Thread Rating:
  • 138 Vote(s) - 3.72 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Adultery পদ্ম নাগের বিষ
দুদিনের মাথায় জ্ঞান ফিরল গোঁসাইয়ের বৌমার। চমৎকার দেখে চমকিত হয়ে উঠল ভুবন গোঁসাই। শম্ভুর দিকে তাকিয়ে আবেগ প্রাবল্য গলায় বললে---বেদের পো, তু তো চমৎকারী রে। আজকেইর দিনে জড়ি বুটিতে সারাই ফেললি মোর বৌমারে।

শম্ভু তখনও রুগীকে পর্যবেক্ষণ করছে। বললে---গোঁসাই, জ্ঞান ফিরছে বটে, হাঁটাচলাটা করতে সময় লাইগবে। আমার কাজ শেইষ। ক'টা দিন যে জড়ি বুটি দিছি, তা খাওয়াও। আর কাটা জাগাটায় বাটাটা দিও।

ভোর বেলা বেরোবার সময় কড়কড়ে দুটি পাঁচ শত টাকা দিল শম্ভুর হাতে গোঁসাই। বললে---কেষ্ট ঠাকুর তুর মঙ্গলটা করুক।

পথ ধরে হাঁটতে লাগলো শম্ভু। সাথে ঝাঁপি থাকলে বাসে নিতে চায় না বেদেদের। যাত্রীরা ভয় করে। দীর্ঘ অপেক্ষার পর একটা বাস তুলে নিল তাকে। বাসে উঠতেই হেল্পার বললে---কি আছে রে তাতে? সাপ নাকি?

শম্ভু রুক্ষ গলায় বললে---খুলে দেখাবো লা কি?

ভয় পেল হেল্পার, বলল---থাক। থাক। পিছনের দিকে সিট আছে। গিয়ে বোস। সামনে আসবিনি।

দেবীপুর স্ট্যান্ডে যখন নামলো তখন সকাল দশটা, তীব্র রোদের উত্তাপ শুরু হয়েছে এখন থেকেই। আড়াই ঘণ্টা কাটলো তার বাসে। দেবীপুর থেকে আড়াই কিমি হাঁটলে দেউলবাড়ি। সেখান থেকে সরবেড়িয়া আরো চার কিমি। এ পথে ভ্যান রিকশা চললেও শম্ভুদের মত বেদেদের হাঁটা অভ্যাস।

দেউলবাড়ি এসে ইউসুফের মাংস দোকানে ঢুকল শম্ভু। বোস্টমের ঘরে মাছ-মাংস খায় না। এ' কদিন মাছ-মাংস পেটে পড়েনি শম্ভুর। শম্ভু বড্ড মাংস লোভী। ওর একার সংসারে যা আয় হয়, তা দিয়ে দু বেলা ভরপেট খেয়ে ও ওর শক্তপোক্ত শরীরটা ঠিক রাখতে পারে। হাড্ডি মাংস ওর খুব প্রিয়। অনেক সময় ছাঁটও আনে। ইউসুফের দোকানে এখন ভিড় কম। ভিড়টা যা হয় সকালবেলা। ইউসুফ বললে--আরে শম্ভু বেদে যে, কোত্থেকে এলি?

---বাসন্তী গেছিলাম গো, ইউসুফ ভাই। দাও দিখি এক কিলো।

ইউসুফের দোকানে হাজির ছিল রতন দাস। লরির ড্রাইভার। বললে---এক কিলো কি তুই একাই খাবি! বে শাদী তো করিস লাই।

ইউসুফ হেসে বলল---এরকম গতরওলা যুবক মরদের তো লাইগবেই রতন দা। শম্ভুটা মোর .,দের মত, মাংস তার দরকার।

রতন বললে---উত্তরপ্রদেশে দেখছি বেদেরা '. হয়। শম্ভু তু কি '.রে?

---হেসে উঠল শম্ভু। বেদের কুনো জাত লাই গো রতন দা। বেদে * , '., বোস্টম, সাঁতাল সব হয়।

কালো পলিথিন ব্যাগে মাংস ভরে দিয়ে ইউসুফ বললে---ঝাঁপিতে কি আছে রে? সাপ নাকি!

---দিখবে? শম্ভু জিজ্ঞেস করল।

সকলের উৎসুক চোখ। আরো ক'জন জুটে গেল। ঝাঁপি খুলে বার করে আনলো কেউটেটাকে। কেমন যেন সেঁধিয়ে রয়েছে ভয়ে। টোকা মেরে মেরে খানিক ফনা তোলালো। কেউ একজন বললে---বিষ দাঁত আছে না লাই?

ভিড় থেকে লোকটাকে খুঁজে নিয়ে শম্ভু সাপটা ওর দিকে নিয়ে গিয়ে বললে---লিজে দিখে লাও।

লোকটা ভয়ে সরে গেল। কিছু লোক জড়িবুটি চাইলো। বলতে বলতে শ দেড়েক টাকা রোজগার হয়ে গেল ইউসুফের দোকানের সামনেই। ইউসুফ বললে---তোর তো মাংসের দাম উঠে গেল রে শম্ভু।

শম্ভু হেসে ঝাঁপি গুছিয়ে হাঁটা দিল। হাঁটতে হাঁটতে বাড়ি ফিরল যখন সাড়ে এগারোটা। আজ সে ঠিক করেছে রেঁধে নিয়ে স্নানে যাবে। খেয়েদেয়ে পদ্মর সাথে ঝিম ধরা পিরিতের নেশা চড়িয়ে ঘুমোবে একটা দীর্ঘক্ষণ।

ঘরের কপাট খুলে দেরী করল না ও। চাল ধুয়ে হাড়িতে করে স্টোভ জ্বালিয়ে ভাত বসিয়ে দিল। মাংসটায় নুন হলুদ মাখিয়ে রেখে চলে গেল কলতলায়। এই নলকূপ তার মায়ের জন্য দাদু বসিয়ে দিয়েছিল। শম্ভুর অবশ্য ইচ্ছে হলে কালনাগিনীতে চলে যায়। ওখান থেকেই স্নান করে ফেরে। যেদিন সাবান তেল মাখে, সেদিনই কেবল কলতলায় বসে। শেষবার সাবান মেখেছিল মাসখানেক আগে। আজ আবার কলতলায় সাবান মেখে ভালো করে গা ধুয়ে ফিরল যখন ভাত হয়ে এসেছে। মাংসটায় ঝাল দিল না শম্ভু। বুলি ঝাল খেতে পারে না। রান্না বান্না শেষ হতে দূর থেকে হাঁক পাড়লো---বুলি! ও বুলি?

বুলিটা ষষ্ঠীপদর মেয়ে। বয়স এখন ছয়। আধো আধো কত কথা বলে শম্ভুর সাথে। শম্ভু বাইরে কোথাও গেলে ওর জন্য লজেন্স এনে দেয়। ষষ্ঠী ঘরে নেই। ষষ্ঠীর বউ লতা বললে--যা রে বুলি, তোর শম্ভু কাকা ডাইকছে।

ঝুমঝুমি পায়ে হাজির হল বুলি,--কাকা? কি আনছ আমার জন্য।

একটা বাটিতে মাংস দিয়ে বললে---ফেইলে দিস না যেন। মাকে গিয়ে দিস। তুর জন্য মাংস আছে।

বুলি কিছুটা এগোতেই ষষ্ঠীর বউ লতা এগিয়ে এসে মেয়ের হাত থেকে বাটিটা ধরে নিল। একবার তাকালো শম্ভুর দিকে। শম্ভু জানে লতার এই চাহুনিতে একটা কামার্ত ভাব আছে। সে তাকাতে পারে না। শরীর টনটন করে। অনেক কিছুই একলা দিনে ইচ্ছে করে তার তখন।

আয়েশ করে খেয়ে দেয়ে মুখ ধুয়ে দোচালায় উঠে গেল শম্ভু। গরমে তক্তাপোশের তেলচিটে বিছানায় না শুয়ে মেঝেতে শীতলপাটি পাতলো। তারপর পদ্মের ঝাঁপির কাছে গিয়ে এমন ভাবে ডাক দিল, যেন সাপেরও কান আছে---পদ্ম, আ পদ্ম কই গেলি রে, আমার পিরিতের নাঙ।

ঝাঁপি খুলে চমকে গেল শম্ভু। ঝাঁপি শূন্য, পদ্ম নেই। নিশ্চই তক্তাপোশের তলায় গিয়ে সেঁধিয়েছে। এমন আগেও এক দুবার বেরিয়ে গেছে ও। ভারী ডানপিটে কিনা। শম্ভু মনে মনে হাসলো।

কিন্তু, কোথায় পদ্ম! সারা ঘর তন্ন তন্ন করে খোঁজ মিলছে না তার। দোচালা, একচালা কোথাও তার অস্তিত্ব নেই। উন্মাদের মত হয়ে উঠল শম্ভু। উঠান লাগোয়া হোগলা বন তেড়ে ফেলতে লাগলো। কোথাও পদ্মের কোনো চিহ্ন নেই। পদ্ম কি পালালো! পদ্ম কি গোলাপির মত তার বিষ সহ্য করতে পারলো না! বিশ্বাস হয় না শম্ভুর।

অনেক খোঁজাখুঁজির পর বুঝতে পারলো পদ্মও তাকে ছেড়ে চলে গেছে। চোখে মুখে তখন তার হতাশা, গ্লানি, রাগ। উঠানে বসে আছে হতভম্ব হয়ে।
+++++
Like Reply


Messages In This Thread
পদ্ম নাগের বিষ - by Henry - 21-10-2023, 11:21 PM
RE: পদ্ম নাগের বিষ - by Henry - 10-11-2023, 11:40 PM



Users browsing this thread: 5 Guest(s)