Thread Rating:
  • 99 Vote(s) - 2.82 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
WRITER'S SPECIAL "ধূসর পৃথিবী"
[Image: Picsart-22-12-06-20-20-08-119.jpg]



                 দ্বিতীয় পার্ট
                 ১৪তম পর্ব


কথায় বলে মানুষকে তার পাপের শাস্তি এই জীবনেই ভোগ করতে হয় হুইলচেয়ারের দুসাইডের দুটো চাকায় হাত বোলাতে বোলাতে একথাই মনে হয় অরুণাভর, আজ তার যা অবস্থা সেটা নিশ্চয়‌ই তার পাপের ফল।

লোকের চোখে তার এই অবস্থার জন্য দায়ী একটা অ্যাক্সিডেন্ট কিন্তু অরুণাভ নিজে জানে অ্যাক্সিডেন্টটা ঘটানো হয়েছে উদ্দেশ্য যদিও তাকে মেরে ফেলাই ছিল কিন্তু সে বেঁচে গেছে। প্রাণে বেঁচে গেলেও তার পাদুটো বোধহয় অকেজো হয়ে গেছে ডাক্তার যদিও বলেছে আপাতত কিছুদিন রেস্টের পরে থেরাপি শুরু হবে তারপর অরুণাভ আবার নিজের পায়ে চলাফেরা করতে পারবে।

কিন্তু অরুণাভ ভালো করেই জানে যারা তার এই অ্যাক্সিডেন্টের পিছনে দায়ী তারা এক প্রচেষ্টায় থামবে না তারা আবার চেষ্টা করবে হয়তো তার বাবাকেও মারতে চাইবে, তাদের সাথে মিলে সে নিজেও তো কম কুকীর্তি তো করেনি একবার তো তার সামনেই সেইকথা বলেছিল কিন্তু কি করবে সে? তার হাতে কোনো প্রমাণ নেই ওদের বিরুদ্ধে, শহরের সবথেকে ক্ষমতাধর পরিবারের ছেলে হয়েও ভীষণরকম অসহায়ত্ব অনুভব করে অরুণাভ।

ওদের আটকাতে না পারলে ওরা যে তাকে এবং বাবাকে শেষ করে দিতে দ্বিধাবোধ করবে না প্রথমে সে তারপর বাবা তারপর.. তারপর কি তার ছোট্ট ছেলেমেয়ে দুটোকেও.. ভাবতেই শিউরে উঠলো অরুণাভ।

এইসময় হটাৎই তার দুপুরের ঘটনাটা মনে পরলো একটা ছেলে তাদের বাড়িতে ঢুকে সুশান্ত আর মনোজকে আরোং ধোলাই দিল। কে ছিল ছেলেটা? অরুণাভ লক্ষ্য করেছে ছেলেটা কয়েকমুহূর্তের জন্য তার আর মৌমিতার দিকে তাকিয়ে ছিল, অরুণাভর কেন যেন সেই দৃষ্টিটা অত্যন্ত চেনা মনে হয়েছিল, কোথায় যেন দেখেছিল কিন্তু কিছুতেই তখন মনে পরেনি এখন পরেছে সেই এক‌ই দৃষ্টি সেই চরম বিতৃষ্ণা ঘৃণা ছিল সেই দৃষ্টিতে যেটা সে আরো একজনের চোখে দেখেছিল, প্রায় ৯ বছর আগে গ্যাংটকের রুমটেক মনাস্ট্রির পিছনের দিকের খাদে নীচের অন্ধকারে তলিয়ে যাওয়ার আগে শেষবারের মতো তার ছোটোভাই অনিকেতের চোখে দেখেছিল অরুণাভ।

সকালে মর্ণিং ওয়াকের অভ্যাস না থাকলেও যখনই শ্যালক-ভগ্নিপতি অর্থাৎ স্বর্ণেন্দু বাবু এবং অভিরূপবাবু পরস্পরের বাড়িতে থাকেন তখন সকালে উঠে দুজনেই হাঁটতে বেড়োন, এমনই গল্প করতে করতে হাঁটা তারপর কোনো একটা রাস্তার কোনো একটা চায়ের দোকান থেকে চা খেয়ে আবার হাঁটতে হাঁটতে ফিরে আসেন।

অনেকেই হয়তো ভ্রু কোঁচকাবেন যে এতবড়ো মানুষ হয়েও রাস্তার দোকান থেকে চা খান? হ্যাঁ খান আর এখানেই ওনাদের পরিচয়, যত বড়ো‌ই হয়ে যান যতো টাকাই উপার্জন করুন না কেন দুজনেই সর্বদা মাটির মানুষ হয়ে থাকেন।

আজ‌ও নিউ আলিপুরের বাড়ি থেকে দুজনেই ভোর ভোর উঠে বেরোলেন, কিন্তু আজ স্বর্ণেন্দু বাবু লক্ষ্য করলেন অভিরূপবাবুকে কেমন যেন লাগছে,
"কিছু হয়েছে জামাইবাবু? তোমার মুখটা কেমন যেন লাগছে?" দুজনের সম্পর্ক বন্ধুর মতোই তাই পরস্পরকে তুমি করেই সম্বোধন করেন তারা।

"একটা কথা বলবো ভাবছি কিন্তু সেটা ঠিক হবে কি না বুঝতে পারছি না"

"তুমি আমাকে কথা বলতে হেজিটেট করছো কবে থেকে? আর জানোই তো ডাক্তার এবং উকিলের কাছে কিছু লুকোতে নেই, আমি তো শুধু তোমার শালা ন‌ই তোমার পরিবারের উকিল‌ও, বলো কি হয়েছে?"

অভিরূপবাবু তবুও কিছুক্ষণ চুপ থাকেন বোধহয় মনের দ্বিধাটা দূর করে নেন তারপর বললেন,
"গতকালের ছেলেটাকে মনে আছে?"

"যে ছেলে একা ব্যানার্জী ভিলায় ঢুকে বাড়ির ছেলে আর তার বন্ধুকে ঠেঙিয়ে যায় তাকে ভোলা যায়? কিন্তু কি হয়েছে ওর?"

"তোমার দিদির মনে হচ্ছে ও আসলে অনি"

একটু যেন অবাক হলেন স্বর্ণেন্দু বাবু বলেন, "কিন্তু দিদির এরকম মনে হচ্ছে কেন? অনি তো.."

"জানি, তবুও শ্রীতমার মনে হয় ওটা অনি ছিল"

"আর তোমার কি মনে হয়?"

"সত্যি বলতে ও যখন আমার পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করলো তখন একমুহূর্তের জন্য আমারও মনে হলো যেন ওটা অনির হাত"

"কিন্তু জামাইবাবু ও যদি অনি হয় তাহলে এতবছর কোথায় ছিল, ফিরে এলোনা কেন? বা এখনো ফিরে আসছে না কেন? ইনফ্যাক্ট চেহারা পাল্টালো কেন আর কিভাবে?"

"চেহারা প্লাস্টিক সার্জারি করে পাল্টানো যায়, স্বর্ণেন্দু"

"আমি জানি সেটা কিন্তু কেন? আর কিভাবে? মানে ও সার্জারির টাকা পেলো কোথায়? প্লাস্টিক সার্জারি করতে কম টাকা লাগে না, ওর তো কোনো ব্যাংক অ্যাকাউন্ট‌ও ছিল না অরুণাভর মতো যেখানে তুমি মাসে মাসে অরুকে হাতখরচা দিয়ে দিতে, অনির যখন দরকার হতো তখন তোমার বা দিদির থেকে চেয়ে নিত, তাহলে ও এত টাকা পেলো কোত্থেকে? না জামাইবাবু দিদি যাই বলুক ও অনি নয়"।

"কিন্তু টোবো? ও ওরকম আচরণ করলো কেন? মানুষ একজন মানুষকে চিনতে ভুল করতে পারে কারণ তারা চেহারা দেখে বিচার করে কুকুর সেটা নয়, যতই মেকআপ করুক বা চেহারা পাল্টাক কুকুর ঠিক তার পরিচিত মানুষকে চিনতে পারে আর কাল টোবোর আচরণ দেখে মনে হলো ও ওই ছেলেটাকে চিনতে পেরেছে, যে লাল বলটা দিয়ে ও ছেলেটার সাথে খেলতে চাইলো সেটা অনি খেলতো ওর সাথে, বলটাও অনির দেওয়া"

স্বর্ণেন্দু বাবুর মুখ দেখে মনে হলো তিনিও এবার একটু কনফিউজড হয়ে গেছেন এবং সেটা তার কথাতেই বোঝা গেল, " তুমি তো আমাকেও ফাঁপড়ে ফেলে দিলে, এই কথাটাতো মাথায় আসেনি"

"এটা তোমার দিদির মাথায় এসেছে আমিও ওর এই কথার পাল্টা দিতে পারিনি"।

কথা বলতে বলতে হেঁটে বাড়ি থেকে অনেকটাই চলে এসেছেন দুজনে এবার একটা চায়ের দোকানে ঢুকে দুটো চা অর্ডার করলেন একটু পরেই দুটো কাঁচের গ্লাসে গরম চা দোকান থেকে একটু সরে এলেন তারপর ধোঁয়া ওঠাগরম চায়ে একটা চুমুক দিয়ে তৃপ্তিসূচক শব্দ বার করে স্বর্ণেন্দুবাবু জিজ্ঞেস করলেন, "তাহলে এখন কি চাইছো?"

অভিরূপ বাবুও চায়ে একটা চুমুক দিয়ে বললেন "তোমার দিদি চাইছেন আমি যেন ওকে খুঁজে বের করি"।

"কিন্তু জামাইবাবু এটা আমাদের অনুমান যে ও অনি আর এটা সত্যি নাও হতে পারে"

"আবার হতেও পারে, দেখো স্বর্ণেন্দু শহরে আমার পরিচিত অনেক আছে এটা ঠিক তাদের বললে তারা হয়তো খুঁজে বের করবে কিন্তু কোনোভাবে যদি প্রীতম আর মনোজিত বাবু ওর খোঁজ পেয়ে যান তাহলে ওর ক্ষতি করার চেষ্টা করবে তাই আমি চাইছিলাম যাতে পুলিশের কেউ করে, তোমার তো লালবাজারের অনেক উঁচু পোস্টের পুলিশের সাথে যোগাযোগ আছে তাদের কেউ যদি কাজটা করে"।

"জামাইবাবু ওইদুজন ব্যানার্জী পরিবারের নাম ভাঙিয়ে অনেক কিছু করেছে পুলিশেও ওদের খোঁচর আছে, সেখান থেকেও খবর পেয়ে যাবে"

"তাহলে? বিশ্বস্ত কি কেউ নেই?"

একটু ভেবে স্বর্ণেন্দু বাবু বলেন, "আছে, একজন আছে সে নিশ্চয়ই বার করতে পারবে,আমার পরিচিত, বন্ধুও বলতে পারো"

"কে তিনি? তাকেই বলে দেখো, বলোতো আমিও যাবো তোমার সাথে"

"সেটা যাওয়া যায় কিন্তু একটা প্রবলেম আছে"

"কি প্রবলেম?"

"তিনি আমাদের উপরে রেগে আছেন, আমার উপরে তো বটেই এমনকি তোমার উপরেও"

"কেন? আমি কি করেছি?"

"আসলে কথাটা হলো লোকটা অনিকে চিনতো, শুধু চিনতো বলা ভুল দুজনের রীতিমতো ঘনিষ্ঠ পরিচয় ছিল এবং অনিকে যথেষ্ট স্নেহ করতো। ওর বিশ্বাস অনি নিজে থেকে খাদে পরেনি ওকে কেউ ঠেলে ফেলে দিয়েছে"

"মানে খুন? কিন্তু অনিকে খুন করবে কে? আর কেন?"

"সেটাই ও তদন্ত করতে চেয়েছিল ওর সন্দেহ অরু এবং মৌমিতার উপরে, এবং ওর যা সোর্স তাতে সিকিম পুলিশকে দিয়েও তদন্ত করাতে পারতো নিজেও অরু আর মৌমিতাকে জেরা করতে চেয়েছিল, আমাকে বেশ কয়েকবার সেকথা বলেছিল অথচ আমরা রাজী হ‌ইনি, উপরন্তু কেসটা বন্ধ করে দিয়েছি তাই ক্ষেপে আছে"

"তাহলে ওনার কাছেই চলো, আজ‌ই চলো আমি কথা বলবো"

"আজ হবে না"

"কেন?"

"আসলে আগে আমি যখন খুশি দেখা করতে পারতাম কিন্তু অনির এই ঘটনার পরে আমার উপরে এতটাই রেগে আছে যে দেখা করতে চায় না বাইচান্স কোনো কেসের ব্যাপারে বা কোর্টে দেখা হলেও চেষ্টা করে এড়িয়ে যেতে তাই আগে ওর থেকে অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিতে হবে সহজে দেখা করবে না তবে চেষ্টা করে দেখি"

"চেষ্টা নয় ওনার সাথে দেখা করতেই হবে, বলো তো ওনার বাড়িতে বা লালবাজারেও দেখা করতে যাবো"

"ঠিক আছে জামাইবাবু আমি দেখছি"

চা শেষ হয়ে গিয়েছিল এবার গ্লাস দুটো ফেরত দিয়ে দাম মিটিয়ে দুজনে উল্টোপথ ধরলেন বাড়িতে ফেরার।

মনোজিত বাবুর বাড়িতে আজ আবার মিটিং বসেছে চারমূর্তি তো উপস্থিত আছেন‌ই সাথে আরও ৫-৬ জন আছে, খুবই সাধারণ চেহারা তবে দুজনের রীতিমতো জিম করা চেহারা, কিন্তু প্রত্যেকের চোখ একেবারে জাত খুনির দেখেই বোঝা যায় অবলীলায় যে কারো গলা কাটতে পারে।

"ভেবে দেখো কাজটা করতে পারবে কি না?"

মনোজিত বাবু লোকগুলোর উদ্দেশ্যে প্রশ্ন করেন, লোকগুলোর মধ্যে একজন কর্কশ গলায় জবাব দেয়, "কাজটা তো এতদিনে হয়েই যেত আপনারাই বললেন কিসব প্ল্যান আছে, তারপর এইকদিন আমাদের পুরো এরিয়া ঘোরালেন"

"ওটার দরকার ছিল"

"অত ঝামেলার দরকার কি সেটাই তো বুঝতে পারছি না, লোকটাকে অনেকবার রাস্তায় একা দেখেছি নেহাত আপনারা বারণ করেছেন তাই কাজ করিনি"

"তোমাদের কোনো ধারণা আছে লোকটা কে? ওর গায়ে একটা আঁচড় পরলে পুরো লালবাজার ঝেঁকে আসবে"

"এত ভয় পেলে কাজ হয় নাকি? পুলিশ তো এখনও তদন্ত করবে"

"করবে, তবে খুনের নয় ডাকাতির"

"মানে আপনাদের প্ল্যানটা খুলে বলুন"

"লোকটাকে মারার আগে পুরো সাউথ কলকাতা জুড়ে তোমাদের আরও কয়েকটা কাজ করতে হবে, তারপর মেইন কাজ। এমনভাবে করতে হবে যাতে পুরো ব্যাপারটা ডাকাতির মনে হয় খুনের নয়, যেটা বললাম পুলিশ তদন্ত করবে তবে ডাকাতির কাজটা করে তোমরা ফিরে যাবে এইসব কেসে পুলিশ আরও একটা ঘটনার ওয়েট করে ফাঁদ পেতে, কিন্তু আর কোনো ঘটনা হবে না"

"এতে কিন্তু বেশি টাকা লাগবে"

"দেবো" এতক্ষণে মুখ খুললেন প্রীতমবাবু "কিন্তু কাজটা হ‌ওয়া চাই লোকটা যেন বাঁচতে না পারে"

"বাঁচবে না, গ্যারান্টি"।


লালবাজারের পুলিশ হেডকোয়ার্টারে নিজের কেবিনে বসে চিন্তা করছিলেন নগরপাল সুপ্রতিম দাশগুপ্ত, বয়স ৫২ এর আশেপাশে, কিন্তু শক্তপোক্ত পেটানো চেহারা মাথায় কানের উপরে দুই জুলফিতে পাক ধরেছে এছাড়া বাকি মাথায় পাকা চুল প্রায় নেই বললেই চলে, নাকের নীচে মোটা গোঁফ, এছাড়া দাঁড়ি পরিষ্কারভাবে কামানো, গায়ের রঙ শ্যামলা।

সুপ্রতিম বাবুর চিন্তার কারণ সম্প্রতি কলকাতার দক্ষিণ অংশে ঘটে যাওয়া কয়েকটা ছিনতাইয়ের কেস। ছিনতাইকারীরা বাইকে করে আসছে কোনো মহিলা বা বৃদ্ধকে জখম করে তাদের কাছে থাকা মূল্যবান জিনিসপত্র লুট করে চম্পট দিচ্ছে আবার কখনো কখনো কোনো দোকানে ঢুকে টাকা লুট করে চলে যাচ্ছে।

বিগত তিনমাসের মধ্যে এখনও পর্যন্ত পাঁচ-পাঁচটি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে অথচ পুলিশ যে তিমিরে ছিল সেই তিমিরেই আছে, সবথেকে বেস্ট অফিসারদের এই তদন্তের ভার দিয়েছেন কিন্তু এখনো পর্যন্ত কোনো ক্লু নেই কাউকে গ্ৰেপ্তার করা যায়নি, এই নিয়ে শহরে বেশ হ‌ইচ‌ই পরে গেছে। মিডিয়া রীতিমতো ছিঁড়ে খাচ্ছে পুলিশ ডিপার্টমেন্টকে।

কিভাবে এই ছিনতাইকারীদের ধরা যায় সেবিষয়েই ভাবছিলেন সুপ্রতিমবাবু হটাৎ দরজায় টোকার আওয়াজে চিন্তায় ছেদ পরে তাকিয়ে দেখেন দরজায় এক যুবতী দাঁড়িয়ে আছে পরনে সাদা শার্ট আর কালো ট্রাউজারস্, পায়ে বুট মাথায় চুল খোঁপা করে রাখা।

"মে আই কাম ইন স্যার?" যুবতী ভিতরে আসার পার্মিশন চায়,

"ইয়েস কাম ইন" যুবতী ভিতরে এলে সুপ্রতিমবাবু আবার জিজ্ঞেস করেন "এনি আপডেট?"

"নো স্যার"

"সিসিটিভি ফুটেজ চেক করেছো? বাইকের নাম্বারগুলো ট্রেস করা গেছে?"

"স্যার কয়েক জায়গার ফুটেজে ওদের দেখা গিয়েছে কিন্তু সবসময়ই মুখ হেলমেটে ঢাকা ছিল তাই মুখ বোঝার উপায় নেই"

"বাইকের নম্বর গুলো?"

"ফেক নম্বর, তবে একটা জিনিস বোঝা যাচ্ছে"

"কি সেটা?"

"এলাকার রাস্তাঘাট ওদের খুবই চেনাজানা, যারা এই ঘটনার পিছনে দায়ী তারা হয় এলাকার লোক আর নাহয় অনেকদিন থেকেই প্ল্যান করেছে, আগে রাস্তাঘাট সব চিনে জেনে নিয়ে তারপর অ্যাকশনে নেমেছে"

"সেটা বললে তো হবে না ওদের ধরতে হবে সেটা কিভাবে করা যায় কিছু ভেবেছো?"

যুবতী মাথা নীচু করে মাথা নেড়ে না জানায় এতে সুপ্রতিমবাবু যেন তেলেবেগুনে জ্বলে ওঠেন,
"সবকটা অকর্মার ঢেঁকি, একটাও কাজের নয় সবকটাকে সাসপেণ্ড করবো"

"স্যার, আমরা প্রাণপণ চেষ্টা করছি"

"তার নমুনা তো দেখতেই পারছি, একটাও কাজের না, হোপলেস.... এইসময় যদি ও আমার পাশে থাকতো তাহলে আর চিন্তা ছিল না" একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে কারো না থাকায় আফশোষ প্রকাশ করেন নগরপাল।

যুবতী এবারে মুখ তুলে তাকায় এটা নতুন নয় সে জানে কার কথা হচ্ছে সামনের মানুষটা তো শুধু তার সিনিয়র অফিসার নন তার বাবাও, যুবতী বলে,
"আমাদের পুলিশ ডিপার্টমেন্টের বেস্ট অফিসাররা এই কাজে লেগে আছে"

"তারপরেও রেজাল্ট জিরো, এইসময় সত্যিই ওকে খুব দরকার ছিল" আবার আফশোষ ঝরে পরে সুপ্রতিমবাবুর স্বরে।

"যে নেই তার কথা ভেবে কি হবে ড্যাড" এমনিতে অফিসে স্যার বলেই ডাকে যুবতী কখনো সখনো দুজনে একা থাকলে তখন ড্যাড বলে সম্বোধন করে।

"ও থাকলে এতদিনে ঠিক কেস সলভ্‌ হয়ে যেত ঠিক কোনো না কোনো প্ল্যান বার করতো"

এইসময় আবার দরজায় নক হয় দুজনে তাকিয়ে দেখেন একজন কনস্টেবল দাঁড়িয়ে আছে সে একটা স্যালুট ঠুকে বলে "স্যার অ্যাডভোকেট স্যার আপনার সাথে দেখা করতে চাইছেন"

"কে?" একটু বিরক্ত হয়েই জিজ্ঞেস করেন সুপ্রতিমবাবু।

"অ্যাডভোকেট স্বর্ণেন্দু মুখার্জি, বলছেন খুব দরকারি বিষয়"

"বলে দিন ব্যাস্ত আছি দেখা হবে না"

কিন্তু পরক্ষনেই কনস্টেবলের পিছনে স্বর্ণেন্দু বাবুর মুখ দেখতে পান সুপ্রতিমবাবুপরক্ষনেই রাগে ফেটে পরেন,

"কে ঢুকতে দিয়েছে আপনাকে? বেরিয়ে যান আমি এখন ব্যাস্ত আছি"

"এতদিনের পুরনো বন্ধুর সাথে এরকম ব্যবহার?" ভিতরে ঢুকে কথাটা বলেন স্বর্ণেন্দু বাবু

"আপনাকে ঢুকতে কে দিয়েছে?"

"পুলিশের হয়ে এতগুলো কেস লড়ে জেতার পরেও যদি আমাকে কেউ তোমার রুমে আসা থেকে আটকায় তাহলে তো খুবই দুঃখের কথা ভায়া"

স্বর্ণেন্দু বাবুর এইরকম কথায় সুপ্রতিমবাবুর রাগের পারদ চড়তে থাকে তবুও তিনি যথাসম্ভব নিজেকে সামলিয়ে বলেন, "দেখো তোমার সাথে ফালতু কথা বলে নষ্ট করার মতো সময় আমার নেই, তুমি এখন যাও"

"ডাকাতির কেসগুলো নিয়ে ব্যাস্ত নাকি?" চেয়ারে বসে মন্তব্য করলেন স্বর্ণেন্দু বাবু।

"হ্যাঁ, আংকেল" যুবতী কথা বলে,

"আরে তানিয়া মা, তোমাকে খেয়ালই করিনি কেমন আছো?"

"আপাতত খুবই খারাপ যতদিন না এই ক্রিমিনালগুলোকে ধরতে পারছি ততদিন ভালো হবো না"

"হাল ছেড়ো না, ঠিকই পারবে"

"একটা হেল্প করবেন আংকেল?"

"বলো"

"ঘটনাগুলো মূলত শুধুমাত্র সাউথের কয়েকটা জায়গা জুড়েই হচ্ছে এইসব এলাকায় নতুন কেউ এসেছে নাকি বা কারো লাইফস্টাইল হটাৎ করেই চেঞ্জ হয়েছে নাকি একটু খোঁজ নেবেন?"

"এসব তো পুলিশের ইনফর্মারদের কাজ,আমি কেন?"

"ইনফর্মারদের বলা আছে তবুও আপনি ওখানকার লোকাল লোক তার উপরে আমাদের আত্মীয়‌ই, বিশ্বস্ত‌ও তাই বলছিলাম"

"তোমার বাবা আমাকে আত্মীয় মনে করেন না, সে যাই হোক আমি আমার কিছু বিশ্বস্ত লোককে বলে রেখেছি খবর পেলেই জানাবো"

"থ্যাংক ইউ আংকেল" যুবতী বেরিয়ে গেল, আর তারপরেই সুপ্রতিম বাবু গম্ভীরমুখে জিজ্ঞেস করলেন, "এখানে এখন কি দরকার?"

"তোমার সাথে আলাদা একটু দরকার ছিল, বাড়িতে তো আমাকে ঢুকতে দেবে না তাই আগে এখানে দেখা করতে এলাম"

"কি দরকার সেটা বলবে?"

"আমার জামাইবাবু মানে অভিরূপ ব্যানার্জী তোমার সাথে একটু দেখা করতে চান"

"অভিরূপ ব্যানার্জী আমার সাথে দেখা করতে চান কারনটা জানতে পারি?" একটু যেন অবাক হন সুপ্রতিমবাবু।

"সেটা উনি‌ই বলবেন তবে শুনলে তুমিও ইন্টারেস্ট পাবে আজ রাতে তোমার বাড়িতে আনবো?"

সুপ্রতিমবাবুকে চুপ থাকতে দেখে স্বর্ণেন্দু বাবু আবার বলেন "প্লিজ না কোরো না"

"বেশ, তবে আজ রাতে না তোমরা বরং কাল সকালে আসো"

"থ্যাংক ইউ ভাই, থ্যাংক ইউ"।
I'm the King of Dark
                &
I rule over all Devils
               devil2 devil2
Like Reply


Messages In This Thread
"ধূসর পৃথিবী" - by Monen2000 - 11-12-2022, 01:47 AM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Mehndi - 17-12-2022, 01:10 AM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by kublai - 10-05-2023, 02:46 AM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Rancon - 29-05-2023, 05:43 PM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Naim_Z - 31-05-2023, 08:58 AM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Naim_Z - 02-06-2023, 10:56 AM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Naim_Z - 04-06-2023, 09:56 PM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Monen2000 - 05-06-2023, 10:13 PM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Naim_Z - 06-06-2023, 11:49 AM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Naim_Z - 10-06-2023, 09:33 AM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Naim_Z - 11-06-2023, 10:57 PM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Naim_Z - 14-06-2023, 02:02 AM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Naim_Z - 15-06-2023, 08:50 AM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Naim_Z - 17-06-2023, 08:52 PM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Naim_Z - 18-06-2023, 10:26 AM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Naim_Z - 20-06-2023, 12:46 AM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Naim_Z - 23-06-2023, 09:41 AM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Naim_Z - 25-06-2023, 02:35 PM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Naim_Z - 26-06-2023, 01:00 AM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Naim_Z - 26-06-2023, 01:12 AM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Naim_Z - 26-06-2023, 09:57 PM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Naim_Z - 27-06-2023, 06:42 PM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Naim_Z - 28-06-2023, 09:40 PM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Naim_Z - 30-06-2023, 10:41 PM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Naim_Z - 02-07-2023, 11:34 AM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Naim_Z - 02-07-2023, 12:29 PM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Rancon - 02-07-2023, 04:41 PM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Naim_Z - 03-07-2023, 10:33 AM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by guru1 - 03-07-2023, 03:31 PM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Naim_Z - 04-07-2023, 12:06 AM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Naim_Z - 08-07-2023, 04:22 PM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Rancon - 08-07-2023, 11:39 PM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Naim_Z - 09-07-2023, 12:50 AM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Naim_Z - 11-07-2023, 11:32 AM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Naim_Z - 12-07-2023, 09:57 AM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Naim_Z - 12-07-2023, 10:18 PM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Naim_Z - 15-07-2023, 09:49 AM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Naim_Z - 15-07-2023, 10:37 PM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Naim_Z - 18-07-2023, 12:07 AM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Naim_Z - 18-07-2023, 08:42 PM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Naim_Z - 22-07-2023, 10:14 PM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Ahid3 - 25-07-2023, 12:31 AM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Naim_Z - 25-07-2023, 08:54 AM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Rancon - 25-07-2023, 09:01 AM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Naim_Z - 26-07-2023, 08:25 AM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Naim_Z - 30-07-2023, 11:48 PM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by pratim - 05-08-2023, 10:31 PM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Rancon - 07-08-2023, 07:51 AM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by kublai - 15-08-2023, 05:12 AM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Naim_Z - 19-08-2023, 02:07 PM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Rancon - 22-08-2023, 05:38 AM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Rancon - 03-09-2023, 07:04 AM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by pratim - 03-09-2023, 04:00 PM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Saj890 - 18-05-2024, 05:13 PM



Users browsing this thread: 8 Guest(s)