Thread Rating:
  • 138 Vote(s) - 3.72 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Adultery পদ্ম নাগের বিষ
রাতে সকলে প্রানভরে খেল। রমার হাতের রান্নার প্রশংসা সকলের মুখে একসাথে শোনা গেল। হাভাতে জীবনে শম্ভু বা ষষ্ঠী এমন সুস্বাদু রান্না কেউ কখনো খায়নি। ষষ্ঠীর ছয় বছরের মেয়ে বুলিও চিবিয়ে চিবিয়ে কাঁটা সমেত মাছটা খেয়ে ফেলল, অথচ পিকলু এখন ক্লাস এইটে পড়ে, মাছে কাঁটা থাকলে রমাকে বেছে দিতে হয়। বেশি কাঁটা যুক্ত মাছ তো পিকলু খাবেই না।
রমাও কলকাতার বাজারের চেয়ে বেশি টাটকাযুক্ত ইলিশ মাছের স্বাদের অনন্যতা উপভোগ করেছে। পীযুষ ইলিশ ভালোবাসে। রমা ভাবলো নিশ্চই এমন মাছের টেস্ট পেলে ও খুশি হত। এরমধ্যে একদিন যদি সুযোগ হয়, সুন্দরবনের ইলিশ খাওয়াবে পীযুষকে।


খাওয়া দাওয়ার পর লতা আর বুলি চলে গেলেও আজ অনেকদিন পর ষষ্ঠী আর শম্ভু তাস নিয়ে বসেছে দো চালায়। যাবার আগে লতা বাসন কোচনগুলো ধুয়ে দিয়ে গেছে। এক দিক দিয়ে ভালোই হয়েছে, এই এঁটো বাসন ধোয়ার বিষয়টাতে রমার একটু অস্বস্তি হয়। বাড়িতে চাঁপাই ধোয়। রমা ঘুমিয়ে পড়ল পিকলুর পাশে। রাতে এলাকাটা নিঃঝুম হয়ে যায়, একটা পেঁচা ডাকলেও কানে ঠেকে। ছাদের ওপর ষষ্ঠী আর শম্ভুর তাস খেলবার সময়ের নূন্যতম কথাটুকু কখনো কখনো কানে ঠেকছে রমার।

তখন রাত্রি বারোটা মত। রমার ঘুম ধরে গেছিল অনেকক্ষণ। হঠাৎ চেঁচামেচিতে ঘুম ভাঙল তার। কেউ বা কারা যেন সদলবলে ঘরের কপাটের সামনে হুড়োহুড়ি করছে। তাদের গলায় প্রচন্ড ক্রুদ্ধ চিৎকার---শম্ভু! এই শম্ভু! শালা বেদের পো! কই আছিস!

সবেমাত্র তাসের খেলা শেষ করে ষষ্ঠী আর শম্ভু বিড়ি ধরিয়েছিল। চেঁচামেচি শুনে ওরা নীচে নেমে এলো। শম্ভু দেখতে পেল রমা জেগে আছে। শুধু কড়া গলায় একবার বলল---দিদিমণি আপনি বার হবেন লাই।

শম্ভুর উপর চড়াও হবে এমন অবস্থা গ্রামের পঞ্চায়েত সদস্য ইউসুফ মোল্লার লোকেরা। ইউসুফ মোল্লা খান্ত করল ওদের। সঙ্গে রতিকান্ত, দীননাথ সহ সরবেড়িয়ার জেলে পাড়ার কয়েজন যুবকও আছে।

ইউসুফ মোল্লা বললে---দেখ শম্ভু, তোর বাপ ভীমনাগ বেদে গেরামে পচুর সাপে কাটারে এককাল বাঁচাইছে। তারে আমরা সম্মান দিই। তুই তার ব্যাটা। তুইও সাপে কাটা রুগীর চিকিচ্ছা করিস। ঘরে সাপ পুষিস, আমরা আপত্তি করি লাই। কিন্তু আমি শুনলি তুই লা কি শহর থিকে মেয়েছেলে আনে রাইখছিস!


শম্ভুর মাথাটা গরম হয়ে গেল। তার আগেই ষষ্ঠীপদ সামলে নিয়ে বললে---ইউসুফ সাহেব, কুনো মেয়েছেলে লা গো। শহুর থিকে দিদিমণিটা আসসে, তার ব্যাটাটারে সাপে কাটছে বইলে। দিদিমণির বরটাও আইসে, আজই আইসছিল। কলকাতা শহুরে কলেজের বড় মাস্টারটা আছে দিদিমণির বরটা।


অমনি দীননাথ শাসিয়ে উঠল---চুপ কর ষষ্ঠী! আমরা কি বুঝি লাই, কলকাতা শহরে মাস্টারের বউটাকে ফুঁসলিয়ে লিয়ে আসসে এই বেদের ব্যাটা। শালা এর বাপটা ভি তো ফুঁসলাই ছিল জেলে পাড়ার সনাতন মাঝির বেটিরে। যাবে কুথা রক্ত আছে যে।

শম্ভুর মাথায় আগুন জ্বলে উঠল। বাপের নামে গালাগালি সহ্য করতে পারলো না সে। উত্তেজিত কন্ঠে তেড়ে যেতে লাগলো দীননাথের দিকে---কি কইলি, মোর বাপের নামে গালি দিস রেন্ডির পো!

তৎক্ষনাৎ দীননাথের গলাটা চেপে ধরল শম্ভু। মাতব্বর দীননাথের তখন ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা। ষষ্ঠী বুঝল প্রচন্ড বিপদ। শম্ভুর গায়ে অদম্য জোর। কিন্তু ইউসুফ মোল্লার বিশাল বাহিনী। এই মুহুর্তেই সঙ্গে আছে দশটা তাগড়া যুবক ছেলে। তবে ইউসুফ নিজেই শান্ত করল সবাইকে। শম্ভুকে বললে---বললি লা তুকে, তুই ভীমনাগ বেদের ব্যাটা আছিস। তাই তুরে কিছু বলব লাই। গায়ে হাত দিবে লাই কেউ। কিন্তু তু যদি যে মেয়েছেলেরে ভাগাই লিয়ে আসছিস, তারে ঘরে রাইখতে চাস, তবে বিয়ে কইরে রাখ। কেউ কিচ্ছু বইলবে লাই, ইটা ইউসুফ মোল্লার এক কথা। এমনি এ গাঁয়ে রাইখতে পারবি লাই।

দেয়ালের আড়াল থেকেও রমা কথাগুলো শুনতে পাচ্ছিল। গ্রামে গঞ্জে রাজনৈতিক হানাহানি আর খুনোখুনি এসব প্রতিদিন খবরের কাগজে পাওয়া যায়। কথায় কথায় ভোটের সময় গুলি-বোমা চলে। এই পরিস্থিতি যে আসলে শম্ভুকে বিপদে ফেলল সেটা বুঝতে রমার বাকি নেই।

শম্ভুর রাগে গা কাঁপছে। ইচ্ছে করছে এখুনি দীননাথকে কুপিয়ে খুন করে ফেলে। ষষ্ঠী তাকে ঠান্ডা করে বললে---শম্ভু ঘুমাবি যা। মাথা ঠান্ডা রাখ।

ঘরে ঢুকতেই সে দেখল রমা বসে রয়েছে বিছানায়। রমা বলল---শম্ভু...

শম্ভু রমাকে কথা না বলতে দিয়ে থামিয়ে দিয়ে বললে---দিদিমণি, ঘুমিয়ে যান। কাল সকালেই কুথা হবে।

না রমা না শম্ভু কেউই ঘুমোতে পারছিল না। শম্ভুর মনটা গ্লানিতে ভরে যাচ্ছিল। তাকে দিদিমনির সামনে এমন অপমান করল ওরা। বড্ড গ্লানি চেপে বসছিল ওর বুকে। সে তো কারোর কখনো ক্ষতি করেনি এ যাবৎ। তবু ওরা এত শত্রুতা করল ওর সাথে। কি বলবে কাল সকালে ও দিদিমণিকে। চলে যেতে বলবে!

ভোরবেলা রমার যখন ঘুম ভাঙলো, তখন শম্ভুকে কোত্থাও দেখতে পেল না ও। রমা উঠানে এসে দেখল নদীর তীরে বসে আছে শম্ভু, শান্ত স্থির হয়ে এক দৃষ্টে চেয়ে। রমা চা করে নিয়ে গিয়ে ওর পাশে রাখলো। নিজেও চায়ে চুমুক দিচ্ছে রমা। শম্ভু রমার উপস্থিতি টের পেয়েও না তাকিয়ে বললে---দিদিমণি, আপনি আজই চইলে যাবেন। বাপ-দাদার ঘর মোর। উরা সাংঘাতিক লোকটা আছে। আপনি থাইকলে আজ লা হয় কাল ঘর ভাইঙবে আমার। আপনার মান সম্মানটা লিয়েও টানাটানি কইরবে। বাজে লোক আছে উরা। আমি একলাটা থাইকলে ই শালাদিগের কুনোটাকে ছাইড়তাম লা। কিন্তু ঘরে মেয়েছিলে থাইকলে সেসব পারব লাই। চইলে যান আপনি।

----কিন্তু পিকলুটার কি হবে শম্ভু। আমার ছেলেকে কি তুমি....

---দিখেন দিদিমণি, আমি জেবনটা বাঁচাই দিছি আপনার ছেলের। আপনি ইবার ডাক্তারটা দিখাই লেন। দিখবেন ঠিক সুস্থটা হয়ে যাবে।

---কিন্তু আমার যে বিশ্বাস হয় না শম্ভু। ডাক্তার তো পারেনি ওকে বাঁচাতে। তুমিই তো পেরেছ।

শম্ভু চা না খেয়েই উঠে গেল ওখান থেকে। ডিঙি নৌকায় দাঁড় বাইতে শুরু করল। যাবার সময় বললে---দিদিমণি, আমি ফিইরলে দিখি যেন আপনি চইলে গেছেন। আমার আর কিছু করার লাই।

চলবে।
Like Reply


Messages In This Thread
পদ্ম নাগের বিষ - by Henry - 21-10-2023, 11:21 PM
RE: পদ্ম নাগের বিষ - by Henry - 28-11-2023, 11:01 PM



Users browsing this thread: 3 Guest(s)