Thread Rating:
  • 135 Vote(s) - 3.69 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Adultery পদ্ম নাগের বিষ
দু একদিনের মধ্যে শম্ভুর ঘরটা যেন বদলে গেল। শম্ভুর মনে পড়ল ষষ্ঠীপদ একদিন বলছিল 'মেয়েছেলের হাত পইড়লে দেখবি ঘরটা কত যতন হছে'। শম্ভুর দো চালা ঘরের নীচ চালায়, যেখানে রমা আর পিকলুর থাকবার ব্যবস্থা হয়েছে, সেখানে সবকিছু টিক টিক করে গোছানো। তক্তাপোষটাও সুন্দর হয়েছে। একবার শম্ভু বসে দেখেছে কি নরম। দেবীপুর থেকে ইলেকট্রিক মিস্ত্রি এসে ব্যাটারী ফিট করে ফ্যানটা চালিয়ে দিয়ে গেছে। সেই ব্যাটারিতে দুটো বাল্ব জ্বলে, একটা নীচ চালায়, অন্যটা উঠোনে। ষষ্ঠীপদ টিন আর ত্রিপল দিয়ে কলতলাটা ঘিরে বাথরুম বানিয়ে দিয়েছে রমার স্নান করবার জন্য।

সুন্দরবন থেকে ফেরার পর পীযুষের মাথায় ঘুরছে প্রাচীন মেডিসিনাল সায়েন্স নিয়ে জানার ইচ্ছা। বিশেষ করে বেদে জনজাতির সর্প দংশনের চিকিৎসা সম্পর্কে। নৃ তত্ব রমার বিষয়, ওর কলেজ জীবনের কিছু বই বুক শেলফে আলাদা করে রাখা। রমা আজকাল ওগুলো নামায়ও না, পড়েও না। ঐ যা মাঝে মধ্যে ঝাড় পোঁছ করে যেমনটি ছিল রেখে দেয়। পীযুষও কখনো ঐ বইগুলোর দিকে গুরুত্ব দিয়ে পর্যবেক্ষণ করেনি। আজ তার মধ্য থেকেই 'নোম্যাডস অফ ইন্ডিয়া' বইটা নজরে এসেছে পীযুষের। বেদেরা যাযাবর। ঐ বইটাতে নিশ্চই কিছু কথা আছে ওদের সম্পর্কে।

আজ দুপুরে খেতে বসেছে শম্ভু। বাড়িতে একজন শহরের ভদ্রমহিলা আছে। তাই সে নিজেকে একটু পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখে আজকাল। স্নানে ঢুকলে টের পায় টিন ঘেরা কলতলাতে সদ্য রমার স্নান করে যাওয়া সুগন্ধী সাবান শ্যাম্পুর ঘ্রাণ। নাক ভরে টেনে নেয় সে সেই ঘ্রাণ। এই ঘ্রাণ নেওয়াটা তার গোপন লালসা। রমাকে যে সে লুকিয়ে এ' কদিন দেখেনি এমন নয়। স্নান করে বেরোনো ফর্সা রমার তকতকে কোমল বাহু, কিংবা লাল, কালো, সবুজ ব্লাউজে ঢাকা ঠাসা পুষ্ট স্তন তার নজরে আসে। শরীরটা চাড়া দিয়ে ওঠে। পরক্ষনে নিজেকে সাবধান করে নেয় শম্ভু, সে ভীমনাগ বেদের ছেলে, কখনো যেন দিদিমণি টের না পায় তার পৌরুষে নোংরা লোভটা জেগে আছে।

রমা তখন পিকলুকে খাওয়াচ্ছে। মাটির দাওয়ায় আসন পেতে ভাত খাচ্ছে শম্ভু। তেলাপিয়া মাছটা ভালোই রেঁধেছে দিদিমণি। এ কদিন সে দিদিমণির হাতের রান্না খাচ্ছে দু'বেলা। মুখে একটা দারুন স্বাদ জমে গেছে তার। মাছের কাঁটা চিবোতে চিবোতে বললে---দিদিমণি অভ্যাস খারাপ কইরে দিতেছেন আমার। আপনার রাঁধা খাওয়ার খিয়ে, আর লিজের রান্না মুখে রুচবেনি গো।

রমা পিকলুর মুখে ঝোল মাখানো ভাতের মন্ড তুলে দিতে দিতে বলল---এবার একটা বিয়ে করে নাও শম্ভু। আর হাত পুড়িয়ে নিজেকে রান্না করে খেতে হবে না।

বিয়ের কথা শুনলে শম্ভু কেমন গম্ভীর হয়ে যায়। এই ক'দিনে ওকে দু'বার বিয়ের কথা বলেছে রমা। সব বারই কেমন গম্ভীর মুখে বিষের কথা বলেছে। বিষটা যে কি রমার জানা নেই। নিশ্চই কোনো পুরোনো দুঃখ আছে শম্ভুর মনে। তবু রমা ওকে বলল---দেখো শম্ভু, বয়স তোমার কম। সংসার শুরু করে ফেলো। দেখো সব পুরোনো কিছু দুঃখ ভুলে যাবে।

শম্ভু এবার হাসলো। এই হাসিতে নিজের প্রতি তাচ্ছিল্য আছে। বলল---দিদিমণি, বেদের পো আমি। আমার দাদু সনাতন মাঝি জেলে। নদীর মাছ ধইরে যা আনন্দটা পাই, সে আনন্দ সংসারের চেয়েও বেশি সুখটা দেয় আমার লিগে।

রমা টের পায় শম্ভুর চেহারাটাই শুধু দীর্ঘ পুরুষালি। গায়ে তার অদম্য জোর। কিন্তু মনের মধ্যে সে একটা সরল মানুষ। এই সরলতা রমার অনেক বেশি ভালো লাগে। কিছুদিন আগে দেখে যে লোকটাকে তার রুক্ষ বন্য মনে হত, সেই লোকটার মানবিক গুনগুলো সে ধারাবাহিক দেখছে। পিকলুর সাথেও শম্ভুর একটা সহজ বন্ধুত্ব হয়ে গেছে। পিকলু আর কথায় কথায় ঘর ফেরার কথা বলে না। বরং শম্ভু যখন ওর চিকিৎসা চালায়, সর্বাঙ্গ শক্ত হাতে চাপ চাপ তেল মালিশ করে; তখন ও তার সাথে নদী, সুন্দরবনের বাঘ, কুমির নিয়ে গল্প করে। পিকলুরও মাত্র কয়েকদিনে কিছু উন্নতি হয়েছে। কোনোরকম স্পিচ থেরাপি ছাড়া কথা খানিকটা স্পষ্ট হয়েছে। হাতের আঙ্গুলগুলোও দু-একটি বাদে সচল।

রমা বিকেল হলে মাঝে মধ্যে নদীর ধারে যায়। নদীর ওপারেই গভীর অরণ্য। গোলপাতা, হোগলার বন ঘিরে আছে শম্ভুর বাড়িটাকেও। কালনাগিনীর ছোট একটা স্রোত ঐ হোগলার বন দিয়ে কোথায় হারিয়ে গেছে। ওর মুখে শম্ভু মাছ ধরার মুগরী বসিয়েছে। ছোট ছোট মাছও ওঠে ওতে। একদিন একটা ইল জাতীয় মাছ রমার দিকে ছুঁড়ে ভয় খাইয়ে দিয়েছিল শম্ভু। পরে বুঝেছিল ওটা সাপ নয়, মাছ। কাদা জলে নেমে শম্ভু মাছ ধরে। রমা পাড়ে বসে গল্প করে ওর সাথে। কখনো রমার সাথে ষষ্ঠীর ছোট্ট মেয়েটা বুলি থাকে।
শম্ভুর গল্পগুলো জল, জঙ্গল আর হাসি ঠাট্টার। শম্ভুর মধ্যে যথেষ্ট বুদ্ধিমত্তা টের পায় রমা। শম্ভুর পড়াশোনা বিশেষ কিছু নেই, অথচ বেশ বুদ্ধিদিপ্ত মজার কথা বলে। তবে শম্ভুর একটা জেদও লক্ষ্য করে রমা, ও বড্ড স্বাধীনচেতা। যেটা ইচ্ছে, সেটা করবে। কেউ ওর ওপর কতৃত্ব ফলাতে পারে না। বরং রমা টুকটাক কিছু কাজ বললে করে দেয়। বিশেষ করে ভারী কিছু কাজ যেটাতে পৌরুষ ক্ষমতা লাগে, সেগুলি রমা শম্ভুকে দিয়ে করিয়ে নেয়।

ষষ্ঠীপদ বাজার করে দেয় লিস্ট মত। রমা ওকে বখশিশও দেয়। ষষ্ঠী লোকটা শম্ভুর মত শক্তিশালী বা দুধর্ষ না হলেও বড্ড সাধারণ। রমাকে বড্ড সম্মান করে। ষষ্ঠীর বউ কাপড় পর্যন্ত কেচে দিতে একদিন এসেছিল রমার কাছে। রমা বারণ করে ওকে বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছে।
[+] 10 users Like Henry's post
Like Reply


Messages In This Thread
পদ্ম নাগের বিষ - by Henry - 21-10-2023, 11:21 PM
RE: পদ্ম নাগের বিষ - by Henry - 28-11-2023, 10:58 PM



Users browsing this thread: 5 Guest(s)