Thread Rating:
  • 27 Vote(s) - 3.26 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Romance জীবন যে রকম ( সম্পূর্ণ ধারাবাহিক উপন্যাস) By Lekhak
#89
তেরো
 
গানটা শুনতে শুনতে শুভেন্দু যেন দোলায় দুলছেগান পাগল নয় আমার গলা পাগল হঠাৎ একটা আবদার করে বসল, ‘এই দেব একটা রিকোয়েস্ট করব, রাখবি? তোকে এটা করতেই হবে।’
আমি বললাম, কি?
শুভেন্দু বলল, ‘এবারের পূজোতে বিরাট ফাংশন হচ্ছে আমাদের পাড়াতেতোকে গাইতে হবে।’
আমি বললাম, ‘পাড়ার জলসা?’
শুভেন্দু বলল, ‘কেন, তুই তো গেয়েছিস বেশ কয়েকবারতোদের পাড়ার ফাংশনেই গেয়েছিসএবার না হয় আমাদের ওখানে গাইবি।’
আমি বললাম, ‘সে তো দেরী আছে এখনওতখন যদি শরীর সুস্থ থাকে নিশ্চই গাইবআর তুই রিকোয়েস্ট করছিস, তোর অনুরোধ কি আমি ফেলতে পারি?’
দাঁত বার করে একটু ফিক ফিক করে হাসল শুভেন্দুশুক্লা বলল, ‘আচ্ছা দেব, আমিও যদি তোকে একটা রিকোয়েস্ট করি রাখবি?’
শুভেন্দু শুক্লার পুরো কথাটা শেষ না হতে দিয়েই শুক্লাকে বলল, ‘তুইও কি ওকে জলসায় গাওয়াবি নাকি? কি প্ল্যান মতলব?’
শুক্লা বলল, ‘এই চুপ করতুই যা করবি, আমাকেও তাই করতে হবে নাকি? আমি দেবকে দিয়ে গাওয়াব নাআমি গান শিখব।’
শুভেন্দু শুক্লার কথা শুনে হেসেই লুটোপুটিহাসতে হাসতে বলল, ‘তুই? গান শিখবি? এই বয়সে?’
শুক্লা বলল, ‘কেন? আমি কি বুড়ী হয়ে গেছি নাকি? যে বয়সের খোটা দিচ্ছিস?’
আমি মাঝখানে বাঁধা দিয়ে শুক্লার তারিফ করে শুভেন্দুকে বললাম, ‘জানিস তো শুভেন্দুশুক্লা কিন্তু দারুন ছবি আঁকেএক একটা ছবি যেন মাষ্টার পিসচোখ জুড়িয়ে যায়আমি ওর ফ্ল্যাটে গিয়ে ওর আঁকা ছবি দেখেছি।’
শুভেন্দু বলল, ‘সত্যি তোদের কত গুণএই ‘দেব’ কি সুন্দর গান গায়, আবার গল্পটল্পও লেখে শুনেছিতুই খুব ভাল ছবি আঁকিসআর আমি হলাম যে পুরোপুরি কোয়ালিটি লেসআমার কোন গুন নেই।’ বলেই মুখটা এমন ব্যাজার মত করল, যেন নিজের ওপরেই খুব আফসোস হয়েছে ব্যাচারার
মা সেই সময়ে আর একবার ঘরে ঢুকলশুভেন্দুর কথাটা শুনতে পেয়েছেওকে বলল, ‘কার গুণ নেই বলছ শুভেন্দু? তোমার? তুমি বললেই আমি বিশ্বাস করব? তোমার মত ছেলে হয় নাআমি নিজে তার প্রমাণ পেয়েছিএমন ছেলে লাখে একটা।’
মা কাছে এসে শুভেন্দুর থুতনিটা ধরে একটু আদর করে দিলশুভেন্দু তাড়াতাড়ি মা’র পা ধরে প্রনাম করে বলল, ‘মাসীমা আরও আশীর্ব্বাদ করুনআমি যেন আপনাদের সেবায় আরও নিমজ্জিত হতে পারিএবার আপনি বললেন, আমার দূঃখটা দূর হলআর আমাকে কেউ বেগুন বললেও আমি মানব না।’
 আমি আর শুক্লা দুজনেই হাসছি, শুভেন্দুর রকম দেখেশুক্লা হাসতে হাসতে বলল, ‘যাক, মাসীমার কাছ থেকে সার্টিফিকেটটা পেয়ে গেলিএর থেকে বড় সার্টিফিকেট পৃথিবীতে আর নেই।’
মা বলল, ‘সত্যি গো, ছেলেটার মনটা এত ভালআমার তো খুব ভাল লাগে ওকেদেব বারেবারে ওর কথা বলেএখন মনে হয়, সত্যি এমন বন্ধু আর কে আছে? ক জনের ভাগ্যে জোটে। ‘দেব’ আমি দুজনেই খুব ভাগ্যবান।’
মা কথাগুলো খুব আবেগ নিয়ে বলছে, আর শুভেন্দু চেয়ারে বসে বসে বুকের ছাতি চওড়া করছেশুক্লা হাসতে হাসতে আমাকে বলল, ‘দেখ, দেখমাসীমার কথাগুলো শুনে ও কেমন করছে? শুভেন্দুর রকমটা দেখ।’
আমিও শুয়ে শুয়ে হাসতে লাগলামমা হঠাৎই সেইসময় বলে বসল, ‘আমার কিন্তু একটা কথা আছে বাবা? এটা কিন্তু তোমাকে রাখতে হবে।’
কথাটা শুভেন্দুকে উদ্দেশ্য করেই বলেছেশুভেন্দু প্রথমে বুঝতে পারেনিভ্যাবাচাকা খেয়ে ওর মুখের আদলটাই পাল্টে গেলমা কি আদেশ করবে ও জানে নামুখটা একটু করুন মত করে বলল, ‘বলুন মাসীমা।’
মা বলল, ‘এবার কিন্তু তোমাকেও বিয়ে করতে হবে বাবা, আমি কোন কথা শুনছি না।’
শুভেন্দু আঁতকে ওঠার মতন করে বলল, ‘বিয়ে?’
মা বলল, ‘হ্যাঁ বিয়েতুমি শুনে অমন চমকে উঠলে?’
আমি আর শুক্লা দুজনেই মুখ টিপে হাসছি, শুভেন্দু বলল, ‘আপনি বলছেন যখন মাসীমাকরে ফেলবএ আর কি এমন কঠিন কাজ? কবে করতে হবে বলুন? আপনি শুধু হুকুম করুন।’
বাধ্য ছেলের রকম দেখে আমার আর শুক্লার দুজনেরই খুব মজা লাগছে।  মা বলল, ‘বিয়েটা করবে কাকে? একটা মেয়ে তো দরকারমেয়ে দেখা শুরু করেছ?’
শুভেন্দু বলল, ‘ওটাই তো মাসীমাসমস্যা তো ওখানেই হয়েছেকিছুতেই মেয়ে খুঁজে পাচ্ছি নাঅনেক চেষ্টা করলামসব বৃথা গেল।’
মা বলল, ‘সত্যি তুমি মনের মতন মেয়ে খুঁজে পাচ্ছো না? এও আমাকে বিশ্বাস করতে হবে?
আমি বিছানায় শুয়েই ওকে বললাম, কটা মেয়ে খুঁজেছিস তুই? মাকে খুব ম্যানেজ করছিসব্যাটা গুলবাজ।’
শুক্লা কান্ডকারখানা আর রকম দেখছে শুভেন্দুরশুভেন্দু বলল, ‘ভাবছিস আমি সত্যি গুল মারছিআরে তোদের কাছে আমি অনেক কিছুই লুকোতে পারিতা বলে মাসীমার কাছে কি লুকোব? এই তো গত মাসেই আমি ছটা মেয়েকে দেখলামআরে আমার মেজবৌদিও খুব উঠে পড়ে লেগেছে আমার জন্য।  তাছাড়া মাধুরীও চেষ্টা চরিত্র করছেজানি একদিন না একদিন আমাকে বিয়ে করতেই হবেতাই তো সত্যি কথাটাই বললাম।’
শুক্লা বলল, ‘ছটা মেয়ে কে দেখলি, তারমধ্যে একটাকেও তোর পছন্দ হল না? তোর ব্যাপারটা কি বলতো?’ সর্বগুণে গুণান্বিত আবার অপূর্ব সুন্দরীদুটো কিন্তু একসাথে হবে নাও আশা ছেড়ে দাও
 শুভেন্দু বলল, আমার কাছে সুন্দরীটা ফ্যাক্টর নয়কিন্তু একটা জিনিষ বুঝিস তো? জয়েন্ট ফ্যামিলি আমাদেরআমাদের চার ভাইয়ের নিজেদের মধ্যে খুব ভাববিয়ের পরও সেই বন্ধনটা অটুট রয়ে গেছেআমার বৌদিরাও সব মানিয়ে নিয়েছেআজকালকার মেয়েরা, তারা সব আলাদা থাকতে চায়আলাদা সংসার হবেছোট্ট সংসারজয়েন্ট ফ্যামিলিতে তারা থাকতে চায় নাএই ব্যাপারগুলো বুঝে শুনে,তবেই তো বিয়েটা করতে হবেবিয়ের পরে কোন ঝেমেলা বহন করতে আমি রাজী নই
মা শুভেন্দুর কথাটা শুনে ঘাড় নাড়লবলল, হ্যাঁ বাবা, তুমি ঠিকই বলেছসেরকম মেয়ে খুঁজেই তবে তাকে বিয়ে করতবে পাবে নিশ্চইআমার মন বলছে।’
শুভেন্দু বলল, ‘চেষ্টায় তো লেগে আছিদেখি-
মা এরপর পাশের ঘরে চলে গেলশুভেন্দু আমার আর শুক্লার দিকে তাকিয়ে মিচকি মিচকি হেসে বলল, ‘কোনরকমে ম্যানেজ করেছি বল? নইলে মাসীমা এখুনি চেপে ধরত আমায়
শুক্লা ওর কথা শুনে প্রথমে চোখটা বড় করেছেতারপর হাসতে হাসতে আমাকে বলল, ‘দেখেছিস ব্যাটা কেমন পাজীমাসীমাকে দিব্যি  কেমন বানিয়ে বানিয়ে কথাগুলো বলে গেল।’
শুভেন্দু একটু সিরিয়াস হয়ে বলল, ‘দেখ শুক্লা, এখন আমার বিয়ের থেকেও সবথেকে বড় ইমপরট্যান্ট জিনিষটা হচ্ছে দেব আর বিদিশার আবার মিল হয়ে যাওয়াআরে আপন কা ক্যায়া? কিসিকো ভী শাদী করলেগা ইয়ারলেকিন এ যো পড়া হ্যায় না বিস্তার মেতেরে সামনে? পহেলে ইসকা জিন্দেগী বস জানে দে ইয়ারবহূত ইন্তেজার কিয়াঅব আয়া ও শুভঘড়িএ মেরে সবসে প্যায়ারা দোস্ত জিসকা শাদী মে ম্যায় জবরদস্ত নাচুঙ্গা আরে ইয়ে মেরে ইয়ার কি শাদী হ্যায়এ মেরে ইয়ার কি শাদী হ্যায়।’
শুভেন্দু একটু এগিয়ে এসে আমার হাতটা ধরে গান গাইতে শুরু করল, ‘এ দোস্তীহাম নেহী তোরেঙ্গেতেরা সাথ না ছোড়েঙ্গে। ‘
আমিও ওর সাথে গলা মেলাতে লাগলাম।  কিছুক্ষণ পরে নিজেই খেই হারিয়ে, হাত ছেড়ে দিলতারপর আক্ষেপের সুরে বলল, না, এই হেঁড়ে গলায় আমার দ্বারা আর গান হবে নানারে শুক্লা, তোর মত আমাকেও গানটা শিখতে হবে দেখছি দেবের কাছে।’
 
মা হঠাৎই ঘরে ঢুকেছে আবার।  যেন মা’রও বিস্ময়ের ঘোর কাটতে চাইছে না।  বহুদিন পরে খুব চেনা, কাছের জনকে দেখলে যেমন মনটা আকুলতায় ভরে যায়, নিজের চোখকেও অনেকে বিশ্বাস করতে পারে নাআমি যা দেখছি, সত্যি দেখছি তো? নাকি ভুল দেখলাম? মা সেভাবেই ঘরে ঢুকে বলল, ‘বারান্দা থেকে দেখলাম বিদিশা ট্যাক্সি থেকে নামছেকতদিন পরে ওকে আবার দেখছিহ্যারে দেব? সত্যি আমি ওকে দেখলাম তো? না, বিদিশার মত দেখতে অন্য কোন মেয়ে? কিন্তু আমার চোখ কি এতটাইই ভুল হবে?
শুভেন্দু বলল, ‘না মাসীমাআপনি ঠিকই দেখেছেনবিদিশাই এসেছেও সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠে আসুকআমি গিয়ে দরজা খুলে দিচ্ছি।’
 
পরবর্তী আপডেট একটু পরেই
 
[+] 3 users Like Lekhak is back's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: Jeeban Je Rakam By Lekhak - by Lekhak is back - 01-07-2021, 10:43 PM
RE: Jeeban Je Rakam By Lekhak - by Lekhak is back - 01-07-2021, 10:46 PM
RE: Jeeban Je Rakam By Lekhak - by Lekhak is back - 01-07-2021, 10:49 PM
RE: Jeeban Je Rakam By Lekhak - by Lekhak is back - 01-07-2021, 10:50 PM
RE: Jeeban Je Rakam By Lekhak - by Lekhak is back - 01-07-2021, 10:52 PM
RE: Jeeban Je Rakam By Lekhak - by Lekhak is back - 01-07-2021, 10:54 PM
RE: Jeeban Je Rakam By Lekhak - by Lekhak is back - 01-07-2021, 10:55 PM
RE: Jeeban Je Rakam By Lekhak - by Lekhak is back - 01-07-2021, 10:57 PM
RE: Jeeban Je Rakam By Lekhak - by Lekhak is back - 01-07-2021, 11:00 PM
RE: Jeeban Je Rakam By Lekhak - by Lekhak is back - 01-07-2021, 11:05 PM
RE: জীবন যে রকম ( সম্পূর্ণ ধারাবাহিক উপন্যাস) By Lekhak - by Lekhak is back - 06-07-2021, 11:09 PM



Users browsing this thread: 3 Guest(s)