Thread Rating:
  • 30 Vote(s) - 3.43 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Romance দূরত্ব (ছোট গল্প)
#1
Heart 
[Image: 20201223-000806.jpg]


কাটলেটে শেষ কামড়টা দিতেই পিঠে হটাৎ একটা জোরে চাপড় পড়লো. ভুরু কুঁচকে তাকিয়ে অবাক. সঞ্জয়!! এতো বছর পর!!

সঞ্জয় দুস্টু রাগী চোখেই তাকিয়ে বললো - কিরে শালা? কোথায় ছিলি এতো বছর? ব্যাটা সেই কলেজ শেষ হতে না হতেই গায়েব? শালা... তুমি বহুত চালু মাল হ্যা.... কলেজ শেষ তো বন্ধুত্বও শেষ?

আমি হেসে উঠে দাঁড়িয়ে জড়িয়ে ধরলাম ওকে. তারপর বললাম - আচ্ছা তাই বুঝি? শালা তুমি যে প্রতিবার আমার পরীক্ষার খাতায় চক্ষুদান করতে.. তখন কি তোমায় আটকেছি? আর আমায় চালু বলছিস? তারপর হেসে বললাম - আরে কি করবো বল? তোর আর বাকিদের নম্বর গুলো আমার ফোনে ছিল... আর সেটাই গেলো চুরি... মানে  তারপর নানারকম ঝামেলা এই করো ওই করো..কিছু ফ্যামিলি প্রব্লেম ছিল... উফফফফ....তারপর তো আমরা অনেকদিন অন্য জায়গায় শিফট করেছিলাম. রাতুলের সাথে পরে দেখা হতে ও বলেছিলো তোরাও অন্য জায়গায় ফ্লাট নিয়ে চলে গেছিস. এদিকে আমিও নিজের জীবন নিয়ে ব্যাস্ত হয়ে পড়লাম. ছাড় ওসব কথা. তা গুরু তুমি তো ফুলে গেছো ভাই? এতো ভুঁড়ি কিকরে এলো রে? খুব সাঁটাচ্ছিস না? 

সঞ্জয় পেটে হাত বুলিয়ে বললো - এটা কৃতিও বলে রে. কিন্তু কিকরবো বল... শালা কিছুতেই খাওয়া কমাতেই পারছিনা.

আমি চোখ মেরে বললাম - এইযে.... কৃতিটা কে হ্যা? আমাদের কলেজে কৃতি বলে তো কেউ ছিলোনা....

সঞ্জয় বললো - ওরে... সেই কচি বয়স কি আর আছেরে... যে এদিক ওদিক খুঁজে বেড়াবো... কলেজে অন্য জিনিস....তখন আলাদা ব্যাপার ছিল গুরু..... আজ তো আমার হাল দেখছিস.....কৃতি আমার ওয়াইফ. দাঁড়া... পরিচয় করিয়ে দি.....

এই কৃতি এদিকে এসো. 

আমি দেখলাম নীল সালোয়ার পরিহিতা এক বেশ সুন্দরী নারী হাসি মুখে আমাদের দিকে তাকালো. তারপর হাসি মুখে আমাদের দিকে এগিয়ে এলো.

আমি নমস্কার করলাম. উনিও প্রত্তুতরে নমস্কার করলেন. তারপর উনি বললেন - দাদা..... আপনার কথা ওর থেকে অনেকবার শুনেছি. এখানে এসে আপনাকে দূর থেকে দেখে একবার আমায় বললো চেনা চেনা লাগছে. তারপর চিনতেই ছুটে গেলো আপনার কাছে.

আমি মুচকি হাসলাম.

তারপর কৃতি আমাকে একবার দেখে নিয়ে স্বামীর দিকে তাকিয়ে বললো - দেখো.... দেখো নিজের বন্ধুকে.... কি হ্যান্ডসম... কি সুন্দর ভাবে আজও নিজেকে মেইনটেইন করেছেন... আর তুমি.... ইশ.... নিজের পেটের দিকে দেখো একবার.

সঞ্জয় আমার দিকে তাকিয়ে বললো - ওই... দেখলি? শুরু হয়ে গেলো.

আমরা তিনজনেই হেসে উঠলাম. তারপর ভদ্রতার খাতির আমিই বললাম - আয়না.... আমার এখানে বোস. তোরা কি অর্ডার দিয়ে দিয়েছিস?

সঞ্জয় বললো - আরে নারে..... আমরা তিনজন ঢুকে সবে বসেছি... এমন সময় তোর দিকে নজর গেলো আমার. আমার মনেই হচ্ছিলো ওটা তুই. তারপর তুই যখন ওয়েটার কে ডাকতে পাশে তাকালি... পুরো তোর মুখটা দেখতে পেলাম. তাই তো গিয়ে সোজা চাপড়.

আমি বললাম - ইশ.....ব্যাটা যা জোরে মারলি... উফফফ.....তোর শয়তানি গেলোনা... জানেন বৌদি? ব্যাটা.... কলেজে এইভাবেই রোজ আমায় চাপড় দিতো. 

তারপরই একটা কথা মাথায় এলো. জিজ্ঞেস করলাম - এক মিনিট... তুই কি বললি? তিনজন? আরেকজন কে?

সঞ্জয় মাথায় হাত রেখে জিভ বার করে বললো - এমা! দেখেছিস... মেয়েটাকে একা বসিয়ে চলে এসেছি. আমার স্ত্রীয়ের বান্ধবী. দাঁড়া পরিচয় করিয়ে দি..... এই অঞ্জলি.

নামটা শুনেই পলকের মধ্যে হাজার মুহুর্ত মনে পড়ে গেলো আমার.  কেমন একটা করে উঠলো বুকের ভেতরটা. এই নামটা..... এই নামটা কোনোদিন কি আমার পিছু ছাড়বেনা? ওই নামটাকে কি ভুলতে পারবোনা আর কোনোদিন? 

যাক গে..... মাথা থেকে সব ঝেড়ে ভদ্রতার খাতিরে হাসি মুখে সঞ্জয় যে দিকে তাকিয়ে আছে সেই দিকে তাকালাম.

নিজের নাম শুনে কিছুদূরে বসে থাকা মেয়েটি আমাদের দিকে ঘুরে তাকালো. আর তখনি মনে হলো পায়ের তলা থেকে মাটি সরে যাচ্ছে. তৎক্ষণাৎ আমার মুখ ঘুরিয়ে নিলাম.

এ কাকে দেখলাম আমি!! না না..... এতো বছর পর. আবার?

পায়ের শব্দ প্রতি মুহূর্তে এগিয়ে আসছে. আর ততই দ্রুত হচ্ছে আমার বুকের ধুকপুকানি. শেষে আমার পাশে এসে সে দাঁড়ালো. 

সঞ্জয় হেসে তাকে বললো - হ্যা... আলাপ করিয়ে দি..... আমার কলেজ ফ্রেন্ড অনির্বান. 

হাসি মুখেই সে নিজের মুখ সঞ্জয়ের থেকে ঘুরিয়ে আমার দিকে তাকালো. আর তারপরেই তার মুখের হাসিও মিলিয়ে গেলো. হাত দুটো নমস্কার করবে বলে জড়ো করতেই যাচ্ছিলো. দুই হাত সেই দূরত্বেই থেকে গেলো. আমার বুঝতে বাকি রইলোনা যে সামনের মানুষটার অবস্থাও আমার মতোই. তার ভেতরেও একটা ঝড় শুরু হয়েছে. অনেক মুহূর্ত তার সামনেও হয়তো ভেসে উঠেছে.

পরিস্থিতি সামলাতে আমি দুই হাত জড়ো করে বললাম - নমস্কার.

সেও অবাক হয়ে তারপর পরিস্থিতির গাম্ভীর্য বুঝে নকল হাসি হেসে আমায় নমস্কার জানালো.

এটা করতে যে তাকে বেশ কষ্ট করতে হয়েছে বুঝলাম. আমারো তো একি অবস্থা.

আমরা সবাই একসাথেই খেতে বসলাম. আমি আর সঞ্জয় একদিকে আর অন্যপাশে দুই বান্ধবী. সঞ্জয় নিজেদের অর্ডার দিলো. আমি তো বেশ কিছুক্ষন আগেই এসেছিলাম তাই আমার খাওয়া শেষই হয়েছে গেছিলো. তবু বন্ধু জোর করে আবার আমার জন্য অর্ডার দিলো. আমি বারণ করলাম কিন্তু কে শোনে. খাবার আসলে সবাই খেতে লাগলাম. খেতে খেতে বার বার সামনের মানুষটার দিকে নজর চলে যাচ্ছিলো. আজও বেশি ঝাল খেতে পারেনা. তবু সেটাই বেশি করে খায় . বার বার নাক টানে. আজও তার পরিবর্তন লক্ষ্য করলাম না. শেষের চিকেনটা পুরো খেলনা. খাওয়া অনেক কমিয়ে দিয়েছে. একটু রোগাও হয়ে গেছে. না তবে সেই পাগল করা রূপটা একটুও কমেনি. সবুজ শাড়ীটাতে অসাধারণ লাগছে. 

আমার বন্ধুটি আবার খাবার সময় স্পিক্ টি নট. সব ভুলে মাংসের পা চিবোচ্ছে. কি মোটকুই না হয়েছে. কলেজের সময় থেকে কত পাল্টে গেছে ব্যাটা.

আরে ওকে কি বলছি? আমি কি পাল্টাইনি? হ্যা পাল্টেছি.... অনেক পাল্টেছি..... ওর থেকেও বেশি পাল্টেছি একসময়. বাইরে থেকে নয়.... ভেতর থেকে. আর সেটাই তো ছিল আমার.... না.... আমার কেন? আমাদের মাঝে দূরত্বের কারণ.

তাই হয়তো একবারও সোজা তাকিয়ে দেখতে পারিনি সামনে বসে থাকা সুন্দরী নারীটির দিকে. সবসময় খাবার অছিলায় চোখ নামিয়ে ছিলাম. আচ্ছা ও কি আমাকে দেখছে? নাকি একবারের জন্যও তাকায়নি? সত্যি কি তাকায়নি?

এদিকে আমার প্রায় দ্বিগুন গেরাচ্ছে সঞ্জয়টা. কৃতি নিজের স্বামীর খাওয়া দেখে আমায় ইশারায় ওকে দেখিয়ে বললো - দেখেছেন আপনার বন্ধুর কান্ড? কত বলি কন্ট্রোল করো, শুনবেই না কিছু.

সঞ্জয় মাংস চিবোতে চিবোতেই বললো - ওসব ডায়েটিং ফায়েটিং আমার দ্বারা হবেনা গুরু.... আমি এই বেশ আছি. খেতে দাও তো... খেতে দাও. দেখছিস ভাই.....? সবসময় আমার খাওয়া নিয়ে খোঁটা দেবেন ইনি. আরে বেচারা মানুষটার একটু খেতে ভালো লাগে আর সেটা নিয়ে এরকম অত্যাচার... উফফফ.

আমরা হেসে উঠলাম. তারপর হটাৎ একটা প্রশ্নবান ছুটে এলো আমার দিকে সামনের দিক থেকে.

দাদা.... আপনি কি বিয়ে করেছেন? নাকি এখনো অবিবাহিত?

সঞ্জয় বললো - হ্যা রে? সেটাতো জিজ্ঞেসই করা হয়নি.... এখনো unmarried নাকি..... অবশ্য যা হ্যান্ডসম হয়েছিস.... সত্যি যা লাগছেনা তোকে..উফফ দেখেই বোঝা যাচ্ছে... হেব্বি মাল্লু কামাচ্ছিস না ? ওটাই তো আসল জিনিস... কি বল?

আমি মুচকি হাসলাম. দেখলাম সামনে বৌদির পাশে বসে থাকা মানুষটা একবার আমার দিকে তাকিয়ে আবার খেতে লাগলো.

কৃতি বৌদির প্রশ্ন শুনে কি বলবো বুঝতে পারলাম না.... একজন সামনে উপস্থিত না থাকলে হয়তো মিথ্যেটাই বলতাম. কিন্ত......শেষমেষ সত্যিটাই বলে ফেললাম. আর কত এড়িয়ে যাবো এই সত্যিটা?

আমি - হ্যা... করেছি..... I mean করেছিলাম. কিন্তু আমাদের মধ্যে....

এইটুকু শুনেই আমার বন্ধু আর তার স্ত্রীর হাসিমুখটা শান্ত হয়ে গেলো. নিজেদের খাওয়া থেকে সবাই একটু বিরতি দিলেন শুধু একজন বাদে. সে একবারের জন্যও না তাকিয়ে নিজের ফোনে কি দেখছে আর খাচ্ছে.

সঞ্জয় - ওহ... সরি রে... আসলে আমরা.....তো.....

আমি হেসে বললাম - আরে দূর ব্যাটা.... এটাতো নরমাল ব্যাপার. আমাদের দুজনেরই প্রব্লেম হচ্ছিলো এই সম্পর্কটা এগিয়ে নিয়ে যেতে.... তার থেকে ভালো ছিল আলাদা হয়ে যাওয়া... আমরা সেটাই করেছি. 

কৃতি আর আমার বন্ধু নিজেদের চোখ চাওয়া চাই করে আবার খেতে লাগলেন. অর্থাৎ এই ব্যাপারে আর কোনো কথা নয়. আজ আমরা আর সেই কলেজের বিচ্ছু স্টুডেন্ট নই, পুরোপুরি প্রাপ্তবয়স্ক... তাই বুঝি কখন কোথায় ইতি টানতে হয় কথায়.

উফফফফফ পেট ভর্তি পুরো. ব্যাটা সঞ্জুটার জন্য এই অবস্থা. এবার কিছুক্ষন হাঁটা চলা না করলে শান্তি পাবনা.

বিল মিটিয়ে আমরা বেরিয়ে পড়লাম. এবারে হোটেলে ফেরার পালা. কথা বলে জানলাম আমি যে হোটেলে উঠেছি ওরাও আজকেই সকালে সেই হোটেলেই এসে উঠেছে. এটাকে কি বলে ঠিক জানিনা. আকাশের দিকে তাকালাম. ভগবান? কি বলতে চাইছেন বলুনতো? কি ঘুরছে মাথায়?

 কাজের থেকে বিরতি নিয়ে কয়েক দিনের জন্য বেড়াতে এসে যে হটাৎ দ্বিতীয় দিনেই আমার সাথে এরকম কিছু হবে কে জানতো? যে অতীতকে একান্তে ভাববো বলে এসেছি, সেই অতীত নিজেই আমার সামনে এসে উপস্থিত হবে কে জানতো? 

 দুই বান্ধবী হেটে এগিয়ে গেছে তখন সঞ্জয় আমায় হালকা ধাক্কা মেরে সামনে দেখিয়ে বললো - কিরে? কেমন দেখলি? আমি বুঝেও না বোঝার ভান করে বললাম - খুব মিষ্টি একটা বৌ পেয়েছিস গুরু. ভেরি লাকি. সঞ্জয় কপালে হাত মেরে বললো - ধুর.. আরে ব্যাটা... আমার বৌয়ের কথা কে বললো? ওর পাশে যিনি হাঁটছেন...... কেমন লাগলো তাকে?

আমি একবার সামনে তাকিয়ে হেসে আবার সঞ্জয়ের দিকে তাকিয়ে বললাম - ভালোই তো....

সঞ্জয় বড়ো বড়ো চোখ করে বললো - ভালো বলছিস কিরে? দারুন বল..... আরে প্রথমবার যখন আমি পরিচিত হয়েছিলাম.. তখন তো আমারই মাথা ঘুরে গেছিলো রে. না.... তাবলে ভাবিসনা ওকে খারাপ চোখে দেখি, মোটেও তা না কিন্তু সত্যি.... মেয়েটার মধ্যে একটা যোগ্য বৌ বৌ ব্যাপার আছে মানতেই হবে.... আমি তো দেখছি ওকে অনেকদিন.... সত্যি খুব ভালো মেয়ে. শান্ত, বেশি কথা বলেনা, আমার বৌয়ের মতো এতো রাগ করেনা. নম্র স্বভাবের.

আমার কেমন কেমন যেন লাগলো. সঞ্জয় কি বোঝাতে চাইছে আমায়? আমি তীক্ষ্ণ নয়নে ব্যাটার দিকে তাকিয়ে বললাম - হুমম  বুঝলাম.... তা বাবা ঝেড়ে কাশতো... কি বলতে চাইছিস.

আমার  হাতে কনুই মেরে ও  বললো - কি? পছন্দ?

আরে ধুর ব্যাটা.... একবার ওই রাস্তায় গিয়ে দেখেছি... আর নয় গুরু. এই বলে তাকালাম সামনের দিকে. দুই বান্ধবী হাসাহাসি করতে করতে এগিয়ে যাচ্ছে. দুজনেই একবার পেছনে ফিরে আমাদের দেখলো. তারপর আবার সামনে চলতে লাগলো. যদিও কৃতি বৌদির পাশের মানুষটি আমাদের নয়, আমার দিকে তাকিয়ে ছিল আর কিছুক্ষন ঐভাবেই তাকিয়ে তারপর মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছিল.

সঞ্জয় বললো - জানিস ওর ব্যাপারটাও তোর মতোই. তিন বছর আগে ওরও সেপারেশন হয়েছে. আমাদের সঙ্গে তো হটাৎ দেখা এই কয়েকমাস আগে একটা শপিং মলে. কৃতিই পরিচয় করিয়ে দেয় তখন.... আর তখনই সব জানতে পারি. ওর সঙ্গে কৃতির যোগাযোগ সেরকম ছিলোনা স্কুলের পর আর দেখা সেরকম হয়নি দুজনে. এবারে এতদিন পর দেখা. সব তখনই বলে ও. এতদিন পর বান্ধবীকে পেয়ে কৃতিও আর ছাড়লনা... বললো আমরা বেড়াতে যাচ্ছি তোকেও আসতেই হবে. সেতো আসতেই চায়না... জোর করে আমরা রাজি করালাম. কৃতি আমায় বলেছিলো সেই আগের বান্ধবী আর এখনকার অঞ্জলির মিল সেরকম নেই. হয়তো..... ওই ডিভোর্সের কারণেই..... আচ্ছা... এরকম একটা মিষ্টি মেয়েকে কোন বোকাচোদার ভালো লাগেনি বলতো? এরকম একজনকে পেয়েও তার মর্ম বুঝলোনা? শালা গান্ডু একটা.... কি বলিস? 

আমি কথাটা শুনে মাথা নিচু করে হেসেই বললাম - হ্যা...... গান্ডুই..... তাইতো.

আমার কবিত্ব আসেনা. নইলে সামনের ওই মানুষটার ওই একবার ঘুরে তাকানো দেখে আমার যে কি অনুভূতি হয়েছিল তা কাগজে লিখে ফেলতাম. যাইহোক হোটেলে পৌঁছে গেলাম একটু পরেই. বিদায় নেবার আগে সঞ্জয় বললো কাল ওদের ঘুরতে যাবার প্ল্যান আছে. সামনেই দারুন একটা জায়গা আছে. আমাকেও ওদের সাথে যেতেই হবে. কোনো ছাড়াছাড়ি নেই. শেষমেষ রাজি হতেই হলো. তারপর একে অপরকে goodnight জানিয়ে আমি ওখান থেকে বেরিয়ে নিজের রুমের দিকে যেতে লাগলাম . কি মনে হতে কিছুদূর এগিয়ে একবার পেছন ফিরে তাকালাম. দেখলাম আমার বন্ধু ও তার স্ত্রী ঘরে ঢুকে গেছেন কিন্তু তাদের সঙ্গের মানুষটি নিজের রুমের দরজা খুলেও না ঢুকে আমার দিকেই তাকিয়ে রয়েছে. চোখাচুখি হতেই মুখ নামিয়ে দ্রুত নিজের রুমে চলে গেলো. আমি নিজের রুমে চলে এলাম.

 না...... আর তাকাইনি ঘুরে.

 নিজের ঘরে এসে ফ্রেশ হয়ে শুয়ে বাবা মায়ের সাথে কিছুক্ষন কথা বলে শুয়ে পড়লাম. না... ঘুম আসছেনা. কিকরে আসবে? আসার কথাও নয়. বার বার চোখের সামনে ভাসছে সেই সব স্মৃতি  গুলো. ফোনের গ্যালারিতে গিয়ে নিজের এক্স ওয়াইফের ছবি দেখতে লাগলাম. তার সাথে বেশ কয়েকটা ছবি তোলা ছিল আমার. ডিলিট করতে গিয়েও কেন জানি পারিনি. সেই ছবি গুলোই পাল্টে পাল্টে দেখতে দেখতে পাশে তাকিয়ে দেখি দুজন মানুষ দাঁড়িয়ে ঝগড়া করছে. তার মধ্যে একজন পুরুষ একজন নারী. দুজনকেই চিনি আমি. একজন কে তো রোজ দেখি..... নিজের আয়নায়. আরেকজন তারই অর্ধাঙ্গিনী.

মেয়েটির চোখে জল. তাও এগিয়ে গিয়ে স্বামীর কাঁধে হাত রাখলো. কিন্তু শয়তান লোকটা এক ঝটকায় ওর হাত সরিয়ে স্ত্রীয়ের দুই কাঁধ ধরে ক্রুদ্ধ নয়নে বললো - গিভ মি মাই স্পেস. জাস্ট..... লিভ মি অ্যালোন. তুমি থাকোনা তোমার মতন.... আরে আমি কি তোমায় ভুলে অন্য মেয়েকে নিয়ে ফুর্তি করছি নাকি? আমি তো নিজের কাজ নিয়ে আছি নাকি? আরে আজ আমি একটা সুযোগ পেয়েছি নিজেকে এগিয়ে নিয়ে যাবার..... কেন আমার পথে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছ... কেন?

মেয়েটি ভেজা চোখেই বললো - আমি তোমার এগোনোর পথে বাঁধা? এটা তুমি কি বললে?

লোকটি স্ত্রীকে ছেড়ে এগিয়ে গিয়ে দেয়ালে হাত রেখে বললো - আর নয় তো কি? বার বার কেন আমায় বিরক্ত করো. দেখো অঞ্জু  বোঝো একটু.... আমি তোমায় খুব ভালোবাসি কিন্তু এখন আমি প্রস্তুত নই এতো বড়ো দায়িত্ব নেবার. এটা আমার এগিয়ে যাবার সময়..... এসব ফালতু পিছুটান মাথায় নিয়ে চললে কাজ টাজ মাথায় উঠবে.

মেয়েটি - আমি তো তোমার কাছে আর কিছু চাইনি.... একটা বাচ্চা ছাড়া. তোমাকে তো সারাদিন কাছেই পাইনা.... সারা বাড়িতে একা কাটাই. অন্তত আমাদের বাচ্চা থাকলে তাকে নিয়ে সময় কাটাতাম. আর এটাও তোমার কাছে ফালতু ব্যাপার অনি?

আমি দর্শকের মতো শুধুই দেখছি সব. দেখলাম মেয়েটি বিছানায় বসে স্বামীর দিকেই তাকিয়ে রইলো. টপ করে একফোঁটা জল বেরিয়ে নিচে পড়লো. ওই শয়তান লোকটা বললো - আরে এসব সেন্টিমেন্টাল কথা বলে আমায় নরম করার চেষ্টা করোনা.... বোঝতোনা খাটনি কি.... ঘরে রানীর মতো থাকো... যা চাও তাই পাও... আমি যে কি করে অর্জন করি জানো? বোঝো? বুঝলে আর এসব বলতে না. আমাকে আমার মতো থাকতে দাওনা প্লিস...আগে নিজেকে আরেকটু গুছিয়ে নি... তারপর সব হবে... ততদিন সময় চাইছি... এই হাত জোর করছি তোমার কাছে.... প্লিস .  উফফফ.

বেরিয়ে যাচ্ছিলো লোকটা. পেছন থেকে মেয়েটি বললো - তাহলে বিয়ে করলে কেন আমায়? যদি আমায় একটুও সময় দিতে না পারো তাহলে....

-আমি চাইনি. বললো লোকটি. আমি এই সময় চাইনি বিয়েটা করতে. বাবা মাকে বলেও ছিলাম কিছু বছর পর করবো.... কিন্তু তারাও এমন সব ইমোশনাল...সেন্টিমেন্টাল কথাবার্তা বলতে লাগলো.... রাজি হতেই হলো. সবাই যেন ইমোশনাল ফুল হয়ে যাচ্ছে. 

আমি তাকালাম লোকটার দিকে. দেখতে আমার মতোই. আমার মতো কেন? সেতো আমিই. আমারই তো অতীত এই শয়তান. সে আবার বললো - বাবা মায়ের কথা রাখতে রাজি হয়েছিলাম. আমি চাইনি এরকম একটা সময় বিয়ে করতে. ভালো আমিও বাসি তোমায়. সেটা তুমিও জানো. কিন্তু এই মুহূর্তে আমার কাছে আমার এম্বিশন আগে. আমি অনেক ঝামেলার মধ্যে বড়ো হয়েছি অঞ্জু. আমাদের একটা ভয়ানক সময় গেছে. প্রায় সব কিছু হারিয়ে গেছিলো আমাদের. নিজের লোকেরাই আমাদের পেছনে ছুরি মেরেছিলো. ওই সময় বাস্তব জীবনের ভয়ঙ্কর রূপটা দেখেছি আমি. আমি কখনোই চাইনি আমার নিজের ভবিষ্যত সেরকম হোক. তাই আমার কাছে আগে আমার ব্যবসা. আমি একটু একটু করে নিজের বিজনেসটা দাঁড় করাচ্ছি.... এখন এসব বাচ্চা টাচ্চা চেওনা. দেখো... সব হবে.... কিন্তু এখন না. আমি যা করছি আমাদের ভালোর জন্যই. আগে সবকিছু গুছিয়েনি তারপরে ভাবা যাবে. আর তাছাড়া সবে তো ৮ মাস হলো আমাদের..... এতো তাড়াতাড়ি কি হবে? আজকাল এতো তাড়াতাড়ি কেউ নেয়না..

মেয়েটি এগিয়ে গিয়ে স্বামীর পিঠে হাত রেখে বললো - কিন্তু আমি যে একটু একটু করে তোমায় হারিয়ে ফেলছি..আগে যাও বা তোমাকে কাছে পেতাম কিন্তু এখন..... রোজ তুমি সকালে বেরিয়ে যাও... ফেরো সেই রাতে. আমাকে কতক্ষন সময় দাও বলো? আমি তোমায় কখনই আটকাইনি. আমি জানি তোমার কাছে তোমার কাজের মূল্য কি.... কিন্তু আমারো তো তোমাকে কাছে পেতে ইচ্ছে করে. আমরা যতটুকু একে অপরকে পাশে পেয়েছি.... তা ভেবে বলতো? আমাদের বিবাহিত জীবন কি এইভাবেই চলবে? তাহলে এই সংসারের মানেটা কি?

মানুষটা এবারে ঘুরে দাঁড়িয়ে বললো - এসব বলে কি বলতে চাইছো? আমি তোমায় খুশি রাখিনা? এই যে গলায় হারটা... এটা কে দিয়েছে? এই যে কানের দুল কার দেওয়া? এগুলো এমনি এমনি আসেনি... আমার এই সারাদিনের খাটনির ফলাফল বুঝলে.....এইযে এতো বড়ো বড়ো জ্ঞান দিচ্ছ.... আজ এগুলো যদি কিনে না দিতে পারতাম তখন নিজেই তো বলতে কার সাথে বিয়ে করলাম.... বৌকে কিছু দেবার দম নেই, সামর্থ নেই ... অযোগ্য লোক একটা.... কি বলতেনা? দেখো... টাকা আছে তো খুশিও আছে... নইলে না এসব জ্ঞান পেছন দিয়ে বেরিয়ে যায় বুঝলে? যত্তসব...

এইবলে লোকটা বেরিয়ে গেলো. মেয়েটি স্বামীর চলে যাওয়া দেখে  বিছানায় বসে কাঁদতে কাঁদতে কোথায় যেন মিলিয়ে গেলো.

আমার মনে হচ্ছিলো নিজের অতীতের ওই রূপটাকে গিয়ে কষিয়ে দুটো থাপ্পড় মারতে. কি হয়ে গেছিলো আমার তখন? শুধু টাকা- টাকা - টাকা. এই ঝগড়া প্রায় রোজ হতো দুজনে. আর সহ্য করতে পারেনি মেয়েটি. চলে যায় একদিন ঘর ফাঁকা করে. আমিও জোর করে আটকাইনি তাকে.  ফাঁকা বিছানায় ঘুমোতে প্রথম প্রথম ভালোই লাগতো. আর কেউ নেই বিরক্ত করার. পুরো সময় আমার . আর নেই কোনো বাড়তি দায়িত্ব. সারাদিন অর্থের পেছনে দৌড় করা ছাড়া কোনো কাজ নেই. ঘরে অর্থ আসছে. সাফল্যের মুখ দেখছি. কিন্তু যতদিন যেতে লাগলো ততো মনে হতে লাগলো সত্যি তো কেউ আর বিরক্ত করছেনা, কেউ তো ঝগড়া করছেনা, কেউ তো অপেক্ষা করে থাকেনা. ফাঁকা বাড়িটা সকালে যেমন ছেড়ে যায়, ফেরত এসে তেমনি পাই. মাঝে মাঝে একাকিত্ব অনুভব করে. কেমন যেন ভয় লাগতো. পাশে বার বার তাকিয়ে দেখতাম ফাঁকা জায়গাটা.

নতুন ফ্লাট নিলাম. ভেবেছিলাম একেবারে নতুন ফ্ল্যাটেই বাবা মাকে নিয়ে আসব. এবারে যদি একাকিত্ব দূর হয়. কিন্তু নিজের ঘরে ঢুকলেই আবার সেই একাকিত্ব. বাবা মা অনেকবার বলেছিলো আমাদের আলাদা না হতে কিন্তু তখন আমি আর আমি ছিলাম না. তখন আমি ছিলাম অর্থের উপাসক. শুধুই সাফল্য ছিল আমার স্বপ্ন. নিজের অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে সাফল্যের ভবিষ্যত গড়ে তুলতে এতোই মশগুল ছিলাম যে কোনো কিছু তোয়াক্কা করিনি. নিজের বাবা মাকেও না. শুধুই অর্থ উপার্জন করে বাবা মায়ের হাতে টাকা তুলে দেয়াকেই ভেবেছি কর্তব্য পালন. 

আজ আমি সফল. হ্যা... বেশ ভালোই আছি. গাড়ি, ফ্লাট সব হয়েছে. কিন্তু আজ যখন পেছন ফিরে তাকাই তখন নিজেকে দেখতে পাইনা. দেখি একটা কাপুরুষকে. যে জীবনের মানেটাই বোঝেনি. যে জীবনের মূল অর্থটাই বোঝেনা, যে সাফল্য আর সুখের মধ্যে ভারসাম্যটা অনেক আগেই হারিয়ে ফেলেছিলো.

আজ সে একা..... আমি একা. বাবা মায়ের সন্তান কিন্তু স্পেশাল কারোর একজন আর নই. আমি চাইলেই আবার সংসার করতে পারতাম. না..... পারিনি. পারিনি আর. ইচ্ছে হয়নি.... না.... বোধহয় এটা বলা ঠিক যে সেই মুখটা ভুলতে পারিনি . বার -বার বাবা মা বলেছে কিন্তু পারিনি.

থাকতে না পেরে খোঁজও নিতে চেয়েছি অতীতের চেনা মানুষটার. ফোন করেও ছিলাম কিন্তু ওপাশ থেকে উত্তর পাইনি. সে হয়তো নিজের জীবনে এগিয়ে গেছে ভেবে আর এগোতে পারিনি. তাছাড়াও কি মুখে দাঁড়াতাম তার সামনে? কি বলতাম তাকে?

না... আর খোঁজ নেওয়া হয়নি. ভুলতেও চেয়েছি, পারিনি. কিন্তু এটা বুঝেছিলাম ভালোবাসা আমার জীবনেও এসেছিলো. কিন্তু তাকে দুহাত বাড়িয়ে গ্রহণ করার পরিবর্তে নিজের ভুলে তাকে বর্জন করেছি. শুধুই কষ্ট দিয়েছি. আর শেষে হারিয়ে ফেলেছি আমার ভালোবাসা. ওই শুন্য স্থান আর কেউ পূরণ করতে পারবেনা. 

চোখে হালকা জল এসে গেলো . তারপর ছবিতে সুন্দরী মেয়েটার হাসি মুখটা দেখে আমার মুখ দিয়ে বেরিয়ে এলো- সরি. এক্সট্রিমলি সরি.

সকালে উঠে ফ্রেস হয়ে রেডি হয়ে নিলাম. চা খাচ্ছি  এমন সময় ফোন বাজলো. ফোন হাতে নিয়ে দেখি অচেনা নম্বর. আমিই রিসিভ করলে ওপাশ থেকে শুনলাম - উঠে পড়েছিস... চল জলদি রেডি হয়ে নে...খেয়েই বেরিয়ে পড়বো. একসাথে বাইরে খেতে যাবো. 

ভুলেই গেছিলাম কালকেই সঞ্জয়কে নিজের নম্বর দিয়েছিলাম. বাড়ি ফিরে ওরটা সেভ করতে ভুলেই গেছিলাম. কি মনে হতে আমি তখনি বললাম - হ্যা আসছি.... তা আমরা সবাই যাচ্ছি তো?

- হ্যা... সবাই... যদিও  অঞ্জলি বলছিলো ও বেরোবে না ....হোটেলেই থাকবে.... কিন্তু আমরা ঠিক রাজি করিয়ে নিয়েছি. আরে বেড়াতে এসে ঘরে বসে থাকা? কাভি নাহি!!
 নে চল... চল ব্যাটা তাড়াতাড়ি আয় নিচে.

একটু পরে রেডি হয়ে নিলাম. আমার মধ্যে কি যেন একটা পরিবর্তন এসেছে হটাৎ বুঝলাম. কেমন একটা অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছে ভেতরে. আয়নায় তাড়াতাড়ি একবার নিজেকে দেখে নিলাম. আশ্চর্য!আজ অনেকদিন পর নিজের মুখটা আয়নায় অন্যরকম লাগলো. কিছু একটা পরিবর্তন হয়েছে আমার মধ্যে কি?

সঞ্জয়কে আরেকবার ফোন করে ওরা রেডি হয়েছে কিনা জেনের নিয়েই বেরিয়ে গেলাম নিচে. বাইরে গিয়ে দেখি বন্ধু আর দুই মহিলা দাঁড়িয়ে. আমাকে আসতে দেখে দুজনের মুখে হাসি ফুটলেও একজন নিজের মুখ ঘুরিয়ে রাস্তার দিকে তাকিয়ে রইলো. আমিও আর না তাকিয়ে সঞ্জয়ের সাথে কথা বলতে লাগলাম.

আহা.... এবারে চলো যাই. বৌদির কথায় যথা আজ্ঞা দেবী বলে বন্ধুটি আমার গায়ে ঠেলা দিয়ে বললো - ভাই চল..... অর্ডার পালন করতেই হবে... নইলে বিপদ. আমরা হেসে বেরিয়ে পড়লাম.

বুঝলাম বন্ধুটি আমার বেশ খুশি আছে নিজের জীবনে. যতই বন্ধুকে দেখছি ততই নিজের ওপর লজ্জিত হচ্ছি. ওর জায়গায় আমি কি ছিলাম? দুজনকে একে অপরের সাথে কি ভালো লাগছে.  এটাই তো জীবনের আসল খুশি. একটু রাগ, একটু অভিমান, একটু ইয়ার্কি,দুস্টুমি আর অনেক অনেক ভালোবাসা. 

হাঁটতে হাঁটতে মাঝে মাঝে আমার নজর চলে যাচ্ছে বেগুনি সালোয়ার কামিজ পরিহিতার দিকে. কি অসাধারণ লাগছে. কিন্তু সোজা চোখে তাকিয়ে দেখার অধিকার আজ আর নেই. সত্যি কি নেই? একটুও?

আমার বন্ধুটি হটাৎ আমার ঘনিষ্ট হয়ে গলা নামিয়ে বললো - আচ্ছা তখন তুই আমায় সবাই আসছে কিনা জিজ্ঞেস করলি কেন?

আমি কি বলবো বুঝতে না পারলেও তৎক্ষণাৎ নিজেকে সামলে বললাম - না মানে এমনি..... এই আর কি.

দুস্টু চাহুনি দিয়ে সে বললো - এমনি? আচ্ছা? এমনি? আমায় কি কচি খোকা ভাবো? কিছুই বুঝিনা হুম? 

মানে? বুঝেও না বোঝার ভান করে জিজ্ঞেস করলাম.

ও দুস্টু চাহুনি দিয়ে বললো - মানে? বলি চোখ তো সরাতেই পারছোনা গুরু? তাইতো বলি আমাকে জিজ্ঞেস করলো কেন সবাই... মানে সবাই যাচ্ছি কিনা. কাল তো বললামই আমরা সবাই যাচ্ছি তাও আজ আলাদা করে সবাই যাচ্চি কিনা জিজ্ঞেস কেন করলো? কি ব্যাপার গুরু?

আমি অপ্রস্তুত হয়েও নিজেকে সামলে নিয়ে বললাম - আরে ধুর ব্যাটা... আমি... আমি তো...

ও বললো - এত আমি আমি করোনা.... পেটে খিদে মুখে লাজ... ন্যাকা....দেখ তুই যদি বলিস আমি মানে আমি আর কৃতি কিন্তু ওর সাথে কথা বলতে পারি.....তারপর না হয়....

আমি - আরে তুই কোথা থেকে কোথায় চলে যাসনা.... এমন কিছু না চল ব্যাটা . (আমি এড়ানোর জন্য বললাম.)

এবারে সঞ্জয় সিরিয়াস হয়ে বললো - আরে আর কতদিন একা থাকবি? যা হবার তো হয়েই গেছে.... এবারে এগিয়ে যাওয়াই তো উচিত নাকি? দেখ তুই আর ও দুজনেই এখন একা. তোদের দুজনেরই একটা পাস্ট আছে কিন্তু সেসব ভুলে নতুন করে এগিয়ে যাওয়া উচিত. তোর যদি ওকে ভালো লেগে থাকে তাহলে আমাকে বল..... আমরা ওর সাথে কথা বলি.... বা বেস্ট হয় তোরা নিজেদের সাথে কিছুক্ষন সময় কাটা, কথা বল.

আমি হেসে বললাম - আরে আমরা বেড়াতে এসেছি.... এখানে এসে এসব করবো?

সঞ্জয় - তুই ব্যাপারটা এড়িয়ে যাচ্ছিস কেন বলতো? ও ডিভোর্সড বলে?

আমি - সে তো আমিও.

সঞ্জয় - তাহলে? লজ্জা করছে? তুই শালা চিরকাল গুড বয় হয়েই থেকে গেলি. ভদ্র ছেলেটা. আরে একটু সাহস নিয়ে এগিয়ে যা না. 

আমি হেসে বললাম - হুম..... ঠিকই বললি.... গুড বয় হয়েছি ঠিকই, কিন্তু গুড হাসব্যান্ড হতে পারিনি.

সঞ্জয় - এই সরি রে আমি কিন্তু ওই ভাবে কিছু.......

আমি হেসে ওর কাঁধে হাত রেখে বললাম - আরে ধুর... সরি কিসের..... ছাড় ওসব... চল.

সঞ্জয় - আমি কিন্তু শুধু তোর কথা ভেবে ওগুলো বলিনি. তুই যেমন ওর দিকে দেকছিলিস... তেমনি অঞ্জলিও কিন্তু তোর দিকে দেখছিলো মাঝে মাঝেই কাল. কৃতি বললো আমায়. কাল তুই যখন খাচ্ছিলি তখন কৃতি দেখেছে ওকে তোর দিকে মাঝে মাঝে তাকাতে. I think..... ওরও তোকে পছন্দ হয়েছে. কাল তোর সাথে পরিচয় করানোর সময়ই তো দেখলাম... দুজন দুজনকে দেখেই যাচ্ছিলি.

আমি নিজের মনের হাসলাম ওর কথা শুনে. ও কি ভাবছে আর..... সত্যিটা কি. 

একসময় সেই স্থানে পৌঁছে গেলাম. খুব বেশি দূর না আমাদের হোটেল থেকে. কিন্তু এই রাস্তা টুকু কখন যে পার করে ফেলেছি ভেবে পেলাম না.
Like Reply
Do not mention / post any under age /rape content. If found Please use REPORT button.
#2
উপরের অংশের পর 

আমি এসেছিলাম কটা দিন কাজ থেকে মুক্তি নিয়ে নির্জনে সময় কাটাতে. হয়তো হোটেল থেকে বেশি বেরোতামও না. বাবা মাও বলেছিলো একটু রেস্ট প্রয়োজন আমার. বাবা মাকেও আনতে চেয়েছিলাম কিন্তু বাবার বেশি বেরোনো মানা. তাই আমাকেই প্রায় জোর করেই বললো ঘুরে আসতে. আমিও ভাবলাম একটু মুক্তি প্রয়োজন. আগে কাজে ডুবে ছিলাম সাফল্যের লোভে আর এবং ডুবে থাকি অতীতের ভুল গুলো ভুলে থাকতে.


বেশ সুন্দর জায়গাটা. চারিদিকে গাছ আর গাছ. প্রাকৃতিক পরিবেশের সৌন্দর্যই আলাদা. একটু দূরে জলের দেখাও পেলাম. নিজের স্থান অধিকার করে নিজের স্রোতে বয়ে চলেছে সে. এপার থেকে ওপার যাবার জন্য ছোটো একটা লাল ব্রিজ. আমরা ব্রিজে উঠে এগোচ্ছি সামনের দিকে. বৌদি একটু ভয় পাচ্ছিলো বলে আমার বন্ধুটি তার হাত ধরে এগোচ্ছে. এটাই তো প্রয়োজন..... ভরসা. সামান্য ভরসা, পাশে থাকা. ওদের দেখে আমার মুখে হাসি ফুটে উঠলো. নিচে তাকিয়ে দেখলাম অনেক গুলো হাঁস জলে এদিক থেকে ওদিক যাচ্ছে. সূর্যের আলো জলে পড়ে সোনালী উজ্জ্বল আলোয় আলোকিত করে তুলেছে স্থানটা. কি অসাধারণ রূপ. আমরা ওখানেই দাঁড়িয়ে সেই দৃশ্য দেখতে লাগলাম. আমার পাশেই দাঁড়িয়ে সেই সুন্দরী সেই দৃশ্য দেখছে. আর আমি দেখছি তাকে. সে বোধহয় বুঝতে পারলো. তাই আমার কাছ থেকে সরে বান্ধবীর পাশে গিয়ে হাসিমুখে কথা বলতে লাগলো. আমি মুচকি হেসে আবার নিচে হাঁসেদের দেখতে লাগলাম. বাচ্চা গুলো কেমন মায়ের পাশে পাশে চলছে. আবার জলে মুখ ডুবিয়েই মাথা ঝাড়া দিয়ে ওপরে তাকাচ্ছে.  

তখনই আমার ফোনটা বেজে উঠলো. দেখলাম অর্কর ফোন. ওর হাতেই সব দায়িত্ব দিয়ে এসেছি. কিছু দরকারে নিশ্চই ফোন করেছে. নইলে আমি বলে এসেছি ফোন না করতে. আমি ফোন রিসিভ করে ওর সাথে কথা বলতে লাগলাম. পেছন থেকে সঞ্জয় বললো - এই আমরা সামনে এগোলাম.... তোর হয়ে গেলে আসিস. আমি সামান্য মাথা ঘুরিয়ে আচ্ছা বলে আবার ফোনে মন দিলাম.

সেরকম কিছু নয়, একটা মিটিংয়ের ব্যাপারে. যেটা কয়েকদিন পর হবার কথা সেটা আরো পিছিয়ে গেছে. এই মুহূর্তে সেটা হচ্ছেনা. সেই ব্যাপারেই আমি আর ও কিছুক্ষন কথা বললাম সাথে  সব কিছু ঠিক মতো চলছে কিনা জেনে নিলাম. বেশ কাজের ছেলে অর্ক. সব একদম নিজ দায়িত্বে সামলাচ্ছে. আমার ছোট ভাইয়ের মতো. বাবা মায়ের পাশাপাশি সেও প্রায় জোর করেই বলেছিলো একটু বাইরে থেকে ঘুরে আসতে. সব ও সামলে নেবে. তাই একটু ফাঁকা পেতেই আমিও বেরিয়ে পড়ি. 

কথা শেষ হলে ওই হাঁসেদের দলের একটা ফটো তুললাম. দামি ফোন...... অথচ বাবা মায়ের ছবি আর সেই চলে যাওয়া মানুষটার ছবি ছাড়া কিছুই নেই. পুরো ফাঁকা ফোন. ছবি টবি তোলাই হয়না. আজ এতদিন পরে একটা সুন্দর মুহুর্তকে ফোনে তুলে রাখলাম. তারপর এগিয়ে গেলাম সামনের দিকে. ওরা বেশ দূরে এগিয়ে গেছে মনে হয়. আমি ধীর পায়ে এগিয়ে গেলাম. কিছুদূর এগোতেই দেখি  দম্পতি একটি জায়গায় দাঁড়িয়ে সেলফি তুলছে. দুজন খুব অন্তরঙ্গ হয়ে ছবি তুলছে. ঐখানে এই মুহূর্তে যাওয়াটা উচিত মনে করলাম না. তাই ওখান থেকে চলে এলাম. একটু এগোতেই একটা বসার জায়গা পেলাম. ওখানেই বসে পড়লাম. আমাদের মতো আরো অনেকে এদিকে ঘুরতে এসেছে. সবাই এদিক ওদিক ছড়িয়ে. একটা বাচ্চা মেয়েকে দেখলাম একটা ছোট্ট কুকুর ছানাকে আদর করছে আর পাশে বাবা মা দাঁড়িয়ে. কুকুর ছানাটা আদর খাচ্ছে আজ লেজ নাড়ছে.

-কেমন আছো?

পেছন থেকে হটাৎ একটা পরিচিত কণ্ঠ শুনে উঠে ঘুরে দাঁড়ালাম. সে  আমার সামনে দাঁড়িয়ে. সামান্য হাসি দিয়ে আবার জিজ্ঞেস করলো - কেমন আছো?

আমিও সামান্য হেসে বললাম - এই... আছি.

সে - বাবা মা কেমন আছে? ওরা ঠিক আছে তো?

আমি - হ্যা... ভালো..... তোমার মা? ভালোতো উনি?

ও শুধু হ্যা সূচক মাথা নাড়লো.

আমি বললাম - বসোনা. আসলে এতদূর হেটে হেটে এলাম তো. তাই বসেছিলাম একটু.

ও সামান্য হেসে বললো - না ঠিকাছে তুমি বসো... আমি যাই কৃতির কাছে. 

ও পাশে ঘুরতেই আমার মধ্যে কি যেন হলো. আমি একটু জোর করেই বললাম - না প্লিস..... একটু.... একটু বসোনা. 

ও আমার দিকে আবার ঘুরলো. আমার চোখে কিছু দেখলো কিনা জানিনা কিন্তু এবারে আর কিছু না বলে বসলো. আমিও একটু দূরত্ব বজায় রেখে পাশে বসলাম. কিছু পরে তার দিকে না তাকিয়েই জিজ্ঞেস করলাম - তুমি কেমন আছো?

- এইতো... বেশ ভালোই আছি.

আমি এবারে তাকালাম ওর দিকে. ও সামনে তাকিয়ে আমার মতোই ওই বাচ্চাটা আর কুকুর ছানাকে দেখছে. এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ও বাচ্চা মেয়েটার দিকে. ওই চোখে আমি কিছু যেন খুঁজে পেলাম. একটা অপূর্ন ইচ্ছে. নিজেকে নিজেই ধিক্কার দিলাম.  তারপর আমার নজর গেলো ওর গলায়. আরে!... এটাতো ওই.....!

একটু সুখ পেলাম যেন. তারপর সামনে তাকিয়ে বললাম -

কি sweet  না বাচ্চাটা? জিজ্ঞেস করলাম আমি. উত্তরে ও হেসে মাথা নেড়ে বললো খুবই. দেখো..... কেমন বাবাকে নিচে বসিয়ে জোর করে ওনাকে দিয়েও আদর খাওয়াচ্ছে কুকুরটাকে.

আমিও দেখলাম.... তিনজন সুখী মানুষকে আমাদের থেকে কিছুদূরে দাঁড়িয়ে থাকতে. বাবা মা মেয়ে তিনজনের মুখেই হাসি. লোকটা হয়তো সেই ভাবে পশু প্রেমিক নন তাও মেয়ের কথায় কুকুর ছানার গায়ে হাত বোলাচ্ছেন আর মা দাঁড়িয়ে ওদের দেখে হাসছে.

আমি - একটা কথা জিজ্ঞেস করবো?

ও বললো - করো.

আমি - বিয়ে করলেনা কেন আর?

ও হালকা হাসলো. তারপর বললো - ধুর... আর..... ইচ্ছে করলোনা.... মা যদিও কানের সামনে ঘ্যানর ঘ্যানর করে... আমি কান দিই না. 

আমি ওর দিকে তাকিয়ে - ইচ্ছে করেনা... নাকি.....

ও আমার কথা কেড়ে নিয়ে নিজেই এবারে আমায় জিজ্ঞেস করলো - তা তুমিও তো শুনলাম কাল ওদের বললে ডিভোর্সড. তুমি আর বিয়ে করোনি কেন? এখন তো বেশ সাকসেসফুল হয়েছো. দেখেই বোঝা যাচ্ছে.... আলাদাই ব্যাপার.... তাহলে?

আমি মাথা নামিয়ে হেসে বললাম - হ্যা টাকা পয়সার দিক থেকে সফল অবশ্যই..... কিন্তু আমি... আমিও আর পারিনি.... ইচ্ছে হয়নি.

ও এবারে হেসে জিজ্ঞেস করলো - ইচ্ছে হয়নি? নাকি......

দুজনেই হেসে ফেললাম. জানি দুজনের হাসিই নকল.

আমরা বসে আছি. দেখি দূর থেকে সঞ্জয় আর বৌদি আমাদের কেই দেখছে. দুজনের মুখেই হাসি. অঞ্জলি দেখেনি ওদের. ওরা আমাদের একসাথে বসে থাকতে দেখে কি ভাবলো কে জানে....হাতের ইশারায় আমাদের ওখানেই থাকতে বলে নিজেরা অন্যদিকে চলে গেলো. ওরা যেটা ভাবছে সেটা ভেবে হাসি পেলো আমার.

কি হলো? হাসছো কেন? ও জিজ্ঞেস করলো.

তোমার বান্ধবী আর আমার বন্ধু আমাদের এইভাবে একসাথে বসে থাকতে দেখে বোধহয় ভাবলো আমাদের মধ্যে........ তাই আমরা যাতে ডিস্টার্ব না হই তাই অন্যদিকে চলে গেলো.

ওমা! সেকি.....

-হুমম..... ওরা কাল থেকেই ভাবছে যে প্রথম দেখা থেকেই আমাদের মধ্যে......

-কি!! আমি যাই....

আমি - কোথায়?

ও চিন্তিত মুখে বললো - আরে.... ওরা আমাদের দেখে কিনা কি ভাবছে.... কৃতির কাছে গিয়ে বলি যে এরকম কিছু নয়....

আমি হেসে বললাম - আরে ছাড়ো তো....

ও বললো - না.... আমি যাই... ভুল বোঝাবুঝি আরো বাড়ুক তার আগেই ওকে গিয়ে বলি এসব কিছুই না.

ও প্রায় উঠেই যাচ্ছিলো. আমার কি মনে হতে ওর হাত ধরে ফেললাম. বা বলা উচিত অজান্তেই আমার হাত ওর হাত ধরে ফেললো. তারপর মুখ থেকে বেরিয়ে এলো - প্লিস যেওনা.

ও ঘুরে আমার হাতের দিকে তাকালো. আমি সঙ্গে সঙ্গে নিজের হাত সরিয়ে নিলাম. ও বসে রইলো.

- সরি.

- কেন?

- না... মানে হাতটা ঐভাবে ধরলাম.

- ওহ..... না ঠিকাছে 

- তাই ?

- মানে?

-সত্যি কি সব ঠিকাছে?

- কি বলছো?

- না কিছুনা.

কিছুক্ষন নীরবতা.

তারপর ওই বললো - বাবা মা কি এখনো আলাদা থাকেন নাকি তোমার সাথে এনে রেখেছো?

আমি - না একটা নতুন ফ্লাট নিয়েছি... আর বাবা মাকেও নিয়ে চলে এসেছি. এখন আমরা একসাথেই থাকি. 

- বাহ্... খুব ভালো. ওদের খেয়াল রেখো....কাজ থেকে সময় বার কোরো ওদের জন্য.... বয়স হচ্ছে তো. এখন ওদের তোমাকে প্রয়োজন. অন্তত এখন আর সেই ভুল করোনা.... ওদের এখন তোমাকে প্রয়োজন.

আমি হেসে বললাম - জানি...  ওহ.. শুনলাম তুমি নাকি আজ আসতে চাইছিলে না? বান্ধবী জোর করাতে বেরোতে রাজি হয়েছো?

- হ্যা.... ওই ভালো লাগছিলোনা... তাছাড়া আমি আর বেশি বেরোই টেরই না... ঘরে থাকলেও না.

আমি - অথচ একটা সময় ঘুরে বেড়াতে পছন্দ করতে. ঘুরতে যাবার কথা বলতে....

ও হালকা হাসি মুখে বললো - কি করবো বলো.... একজনকে তো খুব বলতাম.... কিন্তু সে তো সময়ই পেতোনা আমাকে নিয়ে বেরোনোর. তারপর আমারও ওই ইচ্ছে চলে গেছে.

আমি - তখন সবে ব্যাবসা এগোচ্ছে.... প্রচন্ড চাপ.... দেখতে তো... সকাল যেতাম আর ফিরতাম সেই রাতে.

ও মুচকি হেসে বললো - হ্যা.... তা ঠিক.... নিজের জীবনের থেকে বেশি গুরুত্ব তুমি তোমার ব্যবসাতে দিয়েছো.... তাইতো আজ এতো সাকসেসফুল.

আমি - খোঁটা দিচ্ছ? জীবনে অর্থের প্রয়োজন কতটা সেটা আমি বুঝি.... আমি সেই জীবন দেখেছি.... টাকা ছাড়া যে কি অবস্থা হয়... সেটা আমি এক্সপেরিয়েন্স করেছি. তুমি সেটা বুঝবেনা.

ও বললো - না মোটেও না.... তুমি নিজের চেষ্টায় আজ সফল.... এখানে খোঁটা কেন দেবো.... যাকগে ছাড়ো..... তুমি তোমার মতো করে ভালো আছো... আমি আমার মতো.

নিচের দিকে তাকিয়ে বললাম - একসাথে কি থাকা যেতোনা? ওই ডিসিশান নেওয়াটা কি খুব প্রয়োজন ছিল? 

এটা শুনে হাসলো অঞ্জলি. তারপর বললো - কি করবো বলো? যার সাথে সারাজীবন চলবো.... তার উপস্থিতির যদি অভাব বোধহয় হয়, যাকে পেয়েও না পাই তাহলে কি করবো? যাকে ভালোবে........

এইটুকু বলেই সে থেমে আমার দিক থেকে মুখ ঘুরিয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে থাকলো. তারপর বললো - আমাদের বোধহয় এবারে ওদের কাছে যাওয়া উচিত.

আমরা উঠে দাঁড়িয়েছি হটাৎ.....ওমা.... তখনি.... কোথা থেকে দেখি আরেকটা পুচকে কুকুর ছানা আমাদের সামনে এসে উপস্থিত. আমাদের দেখে ভয় পিছিয়েও যাচ্ছে আবার লেজও নাড়ছে. সেটাকে দেখে অঞ্জলি আয় আয় করে ডেকে তখনি কোলে তুলে নিলো.

আমিও এগিয়ে গেলাম ওর কাছে. দেখি সেই পুচকে নিজের ছোট্ট জিভ বার করে ওর গালে চেটে দিচ্ছে.

আমি বললাম - এ বাবা... তোমার গাল চেটে দিচ্ছে তো ইশ....

ও হেসে বললো - তাতে কি হয়েছে? বাবুর খিদে পেয়েছে? সাথে বিস্কুট নেই... ইশ.. 

ওর দিকে তাকালাম. ওই ছোট ছানাকে কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে এক অসাধারণ রূপসী. না শুধু রূপসী নয়, একজন ভালো মনের মানুষও. যেভাবে ওই ছানাটি কোলে নিয়ে আদর করছে যেন........ যেন ওটা ওর কাছের কেউ.

আমি ওর পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে বললাম - জানতাম না তো.... তোমার কুকুর এতো ভালো লাগে. আগে বলোনি তো.

ও কুকুর ছানার থেকে চোখ না সরিয়েই বললো - আমি কুকুর বেড়াল সবই পছন্দ করি. তোমাকে বলা হয়নি.... ভেবেছিলাম আমাদের বাড়িতে..... একটা ল্যাব কিনবো...

আমি - ল্যাব? ও আচ্ছা লাব্রাডর..... বলোনি তো.....

ও না তাকিয়েই বললো - সেই সুযোগ হয়ে ওঠেনি.....হলেও কি তুমি রাজি হতে?

আমি - তখন কি বলতাম জানিনা....কিন্তু এখন.....

আমার দিকে একবার তাকালো ও. হয়তো বোঝার চেষ্টা করলো আমি কি বলতে চাইছি.

ওদিকে ছানাটা যেন মায়ের কোলের খোঁজ পেয়েছে. চুপচাপ ওর কাঁধে মাথা রেখে শুয়ে. আর ও কুকুর ছানাটার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে. আর তখন ওর আঙুলে চোখ গেলো. ডান হাতের আঙুলে একটা আংটি. আমার মুখে হালকা হাসি চলে এলো কোথা থেকে. 

আমিও কুকুর ছানাটার মাথায় হাত বুলিয়ে বললাম - দেখো.... তোমার কোলে ঘুমিয়েই পড়লো মনে হয়. দুজনেই হাত বোলাতে লাগলাম ছানাটার মাথায়. বেশ কয়েকবার আমাদের দুজনের হাত স্পর্শ হলো. 

আমি - তুমি ঠিকই বলেছো. তখন আমি অন্য মানুষ ছিলাম. আমার একটাই লক্ষ ছিল. টাকা. আমি তোমাকে নিয়ে ভাবার বা সময় বার করার চেষ্টাও করিনি. আমি...বোকা হাঁদা সবসময় ভেবেছি তোমায় দামি গয়না শাড়ী কিনে দিলেই দায়িত্ব পালন করা হয়ে গেলো...আসলে সেই সময়টা এতো কাজের চাপ.... একটু একটু করে যত সাফল্য পাচ্ছিলাম ততই আরো ব্যাস্ত হয়ে পড়ছিলাম. আরো সাফল্যের চাহিদা বেড়ে যাচ্ছিলো. জিনিস কিনে দেয়াকেই দায়িত্ব পালন করা বুঝতাম. অতীতের থেকে মুক্তির পথ খুঁজতে খুঁজতে কখন যে পথটাই হারিয়ে ফেলেছি... বুঝতেই পারিনি. ভাবিনি জীবনের আসল দায়িত্ব পালন কি..... ইডিয়ট ছিলাম একটা !

হটাৎ আমার মুখ থেকে এরকম কথা শুনে ও আমার দিকে তাকালো. আশ্চর্য দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে. হয়তো ভাবছে এ কোন লোককে দেখছে সে? এ কি সেই পরিচিত মানুষটা?

আমার মধ্যে কি হয়েছিল জানিনা. বার বার মনে হচ্ছিলো এই মুহূর্তটা যদি হাতছাড়া হয়ে যায় তাহলে চিরদিনের মতো আমি সব হারিয়ে ফেলবো. ভয় ও সাহস  দুই একসাথে কাজ করছিলো. হয়তো আমার ভেতরের সত্যিকারের পুরুষটা ওই কাপুরুষ কে হারিয়ে বেরিয়ে আসছিলো.

আমি ওর দিকে তাকিয়ে বললাম - আমি জানি..... আমার ওপর অনেক অভিমান জমে আছে তোমার. তুমি ঠিকই বলেছো... জীবনের একটা সুখের সময় যে মানুষটার সাথে কাটানোর কথা, যাকে সবসময় নিজের পাশে পেতে চেয়েছো..... তুমি তাকে সেই সময় পাশে পাওনি. আমি এর জন্য দায়ী. আমি ভুল.... আমি... আমি মানছি. কিন্তু এটাও ঠিক যে আমি নিজেও ওরকম হতে চাইনি. পরিস্থিতি আমাকে বাধ্য করেছিল. আমাদের নিজেদের কাছের মানুষকে ধোঁকা দিতে দেখেছি. বাবাকে প্রায় সবকিছু হারিয়ে ফেলতে দেখেছি. সেই সময় নিজের বাবাকে খাটতে খাটতে প্রায় শেষ হয়ে যেতে দেখেছি. মায়ের কান্না দেখেছি আমি. তাও বাবা মা আমার ওপর এসবের কিছুই আসতে দেননি. সবকিছু উজাড় করে দিয়েছিলো ওরা. আমার পড়াশোনার একটুও ক্ষতি হতে দেননি তারা. তাই আমিও ছোট থেকেই নিজেকে পাল্টে ফেলেছিলাম. আমার একটাই লক্ষ্য ছিল বাবা মা কে আবার সেই সুখের জীবন ফিরিয়ে দেওয়া. কিন্তু সেই লড়াই লড়তে লড়তে কখন যে আমিও পাল্টে গেছি বুঝিনি. বাবা মায়ের মুখে হাসি ফুটিয়েছি যেমন.... তেমনি তাদেরকেও ভুলে শুধু নিজের ব্যবসা নিয়েই ভেবেছি. অতীতের সেই দিন যাতে আর ফিরে না আসে সেই চেষ্টায় বিলিয়ে দিয়েছি নিজেকে কিন্তু ভুলে গেছি জীবনে ভারসাম্য কতটা প্রয়োজন. ব্যালান্স রক্ষা করা. হ্যা এটা ঠিক যে আমি আমার ভারসাম্য বজায় রাখতে পারিনি.... কিন্তু এটাও ঠিক যে আমি কোনো কুপথেও যায়নি. আজকে আমি যে স্থানে পৌঁছেছি তার জন্য নিরলস পরিশ্রম করেছি. কিন্তু এই পরিশ্রমকে আমি কুপথে গিয়ে বা নিজের সভ্যতা বর্জন করে অপমান করিনি. এটা ঠিক যে ওই সময় আমি অন্য মানুষ হয়ে গেছিলাম কিন্তু...... কিন্তু আজ আমি অন্য মানুষ. আর আমার এই পরিবর্তনের কারণ তুমি. তোমাকে হারিয়ে আমি বুঝেছি তোমার গুরুত্ব. ওই যে তখন জিজ্ঞেস করলে না .... ইচ্ছে করে আর বিয়ে করিনি নাকি অন্য ব্যাপার..... হ্যা অন্য ব্যাপার. প্রথমত নিজের কাছেই আমি ছোট হয়ে গেছিলাম আর দ্বিতীয়ত........


-দ্বিতীয়ত কি?

ছানাটা আবার ওর গাল চাটছে... কিন্তু ওর নজর আমার দিকে. সোজা তাকিয়ে আমার দিকে সে.

আমি ওর চোখে চোখ রেখে বললাম - দ্বিতীয় কারণটা তুমি. আমার পাশে আর অন্য কাউকে আমি..... আমি ভাবতেও পারিনা.  যে সময়টা তোমার সাথে কাটিয়েছি..... তখন না বুঝলেও আজ বুঝি ওই সময়টার মূল্য কি ছিল. আজ এটা বলতে দ্বিধা নেই যে তোমার জায়গা আর কেউ নিতে পারবেনা. আসলে কি বলতো....? আমাদের দুজনেরই পরিস্থিতি এমন ছিল যে তুমিও ভুল নয়..... আর সেই সময় মনে হতো আমিও ভুল নয়. আমি যা করছি আমার পরিবারের জন্যই তো করছি. কিন্তু ঐযে ব্যালান্স..... ওখানেই প্রব্লেমটা হলো. আজ বিত্তবান হয়েছি কিন্তু পেয়েছি নিঃসঙ্গতা, সফল হয়েছি কিন্তু হারিয়েছি সুখ. বাবা মায়ের ভালোবাসা আশীর্বাদ তো সবসময় সন্তানের সাথে থেকেই কিন্তু মানুষ হিসেবে কাছের মানুষকে ভালোবাসার সুখ থেকে আজ বঞ্চিত আমি. বার বার মনে হয়েছে তোমার সাথে দেখা করি কিন্তু...... পারিনি.


-তা হটাৎ এই উপলব্ধি?

আমি - মানুষ মাত্রেই তো ভুল করে... তাইনা? আমি ভুল করেছি আর সেটা যে কি ভুল আজ বুঝতেও পারছি...

ও আমার থেকে চোখ সরিয়ে বললো - এখন এসব কেন বলছো আমায় ?

আমি - অঞ্জু...

নামটা শুনেই ও অস্থির হয়ে এদিক ওদিক দেখতে লাগলো. আমার কাছ থেকে নিজের মুখ লুকিয়ে অন্যদিকে ফিরে তাকিয়ে রইলো.

আমি থামলাম না. বললাম- ভালো আমিও তোমায় বেসেছি..... বা বলতে পারো.... যদি কাউকে ভালোবেসে থাকি সে শুধু তুমি. শুধু ওই সময় আমি...... আমি তোমায় বুঝিয়ে উঠতে পারিনি.... হ্যা আমি ভুল ছিলাম..... কিন্তু... কিন্তু..আমি শুধু তোমাকেই চেয়েছি... সবসময়.... তাইতো আমি... আমি পারিনি আবার নতুন করে পথ চলতে. আবার তোমার সামনেও যেতে পারিনি. সবচেয়ে মজার ব্যাপার কি জানো? তোমায় যত ভুলতে চেয়েছি.... ততোই তোমায় মনে পড়েছে. আসলে আমরা যাকে ভুলতে চাই... তাকেই সবথেকে বেশি মনে করি.

- কি বলতে চাইছো তুমি?

আমি নিজের সব টুকু সাহস করে বলেই ফেললাম - বলতে এটাই চাই যে..... আমরা কি আবার..... আবার নতুন করে সব শুরু করতে পারিনা? একসাথে পথ চলতে পারিনা আবার? বিশ্বাস করো.... আমি আর আগের সেই মানুষটা নই... আমি পাল্টে গেছি. 

অঞ্জু আমার দিকে না তাকিয়েই বললো - না..... আর না.....আমিও বদলে গেছি... একা পথ চলতে শিখে গেছি.. প্রথম প্রথম অসুবিধা হতো.... কিন্তু এখন আর হয়না. এই আছি.. বেশ আছি.

আমি ওর আরেকটু কাছে গিয়ে দাঁড়ালাম. আমি জানি ও আমার থেকে নিজেকে লুকোচ্ছে. হয়তো দুচোখে একটু জলও জমেছে .যেটা আমাকে ও দেখাতে চায়না না.

আমি - জানি... আমার ওপর খুব অভিমান তোমার... আমি তার যোগ্যও..... তুমি হয়তো ভাবছো আজ যখন সব কিছু গুছিয়ে নিয়েছি তখন তোমার কাছে এসেছি. তার আগে তো আসিনি. খোঁজও নিই নি. আসলে ওই ভাবে আমরা হটাৎ আলাদা হয়ে গেলাম... তুমিও আমার ওপর রাগ করে ছিলে, আমিও রাগ করে... দুজনেই রেগে ছিলাম. তারপর আমি পারিনি তোমার সামনে আসতে.... না পেরেছি তোমায় ভুলতে, না পেরেছি তোমার কাছে যেতে. এই অনুভূতি যে কি তা আমি ছাড়া কেউ বুঝবেনা. কিন্তু একদিন পরিস্থিতি  আমাদের দূরে করেছিল আজ সেই পরিস্থিতিই আবার আমাদের একে অপরের সামনে নিয়ে এসেছে. হয়তো কেউ একজন চাইছে যে আবার সবকিছু নতুন করে শুরু হোক. নইলে ভাবো... আমাদের হটাৎ করে আবার দেখা আমার বন্ধুর মাধ্যমে. আজ যখন এতদিন পর আমরা আবার মুখোমুখি হয়েছি তখন......

অঞ্জলি - আমি তো বললাম আমি আর সেই আগের অঞ্জলি নেই যে একা থাকতে পারতোনা..... আমি আজ একা থাকতেই পছন্দ করি. আমি শিখে গেছি একা থাকতে. আমার আর কাউকে পাশে প্রয়োজন নেই.

দৃঢ়তার সাথে বললো অঞ্জলি. কিন্তু একবারের জন্যও তাকায়নি আমার দিকে.

আমি - কিন্তু আমার যে প্রয়োজন. খুব..... কি করবো বলো? এক নম্বরের স্বার্থপর যে আমি. তাইনা?

ও - হুমম. একদমই তাই.

আমি - তা এই স্বার্থপর লোকটাকে শোধরানোর দায়িত্ব নিজের কাঁধে আবার নিতে পারবেনা? আমি কি পাশে পেতে পারিনা তোমায় আবার? 

ও -  না..... আর.... আর না.... আমি আর চাইনা তোমায়. একটুও না.

আমার দিকে পেছন ঘুরে দাঁড়িয়ে ও তবে ওর গলার স্বরে হালকা কম্পনটা স্পষ্ট বুঝলাম আমি. 

আমি - তাই? তা আমায় বলতো.... ভুল আমি করেছি তাও তুমি কেন নিজের জীবন নতুন করে শুরু করলেনা?

অঞ্জু - আর সাহস হয়নি. 

আমি - সাহস হয়নি? নাকি তুমিও আমায় আজও ভুলতে পারোনি?

ও - তোমায় আমি কবে ভুলে গেছি. তোমার মতো লোককে কে মনে রাখবে?

আমি মুচকি হেসে আবার বললাম.- তা ঠিক..... তা আমার মতো একটা বাজে লোককে মনে যদি নাই রাখো... তাহলে তোমার গলায় আমার দেওয়া ওই কমদামি পেন্ডেন্টটা কেন?ওটা তোমার জন্মদিনে তোমায় কিনে দিয়েছিলাম তাই? 

ও নিজের গলার কাছে একবার হাত রেখে তারপর বাচ্চাটার মাথায় হাত বোলাতে লাগলো.

আমি আরেকটু এগিয়ে ও যে হাতে বাচ্চাটার মাথায় হাত বোলাচ্ছে সেই হাতের ওপর হাত রেখে বললাম - আর আমার এই রাস্তা থেকে কিনে দেওয়া এই কমদামি আংটিটা কেন? আমরা মেলায় বেড়াতে গেছিলাম আমাদের বিয়ের পর পরেই. তখনই একটা দোকানে আমার নজর পড়ে এই A লেখা আংটিটার ওপর. তোমায় কিনে দি তখন. তখন তোমার হাতে বেশ টাইট হতো কিন্তু এখন তো বেশ ফিট. সামান্য এই ফালতু আংটিটা খালি খালি কেন পড়ে আছো আজও?

আমার দিকে একটু ক্রুদ্ধ নজর নিয়ে ঘুরে তাকালো ও. জল চিক চিক করছে সেই চোখে. হালকা মাথা নাড়িয়ে বললো - তুমি একটুও পাল্টাওনি..... একটুও না.

আমি  - রাগ হচ্ছে আমার ওপর? ওগুলোকে সস্তা কমদামি ফালতু বললাম বলে? তাইনা?

ও - কি বলতে চাইছো?

আমি ওর একদম কাছে গিয়ে চোখে চোখ রেখে বললাম - আমি এটাই বলতে চাইছি যে আমি পাল্টে গেছি.... কিন্তু তুমি?....তুমি  একটুও পাল্টাওনি. আজও..  আজও আমাকে ভুলতে পারোনি তুমি. তুমিও আমার মতোই ভিতরে ভিতরে কষ্ট পাচ্ছ. আমরা কাগজে কলমে আলাদা হলেও মন থেকে আলাদা হতে পারিনি আর পারবোও না. আজ এতদিন পরেও তুমি সেই একি রয়ে গেছো. তাই আজও আমার দেওয়া এই জিনিস গুলো ফেলে দাওনি... বলো ভুল বলছি?

ও বাচ্চাটাকে নিচে নামিয়ে দিয়ে ঘুরে দাঁড়িয়ে বললো - আমি আর এই বিষয়ে কথা বলতে চাইনা... আমি আসছি.

আমি হালকা স্বর তুলে বললাম - দাড়াও.... আমায় উত্তর দিয়ে যাও.

ও রাগী ভাবে - বললাম তো এই বিষয় নিয়ে আমি কিছু বলতে চাইনা.... আমি ভুলে গেছি তোমায়. 

আমি - তাহলে দুই চোখে জল কেন তোমার? কাকে ঠকাচ্ছ? আমায়? না..... তুমি নিজেকে ঠকাচ্ছ... নিজেকে. 

ও ঘুরে দাঁড়িয়ে আমার কাছে দ্রুত পায়ে এগিয়ে এসে জলে ভেজা ক্রুদ্ধ নয়নে চেয়ে থাকলো কয়েক মুহূর্ত... তারপর ঠাস করে একটা চড় মারলো আমার গালে. তারপর কোনোরকমে নিজের কান্না আটকে বললো - I hate you.... Hate you..

ব্যাথা লাগলোনা....আমি সেই চড়ের যোগ্য ছিলাম. দুঃখও পেলাম না... বরং বিপরীত অনুভূতিটাই বৃদ্ধি পেলো. আমার দুই চোখেও কখন জানি জল এসেছে গেছে. সেই জল চোখেই মুখে হাসি এনে বললাম - ব্যাস..... আর কিছু বলার নেই, জানারও নেই .... আমি আমার উত্তর পেয়ে গেছি.... পেয়ে গেছি.... আজ আমি... খুব খুশি.. খুব.

আমাকে হাসতে দেখে আমায় একটা হালকা ধাক্কা দিয়ে ও বললো - বাজে লোক একটা.... জঘন্য লোক... I hate you. কেন এতদিন....

আর কিছু বলতে পারলোনা ও. চোখ মুছতে মুছতে চলে গেলো ওই জায়গা ছেড়ে. আমি যেন অনেকটা হালকা অনুভব করছিলাম. কেউ - কেউ আওয়াজ শুনে পাশে তাকিয়ে দেখি ওই বাচ্চাটা ওর ভাই বোনদের সাথে দৌড়াদৌড়ি করছে, কামড়াকামড়ি করছে. হটাৎ ঘেউ করে একটা আওয়াজ পেয়ে ওরা সবাই ছোট্ট ছোট্ট পায়ে দ্রুত একটা বড়ো কুকুরের দিকে দৌড়ে গেলো. সবাই ঘিরে ফেললো মাকে. ওদের মা সবার গায়ে মাথায় জিভ বোলাতে বোলাতে শুয়ে পড়লো আর পুচকে গুলো  মাতৃদুগ্ধ পানে ব্যাস্ত হয়ে গেলো.

আমি দেখতে লাগলাম ওদের. ওদের মা দূরে কোথাও গেছিলো খাবার খুঁজতে হয়তো. এতক্ষন পর মা সন্তানের মাঝে দূরত্ব মিটেছে.

আর অন্যদিকে আরেকটি দূরত্বও হয়তো এতদিনে...... 



সমাপ্ত.

কেমন লাগলো এই ছোট গল্প? জানাবেন বন্ধুরা 
 
Like Reply
#3
তারপর ?
Like Reply
#4
(25-12-2020, 07:02 PM)dada_of_india Wrote: তারপর ?

দাদা.... পরের পর্ব অর্থাৎ শেষ অংশ দিয়েছি.... পড়ে নিন.... কেমন লাগলো জানাবেন  Heart
[+] 3 users Like Baban's post
Like Reply
#5
খুব সুন্দর বললে হয়ত সুন্দরের অবমাননা করা হবে ! একটাই কথা বলবো হৃদয় ছুঁয়ে গেলো  ! মুগ্ধ আমি আপ্লুত আমি ! এইটুকুই বলতে পারবো ! Namaskar Namaskar Namaskar
[+] 3 users Like ddey333's post
Like Reply
#6
(25-12-2020, 07:29 PM)dada_of_india Wrote: খুব সুন্দর বললে হয়ত সুন্দরের অবমাননা করা হবে ! একটাই কথা বলবো হৃদয় ছুঁয়ে গেলো  ! মুগ্ধ আমি আপ্লুত আমি ! এইটুকুই বলতে পারবো ! Namaskar Namaskar Namaskar

অনেক অনেক ধন্যবাদ দাদা  Namaskar
আপনার হৃদয় ছুঁয়ে গেলো জেনে সত্যি ভালো লাগছে.  Heart
[+] 4 users Like Baban's post
Like Reply
#7
গল্পটা ছোট আর কোথায় রইল, গল্পটা যে বিশাল! পাথরের আঁচর! যতদিন বুক থাকবে ততদিন ভালোবাসা থাকবে! হারিয়ে যেতেও মাঝে মাঝে হারিয়ে যাওয়া যায় না! ভাঙা গড়া - গড়া ভাঙা এই নিয়েই জীবন, তাই না! clps yourock
[Image: 20210115-150253.jpg]
[+] 5 users Like pinuram's post
Like Reply
#8
গল্পটা ছোটো হলেও খুবই মনোমুগ্ধকর ছিল,,, ধন্যবাদ দাদা
[+] 2 users Like Avenger boy's post
Like Reply
#9
(25-12-2020, 11:24 PM)pinuram Wrote: গল্পটা ছোট আর কোথায় রইল, গল্পটা যে বিশাল! পাথরের আঁচর! যতদিন বুক থাকবে ততদিন ভালোবাসা থাকবে! হারিয়ে যেতেও মাঝে মাঝে হারিয়ে যাওয়া যায় না! ভাঙা গড়া - গড়া ভাঙা এই নিয়েই জীবন, তাই না! clps yourock

একদমই তাই 
অনেক ধন্যবাদ পিনুদা ❤


সত্যিই... যতদিন বুক থাকবে ততদিন থাকবে ভালোবাসা. দোষ, ভুল যেমন আছে তেমনই আছে ক্ষমা..... যা জীবনের কঠিন বাস্তবের পাথুরে রাস্তায় হারিয়ে যাওয়া বিবেক নামের পথিককে  খুঁজে আবার নতুন করে হাঁটতে শেখায়. 
[+] 5 users Like Baban's post
Like Reply
#10
(26-12-2020, 12:16 AM)Avenger boy Wrote: গল্পটা ছোটো হলেও খুবই মনোমুগ্ধকর ছিল,,, ধন্যবাদ দাদা

অনেক ধন্যবাদ Avenger boy Heart
আপনার ভালো লেগেছে জেনে খুব ভালো লাগলো আমার.
[+] 1 user Likes Baban's post
Like Reply
#11
দুর্দান্ত ভালো লাগল ! অনেক কিছু শিখিয়ে দিল এই গল্পটা  clps জেট যুগের ইঁদুর দৌড়ে নেমে মানুষের মন থেকে ভালোবাসাটাই হারিয়ে যায় অনেকের। অনির্বানেরও তাই হয়েছিল। কিন্তু everybody needs a second chance, অনির্বাণ উপলব্ধি করতে পেরেছে যে জীবনে টাকা, যশ-খ্যাতিই সব নয়। বেঁচে থাকার জন্য সবার আগে চাই ভালোবাসার নির্ভরতা, বুঝেছে অঞ্জলী ছাড়া ও অচল। অপরদিকে অনির্বাণকে ছাড়া অঞ্জলীও এতদিন পালবিহীন তরীর মতো নিঃস্ব জীবন কাটিয়েছে, তাও দুজনে আশা ছাড়ে নি, মনের কোনো গভীর কোনায় হয়তো একচিলতে আশা ছিল দুজনেরই। যেভাবে ওদের পুনরায় সব রাগ অভিমান ভুলে মিল দেখিয়েছো, দূরত্ব ঘুচিয়ে পরস্পরের কাছে এনেছো, সেটা অনবদ্য লাগল  Heart Heart yourock
(দেরিতে মন্তব্য করার জন্য দুঃখিত, সুযোগ হয়নি সাইটে আসার  Namaskar )
[+] 4 users Like Mr Fantastic's post
Like Reply
#12
Der aye par Dusrust aaye!!❤❤
এতো সুন্দর কমেন্ট পড়ে সত্যি খুব ভালো লাগছে. দুই আলাদা হয়ে যাওয়া মানুষের পুনর্মিলনের গল্পটা ও তাদের ভেতরের অনুভূতি তুমি এতো সুন্দর ভাবে বুঝেছো বা বলা উচিত অনুভব করেছো দেখে আমি খুব খুশি হলাম. এটাই তো লেখক চায়.. পাঠক তার গল্পের সাথে, চরিত্রের সাথে তাদের জগতে হারিয়ে যাক. পিনুদার গল্পের মতো এখানেও শেষ থেকে শুরু ❤

এবারে আমি চাই তুমিও কিছু লেখো. এরকম আমার মতো ছোট এক পাতার গল্পও লিখতে পারো. অপেক্ষায় রইলাম.
[+] 1 user Likes Baban's post
Like Reply
#13
(26-12-2020, 05:48 PM)Mr Fantastic Wrote: দুর্দান্ত ভালো লাগল ! অনেক কিছু শিখিয়ে দিল এই গল্পটা  clps  জেট যুগের ইঁদুর দৌড়ে নেমে মানুষের মন থেকে ভালোবাসাটাই হারিয়ে যায় অনেকের। অনির্বানেরও তাই হয়েছিল। কিন্তু everybody needs a second chance, অনির্বাণ উপলব্ধি করতে পেরেছে যে জীবনে টাকা, যশ-খ্যাতিই সব নয়। বেঁচে থাকার জন্য সবার আগে চাই ভালোবাসার নির্ভরতা, বুঝেছে অঞ্জলী ছাড়া ও অচল। অপরদিকে অনির্বাণকে ছাড়া অঞ্জলীও এতদিন পালবিহীন তরীর মতো নিঃস্ব জীবন কাটিয়েছে, তাও দুজনে আশা ছাড়ে নি, মনের কোনো গভীর কোনায় হয়তো একচিলতে আশা ছিল দুজনেরই। যেভাবে ওদের পুনরায় সব রাগ অভিমান ভুলে মিল দেখিয়েছো, দূরত্ব ঘুচিয়ে পরস্পরের কাছে এনেছো, সেটা অনবদ্য লাগল  Heart Heart yourock
(দেরিতে মন্তব্য করার জন্য দুঃখিত, সুযোগ হয়নি সাইটে আসার  Namaskar )

ওটা জেট যুগের ইঁদুর দৌর হবে না ! ওটা হবে ইঁদুর যুগের জেট দৌর !
[+] 1 user Likes ddey333's post
Like Reply
#14
আমারও sarah Connor এর মতন মনে হয় - if a machine, a Terminator, can learn the value of human life, maybe we can too.
[+] 1 user Likes Baban's post
Like Reply
#15
(26-12-2020, 07:56 PM)Baban Wrote: Der aye par Dusrust aaye!!❤❤
এতো সুন্দর কমেন্ট পড়ে সত্যি খুব ভালো লাগছে. দুই আলাদা হয়ে যাওয়া মানুষের পুনর্মিলনের গল্পটা ও তাদের ভেতরের অনুভূতি তুমি এতো সুন্দর ভাবে বুঝেছো বা বলা উচিত অনুভব করেছো দেখে আমি খুব খুশি হলাম. এটাই তো লেখক চায়.. পাঠক তার গল্পের সাথে, চরিত্রের সাথে তাদের জগতে হারিয়ে যাক. পিনুদার গল্পের মতো এখানেও শেষ থেকে শুরু ❤

এবারে আমি চাই তুমিও কিছু লেখো. এরকম আমার মতো ছোট এক পাতার গল্পও লিখতে পারো. অপেক্ষায় রইলাম.

হ্যাঁ ঠিক, শেষে এসে শুরু। নব জীবনের সূচনা।  Heart


আর আমি পরের গল্পের প্লট ভেবে রেখেছি, কিন্তু তার আগে সংগ্রহে থাকা অন্যান্য লেখকদের গল্পগুলো পোষ্ট করবো আর নিজের লেখা কিছু অন্য ধাঁচের মেইনস্ট্রিম গল্প পোষ্ট করবো  Smile
[+] 1 user Likes Mr Fantastic's post
Like Reply
#16
(26-12-2020, 11:11 PM)Mr Fantastic Wrote: হ্যাঁ ঠিক, শেষে এসে শুরু। নব জীবনের সূচনা।  Heart
আর আমি পরের গল্পের প্লট ভেবে রেখেছি, কিন্তু তার আগে সংগ্রহে থাকা অন্যান্য লেখকদের গল্পগুলো পোষ্ট করবো আর নিজের লেখা কিছু অন্য ধাঁচের মেইনস্ট্রিম গল্প পোষ্ট করবো  Smile

ঠিকাছে. অপেক্ষায় রইলাম তোমার নতুন গল্পের. আগে মনের মধ্যে থাকা গল্পটা ভালো করে সাজিয়ে নাও, তারপরে আমাদের সামনে নিয়ে এসো. আর ঐযে বলেছিলাম... লেখার সময় মন কিন্তু আসল বন্ধু. সে যা বলবে হাত তাই লিখবে. জানি ভালো  কিছু পাবো তোমার থেকে  Heart
[+] 2 users Like Baban's post
Like Reply
#17
(27-12-2020, 02:28 PM)Baban Wrote: ঠিকাছে. অপেক্ষায় রইলাম তোমার নতুন গল্পের. আগে মনের মধ্যে থাকা গল্পটা ভালো করে সাজিয়ে নাও, তারপরে আমাদের সামনে নিয়ে এসো. আর ঐযে বলেছিলাম... লেখার সময় মন কিন্তু আসল বন্ধু. সে যা বলবে হাত তাই লিখবে. জানি ভালো  কিছু পাবো তোমার থেকে  Heart

তুমি অন্যের গল্পের অপেক্ষায়, আমি তোমার গল্পের অপেক্ষায়! আমার গল্প শেষ, এবারে আমি গল্প পড়তে আর তোমাদের (আই মিন ওই যে চরিত্র গুলো থাকবে গল্পে) গালাগালি দিতে! ছোট ছোট চিন্দি পুন্দি অনেক হল! এবারে একটা বড় গল্প চাই, মারকাটারি !!!!!
[Image: 20210115-150253.jpg]
[+] 3 users Like pinuram's post
Like Reply
#18
(27-12-2020, 09:19 PM)pinuram Wrote: তুমি অন্যের গল্পের অপেক্ষায়, আমি তোমার গল্পের অপেক্ষায়! আমার গল্প শেষ, এবারে আমি গল্প পড়তে আর তোমাদের (আই মিন ওই যে চরিত্র গুলো থাকবে গল্পে) গালাগালি দিতে! ছোট ছোট চিন্দি পুন্দি অনেক হল! এবারে একটা বড় গল্প চাই, মারকাটারি !!!!!

এটাতো ঐরকম হয়ে গেলো. Aap devil ke peechey, devil aapke peechey... Too much fun.

আসলে আমার এই গল্পটাকেই বড়ো একটা গল্পের আকারে লেখার ইচ্ছে ছিল. তোমাতে আমাতে দেখা হয়ে ছিল গল্পটার মতন. আপনি পড়ে নিশ্চই বুঝেছেন এই গল্পটার মধ্যে এমন অনেক ব্যাপার ছিল যেগুলো আরো ডিটেইলে প্রকাশ করা যেত. অর্থাৎ মূল চরিত্রদের অতীতের মুহুর্ত গুলি. অনির্বানের ছোটবেলা, তার বাবা মায়ের কষ্টের জীবন. সেই থেকে অনির্বানের পরিবর্তনের শুরু. তার কলেজ লাইফ. প্রথম প্রেম.... সেই প্রেমের ফলে পড়াশুনার ক্ষতি ও প্রেম থেকে মুক্তি. তারপরে ব্যবসা শুরু,আর্থিক উন্নতি. বাবা মায়ের জোর জবরদস্তিতে শেষমেষ বিয়ে. জীবনে অঞ্জলীর আগমন. তাদের ভালোবাসার পবিত্র কিছু মুহূর্ত. সেখান থেকে আবারো অনির্বানের পরিবর্তন. সাফল্যের লোভ. আর শেষে উপলব্ধি.

ভেবেছিলাম অতীত ও বর্তমান একসাথে চলবে. অর্থাৎ অনির্বানের মনে পড়বে সব মুহূর্ত. তখন এই গল্পের নাম হতো - মুছে যাওয়া দিন গুলি.

কিন্তু লেখা হলোনা. তাই ভাবলাম এক পাতার গল্পে রূপান্তর করে সেই স্টাইলে লিখি আর নাম দিলাম দূরত্ব.
[+] 2 users Like Baban's post
Like Reply
#19
খুব সুন্দর গল্প। 
রেপু দিলাম। 
[+] 1 user Likes buddy12's post
Like Reply
#20
অনেক ধন্যবাদ buddy12❤
আপনার ভালো লাগলো জেনে খুশি হলাম.
Like Reply




Users browsing this thread: 1 Guest(s)