Thread Rating:
  • 153 Vote(s) - 3.39 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Adultery হেমন্তের অরণ্যে
#12
রাত্রে খাবার টেবিলে কাবেরী বলল----জানো আজ হেমেন দা এসেছিল।
ঘুগনির বাটিতে পেঁয়াজ কুচি ছড়াচ্ছিল অরুণাভ। মাথা না তুলেই বলল---কে?
----হেমেন দা।
---ওই তোমার মামাতুতো দাদা? অরুণাভ কপাল কুঁচকে ছেলেদের দিকে তাকালো---এই তোরা থামবি?
দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের জন্য ভারতীয় টেস্ট ক্রিকেট দল ঘোষণা হয়েছে। তাই নিয়ে দুই ছেলেতে তর্ক বেধেছে। এর জায়গায় ও হলে ভালো হত, এর জায়গায় ও, এইসব। তাতানের একেবারে পছন্দ হয়নি টিমটা। কলেজে ঢোকার সুবাদে তাতান এখন সর্বজ্ঞ। তিন বছরের ছোট ভাইকে পাত্তাই দেয় না। পাপানও কম যায় না। স্কুলের টিমে কোনো দিন তাতান চান্স না পেলেও, পাপান ক্রিকেট থেকে ফুটবল সব টিমেই চান্স পায়। আর তা নিয়ে একটা টিটকিরি দিতেই রেগে উঠল তাতান---বাপি দেখলে আমাকে কেমন স্টুপিড বলল!
অরুণাভ একটু ধমকের সুরে বলল---পাপান, দাদার সাথে যদি ভদ্র ভাষায় কথা না বলতে পারো, তাহলে এসব তর্ক করতে যেও না।
পাপান গোঁ মেরে চুপ করে গেল। অমনি তাতান বলে উঠল---ইডিয়ট!
---দেখছ বাপি আমাকে ইডিয়ট বলল, তার বেলা? ফস করে উঠল পাপান।
কাবেরী বিরক্ত হয়ে বলল---তোরা চুপ করবি? নাকি দুটোকেই বাইরে বের করে দেব। সারা রাত রাস্তায় দাঁড়িয়ে তর্ক করিস।

পাপানটা দাদার মত জেদী নয়। ধমক খেয়ে খাওয়ায় মনযোগ দিল। তাতান গোঁ মেরে রয়েছে। কাবেরী বুঝতে পেরে বড় ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে আদর করতে করতে বলল---যাক বাবা খেয়ে নে, ভাইটা তো জানিস ছোট। কি নয় কি বলে ফেলে।
অরুণাভ আড় চোখে দেখে বলল---আর মাথায় তুলতে হবে না। এই আদর দিয়েই দুটোকে মাথায় তুলেছ।
যদিও মাথায় তোলার বিষয় হলে অরুণাভ কাবেরীর চেয়ে অনেক বেশি এগিয়ে। কাবেরী বরং বকাঝকা করে থাকে, অরুণাভ সে ক্ষেত্রে কমই। অরুণাভ চামচ দিয়ে ওমলেট কাটতে কাটতে বলল---হ্যা কি যেন বলছিলে?
---হেমেন দা এসেছিল।
---হঠাৎ, এত বছর পরে!
---কেন বোনের সাথে দাদা দেখা করতে আসতে পারে না নাকি?
---না না। লোকটা ভ্যাগাবন্ড তো। সে বার ওই পাঁচ হাজার টাকা...

অরুণাভ ব্যাংকের পেশাদার ভল্ট ম্যানেজার। টাকা পয়সার হিসেব যতই সামান্য হোক, মনে থাকে তার। হেমেন দা সেবার একটা পাঁচ হাজার টাকা জরুরী প্রয়োজন বলে নিয়েছিল। তারপর, বহু বছর বেপাত্তা।

কাবেরী মৃদু অথচ উত্তাপ রেখে বলল--আমার দাদুর জমিদারী ছিল। হেমেন দার টাকা পয়সার অভাব নিশ্চই থাকার কথা নয়। নির্ঘাত কোনো জরুরী দরকারে..
---তারপর তো আর বিষয়টা উনি মনে রাখেননি। যাইহোক কি বলছিলেন উনি?
----আমার দাদু দীননাথ রায়ের পূর্বপুরুষেরা জমিদার ছিল এ কথা মায়ের কাছে বহুবার শুনেছি।
অরুণাভ ঠাট্টা করে বলল---তা সেই জমিদারী কি ফিরে পেলেন কাবেরী দেবী?
তাতান-পাপানও ফিক করে হেসে উঠল। মায়ের কাছে মামাবাড়ির এই জমিদারীর গল্প বহুবার শুনেছে তারাও। যে জমিদারী তাঁদের মায়ের কাছেই উপকথার গল্পের মত, আজকের এই মেট্রপলিটন যুগে তাদের কাছে বরাবরই হাস্যকর মনে হয়।
কাবেরী সংযত ভাবেই বলল---ফিরে পাওয়াই বলতে পারো।
---ইন্টারেস্টিং। অরুণাভ খাবার প্লেটের ওপর জল দিয়ে হাত ধুয়ে উঠতে লাগলো। বহুবার কাবেরী বারণ করেও অরুণাভর এই অভ্যেস বদলাতে পারেনি।
কাবেরীর আজ সেদিকে নজর নেই। ও কথাটা সম্পুর্ন করতে লাগলো---ঝাড়খন্ড-পুরুলিয়া বর্ডারে নাকি একটা হাঁসড়া বলে গ্রাম আছে।
---হ্যা জানি তো। বাঘমুন্ডি থেকে আরো ভেতরের দিকে। পাহাড়ি এলাকা।
---তুমি জানো? গিয়েছ? কাবেরী স্বামীর দিকে উৎফুল্ল হয়ে তাকালো।
---যাইনি। তবে শুনেছি। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে আমার চাকরির শুরুটা তো পুরুলিয়াতে জানো।
---ওই হাঁসড়া গ্রামেই নাকি দাদুর এখনো বাড়ি সমেত সম্পত্তি রয়েছে। হেমেন দা এখন ওখানেই থাকেন। স্থানীয় মুন্ডা আদিবাসীদের জন্য কাজ করছেন। ওঁর খুব ইচ্ছে ওই জমিরই একাংশে একটা স্কুল গড়বেন।
---বাঃ। ভদ্রলোকের এতদিনে সুবুদ্ধি হয়েছে। লোন টোন লাগলে হবে না বাপু। ওটা ঝাড়খন্ড স্টেটে পড়ে।
বিরক্ত দেখালো কাবেরীকে। তার স্বামী মানুষটির এই টাকা পয়সা সংক্রান্ত বাড়বাড়ন্ত ভালো লাগে না।
---হেমেন দা ঠিক এটা বলতে আসেননি। ওই জমি-বাড়ি দাদু নাকি উত্তরসুরি হিসেবে যতটা হেমেন দার নামে রেখেছেন, ততটা আমার নামে। কাজেই স্কুল গড়তে হলে আমারও সহযোগিতা লাগবে বৈকি।
অরুণাভ কাবেরীর পিঠে হাত রেখে বলল---সে তোমার ইচ্ছে। তোমার সম্পদ কিভাবে তুমি ইউটিলাইজ করবে, তুমিই ঠিক করবে।
---আমার একবার ইচ্ছে আছে গিয়ে দেখার। সামনের মাসেই তো গরমের ছুটি, যাবে?
---মাথা খারাপ। আমার চাকরিটা তোমরা সকালের প্রাইমারী স্কুল নয় ডার্লিং। যে গরমের ছুটি, পুজোর ছুটি, শিশু দিবসের ছুটি, শিক্ষক দিবসের ছুটি। অরুণাভ জলের জগ থেকে গেলাসে জল ঢালতে ঢালতে চোখ না তুলেই বলল।
---আমি কি তাই বলছি, ছুটি নিলেই তো পারো।
অরুণাভ জল খেয়ে হাতের কাছে তোয়ালে খুঁজে না পেলে প্রায়শই কাবেরীর শাড়ির আঁচলে মুখ মোছে। ছেলে দুটোরও অভ্যাস এক। একে একে ওরা মুখ মুছতে লাগলো মায়ের শাড়ির আঁচলে। পাপান বলল---আমি যেতে পারবো না। কোচিং ক্লাস বন্ধ করা যাবে না।
কথাটা ঠিক। সামনের বছর পাপানের এইচ এস। বাড়িতেও প্রাইভেট টিউটর আসেন। তাতান তো একেবারেই গররাজি, ও এমনিতেই বইমুখো। কাবেরীর অবস্থা দেখে হাসলো অরুণাভ। বলল---তুমি একাই তো যেতে পারো।
---একা? আমি কখনো গেছি।
---কেন বিয়ের আগে যাওনি? ওই যে বলেছিলে তোমাদের কলেজের এক্সকার্সনে।
সত্যি, কাবেরী বিয়ের পর থেকে এই বাইশ বছর বাপের বাড়ি যাওয়া ছাড়া কখনো কোথাও দূরে একা যায়নি। যদিও কাবেরীর বাপের বাড়ি চুচুড়ায়। কলকাতা থেকে চুচুড়াকে খুব একটা দূর বলা যায় না। ছেলে দুটোকে নিয়ে একবার তাতানের স্কুলের ট্যুরে মুকুটমণিপুর গিয়েছিল বটে, এইটুকুই। কিন্তু অতদূর অজানা জায়গায় একা, কাবেরী ভেবে দেখেনি। বিয়ের পর অরুণাভর সাথে কিংবা ছেলে দুটো হবার পরও কাশ্মীর, দার্জিলিং, উটি, আন্দামান বহু জায়গা ঘোরা হয়েছে। তবে সবটাই অরুণাভ ছিল বলে।
+++++++
Like Reply


Messages In This Thread
RE: হেমন্তের অরণ্যে - by Henry - 04-10-2022, 05:07 PM



Users browsing this thread: 4 Guest(s)