14-04-2023, 05:02 PM
(This post was last modified: 14-04-2023, 05:05 PM by Bumba_1. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
(22-03-2023, 12:55 AM)Monen2000 Wrote:
৯বম পর্ব
নীলাদ্রি একটা ফাঁক একটা প্রমাণ খুঁজছিল যাতে এই নকল আদিত্যকে ধরা যায় আর সেটা দেয় মনোহরবাবু আর মলয়, সেদিন ওদের বয়ান শুনেই তৎক্ষনাৎ স্পটে যান এবং তাদের বয়ানের উপরেই ভিত্তি করে ঘটনার একটা আনুমানিক রূপ তৈরী করেন তার মনে বিশ্বাস ছিল এই নকল আদিত্য সেটা শুনে উত্তেজিত হয়ে আরও কিছু ভুল করবে কিন্তু উল্টে তার এই শান্তভাব নীলাদ্রিকে অত্যন্ত অবাক করে আর তারপর তার মাথায় কয়েকটা প্রশ্ন একে একে উঁকি দিতে থাকে প্রশ্নগুলো নীলাদ্রি নিজের মনেই সাজিয়ে নেয়, প্রথমত অতীন্দ্রবাবু এই নকল আদিত্যর বিষয়ে আদৌ জানেন? যদি জানেন তাহলে কতটা আর কেনই বা ওকে এখানে এনে রেখেছেন? দ্বিতীয়ত ওই দ্বিতীয় লোকটা কে? তাকে নকল আদিত্য মারলো কেন? তৃতীয়ত বডিদুটো কোথায় সরিয়েছে, সবথেকে যেটা আশ্চর্যের লাগছে নীলাদ্রির সেটা হলো নকল আদিত্য খুন করে বডিদুটো সরিয়েছে কিন্তু রক্ত লাগা শার্ট পরেই বাড়িতে ফিরলো? এছাড়া আরো দু একটা প্রশ্ন তার মাথায় অনেকক্ষণ থেকে ঘুরছে মনোহরবাবু আর মলয় কতটা সত্যি বলছে? আর যেটা সবথেকে তাকে ভাবাচ্ছে সেটা হলো এই নকল আদিত্যর ছায়াসঙ্গী বাদশার অনুপস্থিতি, যতটুকু জেনেছে সে তাতে সে জানে এই নকল আদিত্যর সবথেকে কাছের এবং বিশ্বস্ত যদি কেউ থাকে তাহলে সেটা হলো এই পোষা কুকুরটা অথচ এখন সে অনুপস্থিত, কোথায় গেল সে? মন্দিরের পিছনে জায়গাটা শুকনো তাই ওখানে পায়ের ছাপ পাওয়া মুশকিল, অথচ সিংহ রায় প্যালেসে নেই বাদশা আবার সুবিমলবাবুর বাড়িতেও আসেনি তবে কি তাকে আদিত্য কোথাও লুকিয়ে রেখেছে? কিন্তু কেন?কোনো বিশেষ কিছু বা কাউকে গার্ড দেওয়ার জন্য? নাকি অন্য কোনো রহস্য লুকিয়ে আছে এর পিছনে, প্রশ্নগুলো ভাবতে ভাবতেই নীলাদ্রির জিপ থানার সামনে চলে আসে।
"তোমাদের কোনো সমস্যা হচ্ছে না তো, হলে এখনই বলতে পারো" চা-বাগানের কর্মীদের উদ্দেশ্যে প্রশ্নটা করে আদিত্য, এটা সে বরাবরই করে আর প্রতিটা চা-বাগান শুধু নয় ওদের বিভিন্ন রিসর্টে যারা কাজ করে তাদের বা যারা অন্যান্য বিভিন্ন জায়গায় ওদের হয়ে কাজ করে সবাইকেই করে, আর প্রত্যেকে এটাও জানে যে এটা শুধু কথার কথা হিসেবে জিজ্ঞেস করা নয়, যদি কোনো সমস্যা তারা আদিত্য সিংহ রায়কে জানায় তবে সেটর সুরাহা হতে বেশি দেরী হয় না। আজও তেমনি আদিত্য জিজ্ঞেস করলো উত্তরে দু-একজন কয়েকটা ছোটোখাটো সমস্যা জানালো, এবং আদিত্য সেগুলো মিটিয়ে দেবার কথা জানিয়ে কারখানার উদ্দেশ্যে রওনা দিল এখানে যারা জানেনা তাদের বলে রাখা ভালো যে চা কারখানা সবসময় চাবাগানের কাছাকাছি থাকে।
কারখানায় আদিত্য কিছুক্ষণ ঘুরে দেখতে থাকে কিছুক্ষণ থেকে বেরিয়ে আসছে এমন সময় ওর ফোনটা বেজে ওঠে, পকেট থেকে বার করে দেখে সেটা সুবিমলবাবুর,
"হ্যাঁ, স্যার বলুন" বেশ স্বাভাবিক স্বরেই বলে আদিত্য কিন্তু ওপাশে সুবিমলবাবুর কথা প্রচণ্ড ভয়ার্ত এবং উত্তেজিত আওয়াজ ভেসে আসে "আদিত্য হেল্প মি"।
"কি হয়েছে স্যার আর আপনি এরকম করছেন কেন?"
"আদিত্য আই নিড ইওর হেল্প"
"আপনি কোথায়? আমাকে লোকেশন পাঠান আমি এক্ষুনি আসছি" কথা বলার সাথে সাথেই আদিত্য জিপের উদ্দেশ্যে দৌড় লাগায় সাথে জিজ্ঞেস করে "কি হয়েছে স্যার কিছু তো বলুন"
"ওরা আমাদের মেরে ফেলবে আদিত্য, সেভ আস" সুবিমলবাবুর করুন আকুতির সুরে সাহায্য প্রার্থনা করেন, ততক্ষণে আদিত্য জিপে উঠে জিপ স্টার্ট দিয়ে দিয়েছে, সে বলে "কারা মেরে ফেলবে? আপনি লোকেশন পাঠান আমি এক্ষুনি আসছি"।
প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই ফোনের ওপাশ থেকে একটা কানফাটানো আওয়াজ শুনতে পায় তারপর অন্য আরেকটা কণ্ঠস্বর খুবই ক্ষীণভাবে শুনতে পায় সেটা যেন কাকে বলছে আপনি পালান ডাক্তারবাবু আপনি পালান। আদিত্য ক্রমাগত "হ্যালো, স্যার শুনতে পাচ্ছেন?" বললেও ওপাশ থেকে কোনো উত্তর আসে না, একটু পরে সেই অপর গলাটা আবার শুনতে পায় আদিত্য "আ..আদিত্য তাড়াতাড়ি বজরঙবলি মন্দিরে এসে ডাক্তারবাবুকে বাঁচাও" গলাটা শুনে চমকে ওঠে আদিত্য এ গলা সে চেনে রাগে মুখ লাল হয়ে যায় আদিত্যর সে জিপের স্পিড আরও বাড়িয়ে দেয়, খুব বেশিক্ষণ লাগে না পৌঁছাতে আর পৌঁছে একটু এদিক ওদিক দেখতেই মন্দির থেকে কিছুটা দূরে রাস্তার একপাশে ক্যাদরানো অবস্থায় দেখে সুবিমলবাবুর গাড়িটাকে, দৌড়ে সেখানে যায় কিন্তু গাড়ির ভিতরে কাউকে দেখতে পায় না, সে মন্দির সহ আশেপাশে খুঁজতে থাকে খুঁজতে খুঁজতে সে মন্দিরের পিছনে খাড়াই পথ ধরে কিছুটা ফাঁকা জায়গায় চলে আসে সেখানে হটাৎ কারো একটা গোঙানির আওয়াজ সাথে একটা আর্তনাদ শুনতে পেলে সেই আওয়াজ লক্ষ্য করে দৌড়ে গিয়ে দেখে মাটিতে একটা রক্তাক্ত দেহ পড়ে আছে আর জনা পাঁচেক লোক সুবিমলবাবুকে ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে এবং একজন ছুরি দিয়ে ওনার পেটে আঘাত করলো সুবিমলবাবু আবার আর্তনাদ করে উঠলেন, আদিত্য এবার তাদের দুজনকে চিনতে পারলো একজন মনোহরবাবু আর অপরজন মলয়, ওরা আদিত্যকে দেখে প্রথমে কিছুটা হতচকিত হয়ে গেলেও পরক্ষনেই মলয়ের হাতে রিভলবার উঠে এল কিন্তু ট্রিগার চাপলেও সেটা থেকে গুলি বার হলো না চেম্বার খালি হয়ে গেছে এবার ওদের সঙ্গীরা সুবিমলবাবুকে ছেড়ে আদিত্যকে আক্রমণ করলো, আর সুবিমলবাবু একটা গোঙানির মতো আওয়াজ করে মাটিতে পড়ে গেলেন।
প্রথমে একজন আগে এগিয়ে এসে আঘাত করতে গেলে এক লাথিতে তাকে ছিটকে দেয় আদিত্য তারপর আরেকজন ছুরি দিয়ে মারতে এলে আদিত্য প্রথমে ওর আঘাতটা এড়িয়ে যায় তারপর লোকটার হাত মুড়িয়ে ধরে পাশে সরে পাঁজরে সজোড়ে লাথি মারে, তৃতীয় জনের বেশ শক্তসমর্থ চেহারা তার একটা ঘুষি আদিত্য এড়াতে পারে না কিন্তু পরক্ষনেই সেটা সামলে লোকটার থুতনিতে একটা আপারকাট পাঞ্চ মারে লোকটা টাল সামলাতে না পেরে কয়েকপা পিছিয়ে পড়ে যায় ইতিমধ্যে প্রথম জন উঠে আবার আক্রমণ করতে গেলে বাদশা তার উপরে ঝাঁপিয়ে পড়ে তার হাতে কামড় বসিয়ে দেয় লোকটা পরিত্রাহি গলায় চিৎকার শুরু করে এটা দেখে বাকি দুজন পালানোর উদ্দেশ্যে দৌড় লাগায় সাথে মনোহরবাবু আর মলয়ও দৌড় লাগায় বাদশার সামনে দাঁড়ানোর সাহস তাদের হয় না প্রথম লোকটাও কোনোমতে বাদশার মুখ থেকে হাত ছাড়িয়ে দৌড় লাগায়, বাদশা আর আদিত্যও ওদের পিছনে যাচ্ছিল কিন্তু "আ...আদিত্য" ডাক শুনে থেমে পিছনে তাকিয়ে দেখে যাকে প্রথমে মাটিতে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেছিল তিনি কোনোমতে একটা হাত তার দিকে বাড়িয়ে ডাকছেন এবং আদিত্য লোকটাকে চিনতে পেরেই চমকে ওঠে সেটা আর কেউ নয় প্রতাপ সরকার, তিনি অতিকষ্টে আদিত্যকে ডাকছেন "আ...দি...ত্য"।
"বাদশা" ডাকটা দিয়েই আদিত্য দৌড়ে প্রতাপ বাবুর কাছে আসে, প্রতাপ সরকার কোনোমতে উচ্চারণ করেন "আ......দি..ত্য আ..ম.মার ম.." কথা শেষ করতে পারেন না তিনি। অসম্পূর্ণ রেখেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন একদা পুরো উত্তরবঙ্গে শাষন করা প্রতাপ সরকার, তার চোখদুটো তখনও আদিত্যর দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে যার একটা চোখের কোণা থেকে শেষবারের মতো একটুখানি জল ঝড়ে পরে। আদিত্য খানিকক্ষণ হতবিহ্বল হয়ে থাকে, প্রতাপ সরকারের সঙ্গে তার শত্রুতা ছিল ঠিকই কিন্তু সেটা শুধু সিংহ রায়দের সাথে ব্যাবসায়িক ক্ষেত্রে আদিত্য কখনোই প্রতাপ সরকারের মৃত্যু চায়নি। আদিত্য আলতো করে প্রতাপ সরকারের চোখদুটো বন্ধ করে দেয় হটাৎ কাছেই আবার একটা ক্ষীণ গোঙানির শব্দ শুনে চমকে উঠে তাকিয়ে দেখে একটু দূরেই সুবিমলবাবু, তার মুখ থেকেই গোঙানির আওয়াজটা আসছে, তিনি তখনও বেঁচে আছেন কিন্তু নাড়ী খুবই ক্ষীণ।
"আদিত্য.....আদিত্য" খুব কাছেই কেউ একজন ডাকছে, আওয়াজটা তার খুবই চেনা, আওয়াজটা আবার ডাকে "আদিত্য" এবার তন্ময়তা ভেঙে বাস্তব জগতে ফিরে আসে আদিত্য, দুই হাঁটুর মাঝ থেকে মাথা তুলে তাকায় আদিত্য, গরাদের ওপারে দাঁড়িয়ে তাকে ডাকছেন অতীন্দ্র সিংহ রায়।
"আপনি?" নিরাসক্ত কণ্ঠে জিজ্ঞেস করে আদিত্য উত্তরে অতীন্দ্রবাবু কিছু বলতে যাচ্ছিলেন কিন্তু তার আগেই তার পিছন থেকে নীলাদ্রির আওয়াজ আসে "এরকম করবেন না আঙ্কেল একজন ক্রিমিনালকে সাহায্য করবেন না"।
"কাকে ক্রিমিনাল বলছো, তুমি কি জানো ওর সম্বন্ধে?" নীলাদ্রির কথায় যে প্রচণ্ড রেগে গেছেন অতীন্দ্রবাবু এটা স্পষ্ট বোঝা যায়, কিন্তু নীলাদ্রি তাতে দমবার ছেলে নয় সে বলে "ও আদিত্য নয় আঙ্কেল, হয়তো ওই আদিত্যকে মেরেছে"।
"জানি নীলাদ্রি, আমিই তো ওকে এখানে এনেছিলাম, আর ও আমার ছেলেকে মারেনি আদিত্য কার অ্যাক্সিডেন্টে মারা গিয়েছিল"
"কিন্তু কেন এনেছিলেন ওকে?"
"সে কৈফিয়ত তোমাকে দিতে বাধ্য নই, এখন তুমি ওকে ছাড়বে নাকি আবার আমাকে তোমার সিনিয়রকে ফোন করতে হবে?"
অতীন্দ্রবাবু এমনিতে খুবই শান্ত ভদ্র নম্র স্বভাবের কিন্তু রেগে গেলে তখন তাকে সামলানো মুশকিল আর এখন তার প্রতিটা কথায় সেই প্রচণ্ড রাগ প্রকাশ পাচ্ছে, কিন্তু তবুও নীলাদ্রি আবার বলে "আরেকবার ভেবে দেখুন আপনি.." এতটা বলেই নীলাদ্রিকে থামতে হয় কারণ ততক্ষণে অতীন্দ্রবাবু আর কোনো কথা না বলে নিজের মোবাইলে কাউকে ফোন করার জন্য নাম্বার খুঁজছেন, নীলাদ্রির বুঝতে বাকি থাকে না যে এই ফোনটা তার বাবা অর্থাৎ পুলিশ কমিশনার শশাঙ্ক বাবুর কাছে যাচ্ছে না যাচ্ছে তারও সিনিয়রের কাছে, তাই আর কথা না বাড়িয়ে সে একজন কনস্টেবলকে লক্আপ খুলে আদিত্যকে ছেড়ে দিতে বলে কনস্টেবলটি অবশ্য সঙ্গে সঙ্গেই সে আদেশ পালন করে।
"আপনি এখানে?" লক্আপ থেকে বেরিয়ে শান্ত স্বরে প্রশ্ন করে আদিত্য,
"তুমি কি ভেবেছিলে আমি আসবো না?"
"সেরকমই ভেবেছিলাম, আমি এখন সুবিমলবাবুর খুনের অভিযোগে অভিযুক্ত আর সুবিমলবাবু আপনার ঘনিষ্ঠ বন্ধু"
"চলো বাড়ি যেতে যেতে কথা হবে" আদিত্যকে ছাড়িয়ে নেওয়ার কিছু ফর্মালিটি বাকি ছিল সেগুলো শেষ করে অতীন্দ্রবাবু আর আদিত্য থানার বাইরে বেরিয়ে আসে সেখানে অতীন্দ্রবাবুর নিজের মারুতি গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে, সেটায় উঠতে উঠতে আদিত্য জিজ্ঞেস করে "মা কেমন আছেন?"
"চলো সেখানে গিয়েই দেখবে"
থানার সামনে থেকে দুজনে বেরিয়ে যায় পিছনে তখনও দাঁড়িয়ে আছে নীলাদ্রি, নিস্ফল রাগে সে ফুঁসছে। সুবিমলবাবুর বাড়ির সামনে যখন অতীন্দ্রবাবু আর আদিত্য পৌঁছালো তখন পুরো বাড়ির আশেপাশে এক থমথমে নীরবতা বিরাজ করছে অবশ্য সেটাই তো স্বাভাবিক বাড়ির কর্তার মৃত্যু হয়েছে। অতীন্দ্রবাবু গাড়ি পার্ক করতে করতে আদিত্য বাড়ির ভিতরে ঢুকলো, বসার ঘরে অদ্রিজা, প্রীতি বসে আছেন আর যিনি আছেন তিনি একজন ', ওদের কথাবার্তা শুনে আদিত্য বুঝলো সুবিমলবাবুর পারলৌকিক কাজের বিষয়ে কথা বলছে ওরা।
"আপনি এখনই আপনার বাবার পারলৌকিক কাজ করতে পারেন না মিস চক্রবর্তী"
আদিত্যর আওয়াজে চমকে উঠলো অদ্রিজা, তারপর দরজায় আদিত্যকে দেখেই প্রথমে অবাক তারপর রাগে ফেটে পড়লো অদ্রিজা, সোজা আদিত্যর কাছে এসে রাগ এবং ঘৃণা ভরে জিজ্ঞেস করলো "হোয়াট দ্যা হেল আর ইউ ডুয়িং হেয়ার? এণ্ড হাউ ডিড ইউ গেট আউট অফ জেল?"
আদিত্য কিন্তু অদ্রিজার প্রশ্নের কোনো উত্তর না দিয়ে সম্পূর্ণ অন্য কথা বললো "এখনো আপনার বাবার ডেডবডি পাওয়া যায়নি বা এমন কোনো অকাট্য প্রমাণ পাওয়া যায়নি যাতে তাকে মৃত বলে ধরে নেওয়া যায় তাই আইনের চোখে তিনি এখনও জীবিত এখন আপনি ভেবে দেখুন তার পারলৌকিক ক্রিয়া করবেন নাকি বন্ধ রাখবেন?" তারপর উপস্থিত ',মশাইকে উদ্দেশ্য করে বলে "আমি কি ভুল বললাম?"
',টি আমতা আমতা করছে দেখে আদিত্য বলে "আপনি এখন আসুন", শুনে ',টি বেড়িয়ে যায়। অদ্রিজার মনে হলো আদিত্য তার সাথে ইয়ার্কি করছে সে রেগে আরও কিছু বলতে যাচ্ছিল কিন্তু হটাৎই আদিত্যর গালে সশব্দে একটা চড় এসে পড়ে, উমাদেবী কখন যে ভিতরের ঘর থেকে বেরিয়ে এসেছেন সেটা কেউই বুঝতে পারেনি, চড় মেরে উমাদেবী কিন্তু শান্ত হননি তিনিও রাগী স্বরে বলতে থাকেন "তোমার সাহস হয় কি করে এখানে আসার?"
"মা, একবার আমার কথাটা শোনো"
"খবরদার, একদম আমাকে মা বলে ডাকবে না আমি তোমার মা নই"
কথাটা শুনে আদিত্যর চোখ ফেটে জল আসতে চাইলো কিন্তু এলো না তার পরিবর্তে ওর ঠোঁটে এক অদ্ভুত হাসির রেখে দেখা গেল, এটা খুশী বা আনন্দের হাসি নয় এটা নিয়তির কাছে অসহায় আত্মসমর্পণ করার হাসি যেন সে অনেক আগে থেকেই জানতো একদিন এটা হবেই কিন্তু তবুও লড়ে যাচ্ছিল ভবিতব্যের বিরুদ্ধে আর আজ সে এই লড়াইতে সম্পূর্ণ পরাস্ত।
আদিত্য হয়তো কিছু বলতে যাচ্ছিল কিন্তু তার আগে তার পিছন থেকে অতীন্দ্রবাবুর আওয়াজ আসে, "এ তুমি কি বলছো উমা, তুমি বুঝতে পারছো কি বলছো?"
অতীন্দ্রবাবুকে দেখে সবাই আরও অবাক হয়, "বাপি তুমি এখানে কখন ফিরলে আর এই ঠগবাজটার সাথে কি করছো?"
"চুপ করো প্রীতি"অতীন্দ্রবাবু মেয়েকে ধমক লাগান "তুমি জানো তুমি কাকে ঠগবাজ বলছো?"
"জানি বাপি, এই ফ্রড ঠগবাজটাকে যে এতদিন আমার দাদা সেজে বসেছিল,
"প্রীতি" অতীন্দ্রবাবু এবার প্রায় গর্জন করে ওঠেন, কিন্তু আদিত্য সঙ্গে সঙ্গে তাকে বাধা দেয় "স্যার, আপনি শান্ত হোন"
"হ্যাঁ বাপি আমি ঠিকই বলেছি আমি এখনই নীলাদ্রিকে ফোন করে জিজ্ঞেস করছি ওকে কেন জেল থেকে ছাড়লো?"
কিন্তু প্রীতি ফোন করার আগেই নীলাদ্রি সেখানে উপস্থিত হয় আর বলে "আমি ছাড়তে বাধ্য হয়েছি কারণ আঙ্কেল উপরমহলে নিজের ইনফ্লুয়েন্স কাজে লাগিয়ে ওকে ছাড়িয়েছেন"
"হোয়াট" নীলাদ্রির কথা শুনে প্রীতি যেন আকাশ থেকে পড়ে অবশ্য অদ্রিজা আর উমাদেবীর মনের অবস্থাও একই, "আঙ্কেল" অতীন্দ্রবাবু কিছু বলতে যাচ্ছিলেন কিন্তু তাকে মাঝপথে থামিয়ে দেয় অদ্রিজা, সে বলে "আমার বাপি আপনার খুব ভালো বন্ধু ছিল, আর আপনি তার খুনীকে জেল থেকে ছাড়িয়ে আনলেন, কেন আঙ্কেল?"
"কারণ ও সুবিমলকে খুন করেনি ও কারো খুন করতে পারে না, কোথাও ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে"
অদ্রিজা আর কিছু না বলে একহাত মুখ চেপে কাঁদতে শুরু করে।
"তুমি আমাকে ঠকালে?" এবার উমাদেবী তার স্বামীকে প্রশ্ন করেন,
"উমা আমার কথাটা আগে শোনো"
"কি করে করলে তুমি এটা? তুমি জানতে ও আমার আদিত্য নয় তবুও"
"উমা.... আমি যা করেছি সেটা"
"মা, এখন তুমি শান্ত হও, পরে কথা বলো" আদিত্য আবার মাঝখানে কথা বলে, কিন্তু উমাদেবী আবার রেগে ঝাঁঝিয়ে ওঠেন, আদিত্য তার দিকে এক পা এগোলে তিনি দুপা পিছিয়ে যান "তোমাকে বলেছি না আমাকে মা ডাকবে না"
"বিশ্বাস করো অন্য কোনো ডাক আসছে না, ওই একটা ডাকই আসছে"
"চলে যাও এখান থেকে, আমি তোমার মুখও দেখতে চাই না চলে যাও"
"উমা তুমি কি বলছো? তুমি আগে আমার পুরো কথা শোনো"
"স্যার." অতীন্দ্রবাবু নিজের স্ত্রীকে কিছু বলতে যাচ্ছিলেন কিন্তু শেষ করার আগেই আদিত্য তাকে ডাকে, অতীন্দ্রবাবু তাকালে সে ঘাড় নেড়ে বারণ করে, তারপর আদিত্য উমাদেবীর উদ্দেশ্যে একদম শান্ত কণ্ঠে বলে "কথা দিচ্ছি চলে যাবো মা, আমি তোমার ছেলে না হতে পারি কিন্তু তুমি তো এটা জানো আমি কখনোই নিজের কথার খেলাপ করি না, শুধু এখানে শেষ একটা ছোট্ট কাজ বাকি রয়ে গেছে সেটা শেষ করেই চলে যাবো"।
কথাটা বলে আদিত্য নীচু হয়ে উমাদেবীকে প্রণাম করতে যাচ্ছিল কিন্তু তিনি আবার পিছিয়ে যান, আদিত্য যে জায়গাটায় উমাদেবী দাঁড়িয়ে ছিলেন সেখানেই হাত স্পর্শ করে আবার মাথায় স্পর্শ করে তারপর ঘর ছেড়ে বেরিয়ে যায়, পিছন থেকে শুনতে পায় অতীন্দ্রবাবু বলছেন "তুমি বুঝতেও পারছো না আজ তুমি কি ভুল করলে"।
কিছুটা এগিয়ে আসার পর পিছন থেকে অতীন্দ্রবাবুর ডাক শুনে দাঁড়িয়ে পড়ে আদিত্য, অতীন্দ্রবাবু তাকে জিজ্ঞেস করেন "কোথায় যাচ্ছো তুমি?"
"বললাম যে একটা ছোট্ট কাজ বাকি আছে"
"আদিত্য তোমার কাছে ক্ষমা চাওয়ার মুখও আমার নেই তবুও"
"আপনি ক্ষমা চাইবেনই বা কেন?"
"দেখো আদিত্য.."
"ওটা আমার আসল নাম নয়, আপনি কিন্তু আমার আসল নাম জানেন"
"তুমি চাও আমি তোমাকে ওই নামে ডাকি?"
"না... তার থেকে এটাই থাক, আমি এখন আসি স্যার আপনি ভিতরে যান ওখানে এখন আপনার থাকা দরকার" কথাটা ফলে আর অপেক্ষা না করে দ্রুত হাঁটা লাগায় আদিত্য।
কিছুতেই নিজের মাথায় ঘুরতে থাকা প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজে পায় না নীলাদ্রি অনেক চেষ্টা করেও উত্তর অধরা থাকে অগত্যা মাথা ঠান্ডা করতে রাতে ডিনারের পর একটু হাঁটতে বেরোয় সে একাই বেরোয়, মূলত চারটে প্রশ্ন তার মাথায় ঘুরছে,
১) সেদিন স্পটে থাকা দ্বিতীয় রক্তের দাগটা কার, আর দুজনের বডিই বা কোথায় গেল?
২) মনোহরবাবু আর মলয় কতটা সত্যি বলছে বা আদৌ কি সত্যি বলছে?
৩) এই নকল আদিত্য এত চুপচাপ কেন, ও কি সত্যিই খুনি নাকি নির্দোষ?
৪) বাদশা কোথায় গেল?
প্রশ্নগুলো নিয়ে চিন্তা করতে করতেই কখন যেন সুবিমলবাবুদের বাড়ির কাছাকাছি চলে এসেছে, এখানেই প্রীতি আছে তার প্রিয় বন্ধু আদিত্যর বোন যাকে সে ছোটোবেলা থেকেই ভালোবাসে প্রীতি অবশ্য জানতো না, নীলাদ্রি নিজের ছোটোবেলায় ফিরে যায়...
আদিত্য আর নীলাদ্রি তখন কিশোর অবস্থা প্রায় শেষ বয়স তখন পনেরো কি ষোলো হবে দুজনে একই কলেজে পড়ে, দুজনের বন্ধুত্বও খুব গভীর। সেইসময় একদিন আদিত্যদের বাড়ি থেকে কিছুটা দূরের নীলকণ্ঠ মন্দিরে পূজো ছিল আদিত্য সেখানে বন্ধুকে আমণ্ত্রন জানিয়েছিল আসার জন্য যথারীতি নীলাদ্রি গিয়েছিল এবং একাই গিয়েছিল, নীলাদ্রির বাড়ি থেকে খুব একটা দূরে নয় সে মন্দির। মন্দিরে গিয়ে বন্ধুর সাথে দেখা করার আগেই একজনের দিকে তার চোখ আটকে গিয়েছিল একটি ১০-১১ বছরের কিশোরী মেয়ে, একটা হলুদ রঙের শাড়ি পড়েছিল কেউ পড়িয়ে দিয়েছিল আর কি, মাথায় চুল খোলা পিঠের উপরে ছড়ানো, মায়ের পাশে পাশে হাঁটছে তাকে দেখে নীলাদ্রির কি হলো সে ঠিক বুঝতে পারলো না একদৃষ্টিতে মেয়েটির দিকে তাকিয়ে ছিল অনেকক্ষণ, যদিও তখনও মেয়েটির পরিচয় জানেনা সে সেটা সেদিনই আরও পরে জেনেছিল যখন আদিত্য মেয়েটিকে নিয়ে এসে পরিচয় করিয়ে দিল নিজের বোন বলে, সেদিন মেয়েটির সাথে ঠিকমতো কথা বলতে পারেনি সে তারপর অবশ্য নীলাদ্রিরা নর্থবেঙ্গল ছেড়ে চলে যায় কিন্তু বন্ধুর সাথে যোগাযোগ থাকলেও সেই মেয়েটিকে আর দেখার সুযোগ হয়নি তবুও মেয়েটি নীলাদ্রির হৃদয়ে চিরস্থায়ী অধিকার করে নিয়েছিল।
আর আবার এতবছর পরে তার সাথে দেখা হয় হিউম্যান অর্গান স্মাগলিংএর কেসে প্রথমে একটু সন্দেহ হয়েছিল কিন্তু অচিরেই সে বুঝতে পারে প্রীতি নির্দোষ, তারপর তাকে নিজের পরিচয় দিয়েছিল প্রীতি প্রথমে চিনতে না পারলেও পরে পেরেছিল তারপর থেকে সে নীলাদ্রির সাথে ছিল কেসটা সলভ করতে সাহায্য করছিল অবশেষে কেস সলভ্ করার পরেই নীলাদ্রি প্রপোজ করে প্রীতিকে, সে অবশ্য আশা করেনি যে প্রীতি সঙ্গে সঙ্গেই হ্যাঁ বলবে।
ভাবতে ভাবতেই কখন যেন সুবিমলবাবুর বাড়ির সামনে চলে এসেছে খেয়ালই করেনি নীলাদ্রি কয়েক মুহূর্ত দাঁড়িয়ে বাড়িটির দিকে তাকিয়ে থাকে বোধহয় প্রীতিকে খুঁজতে থাকে যদিও সে জানে যে বাইরে থেকে প্রীতিকে দেখা সম্ভব নয়, একটু দাঁড়িয়ে থেকে সে আবার হাঁটা শুরু করতে যাবে হটাৎ তার একটা খটকা লাগে যেন কিছু একটা অস্বাভাবিক রয়েছে এখানে এবং প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই লক্ষ্য করে গেটে সিকিউরিটি নেই একটু অবাক হয় সে কারণ এই বাড়িতে ২৪ ঘন্টাই গেটে সিকিউরিটি থাকে, সেটা তো নেই আর মেইন গেটটাও খোলা।
নীলাদ্রি ঠিক করে ভিতরে ঢুকে দেখবে সবাই ঠিক আছে কিনা সে পা বাড়াতে যাবে এমন সময় দেখে বাড়ির ভিতর থেকে কয়েকজন লোক মুখ ঢেকে কি একটা যেন কোলে তুলে নিয়ে আসছে, প্রথমটায় বুঝতে না পারলেও পরে বুঝতে পেরেই তার মাথায় আগুন জ্বলে উঠলো সে তৎক্ষণাৎ ওই লোকগুলোর সামনে গিয়ে দাঁড়ালো।
লোকগুলো প্রথমটায় একটু থমকে গেল তারা এই অবাঞ্ছিত বাধাটা আশা করেনি আর এই সুযোগে নীলাদ্রি ওদের আক্রমণ করলো, হতে পারে সে এখন নিরস্ত্র হতে পারে সে এখন অফডিউটি কিন্তু সে পুলিশ অফিসার। সামনের লোকগুলোর মধ্যে একজন দাঁড়িয়ে রইলো বাকিরা এগিয়ে এলো নীলাদ্রি একা হতে পারে কিন্তু সেও পুলিশের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কাজেই লোকগুলো সহজে পাত্তা পাচ্ছিল না, হয়তো তারা রণে ভঙ্গই দিত কিন্তু হঠাৎ করেই বিপর্যয় নেমে এলো, কেউ একজন পিছন থেকে সজোড়ে নীলাদ্রির মাথার পিছনে আঘাত করলো আর সঙ্গে সঙ্গেই নীলাদ্রি চোখে অন্ধকার দেখলো,সে মাথায় আঘাতপ্রাপ্ত জায়গায় হাত দিয়ে মাটিতে পড়ে গেল, পুরোপুরি অজ্ঞান না হওয়ায় বুঝতে পারলো লোকগুলো চলে যাচ্ছে আর সাথে নিয়ে যাচ্ছে তার ভালোবাসার মানুষটিকে, তার বাগদত্তা প্রীতিকে।
"প্রীতি.." অস্ফুটস্বরে ডাকে নীলাদ্রি কোনোমতে ওঠার চেষ্টা করে কিন্তু মাথার পিছনে প্রচণ্ড যন্ত্রণা হচ্ছে সেখানে হাত বুলিয়ে চোখের সামনে এনেই বুঝতে পারে সেখানে রক্তপাত হচ্ছে তবুও কোনোমতে উঠে যেদিকে লোকগুলো অচেতন প্রীতিকে নিয়ে গেছে সেদিকে যায়, কিছুটা গিয়ে দেখতে পায় লোকগুলো একটা গাড়িতে উঠছে সে আরো দ্রুত পৌঁছাতে চেষ্টা করে কিন্তু পৌঁছনোর আগেই গাড়িটা বেরিয়ে যায় আর দাঁড়াতে পারে না নীলাদ্রি মাটিতে পড়ে যায় তার দুচোখে আবার অন্ধকার নেমে আসে।
চক্রবর্তী হাউজে তখনও কেউ ঘুমায়নি চারুলতা দেবী নিজেকে কিছুটা সামলে নিয়েছেন এগন আর আগের মতো কান্নাকাটি করছেন না বোধহয় মেয়ের কথা চিন্তা করেই নিজেকে শক্ত করেছেন, আর অদ্রিজা সেও মায়ের সামনে নিজেকে কোনোমতে শক্ত রেখেছে কারণ মায়ের সামনে তার ভেঙে পড়া চলবে না সে এখন বিছানায় মায়ের মাথার কাছে বসে তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে, ঘরের ভিতরে আর রয়েছেন উমাদেবী এবং অতীন্দ্রবাবু, সেদিনের পর থেকে তারা এখানেই আছেন। উমাদেবী বান্ধবীকে মানসিকভাবে শক্ত থাকার কথা বললেও অতীন্দ্রবাবু অবশ্য বারবার একটাই কথা বলছেন "চিন্তা কোরো না সুবিমলের কিচ্ছু হয়নি আমার মন বলছে সে ঠিক আছে"।
"আপনার মন বলছে নাকি আপনাকে সেই ফ্রডটা বলেছে?" অদ্রিজার বাঁকা কথায় স্পষ্ট বোঝা যায় যে আদিত্যকে জেল থেকে ছাড়ানোয় সে এখনো অতীন্দ্রবাবুর উপরে রেগে আছে।অতীন্দ্রবাবু কিছুক্ষণ বন্ধুর মেয়ের দিকে তাকিয়ে থাকেন তারপর মৃদুকণ্ঠে বলেন "তুমি.. না তোমরা সবাই ওকে ভুল বুঝছো কিন্তু একদিন এমন আসবে যেদিন দেখবে যে ওই ঠিক ছিল"
"উল্টোটাও হতে পারে আঙ্কেল হয়তো দেখবেন আপনি ভুল করছেন ওই ফ্রডটাকে বিশ্বাস করে"।
অদ্রিজার কথার উত্তরে অতীন্দ্রবাবু কিছু বলতে যাচ্ছিলেন এমন সময় নীচের ড্রয়িংরুম থেকে নীলাদ্রির তীব্র চিৎকার শোনা গেল "অতীন্দ্র আঙ্কেল..... অতীন্দ্র আঙ্কেলসবাই বেশ অবাকই হয় এইসময় নীলাদ্রি এখানে? তাও এরকম ভাবে ডাকছে কেন?
চারুলতা দেবী বাদে সবাই নীচে যায়,আর সঙ্গে সঙ্গে নীলাদ্রি প্রায় অতীন্দ্রবাবুর উপরে হামলে পড়ে "কোথায় আছে ও?"
"কে?" অতীন্দ্র বাবু সত্যিই অবাক হয়েছেন, কিন্তু নীলাদ্রি আবার বলে "কোথায় আছে ওই নকল আদিত্য?"
"ও আবার কি করলো?"
"আমি বলেছিলাম ওকে বিশ্বাস করবেন না কিন্তু আপনি শোনেননি"
"কি হয়েছে সেটা বলবে,কি করেছে ও?"
"প্রীতিকে কিডন্যাপ করে নিয়ে গেছে"
মুহূর্তে যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়লো সবার মাথায়, "কি বলছো তুমি?" অতীন্দ্রবাবুর মুখ রাগে লাল হয়ে ওঠে, কিন্তু নীলাদ্রি তাতে দমে যাওয়ার ছেলে নয়, সে বলে "বিশ্বাস হচ্ছে না তো,তাহলে প্রীতি কোথায় ডাকুন ওকে?"
কথা শুনে অতীন্দ্রবাবু ডাকতে যাচ্ছিলেন কিন্তু তার আগেই অদ্রিজা এসে বললো "প্রীতি নেই"। ইতিমধ্যেই সে প্রীতি আর তার রুমে একবার খুঁজে এসেছে,আর কিচেনে কেউ নেই সেটা দেখাই যাচ্ছে।
"এবার বিশ্বাস হলো তো স্যার? কিছু লোক প্রীতিকে তুলে নিয়ে গেছে আমি বাধা দিতে গিয়েছিলাম কিন্তু পারিনি এবার প্লিজ বলুন ওকে কোথায় পাবো?"
উমাদেবী কান্নায় ভেঙে পড়েন কাঁদতে কাঁদতে স্বামীকে বলেন "তোমার জন্য এইসব হয়েছে, জানিনা আমার মেয়েটাকে নিয়ে ও কোথায় গেছে, আমার মেয়েটা কি অবস্থায় আছে?"
অতীন্দ্রবাবু কি বলবেন ভেবে পাচ্ছেন না তার ভিতরে এখন প্রচণ্ড ঝড় চলছে তার মন একবার বলছে আদিত্য এই কাজ করতে পারে না, আবার পরমুহূর্তেই সেই বিশ্বাস দুর্বল হয়ে পড়ছে,এই দোলাচলের মাঝেই তিনি আদিত্যকে ফোন করলেন, রিং হবার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই ওপাশ থেকে কথা এলো "স্যার"
"এরকম কেন করলে? আমার মেয়েটাকে তো তুমি বোন বলতে ওকে কিডন্যাপ করলে কেন তুমি?"
"স্যার.." আদিত্যর গলায় এক অদ্ভুত স্বর অতীন্দ্রবাবুর অভিযোগ যেন একদিকে তাকে প্রচণ্ড অবাক এবং আহত করেছে, কিন্তু সে কিছু বলার আগেই উমাদেবী ফোনটা ছিনিয়ে নিয়ে স্পিকার বললেন "তুমি কি চাও টাকা? কত টাকা চাই আমরা দিয়ে দেবো আমার মেয়েটাকে কিছু কোরো না, আমি হাতজোড় করছি তোমার কাছে.. আ...আমি অদ্রিজা আর নীলাদ্রিকে বলে দেবো ওরা তোমার বিরুদ্ধে কোনো কেস করবে না। দয়া করে আমার মেয়েটার কোনো ক্ষতি কোরো না"
উমাদেবী আর কিছু বলতে পারলেন না, হাউহাউ করে কাঁদতে লাগলেন কিন্তু ফোনের ওপাশ থেকে কোনো আওয়াজ এলো না, যেন সে আরো কিছু শোনার জন্য অপেক্ষা করছে, এবার নীলাদ্রি কথা বলে "আমি তোকে ছাড়বো না, প্রীতির যদি কিছু হয়েছে তাহলে আই উইল কিল ইউ"
"শাট্আপ ইউ স্টুপিড, শাট্ ইওর মাউথ এণ্ড লিসন টু মি ভেরি কেয়ারফুলি" এতক্ষণে আদিত্য কথা বলে আর তার স্বরে একটা কর্তৃত্বের ভাব যেটা শুনে নীলাদ্রি তো অবাক হয়ই সাথে চাপ পড়ে অজান্তেই ফোনের স্পিকার অন হয়ে যাওয়ায় সবাই শুনতে পায় এবং অবাক হয়, আদিত্য বলে চলে "নীলাদ্রি তোমার ডিপার্টমেন্টে এমন কেউ তো নিশ্চয়ই আছে যে মোবাইল নম্বর ট্রেস করে লোকেশন বলতে পারবে, তাকে বলো ইমিডিয়েটলি আমার নম্বরটা ট্রেস করতে"।
"সেটা তো আমি করবোই, তোকে খুঁজে বার করবোই যেখানেই লুকিয়ে থাকিস না কেন" নীলাদ্রি কথার মাঝখানে কথা বলে আর তাতে যেন আবার রেগে ওঠে আদিত্য
"শাট্ ইওর মাউথ ইউ ইডিয়ট, তুমি নিজেকে যত বড়ো ইনভেস্টিগেটর ভাবো আসলে তত বড়ো নও, তোমার মাথায় ব্রেণ নেই তাই ওটার লোকদেখানো ব্যবহার কোরো না, যেটা বলছি সেটা শোনো"
"কি?" নীলাদ্রি যেন কিছুটা দমে যায় এবার,
"প্রীতি কিডন্যাপ হয়েছে সেটা আমি জানি, সুবিমলবাবুদের রাতের সিকিউরিটিকে আমি চাকরিটা দিই যারা কিডন্যাপ করেছে তারা ওকে অজ্ঞান করে ভিতরে ঢুকেছে, একটু আগে ওর জ্ঞান ফিরেছে আর তৎক্ষণাৎ ও আমাকে জানিয়েছে"।
"হোয়াট?" নীলাদ্রির গলায় বিস্ময়, আদিত্য বলে চলে "আমি ওকে ট্রেস করে যাচ্ছি কিন্তু হতে পারে যারা ওকে নিয়ে গেছে তারা সংখ্যায় অনেক বা ওদের কাছে অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র আছে আমার একার পক্ষে ওদের মোকাবেলা করা সম্ভব নয়, আমি মরতে ভয় পাইনা বাট আই ওয়ান্ট মাই সিস্টার সেফ"।
তুমি একজ জিনিয়াস এই পর্ব পড়ার পর এ কথা না বলে পারলাম না।