Thread Rating:
  • 100 Vote(s) - 2.84 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
WRITER'S SPECIAL "ধূসর পৃথিবী"
[Image: Picsart-22-12-06-20-20-08-119.jpg]




                দ্বিতীয় খণ্ড
                ২৪তম পর্ব


বেশকিছুদিন আনন্দ নিকেতনে শান্ত জীবন কাটানোর পরে শহরে এসে অভিরূপবাবুর আর মন লাগে না ইতিমধ্যে তিনি অনেকটাই সুস্থ হয়ে উঠেছেন কিন্তু এখন তার খালি মনে হয় এই শহর ছেড়ে গ্ৰামে ফিরে যান সেখানে প্রকৃতির কোলে নিশ্চিন্তে বসে, ঘুরে বা মাছ ধরে সময় কাটান। 

এবারে যেকদিন ছিলেন তার মধ্যে দুদিন ছিপ নিয়ে সত্যিই বসেছিলেন মাছ ধরতে একদিন একটা মাঝারি সাইজের রুইমাছ ধরে ছিলেন যদিও নিয়ম অনুযায়ী আবার ছেড়ে দিতে হয়েছে এতে অবশ্য তার কোনো আক্ষেপ নেই কারণ তিনি তো নিছক মনোরঞ্জনের জন্যই ধরেছিলেন, আরেকদিন অবশ্য শ্রীতমাদেবী বেশিক্ষন বসতে দেননি।

শহরে ব্যানার্জী ভিলায় এসে তার এই কদিনের কথাই খালি মনে পরে আর মনে পরে ওখানে থাকা নিজের ছেলে আর বৌমার কথা ছেলের সঙ্গে তার এবং তার পরিবারের মান অভিমানের জন্য মেয়েটাকে একা থাকতে হচ্ছে তাও সেইসময় যখন তাদের মেয়েটির পাশে থাকার সবথেকে বেশি দরকার। 

তিনি ভেবেছিলেন যে অনি তার সঙ্গে সব সম্পর্ক ছিন্ন করবে এমনকি নিজের সন্তানের মুখ‌ও দেখতে দেবে না তাকে কিন্তু এইকদিন তার সঙ্গে কাটিয়ে তিনি এটা বুঝেছেন যে সেটা তার ছেলে করবে না, রাগ অভিমানের জন্য হয়তো নিজের পরিচয় দেবে না কিন্তু আর কোনো কিছু করবে না,তাই তিনি ঠিক করেই রেখেছেন তার বৌমার ডেলিভারীর সময় নিজে উপস্থিত থাকবেন এবং নাতি বা নাতনী যাই হোক কি দিয়ে মুখ দেখবেন সেটাও মনে মনে ঠিক করে রেখেছেন।


এতদিন কলকাতা শহর থেকে দূরে থাকায় শহরের গতিময় জীবনের ছোঁয়া পাননি অভিরূপবাবু কিন্তু এখন ফিরে এসে মনে হচ্ছে শহরের জীবনের গতি বেশ কিছুটা বেড়ে গেছে পুরো শহর জুড়ে হ‌ইচ‌ই পরে গেছে তার কারণ শহরের উপরে ঘটে চলা দুঃসাহসিক ডাকাতির পাণ্ডারা ধরা পরেছে, অবশ্য ধরা পরেছে বলাটা একটু ভুল হবে কারণ ধরা দুজন পরেছে তাও গুরুতর আহত হয়ে বাকীরা পুলিশের গুলিতে মারা গেছে।

এই ঘটনায় পুরো শহরে আবার হুলস্থুল পরে গেছে যে মিডিয়া কদিন আগে পর্যন্ত উঠতে বসতে পুলিশের মুণ্ডুপাত করছিল তারাই এখন পুলিশের সুখ্যাতি করছে। 

নিজের বাড়িতে বসে টিভিতে খবর দেখছিলেন আর নিজের মনে হাসছিলেন সুপ্রতিমবাবু। মিডিয়ার এই হটাৎ পাল্টি খাওয়ায় হাসছিলেন ঠিকই কিন্তু সাথে তার মাথায় একটা চিন্তাও ঘুরছিল সেটা হলো লোকগুলো কোথায় লুকিয়ে ছিল সে খবর তিনি পেয়ে তাদের ধরার জন্য টীম নিয়ে গিয়েছিলেন ঠিকই কিন্তু কেউ তাদের আগাম সতর্ক করে দিয়েছিল ফলে লোকগুলো সেখান থেকে প্রায় পালিয়ে গিয়েছিল, সুপ্রতিমবাবুর মাথায় এখন এই বিশ্বাসঘাতকটাকে নিয়েই চিন্তা কারণ সেদিনের অপারেশনের খবর তার টীমের বাইরে কারো কাছে ছিল না সুতরাং বিশ্বাসঘাতকটা তার টীমের মধ্যেই আছে।

আগাম খবর পেয়ে লোকগুলো পালাচ্ছিল ঠিকই কিন্তু ভাগ্য ভালো থাকায় ওদের গাড়িটার অনুসরণ করতে পারেন এবং ওদের দুর্ভাগ্য যে গাড়িটায় পালাচ্ছিল সেটার টায়ার গুলি লেগে ফেটে যায় ফলে গাড়ি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উল্টে যায় আর এতেই লোকগুলো জখম হয় কিন্তু তবুও ওরা ওই অবস্থাতেই কোনোমতে গাড়ি থেকে বেরিয়ে এলোপাতাড়ি ফায়ারিং করতে থাকে ফলে সুপ্রতিমবাবু ও তার টিমকে পাল্টা ফায়ারিং করতে হয় তিনজন অন দ্যা স্পট ডেড উপায় ছিল না সুপ্রতিমবাবু এবং তার টীমের যেভাবে ওরা গুলি চালাচ্ছিল তাতে তার টিমের তো বটেই এমনকি পবলিকের‌ও লাগতে পারতো। বাকীদের জখম অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে আসা হলে সেখানে দুজনের মৃত্যু হয় বাকি দুজন এখন‌ও চিকিৎসাধীন।


"আপনাকে আগেই বলেছিলাম ওদের শেষ করে দিন শুনলেন না এবার দেখলেন তো কি হলো?" 

মনোজিৎ বাবুর উপরে রাগে ফেটে পরলেন প্রীতমবাবু, তাদের ঠিক করা লোকগুলো ধরা পরতেই আবার মিটিং বসেছে সেখানেই প্রীতমবাবুর এই গর্জন যেটা শুনে মনোজিৎ বাবু মিনমিনে স্বরে বললেন "কিন্তু পুলিশ ওদের খবর পেলো কিভাবে?"

"সেটা ভাবার আগে এটা ভাবুন যে দুজন এখনও বেঁচে আছে ওরা যদি পুলিশের কাছে মুখ খোলে তখন কি হবে?"

"কিন্তু ওরা তো এখনো আইসিইউ তে আছে"

"ওটা যে সত্যি সেটা কিভাবে বুঝছেন? ওটা পুলিশের চাল‌ও তো হতে পারে আর সুপ্রতিম দাশগুপ্তকে যতটা চিনেছি ও ওদের দুজনকে বাঁচানোর সবরকম চেষ্টা করবে এমনকি যাতে বাইরে থেকে কেউ ওদের ক্ষতি না করতে পারে তার ব্যাবস্থাও করবে"

"তাহলে এখন উপায়?"

"সবসময় উপায় আমি বলবো কেন? আপনিও কিছু ভাবুন"

"আসলে প্ল্যান তো সবসময় আপনার মাথা থেকেই বেরোয়" মনোজিৎ বাবু কথা দিয়ে তৈলমর্দন করতে থাকেন প্রীতমবাবুকে খুশী করার অভিপ্রায়ে "সেই কবে থেকে আমাদের পরিচয় কত কাজ একসাথে করেছি সবসময় প্ল্যান আপনি‌ই করেছেন এমনকি..."

"এমনকি?"

"অনিকেতকে মারার প্ল্যানটাও যে আপনার‌ই করা এটা আর কেউ না জানুক আমি তো জানি, অবশ্য কাজটা নিজে করেননি করিয়েছেন আমার মেয়ে আর অরুণাভকে দিয়ে"

"অনিকেতকে সরানোর দরকার হয়ে পরেছিল"

"সেটা তো জানি ছেলেটা আপনার অনেক গোপন কথা জেনে ফেলেছিল তাই ওকে পৃথিবী থেকেই সরিয়ে দিলেন তবে পরে মৌমিতা আর অরুণাভকে ব্ল্যাকমেইল করছেন কেন বলুনতো অন্তত আমার মেয়েটাকে ছাড় দিন"

"অরুণাভ আর আপনার মেয়ে আমাদের বিরুদ্ধে চলে যাচ্ছিল তাই ওটার দরকার ছিল কিন্তু এখন ওসব কথা ছাড়ুন যেটা দরকার সেটা কি করবেন ভাবুন"

"আপনিই বলুন না"

"আমার কথা শুনলে আজ এই দিনটা দেখতে হতো না"

"আহা পুরনো কথা ছাড়ুন না আর বলেছিলাম তো ওদের তখন মারলে ওদের লোকজন আমাদের ছাড়তো না"

"কিন্তু এখন ওদের শেষ করতেই হবে নাহলে আমরা ফেঁসে যাবো"

"কিন্তু করবেন কিভাবে?"

"ঠিক আছে আমি ভাবছি আগে হাসপাতালের পরিস্থিতিটা দেখতে হবে"

"আর অভিরূপ ব্যানার্জী?"

"অভিরূপ ব্যানার্জীর কি?"

"তিনি তো এখনো বেঁচে আছেন"

"জানি বারবার বেঁচে যাচ্ছে ভাগ্য আছে বলতে হবে মাঝখানে কিছুদিন কোথায় গায়ের হয়ে গেল কেউ বলতেই পারলো না"

"মানে? কাউকে বলে যায়নি?"

"না, বাড়ির কেউ জানতো না"

"কিন্তু এবার তো ফিরে এসেছে"

"হ্যাঁ, এবার আর বাঁচবে না তবে আগে নিজেদের গলা বাঁচাতে হবে লোকদুটো যদি মুখ খোলে তাহলে সুপ্রতিম দাশগুপ্ত আমাদের ছাড়বে না তখন কেউ আমাদের বাঁচাতে পারবে না"

"আপনি‌ই প্ল্যান করুন আমি সাথে আছি"।



রাগে হাতের খবরের কাগজটা ছুঁড়ে ফেললেন সুপ্রতিম দাশগুপ্ত রাগের কারণ আবার মিডিয়ার পাল্টি খেয়ে পুলিশকে গালমন্দ করা না বরং নিজেদের ব্যার্থতায়। অনেক চেষ্টা করেও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন দুই ধৃত ডাকাতদলের সদস্যকে বাঁচানো সম্ভব হয় নি গতকাল রাতে তাদের মৃত্যু হয়েছে আর সেই সঙ্গে এদের পিছনে থাকা অপরাধের মেইন ষড়যন্ত্রী আবার পুলিশের হাত থেকে বেঁচে গেছে এবং এটা নিয়েই মিডিয়া পুলিশ ডিপার্টমেন্টকে  বিঁধেছে, এবং যদি সুপ্রতিমবাবুর অনুমান সত্যি হয় এবং সেই খবর মিডিয়ার কাছে পৌঁছায় তাহলে তারা পুলিশের অবস্থা আরও খারাপ করে দেবে। 

সুপ্রতিমবাবুর অনুমান এই দুজনকে হত্যা করা হয়েছে যাতে তারা পুলিশের কাছে মুখ খুলতে না পারে সেইজন্য দুটো বডির পোস্টমর্টেম করতে পাঠিয়েছেন রিপোর্ট চলে এলে বোঝা যাবে তার অনুমান সঠিক না ভুল। যদি সঠিক হয় তাহলে শুধু মিডিয়া নয় চিন্তার আরও কারণ রয়ে যাবে কারণ সেক্ষেত্রে বলতে হয় শুধু পুলিশ ডিপার্টমেন্টেই নয় হাসপাতালের যে সকল ডাক্তার এবং স্টাফদের ওই দুজনের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল তাদের মধ্যেই কেউ এই কাজটি করেছে অর্থাৎ বিশ্বাসঘাতক সেখানেও রয়েছে, কিন্তু কথা হলো তাদের চিহ্নিত করবেন কিভাবে?।

"কি ব্যাপার কমিশনার এত চিন্তা কিসের?"

হটাৎ এই প্রশ্নে সুপ্রতিমবাবুর ভাবনায় ছেদ পরে তিনি তাকিয়ে দেখেন স্বর্ণেন্দু বাবু প্রশ্নটা করেছেন এবং তার পাশে দাঁড়িয়ে আছেন অভিরূপবাবু। 

দুজনেই এখন এই বাড়ির পরিচিত মুখ তাই কারোরই ভিতরে আসতে বাধা নেই সেই কারনেই যে দারোয়ান এদের আটকায়নি এটা সুপ্রতিমবাবুর বুঝতে বাকী রইলো না অবশ্য তিনিও তো বলে দেননি যে পরিচিত কেউ এলে‌ও তাকে আটকাতে, সুপ্রতিমবাবু হালকা স্বরেই দুজনকে আহ্বান জানালেন,

"আসুন মিস্টার ব্যানার্জী, আসো স্বর্ণেন্দু বসো তারপর বলুন আপনার শরীর এখন কেমন মিস্টার ব্যানার্জী?"

"এখন আগের থেকে অনেক বেটার, আপনি ভালো আছেন? আপনার মেয়ে কেমন আছে?"

"আমাদের পুলিশদের আর ভালো থাকার জো কোথায় বলুন প্রতিদিনই মিডিয়া ছিঁড়ে খাচ্ছে আমাদের"

"মিডিয়ার তো কাজ‌ই ওটা ওতে মাইণ্ড করলে চলে?"

"ওতে নয় মিস্টার ব্যানার্জী নিজের ব্যার্থতায় খারাপ লাগছে"

"কেন আপনি তো ডাকাতগুলোকে ধরেছেন"

"ওরা ডাকাত ছিল না মিস্টার ব্যানার্জী ওদের মেইন উদ্দেশ্য ছিল আপনি আপনাকে মেরে ফেলা, সেটাই ওদের উদ্দেশ্য ছিল আপনার ভাগ্য ভালো সেখানে সেই ছেলেটা ছিল যে ঠিক সময়ে আপনাকে বাঁচায়"

"যাইহোক ওদের তো আপনি ধরেছিলেন"

"কিন্তু তাতে কাজের কাজ কিছু হলো না ওদের পিছনের মেইন মাথা অধরাই থেকে গেল... আমি সত্যিই খুবই লজ্জিত মিস্টার ব্যানার্জী"

"আপনার লজ্জিত হবার কিছু হয়নি"

"ব্যার্থতা আমার সহ্য হয় না আর এখন বারবার ব্যার্থতার মুখোমুখি হতে হচ্ছে"

"যে চেষ্টা করে সেই ব্যার্থ হয় আবার সফল‌ও হয়, আপনি নিশ্চয়ই সফল হবেন তবে শুধু আমাকে মারতে চেয়েছে বলে ধরতে চাইবেন না ও আরও অনেক অপরাধ করেছে সেগুলোর সূত্রে ধরার চেষ্টা করুন"

"এবার বুঝলাম অনির মধ্যে এই গুণটা কোথা থেকে এসেছে" সুপ্রতিমবাবু একটু হেসে বললেন, অভিরূপবাবু একটু অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলেন, "মানে কোন গুণ?"

"এই যে নিজের আগে অন্যের কথা ভাবা, তারপর সবসময় বিকল্প রাস্তার চিন্তা করা। কিন্তু এক্ষেত্রে প্রবলেম হলো অন্য কোনো রাস্তায় ধরলে উপর থেকে অর্ডার চলে আসবে ছেড়ে দেওয়ার জন্য"

"তুমি কবে থেকে উপরের লোকেদের অর্ডার মানতে শুরু করলে সুপ্রতিম?" স্বর্ণেন্দু বাবু প্রশ্ন করেন।

"কি করবো বলো মাঝে মাঝে মানতে হয়"

"সেইজন্যই বললাম অন্য রাস্তা দেখতে"

অভিরূপবাবুর কথায় সুপ্রতিম বাবু একটু অবাক হন অভিরূপবাবু বলতে থাকেন "আমার উপরে হামলা এই কেসে ধরলে বোন এসে হাতে পায়ে ধরবে কান্নাকাটি করবে সেক্ষেত্রে হয়তো আমি ক্ষমা করে দিলেও দিতে পারি কিন্তু যদি অন্য কেসে ধরেন তাহলে তো আমার ক্ষমা করার প্রশ্ন‌ই আসছে না"

"তার মানে আপনি বলছেন যদি অন্য কোনো ক্রাইমের সূত্রে ধরি তাহলে আপনি নিজের ক্ষমতা কাজে লাগিয়ে ছাড়িয়ে নেবেন না?"

"আমি আর বেশিদিন কলকাতা শহরে থাকবো না সুপ্রতিমবাবু"

"থাকবেন না মানে? কোথাও যাচ্ছেন?"

"হ্যাঁ তবে তার আগে একটা সত্যি জানতে চাই"

"কি?"

"আমার অনির সাথে হওয়া দুর্ঘটনায় আমার বড়ো ছেলে অর্থাৎ অরুণাভর হাত আছে কি না?"

"মিস্টার ব্যানার্জী সেটা এখন জানা অসম্ভব এক যদি না সেই ঘটনার সাথে জড়িত কেউ সেকথা স্বীকার করে আর অরুণাভ বা তার স্ত্রী কেউই একথা স্বীকার করবে বলে মনে হয় না"

"কিন্তু অনি তো বলতেই পারে"

"মিস্টার ব্যানার্জী যদি আপনার ধারণা সত্যি হয় যে ওই ছেলেটা আদিত্য তাইতো? ওই অনিকেত তাহলে ও কি বলবে? আপনার কি মনে হয়? যে ছেলে এতবছর সত্যি লুকিয়ে দূরে থাকলো, বেঁচে থাকা সত্ত্বেও নিজেকে সবার কাছে মৃত করে রাখলো সে সব কথা এখন প্রকাশ করবে?"

"ছেলেটার মনে অনেক রাগ আর অভিমান জমে আছে কিন্তু সেটা আমাদের বিরুদ্ধে আপনার বিরুদ্ধে নয় আপনি কথা বললে হয়তো সব বলতেও পারে"

"আপনি জানেন ও কোথায় আছে?"

"হ্যাঁ ও নারায়ণতলা গ্ৰামে থাকে"

"কোথায় থাকে?"

"নারায়ণতলা গ্ৰামে, ঘটকপুকুর মালঞ্চ ছাড়িয়ে ওদিকে একটা গ্ৰাম আছে ওখানে থাকে"

"আপনি দেখেছেন ওকে?"

"হ্যাঁ, ওখানে আনন্দ নিকেতন নামে একটা রিসর্ট আছে সেখানেই গিয়েছিলাম রেস্টে এবং ওখানেই ওর সাথে দেখা হয়"

"স্বীকার করেছে যে ও অনিকেত?"
সুপ্রতিমবাবুর স্বরে উত্তেজনা স্পষ্ট।

"না, সেইজন্যই তো বলছি আপনি একবার গিয়ে কথা বলে দেখুন না"

"যদি আপনার অনুমান সত্যি হয় তাহলে তো যেতেই হবে একবার ওহ ভালো কথা আপনার ছেলে অরুণাভ লোক লাগিয়েছিল আপনার উপরে হামলাকারীদের খুঁজে বের করার জন্য"

"কি বলছো সুপ্রতিম?"

"ঠিকই বলছি স্বর্ণেন্দু"

"তুমি জানলে কিভাবে?"

"যাদের লাগিয়েছিল তাদের মধ্যে কেউ কেউ আমাদের ইনফর্মার হয়েও কাজ করে তারাই বলেছে"

"কিন্তু ও ওদের খোঁজ করছিল কেন?"

"সেটা তো উনিই বলতে পারবেন প্রতিশোধ হতে পারে আবার অন্য কারন‌ও হতে পারে তবে প্রতিশোধ বলেই মনে হচ্ছে"।

অভিরূপবাবু চুপ করে শুনছিলেন সুপ্রতিমবাবু বলতে থাকেন "কিছু মনে করবেন না হয়তো অরুণাভর মধ্যে বাবার জন্য ভালোবাসা এখনো রয়ে গেছে কিন্তু ক্রাইম উনিও কম করেননি নেহাত ব্যানার্জী পরিবারের ছেলে তাই পুলিশ ওর গায়ে হাত দেয়নি"

"জানি সুপ্রতিম বাবু কিন্তু তাই বলে নিজের ভাইকে মারার চেষ্টা করবে? এটা আমার এখনও বিশ্বাস হচ্ছে না"

"আমি তো একবার‌ও বলিনি এটা সত্যি, আমি বলেছিলাম ওটা আমার অনুমান সেটা সত্যি নাও হতে পারে সেইজন্যেই আমি তখন তদন্ত করতে চেয়েছিলাম"

"ভুল হয়ে গেছে সুপ্রতিমবাবু,বড্ড ভুল হয়ে গেছে আর তার শাস্তি এখন পাচ্ছি যতই আদিত্য সেজে থাকুক অনির চোখের দিকে যখন তাকালাম তখন যেন স্পষ্ট শুনতে পেলাম ও বলছে 'বাবা তুমি দাদাকে বেশী ভালোবেসেছো তাই তুমি ওকে নিয়েই থাকো আমি দূরে সরে গেলাম' বিশ্বাস করুন আমি বলতে চেয়েছি যে আমি তোদের দুজনকেই ভালোবাসি কিন্তু বলতে পারিনি"

অভিরূপবাবু মাথা নীচু করে র‌ইলেন স্বর্ণেন্দু বাবু কাঁধে হাত দিয়ে এবং সুপ্রতিমবাবু অভিরূপবাবুর হাত ধরে সান্ত্বনা দিতে চেষ্টা করলেন।


মনোজিৎ বাবুর বাড়িতে আজ রাতে পার্টি হচ্ছে সাফল্যের পার্টি। পুলিশ ডিপার্টমেন্টে থাকা নিজেদের লোক এবং হাসপাতালের স্টাফকে টাকা দিয়ে দুজনকে শেষ করে দিয়েছেন সেইজন্যই পার্টি কিন্তু সেখানেও নিজের দীর্ঘদিনের ক্রাইম পার্টনার প্রীতমবাবুকে একটু গম্ভীর ও চুপচাপ দেখে মনোজিৎবাবু একটু অবাক হন,

"আপনার কি হয়েছে বলুন তো? এখনও চুপচাপ কেন? কাজ তো হয়ে গেছে পুলিশ বা আপনার ওই সুপ্রতিম দাশগুপ্ত আর আমাদের টিকিও ছুঁতে পারবে না"

"আপনি সুপ্রতিম দাশগুপ্তকে এখনো চেনেননি আপনি কি ভেবেছেন ও বুঝতে পারবে না যে এটা ইচ্ছাকৃত খুন? ও ঠিক তদন্ত চালিয়ে যাবে"

"আপনার মনে এত ভয় সেটা তো জানা ছিল না?"

"ভয় নয়" প্রীতমবাবু গর্জে উঠলেন "ভয় নয়, সতর্কতা"

"তাহলে এবার কি করবেন?"

"দেখছি কি করা যায়"

"ওহ ভালো কথা খবর শুনেছেন?"

"কিসের?"প্রীতমবাবু একটু অবাক হন।

"সেকি মশাই আপনি ওই বাড়িতে থাকেন আর খবর শোনেননি?"

"কি খবর সেটা তো বলবেন?"

"আপনার শালাবাবু অর্থাৎ অভিরূপ ব্যানার্জী জমি কিনে সেখানে বাড়ি বানাচ্ছে, ব‌উকে নিয়ে ওখানে চলে যাবে"

"হোয়াট! একথা আপনাকে কে বললো?"

"আমার মেয়ে মৌমিতা বলেছে"

"ও কিভাবে জানলো? অভিরূপ ব্যানার্জী বলেছে?"

"অভিরূপ ব্যানার্জী ছেলেকে বলেছে তাও বলতে চায়নি অরুণাভ কোর্টে দেখে ফেলে তা বাড়িতে এসে জিজ্ঞেস করলে তখন বলেন মৌমিতা লুকিয়ে শুনেছে"

"কোথায় যাচ্ছে কিছু জানতে পেরেছে?"

"না সেটা এখনও জানতে পারেনি। আপনি কিছুই জানেন না এ ব্যাপারে?"

"না, লোকটা যে তলে তলে আরো কি কি করছে কে জানে?"

"তাহলে এবার ওকে শেষ করার প্ল্যান করুন"

"এখনই না, এখন পরিস্থিতি একটু শান্ত হতে দিন তারপর"

"কিন্তু তখন তো পাখি হাওয়া হয়ে যাবে"

"যাবে আর কোথায়? আশেপাশেই কোথাও থাকবে নিশ্চয়ই কিন্তু একটা জিনিস আমি খেয়াল করেছি"

"কি জিনিস?"

"মাঝখানে কোথায় একটা ঘুরতে গিয়েছিল জানেন তো?"

"হ্যাঁ ওই স্বর্ণেন্দুরাও গিয়েছিল কিন্তু কোথায় সেটা বলেনি"

"হ্যাঁ, ওখান থেকে আসার পরে একটু বদলে গেছে"

"কিরকম?"

"সেটা বলে বোঝানো যাবে না কথাবার্তা হাবভাব ব্যবহার পাল্টে গেছে এমনকি অরুণাভর সঙ্গেও ব্যবহার পাল্টে গেছে"

"কি কারন আন্দাজ করতে পারেন?"

"না তবে আমাদের সাবধানে থাকতে হবে ইদানিং সুপ্রতিম দাশগুপ্তর সাথে ঘনিষ্ঠতা বেড়েছে, কি কথা হচ্ছে জানা নেই তাই সাবধানে থাকাই ভালো।



সময় কারো জন্য থেমে থাকে না সে নিজের মতো নিজের গতিতে এগিয়েই চলে। অভিরূপবাবুরা আনন্দ নিকেতন ছেড়ে চলে যাবার পরে বেশ কিছুদিন কেটে গেছে, প্রথম প্রথম পিয়ালী কিছুটা মনমরা হয়ে থাকতো এখন আবার ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হচ্ছে।

আদিত্য তার মনমরা থাকার কারণ জিজ্ঞেস করলে কিছু বলতে চায় না সে নিজেও তো বোঝে যে আদিত্যর‌ও কম কষ্ট হচ্ছে না কিন্তু এখন এই সংসার শুধু তাদের দুজনের আর তাদের আগত সন্তানের, সবকিছু থেকেও তাদের কেউ নেই শ্বশুর শাশুড়ি থেকেও তারা নেই, অবশ্য তারা বলেছেন যে খুব তাড়াতাড়ি এখানে ফিরে আসবেন জমি কিনে বাড়ি বানিয়ে থাকবেন, কিন্তু তবুও তার স্বামী হয়তো কোনোদিন নিজের পরিচয় দেবে না এ নিয়ে তার কোনো অভিযোগ নেই কারণ আদিত্যর এই সিদ্ধান্তের পিছনের কারনটা সে জানে।

পিয়ালীর প্রেগনেন্সির যত দিন যাচ্ছে আদিত্য তত বেশী সময় কাটাচ্ছে পিয়ালীর সঙ্গে, রিসর্ট থেকে কোনো মতে কাজ সেরে যত তাড়াতাড়ি পারে বাড়িতে ফিরে আসছে আর তারপর পুরো সময়টা নিজের স্ত্রীর সাথে কাটাচ্ছে তাকে হাসিখুশি রাখতে চেষ্টা করছে। কিন্তু মানুষের জীবন সবসময় সোজা সরল পথে চলে না অনেক সময় হটাৎ করেই বাঁক নেয় ঠিক যেমন অনেক সময় আচমকাই বিপদ চলে আসে ঠিক তেমনই অনেক সময় অনেক মানুষ‌ও চলে আসে তাদের কেউ আমাদের শত্রু আবার কেউ পরম মিত্র।

ঠিক এমনই একজন হটাৎ করেই চলে এল আদিত্যর জীবনে বা বলা ভালো ফিরে এলো। সেদিন‌ও রিসর্টের কাজ সেরে দুপুরের একটু পরেই বাড়িতে ফিরে এসেছে, এসে ফ্রেশ হয়ে খেয়েদেয়ে দুজনেই ভাতঘুম দিয়েছে তারপর বিকেলে নিজেদের বাড়ির চারিপাশে তৈরী বাগানের মাঝে একটা বসার জায়গায় বসে গল্প করছে এই সময়েই আদিত্যর কাছে ফোনটা এলো,

"হ্যালো"

"দাদা আমি থানা থেকে বলছি"

"থানা থেকে? তা হটাৎ থানা থেকে আমাকে কেন?"

"দাদা কলকাতা থেকে একজন এসেছেন তিনি তোমার খোঁজ করছেন"

কথাটা শুনে একটু অবাক হয় আদিত্য কলকাতা থেকে এখানকার থানায় এসে তার খোঁজ কে করবে? সে জিজ্ঞেস করে "তুমি ঠিক বলছো আমাকেই খুঁজছে তো? নাকি অন্য কাউকে?"

"না দাদা তোমাকেই খুঁজছে তোমার ছবি দেখালো?"

"আচ্ছা? আর কি বললো?"

"কিছু না বড়োবাবুকে বললো তোমার কাছে নিয়ে যেতে"

"উনি জানলেন কিভাবে আমি এখানে থাকি?"

"উনি খবর নিয়েই এসেছেন, কলকাতার লালবাজার থেকে এসেছেন অনেক উঁচু পোস্টের অফিসার তাইতো বড়োবাবু কিছু বলতে পারলেন না তবে আমাকে ইশারা করে তোমাকে জানাতে বললেন"

"লালবাজারের অফিসার, নামটা কি জানো?"

"হ্যাঁ দাদা সুপ্রতিম দাশগুপ্ত"
I'm the King of Dark
                &
I rule over all Devils
               devil2 devil2
Like Reply


Messages In This Thread
"ধূসর পৃথিবী" - by Monen2000 - 11-12-2022, 01:47 AM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Mehndi - 17-12-2022, 01:10 AM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by kublai - 10-05-2023, 02:46 AM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Rancon - 29-05-2023, 05:43 PM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Naim_Z - 31-05-2023, 08:58 AM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Naim_Z - 02-06-2023, 10:56 AM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Naim_Z - 04-06-2023, 09:56 PM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Naim_Z - 06-06-2023, 11:49 AM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Naim_Z - 10-06-2023, 09:33 AM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Naim_Z - 11-06-2023, 10:57 PM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Naim_Z - 14-06-2023, 02:02 AM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Naim_Z - 15-06-2023, 08:50 AM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Naim_Z - 17-06-2023, 08:52 PM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Naim_Z - 18-06-2023, 10:26 AM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Naim_Z - 20-06-2023, 12:46 AM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Naim_Z - 23-06-2023, 09:41 AM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Naim_Z - 25-06-2023, 02:35 PM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Naim_Z - 26-06-2023, 01:00 AM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Naim_Z - 26-06-2023, 01:12 AM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Naim_Z - 26-06-2023, 09:57 PM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Naim_Z - 27-06-2023, 06:42 PM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Naim_Z - 28-06-2023, 09:40 PM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Naim_Z - 30-06-2023, 10:41 PM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Naim_Z - 02-07-2023, 11:34 AM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Naim_Z - 02-07-2023, 12:29 PM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Rancon - 02-07-2023, 04:41 PM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Naim_Z - 03-07-2023, 10:33 AM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by guru1 - 03-07-2023, 03:31 PM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Naim_Z - 04-07-2023, 12:06 AM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Naim_Z - 08-07-2023, 04:22 PM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Rancon - 08-07-2023, 11:39 PM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Naim_Z - 09-07-2023, 12:50 AM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Naim_Z - 11-07-2023, 11:32 AM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Naim_Z - 12-07-2023, 09:57 AM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Naim_Z - 12-07-2023, 10:18 PM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Naim_Z - 15-07-2023, 09:49 AM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Naim_Z - 15-07-2023, 10:37 PM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Monen2000 - 17-07-2023, 10:49 PM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Naim_Z - 18-07-2023, 12:07 AM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Naim_Z - 18-07-2023, 08:42 PM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Naim_Z - 22-07-2023, 10:14 PM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Ahid3 - 25-07-2023, 12:31 AM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Naim_Z - 25-07-2023, 08:54 AM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Rancon - 25-07-2023, 09:01 AM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Naim_Z - 26-07-2023, 08:25 AM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Naim_Z - 30-07-2023, 11:48 PM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by pratim - 05-08-2023, 10:31 PM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Rancon - 07-08-2023, 07:51 AM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by kublai - 15-08-2023, 05:12 AM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Naim_Z - 19-08-2023, 02:07 PM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Rancon - 22-08-2023, 05:38 AM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Rancon - 03-09-2023, 07:04 AM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by pratim - 03-09-2023, 04:00 PM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Saj890 - 18-05-2024, 05:13 PM



Users browsing this thread: 17 Guest(s)