Thread Rating:
  • 138 Vote(s) - 3.72 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Adultery পদ্ম নাগের বিষ
ভোরবেলা কালনাগিনী যেন ফুঁসছে। এক হপ্তা বৃষ্টি হবার পর নদী যেন গর্ভবতী। হোগলা বনে হারিয়ে যাওয়া খালটাও ফুলে ফেঁপে উঠেছে। ষষ্ঠী বললে---শম্ভু, দড়া খুলাই দে। গতর দিয়া ঠেইলে ধর দিখা।

শম্ভু একবার দেখে নিল জালসামগ্রী সব তোলা হয়েছে কিনা। গত এক সপ্তাহ বৃষ্টির জন্য জলে যেতে পারেনি ওরা। আজ রোদ্দুর। ভোর থেকেই দু'জনে প্রস্তুত। ইলিশের ঝাঁক আসবে। ধরতে হবে জাল পেতে। বড় সাইজের উঠলে আড়ৎদার নবকৃষ্ণ হালদার হাটে যাবার আগেই কিনে নেবে।
রমা আগেই শম্ভুর জন্য খাবার বেঁধে দিয়েছে। সারাদিন নদীতে থাকবে কিনা।
পিকলু বসতে পারে। হেলান দিয়ে বই পড়ে। ঐ তো গতকাল বিকেলে ষষ্ঠী আর শম্ভু ওকে ধরে ধরে হাঁটলো অনেকটা। রমা লক্ষ্য করেছে ছেলেটার গায়ের রঙটাও খানিক ফিরছে। বাপ-মায়ের মত টকটকে ফর্সা ছেলেটার সারা গায়ে যে কালশীটে পড়েছিল, তা যেন আস্তে আস্তে হারিয়ে যাচ্ছে। শম্ভু বলেছে--দিদিমণি, বিষ লষ্ট হয়ে গিলে, আবার তুর ছিলা গোরা হয়ে যাবে।

আজকাল শম্ভু আর রমাকে 'আপনারে, আপনি' করে সম্বোধিত করে না। বরং 'তুই' করেই ডাকে। তবে 'দিদিমণি' ডাকটা ও এখনো ছাড়েনি। রমাও এই ডাকটি খুব সহজাত ভাবে নিয়েছে। কলতলায় কাপড় কাচছিল রমা। হাঁটু অবধি ওর কাপড় তোলা। লতা মাছের আঁশ ছাড়িয়ে ধুতে এসে আটকা পড়ল। এক দৃষ্টে তাকিয়ে রইল রমার দিকে। রমার হাঁটু থেকে ফর্সা দু'খানি মসৃন পা, ইতিউতি কপালে অবিন্যস্ত চুলে নারী সৌন্দর্য্য লতাকে যেমন মুগ্ধ করে তেমন ঈর্ষাও হয়। ওর নজর এখন রমাকে পর্যবেক্ষণ করছে।

---দিদিমণি, রাতে কি মশা কামড়ায় লা কি?

আচমকা লতার এমন প্রশ্নে চমকে উঠল রমা। বললে---কই, না তো।

---তাহলে পোকা কাটছে।

রমা স্তম্ভিত। লতার সন্ধানী চোখ রমার স্তন বিভাজিকায়, গলায়, আরো আরো জায়গায় খুঁজে বেড়ায়। রমা জানে এসব শম্ভুর কামড়ের দাগ। এই এক সপ্তাহে তারা যথেচ্ছ মিলিত হয়েছে। দিন-রাত-ভোর কোনো সময়ই বাদ দেয়নি শম্ভু। শুধু ওরা নজর দিয়েছে পিকলু যেন কোনো ভাবে টের না পায়। কিন্তু লতার চোখকে এখন ফাঁকি দেবে কি করে রমা। কথা এড়িয়ে কলতলা থেকে সরে গিয়ে বললে---কি হল মাছ কাটা হয়ে গেছে? ধুয়ে নাও।

রমা সরে যেতেই লতা মাছের টুকরোগুলো ধুয়ে নিল। কলতলা থেকে মোটা শিরীষ গাছটা পর্যন্ত শম্ভু একটা দড়ি বেঁধে দিয়েছে। রমা কাপড় চোপড় শুকোবে বলে। ও যখন কাপড় চোপড় শুকোতে দিয়ে ফিরল, তখন লতা মাছে নুন হলুদ মাখিয়ে সবজি কেটে দিচ্ছে। রমা বললে---বুলি কোথায়, দেখছি না তো?

লতা খুব গম্ভীরভাবে বললে---কাল ওর মামা আইসেছিল, লিয়ে গেছে।

রমা রান্না বসাতে গেলে লতা পুনরায় বললে---দিদিমণি, আমার কুথাটার উত্তর দিলেন লাই!

বিরক্ত হল রমা। কেন তাকে জবাব দিতে হবে লতাকে। লতা শম্ভুর কেউ নয়। তার সংযত আচরণ এক লহমায় ভেঙে গেল, বললে---তোমার কি খুব জানবার দরকার আছে, লতা?

দিদিমণিকে যেটুকু দেখেছে লতা, তাতে এমন আচরণ অপ্রত্যাশিত। তাই ভিরমি খেল ও। সাহস পেল না দ্বিতীয়বার কিছু বলতে। তবে রমার এই নিরুত্তর থাকা, কিংবা তুমুল বিরক্তি তার সন্দিহান মনে আরো বেশি আগুন দিল।
বাকি কাজটুকু চুপ করেই করে গেল লতা। রমাও নিশ্চুপ। মনে মনে ওর ভালোই লাগছিল, শম্ভুর প্রতি লতার এই বাসনা মোটেই ভালো লাগছে না আর তার। শম্ভু শুধু রমার, এমনই এক দাবী জন্ম হল রমা মৈত্রের মনে।

লতা ভাঙছে ভেতরে। শম্ভুর জন্য কামনা বাসনা তার অনেকদিনের। সে তার স্বামীকে অবহেলা করেছে শম্ভুর জন্য। তবু সে রমা দিদিমণিকে যেটুকু সহায়তা করার সে কাজটুকু করে চলে গেল। শম্ভুরা আজ দুপুরে ফিরবে না। ওরা ফিরবে বিকেলে। তারপর হাটে যাবে। শম্ভুর সাথে রমার কথা বলার সুযোগ সেই রাতে। পিকলু ঘুমিয়ে গেলে চুপিচুপি ও উঠে যায় শম্ভুর বিছানায়। ভোররাতে ফিরে আসে। গত এক সপ্তাহ ধরে এটাই হয়ে আসছে এই দোচালা ঘরে। রমার কিছুক্ষণ পর মনে হতে লাগলো লতার সাথে এমন রূঢ় আচরণ করা ঠিক হয়নি তার। আবার মনে হল স্বামী থাকতে পরপুরুষের প্রতি এত লোভ কেন, ঠিক তক্ষুনি নিজেকেও অপরাধী মনে হল। সেও যে পরপুরুষের সাথে সংসার করছে। অবশ্য তার হাতে শম্ভুর দেওয়া শাঁখা-পোলা, শম্ভু তার কপালে সিঁদুর দিয়েছে।

শম্ভুর সংসারে রমাই একমাত্র রমণী। তার হাতেই টিকটিক গচ্ছিত থাকে জিনিসপত্র। যেমনটি কলকাতায় লেক টাউনের বাড়িতে রমার সংসার। এই সংসারেও শোভা বেড়েছে সুগৃহিনীর দক্ষতায়। দোচালার ঘরে শম্ভুর তক্তাপোশে ময়লা তেলচিটে বালিশের বদলে নতুন দুটো বালিশ আনিয়েছে রমা। পেতে দিয়েছে ভালো বিছানা চাদর। যত্রতত্র মাটির মেঝেতে বিড়ির টুকরো ফেলে শম্ভু। রমা আলাদা করে একটা বাতিল টিনের কৌটো এস্ট্রে করে দিয়েছে। শম্ভু এখন যেখানে সেখানে পোড়া বিড়ি ফেলতে পারে না।

দোচালার ঘরটা ছোট। তার ছাদ বেশ নিচু। একসময় খুব একটা রমা উঠত না। উঠলেই যেন কেমন দমবন্ধ হয়ে আসতো তার। আজকাল এই ঘরটাই তার বেশ পছন্দ। সারারাত শম্ভু এখানেই তার শরীর ঘাঁটে। উলঙ্গ করে উন্মত্ত যৌন সঙ্গম চলে এই ছোট্ট ঘরেই। রমা গুছিয়ে রাখে শম্ভুর লুঙ্গি, গেঞ্জি সব। শম্ভুর বিছানায় এলিয়ে দেয় শরীরটা। লেক টাউনের ঘরের মত নরম বিছানা নয়। দীর্ঘ দিনের কয়েকটা ছেঁড়া কাঁথা পাতা বিছানা। তার ওপরই রমা পেতে দিয়েছে একটা পরিষ্কার বিছানা চাদর। প্রতিদিন সকালে রাতের ঝড়ের পর এলোমেলো হয়ে যায়। দুর্বল তক্তপোষের ক্যাচোর ক্যাচোর করুন শব্দে ভোর হয় রমার। রাতের জন্য আজও উদগ্রীব সে। শম্ভুকে বুকে নিয়ে সামলাবে ঘন্টার পর ঘন্টা। মুখ দিয়ে শব্দ বার করল---উফঃ!

পিকলু ঘুমিয়ে গেছে। এই দুপুরটা যেন অধৈর্য্যে কাটছে ওর। শম্ভু এখন নদীবক্ষে। রমার সারা শরীরে শিহরণ। কবিতার বইটা নিয়ে উঠে এসেছে দোচালার বিছানায়, নিভৃত দুপুরে। বড্ড কঠিন সব কবিতা লেখেন শক্তি চট্টোপাধ্যায়। অনেকদিন লেকটাউনের বুকসেলফে পড়ে রয়েছিল বইটা, বোধ হয় শ্বশুর মশাইয়ের। এক আধবার ঘেঁটে দেখেছে রমা, সব কবিতা বোঝা যায় না। রমা কবিতা পড়তে ভালোবাসে বলেই, পীযুষকে এই বইটাই আনতে হল! পীযুষ কি সবসময়ই তাকে অর্ধেক ঠাহর করে কাটিয়ে দেবে, কখনোই তাকে সম্পূর্ন জানতে চেষ্টা করবে না?

দেহটা এলিয়ে দিল তক্তপোষের বিছানায়। তক্ষুনি সেই বিচিত্র শব্দ হল তার থেকে। বড্ড সুখানুভুতি হচ্ছে রমার, শম্ভুকে বুঝতে দেয় না সে। পিঠ উল্টে মুঠোতে থাকা বইটার পাতা ওল্টাতে গিয়ে থামলো এক জায়গায়।

''কবিতার তুলো ওড়ে সারাদিন মনের ভিতরে
হাওয়া লেগে
খেলাভোলা শিশু
এক খেলা ফেলে রেখে এক নতুন উৎক্ষিপ্ত খেলায়
সমর্পণ করে সব--অশ্রুহাসি স্বপ্ন পরিশ্রম।

কবিতার তুলো ওড়ে সারাদিন মনের ভিতরে
তবু কি ওড়ে না শিশু
ছুঁয়ে থাকে মাটির বাস্তব?
কিন্তু টা কি করে হবে...
ও যে নখে বালিশ ছিঁড়েছে..."

রমাও একবার কবিতা লিখেছিল এমন পড়ন্ত দুপুরে লেকটাউনের বাড়িতে। একা একা নিঃস্ব সময়গুলো পার করতে গিয়ে একটা পুরোনো ডায়েরির পাতায় লিখে ফেলেছিল বেশ ক'লাইন। রাত্রি বেলা বিছানায় সাহস করে শুনিয়েছিল পীযুষকে। পীযুষ অবশ্য নিরুৎসাহিত করেনি। তবে ওর মুখে একটা ঠাট্টার হাসি দেখতে পেয়েছিল রমা। আসলে কবিতার বেশ কিছু শব্দ নাকি পীযুষের মতে খুবই সাধারণ। তারপর আর রমা কবিতা লেখেনি।

"অস্পষ্ট চাঁদের কাছে হাত পেতে রয়েছে ভিক্ষুক
দাঁড়িয়ে এখনো
তুমি তার পাশে প্রার্থী হয়ে শোনো
সে কিছু চাঁদকে দেবে ব'লে
বহুকাল থেকে রাখে দুঃখ মুদ্রা জড়ানো কম্বলে।"

গতরাতে শম্ভু বলেছিল রমার জন্য তার নাকি উপহার রাখা আছে। রমা হেসে বলেছিল--থাক তোমার উপহার। তোমার বউটি হলে দিও।' শম্ভু বলেছে---এ'জন্মে বে আমি কইরেছি দু'বার। যিটা আসল ছিল সিটা নকল ভালোবাসার, যিটা নকল ছিল সিটা আসল ভালোবাসা।

শম্ভুর কথায় হেসেছে রমা। শম্ভুর কাছে রমা একদিন অস্পষ্ট হয়ে যাবে। রমার শরীর পূর্ন দখল করেছে শম্ভু, হৃদয়ে এখনো সামান্য মাত্র। ওর হৃদয়ে এখনো পীযুষই সিংহাসনে। শম্ভু কখনোই পারবে না তাকে সিংহাসনচ্যুত করতে।
++++++
Like Reply


Messages In This Thread
পদ্ম নাগের বিষ - by Henry - 21-10-2023, 11:21 PM
RE: পদ্ম নাগের বিষ - by Henry - 02-01-2024, 09:33 PM



Users browsing this thread: 1 Guest(s)