28-05-2023, 10:47 PM
দ্বিতীয় পার্ট
১১তম পর্ব
মানুষের জীবন বড়ো অদ্ভুত কখন কি হয়ে যায় সেটা কে বলতে পারে? সবাই ভাবে যে সে কোনো সিদ্ধান্ত নিয়ে সেই অনুযায়ী কাজ করছে, কিন্তু বাস্তবে কি তাই হয়?
না হয় না মানুষ একটা ভ্রমে বেঁচে থাকে মানুষ নিজে কিচ্ছু করতে পারে না ঠিক যেমন চাইলেও তার অতীত ভুলতে পারে না, অতীতের থেকে পিছু ছাড়াতে পারে না যত চেষ্টাই করুক অতীত ঠিক কোনো না কোনো ভাবে সামনে চলে আসবে।
আদিত্যর জীবনেও সেটাই হয়েছিল সে ঠিক করেছিল আর কখনও তার ফেলে আসা অতীত জীবনে ফিরবে না সেইমতো আপ্রাণ চেষ্টাও করছিল কিন্তু তার এই চেষ্টা যে বৃথা এটা মহাকাল ভালো করেই জানতেন তিনিও হয়তো হেসে হেসে বলতেন 'যতই চেষ্টা করো নিয়তিকে কেউ খণ্ডাতে পারে না তুমিও পারবে না, অতীত ভুলতে চাও? কিন্তু অতীত যে নিজেই তোমাকে খুঁজে সামনে এসে দাঁড়াবে'।
নিউ আলিপুরে পৌঁছে আদিত্য গুগল ম্যাপে ব্যানার্জী নিবাস সার্চ করে কিছু না পেল না উল্টে ব্যানার্জী ভিলা দেখাচ্ছিল ফলে একপ্রকার বাধ্য হয়েই রাস্তার কয়েকজন লোককে জিজ্ঞেস করে জানতে পারে ব্যানার্জী নিবাস নয় ব্যানার্জী ভিলা বলে একটা বাড়ি আছে এখানে, তারও কিছুক্ষণ পরে যখন আদিত্যর বাইকটা ব্যানার্জী ভিলার সামনে দাঁড় করালো তখনও বোধহয় সে ঘুণাক্ষরেও বুঝতে পারেনি যে অজান্তে সে নিজেরই ফেলে আসা অতীতে পদার্পণ করছে।
ব্যানার্জী ভিলা বাড়িটা অবশ্য বাড়ি না বলে ছোটোখাটো বাংলো বলাটাই বোধহয় ঠিক হবে, সেটাতে কোনো অনুষ্ঠান চলছে, এবং একটু এদিক ওদিক তাকাতেই বুঝতে পারলো যে এখানে বিয়ের অনুষ্ঠান হচ্ছে বা হয়েছে কারণ গেটে সুশান্ত নামের কারো বিয়ের বোর্ড লাগানো।
কয়েকজন গেস্ট ভিতরে ঢুকছে আদিত্য বাইক নিয়ে গেটে ঢুকতে গেল ভেবেছিল সিকিউরিটি বাধা দেবে কিন্তু সেরকম কিছু করলো না শুধু চেকিং করে ছেড়ে দিল খুব সম্ভবত বিয়ে উপলক্ষ্যেই গেস্টরা যাতে মনক্ষুণ্ণ না হয় তাই অর্ডার দেওয়া হয়েছে, ভিতরে ঢুকে বাইক পার্কিং এরিয়াতে বাইক রেখে দুজনে নামলো।
"বাদশা তুই বাইকেই থাক আমরা এক্ষুনি চলে আসবো"।
মনিবের হুকুম বাধ্য সারমেয় পালন করলো সে বাইকের উপরেই বসে থাকে। আদিত্য আর পিয়ালী কয়েকজন গেস্টকে ফলো করে এগোতে থাকে। গেস্টরা প্রধান বাড়িটায় নয় বরং পাশে অনেকটা জায়গা জুড়ে লনের দিকে যাচ্ছে সেদিকেই ওরা গেল যেতে যেতে হটাৎ আদিত্য দাঁড়িয়ে পরে,
"কি হলো?" পিয়ালী জিজ্ঞেস করে, উত্তরে আদিত্য বলে "জানিনা হটাৎ কেমন একটা অদ্ভুত ফিল হচ্ছে"
"তোমার শরীর খারাপ লাগছে নাকি?"
"না সেসব নয়, অনেক বছর পর এই ফিলিংসটা হচ্ছে, বোধহয় যেটার ভয় পাচ্ছিলাম সেটাই"
"চলো ফিরে যাই, আমার ভয় লাগছে"
"না, আর তোমাকে তো বলেছি আমি থাকতে তোমাকে কেউ ছুঁতে পারবে না আমার উপরে ভরসা নেই?"
"আমার তোমার জন্যই ভয় লাগছে"
"চলো, তোমার পিছনে লাগা দুজনকে শিক্ষা দেওয়াটা জরুরী"
দুজনে এগিয়ে চলে একটু গিয়েই দেখে সেখানে কিছুটা জায়গা জুড়ে সামিয়ানা টাঙানো হয়েছে এবং অনেক ছেলে মেয়ে একত্রে হাসি ঠাট্টা করছে এবং তারা প্রায় প্রত্যেকেই সমবয়সী ওই ৩০ এর আশেপাশেই বয়স।
"তুমি ওই ছেলেটাকে চেনো যার বিরুদ্ধে কেস ছিল? এখানে আছে?" আদিত্য পিয়ালীকে জিজ্ঞেস করে, উত্তরে পিয়ালী একটা দিকে দেখায় যেখানে ছেলে মেয়েদের জটলা একটু বেশি তবে মধ্যমণি একজন ছেলে এবং একটি মেয়ে, বোঝাই যাচ্ছে এই অনুষ্ঠান এদেরই বিবাহ উপলক্ষ্যে সাথে এদের পাশে আরেকটা ছেলে দাঁড়িয়ে আছে এদের ঘিরে বাকিরা।
পিয়ালী নবদম্পতির পাশে দাঁড়ানো ছেলেটির দিকে আঙ্গুল দেখিয়ে বলে ওই সে আর ওই যে নিউলি ওয়েড গ্ৰুম ওটি ওর সঙ্গী।
আদিত্য পিয়ালীর হাত ধরে সেইদিকে নিয়ে গেল একেবারে ওই তিনজনের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো ফলে স্বভাবতই সবাই অচেনা দুজন ছেলেমেয়েকে দেখে একটু অবাক হলো, আদিত্য বেশ ঠান্ডা স্বরেই বললো
"নমস্কার"
"কে বে তুই?" অত্যন্ত রুক্ষতা এবং তাচ্ছিল্যের সঙ্গেই উত্তর দিল মনোজ,
"আমি ওর হাজবেন্ড" পাশে পিয়ালীকে দেখিয়ে বলে আদিত্য, মনোজ এবার পিয়ালীকে লক্ষ্য করে এবং ওকে দেখে ওর মুখ গম্ভীর হয়ে যায় আদিত্য আবার বলতে থাকে,
"আপনি বলেছিলেন না যে ওকে আপনার কাছে নিয়ে আসতে তাই নিয়ে এসেছি"।
মনোজ একবার চারিদিকে চোখ বোলায় দেখে তার আশেপাশের সবাই তার এবং আদিত্য আর পিয়ালীর দিকে দেখছে আদিত্যর বুঝতে অসুবিধা হয় না যে এদের কাছে মনোজের ক্যারেক্টার ভালো ছেলের, মনোজ এবার রাগে চিবিয়ে চিবিয়ে বলে,
"এসব কি বলছিস তুই? কে তোরা?"
"আমরা কে? খানিকক্ষণ আগেই তো ফোনে আমাদের সাথে কথা হলো আপনি বললেন আমার স্ত্রীকে আপনার হাতে তুলে দিতে আপনি আর আপনার বন্ধু সুশান্ত একরাত এনজয় করে ওকে আমার কাছে ফেরত দেবেন, নিন আমি নিয়ে এসেছি ওকে এবার আপনারা দুজন হাত লাগিয়ে দেখান"
শেষের শব্দগুলো প্রায় চ্যালেঞ্জের সুরে বলে আদিত্য, কিন্তু মনোজ কোনো উত্তর দেয় না সে আবার চারপাশে তাকিয়ে দেখে, আদিত্য আবার বলে, "কি হলো হাত লাগিয়ে দেখান"
উত্তরে মনোজ কিছু বলতে যাচ্ছিল কিন্তু তার আগেই একটা থাপ্পড় তার গালে এসে পরে আর সেটা মেরেছে আদিত্য, সঙ্গে সঙ্গে পাশ থেকে বন্ধুকে বাঁচাতে সুশান্ত এগিয়ে আসে এবং পরক্ষণেই চোয়ালে একটা ঘুষি খেয়ে ছিটকে পড়ে।
আশেপাশে যারা ছিল তারা এই আকস্মিক ঘটনায় এতটাই হতচকিত হয়ে গেছে যছ সবাই পাথরের মূর্তির মতো স্থির হয়ে দেখছে। কিন্তু মনোজ আর সুশান্ত মার হজম করার ছেলে নয় ওরা আদিত্যকে মারতে এলো এবং আবার আদিত্যর ঘুষি খেয়ে ছিটকে পিছনে পরলো, এরপর আদিত্য ওদের দুজনের একজনকে ধরে পরপর কয়েকটা চড় মারে ফেলে দেয় তারপর অপরজনকে ধরে চড় মেরে ফেলে দেয়।
এবার প্রথমে নববধূ চিৎকার করে ওঠে "কে আছো? বাঁচাও... সিকিউরিটি" বলে এবং সাথে আরো কয়েকজন। এই চিৎকার শুনেই বোধহয় কয়েকজন ষণ্ডামার্কা লোক ডান্ডা হাতে দৌড়ে আসতে থাকে, আদিত্য এবার মনোজ আর সুশান্তকে ছেড়ে দেয় তারপর হাত থেকে ঘড়িটা খুলে পিয়ালীর দিকে বাড়িয়ে ধরে পিয়ালীও কোনো কথা না বলে স্বামীর ঘড়িটা ধরে।
এরপর ওখানে রীতিমতো একটা ছোটোখাটো ঝড় বয়ে গেল ঝড় থামার পরে দেখা গেল আদিত্য হাতে একটা ডান্ডা নিয়ে নিজের পায়েই দাঁড়িয়ে আছে কিন্তু যারা ওকে মারার জন্য এগিয়ে আসছিল তারা কেউ দাঁড়িয়ে নেই, কেউ হাঁটু ধরে , কেউ হাত, কেউ মাথা ধরে মাটিতে গড়াগড়ি খাচ্ছে।
এবার আদিত্য আবার মনোজ আর সুশান্তর দিকে এগিয়ে যায় ইতিমধ্যে আরও কয়েকজন লোক এবং মহিলা এসে গেছে তিনি রীতিমতো হুঙ্কার দিচ্ছে "অ্যাই ছেলে কে তুমি, আমার ছেলেকে মারছো কেন?"
"আপনি আপনার ছেলেকে ঠিকমতো শিক্ষা দিতে পারেননি মানুষ করতে পারেননি, ওকে এখন মানুষ হয়তো করতে পারবো না কিন্তু কিছু শিক্ষা দিয়ে যাচ্ছি"
বলে আদিত্য আবার মনোজ আর সুশান্তকে ডান্ডা দিয়ে ঠাণ্ডা করতে থাকে। আশেপাশের লোকজন "ছেড়ে দাও.. অ্যাই কে আছিস ধর ওকে"চিৎকার করতে থাকে কিন্তু কে শোনে? আদিত্যর কি করতে পারে সেটা একটু আগেই সবাই দেখেছে তাই এখন সবাই মুখে বললেও ওকে আটকানোর জন্য ওর কাছে যেতে কেউ সাহস করছে না আর সেই সুযোগে আদিত্য মনের সুখে দুজনকে ঠেঙিয়ে যাচ্ছে।
"এখানে এইসব কি হচ্ছে?" হঠাৎই একটা গুরুগম্ভীর স্বর শুনে সবাই চমকে ওঠে এমনকি আদিত্যও থেমে যায়, পিয়ালী এবং আদিত্য তাকিয়ে দেখে বক্তাকে, তার ব্যাক্তিত্বই এমন যে সবাই সম্ভ্রমের সঙ্গে দাঁড়িয়ে আছে কেউ তার দিকে সোজা দৃষ্টি দিচ্ছে না, ইনিই যে অভিরূপ ব্যানার্জী সেটা আর না বললেও চলে পুরো কলকাতা শহরে খুব কম লোকই আছেন যারা তাঁকে চেনেন না।
আদিত্য তাকিয়ে দেখে অভিরূপবাবুর পিছনে আরও তিন-চারজন লোক দাঁড়িয়ে আছেন তাদের মধ্যে একজন এই এলাকার বিধায়ক যার আত্মীয়ের মেয়ের সঙ্গে সুশান্তর বিয়ে হচ্ছে, তার পাশে দাঁড়িয়ে আছেন যিনি খুব সম্ভবত তিনিই কন্যার পিতা, পারিবারিক সূত্রে শুধু নয় এনাদের মধ্যে বন্ধুত্বেরও সম্পর্ক আছে তাই নিঃসংকোচে এসেছেন এদের সাথে প্রীতমবাবু এবং মনোজিতবাবু দাঁড়িয়ে আছেন এছাড়া আরও একজন আছেন তার বয়স ৫০ এর আশেপাশে মাথায় কাঁচা পাকা মেশানো চুল মুখে ফ্রেঞ্চকাট দাঁড়ি, চোখে ফ্রেমহীন আয়তাকার চশমা, এদের প্রায় সবার পরণেই নতুন পাঞ্জাবী এবং পাজামা, অভিরূপবাবুর কাঁধে একটা চাদর আছে।
তাদের দেখেই প্রথমে মনোজ 'বাপি' বলে নিজের বাবার কাছে যায় আর একটু আগের মহিলা যিনি আসলে সুশান্তর মা এবং অভিরূপবাবুর বোন মণিমালা দেবী তিনি দাদার কাছে অভিযোগ জানাতে থাকেন,
"দেখ না দাদা এই ছেলেটা কোত্থেকে না জানি এসে সুশান্ত আর মনোজকে মারতে শুরু করেছে"।
বলাইবাহুল্য আশেপাশের সবাই এমনকি সুশান্তর নববধূও আদিত্যর দিকে আঙ্গুল তুলছে।
"অ্যাই ছেলে কে তুমি, আমার ছেলের গায়ে হাত দেওয়ার সাহস হয় কিভাবে? জানো এরজন্য তোমার কি অবস্থা করতে পারি?" প্রীতমবাবু একপ্রকার হুমকি দিলেন এবং তার সুরেই সুর মেলালেন মনোজিত বাবু, "ওর আমাদের ক্ষমতা সম্পর্কে কোনো ধারণা নেই মনে হয়, ওকে দেখানো দরকার"
"আপনাদের অনেক ক্ষমতা কিন্তু সেই ক্ষমতা অন্যকে দেখানোর বদলে যদি নিজেদের ছেলেদের দেখাতেন, যদি ওদের সঠিক শিক্ষা দিয়ে মানুষ করতে পারতেন তাহলে আজ আমাকে এখানে আসতে হতো না" আদিত্য ভয়হীন স্বরে উত্তর দেয়।
"তোমার সাহস তো কম নয় আমার সামনে দাঁড়িয়ে আমার ছেলেকে অমানুষ বলছো আবার আমার শিক্ষাকে অপমান করছো?" প্রীতমবাবু আবার হুংকার ছাড়েন, কিন্তু এবার উত্তরটা পিয়ালী দেয় এবং সেটাও ভয়হীন দৃঢ় স্বরে,
"যে ছেলে মেয়েদের সম্মান করতে জানেনা, তাদের সম্মান নিয়ে খেলতে যাদের বিবেকে আটকায় না তাদের মানুষ বলি কিভাবে? ইনফ্যাক্ট আমার তো ওই নববধূর জন্য আফশোষ হচ্ছে বেচারির জীবনটা বরবাদ হয়ে যাবে এরকম স্বামী পেয়ে"
প্রীতমবাবু এবার পিয়ালীর দিকে তাকালেন এবং পরক্ষণেই মনোজিত বাবুর সাথেও দৃষ্টি বিনিময় করলেন।
"এখানে উপস্থিত অনেকেই বিবাহিত, আপনারাই বলুন কেউ যদি আপনাদের স্ত্রীকে অপমান করে বা তাকে তুলে নিয়ে গিয়ে রেপ করতে চায় তাহলে স্বামী হিসেবে আপনার কি করণীয়? আপনারা কি নিজের স্ত্রীকে সেই লম্পটের হাতে তুলে দেবেন নাকি সেটাই করবেন যেটা আমি করেছি?"
আদিত্যর এই দৃপ্ত স্বরে আশেপাশের যারা এতক্ষণ ওর বিরুদ্ধে কথা বলছিল তারা চুপ করে যায় আদিত্য পিয়ালীকে দেখিয়ে বলতে থাকে,
"এই হলো আমার স্ত্রী, বিয়ের আগে ওকালতি করতো তখন একটা কেসে এই মনোজের বিরুদ্ধে লড়তে রাজী হয় কিন্তু কেসটা কোর্টে ওঠার আগেই ভিক্টিম অর্থাৎ ওর ক্লায়েন্ট মারা যায় এবি কেসটা বন্ধ হয়ে যায় কিন্তু এনারা আমার ওয়াইফের পিছনে পরে যায় এর আগেও ওরা লোক পাঠিয়েছিল কিন্তু তারা ফেল করে, তাই আবার পাঠায় এখন তো আমার ওয়াইফ প্র্যাকটিস করেনা, সেকথা আমি ওনাদের জানিয়ে আগের ব্যাপার মেটাতে চাই, ক্ষমাও চাই উত্তরে ওনারা দুজন কি বলেছেন জানেন? বলেছেন আমি যেন আমার স্ত্রীকে একরাতের জন্য ওনাদের হাতে তুলে দিই ওনারা ওর সাথে মজা করে ফেরত দেবেন... এবার আপনারাই বলুন আমি যা করেছি সেটা ঠিক না ভুল?...বলুন"।
আশেপাশের ছেলে মেয়েগুলোর মুখ থেকে একটা শব্দও বেরোয় না, শব্দ বেরোয় মনোজের মুখ থেকে যথারীতি সে অস্বীকার করে, "মিথ্যে কথা আমি এই মেয়েকে চিনিই না"
"আমার কাছে প্রমাণ আছে" আদিত্যর কথায় জোঁকের মুখে নুন দিলে যেমন হয় মনোজের মুখ সেরকম হয়ে গেল।
"কি প্রমাণ? আর যদি প্রমাণ থাকেই তাহলে পুলিশের কাছে যাওনি কেন? জানোনা কেউই আইন নিজের হাতে তুলে নিতে পারে না, সেটাও এক ধরনের ক্রাইম?" এই প্রথম মুখ খুললেন স্বর্ণেন্দু বাবু।
"স্যার, আপনার সম্পর্কে অনেক শুনেছিলাম সবই ভালো কথা যে আপনি কখনো অন্যায়কে সাপোর্ট করেন না, সবসময় তার বিরোধিতা করেন এমনকি এও শুনেছি যে যদি কোনো ক্লায়েন্ট অপরাধী হয় তাহলে আপনি সেই কেস নেন না, কিন্তু এখন দেখছি পুরোটাই মিথ্যা এখানে তো আপনি অপরাধীদেরই সাপোর্ট করছেন" ব্যাঙ্গের সুরে কথা বলে পিয়ালী।
"আমি এখনো কাউকেই সাপোর্ট করছি না, শুধু আইনটা বললাম"
"আপনার মতো না হলেও আইন আমিও কিছুটা জানি, আপনার আইন কি নতুন উকিলদের সেফটি দেয়? যে পুলিশের কথা বলছেন সেকরম এক পুলিশই আমার কাছে কেসটা এনেছিল কারণ কেউ এই কেসে মিস্টার মনোজ দত্তের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে চায়নি, আমি দাঁড়িয়েছিলাম আর কো-ইন্সিডেন্ট বলুন বা ষড়যন্ত্র কেস কোর্টে ওঠার ঠিক আগেই ভিক্টিম মারা যায় এবং এক অজ্ঞাত কারণে তার ফ্যামিলি কেস উইথড্র করে নেয়"।
"কেসটা ওখানেই শেষ হয়ে যাওয়া উচিত ছিল কিন্তু ওনারা সেটা করেননি ওনারা নিজেদের ক্ষমতার অপব্যবহার করে আমার ওয়াইফের ক্ষতি করার চেষ্টা করতে থাকেন। আপনি বলছেন পুলিশের কাছে যাইনি কেন? কোন অফিসার ব্যানার্জী পরিবারের ছেলে বা তার পরিচিতর বিরুদ্ধে কেস নেবে একটু বলবেন? আমরা সাধারণ মানুষ বেশি ঝামেলা পছন্দ করি না, আমাদের সেই ক্ষমতাও নেই যে আপনাদের সঙ্গে লড়াই করবো তাই আমি অন্যায় না থাকা সত্বেও আমার ওয়াইফের হয়ে ক্ষমা চেয়েছিলাম কিন্তু ওনারা.." আদিত্য আবার দৃঢ় স্বরে কথা বলে এবার অবশ্য স্বর্ণেন্দু বাবুও চুপ করে থাকেন।
"তুমি বলছিলে প্রমাণ আছে সেটা দেখাও"
এতক্ষণে এইপ্রথম কথা বললেন অভিরূপবাবু এতক্ষণ তিনি চুপ করে কথা শুনছিলেন এবার নিজে মুখ খোলেন।
"মামা ও মিথ্যা কথা বলছে তুমি বিশ্বাস করো" সুশান্ত কথা বলে, তাকে সাপোর্ট করে তার মা মণিমালা দেবী "দাদা তুই এই বাইরের ছেলেটাকে বিশ্বাস করছিস? সুশান্ত তোর নিজের ভাগ্নে ও এরকম কাজ করতে পারে বলে তোর মনে হয়?"
"একজন বাইরের ছেলে তো শুধু শুধু এতবড়ো একটা অভিযোগ আনছে না বা শুধু শুধু বাড়ি বয়ে এসে ওকে ঠ্যাঙাচ্ছে না"
"কিন্তু মামা?"
"তুমি যদি কোনো অন্যায় না করে থাকো তাহলে তো তোমার ভয় পাওয়ার কিছু নেই? কই দেখি কি প্রমাণ" অভিরূপ বাবু শেষের কথাটা অবশ্য আদিত্যকে উদ্দেশ্য করে বলেন।
"দেখাবো না শোনাবো"
"বেশ শোনাও"
অভিরূপবাবুর কথা শুনে আদিত্য কিছু বলতে যাচ্ছিল কিন্তু হটাৎ একটা বাচ্চা মেয়ের আওয়াজ পেয়ে থেমে যায়,
"সুপারম্যান আংকেল, তুমি এখানে?"
একটা ৬ বছরের বাচ্চা মেয়ে হঠাৎই আদিত্যর সামনে এসে দাঁড়ায় এতে আদিত্য প্রথমে কিছুটা অবাক হলেও তারপর নিজেকে সামলে নেয়। বাচ্চাটি আদিত্যর সামনে এসে ওর দিকে তাকিয়ে থাকে অপরদিকে আদিত্যও বাচ্চাটির দিকে তাকিয়ে থাকে, অভিরূপবাবু এবং স্বর্ণেন্দু বাবু এমনকি পিয়ালীও অবাক হয়ে এই দুজনকে দেখছে।
"পিউ দিদি, তুমি কাকে কি বলছো? তুমি ওকে চেনো?" স্বর্ণেন্দু বাবু বাচ্চা মেয়েটিকে বলেন, উত্তরে মেয়েটি বলে, "হ্যাঁ, দাদুন আমি চিনি" তারপর আদিত্যর দিকে তাকিয়ে বলে "আমাকে চিনতে পারছো না সুপারম্যান আংকেল? আমি পিউ"।
আদিত্য একটু হেসে দুহাতে বাচ্চা মেয়েটিকে কোলে তুলে নেয় তারপর মোলায়েম স্বরে বলে, "আমি তো তোমাকে চিনতে পেরেছি কিন্তু তুমি আমাকে চিনলে কিভাবে? আমাকে তোমার মনে আছে? কারণ একে তো তোমার সাথে আমার একবারই দেখা হয়েছিল সেটাও অল্পসময়ের জন্য তাও আবার অনেকদিন আগে, তার উপরে তখন আমার মাথায় লম্বা চুল, মুখভর্তি দাঁড়িগোঁফ, তুমি আমাকে চিনতে পেরেছো সেটাই আশ্চর্যের, আমাকে চেনার কথা নয়"
"জানিনা কিভাবে চিনলাম, ওখান থেকে তোমাকে দেখেই আমার মনে হলো, আরে এই তো সুপারম্যান আংকেল"।
বাচ্চা মেয়েটি যেদিকে দেখালো সেদিকে তাকিয়ে আদিত্য কয়েক মূহুর্তের জন্য থমকে গেল সেখানে একজন যুবক যুবতী দাঁড়িয়ে আছে এদের দিকেই মেয়েটি দেখালো কিন্তু আদিত্য তাদের পাশে থাকা দুজনের দিকে দেখছে এদের মধ্যে ছেলেটি একটা হুইলচেয়ারে বসে আছে এবং চেয়ারের পিছনে দাঁড়িয়ে আছে এক যুবতী, আদিত্য কিছুক্ষণ তাদের দিকে তাকিয়ে রইলো।
"জানো আমি তোমাকে খুব মিস করেছি" আবার বাচ্চাটির কথায় চমক ভাঙে আদিত্যর, "তাই?"
"হ্যাঁ, আমি মাম্মাকে আর ড্যাডিকে অনেকবার বলেছি তোমাকে নিয়ে আসতে কিন্তু ওরা আনেনি, আচ্ছা তুমি আমার বার্থডে তে এলে না কেন?"
"এই রে.. ভুল হয়ে গেছে আমি তো জানতাম না যে কবে তোমার বার্থডে জানলে অবশ্যই আসতাম"।
"এখন আমি তোমার সাথে কথা বলবো না, রেগে আছি" বাচ্চা মেয়েটি লাগে মুখ ফুলিয়ে থাকে, আদিত্য একটু হেসে বলে, "আচ্ছা তাহলে আমি কি করবো যাতে তোমার রাগ ভাঙে?"
"আমার সাথে দেখা করতে আসবে এবং খেলবে?"
"আচ্ছা ঠিক আছে আমি যখন তোমাদের পাড়ায় যাবো তখন তোমার সাথে অবশ্যই দেখা করবো, এবার খুশী তো?"
"প্রমিস?"
"প্রমিস, কিন্তু এদিকে যে আমি আরেকটা ভুল করে ফেলেছি.. তোমার জন্য কোনো গিফ্ট আনিনি আমি তো জানতাম না যে এখানে তোমার সাথে দেখা হবে তাই আনা হয়নি, ভেরি সরি"
"ঠিক আছে তবে প্রমিস ভুলো না যেন তাহলে আমি কিন্তু আবার রেগে যাবো"
"ওরে বাবা আর ভুল হবে না, তোমাকে আমি রাগাতে পারি?" বলে আদিত্যর বাচ্চাটির দুগালে দুটো স্নেহচুম্বন দিল উত্তরে বাচ্চাটিও আদিত্যর দুগালে হামি দিল।
"তোমার আংকেল গিফ্ট ভুললেও আমি কিন্তু ভুলিনি" কথাটা বলে পিয়ালী পার্স থেকে একটা বড়ো ক্যাডবেরী বার করে এগিয়ে দেয়।
"তুমি কে?" বাচ্চাটি জিজ্ঞেস করে, উত্তরটা আদিত্যই দেয়,
"ও তোমার একটা আন্টি ওর নাম পিয়ালী"
"পিয়ালী আন্টি?"
"হ্যাঁ, এবার আন্টির গিফ্টটা নাও"
বাচ্চাটি ক্যাডবেরীটা নিতেই পিছন থেকে এক যুবতী বারণ করলো, "না না ওসবের দরকার নেই" যুবতী আরও কিছু বলতে যাচ্ছিল কিন্তু তার আগে তার পাশে দাঁড়ানো যুবকটি তাকে আটকালো, বললো
"শিশুরা ঈশ্বরের রূপ তারা নিষ্পাপ, আমরা বড়োড়া অকৃতজ্ঞ উপকারীর উপকার ভুলে যাই কিন্তু শিশুরা ভোলে না তাই দেখো যে আমাদের মেয়ের প্রাণ বাঁচিয়েছিল তাকে আমরা ভুলে গেলেও পিউ কিন্তু ভোলেনি" তারপর যুবকটি আদিত্যর সামনে এসে হাতজোড় করে বলে "আমাকে চিনতে পারছেন? আমি মৈনাক পিউর বাবা"
"নমস্কার"
"আমি সত্যিই আপনাকে চিনতে পারিনি আপনাকে কতটা অকৃতজ্ঞ আমরা"
"না না ইটস্ ওকে সেটাই স্বাভাবিক তখন আমার যা রূপ ছিল অনেকেই চিনতে পারবে না"
"পিউ কিন্তু চিনতে পেরেছে ওর জীবনদাতাকে" তারপর নিজের স্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে মৈনাক বলে, "সুনন্দা তুমি ওনাকে চিনতে পারছো না? উনিই আমাদের পিউকে গাড়ির থেকে বাঁচিয়েছিলেন"
"হ্যাঁ, এবার মনে পরেছে" সুনন্দা একটু লজ্জিত কণ্ঠে বলে।
"আচ্ছা এবার ওকে এখান থেকে নিয়ে যান, এখানে বড়োদের কথার মাঝে ওর না থাকাটাই উচিত" পিউকে মৈনাকের কোলে দিয়ে আদিত্য বলে,
"বাই আংকেল, বাই আন্টি তোমরা দুজনেই আসবে কিন্তু" যেতে যেতে বাচ্চা মেয়েটি বলতে থাকে।
"অবশ্যই আসবো" পিয়ালী এবং আদিত্য দুজনেই তাকে আশ্বাস দেয়, পিউ চলে যেতেই আদিত্যর মুখ থেকে হাসিটা মিলিয়ে গিয়ে আবার আগের গাম্ভীর্য ফিরে এলো তবে সে কিছু বলার আগেই স্বর্ণেন্দু বাবু তাকে বললেন "থ্যাংকস"
"কিসের জন্য?"
"তুমি আমার নাতনীকে বাঁচিয়েছো তার জন্য"
"ওটার জন্য থ্যাংকস এর কোনো দরকার নেই, যাইহোক আপনারা প্রমাণ চাইছিলেন সেটার আগে কিছু কথা বলে নেওয়া দরকার.... আমাদের বিয়ের আগে ও কসবা এলাকার একটা মেসে থাকতো সেখানে আগে কয়েকজন এসেছিল কিন্তু সৌভাগ্যবশত সেদিনও আমি উপস্থিত থাকি এবং ওরা ব্যার্থ হয় তারপর আমি ওকে আমার বাড়িতে নিয়ে যাই কিন্তু আজ একটা কারণে আবার মেসে ফিরে এলে নতুন একদল লোক আসে তারা অবশ্য এখন কি অবস্থায় আছে বলা মুশকিল কারণ ওই এলাকার স্থানীয় বাসিন্দারা ওদের ঠ্যাঙাবেন বলে নিয়ে গেছেন, ওরা নাকি ওখানকার মেয়েদের সাথে খারাপ ব্যবহার করে আপনারা খোঁজ নিলেই জানতে পারবেন। তো ওদেরই একজন তাদের লিডার অর্থাৎ আপনাদের মনোজকে ফোন করে এবং তখনই ওনার সাথে আমার কথা হয়"
এবার আদিত্য পকেট থেকে একটা ফোন বার করে পিয়ালী অবাক হয়ে দেখে এটা আদিত্যর নিজের ফোনটা নয় এটা সেই ফোনটা যেটা সে সেই গুণ্ডাদের নেতার থেকে নিয়েছিল, এবার আদিত্য সেই ফোনে কিছু একটা করে এবং সেটা থেকে একটা কথোপকথন বাজতে থাকে একটা কল রেকর্ডিং, এবং সেটা যে আদিত্যর সাথে মনোজের কথোপকথনের সেটা পিয়ালীর বুঝতে বাকি থাকে না, সে বুঝতেও পারেনি কখন আদিত্য এই কাজটা করেছে অর্থাৎ এই কলটা রেকর্ড করে নিয়েছে, ফোনের ভিতল থেকে মনোজ এবং আদিত্য দুজনের এবং সাথে সুশান্তর আওয়াজ বেরোতে থাকে,
"হ্যা..হ্যালো স্যার"
"কি হয়েছে?"
"স্যার আমি ক্ষমা চাইছি আমার ওয়াইফের হয়ে, ওকে আর আমাকে ক্ষমা করে দিন প্লিজ"।
"কেনো রে ভয় পেয়ে গেলি?"
"ভয় না পেয়ে উপায় আছে? আপনি কত বড়ো মানুষ?"
"তাহলে আমার লোকদের মেরেছিলি কেন?"
"ভুল হয়ে গেছে, আর তখন তো আমি জানতাম না যে ওরা আপনার লোক"
"প্লিজ স্যার আমাদের ক্ষমা করে দিন"
"ঠিক আছে যা তোকে ছেড়ে দিলাম"
"থ্যাংক ইউ স্যার থ্যাংক ইউ"
"আমার লোকজন তোকে ছেড়ে দেবে কিন্তু.."
"কিন্তু?"
"তোর ওই উকিলটাকে আমার পছন্দ হয়ে গেছে, ওকে আমার লোকেদের হাতে তুলে দে"
"স্যার.. এ কি বলছেন, প্লিজ স্যার এরকম করবেন না"
"অ্যাই... তোকে রিকোয়েস্ট করছি না এটা অর্ডার"
"প্লিজ স্যার"
"চোপ.. তোকে ছেড়ে দিচ্ছি এটাই অনেক, এবার চুপচাপ কেটে পর"
"স্যার"
"অ্যাই.. এবার আর কোনো কথা বললে তোকে মেরে ওকে তুলে নিয়ে আসবে আমার লোকেরা"
"না.. স্যার আমাকে কিছু করবেন না"
"তাহলে চুপচাপ কেটে পর, আচ্ছা যা শুধু একটা রাত তোর বউকে নিয়ে আমি মজা করবো তারপর আবার তোর কাছে ফিরিয়ে দেবো"
"ঠিক আছে স্যার.... কোথায় আসতে হবে?"
"তোকে আসতে হবে না.. আচ্ছা তুইও আয় তোর বউএর সাথে যখন আমরা মস্তি করবো তখন তুই সেটা দেখে হ্যাণ্ডেল মারবি"
"আমরা?"
"হ্যাঁ, ওর সাথে আমিও আছি, আমার আর সহ্য হচ্ছে না বুঝলি ভাই মনোজ"
"অপেক্ষা তো আমারও হচ্ছে না সুশান্ত, কিন্তু রাত পর্যন্ত তো অপেক্ষা করতেই হবে, আজ রাতে ফুল মস্তি হবে কিন্তু সুশান্ত তোর তো বিয়ে হয়ে গেছে এখন তো শুধু নিজের বউএর সাথে মস্তি করবি"
"বউকে তো রোজই পাবো কিন্তু এই উকিলটাকে তো রোজ রোজ পাবো না"
"ভাবছিস কেন যদি ভালো লাগে তাহলে আবার নিয়ে এসে মস্তি করবো যখনই ইচ্ছা হবে তুলে নিয়ে এসে লাগাবো"
"শোন আমার লোকদের বলা আছে কোথায় আনতে হবে, তুই চাইলে আয় নাহলে চলে যা"
"ঠিক আছে, আসছি"।
কথোপকথন এখানেই শেষ, সঙ্গে সঙ্গে পিয়ালীর বিদ্রুপের ধ্বনি শোনা যায়, "স্বর্ণেন্দু স্যার, এটাকে কি বলবেন? আপনার চোখে এটা কি ক্রাইম নয়? অবশ্য নাও হতে পারে হাজার হোক আপনার পরিচিত আপনার চোখে তো শুধু আমার হাজবেন্ড ক্রাইম করেছে"
স্বর্ণেন্দু বাবু চুপচাপ খোঁচাটা হজম করলেন যদিও তিনি উত্তর দিতে পারলেন কিন্তু দিলেন না উল্টে স্বামীর প্রতি এই মেয়েটির ভালোবাসা দেখে খুশীই হলেন।
"তাহলে প্রমাণ পেলেন?" এবারে আদিত্য মুখ খোলে, সুশান্ত কোনোমতে তোতলাতে তোতলাতে বলতে চেষ্টা করে যে এটা মিথ্যা কিন্তু অভিরূপবাবুর ধমক খেয়ে আর চুপ করে যায়, কিন্তু আদিত্য বলতে থাকে এবং তার উদ্দেশ্যে প্রীতমবাবু এবং মনোজিত বাবু
"আপনাদের অনেক ক্ষমতা কিন্তু এবার থেকে সেই ক্ষমতা নিজেদের ছেলেদের শোধরানোর কাজে ব্যবহার করুন, আপনারা পুরো শহর জুড়ে কি কি করে বেড়ান তার কিছু কিছু খবর জানি কিন্তু তাতে আমার কিচ্ছু যায় আসে না কিন্তু ফের যদি আমার ওয়াইফের বা আমাদের লাইফে কোনোরকম ডিস্টার্বেন্স ক্রিয়েট করেন তাহলে তার ফল ভালো হবে না"
"এটা কি হুমকি?"
আদিত্যর প্রতি অগ্নিদৃষ্টি দিয়ে প্রশ্ন করেন প্রীতমবাবু, উত্তরে আদিত্যও ভয়হীন অথচ কঠিন স্বরে বলে,
"যা ভাবতে চান, আপনাদের লাইফ আর আমাদের লাইফ সম্পূর্ণ আলাদা তাদের মধ্যে কোনো কানেকশন নেই আর এখন তো আমার ওয়াইফও ওকালতি ছেড়ে দিয়েছে তাই আপনারা আপনাদের মতো থাকুন আমরা আমাদের মতো থাকি কেউ কারো লাইফে না ঢোকাই ভালো আগে যা কিছু হয়েছে সেটা ভুলে যাওয়াই উচিত, তাই নয়কি?" শেষের কথাগুলো অবশ্য আদিত্য বলে অভিরূপবাবু এবং প্রীতমবাবুর দিকে তাকিয়ে ওনাদের উদ্দেশ্য করে।
"তোমাদের আর কেউ কোনো ডিস্টার্ব করবে না, আমি কথা দিচ্ছি" অভিরূপ বাবু তার গম্ভীর স্বরে বলেন কিন্তু মনোজিত বাবু এবার প্রতিবাদ করেন, "কিন্তু মিস্টার ব্যানার্জী ও হুমকি দিচ্ছে"
"আপনার ছেলে যা করেছে তাতে ওকে যে এখনো মেরে ফেলেনি এটাই অনেক মনোজিত বাবু, আপনারা যা শুরু করেছেন তাতে ব্যানার্জী পরিবারের নাম খারাপ হচ্ছে, আর প্রীতম এবং মণি দেখো ছেলেকে কি শিক্ষা দিয়েছো তোমরা, ওকে এবার শুধরে যেতে বলো নাহলে কোনোদিন রাস্তায় মার খেয়ে মরবে তখন ক্ষমতা দেখিয়ে কোনো লাভ হবে না, ওদের ভাগ্য ভালো ওরা পুলিশে জানায়নি নাহলে জেলের ভাত খেতে হতো"
চার বাপব্যাটা মুখে কিছু না বললেও এমনভাবে আদিত্যকে দেখছে যেন পারলে এখনই ওকে টুকরো টুকরো করে কাটে ওদের এই ভাবভঙ্গি অভিরূপবাবুও বোধহয় লক্ষ্য করলেন যেটা তার পরের কথাতেই পরিষ্কারভাবে বোঝা গেল "আর এরপর যদি আবার তোমরা ওদের কোনো ক্ষতি করার চেষ্টা করো তাহলে আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না" তারপর আদিত্যকে উদ্দেশ্য করে তিনি বললেন, "আর তুমি আমার কার্ড রাখো যদি কোনো প্রবলেম হয় তাহলে সোজা আমাকে জানাবে" বলে তিনি নিজের একটা কার্ড আদিত্যকে দিলেন তারপর আবার বললেন, "আমাকে বা স্বর্ণেন্দুকে জানালেও হবে স্বর্ণেন্দু তুমিও তোমার একটা কার্ড ওদের দাও"
এবার স্বর্ণেন্দু বাবুও নিজের একটা কার্ড দিলেন, আদিত্য কার্ড দুটি নিয়ে "থ্যাংকস" বললো তারপর হটাৎ কি মনে হওয়াতে প্রথমে অভিরূপবাবু আর তারপর স্বর্ণেন্দু বাবুকে প্রণাম করলো এতে দুজনেই কিছুটা
হকচকিয়ে গেলেন পরক্ষনেই পিয়ালীও যখন তাদের প্রণাম করলো তখন তারা একটু অবাকই হলেন, অভিরূপবাবু অবশ্য কিছুক্ষণ আদিত্যর দিকে তাকিয়ে রইলেন এক অদ্ভুত দৃষ্টি তার চোখে একধারে অবাক অবিশ্বাস, বিষ্ময় সবকিছুই মিশে আছে সেই দৃষ্টিতে, উল্টোদিকে আদিত্যও একবার তারদিকে তাকিয়ে চোখ নামিয়ে নেয় তারপর চলে আসার জন্য পিছন ফিরে হাঁটতে যাচ্ছে এমন সময় একটা কুকুরের আওয়াজ শোনা যায় প্রায় পরক্ষণেই দেখা যায় একটা সাদা রঙের কুকুর ডাকতে ডাকতে দৌড়ে আসছে একজন বয়স্ক লোক তার পিছু পিছু দৌড়ে আসছে, ওকে আসতে দেখে এতক্ষণে সুশান্তর মুখে কথা ফোটে সে আদিত্যকে উদ্দেশ্য করে বলে,
"এবার দেখ টোবো তোর কি করে, বাইরের কেউ যদি এইবাড়ির কারো ক্ষতি করার চেষ্টা করে তাহলে ও তাকে আস্ত রাখে না"।
"টোবো.. কি হচ্ছে?" অভিরূপবাবু ধমকে ওঠেন কিন্তু কুকুরটার সেদিকে খেয়াল নেই সে দৌড়ে এসে হটাৎই থেমে গিয়ে এদিকওদিক দেখছে যেন কাউকে খুঁজছে, পিছনে আসা বয়স্ক মানুষটা হাঁফাতে হাঁফাতে বলে, "বাবু আজ কেন যেন হটাৎই ডাকতে শুরু করে তারপর এদিকে দৌড় দেয় আমি ধরতে পারিনি"
এদিকে কুকুরকে দেখে আশেপাশের সবাই থমকে গেছে এমনকি আদিত্য আর পিয়ালীও তাকে দেখতে থাকে।
এদিকওদিকে দেখতে দেখতে একসময় কুকুরটার দৃষ্টি আদিত্যর উপরে এসে থামে এবার সে পায়ে পায়ে আদিত্যর কাছে এগিয়ে এসে প্রথমে কিছুক্ষণ ওর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে তারপর পায়ের কাছে কিছু একটা শোঁকে এবং তারপর দুএকবার ডেকে ওঠে সাথে আনন্দে ঘনঘন লেজ নাড়াতে থাকে, অভিরূপবাবু পর্যন্ত অবাক হয়ে যান কুকুরটার এইরকম আচরণ দেখে।
এবারে কুকুরটা আদিত্যকে প্রদক্ষিণ করা শুরু করে সাথে ডাক আর লেজ নাড়ানো তো আছেই এরপর একসময় আবার আদিত্যর সামনে এসে পিছনের দুপায়ে ভর দিয়ে সামনের পা দুটো আদিত্যর উপরে তুলে সোজা হয়ে দাঁড়ায়, আশেপাশের সবাই অবাক বিস্ময়ে দুজনকে দেখতে থাকে।
আদিত্য এতক্ষণ স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে দেখছিল এবার বাঁহাত দিয়ে কুকুরটার মাথায় আলতোভাবে বোলাতে থাকে এতে কুকুরটার লেজ নাড়ানো আরও বেড়ে যায় কিন্তু বেশীক্ষণ সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে পারে না এবার সে আদিত্যর পায়ের কাছে প্যান্টের কিছুটা কামড়ে ধরে টানতে শুরু করে যেন ওকে কোথাও নিয়ে যেতে চাইছে।
আদিত্যও অবশ্য ওর ডাকে সাড়া দিয়ে ওর পিছু পিছু চলতে থাকে এবং ওর সাথে পিয়ালী, অভিরূপবাবু, স্বর্ণেন্দু বাবুও আসে। কুকুরটা ওকে একটা ছোট্টরুমের সামনে নিয়ে যায় রুমটা সত্যিই ছোটো বোধহয় কুকুরটার থাকার জন্যই তৈরি করা, এবার কুকুরটা রুমটার ভিতরে ঢুকে যায় এবং একটু পরেই মুখে করে একটা ছোটো লাল বল নিয়ে বেরিয়ে আসে, এসে আদিত্যর পায়ের কাছে বলটা রেখে ওর মুখের দিকে তাকিয়ে একবার ডেকে লেজ নাড়তে থাকে, আদিত্য বুঝতে পারে কুকুরটা কি চাইছে সে এখন এই বল নিয়ে আদিত্যর সাথে খেলতে চাইছে।
আদিত্য এবার কুকুরটার সামনে হাঁটু মুড়ে বসে বলটা হাতে তুলে নেয় তারপর একটা দিকে ছুঁড়ে দেয় আর কুকুরটা তৎক্ষণাৎ সেদিকে ছুটে যায় বলটা নিয়ে আসতে, আদিত্য তাকিয়ে দেখে অভিরূপবাবু, স্বর্ণেন্দু বাবু এবং পিয়ালী অবাক বিস্ময়ে এই ঘটনা দেখছে।
কুকুরটা চলে যেতেই আদিত্য উঠে দাঁড়ায় এবং ইশারায় পিয়ালীকে আসতে বলে যেদিকে বাইক পার্ক করেছিল সেদিকে পা বাড়াতেই পিছন থেকে এক মহিলার "কে?"শুনে থেমে যায় কিন্তু পিছনে ফেরে না এবার কেউ একটা হাত আদিত্যর কাঁধে রাখে ফলে তাকে ঘুরতেই হয়।
পিছনে এক মহিলা দাঁড়িয়ে আছেন তিনিই আদিত্যর কাঁধে হাত রেখেছিলেন তার পিছনে আরও এক মহিলা দাঁড়িয়ে আছেন হাতে একটা বড়ো পূজোর ডালা নিয়ে, বোধহয় দুজনে কোনো মন্দিরে গিয়েছিলেন পূজো দিতে।
"কি হলো শ্রী?" অভিরূপবাবু নিজের স্ত্রীকে প্রশ্ন করলেন, শ্রীতমাদেবী উত্তর না দিয়ে একদৃষ্টিতে আদিত্যকে নিরীক্ষণ করতে থাকেন আদিত্যও কোনো কথা না বলে শ্রীতমাদেবীর দিকে তাকিয়ে থাকে।
"দিদি তুই ওকে চিনিস?" স্বর্ণেন্দু বাবু দিদিকে প্রশ্ন করেন, কিন্তু শ্রীতমাদেবী ভাইয়ের কথার কোনো উত্তর না দিয়ে পিছনে দাঁড়ানো মহিলার হাতের ডালা থেকে একটা সন্দেশ এগিয়ে দেন আদিত্যর দিকে বলেন, "পূজোর প্রসাদ নাও"।
I'm the King of Dark
&
I rule over all Devils