Thread Rating:
  • 99 Vote(s) - 2.82 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
WRITER'S SPECIAL "ধূসর পৃথিবী"
[Image: Picsart-22-12-06-20-20-08-119.jpg]


                  ৮ম পর্ব


আদিত্য কণ্ঠস্বর লক্ষ্য করে তাকিয়ে দেখে কথাটা বলেছে নীলাদ্রি সান্যাল, সেও আদিত্যর দিকে এগিয়ে এসে করমর্দনের উদ্দেশ্যে হাত বাড়িয়ে দিল আদিত্য‌ও পাল্টা করমর্দন করলো, নীলাদ্রি আবার জিজ্ঞেস করলো "আপনার কি এটা খুন বলে মনে হয়?"
"আপনার হয় না?"
"সন্দেহ অবশ্য আমারও হচ্ছে কিন্তু এখনো প্রমাণ পাইনি"
"বা হয়তো প্রমাণ খোঁজার চেষ্টাই করেননি, লরিটাও তো এখনো ধরতে পারেননি"
"ওটার খোঁজ চলছে কিন্তু আপনি এখানে?"
"মিস সরকার আইমিন প্রতাপ সরকারের মেয়ের সঙ্গে আমার কিঞ্চিৎ পরিচয় ছিল"
"উনি কি আপনার.."
"আপনি যা ইঙ্গিত করছেন তা নয়" নীলাদ্রির কথাটা শেষ করতে না দিয়েই আদিত্য বলে ওঠে।
"বুঝলাম, চিন্তা করবেন না এটা যদি খুন হয়‌ও তাহলে খুনি আমার হাত থেকে পালাতে পারবে না"
"তাই নাকি?" আদিত্যর গলায় বিদ্রুপের সুর আর সেটা লক্ষ্য করেই এতক্ষণ ধরে নীলাদ্রির ঠোঁটে থাকা হালকা হাসিটা মিলিয়ে গেল, এবার একটু কঠিন স্বরে বললো "আপনি হয়তো ভুলে যাচ্ছেন এখানকার হাসপাতালের হিউম্যান অর্গানের স্মাগলিংএর কেসটা আমি সলভ করেছি"।
"কিন্তু প্রতাপ সরকার এখনো অধরা আর এখন পুলিশের নজরদারিতে থাকা ওনার পুরো পরিবারকে কেউ বা কারা শেষ করে দিল"
"এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক"
"দুর্ভাগ্য নাকি ষড়যন্ত্র? আর তাছাড়া.."
"তাছাড়া?"
"আপনার মনে হয় না যে প্রমাণগুলো আপনি পেয়েছেন সেগুলো অতি সহজেই আপনার হাতে চলে এসেছে? যেন কেউ চাইছিল যে সেগুলো পুলিশের হাতে আসুক"
"সেটা আপনার মনে হচ্ছে আসলে সেটা নয় বাইরে থেকে অবশ্য সবাই পুলিশের কাজকে সোজাই মনে করে কিন্তু আদতে সেটা ভুল আর প্রতাপ সরকার‌ও বেশিদিন আমার হাত থেকে পালিয়ে বাঁচতে পারবে না আর এখন তো ওনার সামনে আসার চান্স বেশী"।
"শেম অন ‌ইউ, একজন অপরাধীকে ধরতে না পেরে পরিবারকে শেষ করে দিলেন?"
"আদিত্য" গর্জন করে উঠলেন নীলাদ্রি সান্যাল তার মুখ‌ও রাগে কঠিন হয়ে গেছে, যদিও আদিত্য যে তাতে ঘাবড়াবার লোক নয় সেটা তার পরের কথাতেই বোঝা গেল,
"চেঁচিয়ে লাভ নেই মিস্টার সান্যাল হয়তো আমি যা বললাম হয়তো সেটাই সত্যি যদি সত্যিই অপরাধীদের ধরার ইচ্ছা থাকে তাহলে এই খুনের খুনীদের ধরে দেখান"
"সে তো আমি ধরবোই আপনার চ্যালেঞ্জ এক্সেপ্ট করলাম"
"গুড লাক মিস্টার সান্যাল, চলি" কথাটা বলে আর দাঁড়ালো না নিজের জিপের উদ্দেশ্যে র‌ওনা দিল কিন্তু নীলাদ্রি পিছন থেকে বললো "মিস্টার সিংহ রায় খুনি কখনো আমার হাত থেকে পালাতে পারবে না তা সেটা এখন এই কেসের হোক কিংবা বছর পুরনো কোনো কেসের, কথাটা মনে রাখবেন", আদিত্য এই কথার কোনো উত্তর দিল না ফিরে গিয়ে জিপে উঠে জিপ স্টার্ট দিল।
বাড়িতে ফিরেও নিজেকে কিছুতেই শান্ত করতে পারে না তার ভিতরে কি যেন একটা অদ্ভুত অনূভুতি হচ্ছে সেটা যে কি সেটা আদিত্য নিজেও ঠিক বুঝতে পারছে না। খোলা ছাদে অস্থিরভাবে পায়চারী করতে থাকে, কিছুতেই নিজেকে শান্ত করতে পারে না খালি ছটফট করতে থাকে একবার পকেট থেকে সিগারেটের প্যাকেট বার করে একটা মুখে নিয়ে ধরাতে যাবে কিন্তু পারলো না থেমে গেল কারণ তখনই তার চোখের সামনে ভেসে উঠলো কিছুদিন আগে কোর্ট চত্ত্বরে দেখা এক যুবতীর মুখ সাথে কানে ভেসে ওঠে তার বলা কথা "স্মোকিং ইজ ইঞ্জুরিয়াস টু হেলথ, শোনেননি?, সিগারেট খাওয়া ছেড়ে দিন ওতে আপনারই ক্ষতি হচ্ছে"। সিগারেটটা আর ধরায়না আদিত্য আবার প্যাকেটে ঢুকিয়ে পকেটে রেখে দেয়, সে বুঝতে পারে না কেন তার খালি পিয়ালীর কথা মনে পড়ছে কেন চোখের সামনে শুধু পিয়ালীর মুখটা ভেসে উঠছে, আদিত্য বুঝতে পারে না পিয়ালীর  মৃত্যুর খবর শুনে তার কেন এত খারাপ লাগছে? নিজের মন বলে যে বস্তুটাকে সে এতবছর ধরে নির্জীব পাথরে পরিণত করেছিল সেখানে যেন আবার প্রাণের স্পন্দন দেখা যাচ্ছে শুধু তাই নয় সেখানে এখন যেন একটা চিনচিনে ব্যাথাও অনুভব করছে। শেষে যেন জোর করেই নিজের ভিতর থেকে এই অনূভুতিটা বের করে দেওয়ার জন্যই আবার পকেট থেকে সিগারেট বার করে ধরিয়ে টান দিতে থাকে।
অ্যাক্সিডেন্টে প্রতাপ সরকারের পুরো পরিবারের মারা যাওয়ার ঘটনাটা বেশ কিছুদিন স্থানীয় লোকেদের চর্চার বিষয় থাকলো তার কারণ প্রতাপ সরকারকে এলাকার প্রায় সবাই যত না ভয় পেত তার চেয়ে বেশি ঘেন্না করতো আর হিউম্যান অর্গান স্মাগলিংএর মাথায় তিনি থাকায় সেই ঘেন্না আরও বেড়েছে তাই তার পরিবার মারা যাওয়ায় সবার মনেই "বেশ হয়েছে" গোছের মনোভাব তারা সবাই ধরেই নিয়েছে যে ঘটনায় প্রতাপ সরকার‌ও মারা গেছেন তাই তার হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছেন এই মানসিকতাই সবার মধ্যে।
নিজেদের একটা চায়ের বাগানের পরিদর্শনে গিয়ে ওখানকার কর্মীদের মধ্যে এই ধরনের আলোচনাই কানে আসে আদিত্যর, মুখে তাদের কিছু না বললেও  ভিতরে এক অদ্ভুত রাগ অনুভব করে বিশেষ করে যখন তারা প্রতাপ সরকারের পরিবার নিয়ে কথা বলে। তার স্থির বিশ্বাস প্রতাপ সরকার অপরাধী হতে পারে কিন্তু তার পরিবার নির্দোষ ছিল অথচ এখানকার কেউ সেকথা মানতেই চায় না অনবরত তারা প্রতাপ সরকারের পরিবারকে নিয়ে বাজে কথা বলতে থাকে বিশেষ করে তার মেয়েকে নিয়ে আর এতেই যেন আদিত্যর রাগের পারদ চড়তে থাকে, আদিত্য বোঝে বেশীক্ষণ ওখানে থাকলে নিজের রাগটাকে কন্ট্রোল করতে পারবে না তাই কোনোমতে সেখানকার কাজ শেষ করে বেরিয়ে পরে।
প্রকৃতির শান্ত রূপ অনেকসময় আগত ঝড়ের ইঙ্গিত করে অ্যাক্সিডেন্টে সরকাররা পরিবারসহ মারা যাওয়ার পরে নর্থবেঙ্গলে এরকমই শান্তি বিরাজ করছিল যদিও কেউ আঁচ‌ও করতে পারেনি যে এটা আগত ঝড়ের পূর্বাভাস যে ঝড়ের প্রভাব সবথেকে বেশি পরবে সিংহ রায়দের উপরে বা বলা ভালো আদিত্য সিংহ রায়ের উপরে আর এই ঝড়ের প্রাথমিক ধাক্কাটা পরলো চক্রবর্তী পরিবারে।
অদ্রিজা আর প্রীতিও তাদের প্যারেন্টসদের মতো বেস্টফ্রেণ্ড তাই মাঝে মাঝেই প্রীতি যেমন অদ্রিজাদের বাড়িতে গিয়ে ওর সাথে রাতে থেকে যায় ঠিক তেমনি মাঝে মাঝে অদ্রিজাও সিংহ রায় প্যালেসে এসে নিজের বান্ধবীর কাছে থাকে আর এখন তো সেটা আরও বেড়ে গেছে কারণ অতীন্দ্রবাবু ব্যাবসার কাজ সেরে শহরে ফিরলেই যে প্রীতির বিয়ের  তোড়জোড় শুরু হবে কাজেই এখন দুই বান্ধবী যতটা পারে পরস্পরের সাথে সময় কাটিয়ে নিচ্ছে।
এরকমই একদিন কাজ সেরে দুই বান্ধবী সিংহ রায় প্যালেসে ফিরেছে অদ্রিজা আগেই নিজের মাকে জানিয়ে দিয়েছে এখানে থাকার কথা, রাতে ডিনার সেরে দুজনে প্রীতির রুমে অনেক রাত পর্যন্ত গল্প করছে একসাথে থাকলে এটাই ওদের স্বভাব হটাৎ অদ্রিজার ফোনে মিসেস চক্রবর্তীর ফোন এলো এবং প্রীতি লক্ষ্য করলো ফোনের অপরপ্রান্তের কথা শুনে অদ্রিজার মুখ ভয়ে ছোটো হয়ে গেল সে শুধু একবার বললো "আমি এখনই আসছি'বলেই তাড়াতাড়ি ঘর থেকে বেরিয়ে গেল, প্রীতি বারবার "কি হয়েছে" জিজ্ঞেস করা সত্ত্বেও সে দ্রুতপায়ে নীচে নেমে এলো উমাদেবী তখন ডাইনিং রুমে আদিত্যর সাথে বসে ডিনার করছিলেন, মাঝে মাঝেই আদিত্যর ফিরতে দেরী হয় তখন উমাদেবী ছেলের জন্য অপেক্ষা করেন।
অদ্রিজা আর প্রীতিকে ওইভাবে হন্তদন্ত হয়ে নামতে দেখে উমাদেবী যারপরনাই অবাক হন তিনি জিজ্ঞেস করেন "কি হয়েছে তোদের?", যদিও উত্তরটা প্রীতি‌ই দেয় "দেখোনা মা, আন্টির ফোন এলো তারপর‌ই ও কিছু না বলে এইরকম বেরিয়ে যাচ্ছে"। উমাদেবী এবার অদ্রিজাকে প্রশ্ন করেন "কি হয়েছে অদ্রি?"
"আন্টি মায়ের ফোন ছিল, বাপি এখনো বাড়ি ফেরেননি ওনার ফোন‌ও সুইচড অফ" অদ্রিজা প্রায় কেঁদে ফেলে, কিন্তু উমাদেবী সান্ত্বনা দেওয়ার ভঙ্গিতে বলেন "আরে এতে ঘাবড়াবার কি আছে? অদ্রি তোমার বাপি একজন ডাক্তার কোনো এমার্জেন্সি কেস এসেছে বোধহয়"।
"সেরকম হলে বাপি ফোন করে জানিয়ে দেন"
"আজ হয়তো সুযোগ পাননি"
"জানিনা আন্টি, তবে মা ভয় পাচ্ছেন আমাকে এক্ষুনি যেতে বললেন"
"ঠিক আছে একটু দাঁড়াও আমরাও যাবো"।
অদ্রিজা যখন নিজের বাড়িতে পৌঁছালো তখন‌ও সুবিমলবাবুর কোনো খবর নেই, চারুলতা দেবী সমানে কেঁদে চলেছেন, উমাদেবী এসে নিজের বান্ধবীকে সান্ত্বনা দিতে থাকেন কিন্তু তাতেও তার কান্না থামে না, অদ্রিজা সুবিমলবাবু যেতে পারেন এমন সম্ভাব্য সব জায়গায় ফোন করে খোঁজ নিয়েছে কিন্তু কোথাও খোঁজ পায়নি, শেষপর্যন্ত প্রীতি নীলাদ্রিকে ফোন করে, ঘটনা শোনার আধঘন্টার মধ্যেই নীলাদ্রি অদ্রিজাদের বাড়িতে চলে আসে।
এখানে আসতে আসতে নীলাদ্রি আশেপাশের বেশ কয়েকটা থানায় খবর দিয়ে দিয়েছে সেখানেও খোঁজ চালু হয়ে গেছে। সুবিমলবাবু কোথায় যেতে পারেন ওনার দৈনন্দিন অভ্যাস ইত্যাদি যাবতীয় পুলিশি প্রশ্নের উত্তর অদ্রিজার কাছ থেকে জেনে নিয়ে সেসব‌ও খোঁজ করেন কিন্তু বৃথাই সুবিমলবাবুর কোনো খোঁজ পাওয়া যায় না। শুধু নীলাদ্রিও নয় আদিত্য‌ও সুবিমলবাবুর খোঁজে বেরিয়েছিল কিন্তু ভোরে সেও এসে জানায় সুবিমলবাবুর খোঁজ সে পায়নি, এতে যেন চারুলতা দেবী একেবারে ভেঙে পড়েন, শুধু তিনি একা নন এবার অদ্রিজাও কান্নায় ভেঙে পড়ে প্রীতি তাদের সান্ত্বনা দিতে থাকে "আরে অদ্রি এভাবে ভেঙে পড়লে চলে? এখনো তো নীলাদ্রি আসেনি ও আসুক ও তো কোনো খোঁজ পেলেও পেতে পারে" কিন্তু এই সান্ত্বনায় অদ্রিজা কতটা শান্ত হয় সেটা ওর মুখ দেখে বোঝা যায় না।
দুপুর দুটো বাজার একটু পর অদ্রিজাদের বাড়ির বাইরে একটা গাড়ি থামার আওয়াজ শোনে সবাই এবং মুহূর্ত পরের ভিতরে ঢোকেন নীলাদ্রি সান্যাল তবে এখন পরনে পুরোদস্তুর পুলিশের উর্দি। ওকে দেখে চারুলতা দেবী আশান্বিত হয়ে তাকান অদ্রিজাও জিজ্ঞেস করে "নীলাদ্রি বাবু আমার বাপির কোনো খোঁজ পেলেন?"
নীলাদ্রি কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে পকেট থেকে দুটো এভিডেন্স সংগ্ৰহ করার প্যাকেট বার করে এগিয়ে দিয়ে বলে "দেখুন তো এগুলো চিনতে পারেন কি না?"। একটা প্যাকেটের মধ্যে একটা রিস্ট ওয়াচ রয়েছে যেটার সামনে ডায়ালের উপরের কাঁচ ভাঙা আর ভিতরে কাঁটা বন্ধ হয়ে গেছে, এবং ঘড়িটার চেনে কিছুটা শুকনো রক্তের দাগ লেগে আছে আর অপর প্যাকেটের মধ্যে একটা ভাঙা মোবাইল, স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে কোনো ভারী কিছুর আঘাতে মোবাইলটা ভেঙেছে, অদ্রিজা প্যাকেট দুটোনীলাদ্রির হাত থেকে প্রায় ছিনিয়ে নিয়ে ডুকরে কেঁদে ওঠে কোনোমতে বলে "এটা তো বাপির ঘড়ি, এটা কোথায় পেলেন?"
নীলাদ্রি আবার জিজ্ঞেস করে "আপনি নিশ্চিত যে এটা সুবিমলবাবুর ঘড়ি?"
"হ্যাঁ, নীলাদ্রি বাবু বাপির লাস্ট বার্থডে তে এটা আমিই গিফ্ট দি‌ই বাপিকে, কিন্তু বাপি কোথায়?"
নীলাদ্রি গম্ভীর কণ্ঠে বলে "আর এই মোবাইল?"
"এটাও আমার বাপির, কিন্তু আমার বাপি কোথায় নীলাদ্রি বাবু?"
"ওনার সঠিক হদিশ এখনো আমরা পাইনি, আর হয়তো পাবো‌ও না খুব সম্ভবত তিনি মারা গেছেন আরও স্পষ্ট করে বললে খুন হয়েছেন" কথাটা শুনেই চারুলতা দেবীর মুখ ফ্যাকাশে হয়ে যায়।
"নীলাদ্রি বাবু" একটু চেঁচিয়ে ওঠে অদ্রিজা, তারপর নিজেকে সংযত করে বলে "এসব কি বলছেন আপনি?"
"নিজেকে সামলান মিস চক্রবর্তী কারণ আপনার মাকেও আপনাকেই সামলাতে হবে"
"কিন্তু নীলাদ্রি তুমি বলছো আঙ্কেলের কোনো খোঁজ পাওনি, তাহলে শুধুমাত্র ঘড়ি আর মোবাইলের ভিত্তিতে কিভাবে এই কথা বলছো?" মাঝখানে প্রীতি কথা বলে, নীলাদ্রিও দৃঢ়ভাবে উত্তর দেয় "উপযুক্ত প্রমাণ ছাড়া আমি কিছু বলিনা প্রীতি"
"কিন্তু কে আঙ্কেলকে খুন করবে কেন করবে, আর কি প্রমাণ পেয়েছো?"
"হয়তো তিনি কারো জন্য সমস্যার সৃষ্টি করছিলেন বা কারো কোনো গোপন কথা জেনে ফেলেছিলেন"
"এসব কি বলছেন আপনি নীলাদ্রি বাবু?" অদ্রিজার গলায় তখনও অবিশ্বাস, নীলাদ্রি শান্তভাবে বলে চলে "এগুলো আমরা যেখানে পেয়েছি সেখানে অনেকটা জায়গা জুড়ে রক্তের দাগ পাই যেমনটা কেউ শরীরে গুরুতর আঘাতের পরে রক্তাক্ত অবস্থায় অনেকক্ষণ পরে থাকলে হয়, আমাদের ফরেনসিক এক্সপার্টরা জানায় ওখানে দুজন আলাদা মানুষের ব্লাড স্যাম্পল আছে, আমার অনুমান যদি খুব ভুল না হয় তাহলে একজন সুবিমলবাবু অবশ্য অপরজন কে সেটা এখনো জানিনা"।
এবার আদিত্য কথা বলে " কিন্তু আপনার কাছে এমন কি প্রমাণ আছে যাতে আপনি ওনাকে মৃত বলে ঘোষণা করছেন"
এইসময় চারুলতা দেবী আবার জোরে কেঁদে ওঠেন কিন্তু নীলাদ্রি তাতে কর্নপাত না করে আদিত্যর সামনে এসে বলে "সেসব বলছি তবে তার আগে আদিত্যবাবু আপনাকে কয়েকটা প্রশ্ন করতে পারি?"
"আমাকে?" আদিত্য যে বেশ অবাক হয়েছে সেটা ওর কথাতেই বোঝা যাচ্ছে, তবুও যতটা সম্ভব স্বাভাবিক স্বরে বলে "করুন"।
"গতকাল সারাদিন আপনি কোথায় কোথায় ছিলেন এবং কি কি কাজ করেছেন?"
"হটাৎ এই প্রশ্ন অফিসার?"
"কারন আছে আদিত্য বাবু"
"কারনটা জানতে পারি?"
"যথাসময়েই বলবো, আগে আপনি আমার প্রশ্নের উত্তর দিন"
আদিত্য লক্ষ্য করলো ঘরে উপস্থিত সবার দৃষ্টি সোজা তার দিকে নিবদ্ধ,এমনকি প্রীতি আর উমাদেবীর‌ দৃষ্টিও সটান তার দিকে, আদিত্যকে চুপ থাকতে দেখে নীলাদ্রি আবার জিজ্ঞেস করে "কি হলো বলুন?"
"কাজে ছিলাম"
"কি কাজ?"
"কাজ তো একটা নয় যে ধরে ধরে হিসাব দেবো"
"নীলাদ্রি তুমি কি বলতে চাইছো বলোতো?" কথাটা বললেন উমাদেবী এবং তিনি নীলাদ্রির প্রতি বেশ বিরক্ত হয়েছেন সেটা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে, তবে নীলাদ্রি উত্তরটা শান্তভাবেই দিল "বলছি তবে আগে আদিত্যবাবু আমার প্রশ্নের পরিষ্কার উত্তর দিক"।
"আমি আমাদের একটা চায়ের বাগান আর ফ্যাক্টরি পরিদর্শনে গিয়েছিলাম"
"সেখানে কতক্ষণ ছিলেন?"
"আপনার উদ্দেশ্যটা কি একটু বলবেন অফিসার? এবার আদিত্যর গলাতেও বিরক্তি, তবে এবার নীলাদ্রি শান্তভাবে কথাটা বললেও কথায় যথেষ্ট শ্লেষ মেশানো ছিল, "আপনাদের চা ফ্যাক্টরিগুলোতে আমি খোঁজ নিয়েছি, আপনি একটা ফ্যাক্টরিতে ছিলেন ঠিকই কিন্তু বেশীক্ষণ নয় সেখানে যাওয়ার কিছুক্ষণ পরে দুপুরের আগেই একটা ফোন পেয়ে বেরিয়ে আসেন, ফোনটা কার ছিল একটু বলবেন?"
"সেটা আপনার জানার বিষয় নয়" এবার শুধু বিরক্তি নয় চাপা রাগ‌ও প্রকাশ পেল আদিত্যর কথায় তবে এবার‌ও নীলাদ্রি নির্ভীকভাবেই উত্তর দিল "অবশ্যই জানার বিষয় কারণ ফোনটা ছিল সুবিমলবাবুর"
নীলাদ্রির এই কথা শুনে শুধু যে আদিত্য চমকে উঠলো তাই নয় ঘরের বাকিরাও চমকে উঠলো, এবার আবার নীলাদ্রি কথা বলা শুরু করলো এবং এবার কথায় শ্লেষের পরিমাণ আরও বেশী "আমি সুবিমলবাবুর কল লিস্ট বার  করিয়ে চেক করেছি সেখানে লাস্ট কলটা আপনার নম্বরে করা হয়েছিল, আপনাদের মধ্যে কি কথা হয়েছিল একটু বলবেন?"
আদিত্য উত্তর না দিয়ে চুপ করে একদৃষ্টিতে নীলাদ্রির দিকে তাকিয়ে থাকে, আদিত্যকে চুপ থাকতে দেখে বোধহয় নীলাদ্রির সাহস বেড়ে যায় সে আবার বলে "বলুন"
"নীলাদ্রি এবার কিন্তু তুমি বাড়াবাড়ি করছো, তুমি কি প্রমাণ করতে চাইছো?' উমাদেবী এবার সত্যি সত্যিই রেগে গেছেন, কিন্তু নীলাদ্রি কিছু বলার আগে তাকে অবাক করে দিয়ে প্রীতি বলে ওঠে "মা তুমি একটু শান্ত হ‌ও নীলাদ্রি কিছু একটা আন্দাজ করেই কথাগুলো বলছে"।
"শান্ত হবো মানে? ও তোর দাদাকে.."
"আন্টি, আমি যা করছি সেটা একজন পুলিশ অফিসার হিসেবে করছি তাই আপনার খারাপ লাগলেও আমার কিছু করার নেই" উমাদেবীকে কথাটা শেষ করতে না দিয়ে নীলাদ্রি বলে ওঠে, তারপর আবার আদিত্যকে বলে "কি কথা হয়েছিল বলুন? আচ্ছা আপনারা কি দেখা করেছিলেন?"
"না" ছোট্ট উত্তর দেয় আদিত্য‌, কিন্তু উত্তর শুনে নীলাদ্রির ঠোঁটে বাঁকা হাসি ফুটে ওঠে, এবার সে স্পষ্ট বলে "মিথ্যা বলে ভুল করে ফেললেন"
"মিথ্যা?"
"হ্যাঁ, আদিত্যবাবু মিথ্যা কারণ আমি জানি আপনার সাথে সুবিমলবাবুর দেখা হয়েছিল এবং আমার কাছে তার প্রমাণ‌ও আছে আর সাক্ষী আছে"
"কি প্রমাণ আর কে সাক্ষী?"
"প্রমাণটা পরে দেখাচ্ছি আগে সাক্ষীদের ডাকি?" এতটা বলে বাইরে থাকা কারো উদ্দেশ্যে আদেশ দিল নীলাদ্রি "ওদের ভিতরে নিয়ে এসো" একটু পরেই দুজন কনস্টেবলের সাথে ঘরের ভিতরে প্রবেশ করলো মনোহরবাবু আর মলয় এদের একজনের মাথায় ব্যাণ্ডেজ বাধা আরেকজনের হাতে বোঝাই যাচ্ছে গুরুতর আহত দুজন। ঘরে ঢোকার প্রায় সাথে সাথেই মনোহরবাবু আদিত্যকে দেখিয়ে চেঁচিয়ে উঠলেন ওই.. ডাক্তারবাবুকে মেরেছে, ওই মেরেছে, আমাদের ডাক্তারবাবুকে মেরে ফেলেছেন" বলতে বলতে তার চোখ থেকে জল বেরিয়ে আসে।
কথাটা শোনার সঙ্গে সঙ্গেই যেন জ্বলে উঠলো আদিত্য, ক্রুদ্ধ স্বরে "শয়তান কোথাকার" বলে দ্রুতপায়ে ওদের কাছে গিয়ে দুহাতে দুই বাপ-ব্যাটার গলা টিপে ধরলো, সঙ্গে সঙ্গে যদিও নীলাদ্রি ছাড়াতে এলো কিন্তু ব্যর্থ হলো শেষে উমাদেবীর ধমকের সুরে "আদিত্য কি করছিস? ছাড় ওদের" শুনে ছেড়ে পিছিয়ে এলো আদিত্য তারপর উমাদেবীর সামনে দাঁড়িয়ে বললো "মা ওরা মিথ্যা কথা বলছে আমি সুবিমলবাবুকে মারিনি তুমি বিশ্বাস করো"।
"আমরা মিথ্যা বলছি না তুমি বলছো?"আবার মনোহরবাবু বলে উঠলেন, এবার শুধু মনোহরবাবু নয় মলয়‌ও বলতে শুরু করে "না আমার বাবা মিথ্যা বলছে না আমিও ছিলাম আমার বাবার সাথে"এতটা বলেই মলয়কে থামতে হলো কারণ আদিত্য আবার চিৎকার করে উঠলো "মলয়, শয়তান কোথাকার আমি তোদের শেষ করে ফেলবো" কথাটা বলেই আবার আদিত্য মলয়ের দিকে এগোতে যেতেই নীলাদ্রি ওদের মাঝে এসে আদিত্যকে বাঁধা দেয়, মলয় ভয়ার্ত কণ্ঠে বলে "দেখেছেন কিভাবে থ্রেট করছে আমাদের তাও সবার সামনে তাহলে ভাবুন সুবিমলবাবুর সাথে কি করেছে ও"।
"মলয়" আবার চিৎকার করে ওঠে আদিত্য এবার নীলাদ্রিও চেঁচিয়ে ওঠে "চুপ করুন চেঁচিয়ে নিজের অপরাধকে ঢাকতে পারবেন না"। মলয় আবার শুরু করে "বজরঙবলি মন্দিরে পূজো দিতে গিয়েছিলাম আমরা সেখানে পূজো দিয়ে ফিরছি হটাৎ দেখি আদিত্য মন্দির থেকে কিছুটা দূরে যে খাড়াই জায়গাটা আছে সেদিকে যাচ্ছে আমরা একটু অবাক হ‌ই কারণ জানি আদিত্য পূজোআচ্চা করে না আমি ওকে দুবার ডাকিও কিন্তু ও আমাদের পাত্তা দেয় না দেখে আমরা ওর পিছনে যাই আসলে মনে হলো ওর একটু তাড়ায় আছে"এতটা বলে মলয় থামে তারপর একটু ঢোঁক গিলে আবার শুরু করে "কিছুক্ষণ ওকে খুঁজে পাইনা আমরা খুঁজতে খুঁজতে কিছুটা ফাঁকা জায়গায় চলে যাই সেখানে একটা চিৎকার শুনে সেদিকে দৌড়ে গিয়ে দেখি" আতঙ্কে মলয় আবার চুপ করে, আদিত্য তখন রাগে বড়ো বড়ো নিঃশ্বাস ফেলছে কিন্তু নীলাদ্রি ওর সামনে থাকায় কিছু করতে পারে না।
"আমরা দেখি আদিত্য হিংস্রভাবে একটা ছুরি দিয়ে সুবিমলবাবুকে একের পর এক আঘাত করছে আর আরো একজন রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে পড়ে আছে যাকে আমি ঠিক চিনতে পারিনি ওখানে আরও কয়েকজন ছিল যারা সুবিমলবাবুর দুটো হাত ধরে রেখেছিল, ওর এই রূপ দেখে আমরা ভয়ে...ভয়ে কাঠ হয়ে যাই কিন্তু হটাৎ‌ই আ...আদিত্য আমাদের দেখতে পায় আর সঙ্গে সঙ্গে ওরা আমাদের তাড়া করে কিন্তু কোনোমতে আমরা মন্দিরে ফিরে গাড়িতে উঠে তাড়াতাড়ি বেরিয়ে যাই কিন্তু মাঝরাস্তায় একটা ছোটো অ্যাক্সিডেন্ট হয়" মলয়ের কথাটা শেষ হবার সঙ্গে সঙ্গে আবার আদিত্য ওদের দিকে তেড়ে যাচ্ছিল কিন্তু এবার নীলাদ্রি আবার ওদের মাঝখানে এসে দাঁড়ায়। "নীলাদ্রি ওরা মিথ্যা বলছে" আদিত্য বললেও তার কথায় যে নীলাদ্রি বিশ্বাস করেনি সেটা ওর পরের কথাতেই বোঝা যায়,
"উঁহু ওরা নয় মিথ্যা আপনি বলছেন আমার কাছে তার প্রমাণ আছে"
"কি প্রমাণ?" এই কথাটা অবশ্য বলেন উমাদেবী, চারুলতা দেবী আর অদ্রিজা একটা কথাও বলেনি বা বলা ভালো ওনারা বলার অবস্থাতেই নেই এতটাই শক পেয়েছেন।
"ওটা নিয়ে এসো" নীলাদ্রি একজন কনস্টেবলকে আদেশ দিতেই সে বাইরে গিয়ে আবার একটা প্যাকেট হাতে ভিতরে আসে তবে এবারের প্যাকেটটা একটু বড়ো এবং তার মধ্যে একটা সাদা গেঞ্জি এবং একটা কালো শার্ট আছে, শার্টে অতটা বোঝা না গেলেও সাদা গেঞ্জিটা যে লাল রঙে মাখামাখি হয়ে আছে সেটা যে রক্তের সেটা বুঝতে কারোরই বাকি থাকে না, প্যাকেটটা সামনে তুলে ধরে নীলাদ্রি জিজ্ঞেস করে "দেখুন তো এই শার্টটা চিনতে পারছেন কি না?, আদিত্যবাবু চিনতে পারছেন?"
কেউ কোনো কথা না বললেও সবাই একবার প্যাকেটের দিকে এবং আরেকবার আদিত্যর দিকে তাকাচ্ছে, আদিত্য‌ও কোনো কথা না বলে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে, নীলাদ্রি বলে চলে "এটা যে আদিত্যর শার্ট আর গেঞ্জি সেটা নিয়ে আশা করি কারো সন্দেহ নেই এবং এতে যে রক্ত লেগে আছে সেটাও পরীক্ষায় প্রমাণিত আরো একটা কথা এই শার্টে‌ও দুটো আলাদা ব্লাডের ট্রেস পেয়েছে আমাদের ফরেনসিক এক্সপার্ট যার একটা এই ঘড়িতে লেগে থাকা  রক্তের সাথে ম্যাচ করেছে এবং এই রক্তের গ্ৰুপ এ পজিটিভ যেটা ডক্টর সুবিমল চক্রবর্তীর‌ও ব্লাডগ্ৰুপ যেটা আমি গতকাল রাতে মিস চক্রবর্তীর সাথে কথা বলে জেনেছিলাম আর অপরটা সেই অজানা ব্যাক্তির রক্তের সাথে ম্যাচ করেছে। এবার আপনাদের মনে হয়তো প্রশ্ন জাগছে যে এই শার্ট আমি কোথা থেকে পেলাম? তাহলে বলি সিংহ রায় প্যালেসের আশেপাশে আমি পুলিশের ইনফর্মার নিযুক্ত করেছিলাম একটা বিশেষ কারনে,  সেই আমাকে একটা খবর দেয় গতকাল রাতে মিস্টার আদিত্য সিংহ রায় সামনের গেট দিয়ে না পিছনের গেট দিয়ে লুকিয়ে বাড়িতে ঢোকেন মিস্টার আদিত্য ভুল বলছি আমি?" প্রশ্নটা করে নীলাদ্রি বোধহয় আদিত্যর উত্তরের জন্য একটু থামে কিন্তু আদিত্যকে চুপ থাকতে দেখে নিজেই আবার বলতে শুরু করে "যখন তিনি বাড়িতে ঢোকেন তখনও তার  শার্টে লাল রঙের কিছু একটা লেগে থাকতে দেখে আমার ইনফর্মার, সনাতন বাবুও এটা লক্ষ্য করেছিলেন  যদিও সেটা রক্ত কি না সেটা তারা কেউই কনফার্ম করেনি"
 "আজ ভোর ভোর মনোহরবাবু আর মলয় থানায় এসে আমাকে সব বলেন সঙ্গে সঙ্গে আমি স্পটে যাই  সেখানে মন্দির থেকে কিছুটা দূরে প্রথমে রাস্তার একপাশে সুবিমলবাবুর গাড়িটা দেখতে পাই যেটার পিছনের একটা টায়ার বুলেট লেগে ফেটে গেছে, তারপর আশেপাশে অনেকটা এলাকায় খোঁজ শুরু করি কিন্তু তন্নতন্ন করে খুঁজেও এই মোবাইল আর ঘড়ি ছাড়া আর কিছু পাইনা যদিও যেখানে এগুলো পাই সেখানে কিছুটা জায়গায় রক্তের দাগ‌ও ছিল, এটা আগেই বলেছি, এরপর আমি ওই মন্দিরের পুরোহিত এবং ওখানকার  আরও কয়েকজন লোকের সাথে কথা বলি তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করি তখন তাদের কয়েকজন জানায় তে গতকাল দুপুরবেলা মন্দিরে লোক সমাগম কিছুটা কম ছিল অল্প কয়েকজন ট্যুরিস্ট ও কয়েকজন ভক্তবৃন্দ ছিল হটাৎ‌ই একটা কানফাটানো আওয়াজ শুনতে পায় এবং তারা সেটা লক্ষ্য করে খোঁজ করতে গিয়ে দেখে একটা গাড়ি থেকে দুজন লোক নেমে পালানোর চেষ্টা করছে একজন যে সুবিমলবাবু সেটা তারা ছবি দেখে কনফার্ম করেছে আর অপরজনের মুখে দাঁড়ি গোঁফ থাকায় তারা চিনতে পারেনি, একটু পরেই সেখানে আরো একটা গাড়ি আসে যেটা থেকে কয়েকজন গুণ্ডা প্রকৃতির লোক নেমে আগের দুজনকে ধাওয়া করে আর প্রায় পরপরই একটা জিপে করে আরো একজন আসে সেও ওই কিছুক্ষণ খোঁজাখুঁজি করে আগের লোকগুলোর দিকেই চলে যায়, এবারও আদিত্যর ছবি দেখাতে তারা তাকে আইডেন্টিফাই করেছে"
নীলাদ্রি একটু থেমে আবার বলতে শুরু করে "এরপর আমি সনাতন বাবুর সাথে দেখা করি উনি প্রথমে রাজী হচ্ছিলেন না কিন্তু পরে ওনাকে প্রীতি বলাতে উনি রাজী হন এবং তারপর আদিত্যর রুম থেকে এই শার্ট এবং গেঞ্জি উদ্ধার করি, যেকোনো কারনেই হোক এগুলো তখনও পর্যন্ত লোপাট করেননি বা করার সুযোগ পাননি তাইতো মিস্টার আদিত্য?"।
আদিত্য এবার‌ও চুপ করে থাকে দেখে নীলাদ্রি বিদ্রুপের স্বরে বলে "কি কিছু বলবেন না? অবশ্য আপনার বলার কিছু নেই, শুধু একটা কথা বলুন কেন মারলেন সুবিমলবাবুকে? আর ওনার বডিটার কি করেছেন?"।
আদিত্য তখনও কোনো কথা না বলে চুপ করে থাকে দেখে নীলাদ্রি আবার বলে "আপনি ফেঁসে গেছেন আদিত্য বাবু, অপরাধী অপরাধ করে কখনো পার পায় না, আপনিও পাবেন না একটা ভুল আপনাকে ধরিয়ে দিল এই শার্ট আর গেঞ্জিটা লোপাট করতে ভুলে গিয়েছিলেন তাইতো? অবশ্য লোপাট করলেও আমি খুঁজে বার করতামই"
"আপনি ভুল করছেন অফিসার, আমি সুবিমলবাবুকে মারিনি" এতক্ষণে আদিত্য কথা বলে।
"তাহলে আপনার শার্টে রক্ত এলো কোথা থেকে, বলুন" নীলাদ্রি চিৎকার করে ওঠে, কিন্তু আদিত্য এই কথার কোনো উত্তর দেয় না। নীলাদ্রি বলে "আমি বলি? পুরোটাই যদিও আমার অনুমান তবে আমার অনুমান যে সঠিক সেটা আমি নিশ্চিত। ওই দ্বিতীয় লোকটি কে সেটা আমি না জানলেও অনুমান করতে পারি উনি হয়তো আপনার হয়ে কাজ করা কেউ, বা এমন‌ও হতে পারে যে উনি কোনোভাবে আপনার বিষয়ে কোনো গোপন কথা জেনে গিয়েছিলেন ফলে আপনার লোক তাকে মারার জন্য তাড়া করছিল এখন পালানোর পথে হয়তো সুবিমল বাবুর সাথে লোকটির দেখা হয় সুবিমলবাবু এই এলাকায় শুধু একজন বিখ্যাত ডাক্তার‌ই নন সাথে একজন গণ্যমান্য লোক তাই হয়তো লোকটা তার কাছে বাঁচার জন্য সাহায্য চেয়েছিল কিন্তু সুবিমলবাবু একটা ভুল করলেন তিনি কথাটা আপনাকেই ফোন করে জানালেন, হয়তো সেই লোকটা আপনার নাম বলেনি বা সে আপনাকে অন্য কোনো পরিচয়ে চিনতো যেটা সুবিমলবাবুর জানার কথা নয় তাই তিনি আপনাকে ফোন করেন হাজার হোক আপনার এখানে একটা মানবদরদী ইমেজ আছে, কিন্তু এর ফলে আপনি তাকেও পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেওয়ার প্ল্যান করলেন, ইতিমধ্যে আপনার লোকেরা তার গাড়ির টায়ার ফাটিয়ে দেওয়ায় তিনি পালাতে পারলেন না চেষ্টা করেছিলেন কিন্তু ব্যার্থ হলেন তারপর আর কি ওনাদের নৃশংসভাবে খুন করে বডি গায়েব করে দিলেন"।
"আপনি পুলিশে জয়েন না করে গল্প লেখক হতে পারতেন আপনার কল্পনাশক্তি দারুণ কিন্তু এক্ষেত্রে আপনার গল্পটা একটু ক্লিশে টাইপের শোনাচ্ছে বলে মনে হয় না কি?" নীলাদ্রি চুপ করতেই আদিত্য ব্যাঙ্গাত্মক স্বরে বলে, কিন্তু নীলাদ্রিও সমানভাবে বলে "এটা আমার অনুমান আগেই বলেছি পুরোটা তো আপনি বলবেন জেল কাস্টডিতে, আর প্রমাণ হিসেবে আপনার শার্ট আর গেঞ্জি তো র‌ইলোই।
"হাউ কুড ইউ.. এরকম কেন করলেন কিভাবে করতে পারলেন আপনি?" আদিত্য কিছু বলতে যাচ্ছিল কিন্তু তার।আগেই আদিত্যর সামনে এসে ওর জামার কলারদুটো জোরে টেনে কাঁদতে কাঁদতে এবার কথাটা বললো অদ্রিজা কিন্তু আদিত্য ওকে একটাও কথা বললো না অদ্রিজা আবার এক‌ই প্রশ্ন করলো আদিত্যকে তবে এবার আদিত্যর দুগালে ঠাস ঠাস করে চড়‌ও মারতে শুরু করলো কিন্তু আদিত্য কোনো প্রতিবাদ বা বাধা দেওয়ার চেষ্টা না করে চুপচাপ দাঁড়িয়ে সহ্য করতে থাকে,হটাৎ প্রীতি "চারু আন্টি" বলে আর্তনাদ করে ওঠে এবং সবাই দেখে তিনি অজ্ঞান হয়ে গেছেন সঙ্গে সঙ্গে অদ্রিজা আদিত্যকে ছেড়ে মায়ের কাছে যায়।
"নীলাদ্রি তোমার কোথাও ভুল হচ্ছে" উমাদেবী এতক্ষণে কথা বলেন, উত্তরটা নীলাদ্রি বেশ শান্তভাবেই দেয় "না আন্টি আমার কোনো ভুল হচ্ছে না"।
"আদিত্য এরকম করতে পারে না, কোথাও ভুল বোঝাবুঝি হচ্ছে" উমাদেবী আবার বললেন, তার উত্তরে নীলাদ্রি যেটা বললো সেটার জন্য ঘরের কেউই প্রস্তুত ছিল না এমনকি খোদ আদিত্য‌ও নয়,
"ঠিক বলেছেন আন্টি আদিত্য একাজ করতে পারে না, কিন্তু এই যিনি আমাদের সামনে দাঁড়িয়ে আছেন যাকে আপনারা আদিত্য বলে ভাবছেন সে আসলে আদিত্য নয় সে আসলে একটা ফ্রড"
মুহূর্তে ঘরের মধ্যে যেন বজ্রপাত হলো, উমাদেবী তবুও বলেন "নীলাদ্রি, তুমি কি বলছো সেটা বুঝতে পারছো?"
"আমার কাছে তার প্রমাণ আছে"।
"কি প্রমাণ"
উমাদেবী কথা বললেও আদিত্য সেই যে চুপ করেছে এখনও চুপ করেই আছে, এবার নীলাদ্রি পকেট থেকে তার ওয়ালেটটা বার করে সেটার ভিতর থেকে একটা ছোটো ফটো বার করে উমাদেবীর হাতে দিয়ে বলে "দেখুনতো চিনতে পারছেন কি না?"
উমাদেবী দেখেন ছবিটা বেশ পুরনো তাতে দুটো ১৩-১৪ বছরের ছেলে একে অপরের কাঁধে হাত দিয়ে হাসিমুখে দাঁড়িয়ে আছে তাদের পরনে স্কুল ইউনিফর্ম, উমাদেবী ছবির একজন ছেলেকে ইঙ্গিত করে বলেন "এটা তো আমার আদিত্য আর অপরটা..."
"অপরটা আমি" নীলাদ্রি কথাটা শেষ করে তারপর একটু থেমে বলে "আমি ছোটোবেলায় এই এলাকাতেই থাকতাম, আদিত্য‌ শুধু যে আমার ক্লাসমেট ছিল তাই নয় ও আমার বেস্টফ্রেণ্ড ছিল, এমনকি বাবার ট্রান্সফার হওয়ার পরে যখন আমরা এখান থেকে চলে তাই তারপরেও আমার সাথে আদিত্যর নিয়মিত যোগাযোগ ছিল, মাঝে মাঝেই আমরা বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে গিয়ে মিট করতাম, ও ওর সব শিকারের ঘটনা, অ্যাডভেঞ্চারের ঘটনা আমাকে বলতো কিন্তু ৭ বছর আগে একদিন হটাৎ‌ই আমাকে জানায় আমি যেন দেরী না করে বাবাকে নিয়ে গ্যাংটকে যাই খুব দরকার, ডিটেইলস কিছু না বললেও এটা বলে যে ও ওখানে একটা মারাত্মক ক্রাইম আর ক্রিমিনালদের খোঁজ পেয়েছে কিন্তু লোকাল পুলিশের উপরে ভরসা করতে পারছে না, ও জানতো আমার বাবার তখন প্রমোশন হয়েছে তিনি কমিশনার হয়েছেন তাই আমাদের ডেকেছিল কিন্তু আমাদের যেতে দুটো দিন দেরী হয়েছিল যে হোটেলে ওর থাকার কথা ছিল সেখানে গিয়ে শুনি.."
"কি..কি শোনো" উমাদেবীর গলা কাঁপছে, কিন্তু এবার দেখা গেল নীলাদ্রির গলাও কাঁপছে অতিকষ্টে ও কান্নাটাকে চেপে রেখেছে বললো "একটা অ্যাক্সিডেন্টে আদিত্য সিংহ রায় বলে একজনের মৃত্যু হয়েছে"।
"নীলাদ্রি কি আবোলতাবোল বকছো, এই তো আদিত্য আমার সামনে দাঁড়িয়ে" উমাদেবী কথাগুলো বললেন বটে কিন্তু তার গলায় জোর কমে এসেছে, নীলাদ্রি আবার বলে "আমরা হাসপাতালে খোঁজ নিয়েছিলাম ওরা কনফার্ম করেছিল"।
"আমি তোমার কোনো কথা বিশ্বাস করি না নীলাদ্রি"
"ডিএন‌এ রিপোর্ট তো বিশ্বাস করবেন?" কথাটা বলে নীলাদ্রি আবার একজন কনস্টেবলকে ইশারা করতেই সে বেরিয়ে গিয়ে একটা রিপোর্ট এনে উমাদেবীকে দেয়, নীলাদ্রি বলতে থাকে "এখানে এসে আমি যখন শুনি আদিত্য বেঁচে আছে আমি প্রথমে অবাক হলেও পরে খুব খুশী হ‌ই কিন্তু যখন দেখি এই আদিত্য সেজে থাকা ব্যাক্তিটি আমাকে চিনতে পারলেন না তখন আমি নিশ্চিত হলাম যে এ আদিত্য নয় কারণ আদিত্য‌ আমাকে ভুলে যাবে এটা হতে পারে না তাই আমি প্রীতিকে সব কথা বলে ডিএনএ টেস্টের জন্য স্যাম্পল জোগাড় করালাম, ওই জোগাড় করে দিল রিপোর্টটা দেখুন ওতে স্পষ্ট লেখা আছে এই আদিত্যর সাথে অতীন্দ্র আঙ্কেলের ডিএনএ রিপোর্ট ম্যাচ করছে না, এমনকি আমি শিওর যে যদি এর ব্লাড টেস্ট‌ও করা হয় তাহলে এর ব্লাডগ্ৰুপ‌ও আদিত্যর ব্লাডগ্ৰুপের সাথে ম্যাচ করবে না"।
"চুপ করো তুমি"উমাদেবী চেঁচিয়ে ওঠেন, প্রীতি তাকে শান্ত করতে গেলে তিনি তাকেও সরিয়ে দেন তারপর সোজা আদিত্যর কাছে এসে তার সোজাসুজি দাঁড়িয়ে বলেন "আদিত্য ওরা কি বলছে, তুই নাকি আমার ছেলে নোস আমি বিশ্বাস করি না শুধু তুই একবার বল যে ওরা মিথ্যা বলছে একবার বল" কথাটা বলতে বলতে উমাদেবী আদিত্যর ডানহাত নিয়ে নিজের মাথায় চেপে ধরেন কাঁদতে কাঁদতে বলেন "তোকে আমার দিব্যি একবার বল যে ওরা মিথ্যা বলছে তুই আমার আদিত্য"। আদিত্য কিছু বলে না মাথা নীচু করে থাকে, সেটা দেখে উমাদেবী আবার বলেন "মাথা নীচু করে থাকিস না আদিত্য, একবার শুধু বল যে তুই আমার আদিত্য আমার ছেলে আদিত্য"।
আদিত্য এবার মুখে কিছু বলে না শুধু মাথাটা দুদিকে নাড়িয়ে না বলে, উমাদেবীর মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়ে তিনি আদিত্যর (নাকি আদিত্য বলাটা ঠিক হবে না তবে আপাতত আদিত্য‌ই বলা যাক) হাতটা ছেড়ে দুপা পিছিয়ে গেলেন তিনি আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারেন না প্রায় নীচে পরে যাচ্ছিলেন, আদিত্য তাকে ওই অবস্থায় দেখে "মা" বলে ধরতে গেল কিন্তু তার আগেই প্রীতি নিজের মাকে ধরে ফেললো আর এক হাত আদিত্যর দিকে বাড়িয়ে তাকে বললো "ডোন্ট টাচ হার, ডোন্ট টাচ মাই মাদার ইউ মার্ডারার"। বলে মাকে চারুলতা দেবীর পাশে একটা সোফায় বসিয়ে দেয়।
"প্রীতি, বোন আমার একবার আমার কথাটা শোন" আদিত্য অসহায়ভাবে বলে ওঠে, কিন্তু প্রীতি ঝাঁঝিয়ে ওঠে "ডোন্ট কল মি দ্যাট, আই অ্যাম নট ইওর সিস্টার এণ্ড ইউ আর নট মাই ব্রাদার, ইউ আর আ ফ্রড, আ মার্ডারার" কথাগুলো যে আদিত্যর একদম ভিতরে আঘাত করছে সেটা ওর অসহায়ভাবে তাকিয়ে থাকা দেখেই বোঝা যায়।
" আমি বলেছিলাম না খুনি কখনো আমার হাত থেকে পালাতে পারবে না তা সেটা এখন এই কেসের হোক কিংবা বছর পুরনো কোনো কেসের, একটা খুনের প্রমাণ তো পেয়েছি এবার যদি প্রমাণ পাই যে আমার বন্ধুকে তুই মেরেছিস তাহলে.." চিবিয়ে চিবিয়ে কথাগুলো  বললো নীলাদ্রি কিন্তু শেষ করলো না, আদিত্য তার কথার কোনো উত্তর দিল না তার দৃষ্টি উমাদেবীর দিকে উমাদেবী অজ্ঞান হননি কিন্তু তিনি অন্য দিকে মুখ ফিরিয়ে রেখেছেন।
I'm the King of Dark
                &
I rule over all Devils
               devil2 devil2
Like Reply


Messages In This Thread
"ধূসর পৃথিবী" - by Monen2000 - 11-12-2022, 01:47 AM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Mehndi - 17-12-2022, 01:10 AM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Monen2000 - 14-03-2023, 11:45 PM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by kublai - 10-05-2023, 02:46 AM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Rancon - 29-05-2023, 05:43 PM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Naim_Z - 31-05-2023, 08:58 AM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Naim_Z - 02-06-2023, 10:56 AM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Naim_Z - 04-06-2023, 09:56 PM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Naim_Z - 06-06-2023, 11:49 AM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Naim_Z - 10-06-2023, 09:33 AM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Naim_Z - 11-06-2023, 10:57 PM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Naim_Z - 14-06-2023, 02:02 AM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Naim_Z - 15-06-2023, 08:50 AM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Naim_Z - 17-06-2023, 08:52 PM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Naim_Z - 18-06-2023, 10:26 AM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Naim_Z - 20-06-2023, 12:46 AM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Naim_Z - 23-06-2023, 09:41 AM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Naim_Z - 25-06-2023, 02:35 PM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Naim_Z - 26-06-2023, 01:00 AM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Naim_Z - 26-06-2023, 01:12 AM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Naim_Z - 26-06-2023, 09:57 PM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Naim_Z - 27-06-2023, 06:42 PM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Naim_Z - 28-06-2023, 09:40 PM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Naim_Z - 30-06-2023, 10:41 PM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Naim_Z - 02-07-2023, 11:34 AM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Naim_Z - 02-07-2023, 12:29 PM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Rancon - 02-07-2023, 04:41 PM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Naim_Z - 03-07-2023, 10:33 AM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by guru1 - 03-07-2023, 03:31 PM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Naim_Z - 04-07-2023, 12:06 AM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Naim_Z - 08-07-2023, 04:22 PM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Rancon - 08-07-2023, 11:39 PM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Naim_Z - 09-07-2023, 12:50 AM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Naim_Z - 11-07-2023, 11:32 AM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Naim_Z - 12-07-2023, 09:57 AM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Naim_Z - 12-07-2023, 10:18 PM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Naim_Z - 15-07-2023, 09:49 AM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Naim_Z - 15-07-2023, 10:37 PM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Naim_Z - 18-07-2023, 12:07 AM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Naim_Z - 18-07-2023, 08:42 PM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Naim_Z - 22-07-2023, 10:14 PM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Ahid3 - 25-07-2023, 12:31 AM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Naim_Z - 25-07-2023, 08:54 AM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Rancon - 25-07-2023, 09:01 AM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Naim_Z - 26-07-2023, 08:25 AM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Naim_Z - 30-07-2023, 11:48 PM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by pratim - 05-08-2023, 10:31 PM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Rancon - 07-08-2023, 07:51 AM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by kublai - 15-08-2023, 05:12 AM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Naim_Z - 19-08-2023, 02:07 PM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Rancon - 22-08-2023, 05:38 AM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Rancon - 03-09-2023, 07:04 AM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by pratim - 03-09-2023, 04:00 PM
RE: "ধূসর পৃথিবী" - by Saj890 - 18-05-2024, 05:13 PM



Users browsing this thread: 7 Guest(s)