Thread Rating:
  • 21 Vote(s) - 3.1 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Adultery অন্তর্বর্তী শূন্যতা
#18
দূর্নিবার – সেই সকাল ন’টা – সওয়া ন’টা থেকে দুপুর বারোটা – সাড়ে বারোটা অবধি যেন নিঃশ্বাস ফেলারও সময় থাকে না দুর্নিবারের। অবশ্য এমনটা হওয়াও কিছু আশ্চর্যের নয়। রিসেন্টলি প্রমোশন পেয়ে অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার থেকে সটান ম্যানেজার হলে মাইনের সাথে সাথে কাজের চাপটাও যে সমানুপাতিক হারে সাধারণত বেড়ে থাকে, তা ওর ভালো করেই জানা আছে। অবশ্য কাজ করতে যে, ওর খারাপ লাগে বা ভালো লাগে না, তাও নয়। তবু কাজের তো একটা গতি বা রিদম থাকা দরকার নাকি। কখনও কমবে আবার কখনও বাড়বে। কিন্তু ব্যাঙ্কের কাজের ক্ষেত্রে তা হওয়াটা সম্ভব নয়। যতই সোশ্যাল মিডিয়ার পাতায় লোকেরা তাদের মত ব্যাঙ্ক এমপ্লয়ীদের নিয়ে মজা করে বা ট্রোল করে, তার এক শতাংশও জানে না, ব্যাঙ্কে তাদের সারাদিনে ঠিক কতটা পরিমাণে কাজ করতে হয়। তারা তো মজা করেই খালাস। এই যেমন দূর্নিবারের কথাই ধরা যাক। প্রমোশনটা ও পেয়েছে মাস আড়াই হল। মাইনেও বেড়েছে একলাফে অনেকটাই। সেইসাথে বেড়েছে কাজের চাপও। আগে তবু কিছুটা রিল্যাক্স হওয়ার অন্তত সময় পেত। কলিগদের সাথে খোশগল্প করারও সময় বেরিয়ে যেত ঠিক। এখন আর তা হওয়ার নয়। ম্যানেজার হওয়ার পর থেকে আলাদা কেবিনে একলা কয়েদীর মত সময় কাটাতে হয় তাকে। কশ্চিৎ কদাচিৎ কলিগদের মধ্যে কেউ কেউ আসে তার কেবিনে। ফাইলে সই করাতে বা অন্য কোনো কাজে। বাকিটা সময় একা একাই কাটাতে হয় তাকে। মাঝেমধ্যে হাঁপিয়ে ওঠে ও। মনে মনে ভাবে প্রমোশনটা না অ্যাকসেপ্ট করলেই বোধহয় ভালো হত। ঐ যে কথায় বলে না, “সুখের থেকে শান্তি অনেক ভালো।” সেটা এখন হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে ও। এই যেমন আজকেই। সেই যে সকাল ন’টা থেকে ঢুকে ল্যাপটপে মুখ ঢুকিয়েছিল, বের করল সাড়ে বারোটা নাগাদ। এর মাঝে কেবল দেড় কাপ র’ চা আর খান তিনেক সিগারেটের বিরতি। ঘাড়টা টনটন করছে। বাঁ হাত দিয়ে ঘাড়টায় হালকা ম্যাসাজ করতে করতে চেয়ারের নরম গদিতে পিঠটা ঠেকাল ও। দিনটা মোটেও সুবিধের যাচ্ছে না। যেমন – সকালের ঘুমটা ভেঙ্গেছিল ইতু অর্থাৎ বউয়ের ঠেলানি খেয়ে। ও সাধারণত এরকম করে না। কিন্তু আজ করল। আধো ঘুমে আধো জাগরণে বউয়ের মুখে হাঁকাহাঁকি শুনে যেটুকু ও বুঝেছিল তা হল, বুবান অর্থাৎ ওদের ছেলে নাকি আজ ভোরবেলায় ঘুম থেকে উঠে জিমে যায় নি। বিছানায় পড়ে পড়ে নাকি ভোঁশ ভোঁশ করে ঘুমাচ্ছে। আচ্ছা, এটা কি কোনো কথা হল? উঠতি বয়সের একটা ছেলে, এক-আধদিন কি বেলা পর্যন্ত ঘুমাতে পারে না? এক কথাটাই ও বউকে বোঝাতে গিয়েছিল। তাতে বিপদ বাড়ল বৈ কমল না। বউ আরও বেশী করে হাঁউমাউ করে ওকে চল্লিশটা কথা শুনিয়ে চলে গেল। ওর জন্যই নাকি ছেলে-মেয়ে দুটো মানুষ হল না। মা যতই চেষ্টা করুক বাবা ছেলেমেয়েদের মানুষ হতে দেবে না। ইত্যাদি, প্রভৃতি। ও তখনই বুঝে গিয়েছিল আজকের দিনটা কেমন যেতে চলেছে। তাই দেরী না করে ঘুম থেকে উঠে গুড বযের মত রেডী হয়ে ব্রেকফাস্ট সেরে যখন ঘর থেকে বের হচ্ছে তখনও ওর বউ ছেলের দরজায় ধাক্কা মারছে এরকম ছিটমস্তিষ্কপ্রবণ মহিলার সঙ্গে সারাজীবন কাটানোর জন্য তার জন্য একটা না একটা পুরষ্কার প্রাপ্য, এতে ওর নিজের কোনো সন্দেহই নেই।

হাল্কা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে টেবিলের উপর থেকে প্যাকেটটা তুলে নিয়ে একটা সিগারেট ধরাল দূর্নিবার। লাইটারটা রাখতে গিয়ে নজর পড়ল ফোনটার উপর। সাথে সাথে মনে পড়ে গেল গতকালের টিফিনের কথা। ইন্টারকমের বোতামটা টিপে ও বলল, “তনিমা, এক্ষুণি একবার আমার কেবিনে এসো। কুইক। আর সাহেব তুমি ক্যাশে একটু বোসো। আমার টাইম লাগবে।” ইন্টারকমটা রেখে দিয়ে সিগারেটটায় আরামের একটা টান দিল ও। গতকালের কথাগুলো মনে পড়তেই কেমন একটা সলজ্জ হাসি খেলে গেল ওর গোটা মুখ জুড়ে। ফোনটা হাতে নিয়ে আলতো করে নাড়তে লাগল। ঠিক তখনই ওর কেবিনের দরজাটা খুলে একটি মেয়ে মুখ বাড়ালো, “মে আই কাম ইন, স্যার?”

-  “এসো, এসো তাড়াতাড়ি এসো।” বলে হাতের সিগারেটটাকে অ্যাশট্রেতে ফেলে দিয়ে চেয়ারে সোজা হয়ে বসল ও।

তনিমা ঘরে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে মিষ্টি একটা গন্ধ এই এয়ারকন্ডিশনড বদ্ধ ঘরের চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ল। এই গন্ধটা ইউনিক। সেই সাথে নতুন। মেয়েটার বোধহয় পারফিউমের কালেকশন আছে। প্রায় প্রতিদিনই একটা করে নতুন পারফিউম মেখে আসে। গন্ধগুলোও বেশ মিষ্টি হয়। এটার কি নাম কে জানে। তনিমা মুচকি হেসে সামনের একটা চেয়ার টেনে বসল। দূর্নিবার ওর দিকে একভাবে তাকিয়ে রইল। আজকে ও পরে এসে ক্রিম কালারের একটা শার্ট আর কালো জিন্স। তাও আবার টাইট ফিটিংস। শরীরের আনাচ কানাচের ভাঁজগুলো খালি চোখেই ধরা পড়ছে। আরো একটা জিনিস নজরে পড়ল ওর। তনিমার শার্টের একদম উপরের বোতামটা খোলা। ভিতরের অন্ধকার কেমন যেন ভয়ঙ্কর ভাবে হাঁ হয়ে আছে। এইটা মেয়েটার আরো একটা বদ স্বভাব। কিন্তু এটা যে ও কেন করে, তার কারণ আজও বুঝে উঠতে পারেনি দূর্নিবার। মেয়েটার বয়স মেরে কেটে সাতাশ। আজ তিন বছর এই ব্যাঙ্কে ক্যাশিয়ারের চাকরী করছে। বিয়ে করেনি। অথচ বয়ফ্রেন্ডের সাথে লিভ ইনে থাকে। কলকাতা শহরটাও যে সাবালক হয়ে উঠেছে তা এই তনিমার মত মেয়েদের দেখলেই বোঝা যায়। দূর্নিবার একবার ওকে জিজ্ঞাসা করেছিল, “লিভ ইনে না থেকে, বিয়েটা করে নিচ্ছো না কেন?” তাতে ঠোঁটচাপা একটা হাসি হেসে তনিমা উত্তর দিয়েছিল, “সব চাহিদা যখন এতেই পূরণ হয়ে যাচ্ছে, তখন বিয়ের বোঝাটা ঘাড়ে নিতে যাবো কেন শুধুশুধু?”

-  “স...সব চাহিদা মানে?” তুতলিয়ে জিজ্ঞাসা করেছিল ও

-  “সব চাহিদা মানে, সঅঅঅব চাহিদা।” ঠোঁটচাপা হাসিটা ততক্ষণে অনেকটা প্রকাশ পেয়েছিল।

সেই সাথে চোখের একটা ইশারা। সেই ইশারা দেখে অর্থটা বোধগম্য বিশেষ দেরী হয়নি ওর। আর কথাও বাড়ানি সে। এই মেয়ে একটা আস্ত আগুনের ফুলকি। সাবধানে না হ্যান্ডেল করলে পুড়ে মরাও অসম্ভব নয়।

চেয়ারে বসেই প্রথমে বলল, “ডাউনলোড করেছেন?” ও ঘাড় নেড়ে উত্তর দিল, “না।” তারপর একটু থেমে বলল, “আমি ওসব পারি না। তুমিই করে দাও।” ওর বিখ্যাত ঠোঁটচাপা হাসিটা হেসে দিয়ে তনিমা হাত বাড়িয়ে বলল, “কই দিন আপনার ফোনটা। আমিই সব করে দিচ্ছি।” ফোনটা তনিমার হাতে সঁপে দিল দূর্নিবার। ফোনটা হাতে পেয়েই তাতে মনোযোগ দিয়ে ঘাঁটতে শুরু করে দিল তনিমা। ততক্ষণে ওকে জরিপ করতে শুরু করল দূর্নিবার। মেয়েটার বয়স ছাব্বিশ/সাতাশ। রঙ ফর্সাই বলা চলে। মুখশ্রীও বেশ ভালো। তবে সবচেয়ে যেটা চোখে পড়ে তা হল ওর শরীর। যাকে বলে চাবুকের মতো। লম্বা। ছিপছিপে। মেদহীন। কিন্তু বুক আর পাছাদুটো বেশ মাংসল। টাইট ফিটিংস শার্ট আর প্যান্টের দৌলতে তা ভালোই বোঝা যায়। একদৃষ্টে সামনের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে ওর চোখদুটো যেন স্ক্যান করতে লাগল তনিমার গোটা শরীরটাকে। বিশেষ করে বোতাম খোলা জায়গাটাকে। সামান্য গোলাপীর একটা আভাস যেন ফুটে উঠেছে কি? চোখদুটোকে সরু করে সেদিকে ভালো করে তাকালো ও। হ্যাঁ। ঠিকই। বোতমা খোলা ক্রিম কালারের শার্টের তলা থেকে গোলাপী রঙের ইনারটার একটা হদিশ যেন পাওয়া যাচ্ছে। তাহলে কি নিচেরটাও গোলাপী? নাকি অন্য কোনো কালার? মাথায় যেন রক্ত চলকে উঠল ওর। কল্পনাগুলো আবার যেন লাগামছাড়া হয়ে চলেছে। মাথাটাকে ঠান্ডা রেখে সামনের দিকে তাকিয়ে রইল ওর। তনিমার অবশ্য এসব দিকে একদমই খেয়াল নেই। সে ফোনের দিকেই চোখ রেখে জিজ্ঞাসা করল, “তাহলে ফোন নম্বরটা দেবো না তো?”

-  “না। ওতে রিস্ক বেশী। তুমি ইমেলটা দাও। আবার আমার পার্সোনালটা দিও না যেন। কালকেই একটা ফেক ইমেল তৈরী করেছি। ওটা দাও। তোমাকে হোয়াটসঅ্যাপে কালকেই পাঠিয়ে দিয়েছি দেখো।”

ফোন থেকে একবার মাত্র চোখ তুলে ওর দিকে তাকিয়ে আরো একবার ঠোঁটচাপা হাসিটা হাসল তনিমা। তারপর আবার চোখ নামিয়ে ফোনের দিকে তাকিয়ে বলল, “আপনি আগেভাগেই সব কাজ গুছিয়ে রেখেছেন দেখছি। গুড!” তারপর নিজের ফোন দেখতে দেখতে টাইপ করতে লাগল। তারপর একবার চোখ তুলে বলল, “এই ইউজার নেমটা দেবেন?” ও ঘাড় নেড়ে বলল, “হ্যাঁ।” তনিমা বলল, “বাঃ! বেশ সেক্সী একটা নাম তো? কোথায় পেলেন?”
-  “নেটে। কালকেই সার্চ করে বের করে রেখেছিলাম।”

তনিমা আরো কিছুক্ষণ ওর ফোনটাকে নিয়ে নাড়াঘাঁটা করার পর ওর দিকে তাকিয়ে বলল, “নিন। হয়ে গেছে। পাসওয়ার্ডটা আপনাকে হোয়াটসঅ্যাপে পাঠিয়ে দিয়েছি। আর আপনার প্রোফাইলে আমাকেও অ্যাড করে দিয়েছি। আপনার কপালে আর কেউ না জুটলেও আমি রইলাম।” তনিমার হাত থেকে ফোনটা ফেরত নিয়ে ও মুচকি হেসে বলল, “তুমিই তো আমার একমাত্র ভরসা।”

-  “কথাটা মনে রাখবেন। আমার কোনো দরকার পড়লে আপনাকেও হেল্প করতে হবে কিন্তু।”

-  “এনিটাইম।”

-  “এখন চলি। বাইরে ভীড় আছে। আর হ্যাঁ, একবার সব দেখে নিয়ে বুঝে টুঝে নিন। কিছু প্রবলেম হলে আমি হেল্প করে দেবো।”

তনিমা কেবিন থেকে বেরিয়ে যেতেই ফোনটার দিকে তাকালো দূর্নিবার। অ্যাপটা তখনও খোলা রয়েছে। সেটার দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে গতকাল দুপুরের কথা মনে পড়ে গেল ওর। টিফিনের সময় বাকী কলিগদের সাথে খাবার আর সময় শেয়ার করাটা ওর অনেকদিনেরই অভ্যেস। কিন্তু ওর ম্যানেজার পদে উন্নীত হওয়ার পর থেকে সেই অভ্যাসে কিছুটা হলেও দাঁড়ি পড়েছে। তার কারণ অবশ্য সে নয়, বরং বাকীরা। বাকীরা তার সঙ্গে আর টিফিনে খেতে আসে না। আসলে তাদের যে আর সাহসে কুলায় না, সেটা ও ভালো করেই বুঝতে পারে। কিন্তু তনিমা মেয়েটা যে অন্য ধাতুতে গড়া সেটা ও ভালো করেই জানে। তাই স্রোতের উল্টোদিকেই সাঁতার কেটে সে সটান চলে আসে ওর কেবিনে। ও আপত্তি করেনি। একা একা খাবার খাওয়ার চেয়ে কারো সঙ্গে খেতে ওর ভালোই লাগে। আৎ তনিমা হলে তো কোনো আপত্তি থাকারও কথা নয় অবশ্য। ওরও নেই। তাই ওরা দুজনেই ওর কেবিনে খাবার খায়। গল্প করে। হাসিঠাট্টা করে। তাই নিয়ে অবশ্য গোটা ব্যাঙ্ক জুড়ে যে একটা কানাকানি চলে, সেটাও ওর চোখ বা কান কোনোটাই এড়ায় নি। ‘বুড়ো শালিকের ঘাড়ে রোঁ’ কথাটা বেশ কয়েকবারই ওর কর্ণকুহরে প্রবেশ করে মধুবর্ষণ যে করেনি তা নয়। কিন্তু ও তাতে বিশেষ কর্ণপাত করেনি। বা করার প্রয়োজন মনে করেনি। তনিমাও যে করেনা, তাতে ও একশো শতাংশ নিশ্চিত। নিজের বয়ফ্রেণ্ড বা লিভ ইন পার্টনারের প্রতি ও বেশ কমিটেড ওর কথাবার্তায় তা অনেকবারই টের পেয়েছে দূর্নিবার। মেয়েটা যে একটা আস্ত ফুলকি। সেটা তো আর ও এমনি এমনি বলে না। তার যথেষ্ট কারণও আছে। এই যেমন গতকাল। টিফিনের সময়। এটা ওটা কথার মাঝেই হঠাৎ করে তনিমা ওকে জিজ্ঞাসা করে বসল, “আপনার ম্যারেজ লাইফ কত বছর হল?”

-  “এ বছর টোয়েন্টি ফিফথ হবে।” চিবোতে চিবোতে উত্তর দিয়েছিল ও।

-  “বাব্বা! পঁ...চিশ বছর!!!” পঁচিশ কথাটা কেমন যেন টেনে টেনে উচ্চারণ করল তনিমা।

-  “হ্যাঁ। কিন্তু কেন বলোতো?” তনিমার কথা বলার ঢংয়ে ও কিছুটা আশ্চর্যই হয়ে গেছিল।

-  “না এমনি।” আরো একবার যেন খাবারে মন দিল তনিমা।

-  “এমনি এমনি কথা বলার মেয়ে তো তুমি নও।”

-  “তার মানে আমি সব বাজে বকি?” গুলির মত প্রশ্ন ওর দিকে একপ্রকার ছুঁড়ে মারল তনিমা।

-  “মোটেও না। বরং তোমার সব কথার পিছনে একটা নির্দিষ্ট কার্যকারণ থাকে। এবার বলোতো হঠাৎ এই কথাটা আমাকে জিজ্ঞাসা করলে কেন?” ধীরে সুস্থে নিজেকে প্রমাণ করে পাল্টা প্রশ্নটা করে বসেছিল ও।

-  “কয়েকদিন থেকেই আমার মাথায় একটা প্রশ্ন ঘুরছে?”

-  “কি প্রশ্ন?”

-  “এই যে আপনি বিবাহিত। ম্যাডামের সঙ্গে একসাথে একই বাড়িতে থাকেন। একই বিছানায় শোন। আপনার দুটো ছেলে মেয়ে আছে। আর আমিও আমার বয়ফ্রেন্ডের সাথে একই বাড়িতে থাকি। একই বিছানায় পাশাপাশি শুই। মাঝেমধ্যে ‘ইয়ে’ও করে থাকি...”

-  “’ইয়ে’টা কি?” তনিমার প্রগলভ বক্তৃতার মাঝেই তাকে প্রায় থামিয়ে দিয়ে আড়চোখে তার দিকে তাকিয়ে প্রশ্নটা ছুঁড়ে মেরেছিল দূর্নিবার।

-  “উফ! দিলেন তো কথার ফ্লো টা নষ্ট করে...” তার মার্কামারা ঠোঁটচাপা হাসিটা হেসে বলেছিল তনিমা।

-  “সরি, সরি, সরি। বলো, কি বলছিলে?”

-  “হ্যাঁ। যা বলছিলাম। তো আমি আমার বয়ফ্রেন্ডের সাথে একই বাড়িতে থাকি। কিন্তু ক’দিন?”

-  “মানে?” তনিমার প্রশ্নের আত্মিক অর্থটা ওর বোধগম্য হল না।

-  “মানে। এভাবে আমি কতদিন ওর সাথে থাকতে পারবো? বা থাকবো? সারাজীবন তো নিশ্চয়ই নয়।”

-  “কেন? সারাজীবন নয় কেন? তুমি তোমার বয়ফ্রেন্ডের প্রতি কি কমিটেড নও?”

-  “এই হচ্ছে আপনাদের জেনারেশনেই একটা মস্ত বড়ো দোষ। সে আমার বয়ফ্রেন্ড। আমি ওর গার্লফ্রেন্ড। আমরা একসাথে আজ বছর পাঁচেক হতে চলল লিভ ইন করছি। জানিনা কোনোদিন ওকে বিয়ে করবো কিনা, কিন্তু এখানে কমিটমেন্টের কথা আসছে কোথা থেকে? আমি ওকে ভালোবাসি। ওও আমাকে ভালোবাসে। কিন্তু তার মানে ওই নয় আমরা একে অপরকে ছাড়া অন্য কাউকে ভালোবাসতে বা পছন্দ করতে পারবো না?” একটানা কথা বলে থামল তনিমা।

-  “আমি এখনও তোমার কথা বুঝতে পারলাম না, তনিমা।”

-  Voyeurism মানে জানেন?” ওর কথার উত্তরে পাল্টা প্রশ্ন করল তনিমা। ও তাৎক্ষণিক কোনো উত্তর দিতে পারল না। শব্দটা আগে কোথাও শুনেছে কিন্তু মানেটা জানা নেই ওর। ও চুপ করে আছে দেখে তনিমাই আবার বলল, “আপনার মুখ দেখেই বুঝতে পারছি মানেটা আপনি জানেন না। শব্দটার আক্ষরিক অর্থ হল ঈক্ষণকাম।” তারপর একটু থেমে আবার বলল, “কি? আরোও বেশী করে গুলিয়ে গেল তো? গোদা বাংলায় যাকে বলে এমন ব্যক্তি যে কোনো গুপ্তস্থান থেকে অন্যের সেক্স দেখে নিজে তৃপ্তিলাভ করে। Voyeur বা cuckold এসবের প্রায় একই মানে। অবশ্য Voyeurism আর cuckolding আলাদা বস্তু। কিন্তু ধরে নিন কিছুটা হলেও জিনিস দুটো প্রায় এক। তা আমার বক্তব্য হচ্ছে, আমি বা আপনি অন্য কাউকে ভালোবাসলেও যে voyeur বা cuckold হতে পারবো না, সেটা কে বলল?”

-  “আমি এখনও তোমার কথার মাথামুন্ডু কিছুই বুঝতে পারছি না।”

-  “দেখুন, আমার বয়ফ্রেণ্ড হচ্ছে একজন cuckold. ওর ইচ্ছে আমি ওর সামনে অন্য কারোর সাথে সেক্স করি। আর ও সেটা বসে বসে এঞ্জয় করবে।”

-  “ধ্যাৎ! এরকম আবার হয় নাকি? এ তো ইললিগ্যাল!”

-  “আপনি সত্যিই প্রাগৈতাসিক যুগেই পড়ে রয়েছেন। এটা তখনই ইললিগ্যাল হতো, যদি এতে আমার কনসেন্ট না থাকতো।”

-  “মানে??!! এতে তোমার কনসেন্ট আছে??!!!” খাবার প্রায় ওর গলায় আটকে যাওয়ার জোগাড় তখন

-  “অফকোর্স আছে। এই তো বয়স এক্সপেরিমেন্ট করার।”

-  “কিন্তু এসব করবে কিভাবে?”

-  Gigolo মানে জানেন?”

-  “সে আবার কি? কিসব বলছো কিছুই বুঝতে পারছি না।”

-  Gigolo মানে হচ্ছে male prostitute, বুঝলেন?”

-  “কলকাতায় ওসব আছে নাকি?”

-  “সব আছে। কেবল খুঁজে বের করার অপেক্ষা। malefemale সব আছে আপনার হাতের মুঠোয়।”

-  “হাতের মুঠোয় মানে?” প্রশ্নটা শুনে চোখটা একবার নাচিয়ে নিয়ে ঠোঁটচাপা হাসিটা হেসে তনিমা বলেছিল, “এখন নয়, পরে বুঝিয়ে বলবো আপনাকে।”

সুমিষ্ট একটা আওয়াজে ঘোর কাটল দূর্নিবারের। অতীত থেকে বর্তমানে দ্রুত ফেরৎ এল ওশব্দটা এসেছে ওর হাতে ধরে থাকা ফোনটা থেকে। চমকে তাকিয়ে ও দেখল ফোনের স্ক্রিণে ফুটে উঠেছে, One Message Received বার্তাটি। অপশনটিতে ক্লিক করতেই তড়িৎ গতিতে অ্যাপটা খুলে গেল। নীলচে একটা বৃত্ত একটু ঘোরার পরেই স্ক্রিণটা সাদা হয়ে গিয়ে মেসেজটা খুলে গেল। একবার ঢোঁক গিলে চোখ বড়ো বড়ো করে সেই দিকে তাকিয়ে থাকল দূর্নিবার।
[Image: 20240303-191414.png]
Like Reply


Messages In This Thread
RE: অন্তর্বর্তী শূন্যতা - by রতিদেবী - 20-02-2024, 08:35 PM



Users browsing this thread: 3 Guest(s)