Thread Rating:
  • 99 Vote(s) - 2.82 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
WRITER'S SPECIAL "ধূসর পৃথিবী"
[Image: Picsart-22-12-06-20-20-08-119.jpg]


                             দ্বিতীয় পার্ট
                                   ৪র্থ পর্ব

বান্ধবীর কথা শুনে প্রথম যুবতীর ঠোঁটে হাল্কা হাসির রেশ দেখা যায় কিন্তু সে কোনো কথা বলে না দ্বিতীয় যুবতী বলে চলে, "ঠিক কথাই বলছি তুই জানিস আমাদের কাজের জায়গায় কত ছেলে তোকে ফলো করে? এমনকি কদিন আগে যে একজন সিনিয়র উকিলের ছেলে এলেন মনে আছে ওনার সাথে দেখা করতে? তাকেও দেখি তোর দিকে হাঁ করে তাকিয়ে আছে কিন্তু দেখ তুই এখানে কাউকে পাত্তা দিস না, কেন রে কেউ সেট করা আছে নাকি?"
প্রথম যুবতীর মুখে লেগে থাকা অল্প হাসিটুকু মিলিয়ে গেল পরিবর্তে একটা চাপা কষ্টের রেখা ফুটে উঠলো সেটা দ্বিতীয় যুবতীর দৃষ্টি এড়ালো না সে বোধহয় বুঝতে পারলো তার বান্ধবীর জীবনে কিছু একটা আছে যেটা সে কাউকে বলেনি, তাই সে আবার জিজ্ঞেস করে, "কি রে কেউ আছে নাকি?"
"না" প্রথম যুবতীর ছোট্ট উত্তর।
"সত্যি বলছিস? তাহলে কাউকে পাত্তা দিতে চাস না, ব্যাপার কি?"
"ওদের আমার পছন্দ হয় না তাই"
"কেমন ছেলে পছন্দ তোর, শুনি?"
"ওসব থাক"
"ধুর.. বল না"
"আমার যেরকম ছেলে পছন্দ সেরকম আর কেউ হবে না"
"আর?... মানে কেউ ছিল, কে শুনি একটু?"
"ছিল একজন"
"ছিল? কেন ব্রেক‌আপ?"
"না"
"তাহলে?"
"কখনো প্যাচ‌আপ‌ই হয়নি তো ব্রেক‌আপ কিভাবে হবে?"
"মানে?"
"কখনো তাকে বলতে পারিনি, বলার সুযোগ বা সময় কোনোটাই পাইনি"
"কেন সে কি অন্য কাউকে?.."
"জানিনা আমি তার থেকে অনেকটাই দূরে"
"তাহলে একবার খোঁজ নে, হয়তো সেও এখনো তোর মতো কাউকে খুঁজছে"
"তুই আমার লাইফ সম্পর্কে কিছু জানিস না তাই একথা বলছিস কিন্তু সে জানে আর তাই সে কখনোই আমাকে মেনে নেবে না"
"কেন? কি হয়েছে?"
"বাদ দে ওসব কথা, আমি শুধু এটুকুই চাই সে যেখানেই থাকুক যার সঙ্গেই থাকুক ভালো থাকুক সুখে থাকুক"।
"কেমন ছিল সে?"
"সবার থেকে আলাদা"
"সেটা তো সবাই বলে, এ আর নতুন কি?"
"কিন্তু আমার কাছে ও সবার থেকে আলাদা"
"বাব্বা ও? কতদিনের রিলেশন ছিল তোদের?"
"বললাম না কোনোদিন ওকে বলার‌ই সুযোগ হয়নি, সবমিলিয়ে হয়তো দুবার সামনাসামনি কথা হয়েছে"
"কি বলছিস মাত্র দুবার? তাতেই এই?"
"হ্যাঁ, ওর মধ্যে এমন একটা কিছু ছিল যেটা প্রথমবারেই আমার মনে চিরস্থায়ী জায়গা করে নেয়, এখন আমি ওর সাথে থাকি কি না থাকি আমার মনে ও ছাড়া আর কারো জায়গা নেই কোনোদিন হবেও না।"
"আমি প্রার্থনা করি একদিন সে ঠিক তোর কাছে আসবে, তুই খুব ভালো তোর সাথে খারাপ কিছু হতে পারে না"
"আমার সাথে যা খারাপ হবার সেটা হয়ে গেছে তাই আর ওসব নিয়ে ভাবি না কারণ ভেবে কোনো লাভ নেই কিছুই বদলাবে না... এবার চল রিসর্টে ফেরা যাক ক্ষিদে পেয়েছে"।
রিসর্টে ফিরে প্রত্যেকে স্নান সেরে ব্রেকফাস্টের জায়গায় এলো ইচ্ছা করলে নিজেদের রুমেও ডেকে নেওয়া যায় কিন্তু যুবতীরা সবার সাথেই খেতে গেল। ব্রেকফাস্টের জায়গায় আরও অনেক ট্যুরিস্টর আছে প্রত্যেকে নিজেদের মতো গল্প করতে করতে খাচ্ছে। খাওয়া শেষে বাকী যুবতীরা নিজেদের রুমে রেস্ট নিতে গেলেও একজন গেলো না তার মন এখনো খচখচ করছে কেসটা নিয়ে সে বাকিদের থেকে একটু আলাদা হয়ে রিসর্টের বাগানে গেল, সেখানে ট্যুরিস্টদের নিরিবিলিতে বসার জন্য অনেক জায়গা করা আছে, তার‌ই একটাতে গিয়ে বসলো সে।
তার মাথায় এখন শুধু কেস নয় একটু আগে বান্ধবীর বলা কথাগুলো‌ও ঘুরপাক খাচ্ছে সাথে চোখে একজনের মুখ ভেসে ওঠে, যুবতী মোবাইল খুলে একটা ছবি ওপেন করে দেখতে থাকে একজন তরণের ছবি সেইজন যাকে সে প্রথম দেখাতেই মনপ্রাণ সব সঁপেছে কিন্তু কখনো বলা হয়নি হয়তো কোনোদিন বলাও হবে না, একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো যুবতীর ভিতর থেকে নিজের মনেই বললো "না জানি এখন কেমন আছে সে, কার সাথে আছে? তবে যেখানেই থেকো যার সাথেই থাকো চাইবো সারাজীবন সুখে থাকো... আমার জীবনে আমি সবকিছু হারিয়েছি তোমাকেও আমি হয়তো পাবো না, কিন্তু তুমি যার‌ই হ‌ও সে যেন তোমাকে খুশি রাখে, সুখী রাখে"।
এভাবে কতক্ষণ কেটে গেছে তা খেয়াল নেই যুবতীর সে বসার জায়গাটা থেকে উঠে আশেপাশে পায়চারী করতে থাকে এইভাবে আনমনে হাঁটতে হাঁটতে রিসর্টের বাগানের ভিতর দিয়ে অনেকটা চলে যায়, এদিকটায় একদম খালি কেউ নেই, হটাৎ‌ই তার চোখে পরে একটা তাঁবু, একটু অবাক হয় যুবতী কারণ রিসর্টের সামনের দিকেই সব তাঁবুগুলো আছে যেখানে ট্যুরিস্টরা তাদের ইচ্ছামতো বুকিং করে থাকতে পারে এমনকি নাইটস্টে পর্যন্ত করতে পারে, কিন্তু এই জায়গাটা রিসর্ট থেকে একটু দূরে এখানে তাঁবু খাটানো আছে দেখে স্বভাবতই তার মনে কৌতুহল জেগে ওঠে, আরও একটু ভালো করে দেখার জন্য সে তাঁবুটার কাছে এগিয়ে যায়।
 কিন্তু কাউকে দেখতে পায় না আশেপাশে দেখতে গিয়েই সে থমকে দাঁড়িয়ে পরে সেখানে একজন যুবক দাঁড়িয়ে সামনে দাঁড় করানো সাদা ক্যানভাসে ছবি আঁকছে। ছবি আঁকিয়ে যুবকটির গায়ে একটা কালো কাপড়ের পাতলা ট্রাউজারস্ আর গায়ে একটা কালো স্যাণ্ডো গেঞ্জি যেটাতে লাল পাইপিং করা, তবে যুবতীর দৃষ্টি তার কাপড়ে নয় তার মুখের দিকে, একটা সাইড‌ই দেখতে পাচ্ছে সে, এইসময় যুবকটি পাশে রাখা একটা ছোট্ট চেয়ার থেকে রঙের টিউব নেওয়ার জন্য ফিরতেই পুরো মুখটা দেখতে পেলো যুবতী, যদিও যুবকটি যুবতীকে দেখেওনি সে রং নিয়ে আবার ছবি আঁকায় মনোনিবেশ করেছে।
আঁকিয়ে যুবকটির মাথায় লম্বা লম্বা চুল কাঁধ পর্যন্ত নেমে এসেছে মুখ লম্বা দাঁড়ি-গোঁফে পুরো ঢেকে গেছে, সে মুখে একটা জ্বলন্ত সিগারেট নিয়ে একমনে ছবি এঁকে চলেছে একবার সামনে দেখছে আবার ছবিতে তুলি বোলাচ্ছে।
মুখ ভর্তি দাঁড়ি-গোঁফের জন্য ছবি আঁকিয়েটিকে চেনা একপ্রকার দুঃসাধ্য হলেও যুবতী ঠিক চিনতে পেরেছে কিন্তু সে বিশ্বাস করতে পারছে না এ‌ও কি সম্ভব? যুবতী বুঝতে পারছে তার বুকে যেন কেউ দামামা বাজাতে শুরু করেছে যাকে সে প্রথম দেখাতেই ভালোবেসেছে কিন্তু কখনো বলতে পারেনি পরিস্থিতির চাপে যাকে ছেড়ে আসতে হয়েছে, নিজের মনকে একপ্রকার জোর করে বুঝিয়েছে যে তার সাথে আর কখনো দেখা হবে না সে এখানে? কেন?
একবার নিজেই নিজেকে চিমটি কাটে যুবতী আর কেটেই বোঝে সে সম্পূর্ণ জেগে আছে এবং সজ্ঞানে আছে, তার বুকের ভিতরে বাজতে থাকা দামামা আরও জোরে বাজতে শুরু করেছে এবার সে আরেকটু এগিয়ে যায় আর তখনই আরেকজনকে দেখতে পায় সে, ক্যানভাসের পিছনে কিছুটা দূরে চার পা ছড়িয়ে বসে জিভ বের করে আছে সে একটা বিরাট কালো কুকুর, এবার আর কোনো সন্দেহ থাকে না, প্রথম যেদিন ওকে দেখেছিল যুবতী তখনও এই কুকুরটা তার সঙ্গে ছিল ওর সর্বক্ষণের সঙ্গী, বিশ্বস্ত বডিগার্ড সব।
যুবতীর মনে হলো সে আর নিজেকে আটকাতে পারছে না তার পাদুটো যেন আপনা থেকেই তাকে নিয়ে যাচ্ছে তার কাছে, ছবি যুবকটির মুখের সিগারেটটা শেষ হয়ে গেছে সে ওটা একটা ছাইদানিতে ফেলে চেয়ারের উপরছ রাখা প্যাকেট থেকে আরেকটা বার করে মুখে দেয় তারপর চেয়ারের উপরেই রাখা লাইটার দিয়ে ধরিয়ে একটা লম্বা টান দিয়ে কিছুটা ধোঁয়া ছাড়ে যুবতী আর থাকতে পারে না সটান তার কাছে গিয়ে বলে,
"স্মোকিং ইজ ইঞ্জুরিয়াস টু হেলথ, শোনেননি?"
ক্যানভাসে বোলাতে থাকা তুলি ধরা হাত থেমে গেল যুবকের এবং চকিতে যুবতীর দিকে তাকালো যুবকটি এবং অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে র‌ইলো, যুবতী এবার যেটা করলো সেটার জন্য বোধহয় প্রস্তুত ছিল না সে, যুবতী দ্রুত পায়ে এগিয়ে এসে সিগারেটটা তার ঠোঁট থেকে নিয়ে মাটিতে ফেলে পা দিয়ে মাড়িয়ে ফেলে, বলে "আপনি কেন বুঝতে পারছেন না এসব খাওয়া ভালো না.. কতবার বলবো আপনাকে?"।
যুবতীর কথা শুনেও কিছু বলতে পারে না যুবকটি সে হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে থাকে যেন এমন কিছু দেখছে যেটা সে বিশ্বাস করতে চাইছে কিন্তু বিশ্বাস করতে পারছে না বা বিশ্বাস হচ্ছে না,অবশেষে একসময় সে একটা নিঃশ্বাস ছাড়ে যেটা অনেকটা স্বস্তির নিঃশ্বাস।
 "আপনি হয়তো আমাকে চিনতে পারছেন না আমি." যুবতী কথা বলে কিন্ত যুবতীকে কথাটা শেষ করতে না দিয়ে যুবকটি বলে, "পিয়ালী সরকার, ডটার অফ লেট প্রতাপ সরকার", তারপর একটু থেমে বলে "সরি ফর ‌ইওর ফাদার"।
কথাটা বলে যুবকটি আবার একটা সিগারেট বার করে ঠোঁটে ধরে জ্বালাতে যায় কিন্তু একটা টান দেওয়ার আগেই পিয়ালী আবার সিগারেটটা যুবকের ঠোঁট থেকে নিয়ে মাটিতে ফেলে এটাও পা দিয়ে মাড়িয়ে ফেলে, বলে "বলেছিলাম না যে আপনাকে যেখানেই সিগারেট খেতে দেখবো সেখানেই আবার এক‌ই কাজ করবো"।
কিছুক্ষণ দুজনেই চুপচাপ থাকে তারপর পিয়ালী‌ই প্রথম কথা বলে "নর্থবেঙ্গলের কিং মিস্টার আদিত্য সিংহ রায় হটাৎ এখানে এই অবস্থায় কেন জানতে খুব কৌতূহল হচ্ছে"
"এই অবস্থায় মানে?"
"এই যে সন্ন্যাসীর মতো বেশ"
"আমার অবস্থা সন্ন্যাসীর থেকেও নীচে তাই"
"নর্থবেঙ্গল ছেড়ে এখানে?"
"এই প্রশ্ন তো আমিও করতে পারি আপনাকে?"
"আগে প্রশ্ন আমি করেছি মিস্টার আদিত্য তাই আগে আমি"
"আপনাকে বলেছিলাম মনে আছে যে আমি মৃত একজন ওয়াকিং ডেড?"
"হ্যাঁ, মনে আছে"
"ওয়াকিং ডেডরা কোনো জায়গায় ততদিন পর্যন্তই থাকতে পারে যতদিন না তাদের আসল পরিচয় প্রকাশ পাচ্ছে, পরিচয় প্রকাশ পেলেই তাদের সে জায়গা ছাড়তে হয় যেমন আমাকে নর্থবেঙ্গল ছাড়তে হয়েছে"
"মানে? আপনার কথা কিছুই বুঝতে পারছি না"
"আমার কথা ছাড়ুন আপনার কথা বলুন আপনি এখানে কিভাবে এলেন?"
"রিসর্টে ঘুরতে এসেছি বান্ধবীদের সাথে"
"রিসর্টে নয় আপনি নর্থবেঙ্গল ছেড়ে কিভাবে এলেন? এখন যেখানে থাকেন সেখানের কথা বলছি, আর আমিতো ভেবেছিলাম যে আপনি.."
"মারা গেছি?"
"হুমম"
"সৌভাগ্য না দুর্ভাগ্য জানিনা তবে ওই ভাগ্যের জন্যই বেঁচে গেছি"
"কিভাবে? আর এখন কোথায় থাকেন?"
"কেন বলবো বলুনতো? নিজের ব্যাপারে তো কিছুই বলছেন না"
"আমার ব্যাপারে জেনে কারো কোনো লাভ নেই তাই"
"আমার ব্যাপারে জেনেই আপনার কি লাভ?"
"এমনি কৌতূহল"
"আমারও কৌতূহল"
"এইজন্যই বলে উকিলের সঙ্গে কথায় পারা যাবে না"
"একদমই তাই.... ঠিক আছে আমিও বলবো তবে আপনাকেও বলতে হবে"
"আমারটা শুনেই ছাড়বেন তাহলে?"
"আমারটা জানতে চাইলে বলতে হবে"
"বেশ আসুন"
"কোথায়?"
"আমার টেন্টে" সামনের তাঁবুটা দেখিয়ে উত্তর দেয় আদিত্য,
"আপনি তো খুব সুন্দর ছবি আঁকেন"
পিয়ালীর কথা শুনে দাঁড়িয়ে পরে আদিত্য সে তাঁবুর দিকে কিছুটা এগিয়ে গিয়েছিল ফিরে কিছুটা পিছিয়ে এসে হাল্কা স্বরে বলে "থ্যাংকস, শিখেছিলাম কোনো এক অতীত জীবনে, এখানে এসে আবার প্র্যাকটিস করছি টাইম কাটানোর জন্য আসুন"।
"আপনার কথার মাথামুন্ডু কিছুই বুঝতে পারছি না" পিয়ালী মন্তব্য করে, দুজনে তাঁবুর ভিতরে যায় তাঁবুর ভিতরে একটা চৌকি রাখা আছে তার উপরে একটা পরিষ্কার বালিশ, চৌকির একপাশে একটা স্ট্যান্ড ফ্যান অপর পাশে একটা ছোট্ট টেবিল যাতে একটা ছোট্ট ইলেকট্রিক কেট্‌ল আর একটা ট্রে তে চা ও কফি তৈরির উপাদান মজুত আছে আর একটা জলের জগ, টেবিলের নীচে একটা মাঝারি সাইজের মাটির কুঁজো যেটা একটা গেলাস দিয়ে ঢাকা আছে, এছাড়া এক কোণে একটা কাঠের স্ট্যাণ্ডে গুটিকয়েক জামা ও প্যান্ট ঝুলছে, পাশে দুটো বেতের চেয়ার, একটা সুইচবোর্ড‌ও লাগানো আছে। একদিকে আরেকটা দরজার মতো তবে বাথরুমের, পুরো সেট‌আপটাই যেন একটা ছোটোখাটো রুম।
"চা না কফি?"
পিয়ালী চারিদিকে দেখছিল হটাৎ আদিত্য‌র প্রশ্নে চমক ভাঙলো "হুঁ?"
"চা না কফি?
"আপনি যেটা দেবেন"
"বসুন" আদিত্য বেতের চেয়ারদুটো দেখিয়ে কথাটা বললো তারপর ফ্যানটা পিয়ালীর দিকে ঘুরিয়ে চালিয়ে দিয়ে ইলেকট্রিক কেট্‌লে জল গরম করে কফি তৈরি করতে লাগলো।
"সুগার কিউব?"
"হুঁ?"
পিয়ালী একদৃষ্টিতে আদিত্যকে দেখছিল হটাৎ আদিত্যর প্রশ্নটায় হকচকিয়ে গেল। "কটা সুগার কিউব?" আদিত্য আবার প্রশ্ন করে।
"দুটো"
আদিত্য দুটো সুগার কিউব পিয়ালীর কফিতে দিয়ে চামচ দিয়ে ঘেঁটে সেটা পিয়ালীর দিকে বাড়িয়ে দিল পিয়ালী সেটা নিলে আদিত্য নিজের জন্য এক কাপ তৈরী করে অপর চেয়ারে বসলো বললো "এবার বলুন"।
পিয়ালী কফিতে চুমুক দিতে দিতে বলতে শুরু করে, "আমার বাবার নামে পুলিশ ওয়ারেন্ট বার করার পরেই উনি পালিয়ে যান এবং পুলিশ ওনাকে না পেয়ে আমাকে, মাকে আর দাদাকে একপ্রকার ঘরেই নজরবন্দি করে রাখলো এটা তো আপনি জানেন?"
"হ্যাঁ"
"আমাদের কোথাও বেরোনোর উপায় ছিল না এইভাবেই দিন কাটছিল একদিন এক কনস্টেবল একটা চিরকুট এনে দেয় বাবার চিরকুট ওতে লেখা 'আমাদের খুব বিপদ পালাতে হবে'। কিন্তু পালাবো কেন কোথায় সেটা জানিনা আর বুঝলাম‌ও না কিন্তু ওই কনস্টেবল‌ই পালাতে সাহায্য করলেন, উনি‌ই গাড়ি ও ড্রাইভার ঠিক করলেন। মাঝে রাস্তায় এক জায়গায় কনস্টেবলটির ঠিক করে দেওয়া ড্রাইভার গাড়িটা থামাতে আমি একটু জল কিনতে গেছি, মায়ের শরীরটা অসুস্থ থাকায় ও মায়ের কাছে থাকে হটাৎ পিছনে একটা আর্তনাদ শুনে দেখি কয়েকজন লোক ওদের জোর করে আমাদের গাড়িতে ঢুকিয়ে দিল, আমি চিৎকার করতে গেলে একটা শক্ত হাত আমার মুখ চেপে একদিকে টেনে নিয়ে যায় আর ওই লোকগুলো মাকে আর দাদাকে ধরে নিয়ে চলে যায়। আমি হাতটা ছাড়িয়ে দেখি বাবা"
এতটা বলে পিয়ালী একটু থামলো আদিত্য কোনো কথা না বলে অপেক্ষা করতে থাকে একটু পর পিয়ালী নিজেই আবার শুরু করলো,
"আমি অবাক হয়ে গেলাম বাবাকে ওখানে দেখে কিন্তু কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই উনি আমাকে টানতে টানতে অন্য একটা গাড়িতে তুলে নিলেন, তিনি নিয়ে গেলেন স্যার এর বাড়ি"
"স্যার?"
"আমি যার অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে ওখানে প্র্যাকটিস করতাম"
"আচ্ছা, কিন্তু ওখানে কেন?"
"সেটাই আমি করেছিলাম তখন বাবা বললেন যে বিপদটা মূলত আমার তাই আমাকে সরিয়ে এনেছেন আর যারা মা আর দাদাকে নিয়ে গেছে তারাও বাবার লোক ওরা ওদের একটা সেফ জায়গায় নিয়ে যাবে আর আমাকে নর্থবেঙ্গল ছেড়ে চলে যেতে হবে কিন্তু কিছুক্ষণ পর খবর আসে যে একটা লরি মা আর দাদার গাড়িটাকে ধাক্কা মেরে খাদে ফেলে দিয়েছে, এটা শুনে বাবা আর স্যার যেন আরও ব্যাস্ত হয়ে উঠলেন কান্নার সময়‌ও পেলাম না তাড়াতাড়ি আমাকে নিয়ে এনজেপি তে আসার জন্য র‌ওনা দেয় কিন্তু সেখানেও দুর্ভাগ্য"
আবার একটু থামে পিয়ালী এবারেও আদিত্য কথা বলে না অপেক্ষা করে পিয়ালী আবার শুরু করে, "এনজেপি তে পৌঁছাতে না পৌঁছাতে কয়েকজন আমাদের উপরে অ্যাটাক করে আমাদের সাথেও বাবার কয়েকজন অনুচর ছিল কিন্তু বিপক্ষে যারা ছিল তারা সংখ্যায় বেশী আমাদের লোকগুলো একে একে মারা পরতে থাকে তবুও বাবা আমাকে আর স্যারকে কোনোমতে ট্রেনের দিকে যাওয়ার রাস্তা করে দিয়ে নিজে লড়তে থাকে তবে বেশিক্ষণ না শেষবার তাকিয়ে দেখি উনি রক্তাক্ত অবস্থায় লুটিয়ে পরছেন আর আমাকে ট্রেনে তুলে দিয়ে নিজে উঠতে গিয়ে পিঠে গুলি খেয়ে পরে যান, আশ্চর্যের বিষয় ওরা আমাকে লক্ষ্য করে গুলি চালালো না ওরা আমাকে ধরার জন্য আসতে থাকে কিন্তু স্যার ওদের বাধা দিতে থাকেন কিন্তু ওরা..."
পিয়ালী আবার থামে সে আর বলতে পারে না তার দুচোখ দিয়ে জল পরছে, আদিত্যকে আর বলতে হয় না সে বুঝতে পারে বাকি কথাটা, সেটা সে নিজেই শেষ করে, "তারপর ওরা ওনাকে পুরোপুরি শেষ করে কিন্তু আপনাকে ধরতে পারে না তাইতো?"
"হ্যাঁ, ট্রেনটা ছেড়ে দেয় কিন্তু স্যার শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত ওদের আটকে রাখেন না অন্য কিছু হয় জানিনা"
"আয়্যাম সরি"
"ইটস্ ওকে এবার আপনার টা বলুন"
"আগে কয়েকটা কথা যেটা আপনার জানা দরকার এরমধ্যে কয়েকটা আমার অনুমান তবে মনে হয় না যে ভুল করছি"
"কি?"
"সেদিন আপনার স্যার নয় আপনার বাবাই বোধহয় ওদের আটকায়"
"কি...কিন্তু?"
"আপনার বাবা স্টেশনের বাইরে কেন সেদিন মারাই যাননি"
"এ কি বলছেন আপনি? কিন্তু এটা কিভাবে সম্ভব? আমি তো নিজের চোখে দেখলাম." পিয়ালী যথেষ্ট উত্তেজিত।
"আপনি কি দেখেছেন আমি জানিনা, পরেরদিন এনজেপি তে একটা ঝামেলার খবর কানে এসেছিল কিন্তু তখন আমার মাথায় আপনার কথা ( আদিত্য‌র কথা শুনে পিয়ালী ক্ষণিকের জন্য চমকে উঠেছিল).. মানে অন্য একটা কথা ঘুরছিল তাই অতটা মাথা ঘামাইনি"।
আদিত্য একটু থেমে আবার শুরু করে "খুব সম্ভবত আপনার বাবাই ওদের আটকে আপনাকে পালাতে সাহায্য করে তারপর নিজেও ওদের হাত থেকে পালাতে সফল হয়"।
"আপনি এত শিওর কিভাবে হচ্ছেন?"
"বললাম যে ওটা আমার অনুমান তবে আবার বাবা যে স্টেশনে মারা যাননি এটা আমি জানি"
"কিভাবে?"
আদিত্য একটু চুপ করে বোধহয় কথাটা কিভাবে বলবে সেটা নিজের মনে একবার গুছিয়ে নেয় তারপর বলে, "আপনার বাবা যখন মারা যান তখন আমি ওখানে ছিলাম"
চমকে ওঠে পিয়ালী, "মানে? আমার বাবা.. আপনি? আমি কিচ্ছু বুঝতে পারছি না, আমার বাবাকে কি তবে আপনি?.."
"না.. আপনার বাবাকে আমি মারিনি"
"তবে কি পুলিশ এনকাউন্টার করেছে?"
"না"
"তবে?"
"আপনার বাবা তাদেরই হাতে খুন হয়েছিলেন যাদের হয়ে তিনি কাজ করতেন"
"হোয়াট?" পিয়ালীর মুখ দেখে স্পষ্ট বোঝা যায় যে এটা তার কাছে মোটেও বিশ্বাসযোগ্য নয়, "এটা আপনি কি বলছেন? আমার বাবা? "
"ঠিক বলছি, আপনার বাবাকে নর্থবেঙ্গলের অপরাধ জগতের একজন রাজার মতো দেখলেও আসলে তিনি একজন ছোটো বোড়ে ছাড়া আর কিছুই ছিলেন না, আর তারাই আপনার বাবাকে মেরেছে, আমার এই দুটো হাতের উপরেই আপনার বাবা শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন" আদিত্য নিজের হাতদুটো দেখায়।
"আপনার হাতে?"
"হ্যাঁ, বিশ্বাস করুন আমার কিচ্ছু করার ছিল না আমি যদি আর মিনিটখানেক আগেও পৌঁছাতে পারতাম তাহলে ওনাকে মরতে দিতাম না কিন্তু আমি যখন ওনার কাছে পৌঁছালাম তখন অনেক দেরী হয়ে গেছে, আয়্যাম সরি"
পিয়ালী চোখের জল মোছে আদিত্য উঠে একটা ল্যামিনেশন করা ডকুমেন্ট এনে পিয়ালীর দিকে এগিয়ে দেয়।
"এটা কি?" পিয়ালী জিজ্ঞেস করে।
"আপনার বাবার ডেথ সার্টিফিকেট আমার কাছে ছিল কারণ আমি তো জানতাম যে আপনি আর.... এবার এটা আপনার"
"কিন্তু এটা.."
"শুধু নর্থবেঙ্গলে নয় সবজায়গাতেই এমন অনেক ছোটোখাটো হসপিটাল আছে যেখানে পুলিশের দৃষ্টি বেশি নেই অথচ ওখানে প্রায় সবরকম কাজ‌ই হয়, সেরকমই একটা জায়গা থেকে বার করা"
"থ্যাংকস...আচ্ছা যারা আমার বাবাকে মেরেছে তারা কোথায়?"
"তারা পুলিশের এনকাউন্টারে মারা গেছে"
"আপনি শিওর?" এবারে পিয়ালীর গলায় ছক অদ্ভুত বদল আসে যেটা একজন প্রতিশোধ স্পৃহা থেকেই জন্মায়, আদিত্য বুঝতে পারে সেটা সে বলে, "আজ আপনাকে বলা প্রতিটা কথা সত্যি"
"একটা কথা বলুন তো আমার বাবা যদি ওদের হয়ে কাজ করতো তাহলে ওরা বাবাকে মারলো কেন?"
"অনুমান করতে পারি তবে কোনো প্রমাণ নেই"
"অনুমানটাই বলুন"
 "ঠিক আছে বলছি, খুব সম্ভবত সেদিন স্টেশনে যারা আপনাদের উপর অ্যাটাক করেছিল তারাও ওদের লোক এবং.. এবং যে লরিটা আপনার মা এবং দাদাকে মারে সেটাও ওদের লোক চালাচ্ছিল এবং ইচ্ছা করেই ওদের ধাক্কা দিয়ে খাদে ফেলে দেওয়া হয়"
"কিন্তু কেন? আমার মা আর দাদা ওদের কি ক্ষতি করেছিল?"
"খুব সম্ভবত আপনার বাবা করছিল"
"কি ক্ষতি?"
"তিনি ওদের বিরুদ্ধে চলে গিয়েছিলেন হয়তো ওদের হুমকি দিচ্ছিলেন যে ওদের সবকথা যেগুলো আপনার বাবা জানতেন সেগুলো ফাঁস করে দেবেন"
"আমার বাবার জন্য আমাদের পুরো পরিবারকে শেষ হয়ে যেতে হলো" পিয়ালীর দুচোখ থেকে আবার জলের ধারা বেরোতে থাকে। আদিত্য সান্ত্বনা দেওয়া স্বরে বলে,"আপনার বাবা কিন্তু আপনার জন্যই ওদের সাথে শত্রুতা করেছিলেন"
"মানে?"
"আপনি জানেন কি না জানিনা কিন্তু আপনার বাবা মেয়ে পাচারের সাথে যুক্ত ছিলেন কিন্তু তিনি যাদের হয়ে কাজ করতেন তাদের কাছে নিজেদের লোক বলে কিছু হয় না এবার কোনোভাবে হয়তো তাদের চোখ.... তাদের চোখ আপনার উপরে পরেছিল (পিয়ালী আবার চমকে উঠলো আদিত্যর কথা শুনে), এবার সেটা আপনার বাবা জানতে পারেন হাজার হোক বাবা তো নিজের মেয়েকে কিভাবে?... ফলস্বরূপ ওদের সাথে শত্রুতা এবং...... সেইজন্যেই উনি আপনাকে নিয়ে বেশী চিন্তিত ছিলেন এবং আপনকে নর্থবেঙ্গল থেকে বার করে দিয়েছিলেন"।
"এতকথা আপনি কিভাবে জানলেন?"
"ওদের‌ই একজন লোক বলেছে"
"ওদের সাথে আপনার‌ও যোগাযোগ ছিল?"
"না, যারা আপনাদের গাড়িটা খাদে ফেলেছিল তাদের যখন মারছিলাম তখন ওদের একজন বলেছিল"
"আপনি ওদের মেরেছেন?"
"শাস্তি দিয়েছি, মৃত্যুদণ্ড"
"কিন্তু আমাদের সাথে তো আইমিন আমার বাবার সাথে তো আপনার শত্রুতা ছিল তাহলে?"
আদিত্য চকিতে একবার পিয়ালীর মুখের দিকে তাকালো তারপর দৃষ্টি নামিয়ে বললো "আপনি বোধহয় ভুলে যাচ্ছেন যে আপনার মা একবার আমাকে নিজের হাতের তৈরী লুচি-তরকারি খাইয়েছিলেন ওনার খুনিকে কিভাবে ছেড়ে দেবো?"
পিয়ালীর মনে হলো আদিত্য অন্য একটা কিছু বলতে গিয়ে কথাটা ঘুরিয়ে নিল অবশ্য এটা তার মনের ভুল‌ও হতে পারে, সে যবু জিজ্ঞেস করে,
"শুধু আমার মায়ের লুচি-তরকারির ঋণ শোধের জন্য ওদের মারলেন?"
প্রশ্নটা শুনে আদিত্য‌ কোনো উত্তর দিল না চুপ করে পিয়ালীর মুখের দিকে তাকিয়ে র‌ইলো বেশ কিছুক্ষণ দুজনে পরস্পরের চোখের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে র‌ইলো যেন নীরবতাই অনেক কথা বলে যাচ্ছে যেগুলো তাদের মূখ হয়তো কোনোদিন বলতে পারবে না, একটু পরে আদিত্য‌ই মুখ খোলে,
"তারপর কি হলো? ওখান থেকে এখানে এলেন তারপর?"
"স্যারের এক পরিচিত ছিল এখানে তার খোঁজেই একটা মেসে উঠলাম টাকার অভাব ছিল না তাই অসুবিধা হয়নি তারপর একটা কাজ‌ও জুটিয়ে ফেললাম"
"কাজ? কি কাজ?"
"যেটা করতাম? একজন বড়ো উকিলের অ্যাসিস্ট্যান্ট"
"নিজে কবে থেকে ইন্ডিপেন্ডেন্টলি শুরু করবেন?"
"শুরু করেছি, দু-একটা ছোটোখাটো কেস লড়েছি জিতেওছি.. কিন্তু"
"কনগ্ৰাচুলেসনস্। কিন্তু কি? বড়ো কেস পাচ্ছেন না? পেশেন্স রাখুন ঠিক পাবেন"
"পেয়েছিলাম কিন্তু সে কেস কোর্টে ওঠার আগেই একটা অ্যাক্সিডেন্টে মেইন ভিক্টিম মারা যায়"
"ব্যাড লাক। কিন্তু লেগে থাকুন ঠিক সাকসেস পাবেন কোথায় প্র্যাকটিস করছেন?"
"হাইকোর্টে"
"হাইকোর্টে?" আদিত্য বিস্ময় প্রকাশ করে,
"হ্যাঁ, অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে কাজ করতে করতে বেশ কিছু পরিচিতি হয়ে গেছে তাই অসুবিধা হয়নি"
"আমার তরফ থেকে গুডলাক"
"থ্যাংক ইউ এবার আপনারটা বলুন"
"আমারটা জেনেও কোনো লাভ নেই তাই ছাড়ুন"
"এটা কিন্তু চিটিং হচ্ছে, কথা ছিল দুজনেই সব বলবো আমি বলেছি এবার আপনার পালা"।
আদিত্য কিছু বলতে যাচ্ছিল কিন্তু তার আগেই তাঁবুর বাইরে কিছু পদশব্দ সাথে বাদশার ডাক আর কয়েকটা মেয়ের ভয়ার্ত স্বর শুনে দুজনেই চমকে উঠলো,পিয়ালী অবশ্য বাইরের মেয়েদের আওয়াজ চিনতে পারলো বললো, "এই রে আমার ফ্রেণ্ডস রা বোধহয় খুঁজতে খুঁজতে চলে এসেছে"
"হ্যা, অনেকক্ষণ হলো প্রায় সন্ধ্যা হতে চললো"
"আপনারটা কিন্তু শোনা হলো না, আমরা কাল সকালেই চলে যাবো দিস ইস নট ফেয়ার"
"বেশ তো আমি তো এখানেই থাকি এখন, আবার যখন আসবেন তখন নাহয় বলবো"
"প্রমিস?"
"প্রমিস"
দুজনে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ায় কিন্তু বাইরে আসার আগে পিয়ালী যেকাজটা করলো সেটার জন্য আদিত্য ঠিক তৈরী ছিল না, আদিত্য একটু এগিয়ে গিয়েছিল হঠাৎ পিয়ালীর "আদিত্য" ডাকটা শুনে পিছনে ফিরলো আর প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই পিয়ালী দুহাতে আদিত্যকে জড়িয়ে ধরে ওর বুকে মাথা গুঁজে দিল।
"থ্যাংকস, আমার বাবা আমার মা আর দাদার জন্য যেটা করেছো তার জন্য। থ্যাংকস আ লট"।
ব্যাপারটা এত তাড়াতাড়ি ঘটে গেল যে আদিত্য ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল সে কি করবে বা কি বলবে বুঝতে না পেরে দুহাত স্যারেণ্ডার করার ভঙ্গিতে উপরদিকে তুলে দাঁড়িয়ে র‌ইলো। আবার বাদশার ডাক শুনে পিয়ালীর চমক ভাঙলো সে তৎক্ষণাৎ আদিত্যকে নিজের বাহুবন্ধন থেকে মুক্ত করে আরক্ত মুখে দাঁড়িয়ে র‌ইলো, আদিত্য একটু চুপ থেকে বললো, "ইটস্ ওকে থ্যাংকস বলার কিছু নেই আসুন"।
দুজনে বাইরে গিয়ে দেখে সেখানে তিন-চারটি মেয়ে ভয়ে গুটিসুটি মেরে দাঁড়িয়ে আছে তারা না পারছে ভিতরে আসতে আর না পারছে দৌড়ে পালিয়ে যেতে আর তাঁবুর গেটের বাইরে বাদশা প্রহরা দিচ্ছে। 
আদিত্য মেয়েগুলোর অবস্থা দেখে ওদের ভয় কাটানোর জন্য বললো,
"রিল্যাক্স, ভয় পাবেন না ও কিছু করবে না কিন্তু আপনারা?"
মেয়েগুলোর হয়ে উত্তরটা আরেকটা অল্পবয়সী ছেলে দিল যে এই রিসর্টে কাজ করে, "দাদা ওনারা ওনার এক ফ্রেণ্ডকে খুঁজে পাচ্ছেন না, উনি ফোন‌ও ঘরে ফেলে গেছেন"
এবারে পিয়ালী আদিত্যর পিছন থেকে বেরিয়ে আসে "আমি এখানেই ছিলাম" তারপর আদিত্যর দিকে ফিরে বলে "আমি কিন্তু আপনার কথা শুনতে আবার আসবো আর আপনিও কিন্তু কথা দিয়েছেন যে বলবেন"
"বেশ তবে এখন আপনি ফিরে যান আর রিসর্টে এইসময় ছোট্ট করে ক্যাম্পফায়ারিং এর ব্যবস্থা করা হয় ওটা মিস করবেন না।"
"আপনি আসছেন?"
"আমি গেলেও ওখানে হয়তো থাকতে পারবো না কিছু কাজ আছে সেগুলো সারতে হবে"
"ওকে গুড বাই"
"গুড বাই"
পিয়ালী ওর বান্ধবীদের সাথে চলে গেল সে আর পিছনে ফিরে তাকালো না হয়তো নিজেকে সামলাতে পারবে না বলেই বা যেটা একটু আগে করেছে সেটার লজ্জার জন্য কিন্তু যদি তাকাতো তাহলে দেখতে পেতো পিছনে দাঁড়ানো মূর্তিটি একদৃষ্টে অপলক চোখে তার চলে যাওয়া দেখছে।

"কোন শালা ফোন করেছিস বে?"
বিছানায় পাশ থেকে হাতরে ফোনটা খুঁজে কানে দিয়ে নেশা আর ঘুমজড়ানো গলায় জিজ্ঞেস করে মনোজ,ঘুমের মাঝে কেউ ফোন করে ঘুম ভাঙালে প্রচণ্ড রেগে যায় সে তখন তার আর হিতাহিত, শিষ্টাচার জ্ঞান থাকে না, কাল অনেক রাতে বাড়ি ফিরে সবে বিছানায় শুয়েছে আর সকাল হতে না হতেই ফোন।
"বাব্বা এই তো জেগে আছো দেখছি"
"কোন শালা বে, ফোন রাখ বাঞ্চোদ"
"ভদ্রভাবে কথা বলো মনোজ কারণ দরকারটা তোমারই, আমি প্রীতম আঙ্কেল বলছি"
"কি দরকার?"
"ওই উকিলটার খোঁজ পাওয়া গেছে"
চকিতে নেশা ছুটে গেল মনোজের এমনিতেও কাল খুব একটা রঙিন জল পেটে পরেনি তার তাও যেটুকু নেশা ছিল সেটুকুও কেটে গেল প্রতিশোধের নেশা বোধহয় এমনই যার সামনে অ্যালকোহলের নেশাও টিকতে পারে না।
"মেসে ফিরেছে?" সটান সোজা হয়ে বসে প্রশ্নটা করে মনোজ।
"হ্যাঁ, কাল রাতে"
"রাতে জানাননি কেন?"
"রাতে শোনার মতো অবস্থায় ছিলে?"
"সে বাদ দিন এখন মেসেই আছে তো?
"আপাতত, তবে বোধহয় আজ থেকে আবার কোর্টে যাবে"
"আপনার কাছে ছবি আছে?"
"আছে, তোমাকে পাঠিয়েছি"
টুং করে নোটিফিকেশন আসতেই হোয়াটস্অ্যাপে গিয়ে ছবিটা দেখলো মনোজ আর সঙ্গে সঙ্গে ওর মুখে ক্রুর হাসি খেলে যায়, লালসায় তার চোখ চকচক করে ওঠে
"এর নাম কি আঙ্কেল?"
"তুমি কি করবে ভেবেছো?"
"দেখি, এখনো ঠিক ভাবিনি"
"এমন কিছু কোরে বসো না যাতে পরে পস্তাতে হয়"
"উপদেশের জন্য থ্যাংকস"
"মনে রেখো এই মেয়েটি কিন্তু উকিল আর তুমি অলরেডি একটা কেসে ফেঁসে আছো"
"আমার মনে আছে, আপাতত এর মেসের অ্যাড্রেসটা পাঠান"
"ঠিক আছে, তবে শুধু মেসের অ্যাড্রেস নয়, ওল্ড পোস্ট অফিস স্ট্রিটের ওখানে একটা ছোট্ট চেম্বার আছে ওর সেটার অ্যাড্রেস‌ও পাঠাচ্ছি"
"গুড আর নামটা?"
"পিয়ালী... পিয়ালী সরকার"।

"ড্যাড, তুমি কিন্তু মনোজকে চেনো ও কিন্তু তোমার উপদেশ মানবে না, সেটাই করবে যেটা ও নিজে ঠিক মনে করবে" ফোনটা রাখতেই সুশান্ত তার বাবা প্রীতমবাবুকে প্রশ্নটা করে এতক্ষণ সে বাবার পাশে বসে মনোজের সাথে প্রীতমবাবুর কথোপকথন শুনছিল। ছেলের কথা শুনে একটু হেসে প্রীতমবাবু উত্তর দেন,
"আমি তো সেটাই চাই যে ও উল্টোপাল্টা কিছু করুক"
"মানে? তাহলে তুমি ওকে সামলে চলার উপদেশ দিলে কেন?"
"উপদেশ কে দিল? আমি তো ওকে একটু খুঁচিয়ে দিলাম"।
"তাতে আমাদের কি লাভ হবে?"
"উফফফ এই মনোজের সাথে মিশে মিশে তোর মাথাতেও মরচে ধরেছে দেখছি" বিরক্তির সাথে বললেন প্রীতমবাবু, আর সুশান্ত একটু কাঁচুমাচু হয়ে বললো, "আসলে ড্যাড তোমার বুদ্ধির সাথে পাল্লা দেওয়া তো সবার কম্ম নয় তাই.."
প্রীতমবাবুর মুখ দেখে মনে হলো ছেলের প্রশস্তিবাক্যে তিনি মনে মনে একটু খুশী‌ই হয়েছেন, একটু মোলায়েম স্বরে বললেন "মনোজ একটা মাথামোটা ও যদি ওই উকিল মেয়েটাকে মেরে দেয় তাতে আমাদের কোনো ক্ষতি নেই কিন্তু ধর মেয়েটা বেঁচে গেল তখন কি ও মনোজকে ছাড়বে? মনে হয় না। যতটুকু খবর পেয়েছি মেয়েটা খুব সাহসী সহজে কাউকে ডরায় না ও মনোজকে ছাড়বে না অন্তত জেলের ঘানি টানিয়ে ছাড়বে"।
"আর যদি মনোজ মেয়েটাকে মেরে দেয় আর ওর কিছু না হয় তাহলে?"
"সেটা হবে না, মনোজের উপর নজর রাখার জন্য আমার লোক আছে, মনোজের বিরুদ্ধে প্রমাণ আমার হাতে তুলে দেয়"
"কিন্তু তাতে কি হবে? ধরে নিলাম তুমি ওকে ফাঁসিয়ে দিলে তারপর?"
"তুই এখনো বুঝিসনি, মনোজ জেলে গেলে বা কোনোভাবে মারা গেলে মনোজিত বাবুর মেরুদণ্ড ভেঙে যাবে সেক্ষেত্রে ওর পুরো বিজনেসটা আমাদের হাতের মুঠোয় চলে আসবে"।
I'm the King of Dark
                &
I rule over all Devils
               devil2 devil2
Like Reply


Messages In This Thread
"ধূসর পৃথিবী" - by Monen2000 - 11-12-2022, 01:47 AM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Mehndi - 17-12-2022, 01:10 AM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Monen2000 - 30-04-2023, 11:28 PM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by kublai - 10-05-2023, 02:46 AM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Rancon - 29-05-2023, 05:43 PM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Naim_Z - 31-05-2023, 08:58 AM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Naim_Z - 02-06-2023, 10:56 AM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Naim_Z - 04-06-2023, 09:56 PM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Naim_Z - 06-06-2023, 11:49 AM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Naim_Z - 10-06-2023, 09:33 AM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Naim_Z - 11-06-2023, 10:57 PM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Naim_Z - 14-06-2023, 02:02 AM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Naim_Z - 15-06-2023, 08:50 AM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Naim_Z - 17-06-2023, 08:52 PM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Naim_Z - 18-06-2023, 10:26 AM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Naim_Z - 20-06-2023, 12:46 AM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Naim_Z - 23-06-2023, 09:41 AM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Naim_Z - 25-06-2023, 02:35 PM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Naim_Z - 26-06-2023, 01:00 AM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Naim_Z - 26-06-2023, 01:12 AM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Naim_Z - 26-06-2023, 09:57 PM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Naim_Z - 27-06-2023, 06:42 PM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Naim_Z - 28-06-2023, 09:40 PM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Naim_Z - 30-06-2023, 10:41 PM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Naim_Z - 02-07-2023, 11:34 AM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Naim_Z - 02-07-2023, 12:29 PM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Rancon - 02-07-2023, 04:41 PM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Naim_Z - 03-07-2023, 10:33 AM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by guru1 - 03-07-2023, 03:31 PM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Naim_Z - 04-07-2023, 12:06 AM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Naim_Z - 08-07-2023, 04:22 PM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Rancon - 08-07-2023, 11:39 PM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Naim_Z - 09-07-2023, 12:50 AM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Naim_Z - 11-07-2023, 11:32 AM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Naim_Z - 12-07-2023, 09:57 AM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Naim_Z - 12-07-2023, 10:18 PM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Naim_Z - 15-07-2023, 09:49 AM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Naim_Z - 15-07-2023, 10:37 PM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Naim_Z - 18-07-2023, 12:07 AM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Naim_Z - 18-07-2023, 08:42 PM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Naim_Z - 22-07-2023, 10:14 PM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Ahid3 - 25-07-2023, 12:31 AM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Naim_Z - 25-07-2023, 08:54 AM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Rancon - 25-07-2023, 09:01 AM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Naim_Z - 26-07-2023, 08:25 AM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Naim_Z - 30-07-2023, 11:48 PM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by pratim - 05-08-2023, 10:31 PM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Rancon - 07-08-2023, 07:51 AM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by kublai - 15-08-2023, 05:12 AM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Naim_Z - 19-08-2023, 02:07 PM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Rancon - 22-08-2023, 05:38 AM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Rancon - 03-09-2023, 07:04 AM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by pratim - 03-09-2023, 04:00 PM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Saj890 - 18-05-2024, 05:13 PM



Users browsing this thread: 3 Guest(s)