Thread Rating:
  • 27 Vote(s) - 3.26 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Romance জীবন যে রকম ( সম্পূর্ণ ধারাবাহিক উপন্যাস) By Lekhak
#90
বিদিশা এসেছেমা’র মুখ থেকে বিদিশার নামটা শুনেই, আমার ভেতরটা কেমন যেন হয়ে গেলশুভেন্দু তখন উঠে গেছে দরজা খুলে বিদিশাকে ফ্ল্যাটে ঢোকাবে বলেআমি শুক্লার মুখের দিকে তাকিয়ে আছিশুক্লাও আমার দিকেকিছুক্ষণ চুপচাপ, দুজনের মুখেই কোন কথা নেইশুক্লা বলল, ‘কি রে দেব? এবারে তুই খুশি তো? বিদিশা তো এসেছে।’
আমি বললাম ‘হ্যাঁএসেছেএই হতভাগাটাকে দেখতে এসেছে।’
শুক্লা বলল, ‘নিজেকে হতভাগা বলছিস? আরে তুই তো খুব ভাগ্যবাননইলে যে মেয়েটা কবে তোকে ছেড়ে চলে গিয়েছিলআবার তার তোর কাছেই ফিরে আসা, এগুলো সব গল্পে হয়কিন্তু বাস্তবে? আমি তো ভাবতেই পারি নামনে কর, আজ থেকে তুই পৃথিবীর সব থেকে সৌভাগ্যবান ব্যক্তিযার জীবনে দূঃখ বলে কিছু নেই।’
আমি কিছুক্ষণ ওর মুখের দিকে তাকিয়ে রইলামশুক্লাকে বললাম, ‘সময়টা মনে হচ্ছে আবার ভাল হয়ে গেলতাই নারে শুক্লা?’
শুক্লা বলল, ‘ভালো মানে? মনে কর, এটাই তোর জীবনের সেরা সময়তাছাড়া তুই তো কোন অন্যায় করিস নিভগবান তোকে শুধু শুধু কষ্ট দিতে যাবে কেন?’
আমি একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেললামশুক্লাকে বললাম, ‘হ্যাঁঠিক তাইভগবান অকারনে কাউকে কষ্ট দেয় না।’
শুক্লা একটু খুনসুটি মেরে আমাকে বলল, ‘এই দেব, আমি কিন্তু একটু মজা করবতুই কিন্তু চোখ বন্ধ করে শুয়ে থাকবিবিদিশা ঘরে ঢুকবেআমি বলব, দেব এখন ঘুমোচ্ছেডাক্তার বলে গেছে ওর ঘুম না ভাঙাতেতারপর ওর সাথেও খুনসুটি করবতুই চোখ বন্ধ করে সব শুনবি।’
আমি কিছু বলতে যাচ্ছিলামশুক্লা আমাকে বাঁধা দিয়ে বলল, ‘না, না, আজ কোন কথা আর শুনছি নাআরে বাবা আমরাও তো একটু আনন্দ করব, তাই নয় কি? তোর আনন্দ মানে তো আমাদেরও আনন্দ।’
আমি বললাম, ‘সে ঠিক আছেকিন্তু শুভেন্দু তো জানেওই দেখবি, বিদিশাকে সব বলে দেবেদেব ঘাপটি মেরে শুয়ে আছেতুই তখন খারাপ হবি, আর সেই সাথে আমিও।’
শুক্লার কি খেয়াল হল, হঠাৎই উঠে গেল বিছানা ছেড়েশুভেন্দু তখন আমাদের ফ্ল্যাটের মেন দরজাটা খুলে ওয়েট করছে বিদিশার জন্যবিদিশা সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠে আসছেশুক্লা শুভেন্দুর কাছে গিয়ে কানে কানে কিসব বলে এলমা’কেও বলেদিল খুনসুটি করবার ফন্দীটাঘরে ঢুকে বলল, ‘শুভেন্দুকে বলে দিয়েছি, সেই সাথে মাসীমাকেওবিদিশা কিছু বুঝতেই পারবে না।’
আমি বললাম, ‘দেখিস, বিদিশাও কিন্তু খুব ঝেমেলায় আছেমজা করতে গিয়ে শেষকালে আবার ও যেন কোন ব্যাথা না পায়।’
শুক্লা বলল, ‘আরে না না, ওটাতো পাঁচ মিনিট থেকে দশমিনিটের জন্যতারপর তুই নিজেই চোখ খুলবিযেন তোর ঘুম ভেঙেছে, এইভাবেচোখ খুলেই বিদিশাকে বলবি, ও বিদিশা? তুমি এসেছো? কখন এলে? তার আগের কোন কথাই তুই শুনতে পাসনি।’
ফন্দীটা উগড়ে দিয়ে শুক্লা খিলখিল করে হাসতে লাগলতারপর নিজেই আবার চুপ হয়ে বলল, ‘এই এই এই বিদিশা এসে গেছেআমি ওর গলার আওয়াজ পাচ্ছিতুই চোখ বন্ধ কর, আমি মুখটা গম্ভীর করে নিচ্ছি।’

আমি বললাম, ‘আরে তোরা জোরে জোরে কথা বললে তো আমার এমনিই ঘুম ভেঙে যাবেতখন?-

শুক্লা বলল, ‘আরে না নাআমরা আসতে আসতেই কথা বলবযাতে তোর ঘুম না ভাঙেতুই চিন্তা করিস নাএবার চোখটা বন্ধ করো তোবাবা লক্ষ্নী ছেলে।’

লক্ষ্নী ছেলের মতন আমিও চোখটা বন্ধ করে নিলামশুক্লা আমার মাথার কাছেই সেই ঠাই বসে রইলচোখ বন্ধ করে ভাবতে লাগলামবিদিশা ঘরে ঢুকে আমাকে দেখবে, অথচ আমি ওকে দেখতে পাব নাআমার মুখের দিকে হয়তো কিছুক্ষণ তাকিয়েও থাকবেকিন্তু আমি ওর মুখের অভিব্যক্তিটা বুঝতেই পারব নাবিদিশা হয়তো আমার মাথার কাছে এসে বসতে চাইবেআমার মাথায় হাত বুলোতে চাইবেকিন্তু আমি ওর হাতের স্পর্ষ পাব নাইস কি জ্বালায় পড়েছিশুক্লার মন রাখতে গিয়ে আমাকে এখন ঘুমোবার অ্যাকটিং করতে হচ্ছে

আমি চোখটা পুরোপুরি বন্ধ করে ফেলেছিআমাকে অবাক করে শুক্লা বলল, ‘চিন্তা করিস নাআমি এখন যেখানে বসে আছিবিদিশা ঘরে ঢুকলে ঠিক তোর মাথার কাছটাতেই ওকে বসাবযাতে চোখ খুলে তুই প্রথম ওকেই দেখতে পাস।’

শুক্লা যেন আমার মনের ইচ্ছাটা আগে থেকেই বুঝতে পারেচোখ বন্ধ করে ওকে বললাম, ‘ঠিক আছে, ঠিক আছেতুই বসে থাকনা এখনকে তোকে মানা করছে?’

শুক্লা হাসতে লাগল, খুব আস্তে আস্তেযেন খুব মজা পেয়েছেতারপরেই চুপ করে গেলকারণ বিদিশা তখন শুভেন্দুর পেছন পেছন ঘরে ঢুকেছেআমি চোখ বন্ধ অবস্থাতেই ওর উপস্থিতি টের পাচ্ছি

ঘরে ঢোকার পরে শুক্লা প্রথম যে কথাটা বিদিশাকে বলল, শুনে আমার মনটা ভীষন খারাপ হয়ে গেলশুক্লা ওকে বলল, ‘একিরে বিদিশা? কি চেহারা করেছিসকেমন উসখো খুসকো দেখাচ্ছে তোকেতোরও কি শরীর খারাপ নাকি?’

বিদিশা কোন জবাব দিল নামনে হল আমার খাটের উল্টোদিকের চেয়ারটায় বসল বিদিশাযেখানটায় শুভেন্দু এতক্ষণ বসেছিল

শুক্লা বলল, ‘আয় আয় আয়তুই বরং এখানে এসে বসদেবের মাথার কাছেতবে হ্যাঁদেব এখন ঘুমোচ্ছেআমি এসেছি, সেই থেকে দেখছি ঘুমোচ্ছেডাক্তার বলে গেছে একটু রেস্ট দরকারআমি আর শুভেন্দু আসতে আসতে কথা বলছিলামদেবকে সেভাবে ডিস্টার্ব করিনি।’

বিদিশাও বলল খুব আসতে আসতে। ‘এখন কেমন আছে ও?’

শুক্লা বলল, ‘ভালোএই তো ঘুমের মধ্যেই এতক্ষণ বিড় বিড় করছিলতোর নাম করছিলতুই যে এখানে আসছিস ও জানে না।’

মনে হল বিদিশা শুভেন্দুকে কিছু বলতে চাইছেশুভেন্দুও নিজে থেকে বলল, ‘হ্যাঁ আমিও কিছু বলিনিব্যাপারটা সারপ্রাইজ থাকও চোখ খুলে তোকে দেখুককি বল শুক্লা?’

শুক্লা বলল, ‘হ্যাঁ তাই তোদেব কিন্তু চোখ খুলে তোকে দেখলে খুব খুশি হবেবিদিশা ছাড়া দেব যেন কত মনমরা হয়েছিল এতদিনরাধা ছাড়া কৃষ্ণের বাঁশি শুনতে কি আর ভাল লাগে? এত দরাজ কন্ঠ, এত মিষ্টি গানএ গান কার জন্য? একজনই তো আছে দেবের একমাত্র প্রেমিকা।’

শুভেন্দু সঙ্গে সঙ্গে বলে উঠল, ‘ঠিকই বলেছিসআর আমরা হলাম সব ফেউযত উলুখাগড়ার দলনা আমরা দেবের কোন উপকারে আসব, না বিদিশার জায়গাটা কোনদিন নিতে পারব।’

শুক্লা শুভেন্দুকে বলল, ‘না না তুই ও কথা বলিস নাতুই দেবের জন্য অনেক করিসদেব নিজেও সেটা স্বীকার করেতোর মতন বন্ধু হয় না।’

শুভেন্দু আবার হেঁড়ে গলায় গান শুরু করল, ‘এমন বন্ধু আর কে আছে? আমার মত মিষ্টার?’

শুক্লা সঙ্গে সঙ্গে বলল, ‘এই এই এইদেবের ঘুম ভেঙে যাবেঅত জোরে চিল্লাস না।’

শুভেন্দু বলল, ‘জাগা না ওকেবিদিশা এসেছেএকবার চোখ খুলে, নয়ন মেলে দেখুকআহা কি আনন্দ আজ আকাশে বাতাসে।’

বিদিশাও বলল, ‘না না ও ঘুমোচ্ছেওকে জাগাতে হবে নাএই তো আমি ওর কথা সব তোদের কাছে শুনছি।’

মা সেই সময় ঢুকলো ঘরেশুভেন্দু নিজেকে একটু নিয়ন্ত্রণ করে নিলঘরে ঢুকেই বিদিশার দিকে তাকিয়ে মা বলল, ‘ভালো আছো বিদিশা? কতদিন পরে তোমায় দেখলাম।’

বিদিশাও এই প্রথম এতদিন পরে মাকে দেখলচেয়ার ছেড়ে উঠে মা’কে প্রনাম করল পা ছুঁয়েমা বলল, ‘থাক থাকভালো থাকো মাআশীর্ব্বাদ করি।’

শুক্লা তখন বুড়ো আঙুল দিয়ে আমার গায়ে একটু ঠেলা মেরে আমাকে বোঝানোর চেষ্টা করছে, মায়ের চরণ ছুঁয়েছে বিদিশাকিন্তু আমি চোখ বন্ধ অবস্থাতেই সব বুঝতে পারছিএকটু চোখটা অল্প বিস্তর ফাঁক করে পিট পিট মতন করে লুকিয়ে চুরিয়ে দেখছি, সত্যি বিদিশার মুখ যেন কত বিষাদে ভরাযেন চিন্তায় চিন্তায় সারা রাত ঘুম হচ্ছে না ব্যাচারারতার ওপর আমার শরীর খারাপের খবরটা পেয়েছেদৌড়ে চলে এসেছে আমার কাছেমনে মনে বললাম, ‘বিদিশা তুমি এসো কাছেপারলে এখুনি শুক্লার জায়গাটা দখল করো।  এই শুক্লা, তুই উঠে যা না? বিদিশাকে আমার মাথার কাছে বসতে দে না? কেন কেন শুধু শুধু তোরা ওকে বুঝতে দিচ্ছিস না? আমিতো জেগেই আছিমিছি মিছি ঘুমোবার ভাণ করে তোদের সব কথা শুনছিশুক্লা? তুই কি এভাবেই আমার মাথার কাছে বসে থাকবি? তাহলে বিদিশা এখানে এসে বসবে কি করে?

শুভেন্দু সেই সময় বলল, ‘আচ্ছা শুক্লা এমন তো নয়? দেব হয়তো জেগেই আছে।  আমাদের সবকথা শুনছে? ওর গায়ে একবার ঠেলা মেরে দেখ না? সত্যি ঘুমোচ্ছে কিনা?’

শুক্লাও তেমনিজবাবে বলল, ‘ না নাদেব এখন অঘোরে ঘুমোচ্ছেএইসময় জাগানোটা ঠিক হবে নাএত ব্যস্ত হচ্ছিস কেন? বিদিশা তো এই সবে এলও কি পালিয়ে যাচ্ছে না কি?’

আমার শুক্লার উপর খুব রাগ হচ্ছিলমনে হচ্ছিল এই দশ মিনিট সময়টাই যেন অনেক লম্বা সময়আমার ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে যাচ্ছেএই মেয়েরা কেন এত অবুঝ হয় বুঝি নাপুরুষের মন বোঝে নাদূঃখ কষ্ট বোঝে না? ব্যাচারা এল এত কষ্ট করে, আমার শরীর খারাপের খবর পেয়েতাকে আর আমাকে নিয়ে এখন শুক্লার মজামজা আমি বার করছি
 
 

 
[+] 3 users Like Lekhak is back's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: Jeeban Je Rakam By Lekhak - by Lekhak is back - 01-07-2021, 10:43 PM
RE: Jeeban Je Rakam By Lekhak - by Lekhak is back - 01-07-2021, 10:46 PM
RE: Jeeban Je Rakam By Lekhak - by Lekhak is back - 01-07-2021, 10:49 PM
RE: Jeeban Je Rakam By Lekhak - by Lekhak is back - 01-07-2021, 10:50 PM
RE: Jeeban Je Rakam By Lekhak - by Lekhak is back - 01-07-2021, 10:52 PM
RE: Jeeban Je Rakam By Lekhak - by Lekhak is back - 01-07-2021, 10:54 PM
RE: Jeeban Je Rakam By Lekhak - by Lekhak is back - 01-07-2021, 10:55 PM
RE: Jeeban Je Rakam By Lekhak - by Lekhak is back - 01-07-2021, 10:57 PM
RE: Jeeban Je Rakam By Lekhak - by Lekhak is back - 01-07-2021, 11:00 PM
RE: Jeeban Je Rakam By Lekhak - by Lekhak is back - 01-07-2021, 11:05 PM
RE: জীবন যে রকম ( সম্পূর্ণ ধারাবাহিক উপন্যাস) By Lekhak - by Lekhak is back - 06-07-2021, 11:17 PM



Users browsing this thread: 4 Guest(s)