Thread Rating:
  • 135 Vote(s) - 3.69 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Adultery পদ্ম নাগের বিষ
মার্দিনো বললে---স্যার, এইটা হল গিয়ে জেনারেল সুহার্ত এর সমাধি।

সুহার্ত? ইন্দোনেশিয়ার গণহত্যার নায়ক! একজন গণহত্যাকারীর সমাধিতেও কেউ বা কারা ফুল রেখে গেছে। পৃথিবীতে প্রত্যেক মানুষেরই ভালোবাসার লোক আছে। এডমায়ারার আছে। পীযুষ মার্দিনোর সাথে হাঁটতে হাঁটতে এসে পৌঁছল সমুদ্র তীরে। বললে---মার্দিনো, তোমাদের সমুদ্র এত শান্ত কেন?

মার্দিনো হাসলো, বলল---সুনামীর সময় এই সমুদ্রই হয়েছিল ভয়াবহ।

জাকার্তার সমুদ্র উপকূল এখন নিশ্চল ঘন নীল। এদেশের দীঘা, পুরি, বকখালির মত নয়। এখানেও মানুষের ভিড়। পর্যটকদের জন্য সমুদ্র সারথী ছোট ছোট বোট রাখা। এই সমুদ্র দেখে কে বলবে একদিন এখানে কোনো এক জনবহুল সকালে আচমকা ধেয়ে এসেছিল সুনামী। কাল রাতে স্বপ্নে দেখা সেই ভয়ঙ্কর ঢেউয়ের মত! পীযুষ বললে---এই শান্ত শিথিল সমুদ্রে এমন ঢেউ আসে?

---আসে স্যার। বারো বছর আগে সুনামিতে আমার খুড়তুতো ভাইয়ের পরিবার ভেসে গেছে। ঐ যে দেখছেন লাইট হাউসের গায়ে দাগ, ওটা সুনামীরই।

পীযুষ মার্দিনোর কাছে আরো জানলো এই জাকার্তা শহরও একদিন সমুদ্রে তলিয়ে যাবে। তার সি লেভেল বেড়ে যাচ্ছে। পৃথিবীর বিপজ্জনক সমুদ্রতীরবর্তী স্থানের এটি একটি অন্যতম। এই স্নিগ্ধ সমুদ্রই গ্রাস করে নিচ্ছে এই বিশাল জনপ্লাবিত শহরটিকে। তাই ইন্দোনেশিয়ার সরকার তৎপর রাজধানী স্থানান্তরণে।

তৎপরতা বিকেল থেকেই শুরু হয়েছে ষষ্ঠী আর শম্ভুর মধ্যে। নবকৃষ্ণ হালদার রসুলপুর ঘাটে কিনে নিয়েছে বড় মাছগুলো। পাঁচশ-ছ'শ গ্রামের ওজনের ইলিশগুলো আড়ত থেকে চালান হয়ে যাবে কলকাতা শহরে। সাড়ে তিনশ থেকে চারশ গ্রামের মাছগুলো বেছে রাখছে শম্ভু। এগুলো দেবীপুর বাজারে নিয়ে যাবে আজ সে। ছোটগুলো সরবেড়িয়া হাটে নিয়ে যাবে ষষ্ঠী। তার মধ্যে রমা বেছে নিয়েছে দু'টো। রাতে অবশ্য মুরগীর মাংস আনবে বলে গেছে শম্ভু। রমা তাই মাছগুলো নুন হলুদ মেখে মৃদু ভেজে রাখলো। ফ্রিজ থাকলে চিন্তা ছিল না রমার। আরও কয়েক পিস রেখে দিতে পারতো নিশ্চিন্তে।

রান্না ঘরে ভাতটা রেঁধে রাখলো রমা। শম্ভু বাজার থেকে ফিরলে মাংসটা রাঁধবে। পিকলুর পাশে বসে রমা ওকে ইংরেজী গ্রামার পড়াচ্ছে। পিকলু নিজেই চায় পড়তে, রমা ওকে কয়েকটা ভয়েস চেঞ্জ করতে দিয়েছিল ভাত বসানোর আগে।

ইংরেজী গ্রামারটা যে ঠিক ঠিক রমার মনে আছে তেমন নয়। তবে বই টই হাতড়ে ও মোটামুটি সাহায্য করতে পারে। পিকলুর পড়াশোনার ব্যাপারে পীযুষ রমা দুজনেই বরাবর তৎপর। এক বছর স্কুল যাবে না পিকলু, রমা তাই নজরে রাখে পড়াশোনার সবকিছু যেন না ভুলে বসে সে। গতকালই ওকে অ্যালজেব্রার সূত্রগুলো লিখতে দিয়েছিল রমা। কয়েকটা বীজগাণিতিক সংখ্যার প্রোডাক্ট বার করতেও দিয়েছিল। এমনই মজার ছলে রমা পিকলুকে এই অবস্থায় পড়ায় উৎসাহিত করে যাচ্ছে।

পিকলু অবশ্য মেধাবী। প্যাসিভ থেকে এক্টিভ সেন্টেন্সগুলো যথাযথ ঠিক করলেও সামান্য ভুল করেছে দু একটা ভার্বে। ওগুলো বুঝিয়ে দিয়ে মা ছেলেতে গল্প করতে লাগলো। আসলে এসময় রমা চায় না পিকলুকে খুব বেশি আবার পড়ার চাপ দিতে। তাই সামান্য কয়েকটা গ্রামার করেই ছেলের সাথে গল্প জুড়ে দিল রমা। ওদের গল্পের বিষয় বস্তু ছিল বর্ধমানে রমার মামাবাড়ির দিদিমার মুখে শোনা আজগুবি সব গল্প। পিকলু বহুবার মায়ের মুখে সেসব গল্প শুনেছে। তবু তার বারবার শুনতে ভালো লাগে। মায়ের কোলে মাথা রেখে সে শুনে যাচ্ছে সেসব আষাঢ়ে কাহিনী।

আজ সারাদিন বৃষ্টি হয়নি। রোদও ছিল দুপুরে। তবে হপ্তা ধরে বর্ষা হবার কারণে আজও হিমেল বাতাসটা আছে, তবে শীত শীত ভাব নেই। এমনিতেই দক্ষিণপ্রান্তে নদী তীরের এই দোচালা ঘরে সারা বছরই ফুরফুরে হাওয়া। আজ যেন একটু বেশিই।

দেবীপুর থেকে শম্ভু সরবেড়িয়া হাটে যখন ফিরল তখন রাত্রি আটটা। ষষ্ঠী বিক্রিবাটা সেরে বিড়ি ধরিয়ে বসে বসে গল্প করছে কয়েকটা মাছওলা ছোকরার সাথে। ওরা সব রসুলপুর ঘাটের ছেলে। জাতিতে একজন বাদে সকলে .,। শম্ভুর সাথেও ওদের ভাব ভালোবাসা খুব। শম্ভুকে দেখেই ওদের একজন বললে---আরে শম্ভু বেদে যে, তুর জন্যই অপেক্ষা কইরেছিলাম। তা বে করলি, খবর আছে লা কি?

ঠিক ঠাহর করতে না পেরে শম্ভু ষষ্ঠীপদর মুখের দিকে তাকালো। সে ঠিক বুঝতে পারলো না শফিউল কি বলতে চাইছে। ষষ্ঠী অবশ্য বুঝতে পেরেছে, তাই সে বললে---একমাস হল বে কইরছে, এখুন কি খবর লিবি?

এইবার শম্ভুর মাথাটায় ঢুকল। ওর মধ্যে একটা লাজুক ভাব জন্ম নিল সেই মুহূর্তে। মাছওলাদের মধ্যে আরেজন ছিল একটু বয়স্ক। ও আবার মজিদের মায়ের পেটের ভাই। বললে---দের করিস লা শম্ভু, লিয়ে লে। তুর বিবির তো শুইনছি বয়স বেশি তুর চেয়ে। যা লে'বার লিয়ে লে জলদি। দু একটা ছ্যানাপোনা ঘরে লা থাইকলে ঘর খাঁ খাঁ করে কিনা।

ষষ্ঠীও ঈষৎ মজা করে তাল মিলিয়ে বললে---ঠিক কইছেন সাজ্জাদ চাচা, ই দিখেন আমার বিটিটা একদিন হল গিয়া তার মামার দুয়ারে গিছে, ঘরটা খাঁ খাঁ কইরে। শম্ভুরে তাই বলি য'খান বাচ্চা লে'বার লিয়ে লে জলদি।

শম্ভু লাল চোখে রাগী রাগী ভাব এনে তাকালো বটে ষষ্ঠীর দিকে, মনে অবশ্য তার বাসনাকুসুম ফুটছে। বললে---ঠিক সময় সুখবর মিইলবে চাচা, চলতেছে কাজ।

অমনি শরিফুলের পাশে দাঁড়ানো শম্ভুরই বয়সী মলিন মণ্ডল বললে---গায়ে গতরে তাগড়া জোয়ান আছিস, খবর আইসতে দের লাইগবে লা। তোর বউ পোয়াতি হইলে মো দিগের খাওয়াবি তো?

সাজ্জাদ চাচা বললে---দিশি লাইগবে। মুরগীর ছাঁট দিয়া রসুলপুর ঘাটে, কথা রইল শম্ভু।

---হউক। হউক। দাও দিখি বড় পাতার বিড়ি একটা। ছোট বিড়ি জলদি ফুরায় যায়।

শম্ভু সাজ্জাদ চাচার হাত থেকে একটা বিড়ি নিয়ে ধরালো। ষষ্ঠী আর ও একসাথে ফিরল তারপর। ষষ্ঠীর দাওয়ায় বসে সারাদিনের আয় ইনকাম ভাগ বাঁটোয়ারা করে ঘরে ফিরল সে। মাংসের ব্যাগটা রমাকে দিয়ে বললে---লুঙ্গি গামছাটা দে দিখি, দিদিমণি।

শম্ভুর গায়ে আঁশটে গন্ধ। সারাদিন মাছের সাথে ছিল কিনা। রমা আজ দুপুরের কাচা লুঙ্গি আর গামছাটা এনে দিয়ে বললে---ভালো করে গায়ে সাবান দিও। বড্ড গন্ধ।
Like Reply


Messages In This Thread
পদ্ম নাগের বিষ - by Henry - 21-10-2023, 11:21 PM
RE: পদ্ম নাগের বিষ - by Henry - 02-01-2024, 09:35 PM



Users browsing this thread: 6 Guest(s)