06-08-2023, 10:37 PM
দ্বিতীয় খণ্ড
৩০তম পর্ব
পুলিশ ডাটাবেস থেকে দুজনের পরিচয় বের করতে বেশী সময় লাগে না সুপ্রতিমবাবুর দুজনেই পেশাদার ক্রিমিনাল যদিও আগে একসময় বক্সিং চ্যাম্পিয়ন ছিল পরে কোনো কারনে ক্রাইমের পথে চলে যায় একাধিক ক্রাইম আছে ওদের নামে বেশ কয়েকবার পুলিশের হাতে ধরাও পরে কিন্তু তেমন কোনো পোক্ত প্রমাণ না পাওয়ায় ছাড়া পেয়ে যায় এমনকি অনেক খুনের ক্ষেত্রেও ওদের নাম জড়িয়ে যায় কিন্তু সেই একই সমস্যা কোনো প্রমাণ নেই কোথাও সাক্ষী আদালতে পাল্টি খায় তো সাক্ষী খুঁজেই পাওয়া যায় না।
সুপ্রতিমবাবু চিন্তায় পরে যান আদিত্য ওদের খবর জানলো কিভাবে? ওরা দুজন কি তবে আদিত্যর পিছনে পরেছে? কিন্তু কেন? ছেলেটার বাড়িতে গর্ভবতী স্ত্রী আছে, সুপ্রতিমবাবু আর স্থির হয়ে বসে থাকতে পারেন না তক্ষুনি কেবিন থেকে বেরিয়ে নিজের গাড়ি করে রওনা দেন ড্রাইভারকে অবশ্য সঙ্গে নেন না ডিপার্টমেন্টে কাউকে বিশ্বাস করা ক্রমশ কঠিন হয়ে উঠছে তার পক্ষে।
"করেছো টা কি? ওদের পেলে কোথায়? আর এই অবস্থা করলে কিভাবে?"
দুজনের অবস্থা দেখে অবাক বিস্ময়ে হতবাক হয়ে প্রশ্ন করেন সুপ্রতিম বাবু। গ্ৰামে পৌঁছানোর আগেই আদিত্যকে ফোন করে তার আসার কথা জানিয়ে দিয়েছিলেন তিনি সেইমতো আদিত্য জায়গামতো দেখা করে সুপ্রতিম বাবুকে দেখা করে গ্ৰামের মন্দিরের পিছনের আমবাগানে নিয়ে যায় সেখানে গিয়ে তিনি দেখেন দুজনকে একটা গাছের সঙ্গে বেঁধে রাখা হয়েছে আর তাদের ঘিরে কয়েকজন লাঠি হাতে দাঁড়িয়ে আছে আর দাঁড়িয়ে আছে আদিত্যর সবথেকে বিশ্বস্ত বন্ধু বাদশা, দুজনের অবস্থাই একেবারে কাহিল চুপচাপ বাঁধা অবস্থায় মাটিতে বসে আছে, বোঝাই যাচ্ছে রীতিমতো উত্তমাধ্যম ঠ্যাঙানো হয়েছে ওদের।
"করেছো টা কি? ওদের পেলে কোথায়? আর এই অবস্থা করলে কিভাবে?"
সুপ্রতিমবাবুর প্রশ্নের উত্তরে আদিত্য একটু হাসে তারপর সবকথা খুলে বলে রিসর্টে অন্য দুজনকে দেখা তারপর ওকে ফলো করা থেকে আজ ওর পিছু নিয়ে মারতে চাওয়া সবকিছু,
"তুমি একা ওদের এই অবস্থা করেছো?" সুপ্রতিমবাবু জিজ্ঞেস করেন
"প্রথমে একাই লড়ছিলাম কিন্তু তারপর এই এরা দেখতে পেয়ে চলে আসে, ওদের সৌভাগ্য বাদশা সেইসময় আমার সঙ্গে ছিল না নাহলে ওদের হয়তো হাসপাতালে নিয়ে যেতে হতো আমাকে মারার চেষ্টা করার জন্য বাদশা ওদের ছাড়তো বলে মনে হয় না, বাদশাকে পরে এনেছি" আদিত্য ওর সঙ্গের লাঠি হাতে দাঁড়িয়ে থাকা লোকগুলোকে দেখিয়ে কথাটা বলে
"কিন্তু কেন? মানে ওরা তোমাকে মারতে চাইছিল কেন"
"ওদের কাজটা করতে পাঠানো হয়েছিল"
"কে?"
"সেটা বলছি তবে আগে বলুন ওদের পরিচয় জেনেছেন?"
"ওরা দুজন দুটি রত্ন"
"তাই নাকি?"
"হুমম, তুমি সত্যিই ওদের চিনতে পারোনি?"
"না, কোনো সেলিব্রেটি নাকি ওরা?"
"একপ্রকার বলতে পারো একসময় কলকাতার বক্সিং চ্যাম্পিয়ন ছিল তারপর অবশ্য ক্রাইমের সাথে জড়িয়ে পরে"
"বক্সিং চ্যাম্পিয়ন? কবে?"
"২০১৭ তে"
"তার মানে প্রায় ছ বছর আগে, ওই সময়টা আমি কলকাতার বাইরে ছিলাম কলকাতার খবর খুব একটা রাখতাম না"
"কোথায় ছিলে?"
"আমি ন..." কিছু বলতে গিয়েও থেমে যায় আদিত্য কথা ঘুরিয়ে বলে "আমার কথা ছাড়ুন আপনি আপনার দুই বন্ধুর সাথে ওদের কোনো লিংকআপ খুঁজে পেয়েছেন?"
"সেরকম কিছু নয় আসলে এরা প্রফেশনাল, টাকার জন্য ক্রাইম করে কিন্তু কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি তাই"
"আমি কিন্তু পেয়েছি"
"কি?" চমকে ওঠেন সুপ্রতিম বাবু, "কি প্রমাণ?"
আদিত্য দুটো পিস্তল সযত্নে সুপ্রতিমবাবুর হাতে দিয়ে বলে, "এতে ওদের ফিঙ্গারপ্রিন্ট পেতে পারেন এটা দিয়েই আমাকে মারতে চেয়েছিল আর এটা ছাড়া ওদের স্বীকারোক্তি আছে"
"স্বীকারোক্তি?"
আদিত্য নিজের মোবাইলে একটা ভিডিও চালু করে সুপ্রতিমবাবুর হাতে দেয় ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে গাছে বাঁধা অবস্থায় এই দুজন স্বীকারোক্তি দিচ্ছে কিন্তু ওরা কিছু একটা দেখে ভয় পাচ্ছে, ভিডিওটা দেখে মোবাইলটা ফেরত দিয়ে সুপ্রতিম বাবু জিজ্ঞেস করলেন, "ওদের দেখে মনে হচ্ছে ওরা কিছু একটা দেখে ভয় পাচ্ছে সেটা কি তোমার এই.."
"হ্যাঁ স্যার বাদশা, খুব কম লোকই আছেন যারা বাদশার সামনে নিজের নার্ভ ঠিক রাখতে পারবেন সে যতই এক্স বক্সিং চ্যাম্পিয়ন হোক না কেন?"
সুপ্রতিম বাবু হো হো করে হেসে বললেন "কিন্তু আদিত্য আদালতে এই স্বীকারোক্তি গ্ৰহনযোগ্য নাও হতে পারে, আর শুধুমাত্র এই ভিডিওর জেরে ওই ক্রিমিনালটিকে ধরা একটু কঠিন"
আদিত্য এবার দুটো মোবাইল সুপ্রতিমবাবুর হাতে দিয়ে বললো "সেটা জানি স্যার, তবে এই মোবাইল দুটোয় দুটো নম্বর থেকে অনেকবার কল এসেছে আর এরাও করেছে চেক করে দেখুন কারো না কারো তো লিংক পাবেনই"
"আর এদের কি করবে?"
"সেটা আপনি ঠিক করুন, তবে আমার কথা যদি শোনেন তাহলে বলি ওদের অ্যারেস্ট করবেন না আইমিন অফিশিয়ালি তবে আনঅফিশিয়ালি রাখুন পুলিশ ডিপার্টমেন্টের বাইরে আপনার নিশ্চয়ই বিশ্বস্ত লোক আছে"
"আমি বুঝতে পারছি তুমি কি বলতে চাইছো, কিন্তু.."
"ওরা এখানে রিসর্টে এসেছিল এবং যদি খুব ভুল না করে থাকি সেটাও ভুয়ো পরিচয়ে এবং অলরেডি চেকআউট করে গেছে তাই তারপর ওরা কোথায় গেছে কি করেছে হু কেয়ারস্?"
সুপ্রতিম বাবুর মুখে আবার হাসি দেখা গেল তিনি মোবাইল বার করে কাউকে ফোন করলেন।
এরপর আবার বেশ কিছুদিন খুব ভালো কাটলো কোথাও কোনো গণ্ডগোল নেই মাঝে একবার সুপ্রতিমবাবু ফোন করে জানালেন নাম্বারদুটোর ডিটেইলস বার করেছেন ওই দুজনের একজন মনোজিতবাবু আর অপরজন মনোজ মনোজিতবাবুর ছেলে, সুপ্রতিমবাবু আরও জানালেন বক্সার দুজনের থেকে আরো ইনফরমেশন বার করার চেষ্টা চালাচ্ছেন তিনি এবং মনোজিতবাবু এবং মনোজের উপরে নজর রাখার জন্য আরো কয়েকজন লোক লাগিয়েছেন কিছু না কিছু সূত্র তো পাবেনই।
আদিত্যর মাথায় চিন্তা বেড়ে যায় মনোজিতবাবু হটাৎ ওর পিছনে পরলেন কেন? তবে কি সেই পুরনো রাগ? আদিত্য পিয়ালীকে এই বিষয়ে কিছু জানায় না বেকার বেকার ওকে চিন্তায় ফেলে লাভ নেই তবে আদিত্য এখন আরও বেশি সময় পিয়ালীর সঙ্গে কাটাতে থাকে।
আদিত্যকে মারার জন্য নিজের পাঠানো দুজন লোকের থেকে কোনো খবর না পেয়ে অধৈর্য্য হয়ে পরেন মনোজিত বাবু, তার বুঝতে বাকি রাখে না দুজন ব্যার্থ হয়েছে কিন্তু তিনি কিছুতেই ভেবে পান না কিভাবে ব্যার্থ হলো, আজ পর্যন্ত ওই দুজন কখনও ব্যার্থ হয়নি তার উপরে এখন ওদের ফোনও বন্ধ একাধিকবার ফোন করেও লাইন পান না তিনি।
"তোমাকে বলেছিলাম ওই মেয়েটাকে শেষ করতে আর তুমি অনিকেতকে মারার জন্য লোক পাঠিয়েছো, কেন?"
হন্তদন্ত হয়ে ঘরে ঢুকে নিজের বাবাকে প্রশ্ন করে মৌমিতা, মনোজিতবাবু নিজের মেয়েকে এইসময়ে এখানে দেখে একটু অবাক হন আরও অবাক হন মৌমিতার কথা শুনে কারণ তিনি যে আদিত্য বা তার মেয়ের কথায় অনিকেতকে মারার জন্য লোক পাঠিয়েছেন এটা মৌমিতার জানার কথা নয়, অবশ্য মৌমিতার পিছনে মনোজকে দেখেই তিনি বুঝতে পেরেছেন যে ভাইবোনের মধ্যে এই নিয়ে কথা হয়েছে।
"কি হলো বলো তোমাকে বারবার বলা সত্ত্বেও তুমি অনিকেতকে মারতে পাঠিয়েছিলে কেন?"
"হটাৎ ওর উপরে তোর এত দরদ কেন? তুই ভুলে যাচ্ছিস তুই নিজে বলেছিস যে ও আমাদের সম্পর্কে অনেক কিছু জানে আর ও যদি সত্যিই অনিকেত হয় তাহলে তো ওকে শেষ করাটা খুবই জরুরী"
"অনিকেতকে আমি সামলে নেবো তুমি মেয়েটাকে শেষ করতে পারবে কি না বলো? তোমার ওই লোকদুটো কোথায়?"
"ওদের ফোন সুইচড অফ কোনো খবর নেই"
"ওরা অনিকেতকে মারতে পারেনি"
"তুই কিভাবে জানলি?"
"অরুণাভর সঙ্গে ওর বাবার কথা হয়েছে, ওনারা তো ওখানে আছেন আর ওনাদের সঙ্গে ওর যা ভাব তাতে ওর কিছু হলে এত সহজভাবে কথা বলতেন না"
"তাহলে ওরা গেল কোথায়? পালানোর বান্দা তো ওরা নয়"
"দেখো অনিকেত হয়তো মেরে হাত পা ভেঙে কোথাও ফেলে দিয়েছে"
"হোয়াট?"
"হ্যাঁ, তোমাকে বলা হয়নি অনিকেত দারুণ ফাইটার, অভিরূপ ব্যানার্জীকে ওই বাঁচিয়েছিল"
"কি?" মনোজিতবাবু হতবাক হয়ে যান "তুই কিভাবে জানলি?"
"আমার শাশুড়ি অরুণাভকে মুখ ফসকে বলে ফেলেছিল আর নিজের চোখেই তো দেখেছিলে যেদিন মনোজ আর সুশান্তকে ঠ্যাঙাতে এসেছিল সেদিন আমাদের সিকিউরিটি দের একাই কিরকম ঠেঙিয়েছিল তো তোমাদের ওই দুজনকে সামলানো তো কোনো ব্যাপারই না, ওখানে ওর সাথে তো পুরো গ্ৰামের লোক আছে"
"চিন্তা নেই ওরা মুখ খুলবে না তাই ওদিক থেকে নিশ্চিন্ত"
"ট্রাস্ট মি অনিকেত ওদের মুখ খুলিয়ে নেবে"
"আমি বুঝতে পারছি না তুই হটাৎ ওই ছেলেটার এত প্রশংসা করছিস কেন? কি হয়েছে তোর?"
"ছাড়ো তোমার জেনে কাজ নেই, তোমাকে আর কিছু করতেও হবে না যা করার আমিই করবো ওই মেয়েটাকে আমিই শেষ করবো" কথাটা বলে মৌমিতা দ্রুত ঘর ছেড়ে বেরিয়ে যায়।
আদিত্য পিয়ালীর সামনে যতই স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করুক পিয়ালী ঠিকই বুঝতে পারে আদিত্যর মাথায় চিন্তা চলছে, তবে আদিত্য সবমময় তাকে হাসিখুশি রাখার চেষ্টা করছে নিয়মিত চেকআপ করাচ্ছে একটা ডেটও মিস করছে না অবশ্য গ্ৰামের স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চেকআপের ভালো ব্যবস্থা না থাকায় টাউনের হাসপাতালে যেতে হয় আর টেস্টগুলোর জন্য অনেক প্রাইভেট ক্লিনিক আছে।
এখন অবশ্য চেকআপে গেলে বাইক নিয়ে যায় না,ক্যাব বুক করে নেয় তবে আজকের চেকআপে ক্যাব বুক করেনি গ্ৰামের একজনের গাড়ি আছে সে ওলা এবং উবের দুটোতেই রেজিস্ট্রেশন করে চালায় তবে সে কিছুদিনের ছুটি নিয়ে ঘুরতে যাওয়ায় ওর গাড়িটা চেয়ে রেখেছিল ওটাতেই পিয়ালীকে নিয়ে টাউনের ক্লিনিকে এসেছে কিছু টেস্ট করাতে। পার্কিং এরিয়ায় গাড়ি পার্ক করে বাদশাকে গাড়ি পাহারার দায়িত্বে রেখে ওরা বহুতল বিল্ডিংয়ের উপরে উঠে গেল নির্দিষ্ট ফ্লোরের উদ্দেশ্যে।
I'm the King of Dark
&
I rule over all Devils