Thread Rating:
  • 36 Vote(s) - 3.03 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Romance আধুরা ইন্সান !
দাদার গুপ্ত কথা

 
ভর সন্ধ্যাবেলা চিৎকার চেঁচামিচিতে ঘুম ভেঙ্গে গেল | এমনিতেই আজ একটু বেলা করে ঘুমিয়েছি
বারান্দায় বেরিয়ে দেখি দাদা  অমন সৌম্যকান্তি চেহারা নিয়ে | সাদা পাজামা, পাঞ্জাবি পরে গম্ভীর মুখে একটা সাইকেল রিক্সা চালিয়ে আবাসনের ভেতরে ঢুকছেন |
গেটের সিকিউরিটি গার্ড গেট খুলে হাঁ করে তাকিয়ে আছে | আমার মতন ফ্ল্যাটের অন্য প্রতিবেশীরা বারান্দায় দাঁড়িয়ে কেউ হেসে লুটিয়ে পড়ছে | কেউ কেউ বিস্ময়ে নিজেরা বলাবলি করছে আহা রে এই ভাবে এতোদিন ঘর বন্দী হয়ে মনে হয় মাথা খারাপ হয়ে গেছে
মারাত্মক ডিপ্রেশনের শিকার হয়েছেন |
 বৌদি বারান্দা দিয়ে চিল চিৎকার করছেন | ঘুমের ওষুধ ফুরিয়ে গেছে বলে কিনতে বেরিয়ে সাইকেল রিক্সা চালিয়ে ফ্ল্যাটে ঢুকছো
মাথাটা কি একদম খারাপ হয়ে গেছে তোমার ?
দাদার দেখলাম কোনো ব্যাপারেই কোনো হেলদোল নেই | একদম স্টেডি হয়ে ধরে ধরে রিক্সাটা চালিয়ে ফ্ল্যাটের নীচে ঢুকে গেলেন
বৌদি চিৎকার করতে করতে দেখলুম সশব্দে বারান্দার দরজাটা দিয়ে দিলেন
বুঝলাম আজ  দাদার কপালে অশেষ দুঃখ আছে
কিন্তু কিছুতেই মাথায় ঢুকলো না একজন উচ্চ পদস্হ চাকুরিজীবি মানুষ ভর সন্ধ্যাবেলা ঘুমের ওষুধ কিনবে বলে বেরিয়ে হঠাৎ একটা সাইকেল রিক্সা চালিয়ে  বাড়ি ফিরবে কেন ?
রিক্সাটা কার ? রিক্সাওয়ালা কোথায় ? এখন কি নতুন নিয়ম হয়েছে যে ওষুধের দোকানে কেউ ঘুমের ওষুধ কিনতে গেলে তাকে রিক্সা চালিয়ে বাড়ি ফিরতে হবে
হাজারটা প্রশ্ন মাথার মধ্যে খেলা করে বেড়াতে লাগলো
ঘন্টাদুয়েক পরে আর কৌতূহল না চাপতে পেরে দাদাকে ফোনই করে ফেললুম
বেশ কিছুক্ষণ বাজার পরে দাদা ফোনটা ধরে বললো | অলরেডি চল্লিশটা ফোন পেয়ে গেছি | একটাও তুলিনি | কিন্তু তুই তো আমার খুবই স্নেহের পাত্র | তাই তোর ফোন না ধরে আর পারলুম না
আমি কেন রিক্সা চালিয়ে ঢুকলাম এটা জানতে চাইছিস তো ? তোর দোষ নেই | সত্যিই তো হঠাৎ করে একটা দামড়া লোক ওষুধ কিনবে বলে হেঁটে বেরোলো | খানিক পরে একটা রিক্সা চালিয়ে ঢুকলো | মানুষ তো অবাক হবেই | তোর বৌদিও তো সব শোনার পরে ঘরের দরজা বন্ধ করে দিয়েছে | জানি কদিন এখন এই রকম চলবে
দাদা  সোজা প্রসঙ্গে চলে আসায় আমার ঝামেলা অনেক কমে গেল
বললাম কি হয়েছে দাদা
একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে দাদা  বললে | এই দেড় মাস এক ফোঁটা মদ খাই নি | কিন্তু কাল থেকে টিভিতে এতবার মদ,মদ করে মাথা খারাপ করলো যে প্রচন্ড ইচ্ছে করছিল খেতে | কিন্তু জানতাম বিশাল লাইন পড়বে
তাই মোড়ের রিক্সা স্ট্যান্ডের ভলুকে বলেছিলাম আমার হয়ে লাইনে দাঁড়িয়ে যদি দুটো বোতল তুলে দেয় | আমি কিছু টাকা দিয়ে দেবো | খুশী খুশী রাজি হয়ে গেল | বললাম নামটা মনে রাখতে পারবে তো ? ব্ল্যাক ডগ স্কচ হইস্কি
বললো আরে হ্যাঁ দাদা নো পবলেম | ব্ল্যাক ডগ এস্কচ তো ? ঠিক মনে থাকবে |
বিপদ হলো সন্ধ্যাবেলা | ভলু ফোন করে বললো | দাদা বিশাল বাওয়াল হয়ে গেছে | আমি মাল কিনে বেরোনোর টাইমই লাইনে হেব্বি ঝামেলা হয়েছে | পুলিশ লাঠি চার্জ করেছে | দোকান বন্ধ করে দিয়েছে | আমি কোনোরকমে রিস্কার সীটের নীচে বোতল দুটো রেখে রিক্সা নিয়ে পালাতে যাবো |
 এমন সময় একটা পুলিশ লাঠি দিয়ে উদোম ক্যালালো | বললো যা ভাগ এখান থেকে
রিস্কা ফেলে সেই যে দৌড় দিয়েছি সোজা বাড়ি ঢুকে গেছি | জানি না আপনি ওই বোতল পাবেন কিনা
ঈসস সে কি ? কি প্যাথেটিক ব্যাপার বলে উঠি আমি |
প্যাথেটিক বলে প্যাথেটিক
তারপরে কি হল দাদা  ? 
আর কি হবে | বুকে পাথর চেপে বসে রইলুম ঘন্টা দুয়েক | তারপরে ভলুই ফোন করে বললো | দাদা অল কিলিয়ার | খবর পেয়েছি এলাকা ফাঁকা হয়ে গেছে | আমি রিস্কাটা মদের দোকানের উল্টোদিকে ল্যাম্পপোসেটর গায়ে হেলিয়ে রেখে এসেছি | যদি ভগোবান চান তাহলে এখনও হয়তে সীটের নীচে বোতলদুটো আছে |একবার গিয়ে দেখতে পারেন
গলায় মধু মাখিয়ে বল্লাম তুমি কি একবার যেতে পারবে ভাইটু
ভলু বল্লে পাগল নাকি দাদা ? বাড়ি থেকে বেরোলে বউ কেলিয়ে আমসত্ব বানিয়ে দেবে | আপনি গেলে যান গে | রিস্কার জন্য আমি রিক্স নেবো নিকো
থার্টি পারসেন্ট দাম বেড়ে গেছে | তার উপরে স্কচ | তাও দুটো | ভাবলাম যা থাকে শালা কপালে | শর্টকার্ট দিয়ে তো একটুখানি | যাই গিয়ে দেখে আসি
বারমুডাটা ছেড়ে পাজামা, পাঞ্জাবিটা পরে |তোর বৌদিকে গম্ভীর ভাবে বললাম ঘুমের ওষুধ একদম শেষ | জাস্ট দু মিনিটে গিয়ে নিয়ে আসছি | বলেই কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই বেরিয়ে পড়লাম
গিয়ে দেখি রিক্সাটা ভলু যেমন বলেছিল ঠিক তেমন ভাবেই রাখা আছে | উত্তেজনায় কাঁপতে কাঁপতে রিক্সার সীটটা তুলে দেখি দুটো বোতলই রাখা রে | উফফ যা আনন্দ হলো না কি বলবো তোকে | ঝপ করে সীটটা ফেলে | কয়েক মিনিট দম নিয়ে পকেট থেকে প্লাস্টিকের ব্যাগটা যেই বের করেছি
অমনি মাটি ফুঁড়ে একজন পুলিশ অফিসার উঠে এল | গুরু গম্ভীর গলায় জিজ্ঞাসা করলো | কি ব্যাপার কি করছেন এখানে ? কার রিক্সা ?
সত্যি বলছি | পুলিশ দেখে মারাত্মক ভয় পেয়ে গেলাম রে | বেজায় ঘাবড়ে গিয়ে বললাম - আমার স্যার
মানে ?? পুলিশ অফিসারের মাস্ক পরা মুখে চোখ দুটো গোল গোল হয়ে গেল দেখলাম
আপনার রিক্সা ? আপনি রিক্সা চালান
-না | মানে ইয়েস স্যার
আরে কি বলছেন মশাই  ঠিক করে বলুন | রিক্সাটা আপনার ? আপনি চালান তাই তো
ইয়েস স্যার
কোথায় থাকেন
অপ্সরা অ্যাপার্টমেন্টে স্যার
হোয়াট ?? এই অপ্সরায় থাকেন ? রিক্সা চালান ? একরাশ অবিশ্বাস ঝরে পড়ে অফিসারের গলায় | মাস্ক পরেন নি কেন ? জানেন একটু আগে এখানে বিশাল গন্ডগোল হয়েছিল | আপনি অপ্সরা বিল্ডিং থেকে বেরিয়ে এইখানে রিক্সা নিয়ে কি করছেন
দেখলাম ভয় পেয়ে যখন মিথ্যা বলেই ফেলেছি আর থামা যাবে না | অন্য কেস খাবো | লোকনাথ বাবাকে জোরসে স্মরণ করে একটা লম্বা শ্বাস নিয়ে বললাম
প্যাসেঞ্জার ছিল স্যার | বয়স্ক মানুষ ওই গলির ভিতরে ছেড়ে দিয়ে এলাম | এইবারে বাড়ি চলে যাবো
অফিসারের মুখে মাস্ক তাই মুখটা দেখতে পাচ্ছিলাম না | তবে চোখ দুটোয় কেমন জানি একটা পৈশাচিক উল্লাস দেখতে পেলুম
চিবিয়ে চিবিয়ে বললে সাথে ব্যাগ কেন
কি অদ্ভূত ভাবে উত্তর গুলোও চলে আসছিলো রে | বললাম ফেরার পথে এট্টু সব্জি কিনতুম স্যার | আমাদের বিল্ডিংয়ের পাশেই বসে
হুমম | অপ্সরা বিল্ডিংয়ে থাকেন | রিক্সা চালান | এখন সব্জি কিনে বাড়ি ঢুকবেন | বাঃ খুব ভালো | তা সবসময়ই কি এমন ধপধপে সাদা পাজামা, পাঞ্জাবি পরে রিক্সা চালান
- ইয়েস স্যার | এটাই আমার ট্রেডমার্ক বলতে পারেন |
 হুমম অপ্সরায় একা থাকেন
না স্যার আমি আর আমার মিসেস
মিসেস কি করেন
স্কুল টিচার
হুমম, বলে পুলিশটা কিছুক্ষণ চুপ করে আমার দিকে তাকিয়ে থাকে | আমি ভয়ে কাঁপতে থাকি | প্রবল বেগে পেচ্ছাব এবং পায়খানা দুটোই পেতে থাকে |
হঠাৎ অফিসার প্রশ্ন করে | আপনি কিসে আছেন ?
গ্ল্যাক্সো কোম্পানীতে স্যার
কি পোস্ট
সেলস ম্যানেজার
এই যে বললেন রিক্সা চালান |
বুঝলাম এটা ওর স্ট্র্যাটেজি | প্রথমে নার্ভাস করে দাও | তারপরে দুম করে প্রশ্ন করে সত্যিটা বার করে নাও
তবে আমিও হারার পাত্র নই | লোকনাথবাবার ভক্ত আমি | স্পষ্ট অনুভব করলাম আমার পিছনে মদ চাপা রিক্সার সীটের উপর স্বয়ং লোকনাথবাবা প্যাসেঞ্জার হয়ে বসে আছেন রে | উনিই কথা যোগালেন মুখে |
বললাম ইয়েস স্যার | এটা জাস্ট একটা ফিট থাকার উপায় | মা- মাথা খাটিয়ে বের করেছি | কাজের যা স্ট্রেস | তাই ইভনিংয়ে এটা নিয়ে বেরোই | বেশ কয়েক চক্কর দিই | টু কিপ মাইসেলফ ফিটআর যদি প্যাসেঞ্জার পেয়ে যাই তো একটু সোশ্যাল ওয়ার্ক করি | পয়সা নিই না | হেঁ, হেঁ একটা অদ্ভূত সখ বলতে পারেন
চব্বিশ বছর পুলিশে চাকরি করছি | শরীর ফিট রাখার জন্য মানুষজন হাঁটে, দৌড়য়, সাঁতার কাটে , সাইক্লিং করে দেখেছি | বাপের জন্মে কোনোদিনও দেখিনি কেউ অফিস থেকে ফিরে সাইকেল রিক্সা চালায় নিজেকে ফিট রাখার জন্য | সাথে আবার প্যাসেঞ্জারও নেয় | তাও ফ্রীতে | এই করোনার জন্য মারাত্মক চাপে আছি নয়তো আপনার কপালে আজ অনেক দুঃখ ছিল |
আপনাকে দেখে তো রিক্সা চোর মনে হয় না | যাই হোক আমি আপনার পেছন পেছন যাচ্ছি | আমি দেখতে চাই আপনি আপনার রিক্সাটা চালিয়ে নিয়ে অপ্সরা বিল্ডিংয়ের ভিতরে ঢুকছেন
কি আর করবো |ভিতরের রাস্তা দিয়ে মাথা নীচু করে রিক্সা চালিয়ে এলাম | পেছন পেছন হারামজাদা পুলিশটা বাইক নিয়ে এল
ওই রাস্তার অনেকেই চেনে আমাকে | দেখলাম বিভিন্ন বারান্দায় গুনগুন, ভনভন করে গুঞ্জন হচ্ছে আমাকে নিয়ে | বুঝলাম বাড়ির পিছনের এই শর্টকাটটা  সারা জীবনের মতন রেড জোন হয়ে গেল আমার কাছে |
গেটে সিকিউরিটির সমর দেখি আমাকে দেখে হাঁ করে ভ্যাবলার মতন তাকিয়ে আছে
 বললাম আরে কি দেখছো কি অমন করে ? রিক্সা চালিয়ে ঢুকতে যেন প্রথম দেখছো মনে হচ্ছে আমাকে ? যত্তোসব , গেট খোলো |
 ঘাড় ঘুরিয়ে অফিসারের দিকে তাকিয়ে বললুম আসছি স্যার ভালো থাকবেন | বলে রিক্সা চালিয়ে সোজা আমার ফ্ল্যাটের নীচে চলে এলাম |
তারপর তো সবই জানিসশিবাশীষ কি বললো শুনলি তো ? কি দাদা  জেন এস্টিলোটা চেঞ্জ করে এটা নিলেন ? বাঃ ভালো মডেল | আরও অনেকে অনেক কিছু বললো | তখন আর কান দিই নি | রিক্সাটা পার্ক করে সীটের তলা থেকে বোতল দুটো নিয়ে সোজা বাড়ি |
এই হচ্ছে ঘটনা | ভলুকে বলে দিয়েছি | কাল এসে রিক্সা নিয়ে যাবে | ওর কাছে চিরকৃতজ্ঞ থাকবো আমি
প্রথম কদিন এটা নিয়ে খুব চর্চা হবে জানি তারপরে সবাই ভুলে যাবে
এই প্রথম পেগটা ঢাললুম | তোর সাথে কথা সেরে একটা লম্বা চুমুক দেবো | রাখি ভাইটু | ভালো থাকিস চীয়ার্স |
 

[+] 2 users Like ddey333's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: আধুরা ইন্সান ! - by ddey333 - 15-11-2021, 11:55 AM



Users browsing this thread: 1 Guest(s)