Thread Rating:
  • 36 Vote(s) - 3.03 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Romance আধুরা ইন্সান !
দুজনের কথার মাঝেই অভির ডাক এলো ... অভি নিলঞ্জনাকে বিদায় জানিয়ে যেতে উদ্ধত হলেই নিলঞ্জনা হাত বাড়িয়ে দিলো ! অভির সাথে করমর্দন করার সময় বলে উঠল " বেস্ট অফ লাক !"

থাঙ্কস জানিয়ে অভি ভিতরে চলে গেলো  !
- আসুন মিস্টার অভিনন্দন ! আমি পি এস দাস, এখানকার হেড এইচ আর ! বসুন ! করমর্দন করে অভিকে বসতে অনুরোধ করলো মিস্টার দাস !
অভি সমস্ত সার্টিফিকেট সব তুলে দিলো মিস্টার দাসের হাতে ! খুব মনোযোগ দিয়ে সার্টিফিকেট গুলো দেখতে দেখতে শুরু হোল ইন্টার্ভিউ পর্ব ! এর মধ্যে আরও দুজন এসে যোগ দিয়েছে ইন্টার্ভিউ প্রসেসে ! প্রায় দুই ঘণ্টা চলল ইন্টার্ভিউ...।।
এর মধ্যে প্যান্টের পকেটে সাইলেন্ট মোডে রাখা মোবাইল বেশ কয়েকবার বেজে থেমে গেছে !
ইন্টার্ভিউ শেষ হলে মিস্টার দাস হাত বাড়িয়ে অভিনন্দন জানালেন " কনগ্র্যাটস মিস্টার অভিনন্দন ! আপনাকে আমরা সিলেক্ট করলাম !  খুব শীঘ্রই আপনার মেলে আপনি অফার লেটার পেয়ে যাবেন ! ওতেই সমস্ত স্যালারি ব্রেকআপ, পজিসন, পোস্টিং দেওয়া থাকবে ! আমরা চেষ্টা করবো আগামিকালের মধ্যেই পাঠিয়ে দিতে ! আপনি কি এখানে আগামিকাল অবধি থাকতে পারবেন?
- আমি দুঃখিত ! আমাকে আজই মুম্বাই চলে যেতে হবে ! সেখানে আমার দুই দিদি অপেখ্যা করছেন আমার জন্য আর হোটেলে আমার ছোটবোন অপেখ্যা করে আছে !
- ওহ ! সরি ! আপনাকে এতক্ষন আটকে রাখার জন্য ! আসুন ! আশা করি আপনাকে আমরা কালই অফার লেটার পাঠিয়ে দেবো ! বাকি যদি কিছু প্রশ্ন থাকে তাহলে আপনার সাথে আপনার মোবাইলে আমরা কন্টাক্ট করে নেবো ! সবার সাথে করমর্দন করে অভি বেড়িয়ে এলো ! রিসেপ্সনে নিলঞ্জনাকে দেখতে পেলনা ! কোম্পানির বাইরে এসে মোবাইল বের করে দেখল দেবির দুটো আর মনামির তিনটে ফোন এসেছিল ! অভির চিন্তা ছিল দেবিকে নিয়ে তাই সবার আগে দেবিকে ফোন করলো !
অপর প্রান্তে দেবির ভয়ার্ত কণ্ঠস্বর ! দাদা তুই কোথায় ?
- এইত ইন্টার্ভিউ দিয়ে বেরুলাম !
- আমি খুব ভয় পেয়ে গেছিলাম তোর দেরি দেখে !
- ভয়ের কিছুই নেই ! তৈরি থাকিস ! এসেই আমরা মুম্বাই বেড়িয়ে যাবো !
দেবির ফোন রেখে মনামিকে ফোন করে অভি ! মনামি রেগে টং হয়ে আছে ! ওদের ফোন তুলিনি বলে ! ওকে বলল যে ইন্টার্ভিউ টে বিজি ছিল বলে ফোন তুলতে পারেনি ! তার জন্য দুঃখিত ! হোটেলে পৌঁছেই ওরা বেড়িয়ে যাবে মনামিদের বাড়ির উদ্যেশ্যে !
ফোন রেখে একটা ট্যাক্সি নিয়ে সোজা হোটেলে ফিরে এলো ! দরজা খুলতেই দেবির চেহেরা দেখে ওকে জরিয়ে ধরল অভি ! " ধুর পাগলি আমি তো ইন্টার্ভিউ দিতে এসেছি ! ঘুরতে এসেছি নাকি ?" চল চল এবার তৈরি হয়ে নে ! আগে কিছু খেয়ে আমরা বেড়িয়ে পড়ব মুম্বাই !
লাঞ্চ সেরে ওরা হোটেলের কাউন্টারে মুম্বাই যাবার ট্রেনের কথা জিজ্ঞাসা করতেই রিসেপ্সনের ছেলেটি বলল " স্যার ! আমাদের এখান থেকে শেয়ার ট্যাক্সি ছাড়ে ! যদি যেতে চান তাহলে বুক করে দিই ! তারাতারি পৌঁছে যাবেন !      
 
 
হোটেলের লোকের কথায় একটা শেয়ার ট্যাক্সি বুক করে দুই ভাইবোনে বেড়িয়ে পড়লো তখন তিনটে বাজে ! ট্যাক্সি ড্রাইভারের সাথে কথা বলে জানতে পারল যে ওরা সন্ধ্যে সাতটার মধ্যেই বোরিভালি পৌঁছে যাবে ! সেখান থেকে ওরা লোকাল ট্রেন বা ট্যাক্সি নিয়ে আন্ধেরি পৌঁছতে পারে !
অভি বলল যে হোটেলে ওদেরকে বলা হয়েছিলো যে গাড়ি সিএসটি পর্যন্ত যাবে ...।
ট্যাক্সি ড্রাইভার বলল ওদের গন্তব্য বোরিভালি পর্যন্ত ! ওর আগে ওদের যাবার অনুমতি নেই ! কি আর করা যাবে ...। দুই ভাইবোনে রাস্তার শোভা দেখতে লাগলো ! অভির পাশের এবং আগের প্যাসেঞ্জার দুজনেই মারাঠি ! ওরা কি বলছে সেটা বোঝার ক্ষমতা দুজনেরই নেই ! তাই চুপচাপ শোভা দেখা ছাড়া আর কোনও উপায় নেই ! খান্ডালার উপর দিয়ে যখন গাড়ি পাশ করছে খান্ডালার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ওদের দুজনকেই বিভর করে দিলো ! দেবী আনন্দের আতিসাজ্যে গাড়ির ভিতর থেকেই চেঁচিয়ে উঠল ! " দাদা দ্যাখ দ্যাখ কি সুন্দর এই জায়গা টা ! আমরা কি এখানে আসতে পারিনা ?"
ওর চীৎকারের সাথে সাথেই বাকি দুজন মারাঠি লোক ওদের দিকে অবাক হয়ে দেখতে থাকলো ! অভি ওদেরকে বলল "সরি! আসলে আমার বোন প্রকৃতির সৌন্দর্য তে এতো বেশি ভাবুক হয়ে গিয়েছিল যে নিজের মনের ভাব ধরে রাখতে পারেনি ! " লোকগুলো মুখেতে হাসি এনে আবার রাস্তার দিকে ধ্যান দিলো ! বাকি রাস্তাটুকু অভি দেবির হাত চেপে ধরে থাকলো যাতে দেবী আর চেলাতে না পারে ! দেখতে দেখতে ওরা বোরিভালি পৌঁছে গেলো ! মুম্বাইয়ের বিকেল ...... সন্ধ্যে হবো হবো করছে কিন্তু স্ট্রীট লাইটের উজ্জ্বল আলো কিছুতেই অন্ধকারকে আসতে দিতে চাইছে না ! তার উপর মানুষের ঢল ... অবাক বিস্ময়ে দেবী দেখতে থাকলো ! কলকাতায় মানুষের ভিড় দেখেছে কিন্তু এতো সুন্দর আলোর ভিতর মানুষের ভিড় কোথাও যেন আলাদা কলকাতার থেকে ! 
ট্যাক্সি নিয়ে সোজা দাদর যাবার নির্দেশ দিলো অভি ! মনামিকে ফোন করে দিলো যে ওরা আর কিছুক্ষণের মধ্যেই বড়দির বাড়ি পৌঁছে যাবে ! ছোড়দি ওকে কি ভাবে পৌঁছতে হবে সেটা বলে দিলো !
 
হাতের সময় কম হলেও ওরা বেশ এঞ্জয় করলো ! মুম্বাই, শিরডি সব ঘুরে নিলো সবাই মিলে ! এমন একটা সুযোগ দেবির জীবনে আসবে কোনোদিন ও ভাবতেও পারেনি ! ছোট থেকেই ও একা মানুষ হয়েছে ! ভাই বোন বলতে কাউকেই জানত না ! মনামির বিয়েতেই ওর পৃথিবী ওর সামনে চলে এসেছে ! এখন ওর প্রান ওর দাদা অভি আর ওর ছোড়দি মনামি ! বড়দির সাথে একটু দুরত্ব সবাইকারই আছে ! সবাই বড়দিকে বেশ সম্ভ্রম করে ! বড়দি, ছোড়দি যেভাবে দেবিকে আগলে রেখেছে বা আপন করে নিয়েছে সেটাই আপ্লুত করে দেবিকে !
 
আসার সময় মনামি অভি আর দেবিকে জরিয়ে ধরে কেঁদে ফেলে এয়ারপোর্ট এ ! অভি কে বলে বোন কে দেখিস ! ঠিক মতো গাইড করিস !
দেবী মনামিকে জরিয়ে ধরে বলে " আর চিন্তা করোনা ছোড়দি ! এতদিনে আমি আমার দিদি দাদা সবাইকে পেয়েছি ! আর আমার চিন্তা নেই !
অভি দেবিকে নিয়ে চোখ মুছতে মুছতে এয়ারপোর্ট এর ভিতরে  চলে যায় ! ! প্লেনের ভিতরে দেবী চুপচাপ বসে আছে ! চোখ দুটো বেশ ফুলে গিয়ে লাল হয়ে গেছে  ! পাশে বসা অভির হাত শক্ত করে ধরা !
এক সময় প্লেন ছারল !
- আচ্ছা দাদাভাই ! তুই কেনও আমার থেকে এতদিন দূরে ছিলিস ?
- আমি তো দূরে থাকিনি ! আমাকে দূরে রাখা হয়েছিলো ! আর যে দূরে রেখে ছিল এখন সে আমাদের থেকে দূরে আছে ! ...। বলে দেবিকে বুকের মাঝে ঢুকিয়ে নিতে চাইল অভি ! সত্যিই তো অভির ও ভুল ছিল ! কেনও এতদিন সে দেবির কোনও খোঁজ নেয়নি ! আসলে ফাল্গুনি দেবী নিজেই কোনোদিন অভিকে নিজের কাছে টেনে নেননি ! অনিমেশ বাবুও ছেলেকে দাদার জিম্মায় ছেরে একেবারে বিছিন্ন হয়ে গেছিলেন ! ফাল্গুনি দেবির সাথে ডিভোর্স হবার পর তারও ছেলের কথা মনে পড়েছিল ! অভি ছোট থেকেই জেঠু কেই বাবা এবং জেঠিমাকেই মা বলে জানত এবং এখনও সেটাই মানে ! এই ছোট্ট মেয়েটাকে পেয়ে এখন ও নিজেকেই ওর জন্য উৎসর্গ করতে চায় ! কথায় আছে না রক্তের টান বড়ই ভীষণ টান !
দিয়ার সাথে ভালো করে কথা হয়নি প্রায় ৩ দিন হয়ে গেলো ! ফোন করলে দিয়া শুধু হু হা জবাব দিয়ে যাচ্ছে ! জানিনা এতো রাগ কিসের ওর ! ছোড়দির সাথে মাঝে কথা বলিয়ে দিয়েছিলাম কিন্তু তখন বুঝিনি কেন ও আমার সাথে কথা বলতে চাইছে না ! বাড়ি ফিরি তারপর দেখবো ওই টুকু পুচকে মেয়ের অতো রাগ কেন ! ফ্লাইটে বসে বসে অভি ভেবে যাচ্ছিলো ! প্লেনে ওঠার আগে মামনির সাথে ফোনে কথা হয়েছে ! জেঠু একটু যেন বিমর্ষ হয়ে পড়েছেন ! বাড়িতে গিয়ে পাপার সাথে বসতে হবে অভিকে ! উফফ ! আর পারা যাচ্ছে না ! একদিকে দিয়া ! অন্যদিকে পাপা মামনি ! বন্ধু বান্ধবের কথাই তো আলাদা ! আভিক বলল যে বিরেন দা নাকি আমার খোঁজে এসে বেশ কয়েকবার ফিরে গেছে ! ও জিজ্ঞাসা করেছিল কিন্তু কিছুই বলেনি ! শুধু বলেছে অভির সাথে অনেক জরুরি কথা আছে ! বিরেন দা কোনও মোবাইল রাখেন না যে ফোন করে জিজ্ঞাসা করবো ! বাড়ি ফিরেই বিরেন দার সাথে দেখা করতে হবে ! নিশ্চয় কোনও প্রবলেম হয়েছে বাড়িতে !
আসলে বিরেন দা মানে বিরেন বসু এক সময় ছাত্র বাম রাজনিতির দাপুটে নেতা ছিলেন ! পরের জীবনে রেলে চাকরি পান ! কলেজের প্রেমিকা সুদেশ্না কে বিয়েও করেন ! কিন্তু............  
থাক সে কথা পরে হবে ! আগে বাড়ি যাওয়া যাক !
ফ্লাইট যথা সময়েই ল্যান্ড করলো ! দুই ভাইবোন এয়াইরপোরটের বাইরে এসে দেখল ফাল্গুনি ম্যাম মানে অভির মম আর দেবির মা উদ্বিগ্ন হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছেন !
অভি কাছে এসে প্রনাম করতেই উনি অভিকে জরিয়ে ধরে কেঁদে ফেললেন !
যদিও অভি কান্নার কারন জানে না তবুও জিজ্ঞাসা করলো " কি হয়েছে মম ! তোমার মেয়ে তোমার কাছে ফিরে এসেছে ! "
- আমার সাথে একবার আমরি হসপিটাল চলো ! অভির হাতটা শক্ত করে ধরে ফাল্গুনি দেবী টান দিলেন ! অভির এক হাত ফাল্গুনি দেবির হাতে এক হাতে পিঠের লাগেজ সামলাতে ব্যাস্ত, ব্যাকপ্যাকের হাতলে দেবির করা বন্ধন  ! ............... 
[+] 7 users Like ddey333's post
Like Reply
Do not mention / post any under age /rape content. If found Please use REPORT button.


Messages In This Thread
RE: আধুরা ইন্সান ! - by dada_of_india - 11-12-2021, 07:58 PM



Users browsing this thread: 3 Guest(s)