13-08-2023, 10:22 PM
দ্বিতীয় খণ্ড
৩২তম পর্ব
"ওই ছেলেটাকে তুমি মাথায় তুলেছিলে বাবা, এখন দেখলে ওই আমাদের বিরুদ্ধে পুলিশে মিথ্যা কেস করছে, এইসব ছেলেদের আমি হাড়ে হাড়ে চিনি এরা শুধু লোকের ভালোবাসার ফায়দা তুলতে জানে"
বাড়ি ঢুকেই আবার শুরু করলো অরুণাভ লালবাজার থেকে বেরিয়ে অরুণাভ, মৌমিতা আর শ্রীতমাদেবীকে আগে গাড়িতে পাঠিয়ে দিয়ে পরে অভিরূপবাবু আর স্বর্ণেন্দু বাবু পরে ট্যাক্স ধরে ফেরেন আর তারা ফিরতেই অরুণাভ শুরু করে, অভিরূপবাবু বেশ কিছুক্ষণ চুপ করে শুনছিলেন ওর কথা কিন্তু একসময় আর থাকতে পারলেন না "চোপ" গর্জন করে উঠলেন তিনি।
হটাৎ বাবার গর্জন শুনে থতমত খেয়ে চুপ করে গেল অরুণাভ। অভিরূপবাবুর ফর্সা মুখ টকটকে লাল হয়ে গেছে রাগে ওর সেই রূপ দেখে অরুণাভকেও কিছুটা ভয়ার্ত দেখালো বাবার এই রূপ সে এর আগে কোনোদিন দেখেনি, শুধু অরুণাভ নয় মৌমিতা এবং শ্রীতমাদেবীও হতবাক হয়ে গেছেন, অভিরূপবাবু বলতে থাকেন,
"কে মিথ্যা কেস করেছে আর কে সত্যি সত্যিই ক্রাইম করেছে সেটা আমি ভালো মতোই বুঝতে পারছি"
"বাবা.. তুমি এখনও ওর সাথ দিচ্ছো নিজের ছেলের না দিয়ে" অনেক কষ্টে ভয়ে ভয়ে কথাটা শেষ করে অরুণাভ, অভিরূপবাবু আবার গর্জে ওঠেন
"ওর সাথ দিলে তুমি এখন জেলে থাকতে, তোমার ভাগ্য ভালো তোমার মায়ের আবদারে না চাইতেও তোমাকে ছাড়িয়ে আনতে বাধ্য হয়েছি আমরা নাহলে তুমি যা করেছো তাতে তোমাকে জেলে থাকতে দেওয়াই উচিত ছিল"
"বাবা.. তুমি" অরুণাভ আরও কিছু বলতে চায় কিন্তু অভিরূপবাবুর দৃষ্টির সামনে বলতে সাহস পায় না, কিন্তু অভিরূপবাবু বলেন,
"একটা কথা কান খুলে শুনে রাখো এটাই শেষবার এরপর যদি আবার এরকম কিছু করেছো তাহলে আমি বা তোমার মামা কেউই তোমাকে ছাড়াতে যাবো না আর তোমার মাকেও যেতে দেবো না"।
কথাটা বলে অভিরূপবাবু হনহন করে নিজের রুমে চলে গেলেন পিছনে তাড়াতাড়ি স্বর্ণেন্দু বাবু এবং শ্রীতমাদেবীও গেলেন আর অরুণাভ ও মৌমিতা ড্রয়িংরুমে থম মেরে বসে রইলো।
নিজের রুমে গিয়েই অভিরূপবাবু দেওয়াল থেকে ছোটো ছেলে অনিকেতের ছবিটা খুলে আনেন কিন্তু পিছনে পিছনে শ্রীতমাদেবীও ঘরে ঢোকেন, ঢুকেই তিনি স্বামীকে ছেলের ছবি খুলে ফেলতে দেখে তিনি বাঁধা দিতে চান "এটা কি করছো, অনির ছবি খুলছো কেন?", কিন্তু অভিরূপবাবু কোনো উত্তর না দিয়ে ছবিটা খুলে সেটা একটা পেপার দিয়ে মুড়ে দড়ি দিয়ে বেঁধে ফেলেন।
"কি হলো অনির ছবি খুলছো কেন?"
"কি হবে ওর ছবি রেখে?" এতক্ষণে মুখ খোলেন অভিরূপবাবু,
"ওর ছবি রেখে কি হবে মানে? তোমার হয়েছে টা কি?"
"তোমার কি হয়েছে? আজ তুমি যেটা করেছো সেটা কি ঠিক করেছো?"
শ্রীতমাদেবীর মুখ দেখে বুঝতে অসুবিধা হলো না যে তিনিও বুঝতে পেরেছেন যে তিনি ঠিক করেননি তবুও আস্তে আস্তে বললেন "আমি মা আমি কিভাবে ছেলেকে জেলে যেতে দিতাম?"
"আর ওই ছেলে ওর সাথে যা হয়েছে সেটা? অরুণাভ ওকে আর ওর বৌ কে মারার জন্য লোক পাঠিয়েছিল, তুমি বুঝতে পারছো? এটা কত বড়ো ক্রাইম? পিয়ালীর কিছু হলে শুধু ওর হতো না ওর পেটের বাচ্চাটাও মারা যেত"
"অরুণাভ হয়তো কাউকে পাঠায়নি" শ্রীতমাদেবীর গলায় এখনও ছেলের প্রতি বিশ্বাস।
"তার মানে অনি মিথ্যা কথা বলছে তাইতো?"
শ্রীতমাদেবী চুপ করে থাকেন অভিরূপবাবু কিন্তু চুপ করে থাকেন না,
"মিথ্যা অনি বলছে না শ্রীতমা মিথ্যা অরুণাভ বলছে"
"জামাইবাবু ছেড়ে দাও, একটু শান্ত হও"
স্বর্ণেন্দু বাবু অভিরূপবাবুকে শান্ত করতে চেষ্টা করেন কিন্তু অভিরূপবাবু শান্ত হবার নন তিনি স্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে বলতে থাকেন,
"আজ তোমার জন্য তোমার অন্যায় জেদের জন্য স্বর্ণেন্দুকেও সাফার করতে হচ্ছে, আজ তোমার জন্য সুপ্রতিম বাবুর সাথে ওর এতদিনের বন্ধুত্ব শেষ হয়ে গেল"
"জামাইবাবু ছাড়ো না, যা হয়ে গেছে সেটা বাদ দাও" স্বর্ণেন্দু বাবু আবার অভিরূপবাবু কে শান্ত করতে চেষ্টা করেন কিন্তু অভিরূপবাবু বলে চলেন,
"না স্বর্ণেন্দু এতদিন সবকিছু ছেড়েই দিতাম, অরুণাভর সব অন্যায়ই ছেড়ে দিতাম সেই ছোটো থেকেই ছেড়ে দিতাম আজ যদি সেটা না করতাম তাহলে হয়তো আমার অনি আমার সঙ্গে থাকতো"
"অনি আমাদের সঙ্গেই থাকবে ওকে একটু বুঝিয়ে বললে ও নিশ্চয়ই বুঝবে" শ্রীতমাদেবী মাঝখানে কথা বলেন।
"আজ আমরা যেটা করেছি সেটার পরেও তোমার মনে হয় ও আমাদের কথা শুনবে? তোমার ভাগ্য ভালো তোমার কথা শুনে ও অরুর বিরুদ্ধে কেসটা তুলে নিয়েছে নাহলে.... আচ্ছা সবসময় ওই কেন স্যাক্রিফাইস করবে? ছোটো থেকে কম অবহেলা তো সহ্য করেনি এখনও?"
শ্রীতমাদেবী আর কিছু বলতে পারেন না কিন্তু অভিরূপবাবু বলে চললেন "এই ছবি আর রাখার কোনো দরকার নেই যে ছেলেকে আমরা কখনো আপন করে নিতে পারিনি তার ছবি রেখে লোক দেখানোর কোনো মানে হয় না"
"এ তুমি কি বলছো?"
"ঠিকই বলছি, আজ সুপ্রতিমবাবু অনির সামনে কি বললেন জানো? বললেন ওনার ধারণা এটাই সত্যি যে অনি আমাদের ছেলে নয় এবং উনি অনিকে এটাই বলবেন যে ও যেন আর ফেরত না আসে"
"উনি কে অনিকে এসব বলার? ওনার কি অধিকার আছে?"
"উনি শুধু স্বর্ণেন্দুর বন্ধুই নন, একইসঙ্গে উনি অনির গুরু। আমরা যখন দিনের পর দিন অরুকে কাছে রেখে অনিকে দূরে সরিয়ে রাখতাম তখন উনিই অনিকে আগলে রাখতেন, অনির যে প্রতিভা আমরা কোনোদিন দেখতে চাইনি সেটা উনি দেখেছেন উনি অনিকে আগলে রাখতেন তাই অনিকে কিছু বলার অধিকার ওনার ছিল এখনও আছে আর ভবিষ্যতেও থাকবে"
"জামাইবাবু" স্বর্ণেন্দু বাবু মাঝখানে কথা বলেন "একটা কথা কিন্তু দিদি ঠিক বলেছে আমাদের একবার অনির সাথে কথা বলা দরকার"
"আর কি বলবে তুমি স্বর্ণেন্দু? যে ওর সন্তানসম্ভবা স্ত্রীকে মারতে চেয়েছিল আমরা তাকে বাঁচানোর পরে ওর কাছে এসেছি? স্বর্ণেন্দু পিয়ালী আমাদের বাড়ির বউ ওর গর্ভে যে আছে সে এই পরিবারের সন্তান আর আমরা... কি বলবো ওই মেয়েটার সামনে গিয়ে? কি ভাবে দাঁড়াবো অনির সামনে তখন ওর চোখের দিকে তুমি তাকাওনি আমি তাকিয়েছিলাম ও যেন আমাকে বলছে বাবা আজও তুমি আমার পাশে দাঁড়ালে না আজও তুমি অন্যায়ের পাশে দাঁড়ালে, আর আমার কাছে ওকে দেওয়ার মতো কোনো উত্তর ছিল না শুনলে তো ও কি বললো? ওর মনেও দৃঢ় বিশ্বাস জন্মে গেছে যে ও আমাদের ছেলে না"
"অনি এই কথা বলেছে তোমাকে?" শ্রীতমাদেবীর গলায় বিস্ময়।
"জিজ্ঞেস করো স্বর্ণকে কি বলেছে?"
"কি বলেছে রে স্বর্ণ?"
দিদির কথায় স্বর্ণেন্দু বাবু আদিত্যর বলা কথাগুলো সবটা দিদিকে বলেন, সবটা শুনে শ্রীতমাদেবী চুপ করলেও অভিরূপবাবু আবার বলতে শুরু করেন, "এবার বুঝতে পেরেছো ওর মনের কোন জায়গাটায় আমরা আঘাত করেছি, এর পরেও তুমি বলছো ওকে বোঝালে ও আমাদের সঙ্গে থাকতে আসবে? না শ্রীতমা ও আসবে না আসার হলে অনেক আগেই আসতো"
"সে তো এসেছিল, তুমিই তাকে চিনতে পারোনি তাই সে ফিরে গেছে" শ্রীতমাদেবী এবার প্রায় দশবছর আগের কথা মনে করিয়ে স্বামীকে কথাটা বলেন।
"সেইজন্যই আমি ওর কাছে যেতে চেষ্টা করছিলাম ওর মনে জমে থাকা অভিমানের পাহাড় সরিয়ে যেতে চাইছিলাম কিন্তু আজ যা হলো তারপর সেই রাস্তাও বন্ধ হয়ে গেল আজকের পরে ওর সাথে দেখা হলে ও হয়তো আগের মতোই স্বাভাবিকভাবে কথা বলবে কিন্তু সেটা আদিত্য হিসেবে, অনি হিসেবে ওকে ফিরে আর পাবো না"
"একথা বোলো না আমি আমার দুই ছেলেকেই একসাথে চাই"
"সেটা আর সম্ভব নয়, দশবছর আগে অরুণাভ যদি সত্যিই অনিকে মেরে ফেলার চেষ্টা করে থাকে তাহলে সেটা হয়তো ও ক্ষমা করলেও করতে পারে কিন্তু আজ যেটা অরু করেছে সেটা কোনো স্বামী কোনো বাবা ক্ষমা করবে না, অরুণাভ অনির স্ত্রীকে এবং ওর হবু সন্তানকে মারতে চেয়েছে শ্রীতমা, অনি আজ তোমার কথা শুনে ছেড়ে দিলেও আবার যদি অরু একই কাজ করে তাহলে না ও ছেড়ে কথা বলবে আর না সুপ্রতিম বাবু ছেড়ে দেবেন, কথাটা মাথায় রেখো"
"কিন্তু জামাইবাবু অরু হটাৎ অনির পিছনে পরলো কেন?"
"সেদিন গ্ৰামে তো তুমিও ছিলে"
"শুধু সেইজন্য? না জামাইবাবু আমার মনে হচ্ছে এর পিছনে অন্য কারণ আছে"
"কি কারণ?"
"সেটা এখনও ঠিক জানিনা তবে শুধুমাত্র ওই ঝামেলার জন্য ওদের মারতে লোক পাঠাবে এটা ঠিক বিশ্বাস হচ্ছে না, এর পিছনে নিশ্চয়ই অন্য কারণ আছে"।
I'm the King of Dark
&
I rule over all Devils