Thread Rating:
  • 11 Vote(s) - 3.09 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Adultery হোম ডেলিভারি by avi5774
#1
মনটা খারাপ হয়ে যায়। বর্ষার শেষে আকাশে সোনা রোদ, পুজোর গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে, তবুও শম্পা খুব একা, নিজের তো কেউ নেই। হাত ধরে হাটার কেউ না থাকলে কিসের পুজো। আনন্দ যদি ভাগ না করি তাহলে কিসের আনন্দ!!
মশলা কষতে কষতে চোখে জল চলে আসে, ঝাঁজের দোহায় দিয়ে কিছুটা চোখের জল ফেলে নেয়। এইভাবেই মনের ভিতরে গুমরানো কষ্টটাকে প্রতিদিন একটু একটু করে বের করে দেওয়ার চেষ্টা করে। 
সেই স্কুলে যাওয়ার সময় থেকে পার্থর সাথে প্রেম। বন্ধুরা হিংসে করতো সুপুরুষ পার্থকে দেখে, শম্পার গর্ব হোতো। ধিরে ধিরে সেই প্রেম ঘিরে দুই পরিবারের বিবাদ সঙ্ঘর্ষ। আজকে সেইদিন গুলোর কথা মনে পরলে বুক কাঁপে। 
এই কে খবর দিয়ে দিয়েছে পার্থর সাইকেলের পিছনে করে ওকে যেতে দেখে। সেই নিয়ে বাড়িতে তুমুল অশান্তি। কতরাত ভাত পর্যন্ত খাইয়নি ওরা দুজন। 
কলেজে ওঠার আগেই বাবা ওর জন্যে সন্মন্ধ দেখতে শুরু করে দিলো। সুন্দরি মেয়ে নিমত্তন্নে গেলেই যেন একের পর এক সন্মন্ধ আসতে থাকে। শম্পার নিখুত সৌন্দর্য্য, ছেলের মায়েদের শিকারি চোখ এড়াতে পারেনা। কেউ বলে এক কাপরে নিয়ে যাবো, কেউ বলে আমার মেয়ের মতন করে রাখবো, কেউ বলে ছেলে বলে দিয়েছে ওকে ছাড়া আর কাউকেই বিয়ে করবেনা। 
বাউন্ডুলে পাড়ার ছেলে পার্থর কি আর দর তখন। সদ্য কলেজে উঠেছে, টিউশানি করে যা রোজগার তা লুকিয়ে চুরিয়ে প্রেম করতেই শেষ। বাড়িতে চার ভাই ওরা। মা বাবা চার ভাইকে বড় করে তুলতে গিয়েই হিমসিম তো যাদবপুর, শিবপুর আর খরগপুর এদের কাছে যায়গারই নাম। 
কিন্তু শম্পার মনের খবর কে রাখে। সে যে তার শিবঠাকুর স্থাপন করে ফেলেছে মনের মন্দিরে। 
বাবা মায়ের অনবরত চাপ, ওই বাড়ির ছেলেকে কিছুতেই জামাই করা যাবেনা। সন্মন্ধ অনেক আসছে এর মধ্যেই তোমাকে পছন্দ করতে হবে। 
নিম্নমধ্যবিত্ত বাড়ির মেয়ের আবার নিজের মতামত। ধুর্*। 
প্রচন্ড চাপের মধ্যেই সেজেগুজে পাত্রপক্ষের সামনে চা মিষ্টি নিয়ে উপস্থিত হতে হোলো। মা মাসি, মেয়ের নানা গুনগান করছে, হাতের কাজ, রান্না করার ক্ষমতা জাহির করছে, বাবা খুজে বের করার চেষ্টা করছে দেশের বাড়ির দিক থেকে যদি কোন পুর্বপরিচয় বেরোয়। 
বোনটা সারাক্ষন ওকে গার্ড করে রেখেছে যাতে করে ও বেচাল করতে না পারে। ছেলের মনে হোলো হবু জীবনসঙ্গিনীর সাথে একান্তে কথা বলা দরকার। সেটা বুঝতে পেরে মাই প্রস্তাবটা পেরে দিলো ‘উপরে গিয়ে রাহুলকে তোর বানানো বাগানটা দেখিয়ে আন না’ সাথে বোনের দিকেও ইঙ্গিত দিলো যাতে আমাদের একেবারে একা ছেরে না দেয়, তাতে যদি আমি পার্থর কথা বলে দি। 
বাগান শম্পা কোনদিনই করেনি। তবুও মা সেটাই রঙ চরিয়ে বলে দিলো যে ওই করেছে। বহুমুখি প্রতিভা না হলে যেন পাত্রির বাজারে দাম নেই। 
গরমে তেঁতে থাকায় খালি পায়ে ছাদে দাড়ানো যাচ্ছেনা। তাও ছেলেটা স্মার্ট দেখানোর জন্যে একটা সিগেরেট ধরালো। 
শম্পার চোখে জল চলে এলো প্রায়। এই সিগেরেট খাওয়া নিয়ে পার্থর সাথে কত ঝগড়া। শম্পার বকা খেয়ে সিগেরেট ফেলে দিলেও আবার পরের দিন যেই কে সেই। এখন কেমন যেন সেই ঝগড়াগুলোও কত ভালো লাগছে। আর কি কোনদিন দুজন পাশাপাশি বসতে পারবে?
‘আসলে অনেকক্ষন সিগেরেট খাইনি। সেই বাড়ী থেকে এতদুর এলাম সুজোগই পেলাম না।’ 
শম্পা চুপ করে রইলো। 
ছেলেটা আবার বললো ‘খুব সুন্দর বাগান হয়েছে, আপনার রুচি আছে বলতে হয়... আসলে প্রতিটা মানুষেরই কিছু সখ থাকা দরকার, নাহলে অবসর কাটেনা।’
ছেলেটা মনে হয় বোনকে ইশারা করলো, বোন দিদি আমি একটু আসছি বলে নিচে চলে গেলো। 
‘আপনার কিছু বলার নেই?’ রাহুল জিজ্ঞেস করলো। 
শম্পা কোন উত্তর দিলো না। মনের মধ্যে একটা কষ্ট চাঁপ বাধছে, ক্রমশঃ চাপ বেড়ে চলেছে। এই ছেলেটাকে বিয়ে করে চলে গেলে পার্থ কি করবে? সেও কি আরেকজন কে খুজে নেবে না দেবদাস হয়ে যাবে। 

কিছুতেই পার্থর সাথে যোগাযোগ করতে পারছেনা ও। কিন্তু শেষবারের মতন একবার কথা বলা দরকার। ভগবান একবার তুমি সুযোগ করে দাও। 

অগত্যা রাতের অন্ধকারে পার্থদের বাড়িতে গিয়ে হাজির। ওর গলা ঠিক চিনতে পেরে পার্থ বেরিয়ে এলো। চোখে মুখে আতঙ্ক, এতরাতে কেউ দেখতে পেলে কেলেঙ্কারির একশেষ। 

এরপর যা ঘটলো সেটা সিনেমায় ঘটে। কোনরকমে ভোর পাচটা পর্যন্ত্য লুকিয়ে কাটিয়ে একটা ট্যাক্সি ধরে ধর্মতলা, সেখান থেকে দিঘা। তারপর দুজনের বাড়িতে ফোন যে ওরা পালিয়ে চলে এসেছে। 

ফলস্বরুপ, পার্থর মায়ের অকাল মৃত্যু। শম্পার বাবার হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়া। দুজনের বাড়ি ফেরা বন্ধ। 

কলকাতায় ফিরে শিয়ালদহের এক হোটেলে কাজ যোগার করে নিতে পারলো পার্থ। রাজাবাজারের কাছে এক বস্তিতে থাকতো ওরা। শম্পাও কয়েকটা বাচ্চা পরানোর কাজ পেলো। দুজনে মিলে টেনেটুনে চলে যাচ্ছিলো। 

ভাগ্য পরিশ্রমীদের সঙ্গ দেয়। পার্থ বলতো শম্পা ওর জিবনের লক্ষ্মী। শম্পা আসার পরে কোনদিনও ওর মানিব্যাগ খালি হয়নি। সেই হোটেলেরই এক কাস্টোমারের হারিয়ে যাওয়া টাকা ভর্তি ব্যাগ পার্থ ফিরিয়ে দেওয়াতে ভদ্রলোক ওকে ব্যাবসার অফার দেয়। 
বাংলাদেশ, নেপাল থেকে আসা বিভিন্ন জামাকাপরের পাইকারি ব্যাবসার ডিস্ট্রিবিউটর। 
দিনকে রাত এক করে দিয়ে পার্থ ধিরে ধিরে সাফল্য করায়ত্ত করলো। 
রাজাবাজারের ঘিঞ্জি বস্তি ছেরে দক্ষিন কলকাতায় বাড়ি ভাড়া নিলো। 
এতদিন পর্যন্ত্য ওরা সন্তানের কথা ভাবেনি। বস্তির সেই ঘরে দুজন একান্ত হবে সেই সুজোগও কম ছিলো। 
নতুন ভাড়া বাড়িতে দুজনে দুজনার ভালোবাসা উগড়ে দিলো। অল্পকিছুদিনের মধ্যেই নতুন বিজবপন হোলো শম্পার শরিরে। পার্থর খাটাখাটনি আরো বেরে গেলো। এখন থেকেই সঞ্চয় করতে হবে, সন্তানের ভবিষ্যত নিশ্চিত করতে। চালু ব্যাবসার পাশে নতুন করে কম্প্যুটারের যন্ত্রাংশের ব্যাবসা শুরু করলো। তাতেও ধিরে ধিরে সাফল্যের মুখ দেখলো। 
প্রতিদিন রাতেই হিসেবনিকেশ নিয়ে বসতে হোতো ওকে। শম্পা কতবার বলেছে এত চাপ না নিতে, ওকে বুঝিয়ে দিলে ওই করতে পারে তাতে পার্থ বিশ্রাম পায়, কে শোনে কার কথা। 
‘তোমার আরাম করা দরকার, বেশি কাজ কোরোনা। এগুলো তে মানসিক চাপ পরে... সেটা তোমার পক্ষে ভালো না।’
শম্পারও উত্তর তৈরি থাকতো ‘এই যে ধোয়া ছেরে মেঘ করে তার মধ্যে বসে কাজ করছো, এতে তোমার শরির ঠিক থাকবে তো?’
‘তুমি আমাকে খাইয়ে পরিয়ে যেরকম রেখেছো রোগের সাহস নেই আমাকে ছোয়’ পার্থ বলতো। 
সত্যি বলতে শম্পার হাতের রান্না দারুন। আর ওর এটার শখ আছে। ওর সময়ই কাটে বিভিন্ন ধরনের রান্নাবান্নার বই নিয়ে বা টিভিতে এই ধরনের অনুষ্ঠান দেখে। 
একেক দিন একেক ধরনের রান্না করে ও আর পার্থর তৃপ্তি দেখে মন ভরে যায়। 
পার্থ বলেই ফেলে ‘তুমি আমার অভ্যেস খারাপ করে দিয়েছো, এক কাপ চাও বাইরে খেতে ইচ্ছে করেনা এমন সব খাওয়ার দাওয়ার খেয়ে।’
পার্থর মতে মেয়েরা রান্না করলে তবেই মনে হয় আসল সংসার। আর রাতের বেলা যে বাড়িতে রান্না করে ফ্রেশ খাওয়া হয় সে বাড়িতে সাক্ষাত মা লক্ষ্মী বিরাজ করে। রান্নার গন্ধ, ফোরনের গন্ধ, এসব না থাকলে আর সংসার কি হোলো। 
শম্পাও কার্পন্য করতো না, বুঝে শুনে রান্না করতো যাতে পার্থর শরির স্বাস্থ্যঠিক থাকে। অল্পতেলে সুস্বাদু রান্নাতে ওর জুরি ছিলো না। ব্যাবসায়িক সুত্রেই কয়েকজন ওদের বাড়িতে দুপুরের বা রাতের খাবার খেয়েছে। তাদের মধ্যে একজন তো সাষ্টাঙ্গে প্রনামই করে ফেললো ওকে। বয়স্কলোক, কি ভিষন লজ্জায় যে পরেছিলো শম্পা!!
সময় বয়ে গেলো, শম্পার মা হওয়ার দিন এগিয়ে এলো। পেটটা বেশ বড় হয়েছে। ডাক্তার চাইছে নর্মাল ডেলিভারি করতে। পার্থ এখন তাড়াতাড়ি ফিরে আসছে। বাকি কাজগুলো ফোনে ফোনেই সেরে ফেলছে। 
দুজনেরই মনে একটা চাপা উত্তেজনা। বিপদ কিছু হবেনা তো? মা হতে গিয়ে তো কতকিছু হয়। 

এরকমই এক রাতে পার্থ শম্পাকে বললো ‘ভাবছি বাড়ি থেকে ঘুরে আসবো।’ 
শম্পা অবাক হয়ে পার্থর দিকে তাকালো। পার্থ শম্পার সংশয় দূর করতে বললো ‘এই সময় বাড়ির গুরুজনদের আশির্বাদ দরকার। তোমার বাড়িও যাবো আমার বাড়িও। নাহয় দুচ্ছাই ই করবে খানিকটা, ফেলে তো দিতে পারবে না। তাছারা আমরা তো আর ওদের ঘারে গিয়ে উঠছি না’। 

দু বাড়িতেই একই রকম সম্বর্ধনা মিললো। কেউ ওদের মুখ দেখতে চায় না। পার্থকে তো ওর বাবা অভিশাপ দিলো কারন ও ওর মায়ের মৃত্যুর জন্যে দায়ি। বাকি ভাইরা বললো সম্পত্তিতে ভাগ বসাতে এসেছে, ট্যাকের কড়ি ফুরিয়েছে তাই আবার বাপের ঘারে, সঙ্গে শম্পার পেটের দিকে দেখিয়ে বললো সুদ সমেত এসেছে। 
পার্থ শম্পার অপমান সহ্য করতে না পেরে ফুঁসে উঠলো। অপ্রিতিকর অবস্থা এড়াতে শম্পা মাঝখানে এসে না পরলে ভাইয়ে ভাইয়ে রক্তারক্তি করে ছারতো। পাড়ায় লোকজন জড় হয়ে একাকার। 
যাওয়ার সময় পার্থ বলে এলো, ‘দ্যাখ তোদের নাকের ডগায় এসে থাকবো এবার থেকে, তোরা পান্তাভাত খাবি আর আমি রোজ বিরিয়ানির গন্ধ শোকাবো তোদের।’

শম্পার বাড়িতেও এক। সেই ছেলেটির সাথে ওর বোনের বিয়ে হয়েছে। সে এখন বিদেশে থাকে। শম্পা ওদের কাছে মৃত এখন। এমন কি ওর পেটের সন্তানের জন্যেও বিন্দুমাত্র মায়াদয়া নেই ওদের। 

যে যেখানে সে সেখানে রয়ে গেলো। পার্থ এরপর থেকে কেমন গুম মেরে গেলো। শম্পা ওকে অনেক বোঝানোর চেষ্টা করলো, কিন্তু ও ভাইয়েদের করা অপমান ভুলতে পারছেনা। শম্পা যানে এ মানুষ কত গোঁয়ার। 
অবশেষে সমস্ত আশা আশঙ্কা দূর করে শম্পার কোল আলো করে ফুটফুটে এক মেয়ে এলো। সেদিন ই পার্থ হাসপাতালেই শম্পাকে জানালো যে ও মায়ের সাথে সাথে একটা দোতলা বাড়ির ও মালকিন হয়েছে। ওদেরই পুরানো পাড়ার পাশের পাড়াতে। খুব ভালো এলাকা। কেউ কারো সাতে পাচে থাকেনা। ভদ্রলোক বিদেশে চলে যাবেন, ছেলে বোউয়ের কাছে তাই নাম মাত্র দামে বিক্রি করে দিচ্ছেন। বেশি জায়গা নেই তবুও খুব খারাপও নয়। আজকেই সব ফাইনাল হয়েছে। ‘দুই গৃহলক্ষ্মীর প্রভাব’ পার্থর আনন্দোক্তি। 

তেল দেওয়া মেশিনের মতন চলছিলো নতুন বাড়িতে নতুন সংসার। মেয়ে ঘুমিয়ে পরলে রোজ রাতেই পার্থর আবদার, দিদি আর ভাই হলে কত মজা। চল দিদির জন্যে ভাই নিয়ে আসি। শম্পার উলঙ্গ শরিরটা চুমু আর শুরশুরির যৌথ আক্রমনে জর্জরিত হয়ে যেতো। পার্থকে বুকের ওপর নিয়ে ভাবতো এতো সুখ সইবে তো। 
কারো নজর পরেছিলো। সুখ সত্যিই দির্ঘস্থায়ি হোলো না। মেয়ের অল্প বয়েসেই একদিন সেই দুঃসংবাদ এলো। বুকে প্রচন্ড ব্যাথা নিয়ে অচেতন হয়ে পরেছে পার্থ। এরপর শম্পা পার্থকে আর জীবিত দেখতে পায়নি। হাস্পাতালের বেডে জড় পদার্থের মতন পরে ছিলো। মাত্র ৩৫ বছর বয়েসে একটা প্রতিশ্রুতিময় জীবন শেষ হয়ে গেলো। অতিরিক্ত সিগেরেট মৃত্যুকে দ্রুত ডেকে এনেছে। 

দুঃখ, বিরহ, সব নিয়েই জীবন। জীবন থেমে থাকেনা। ব্যাবসার মধ্যে কোনদিন ঢুকতে দেয়নি শম্পাকে। তাই ব্যাবসা করা ওর হোলো না। সঞ্চিত ধন বসে খেলে চলবেনা, সেটা শম্পা জানে। সাথে বারন্ত মেয়ের স্কুলের চাপ। নামি স্কুলেই পরে ও। খরচও সেরকম। কলেজ না জেতে পারলেও যেটুকু বিদ্যা আছে তাতে শম্পা ভালোই বোঝে যে ও বসে থাকলে আর বছর খানেক চলবে। এর মধ্যে পার্থর দাদারা এসে কুম্ভিরাশ্রু ফেলে গেছে, আকারে ইঙ্গিতে শম্পা বুঝতে পারে যে এই বাড়িটা হস্তগত করার ইচ্ছে আছে। পার্থর স্মৃতি ও জীবন দিয়ে রুখবে। তাই কড়া কথা বলে ওদের বিদায় দেয়। খুব সহানুভুতি দেখাচ্ছিলো, এখন ওদের সাথে থাকতে বলছে, মেয়ে বড় হচ্ছে, একা মহিলা কিভাবে সামলাবে... নানান চিন্তা তাদের। লোকটা বেঁচে থাকতে দেখলো না... দেখার দরকার ছিলো না যদিও। এখন এসে ছেলেভোলানো গল্প বলছে। কাজের মেয়ের মারফত এও শুনেছে যে পার্থর বাবার টাকাও আছে এ বাড়িতে এধরনের রটনা করেছে ওর দাদারা। 
এসব নিয়ে শম্পা চিন্তিত নয়। জানে কেউ কিছু করতে পারবেনা। আর এ পাড়ায় সেরকম ব্যাপার নেই। কেউ কারো হাড়ির খবর নিতে আসেনা। যে যার মতন থাকে। 

পার্থর ব্যাবসায়িক ক্ষেত্রের অনেক বন্ধু নানারকম সাজেশান দিলো, জীবনটাকে নতুন করে শুরু করার। কেউ বললো এত ভালো বাজার ছেরে দেবেন কেন, এই ব্যাবসায় চালু করুন আবার, আমরা তো আছি। কিন্তু শম্পা যানে ও পারবেনা। ও খুব বেশি হলে নিচু ক্লাসের কিছু টিউশানি করতে পারে। যাইহোক না কেন বাড়ির বাইরে গিয়ে ও কিছু করতে পারবেনা, এটা ওর কাছে পরিস্কার। 

অনেক চিন্তাভাবনা করে, আলাপ আলোচনা করে শুরু হোলো ওর দ্বিতিয় অধ্যায়। জীবন যুদ্ধের দ্বিতিয় ইনিংস। হোম ডেলিভারি।


প্রথম প্রথম অসুবিধে হলেও মানিয়ে নিয়েছিলাম। করতেই হবে। মেয়ের ভবিষ্যত আছে। খবরের কাগজের সাথে লিফ্লেট দেওয়া, দোকানে বাজারে পোষ্টার দেওয়া, এসব ব্যাপারে পার্থর বন্ধুরা অনেক সাহাজ্য করেছে, এবং নিঃস্বার্থ। ভালো বন্ধু পাওয়াও ভাগ্যের ব্যাপার। 

ঠিকে কাজের লোকটাকে সবজি মাছ কাটা, বাটনা বাটার জন্যে মাইনে বাড়িয়ে দিলাম। একটু বেশি থেকে ও কাজগুলো করে দিয়ে যেতো। সমস্যা হচ্ছিলো, বাড়ি বাড়ি পৌছে দেওয়া। তাও নিজেই মাসোহারা দিয়ে একটা রিকশা ঠিক করে নিয়েছিলাম। 
খুব বেশি সময় লাগলো না পসার হতে। আমি তো আর ডালের বদলে জল দিতে পারতাম না বা ঝোল বাড়াতে জল মেশাতাম না। একেকদিন একেক মেনু। এখানেও পার্থর রুচি আমাকে সাহাজ্য করলো বৈচিত্র আনতে। 
বছর খানেক ঘুরতে না ঘুরতেই ব্যাবসায় সুনামের সাথে বাড়তে থাকলো। 
ঠীকে মেয়েটা এখন আমার কাছেই থাকে মাসে একবার বাড়ি যায়। খুব দুঃখ করে। নিজের পরিবার বলতে স্বামি সন্তান। ১৪ বছর বয়েসে বিয়ে, দুই ছেলে আর বাপ তিন জনেই মাতাল। স্ত্রীকে মারতে, মাকে খিস্তি খেউর করতে কেউ পিছপা হয়না। এখানে থাকার পর থেকে বুঝতে পারলাম ও কতটা মানসিক শান্তিতে আছে। কত আর বয়েস হবে ৩২ থেকে ৩৫ এর মধ্যে। দুঃখ করে বলে ‘তোমার নেই, আমার থেকেও কেউ নেই’
মাঝে মাঝে দু একটা ঘরোয়া অনুষ্ঠানেও সাপ্লাই করছি। সারাদিন ব্যাস্ততার মধ্যে কোথা দিয়ে দিন কেটে যায় টেরই পায়না। মিমি মানে আমার মেয়ে যে বড় হয়ে উঠেছে সেটাও মাঝে মাঝে ভুলে যাই। 
নাঃ ওকে একটু সময় দেওয়ার দরকার। প্রাইভেট টিউটর আছে, পড়াশুনায় ভালোই। তাহলেও ও কেমন যেন মিইয়ে থাকে। 
এবার থেকে আলটপকা অর্ডারগুলো নেওয়া বন্ধ করতে হবে। সবাই সবারটা বোঝে। আমিই পারিনা কাউকে মুখের ওপর না করতে। 
মেসের ছেলেগুলো রোজই সন্ধ্যেবেলা এক অর্ডার দেয় আর রাত হলেই সেগুলো বেশিরভাগই ভাজা, কষা এসবে পরিনত হয়। এমন ভাবে আবদার করে যে না করতে পারিনা। ওদের জন্যে ডেলিভারি দিতে দেরি হয়ে যায়। অনেক রাতও হয়ে যায়। 
জীবনে কোনদিন হিসেব করিনি। এখন সকাল বিকেল রোজ হিসেব নিয়ে বসতে হয়। একটা কাউকে পেলে ভালো হোত, যে এগুলো ঠিক করে দেখভাল করতে পারতো। ভগবানের আশির্বাদে আজ আমার হোম ডেলিভারির ব্যাবসার ১০০ জনের ওপর খদ্দের। তারওপর ছোটখাটো অনুষ্ঠাণ তো লেগেই আছে। একসাথে ৬০ জনের রান্নাও সাপ্লাই করেছি। আর প্রতিদিনই ১০-১৫টা প্লেট এক্সট্রা দিতে হয়। কার বাড়িতে লোক আসে, কার বন্ধু আসে, এসব তো লেগেই আছে।
Like Reply
Do not mention / post any under age /rape content. If found Please use REPORT button.


Messages In This Thread
হোম ডেলিভারি by avi5774 - by ronylol - 10-06-2019, 07:15 PM



Users browsing this thread: 1 Guest(s)