21-05-2023, 11:50 PM
দ্বিতীয় পার্ট
৯বম পর্ব
কথায় আছে সকাল দেখেই বোঝা যায় যে পুরো দিনটা কেমন যাবে কিন্তু কথাটা সবসময় বোধহয় সত্যি নয় যদি সত্যি হতো তাহলে ব্যানার্জী পরিবার তাদের উপর আসন্ন বিপদের আগমন বার্তা বুঝতে পারতো কিন্তু সেটা তারা পারেনি।
প্রতিদিনের মতোই ব্যানার্জী পরিবারের সবাই সকালে উঠে নিজের নিজের কাজে ব্যাস্ত হয়ে গেছে। বাড়ির দুই সিনিয়র মহিলা বাড়ির কর্ত্রী শ্রীতমাদেবী কিচেনে সবার খাবারের ব্যবস্থা করছেন তার সঙ্গে তাকে সাহায্য করছেন মণিমালা দেবী,বাড়ির বউ মৌমিতা ছেলে মেয়েকে কলেজে যাবার জন্য তৈরী করছে। বাড়ির কর্তা অভিরূপবাবু ড্রয়িংরুমে একটা সোফায় বসে পেপার পড়ছেন, অরুণাভও কাজে যাবার জন্য তৈরী হচ্ছে, প্রীতমবাবুরও অবশ্য ব্যাস্ততা আছে তবে সেটা অন্য কারণে, তার ছেলে সুশান্তর বিয়ে ঠিক হয়েছে প্রীতমবাবুর বন্ধু এলাকার বিধায়কের এক আত্মীয়ের মেয়ের সাথে, কিছুদিনের মধ্যেই আশীর্বাদ তাই কেনাকাটার একটা ধুম লেগে আছে, তিনি অফিস থেকে কদিনের জন্য ছুটি নিয়েছেন কিন্তু অভিরূপবাবু আর অরুণাভকে অফিসে যেতেই হবে।
খাবার তৈরী হয়ে গেলে যে যার মতো বেরিয়ে গেলেন, অভিরূপবাবুর একটা ক্লায়েন্টের সাথে মিটিং আছে তাই তিনি প্রথমে অফিসে যাবেন তারপর অফিসে যাবেন, কিন্তু অরুণাভর সেরকম কোনো ব্যাপার নেই সে সোজা অফিসেই যাবে। দুই বাপ-ব্যাটা একসাথেই বাড়ি থেকে বেরোলো যদিও আলাদা আলাদা গাড়িতে, অভিরূপবাবু নিজে ড্রাইভ করেন না তার জন্য ড্রাইভার আছে অরুণাভবাবুর জন্যও ড্রাইভার আছে কিন্তু সে কদিনের জন্য ছুটি নিয়েছে তাই এইকদিনের জন্য নতুন ড্রাইভার না রেখে নিজেই ড্রাইভ করছে আজও তাই নিজেই গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে গেল কেউ লক্ষ্যই করলো না ওরা বেরিয়ে যেতেই পিছনে একদম আলাদাভাবে প্রীতমবাবু কাউকে ফোন করলেন আর বললেন "এইমাত্র বেরোলো,সবাই রেডি তো?" উত্তরে তার মুখে একটা ক্রুর হাসি ফুটে উঠলো।
নিউ আলিপুরের বাড়ি থেকে বেরিয়ে তাদের রাজারহাটের অফিসটার উদ্দেশ্যে যায় অরুণাভ, এমনিতে পুরো শহর জুড়েই বিভিন্ন জায়গায় অনেক গুলো ছোটো ব্রাঞ্চ আছে বড়ো অফিস তুলনায় কম তারই একটা রাজারহাটে।
অরুণাভ পাকা ড্রাইভার বেশ স্মুথলিই গাড়ি চালাচ্ছিল কিন্তু একটা সিগন্যালে এসে গাড়ি থামানোর জন্য ব্রেক চাপতেই সে বিপদের ঘন্টা শুনতে পেলো গাড়ির ব্রেক কাজ করছে না, বাড়ি থেকে খুব একটা দূরে এখনো আসেনি তাই সে ভাবলো কোনোমতে যদি থামে তাহলে মেকানিক ডেকে ঠিক করিয়ে নেবে, এমনিতে তার ড্রাইভারই সব চেক করে নেয় বাড়ি থেকে বেরোনোর আগে কিন্তু এইকদিন সে না থাকায় সেটা হয়ে ওঠেনি আর এটা যে মস্ত বড়ো ভুল সেটা এখন বুঝতে পারছে।
অরুণাভ বারংবার চেষ্টা করতে থাকে গাড়ি থামানোর কিন্তু পারে না, কোনোমতে এদিক ওদিকে গাড়ি ঘুরিয়ে অ্যাক্সিডেন্টগুলো এড়ানোর চেষ্টা করতে থাকে কিন্তু কিছুতেই থামতে পারে না ইতিমধ্যে সে আগের সিগন্যাল ব্রেক করে এগিয়ে এসেছে তারপর আবার থামতে হবে কারণ সামনে আরেকটা সিগন্যাল সে প্রাণপণ চেষ্টা করে গাড়ি থামানোর কিন্তু পারে না সে সিগন্যাল ব্রেক করে সোজা এগিয়ে যায় ক্রসিং পার করতেই আরেকটা ট্যাক্সি এসে অরুণাভর গাড়ির সাইডে আঘাত করে আর তৎক্ষণাৎ অরুণাভ গাড়িসহ উল্টে গিয়ে একটা পাক খেয়ে রাস্তার উপরে পরে আর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পাশের একটা ফুটপাতের উপরে থাকা ল্যাম্পপোস্টে গিয়ে ধাক্কা মারে এবং গাড়িতে সঙ্গে সঙ্গেই আগুন জ্বলে ওঠে আর অরুণাভ গাড়ির ভিতরেই রক্তাক্ত অবস্থায় অজ্ঞান হয়ে আটকে যায়।
"আমার এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না যে আমি তোমার সাথে বসে আছি আর আমাদের বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে"
নারায়ণতলা গ্ৰামে আনন্দ নিকেতন রিসর্টের ভিতরের নিজস্ব জলাশয় ছাড়াও বাইরে গ্ৰামের লোকেদের জন্য একটা পুকুর আছে যেখানে গ্ৰামের লোকজন স্নান, কাপড় কাঁচা আরও টুকটাক কাজে ব্যবহার করেন, পুকুরটার চারপাশে চারটে বাধানো ঘাট আছে যেগুলো থেকে সিঁড়ি নীচে জলে নেমে গেছে তারই একটা ঘাটের একটা সিঁড়িতে পাশাপাশি বসে আছে অনিকেত ওরফে আদিত্য আর পিয়ালী।
সেদিন একে অপরকে প্রেম নিবেদন করার পরে আদিত্য প্রথমে যায় বৃদ্ধ অখিল বাবুর কাছে, সেখানে প্রথমে তাকে ধন্যবাদ জানায় তাকে সঠিক পথ দেখানোর জন্য তারপর তার আর পিয়ালীর কথা বলে। বৃদ্ধ শুনে তো খুব খুশি পারলে তক্ষুনি দুজনকে ধরে বিয়ে দিয়ে দেন, কিন্তু তারপর নিজেই একটু শান্ত হয়ে ঠিক করেন এভাবে নয় রীতিমতো পুরোহিত ডেকে দিনক্ষণ ঠিক করে তারপর বিয়ে হবে।
আদিত্য বা পিয়ালী কারোরই অবশ্য এতে আপত্তি ছিল না পিয়ালীর পরিবারে কেউ নেই তাই পার্মিশন চাওয়ার কোনো দরকার নেই আর আদিত্যর থেকেও নেই বরং এই আনন্দ নিকেতন এবং এই নারায়ণতলা গ্ৰামের লোকজনকেই সে নিজের পরিবারের লোক বলে কাছে টেনে নিয়েছে। অখিলবাবু গ্ৰামের পুরোহিত ডেকে ওদের বিয়ের দিন ঠিক করেন এবং যখন শুনলেন যে এক সপ্তাহ পরেই একটা ভালো দিন আছে তখন ঠিক করলেন যে ওই দিনেই দুজনের বিয়ে দেবেন আদিত্য আর পিয়ালী আপত্তি করেনি। অবশ্য খুব বড়ো অনুষ্ঠান হোক এটা দুজনের কেউই চায়না বরং আদিত্য প্রস্তাব দেয় যে বিয়ে সাধারণভাবে করে আনন্দ নিকেতন এবং গ্ৰামের সবাইকে খাওয়ানো হোক পিয়ালীও এতে সম্মতি দেয়, গ্ৰামটা এমনিতেই ছোটো তাই খুব বেশি লোক এখানে থাকে না ফলে অসুবিধা হবার প্রশ্নই আসে না।
কয়েকদিন কেটে গেল দুজনে এখন মাঝে মাঝেই বিকেলের দিকে গ্ৰামে হেঁটে হেঁটে ঘুরতে বেরোয় আজও সেরকমই বেরিয়েছিল, আর তারপর পুকুরের ঘাটে বসে গল্প করছে।
"আমার এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না যে আমি তোমার সাথে বসে আছি আর আমাদের বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে" পিয়ালী বললো।
"কেন, বিশ্বাস হচ্ছে না কেন?"
"কোনোদিন ভাবিনি যে তোমাকে কাছে পাবো, প্রথমদিন যখন তোমাকে দেখি তখন তোমার সাথে আমার বাবার শত্রুতা ছিল, ভয়ানক শত্রুতা। জানতাম বাবা কোনোদিন মেনে নেবেন না আর তুমিও আমাকে মেনে নেবে কি না জানতাম না"
"তবুও তো কোর্টে এসেছিলে"
"হ্যা,তোমাকে দেখে আর থাকতে পারিনি একটু কথা বলতে ইচ্ছে করছিল"
"বুঝলাম, কিন্তু এখন তো আমরা একসাথে আছি তাহলে বিশ্বাস হচ্ছে না কেন?"
"মনে হচ্ছে স্বপ্ন দেখছি"
"তাহলে বিশ্বাস করানোর জন্য কি করতে হবে? একটা কাজ করতে পারি"
"কি কাজ?"
"বাদশা" হঠাৎই আদিত্য নিজের পোষ্যটিকে ডাক দিল যে ওদের পিছনেই বসে ছিল কিন্তু পিয়ালী বাদশার নাম শুনে ভয়ি আঁতকে উঠলো,
"আবার ওকে ডাকছো কেন?"
"ও তোমাকে বিশ্বাস করাবে যে যা হচ্ছে সেটা সত্যি"
"না... ওকে ডেকো না"
"তুমি ওকে ভয় পাচ্ছো কেন, ও কিচ্ছু করবে না"
"আ...আমার ভয় করছে"
"আমি আছি তো, ও শুধু তাদেরই ক্ষতি করে বা ভয় দেখায় যাদের আমি ওকে দেখাতে বলি বা যারা আমার ক্ষতি করতে চায়"
"কিন্তু.."
"কোনো কিন্তু নয় তুমি ওর মাথায় হাত বোলাও"
পিয়ালীর ভয় তবুও যায় না তার হাত কাঁপতে শুরু করেছে, কিন্তু আদিত্য তার একটা হাত ধরে বাদশার মুখের দিকে এগিয়ে নিতে থাকে দেখে পিয়ালী চোখ বন্ধ করে নেয় কিন্তু আদিত্য পিয়ালীর হাতটা ধরে বাদশার মাথায় বোলাতে শুরু করে, ধীরে ধীরে পিয়ালী চোখ খোলে এবার আদিত্য আস্তে আস্তে পিয়ালীর হাতটা ছেড়ে দেয় আর বাদশা আস্তে আস্তে এগিয়ে এসে দুজনের কোলের উপরে বসে।
পিয়ালীর যে বাদশার প্রতি ভয়টা ধীরে ধীরে কাটতে শুরু করেছে সেটা ওর মুখে ফুটতে থাকা হাসির রেখা দেখেই বোঝা যাচ্ছে সে এবার নিজে নিজেই বাদশার মাথায় হাত বোলাতে থাকে, আদিত্য বলে
"ও না থাকলে আমিও থাকতাম না। ওর জন্যই আমি প্রাণে বেঁচেছি এবং এখানে আসতে পেরেছি"
পিয়ালী উত্তরে বাদশাকে আদর করতে করতে বলে "থ্যাংক ইউ বাদশা"
বাদশা একবার মুখ তুলে তার মনিবের হবু স্ত্রীকে দেখে তারপর আবার মাথা নামিয়ে চোখ বন্ধ করে আদর খেতে থাকে।
"আমার ছেলে বাঁচবে তো ডক্টর?"
আকুলভাবে প্রশ্ন করেন অভিরূপবাবু, অ্যাক্সিডেন্টের পরে আশেপাশের উপস্থিত প্রত্যক্ষদর্শীরা কোনোমতে অজ্ঞান অরুণাভকে গাড়ি থেকে বার করে নিকটবর্তী হাসপাতালে নিয়ে যায় সেখানে তৎক্ষণাৎ তার চিকিৎসা শুরু হয়।
অরুণাভকে প্রায় পুরো শহর চেনে আর এই হাসপাতাল তার বাড়ি থেকে খুব একটা দূরে নয় তাই বাড়িতে খবর যেতে দেরী হয়নি বাড়ির সবাই সঙ্গে সঙ্গে ছুটে যান হাসপাতালে, অভিরূপবাবুও খবর পেয়ে মিটিং ক্যানসেল করে চলে আসেন।
ডাক্তার জানায় অরুণাভর অবস্থা খুবই আশঙ্কাজনক একাধিক বড়ো ইঞ্জুরি হয়েছে, একটা পায়ের হাড় কয়েক টুকরো হয়ে গেছে একই অবস্থা একটা হাতের, একটা কাঁধের হাড় সরে গেছে, মাথা তো ফেটে গেছে কিন্তু ইন্টারনাল কোনো আঘাত হয়েছে কি না সেটা জানার জন্য মাথায় সিটি স্ক্র্যান করা হয়েছিল তবে সৌভাগ্যের বিষয় মাথার বাইরে ফেটে গেলেও খুলি বা মস্তিষ্কে কোনো বড়ো আঘাত লাগেনি, কিন্তু তারপরেও বাকি শরীরের যা অবস্থা তাতে বাঁচবে কি না বলা মুশকিল, ডাক্তাররা অবশ্য অপারেশন শুরু করে দিয়েছেন।
এদিকে শ্রীতমাদেবী, মৌমিতা কান্নাকাটি শুরু করেছে মণিমালা দেবী তাদের সান্ত্বনা দিচ্ছেন একে একে স্বর্ণেন্দু বাবু, সুনন্দা, মৈনাক, মনোজিত বাবু, মনোজ এবং আরো অন্যান্য আত্মীয় পরিজনরা আসতে শুরু করেছেন, দীর্ঘ সময় ধরে অপারেশন চলার পরে একটা সময় ডাক্তার ওটি থেকে বাইরে বেরিয়ে আসেন আর তখনই অভিরূপবাবু তাকে ধরেন,
"আমার ছেলে বাঁচবে তো ডক্টর?" প্রায় কেঁদে ফেলেন তিনি নিজেকে কোনোভাবে সামলে নিয়ে আবার বলেন "ডক্টর আমার ছেলেকে বাঁচান এক ছেলেকে অনেকদিন আগে হারিয়েছি আরেক ছেলেকে হারাতে পারবো না"।
ডক্টর অভিরূপবাবুর কাঁধে হাত রেখে বলেন, "মিস্টার ব্যানার্জী আমরা আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করেছি এবং এখনো করে চলেছি, তবে মাঝে মাঝে কিছু সময় আসে যখন সবকিছু আমাদের হাতে থাকে না। অরুণাভ বাবুর মাথায় খুলি বা মস্তিষ্কে কোনো আঘাত হয়নি যেটা আমাদের কাছে কিছুটা স্বস্তির ওটা থাকলে ভয়ের কারণ ছিল, এখন দেখা যাক আমাদের অপারেশন সাকসেসফুল, আমরা এখন ওনাকে অবজার্ভেশনে রাখবো.. লেটস্ হোপ ফর দ্যি বেস্ট"।
মানুষের জীবনে কখন কি হয় সেটা কে বলতে পারে? অনেকেই দাবি করে যে সে ভবিষ্যৎবক্তা কিন্তু তারাও কি সত্যিই ভবিষ্যৎ বলতে পারে? সন্দেহ আছে।
কারণ জীবন কখনো সোজা রাস্তায় চলে যায় সে কিছুটা সোজা যায় তারপর বাঁক নেয়, কখনো কখনো এই বাঁকগুলো এতটাই অপ্রত্যাশিত হয় যে চেয়ে চেয়ে দেখা এবং সেটা সাথে নিয়ে এগিয়ে চলা ছাড়া আর উপায় থাকে না।
আদিত্য আর পিয়ালীর জীবনও সেরকমই একজন নিজের পরিবারকে হারিয়ে অন্য একটা পরিবারে গিয়েছিল তারপর সেটাও হারিয়ে আজ এই জায়গায় এসেছে আর অপরজনও একই এক ঝটকায় তার পুরো পরিবারকে হারিয়ে এই পৃথিবীতে একা হয়ে গেছে।
দুজনের নিয়তিই একই তাই হয়তো তাদের ভাগ্যদেবী চাননি যে তারা একে অপরের থেকে দূরে থাকুক তাই হয়তো দুই সর্বহারা মানুষ আজ একে অপরের সাথে বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হতে চলছে, হ্যাঁ আজ অনিকেত ওরফে আদিত্য আর পিয়ালীর বিয়ে।
ধুমধাম করে নয় বরঞ্চ খুবই সাধারণভাবে যে বিয়ে করবে এটা দুজনে আগেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সেইমতো গ্ৰামের এক মন্দিরে অল্প কয়েকজন মানুষের উপস্থিতিতে বিয়ে সারলো দুজন।
সাধারণভাবে বিয়ে করলেও পরেরদিন পুরো গ্ৰাম ভোজের জন্য নিমন্ত্রিত ছিল, অবশ্য শুধু ভোজ নয় একটা পারিবারিক অনুষ্ঠানে যেরকম পরিবারের সবাই একসাথে সব আয়োন করে তেমনই সবাই একত্রিত হয়ে আনন্দ হইহট্টগোল করতে করতে সব কাজ করছিল তারপর রাতে ভোজ সেরে ফিরে যায় গ্ৰামের লোকদের সাথে এইদুদিন রিসর্টে যেসকল গেস্ট উপস্থিত ছিল তারাও আমণ্ত্রিত ছিল।
রাতে আদিত্য নিজের তাঁবুতে ঢুকে দেখে সেখানে নীচে ফুল দিয়ে সাজিয়ে শয্যা তৈরি করা হয়েছে যেখানে এখন তার নববিবাহিত বধূ অপেক্ষা করছে। এখনো তাঁবুটা ব্যবহার করার কারণ অখিলবাবু তাঁর এবং রিসর্টের মালিক শৈলেশবাবুর থাকার বাড়িটা আদিত্য আর পিয়ালীর থাকার জন্য দিয়েছেন কিন্তু ওটা শৈলেশবাবুর পরে বেশকিছুদিন ব্যবহার করা হয়নি তাই ওটা পরিষ্কার করে মেরামত করে নতুন রঙ করতে দিয়েছেন এইকাজে একটু সময় লাগবে তাছাড়া একটা দম্পতি তাদের সংসার শুরু করতে চলেছেন তাদের জন্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র আনতে দেওয়া হয়েছে এইহবের জন্য আপাতত আদিত্যর তাঁবুটাতেই দুজনে থাকবেন, এবং যেহেতু আদিত্য এতকাল একা থাকতো তাই নিজের জন্য একটা সিঙ্গেল চৌকি ব্যবহার করতো যেটায় দুজন আঁটবে না অতএব চৌকি সরিয়ে নীচেই দুজনের ফুলশয্যার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
আদিত্য পিয়ালীর পাশে বসে আস্তে করে তার ঘোমটা তুলে ফেললো প্রথমে পিয়ালী একটু লজ্জায় চোখ বন্ধ করে নিলেও বেশীক্ষণ নয় এবার সে সোজা আদিত্যর দিকে তাকিয়ে থাকে, বলাইবাহুল্য পিয়ালীর শর্ত অনুযায়ী আদিত্য তার চুল ছোটো করে কেটেছে সাথে পরিষ্কার করে দাঁড়িগোঁফ কেটেছে, এতে যেন তাঁর রূপ আরও বেড়ে গেছে তাকে আরো সুন্দর লাগছে দেখতে, পিয়ালী দৃষ্টি ফেরাতে পারে না একই অবস্থা আদিত্যরও, সেও একদৃষ্টিতে পিয়ালীর দিকে তাকিয়ে থাকে।
এভাবে কিছুক্ষণ দুজনে পরস্পরের দিকে তাকিয়ে দেখার পর আদিত্যই প্রথম মুখ খোলে,
"থ্যাংক ইউ আমাকে এক্সেপ্ট করার জন্য আমি কোনোদিন ভাবিনি যে আবার কারো ভালোবাসা আমার জীবনে আসবে আমি তো ভেবেছিলাম.."
এতটা বলেই আদিত্যকে থামতে হয় কারণ পিয়ালী তার মুখ চেপে ধরেছে, পিয়ালী বলে,
"আজ ওসব কথা নয়.. আজ তুমি শুধু আমাকে ভালোবাসবে, আজ আমি পুরোপুরি তোমার হতে চাই... তোমাকে নিজের করে পেতে চাই"।
আদিত্য আর কোনো কথা না বলে আস্তে করে নিজের মুখটা পিয়ালীর মুখের দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়, উল্টোদিকে পিয়ালীও এগিয়ে আসে, একসময় উভয়ের ঠোঁটজোড়া পরস্পরের স্পর্শ পায়।
বেশকিছুক্ষণ দুজন প্রেমচুম্বনে লিপ্ত থেকে ক্ষান্ত হয় তবে থামে না। প্রচণ্ড আবেগে ভালোবাসায় পিয়ালী হঠাৎই আদিত্যকে জড়িয়ে ধরে তার গালে চুমু দিতে থাকে তারপর একে একে আদিত্যর ঘাড়ে, গলায় তারপর তার কুর্তার ফাঁকে বুকে মুখ ঘষতে থাকে।
কিছুক্ষণের মধ্যে অন্য এক অনুভূতি শুরু হল আদিত্যর শরীরে। যুগ যুগ ধরে মানুষের শরীরে ঘুমিয়ে থাকা আদিম অনুভূতিও জেগে উঠতে শুরু করল তার ভিতরে। সে অনুভূতি মিশে থাকে প্রত্যেক নর-নারীর রক্তে, প্রত্যেক প্রাণীর রক্তে। আদিত্যর মনে হল তার নববিবাহিতা স্ত্রীর দেহেও যেন জেগে উঠেছে সেই আদিম সত্তা, নইলে সে ওভাবে একটানা আদিত্যর বুকে মুখ ঘসে চলেছে কেন?
আলিঙ্গনরত পিয়ালীর নখগুলো যেন প্রচণ্ড উত্তেজনায় আদিত্যর পিঠে বসে যাচ্ছে!
আদিত্য যেন নিজের অজান্তেই পিয়ালীকে টেনে সাজানো শয্যায় শুইয়ে দিল। বাধা দিল না পিয়ালী বরং আদিত্যর মুখটা আরও চেপে ধরল নিজের মুখের ওপর।
ধীরে-ধীরে শরীর থেকে পোশাক খসিয়ে চুড়ান্ত মিলনের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করতে শুরু করল পিয়ালী। এই প্রথম নিজেকে একজন পুরুষের কাছে সত্যি সমর্পণ করল পিয়ালী, যার জন্য সে এতদিন অপেক্ষা করে ছিল যাকে প্রথম দেখা থেকেই নিজের সবটুকু দিয়ে ভালোবেসেছিল। শরীর ও মনের এক আশ্চর্য তৃপ্তি অনুভব করতে পারছে পিয়ালী, তার শরীর উন্মোচিত হল আদিত্যর সামনে সে শরীরে শুধু কামবাসনা নয় বরং ভালোবাসা জড়িয়ে আছে, পিয়ালীর শরীরের প্রতিটা রোমকূপ, প্রতিটা রন্ধ্র যেন আদিত্যর স্পর্শ পাবার জন্য উন্মুখ। নিজের পরিহিত কুর্তা খসিয়ে ফেলল আদিত্য তার ঠোঁট পিয়ালীর ঠোঁট ছুঁয়ে নামতে শুরু করল তার গলায়, বুকের মাঝে, দু-পাশে পদ্মের মতো প্রস্ফুটিত দুই স্তনে, তারপর আরও নীচে গভীর নাভিকূপে। সেখানে কিছুক্ষণ থেমে তারপর আরও নীচে।
তাঁবুর একপাশে একটা ছোট্ট জানালার মতো ব্যবস্থা করা ছিল সেই খোলা জানলা দিয়ে সেই চাঁদের আলো এসে ছড়িয়ে পড়ল শয্যায়, আলিঙ্গনরত আদিত্য ওরফে অনিকেত আর পিয়ালীর নগ্ন শরীরে, দুজন যেন মিথুনরত পৃথিবীর প্রথম নারী-পুরুষ তারা। বাইরে পাহাড়ায় অবিচল সারমেয় ভিতরে অনেকরাত পর্যন্ত তাঁবু জুড়ে দুজন নরনারীর আদিম ক্রীড়ার শিৎকারে মুখরিত হয়ে থাকলো তারপর একসময় দুজনেই ক্লান্ত অথচ পরিতৃপ্ত হয়ে একে অপরকে আঁকড়ে ধরে পাশাপাশি শুয়ে থাকে।
সকালবেলা নিজে থেকেই ঘুমভেঙে গেল পিয়ালীর প্রথমে গতরাতের ঘটনাটা স্বপ্ন বলে মনে হলো তার কিন্তু পরক্ষনেই পাশে চোখ যেতেই বুঝলো স্বপ্ন নয় গতরাতে যা ঘটেছে সেটা সত্যি।
পিয়ালী নিজে সোজা হয়ে শুয়েছিল পুরো নগ্ন শরীরের উপরে বুক পর্যন্ত ঢাকা দেওয়া একটা চাদর, পাশে তাকাতেই সে দেখে তার পাশে একই চাদরের তলায় আদিত্য উবু হয়ে ঘুমিয়ে আছে তার মুখ পিয়ালীর কাঁধের কাছে এবং এটাও বুঝতে পারলো যে আদিত্য নিজেও সম্পূর্ণ নগ্ন এবং তার একটা হাত পিয়ালীর স্তনদ্বয়ের ঠিক নীচে ছড়িয়ে রাখা আছে, রাখা আছে বলা ভুল পিয়ালীকে আঁকড়ে ধরে রেখেছে।
পিয়ালী কিছুক্ষণ ওইভাবেই ঘুমন্ত আদিত্যর মুখের দিকে তাকিয়ে দেখতে থাকে, তারপর আস্তে করে আদিত্যর হাতটা নিজের উপর থেকে নামিয়ে উঠে পরে, উঠতে গিয়ে প্রথমে একটু থেমে যায় তার দুপায়ের মাঝে যোনিতে একটু ব্যাথা আছে, প্রথমবার কোনো পুরুষের লিঙ্গ সেখানে ঢুকেছিল গতরাতে, কিন্তু ব্যাথার থেকেও যেটা অনুভব করছে সেটা খুশী কারণ সেই পুরুষটা আর কেউ নয় তার স্বামী তার ভালোবাসার মানুষ আর গতরাতে পিয়ালী ওকে নিজের করে পেয়েছে নিজেকেও ওর কাছে পুরোপুরি সমর্পণ করেছে ভাবতে ভাবতেই তার সারা শরীরে এক অদ্ভুত অনুভূতি খেলে গেল।
আস্তে আস্তে উঠে পরলো সে প্রথমে একটু যোগব্যায়াম করলো যেটা তার অনেকদিনের অভ্যেস, তারপর তাঁবুর ভিতরের বাথরুমে গিয়ে স্নান করলো, স্নান করে বেরিয়ে এসে নতুন শাড়ি বার করে পরলো লাল-সাদা শিফন শাড়ি ও লাল রঙের স্লিভলেস ব্লাউজ যেটা একটু বেশীই ডিপ ব্যাক সাথে সামনেও একটু ডিপ সাথে বোধহয় সাইজে একটু ছোটো ফলে স্তনের কিছুটা অংশ ব্লাউজের উপরে উঠে এসেছে এবং ক্লিভেজটা একটু বেশীই গভীর মনে হচ্ছে, দুই হাতে শাখা-পলার সাথে লাল কাঁচের চুড়ি, দুই কানে অক্সিডাইজড জাঙ্ক ইয়ারিং কপালে, ছোট্ট টিপ দুই পায়ে রয়েছে তাঁর নুপূর। চুল খোলা, সেক্সি কোমরে আঁচল গুঁজে তারপর ভেজা চুলটা মুছে আঁচড়িয়ে সিঁথিতে সিঁদুর পরলো, আয়নায় সে খেয়াল করলো যে তার গলায়, ঘাড়ে কয়েকটা দাগ বুঝতে অসুবিধা হলোনা ওগুলো কিসের দাগ সে জানে ওগুলো গতরাতের আদিত্যর ভালোবাসার চিহ্ন।
আদিত্যর কথা মনে পরতেই সে ঘুরে দেখে সে তখনও ঘুমাচ্ছে, আবার সে আদিত্যর কাছে এসে আবার একদৃষ্টিতে দেখতে থাকে যেন যতই দেখে তার আশ মেটে না।
"দূর থেকে এভাবে না দেখে কাছেও তো আসতে পারো,এখন তো আমি তোমার হাজবেন্ড"
পিয়ালী চমকে উঠলো আদিত্যর কথা শুনে, আদিত্যর চোখ বন্ধ থাকায় সে ভেবেছিল সে ঘুমাচ্ছে।
"তুমি জেগে গেছো?" পিয়ালী আস্তে করে জিজ্ঞেস করলো,আদিত্য চোখ খুলে উবু থেকে সোজা হয়ে শুয়ে বললো, "যার নতুন বিয়ে করা বউ পরদিন সকালেই তার কাছ থেকে উঠে যায় তার আর ঘুম কিভাবে আসে বলো?"
"আসলে আমার এক্সারসাইজের অভ্যাস, সেটাই করছিলাম"
"এখনো এক্সারসাইজ করে কি হবে?"
"দরকার আছে যদি মোটা হয়ে যাই আর আমার বর আমাকে পছন্দ না করে তখন?"
উত্তরে আদিত্য কোনো কথা বললো না শুধু পিয়ালীর দিকে তাকিয়ে রইলো এবং তার ঠোঁটে একটা দুষ্টুমির হাসি দেখা গেল, পিয়ালী প্রথমে বুঝতে পারলো না তারপর আদিত্যর দৃষ্টি বলো করে নিজের বুকের দিকে তাকাতেই ব্যাপারটা বুঝতে পারলো আর সঙ্গে সঙ্গে তার মুখ লজ্জায় লাল হয়ে গেল, তার ভেজা চুল থেকে একটু জল চুঁইয়ে পরে ঘাড় বেয়ে নীচে নেমে তার স্তনগহ্বরে প্রবেশ করে হারিয়ে গেছে আদিত্য সেটাই দেখছিল,
"একদম দুষ্টুমি করবে না" আদিত্য কি দেখছে সেটা বুঝতে পেরে কপট রাগ আর লজ্জা মেশানো কণ্ঠে বললো পিয়ালী।
"এটা কোনো কথার কথা হলো? আমার বউ আর আমি কিছু করবো না?"
"কাল রাতে অনেক হয়েছে"
"তাতে কি হয়েছে? নতুন বিয়ে করা বউ একরাতে শখ মেটে নাকি?
"আবার আজ রাতে হবে, কিন্তু নর্থবেঙ্গলের সদারাগী,সদাগম্ভীর থাকা আদিত্য মশাই যে এত রোমান্টিক সেটা কে বিশ্বাস করবে?"
"আমার বউ করলেই হলো আর এসব তোমার জন্য আমি তো আর কোনো কিছুর আশাই ছেড়ে দিয়েছিলাম শুধু নিজেকে শেষ করলে একটা অবলা জীব একা হয়ে যাবে তাই.."
"একদম ওসব খারাপ কথা বলবে না, এখন কিন্তু শুধু বাদশা নয় আমিও আছি তোমার সাথে"।
পিয়ালীর কথা শুনে আদিত্য কিছু একটা বলতে যাচ্ছিল কিন্তু হটাৎ আবার কিছু একটা দেখে তার মুখ গম্ভীর হয়ে গেল, সে বললো
"আমি তোমাকে হার্ট করেছি, আয়্যাম সরি আমি বুঝতে পারিনি"
পিয়ালী বুঝতে পারলো যে আদিত্য তার শরীরের দাগগুলোর কথা বলছে সে বললো,
"এটা তুমি কি বলছো? এগুলো তোমার ভালোবাসার চিহ্ন"
"আমি তোমাকে ব্যাথা দিয়েছি"
"আমার কোনো ব্যাথা লাগেনি, তুমি বুঝতে পারছো না আমি কতটা খুশি, তুমি আমার চোখে খুশী দেখতে পারছো না?"
আদিত্য তবুও মুখ শুকনো করে আছে দেখে পিয়ালী এবার আদিত্যর উপর ঝুঁকে ওর দুগালে দুটো চুম্বন দিয়ে বলে,
"আমার কোথাও ব্যাথা লাগেনি আমি খুব খুশি যেটা কোনোদিন সত্যি হবে বলে কল্পনাও করিনি আজ সেটা সত্যি আজ তুমি আমার সাথে, আমি তো এরকমই চেয়েছিলাম একটা ছোট্ট ঘর যেখানে তোমার সাথে থাকতে পারবো সাথে শ্বশুর শাশুড়ির আশীর্বাদ আর গাইডেন্স থাকবে কিন্তু এখন নাহয় আমরা দুজনই থাকবো"
"ভৌ"
কথা বলতে বলতে দুজনেই চমকে উঠলো পিয়ালীর কথা শেষ হতে না হতেই তাঁবুর গেটের কাছ থেকে বাদশা ডেকে উঠলো এখন তার স্বরে হুমকি বা ভয় দেখানো ভাব নেই, কিন্তু আদিত্য বুঝতে পারলো তার মনের ভাব তাই সে হো হো করে হেসে উঠলো পিয়ালী কিন্তু বুঝতে পারেনি সে আদিত্যর দিকে চেয়ে থাকে বলে, "কি হলো তুমি হটাৎ হাসছো কেন?"
আদিত্য হাতের ইশারায় বাদশাকে কাছে ডাকে বাদশা তৎক্ষণাৎ এগিয়ে এসে একেবারে মনিবের গা ঘেঁষে দাঁড়ায়, আদিত্য হাসি থামিয়ে বলে, "তুমি এক্ষুনি বললে না যে একটা ঘর যেখানে শুধু আমরা দুজন থাকবো তাতে ও ভেবেছে আমরা বোধোহয় ওকে তাড়িয়ে দেবো তাই আওয়াজ করে নিজের অস্তিত্ব বোঝাতে চাইছে"
"এ বাবা আমি কিন্তু ওভাবে বলিনি"
"জানি" আদিত্য পিয়ালীকে আশ্বস্ত করে তারপর উঠে বসে বাদশার মাথায় হাত বোলাতে বোলাতে বলে, "তোকে আমি কোথাও যেতে দেবো না তুই সারাজীবন আমার সাথে থাকবি বুঝলি?"
বাদশা মনিবের কথা শুনে বোধহয় কিছুটা আশ্বস্ত হয় সে আলিঙ্গন করার ভঙ্গিতে আদিত্যর দুকাঁধে দুটো পা তুলে জড়িয়ে ধরে, পিয়ালী বলে "শুধু তোমার সাথে নয় ও আমাদের সাথে থাকবে। আর বাদশা চিন্তা নেই নতুন বাড়িটা হলে তোকেও বিয়ে দিয়ে দেবো"
"হ্যাঁ, এবার একটা মেয়ে কুকুর দেখতেই হবে"
আদিত্যর কথায় পিয়ালী হেসে ওঠে।
"আচ্ছা এবার কিন্তু মেস থেকে আমার জিনিসগুলো আনতে হবে" হাসি থামিয়ে পিয়ালী বলে।
"হ্যাঁ, মনে আছে ঘরটা ঠিক হয়ে যাক তারপর একদিন গিয়ে নিয়ে আসবো"
"আচ্ছা, তুমি সবসময় শৈলেশবাবুর নাম বলো, কিন্তু ওনাকে দেখি না উনি এখানে থাকেন না?"
"তোমাকে বলিনি?"
"কি?"
"উনি মারা গেছেন, পরিবারে কেউ ছিল না, বিপত্নীক এবং নিঃসন্তান ছিলেন আনন্দ নিকেতন এবং নারায়ণতলা গ্ৰামের লোকজনই ওনার আপনজন ছিল এছাড়া মাঝে মাঝে অন্য অনেক গ্ৰামে যেতেন চিকিৎসা ক্যাম্পে এরকমই একটা জায়গা থেকে আমাকেও নিয়ে আসেন এটা তো বলেছি"
"ওহ, সরি"
"ইটস্ ওকে, উনি থাকলে বুঝতে খুব ভালো মানুষ ছিলেন যাওয়ার আগে আমাকে এই আনন্দ নিকেতনের দায়িত্ব দিয়ে যান আমি এখনো বুঝতে পারিনি যে আমার মধ্যে কি দেখেছিলেন"
"তুমি যে ওনার দায়িত্ব পালন করবে এই বিশ্বাস ওনার ছিল হয়তো উনি মানুষ চিনতেন"
আদিত্য একটু শুকনো হেসে একহাতে পিয়ালীকে বুকে টেনে নেয়।
অ্যাক্সিডেন্টে বেঁচে গেলেও অরুণাভর মধ্যে একটা পরিবর্তন আসে যেটা সবাই বুঝতে পারলেও এখনই ওটা নিয়ে মাথা ঘামায় না, পরিবর্তনটা শুধু শারীরিক নয় মানসিক।
শারীরিক অবস্থা সময়ের সাথে সাথে ঠিক হয়ে যাবে তবে আপাতত কমপ্লিট রেস্ট। অবশ্য সেটা ছাড়া উপায়ও নেই মাথায় ব্যাণ্ডেজ, হাতে প্লাস্টার, পায়ে প্লাস্টার এসব নিয়ে আর যাই হোক কোনো কাজ করা যায় না।
অপারেশনের পর বেশকিছুদিন অবজার্ভেশনে রেখে তারপর ডাক্তাররা ডিসচার্জ করে দেয় তাকে সাথে এটাও বলে দেয় যে আপাতত নিয়মিত চেকআপে থাকতে হবে, ব্যানার্জী পরিবারের সবাই অবশ্য সেটা মেনেই নেয়।
হাসপাতাল থেকে বাড়িতে এসে অরুণাভর মনে হলো যেন সে নতুন জন্মলাভ করেছে। হুইলচেয়ারে বসে যখন সে ভিতরে ঢুকছে তখন অবাকভাবে চারিদিকে দেখতে থাকে কিন্তু মুখে কিছু বলে না চুপ করে থাকে কেউ কিছু জিজ্ঞেস করলে দায়সারাভাবে উত্তর দেয়।
ছেলেমেয়েদুটো অবশ্য বাবাকে পেয়ে কাছে যাওয়ার জন্য অস্থির হয়ে উঠেছে কিন্তু মৌমিতা বেশিক্ষণ থাকতে দেয় না পাছে ওদের হুড়োহুড়ির জন্য কোনো অঘটন ঘটে যায়।
"তোমার কি হয়েছে, কথা বলছো না কেন?"
অবশেষে আর থাকতে না পেরে জিজ্ঞেস করে মৌমিতা কিন্তু অরুণাভ উত্তর দেয় না চুপ করে থাকে। মৌমিতা আর কথা বাড়ায় না সে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে যেতে পিছনে ফিরতেই অরুণাভ কথা বলে,
"এসব পাপের ফল যা পাপ আমি করেছি তার ফল তো আমাকেই ভোগ করতে হবে"
চকিতে স্বামীর দিকে ফেরে মৌমিতা জিজ্ঞেস করে, "কিসের কথা বলছো তুমি?"
"কেন তুমি জানোনা? একটা তো নয় অনেকগুলো আর আমার সব কাজেই তো তুমি আমার পার্টনার ছিলে"।
"তুমি কি বলতে চাইছো?"
"তোমার কি মনে হয় এটা শুধুই অ্যাক্সিডেন্ট?"
"না, আমি নিশ্চিত এটা প্ল্যান করে ঘটানো হয়েছে আর কে করেছে সেটাও জানি"
"জেনে কি করবে?"
"তুমি কি চাও?"
"আমি জানিনা, আমি এই পাঁকে আটকে গেছি এখান থেকে বেরোনোর উপায় নেই"
"যদি ওনাদের শেষ করে দিই"
"কজনকে করবে?"
"মানে, একজনই তো মেইন কালপ্রিট"
"তার সঙ্গে আরও অনেকে আছে"
"তুমি কি আমার বাবা আর ভাইকে সন্দেহ করছো?"
"সন্দেহ নয়, আমার দৃঢ় বিশ্বাস ওনারাও যুক্ত আছেন"
"কিন্তু আমার বাবা তোমাকে মারতে চাইবেন কেন? উনি তো জানেন যে তুমি আমার স্বামী কোনো বাবা কি তার মেয়েকে বিধবা দেখতে চান?"
"হয়তো তুমিও ওদের সাথে যুক্ত আছো"
"অরুণাভ.. এই কথাটা বলতে পারলে তুমি?" মৌমিতার স্বরে অবিশ্বাস এবং হতাশা।
"ভুল কোথায় বললাম, অর্থ আর প্রতিপত্তির জন্য তুমি কি কি করেছো ভুলে গেছো?"
"শুধু আমি? তুমি করোনি?"
"করেছি, সেই পাপেই তো আজ আমার এই অবস্থা"
"এখন সবকিছুর জন্য আমি দায়ী হয়ে গেলাম অরু?"
শেষের কথাটা বলতে গিয়ে মৌমিতা কেঁদে ফেলে, আর এই কান্না দেখেই বোধহয় অরুণাভ কিছুটা নরম হয়, বলে "সরি মৌ... তোমাকে কথাগুলো বলা উচিত হয়নি, কিন্তু এটা সত্যি তোমার বাবা হয়তো পিসেমশাইয়ের এই প্ল্যানে আছেন"
এই কথায় মৌমিতার কান্না থেমে যায় তার চোখে রাগের ঝিলিক দেখা যায় সে বলে "যদি এটা সত্যি হয় তবে আমার বাবাকেও এর জবাব দিতে হবে তবে আগে প্রমাণ জোগাড় করতে হবে পিসেমশাইয়ের বিরুদ্ধেও"
"কিন্তু কিভাবে?"
"আগে যেভাবেই হোক সুশান্তর ভিডিওটা পেতে হবে তারপর ওনার যেসব বন্ধুরা এই শহরে ছড়িয়ে আছেন তাদের খুঁজে বার করতে হবে"
"আমার মাথায় কিচ্ছু আসছে না এগুলো কিভাবে হবে?"
"সব হবে দুজনে একসাথে মিলে প্ল্যান করবো, আপাতত তোমার রেস্টের দরকার.. তুমি রেস্ট নাও"।
"তোমার জিনিসগুলো কবে আনতে যাবে? মেসের যে মালিক তার সাথে কথা বলেছো?"
আদিত্য প্রশ্ন করে পিয়ালীকে, দেখতে দেখতে তাদের বিয়ের বেশ কিছুদিন পেরিয়ে গেছে ইতিমধ্যে শৈলেশবাবুর বাড়িটাও নতুন করে সাজানো হয়ে গেছে এখন আদিত্য, পিয়ালী আর বাদশা ওখানেই থাকে, বাড়িটা রিসর্টের বাইরে হলেও খুব দূরে নয়, ওখানে ওদের নিজের সংসার যদিও দুজনের বেশীরভাগ সময়টাই কেটে যায় হয় রিসর্টে আর না হয় গ্ৰামের বাচ্চাদের সাথে, নারায়ণতলা একটা ছোট্ট গ্ৰাম এখানে সবাই সবাইকেই ভালোবাসে নিজেদের মধ্যে ঝামেলা হয় আবার নিজেরাই মিটিয়ে নেয়।
প্রতিদিন রিসর্টে আসার দরকার না থাকলেও আদিত্য অবশ্য প্রায়ই একবার হলেও এসে খানিকক্ষণ থেকে যায় তারপর সেখান থেকে বেরিয়ে পিয়ালী আর বাদশাকে নিয়ে গ্ৰামে ঘুরে বেড়ায় বা কোনো পুকুরের ধারে গিয়ে বসে বা নিজের বাড়ির বাগানে বসে গল্প করে, একরকমই একদিন রিসর্ট থেকে ফিরে বাড়ির সামনে একটা ছোট্ট বাগানে বসে আড্ডা দেওয়ার জায়গা করেছে সেখানেই চা খেতে খেতে কথা বলছিল নবদম্পতি তখনই আদিত্য প্রশ্নটা করে।
"সে বলে দেবো কিন্তু জিনিসগুলো আনবে কিভাবে?" পিয়ালী পাল্টা প্রশ্ন করে।
"এখানে একজন আছে যাদের ছোটা হাতি আছে, তাকে বললে সেই যাবে সাথে আরও কয়েকজনকে নিতে হবে জিনিসগুলো লোডিং করার জন্য, আচ্ছা ওগুলো এনে কি করবে? মানে এখানে তো খুব একটা দরকার হবে না বিছানা, আলমারি, ড্রেসিং টেবিল সবই মোটামুটি আছে"
"ওখানে আলমারি নেই বাকি যা ফার্ণিচার আছে সেগুলো এখানে এনে না হয় রিসর্টের কাজে ব্যবহার করা হবে আর কিছু বই আছে ওগুলো আমি রাখবো"
"ঠিক আছে, তাহলে আমি ওদের বলে রাখছি দেখি ওদের কবে সময় হয়?"
"ঠিক আছে"।
দিনকতক পরে কসবার যে মেসে পিয়ালী থাকতো সেখান থেকে নিজের ফেলে আসা বাকি জিনিসগুলো বার করে নিচ্ছে গ্ৰাম থেকেই কয়েকজনকে নিয়ে গিয়েছিল আদিত্য ওরাই জিনিসগুলো ধরাধরি করে গাড়িতে লোডিং করছে। এখানে আসার পর মেসের বাকি মেয়েরা অবশ্য পিয়ালীকে ঘিরে ধরেছে 'ও কেন চলে গেল, কোথায় থাকে বিয়ে কবে করলো' ইত্যাদি প্রশ্নে ব্যাতিব্যস্ত করে তুললো পিয়ালী অবশ্য বুঝে শুনেই উত্তর দিচ্ছে আদিত্য পাশে চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে।
এখানে এসে পিয়ালী জানতে পারলো ও চলে যাওয়ার কয়েকদিন পর থেকে কয়েকজন লোক একাধিকবার ওর ব্যাপারে খোঁজ করে গেছে যদিও কাউকে কিছু বলে যায়নি বলে কেউ কিছু বলতে পারেনি শুনে পিয়ালী একবার আদিত্যর মুখের দিকে তাকিয়ে দেখে আদিত্য নির্বিকার মুখে দাঁড়িয়ে আছে।
লোকগুলো কারা ছিল সে বিষয়ে জানতে বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হলো না একটু পরেই চার পাঁচটা বাইকে দশজনের মতো লোক এসে মেসের সামনে দাঁড়ালো।
I'm the King of Dark
&
I rule over all Devils