেয় সম্মতি। ওর দৃষ্টি এখনও নিবদ্ধ দূরে কোথাও।

 

এ যে ক্রমাগত বিষয়টা জটিল করে তুলছে! আর তো পারা যায় নাএকটা হেস্তনেস্ত হওয়া দরকার। বোঝাপড়ার অভিপ্রায়ে পাশ ফিরে শুই। আমার নিঃশ্বাস এখন সরাসরি ওর গালের লালচে আভায়। সদ্যস্নাত পবিত্র মুখটাতে কি এক দ্বন্দ্ব অবিরাম খেলা করে বেড়ায়। চোখের কোণে সংশয়ের পাণ্ডুরতা। বাঙ্ময় হয়ে উঠতে চাওয়া ঠোঁটগুলো তিরতির কাঁপছে। অবাধ্য চুলের ঊর্ণনাভে ঢেকে থাকা এই কুহকিনীর আকর্ষণ আজও ফিকে হল না এতটুকু। নিষ্পলক চেয়ে থাকি। বুকের ভিতর থেকে একদলা আবেগ এসে ধাক্কা মারে কণ্ঠনালীতে। গলার কাছটা শুকিয়ে গেছেএকটু জল খেতে পারলে ভাল হত। অদম্য পিপাসার বশেই কিনা কে জানেওর পূর্ণযুবতী স্তনের ওপর আরও দৃঢ় হয় আমার মুঠি। যেন প্রাণপণে ঘোষণা করতে চাইছে নিজ অধিকার। কি চায় মনখানিক আগেই যাকে অন্য পুরুষ হয়ে রমণ করেছি উন্মাদের মততার শরীরে বিজাতীয় স্পর্শের সম্ভাবনায় আপাদমস্তক অস্থির হয়ে উঠছে কেনঈর্ষায় ছটফটিয়ে ওঠে হৃদয়চেনা নারীদেহের উপত্যকায় পুনর্বার আক্রমণের ইচ্ছে চাগাড় দেয় ভিতর থেকে। কিন্তু... উপায় নেই যে!

 

অস্থিরতাটা বোধহয় সঞ্চারিত হয়েছে এক মন থেকে আরেক মনে। দৃষ্টি না ফিরিয়েই আবার ও কৈফিয়তের পাতা ওল্টালো।

 

‘তুই চাইতিস তো আমি অন্যদের সাথে... দ্যাট আই ইন্ট্যার‍্যাক্ট উইদ আদার মেন মোর ওপেনলি। ওয়েল পারহ্যাপ্স আই হ্যাভ ক্রস্ড দ্য ব্যারিয়ার বাই আ ফিউ মাইলস’

 
হেঁয়ালির আবরণ ছাড়িয়ে একটা আপাত অসম্ভব সম্ভাবনা উঁকি দিচ্ছে নাকিঅশান্ত হয়ে উঠতে থাকা মনকে কোনওমতে সামলাইমুখের রেখায় অবশ্য তার প্রভাব পড়ে না তেমন। নির্নিমেষ চাহনিতে জিজ্ঞাসা ফুটে থাকে। ও-ও বুঝতে পেরেছে সেটা। আগের কথার খেই হারিয়ে কিঞ্চিৎ অসংলগ্নভাবেই বলে চলে...


(পরবর্তী পোস্টে বাকি অংশ...)
[+] 2 users Like অনঙ্গপাল's post
Like Reply
#16
‘লাস্ট সানডের পরে আমার মেণ্টালিটি অনেকটা চেঞ্জ করেছে। সঞ্জীবের সাথে ওর বাড়িতে... অ্যাম নট সেয়িং যে ওটা দারুণ এক্সপেরিয়েন্স ছিল বাট, বাট... আই লার্নড আ লট ফ্রম দ্যাট। হি ইজ নট অ্যাট অল আ ব্যাড গায়, র‍্যাদার আই উড সে দি অপোজিট। অ্যাণ্ড স্টিল হি এণ্ডেড আপ মলেস্টিং মি, ইভন দো... হি, হি লাভস মি’, যেন বহুযুগের ওপার থেকে এইমাত্র আমার দিকে চোখ মেলে তাকাল... পূর্ণদৃষ্টিতে, স্পষ্ট ভাষায় উচ্চারিত পরবর্তী শব্দগুলো, ‘ইয়েস আই অ্যাম মোস্ট সার্টেন অ্যাবাউট ইট। দ্য ওয়ে হি ওয়াজ টাচিং মি, সো টেণ্ডার, সো জেন্টল... আমি তোকে ঠিক বোঝাতে পারব না বাট ট্রাস্ট মি, মেয়েরা এগুলো ঠিক বুঝতে পারে। ইভন যখন ও আমার... বুকে হাত রেখেছিল... পাগলের মত টিপছিল তখনও আমার একটুও ব্যথা লাগেনি বরং ওকে থামাবার বদলে ওর চোখে চোখ আটকে গেছিল। আই ক্যুড রিড হিজ মাইণ্ড ইন হিজ ডিপ আইজ... ইট ওয়াজ লাইক হি ওয়াজ বেগিং মি ফর সামথিং, সামথিং হি নোজ হিমসেলফ ক্যান নট বি হিজ... আর ও তারপর যেই আমার... ব্রেস্টগুলো চুষতে লাগল, আই ওয়াজ টোটালি ক্লুলেস হোয়াট টু ডু। আই কাণ্ট ব্লেম হিম এণ্টায়ারলি, আমি নিজেই তো ওরকম সিডাকট্রেস এর মত সেজে ওর কাছে গেছি। আই রিয়ালাইজড হোয়াট টেলিং এফেক্ট মাই বডি ক্যান হ্যাভ অন আ ডিসেণ্ট চ্যাপ লাইক হিম। আর ওর কামড়ানোটা, ইট ওয়াজ জাস্ট আ মোমেণ্ট অফ ফ্রেঞ্জি। হি ডিডণ্ট বাইট মি লাইক আ রেপিস্ট, ইট ওয়াজ মোর লাইক আ... আ লাভ বাইট ফ্রম অ্যান এক্সাইটেড লাভার’
 
ওর একটানা বলে চলা কথাগুলো যেন এক কান দিয়ে প্রবেশ করে আরেক কানের দিকে প্রবাহিত হয়ে ঘরের বাতাসে ফের মিশে যাচ্ছে। কর্ণেন্দ্রিয়ের সাথে মস্তিষ্কের যোগাযোগ বুঝিবা এখন বিচ্ছিন্ন, কিংবা আমার বোধশক্তিটাই আকস্মিকতার মরচে পড়ে ভোঁতা হয়ে গেছে? অসাড় জিহ্বা তারইমধ্যে যান্ত্রিক প্রতিবর্তের তাড়নায় কোনওমতে সচল হল।
 
‘তাহলে চড় মারলি কেন?
 
বহুক্ষণ পরে বিচ্ছিন্ন হল দৃষ্টিসংযোগ। বিচ্ছিন্ন হল, নাকি বিচ্ছিন্ন করল? ওর মুখের ওপর দিয়ে চকিতে খেলে যাওয়া রক্তাভা কিসের ইঙ্গিত দিচ্ছে, সে কি ওর লুকিয়ে রাখা অপরাধবোধ? না, দৃঢ়প্রত্যয়ে আবার আমার দিকে ফিরেছে, চোখের মধ্যে সংকল্প। যেন দাঁতে দাঁত চেপে স্বীকার করবে সত্যিটা। করলও তাই।
 
‘অ্যাকচুয়ালি সেটার কারণ সঞ্জীব নয়, আমি নিজে’, প্রেমিকের বিস্মিত দৃষ্টি উপেক্ষা করে বলে চলল, ‘জানি না এটা ওয়াইনের এফেক্ট ছিল নাকি ওর চোখের আকুতি, বাট আই ওয়াজ স্লোলি গেটিং টার্নড অন। মে বি বাই দি এম্বিয়েন্স, মে বি বিকজ অফ আওয়ার ক্লোজ প্রক্সিমিটি, মে বি বিকজ অফ ইয়োর লং অ্যাবসেন্স অর মে বি... সিয়িং হিজ জায়েণ্ট টুল’, গলাটা শেষদিকে কেমন কেঁপে গেল, সেইসঙ্গে টের পেলাম ওর শরীরে মৃদু কম্পন। অঝোরধারে বরিষণের মাঝে মাধবীলতার ফুলে যেমন থিরথির কাঁপন জাগে... সামান্য কিন্তু নিশ্চিত, একটানা লয়ে কাঁপতে থাকে... অনেকটা সেরকম। এ কাঁপা ভয়ের ততটা নয়, রোমাঞ্চের যতখানি। যেন কুমারীর অপাপবিদ্ধ দেহ সহসা স্পর্শ করে ফেলেছে কোনও অচেনা পুরুষের দীর্ঘ, সুকঠিন শিশ্ন। আচমকাই মাথার মধ্যে বিদ্যুচ্চমক, ওর শরীরও কি তবে সেই নিষিদ্ধ স্পর্শ স্মরণ করে রোমাঞ্চে পুলকিত হচ্ছে? ভাবনার মাঝেই অনুভব করলাম কোমরের নীচে, দুই উরুর সন্ধিস্থলে ক্রমশ জাগ্রত পৌরুষের অস্তিত্ব... আরেকটু উত্তেজনার ইন্ধন পেলেই যা ছূঁয়ে ফেলবে প্রেয়সীর উন্মুক্ত নিরাবরণ জঙ্ঘা। সন্তর্পণে নিজের দেহকাণ্ডকে কিছুটা সরিয়ে নিই, আসন্ন বিপদের আশঙ্কায় চোখ চলে যায় ওর চোখের দিকে, দেখে ফেলেনি তো? নাঃ, সে নিজের স্মৃতিচারণে বিভোর...
 
‘ইট ওয়াজ আ কমপ্লিটলি নিউ সিচুয়েশান আই নেভার ফেসড বিফোর। ও যেন একটা ট্রান্সের মধ্যে চলে গেছিল। গোটা মুখচোখ লাল, হি ওয়াজ ব্রিদিং সো হেভিলি, লাইক আ ড্রাউনিং ম্যান গ্যাসপিং ফর এয়ার অ্যাণ্ড... আই ডিডন্ট টেল ইউ দিস বিফোর, হি ওয়াজ কন্টিনিউয়াসলি মার্মারিং দ্যাট... হি লাভস মি’, ও নিজেই বুঝি দম নেওয়ার জন্য একটু থামল, বুকভরা বাতাসের ভারে পেলব স্তনগুলো উত্থিত হল ইঞ্চিখানেক, ‘ইট হ্যাজ বিন আ লং লং টাইম সিন্স এনিওয়ান বাট ইউ আটার্ড দোজ ওয়ার্ডস টু মি... আই গট... আই ওয়াজ সো হর্নি দ্যাট আই কান্ট টেল ইউ হানি! ফাইন্যালি ও যখন আমার... বুবস নিয়ে খেলা করছিল, আই সাডেনলি ফেল্ট মাই নিপলস ওয়্যার পোকিং থ্রু মাই ব্লাউজ, ওহ গড! ইউ কান্ট ইম্যাজিন হাউ এমব্যারাসিং ইট ওয়াজ ফর মি... অ্যাণ্ড অ্যাট দা সেম টাইম হাউ এক্সাইটিং, হাউ সেক্সি... আমি প্লেজারের চোটে ওর মাথাটা নিজের বুকে জড়িয়ে ধরেছিলাম ফর আ মোমেণ্ট, আর তখনই ও... হি বিট মাই ব্রেস্ট, রাইট দেয়ার’, পলকের জন্য বিরতি। তারপর আবার মুখর রমণীকণ্ঠ, ‘আই ফেল্ট এনর্মাস পেইন অ্যাণ্ড আই অলসো ক্যুড ফিল দি অ্যাবসোলিউট প্লেজার থ্রু দ্যাট পেইন। আমি... ফর আ মোমেণ্ট চাইছিলাম ওকে পেতে... মে বি ওকে নয়, ওর মধ্যে দিয়ে তোকেই পেতে চাইছিলাম... আমি জানি না কি চাইছিলাম এক্স্যাক্টলি... ডোন্ট রিয়্যালি নো হোয়াট ওয়াজ দ্যাট। অ্যাণ্ড দেন আই কেম টু মাই সেন্সেস... আর আমার এত গিলটি ফিল হচ্ছিল! আই ওয়াজ সো সো অ্যাশেমড অফ মাইসেলফ, আমার আর্মস তখনও ওকে জড়িয়ে ছিল... অ্যাণ্ড আই ওয়াজ ট্রাইং টু গেট রিড অফ হিজ এমব্রেস, বাট আই ক্যুডণ্ট... হি ইজ সো স্ট্রং, বাট আই হ্যাড টু গেট আউট অফ দ্যাট মেস অ্যাট এনি কস্ট... সো, আই হ্যাড নো অপশন বাট টু স্ল্যাপ হিম... বাকিটা তো তুই অলরেডি জানিস’
 
নারীর কথকতা স্তব্ধ হয়েছে, অন্তত সাময়িক। পরপুরুষের আলিঙ্গনে কাটানো মুহূর্তের রোমন্থন নিজ প্রেমিকের কাছে করার গ্লানিতে, অথবা রোমাঞ্চঘন সেই বিকেলের ক্ষণিক উত্তেজনার লীনতাপে, এখনও তার দেহ উষ্ণতা বিকিরণ করে চলেছে ক্রমাগত। স্মৃতিসঞ্জাত আবেগে অধর স্ফুরিত, শ্বাস পড়ছে ঘন ঘন, দয়িতের হাতের মুঠোয় ধরা পড়া স্তনের বৃন্ত জেগে উঠেছে আচমকা। ওর বুকের লাবডুব চতুর্গুণ হয়ে আছড়ে পড়ছে আমার করতলে। শ্রান্ত, উদ্বেল মানবী টেরও পায়নি তার অনাবৃত জঙ্ঘাদেশে কঠিন পৌরুষের আতপ্ত স্পর্শ। হঠাৎ মায়ায় ঘিরে ধরল আমাকে, নিজের সবটুকু সততা উজাড় করে প্রেমিকের কাছে এমন স্বীকারোক্তি দিতে আজকের দিনে ক’টা মেয়ে পারে? পারলেও তা করে কতজন? আমি নিজেই কি পেরেছি মনের দরজা ওর সামনে হাট করে খুলে ধরতে?
 
মুহূর্তেকের জন্য বিষাদগ্রস্ত হয়ে পড়ার আগেই মাথাচাড়া দিয়েছে দুর্নিবার কৌতূহল... বম্বেতে কি ঘটেছিল সেটাই তো এখনও অজানা রয়ে গেল! স্তনের ওপরে মৃদু চাপ দিই মনোযোগ আকর্ষণের জন্য, কোনও সাড়া মেলে না। হয়তো ধরে নিয়েছে এতদিনের অদর্শনের পর হাতের খিদে মেটাচ্ছি এইভাবে... অগত্যা পেষণের মাত্রা বাড়াতে বাধ্য হই।
 
সকাল থেকে উপর্যুপরি দু’বার রমণের ক্লান্তি আর দ্বিতীয় পুরুষের লাঞ্ছনার স্মৃতির অবসাদ সারা দেহমনে মেখে শুয়ে থাকা নারী চোখ মেলে তাকায়। মিনতিভরা চাহনিতে নীরব আর্তি। সে সব অগ্রাহ্য করে স্বার্থপর আমি প্রশ্ন করে চলি...
 
‘অয়েণ্টমেণ্ট লাগালো কখন?
 
মৃন্ময়ী মূর্তি সচকিতে নড়েচড়ে ওঠে, ‘বললাম তো বম্বেতে যাওয়ার পর’, খানিক ভেবে নেয় কি যেন, ... এখনই শুনবি?
 
শোনার জন্য যে কি অপরিসীম আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষমান এই হৃদয় তা তো আর প্রকাশ করতে পারি না! তাও মনের ভাব যথাসাধ্য গোপন করে চেষ্টা করি রাজি করানোর, ‘হ্যাঁ বল, শুনছি তো’
 
‘উম্মম্ম পরে বলব’, সারা গা মুচড়ে অদ্ভুত মাদকতাময় এক দেহভঙ্গি করে আদরিণী, ‘এখন কিছু খাওয়া না প্লিজ! অ্যাম ভেরি ভেরি হাংগ্রি হানি, সেই সকাল থেকে না খেয়ে আছি’
 
এমন কাতর অনুনয়ের কাছে পুরুষ চিরকাল অসহায়। উদগ্র কৌতূহল আপাতত নিবৃত্ত করে উঠে যাই কিচেনের দিকে। না শোনা অবধি আত্মজল্পনাই সম্বল। যাওয়ার আগে অবশ্য একটু আদিম রসিকতার লোভ সংবরণ করতে পারি না, ‘না খেয়ে আছিস বলছিস কেন, খাওয়ালাম যে এত কিছু?
 
‘কই কি আবার খাওয়ালি, অ্যাম লিটার‍্যালি স্টার্ভিং!’, অকৃত্রিম জিজ্ঞাসা ওর চোখে।
 
ঠোঁটের অনুচ্চার সঞ্চালনে চ-কারান্ত তিন-অক্ষর শব্দের উল্লেখমাত্র রাঙিয়ে ওঠে দুই গাল, সলজ্জ কণ্ঠ বেজে ওঠে, ‘উফফ ইউ আর ট্রুলি ইনকরিজিবল... শেমলেস কাঁহিকা!’ চোখ পাকিয়ে ছদ্ম কোপের আভাস ফুটিয়ে তুলে চকিতে গাত্রোত্থান, এলানো একঢাল চুলকে খোঁপার শাসনে বেঁধে ব্যস্ত হয়ে পড়ে কয়েক সপ্তাহব্যাপী গিন্নীপনার বিরতিতে ছেদ টানতে। ট্রলিব্যাগের আচ্ছাদন খুলে বের করছে ভেতরের যাবতীয় সামগ্রী, একে একে গুছিয়ে রাখছে জায়গামত। খানিকপরেই মতপরিবর্তন, দৃষ্টি পড়েছে আসবাবপত্রের ওপর। অগোছালো টেবিল এক মিনিটের মধ্যেই তকতকে পরিষ্কার, বাতিল কাগজ আর অন্যান্য অপ্রয়োজনীয় জিনিষের ঠাঁই হল ট্র্যাশবিনে। চোখ সরু করে নাক কুঁচকে গভীর অভিনিবেশে নিরীক্ষণ করছে চারদিক, ব্যাচেলর পুরুষের ঘরের পরিচ্ছন্নতার ছিদ্রান্বেষণে মগ্ন। ব্যস, শুরু হয়ে গেল নিরবচ্ছিন্ন ঘরকন্না, এখন চলবে ঘণ্টাখানেক।
 
এই হল শাশ্বত নারী। ক্ষণে ক্ষণে রূপ বদলায়। কখনও মোহিনী, কখনও বা মানিনী, পরক্ষণেই ঘর-গেরস্থালিতে বুঁদ হয়ে থাকা অভিজ্ঞ গৃহিণী। হাজার বছর পেরিয়ে গেলেও তার আবেদন একইরকম অমলিন!
 
প্যানকেক বানানোর উদযোগ করছি, বেডরুম থেকে রান্নাঘরের সংকীর্ণ পরিসরে ভেসে আসছে বিক্ষিপ্ত দু’-এক টুকরো অসন্তোষবার্তা। ঘর গোছানোর ফাঁকে আপনমনে গজগজ করে চলেছে। তার অধিকাংশ, বলাই বাহুল্য, আমায় এবং আমার পারিপাট্যের অভাবকে লক্ষ্য করে... কান না দিয়ে একাগ্রচিত্তে নিজের কাজ করে যাই। আর যাই হোক এ শর্মার রান্নার হাতকে উনি আজ অবধি অবজ্ঞা করতে পারেননি। জবরদস্ত একটা ব্রেকফাস্ট মুখের সামনে পেলে আপনা থেকেই এত তর্জন-গর্জন থেমে যাবে। তখন পটিয়ে পাটিয়ে বম্বের ঘটনাটা পেট থেকে বের করার আরেকটা চেষ্টা করব... অনবরত এ উৎকণ্ঠা আর সহ্য হয় না। আচ্ছা কি এমন ঘটেছিল যে পরে বলবে বলে ঝুলিয়ে রাখল? সঞ্জীবের ফ্ল্যাটের ঘটনার থেকেও বেশি সিরিয়াস কিছু? নাকি এমনিই ক্লান্ত হয়ে গিয়ে বিশ্রাম চাইল? অথবা প্রথম দিনের ঘটনাটা আরও একবার বলে আমার প্রতিক্রিয়াটা যাচিয়ে নিল, এখন বৃহত্তর সত্য উন্মোচনের জন্য মানসিক প্রস্তুতি নিচ্ছে... দুত্তোর, একা একা এই আত্মপীড়নের কোনও অর্থ হয়! তার চেয়ে বরং ডিম ফেটানোয় মন দিই।
 
এতাল বেতাল ভাবনার মাঝে সহসা যতিচিহ্ন, কিচেনের দ্বারে এসে উপস্থিত মহারানী। কণ্ঠস্বরে অসহিষ্ণুতার প্রবল ছোঁয়া। কি ব্যাপার, ভৃত্যের খিদমদগারিতায় ভুল ধরতে নাকি? না অন্য কোনও উপলক্ষ? সুতীক্ষ্ণ ভর্ৎসনায় দ্রুতই পরিষ্কার হয়ে গেল।
 
‘কি ব্যাপার, কানের মাথা খেয়েছিস নাকি? ডাকছি এত করে শুনতে পাচ্ছিস না???
‘ও আচ্ছা সরি... মানে বুঝতে পারিনি ঠিক’
‘ওঘরে দয়া করে আয় একবার’
‘এখন যেতে পারব না, কি হয়েছে বল না’
‘আমি কি হাত গুটিয়ে বসে থাকব ততক্ষণ, কি এমন রাজকার্য করছিস?, বামাকণ্ঠ একপর্দা উঁচুতে ঝেঁঝে ওঠে।
 
আপনারই প্রাতরাশের বন্দোবস্ত করছি মালকিন, তবে সে কথা তো এখন মুখে আনার জো নেই। অগত্যা শান্তশিষ্ট পত্নীনিষ্ঠের মত লাঙ্গুল উঁচিয়ে সুড়সুড় করে ওনাকে অনুসরণ করি। শয্যাকক্ষে এসে চক্ষু চড়কগাছ। ট্রলিব্যাগ আর দেয়াল-লাগোয়া কাবার্ডের একটা জামাকাপড়ও বোধহয় স্বস্থানে নেই। স্তূপীকৃত বস্ত্রসম্ভার ডাঁই করে রাখা মেঝেতে। কয়েকটা খাটের ওপর বা এদিক সেদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে। যেন দক্ষযজ্ঞের আয়োজন হচ্ছে। সবকিছুর কেন্দ্রস্থলে উদ্ভ্রান্তের মত দাঁড়িয়ে দক্ষকন্যা... ওহো ঐ নামটা তো এখন নাকি আর প্রযোজ্য নয়! অসহায়ের মত পর্যায়ক্রমে আমার মুখ আর কাপড়ের রাশি দেখে চলেছে, একটু আগের দাপট কোথায় উধাও...
 
‘কি করি বল তো, কোনটা কোথায় থাকবে কিচ্ছু বুঝতে পারছি না’, ন্যাকামি মেশানো কাঁদো কাঁদো গলায় করুণ আর্তি। ঠেকায় পড়লে প্রায়শই এই স্বর বেরিয়ে আসে।
‘তোকে এখন এসব হাঁটকাতে কে বলল? সবকিছু না গোছাতে পারলে কি পিছনে কামড়ায়?
‘চুপ কর, ওয়ান উইক হয়ে গেছে ফিরেছিস, এখনও ব্যাগ যে কে সেই পড়ে আছে... নিজে গোছাসনি কেন? কাবার্ডটার কি অবস্থা দেখেছিস? এভরিথিং ইজ ইন ডিসঅ্যারে’, নাও ঠেলা... যত দোষ সব এখন এই শ্রীমান নন্দ ঘোষ মহাশয়ের।
‘আচ্ছা ঠিক আছে আগে খেয়ে নে তারপরে না হয় এসব করিস’
 
সমাধানটা মনঃপূত হয়নি সেটা দৃশ্যতই বোঝা যাচ্ছে। গোঁজ হয়ে আবার ব্যাপৃত নিজের গৃহস্থালীতে, আমিও আরব্ধ রন্ধনকার্য সমাধা করতে পাকশালায়। প্রাতরাশ বানানো সমাপ্ত, একে একে ট্রে তে সাজিয়ে নিচ্ছি টোস্ট, প্যানকেক, মাখনের কৌটো, ধূমায়িত কফির পেয়ালা। এঘরে এসে আবারও চমৎকৃত, অল্প সময়ের মধ্যে কি তুরন্ত পট-পরিবর্তন! মেঝেতে পা ছড়িয়ে থেবড়ে বসে এই চার দেওয়ালের অঘোষিত সম্রাজ্ঞী, হাতে ধরা সদ্যকেনা নিভাঁজ ময়ূরকণ্ঠী বরণ কাঞ্জিভরম সিল্ক। থেকে থেকে আঘ্রাণ নিচ্ছে সন্তর্পণে, উজ্জ্বল চোখের তারায় হঠাৎ-পাওয়া ভাললাগার পরশ। আমায় আসতে দেখে সামলে নেওয়ার একটা ব্যর্থ প্রয়াস হল বটে, তবে গদগদ স্বরে পুরোপুরি লুকোনো গেল না...
 
‘কার জন্য এটা?
 
বলিহারি! ন্যাকামির কোনও সীমা-পরিসীমা নেই! তাও একঝলক স্বস্তি ছুঁয়ে গেল আমায়। ঝাড়া তিনটি ঘণ্টা সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগে, খ্যাতনামা বস্ত্রবিপণির বিক্রেতাদের ক্রমাগত উত্যক্ত করে খরিদ করা তবে বিফলে যায়নি!
 
‘খুব স্পেশ্যাল একজনের জন্য’
‘তাই? আমি কি চিনি তাকে? এনি নিউ গার্লফ্রেণ্ড দ্যাট আই শ্যুড বি ওরিড অ্যাবাউট?
‘নোপ, ফর দ্য গুড ওল্ড ওয়ান’, পাশে বসে তেরছাভাবে জড়িয়ে নিয়েছি আলিঙ্গনে। মনের সুখে চটকাচ্ছি কমকান্তি তনু। ও যেন সোহাগে গলে যাচ্ছে আমার আলতো নিষ্পেষণে...
‘উম্মম্মম্মম্ম’, মুগ্ধ আঙুল তারই মধ্যে বিচরণ করছে শাড়ির আঁচলের প্রান্তদেশে, মেপে নিচ্ছে শৈল্পিক কারুকাজের ঘনত্ব। পছন্দ যে হয়েছে সেটা জানলার কাঁচ ভেদ করে পর্দার আড়াল সরিয়ে জোর করে ঘরে ঢুকে পড়া দিনের আলোর মতই স্পষ্ট। সানুনাসিক গলায় অনুযোগের ছদ্মবেশে প্রশস্তির সুর, ‘কি দরকার ছিল এত দাম দিয়ে কেনার?
 
স্থির থাকা গেল না। মুহূর্তে রমণীকে আরও কাছে টেনে নিয়েছি, এত যত্নে কেনা বস্ত্রভূষণ দূরে সরে গেছে অবহেলায়। দুই শরীরের মধ্যে একচিলতে বাতাস গলারও জায়গা নেই আর। প্রবল আশ্লেষে বাঁধা পড়ল মানব-মানবী। উন্মত্ত, দিশেহারা চুমুতে ভরে যাচ্ছে দু’জনের গাল, গলা, চোখ, ঠোঁট। তৃষিত চকোরের মত পান করছি অধরসুধা, ছোট ছোট দংশনের যাতনায় শিউরে উঠছে ওর বিম্বোষ্ঠ। প্রথম ফাল্গুনের মৃদুমন্দ সকালেও নাকের শীর্ষবিন্দুতে জমা হয়েছে উদ্দীপনার স্বেদকণিকারা। সোহাগে অভিভূত কবরী বাঁধনহারা। এলো কেশ অশান্ত পাহাড়ি ঝরনার মত প্রবাহিত হল আধখোলা পিঠের বক্রতায়, পীনোন্নত বুকের তরঙ্গায়িত ভূমিতে। দু’-এক ফোঁটা অলকবিন্দু ছিটকে ঝরে পড়েছে আমার মুখেও, গালের উপর সযত্নে আদরের চিহ্ন এঁকে দিয়ে গেল। পেলব দুই বাহু আকর্ষণে বেঁধে নিতে গিয়েও হঠাৎ দূরে ঠেলে দিয়েছে। পুরুষের অবুঝ দাবীকে শাসন করছে কণ্ঠলগ্না নারী।
 
‘উম্মম্ম হানি, এখন আর না’
‘কি হল, এদিকে আয়’, বিচ্ছেদের আশঙ্কায় খামচে ধরি চন্দনের অদৃশ্য পত্রলেখা-শোভিত বাম পয়োধর।
‘খেতে দিবি না? সকাল থেকে তো শুধু চটকেই যাচ্ছিস’
 
অতঃপর, মিলন-প্রচেষ্টায় ক্ষান্তি দিতে হয়। নীরব আহারে ব্যস্ত দু’জনেই, ওর মুগ্ধ দৃষ্টি ক্ষণে ক্ষণে ছুঁয়ে যাচ্ছে অদূরে বিছানো কাঞ্জিভরমের মনোলোভা দেহপট। এখনও জানে না এর থেকেও চমকপ্রদ উপহার অপেক্ষা করে আছে। মিষ্টি মুখের প্রতিটি রেখায় চুঁইয়ে পড়া গোপন তৃপ্তির আভাস তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করি, সারপ্রাইজটা একটু পরে ভাঙলেও চলবে।
 
পোর্সেলিনের পেয়ালার কোণ থেকে উঁকি দেয় দুষ্টুমি মাখানো চোখ, ‘অ্যাই, সিনেমা দেখতে যাবি?
‘কি সিনেমা?
‘উম্ম সেটা তো পরে ডিসাইড করলেও চলবে’
‘আজ আর বেরোনোর কি দরকার, সবে তো ফিরলি’, অনীহার সুরটা চাপা থাকে না আমার গলায়। আরও আদরের আকাঙ্ক্ষা বাকি রয়েছে, তিনটে অদেখা সপ্তাহের চাহিদা দু’বারের চরম স্খলনেও পূর্ণ হয়নি ঠিকমত।
‘গতরটা একটু নাড়া না, এত কুঁড়ে কেন তুই, উফফ!’, অসহিষ্ণু রমণী এত সহজে হার মানতে নারাজ।
 
এহেন অভিযোগের পর নিতান্ত পুরুষত্বের খাতিরেই রাজি হওয়া ছাড়া গত্যন্তর নেই। অবশ্য একটা আউটিং হলে মন্দ হয় না, তাছাড়া... শত হোক বিবির খুশিতেই মিঞার খুশি।
 
‘কখন যেতে চাস?
‘নাউ ইটস অলমোস্ট টেন থার্টি, এখনই রেডি হই, তাহলে সাড়ে বারোটার শো তে আরামসে পৌঁছে যাব’
‘ওকে, অ্যাজ ইউ উইশ’
‘রেডি হচ্ছি তাহলে, তুই অনলাইনে দেখ কোন টিকিট বুক করবি’
 
অর্থাৎ ওনার নিজের আলাদা কোনও পছন্দ নেই। অর্থাৎ সিনেমা দেখাটা মুখ্য নয়, মুখ্য বেড়ু-বেড়ু করতে বেরোনো। অর্থাৎ এখন উনি ঘটা করে সাজতে বসবেন। মন্দ কি!
 
ইণ্টারনেটে প্রবেশের আগেই হঠাৎ মনে পড়েছে, ট্রলিব্যাগের ভিতরে সংগোপনে রক্ষিত লঁজারির প্যাকেটটা বের করে বাড়িয়ে ধরি। অপ্রত্যাশিত চমকে নিখুঁত-চর্চিত ভ্রূলতায় ভাঁজ।
 
‘হোয়াট’স দিস?
 
নিরুচ্চারে হাতে তুলে দিই। প্যাকেটের গায়ে বড় বড় হরফে ছাপা নাম আর বিবরণী নজরে আসতেই পানপাতা মুখশ্রী লজ্জারাঙা। চোখে অপার বিস্ময়, প্রথম প্রভাতের অরুণিমার আভা দুই কমনীয় গালে। কে যেন সেখানে মুঠো মুঠো আবির ছুঁড়ে মেরেছে!
 
কিছুক্ষণ এই অপার্থিব দৃশ্যের সামনে দাঁড়িয়ে থেকে লিভিং রুমে চলে আসি। আন্তর্জালে সন্ধান করছি নিকটবর্তী প্রেক্ষাগৃহে মনোমত চলচ্চিত্রের। মাথার মধ্যে অবশ্য অন্য ছক ঘুরে চলেছে, এমন মুভি বাছতে হবে যাতে ওর কোমল হৃদয় সহজেই আর্দ্র হয়ে পড়ে। বম্বের পুরো ঘটনাটা জানা সেক্ষেত্রে সহজতর হবে, আবেগের তোড়ে সব বলে ফেলার প্রভূত সম্ভাবনা। আবার সিনেমা দেখে বেশি কান্নাকাটি করলেও মুশকিল, রোদনোন্মুখ নারীর উচ্চারণ বোঝাই তখন দায়। অনেক খুঁজেপেতে একটা হলিউডি রম-কম পাওয়া গেল, টিকিটও সহজলভ্য। এটাই এই মুহূর্তে প্রয়োজন, মুখ খোলানোর জন্য।
 
দক্ষ ষড়যন্ত্রকারীর মত নিপাট ভালমানুষ মুখ করে টিকিট বুক করলাম দু’জনের, কোণের ব্যালকনির আধো-অন্ধকারের নিভৃতে। চড়ামূল্যে ক্রয় করা একফালি নির্জনতা। বিশ্বায়নের যুগে এগুলোও এখন খরিদযোগ্য।
 
হঠাৎই নিঃশব্দচরণে পাশে এসে হাজির জেনানা, উল্টোদিকে মুখ করে রয়েছে। বাঁ হাতে ধরা বাহারি কঙ্কতিকা, দেখেই বোঝা যায় কেশসজ্জা মাঝপথে। ঈর্ষণীয় ভরাট দেহলতা সলাজে আবৃত করে রেখেছে শুধুমাত্র ওপর-নীচের অন্তর্বাস। সবেমাত্র পাওয়া প্রণয়-উপচার। জলপ্রপাতের মত চুল আছড়ে পড়েছে সামনে বুকের উপত্যকায়, মসৃণ নির্লোম পিঠের পরিমিতি প্রায় সম্পূর্ণ উন্মুক্ত। জলপাইবর্ণা ত্বকের চালচিত্রে ব্যতিক্রম কেবল আধুনিকতম কাঁচুলির দুই প্রান্ত। অনাবদ্ধ।
 
মেঘবরণ কেশের মধ্যে ব্যস্ত চিরুনি চালাতে চালাতেই নরম স্বরে অনুরোধ ভেসে এল,
 
‘হুকটা লাগিয়ে দে না প্লিজ!’
[+] 4 users Like অনঙ্গপাল's post
Like Reply
#17
(23-02-2021, 08:28 PM)অনঙ্গপাল Wrote: ‘লাস্ট সানডের পরে আমার মেণ্টালিটি অনেকটা চেঞ্জ করেছে। সঞ্জীবের সাথে ওর বাড়িতে... অ্যাম নট সেয়িং যে ওটা দারুণ এক্সপেরিয়েন্স ছিল বাট, বাট... আই লার্নড আ লট ফ্রম দ্যাট। হি ইজ নট অ্যাট অল আ ব্যাড গায়, র‍্যাদার আই উড সে দি অপোজিট। অ্যাণ্ড স্টিল হি এণ্ডেড আপ মলেস্টিং মি, ইভন দো... হি, হি লাভস মি’, যেন বহুযুগের ওপার থেকে এইমাত্র আমার দিকে চোখ মেলে তাকাল... পূর্ণদৃষ্টিতে, স্পষ্ট ভাষায় উচ্চারিত পরবর্তী শব্দগুলো, ‘ইয়েস আই অ্যাম মোস্ট সার্টেন অ্যাবাউট ইট। দ্য ওয়ে হি ওয়াজ টাচিং মি, সো টেণ্ডার, সো জেন্টল... আমি তোকে ঠিক বোঝাতে পারব না বাট ট্রাস্ট মি, মেয়েরা এগুলো ঠিক বুঝতে পারে। ইভন যখন ও আমার... বুকে হাত রেখেছিল... পাগলের মত টিপছিল তখনও আমার একটুও ব্যথা লাগেনি বরং ওকে থামাবার বদলে ওর চোখে চোখ আটকে গেছিল। আই ক্যুড রিড হিজ মাইণ্ড ইন হিজ ডিপ আইজ... ইট ওয়াজ লাইক হি ওয়াজ বেগিং মি ফর সামথিং, সামথিং হি নোজ হিমসেলফ ক্যান নট বি হিজ... আর ও তারপর যেই আমার... ব্রেস্টগুলো চুষতে লাগল, আই ওয়াজ টোটালি ক্লুলেস হোয়াট টু ডু। আই কাণ্ট ব্লেম হিম এণ্টায়ারলি, আমি নিজেই তো ওরকম সিডাকট্রেস এর মত সেজে ওর কাছে গেছি। আই রিয়ালাইজড হোয়াট টেলিং এফেক্ট মাই বডি ক্যান হ্যাভ অন আ ডিসেণ্ট চ্যাপ লাইক হিম। আর ওর কামড়ানোটা, ইট ওয়াজ জাস্ট আ মোমেণ্ট অফ ফ্রেঞ্জি। হি ডিডণ্ট বাইট মি লাইক আ রেপিস্ট, ইট ওয়াজ মোর লাইক আ... আ লাভ বাইট ফ্রম অ্যান এক্সাইটেড লাভার’
 
ওর একটানা বলে চলা কথাগুলো যেন এক কান দিয়ে প্রবেশ করে আরেক কানের দিকে প্রবাহিত হয়ে ঘরের বাতাসে ফের মিশে যাচ্ছে। কর্ণেন্দ্রিয়ের সাথে মস্তিষ্কের যোগাযোগ বুঝিবা এখন বিচ্ছিন্ন, কিংবা আমার বোধশক্তিটাই আকস্মিকতার মরচে পড়ে ভোঁতা হয়ে গেছে? অসাড় জিহ্বা তারইমধ্যে যান্ত্রিক প্রতিবর্তের তাড়নায় কোনওমতে সচল হল।
 
‘তাহলে চড় মারলি কেন?
 
বহুক্ষণ পরে বিচ্ছিন্ন হল দৃষ্টিসংযোগ। বিচ্ছিন্ন হল, নাকি বিচ্ছিন্ন করল? ওর মুখের ওপর দিয়ে চকিতে খেলে যাওয়া রক্তাভা কিসের ইঙ্গিত দিচ্ছে, সে কি ওর লুকিয়ে রাখা অপরাধবোধ? না, দৃঢ়প্রত্যয়ে আবার আমার দিকে ফিরেছে, চোখের মধ্যে সংকল্প। যেন দাঁতে দাঁত চেপে স্বীকার করবে সত্যিটা। করলও তাই।
 
‘অ্যাকচুয়ালি সেটার কারণ সঞ্জীব নয়, আমি নিজে’, প্রেমিকের বিস্মিত দৃষ্টি উপেক্ষা করে বলে চলল, ‘জানি না এটা ওয়াইনের এফেক্ট ছিল নাকি ওর চোখের আকুতি, বাট আই ওয়াজ স্লোলি গেটিং টার্নড অন। মে বি বাই দি এম্বিয়েন্স, মে বি বিকজ অফ আওয়ার ক্লোজ প্রক্সিমিটি, মে বি বিকজ অফ ইয়োর লং অ্যাবসেন্স অর মে বি... সিয়িং হিজ জায়েণ্ট টুল’, গলাটা শেষদিকে কেমন কেঁপে গেল, সেইসঙ্গে টের পেলাম ওর শরীরে মৃদু কম্পন। অঝোরধারে বরিষণের মাঝে মাধবীলতার ফুলে যেমন থিরথির কাঁপন জাগে... সামান্য কিন্তু নিশ্চিত, একটানা লয়ে কাঁপতে থাকে... অনেকটা সেরকম। এ কাঁপা ভয়ের ততটা নয়, রোমাঞ্চের যতখানি। যেন কুমারীর অপাপবিদ্ধ দেহ সহসা স্পর্শ করে ফেলেছে কোনও অচেনা পুরুষের দীর্ঘ, সুকঠিন শিশ্ন। আচমকাই মাথার মধ্যে বিদ্যুচ্চমক, ওর শরীরও কি তবে সেই নিষিদ্ধ স্পর্শ স্মরণ করে রোমাঞ্চে পুলকিত হচ্ছে? ভাবনার মাঝেই অনুভব করলাম কোমরের নীচে, দুই উরুর সন্ধিস্থলে ক্রমশ জাগ্রত পৌরুষের অস্তিত্ব... আরেকটু উত্তেজনার ইন্ধন পেলেই যা ছূঁয়ে ফেলবে প্রেয়সীর উন্মুক্ত নিরাবরণ জঙ্ঘা। সন্তর্পণে নিজের দেহকাণ্ডকে কিছুটা সরিয়ে নিই, আসন্ন বিপদের আশঙ্কায় চোখ চলে যায় ওর চোখের দিকে, দেখে ফেলেনি তো? নাঃ, সে নিজের স্মৃতিচারণে বিভোর...
 
‘ইট ওয়াজ আ কমপ্লিটলি নিউ সিচুয়েশান আই নেভার ফেসড বিফোর। ও যেন একটা ট্রান্সের মধ্যে চলে গেছিল। গোটা মুখচোখ লাল, হি ওয়াজ ব্রিদিং সো হেভিলি, লাইক আ ড্রাউনিং ম্যান গ্যাসপিং ফর এয়ার অ্যাণ্ড... আই ডিডন্ট টেল ইউ দিস বিফোর, হি ওয়াজ কন্টিনিউয়াসলি মার্মারিং দ্যাট... হি লাভস মি’, ও নিজেই বুঝি দম নেওয়ার জন্য একটু থামল, বুকভরা বাতাসের ভারে পেলব স্তনগুলো উত্থিত হল ইঞ্চিখানেক, ‘ইট হ্যাজ বিন আ লং লং টাইম সিন্স এনিওয়ান বাট ইউ আটার্ড দোজ ওয়ার্ডস টু মি... আই গট... আই ওয়াজ সো হর্নি দ্যাট আই কান্ট টেল ইউ হানি! ফাইন্যালি ও যখন আমার... বুবস নিয়ে খেলা করছিল, আই সাডেনলি ফেল্ট মাই নিপলস ওয়্যার পোকিং থ্রু মাই ব্লাউজ, ওহ গড! ইউ কান্ট ইম্যাজিন হাউ এমব্যারাসিং ইট ওয়াজ ফর মি... অ্যাণ্ড অ্যাট দা সেম টাইম হাউ এক্সাইটিং, হাউ সেক্সি... আমি প্লেজারের চোটে ওর মাথাটা নিজের বুকে জড়িয়ে ধরেছিলাম ফর আ মোমেণ্ট, আর তখনই ও... হি বিট মাই ব্রেস্ট, রাইট দেয়ার’, পলকের জন্য বিরতি। তারপর আবার মুখর রমণীকণ্ঠ, ‘আই ফেল্ট এনর্মাস পেইন অ্যাণ্ড আই অলসো ক্যুড ফিল দি অ্যাবসোলিউট প্লেজার থ্রু দ্যাট পেইন। আমি... ফর আ মোমেণ্ট চাইছিলাম ওকে পেতে... মে বি ওকে নয়, ওর মধ্যে দিয়ে তোকেই পেতে চাইছিলাম... আমি জানি না কি চাইছিলাম এক্স্যাক্টলি... ডোন্ট রিয়্যালি নো হোয়াট ওয়াজ দ্যাট। অ্যাণ্ড দেন আই কেম টু মাই সেন্সেস... আর আমার এত গিলটি ফিল হচ্ছিল! আই ওয়াজ সো সো অ্যাশেমড অফ মাইসেলফ, আমার আর্মস তখনও ওকে জড়িয়ে ছিল... অ্যাণ্ড আই ওয়াজ ট্রাইং টু গেট রিড অফ হিজ এমব্রেস, বাট আই ক্যুডণ্ট... হি ইজ সো স্ট্রং, বাট আই হ্যাড টু গেট আউট অফ দ্যাট মেস অ্যাট এনি কস্ট... সো, আই হ্যাড নো অপশন বাট টু স্ল্যাপ হিম... বাকিটা তো তুই অলরেডি জানিস’
 
নারীর কথকতা স্তব্ধ হয়েছে, অন্তত সাময়িক। পরপুরুষের আলিঙ্গনে কাটানো মুহূর্তের রোমন্থন নিজ প্রেমিকের কাছে করার গ্লানিতে, অথবা রোমাঞ্চঘন সেই বিকেলের ক্ষণিক উত্তেজনার লীনতাপে, এখনও তার দেহ উষ্ণতা বিকিরণ করে চলেছে ক্রমাগত। স্মৃতিসঞ্জাত আবেগে অধর স্ফুরিত, শ্বাস পড়ছে ঘন ঘন, দয়িতের হাতের মুঠোয় ধরা পড়া স্তনের বৃন্ত জেগে উঠেছে আচমকা। ওর বুকের লাবডুব চতুর্গুণ হয়ে আছড়ে পড়ছে আমার করতলে। শ্রান্ত, উদ্বেল মানবী টেরও পায়নি তার অনাবৃত জঙ্ঘাদেশে কঠিন পৌরুষের আতপ্ত স্পর্শ। হঠাৎ মায়ায় ঘিরে ধরল আমাকে, নিজের সবটুকু সততা উজাড় করে প্রেমিকের কাছে এমন স্বীকারোক্তি দিতে আজকের দিনে ক’টা মেয়ে পারে? পারলেও তা করে কতজন? আমি নিজেই কি পেরেছি মনের দরজা ওর সামনে হাট করে খুলে ধরতে?
 
মুহূর্তেকের জন্য বিষাদগ্রস্ত হয়ে পড়ার আগেই মাথাচাড়া দিয়েছে দুর্নিবার কৌতূহল... বম্বেতে কি ঘটেছিল সেটাই তো এখনও অজানা রয়ে গেল! স্তনের ওপরে মৃদু চাপ দিই মনোযোগ আকর্ষণের জন্য, কোনও সাড়া মেলে না। হয়তো ধরে নিয়েছে এতদিনের অদর্শনের পর হাতের খিদে মেটাচ্ছি এইভাবে... অগত্যা পেষণের মাত্রা বাড়াতে বাধ্য হই।
 
সকাল থেকে উপর্যুপরি দু’বার রমণের ক্লান্তি আর দ্বিতীয় পুরুষের লাঞ্ছনার স্মৃতির অবসাদ সারা দেহমনে মেখে শুয়ে থাকা নারী চোখ মেলে তাকায়। মিনতিভরা চাহনিতে নীরব আর্তি। সে সব অগ্রাহ্য করে স্বার্থপর আমি প্রশ্ন করে চলি...
 
‘অয়েণ্টমেণ্ট লাগালো কখন?
 
মৃন্ময়ী মূর্তি সচকিতে নড়েচড়ে ওঠে, ‘বললাম তো বম্বেতে যাওয়ার পর’, খানিক ভেবে নেয় কি যেন, ... এখনই শুনবি?
 
শোনার জন্য যে কি অপরিসীম আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষমান এই হৃদয় তা তো আর প্রকাশ করতে পারি না! তাও মনের ভাব যথাসাধ্য গোপন করে চেষ্টা করি রাজি করানোর, ‘হ্যাঁ বল, শুনছি তো’
 
‘উম্মম্ম পরে বলব’, সারা গা মুচড়ে অদ্ভুত মাদকতাময় এক দেহভঙ্গি করে আদরিণী, ‘এখন কিছু খাওয়া না প্লিজ! অ্যাম ভেরি ভেরি হাংগ্রি হানি, সেই সকাল থেকে না খেয়ে আছি’
 
এমন কাতর অনুনয়ের কাছে পুরুষ চিরকাল অসহায়। উদগ্র কৌতূহল আপাতত নিবৃত্ত করে উঠে যাই কিচেনের দিকে। না শোনা অবধি আত্মজল্পনাই সম্বল। যাওয়ার আগে অবশ্য একটু আদিম রসিকতার লোভ সংবরণ করতে পারি না, ‘না খেয়ে আছিস বলছিস কেন, খাওয়ালাম যে এত কিছু?
 
‘কই কি আবার খাওয়ালি, অ্যাম লিটার‍্যালি স্টার্ভিং!’, অকৃত্রিম জিজ্ঞাসা ওর চোখে।
 
ঠোঁটের অনুচ্চার সঞ্চালনে চ-কারান্ত তিন-অক্ষর শব্দের উল্লেখমাত্র রাঙিয়ে ওঠে দুই গাল, সলজ্জ কণ্ঠ বেজে ওঠে, ‘উফফ ইউ আর ট্রুলি ইনকরিজিবল... শেমলেস কাঁহিকা!’ চোখ পাকিয়ে ছদ্ম কোপের আভাস ফুটিয়ে তুলে চকিতে গাত্রোত্থান, এলানো একঢাল চুলকে খোঁপার শাসনে বেঁধে ব্যস্ত হয়ে পড়ে কয়েক সপ্তাহব্যাপী গিন্নীপনার বিরতিতে ছেদ টানতে। ট্রলিব্যাগের আচ্ছাদন খুলে বের করছে ভেতরের যাবতীয় সামগ্রী, একে একে গুছিয়ে রাখছে জায়গামত। খানিকপরেই মতপরিবর্তন, দৃষ্টি পড়েছে আসবাবপত্রের ওপর। অগোছালো টেবিল এক মিনিটের মধ্যেই তকতকে পরিষ্কার, বাতিল কাগজ আর অন্যান্য অপ্রয়োজনীয় জিনিষের ঠাঁই হল ট্র্যাশবিনে। চোখ সরু করে নাক কুঁচকে গভীর অভিনিবেশে নিরীক্ষণ করছে চারদিক, ব্যাচেলর পুরুষের ঘরের পরিচ্ছন্নতার ছিদ্রান্বেষণে মগ্ন। ব্যস, শুরু হয়ে গেল নিরবচ্ছিন্ন ঘরকন্না, এখন চলবে ঘণ্টাখানেক।
 
এই হল শাশ্বত নারী। ক্ষণে ক্ষণে রূপ বদলায়। কখনও মোহিনী, কখনও বা মানিনী, পরক্ষণেই ঘর-গেরস্থালিতে বুঁদ হয়ে থাকা অভিজ্ঞ গৃহিণী। হাজার বছর পেরিয়ে গেলেও তার আবেদন একইরকম অমলিন!
 
প্যানকেক বানানোর উদযোগ করছি, বেডরুম থেকে রান্নাঘরের সংকীর্ণ পরিসরে ভেসে আসছে বিক্ষিপ্ত দু’-এক টুকরো অসন্তোষবার্তা। ঘর গোছানোর ফাঁকে আপনমনে গজগজ করে চলেছে। তার অধিকাংশ, বলাই বাহুল্য, আমায় এবং আমার পারিপাট্যের অভাবকে লক্ষ্য করে... কান না দিয়ে একাগ্রচিত্তে নিজের কাজ করে যাই। আর যাই হোক এ শর্মার রান্নার হাতকে উনি আজ অবধি অবজ্ঞা করতে পারেননি। জবরদস্ত একটা ব্রেকফাস্ট মুখের সামনে পেলে আপনা থেকেই এত তর্জন-গর্জন থেমে যাবে। তখন পটিয়ে পাটিয়ে বম্বের ঘটনাটা পেট থেকে বের করার আরেকটা চেষ্টা করব... অনবরত এ উৎকণ্ঠা আর সহ্য হয় না। আচ্ছা কি এমন ঘটেছিল যে পরে বলবে বলে ঝুলিয়ে রাখল? সঞ্জীবের ফ্ল্যাটের ঘটনার থেকেও বেশি সিরিয়াস কিছু? নাকি এমনিই ক্লান্ত হয়ে গিয়ে বিশ্রাম চাইল? অথবা প্রথম দিনের ঘটনাটা আরও একবার বলে আমার প্রতিক্রিয়াটা যাচিয়ে নিল, এখন বৃহত্তর সত্য উন্মোচনের জন্য মানসিক প্রস্তুতি নিচ্ছে... দুত্তোর, একা একা এই আত্মপীড়নের কোনও অর্থ হয়! তার চেয়ে বরং ডিম ফেটানোয় মন দিই।
 
এতাল বেতাল ভাবনার মাঝে সহসা যতিচিহ্ন, কিচেনের দ্বারে এসে উপস্থিত মহারানী। কণ্ঠস্বরে অসহিষ্ণুতার প্রবল ছোঁয়া। কি ব্যাপার, ভৃত্যের খিদমদগারিতায় ভুল ধরতে নাকি? না অন্য কোনও উপলক্ষ? সুতীক্ষ্ণ ভর্ৎসনায় দ্রুতই পরিষ্কার হয়ে গেল।
 
‘কি ব্যাপার, কানের মাথা খেয়েছিস নাকি? ডাকছি এত করে শুনতে পাচ্ছিস না???
‘ও আচ্ছা সরি... মানে বুঝতে পারিনি ঠিক’
‘ওঘরে দয়া করে আয় একবার’
‘এখন যেতে পারব না, কি হয়েছে বল না’
‘আমি কি হাত গুটিয়ে বসে থাকব ততক্ষণ, কি এমন রাজকার্য করছিস?, বামাকণ্ঠ একপর্দা উঁচুতে ঝেঁঝে ওঠে।
 
আপনারই প্রাতরাশের বন্দোবস্ত করছি মালকিন, তবে সে কথা তো এখন মুখে আনার জো নেই। অগত্যা শান্তশিষ্ট পত্নীনিষ্ঠের মত লাঙ্গুল উঁচিয়ে সুড়সুড় করে ওনাকে অনুসরণ করি। শয্যাকক্ষে এসে চক্ষু চড়কগাছ। ট্রলিব্যাগ আর দেয়াল-লাগোয়া কাবার্ডের একটা জামাকাপড়ও বোধহয় স্বস্থানে নেই। স্তূপীকৃত বস্ত্রসম্ভার ডাঁই করে রাখা মেঝেতে। কয়েকটা খাটের ওপর বা এদিক সেদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে। যেন দক্ষযজ্ঞের আয়োজন হচ্ছে। সবকিছুর কেন্দ্রস্থলে উদ্ভ্রান্তের মত দাঁড়িয়ে দক্ষকন্যা... ওহো ঐ নামটা তো এখন নাকি আর প্রযোজ্য নয়! অসহায়ের মত পর্যায়ক্রমে আমার মুখ আর কাপড়ের রাশি দেখে চলেছে, একটু আগের দাপট কোথায় উধাও...
 
‘কি করি বল তো, কোনটা কোথায় থাকবে কিচ্ছু বুঝতে পারছি না’, ন্যাকামি মেশানো কাঁদো কাঁদো গলায় করুণ আর্তি। ঠেকায় পড়লে প্রায়শই এই স্বর বেরিয়ে আসে।
‘তোকে এখন এসব হাঁটকাতে কে বলল? সবকিছু না গোছাতে পারলে কি পিছনে কামড়ায়?
‘চুপ কর, ওয়ান উইক হয়ে গেছে ফিরেছিস, এখনও ব্যাগ যে কে সেই পড়ে আছে... নিজে গোছাসনি কেন? কাবার্ডটার কি অবস্থা দেখেছিস? এভরিথিং ইজ ইন ডিসঅ্যারে’, নাও ঠেলা... যত দোষ সব এখন এই শ্রীমান নন্দ ঘোষ মহাশয়ের।
‘আচ্ছা ঠিক আছে আগে খেয়ে নে তারপরে না হয় এসব করিস’
 
সমাধানটা মনঃপূত হয়নি সেটা দৃশ্যতই বোঝা যাচ্ছে। গোঁজ হয়ে আবার ব্যাপৃত নিজের গৃহস্থালীতে, আমিও আরব্ধ রন্ধনকার্য সমাধা করতে পাকশালায়। প্রাতরাশ বানানো সমাপ্ত, একে একে ট্রে তে সাজিয়ে নিচ্ছি টোস্ট, প্যানকেক, মাখনের কৌটো, ধূমায়িত কফির পেয়ালা। এঘরে এসে আবারও চমৎকৃত, অল্প সময়ের মধ্যে কি তুরন্ত পট-পরিবর্তন! মেঝেতে পা ছড়িয়ে থেবড়ে বসে এই চার দেওয়ালের অঘোষিত সম্রাজ্ঞী, হাতে ধরা সদ্যকেনা নিভাঁজ ময়ূরকণ্ঠী বরণ কাঞ্জিভরম সিল্ক। থেকে থেকে আঘ্রাণ নিচ্ছে সন্তর্পণে, উজ্জ্বল চোখের তারায় হঠাৎ-পাওয়া ভাললাগার পরশ। আমায় আসতে দেখে সামলে নেওয়ার একটা ব্যর্থ প্রয়াস হল বটে, তবে গদগদ স্বরে পুরোপুরি লুকোনো গেল না...
 
‘কার জন্য এটা?
 
বলিহারি! ন্যাকামির কোনও সীমা-পরিসীমা নেই! তাও একঝলক স্বস্তি ছুঁয়ে গেল আমায়। ঝাড়া তিনটি ঘণ্টা সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগে, খ্যাতনামা বস্ত্রবিপণির বিক্রেতাদের ক্রমাগত উত্যক্ত করে খরিদ করা তবে বিফলে যায়নি!
 
‘খুব স্পেশ্যাল একজনের জন্য’
‘তাই? আমি কি চিনি তাকে? এনি নিউ গার্লফ্রেণ্ড দ্যাট আই শ্যুড বি ওরিড অ্যাবাউট?
‘নোপ, ফর দ্য গুড ওল্ড ওয়ান’, পাশে বসে তেরছাভাবে জড়িয়ে নিয়েছি আলিঙ্গনে। মনের সুখে চটকাচ্ছি কমকান্তি তনু। ও যেন সোহাগে গলে যাচ্ছে আমার আলতো নিষ্পেষণে...
‘উম্মম্মম্মম্ম’, মুগ্ধ আঙুল তারই মধ্যে বিচরণ করছে শাড়ির আঁচলের প্রান্তদেশে, মেপে নিচ্ছে শৈল্পিক কারুকাজের ঘনত্ব। পছন্দ যে হয়েছে সেটা জানলার কাঁচ ভেদ করে পর্দার আড়াল সরিয়ে জোর করে ঘরে ঢুকে পড়া দিনের আলোর মতই স্পষ্ট। সানুনাসিক গলায় অনুযোগের ছদ্মবেশে প্রশস্তির সুর, ‘কি দরকার ছিল এত দাম দিয়ে কেনার?
 
স্থির থাকা গেল না। মুহূর্তে রমণীকে আরও কাছে টেনে নিয়েছি, এত যত্নে কেনা বস্ত্রভূষণ দূরে সরে গেছে অবহেলায়। দুই শরীরের মধ্যে একচিলতে বাতাস গলারও জায়গা নেই আর। প্রবল আশ্লেষে বাঁধা পড়ল মানব-মানবী। উন্মত্ত, দিশেহারা চুমুতে ভরে যাচ্ছে দু’জনের গাল, গলা, চোখ, ঠোঁট। তৃষিত চকোরের মত পান করছি অধরসুধা, ছোট ছোট দংশনের যাতনায় শিউরে উঠছে ওর বিম্বোষ্ঠ। প্রথম ফাল্গুনের মৃদুমন্দ সকালেও নাকের শীর্ষবিন্দুতে জমা হয়েছে উদ্দীপনার স্বেদকণিকারা। সোহাগে অভিভূত কবরী বাঁধনহারা। এলো কেশ অশান্ত পাহাড়ি ঝরনার মত প্রবাহিত হল আধখোলা পিঠের বক্রতায়, পীনোন্নত বুকের তরঙ্গায়িত ভূমিতে। দু’-এক ফোঁটা অলকবিন্দু ছিটকে ঝরে পড়েছে আমার মুখেও, গালের উপর সযত্নে আদরের চিহ্ন এঁকে দিয়ে গেল। পেলব দুই বাহু আকর্ষণে বেঁধে নিতে গিয়েও হঠাৎ দূরে ঠেলে দিয়েছে। পুরুষের অবুঝ দাবীকে শাসন করছে কণ্ঠলগ্না নারী।
 
‘উম্মম্ম হানি, এখন আর না’
‘কি হল, এদিকে আয়’, বিচ্ছেদের আশঙ্কায় খামচে ধরি চন্দনের অদৃশ্য পত্রলেখা-শোভিত বাম পয়োধর।
‘খেতে দিবি না? সকাল থেকে তো শুধু চটকেই যাচ্ছিস’
 
অতঃপর, মিলন-প্রচেষ্টায় ক্ষান্তি দিতে হয়। নীরব আহারে ব্যস্ত দু’জনেই, ওর মুগ্ধ দৃষ্টি ক্ষণে ক্ষণে ছুঁয়ে যাচ্ছে অদূরে বিছানো কাঞ্জিভরমের মনোলোভা দেহপট। এখনও জানে না এর থেকেও চমকপ্রদ উপহার অপেক্ষা করে আছে। মিষ্টি মুখের প্রতিটি রেখায় চুঁইয়ে পড়া গোপন তৃপ্তির আভাস তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করি, সারপ্রাইজটা একটু পরে ভাঙলেও চলবে।
 
পোর্সেলিনের পেয়ালার কোণ থেকে উঁকি দেয় দুষ্টুমি মাখানো চোখ, ‘অ্যাই, সিনেমা দেখতে যাবি?
‘কি সিনেমা?
‘উম্ম সেটা তো পরে ডিসাইড করলেও চলবে’
‘আজ আর বেরোনোর কি দরকার, সবে তো ফিরলি’, অনীহার সুরটা চাপা থাকে না আমার গলায়। আরও আদরের আকাঙ্ক্ষা বাকি রয়েছে, তিনটে অদেখা সপ্তাহের চাহিদা দু’বারের চরম স্খলনেও পূর্ণ হয়নি ঠিকমত।
‘গতরটা একটু নাড়া না, এত কুঁড়ে কেন তুই, উফফ!’, অসহিষ্ণু রমণী এত সহজে হার মানতে নারাজ।
 
এহেন অভিযোগের পর নিতান্ত পুরুষত্বের খাতিরেই রাজি হওয়া ছাড়া গত্যন্তর নেই। অবশ্য একটা আউটিং হলে মন্দ হয় না, তাছাড়া... শত হোক বিবির খুশিতেই মিঞার খুশি।
 
‘কখন যেতে চাস?
‘নাউ ইটস অলমোস্ট টেন থার্টি, এখনই রেডি হই, তাহলে সাড়ে বারোটার শো তে আরামসে পৌঁছে যাব’
‘ওকে, অ্যাজ ইউ উইশ’
‘রেডি হচ্ছি তাহলে, তুই অনলাইনে দেখ কোন টিকিট বুক করবি’
 
অর্থাৎ ওনার নিজের আলাদা কোনও পছন্দ নেই। অর্থাৎ সিনেমা দেখাটা মুখ্য নয়, মুখ্য বেড়ু-বেড়ু করতে বেরোনো। অর্থাৎ এখন উনি ঘটা করে সাজতে বসবেন। মন্দ কি!
 
ইণ্টারনেটে প্রবেশের আগেই হঠাৎ মনে পড়েছে, ট্রলিব্যাগের ভিতরে সংগোপনে রক্ষিত লঁজারির প্যাকেটটা বের করে বাড়িয়ে ধরি। অপ্রত্যাশিত চমকে নিখুঁত-চর্চিত ভ্রূলতায় ভাঁজ।
 
‘হোয়াট’স দিস?
 
নিরুচ্চারে হাতে তুলে দিই। প্যাকেটের গায়ে বড় বড় হরফে ছাপা নাম আর বিবরণী নজরে আসতেই পানপাতা মুখশ্রী লজ্জারাঙা। চোখে অপার বিস্ময়, প্রথম প্রভাতের অরুণিমার আভা দুই কমনীয় গালে। কে যেন সেখানে মুঠো মুঠো আবির ছুঁড়ে মেরেছে!
 
কিছুক্ষণ এই অপার্থিব দৃশ্যের সামনে দাঁড়িয়ে থেকে লিভিং রুমে চলে আসি। আন্তর্জালে সন্ধান করছি নিকটবর্তী প্রেক্ষাগৃহে মনোমত চলচ্চিত্রের। মাথার মধ্যে অবশ্য অন্য ছক ঘুরে চলেছে, এমন মুভি বাছতে হবে যাতে ওর কোমল হৃদয় সহজেই আর্দ্র হয়ে পড়ে। বম্বের পুরো ঘটনাটা জানা সেক্ষেত্রে সহজতর হবে, আবেগের তোড়ে সব বলে ফেলার প্রভূত সম্ভাবনা। আবার সিনেমা দেখে বেশি কান্নাকাটি করলেও মুশকিল, রোদনোন্মুখ নারীর উচ্চারণ বোঝাই তখন দায়। অনেক খুঁজেপেতে একটা হলিউডি রম-কম পাওয়া গেল, টিকিটও সহজলভ্য। এটাই এই মুহূর্তে প্রয়োজন, মুখ খোলানোর জন্য।
 
দক্ষ ষড়যন্ত্রকারীর মত নিপাট ভালমানুষ মুখ করে টিকিট বুক করলাম দু’জনের, কোণের ব্যালকনির আধো-অন্ধকারের নিভৃতে। চড়ামূল্যে ক্রয় করা একফালি নির্জনতা। বিশ্বায়নের যুগে এগুলোও এখন খরিদযোগ্য।
 
হঠাৎই নিঃশব্দচরণে পাশে এসে হাজির জেনানা, উল্টোদিকে মুখ করে রয়েছে। বাঁ হাতে ধরা বাহারি কঙ্কতিকা, দেখেই বোঝা যায় কেশসজ্জা মাঝপথে। ঈর্ষণীয় ভরাট দেহলতা সলাজে আবৃত করে রেখেছে শুধুমাত্র ওপর-নীচের অন্তর্বাস। সবেমাত্র পাওয়া প্রণয়-উপচার। জলপ্রপাতের মত চুল আছড়ে পড়েছে সামনে বুকের উপত্যকায়, মসৃণ নির্লোম পিঠের পরিমিতি প্রায় সম্পূর্ণ উন্মুক্ত। জলপাইবর্ণা ত্বকের চালচিত্রে ব্যতিক্রম কেবল আধুনিকতম কাঁচুলির দুই প্রান্ত। অনাবদ্ধ।
 
মেঘবরণ কেশের মধ্যে ব্যস্ত চিরুনি চালাতে চালাতেই নরম স্বরে অনুরোধ ভেসে এল,
 
‘হুকটা লাগিয়ে দে না প্লিজ!
দাদা দয়া করে আপডেট দাও । please dada । এটা সেরার সেরা গল্প
Like Reply
#18
darun.
আসুন আমরা সবাই চটি গল্প উপভোগ করি।
Like Reply
#19
।। ১৩ ।।




‘জিস নাম্বার পে আপ কল কর রহে হ্যায়, উসকা উত্তর নহি মিল রহা হ্যায়। কৃপয়া থোড়ি দের বাদ...’
 
মুঠোফোনের ভেতর থেকে ভেসে আসা সুকণ্ঠী ঘোষিকার একটানা যান্ত্রিক স্বর পুরোটা শোনার ধৈর্য হল না। ইংরেজি আর কন্নড়ে গতানুগতিক অনুবাদের ফাটা রেকর্ড শুরু হওয়ার আগেই আঙুলের অস্থির ছোঁয়ায় স্তব্ধ দূরভাষ। অন্ধকার পর্দায় জ্বলজ্বল করছে শুধু নির্বাক সংখ্যারা। স্বয়ংক্রিয় সময়সূচক। বছর-মাস-দিন অতিক্রম করে ঘণ্টা-মিনিট-সেকেণ্ডেরও নির্ভুল পরিমাপ। মহাকালকে নিজেদের নিয়মে বাঁধতে চাওয়া ক্ষুদ্র মানুষের হাস্যকর প্রয়াস। রাত এগারোটা কুড়ি।
 
কল্লোলিনী তিলোত্তমার ঘড়ি অনুযায়ী সবে সন্ধেরাত হলেও কর্মব্যস্ত প্রযুক্তি-নগরীর রবি-নিশির নিরিখে সময়টা নিশুতি। সীমানা রক্ষায় সদাতৎপর কিছু সারমেয়র ইতিউতি আস্ফালন আর পাব-ডিস্কোয় উদ্দাম সায়াহ্নযাপনের শেষে ‘মানডে-মর্নিং-ব্লুজ’-এর তাড়নায় ক্লান্তচোখে অকালে নীড়ে ফিরতে থাকা রাতপাখিদের গাড়ির হর্নের একঘেয়ে আওয়াজ... এ ব্যতীত চরাচর প্রায় সম্পূর্ণ নিস্তব্ধ। মন দিয়ে কান পাতলে শোনা যায় শুধু দেয়ালে অধিষ্ঠিত কোয়ার্টজ ঘড়ির অবিরাম আত্মঘোষণা। টিকটিক, টিকটিক। ‘তুমি আছো, আমি আছি’সঙ্গে বরাদ্দ অখণ্ড নীরবতা।
 
‘দুয়ার এঁটে ঘুমিয়ে আছে পাড়া
কেবল শুনি রাতের কড়ানাড়া...’
 
খাটের ওপর এলোমেলো ভাবে বিন্যস্ত একজোড়া হাত, দুমড়ে মুচড়ে থাকা দুটো পা। অবসাদে এলিয়ে পড়া শরীরের আর সব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ। সমষ্টিগতভাবে দেখলে এক প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ। সংসারের মায়াপ্রপঞ্চে আষ্ঠেপৃষ্ঠে বাঁধা। ইহজীবনের বন্ধনমুক্ত হওয়ামাত্র যার প্রতিটি অণু-পরমাণু গিয়ে আশ্রয় নেবে পঞ্চভূতে। নশ্বরদেহের পরিসমাপ্তি চিতাভস্মে। বা গোরের চিরঅন্ধকারের অন্তরালে। বা সুউচ্চ নির্জন প্রাকার-স্তম্ভের আড়ালে ওত পেতে থাকা নরমাংসলোলুপ খেচরের পাকস্থলীতে। কিংবা...
 
কিন্তু শরীরের অভ্যন্তরে, অনেক অনেক গভীরে, রঞ্জন-রশ্মির সন্ধানী দৃষ্টিও যার হদিশ পায় না সেই অতলের নিভৃত কোনও কোটরে বাস করা মন? কি হয় তার গতি? জিয়ন্তে যার অবাধ যাতায়াত সর্বব্যাপী, সর্বগামী; স্বয়ং ধর্মরাজ যাকে দরাজহস্তে শংসাপত্র বিলিয়েছেন ‘বাতাসের চেয়েও দ্রুতগামী’, সেও বুঝি হারিয়ে যায় ইহলীলা সংবরণের সাথে সাথেই? ঐহিক যাত্রার অন্তিমে যখন সব একাঙ্গী, সেই মুহূর্তেই কি রুদ্ধ তার বিচরণ? নাকি আত্মার মত সে অবিনশ্বর? অজর-অমর? মরণের ওপারে বৈতরণী কূলেভেড়ার পরেও সদা জাগরূক?
 
অথবা তার মৃত্যু হয়তো বারংবার। একজীবনে অনেকবার। কোনও অজানা মৃতসঞ্জীবনীর সংস্পর্শে মরণকে জয় করে সে ফিরে আসে নতুন করে বাঁচবে বলে। বা কোনও দুর্ভাগার ক্ষেত্রে, আরও একবার... কি আরও অনেকবার মরার জন্য।যে হতভাগ্যের অন্তিম পরিণতি মৃত মনকে সঙ্গে নিয়ে বেহুলার ভেলায় চেপে জীবনসমুদ্রে ভেসে বেড়ানো, আমৃত্যু।
 
কোনও এক মহাজন একদা বলেছিলেন, কাপুরুষের মৃত্যু হয় বারবার।
 
আজ তবে আমার পৌরুষ নিয়তির সাপ-সিঁড়ির খেলায় একধাপ নীচে নেমে দাঁড়াল? এই অধঃপতন কি তবে মৃত্যুর সমার্থক?
কে বলে দেবে এর উত্তর?

ভূতগ্রস্তের মত উঠে দাঁড়াই। শরীরের ভার দুর্বল পায়েরা কোনওমতে ধরে রেখেছে, হাঁটতে গিয়েই টের পেলাম সমস্ত শক্তি নিঃশেষিত। পড়ে যাওয়ার আগে জানলার গ্রিল ধরে সামাল দিয়েছি। আপাদমস্তক চুঁইয়ে পড়ছে অবসাদ আর ক্লান্তি। মাথা তোলার মত জোরটুকুও আর বাকি নেই। তবুও কি করে তুললাম জানি না। কোনওমতে দেহকাণ্ডকে সোজা রেখে অবসন্ন পায়ে দু’কদম এগোতেই প্রবল ঝটকা। সামনে ওয়ার্ড্রোবের লাগোয়া আয়নাতে এক বীভৎস ছায়া!

কে ও? এই ফ্ল্যাটে ঢুকল কি করে?

চোখে ভাল দেখতে পাচ্ছি না। শেষ ফেব্রুয়ারিতে বিদায় নিতে চলা শহুরে শীতের কুয়াশার আস্তরণ জমেই কি দৃষ্টি এমন ঘোলাটে হয়ে গেল? নাকি ঘরের রাতবাতিটার ঔজ্বল্য কমে কমে কবে ঘরের বাসিন্দার মত নিষ্প্রভ হয়ে গেছে টেরও পাইনি?
আধো-আলো আধো-অন্ধকারের প্রহেলিকা ভেদ করে ধীর স্খলিত পায়ে দাঁড়াই দর্পণের সামনে। একটু আগের ছায়া এখন মূর্তিমান বিভীষিকা হয়ে তাকিয়ে রয়েছে আমার দিকে। ও-ও বুঝি কাউকে খুঁজছে এখানে? কিন্তু এই ঠিকানায় তো আর কেউ থাকে না, নেহাত পথ ভুল করে এত রাত্রে... কেমন যাযাবর ভিখারির মত চেহারা! কোটরে বসে যাওয়া দুই ম্লান চোখের আর্ত নীরব দৃষ্টি বলে দিচ্ছে দিন দুয়েক কোনও খাওয়া জোটেনি। পরনের কাপড়গুলোর কেমন ম্যাড়মেড়ে হতশ্রী দশা। উস্কোখুস্কো একমাথা চুল, ম্রিয়মাণ আলোতেও রুক্ষতার আভাস স্পষ্ট। কে জানে কতদিন চান করে না! স্বাস্থ্য খারাপ নয় কিন্তু গোটা শরীর জুড়ে ধুঁকতে থাকা ভাব। বুকটা যেন হাপরের মত অনবরত ওঠা-নামা করে চলেছে। চোখের নীচে ক্লান্তির গাঢ় ছোপ ভেদ করে ওর বিনিদ্র চাহনিটা সার্চলাইটের মত এসে পড়ছে আমার উপর, বুঝি অস্থি-পঞ্জর ভেদ করে দেখে নেবে আমার সমগ্র সত্তা। কার সন্ধানে এসেছো আগন্তুক?

অনেকক্ষণের নীরবতার পলি জমে ঘরের বাতাসটা ভারী, তাই বোধহয় কথা বলতে গিয়েও গলায় স্বর ফোটে না। একটু থেমে, খুব সন্তর্পণে গলাখাঁকারি দিই।

‘কাকে খুঁজছো এত রাতে?’

ছায়ামূর্তি একইভাবে নীরব, নিশ্চল। শুধু তার চোখের পাতায় ক্ষণিকের কাঁপন জেগে উঠে মিলিয়ে যায়।

‘এখানে কাকে চাই?’

তাও কোনও উত্তর নেই। একদৃষ্টে দেখে চলে আমায়। সে দৃষ্টিতে কি অদ্ভুত অভিব্যক্তি! অসহিষ্ণু হয়ে উঠতে গিয়েও পারি না। আবার প্রশ্নের পুনরাবৃত্তি করতে যাব, হঠাৎ সে স্বপ্নোত্থিতের মত বলে ওঠে,

‘এটা কি অয়নাংশু সাহার বাড়ি?’

আশ্চর্য, ভুল ঠিকানা তো নয়! কে ও, কি চায় আমার কাছে?
আর কারওর কিই বা চাওয়ার থাকতে পারে আমার কাছে?
কৌতূহলী মন বাগ মানে না, সে প্রশ্নোত্তর চালিয়ে যায়। একের পর এক। ছায়ামূর্তিও জবাব দেয়, একের পর এক। এতক্ষণের নীরব ফ্ল্যাট অনুরণিত হয় আমাদের আলাপচারিতায়।

বহমান সময়ের প্রতিটি ঢেউ গুনতে থাকা ঘড়িটা শুধু অবাক চোখে তাকিয়ে দেখে অয়নাংশু, অর্থাৎ অন্তুর সাথে তার নিজ প্রতিবিম্বের কথোপকথন।

...

রাত পেরিয়ে দিন আসে, সূর্য ওঠে, ভোর হয়। বীতনিদ্র চোখে দেখতে থাকি একটু একটু করে আলোর স্পর্শে গোটা চরাচরের উপর সোনালি আবরণ বিছিয়ে যাচ্ছে। ঘুম ভেঙে উঠে শুরু হয় পাখিদের রোজনামচা, তারপরে মানুষের। নিস্তব্ধ পৃথিবী মুখর হয় ব্যস্ত কোলাহলে। জানলার পর্দাটা যৎকিঞ্চিৎ ফাঁক, সেই সুযোগে একফালি রোদ চুরি করে ঢুকে পড়েছে  ঘরের ভিতর। ক্রমাগত সাহস সঞ্চয় করে তার অবাধ বিচরণ মেঝে থেকে খাটের উপর, সবশেষে ক্লান্ত দুই চোখের পাতায়। যন্ত্রচালিতের মত নিজেকে টেনে তুলি। অফিস যেতে হবে।

রোদের উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ার আগে পর্যন্ত সকালের দিকটায় এসময়ে শীতের ভালই কামড় থাকে। বোধহয় যাওয়ার আগে সে নিজের উপস্থিতিটা জানান দিয়ে যেতে চায়। আশপাশের সবার বেশভূষাতেও তার ছাপ। শুধু আমি ছাড়া। সোয়েটার বা জ্যাকেট নেওয়ার কথা ভুলে মেরে দিয়েছি। গোটা শরীরটা যেন এসব পার্থিব অনুভূতির অতীত এখন। খিদে-তেষ্টা-শীতবোধ কিছুই আর স্পর্শ করতে পারছে না। এক অদ্ভুত নিরাসক্তির বলয় আস্তে আস্তে ঘিরে ধরছে আমায় চারিদিক থেকে। নির্লিপ্তি, তার সাথে অভিমান মিশে মনের ভিতর ইস্পাতের কাঠিন্য। ভলভো বাসের আরামদায়ক আসনে বসে, পাশেই এক উদ্ভিন্নযৌবনা যাত্রিনী। শীতবোধ কাটাতে কিংবা আদিম গূঢ়ৈষণা বশত তার তন্বী অবয়ব প্রয়োজনের থেকে একটু বেশি ঘনিষ্ঠ, পেলব উরু বাসের গতির সাথে থেকে থেকে পিষ্ট হচ্ছে আমার ডান উরুতে, আঁটোসাটো টপের আড়াল ভেদ করে বেরিয়ে আসা কমনীয় বাহু ছুঁয়ে রেখেছে পুরুষালি বাহুর প্রান্তদেশ।  দূরভাষে কথা বলার অছিলায় বারকয়েক কোমল স্তন তার উষ্ণতার পরশ বুলিয়ে গেল। মাদকতাময় সুরভির প্রলেপ বাতাসে। এত আহ্বান, তবু একবারের জন্যও সাড়া জাগল না পৌরুষে। আপাদমস্তক শীতলতার বর্মে ধাক্কা খেয়ে ফিরে যাচ্ছে আদিম রিপুর আবেদন। মস্তিষ্ক আশ্রয় নিয়েছে বোধহীনতার আড়ালে, অসাড় মন শুধু ভেবে চলেছে...

কেউ সকালে ফোন করে জানতে চায়নি ব্রেকফাস্ট করেছি কিনা। কেউ আদর-জড়ানো শাসনের গলায় বলেনি জ্যাকেট আর মাফলার নিতে, এই ওয়েদারেই নাকি ঠাণ্ডা লাগে বেশি। সকালের নীলচে আলো মাখা সুরে কেউ প্রশ্ন করেনি আমি কি শুধুই তার কথা ভাবছি? তাকে প্রচণ্ড মিস করছি?

হায়, কি বিচিত্র এ জগৎ! কি বিচিত্র তার নিয়ম! রোজ এই একই প্রশ্নের প্রাত্যহিকতার একঘেয়েমিতে সময় সময় বিরক্ত হতাম। কিন্তু সেটা সন্তর্পণে গোপন করতে হত। ভুলক্রমেও বিরক্তির আভাসমাত্র যদি ফোনের ওপারে পৌঁছয় তাহলে সে মানভঞ্জনের মেয়াদ সারাদিন, চাই কি গোটা সপ্তাহ।

আর আজ, এই একলা সকালে যখন আমার মনের মেঘলা আকাশ জুড়ে শুধু তার মুখ, তার কথা... পকেটে রাখা দূরভাষ তখন মুখর অনভ্যস্ত মৌনতায়।
দেড়দিনের অভিজ্ঞতা বলছে পরিচিত নম্বরে ডায়াল করলে কেবল ঘোষিকার যান্ত্রিক স্বর শোনা যাবে

গত শনিবার বিকেল থেকে যতবার পিপিকে ফোন করেছি, একটিবারের জন্যও সেই পরিচিত মধুঝরানো গলা শুনতে পাইনি।
গোলাপি আভাময় গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়তে থাকা জলবিন্দুদের সংবরণ করার কোনওরকম চেষ্টা না করে আমার ঘরের দরজা দিয়ে যখন সে উন্মাদিনীর বেগে বেরিয়ে গিয়েছিল, তখনও তার গলা থেকে একটি শব্দ বেরোয়নি, অস্ফুট কান্নার গোঙানিটুকু ছাড়া। শুধু যাওয়ার আগে মুহূর্তের ভগ্নাংশের জন্য তার তীব্র দৃষ্টি ছুঁয়ে গিয়েছিল আমায়। সে চাহনিতে দেখেছিলাম নারীর বুকের ভিতর জ্বলতে থাকা অপমানের বহ্নিশিখা।

এখনও সেই লেলিহান আগুনে দগ্ধে চলেছি আমি, পুড়তে পুড়তে অন্তরাত্মা মৃতপ্রায়।

বাস থেকে নেমে নিজেকে কোনওমতে হিঁচড়ে নিয়ে যাচ্ছি অফিসের দিকে। শরীর ভারী পাথরের মত গতিজাড্যহীন, স্থাবর পড়ে থাকতে চায় পথের ধারে। আচমকা এক দমকা হাওয়ার স্পর্শ চোখে-মুখে। আকাশের দিকে তাকাই। দিগন্ত থেকে ছুটে আসা পরদেশী মেঘেরা ভিড় করেছে। ‘রোদ নেই শুধু একটা ছাই রঙের আলো যাতে কোনকিছুরই ছায়া পড়ে না।’
পড়বে কিভাবে? শৈশবে পড়া ভৌতিক গল্পের সূত্র হানা দেয় মনে- মানুষের ছায়া পড়ে, ভূতেদের নয়।
আমি তো এক অশরীরী আজ, মানুষের ছদ্মবেশ ধরে যে যন্ত্রবৎ জীবন কাটাবে, হয়তো আরও কুড়ি, কিংবা তিরিশ, কিংবা চল্লিশ বছর।

সোমবারের কর্মব্যস্ত অফিস, সবাই মগ্ন উইকেণ্ডের আলস্য ঝেড়ে ফেলে দিনগত পাপক্ষয়ের অভ্যস্ততায় নিজেদের মানিয়ে নিতে। তারই মাঝে নিয়মমাফিক কুশল-বিনিময়, সৌজন্যের মুখোশ এঁটে সেসবের প্রত্যুত্তর দিই। অয়নাংশু সাহার নামাঙ্কিত কিউবিক্‌লটা একপ্রান্তে, বিচ্ছিন্ন একটা দ্বীপের মত। কাজ শুরুর আগে স্বাভাবিক প্রবণতায় মেলবক্সে উঁকি, যদি কোনও অপঠিত বার্তা এসে থাকে।

আঙুলের ইশারায় মাউসে চাপ পড়তেই মুহূর্তেকের জন্য মগজে দু’শোকুড়ি ভোল্টের ঝলকানি। তারপরেই আবার সব আগের মত, নিস্পৃহ মুখে মেইল পড়ছি।

‘হাই, হোপ ইউ আর ফাইন। আই অ্যাম সো বিজি দিজ ডেজ, কাণ্ট ফাইণ্ড এনি টাইম টু টক টু ইউ। বাট একটা ব্যাপারে তোমার একটু হেল্প লাগবে। নেক্সট টু নেক্সট মান্থ আমি ব্যাঙ্গালোর যাচ্ছি একটা ইণ্টার্নশিপের জন্য। ফর অলমোস্ট ফোর মান্থস। ওরা অ্যাকোমোডেশন প্রোভাইড করবে বলেছে বাট নট বিফোর আ সার্টেইন ডেট, আর এদিকে আমার ফ্লাইট টিকেটের অ্যাভেলেবিলিটি যেমন তাতে আই হ্যাভ টু রিচ দেয়ার বিফোর। সো... ক্যুড আই স্টে অ্যাট ইয়োর প্লেস ফর দোজ ফিউ ডেজ? ইট ওণ্ট বি মোর দ্যান ওয়ান উইক। প্লিজ লেট মি নো অ্যাস্যাপ।
আই গেস বাড়িতে এগুলো না জানানোই ভাল, ইউ নো হোয়াট আই মীন।
তোমায় কাল অনেকবার কল করার চেষ্টা করেছিলাম বাট ফোন বিজি আসছিল। সো হ্যাড টু ড্রপ অ্যান ইমেইল। হোপ ইউ ডোণ্ট মাইণ্ড। টেক কেয়ার।’
প্রেরক... থুড়ি, প্রেরিকার নাম দীপান্বিতা চৌধুরী।

ভাবলেশহীন মুখে বসে আছি। কর্তব্যকর্ম স্থির করতে কিছুক্ষণের দ্বিধা, তারপর অনায়াস গতিতে টাইপ করছি প্রত্যুত্তর। প্রথমে দীপান্বিতাকে। পরেরটা রিংকুদিকে। এ বোঝা ঘাড় থেকে নামানোর সহজতম পন্থা। রিংকুদি নিশ্চয়ই বুঝবে।

ইলেকট্রনিক বার্তা প্রেরণের পরে সহসা কেমন অবসাদ চারিয়ে এল মনে। নারীসঙ্গের কথা ভাবতে এখন বিবমিষা জাগছে। আপাতত ও প্রসঙ্গটাই অরুচিকর।

আবারও খোলসের মধ্যে ঢুকে যাই। নিস্পন্দ, নির্লিপ্ত জীবন। বেদনাহীন। ব্যথা-বেদনার অনুভূতিগুলোই হারিয়ে গেছে।
সারাদিন যন্ত্রমানবের মত কাজ করি। মাপা কথা, মাপা প্রতিক্রিয়া। অন্য মানুষের সাহচর্য ভাল লাগে না। আমার বীতস্পৃহার নির্মোকে প্রতিহত হয়ে তারাও দূরে সরে যায়। এই বেশ ভাল আছি।

সন্ধেয় ঘরে ফিরে আসি। অন্ধকারে পড়ে থাকি নির্জীবের মত। রাত বাড়ে। ফিকে থেকে ক্রমে গাঢ় হয় ঘরের আঁধার। সে আঁধার তরল আকার ধারণ করে প্রবেশ করে আমার সত্তায়। চারিয়ে যায় কোষে-কোষে, অস্থিমজ্জায়। গোটা জগতসংসার দূরে সরে গেছে। চোখের পাতায় ঘুমের যবনিকা নামার অনন্ত প্রতীক্ষা। সেও আসে কই?

‘আধেকলীন হৃদয়ে দূরগামী
ব্যথার মাঝে ঘুমিয়ে পড়ি আমি
সহসা শুনি রাতের কড়ানাড়া...’
[+] 3 users Like অনঙ্গপাল's post
Like Reply
#20
প্রথম পর্ব কি এখানেই শেষ?
Like Reply




Users browsing this thread: 1 Guest(s)