Thread Rating:
  • 29 Vote(s) - 2.69 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
নাম না জানা এক সম্পর্কের গল্প (দেয়ালের ওপারে)
#1
নাম না জানা এক সম্পর্কের গল্প এইটা এই গল্পে কোনো সেক্স এর কোনো কাহিনী নাই ।
আমার কাছে গল্পটা ভালো লেগেছে তাই আমি পোস্ট করছি আপনাদের কাছে কেমন লাগবে জানিনা ।
ভালো না লাগলে বলবেন আর পোস্ট করবো না,আর ভালো লাগে তাহলে জানাবেন পোস্ট করবো।

গল্প-দেয়ালের ওপারে

[b]পর্ব-০১[/b]



লেখক-সবুজ আহম্মদ মুরসালিন







        "অবহেলা এসো, আমাকে শিখিয়ে দেও,
       অবহেলা করে কীভাবে ভালো থাকতে হয়!"

প্রিয় রুদ্র,
     একটা সুন্দর সকালে বেলকনিতে বসে চা খেতে খেতে উপরের দু'লাইন হঠাৎ মনে এলো। সেই থেকে ভাবছি, অবহেলা করতে শিখে গেলে কি ভালো থাকা যায়? কথাটা ঠিক নাকি বেঠিক সেটা ভাবতে ভাবতে মনে হলো তোকে একটা চিঠি লেখা উচিত। তাই আরেক কাপ চা বানিয়ে কাগজ কলম নিয়ে এখন বেলকনিতে বসে আছি। কিন্তু অদ্ভুত ব্যাপার কি জানিস, কাগজ কলম নেওয়ার আগে যা লিখবো ভেবেছিলাম এখন তার কিছুই গুছিয়ে লিখে উঠতে পারছি না। আরেকটা অদ্ভুত ব্যাপার হচ্ছে, এখন সুন্দর সকালটাকে আর সুন্দর মনে হচ্ছে না। হুট করে পরিবেশটা কেমন গুমোট হয়ে উঠেছে। কেমন নিশ্চুপ চারদিক। বাতাস নেই, পাখিদের গান নেই, কোথাও কেউ ভালো নেই, সুখ নেই, হাসি নেই, কিচ্ছুটি নেই!

রুদ্র, এই অসুন্দর সকালে বেলকনিতে বসে দালাই লামার একটা কথা খুব মনে পড়ছে। উঁনি বলেছিলেন; "আমাদের জীবনের মূল উদ্দেশ্য হ'ল সুখ খোঁজা।" আসলেই তাই। মূলত মানুষ সারাজীবন সুখ খুঁজে বেড়ায়। সেভাবেই আমরা সুখ খুঁজবো বলে একদিন একসাথে পথে নেমেছিলাম। অত:পর, কি হলো? হ্যাঁ আজ অবশ্য আমরা সুখি। দুইজন আলাদা ভাবেই সুখি। আজ আমরা সফল। এই যে দুজনেই সুখ খুঁজে পেয়েছি। কিন্তু এই সুখের কাছে পৌঁছাতে আমাদের একত্রে অনেক কষ্ট সহ্য করতে হয়েছে, তাই না?

রুদ্র, আমাদের অনেক দিন দেখা হয় না। কথা যে হয় সেটাও না। তবে আমরা সবসময় দেখা না হওয়াটা বেশি মনে রাখি। যদি প্রশ্ন করি, আমাদের আবার দেখা হওয়ার সম্ভাবনা কতটুকু? তুই কি উত্তর দিবি জানিনা, তবে আমাকে যদি কেউ এই প্রশ্ন জিজ্ঞেস করে তাহলে আমি না ভেবেই বলে দিতে পারি শূন্য পার্সেন্ট। তুই-তো জানিস শূন্য আমার সবচেয়ে প্রিয় সংখ্যা। এখানে কোনো আশা নেই। তাই এখানে হতাশাও নেই। কিছুক্ষেত্রে চিরন্তন সত্যকে আমরা মেনে নিতে চাই না। মানুষের এটা একটা দোষ। মানুষ শুধু আশায় বুক বাঁধে। কিন্তু আমি ভিন্ন। আমি কখনো আশা করি না যে আমাদের আবার দেখা হবে। আমি এই চিরন্তন সত্যকে মেনে নিয়েছি। হয়তো এতো সহজে মেনে নিতে পারার কারণ, এটা ছাড়া কোনো উপায় নেই।

আজকের চিঠিটায় কেমন একটা দুঃখ দুঃখ ঘ্রাণ আছে, তাই না রুদ্র? চিঠিটা লেখার আগে ভেবেছিলাম আগের চিঠিগুলোর মত আজকের চিঠিটাও তোর কথা লিখবো। আমার কথা লিখবো। আমাদের কথা লিখবো। কিন্তু হুট করে যে কি হলো আমার। জানিনা রুদ্র, কি হলো। আজকাল আমার প্রায়ই এমন হয়। এই মন ভালো, এই মন খারাপ। এই-যে আমার এই কথায় তুই এখন ভাববি আমি কষ্টে আছি। কিন্তু আমি কষ্টে নেই। তোর থেকে অনেক ভালো আছি। আর ভালো কেনো থাকবো না? ভালো থাকার জন্যই-তো আমরা আলাদা হয়েছিলাম। সরি, তুই না, আমিই বিচ্ছেদ টেনে দিয়েছিলাম।

রুদ্র, এইসব দুঃখের ঘ্রাণ আসা চিঠিগুলো তোকে পাঠানো হয় না। আগেও কিছু চিঠি লিখেছি। সেগুলো আমার কাছেই পড়ে আছে। যদি তোকে এই চিঠিটা পাঠায় তাহলে চিঠিটা পড়ে ভাবতেই পারিস কেনো এমন একটা দুঃখের ঘ্রাণ আসা চিঠি তোকে পাঠালাম। আমার এখন মনে হয়, আমাদের সবসময় ভালো থাকা উচিত নয়। মাঝে মাঝে খারাপ থেকে ভালো থাকার সময়গুলোকে মূল্যবান করে তুলতে হয়। যদি কখনো খারাপই না থাকি তাহলে ভালো থাকার মূল্যটা আমরা উপলব্ধি করতে পারবো না। সেই সাথে আমাদের ভালো মুহুর্তগুলোও স্মরনীয় হয়ে উঠবে না। তাই মাঝেমধ্যে মন খারাপ করা ভালো। কিছুটা খারাপ থাকা মন্দ নয়, তুই কি বলিস?

তোকে চিঠি লিখতে গেলে প্রথমে কোনো কথা খুঁজে না পেলেও শেষের দিকে এসে আমার কথা ফুরায় না। ক্রমশ বেড়েই যায়। তখন করার কিছু থাকে না। একটা সময় গিয়ে বাধ্য হয়ে কথাগুলোকে থামিয়ে দিয়ে চিঠি শেষ করতে হয়। আজ এই চিঠিটা শেষ করার আগে তোকে দুইটা কথা বলতে চাই। প্রথম কথাটা হলো; আমার আজকাল সত্যি মনে হয়, "যারা একবার অবহেলা করতে শিখে যায়, তারা আর কখনো কারো কাছ থেকে কষ্ট পায় না?" দ্বিতীয় কথাটা হলো; "আমি এখনও তোকে অবহেলা করতে শিখিনি। শুধু তোর জন্য তোকে দূরে ঢেলে দিয়েছি। অবহেলা আমাকে স্পর্শ করেনি। আমাকে শেখায়নি কীভাবে কাউকে অবহেলা করতে হয়।"

ইতি, তরু।

       সকালের রোদটা এসে রুদ্রের মুখে পড়তেই চিঠিটা সঙ্গে নিয়ে সে বেলকনি থেকে উঠে রুমে ঢুকে টেবিলে বসতে বসতে উচ্চ কন্ঠে বলল; "মা, এক কাপ চা দিবে? বড্ড চায়ের তৃষ্ণা পেয়েছে।" কথাটা শেষ করে সে টেবিলের একটা ড্রয়ার খুলল। সেখানে ছোট-বড় নানা রঙের অসংখ্য কাগজ। তার মধ্যেই সে চিঠিটা রেখে ড্রয়ারটা আবার আগের মত বন্ধ করে দিলো।

       রুদ্রের মায়ের নাম জাহানারা আকবর। দীর্ঘ বারো বছর সে একাই এই সংসারটা সামলে যাচ্ছে। তার স্বামী ওসি ইসমাইল আকবর বারো বছর আগে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যায়। তখন সে দুই মাসের গর্ভবতী। তার দ্বিতীয় সন্তান জন্ম নেওয়া পরে সে আর বিয়ে করেনি। সে এই ছোট্ট সংসারটা অনেক কষ্টে সামলে নিয়েছে।
অভাব কি সেটা সে কখনোই তার দুই সন্তানকে বুঝতে দেয়নি। একটা সংগ্রামী জীবন কাটিয়েছে দীর্ঘ বারো বছর। বর্তমানে সে একটা নার্সিং হোমে চাকরি করে। স্বামীর পেনশন এবং তার বেতন দিয়ে এখন ভালো ভাবেই তার সংসারটা চলে যায়।

       রুদ্রের টেবিলে চা এবং বিস্কুট রাখতে রাখতে জাহানারা জিজ্ঞেস করল; "আজ এতো সকাল সকাল উঠেছিস?"
"একটা পরীক্ষা আছে।" রুদ্র উত্তর দিলো।
"প্রিপারেশন কেমন?"
"ভালো।"
"কখন বেরুবি?"
"ন'টার দিকে।" ছোট্ট করে জবান দিয়ে রুদ্র পড়ায় মনোযোগ দিলো। জাহানারা এটা দেখে তাকে আর কিছু না বলে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। অনেক কাজ বাকী। অফিসে যাওয়ার আগে তাকে সেগুলো শেষ করতে হবে।

       মনোযোগ দিয়ে কিছুক্ষণ পড়ার চেষ্টা করল রুদ্র। একটা সময় পর সে ব্যর্থ হলো। পড়ায় তার মনোযোগ নেউ। সে আবার ড্রয়ারটা খুলল। সেখানে অসংখ্য কাগজ। তার একপাশে অনেকগুলো চিঠির খাম। সবগুলোই তরুর দেওয়া। রুদ্র চিঠিগুলো যত্ন করে রেখে দিয়েছে। সে ড্রয়ারটা পুরোপুরি খুলল। ভিতরে থাকা সব কাগজ বের করে টেবিলের উপরে রাখল। রঙিন কাগজগুলো তার নিজের লেখা। সে বিভিন্ন বই পড়তে পছন্দ করে। সেই সব বইয়ের প্রিয় লাইনগুলো সে রঙিন কাগজে লিখে জমা করে রাখে। মন খারাপের সময় সেই সব লেখা পড়তে রুদ্রের অনেক ভালো লাগে।

       রঙিন কাগজগুলো গুছিয়ে ড্রয়ারে এক কোনে রেখে দিয়ে সাদা কাগজগুলো গোছাতে লাগল। এগুলো তার নিজের লেখা। যে কথাগুলো সে কাউকে বলতে পারে না সেই সব কথাগুলো সে লিখে জমা করে রাখে। এটা করলে তার মন হালকা হয়। সবশেষে সে চিঠিগুলো গোছাতে গিয়ে সে অবাক হলো। সে নিজের অজান্তে বলে উঠল, "তরু, এতোগুলা চিঠি দিয়েছে!"

       চিঠিগুলোর তারিখ অনুযায়ী গোছানো শেষ হলে সে সেখান থেকে একটা চিঠি তুলে নিয়ে খামের ভেতর থেকে চিঠিটা বের করল। সে এটা আগেও পড়েছে। একবারের বেশিই পড়েছে। তবুও সে আবার পড়তে শুরু করল।

                "তোকে ছুঁয়ে থাকি রোজ
                    বাতাসে গানে বৃষ্টিতে
                   তোকে মনে রাখি রোজ
                নিশ্বাসে, দীর্ঘশ্বাসে, স্মৃতিতে!"

রুদ্র,
    আজ সকালে ঘুম ভেঙেই দেখি বাইরে ঝড় বাতাস। তার কিছুক্ষণ পরেই বৃষ্টি। আকাশটা মন খারাপ করে ছিলো বেশ কিছুক্ষণ। আমিও আকাশের মন খারাপের সঙ্গী হতে চলে গেলাম ছাঁদে। আকাশের কান্নায় ভিজলাম অনেকক্ষণ।

সে কি শীতল অনুভূতি। মুহুর্তেই মনটা জুড়িয়ে গেলো। ভীষণ ভালো লাগছিলো। আর এই ভীষণ ভালো লাগার মধ্যে হঠাৎ তোর কথা মনে পড়লো। সে যে কি বিচ্ছিরি ভাবে মনে পড়লো তুই না দেখলে বুঝবি না।

তোর কথা মনে পড়তেই বৃষ্টি আরো বেড়ে গেলো। তারপর আর কি? আমি ভিজলাম, তোকে মনে করলাম, তোকে বৃষ্টির ফোঁটায় ফোঁটায় রেখে দিলাম। বাতাসকেও বলে দিলাম তোর আমার সব গোপন কথা। সে কি নির্লজ্জ ভাবে যে বাতাসকে কথাগুলো বললাম তখন বুঝতে পারি নি। এখন সে সব কথা মনে পড়তেই নিজেরই লজ্জা হচ্ছে। আমাদের সব গোপন কথা বাতাস জেনে গেলো, বৃষ্টি জেনে গেলো, কী হবে এবার?

রুদ্র, তুই কি আজকাল বৃষ্টিতে ভিজিস?

ইতি, তরু।

       রুদ্র চিঠিটা এক নিশ্বাসে পড়ে শেষ করল। তারপর সে সময় নিয়ে দম নিলো। ঘনঘন নিশ্বাস ছাড়তে লাগল। সে আনমনে জানালা দিয়ে বাইরে তাকালো। বাইরে রোদ ঝলমল করছে। সকালের মৃদু রোদে গাছের কচিপাতাগুলো খেলা করছে। পাতাগুলোর সে যে কি আনন্দ। রুদ্র এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সেদিকে। সে পাতা দেখছে, নাকি রোদ দেখছে, নাকি কিছুই দেখছে না সেটা বলা মুশকিল। তবে সে চোখের পলক না ফেলে পাতাগুলোয় দিকে তাকিয়ে আছে।

       "ভাইয়া, ভাইয়া, মা ডাকছে তোমাকে।"
রুদ্র চমকে উঠে ঘুরে তাকিয়ে দেখল তার ছোট বোন মিলি দাঁড়িয়ে আছে। সে তাকে ইশারায় কাছে ডাকতেই মিলি ছুটে এলো। রুদ্র মিলির চুলগুলো ঠিক করে দিতে দিতে বলল, "বুড়িটা ঘুম থেকে কখন উঠেছে?"
"একটু আগে উঠেছি, ভাইয়া।"
"ঘুম ভালো হয়েছে?"
"মোটেও না। আম্মু আমাকে ঘুমাতেই দিলো না। আমি উঠবো না তবুও আম্মু আমাকে জোর করে ডেকে তুলল।"
"আম্মু এটা ঠিক করেনি। কিন্তু কেনো ডেকে তুলল?"
"স্কুলে যাওয়া জন্য। আমার স্কুলে যেতে একটু ভালো লাগে না। স্কুলের সবাই ভীষণ দুষ্টু।"
"তোমার সাথে আবার কেউ দুষ্টুমি করেছে?"
"হুম করেছে।"
"কি করেছে?"
"ভাইয়া, তুমি তো জানো টিকটিকিকে আমি ভয় পাই।
"জানি তো আমি। কিন্তু কি হয়েছে?"
"গতকাল যখন আমাদের টিফিন দিলো তখন আমি বেঞ্চে বসেছিলাম। দূর থেকে একটা ছেলে আমার ব্যাগের উপর একটা টিকটিকি ছুড়ে মরলো। আমি ভীষণ ভয় পেয়ে উঠে দৌড় দিতে গিয়ে পড়ে গেলাম। আর সবাই আমাকে দেখে হেসে দিলো। আমার লজ্জা লাগছিল ভীষণ। তারপর এই দেখো পায়েও ব্যথা পেয়েছি।" মিলি তার ভাইকে পা দেখালো।

       "ওটা কি আসল টিকটিকি ছিলো?"
"না, আসল না। কিন্তু যখন আমার ব্যাগের উপর টিকটিকি পড়লো তখন আমি দেখেই ভীষণ ভয় পেয়ে গেলাম। সেই সময় আমি কি করে বুঝব ওটা নকল?"
"ঠিকই-তো, তখন হুট করে কি করে বুঝবে। তারপর কি হলো?" রুদ্র আগ্রহ নিয়ে জিজ্ঞেস করল।

       "আমাকে কান্না করতে দেখে ইংরেজি ম্যাম আমাকে হেড মিসেসের কাছে নিয়ে গেলো।"
"ওই দুষ্ট ছেলেদের হেড মিসেস কিছু বলেনি?"
"বলেছে-তো।"
"তাহলে এখন সমস্যা কী? স্কুলে কেনো যাবে না?"
"তবুও আমার স্কুলে যেতে ভালো লাগে না। ওরা সবাই অনেক দুষ্টু। কেউ আমার বন্ধু না।" মিলি কথাটা মন খারাপ করে বলল।

       রুদ্র বলল, "এভাবে মন খারাপ করে না। আমি আজ গিয়ে ওই ছেলেটাকে বকে দিবো। আর কখনো কেউ তোমার সাথে দুষ্টুমি করবে না। সবাইকে এটাও বলে দিবো, সবাই যেনো তোনার বন্ধু হয়ে যায়।"

       রুদ্রের কথা শুনে মিলির মন ভালো হয়ে গেলো। সে হাসিমুখে বলল, "আচ্ছা ভাইয়া। তাহলে আমি স্কুলে যাবো। তুমি কিন্তু আমাকে নিয়ে যাবে? আর আমাকে একটা আইসক্রিম কিনে দিবে!" কথাটা বলেই মিলি হেসে দিলো। কী নিষ্পাপ সেই হাসি।
"আচ্ছা, কিনে দিবো।" রুদ্র কথাটা বলে মিলিকে আদর করতে করতে আবার বলল, "আমার লক্ষী বোন।"

       "ভাইয়া, এইগুলো কি?" রুদ্রের টেবিলে থাকা খামগুলোর দিকে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে মিলি জিজ্ঞেস করল।
"এগুলো চিঠি।" রুদ্র উত্তরে বলল।
"তোমার?"
"হ্যাঁ, আমার।"
"কে দিয়েছে।"
"তোমার একটা বড় আপু।"
"আপুটার নাম কি?"
"তরু।"
"তরু আপু কি তোমাকে ভালোবাসে?"

       মিলির কাছ থেকে এরকম প্রশ্ন রুদ্র আশা করেনি। সে যথেষ্ট অবাক হয়েছে। সে বলল, "তোমাকে কে বলল, কেউ কাউকে চিঠি দিলে সে তাকে ভালোবাসে।"
"তুমি জানো না বুঝি?" একটু বলে মিলি হাসলো। সে আবার বলল, "আমাদের ক্লাসের একটা ছেলে একটা মেয়েকে চিঠি দিয়ে বলেছে সে তাকে ভালোবাসে। তাই-তো আমি জানি।"

       রুদ্র এবারও অবাক হলো। আজকাল বাচ্চাকাচ্চা অল্প বয়সে একদম পেঁকে গেছে।  

       "ভাইয়া, বলো না, তরু আপু কি তোমাকে ভালোবাসে?"

       রুদ্র হঠাৎ দোটানায় পড়ে গেলো। সে কি বলল বুঝে উঠতে পারছে না। সে মিলির প্রশ্নের কোনো উত্তর না দিলে উলটো তাকে বলল, "তুমি দিন দিন বেশি দুষ্টু হয়ে যাচ্ছ।" এই বলে যেই মিলিকে কাতুকুতু দিতে যাবে ওমনি মিলি ছুটে পালিয়ে গেলো। মিলি চলে যাওয়া পর রুদ্র দ্রুত চিঠিগুলো ড্রয়ারে রেখে সেটা বন্ধ করে দিলো।  

       রুদ্রের ছোট বোন মিলি। বয়স বারো বছর। ক্লাস সিক্সে পড়ে। একটা সমস্যার কারণে বছর শেষ হওয়ার আগেই তাকে আগের স্কুল পরিবর্তন করতে হয়েছে। এই জন্য নতুন স্কুলে এখনো কেউ তার ভালো বন্ধু হয়ে উঠে নি। তাই সে তার নতুন স্কুলে যেতে চায় না।

       রুদ্র গোসল সেরে রেডি হয়ে ড্রয়িং রুমে এসে দেখে তার দাদী সোফায় বসে আছে। সে কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করল, "দাদী, কেমন আছো?"

       আলেয়া বেগম কাশতে কাশতে উত্তর দিলো, "ভালো না দাদু। মনে হচ্ছে আর বেশিদিন বাঁচবো না। তোর দাদা প্রায় স্বপ্নে আসে। আমাকে ডাকে।"
আগেকার দিনে মানুষ বিশ্বাস করতো মৃত মানুষ স্বপ্নে কাউকে ডাকলে সে দ্রুত তার কাছে চলে যায়।

       "এই সব বাজে কথা বলবে না তো। দাদাকে নিয়ে যেতে দিলে তো। তোমার কিচ্ছু হবে না। আমাদের কাছ থেকে তোমাকে কেউ নিয়ে যেতে পারবে না।"

       রুদ্রের কথা শুনে আলেয়া হেসে দিলো। মুখে ভাজ পড়া চামরাটাও সেই হাসির সৌন্দর্য একবিন্দু নষ্ট করতে পারল না। সেই পুরনো, যৌবনে হাসিটা রুদ্র আলেয়ার মুখে দেখল। রুদ্রের বাবা যেদিন জন্মগ্রহণ করে সেদিনের একটা সাদাকালো ছবি তাদের ছবির এলবামে আছে। রুদ্র প্রায়ই দেখে। যখম সে তার বাবাকে অনেক মিস করে তখন তাদের পারিবারিক যত ছবি আছে সে-তা দেখে। সে চায় না তার বাবার মুখটা ধীরে ধীরে তার স্মৃতি থেকে মুছে যাক। সে সারাজীবন তাকে মনে রাখতে চায়। অবশ্য তার বাবার পুলিশের চাকরির কারণে সেভাবে তার বাবাকে সে কাছে পায়নি। তারপর সে ছোট থাকতেই মানুষটা অকালে তাদের সবাইকে রেখে চলে গেল দূরে। বহুদূরে! রুদ্রের মাঝেমধ্যে বাবার প্রতি অভিমান হয়। তবুও সে তার বাবাকে অনেক ভালোবাসে।

       "রুদ্র।"
আলেয়া ডাক শুনে রুদ্র উত্তর দিলো, "জি দাদি।"
"আমার কাছে একটু আয়।"

       রুদ্র কাছে যেতেই আলেয়া তার কপালে চুমু এঁকে দিলো। রুদ্র লজ্জা পেলো। সে এখন অনেক বড় হয়েছে। রুদ্রের মুখ দেখে আলেয়াও সেটা বুঝল কিন্তু কেউ এটা নিয়ে কিছু বলল না।
আলেয়া বলল, "তুই দেখতে দেখতে অনেক বড় হয়ে গেছি।"
"মানুষ কি সারাজীবন ছোট থাকে?"
"হ্যাঁ রুদ্র, জীবন শুধু এগিয়ে যায়!"
"হুম দাদি।"
"রুদ্র, জীবনে যত কিছুই ঘটুক, কখনো থেমে থাকবি না। নিজের উপর বিশ্বাস রেখে এগিয়ে যাবি। মানুষের জীবন কখনো একরকম থাকে না৷ ক্ষণেক্ষণে সেটা পরিবর্তন হয়। জীবনের দুঃখ কষ্ট আসে। আবার তা চলেও যায়। তাই সবসময় যে কোনো পরিস্থিতিতে শক্ত থাকতে হয়। সেই সময়টাকে হাসিমুখে মোকাবেলা করতে হয়। তাহলে ভালো থাকা যায়।"

       রুদ্র মাথা নেড়ে তার দাদীক আশ্বাস দিলো। সে এগিয়ে যাবে। সবাইকে সাথে নিয়ে এগিয়ে যাবে। তার সম্পূর্ণ পৃথিবীতো এই কয়জন মানুষকে ঘিরে।

       পরীক্ষা শেষ করে চায়ের দোকানে যাওয়ার পথে আলিফের সাথে দেখা হয়ে গেলো রুদ্রের। রুদ্রকে দেখতে পেয়েই আলিফ বলল, "কি করে দোস্ত। পরীক্ষা কেমন হলো?"
রুদ্র ছোট্ট করে বলল, "আলহামদুলিল্লাহ, ভালোই হয়েছে।'
"কোথায় যাচ্ছিস?"
"চা'য়ের দোকানে।"
"ক্লাস নেই আর?"
"একটা আছে। করতে ইচ্ছে করছে না।"
"আচ্ছা, তাহলে চল চা খাওয়া যাক একসাথে।"

       দুইজনে চা খেতে খেতে নানা কথা বলার মাঝে আলিফ হঠাৎ বলল, "তোর কি মুড অফফ?"
"সামান্য!"
"কি হয়েছে?"
"তেমন কিছু না।"
"আরে বল। আমাকে না বললে কাকে বলবি।"

       রুদ্রের বেস্ট ফ্রেন্ড আলিফ। ক্লাস নাইন থেকেই তাদের বন্ধুত্ব। একই কলেজে পড়েছে। কিন্তু এখন একই ভার্সিটি পড়লেও তাদের বিভাগ ভিন্ন। কিন্তু তারা খুশি, তারা একই ভার্সিটিতে পড়ছে। প্রতিদিন আড্ডা দিতে পারছে। একসাথে থাকতে পারছে। যদি কোনো একজন অন্য কোথাও চলে যেতে তাহলে তারা কীভাবে থাকত? তারা এটা ভাবতে চায় না। তবুও যদি কেউ একজন অন্য কোথাও চলে যেতো, হয়তো সবকিছু ধীরে ধীরে তারা মানিয়ে নিতো। কিন্তু মন খুলে চায়ের সাথে আড্ডা দিতে দিতে সব কথা খুলে বলার একজন বন্ধু হারাত। চাইলেও এভাবে প্রতিদিন দেখা করতে পারতো না।

"কি হলো, বল কি হয়েছে?"
"তরু চিঠি...!" রুদ্র কথা শেষ করতে পারলো না।
আলিফ বলল, "মেয়েটা আবারও চিঠি পাঠিয়েছে।"
"হুম।" রুদ্র উত্তর দিলো।
"আরে এটা নিয়ে মন খারাপ করা কি আছে। এখন বাদ দে তো এই সব। ভুলে যা সব। শুধু শুধু মন খারাপ করে কোনো লাভ নেই!"

       রুদ্র এই বিষয় নিয়ে আলিফের সাথে আর কথা বাড়ালো না। সে জানে এটা নিয়ে কথা বাড়ালে আলিফ তাকে এখন বড় একটা লেকচার দিবে। কিন্তু তার এখন কিছুতেই লেকচার শুনতে ইচ্ছে করছে না। সে চা শেষ করে আলিফ কে বলল, "দোস্ত, বাসায় যাবো। ভালো লাগছে না। রাতে ঘুম হয়নি। বাসায় গিয়ে লম্বা একটা সাওর নিয়ে লম্বা একটা ঘুম দিতে হবে।"
"আচ্ছা যা। আর এই সব নিয়ে মন খারাপ করবি না।"
"আচ্ছা।" রুদ্র বাধ্য ছাত্রের মত উত্তর দিলো।

       রুদ্র বাসায় এসে একটা লম্বা সাওর নিলো। তারপর খেয়েই শুয়ে পড়ল। দিনে তার ঘুম আসে না। সে যত চেষ্টা করুক দিনের আলোয় সে ঘুমাতে পারে না। তবুও তার ঘুমানো দরকার। মাথা ব্যথাটা তাকে খুব কষ্ট দিচ্ছে। ঘুমালে ভালো লাগবে। তাকে অবাক করে দিয়ে শোয়া মাত্রই ঘুম এসে তাকে গভীর ঘুমিয়ে তলিয়ে নিলো।




চলবে....!
===========================
পড়তে থাকুন  চটি গল্প এ-র পাশা-পাশি ভিন্ন ধরনের গল্প ✒।


Keep reading chatty stories as well as different types of stories✒.



( Post By- Kam Pagol) 

Like Reply
Do not mention / post any under age /rape content. If found Please use REPORT button.


Messages In This Thread
নাম না জানা এক সম্পর্কের গল্প (দেয়ালের ওপারে) - by Bangla Golpo - 18-11-2022, 10:17 PM



Users browsing this thread: 1 Guest(s)