Thread Rating:
  • 21 Vote(s) - 3.1 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Adultery অন্তর্বর্তী শূন্যতা
#24
ইন্দুমতি – চলন্ত বাসের জানালা দিয়ে পড়ন্ত বিকেলের মরা আলোটা এসে পড়েছিল ইন্দুমতির মুখের বাঁদিকটায়। কপালে জমে ওঠা বিন্দু বিন্দু ঘামগুলো ঐ আলোর জন্য নাকি অন্য কোনো কারণে সেটা অবশ্য ওর মুখ দেখে বোঝার উপায় নেই। হাতের ব্যাগটা থেকে রুমালটা বের করে ধীরে সুস্থে মুখটা একবার মুছে নিল ও। তারপর সেটাকে আবার যথাস্থানে রেখে দিয়ে বাসের সীটটায় গা এলিয়ে দিয়ে আরাম করে বসে চোখ বুজল। উফ! সারাটা দিন গেলো বটে একটা! কেমন যেন ক্লান্তি বোধ করছে শরীর আর মনের ভিতরে। এদের দুজনেরই বা দোষ কী! সারাটা দিন জুড়ে কম ধকল গেলো ওদের উপরে। সেই সকাল থেকে শুরু হয়েছে দৌড়োদৌড়ি। আজকেই হঠাৎ করে বুবান অর্থাৎ ওর ছেলে দেরী করে ঘুম থেকে উঠেছে। অন্যদের কাছে হয়তো এটা নিতান্তই একটা ছোট্ট ঘটনা হতে পারে। এমন কি তার বরের কাছেও। কিন্তু তার কাছে একদমই নয়। মেয়েকে সে একেবারেই মানুষ করতে পারেনি। যাকে বলে হোপলেস। কিন্তু ছেলেকে সে ছোটোবেলা থেকেই নিজের মনের মতো করে বড়ো করে তুলেছে। অন্তত করে তোলার চেষ্টা করেছে। চেষ্টার সে কসুর করেনি। তার মতে একজন মানুষ তখনই সাকসেসফুল হতে পারে, যখন সে জীবনে ডিসিপ্লিনড হয়। সে ছেলেকে ডিসিপ্লিনড করে তোলার সর্বত চেষ্টা করে গেছে। এবং এখনও করে যাচ্ছে। আজকালকার ছেলেমেয়েদের তো সে দেখতে পাচ্ছে নিজের চোখের সামনেই। কি অধঃপতনেই না তারা যেতে শুরু করেছে। এমনকি নিজের পেটের মেয়েটাও তো সেই রাস্তায় হাঁটতে শুরু করে দিয়েছে। তাই তার জেদ ছেলেকে সে কিছুতেই যেতে দেবে না। তাই আজকের সকালের ঘটনা কিছুটা হলেও তার মনে দাগ কেটে গেছে। তাহলে কি তার ছেলেও তার নাগালের বাইরে যাচ্ছে ধীরে ধীরে? কথাটা ভাবতেই নিজের মনেই শিউড়ে উঠল ইন্দুমতী।

-  “ম্যাডাম. ভাড়াটা দিন।” কন্ডাক্টরের ডাকে বর্তমানে ফিরে এল ও।

চোখ খুলে দেখল আধবয়সী লোকটা ওর দিকে হাত বাড়িয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। ক্ষয়াটে চেহারার লোকটাকে প্রতিদিনই দেখতে পায় ও। প্রতিদিনই কলেজ থেকে এই বাসে করেই বাড়ি ফেরে। রোজকার রুটিন বলা যেতে পারে। অবশ্য যেদিন কাজের চাপে বা অন্য কারণে দেরী হয়ে গেলে আলাদা কথা। কিন্তু তা না হলে ও এই বাসেতেই বাড়ি ফেরে ডেলী। নিজের রোজকার রুটিনটা চট করে ভাঙ্গতে চায় না ও। কেমন যেন কমফোর্টেবল ফিল করে না। আর তাই নিয়ে ওর বর আর মেয়ে ওকে নিয়ে মজা করে। ঠাট্টা করে। কিন্তু ও সেসব গায়ে মাখে না। কারণ ওর কাছে ডিসিপ্লিনটাই শেষ কথা। ও চোখ খুলতেই কন্ডাক্টারটা আবার বলল, “ম্যাডাম, ভাড়াটা?”

-  “দিচ্ছি।” বলে পার্স থেকে কুড়িটা টাকা বের করে লোকটার হাতে দিয়ে দিল।

টাকাটা নিয়ে অকারণেই নিজের পান আর গুটখা খাওয়া লাল দাঁতগুলো বের করে একটা দেঁতো হাসি হেসে পিছনের দিকে চলে গেল লোকটা। সে প্রতিদিনই এই হাসিটা হাসে ওর দিকে চেয়ে। হয়তো আলতো সৌজন্যের হাসি, কিন্তু হাসিটা দেখলেই ওর কেমন যেন গাটা গুলিয়ে ওঠে। হয়তো ওর ক্ষয়াটে গালে না কামানো কয়েকদিনের খোঁচা খোঁচা সাদাকালো দাড়িগুলো দেখে। কিম্বা ওর বিশ্রী দর্শন লালাভ দাঁতগুলো দেখে। কিম্বা পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় গায়ের তীব্র ঘামের গন্ধের কারণে। কারণ যাই হোক, লোকটাকে দেখে ওর একদমই ভালো লাগে না। অথচ লোকটা কোনোদিন ওর সঙ্গে মিসবিহেভ করেনি। বরং ও কলেজে পড়ায় শুনে ওকে সম্মান দিয়ে ‘ম্যাডাম’ বলে ডাকে। তবুও ওর লোকটাকে একদমই পছন্দ হয় না। কেমন যেন একটু গায়ে পড়া। আর এইরকম গায়ে পড়ে লোক ওর একদমই অপছন্দের। সিটের ব্যাকরেস্টে শরীরের সমস্ত ভারটা ছেড়ে দিয়ে আরামে চোখ বুজল ইন্দুমতি। ঘর থেকে বের হওয়ার পর থেকে মনটা কেমন যেন টক হয়ে গেছিল ওর। কলেজে পৌঁছাবার পরেও সেই ভাবটা অনেকক্ষণ পর্যন্ত কাটেনি। পর পর দুটো ক্লাস নেওয়ার পর স্টাফরুমে ঢুকে টেবিলের উপরে হাতের বইগুলোকে সশব্দে আছড়ে ফেলে ও বলল, “আজকালকার ছেলেমেয়েগুলো যেন উচ্ছন্নে যাওয়ার জন্য পা বাড়িয়ে বসে আছে।” পাশের চেয়ারে বসে থাকা ফিলোসফির প্রফেসর এবং ওর বন্ধু তন্নিষ্ঠা ম্যাডাম হাতের ম্যাগাজিনটাকে নামিয়ে ওর দিকে মৃদু হেসে বলল, “কেন, আজকে আবার ক্লাসে কি হলো?” ওর পাশের খালি চেয়ারটায় ধপাস করে বসে ক্ষুব্ধ কণ্ঠে বলল, “হেসো না তো, গা জ্বলে যাচ্ছে। এমনিতেই সকাল থেকে মাথাটা গরম হয়ে আছে।” হয়তো ওর গলার স্বরে বা বলার ধরণে তন্নিষ্ঠা বুঝতে পারল সত্যিই ওর মেজাজটা খারাপ আছে। সঙ্গে সঙ্গে ও সিরিয়াস কণ্ঠে বলল, “কেন, কি হয়েছে? তবে তার আগে একটু জল খাও। পুরো ঘেমে গেছো দেখছি।” ইন্দুমতি নিজের ব্যাগ থেকে জলের বোতলটা বের করে ঢক ঢক করে বেশ খানিকটা জল খেল। তারপর রুমাল দিয়ে মুখ, ঘাড়, গলা ভালো করে মুছে নিয়ে তন্নিষ্ঠার দিকে তাকিয়ে বলল, “কি বলবো বলো তো? একটা কারণ হলে হয়, এখানে হাজারটা কারণ।”

-  “প্রথমে একটু শান্ত হয়ে পাখার তলায় বসো। তারপর ঠাণ্ডা মাথায় এক এক করে বলো, কি হয়েছে।”

-  “সে সব বাদ দাও। তোমাকে যেটা বলেছিলাম করেছো?”

-  “কি?” অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করল তন্নিষ্ঠা।

-  “কি মানে? কালকেই তো তোমার সঙ্গে কথা হলো!! তুমি বললে ব্যাপারটা জেনে আমায় বলবে!!! আর আজকেই ভুলে গেলে?” ততোধিক আশ্চর্য হয়ে ইন্দুমতি বলল।

-  “ওহ, কালকের ঐ ঘটনাটার কথা বলছো? তোমার চিন্তা নেই। আমি কালকেই মেয়েটির সঙ্গে কথা বলেছিলাম। ছেলেটার সঙ্গেও বলেছিলাম। অবশ্য আলাদা আলাদা করে...”

-  “কি বলল ওরা?” তন্নিষ্ঠাকে একপ্রকার থামিয়ে দিয়ে জিজ্ঞাসা করল ও।

-  “বলছি। তবে আগেই জানিয়ে রাখি ওরা আমাকে শর্ত দিয়েছে এই ব্যাপারটা নিয়ে আমি যেন তোমার বা অন্য কারোর সাথে কোনোরকম আলোচনা না করি।”

-  “শর্ত!! ওরা শর্ত দেওয়ার কে? তুমি এক্ষুণি চলো আমার সঙ্গে।”

-  “কোথায়?”

-  “কোথায় আবার? প্রিন্সিপালের কাছে। ওনাকে এই বিষয়টা জানাতে হবে।”

-  “তোমার কি মনে হয়, তাতে ব্যাপারটা মিটবে?”

-  “কেন মিটবে না?”

-  “তার কারণ, আমরা যদি প্রিন্সিপালের কাছে যাই, এবং ওনাকে বিষয়টা জানাই, তাহলে ব্যাপারটা আর তোমার আমার মধ্যে লুকানো থাকবে না। আর একবার জানাজানি হলেই আমরা এইটা আর জানতে পারবো না, এই বিষয়টার মধ্যে আর কে কে বা কি কি লুকিয়ে আছে।” শান্ত স্বরে ওকে তামিয়ে দিয়ে বলল তন্নিষ্ঠা।

তন্নিষ্ঠার কথায় যুক্তি আছে বুঝতে পেরে থেমে গেল ইন্দুমতি। উত্তেজনায় ও আবার ঘেমে উঠেছে বুঝতে পেরে রুমাল দিয়ে আবার ঘামগুলোকে মুছতে মুছতে বলল, “কি কি জানতে পেরেছো বলো আমায়।”

-  “এইটুকুই যে, অ্যাপটা নেটে সহজেই পাওয়া যায়। যে কেউ সেটাকে ডাউনলোড করে ইন্সটল করতে পারে। ওরাও তাইই করেছে। তুমি আমিও করতে পারি। যে কেউ এটা করতে পারে।”

-  “কিন্তু এটা তো বেআইনী!”

-  “কথাটা তুমি নিতান্তই বাচ্চা মেয়ের মত বললে।” মুচকি হেসে বলল তন্নিষ্ঠা।

-  “কেন?”

-  “যে জিনিসটা নেটে সহজেই অ্যাভেইলেবল সেটা বেআইনী হয় কি করে? আর হলেও বা সেটাকে আটকাবে কি করে? তুমি কি ভিপিএনের কথা শোনোনি?”

-  “শুনেছি।” তেতোমুখ করে বলল ও। তারপর একটু থেমে বলল, “আর কি জানতে পারলে?”

-  “প্রথমত ওরা স্বীকার করল যে তোমার ক্লাসে ওটা ব্যবহার করা ওদের উচিত হয়নি। এর জন্য ওরা ক্ষমাও চেয়ে নিয়েছে। এবং বারবার আমার কাছে অনুরোধ করেছে যেনো এই ব্যাপারটা নিয়ে আমি বেশি জলঘোলা না করি। প্রিন্সিপাল বা ওদের গার্জেন যেন জানতে না পারে।”

-  “আর?”

-  “আর, ওর এটাও বলল যে, কলেজের অনেক ছেলেমেয়েই নাকি এই অ্যাপটা ইউজ করে।”

-  “মাই গড! এদের কিস্সু হবে না। সামান্য কলেজে পড়ে, আঠারো, উনিশ বছর বয়স সব। এখনো সামনে গোটা জীবনটা বাকী... ছিঃ ছিঃ ছিঃ!! কি নোংরামী।” বলে কিছুক্ষণ চুপ করে বসে রইল ইন্দুমতি।

তারপর হঠাৎ মুখ তুলে তন্নিষ্ঠার দিকে তাকিয়ে বলল, “অ্যাপটার নাম জানতে পেরেছো?” তন্নিষ্ঠা বলল, “হ্যাঁ। ওরা আমাকে অ্যাপটার নাম বলেছে?” ইন্দু তাড়াতাড়ি ব্যাগ থেকে মোবাইলটা বের করে বলল, “অ্যাপের নামটা আমায় বলোতো...” ওর এই কর্মোদ্যম দেখে অবাক হয়ে গেল তন্নিষ্ঠা। ও অবাক হয়েই বলল, “কেন, তুমি অ্যাপটার নাম জেনে কি করবে?”

-  “আঃ বলোই না। একটা আইডিয়া এসেছে মাথায়।” বিরক্ত জড়ানো কণ্ঠে বলল ইন্দু।

-  “কি আইডিয়া?”

-  “বলছি, তার আগে আমায় অ্যাপটার নামটা তাড়াতাড়ি বলো। আমার ক্লাস আছে। তার আগেই সব করতে হবে।” ব্যস্ততার সুরে বলল ইন্দু।

চোখ খুলে সোজা হয়ে বসল ইন্দুমতি। ব্যাগ থেকে ফোনটা বের করে হাতে নিল। তারপর আবার দোনামোনা করে সেটাকে ব্যাগে পুরে রেখে দিল। বাসে বসে এসব জিনিস না করাই ভালো হবে মনে করে ফোনটাকে রেখে দিল সে। উত্তেজনার বশে কিছু না করাই ভালো হবে। তার চেয়ে বরং ঠান্ডা মাথায় এসব কিছু করতে হবে। কথাটা ভেবেই ইন্দু জানালা দিয়ে বাইরে তাকালো। এখনো ওর স্টপেজ আসেনি। একটা স্টপেজ বাকী। কিন্তু ও সিট ছেড়ে উঠে পড়ল। তারপর বাসের গেটের দিকে এগিয়ে গেল। বাসটা সম্পূর্ণ গতিতে ছুটে চলেছে তার গন্তব্যের দিকে। গেটের কাছে আসতেই একটু বেটাল হয়ে গেল ও। কন্ডাক্টারটা দাঁড়িয়ে ছিল গেটের ঠিক মুখেই। ভীড়ও যে খুব একটা ছিল তা নয়। দুজন মাত্র দাঁড়িয়ে ছিল গেটের কাছে। হয়তো সামনের স্টপেজে নামবে। ইন্দু বেটাল হয়েই মাথার উপরের রডটাকে ধরতে গেল। কিন্তু হাতে ব্যাগ থাকায় তা পারল না। এবং তার ফলে ও আরো বেটাল হয়ে গেল। হয়তো ও মুখ থুবড়ে পড়েও যেতে পারত, কিন্তু পড়ল না। কারণ একজোড়া শক্ত হাত ওকে ধরে ফেলল। “আরে, আরে, ম্যাডেম, পড়ে যাবেন যে। ঠিক করে দাঁড়ান। আর আপনি এখন উঠে এলেন কেন। আপনার স্টপেজ এখনো আসেনি।” শতব্যস্ত হয়ে কন্ডাক্টারটা বলল। ইন্দু সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে প্রথমেই বুক থেকে খসে পড়া শাড়ির আঁচলটাকে আবার যথাস্থানে গুছিয়ে রাখল। তারপর কঠোর স্বরে বলল, “আমি এখানেই নামব।” ততক্ষণে ওর শরীর থেকে হাতজোড়া সরিয়ে নিয়ে লোকটা। উফ! লোকটার হাতদুটো কি শক্ত আর খড়খড়ে!! মনে হচ্ছে ওর শরীরটা জ্বলছে। “ও আচ্ছা।” বলে নির্লীপ্ত ভাবে আগের মত দাঁড়িয়ে পড়ল লোকটা। একটু পরেই স্টপেজ এল। বাকী লোকদুটোর সাথে ইন্দুও বাস থেকে নেমে পড়ল। এর আগে ও কখনও এমন করেনি। যদিও এমনটা নয় এই এলাকাটা ওর অচেনা। কিন্তু এর আগে ও কখনও এখানে নামেনি। এই আজ প্রথম নামল। ও নামার সাথে সাথেই বাসটা আবার আগের মত ঝড়ের গতিতে এগিয়ে গেল। ইন্দু পায়ে পায়ে বাসস্ট্যান্ড থেকে এগিয়ে গেল কিছুটা। দিনের আলো তখন একেবারেই মুছে গেছে। কালো কালো অন্ধকারটা চারিদিকে নেমে আসছে একটু একটু করে। রাস্তার লাইটগুলো জ্বলতে শুরু করে দিয়েছে। ইন্দু কাঁধের ব্যাগটা সামলে আরো কিছুটা এগিয়ে গেল। বাসস্ট্যান্ডটা ছাড়িয়ে একটু এগিয়ে যেতেই একটা গলির মতো রাস্তা পড়ল। চওড়া নয় বরং কিছুটা সরুই। বেশী কিছু চিন্তা না করেই সেই সরু গলিটায় ঢুকে পড়ল ও। কিছুটা দূর যেতেই বুঝতে পারল ভিতরটা বেশ অন্ধকার। চলা থামিয়ে ব্যাগ থেকে ফোনটা বের করল। তারপর ফোনের টর্চটা জ্বেলে আরো কিছুটা এগিয়ে গেল ও। দুপাশের বাড়ি থেকে নানান রকমের শব্দ আসছে। টিভির শব্দ। কথাবার্তার আওয়াজ। কোনো কোনো বাড়ি থেকে আবার শাঁখের শব্দও ওর কানে এল। আরো কিছুটা এগিয়ে যাওয়ার পর একটা কোণা মত জায়গা দেখে ও দাঁড়াল। তারপর কাঁধের ব্যাগটাকে নামিয় রাখল মাটিতে। কাঁধটা টনটন করছে। একমূহুর্ত দাড়িয়ে চারপাশটা ভালো করে দেখে নিল ও। কেউ আসছে না তো? তারপর নিশ্চিন্ত হয়ে ফোনের স্ক্রিণটার দিকে তাকালো। দুপুরের পর থেকে একবারও অ্যাপটা খোলেনি। প্রথমে তন্নিষ্ঠার কথা কানেই তোলেনি সে। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে ঝোঁকের মাথায় কোনো ভুল সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে না তো? মনটা অল্পসময়ের জন্য হলেও দূর্বল হয়ে পড়ল। কিন্তু তারপরেই মনস্থির করে ফেলল ও। বুক ভরে লম্বা একটা নিঃশ্বাস নিল। তারপর অ্যাপটায় একটা আলতো চাপ দিল। নীলচে রঙের বৃত্তটা ঘুরতে শুরু করেছে কিন্তু ধীরে ধীরে। কেটে কেটে যাচ্ছে। হাতের ফোনের স্ক্রীণটার দিকে ভালো করে তাকিয়ে দেখল নেট কানেকশনটা কেটে গেছে। গলির এতটা ভিতরে আসার কারণেই হয়তো। মুখে একটা বিরক্তিসূচক শব্দ করে নির্জন কোণটা থেকে বেরিয়ে এল ও। তারপর কিছুটা পিছিয়ে এল গলির সরু পথটা ধরে। ও যেদিক থেকে এসেছিল সেইদিকে অল্প কিছুটা ফিরে আসতেই নেট কানেকশনটা আবার ফিরে এল ওর ফোনে। ও দেখল নীলচে বৃত্তটা আবার পূর্ণগতিতে ঘুরতে শুরু করে দিয়েছে। গলির ভিতরে হওয়ার কারণে এখানটা বেশ গরম। ওর গোটা শরীরটা ঘেমে উঠেছে ইতিমধ্যে। বড় বড় ঘামের ফোঁটা ঘাড় আর গলা বেয়ে ক্রমশ নীচের দিকে নামতে শুরু করে দিয়েছে। বিরক্তি লাগছে। শাড়ির আঁচলটা দিয়ে একবার গলা আর বুকটা মুছে নিল ও। তারপর আবার তাকাল ফোনটার স্ক্রিণের দিকে। নীলচে বৃত্তের ঘূর্ণণটা থেমে গিয়ে অ্যাপটা খুলে গেছে। যথাস্থানে ইউজার নেম আর পাসওয়ার্ডটা দিয়ে লগ ইন বোতামটায় আরো একটা চাপ দিল ও। প্রায় পূর্ণগতিতে নীলচে বৃত্তটা ঘুরতে শুরু করে দিয়েছে। অল্প ঘোরার পরেই বৃ্ত্তটা থেমে গিয়ে অ্যাপটা খুলে গেল। আবারও গরম লাগতে শুরু করে দিয়েছে। কিন্তু আর সেইদিকে খেয়াল নেই। ঘাড়টা একপ্রকার ফোনের স্ক্রিণটার দিকে ঝুঁকিয়ে বাহ্যজ্ঞানশূণ্য হয়ে দ্রুতগতিতে আঙ্গুল চালাতে শুরু করল ইন্দুমতি। 
[Image: 20240303-191414.png]
Like Reply


Messages In This Thread
RE: অন্তর্বর্তী শূন্যতা - by রতিদেবী - 24-02-2024, 07:13 PM



Users browsing this thread: 1 Guest(s)