Thread Rating:
  • 99 Vote(s) - 2.82 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
WRITER'S SPECIAL "ধূসর পৃথিবী"
[Image: Picsart-22-12-06-20-20-08-119.jpg]

                  দ্বিতীয় পার্ট
                    ৭ম পর্ব




আদিত্য কয়েকমুহূর্ত চুপ করে র‌ইলো তারপর বললো, "কিন্তু আমার একটা অতীত আছে যেখানে এমন কিছু আছে যেগুলো কেউ জানেনা কেউ না অতীন্দ্রবাবু কিছুটা জানতেন পুরোটা নয়... পুরোটা একজন‌ই জানে... বাদশা ওই অবলা জীবটাই যবে থেকে আমার কাছে এসেছে কখনো আমাকে ছেড়ে যায়নি সবসময় আমার সাথে ছিল আমার সব কথা শুনেছে এমনকি আমার প্রাণ‌ও বাঁচিয়েছে, ওই সবটা জানে কিন্তু কোনোদিন কাউকে বলতে পারবে না"।
"আর আমি জানতেও চাই না"
"কেন আমার কথায় ভালোবাসা শেষ হয়ে গেছে?"
"আপনার প্রতি আমার ভালোবাসা কোনোদিন শেষ হবে না"
"তাহলে আপনার আমার অতীতটা জানা উচিত...কারণ সেখানে একজন ছিল"
"মেয়ে?"
"হ্যাঁ, একটা মেয়ে" পিয়ালীর মুখ একটু ছোটো হয়ে গেল আদিত্য বলতে থাকে, "একটা মেয়ে যে এসেছিল আমার জীবনে, আমার জীবন আমার মন নিয়ে খেলতে কিন্তু আমি তাকে ভালোবেসেছিলাম কত‌ই বা বয়স ছিল তখন ওই ১৮-১৯ হবে কিন্তু কোনোদিন সেই ভালোবাসা আমার জীবন শেষ করে দেবে"
"মানে?"
"এই ভালোবাসা আমার থেকে সবকিছু কেড়ে নিয়েছে আমার জীবন তছনছ করে দিয়েছে.. আজ পৃথিবীতে আমার কোনো অস্তিত্ব নেই, বেঁচে থেকেও আমি বেঁচে নেই,আমি মৃত.. আ ওয়াকিং ডেড। এই ভালোবাসার জন্য আজ আমার বাবা মা থাকতে বাবা ম নেই, পরিবার থাকতে পরিবার নেই, বাড়ি থাকতে বাড়ি নেই, আমি নিজের লোকেদের কাছে যেতে ভয় পাই, তাদের নিজের পরিচয় দিতে ভয় পাই, আজ আমি নিজের নামটা পর্যন্ত ব্যবহার করতে ভয় পাই এমনকি সুযোগ পেতেই নিজের চেহারাটা পর্যন্ত বদলে ফেলেছি"।
এতটুকু বলে আদিত্য পিয়ালীর দিকে তাকালো তার কপালে ভ্রুকুটি, আদিত্য বুঝলো ব্যাপারটা বললো, "এটা আমার নিজের চেহারা নয় এটা আদিত্যর চেহারা ওর সাথে আমার গায়ের রঙ আর তখন হাইটের একটা মিল ছিল তাই অতীন্দ্রবাবু প্লাস্টিক সার্জারি করে আমার চেহারাটা বদলে আদিত্যর চেহারা করে দেন"
"তুমি রাজী হলে?" পিয়ালী আবার আপনি থেকে তুমিতে ফিরে এসেছে।
"বললাম না এই ভালোবাসা আমার থেকে সব কেড়ে নিয়েছে এমনকি বেঁচে থাকার ইচ্ছেটাও, শুধু এতদিন ছিলাম অতীন্দ্রবাবুর কথায় যাতে ওনার স্ত্রী সুস্থ থাকেন ছেলেকে পেয়ে আর এখন বাদশার জন্য, ও না থাকলে কি করতাম ঠিক নেই... তুমি জানতে চাও আমার অতীত? তাহলে শোনো"
আদিত্য তার অতীত বলতে শুরু করলো পিয়ালী চুপ করে শুনতে লাগলো, আদিত্য পুরো ঘটনাই বলেছিল শুধু কয়েকটা বাদে বাকি নাম গোপন রেখে

             আদিত্যর অতীত:

আদিত্য এই কলকাতার‌ই ছেলে এখানেই জন্ম বেড়ে ওঠা... এখানেই ওর পরিবার সে, মা বাবা আমার দাদা আর ছিলেন পিসি, পিসেমশাই এবং তাদের ছেলে অর্থাৎ তার ভাই।
আদিত্যর বাবা-মায়ের দুজন ছেলে কিন্তু স্বভাবে কিছুটা আলাদা আদিত্যর দাদা পড়াশোনায় এক্সট্রা অর্ডিনারি ব্রিলিয়ান্ট, এছাড়া খেলাধুলা, আবৃত্তি, কথাবার্তা, চালচলন আচার-ব্যবহার সবেতেই দারুণ সবসময় হাসিখুশি ও একদম যাকে বলে আদর্শ ছেলে।
আর আদিত্য কিছুটা উল্টো অগোছালো, কিছুটা রাগী, ঠোঁটকাটা বা যা মুখে আসে বলে দেয়। আদিত্যর দাদা সবার পছন্দের সবার কাছের স্কুলকলেজের টীচারদের থেকে শুরু করে আত্মীয়-স্বজন, পাড়া প্রতিবেশী এমনকি আমাদের বাবা-মায়ের‌ও, সবার আদরের আর আদিত্য.. সে বরাবরই দাদার ছায়ায় ঢাকা থাকতো, ওর জন্য কারো সময়‌ই ছিল না।
এটা ঠিক যে আদিত্যর বাবা-মা আমাকে কখনও কোনো জিনিসের অভাব হতে দেননি কিন্তু ওর জন্য তাদের কাছে সময় ছিল না। বাবা ব্যাবসা নিয়ে ব্যাস্ত থাকতেন আর মা ঘরের কাজ নিয়ে, বাকি সময় দাদার জন্য।
যখন একটু বড়ো হলো বুঝতে শিখলো তখন খারাপ লাগতো, রাগ হতো আর সেই রাগটা তুলতো দিদির উপরে।
দিদি মানে আদিত্যর আরেকটা কাজিন। ওকেই বিরক্ত করতো আর ও আদিত্যর মায়ের কাছে নালিশ করতো ফলে বকা... তবুও ওকেই বিরক্ত করতো, একটা সময় পর সেসব‌ও বন্ধ করে দেয়। নিজের একটা আলাদা দুনিয়া তৈরি করে নেয় সে, আদিত্যর দিকে নজর দেওয়ার মতো কেউ ছিল না ওর সম্পর্কে কারো যেন কোনো আগ্ৰহ নেই আদিত্য কোথায় যাচ্ছি, কি করছি সে সম্বন্ধে কেউ কিছু জানতে চাইতো না তাই ওরও সুবিধা হয়েছিল মাঝে মাঝে রাতে বাড়ি ফিরতে দেরী হলে মা চিন্তা করতো, বাবাও অপেক্ষা করতো।
এর মানে কিন্তু এই নয় যে আদিত্যর বাবা মা ওকে ভালোবাসতো না, হয়তো বাসতো আসলে কখনো বুঝতে পারেনি কখনো ওনাদের সেইভাবে কাছে পায়নি যেভাবে ওর দাদাকে পেতে দেখেছে আর একটা সময় পরে তো নিজেই দূরে থাকতে শুরু করে আলাদা থাকতে শুরু করে।
নিজের দুনিয়ায় শুধু কুকুরদের প্রবেশাধিকার ছিল ছোটোবেলায় পড়েছিল যে কুকুর খুব প্রভুভক্ত হয় তাদের সাথে বন্ধুত্ব করলে তারা কখনো ছেড়ে যায় না, আদিত্য তাই কুকুরদের সাথেই বন্ধুত্ব করলো ওদের পাড়ায় যত কুকুর ছিল সবার সাথে তার পরিচয়, সে তাদের সাথে ঘুরতো তাদের খাওয়াতো আবার তারা আদিত্য কথা শুনতো রাতে বাড়ি ফিরতে দেরী হলে তারা ওকে একা রাস্তায় পাহারা দিতে দিতে বাড়ি পৌঁছে দিত এইভাবেই জীবন কাটছিল তারপর একদিন একজন এল আদিত্যর জীবনে...একটা মেয়ে।
আদিত্যদের পাড়াতেই থাকতো আগে কখনো কথা হয়নি আদিত্য তো এমনিতেও একাই থাকতো তার উপর কখনো কোনো মেয়ের সাথে কথা বলেনি ওই দিদি ছাড়া।
মেয়েটা আদিত্যর কলেজেই ভর্তি হয়েছিল ওর ক্লাসেই, একদিন সন্ধ্যার দিকে আদিত্য ওর কুকুর বাহিনীর সাথে ঘুরে পাড়ায় ঢুকছে দেখলো পাড়ার বাইরে কয়েকজন ছেলে ওকে আর ওর কয়েকজন বান্ধবীকে ঘিরে রেখেছে বুঝতে অসুবিধা হলো না যে ওরা ওদের ইভটিজিং করছে।
অন্য কোনো ছেলে হলে কি করতো ঠিক নেই কিন্তু আদিত্য ওদের সাহায্য না করে পারলো না আর এটাই ওর জীবনের প্রথম ভুল ছিল"।
হ্যাঁ ভুল কারণ ওটার ফলেই আদিত্যর জীবনের গতিপথ পাল্টে গেল, সেদিন ওটা না করতো তাহলে হয়তো জীবনটা অন্যরকম হতো। যাইহোক, ওই ছেলেগুলো কিছুদিন আগে আদিত্যর দিদির সাথেও এক‌ই কাজ করেছিল তখন আদিত্য ওর কুকুরদের নিয়ে ওদের তাড়া করিয়েছিল ফলে সেদিন‌ও যখন আদিত্য ওর বাহিনী নিয়ে ওদের সামনে গেলো তখন ওরা ভয়েই বোধহয় আস্তে আস্তে সরে গেল, তখন‌ও আদিত্য বুঝতে পারেনি যে যা করলো তাতে ওর পুরো জীবন তছনছ হয়ে যাবে। পরদিন থেকে ওই মেয়েটা আদিত্য পিছনে পরে গেল কলেজে, ক্যান্টিনে ওর পাশে বসতো তারপর ধীরে ধীরে পরিচয় হলো আর সেখান থেকে বন্ধুত্ব, আদিত্যর সাথে ঘোরা, ওর সাথে কুকুরদের খাওয়ানো সব করতে লাগলো তারপর সেইদিনটা এলো, ১৪ই ফেব্রুয়ারি ভ্যালেন্টাইনস ডে ছিল যেদিন মেয়েটাই আদিত্যকে প্রপোজ করলো আর আদিত্য‌ও বোকার মতো এক্সেপ্ট করলো, হয়তো.. হয়তো কেন নিশ্চয়ই সেও ওর প্রতি দুর্বল হয়ে পরেছিল আর এটাই আদিত্যর জীবনের দ্বিতীয় ভুল।
সময় গড়াতে থাকে ধীরে ধীরে ওদের দুজনের রিলেশনের কথা ওদের পরিবারের সবাই জানলো ঠিক হলো আদিত্য আগে নিজের পায়ে দাঁড়াবে তারপর ওদের বিয়ে দিয়ে দেওয়া হবে, আদিত্যদের নিজস্ব ব্যাবসা তাই অসুবিধাও ছিল না, কিন্তু আদিত্য কখনোই ওদের ব্যাবসা বা টাকা ইনকামের দিকে চোখ দেয়নি তার প্রয়োজন‌ও মনে করেনি ওর বাবা আর দাদাই দেখতো, কখনো কিছুর অভাব ছিল না যখনই আদিত্য টাকার দরকার হতো তখনই বাবা, মা, দাদা যখন যার কাছে ইচ্ছা চেয়ে নিতো একটা সময় ঠিক হলো ওর দাদাই ওদের ব্যাবসার হাল ধরবে আদিত্যর অবশ্য তাতে কোনো আপত্তি ছিল না, ও মনে করতো নিজের‌ই তো দাদা আবার কোম্পানিও ওদের সেটা ও দেখুক কি দাদা কি যায় আসে?
কিন্তু এটা শোনার পর থেকে মেয়েটি কেমন যেন পাল্টে যেতে লাগলো প্রথমে আদিত্য অতটা গুরুত্ব দেয়নি বিশ্বাস করতো মেয়েটিকে কিন্তু সে ভুলে গিয়েছিল যে বিশ্বাসের মধ্যেই বিষ বাস করে।
বুঝতে পারেনি যে ওর পিছনে অন্য একজনের সাথে রিলেশনে জড়িয়ে গেছে মেয়েটা কখনো আদিত্যর মাথাতেই আসেনি যে ও এরকম করতে পারে। একদিন মেয়েটা বললো গ্যাংটকের রুমটেক মঠে নাকি লামাদের নাচ হবে সেটা দেখতে যেতে চায়, আদিত্য আপত্তি করেনি, দুজনের বাড়ি থেকেও কেউ আপত্তি করেনি দুজনেই গেল সেখানে আর তারপর এলো সেই রাত।
গ্যাংটকে পৌঁছে একটু ঘোরাঘুরি করলো পরদিন রাতেই ছিল লামা ডান্স দুজনেই গিয়েছিল দেখতে, আদিত্য এর আগে কখনো জিনিসটা দেখেনি তাই মন দিয়ে দেখছিল মঠে বেশ ভিড় হয়েছিল একটা সময় মেয়েটি বললো সে মঠের পিছনে খোলা জায়গায় যাচ্ছে এখানে ভিড়ে নাকি ওর সাফোকেশন হচ্ছে নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। আদিত্য কিছু বলার আগেই উঠে চলে গেল আদিত্যও সঙ্গে সঙ্গে গেলো কিন্তু ভিড়ের জন্য বেরোতে একটু পিছিয়ে পরলো বাইরে এসে দেখে মেয়েটি নেই, মঠের পিছনে দিকে গিয়ে খুঁজলো কিন্তু পেলো না সেদিন রাতে কুয়াশা ছিল তাই একটা সময় পরে প্রচণ্ড চিন্তা হচ্ছিল যে মঠের পিছনে যে খাদটা আছে ওখানে যায়নি তো? তাই আদিত্যও ওখানে গিয়ে খুঁজতে থাকে এমন সময় হঠাৎ পিছন থেকে মাথার পিছনে কেউ সজোড়ে মারলো, মুহূর্তের জন্য চোখে অন্ধকার দেখলো তারপর নিজেকে সামলিয়ে পিছনে তাকিয়ে দেখতে পেলো আঘাতকারীকে.. ওই মেয়েটা নয় একটা ছেলে মেয়েটির নতুন প্রেমিক আদিত্যর পিছনে যার সঙ্গে ও রিলেশনে ছিল এবং যার সঙ্গে মিলে ও আদিত্যকে মারার জন্য ওখানে নিয়ে এসেছে।
প্রথমে বিশ্বাস হচ্ছিল না কিন্তু তারপর‌ই মেয়েটা সামনে এলো তখন আদিত্যর বুঝতে বাকি র‌ইলো না যে সাফোকেশন টাফোকেশন মিথ্যে, আদিত্যকে মঠ থেকে বার করে ফাঁকা জায়গায় নিয়ে আসার প্ল্যান ছিল ওটা মেয়েটা জানতো ও বেরিয়ে গেলে আদিত্য ওকে খুঁজতে আসবে, আর এটাই ওরা চাইছিল, ওরা জানতো ওখানে আদিত্য সাহায্য করার কেউ থাকবে না।
আদিত্য বারবার ওদের অনুরোধ করতে থাকে যে ওকে না মারতে, বারবার বলতে থাকে যে 'আমি তো তোমাদেরকোনো ক্ষতি করিনি তাহলে আমাকে মারবে কেন?', মেয়েটিকে বলে 'তুমি তো বলেছিলে আমাকে ভালোবাসো তাহলে আমাকে মারছো কেন?'
উত্তরে মেয়েটা হিংস্র কণ্ঠে জবাব দেয় 'আমি তোমাকে ভালোবাসি কে বলেছে? তোমার মতো ছেলেকে কোনো মেয়ে ভালোবাসতেই পারে না, তোমার মধ্যে সেরকম কোনো কোয়ালিটি নেই তুমি য়কারো ভালোবাসার যোগ্য ন‌‌ও তোমাকে কেউ ভালোবাসতে পারে না' আরো বলে 'তুমি না মরলে ওরা এক হতে পারবে না তাই তোমাকে মরতেই হবে'।
আদিত্য একবার শেষ চেষ্টা করে 'ঠিক আছে আমি তোদের মাঝে আসবো না, কিন্তু আমাকে মারিস না',  কিন্তু এতে ওইদুজনের দুজন মনে কোনো পরিবর্তন আসে না। 'এভাবে হবে না' কথাটা বলেই মেয়েটিই প্রথমে খাদের ধারে দাঁড়ানো আদিত্যর দিকে দুপা এগিয়ে এসেই তাকে এক ধাক্কা মারে, টাল সামলাতে না পেরে প্রথম আদিত্য আঃ করে একটা আর্তনাদ করে উল্টে পড়ে যায়। চকিতে ঘটনাটা ঘটে যাওয়ায় দ্বিতীয় যুবকটি কিছুটা হতবিহ্বল হয়ে যায় সে বড়ো বড়ো চোখে যুবতীটির দিকে তাকিয়ে থাকে, যুবতীটি সেটা দেখে বলে 'তুমি দেরী করছিলে তাই আমি করে দিলাম'। দ্বিতীয় যুবকটি একটু হেসে উত্তর দেয় 'তা ঠিক করেছো কিন্তু এরপর কি করতে হবে মনে আছে তো?'।
'আছে' মেয়েটি আরও কিছু বলতে যাচ্ছিল কিন্তু একটা গোঙানির আওয়াজ পেয়ে দুজনেই চমকে ওঠে, নীচে খাদের দিকে তাকিয়ে দেখে খানিক আগেই ধাক্কা দিয়ে যাকে ফেলে দেয় সে আস্তে আস্তে উপরে উঠে আসার চেষ্টা করছে, খাদটা খাড়া খাড়া নামেনি একটু ঢালু হয়ে নেমেছে মাঝে মাঝে কিছু ঝোপঝাড় আবার কখনো কখনো পাথর খামচে ধরে উঠে আসছে, আরও কিছুটা এগিয়ে আসতেই তার মুখটা দৃশ্যমান হয় উপরে থাকা দুজনের তারা অবাক হয়ে দেখে যে উঠে আসছে তার কপাল ফেটে রক্ত পড়ছে এছাড়াও গালে থুতনিতে কয়েক জায়গায় ছড়ে গেছে।
আদিত্য প্রায় খাদের উপরে উঠে এসেছে কিন্তু একদম উপরের ধারে হাত রাখতেই উপরে থাকা দুজন নীচের আদিত্যর দুটো হাত পা দিয়ে মাড়িয়ে ধরলো, আদিত্য ব্যাথায় একটা আর্তনাদ করে ওঠে। 'তুই এখনো বেঁচে আছিস? তোকে মরতেই হবে' নিজের ডান পা দিয়ে আদিত্যর বা হাতটা মাড়াতে মাড়াতে হিংস্র কণ্ঠে বলতে থাকে উপরে থাকা যুবকটি। নীচের যুবকটি কেঁদে ওঠে 'আমি সত্যি বলছি আমি তোদের মাঝখান থেকে চলে যাবো, কিন্তু আমাকে মারিস না'। আদিত্য আরও কিছু বলতে যাচ্ছিল কিন্তু হটাৎ মুখে একটা লাথি খেয়ে আঃ করে থেমে যায়, লাথিটা মেরেছে মেয়েটি, তার একটা পা তখন‌ও আদিত্যর ডান হাত মাড়িয়ে রাখা আছে, হিংস্র কণ্ঠে সে বলে 'তুমি বুঝতে পারছো না তোমাকে মরতেই হবে, তুমি না মরলে আমরা একসাথে থাকবো কিভাবে?' আদিত্য ব্যাথায় কঁকিয়ে উঠে কোনোমতে বলে 'আমি তো বলছি আমি তোমাদের মাঝখান থেকে সরে যাবো', কিন্তু উত্তরে মেয়েটির কণ্ঠ আরও হিংস্র হয়ে ওঠে 'আমরাই তোমাকে সরিয়ে দেবো'।  এবার উপরের যুবকটিও লাথি মারতে থাকে, আদিত্য তাও বাঁচার চেষ্টা করতে থাকে কিন্তু দুজনের ক্রমাগত লাথিতে আর পারে না, তাছাড়া তার দুটো হাত উপরের দুজনে মাড়িয়ে রেখেছে সে আর থাকতে পারে না ধরে থাকতে একটা চিৎকার করে সে নীচে পড়ে যায়, তার আর্তনাদ আশেপাশের কুয়াশা আবৃত অন্ধকারে মিলিয়ে যায়'।

                বর্তমান সময়:

"তারপর কি হলো? তোমাকে বাঁচালো কে?"
আদিত্য থামতেই ওর একটা হাতের উপরে নিজের একটা হাত রেখে আস্তে করে একটু চাপ দিয়ে প্রশ্ন করে পিয়ালী, "তোমার বাড়ির লোক জানতে পারেনি? মেয়েটার কি হলো?"
"আমার ভাগ্যে ওখানে মৃত্যু ছিল না তাই বেঁচে গিয়েছিলাম"
"তুমি যখন বেঁচে গিয়েছিলে তখন বাড়ি ফিরে গেলেনা কেন?"
"গিয়েছিলাম কিন্তু.."।
"কিন্তু?"
আদিত্য আবার অতীতে ডুব দেয়,

             আদিত্যর অতীত:

আদিত্য যখন আবার জ্ঞান ফিরে পেয়ে চোখ খুললো তখন হাসপাতালে, বেডে শুয়ে আছে, ওঠার চেষ্টা করতেই বুঝলো সেটা সম্ভব নয় একটু ধাতস্থ হয়ে সে চারিদিকে তাকিয়ে থেকে বোঝার চেষ্টা করলো যে সে কোথায়? নিজের অবস্থাও বুঝতে অসুবিধা হলো না হাত তুলতে গিয়ে দেখলো নাড়াতেই পারছে না। 
"এখন কেমন লাগছে?" মোলায়েম স্বরটা তখনই প্রথম কানে আসে পাশে তাকায় দেখে এক মধ্যবয়স্ক ভদ্রলোক বসে আছেন, বয়স ৪৫ এর আশেপাশে, মাথায় কাঁচা-পাকা মেশানো ঢেউ খেলানো চুল, গোঁফ দাঁড়ি পরিষ্কার করে কামানো, চোখে ফ্রেমহীন আয়তাকার চশমা, গায়ে একটা বড়ো কোট। "এখন কেমন লাগছে?" আবার প্রশ্ন করেন ভদ্রলোক।
"আআআমি কোথায়?" কোনোমতে কথা বলে আদিত্য। "তুমি হাসপাতালে, তোমাকে কেউ খাদ থেকে ফেলে দিয়েছিল" শান্ত কণ্ঠে উত্তর দেন ভদ্রলোক, এবারে আদিত্য অনুভব করে যে তার মাথা এবং কানের দুপাশ থেকে থুতনি পর্যন্ত ব্যাণ্ডেজ জড়ানো কপালেও বাধা আছে, চোখের নীচে ব্যাণ্ডেজ এছাড়া হাতেও প্লাস্টার শরীরের আরও অনেক জায়গায় ব্যাণ্ডেজ অনুভব করে সে। "তোমার নাম কি? বাড়ি কোথায়?" জিজ্ঞেস করেন ভদ্রলোক।
"আমার বাড়ি কলকাতায়" উত্তর দেয় সে,
"তুমি গ্যাংটকে এসেছিলে কেন, বেড়াতে?" আবার প্রশ্ন করেন ভদ্রলোক, "হ্যাঁ" ছোট উত্তর আদিত্যর।
"একটা প্রশ্ন করবো?" জিজ্ঞেস করেন ভদ্রলোক, শুনে একটু অবাক হয় আদিত্য, ভদ্রলোক এতক্ষণ বিনা অনুমতিতে প্রশ্ন করছিলেন এখন হটাৎ অনুমতি চাইছেন কেন সেটা বুঝতে পারে না সে বলে "করুন"।
"তোমাকে ওরা মারতে চাইছিলো কেন?" ভদ্রলোকের প্রশ্নে চমকে যায় আদিত্য, সে উত্তর না দিয়ে চুপ করে থাকে, ভদ্রলোক বলেন "রুমটেকের মনাস্ট্রিতে আমিও গিয়েছিলাম সেদিন, তারপর হটাত একটু হালকা হতে পিছনের খালি জায়গাটায় গিয়েছিলাম হটাৎ একটা চিৎকার শুনে সেদিকটায় যাই, কুয়াশার জন্য তাড়াতাড়ি দৌড়ানো সম্ভব ছিল না, ওখানে গিয়ে দেখি দুজন চলে যাচ্ছে পিছন দিক থেকে দেখে চিনতে পারিনি, টর্চের আলোয় আশেপাশে খুঁজতে থাকলাম যে চিৎকারটা কোথা থেকে এসেছিল কিন্তু কাউকে দেখতে পাইনি হটাৎ খাদের ধারে একটা পাথরের উপর একটু রক্ত চোখে পড়ে সন্দেহ হয় যে হয়তো একটু আগে দেখা দুজন কাউকে এখান থেকে ফেলে দিয়েছে, আমি জানতাম যে খাদটা একদম খাঁড়া নামেনি ধাপে ধাপে নেমেছে অথচ কুয়াশার জন্য ঠিকঠাক দেখা যাচ্ছে না তবুও আস্তে আস্তে কিছুটা নীচে নেমে দেখি এক জায়গায় একটা জ্যাকেটের কিছুটা ছেঁড়া অংশ আটকে আছে আরো একটু নামতেই তোমাকে দেখতে পেলাম একটা আগাছার ঝোপের উপরে পড়ে আছো, মাথা ফেটে রক্ত পড়ছে, প্রথমে ভেবেছিলাম তুমি মারা গেছো তারপর বুঝলাম অজ্ঞান হয়েছো, তাই তড়িঘড়ি তোমাকে এখানে নিয়ে এলাম"। ভদ্রলোক এক নাগাড়ে বলে একটু থামলেন তারপর বললেন "কিন্তু ওরা তোমাকে মারতে চাইছিলো কেন?"।
আদিত্য চুপ করে আছে দেখে ভদ্রলোক আবার বলেন "তোমাকে তুমি বলছি বলে কিছু মনে কোরো না, আসলে তুমি অচেতন অবস্থায় নিজেই বলছিলে 'যে আমাকে মারিস না আমি তোদের মাঝখান থেকে সরে যাবো' অবশ্য অনধিকার চর্চা করছি বলে কিছু মনে কোরো না"।
"আপনি আমাকে তুমিই বলুন আমি আপনার থেকে অনেক ছোটো, আমাকে বাঁচানোর জন্য আপনাকে ধন্যবাদ বলা উচিত কিন্তু পারছি না আপনি আমাকে না বাঁচালেও পারতেন" উত্তর দেয় আদিত্য।
"একথা বলতে নেই" ভদ্রলোক বলেন।
"যার নিজের লোক তাকে মারতে চায়, যে মেয়েটাকে সে ভালোবাসতো যার সাথে বিয়ে করে সে সারাজীবন কাটাতে চেয়েছিল সেই যখন ঠকায় সে যখন অন্য কারো সাথে থাকবে বলে তাকে খুন করতে চায়, খাদ থেকে ধাক্কা মেরে ফেলে দিতে হাত কাঁপে না তখন একজন মানুষের জীবনে বেঁচে থাকার আর কোনো কারণ থাকতে পারে কি?" আদিত্যরচোখ থেকে জল গড়িয়ে পড়ে।
"কিন্তু এবার তুমি কি করবে? কলকাতায় ফিরবে?" জিজ্ঞেস করেন ভদ্রলোক।
"হ্যাঁ, ওদের সামনে আমি গিয়ে দাঁড়াবো, আপনি আমাকে আরেকটু হেল্প করবেন আমাকে কলকাতায় পৌঁছে দেওয়ার ব্যাবস্থা করবেন?" ভদ্রলোককে অনুরোধ করে আদিত্য।
"অবশ্যই করবো, আমি নিজে তোমাকে নিয়ে যাবো কিন্তু আগে তুমি পুরো সুস্থ হয়ে ওঠো তারপর, এখন তোমার জ্ঞান ফিরলেও তুমি চলাফেরা করার অবস্থায় নেই" আশ্বস্ত করেন ভদ্রলোক তারপর একটু থেমে বলেন "ওই দেখো এত কথা হলো এখনো নিজের পরিচয় দেওয়া হয়নি আমি অতীন্দ্র সিংহরায়, এটুকুই আপাতত যথেষ্ট"।

প্রায় একমাস লেগেছিল আদিত্যর মোটামুটি ঠিক হতে, যদিও তখনও শরীরের অনেক জায়গায় ব্যাণ্ডেজ, মুখে আঘাতের চিহ্ন, ক্রাচ ছাড়া হাঁটতে পারে না সেই অবস্থাতেই অতীন্দ্র বাবু আর আদিত্য ট্যাক্সি করে কলকাতার ঢাকুরিয়ায় ব্যানার্জি বাড়ির সামনে এলো তখন আদিত্যর মুখ মাস্ক দিয়ে ঢাকা, চোখে কালো চশমা, কপালে তখনও ব্যাণ্ডেজ বাধা, বা হাতটা প্লাস্টার, মুখটা ঢেকে রাখার একটা কারণ নীচে পড়ে যাওয়ার সময় তার মুখে পাথরের আঘাতে গভীর ক্ষত হয়েছে যেগুলোর দাগ কোনোদিন মুছে যাবে না, আদিত্যর মুখের এই দাগগুলোর জন্য এখন তার মুখটা বিভৎস হয়েছে, আয়নায় নিজের মুখটা দেখার পরে সে দোনামোনায় ভুগতে শুরু করেছিল যে এই মুখ নিয়ে বাড়িতে আসবে কি না কিন্তু শেষ পর্যন্ত অতীন্দ্র বাবু বোঝানোয় আসতে রাজী হয়েছে, যদিও ট্যাক্সি থেকে নামেনি, অতীন্দ্র বাবুই একপ্রকার জোর করেই ট্যাক্সি থেকে নামান তারপর ট্যাক্সির ভাড়া মিটিয়ে দিয়ে বাড়ির ভিতরে ঢোকেন, আদিত্য এক হাতে ক্রাচ ধরে কোনোমতে হেটে ভিতরে ঢোকে, অতীন্দ্র বাবু বাড়ির সামনে একজনকে জিজ্ঞেস করে জানেন বাড়ির সবাই পিছনে কাছেই মাঠে আছেন সেখানে অনুষ্ঠান চলছে।
কি অনুষ্ঠান জিজ্ঞেস করতে অপর এক মহিলা অদ্ভুত স্বরে বলেন,
"বিয়ের অনুষ্ঠান"
"বিয়ে?" অতীন্দ্রবাবু অবাক হন
"হ্যাঁ, বিয়ে। বড়োলোকদের ব্যাপারস্যাপার বুঝিনা দেখলে গা জ্বলে যায়, একমাস আগেই বাড়ির ছোটোছেলে ঘুরতে গিয়ে অ্যাক্সিডেন্টে মারা গেছে আর এর মধ্যেই বাড়ির বড়ো ছেলে বিয়ে করছে"।
অতীন্দ্র বাবু আর কোনো কথা না বলে আদিত্যকে নিয়ে সেদিকে যান। বাড়ির পিছনে কিছুটা গেলে একটা মাঠ আছে সেখানে কিছুটা জায়গা জুড়ে প্যাণ্ডেল করা হয়েছে সেখানে কিছু লোকের ভিড়, কয়েকজন মহিলা নিজেদের মধ্যে কথা বলছে যার সারমর্ম একটু আগের মহিলার মতোই
"সত্যিই কি দিনকাল পরলো দেখো, ছোটোভাই মরতে না মরতেই বড়োভাই বিয়ের পিড়িতে বসে পরলো"
"কিন্তু এটা তো হয়না তাই না? অন্তত একবছর তো অশৌচ মানতেই হয়?"
"আরে রাখো বড়োলোকদের আবার মানা না মানা, কথায় আছে মানলে অনেক কিছুই আর না মানলে কিছুই না, ওই শ্রাদ্ধের দিন‌ই ঠাকুরমশাই বিধান দিয়েছিলেন যে অপঘাতে মরলে নাকি অশৌচ কাটানো যায়, তাই করেছেন"
"কিন্তু তাই বলে ব্যানার্জী বাবু আর তার ব‌উ মেনে নেবেন? হাজার হোক ওনাদের ছেলে মরেছে"
"ধুর ওই ছেলের প্রতি টান ছিল নাকি? ওদের বাড়িতে যে ব‌উটা কাজ করে সে বলেছে ছোটোছেলের প্রতি তেমন টান ছিল না"
"এ আবার হয় নাকি? বাবা মা তো?"
"কে জানে? দেখো গিয়ে হয়তো কুড়িয়ে পাওয়া ছেলে তাই মরলেও কোনো দুঃখ নেই"
"বাদ দাও, আমাদের কি? এসব বড়োলোকদের ব্যাপারে আমাদের মাথা ঘামিয়ে দরকার নেই"
 আদিত্য হঠাৎ কাউকে দেখে যেন নিজেকে আরও কিছুটা গুটিয়ে নেয় অতীন্দ্রবাবুর পিছনে লুকোতে চেষ্টা করে, অতীন্দ্র বাবু হটাৎ আদিত্যকে নিজের পিছনে লুকোতে দেখে অবাক হয়ে যান তিনি বোঝেন ছেলেটা কারো থেকে নিজেকে লুকোচ্ছে, তিনি জিজ্ঞেস করায় আদিত্য একজন যুবকের দিকে ইঙ্গিত করে বয়সে অনিকেতের মতোই একটু বড়ো হয়তো, উচ্চতাতেও আদিত্যর থেকে একটু বেশি ওই ছ ফুটের কিছুটা কম রোগা ফর্সা, টিকালো নাক, বর্তমানে গায়ে একটা স্যাণ্ডো গেঞ্জি এবং ধুতি সে একজন মহিলার পাশে বসে তাকে কি যেন বোঝাচ্ছে মহিলার বয়স ৪০-৪২ এর মধ্যে ফর্সা একটু মোটা গায়ে লাল শাড়ি, লাল ব্লাউজ, মাথায় চুল পিছনে খোঁপা করা আছে সিঁথিতে সিঁদুর তিনি একটা চেয়ারে চুপ করে বসে আছেন মুখ গম্ভীর।
"মা" অতীন্দ্র বাবুর পিছন থেকে ডেকে ওঠে আদিত্য যদিও সে ডাক একমাত্র অতীন্দ্র বাবুই শুনতে পান, তিনি বলেন "চলো, তোমার মায়ের কাছে চলো"। কিন্তু আদিত্য আবার কুঁকড়ে যায় তার চশমা পড়া চোখ এবার অন্য একজনের দিকে অতীন্দ্র বাবু দেখেন এক যুবতীকে বয়স ২০-২২ এর মধ্যে, উচ্চতা পাঁচ ফুটের একটু বেশি, গায়ের রঙ একদম ফর্সা না হলেও কালো নয়, কিন্তু দেখার জিনিস তার চোখদুটো অতীন্দ্র বাবু সহজেই বুঝতে পারেন এই মেয়ে সুবিধার নয় এর চোখ দুটোতে চালাকি এবং শয়তানি বুদ্ধির প্রকাশ স্পষ্ট, চোখের কোলে এখন কালির দাগ এবং জলের ছাপ সেগুলো যে মেকআপ সেটা তিনি সহজেই বুঝতে পারেন এবং সাথে এটাও বুঝতে পারেন যে এই মেয়েই সে যাকে আদিত্য ভালোবাসতো মেয়েটিকে দেখে আগের যুবকটি উঠে যায় দুজনে একটা কোণে একাকী গিয়ে কিছু কথা বলে ফিরে আসে যুবকটি আবার আগের মতো মহিলার পাশে গিয়ে বসে।
"কাকে খুঁজছেন?" গুরুগম্ভীর কণ্ঠে প্রশ্নটা শুনেই চমকে ওঠেন অতীন্দ্র বাবু তাকিয়ে দেখেন তাঁরই বয়সী এক ভদ্রলোক, লম্বায়‌ও তারি সমান ছফুটের উপরে এনার‌ও রঙ ফর্সা ,টিকালো নাকের নীচে পুরুষ্ট গোঁফ, দেখেই বোঝা যায় দারুণ ব্যাক্তিত্ত্ব। "আসলে আমি অন."নামটা নিতে গিয়েও থামতে হয় তার একটা কারণ তার শার্টের পিছনে টান দিয়েছে আদিত্য, আর দুই সেই মুহূর্তে অপর একজন ডাক দেয় "মিস্টার ব্যানার্জি" অতীন্দ্র বাবুর সামনে দাঁড়ানো ভদ্রলোক "এক্সকিউজ মি প্লিজ" বলে সেদিকে এগিয়ে যান, অতীন্দ্র বাবু পিছনে আদিত্যকে জিজ্ঞেস করেন "উনি তোমার বাবা?"।
"হ্যাঁ" ছোট উত্তর দেয় আদিত্য।
"তাহলে তুমি আমাকে থামালে কেন? ওনার তো জানা উচিত যে" কথাটা সম্পূর্ণ করতে পারলেন না অতীন্দ্র বাবু, কারণ আদিত্য বলতে শুরু করেছে "আমি এই চেহারা নিয়ে কিভাবে ওনাদের সামনে যাবো?"
"কিন্তু ওনারা তোমার বাবা মা তুমি ওনাদের কাছে যাবে না তো কার কাছে যাবে?" অবাক স্বরে প্রশ্ন করেন অতীন্দ্র বাবু,কিন্তু আদিত্যর উত্তর দেওয়ার আগেই কেউ জোরে মাইকে গান চালু করে দেয়।
" আপনি আমাকে এখান থেকে নিয়ে চলুন" আদিত্যর স্বরে বোঝা যায় যে ও কান্নাটাকে কোনোমতে আটকে রেখেছে। "কিন্তু এনারা তোমার.." কথা শেষ করতে পারেন না অতীন্দ্র বাবু আদিত্য তাকে থামিয়ে বলতে শুরু করে "প্লিজ আমাকে এখান থেকে নিয়ে চলুন"।
একটা কফি শপে একটু কোনায় একটা টেবিলে আদিত্য আর অতীন্দ্র বাবু মুখোমুখি বসে আছেন সামনে কফির পেয়ালা রাখা সত্ত্বেও দুজনের কেউই মুখে তুলছে না, আদিত্য টেবিলের উপরে দুটো হাত জড়ো করে তার মাঝে মাথা গুঁজে রেখেছে, অতীন্দ্র বাবু বলেন "তুমি ফিরে চলো, তোমার বাবা-মার জানা উচিত সত্যিটা"
"কিভাবে ফিরে যাবো? আমার মুখের অবস্থা দেখেছেন?" মাথা তুলে জিজ্ঞেস করে আদিত্য ওর মুখে এখন মাস্ক নেই, চোখেও চশমা খুলে রেখেছে, অতীন্দ্র বাবু বোঝানোর চেষ্টা করেন "এখন চিকিৎসা বিজ্ঞান অনেক এগিয়ে গেছে, প্লাস্টিক সার্জারির দ্বারা তোমার মুখের এই দাগ মুছে যাবে"।
"আর তারপর?" আদিত্য প্রশ্ন করে, অতীন্দ্র বাবু বলেন "তারপর মানে?"।
"আমি ওনাদের কাছে ফিরে গেলে ওনারা যত খুশি হবেন তার থেকে অনেক বড়ো আঘাত ধেয়ে আসবে"
"এসব কি বলছো তুমি?"
"ঠিকই বলছি স্যার আর আমি কোনোমতেই আমার বাবা মাকে আঘাত দিতে পারবো না, এমনিতেও আমার প্রতি ওনাদের টান বরাবরই কম আমার মৃত্যুটাকে সহজেই ওনারা সহ্য করে নেবেন, ওনাদের কাছে ফিরে গিয়ে তাই ওনাদের ওই আঘাতের সামনে দাঁড় করানোর কোনো মানেই হয় না এর থেকে এটাই ভালো যে আমি তাদের কাছে মৃত হয়েই থাকি"
"কিন্তু তাই বলে যারা তোমাকে মারার চেষ্টা করলো তারা খোলামেলা ভাবে ঘুরে বেড়াবে?"
"তাছাড়া আর উপায় নেই কারণ আমার কথা কেউ বিশ্বাস করবে না আর আমার কাছে তো কোনো প্রমাণ নেই"।
"ওনারা তোমার বাবা-মা এটাই কি যথেষ্ট নয়?" অতীন্দ্র বাবু আবার বোঝানোর চেষ্টা করেন কিন্তু আদিত্যর ওই এক কথা "আমি ফিরে গেলে অনেক সত্যি বেরিয়ে আসবে আর তাতে বাবা মা বেশি কষ্ট পাবে" সে কিছুতেই যেতে রাজী হয় না, শেষে অতীন্দ্র বাবু হাল ছেড়ে দেন তিনি জিজ্ঞেস করেন "বেশ কিন্তু এবার তুমি কি করবে ভেবেছো?"।
"আমি চলে যাবো অনেক দূরে যেখানে কেউ আমার পরিচয় জানবে না, কেউ আমাকে চিনবে না আপনি আমার জন্য যা করেছেন সেটার ঋণ আমি কোনোদিন শোধ করতে পারবো না আপনাকে আজীবন মনে রাখবো" উত্তর দেয় আদিত্য তারপর একটু থেমে বলে "আচ্ছা আপনি আমার জন্য এত কিছু করছেন কিন্তু কেন সেটা জানতে পারি?"
"কারণ তোমাকে দেখে আমার একজনের কথা মনে পড়ে" উত্তর দেন অতীন্দ্র বাবু, "কে?" আদিত্য প্রশ্ন করে, "আমার অতি প্রিয় একজন, আচ্ছা তোমাকে একটা কথা বলবো?" অতীন্দ্র বাবুর স্বরে সংকোচ। "এতে জিজ্ঞাসা করার কি আছে বলুন" আদিত্য বলে তার স্বর এখন আগের থেকে অনেকটাই সংযত।
"তুমি তো নিজের ফ্যামিলির কাছে ফিরে যেতে চাইছো না অন্য কোথাও যেতে চাইছো তো যদি তুমি রাজী থাকো তাহলে আরেকটা উপায় আছে এতে তুমি যেটা চাইছো সেটাও হবে আর.." অতীন্দ্র বাবু কিছু বলতে গিয়েও থেমে যান। "আর?" আদিত্য জিজ্ঞেস করে, "আর আমারও একটা ছোট্ট উপকার হয়" কথাটা বলেই ফেলেন অতীন্দ্র বাবু। "আপনি আমার প্রাণ বাঁচিয়েছেন আপনার যদি উপকারে লাগতে পারি তাহলে সেটা আমার সৌভাগ্য, বলুন আপনি কি চান?"। "আগে আমার পুরো কথা শোনো তারপর তুমি সিদ্ধান্ত নাও" আবার দোটানায় ভুগতে থাকেন অতীন্দ্র বাবু, সেটা বুঝতে পেরে আদিত্য বলে "আমার এই জীবনের কোনো মূল্য নেই এখন কিন্তু এটা যদি আপনার উপকারে লাগে তাহলে এর থেকে ভালো কিছু আর হয় না আপনি নিঃসংকোচে বলুন"। অতীন্দ্রবাবু একটু গলা খাঁকড়িয়ে বলেন "বেশ তবে বলছি শোনো"।
"বলুন"
"আমি নর্থবেঙ্গলে থাকি ওখানে আমাদের পূর্বপুরুষের তৈরি একটা বিরাট বাড়ি আছে। আমার স্ত্রী এক ছেলে আর এক মেয়েকে নিয়ে থাকতাম"।
"থাকতাম মানে?"
"আমার ছেলে আদিত্য ওর অন্য কোনো বদ নেশা বা শখ না থাকলেও প্রচণ্ড শিকারের শখ, মাঝে মাঝেই আমাদের ওখানের জঙ্গলে ম্যান‌ইটার বেরোয় তখন অনেক সময় বনদপ্তরের লোকেদের সাথে শিকারে যায় শিকার মানে মেরে ফেলে না ওই ঘুমপাড়ানি বুলেট মেরে অজ্ঞান করে বনদপ্তরের লোকেদের হাতে তুলে দেয়"।
কিন্তু মাস ছয়েক আগে ও কোথায় একটা জানোয়ারের খবর পেয়ে ওটাকে শিকার করার জন্য ঘর ছেড়ে চলে যায়, তারপর আর খোঁজ ছিল না। আমি অনেক লোক লাগিয়েছিলাম তাদেরই একজনের মারফত খবর পাই ও নাকি গ্যাংটকে আছে, তাই আমিও চলে যাই  ওখানে গিয়ে শুনি ও মনাস্ট্রিতে আছে সেখানেও যাই কিন্তু পাইনি, তারপর খবর পাই যে.."
"যে?"
"অ্যাক্সিডেন্টে আমার ছেলে মারা গেছে" অতীন্দ্রবাবু হাউহাউ করে কেঁদে ওঠেন।
"কিন্তু আপনি শিওর কিভাবে হচ্ছেন যে ও মারাই গেছে?"
"আমি ওর বডি দেখেছি"
"আপনি শিওর যে ওটা আপনার ছেলেই?"
"হ্যা"
"আয়্যাম সরি, কিন্তু আপনি আমার থেকে কি চাইছেন সেটা যদি বলেন?"
"আমার বাড়িতেএখনো কেউ জানেনা যে আমার ছেলে মারা গেছে, জানলে ওর মাকে মানে আমার স্ত্রীকে আর বাঁচাতে পারবো না, আমি এই ব্যাপারেই তোমার হেল্প চাইছি"
"কিন্তু এই ব্যাপারে আমি কিভাবে হেল্প করবো?"
"তুমি যদি আদিত্য হয়ে আমার বাড়িতে চলো"
"কিন্তু সেটা কিভাবে সম্ভব? আপনার ছেলে আর আমার চেহারা নিশ্চয়ই এক নয়?"
"না সেটা নয় তবে তোমাদের গায়ের রং, এমনকি হাইট প্রায় এক‌ই চট করে ধরা অসম্ভব, তুমি যদি রাজী থাকো তাহলে আমার এক পরিচিত সার্জেনকে দিয়ে তোমার চেহারাটা বদলে আমার ছেলের করে দেবো"
"প্লাস্টিক সার্জারী? সেইজন্যেই একটু আগে এটার কথা বলছিলেন?"
"হ্যাঁ.. মানে তুমি যদি রাজী থাকো"
"সমস্যা তো শুধু চেহারা নয় স্যার, আমি আপনার ছেলের সম্পর্কে কিছুই জানিনা ওর হাবভাব, চালচলন কথাবার্তা কিচ্ছু না এভাবে কাউকে ঠকানো যায় না, বিশেষ করে একজন মাকে"
"ওটা ম্যানেজ করতেই হবে নাহলে আমার স্ত্রীকে বাঁচাতে পারবো না, এটুকু উপকার আমার করবে তুমি?"
"স্যার, উপকার বলবেন না আপনি আমার প্রাণ বাঁচিয়েছেন কিন্তু আপনি বাস্তব সমস্যাটা বোঝার চেষ্টা করুন এগুলোর কোনো উপায় আছে আপনার কাছে?"
"আছে, আমার কাছে আদিত্যর কিছু পুরনো ভিডিও আছে যেগুলো দেখে তুমি ওর ভাবভঙ্গি চলাফেরা কথাবার্তা শিখে নিতে পারবে"
"বেশ, তবে আপনাকে একটা কথা দিতে হবে"
"কি কথা?"
"আমি কে এটা আপনি কোনোদিন কাউকে বলবেন না, যদি কখনো এমন হয় যে সবাই জেনে গেল আমি আদিত্য ন‌ই তখনও নয়,এটা আপনকে কথা দিতে হবে"
"বেশ আমি কথা দিচ্ছি"।
I'm the King of Dark
                &
I rule over all Devils
               devil2 devil2
[+] 8 users Like Monen2000's post
Like Reply


Messages In This Thread
"ধূসর পৃথিবী" - by Monen2000 - 11-12-2022, 01:47 AM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Mehndi - 17-12-2022, 01:10 AM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Monen2000 - 10-05-2023, 01:01 AM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by kublai - 10-05-2023, 02:46 AM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Rancon - 29-05-2023, 05:43 PM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Naim_Z - 31-05-2023, 08:58 AM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Naim_Z - 02-06-2023, 10:56 AM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Naim_Z - 04-06-2023, 09:56 PM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Naim_Z - 06-06-2023, 11:49 AM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Naim_Z - 10-06-2023, 09:33 AM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Naim_Z - 11-06-2023, 10:57 PM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Naim_Z - 14-06-2023, 02:02 AM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Naim_Z - 15-06-2023, 08:50 AM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Naim_Z - 17-06-2023, 08:52 PM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Naim_Z - 18-06-2023, 10:26 AM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Naim_Z - 20-06-2023, 12:46 AM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Naim_Z - 23-06-2023, 09:41 AM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Naim_Z - 25-06-2023, 02:35 PM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Naim_Z - 26-06-2023, 01:00 AM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Naim_Z - 26-06-2023, 01:12 AM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Naim_Z - 26-06-2023, 09:57 PM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Naim_Z - 27-06-2023, 06:42 PM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Naim_Z - 28-06-2023, 09:40 PM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Naim_Z - 30-06-2023, 10:41 PM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Naim_Z - 02-07-2023, 11:34 AM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Naim_Z - 02-07-2023, 12:29 PM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Rancon - 02-07-2023, 04:41 PM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Naim_Z - 03-07-2023, 10:33 AM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by guru1 - 03-07-2023, 03:31 PM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Naim_Z - 04-07-2023, 12:06 AM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Naim_Z - 08-07-2023, 04:22 PM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Rancon - 08-07-2023, 11:39 PM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Naim_Z - 09-07-2023, 12:50 AM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Naim_Z - 11-07-2023, 11:32 AM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Naim_Z - 12-07-2023, 09:57 AM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Naim_Z - 12-07-2023, 10:18 PM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Naim_Z - 15-07-2023, 09:49 AM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Naim_Z - 15-07-2023, 10:37 PM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Naim_Z - 18-07-2023, 12:07 AM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Naim_Z - 18-07-2023, 08:42 PM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Naim_Z - 22-07-2023, 10:14 PM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Ahid3 - 25-07-2023, 12:31 AM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Naim_Z - 25-07-2023, 08:54 AM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Rancon - 25-07-2023, 09:01 AM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Naim_Z - 26-07-2023, 08:25 AM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Naim_Z - 30-07-2023, 11:48 PM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by pratim - 05-08-2023, 10:31 PM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Rancon - 07-08-2023, 07:51 AM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by kublai - 15-08-2023, 05:12 AM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Naim_Z - 19-08-2023, 02:07 PM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Rancon - 22-08-2023, 05:38 AM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Rancon - 03-09-2023, 07:04 AM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by pratim - 03-09-2023, 04:00 PM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Saj890 - 18-05-2024, 05:13 PM



Users browsing this thread: 10 Guest(s)