Thread Rating:
  • 23 Vote(s) - 3.3 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Erotic Thriller চন্দ্র কথা - তমালের গোয়েন্দাগিরি
#3
Rainbow 
গার্গী প্রথমেই নিয়ে গেলো একটা ঘরে। একটা তক্তপোশে এক বৃদ্ধ শুয়ে আছেন। গার্গী পরিচয় করলো… আমার বাবা… তমাল নমস্কার করতেই তিনি উঠে বসতে গেলেন…

আর কাশির দমকে আবার বেঁকে গেলেন।বালিশে মুখ গুঁজে কাশতে লাগলেন তিনি… গার্গী এগিয়ে গিয়ে তার পিঠে হাত ঘষে দিতে লাগলো। তারপর এক গ্লাস জল এগিয়ে দিলো।

কোনো রকমে জল এর গ্লাস এ চুমুক দিয়ে আবার শুয়ে পড়লেন বৃদ্ধ… তমাল বললো… থাক,ওনাকে বিশ্রাম করতে দাও… পরে আলাপ করা যাবে।

তারপর গার্গী সিঁড়ি দিয়ে দোতলায় উঠে একদম কোণের একটা ঘরে নিয়ে গেলো। সেখানে একজন বছর চল্লিশের মহিলা বসে আছেন।

গার্গী বললো… আমার বৌদি… ভদ্র মহিলা নমস্কার করে বললেন… আমার নাম তৃষা…। তৃষা রায়চৌধুরী…। বসুন… একটু চা করে আনি।

তমালেরও খুব চা তেষ্টা পেয়েছিল… তাই আর ভদ্রতা করে না বললো না।

তৃষা চলে যেতে তমাল বললো… তোমার দাদা কোথায়?

গার্গীর মুখটা থমথমে হয়ে গেলো… বললো… তার কথা আর বলবেন না… আছে কোনো তাস বা মদ এর আড্ডায়।

তমাল আর কথা বাড়ালো না। ঘুরে ঘুরে ঘরটা দেখলো তমাল।দারিদ্রের চিহ্ন নিপুণ হাতে ঢাকার চেষ্টা করা হয়েছে,

গার্গীর বৌদি বেশ গোছালো বোঝাই যায়…আর তাদের দারিদ্র নিয়ে লজ্জিত ও। দেয়াল এর প্লাস্টর খসে ইট বেরিয়ে পড়েছে… সেখানেই রুচি সম্মতো ভাবে সূচিশিল্প বা হাতে আঁকা ছবি দিয়ে সুন্দর করে সাজিয়ে দিয়েছেন তিনি।

সাধারণ সব জিনিসও যার যার নিজের জায়গায় রয়েছে… টেবিল এর উপর অনেক বই পত্রও দেখলো তমাল… নেড়েচেড়ে দেখচ্িল তমাল…

গার্গী বললো… বৌদি গল্পের বই এর পোকা… আর গোয়েন্দা গল্পের তো অন্ধ-ভক্ত।

তমাল বললো… আমার আসার উদ্দেশ্যটা বলোনি নিশ্চয়?

গার্গী বললো, তা বলিনি বটে… তবে বৌদি কিছু সন্দেহ করেছে।

তমাল বললো… ভালো কথা… আমাদের কী পরিচয় দিয়েছ?

গার্গী বললো… কুহেলিকে সবাই চেনে এ বাড়িতে… আর আপনি হলেন তার দূর সম্পর্কের দাদা। কখনো গ্রাম দেখেন নি… তাই গ্রাম দেখতে এসেছেন।

তমাল বললো… যাক… সম্পর্কটা দূরে রেখে ভালই করেছ… তারপর দুষ্টু হাসি দিলো চোখ টিপে। তৃষা বৌদি চা নিয়ে এলে সবাই চা শেষ করলো নীরবে।

তারপর তৃষা বৌদি বললো…ওদের ঘরে নিয়ে যাও গার্গী… এত দূর থেকে এসেছে… খুব ক্লান্ত নিশ্চয়ই।

তমাল বললো… না না… ক্লান্ত বেশি নই… তবে ফ্রেশ হয়ে গ্রামটা একটু ঘুরে দেখবো।

তৃষা বললো… হ্যাঁ গ্রাম দেখতে এসেছেন… সে তো দেখবেনই… যান ফ্রেশ হয়ে নিন…

গার্গী নিয়ে যাবে। তমাল বললো… আমি আপনার থেকে ছোট… আমাকে আপনি বলবেন না প্লীজ।তৃষা বললো… আচ্ছা… তাই হবে …, 
প্রত্যেক তলাতে ৬টা করে রূম। দোতলার এক কোণে গার্গীর দাদা বৌদি থাকেন… অন্য কোনায় তমালের থাকার ব্যবস্থা হয়েছে… তার পাশের ঘরে থাকবে গার্গী আর কুহেলি।

গার্গীদের বাড়িতে ওভারহেড ওয়াটর ট্যাঙ্কের ব্যবস্থা নেই। ইলেক্ট্রিসিটি আছে যদিও… তবে পাম্প লাগানো হয়নি। নীচে কলঘরে টিউবওয়েল বসানো আছে। সেখান থেকেই জল আনতে হয় দোতলায়।

দোতলায় একটা কমন বাথরুম আছে। সেখানে চৌবাচ্চায় জল ভরা আছে। তমাল নিজের জন্য বরাদ্দ ঘরে ব্যাগ রেখে ফ্রেশ হয়ে নিলো।

কুহেলি ফ্রেশ হবার পরে তমাল গার্গীকে বললো… চলো তোমাদের গ্রামটা ঘুরে আসি।

গার্গী বললো, এখনই যাবেন?

তমাল বললো… হ্যাঁ চলো এখনই যাই… আর তুমি কুহেলির বন্ধু… আমাকে আপনি বোলোনা… তুমিই বলো। গার্গী একটু হেসে ঘাড় নাড়লো।

তমাল আবার বললো… ভালো কথা… তোমার ঠাকুরদা যে কবিতাটা দিয়েছেন তোমাকে…ওটা সঙ্গে নাও। গার্গী আবার ঘাড় নেড়ে সেটা আনতে নিজের ঘরে চলে গেলো।

তিনজনে মেঠো পথ দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে গ্রামটা ঘুরে দেখচ্ে। জায়গাটা এখনো সত্যিকারের গ্রামই রয়েছে। আধুনিকতা ঢোকার চেষ্টা করছে বটে, তবে এখনো খুব একটা সুবিধা করে উঠতে পারেনি। ছাড়া ছাড়া কিছু ঘরবাড়ি রয়েছে… কেউ কেউ অল্প বিস্তর পাকা করে নিয়েছে… তবে বেশির ভাগই কাঁচা। গার্গীদের বাড়ি থেকে বেশ খানিকটা দূরে একটা নির্জন জায়গায় চলে এলো ওরা হাঁটতে হাঁটতে।

সামনে একটা খাল দেখলো… বেশ বড়। সেদিকে তমাল তাকিয়ে আছে দেখে গার্গী বললো… এটা আগে এক সময় শাখা-নদী ছিল… এখন মজে গেছে বলে পঞ্চায়েত থেকে সংস্কার করে চাষ-বাস এর জন্য জল সরবরাহ করার কাজে ব্যবহার করা হয়।

তমাল মাথা নেড়ে বোঝালো… বুঝেছে সে। খাল এর পারটা বেশ উঁচু… আর ঝোপ ঝাড়ে ভর্তি সাইড দুটো।ওরা উঁচু পার থেকে একটু নেমে এসে ঢালের উপর একটা ফাঁকা জায়গায় বসলো… উপর থেকে দেখা যাচ্ছেনা ওদের।

তমালের দুপাশে গার্গী আর কুহেলি বসলো। তমাল বললো, কই দেখি কাগজটা দাও গার্গী। সেটা হাতে নিয়ে নেড়েচেড়ে দেখলো তমাল। খুব পুরানো একটা কাগজ… লাল হয়ে ছোপ ছোপ দাগ পড়ে গেছে। বেশ শক্তও হয়ে গেছে… চাপ দিলে ভেঙ্গে যাবে এমন ভয়ও রয়েছে।

তমাল সাবধানে কাগজটার ভাঁজ খুলে দেখলো ফাউন্টেন পেনে লেখা একটা লম্বা কবিতা। একবার চোখ বুলিয়ে বললো… থাক পরে পড়ছি, আগের কথা আগে জানা ভালো…। তুমি বরং প্রথম থেকে বলো গার্গী। তিনজনে একটু নড়েচড়ে আরাম করে বসলো।

গার্গী বলতে শুরু করলো… আমাদের বাড়িটা দেখে বুঝতেই পারছেন… এক সময়ে এই বাড়ি এখনকার মতো ছিল না। গ্রামের মানুষ এখনো একে জমিদার বাড়ি নামেই ডাকে। ইংরেজ দের তাবেদারি করে রায়চৌধুরী উপাধি পায় আমার ঠাকুরদার প্রপিতামহ… ইন্দুভূষণ রায়চৌধুরী।

অনেক জমিজমা ছিল তার। ইংরেজদের তোষামোদি করে বিভিন্ন উপায়ে সেটা ফুলে ফেঁপে রাজকীয় হয়ে উঠলো তার আমলে। জমি জমার সঙ্গে সঙ্গে ব্যবসা বানিজ্যও শুরু হলো… সিন্দুক ভরে উঠে উপচে পড়তে লাগলো। তারপর যা হয় তাই হলো…

বিলাসিতা আর বাবুগিরিও এসে পড়লো মা-লক্ষ্মীর পিছু পিছু। ইন্দুভূষণ এর পরে জমিদারী পেলেন তার পুত্র শশীশেখর রায়চৌধুরী। তিনি বাবুগিরি আর উশৃংখলতাকে প্রায় শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে গেলেন। তার সঙ্গে যোগ হলো লাম্পট্য। দেশ বিদেশ থেকে বাঈজী আসতে লাগলো প্রায় দিন। মদ আর যৌনতার ফোয়ারা ছুটলো।

গ্রামটা শহর থেকে অনেক দূরে বলে ইংরেজদের বড় কর্তাদের বাগানবাড়ী হয়ে উঠলো এটা। আর বিদেশী প্রভুদের খোশামোদিতে যথেচ্ছো অর্থ-নাশ হতে শুরু করলো। ভরা চৌবাচ্চায় ছিদ্র হলে যেভাবে জলের স্তর চুপি সারে নামতে থাকে… সেভাবেই সঞ্চিত ধন কমতে শুরু করলো। আমার ঠাকুরদার বাবা চন্দ্রনাথ রায়চৌধুরী যখন সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হলেন তখন অর্ধেকেরও বেশি নষ্ট হয়ে গেছে।

খুব মন দিয়ে শুনছিল তমাল আর কুহেলি, তমাল নরম ঘাস এর উপর চিৎ হয়ে শুয়ে পড়লো। কুহেলি তার বুকের উপর শুয়ে কনুইয়ে ভর দিয়ে মাথা উঁচু করে রাখলো। তার বুক তমালের বুকের উপর আশ্রয় নিলো।

সেদিকে তাকিয়ে গার্গী একটু মুচকি হেসে আবার বলতে শুরু করলো…। সারা জীবন লাম্পট্য আর খোলামকুচির  মতো টাকা উড়িয়ে শেষ বয়সে অনুতাপ হলো বোধ হয় শশীশেখরের।


তিনি জীবন ধারার রাস টানতে চেষ্টা করলেন… কিন্তু ততক্ষনে অনেক দেরি হয়ে গেছে… বয়স তাকে অসমর্থ করে তুলেছে। জমিদারীতে তখন আয় এর চাইতে ব্যয় বেশি।
তাই বোধ হয় তিনি ছেলের নামে একটা উপদেশ… কবিতা আকারে লিখে ছেলের হাতে দিলেন। এটাই সেই কবিতা… বা ছড়া। কবিতাটা দিয়ে ছেলে কে বললেন… যদি কোনদিন বিপদে পড়ো, এটা কে মন দিয়ে পড়বে… বিপদ থেকে উদ্ধার এর পথ খুঁজে পাবে এর ভিতর। 
কিন্তু জমিদারী রক্ত শরীরে রয়েছে…প্রথম বয়সে আমার ঠাকুরদার বাবাও বেশ কিছু টাকা উড়িয়ে দিলেন বাবুয়ানিতে। কিন্তু তিনি শিক্ষার আলোর পথ দেখেছিলেন। সেই যুগেও আমার ঠাকুরদার বাবা বি.এ পাশ করেছিলেন।

বাইরের সমাজে মিশে তিনি সম্পত্তির কদর করতে শিখলেন। দেওয়া কবিতাটাও হয়তো তার শুভ বুদ্ধির জাগরণ ঘটিয়েছিল। তিনি চেষ্টা করে গেছেন পরিবারকে বাঁচিয়ে তোলার। কিন্তু কথায় বলে এক পুরুষ পর পর ভালো আর খারাপ গুণ বংশধারাতে প্রকাশ পায়।

আমার ঠাকুরদার ভিতরও শশীশেখর এর খারাপ গুণগুলো পুরো মাত্রায় প্রকাশ পেলো। আমার ঠাকুরদার নাম অলকেশ রায়চৌধুরী। সারা জীবন সংসার সম্পর্কে উদাসীন।

ভোগ বিলাস এ ডুবে থাকলেন যৌবনে। চন্দ্রনাথ এর বয়স হয়েছে… তিনি ছেলে কে বাগে আনতে পারলেন না। দারিদ্র্য এসে হানা দিতে শুরু করলো পরিবারে। ভালো পরিবার দেখে ছেলের বিয়ে দিলেন চন্দ্রনাথ… এক ছেলে এবং এক মেয়ে হলো তার… নিখিলেশ ও সর্বাণী… মানে আমার বাবা ও আমার পিসি। তন্ময় হয়ে শুনতে শুনতে তমালের বুকের উপর শুয়েই পড়েছে কুহেলি…

তমাল তার চুল গুলো নিয়ে বিলি কাটছে… কিন্তু পূর্ণ মনোযোগ গার্গীর দিকে… গার্গী বলে চলেছে…। চন্দ্রনাথও একদিন তার ছেলে কে ডেকে বাবার দেওয়া কবিতা আর একই উপদেশ ছেলে অলকেশ কে দিয়ে পৃথিবীর মায়া কাটিয়ে চলে গেলেন।

শশীশেখর যেমন পড়ন্ত বেলায় এসে অনুতাপ করেছিলেন… অলকেশ এর ভিতরও সেটা দেখা দিলো। তিনি লক্ষ্য করলেন এক পুরুষ পর পর বংশগতিতে গুণের প্রবাহ্ তার ছেলের বেলায় খাটলো না।

তার ছেলে মানে আমার বাবাও জমিদার বংশের সমস্ত দোষ গুলো ধারণ করলেন… চন্দ্রনাথ এর গুণ বা শিক্ষা… কোনোটাই পেলেন না আমার বাবা। তার অকর্মণ্যতায় সংসার এর লক্ষ্মী পরিবার ছেড়ে চলে গেলেন, আর দারিদ্রের অতলে তলিয়ে গেলাম আমরা। অলকেশ চেষ্টা করেছিলেন পরিবারকে শৃংখলায় বাঁধতে…

তাই শেষ বয়সে তিনি বেশ কঠোর এবং রাগী হয়ে পড়েছিলেন। আমার পিসি সর্বাণী এই সময় একজন নিচু জাতের ছেলের প্রেমে পড়েন। বাড়ি থেকে পালিয়ে তাকে বিয়েও করেন।

অলকেশ রেগে গিয়ে তাকে সম্পত্তির উত্তরাধিকার থেকে বঞ্চিত করেন। কিছুদিন পরে তাদের এক সন্তান হয়… আমার পিসতুতো দাদা… সৃজন। একটা অ্যাক্সিডেন্টে পিসি পিশেমশাই দুজনই মারা পড়েন…

সৃজনদার বয়স তখন ১২ কি ১৩। ঠাকুরদা ভেঙ্গে পড়েন মেয়ের মৃত্যুতে। সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করলেও সৃজনদাকে বাড়িতে আশ্রয় দেন। সেই থেকে সে এই বাড়িতেই আছে। আমার বাবা মা এর ২টি সন্তান…

আমার দাদা অম্্বরীশ রয়চৌধুরী আর আমি। দাদা বছর পাঁচেক হলো বিয়ে করেছেন। কিন্তু সংসারে তারও মন নেই। ভীষণ বদমেজাজী… আর মদ, গাঁজা, জুয়া কোনো কিছুই বাদ নেই তার।


আমরা আস্তে আস্তে সমাজ-স্তর এর সর্বোচ্চ শিখর থেকে সর্ব-নিম্ন স্তরে এসে পৌঁছেছি তমালদা… জানি না কিভাবে চলবে এর পরে। পড়াশুনা করে নিজের পায়ে দাঁড়াবো… টাকার অভাবে সেটাও শেষ করতে পারবো না বোধ হয়…। এই পর্যন্ত বলে গার্গী একটু থামল…
তমাল ও কুহেলি চুপ থেকে তাকে সময় দিলো গুছিয়ে নিতে। তারপর তমাল বললো… তারপর কী হলো গার্গী? কবিতাটা তোমাকে কবে দিলেন তোমার ঠাকুরদা?

গার্গী বললো…। কলেজ হোস্তেলে থেকেই খবর পেলাম ঠাকুরদা ভীষণ অসুস্থ। আমি চলে এলাম। শেষ দিকে ঠাকুরদা প্রায় কাউকেই সহ্য করতে পারছিলেন না… একমাত্র আমি ছাড়া। আমাকে ভীষণ ভালোবাসতেন তিনি। আমি গেলেই উনি কাছে টেনে নিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতেন। বলতেন তুইই আমাদের বংশের এক মাত্র ভরসা…,

আমি পৌঁছে দেখলাম তিনি ভীষণ অসুস্থ। তিনি বললেন গার্গী বাদে সবাই একটু বাইরে যাও… আমার সাথে দিদিভাই এর একটু কথা আছে। অনিচ্ছা সত্বেও সবাই বেরিয়ে গেলো।

আমাকে বললেন দরজা লাগিয়ে দিতে। তারপর চাবি দিয়ে সিন্দুক খুলতে বললেন। ভিতরে টাকা পয়সা কিছুই ছিল না… ছিল একটা উইল… আর একটা খামে ওই কবিতাটা।

আমাকে বললেন… দিদিভাই… আমি চললাম… কিছুই দিয়ে যেতে পারলাম না তোদের। বাড়িটাই এক মাত্র সম্বল… সেটা তোর দাদাকেই দিয়ে গেলাম। তবে এই একটা জিনিস অনেক পুরুষ ধরে চলে আসছে আমাদের বংশে। জানি না এটাতে তোর কিছু লাভ হবে কী না।

তবে তোকে এটা দিয়ে গেলাম। তুই লেখা পড়া শিখেছিস… তুই হয়তো এই জিনিসটার উদ্দেশ্য আর নির্দেশ বুঝতে পারবি। আমার মনে হয়… কিছু একটা ব্যাপার আছে এটার ভিতর, তাই তোকে দিয়ে গেলাম…। বলে খামটা তিনি আমার হাতে তুলে দিলেন… আর বললেন এটা যেন হাতছাড়া না করি…

দুদিন পরে ঠাকুরদা মারা গেলেন। তমাল প্রশ্ন করলো… আর কে কে জানে খামটার কথা? গার্গী বললো… সবাই জানে। ঠাকুরদা বেঁচে থাকতে কেউ কিছু বললো না… কিন্তু তিনি চলে যেতেই সবাই আমাকে চেপে ধরলো… কী দিয়ে গেছেন আমাকে ঠাকুরদা? আমি খামটা তাদের হাতে তুলে দিলাম।

দাদা কবিতাটা দেখে বিদ্রুপ করলো। সৃজন দা মুখ বাঁকালো… শুধু বৌদির ভুরু কুঁচকে রইলো। তারপর উইলটা পড়া হলো। ঠাকুরদা উইল করে গেছেন… আমার স্থাভরাও অস্থাবর যাবতীয সম্পত্তির ভিতর শুধু মাত্র স্থাবর সম্পত্তি… এই বসতবাড়ি  পাবে আমার একমাত্র পুত্র নিখিলেশ এর পুত্র অম্্বরীশ।

আর আমার সমস্ত অস্থাবর এবং গচ্ছিত সম্পত্তি পাবে নিখিলেশ এর কন্যা গার্গী রায়চৌধুরী। আবার উল্লেখ যে একমাত্র গার্গী রায়চৌধুরীর অধিকার থাকবে তার উপর… অন্য কারো নয়। সবাই অবাক হয়ে গেলো… অস্থাবর সম্পত্তি…

টাকা পয়সা যত সামান্যই আছে… সেগুলো উইল করে যাবার দরকার ছিল না… তবুও তিনি কেন উইল করলেন… এবং দুবার উল্লেখ করে গেলেন উইলে… কেউই বুঝতে পারছিল না।

দাদার ধারণা বুড়ো বয়সের ভিমরতি… নিজেকে নাকি ঠাকুরদা তখনও জমিদার ভেবে স্বপ্ন দেখতেন, আর ভাবতেন তার সিন্দুক বোঝাই সোনাদানা মোহর… সেই কল্পনার ধনই আমাকে দিয়ে গেছেন।

বৌদি কিন্তু সন্দেহ করলো সেদিন সবাইকে বের করে দিয়ে ঠাকুরদা আমাকে কোনো দামী জিনিস বা তার হদিস দিয়ে গেছেন। প্রথমে আমার উপর চোট্‌পাট্, তারপর ভয় দেখিয়ে কথা আদায়ের চেষ্টা চলল…


লাভ হলোনা দেখে এখন খুব ভালো ব্যবহার করে মন জয়ের চেষ্টা করে চলেছেন। কিন্তু তমালদা বিশ্বাস করুন আমি কিছুই জানি না… কিছুই বুঝতে পারছি না… !

তমাল বললো… বলাই বাহ্ুল্য, তুমি বুঝতে পারলে আমাকে ডাকতেনা গার্গী। আচ্ছা এবার এসো দেখা যাক তোমার ঠাকুরদা তোমাকে কী দিয়ে গেছেন… খাম থেকে কাগজটা খুলে কোলের উপর সযত্নে মেলে ধরলো তমাল। তারপর জোরে জোরে পড়তে শুরু করলো…।

                                     “চন্দ্র-কথা” 
জীবনটাও চাঁদ এর মতো,               সামনে আলো পিছে ক্ষত
যখন আলোয় ভাসতে থাকে,              কেউ দেখেনা অন্ধকার,
হঠাৎ আঁধার ঘনায় যখন…                        চতুর্দিকে বন্ধ দ্বার।

ভয় পেয়ো না অন্ধকারে                      ফুটবে আলো চন্দ্রহারে,
কণক প্রভায় ভরাও জীবন…              সঠিক শ্রম আর কাজে-
দুয়ার খুলে বাইরে এসো…                       দাঁড়াও জগৎ মাঝে।
 দৃষ্টি রেখো চতুর্পাশে                কোথায় সুযোগ, কখন আসে-
অপেক্ষা আর ধৈর্য রেখো…                      ইন্দু-সম সহনশীল,
 কেমনে সে জোৎস্না পেতে…          জমায় আলো তিল তিল।

 মধ্য বয়স পথ দেখাবে                 কোথায় মাথা খুঁড়তে হবে,
সঠিক পথের সন্ধানেতে…                 চক্রাকারে ঘুরছে হায় !
আকার বাড়ে… আকার কমে…            ষোল-কলা পূর্ণ হয় !!

 পূর্ণিমা… আর অম্ানিশা                  একই শশির দুটি দশা,
 উল্টো, সোজা দুইই সঠিক…          দুটো থেকেই শিক্ষা নাও
 ডাইনে এবং বায়ে ঘুরে…            সঠিক লক্ষ্যে পৌঁছে যাও !

কবিতাটা পড়া শেষ হতেই কুহেলি বললো… বাবাহ্! কী এটা?এতো দেখি হিতোপদেশ ! আমি তো ভাবলাম গুপ্তধন টন কিছু হবে। হা ! সারা জীবন বাবুগিরি করে শেষে এসে উপদেশ? তাও আবার উইল করে দিয়ে গেছে… আজব ব্যাপার সব।

কুহেলির ব্যঙ্গে গার্গী একটু দুঃখ পেল… আর একটা হতাশাও গ্রাস করলো তাকে… মুখটা কালো হয়ে গেলো গার্গীর। সেটা লক্ষ্য করলো তমাল। বললো… আমি কিন্তু মজা পাচ্ছি। আবার কৌতুহলও বোধ করছি। গার্গীর কথা অনুযায়ী এটা শশীশেখরের লেখা… তার মানে প্রায় ১৫০ বছরের পুরানো। কবিতাটার ভাষা দেখে কী তোমাদের সেটা মনে হচ্ছে?

কুহেলি বললো… তাই তো? কী যেন একটা খট্‌কা লাগছিল মানে… তুমি বলাতে এখন বুঝলাম ভাষাটা আমাকেও ভাবিয়েছিল।

গার্গী বললো… হ্যাঁ আমারও কেমন জানি লেগেছিল। তমাল বললো… গল্পটা যখন চালু আছে…তখন একটা উপদেশ হয়তো ঠিকই শশীশেখর দিয়ে গিয়েছিলেন… কিন্তু এটা সেটা নয়। এটা লেখা হয়েছে অনেক পরে। শশীশেখর এর যুগে বাংলা ভাষা এই রকম ছিল না। সেই গল্পটাকে বজায় রাখা হয়েছে এই কবিতাটাকে গোপন রাখতে। এটা খুব বেশি হলে ৮০ কী ৯০ বছরের বেশি আগে লেখা হতেই পরে না, অর্থাৎ এটা লিখেছিলেন চন্দ্রনাথ… তাও তার শেষ বয়সে। গার্গীদের পূর্বপুরুষদের প্রায় সবার নামেই চাঁদ এর প্রতি-শব্দ আছে… ইন্দু, শশি, চন্দ্র…।কিন্তু কবিতাটার নাম খেয়াল করো… “চন্দ্র-কথা”।

এর ভিতরও একটা সূত্র দিয়ে গেছেন তিনি। ইন্দু বা শশি নয়… চন্দ্রনাথ এর নিজের কথা এটা। এখন প্রশ্ন হলো… এই রকম একটা সস্তা কবিতা কেন বংশ পরম্পরায় উত্তরাধিকার সূত্রে দান করা হবে? কবিতাটার সাহিত্য মূল্য কিছুই নেই… ভীষণ কাঁচা একটা কবিতা… গুরু চন্ডালী দোষ আছে… কিন্তু বলার ধারণটা কৌতুহল জাগায়।


কিছু একটা বলার চেষ্টা করা হয়েছে সু-কৌশলে। আর সেটা একমাত্র গার্গীদের বংশে উচ্চ শিক্ষিত চন্দ্রনাথই পারতেন। সুতরাং এটা তারই লেখা, এব্যাপারে আমি নিশ্চিত।

চন্দ্রনাথ শিক্ষিত মানুষ ছিলেন, তিনি বিনা কারণে এই রকম একটা কবিতাটার ছেলেকে দেবে না কিছুতেই। সুতরাং আমি হতাশ নই… বরং উত্তেজিত। এটার ভিতর রহস্য আছে… আর রহস্য বের করতে পারলে ভালো কিছু আশা করাও যেতেই পারে।

গার্গীর মুখটা আশার আলোতে উজ্জ্বল হয়ে উঠলো। আর কুহেলিও নড়েচড়ে বসলো, তারপর ষড়যন্ত্র করার মতো গলা নামিয়ে বললো… গুপ্তধন !!!

তমাল মুচকি হেসে বললো… হতেও পারে ! এমন সময় বছর চল্লিশের এক যুবক নেমে এলো খাল এর পার বেয়ে, হঠাৎ যেন উদয় হলো সে। তারপর গার্গীকে বললো… কী রে? অথিতিদের খেতে দিবিনা নাকি? চল চল… কতো দেরি হয়ে গেছে… বৌদি ভীষণ রেগে গেছে। আমি কখন থেকে খুঁজছি তোদের, জলদি চল।

গার্গী বললো… হ্যাঁ চলো সৃজনদা…ওহ্ আলাপ করিয়ে দি… তমালদা, ইনি আমার পিসতুতো দাদা… আর ইনি কুহেলির দূর সম্পর্কের দাদা। দুজনেই নমস্কার করলো… তারপর দল বেঁধে ফিরে চলল গার্গীদের বাড়ির উদ্দেশ্যে…,

গার্গীর দাদা-বৌদির ঘরে খাবার ব্যবস্থা হলো… মাটিতে আসন পেতে প্রথমে বাড়ির ছেলেদের বসার ব্যবস্থা হয়েছে। অম্্বরীশ, সৃজন আর তমাল। গার্গীর বাবার খাবার তার ঘরেই দেওয়া হয়।

গার্গী তাকে খেতে দিতে গেছে… সঙ্গে কুহেলি। এই প্রথম গার্গীর দাদাকে দেখলো তমাল। বয়স ৫০ এর আসে পাশে হবে… কিন্তু দেখলে মনে হয় আরও ১০ বছর বেশি।

রোগা, পাকানো দাড়ির মতো চেহারা।নেশা ভাঙ করে শরীরে অকাল বার্ধক্য নিয়ে এসেছে, বোঝাই যায়। পৃথিবীর সবার উপর বিরক্ত এমন একটা মুখের ভাব। মেজাজটাও চেহারার সাথে মানান-সই রকমের খিটখিটে। মুখ গোঁজ করে খেতে বসলো সে।

তমালের নমস্কারের উত্তরে শুয়োরের মতো নাক দিয়ে ঘোঁৎ করে একটা আওয়াজ বের করলো শুধু। তমালের আগমন খুব একটা খুশি করেনি… বোঝাই যায়। সেই তুলনায় সৃজন বেশ হাসি খুশি। চালাক চতুরও বোঝা যায়।

তৃষা বৌদি বললো… অনেক দেরি হয়ে গেলো…। রান্না অনেকক্ষন হয়ে গেছে… কিন্তু তোমাদের খুঁজে পাচ্ছিলামনা দেখে সৃজন কে পাঠালাম। তমাল বললো… আপনিই তো গ্রাম দেখে আসতে বললেন বৌদি?

তৃষা বললো…ও হ্যাঁ হ্যাঁ… তা কেমন লাগলো গ্রামটা?

তমাল বললো… সুন্দর… শান্ত, নিরিবিলি।

হ্যাঁ, সুন্দর না ছাই… এখানে মানুষ থাকে? আর দেখারই বা কী আছে? যত্ত সব ! আবার বাইরে থেকে দেখতে আসার আর গ্রাম পেলো না… আপনার মতলবটা কী মশাই?

তমাল বললো… মতলব পাকানোর মতো কিছু আছে বলছেন এখানে? আমি তো গ্রামই দেখতে এসেছি। অবশ্য আপনার পছন্দ না হলে আমি আজই ফিরে যাচ্ছি।

ধমকে উঠলো তৃষা… চুপ করো তো ! মানুষের সাথে কিভাবে কথা বলতে হয় সেটাও জানো না… অসভ্য ! তোমাকে সভ্য সমাজে মানায় না…ওই চুল্লুর ঠেকেই তোমার থাকা উচিত। জোঁকের মুখে নুন পড়ার মতো নেতিয়ে পড়লো অমবরীশ… না মানে ইয়ে… আমি অপছন্দ করবো কেন? থাকুন না… যতদিন খুশি থাকুন… ঘাড় গুঁজে মুখে বাট চুষতে লাগলো সে।


তৃষা বললো… কিছু মনে করো না …ওই মানুষটার মাথার ঠিক নেই… নুন আনতে পান্তা ফুরানো সংসার… মাথা কী আর ঠিকঠাকে? বিয়ের সময় শুনেছিলাম জমিদার বাড়ি বিয়ে হচ্ছে… হ্যাঁ, জমিদার… এর চাইতে জমাদাররাও সুখে থাকে। এক পয়সা কামানোর সমর্থ নেই…আবার ফণা তোলে।
[+] 1 user Likes kingsuk-tomal's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: চন্দ্র কথা - তমালের গোয়েন্দাগিরি - by kingsuk-tomal - 02-11-2022, 10:57 AM



Users browsing this thread: 2 Guest(s)